জিজ্ঞাসা-১২৪:
কালো খেজাব ব্যবহার করার শরয়ী বিধান কী? কোনো ইমাম
সাহেব যদি ব্যবহার করেন তাহলে তার পেছনে ইকতিদার বিধান কী হবে? তারিখ-১০/০৬/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
উত্তর: বয়সের কারণে চুল-দাড়ি পেকে গেলে কালো খেযাব ব্যবহার করা নাজায়েয। হাদীসে এ
ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হযরত জাবের রা. বলেন, মক্কা বিজয়ের
দিন আবু কুহাফাকে নিয়ে আসা হল। তার চুল ছাগামা উদ্ভিদের ন্যায় (একেবারে) সাদা ছিল।
তখন নবী কারীম (ﷺ) বলেন-
غَيِّرُوا هَذَا بِشَيْءٍ، وَاجْتَنِبُوا السّوَادَ.
এটাকে কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন করে দাও। তবে কালো রং ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকো। সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১০২
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন-
يَكُونُ قَوْمٌ يَخْضِبُونَ فِي آخِرِ الزّمَانِ بِالسّوَادِ، كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ، لَا يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنّةِ.
শেষ যামানায় কিছু লোক কবুতরের পেটের (কালো রঙের) ন্যায় কালো খেযাব ব্যবহার করবে।
তারা (কিয়ামতের দিন) জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে
না। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-৪২১২
আর হাদীসে যে কালো খেযাব ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে তার মূল কারণ এতে অন্যদের
সামনে বয়স গোপন করা হয়। যাতে ধোঁকার বিষয়টি থাকে। ইবনুল কায়্যিম রাহ. বলেন, নিষিদ্ধ কালো খেযাব হচ্ছে,
যে খেযাব দ্বারা ধোঁকা দেওয়া উদ্দেশ্য থাকে। যেমন বৃদ্ধা মহিলা চুলে
কালো খেযাব ব্যবহার করে স্বামীকে ধোঁকা দিল, এমনিভাবে বৃদ্ধ লোক
কালো খেযাব ব্যবহার করে স্ত্রীকে ধোঁকা দিল। কারণ এটি সুস্পষ্ট প্রতারণা। সূত্র: যাদুল মাআদ-৪/৩৬৮
উত্তর: ক। চুলের কালো রংয়ের সাথে মিশে, এমন কাল রংয়ের খেজাব করা মাকরুহ। তবে ফোকাহায়ে কেরামগণ ! তিনটি ছুরতে জায়েজ বলেছেন। যেমন,
(০১) কারো যদি অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে বয়সের আগেই চুল পেকে যায় তাহলে তার জন্য কোনো কোনো ফকীহের মতে কালো খেযাব ব্যবহার করার অবকাশ রয়েছে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী যুহরী রাহ. বলেন-
كُنّا نُخَضِّبُ بِالسّوَادِ إِذْ كَانَ الْوَجْهُ جَدِيدًا فَلَمّا نَغَضّ الْوَجْهَ وَالْأَسْنَانَ تَرَكْنَاهُ.
যখন আমাদের চেহারা সতেজ ছিল তখন আমরা কালো খেযাব ব্যবহার করতাম। কিন্তু যখন চেহারায় ভাঁজ পড়ে গেল এবং দাঁত নড়বড়ে হল তখন কালো খেযাব ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছি। সূত্র: ফাতহুল বারী- ১০/৩৬৭
অবশ্য যুবক অবস্থায় দাড়ি-চুল পেকে গেলে কালো খেজাব ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও হাদীসে
যেহেতু সরাসরি কালো খেযাব ব্যবহার করতে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তাই একেবারে কালো খেযাব ব্যবহার
না করে তাতে সামান্য হলেও অন্য রং মিশ্রিত করে নেওয়া উচিত।
আর কোনো ইমাম যদি কালো খেযাব ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে কেনো ওজর আছে
কি না, তাঁর বয়স কত-
এসব বিষয় জানার পরই তার পিছনে ইকতিদার মাসয়ালা বলা যাবে। কিন্তু ঘটনা যাই হোক,
ইমামগণ যেহেতু সমাজের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব তাই তাঁদের উচিত এমন বিষয়
থেকে বিরত থাকা।
সূত্র: উমদাতুল কারী ২১/৫১; ফয়যুল কাদীর ১/৩৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৮৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৯;
ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২১৪; আদ্দুররুল মুখতার
৬/৪২২
উত্তর প্রদানে, মুফতি আব্দুর রাজ্জাক বগুড়া
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন