জিজ্ঞাসা-১১২:
ঈদের নামাজের তাকবির কয়টি ? ৬ তাকবির কি সহিহ দ্বারা প্রমাণিত?
ঊত্তর। এটি একটি ইজতাহিদী মাসয়ালা। এ নিয়ে সাহাবায়ে
কেরাম, তাবেয়ী ও
পরবর্তী ইমামদের মধ্যে মতানৈক্য আছে এবং এ মাসয়ালায় ১০টিরও অধিক মতামত রয়েছে।
মালেকী ও হাম্বলি মাযহাবের আলেমগণ বলেন: ঈদের নামাযের প্রথম রাকাতে তাকবীর সংখ্যা ৬টি এবং
দ্বিতীয় রাকাতে ৫টি। এটি মদিনার সাত ফকীহ, উমর ইবনে আব্দুল আযিয, যুহরী ও মুযানি থেকে বর্ণিত আছে। আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা’ (১৩/২০৯)
বুঝা যাচ্ছে- প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমাকে তারা সপ্তম তাকবীর হিসেবে গণ্য
করেন এবং দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর তাকবীরকে তারা বর্ণিত পাঁচটি তাকবীরের
অতিরিক্ত তাকবীর হিসেবে গণ্য করেন।
আর হানাফী মাযহাবের অভিমত ও এক বর্ণনা মতে ইমাম আহমাদের মত হচ্ছে: দুই ঈদের নামাযে
অতিরিক্ত ৬ তাকবীর দিতে হবে। প্রথম রাকাতে ৩ তাকবীর, দ্বিতীয় রাকাতে ৩ তাকবীর। এটি
ইবনে মাসউদ (রা.), আবু মুসা আশআরী (রা.), হুযাইফাতুল ইয়ামান (রা.), উকবা বিন আমের (রা.),
ইবনে যুবায়ের (রা.), আবু মাসউদ আল-বদরী (রা.),
হাসান বসরী (রহ.), মুহাম্মদ বিন সিরিন (রহ.),
ছাওরী (রহ.), কুফার আলেমগণ ও এক বর্ণনা মতে
ইবনে আব্বাস (রা.) এর অভিমত।
শাফেয়ি মাযহাবের আলেমগণ বলেন: প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত তাকবীর ৭টি এবং দ্বিতীয় রাকাতে
৫টি।
ঈদের নামাযের অতিরিক্ত ৬ তাকবীর সংক্রান্ত
সহিস হাদিস। দুঈদের নমাযে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর ওয়াজিব হওয়ার বিধান
সম্পূর্ণ হাদীস সম্মত। মারফু এবং মাওকুফ উভয় প্রকারের হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত। এ
ব্যাপারে সহীহ-শুদ্ধ হাদীস গ্রন্থাদিতে বহু হাদীস পাওয়া যায়। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি
হাদীস নিম্নে পেশ করছি।
أن
القاسم ابا عبد الرحمن حدثه قال حدثني بعض اصحاب رسول الله صلي الله عليه وسلم قال
صلي بنا النبي صلي الله عليه وسلم يوم عيد فكبر اربعاً واربعاً ثم اقبل علينا
بوجهه حين انصرف فقال لا تنسوا كتكبير الجنائز واشار باصابعه وقبض ابهامه ـ فهذا
حديث حسن الاسناد ـ
নির্ভরযোগ্য হাদীসগ্রন্থ তাহাবী শরীফের বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, আবু আব্দুর রহমান বলেন,
আমাকে কতিপয় সাহাবা রাযি. বলেছেন যে, হযরত
রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের নিয়ে ঈদের নামায পড়ে ছিলেন। তাতে তিনি চার চার তাকবীর
বলেন। অত:পর নামায শেষে হুযুর (সা.) আমাদের কে লক্ষ্য করে বললেন, ভুলে যেও না, ঈদের নামাযের তাকবীর জানাযার নামাযের
তাকবীরের অনুরূপ। সাথে সাথে হুযুর (সা.) বৃদ্ধাঙ্গুলী মুষ্ঠিবদ্ধ করে অবশিষ্ট চার
আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করে দেখালেন (তাহাবী শরীফ, ২/৪০০পৃ । বর্ণিত হাদীসের সনদকে ইমাম তাহাবী রহ. হাসান
বলেছেন। আর হাসান হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে সহীহ হাদীসের মত (তাদরীবুর রাবী, ১/৯৬ পৃ । বর্ণিত হাদীসে দু’ রাকাতে চার চার তাকবীর বলা
হয়েছে। এদ্বারা বুঝা যায় মোট আট তাকবীর। যথা: প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমা সহ চার
তাকবীর আর দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীর সহ চার তাকবীর। অর্থাৎ দুটি আসল ৬টি
অতিরিক্ত বলা যেতে পারে।
أن
سعيد بن العاص سأل أبا موسي الاشعري وحذيفة بن اليمان كيف كان رسول الله صلي الله
عليه وسلم يكبر في الاضحي والفطر فقال ابو موسي كان يكبر اربعا تكبيرة علي الجنائز
فقال حذيفة صدق فقال ابو موسي كذلك كنت اكبر في البصرة ـ
বিশুদ্ধ হাদীসগ্রন্থ আবু দাউদ শরীফের এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, সাঈদ ইবনে আস রাযি. একদা আবু
মূসা আশয়ারী ও হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রাযি. কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযে কিভাবে তাকবীর বলতেন?
জবাবে আবু মূসা রাযি. বললেন জানাযার নামাযের মত প্রতি রাকাতে চার
চার তাকবীর বলতেন। হুযায়ফা রাযি. সমর্থন করে বললেন আবু মূসা সত্য বলেছে। আবু মূসা
রাযি. বললেন আমিও বসরা দেশে এভাবেই তাকবীর বলতাম (আবু দাউদ, ১/১৬৩
পৃ:; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ৪/২১৩
পৃ ।
উভয় হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের নামাযের তাকবীর প্রতি রাকাতে চার চার করে
সর্ব মোট আট বলেছেন। অর্থাৎ দু’টি আসল ৬টি অতিরিক্ত। প্রশ্ন হতে পারে, হাদীসে
তো তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর তাকবীরের কথা উল্লেখ নেই? তার
জবাবে বলতে চাই যে, হুযুর (সা.) ঈদের তাকবীরকে জানাযার তাকবীরের
সাথে তুলনা করেছেন। তা থেকে বুঝা যায় যে, যেমন জানাযার ৪
তাকবীরের মধ্যে প্রথম তাকবীরে তাহরীমা অপর ৩টি অতিরিক্ত তদ্রুপ ঈদের নামারের চার
চার তাকবীরের মধ্যে ও একটি আসল অপর ৩টি অতিরিক্ত। এটা কোন মনগড়া ব্যাখ্যা নয় বরং
বহু মাওকুফ হাদীস দ্বারা প্রমানিত সত্য। একথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, হাদীসে মাওকুফ যদি ইজতেহাদী বিষয় না হয় এবং কুরআনের কোন আয়াত বা হাদীসে
মারফুর সাথে সাংঘর্ষিক না হয় তখন হাদীসে মারফুর মত শরীয়তের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ
যোগ্য হবে (জফরুল আমানী, ১/১৯০ পৃ ।
হাদিস
নং-০৩
أن
إبن مسعود رضـ كان يكبر في العيدين تسعا اربع قبل القرأة ثم يكبر فيركع وفي
الثانية يقرأ فاذا فرغ كبر اربعاً ثم ركع ـ
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) থেকে ঈদের নামাযের নিয়ম প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, তিনি ঈদের নামাযে ৯টি তাকবীর
বলতেন। ৪টি কেরাতের পূর্বে। অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা সহ ৪টি। অত:পর কেরাত পড়ে
তাকবীর বলে রুকু করতেন। দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর ৪টি তাকবীর বলতেন এবং চতুর্থ
তাকবীরের সাথে রুকু করতেন (তিরমিজী শরীফ, ১/১২০ পৃ:; ই’লাউস সুনান, ৮/১০৬ পৃ:;
তাহাবী শরীফ, রায়াহ, ২/৪০১
পৃ: মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৪/২১৬পৃ. নাসবুর রায়াহ,
২/২২২ পৃ.)।
০৪ নং হাদীস:
أن
القاسم ابا عبد الرحمن حدثه قال حدثني بعض اصحاب رسول الله صلي الله عليه وسلم قال
صلي بنا النبي صلي الله عليه وسلم يوم عيد فكبر اربعاً واربعاً ثم اقبل علينا
بوجهه حين انصرف فقال لا تنسوا كتكبير الجنائز واشار باصابعه وقبض ابهامه ـ فهذا
حديث حسن الاسناد ـ
নির্ভরযোগ্য হাদীসগ্রন্থ তাহাবী শরীফের বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, আবু আব্দুর রহমান বলেন,
আমাকে কতিপয় সাহাবা রাযি. বলেছেন যে, হযরত
রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের নিয়ে ঈদের নামায পড়ে ছিলেন। তাতে তিনি চার চার তাকবীর
বলেন। অত:পর নামায শেষে হুযুর (সা.) আমাদের কে লক্ষ্য করে বললেন, ভুলে যেও না, ঈদের নামাযের তাকবীর জানাযার নামাযের
তাকবীরের অনুরূপ। সাথে সাথে হুযুর (সা.) বৃদ্ধাঙ্গুলী মুষ্ঠিবদ্ধ করে অবশিষ্ট চার
আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করে দেখালেন (তাহাবী শরীফ, ২/৪০০পৃ । বর্ণিত হাদীসের সনদকে ইমাম তাহাবী রহ. হাসান
বলেছেন। আর হাসান হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে সহীহ হাদীসের মত (তাদরীবুর রাবী, ১/৯৬ পৃ । বর্ণিত হাদীসে দু’ রাকাতে চার চার তাকবীর বলা
হয়েছে। এদ্বারা বুঝা যায় মোট আট তাকবীর। যথা: প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমা সহ চার
তাকবীর আর দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীর সহ চার তাকবীর। অর্থাৎ দুটি আসল ৬টি
অতিরিক্ত বলা যেতে পারে।
أن
سعيد بن العاص سأل أبا موسي الاشعري وحذيفة بن اليمان كيف كان رسول الله صلي الله
عليه وسلم يكبر في الاضحي والفطر فقال ابو موسي كان يكبر اربعا تكبيرة علي الجنائز
فقال حذيفة صدق فقال ابو موسي كذلك كنت اكبر في البصرة ـ
বিশুদ্ধ হাদীসগ্রন্থ আবু দাউদ শরীফের এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, সাঈদ ইবনে আস রাযি. একদা আবু
মূসা আশয়ারী ও হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রাযি. কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযে কিভাবে তাকবীর বলতেন?
জবাবে আবু মূসা রাযি. বললেন জানাযার নামাযের মত প্রতি রাকাতে চার
চার তাকবীর বলতেন (তাকবিরে তাহরিমা ১টি ও দ্বিতীয় রাকাতে
রুকুর তাকবির একটি)। হুযায়ফা রাযি. সমর্থন করে বললেন আবু মূসা সত্য বলেছে। আবু
মূসা রাযি. বললেন আমিও বসরা দেশে এভাবেই তাকবীর বলতাম (আবু দাউদ, ১/১৬৩ পৃ:; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ৪/২১৩ পৃ ।
ছয় তাকবীরের সাথে ঈদের নামাযের এই নিয়মটি হযরত ইবনে মাসউদ ব্যতীত হযরত ওমর, হুযায়ফ, আবু
মূসা আশয়ারী, আনাস, জাবির, আবু মাসউদ আনসারী, ইবনে আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবনে
জুবায়ের (রাযি.) প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম থেকেও বর্ণিত আছে (মুসান্নাফে ইবনে আবি
শায়বা, ৪/২১৪-২১৯ পৃ:; তাহাবী শরীফ,
২/৪০০ পৃ ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন