জিজ্ঞাসা-১৩৫: আসসালামুয়ালাইকুম। একদম মুমূর্ষু অবস্থায় মৃত্যুর পূর্বে ৬/৭ বছর কোন নামাজ, রোজা কিছু করতে পারে নাই, তার অসীয়তের 1/3 (এক তৃতীয়াংশ) এর পূর্ণ সম্পদ ফিদীয়া দিয়ে দিলেই কি সমষ্টিগতভাবে সব আদায় হয়ে যাবে? নাকি ওয়ারিশদের অংশ থেকে ও অতিরিক্ত দিন, সময় ইত্যাদি হিসাব করে আরো আদায় করা উচিত?
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
মাসয়ালাটি বুঝার সুবিধার্থে কয়েকটি ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। ফিদিয়া কোন ব্যক্তির জন্য দিতে হয়?
উত্তর: ক।
নামাজের ফিদিয়া: কোন ব্যক্তি যদি ইশারাও নামাজ আদায় করতে না
পারেন, তাহলে তার নামাজ পড়া লাগবে না। সুতরাং এ অবস্থায় তার পক্ষে ফিদিয়া দেওয়া লাগবে
না। দলীল:
عن عمران بن حصين رضي الله عنهما قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: ((صلِّ قائمًا، فإن لم تستطع فقاعدًا، فإن لم تستطع فعلى
جنب
رواه البخاري في أبواب تقصير الصلاة، باب إذا لم يُطِقْ قاعدًا 1/ 376 (1066)
হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার অশ্ব রোগ ছিল, তাই এ অবস্থায় কিভাবে নামাজ আদায়
করবো তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি
বললেন, দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় কর, যদি না
পার তবে বসে কর, তাও যদি না পার তাহলে এক পার্শ্বের উপর আদায়
কর। তাখরিজ: বুখারি ১/৩৭৬
যে ব্যক্তি ইশারায় রুকু-সিজদা করবে, সে রুকু থেকে সিজদাতে সামান্য বেশি ঝুঁকবে।
অন্যথায় নামাজ সহিহ হবে না। তাখরিজ: তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৭৬
শুধুমাত্র মাথা দিয়ে ইশারা করলেও তা রুকু-সিজদার স্থলাভিষিক্ত বলে বিবেচিত
হবে। ইশারা কেবল চোখ বা অন্তরে করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। তাখরিজ: সুনানে কুবরা, হাদিস নং: ৩৭১৯
অসুস্থ ব্যক্তি মাথার মাধ্যমে ইশারা করতে অক্ষম হলে, তার অবস্থা বিবেচনা করা হবে।
তখন দেখতে হবে, এভাবে তিনি কতক্ষণ থাকেন। পাঁচ ওয়াক্ত শেষ
হওয়ার পর যদি অবস্থার উন্নতি ঘটে, তাহলে ওই সব নামাজ মাথা
দিয়ে ইশারা করে কাজা করে নেবে। আর যদি এর চেয়ে বেশি সময় পার হওয়ার পরও উন্নতি না
হয়, তবে ওই সব নামাজ তার দায়িত্বে আর থাকবে না। অর্থাৎ এগুলো
আদায় করা লাগবে না। তাখরিজ: মুআত্তা মুহাম্মদ-২৭৮, দারা
কুতনি-১৮৮৩
"إن تعذر الإیماء برأسه أخرت
الصلاة فلا سقط عنه؛ بل یقضیها إذا قدر علیها، ولوکانت أکثر من صلاة یوم ولیلة
إذا کان مضیقًا وهو الصحیح، کما في الهدایة. وفي الخانیة:
الأصح أنه لایقضي أکثر من یوم
ولیلة کالمغمیٰ علیه، وهو ظاهر الروایة، وهذا اختیار فخر الإسلام، وشیخ الإسلام. وفي الخلاصة: وهو المختار؛ لأن مجرد العقل لایکفي لتوجه الخطاب. وفي التنویر: وعلیه الفتویٰ، ولایومئ بعینیه ولابحاجبیه ولابقلبه؛ لما روینا، وفیه
خلاف زفر". (مجمع الأنهر، کتاب الصلاة، باب
صلاة المریض، دار الکتب العلمیة بیروت ۱/۲۲۹)
সারমর্মঃ
যদি এক দিন এক রাতের নামাজ থেকেও বেশি সময় ধরে এমন হয়, তাহলে তার আর কাজা আদায় করতে হবেনা।
"قال بعضهم: إن زاد عجزه علی یوم ولیلة لایلزمه القضاء، وإن کان دون
ذلك یلزمه کما في الإغماء، وهو الأصح، والفتوی علیه". (الفتاوى الهندیة، کتاب الصلاة، الباب الرابع عشر في
صلاة المریض، (۱/۱۹۷)
সারমর্মঃ
যদি এক দিন এক রাতের নামাজ থেকেও বেশি সময় ধরে এই ওযর (ইশারা করেও
নামাজ আদায় করতে অক্ষম) হয়, তাহলে তার আর কাজা আদায় করতে হবে
না।
প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যক্তি যদি এই সময়ে
যদি সে ইশারা করেও নামাজ পড়ার শক্তি না রেখে থাকে, তাহলে তার ফিদিয়াহ দিতে হবেনা।
আর যদি তার ইশারা করে নামাজ পড়ার শক্তি ছিলো বলে জানা যায়, তাহলে
সেই কয়দিনের নামাজের ফিদিয়াহ দিতে হবে।
রোজার ফিদিয়া:
আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ
لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ *
أَيَّاماً مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ
كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ
وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَنْ تَطَوَّعَ
خَيْراً فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ وَأَنْ تَصُومُوا خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ
تَعْلَمُونَ ) البقرة/183-184.
“হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে,
যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা
তাকওয়া অবলম্বন কর। নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে,
কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা
পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য
ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত
সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন
তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। সূরা বাক্বারাহ,
২: ১৮৩-১৮৪
ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন যে তিনি
বলেছেন: এ আয়াতটি মানসুখ (রহিত)নয়, বরং আয়াতটি অতি বৃদ্ধ নর ও নারীর ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য- যারা রোযা পালনে অক্ষম। তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে
খাওয়াবেন। তাখরিজ: বুখারি-৪৫০৫
প্রশ্ন: খ। ফিদিয়ার পরিমাণ?
উত্তর: খ। রোজার মত নামাজের ফিদিয়া কুরআন-হাদিসে আসেনি, তবে (রোজার
ফিদিয়া) কুরআন
মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ
আর যাদের রোযা রাখার সামর্থ্য নেই তারা একজন মিসকীনের খানা সমপরিমাণ ফিদিয়া
দিবে। সূরা বাকারা-১৮৪
এ আয়াতের উপর কিয়াস করে ওলামায়ে
আহনাফ একই পরিমাণ বলেছেন, বিতরসহ (মোট ৬ ওয়াক্ত একদিনে)
প্রতি ওয়াক্ত নামায হিসেব করে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য পৌনে দুই সের গম বা আটা অথবা
এর বাজার মূল্য গরীব মিসকিনকে মালিক বানিয়ে দান করে দিতে হবে। অথবা প্রতি ওয়াক্তের
বদলে একজন গরীবকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াতে হবে। যা সদকায়ে ফিতির এর
টাকা পরিমাণ হয়। সূত্র: ফতাওয়া শামী-২/৭২; মারাক্বিল ফালাহ-১/১৬৯ হবে।
(وَلَوْ مَاتَ وَعَلَيْهِ
صَلَوَاتٌ فَائِتَةٌ وَأَوْصَى بِالْكَفَّارَةِ يُعْطَى لِكُلِّ صَلَاةٍ نِصْفَ صَاعٍ مِنْ بُرٍّ) كَالْفِطْرَةِ (وَكَذَا حُكْمُ الْوِتْرِ) وَالصَّوْمِ، وَإِنَّمَا يُعْطِي (مِنْ ثُلُثِ مَالِهِ) (الدر المختار-2/72
সহজ কথায়, প্রতিটি নামায ও রোজার জন্য
সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকা গরীবকে দান করে দিতে হবে।
প্রশ্ন: গ। তার অসীয়তের 1/3 (এক তৃতীয়াংশ) এর পূর্ণ সম্পদ ফিদীয়া
দিয়ে দিলেই কি সমষ্টিগতভাবে সব আদায় হয়ে যাবে? নাকি ওয়ারিশদের
অংশ থেকে ও অতিরিক্ত দিন, সময় ইত্যাদি হিসাব করে আরো আদায় করা
উচিত?
উত্তর: গ। ফিদিয়া আদায়ের পদ্ধতি হলো প্রথমে উক্ত ব্যক্তির কাজা নামাজ ও রোজা
হিসেব করবে, তারপর ফিদিয়া দিবে। যদি অসীয়তের 1/3 (এক তৃতীয়াংশ) এর পূর্ণ সম্পদ দিয়েও
ফিদিয়া আদায় না হয়, তাহলে ওয়ারিশদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ-এর বেশি সম্পদ দ্বারা ব্যয় করতে বাধ্য নয়।
দলিল:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আল্লাহ তোমাদের মৃত্যুর সময়
নিজেদের সম্পদের এক তৃতীয়াংশ তোমাদের উপর দাক্ষিণ্য করেছেন যেন তোমরা এর দ্বারা
নেক আমল বাড়াতে পার। সুনানে ইবনে মাজাহ-২৭০৯ হাদিসটির সনদ হাসান
তবে বালেগ ওয়ারিশগণ যদি সেচ্ছায় আদায়
করে, তাহলে জায়েজ
ও উত্তম। সূত্র: দুররুল
মুখতার-২/৯-১০০
প্রশ্ন: ঘ। মৃত্যু ব্যক্তির জন্য ওয়ারিশগণণের উপর কি ফিদিয়া দেওয়া ওয়াজিব?
উত্তর: ঘ। যদি মৃত ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে
তার নামাযের কাফফারা আদায়ের জন্য অসিয়ত করে যায়, আর তার
নিজের মালও ছিল। তাহলে তার এক তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে কাফফারা আদায় করতে হবে। আর যদি
তার কোন সম্পদ না থাকে, বা সে মাল রেখে গেছে কিন্তু কোন
কাফফারা আদায়ের অসিয়ত করে যায়নি। তাহলে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারা আদায় করা
আত্মীয়দের উপর জরুরী নয়। তবে স্বজনদের কাফফারা আদায় করে দেয়াই উত্তম। এর দ্বারা
মৃত ব্যক্তি শান্তি পায়। দুররুল মুখতার-২/৯৫-১০০
وَأَمَّا إذَا لَمْ يُوصِ فَتَطَوَّعَ بِهَا
الْوَارِثُ فَقَدْ قَالَ مُحَمَّدٌ فِي الزِّيَادَاتِ إنَّهُ يُجْزِيهِ إنْ شَاءَ
اللَّهُ تَعَالَى، (رد المحتار-2/95-100)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন,
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন