জিজ্ঞাসা-১৭০: কিছু লোক
শুধু কুরআন ও হাদীসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করে অন্য কিছু মানতে চায় না। বিশেষ করে কিয়াসকে
দলিল হিসেবে গ্রহণ করে না। কিয়াস শরীয়তের দলিল
কিনা, এর পক্ষে নস আছে কি?
মাওলানা মোহাম্মাদ আব্দুর রহমান বগুড়া থেকে---
উত্তর: جزاك الله خيرا احسن جزاء । আল্লাহ আপনাকে নিরাপদে ও শান্তিতে রাখুন। স্নেহের ভাই আব্দুর
রহমান সাহেবকে যিনি সাম্প্রতিক সময়ে সহিহ হাদিসের নামে স্লোগান তুলে কতিপয় মানুষ
মুসলিম সমাজকে বিভ্রান্ত করছেন। আল্লাহ
তাদেকে সহিহ বুঝ দান করুন।
মুহতারাম, আপনি কিয়াস সম্পর্কে শরীয়তের নস তালাশ করেছেন, ইনশাল্লাহ এর জবাব দিব, তার আগে আমি কিছু প্রশ্ন
ছুড়ে দিলাম/রাখলাম। যারা কিয়াসকে মানেন না। (তাদেরকে প্রশ্ন করা যেতে পারে)
প্রশ্ন: ০১। রোজাবস্থায় ইনজেকশন/করোনার টিকা নিলে, অন্যকে রক্ত দান করলে রোজা ভঙ্গ হবে কি না? কুরআন-সহিহ হাদিস থেকে দলিল দিন, কিয়াস ব্যতিত।
প্রশ্ন: ০২। পুরুষ লোক মারা গেলে কাপড় হলো তিনটি ও মহিলার জন্য পাঁচটি
যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত; কিন্তু খুনসা অর্থাৎ হিজরা মারা গেলে কাপড় কয়টি? কুরআন-সহিহ
হাদিস থেকে দলিল দিন, কিয়াস ব্যতিত।
প্রশ্ন: ০৩। যানবাহনে, বিমানে, জাহাজ-নৌকাতে কিভাবে নামাজ পড়বো/হবে
কিনা, কারণ নবির
যুগে এগুলো ছিল না? কুরআন-সহিহ হাদিস থেকে দলিল দিন, কিয়াস ব্যতিত।
প্রশ্ন: ০৪। ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা জায়েজ কিনা কিংবা এর পদ্ধতি কি? কারণ নবির যুগে এগুলো ছিল না?
কুরআন-সহিহ হাদিস থেকে দলিল দিন,
কিয়াস ব্যতিত।
প্রশ্ন: ০৫। কুকুর কোনো পাত্রে মুখ দিলে পবিত্রতার পদ্ধতি সাত পাত্রটি ধোয়া কিন্তু শুকুর মুখ দিলে কতবার ধুতে হবে? কুরআন-সহিহ হাদিস থেকে দলিল দিন, কিয়াস ব্যতিত।
প্রশ্ন: ০৬। মদ হারাম কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। কিন্তু হিরোয়িন, আফিম,বাবা আধুনিক বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য এগুলো নামে সরাসরি হারাম হওয়ার নস নেই। কারণ নবির যুগে এগুলো ছিল না? কুরআন-সহিহ হাদিস থেকে দলিল দিন, কিয়াস ব্যতিত।
প্রশ্ন: ০৭। মোবাইলে কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েজ কিনা? কারণ নবির যুগে এগুলো ছিল না? কুরআন-সহিহ হাদিস থেকে দলিল দিন, কিয়াস ব্যতিত।
প্রশ্ন: ০৮। মাইকে আজান দেওয়া যাবে কিনা? কারণ নবির যুগে এগুলো ছিল না?
কুরআন-সহিহ হাদিস থেকে দলিল দিন,
কিয়াস ব্যতিত।
প্রিয় পাঠক! এরকম হাজরো মাসয়ালার ক্ষেত্রে কিয়াস ব্যতিত আমল করা সম্ভব হবে কি? যারা মানেন না; তাদেরকে উপরোক্ত প্রশ্নগলোর উত্তর দেওয়ার জন্য কিয়ামত সময় দিলেও কি এই আসমানের নিচে জমিনের ওপরে কোনো আলেম আছে কি কিয়াসের সাহায্য ছাড়া জবাব দিতে পারবে?
এখন কিয়াসের পক্ষে নস পেশ করছি। শুরুতে যৎকিঞ্চিৎ কিয়াসের পরিচয় জেনে নেয়। কিয়াসঃ
কিয়াস (قياس) আরবি শব্দ যার
অর্থ হল অনুমান করা, পরিমান করা, তুলনা করা, ওজন
করা, নমুনা, সাদৃশ্য করা ইত্যাদি।
ফিকহের পরিভাষায়- মূল আইন হতে ইল্লাতের যুক্তিভত্তিক
সিদ্বান্ত হল কিয়াস।
v কুরআনুল কারিম থেকে দলিল:
আয়াত নং-০১
এ আয়াতের ব্যাখ্যা
আয়াত নং-০২
আয়াতের ব্যাখ্যা
খ্যাতনামা মুফাসসিরগণের তাফসীরের ভিত্তিতে বলা যায় যে, সূরা হাশরের ২ নম্বর আয়াত থেকে প্রমাণিত যে,
কুরআন-হাদীস ও ইজমা দ্বারা কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত পাওয়া না গেলে
ইজতিহাদ বা কিয়াসই
তখন শরীআতের দলীল হিসেবে স্বীকৃত।
আয়াত নং-০৩
وَدَاوُودَ
وَسُلَيْمَانَ إِذْ يَحْكُمَانِ فِي الْحَرْثِ إِذْ نَفَشَتْ فِيهِ غَنَمُ الْقَوْمِ وَكُنَّا لِحُكْمِهِمْ شَاهِدِينَ – فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَ ۚ وَكُلًّا آتَيْنَا حُكْمًا وَعِلْمًا
‘(আর স্মরণ করো) দাউদ এবং সুলাইমান (-এর সেই ঘটনার কথা) যখন উভয়ে ক্ষেতের
মামলার ব্যাপারে বিচার করে দিচ্ছিল। সেসময় (ঘটনাটি এই ঘটেছিল যে) রাতের বেলা তাতে
একটি কওমের মেষ ছড়িয়ে পড়েছিল। আর আমি তাদের বিচারকার্য পর্যবেক্ষন করছিলাম (যে
তাঁরা দুজনে কিভাবে বিচার করে)। তখন আমরা সুলায়মানকে তা (অর্থাৎ সঠিক ফয়সালা কী হওয়া উচিৎ তা) বুঝিয়ে দিলাম। আর (তাছাড়া) আমরা
(তাঁদের দুজনের) প্রত্যেককেই দান করেছিলাম হিকমাহ ও ইলম। সূরা আম্বিয়া ৭৮, ৭৯
ইমাম হাসান বাসরী রহ. একবার উপরোক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করে বললেন: فحَمَد
سليمان، ولم يَلُم داود، ولولا ما ذكر الله من أمر هذين، لرأيت أنَّ القضاة هلكوا، فإنَّه أثنى على هذا بعلمه، وعذر هذا باجتهاده এখানে (উত্তম রায়ের জন্য) হযরত সুলায়মান আ.-এর প্রশংসা করা
হয়েছে, কিন্তু হযরত দাউদ আ.-এর
কোনো ক্রুটি ধরা হয়নি। আর আল্লাহ তাআলা যদি এই দুই নবীর উক্ত ঘটনা উল্লেখ না করতেন,
তাহলে আমার মতে বিচারকরা নির্ঘাত ধ্বংস হয়ে যেত। বস্তুতঃ আল্লাহ
তাআলা হযরত সুলায়মান আ.-এর রায়কে তার ইলমের কারণে
প্রশংসা করেছেন, আর হযরত দাউদ আ.কে (ক্রুটি ধরা) থেকে মুক্তি
দিয়েছেন তার ইসতিহাদের (কিয়াসের) কারণে। [সহিহ বুখারী- ৮/১১১; শারহুস সুন্নাহ, ইমাম বাগাভী- ১০/১১৬]
v হাদিসে নবিব থেকে দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ،
حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي عَوْنٍ، عَنِ الْحَارِثِ بْنِ عَمْرِو ابْنِ
أَخِي الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، عَنْ نَاسٍ مِنْ أَصْحَابِ مُعَاذٍ مِنْ أَهْلِ
حِمْصٍ، عَنْ مُعَاذٍ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ حِينَ بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ، فَقَالَ: ” كَيْفَ
تَصْنَعُ إِنْ عَرَضَ لَكَ قَضَاءٌ؟ ”
قَالَ:
أَقْضِي بِمَا فِي كِتَابِ اللهِ. قَالَ: ” فَإِنْ
لَمْ يَكُنْ فِي كِتَابِ اللهِ؟ ”
قَالَ:
فَبِسُنَّةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ:
” فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِي سُنَّةِ رَسُولِ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ ”
قَالَ:
أَجْتَهِدُ رَأْيِي، لَا آلُو. قَالَ: فَضَرَبَ
رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَدْرِي، ثُمَّ قَالَ: الْحَمْدُ
لِلَّهِ الَّذِي وَفَّقَ رَسُولَ رَسُولِ اللهِ لِمَا يُرْضِي رَسُولَ اللهِ.
অর্থ: হযরত মুআজ রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন তাঁকে ইয়ামান প্রেরণ করেন তখন বললেন: তোমার সামনে কোন
বিচার এলে তুমি কীভাবে তার সমাধান করবে? তিনি বললেন: আল্লাহর কিতাবে যা আছে আমি সে অনুযায়ী ফায়সালা
করব। রসূলুল্লাহ (ﷺ) পুনরায় বললেন: যদি তুমি আল্লাহর কিতাবে তা না
পাও? হযরত মুআজ রা. বললেন:
তাহলে রসূলুল্লাহ (ﷺ)--এর সুন্নাত দ্বারা ফায়সালা করব। তিনি আবার বললেন: যদি তুমি
রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সুন্নাতে না পাও? হযরত মুআজ রা. বললেন: তাহলে আমি আমার বিবেচনা দ্বারা গবেষণা
করব। আর এ ব্যাপারে আমার চেষ্টায় কোন ত্রুটি করব না। হযরত মুআজ রা. বলেন: এ কথা
শুনে রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার সিনা চাপড়ে বললেন: সব প্রশংসা সেই আল্লাহ তাআলার যিনি
তাঁর রসূলের প্রেরিত দূতকে এমন (বিচারিক যোগ্যতার) তাওফীক দিয়েছেন যে ব্যাপারে
আল্লাহর রসূল সন্তুষ্ট। মুসনাদে আহমাদ: ২২০০৭, আবু দাউদ: ৩৫৫৩, ৩৫৫৪, তিরমিজী: ১৩৩১, ১৩৩২
নোট: হাদিসটি সনদ সম্পর্কে আবু বকর রাযী, আবু বকর ইবনে আরাবী, খতীবে বাগদাদী ও ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়া-এর মতে সহিহ। সূত্র: আল ইলালুল মুতানাহিয়া: বিচার-ফায়সালা অধ্যায়
হাদিস নং-০২
নোট: শায়খ শুআইব আরনাউত মুসনাদে আহমাদ ১৭৮১২ নম্বর হাদীসের তাহকীকে বলেন: حديث صحيح، “হাদীসটির সনদ সহীহ”।
দেখুন, হযরত আমর ইবনুল আছ রা. ফরয গোসলের
স্থলে তায়াম্মুমের আমল কুরআন-হাদীসের কোন দলীলের ভিত্তিতে করেননি এবং এ মর্মে কোন
দলীলও তিনি পেশ করেননি; বরং কুরআনের আয়াতের আলোকে তিনি নিজে
গবেষণা করে এ আমল করেছিলেন। রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর এ গবেষণালব্ধ দলীল শুনে হাসলেন। আর এটা
রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর পক্ষ থেকে গবেষণা নামক দলীলের স্বীকৃতির বহিঃপ্রকাশ। ফিকাহের
পলিভাষায় তাকে কিয়াস বলে।
হাদিস নং-০৩
সম্মানিত পাঠক! লক্ষ্য করুন, উনারা কথায় কথায় বুখারি উদ্ধৃতি দেন,
আর সেই বুখারির হাদিসের বৈধতা পাওয়া যাচ্ছে। কেননা, রসূরে নির্দেশ
অমান্য করে সলাত করলেও; এতদসত্ত্বেও রসূলুল্লাহ (ﷺ)
তাদেরকে তিরস্কার না করা বা কিছুই না বলা
এটাই প্রমাণ করে যে, ইজতিহাদ বা গবেষণাও শরীআতের দলীল।
হাদিস নং-০৪
ইমাম ত্বাবরানী (মৃ: ৩৬০ হি:) রহ. উত্তম সনদে হযরত আলী রা. থেকে একটি হাদিস
বর্ণনা করেছেন, হযরত আলী রা. বলেন- قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنْ نَزَلَ بِنَا أَمْرٌ لَيْسَ فِيهِ بَيَانٌ : أَمْرٌ وَلا نَهْيٌ ، فَمَا تَأْمُرُنَا ؟ قَالَ : ” تُشَاوِرُونَ الْفُقَهَاءَ وَالْعَابِدِينَ ، وَلا تُمْضُوا فِيهِ رَأْيَ خَاصَّةٍ – رواه الطبـراني فــي الأوســط:
رقم الحديث ١٦٤٧, قال
الهيثمي فـي مــجمـع الزوائد:١٠/١٧٨ رجاله موثقون من أهل الصحيح, الهندي
في كنز العمال رقم ٤١٨٨، وقال عنه حسن صحيح,
و خليفة بن خياط فـي مسنده, رقم
الحديث ٤٦ – আমি বললাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমাদের কাছে যদি এমন কোনো ব্যাপার সামনে আসে যে
সম্পর্কে (কুরআন ও সুন্নাহ’র
কোথায়ও পরিষ্কার করে কিছু) বলা নেই, আবার (সে সম্পর্কে) কোনো
নিষেধাজ্ঞাও নেই, সেক্ষেত্রে আপনি আমাদেরকে কি করার নির্দেশ
দেন? রাসুলুল্লাহ (ﷺ) -. এরশাদ
করলেন: تُشَاوِرُونَ الْفُقَهَاءَ وَالْعَابِدِينَ ، وَلا تُمْضُوا فِيهِ رَأْيَ خَاصَّةٍ –(তখন) তোমরা ফকিহ ও আবেদ (আলেম)গণের সাথে
পরামর্শ করো এবং সে ব্যাপারে কোনো একক (ব্যাক্তির) মতামতকে গ্রহন করো না। আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরানী-১৬৪৭; মাজমাউয যাওয়ায়িদ, হাইছামী-১০/১৭৮;
কাঞ্জুল উম্মাল, মুত্তাকী-৪১৮৮; মুসনাদে খালিফাহ- ৪৬
হাদিস নং-০৫
হযরত আমর ইবনুল আস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) - এরশাদ করেন– إذا حكم الحاكم فاجتهد ثم أصاب فله أجران وإذا حكم فاجتهد ثم أخطأ فله أجر – যখন কোনো হাকিম (বিচারক) ইসতিহাদ করে ফয়সালা দেন ও ফয়সালাটি সঠিক হয়, তখন তিনি (আমলনামায়) দুটি পুরষ্কার পান। আর তিনি যখন ইসতিহাদ করে ফয়সালা দেন কিন্তু ফয়সালাটা ভুল হয়ে যায়, তখন তিনি একটি পুরষ্কার পান। সহীহ বুখার, হাদিস ৭৩৫২; সহীহ মুসলীম-১৭১৬; সুনানে আবু দাউদ-৩৫৭৪; মুসনাদে আহমাদ-৪/১৯৮
এই হাদিসটি ইসতিহাদ ও কিয়াসের পক্ষে একটি শক্তিশালী দলিল।
হাদিস নং-০৬
সহীহ হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) - এরশাদ করেন– إني إنما أقضي بينكما برأي فيما لم ينزل علي فيه – ‘যে ব্যাপারে (সরাসরি কোনো ফয়সালা সহকারে) আমার উপর (কোনো ওহী) নাজিল হয় না, শুধু সেক্ষেত্রে আমি (আমার উপর বিগত নাজিল হওয়া ওহীর আলোকে ইসতেহাদ করি এবং একটি সিদ্ধান্তে উপণীত হই এবং) তোমাদের দুজনের মাঝে আমার সিদ্ধান্ত অনুসারে ফয়সালা করে দেই। সহীহ বুখারী-৫/২১২; সহীহ মুসলীম-৩/১৩৩৭; সুনানে আবু দাউদ-৩৫৮৫; সুনানে নাসায়ী-৮/২৩৩; তাফসিরে ইবনে কাসির-৪/২৬০
আকলি দলিল:
ইসলামের শুরু হতে কিয়ামত পর্যন্ত আগম সমস্ত মানুষের নাম উল্লেখ করে, সব সমাধান যদি কুরআনুল কারিমে নাজিল হতো,
তাহলে কুরআন ত্রিশ (৩০) পারা
থাকতো। না কোটি কাটি পাড়া হতো। হাদিসও সেম হতো তাহলে হাদিসও কোটি কোটি হত। সেখান
থেকে বাছাই করে আমর করা কত কঠিন হতো। একথা কি আমরা একবারই ভেবে দেখেছি।
তাছাড়া রসূল (ﷺ) কে جَوَامِعَ الكَلِم জামেউল কালিম (অর্থাৎ কথার সমষ্টি দান) করেছেন। দলিল:
রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন: بُعِثْتُ بِجَوَامِعِ الكَلِمِ، আমাকে বিশদ
অর্থবহ সংক্ষিপ্ত কথা বলার বৈশিষ্ট দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। ইমাম বুখারী রহ. এ কথার ব্যাখ্যায় বলেন: وَبَلَغَنِي أَنَّ جَوَامِعَ
الكَلِمِ: أَنَّ اللَّهَ يَجْمَعُ
الأُمُورَ الكَثِيرَةَ، الَّتِي كَانَتْ تُكْتَبُ فِي الكُتُبِ قَبْلَهُ، فِي
الأَمْرِ الوَاحِدِ، وَالأَمْرَيْنِ، أَوْ نَحْوَ ذَلِكَ ” আমার নিকটে পৌঁছেছে
যে, جَوَامِعَ
الكَلِمِ এর
ব্যাখ্যা হলো: আল্লাহ তাআলা রসূলুল্লাহ স.-এর এক/দুই কথার মধ্যে এত কিছু একত্রিত
করে দিয়েছেন, ইতিপূর্বে যা বর্ণনা করতে কিতাবে লিখতে হতো বা অনুরূপ কোন ব্যবস্থা নিতে
হতো। বুখারী: ৬৫৪১)
যদি রসূলুল্লাহ স.-এর কিছু কিছু (অনেক) কথা দশটি বিধান বের করা না যায় তাহলে রসূলুল্লাহ স.-এর এ বৈশিষ্টের সার্থকতা কোথায়?
প্রশ্ন: ক। একটি সংশয়।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
أَفَغَيۡرَ
ٱللَّهِ أَبۡتَغِى حَكَمً۬ا وَهُوَ ٱلَّذِىٓ أَنزَلَ إِلَيۡڪُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ
مُفَصَّلاً۬ۚ
অর্থঃ এমতাবস্থায় আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মীমাংসাকারীর সন্ধান করবো? অথচ তিনি পূর্ণ বিস্তারিত বিবরণসহ তোমাদের
কিতাব নাযিল করেছেন। সুরা আনআম-১১৪
এ আয়াত দ্বারা বলেন, কুরআনে সকল বিষয় বিস্তারিত বর্ণিত তার পরও
কি কিয়াস দরকার? ( দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ। সূরা মায়েদা-০৩)
উত্তর: ক। তার জবাব,
কুরআন সকল বিষয়ে বর্ণনা এসেছে অর্থ
সকল বিষয়ে মূলনীতি এসেছে। কুরআনে যে সব কিছুই আছে, এ বিয়য়ে ইমাম শাফিকে প্রশ্ন করা হলে,
তিনি জবাবে এ আয়াত দ্বারা দলিল দেন।
وَ مَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡهُ ٭ وَ مَا نَهٰىکُمۡ عَنۡهُ فَانۡتَهُوۡا ۚ
অর্থ: রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্ৰহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ
করে তা থেকে বিরত থাক। সূরা হাশর-০৭
কুরআনে নামাজ কায়েম করতে বলা হয়েছে, কিন্তু বিস্তারিত বলা হয়নি, হাদিস থেকে আমরা বিস্তারিত পদ্ধতি জানতে পারি। পবিত্রতা সম্পর্কে কুরআনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা এসেছে, কিন্তু বিস্তারিত আলোচনা আসেনি। এরকম অগণিত বিষয়। সুতরাং প্রমাণিত হলো, কুরআন সকল বিষয়ে বর্ণনা এসেছে অর্থ সকল বিষয়ে মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে।
والله
اعلم بالصواب
আল্লাহপাকই সকল বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন