জিজ্ঞাসা-১২৫৬৭:
আসসালামু আলাইকুম। দীর্ঘদিন যাবত প্রায় 4-5 বছর হলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগ-শারীরিক সম্পর্ক নেই। এমতাবস্থায় স্বামী কর্তৃক তালাক প্রাপ্ত হলে স্ত্রীর কি ইদ্দত পালন করা বাধ্যতামূলক? এ বিষয়ে শরয়ি সমাধান কি?
তারিখ: ২৬/০৪/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ড. মনজুরুল ইসলাম হাফিজাহুল্লাহ, ঢাকা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ইসলামি শরিয়তে ইদ্দতের সম্পর্ক তালাক ও স্বামীর মৃত্যুর সাথে। যখনি উক্ত দু’টির কোন একটি ঘটবে, তখন থেকেই ইদ্দতের সময়সীমা শুরু হয়। শারিরীক সম্পর্ক ছিল কি না? এর সাথে ইদ্দতের কোন সম্পর্ক নেই। দলিল:
আয়াত নং -০১
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ ۚ [٢:٢٢٨]
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। সূরা বাকারা-২২৮
আয়াত নং -০২
Surah Al-Baqara, Verse 234:
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে। সূরা বাকারা-২৩৪
ফিকহি দলিল:
جاء في الموسوعة الفقهية: ذهب الحنفية إلى أن العدة تبدأ في الطلاق عقيب الطلاق, وفي الوفاة عقيب الوفاة , لأن سبب وجوب العدة الطلاق أو الوفاة , فيعتبر ابتداؤها من وقت وجود السبب
ফিকহের বিশ্বকোষে বলা হয়েছে: হানাফীদের অভিমত যে, ইদ্দত শুরু হয় তালাকের পর এবং মৃত্যুর পর মৃত্যুতে, কারণ ইদ্দতের বাধ্যবাধকতার কারণ হল তালাক বা মৃত্যু। কারণের অস্তিত্বের সময় থেকে শুরু করা বলে মনে করা হয়। সূত্র: ফিকহুল উসরাতিল মুসলিমা -১৪২৬৬৭ (ফতোয়া নং)
দ্বিতীয় কথা হলো, নারীদের ইদ্দত পালনের অনেকগুলো হিকমাহ রয়েছে, তার মধ্যে একটি হল গর্ভধারণ নিশ্চিত করা। তাই অনেকে যুক্তি দেখায় যদি স্বামী যদি স্ত্রী থেকে দূরে থাকে দীর্ঘদিন যদি সহবাস না করে, তাহলে ইদ্দতের পালনে প্রয়োজন নেই।
এ কথা সঠিক নয়, শুধু গর্ভের বাচ্চা নির্ণয়েই কারণ/হিকমাহ নয়। অন্যান্য অনেক কারণ/হিকমাহ রয়েছে । (যেমন,স্বামীর মৃত্যুর পর চার মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন স্বামীর অনুগ্রহের একধরনের কৃতজ্ঞতা। স্বামীর মৃত্যুর পর দ্রুত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে স্বামীর মৃত্যুতে শোক জানানো প্রেম ও ভালোবাসার দাবি। অনেক সময় স্বামীর মৃত্যুর সময় ছোট সন্তান থাকে। স্ত্রী অন্যত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে এই সন্তানের প্রতিপালন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ইসলামে সেসব শিশুর যথাযথ প্রতিপালনের তাগিদে স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস ১০ দিন আর তালাক প্রাপ্ত হলে তিন তুহুর ইদ্দত পালনের নির্দেশ দিয়েছে।)
শারীরিক সম্পর্ক না থাকলে ইদ্দত পালন করতে হবে না, এরকম কোন নস পবিত্র কুরআন- সুন্নাহ ইজমা ও কিয়াসে নেই। বরং নিম্নের আয়াত থেকে সুস্পষ্ট হয়-
Surah At-Talaq, Verse 4:
وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِن نِّسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন। সূরা তালাক -0৪
ব্যাখ্যা: যে নারীর ঋতু বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেছে তার সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই আর যে নারী এখনো পিরিয়ড বা বালেগা হয়নি তারও সন্তান হওয়ার সময় নাই তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা তিন মাস পালন করতে বলেছেন।
সারকথা হলো, স্বামীর মৃত্যু বা তালাকের পরে স্ত্রীকে অবশ্যই ইদ্দত পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্ক হোক বা না হোক কোন পার্থক্য নেই।
সুতরাং আপনার প্রশ্নের আলোকে, উক্ত স্ত্রী দীর্ঘ পাঁচ বছর স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক না থাকলেও তালাকের পরে শরীয়ত নির্ধারিত ইদ্দত পালন করতে হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন