জিজ্ঞাসা:১২৭- আসসালামু 'আলাইকুম আমার জানার বিষয় হলো, "স্বামী-স্ত্রী ঝগড়ার একপর্যায়ে পবিত্র কুরআন ছুঁয়ে স্বামী বললো, আমি আজ থেকে তোমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবো না ; স্ত্রীও অনুরূপ বললো" এখন করনীয় কী দয়া করে জানালে ভালো হয়।
(
উত্তর: ওয়ালাইকুমুস সালাম
ওয়া রহমাতুল্লাহ ও বারাকাতুহ। আপনার প্রশ্নকে
বুঝার জন্য কয়েকভাগে ভাগ করেছি।
প্রশ্ন: ক।
কুরআন দ্বারা শপথ করলে শপথ হবে কি না?
উত্তর: ক।
আল্লাহ নাম ছাড়া অন্য কারাও নামে শপথ করলে শপথ ধর্তব্য হবে/কার্যকর হবে
না। তবে পবিত্র কুরআন নিয়ে কসম করলে কসম হিসেবে বিবেচিত হবে। সূত্র: আহসানুল ফাতাওয়া - ৫/৪৮৮
সুতরাং আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে
কসম কার্যকর হবে। আর অন্যায় কিছু শপথ করলে তা ভাঙ্গা জরুরি অর্থাৎ শপথের চেয়ে
উত্তম কাজ হলে, শপথ ভাঙ্গবে। দলিল:
• عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِ الَّذِى هُوَ خَيْرٌ وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ • হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি
কোন কিছুর কসম খায়, তারপর এর বিপরীত কাজে কল্যাণ দেখে,
তাহলে সে যেন উক্ত কল্যাণধর্মী কাজটি করে এবং স্বীয় কসমের কাফফারা
প্রদান করে। -সহীহ মুসলিম-৪৩৬২, সহীহ
ইবনে হিব্বান-৪৩৫২,৪৩৪৭, মুসনাদে আবী
আওয়ানা-৫৯৩১, মুসনাদে আহমদ-১৮২৫১, মুসনাদুশ
শিহাব-৫১৬, সহীহ
বুখারী-৬২৪৭
এখন স্বামী-স্ত্রী স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখলে কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব।
প্রশ্ন: খ। কাফফারার পদ্ধতি কি?
উত্তর: খ। কাফফারার পদ্ধতি
নিম্নরূপ:
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ • আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন
না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের
জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে,
দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম
শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে
বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে
দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে।
এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয়
শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন,
যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। -সূরা
মায়িদা-৮৯
উক্ত আয়াতে কারিমার ভিত্তিতে, কসম ভঙ্গ করার পরই কাফফারা আদায় করতে হবে ( কসম ভাঙ্গার আগে
কাফফারা দিলে হবে না)। কাফফারার দুই পদ্ধতি : (এক) ১০ মিসকিনকে দুই
বেলা পেট ভরিয়ে খানা খাওয়ানো।
(দুই) ১০ মিসকিনকে ১০ সেট পোশাক প্রদান করা। এ দুটির যেকোনোটি
বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। এর কোনোটিতেই সক্ষম না হলে ধারাবাহিক তিনটি রোজা রেখেও
কাফফারা আদায় করতে পারে। সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮৯, দুররুল মুখতার : ৩/৭২৫
প্রশ্ন: গ। উপরোক্ত শপথদ্বয় দ্বারা তালেকে কিনায়া পতিত হবে কি না?
উত্তর: গ। ইসলামি শরিয়তে খুলা তালাক ব্যতিত স্ত্রীদের
তালাকের অধিকার নেই। তবে স্বামী শপথ
দ্বারা নির্ভরযোগ্য ফাতাওয়া গ্রন্থ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত
রয়েছে,
قال لها لا نكاح بيني
وبينك أو قال لم يبق بيني وبينك نكاح يقع الطلاق إذا نوى
স্বামী যদি তার স্ত্রীকে বলে তোমার আর আমার মধ্যকার বিয়ের কোনো
সম্পর্ক নেই। অথবা বলে যে, তোমার আর আমার মধ্যকার আর বিয়ে
নেই। তাহলে তালাক পতিত হবে যদি স্বামী তালাকের নিয়ত করে। নতুবা তালাক পতিত হবে না।
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৩৭৫কিতাবুন-নাওয়াযিল-৯/৪৪৬
সুতরাং প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী এটা তালাকে কেনায়ার পর্যায়ভুক্ত হবে।
তালাকে কেনায়ার হুকুম হল,স্বামী উক্ত কথা দ্বারা তালাকের
নিয়ত করলে তালাক পতিত হবে।এক তালাকের নিয়ত করে থাকলে এক তালাকে বায়েন পতিত হবে। আর
তিন তালাকের নিয়ত করে থাকলে, তিন তালাকে বায়েন পতিত হবে।
তালাকে কেনায়ায় দু তালাকের নিয়ত করা যায় না। আর যদি স্বামী তালাকের কোনো নিয়ত না
করে থাকে, তাহলে কোনো তালাকই পতিত হবে না।
والله اعلم بالصواب
(আল্লাহ তাআলাই সকল বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।)
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله و
اصحابه و جميع المؤمن وسلم
وتسليما
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া),
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন