জিজ্ঞাসা: ১০৪- বন্ধক রেখে তা থেকে ফায়দা নেওয়া কি জায়েজ ?
ইবনে আবেদীন শামী রাহবন্ধক পদ্ধতির বৈধতা সম্পর্কে
বলেন,
[ كِتَابُ
الرَّهْنِ] هُوَ مَشْرُوعٌ، لِقَوْلِهِ تَعَالَى - {فَرِهَانٌ مَقْبُوضَةٌ}
[ البقرة: 283] - وَبِمَا رُوِيَ «أَنَّهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ -
اشْتَرَى مِنْ يَهُودِيٍّ طَعَامًا وَرَهَنَهُ بِهِ دِرْعَهُ» وَانْعَقَدَ
عَلَيْهِ الْإِجْمَاعُ.
ভাবার্থঃ-বন্ধক
পদ্ধতি কোরআনে কারীমের সূরা বাকারার ২৮৮নং আয়ত দ্বারা প্রমাণিত এবং নবীজী (ﷺ) কর্তৃক নিজ বর্মকে বন্ধক রাখা দ্বারাও প্রমাণিত হয়।সর্বোপরি
বৈধতার উপর উলমায়ে কেরামদের ইজমা বা ঐক্যমত ও রয়েছে।(রদ্দুল মুহতার-৬/৪৭৭)
বন্ধক
সম্পর্কে হাদীস :
حَدَّثَنَا
مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ
أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ وَلَقَدْ رَهَنَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم
دِرْعَهُ بِشَعِيرٍ، وَمَشَيْتُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِخُبْزِ
شَعِيرٍ وَإِهَالَةٍ سَنِخَةٍ، وَلَقَدْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ " مَا
أَصْبَحَ لآلِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ صَاعٌ، وَلاَ أَمْسَى
". وَإِنَّهُمْ لَتِسْعَةُ أَبْيَاتٍ
অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যবের বিনিময়ে তাঁর বর্ম
বন্ধক রেখেছিলেন। আমি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে যবের
রুটি এবং দুর্গন্ধ যুক্ত চর্বি নিয়ে গেলাম, তখন তাঁকে বলতে শুনলাম, মুহাম্মাদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার পরিজনের
কাছে কোন সকাল বা সন্ধায় এক সা’ এর অতিরিক্ত (কোন খাদ্য) দ্রব্য থাকে না। (আনাস (রা.) বলেন)
সে সময়ে তারা মোট নয় ঘর (নয় পরিবার) ছিলেন।ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৩৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫০৮
عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم اشْتَرَى مِنْ يَهُودِيٍّ طَعَامًا إِلَى
أَجَلٍ وَرَهَنَهُ دِرْعَهُ.
‘আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ইয়াহুদীর কাছ থেকে
নির্দিষ্ট মেয়াদে খাদ্যশষ্য খরিদ করেন এবং নিজের বর্ম তার কাছে বন্ধক রাখেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৩৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫০৯
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه
ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ " الرَّهْنُ
يُرْكَبُ بِنَفَقَتِهِ، وَيُشْرَبُ لَبَنُ الدَّرِّ إِذَا كَانَ مَرْهُونًا
".
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বন্ধকী প্রাণীর
উপর তার খরচ পরিমাণ আরোহণ করা যাবে। তদ্রুপ দুধেল প্রাণী বন্ধক থাকলে (খরচ পরিমাণ)
তার দুধ পান করা যাবে। ইসলামিক
ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৩৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫১১
قَالَ مُغِيرَةُ
عَنْ إِبْرَاهِيمَ تُرْكَبُ الضَّالَّةُ بِقَدْرِ عَلَفِهَا، وَتُحْلَبُ بِقَدْرِ
عَلَفِهَا، وَالرَّهْنُ مِثْلُهُ
মুগীরা (রহ.) ইবরাহীম (রহ.) থেকে বর্ণনা
করেছেন, হারিয়ে যাওয়া প্রাণী যে পাবে সে তার ঘাসের (ও অন্যান্য প্রয়জনীয়) খরচ পরিমাণ
আরোহণ করতে পারবে, এবং ঘাসের খরচ পরিমাণ দুধ দোহন করতে পারবে। বন্ধকী প্রানীর ব্যাপারটিও অনুরূপ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم. " الرَّهْنُ يُرْكَبُ بِنَفَقَتِهِ إِذَا
كَانَ مَرْهُونًا، وَلَبَنُ الدَّرِّ يُشْرَبُ بِنَفَقَتِهِ إِذَا كَانَ
مَرْهُونًا، وَعَلَى الَّذِي يَرْكَبُ وَيَشْرَبُ النَّفَقَةُ
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বাহনর পশু বন্ধক থাকলে তার খরচের পরিমাণে তাতে আরোহণ করা
যাবে। তদ্রুপ দুধেল প্রাণী বন্ধক থাকলে তার খরচের পরিমাণে দুধ পান করা যাবে। (মোট
কথা) আরোহণকারী এবং দুধ পানকারীকেই খরচ বহন করতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৩৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫১২
عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ ـ رضى الله عنه
مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ، يَسْتَحِقُّ بِهَا مَالاً وَهْوَ فِيهَا فَاجِرٌ،
لَقِيَ اللَّهَ وَهْوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَصْدِيقَ ذَلِكَ
(إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا
قَلِيلاً) فَقَرَأَ إِلَى (عَذَابٌ أَلِيمٌ).ثُمَّ إِنَّ الأَشْعَثَ بْنَ
قَيْسٍ خَرَجَ إِلَيْنَا فَقَالَ مَا يُحَدِّثُكُمْ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ
قَالَ فَحَدَّثْنَاهُ قَالَ فَقَالَ صَدَقَ لَفِيَّ وَاللَّهِ أُنْزِلَتْ، كَانَتْ
بَيْنِي وَبَيْنَ رَجُلٍ خُصُومَةٌ فِي بِئْرٍ فَاخْتَصَمْنَا إِلَى رَسُولِ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "
شَاهِدُكَ أَوْ يَمِينُهُ ". قُلْتُ إِنَّهُ إِذًا يَحْلِفُ وَلاَ
يُبَالِي. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ حَلَفَ
عَلَى يَمِينٍ يَسْتَحِقُّ بِهَا مَالاً هُوَ فِيهَا فَاجِرٌ، لَقِيَ اللَّهَ
وَهْوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ ". فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَصْدِيقَ ذَلِكَ،
ثُمَّ اقْتَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ (إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ
وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً) إِلَى (وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ).
কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহ.) ... আবদুল্লাহ
(ইবনু মাস’উদ) (রা.) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, মিথ্যা কসম করে
যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদ হস্তগত করে সে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ সাথে সাক্ষাত করবে এ
অবস্থায় যে, আল্লাহ তার প্রতি
রাগান্বিত থাকবেন। তারপর আল্লাহ তা’আলা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) উক্ত বাণী
সমর্থন করে আয়াত নাযিল করলেন: “নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাতে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের
প্রতিশ্রুতি তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে। (৩ঃ ৭৭) (রাবী বলেন)
পরে আশ’আস ইবনু কাযস (রা.)
আমাদের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আবূ আবদুর রহমান (ইবনু মাসউ’দ) তোমাদের কি হাদীস শোনালেন (রাবী বলেন), আমরা তাকে
হাদীসটি শোনালে তিন বললেন, তিনি নির্ভুল
হাদীস শুনিয়েছেন। আমাকে কেন্দ্র করেই তো আয়াতটি নাযিল হয়েছিলো। কুয়া (এর মালিকানা)
নিয়ে আমার সাথে এক লোকের ঝগড়া চলছিলো। পরে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যাক্তি
মিথ্যা হলফ করে অর্থ-সম্পদ হস্তগত করবে, সে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এ অবস্থায় যে, আল্লাহ তার প্রতি
রাগান্বিত থাকবেন। তিন (আশআস) বলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা এর সমর্থনে আয়াত নাযিল করলেন। অতঃপর তিনি (আশআস) এই
আয়াত إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ
بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً) إِلَى (وَلَهُمْ عَذَابٌ
أَلِيمٌ তিলাওয়াত করলেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৩৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫১৫ – ২৫১৬
ঋণ দেওয়ার ফলে কোন প্রকার উপকার গ্রহণ করা.- সুদের প্রবেশপথ বন্ধ করার লক্ষ্যে নবী করীম (ﷺ) মুসলমানদের উপর সেই সমস্ত মুনাফা ও উপকার
গ্রহণকেও হারাম ঘোষণা করেছেন, যা ঋণ দেওয়ার ফলে ঋণগ্রহীতার নিকট পেশ করা হয়ে থাকে।
যেমন কোন উপহার-উপঢৌকন অথবা বিনা মজুরীতে
ঋণদাতার কোন কাজ করে দেওয়া প্রভৃতি (যদিও ঋণগ্রহীতা এ সবের মাধ্যমে উপকারের
বিনিময়ে প্রত্যুপকার করতে চায়, তবুও ঋণদাতার জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ নয়।) হাদীস শরীফে প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন,
إذا أقرض أحدكم قرضاً فأهدى إليه أو
حمله على الدابة فلا يركبه ولا يقبلها إلا أن يكون جرى بينه وبينه قبل ذلك.
অর্থাৎ, ‘‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ (কাউকে) ঋণ দেয়। অতঃপর
(ঋণগ্রহীতার তরফ থেকে) তাকে কোন উপঢৌকন দেওয়া হয় অথবা তাকে (ঋণগ্রহীতা নিজের গাড়ি
বা) সওয়ারীতে চড়িয়ে কোথাও পৌঁছিয়ে দিতে চায়, তবে সে যেন তার সওয়ারীতে না চড়ে এবং তার
উপঢৌকনও গ্রহণ না করে। তবে হ্যাঁ, যদি এরূপ সদ্ব্যবহার (উপঢৌকন আদান-প্রদান ঋণ দেওয়ার) পূর্ব থেকেই জারী থাকে
তবে (তার পরে) অনুরূপ কিছু গ্রহণ করায় দোষ নেই।’’ মুসনাদে আহমদ ১/৩৯৫, ৪২৪, ইবনে মাজাহ
২২৭৯, বাইহাকী, মিশকাত ২৮২৭ নং)
উক্ত হাদীসে নবী করীম (ﷺ) সেই মুনাফা ও উপকার গ্রহণ করতেও নিষেধ
করেছেন যা ঋণ দেওয়ার কারণেই ঋণগ্রহীতা ঋণদাতার জন্য নিবেদন করতে চায়।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন