আসসালামুয়ালাইকুম।
প্রশ্ন : গম,জব, কিসমিস, পনির ও খেজুরের যেকোনো একটি খাদ্য দ্রব্যের বর্তমান বাজার মূল্য নির্দিষ্ট করে চাল, ডাল, তেল, ও চিনি দ্বারা ফিৎরা আদায় করা জায়েয হবে কিনা?
দলিল সহ সমাধান প্রদান করার অনুরোধ করছি।
তারিখ: ০৬/০৪/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ, রাজবাড়ী থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, গম,জব, কিসমিস, পনির ও খেজুরের যেকোনো একটি খাদ্য দ্রব্যের বর্তমান বাজার মূল্য নির্দিষ্ট করে চাল, ডাল, তেল, ও চিনি দ্বারা ফিৎরা আদায় করা জায়েয হবে। দলিল:
حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ فَضَالَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو عُمَرَ، عَنْ زَيْدٍ، عَنْ عِيَاضِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كُنَّا نُخْرِجُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ. وَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ وَكَانَ طَعَامَنَا الشَّعِيرُ وَالزَّبِيبُ وَالأَقِطُ وَالتَّمْرُ.
মু’আয ইবনে ফাযালা ... আবু সা’ঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী (ﷺ) এর যুগে ঈদের দিন এক সা’ পরিমাণ *খাদ্যদ্রব্য* সাদ্কাতুল ফিত্র হিসাবে আদায় করতাম। আবু সা’ঈদ (রাযিঃ) বলেন, আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২২ (আন্তর্জাতিক নং ১৫১০)
ব্যাখ্যা: এ হাদিসে صَاعًا مِنْ طَعَامٍ এক সা খাদ্যদ্রব্য দ্বারা। এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে শায়েখ ইবনে বাজ রহ. বলেন,
وقد بين كثير من العلماء "الطعام" الوارد في الحديث: القمح. ويقول بعض العلماء: يقصد بالطعام: الطعام الذي كان أهل المنطقة يأكلونه ؛ سواء كان ذلك من القمح أو الشعير أو أي شيء آخر. هذا هو الرأي الصحيح. لأن الفطرة تعبير عن شفقة الغني على الفقير. لا يجب على المسلم أن يتضامن مع أي شيء آخر غير الطعام المحلي. في الوقت الحاضر الأرز هو الغذاء الأساسي في بلد الحرمين وهو غالي الثمن وطعام جيد. لذلك من الأفضل إعطاء الفطرة بالأرز من الشعير. مع أنه ورد في الوثيقة جواز إعطاء الفطرة بالشعير. وبهذا علم أنه لا إشكال في إخراج الفطرة بالأرز. [النهاية]
[مجموع فتاوى الشيخ بن باز (14/200)]
অর্থাৎ অনেক আলেম হাদিসে উল্লেখিত ‘খাদ্যদ্রব্য’ এর ব্যাখ্যা করেছেন: গম। আবার কোন কোন আলেম বলেন: ‘খাদ্যদ্রব্য’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে: কোন এলাকার মানুষ যে খাদ্য খেয়ে অভ্যস্ত; সেটা গম হোক, যব হোক কিংবা অন্য কিছু হোক। এটাই সঠিক অভিমত। কারণ ফিতরা হচ্ছে- ধনীদের পক্ষ থেকে গরীবদের প্রতি সহমর্মিতার প্রকাশ। স্থানীয় খাদ্য ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করা মুসলমানের উপর ফরয নয়। বর্তমানে হারামাইনের দেশে ভাত হচ্ছে- প্রধান খাদ্য এবং এটি দামী ও ভাল খাদ্য। তাই যব এর চেয়ে চাউল দিয়ে ফিতরা দেয়া উত্তম; যদিও যব দিয়ে ফিতরা দেয়া জায়েয মর্মে দলিলে উল্লেখিত হয়েছে। এভাবে জানা গেল যে, চাউল (ডাল,চিনি) দিয়ে ফিতরা আদায় করতে কোন অসুবিধা নেই। সূত্র: মাজমু ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায-১৪/২০০
الكفارة.
قال ابن القيم رضي الله عنه في اعلام الموكيين (3/12): «كان هذا طعامهم في المدينة. ومن ناحية أخرى ، إذا كان غذاء بلد أو منطقة آخر ، وجب عليهم إخراج الفطرة من طعامهم. على سبيل المثال - أولئك الذين طعامهم من الذرة أو الأرز أو المراهقين أو أي حبوب أخرى (سوف يعطون الفطر معها). وإذا كان طعامهم غير الحبوب. على سبيل المثال - الحليب واللحوم والأسماك وما إلى ذلك ، فإنهم سيوفرون الفطرة مع طعامهم الطبيعي مهما كان. هذا رأي جمهور عالم. هذا هو الرأي الصحيح. لا توجد فرصة للتعبير عن آراء أخرى. لأن الغرض من إعطاء الفطر هو تلبية احتياجات الفقراء يوم العيد والتعاطف معهم بإعطائهم نفس الطعام الذي يأكله الجميع. وعلى ضوء ذلك يجوز إخراج الفطرة بالطحين أو الطحين. على الرغم من أنه لم يرد في أي حديث صحيح
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) ‘ইলামুল মুওয়াক্কিয়ীন’ (৩/১২) গ্রন্থে বলেন: “মদিনাতে এগুলো ছিল তাদের প্রধান খাদ্য। পক্ষান্তরে, কোন দেশের কিংবা এলাকার প্রধান খাদ্য যদি অন্য কিছু হয় তাহলে তাদের উপর তাদের খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা ফরয। যেমন- যাদের খাদ্য ভুট্টা কিংবা ভাত কিংবা ত্বীন কিংবা অন্য কোন শস্যদানা (তারা সেটা দিয়ে ফিতরা দিবে)। আর তাদের খাদ্য যদি শস্যদানা না হয়ে অন্য কিছু হয়; যেমন- দুধ, গোশত, কিংবা মাছ ইত্যাদি তাহলে তারা তাদের প্রকৃতিগত খাদ্য দিয়ে ফিতরা দিবে সেটা যেমনি হোক না কেন। এটা জমহুর আলেমের অভিমত। এটাই সঠিক মত; অন্য মত প্রকাশ করার সুযোগ নেই। কারণ ফিতরা দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে- ঈদের দিন মিসকীনের প্রয়োজন পূরণ করা এবং সবাই যেমন খাবার খায় সে জাতীয় খাবার দিয়ে তাদের সহমর্মী হওয়া। এর আলোকে বলা যায় আটা বা ময়দা দিয়ে ফিতরা দেয়া জায়েয হবে; যদিও কোন সহিহ হাদিসে এর কথা আসেনি। সূত্র: ইলামুল মুওয়াক্কিয়ীন’ (৩/১২)
قال الشيخ عثيمين (رضي الله عنه) في كتاب الشرح الممتع (6/183): على القول الصحيح: يجوز إخراج الفطرة بما عُرِف من طعام ، سواء كان من الحبوب أو الثمار أو اللحم. [نهاية]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) ‘আশ-শারহুল মুমতি’ (৬/১৮৩) গ্রন্থে বলেন: সঠিক মতানুযায়ী, যেটা খাদ্য হিসেবে প্রচলিত সেটা শস্যদানা হোক, ফল-ফলাদি হোক কিংবা গোশত হোক সেটা দিয়ে ফিতরা দেয়া জায়েয।” সূত্র: আশ-শারহুল মুমতি’-৬/১৮৩
সারকথা হলো, গম,জব, কিসমিস, পনির ও খেজুরের যেকোনো একটি খাদ্য দ্রব্যের বর্তমান বাজার মূল্য নির্দিষ্ট করে চাল, ডাল, তেল, ও চিনি দ্বারা ফিৎরা আদায় করা জায়েয হবে।
- والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন