|
জিজ্ঞাসা-২০০: একজন মুমিনের জীবনে ফরজ ওয়াজিব এবং সুন্নত
কাজগুলো কি কি? এ ধরনের বই অথবা লেসন যদি কারো কাছে থাকে তাহলে অনুগ্রহ করে সেয়ার করবেন।
তারিখ- ২৪/০৬/২০২২ ঈসায়ি
(সম্মানিত ভাই আরটি- ইব্রাহীম ২৪ ফিল্ড
আর্টিলারি, খোলাহাটি সেনানিবাস-এর
প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের
জীবন দান করুন।)
জবাব: এ সংক্রান্ত কয়েকটি
কিতাবের নাম বলে দিচ্ছি আশা করি আপনার
কাঙ্ক্ষিত জবাব পেয়ে যাবেন।
নং-০১. “বেহেশতী
জেওর”- আশরাফ আলী থানভী রহ.
নং-০২. দৈনন্দিন
জীবনে ইসলাম- ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক সংকলিত
নং-০৩. “আহকামে
জিন্দেগী” -মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন দা. বা.
নং-০৪. “ইসলামি জিন্দেগী”- মুফতি মনসুরুল হক সাহেব দা. বা.
নং-০৫. “আহকামুন
নিসা” ও “ফিকহুন নিসা”- মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন দা. বা.
নং-০৬. “মাতৃজাতির
পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান”- মাওলানা মিজানুর রহমান কাসেমি দা.বা.
নং-০৭. “আদাবুল
মুআশারাত”- আশরাফ আলী থানভী রহ.
নোট: ওলামায়ে দ্বীন পূর্ণাঙ্গ দ্বীন-ইসলামকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন।
যথা: (১) ঈমান ও আকাইদ (২) ইবাদত (৩) মুআমালাত (লেনদেন) (৪) মুআশারাত (আচার-আচরণ) ও (৫) আখলাকিয়াত (চরিত্র-আধ্যাত্মিক
পরিশুদ্ধ)।
উপরোক্ত কিতাবগুলোতে পাঁচটি
বিষয়ে বিস্তারিত দলিল ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে।
ফজরের
সুন্নাত কোথায় পড়া উত্তম বাসায় নাকি মাসজিদে? |
জিজ্ঞাসা-২০১: আসসালামুয়ালাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ, শায়েখদের নিকট জিজ্ঞাসা ,
ফজরের সুন্নাত কোথায় পড়া উত্তম বাসায় নাকি মাসজিদে? তারিখ- ২৪/০৬/২০২২ ঈসায়ি
জবাব: শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ফরজ
ছাড়া সকল প্রকার সুন্নত, নফল ইত্যাদি বাড়িতে পড়া উত্তম।
রাসূল (ﷺ) বলেন,
فَعَلَيْكُمْ بِالصَّلاَةِ فِىْ
بُيُوْتِكُمْ فَإِنَّ خَيْرَ
صَلاَةِ الْمَرْءِ فِىْ
بَيْتِهِ إِلاَّ الصَّلاَةَ
الْمَكْتُوْبَةَ
“বাড়িতে সালাত আদায় করাকে তোমরা
নিয়ম বানিয়ে নাও। কেননা পুরুষের জন্য ফরয সালাত ব্যতীত ঘরে সালাত আদায় করা উত্তম।”
[বুখারী হা/৭৩১; মুসলিম হা/৭৮০]
তিনি আরও বলেন:
إِذَا قَضَى أَحَدُكُمْ
صَلاَتَهُ فَلْيَجْعَلْ لِبَيْتِهِ
مِنْهَا نَصِيبًا فَإِنَّ
اللهَ جَاعِلٌ فِىْ
بَيْتِهِ مِنْ صَلاَتِهِ
خَيْرًا
“তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করে,
তখন সে যেন ঘরের জন্য সালাতের কিয়দাংশ রেখে দেয়। কেননা ঘরে সালাত
আদায়ের ফলে আল্লাহ তাতে কল্যাণ দান করেন।” [ইবনে মাজাহ
হা/১৩৭৬; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৩৯২।]
আব্দুল্লাহ ইবনে সা‘দ রা. হ’তে
বর্ণিত তিনি বলেন,
سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه
وسلم أَيُّمَا أَفْضَلُ
الصَّلاَةُ فِى بَيْتِى
أَوِ الصَّلاَةُ فِى
الْمَسْجِدِ قَالَ أَلاَ
تَرَى إِلَى بَيْتِى
مَا أَقْرَبَهُ مِنَ
الْمَسْجِدِ فَلأَنْ أُصَلِّىَ
فِى بَيْتِى أَحَبُّ
إِلَىَّ مِنْ أَنْ
أُصَلِّىَ فِى الْمَسْجِدِ
إِلاَّ أَنْ تَكُونَ
صَلاَةً مَكْتُوبَةً.
“আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞেস করলাম:
কোনটি উত্তম, আমার ঘরে সালাত আদায় করা না কি
মসজিদে?
তিনি বললেন: তুমি কি দেখ না
আমার ঘর মসজিদের কত নিকটে? তা সত্ত্বেও মসজিদে সালাত আদায় করার চেয়ে ঘরে সালাত আদায় করা আমার নিকটে
অধিক প্রিয়; ফরয সালাত ব্যতীত’। [ইবনে মাজাহ হা/১৩৭৮; সহীহ আত-তারগীব হা/৪৩৯।]
তিনি আরও বলেন,
اجْعَلُوْا فِىْ بُيُوْتِكُمْ
مِنْ صَلاَتِكُمْ، وَلاَ
تَتَّخِذُوْهَا قُبُوْرًا
“তোমাদের ঘরেও কিছু সালাত আদায়
করবে এবং ঘরকে তোমরা কবর বানিয়ে নিও না’। [বুখারী হা/৪৩২, ১১৮৭; আবু দাউদ
হা/১০৪৩, ১৪৪৮; তিরমিযী হা/৪১৫;
ইবনে মাজাহ হা/১১৪১; মিশকাত হা/৭১৪।]
উপরোক্ত হাদিস সমূহ থেকে ফরয
সালাত ছাড়া অন্যান্য সাধারণ নফল-সুন্নত ইত্যাদি সালাত বাড়িতে পড়ার গুরুত্ব ও ফযিলত
সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
,
وفی الشامیۃ(۲۲/۲): (قولہ والافضل فی
النفل الخ) شمل
ما بعد الفریضۃ
وما قبلھا، لحدیث
الصحیحین ’’علیکم الصلاۃ
فی بیوتکم فان
خیر صلاۃ المرء
فی بیتہ الا
المکتوبۃ‘‘ واخرج ابو
داؤد ’’صلاۃ المرء
فی بیتہ افضل
من صلاتہ فی
مسجدی ھذا الا
المکتوبۃ‘‘ وتمامہ فی
شرح المنیۃ وحیث
کان ھذا افضل
یراعی مالم یلزم
منہ خوف شغل
عنھا لوذھب لبیتہ،
او کان فی
بیتہ ما یشغل
بالہ ویقلل خشوعہ
فیصلیھا حینئذ فی
المسجد لان اعتبار
الخشوع ارجح
বাড়িতেই সুন্নাত নফল নামাজ
আদায় করা উত্তম।
হ্যাঁ যদি বাড়িতে গিয়ে কোনো
কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,বা খুশু খুজুতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,তাহলে মসজিদেই পড়া উচিত।
(ফাতাওয়ায়ে শামী ২/২২ নাজমুল
ফাতওয়া ২/২৬১)
وفی الھندیۃ(۱۱۳/۱): الافضل فی السنن
والنوافل المنزل لقولہ
علیہ السلام صلاۃ
الرجل فی المنزل
افضل الا المکتوبۃ
الخ۔
সারমর্মঃ উত্তম হলো সুন্নাত নফল নামাজের ক্ষেত্রে
বাড়িতেই আদায় করা।
★প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনি বন্ধু😍,
বাড়িতেই সুন্নাত নফল নামাজ
আদায় করা উত্তম।
হ্যাঁ যদি বাড়িতে গিয়ে কোনো
কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,বা খুশু খুজুতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,তাহলে মসজিদেই পড়া উচিত।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ ইমরান
|
জিজ্ঞাসা-২০২: বিজ্ঞ ওলামায়ে কিরামের নিকট
আমার জানার বিষয়, চাচার স্ত্রী মারা যাওয়ার কিছুদিন পরে
চাচার নিজের ভাতিজা দুই সন্তান ও স্ত্রী রেখে মারা যায়। এখন চাচা মৃত ভাতিজার
স্ত্রীকে বিবাহ করতে পারবে কি না। (তারিখ- ২৪/০৬/২০২২ ঈসায়ি)
আরটি ছাদেকুল ইসলাম ২৫বীর ((ﷺ)ব্যাঃ)রংপুর।
জবাব: পারবে। দলিল:
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ
الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ
وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ
الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ
وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي
حُجُورِكُم مِّن نِّسَائِكُمُ
اللَّاتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ
فَإِن لَّمْ تَكُونُوا
دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلَا
جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ
أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ
أَصْلَابِكُمْ وَأَن تَجْمَعُوا
بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا
مَا قَدْ سَلَفَ
ۗ إِنَّ اللَّهَ
كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
[٤:٢٣]
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ
إِلَّا مَا مَلَكَتْ
أَيْمَانُكُمْ ۖ كِتَابَ
اللَّهِ عَلَيْكُمْ ۚ
وَأُحِلَّ لَكُم مَّا
وَرَاءَ ذَٰلِكُمْ أَن
تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ
غَيْرَ مُسَافِحِينَ ۚ
فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ
مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ
فَرِيضَةً ۚ وَلَا
جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا
تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن
بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ
عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤]
তোমাদের জন্যে হারাম করা
হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের
দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা
যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি
তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন
গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা;
কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী,দয়ালু।
এবং নারীদের মধ্যে তাদের
ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের
মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব
নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা
তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের
জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে
তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা
পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। {সূরা নিসা-২৩-২৪}
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মো: আজিজুর রহমান
স্টেশন সদর দপ্তর
রাজন্দ্রপুর সেনানিবাস
|
জিজ্ঞাসা-২০৩: মোনাজাতে হাত কিভাবে কতটুকু
উপরে উঠাতে হবে,হাত ফাঁকা থাকবে নাকি দুহাত মিলিত থাকবে,
জানতে চাই হযরত। (তারিখ- ২৪/০৬/২০২২ ঈসায়ি)
(সম্মানিত ভাই শরিফ ইনসান (ভদ্র প্রকৃতির মানুষ) আর টি সাইফুল ইসলাম, এএসপিটিএস, মোমেনশাহী। সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: শুরুতে আন্তরিকভাবে দুঃখিত যে, আপনার জবাব দিতে দেরি
হলো। কারণ আমি যে এলাকায় ছিলাম (ছুটিতে) নেটের প্রবলেম ছিল। যাই আপনার
প্রশ্নের উত্তর নিম্নে হলো:
(ক) উভয় হাত সিনা (বুক) বরাবর উঠানো। দলিল: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,
হা. নং- ৩২৩৪
(খ) হাতের আঙ্গুল সমূহ স্বাভাবিক ফাঁক রাখা। দলিল:
হিসনে হাসিন-২৭
(গ) দু হাতের
মাঝখানে সামান্য ফাঁক রাখা। দলিল: তহাবি শরিফ-২০৫
(ঘ) হাতের
তালু আসমানের দিকে প্রশস্ত করে রাখা। দলিল: তাবরানী কাবীর, হাঃ নং ৩৮৪২
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
طلب العلم فريضة এই ফরজের
অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো কি কি? |
জিজ্ঞাসা-২০৪: আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া
রাহমাতুল্লাহ। আমাদের একজন আরটি হুজুরের কাছে তার সিও জানতে চেয়েছেন,
طلب العلم فريضة এই ফরজের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো
কি কি? কারো সংগ্রহে কোন রেফারেন্স নোট তৈরি করা থাকলে
দেয়ার জন্য অনুরোধ রইল।
(তারিখ- ২৪/০৬/২০২২ ঈসায়ি)
(সম্মানিত ভাই সত্যান্বেষণকারী
আলেম আরটি মোহাম্মাদ
আব্দুর রহমান (সাভার)১৭ ইবি, বগুড়া সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: وَعَنْ أَنَسِ بْنِ
مَالِكٍ قَالَ قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ
عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
وَوَاضِعُ الْعِلْمِ عِنْدَ
غير أَهله كمقلد
الْخَنَازِير الْجَوْهَر واللؤلؤ
وَالذَّهَبَ» . رَوَاهُ ابْنُ
مَاجَهْ وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ فِي
شُعَبِ
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ’ইলম বা
জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয এবং অপাত্রে তথা অযোগ্য মানুষকে ’ইলম শিক্ষা দেয়া শুকরের গলায় মণিমুক্তা বা স্বর্ণ পরানোর শামিল। তখরিজ:
ইবনে মাজাহ্ ২২৪, সহীহুল জামি-৩৯১৩ বায়হাকি-১৫৪৪
নোট: প্রথম অংশ তথা (طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ
عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ) সহীহ। দ্বিতীয় অংশ জয়িফ।
জবাব: ‘নিঃসন্দেহে মুসলিম مسلم (পুরুষ) শব্দটি المسلمة মুসলিমা (নারী) কেও শামিল করে। অর্থাৎ এই বিধান পুরুষের সঙ্গে
সঙ্গে নারীর জন্য সমানহারে প্রযোজ্য। আর কোনো কোনো হাদীছে المسلمة শব্দটি উল্লেখ করা
হয়েছে। এ হাদিসের ব্যাখ্যা সম্পর্কে
এসেছে-
وَكُلُّ مَنْ
اشْتَغَلَ بِشَيْءٍ يُفْرَضُ
عَلَيْهِ عِلْمُهُ وَحُكْمُهُ
لِيَمْتَنِعَ عَنْ الْحَرَامِ
فِيهِ اهـ
যে বক্তি কোনো জিনিষ বা
কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট হবে নিজেকে সংশ্লিষ্ট করজে, তার উপর উক্ত বিষয় সম্পর্কে
ইলম অর্জন করা ফরয।যাতে করে উক্ত বিষয় ও বিষয় সংশ্লিষ্ট সমস্ত হারাম থেকে সে
অনায়াসে বেছে থাকতে পারে। রদ্দুল মুহতার-১/৪২
ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে
وَفَرْضٌ عَلَى كُلِّ
مُكَلَّفٍ وَمُكَلَّفَةٍ بَعْدَ
تَعَلُّمِهِ عِلْمَ الدِّينِ
وَالْهِدَايَةِ تَعَلُّمُ عِلْمِ
الْوُضُوءِ وَالْغُسْلِ وَالصَّلَاةِ
وَالصَّوْمِ، وَعِلْمِ الزَّكَاةِ
لِمَنْ لَهُ نِصَابٌ،
وَالْحَجِّ لِمَنْ وَجَبَ
عَلَيْهِ وَالْبُيُوعِ عَلَى
التُّجَّارِ لِيَحْتَرِزُوا عَنْ
الشُّبُهَاتِ وَالْمَكْرُوهَاتِ فِي
سَائِرِ الْمُعَامَلَاتِ. وَكَذَا
أَهْلُ الْحِرَفِ،
প্রত্যেক মুকাল্লাফ-মুকাল্লাফাহ(আক্বেল-বালেগ
নর-নারী)এর উপর দ্বীনের প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের পর ফরয হচ্ছে,ওজু,গোসল,নামায এবং রোযা,এর জ্ঞান অর্জন করা। এবং নেসাব প্রাপ্ত
মালের মালিকের উপর যাকাতের জ্ঞান অর্জন করা এবং যার উপর হজ্ব ফরয,তার জন্য হজ্বের বিধি-বিধান অর্জন করা।
এবং ব্যবসায়ীদের উপর ব্যবসা
সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করা। এজন্য ফরয,যাতে তারা উক্ত বিষয় সম্পর্কিত বিভিন্ন
অস্পষ্টতা,সন্দেহ ও অপছন্দনীয় দিবসসমূহ থেকে অনায়াস বেছে
থাকতে পারে। ঠিকতেমনিভাবে পেশাজীবীদের জন্য সংশ্লিষ্ট পেশা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন
করা ফরয।
এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কর্তৃক রচিত- “দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম” কিতাবের ইলম অধ্যায় দেখে নিতে
পারেন। তাছাড়া আমার লেখা- “মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ(৪০) হাদিস” কিতাবের ৬০ নং
পৃষ্ঠা দেখা যেতে পারে। কিতাবটির পিডিএফ কপি দেওয়া হবে ইনশাল্লাহ।
এ সংক্রান্ত খুলাসা (সারকথা) শা্হ
আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহ আলাইহির বাণীটি যথার্থ। তিনি বলেছেন, ইসলামে যে আমল করা ফরজ; তার জ্ঞান অর্জন করাও ফরজ (যেমন-ঈমান-আখিরাত-রিসালাত ইত্যাদি)। যে আমল করা ওয়াজিব, সে সস্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাও
ওয়াজিব। যে আমল করা সুন্নাত, তার জ্ঞান অর্জন করা সুন্নাত। আর
ইসলামে যে আমল করা নফল/মুস্তাহাব ওই সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করাও নফল/মুস্তাহাব।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
মহিলাদের
কাতার প্রসঙ্গে |
|
জিজ্ঞাসা-২০৫: উক্ত হাদিসের বরাতে
হানাফিপন্থি এক শায়েখের কিতাবে পেলাম,কাতারে আগে পুরুষ অতপর
বালক অতপর মহিলা গণ দাঁড়াবেন।বিজ্ঞ ওলামায়ে কিরামগণের নিকট আমার জানার আগ্রহ যে,পুরুষ, বালক, মহিলা বিষয় সরাসরি কোন হাদিস বা দলিল আছে কিনা। মহান আল্লাহ সকলের ইজ্জত বুলন্দ
করুক,আমিন। (তারিখ- ২৫/০৬/২০২২ ঈসায়ি/ইংরেজি) আমিন।
(সম্মানিত শায়েখ ধর্ম শিক্ষক মোঃ ছাদেকুল ইসলাম ২৫ বীর, ৬৬ পদাতিক ডিভিশন, রংপুর সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে)
জবাব:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْرُ
صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا
وَشَرُّهَا آخِرُهَا وَخَيْرُ
صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا
وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا.৫৮
অর্থ- আবূ হুরাইরাহ e হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- পুরুষদের জন্য
(সালাতে) উত্তম সফ হলো প্রথম সফ (সারি), আর তাদের জন্য মন্দ সফ
হলো একদম পিছনের সফ। আর মহিলাদের জন্য উত্তম সফ হলো সর্বশেষ সফ (সারি), আর তাদের জন্য মন্দ সফ হলো প্রথম সফ।৫৯
মহিলা যদি মাত্র একজনও হয়
তবুও তাকে পুরুষের সারিতে নিয়ে আসা যাবে না বরং তাকে পিছনে এবং পৃথক সারিতে
দাঁড়াতে হবে।
আমাদের দেশের বর্তমান যে
সমাজ ব্যবস্থা এবং আমাদের সামাজের যে বেহাল দশা, এতে মহিলাদের মাছজিদে না যেয়ে
বরং নিজ নিজ গৃহে সালাত আদায় করা আবশ্যক। তাছাড়া এমনিতেই তো মহিলাদের জন্য
মাছজিদের পরিবর্তে নিজ নিজ ঘরে সালাত আদায় করা উত্তম। যেমন-
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ،
عَنْ رَسُولِ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ:
خَيْرُ مَسَاجِدِ النِّسَاءِ
قَعْرُ بُيُوتِهِنَّ.৬০
অর্থ- উম্মু ছালামাহ f হতে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে যে,
রাছূলুল্লাহ 1 বলেছেন:- মহিলাদের জন্য সবচেয়ে
উত্তম মাছজিদ হলো তাদের গৃহাভ্যন্তর।৬১
তবে হ্যাঁ, যদি পূর্ণ পর্দার সাথে
মহিলাদের মাছজিদে আসা-যাওয়া, তাদের নিরাপত্তা এবং
পুরুষ-মহিলার সংমিশ্রণ না হওয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, তাহলে
মহিলাদেরকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য মাছজিদে আসা থেকে
বারণ করা যাবে না।
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, রায়হানুল মুবারক (নারায়ণঞ্জ)
সম্পূরক উত্তর:
জবাব: আলহামদুলিল্লাহ আমার স্নেহের ছোট ভাই মাওলানা রায়হানুল মুবারক (সোনারগা,নারায়ণঞ্জ) এ বিষয়ে সুন্দর দলিলভিত্তিক আলোচনা
করেছেন। আমি সাথে একটু যুক্ত করতে চাচ্ছি; যেহেতু সাম্প্রতিক
সময়ে এটি একটি আলোচিত মাসয়ালা। নারীদের ফেতনা সর্বত্র, এমতাবস্থায়
তাদের জন্য জামাতে শরিক হওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত। আলোচনা সুবিধার জন্য কয়েকভাগে ভাগ
করছি-
প্রশ্ন: ক। মহিলাদের জন্য জামাতের নামাজ পড়া আবশ্যক কিনা?
উত্তর: ক। না, ইসলামি
শরিয়ত নারীদের ওপর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা আবশ্যক করেনি। দলিল:
হাদিস নং-০১
আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘জামাতে জুমার নামাজ পড়া প্রত্যেক
মুসলমানের ওপর অকাট্য ওয়াজিব, তবে ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব নয়।
তাখরিজ: আবু দাউদ- ১০৬৭
নোট: ইমাম হাকেম রহ. বলেন,
হাদিসটি ইমাম বুখারি ও মুসলিম (রহ.)-এর শর্ত অনুযায়ী সহিহ। সূত্র: আল মুস্তাদরাক : ১/২৮৮
হাদিস নং-০২
হজরত মুহাম্মদ ইবনে কাব আল
কুরাজি (রহ.) বলেন,, রাসুল (ﷺ)
বলেন, ‘নারী ও
দাসের ওপর জুমার নামাজ নাই। তাখরিজ:
মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক-৫১৯৬
নোট: হাদিসটির সনদ সহিহ
হাদিস নং-০৩
যেসব পুরুষ প্রয়োজন ছাড়া
মসজিদে না এসে ঘরে নামাজ পড়ে, তাদের বিষয়ে রাগান্বিত হয়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যদি ঘরগুলোতে নারী ও শিশুরা না থাকত,
তাহলে আমি এশার নামাজের ইমামতির দায়িত্ব অন্যজনকে দিয়ে কিছু যুবকদল
দিয়ে তাদের ঘরের সব কিছু
জ্বালিয়ে দিতাম। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ,
হাদিস : ৮৭৯৬
এতে বোঝা যায়, যখন নামাজের জামাত চলতে থাকে,
তখন নারীরা ঘরে থাকে।
প্রশ্ন: খ।
রসূল এর যুগে কি কি শর্ত সাপেক্ষে মসজিদে আসার অনুমতি ছিল?
উত্তর: খ। রাসুলুল্লাহ
(ﷺ)-এর যুগে
মহিলাদের যে মসজিদে আসার অনুমতি ছিল, তা-ও অনেক শর্তসাপেক্ষ ছিল।
যথা—
.
(ক)সম্পূর্ণ আবৃত ও পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে।
দলিল: আয়েশা রা.বর্ণনা করেন-
كن نساء المؤمنات يشهدن مع
رسوالله صلي الله عليه و سلم صلاة الفجر متلفعات بمروطهن ثم ينقلبن الي بيوتهن حين
يقضين الصلاة لا يعرفهن أحد من الغرس .
মুমিন নারীগণ মোটা চাদরে আবৃত হয়ে রাসূল স.-এর সাথে ফজরের জামাতে
হাযির হতেন । বড় চাদরে তাদের মাথা পা পর্যন্ত ঢাকা থাকতো। নামায শেষে ঘরে ফেরার
সময়েও ভোরের অন্ধকারের কারণে কেউ তাদের চিনতে পারতো না। বুখারী : ৫৭৮
.
(খ) সেজে-গুজে খুশবু লাগিয়ে বের না হওয়া। দলিল:
قال لنا رسول الله صلي الله عليه
وسلم اذاشهدت احداكن المسجد فلا تمس طيبا. (مسلم)
রাসূল (ﷺ)
আমাদের সম্বোধন করে বলেন, তোমাদের কেও যদি মসজিদে গমন করে তাহলে সে যেনো সুগন্ধি ব্যবহার না করে।
তাখরিজ: মুসলিম-৪৪৩
.
(গ) বাজনাদার অলংকার, চুড়ি ইত্যাদি পরে আসতে
পারবে না। দলিল: হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন-
لا تمنعوا إماء الله مساجد الله
ولكن ليخرجن وهن تفلات.
(رواه أحمد في مسند و اسناده صحيح)
আল্লাহর বান্দীদের মসজিদ থেকে বারণ করো না। তবে তারা সাজসজ্জা
পরিপূর্ণ পরিহার করে আসে। তাখরিঝ: মুসনাদে আহমদ : ৯৬৪৫,
আবু দাউদ-৫৬৫
.
(ঘ) অঙ্গভঙ্গি করে চলতে পারবে না।
(ঙ) মসজিদে ও পথে নারী পুরুষের
সংমিশ্রণ না ঘটা।
.
দলিল: হযরত উম্মে সালমা রা. বর্ণনা করেন –
كان رسول الله صلى الله عليه
وسلم إذا سلم قام النساء حين يقضى تسليمه ويمكث هو فيمقامه يسيرا قبل ان يقوم. (رواه بخاري : ৮৭০)
রাসূল (ﷺ)
যখন নামায শেষে সালাম ফেরাতেন তখন কোনো প্রকার বিলম্ব না করে মহিলাগণ কাতার থেকে
উঠে চলে যেতেন। আর রাসূল স. আপন স্থানে কিছুক্ষণ বসে থাকতেন। (যাতে মহিলাদের সাথে
পুরুষের কোনো রকম সংমিশ্রণ না হয়)। তাখরিজ: বুখারী-৮৭০
এসব হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, রাসূল (ﷺ) চলাচলের পথে পুরুষ-নারীর সংমিশ্রণ না হওয়ার
শর্তে মহিলাদের মসজিদে গমনের অনুমতি দিয়েছেন।
।
(চ) অপ্রয়োজনে কোনো বেগানা পুরুষের সঙ্গে
কথা বলবে না। সর্বোপরি তাদের এই বের হওয়া ফিতনার কারণ হবে না।
তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫৬৫,
আহকামুল কোরআন, থানভি : ৩/৪৭১, বাজলুল মাজহুদ : ৪/১৬১)
কিন্তু রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিদায়ের কিছুদিন পর থেকেই। যখন এই শর্তগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত
হতে শুরু করে, তখন রাসুল (ﷺ)-এর
প্রাণ প্রিয় সাহাবিরা তা উপলব্ধি করতে পেরে নারীদের মসজিদে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা
জারি করেন।
প্রশ্ন: গ। বর্তমান যামানায় নারীদের জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার বিধান কি?
উত্তর: গ। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নিজ খেলাফত আমলে যখন মহিলাদের
পরিবর্তিত অবস্থা দেখেন এবং ফিতনার। আশঙ্কাও দিন দিন বাড়তে থাকে, তখন উম্মুল মুমিনিন
আয়েশা (রা.), ইবনে মাসউদ ও ইবনুজ জুবায়ের
(রা.)সহ বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম নারীদের মসজিদে না আসার আদেশ জারি করলেন। যেমন,
হাদিস নং-১
عن عبد الله بن سويد الأنصاري عن
عمته امرأة أبي حميد الساعدي : أنها جاءت النبي صلى الله عليه و سلم فقالت : يا رسول الله صلى الله عليه و سلم إني أحب الصلاة معك
فقال : قد علمت أنك تحبين الصلاة معي و
صلاتك في بيتك خير من صلاتك في حجرتك و صلاتك في حجرتك خير من صلاتك في دارك و
صلاتك في دارك خير من صلاتك في مسجد قومك و صلاتك في مسجد قومك خير من صلاتك في
مسجدي فأمرت فبني لها مسجد في أقصى شيء من بيتها و أظلمه فكانت تصلي فيه حتى لقيت
الله عز و جل
আব্দুল্লাহ বিন সুয়াইদ আল
আনসারী রাঃ তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদী এর স্ত্রী রাসূল (ﷺ) এর কাছে এসে বললেনহে আল্লাহর রাসূল!
নিশ্চয় আমি আপনার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজী (ﷺ) বললেন-আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে
পছন্দ কর। অথচ তোমার একান্ত রুমে নামায পড়া উত্তম
তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বসবাসের গৃহে নামায
পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বাড়িতে নামায পড়া উত্তম
তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়া উত্তম
আমার মসজিদে [মসজিদে নববীতে] নামায পড়ার চেয়ে। তারপর
তিনি আদেশ দিলেন তার গৃহের কোণে একটি রুম বানাতে। আর সেটিকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে
ফেললেন। তারপর সেখানেই তিনি নামায পড়তেন মৃত্যু পর্যন্ত। তাখরিজ: সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৯; ইলাউস সুনান-৩/২৬।
আসার-০১
عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَتْ لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم– مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ الْمَسْجِدَ كَمَا مُنِعَهُ
نِسَاءُ بَنِى إِسْرَائِيلَ. قَالَ يَحْيَى فَقُلْتُ لِعَمْرَةَ أَمُنِعَهُ نِسَاءُ بَنِى
إِسْرَائِيلَ قَالَتْ نَعَمْ.
অর্থ: আয়েশা (রা) বলেন. “যদি
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানতেন
যে, মহিলারা কি
অবস্থা সৃষ্টি করেছে , তা হলে বনী ইসরাইলের মহিলাদের যেমন
নিষেধ করা হয়েছিল, তেমনি এদেরও মসজিদে আসা নিষেধ করে দিতেন ।
(রাবী) ইয়াহইয়া ইবন সায়ীদ (র) বলেন, আমি আমরাহ (রা) কে
জিজ্ঞেস করলাম, তাদের কি নিষেধ করা হয়েছিল ? তিনি বললেন , হ্যাঁ ।” তাখরিজ: বুখারী-৮৩১ ই.ফা.
বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার
আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘আয়েশা (রা.)-এর এই মন্তব্য তো
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর
দুনিয়া থেকে বিদায়ের কিছুদিন পরের নারীদের সম্পর্কে। অথচ আজকের যুগের নারীদের
উগ্রতা আর বেহায়াপনার হাজার ভাগের এক ভাগও সে যুগে ছিল না। তাহলে এ অবস্থা দেখে
তিনি কী মন্তব্য করতেন?’
(উমদাতুল কারি : ৬/১৫৮)
এখন আমরা চিন্তা করে দেখতে
পারি যে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) নিজ যুগ তথা হিজরি নবম শতাব্দীর নারীদের
সম্পর্কে এ কথা বলেছেন। তাহলে আজ হিজরি পঞ্চদশ শতাব্দীতে সারা বিশ্ব যে অশ্লীলতা
আর
উলঙ্গপনার দিকে ছুটে চলেছে, বেপর্দা আর
বেহায়াপনার আজ যে ছড়াছড়ি, মেয়েরা যখন পুরুষের
পোশাক পরছে, পেট-পিঠ খুলে রাস্তাঘাটে বেড়াচ্ছে, ঠিক সে মুহূর্তে অবলা মা-বোনদের সওয়াবের স্বপ্ন দেখিয়ে মসজিদে আর ঈদগাহে
টেনে আনার অপচেষ্টা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।
আসার-০২
عن أبي عمرو الشيباني أنه رأى بن
مسعود يخرج النساء من المسجد ويقول أخرجن إلى بيوتكن خير لكن
অর্থ: আবু আমর শায়বানি (রহ.) বলেন,
আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে দেখেছি, তিনি
জুমার দিন নারীদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা
বের হয়ে যান। আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য উত্তম। তাখরিজ: আল
মুজামুল কাবির-৯৪৭৫
আসার নং-০৩
হজরত জুবায়ের ইবনুল আওয়াম
(রা.) তাঁর পরিবারের কোনো নারীকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজে যেতে দিতেন না। মুসান্নাফে
ইবনে আবি শায়বা-৫৮৪৬
নোট: হাদিসটির সনদ সহিহ
আসার নং-০৪
হজরত ইবনে ওমর (রা.) তাঁর
স্ত্রীদের ঈদগাহে বের হতে দিতেন না। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-৫৮৪৫
নোট: হাদিসটির সনদ সহিহ
প্রশ্ন: ঘ। নারীদের মসজিদে গমন নিয়ে ফিকাহবিদদের মতামত কি?
উত্তর: ঘ। প্রথমদিকের কিছু ওলামায়ে কেরাম বৃদ্ধাদের জন্য মাগরিব ও এশার সময়
ফিতনামুক্ত হওয়ার কারণে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। পরবর্তী ফিকাহবিদরা ফিতনার
ব্যাপকতার কারণে যুবতী ও বৃদ্ধা সবার জন্য সব নামাজে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ
করেছেন। সূত্র: শরহুস সগির : ১/৪৪৬, আল
মাজমু : ৪/১৯৮, আল মুগনি : ২/১৯৩
হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত
গ্রন্থ ‘বাদায়েউস সানায়ে’ তে বলা হয়েছে যে যুবতী নারীদের
মসজিদে যাওয়া ফিতনা। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/১৫৬)
.
আল্লামা ইবনে নুজাইম মিসরি ও আল্লামা হাসকাফি.(রহ.) বলেন, বর্তমান যুগে ফিতনার ব্যাপক প্রচলন হওয়ায় ফতোয়া হলো, সব নারীর জন্যই সব নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতে আদায় করা মাকরুহে তাহরিমি।
সূত্র:
আল বাহরুর রায়েক : ১/৬২৭-৬২৮, আদ্দুররুল
মুখতার : ১/৩৮০
প্রশ্ন: ঙ। হাদিসে তো নারীদেরকে মসজিদে
যেতে বাধা দিতে নিষেধ করা হয়েছে, তাহলে মাকরুহ হলো কিভাবে?
উত্তর: ঙ। আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের সূত্রে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন –
اذا استاذنت امرأة احدكم الي
المساجد فلا يمنعها .
(رواه البخاري)
তোমাদের স্ত্রীগণ মসজিদে আসার অনুমতি চাইলে তাদের নিষেধ করো না।
তাখরিজ: বুখারী-৫২৩৮
ব্যাখ্যা: আল্লামা ইবনে হাজর (রহ.) বলেন,
এ হাদিসে যদিও স্বামীকে নিষেধ করতে বারণ করা হয়েছে, এ বারণ কঠোর নিষেধ নয়, বরং তা হলো সাধারণ নিষেধ। এ
জন্যই স্বামী অনুমতি দিলেও ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান ফিতনার আশঙ্কায়
নারীদের মসজিদে আসা নিষেধ করতে পারবেন।
সূত্র: মিরকাতুল মাফাতিহ : ৩/৮৩৬
তথ্য সহযোগিতায়: https://muhammadsaifurbd.wordpress.com/
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
|
ব্যাংক
লোন থাকতে কুরবানী হবে কি? |
জিজ্ঞাসা-২০৬: ব্যাংক লোন থাকতে কুরবানী হবে
কি? (তারিখ- ২৫/০৬/২০২২ ঈসায়ি/ইংরেজি)
(সম্মানিত ভাই আরটি রফিক ৩৩ এসটি
সাভার সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে
দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
করছেন। অনেকে ঋণ-এর অজুহাতে কুরবানি থেকে বিরত থাকে। আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েকভাগে
ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। কুরবানি কার ওপর ও কখন ওয়াজিব হয়?
উত্তর: ক্ কুরবানীর
দিনসমূহে (১০, ১১ ও ১২ জিলহজ) যার কাছে আবশ্যকীয় প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা আবশ্যক।
নেসাব পরিমাণ হল, সাড়ে বায়ান্ন তোলা বা এর
সমমূল্য পরিমাণ অতিরিক্ত সম্পদ মজুদ থাকা। যা বর্তমান বাজার অনুপাতে ১৫১৬*৫২.৫=৭৯,৫৯০
(কথায় উনসত্তর হাজার পাঁচশত নব্বই )টাকা
(বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত)
দলিল:
(وَأَمَّا) (شَرَائِطُ الْوُجُوبِ) : مِنْهَا الْيَسَارُ وَهُوَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبِ صَدَقَةِ
الْفِطْرِ دُونَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبُ الزَّكَاةِ،………. وَالْمُوسِرُ فِي ظَاهِرِ الرِّوَايَةِ مَنْ لَهُ
مِائَتَا دِرْهَمٍ أَوْ عِشْرُونَ دِينَارًا أَوْ شَيْءٌ يَبْلُغُ ذَلِكَ سِوَى
مَسْكَنِهِ وَمَتَاعِ مَسْكَنِهِ وَمَرْكُوبِهِ وَخَادِمِهِ فِي حَاجَتِهِ الَّتِي
لَا يَسْتَغْنِي عَنْهَا، فَأَمَّا مَا عَدَا ذَلِكَ مِنْ سَائِمَةٍ أَوْ رَقِيقٍ
أَوْ خَيْلٍ أَوْ مَتَاعٍ لِتِجَارَةِ أَوْ غَيْرِهَا فَإِنَّهُ يُعْتَدُّ بِهِ مِنْ
يَسَارِهِ،(الفتاوى الهندية، كتاب الأضحية،
فصل شرائط الوجوب-5/292، رد المحتار، كتاب الاضحية-9/452-453، مجمع الانهر-4/167)
নোট: এখানে একটি বিষয় স্মরণ রাখতে
হবে যে, যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমান সম্পদ একবছর মালিকানায় থাকা শর্ত;
কিন্তু কুরবানির বেলায় তা নয়। জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে নিসাব
পরিমান সম্পদ থাকলেই কুরবানি ওয়াজিব হবে।
প্রশ্ন: খ। লোন/ঋণ
থাকলে কুরবানি ওয়াজিব/দিতে হবে কিনা?
প্রশ্ন: খ। শরীয়তের বিধান হলো কাহারো ঋণ
যদি এত হয় যা বাদ দিলে তার কাছে নিসাব পরিমাণ যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে না তাহলে তার
ওপর যাকাত ফরয নয়। মুয়াত্তা মালেক ১০৭; মুসান্নাফে আবদুর
রাযযাক হাদীস ৭০০৩, ৭০৮৬, ৭০৮৯,
৭০৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৪৭-৫৪৮;
আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৩; বাদায়েউস সানায়ে
২/৮৩
কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে
যে, এই প্রসিদ্ধ
মাসআলাটি সকল ঋণের ক্ষেত্রে নয়।
ঋণ দুই ধরনের হয়ে থাকে।
ক. প্রয়োজনাদি পূরণের
জন্য বাধ্য হয়ে যে ঋণ নেওয়া হয়।
খ. ব্যবসা-বাণিজ্যের
উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেওয়া হয়।
,
প্রথম প্রকারের ঋণ সম্পদ
থেকে বাদ দিয়ে যাকাতের নিসাব বাকি থাকে কিনা তার হিসাব করতে হবে। নিসাব থাকলে
যাকাত/কুরবানি
ওয়াজিব হবে, অন্যথায় নয়।
,
কিন্তু যে সকল ঋণ উন্নয়নের
জন্য নেওয়া হয় যেমন কারখানা বানানো, কিংবা ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করার
উদ্দেশ্যে বিল্ডিং বানানো অথবা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নিলে যাকাতের হিসাবের
সময় সে ঋণ ধর্তব্য হবে না। অর্থাৎ এ ধরনের ঋণের কারণে যাকাত কম দেওয়া বা কুরবানি
থেকে বিরত থাকা যাবে না। তাখরিজ: মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৮৭
وفي رد المحتار- ( قوله أو مؤجلا إلخ ) عزاه في المعراج إلى شرح الطحاوي ، وقال : وعن أبي حنيفة لا يمنع وقال الصدر الشهيد : لا رواية فيه ، ولكل من المنع وعدمه وجه، زاد القهستاني
عن الجواهر : والصحيح أنه غير مانع (رد المحتار-كتاب الزكاة، مطلب الفرق بين السبب والشرط والعلة-3/177، بدائع الصنائع-2/86
আপনার প্রশ্নে বর্ণিত
ব্যাংকে লোন যদি,
(১) প্রথম
প্রকারের হয়,তাহলে সেটা বাদ দিয়ে যদি আপনার নিকট যেহেতু
নেসাব পরিমাণ টাকা আছে,তাহলে ঋন ব্যাতিত সম্পদের উপরেই আপনার
কুরবানি ওয়াজিব হবে।
(২) আর যদি
দ্বিতীয় প্রকারের ঋণ হয়,তাহলে বিধান হলোঃ
আপনি যাদের কাছ থেকে যেই লোন
নিয়েছেন, এর বছরান্তের আদায়যোগ্য কিস্তি ছাড়া যদি আপনার কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলার
রূপার সমমূল্য বর্তমান বাজর দর-৭৯,৫৯০ (কথায়, উনসত্তর হাজার পাঁচশত নব্বই) টাকা বাকি থাকে, তাহলে আপনার উপর কুরবানি আদায় করা
আবশ্যক। কারণ দীর্ঘমেয়াদী ঋণ থাকা কুরবানি/যাকাত আবশ্যক হবার
জন্য প্রতিবন্ধক নয়।
সারকথা: আপনি যদি দ্বিতীয় প্রকারের ঋণ
হয়, ঈদের দিনগুলোতে
মাসিক কিস্তি বাদ দিয়ে, অতিরিক্ত উনসত্তর হাজার
পাঁচশত নব্বই টাকা থাকলে, আপনার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে।
তথ্যসহযোগিতায়: আহলে হক মিডিয়া; ISLAMIC ONLINE MADRASHA
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
টিএ ডিএ বিল পাস করানোর জন্য
ঘুষ দেওয়া জায়েজ হবে কিনা? |
|
জিজ্ঞাসা-২০৭: সরকারি যে কোন অফিস থেকে টিএ ডিএ
বিল পাস করানোর জন্য ঘুষ দেওয়া জায়েজ হবে কিনা? (তারিখ- ২৫/০৬/২০২২ ঈসায়ি/ইংরেজি)
(সম্মানিত শায়েখ! বাআমল আলেম আরটি ১২৩৭৬ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। ২১ বীর, কুমিল্লা সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: ঘুষের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা
সবাই অবগত। কিছু কিছু গুনাহ আছে যা কোন
ধর্মে তা সমর্থন করে না। তারমধ্যে অন্যতম হলো ঘুস। আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জ্যন তিনভাগে ভাগ
করছি।
প্রশ্ন: ক। ঘুষ কাকে বলে?
উত্তর: ক। ঘুষ শব্দটি বাংলা, দেশি শব্দ। কোনো কাজে সাহায্য লাভের জন্য বা কার্যসিদ্ধির জন্য গোপনে
দেওয়া পুরস্কার বা অর্থ, উত্কোচ। সূত্র: সংসদ বাংলা অভিধান
কোনো প্রতিষ্ঠানে কমকতা কমকতা কমচারী তাদের কাজে জন্য নিদিষ্ট বেতন ভাতা
পায়। কিনতু তারা যদি ঐ কাজে জন্য অন্যয়ভাবে আরও বেশি কিছু গ্রহণ করে তা হলো ঘোষ।
প্রশ্ন: খ। ঘুষ
গ্রহণ করা কি জায়েজ আছে?
প্রশ্ন: খ। না, কোন
অবস্থায় ঘুষ গ্রহণ করা জায়েজ নেই। দলিল:
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم
بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا
مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের
ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে উৎকোচ
দিও না। সুরা বাকারা- ১৮৮
আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন,
«لَعَنَ اللهُ الرَّاشِيَ
وَالْمُرْتَشِيَ فِي الْحُكْمِ»
অর্থ: বিচার-ফায়সালায়
ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ের উপরে আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ,
হাদীস নং ৯০১১
প্রশ্ন: গ। মাজলুম/নিরাপায়
হয়ে ঘুষ দেওয়া কি জায়েজ?
উত্তর: গ। হ্যাঁ, মাজলুম/নিরাপায়
হয়ে ঘুষ দেওয়া কি জায়েজ আছে। অর্থাৎ মাজলুম ব্যক্তি যদি বৈধ কোনো পন্থায় নিজের হক
উদ্ধার করার সক্ষমতা রাখে তাহলে সে তাই করবে। আর যদি বৈধ পদ্ধতিতে উদ্ধার করার
সক্ষমতা না থাকে; তাহলে অর্থ প্রদানের মাধ্যমেও অধিকার রক্ষা
করতে পারে। তবে মুমিন মুসলমানদের জন্য এই অনুমতির বিষয়টা একান্ত অপারগ পরিস্থিতিতে
পালন করা উচিত। সূত্র: রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-৬০৭, ফাতহুল
ক্বাদীর,খণ্ড-৭,পৃষ্ঠা-২৫৫, বাহরুর রায়েক,খণ্ড-৬,পৃষ্ঠা-২৬২
সারকথা: আপনার প্রশ্নে বর্ণিত টিএ,ডিএ যদি বাস্তবিক দাবি হয়, (আর দাবিটা যদি অসত্য হয়,
তাহলে তো ডিমান্ট করা এমনিতে জায়েজ নেই)। সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা-ফিকির করার পরও যদি লক্ষ্য
অর্জিত না হয়। এমতাবস্থায় অপারগতার কারণে
ঘুষ দেওয়া জায়েজ হবে। কিন্তু ঘৃণাভরে ঘুষটা দিতে হবে। হারাম জিনিস হালাল মনে করলে ঈমান থাকে না;
তেমনি হারাম কাজে খুশি হওয়াও ঈমান যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
তাকওয়া: তবে এ বিষয়ে কেউ ঘুষের ভয়ে মূল টাকা/দাবিও
ছেড়ে দেয়; তাহলে তার জন্য অবশ্যই এটা উত্তম/সর্বোচ্চ তাকওয়া। যেমন,
আবু দারদা (রা.) বলেন, পরহেজগারিতা পরিপূর্ণ হয় যখন
বান্দা তার প্রতিপালককে ভয় করবে। এমনকি সে অণু পরিমাণ গুনাহের ব্যাপারেও সতর্ক
থাকে। সূত্র: জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ৮/২২
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মো: আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
সিজদার
মধ্যে পা কিভাবে রাখবে মিলিয়ে না, ফাকা? |
জিজ্ঞাসা-২০৭: সালাতের মধ্যে সিজদার সময় কি পা
মিলিয়ে রাখতে হবে না পা ফাঁক রাখতে হবে, দলিলসহ
জানালে উপকৃত হব। (তারিখ- ২৫/০৬/২০২২ ঈসায়ি/ইংরেজি)
(আমার পরম শ্রদ্ধেয় স্যার (প্রশিক্ষক)
আরটি মো. ওলিউল্লাহ, 24 ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড জিয়া কলোনি-ঢাকা
সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান ও ইজ্জতের জীবন দান
করুন।)
জবাব:
এই বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে উভয় রকমের আমল পাওয়া যায়।
তাই সেজদায় দুই পায়ের মাঝে
ফাকা রাখা বা মিলিয়ে রাখা উভয়টিই জায়েজ আছে
কোনো সমস্যা নেই।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ
عُثْمَانَ، حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ، حَدَّثَنِي عُتْبَةُ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللهِ
بْنُ عِيسَى، عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ سَهْلٍ السَّاعِدِيِّ، عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ،
بِهَذَا الْحَدِيثِ قَالَ وَإِذَا سَجَدَ فَرَّجَ بَيْنَ فَخِذَيْهِ غَيْرَ
حَامِلٍ بَطْنَهُ عَلَى شَىْءٍ مِنْ فَخِذَيْهِ
আবূ হুমায়িদ (রাঃ) সূত্রে
পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি সিজদাতে স্বীয় পেট ঊরু
থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতেন।
(আবু দাউদ ৭৩৫)
روته أم المؤمنين عائشة رضي الله
عنها قالت : (فقدت رسول الله صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وكان معي على فراشي ، فوجدته ساجداً ، راصّاً عقبيه ، مستقبلاً
بأطراف أصابعه القبلة ، فسمعته يقول : أعوذ برضاك من سخطك ، وبعفوك من عقوبتك ، وبك منك ، أثني عليك ، لا
أبلغ كل ما فيك) .
أخرجه الطحاوي في "بيان مشكل الآثار" (1/104) ، وابن المنذر في "الأوسط"
(رقم/1401) وابن خزيمة في صحيحه (1/328) ، وابن حبان في صحيحه (5/260) ، والحاكم في "المستدرك"
(1/352) ، وعنه
البيهقي في "السنن الكبرى" (2/167) .
সারমর্মঃ
আয়েশা রাঃ বলেন আমি
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে অনুপস্থিত মনে করলাম,
তিনি ছিলেন আমার বিছানাতে।
তাকে পেলাম পা মিলিয়ে সিজদাহ
রত অবস্থায়, সকল আঙ্গুল কিবলার দিক অবস্থায় ,,,,,
کان صلی اللہ علیہ وسلم إذا رکع
بسط ظھرہ وإذا سجد وجّہ أصابعہ قِبَل القبلة فتفاجّ یعني وسّع بین رجلیہ (وکلا الحدیثین صحیح أو حسن: إعلاء السنن)
সারমর্মঃ
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখন সেজদাহ দিতেন,তখন দুই পায়ের মাঝে প্রশস্ততা
রাখতেন।
.
সুতরাং উভয় পদ্ধতিই সুন্নাহ
দ্বারা প্রমানীত ।
,
এর কোনটি অবলম্বন করা
মুস্তাহাব,সেই মর্মে ফুকাহায়ে কেরামগন মতবিরোধ করেছেন।
অনেকেই পা মিলিয়ে রাখার
পক্ষে মত দিয়েছেন।
অনেকে পায়ের মাঝে ফাকা রাখার
পক্ষে মত দিয়েছেন।
সমন্বয়: অনেকে বলেছেন যে ছেলেরা পায়ের মাঝে ফাকা
রাখবে,মেয়েরা পা মিলিয়ে রাখবে।
এই মতটির উপর আমল করলে উভয়
হাদীসের উপর আমল হয়।
তথ্যসহযোগিতায়: আহলে হক মিডিয়া; ISLAMIC ONLINE MADRASHA
খাসি দ্বারা কুরবানি হবে
কি? |
জিজ্ঞাসা-১০৮: আপনার এই লেখাটি পড়ে দুইটি প্রশ্ন জানতে পারলাম
খাসি/অন্ডকোষ বিহীন প্রাণী যারা কোরবানি হবে কিনা আর চাউল সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত নয়
কেননা এতে জ্বালানির অপচয় হয়। তারিখ-২৭/০৬/২২ ঈসায়ি/ই ইংরেজি।
(সম্মানিত ভাই ধর্ম শিক্ষক মোঃ নুরুল আমিন –এর আলোকে)
জবাব: আপনার ফেসবুকের লেখাটি পডলাম, কিন্তু
দুঃখজনক হলো তিনি কোন নস উল্লেখ করেননি। ইসলামী শরীয়তের কোন বিষয়কে হারাম বা মাকরূহে
তাহরীমী সাব্যস্ত করতে হলে শক্তিশালী নসের প্রয়োজন হয়। যাইহোক আপনার প্রশ্ন কেউ সহজ
ভাবে বুঝার জন্য দুটি ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। খাসি বা অন্ডকোষ বিহীন প্রাণীর দ্বারা কুরবানী জায়েজ
হবে কি?
উত্তর: ক। হ্যাঁ, খাসি
বা অণ্ডকোষ বিহীন গরু ছাগল ভেড়া দুম্বা দ্বারা কুরবানী হবে এতে বিন্দুমাত্র সমস্যা
নেই। দলিল: ০১ নং হাদিস
عن جابر رضی الله تعالی عنه قال
ذبح النبی صلی الله علیه وسلم یوم الذبح کبشین اقرنین املحین موجوئین۔
অর্থাৎ, হযরত
জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী
করিম (ﷺ) সাদা কালো মিশ্রিত রঙ্গের শিং বিশিষ্ট দু’টি খাসী ছাগল কোরবানী ঈদের দিন জবেহ করেছেন। তাখরিজ: আবু দাউদ শরীফ, ৩৮৬
পৃ. মিশকাত শরীফ, ২২৮
পৃষ্ঠা
২ নং হাদিস
حدثنا محمدبن یحی ثنا عبد الرزاق
ابن سفیان الثوری عبد الله بن محمد بن عقیل عن ابی سلمة عن عاٸشة و عن ابی هریرة
ان رسول الله صلی الله علیه وسلم کان اذا اراد ان یضحی اشتری کبشین عظیمین سمینین
اقرنین املحین موجوأین فذبح احدهما عن امته لمن شهد لله بالتوحید و شهد له بالبلاغ
و ذبح الاخر عن محمد وعن ال محمد صلی الله علیه وسلم۔
অর্থাৎ, হযরত
আয়েশা সিদ্দিকা ও হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন
কোরবানীর ইচ্ছা করতেন তখন দু’টি মোটা তাজা, গোশতযুক্ত, শিং যুক্ত, সাদা কালো মিশ্রিত রঙ্গের ও খাসীকৃত দুম্বা (মেষ) ক্রয় করতেন।
অত:পর এর একটি আপন উম্মতের যারা আল্লাহ’র তাওহীদের
স্বাক্ষী দেয় এবং তার নবুওয়াতের প্রচারের স্বাক্ষী দেয়, তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মদ (ﷺ) ও তার পরিবার বর্গের পক্ষ থেকে কোরবানী করতেন।
তাখরিজ: ইবনু মাজাহ শরীফ, ২২৫
পৃষ্ঠা।
সারকথা: খাসীকৃত প্রাণী ত্রুটিপূর্ণ নয়। কারণ এটি
ছাগলের কোন রোগ নয়। বরং খাসীর গোশত তুলনামূলক
পবিত্র, দুর্গন্ধমুক্ত ও সুস্বাদু হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে সর্বদা দু’টি করে ‘খাসী’
(خَصِيَّيْنِ- مَوْجُوْئَيْنِ) কুরবানী দিতেন (হাকেম হা/৭৫৪৭; আহমাদ
হা/২৩৯১১; ইরওয়া হা/১১৪৭, সনদ
ছহীহ)। ছহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ)
বলেন, ‘খাসী’
করার
কারণে কেউ কেউ এটাকে খুঁৎওয়ালা পশু বলে অপসন্দ করেছেন। কিন্তু মূলতঃ এটি কোন খুঁৎ নয়।
বরং এর ফলে গোশত রুচিকর ও সুস্বাদু হয় এবং দুর্গন্ধ দূরীভূত হয় (ইবনু হাজার আসকালানি, ফাতহুল
বারী শরহ ছহীহুল বুখারি ১০/১২)। ইবনু কুদামা বলেন, খাসীই
কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু’টি খাসী দিয়েই কুরবানী করতেন (মির‘আত ৫/৯১)।
প্রশ্ন: খ। সেদ্ধ চাল খাওয়া উচিত নয় কারণ, এতে
জ্বালানির অপচয় হয়।
উত্তর: খ। উক্ত ব্যক্তি যে একটি
খাড়া যুক্তি খাড়া অজুহাত উল্লেখ করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয় কেননা আমাদের পৃথিবীতে
হাজারো রকমের খাবার যা চাল গম ভুট্টা থেকে
প্রক্রিয়াজাত হয়ে নতুনভাবে তৈরি হচ্ছে, এতে
প্রচুর জ্বালানি খরচ হচ্ছে। যা রাসূল (ﷺ) এর জমানায় ছিল না,
তাহলে
এসব কি হারাম, খাওয়া যাবেনা। খাবারে মূল বিষয় হল হালাল হওয়া।
মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا
مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ
إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
অর্থ: হে মানব মন্ডলী, পৃথিবীর
হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষন কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে
তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সূরা বাকারা-১৬৮
নোট: কেউ যদি আদিল্লায়ে আরবা
ব্যতীত কোন কথা বলে আমাদের উচিত, বিব্রত না হওয়া, বরং
তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করা যাতে তারা স্তব্ধ হয়ে যায়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম
শিক্ষক, মোঃ আব্দুর রাজ্জাক,
49 ফিল্ড
রেজিমেন্ট আর্টিলারি। শেখ হাসিনা সেনানিবাস,
বরিশাল।
মাতৃভূমিকে মা বলা যাবে কি |
জিজ্ঞাসা-২০৯: আসসালামুয়ালাইকুম
মুহতারাম শায়েখ এর নিকট জানতে চাই নিজ জন্মভূমি কে মা বলা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে
কতটুকু সঠিক? তারিখ-২৮/০৬/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত শাইখ সত্যান্বেষী আলিম
আরটি আখতারুজ্জামান দা.বা. প্রশ্নের আলোকে)
জবাব: ওয়ালাইকুমসসালাম রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আল্লাহ আপনাকে দোজাহানের সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন। আপনার প্রশ্নকে সহজ ভাবে বোঝার জন্য আমরা কয়েকটি
ভাগে ভাগ করছি: প্রথম কথা হল, কবিতা যথার্থ কবিতা হওয়ার পেছনে
আরো কয়েকটি উপাদান বা অনুষঙ্গ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো-
ছন্দ, শব্দালঙ্কার, রূপক-উপমা -প্রতীক-রূপকল্প
ইত্যাদি। কবিরা প্রয়োজন,
নিজস্ব রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী প্রচলিত-অপ্রচলিত, নতুন-পুরাতন, সাধু-চলতি ইত্যাদি সব ধরনের শব্দই ব্যবহার
করে থাকেন।
প্রশ্ন : ক। রুপক কাকে বলে?
উত্তর: ক। ভাষা
আলঙ্কার এটার জন্য অলঙ্কৃত প্রভাব, সরাসরি অন্য একটি জিনিস উল্লেখ করে একটি জিনিস
বোঝায়। পৃথিবীর সকল ভাষায় রূপক শব্দ ব্যবহার
করা হয় বিশেষ করে কবিতায় কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে দেয়া হল: (১)আরবি সাহিত্যে রূপক
শব্দের ব্যবহার: وقالت عائشة رضى الله تعالى
عنه:
لنا شمس وللآفاق شمس + وشمسى خير من شمس السماء،، وشمس الناس تطلع بعد فجر + وشمسى تطلع
بعد العشاء. অর্থ:
"আমার একটি সূর্য আছে, আকাশেরও একটি সূর্য আছে। আমার সূর্য আকাশে সূর্য চেয়েও উত্তম। মানুষের সূর্য
ওঠে ফজরের পরে আর আমার সূর্য উদিত হয় এশারের পরে।"। উক্ত কবিতায় হজরত আয়েশা রা. রাসূল (ﷺ) এর সৌন্দর্য ও উজ্জ্বলতা তার চেহারার নূরকে
সূর্যের সাথে তুলনা করেছেন।
(২) ইংরেজি সাহিত্যের রূপকের সবচেয়ে
সাধারণভাবে উদ্ধৃত উদাহরণগুলির মধ্যে একটি "সমস্ত বিশ্বের একটি পর্যায়"একাকীত্ব
থেকে যেমন আপনি এটি পছন্দ:
সমস্ত বিশ্বের একটি পর্যায়,
এবং সমস্ত পুরুষ এবং মহিলা কেবল
খেলোয়াড়;
তাদের প্রস্থান এবং প্রবেশদ্বার
রয়েছে ...
—উইলিয়াম শেক্সপিয়ার,
এই উদ্ধৃতিটি একটি রূপককে প্রকাশ
করে কারণ বিশ্ব আক্ষরিক অর্থে একটি পর্যায় নয়। বিশ্বটি একটি মঞ্চ বলে জোর দিয়ে শেক্সপিয়ার
বিশ্বের মেকানিক্স এবং এর মধ্যে থাকা মানুষের আচরণ সম্পর্কে বোঝার জন্য বিশ্বের এবং
একটি মঞ্চের তুলনা করার পয়েন্ট ব্যবহার করে।
(৩) বাংলা কবিতায় রূপক শব্দের ব্যবহার:
"রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?"
এখানে মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফারুক
আহমেদ পাঞ্জেরী দ্বারা (পাঞ্জেরী অর্থ জাহাজের অগ্রভাগে যিনি থাকেন) মুসলিম জাতির কর্ণধার
বুঝিয়েছেন। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা
আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো স্বদেশকে বোঝাতে রূপক অর্থে মা শব্দ ব্যবহারে কোন সমস্যা
নেই।
প্রশ্ন: খ। বিজাতীয় ভাষা বা শব্দ ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তর: খ। বিজাতীয় যেসব ভাষা তাদের ধর্মের সাথে নির্দিষ্ট
সেটা মুসলিম ব্যবহার করতে পারে না। যেমন আল্লাহ ঈশ্বর, ভগবান, যীশু
ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা। দলিল: Surah Al-Araf, Verse 180:
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ
الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ
سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থ: আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম
নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা
তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।
সূরা আরাফ-১৮০
সারকথা: শেষ কথা হল স্বদেশ বা
মাতৃভূমির রূপক হিসেবে মা শব্দ ব্যবহার করা কোরআন হাদিসের সাথে কোন সংঘর্ষিক নয়। ভাষা
বৈচিত্র্য রব্বুল আলামীনের একটি মহান দান। যেমন তিনি বলেন,
وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ إِنَّ فِي
ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ
তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল
ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে
নিদর্শনাবলী রয়েছে। সূরা রুম-২২
الله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন, ধর্ম শিক্ষক, মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, 49 ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি। শেখ
হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
সুদি ব্যাংকে চাকরি করে
তাদের সাথে কুরবানি দেওয়া প্রসঙ্গে |
জিজ্ঞাসা-২১০: বিজ্ঞজনের কাছে
আমার প্রশ্ন - কোন এক ভাই আগে সুদী ব্যাংকে চাকরি করতেন এখন আর করেন না তবে চাকরির
সুবাদে তিনি পেনশনের টাকা পাচ্ছেন,
বাড়ি
ভাড়া পাচ্ছেন তার সাথে কোরবানি করা ঠিক হবে কিনা? (তারিখ- ২৮/০৬/২০২২ ঈসায়ি/ইংরেজি)
(আমার
পরম শ্রদ্ধেয় স্যার (প্রশিক্ষক) আরটি মো. ওলিউল্লাহ, 24 ইঞ্জিনিয়ার
কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড জিয়া কলোনি-ঢাকা সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে
দুজাহানে সম্মান ও ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: প্রথম কথা হলো, আপনি
উক্ত ব্যক্তিকে সুদী ব্যাংকে চাকরির কথা বলেছেন সুতরাং সুদী ব্যাংকের বেতন এবং পেনশন
দুটি হারাম। তাই তার সাথে কোরবানি দিলে কোরবানি হবে না। দলিল:
হাদিস নং-০১
عبد الله بن مسعود عن أبيه عن
النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ খায়,
যে সুদ
খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়,
আর দলিল
যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন। তাখরিজ: আহমাদ-৩৮০৯, মুসনাদে
আবি ইয়ালা-৪৯৮১
তবে যদি সুদী কাজে জড়িত না হতে
হয়, বরং তার কাজের ধরণ এমন হয় যেমন ড্রাইভার, ঝাড়ুদার, দারোয়ান, জায়েজ
কারবারে বিনিয়োগ ইত্যাদি হয় তাহলে যেহেতু এসবে সরাসরি সুদের সহায়তা নেই তাই এমনটি করার
সুযোগ আছে।
আর হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার
বিষয়ের ক্ষেত্রে শরয়ী মূলনীতি হল-যদি বেতনটি হালাল ও হারাম মালের সাথে মিশ্রিত হয়, আর হারাম
মাল বেশি হয়, তাহলে তা নেয়া জায়েজ নয়। তবে যদি হারাম মাল কম হয়
তাহলে বেতন নেয়া জায়েজ হবে।
ولا يجوز قبول هدية أمراء الجور
لأن الغالب في مالهم الحرمة إلا إذا علم أن أكثر ماله حلال بأن كان صاحب تجارة أو
زرع فلا بأس به لأن أموال الناس لا تخلو عن قليل حرام فالمعتبر الغالب (الفتاوى
الهندية، كتاب الكراهية، الثاني عشر في الهدايا والضيافات-5/342)
অনুবাদ-জালেম বাদশাহর হাদিয়া
গ্রহণ জায়েজ নয়। কেননা তার অধিকাংশ মাল হয় হারাম। তবে যদি জানা যায় যে, তার
অধিকাংশ মাল হালাল, এ হিসেবে যে সে ব্যাবসায়ী বা জমিদার, তাহলে
তার থেকে হাদিয়া গ্রহণ করাতে সমস্যা নেই। কেননা সাধারণত মানুষের মাল অল্প হারাম থেকে
মুক্ত নয়। তাই এতে আধিক্যের বিষয়টি বিবেচিত হবে। { ফাতওয়ায়ে
হিন্দিয়া-৫/৩৪২}
ব্যাংকের অবস্থা এই যে, তার
পূর্ণ সম্পদ কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা-
১-মূলধন। ২-সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত
টাকা। ৩-জায়েজ ব্যবসার আমদানী। ৪-সুদ এবং হারাম ব্যাবসার আমদানী।
এ চারটি বিষয়ের মাঝে কেবল ৪র্থ
সুরতটি হারাম। বাকিগুলো যদি কোন হারাম কাজ না হয় তাহলে মূলত জায়েজ।
যেসব ব্যাংকে প্রথম ৩টি বিষয়ের
লেনদেন অধিক। আর ৪র্থ বিষয়টি তথা হারাম লেনদেনের লভ্যাংশ কম সেসব ব্যাংকে সেসব ডিপার্টমেন্টে
চাকরী করা যাতে হারাম কাজ করতে না হয় তাহলে তা জায়েজ হবে। এবং বেতন নেওয়াও জায়েজ হবে।
তবে উত্তম হল এ চাকরীও ছেড়ে দেয়া।
কিন্তু যদি হারাম আমদানী বেশি
হয় হালালের তুলনায়, বা হারাম কাজে জড়িত হতে হয় তাহলে উক্ত ব্যাংকে চাকরী
করা জায়েজ নয়। এ থেকে বেতন নেওয়াও জায়েজ নয়। বেতন নিলে তা হারাম হিসেবে গণ্য হবে। সূত্র: ফাতওয়ায়ে
উসমানী-৩/৩৯৪-৩৯৬
সারকথা হলো: আপনি উল্লেখ করেননি
উক্ত ব্যক্তি ব্যাংকের কোন পোস্টে চাকরি করেন,
যদি
তিনি সরাসরি সুদের কাজে জড়িত হোন তাহলে বেতন হারাম। সরাসরি সুদের কাজে না হয়, তাহলে
জায়েজ আর দ্বিতীয়টি হলো অধিকাংশই টাকা হারাম হয় তাহলে, বেতন-ভাতা
হারাম হয়ে যাবে। উক্ত ব্যক্তির সাথে কোরবানি দেওয়া সন্দেহ থেকেই যায়। না দেওয়া
ই উত্তম।
والله اعلم بالصواب উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম
শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক 49 ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি শেখ
হাসিনা সেনানিবাস বরিশাল।
স্ত্রী
সম্পদশালী হলে কুরবানি দিতে হবে কি, যৌথ পরিবারের কুরবানি |
জিজ্ঞাসা-২১১: শাইখদের কাছে জানতে চাই, স্ত্রী যদি সম্পদশালী হয় সেই পরিবারে স্বামীর পক্ষ
থেকে কুরবানী করা হলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হবে কিনা? আর স্ত্রী
কুরবানী যে না করলে সে গুনাহগার হবে কিনা?
একান্নবর্তী
পরিবারে বাবা এবং সকল সন্তান সম্পদশালী হলে ওই পরিবারে বাবার পক্ষ থেকে একটি গরুর অংশ
অথবা একটি ছাগল কুরবানী দিলে পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে তা আদায় হবে কিনা? মেহেরবানী
করে দলিলসহ জানাবেন। সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য পরিবার নিয়ে থাকেন, বাবাকে
মাসে মাসে টাকা পাঠান, কুরবানিতেও টাকা পাঠান, কুরবানীর
সময় দুটি কুরবানী দেওয়া তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে যায়। অতএব বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী
করা ওই পরিবারের জন্য যথেষ্ট কিনা? তারিখ-২৯/০৬/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি।
(সম্মানিত শায়েখ, আমার
পরম শ্রদ্ধেয় বড় ভাই আরটি শরীফ, ব্যান ইঞ্জিনিয়ার (কনস্ট্রাকশন)/
21 জুবা, সাউথ সুদান। আল্লাহ তাকে বিদেশের মাটিতে শান্তি ও নিরাপদে রাখুন )
জবাব: জাযাকাল্লাহ খাইরান আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সওয়াল
করেছেন, যা অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে ভুলের মধ্যে রয়েছে। যাইহোক আপনার
প্রশ্নকে সহজ ভাবে বোঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করেছি:
প্রশ্ন:
ক। কুরবানি কার ওপর ও কখন ওয়াজিব হয়?
উত্তর: ক। কুরবানীর
দিনসমূহে (১০, ১১ ও ১২ জিলহজ) যার কাছে আবশ্যকীয় প্রয়োজন অতিরিক্ত
নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা আবশ্যক।
নেসাব পরিমাণ হল, সাড়ে
বায়ান্ন তোলা বা এর সমমূল্য পরিমাণ অতিরিক্ত সম্পদ মজুদ থাকা। যা বর্তমান বাজার অনুপাতে
১৫১৬*৫২.৫=৭৯,৫৯০ (কথায় উনসত্তর হাজার পাঁচশত নব্বই )টাকা (বাজুস
কর্তৃক নির্ধারিত)
দলিল:
(وَأَمَّا) (شَرَائِطُ الْوُجُوبِ) : مِنْهَا الْيَسَارُ وَهُوَ مَا
يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبِ صَدَقَةِ الْفِطْرِ دُونَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبُ
الزَّكَاةِ،………. وَالْمُوسِرُ فِي ظَاهِرِ الرِّوَايَةِ مَنْ لَهُ مِائَتَا
دِرْهَمٍ أَوْ عِشْرُونَ دِينَارًا أَوْ شَيْءٌ يَبْلُغُ ذَلِكَ سِوَى مَسْكَنِهِ
وَمَتَاعِ مَسْكَنِهِ وَمَرْكُوبِهِ وَخَادِمِهِ فِي حَاجَتِهِ الَّتِي لَا
يَسْتَغْنِي عَنْهَا، فَأَمَّا مَا عَدَا ذَلِكَ مِنْ سَائِمَةٍ أَوْ رَقِيقٍ أَوْ
خَيْلٍ أَوْ مَتَاعٍ لِتِجَارَةِ أَوْ غَيْرِهَا فَإِنَّهُ يُعْتَدُّ بِهِ مِنْ
يَسَارِهِ،(الفتاوى الهندية، كتاب الأضحية، فصل شرائط الوجوب-5/292، رد المحتار،
كتاب الاضحية-9/452-453، مجمع الانهر-4/167)
নোট: এখানে একটি বিষয় স্মরণ রাখতে
হবে যে, যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে
নিসাব পরিমান সম্পদ একবছর মালিকানায় থাকা শর্ত; কিন্তু
কুরবানির বেলায় তা নয়। জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও
১২ তারিখে নিসাব পরিমান সম্পদ থাকলেই কুরবানি ওয়াজিব হবে হবে। সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল
মুহতার ৬/৩১২
প্রশ্ন: খ। স্ত্রী যদি সম্পদশালী হয় সেই পরিবারে স্বামীর পক্ষ
থেকে কুরবানী করা হলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হবে কিনা?
উত্তর: খ। স্ত্রী সম্পদশালী এ
বিষয় সুস্পষ্ট, কিন্তু আপনি উল্লেখ করেননি স্বামী কি সম্পদশালী
অর্থাৎ সাহেবে নিসাব কিনা? শুধু স্ত্রী যদি সম্পদশালী হয় তাহলে স্বামী কোরবানি
করলে আদায় হবে আর যদি স্বামীও সম্পদশালী হয় তবে আলাদা আলাদা কুরবানী দিতে হবে। স্ত্রী
কুরবানীর মাধ্যমে সবার কুরবানী আদায় হবে না।
যা ব্যক্তির উপর স্বতন্ত্রভাবে আবশ্যক হয়।
একজনের আদায়ের দ্বারা অন্যজন দায়িত্বমুক্ত হয় না। পরিবারের যে সকল সদস্যের উপর কুরবানী
আবশ্যক হবে তাদের প্রত্যে বহককেই স্বতন্ত্রভাবে কুরবানী করতে হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল
(ﷺ) বলেন,
عن أبي هريرة قال: قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم: من وجد سعة لأن يضحي فلم يضح فلا يقربن مصلانا.
‘যার কুরবানী করার সামর্থ্য আছে তবুও কুরবানী করল না সে যেন আমাদের
ঈদগাহে না আসে।’ [মুসনাদে
আহমাদ ২/৩২১; মুস্তাদরাকে হাকেম ৭৬৩৯] সুতরাং হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় একজনের কুরবানী
সকলের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
প্রশ্ন: গ। একান্নবর্তী পরিবারে
বাবা এবং সকল সন্তান সম্পদশালী হলে ওই পরিবারে বাবার পক্ষ থেকে একটি গরুর অংশ অথবা
একটি ছাগল কুরবানী দিলে পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে তা আদায় হবে কিনা?
উত্তর: গ। একক পরিবার
হোক আর যৌথ পরিবারের হোক প্রত্যেককে যদি সাহেবে নিসাব হয়, তাহলে
প্রত্যেকের ওপরই আলাদা আলাদা কোরবানি করা আবশ্যক।
সুতরাং উক্ত যৌথ পরিবারে যাদের
উপর কুরবানী আবশ্যক হবে তাদের প্রত্যেককেই কুরবানী করতে হবে। সূত্র: রদ্দুল মুহতার
৯/৪৫৩; হেদায়া ৪/৪৪৩
তাই পরিবারের যতজন সদস্য রয়েছেন।
তাদের প্রতিজনের আলাদাভাবে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে, প্রতিজনের
উপরই কুরবানী করা আবশ্যক হবে। একজনের কুরবানী দ্বারা অন্যের কুরবানী আদায় হবে না। সূত্র:
হিদায়া-৪ খন্ড,৪৪৪পৃষ্ঠা,
মাজমুউল
আনহার-২/৫১৬
وإنما تجب على حر مسلم مقيم موسر
عن نفسه، لأنه أصل فى الوجوب عليه (مجمع الأنهر-2/516، هداية-4/443-444
أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ
أُخْرَىٰ [٥٣:٣٨
কোন ব্যক্তি কারও বোঝা নিজে
বহন করবে না। সূরা নাজম-৩৮
প্রশ্ন: ঘ। সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য পরিবার নিয়ে থাকেন, বাবাকে
মাসে মাসে টাকা পাঠান, কুরবানিতেও টাকা পাঠান, কুরবানীর
সময় দুটি কুরবানী দেওয়া তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে যায়। অতএব বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী
করা ওই পরিবারের জন্য যথেষ্ট কিনা?
উত্তর: ঘ। আপনি একই ধরনের প্রশ্ন
বারবার করেছেন, একথা স্পষ্ট নয় যে, পিতা
সাহেবে নিসাব কিনা,কে বেতন পাঠায়, কে কি
করে সেটা বিষয় নয়, ছেলে এবং পিতা যদি উভয়ই সাহেবে নিসাব হয়, তাহলে
অবশ্যই আলাদা আলাদা কোরবানি করতে হবে আর যদি
না হয় যে সাহেবে নিসাব সে কুরবানি দিবে। দলিল পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম
শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, শেখ
হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
জিলহজ্ব
মাসের ১-১০ তারিখ পর্যন্ত চুল কাটা ও না কাটার বিষয়ে বিধান কি? |
জিজ্ঞাসা-২১২ আসসালামু আলাইকুম
ওয়া রাহমাতুল্লাহ। শায়েখদের নিকট জিজ্ঞাসা। জিলহজ্ব মাসের ১-১০ তারিখ পর্যন্ত চুল কাটা ও না
কাটার বিষয়ে বিধান কি? দয়া করে জানাবেন। তারিখ-৩০/০৬/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি-১২৫৬৮
মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, সদর দপ্তর ২৪ আর্টিলারি ব্রিগেড, গুইমারা-খাগড়াছড়ি, ২৪ পদাতিক ডিভিশন।)
জবাব: ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আমি
জবাব রেডি করতেছি ইতোমধ্যে আমার ছোট ভাই দক্ষ যোগ্য আলেম মোঃ ইমরান তিনি একটি হাদিস
পোষ্ট দিয়েছেন আমি তার সাথে যুক্ত করছি। প্রথমে আপনাকে ( প্রশ্নকারীকে)জাযাকাল্লাহু
খাইর এজন্যই যে আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়োপযোগী প্রশ্ন করেছেন আগামীকাল জিলহজ মাসের
এক তারিখ। যিনি কুরবানী দিবেন তার জন্য জিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে চুল নখ না
কাটা মুস্তাহাব। দলিল:
হাদীস নং ০১
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ
النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي
الْحِجَّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ
وَأَظْفَارِهِ.
অর্থ : উম্মে সালামা রা. থেকে
বর্ণিত, নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন, যখন
যিলহজ্বের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে।
তাখরিজ: মুসলিম- ১৯৭৭; জামে
তিরমিযী-১৫২১ হাদিস
নং-০২
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ
عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ لِرَجُلٍ: أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللَّهُ عَزَّ
وَجَلَّ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ، فَقَالَ الرَّجُلُ: أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلَّا
مَنِيحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ
شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَقُصُّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ،
فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
‘আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন,
আমাকে
কুরবানির দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে। যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন।
এক সাহাবি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা
থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কুরবানি করতে পারি? নবি
কারিম (ﷺ) বললেন, না, তবে
তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে।
এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানি বলে গণ্য হবে। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-২৭৮৯
উপরোক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে
ফকীহগণ কুরবানীকারীর জন্য নখ-চুল না কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন।
প্রশ্ন: ক। জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিন নখ গোঁফ কাটা কি মাকরূহ?
উত্তর:
ক। ০১ নং হাদীস বর্ণনা করার পর 'ইলাউস
সুনান' গ্রন্থ প্রণেতা বলেন-
أقول : نهى النبى صلى الله عليه
وسلم من أراد التضحية عن قلم الأظفار وقص الشعر فى العشر الأول، والنهى محمول
عندنا على خلاف الأولى
'আমার
অভিমত হলো, নবী করীম (ﷺ) কুরবানীর ইচ্ছাকারী ব্যক্তির জন্য জিলহজের প্রথম দশকে নখ কাটতে এবং
চুল কাটতে নিষেধ করেছেন। তারি নিষিদ্ধতা অনুত্তমের পর্যায়ভুক্ত। (ইলাউস সুনান : ১৭/২৬৪)
وقال الشامى: بعد نقل هذا
الحديث: هذا محمول على الندب دون الوجوب بالإجماع (رد المحتار، باب العيدين، مطلب
فى إزالة الشعر والظفر فى ذى الحجة-3/66)
'আল্লামা
শামী এই হাদিস উল্লেখ করার পর বলেন,
ওলামায়ে
কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে এর দ্বারা মুস্তাহাব উদ্দেশ্য, ওয়াজিব
নয়। সূত্র: রদ্দুল মুহতার : ৩/৬৬
প্রশ্ন: খ। আপনি উল্লেখ করেছেন জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন
না কাটা মুস্তাহাব কিন্তু এই আমল করতে গিয়ে
যদি 40 দিনের বেশি হয় তখন কোনটা প্রাধান্য পাবে?
উত্তর: খ। আপনি ঠিকই বলেছেন একদিকে
জিলহজ মাসের ১০ দিনের ফজিলত অন্যদিকে 40 দিনের বেশি নখ গোঁফ না রাখার
বিষয়ে
নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেমন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ
قَالَ أَنَسٌ وُقِّتَ لَنَا فِى قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ
وَنَتْفِ الإِبْطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ
أَرْبَعِينَ لَيْلَةً
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের জন্য মোচ, নখ কর্তন
এবং বগলের চুল ও অবাঞ্ছিত লোম কাটার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেটি হল, যেন
তা চল্লিশ দিনের উর্দ্ধে না যায়। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম-২৫৮, সুনানে
ইবনে মাজাহ-২৯৫ এখন দুটি
বিষয়ের সমন্বয় হলো আমরা এ ক্ষেত্রে জিলহজে মাসের প্রথম ১০ দিন আমলটা ছেড়ে দিব, ৪০ দিন
হওয়ার আগে অবাঞ্চিত চুল-নখ কাটা প্রধান্য পাবে।
প্রশ্ন: গ। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন নখ-চুল না কাটা কি শুধু
যারা কুরবানী করবে তাদের জন্যই, না সবার জন্য মুস্তাহাব।
উত্তর: গ। অধিকাংশ আলেমদের মতে যারা কুরবানী করবে তাদের জন্যই
শুধু মুস্তাহাব। দলিল: প্রথমে উল্লেখিত হাদিস দুটি। তবে কোন কোন আলেম বলেছেন সবার জন্য।
দলিল:
হাদিস/আসির
নং-০১
ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি
মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি
বললেন, আমাকে নাফে রাহ বলেছেন যে,
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এক নারীর
নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। মহিলাটি যিলহজ্বের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল।
তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তবে বড় ভাল
হত। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫৯৫)
হাদিস/আসার নং-০২
মুতামির ইবনে সুলাইমান আততাইমী বলেন,
আমি
আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে ইবনে সীরীন রাহ. যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন।
এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুন্ডণ করাকেও অপছন্দ করতেন। (আল মুহাল্লা, ইবনে
হাযম ৬/২৮)
এসব দলীলের কারণে কারো কারো মতে
সকলের জন্যই যিলহজ্বের প্রথম দশকে নখ,
গোফ
ও চুল না-কাটা উত্তম।
নোট: সাহাবা-তাবেঈন আমল আমাদের
জন্য দলিল, অনুসরণীয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম
শিক্ষক, মোঃ আব্দুর রাজ্জাক,
49 ফিল্ড
রেজিমেন্ট আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
শুক্রবার হজ হলে কি হজ্ আকবর হয়? |
জিজ্ঞাসা-২১৩: হযরত
মুফতি সাহেবের নিকট প্রশ্ন শ্তক্রবারে হজ হলে একে হজ্জে আকবার বলে, শরিয়তে
এর কোন প্রমান আছে? তারিখ-০৩-০৭-২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই শরিফ ইনসান (ভদ্র প্রকৃতির মানুষ) আরটি আখতারুজ্জামান,৬এডিএ ব্রিগেড, মিরপুর
সেনানিবাস।এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: আমি জবাব রেডি করছি এর মধ্যে
সম্মানিত শায়েখ আখতার হোসেন (২১ বীর কুমিল্লা) একটি সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছেন। আমি উনার সাথে বিস্তারিত জবাব যুক্ত করলাম। প্রথম কথা হলো, শুক্রবারে হজ
হলে একে হজ্জে আকবার বলে, শরিয়তে এর কোন প্রমাণ নেই। নবী (ﷺ) থেকে অথবা কোন সাহাবী
কিংবা কোন তাবেয়ী থেকে এ ধরনের কোন বর্ণনার ভিত্তি নেই। সূত্র: যাদুল মাআদ-১/৬০-৬৫
প্রশ্ন: ক। মানুষের মুখে মুখে শুক্রবারে হজ হলে
একে হজ্জে আকবার বলে, এর কোন কারণ আছে কি?
উত্তর: ক।
হ্যাঁ, মানুষের মুখে মুখে শুক্রবারে হজ হলে একে হজ্জে আকবার
বলে, এর কারণ আছে। প্রথম কারণ হলো, আল্লাহ তাআলার বানী- وَ اَذَانٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖۤ اِلَی النَّاسِ یَوۡمَ
الۡحَجِّ الۡاَکۡبَرِ অরথ: আর মহান হজের দিনে(১) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি এটা
এক ঘোষণা যে, নিশ্চয় মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ দায়মুক্ত
এবং তার রাসূলও। সূরা তওবা-০৩
এ আয়াতে কারিমায় যে হজে আকবর
বলা হয়েছে, অনেকে এটা দ্বারা মন গড়া জুমা/শুক্রবার ব্যাখ্যা
করেছেন, এ কারণেই শুক্রবার হজ হলে, হজে
আকবর বলে।
এখানে মহান হজের দিনে বলতে
কি বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে মুফাসসিরগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস, উমর, আবদুল্লাহ
ইবন ওমর এবং আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের রা. প্রমুখ সাহাবা বলেনঃ
এর অর্থ আরাফাতের দিন। [ইবন কাসীর] কারণ, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) হাদীস শরীফে এরশাদ করেছেন “হজ হল আরাফাতের দিন”। [তিরমিযী: ৮৮৯] পক্ষান্তরে আলী, আবদুল্লাহ ইবন আবি আওফা,
মুগীরা ইবন শুবাহ, ইবন আব্বাসসহ সাহাবায়ে
কিরামের এক বড় দল এবং অনেক মুফাসসির বলেন, এর অর্থ কোরবানীর
দিন বা দশই যিলহজ। [ইবন কাসীর] এর সপক্ষে বেশ কিছু সহীহ হাদীস রয়েছে। যেমন,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরবানীর
দিন প্রশ্ন করেছিলেন, “এটা কোন দিন? লোকেরা চুপ ছিল এমনকি মনে করেছিল যে,
তিনি হয়ত: অন্য কোন নামে এটাকে নাম দিবেন, শেষ
পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এটা কি বড় হজের দিন নয়?”
[বুখারী ৪৪০৬; মুসলিম: ১৬৭৯
عن ابن عمر- رضى الله
عنهما- أن رسول
الله صلى الله عليه وسلم قال يوم النحر: [أي يوم هذا] ؟ قالوا: يوم النحر،
قال: «هذا يوم
الحج الأكبر».رواه أبو
داود وصححه الألباني
ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরবানির দিন জিজ্ঞেস করলেন এটা কোনো দিন? সাহাবিগণ উত্তর দিলেন এটা
ইয়াওমুন্নাহার বা কুরবানির দিন। রাসূলে করীম (ﷺ) বললেন: এটা হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। আবু দাউদ: ১৯৪৫
ইমাম সুফিয়ান সওরী
রাহিমাহুল্লাহ এবং অপরাপর ইমামগণ এ সকল উক্তির সমস্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে বলেন, হজের দিনগুলো হজ্জে আকবরের
দিন। এতে আরাফাত ও কোরবানীর দিনগুলোও রয়েছে। [ইবন কাসীর]
দ্বিতীয় কারণ হলো এই জাল
হাদিস:
“সর্বোত্তম দিন হচ্ছে- যদি শুক্রবারে আরাফা হয়।
সে হজ্জ শুক্রবারে হজ্জ নয় এমন ৭০ টি হজ্জের চেয়ে উত্তম।”
নোট: হাদিস বিশারদগণ এটিকে বাতিল
বলে অভিহিত করেছেন। যেমন, ইবনুল কায়্যিম রহ.; ইবনে
আবেদনী ‘হাসিয়া’; হাফেয নাসের উদ্দিন আল-দিমাশকি । সূত্র: যাদুল
মাআদ-১/৬৫; মুনাবি ফাতহুল কাদির-২/২৮
প্রশ্ন: খ। বুঝলাম এ বিষয়ে কোন সহিহ দলিল নেই, তবে শুক্রবারে হজ হলে কি কোন
বিশেষত্ব আছে কিনা?
উত্তর: খ। কথা ঠিক,
এ বিষয়ে কোন সহিহ দলিল না থাকলেও, শুক্রবারে হজ হলে বিশেষত্ব আছে। দলিল:
(১) এই
হজ্জ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হজ্জের সাথে মিলে যায়। কারণ নবী
সাল্লাল্লামের আরাফায় অবস্থান জুমার দিনে ছিল।
(২)
إنَّ في الجُمُعَةِ لَساعَةً، لا
يُوافِقُها مُسْلِمٌ، يَسْأَلُ اللَّهَ فيها خَيْرًا، إلَّا أعْطاهُ إيَّاهُ،
قالَ: وهي ساعَةٌ خَفِيفَةٌ. وفي رواية: ولَمْ يَقُلْ: وهي ساعَةٌ خَفِيفَةٌ.
الراوي : أبو هريرة | المحدث :
مسلم | المصدر : صحيح مسلم | الصفحة أو الرقم : 852 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح]
অর্থ: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে
একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট
যে দোয়া করবে আল্লাহ তা কবুল করেন। মুসলিম-৮৫২;
আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮
(৩) আরাফার
দিন ঈদ ও জুমার দিনও ঈদ। সুতরাং দুই ঈদের একত্রিত হওয়াটা কল্যাণকর। দলিল: “মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার
দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন।” ইবনে মাজাহ-১০৮৪
আরও দেখুন: ফাতহুল বারী (৮/২৭১)
ও তুহফাতুল আহওয়াজি (৪/২৭)।
উপরোক্ত কারণে আলেমগণ বলেন: জুমার দিনে হজ্জ
হওয়াটা উত্তম।
সারকথা: চূড়ান্ত কথা হলো শুক্রবারে হজ
হলে তাকে হজ্জে আকবার বলা যাবে না। তবে বিশেষত্ব অবশ্যই আছে। বরং উত্তম হজ বলা যাবে।
নোট: আমার জবাব লেখতে এ জন্য দেরি
হয় যে, প্রতিটির প্রশ্নের পক্ষে-বিপক্ষে,
কোন কারণ, বিশেষত্ব, এর
কোন অস্তিত্ব আছে কিনা বা আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা
যাচাই-বাচাই করে এবং বিকল্প কোনো রাস্তা আছে কিনা, উক্ত বিষয়ে কি কি প্রশ্ন হতে পারে/ প্রশ্নের রাস্তা
যাতে বন্ধ হয়/কোনো ফাক ফোকর না থাকে। আলহামদুলিল্লাহ সব কিছু মিলে তার জবাব দেই।
তারপরও যদি কোনো ভুল/এর উত্তম কোন জবাব থাকে, অবশ্যই আমাকে জানালে উপকৃত হবো।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মো: আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
মসজিদর মেহরব বানানো জায়েজ
কিনা? |
জিজ্ঞাসা-২১৪: আমি একটা
বড় সমস্যায় পড়েছি এজন্য বিজ্ঞ মুফতি সাহেবের কাছে আমার একটা জিজ্ঞাসা, আর সেটা হল : মসজিদের মেহরাব রাখা কি বৈধ না অবৈধ? ইদানিং আমাদের মসজিদের মেহরাব নিয়ে ইমাম সাহেব
প্রশ্ন তুলছেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের মসজিদগুলোতে মেহরাব
ছিলনা মেম্বার ছিল কাঠের তৈরি অতএব মসজিদের মেহরাব ভাঙতে হবে এবং মেম্বার কাঠের তৈরি
করতে হবে বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট দলিল চাই, যাতে করে আমার এলাকাবাসী বড় ফিতনা থেকে বাঁচতে পারে / জাযাকাল্লাহু
খাইরান। তারিখ-৩০/-৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত শায়েখ, আরটি- 25 ফিল্ড এম্বুলেন্স জাহাঙ্গীরাবাদ
সেনানিবাস বগুড়া-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে
দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: সম্মানিত শায়েখ ইতিপূর্বে আল-বুরহানে মেহরাবের সংজ্ঞা, বর্তমান যুগের মেহরাব
মসজিদের অন্তর্ভুক্ত কিনা এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আপনার প্রশ্নকে সহজে বুঝার জন্য কয়েকভাবে ভাগ
করছি।
প্রশ্ন: ক। মেহরাবের পরিচয়।
উত্তর: ক। মেহরাবকে মেহরাব নামকরণ করার ব্যাপারে কয়েকটি
মতামত পাওয়া যায়। মেহরাবের আভিধানিক অর্থ মজলিসের অগ্রভাগ, , অস্ত্রাগার, অস্ত্র রাখার স্হান, যন্ত্রাংশ রাখার স্হান ইত্যাদি।
মেহরাব যেহেতু মসজিদের
অগ্রভাগেই অবস্থিত, যা কিবলার দিকে দেয়ালের মধ্যখানে ইমামের দাঁড়ানোর স্থান নির্ধারণ করার
জন্য নির্মাণ করা হয়। তাই মেহরাবকে মেহরাব বলে নামকরণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন: খ। আমাদের মসজিদের মেহরাব নিয়ে ইমাম
সাহেব প্রশ্ন তুলছেন যে রাসূল (ﷺ)-এর র যুগের মসজিদগুলোতে মেহরাব ছিলনা ?
উত্তর: খ। রাসূল যুগে ছিল না মানে তা
বিদআত। এখন আমরা বিদআতের সংজ্ঞা জানি,
বিদআত অর্থ নতুন সৃষ্টি। শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত বলা হয় দ্বীনের
মধ্যে কোন নতুন সৃষ্টিকে, অর্থাৎ দ্বীনের মধ্যে ইবাদত মনে
করে এবং অতিরিক্ত ছওয়াবের আশায় এমন কিছু আকীদা বা আমল সংযোজন ও বৃদ্ধি করা,
যা রাসূল (সাঃ) সাহাবী ও তাবেঈদের যুগে অর্থাৎ আদর্শ যুগে ছিল না।
সূত্র: আহকামে জিন্দাগি।
কোন কিছু বৈধ হতে হলে সবকিছু
রসূলের যুগে থাকা জরুরি নয়। সাহাবা-তাবেয়িদের যুগে থাকলেও
চলবে। এখন আমরা দেখবো এই তিন যুগে বর্তমান মেহরাব ছিল কিনা?
আসার-০১
عَنْ عَلِيٍّ، أَنَّهُ
كَرِهَ الصَّلَاةَ فِي
الطَّاقِ
‘আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি পুরোপুরি মেহরাবে দাঁড়িয়ে
নামাজ পড়াকে অপছন্দ করতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস:
৪৬৯৩
নোট: এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,
সাহাবাদের জামানায় ইমাম মেহরাবের মধ্যে নামাজ আদায় করতেন, অর্থাৎ বর্তমান মেহরাব।
আসার-০২
রাসুল (সা.)-এর যুগে প্রচলিত
মেহরাবের অস্তিত্ব ছিল কি না, এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরামের ও ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ
রয়েছে। কারো কারো মতে, রাসুল (ﷺ) এর যুগে বর্তমান যুগের মতো মেহরাব ছিল না; বরং এজাতীয় মেহরাবের প্রচলন
শুরু হয় ৯১ হিজরিতে ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.)-এর যুগে। তিনি যখন ওয়ালিদ ইবনে
আব্দুল মালেক কর্তৃক মদিনার গভর্নর নিযুক্ত হয়ে মসজিদ-ই-নববীর পুনর্নির্মাণ
করেছিলেন, তখনই মেহরাবসহ মসজিদ নির্মাণ করেন। সূত্র: আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়েতিয়্যাহ : ৩৬/১৯৫
উপরোক্ত দুটি আসার দ্বারা
প্রমাণিত হলো, বর্তমান যুগের মেহরাব খুলাফা-সাহাবা-তাবেয়ির যুগে ছিল। সুতরাং তা বিদআতের সংজ্ঞায় পড়ে না।
রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন :
فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ
مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى
اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ
بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ
الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا
بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا
بِالنَّوَاجِذِ
‘তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে, তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ
দেখতে পাবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাহ এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলিফাগণের
সুন্নাহ অনুসরণ করবে, তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে। তাখরিজ:
সুনানে আবি দাউদ : ৪৬০৭; সুনানুত তিরমিজি :
২৬৭৬
وَعَن عِمْرَانَ بنِ الحُصَيْنِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، أنّه قَالَ : «خَيْرُكُمْ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ
يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ». قَالَ عِمْرَانُ: فَمَا أدْري قَالَ
النَّبِيُّ ﷺ مَرَّتَيْنِ أَو ثَلاَثاً« ثُمَّ يَكُونُ بَعْدَهُمْ قَوْمٌ
يَشْهَدُونَ وَلاَ يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَخُونُونَ وَلاَ يُؤْتَمَنُونَ،
وَيَنْذِرُونَ وَلاَ يُوفُونَ، وَيَظْهَرُ فِيهمُ السَّمَنُ ». متفقٌ عَلَيْهِ বাংলা অনুবাদ ইমরান ইবনে হুসাইন
রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবি (ﷺ) বলেছেন, আমার
উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম যুগ হল আমার সাহাবিদের যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেয়িদের) যুগ।’’
ইমরান
বলেন, নবি (ﷺ) তাঁর
যুগের পর উত্তম যুগ হিসাবে দুই যুগ উল্লেখ করেছেন, না তিন
যুগ তা আমার জানা (স্মরণ) নেই।’ অতঃপর তোমাদের পর এমন এমন কিছু লোকের
আবির্ভাব ঘটবে, যারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদেরকে সাক্ষী মানা হবে
না। তারা খেয়ানত করবে এবং তাদের নিকট আমানত রাখা যাবে না। তারা আল্লাহর নামে মানত করবে
কিন্তু তা পুরা করবে না। আর তাদের দেহে স্থূলত্ব প্রকাশ পাবে।’’ তাখরিজ: বুখারি ২৬৫১, ৩৬৫০, ৬৪২৮, ৬৬৯৫, মুসলিম
২৫৩৫, তিরমিযি ২২২১,
২২২২, নাসায়ি৩৮০৯
প্রশ্ন: খ। রসূল (ﷺ)-এর যুগে মেম্বার ছিল কাঠের তৈরি
অতএব মসজিদের মেহরাব ভাঙতে হবে এবং মেম্বার কাঠের তৈরি করতে হবে?
উত্তর: খ। মুহতারাম, এ প্রসঙ্গে আল-বুরহানে,জিজ্ঞাসা-১৮৯: মসজিদের মেম্বার কি ইট
সিমেন্ট বালি দ্বারা তৈরি করা জায়েজ? শিরোনামে আলোচনা করা হয়েছে।
উপকার্থে আবার শেয়ার হবে ইনশাল্লাহ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
একজন
ইমাম কি একাধিক ঈদের জামাতের ইমামতি করতে পারবে কি না? |
জিজ্ঞাসা-২১৫: السلام عليكم ورحمة الله
আমার প্রশ্ন হলো একজন ইমাম কি
একাধিক ঈদের জামাতের ইমামতি করতে পারবে কি না?
তারিখ-০৪/০৭/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই সালেহ আহমদ,৩৮ ইবি,আলীকদম।
এর প্রশ্নের আলোকে, আল্লাহ তাআলা তাকে শান্তি ও নিরাপদে রাখুন।)
জবাব: অলাইকুম আসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
ইতোমধ্যে আপনার প্রশ্নের জবাব আমার পরম শ্রদ্ধেয় স্যার হযরত মাওলানা অলিউল্লাহ দা.
বা. সংক্ষিপ্তভাবে জবাব দিয়েছেন আমি তার সাথে সমমত পোষণ করে একটু বিস্তারিত এবং দালিলিক
জবাব দিচ্ছি। আপনার প্রশ্নকে সহজ ভাবে বুঝার
জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। একজন
ইমাম কি একাধিক ঈদের জামাতের ইমামতি করতে পারবে?
উত্তর: ক। না,
একজন
ইমাম একাধিক ঈদের জামাতের ইমামতি করতে পারবে
না। নবি-খোলাফা-সাহাবা- তাবেয়ি দ্বারা প্রমাণিত নয়। হাদিস নং-০১
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ
النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ” إِنَّمَا جُعِلَ
الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَلاَ تَخْتَلِفُوا عَلَيْهِ،
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
রাসূল (ﷺ)ইরশাদ করেছেন, অনুসরণ
করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়, তাই তার বিরুদ্ধাচরণ করবে না।
তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭২২
হাদীসে ইমামের বিরুদ্ধাচরণ করতে
নিষেধ করা হয়েছে, আর ইমাম যখন নফল নামায পড়ছে, আর মুসল্লিগণ
তার পিছনে ওয়াজিব নামাযের নিয়তে দাঁড়ায়,
তাতো
পরিস্কার তার বিরুদ্ধাচরণ। এভাবে ইক্তিদা কিভাবে সহীহ হতে পারে?
হাদিস/আসার নং-০২
হযরত কাতাদাহ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব ও হাসান বসরী রাহ. বলেন,
যে ব্যক্তি
যোহরের জামাত মনে করে আসরের নামায আদায়রত জামাতে শরীক হল এবং নামাযের পর সে জানতে পারল, তারা
আসর আদায় করেছে, উক্ত ব্যক্তি আসর ও যোহর উভয় নামায পুনরায় পড়বে।’-মুসন্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৩/৫২৪
এই হাদিসে আমরা দেখতে পাই মুক্তাদির
ইমামের বিপরীত নামাজ হওয়ার কারণে নামাজ হয়নি। সুতরাং ওয়াজিব নামায আদায়কারী ব্যক্তি
নফল নামাজ হবে কিভাবে?
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় এই যে, ইমাম
যখন ঈদের নামায পড়বেন, তিনি অতিরিক্ত তাকবীরের সাথে পড়াবেন। অথচ বলার অপেক্ষা
রাখে না যে, কোনো নফল নামাযে ঈদের নামাযের মতো অতিরিক্ত তাকবীর
নেই। বিশেষ করে নবী করীম (ﷺ)পূর্ণ
জীবনে কখনো আদায়কৃত ঈদের নামায পুনরায় পড়াননি। কোনো সাহাবীকে এমন করতে আদেশও করেননি
বা কোনো সাহাবী এমন করেছেন তার প্রমাণ নেই।
হাদিস নং -০৩
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)কে বলতে শুনেছি, কোনো
নামায একদিনে একাধিকবার পড়ো না। তাখরিজ: আবু দাউদ ১/৮৫
দ্বিতীয় কারণ হল এতদাঞ্চলে ফিকহে
হানাফী অনুযায়ী কুরআন ও হাদীসের উপর আমল করা হয়। তাই শরীয়তসম্মত প্রয়োজন ছাড়া বিপরীত
ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা দ্বীনী মাসলাহাতের পরিপন্থী। সূত্র: আততামহীদ ২৪/৩৬৭; আলমাজমূ’
৪/১৬৯; ফাতহুল
বারী ২/২২৬; কিতাবুল উম্ম ১/২০০; আলমুহীতুল
বুরহানী ২/১৯৬; যাখীরা ২/২৪২; আলমুনতাকা, ইবনে
তায়মিয়া ১/৬৩২; তাসহীলুল
২/৪৯৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩/৫২৪
প্রশ্ন:
খ। মুয়াজ ইবনে জাবাল রা তো ইমামতি
করতেন।
উত্তর: খ।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ
اللَّهِ: «أَنَّ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ، كَانَ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَرْجِعُ، فَيَؤُمُّ قَوْمَهُ»
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ
থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ রাসূল (ﷺ)-এর সাথে সালাত আদায় করতেন, তারপর
ফিরে গিয়ে তার কওমের ইমামতী করতেন। তাখরিজ: বুখারী-৭০০
বুখারীর হাদীসে মুয়াজ রাঃ যে
নামায নবীজীর পিছনে পড়তেন, ঠিক সেই নামাযটির ইমামতীই আবার গিয়ে করতেন কি না? তা পরিস্কার
আসেনি।
কিন্তু অন্যান্য কিতাবে তা এসেছে।
এখানে বিষয় হল, এটি
মুয়াজ রাঃ এর একটি ব্যক্তিগত আমল ছিল। এতে রাসূল (ﷺ)সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন নাকি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন? আরেকটি
বিস্তারিত হাদীস দেখলে বিষয়টি পরিস্কার হবে।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ رِفَاعَةَ
الزُّرَقِيُّ: أَنَّ رَجُلًا، مِنْ بَنِي سَلِمَةَ يُقَالُ لَهُ سَلِيمٌ أَتَى
رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَالَ: إِنَّا نَظَلُّ فِي
أَعْمَالِنَا , فَنَأْتِي حِينَ نُمْسِي , فَنُصَلِّي فَيَأْتِي مُعَاذُ بْنُ
جَبَلٍ , فَيُنَادَى بِالصَّلَاةِ , فَنَأْتِيهِ فَيُطَوِّلُ عَلَيْنَا. فَقَالَ
لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مُعَاذُ لَا تَكُنْ
فَتَّانًا , إِمَّا أَنْ تُصَلِّيَ مَعِي , وَإِمَّا أَنْ تُخَفِّفَ عَنْ قَوْمِكَ»
হযরত মুয়াজ বিন রিফাআ যুরকী রাঃ
থেকে বর্ণিত। বনী সালামার এক ব্যক্তি যার নাম ছিল সালীম। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন। এসে বললেন,
আমরা
কাজকর্মে ব্যস্ত থাকি। সন্ধ্যায় ফিরে এসে সালাত আদায় করি। তখন মুয়াজ বিন জাবাল আসে।
এসে সালাতের জন্য আহবান করে। তখন আমরা নামায পড়তে আসি। তখন মুয়াজ নামায অনেক দীর্ঘায়িত
করে। [ফলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়, এ অভিযোগ শুনে] তখন নবীজী (ﷺ)বললেন,
হে মুয়াজ!
ফিতনা সৃষ্টিকারী হইয়োনা, তুমি হয়তো আমার সাথে নামায পড়ো, অথবা
তোমার কওমের সাথে সংক্ষেপে সালাত পড়। তাখরিজ: তাহাবী শরীফ-২৩৬২, আল-মু’জামুল কাবীর লিততাবরানী-৬৩৯১
এ হাদীসে ঘটনাটির মোটামুটি পূর্ণ
বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে। যাতে দেখা যাচ্ছে,
নবীজী
(ﷺ) মুয়াজ রাঃ কে বলছেন, তুমি
হয়তো আমার সাথে নামায পড়, অথবা কওমের সাথে গিয়ে সংক্ষেপে নামায পড়াও।
যা পরিস্কার বুঝাচ্ছে, এক সালাতের
ইমামতী দুইবার করা যায় না। যদি যেত,
তাহলে
নবীজী বলতেন, আমার পিছনে সালাত পড়ে গিয়ে, কওমের
সাথে সংক্ষেপে নামায পড়ো। কিন্তু নবীজী তা না বলে, জানিয়েছেন, হয়তো, আমার
সাথে পড়ো, নতুবা তাদের সাথে পড়।
এ হাদীস পরিস্কার প্রমাণ করে, এক সালাত
একবার আদায়ের পর, সেটির ইমামতী আবার করা যায় না।
সুতরাং বুঝা গেল, হযরত
মুয়াজ রাঃ এর একটি ব্যক্তিগত আমল, যার উপর নবীজী (ﷺ) অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, সেটি
উপস্থাপন করে এক সালাতের একাধিক জামাতের ইমামতীর বৈধতার পক্ষে দলীল পেশ করা সম্পূর্ণ
অযৌক্তিক।
তথ্য সহযোগিতায় মাসিক আল কাউসার
ও আহলে হক মিডিয়া
الله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন ধর্ম শিক্ষক মোঃ
আব্দুর রাজ্জাক ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি। বরিশাল সেনানিবাস।
গরুটি
সম্পূর্ণ সুস্থ,, কিন্তু পায়ে আঁচিলের মত (রং দেওয়ার কারনে এমনটা দেখাচ্ছে) একটা গোস্তের টুকরা। আপনাদের নিকট জানতে চাচ্ছি,, এটা দিয়ে কুরবানি সহিহ হবে
কিনা??? |
জিজ্ঞাসা-২১৬: গরুটি
সম্পূর্ণ সুস্থ,, কিন্তু পায়ে আঁচিলের মত (রং দেওয়ার কারনে এমনটা দেখাচ্ছে) একটা গোস্তের টুকরা। আপনাদের নিকট জানতে চাচ্ছি,, এটা দিয়ে কুরবানি সহিহ হবে কিনা???। তারিখ-০৫/-৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি মোঃ ইমারাত হোসেন
৩ ইঞ্জিনিয়ার যশোর সেনানিবাস এর প্রশ্নের আলোকে)
জবাব: প্রধান চারটি ত্রুটি থাকলে ঐ
পশু দ্বারা কুরবানি জায়েজ নেই। দলিল:
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (ﷺ)-কে কোরবানির ক্ষেত্রে যেসব পশু পরিহার করা
হয় এসব পশু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেছেন, ‘চার
ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্ধ—যার দৃষ্টিহীনতা সুস্পষ্ট, রোগাক্রান্ত—যার রোগের বিষয়টি সুস্পষ্ট, পঙ্গু যার পঙ্গুত্ব
সুস্পষ্ট ও আহত—যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে। তাখরিজ: তিরমিজি-১৪৯৭; নাসায়ি-৪৩৭১
বিস্তারিত হলো:
১. দৃষ্টিশক্তি না থাকা। যে পশুর দুই চোখ বা
এক চোখ পুরোপুরি অন্ধ, অথবা এক তৃতীয়াংশের বেশি নষ্ট হয়েছে
এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে না।
২. শ্রবণশক্তি না থাকা।
৩. অত্যন্ত দুর্বল ও
জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া। কোরবানির পশুর হাড়ের মগজ শুকিয়ে গেলে তা দিয়ে কোরবানির
করা যাবে না। আর হাড়ের মগজ না শুকালে কোরবানি করা যাবে।
৪. এই পরিমাণ লেংড়া যে
জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না। যে পশু এমন খোঁড়া যে তিন পায়ের
ওপর ভর করে চলাচল করে, চতুর্থ পা মাটি স্পর্শ করে না কিংবা স্পর্শ করলেও তাতে ভর দিতে পারে না
এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে না। তবে জবাইয়ের সময় মাটিতে শোয়াতে গিয়ে পশুর পা
ভেঙ্গে গেলে ওই পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে।
৫. লেজের বেশির ভাগ অংশ
কাটা।
৬. জন্মগতভাবে কান না থাকা।
৭. কানের বেশির ভাগ কাটা।
পশুর কানের এক-তৃতীয়াংশের বেশি কাটা থাকলে তা দিয়ে কোরবানি করা যাবে না।
৮. গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া।
৯. পাগল হওয়ার কারণে
ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া।
১০. বেশির ভাগ দাঁত না থাকা।
১১. রোগের কারণে স্তনের দুধ
শুকিয়ে যাওয়া।
১২. ছাগলের দুটি দুধের
যেকোনো একটি কাটা।
১৩. গরু বা মহিষের চারটি
দুধের যেকোনো দুটি কাটা।
সূত্র: জামে তিরমিযী ১/২৭৬; সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬; রদ্দুল মুহ্তার ৬/৩২৪; আলমগীরী ৫/২৯৭
সুতরাং আপনার প্রশ্নে বর্ণিত
পশুটির ত্রুটি মৌলিক ত্রুটি নয়, সুতরাং এ দ্বারা কুরবানি সহিহ হবে। তবে এর চেয়ে ভাল পশু পেলে সেটা
দ্বারা কুরবানি আরও উত্তম হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
কুরবানি
কি ওয়াজিব না সুন্নাহ?
এ বিষয়ে দালিলিক বিশ্লেষণ । |
জিজ্ঞাসা-২১৭: কুরবানি কি ওয়াজিব না সুন্নাহ?
এ বিষয়ে দালিলিক বিশ্লেষণ করলে উপকৃত হতাম। বর্তমান আহলে হাদিস
ভাইয়েরা এটাকে ঐচ্ছিক বলতেছেন? তারিখ-০৫/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আর টি সাইফুল ইসলাম, এএসপিটিএস
মোমেনশাহী সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: জাযাকাল্লাহু খয়রান আমার প্রিয় ভাইকে, যিনি
সম্প্রতিক সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বোধগম্যের জন্য
কয়েকভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। কুরবানি কি ওয়াজিব না
সুন্নাহ?
উত্তর: ক। এ বিষয়ে দুটি মতামত পায়।
প্রথম মত: কুরবানি ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ি, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখের মত এটা। আর ইমাম মালিক ও ইমাম
আহমাদের একটি মতেও কুরবানি ওয়াজিব।
দ্বিতীয় মত: কুরবানি সুন্নাতে
মুয়াক্কাদা বা অত্যন্ত তাকিদপূর্ণ সুন্নাহ। ইমাম মালিক ও শাফিয়ির প্রসিদ্ধ মত।
প্রশ্ন: খ। যারা কুরবানি ওয়াজিব বলেন
তাদের দলিল কি?
উত্তর: খ। নিম্নে দেওয়া হলো:
v কুরআন থেকে দলিল:
আয়াত নং-০১
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ
‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে
সালাত আদায় করো ও পশু কুরবানি করো। সূরা কাউসার-০২
আর আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো
ব্যাপারে নির্দেশ দেন সাধারণত সেটা পালন করা ওয়াজিবই হয়ে থাকে।
এ আয়াতের তাফসিরকারকদের
মতামত:
(ক) এ আয়াতের
ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, সঠিক
তাফসীর হচ্ছে- (و انحر) এর অর্থ: কুরবানী করুন। আর সালাত দ্বারা ঈদের নামায উদ্দেশ্য। এটাই
যুগ যুগ ধরে বহু সালাফের কথা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু,আতা, মুজাহিদ,ইকরিমা,ক্বাতাদাহ
ও হাসান বসরী রহ.সহ বহু জগৎ বিখ্যাত তাফসীর বিশেষজ্ঞগণ وانحر এর অর্থ “আপনি
কুরবানী করুন” করেছেন।
সূত্র: তাফসীরে ইবনে
কাসীর,৮/৫০৩
(খ) আল্লামা
আলূসী রহ. তাফসীরে রুহুল মাআনীতে বলেন:- অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কেরামের মতে এই আয়াতে
نحر দ্বারা কুরবানী করা উদ্দেশ্য।
সূত্র: তাফসীরে রুহুল
মাআনী،১৪/৬৬৫,৬৬৬
(গ) ইমাম ইবনে
জারীর তাবারী রহ. বলেন: فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ﴿٢﴾ এর সঠিক অর্থ হচ্ছে হে রাসুল! আপনি আপনার নামাযকে খালিস আপনার রবের জন্য পড়ুন,Statues বা মূর্তি-গাইরুল্লাহর জন্য নয় (যেমন মুশফিকরা করে থাকে)। ঠিক তেমনিভাবে আপনার কুরবানী ও খালিস রবের নামে করুন। অন্য কোন প্রতিমা ও মূর্তির
নামে নয়। সূত্র: জামিউল বায়ান ফী তা’বীলিল
কুরআন লিত্তবারি,১৬/৩৬১,৩৬২
এ সকল তাফসীর দ্বারা দিবালোকের
ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে সূরা কাউসারের ২ নং আয়াতে বর্ণিত نحر দ্বারা কুরবানী করাই উদ্দেশ্য। এ আয়াতে আল্লাহ
তা’আলা কুরবানী করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এ নির্দেশ
পালন অবশ্যই ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
আয়াত নং-০২
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا
مَنسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ
الْأَنْعَامِ ۗ অর্থ:-
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে
তারা আল্লাহর দেয়া Quadrupeds বা চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার
সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।… (সূরা
হজ্জ-৩৪)
সুতরাং এমন আমল যা সকল উম্মতের
জন্য Inevitable বা অবধারিত তা অবশ্যই ওয়াজিব হওয়ার-ই প্রমাণ বহন
করে।
v হাদিস দ্বারা দলিল:
হাদিস নং-০১
«مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ
يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا»
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি
করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছেও না আসে।
তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ ১৬/৪৬৬; ইবনু
মাজাহ- ৩১২৩; মুসান্নাফে ইবনে আবী
শাইবা-৩১২৩
নোট: হাদীসটিকে ইমাম হাকিম, ইমাম যাহাবী, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ফাতহুল
বারিতে হাদিসটির সনদকে সহীহ বলেছেন।
ইমাম ইবনে মাজাহ রহ. বলেন, হাদীসটি কুরবানি ছেড়ে দেওয়া
ব্যক্তিদের জন্য কঠিন ধমকি। আর এমনটি হয় ওয়াজিব তরককারিদের ক্ষেত্রে।
হাদিস নং-০২
«يَا أَيُّهَا النَّاسُ عَلَى
كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِي كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَّةٌ»
মিখনাফ ইবনু মুসলিম থেকে
বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন
হে মানব সকল! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হলো প্রতি বছর কুরবানি দেয়া। তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজাহ-৩১২৫
হাদিস নং-০৩
اخبرني ابو الزبير انه سمع جابر
بن عبد الله يقول صلى لنا النبي صلى الله عليه وسلم يوم النحر بالمدينه فتقدم رجال
فنحروا وظنوا ان النبي قد نحر فامر النبي صلى الله عليه وسلم “من كان نحر قبله ان يعيد بنحر آخر، ولا ينحروا حتى ينحر
النبي صلى الله عليه وسلم (رواه مسلم رقم الحديث ١٩٦٤
হযরত জাবের রা. বলেন, রাসূল (ﷺ) মদিনাতে ঈদের নামায পড়িয়েছেন। কিছু লোক
নামাযের পূর্বেই কুরবানি করে ফেলেছেন এ ধারণায় যে, হয়তো রাসূল (ﷺ)ও কুরবানি করে ফেলেছেন। তখন রাসূল (ﷺ) নির্দেশ দিলেন যারা নামাযের পূর্বে কুরবানি
করেছে তারা অবশ্যই পূনরায় কুরবানি করতে হবে। তোমরা কেউ রাসূল এর পূর্বে কুরবানি করবে না। তাখরিজ: সহীহ মুসলিস, হাদিস
নং ১৯৬৪
যদি কুরবানি ওয়াজিব না-ই হতো, তাহলে তো পূনরায়
কুরবানির নির্দেশ দিতেন না।
হাদিস নং-০৪
হযরত জুনদুব আল বাজালি রা.
বলেন:
قال شهد رسول الله صلى الله عليه
وسلم يوم اضحى ثم خطب فقال من كان ذبح قبل ان يصلي فليعد مكانها…. ومن لم يكن ذبح فليذبح بسم الله )رواه مسلم رقم ١٩٦٠(
রাসূল (ﷺ)ঈদের খুতবাতে ইরশাদ করেন, যারা নামাযের পূর্বে কুরবানি
দিয়েছো তারা তার পরিবর্তে অবশ্যই পুনরায় কুরবানি করো। আর যারা তখন কুরবানি করোনি তারা
আল্লাহর নামে কুরবানি করো। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম-১৯৬০
এ হাদিসেও পুনরায় কুরবানি করা এবং যারা আগে করেনি তাদেরকে কুরবানি
করার নির্দেশ রাসুল সা. দিয়েছেন। রাসূল (ﷺ)এর এমন নির্দেশমূলক বাণীও কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
হাদিস নং-০৫
হযরত বারা ইবনে আযেব রা. হতে
বর্ণিত:
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ
أَنَّ خَالَهُ أَبَا بُرْدَةَ بْنَ نِيَارٍ ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يَذْبَحَ
النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ هَذَا يَوْمٌ
اللَّحْمُ فِيهِ مَكْرُوهٌ وَإِنِّى عَجَّلْتُ نَسِيكَتِى لأُطْعِمَ أَهْلِى
وَجِيرَانِى وَأَهْلَ دَارِى. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র أَعِدْ نُسُكًا গ্ধ. فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ عِنْدِى عَنَاقَ لَبَنٍ هِىَ
خَيْرٌ مِنْ شَاتَىْ لَحْمٍ. فَقَالَ ্র هِىَ خَيْرُ نَسِيكَتَيْكَ وَلاَ تَجْزِى جَذَعَةٌ عَنْ أَحَدٍ
بَعْدَكَ
গ্ধ. (صحيح مسلم، رقم: ৫১৮২، الشاملة)
হযরত আবু বুরদা রা. রাসূল (ﷺ)এর কুরবানির পূর্বেই সকাল-সকাল কুরবানি করে
ফেলেছেন। কারণ, দিনের শেষে গোশতের আগ্রহ থাকে না। অতঃপর রাসূল (ﷺ)-কে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে রাসুল সালাম বলেন,
অবশ্যই পুনরায় সঠিক সময়ে কুরবানি করতে হবে। তিনি বলেন, এখন আমার কাছে ছোট একটি বকরি অবশিষ্ট আছে মাত্র। তবে তা মোটাতাজা। রাসুল
সালাম বললেন সেটা দিয়ে কুরবানি করো। তবে এ সুযোগটা শুধুই তোমার জন্য। অন্য কারো
ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। ছয় মাসের বকরি দিয়ে কুরবানি করা একমাত্র তোমার ক্ষেত্রে
অনুমোদিত। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদিস
নং- ১৯৬১
এ হাদীসে একবার কুরবানি করার পর তা সঠিক সময়ে না হওয়ায় রাসূল (ﷺ) তার সাহাবীদের কুরবানি করার নির্দেশ দিলেন
এবং তার কাছে কুরবানির উপযুক্ত বকরি না থাকা সত্ত্বেও কম বয়সের দ্বারা হলেও
কুরবানি করার নির্দেশ স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, কুরবানি ওয়াজিব; মুস্তাহাব
নয়।
হাদিস নং-০৬
عن نافع عن عبد الله بن عمر رضي
الله عنه : قال ” أقام رسول الله صلى الله عليه وسلم بالمدينة عشر سنين
يضحي” اخرجه الترمذي و قال هذا حديث
حسن (رقم الحديث ١٥٠٧ ومسند احمد ٤٩٣৫) قال المحقق اسناده صيحح.
হযরত ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূল (ﷺ)মদিনা শরীফে দশ বছর অবস্থানকালে কুরবানি করে
গেছেন। তিরমিজি ১৫০৭, মুসনাদে আহমদ ৪৯৩৫
নোট: ইমাম তিরমিজি রহ. হাদিসটিকে
হাসান বলেছেন।
হাদিসটির ব্যাখ্যা: মুহাক্কিক শুআইব আল-আরনাউত বলেন: হাদিসটির সনদ সহীহ। নিচে মুসনাদে আহমদের টীকা উল্লেখ করা হলো:
قال شعيب الارنؤوط : في هامش مسند احمد .. إسناده ضعيف فيه حجاج بن ارطاة ، مدلس وقد عنعن ولكن و له شاهد عن
ابن عمر ان النبي النبي صلى الله عليه وسلم كان ينحر يوم الاضحى بالمدينه، اخرجه
النسائي عن على بن عثمان عن سعيد ابن عيسى عن المفضل عن عبد الله بن سليمان عن
نافع : وهذا اسناد حسن من اجل عبد الله
بن سليمان وباقي الرجال ثقات لذا قال شعيب الارنؤوط :حديث صحيح، (رقم الحديث:
٦٤٠١ من مسند احمد.
শরীয়তের মূলনীতি হচ্ছে- যে
কাজ রাসূল (ﷺ)ধারাবাহিকভাবে
করেছেন কোনো দিন ছাড়েননি তখন কাজটি ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
প্রশ্ন: গ। যারা কুরবানি সুন্নাত বলেন তাদের দলিল কি?
উত্তর: গ। তাদের দলিল নিম্নরুপ:
হাদিস নং-০১
«إِذَا رَأَيْتُمْ هِلالِ ذِي
الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعَرِهِ
وَأَظْفَارِهِ»
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন তোমাদের মাঝে যে কুরবানি করতে চায়, যিলহয মাসের চাঁদ দেখার পর সে
যেন কুরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নাখ না কাটে। তাখরিজ: মুসলিম-১৯৭৭
এ হাদিসে ‘যে কুরবানি করতে চায়’
কথা দ্বারা বুঝা যায় এটা ওয়াজিব নয়।
হাদিস নং-০২
রাসূল (ﷺ) তার
উম্মতের মাঝে যারা কুরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে কুরবানি করেছেন। তার এ কাজ
দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে কুরবানি ওয়াজিব নয়।
হাদিস নং-০৩
হযরত জাবালা বিন সুহাইম থেকে
বর্ণিত:
عن جبلة بن سحيم ان رجلا سأل ابن
عمر عن الاضحية أ واجبة هي؟ فقال: ضحى رسول الله صلى الله عليه وسلم والمسلمون فاعادها عليه، فقال : أتعقل؟ ضحى رسول الله صلى الله عليه وسلم والمسلمون .(اخرجه الترمذي رقم الحديث: ١٥٠٦ و قال” هذا حديث حسن صحيح” وأخرجه ابن ماجه في الأضاحي، رقم الحديث ٣١٢٤(
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে এক লোক জিজ্ঞেস
করলো, কুরবানি কি ওয়াজিব? তিনি উত্তরে
বললেন, রাসূল (ﷺ)কুরবানি
করেছেন এবং সকল মুসলমানরাও কুরবানি করেছেন। প্রশ্নকারী বারবার জিজ্ঞেস করলে ইবনে
ওমর একই কথা বারবার পুনরাবৃত্তি করলেন। উক্ত হাদিসে হযরত ইবনে ওমর রা. রাসূল (ﷺ) ও মুসলিম মিল্লাতের ধারাবাহিকভাবে কুরবানির কথা স্পষ্ট প্রমাণ
করে যে এটি ওয়াজিব। একবারের জন্যও তিনি ওয়াজিব নয় বলেননি। অথচ প্রশ্নটি ছিল ওয়াজিব
কি-না। হাঁ, তিনি স্পষ্ট “ওয়াজিব” না বলার
কারণ হলো, যাতে কুরবানিকে ফরজ সমতুল্য মনে করা না হয়।
হাদিস নং-০৪
(سنة المسلمين سنة
ابراهيم سنة المعروفه) সুন্নাতে ইব্রাহিম, সুন্নাতুল মুসলিমিন, সুন্নাতে
মারুফা ইত্যাদি শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে।
ওয়াজিব অমান্যকারীদের যুক্তি
খণ্ডন:
১নং-হাদিস
শাইখ ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, বান্দার ইরাদা বা
ইচ্ছার সাথে কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি যুক্ত হতে পারে না। একটি বিধান ওয়াজিব
হওয়ার পর মানুষ যখন তা পালন করার ইচ্ছা করে, সে যেন নখ-চুল
ইত্যাদি না কাটে। এই অর্থই গ্রহণযোগ্য।
এর প্রমাণ হাদিসে প্রচুর রয়েছে। যেমনÑ রাসূল (ﷺ)বলেন: من اراد الحج فليتعجل যে হজের ইরাদা করবে, সে যেন তাড়াতাড়ি করে। এই হাদিসের অর্থে কি
কেউ বলবে যে, হজ একটি ঐচ্ছিক ব্যাপার? এটি
ফরজ নয়? (মাজমুআতুল ফাতাওয়া: খন্ড ১৩ পৃষ্ঠা ৯২)
২নং-হাদিস
রসূল তার উম্মতের মাঝে যারা
কুরবানি করেননি তাতের পক্ষ থেকে কুরবানি করেছেন। যদি সবার পক্ষ থেকেই আদায় করতেন, তাহলে সামর্থবান জন্য ধমকসূচক
বাক্য ব্যবহার করলেন কেন?
৩ নং-হাদিস
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানি হাফি. তাকমিলাতু ফাতহুল
মুলহিমে বলেন:
قال شيخنا في تكملة فتح الملهم : “ظاهر جواب ابن عمر انه اراد الدلالة على الوجوب لان السائل
انما سأله عن الوجوب فلو كانت الاضحية غير واجبة لنفي الوجوب صراحة ولكنه ذكر
مواظبة النبي صلى الله عليه وسلم والمسلمين وهو مما يدل على الوجوب، ولم يصرح
بالوجوب كي لا يظن تحتمه كتحتم الفرائض) . التكملة ج ٣ ص ٣٠٩ (
অর্থ: ইবনে উমর রা. এর জবাবে
কুরবানি ওয়াজিব হওয়ারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কেননা, তাঁকে কুরবানি ওয়াজিব কি-না?
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিলো। যদি সত্যিই কুরবানি ওয়াজিব না-ই হতো,
তবে তিনি স্পষ্ট ওয়াজিব নয় বলতে পারতেন। তিনি তা না করে রাসূল স. এর
আমলের ধারাবাহিকতা উল্লেখ করেছেন, যা ওয়াজিব হওয়ার উপর
প্রমাণ বহন করে। আর স্পষ্ট ওয়াজিব বলেননি যাতে কেউ ফরজ ভেবে না বসে। তাখরিজ: তাকমিলাতুল ফাতহুল মুলহিম:
৩/৩০৯
৪ নং- হাদিস
এগুলোর জবাবে স্বয়ং হাফেজ
ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেই বলেছেন এসব হাদিসে ” سنة ” সুন্নাহ শব্দের অর্থ ফকিহদের পরিভাষার সুন্নাত নয়, যা
ওয়াজিবের পরিপন্থী; বরং সুন্নাহ শব্দের অর্থ হাদিসসমূহে “তরিকা” ” الطريقة المسلوكة ” পন্থা, পদ্ধতি, নিয়ম বা
তরিকা-ই উদ্দেশ্য। আর এটা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব সব ধরনের বিধানকে শামিল করে। তাই শব্দগুলোর বাহ্যিক
অর্থ নিয়ে ওয়াজিব এর বিপক্ষে দাঁড় করানোর কোনো সুযোগ নেই। বিভিন্ন দলিলে যা ওয়াজিব
প্রমাণিত সেগুলো ‘সুন্নাহ’। আর যে সব বিধান সুন্নাত বা মুস্তাহাব প্রমাণিত সেগুলোও ‘সুন্নাহ’।
ইবনে হাজার আসকালানি রহ.
বলেন:
المراد بالسنة هذا في الحديثين
معا “الطريقة” لا السنة بالاصطلاح التي تقابل الوجوب والطريقة اعم من
ان تكون للوجوب او للندب (
فتح الباري ج ١٠ ص ٥ )
আল্লামা থানভী রহ. বলেন:
و ما في حديث البراء عن الشيخين : من ذبح بعد الصلاة فقد تم نسكه واصاب سنة المسلمين ،
فلا ينافي الوجوب لان المراد سيرة المسلمين وطريقتهم ، وذلك قدر مشترك بين الواجب
والسنة المصطلح عليها ومثله قوله صلى الله عليه وسلم “سنوا بهم سنة اهل الكتاب” وقوله صلى الله عليه وسلم عليكم بسنتي وسنةالخلفاء
الراشدين المهديين ، ولم تكن السنة المصطلح عليها معروفة اذ ذاك وقد قال البيهقي
في قول ابن عباس :
الختان سنة ، أراد سنة النبيদ্ধ الموجبة .(اعلاء السنن ج ١٠ ص ٧٩٤٥ بدائع الصنائع للكاساني: ج ٦ ص ٢٦٧)
সুতরাং সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ
হয়ে গেল যে, হাদিসে “সুন্নাহ” শব্দ দিয়ে
কুরবানিকে ফিকহের ভাষায় “সুন্নাত” তথা
ওয়াজিব নয় বলার কোনো সুযোগ নেই। কারণ পরবর্তী ‘সুন্নাত তথা
ওয়াজিব নয়’ পরিভাষাটি রাসূল (ﷺ)এর যুগে বিদ্যমান ছিলো না; বরং সুন্নাহের অর্থ হলো: তরিকা,
পদ্ধতি, সিরাত যা ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নত এবং
মুস্তাহাব সবটিকে শামিল করে।
প্রশ্ন: ঘ। বর্তমান আহলে হাদিস ভাইয়েরা এটাকে ঐচ্ছিক বলতেছেন?
উত্তর: ঘ। পূর্বসুরিরা কেউ এটাকে ঐচ্ছিক
বলিনি। যেমন,
(ক) দেখুন,
ইমাম মালিক ও শাফিয়ির রহ. মতে সুন্নাতে
মুয়াক্কাদা। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা
আবার বলেছেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি পরিত্যাগ করা
মাকরুহ। যদি কোন জনপদের লোকেরা সমর্থ্য হওয়া সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কুরবানি
পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কুরবানি হলো ইসলামের একটি
শিয়ার বা মহান নিদর্শন। ইবনু উসাইমিন, আহকামুল
উদহিয়্যাহ, পৃ. ২৬
(খ) শাইখুল
ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এর অভিমত
আহলে হাদিস ভাইদের সর্বাধিক
মান্যবর মহান ব্যক্তিত্ব, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি এর مجموعة الفتاوي এর ১২ নং
খন্ডের ৯৩ নং পৃষ্ঠা খুলে দেখা যেতে পারে। তাঁর দলিলভিত্তিক শক্তিশালী মতামত হচ্ছেÑ কুরবানি করা ওয়াজিব। তিনি তাঁর
এই বিখ্যাত ফতোয়ায় কুরআনের বহু আয়াতের উপর ভিত্তি করে কুরবানি ওয়াজিব সাব্যস্ত
করেছেন।
তাঁর ভাষায় শুনুন :
واما الاضحية ،
فالأظهر وجوبها ،
فانها من اعظم
شعائر الاسلام وهي
النسك العام في
جميع الامصار، والنسك
مقرون بالصلاة في
قوله : قُلْ إِنَّ
صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ
وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ
الْعَالَمِينَ (১৬২)
وقد قال تعالى:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (২) فامر
بالنحر كما امر
بالصلاة.
وقد قال الله
تعالى: * وَلِكُلِّ أُمَّةٍ
جَعَلْنَا مَنسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ
اللَّهِ عَلَىٰ مَا
رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ
الْأَنْعَامِ ۗ
* والْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم
مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ
لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ
ۖ فَاذْكُرُوا اسْمَ
اللَّهِ عَلَيْهَا صَوَافَّ
ۖ
* لَن يَنَالَ اللَّهَ
لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا
وَلَٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ
مِنكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ
سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ
عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ
ۗ وَبَشِّرِ
অতঃপর ইবনে তাইমিয়া রহ. আরো বলেন,
وقد جاءت الاحاديث بالامر بها
وقد خرج وجوبها قولا في مذهب احمد ، وهو قول ابي حنيفه واحد القولين في مذهب مالك
او ظاهر مذهب مالك
অর্থাৎ বহু হাদিস শরীফে
কুরবানি করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এটাই ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর একটি মত। এটা
ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মাযহাব এবং ইমাম মালেক এর মূল মাযহাব। অতঃপর শাইখুল ইসলাম
ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সুস্পষ্ট ভাষায় বলেনÑ যারা কুরবানি ওয়াজিব বলতে চায়
না, তাদের পক্ষে কোনো দলিল-প্রমাণ নেই। তারা সবচাইতে বড় দলিল
বলে যে হাদীসটি পেশ করেন, সেটা তাদের দলিল বহন করে না।
অতএব, নব্য আহলে হাদিস ভাইদের অনুরোধ
করবো, আপনাদের মহান গুরু ও মান্যবর ব্যক্তির উপরোক্ত বয়ান
ভাল করে পড়–ন! তাহলেই আপনাদের বিভ্রান্তির কারণ বুঝতে
পারবেন। ইনশাআল্লাহ।
(গ) শাইখ
মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রহ. এর অভিমত
বর্তমান সময়ের সৌদি আরবের
বিখ্যাত মুফতি ও শাইখ, আহলে হাদিস ভাইদের অত্যন্ত মান্যবর ব্যক্তিত্ব, শাইখ
মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন احكام الأضحية والزكاة নামে একটি কিতাব লিখেছেন।
এই কিতাবে তিনি লেখেন:
قال الشيخ ابن عثيمين رحمه الله
وعندي ان التفويض الى الاراده لا ينافي الوجوب اذا قام عليه الدليل فقد قال النبي
صلى الله عليه و سلم في المواقيت هن لهن اتى عليهن ، من غير اهلهن ممن يريد الحج
والعمرة ، ولم يمنع ذلك من وجوب الحج والعمرة بدليل اخر . فصح تقسيم الناس فيها الى مريد و غير مريد لان الاضحيه
لا تجب على المعسر.
(ثم نقل الشيخ قول شيخ الاسلام
ابن تيميه مفصلا وذكر جميع الادله لنفات الوجوب واجاب واحد عن واحد واتي بادلة الوجوب
فاجاب عما ورد فيها حديثا عن حديث) ثم قال:
هذه آراء العلماء وادلتهم سقناها
ليبين شان الاضحيه واهميتها في الدين. والادله فيها متكافية ، و سلوك الاحتياط ان لا يدع مع القدره عليها
لما فيها من تعظيم الله وذكره و براءة الذمة بيقين انتهي . (احكام الاضحية والزكاة ص ٤٧ (
শাইখ ইবনে উসাইমিন রহ.
উপরোক্ত বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার পক্ষের দলিলসমূহ
প্রাধান্য পাবে। তিনি দলিলগুলোর উপর আরোপিত সব অভিযোগের জবাবও দিয়েছেন। পক্ষান্তরে
যারা ওয়াজিব বলেন না, তাদের দলিলগুলো একটা একটা করে খ-নও
করেছেন এবং বলেছেন, এর অধিকাংশ দলিলই দুর্বল। যেটা সহীহ সেটা
কিন্তু ওয়াজিবের পরিপন্থী নয়। পরিশেষে বলেছেন, যথেষ্ট
পরিমাণে দলিল উল্লেখ করলাম কুরবানির গুরুত্ব ও ইসলামের নির্দেশনা বোঝানোর জন্য। সব
দলিলের বিবেচনায় অতি সাবধানতা হচ্ছেÑ সামর্থ্যবান ব্যক্তির
জন্য কুরবানি না করার কোন সুযোগ নেই। ইসলামের নিদর্শন হিসাবে এটাই দাবি রাখে।
(আহকামুল উযহিয়্যাহ ও যাকাত ৪৭)
নিজস্ব মত: যারা কুরবানি ঐচ্ছিক বলেন,
তাদেরকে বলতে চাই, ওয়াজিব আদায়ের মধ্যে নিরাপদ। ওয়াজিবের মধ্যে সুন্নাত ও নফল আছে; কিন্তু নফল/সুন্নাতের মধ্যে ওয়াজিব নেই। আর এটা তো সামর্থবানদের
ওপরও ওয়াজিব সবার প্রতি নয়। সূতরাং শরিয়তের মহা হুকুম ও শিআরে ইসলামের এ আমল
উম্মাহর মধ্যে উৎসাহ দিতে হবে অনুসাহিত নয়।
তথ্য সহযোগিতায়, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ ও হাফেজ
মাওলানা আব্দুল মাজীদ মামুন রহমানি-এর প্রবন্ধ থেকে, আওয়ার ইসলাম.
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
কুরবানী
র সাথে আকিকা দেওয়া র কি কোন দলীল আছে? |
জিজ্ঞাসা-২১৮: আসসালামুয়ালাইকুম মুহতারাম শায়েখ
এর নিকট জানতে চাই কুরবানী র সাথে আকিকা দেওয়া র কি কোন দলীল আছে? তারিখ-০৬/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত শায়েখ, আমার পরম শ্রদ্ধেয় বড় ভাই আরটি- আখতারুজ্জামান ৬ এডি বিগ্রেড মিরপুর সেনানিবাস, ঢাকা -এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ও বারাকাতুহ। আল্লাহ তাআলা আপনাকে
নিরাপদে ও শান্তিতে রাখুন। আপনি একটি কমন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন, কুরবানি আসলেই এ শ্রেণীর মানুষকে এ নিয়ে প্রপাগাণ্ডা চালায়। আপনার
প্রশ্নকে সহজভাবে বোঝার জন্য কয়েকভাবে ভাগ করছি। ونسأل الله
التوفيق وهو الموفق
والمعين
প্রশ্ন: ক। এ বিষয়ে ইমামদের মতামত কি?
উত্তর: ক। হানাফি মাযহাব এবং এক বর্ণনা মতে, এটি ইমাম আহমাদের মতে কুরবানির
সাথে আকিকা দেওয়া যাবে। তাছাড়া এটি হাসান বসরি, মুহাম্মদ বিন সিরিন ও কাতাদা প্রমুখের
অভিমত।
প্রশ্ন: খ। কুরবানীর সাথে আকিকা দেওয়া র কি
কোন দলীল আছে?
উত্তর: খ। হ্যাঁ, দলিল তো অবশ্যই আছে। এখন
প্রশ্ন হলো শরিয়তের দলিল কয়টি? আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের
মতে দলিল চারটি। (কুরআন,হাদিস,ইজমা ও কিয়াস) কিন্তু কিছু সুবিধাবাদী লোক আছে। যারা
তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলে কিয়াসকে অস্বীকার করে। আবার বিভিন্ন সময় মানে। যাই হোক
দলিল নিম্নে দেওয়া হলো:
আসার নং-০১
বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ‘আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. এর ফতোয়াটিই সম্ভবত বিজ্ঞজনের যথেষ্ট হবে। তিনি বলেছেন, ‘উট ও গরু সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানী হতে পারে। আর এতে শরীক হতে পারে কুরবানীকারী, তামাত্তু হজ্বকারী এবং হজ্বের ইহরাম গ্রহণের পর হজ্ব আদায়ে অপারগ ব্যক্তি। তাখরিজ: আসসুনান, সায়ীদ ইবনে মানসূর-আল কিরা লি-কাসিদি উম্মিল কুরা, পৃ. ৫৭৩
সুতরাং প্রমাণিত হলো
কুরবানির সাথে আকিকাও দেওয়া যাবে,সমস্যা নেই।
আসার নং-০২
হিশাম ও ইবনে সিরিন থেকে
বর্ণিত আছে তারা উভয়ে বলেন: তার পক্ষ থেকে কোরবানী করলে সেটা আকিকা হিসেবে যথেষ্ট
হবে। সূত্র: আল-মুসান্নাফ-৫/৫৩৪
আসার নং-০৩
কাতাদা থেকে বর্ণিত আছে তিনি
বলেন: আকিকা হিসেবে জবাই করা না হলে সেটা যথেষ্ট হবে না। সূত্র: আল-মুসান্নাফ-৫/৫৩৪
তাবেয়িদের কথা, কর্ম, আমল,
ফতোয়া আমাদের দলিল। যারা বুখারি বুখারি করে, তারা
বুখারি খুলে দেখুক, হাজার হাজার তাবেয়িদের বাণী, ফতোয়া বুখারি ভরা, বিশ্বাস না হলে প্রথম পৃষ্টা
খুলেই দেখুন, বাংলা আরবি দেখুন।
প্রশ্ন: গ। কুরবানি ও আকিকা কি একই জিনিস?
উত্তর: গ। হ্যাঁ, কুরবানি
ও আকিকা একই জিনিস। আকীকাও এক ধরনের কুরবানী।
দলিল: হাদীস শরীফে আকীকার উপরও ‘নুসুক’ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। আর এখানে ‘নুসুক’ অর্থ কুরবানী। হাদীসের আরবী পাঠ এই-
سئل رسول الله صلى الله عليه
وسلم عن العقيقة، فقال :
لا أحب العقوق كأنه كره الاسم،
قالوا يا رسول الله!
نسألك عن أحدنا يولد له، فقال : من أحب منكم أن ينسك عن ولده فليفعل، على الغلام شاتان
مكافأتان، وعلى الجارية شاة.
তাখরিজ: আলমুসান্নাফ, আব্দুর রাযযাক : ৭৯৬১; আলমুসনাদ, আহমদ : ৬৭১৩, ৬৭২২; আসসুনান, আবু দাউদ (আকীকা অধ্যায়) ২৮৪২; আসসুনান, নাসায়ী : ৭/১৬২, ১৬৩; আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২৪-২৪৭২৭; আলমুসতাদরাক, হাকিম, ৫/৩৩৭-৭৬৬৬
سئل رسول الله صلى الله عليه
وسلم عن العقيقة، فقال :
لا يحب الله العقوق، من ولد له
منكم ولد فأحب أن ينسك عنه فليفعل.
তাখরিজ:আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২১, হাদীস : ২৪৭২২; আলমুয়াত্তা, ইমাম মালিক, আকীকা অধ্যায়, হাদীস : ৬৫৮
আকীকাও যখন এক প্রকারের কোরবানী তখন একটি গরু বা উট দ্বারা একাধিক ব্যক্তির (সাত জন পর্যন্ত)
আলাদা-আলাদা কুরবানী আদায় হওয়ার হাদীসগুলো থেকে কুরবানী-আকীকা একত্রে আদায়ের অবকাশও প্রমাণিত হয়। এটা শরীয়তের পক্ষ হতে প্রশস্ততা যে, গরু বা উটের ক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’ সাত জনের সাতটি জবাইয়ের স্থালাভিষিক্ত গণ্য হয়। একারণে একটি উট বা গরু সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট হয়।
সহীহ মুসলিমে সাহাবী জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমরা হজ্বের ইহরাম বেঁধে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে আদেশ করলেন যেন প্রত্যেক উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি।’-সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্ব, হাদীস : ১৩১৮/৩৫১
خرجنا مع رسول الله صلى الله
عليه وسلم مهلين بالحج، فأمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نشترك في الإبل
والبقر، كل سبعة منا في بدنة.
অন্য বর্ণনায় আছে, নবী (ﷺ)বলেছেন,(একটি) গরু সাতজনের পক্ষ হতে এবং (একটি) উট সাতজনের পক্ষ হতে (কুরবানী করা যাবে)।’
البقرة عن سبعة والجزور عن سبعة.
-আস-সুনান, আবু দাউদ, হাদীস : ২৮০১, কিতাবুল আযাহী
সারকথা, ‘নুসুক’ বা কুরবানীর ক্ষেত্রে শরীয়তের প্রতিষ্ঠিত মূলনীতি এই যে, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’ (إراقة الدم) দ্বারা একটি কুরবানী আদায় হলেও উট ও গরুর ক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’ দ্বারা সাতটি কুরবানী আদায় হতে পারে। অর্থাৎ এখানে ‘জবাইয়ে শরীক হওয়া’ও (সর্বোচ্চ সাত জনের) কুরবানী আদায়ের পক্ষে যথেষ্ট। আকীকাও যেহেতু ‘নুসুক’ বা কুরবানী তাই এ মূলনীতিতে আকীকাও শামিল থাকবে। সুতরাং ‘একটি পশু জবাই’ করা দ্বারা যেমন তা আদায় হবে, তেমনি নির্ধারিত নিয়মে ‘জবাইয়ে শরীক হওয়ার’ (شركة في دم) দ্বারাও তা আদায় হবে।
সারকথা হলো, কুরবানি ও আকিকা একই নুসুক,
একই রকম বিধান। আর ধরুন,একজন ব্যক্তি একটি
ছাগল/ভেড়া নিজের জন্য কুরবানি করলো আরেকটি ছাগল/ভেড়া ছেলের জন্য আকিকা করলো। এতে সমস্যা নেই। আমরা জানি গরু/মহিষ/উটে সাতটি ভাগ দেওয়া যায়। এখন যদি কোন ব্যক্তি দুটি ভাগ নিয়ে একটি নিজের
কুরবারি ও অপরটি আকিকা দিলে সমস্যা কোথায়। অর্থাৎ একটি সাতটি ছাগলের সমান।
ঘ। কিয়াস দ্বারা দলিল:
(১) এ দুটো
আমলের মাধ্যমে উদ্দেশ্য হচ্ছে পশু জবাই করার মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য হাছিল করা।
তাই একটি অপরটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। যেমনিভাবে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ
(মসিজদে প্রবেশের নামায) ফরয নামাযের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে।
(২) ইবনে
আবু শাইবা (রহঃ) "আল-মুসান্নাফ" গ্রন্থে (৫/৫৩৪) বলেন: হাসান থেকে
বর্ণিত আছে তিনি বলেন: কেউ যদি ছেলের পক্ষ থেকে কোরবানী করে তাহলে সেটা আকিকা
হিসেবে যথেষ্ট হবে।
হিশাম ও ইবনে সিরিন থেকে
বর্ণিত আছে তারা উভয়ে বলেন: তার পক্ষ থেকে কোরবানী করলে সেটা আকিকা হিসেবে যথেষ্ট
হবে।
কাতাদা থেকে বর্ণিত আছে তিনি
বলেন: আকিকা হিসেবে জবাই করা না হলে সেটা যথেষ্ট হবে না।
(৩) আল-বুহুতি
(রহঃ) "শারহু মুনতাহাল ইরাদাত" গ্রন্থে (১/৬১৭) বলেন: "যদি আকিকার
সময় ও কোরবানীর সময় একত্রে পড়ে; অর্থাৎ কোরবানীর দিনগুলোতে
শিশু জন্মের সপ্তম দিন বা অনুরূপ কোন দিন পড়ে এবং তার আকিকা করা হয় তাহলে সেটা
কোরবানী হিসেবে যথেষ্ট হবে। কিংবা যদি কোরবানী করা হয় তাহলে সেটা আকিকা হিসেবে
যথেষ্ট হবে। যেমনিভাবে যদি ঈদের দিন ও জুমার দিন একই দিনে পড়ে তখন একটার জন্য গোসল
করলে অপরটার গোসল হিসেবে যথেষ্ট হবে এবং যেমনিভাবে তামাত্তু হজ্জকারী কিংবা
ক্বিরান হজ্জকারী যদি কোরবানীর দিন একটি ভেড়া জবাই করে সেটা হজ্জের ফরয হাদি ও
কোরবানী হিসেবে যথেষ্ট হবে।"
আরও বলেন: "যদি আকিকা ও কোরবানী একই সময়ে
পড়ে এবং একটি পশু জবাই করার মাধ্যমে উভয়টির তথা আকিকা ও কোরবানীর নিয়ত করা হয়
তাহলে উভয়টি আদায় হয়ে যাবে‑ ইমাম আহমাদের সুস্পষ্ট উক্তির আলোকে।" সূত্র: কাশ্শাফুল ক্বিনা-৩/৩০
(৪) এ
অভিমতটি শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম (রহঃ)ও মনোনীত করেছেন। তিনি বলেন: যদি কোরবানী
ও আকিকা একত্রে পড়ে এবং পরিবারের কর্তার কোরবানী করার দৃঢ় সংকল্প থাকে এবং তিনি
পশু জবাই করেন তাহলে এ পশু কোরবানীর পশু এবং এর মধ্যে আকিকাও ঢুকে পড়বে।
এক্ষেত্রে কিছু কিছু আলেমের
কথায় পাওয়া যায় যে, উভয় জবাই একই ব্যক্তির পক্ষ থেকে: অর্থাৎ কোরবানী ও আকিকা নবজাতকের পক্ষ
থেকে হতে হবে। আর কিছু কিছু আলেমের মতে, তা শর্ত নয়। যদি
পিতা কোরবানী করেন তাহলে কোরবানী পিতার পক্ষ থেকে, আর আকিকা
ছেলের পক্ষ থেকে।
সারকথা: যদি কোরবানীর পশুকে
কোরবানী ও আকিকার নিয়তে জবাই করা হয় তাহলে সেটা জায়েয হবে। সূত্র: ফাতাওয়াস শাইখ মুহাম্মদ বিন
ইব্রাহিম -৬/১৫৯
তথ্য সহযোগিতায় মাসিক আল কাউসার
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
কোন
গরু/মহিষ/উটে সমান ভাগ না দিলে কুরবানি হবে কি? |
জিজ্ঞাসা-২১৯: আসসালামু আলাইকুম।
কোন গরুতে কেউ ভাগ নিলো দেড় ভাগ/
আড়াই ভাগ/ অথবা সাড়ে তিন ভাগ। এমতাবস্থায় ব্যক্তির কোরবানি কি সহীহ হবে,,?? অর্থাৎ ভগ্নাংশের উপর কি কোরবানি জায়েজ হবে,,,??
দালিলিকভাবে আলোচনা করলে উপকৃত
হবো। বারাকাল্লাহু ফি কুম।
? তারিখ-০৬/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আলেমে মাহের মুহাম্মদ হেলাল উদ্দীন ইউনিট- 7 ই
বিবগুড়া ক্যান্টনমেন্ট। -এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ
তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ও বারাকাতুহ। আল্লাহ তাআলা আপনাকে
নিরাপদে ও শান্তিতে রাখুন।
ونسأل الله التوفيق
وهو الموفق والمعين
না, কোন গরুতে কেউ ভাগ নিলো দেড় ভাগ/
আড়াই ভাগ/ অথবা সাড়ে তিন ভাগ। এমতাবস্থায় উক্ত ব্যক্তির কোরবানি সহীহ হবে না। দলিল:
সাতজনে মিলে কুরবানী করলে
সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা
ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে
না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০
عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ
عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:
الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْجَزُورُ عَنْ سَبْعَةٍ
জাবির ইবনু ’আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে
বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেনঃ (একটি) গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং (একটি)
উট সাতজনের পক্ষ থেকে (কুরবানী করা যাবে)। সুনানে আবু দাউদ-২৮০৮
হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে,‘আমরা হজ্বের ইহরাম বেঁধে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)এর সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে আদেশ করলেন যেন প্রত্যেক উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি।’সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্ব, হাদীস : ১৩১৮/৩৫১
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে
ফুকাহায়ে কেরাম বলেন যে, সবার সমান হতে হবে। উদাহরণ হলো,
আপনি এবং আপনার বন্ধু মিলে সাত লক্ষ টাকা দিয়ে একটি বাড়ি কিনলেন,
বাড়িতে সাতটি ফ্ল্যাট আছে। (৭০০০০০/৭= ১,০০০০০) প্রতিটি ফ্ল্যাট সমান। সুতরাং প্রত্যেকে এক লক্ষ টাকা দিতে হবে। এখন যদি
কেউ পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়, সে কি একটি ফ্ল্যাট পাবে ? আরেকজন দেড় লক্ষ টাকা দিলো,
এখন বণ্টন হবে কিভাবে?
এক্ষেত্রে সাত ভাগ মানে সবাই সমান অংশ এবং সমান অর্থ ।
কুরবারির বেলাও তাই।
সুতরাং আপনার প্রশ্নে বর্ণিত
ছুরতে দেড়/আড়াই/সাড়ে তিন ভাগ দিলে কুরবানি হবে সহিহ হবে না।
প্রশ্ন: মুহতারাম আমি বলতে চাচ্ছি, যদি একটি গরু সমান সমানভাবে তিনজনে মিলে করে তখন
অবশ্যই সেখানে ভগ্নাংশ সাবেত হচ্ছে,,,,
যেমন-
একটি গরু যদি 7 ভাগের সমান হয়, তাইলে
তিনজনে পাইলো 2 ভাগ করে এবং সপ্তমভাগের কিছু অংশ,,,, এক্ষেত্রে বিষয়টি আমার খুব প্যাচ মনে হচ্ছে। শুকরান।
উত্তর: আপনার প্যাচটি সঠিক নয়। প্রথম কথা হলো একটি গরু/মহিষ/উটে সর্বোচ্চ সাত ভাগ দেওয়া যাবে। তার মানে এই নয় যে, সাত ভাগই দিতে হবে, ৩,৪,৫,৬ ভাগ দেওয়া যাবে না। দলিল:
উট, গরু, মহিষ
সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন,
চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। সূত্র:
মুসলিম, হাদিস: ১৩১৮; বাদায়েউস
সানায়ি: ৪/২০৭
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
হযরত
ইব্রাহীম আঃ ও ইসমাঈ আঃ কাবা ঘর নির্মানের পর অবশিস্ট ইট- বালির কনা ছুড়ে দিলেন/
ছিটিয়ে দিলেন, উক্ত কনা পৃথিবীর যে যে প্রান্তে
পড়েছে সেখানে মসজিদ নির্মিত হবে, |
জিজ্ঞাসা-২২১: আসসালামু আলাইকুম। সমাজে প্রচলিত একটি উক্তি, হযরত
ইব্রাহীম আঃ ও ইসমাঈ আঃ কাবা ঘর নির্মানের পর অবশিস্ট ইট- বালির কনা ছুড়ে দিলেন/ ছিটিয়ে
দিলেন, উক্ত কনা পৃথিবীর যে যে প্রান্তে পড়েছে সেখানে মসজিদ নির্মিত
হবে, উক্তিটি কতটুকু সঠিক জানেবেন। তারিখ-০৬/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
সম্মানিত ভাই শরিফ ইনসান (ভদ্র প্রকৃতির মানুষ) আরটি, আবুল
কালাম আজাদ, ৫৫ এমপি
ইউনিট, যশোর সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে
দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ও বারাকাতুহ। আল্লাহ তাআলা আপনাকে
নিরাপদে ও শান্তিতে রাখুন। ভাই আপনি যে
কথাটি উল্লেখ করেছেন, হযরত ইব্রাহীম আঃ ও ইসমাঈ আঃ কাবা ঘর নির্মানের
পর অবশিস্ট ইট- বালির কনা ছুড়ে দিলেন/ ছিটিয়ে দিলেন, উক্ত
কনা পৃথিবীর যে যে প্রান্তে পড়েছে সেখানে মসজিদ নির্মিত হবে।
এ রকম কোন কথার নস আমার নেই; আল-বুরহানের
১৮৬ জন সদস্যের মধ্যে কাহাও জানা থাকে। দয়া করে দলিল উপস্থাপন করলে, উপকৃত হতাম।
তবে ইবরাহিম (আ.) হজের ঘোষণা
পৃথিবী সকল হাজি শুনেছিল তার বর্ণনা পাওয়া :
وَ اَذِّنۡ
فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ یَاۡتُوۡکَ رِجَالًا وَّ عَلٰی کُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ
مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ
অর্থ: আর মানুষের নিকট হজ্জের
ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে’। সূরা হজ-২৬
ইমাম বগভি বলেন, কাবাঘর নির্মাণ করার পর আল্লাহ
তাআলা আদম (আ.)-কে নির্দেশ দেন যে মানুষের মধ্যে ঘোষণা করে দাও যে বায়তুল্লাহর হজ
তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। ইবনে আবি হাতেম ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন,
যখন ইবরাহিম (আ.)-কে হজ ফরজ হওয়ার কথা ঘোষণা করার নির্দেশ দেওয়া হয়,
তখন তিনি আল্লাহর কাছে আরজ করেন, এখানে তো
জনমানবশূন্য মরুপ্রান্তর। ঘোষণা শোনার মতো কেউ নেই, যেখানে
জনবসতি আছে, সেখানে আমার আওয়াজ কিভাবে পৌঁছবে? আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমার দায়িত্ব শুধু ঘোষণা করা।
মানুষের কানে পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার। অতঃপর ইবরাহিম (আ.) আবু কুবাইস পাহাড়ে আরোহণ
করে দুই কানে অঙ্গুলি রেখে ডানে-বাঁয়ে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ করে চিৎকার করে ঘোষণা
করেন, ‘হে মানুষেরা! আল্লাহ তোমাদের এ ঘরের হজ করার নির্দেশ
করেছেন, যাতে তোমাদের জান্নাত দিতে পারেন এবং জাহান্নাম থেকে
মুক্তি দিতে পারেন। সুতরাং তোমরা হজ করো। ’ ইবরাহিম (আ.)-এর
এ আওয়াজ আল্লাহ তাআলা সব মানুষের কানে কানে পৌঁছে দেন। এমনকি যারা ভবিষ্যতে কিয়ামত
পর্যন্ত পৃথিবীতে আসবে, তাদের কানে পর্যন্ত এ আওয়াজ পৌঁছে
দেওয়া হয়। যাদের ভাগ্যে আল্লাহ তাআলা হজ লিখে দিয়েছেন, তাদের
প্রত্যেকেই এ আওয়াজের জবাবে আমি হাজির, আমি হাজির বলে হাজির
হওয়ার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ইবরাহিম
(আ.)-এর ঘোষণার উত্তরই হচ্ছে হজে লাব্বাইক বলার আসল ভিত্তি। সূত্র: কুরতুবি, ১২তম খণ্ড, ২৮ পৃষ্ঠা,
মাজহারি
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
আমাদের
দেশে আইয়ামে তাশরিকের তাকবীর কোন দিন থেকে শুরু হবে এবং কোন দিনে শেষ হবে? |
জিজ্ঞাসা-২২০ আসসালামু আলাইকুম আমার জানার
বিষয়টা হচ্ছে আরাফার দিন শুক্রবার হলে আমাদের দেশে আইয়ামে তাশরিকের তাকবীর কোন দিন
থেকে শুরু হবে এবং কোন দিনে শেষ হবে? তারিখ-০৬/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি মমিনুর রহমান ৩৫ ফিল্ড এম্বুলেন্স
কুমিল্লা সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে
দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ও বারাকাতুহ। আল্লাহ তাআলা আপনাকে
নিরাপদে ও শান্তিতে রাখুন।
আরাফার দিন, ৯ যিলহজ ফজর থেকে ১৩ যিলহজ আসর
পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর একবার তাকবিরে তাশরিক তথা— ‘আল্লাহু আকবর,
আল্লাহু
আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর,
ওয়ালিল্লাহিল
হামদ’ বলা ওয়াজিব। সূত্র: আলআওসাত, হাদীস: ২১৯৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস:
৫৬৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৭;
আলবাহরুর
রায়েক ২/১৬৫
সুতরাং আপনার সৌদিতে
আরাফা যেদিন হোক কেন, আমরা/আপনি আগামি শনিবার থেকে বুধবার আসর পর্যন্ত বাংলাদেশিরা তাশরিক আদায় করবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
কুরবানির গোশত তিন ভাগ
দেওয়া করা বিধান কি |
জিজ্ঞাসা-২২২: কুরবানীর গোশতকে তিনভাগ করতে হবে
এমন কোনো দলিল আছে?? তারিখ-০৬/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি সালেহ আহমদ।৩৮
ইবি,আলীকদম। সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ
তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: প্রথম কথা হলো, যদি
মান্নতের কুরবানি হয়, কুরবানি দাতা ও ধনী ব্যক্তি/হাশেমি বংশ খেতে পারবে না। সূত্র:
ফাতাওয়া কাসিমিয়া-১৭/৮২-৮৩
দ্বিতীয় কথা হলো, স্বাভাবিক কুরবানি হলে,
এর গোশত তিন ভাগ করা(নিজে,আত্মীয়, প্রতিবেশি) মুস্তাহাব
বা সর্বোত্তম পদ্ধতি। তিনভাগ করা জরুরি নয়। তবে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিবেশি ও
আত্মীয়দের হক আছে, সেটাও কুরবানির সময় আদায় করা উচিত।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন-
‘অতঃপর তোমরা
উহা হতে আহার কর এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করাও। সূরা
হজ্ব-২৮
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন-
«كلوا وأطعموا وادخروا»
‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।’(বোখারি-৫৫৬৯)। ‘আহার করাও’ বাক্য
দ্বারা অভাবগ্রস্থকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়।
আলকামা বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমার হাতে কুরবানীর পশু পাঠান এবং নির্দেশ দেন, কুরবানীর
দিন একে যবেহ করবে, নিজে খাবে, মিসকীনদেরকে
দেবে এবং আমার ভাইয়ের ঘরে পাঠাবো। সূত্র: আস-সুনানুল কুবরা
লিল বাইহাকী: ১০২৩৮
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আস (রা.) তার ইহুদী প্রতিবেশীকে
দিয়ে গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন। বুখারী, আদাবুল মুফরাদ,
হাদীস নং ১২৮; সনদ সহীহ
আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) এর
একটি আছার— ‘এটা আল্লাহ পাক হতে অনুগ্রহ; কোরবানির মাংস পুরোটা
নিজেরা খাওয়া যাবে, দরিদ্রদের দান করা যাবে বা পুরোটা উপহার
হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের বিতরণ
করা যাবে। এছাড়া ইবন মাসঊদ (রা.) কুরবানীর গোশত তিনভাগ করে একভাগ নিজেরা খেতেন,
একভাগ যাকে চাইতেন তাকে খাওয়াতেন এবং একভাগ ফকির-মিসকিনকে দিতেন বলে
উল্লেখ রয়েছে।
নোট: উপরোক্ত আসারটির সূত্র আমি
পাইনি।
ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্
দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মাসিক গবেষণাপত্র আল কাউসারে এ বিষয়ে মাওলানা মুহাম্মাদ
ইয়াহইয়া লিখেছেন, ‘মাসআলা: ৪৩. কোরবানির মাংসের এক-তৃতীয়াংশ
গরিব-মিসকিনকে এবং এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম।
অবশ্য পুরো মাংস যদি নিজে রেখে দেয়, তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪,আলমগীরী ৫/৩০০’
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
মহিলাদের
চেহারা বা মুখ মন্ডল হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত কিনা ? |
জিজ্ঞাসা-২২৩: মহিলাদের চেহারা বা মুখ মন্ডল হিজাব
বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত কিনা ?
দালিলিক
বিশ্লেষণ আশা করি। তারিখ-০৭/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি মোহাম্মাদ আব্দুর
রহমান, সাভার;
১৭ ইবি, বগুড়া
সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: জাযাকাল্লাহু খয়র, আমার একান্ত স্নেহেরর ছোট ভাই
আব্দুর রহমান সাহেবকে, তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সওয়াল করেছেন।
এই ফেতনার জামানায় মাসয়ালাটি অতীব জরুরি; যখন কিছু লোক এটাকে
ঐচ্ছিক বলে প্রচার করছে; অথচ এটি একটি স্বতন্ত্র বিধান;
তারা সতর আর হিজাবকে একই মনে করছে।
আল্লাহ তাদেরকে সহিহ বুঝ দান করুন।
প্রশ্ন: ক। চেহেরা/মুখমণ্ডল হিজাব/পর্দার
অন্তর্ভুক্ত কি না?
উত্তর: ক। হ্যাঁ, কুরআন-হাদিস,
উম্মতের ইজমা, কিয়াস, উম্মতের
আমল, বিজ্ঞ আলেমদের মতামত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে মুখমণ্ডল পর্দার অংশ। তবে ইবনে আব্বাস (রা.) এর এক ব্যাখ্যার কারণে কেউ
কেউ জায়েজ বলে, কিন্তু তার অন্য আয়াতের
ব্যাখ্যা দ্বারা তা টিকে না। নিম্নে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
ونسأل الله التوفيق
وهو الموفق والمعين
প্রশ্ন: খ। দালিলিক বিশ্লেষণ আশা করি।
উত্তর: খ। নিম্নে কুরআন হাদিস ইজমা কিয়াস
ও ফুকাহায়ে কিরামের সিদ্ধান্ত উম্মাহর আমল তুলে ধরা হল:
v কুরআনুল কারিমের আদেশ:
আয়াত নং-০১
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ
قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ
وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ
عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ
অর্থ: হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের
চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে
না। সূরা আল আহযাব-৫৯
পর্দা বিষয়ে এ আয়াত অত্যন্ত
পরিষ্কার ও স্পষ্ট। কারণ, এ আয়াত থেকে জানা যায়, পর্দার নির্দেশের মধ্যে মুখমণ্ডলও অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া এ আয়াতে আযওয়াজে মুতাহহারাত (রাসূলুল্লাহর (ﷺ) -এর পুতঃপবিত্র সহধর্মীনীগণ) ও নবি (ﷺ) -এর কন্যাগণের সঙ্গে মুসলিম মহিলাদেরও সম্বোধন করা হয়েছে। এ আয়াতে ‘জালাবিব’ শব্দ ব্যবহার
করা হয়েছে, যা ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। আরবি অভিধানের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লিসানুল ‘আরাব’–এ লেখা হয়েছে, ‘জিলবাব’ ওই
চাদরকে বলা হয় যা মহিলারা নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকার জন্য ব্যবহার করে। ১/২৭
অভিধান থেকে সরে গিয়ে
মুফাসসিরগণের বক্তব্য দেখলেও জানা যায়, ‘জিলবাব’ এমন কাপড়কে বলে যদ্বারা মহিলারা নিজেদের শরীর ঢাকেন। ‘জিলবাব’ অর্থ বড় চাদর,
যা দ্বারা মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়। কুরতুবি, আল-জামে‘ লিআহকামিল কুরআন : ১৪/২
এ আয়াত সম্পর্কে বিখ্যাত
তাফসিরকারকদের মতামত:
(ক) ইমাম
যাসসাস রহঃ বলেন,
فى هذه الآية دلالة على أن
المرأة الشابة مأمورة بستر وجهها من الأجنبيين
এ আয়াত একথা বোঝাচ্ছে যে, যুবতী মেয়েরা ঘর থেকে বের
হওয়ার সময় এমনভাবে বের হবে যেন তাদের চেহারা পরপুরুষের সামনে প্রকাশিত না হয়। সূত্র:
আহকামুল কুরআন ইমাম জাসসাসকৃত-৩/৩৭২
(খ) আল্লামা
আলূসি রহ. আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রা.
বরাত দিয়ে লিখেন, ‘জিলবাব’ সেই চাদরকে
বলে যা মহিলারা দেহের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত উড়িয়ে ছেড়ে দেয়। রুহুল মাআনি : ২২/৮৮
(গ) قال ابن عباس وأبو عبيدة: أمر نساء المؤمنين أن يغطين رؤوسهن ووجوهن بالجلابيب
إلا عينا واحدة ليعلم أنهن حرائر.
ইমাম বাগাবী রহ. বলেন, ইবনে আব্বাস এবং আবু উবাইদা
রাযি. বলেছেন, মুমিন নারীদেরকে ওড়না দ্বারা তাদের মাথা এবং
মুখমণ্ডল আবৃত করে রাখার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে একটি চক্ষু খোলা রাখার
অবকাশ দেওয়া হয়েছে, যাতে বুঝা যায় তারা স্বাধীন নারী।
তাফসীরে বাগাবী ৩/৪৬৯
(ঘ)
وأخرج ابن المنذر وابن أبي حاتم عن محمد بن سيرين رضي
الله عنه قال :
سألت عبيدا السلماني رضي الله
عنه عن قوله الله يدنين عليهن من جلابيبهن فتقنع بملحفة فغطى رأسه ووجهه وأخرج
احدى عينيه.
আল্লামা সুয়ূতী রহ. বলেন, ইবনুল মুনযির এবং ইবনু আবী
হাতেম সূত্রে বর্ণিত, মুহাম্মদ ইবনে সীরীন রহ. বলেন, আমি আবিদাতুস সালমানী রহ. কে আল্লাহর বাণী يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ الخ সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি কম্বল দ্বারা তার একটি চক্ষু ব্যাতিরেকে তার মাথা ও
মুখমণ্ডলসহ সমস্ত শরীর ঢেকে দিলেন। আদ্দুররুল মানসূর ৬/৬৬১
তাই শত শত বছর যাব মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র
যে দ্বীনদার নারীগণ নিকাব ও হিজাব পরিধান করে আসছেন তাঁরা এই জিলবাব ধারণের বিধানই
পালন করছেন।
(ঙ) ومعنى يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن
جلابيبهن يرخينها عليهنّ، ويغطين بها وجوههنّ وأعطافهنّ.
আল্লামা যামাখসারী রহ. বলেন, ‘তারা তাদের ওড়না নিজেদের উপর
টেনে দিবে’ এর অর্থ হলো, তারা তাদের
দেহের উপর ওড়না ঝুলিয়ে দিবে এবং এর দ্বারা তাদের চেহারা ও দেহের পার্শ্বসমূহ
ঢেকে নিবে। (আল কাশ্শাফ ৩/২৭৪)
(চ) নাহব্
তথা আরবী ব্যাকরণ শাস্ত্রের ইমাম ও মুফাসসির আবু হাইয়ান আল আন্দালুসী রহ. বলেন, من جلابيبهن এর মধ্যে من
অব্যয়টি ‘কতেক’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর عليهن এটা নারীদের সমস্ত শরীরকে ব্যাপৃত করে। অথবা
عليهن অর্থ على وجوههن। অর্থাৎ তারা তাদের মুখমণ্ডলের উপর ওড়না টেনে দিবে। কেননা
নারীরা জাহেলী যুগে তাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করে রাখত তা হলো মুখমণ্ডল।
(আলবাহরুল মুহীত; ‘সূরা আহযাব’ ৭/২৪০)
সূরা আল-আহযাবের উল্লেখিত আয়াতের তাফসির
করতে গিয়ে সকল মুফাসসির মুখমণ্ডল ঢাকা হিজাবের অত্যাবশ্যক অংশ গণ্য করেছেন।
(জ)আল্লামা সুয়ূতি
আশ-শাফিঈ রহ.
উল্লেখিত আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে লিখেন, হিজাবের
আয়াত সব নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মাথা ও মুখমণ্ডল ঢাকা যে ওয়াজিব তা এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত
হয়। আওনুল মাবুদ-১১/১৫৪
আয়াত-০২
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ
مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ
অর্থ : তোমাদের যদি
নবী-পত্নীদের কাছ থেকে কোনো জিনিসপত্র চাওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে পর্দার আড়াল
থেকে চেয়ে নিবে। সূরা আহযাব- ৫৩
এ আয়াতকে সাহাবা কেরামের যুগ
হতেই ‘আয়াতে হিযাব বা
পর্দাবিধানের আয়াত বলা হয়ে থাকে।হজরত ওমর রা. আনাস রা. এরুপ উক্তি
রয়েছে ।
মুখমণ্ডল যদি পর্দার
অন্তভুক্ত না হতো, তাহলে সামনে যেতে দোষ কি ছিল ? পর্দার
আড়াল থেকে চাইতে হবে কেন ? অথচ নবির সম্মানিত স্ত্রীগণ এ
উম্মাতের মা,তাদেরকে আপন মায়ের মতই বিবাহ হারাম। এ আয়াত থেকে বলিষ্ঠভাবে, সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে,
মুখমণ্ডল পর্দার অন্তর্ভুক্ত। সূত্র: তাফসিরে বুরহাননুল কুরআন, মাআরিফুল কুরআন
ইমাম জাস্সাস রহ. বলেন,
وهذا الحكم وإن نزل خاصا في
النبي صلى الله عليه وسلم وأزواجه فالمعنى عام فيه وفي غيره إذ كنا مأمورين
باتباعه والإقتداء به
অর্থ : উক্ত আয়াতের বিধানটি
যদিও রাসূল (ﷺ)এবং তাঁর
স্ত্রীদের ব্যাপারে বিশেষভাবে অবতীর্ণ হয়েছে তবে এর অর্থ ব্যাপক। কেননা আমরা তাঁর
অনুসরণ ও অনুকরণের ব্যাপারে আদিষ্ট। সূত্র: আহকামুল কুরআন ৮/৪১৫
আয়াত নং-৩
لَا جُنَاحَ عَلَيْهِنَّ فِي
آبَائِهِنَّ وَلَا أَبْنَائِهِنَّ وَلَا إِخْوَانِهِنَّ
অর্থ : নবী-পত্নীগণের তাদের
পিতা-পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র,
সহধর্মিনী নারী এবং অধিকারভুক্ত দাস-দাসীগণের সামনে যেতে কোনো
সমস্যা নেই। সূরা আহযাব’- ৫৫
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায়
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন,
لما أمر تعالى النساء بالحجاب من
الأجانب، بيَّن أن هؤلاء الأقارب لا يجب الاحتجاب منهم.
অর্থ : যখন আল্লাহ তা‘আলা নারীদেরকে অপরিচিত পুরুষের
থেকে পর্দা পালনের নির্দেশ দিলেন। এখন উক্ত আয়াতে ঐ সকল নিকটাত্মীয়দের উল্লেখ
করেছেন যাদের সাথে তাদের পর্দা পালন করা ওয়াজিব নয়। সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর ৬/৪৭৬
আয়াত নং-০৪
وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ
اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَنْ يَضَعْنَ
ثِيَابَهُنَّ
অর্থ: বৃদ্ধা নারী যারা
বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের
বস্ত্র খুলে রাখে, তাদের জন্য দোষ নেই।.... তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। সূরা নূর-৬০
আলোচ্য আয়াতে পর্দার অপরিহার্যতা এভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, আল্লাহ
বলেন বৃদ্ধনারী বার্ধক্যের কারণে) যার প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না, তারা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখতে পারে। এখানে বস্ত্র খুলে রাখা মানে উলঙ্গ বা নিরাবরণ
হওয়া নয়, বরং যেসব বস্ত্র দ্বারা হাত, মুখমণ্ডল ইত্যাদি আবৃত
রাখা হয়- যথা- চাদর, বোরকা ইত্যাদি। এ আয়াতে বস্ত্র খুলে রাখার অনুমতি শুধুমাত্র
বৃদ্ধা নারীদের জন্যেই নির্দিষ্ট। যুবতী নারীর মুখ-মণ্ডল বিপদ সংকুলস্থান হওয়ায় তা ঢেকে রাখা জরুরি। যদি বস্ত্র খুলে রাখার হুকুম (নির্দেশ) বৃদ্ধা, যুবতী, তরুণী
সকলের জন্যে অভিন্ন হত, তা হলে বৃদ্ধাকে যুবতী থেকে পৃথক করে
উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
আয়াত নং-০৫
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ
يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ
زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا
অর্থ: মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক
অবহিত।[৩০] আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত
রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা
প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে
বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর
তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে,
স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই
এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ,
তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌন কামনা মুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের
গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার
জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা
সফলকাম হতে পার।
সূরা নূর-৩১
সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে
তিনবার زِينَتَهُنَّ যীনাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
وَلاَيُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ
إِلاَّمَا ظَهَرَمِنْهَا (১)
وَلاَيُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ
إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ (২)
وَلَايَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ
لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِن(৩)
এসব জায়গায় যীনাত শব্দের অর্থ
সৌন্দর্য হলেও তিন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
(১) وَلاَيُبْدِينَزِينَتَهُنَّإِلاَّمَاظَهَرَمِنْهَا এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে- তারা যেন তাদের পোশাকের
সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে। তবে যা অনিচ্ছাকৃত প্রকাশ পেয়ে যায়।
এ আয়াতে উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহিলাদের বাহিরে ঐ সমস্ত সৌন্দর্য যা পর পুরুষদের দৃষ্টি থেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও গোপন
করা সম্ভব হয় না। যেমন কাপড় ও চাদরের ওপরের অংশ। বর্তমানে যুগে যেমন বোরকার বাহিরের অংশের সৌন্দর্য ও পায়ের
নিচের অংশের সৌন্দর্য। সুতরাং
এগুলো পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়,তাতে কোন পরপুরুষের দৃষ্টি পড়লে মহিলারা দায়ী হবে না;বরং দায়ী হবে পুরুষ।
(২) আর وَلاَيُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ
إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ আয়াতের এ অংশের পূর্ণ
অর্থ হচ্ছে- মহিলারা যখন কোন প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে বের হবে, তখন মুখমণ্ডলসহ চুল ও গলার আশপাশের সৌন্দর্য
এমন একটি ওড়না বা চাদর দ্বারা মাথার ওপর দিক থেকে ঢেকে নিবে, যদ্দরুন তার এসব অংশেনর
সৌন্দর্য প্রকাশ না পায়। তবে এ বিধান মাহরামদের ব্যাপারে নয়। তাই স্বমী, শ্বশুর, পুত্র আরো এ জাতীয় আম্তীয় যাদের সাথে বিবাহ হারাম,তাদের সাথে উপরোক্ত
পর্দা জরুরি নয়।
এ অংশে যীনাত দ্বারা মুখমণ্ডল ও বক্ষ দেশের পর্দা করাটা গায়রে মাহরামেরে
ক্ষেত্রে জরুরি নয়; বরং মুখমণ্ডল ইত্যাদি তাদের সামনে
খোলা রাখা যাবে।
(৩) আর وَلَايَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ
لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِن এ আয়াতে, অলংকারের ঝংকার পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণের
কারণ হয়, তাই তার সৌন্দর্যকে রক্ষা করে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সারকথা: এ কথা সর্বস্বীকৃতি যে, অলংকারের আওয়াজের তুলনায় পুরুষের জন্য নারীর
চেহেরা অত্যধিক আকর্ষণীয়। বিধায় মুখমণ্ডল পর্দার অন্তর্ভক্ত হওয়ার
ব্যাপারে আয়াতের এ অংশ থেকেও প্রমাণিত হয়।
পবিত্র কুরআনে নারীদের হিজাব
এবং তদসংক্রান্ত প্রায় আটটি আয়াত আছে। সেগুলো থেকেও একথা জানা যায়, শরীয়তের দাবী কেবল শরীর ঢাকা নয়, বরং
মুখমণ্ডল ঢাকাও জরুরি।
v হাদিস
তথা রাসূল (ﷺ) এর আদেশ:
হাদিস নং-০১
আনাস রা. স্বয়ং বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) যখন মক্কা
থেকে মদিনা পৌঁছিলেন তখন আমার বয়স দশ বছর। …..উম্মুল মুমিনিন যয়নাব রা. এর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
দাম্পত্য জীবন
আরম্ভ করার প্রথম দিনই এ আয়াতটি (সূরা আহযাব-৫৩ নং) নাযিল হয়। …….আমি তার পিছনে ঘরে প্রবেশের জন্য। উদ্যত হয়ে আছি। হজরতের (নবির) এক পা হুজুরার দরজার ভিতরে আরেক পা
বাহিরে, এমতাবস্থায় নবি (ﷺ) আমার ও তাঁ মধ্যে পর্দা ফেলে
দিলেন। (আমি হুজুরায় প্রবেশ করতে বিরত থাকলাম এবং জানা গেল পর্দার বিধানের আয়াত
নাযিল হয়েছে )। বুখারি শরিফ-৬/২৩৬৮
আল্লামা আজিজুল হক রহ.
হাদিস নং-০২
হযরত আয়েশা রাযি. বর্ণনা
করেন,
كان الركبان يمرون بنا ونحن مع رسول
الله صلى الله عليه وسلم محرمات فإذا حاذوا بنا سدلت إحدانا جلبابها من رأسها على
وجهها فإذا جاوزنا كشفناه.
অর্থ : আমরা রাসূলে কারীম (ﷺ) এর সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। এ সময় আমাদের
পাশ দিয়েই মানুষের বাহনগুলো চলাচল করছিল। যখন বাহনগুলো আমাদের কাছাকাছি চলে আসত
তখন আমরা আমাদের চাদর চেহারার উপর টেনে দিতাম। আর যখন বাহনগুলো আমাদের থেকে দূরে
চলে যেত তখন আমরা আমাদের চেহারা থেকে চাদর সরিয়ে নিতাম। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ১৮৩৩
হাদিস নং-০৩
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: ” لَمَّا نَزَلَتْ: {يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ} [الأحزاب: 59]، خَرَجَ نِسَاءُ الْأَنْصَارِ كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِهِنَّ
الْغِرْبَانَ مِنَ الأَكْسِيَةِ “
হযরত উম্মে সালামা রা: বলেন, যখন কুরআনে কারীমের এ আয়াত يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ
جَلَابِيبِهِنَّ
তথা “তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ
নিজেদের উপর টেনে নেয়। [মাথার দিক থেকে]” -সূরা আহযাব-৫৯}
নাজিল হয়, তখন আনসারী মহিলারা স্বীয় ঘর থেকে
এমনভাবে বের হতো যেন তাদের মাথায় কাক বসে আছে। তাখরিজ: সুনানে
আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১০১
হাদিস নং-০৪
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ
امْرَأَةً فَلاَ جُنَاحَ
عَلَيْهِ أَنْ يَّنْظُرَ
إِلَيْهَا إِذَا كَانَ
إِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا
لِخِطْبَتِهِ وَإِنْ كَانَتْ
لاَ تَعْلَمُ-
‘যখন তোমাদের কেউ কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে, তখন তাকে দেখাতে কোন গুনাহ হবে না। তবে কেবল বিয়ে করার উদ্দেশ্যেই দেখতে
হবে, যদিও মেয়ে জানতে না পারে।
মুসনাদ আহমাদ হা/২৩৬৫০-৫১; সিলসিলা সহীহাহ
হা/৯৭
এতে প্রতীয়মান হলো যে, যারা বিয়ের উদ্যোগ না নিয়ে,
এমনিই দেখে তারা গোনাহগার হবে।
হাদিস নং-০৫
عَنْ عَبْدِ الْخَبِيرِ بْنِ
ثَابِتِ بْنِ قَيْسِ بْنِ شَمَّاسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَالُ لَهَا أُمُّ خَلَّادٍ وَهِيَ مُنْتَقِبَةٌ، تَسْأَلُ
عَنِ ابْنِهَا، وَهُوَ مَقْتُولٌ، فَقَالَ لَهَا بَعْضُ أَصْحَابِ النَّبِيِّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: جِئْتِ تَسْأَلِينَ عَنِ ابْنِكِ وَأَنْتِ مُنْتَقِبَةٌ؟ فَقَالَتْ: إِنْ أُرْزَأَ ابْنِي فَلَنْ أُرْزَأَ حَيَائِي،
হযরত আব্দুল খায়ের বিন সাবেত
বিন কায়েস বিন শাম্মাস তার পিতা, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা
এক মহিলা রাসূল সা: এর কাছে এলেন। যাকে উম্মে খাল্লাদ বলা হয়। তিনি এমতাবস্থায়
এলেন যে, তার চেহারা পর্দাবৃত ছিল। সে এসে তার নিহত সন্তানের
ব্যাপারে অভিযোগ জানায়। তখন কতিপয় সাহাবী তাকে বলেন, “তুমি
তোমার ছেলের ব্যাপারে অভিযোগ দাখিল করতে এসেছে, তারপরও তুমি
পর্দাবৃত হয়ে এলে?” তখন উম্মে খাল্লাদ বলেন, যদিও আমার ছেলের উপর বিপদ এসেছে, এর মানে তো আমার
লজ্জা শরমেরও বিপদ আসেনি। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৪৮৮
হাদিস নং-০৬
রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর প্রিয়তমা পত্নী
আয়িশা রা.বলেন- আল্লাহ হিজরতকারী
অগ্রবর্তী নারীদের ওপর রহমত করুন। যখন তিনি নাযিল করলেন, আর তারা যেন তাদের বক্ষের ওপর ওড়না টেনে
দেয়’ তখন তারা তাদের নিম্নাংশের কাপড়ের প্রান্ত ছিঁড়ে ফেলেন
এবং তা দিয়ে ওড়না বানিয়ে নেন। বুখারি : ৮৫৭৪
আলোচ্য বর্ণনায় ‘ইখতামারনা’ শব্দটি এসেছে। সহিহ বুখারির
ব্যাখ্যাকার হাফিয ইবন হাজার ‘আসকালানী রহ. ‘ইখতামারনা’ শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘গাত্তাইনা
উজুহাহুন্না’। অর্থা তারা নিজেদের মুখমণ্ডল
ঢেকে রাখতেন। ফাতহুল বারি : ৮/৩৪৭
হাদিস নং-০৭
যখন তোমাদের (নারীদের) কারো
কাছে মুক্তির জন্যে চুক্তিবদ্ধ কৃতদাস থাকে এবং তার নিকট চুক্তি অনুযায়ী মুক্তিপণ
থাকে। তাহলে সে নারী কৃতদাসের
সামনে পর্দা করবে। মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, জামে তিরমিজি
এ হাদিস শরিফ দ্বারা
পর্দার অপরিহর্যতা প্রমাণিত হয়, কারণ
কৃতদাসের সাথে পর্দার বিধান নাই। কিন্তু যখন সে স্বাধীন হবে তখন পর্দা কার্যকর হবে।
হাদিস নং-০৮
عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ
النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا
الشَّيْطَانُ.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ
রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, নারী জাতি হল আপাদমস্তক সতর।
যখনি সে বের হয়, তখনি শয়তান তাকে চমৎকৃত করে তোলে। তাখরিজ:
সুনানে তিরমিজী-১১৭৩,
মুসনাদুল বাজ্জার-২০৬৫, সহীহ ইবনে
খুজাইমা-১৬৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান-৫৫৯৮
হাদিস নং-০৯
আবদুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেন,
وَلاَ تَنْتَقِبِ المَرْأَةُ
المُحْرِمَةُ، وَلاَ تَلْبَسِ القُفَّازَيْنِ‘আর
ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নিকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে। বুখারী
: ১৮৩৮
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, নবি (ﷺ) এর যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও চেহারা ঢাকতেন। এ কারণে ইহরামের সময় নেকাব ও দস্তানা না পরার আদেশ করতে
হয়েছে।
হাদিস নং-১০
- ইফক-এর
ঘটনা থেকেও আমরা মুখ ঢাকার প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারি। বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন পথে এক স্থানে বিশ্রামের
জন্য শিবির স্থাপন করেন। এই
সফরে আয়িশা রা.রাসূলুল্লাহর (ﷺ) -এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে শিবির থেকে বাইরে যান। ….এমতাবস্থায় তিনি লক্ষ্য করেন তার গলার হারটি কোথাও হারিয়ে গেছে। যেখানে হারটি পড়ার সম্ভাবনা ছিল তিনি সেখানে
গেলেন এবং তালাশ করলেন, কিন্তু পেলেন না। ….. আয়িশা রা.বলেন, আমি সেখানে বসে থাকতে থাকতে ঘুমে আমার চোখ
বন্ধ হয়ে যায়।
সাফওয়ান ইবন মুওয়াত্তাল রা.ছিলেন কাফেলার পশ্চাৎগামী ব্যক্তি। তিনি দেখেন এক ব্যক্তি শুয়ে আছে। নিকটে এসে দেখে আমাকে চিনতে পারেন। কারণ, হিজাবের পূর্বে তিনি আমাকে দিখেছিলেন। আমাকে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে তিনি জোরে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না
ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করেন। সাফওয়ানের শব্দ শুনে আমি উঠে বসি এবং খুব দ্রুত চাদর মুড়ি
দিই। আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আমি আমার চাদর দ্বারা আমার
মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলি। বুখারি : ৪৪৭৩; মুসলিম : ২৭৭০
হাদিস নং-১১
عَنْ عَائِشَةَ: «أَنَّهَا كَانَتْ تَطُوفُ بِالْبَيْتِ وَهِيَ مُنْتَقِبَةً»
হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ
বাইতুল্লাহ তওয়াফ করতেন পর্দাবৃত অবস্থায়। {মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৮৮৫৯}
হাদিস নং-১২
দিসে আছে,
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ
ﻋُﻤَﺮَ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻤَّﺎ ﺍﺟْﺘَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺻَﻔِﻴَّﺔَ ﺭَﺃَﻯ
ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻣُﻨْﺘَﻘِﺒَﺔً ﻭَﺳْﻂَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓَﻌَﺮَﻓَﻬَﺎ
ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
যখন নবী করীম (ﷺ) সাফিয়্যাহকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন, তখন তিনি আয়েশা
(রাঃ)-কে মানুষের মাঝে নিকাব পরিহিত দেখে চিনতে পারলেন।
(ইবনে সা‘দ-৮/৯০, ইবনে
আসাকির)
v ইজমায়ে উম্মত:
ইমাম নাববি রহ. স্বীয় গ্রন্থ ‘আল-মিনহাজ’-এ লিখেছেন, যদি ফিতনার আশংকা থাকে তাহলে কোনো
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য কোনো প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর মুখমণ্ডল ও হাত দেখা জায়িয
নেই। আল্লামা রামালী রহ. ‘আল-মিনহাজ’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় এই মতের ওপর আলিমগণের ইজমা’র
কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি এও লিখেছেন, সঠিক মতানুযায়ী ফিতনার আশংকা না থাকলেও প্রাপ্ত বয়স্কা নারীকে দেখা হারাম। এর দ্বারা বুঝা যায়, মুখমণ্ডল খোলা অবস্থায়
মহিলাদের বাইরে বের হওয়া জায়িয নেই। কারণ, সে অবস্থায় পুরুষ তাদেরকে দেখবে এবং দেখার মাধ্যমে ফিতনা ও
কুপ্রবৃত্তির সৃষ্টি হবে। নিহায়াতুল মিনহাজ ইলা শারহিল মিনহাজ-৬/১৮৮
মুখমণ্ডলের পর্দার বিষয়টি ইজমার
ভিত্তিতে স্থিরকৃত হয়েছে। কোনো মাযহাবের কোনো একজন উল্লেখযোগ্য ‘আলিম এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেননি। শায়খ ইবনে বায রাহ., শায়খ ইবনে উছাইমীন ও শায়খ
ইবনে জিবরীনও একই ফতোয়া দিয়েছেন। দেখুন : রিসলাতুন ফিল-হিজাবি ওয়াস-সুফূর : ১৯; ফাতাওয়া উলামাইল
বালাদিল হারাম : ১১৬৯
চার মাযহাব এবং জমহূরে
উলামার বর্তমান সম্মিলিত অবস্থান হলো নারীর চেহারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত, তা পর পুরুষের সামনে খোলা রাখা
বৈধ নয়। বর্তমান ফেতনার যুগে এর বাইরে বলার সুযোগও নেই।
نستطيع أن نخلص مما تقدم بأن
علماء المذاهب الأربعة يكادون يتفقون على تغطية المرأة جميع بدنها عن الأجانب،
سواء منهم من يرى أن الوجه والكفين عورة، ومن يرى أنهما غير عورة لكنه يوجب
تغطيتهما فى هذا الزمان لفساد أكثر الناس. أدلة الحجاب:
٤٧٤
সূত্র: মিশর আল-আযহার
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট লাইব্রেরি দারু ইবনিল যাওজী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ, আদিল্লাতুল হিযাব )أدلة الحجاب পৃষ্ঠা:৪৭৪,
প্রথম সংস্করণ, ২০০৫ ইং ফতহুল বারী: ৯/৩৩৭,
নাইলুল আওতার: ৬/১১০ রওযাতুত তালেবীন:৫/৩৩৬
v কিয়াসের
আলোকে চেহেরা ঢাকা অপরিহার্যতা:
:আল্লাহ তাআলার বাণী-
(১) আর
তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলি যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। তাদেরকে গৃহাভ্যন্তরে
অবস্থান করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। নারীর ভেতরে বস্তু বাহিরের বস্তু নয়। নারী এ উম্মতের জন্য ফেতনা স্বরুপ।
যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-
(ক) , « ما تركتُ بعدي فتنةً هي أَضَرُّ على الرجال من النساء » . متفق عليه . আমি আমার পর পুরুষদের জন্য
নারীদের ফিতনার চেয়ে বড় ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে যাইনি। বুখারি ও মুসলিম
(খ) « فاتقوا الدنيا , واتقوا النساء , فإن أول فتنةِ بني إسرائيل كانت في النساء » [مسلم] অর্থ : তোমরা
দুনিয়াকে ভয় কর এবং নারীকে ভয় কর, কারণ, বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনা ছিল নারীর ফিতনা। মুসলিম
(২)
وَيَا آَدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ
وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَذِهِ
الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ (1
অর্থ: হে আদম! তুমি ও তোমার
স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর। এরপর যেখানে থেকে ইচ্ছে খাও। আর এ গাছের নিকটে যেও না। তাহলে তোমরা জালেমদের অন্তরভুক্ত হবে। সূরা আরাফ-১৯, এ আয়াতে গাছের কাছে যেতে বারণ করেছেন। অথচ প্রকৃত নিষেধাজ্ঞা হলো ফল খাওয়ার প্রতি।
(৩) وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ کَانَ فَاحِشَۃً ؕ
وَ سَآءَ سَبِیۡلًا ﴿۳۲﴾ অর্থ: আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা মন্দ কাজ এবং মন্দ পথ। সূরা ইসরা-৩২
যেনা-ব্যভিচার হলো মূল হারাম। অথচ তার কাছেও যেতে বারণ করেছেন।
এতে (২ এবং ৩ নং আয়াত দ্বারা) প্রমাণিত হয় যে, কোন জিনিস নিজস্বভাবে নিষিদ্ধ না হলেও তাতে যদি কোন নিষিদ্ধ বস্তুর কারণ
বা মাধ্যম হওয়ার আশংকা থাকে, তবে তাও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আলোচ্য মূলনীতির ভিত্তিতে গভীরভাবে চিন্তা করলে
উপলব্ধি করা যায় যে, নারীর জন্যে পরপুরুষের সামনে মুখমণ্ডল খোলা রাখাতে (নৈতিকতা বিধ্বংসী)
অনেক ফাসাদ ও অনাচার নিহিত রয়েছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় যে, মুখমণ্ডল খোলা রাখাতে কিছু
কল্যাণ নিহিত রয়েছে তবে তা অকল্যাণ ও ফাসাদের তুলনায় নগণ্য। কাজেই নারীর জন্যে পর পুরুষের সম্মুখে চেহারা
খোলা রাখা হারাম এবং আবৃত রাখা ওয়াজিব বলে প্রমাণিত হল।
v বিজ্ঞ ফকিহ-আলেমদের
মত:
(ক) মুফতি
মুহাম্মদ শফি রহ. লিখেছেন,
‘ইমাম চতুষ্টয়ের মধ্য থেকে ইমাম মালিক, ইমাম
শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. তিনজনই মুখমণ্ডল ও হাতের
কবজি খোলা রাখার মোটেই অনুমতি দেননি- তা ফিতনার আশংকা থাকুক
বা না থাকুক।
ইমাম আবু হানিফা রহ. ফিতনার আশংকা যদি না থাকে- এই শর্তে খোলা রাখার কথা
বলেন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এই
শর্ত পূরণ হবার নয়, তাই হানাফি ফকিহগণ গায়র মাহরাম পুরুষের
সামনে মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার অনুমতি দেন নি। মাআরিফুল কুরআন -৭/২১৪
তিনি আরও বলেন, হযরত মুফতী শফী রহঃ “আহকামুল কুরআন” গ্রন্থে লিখেন যে,
فى هذه الآية دلالة على أن
المرأة الشابة مأمورة بستر وجهها من الأجنبيين
এ আয়াত একথা বুঝাচ্ছে যে, যুবতী মেয়েরা ঘর থেকে বের
হওয়ার সময় এমনভাবে বের হবে যেন তাদের চেহারা পরপুরুষের সামনে প্রকাশিত না হয়।
আহকামুল কুরআন-৩/১৪৫৮
(খ) ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার
পূর্বে নারীরা হিজাব ব্যতীত বের হতো। ফলে পুরুষরা তাদের চেহারা ও হাত দেখতে পেত।
তখন দেখাও বৈধ ছিল। কারণ নারীদের জন্য মুখমণ্ডল ও হাত প্রকাশ করাও বৈধ ছিল। অতঃপর
যখন পর্দার আয়াত يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ الخ অবতীর্ণ হলো
তখন নারীরা পুরুষদের থেকে পর্দা করতে শুরু করল। (ইয়ানাতুল মুখতারীন বাইনান নিকাবি
ওয়াল খিমার ১/১৬)
তিরি আরও বলেন, বেগানা পুরুষ দেখতে পারে এমনভাবে মহিলাদের
মুখমণ্ডল খোলা রাখা জায়িয নেই। দায়িত্বশীল পুরুষদের (স্বামী, পিতা, ভাই প্রমুখের)
উচিত ‘আমর বিল মা‘রুফ’ ও ‘নাহি ‘আনিল মুনকার’ তথা ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধে’র অংশ হিসেবে তাদেরকে এমন কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া। অধীনস্থ নারীদের পর্দাহীনতা থেকে বিরত না রাখাও দায়িত্বশীল পুরুষদের জবাবদিহিতামূলক অপরাধ। এজন্য তাদেরকে শাস্তিও দেয়া যেতে পারে। মাজমু ফাতাওয়া-২৪/৩৮২
(গ) হাফিয ইবনুল কা ইয়্যিম র. লিখেন, স্বাধীন নারী মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি পর্যন্ত
খোলা রেখে সালাত আদায় করতে পারে (এই শর্তে যে সেখানে কোনো
বেগানা পুরুষ থাকবে না)। তবে এ অবস্থায় সে বাজারে এবং পুরুষের ভীড়ের মধ্যে যেতে
পারবে না। ই‘লাম আল-মুওয়াককিঈন-২/৮০
(ঘ) শাইখ
ইবনে বায ও শাইখ ইবনে উসাইমিনও একই ফতওয়া দিয়েছেন। (রিসালাতুন ফিল হিজাব;
পৃষ্ঠা ১৭, ফাতাওয়া উলামাই বালাদিল হারামাইন;
পৃষ্ঠা ১১৬৯)
(ঙ) বর্তমানকালে আলিম ও প্রখ্যাত ফকিহগণও একই মত পোষণ করেন। পাক-হিন্দের আলিমদের কথা না হয় বাদ দিন। কারণ, তাদের অধিকাংশই হানাফি এবং তাদেরকে ফিকহ
সংক্রান্ত মাসআলা ও বিষয়সমূহে কট্টরপন্থি মনে করা হয়। কিন্তু আরব বিশ্বের সমকালীন সকল আলিম ও মুফতিদের মতও এই যে, মহিলাদের জন্য মুখমণ্ডল ঢাকা
একান্ত আবশ্যক।
তাদের মধ্যে শায়খ আব্দুর রহমান ইবন সাদি, মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহিম আলে আশ-শায়খ, মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানকিতি, শায়খ ‘আবদুল্লাহ ইবনু
বায, শায়খ আবু বাকর জাবির আল-জাযায়িরি,
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু গুনায়মিন, শায়খ আবদুল্লাহ
ইবনু জুবরিন, শায়খ সালিহ আল-ফাওযান,
শায়খ বাকর ইবনু ‘আবদিল্লাহ আবু যায়েদ, মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইসমা’ঈল আল-মাকদাম, আবু, ইসহাক আল-হুওয়ায়তি, মুসতাফা আল-‘আদাবি,
মুহাম্মাদ হাসসান ও আরো অনেকের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং ফকিহগণের চূড়ান্ত ফাতওয়াসমূহ থাকার পরও
কোনো ‘আলিম নিকাবকে অস্বীকার করতে পারেন না। যারা মুখ না ঢাকার ব্যাপারটি জোর করে সপ্রমাণ
করতে চান তারা খেয়াল করেন না যে, তাদের এহেন মত পশ্চিমা ও তাদের ভাব শিষ্যদের অতি পুলকিত করবে। তারা এই রায়কে ব্যবহার করবে হাতিয়ার হিসেবে।
v আসলাফ
তথা সাহাবিদের আমল:
(১) হযরত আয়েশা রাযি. বর্ণনা
করেন,
كان الركبان يمرون
بنا ونحن مع
رسول الله صلى
الله عليه وسلم
محرمات فإذا حاذوا
بنا سدلت إحدانا
جلبابها من رأسها
على وجهها فإذا
جاوزنا كشفناه.
অর্থ : আমরা রাসূলে কারীম (ﷺ)এর সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। এ সময় আমাদের পাশ দিয়েই মানুষের
বাহনগুলো চলাচল করছিল। যখন বাহনগুলো আমাদের কাছাকাছি চলে আসত তখন আমরা আমাদের চাদর
চেহারার উপর টেনে দিতাম। আর যখন বাহনগুলো আমাদের থেকে দূরে চলে যেত তখন আমরা
আমাদের চেহারা থেকে চাদর সরিয়ে নিতাম। তাখরিজ: সুনানে আবু
দাউদ; হা.নং ১৮৩৩
(২) উম্মত জননী আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, আমরা
রাসূলের সাথে এহরাম অবস্থায় ছিলাম, উষ্ট্রারোহী পুরুষরা
আমাদের পার্শ্বদিয়ে অতিক্রম কালে আমাদের মুখামুখি হলে আমরা মাথার উপর থেকে চাদর
টেনে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম। তারা আমাদেরকে অতিক্রস করে চলে গেলে আমরা মুখমণ্ডল খুলে
দিতাম। মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ
(৩)আসমা
বিনতে আবি বাকর রা. বলেন,
আমরা পুরুষদের থেকে আমাদের চেহারা আবৃত রাখতাম। মুস্তাদরাক হাকেম-১৬৬৪
(৩) ফাতিমা
বিনতুল মুনযির রহ. বলেন, ‘আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম। ইমাম মালেক, মুয়াত্তা : ১/৩২৮; হাকিম, মুসতাদরাক :
১/৪৫৪
(৫) আল্লামা
ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন,
استمرار العمل على جواز خروج
النساء إلى المساجد والاسواق والاسفار منتقبات لئلا يراهن الرجال.
অর্থ : নারীদের মসজিদ, বাজার এবং সফরে নেকাব পরিহিত
অবস্থায় বের হওয়ার আমল যুগ পরম্পরায় চলে এসেছে। যাতে করে পুরুষরা তাদের না
দেখতে পারে। (ফাতহুল বারী ৯/৩৩৭)
v যারা চেহেরাকে হিজাব মানেন না/আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) –এর ব্যাখ্যার জবাব:
পরপুরুষের সামনে নারীর
মুখমণ্ডল প্রদর্শন বৈধতার পক্ষের প্রবক্তাগণ প্রমাণের জন্য পূর্বোক্ত সূরা নূরের
৩১ নং لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَهُنَّ اِلَّا
مَا ظَهَرَ مِنۡهَا
অর্থ: আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের
সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। সূরা নূর-৩১
এখানে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে
আব্বাস (রা.) ব্যাখ্যা করেছেন, হাতের
কজি ও মুখমণ্ডল। অথচ তিনি সূরা আহযাবের ৫৯ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি মুখমণ্ডল ঢাকার
কথা বলেছেন। এর সমন্বয় কি? নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, ইবনে আব্বাস রাযি. يدنين عليهن-এর ব্যাখ্যায়
বলেছেন, নারীরা
প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে একটি চক্ষু ব্যতীত পুরো শরীর আবৃত করে বের হবে। আর
এখানে الا ما ظهر منها এর ব্যাখ্যায় তিনি মুখমণ্ডল এবং উভয় হাতের তালু খোলা রাখার কথা
বলবেন এতে তো স্ববিরোধী বক্তব্য প্রমাণিত হয়। মূলত তার দুটি ব্যাখ্যার মাঝে কোনো
বিরোধ নেই। কারণ আল্লামা ইবনে জারীর রহ. সহীহ সূত্রে ইবনে আব্বাস রাযি. এ একটি
বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। বর্ণনাটি হলো
حدثنى على قال حدثنا عبد الله
قال حدثنى معاوية عن على عن ابن عباس ولا يدنين زينتهن الا ما ظهر منها قال الزينة
الظاهرة الوجه وكحل العين وخضا الكف والخاتم فهذه تظهر فى بيتها لمن دخل من الناس
عليها.
অর্থ : ইবনে আব্বাস রাযি. ولا يدنين زينتهن الا ما ظهر
منها ‘তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবে না। তবে যা নিজে নিজে প্রকাশ
হয়ে যায় তার কথা ভিন্ন’ এর ব্যাখ্যায় বলেন, দৃশ্যমান সৌন্দর্য হলো মুখমণ্ডল, চোখের সুরমা,
হাতের মেহেদী এবং আংটি। সুতরাং নারীরা তাদের গৃহে যে সকল লোক প্রবেশ
করে তাদের সামনে এগুলো প্রকাশ করতে পারবে। (তাফসীরে ইবনে জারীর ত্ববারী ১২/১৮৬)
এই বর্ণনার দ্বারা উভয়
বক্তব্যের বিরোধ নিষ্পত্তি হয়ে গেল। কারণ ইবনে আব্বাস রাযি. উক্ত বর্ণনায়
সুস্পষ্টরূপে বলে দিয়েছেন, নারীরা মুখমণ্ডল এবং উভয় হাতের তালু তাদের গৃহে যারা প্রবেশ করে তাদের
সামনেই শুধু প্রকাশ করতে পারবে। আর তারা হলেন মাহরাম। কারণ নারীগৃহে অপরিচিত
লোকদের অবাধ প্রবেশকে কেউ বৈধ বলেন না। সুতরাং ইবনে আব্বাস রাযি.-এর ব্যাখ্যাকে মুখমণ্ডল
হিজাবের অংশ না হওয়ার পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করা সম্পূর্ণ ভুল ও অগ্রহণযোগ্য। এতে
স্পষ্ট হয়ে গেল, ইবনে আব্বাস রাযি.-এর মতেও নারীদের জন্য
তাদের মুখমণ্ডল পরপুরুষের সামনে অনাবৃত রাখা বৈধ নয়।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. বলেন,‘ইল্লা মা যাহারা মিনহা’- যতটুকু সাধারণত প্রকাশ পায়, যেমন- আরবের মহিলাগণ সাধারণত বড় একটি চাদর দ্বারা পরিধেয় আবৃত করে
নিত। হাঁটার সময়
পরিধেয় কাপড়ের নিম্ন অংশ ঐ চাদরের আবরণ মুক্ত থাকে। আল্লামা ইবনে কাসীর
রহঃ উক্ত আয়াতের তাফসীরে লেখেন:
{وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ
إِلا مَا ظَهَرَ مِنْهَا} أَيْ: لَا يُظهرْنَ شَيْئًا مِنَ الزِّينَةِ لِلْأَجَانِبِ،
إِلَّا مَا لَا يُمْكِنُ إِخْفَاؤُهُ.
“তারা
যেন সাধারণত প্রকাশমান অঙ্গ ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে” মানে হল, পরপুরুষের সামনে সৌন্দর্যের কোন কিছুই
প্রকাশ করবে না, তবে যা লুকানো সম্ভব হয় না, তা ভিন্ন।
অর্থাৎ এর হলো
চাদর ও কাপড় ,হাত-চেহেরা নয়। তাফসিরে ইবনে কাসির-৩-২৮৪
‘হাসান বসরি,
মুহাম্মাদ ইবনু সিরিন, ইবনুল জাওযি, ইবরাহিম নাখয়ি প্রমুখ মনীষীও অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেন।’ তাফসিরুল কুরআনিল আজিম-৩/৩১২
পবিত্র কুরআনের শব্দ ও
বাক্য, আলোচ্য বিষয়ের হাদিস ও আছার এবং উসূলে ফিকহের নীতি ও বিধান ইত্যাদি বিবেচনায় ইবন মাসউদ রা. এর ব্যাখ্যাই অগ্রগণ্য। কারণ সূরা আল-আহযাবের ৫৯ নম্বর আয়াতে জিলবাবের একাংশ চেহারার ওপর নামিয়ে মুখমণ্ডল আবৃত রাখার আদেশ করা হয়েছে। তা সূরা নূরের আলোচ্য আয়াতে ইবন মাসঊদ রা.এর ব্যাখ্যাকেই প্রতিষ্ঠিত করে। তাছাড়া সহিহ হাদিসসমূহে নারীদের চেহারা ঢেকে রাখার যে নির্দেশ ও বিবরণ দেখা যায় তা-ও তার ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে।
তাদের দ্বিতীয় দলিল হলো এই
হাদিস: দলীল :
عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها
أَنَّ أَسْمَاءَ بِنْتَ أَبِىْ بَكْرٍ دَخَلَتْ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله
عليه وسلم وَعَلَيْهَا ثِيَابٌ رِقَاقٌ فَأَعْرَضَ عَنْهَا رَسُوْلُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم وَقَالَ يَا أَسْمَاءُ إِنَّ الْمَرْأَةَ إِذَا بَلَغَتِ
الْمَحِيْضَ لَمْ تَصْلُحْ أَنْ يُرَى مِنْهَا إِلاَّ هَذَا وَهَذَا. وَأَشَارَ إِلَى وَجْهِهِ وَكَفَّيْهِ-
আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আসমা
বিনতে আবী বকর (রাঃ) পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলেন।
রাসূল (ছাঃ) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন,
হে
আসমা! নারী যখন যৌবনে পদার্পণ করে তখন তার এটা ওটা ব্যতীত প্রকাশ করা বৈধ নয়। তিনি
চেহারা ও দু’কব্জির দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন। আবু দাঊদ
হা/৪১০৬; মিশকাত হা/৪৩৭২,
এর জবাব হলো :
আসমা বিনতে আবি বকর সম্বন্ধে
আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছটি দুই কারণে দুর্বল বা যঈফ-
এ বর্ণনার সাথেই আবু দাউদ
রাহ.-এর মন্তব্যও আছে, যা নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়নি। তিনি বলেছেন, ‘এর
সূত্র (সনদ) বিচ্ছিন্ন।’ তাছাড়া এতে ‘সায়ীদ
ইবনে বাশীর’ নামক একজন অগ্রহণযোগ্য রাবী আছে। বিশেষত কাতাদা
রাহ. থেকে তার যে বর্ণনাগুলো, তা পরীক্ষা করে হাদীস বিশারদগণ
বলেছেন, ‘এই ব্যক্তি কাতাদা থেকে অগ্রহণযোগ্য কথা বর্ণনা
করে।’ আলোচ্য বর্ণনাও ঐসব বর্ণনারই একটি। এর মতন (বক্তব্য) ‘নাকারাত’ দোষে এবং সনদ (সূত্র) ‘ইযতিরাব’ দোষেও দুষ্ট।
সূত্র: আননাকদুল বান্না, আবু মুয়ায তারিক ইবনে আউযুল্লাহ পৃ. ২৮-৪০; তাফসীরুল
কুরআনিল আজীম, ইবনে কাছীর-৩/৩১২; আলকামিল,
ইবনে আদী-৩/১২০৯; কিতাবুল ইলাল, ইবনে আবী হাতিম-১৪৬৩; আন নাযার ফী আহকামিন নাযার,
ইবনুল কাত্তান-১৬৭,১৬৮; আলজাওহারুন
নাকী, সুনানে কুবরা বাইহাকীর সাথে মুদ্রিত-৭/৮৬পৃ
দ্বিতীয় কথা হলো, এছাড়া এটা বিশুদ্ধ ধরা হলে এটা
পর্দার আয়াত নাযিলের পূর্বের ঘটনার উপর প্রমাণ বহন করে। হজরত আশরাফ আলি থানভি রহ.
তার লিখিত “ইসলামে পর্দার বিধান” নামক কিতাবে প্রমাণ করেছেন
যে, এ সংক্রান্ত
হাদিস পর্দার বিধান নাজিল হওয়ার পূর্বে। সূতরাং আর কোন দ্বন্দ্ব রইলো না।
তৃতীয় কথা হলো, মুস্তাদরাকে হাকিম এর সহীহ
হাদীস
ﻋَﻦْ ﺃَﺳْﻤَﺎﺀَ ﺑِﻨْﺖِ ﺃَﺑِﻲْ ﺑَﻜْﺮٍ ﺍﻟﺼِّﺪِّﻳْﻖِ
ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻛُﻨَّﺎ ﻧُﻐَﻄِّﻲْ ﻭُﺟُﻮْﻫَﻨَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ، ﻭَﻛُﻨَّﺎ ﻧَﻤْﺘَﺸِﻂُ ﻗَﺒْﻞَ ﺫَﻟِﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻻِﺣْﺮَﺍﻡِ-
আসমা বিনতে আবুবকর (رضي الله عنه) বলেন, আমরা পুরুষদের থেকে আমাদের
চেহারা ঢেকে রাখতাম এবং ইহরামের পূর্বে চিরুনী করতাম। তাখরিজ:
মুস্তাদরাকে হাকিম:১/৪৫৪, হাদীস নং-১৬৬৮,
ইরওয়া হা/১০২৩; ছহীহ ইবনু খুযাইমা-হা/২৬৯০
ফিকহ-এর উসূল মোতাবেক একই রাবির
বিপরীত মুখি বর্ণনা হলে, তার ফতোয়া ঠিকে না, অন্য কারোর সাথে সেই মত প্রধান্য পাবে না।
v চুড়ান্ত মতামত বা সিদ্ধান্ত:
যারা মুখ খোলার পক্ষে
বলেছেন প্রথমত তাদের মতটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মত নয় আর দ্বিতীয়ত তাঁরা সবাই এর জন্য
নিরাপদ ও ফিতনামুক্ত হওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। আজ যৌন হয়রানি সবখানে। সংবাদপত্র পাঠকালে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এমন কোন দিন নাই
নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে না ।
খোদ ফ্রি সেক্সর দেশেও। দেখুন ২ নভেম্বর ২০১৮ প্রথম
আলোর শিরোনাম, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ,“কাজ ছেড়ে রাজ পথে গুগলের
কর্মীরা”। শুধু ২০১৮ সালে বাংলাদেশে
৭৩২ জন ধর্ষিত হয়েছে এবং ধর্ষণজনিত ৬৬ জনকে হত্যা করা হয়। প্রথম আলোরে জরিপ, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯। যে সমাজে ছয় মাসের শিশু নারী ধর্ষিত হচ্ছে, জন্মদাতা পিতার কাছে আজ নারী
নিরাপদ নয়। তারপরও ফেতনার যুগ, সময় আসেনি;তবে কবে আসবে ? তারপর মুখ ঢাকা জরুরি হবে ? তাড়াও মানুষের মধ্যে আল্লাহভীতি,লজ্জা কমে গেছে। সাজসজ্জার নানা উপায় ও উপকরণ আবিষ্কৃত হওয়ায়
ফিতনার মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। পরিশেষে পবিত্র কুরআন-হাদিস, ইজমা-কিয়াস ও বিজ্ঞ
আলেম-ফকিহগণের মতামতের ভিত্তিতে এ চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত উপনিত হলাম যে,বর্তমান যামানায় মুখমণ্ডলের পর্দা করা ফরজ, এর
বিপরীত বলার কোন সুযোগ নাই।
মুফতি তাকী ওসমানী (দা. বা.)
হদিস ও ফকীহগণের দীর্ঘ মতামত পর্যলোচনা করে বলেন ‘চার মাজহাবের অভিমতগুলোর ওপর
দৃষ্টিপাত করলে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে সবকয়টি মাজহাবই এই বিষয়ে একমত যে, কামবাসনা পূরাণার্থে কিংবা ফেতনায় জড়িয়ে যাওয়ার শংকাযুক্ত অবস্থায় নারীদের
মুখমণ্ডলের ওপর দৃষ্টিপাত করা হারাম।
বিশেষত বর্তমান এই চারিত্রিক অধঃপতনের যুগে এখন সর্বত্র ফেতনা
ফাসাদের ছড়ছড়ি। এই জন্য হানাফী মাজহাবের মুতাআখখিরিন ওলামায়ে কেরাম সাধারণভাবে
প্রয়োজন ছাড়া কোনো নারীর মুখমণ্ডলের ওপর দৃষ্টিপাত নিষিদ্ধ করেছেন। সূত্র: তাকমিলায়ে ফাতহুল মূলহীম খণ্ড- ৪/ পৃষ্ঠা ২৬১
আল্লাহ তাআলা আমাদের সব মুসলিম মা-বোনকে যথাযথভাবে পর্দা করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
তথ্য সহযোগিতায়- “মুসলিম জীবনে চল্লিশ হাদিস” -১২৮ পৃষ্ঠা, লেখক,
মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মো: আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
জিজ্ঞাসা-২২৪: আসসালামু আলাইকুম, একটা বিষয় দলীলসহ বুঝিয়ে বলুন তো, তেলাওয়াতে
সাজদাহ শুধু একটি কেন দিতে হয়, দুটি দিলে সমস্যা কোথায়? তারিখ-০৭/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি মো: আবুল কালাম আজাদ ৫৫ এমপি যশোর সেনানিবাস-এর প্রশ্নের
আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান
করুন।)
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ও বারাকাতুহ। আল্লাহ তাআলা আপনাকে
নিরাপদে ও শান্তিতে রাখুন। প্রিয় ভাই,
তেলাওয়াতে সাজদাহ শুধু একটি কেন দিতে হয়, দুটি
দিলে সমস্যা কোথায়?
এর জবাব হলো,
ইবাদত
তখনই ইবাদত হয়; যখন রাসূল(ﷺ) এর দেখানো পথে হয় অথবা অনুমতি ব্যক্তির অনুসরণ (অর্থাৎ
খুলাফা-সাহাবা-তাবেয়িদের পথ-মত)। রসূল (ﷺ)
যুগ থেকে অদ্যাবধি তেলাওয়াত সিজদা একটি আমল হয়ে আসছে। সুতরাং এর বিপরীত সুয়োগ নেই।
আপনি যেমন প্রশ্ন ছুড়েছেন, দুটি হলে সমস্যা কোথায়?
আপনাকেও প্রশ্ন করি ফজরের
ফরজ দুরাকাত কেন, চার রাকাত হলে সমস্যা কোথায়? এর জবাব যেরকম তারও
জবাব সেরকম।
হাদিস দ্বারা দলিল:
رواه البيهقي بإسناده عن أم سلمة
الأزدية قالت: رأيت عائشة تقرأ في المصحف فإذا
مرت بسجدة قامت فسجدت.
হযরত আয়েশা রাঃ মাসহাফ থেকে
কুরআন তেলাওয়াত করছিলেন,যখন কোনো সেজদার আয়তে পৌছলেন,তখন দাঁড়িয়ে গেলেন,তারপর (একটি)
সেজদাহ করলেন। সুনানে বাইহাকি
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ
عُثْمَانَ الدِّمَشْقِيُّ أَبُو الْجُمَاهِرِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، - يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ عَنْ مُصْعَبِ بْنِ ثَابِتِ
بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَرَأَ عَامَ الْفَتْحِ سَجْدَةً فَسَجَدَ
النَّاسُ كُلُّهُمْ مِنْهُمُ الرَّاكِبُ وَالسَّاجِدُ فِي الأَرْضِ حَتَّى إِنَّ
الرَّاكِبَ لَيَسْجُدُ عَلَى يَدِهِ .
-
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাক্কাহ
বিজয়ের বছরে (বিজয়ের দিন) সাজদার আয়াত পাঠ করলে উপস্থিত সকলেই সাজদাহ্ করলো। তাদের
মধ্যে কেউ আরোহী ছিলো এবং কেউ ছিলো মাটিতে সাজদাহকারী। এমনকি আরোহী নিজ হাতের উপর
সাজদাহ্ আদায় করেছে।
আবূ দাঊদ ১৪১১,মিশকাতুল মাসাবিহ ১০৩৩)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله
عنه ـ قَالَ قَرَأَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم النَّجْمَ بِمَكَّةَ فَسَجَدَ
فِيهَا، وَسَجَدَ مَنْ مَعَهُ، غَيْرَ شَيْخٍ أَخَذَ كَفًّا مِنْ حَصًى أَوْ
تُرَابٍ فَرَفَعَهُ إِلَى جَبْهَتِهِ وَقَالَ يَكْفِينِي هَذَا. فَرَأَيْتُهُ بَعْدَ ذَلِكَ قُتِلَ كَافِرًا.
হাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ)
... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী (ﷺ) মক্কায় সূরা আন্-নাজম তিলওয়াত করেন। এরপর
তিনি সিজদা করেন এবং একজন বৃদ্ধ লোক ছাড়া তাঁর সঙ্গে সবাই সিজদা করেন। বৃদ্ধ লোকটি
এক মুঠো কংকর বা মাটি হাতে নিয়ে কপাল পর্যন্ত উঠিয়ে বলল, আমার জন্য এ যথেষ্ট। আমি
পরবর্তী যামানায় দেখেছি যে, সে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে।
বুখারি- ১০৬৭
সিজদা মাত্র একটি হবে। এতে
তাশাহহুদ নেই, সালামও নেই। ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৪।
কুরআন মাজীদের সিজদার আয়াত
তিলাওয়াত করলে অথবা শুনলে তকবীর দিয়ে একটি সিজদাহ করা। সূত্র: ইবনে আবী শাইবা,
আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, বায়হাকী, তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী
২৬৯পৃ:
নোট: একই বৈঠকে যতগুলো সিজদার আয়াত
যতবার তিলাওয়াত করা হয়েছে সবগুলোর জন্য পৃথক পৃথক সিজদা দিতে হবে। শুধু এক বৈঠকে
একটি সিজদার আয়াত একাধিকবার পড়লে সেক্ষেত্রে একটি সিজদা ওয়াজিব হবে। সূত্র:
শরহুল মুনইয়া ৫০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৪;
ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
ওয়াজিব
কুরবানির সঙ্গে নফল করবানি জায়েজ আছে কি? |
জিজ্ঞাসা-২২৫: মুহতারাম মুকাররাম শায়েখ এর নিকট
জানতে চাই যদি কুরবানী পশুর মধ্যে ৬ভাগ ওয়াজিব কুরবানি দাতা হয় আর ৭ম নং ভাগে নফল
হিসেবে একাধিক ব্যাক্তির পক্ষ থেকে দেয়া হয় তাহলে কি বিধি সম্মত হবে? যেমনটি
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বিদায় হজে সকল উম্মতের নামে মাত্র কয়েক
টি পশু কুরবানী দিয়েছিলেন। তারিখ-০৮/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই দিয়েছিলেন। আরটি আখতারুজ্জামান
৬এডি ব্রিগেড মিরপুর সেনানিবাস -এর প্রশ্নের আলোকে। মহান
আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: হ্যাঁ, আপনার
প্রশ্নের বর্ণিত ছুরতে ওয়াজিব কুরবানির সঙ্গে নফল করবানি জায়েজ আছে। কোন সমস্যা নেই। গতপরশু আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-২১৮ শিরোনামে
আলোচিত হয়েছে, একই ধরণের প্রশ্ন ( অর্থাৎ
কুরবানির সাথে আকিকা, কুরবনি ওয়াজিব আর আকিকা মুস্তাহাব),
সেটা দেখা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। তবুও কিছু দলিল পেশ করছি:
হাদিস নং-০১
হানাশ রাহ. বলেন-
رَأَيْتُ عَلِيّا يُضَحِّي بِكَبْشَيْنِ، فَقُلْتُ مَا
هَذَا؟ فَقَالَ:
إِنّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم أَوْصَانِي أَنْ أُضَحِّيَ عَنْهُ فَأَنَا أُضَحِّي عَنْهُ.
আমি আলী রা.-কে দেখলাম, দুটি দুম্বা কুরবানী করছেন।
আমি বললাম, দুটি কেন? তিনি বললেন,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে ওসীয়ত করেছেন, তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করতে। তাই আমি তাঁর
পক্ষ থেকেও কুরবানী করছি। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৯০;
জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৮৬
অর্থাৎ আলী রা. প্রত্যেক বছর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর পক্ষ থেকে কুরবানী করতেন।
হাদিস নং-০২
عن نافع عن ابن عمر أنه كان لا
يضحى عن حبل ولكن كان يضحى عن ولده الصغار والكبار، ويعق عن ولده كلهم (المصنف عبد الرزاق-4/380، رقم-8136)
অর্থ: হযরত নাফে থেকে বর্ণিত যে, ইবনে ওমর রা: তিনি গর্ভস্থ
সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করতেন না। কিন্তু তিনি তাঁর ছোট বড় সন্তানদের পক্ষ
থেকে কুরবানী করতেন এবং সকল সন্তানদের পক্ষ থেকে আকীকা করতেন।
তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাদিস: ৮১৩৬
উপরোক্ত হাদিস ও আসারে ভিত্তিতে ফুকাহায়ে কেরাম
বলেছেন যে, ওয়াজিব এর নফল কুরবানি করতে পারবে। সূত্র: ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫০;
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী
শায়বা ৮/২৪৪; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩৩১-৩৩৩; শরহুল মুহাযযাব ৮/৪০৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
জিজ্ঞাসা-২২৬: মুহতারাম শায়খ দের নিকট জানতে চাই:
সৌদি নাগরিক যারা বাংলাদেশে রয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে সৌদিতে কোন দিন কুরবানী করা হবে
এবং তারা কোন দিন হাত পায়ের নখ এবং চুল কাটাবেন এবং আমরা যারা সৌদি এলাকায় রয়েছি
বাংলাদেশে আমাদের পক্ষ থেকে কবে কোরবানি করা হবে এবং আমরা কখন হাত পায়ের নখ এবং চুল
কাটাব। তারিখ-০৮/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি শরিফ, সাউথ
সুদান যুবা-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ
তাকে বিদেশের মাটিতে শান্তি ও নিরাপদে রাখুন।)
জবাব: সুতরাং যখনি কুরবানীর দিনসমূহ আসার পর কুরবানী করা হবে, তখনি কুরবানীদাতা তার চুল ও নখ ইত্যাদি কাটবেন। কুরবানী কোথায় করা হচ্ছে
এটা মূল বিষয় নয়। বরং কুরবানীর দিনে কুরবানী করার সাথে চুল নখ কাটার বিধান
সম্পর্কিত।
سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيِّبِ، يَقُولُ:
سَمِعْتُ أُمَّ سَلَمَةَ،
زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
تَقُولُ: قَالَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ
كَانَ لَهُ ذِبْحٌ
يَذْبَحُهُ فَإِذَا أُهِلَّ
هِلَالُ ذِي الْحِجَّةِ،
فَلَا يَأْخُذَنَّ مِنْ
شَعْرِهِ، وَلَا مِنْ
أَظْفَارِهِ شَيْئًا حَتَّى
يُضَحِّيَ»
নাবী (ﷺ) এর সহধর্মিনা উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, (ﷺ) বলেছেনঃ
যে ব্যক্তির নিকট কুরবানীর পশু আছে সে যেন যিলহাজ্জ এর নতুন চাঁদ দেখার পর থেকে
কুরবানী করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৯৭৭, ইফাবা-৪৯৫৯, সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস
নং-২৭৯১]
وَمِمَّا وَرَدَ فِي
صَحِيحِ مُسْلِمٍ قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
– «إذَا دَخَلَ الْعَشْرُ
وَأَرَادَ بَعْضُكُمْ أَنْ
يُضَحِّيَ فَلَا يَأْخُذَنَّ
شَعْرًا وَلَا يُقَلِّمَنَّ
ظُفُرًا» فَهَذَا مَحْمُولٌ
عَلَى النَّدْبِ دُونَ
الْوُجُوبِ بِالْإِجْمَاعِ، (رد
المحتار، كتاب الصلاة،
باب العيدين، مَطْلَبٌ
فِي إزَالَةِ الشَّعْرِ
وَالظُّفُرِ فِي عَشْرِ
ذِي الْحِجَّةِ-2\181،
دار ا لفكر
بيروت)
সারকথা হলো: ব্যক্তি যে দেশে অবস্থান করবে,
সে দেশের কুরবানি হলে তার নখ-চুল কাটবে;
তার কুরবানি যেখানেই হোক না কেন। পূর্বে এরকম মাসয়ালা আল-বুরহানে আলোচিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি সৌদিতে ৩০দিন
রোজা রেখে বাংলাদেশে আসল, সে এখন কি করবে? উক্ত ব্যক্তি বাংলাদেশে আরেকটি রোজা রেখে, পরের দিন
ঈদ করবে। আল-বুহানের ওয়বেসাইটে মাসয়ালা দেখে দিন। সূত্র:
ফাতওয়ায়ে রহমানিয়া ৫/১৮০-৮১; মাজমূফাতাওয়াশ-শাইখইবনে
বায ১৫/১৫৫
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
কুরবানীর
দিন সকালে কুরবানী করার পর যদি সাতজন শরীক কিছু গোশত মেপে নেয় দুপুরে খাওয়ার জন্য, তার বিধান কি। |
জিজ্ঞাসা: ২২৭
কুরবানীর দিন সকালে কুরবানী করার
পর যদি সাতজন শরীক কিছু গোশত মেপে নেয় দুপুরে খাওয়ার জন্য, তার
বিধান কি।
জবাব: যদি শরিকে কুরবানী হয়, তাহলে
তার গোস্তের বিধান হল সবাই মেপে মেপে সমানভাবে বন্টন করে নিতে হবে। আপনার প্রশ্নের
বর্ণিত ছুরুতে যদি গরু কাটা সম্পূর্ণ হওয়ার
আগেই কিছু গোশত সবাই সমপরিমাণ দুপুরে খাওয়ার জন্য নেয়, এতে
কোন অসুবিধা নেই।
সূত্র: বাদায়উস সানায়ে : ৪/২০৭
উল্লেখ্য যে,
শরীকদের
গোশত অংশের কম বেশি হলে কারো কুরবানী শুদ্ধ হবে না ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
মৃত অমুসলিমদের জন্য দুআ করা
যাবে কি? |
জিজ্ঞাসা-২২৮: মৃত অমুসলিমদের জন্য দুআ করা যাবে কি?মুহতারাম
মুফতি সাহেবের নিকট আমার প্রশ্ন?
(সম্মানিত
ভাই আর্টি আখতারুজ্জামান দা.বা. এর প্রশ্নের
আলোকে)
জবাব: অমুসলিমদের জন্য করা দোয়া
কয়েক প্রকার হতে পারে:–
১। অমুসলিমরা যাতে ইসলাম গ্রহণ
করে, হেদায়েতপ্রাপ্ত হয় এ ধরনের কোনো দোয়া করা।
এ ধরনে দোয়া করা জায়েজ এবং উত্তম।
রসূল (সা.) এ ধরনের দোয়া করেছেন
হাদিস শরিফে এসেছে,
ইবনে উমর (রা.) থেকে সাব্যস্ত
হয়েছে যে, রাসূল (সা.) বলেছেন:
‘হে আল্লাহ্! এই দুই জন লোকের মধ্যে যে ব্যক্তি আপনার কাছে অধিক
প্রিয় তার মাধ্যমে আপনি ইসলামকে শক্তিশালী করুন: আবু জেহেল কিংবা উমর বিন খাত্তাব।’
[সুনানে
তিরমিযি; হাদিস: ৩৬৮১, আলবানী
হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
২। অমুসলিমদের জন্য গুনাহের ক্ষমা
প্রার্থণা করা কিংবা এ-জাতীয় কোন দোয়া করা।
আলেমগণের ইজমার ভিত্তিতে এটি
হারাম।
ইমাম নববী বলেন: ‘পক্ষান্তরে,
কাফেরের
জন্য রহমত প্রার্থনা করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা এটি কুরআনের দলিল ও ইজমার ভিত্তিতে
হারাম।’ [আল-মাজমু
৫/১২০]
৩। অমুসলিম ব্যক্তির রোগ মুক্তি
ও আরোগ্যের জন্য দোয়া করা।
এই দোয়াতে যদি কোনো সুফল হাছিলের
উদ্দেশ্যে থাকে, তাহলে সেটা জায়েয।
সুতরাং হেদায়েতের জন্য এবং সুস্থতার
জন্য দোয়া করতে হবে তো তাকে জীবিত থাকতে হবে,
সুতরাং
মৃত্যুর পরে কোন কাফেরের জন্য দোয়া জায়েজ নেই।
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম
শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক, ৪৯ ফিল্ড
রেজিমেন্ট আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
তাকবির কি ০১ বার পড়বো নাকি
০৩ বার পড়বো? |
জিজ্ঞাসা-২২৯
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
আরটি-১২৫৬৮
মোঃ মোজাম্মেল হোসেন
সদর দপ্তর ২৪ আর্টিলারি ব্রিগেড, গুইমারা-খাগড়াছড়ি।
২৪ পদাতিক ডিভিশন।
শায়েখদের নিকট জিজ্ঞাসা
জিলহজ্ব মাসের ০৯ তারিখ অর্থাৎ
আজ ফজর থেকে আইয়্যামে তাশরিকের তাকবির শুরু।
জানার বিষয় হলো তাকবির কি ০১
বার পড়বো নাকি ০৩ বার পড়বো?
জবাব: আরাফার দিন, ৯ যিলহজ
ফজর থেকে ১৩ যিলহজ আসর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর একবার তাকবিরে তাশরিক
তথা— ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু
আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু
আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ বলা ওয়াজিব। সূত্র: ফাতাওয়ায়ে শামী, বাহরুর
রায়িক
তবে পূর্ণ তাকবিরে তাশরিক তিনবার
পড়ার বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফিকহবিদরাও তিনবার বলার প্রতি গুরুত্ব দেননি। অবশ্য
কেউ যদি সুন্নত মনে না করে এমনিতেই তিনবার বলে তবে সেটাকে বিদআত বলাও উচিত নয়। সূত্র:
আলআওসাত, হাদীস: ২১৯৮; মুসান্নাফ
ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ৫৬৯৮; ফাতাওয়া
হিন্দিয়া ১/১৫২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৭; আলবাহরুর
রায়েক ২/১৬৫
সুন্নত মনে করে পড়লে মাকরূহ হবে।
সূত্র: ফাতাওয়া নাওয়াজেল-১৪/৫৯৪
عن جابر بن عبد الله رضى الله
عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا صلى الصبح من غداة عرفة يقبل على
أصحابه، فيقول: على مكانكم، ويقول: “الله أكبر الله اكبر، لا إله إلا الله، والله
أكبر الله أكبر ولله الحمد” فيكبر من غداة عرفة إلى صلاة العصر من آخر أيام
التشريق، (سنن الدار قطنى، باب العيدين-2/38، رقم-1721)
أما صفته فإنه واجب وأما عدده
وما هيته فهو أن يقول مرة واحدة: “الله أكبر الله اكبر، لا إله إلا الله، والله
أكبر الله أكبر ولله الحمد” (الفتاوى الهندية-1/102)
والتكبير أن يقول مرة واحدة:
“الله أكبر الله اكبر، لا إله إلا الله، والله أكبر الله أكبر ولله الحمد” وهو
عقيب الصلاة المفروضات على المقيمين فى الأمصار فى الجماعات المستحبة عند ابى
حنيفة (الهداية-1/175)
والتكبير أن يقول: مرة واحدة،
وهو قول عمر بن الخطاب وابن مسعود، وقولنا: هو مذهب عمر بن الخطاب وعبد الله بن
مسعود (عينى شرح الهداية-1/1030)
وياتى به مرة وما زاد فهو مستحب،
قاله العينى فى شرح التحفة، واقره فى الدر، وفى الحموى عن القراحصارى: الإتيان به
مرتين خلاف السنة، (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح، كتاب الصلاة، باب احكام
العيدين-539)
(وَيَجِبُ تَكْبِيرُ التَّشْرِيقِ) فِي الْأَصَحِّ لِلْأَمْرِ بِهِ
(مَرَّةً) وَإِنْ زَادَ عَلَيْهَا يَكُونُ فَضْلًا قَالَهُ الْعَيْنِيُّ.
وفى رد المحتار: (قَوْلُهُ
وَإِنْ زَادَ إلَخْ) أَفَادَ أَنَّ قَوْلَهُ مَرَّةً بَيَانٌ لِلْوَاجِبِ، لَكِنْ
ذَكَرَ أَبُو السُّعُودِ أَنَّ الْحَمَوِيَّ نَقَلَ عَنْ الْقَرَاحَصَارِيِّ أَنَّ
الْإِتْيَانَ بِهِ مَرَّتَيْنِ خِلَافُ السُّنَّةِ، (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب
العيدين-3/61-62)
وفى مجمع الأنهر: إن زاد فقد
خالف السنة ولعل محله إذا أتى به على أنه سنة، واما إذا أتى به على أنه ذكر مطلق
فلا، (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح، كتاب الصلاة، باب احكام العيدين-539
তথ্যসহযোগিতা আহলে হক মিডিয়া,আওয়ার ইসলাম২৪.কম
উত্তর দিচ্ছেন ধর্ম শিক্ষক মোঃ
আব্দুর রাজ্জাক বগুড়া
নারীদের
ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ এর বিধান কি? |
জিজ্ঞাসা-২৩০: নারীদের ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ এর
বিধান কি?
তারিখ-০৯/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি মোঃ আব্দুর রহমান, সাভার; ১৭ ইবি, বগুড়া
সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: এ বিষেয়ে আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-২০৫
শিরোনামে আলোচনা করা হয়েছে। সেটা দেখে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
প্রথম কথা হলো, নারীদের জন্য জামাতের সঙ্গে
নামাজ আদায় করা ওয়াজিব/জরুরি নয়। হানাফি মাজহাব মতে, যদি কোনো নারী ঈদের নামাজ পড়ে তবে তা নফল হবে। আর নফল নামাজ জামাআতে পড়া
মাকরূহ। সুতরাং ফেতনার আশংকায় নারীদের ঈদের নামাজ আদায় করাও মাকরূহ। বর্তমানে
সালাফি/আহলে হাদিসদের মতে সুন্নাত। ইমাম শাফির রহ. মত এটাই।
প্রশ্ন: ক। বর্তমান যামানায় নারীদের জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার বিধান কি?
উত্তর: ক। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নিজ খেলাফত আমলে যখন মহিলাদের
পরিবর্তিত অবস্থা দেখেন এবং ফিতনার। আশঙ্কাও দিন দিন বাড়তে থাকে, তখন উম্মুল মুমিনিন
আয়েশা (রা.), ইবনে মাসউদ ও ইবনুজ জুবায়ের
(রা.)সহ বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম নারীদের মসজিদে না আসার আদেশ জারি করলেন। যেমন,
হাদিস নং-১
عن عبد الله بن سويد الأنصاري عن
عمته امرأة أبي حميد الساعدي : أنها جاءت النبي صلى الله عليه و سلم فقالت : يا رسول الله صلى الله عليه و سلم إني أحب الصلاة معك
فقال : قد علمت أنك تحبين الصلاة معي و
صلاتك في بيتك خير من صلاتك في حجرتك و صلاتك في حجرتك خير من صلاتك في دارك و
صلاتك في دارك خير من صلاتك في مسجد قومك و صلاتك في مسجد قومك خير من صلاتك في
مسجدي فأمرت فبني لها مسجد في أقصى شيء من بيتها و أظلمه فكانت تصلي فيه حتى لقيت
الله عز و جل
আব্দুল্লাহ বিন সুয়াইদ আল
আনসারী রাঃ তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদী এর স্ত্রী রাসূল (ﷺ) এর কাছে এসে বললেনহে আল্লাহর রাসূল!
নিশ্চয় আমি আপনার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজী (ﷺ) বললেন-আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে
পছন্দ কর। অথচ তোমার একান্ত রুমে নামায পড়া উত্তম
তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বসবাসের গৃহে নামায
পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বাড়িতে নামায পড়া উত্তম
তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়া উত্তম
আমার মসজিদে [মসজিদে নববীতে] নামায পড়ার চেয়ে। তারপর
তিনি আদেশ দিলেন তার গৃহের কোণে একটি রুম বানাতে। আর সেটিকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে
ফেললেন। তারপর সেখানেই তিনি নামায পড়তেন মৃত্যু পর্যন্ত। তাখরিজ: সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৯; ইলাউস সুনান-৩/২৬।
আসার-০১
عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَتْ لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم– مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ الْمَسْجِدَ كَمَا مُنِعَهُ
نِسَاءُ بَنِى إِسْرَائِيلَ. قَالَ يَحْيَى فَقُلْتُ لِعَمْرَةَ أَمُنِعَهُ نِسَاءُ بَنِى
إِسْرَائِيلَ قَالَتْ نَعَمْ.
অর্থ: আয়েশা (রা) বলেন. “যদি
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানতেন
যে, মহিলারা কি
অবস্থা সৃষ্টি করেছে , তা হলে বনী ইসরাইলের মহিলাদের যেমন
নিষেধ করা হয়েছিল, তেমনি এদেরও মসজিদে আসা নিষেধ করে দিতেন ।
(রাবী) ইয়াহইয়া ইবন সায়ীদ (র) বলেন, আমি আমরাহ (রা) কে
জিজ্ঞেস করলাম, তাদের কি নিষেধ করা হয়েছিল ? তিনি বললেন , হ্যাঁ ।” তাখরিজ: বুখারী-৮৩১ ই.ফা.
বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার
আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘আয়েশা (রা.)-এর এই মন্তব্য তো
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর
দুনিয়া থেকে বিদায়ের কিছুদিন পরের নারীদের সম্পর্কে। অথচ আজকের যুগের নারীদের
উগ্রতা আর বেহায়াপনার হাজার ভাগের এক ভাগও সে যুগে ছিল না। তাহলে এ অবস্থা দেখে
তিনি কী মন্তব্য করতেন?’
(উমদাতুল কারি : ৬/১৫৮)
এখন আমরা চিন্তা করে দেখতে
পারি যে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) নিজ যুগ তথা হিজরি নবম শতাব্দীর নারীদের
সম্পর্কে এ কথা বলেছেন। তাহলে আজ হিজরি পঞ্চদশ শতাব্দীতে সারা বিশ্ব যে অশ্লীলতা
আর
উলঙ্গপনার দিকে ছুটে চলেছে, বেপর্দা আর
বেহায়াপনার আজ যে ছড়াছড়ি, মেয়েরা যখন পুরুষের
পোশাক পরছে, পেট-পিঠ খুলে রাস্তাঘাটে বেড়াচ্ছে, ঠিক সে মুহূর্তে অবলা মা-বোনদের সওয়াবের স্বপ্ন দেখিয়ে মসজিদে আর ঈদগাহে
টেনে আনার অপচেষ্টা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।
আসার-০২
عن أبي عمرو الشيباني أنه رأى بن
مسعود يخرج النساء من المسجد ويقول أخرجن إلى بيوتكن خير لكن
অর্থ: আবু আমর শায়বানি (রহ.) বলেন,
আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে দেখেছি, তিনি
জুমার দিন নারীদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা
বের হয়ে যান। আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য উত্তম। তাখরিজ: আল
মুজামুল কাবির-৯৪৭৫
আসার নং-০৩
হজরত জুবায়ের ইবনুল আওয়াম
(রা.) তাঁর পরিবারের কোনো নারীকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজে যেতে দিতেন না। মুসান্নাফে
ইবনে আবি শায়বা-৫৮৪৬
নোট: হাদিসটির সনদ সহিহ
আসার নং-০৪
হজরত ইবনে ওমর (রা.) তাঁর
স্ত্রীদের ঈদগাহে বের হতে দিতেন না। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-৫৮৪৫
নোট: হাদিসটির সনদ সহিহ
প্রশ্ন: খ। নারীদের মসজিদে গমন নিয়ে ফিকাহবিদদের মতামত কি?
উত্তর: খ। প্রথমদিকের কিছু ওলামায়ে কেরাম বৃদ্ধাদের জন্য মাগরিব ও এশার সময়
ফিতনামুক্ত হওয়ার কারণে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। পরবর্তী ফিকাহবিদরা ফিতনার
ব্যাপকতার কারণে যুবতী ও বৃদ্ধা সবার জন্য সব নামাজে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ
করেছেন। সূত্র: শরহুস সগির : ১/৪৪৬, আল
মাজমু : ৪/১৯৮, আল মুগনি : ২/১৯৩
হানাফি
মাজহাবের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বাদায়েউস সানায়ে’ তে বলা হয়েছে যে যুবতী
নারীদের মসজিদে যাওয়া ফিতনা। সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে : ১/১৫৬
.
আল্লামা
ইবনে নুজাইম মিসরি ও আল্লামা হাসকাফি.(রহ.) বলেন, বর্তমান যুগে ফিতনার
ব্যাপক প্রচলন হওয়ায় ফতোয়া হলো, সব নারীর জন্যই সব
নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতে আদায় করা মাকরুহে তাহরিমি। সূত্র:
আল বাহরুর রায়েক : ১/৬২৭-৬২৮, আদ্দুররুল
মুখতার : ১/৩৮০
সারকথা
কথা হলো, এ কথা সত্য যে রাসূল (ﷺ)-এর যুগে নারীরা ঈদের জামাতে শরিক হত, উলামায়ে মুতাআখখেরীনদের
(পরবর্তী) ফতওয়া হলো, বর্তমানে যুবতী হোক অথবা বৃদ্ধা উভয়ের
জন্যই প্রত্যেক নামাজের জামাতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী ফিৎনা প্রকাশ পাওয়ার
কারণে । সূত্র: তাতার খানিয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৬২৮, খুলাছাতুল ফতওয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৫৫, বাদায়েউস সানায়ে ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৫৭
প্রশ্ন: গ। যদি পর্দার সাথে/ঘরোয়াভাবে
নারীর ইমামতিতে ঈদের জামাত আদায় করে, তাহলে কি কোন অসুবিধা?
উত্তর: গ। কোন কোন এলাকায় দেখা মহিলারা বাড়িতে ঈদের জামাত
আদায় করে। প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে ওলামায়েকেরাম একমত
যে, কোন মহিলার
জন্য কোন পুরুষের ইমাম হওয়া জায়েয নেই। এতে পুরুষের নামায বাতিল বলে গণ্য হবে। দলিল; ফাতাওয়া লাজনাতিত দাইমা ৭/৩৯১
দলিল:
হাদিস
নং-০১
জাবের
ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ
আমাদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক খুতবায় বলেছেন,
أَلَا لَا تَؤُمَّنَّ امْرَأَةٌ
رَجُلًا
খবরদার
কোন মহিলা যেন পুরুষের ইমাম না হয়। (ইবনে মাজাহ ১০৭১)
হাদিস
নং-০২
রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন,
لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا
أَمْرَهُمْ امْرَأَةً
ঐ
সম্প্রদায় কখনো সফলকাম হতে পারে না, যারা কোন মহিলাকে তাদের বিষয়াদির নেতা
নিযুক্ত করে। (বুখারী ৪০৭৩ নাসাঈ ৫২৯৩)
যেহেতু
ইমামতি এক প্রকারের নেতৃত্ব, তাই তাদের এ পদে নিযুক্ত করা হারাম।
দ্বিতীয়
কথা হলো, মহিলা মহিলার ইমামতি করতে পারবে কিনা?
এ
বিষয়ে অগ্রবর্তী হানাফী ইমামগণ মহিলাদের
নামাযে মহিলার ইমামতিকে মকরূহ বলে গণ্য করেছেন। আল-মারগিনানী লিখেন:
ويكره للنساء أن يصلين وحدهن
الجماعة، لأنها لا تخلو من ارتكاب المحرم وهو قيام الإمام وسط الصف فيكره كالعراة؛
فإن فعلن قامت الإمام وسطهن؛ لأن عائشة فعلت كذلك، وحمل فعلها الجماعة على ابتداء
الإسلام، ولأن في التقدم زيادة الكشف.
‘কেবল মহিলাদের জামা‘আতে নামায আদায় করা
মাকরূহ; কারণ সে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে মুক্ত নয়। আর তা
(হারাম কাজ) হল: মধ্য কাতারে ইমাম দাঁড়ানো। অতএব উলঙ্গদের জামা‘আতের ন্যায় মহিলাদের জামা‘আতও মাকরূহ। যদি তারা তা
করে তবে ইমাম মাঝখানে দাঁড়াবেন; কারণ ‘আয়িশা
(রা) তেমনটি করেছিলেন। নামাযে তাঁর ইমামতিকে ইসলামের প্রাথমিক যুগের অনুমোদন বলে
চালিয়ে দেয়া যায়। তাছাড়া মহিলারা সামনে গেলে অত্যধিক উন্মোচনের সম্ভাবনা থাকে।
ইবনু ‘আবিদীন একটু এগিয়ে বলেছেন: ويكره تحريما جماعة النساء ولو
في التراويح ‘মহিলাদের জামা‘আত মাকরূহ তাহরীমী, যদিও তা হয় তারাবীহ নামাযের জামা‘আত।
আল-আতরাযী আরেকটু এগিয়ে বলেছেন, মহিলাদের জামা‘আত বিদ‘আহ।
মালিকী মাযহাব: ইবনু রুশ্দ
আল-হাফীদ জোর দিয়ে বলেছেন যে, মালিকী মাযহাব মতে মহিলাদের
স্বতন্ত্র জামা‘আত ও তাতে মহিলার ইমামতি বৈধ
নয়।
মূলকথা: মহিলার ইমামতি মাকরূহে তাহরীমী তথা
নাজায়েয। তারাবীর/ঈদের নামাযের জামাতেরও একই হুকুম।
দলিল:
হাদিস/আসার-০১
হযরত
আলী রা. বলেন-
لاَ تَؤُمّ الْمَرْأَةُ.
কোনো
মহিলা যেন ইমামতি না করে। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, বর্ণনা
৪৯৯৪
হাদিস/আসার-০২
অন্য
এক বর্ণনায় এসেছে ইবনে আউন রাহ. বলেন-
كَتَبْتُ إلَى نَافِعٍ أَسْأَلُهُ، أَتَؤُمّ الْمَرْأَةُ النِّسَاءَ؟ فَقَالَ : لاَ أَعْلَمُ الْمَرْأَةَ تَؤُمّ النِّسَاءَ.
আমি
নাফে রাহ.-কে পত্রলিখে জিজ্ঞেস করলাম- কোনো মহিলা কি অন্য মহিলাদের ইমামতি
করতে পারবে? (উত্তরে) নাফে রাহ. বললেন, ‘আমার জানামতে কোনো মহিলা অন্য মহিলাদের ইমামতি করতে পারবে না। তাখরিজ:
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, বর্ণনা ৪৯৯৫
সূত্র: কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ২১৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৪৮; ফাতহুল কাদীর ১/৩০৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮৭; আলইখতিয়ার ১/২১০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৬৫
শেষ কথা হলো, যেসব ইমাম নারীদের জামাতে/ঈদের নামাজ পড়ার পক্ষে বলেছেন, সবাই শর্তাসাপেক্ষে
ছিল। আর বর্তমান জামানায় সেই শর্ত পূরণ করা দুষ্কর। শর্তগুলো ২০৫ নং মাসয়ালা দেখে
নিন। অতত্রব হানাফি মাজহারের ফতোওয়াই অধিক যুক্তিযুক্ত।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
দরুদ
পাঠের বিধান কি,
অনেকে যে (সাঃ), (ছঃ), (দঃ) এভাবে লেখে এতে কি দরুদের হক আদায় হবে?
দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম। |
জিজ্ঞাসা-২৩২ আস সালামু আলাইকুম। দরুদ পাঠের বিধান কী? অনেকে যে (সাঃ),
(ছঃ), (দঃ)
- এভাবে লিখেন, এতে কি দরুদের হক আদায় হবে? দলিলসহ
জানালে উপকৃত হতাম। তারিখ-১০/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত স্নেহের ভাই, আরটি মো: নুরুল্লাহ, ১০৫
বিগ্রেড, যশোর সেনানিবাস-এর প্রশ্নের
আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান
করুন।)
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ও বারাকাতুহ। প্রথমে জাযাকাল্লাহ খয়র
আমার স্নেহের ছোট ভাইকে তিনি একটা
গুরুত্বপূর্ণ আমলের ব্যাপারে সওয়াল করেছেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে নিরাপদে ও
শান্তিতে রাখুন। যাইহোক, আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার
জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। দরুদ পাঠের বিধান কি?
উত্তর: ক। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ
يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ
وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا[
অর্থ: আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর
প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং
তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর। সূরা আহযাব-৫৬
উপরোক্ত আয়াতের উপর ভিত্তি করে ফুকাহায়ে আহনাফ ও
মালেক বলেন, আল্লাহ তাআলার আদেশ অনুযায়ী জীবনে
একবার হ’লেও দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব।
সূত্র: আল-মাউসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ, ২৭/২৩৪ পৃঃ
Ø ইমাম শাফেঈ ও আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.)-এর মতে তাশাহহুদের পর দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব। আর ইমাম আবূ হানীফা ও মালেক
(রহ.)-এর মতে সুন্নাত। সূত্র: আব্দুল্লাহ
বিন আব্দুর রহমান আল-বাসসাম, তায়সীরুল আল্লাম শরহে উমদাতুল
আহকাম, ১ম খন্ড (কুয়েত : জমঈয়াতু ইহয়াইত তুরাছ আল-ইসলামী,
১৯৯৪ খৃঃ/১৪১৪ হিঃ), পৃঃ ২৬৮।
Ø ইমাম তাহাবী (রহ.) বলেন, যখনই রাসূল (ﷺ)-এর নাম আসবে তখনই তার প্রতি দরূদ পাঠ করা
ওয়াজিব। আর মুস্তাহাব হ’ল, হাদীছে উল্লেখিত বিভিন্ন সময়ে।
যেমন জুম‘আর দিনে, মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময়,
আযানের পরে, দো‘আর শুরুতে ইত্যাদি। সূত্র: আল-মাউসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ, ২৭/২৩৫ পৃঃ
অধিকাংশ ইমাম এ বিষয়ে একমত
যে, কেউ
রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর নাম উল্লেখ করলে অথবা শুনলে দরুদ পাঠ করা
ওয়াজিব হয়ে যায়। কেননা হাদিসে এরূপ
ক্ষেত্রে দরুদ পাঠ না করার কারণে শাস্তিবাণী বর্ণিত আছে। দলিল:
হাদিস নং-০১
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ،
হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, সে ব্যক্তি অপমানিত হোক,
যে ব্যক্তির নিকট আমার নাম উচ্চারণকালে সে আমার উপর দরূদ পাঠ করে
না। তাখরিজ: সুনানে তিরমিজী, হাদীস
নং-৩৫৪৫, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৭৪৫১,সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৮৮৮
হাদিস নং-০২
عَنْ حُسَيْنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ
أَبِي طَالِبٍ قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: البَخِيلُ الَّذِي مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ
হযরত হুসাইন বিন আলী বিন আবী
তালিব রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, সর্বাপেক্ষাবড় কৃপণ সেই ব্যক্তি, যার
নিকট আমার নাম উচ্চারণ করা হলে সে আমার উপর দরূদ পড়ে না। তাখরিজ: সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩৫৪৬
হাদিস নং-০৩
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে
বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) বলেছেন, ‘যে সমস্ত লোক কোনো মজলিসে
বসেছে অথচ তারা আল্লাহর জিকির করেনি এবং তাদের নবীর প্রতি দরুদও পাঠ করেনি, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে।
আল্লাহ তাআলা চাইলে তাদের শাস্তিও দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন।’ তাখরিজ: তিরমিজি, হাদিস :
৩৩৮০
প্রশ্ন: খ। একই মজলিসে/বৈঠকে একাধিকবার প্রিয় নবীজি (ﷺ)-এর নাম উচ্চারিত হলে, করণীয় কি?
উত্তর: খ। একই মজলিসে বার বার নাম উচ্চারিত হলে, একবার দরুদ পাঠ করলেই ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। কিন্তু প্রত্যেকবার পাঠ করা
মুস্তাহাব। সূত্র: তাফসিরে
মাআরেফুল কুরআন-সংক্ষিপ্ত, মাওলাণা
মহিউদ্দীন খান রহ.-১০৯৫ পৃষ্ঠা
প্রশ্ন: গ। অনেকে যে (সাঃ), (ছঃ), (দঃ) এভাবে লেখে এতে কি
দরুদের হক আদায় হবে?
উত্তর: গ। মুখে নাম উচ্চারণ করলে যেমন
দরুদ ও সালাম ওয়াজিব, তেমনি কলমে লেখার সময়ও দরুদ ও সালাম
ওয়াজিব। সুতরাং
(সাঃ), (ছঃ), (দঃ),(সা.),(সা.),(স) (Pbuh),
(Pbh), (D), (S), (Sm), (ﺻﻠﻠﻢ)
,(ﺻﻠﻌﻢ) ,(ﻋﻢ) ,(ﺹ যেভাবেই লেখুক না কেন, এক্ষেত্রে সংক্ষেপে লেখা
যথেষ্ট নয়। সমপূর্ণ দরুদ ও সালাম লেখা বিধেয়।
দলিল:
পূর্বে উল্লেখিত হাদিসসমূহ
এবং নিম্নে একটি পেশ করা হচ্ছে-
প্রিয় নবীজি (ﷺ)-নাম লিখার পর পূর্ণ দরুদ শরীফ লিখা হাদিস শরীফে আদেশ
করা হয়েছে-
عن ابن عباس
قال: قال رسول
الله صلى الله
عليه وسلم: “من
صلى عليّ في
كتاب، لم تزل
الصلاة جارية له
ما دام اسمي
في ذلك الكتاب
অর্থ: যে ব্যক্তি আঁমার উপর
ছলাত বা দরুদ শরীফ লিখবে,সর্বদাই আঁমার নাম মুবারকের সাথে ঐ লিখায় পূর্ণ দরুদ শরীফ লিখবে।
তাখরিজ: মুজামুল কবীর তাবরানী-৪৪৭; মুজামুল আওসাত তাবরানী-১৮৩৫
নোট: কেউ কেউ হাদিসটির সনদকে দুর্বল
বলেছেন।
একই মজলিসে কয়েকবার তাঁর নাম
লিখলে, প্রথমবার
দরুদ লেখা ওয়াজিব এবং পরবর্তী প্রত্যেকবার মুস্তাহাব। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-সংক্ষিপ্ত, মাওলাণা মহিউদ্দীন খান রহ.-১০৯৫ পৃষ্ঠা
ইমাম সূয়ুতী বলছেন এটা
মাকরুহ। উত্তম হলো صلي الله عليه و سلم পরিপূর্ণ লেখা ص বা
صل কিংবা صلعم লেখা মাকরুহ । দেখুন তাদরীবুর রাবী ফি শারহি তাক্বরীবুন নবভী-
কিতাবের
আরো দেখুন : মুসলিম শরীফের শরহ ।
এবং وقال العلامة السخاوي ـ رحمه
الله تعالى ـ في كتابه (فتح المغيث في شرح ألفية الحديث) للعراقي ما نصه: ( واجتنب أيها الكاتب (الرمز لها)
أي الصلاة والسلام على رسول الله
صلى الله عليه وسلم في خطك، بأن تقتصر منها على حرفين، ونحو ذلك، فتكون منقوصة
صورة كما يفعله (الكسائي)، والجهلة من أبناء العجم غالباً، وعوام الطلبة،
فيكتبون بدلاً من صلى الله عليه وسلم (ص)
أو (صم) أو (صلعم)، فذلك لما فيه من نقص الأجر لنقص الكتاب خلاف الأولى).
আল্লামা সাখাভী রহমাতুল্লাহি
আলাইহে তার ফতহুল মুগীছ ফি শারহি আলফিয়াতুল হাদীসে ইরাকী থেকে কোড করেন: হে লেখকগণ!
দরুদ শরীফ লেখার ক্ষেত্রে চিহ্ন ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন। এবং একি অক্ষর কিংবা
দুইটি অক্ষর না লিখে পরিপূর্ণভাবে صلي الله عليه و سلم সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম লিখুন ।
অনারব- ছাত্র এবং কাছায়ীর মত ص স:
লিখবেন না কারন তা পরিপূর্ণ দুরুদ লেখার ফজিলত থেকে বঞ্ছিত হয়। ”
প্রশ্ন: ঘ। কোন কোন স্থানে দরুদ শরিফ পড়া মুস্তাহাব?
উত্তর: ঘ। যেসব স্থানে দরুদ শরিফ পড়া
মুস্তাহাব, নিম্নে তা তুলে ধরা হলো:
(১) রাসুলুল্লাহ (ﷺ)এর নাম উচ্চারণ করলে, লিখলে বা শুনলে। (২) কোনো মজলিস
থেকে ওঠার আগে। (৩) দোয়ার শুরুতে, মাঝে ও শেষে। (৪) মসজিদে
প্রবেশকালে ও বের হওয়ার সময়। (৫) মুয়াজ্জিনের আজানের জবাব দেওয়ার পর আজানের দোয়ার
আগে। (৬) অজু শেষ করে। (৭) নবী করিম (ﷺ)এর রওজা মোবারক জিয়ারতের সময়। (৮) কোনো বই-পুস্তক বা চিঠিপত্র
লেখার শুরুতে। (৯) বিপদ-আপদ, বালা-মসিবত, ভূমিকম্প ইত্যাদির অনিষ্ট
থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। (১০) সকাল ও সন্ধ্যা। (১১) সাফা ও মারওয়া সাঈ করার সময়।
(১২) জুমা ইত্যাদির খুতবায়। (১৪) তালবিয়া থেকে অবসর হওয়ার পর। (১৫) কোনো কিছু ভুলে
গেলে। (১৬) রাগান্বিত হলে। (১৭) হাদিস পাঠের শুরুতে ও শেষে। (১৮) কোনো বিষয়ে
ইসলামী সমাধান লেখার শুরুতে। (১৯) পরস্পর একত্র হওয়া ও বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময়। (২০)
বৈধ সব গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুতে। সূত্র রদ্দুল মুহতার : ২/২৮১-২৮২, দুররে মুখতার : ১/৫১৬, আল কাউলুল বাদি : ২৭, ১৭৪-১৭৫
প্রশ্ন: ঙ। কো কোন জায়গায় দরুদ শরিফ পাঠ করা মাকরুহ?
উত্তর: ঙ। যেসব স্থানে দরুদ শরিফ পড়া
মাকরুহ; নিম্নে
(১) স্বামী ও স্ত্রীর বিশেষ
সম্পর্কের সময়। (২) মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের সময়। (৩) ব্যবসায়িক পণ্যের
পরিচিতির জন্য। (৪) কোনো স্থানে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার পর। (৫) খুতবা শ্রবণকালে।
(৬) আশ্চর্য হলে। (৭) হাঁচি দেওয়ার পর। (৮) জবাইয়ের সময়। সূত্র: রদ্দুল মুহতার : ২/২৮২
নোট: বিনা অজুতে এমনকি হাঁটতে হাঁটতেও দরুদ পড়তে
কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্ন: চ। দরুদের লেখার বিষয়ে
পূর্বসুরিদের কি নিয়ম ছিল?
উত্তর: চ। আমাদের মহান পূর্বসুরি সকল মুহাদ্দিস,ফুকাহায়ে উম্মত , মুফাস্সিরে কেরামগণ কোথায় সংক্ষেপে
দরুদ লেখেননি। বিশ্বাস না হলে, সমস্ত হাদিস, তাফসির ও ফিকাহর গ্রন্থ (মূল কিতাব বাংলা নয়) খুলে দেখুন। লেখা বড় হয়ে যাবে বা
বই বৃদ্ধি পেয়ে যাবে, এ কারণে অনেকে সংক্ষিপ্ত করে থাকেন।
হায় আফসোস! কতটুকু আর কালি/কাগজ লাগতো? প্রিয় নবীজি (ﷺ)-নাম লিখার ক্ষেত্রে কার্পণ্যতা। সেকি শ্রেষ্ঠ কৃপণ
নয়?
هذا ووصيتي لكل مسلم وقارئ وكاتب
أن يلتمس الأفضل ويبحث عما فيه زيادة أجره وثوابه ويبتعد عما يبطله أو ينقصه . نسأل الله سبحانه وتعالى أن يوفقنا جميعا لما فيه رضاه
، إنه جواد كريم وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه .
” مجموع فتاوى الشيخ ابن باز ” ( 2 / 397 – 399 )
সুতরাং এটা আমার ওসিয়্যত যে সকল পাঠক, লেখকরা
যাতে উত্তম এবং অধিক সওয়াব এবং প্রতিদানপূর্ন বিষয়টাকে গ্রহন করেন এবং সংক্ষিপ্ততা
পরিহার করে পরিপূর্ণভাবে (ﷺ)পড়েন ও লিখেন। ----সূত্র: মাজমুউল ফাতাওয়া-২/৩৯৭-৩৯৯
সর্তকতা: আল-হামদুলিল্লাহ
আমি কখনও সংক্ষিপ্ত দরুদ লেখি না, তবে মাঝে মাঝে যে আল-বুরহানে দেখা যায়, তা কপি-পেস্ট-এর কারণে হতে
পারে, সম্পপদনার যথেষ্ট সময় ঘার্তির কারণে/চোখের আড়ালে। পাঠকবৃন্দ! আমার ব্যক্তিগত আইডিতে অবগত
করলে ঠিক করে নিব ইনশাল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তার প্রিয় বন্ধুর প্রতি
বেশি বেশি পাঠ করার তাওফিক দান করুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
এক সাথে তিন তালাক দিলে কয়
তালাক পতিত হয় |
জিজ্ঞাসা-২৩৩: আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
একত্রে তিন তালাক দিলেও যে এক
তালাক পতিত হয়, ৫৯ বেংগল এর জনৈক সৈনিক এই সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে
চাচ্ছিলেন, অর্থাৎ সে মোবাইলে তার স্ত্রী কে এভাবে বলেছে, "তোকে এক তালাক, দুই তালাক,
তিন
তালাক" এখন তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক কেমন হবে? একেবারে
বিচ্ছিন্ন নাকি এক তালাক পতিত হবে?
তারিখ-২০/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি মোহাম্মাদ আব্দুর
রহমান, সাভার;
১৭ ইবি
বগুড়া সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ও বারাকাতুহ। এটি একটি বহুল আলোচিত
মাসয়লা, যা জমহুর ওলামা-ফোকাহার
বিপরীতে বিচ্ছিন্ন একটি মত। বর্তমান নেট জগতে প্রচারের কারণে অনেকে মনে করা শুরু
করেছে এটাই মনে হয় সঠিক। যাইহোক আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েকভাগে করছি।
গত দুইদিন আগে এর সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছি। এখন বিস্তারিত
লেখার ইচ্ছা রাখি।
ونسأل الله التوفيق
وهو الموفق والمعين
প্রশ্ন: ক। একসাথে তিন তালাক দিলে, তাহলে কয় তালাক পতিত হবে?
এব্যাপারে কয়টি মতামত আছে/পাওয়া যায়।
উত্তর: ক। কেউ যদি তার স্ত্রীকে এক মাজলিসে
বা একসাথে তিন তালাক দেয় তাহলে কয় তালাক পতিত হবে, এ ব্যাপারে
তিনটি মতামত পাওয়া যায়। যথা-
প্রথম মত:
শি‘আদের শাখা জা’ফরীদের
মতামত হলো: এর দ্বারা কোনো তালাক হবে না। যেহেতু সালাফে সালেহীনের কারো থেকে এ ধরনের
উক্তি বর্ণিত হয়নি, তাই এ মাযহাব বাতিল। এ নিয়ে কোনো আলোচনার প্রয়োজন
নেই। সূত্র: তাকমিলায়ে ফাতহুল মলহীম: ১/১১১,
ফাতাওয়ায়ে
ইবনে তাইমিয়াহ: ১৭/৯
দ্বিতীয় মত:
ইবনে তাইমিয়াহ রহ. ও ইবনুল কাইয়্যিম
রহ. এবং বর্তমানে তাদের অনুসারি আহলে হাদিস এর মতে: এর দ্বারা এক তালাক হবে, যদিও
তালাক দাতা তিন তালাকের নিয়ত করে থাকে। সূত্র: তাকমিলায়ে ফাতহুল মলহীম: ১/১১৫
তৃতীয় মত:
ফকিহ সাহাবি, (যেমন,
হযরত উমর, আলী, ‘উসমান,
ইবনে
মাসউদ, ইবনে উমর, ইবনে আমর, উবাদাহ
বিন সামিত, আবূ হুরাইরা, ইবনে
আব্বাস, ইবনে যুবায়ের,
আসেম
বিন উমর ও হযরত আয়িশা রা.) আয়িম্মায়ে আরবা (ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম
শাফিঈ, ইমাম আহমাদ)
ইমাম
বুখারী রহ.-সহ অধিকাংশ তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈদের মতামত হলো: এক মাজলিসে বা একসাথে তিন
তালাক দিলে তিন তালাক হয়ে যাবে এবং অন্যত্র বিবাহের পর দ্বিতীয় স্বামীর সাথে মেলামেশা
না হওয়া পর্যন্ত প্রথম স্বামীর জন্য উক্ত স্ত্রী হালাল হবে না।
প্রশ্ন: খ। তৃতীয় মতামত/মাযহাবের দলীল কি?
উত্তর: খ। তৃতীয় মতামত/মাযহাবের দলীল নিম্নরুপ:
কুরআন থেকে দলীল:
আয়াত নং-০১
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ
لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا
جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ
اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে
(তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না
নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক
দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে
করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ
কতৃ নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা
করা হয়। সূরা বাকারা-২৩০
আয়াত নং-০২
یٰۤاَیُّهَا
النَّبِیُّ اِذَا طَلَّقۡتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوۡهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَ
اَحۡصُوا الۡعِدَّۃَ ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ رَبَّکُمۡ ۚ لَا تُخۡرِجُوۡهُنَّ مِنۡۢ
بُیُوۡتِهِنَّ وَ لَا یَخۡرُجۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ یَّاۡتِیۡنَ بِفَاحِشَۃٍ
مُّبَیِّنَۃٍ ؕ وَ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰهِ ؕ وَ مَنۡ یَّتَعَدَّ حُدُوۡدَ اللّٰهِ
فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهٗ ؕ لَا تَدۡرِیۡ لَعَلَّ اللّٰهَ یُحۡدِثُ بَعۡدَ ذٰلِکَ
اَمۡرًا-------
অর্থ: ‘হে নবী! বলে দিন,
যখন
তোমরা তোমাদের স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ইচ্ছা করো,
তখন
তাদের ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিও…। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ
তার জন্য পথ বের করে দিবেন’ সূরা
তালাক: ১-২
এ আয়াত প্রমাণ করে যে, ইদ্দতের
প্রতি লক্ষ্য না রেখে তালাক দিলেও তালাক হয়ে যাবে। কেননা যদি তালাক না হয়, তাহলে
সে নিজের উপর জুলুমকারীও হবে না এবং স্ত্রীকে ফেরত নেয়ার পথও বন্ধ হবে না; যেদিকে
এ আয়াত ইশারা করছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ
তার জন্য পথ বের করে দিবেন”।
হাদিস থেকে দলীল:
হাদিস নং-০১
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر
إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت
مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى
تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা]
করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার
আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। তাখরিজ: সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩
হাদিস নং-০২
نا علي بن
محمد بن عبيد
الحافظ نا محمد
بن شاذان الجوهري
نا معلى بن
منصور نا شعيب
بن رزيق أن
عطاء الخراساني حدثهم
عن الحسن قال
نا عبد الله
بن عمر أنه
طلق امرأته تطليقة
وهي حائض ثم
أراد أن يتبعها
بتطليقتين أخراوين عند
القرئين فبلغ ذلك
رسول الله صلى
الله عليه و
سلم فقال : يا
بن عمر ما
هكذا أمرك الله
إنك قد أخطأت
السنة والسنة أن
تستقبل الطهر فيطلق
لكل قروء قال
فأمرني رسول الله
صلى الله عليه
و سلم فراجعتها
ثم قال إذا
هي طهرت فطلق
عند ذلك أو
أمسك فقلت يا
رسول الله رأيت
لو أني طلقتها
ثلاثا أكان يحل
لي أن أراجعها
قال لا كانت
تبين منك وتكون
معصية
অর্থ: হযরত হাসান রাঃ বলেন,হযরত ইবনে উমর রাঃ আমাদের কাছে
বর্ণনা করেছেন যে,তিনি আপন স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় এক তালাক দিয়েছিলেন, অতঃপর ইচ্ছা করলেন যে,
দুই তুহুরে [হায়য থেকে পবিত্র অবস্থায়] অবশিষ্ট দুই তালাক দিয়ে দিবেন।
হুজুর (ﷺ) এই বিষয়ে অবগত হওয়ার পর বলেন-ইবনে
ওমর! এভাবে আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাকে হুকুম দেননি। তুমি সুন্নাতের বিপরীত
কাজ করেছ [হায়য অবস্থায় তালাক দিয়েছ]।
তালাকের শরিয়ত সমর্থিত পদ্ধতি হল,‘তুহুর’ পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। প্রত্যেক ‘তুহুরে’ এক তালাক দেয়া। তার পর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ‘রুজু’ করার নির্দেশ দিলেন। এ জন্য আমি ‘রুজু’ করে নিয়েছি। অতঃপর তিনি বললেন,সে পবিত্র হওয়ার পর তোমার এখতিয়ার থাকবে। চাইলে তুমি
তালাকও দিতে পারবে,বা তাকে নিজের কাছে রাখতে পারবে।
হযরত ইবনে উমর রাঃ
বলেন-তারপর আমি রসূল (ﷺ)কে
জিজ্ঞাসা করলাম-ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি যদি তিন তালাক দেই তখনও কি ‘রুজু’ করার অধিকার থাকবে? হুজুর
(ﷺ) বলেন- না। তখন
স্ত্রী তোমার কাছ থেকে পৃথক হয়ে যাবে।
এবং তোমার এই কাজ (এক সাথে তিন তালাক দেয়া) গুনাহের কাজ সাব্যস্ত হবে। তাখরিজ: সুনানে দারা কুতনী-৮৪, যাদুল মাআদ-২/২৫৭, সুনানে বায়হাকী কুবরা-১৪৭৩২
হাদিস নং-০৩
হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, একব্যক্তি
তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিলো। অতঃপর ঐ মহিলা অন্যজনকে বিবাহ করলে সেও তাকে তালাক দিয়ে
দেয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর
কাছে জিজ্ঞাসা করা হলো, সেকি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়েছে? উত্তরে
তিনি বললেন, ‘না। যতোক্ষণ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্বামী প্রথমজনের মতো ঐ মহিলার
মধু আস্বাদন না করবে’, অর্থাৎ
যতোক্ষণ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে সহবাস না করবে, ততোক্ষণ
পর্যন্ত সে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না। (সহীহ বুখারী: ৫২৬১)
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার হাফেজ
ইবনে হাজার রহ. বলেন, এটা রিফা‘আ বিন
ওয়াহাবের ঘটনা- যে তার স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক দিয়েছিলো, এটাই
স্পষ্ট। রিফা‘আ আল কুরাযীর ঘটনা নয়, যে তার
স্ত্রীকে সর্বশেষ তালাক দিয়েছিলো। যে ব্যক্তি উক্ত দু’জনকে এক মনে করেছে,
সে ভুল
করেছে। ভুলের উৎস হলো, তালাকপ্রাপ্তা উভয় মহিলাকেই আব্দুর রহমান বিন জাবীর
রা. বিবাহ করেছিলেন। ফাতহুল বারী: ৯/৫৮১
হাদিস নং-০৪
হযরত উয়াইমির রা. লি‘আনের পর বলেন,
‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি আমার স্ত্রীকে রাখি তাহলে
তার উপর মিথ্যারোপ করেছি’। একথা বলে তিনি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দিলেন। বুখারী: ৫২৫৯
আল্লামা যাহেদ কাউসারী রহ. বলেন, কোনো
বর্ণনায় পাওয়া যায় না যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার এ কাজকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এখান থেকে উম্মত এটাই বুঝেছে যে, একসাথে
তিন তালাক দিলে তিন তালাকই হয়ে যায়,
যদি
উম্মতের এ বুঝ সহীহ না হতো তাহলে সঠিকটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অবশ্যই বলে দিতেন। সূত্র: তাকমিলায়ে ফাতহুল মলহীম: ১/১১২, ই’লাউস সুনান: ৭/৭০৬
হাদিস নং-০৫
মাহমূদ বিন লাবীদ রা. হতে বর্ণিত, একব্যক্তি
তার স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক দিলে রাসূল (ﷺ) রাগান্বিত হয়ে যান। তাখরিজ নাসাঈ-৩৪৩১
এখানে রাসূল (ﷺ)-এর রাগান্বিত হওয়াই তিন তালাক হয়ে যাওয়ার প্রমাণ। কেননা, একসাথে
তিন তালাক দেয়া গুনাহের কাজ। এ গুনাহের উপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নারাজ হয়েছিলেন।
আসার নং-০১
عن مجاهد قال كنت عند ابن عباس
فجاء رجل فقال إنه طلق امرأته ثلاثا. قال فسكت حتى ظننت أنه رادها إليه ثم قال ينطلق أحدكم فيركب الحموقة ثم يقول يا ابن عباس
يا ابن عباس وإن الله قال (وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ
لَهُ مَخْرَجًا)
وإنك لم تتق الله فلم أجد لك
مخرجا عصيت ربك وبانت منك امرأتك
অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহঃ.
বলেন,আমি ইবনে
আব্বাস রাঃ-এর পাশে ছিলাম। সে সময় এক ব্যক্তি এসে বলেন-‘সে
তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ চুপ করে রইলেন। আমি মনে মনে
ভাবছিলাম-হয়ত তিনি তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার কথা বলবেন (রুজু করার হুকুম দিবেন)।
কিছুক্ষণ পর ইবনে আব্বাস রা. বলেন,তোমাদের অনেকে নির্বোধের
মত কাজ কর;[তিন তালাক দিয়ে দাও!] তারপর ‘ইবনে আব্বাস! ইবনে আব্বাস! বলে চিৎকার করতে থাক। শুনে রাখ আল্লাহ তা‘য়ালা বাণী-“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘য়ালাকে ভয় করে আল্লাহ তা‘য়ালা তার জন্য পথকে খুলে
দেন। তুমিতো স্বীয় রবের নাফরমানী করেছো [তিন তালাক দিয়ে]। এ কারণে তোমার স্ত্রী
তোমার থেকে পৃথক হয়ে গেছে। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-২১৯৯,
সুনানে বায়হাকী কুবরা-১৪৭২০, সুনানে দারা
কুতনী-১৪৩
আসার নং-০২
عن مالك أنه بلغه أن رجلا قال
لعبد الله بن عباس إني طلقت امرأتي مائة تطليقة
فماذا ترى علي فقال له ابن عباس طلقت منك لثلاث وسبع وتسعون اتخذت بها آيات الله
هزوا
অর্থ: হযরত ইমাম মালেক রহঃ
এর কাছে এ বর্ণনা পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর কাছে জিজ্ঞাসা করল-“আমি আমার স্ত্রীকে একশত তালাক দিয়েছি,এ বিষয়ে আপনার
মন্তব্য কি? তখন ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তুমি যা দিয়েছ তা থেকে তিন
তালাক তোমার স্ত্রীর উপর পতিত হয়েছে,আর সাতানব্বই তালাকের
মাধ্যমে তুমি আল্লাহ তা‘য়ালার সাথে উপহাস করেছ। তাখরিজ:
মুয়াত্তা মালেক;১৯৯, হাদীস
নং-২০২১
আসার নং-০৩
عن مالك أنه بلغه أن رجلا جاء
إلى عبد الله بن مسعود فقال إني طلقت امرأتي ثماني تطليقات فقال ابن مسعود فماذا قيل لك قال
قيل لي إنها قد بانت مني فقال ابن مسعود صدقوا
অর্থ: হযরত ইমাম মালেক রহঃ
এর কাছে এ বর্ণনা পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ এর দরবারে উপস্থিত
হয়ে বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে আট তালাক দিয়েছি। হযরত ইবনে মাসউদ
রাঃ বলেন,লোকেরা তোমাকে কি বলেছে? সে
উত্তর দিল,তারা বলল ‘‘তোমার স্ত্রী ‘বায়ানা’ তালাক প্রাপ্ত হয়ে গেছে’’ তখন হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন,তারা সত্য বলেছে। অর্থাৎ তিন তালাক পতিত হয়েছে। তাখরিজ: মুয়াত্তা মালিক-২০২২
আসার-০৪
হযরত হাসান বিন আলী রা. তার স্ত্রী আয়িশা বিনতে ফযলকে
একসাথে তিন তালাক দিলেন। অতঃপর তার স্ত্রীর আবেগময় কথা শুনে কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, যদি
আমি নানাকে (অন্য বর্ণনায় তার পিতার বরাত দিয়ে বলেন) একথা বলতে না শুনতাম, “কোনোব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, তবে
ঐ স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ না বসা পর্যন্ত তার জন্য হালাল হবে না”-
তাহলে
অবশ্যই তাকে ফেরত নিতাম । সুনানে বাইহাকী-১৪৯৭১
আসার নং-০৫
ওয়াকে বিন সাহবান রা. বলেন যে, ইমরান
বিন হাসীন রা.কে একব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যে তার
স্ত্রীকে এক মাজলিসে তিন তালাক দিয়েছে। ইমরান রা. উত্তর দিলেন, সে তার
প্রতিপালকের নাফরমানি করেছে এবং তার জন্য তার স্ত্রী হারাম হয়ে গেছে। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১৮০৮৮
আসার নং-০৬
হযরত উমর রা.-এর কাছে এক ব্যক্তিকে
আনা হলো, যে তার স্ত্রীকে একহাজার তালাক দিয়েছে; আর সে
বলছে, এর দ্বারা আমি খেল-তামাশা করেছি। হযরত উমর রা. তাকে বেত্রাঘাত
করে বললেন, একহাজার থেকে তোমার জন্য তিনটিই যথেষ্ট হয়ে গেছে।
তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর
রাযযাক হা. নং ১১৩৪০, সুনানে বাইহাকী-১৪৯৫৭
ফকিহদের মতামত:
হাফেজ ইবনে রজব রহ. বলেন, ‘জেনে রাখো! কোনো সাহাবা, কোনো
তাবেঈ ও সালফে সালেহীনের মধ্যে যাদের কথা হালাল-হারাম ও ফাতাওয়ার ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য
হয়, তাদের কারো থেকে এ ধরনের সুস্পষ্ট কথা বর্ণিত হয়নি যে, স্বামী
তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার পর একসাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক ধরা হবে’। ই’লাউস সুনান: ৭/৭১০
প্রশ্ন: গ। একসাথে তিন তালাক দিলে,
তিন তালাকই পতিত হবে এ বিষয়ে ইজমা হয়েছে কি?
উত্তর: গ। হ্যাঁ, এ
বিষয়ে সাহাবি-আয়িম্মায়ে মুজতাহিদগণের ইজমা হয়েছে যে, একসাথে তিন তালাক দিলে, তিন তালাকই পতিত হবে। যেমন, হাফেজ ইবনুল হুমাম ফাতহুল ক্বদীরে, ইবনে
হাজার ফাতহুল বারীতে, ইমাম তহাবী শরহু মাআনিল আসারে, আবূ
বকর জাসসাস আহকামুল কুরআনে, আবূল ওয়ালীদ বাজী আল-মুনতাকাতে, ইবনুল
হাদী সিয়ারুল হাসসি ফী ইলমিত তালাকে,
আল্লামা
যুরকানী শরহে মুআত্তায়, ইবনুততীন শরহে বুখারীতে, ইবনে
হাযাম জহেরী মুহাল্লাতে, আল্লামা খত্তাবী শরহে সুনানে আবূ দাউদে, হাফেয
ইবনে আব্দুল বার তামহীদ ও ইস্তিযকারে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, হযরত
উমর রা.-এর যুগে একই মাজলিসে তিন তালাকে তিন তালাক হওয়ার উপর সাহাবায়ে কিরামের ইজমা
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন, ‘সাহাবীগণের ইজমা দলীল হওয়ার বিষয়ে আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামা‘আতের মধ্যে মতৈক্য কায়েম হয়েছে।’
ফতহুল
বারী: ১৩/২৬৬
প্রশ্ন: ঘ। এ বিষয়ে যে ইজমা প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে তা ইবনে তাইমিয়া কোন সমর্থন আছে কি?
উত্তর: ঘ। হ্যাঁ, তার
কথা দ্বারাই প্রমাণিত হয়যে, এই মাসয়ালা ইজমা প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে।
Ø
ইবনে তাইমিয়া রহ. (যিনি এক তালাক হওয়ার প্রবক্তা)
বলেন, একসাথে তিন তালাক দিলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে এবং তিন তালাকপ্রাপ্তা
হয়ে যাবে। এটা ইমাম মালেক, ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আহমাদের শেষ উক্তি এবং অধিকাংশ
সাহাবা ও তাবেঈ থেকে বর্ণিত। ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াহ: ১৭/৮
Ø
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. (তিনিও এক তালাকের প্রবক্তা)
বলেন, ‘এক সাথে
তিন তালাক দিয়ে দিলে তালাক হওয়ার ব্যাপারে চারটি মাযহাব আছে। (ক) তিন তালাকই হয়ে যাবে, এটা
চার ইমাম, অধিকাংশ তাবেঈ ও সাহাবার মাযহাব…।’ সূত্র: লাজনাতুত
দায়িমাহ-এর উদ্ধৃতিতে আহসানুল ফাতাওয়া: ৫/৩৬৬
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘মাশায়েখ ও ইমামগণের মধ্যে কোনো বিষয়ে ইজমা কায়েম
হলে তা অকাট্য দলীল হিসেবে বিবেচিত হবে’। সূত্র: উমদাতুল আসাস: পৃ. ৪২
প্রশ্ন: ঙ। বর্তমান সময়ে সৌদি আরবে ফুকাহা/উলামা/ইফতা বোর্ডের সিদ্ধান্ত কি?
উত্তর: ঙ। আহলে হাদিস ভাইয়েরা সৌদি
আলেমদের ফতওয়া নিজেদের দলিল হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে পেশ করে। বড় আফসোসের বিষয় হলো, সৌদি
আরবের সর্বোচ্চ বোর্ডের গবেষণালদ্ব ফতওয়া তারা মানেন না। ফাতওয়াটি নিম্নরূপ:
بعد الاطلاع على البحث المقدم من
الأمانة العامة لهيئة كبار العلماء والمعد من قبل اللجنة الدائمة للبحوث والإفتاء
في موضوع ( الطلاق الثلاث بلفظ واحد ) .
وبعد دراسة المسألة ، وتداول
الرأي ، واستعراض الأقوال التي قيلت فيها ، ومناقشة ما على كل قول من إيراد – توصل المجلس بأكثريته إلى اختيار القول بوقوع الطلاق
الثلاث بلفظ واحد ثلاثا ___الخ (مجلة البحوث الإسلامية، المجلة الأول، العدد الثالث،
سنة 1397 ه)
অর্থ: লাজনাতুত দায়িমা লিল
বুহুস ওয়াল ইফতা পরিষদ সৌদী আরব কর্তৃক নির্বাচিত ‘এক শব্দে তিন তালাক’ বিষয়ে গবেষণা কর্মে দায়িত্বরত শীর্ষ ওলামাদের সাধারণ পরিষদ
কর্তৃক প্রদত্ত গবেষণাপত্র ও এ বিষয়ে গভীর অধ্যয়ন,প্রতিটি উক্তির বাছ বিচার ও তার
পক্ষে-বিপক্ষে উপস্থাপিত সকল প্রশ্নের উত্তর উত্থাপিত হওয়ার পর অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামের
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিষদ এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে,এক
শব্দে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হবে। সূত্র: মাজাল্লাতুল
বুহুসিল ইসলামিয়্যা, প্রথম খন্ড, তৃতীয়
সংখ্যা, ১৩৯৭ হিজরী
প্রশ্ন: চ। আহলে হাদিসদের দলিল কি ও তার জবাব কি?
উত্তর: চ। তারা যে হাদিস দ্বারা দলিল দেয়,তাহলো
হাদিস নং-০১
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, হযরত
রুকানা রা. তার স্ত্রীকে এক মাজলিসে তিন তালাক দিলেন এবং পরে তিনি খুব মর্মাহত হলেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে
জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কীভাবে তালাক দিয়েছো? তিনি
বললেন, আমি তিন তালাক দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, এক মাজলিসে
দিয়েছো? তিনি বললেন,
হ্যাঁ।
নবীজি (ﷺ) বললেন, এটা
এক তালাক, যদি চাও তাহলে তাকে ফিরিয়ে নাও। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ: ২৩৯১
জবাব:
Ø এ ঘটনার
বর্ণনায় ভিন্নতা পাওয়া যায়। এখানে আছে যে,
তিনি
স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছেন। আর আবূ দাঊদ শরীফের বর্ণনায় আাছে যে, ‘বাত্তাহ’ শব্দ দ্বারা তালাক দিয়েছেন। এ দুই ধরনের বর্ণনার
কারণে ইমাম বুখারী রহ. এ হাদীসকে ‘মা‘লূল’ বলেছেন।
ইবনে আব্দুল বার রহ. এ হাদীসকে যঈফ বলেছেন। সূত্র: আত-তালখীসুল হাবীর: ১৬০৩
Ø ইমাম
জাসসাস ও ইবনে হুমাম রহ. মুসনাদে আহমাদের বর্ণনাকে ‘মুনকার’
বলেছেন।
সূত্র: তাকমিলাহ: ১/১১৫
Ø ইবনে
হাজার রহ. বলেন, ইমাম আবূ দাউদ রহ. ‘বাত্তাহ’ শব্দ
দ্বারা তালাক দেয়াকে রাজেহ বলেছেন। কোনো বর্ণনাকারী এটাকেই তিন তালাক বুঝে সেভাবে বর্ণনা
করেছেন। এ কারণে ইবনে আব্বাস (রা)-এর পরবর্তী হাদীস দ্বারাও দলীল দেয়া যাবে না।
সূত্র: ফাতহুল বারী:
৯/৪৫৪, তাকমিলাহ: ১/১১৫
হাদিস নং-০২
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যুগে, আবূ বকর রা.-এর যুগে ও খিলাফতে উমর রা.-এর প্রথম
দুই বছর (অন্য বর্ণনায় তিন বছর) তিন তালাক এক তালাক ছিলো। অতঃপর হযরত উমর রা. বলেন, লোকেরা
এমন বিষয়ে তাড়াহুড়া করছে, যে বিষয়ে তাদের অবকাশ ছিলো। হায়!
যদি আমি তাদের উপর তা কার্যকর করতাম। অতঃপর তিনি তা কার্যকর করলেন। সূত্র: মুসলিম: ৩৬৫৪
জবাব:
Ø হাফেজ আবূ যুরআহ রহ. বলেন, এ হাদীসের
অর্থ হলো, বর্তমানে লোকদের একসাথে তিন তালাক দেয়ার যে প্রচলন
দেখা যাচ্ছে তা রাসূল (ﷺ)-এর
যুগে, আবূ বকর রা.-এর যুগে ও খিলাফতে উমর রা.-এর প্রথম দুই বছরে ছিলো
না। তখন লোকেরা সুন্নাত তরীকায় তিন তুহুরে তিন তালাক দিতেন। সুনানে বাইহাকী: ১৪৯৮৪
Ø আর যদি হাদীসের অর্থ এই হয় যে, একসাথে
তিন তালাক দিলে বর্তমানে তিন তালাক ধরা হবে,
অথচ
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে, আবূ
বকর রা.-এর যুগে ও খিলাফতে উমর রা.-এর প্রথম দুই বছর তা এক তালাক ধরা হতো। তাহলে এর
উত্তর হলো: এ মাযহাবের দুটি হাদীস,
উভয়টি
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। অথচ তার ফাতাওয়া হলো, একসাথে
বা এক মাজলিসে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই হয়ে যায়। যা দলীল নং ২ ও ১০-এ উল্লেখ করা
হয়েছে। আর ইয়াহইয়া বিন মাঈন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কত্তান, আহমাদ
বিন হাম্বল ও আলী ইবনুল মাদীনীর মতো বড় বড় মুহাদ্দিসীনের মাযহাব হলো, যখন
কোনো রাবী তার হাদীসের বিপরীত আমল করেন বা ফাতাওয়া দেন, তখন
তার বর্ণিত হাদীসটি আমলযোগ্য থাকে না। সুতরাং ইবনে আব্বাস রা.-এর হাদীসদ্বয়ও আমলের
যোগ্য নয়; বিভিন্ন আপত্তির কারণে তা অগ্রহণযোগ্য। সূত্র: ই’লাউস সুনান : ৭/৭১৬
Ø এ হাদীস একটি বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন-
যদি কোনোব্যক্তি তার স্ত্রীকে বলতো,
তুমি
তালাক, তুমি তালাক,
তুমি
তালাক এবং বিচারকের সামনে দাবী করতো যে,
দ্বিতীয়
ও তৃতীয়বার বলে প্রথমটির তাকিদ করা আমার উদ্দেশ্য ছিলো; ভিন্ন
তালাক উদ্দেশ্য ছিলো না, তাহলে কাযী তার দাবি কবূল করতেন এবং তার কথাকে বিশ্বাস
করে এক তালাকের ফাতাওয়া দিতেন। কিন্তু হযরত উমর রা.-এর যুগে লোকজন বৃদ্ধির সাথে সাথে
মানুষের দীনদারী কমতে থাকে, তখন হযরত উমর রা. বিচার ব্যবস্থায় এ ধরনের দাবি
কবূল না করার আইন র্কাযকর করেন এবং ঐ শব্দ দ্বারা তার বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য নেন, তথা
তিন তালাক হওয়ার ফাতাওয়া কার্যকর করেন। সূত্র: তাকমিলাহ: ১/১১৪, ফাতহুল
বারী: ৯/৪৫৬
Ø যদি তাই না হতো এবং উমর রা.-এর এ সিদ্ধান্ত
শরী‘আতে মুহাম্মাদীর বিপরীত হতো, তাহলে
ইবনে আব্বাস রা.-সহ সকল সাহাবায়ে কিরাম কখনোই তা মেনে নিতেন না।
যেমন- উম্মে ওলাদকে বিক্রি করা, এক দিনারকে
দুই দিনারের মাধ্যমে বিক্রি করা, এবং হজ্জে তামাত্তু-এর মাসআলায়
হযরত ইবনে আব্বাস রা. স্পষ্ট-ভাষায় হযরত উমর রা.-এর বিরোধিতা করেছেন। সূত্র: আহসানুল ফাতাওয়া: ৫/৩৬৯
Ø যদি কেউ বলে যে, হযরত
উমর রা.-এর ভয়ে সাহাবীরা তার প্রতিবাদ করেনি (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক), তাহলে
সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে এরূপ ধারণা পুরা দীনকে ভিত্তিহীন করে দিবে, যা কোনো
অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য নয়। ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, কারো
জন্য এ ধারণা করা জায়েয নেই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কিরাম রাসূল (ﷺ)-এর শরী‘আত পরিপন্থী
কোনো বিষয়ের উপরে একমত হয়েছেন। (মাজমূ‘আতুল
ফাতাওয়া: ১৭/২২)
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত: ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওযিয়া রহ. বলেন, ‘রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত ও সাহাবীগণের আমলের পর আর কারো কথা মেনে নেয়া হবে না।’ সূত্র: এগাসাতুল লাহফান: পৃ. ১৯২
Ø চার
ইমামের মাযহাবের বিপরীত যা আছে, তা ইজমায়ে উম্মতের পরিপন্থী, যদিও
তাতে অন্যদের দ্বিমত থাকে। সূত্র: আল-আশবাহ ওয়ান নাযায়ের : পৃ.১৬৯
উপরোক্ত পর্যালোচনা দ্বারা প্রমাণ
হয়ে গেলো যে, এক মাজলিসে বা একসাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই
হবে; এক তালাক নয়।
সারকথা: হজরতে সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ীগণ, মুজতাহিদ ৪ ইমামগণ ও জমহুর ফোকাহা-ওলামা, এবং সৌদি সরকার মক্কা-মদীনাসহ সে দেশের
বড় বড় উলামাদের নিয়ে গঠিত কমিটিকে এ মাসআলার তাহকীক পেশ করার নির্দেশ দেয়। তারা দীর্ঘ
আলোচনা-পর্যালোচনার পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, একসাথে
বা এক মাজলিসে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হবে। এ বিষয়ে পূর্ণ ইসলামের ইতিহাসে
কোন গ্রহণযোগ্য আলেম দ্বিমত পোষণ করেননি। কেবল মাত্র আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা রহঃ ও
তার শিষ্য আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম রহঃ ব্যতিত। কিন্তু সকল উম্মতের বিপরীত এই দুই জনের
বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তথ্যসহযোগিতায়, আওয়ার ইসলাম২৪.কম, আহলে হক মিডিয়া
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
ইসলামে
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশনা ও এর ভাষা/পদ্ধতি কি
হওয়া উচিত? |
জিজ্ঞাসা-২৩৪ আসসালামু আলাইকুম। ইসলামে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশনা ও এর ভাষা/পদ্ধতি কি হওয়া উচিত? অনেকে শুকরান,শুকরিয়া ধন্যবাদ, Thank ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে
কৃতজ্ঞতা আদায় করে, কেহ কেহ আবার শুধু জাযাকাল্লাহ বলে। আমার প্রশ্ন হলো এ শব্দগুলো দ্বারা পূর্ণ
কৃতজ্ঞতা আদায় হবে,? দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম। তারিখ-২৩/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি ইব্রাহীম
২৪ফিল্ড আর্টিলারি, খোলাহাটি সেনানিবাস- এর প্রশ্নের আলোকে।)
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ও বারাকাতুহ। শুরুতে আপনাকে
জাযাকাল্লাহ খয়র। কেননা আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সওয়াল করেছেন। আমরা প্রতিটি
মুহূর্তে আল্লাহর নেয়ামতরাজি ভোগ করছি ও প্রতিনিয়িত কোনো না কোনো মানুষের দ্বারা
উপকৃত/সাহায্যপ্রাপ্ত হচ্ছি। যাই হোক উভয় ক্ষেত্রে আমাদের
কৃতজ্ঞতা আদায় করার ইসলামে নির্দেশ দিয়েছে। আর এটা ইসলামের সুমহান শিক্ষা। আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েকভাবে ভাগ
করছি। ونسأل
الله التوفيق وهو
الموفق والمعين
প্রশ্ন: ক। ইসলামে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের
নির্দেশনা কি?
উত্তর: ক। এ সম্পর্কে ইসলামে নির্দেশনা রয়েছে। যেমন,
পবিত্র কুরআনের বাণী -
لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ
كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذابِيْ لَشَدِيْدٌ.
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে আমি অবশ্যই
তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অস্বীকার কর তাহলে আমার আজাব অবশ্যই কঠিন। -সূরা ইবরাহীম- ৭
وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
আর তুমি তোমার প্রভুর নিআমতের কথা বলো। -সূরা দুহা -১১
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ
أُمُّهُ وَهْنًا عَلَىٰ وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي
وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ
আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের
জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ
ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ
হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। সূরা লুকমান-১৪
পবিত্র হাদিসের বাণী-
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم
قال: «مَنْ لمْ يشْكُر النَّاسَ لَمْ
يشْكُر الله» (رواه الترمذي
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা (রা.) নবি (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতাও আদায় করে না।
তাখরিজ: জামে তিরমিজি-৪৮১১
‘মুআয! আমি তোমাকে বলছি, কখনোই নামাযের পরে এ দুআটি পড়তে ভুল করো না-
اللّهُمَّ أَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ
وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ .
হে আল্লাহ! আপনার জিকির, আপনার কৃতজ্ঞতা ও শোকর
আদায় এবং সুন্দর করে আপনার ইবাদত করতে আপনি আমাকে সাহায্য করুন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২১১৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫২৪
প্রশ্ন: খ। আল্লাহর তাআলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পদ্ধতি ও
ভাষা কি?
প্রশ্ন: খ। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের প্রথম স্তর হলো, তার
আদেশগুলো মান্য করা এবং তার নিষেধগুলো থেকে বিরত থাকা। فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ
وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ
সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং
আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। সূরা বাকারা-১৫২
ব্যাখ্যা:
উক্ত আয়াতে কারিমায় বলা হয়েছে যে, বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করলে, আল্লাহ তাআলাও স্মরণ করবে। এখন প্রশ্ন হলো, বান্দা যখন
আল্লাহ আল্লাহ বলবে, আল্লাহ তাআলা কি তখন বান্দা বান্দা বললে। এর সমাধান, তথা বান্দাকে স্মরণ
করার কায়ফিয়াত সম্পর্কে হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদে
মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানভি রহ বলেন,
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ
اي تذكروني بالطاعة
اذكركم بالانعام অর্থাৎ তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আনুগত্যের মাধ্যমে। আরআমি তোমাদেরকে
স্মরণ করবো নিআমতরাজির/অনুগ্রহের মাধ্যমে।
সূত্র: তাফসিরে বায়ানুল কুরআন অবলম্বনে
আর আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের দ্বিতীয় স্তর হলো, মৌখিকভাবে আদায় করা। যেমন-
وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
আর তুমি তোমার প্রভুর নিআমতের কথা বলো। -সূরা দুহা -১১
আর মৌখিকভাবে কৃতজ্ঞতা বা শুকরিয়া জানানোর
সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো প্রতিটি ক্ষেত্রে রসূল (ﷺ) এর
শিখানো মাসনুন দুআগুলো পাঠ করা। যেমন-
Ø ঘুম
থেকে উঠে দুআ-
اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا
أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ.
অর্থাৎ সকল প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে মৃত্যু
দেয়ার পর আবার জীবন দান করলেন আর তাঁর কাছেই তো আমাদের একত্রিত করা হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩১১২
Ø খাবার খাওয়ার পর দুআ-
اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا،
وَجَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ.
অর্থাৎ সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ তাআলার, যিনি আমাদের পানাহার
করিয়েছেন এবং আমাদেরকে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৫৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৫০
الطَّاعِمُ الشَّاكِرُ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ الصَّائِمِ الصَّابِرِ অর্থ:
খেয়ে যে আল্লাহর শোকর আদায় করে সে ধৈর্যশীল রোযাদার ব্যক্তির সমান
পুরস্কার লাভ করবে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৬৫
Ø প্রস্রাব-পায়খানা সেরে বেরিয়ে আসে, তখনো আমাদের শেখানো হয়েছে
কৃতজ্ঞতার দুআ-
غُفْرَانَكَ. اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ أَذْهَبَ عَنِّيْ الْأَذٰى وَعَافَانِيْ.
অর্থাৎ তোমার কাছেই ক্ষমা চাই হে প্রভু! সকল প্রশংসা
সেই আল্লাহর যিনি আমার কষ্টকর বস্তুগুলো সরিয়ে দিয়েছেন এবং আমাকে নিরাপদ রেখেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩০১; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, ইবনুস সুন্নী, হাদীস ২২
প্রশ্ন: গ। মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা কি?
উত্তর: গ। কিভাবে মানুষের উপকারে প্রতিদান দিতে হবে,তা আমাদের নবি (ﷺ) সুন্দরভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন-
হাদিস নং-০১
أسامة بن زيد عن النبي صلى الله
عليه و سلم أنه قال من صنع إليه معروف فقال لفاعله جزاك الله خيرا فقد أبلغ في
الثناء رواه الترمذي والنسائي وابن حبان في صحيحه অর্থ:
হযরত উসামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ বলেন, তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার
আচরণ করে তখন যদি তুমি তাকে জাযাকাল্লাহ খাইরান (আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন)
বল তাহলেই তুমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করলে। তাখরিজ: জামে তিরমিযী-২০৩৫; সহীহ ইবনে হিববান-৩৪১৩
হাদিস নং--০২
مَنْ أَتَى إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِئُوهُ، فَإِنْ
لَمْ تَجِدُوا فَادْعُوا لَهُ، حَتَّى يَعْلَمَ أَنْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ.
তোমাদের প্রতি যে ব্যক্তি কোনো ভালো আচরণ করে তোমরা তার প্রতিদান দাও। যদি দেয়ার মতো কিছু না পাও তাহলে তার জন্যে দুআ করো, যাতে সে বুঝতে পরে- তোমরা তার প্রতিদান দিয়েছ। -আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ২১৬
হাদিস নং--০৩
مَنْ أُعْطِيَ عَطَاءً فَوَجَدَ فَلْيَجْزِ بِهِ،
وَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَلْيُثْنِ، فَإِنّ مَنْ أَثْنَى فَقَدْ شَكَرَ، وَمَنْ كَتَمَ
فَقَدْ كَفَرَ.
কাউকে যখন উপহারস্বরূপ কিছু দেয়া হয়, তখন সে যদি এর পরিবর্তে দেয়ার মতো কিছু পায় তাহলে যেন তা দিয়ে দেয়। আর যে এমন কিছু না পাবে সে যেন তার প্রশংসা করে। কেননা যে প্রশংসা করল সেও কৃতজ্ঞতা আদায় করল। আর যে লুকিয়ে রাখল সে অস্বীকার করল। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২০৩৪
প্রশ্ন: ঘ। অনেকে শুকরান,শুকরিয়া
ধন্যবাদ, Thank ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা আদায় করে।
আমার প্রশ্ন হলো এ শব্দগুলো দ্বারা পূর্ণ কৃতজ্ঞতা আদায় হবে?
উত্তর: ঘ।
শুকরান,শুকরিয়া ধন্যবাদ, Thank ইত্যাদি
শব্দগুলো দ্বারা পূর্ণ কৃতজ্ঞতা আদায় হবে না। দলিল হিসেবে উপরোক্ত ১,২ ও ৩ নং হাদিস পেশ করা যায়।
অর্থাৎ কৃতজ্ঞতার সর্বনিম্ন স্তর হলো উক্ত ব্যক্তি জন্য দুআ/প্রশংসা করা।
جزاك الله خيرا জাযাকাল্লাহু খায়রান অর্থ আল্লাহ তাআলা আপনাকে
উত্তম বিনিময় দান করুন। শুকরানও আরবী শব্দ। এর অর্থ তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
ধন্যবাদ বাংলা শব্দ। এটি প্রশংসাবাদ, সাধুবাদ বা কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপক উক্তি। আর
থ্যাংক ইউ ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ তোমাকে ধন্যবাদ, তোমার
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এ শব্দগুলোর মধ্যে কোনটা আরবী, বাংলা বা ইংরেজি-এদিকে না
তাকিয়ে শুধু এগুলোর অর্থের দিকে লক্ষ্য করলে দেখব, জাযাকাল্লাহু
খায়রান বাক্যটি সবচেয়ে সারগর্ভ। কারণ এতে শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ নয়, উপকারীর জন্য কল্যাণের দুআও/কামনা আছে।
আর যদি কেউ আরও বাড়িয়ে বলে, جزاك الله خيرا في الدارين জাযাকাল্লাহু খায়রান ফিদ দারাইন (আল্লাহ
দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাকে সর্বোত্তম বিনিময় দান করুন) তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
প্রশ্ন: ঙ।
কেহ কেহ আবার শুধু জাযাকাল্লাহ বলে।
উত্তর: ঙ।
হ্যাঁ, ঠিকই কোনো কোনো ভাই শুধু জাযাকাল্লাহ বলে। এ শব্দ
দ্বারা পূর্ণ কৃতজ্ঞতা আদায় হয় না, বরং জাযাকাল্লাহু সাথে
খয়রান শব্দও বলতে হবে? দেখুন হাদিসের ভাষা হলো,
أسامة بن زيد
عن النبي صلى
الله عليه و
سلم أنه قال
من صنع إليه
معروف فقال لفاعله
جزاك الله خيرا فقد أبلغ
في الثناء رواه
الترمذي والنسائي وابن
حبان في صحيحه অর্থ: হযরত উসামা রা. থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ বলেন, তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার
আচরণ করে তখন যদি তুমি তাকে জাযাকাল্লাহ খাইরান (আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) বল তাহলেই
তুমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করলে। তাখরিজ: জামে তিরমিযী-২০৩৫; সহীহ ইবনে হিববান-৩৪১৩
সারকথা: মুসলিম/আলেম
হিসেবে দুআর ভাষা ধন্যবাদ, শুকরান, Thank ইত্যাদির পরিবর্তে প্রিয় নবির (ﷺ) মুখসৃত
বাণী “জাযাকাল্লাহু খয়রান” বলাই উচিত। ( তবে যারা আরবি/দ্বীনি বুঝে না,
তাদের জন্য দুটাই অর্থাৎ জাযাকাল্লাহু খয়রান + ধন্যবাদ উল্লেখ করাই শ্রেয়।)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
আপন বোনের দুধ পান
প্রসঙ্গে |
জিজ্ঞাসা-২৩৫: অভিজ্ঞ মহলের কাছে বিনীত ভাবে জানতে
চাই, সদ্যপ্রসূত সন্তান যার মা মারা গেছে, সেই সন্তান তার আপন বড় বোনের দুধ পান করতে পারবে
কিনা? তারিখ-২৫/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত শায়েখ, আরটি রফিক, জাহাঙ্গীরাবাদ বগুড়া-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ
তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: শিশুকে দুধপান করানো শিশুর
অধিকার। মায়ের উপর ওয়াজিব। তাফসিরে মারেফুল কোরআন (বাংলা), ১৩০,
আল মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন : ২/২২৮
শিশুর দুধ পানের ক্ষেত্রে মাহরাম বা গয়রে মাহরাম কোন বিধি-নিষিধ নেই।
তবে শিশুর দুধপান বিষয়ে কাফের-মুশরিক- চরিত্রহীনা
মহিলার পান করানো যাবে না। কেননা এটা শিশুর প্রতি প্রতিক্রিয়া কাজ করবে।
‘তোমাদের সন্তানদের দেহপসারিণী
(ব্যভিচারী নারী) ও পাগল মহিলার দুধ পান করানো থেকে দূরে রাখ। তাখরিজ: বুখারি : ২/৮৯১৬
চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে জানা
যায় যে, দেহপসারিণীর
(ব্যভিচারী নারীর) দুধ পানে ‘হেপাটাইটিস বি’ ও ‘এইডস’-এর মতো ভয়াবহ ভাইরাসে
আক্রান্ত হতে পারে শিশু।
তাছাড়া মায়ের মারাত্মক ব্যাধি হলে যা শিশুর
মধ্যে সংক্রমক হওয়ার আশংকা হলে, তখন মায়ের দুধ পান
করানো যাবে না।
هل يجوز للمرأة أن ترضع أخاها؟
ج3: يجوز للمرأة أن ترضع أخاها
الصغير إذا احتاج إلى ذلك، ويكون ابنا لها من الرضاعة إذا أرضعته ع أخاها؟
من الفتوى رقم (19329)
অর্থাৎ আপনার প্রশ্নে বর্ণিত
ছুরতে শিশুটি তার আপন বোনের দুধপান করতে কোন সমস্যা নেই। সূত্র: ফাতওয়ায়ে ইবনে বায-ফাতওয়া নং-১৯৩২৯, “প্রচলিত ভুল” মাসিক আল-কাউসার-জানুয়ারি-২০১০
সংখ্যা
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
ছবি তোলা সম্পর্কে ইসলামের
বিধান কি |
জিজ্ঞাসা-২৩৬: ইসলামে ছবির বিধান কি? ক্যামেরা/মোবাইলে ছবি তোলা কি জায়েজ? ফেসবুক,
মেসেঞ্জার, হোয়াটসএ্যাপ ইত্যাদিতে চ্যাটিং-এর
সময় বিভিন্ন ধরণের emoji ব্যবহারের বিধান দালিলিক বিশ্লেষণ
করলে উপকৃত হতাম। তারিখ-২৬/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি মো: আবুল কালাম আজাদ ৫৫ এমপি যশোর সেনানিবাস-এর প্রশ্নের
আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান
করুন।)
জবাব:
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
আলহামদুল্লিাহ ইসলামে ছবির
বিধান সম্পর্কে আল-বুরহানে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসা-১২৬ শিরোনামে আলোচনা করা
হয়েছে। বাকি ক্যামেরা/মোবাইলে
ছবি তোলা, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে
ইমোজি ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা ইচ্ছা রাখি। আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বোধগম্যের জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি।
ونسأل الله التوفيق
وهو الموفق والمعين
ছবি হারাম হওয়ার রহস্য: বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেমে
দ্বীন জামেআ হাকিমুল উম্মাহর
প্রতিষ্ঠাতা
শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন সাহেব দা.বা. বলেন, মহান আল্লাহ বান্দার ইজ্জত-সম্মান রক্ষার জন্য ছবি/ভিডিও
হারাম করেছেন। যেমন, কোন বান্দা এক সময় গুনাহে
লিপ্ত ছিল বা তার অরুচিকর ছবি/ভিডিও ওঠানো হলো। কিন্তু এক সময় সে তওবা করল।
কিন্তু সমাজে/নেটে ছড়িয়ে পড়া অশ্লীল ছবি/ভিডিও সে আর ডিলিট করা ক্ষমতা রাখে না।
তখন সে লজ্জিত হবে। তাই বান্দা যেন লজ্জিত হতে না হয়, এজন্য দয়াময় আল্লাহ ছবি তোলা হারাম করেছেন।
দেহবিশিষ্ট ভাস্কর্য নির্মাণ
করা চার ইমামের মতে সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। আর দেহবিশিষ্ট ভাস্কর্য না হয়ে যদি তা
প্রতিকৃতি আকারে হয়, তাহলে তিন ইমামের এক অভিমত অনুযায়ী তা হারাম। অবশ্য অধিকাংশ মালিকী আলেমের
গ্রহনযোগ্য ও উওম অভিমত হল যে, এ জাতীয় প্রতিকৃতিও
মাকরূহ। এ প্রসঙ্গে আল্লামা খারেসী ( রহ.) লেখেন:,
« قال في التوضيح: التمثال اذا كان لغير حيوان ، كالشجر : جائز، وان كان لحيوان فما له ظل ويقيم ، فهو حرام
باجماع ، وكذا ان لم يقم ، كاعجين خلافا للصبغ . . . وما لا ظل له إن كان غير ممتهن فهو مكروه، وان كان ممتهنا فتركه اولي »
'আল্লামা খারাসী ( রহ.) ' তাওযীহ' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন : যদি অপ্রাণীর ছবি হয়, যেমন
বৃক্ষ, তাহলে তা জায়েয আছে। যদি প্রাণীর প্রতিকৃতি হয়,
আর তা যদি দেহবিশিষ্ট ছায়াযুক্ত এবং স্থায়ী হয়, তাহলে তা সর্বসম্মতভাবেই হারাম। আর তা যদি স্থায়ী পদার্থ দ্বারা প্রস্তুত
না করা হয়।,যেমন আটার খামিরা দ্বারা, তাহলে তাও হারাম। এক্কেএে আসবাগ ( রহ.) ভিন্নমত পোষন করেছেন। আর যদি সেটা
ছায়াহীন কোনো প্রতিকৃতি হয়, তাহলে সেটি যদি কোনো নিকৃষ্ট
স্থানে না থাকে, তবে তা মাকরূহ। হ্যা যদি সেটি কোনো
নিকৃষ্ট স্থানে থাকে, তাহলে সেটিও পরিহার করা উওম। ' সূত্র: খারাসী আলা মুখতাসিরিল খালীল : খণ্ড -- ৩,
পৃষ্ঠা -- ৩০৩
প্রশ্ন: ক। ক্যামেরা/মোবাইলে ছবি তোলা কি জায়েজ?
উত্তর:
ক। ক্যামেরার ছবি বা
ফটোগ্রাফির বিধান
ক্যামেরার ছবি যাকে আজকাল ফটোগ্রাফিও বলা হয়ে থাকে। এ জাতীয় ছবির
বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী? এ জাতীয় ছবিও কি ওই একই হুকুম, যা হাতে অংকিত উল্লেখ করা হয়েছে, না এর ভিন্ন কোনো
হুকুম রয়েছে? এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
প্রথম মত:
মিসরের প্রখ্যাত মুফতী শায়খ আল্লামা মুহাম্মদ বুখাইত ( রহ.)
الجواب الشافي في اباحة التصوير
الفوتوغرافي
নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেছেন। ওই পুস্তিকায় তিনি একথা উল্লেখ
করেছেন : 'ক্যামেরার ছবি তথা ফটোগ্রাফি মূলত :ছায়া সংরক্ষনের
একটি বিশেষ পদ্ধতি। এই শিল্পের বিশেষজ্ঞারা বিশেষ পদ্ধতিতে এই ছায়া সংরক্ষনের
পন্থা উদ্ভাবন করেছেন। এটি ওই ছবির পর্যায়ভুক্ত নয়, যে ছবির
বিষয়ে শরীয়তে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। কেননা নিষেধাজ্ঞা ওই ছবির ক্ষেএে, যে ছবির অস্তিত্ব বা আবিস্কার ইতিপূর্বে ছিল না। আর ওই ছবিটি এমন প্রাণীর
সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে, যাকে আল্লাহ তাআলা সৃজন কারেছেন।
অথচ এই বিষয়টি ফটোগ্রাফিতে অনুপস্থিত।
দ্বিতীয় মত:
কিন্তু আরববিশ্বের অসংখ্য আলেম এবং হিদুস্তানের সব আলেম কিংবা এদের
বড় অংশটিই এই ফতোয়া দিয়েছেন যে, ফটোগ্রাফি এবং হাতে অংকিত
ছবির হুকুমে কোনো পার্থক্য নেই। আরববিশ্বের সমকালীন কোনো কোনো আলেমের উদ্বৃতি থেকে
এই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।
(১) শায়খ মোস্তাফা আল-হাম্মামী (রহ.)তাঁর
কিতাব
النهضة الاصلاحية
তে উল্লেখ করেছেন :
« واني احب ان
تجزم الجزم كله ان التنصوير بآلة التصوير (الفوتوغرافية)
كالتصوير باليد تماما، فيحرم علي
المؤمن تسليطها للتصوير، ويحرم عليه تمكين مسلطها لالتقاط صورته بها ؛ لانه بهذا
التمكين يعين علي فعل محرم غليظ ، وليس من الصواب في شيء ما ذهب اليه احد علماء
عصرنا هذا من استباحة التصوير بتلك الآلة بحجة ان التصوير ما كان باليد ، والتصوير
بهذه الآلة لا دخل لليد فيه فلا يكون حراما وهذا عندي اشبه بمن يرسل اسدا مفترسا
فيقتل من يقتل ، اويفتح ييارا كهربائيا يعدم كل من مر به ، او يضع سما في طعام
فيهلك كل من تناول من ذلك الطعام ، فاذا وجَّه اليه اتهام بالقتل قال: انا لم اقتل ، انما قتل السم والكهرباء والاسد. . . »
আমি এই বিষয়টি পছন্দ করি যে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত
থাকা উচিত যে,ক্যামেরার মাধ্যমে তোলা ছবি, একেবারে হতে অংকিন করা ছবির মত। সুতরাং ছবি তোলার জন্য কোনো মুমিনের এটি
ব্যবহার করা সম্পুর্ণরূপে হারাম। একইভাবে অন্য কাউকে নিজের ছবি তোলার সুযোগ করে
দেয়াটাও হারাম। কেননা ছবি তোলার সুযোগ করে দেয়াটাও একটি চূড়ান্ত পর্যায়ের হারাম
কাজে সহযোগিতার অন্তভুর্ক্ত । এ সময়কার কোনো একজন আলেম ক্যামেরার মাধ্যমে তোলা ছবি
জায়েয হওয়ার স্বপক্ষে দলীল হিসেবে যে কথা বলেছেন যে,ছবি
তাকেই বলা হবে, যেটি হাতে অংকন করা হবে। আর যে ছবি যন্ত্রের
সাহায্যে তোলা হয় তাতে হাতের কোনো দখলদারিত্ব থাকে না। সুতরাং এ জাতীয় ছবি হারাম
নয়। ' ওই আলেমের এহেন দাবী কোনোভাবেই সঠিক ও গ্রহনযোগ্য নয়।
আমার কাছে তার এই খোরা যুক্তির উপমা এমন মনে হয় যে, কোনো
ব্যক্তি ক্ষুধার্ত বাঘ ছেড়ে দিল,বাঘ ছাড়া পেয়ে কারো উপর
আক্রমন করে ফেলল, কিংবা কোনো ব্যক্তি সংযোগসহ বিদ্যুতের তার
চলাচলের পথে ফেলে রাখল, সেই তারে স্পর্শে কেউ মারা গেল,
কিংবা কোনো ব্যক্তি খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দিল, সেই খাবার খেয়ে কেউ মারা গেল। এরপর যখন ওই হত্যায় তাকে অভিযুক্ত করা হল,
তখন সে বলল, আমি তো হত্যা করি নি ; বরং তাকে তো হত্যা করেছে বিষ, বিদ্যুৎ এবং বাঘে। সূত্র:
আন--নুহদাতুল ইসলামিয়্যাহ
:পৃষ্ঠা -- ২৬৪--২৬৫
(২) শায়খ মোহাম্মদ আলী আসসাবুনী ( রহ.) তাঁর
حكم الاسلام في التصوير
এবং
تفسير آيات الاحكام
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,
:
« إن التصوير الشمسي لا يخرج عن
كونه نوعا من انواع التصوير .و فما يخرج بالآلة يسمي صورة والشخص مصورا، فهو وان كان لا يشمله
النص الصريح لانه ليس تصويرا باليد ، وليس فيه مضاهاة لخلق الله ، الا انه لا يخرج
عن كونه ضربا من ضروب التصوير ، فينبغي ان يقتصر في الاباحة علي حذد الضرورة ».
ফটোগ্রাফিও ছবির প্রকারসমূহের মধ্যে এক প্রকারের অন্তর্ভূক্ত। এই
কারণেই তো যন্ত্রের ( ক্যামেরার) মাধ্যমে যে ছবি ওঠানো হয়, তাকেই
ছবি-ই বলা হয় এবং যিনি তোলেন তাকে ' ফটোগ্রাফার বলা হয়।
সুতরাং এটি যদিও
نص صريح
(শরীয়তের বিধানে সুনিদির্ষ্টভাবে উল্লেখপূর্বক)-এর দ্বারা ছবি
হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় না, কেননা এটি হাত দ্বারা অংকিত ছবি
নয়, আর এতে আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্যতাপূর্ন হওয়ার বিষয়টিও
অনুপস্থিত থাকে। এতদসও্বে এটিকেও ছবির এক প্রকার হওয়া থেকে বাদ দেয়ার অবকাশ নেই।
সুতরাং নিজস্ব প্রয়োজনের ক্ষেএেই এটিকে বৈধতা সীমারেখায় নেয়া উচিত।
(৩) শায়খ ডাক্তার মুহাম্মদ সাঈদ রমযান
আলবতী ( রহ.) তাঁর
فقه السيرة
'ফেকহুস সীরাত 'গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন :
« والحق انه لا ينبغي تكلف اي فرق
بين انواع التصوير المختلفة حيطة في الامر ، ونظرا ل اطلاق لفظ الحديث . هذا يتعلق بالتصوير . اما الاتخاذ ، فلا فرق بين الفوتوغرافي وغيره».
সঠিক কথা হল যে, হাদীসের সাধারণ ভাষ্যের প্রতি
দৃষ্টিপাত করে এবং হুকুমকে ব্যাপকতর করার লক্ষ্যে ছবির বিভিন্ন প্রকারে পার্থক্য
নির্ণয়ের অপচেষ্টা করা অনুচিত। শরীয়তের এই হুকুম তো সব ছবির ক্ষেএেই । আর ছবি চিএণের বিষয়টি হতে পারে সেটি
ক্যামেরাবন্দী ছবি আবার হতে পারে সেটি হাতে অংকিত ছবি। এতে পার্থক্য সৃষ্টির কার
কোনো হেতু নেই। সূত্র: ফিকহুস সীরাত : পৃষ্ঠায়-৩৮০
প্রকৃত সত্য হল, চিএণ এবং অংকনের
মাধ্যমে নির্মিত ছবি এবং ক্যামেরাবন্দী ছবি এ দু'য়ের মাঝে যে
পার্থক্য রয়েছে, মূলত : এর মজবুত কোনো ভিওি নেই। শরীয়তের
নীতি হল এই যে, যে জিনিস মৌলিকভাবে হারাম এবং শরীয়ত অসমর্থিত,
যন্ত্র পরিবর্তনের কারণে তার হুকুমে পরিবর্তন হয় না। যেমন শরাব
হারাম, হতে পারে এটি প্রস্তত করা হয়েছে, আবার এমনও হতে পারে যে, এটি আধুনিক মেশিনারীর
সাহায্য প্রস্তুত করা হয়েছে। অথবা হত্যা করা হারাম, হতে পারে
হত্যা কার্যক্রম সংঘটিত হয়ে চাকু-ছূরির সাহায্যে, আবার হতে
পারে তা বন্দুকের গুলির সাহায্যে। ছবির বিষয়টি ঠিক এমন-ই। শরীয়ত ছবি বানানো
এবং সংরক্ষন নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে। সুতরাং ছবির নির্মাতা এই ছবি তুলির সাহায্যে
প্রস্তত করেছে, না ক্যামেরাবন্দি করে করেছে, তাতে হুকুমের ক্ষেএে কোনো ফরাক হবে না।
والله سبحانه وتعال اعلم
ভারত উপমহাদেশের আলেমদের অভিমত:
(১) বিশ্ববরণ্য
আলেম দ্বীন বিচারপতি তাকি উসমানি দা.বা. বলেন,
فى تفسير آيات الأحكام-فإطلاق الإباحة في التصوير الفوتوغرافي ، وأنه ليس
بتصوير وإنما هو حبس للظلّ ، مما لا ينبغي أن يقال ، بل يقتصر فيه على حد الضرورة
، (تفسير آيات الأحكام-2/300
সুতরাং ফটোগ্রাফী ছবিকে মুতলাক
জায়েজ বলা এই হিসেবে যে, তা মূলত ছবি না, বরং তা ছায়াকে আটকে ফেলা, এরূপ বলা উচিত নয়, বরং তার বৈধতা প্রয়োজন পর্যন্ত
সীমিত থাকবে। সূত্র: তাফসীরু আয়াতিল আহকাম-২/৩০০
(২) বাংলাদেশের
প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মুফতি মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. বলেন, ছবি তোলা ও সংরক্ষণ করা বা প্রদর্শন করা
সম্পূর্ণ হারাম, আর ক্যামেরায় ছবি যাকে আজকাল ফটোগ্রাফিও বলা
হয়। এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের ফাতাওয়া এই যে, যন্ত্রের
পরিবর্তনের কারণে ফটোগ্রাফি এবং হাতে অংকিত ছবির হুকুমে কোন পার্থক্য ধরা হবেনা।
বরং ক্যামেরার ছবি, ফটোগ্রাফিও
প্রকৃত ছবির প্রকারসমূহের মধ্যে এক প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং হাতের দ্বারা ছবি
অংকনের ন্যায় সম্পূর্ণ হারাম হবে। সূত্র: তাসবীর কী শরয়ী
আহকাম পৃ.৬০, তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম খ.৪ পৃ.১৬৩
প্রশ্ন: খ। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসএ্যাপ ইত্যাদিতে চ্যাটিং-এর সময়
বিভিন্ন ধরণের emoji ব্যবহারের বিধান দালিলিক বিশ্লেষণ করলে উপকৃত
হতাম।
উত্তর: খ। ইমোজি শব্দটির উৎপত্তি
জাপানী শব্দ ইমোডজি থেকে, যার অর্থ স্মাইলি অর্থাৎ হাসিমুখ। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসএ্যাপ
ইত্যাদিতে চ্যাটিং-এর সময় বিভিন্ন ধরণের emoji ব্যবহারের
বিধান হলো, যদি emoji এর পূর্ণ অবয়ব
তথা emoji তে ব্যবহৃত প্রাণীর মাথা,মুখ,চোখ,নাক,কান ইত্যাদি
স্পষ্টভাবে বুঝা যায়,তাহলে সেগুলোকে ব্যবহার করা যাবে না। কেননা
এগুলো হাদীসে বর্ণিত নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি.
থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ
বলেছেন,
كُلُّ مُصَوِّرٍ فِي النَّارِ
يُجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسٌ فَيُعَذِِّبُهُ فِي جَهَنَّمَ
প্রত্যেক ছবিনির্মাতা
জাহান্নামে যাবে, তার নির্মিত প্রতিটি ছবি পরিবর্তে একটি করে প্রাণ সৃষ্টি করা হবে, যা তাকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে। (বুখারী ২২২৫, ৫৯৬৩, মুসলিম ৫৬৬২)
হাদিস শরীফে এসেছে,
قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال
كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال
سمعت النبى ﷺ يقول ان اشد الناس عذابا عند
الله المصورون
আ’মাশ তিনি মুসলিম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুকের সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে
ছিলাম, তিন ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্ রাযি.-এর নিকট শুনেছি, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তাআলা কঠিন শাস্তি দেবেন,
যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।’ (বুখারী
২/৮৮০)
★ কিন্তু যদি এমন ইমোজিতে চোখ,
মুখ ইত্যাদি অঙ্গগুলো স্পষ্টত বুঝা না যায়, তাহলে
সেগুলোকে ব্যবহার করা যাবে। কেননা, এগুলোকে ‘প্রাণীর ছবি’ বলা যাবে না বরং খুব বেশী এগুলোকে
আঁকিবুকি, চিহ্ন বা কিছু রেখা ইত্যাদি ভাবা হবে। তবে
যথাসম্ভব এ সব ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
,
যদি চোখ-মুখ বা শারীরিক অবয়ব স্পষ্ট বুঝা না যায়, তবে এমন ইমোজি ব্যবহারে দোষ
নেই। কেননা তা প্রাণীর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল-মুগনী ৭/২৮২; উছায়মীন, মাজমূ ফাতাওয়া ২/২৭৯
প্রশ্ন: গ। স্যোসাল মিডিয়া তথা ফেসবুক-ইন্টারনেটে ছবি আপলোড দেয়া সম্পর্কে দারুল উলুম দেওবন্দের
ফতওয়া কি?
উত্তর : গ। ফেসবুক-ইন্টারনেটে নিজের ছবি তোলে আপলোড দেয়া
জায়েয নয়। এই বিধান জনসাধারণ এবং আলেম সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যারা জেনেশোনে
স্বেচ্ছায় নিজেদের ছবি ফেসবুক-ইন্টারনেটে আপলোড করে বা করায়, তাদের এই কাজ শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। চাই আপলোডকারী বা আপলোডের
নির্দেশদাতা যে কেউ হোক।
দারুল ইফতা : দারুল উলূম
দেওবন্দ, ভারত। ফতোয়া নং ১৫৪৬৮২
প্রশ্ন: গ। মাথা/পূর্নচেহেরা কি ছবির অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর: গ। প্রথম কথা হলো প্রাণীর ছবি
অঙ্কন করা হারাম। এ সম্পর্কে এত বেশী হাদীস বর্ণিত রয়েছে যে,তা
মুতাওয়াতির পর্যায়ের। এই অসংখ্য হাদীস সমূহ থেকে একটি হাদীস উল্লেখ করছি- হযরত
সাঈদ ইবনে আবিল হাসান রাহ, থেকে বর্ণিত,
ﻋَﻦْ
ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ ﻗَﺎﻝَ : ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺇِﻟَﻰ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻧِّﻲ ﺭَﺟُﻞٌ ﺃُﺻَﻮِّﺭُ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺼُّﻮَﺭَ، ﻓَﺄَﻓْﺘِﻨِﻲ ﻓِﻴﻬَﺎ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ : ﺍﺩْﻥُ ﻣِﻨِّﻲ . ﻓَﺪَﻧَﺎ ﻣِﻨْﻪُ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﺩْﻥُ ﻣِﻨِّﻲ . ﻓَﺪَﻧَﺎ ﺣَﺘَّﻰَ
ﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﻋَﻠَﻰَ ﺭَﺃْﺳِﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ
: ﺃُﻧَﺒُّﺌُﻚَ ﺑِﻤَﺎ ﺳَﻤِﻌْﺖُ
ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ - ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - . ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ
- ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - ﻳَﻘُﻮﻝُ : " ﻛُﻞُّ ﻣُﺼَﻮِّﺭٍ ﻓِﻲ
ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ، ﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻟَﻪُ ﺑِﻜُﻞِّ ﺻُﻮﺭَﺓٍ ﺻَﻮَّﺭَﻫَﺎ ﻧَﻔْﺴﺎً ، ﻓَﺘُﻌَﺬِّﺑُﻪُ ﻓِﻲ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ . " ﻭَﻗَﺎﻝَ : ﺇﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﻻَ ﺑُﺪَّ
ﻓَﺎﻋِﻼً ﻓَﺎﺻْﻨَﻊِ ﺍﻟﺸَّﺠَﺮَ ، ﻭَﻣَﺎ
ﻻَ ﻧَﻔْﺲَ ﻟَﻪُ ، ﻓَﺄَﻗَﺮَّ ﺑِﻪِ ﻧَﺼْﺮُ ﺑْﻦُ ﻋَﻠِﻲٍّ . ﺭﻭﺍﻩُ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ( 2225 ) ، ﻭﻣﺴﻠﻢ ﻭﺍﺍﻟﻔﻆ ﻟﻪ
জনৈক ব্যক্তি ইবনে আব্বাস
(রা.) এর নিকট এসে বলল, আমি এসব ছবি অঙ্কন করে থাকি; তাই এ ব্যাপারে আপনি
আমাকে ফাতাওয়া দিন। তিনি বললেন, তুমি আমার কাছে এসো। সে তার
নিকটে এলে তিনি বললেন, (আরও) নিকটে এসো। সে (আরও) নিকটে এলো।
পরিশেষে তিনি তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট যা শুনেছি, তাই তোমাকে বলব। আমি
রসূলুল্লাহ (ﷺ)কে
বলতে শুনেছি - প্রত্যেক ছবি প্রস্তুতকারী জাহান্নামের অধিবাসী হবে। তার তৈরিকৃত
প্রতিটি ছবিতে জীবন দেয়া হবে, সে সময় জাহান্নামে তাকে ঐগুলো আযাব দিতে থাকবে। তিনি আরও
বললেন, তোমাকে একান্তই যদি (তা) করতে হয়, তাহলে গাছ (পালা) এবং প্রাণহীন বস্তুর (ছবি) প্রস্তুত করো। [ইমাম মুসলিম
(রহঃ) এ হাদীস পড়ে শুনালে] নাসর ইবনু আলী (রহঃ) তার অনুমতি দিলেন। সহীহ
বুখারী-[২২২৫]সহীহ মুসলিম [৫৪৩৩]
কিন্তু মাথা কর্তিত থাকলে
সেই ছবি হারামের হুকুম থেকে বাহির হয়ে যাবে। যেমনঃ হযরত ইবনে আব্বাস রাযি থেকে
বর্ণিত,
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ : "
ﺍﻟﺼُّﻮﺭَﺓُ ﺍﻟﺮَّﺃْﺱُ، ﻓَﺈِﺫَﺍ
ﻗُﻄِﻊَ ﺍﻟﺮَّﺃْﺱُ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﺑِﺼُﻮﺭَﺓٍ .
" প্রাণীর মাথা-ই হল মূলত
ছবি তথা প্রাণীর মাথাটাই ছবির উল্লেখযোগ্য অংশ। যখন কোনো ছবির অাকৃতি থেকে মাথাকে
কেটে ফেলা হবে, তখন সেটা যেন কোনো ছবিই না। সুনানে
বায়হাক্বী-১৪৫৮০
শুধু চেহারা বা মাথা সহকারে
উপরের অর্ধাংশের ছবি বিনা প্রয়োজনে আঁকা কিংবা তোলা নাজায়িয ও হারাম। হযরত আবু
হুরাইরা রাযি. বলেন, মাথার প্রতিকৃতির নাম হলো ছবি, আর যাতে মাথা নেই তা
ছবি নয়। সূত্র: শরহু মাআনিল আছার, খ.২পৃ.৩৩৯
নাসায়ী হা.৫৩৬৫ সহীহ ইবনে হিব্বান হা.৫৮৫৩ শরহুস সিয়ারিল কাবীর,সারাখছী খ.৪ পৃ.২১৯ ফাতহুল বারী খ.১০ পৃ.৪৭০
যেহেতু মাথা ছাড়া কোনো
প্রাণী জীবিত থাকতে পারেনা,তাই বলা হচ্ছে মাথা কাটা থাকলে সেটা ছবির হুকুমের আওতাধীন হবেনা।
এ ব্যাপারে এত হাদীস বর্ণিত
হয়েছে যে, ফকীহগণ বলেন, অর্থের দিক থেকে সেগুলো মুতাওয়াতির 'ধারাবাহিক অবিচ্ছেদ্য সূত্রের' পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
আএসব হাদীসের ভিত্তিতেই প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম নববী (রহঃ) সহ অনেকেই একমত যে
রূহ বিশিষ্ট প্রাণীর প্রতিকৃতি বানানো নিষিদ্ধ এবং হারাম। পূর্বোক্ত আলোচনার
দ্বারা বোঝা যায় যে, মুখমন্ডল আঁকাও প্রাণীর
সম্পূর্ণ ছবি আঁকার নামান্তর। আবার ছবি ছোট হওয়ায়
বিধানে কোনো তারতম্য হয় না। তাই এ ধরনের ছবিযুক্ত স্মাইলি বা ইমোটিকন ব্যবহারের
বিধান ছবি অঙ্কনের বিধানের ন্যায় হারাম হবে বলেই মনে হয়। সূত্র: ফাতাওয়াল ইসলাম, প্রশ্ন নং: ৭২২২ ও ২০৮৯৪, মাকতাবা শামেলা
প্রশ্ন: ঘ। ছবি হারাম কি শুধু রাসূল (ﷺ)-এর
যুগের সাথে খাস?
উত্তর: ঘ। না, খাস
নয়, বরং কিয়ামত পর্যন্ত এ হুকুম বলবৎ থাকবে। যেমন এ সম্পর্ক
শারহুল উমাদাহ ' গ্রন্থে
আল্লামা ইবনে দাকীকুল ঈদ ( রহ.) উল্লেখ করেছেন, :
« ولقد ابعد عاية البعد من قال : إن ذلك محمول علي الكراهة ، وأن التشديد كان في ذلك
الزمان لقرب عهد الناس بعبادة الاوثان . وهذا الزمان حيث انتشر الاسلاموتمهدت قواعده فلا يساويه في هذا
التشديد . . . وهذا القول عندنا باطل قطعا ؛
لانه قد ورو في الاحاديث والاخبار عن أمر الآخرة بعذاب المصورين ، وانهم يقال لهم : أحيوا ما خلقتم. وهذه علة مخالفة لما قاله هذا القائل . وقد صرحخ بذلك في قوله صلي الله عليه وسلم : « المشبهون بخلق الله » . وهذه علة عامة مستقلة مناسبة، ولا تخص زمانا دون زمان . وليس لنا أن نتصرف في النصوص المتظاهرة المتضا فرة
بمعني خياليّ»
যারা ছবি 'হারাম' হওয়ার
বিষয়টিকে ' মাকরূহ '- এর কাতারে এনে
বিষয়টিকে হালকা হিসাবে বর্ণনা করেছেন, এবং যুক্তি হিসেবে
একথা বলেছেন যে,ছবি হারাম হওয়ার কঠোর বিধানটি তৎকালীন যুগের
জন্য ছিল ( যখন ইসলামের সুচনাকাল ছিল।) কেননা তৎকালীন যুগ ছিল মুর্তিপূজার
একেবারেই কাছাকাছি যুগ। বর্তমানে যেহেতু ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এবং ইসলামের
বিধিবিধানও সহজ হয়েছে। এই জন্য সেই বিধানের কঠোরতা এখন আর অবশিষ্ট নেই।
আমরা বলব, যারা এহেন খোড়াযুক্তি দাঁড় করিয়ে
ইসলামের বিধান সহজায়নে সাহায্য করেছেন, তারা বাস্তবতা থেকে
বহুদুরে অবস্থান করেছেন।, আমাদের কাছে তাদের এই অভিমত
চূড়ান্তভাবে বাতিল হিসেবে গন্য
কেননা হাদীস সমূহে এবং সাহাবায়ে কিরামের বর্ণনায় আখেরাতে ফটো
নির্মাতাদের কঠোর শাস্তি প্রদানের সতর্কবানী উচ্চারিত হয়েছে। কিয়ামতের দিন ফটো
নির্মাতাদের উদ্দেশ্যে বলা হবে, তোমরা যা বানিয়েছ, তাতে জীবন দান কর।
সুতরাং আধুনিক পছন্দদের দাবীর সঙ্গে এই কারণটি একেবারেই বিপরীত মনে
হয়। এছাড়া যে হাদীসে স্পষ্টভাষায় রাসূলে কারীম (ﷺ) উল্লেখ করেছেন
المتشبهون بخلق الله
' ছবি নির্মাতারা আল্লাহর সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যে সাদৃশ্যপূর্ন
চলে যায়, এই কারণটি ব্যাপক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বতন্দ্র এবং
একটি যথাযথ কারণ। এটি কোনো কালের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। সুতরাং হস্তক্ষেপ করা জায়েয
হবে না। কেননা এটি একটি স্পষ্ট কারণ। সূত্র: শরহুল
উমদাহ:খণ্ড-১,পৃষ্ঠা-১৭৬
প্রশ্ন: ঙ। প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়েজ,
তাহলে প্রফাইলে ছবি কি জায়েজ হবে?
উত্তর: ঙ। জিজ্ঞাসা-১২৬ শিরোনামে
আমরা আলোচনা করেছি যে, কোন কোন ক্ষেত্রে ছবি তোলা জায়েজ আছে।
অর্থাৎ যেখানে ছবি ছাড়া অসম্ভব; সেখানে জায়েজ। তাই বলে
প্রোফাইলে ছবিটা দেওয়া জরুতের মধ্যে পড়ে না। কেননা আমরা (অনেকে)
প্রোফাইলে ছবি ছাড়া সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাপসগুলো ব্যবহার করছি। সুতরাং প্রমাণিত হলো, এটা ছাড়া সম্ভব। তাই আমাদের
প্রোফাইলে ছবি ব্যবহার না করাই শ্রেয়। সূত্র: আল আশবাহ ওয়ান-নাযায়ের-৮৫,কিফায়াতুল
মুফতি ৯/২৪৪-২৪৫
সারকথা: হলো, যারা ক্যামেরায়/মোবাইলে ছবি তোলা জায়েজ বলছেন, তাদের যুক্তি হলো
যেহেতু ছবিটা হাত দ্বারা অংকন করেনি। কেননা হাত দ্বারা ছবি অংকন করা
সর্বোসম্মতভাবে হারাম। আর যারা হারাম
বলছেন, তাদের যুক্তি হলো, সরাসরি হাত
অংকন না করলেও পরোক্ষভাবে দ্বারাই অংকন হয়। যেমন হাত দ্বারা ক্যামেরা ধরা, হাতের সাহায্যে প্রিন্ট করা ইত্যাদি।
শেষ কথা: যেহেতু ছবির তোলার নিষেধাজ্ঞা
সম্পর্কে হাদিসগুলো মুতাওয়াতের পর্যায়ের, কঠিন শাস্তির কথা
এসেছে, তাই ফেসবুক,
মেসেঞ্জার, হোয়াটসএ্যাপ ইত্যাদিতে চ্যাটিং-এর
সময় বিভিন্ন ধরণের emoji ব্যবহার এবং প্রোফাইলে ছবি না দেওয়া
উত্তম পন্থা, নাজাতের পথ।
যেমন পবিত্র হাদিসে এসেছে-
عن النعمان بن بشير -رضي الله عنه- قال: سمعت النبي -صلى الله عليه وسلم- يقول: «إن الحلال بيِّن وإن الحرام بين،
وبينهما أمور مُشْتَبِهَاتٌ لا يعلمهن كثير من الناس، فمن اتقى الشُّبُهات فقد
اسْتَبْرَأ لدينه وعرضه، ومن وقع في الشبهات وقع في الحرام، كالراعي يرعى حول
الحِمى يوشك أن يَرْتَع فيه، ألا وإن لكل مَلِك حِمى، ألا وإن حِمى الله محارمه، ألا
وإن في الجسد مُضغة إذا صلحت صلح الجسد كله وإذا فسدت فسد الجسد كله ألا وهي القلب».
[صحيح] -
[متفق عليه]
নু‘মান ইবন বশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, “হালাল স্পষ্ট এবং হারামও
স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয় রয়েছে -
যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত
হল সে হারামেই লিপ্ত হল। যেমন রাখাল, যে তার পশু বাদশাহের
সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলোর সেখানে
ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহরই একটি
সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর জমীনে তাঁর
সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরে
একটি গোশতের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের
টুকরোটি হলো অন্তর। তাখরীজ: নাসায়ি-৪৪৫৩; ইবনে
মাজাহ-৩৯৮৪; বুখারি-২০৫১, মুসলিম-১৫৯৯
বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন-
ফাতাওয়ায়ে মাদানিয়া ২য় খণ্ড; ২০৬-২১৫ পৃষ্ঠা, আল্লামা
মাহমুদুল হাসান দা.বা. এর কিতাব, ইসলামের আলোকে ফটোর
বিধান মজলিসে এলম, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪, ডিজিটাল ছবি ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়া
সম্পর্কে ইসলামের বিধান- মুফতি ইহসানুল্লাহ শায়েক, মাকতাবাতুল
আযহার, মোবা.০১৯২৪-০৭৬৩৬৫, ফতোয়ায়ে
উসমানি-মুফতি তকি উসমানি দা.বা.-বইঘর প্রকাশনী-০১৭১১-৭১১৪০৯
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
বর্তমানে আমাদের সমাজে জমি
কট নেয়া হয় প্রসঙ্গে |
জিজ্ঞাসা-২৩৭: বর্তমানে আমাদের সমাজে জমি কট নেয়া
হয়। এক/দের লক্ষ্য টাকা দিয়ে এক বৎসরের জন্য এক বিঘা জমি। এখন এক বৎসর পর টাকা ফেরত
নেবার সময় মূল টাকা হতে ৩ হাজার টাকা কম নিলে কতটুকু শরিয়ত সম্মত হবে একটু জানাবেন
প্লিজ। ধন্যবাদ। তারিখ-২৭/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি আরটি ইব্রাহীম
এডমিন উইং ঘাঁটি বাশার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী-এর প্রশ্নের
আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান
করুন।)
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
সালাম ও তাসলিম বাদ, কথা এই যে, বাংলাদেশে প্রচলিত জমি বন্ধক/কট পদ্ধতি হারাম। হজরতে ফোকাহায়ে কেরামাগণ! জায়েজের ছুরত বর্ণনা করেছেন,
তা সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই বেখবর।
উল্লেখ্য যে, জায়েজ পদ্ধতি আছে অবশ্যই, কিন্তু তা গ্রহণ না করাই অধিক তাকওয়া।
যাই হোক প্রথম কথা হলো, বন্ধককৃত বস্তু বন্ধকগ্রহীতার
কাছে আমানতস্বরূপ। ★বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতার কোনো
ফায়দা হাসিল করা নাজায়েজ ও হারাম। এমনকি বন্ধকদাতা এর অনুমতি দিলেও পারবে না। কারণ বন্ধকি জমি
থেকে বন্ধকগ্রহীতা কোনো ধরনের ফায়দা উপভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত, যা হারাম। সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে : ৬/১৪৬ দলিল:
হাদিস/আসার নং-০১
ফাযালাহ ইবুন উবাইদ (রা.)
বলেন,
كُلُّ قَرْضٍ جَرَّ مَنْفَعَةً
فَهُوَ وَجْهٌ مِنْ وُجُوهِ الرِّبَا
‘যে ঋণ থেকে ঋণদাতা উপকৃত হয় তা
সুদের একটি প্রকার।’তাখরিজ: সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদিস: ১১২৫২
হাদিস/আসার নং-০২
اسْتَقْرَضَ رَجُلٌ مِنْ رَجُلٍ
خَمْسَمِائَةِ دِينَارٍ عَلَى أَنْ يُفْقِرَهُ ظَهْرَ فَرَسِهِ فَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ : مَا أَصَبْتَ مِنْ ظَهْرِ
فَرَسِهِ فَهُوَ رِبًا
ইবনে সিরিন (রহ.) সূত্রে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
জনৈক লোক সাহাবি ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, এক ব্যক্তি আমার কাছে একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে, তা
আমি আরোহণের কাজে ব্যবহার করেছি। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, তুমি
আরোহণের মাধ্যমে এর থেকে যে উপকার লাভ করেছ তা সুদ হিসেবে গণ্য হবে। তাখরিজ:
মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৭১
হাদিস/আসার নং-০৩
বিখ্যাত তাবেয়ি ইমাম কাজি
শুরাইহ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সুদ পান করা কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বলেন, বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকি গাভির দুধ পান করা
সুদ পানের অন্তর্ভুক্ত। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস :
১৫০৬৯
,
ঋণদাতার জন্য বন্ধকি জমি ভোগ
করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটি মূলত ঋণ প্রদান করে বিনিময়ে সুদ গ্রহণেরই একটি
প্রকার। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত পদ্ধতিটি জায়েজ হবে না।
উল্লেখ্য যে, জায়েজ পদ্ধতি ওলামায়ে কেরাম
থেকে জেনে নিবেন। ইনশাল্লাহ আমরাও কোন এক সময় আলোচনা ইচ্ছা রাখি। সূত্র: মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/২৪৪-২৪৫; শরহু মুখতাসারিত
তহাবী ৩/১৪৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; বাদায়েউস
সানায়ে ৫/২১২; শরহুল মাজাল্লা, খালেদ
আতাসী ৩/১৯৬-১৯৭; ইলাউস সুনান ১৮/৬৪
তথ্যসহযোগিতা, ইসলামিক ইফতা
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
জমি
বন্ধকের জায়েজ/বিকল্প পদ্ধতি কি? |
|
জিজ্ঞাসা-২৩৮: জমি বন্ধকের জায়েজ/বিকল্প পদ্ধতি কি? জানালে উপকৃত হতাম,ভাল হয়। তারিখ-২/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি আরটি ইব্রাহীম
এডমিন উইং ঘাঁটি বাশার (ঢাকা) বাংলাদেশ
বিমান বাহিনী-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে
সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
আমরা পূ্র্বে আলোচনা করেছি
যে, বন্ধক রেখে
তা খেকে ফায়দা নেওয়া সুদেরও নামান্তর।
যেহেতু বন্ধক বিষয়টা আম হয়ে গেছে,
তাই হজরজে ফুকাহায়ে কেরাম উম্মাহর কল্যাণে ( কিয়াসের
ভিত্তিতে) দুটি জায়েজ ছুরত/পদ্ধতি
বর্ণনা করেছেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো:
১ম সুরত : যিনি জমি নেবেন তিনি এ
হিসেবে চুক্তি করবেন যে, তিনি জমিটি ভাড়া নিচ্ছেন। নামমাত্র কিছু মূল্য মাসিক ভাড়া হিসেবে
নির্দিষ্ট করে নিবে। যেমন ৫০ টাকা বা ১০০ টাকা। আর অগ্রিম ভাড়া হিসেবে প্রদান করবে
১/২ লাখ টাকা। তারপর যেদিন জমিনটি ফেরত নিতে চাইবে, সেদিন
আগের নির্ধারণকৃত নামমাত্র ভাড়ার টাকা রেখে বাকি টাকা ফেরত দিয়ে দেবে জমিনটি
ভোগদখলকারী তথা জমির ভাড়াটিয়াকে। যেমন আবদুল্লাহ এর জমি আছে। কিন্তু টাকা নেই। তার
টাকা প্রয়োজন। আর আবদুর রহমানের টাকা আছে। কিন্তু জমি নেই। তার জমি প্রয়োজন।
আবদুল্লাহ তার জমিটি আবদুর রহমানের কাছে দিয়ে ৫ লাখ টাকা নিতে চাচ্ছে। আর আবদুর
রহমান টাকা প্রদান করে জমিটির ফসল নিতে চাচ্ছে।
এমতাবস্থায়, আবদুল্লাহ তার জমিটি আবদুর
রহমানের কাছে ভাড়া দিবে। মাসিক ভাড়া নির্দিষ্ট করে নিল কথার কথা ৫০ টাকা। যতদিন
আবদুর রহমান জমিটি রাখবে, ততদিন মাসিক ৫০ টাকা করে ভাড়া
প্রদান করবে। মাসিক ভাড়া অগ্রিম হিসেবে আবদুর রহমান ৫ লাখ আবদুল্লাহকে দিয়ে দিবে।
ফলে জমিটির ভাড়াটিয়া হিসেবে আবদুর রহমান ভোগদখল করতে থাকবে। আর আবদুল্লাহ টাকাটি
খরচ করতে পারবে।
তারপর যেদিন আবদুল্লাহ তার
জমিটি ফেরত নিতে চাইবে, সেদিন বিগত দিনের মাসিক ভাড়া বাদ দিয়ে বাকি টাকা প্রদান করে জমিটি ফেরত
নিয়ে নেবে। কথার কথা যদি ৫ মাস পর ফেরত নিতে চায়, তাহলে ৫
মাসের ভাড়া ২৫০ টাকা রেখে বাকি ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫০ টাকা প্রদান করে আবদুল্লাহ সাহেব
তার জমিটি ফেরত নিয়ে নিবেন। সূত্র: ফতহুল কদ্বীর, কিতাবুয জাকাত ২/১৭৪
২য় সুরত : দুটি চুক্তি সম্পাদন করবে।
প্রথমে ক্রয় বিক্রয় চুক্তি। তারপর আলাদা আরেকটি চুক্তি নামায় যেদিন টাকা পরিশোধ
করতে পারবে, সেদিন জমিটি প্রথম জমির মালিক ক্রয় নিয়ে নিয়ে যাবে, আর
বুর্মান মালিক তা বিক্রি করে দিবে মর্মে চুক্তি সম্পাদিত করবে। যেমন- আবদুল্লাহ এর
জমি আছে। কিন্তু টাকা নেই। তার টাকা প্রয়োজন। আর আবদুর রহমানের টাকা আছে। কিন্তু
জমি নেই। তার জমি প্রয়োজন। আবদুল্লাহ তার জমিটি আবদুর রহমানের কাছে দিয়ে ৫ লাখ
টাকা নিতে চাচ্ছে। আর আবদুর রহমান টাকা প্রদান করে জমিটির ফসল নিতে চাচ্ছে।
এমতাবস্থায়, আবদুল্লাহ তার জমিটি ৫ লাখ
টাকায় আবদুর রহমানের কাছে বিক্রি করে টাকা গ্রহণ করে নিবে। এভাবে আব্দুল্লাহ টাকার
মালিক ও আবদুর রহমান জমিটির ভোগ দখলের মালিক হয়ে যাবে। তারপর ভিন্ন আরেকটি চুক্তি
সম্পাদন করবে। যাতে লিখবে যে, যেদিন আবদুল্লাহ ৫ লাখ টাকা
দিতে পারবে, সেদিন আবদুর রহমান জমিটি আবদুল্লাহের কাছে ৫ লাখ
টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিবে। এভাবে ভিন্ন দুটি চুক্তি সম্পাদিত করলে টাকা খরচ করা
এবং জমিটি ভোগ দখলের মধ্যে অবৈধতার কোনো কিছুই বাকি থাকবে না। সূত্র: বাহরুর রায়েক্ব, কিতাবুল বুয়ু’-বাবু খিয়ারিশ শরত ৬/৮; রদ্দুল মুহতার, কিতাবুল বুয়ু’ ৭/২৮১)। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত দেখুন
(মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/২৪৪-২৪৫; শরহু মুখতাসারিত তহাবি
৩/১৪৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; বাদায়েউস
সানায়ে ৫/২১২; শরহুল মাজাল্লা, খালেদ
আতাসি ৩/১৯৬-১৯৭; ইলাউস সুনান ১৮/৬৪; ইরওয়াউল
গালিল হা/১৩৯৭)। আল্লাহু আলামু বিস সাওয়াব।
তথ্যসহযোগিতায়- “জমি বন্ধক রাখার শরিয়া পদ্ধতি” মাওলানা মুফতি ফাওয়াজ মুহাম্মাদ প্রবন্ধ থেকে
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
আত্মহত্যাকারী মুসলিম জিান্নাতে যাবে |
জিজ্ঞাসা-২৩৯: মুহতারাম আল্লাহ্ আপনাকে তারাক্কি দান করুন, প্রশ্ন
হলো - কালেমা পড়লেই বেহেশতে যাবে কিন্তু
আত্নহত্যা কারীর জান্নাত হারাম। সহীহ বুখারীর বর্ণনা। সঠিক ব্যখ্যা কামনা করছি। তারিখ-৩০/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি আতিক, 43 বীর
শেখ হাসিনা সেনানিবাস বরিশার-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব:
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ ও সানার পর, কথা এই যে আপনি একটি
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। যা আমাদের সাধরণ মানুষের একটি কৌতুহল। যাইহোক আপনার
প্রশ্ন সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করছি-
প্রশ্ন: ক। কবিরা গুনাহ করলে কি মুমিন
কাফের হয়?
উত্তর: ক। না, মুমিন
যত বড়ই পাপ করুক না কেন ? কাফের হয় না। দলিল:
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ
الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا
عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ
اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ
يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ অর্থ: মুমিনের দুই দল দ্বন্দ্বে
লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর তাদের একদল অপর দলকে আক্রমণ করলে
তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে,
যতক্ষণ
না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে
ফয়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। সূরা হুজুরাত-০৯
পরস্পর দ্বন্দ্বরত দুই দলের মাঝে মীমাংসা করে দেওয়ার
আদেশ দিয়েছেন। বলা বাহুল্য যে, দ্বন্দ্ব সংঘাত লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও
আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ঈমানদার আখ্যা দিয়েছেন। তাই এ আয়াতের ওপর ভিত্তি করে আলহে সুন্নাত
ওয়াল জামাআত মত পেশ করেছেন যে, যত বড় পাপই করুক,
তাতে
মুমিন বে-ঈমান হয়ে যায় না। পক্ষান্তরে খারিজি ও মুতাজিলাদের একাংশের মতে কবিরা গুনাহ করলে ঈমান থাকে না।
হজরত আবু বকর(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবি কারিম (ﷺ) হাসান-কে নিয়ে বের হলেন এবং তাঁকেসহ মিম্বারে
আরোহণ করলেন। অত্ঃপর বললেন, আমার এ ছেলেটি সরদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে বিবাদমান দুদল মুসলমানের
মাঝে সমঝোতা –মীমাংসা করিয়ে দিবেন। তাখরিজ : বুখারি-৩৬২৯;আবু
দাউদ-৪৬৬২;তিরমিজি-৩৭৭৩;নাসায়ি-১৪১০;আহমদ-২০৩৯
এ হাদিসেও প্রিয় নবি (ﷺ) বিবাদমান দুদলকে মুসলমানরূপে আখ্যা দিয়েছেন।
পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত হওয়ার পরও মুমিন নামটি মুছে যায়নি; বরং
তারা সাংবিধানিক অর্থে মুমিন ছিলেন। যদি তারা কাফের হয়ে যেত কক্ষনোও তাদের মুমিন নামে
ডাকা হত না। আর তাদের মাঝে সংশোধনের হুকুম করা হত না। অন্য এক হাদিসে আরও স্পষ্টভাবে এসেছে- আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত।
রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
তিনটি
বিষয় ঈমানের বুনিয়াদের অন্তর্ভুক্ত। (১) যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমা পড়বে, তার
প্রতি আক্রমণ করা হতে বিরত থাকবে; কোন গুনাহর দরুন তাকে কাফের মনে
করবে না এবং কোন আমলের দরুন তাকে ইসলাম হতে খারিজ করে দিবে না। (২) জিহাদ- যেদিন হতে
আল্লাহ আমাকে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন সেদিন হতে এই উম্মতের শেষ যামানার লোকেরা দাজালের
সাথে জিহাদ করতে থাকবে, কোন অত্যাচারী শাসকের অত্যাচার বা কোন সুবিচারকের
সুবিচার জিহাদকে বাতিল করতে পারবে না এবং (৩) তাকদীরে বিশ্বাস করা। তাখরিজ : মিশকাতুল
মাছাবিহ-কাবীরা গোনাহ ও মুনাফিকীর নিদর্শন অধ্যায়
সুতরাং প্রমাণিত হল মুমিন যত
বড়ই গুনাহ করুক না কে? সে কাফের হয় না।(তবে গুনাহ ঈমানকে দুর্বল করে এবং
কিছু কিছু গুনাহ কুফরির দিকে ধাবিত করে। প্রত্যেক মুসলিমকে এ বিষয়ে আরও সতর্কতাবলম্বন
করা উচিত)
সূত্র: “মহান আল্লাহর নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা”,৭৮ পৃষ্ঠা, লেখক, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
প্রশ্ন: খ। যে ব্যক্তি তাওহিদের ওপর মৃত্যবরণ করবে এবং শিরক না করলে জান্নাতের
সুসংবাদ তার দলিল কি?
উত্তর: খ। যে ব্যক্তি তাওহিদের ওপর
মৃত্যবরণ করবে এবং শিরক না করলে জান্নাতের সুসংবাদ তার দলিল
নিম্নে তুলে ধরা হলো-
আয়াত-০১
আল্লাহ তাআলা বলেন,وَيُنَجِّي
اللَّهُ الَّذِينَ اتَّقَوْا
بِمَفَازَتِهِمْ لَا يَمَسُّهُمُ
السُّوءُ وَلَا هُمْ
يَحْزَنُونَ অর্থ: যারা শিরক থেকে বিরত
থাকত, আল্লাহ তাদেরকে
সাফল্যের সাথে
মুক্তি দেবেন, তাদেরকে অনিষ্ট
স্পর্শ করবে
না এবং
তারা চিন্তিতও
হবে না।[1] সূরা
যুমার-৬১
হাদিস নং-০১
أَبَا ذَرٍّ، يُحَدِّثُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ” أَتَانِي جِبْرِيلُ - عَلَيْهِ السَّلاَمُ - فَبَشَّرَنِي أَنَّهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِكَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ ” . قُلْتُ وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ . قَالَ ” وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ ” |
অর্থ: আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি
(ﷺ) বলেন, জিবরিল
(আ.) আমার নিকট এসে সুসংবাদ দিলেন যে, আপনার
উম্মাতের যে কেউ শিরক না করে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি (আবু জর)
বললাম, যদিও সে ব্যভিচার করে এবং যদিও সে চুরি করে। তিনি
বললেন, যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে। তাখরিজ : বুখারি-৩২২২; মুসলিম-৯৪; তিরমিজি-২৬৪৪; আহমদ -২১৩৪৭
হজরত আবু জর যে বারবার যে প্রশ্ন করেছিলেন যে, ব্যভিচার
এবং চুরি করলেও কি মানুষ জান্নাতে যেতে পারবে? এর কারণ
সম্ভবত এই রছিল যে, চুরি ব্যভিচারকে অত্যন্ত ঘৃণ্য ও অপবিত্র
গুনাহ মনে করার কারণে তিনি আশ্চর্যবোধ করছিলেন যে, এমন গুনাহ
করেও মানুষ জান্নাতে যেতে পারবে? (সামনে এর বিস্তারিত
ব্যাখ্যা আসছে)
হাদিস নং-০২
- عَنْ عُثْمَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ ”.
অর্থ: আবু বকর ইবনে আবু
শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহ.) ওসমান (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি [لاَ
إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
] -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ--এর নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে ইন্তিকাল করবে, সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে। মুসলিম-২৬,৪৩
মুসনাদে আহমদ-৪৯৮
হাদিস নং-০৩
مَنْ شَهِدَ أَنْ
لَا إِلَهَ إِلَّا
اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا
رَسُولُ اللهِ، حَرَّمَ
اللهُ عَلَيْهِ النَّارَ
অর্থ: যে ব্যক্তি খাঁটি মনে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’-এর স্বাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ পাক তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। তাখরিজ : সহীহ মুসলিম-৪৭
হাদিস নং-০৪
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ ” . অর্থ: মুয়াজ ইবনু জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন
: যারা সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাখরিজ: আবু দাউদ-৩১১৬; ইবনে মাজাহ-৩৭৯৬; আহমদ-২১৯৯৮
নোট : ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে
আহমদের বর্ণনায় শব্দের ভিন্নতা রয়েছে সারাংশ একই।
প্রশ্ন: গ। মৌলিক আপত্তি: উপরোক্ত
হাদিসে আমরা দেখতে পাই যে,
১। যে কেউ শিরক না করে মারা
যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যদিও সে ব্যভিচার করে এবং যদিও সে চুরি করে।
২। যার সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৩। ‘যে ব্যক্তি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে ইন্তিকাল করবে,
সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
কিন্তু এর বিপরীতে অসংখ্যা
আয়াতে কারিমা ও হাদিসে নবুওয়া রয়েছে। যে ব্যক্তি এ পাপে লিপ্ত হবে, সে
জান্নাতে প্রবেশ করবে না, শুধু তাই নয়, সে
বেহেশতের বাতাস-ঘ্রাণও পাবে না। নিম্নে
কয়েকটি উল্লেখ করা হলো। যেমন-
১। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বুখারি-৫৯৮৪
২। সর্বদা মাদকদ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না। ইবনে মাজাহ-৩৩৭৬
৩। যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গঠিত হয়েছে, তা
জান্নাতে যাবে না। বায়হাকি-৫৫২০
৪। যার অত্যাচার থেকে প্রতিবেশি নিরাপদ নয়, সে
জান্নাতে যাবে না। মুসলিম-৬৬
৫। পিতা-মাতার অবাধ্য, দাইয়ুস (যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-মেয়ে-বোন
প্রমুখ অধীনস্থ নারীকে বেপর্দা চলাফেরায় বাধা দেয় না), পুরুষের
বেশ ধারণকারী মহিলা। হাকেম-২২৬
৬। চোগলখোর জান্নাতে যাবে না। মুসলিম-১৫১
৭। ‘দুনিয়ার উদ্দেশ্য এলমে দীন অর্জনকারী, জান্নাতের
ঘ্রাণও পাবে না। আবু দাউদ-৩১৭৯
৮। যে নারী তার স্বামীর কাছে অকারণে তালাক কামনা করে, সে
জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। তিরমিজি-১১০৮
৯। জাকাত আদায় না কারীর শাস্তি। সূরা ইমরান-১৮০; বুখারি-১৪০৩
১০। ইয়াতিমের মাল ভক্ষণ করা। সূরা নিসা-১০
১১। আত্মহত্যাকারী জাহান্নামে ঐভাবেই আজবীন আজাব ভোগ করবে। বুখারি
উত্তর: গ। সমাধান বা সমন্বয় : যে ব্যক্তি
দীনে তাওহিদের ওপর আন্তরিক ঈমান রাখবে,
সে
অবশ্যই জান্নাতে যাবে। এখন সে যদি ঈমান সত্ত্বেও গুনাহ করে ফেলে থাকে, তাহলে
সে হয়তো আল্লাহর বিশেষ
রহমতে অথবা
কোন আল্লাহর
পছন্দনীয় আমলের
বরকতে অথবা
আল্লাহর অনুমদিত
ব্যক্তিবর্গের সুপারিশের
দ্বারা অথবা
যাদের নেকি-পাপ সমান সমান
হবে তারা
কিছুকাল আরাফে
অবস্থান করে
আল্লাহর কৃপায়
জান্নাতে দাখিল
হবে এবং
সর্বশেষে পাপের
শাস্তি ভোগ
করার পর
আল্লাহর দয়ায়
ক্ষমা লাভের অধিকারী হয়ে জান্নাতে প্রবেশ
করবে। এর
স্বপক্ষে নিম্নে
দলিল পেশ
করছি :
শিরক না থাকলে সরাসরি ক্ষমা হতে পারে:
(১)
আল্লাহ তাআলা
বলেন-إِنَّ
اللَّهَ لَا يَغْفِرُ
أَن يُشْرَكَ بِهِ
وَيَغْفِرُ مَا دُونَ
ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর সাথে শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না।
আর এ ব্যতিত যাকে ইচ্ছা (তার অন্যান্য অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।[1] সূরা নিসা- ৪৮
(২)إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا
وَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ
اللَّهِ ثُمَّ مَاتُوا
وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ
يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ
অর্থ: যারা কুফরি করে ও আল্লাহর পথ হতে মানুষকে নিবৃত্ত করে,
অতঃপর কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাদেরকে
কিছুতেই ক্ষমা করবেন না।সূরা মুহাম্মাদ-৩৪
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, কুফরি অবস্থায় মৃত্যবরণ না করলে,
আল্লাহ চাইলে সরাসরি ক্ষমা হতে পারে।
(৩)لَا
يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلَّا
مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ
الرَّحْمَنِ عَهْدًا অর্থ: যে দয়াময়ের নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ব্যতিত অন্য কারও সুপরিশ করার
ক্ষমতা থাকবে না। সূরা মারইয়াম-৮৭
الا শব্দটি
এখানে ইস্তিসনা মুনকাতি হিসেবে لكن
এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ –এর সাক্ষ্য প্রদান করে আল্লাহর নিকট
প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে। হজরত
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,عهد এর অর্থ হল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ –এর সাক্ষ্য প্রদান করা অন্যের পূজা অর্চনা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে কেবলমাত্র
আল্লাহর ইবাদত করা এবং আল্লাহর নিকট হতে যাবতীয় আশা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবার কামনা করা।[1] তাফসিরে ইবনে কাসির ৭ম খণ্ড;১৩১ পৃষ্ঠা; অধ্যাপক মাওলানা আখতার ফারূক (রহ.) অনূদিত, ই.ফা.
আল্লাহ তাআলার দরবারে গৃহীত আমলের বরকতে:
(৪) হাদিস শরিফে এসেছে- وَعَنْ
أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللّهِ
ﷺ: غُفِرَ لِامْرَأَةٍ مُوْمِسَةٍ
مَرَّتْ بِكَلْبٍ عَلى
رَأْسِ رَكِيٍّ يَلْهَثُ
كَادَ يَقْتُلُهُ الْعَطَشُ
فَنَزَعَتْ خُفَّهَا فَأَوْثَقَتْهُ بِخِمَارِهَا
فَنَزَعَتْ لَه مِنَ
الْمَاءِ فَغُفِرَ لَهَا
بِذلِكَ . قِيلَ: إِنَّ
لَنَا فِي الْبَهَائِمِ
أَجْرًا؟ قَالَ: فِىْ
كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ
رُطْبَةٍ أَجْرٌ. مُتَّفَقٌ
عَلَيْهِ অর্থাৎ একটি পতিতা মহিলাকে মাফ করে দেওয়া হলো।
(কারণ) মহিলাটি একবার একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাবার সময় দেখল সে পিপাসায় কাতর হয়ে
একটি কূপের পাশে দাঁড়িয়ে জিহবা বের করে হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় সে মরার উপক্রম।
মহিলাটি (এ করুণ অবস্থা দেখে) নিজের মোজা খুলে ওড়নার সাথে বেঁধে (কূপ হতে) পানি
উঠিয়ে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের জন্য তাকে মাফ করে দেওয়া হলো। তাখরিজ : বুখারি-৩৩২১; মুসলিম-২২৪৫; আহমদ -১০৬২১; শারহুস সুন্নাহ-১৬৬৬
(৫)عَنْ
عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ:
جَاءَتْنِي مِسْكِينَةٌ تَحْمِلُ
ابْنَتَيْنِ لَهَا، فَأَطْعَمْتُهَا ثَلَاثَ
تَمَرَاتٍ، فَأَعْطَتْ كُلَّ
وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا تَمْرَةً،
وَرَفَعَتْ إِلَى فِيهَا
تَمْرَةً لِتَأْكُلَهَا، فَاسْتَطْعَمَتْهَا ابْنَتَاهَا،
فَشَقَّتِ التَّمْرَةَ، الَّتِي
كَانَتْ تُرِيدُ أَنْ
تَأْكُلَهَا بَيْنَهُمَا، فَأَعْجَبَنِي شَأْنُهَا،
فَذَكَرْتُ الَّذِي صَنَعَتْ
لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
فَقَالَ: "إِنَّ اللهَ
قَدْ أَوْجَبَ لَهَا
بِهَا الْجَنَّةَ، أَوْ
أَعْتَقَهَا بِهَا مِنَ
النَّارِ" অর্থ: হজরত আয়েশা (রা.) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন গরিব স্ত্রীলোক তার দুটি কন্যাসহ আমার
কাছে আসল । আমি তখন তাদের তিনটি খেজুর খেতে দিলাম, সে তার মেয়ে দুটিকে একটি করে দিল
এবং অবশিষ্ট একটি খেজুর নিজে খাওয়ার জন্য তার মুখের দিকে তুলল। কিন্তু এটিও তার মেয়েরা চাইল। যে খেজুরটি সে নিজে খাওয়ার ইচ্ছা করল তাও দুভাগ করে তার মেয়ে দুটোকে দিয়ে দিল। আয়েশা (রা.) বললেন, ব্যাপরটি
আমাকে অবাক করল। সে যা করল আমি তা রসূলুল্লাহ
(ﷺ)-কে বললাম। তিনি বললেন, এর বিনিময় মহান আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেশত ওয়াজিব (নির্ধারণ) করে দিয়েছেন অথবা জাহান্নাম হতে মুক্তি দিয়েছেন। তাখরিজ : মুসলিম-২৬৩০; সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৬৬৮; আহমদ-২৪৬১১
নোট : বুখারির বর্ণনায় শব্দের ভিন্নতা রয়েছে।
(৬) রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: اقْرَءُوا الْقُرْآنَ
فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ
الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِه অর্থাৎ- তোমরা কোরআন পাঠ কর। কেননা এ
কুরআন তার পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশকারী হয়ে আবির্ভূত হবে। [1] তাখরিজ : মুসলিম-৮০৪; আহমদ -২২১৪৬
শাফায়ত পেয়ে যাবে অর্থাৎ আল্লাহর অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ দ্বারা যেমন নবি-শহিদ-আলেম-হাফেজ-নেককার প্রমুখ:
(৭) مَنْ
ذَا الَّذِي يَشْفَعُ
عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ অর্থ:
কে আছে এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তার অনুমতি ছাড়া।
সূরা
বাকারা-২৫৫
(৮) يَوْمَئِذٍ
لَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ
إِلَّا مَنْ أَذِنَ
لَهُ الرَّحْمَنُ وَرَضِيَ
لَهُ قَوْلًا অর্থ:
দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন
কোন উপকারে আসবে না। সূরা তোহা-১০৯
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, لَا يَمْلِكُونَ
مِنْهُ خِطَابًا اي لا يملكون
ان يطالوه الا
فيما اذن له
কোন বিষয়ে আল্লাহর সাথে কথা বলা সম্ভব হবে না-তবে যে বিষয়ে কথা বলার অনুমতি প্রমাণ
করা হবে সে বিষয়ে বলতে সক্ষম হবে। কুরতুবি-১৩/১৮৬
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর মতে,
“সক্ষম হবে না” ঘোষণাটি মুশরিকিন এবং বিদ্রোহীদের জন্য প্রযোজ্য। রুহুল মাআনি-২০/৩০, কেহ কেহ বলেছেন যে, এই ঘোষণাটি ফেরেশতাদের জন্য প্রযোজ্য।
তাফসিরে কাবির-৮/৩১৩;
বুরহানুল কুরআন-৪/৩৯
(৯)اسْتَغْفِرْ لَهُمْ أَوْ
لَا تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ
إِنْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ
سَبْعِينَ مَرَّةً فَلَنْ
يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ
ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَفَرُوا
بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَاللَّهُ
لَا يَهْدِي الْقَوْمَ
الْفَاسِقِينَ অর্থ: (হে নবি) আপনি
তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না কর একই কথা। আপনি সত্তরবার তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তাদেরকে
কখনও ক্ষমা করবেন না। তা এই জন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অস্বীকার
করেছে। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। সূরা তওবা-৮০
আলোচ্য আয়াতে মুনাফেক-কাফেররা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অস্বীকার
করার কারণে তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা; না করা সমান। সত্তরবারও যদি ক্ষমা চায় তবুও তাদেরকে ক্ষমা হবে না। সুতরাং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে কবুল হওয়ার বিষয়
প্রমাণিত।
(১০) নবি (ﷺ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন : ﺷَﻔَﻌَﺖِ
ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺷَﻔَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻴُّﻮﻥَ ﻭَﺷَﻔَﻊَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺒْﻖَ ﺇِﻻَّ
ﺃَﺭْﺣَﻢُ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ ﻓَﻴَﻘْﺒِﺾُ ﻗَﺒْﻀَﺔً ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻓَﻴُﺨْﺮِﺝُ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻗَﻮْﻣًﺎ
ﻟَﻢْ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﺍ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻗَﻂُّ » “ফেরেশতাগণ শাফাআত করেছে, নবিগণ শাফাআত করেছেন এবং
মুমিনগণও শাফাআত করেছেন। এখন সবচেয়ে দয়ালু আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কারও শাফাআত বাকি
নেই। অতঃপর তিনি জাহান্নামের আগুন থেকে একমুষ্ঠি গ্রহণ করবেন। এর মাধ্যমে তিনি
জাহান্নাম থেকে এমন একদল মানুষকে বের করবেন, যারা কখনো কোন
ভাল আমলই করেনি”। তাখরিজ : মুসলিম- ৪৭২
(১১)عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: "لِكُلِّ نَبِيٍّ
دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ، فَتَعَجَّلَ
كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ،
وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي
شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ
الْقِيَامَةِ، فَهِيَ نَائِلَةٌ
إِنْ شَاءَ اللهُ
مَنْ مَاتَ مِنْ
أُمَّتِي لَا يُشْرِكُ
بِاللهِ شَيْئًا" অর্থাৎ: প্রত্যেক নবির জন্য এমন একটি দোআ রয়েছে
যা আল্লাহর কাছে মকবুল। আর আমি নিজ দোআটি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফাআতের
জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছি। আমার
উম্মতের মধ্যে যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে ইনশাল্লাহ আমার সুপারিশ লাভ
করবে। তাখরিজ
: বুখারি-৬৩০৫; মুসলিম-১৯৯
নোট : হাদিসের শেষাংশটুকু মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে।
(১২) আবু
হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, হে
আল্লাহর রাসূল, কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভ করে সবচেয়ে
বেশি ধন্য কে হবে? তিনি বললেন:
«لَقَدْ
ظَنَنْتُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، أَنْ لَا يَسْأَلَنِي عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ
أَحَدٌ أَوَّلُ مِنْكَ لِمَا رَأَيْتُ مِنْ حِرْصِكَ عَلَى الْحَدِيثِ، أَسْعَدُ
النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ، مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ
خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ»
হে আবু হুরায়রা, আমি ধারণা করেছি, এ হাদীস সম্পর্কে তোমার চেয়ে আগে
কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করবে না। কারণ, হাদীসের ওপর আমি তোমার
আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভ করে সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান সে
হবে, যে নিজের অন্তর অথবা মন থেকে খালিসভাবে লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহ বলবে। তাখরিজ : বুখারি- ৯৯; মুসনাদে আহমদ-৮০৭০
(১৩) شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ
مِنْ أُمَّتِيঅর্থ: আমার উম্মতের কবিরা গুনাহে লিপ্তদের জন্য আমার শাফায়াত। তাখরিজ : আবু দাউদ-৪৭৩৯; তিরমিজি-২৪৩৫; আহমদ -১৩২২২
(১৪)يَشْفَعُ الشَّهِيْدُ فِي
سَبْعِيْنَ مِنْ أَهْلِ
بَيْتِه অর্থ: শহিদ তার পরিবারের সত্তর জনের জন্য সুপারিশ
করবে। তাখরিজ : আবু দাউদ-২৫২২,আহমদ
-১৭১৮২; তিরমিজি-১৬৬৩
(১৫)عَنْ
أَبِي سَعِيدٍ قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «إِذَا خَلَصَ
الْمُؤْمِنُونَ مِنَ النَّارِ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَمِنُوا،
فَمَا مُجَادَلَةُ أَحَدِكُمْ
لِصَاحِبِهِ فِي الْحَقِّ
يَكُونُ لَهُ فِي
الدُّنْيَا، بِأَشَدَّ مُجَادَلَةً
لَهُ، مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لِرَبِّهِمْ
فِي إِخْوَانِهِمُ الَّذِينَ
أُدْخِلُوا النَّارَ» قَالَ:
" يَقُولُونَ: رَبَّنَا إِخْوَانُنَا
كَانُوا يُصَلُّونَ مَعَنَا،
وَيَصُومُونَ مَعَنَا، وَيَحُجُّونَ
مَعَنَا، فَأَدْخَلْتَهُمُ النَّارَ
" قَالَ: فَيَقُولُ: " اذْهَبُوا
فَأَخْرِجُوا مَنْ عَرَفْتُمْ، অর্থ: যখন মুমিন আল্লাহর ওলিগণ দেখবে
যে তারা মুক্তি পেয়ে গেলো তখন তাঁদের মুমিন ভাইদের জন্য তাঁরা আল্লাহর কাছে আবেদন
(দোআ বা কারো জন্য বলা তথা সুপারিশ) করবে : হে আমার প্রতিপালক এরা আমাদের ভাই,
যাদেরকে তুমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছ তারা আমাদের সাথে নামাজ পড়ত,
আমাদের সাথে রোজা রাখত এবং আমাদের সাথে সৎকাজ করত। তখন আল্লাহ্ বলবেন : যাদের অন্তরে শুধুমাত্র এক দিনার ওজন
পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস। তাদের মুখমণ্ডল তথা
আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে । অতঃপর তাঁরা (অলিগণ) সেখানে জাহান্নামিদের নিকট যাবেন। এসে দেখবেন কেউ কেউ পা পর্যন্ত কেউ পায়ের গোঁড়ালি পর্যন্ত
আগুনে ডুবে আছে।এর মধ্যে যাদের তারা চিনবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে
আসবেন। তাখরিজ : মুসনাদে আহমদ-১১৮৯৮
আর যদি সে ক্ষমার যোগ্য না
হয়, তাহলে গুনাহর শাস্তি ভোগ করার পর সে জান্নাতে যেতে পারবে:
(১৬) عَنْ أَبِي سَعِيدٍ
الْخُدْرِيِّ، رضى الله
عنه ـ عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم قَالَ
” يَدْخُلُ أَهْلُ الْجَنَّةِ
الْجَنَّةَ، وَأَهْلُ النَّارِ
النَّارَ، ثُمَّ يَقُولُ
اللَّهُ تَعَالَى أَخْرِجُوا
مَنْ كَانَ فِي
قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ
مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ
إِيمَانٍ. فَيُخْرَجُونَ مِنْهَا
قَدِ اسْوَدُّوا فَيُلْقَوْنَ
فِي نَهَرِ الْحَيَا
ـ أَوِ الْحَيَاةِ،
شَكَّ مَالِكٌ ـ
فَيَنْبُتُونَ كَمَا تَنْبُتُ
الْحِبَّةُ فِي جَانِبِ
السَّيْلِ، أَلَمْ تَرَ
أَنَّهَا تَخْرُجُ صَفْرَاءَ
مُلْتَوِيَةً ”. قَالَ وُهَيْبٌ
حَدَّثَنَا عَمْرٌو ” الْحَيَاةِ
”. وَقَالَ ” خَرْدَلٍ مِنْ
خَيْرٍ অর্থ: হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত, নবি (ﷺ) এরশাদ করেন, যখন জান্নাতিগণ জান্নাতে ও দোজখিগণ দোজখে চলে যাবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, যার অন্তরে সরিষার দানা
পরিমাণও ঈমান রয়েছে তাকেও জাহান্নাম হতে বের লও। তাদের অবস্থা এরূপ
হবে যে, জ্বলে কালো
বর্ণ হয়ে গেছে। অতঃপর
তাদেরকে নহরে হায়াতে ফেলা হবে। তখন তারা এমনভাবে বের হয়ে
আসবে, যেমন
ঢলের(বৃষ্টির কারণে) আবর্জনাতে দানা অঙ্কুরিত হয় (গাছ জন্মায়)। তোমরা কি দেখ না যে, তা কেমন সোনালী ও কোঁকড়ানো
অবস্থায় বের হয়ে আসে।
তাইব (রহঃ) বলেন, ‘আমর (রহঃ) আমাদের কাছে حيا এর স্থলে حياة এবং خردل
من ايمان এর স্থলে خردل
من خير বর্ণনা করেছেন। বুখারি-২২; মুসলিম-১৮২; তিরমিজি-২৫৯৮; ইবনে মাজাহ-৬০; নাসায়ি-১১৪০; দারেমি-২৮৫৯
عَنْ أَنَسٍ،
عَنِ النَّبِيِّ صلى
الله عليه وسلم
قَالَ ” يَخْرُجُ مِنَ
النَّارِ مَنْ قَالَ
لاَ إِلَهَ إِلاَّ
اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ
وَزْنُ شَعِيرَةٍ مِنْ
خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ
النَّارِ مَنْ قَالَ
لاَ إِلَهَ إِلاَّ
اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ
وَزْنُ بُرَّةٍ مِنْ
خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ
النَّارِ مَنْ قَالَ
لاَ إِلَهَ إِلاَّ
اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ
وَزْنُ ذَرَّةٍ مِنْ
خَيْرٍ ”. قَالَ أَبُو
عَبْدِ اللَّهِ قَالَ
أَبَانُ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ
حَدَّثَنَا أَنَسٌ عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم ” مِنْ
إِيمَانٍ ”. مَكَانَ ” مِنْ
خَيْرٍ
(১৭)
অর্থ:
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি (ﷺ)বলেছেন: যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও পূণ্য বিদ্যমান থাকবে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা- ইলা-হা
ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি গম পরিমাণও পুণ্য
বিদ্যমান থাকবে তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকি থাকবে
তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।
(১৮) আবু আবদুল্লাহ বলেন, আবান (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, আনাস (রা.) হতে এবং তিনি
রসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে নেকি –এর স্থলে ‘ঈমান’ শব্দটি বর্ণনা করেছেন। বুখারি-৪৪; মুসলিম-১৯৩; তিরমিজি-২৫৯৩; ইবনে মাজাহ-৪৩১২; দারেমি-৫৩; আহমদ -২৬৯২
ইমাম গাজালি (রহ.)-এর গবেষণা: أَخْرِجُوا
مَنْ كَانَ فِي
قَلْبِهِ مِثْقَالُ (যার অন্তরে সরিষার দানা
পরিমাণও ঈমান রয়েছে তাকেও জাহান্নাম হতে বের লও) হাদিস থেকে রিচার্স করেছেন যে,
ঐ ব্যক্তিও মুক্তি প্রাপ্ত হবে, যে অন্তর দিয়ে
ঈমান এনেছে, কিন্তু কালেমা পড়ার সময় পায়নি এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হয়ে গেছে।
কাশফুল
বারি শরহুল সহিহিল বুখারি-২/১৯৯ ; তাফসিরে মাজহারি-১০খণ্ড; ১৯২-১৯৩ পৃষ্ঠা, তাফসিরে জালালাইন
৫ম খণ্ড; ৫৮৭পৃষ্ঠা; আইছারুত্তাফাসির; বুরহানুল কুরআন-৩/১২২
যা হোক,
ইসলামের
প্রতি আন্তরিকভাবে ঈমান পোষণকারী প্রত্যেকটি মানুষ জান্নাতে অবশ্যই যাবে,
যদিও
জাহান্নামে গোনাহের শাস্তি ভোগ করার পরেই যাক না কেন।
প্রশ্ন: ঘ। এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামাতের
অভিমত
কি?
উত্তর: ঘ। আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাতের অভিমত হলো
গুনাহের শাস্তি
হওয়াই স্বাভাবিক
কিন্তু আল্লাহ
তাআলার ইচ্ছার
ওপর নির্ভর
করে। তিরি
ইচ্ছা করলে
গুনাহ মাফ
করতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে
শাস্তিও দিতে
পারেন। গুনাহ
মাফ হয়
তওবার মাধ্যমে
অথবা প্রিয়
নবি (ﷺ)-এর শাফায়াতের
মাধ্যমে কিংবা
কোনো ওলি
আল্লাহ তাআলার
সুপারিশ ক্রমে
অথবা শুধু
আল্লাহ তাআলার
রহমতে। যদি
আল্লাহ তাআলা
কোনো গুনাহগার
মুমিনকে আজাব
দেওয়ার ইচ্ছাও
করেন। তবে
তা স্থায়ী
আজাব হবে
না; বরং সাময়িক
হবে। কেননা
আল্লাহ তাআলা
প্রত্যেক নেক
আমলের ছওয়াব
প্রদানের প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেন, যেমন কুরআনে
কারিমে ইরশাদ
হয়েছে- فَمَنْ يَعْمَلْ
مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا
يَرَهُ অর্থাৎ‘যে ব্যক্তি সামান্য
নেক আমলও
করবে সে
তার বিনিময়
অবশ্যই দেখতে
পাবে।’ (সূরা যিলযাল-০৭) আর
ঈমান হলো
সবেচেয়ে বড়
নেক আমল
এবং সকল
নেক আমল
কবুল হওয়া
নির্ভর করে
ঈমানের ওপর, আল্লাহ তাআলা ওয়াদার
বরখেলাফ হওয়া সম্ভব নয়।
আখেরাতে ছওয়াব
প্রদানের স্থানই
হলো জান্নাত।
অতত্রব, মুমিন মাত্রই
জান্নাত যাবে।
আজাব ভোগ
করার পর
অথবা কোনো
আজাব ব্যতিতই
আল্লাহ তাআলা
তাকে জান্নাত
নসিব করবেন।
তাফসিরে মাজহারি-১০খণ্ড; ১৯২-১৯৩ পৃষ্ঠা, তাফসিরে জালালাইন
৫ম খণ্ড; ৫৮৭পৃষ্ঠা; আইছারুত্তাফাসির; বুরহানুল কুরআন-৩/১২২
তথ্যসূত্র: মহান আল্লাহর
নিকট একজন
মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা-মূল্য, ৮০-৯৪
পৃষ্ঠা
লেখক,
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস লিলআদব)
ধর্ম শিক্ষক,
বাংলাদেশ
সেনাবাহিনী।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট
আর্টিলারি, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
জিজ্ঞাসা-২৩৯: মুহতারাম আল্লাহ্ আপনাকে তারাক্কি দান করুন, প্রশ্ন
হলো - কালেমা পড়লেই বেহেশতে যাবে কিন্তু
আত্নহত্যা কারীর জান্নাত হারাম। সহীহ বুখারীর বর্ণনা। সঠিক ব্যখ্যা কামনা করছি। আরটি আতিক, 43 বীর। তারিখ-৩০/০৭/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি আতিক, 43 বীর
শেখ হাসিনা সেনানিবাস বরিশার-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
স্বামীকে
তালাক দেওয়ার পদ্ধতি |
জিজ্ঞাসা-২৪০: মুহতারাম আসসালামু আলাইকুম। স্বামী
স্ত্রী কে যদি না ছাড়ে স্ত্রী কোন উপায়ে স্বামী কে ছাড়তে পারবে? আরটি রফিক ৩৩এসটি, সাভার। তারিখ-৩০/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি রফিক ৩৩এসটি, সাভার
সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
সালাম ও তাসলিমবাদ, প্রথম কথা হলো স্ত্রীকে আমভাবে
স্বামীকে তালাক দেওয়ার অধিকার নেই। বরং
স্ত্রী বিনাকারণে তালাক চায়লে কঠিক ধমক
এসেছে-যেমন,
عَنْ ثَوْبَانَ، أَنَّ رَسُولَ
اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا مِنْ غَيْرِ بَأْسٍ
فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الجَنَّةِ
হযরত সাওবান রাঃ থেকে
বর্ণিত। রাসূল (ﷺ)
ইরশাদ করেছেন, যদি কোন মহিলা তার উপর কোন কষ্ট না হবার পরও স্বামীর কাছে তালাক চায়,
তাহলে তার জন্য জান্নাতের ঘ্রাণও হারাম। তাখরিজ: জামে তিরমিজী-১১৮৭
প্রশ্ন: ক। স্বামীকে তালাক দেওয়ার কোন
পদ্ধতি/উপায় আছে কি?
উত্তর: ক। আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি যে,
নারীর স্বামীকে তালাক দেওয়া ক্ষমতা নেই, তবে
স্ত্রী যদি স্বামী থেকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়, তাহলে
স্বামীকে তালাক দিতে পারবে। ইসলামি
পরিভাষায় থাকে খোলা তালাক বলে। যাইহোক
কয়েকটি পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলো,
প্রথম পদ্ধতি:
খোলা তালাক: খোলা শব্দটি আরবি বাংলা অর্থ
হলো, বিচ্ছিন্ন হওয়া, বিচ্ছিন্ন করা,
সম্পর্ক ছেদ করা ইত্যাদি।
শরিয়তের পরিভাষায় খোলা তালাক বলা হয়, কোন কিছুর
বিনিময়ে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে স্বামী সে বিনিময়টি গ্রহণ করে
স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে; এ বিনিময়টি স্বামী কর্তৃক
স্ত্রীকে প্রদত্ত মোহরানা হোক কিংবা এর চেয়ে বেশি সম্পদ হোক কিংবা এর চেয়ে কম হোক।
দলিল:
কুরআনের বাণী-
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا
حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا
تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ
الظَّالِمُونَ [٢:٢٢٩
অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে,তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ
বজায় রাখতে পারবে না,তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময়
দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়,তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ
নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ
যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম।
[সূরা বাকারা-২২৯]
হাদিসের বাণী-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ
امْرَأَةَ ثَابِتِ بْنِ قَيْسٍ أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ:
يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثَابِتُ
بْنُ قَيْسٍ، مَا أَعْتِبُ عَلَيْهِ فِي خُلُقٍ وَلاَ دِينٍ، وَلَكِنِّي أَكْرَهُ
الكُفْرَ فِي الإِسْلاَمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «أَتَرُدِّينَ عَلَيْهِ
حَدِيقَتَهُ؟» قَالَتْ: نَعَمْ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «اقْبَلِ الحَدِيقَةَ
وَطَلِّقْهَا تَطْلِيقَةً
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে,
সাবিত ইবনু কায়স এর স্ত্রী নাবী (ﷺ) -এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)
চরিত্রগত বা দ্বীনী বিষয়ে সাবিত ইবনু কায়সের উপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি
ইসলামের ভিতরে থেকে কুফরী করা অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পছন্দ করছি না।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ
তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি বাগানটি গ্রহণ কর এবং মহিলাকে
এক তালাক দিয়ে দাও। বুখারী-৫২৭৩
ফুকাহয়ে কেরামের মতামত:
وأما ركنه فهو كما فى البدائع: إذا كان بعوض الإيجاب والقبول، لأنه عقد على الطلاق
بعوض، فلا تقع الفرقة ولا يستحق العوض بدون القبول (رد المحتار-3/441، دار الفكر)
وقد اعتبر الحنفية ركن الخلع هو
الإيجاب والقبول، لأنه عقد الطلاق بعوض، فلا تقع الفرقة ولا يستحق العوض بدون
القبول (الفقه الاسلامى وادلته-9/7015، دار الفكر)
الخلع جائز عند السلطان وغيره،
لأنه عقد يعتمد التراضى كسائر العقود، وهو بمنزلة الطلاق بعوض، وللزوج ولاية إيقاع
الطلاق، ولها ولاية التزام العوض، فلا معنى لاشتراط حضرة السلطان فى هذا العقد (المبسوط للسرخسى-6/173، دار المعرفة
সারকথা হলো, এ ক্ষেত্রেও স্বামীর অনুমতি
লাগবে। সূত্র: রদদুল মুখতার-৩/৪৪১ পৃষ্ঠা, আল-মাসবুত লিল
সারাখসি-৬/১৭৩ পৃষ্ঠা
দ্বিতীয় পদ্ধতি:
প্রচলিত বাংলাদেশ প্রচলিত
মুসলিম পারিবারিক আইন-১৯৬১ নিকাহ ও তালাক নামার ১৮ নং কলামে
একটি ধারা রয়েছে। অর্থাৎ স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার।
এখানে যদি স্বামী তার
স্ত্রীকে তালাক পতিত করার অধিকার প্রদান করে থাকে, তা জেনেশুনে স্বামী উক্ত কাবিন
নামার নিচে সাইন করে থাকে, তাহলে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নিজের
উপর তালাক পতিত করার অধিকারপ্রাপ্তা হয়। তখন উপরোক্ত
ধারা অনুপাতে স্বামী লিখিত তালাকের শর্ত পাওয়া গেলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত
করার অধিকার পাবে।
যদি শর্ত না পাওয়া যায়, কিংবা স্বামী স্ত্রীকে তালাকের
অধিকার প্রদান না করে থাকে, তাহলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক
পতিত করার অধিকার পায় না।
তৃতীয় পদ্ধতি:
উপরে দুটি পদ্ধতি না হলে, পারিবারিকভাবে গ্রাম্য সালিশ বা গ্রহণযোগ্য উলামা সমন্বিত পঞ্চায়েতের মাধ্যমে উক্ত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা
করা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا
حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلَاحًا
يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا
অর্থ: দি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই
আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে
একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে
আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত। সূরা নিসা-৩৫
চতুর্থ পদ্ধতি:
উপরে সব পদ্ধতি যদি ফেল হয় আর স্বামী যদি জালেম/অযোগ্য হয়, তার
সাথে সংসার করা সম্ভব না হয়, তাহলে স্ত্রীর উচিত তার স্বামীর
বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা। আদালতের মাধ্যমে স্বামীকে
তালাক দিতে বাধ্য করানো।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
কোরআানের/ইসলামের আলোকে
সৈনিক জীবন |
জিজ্ঞাসা-২৪১: "কোরআানের আলোকে সৈনিক জীবন"
শীর্ষক বিষয়ে কারো কাছে কোন আর্টিকেল থাকলে গ্রুপে দেন, উপকৃত
হব। তারিখ-০৭/০৭/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি মোঃ কুতুব উদ্দিন, বানৌজা তিতুমীর, শহর
খালিশপুর, খুলনা, বাংলাদেশ নৌবাহিনী-এর
প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের
জীবন দান করুন।)
জবাব:
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ ও সানার পর কথা এই যে, "কোরআানের/ইসলামের আলোকে সৈনিক জীবন" কিছু লেখার ইচ্ছা রাখি।
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق
والمعين
ক। হালাল
রিজিক অন্বেষণের একটি অংশ: হালাল রিজিক খাওয়া
প্রত্যেক মুমিনের ওপর ফরজ। সামরিক পেশা হালাল রিজিকের অর্জনের একটি অন্যতম
পন্থা। হালাল খাওয়ার জন্য কুরআনের নির্দেশ
রয়েছে- যেমন,
মহান আল্লাহ বলেন, یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ
حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّهٗ لَکُمۡ
عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ অর্থ: হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে, তোমরা
তা আহার করো এবং কোনোক্রমেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের
প্রকাশ্য শত্রু। সূরা বাকারা-১৬৮
হজরত জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং বৈধ
উপায়ে জীবিকা অর্জন করো। কেননা কোনো প্রাণীই তার নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না করে
মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও কিছু বিলম্ব ঘটে। সুতরাং আল্লাহকে
ভয় করো এবং সৎভাবে জীবিক অর্জন করো। যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন
করো।’ ইবনে মাজাহ
হারাম মাল দ্বারা গঠিত শরীর জান্নাত হারাম: এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে-
وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بالحرَامِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
অর্থ: আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে
প্রতিপালিত হয়েছে, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
তাখরিজ: বায়হাক্বী- শু’আবুল
ঈমান-৫৭৫৯
খ। নামাজ সমাপান্তে রিজিক অর্জন করার নির্দেশ: ইসলাম শুধু নিছক ইবাদত-বন্দেগি পালনের ধর্ম নয়। বরং একটি
গুরুত্বপূর্ণ ফরজ সালাত আদায়ের আল্লাহর জমিনে রিজিক অন্বেষণের তাগিদ করেছেন। যেমন,
ইরশাদ হচ্ছে,
আয়াত নং-০১
﴿فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ
وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ
تُفۡلِحُونَ﴾ [الجمعة:10]
অর্থ: সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে
এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে, এবং আল্লাহকে অধিক স্মরন করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা জুমাআ-১০
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী (র.) বলেন:
فاذا فرغتم من الصلاة فانتشروا في الأرض للتجارة والتصرع في حوائجكم
‘‘যখন নামায শেষ হয়ে যাবে, তখন তোমরা ব্যবসায়িক
কাজকর্ম ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়োজনাদি পূরণে বেড়িয়ে পড়ো। কুরতুবী, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ, আলজামেউ লি আহকামিল কুরআন, খ.১৮,পৃ.৯৬
আয়াত নং-০২
﴿وَءَاخَرُونَ يَضۡرِبُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ يَبۡتَغُونَ مِن فَضۡلِ
ٱللَّهِ وَءَاخَرُونَ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۖ﴾ [الجمعة:9]
‘‘আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে
পড়বে, কেউ আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে দেশভ্রমন করবে এবং কেউ
কেউ আল্লাহর পথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। সূরা মুযযাম্মিল-২০
أي مسافرين في الأرض يبتغون من فضل الله في المكاسب والمتاجر.
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
‘‘অর্থ্যাৎ যারা ব্যবসা-বানিজ্য ও রিযিক উপার্জনের বিভিন্ন উপায় অবলম্বনের
মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের অন্বেষায় পৃথিবীতে ভ্রমনরত। সূত্র: আবুল দিদা ইসমইল ইবন উমর ইবন
কাসীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৮/২৫৮
গ। হালাল রিজিক তালাশ করা শরিয়তের অনত্যম ফরজ: যেমন, হাদিস
শরিফে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ
فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ অন্যান্য ফরয কাজ আদায়ের সাথে হালাল রুযী-রোজগারের
ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরয। তাখরিজ: বায়হাক্বী- শু’আবুল
ঈমান-৮৩৬৭
কোন রিজিক উত্তম:
عن رافع بن خديج، قال: قيل:
يا رسول الله، أي الكسب أطيب؟
قال: «عمل الرجل بيده وكل بيع مبرور»
হযরত রাফে ইবনে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)কে
জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, সর্বোত্তম উপার্জন কোনটি? জবাবে তিনি বলেন: ব্যক্তির
নিজস্ব শ্রমলব্দ উপার্জন ও সততার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়। ইমাম আহমাদ, মুসনাদ, খ.৪, পৃ. ১৪১.
ঘ। ওয়াদা পূর্ণ করা:
একজন সেনাসদস্য রিক্রুট ট্রেনিং পর যখন পবিত্র কুরআন নিয়ে গ্রহণ করে। সে তার জীবন বিপন্ন করিয়ে হলেও নিজ
ও জাতিকে রক্ষা করবেন। আর ওয়াদা রক্ষার
ব্যাপারে আদেশ হলো, یٰۤاَیُّهَا
الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَوۡفُوۡا بِالۡعُقُوۡدِ অর্থ: ওহে মু’মিনগণ! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ
কর। সূরা মায়েদা-০১
ঙ। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ :
আয়াত নং-০১
وَ اَعِدُّوۡا لَهُمۡ مَّا اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ قُوَّۃٍ وَّ مِنۡ
رِّبَاطِ الۡخَیۡلِ تُرۡهِبُوۡنَ بِهٖ عَدُوَّ اللّٰهِ وَ عَدُوَّکُمۡ وَ
اٰخَرِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِهِمۡ ۚ لَا تَعۡلَمُوۡنَهُمۡ ۚ اَللّٰهُ یَعۡلَمُهُمۡ ؕ وَ
مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ یُوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ
اَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ
অর্থ: আর
প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি
সামর্থের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে,যেন প্রভাব পড়ে
আল্লাহর শত্রুদের ওপর এবং তোমাদের
শত্রুদের ওপর আর তারেকে ছাড়া অন্যান্যদের ওপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুত যা
কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোরা পরিপূর্ণভাবে
ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ
থাকবে না। সূরা আনফাল-৬০
আয়াত নং-০২
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا خُذُوۡا حِذۡرَکُمۡ فَانۡفِرُوۡا
ثُبَاتٍ اَوِ انۡفِرُوۡا جَمِیۡعًا
অর্থ: হে মুমিনগণ, নিজেদের অস্ত্র তুলে নাও এবং পৃথক পৃথক সৈন্যদলে কিংবা সমবেতভাবে বেরিয়ে
পড়। সূরা নিসা- ৭১
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তামূলক
ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিতেছেন। শত্রুর বিরুদ্ধে মুমিনের অস্ত্রের ব্যবস্থা
করা, নিজেদের
সংখ্যা করা। তাফসিরে ইবনে কাসির-৩য় খণ্ড; ১৭৪ পৃষ্ঠা, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন
চ। বিশ্ব মানবাধিকারী প্রতিষ্ঠার জন্য: অন্যায়ভাবে হত্যা করলে মানবতা
বিপন্ন হয়। সেক্ষেত্রে অসহায় জনতার আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আসে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী হত্যার বন্ধের জন্য
কাজ করছে। যেমন, ইরশাদ
হচ্ছে-
مِنۡ اَجۡلِ ذٰلِکَ ۚۛؔ کَتَبۡنَا عَلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ
اَنَّهٗ مَنۡ قَتَلَ نَفۡسًۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ اَوۡ فَسَادٍ فِی الۡاَرۡضِ
فَکَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ وَ مَنۡ اَحۡیَاهَا فَکَاَنَّمَاۤ
اَحۡیَا النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ
এ কারণেই আমি বানী ইসরাঈলের জন্য বিধান দিয়েছিলাম যে, যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা
যমীনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে সে যেন তামাম মানুষকেই হত্যা
করল। আর যে মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন তামাম মানুষকে
বাঁচালো। সূরা মায়েদা-৩২
ছ। অসহায়-মাজলুম মানবতাকে
রক্ষায় যুদ্ধের নির্দেশ: মহান আল্লাহ বলেন,
وَ مَا لَکُمۡ لَا تُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ
الۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الۡوِلۡدَانِ الَّذِیۡنَ
یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡ هٰذِهِ الۡقَرۡیَۃِ الظَّالِمِ اَهۡلُهَا
ۚ وَ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ وَلِیًّا ۚۙ وَّ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ
لَّدُنۡکَ نَصِیۡرًا
অর্থ: তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে এবং অসহায়
নারী-পুরুষ আর শিশুদের (রক্ষার) জন্য লড়াই করবে না, যারা দু‘আ করছে- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ যালিম
অধ্যূষিত জনপথ হতে মুক্তি দাও, তোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের
বন্ধু বানিয়ে দাও এবং তোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের সাহায্যকারী করে দাও। সূরা
নিসা-৭৫
উপরোক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে, জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী, ১৯৮৮ সালের ইউএন ইরান-ইরাক
মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের
মাধ্যমে যে অগ্রযাত্রার সূচনা হয়, পরবতীর্ বছরগুলোতে
দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাদারিত্ব ও কর্মস্পৃহার
মৃর্তপ্রতীক হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিজেদের অবস্হান সুসংহত করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫টি কন্টিনজেন্টকে ইউনাইটেড নেশনস ক্যাপাবিলিটি রেডিনেস
সিস্টেম (ইউএনপিসিআরএস-এর অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে।
অনন্য মাত্রার অধিকারী আফ্রিকা মহাদেশের ১৫০টির বেশি মিলিশিয়া বাহিনীর নিরন্তর
সংঘাতের পটভূমিতে নিবেদিতপ্রাণ নীল শিরস্ত্রাণধারী বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের
কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী আজ ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
বাংলাদেশ বর্তমানে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে ৯টি জাতিসংঘ
শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে। তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৯ মে ২০২২
জ। পেশাগত দায়িত্ববোধ: চাকুরী এটি জীবিকা নির্বাহে উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম
হিসেবে পরিগণিত। এসব চাকুরীর ক্ষেত্রে ইসলামের মূল দর্শন হলো প্রত্যেক চাকুরে
তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সচ্ছতার সাথে পালন করবে। রাসূল
(ﷺ) এ বিষয়ের
মূলনীতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
«كلكم راع، وكلكم مسئول عن رعيته »
অর্থ: তোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল।
তোমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ইমাম বুখারী-৮৯৩ ; ইমাম
মুসলিম-১৮২৯
ঝ। দেশ রক্ষা/সীমান্ত পাহারার ফজিলত:
হাদিস নং-০১
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ
الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ مِنَ الجَنَّةِ خَيْرٌ
مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا وَالرَّوْحَةُ يَرُوحُهَا العَبْدُ في سَبِيلِ
اللهِ تَعَالَى أَوِ الغَدْوَةُ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا متفقٌ
عليه
সাহল ইবনে সা’দ সায়েদী (রা.)হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) বলেছেন, আল্লাহর রাহে একদিন সীমান্ত প্রহরায় রত থাকা, পৃথিবী
ও ভূ-পৃষ্ঠের যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা উত্তম। আর তোমাদের কারো একটি বেত্র পরিমাণ জান্নাতের
স্থান, দুনিয়া তথা তার পৃষ্ঠস্থ যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা
শ্রেষ্ঠ। আর তোমাদের কোন ব্যক্তির আল্লাহর পথে (জিহাদ কল্পে) এক সকাল অথবা এক
সন্ধ্যা গমন করা পৃথিবী ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। বুখারী-২৮৯২, মুসলিম ৪৯৮২-৪৯৮৩
হাদিস নং-০২
عَنْ سَلمَانَ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُرِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ
وَقِيَامِهِ وَإنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِيْ كَانَ يَعْمَلُ
وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَأَمِنَ الفَتَّانَ رواه مسلم
সালমান (রা.)হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ )
কে বলতে শুনেছি যে, একদিন ও একরাত সীমান্ত প্রহরায় রত থাকা, একমাস ধরে
(নফল) রোযা পালন তথা (নফল) নামায পড়া অপেক্ষা উত্তম। আর যদি ঐ অবস্থায় মৃত্যু বরণ
করে, তাহলে তাতে ঐ সব কাজের প্রতিদান দেওয়া হবে, যা সে পূর্বে করত এবং তার বিশেষ রুযী চালু ক’রে
দেওয়া হবে এবং তাকে (কবরের) ফিৎনা ও বিভিন্ন পরীক্ষা হতে মুক্ত রাখা হবে। তাখরিজ:
মুসলিম-৫০৪৭
হাদিস নং-০৩
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُعَيْنَانِ لاَ تَمسُّهُمَا النَّارُ : عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ
تَحْرُسُ فِي سَبيلِ اللهِرواه الترمذي وقال حديث حسن
ইবনে আব্বাস (রা.)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) কে বলতে শুনেছি যে, দুই প্রকার চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন
স্পর্শ করবে না। আল্লাহর ভয়ে যে চক্ষু ক্রন্দন করে। আর যে চক্ষু আল্লাহর পথে
প্রহরায় রত থাকে। তাখরিজ: তিরমিযী-১৬৩৯
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের যদি নিয়ত সহিহ থাকে ইনশাল্লাহ সেই উপরোক্ত
হাদিসগুলোর ফজিলত প্রাপ্ত হবে। যেমন, হাদিসে বলা হয়েছে-
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ (ﷺ) " إِنَّمَاا لْعَمَلُ بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لاِمْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ
وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ (ﷺ) وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى
دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ
إِلَيْهِ ".
অর্থ: আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- সকল কর্মই নিয়তের
ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক মানুষের জন্য তা-ই রয়েছে যা সে
নিয়ত করে। অতত্রব, যার হিজরত আল্লাহ
ও তার রাসূলের দিকে (উদ্দেশ্য) হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকেই
(পরিগণিত) হবে। হিজরত দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে কিংবা কোন নারীকে
বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হবে; তার হিজরত সে
দিকেই গণ্য হবে, যে উদ্দেশ্য সে হিজরত করেছে। বুখারি-০১৫৪, ২৫২৯; মুসলিম-১৯০৭; তিরমিজি-১৬৪৭; আবু দাউদ-২২০১; নাসায়ি-৭৫; আহমদ-১৬৮
বিস্তারিত
দেখুন, “সৈনিক জীবনে দৈনন্দিন
কার্যকলাপে ইসলাম” (প্রকাশিতব্য) লেখক, আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
শুধু কন্যার জন্য সমস্ত সম্পদ লিখে দেওয়া
জায়েজ আছে কি? |
জিজ্ঞাসা-২৪৪: কোনো ব্যক্তির যদি পুত্র সন্তান
না থাকে, তাহলে তার জীবদ্দশায় সমস্ত সম্পদ কন্যা সন্তানকে
লিখে দিতে পারবে কিনা? অথবা কী পরিমাণ সম্পদ লিখে দিতে পারবে? দলিলসহ
জানতে চাই। তারিখ-১১/০৮/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি হারুনুর রশিদ, ৯
ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, রামু সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে।)
জবাব:
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ ও সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার
জন্য দুভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। কোনো ব্যক্তির যদি পুত্র সন্তান
না থাকে, তাহলে তার জীবদ্দশায় সমস্ত সম্পদ কন্যা সন্তানকে
লিখে দিতে পারবে কিনা?
উত্তর: ক। আমরা জানি যদি কোন ব্যক্তির পুত্র সন্তান না
থাকে, তাহলে তার মৃত্যুর ভাই/ভাতিজা বা
অন্যারা তার সম্পদের অংশ পাবে। যা ইসলামি শরিয়াহ নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং অন্যান্য ওয়ারিশ বিদ্যমান থাকা অবস্থায়
সব সম্পদ কন্যাকে দেওয়া জায়েজ নেই। দলিল:
মহান আল্লাহ তাআলা মিরাছ
বণ্টনের পর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন-
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَن
يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا
الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
وَمَن يَعْصِ اللَّهَ
وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ
عَذَابٌ مُّهِينٌ
অর্থ: এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা।
যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের আদেশমত চলে,
তিনি
তাকে জান্নাত সমূহে প্রবেশ করাবেন,
যেগুলোর
তলদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য।
যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ
করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। সূরা নিসা-১৩,১৪
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ فَرَّ مِنْ مِيرَاثِ وَارِثِهِ، قَطَعَ اللَّهُ
مِيرَاثَهُ مِنَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
অর্থ- হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ
করেছেন, যে ব্যক্তি ওয়ারিসকে
মিরাস থেকে বঞ্চিত করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের মিরাস থেকে
বঞ্চিত করবেন। তাখরিজ: মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৬/২১৫;
ইবনে মাজাহ- ২৭০৩; সুনানে সাঈদ বিন মানসূর-২৮৫
প্রশ্ন: খ। কী পরিমাণ সম্পদ লিখে দিতে পারবে?
উত্তর: খ। আমরা পূর্বে
উল্লেখ করেছি যে, কন্যাকে সম্পদ লিখে দিতে পারবে না। আপনার
প্রশ্ন দ্বারা হয়তো একথা বুঝাতে চেয়েছেন যে,
তার
জন্য কতটুকু অংশ অসিয়াত করতে পারবেন।
প্রথম কথা হলো, মোট সম্পদের এক তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করা জায়েয নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ্
(ﷺ) সা‘আদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেছেন,
«أُوصِي بِمَالِي كُلِّهِ؟ قَالَ:
«لاَ» ، قُلْتُ: فَالشَّطْرُ، قَالَ: «لاَ» ، قُلْتُ: الثُّلُثُ، قَالَ:
«فَالثُّلُثُ، وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ».
অর্থ: “হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), আমি কি আমার সমুদয় মালের অসিয়ত করে যাব?
তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি
বললাম, তবে এক তৃতীয়াংশ। তিনি বললেন, আর
এক তৃতীয়াংশও অনেক।” তাখরিজ-বুখারী- ২৫৯১;
সহীহ মুসলিম-১৬২৮; তিরমিজি- ২১১৬; আবু দাউদ-২৮৬৪
দ্বিতীয় কথা হলো, ওয়ারিশদের জন্য অসিয়ত জায়েজ নেই এবং তা কার্যকর হবে না। দলিল:
ولذلك قال صلى الله عليه وسلم :
( إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَعْطَى كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ ، فَلَا وَصِيَّةَ
لِوَارِثٍ ) رواه أبو داود (2870) والترمذي (2120) والنسائي (3671) وابن ماجه
(2713) ي في صحيح أبي داود
অর্থ: রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেকের অধিকার যথাযথভাবে বর্ণনা
করেছেন, সুতরাং ওয়ারিশদের জন্য কোনো অসিয়ত নেই। তাখরিজ: আবু দাউদ-২৮৭০ তিরমিজি-২১২০; ইবনে মাজাহ-২৭১৩
এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “কোন একজন নারী বা পুরুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ঘাট বছর আমল
করল। অতঃপর যখন মৃত্যু উপস্থিত হলো তখসন তারা ওসিয়্যাতের ক্ষেত্রে অন্যের অনিষ্ট করলো।
তাহলে উভয়ের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে যাবে। তাখরিজ: তিরমিজি-২১১৭
অর্থাৎ অসিয়তকারীর মৃত্যুর সময় সে তার ওয়ারিশ হতে পারবে না। অবশ্য এ শর্তটি তখনই
প্রযোজ্য হবে, যখন অসিয়তকারীর অন্য কোনো ওয়ারিশ বিদ্যমান থাকে।
অন্য কোনো ওয়ারিশ না থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ওয়ারিশ হলেও তার জন্য অসিয়ত করা যাবে।
প্রশ্ন: গ।
একমাত্র কন্যাকে অসিয়াতের মাধ্যমে এক তৃতীয়াংশ সম্পদের মালিক বানানোর কোন
সুয়োগ আছে কি?
উত্তর: গ। হ্যাঁ, একটি
ছুরুত আছে। অন্যান্য ওয়ারিস যদি অনুমোদন করে তাহলে ওসিয়্যাত করা যাবে, (উল্লেখ্য যে, অনুমদনটা খুশিমনে হতে হবে, কোন চাপ/প্রভাব খাটিয়ে অনুমতি নিলে হবে না)। এই নিষেধাজ্ঞা ছিল তাদের অধিকারের কারণে। সুতরাং তাদের অনুমোদন প্রদানের কারণে
তা জায়িয হবে। সূত্র: “বুরহান উদ্দীন আলী ইবন আবুবকর আল মারগীনানী, আল হিদায়া, প্রাগুক্ত, পৃ: ৫১৭; “মাওলানা উবায়দুল হক ও অন্যান্য সম্পাদিত, ফাতাওয়া ও মাসাইল, প্রাগুক্ত, পৃ: ৪৭৯,৪৮০
সারকথা কথা হলো, শুধু কন্যাকেই সুমদয় সম্পত্তি লিখে দেওয়া জায়েজ নেই, হারাম। আর ওয়ারিশদের জন্য অসিয়ত
করা যায় না। তবে এক তৃতীয়াংশ সম্পদ অসিয়ত করা যাবে বাকি ওয়ারিশদের সন্তুষ্টিচিত্তে
অনুমোদন থাকলে।
বসে বসে ঘুমালে কি অজু যাবে? |
জিজ্ঞাসা-২৪৫: আসসালামুয়ালাইকুম আমার জানার বিষয়
হল, মসজিদে বসে অনেকে ঘুমায় বিশেষ করে শুক্রবারে এবং
এ অবস্থায় নামাজ পড়ে! তাদের কি নামাজ হবে?তারিখ-১২/০৮/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আর্টি আব্দুল্লাহ
আল-ফারুক এএমসি সেন্টার,ঘাটাইল,
শহীদ সালাহ উদ্দিন সেনানিবাস-এর প্রশ্নের
আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান
করুন।)
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ-সানা ও তাসলিমবাদ কথা হলো,
স্বাভাবিক বসা অবস্থায় ঘুমালে ওজু ভাঙ্গে না। তবে পিলার বা যেকোনো
কারো সাথে হেলান/ঠেস লাগিয়ে ঘুমালে ওজু ভেঙ্গে যাবে। দলিল:
ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لَيْسَ عَلَى مَنْ نَامَ
سَاجِدًا وُضُوءٌ، حَتَّى يَضْطَجِعَ، فَإِنَّهُ إِذَا اضْطَجَعَ، اسْتَرْخَتْ
مَفَاصِلُهُ
সেজদা অবস্থায় ঘুমালে অযু ভঙ্গ
হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা, চিৎ
বা কাত হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বায়ু হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে]।
তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ ২৩১৫ আবু দাউদ ২০২
উপরোক্ত হাদিসের ওপর ভিত্তি
ফুকাহায়ে কেরামগণ বলেছেন যে, হেলান দিয়ে বা ঠেস লাগিয়ে ঘুমালে ওজু ভেঙ্গে যাবে।
সারকথা: আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত জুমাআর
দিনে মসজিদে স্বাভাবিক (কারো সাথে হেলান না দিয়ে ঘুমালে)
অবস্থায় বসে বসে ঘুমালে তাদের নামাজ সহিহ হবে। সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে-১/১৩৫;ফাতওয়া খানিয়া-১/৪১; খুলাসাতুল ফাতওয়া-১/১৯
জিজ্ঞাসা-২৪৬: মুহতারাম আমার জিজ্ঞাসা হলো মোয়াজ্জেন
আজান শুরু করেছে এমন সময় জামায়াতের সময় বাকি আছে পাঁচ মিনিট এখন আমি সুন্নাহর নিয়ত
করব না আজানের জবাব দিব দলিলসহ জানালে উপকৃত
হবো ইনশাআল্লাহ। তারিখ-১৪/০৮/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি নেছার উদ্দীন ব্যানএমপি ১৭ কংগো -এর
প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে বিদেশের মাটিতে শান্তি ও নিরাপদে রাখুন।)
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ ও সানার পর প্রথম কথা
এই যে, আজান হলো
শিয়ারে ইসলাম (ইসলামের প্রতীক) ও জবাব
দেওয়া অনেক ফজিলতের কাজ। যেমন,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رضي الله عنهما، أَنَّ رَجُلًا قَالَ: " يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الْمُؤَذِّنِينَ يَفْضُلُونَنَا، فَقَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قُلْ كَمَا يَقُولُونَ، فَإِذَا انْتَهَيْتَ فَسَلْ
تُعْطَهْ
"
অর্থ: আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) হতে বর্ণনা
করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর বলেন, এক ব্যক্তি
বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! মুয়াজ্জিনরা তো আমাদের ওপর ফজিলত প্রাপ্ত
হচ্ছে (আমাদের চেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী হচ্ছে)। আমরা কিভাবে তাদের সমান সওয়াব পাব?
তিনি
বলেন, মুয়াজ্জিনরা যেরুপ বলে,
তুমিও
তদ্রুপ বলবে। অত:পর যখন আজান শেষ করবে,
তখন
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলে তুমিও তদ্রুপ সওয়ার প্রাপ্ত হবে। তাখরিজ: সহীহ আবু দাউদ-৫২৪ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
দ্বিতীয় কথা হলো, ফুকাহায়ে আহনাফের মতে, আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া মুস্তাহাব এবং কার্যকরীভাবে জওয়াব দেয়া অর্থাৎ
নামাযের জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব।
وفى الدرالمختار: ان سمع المسنون وهوماكان عربيا لا لحن فيه-
وفى الشامى: الظاهر أن المراد
ماكان مسنونا جميعه فلوكان بعض كلماته غيرعربى اوملحونا لاتجب عليه الإجابة فى
الباقى لأنه حينئذ ليس اذانا مسنونا- [الفتاوى الشامى 1/397
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ছুরুতে, যেহেতু আজানের জবাব দিতে গেলে সুন্নাত ছুটে
যাবে, সুতরাং এমতাবস্থায় আজানের
জবাব না দিয়ে, সুন্নাত
পড়বেন, সুন্নাত পড়াটই প্রধান্য
পাবে। সূত্র: ফাতওয়ায়ে শামি-১/৩৯৭; আসসিআয়াহ ২/৫১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৯
নামাজের
মধ্যে কান্না প্রসঙ্গে |
জিজ্ঞাসা-২৪৮: মুহতারাম আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম, ফরয
সালাত বা সুন্নাত সালাতের মাঝে নিজের পাপের কথা স্মরণ করে কান্নাকাটি করে তাতে সালাতের
কোন ক্ষতি হবে কি না, জানতে চাই। তারিখ-১৫/০৮/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই Rt Saiful, Aspts, Mymenshingh. সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে
দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ-সানা ও তাসলিমবাদ, প্রথম কথা হলো, নিজের পাপের কথা স্মরণ হলে, তওবা-এস্তেগফার করা খুবই প্রশংসনীয়। আর কাঁদা তওবারই চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। যেমন
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ
الَّذِیۡنَ اِذَا فَعَلُوۡا فَاحِشَۃً اَوۡ ظَلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ ذَکَرُوا
اللّٰهَ فَاسۡتَغۡفَرُوۡا لِذُنُوۡبِهِمۡ ۪ وَ مَنۡ یَّغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ اِلَّا
اللّٰهُ ۪۟ وَ لَمۡ یُصِرُّوۡا عَلٰی مَا فَعَلُوۡا وَ هُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ
আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে
অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য
ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে ? আর তারা যা
করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না। সূরা ইমরান-১৩৫
দ্বিতীয় কথা হলো, নামাজের মধ্যে কাঁদলে নামাজ
ভেঙ্গে যাবে কিনা?
এর জবাব হলো আল্লাহর ভয়-মহব্বতে, দোযখের
ভয়ে নামাজে কাঁদলে, চোখের পানি প্রবাহিত হলে কোন সমস্যা নেই।
দলিল:
আয়াতে
কারিমা
وَ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ
یَبۡکُوۡنَ وَ یَزِیۡدُهُمۡ خُشُوۡعًا
আর তারা কাঁদতে কাঁদতে
লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। সুরাবনি ইসরাঈল-১০৯
হাদিসে নববি:
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى) رواه أبو داود (1319) " .
روى أبو داود (904) والنسائي
(1214) – واللفظ له - عن عبد الله بن الشّخّير رضي الله عنه قَالَ : أَتَيْتُ
النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُصَلِّي وَلِجَوْفِهِ
أَزِيزٌ كَأَزِيزِ الْمِرْجَلِ [القِدْر] - يَعْنِي يَبْكِي " .
অর্থ: মুত্বাররিফ ইবনু আব্দুল্লাহ
বিন শিখখীর (রহঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমি নবী করীম (ﷺ) এর নিকট আসলাম। তখন তিনি ছালাত আদায়
করছিলেন এবং তাঁর ভিতর থেকে টগবগে আওয়াজ হচ্ছিল যেমন ডেগের ফুটন্ত পানির টগবগ
আওয়াজ হয়। অর্থাৎ তিনি কান্নাকাটি করছিলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ) কে ছালাত আদায় করতে দেখেছি। এমতাবস্থায়
তাঁর বুকের মধ্যে চাক্কির আওয়াজের ন্যায় কান্নার আওয়াজ হ’তে থাকত। তাখরিজ: আববু দাউদ-৯০৪; নাসাঈ হা/১২১৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৪৪; মিশকাত হা/১০০০
তৃতীয়
কথা হলো, নামাজের মধ্যে চুপ থাকার নির্দেশ
দেওয়া হয়েছে,
দলিল:
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ وَقُومُوا
لِلَّهِ قَانِتِينَ
অর্থ: সমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান
হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে
একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও। সূরা বাকারা-২৩৮
হাদিস
নং-০১
حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ إِسْمَاعِيْلَ بْنِ أَبِيْ خَالِدٍ عَنِ
الْحَارِثِ بْنِ شُبَيْلٍ عَنْ أَبِيْ عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ عَنْ زَيْدِ بْنِ
أَرْقَمَ قَالَ كُنَّا نَتَكَلَّمُ فِي الصَّلَاةِ يُكَلِّمُ أَحَدُنَا أَخَاهُ
فِيْ حَاجَتِهِ حَتَّى نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ {حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوٰتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا
لِلهِ قَانِتِيْنَ}
فَأُمِرْنَا بِالسُّكُوْتِ
অর্থ: জায়েদ
ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, ‘আমরা নামাজে কথা বলতাম। নামাজি ব্যক্তি তার পাশের ব্যক্তির সঙ্গে নামাজে
কথা বলত। অতঃপর যখন ওয়া কু-মু-লিল্লাহি ক্বানিতিন... এই আয়াত অবতীর্ণ হলো— তখন আমাদের চুপ থাকার আদেশ দেওয়া হয় এবং কথা বলতে নিষেধ করা হয়। তাখরিজ:
মুসলিম- ৫৩৯; বুখারি-৪৫৩৪
হাদিস
নং-০২
মুআবিয়া ইবনে হাকাম আসসুলামি
(রা.) বলেন, রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘নামাজে কোনো ধরনের কথাবার্তা
বলার সুযোগ নেই, এ তো হলো তাসবিহ, তাকবির
ও কোরআনের তিলাওয়াত। তাখরিজ: মুসলিম-৫৩৭
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنَا أَبُو جَعْفَرٍ،
مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ - وَتَقَارَبَا فِي لَفْظِ الْحَدِيثِ - قَالاَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ،
عَنْ حَجَّاجٍ الصَّوَّافِ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ هِلاَلِ بْنِ
أَبِي مَيْمُونَةَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ الْحَكَمِ
السُّلَمِيِّ، قَالَ بَيْنَا أَنَا أُصَلِّي، مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه
وسلم إِذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ فَقُلْتُ يَرْحَمُكَ اللَّهُ . فَرَمَانِي الْقَوْمُ بِأَبْصَارِهِمْ فَقُلْتُ
وَاثُكْلَ أُمِّيَاهْ مَا شَأْنُكُمْ تَنْظُرُونَ إِلَىَّ . فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بِأَيْدِيهِمْ عَلَى
أَفْخَاذِهِمْ فَلَمَّا رَأَيْتُهُمْ يُصَمِّتُونَنِي لَكِنِّي سَكَتُّ فَلَمَّا
صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبِأَبِي هُوَ وَأُمِّي مَا رَأَيْتُ
مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلاَ بَعْدَهُ أَحْسَنَ تَعْلِيمًا مِنْهُ فَوَاللَّهِ مَا
كَهَرَنِي وَلاَ ضَرَبَنِي وَلاَ شَتَمَنِي قَالَ " إِنَّ هَذِهِ الصَّلاَةَ لاَ يَصْلُحُ فِيهَا شَىْءٌ
مِنْ كَلاَمِ النَّاسِ إِنَّمَا هُوَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ وَقِرَاءَةُ
الْقُرْآنِ
"
আবূ জাফার মুহাম্মাদ ইবনুস্
সাব্বাহ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ) ..... মু'আবিয়াহ ইবনুল হাকাম আস সুলামী
(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক
সময় আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর
সাথে সলাত আদায় করছিলাম। ইতোমধ্যে (সলাত আদায়কারীদের মধ্যে) কোন একজন লোক হাচি
দিলে (জবাবে) আমি "ইয়ারহামুকাল্প-হ" (অর্থাৎ- আল্লাহ তোমার প্রতি রহম
করুন) বললাম। এতে সবাই রুষ্ট দৃষ্টিতে আমার প্রতি তাকাতে থাকল। তা দেখে আমি বললামঃ
আমার মা আমার বিয়োগ ব্যথায় কাতর হোক। (অর্থাৎ এভাবে আমি নিজেকে ভৎসনা করলাম)। কি
ব্যাপার! তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ যে? তখন তারা নিজ নিজ উরুতে হাত চাপড়াতে থাকল।
(আমার খুব রাগ হওয়া সত্ত্বেও) আমি যখন দেখলাম যে, তারা
আমাকে চুপ করাতে চায় তখন আমি চুপ করে রইলাম।
পরে রসূলুল্লাহ (ﷺ) সলাত শেষ করলে আমি তাকে সবকিছু বললাম। আমার
পিতা ও মাতা তার জন্য কুরবান হোক। আমি ইতোপূর্বে বা এর পরে আর কখনো অন্য কোন
শিক্ষককে তার চেয়ে উত্তম পন্থায় শিক্ষা দিতে দেখিনি। আল্লাহর শপথ করে বলছি, তিনি আমাকে ধমকালেন না বা
মারলেন না কিংবা বকাঝকাও করলেন না। বরং বললেনঃ সলাতের মধ্যে কথাবার্তা ধরনের কিছু
বলা যথোচিত নয়। বরং প্রয়োজনবশতঃ তাসবীহ, তাকবীর বা কুরআন
পাঠ করতে হবে। তাখরিজ: মুসলিম শরীফ ১০৮৬
হাদিস/আসার নং-০৪
ইবনে জুরাইজ (রহ.) বলেন, আমি আতা (রহ.)-কে জিজ্ঞেস
করলাম, আমি যদি নামাজে ভুলে কথা বলে— ফেলি
(তাহলে এর কী হুকুম হবে?) তিনি বললেন, মুখে
উচ্চারণ করে? আমি বললাম, হ্যাঁ,
তিনি বললেন, তাতে তোমার নামাজ ফাসেদ হয়ে গেছে।
নতুন করে আবার পড়তে হবে। তাখরিজ: মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক-৩৫৬৬
হাদিস/আসার নং-০৫
ইবরাহিম নাখায়ি, কাতাদা ও হাম্মাদ (রহ.) প্রমুখ
তাবেয়ি থেকেও অনুরূপ বক্তব্য বর্ণিত আছে। তাখরিজ: মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক-৩৫৭১,
৩৫৭৩
উপরোক্ত আয়াতে কারিমা ও
হাদিসে নববির ওপর ভিত্তি করে ফুকাহায়ে কেরামগণ বলেন, নামাজের ভেতর কথা বলা। নামাজে
এমন কোনো অর্থবোধক শব্দ করা, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে
যায়। (হোক সেটা এক অক্ষর বা দুই অক্ষরে ঘটিত) তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে। সূত্র:
ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়েক : ২/২
নিম্নে কয়েকটি প্রশ্নের অবতারণা করছি বুঝার সহজের জন্য।
প্রশ্ন: ক। উহ আহ শব্দ দ্বারা কি নামাজ ফাসেদ/বাতিল হয়ে যাবে?
উত্তর: ক। নামাজে উহ্-আহ্ শব্দ করলে নামাজ ভেঙে যায়।
নামাজরত অবস্থায় কোনো ব্যথা কিংবা দুঃখের কারণে উহ্-আহ্ শব্দ করলে নামাজ ভেঙে
যাবে। সূত্র: আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬১৯; আল-বাহরুর রায়েক : ২/৪; মারাকিল ফালাহ ১/১২১
প্রশ্ন: খ। দুনিয়াবি/বিপদের কারণে কাঁদলে কি নামাজ বাতিল হবে?
উত্তর: খ। বিপদে কিংবা
বেদনায় শব্দ করে কাঁদা। দুনিয়াবি কোনো বিপদ-আপদ কিংবা দুঃখের কারণে শব্দ করে
কাঁদলে নামাজ ভেঙে যায়। তাখরিজ: হাশিয়াতু তাহতাবি ১/৩২৫, ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৯,
নূরুল ইজাহ, পৃ. ৬৮
প্রশ্ন: গ। ইচ্ছাপূর্বক কান্নাকাটি করলে
কি নামাজ ফাসেদ হবে?
উত্তর: গ। হ্যাঁ, কান্না নিয়ন্ত্রণ
করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকরে / যদি কেউ কোনো শব্দ/কান্নাকাটি করলে,
যা দুনিয়বি কারণে হোক অথবা আখেরাতের ভয়ে হোক নামাজ ফাসেদ হবে। তবে
যদি অধিক কষ্টের কারনে অথবা জাহান্নামের কথা স্মরণ হওয়ায় অনিচ্ছায় কান্নার আওয়াজ
বেড়িয়ে আসে এবং তা রোধ করা সম্ভব না হয় তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না । সূত্র: রদ্দুল মুখতার-২/৩৭৭-৩৭৮
প্রশ্ন: ঘ। এ বিষয়ে সতর্কতা কি?
উত্তর: ঘ। এ বিষয়ে সতর্কতা হলো, কান্নার কারণে যদি দম বন্ধ হয়ে যায়/ কেরাত, দুআ ইত্যাদি পাঠ করতে অপরাগ হয়। তিন তাসবিহর বেশি সময় হলে সাহু সিজদা দিতে
হবে। সাহু সিজদা না দিলে নামাজ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। সূত্র: ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১২
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ছুরুতে উক্ত
ব্যক্তি নিজের গুনাহের কারণে নামাজে কান্না করা প্রসংশনীয়। যদি অনিচ্ছাকৃত কান্নার শব্দ বের হয়, তা মাফ কিন্তু ইচ্ছাকৃত করলে নামাজ বাতিল হবে। আর ঘ নং প্রশ্ন-উত্তরে
বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
নবিজির
কাছে এক যুবকের ব্যভিচারের অনুমতি প্রসঙ্গে |
জিজ্ঞাসা-২৪৭: আপনি
যদি আমাকে ব্যভিচারের অনুমতি দেন আমি ইসলাম কবুল করব" হাদিসটির এবারত সহ দরকার।
অরটি রফিক ৩৩এসটি সাভার
জবাব-২৪৭: সম্মানিত ভাই,
আপনি যে হাদিসটি বলেছেন, তা পুরো
সঠিক নয়। ব্যভিচারের অনুমতি চেয়েছেন ঠিক, কিন্তু
ইসলাম গ্রহণ করার শর্ত করেনি। হাদিসটি নিম্নরূপ:
أنَّ غلامًا شابًّا
أتى النبيَّ صلَّى
اللهُ عليهِ وسلَّم
فقال : يا نبيَّ
اللهِ أتأذنُ لي
في الزنا ؟
فصاح الناسُ به
, فقال النبيُّ صلَّى
اللهُ عليهِ وسلَّم
قَرِّبوهُ , ادْنُ فدنا
حتى جلس بين
يديْهِ , فقال النبيُّ
عليه الصلاةُ والسلامُ
: أتحبُّه لأُمِّكَ فقال
: لا , جعلني اللهُ
فداك , قال : كذلك
الناسُ لا يُحبُّونَه
لِأمَّهاتِهم , أتحبُّه لابنتِك
؟ قال : لا
، جعلني اللهُ
فداك قال : كذلك
الناسُ لا يُحبُّونَه
لبناتِهم , أتحبُّه لأختِك
؟ وزاد ابنُ
عوفٍ حتى ذكر
العمَّةَ والخالةَ , وهو
يقولُ في كلِّ
واحدٍ لا , جعلني
اللهُ فداك , وهو
صلَّى اللهُ عليهِ
وسلَّم يقولُ كذلك
الناسُ لا يُحبُّونَه
, وقالا جميعًا في
حديثِهما – أعني
ابنَ عوفٍ والراوي
الآخرَ - : فوضع رسولُ
اللهِ صلَّى اللهُ
عليهِ وسلَّم يدَه
على صدرِه وقال
: اللهمَّ طهِّرْ قلبَه
واغفر ذنبَه وحصِّنْ
فَرْجَه فلم يكن
شيءٌ أبغضَ إليه
منه .
رواه أحمد 5/ 256، والطبراني في المعجم الكبير 8/
162، 183، والبيهقي في شعب الإيمان 4/ 362 (5415
একবার এক যুবক রসূল ﷺ- এর কাছে এসে বলেছিল, 'হে আল্লাহর রসুল! আমাকে যিনা করার অনুমতি
দিন।' এ কথা শুনে উপস্থিত সবাই চমকে উঠলেও রসূল ﷺ স্নেহ ভরে তাকে কাছে ডাকলেন। তাকে প্রশ্ন
করলেন, 'তুমি কি
তোমার মায়ের জন্য এটা পছন্দ করবে?' যুবকটি বললো, 'না ইয়া রসুলুল্লাহ। আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি উৎসর্গিত করুন। কোনো মানুষই
তার মায়ের জন্য এটা পছন্দ করবে না।'
রসূল ﷺ
একে একে যুবকটিকে প্রশ্ন করলেন, তাহলে তোমার মেয়ের জন্য? তোমার বোনের
জন্য? তোমার ফুফুর জন্য? তোমার খালার
জন্য?
যুবক প্রতিবারই বিস্ময় এবং ঘৃণার সাথে বললো, 'কোনো
মানুষই এটা পছন্দ করতে পারে না।"
তারপর রসূল ﷺ তার শরীরে হাত রাখলেন এবং দুআ করলেন- 'ইয়া আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা
করুন, তার অন্তর পবিত্র করুন এবং চরিত্র রক্ষা করুন।'
নবি ﷺ -
এর কাছ থেকে এ শিক্ষা পাবার পর, যুবকটি পরবর্তী জীবনে রাস্তায় চলার সময়ও কোনো দিক চোখ তুলে
তাকাতো না। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ-৫/২৫৬; সুনানে বায়হাকি-৫৪১৫
বিদায়
প্রাক্কালে আল্লাহ হাফেজ বা ফি আমানিল্লাহ বলা প্রসঙ্গে |
জিজ্ঞাসা-২৪৯: মুহতারাম, আসসালামু আলাইকুম।
আশা করি ভালই আছেন। জানার বিষয় আমরা যে বিদায় প্রাক্কালে আল্লাহ হাফেজ বা ফি
আমানিল্লাহ বলি থাকি। এটা বলা কি বিদআত হবে দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম? তারিখ-১৫/০৮/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আমি আরটি-১২৫৬৮ মোজাম্মেল
হোসেন
সদর দপ্তর ২৪ আর্টিলারি ব্রিগেড গুইমারা রিজিয়ন, সেনানিবাস-এর
প্রশ্নের আলোকে। মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের
জীবন দান করুন।)
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ ও সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত
বাক্যদ্বয় অর্থাৎ “আল্লাহ হাফেজ/খোদা হাফেজ” ও “ফি আমানিল্লাহ” সরাসরি পবিত্র
কুরআন-হাদিসে
বর্ণিত হয়নি; তবে কাছাকাছি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে; তাছাড়া ‘হাফিজ’ আল্লাহ তাআলার একটি গুণবাচক নাম। যেমন,
فَاللَّهُ خَيْرٌ حَافِظًا
وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
"........... সুতরাং
আল্লাহই শ্রেষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু।" সূরা ইউসুফ-৬৪
أَسْتَوْدِعُ اللَّهَ دِينَكَ
وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيمَ عَمَلِكَ
অর্থঃ আমি আল্লাহর নিকট
তোমার দীন, আমানাত ও সর্বশেষ আমলের হিফাযাতের জন্য দু‘আ করছি। তাখরিজ: তিরমিজি- ৩৪৪২ অধ্যায়:
৪৫/ দুআসমূহ,
প্রথম কথা হলো, আল্লাহ হাফেজ ও ফি আমানিল্লাহ
দুটি অর্থবহ বাক্য । 'ফি আমানিল্লাহ' মানে আপনাকে আল্লাহর নিরাপত্তায় দিয়ে
দিলাম, তিনি যেন আপনাকে নিরাপদ রাখেন।
এটি মানুষের নিরাপত্তা কামনায় সুন্দর একটি দুআ। আর আল্লাহ হাফেজ
মর্মার্থ: আল্লাহ তাআলা তোমাকে হিফাজত করুন, বা তিনি হিফাজতকারী/রক্ষাকারী ইত্যাদি।
দ্বিতীয় কথা হলো, কোনো মুমিন অন্য মুমিনের
জন্য যে কোনো দুআ করতে পারেন, বরং কল্যাণকামিতাই দ্বীন। যেমন,
হাদিস নং-০১
عَنْ تَمِيمٍ الدَّارِيِّ
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
قَالَ:” الدِّينُ النَّصِيحَةُ
, فَقُلْنَا: لِمَنْ يَا
رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: لِلهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ “ অর্থ: হজরত আবু রুকাইয়া তামিম ইবনে আওস আদ-দারি (রা.)
হতে বর্ণিত। নবি
(ﷺ) ইরশাদ করেছেন, দীন ইসলামের মুল কথা হচ্ছে কল্যাণকামিতা।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার জন্য? তিনি বললেন,
মহান আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রসূল, মুসলমানদের ইমাম ও সমস্ত মুসলমানদের জন্য।
তাখরিজ : মুসলিম-৫৫; আবু দাউদ-৪৯৪৪; দারেমি-৪১৯৭; মুসনাদে আহমদ-১৬৯৪০
হাদিস নং-০২
عَنْ جَرِيرٍ قَالَ:
«بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ عَلَى إِقَامِ
الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ،
وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ»
অর্থ: জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট বায়আত
গ্রহণ
করেছি সালাত কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা এবং সমস্ত মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার ওপর। তাখরিজ : বুখারি-৫৭; মুসলিম-৫৬; তিরমিজি-১৯২৫; নাসায়ি-৪১৫৬; আহমদ-১৯১৯১
উপরোক্ত বাক্যেদ্বয় উত্তম
দুআর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং স্বাভাবিক অবস্থায়
বললে বিদআত হবে না। তবে এটাকে জরুরি বা বিদায়কালের সুন্নাত মনে করলে বিদআত হবে।
তৃতীয় কথা হলো, বিদায়ক্ষণে সুন্নাত হলো সালাম
দেওয়া এবং নিম্নের দোয়া পড়া। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ،
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ دَاوُدَ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ عُمَرَ،
عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ جَرِيرٍ، عَنْ قَزَعَةَ، قَالَ: قَالَ لِي ابْنُ عُمَرَ هَلُمَّ أُوَدِّعْكَ كَمَا
وَدَّعَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَسْتَوْدِعُ
اللَّهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيمَ عَمَلِكَ
কাযা‘আহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমাকে বললেন,
এসো তোমাকে ঐভাবে বিদায় জানাই, যেভাবে
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বিদায় দিয়েছেন, ‘‘আমি
আল্লাহর নিকট তোমার দীন, আমানাত ও সর্বশেষ আমলের হিফাযাতের
জন্য দু‘আ করছি। তাখরিজ: আবু দাউদ-২৬০০; তিরমিজি- ৩৪৪২ অধ্যায়:
৪৫/ দুআসমূহ
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ،
حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنِ ابْنِ عَجْلاَنَ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا انْتَهَى أَحَدُكُمْ إِلَى مَجْلِسٍ
فَلْيُسَلِّمْ فَإِنْ بَدَا لَهُ أَنْ يَجْلِسَ فَلْيَجْلِسْ ثُمَّ إِذَا قَامَ
فَلْيُسَلِّمْ فَلَيْسَتِ الأُولَى بِأَحَقَّ مِنَ الآخِرَةِ "
আবূ হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোন মাজলিসে উপস্থিত হলে সে যেন সালাম করে, তারপর তার ইচ্ছা হলে বসে পড়বে। তারপর সে যখন উঠে দাড়াবে, তখনো যেন সালাম করে। কেননা পরের সালামের চাইতে প্রথম সালাম বেশি
গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাখরিজ: তিরমিজি-
২৭০৬
হাদিস নং-০৩
নবীজী একটি মজলিসে ছিলেন, এক ব্যক্তি পাশ দিয়ে
অতিক্রমের সময় বলল, আস সালামু আলাইকুম। নবীজী বললেন,
দশ নেকি।... এক ব্যক্তি সালাম দেয়া ছাড়া উঠে গেল। তখন নবীজী বললেন,
সে মনে হয় ভুলে গেছে। যখন তোমাদের কেউ কোনো মজলিসে পৌঁছবে তখন
সালাম দিবে। যদি উক্ত মজলিসে বসতে চায় বসবে। এরপর যখন মজলিস থেকে উঠে যাবে
(বিদায় নিবে) তখনও সালাম দিবে। কারণ প্রথম সালাম দ্বিতীয় সালাম অপেক্ষা অধিক
গুরুত্বপূর্ণ নয়। অর্থাৎ উভয়টির গুরুত্ব সমান। -আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৯৮৬
শেষকথা: বিদায়বেলা সালাম ও দুআ বলা
সুন্নাত। কোনো কোনা আলেম, শুধু আল্লাহ হাফেজ ও ফি আমানিল্লাহ
বলা খেলাফে সুন্নাত বলেছেন। আর তা জরুরি বা সুন্নাত মনে বিদআত। কেহ যদি সালাম এর
সাথে সাথে আল্লাহ হাফেজ/খোদা হাফেজ, ফি
আমানিল্লাহ বলে, তাহলে সেটিরও অবকাশ রয়েছে। তবে মুসলিম হিসেবে সবক্ষেত্রে সুন্নাত পালন করা
বাঞ্চণীয়।
وَعَن أنس قَالَ: قَالَ لِي
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا بُنَيَّ إِنْ قَدَرْتَ
أَنْ تصبح وتمسي لَيْسَ فِي قَلْبِكَ غِشٌّ لِأَحَدٍ فَافْعَلْ» ثُمَّ قَالَ: «يَا
بني وَذَلِكَ من سنتي وَمن أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي وَمَنْ أَحَبَّنِي
كَانَ مَعِي فِي الْجنَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
অর্থাৎ যে আমার সুন্নাতকে ভালবাসলো, সে যেন আমাকেই ভালোবাসলো। আর যে আমাকে ভালোবাসে, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।
তাখরিজ: জামে তিরমিজি-২৬৭৮
সংস্থা বা সামাজিক সংগঠনের
টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়া যাবে কি? |
জিজ্ঞাসা-২৫০:
সামাজিক
সংগঠনে দাতাদের দানকৃত দান/অনুদান থেকে কি কাউকে কর্জ বা ঋণ দেয়া যাবে?
মাওলানা
নুরুল্লাহ যশোর থেকে--
জবাব: প্রথম কথা হল,অ উক্ত সংগঠনের একজন অর্থ সম্পাদক বা
ক্যাশিয়ার রয়েছেন আর উক্ত অর্থ সম্পাদকের কাছে টাকাটি ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে
আমানত হিসেবে গচ্ছিত আছে। আমানত রক্ষা করা
ফরজ/ওয়াজিব। দলিল:
إِنَّ اللَّهَ
يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا
‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আমানত যথাযথস্থানে
পৌছে দেওয়ার নির্দেশ দেন।’ সূরা নিসা-৫৮
হাদিস
শরিফে এসেছে,
آيَةُ الْمُنَافِقِ
ثَلَاثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ
অর্থ: ‘মুনাফিকের
আলামত তিনটি। কথা বললে মিথ্যা বলে। ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে। আর আমানত রাখা হলে খেয়ানত
করে।’ তাখরিজ: সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৩
দ্বিতীয়
কথা হল, মানবসেবার নিমিত্তে সংগঠনটির
গঠনতন্ত্র/ নীতিমালায় ঋণ দেওয়ার কোন পলিসি থাকে অথবা ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে সদস্যদের সম্মতি থাকলে ঋণ হিসেবে
দেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য
যে, দানের চেয়ে ঋণ দেওয়াতে সওয়াব বেশি। যেমন, হাদিস শরীফে এসেছে-
হাদিস
নং-০১
‘এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করে তার দরজায় একটি লেখা দেখতে
পেল যে সদকার নেকি ১০ গুণ বৃদ্ধি করা হয় এবং ঋণ দানের নেকি ১৮ গুণ বৃদ্ধি করা হয়।’ সিলসিলা সহিহাহ, হাদিস : ৩৪০৭
হাদিস
নং-০২
‘প্রত্যেক ঋণই সদকাস্বরূপ।’ তাখরিজ: বায়হাকি, শুআবুল ঈমান- ৩২৮৫
সদস্যদের
সম্মতি অথবা পলিসি না থাকলে উক্ত টাকা
থেকে ঋণ হিসেবে দেওয়া যাবে না। সূত্র: ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৯; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮২
আমাদের
উচিত নিজ নিজ মহলে সুদ মুক্ত ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা, যাতে সমাজ থেকে সুদের অভিশাপ থেকে মুসলিম জাতি বাঁচতে পারে। সূত্র: সূরা
মায়েদা-০২
দুর্ভিক্ষের সময় আমাদের করণীয়
কি?এবং দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার উপায় কি ? |
জিজ্ঞাসা-২৫১: সম্মানিত শায়খ গণের কাছে
আমার জানার বিষয়:
১। দুর্ভিক্ষের সময় আমাদের
করণীয় কি?
২। দাজ্জালের ফেতনা থেকে
বাঁচার উপায় কি ?
কোরআন এবং হাদিসের আলোকে
জানতে চাই।
মোঃ মফিদুল ইসলাম ঢাকা
-থেকে----
জবাব: نحمده ونصل على رسول الكريم اما
بعد
হামদ ও ছানার পর শুরুতে সম্মানিত ভাইয়ের কাছে
ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, পেশাগত ও পারিবারিক ঝামেলার কারণে অনেক
সময় জবাব দিতে দেরি হওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
যাইহোক আপনার প্রশ্নর আলোকে
জবাবকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করছি।
(০১) দুর্ভিক্ষের সময় করণীয়
সমূহ: দুর্ভিক্ষের সময় মানব সমাজের বিশেষ করে
মুসলমানদের অনেক কিছু কারণে আছে নিচে কয়েকটি উল্লেখ করছি:
(ক) আল্লাহর
পরীক্ষা মনে করে ধৈর্যধারণ করতে হবে।
যেমন যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
আয়াত নং-০১
Surah Al-Baqara, Verse 155:
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ
مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ
وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে
পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের
মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।
সূরা বাকারা-১৫৫
আয়াত নং-০২
Surah Al-Baqara, Verse 177:
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا
وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ
بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ
وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ
وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى
الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي
الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا
وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ
সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ
করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান
আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং
সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে
আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক
ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার। সূরা বাকারা-১৭৭
(খ) বেশি বেশি তওবা ও এস্তেগফার
প্রার্থনা করা:
আয়াত নং-০১
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا
رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا(01) يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا (11) وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ
لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا(21)
অর্থ: অতঃপর বলেছিঃ তোমরা
তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের
উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা
প্রবাহিত করবেন। সূরা নুহ,১০-১২
আয়াত নং-০২
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ
الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ: মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা
সফলকাম হও।
সূরা নুর-৩১
হাদিস নং-০১
وَعَنِ الْأَغَرِّ بْنِ يَسَارٍ
الْمُزَنِيِّ قَالَ :
قَالَ رَسُولُ الله ﷺيَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلٰى اللهِ
واسْتَغْفِرُوهُ فَإِنِّي أتُوبُ في اليَومِ مِئَةَ مَرَّةٍ رواه مسل
অর্থ: আগার ইবনে য়্যাসার
মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ)বলেছেন, হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর সমীপে তওবা কর ও
তাঁর নিকট ক্ষমা চাও! কেননা, আমি প্রতিদিন ১০০ বার করে তওবাহ
ক’রে থাকি। তাখরিজ:মুসলিম ৭০৩৪,
আবূ দাঊদ ১৫১৫
হাদিস নং-০২
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَن
رَسُولِ اللهِ ﷺ
أَنَّهُ قَالَ قَالَ اللهُ عَزَّ
وَجَلَّ : أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي
وَأَنَا مَعَهُ حَيْثُ يَذْكُرُنِي وَاللهِ للهُ أفْرَحُ بِتَوبَةِ عَبْدِهِ مِنْ
أحَدِكُمْ يَجِدُ ضَالَّتَهُ بالفَلاَةِ وَمَنْ تَقَرَّبَ إلَيَّ شِبْراً
تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعاً وَمَنْ تَقَرَّبَ إِلَيَّ ذِرَاعاً تَقَرَّبْتُ
إِلَيْهِ بَاعاً وَإِذَا أقْبَلَ إِلَيَّ يَمْشِي أقْبَلْتُ إِلَيْهِ أُهَرْوِلُ
متفقٌ علي
অর্থ: আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, আল্লাহ আযযা অজাল্ল বলেন,
’আমি সেইরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা
রাখে। আমি তার সাথে থাকি, যখন যে আমাকে স্মরণ করে। আল্লাহর
কসম! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার তওবায় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা
বেশি খুশী হন, যে তার মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া বাহন ফিরে পায়।
আর যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার
দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। যে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। আর সে যখন আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর
হয়, আমি তখন তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। তাখরিজ:
বুখারী ৭৮০৫ , মুসলিম ৭১২৮
হাদিস নং-০৩
وعنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضِي اللَّه
عنْهُما قَال: قالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: منْ لَزِم الاسْتِغْفَار، جَعَلَ اللَّه لَهُ مِنْ
كُلِّ ضِيقٍ مخْرجًا، ومنْ كُلِّ هَمٍّ فَرجًا، وَرَزَقَهُ مِنْ حيْثُ لاَ
يَحْتَسِبُ رواه أبو داود
অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
(রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি
কেউ বেশি বেশি কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহতায়ালা তাকে সব
প্রকার দুর্দশা থেকে মুক্তি দান করেন, হতাশা ও দুশ্চিন্তা
থেকে পরিত্রাণ দান করেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। তাখরিজ: আবু দাউদ-১৫২০, ইবনে মাজাহ_৩৮১৯
(গ) পাপ ছেড়ে দেওয়া:
সাওবান (রা.) বলেন,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সৎকর্ম ছাড়া অন্য
কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য
কিছুতে ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। মানুষ তার পাপ কাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে
বঞ্চিত হয়। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ, হাদিস
: ৪০২২
(ঘ) সৎ
ও যোগ্য খাদ্য মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া: মিশরের
দুর্ভিক্ষকালে হজরত ইউসুফ আ. খাদ্য ছিলেন। যেমন, কুরআনের
ভাষায়,
Surah Yusuf, Verse 55:
قَالَ اجْعَلْنِي عَلَىٰ
خَزَائِنِ الْأَرْضِ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيم
ইউসুফ বললঃ আমাকে দেশের
ধন-ভান্ডারে নিযুক্ত করুন। আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও অধিক জ্ঞানবান। সূরা ইউসুফ-৫৫
(ঙ) সংযত হওয়া অর্থাৎ অল্পে
তুষ্ট থাকা:
নবীজি (সা.)-এর যুগে যখন
মদিনায় দুর্ভিক্ষ এসেছিল, এই দুর্ভিক্ষ থেকে উম্মতকে বাঁচাতে সবাইকে তিনি জীবনাচারে সংযত হওয়ার
নির্দেশ দিয়েছিলেন। জাবালা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমরা মদিনায় কিছুসংখ্যক ইরাকি লোকের সঙ্গে ছিলাম। একবার আমরা
দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হই, তখন ইবনে জুবায়ের (রা.) আমাদের
খেজুর খেতে দিতেন। ইবনে উমর (রা.) আমাদের কাছ দিয়ে যেতেন এবং বলতেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কাউকে তার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া একসঙ্গে দুটো করে খেজুর
খেতে নিষেধ করেছেন। তাখরিজ: বুখারি, হাদিস : ২৪৫৫
(চ) বেশি
বেশি দুআ করা
নবীজি (সা.) দুর্ভিক্ষ
থেকে মুক্তি পেতে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.)
বলেন, নবীজি (সা.)-এর যুগে (অতিবৃষ্টির কারণে) মানুষ
দুর্ভিক্ষের শিকার হলে একদিন জুমার দিন রাসুল (সা.) মিম্বারে উপবিষ্ট হয়ে লোকদের
সামনে জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। এক বেদুইন দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর
রাসুল, ধন-সম্পদ বরবাদ হয়ে গেল, সন্তান-সন্ততি
ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ছে। ...রাসুল (সা.) বলেছেন, হে আল্লাহ,
আমাদের চারপাশে, আমাদের ওপর নয়। বর্ণনাকারী
বলেন, এরপর রাসুল (সা.) হাত দিয়ে যেদিকেই ইশারা করেছেন,
সঙ্গে সঙ্গে সেদিকেই ফরসা হয়ে গেছে। এমনকি আমি মদিনাকে আয়নার মতো
পরিষ্কার দেখতে পেলাম। এদিকে ‘কানাত’ নামক
প্রান্তরে এক মাস ধরে পানির ধারা বয়ে গেল। যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউই এসেছে সে-ই
অতিবৃষ্টির সংবাদ দিয়েছে। তাখরিজ: মুসলিম, হাদিস : ১৯৬৪
(ছ) খাদ্য গুদামজাত নিষিদ্ধ:
স্বাভাবিক অবস্থায় খাদ্য গুদামজাতকরণ নিষিদ্ধ নয় তবে কৃত্রিম খাদ্য সংকট তৈরি
করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য এবং দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্য গুদামজাত করণ জায়েজ নেই,হারাম । দলিল:
হাদিস নং-০১
যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য মজুদ
রাখে, আল্লাহপাক তার ওপর দরিদ্রতা চাপিয়ে দেন। তাখরিজ: আবু
দাউদ- ৫৫
হাদিস নং-০২
"যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য
গুদামজাত করে সে অভিশপ্ত।" তাখরিজ: ইবনে মাজাহ
হাদিস নং-০৩
"যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার
মজুদ রাখে (খাদ্য সংকটের সময়), সে আল্লাহর জিম্মা থেকে
বেরিয়ে যায়।" তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২০৩৯৬
(০২) দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচা
উপায় সমূহ: উম্মতি মোহাম্মদের প্রতি কিয়ামত পর্যন্ত আনিত ফিতনার মধ্যে সবচেয়ে
বড় ফেতনা হল দাজ্জালের ফিতনা। যাইহোক ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য কয়েকটি আমল:
আমল নং- ১
এই দোয়া বেশি বেশি পড়া,
দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয়
প্রার্থনা করাঃ আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)কে নামাযের ভিতরে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাইতে শুনেছি ।[21] তিনি নামাযের শেষ তাশাহুদে বলতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ
مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا
وَالْمَمَاتِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি
আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া মিন আজাবিন্নারি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল
মামাতি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল।
অর্থ : হে আল্লাহ আমি আপনার
কাছে কবরের শাস্তি, জাহান্নামের শাস্তি, জীবন-মৃত্যুর ফেতনা ও দাজ্জালের
ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই।
হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সা: উল্লিখিত দোয়া পাঠ করতেন। তাখরিজ: বুখারি, হাদিস : ১৩৭৭
আমল নং-০২
দাজ্জাল থেকে দূরে থাকা:
হজরত আবুদ দাহমাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমি হজরত ইমরান ইবনুল হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন-
مَن سَمِعَ مِن الدَّجَّالِ
فلينأ مِنهُ ؛ من سَمِعَ من الدَّجَّالِ فلينأ منهُ ؛ فإنَّ الرَّجلَ يأتيهِ
يحسِبُ أنَّهُ مؤمنٌ فما يزالُ بِه لما معَه منَ الشُّبَه حتَّى يتَّبعَه
الراوي : عمران بن الحصين | المحدث :
ابن كثير | المصدر : نهاية البداية والنهاية | الصفحة أو الرقم : 1/146 | خلاصة حكم المحدث : إسناده جيد |
التخريج : أخرجه أبو داود (4319)، وأحمد (19968)
باختلاف يسير
অর্থ: কেউ দাজ্জালের
আবির্ভাবের কথা শুনলে সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়। আল্লাহর কসম! যে কোনো ব্যক্তি
তার কাছে এলো তাকে ঈমানদার মনে করে তার অনুসরণ করতে শুরু করবে; তার মধ্যে যেসব সংশয় সৃষ্টি
হয়েছে সে কারণে। তাখরিজ: আবু দাউদ-১৪১৯; মুসনাদে আহমদ-১৯৯৬৮
আমল নং-০৩
সূরা কাহাফ পাঠ করা: নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জালের ফিতনার সম্মুখিন হলে মুমিনদেরকে
সূরা কাহাফ মুখস্থ করতে এবং তা পাঠ করতে আদেশ করেছেন। তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম
দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা হতে হেফাযতে থাকবে । তাখরিজ: মুসলিম,কিতাবুল ফিতান অধ্যায়
মহান আল্লাহতালা আমাদের
সবাইকে দাজ্জালের ফেতনা সহ সমস্ত ফেতনা থেকে হেফাজত করুন।
টিএডিএ
বিল ঘুষ দিয়ে পাশ করানো জায়েজ আছে কি? |
জিজ্ঞাসা-২৫২ *বিজ্ঞজনদের* নিকট জানার বিষয়, আর্মির লোকেরা পেনশন যাওয়ার পরে পেনশনের টাকা পাওয়ার জন্য যে ঘুস দেয়,
তার বৈধতা কতটুকু আবার ঘুস দিয়ে উত্তলিত
টাকার বৈধতা কতটুকু?? কুরআন হাদিসের আলোকে সমাধান
কামনা করছি।
(তারিখ- ১৮/০৮/২০২২ ঈসায়ি/ইংরেজি)
মাওলানা শফিউল ইসলাম সিলেট
থেকে-----
জবাব: ঘুষের ভয়াবহতা সম্পর্কে
আমরা সবাই অবগত। কিছু কিছু গুনাহ আছে যা কোন ধর্মে তা
সমর্থন করে না। তারমধ্যে অন্যতম হলো ঘুস। আপনার
প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জ্যন তিনভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। ঘুষ কাকে বলে?
উত্তর: ক। ঘুষ শব্দটি বাংলা, দেশি
শব্দ। কোনো কাজে সাহায্য লাভের জন্য বা কার্যসিদ্ধির জন্য গোপনে দেওয়া পুরস্কার বা
অর্থ, উত্কোচ। সূত্র: সংসদ বাংলা অভিধান
কোনো প্রতিষ্ঠানে কমকতা
কর্মকতা কর্মচারী তাদের কাজে জন্য নিদিষ্ট বেতন ভাতা পায়। কিন্তু তারা যদি ঐ কাজে
জন্য অন্যয়ভাবে আরও বেশি কিছু গ্রহণ করে তা হলো ঘুষ।
প্রশ্ন: খ। ঘুষ গ্রহণ করা কি জায়েজ আছে?
প্রশ্ন: খ। না, কোন অবস্থায় ঘুষ গ্রহণ করা জায়েজ নেই। দলিল:
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم
بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا
مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থ: ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের
সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-বুঝে
অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে উৎকোচ দিও না। সুরা বাকারা- ১৮৮
আবু হুরায়রা রা.
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে বর্ণনা
করেন,
«لَعَنَ اللهُ الرَّاشِيَ وَالْمُرْتَشِيَ فِي الْحُكْمِ» অর্থ:
বিচার-ফায়সালায় ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ের উপরে আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯০১১
প্রশ্ন: গ। মাজলুম/নিরাপায় হয়ে ঘুষ দেওয়া
কি জায়েজ?
উত্তর: গ। হ্যাঁ, মাজলুম/নিরাপায়
হয়ে ঘুষ দেওয়া জায়েজ আছে। অর্থাৎ মাজলুম ব্যক্তি যদি
বৈধ কোনো পন্থায় নিজের হক উদ্ধার করার সক্ষমতা না রাখে, তাহলে
সে তাই করবে। আর যদি বৈধ পদ্ধতিতে উদ্ধার করার সক্ষমতা না থাকে; তাহলে অর্থ প্রদানের মাধ্যমেও অধিকার রক্ষা করতে পারে। তবে মুমিন
মুসলমানদের জন্য এই অনুমতির বিষয়টা একান্ত অপারগ পরিস্থিতিতে পালন করা উচিত।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-৬০৭,
ফাতহুল ক্বাদীর,খণ্ড-৭,পৃষ্ঠা-২৫৫,
বাহরুর রায়েক,খণ্ড-৬,পৃষ্ঠা-২৬২
*সারকথা: আপনার* প্রশ্নে বর্ণিত ছুরুতে যদি পেনশনের টাকার
সত্যি কারের দাবিদার (অনেকে ঘুষ দিয়ে পেনশনে টাকা বাড়িয়ে নেয়) হয়
সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা-ফিকির করার পরও যদি লক্ষ্য অর্জিত না হয়। এমতাবস্থায় অপারগতার কারণে ঘুষ দেওয়া জায়েজ হবে। কিন্তু ঘৃণাভরে
ঘুষটা দিতে হবে। হারাম জিনিস হালাল মনে করলে ঈমান থাকে
না; তেমনি হারাম কাজে খুশি হওয়াও ঈমান যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
*সর্বোচ্চ তাকওয়া:* তবে এ বিষয়ে কেউ ঘুষের ভয়ে মূল টাকা/দাবিও
ছেড়ে দেয়; তাহলে তার জন্য অবশ্যই এটা উত্তম/সর্বোচ্চ তাকওয়া।
যেমন,
আবু দারদা (রা.) বলেন, পরহেজগারিতা পরিপূর্ণ হয় যখন
বান্দা তার প্রতিপালককে ভয় করবে। এমনকি সে অণু পরিমাণ গুনাহের ব্যাপারেও সতর্ক
থাকে। সূত্র: জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ৮/২২
অভিজ্ঞতা দেখা গেছে, পেনশন সময় যদি ঘুষ না দেওয়া
হয়, তাহলে পেনশনের টাকা পাওয়া যায়, তারা
দিতে বাধ্য। তবে কম এবং দেরিতে পাওয়া যায়। কেউ যদি
এতেই সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে তার জন্য ঘুষ দেওয়া না দেওয়াই
ভালো, উত্তম।
জামাতে
নামাজ আদায় করার ফজিলত সম্পর্কে জানতে চাই। |
জিজ্ঞাসা-২৫৩: জামাতে নামাজ
আদায় করার ফজিলত সম্পর্কে জানতে চাই।
হাফেজ
মাওলানা মাসুম বিল্লাহ রামু কক্সবাজার থেকে--
জবাব: نحمده ونصلي على رسوله الكريم
اما بعد
হামদ ও ছানার পর, প্রথম কথা হল ইমাম আবু হানিফার
মতে জামাতের সাথে নামাজ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিন্তু অন্য ইমামের
মতে জামাতে নামাজ আদায় করা ফরজ। যাইহোক নিম্নে জামাতের সাথে নামাজ
আদায় করার ফজিলত বর্ণনা করা হলো:
হাদিস নং-০১
عن ابنِ عمَر رضي اللَّه عنهما
أَنَّ رسولَ اللَّه ﷺ
قَالَ: صَلاةُ الجَمَاعَةِ أَفضَلُ مِنْ صَلاةِ الفَذِّ
بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ درَجَةً متفقٌ عليه.
জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী
নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।’বুখারি, মুসলিম
হাদিস নং-০২
وعن أَبي هريرة t قَالَ:
قَالَ رسولُ اللَّهِ ﷺ: صَلاةُ الرَّجُلِ في جَماعةٍ تُضَعَّفُ عَلى صلاتِهِ
فِي بَيْتِهِ وفي سُوقِهِ خَمْسًا وَعِشْرينَ ضِعفًا، وذلكَ أَنَّهُ إِذا تَوَضَّأَ
فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ خَرَجَ إِلى المَسْجِدِ، لا يُخْرِجُه إِلاَّ
الصَّلاةُ، لَمْ يَخْطُ خَطْوةً إِلاَّ رُفِعَتْ لَه بهَا دَرَجَةٌ، وَحُطَّتْ
عَنْه بهَا خَطِيئَةٌ، فَإِذا صَلى لَمْ تَزَلِ المَلائِكَة تُصَلِّي عَلَيْهِ مَا
دَامَ في مُصَلاَّه، مَا لَمْ يُحْدِثْ، تَقُولُ: اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ، اللَّهُمَّ ارحَمْهُ. وَلا يَزَالُ في صَلاةٍ مَا انْتَظَرَ الصَّلاةَ متفقٌ
عَلَيهِ. وهذا لفظ البخاري.
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)বলেছেন, জামাতের সাথে পুরুষের নামায
পড়া, তার ঘরে ও বাজারে একা নামায পড়ার চাইতে ২৫ গুণ বেশি
শ্রেষ্ঠ। তা এই জন্য যে, যখন কোন ব্যক্তি ওযূ করে এবং
উত্তমরূপে ওযূ সম্পাদন করে। অতঃপর মসজিদ অভিমুখে যাত্রা করে। আর একমাত্র নামাযই
তাকে (ঘর থেকে) বের করে (অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকে না), তখন
তার (পথে চলার সময়) প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং
একটি গোনাহ মাফ করা হয়। তারপর সে নামাযান্তে নামায পড়ার জায়গায় যতক্ষণ ওযূ সহকারে
অবস্থান করে, ফিরিশতাবর্গ তার জন্য দু’আ
করেন; তাঁরা বলেন, হে আল্লাহ! ওর প্রতি
অনুগ্রহ কর। হে আল্লাহ! তুমি ওকে রহম কর। আর সে ব্যক্তি ততক্ষণ নামাযের মধ্যেই
থাকে, যতক্ষণ সে নামাযের প্রতীক্ষা করে। তাখরিজ: বুখারী ৬৪৭,
মুসলিম ১৫০৮
হাদিস নং-০৩
তোমাদের কেউ যখন নামাজ আদায়
করার পর নামাজের স্থানেই বসে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মালায়েকাহ (ফেরেশতাগণ) তার জন্য
এ বলে দোয়া করতে থাকে যে-
اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ اللَّهُمَّ
اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ يُؤْذِ فِيهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ
فِيهِ
‘হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি
অনুগ্রহ দান করো। হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি তার তওবা কবুল
করো।’এরূপ দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত করতে থাকে যতক্ষণ না সে কাউকে
কষ্ট দেয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত অজু নষ্ট না হয়।’ তাখরিজ:
মুসলিম, ইবনে মাজাহ-৬৫৮
হাদিস নং-০৪
عَنْ يَزِيدَ بْنِ الأَسْوَدِ
الْعَامِرِىُّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم حَجَّتَهُ، فَصَلَّيْتُ
مَعَهُ صَلاَةَ الصُّبْحِ فِى مَسْجِدِ الْخَيْفِ. قَالَ فَلَمَّا قَضَى صَلاَتَهُ وَانْحَرَفَ إِذَا هُوَ بِرَجُلَيْنِ
فِى أُخْرَى الْقَوْمِ لَمْ يُصَلِّيَا مَعَهُ فَقَالَ : عَلَىَّ بِهِمَا، فَجِىءَ بِهِمَا تُرْعَدُ
فَرَائِصُهُمَا فَقَالَ:
مَا مَنَعَكُمَا أَنْ تُصَلِّيَا
مَعَنَا؟ فَقَالاَ:
يَا رَسُولَ اللهِ! إِنَّا كُنَّا قَدْ صَلَّيْنَا فِى رِحَالِنَا. قَالَ: فَلاَ تَفْعَلاَ إِذَا صَلَّيْتُمَا فِى رِحَالِكُمَا ثُمَّ
أَتَيْتُمَا مَسْجِدَ جَمَاعَةٍ فَصَلِّيَا مَعَهُمْ فَإِنَّهَا لَكُمَا نَافِلَةٌ-
অর্থ: ইয়াযীদ ইবনুল আসওয়াদ
আল-আমেরী (রাঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল
(ছাঃ)-এর সঙ্গে আমি হজ্জে হাযির ছিলাম। তাঁর সঙ্গে মসজিদে খায়ফে ফজরের ছালাত আদায়
করলাম। ছালাত শেষে তিনি যখন ফিরলেন তখন শেষ প্রান্তে দুই ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন,
তারা তাঁর সঙ্গে ছালাত আদায় করেনি। তিনি বললেন, এদেরকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তাদের নিয়ে আসা হ’ল। তখন
ভয়ে তাঁদের ঘাড়ের রগ পর্যন্ত কাঁপছিল। তিনি তাদের বললেন, আমাদের
সঙ্গে ছালাত আদায় করতে তোমাদেরকে কিসে বাধা দিল? তারা বলল,
হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা আমাদের বাড়িতে ছালাত পড়ে নিয়েছিলাম।
তিনি বললেন, এরূপ করবে না। যদি তোমাদের বাড়িতে ছালাত পড়ে
মসজিদে জামা‘আতে আস, তবে তাদের সঙ্গে
জামা‘আতে শরীক হয়ে যেও। তোমাদের জন্য তা নফল হিসাবে গণ্য হবে’। তিরমিযী হা/২১৯; মিশকাত হা/১১৫২
হাদিস নং-০৪
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَبْصَرَ رَجُلاً يُصَلِّى وَحْدَهُ
فَقَالَ : أَلاَ رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلَى
هَذَا فَيُصَلِّىَ مَعَهُ-
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) এক ব্যক্তিকে (জামা‘আতের পর) একাকী ছালাত আদায় করতে
দেখে বলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই কি- যে এই ব্যক্তিকে
ছাদাক্বা দিয়ে তার সাথে একত্রে ছালাত পড়তে পারে’? তাখরিজ:
আবূদাউদ হা/৫৭৪; মিশকাত হা/১১৪৬
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
জনৈক ছাহাবী মসজিদে প্রবেশ করে দেখলেন রাসূল (ছাঃ) তাঁর ছাহাবীদের
নিয়ে যোহরের ছালাত জামা‘আতে সম্পাদন করে নিয়েছেন। রাসূল তাকে
একাকি দেখে বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, তার সাথে ছওয়াব লাভের ব্যবসায় লিপ্ত হবে? তখন একজন
ছাহাবী দাঁড়িয়ে তার সাথে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলেন। তাখরিজ:
আহমাদ হা/১১০৩২, ১১৮২৫,
হাদিস নং-০৫
(عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ السُّوَائِىِّ قَالَ قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَلاَ تَصُفُّوْنَ كَمَا تَصُفُّ الْمَلاَئِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا
تَبَارَكَ وَتَعَالَى؟ قَالَ قُلْنَا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَكَيْفَ تَصُفُّ الْمَلاَئِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ قَالَ
يُتَمِّمُوْنَ الصُّفُوْفَ الأُوَلَ وَيَتَرَاصُّونَ فِى الصَّفِّ-
জাবের ইবনু সামুরাহ সুয়াঈ
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা
রাসূলুল্লাহ বললেন, ‘ফেরেশতামন্ডলী যেরূপ তাদের প্রভুর নিকট
সারিবদ্ধ হন, তোমরা কি সেরূপ সারিবদ্ধ হবে না? আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আললাহর রাসূল (ছাঃ)!
ফেরেশতামন্ডলী তাদের প্রভুর নিকট কিরূপ সারিবদ্ধ হন? তিনি
বললেন, প্রথম সারিগুলো পূর্ণ করেন এবং সারিতে ঘন হয়ে দাঁড়ান’। তাখরিজ: আহমাদ হা/২১০৬২; মুসলিম হা/৪৩০; মিশকাত হা/১০৯১
হাদিস নং-০৬
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم رَأَى فِى أَصْحَابِهِ تَأَخُّرًا فَقَالَ لَهُمْ: تَقَدَّمُوْا فَائْتَمُّوْا بِىْ وَلْيَأْتَمَّ بِكُمْ
مَنْ بَعْدَكُمْ لاَ يَزَالُ قَوْمٌ يَتَأَخَّرُوْنَ حَتَّى يُؤَخِّرَهُمُ اللهُ-
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) তাঁর ছাহাবীদেরকে ছালাতের কাতার হ’তে পশ্চাৎগামী দেখে
বললেন, ‘তোমরা প্রথম কাতারে এসো এবং আমার অনুসরণ কর। অতঃপর
পরবর্তী লোকেরাও তোমাদের অনুসরণ করবে। এক শ্রেণীর লোক সবসময় সামনের কাতার থেকে
পিছনে থাকবে। মহান আল্লাহও তাদেরকে পিছনে ফেলে রাখবেন’। অর্থাৎ তোমরা ছালাতের পিছনের কাতার পসন্দ করলে
আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর রহমত, দয়া, উঁচু মর্যাদা, জ্ঞান ও জান্নাত প্রাপ্তি হ’তে পশ্চাৎগামী করে দিবেন’
তাখরিজ: মুসলিম হা/৪৩৮; মিশকাত হা/১০৯০
মিরাছ
সংক্রান্ত |
জিজ্ঞাসা-২৫৪: মৃত
ব্যক্তির স্ত্রী সন্তান কেউ নেই। আছে ভাতিজা,
আপন বোন ও সৎ ভাই
বোন( বৈমাত্রেয়)। এখন সম্পত্তি কারা পাবে?
মাওলানা ইমরান খান সিলেট থেকে---
জবাব: আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ছুরুতে,
সম্পত্তির ৬ ভাগের
তিনভাগ আপন বোন পাবে।
সৎভাই দুইভাগ এবং
সৎবোন একভাগ।
ভাতিজা মাহরুম
হবে।
উদাহরণ, মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদের
টাকা হিসেবে মোট
টাকা ১২,০০০০ (বার লক্ষ টাকা) এখন আপন বোন ৬ লাখ, সৎ ভাই ৪ লাখ, ২ লাখ
সৎ বোন।
যাকাতের টাকা চিকিৎসা বাবদ দেওয়া যাবে কি? |
জিজ্ঞাসা-২৫৫:
মাওলানা
মুহাম্মদ মিজানুর রহমান কুমিল্লা থেকে
বিজ্ঞজনদের
নিকট সবিনয়ে আমার জানার বিষয় হলো এক ব্যক্তির কিডনির চিকিৎসার জন্য ৪০ লক্ষ টাকা
প্রয়োজন। এমতাবস্থায় তার চিকিৎসার জন্য স্বাভাবিক ভাবে সাহায্য করলে সামান্য টাকা
দেওয়া যায়। কিন্তু যাকাতের টাকা দিলে মোটা অংকে দেওয়া যায়। এখন যাকাতের টাকা দেওয়া
যাবে কি না জানালে উপকৃত হতাম।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمه الله
وبركاته
نحمده و ونصلي على رسول
الكريم اما بعد
তাসলিম
ও হামদ-ছানার পর কথা হলো, আপনি উল্লেখ করেননি উক্ত
ব্যক্তি ধনী না গরিব। যাইহোক, প্রথম কথা হলো, কোন মুসলমানকে উপকার করতে
পারা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের বড় কিসমত। যেমন, যেমন পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ،
قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ نَفَّسَ عَنْ
أَخِيهِ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ
كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ فِي
الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ
فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ
فِي عَوْنِ أَخِيهِ وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ
اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا قَعَدَ قَوْمٌ فِي مَسْجِدٍ
يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلاَّ نَزَلَتْ
عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلاَئِكَةُ
وَمَنْ أَبْطَأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ " . قَالَ
أَبُو عِيسَى
আবূ
হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেনঃ দুনিয়াতে যে লোক তার কোন ভাইয়ের
একটি বিপদ দূর করবে, কিয়ামতের দিবসে আল্লাহ তা’আলা তার একটি বিপদ দূর করবেন। আর কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি
যে লোক গোপন রাখবে, আল্লাহ তা’আলা ইহকালে ও পরকালে তার দোষ গোপন রাখবেন। কোন অভাবীর কষ্ট
যে ব্যক্তি দূর করবে, ইহকালে ও পরকালে তার কষ্ট
আল্লাহ তা’আলা দূর করবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা বান্দার সহায়তা করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার কোন
ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে। মুসলিম-২৩১৪, ইবনে মাজাহ-২২৫
দ্বিতীয়
কথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত
ব্যক্তি যদি সাহেবে নিসাব না হয়, তাহলে যাকাতের টাকা তাকে
দেওয়া যাবে।
কেননা
যাকাতের টাকা শুধু গরিবের হক, যা মহান আল্লাহ তা'আলা
কর্তৃক নির্ধারিত। যেমন,আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা
বলছেন
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ
لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ
قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ
السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
যাকাত
হল কেবল (১)ফকির, (২)মিসকীন,
(৩)যাকাত
উসূলকারী ও (৪)যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক (৫)এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে
ও (৬)ঋণগ্রস্তদের জন্য, (৭)আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং(৮)
মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত
বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। সূরা
আত-তাওবাহ-৬০
প্রশ্ন: ক । কি পরিমান সম্পদ থাকলে বা টাকা থাকলে সাহেবের নিসাব
হিসেবে গণ্য হবে?
উত্তর: ক। আজকের বাজারে সাহেবে নিসাব পরিমাণ হলো, ১৫১৬×৫২.৫=৭৯৫৯০ টাকা অর্থাৎ কোন ব্যক্তির কাছে
প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে যদি অতিরিক্ত সাড়ে ৫২ তোলা রুপার পরিমাণ
টাকা বা এত টাকার সম্পদ থাকে তাহলে তিনি সাহেবে নিসাব তার জন্য যাকাতের টাকা
খাওয়া জায়েজ নাই। সূত্র: মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৭৯৭,৬৮৫১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ৯৯৩৭
প্রশ্ন: খ। উক্ত ব্যক্তি যদি সাহেবে নিসাব হয় কিন্তু চিকিৎসা করার
মতো টাকা না থাকে, তাহলে কি যাকাতের টাকা
গ্রহণ করতে পারবে?
উত্তর:
খ। হ্যাঁ, এমতাবস্থায় তিনি জাকাতের
টাকা গ্রহণ করতে পারবে। তবে চিকিৎসা গ্রহণের পূর্বেই
তাকে এই পরিমাণ টাকা না দেওয়া, যাতে সে আবার সাহেবে নিসাব
হয়। বরং চিকিৎসা গ্রহণ করার পর তাকে যাকাতের টাকা দেওয়া। সূত্র: দারুন দেওবন্দের ফতুয়া প্রশ্ন নং: ৬৭২৯৩
প্রশ্ন:
গ। অসুস্থ ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা কি?
উত্তর:
গ। এ ব্যাপারে সতর্কতা হলো, যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে যাকাত গৃহীতাকে। যদি মালিক বানিয়ে দেয়া
না হয়, তাহলে যাকাত আদায় হবে না। সূত্র: মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদিস: ১৬৫৯১
, ইনায়া আলা ফাতহিল কাদীর-২/২৬৭-২৬৮
ولا يبنى بها مسجدا ولا
يكفن بها ميت لإنعدام التمليك هو الركن، (الهداية-1/205)
والله اعلم بالصواب
উত্তর
দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জমি লিজ দেওয়া প্রসঙ্গে |
জিজ্ঞাসা-২৫৬:
আসসালামু
আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ, বিজ্ঞজনের নিকট জানার বিষয়, আমার ৩ বিঘা জমি আছে, এই জমি আমি ১ বছরে জন্য ৪৫ হাজার টাকায় লিজ দিয়ে থাকি।
এভাবে লিজ দেওয়া বৈধ হবে কিনা, কুরআন ও হাদিসের আলোকে
সমাধান কামনা করছি।
মাওলানা মোঃ শফিউল ইসলাম সিলেট থেকে--
জবাব:
وعليكم السلام ورحمه الله
وبركاته بسم الله الرحمن الرحيم
نحمده نصلي عليه رسول
الكريم اما بعد
হ্যাঁ, লিজ বা ইজারা শরীয়ত স্বীকৃত
বৈধ একটি কারবার বা লেনদেন। এর বিধি-বিধান সুবিস্তৃত।
সুতরাং
আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ছুরুতে, (অর্থাৎ আপনি এক বছরের জন্য
সময় নির্দিষ্ট করেছেন, সুস্পষ্ট করেছেন)
লিজ
দেওয়া জায়েজ হবে অসুবিধা নেই। সূত্র:
বুখারি
হাদিস নং ২১৯৩, সোনা-রূপার বিনিময়ে জমি
ইজারা দেওয়া অধ্যায়,
আল
মাবসূত, সারাখসী, খন্ড: ১৫, পৃষ্ঠা: ৭৪
উত্তর
দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক
প্রতিটি
কাজ সহজ হওয়ার জন্য আসমানি ফর্মুলা |
জিজ্ঞাসা-২৫৭:। মাওলানা মুহাম্মদ আবুল ফজল চট্টগ্রাম থেকে--
মুহতারাম শায়েখ।
একটি জরুরী বিষয় জানার জন্য আবেদন করছি, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে বা
আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক কিছু আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করতে অনেক সময় লাগে।
জানার বিষয় হল প্রতিটি কাজ সহজে হাসিল করার জন্য
কোরআন-হাদিসে কোন ফর্মুলা আছে? জানালে উপকৃত হতাম।। আসসালামু আলাইকুম।
জবাব:
وعليكم السلام ورحمه الله
وبركاته.
بسم الله الرحمن الرحيم
نحمده ونصل على رسوله الكريم ما ابد.
তাসলিম
ও হামদ-ছানার পর কথা হলো, আপনাকে
জাযাকাল্লাহ খাইরান, যেহেতু
আপনি একটি সময়োপযোগী প্রশ্ন করেছেন। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন
আশা-আকাঙ্ক্ষা বা ন্যায্য দাবি পূরণের জন্য বিভিন্ন পদে পদে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছি।
যাই
হোক পৃথিবীর
প্রতিটি মানুষ চায় তার কাজ সহজে হয়ে যাক, বিলম্ব না হয়, পেরেশানি না হয়, হয়রানি না হয়, আসানের সাথে সম্পন্ন হয়। কিন্তু বাস্তব কথা হল
পৃথিবীতে প্রতিটি কাজ আজকে কঠিন হয়ে পড়েছে।
মানব
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি
পরিস্থিতিতে ইসলাম তথা কুরআন-হাদিস পথ নির্দেশ করে, সুতরাং আমরা পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত
পথে চললে সবকিছু সমাধান পেয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। নিচে কয়েকটি আসমানী ফর্মুলা বর্ণনা
করা হলো।
আসমানি ফর্মুলা নং-০১
(তাকওয়ার পথে চলা অর্থাৎ
সমস্ত গুনাহ বর্জন করা)
দলিল:
আয়াত নং-০১
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ
يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
অর্থ:
যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ
তার কাজ সহজ করে দেন। সূরা তালাক-০৪
আয়াত নং-০২
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن
ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ
এবং
যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে। সূরা তোহা-১২৪
অর্থাৎ
যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানি করবে আল্লাহ তার জীবনকে সংকীর্ণময়, কর্কটময়,কঠিন করে দিবেন।
হাদিস
নং-০১
রাসুল
(ﷺ)বলেন, বান্দা
গুনাহ করার দ্বারা রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ
নোট:
ব্যক্তির কামায় রোজগার, চাকরি
ক্ষেত্রে প্রমোশন, পদোন্নতি
সবকিছু রিজিকের অন্তর্ভুক্ত।
আসমানী ফর্মুলা নং-০২
(বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার
করা)
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ
جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
সূরা
নূর-৩১
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ
عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :« مَنْ لَزِمَ
الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا ، وَمِنْ كُلِّ
ضِيقٍ مَخْرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ».
অর্থ:
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- যে
ব্যক্তি সর্বদা ক্ষমা চায় (ক্ষমা চাওয়া নিজের প্রতি আবশ্যক করে) আল্লাহ তাআলা তার
জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হতে একটি পথ বের করে দেন এবং প্রত্যেক চিন্তা হতে তাকে
মুক্তি দেন. আর তাকে রিযিক দান করেন যেখানে হত সে কখন ও ভাবেনি। মুসনাদে আহমদ-২২৩৪; সুনানে আবু দাউদ-১৫১৮, কিতাবুস সালাত; ইবনে মাজাহ-৩৮১৯
আসমানী ফর্মুলা নং-০৩
(দান -সদকা করা)
হাদিস নং-০১
«إِنَّ الصَّدَقَةَ
لَتُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ وَتَدْفَعُ مِيتَةَ السَّوْءِ»
আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেনঃ অবশ্য
অবশ্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা) আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধকে ঠান্ডা করে, আর খারাপ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। তাখরিজ:
জামে তিরমিজি-৬৬১
হাদিস নং-০২
الصدقةُ تُطفئُ الخطيئةَ
كما يُطفئُ الماءُ النارَ.
الراوي : - | المحدث :
ابن عثيمين | المصدر : شرح رياض الصالحين
الصفحة أو الرقم : 2/201
| أحاديث مشابهة | خلاصة حكم المحدث : [صحيح] |
অর্থ:সদকা
গুনাহকে সেভাবে মিটিয়ে দেয়, যেভাবে
পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। তাখরিজ:
মুসনাদ আহমাদ, হাদিস
: ২২১৩৩
আসমানী ফর্মুলা নং-০৪
(বেশি বেশি এই দোয়া পড়া এবং
আল্লাহর কাছে দোয়া করা)
কঠিন
কাজ সহজ হওয়ার এ দোয়াটি প্রিয় নবি (ﷺ)থেকে হজরত আনাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন। দোয়াটি হলো
-اللَّهُمَّ لا سَهْلَ
إِلا مَا جَعَلْتَهُ سَهْلا، وَأَنْتَ إِنْ شِئْتَ جَعَلْتَ الْحَزَنَ سَهْلا
উচ্চারণ
: আল্লাহুম্মা, লা
সাহলা ইল্লা মা ঝাআলতাহু সাহলান। ওয়া আনতা ইন শিইতা ঝাআলতাল হাযানা সাহলান।অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি যা সহজ করেন
তা ছাড়া কিছুই সহজ নয়। আর আপনি ইচ্ছা করলে খুব কঠিন কাজও সহজ করেন।’ তাখরিজ: ইবনে হিব্বান-৯৭৪; সুনানে বায়হাকি-২৬৬
أخرجه ابن حبان (974)،
وابن السني في ((عمل اليوم والليلة)) (351)، والبيهقي في ((الدعوات الكبير)) (266)
এই
পৃথিবীতে যত অশান্তি বিশৃঙ্খলা সব কিছুর মূলে হলো আল্লাহর নাফরমানি তবে অন্য কারণও
আছে।
পর্যালোচনা:
আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন ওস্তাদ শর্ষিনা, চরমোনাই, ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসার তিনটি বড়
প্রতিষ্ঠানের মুফতি মুহাদ্দিস, বরিশাল আল আবরার মডেল কামিল মাদ্রাসার
প্রতিষ্ঠাতা, মরহুম
আল্লামা মুফতি রফিকুল ইসলাম রহ. বলতেন, কেউ যদি পুলিশের ওসি/এসপি/আইজি অথবা Rab প্রধানের মাথায় ঢিল মারে অথবা কোন মন্ত্রী
এমপির গাড়িতে ঢিল মারে।
সে
ব্যক্তি কি আরামে থাকতে পারবে?
প্রিয়
বন্ধুগণ! পুলিশ প্রধান,রেব
প্রধান,মন্ত্রী এমপির গাড়িতে বা
তাকে ঢিল মেরে যদি কেউ আরামে শান্তিতে না থাকতে পারে, তাহলে মহান রব্বুল আলামীন কে অসন্তুষ্ট করে
বান্দা কিভাবে আরামে শান্তিতে থাকতে পারে ?
সারকথা বা নিবেদন: প্রিয় বন্ধুগণ আমরা আমাদের
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন পেরেশানি অশান্তি আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে পদে পদে
বাধাগ্রস্ত হচ্ছি,
আমরা
যদি উপরোক্ত আসমানি ফর্মুলা অনুসারে আমল করি ইনশাআল্লাহ সফলতা আমাদের পায়ে চুম্বন
করবেই।
মহান
আল্লাহ তাআলা আমাকে এবং সব মুসলমানকে গুনাহ মুক্ত জিন্দেগি জীবন যাপন করে আল্লাহ
সন্তুষ্ট নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার তৌফিক দান করুক। আমিন।
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
যে ফরজ নামাজের পর সুন্নাত রয়েছে, তখন
লম্বা তাসবিহ-তাহলিল পড়া যাবে কি? |
জিজ্ঞাসা-২৫৮:
السلام عليكم ورحمه الله
بركاته
মুহতারাম, যে ফরয নামাযের পর সুন্নাত নামাজ আছে, সে ফরয সালাতের পর বেশীক্ষন বসে না থেকে
সুন্নাত সালাত আদায় করতে হবে, সঠিক মতামত জানতে চাই। মাওলানা সাইফুল ইসলাম ত্রিশাল,ময়মনসিংহ -----
জবাব:
وعليكم السلام ورحمه الله
وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم.
نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর কথা হলো, ইদানিং
অনেক মসজিদে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কিছু ভাই ফরজ নামাজের পরে দীর্ঘক্ষণ তাসবিহ-
তাহলিল পড়ার পর সুন্নত পড়েন।
উল্লেখ্য
যে, তাসবিহ
তাহলিল শুধু ফরজ নামাজের পরে নয়, বরং সুন্নত বা নফল নামাজে পড়ো পাঠ করার কথা
হাদিস শরীফে এসেছে। যেমন, ইমাম
বায রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন,
يقول ثوبان t: «كان النبي ﷺ إذا انصرف من
صلاته استغفر الله ثلاثًا وقال: اللهم أنت السلام، ومنك السلام، تباركت يا ذا
الجلال والإكرام رواه مسلم وغيره، ولم يقل: المكتوبة؛ فدل على أنه من كل صلاة
يستغفر في النافلة والفرض.
অর্থাৎ
একথা প্রমান হয় না যে শুধু ফরজ নামাজের পরেই ইস্তেগফার করেছেন বরং ফরজ নফল সব
নামাজের পরই। সূত্র: ইমাম ইবনে বায রহ. ফতোয়া থেকে
তাই
হোক, এ
বিষয়ে আলবানি
রহ এবং তার অনুসারী আহলে হাদিস ভাইয়েরা ফরজ নামাজের পরপরই তাসবীহ-তাহলিল পড়া
উত্তম মনে করেন। সূত্র: সিলসিলাতুল সহিহা-১০২ পৃষ্ঠা
পক্ষান্তরে
ফোকাহায়ে আহনাফ ফরজ নামাজের পর বেশিক্ষণ দোয়া -মোনাজাত, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা মাকরুহ তানজিহ বলেছেন।
ওলামায়ে আহনাফের দলিল নিম্নরূপ:
হাদিস থেকে দলিল:
عَنْ عَاءِشَةَ رَضِيَ
اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
اِذَا سَلّمَ لَمْ يَقْعُدْ اِلَّا مِقْدَار مَايَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ
السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَام تَبَارَكْتَ يَاذَالْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ -
تخريج الحديث وتحقيقه:
صحيح: أخرجه مسلم (592)، وأبو داود (1512)، والترمذي (298، 299)، والنسائي في ((المجتبى)) (3/ 69)، وفي ((الكبرى)) (1261، 7717، 9924، 9925)، وفي ((عمل اليوم والليلة)) (94-97و367)، وأبو يعلى (4721)، والبغوي (714) في ((شرح السنة))، وفي ((الشمائل)) (554)، وابن منده في ((التوحيد)) (208، 264، 358)، والطوسي في ((مختصر الأحكام)) (2/ 173، 174) رقم (282)، والدارمي (1347)، وابن ماجه (924
অর্থঃ
মা আয়েশা (রাঃ)বলেন নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাম ফিরাইবার পর
এই দোয়া পড়া পরিমান সময়ের অধিক বসতেন না। “আল্লাহ্হুমা আনতাম সালামু ওয়া মিনকাছ সালাম
তাবারাকতা ইয়া জালজালালী ওয়াল ইকরাম (হে আল্লাহ তুমি শান্তিময় এবং তোমার নিকট
হইতেই যাবতীয় শান্তি আসে তুমি বরকতময় হে প্রতাপ সম্মানের অধিকারী)”। তাখরিজ: মুসলিম-৫৯২,আবু দাউদ-১৫১২ তিরমিজি-২৯৮ ইবনে মাজাহ-৯২৪
উক্ত
হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা মানাবী (রঃ) বলেন-
لَمْ يَقْعُدْ اِلَّا
مِقْدَار مَايَقُوْلُ – الخ اَيْ بَيْنَ الْفَرضِ وَالسُّنَّةِ
অর্থঃ
এই পরিমাণ দোয়া পড়া পর্যন্ত বসতেন অর্থাৎ এই দোয়া পড়তেন ফরজের পর এবং সুন্নতে
মুয়াক্কাদার পূর্বে। সূত্র:
এলাউস্ সুন্নান, আজীজী
কিয়াস দ্বারা দলিল:
যে
সকল ফরজের পর সুন্নত নামাজ থাকে (যথা জোহর, জুম্মা, মাগরিব, এশা) এসব হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং ফরজ
নামাজের পরে ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার আগে এ উভয়ের মাঝে মুনাজাত হলো মুস্তাহাব; এই মুস্তাহাব মুনাজাত লম্বা করার কারণে দেরীতে
সুন্নত আদায় করা মাকরুহ হবে। সুন্নাতে মুয়াক্কাদার উপর মুস্তাহাব কাজকে
প্রাধান্য দেওয়া বেদাত ও মাকরুহ । সূত্র: মাজাহেরে হক পৃষ্ঠা- ৩০৮; প্রশ্নোত্তরে দোয়ার আহ্কাম (লেখকঃ মাওলানা
মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম, এম, এম)
হযরত
মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রাঃ)বলেছেন, একটি মাকরুহ তানজিহ হতে (ছোট মাকরুহ কাজ হতে)
আত্মরক্ষা করাও বছরের পর বছর ধরে নফল নামাজ, যিকির এবাদত, দোয়া, মোনাজাত হতে শত শত গুণে শ্রেষ্ঠ ফজিলতপূর্ণ ।
তাই ফরজ নামাজের পর সুন্নত নামাজ থাকলে দেরীতে সুন্নাত আদায় করা এমন মাকরুহ্ কাজ
হতে বিরত থাকা উল্লেখিত ফজিলতের অধিকারী এবং বড়ই সৌভাগ্যের শামীল ।
ফোকাহায়ে কেরামের অভিমত:
০১ নং
সমস্ত
ফরজ নামাজের পরই দোয়া করা নবী (সাঃ) এর তরীকা ও সুন্নত। কিন্তু ফরজ নামাজের পর
সুন্নাত নামাজ থাকলে সেই স্থলে যথা- জোহর, মাগরিব, এশা ও জুমা নামাজের পর মুনাজাত সংক্ষিপ্ত করা
উচিত। সূত্র: জখিরাতুজ জাফর ৫০ পৃষ্ঠা
০২ নং
উক্ত
নামাজ সমূহের পরে লম্বা মুনাজাত করা মাকরুহ তানজিহী। সূত্র: মুনিয়া এবং গায়াতুল
আওতার
০৩ নং
আর
যে সকল ফরজ নামাজের পরে সুন্নাত নামাজ নাই যথাঃ ফজর, এবং আছরের নামাজ- এ স্থলে যতটুকু ইচ্ছা মুনাজাত
লম্বা করা যাবে।
وَفِي الْحُجّةِ
الْاِمَامُ اِذَا فَرِغَ مِنَ الظُهْرِ وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ يَشْرَعُ فِيْ
الْسُنَّةِ وَلَايَشْغِلُ بِاَدْعِيَةٍ طَوِيْلَةٍ – (كذافي التاتارخانيه –
عالمغيري جلداول)
অর্থঃ
কিতাবুল হুজ্জাতে উল্লেখ আছে, ইমাম সাহেব যখন জোহর, মাগরিব এবং এশার নামাজ শেষ করবেন, তখন সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে সুন্নাত নামাজ শুরু
করবেন। মুনাজাত দীর্ঘ/লম্বা করবেন না। সূত্র: অনুরূপ তাতার খানিয়া, ফতওয়ারে আলগিরী ১ম জিঃ পৃঃ ৭৭
০৪ নং
جن فراءض كى بعد سنتين
هين انكي بعد دعاء مختصر كرنا هين زياده تاخير كرنا مكروه هين (كذافي الدرالمختار-
شامي- تاتارخانيه –منيةالمصلي )
অর্থঃ
যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ রয়েছে (যেমন- জোহর, মাগরিব, এশা)- যেগুলোর পর সংক্ষিপ্ত দোয়া করতে হয়।
দীর্ঘ সময় কাটানো মাকরুহ্।
সূত্র:
দুররুল মুখতার, মুখতার, শামী, তাতার খানিয়া, মুনিয়াতুল মুসল্লীতে;বেহেস্তী জেওর উর্দ্দু কেতাব পৃষ্টা- ২৩
০৫ নং
جن فراءض كي بعد سنتين
هين ان كي بعد دعاء مختصر هونا منا سب اور افضل هين زياده تاخير كرنا مكروه هين
(كذافي الدر المختار – شامي – تاتارخانيه – منية المصلي –احسن الفتاوي)
অর্থঃ
যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে (জোহর, মাগরিব, এশা) তাদের পর সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করা উচিত এবং
উত্তম। (সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ আদায় করতে) বেশী বিলম্ব করা মাকরুহ ।
সূত্র:
অনুরূপ দুররুল মুখতার, শামী
তাতার খানিয়াহ, মুনিয়া, আলমগিরী কিতাবে আছে; আহসানুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ৩৪৬
০৬ নং
কোন
কিতাবে দেখা যায় প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তিনবার (যেমন হাদিস শরীফে এসেছে,
ثوبان رضي الله عنه قَالَ
: ( كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا انْصَرَفَ
مِنْ صَلَاتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلَاثًا وَقَالَ : اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ ،
وَمِنْكَ السَّلَامُ ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ ) رواه مسلم (591)
وكذلك حديث كَعْبِ بْنِ
عُجْرَةَ رضي الله عنه عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ : ( مُعَقِّبَاتٌ لَا يَخِيبُ قَائِلُهُنَّ - أَوْ فَاعِلُهُنَّ - دُبُرَ
كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ : ثَلَاثٌ وَثَلَاثُونَ تَسْبِيحَةً ، وَثَلَاثٌ
وَثَلَاثُونَ تَحْمِيدَةً ، وَأَرْبَعٌ وَثَلَاثُونَ تَكْبِيرَةً )رواه مسلم (
আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি
লাইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহে, আয়াতুলকুর্ছি, এখলাছ, ফালাক, নাছ এক একবার এবং ৩৩ বারসুব্হানাল্লাহ ৩৪ বার
আলহামদুল্লিলাহ, ৩৪
বার আল্লাহু আকবার পড়া মোস্তাহাব। তবে যে ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে এগুলো
সুন্নাতের পরে পড়াই মোস্তাহাব এবং উত্তম ।
সূত্র:মারাকি, বেহেস্তিজিওর-পৃঃ ১৫৩
যে
সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে, সেক্ষেত্রে আমল, অজীফা, তাছবীহ, তাহ্লীল সমূহ সুন্নাত নামাজ আদায় করার পর
পড়তে হবে। এটাই উত্তম
সূত্র:
মারাকী, বেহেস্তি
জেওয়র ২য় খন্ড পৃঃ ১৫৩
جن فراءض كي بعد سنتين
هين انكي بعد امام اور مقتد يان مختصر دعاء كر سنتين ادا كري (فتاوي دار العلوم
ديو بند جلد سوم )
অর্থঃ
যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নত নামাজ আছে সে সকল নামাজের পরে ইমাম এবং মুক্তাদীগণ
সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে সুন্নাত আদায় করবে। সূত্র: ফতওয়ায়ে দারুল উলুমদেওবন্দ
২য় জিঃ পৃঃ ১৯৭
০৭ নং
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ
قَالَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَيُّ الدُّعَاءِ اَسْمَعٌ قَالَ جَوْفُ الَّيْلِ
الْاٰخِرِ وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوْبَاتِ ترمذي شريف-مشكوة شريف-
আবু
উমাম (রঃ) বলেন একদিন নবীজিকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ কোন্ দোয়া দ্রুত কবুল হয়? নবীজি বলেন শেষ রাতের এবং ফরজ নামাজের পরের
দোয়া এ হাদীসের ব্যাখ্যা মা আয়শার হাদীসে উল্লেখ হয়েছে যে, ফরজের পর সংক্ষেপ মুনাজাত করে সুন্নাতের পর
মুনাজাত লম্বা করার কথা। তবে যে ফরজ নামাজের পর সূন্নাত নেই সেক্ষেত্রে দীর্ঘ
মুনাজাত করতে দোষ নেই। আবি উমামারহাদীস মতে। ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুল হওয়ার
অর্থ ফরজ - সূন্নাত নামাজের পর। অর্থাৎ ফরজের পর সুন্নতে মোয়াকদাহ নামাজ থাকলে
সেক্ষেত্রে সংক্ষেপ মুনাজত করে সুন্নাত নামাজ আদায়ের পর যত ইচ্ছা মুনাজাত করা
যাবে। বেহেস্তি জিওর
মূল
কথা হলো, ফোকাহায়ে
আহনাফ ফরজ নামাজের পরে মাসনুন
দোয়া পড়াকে নিষেধ করেন না; বরং লম্বা দোয়া-মোনাজাত ও তাসবিহ তাহলিল নিষেধ করেন। কারণ ফরজ
নামাজের পরে সুন্নতে মুয়াক্কাদা থাকে, সেই সুন্নত ওই ফরজের অধীন। দলিল হলো, কোন কারণে যদি সময়ের মধ্যে ফরজ নামাজকে
দোহরায়তে (পুনরায় পড়তে হয়) হয়, তখন সুন্নতসহ পড়তে হয়।
সুতরাং
যে ফরজ নামাজের পরে সুন্নত রয়েছে, সেই নামাজের পরই তাসবিহ তাহলিল সংক্ষেপ করে
সুন্নত আদায় করে বাকি আমল করা উচিত।
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আবদুর রাজ্জাক
মৃত্যু ব্যক্তিকে উত্তর
দিকে মাথা আর দক্ষিণ দিকে পা রেখে গোসল করানোর প্রসঙ্গে |
জিজ্ঞাসা-২৫৯:
আসসালামুআলাইকুম,আমার
জিজ্ঞাসা মৃতদেহকে যে খাট বা মর্গের যে জায়গায় রেখে গোসল করানো হয় সেটা কোন দিক
করে স্থাপন করতে হবে,(সাধারণত আমরা লাশ উত্তর
দক্ষিণ দিক করে কবর দেই।)উক্ত বিষয়ে শরঈ সিদ্ধান্ত একান্ত দরকার। জানিয়ে বাধিত
করবেন।
মাওলানা
রমজান সৈয়দপুর নীলফামারী থেকে --
জবাব:
وعليكم السلام ورحمه الله
وبركاته.
بسم الله الرحمن الرحيم.
نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد.
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর কথা হলো, মৃত ব্যক্তিকে গোসলের সময়
উত্তর দিকে মাথা আর দক্ষিণ দিকে পা দিয়ে শোয়ানো ফোকাহায়ে কেরাম উত্তম বা
মুস্তাহাব বলেছেন।
হাদিস
দ্বারা দলিল:
হাদিস
নং -০১
عَنْ يَحْيَى بْنِ عَبْدِ
اللهِ بْنِ أَبِىْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ حِيْنَ قَدِمَ الْمَدِيْنَةَ سَأَلَ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ مَعْرُوْرٍ
فَقَالُوْا تُوُفِّى وَأَوْصَى بِثُلُثِهِ لَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَأَوْصَى أَنْ
يُوَجَّهَ إِلَى الْقِبْلَةِ لَمَّا احْتُضِرَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ
أَصَابَ الْفِطْرَةَ
وَقَدْ رَدَدْتُ ثُلُثَهُ عَلَى وَلَدِهِ ثُمَّ ذَهَبَ فَصَلَّى عَلَيْهِ وَقَالَ
اللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَأَدْخِلْهُ جَنَّتَكَ وَقَدْ فَعَلْتَ.
ইয়াহইয়া
ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আবী ক্বাতাদা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যখন মদ্বীনায় আগমন করলেন, তখন বারা ইবনু মা‘রূর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা জবাবে বলল, সে মারা গেছে এবং আমাদেরকে তিনটি অছিয়ত করে গেছে। তার মধ্যে একটি হল, যখন তার মৃত্যু হবে তখন ক্বিবলার দিকে করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, সে ঠিকই বলেছে। আমি এই তিনটি
বিষয় তার সন্তানদের বলে গেলাম। অতঃপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। তাখরিজ: হাকেম
হা/১৩০৫, ১/৩৫৩; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৮৪৩
হাদিস
নং -০২
قِبلتِكمْ أحياءً و
أمْواتًا
الراوي : عمير بن قتادة
الليثي خلاصة حكم المحدث : حسن | التخريج : أخرجه أبو داود (2875)، والنسائي (4012) باختلاف
يسير.
অর্থ:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায়
সকলের কিবলা হলো কাবা। তাখরিজ: আবু দাউদ: ২৮৭৫, নাসায়ি-৪০১২
হাদিস
নং -০৩
শরীয়তের
বিধান হলো কিবলা দিকে মুখ,পিঠ ফিরিয়ে পেশাব পায়খানা করা নাজায়েজ।
حَدَّثَنَا مُسَدَّدُ
بْنُ مُسَرْهَدٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ
يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ، رِوَايَةً قَالَ " إِذَا
أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ، فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ بِغَائِطٍ، وَلَا
بَوْلٍ، وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا " . فَقَدِمْنَا الشَّامَ،
فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ قَدْ بُنِيَتْ قِبَلَ الْقِبْلَةِ فَكُنَّا نَنْحَرِفُ
عَنْهَا وَنَسْتَغْفِرُ اللهَ
আবূ
আইয়ূব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা পায়খানায় গিয়ে কিবলামুখী হয়ে
পায়খানা-পেশাব করবে না, বরং পূর্ব অথবা পশ্চিমমূখী
হয়ে বসবে।’’ আবূ আইয়ূব (রাঃ) বলেন, আমরা সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে
পেলাম, সেখানকার শৌচাগারগুলো কিবলামুখী করে বানানো।
সেজন্য উক্ত স্থানে আমরা একটু বেঁকে বসতাম এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতাম।
বুখারী
(অধ্যায়ঃ উযু, অনুঃ পায়খানার সময়
ক্বিবলাহমুখী না হওয়া, হাঃ ১৪৪,আবু
দাউদ ০৯)
হাদিস
নং-০৪
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ
عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمَخْزُومِيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ
الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ
الأَنْصَارِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا
أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلاَ تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ بِغَائِطٍ وَلاَ بَوْلٍ
وَلاَ تَسْتَدْبِرُوهَا وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا " . فَقَالَ أَبُو
أَيُّوبَ فَقَدِمْنَا الشَّأْمَ فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ قَدْ بُنِيَتْ
مُسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةِ فَنَنْحَرِفُ عَنْهَا وَنَسْتَغْفِرُ اللَّهَ
আবু
আইয়ুব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন মলত্যাগ করতে
যাও, তখন মলত্যাগ বা পেশাবের সময় কিবলাকে সামনে বা
পেছনে রেখে বসো না, বরং পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে
ফিরে বস। আবু আইয়ূব (রাঃ) বলেন, আমরা সিরিয়াতে এসে দেখতে
পেলাম এখানকার পায়খানাগুলো কিবলার দিকে করে স্থাপিত। অতএব আমরা কিবলার দিক হতে
ঘুরে যেতাম এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা চাইতাম। —সহীহ।
ইবনু মাজাহ– (৩১৮), বুখারী ও মুসলিম,তিরমিজি ০৮)
قوله : (وَلكِنْ
شَرِّقُوْا أَوْ غَرِّبُوْا) অর্থাৎ- তোমরা পূর্ব পশ্চিম
দিকে মুখ করে পেশাব-পায়খানা কর। এ আদেশটি মূলত মাদীনাবাসী এবং যাদের ক্বিবলাহ্
(কিবলাহ/কিবলা) মাদীনাবাসীদের ক্বিবলার দিকে তাদের জন্য প্রযোজ্য।
এর
দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, দিকাভিমুখী হলে ক্বিবলাহ্
(কিবলাহ/কিবলা) সামনে বা পেছনে হয় না সেদিকে মুখ করে স্বাভাবিক প্রয়োজন (তথা
পেশাব-পায়খানা) পূরণ করা যা দেশভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। (অর্থাৎ- প্রত্যেক দেশের
অধিবাসীরা সেদিকে মুখ করে স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণ করবে যে দিকাভিমুখী হবে
(ক্বিবলাহ্ সামনে বা পেছনে হবে না)। হাদীসটি বাহ্যিকভাবে খোলা ময়দান ও প্রাচীর
বেষ্টিত টয়লেটের মাঝে কোন পার্থক্যকরণ ছাড়াই স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণের সময়
ক্বিবলাকে সামনে বা পিছনে করতে নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ।
ফাতাওয়ায়ে
শামীতে আছে
کرہ تحریما استقبال
قبلة واستدبارہا ل أجل بول أو غائط
(درمختار) وفي ”رد المحتار“ أي جہتہا کما في الصلاة فیما یظہر ونصّ الشافعیة علی أنہ لو استقبلہا بصدرہ وحوّل ذکرہ عنہا وبال لم یکرہ بخلاف عکسہ اھ أي فالمعتبر
الاستقبال ․․․ فلیس في الحدیث
دلالة علی أن المنہيّ استقبال العین کما لا یخفی الخ (رد المحتار علی الدر
المختار ۱/۵۵۴، فصل في الاستنجاء، ط: زکریا) وراجع ”در ترمذی“ (۱/۱۸۹)
সারমর্মঃ
কিবলা দিকে মুখ,পিঠ ফিরিয়ে পেশাব পায়খানা করা মাকরুহে তাহরিমি।
উল্লেখ্য
যে, মাইয়্যাতকে গোসলের শুরুতে তাকে বসার মাধ্যমে
প্রসাব-পায়খানা করাতে হয় অর্থাৎ পেটে আস্তে আস্তে চাপ দিতে হয় যাতে পেটের ভেতরে
নাপাকিগুলো বের আসে। সুতরাং তখন তাকে পশ্চিম দিকে প্রসাব পায়খানা করানো আওতায় পড়ে যাবে। কেননা মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তির
ন্যায়। দলিল:
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক মেয়ের ইন্তেকালের পর তার গোসল প্রসঙ্গে
মহিলাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন-
ابْدَأْنَ
بِمَيَامِنِهَا، وَمَوَاضِعِ الوُضُوءِ مِنْهَا.
অর্থাৎ
তোমরা (গোসল করানোর ক্ষেত্রে) তাঁর ডান দিক থেকে এবং অযুর স্থানসমূহ দ্বারা শুরু
করো। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৫৫)
উক্ত
হাদীসের আলোকে ইমাম আবু বকর জাসসাস রাহ. বলেন-
يوضأ وضوءه للصلاة أولاً.
অর্থাৎ
মায়্যেতকে প্রথমে নামাযের অযুর মত অযু করাবে। (শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/১৮৭)
প্রসিদ্ধ
তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-
يُبْدَأُ بِالْمَيِّتِ
فَيُوَضّأُ وُضُوءَهُ لِلصّلاَةِ ثُمّ يَبدَأ بِمَيَامِنِه.
মায়্যেতকে
(গোসলের শুরুতে) প্রথমে নামাযের অযুর ন্যায় অযু করাবে। এরপর তার ডান দিক থেকে
(ধোয়া) শুরু করবে। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১১০০১
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মৃত ব্যক্তির হাড় ভেঙে ফেলা জীবিত মানুষের হাড় ভেঙে ফেলার মতো। তাখরিজ: আবু
দাউদ, হাদিস নম্বর ৩২০৯
কিয়াস
দ্বারা দলিল:
কবরে
নামানোর আগে তাকে কবরের কিবলার দিকে রাখতে হয়। মৃতের মাথা উত্তর দিকে এবং পা
দক্ষিণ দিকে থাকবে। সূত্র: ফাতাওয়া হাক্কানিয়া :
৩/৪৪৬, মারাকিল ফালাহ : ২২০
যেহেতু
কবরে আমাদের দেশে উত্তর দিকে মাথা আর দক্ষিণ দিকে পা রাখা হয়,এর
উপর কিয়াস করে উপমহাদেশের ওলামায়ে কেরাম
বলেছেন যে, মাইয়াতকেও গোসলের সময়
উত্তর দিকে মাথা আর দক্ষিণ দিকে পা রাখবে।
সার
কথা হল, উপরোক্ত হাদিস ও কিয়াসের দ্বারা ফোকাহায়ে
কেরামগণ বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে গোসলের সময়
উত্তর দিকে মাথা এবং দক্ষিণ দিকে পা রাখা উচিত যদি সম্ভব হয়।
উত্তর
দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক
কবরকে
স্থানান্তরিত করা প্রসঙ্গে |
জিজ্ঞাসা-২৬০:
আসসালামু
আলাইকুম,
কোন
এক স্থানে একটি কবর আছে, সেখানে একটি স্থাপনা তৈরি
করবে, এ ক্ষেত্রে ঐ করবটি উক্ত স্থান থেকে সরিয়ে
কবরস্থানে স্থানান্তরিত করতে চাচ্ছে,
প্রশ্নঃ
কবর স্থানান্তরিত করা যাবে কিনা? যদি করা যায় তাহলে
পদ্ধতিটা কেমন হবে?
হাফেজ
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ যশোর থেকে---
জবাব:
عليكم السلام ورحمه الله
وبركاته.
بسم الله الرحمن الرحيم.
نحمده ونصلي على رسوله الكريم اما بعد.
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর কথা হল, একজন মুমিন জীবিত থাকতে যেন
সম্মানিত , তেমনি মৃত্যুবরণ করার পরও সম্মানিত। তাই মুমিনের ইজ্জতের কারণে স্বাভাবিক
অবস্থায় কবর স্থানান্তরিত করা জায়েজ নেই। যেমন, হাদিস শরীফে এসেছে,
وعن عائشة رضي الله عنها:
أن رسول الله ﷺ قال: كسر عظم الميت ككسره حيًّا.
رواه أبو داود بإسنادٍ
على شرط مسلم.
অর্থ:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, লাশের হাড্ডি ভাঙ্গা জীবিতের
হাড্ডি ভাঙ্গার সমান। তাখরিজ: আবু দাউদ-৩২০৭
অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ)
বলেন, এই হাদীছ থেকে জানা যায় যে, মুমিনের সম্মান মৃত্যুর পরেও অবশিষ্ট থাকে যেমন জীবিত অবস্থায় ছিল’ (ফাৎহুল বারী ৯/১১৩)
তবে
শরিয়ি ও বিশেষ জরুরতে জায়েজ আছে। দলিল:
মু‘আবিয়া (রাঃ) একটি পানির নহর প্রবাহিত করার জন্য ওহোদ যুদ্ধে
শহীদ কতিপয় ছাহাবীর কবর খনন করে তাঁদের লাশ অন্যত্র দাফনের ব্যবস্থা করেন। সূত্র:
ইবনুল মুবারাক, কিতাবুল জিহাদ হা/৯৮
যাইহোক, আপনি উল্লেখ করেননি যে উক্ত কবরটা কি ওয়াকফকৃত কিনা,পুরাতন
না নতুন? আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে
বোঝার জন্য কয়েকটি ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন:
ক। কবরটি যদি ওয়াকফকৃত হয়, তাহলে স্থানান্তরিত করা যাবে
কিনা?
উত্তর:
ক। যদি কেউ কোনো জায়গাকে কবরস্থানের জন্য ওয়াকফ্ করে থাকে, তাহলে সে জায়গাকে অন্য কোনো কাজে লাগানো জায়েয হবে না। কেননা ওয়াক্বিফের শর্ত
শরীয়তের বিধানের মতই কর্যকর হিসেবে ধর্তব্য হবে।হ্যা রেফাহে আম তথা জনস্বার্থে যদি
সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়,যেমন রাস্তা ইত্যাদি তাহলে এমতাবস্থায় কবররের
জন্য ওয়াক্বফের জায়গাকেও জনস্বার্থে ব্যবহার করা যাবে এবং কবরকে স্থানান্তরিত করা
যাবে। সূত্র: রদ্দুল মুখতার -৪/৩৬৬
প্রশ্ন:
খ। নতুন কবরের হুকুম কি?
উত্তর:
খ। নতুন কবর বলতে যার লাশ এখন অবশিষ্ট আছে, জায়গার প্রকৃত মালিক সে কবর
সরিয়ে নিতে বাধ্য করে, তাহলে শুধু সে ক্ষেত্রে
মাইয়েত কিংবা মাইয়েতের দেহাবশেষ অন্যত্র স্থানান্তর করার অবকাশ আছে, অন্যথায় জায়েজ নেই। সূত্র:হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাদ্দুর ১/৩৮২, রদ্দুল মুহতার ২/২৩৯, তাতারখানিয়া ৩/৮০
প্রশ্ন:
গ। পুরাতন কবরের হুকুম কি?
উত্তর
: গ। যতদিন লাশ একেবারে মাটি না হবে, ততদিন কবরের সম্মান বাকি
থাকে। যখন লাশ মাটির সাথে মিশে যাওয়ার প্রবল ধারণা হবে তখন কবর সমতল করে দিয়ে সে
জায়গা রাস্তা বা বাড়ি-ঘর অন্য কোন কাজেও ব্যবহার করা যাবে। এমতাবস্থায় কবর স্থানান্তরিত করা কোন প্রয়োজন নেই।
সূত্র:তাতাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; ফাতহুল কাদীর ২/১০১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৩৬; শরহুল মুনয়া পৃ. ৬০৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৭; ইমদাদুল আহকাম ৩/২৮৬
সার
কথা হল, আপনার প্রশ্নের বর্ণিত কবরটি যদি ওয়াককৃত
জায়গা এবং নতুন কবর না হয়, কবরটি পুরাতন হয় অর্থাৎ তার
দেহ মাটির সাথে মিশে গিয়েছে ধারণা করা হয়, তাহলে সেখানে যেকোন স্থাপনা,ঘরবাড়ি
কোন বিল্ডিং তৈরি করা যাবে কোন সমস্যা নেই এবং কবর স্থানান্তরিত করার কোন প্রয়োজন
নেই। দলিল:
وَلَوْ بَلَى الْمَيِّتُ
وَصَارَ تُرَابًا جَازَ دَفْنُ غَيْرِهِ فِي قَبْرِهِ وَزَرْعُهُ وَالْبِنَاءُ
عَلَيْهِ، كَذَا فِي التَّبْيِينِ. (الفتاوى الهندية، كتاب الصلاة، الباب الحادى
عشر فى الجنائز، الفصل السادس فى القبر الدفن-1/167
إذا غلب الماء على القبر
فقيل يجوز تحويله لما روي أن صالح بن عبيد الله رؤي في المنام وهو يقول حولوني عن
قبري فقد آذاني الماء ثلاثا فنظروا فإذا شقه الذي يلي الماء قد أصابه الماء فأفتى
ابن عباس رضي الله عنهما بتحويله (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح، كتاب الصلاة،
باب احكام الجنائز، فصل في حملها ودفنها-61
উত্তর
দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক
ঘোড়ার জানাজা এবং তার গোশত
না খাওয়ার হিকমাহ কি? |
জিজ্ঞাসা-২৬১:
আসসালামু
আলাইকুম।
প্রশ্ন:
কোন কোন এলাকায় ঘোড়ার জানাজা করা হয়। এর কোন দালিলিক ভিত্তি আছে কিনা?
প্রশ্ন:
ঘোড়ার গোশত খাওয়া হয় না কেন?
মাওলানা
শহীদ যশোর থেকে---
জবাব:
وعليكم السلام ورحمه الله وبركاته.
نحمده ونصلي على رسوله
الكريم اما بعد.
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে
প্রশ্ন-উত্তর কে দুই ভাগে ভাগ করছি--
প্রশ্ন:
ক। কোন কোন এলাকায় ঘোড়ার জানাজা করা হয়। এর কোন দালিলিক ভিত্তি আছে কিনা?
উত্তর:
ক। যদি কোন এলাকায় ঘোড়ার জানাজা হয়ে থাকে,তাহলে এটি কুসংস্কার ও
বিদআত। ইসলামে শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। দলিল:
শাব্দিক
দলিল:
الجنازة শব্দ টি আরবি।
এর শাব্দিক অর্থ হলো,
মৃতের
সদ্গতির জন্য প্রার্থনা; সজ্জিত মৃতদেহ; মুসলমানদের অন্ত্যেষ্টি, শবযাত্রা। সূত্র: সংসদ বাংলা
অভিধান
পরিভাষায়
বলা হয়, মৃত ব্যক্তিকে সমাহিত করার
পূর্বে সমবেত নামাজ বা প্রার্থনা। সূত্র: সংসদ বাংলা অভিধান
উপরোক্ত
শাব্দিক অর্থ ও সংজ্ঞা দ্বারা প্রমাণিত হলো জানাযা শুধু মৃত্যু ব্যক্তির জন্য অন্য
কারো জন্য নয়।
হাদিস
শরীফ দ্বারা দলিল:
হাদিস
নং-০১
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ
بْنُ دَاوُدَ بْنِ سُفْيَانَ، وَخُشَيْشُ بْنُ أَصْرَمَ، قَالَا: حَدَّثَنَا
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنِ ابْنِ
الْمُسَيِّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَمْسٌ تَجِبُ لِلْمُسْلِمِ عَلَى أَخِيهِ، رَدُّ السَّلَامِ،
وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ، وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ،
وَاتِّبَاعُ الْجَنَازَةِ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর তার মুসলিম
ভাইয়ের পাঁচটি অবশ্য করণীয় রয়েছে। সালামের জবাব দেয়া, হাঁচি শুনে জবাব দেয়া, দাওয়াত কবূল করা, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া এবং জানাযা ও দাফনে অংশগ্রহণ করা। তাখরিজ: আবু দাউদ
৫০৩০, বুখারী,মুসলিম
হাদিস
নং-০২
প্রিয়
নবী (ﷺ) বলেন, “যখন তোমরা মাইয়্যেতের জানাযা পড়বে তখন তার জন্য
বিশুদ্ধচিত্তে দুআ করবে।” তাখরিজ: আবু দাউদ ২৭৮৪ক, ইবনে মাজাহ ১৪৮৬
হাদিস
নং-০৩
اللَّهُمَّ اغْفِرْ
لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا
وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا ، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ
عَلَى الْإِيمَانِ ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِسْلَامِ .
উচ্চারণঃ-
আল্লা-হুম্মাগফির লিহাইয়িনা অমাইয়িতিনা অশা-হিদিনা অগায়িবিনা অস্বাগীরিনা
অকাবীরিনা অযাকারিনা অউনষা-না, আল্লা-হুম্মা মান
আহয়্যাইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম, অমান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না
ফাতাওয়াফফাহু আলাল ঈমান।
অর্থ-
হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত অনুপস্থিত, ছোট-বড়, পুরুষ ও নারীকে ক্ষমা করে
দাও। হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যাকে তুমি জীবিত রাখবে তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখ
এবং যাকে মরণ দিবে তাকে ঈমানের উপর মরণ দাও। হে আল্লাহ! ওর সওয়াব থেকে আমাদেরকে
বঞ্চিত করো না এবং এর পরে আমাদেরকে ফিতনায় ফেলো না। তাখরিজ: আহমাদ ২/৩৬৮, তিরমিযী ৯৪৫, নাসাঈ ১৯৬০ক, আহমাদ ১৬৮৮৫ক, আবু দাউদ ২৭৮৬ক, ইবনে মাজাহ-১৪৮৬ মিশকাত- ১৬৭৫
নোট:
বিভিন্ন বর্ণনায় শব্দের কম বেশি রয়েছে।
উপরোক্ত
তিনটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় জানাজা শুধু মুসলমানদের জন্য, অন্য কোন প্রাণীর জন্য নয়।
জানাযার
ইতিহাস দ্বারা দলিল:
আদম
(আ.)-এর জানাযার নামাজের মাধ্যমে সর্বপ্রথম জানাযার নামাজ শুরু হয়। আর তার জানাযার
নামাজ পড়ান একজন ফেরেশতা। তার কাফন-দাফনের ব্যাবস্থাও করেন ফেরেশতাগণ। তার জানাযার
নামাজ পড়ানোর পর আদম সন্তানদেরকে লক্ষ্য করে ফেরেশতারা বলেন:
‘হে বনী আদম! এটি তোমাদের জন্য বিধান।’
সেখান
থেকেই জানাযার নামাজ পড়ার প্রচলন শুরু হয়। সূত্র: আলবিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ
১/১৫৬-১৫৭
জানাযা
ইতিহাস থেকে জানা গেল এটা শুধু আদম সন্তানদের জন্য অন্য কোন মাখলুকের জন্য নয়।
কিয়াস
দ্বারা দলিল:
আমলের
হিসাব-নিকাশ শুধুই মানুষ এবং জিন জাতির জন্য, অন্য কোন প্রাণীর হবে না। আর
জানাজা নামাজ পড়া হয় তার উপকার্থে, দোয়ার জন্য।
ঘোড়া
বা অন্য কোন প্রাণীর জন্য দোয়া কোন কাজে আসবে না।
প্রশ্ন:
খ। ঘোড়ার গোশত খাওয়া হয় না কেন?
উত্তর:
খ। ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া মৌলিকভাবে হারাম নয়। ফোকাহায়ে কেরামের মধ্যে ঘোড়ার
গোস্ত খাওয়া নিয়ম মতভেদ রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম ঘোড়া গোস্ত খেয়েছেন। দলিল:
إِسْحَاقُ سَمِعَ
عَبْدَةَ عَنْ هِشَامٍ عَنْ فَاطِمَةَ عَنْ أَسْمَاءَ قَالَتْ ذَبَحْنَا عَلٰى
عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَرَسًا وَنَحْنُ بِالْمَدِينَةِ
فَأَكَلْنَاهُ.
অর্থ:
আসমা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর যুগে আমরা একটি ঘোড়া নহর করলাম এবং সেটি খেলাম। তাখরিজ:
বুখারী- ৫৫১৯
কিন্তু
পরবর্তীতে তা নিষেধ করেছেন। দলিল:
হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।’ তাখরিজ:নাসাঈ শরিফ : ৮/২০৬, আবু দাউদ : ২/৫৩১
ঘোড়ার
গোশত মাকরুহ তাহরিম হওয়ার হিকমাহ:
ঘোড়ার
গোশত খাওয়া যদি সাধারণ করা হয় তাহলে যুদ্ধের জন্য জেহাদের জন্য বাহন ব্যত্যয়
ঘটবে। ঘোড়া শুধু সাধারণ বাহন নয় ; ঘোড়া হলো যুদ্ধের অন্যতম
বাহন। যেমন মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন,
আয়াত
নং -০১
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا
اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ
اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ
يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ
وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ
আর
প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি
সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর
শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও
যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন।
বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।
সূরা
আনফাল-৬০
আয়াত
নং -০২
Surah An-Nahl, Verse 8:
وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ
وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
তোমাদের
আরোহণের জন্যে এবং শোভার জন্যে তিনি ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছেন।
আর তিনি এমন জিনিস সৃষ্টি করেন যা তোমরা জান না। সূরা নাহল-০৮
আলোচ্য
আয়াতে বাহন ও সৌন্দর্যের উপকরণ হিসেবে ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করার
কথা বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ মানুষের কল্যাণে এগুলো সৃষ্টি করেছেন। এ আয়াতের
ব্যাখ্যায় মুফতি শফি (রহ.) লিখেছেন, ‘পবিত্র কোরআনে উট, গরু ও ছাগল ইত্যাদির কথা
বিভিন্ন স্থানে এসেছে। এগুলোর উপকারিতার মধ্যে গোশত খাওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ
উপকারিতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এ আয়াতে ঘোড়া, গাধা ও খচ্চরের কথা বলা হলেও এগুলোর গোশত খাওয়ার কথা বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, এগুলো বাহন ও সৌন্দর্যের উপকরণ
এতে
প্রমাণিত হয়, ঘোড়া, গাধা ও খচ্চরের গোশত খাওয়া বৈধ নয়।’ সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল
কুরআন
একটি
সংশয় ও তার নিরসন:
প্রশ্নটি
হল এখন তো যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়ার ব্যাপক ব্যবহার হয় না, তাহলে এখন সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছেন।
এর
উত্তর হল যদিও আধুনিক যুগে যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়ার ব্যাপক ব্যবহার নেই, তবে পৃথিবীর সব সামরিক বাহিনীতে ঘোড়ার একটি ইউনিট বা ব্যাটালিয়ন রয়েছে।
এমনও অনেক অঞ্চল আছে যেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি গাড়ি অচল ঘোড়ার যুদ্ধ একমাত্র
সচল।
তাই
বর্তমান যুগের ফোকাহায়ে কেরামের মতে আগের মতই মাকরুহ তাহারিমি বলবৎ রেখেছেন।
সূত্র:আহকামুল কোরআন লিল জাসসাস : ৩/১৮৩, ১৮৪
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
স্ত্রী কি তার স্বামী কে
তুই করে বলতে পারে? |
জিজ্ঞাসা: ২৬২:
একটি মাসয়ালাঃ স্ত্রী কি তার
স্বামী কে তুই করে বলতে পারে?
(তার স্বামী রাগের মাথায় একেকবার
বলে এই প্রতিশোধ নিতে স্ত্রী তার স্বামীকে সব সময় বলছেন)
তারিখ:০৫/০৯/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
জবাব:
نحمده ونصلي على رسوله الكريم
اما بعد.
হামদ ও সানার পর কথা হলো,
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামীর মর্যাদা অনেক।
প্রথম কথা হলো, তাই স্বামী কষ্ট পায়, অপছন্দ করেন এমন আচরণ না করা স্ত্রীর কর্তব্য।
স্বামীর সম্মান-মর্যাদার
দলিল:
আয়াত নং-০১
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى
النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا
مِنْ
--.
অর্থ: পুরুষেরা নারীদের উপর
কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সূরা নিসা -৩৪
হাদিস নং-০১
عَنْ مُعَاذٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ
لَأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَسْجُدْنَ لِأَزْوَاجِهِنَّ»
অর্থ: হজরত মুয়াজ রাঃ থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি আমি যদি কোন ব্যক্তিকে অন্য কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে আমি স্ত্রীদের আদেশ দিতাম তাদের স্বামীকে সেজদা দিতে। তাখরিজ:
মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৮৭৮৫, আবু দাউদ-২১৪০
হাদিস নং-০২
إذا صلَّت المرأةُ خمسَها وصامت
شهرَها وحفِظت فرجَها وأطاعت زوجَها قيل لها ادخُلي الجنَّةَ من أيِّ أبوابِ
الجنَّةِ شئتِ
الراوي : عبدالرحمن بن عوف | المحدث :
السخاوي | المصدر : البلدانيات |
الصفحة أو الرقم : 161 | خلاصة حكم المحدث : حسن |
التخريج : أخرجه أحمد (1661) واللفظ له، والطبراني في ((المعجم الأوسط)) (8805
হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামায
আদায় করে, রমজান মাসের রোযা রাখে, লজ্জাস্থানের
হেফাজত করে এবং স্বামীর অনুগত থাকে; তাকে বলা হবে- তুমি যে
দরজা দিয়ে চাও জান্নাতে প্রবেশ কর।’ তাখরিজ: মুসনাদে
আহমদ-১৬৬১; তাবারানি-৮৮০৫
হাদিস নং-০৩
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, ‘তার কোনো নামাজ কবুল হয় না, কোনো নেক আমল ওপরে উঠানো হয় না; যতক্ষণ স্বামী তার
প্রতি সন্তুষ্ট না হবে।’ তাখরিজ: ইবনে হিব্বান
হাদিস নং-০৪
স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর আচরণ
কেমন হবে তা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে এক নারীর
আলাপচারিতায় ফুটে ওঠেছে। হাদিসে এসেছে-
হজরত হুসাইন ইবনে মুহসিন
থেকে বর্ণিত, তাঁর এক ফুফু প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কোনো
প্রয়োজনে এসেছিলেন। তাঁর প্রয়োজন পূর্ণ হলে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, তুমি কি বিবাহিতা? তিনি
বললেন, ‘হ্যাঁ’। প্রিয়নবি (ﷺ)বললেন, তুমি স্বামীর সঙ্গে কেমন আচরণ করে থাক? তিনি বললেন,
আমি একেবারে অপারগ না হলে তার সেবা ও আনুগত্যে ত্রুটি করি না।
তখন প্রিয়নবি (ﷺ)বললেন, ‘স্বামীর সঙ্গে তোমার আচরণ কেমন তা ভেবে
দেখ। কারণ স্বামীই তোমার জান্নাত কিংবা জাহান্নাম।’ তাখরিজ:
মুসনাদে আহমদ
দ্বিতীয় কথা হলো, আপনি, তুমি,
তুই শুধু বাংলা ভাষায় ব্যবহার হয়। আরবি, ইংরেজি
বা অন্য ভাষায় এভাবে ব্যবহার নেই। যেমন, আরবিতে انت (আনতা) মানে (আপনি তুমি তুই) ইংরেজিতে you (উই) মানে আপনি তুমি তুই।
বাংলা ভাষায় তুই কখনো অধিক আন্তরিকতা আবার তাচ্ছিল্য হিসেবে ব্যবহার হয়।
তৃতীয় কথা হলো,
আল্লাহ বলেন, وَ لَا تَسُبُّوا الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ
اللّٰهِ فَیَسُبُّوا اللّٰهَ عَدۡوًۢا بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ؕ
অর্থ: আল্লাহকে বাদ দিয়ে
যাদেরকে তারা ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিও না, কেননা তারা তাদের অজ্ঞতাপ্রসূত শত্রুতার
বশবর্তী হয়ে আল্লাহকে গালি দেবে। সূরা আনআম-১০৮
এ আয়াতের শিক্ষা হলো, অন্য ধর্মের খোদা, অপরের পিতা-মাতা, বংশ ইত্যাদিকে গালি দিলে, তারা আবার পাল্টা গালি দিবে। সুতরাং নিজ ধর্ম, পিতা-মাতা,
নিজের সম্মান-ইজ্জত রক্ষার্থে অপরকে গালি-তাচ্ছিল্য থেকে বেঁচে
থাকতে হবে।
সারকথা হলো, আপনার উল্লেখিত প্রশ্ন আলোকে
বুঝা যায়, স্ত্রীর আচরণে স্বামী খুশি নয়, এমতাবস্থায় স্ত্রীর উচিত তার স্বামী সন্তুষ্ট হয়, এমন
আচরণ করা। অর্থাৎ স্বামীকে তাচ্ছিল্যস্বরে তুই বলা থেকে বিরত থাকা। কারণ এতে
স্বামীর অসম্মান হয় ও দুনিয়া-আখিরাতের ক্ষতির কারণ। আর নিজ স্বামীকে সম্মান
স্ত্রীর কর্তব্য।
জিজ্ঞাসা-২৬৩: মুহতারাম আসসালামু আলাইকুম। টয়লেটে বা বাথরুমে আল্লাহ/রসূলের
নাম বা দুআ-কালাম পড়া যাবে? যদি পড়া না যায়, তাহলে
অ্যাটাচ বামরুমে জিকির-দুআ পাঠ করা জায়েজ হবে কি? তারিখ: ১০/০৯/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই RT 12265 MD shafiqul islam 131 FD wksp
khagrachari সেনানিবাস-এর প্রশ্নের আলোকে।
মহান আল্লাহ তাকে দুজাহানে সম্মান-ইজ্জতের জীবন দান করুন।)
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর শুরুতে আপনাকে
জাযাকাল্লাহ খয়র। কেননা আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সওয়াল করেছেন। যা আমাদের নিত্যদিন
সর্বদা প্রয়োজন। আপনা প্রশ্নকে সহজভাবে
বুঝার জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। টয়লেটে বা বাথরুমে আল্লাহ/রসূলের নাম বা দুআ-কালাম পড়া যাবে?
উত্তর: ক।
মূলকথা হলো, যেখানে নাপাক-দুর্গন্ধ
সেখানে আল্লাহ-রসূলের নাম,
দুআ-জিকির
করা যায় না। টয়লেটে বা বাথরুমে জিকির-দুআ
বিষয়ে ওলামায়ে মুতাকাদ্দিমীনদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও; বিশুদ্ধ
মত হলো, টয়লেটে/বাথরুমে
দুআ-জিকির মাকরুহ। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ
الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ قَتَادَةَ،
عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ حُضَيْنِ بْنِ الْمُنْذِرِ أَبِي سَاسَانَ، عَنِ
الْمُهَاجِرِ بْنِ قُنْفُذٍ، أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ
يَبُولُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ حَتَّى تَوَضَّأَ ثُمَّ
اعْتَذَرَ إِلَيْهِ فَقَالَ " إِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ عَلَى
طُهْرٍ "
. أَوْ قَالَ " عَلَى طَهَارَةٍ " .
অর্থ: হজরত আল-মুহাজির ইবনু কুনফু
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি নবী (ﷺ) এর নিকট গিয়ে তাঁকে সালাম দিলেন। তখন নবী (ﷺ) পেশাব করছিলেন। সেজন্য অযূ না করা পর্যন্ত
তিনি তার জবাব দিলেন না। অতঃপর (পেশাব শেষে অযূ করে) তিনি তার নিকট ওযর পেশ করে
বললেন, পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহর নাম স্মরণ করা আমি অপছন্দ করি। তাখরিজ: সুনানে
আবু দাউদ-১৭
হাদিস/আসার
নং-০২
ما روى عن ابن عباس رضي الله عنه
قال: يكره أن يذكر الله تعالى على
حالتين على خلائه والرجل يواقع امرأته لأنه ذو الجلال والاكرام يجل عن ذلك
أخرجه ابن أبي شيبة في مصنفه (1/ 108)
قال ابن المنذر في الأوسط (1/ 461):
অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা.
তিনি দুই অবস্থায় আল্লাহর জিকির করা অপছন্দ করতেন (১) টয়লেটে থাকা অবস্থায় (২) এবং
এই অবস্থায় যে, একজন ব্যক্তি তিনি তাঁর স্ত্রীর সাথে সহবাস
অবস্থায়। কেননা তিনি (আল্লাহ) মহা মহিয়ান মর্যাদার অধিকারী, এসব
জিনিস থেকে তিনি পবিত্র। তাখরিজ: মুসান্নাফায়ে ইবনে আবী
শাইবাহ ১/১০৮; ইমাম ইবনুল মুনযির রাহিমাহুল্লাহ আল- আউসাত
(১/৪৬১)
হাদিস/আসার
নং-০৩
قال ابن المنذر في الأوسط :
وقال عكرمة لا يذكر الله وهو على
الخلاء بلسانه ولكن بقلبه .
" الأوسط "
( 1 / 341 )
অর্থ: ইকরিমাহ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন যে, কোন
ব্যক্তি টয়লেটে অবস্থানরত অবস্থায় আল্লাহর জিকির মুখে ( আওয়াজ করে) করবে না, বরং
তিনি যিকির মনে মনে করবেন।
ইমাম
ইবনুল মুনযির রাহিমাহুল্লাহ আল-আউসাতে ১/৩৪১ সাহাবী ইকরিমাহ রাদিআল্লাহু আনহু এর
এই কথা উল্লেখ করেছেন।
হাদিস-০৪۔
عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ
النَّبِي صلي الله عليه وسلم
إِذَا دَخَلَ الْخَلاَءَ وَضَعَ خَاتَمَهُ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) যখন টয়লেটে প্রবেশ করতেন তখন আংটি খুলে
রাখতেন। তাখরিজ: আবু দাঊদ-১৯; তিরমিযী-১৭৪৬; নাসায়ি-৫২১৩
আর একথা স্পষ্ট যে
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)
এর আংটিতে আল্লাহ, রাসুল (ﷺ) এর নাম এর নকশা করা ছিলো।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه ،
أن النبي صلي الله عليه وسلم صنع خاتما من ورق ، فنقش فيه محمد رسول الله صلي الله
عليه وسلم ، ثم قال:
لا تنقشوا عليه.هذا حديث حسن صحيح ومعنى قوله: لا تنقشوا عليه ، نهى أن ينقش أحد على خاتمه محمد رسول
الله . (سنن الترمذي -طبعة بشار -ومعها حواشي –رقم 1745- ج3 / ص281)
সারমর্মঃ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)
এর আংটিতে محمد رسول الله লিখিত নকশা করা
ছিলো।
لمافی الھندیۃ(۵۰/۱):ویکرہ ان یدخل فی الخلاء ومعہ
خاتم علیہ اسم اﷲ
تعالیٰ أو شییٔ من القرآن۔
টয়লেটে আল্লাহত নাম,কুরআনের
আয়াত সম্বলিত আংটি নিয়ে প্রবেশ করা মাকরুহ। সুতরাং আল্লাহর নাম সঙ্গে নাজায়েজ হলে,
সেখানে
নাম উচ্চারণ করা আরও অধিকতর নাজায়েজ যা সহজেই অনুমেয়।
হাদিস নং-০৫
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘পৃথিবীর সর্বত্র সালাত আদায়
করা যাবে—গোরস্তান ও বাথরুম ছাড়া। ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম, পৃষ্ঠা
৩৩২; আল ইরওয়া :
১/৩২০
এ হাদিস শরিফ দ্বারা প্রমাণিত
হয়। টয়লেট বা গোসলখানায় সালাত আদায় করাও
বৈধ নয়। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সালাতও শ্রেষ্ঠ জিকিরের
অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন: খ। অ্যাটাচ বামরুমে জিকির-দুআ
পাঠ করা জায়েজ হবে কি?
উত্তর: খ। আমরা জানি যে, নবি-সাহাবি-তাবেয়িদের
যুগে অ্যাটাচ ছিল না, এটা বর্তমান যুগের একটি সংস্করণ। যুগের চাহিদা, জায়গার
স্বল্পতার কারণে এটি বানানো হয়েছে; তবে সম্ভব হলে আলাদা করা উচিত। নবিজি (ﷺ)
গোসল খানায় প্রসাব করতে নিষেধ করেছেন। যেমন,
আবদুল্লাহ্ বিন মুগাফ্ফাল
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
ـ صلى الله عليه وسلم ـ
“ لاَ يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِي
مُسْتَحَمِّهِ فَإِنّ عَامَّةَ الْوَسْوَاسِ مِنْهُ ” .
قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ بْنُ
مَاجَهْ سَمِعْتُ عَلِيَّ بْنَ مُحَمَّدٍ الطَّنَافِسِيَّ يَقُولُ إِنَّمَا هَذَا
فِي الْحَفِيرَةِ فَأَمَّا الْيَوْمَ فَلاَ . فَمُغْتَسَلاَتُهُمُ الْجَصُّ وَالصَّارُوجُ وَالْقِيرُ فَإِذَا
بَالَ فَأَرْسَلَ عَلَيْهِ الْمَاءَ لاَ بَأْسَ بِهِ .
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
তোমাদের
কেউ যেন তার গোসলখানায় পেশাব না করে। কেননা তা থেকেই যাবতীয় সন্দেহের উদ্রেক হয়। ১/৩০৪
ব্যাখ্যা: আবদুল্লাহ্ ইবনে মাজাহ (রহঃ)
বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ (রহঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি
আলী বিন মুহাম্মাদ আত-তানাফিসী (রহঃ) কে বলতে শুনেছেন, এ
নির্দেশ সেই সময়ের যখন গোসলখানা কাঁচা ছিল। যেহেতু বর্তমানকালে গোসলখানা ইট ও চুনা
দ্বারা নির্মিত হয়। তাই যদি কেউ পেশাব করার পর সে সেখানে পানি ঢেলে দেয়, তবে
তাতে কোন দোষ নেই।
আহসানুল ফাতাওয়া এর রচয়িতা
বলেন ,গোসলখানা যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয় এবং তার ভেতর টয়লেট
না থাকে তাহলে সেখানে প্রবেশ বা বের হওয়ার সময় যে কোন পা আগে প্রবেশ করাতে
পারবে।এবং গোসল খানার ভিতর পরিধেয় পোশাক খোলার পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়তে পারবে।
লুঙ্গি বা গামছা ইত্যাদি শরীরে প্যাঁচানো অবস্থায় গোসল করলে শরীরের পোশাক খোলার
পরও গোসলরত অবস্থায় দোয়া কালাম পড়তে পারে। ফাতাওয়া দারুল উলুম জাকারিয়া ১/১৬৬
নিচে আকাবিরের দেওবন্দের
কিছু ফাতোয়া উল্লেখ করা হলো بیت الخلا کے اندر جانے کے بعد دعا پڑھنا،اٹیچ باتھ روم میں دعا
پڑھنا
جنوری 26, 2022 0 تبصرے 38 مناظر
হ্যা,বাথরুম
যদি পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন থাকে, ময়লা ও দুর্গন্ধ না থাকে,পেশাব
পায়খানা করার পর পর্যাপ্ত পানি ঢালার কারণে কমোডে নাপাক দেখা না যায় এবং
দুর্গন্ধ না থাকে, হাই কমোড হলে পর্যাপ্ত পানি ঢালার পর ঢাকনা
বন্ধ করে রাখা হয় তাহলে ঐ অবস্থায় বাথরুমে ওযু করার সময় ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ
বলা ও ওযুর আগে- পরে হাদিসে বর্ণিত দোয়া সমূহ পড়া যাবে।
টয়লেট করার আগে -পরের দোয়া
গুলো ও কমোড থেকে সরে এসে গোসলখানার অংশে পড়া যাবে।
প্রশ্ন: গ।
বাথরুম/টয়লেটের দুআ কখন পাঠ করবে?
উত্তর: গ। অনেকে বিষয়টা বুঝে না, মাসনুন
দুআগুলো কখন পাঠ করতে হবে। প্রবেশের পূর্বে না পরে এবং বের হবার পূর্বে না পরে।
টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে দুআ
পাঠ করবে।
দলিল:
وعن علي قال قال رسول الله ﷺ ستر ما بين أعين الجن وعورات بني ادم إذا دخل أحدهم
الخلاء أن يقول بسم الله. رواه الترمذي وقال حديث غريب
وإسناده ليس بقوي
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন : যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ
করবে (যখন
প্রবেশের ইচ্ছা পোষণ করবে) তখন জিন শাইত্বনের চোখ ও বানী আদামের
লজ্জাস্থানের মধ্যে পর্দা হল “বিসমিল্লা-হ” বলা।
তাখরিজ: তিরমিযী ৬০৬, সহীহুল
জামি ৩৫১১;
মিশকাতুল
মাসাবিহ-৩৫
এবং টয়লেট থেকে বের গওয়ার পর
দুআ পাঠ করবে। দলিল:
وعن عائشة قالت كان النبي ﷺ إذا خرج من الخلاء قال غفرانك. رواه الترمذي وابن ماجة والدارمي
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নাবী
(ﷺ )যখন পায়খানা হতে বের হতেন তখন বলতেন : “গুফরা-নাকা” (অর্থাৎ-
হে আল্লাহ! তোমার ক্ষমা প্রার্থনা করছি)। আবূ দাঊদ ৩০, তিরমিযী
৭, ইবনু মাজাহ্ ৩০০,
দারিমী
৭০৭; মিশকাতুল
মাসাবিহ-৩৫৯
প্রশ্ন: ঘ। যদি কেউ টয়লেটে দুআ পাঠ করতে ভুলে যায়; তাহলে
করণীয় কি?
উত্তর: ঘ। যদি কেউ টয়লেটে দুআ পাঠ করতে ভুলে যায়; পরে
মনে হয়; তাহলে উচ্চস্বরে দুআ পা না করে, মনে
মনে পড়ে নিবে। দলিল:
প্রখ্যাত তাবেঈ ইকরিমা (রহ.)
বলেন, টয়লেটে থাকা অবস্থায় মুখে উচ্চারণ করে জিকির করবে না, তবে
মনে মনে করতে পারে। সূত্র: আল আওসাত-১/৩৪১
قوله( الا حال انكشاف) الظاهر ان المراد انه يسمي قبل
رفع
ثيابه ان كان في غير المكان المعد لقضاء الحاجة والا فقبل دخوله فلو نسي فيها سمى
بقلبه ولا يحرك لسانه تعظيما لاسم الله تعالى
অর্থাৎ দেহ থেকে কাপড় খোলার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলবে যদি সে
পেশাব- পায়খানা করার জন্য প্রস্তুতকৃত জায়গায় ইস্তিঞ্জা না করে। আর পেশাব
-পায়খানার জন্য প্রস্তুতকৃত স্থানে অর্থাৎ বায়তুল খলায় জরুরত পুরা করলে সেখানে
প্রবেশের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলবে। বিসমিল্লাহ না বলে বাইতুল খলায় প্রবেশ করে
ফেললে দিলে দিলে বিসমিল্লাহ বলবে, আল্লাহর নামের সম্মান প্রকাশার্তে
মুখে উচ্চারণ করে বিসমিল্লাহ বলবেনা। সূত্র: ফাতাওয়া শামী
১/২৪২(মাকতাবায়ে আশরাফিয়া) হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ পৃ: ৫১
সারকথা কথা হলো, টয়লেটে প্রবেশ করার পর মুখে
জিকির পাঠ করবে না, বরং প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে জিকির পাঠ করা বাদ
দিয়ে নীরবতা অবলম্বন করবে। বর্তমানে যেহেতু টয়লেট পরিচ্ছন্ন থাকে, তাই
যখন কমোডের বাইরে অবস্থান করবে, তখন দোয়া বা বিসমিল্লাহ পড়া
যাবে। আর যদি দুর্গন্ধ থাকে; তাহলে অ্যাটাচ বাথরুমে প্রবেশের পূর্বে দুআ পড়ে নিবে। সূত্র:
ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা-৫/৯৩
জিজ্ঞাসা-২৬৪: আসসালামু আলাইকুম। কর্মত্রেক্ষে
অমুসলিম সহকর্মীর রুমে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার নিমিত্তে থাকা উত্তম, না আলাদা রুমে থাকা উত্তম। তারিখ-১০/০৯/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
(সম্মানিত ভাই আরটি মিজানুর
রহমান চন্দ্রপুরি, ২৬ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি-এর প্রশ্নের আলোকে। )
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানা বাদ, আপনার প্রশ্নের বর্ণিত আলোকে অমুসলিমের সঙ্গে বসবাসের দুটি ছুরত হতে পারে
এবং হুকুম ভিন্ন হবে।
প্রথম ছুরুত: যদি উক্ত ননমুসলিম কলিক দ্বারা আপনার দ্বীনের ক্ষতি হয়, তার দ্বারা আপনি প্রভাবিত হতে পারেন। তাহলে তার সাথে বসবাস করা জায়েজ হবে না।
দলিল:
কুরআনের বাণী-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ
بَعْضٍ ۚ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا
يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ. فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ
يَقُولُونَ نَخْشَىٰ أَنْ تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ ۚ فَعَسَى اللَّهُ أَنْ يَأْتِيَ
بِالْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِنْ عِنْدِهِ فَيُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا أَسَرُّوا فِي
أَنْفُسِهِمْ نَادِمِينَ “হে মু’মিনগণ, ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে
তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের
সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে অবশ্যই তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ
জালেম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না। সুতরাং তুমি দেখতে পাবে, যাদের
অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা কাফিরদের মধ্যে (বন্ধুত্বের জন্য)
ছুটছে। তারা বলে, ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে, কোনো বিপদ আমাদেরকে আক্রান্ত করবে।’ অতঃপর হতে পারে
আল্লাহ দান করবেন বিজয় কিংবা তাঁর পক্ষ থেকে এমন কিছু, যার
ফলে তারা তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তাতে লজ্জিত হবে। সূরা
মায়েদা, ৫১-৫২
হাদিসের বাণী-
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ
دَاوُدَ بْنِ سُفْيَانَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَسَّانَ، أَخْبَرَنَا
سُلَيْمَانُ بْنُ مُوسَى أَبُو دَاوُدَ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ سَعْدِ بْنِ
سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ، حَدَّثَنِي خُبَيْبُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ أَبِيهِ،
سُلَيْمَانَ بْنِ سَمُرَةَ عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ، أَمَّا بَعْدُ قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ جَامَعَ الْمُشْرِكَ وَسَكَنَ مَعَهُ فَإِنَّهُ مِثْلُهُ " .
মুহাম্মদ ইবন দাঊদ (রহঃ) ............ সামূরা ইবন জুনদুব
(রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ ) বলেছেন, যে ব্যক্তি
কোন মুশরিকের সাথে সম্পর্ক রাখে
এবং তার সাথে
বসবাস করে, সে
তারই মত হবে।
আবু দাউদ শরীফের ২৭৭৮
হাদিস নং-০২
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «لاَ تُصَاحِب
إِلاَّ مُؤْمِنًا،
وَلاَ يَأْكُل طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِي».
[حسن] - [رواه أبوداود والترمذي
وأحمد]
নবী (ﷺ ) বলেছেন: “তুমি মুমিন ছাড়া অন্য কারো সাথী হবে না। আর মুত্তাকী ছাড়া
অন্য কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়”।
তাখরিজ: সুনানে
তিরমিজি-২৩৯৫
দ্বিতীয় ছুরুত: যদি একই রুমে থাকতে বাধ্য হন
এবং তার দ্বারা প্রভিাবিত হবার হওয়ার ভয় নেই; তাহলে একই সাথে
বসবাস করা জায়েজ হবে।
সারকথা কথা হলে, আপনার অন্যরুমে বসবাস করার সুযোগ থাকলে; তার সঙে্গ
থাকা উচিত হবে না। আর দাওয়াত দিতে একই রুমে থাকা জরুরি নয়। উল্লেখ্য যে, অমুসলিমদের
সাথে কখনও আন্তরিক বন্ধুত্ব জায়েজ নেই। তবে
সামাজিকতা রক্ষা করতে হবে বাহ্যিকভাবে।
মহিলানরা অলংকার কোন হাতে/পায়ে
পরিধান করবে? |
জিজ্ঞাসা-২৬৫: আসসালামু আলাইকুম। মহিলারা শুধু
একটা হাতে বা পায়ে অলংকার পরতে পারবে?
অলংকার
পরিধানের মাসআলা বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব। তারিখ-১১/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
সম্মানিত ভাই আরটি মোঃ তাজুল
ইসলাম ২৩ বীর কুমিল্লা সেনানিবাস।–এর প্রশ্নের আলোকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
সালাম ও তাসলিমবাদ, প্রথম কথা হলো, আমার জানামতে কোন নির্দিষ্ট হাত/পায়ে গোহনা-অলংকার ব্যবহার করার বিধি নিষেধ ইসলামে নেই। বরং উভয় হাত/পায়ে পরিধানের প্রমাণ বহন করে। দলিল:
আয়াত নং-০১
وَلَا يَضْرِبْنَ
بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى
اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ: তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা
প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা
কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা নূর-৩১
এখানে رِجْلُ (রিজলুন)
এর বহুবচন ارجل (আরজালু) ব্যবহার
করা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের পাসমূহ।
এ আয়াত থেকে উভয় পায়ে অলংকার
ব্যবহার করা প্রমাণিত হয়।
হাদিস নং-০১
نَّ امرأةً أتت رسولَ اللَّهِ
صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ ومعها ابنةٌ لها وفي يدِ ابنتِها مَسكتانِ غليظتانِ
مِن ذهبٍ فقالَ لها أتُعطينَ زَكاةَ هذا قالت لا قالَ أيسرُّكِ أن يسوِّرَكِ
اللَّهُ بهما يومَ القيامةِ سوارينِ من نارٍ قالَ فخلعَتْهما فألقتْهما إلى
النَّبيِّ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ وقالت هما للَّهِ عزَّ وجلَّ ولرسولِه
الراوي : عبدالله بن عمرو أبي داود
الصفحة أو الرقم: 1563 | خلاصة حكم المحدث : حسن
التخريج : أخرجه أبو داود (1563) واللفظ له، والترمذي (637)، والنسائي (2479)
অর্থ: এক মহিলা তার মেয়েকে নিয়ে রাসূল
(ﷺ ) এর কাছে আসেন। মেয়েটির হাতে
দুটি স্বর্ণের চুড়ি ছিল। রাসূল (ﷺ)বললেন, তুমি এ অলংকারের যাকাত আদায় কর? মহিলা
বললেন, না। রাসূল (ﷺ)বললেন-
أَيَسُرّكِ أَنْ يُسَوِّرَكِ
اللهُ بِهِمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ سِوَارَيْنِ مِنْ نَارٍ؟
তুমি কি পছন্দ কর যে, এ দুটি
চুড়ির বদলে তোমাকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন আগুনের দুটো চুড়ি পরাবেন? তাখরিজ:
সুনানে
আবু দাউদ-১৫৬৩, তিরমিজি-৬৩৭
নোট: হাদীসটিকে
ইবনুল কাত্তান, মুনযিরি,
যাইলায়ী
প্রমুখ হাদীস বিশারদগণ সহীহ বলেছেন। নাসবুর রায়াহ ২/৩৭০; বায়ানুল
ওয়াহামি ওয়াল ঈহাম ৫/৩৬৬
হাদিস নং-০২
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন-
دَخَلَ عَلَيّ رَسُولُ اللهِ
صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَرَأَى فِي يَدَيّ فَتَخَاتٍ مِنْ وَرِقٍ،
فَقَالَ: مَا هَذَا يَا عَائِشَةُ؟ فَقُلْتُ: صَنَعْتُهُنّ أَتَزَيّنُ لَكَ يَا
رَسُولَ اللهِ، قَالَ: أَتُؤَدِّينَ زَكَاتَهُنّ؟، قُلْتُ: لَا، أَوْ مَا شَاءَ اللهُ،
قَالَ: هُوَ حَسْبُكِ مِنَ
النَّارِ.
রাসূল (ﷺ ) আমার কাছে আসলেন, তখন
আমার হাতে রূপার দুটো চুড়ি ছিল। রাসূল (ﷺ ) বললেন,
এটা
কী আয়েশা? আমি বললাম,
হে আল্লাহর
রাসূল, আমি যেন আপনার সামনে সেজেগুজে থাকতে পারি এজন্য এগুলো বানিয়েছি।
তিনি বললেন, তুমি কি এগুলোর যাকাত আদায় কর? আমি
বললাম, না। তিনি বললেন,
এগুলোই
তোমাকে জাহান্নামে নেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। তাখরিজ: সুনানে
আবু দাউদ-১৫৬৫; মুসতাদরাকে হাকেম-১৪৭৭
নোট:
ইবনে
দাকীকিল ঈদ প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। নাসবুর রায়াহ ২/৩৭১
উপরোক্ত হাদিসদ্বয়ে হাতে
দুটি চুড়ি কথা বলা হয়েছে। কোন নির্দিষ্ট করা হয়নি।
প্রশ্ন: ক।
কোন
হাত/পায়ের অলংকার-গহনা আগে পড়বে দলিল কি ?
উত্তর: ক। দলিল:
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ «يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ، فِي تَنَعُّلِهِ، وَتَرَجُّلِهِ،
وَطُهُورِهِ، وَفِي شَأْنِهِ كُلِّهِ» , (خ) 168
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি (ﷺ ) জুতা পরা,
চিরুনি
করা, ওজু করা এবং প্রত্যেক সম্মানজনক কাজ ডান থেকে করতে পছন্দ
করতেন। বুখারি-১৬৮,৫৩৮০
উক্ত হাদিসের আলোকে
ডান
হাত/পায়ের অলংকার আগে পড়বে এবং খোলার সময় বাম হাত/পা আগে খুলবে।
মূলকথা হলো, নারীরা উভয় হাত/পায়ে কিংবা
পছন্দমত যে কোন এক হাত/পায়ে গোহনা-অলংকার ব্যবহার করতে পারবে কোন সমস্যা নেই। তবে যদি কোন আংটি/অলংকারে আল্লাহ-রসূলের নাম প্রকাশমান-দৃশ্যমান
থাকে সেটা নিয়ে টয়লেটে যাওয়া যাবে না। বরং
খুলে রাখতে হবে। দলিল:
عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ النَّبِي صلي الله عليه
وسلم إِذَا دَخَلَ الْخَلاَءَ وَضَعَ خَاتَمَهُ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) যখন টয়লেটে
প্রবেশ করতেন তখন আংটি খুলে রাখতেন। তাখরিজ: আবু দাঊদ-১৯; তিরমিযী-১৭৪৬; নাসায়ি-৫২১৩
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৬৬: বিজ্ঞ ওলামায়ে দ্বীনের কাছে জানার বিষয় হল :ফরজ নামাজের তিন
নম্বর এবং চার নম্বর রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার বিধান কি? তারিখ-১৩/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
সম্মানিত ভাই ধর্ম শিক্ষক আব্দুর
রাজ্জাক (পাবনা )
ডিভ হেডকোয়াটার সিলেট সেনানিবাস
এর প্রশ্নের আলোকে।
জবাব:
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ-সানা ও দরুদের পর কথা হলো, ফরজ নামাজের ৩য় এবং ৪র্থ রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা আহলে হাদিসের মতে
পড়া ফরজ/ওয়াজিব আর ফুকাহায়ে আহনাফের নিকট সুন্নাত/মুস্তাহাব।
ফুকাহায়ে আহনাফের দলিল:
হাদিস নং-০১
হাদিস শরিফে এসেছে,
أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ فِي الأُولَيَيْنِ
بِأُمِّ الكِتَابِ، وَسُورَتَيْنِ، وَفِي الرَّكْعَتَيْنِ الأُخْرَيَيْنِ بِأُمِّ
الكِتَابِ
‘রাসূল (ﷺ) জোহরের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা ও দু’টি সূরা পড়তেন এবং শেষ দুই
রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন…। তাখরিজ: বুখারি, হাদিস:
৭৭০
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ
إِسْمَاعِيلَ، قَالَ حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ
أَبِي قَتَادَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ
يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ فِي الأُولَيَيْنِ بِأُمِّ الْكِتَابِ وَسُورَتَيْنِ،
وَفِي الرَّكْعَتَيْنِ الأُخْرَيَيْنِ بِأُمِّ الْكِتَابِ، وَيُسْمِعُنَا الآيَةَ،
وَيُطَوِّلُ فِي الرَّكْعَةِ الأُولَى مَا لاَ يُطَوِّلُ فِي الرَّكْعَةِ
الثَّانِيَةِ، وَهَكَذَا فِي الْعَصْرِ
আবূ কাতাদাহ্ (রাযি.) হতে
বর্ণিত যে, নাবী (ﷺ) যুহরের প্রথম দু’রাক‘আতে
সূরাহ্ আল-ফাতিহা ও দু’টি সূরাহ্ পড়তেন এবং শেষ দু’রাক‘আতে সূরাহ্ আল-ফাতিহা পাঠ করতেন এবং তিনি কোন
কোন আয়াত আমাদের শোনাতেন, আর তিনি প্রথম রাক‘আতে যত দীর্ঘ করতেন, দ্বিতীয় রাক‘আতে তত দীর্ঘ করতেন না। ‘আসরেও এ রকম করতেন। বুখারী
শরীফ ৭৭৬.৭৫৯
হাদিস/আসার নং-০৩
أن عبد اللہ بن مسعود کان لا
یقرأ خلف الامام فیما جھر فیہ، وفیما یخافت فیہ فی الأولیین، ولا فی الأخریین،
واذا صلی وحدہ قرأ فی الأولیین بفاتحة الکتاب وسورة، ولم یقرأ فی الأخریین
شیئا“
(مؤطا امام مالک ،باب افتتاح الصلاة،ص62،مطبوعہ المکتبة العلمی
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রাঃ যখন একাকী নামাজ পড়তেন,তখন প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা
আর অন্য সুরা পড়তেন,শেষ দুই রাকাতে কিছুই পড়তেননা। তাখরিজ:
মুয়াত্তা মালেক-৬২ পৃষ্ঠা
হাদিস/আসার নং-০৪
”عن عبید اللہ بن أبی رافع قال کان یعنی علیا یقرأ فی
الأولیین من الظھر والعصر بأم القرآن وسورة، ولا یقرأ فی الأخریین“
(مصنف عبد الرزاق،کتاب الصلاہ،باب کیف القراء ة فی
الصلاة،ج2،ص100،مطبوعہ المکتب الاسلامی ،بیروت)
অর্থ: হযরত আলী রাঃ জোহর আছরের ১ম
দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা আর অন্য সুরা পড়তে, শেষ দুই
রাকাতে পড়তেননা। তাখরিজ:
মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক- ২ খণ্ড; ১০০ পৃষ্ঠা
হাদিস/আসার নং-০৪
হযরত ইবরাহীম নখয়ী থেক
বর্ণিত আছেঃ
ما قرأ علقمة فی الرکعتین
الأخریین حرفاقط“
(مصنف عبد الرزاق،کتاب الصلاہ،باب کیف القراء ة فی
الصلاة،ج2،ص100،مطبوعہ المکتب الاسلامی ،بیروت
আলকামা রাঃ শেষ দুই রাকাতে
এক হরফও পড়তেননা। তাখরিজ: মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক- ২ খণ্ড;
১০০ পৃষ্ঠা
আলেমদের মতামত:
واکتفی المفترض فیما
بعد الأولیین بالفاتحة
فانھاسنۃ علی الظاھر
(درمختار،کتاب الصلاۃ،ج02،ص270،مطبوعہ کوئٹہ)
অর্থাৎ
প্রথম দুরাকাতে সূরা ফাতেহা মিলাতে হবে।
সূত্র: ফাতাওয়ায়ে শামী-২য় খণ্ড;২৭০ পৃ.
সারকথা কথা হলো, উপরোক্ত হাদিস, আসার এর উপর ভিত্তি করে ওলামায়ে আহনাফ বলেন, ফরজ
নামাজের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়া
সুন্নাত। সুতরাং কেহ যদি ৩য়/৪র্থ রাকাতে সূরা ফাতিহা না পড়ে; তাহলে সাহু সিজদা
লাগবে না, নামাজ হয়ে যাবে। সূত্র: আলমগিরি ১/১২৬, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৩৭৪৩-৩৭৬২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২৬; শরহুল মুনইয়াহ ৩৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৯
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৬৮: আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম, একজন
ইমাম সাহেব, সালাম ফিরানোর পর দেখেন যে, তার
পায়ে জোক ধরে আছে। জোক রক্ত খেয়ে মোটা হয়েছে।
এখন আমার জানার বিষয় হলো, উনার অজু নষ্ট হয়েছে কিনা? এবং আদায়কৃত নামাজ কি আবার পড়তে হবে। তারিখ-১৪/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
সম্মানিত ভাই আরটি মোঃ রজিব
উদ্দিন, ৫ আরই
ব্যাটালিয়ন পোস্তগোলা সেনানিবাস।–এর প্রশ্নের আলোকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম-হামদ-সানার পর কথা হলো, জোক ধরা বা রক্ত খাওয়া অজু ভঙ্গের মূল
কারণ না। আসল কারণ হলো, রক্ত গড়িয়ে পড়া।
দলিল:
হাদিস নং-০১
أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا
رَعَفَ، انْصَرَفَ فَتَوَضَّأَ
অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন উমর রাযি.-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝরতো,
তখন তিনি ফিরে
গিয়ে অযু করে নিতেন। তাখরিজ: মুয়াত্তা মালিক-১১০
হাদিস নং-০২
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّهُ
كَانَ يُفْتِي الرَّجُلَ إِذَا رَعَفَ فِي الصَّلَاةِ، أَوْ ذَرَعَهُ قَيْءٌ، أَوْ
وَجَدَ مَذِيًّا أَنْ يَنْصَرِفَ فَيَتَوَضَّأُ
অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি যদি কারো
নামাযরত অবস্থায় নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, বা বমি হতো,
বা মজি বের হতো
তাহলে তাকে ফিরে গিয়ে অযু করার ফাতওয়া প্রদান করতেন। তাখরিজ: মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-৩৬১০
হাদিস নং-০৩
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত,
নিশ্চয়
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّمَا الْوُضُوءُ مِمَّا خَرَجَ ،
وَلَيْسَ مِمَّا دَخَلَ
অর্থ: শরীর থেকে যা কিছু বের হয় এ কারণে অযু ভেঙ্গে যায়,
প্রবেশের দ্বারা
ভঙ্গ হয় না। তাখরিজ: সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী-৫৬৮
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে ফুকাহায়ে আহনাফ বলেন যে, শরীর থেকে রক্ত পুজ গড়িয়ে পড়লে অজু ভেঙ্গে
যাবে।
আপনার বর্ণিত ছুরুতে যেহেতু জোকটি রক্ত খেয়ে মোটা হয়েছে, তাহলে সহজে বুঝা যাচ্ছে যে, এতে তার অজু নষ্ট হয়েছে। সুতরাং
তার আদায়কৃত নামাজ মুসল্লিকে আবার দোহরায়তে (পুনরায়) হবে।
উল্লেখ্য যে, যদি জোক ধরার পর রক্ত বের হওয়ার আগেই টের
পায়, অথবা এই পরিমাণ খেয়েছে, যা গড়িয়ে
পড়ার মত নয়; তাহলে অজু ভাঙ্গবে না। সূত্র: আততাজনীস ওয়াল মাযীদ
১/১৩৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/৪৭;
খুলাসাতুল ফাতাওয়া
১/১৭
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৪২: আসসালামু আলাইকুম। মহিলারা শুধু
একটা হাতে বা পায়ে অলংকার পরতে পারবে?
অলংকার
পরিধানের মাসআলা বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব। তারিখ-১১/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
সম্মানিত ভাই আরটি মোঃ তাজুল
ইসলাম ২৩ বীর কুমিল্লা সেনানিবাস।–এর প্রশ্নের আলোকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
(বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৬৯: মোট জমির পরিমাণ-৩৩ শতাংশ মরহুমা মরিয়ম নেছা
স্বামী, পিতা, তিনি ছেলে ও তিন
মেয়ে রেখে মারা যান। এখন কে কতটুকু পাবে। তারিখ-১৫/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
সম্মানিত ভাই আরটি মো: শহিদুল ইসলাম ১৪ বেঙ্গল,
যশোর সেনানিবাস।–এর প্রশ্নের আলোকে।
জবাব:
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
স্বামী
৪ ভাগের এক ভাগ, বাবা ৬ ভাগের একভাগ,আর বিকীটা
৬ ছেলে মেয়ে للذكر مثل حظ الانثيين হিসাবে
পাবে। ১২ দিয়ে মাসআলা করলে ১২ এর ২ বাবা,১২ এর ৩ স্বমী, আর বাকী
৭ ৬ ভাই বোনের মধ্যে সমান বিভাজ্য হয়না।
বাবাঃ
১/৬=৫.৫৫১,
স্বামীঃ১/৪=৮.২৫,
পুত্র
প্রত্যেকেঃ ৪.২৭৬৮
কন্যা
প্রত্যেকেঃ ২.১৩৮৪
সারকথা
কথা হলো, কোন বিজ্ঞ সিভিল লোক দিয়ে জমি ভাগ করলে ভাল হবে, আপনি
শুধু (উদাহরণ) ১/৬;১/৪ বললেই হবে। আমাদের অংক সঠিক ১০০% নাও হতে পারে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি আব্দুর শাকুর
মাওলানা ইমরান
জিজ্ঞাসা-২৭১: টাকা বা স্বর্ণালংকার নয় কনের তরফ
থেকে ১০১ টি বইয়ের তালিকা দেওয়া হয়েছে দেনমোহর হিসেবে শর্ত। এটা কি মোহরানা হিসেবে
শারয়ী বৈধতা পাবে? kindly জানাবেন কি?
তারিখ-১৬/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
সম্মানিত ভাই আরটি নূরুল আমীন, ৪৫ ফিল্ড এম্বুলেন্স শহীদ মাহবুব
সেনানিবাস,খোলাহাটী, পার্বতীপুর,দিনাজপুর।-এর প্রশ্নের আলোকে।
জবাব:
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ-সানা ও দরুদের পর প্রথম কথা হলো, মহরের বিষয়ে
স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন,
وَءَاتُواْ ٱلنِّسَآءَ
صَدُقَٰتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَىْءٍۢ مِّنْهُ نَفْسًا
فَكُلُوهُ هَنِيٓـًٔا مَّرِيٓـًٔا
এবং তোমরা নারীদেরকে দাও
তাদের মোহর খুশিমনে।
সূরা নিসা-০৪
মোহর আদায় করা স্বামীর উপর ফরয এবং বিয়ের অপরিহার্য শর্ত। মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না। আকদের সময় উল্লেখ না করলেও
কিংবা না দেওয়ার শর্ত করলেও মোহর বাতিল হয়
না। সূত্র: আহকামুল কুরআন, জাসসাস
২/১৪০-১৪৬; আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী
১/৩৮৪-৩৯০; তাফসীরে উছমানী পৃ. ১০৫
মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ
কুরআন মজীদে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
মোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ
শরিয়ত নির্ধারণ করেনি। বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৭৫, মিরকাতুল মাফাতিহ : ৬/৩৫৮
তবে সর্বনিম্ন হাদিস-আসারে রয়েছে। ফিকহে হানাফী অনুসারে সর্বনিম্ন মোহর দশ দিরহাম।
দলিল:
হাদিস নং-০১
عن علي -رضي الله عنه- قال: «لا
تُقطع اليدُ إلا في عَشرة دَراهِم, ولا يكون المهرُ أقلَّ مِن عشرة دَراهِمسنن
الدارقطني, ت: شعيب الارنؤوط وجماعة, مؤسسة الرسالة، بيروت - الطبعة الأولى،
1424هـ.
হাদিস নং-০২
لا مَهْرَ أَقَلُّ مِنْ عَشْرَةِ
دَرَاهِمَ
“দশ দিরহামের কম মহর নেই। ”
তাখরিজ: দারা কুতনী-৩৯২
দশ দিরহামের পরিমাপ : প্রতি দিরহামে
৩ মাশা ০.৮.রতি হয়। ৮ রতিতে ১ মাশা, ১২ মাশায় ১ তোলা হয়। এ হিসেবে দশ দিরহামের পরিমাণ হলো ৩১ মাশা রূপা
বা ২ তোলা ৭ মাশা (প্রায় আড়াই ভরি রূপা) অথবা তার সমমূল্য টাকা। এটাই বিবাহের মহরের
সর্বনিম্ন পরিমাণ।
আজকের বাজারে প্রতি ভরি
রুপার দাম, ১৫১৬ টাকা (১৩ সেপ্টেম্ব বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত) হয়, তাহলে দশ দিরহাম বা আড়াই ভরি রূপার মূল্য হবে (১৫১৬×২.৭)=৪০৯৩ টাকা।
সূত্র: শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৪/৩৯৮ আযীযুল ফাতাওয়া, ৪৫১/ ফাতাওয়া
দারুল উলূম ৮ : ২৬৪/ আহসানুল ফাতাওয়া ৪ : ৩৮২; ৫/৩১২, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৬/২৪৩
দ্বিতীয় কথা হলো, মোহর এমন কিছু হতে হবে,
যা শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘মাল’ (সম্পদ) বলে গণ্য। টাকা-পয়সা
হওয়া জরুরি নয়। দলিল:
لما تزوج عليٌّ رضيَ اللهُ عنهُ
فاطمةَ رضيَ اللهُ عنها ، قال له رسولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّم : أعطِهَا
شيئًا ، قال : ما عندي . قال : فأين درعُك الحطميَّةُ
الراوي : عبدالله بن عباس : صحيح
النسائي
الصفحة أو الرقم: 3376 |
خلاصة حكم المحدث : صحيح
অর্থ: রাসূলে আকরাম (ﷺ) হযরত
আলী (রা.)-কে নির্দেশ দিয়েছেন, কিছু দেয়ার আগে বিবির কাছে যেয়ো
না। হযরত আলী (রা.) ওজরখাহি করলেন,
আমার
কাছে তো কিছুই নেই। রাসূলে কারিম (ﷺ) বললেন, তোমার কাছে যে লোহার বর্মটি ছিল সেটি কোথায়? ওটাই
ফাতেমাকে (রা.) দিয়ে দাও। সাহাবী হযরত আলী (রা.) নির্জনবাসে যাওয়ার পূর্বেই বর্মটি
ফাতেমাকে (রা.) দিয়ে দেন।’ তাখরিজ:
সুনানে
নাসায়ি-৩৩৭৬; আবু দাউদ-২১২৬
সুতরাং আপনার প্রশ্নেবর্ণিত
ছুরুতে ১০১ বইয়ের মূল্য যদি ৪০৯৩ টাকা বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে মহরানা হিসেবে গণ্য হবে
এবং বিবাহ ছহিহ হওয়াতে কোন সমস্যা নেই।
তবে জোর করে নারীকে চাপানো
ঠিক হবে না এবং উক্ত জিনিস পছন্দ না হলে
প্রত্যাখ্যান করা ক্ষমতা নারীর রয়েছে। সূত্র: আহসানুল
ফাতাওয়া : ৫/২৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
জিজ্ঞাসা-২৭৪:
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
প্রশ্ন : জনৈক ইমাম মাগরিবের
নামাজ দুই রাকাতের বৈঠক শেষে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে নিলে মুসল্লিদের কেউ বলল, সালাত দুই রাকাত হয়েছে।
এবার ইমাম নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস
করলেন, "সালাত
কি দুই রাকাতই হয়েছে? .. আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আমরা আর এক রাকাত পড়ে নেই।"
এই বলে তিনি এক রাকাত নামাজ পড়ে
সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করলেন।
এরপর দাঁড়িয়ে নিম্মের হাদীস
দিয়ে দলীল দিয়ে বললেন, এভাবে কথা বললেও নামাজ সঠিক হয়।
حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا
شُعْبَةُ، عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ صَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم
الظُّهْرَ أَوِ الْعَصْرَ فَسَلَّمَ، فَقَالَ لَهُ ذُو الْيَدَيْنِ الصَّلاَةُ يَا
رَسُولَ اللَّهَ أَنَقَصَتْ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لأَصْحَابِهِ " أَحَقٌّ مَا يَقُولُ ". قَالُوا نَعَمْ. فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ أُخْرَيَيْنِ ثُمَّ سَجَدَ سَجْدَتَيْنِ. قَالَ سَعْدٌ وَرَأَيْتُ عُرْوَةَ بْنَ الزُّبَيْرِ
صَلَّى مِنَ الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ فَسَلَّمَ وَتَكَلَّمَ ثُمَّ صَلَّى مَا
بَقِيَ وَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ وَقَالَ هَكَذَا فَعَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, নবী (ﷺ) আমাদের নিয়ে যুহর বা আসরের সালাত আদায় করলেন
এবং সালাম ফিরালেন। তখন যুল-ইয়াদাইন (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া আল্লাহ্র রাসূল! সালাত কি
কম হয়ে গেল? নবী (ﷺ) তাঁর সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন, সে যা বলছে, তা কি ঠিক? তাঁরা বললেন, হাঁ।
তখন তিনি আরও দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন।
পরে দু’টি সিজদা করলেন।
সা‘দ (রহঃ) বলেন, আমি ‘উরওয়াহ ইব্নু যুবায়র (রহঃ)-কে দেখেছি, তিনি মাগরিবের
দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন
এবং কথা বললেন। পরে অবশিষ্ট সালাত আদায় করে দু’টি সিজদা করলেন
এবং বললেন, নবী (ﷺ) এ রকম করেছেন। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১২২৭
সাথে সাথে তিনি কুরআনের আয়াত
(ولا تبطلوا أعمالكم)
দিয়ে দলীল দিলেন।
----
উপস্থিত একজন ব্যক্তি সাথে সাথে
অন্য একজন মুফতি সাহেবের কাছে ফোন করে জানতে চাইলে উক্ত মুফতি সাহেব বললেন, সালাত নষ্ট হয়ে গেছে, সালাতটি পুনরায় আদায় করতে হবে। তিনি নামাজে কথা বলা যায় না মর্মে নিন্মের
হাদীসটি উল্লেখ করেন -
حَدَّثَنَا أَبُو جَعْفَرٍ،
مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ - وَتَقَارَبَا فِي لَفْظِ الْحَدِيثِ - قَالاَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ،
عَنْ حَجَّاجٍ الصَّوَّافِ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ هِلاَلِ بْنِ أَبِي
مَيْمُونَةَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ الْحَكَمِ
السُّلَمِيِّ، قَالَ بَيْنَا أَنَا أُصَلِّي، مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه
وسلم إِذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ فَقُلْتُ يَرْحَمُكَ اللَّهُ . فَرَمَانِي الْقَوْمُ بِأَبْصَارِهِمْ فَقُلْتُ
وَاثُكْلَ أُمِّيَاهْ مَا شَأْنُكُمْ تَنْظُرُونَ إِلَىَّ . فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بِأَيْدِيهِمْ عَلَى
أَفْخَاذِهِمْ فَلَمَّا رَأَيْتُهُمْ يُصَمِّتُونَنِي لَكِنِّي سَكَتُّ فَلَمَّا
صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبِأَبِي هُوَ وَأُمِّي مَا رَأَيْتُ
مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلاَ بَعْدَهُ أَحْسَنَ تَعْلِيمًا مِنْهُ فَوَاللَّهِ مَا
كَهَرَنِي وَلاَ ضَرَبَنِي وَلاَ شَتَمَنِي قَالَ " إِنَّ هَذِهِ الصَّلاَةَ لاَ يَصْلُحُ فِيهَا شَىْءٌ ------
মু’আবিয়াহ্ ইবনুল হাকাম আস্ সুলামী
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে সলাত আদায় করছিলামভ। ইতোমধ্যে (সলাত
আদায়কারীদের মধ্যে) কোন একজন লোক হাঁচি দিলে (জবাবে) আমি “ইয়ার্হামুকাল্ল-হ” (অর্থাৎ- আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন) বললাম। এতে সবাই রুষ্ট দৃষ্টিতে আমার
প্রতি তাকাতে থাকল। তা দেখে আমি বললামঃ আমার মা আমার বিয়োগ ব্যথায় কাতর হোক। (অর্থাৎ-এভাবে
আমি নিজেকে ভৎসনা করলাম)। কি ব্যাপার!
তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ যে? তখন তারা নিজ নিজ উরুতে হাত চাপড়াতে থাকল।
(আমার খুব রাগ হওয়া সত্ত্বেও) আমি যখন দেখলাম যে, তারা আমাকে
চুপ করাতে চায় তখন আমি চুপ করে রইলাম। পরে রসূলুল্লাহ (ﷺ) সলাত শেষ করলে আমি তাঁকে সবকিছু বললাম। আমার
পিতা ও মাতা তাঁর জন্য কুরবান হোক। আমি ইতোপূর্বে বা এর পরে আর কখনো অন্য কোন শিক্ষককে
তাঁর চেয়ে উত্তম পন্থায় শিক্ষা দিতে দেখিনি। আল্লাহর শপথ করে বলছি, তিনি আমাকে ধমকালেন না বা মারলেন
না কিংবা বকাঝকাও করলেন না। বরং বললেনঃ সলাতের মধ্যে কথাবার্তা ধরণের কিছু বলা যথোচিত
নয়। বরং প্রয়োজনবশতঃ তাসবীহ, তাকবীর বা কুরআন পাঠ করতে হবে অথবা
রসূলুল্লাহ (ﷺ) যেরূপ
বলেছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (ﷺ) ! আমি সবেমাত্র জাহিলিয়াত বর্জন করেছি এবং এরপর আল্লাহ আমাকে ইসলাম
গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা গণকদের কথায় বিশ্বাস করে।
তিনি (ﷺ) (এ কথা শুনে) বললেনঃ তুমি গণকদের কাছে যেয়ো
না। সে বললঃ আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা শুভ অশুভ লক্ষণ নির্ধারণ করে থাকে।
তিনি বললেনঃ এটা তাদের হৃদয়ের বদ্ধমূল বিশ্বাস। এটি তাদেরকে (ভাল কাজ করতে) বাধা না
দেয়। হাদীস বর্ণনাকারী সাববাহ বলেছেন, তা যেন তোমাকে বাধা না দেয়। লোকটি বর্ণনা করেছেন-
আমি আবারও বললামঃ আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা রেখা টেনে শুভ-অশুভ নির্ধারণ
করে থাকে। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ
একজন নবী এভাবে রেখা টানতেন। সুতরাং কারো রেখা যদি (নাবীর রেখা) অনুরূপ হয় তাহলে তা
ঠিক হবে।[৪]
বর্ণনাকারী মু’আবিয়াহ্ বলেন, আমার এক দাসী ছিল সে উহুদ ও জাও্ওয়ানিয়্যাহ্ এলাকায় আমার বকরীপাল চরাত। একদিন
আমি হঠাৎ সেখানে গিয়ে দেখলাম তার বকরীপাল থেকে বাঘে একটি বকরী নিয়ে গিয়েছে। আমি তো
অন্যান্য আদম সন্তানের মত একজন মানুষ। তাদের মত আমিও ক্ষোভ ও চপেটাঘাত করলাম। এরপর
আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর
কাছে আসলাম (এবং সব কথা বললাম) কেননা বিষয়টি আমার কাছে খুবই গুরুতর মনে হলো। আমি জিজ্ঞেস
করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি কি তাকে (দাসী) মুক্ত করে দিব? তিনি বললেনঃ তাকে আমার কাছে নিয়ে
আসো। সুতরাং আমি তাকে এনে রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কাছে হাজির করলাম। তিনি তাঁকে (দাসীকে) জিজ্ঞেস করলেনঃ (বলো তো)
আল্লাহ কোথায়? সে বলল- আকাশে। নবী (ﷺ) বললেন, (বলো তো) আমি কে? সে বললঃ আপনি আল্লাহর রসূল। তখন রসূলুল্লাহ
(ﷺ) আমাকে বললেনঃ তুমি
তাকে মুক্ত করে দাও, সে একজন মু’মিনাহ্ নারী। (ই.ফা. ১০৮০, ই.সে. ১০৮৮)
জানার বিষয় হলো এখানে সঠিক কোনটি
? তারিখ-১৭/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
সম্মানিত ভাই আরটি আরটি সাজ্জাদ
৫০৬ ডিওসি, বগুড়া সেনানিবাস।–এর প্রশ্নের আলোকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ولا خلاف بين أهل العلم أن من
تكلم في صلاته عامدا عالما فسدت صلاته، قال ابن المنذر: أجمع أهل العلم على أن من
تكلم في صلاته عامدا
অর্থাৎ
আহলে এলেমদের মধ্যে এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই যে, নামাজের মধ্যে ইচ্ছাপূর্বক জ্ঞাতসারে কথা বললে
নামাজ ফাসেদ হবে। ইবনে মুনজির রহ. বলেন, আহলে এলেমদের মধ্যে ইজমা হয়েছে যে, নামাজে মধ্যে ইচ্ছা করে কথা
বললে নামাজ নষ্ট হবে।
দ্বিতীয়
কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণিত ছুরতে নামাজের প্রয়োজনে/সংশোধনে কথা বললে নামাজ
বাতিল হবে কিনা, এ বিষয়ে আহলে হাদিস এবং ফোকাহায়ে আহনাফের মতভেদ
রয়েছে।
আহলে
হাদিসদের মতে,
জামাআতের
লোক ভুল করে চার রাকআতের জায়গায় তিন রাকআত পড়ে সালাম ফিরার পর মুক্তাদীদের কেউ এই
ভুল সম্বন্ধে স্মরণ দিলে এবং ইমামও নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্যান্যকে জিজ্ঞাসাবাদ
করলে সংশোধনের উদ্দেশ্যে আরো এক রাকআত নামায অবশ্যই পড়বে এবং সহু সিজদাহ করবে। আর
এর মাঝে ইমাম-মুক্তাদীর ঐ কথোপকথন নামাযের জন্য ক্ষতিকর হবে না। দলিল:
আপনার উল্লেখিত প্রথম
হাদিসটি (অর্থাৎ حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا
شُعْبَةُ، عَنْ سَعْدِ
بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ
أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ ـ
رضى الله عنه
ـ قَالَ صَلَّى
بِنَا النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم
الظُّهْرَ أَوِ الْعَصْرَ
فَسَلَّمَ، فَقَالَ لَهُ
ذُو الْيَدَيْنِ الصَّلاَةُ
يَا رَسُولَ اللَّهَ
أَنَقَصَتْ------ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, নবী (ﷺ) আমাদের নিয়ে যুহর বা আসরের সালাত আদায় করলেন
এবং সালাম ফিরালেন। তখন যুল-ইয়াদাইন (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া আল্লাহ্র রাসূল! সালাত কি
কম হয়ে গেল? নবী (ﷺ) তাঁর সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন, সে যা বলছে, তা কি ঠিক? তাঁরা বললেন, হাঁ।
তখন তিনি আরও দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। পরে দু’টি সিজদা
করলেন-----। সহিহ বুখারী-১২২৭
ফোকাহায়ে আহনাফের মতামত: নামাজের মধ্যে কথা যে কারণেই হোক ফিকহি হানাফি কোন পার্থক্য করেননি। নামাজে এমন কোনো অর্থবোধক শব্দ করা, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (হোক সেটা এক অক্ষর বা দুই অক্ষরে
ঘটিত) তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে। ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৩, আল
বাহরুর রায়েক : ২/২
ওলামায়ে আহনাফ বলেন, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত
হাদিসটি নিম্নে বর্ণিত হাদিস দ্বারা রহিত হয়ে গেছেন।
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ
إِسْمَاعِيْلَ بْنِ أَبِيْ خَالِدٍ عَنِ الْحَارِثِ بْنِ شُبَيْلٍ عَنْ أَبِيْ
عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ كُنَّا نَتَكَلَّمُ فِي
الصَّلَاةِ يُكَلِّمُ أَحَدُنَا أَخَاهُ فِيْ حَاجَتِهِ حَتَّى نَزَلَتْ هَذِهِ
الْآيَةُ {حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوٰتِ
وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى وَقُوْمُوْا لِلهِ قَانِتِيْنَ} فَأُمِرْنَا بِالسُّكُوْتِ
যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সালাতের মধ্যে কথাবার্তা বলতাম আর আমাদের কেউ অন্য ভাইয়ের প্রয়োজন
নিয়ে কথা বলতেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى
وَقُوْمُوْا لِلهِ قَانِتِيْنَ তখন আমাদেরকে চুপ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। তাখরিজ: বুখারী-
৪৫৩৪.১২০০
হাদিস নং-০২
عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ
اللَّهِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كُنَّا نُسَلِّمُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم وَهُوَ فِي الصَّلاَةِ فَيَرُدُّ عَلَيْنَا، فَلَمَّا رَجَعْنَا مِنْ عِنْدِ
النَّجَاشِيِّ سَلَّمْنَا عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْنَا وَقَالَ " إِنَّ فِي الصَّلاَةِ شُغْلاً ".
অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ
(রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ)
এর নামায পড়া অবস্থায় আমরা তাঁকে সালাম দিতাম এবং তিনি সালামের উত্তরও দিতেন।
অতঃপর যখন নাজাশীর নিকট থেকে ফিরে এলাম, তখন সালাম দিলে তিনি উত্তর দিলেন না। পরে
কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, “নামাযে মগ্নতা আছে।”তাখরিজ: বুখারী-১১৯৯
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنَا أَبُو جَعْفَرٍ،
مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ - وَتَقَارَبَا فِي لَفْظِ الْحَدِيثِ - قَالاَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ،
عَنْ حَجَّاجٍ الصَّوَّافِ، عَنْ وَلاَ شَتَمَنِي قَالَ " إِنَّ هَذِهِ الصَّلاَةَ لاَ يَصْلُحُ فِيهَا شَىْءٌ
مِنْ كَلاَمِ النَّاسِ إِنَّمَا هُوَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ وَقِرَاءَةُ
الْقُرْآنِ "------
আবূ জাফার মুহাম্মাদ ইবনুস্
সাব্বাহ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ) ..... মু'আবিয়াহ ইবনুল হাকাম আস সুলামী
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সময় -------
আল্লাহর শপথ করে বলছি, তিনি আমাকে ধমকালেন না বা
মারলেন না কিংবা বকাঝকাও করলেন না। বরং বললেনঃ সলাতের মধ্যে কথাবার্তা ধরনের কিছু
বলা যথোচিত নয়। বরং প্রয়োজনবশতঃ তাসবীহ, তাকবীর বা কুরআন
পাঠ করতে হবে। তাখরিজ: মুসলিম শরীফ ১০৮৬.
সারকথা কথা হলো, আপনার প্রশ্নের ছুরুতে ফিকহে হানাফির মতে নামাজটি বাতিল হয়েছে। আর আহলে
হাদিসের মতে ঠিকই আছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৭৫: আসসালামু আলাইকুম। কোন অমুসলিম
ব্যক্তি কি এসি/ইলেকট্রিক
বা যে কোন কাজে মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে কি? দলিলসহ জানালে
উপকৃত হতাম। তারিখ-২০/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক মাওলানা নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক ।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আদি মসজিদ বায়তুল হারাম শরিফে
অমুসলিম ব্যক্তিরা প্রবেশ করতে পারবে না; এটা আয়িম্মায়ে
আরবার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। তবে জিম্মি
কাফের প্রবেশ করতে পারবে, এটা ইমাম আজম রহ. এর মত। সূত্র: নেহায়াতুল মুহতাজ-৮/৮৬; দুররে মুখতার-৩/২৭৫
দ্বিতীয় কথা হলো, মসজিদে হারাম ব্যতিত পৃথিবীর যে কোন মসজিদে প্রবেশের ব্যাপারে ইমাম মালেক
রহ. ব্যতিত বাকি তিন ইমামের মতে মুসলমানের অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবে।
তিনি ইমামের দলিল:
والصواب جوازه لمصلحة شرعية أو
لحاجة تدعو إلى ذلك : لسماع ما قد يدعوه للدخول في الإسلام ، أو حاجته إلى الشرب
من ماء في المسجد أو نحو ذلك ؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم ربط ثمامة بن أثال
الحنفي في المسجد قبل أن يسلم ، وأنزل وفد ثقيف ووفد نصارى نجران قبل أن يسلموا في
المسجد ؛ لما في ذلك من الفوائد الكثيرة ، وهي : سماعهم خطب النبي صلى الله عليه
وسلم ومواعظه ، ومشاهدتهم المصلين والقراء
وغير ذلك من الفوائد العظيمة التي تحصل لمن لازم المسجد
من فتاوى اللجنة الدائمة 6/276
অর্থাৎ সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হল
যে বৈধ স্বার্থ বা প্রয়োজনের জন্য এটি জায়েজ: যা তাকে ইসলামে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানাতে পারে, বা
মসজিদে পানি পান করার প্রয়োজন বা অনুরূপ; কারণ নবী,
(ﷺ) ছুমামা বিন আছাল আল-হানাফীকে ইসলাম গ্রহণ করার
আগে মসজিদে বেঁধে রেখেছিলেন এবং নাজরানের ছাকিফ প্রতিনিধিদল এবং খ্রিস্টান
প্রতিনিধিদল মসজিদে ইসলাম গ্রহণের আগে মসজিদে নববিতে অবস্থান করেছিলেন। সূত্র: ফতোয়ায়ে লাজনাতিল দায়েমা-৬-২৭৬
সারকথা কথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ছুরুতে, অমুসলিম ব্যক্তি ইলেকট্রিক কাজে
মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে কোন সমস্যা নেই।
সুত্র: খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৭৭; আলজামিউস
সগীর ৪৮২; আহকামুল কুরআন জাসসাস ৩/৮৮; তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৭৭: সম্মানিত সায়েখদের প্রতি প্রশ্ম।
প্রত্যেক পুরুষের হাদীসটি জানা
উচিত এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
ইমাম আবু সুলইমান খাত্তাবী রহ.
(মৃ: ২৮৮ হি:) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ
ﷺ এরশাদ করেন-
–
‘অবশ্যই মানুষের উপর (এমন) জামানা আসবে, (যখন
বদদ্বীনীর কারণে দ্বীন মতো চলা এত কঠিন হয়ে যাবে যে), দ্বীনদার
ব্যাক্তির জন্য তার দ্বীনকে নিয়ে শিয়ালের কৌশলে পালানোর ন্যায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে, এক চুড়া
থেকে অন্য চুড়া’য় এবং এক পাহাড়ী-গুহা থেকে অন্য পাহাড়ী-গুহা’য় পালিয়ে ফেরা ছাড়া (কেউ তার দ্বীনকে) নিরাপদে রাখতে পারবে না।
জিজ্ঞেস করা হল: সেটা কখন হবে
-ইয়া রাসুলাল্লাহ?
তিনি বললেন: যখন (উপার্জনের উপায়-উপকরণের
মধ্যে নাজায়েয বিষয় এত ব্যপকভাবে জড়িত থাকবে যে, তখন)
আল্লাহ তাআলা’র (অসন্তুষ্টি ও) ক্রধ ব্যতীত আয়-রোজগার করা যাবে
না। যখন এরকম জামানা হবে, তখন অবিবাহিত থাকাকে হালাল করে নিবে।
বলা হল: সেটা কেমন করে হতে পারে
-ইয়া রাসূলাল্লাহ, অথচ আপনি আমাদেরকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন?
তিনি বললেন: কারণ, যখন
সেই জামানাটি আসবে, তখন পুরুষ তার পিতা-মাতার হাতে বরবাদ হয়ে যাবে।
যদি সে তার পিতা-মাতার হাতে (বরবাদ) না হয়,
তাহলে
সে তার স্ত্রী ও সন্তানের হাতে (বরবাদ হবে)। যদি তার স্ত্রীর হাতেও না হয়, সন্তানের হাতে না হয়, তাহলে
সে তার আত্বীয়-স্বজনের হাতে (বরবাদ হবে)।
লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: (সেটা)
কেমন করে হবে, ইয়া রাসুলাল্লাহ?
রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ বললেন: তারা তাকে (সামাজিকতার খাতিরে ভাল
মানের) আয়-রোজগার করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে জোড়াজুড়ি করতে থাকবে, পরে
তারা তার উপর (এমন মানসিক ও সামাজিক) বোঝা চাপিয়ে দিবে, যা সে
ধারন করতে পারবে না। অবশেষে সে (অর্থকড়ি উপার্জনের জন্য নাজায়েয ও) বরবাদীর উপকরনাদির
দিকে ধাবিত হবে’।
আল-উযলাহ, ইমাম
খাত্তাবী– ১/১০
হাদিস ৯; আল-যুহদুল কাবীর, বাইহাকী
হাদিস ৪৪৫
এ হাদীসের আরবি ইবারতসহ সনদের মান জানালে উপকৃত হতাম।
তারিখ-১১/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নেছার উদ্দিন কঙ্গো
থেকে-------
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ-সানা ও দরুদের পর , আপনার প্রশ্নে বর্ণিত হাদিসর আরবি ইবারত
নিচে দেওয়া হলো,
دَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ سَلْمَانَ النَّجَّادُ , قَالَ :
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُونُسَ الْكُدَيْمِيُّ , قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ
بْنُ مَنْصُورٍ الْجُشَمِيُّ , قَالَ : حَدَّثَنَا سَلْمُ بْنُ سَالِمٍ , قَالَ :
حَدَّثَنَا السَّرِيُّ بْنُ يَحْيَى ، عَنِ الْحَسَنِ ، عَنْ أَبِي الأَحْوَصِ ،
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ , قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يأتي على الناسِ زمانٌ لا يَسْلَمُ لذي دينٍ دِينُه إلا من فَرَّ به من شاهقٍ إلى شاهقٍ، أو من جُحْرٍ إلى جُحْرٍ ؛ كالثعلبِ
بأشبالِه، قالوا : متى يكونُ ذلك ؟ قال : في آخِرِ الزمانِ ؛ إذا لم تُنَلِ
المعيشةُ إلا بمعصيةِ اللهِ، فإذا كان كذلك حَلَّتِ العُزْبَةُ . قالوا : أنت
تأمرُنا بالتزويجِ ؛ فكيف تَحِلُّ العُزْبَةُ ؟ قال : يكون في ذلك الزمانِ هلاكُ الرجلِ
على يَدَيْ أبويه ؛ إن كان له أَبَوانِ، فإن لم يكن له أَبَوانِ فعلى يَدَيْ
زوجتِه وولدِه، فإن لم يكن زوجةٌ ولا ولدٌ، فعلى يَدَيْ الأقاربِ والجيرانِ ؛
يُعَيِّرونه بِضِيقِ المعيشةِ، حتى يُورِدَ نفسَه المواردَ التي يَهلَكُ فيها-
হাদিসটির সনদ সম্পর্কে কতক
মুহাদ্দিস বলেছেন যয়িফ আর শায়েখ আলবানি রহ. এটাকে মুনকার বলেছেন। তবে এর কাছাকাছি/একই বর্ণনা
হজরত ইবনে মাসউদ রা. থেকেই ছহিহ মারফু হাদিস এসেছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৭৮: ছোট সোনামনিকে দোলনায় শোয়ানো কি
জায়েজ আছে? দয়া করে কোরআন-হাদিসের আলোকে জানালে উপকৃত হতাম।
যেমন:----------। তারিখ-১১/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শরিয়তুল্লাহ বাহাদুর মুন্সিগঞ্জ
থেকে-----
জবাব:
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ-সানা
ও দরুদের পর কথা হলো, ছোট বাচ্চারা দোলনায় শোয়ানো যাবে না, এ রকম কোন বিধি-নিষেধ
ইসলামে নেই। বরং শোয়ানোর পক্ষেই ইশারাতুন নস দ্বারা দালালত করে।
কুরআনুল
কারিম থেকে দলিল:
Surah Al-Maeda, Verse 110:
إِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ
مَرْيَمَ اذْكُرْ نِعْمَتِي عَلَيْكَ وَعَلَىٰ وَالِدَتِكَ إِذْ أَيَّدتُّكَ
بِرُوحِ الْقُدُسِ تُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا
অর্থ: যখন আল্লাহ বলবেনঃ হে ঈসা ইবনে মরিয়ম, তোমার প্রতি ও
তোমার মাতার প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে পবিত্র
আত্মার দ্বারা সাহায্য করেছি। তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে দোলনায় ও পরিণত বয়সে। সূরা মায়েদা-১১০
হাদিস শরিফ থেকে দলিল:
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله
عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «لَمْ يَتَكَلَّمْ في المَهْدِ إلاَّ ثَلاثَةٌ :
عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ، وَصَاحِبُ جُرَيْجٍ، وَكَانَ جُرَيْجٌ رَجُلاً عَابِداً،
فَاتَّخَذَ صَوْمَعَةً فَكَانَ فِيهَا، فَأَتَتْهُ أُمُّهُ وَهُوَ يُصَلِّي،
فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ، فَقَالَ : يَا رَبِّ أُمِّي وَصَلاتِي فَأَقْبَلَ عَلَى
صَلاتِهِ فَانْصَرَفَتْ . فَلَمَّا كَانَ مِنَ الغَدِ أتَتْهُ وَهُوَ يُصَلِّي،
فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ، فَقَالَ : أيْ رَبِّ أمِّي وَصَلاتِي، فَأقْبَلَ عَلَى --------». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত নবি (ﷺ) বলেছেন, (নবজাত
শিশুদের মধ্যে) দোলনায় তিনজনই মাত্র কথা বলেছে;
মারয়্যামের
পুত্র ঈসা, আর (বনি ইসরাইলের) জুরাইজের (পবিত্রতার সাক্ষী)
শিশু। জুরাইজ ইবাদতগুযার মানুষ ছিল এবং সে একটি উপাসনালয় (আশ্রম) বানিয়েছিল। একদা সে
সেখানে নামাজ পড়ছিল। এমন সময় তার মা তার নিকট এসে তাকে ডাকলে সে (মনে মনে) বলল, হে প্রভু!
আমার মা ও আমার নামাজ (দুটিই গুরুত্বপূর্ণ;
কোনটিকে
প্রাধান্য দিই, তার সুমতি দাও)।’ সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। আর তার মা ফিরে গেল।
পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, জুরাইজ!’
সে
(মনে মনে) বলল, হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামাজ (এখন কী করি?)’ সুতরাং
সে নামাযে মশগুল থাকল। তার পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা
এসে ডাক দিল, জুরাইজ!’ সে (মনে মনে) বলল, হে প্রভু!
আমার মা ও আমার নামাজ (এখন কী করি?)’
সুতরাং
সে নামাযে মশগুল থাকল। তখন (তিন তিন দিন সাড়া না পেয়ে তার মা তাকে বদদোয়া দিয়ে) বলল, হে আল্লাহ!
বেশ্যাদের মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি ওর মরণ দিও না।’ বনি ইসরাইল জুরাইজ ও তার ইবাদতের কথা চর্চা করতে
লাগল। এক বেশ্যা মহিলা ছিল, যার দৃষ্টান্তমূলক রূপ-সৌন্দর্য ছিল। সে বলল, তোমরা
চাইলে আমি ওকে ফিতনায় ফেলতে পারি।’ সুতরাং সে নিজেকে তার কাছে পেশ করল। কিন্তু জুরাইজ
তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করল না। পরিশেষে সে এক রাখালের কাছে এল, যে জুরাইজের
আশ্রমে আশ্রয় নিত। সে দেহ সমর্পণ করলে রাখাল তার সাথে ব্যভিচার করল এবং বেশ্যা তাতে
গর্ভবতী হয়ে গেল। অতঃপর সে যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ করল, তখন
(লোকেদের জিজ্ঞাসার উত্তরে) বলল, এটি জুরাইজের সন্তান।’
সুতরাং
লোকেরা জুরাইজের কাছে এসে তাকে আশ্রম থেকে বেরিয়ে আসতে বলল। (সে বেরিয়ে এলে) তারা তার
আশ্রম ভেঙ্গে দিল এবং তাকে মারতে লাগল। জুরাইজ বলল, কী ব্যাপার
তোমাদের? (এ শাস্তি কিসের?)’ লোকেরা
বলল, তুমি এই বেশ্যার সাথে ব্যভিচার করেছ এবং তার ফলে সে সন্তান জন্ম
দিয়েছে।’ সে বলল, সন্তানটি
কোথায়?’ অতঃপর লোকেরা শিশুটিকে নিয়ে এলে সে বলল, আমাকে
নামাজ পড়তে দাও।’ সুতরাং
সে নামাজ পড়ে শিশুটির কাছে এসে তার পেটে খোঁচা মেরে জিজ্ঞাসা করল, ওহে
শিশু! তোমার পিতা কে?’
সে জবাব
দিল, অমুক রাখাল।’ অতএব লোকেরা (তাদের ভুল বুঝে এবং এই অলৌকিক ঘটনা
দেখে) জুরাইজের কাছে এসে তাকে চুমা দিতে ও স্পর্শ করতে লাগল। তারা বলল, আমরা
তোমার আশ্রমকে স্বর্ণ দিয়ে বানিয়ে দেব।’ সে বলল,
না, মাটি
দিয়েই তৈরী করে দাও, যেমন পূর্বে ছিল।’
সুতরাং
তারা তাই করল। (তৃতীয় শিশুর ঘটনা হচ্ছে বনি ইসরাইলের) এক শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল।
এমন সময় তার পাশ দিয়ে উৎকৃষ্ট সওয়ারিতে আরোহী এক সুদর্শন পুরুষ চলে গেল। তার মা দোয়া
করে বলল, হে আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে ওর মত করো।’
শিশুটি
তখনি মায়ের দুধ ছেড়ে দিয়ে সেই আরোহীর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, হে আল্লাহ
আমাকে ওর মত করো না।’ তারপর
মায়ের দুধের দিকে ফিরে দুধ চুষতে লাগল। আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)নিজের তর্জনী আঙ্গুলকে নিজ মুখে চুষে শিশুটির
দুধ পান দেখাতে লাগলেন। আমি যেন তা এখনো দেখতে পাচ্ছি। পুনরায় (তাদের) পাশ দিয়ে একটি
দাসীকে লোকেরা মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা বলছিল, তুই
ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস!’ আর দাসীটি বলছিল, হাসবিয়াল্লাহু
অনিমাল অকীল।’ (আল্লাহই
আমার জন্য যথেষ্ট ও তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।) তা দেখে মহিলাটি দোয়া করল, হে আল্লাহ!
তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না।’ ছেলেটি
সাথে সাথে মায়ের দুধ ছেড়ে দাসীটির দিকে তাকিয়ে বলল, হে আল্লাহ!
তুমি আমাকে ওর মত করো।’ অতঃপর
মা-বেটায় কথোপকথন করল। মা বলল, একটি সুন্দর আকৃতির লোক পার হলে
আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো। তখন তুমি
বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আবার ওরা ঐ দাসীকে নিয়ে
পার হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না। কিন্তু
তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো! (এর কারণ কী?)’ শিশুটি
বলল, (তুমি বাহির দেখে বলেছ,
আর আমি
ভিতর দেখে বলেছি।) ঐ লোকটি স্বৈরাচারী,
তাই
আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আর ঐ দাসীটির
জন্য ওরা বলছে, তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি
করেছিস, অথচ ও এ সব কিছুই করেনি। তাই আমি বললাম, হে আল্লাহ!
তুমি আমাকে ওর মত করো।’ তাখরিজ:
বুখারি৩৪৩৬, ২৪৮২, ৩৪৬৬, মুসলিম
২৫৫০, আহমদ ৮০১০, ৮৭৬৮, ৯৩১৯
সুতরাং উপরোক্ত ইশারাতুন নস দ্বারা প্রমাণিত
হলো, ছোট সোনামনিদেরকে দোলনায় শোয়াতে কোন সমস্যা নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন