জিজ্ঞাসা-১২৪০৩: বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ, এ বিষয়ে লেসন প্ল্যান থাকলে মেহেরবানী করে শেয়ার করুন।
মাওলানা আব্দুর রহমান সাভার থেকে
জবাব: আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়টি সংক্রান্ত ঢাকাতে একটি রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ করেছিলাম এবং আলহামদুলিল্লাহ পুরস্কারও পেয়েছিলাম। সেটিই হুবহু শেয়ার করছি। আশা করি কাঙ্ক্ষিত জবাব পাবেন।
প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা
বিষয়: অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনে
মহানবি (ﷺ)- এর আদর্শ : বর্তমান প্রেক্ষিত
রচনায়: মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
পদবি: ধর্মীয় শিক্ষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, লেবুখালী, বরিশাল।
মোবাইল: ০১৮৮৭-৭০১৬৫৬,
০১৭৩৫-৭৯১৩৮২
অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনে
মহানবি (ﷺ) এর আদর্শ : বর্তমান
প্রেক্ষিত |
ভূমিকা: সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য ও অসংখ্য
দরুদ-সালাম প্রিয় নবি (ﷺ) ও তার সাহাবা-আহলে
বায়আতের প্রতি। পবিত্র কুরআনে এসেছে-
وَقَالُوۡا مَالِ ہٰذَا الرَّسُوۡلِ یَاۡکُلُ
الطَّعَامَ وَیَمۡشِیۡ فِی الۡاَسۡوَاقِ তারা বলে, এ কেমন রাসূল যে, খাদ্য
আহার করে এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করে?[1]
এ
আয়াত থেকে বুঝা যায়, রাসূল (ﷺ) সাত আসমানের উপর আর জমিনের নিচে কি হয় শুধু এ সংবাদ দেন না; বরং দুনিয়ার বাস্তব জীবনে কিভাবে ভাল থাকা সে বিষয়েও তিনি দিক-নির্দেশনা দেন।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন
রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) গত জুন মাসের এক
গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে দারিদ্র্য বেড়ে ৪৩ শতাংশ হয়েছে।[2]
عَنْ
ابْنِ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَقُولُ الْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنْ الْيَدِ السُّفْلَى قَالَ وَالْيَدُ
الْعُلْيَا يَدُ الْمُعْطِي وَالْيَدُ السُّفْلَى يَدُ السَّائِلِ
অর্থ: হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)
কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নিচের হাতের চেয়ে উপরের হাত উত্তম। তিনি বলেন, উপরের
হাত হলো দাতার হাত এবং নিচের হাত হলো দান প্রার্থীর হাত।[3]
এ
হাদিস শরিফে প্রিয় নবি (ﷺ) স্বনির্ভরতার প্রশংসা
করেছেন।
সুতরাং দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে আত্মনির্ভরতা অর্জন করতে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে
হবে। নিম্নে রাসূল (ﷺ)-এর কোন কোন কর্ম পদ্ধতি
আমাদেরকে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা করে তুলবে তার আলোচনা করা হলো।
অর্থনৈতিক
স্বনির্ভরতা অর্জনে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কর্ম পদ্ধতিসমূহ:
(ক)
পারস্পারিক সহযোগিতা: আমরা জানি, মুহাজিররা তাদের পরিবার-পরিজন এবং অধিকাংশ
সহায়-সম্পদ মক্কায় ফেলে রেখে মদিনায় চলে আসেন। রাসূল (ﷺ) আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব কায়েম করে
দেন। পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে এই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হলেও
মৃত্যুর পরে তারা একে অন্যের সম্পদের ওয়ারিশ হতেন। তবে এই আয়াত দ্বারা তা বাতিল
হয়ে যায়।
وَأُوْلُوْا الأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى
بِبَعْضٍ فِى كِتَابِ اللهِ অর্থ: বস্তুত
আত্মীয়দের কতক কতকের চেয়ে আল্লাহর বিধান মতে অধিক হকদার।[4]
অর্থাৎ তখন থেকে মৃত্যুর পর ওয়ারিশ হওয়ার বিষয়টি শুধু
আত্মীয়দের মাঝেই সীমিত হয়ে গেল।[5]
إِبْرَاهِيْمُ بْنُ سَعْدٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ
جَدِّهِ قَالَ لَمَّا قَدِمُوْا الْمَدِيْنَةَ آخَى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم بَيْنَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ وَسَعْدِ بْنِ الرَّبِيْعِ قَالَ
لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ إِنِّيْ أَكْثَرُ الأَنْصَارِ مَالًا فَأَقْسِمُ مَالِيْ
نِصْفَيْنِ
অর্থ: আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, যখন মুহাজিরগণ মদিনায় আগমন করলেন,
তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আবদুর রহমান ইবনে আওফ ও সাদ ইবনে
রাবি (রা.) এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করে দিলেন। তখন তিনি [সাদ
(রা.)] আবদুর রহমান (রা.) কে
বললেন, আনসারদের মধ্যে আমিই সব থেকে বেশি সম্পদের অধিকারী। আপনি
আমার সম্পদকে দু’ভাগ করে নিন।[6]
নোট: হাদিসটির অংশ বিশেষ উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষিত: আমরাও যদি যাদের সম্পদ বেশি
আছে নবিজি (ﷺ)- এর সেই শিখানো ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে উজ্জীবিত হয়ে গরিব ভাইদেরকে অংশীদার বানাই,
তাহলে তারাও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা
অর্জন করবে ইনশাল্লাহ।
(খ) মুদারাবা তথা একজনের শ্রম
অন্যজনের অর্থ সম্মিলিত ব্যবসা:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ اشْتَرَكْتُ أَنَا
وَسَعْدٌ، وَعَمَّارٌ، يَوْمَ بَدْرٍ فِيمَا نُصِيبُ فَلَمْ أَجِئْ أَنَا وَلاَ
عَمَّارٌ بِشَىْءٍ وَجَاءَ سَعْدٌ بِرَجُلَيْنِ .
আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন সাদ (রা.), আম্মার (রা.) ও আমি গনীমাতের মালের ব্যাপারে অংশীদার হই (এই মর্মে যে,
আমরা যা পাবো তা তিনজনে ভাগ করে নিবো)। আম্মার ও আমি কিছুই আনতে
পারিনি। অবশ্য সাদ (রা.) দু’জন যুদ্ধবন্দী নিয়ে আসেন।[7]
এই হাদিসটি হলো
মুদারাবার দলিল। ইসলামের দৃষ্টিতে ’একজনের অর্থ আরেকজনের শ্রম’ ভিত্তিতে ব্যবসা করা জায়েজ আছে। ফিকহের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ’মুদারাবা’। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায় লাভ হলে উভয়ে চুক্তি
অনুযায়ী লাভের অংশ ভাগাভাগি করে নিবে।[8]
বর্তমান প্রেক্ষিত: আমরা
মুদারাবা মাধ্যমে আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারি। যেমন টাকা প্রদানকারী এ কথা বলল যে, লাভের ৫০/৬০/৭০ পার্সেন্ট আমাকে দিতে হবে। এতে উভয় চুক্তিকারী সম্মত হল। তাহলে চুক্তিকৃত মুনাফা অর্থদাতা পাবে আর বাকিটা
পাবে মুদারিব (শ্রমদাতা)। এ পদ্ধতিতে ব্যবসা করায় ইসলামে কোনো বাধা
নেই।
(গ)
অনাবাদি জমি চাষাবাদ করার ব্যবস্থা:
« من كا نت له أرض فليزر عها فان لم يزرعها فليمنحها أخاه» অর্থাৎ যার জমি রয়েছে সে তা হয় নিজে চাষ করবে, অন্যথায়
তার কোন ভাইয়ের দ্বারা চাষ করাবে অথবা তাকে চাষ করতে দেবে।[9]
মহানবি (ﷺ)
পতিত জমি কেবলমাত্র চাষ করতেই বলেননি বরং উৎসাহ দেয়ার জন্য পতিত জমিতে চাষকারীর মালিকানারও
স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন,
عَنْ جَابِرٍ أَنَّ
النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَنْ
أَحْيَا أَرْضًا مَيْتَةً فَهِيَ لَهُ
যে লোক অনাবাদী জমি
আবাদ ও চাষযোগ্য করে নেবে সে তার মালিক হবে।[10]
বর্তমান প্রেক্ষিত: বর্তমানে দেশে অনাবাদি (পতিত) জমির পরিমাণ ৪৩ লাখ ৯ হাজার ৩৩১ হেক্টর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ‘রিপোর্ট অন
এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল স্ট্যাটিসটিকস ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে
এসব তথ্য পাওয়া গেছে।[11]
সুতরাং নবিজির শিক্ষা অনুসারে পতিত জমি চাষাবাদ করলে, আর্থিক আত্মনির্ভরতা অর্জিত
হবে, যা সহজেই অনুমেয়।
(ঘ)
শ্রমের বিনিময়ে উৎপাদিত ফসলের অংশীদার বানানো:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَتْ
الأَنْصَارُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم اقْسِمْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ
إِخْوَانِنَا النَّخِيلَ قَالَ لاَ فَقَالُوا تَكْفُونَا الْمَئُونَةَ
وَنَشْرَكْكُمْ فِي الثَّمَرَةِ قَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا
হজরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, আনসার সাহাবিগণ নবি (ﷺ) নিকট এ বলে আবেদন পেশ করলেন, আমাদের খেজুর
বাগানগুলো মুহাজির ভাই ও আমাদের মাঝে সমানভাবে বণ্টন করে দিন। নবি (ﷺ) তাদের এ প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন। তাই আনসারগণ মুহাজিরগণকে বললেন,
তোমরা শুধু আমাদেরকে চাষাবাদের কাজে সাহায্য করবে আর আমরা তোমাদেরকে
ফসলের ভাগ দিব। অবশেষে তারা সকলেই এই প্রস্তাবে সম্মত
হলেন।[12]
বর্তমান প্রেক্ষাপট:
আমরা জমির মালিকরা যদি মিসকীনদেরকে শ্রমের বিনিময়ে উৎপাদিত
ফসলের মালিক বানাই, তাহলে তারাই অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরতা হয়ে
উঠবে।
(ঙ) ভিক্ষাবৃত্তি
উচ্ছেদ ও কর্মমুখী হওয়া: যেমন,
«من سال من غير فقر فكانما يأ كل الجمر
» অর্থ: যে ব্যক্তি অভাব ব্যতিত ভিক্ষা করে সে যেন (জাহান্নামের) পাথর ভক্ষণ করে। [13]
পরনির্ভরশীলতার সর্বশেষ পর্যায় হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি। রাসূল (ﷺ) ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করে স্বনির্ভরতা অর্জনের বাস্তব শিক্ষা প্রদান করেছেন। নিম্নের
ঘটনায় যার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، أَنَّ
رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ يَسْأَلُهُ، فَقَالَ : " لَكَ فِي بَيْتِكَ شَيْءٌ ؟ " قَالَ
: بَلَى، حِلْسٌ نَلْبَسُ بَعْضَهُ وَنَبْسُطُ بَعْضَهُ، وَقَدَحٌ نَشْرَبُ فِيهِ
الْمَاءَ. قَالَ : " ائْتِنِي بِهِمَا ". قَالَ : فَأَتَاهُ بِهِمَا،
فَأَخَذَهُمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ، ثُمَّ
قَالَ : " مَنْ يَشْتَرِي هَذَيْنِ ؟ " فَقَالَ رَجُلٌ : أَنَا
آخُذُهُمَا بِدِرْهَمٍ. قَالَ : --------"
هَذَا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تَجِيءَ وَالْمَسْأَلَةُ نُكْتَةٌ فِي وَجْهِكَ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ، إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لَا تَصْلُحُ إِلَّا لِذِي فَقْرٍ
مُدْقِعٍ ، أَوْ لِذِي غُرْمٍ مُفْظِعٍ ، أَوْ دَمٍ مُوجِعٍ ".
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। এক আনসারী ব্যক্তি নবি (ﷺ)
এর নিকট উপস্থিত হয়ে কিছু চাইলে তিনি বলেন তোমার ঘরে কি কিছু আছে? সে বললো, হ্যাঁ,
একটি কম্বল আছে আর একটি পানপাত্র আছে। নবি (ﷺ) বলেন, জিনিস দু’টি আমার নিকট নিয়ে এসো। রাবি বলেন, সে এগুলো তাঁর নিকট নিয়ে আসলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
জিনিস দু’টি নিজ হাতে নিয়ে বলেন, এই জিনিস দু’টি কে কিনবে?
----------রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
সেটি নিয়ে তাতে নিজ হাতে কাঠের হাতল লাগিয়ে দিলেন এবং বললেন, যাও, জঙ্গল থেকে কাঠ
সংগ্রহ করো। আমি যেন পনের দিনের মধ্যে তোমাকে না দেখি। সে কাঠ সংগ্রহ করে বিক্রয়
করতে লাগলো।
অতঃপর সে যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট আসলো, তখন তার নিকট দশ দিরহাম
সঞ্চিত হয়েছে--------।[14]
বর্তমান প্রেক্ষিত: মহানবি (ﷺ) যেমনিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ
ও নিরুৎসাহিত করণের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি উচ্ছেদ করেছেন। আমরাও যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে এরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করি,
ইনশাল্লাহ স্বনির্ভরতা বেড়ে যাবে।
(চ) সুদের মূলোৎপাটন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
یَمۡحَقُ
اللّٰہُ الرِّبٰوا وَیُرۡبِی الصَّدَقٰتٍِ অর্থ: আল্লাহ তাআলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান
খয়রাতকে বর্ধিত করেন।[15]
لَعَنَ رَسولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه
وسلَّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقالَ: هُمْ سَوَاءٌ. অর্থ: সুদখোর সুদ দাতা এর লেখক
ও সাক্ষী অভিশপ্ত। তারা সকলেই এক পর্যায়ভুক্ত।[16]
বিদায় হজে ভাষণে মহানবি (ﷺ)
বলেন,
وإن ربا الجاهلية موضوع ولكن لكم رؤوس أموالكم
لا تظلمون ولا تظلمون وقضى الله أنه لا ربا. وإن أول ربا أبدأ به عمي العباس بن
عبد المطلب.
অর্থ: নিশ্চয়ই সব ধরনের সুদ রহিত করা হলো। তবে তোমাদের মূলধন বহাল থাকবে। মহান আল্লাহ ফয়সালা দিয়েছেন যে আর কোনো সুদ নয়। আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিবের সব সুদ রহিত করা হলো।[17]
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস থেকে জানতে পারলাম, সুদ একটি অভিশাপ যা কখনও কল্যাণ বয়ে আনবে
না। বিভিন্ন প্রয়োজনে সুদি লোন নিয়ে মানুষ
একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান প্রেক্ষিত: প্রথম কথা হলো, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ছাড়া সুদ একেবারে উচ্ছেদ করা অসম্ভব। তবে আমরা যারা
ব্যক্তিগতভাবে সুদের লেনদেন করি, যদি রাসূল (ﷺ)-এর দেখানো সেই
পথে আমল করি অর্থাৎ শুধু মূলধন নিবো। এত
গরিবের অনেকটা আর্থিক স্বচ্ছলতা আসতো।
(ছ) দুর্নীতি দমন: হযরত জাবির রা.
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ
করেছেন-
إِنّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنّةَ
لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْت، النّارُ أَوْلَى بِهِ.
এমন
শরীর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না,
যা
হারাম দ্বারা বর্ধিত। জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান।[18]
বর্তমান প্রেক্ষিত: বার্লিন ভিত্তিক
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি তাদের বার্ষিক
দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই)–২০২১ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম।[19]
দেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ও আর্থিক স্বনির্ভরতা
গড়ে তুলতে সরকারকে অবশ্যই দুর্নীতি দমন করতে হবে।
(জ)
সুদের বিকল্প কর্জে হাসানাহ্ তথা সুদ মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা: যদিও
বিরাজমান পুঁজিবাদ ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা সুদমুক্ত ঋণদানকে বোকামী মনে করে।
মহান আল্লাহ সমাজের ধনীদের ঋণদানে উৎসাহিত
করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَقۡرِضُواْ
ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗاۚ অর্থ: তোমরা আল্লাহকে কর্জে হাসানাহ্ (উত্তম ঋণ) দাও।[20]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، عَنِ النَّبِيِّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : كُلُّ قَرْضٍ صَدَقَةٌ
আবদুল্লাহ
ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ঋণই সদকাস্বরূপ’ ।[21]
عَنْ
أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عنهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَعلى آلِهِ وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ: «رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عَلَى بَابِ
الْجَنَّةِ مَكْتُوباً: الصَّدَقَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، وَالْقَرْضُ
بِثَمَانِيَةَ عَشَرَ، فَقُلْتُ: يَا جِبْرِيلُ، مَا بَالُ الْقَرْضِ أَفْضَلُ مِن
الصَّدَقَةِ؟
قَالَ:
لِأَنَّ السَّائِلَ يَسْأَلُ وَعِنْدَهُ، وَالْمُسْتَقْرِضُ لَا يَسْتَقْرِضُ
إِلَّا مِنْ حَاجَةٍ».
হজরত
আনাস ইবন মালিক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মিরাজের রাতে আমি জান্নাতের একটি দরজার উপর
লেখা দেখলাম, সদকায় ১০ গুণ সওয়াব এবং কর্জে (ঋণে) ১৮ গুণ। আমি
বললাম, হে জিবরাঈল! কর্জ সদকার চেয়ে উত্তম কেন? তিনি বললেন, কারণ ভিক্ষুক তার কাছে (সম্পদ) থাকতেও
চায়। আর কর্জদার প্রয়োজন ছাড়া কর্জ চায় না। [22]
বর্তমান প্রেক্ষিত: সুদমুক্ত ঋণ পেলে মুসলিম তো
দূরের কথা কোনো অমুসলিম ব্যক্তিও সুদযুক্ত ঋণ নিবে না। তাই দরিদ্র ও পরনির্ভরশীল মানুষকে স্বনির্ভরতা করে তোলার
জন্য কর্জে হাসানাহ্ বা সুদ মুক্ত ঋণ দান একটি অতি উত্তম পন্থা।
প্রস্তাবনা: ইসলামী ব্যাংকগুলোকে এভাবে একটি প্রস্তাব বা পরামর্শ দেয়া যেতে পারে যে,
তারা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতিক্রমে ‘কর্জে হাসানা’ নামে একটি ফান্ড বা তহবিল গঠন করতে
পারে।
প্রতি বছর ব্যাংকের লাভের একটি অংশ এবং
ব্যাংকের মালিক বা শেয়ার হোল্ডার এবং ব্যাংকের বড় বড় গ্রাহকদের এ ফান্ডে আর্থিক
সাহায্য করার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া যেতে পারে। কেননা, কর্জে হাসানা মূলত সমাজের ধনী লোকদের উপরই বর্তায়। তা ছাড়া জাকাতের টাকাও
এর উৎস হতে পারে। কারণ জাকাতের আটটি খাতের মধ্যে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণভার মুক্ত
করার একটি খাত রয়েছে।
(ঝ) অপচয়-অপব্যয় না করা: আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ
إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ এবং আহার করবে ও পান করবে। কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ
করেন না।[23]
রাসুল (ﷺ) বলেছেন,
إِنّ اللهَ كَرِهَ لَكُمْ ثَلاَثًا قِيلَ
وَقَالَ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ وَكَثْرَةَ السّؤَالِ আল্লাহ তোমাদের জন্যে তিনটি
বিষয়কে অপছন্দ করেন- ১. অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করা ২. সম্পদ নষ্ট করা,
৩. অধিক প্রশ্ন করা। [24]
বর্তমান প্রেক্ষিত: আজ যে অপচয়-অপব্যয়কারী বিলাসী, কাল সে ভিখারী ও পরমুখাপেক্ষী। এটা যেমন ব্যক্তি জীবনে সত্য, রাষ্ট্রীয় জীবনেও সত্য। তাই তো কবি বলেছেন,
“যে
জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি।
আশুগৃহে
তার দেখিবে না আর নিশীথে প্রদীপ বাতি।”
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)
বলছে, বছরে প্রায় ১৩০ কোটি টন খাদ্য অপচয় হয়। অপচয় হওয়া এ বিপুল পরিমাণ খাদ্যের
এক-চতুর্থাংশও যদি বাঁচানো যেত, তাহলে তা দিয়ে ৮৭ কোটি
মানুষের খাদ্যের চাহিদা মিটত।[25]
সাম্প্রতিক প্রথম আলোর একটি হেড লাইন- ‘সিস্টেম
লসে বছরে অপচয় ৩,৫০০ কোটি টাকা’ যা
দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ে।[26] সুতরাং স্বনির্ভরতা অর্জনে অপচয় বড়
বাঁধা।
(ঞ)
আয়-ব্যয়ের সমন্বয় অর্থাৎ আয় বুঝে ব্যয় করা:
وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَنفَقُواْ لَمۡ
يُسۡرِفُواْ وَلَمۡ يَقۡتُرُواْ وَكَانَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ قَوَامٗا আর যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না,
বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়।[27]
অপরিমিত সম্পদ ব্যয় পরনির্ভরশীলতার অন্যতম প্রধান কারণ। । রাসূল
(ﷺ)
তাই সম্পদ ব্যয়ে মিতাচারী হবার নির্দেশ দিয়েছেন।
عَنْ
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم:
مَا عَالَ مَنِ اقْتَصَدَ.
অর্থ: যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না।[28]
বর্তমান প্রেক্ষিত: সমাজে অনেক লোক আছে যারা
আয়-ব্যয়ের সমন্বয় সাধন করে না বিধায়, পরর্ভিরশীলতা
থাকতে হয়। অতএব বলা যায় স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য অপব্যয় না করা ও মিতব্যয়ী হওয়া অত্যন্ত
প্রয়োজন।
(ত) উৎপাদন ক্ষেত্রে মুনাফায় শ্রমিকের
অংশ দান: রাসূল (ﷺ) ঘোষণা করেছেন;
أَعْطُوا الْعَامِلَ مِنْ عَمَلِهِ فَإِنَّ
عَامِلَ اللَّهِ لَا يَخِيبُ
শ্রমিককে তাদের উৎপাদিত পণ্য থেকে অংশ প্রদান কর। কারণ আল্লাহর
বান্দাহ এ শ্রমিকদেরকে কিছুতেই বঞ্চিত করা যাবে না। [29]
বর্তমান প্রেক্ষিত: রাসূল (ﷺ) শ্রমজীবি মানুষের অর্থনৈতিক দৈন্যতা
দূরকরণ ও স্বনির্ভরতা করে তোলার জন্য মুনাফায় শ্রমিকের অধিকারের ঘোষাণা দিয়ে এক যুগান্তকারী
ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তা যদি আজ মিল-কারখানা-ইন্ডাস্ট্রিজ –এর মালিকরা মানত, তাহলে পরনির্ভরতা বহু অংশে হ্রাস পেত।
(থ) মাদকদ্রব্য, জুয়া-ক্যাসিনো নিষিদ্ধকরণ: আল্লাহ তাআলা
বলেন,
إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ
وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ
মদ, জুয়া, মূর্তিপুজার বেদী
ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তুত, শয়তানের কাজ। সুতরাং
তোমরা তা বর্জন কর।[30]
عَنْ
أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ أَوْصَانِي خَلِيلِي ـ صلى الله عليه وسلم ـ " لاَ
تَشْرَبِ الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ " .
আবু দারদা (রা.), থেকে বর্ণিত। আমার বন্ধু (ﷺ) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন, শরাব পান করো না, কারণ
তা সমস্ত পাপাচারের জন্মদাতা।[31]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, مَنْ
لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِى لَحْمِ خِنْزِيرٍ
وَدَمِهِ ‘যে ব্যক্তি নারদশীর (পাশা) খেলল, সে যেন শূকরের গোশত
ও রক্তের মধ্যে নিজের হাত ডুবালো’।[32]
বর্তমান প্রেক্ষিত: মদ/নেশাখোর ব্যক্তির নেশার টাকা জোগাতে
নিজের সহায়-সম্পদ বিক্রি করেও ক্ষান্ত হয়না, নিজের আপন
সন্তান পর্যন্ত বিক্রি করছে। আজকাল আরও শোনা যায়, ভোগবাদী মানুষের সুবিধার্থে তারকা
হোটেলের নাকি অভাব নেই দেশে। সেসব হোটেলে রয়েছে মদের ছড়াছড়ি।
এছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব, আসর, বার কিংবা
হোটেলের নির্দিষ্ট কাউন্টারে সহজেই মদ পাওয়া যায়।
ডিজিটাল
পদ্ধতির অপব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড ফোন, টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপের মাধ্যমে জমজমাট হয়ে উঠেছে জুয়ার আসর। তথ্য প্রযুক্তির যুগে বদলেছে জুয়া খেলার
ধরণ। জুয়া শব্দটিকে অর্থবহ করে কিছু নতুন শব্দ যেমন - ক্যাসিনো, অনলাইন বাজি, বেটউইনার ইত্যাদি।
ক্যাসিনো কি: ক্যাসিনো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলার একটি নির্দিষ্ট স্থান যাকে
বাংলায় জুয়ার আড্ডা বা আসর বলা যায়। কিছু কিছু ক্যাসিনোয় সরাসরি বিনোদন প্রদান
যেমন স্ট্যান্ড আপ কমেডি, কনসার্ট, খেলাধুলা ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে।
প্রিয়
সচেতন দেশবাসী! নেশাখোর
আর জুয়াখোর ব্যক্তি কখনও আর্থিক স্বনির্ভরতা
অর্জন করতে পারবে না । তাই আমাদের
আপনজনকে তা থেকে ফিরাবো এবং মাননীয় সরকার বাহাদুরকে সেগুলো অবশ্যই দ্রুত বন্ধ করার কার্যকরী ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করবো।
(দ)
সিন্ডিকেট বা মূল্যবৃদ্ধির জন্য
খাদ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হারাম:
عَنْ مَعْمَرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ
رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ
" لاَ يَحْتَكِرُ إِلاَّ خَاطِئٌ " .
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন,
পাপাচারী লোক ব্যতিত কেউ গুদামজাত করে না।[33]
নোট: স্বাভাবিক অবস্থায় খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত নিষেধ নয়, দুর্ভিক্ষ
ও মূল্যবৃদ্ধির জন্য খাদ্যদ্রব্যের
কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হারাম।
বর্তমান প্রেক্ষিত: স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে আজ বড় বাঁধা হলো দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। এর
পিছনে যৌক্তিক কারণ আছে। তবে ব্যবসায়িক পণ্য বিক্রি না করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি
করে বর্ধিত মুনাফা আদায়ের প্রচেষ্টাই
দায়ি। তাই সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
(ধ)
ধনীদের জাকাত প্রদান,
জাকাত ভিক্ষা নয়; গরীবের অধিকার :
জাকাত ইসলামের অন্যতম ফরজ রুকুন। এটা অস্বীকারকারী কাফের
বলে গণ্য। আর এর হকদার কে কে তা সুবিন্যস্ত আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন। যেমন,
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلْفُقَرَآءِ وَ
الْمَسٰكِیْنِ وَ الْعٰمِلِیْنَ عَلَیْهَا وَ الْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَ فِی الرِّقَابِ
وَ الْغٰرِمِیْنَ وَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ ؕ فَرِیْضَةً
مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌ حَكِیْمٌ۶۰
অর্থ জাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও জাকাতের কাজে নিযুক্ত
ব্যক্তিদের জন্য, যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্য,
দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এ আল্লাহর বিধান।[34]
مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا، فَلَمْ يُؤَدِّ
زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ
زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ - يَعْنِي
بِشِدْقَيْهِ - ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ
অর্থ: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যাকে আল্লাহ তাআলা সম্পদ দান করেছেন,
কিন্তু সে এ জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন
তার সম্পদকে টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে -----, সাপটি তার মুখের দুই পার্শ্ব কামড় দিয়ে বলতে থাকবে, আমি
তোমার সম্পদ আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ।[35]
বর্তমান প্রেক্ষিত: ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ,
দারিদ্র্য দূরীকরণ, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ
তৈরি, অর্থনৈতিক ভারসাম্য, কর্মসংস্থান
সৃষ্টি, ঋণমুক্তি জাকাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। একটি পরিসংখ্যান
তুলে ধরলে তা সহজে বুঝে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ হিসাব
অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা
দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৪৫৭জন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর বাহিরে আরও অনেক কোটিপতি রয়েছে।
২০২২ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার
আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৮৪১জন। ---- এই সময়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা বেড়ে ০১ হাজার
৮০৫টিতে দাঁড়িয়েছে।[36]
আমরা জানি, ৭.৫ ভরি সোনা অথবা ৫২.৫ ভরি
রূপা বা এর সমমূল্য নগদ টাকা-পয়সা, ব্যবসায়ী
পণ্য থাকলে উক্ত ব্যক্তির উপর জাকাত ফরজ হয়।
তাই আজকের বাজারে (০২-১০-২২ ইংরেজি)
সাহেবে নিসাব পরিমাণ হলো, রূপার ভরি হলো,
১৫১৬ বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত।[37]
১৫১৬×৫২.৫= ৭৯৫৯০ টাকা অর্থাৎ কোন ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে যদি
অতিরিক্ত সাড়ে ৫২ তোলা রুপার পরিমাণ টাকা বা এত টাকার
সম্পদ থাকে তাহলে তিনি সাহেবে নিসাব তার জন্য জাকাত প্রদান করা ফরজ।[38]
প্রিয় পাঠক! একটু চিন্তা করুন। কোন ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনীয় খরচ বাদ
দিয়ে ৭৯, ৫৯০ টাকা এক বছর থাকলে জাকাত ফরজ হয়। এই সমাজে কত
মানুষ এ সমপরিমাণ টাকার মালিক।
শতকরা ২.৫ (আড়াই টাকা), এক হাজারে ২৫
টাকা, এক লাখে ২৫০০ টাকা, এক কোটিতে
আড়াই লাখ টাকা জাকাত দিতে হবে।
সারকথা হলো, বাংলাদেশের সমস্ত সাহেবে নিসাব ব্যক্তিবর্গ
যদি সঠিকভাবে জাকাত আদায় করতো, তাহলে প্রায় ২ কোটি মানুষের
দারিদ্র্য দূরীকরণ হয়ে আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতো। এভাবে পাঁচ বছর সঠিকভাবে
পরিকল্পনা অনুযায়ী জাকাত দিলে এ দেশে আর কোন ভিক্ষুক/গরিব
খুঁজে পাওয়া যেত না।
একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর: আপনি যে ধনীদের বা কোটিপতিদের তালিকা দিয়েছেন। এর মধ্যে ননমুসলিমও রয়েছে। এর জবাব হলো জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ (আগস্ট) অনুযায়ী ৯১.৪% মুসলিম।[39]
সুতরাং জনসংখ্যানুপাতে বলা যায়,
অধিকাংশই ধনী মুসলিম।
(ণ)
নফল দান-সদকা: এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
وَفِيٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ حَقّٞ لِّلسَّآئِلِ وَٱلۡمَحۡرُومِ অর্থাৎ তোমাদের সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিত জনের অধিকার রয়েছে।[40]
হাদিস
নং-০১
عن
عَدِي بن حاتم رضي الله عنه قال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: «اتَّقُوا
النَّار ولو بِشِقِّ تمرة
অর্থ:
খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে
থাকার চেষ্টা কর।[41]
হাদিস
নং-০২
وَعَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّخِيُّ قَرِيبٌ مِنَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ
الْجَنَّةِ قَرِيبٌ مِنَ النَّاسِ بَعِيدٌ مِنَ النَّارِ. وَالْبَخِيلُ بَعِيدٌ
مِنَ اللَّهِ بَعِيدٌ مِنَ الْجَنَّةِ بَعِيدٌ مِنَ النَّاسِ قَرِيبٌ مِنَ
النَّارِ. ---
অর্থ:
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)
বলেছেন, দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী,
জান্নাতের নিকটবর্তী,
জনগণের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী।
কিন্তু কৃপণ ব্যক্তি,
সে আল্লাহর থেকে দূরে, ----- জাহান্নামের নিকটবর্তী। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার
নিকট আবিদ কৃপণ অপেক্ষা জাহিল দাতা অধিক প্রিয়।[42]
হাদিস নং-০৩
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ، اللَّهِ قَالَ جَاءَ
نَاسٌ مِنَ الأَعْرَابِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَيْهِمُ
الصُّوفُ فَرَأَى سُوءَ حَالِهِمْ قَدْ أَصَابَتْهُمْ حَاجَةٌ فَحَثَّ النَّاسَ
عَلَى الصَّدَقَةِ فَأَبْطَئُوا عَنْهُ حَتَّى رُئِيَ ذَلِكَ فِي وَجْهِهِ - قَالَ
- ثُمَّ إِنَّ رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ جَاءَ بِصُرَّةٍ مِنْ وَرِقٍ ثُمَّ جَاءَ
آخَرُ ثُمَّ تَتَابَعُوا حَتَّى عُرِفَ السُّرُورُ فِي وَجْهِهِ -----
অর্থ: জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কয়েকজন বেদুঈন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এল।
তাদের পরিধানে ছিল পশমী বস্ত্র। তিনি তাদের দুরাবস্থা দেখলেন। তারা ছিল অভাবে
পতিত। তখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) লোকদের দান-খয়রাত করার জন্য
উৎসাহিত করলেন। লোকেরা সাদাকা দিতে বিলম্ব করছিল। এমনকি এর প্রতিক্রিয়া তাঁর
চেহারায় প্রতিভাত হল।
রাবি বলেন, এরপর একজন আনসারি ব্যক্তি একটি রূপার
(টাকার) থলে নিয়ে এলেন। এরপর আরেকজন এলেন। এরপর একের পর এক আসতে লাগলেন, অবশেষে তার চেহারায় খুশীর চিহ্ন ফুটে উঠল।--------।[43]
নোট: হাদিসটির অংশ বিশেষ উল্লেখ করা হয়েছে।
এভাবে রাসূল (ﷺ)
এর সাহাবিরা দানশীলতার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার দারিদ্র্য দূরীকরণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
বর্তমান প্রেক্ষিত: মদীনার আনসারগণ কর্তৃক সর্বস্বত্যাগী
মুহাজিরগণকে নিজেদের জায়গা, জমি, বাগিচা, ঘর ও অর্থ সম্পদ দান করার শিক্ষা যদি আমরা বাস্তবায়ন করি। তাহলে দানশীলতার মাধ্যমে পরনির্ভরশীল,
নিঃস্ব ও অভাবী মানুষ স্বনির্ভরতা অর্জনের
অবলম্বন পেতে পারে।
(ট)
বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা: মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর প্রথম পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)
এর ঘরে বা উম্মুল মুমিনিনদের কারও কামরায়
মুসলমানদের বাইতুল মাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর বাইতুল মাল মসজিদে স্থানান্তর করা হয়। আবু বকর রা.
এর খেলাফতের জামানায় বাইতুল মালের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণ করা হয়। যেমন,
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ ـ رضى الله عنه
ـ قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الْعَصْرَ، فَلَمَّا
سَلَّمَ قَامَ سَرِيعًا دَخَلَ عَلَى بَعْضِ نِسَائِهِ، ثُمَّ خَرَجَ ----مِنْ تَعَجُّبِهِمْ لِسُرْعَتِهِ فَقَالَ " ذَكَرْتُ
وَأَنَا فِي الصَّلاَةِ تِبْرًا عِنْدَنَا، فَكَرِهْتُ أَنْ يُمْسِيَ أَوْ يَبِيتَ
عِنْدَنَا فَأَمَرْتُ بِقِسْمَتِهِ ".
উকবা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি
মদিনায় রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর পেছনে আসরের সালাত আদায় করলাম। তিনি সালাম
ফেরালেন। সালাম শেষে তিনি দ্রুতবেগে উঠে মুসল্লিদের কাঁধ ডিঙিয়ে তাঁর এক স্ত্রীর
কামরায় চলে যান। সাহাবিগণ তাঁর দ্রুততা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন। অনন্তর তিনি
সাহাবিদের উদ্দেশে বেরিয়ে আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর দ্রুততা দেখে সাহাবিগণ বিস্মিত হয়েছেন। তখন তিনি বলেন,
আমার স্মরণে আসে যে, আমার কাছে একটি স্বর্ণের
পাত রয়ে গিয়েছিলো। ---তাই আমি তা বন্টন করে দেয়ার নির্দেশ
দিয়ে এলাম।[44]
বর্তমান প্রেক্ষিত: আমরা
জানি বায়তুল মালের উৎস হলো, ফাই, জিযয়া, খারাজ, গনিমতের এক-পঞ্চমাংশ, গুপ্তধনের এক পঞ্চমাংশ। মুসলিম শাসক গোষ্ঠী যদি এটা বাস্তবায়ন করতো, বিশেষ করে আমাদেরে দেশে রাষ্ট্রের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার পাশাপাশি জনকল্যাণ এবং মৌলিক
চাহিদা পূরণ সংক্রান্ত কাজ করত। যা দারিদ্র বিমোচন করে স্বনির্ভরতা অর্জনে সুদূর প্রসারী
ভূমিকা রাখতো।
(ঠ)
ব্যবসা করা: আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاَحَلَّ
اللّٰہُ الۡبَیۡعَ وَحَرَّمَ الرِّبٰوا অর্থ: আল্লাহ তাআলা ব্যবসা বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।[45]
এ সম্পর্কে হাদিস
শরিফে এসেছে-
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)
বলেন,اَلتَّاجِرُ الصَّدُوقُ الأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ
وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ، অর্থ: সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী (কিয়ামতের দিন) নবি, ছিদ্দিক
ও শহিদদের সাথে থাকবে।[46]
عَرَضَ
لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم جَلَبٌ فَأَعْطَانِى دِيْنَاراً وَقَالَ أَىْ عُرْوَةُ
ائْتِ الْجَلَبَ فَاشْتَرِ لَنَا شَاةً.
فَأَتَيْتُ الْجَلَبَ ----------ا
أَوْ قَالَ أَقُوْدُهُمَا فَلَقِيَنِىْ رَجُلٌ فَسَاوَمَنِىْ فَأَبِيْعُهُ شَاةً
بِدِيْنَارٍ فَجِئْتُ بِالدِّيْنَارِ وَجِئْتُ بِالشَّاةِ فَقُلْتُ----. قَالَ
وَصَنَعْتَ كَيْفَ. قَالَ فَحَدَّثْتُهُ الْحَدِيْثَ فَقَالَ
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُ فِىْ صَفْقَةِ يَمِيْنِهِ-
অর্থ: উরওয়া বিন আবিল জাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি কারিম (ﷺ)-এর
নিকট পশুর একটি চালানের সংবাদ আসল। তিনি আমাকে একটি দীনার দিয়ে বললেন, উরওয়া! তুমি চালানটির নিকট যাও এবং আমাদের
জন্য একটি বকরী ক্রয় করে নিয়ে আস। তখন আমি চালানটির কাছে গেলাম এবং চালানের
মালিকের সাথে দরদাম করে এক দীনার দিয়ে দুইটি বকরী ক্রয় করলাম। বকরী দু’টি নিয়ে আসার পথে এক লোকের সাথে আমার সাক্ষাৎ হ’ল।
লোকটি বকরী ক্রয় করার জন্য আমার সাথে দরদাম করল। তখন আমি তার নিকট এক দীনারের
বিনিময়ে একটি বকরী বিক্রয় করলাম এবং একটি বকরী ও এক দীনার নিয়ে চলে এলাম। এসে
বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)!
এই হচ্ছে আপনার দীনার এবং এই হচ্ছে আপনার বকরী -------।[47]
বর্তমান প্রেক্ষিত: কাতাদা (রহ.) বলেন, اَلتِّجَارَةُ
رِزْقٌ مِنْ رِزْقِ اللهِ حَلاَلٌ مِنْ حَلاَلِ اللهِ لِمَنْ طَلَبَهَا بِصِدْقِهَا وَبِرِّهَا ব্যবসা আল্লাহর রিযিকের মধ্যে একটি রিযিক এবং আল্লাহর
হালালকৃত বস্তুগুলির মধ্যে একটি হালাল ঐ ব্যক্তির জন্য, যে সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে ব্যবসা করে।[48]
সুতরাং
আমরাও ন্যায়পরায়ণতার সাথে ব্যবসা করে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারি।
(ড) ইয়াতিম বাচ্চাদের
বালেগ হওয়া পর্যন্ত সম্পদ ন্যস্ত না করা: এ
সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ لَا تُؤْتُوا السُّفَهَآءَ اَمْوَالَكُمُ
الَّتِیْ جَعَلَ اللهُ لَكُمْ قِیٰ-- لًا
مَّعْرُوْفًا، وَ ابْتَلُوا الْیَتٰمٰی حَتّٰۤی اِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ ۚ
فَاِنْ اٰنَسْتُمْ مِّنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوْۤا اِلَیْهِمْ اَمْوَالَهُمْ.
তোমরা
নির্বোধদের হাতে তোমাদের সম্পদ অর্পন করো না, -----। আর তোমরা এতিমদের পরীক্ষা করো, অবশেষে তারা যখন বিয়ের বয়সে পৌঁছে,
তখন যদি তাদের মাঝে ভালো-মন্দ বিচারের জ্ঞান উপলব্ধি কর তাহলে তাদের
সম্পদ তাদের হাতে অর্পণ করো।[49]
وَأنا وكافِلُ اليَتِيمِ في الجَنَّةِ هَكَذا
وأَشارَ بالسَّبَّابَةِ والوُسْطَى، وفَرَّجَ بيْنَهُما شيئًا
সাহল
বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)
ইরশাদ করেছেন, আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব।[50]
বর্তমান প্রেক্ষিত: এতিম
শিশুরা না বুঝে কিংবা দুষ্ট কারও প্ররোচনায় পড়ে, যাতে তাদের
সম্পদ হারিয়ে না ফেলে সেজন্যে কত দৃঢ় চমৎকার নির্দেশনা! বুঝ-বুদ্ধির অভাবে অযথা ও
অপ্রয়োজনীয় খরচ তারা করতেই পারে। পরিণতিতে একসময় প্রয়োজনীয় খরচ করার মতো টাকা নাও
থাকতে পারে। তাই ইয়াতিমকে যথাযথ লালন-পালনের মাধ্যমে
আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলা যায়।
(ঢ) নিজ হাতে কামাই-উপার্জন করা:
হাদিস
নং-০১
ما
أكلَ أحدٌ طعامًا قطُّ ، خيرًا من أنْ يأكلَ من عمَلِ يدِهِ وإنَّ نبيَّ اللهِ
داودَ كان يأكلُ من عمَلِ يدِهِ
অর্থ: কারও জন্য নিজ হাতের উপার্জন অপেক্ষা
উত্তম খাবার নেই। আল্লাহর নবি দাউদ (আ.) নিজ হাতের কামাই খেতেন।[51]
হাদিস
নং-০২
ما بعثَ اللهُ نبيًا إلا ورعى الغنمَ قالوا : وأنت
يا رسولَ اللهِ ؟ قالَ : نعم كنتُ أرعاها على قراريطَ لأهلِ مكة অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা রা থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যত নবি রাসূল পাঠিয়েছেন সকলে
ছাগল চরিয়েছেন। সাহাবিগণ বললেন হে আল্লাহর রাসূল আপনিও কি চরিয়েছেন ? তখন রাসুল (ﷺ)
বললেন হ্যাঁ! আমি কয়েক কেরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরিয়েছি (শ্রম খেটেছি)।[52]
বর্তমান প্রেক্ষিত: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও
গৃহগণনা ২০২২ সালের প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে জনসংখ্যা এখন ১৬
কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬।[53]
দেশে
মোট ১২ লাখ ১৭ হাজার ৬২ জন সরকারি চাকরিজীবী রয়েছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার
মাত্র ০.৭৪% (প্রায়) মানুষ সরকারি চাকরি করেন।[54]
এ
তথ্য এই জন্য উল্লেখ করলাম যে, সবাই তো চাকরি করবে না/হবে না। বাকি শিক্ষিত কী করবে।
রাসুল (ﷺ)-এর শিক্ষানুযায়ী শিক্ষিত সমাজ লজ্জা ছেড়ে
নিজ হাতে কর্ম করত। তাহলে তারা আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জন করত।
(ন) পরিবার-পরিজনের জন্য বাৎসরিক খোরাকি/খরচের বন্দোবস্ত করা: যেমন
হাদিস শরিফে এসেছে-
عَنْ
عُمَرَ، قَالَ كَانَتْ أَمْوَالُ بَنِي النَّضِيرِ مِمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى
رَسُولِهِ مِمَّا لَمْ يُوجِفْ عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ بِخَيْلٍ وَلاَ رِكَابٍ
فَكَانَتْ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم خَاصَّةً فَكَانَ يُنْفِقُ عَلَى
أَهْلِهِ نَفَقَةَ سَنَةٍ وَمَا بَقِيَ يَجْعَلُهُ فِي الْكُرَاعِ وَالسِّلاَحِ
عُدَّةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ .
অর্থ:
হজরত ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনি নাযীর গোত্রের সম্পদ এমন সম্পদ যা আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
কে বিনাযুদ্ধে প্রদান করেন। ---- সুতরাং তিনি তা থেকে স্বীয় পরিবারের
এক বছরের ভরণ-পোষণে খরচ করতেন এবং অবিশষ্ট সম্পদ আল্লাহর
পথে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য ঘোড়া ও অস্ত্র ক্রয় খাতে রেখে দিতেন এবং আল্লাহর পথে
ব্যয় করতেন।[55]
বর্তমান প্রেক্ষিত: আমাদের কখনও কখনও মোটা অংকের টাকা হাতে আসে;
তখন অযথা ব্যয় করি। পরিবার-পরিজনের
জন্য বাৎসরিক খোরাকি ব্যবস্থা করলে; অপরের নিকট হাত পাতা
থেকে নিশ্চিন্ত ভাবে একটি বছর কাটানো যায়।
(প) ভবিষ্যত প্রজন্মকে
সচ্ছল ও স্বনির্ভরতা এর মাধ্যমে টেকসই
অর্থনীতি ব্যবস্থা করা : এ বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা হচ্ছে-
كانَ
النبيُّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ يَعُودُنِي وأَنَا مَرِيضٌ بمَكَّةَ، فَقُلتُ:
لي مَالٌ، أُوصِي بمَالِي كُلِّهِ؟ قالَ: لا قُلتُ: فَالشَّطْرِ؟ قالَ: لا قُلتُ:
فَالثُّلُثِ؟ قالَ: الثُّلُثُ والثُّلُثُ كَثِيرٌ، أنْ تَدَعَ ورَثَتَكَ
أغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِن أنْ تَدَعَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ في
أيْدِيهِمْ،
অর্থ: হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) রাসূল (ﷺ)-কে
জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূলুল্লাহ! আমি কী আমার সমস্ত সম্পদের ওসিয়ত করে যাবো?
রাসূল (ﷺ) বললেন,
না। ----------------- রাসূল (ﷺ)
বললেন, করা যায়,
তবে এক তৃতীয়াংশও অনেক। এরপর রাসূল (ﷺ)
বলেন, সন্তানদেরকে মালদার রেখে যাওয়া, অসহায় দরিদ্র অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম।
কারণ, দরিদ্র রেখে গেলে তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরবে আর ভিক্ষা চাইবে।[56]
বর্তমান প্রেক্ষিত: আধুনিক
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের চাহিদা ও
প্রয়োজন পূরণে সক্ষম দীর্ঘস্থায়ী ও পরিবেশবান্ধব অর্থনীতিকে টেকসই অর্থনীতি বলে। [57]
আধুনিক অর্থনীতিবিদ যা বলছেন, প্রিয় নবি (ﷺ) ১৪০০ বছর আগেই তা বলেছেন।
(ফ) শ্রমিকের ন্যায্য
অধিকার প্রতিষ্ঠা করা : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, أَعْطُوا
الْأَجِيْرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرْقُهُ، অর্থ: শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকাবার আগেই তার মজুরি দিয়ে দাও।[58]
ن
أبي هُرَيرةَ رَضِيَ اللهُ عنه، عن النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم قال: قال اللهُ: ثلاثةٌ أنا خَصمُهم يومَ القيامةِ: رجلٌ أعطى بي ثمَّ غدرَ، ورجلٌ باع حرًّا فأكَلَ ثمنَه، ورجُلٌ استأجرَ أجيرًا فاستوفى منهُ ولم يُعْطِه أجْرَه
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)
বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে।--------- তার মধ্যে একজন হল যে শ্রমিকের নিকট থেকে পূর্ণ শ্রম গ্রহণ করে, অথচ তার পূর্ণ মজুরী প্রদান করে না।[59]
বর্তমান প্রেক্ষিত: আমরা প্রায়ই মিডিয়ায় দেখি, বিভিন্ন গার্মেন্টস-কারখানা-চা শ্রমিকরা তারা তাদের বেতন-ভাতা, দাবি-দাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছে। সাম্প্রতিক দৈনিক যুগান্তর
একটি হেড লাইন দেখলাম- “শত বছরে চা শ্রমিকদের মজুরী মাত্র
১২০ টাকা”।[60]
সারা
দেশের ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে ৭টি ভ্যালীতে ১ লাখ ২৪ হাজার চা শ্রমিক কাজ
করছে। আকাশচুম্বি দ্রব্যমূল্যের গতিতে
১২০ টাকায় কি সংসার চলবে? যদিও পরে বর্ণিত করা হয়েছে ৫০টাকা অর্থাৎ ১৭০ টাকা। সুতরাং শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৩০০ টাকা উচিত।
নাহলে দারিদ্রতার হার কমবে না।
(ব) অর্থনৈতিক
কর্মকান্ডে নারীদের অংশ গ্রহণ: عَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ مَا اسْتَفَادَ الْمُؤْمِنُ بَعْدَ تَقْوَى اللهِ
خَيْرًا لَهُ مِنْ زَوْجَةٍ صَالِحَةٍ فِي نَفْسِهَا وَمَالِهِ
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ), কোনো মুমিনের জন্য আল্লাহর তাকওয়া
অর্জনের পর নেককার স্ত্রীর চেয়ে কল্যাণকর কিছু নেই। ------স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে এবং স্বামীর
সম্পদ সংরক্ষণ করে।[61]
সূরা
নিসার ৩৪ নং আয়াত ও এই হাদিস নারীদের অর্থনৈতিক অবদানের ইঙ্গিত করে।
বর্তমান প্রেক্ষিত: এ দেশের অর্ধেকের কিছু বেশি নারী। নারীদের
পর্দা মেনে চলে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি
ইসলাম অনুমোদন করে। তাছাড়া ঘরে বসে হাতের কাজ যেমন- নকশিকাঁথা বোনা, বাঁশ ও বেতের কাজ ছাড়াও নানা হস্তশিল্প, হাঁস-মুরগির
খামার, গাভী পালন, পাখি ও কবুতরের
খামার, কৃষি কাজ ইত্যাদি নানাভাবে সংসারের আর্থিক অবস্থা
পুনর্গঠনে সাহায্য করার অবকাশ রয়েছে।
(ভ) ভোগ মানসিকতার
নিয়ন্ত্রণ: নবি কারীম (ﷺ) বলেছেন,لَيْسَ
الغِنَى عَنْ كَثْرَةِ العَرَضِ، وَلَكِنَّ الغِنَى غِنَى النَّفْسِ، ‘সম্পদের
আধিক্য প্রকৃত ধনাঢ্যতা নয়; বরং প্রকৃত ধনাঢ্যতা হল অন্তরের ধনাঢ্যতা।[62]
বর্তমান প্রেক্ষিত: এক শ্রেণীর মানুষের অতিরিক্ত ভোগের ফলে অন্য অংশ পতিত হয় চরম দারিদ্রে।
তাই অতিরিক্ত ভোগ-বিলাসের স্পৃহা দমিত করতে না পারলে আর্থিক স্বনির্ভরতা
অর্জন সম্ভব নয়।
উপসংহার: মানবতার
সার্বিক কল্যাণেই মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর আগমন। সুতরাং অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনে তার দেখানো পথ
ছাড়া বিকল্প নেই। তাই তো পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
لَقَدْ
كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ অর্থ: নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।[63]
প্রবন্ধ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য
বিষয়
Ø তাখরিজ তথা
হাদিস শরিফের নাম্বার নির্ণয় করতে মাকতাবায়ে শামেলা সফটওয়্যারের সাহায্য নেওয়া
হয়েছে।
Ø বিদেশী শব্দের
ক্ষেত্রে মাওলানা শেখ মুহিউদ্দীনের রচিত “বাংলাভাষা ও বানানরীতি
“ কিতাবের অনুসরণ
করা হয়েছে।
[1]
সূরা ফুরকান-৭
[2] সূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ, ৮
জানুয়ারি ২০২২
[3] তাখরিজ: তিরমিজি-৬৯১; নাসায়ি-২১১২; আবু দাউদ-২৩৪০; দারেমি-১৬৯২ (শামেলা)
[4] সূরা আনফাল-৭৫
[5] তাফসিরে ইবনে কাসির, ৪র্থ খণ্ড, ৫৫১ পৃ. ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় সংস্করণ-মার্চ ২০১৪
[6] মুসলিম-৩৭৮০
[7] ইবনে মাজাহ-২২৮৮; নাসায়ি-৪৬৯৭
[8] আল মাউসুআতুল ফিকহিয়াহ বা
ফিকাহ বিশ্বকোষ-৮ খণ্ড, ১১৬ পৃষ্ঠা; বাংলাদেশ ইসলামিক ল রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার; জুন ২০১৬
[9] মুসলিম-১৫৩৬
[10] তিরমিজি-১৩০০
[11] অক্টোবর ২২, ২০২০ এগ্রিকেয়ার২৪.কম (অনলাইন)
[12] বুখারি-২৭১৯; ২৩২৫
[13] আহমদ-১৭৫০৮; ইবনে খুজাইমা-২৪৪৬
[14] আবু দাউদ ১৬৪১; ইবনে মাজাহ-২১৯৮
[15] সূরা বাকারা-২৭৬
[16] মুসলিম-১৫৯৮
[17] মুসলিম-১২১৮
[18] মুসনাদে আহমাদ-১৪৪৪১
[19] প্রথম আলো- ২৬ জানুয়ারি ২০২২ (অনলাইন)
[20] সূরা হাদিদ-১৮
[21] তাবারানি-১/২৪৬
[22] জামেউস সগির-৪৩৬৯
[23] সূরা আরাফ-৩১
[24] তাখরিজ: বুখারি-১৪৭৭; মুসলিম-৫৯৩
[25] যুগান্তর ৬ জানুয়ারি, ২০১৮
[26] প্রথম আলো- ১৮ মে ২০২২ (অনলাইন)
[27] সূরা ফুরকান-৬৭
[28] আহমদ-৪২৬৯
[29] আহমদ-৮৬০৪
[30] সূরা মাদেয়া-৯০
[31] ইবনে মাজাহ-২৭৩৩
[32] ছহিহ ইবনে হিব্বান-৫৮৭৩
[33] মুসলিম-১৬০৫
[34] সূরা তাওবা-৬০
[35] বুখারি-১৪০৩
[36] দৈনিক যুগান্তর- ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
[38] মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক-৬৭৯৭, ৬৮৫১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-৯৯৩৭
[39] সূত্র: বিন.এম.উইকিপিডিয়া
[40] সূরা জারিয়াত-১৯
[41] বুখারি-৬৫৬৩
[42] তিরমিজি-১৯৬১
[43] মুসলিম-১০১৭
[44] বুখারি-১২২১
[45] সূরা বাকারা-২৭৫
[46] তিরমিজি-১২০৯
[47] বুখারি-৩৬৪২; আহমদ-১৯৩৬৭
[48] বায়হাকি-৫৪৫২,আস-সুনানুল কুবরা-দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়া বৈরুত
[49] সূরা নিসা, ৫-৬
[50] বুখারি- ৫৩০৪
[51] বুখারি-২০৭২
[52] বুখারি-২২৬২; ইবনে মাজাহ-২১৪৯
[54] https://thedailycampus.com/opinion/97176
[55] বুখারি-২৯০৪; মুসলিম-১৭৫৭
[56] বুখারি- ৫৩৫৪
[57] পরিবেশ ও অর্থনীতি. পৃষ্ঠা ১৪৩, ঢাকেশ্বরী প্রকাশনী, প্রকাশকাল ২০১৫
[58] ইবনে মাজাহ-২৪৪৩
[59] ইবনে মাজাহ-২৪৪২
[60] সূত্র: দেনিক যুগান্তার ২০ মে ২০২২ (অনলাইন)
[61] ইবনে মাজাহ- ১৮৫৭
[62] বুখারি-৬৪৪৬; মুসলিম-১০৫১
[63] সূরা আজহাব-২১
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন