আসসালামু আলাইকুম । আমার জানার বিষয় হলঃ একজনের গলায় কাঁটা বেঁধে গেছে, কাঁটা বের করার জন্য অনিচ্ছা শর্তে বমি হয়ে গেছে , এমতাবস্থায় তার রোজা কি হবে? না ভেঙে গেছে ? বিষয়টা অতি জরুরি। জানাবেন।
তারিখ: ০৪/০৪/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আমিনুর রহমান, যশোর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আল্লাহ তাআলা সাধ্যের বাহিরে বান্দাকে কোন হুকুম আরোপিত করেননি। তাই তাই অনিচ্ছা স্বার্থে বমি হলে তার রোজা ভাঙবে না এবং কাজা করতে হবে না। দলিল:
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ ذَرَعَهُ الْقَىْءُ فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءٌ وَمَنِ اسْتَقَاءَ عَمْدًا فَلْيَقْضِ " . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ وَثَوْبَانَ وَفَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ هِشَامٍ عَنِ ابْنِ سِيرِينَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ عِيسَى بْنِ يُونُسَ . وَقَالَ مُحَمَّدٌ لاَ أَرَاهُ مَحْفُوظًا . قَالَ أَبُو عِيسَى وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَلاَ يَصِحُّ إِسْنَادُهُ . وَقَدْ رُوِيَ عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ وَثَوْبَانَ وَفَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَاءَ فَأَفْطَرَ . وَإِنَّمَا مَعْنَى هَذَا أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ صَائِمًا مُتَطَوِّعًا فَقَاءَ فَضَعُفَ فَأَفْطَرَ لِذَلِكَ . هَكَذَا رُوِيَ فِي بَعْضِ الْحَدِيثِ مُفَسَّرًا . وَالْعَمَلُ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ عَلَى حَدِيثِ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ الصَّائِمَ إِذَا ذَرَعَهُ الْقَىْءُ فَلاَ قَضَاءَ عَلَيْهِ وَإِذَا اسْتَقَاءَ عَمْدًا فَلْيَقْضِ . وَبِهِ يَقُولُ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَالشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ .
আলী ইবনে হুজর (রাহঃ) ..... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ কারো (রোযাকালে) অনিচ্ছকৃত বমি হলে তাকে কাযা করতে হবে না। কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছাকৃত বমি করে তবে সে কাযা করবে। - ইবনে মাজাহ ১৬৭৬
এই বিষয়ে আবু দারদা, সাওবান ও ফাযালা ইবনে উবাইদ (রাযিঃ) থেকে হাদিস বর্ণিত আছে। ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসটি হাসান গরীব। ঈসা ইবনে ইউনুসের বরাত ছাড়া, হিশাম ইবনে সিরীন, আবু হুরায়রা সূত্রে এই হাদিসটি বর্ণিত আছে বলে আমাদের জানা নাই। মুহাম্মাদ (বুখারী) (রাহঃ) বলেন, ঈসা ইবনে ইউনুসকে আমি বারী হিসাবে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করি না। ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, নবী (ﷺ) আবু হুরায়রা (রাযিঃ) এর বর্ণিত হাদিসটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত আছে। কিন্তু এর সনদগুলো সহীহ নয়।
আবুদ দারদা, সাওবান ও ফাযালা ইবনু উবাইদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী (ﷺ) একবার (রোযা কালে) বমি করলেন এবং রোযা ছেড়ে দিলেন।এ হাদিসটির র্মম হল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নফল রোযা পালন করছিলেন। বমি হওয়ার পর দুর্বল হয়ে পড়লে তিনি রোযা ভেঙ্গে ফেলেন। কোন কোন হাদিসে এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বর্ণিত রয়েছে। নবী (ﷺ) থেকে আবু হুরায়রা (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণিত এই হাদিস অনুসারে আলিমগণের আমল রয়েছে যে, সায়িমের অনিচ্ছাকৃত বমি হলে তার কোন কাযা নেই। কিন্তু ইচ্ছা করে বমি করলে সে কাযা করবে। এ হলো শাফিঈ, সুফিয়ান সাওরী, আহমাদ ও ইসহাক (রাহঃ) এর অভিমত।
হাদীসের ব্যখ্যা:
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, অনিচ্ছায় মুখ ভরে বমি হলে রোযা ভাঙ্গবে না। ইচ্ছেকৃত বমি করলে মুখ ভরে হলে ভেঙ্গে যাবে। মুখ ভরে না হলে ভাঙ্গবে না। ইচ্ছেকৃত হল মুখে আঙ্গুল দিয়ে এভাবে কোন পদ্ধতিতে ইচ্ছেকৃত মুখ ভরে বমি করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। অনিচ্ছায় হলে বা ইচ্ছেকৃতি মুখ ভরে না হলে রোযা ভাঙ্গবে না।
—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৭২০ (আন্তর্জাতিক নং ৭২০)
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মোতাবে গলায় কাঁটা বাঁধায়, কাঁটা বের করার জন্য অনিচ্ছা শর্তে বমি হওয়ায় এমতাবস্থায় তার রোজ হবে। রোজা নষ্ট বা ভঙ্গ হয়নি। সূত্র: কিতাবুল আসল ২/১৯২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪১
- والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন