মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ(৪০)হাদিস
লেখক : মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস লিলআদব)
ধর্মীয়
শিক্ষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
মোবাইল :
০১৭৩৫-৭৯১৩৮২,০১৮৮৭৭০১৬৫৬
গ্রন্থস্বত্ব : লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কম্পিউটার
কম্পোজ: মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক(লেখক নিজে)
বিসমিল্লাহির
রহমানির রহিম
লেখকের
ভূমিকা
তামাম প্রশংসা ও
তারিফ বিনা মূল্যে অক্সিজেন দাতা মহাবিজ্ঞানী আল্লাহ তাআলার জন্য ও পরিপূর্ণ দরূদ
ও সালাম মানব-দানব তথা সারা মাখলুকের সেরা হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের উপর যাঁর শুভাগমন সমগ্র
বিশ্বের জন্য রহমত স্বরুপ আর তার পরিবার-পরিজন ও সাহাবাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক
যাঁরা ছিলেন হিদায়াতের নক্ষত্র এবং পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর প্রচারের জন্য জীবন
উৎসর্গকারী। হাদিস শরিফ হলো ইসলামি শরিয়ত ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস-ভান্ডার। হাদিস মূলত পবিত্র কুরাআনেরই ব্যাখ্যা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন- আমি আপনার
নিকট উপদেশ গ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যেগুলো
তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে। যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সূরা নাহল-৪৪) তাই বক্ষ্যমাণ এই কিতাবে এমন সব চল্লিশটি বুনিয়াদি
হাদিস শরিফ চয়ন করেছি, যা মুমিন জীবনে সফলতার দ্বার উন্মুক্ত
হবে এবং বাকি আমল সহজ হবে ইনশাল্লাহ। একারণেই কিতাবের নাম রাখলাম, “মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ হাদিস”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলাجامع الكلم (কথার সমষ্টি অর্থাৎ এক
কথার ভিতর অনেক বিষয় লুকায়িত ) দান করেছেন। সুতরাং অনেক ক্ষেত্রে ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। সংশ্লিষ্ট হাদিসের
ব্যাখ্যায় অনেক মাসয়ালা-মাসায়েল বর্ণনা করা হয়েছে এবং নির্ভরযোগ্য কিতাবের সন্ধান
দেয়া হয়েছে। আশা করি পরিপূর্ণ ফায়দা
হাসিল করতে উল্লিখিত কিতাব সংগ্রহ করলে বেশি লাভবান হবে। উসূলে হাদিসের আলোকে যেসব হাদিস
গ্রহণযোগ্য সেসব হাদিস উদ্ধৃতি দিয়েছি। তারপরেই যদি বিজ্ঞ ওলামা-কেরামের
নিকট কোন ভুল-ত্রুটি দৃষ্টি গোচর হলে ইকরামুল মুসলিমীনের অংশ হিসেবে অবহিত করলে,
চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। পরিশেষে এ কিতাব রচনায়-প্রকাশ করতে যারা বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন,
মহান আল্লাহ তাদেরকে দুনো জাহানে সম্মান-নিরাপত্তার
জীবন দান করুন।
সূচীপত্র
বিষয়
পৃষ্ঠা
হাদিস নং-০৩, রাসূলে আকরাম
(ﷺ)
এর ভালবাসা ও তার অনুসরণ
হাদিস নং-০৬, ওসওয়াসা/মনের ধাঁধাঁ বা খটকা
হাদিস নং-০৭, তাকদির/ভাগ্য-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
হাদিস নং-০৮, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব-কর্তব্য
হাদিস নং-০৯, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব
হাদিসনং-১০, সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু (কবিরা গোনাহ)
হাদিস নং-১১, সালাম বিনিময় বা অভিবাদন ইসলামি পদ্ধতি
হাদিসনং-১২, পানাহারের আদব বা শিষ্টাচার
হাদিসনং-১৩, ঢোল,বাদ্যযন্ত্র,গান হতে নিষেধাজ্ঞা
হাদিস নং-১৪, দুনিয়ার ধোঁকাবাজী
হাদিসনং-১৫, মৃত্যুর কামনা হতে নিধেষজ্ঞা
হাদিস নং-১৬, এলেম(জ্ঞান) ও আলেমের মর্যাদা
হাদিস নং-১৭, গোনাহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা
হাদিস নং-১৯, সালাতের (নামাযের) গুরুত্ব ও ফযিলত
হাদিস নং-২০, সিয়াম বা রোজার ফযিলত
হাদিস নং-২১, যাকাত আদায় না
করার শাস্তি
হাদিস নং-২৩, হালাল উপার্জন করা
হাদিসনং-২৪, কোন নারীকে বিবাহ করব
হাদিস নং-২৮, ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা
হাদিসনং-২৯, দুআর গুরুত্ব ও ফযিলত
হাদিসনং-৩১, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ (মন্দ) কাজের নিষেধ
হাদিস নং-৩২, আল্লাহ-ওয়ালাদের ছুহবতের প্রয়োজনীয়তা
হাদিসনং-৩৩, কুদৃষ্টি হতে হেফাযত
হাদিসনং-৩৪, সবর (ধৈর্য) ও শুকর (কৃতজ্ঞতা) করা
হাদিসনং-৩৬, সাহাবা কেরামের মর্যাদা
হাদিসনং-৩৭, পুরুষের টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করার বিধান
হাদিস নং-০১, নিয়ত সহিহ করা |
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه
ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ (ﷺ) " إِنَّمَاا لْعَمَلُ
بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لاِمْرِئٍ مَا
نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى
اللَّهِ وَرَسُولِهِ (ﷺ)
وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا
يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ ".
অর্থ: আমিরুল মুমিনিন
হজরত ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- সকল কর্মই নিয়তের
ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক
মানুষের জন্য তা-ই রয়েছে যা সে নিয়ত করে। অতত্রব, যার হিজরত
আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে (উদ্দেশ্য)
হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকেই (পরিগণিত) হবে। হিজরত দুনিয়া লাভের
উদ্দেশ্যে কিংবা কোন নারীকে বিবাহ করার
উদ্দেশ্যে হবে; তার হিজরত সে দিকেই গণ্য হবে, যে উদ্দেশ্য সে হিজরত করেছে। বুখারি-০১৫৪, ২৫২৯;
মুসলিম-১৯০৭; তিরমিজি-১৬৪৭; আবু দাউদ-২২০১; নাসায়ি-৭৫; আহমদ-১৬৮
প্রাসঙ্গিক
আলোচনা : এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-(১) যে সমস্ত লোক নিজেদের মাল আল্লাহর রাস্তায় খরচ
করে, তাদের উদাহরণ হলো ঐ দানার মত, যা হতে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয় আর প্রত্যেকটি শীষে
একশতটি করে দানা রয়েছে। আর আল্লাহ তাআলা
যাকে চান (তার মাল ) বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা মহান
দাতা, মহাজ্ঞানী। সূরা আল
বাকারা-২৬১
অতত্রব, এ আয়াতে প্রমাণ হয়,
আল্লাহর জন্য কোন আমল করা হলো দশ-সাতশ পযর্ন্ত বাড়ানো হবে, তার এখলাস যত বেশি হবে,
আমলের দাম তত বাড়বে। এই জন্য কুরআনুল কারিমে
আমল গণনা করার কথা বলা হয়নি; বরং ওজন করার কথা বলা হয়েছে।
(২) আল্লাহর নিকট না ঐ সব কুরবানীর গোশত পৌঁছে আর না ঐ গুলোর রক্ত। বরং তার নিকট তো তোমাদের পরহেজগারি পৌঁছে। অথাৎ তোমাদের
সামনে জযবা (এখলাস) দেখা হয়। সূরা
হজ-০৩
v
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-(৩)
তোমাদের কাহারও ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান-খয়রাত করা তাঁদের
(সাহাবাদের) কোন একজনের মাত্র এক মুদ্দ (প্রায় চৌদ্দ ছটাক) বা তার কম পরিমাণ বস্তু
দানের সমানও হতে পারবে না। বুখারি-৩৬৭৩
বুখারি শরিফ এই হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হজরতে
সাহাবা কেরাম রা. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ছুহবতের বরকতে এমন এক অন্তরের অধিকারী ছিল, তাঁদের ঈমান, আমল
বরাবর পৃথিবীর কোন ওলি, গাউস, আবদাল পৌঁছেতে পারবে না।
(৪) আল্লাহ পাক তোমাদের বাহ্যিক ছূরত ও সম্পদের প্রতি লক্ষ্য করেন না, বরং
তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। সহিহ মুসলিম-৬৫৪
(৫) যখন মানুষ সওয়াবের নিয়তে আপন পরিবাবের উপর খরচ করে, সে সদকার সওয়াব পায়। বুখারি-৫৫
মুসলমানদের
প্রত্যেক কাজই ইবাদত যদি নিয়ত ছহীহ হয়।
(৬) যে ব্যক্তি নিজের বিছানায় আসে এবং তার নিয়ত এই যে, রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ
পড়বো। কিন্তু ঘুম প্রবল হওয়ার
কারণে সকালেই চোখ খুলে। তার জন্য
তাহাজ্জুদের সওয়াব লেখে দেয়া হয় এবং ঘুম তার রবের পক্ষ হতে তার জন্য দান স্বরুপ হয়। সুনানে নাসায়ি-১৭৮৮
(৭) এক
ব্যক্তি উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলুল্লাহ! ঈমান কি ? তিনি
বললেন, ঈমান হল এখলাস। সুনানে বাইহাকি-৩৪২
রিয়া বা লোক ইবাদত
শিরক : বন্ধুগণ! ইখলাস-এর বিপরীত হলো রিয়া
যাকে ছোট শিরক বলা হয়। যেমন হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি দেখানোর জন্য নামাজ পড়ল সে শিরক
করল, যে ব্যক্তি দেখানোর জন্য রোজা রাখল সে শিরক করল আর যে ব্যক্তি
দেখানোর জন্য দান-খয়রাত করল সেও শিরক করল। মুসনাদে আহমদ-১৯/২২১
রিয়ার ভয়াবহতা: ইখলাস ব্যতীত
কোন ইবাদতই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং জাহান্নামের ধমক
দেওয়া হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তাআলা বলেন- অতএব দুর্ভোগ সে সব নামাজির,
যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে বে-খবর; যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে। সূরা মাউন, ৪-৬
হজরত আবু হুরাইরা
রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি- নিশ্চয় সর্ব
প্রথম ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যার ওপর ফয়সলা করা হবে, সে ব্যক্তি
যে শহীদ হয়েছিল। তাকে আনা হবে, অতঃপর তাকে তার (আল্লাহর)
নেয়ামত রাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বললেন, তুমি এতে কি
আমল করেছ? সে বলবে, আপনার জন্য জিহাদ করে
এমনকি শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বললেন, মিথ্যা বলেছ,
তবে তুমি এ জন্য জিহাদ করেছ যেন বলা হয় বীর। অতএব বলা হয়েছ। অতঃপর তার ব্যাপারে
নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হেঁচড়ে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আরও এক ব্যক্তি যে
এলম শিখেছে, শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন তেলাওয়াত করেছে, তাকে আনা হবে। অতঃপর তাকে তার (আল্লাহর)
নেয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। আল্লাহ বললেন, তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবে, আমি এলম শিখেছি, শিক্ষা
দিয়েছি ও আপনার জন্য কুরআন তেলাওয়াত করেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, তবে
তুমি এলম শিক্ষা করেছ যেন বলা হয়, আলেম, কুরআন তেলাওয়াত করেছ বলা হয়, সে কারী, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে
------টেনে-হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আরও এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ স্বচ্ছলতা দান করেছেন, তাকে আনা হবে। অতঃপর তাকে তার (আল্লাহর) নেয়ামতরাজি জানানো
হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বললেন, তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবে এমন খাত নেই যেখানে খরচ করা আপনি পছন্দ করেন আমি তাতে আপনার জন্য খরচ
করি নাই। আল্লাহ বললেন, মিথ্যা বলেছ,
তবে তুমি করেছ যেন বলা হয়, সে দানশীল, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে তার চেহারার
ওপর ভর করে টেনে-হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। মুসলিম-০৫; নাসায়ি
প্রশ্ন : অনেক
সময় বান্দা গোপনে বা প্রকাশ্যে ইবাদত, ভাল কাজ করে। অতঃপর লোকের মাঝে তা প্রকাশ পেলে, লোকজন
প্রশংসা করলে বা সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে; এতে তার ভাল
লাগলে, অথচ সে সেটা চায়নি, এর ফলে কি
তার নেক আমল বরবাদ বা রিয়া হবে কি?
উত্তর : মনে সুনামের
কামনা না থাকা সত্ত্বেও যদি মানুষের মাঝে কারো সুনাম হয়। তবে তাতে তার পরকালের সওয়াব বরবাদ হয়ে যাবে না। একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে জিজ্ঞেস
করা হল; বলুন, যে মানুষ সৎকাজ করে,
আর লোকে তার প্রশংসা করে থাকে, (তাহলে এরূপ কাজ কি রিয়া বলে গণ্য হবে?) তিনি বললেন, এটা মুমিনের নগদ সুসংবাদ। মুসলিম-১৩৬
প্রিয়! মুসলিম ভাই
বোন! এরকম অসংখ্যা আয়াত ও হাদিস বর্ণিত আছে নিয়ত ছহিহ ও রিয়ার ভয়াবহতা ব্যাপারে। আল্লাহ তাআলা আমাকে ও সব মুমিনকে আমল করার তাওফিক দান করুন।
পরামর্শ: এখলাস
পয়দা করার উপায় হল-(১) আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্যে চাওয়া আয় আল্লাহ আপনার
জন্য সব কিছু করার তাওফিক দিন।
(২) খাঁটি আল্লাহ ওয়ালাদের ছুহবতে থাকা
হাদিস নং-০২, ঈমান |
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى
الله عليه وسلم-
قَالَ « الإِيمَانُ
بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَفْضَلُهَا قَوْلُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَدْنَاهَا
إِمَاطَةُ الْعَظْمِ عَنِ الطَّرِيقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ » অর্থ হজরত আবু
হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- ঈমানের সত্তরটিরও বেশি
শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম হচ্ছে- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’
বলা (তাতে বিশ্বাস স্থাপন করা ) আর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে পথের মধ্যে হতে
কষ্টদায়ক বস্তু দূর করে দেয়া এবং লজ্জা হলো ঈমানের একটি (গুরুত্বপূর্ণ ) শাখা
বিশেষ। বুখারি-৯; মুসলিম-৩৫; আবু দাউদ-৪৬৭৬; তিরমিজি-২০০৯; নাসায়ি-৫০০৪; ইবনে মাজাহ-৫৭; আহমদ-৮৯২৬
নোট : উক্ত হাদিসে বুখারি ও
মুসলিম বর্ণনার মধ্যে শব্দের কম বেশি আছে।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা : ঈমান হলো বহু শাখা
বিশিষ্ট একটি সতেজ গাছের তুল্য। আমল হলো শাখা স্বরুপ। ঈমান এমন নয় যে, তার কোন শাখা ধ্বংস বা কেটে গেলে
মূলই ধ্বংস হয়ে যাবে। বরং শাখা ছাড়াও ঈমান নামক গাছটি অবশিষ্ট থাকে। কেননা ঈমান হলো (التصديق البسيط)
একক
আন্তরিক বিশ্বাস। ফাতহুল বারি, ফয়জুল
বারি
জান্নাতের চাবি কি? হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন যে,
জান্নাতের চাবি হলো এই সাক্ষ্য দেয়া, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নাই। মুসনাদে আহমদ
জাহান্নাম হারাম হয়
কিসে ? হজরত ওমর রা. বর্ণনা করেন, নবি (ﷺ) বলেন আমি এমন এক কালেমা জানি, যা আন্তরিকতার সাথে কেহ পাঠ করলে
এবং এই অবস্থায় তার মৃত্যু হলে দোযখ তার উপর হারাম হয়ে যাবে। তা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। মুস্তাদরাকে হাকেম
বিখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলি কারি রহ. এই সব হাদিস ঐ সময়ের
জন্য ছিল, যখন আহকাম নাযিল হয়নি, হাদিসের অর্থ হলো অনন্ত কালের জন্য সে জাহান্নামে
থাকবে না।(মিরকাত) যেমন ইমাম বুখারি রহ. বলেন, লজ্জিত হয়ে তওবার সাথে এই কালেমা পড়লে,
তার এই অবস্থা হবে। আল্লামা তিবি রহ. বলেন, হায়ার সাথে ঈমানের গভীর সর্ম্পক
রয়েছে বিধায় হায়াকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। লজ্জা হলো অশ্লীলতা ও
রুচিবর্জিত কার্য পরিহারের মূলশক্তি। যেমন হাদিসে এসেছে-যখন তোমার লজ্জা থাকবে না, তখন যা ইচ্ছা
তা কর।
ঈমান বৃদ্ধির উপায় : হুজুরে
আকরাম (ﷺ) বলেন, তোমরা তোমাদের ঈমানকে তাজা করতে থাক।ছাহাবারা বললেন, আমরা কিভাবে ঈমানকে নবায়ন করব। জবাবে তিনি বললেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বেশী বেশী করে পড়। মুসনাদে আহমদ
ঈমানের দাম : হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা.
হতে বর্ণিত, নবি (ﷺ) এরশাদ করেন,
যখন জান্নাতিগণ জান্নাতে ও দোযখীগণ দোযখে চলে যাবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন,
যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান রয়েছে তাকেও জাহান্নাম হতে বের লও। তাদের অবস্থা এরুপ হবে যে, জ্বালিয়া কালো বর্ণ
হয়ে গেছে। অতঃপর তাদেরকে নহরে হায়াতে ফেলা হবে। তখন তারা এমন ভাবে বের হয়ে আসবে, যেমন ঢলের (বৃষ্টির কারণে) আবর্জনাতে দানা
অঙ্কুরিত হয় (গাছ জন্মায়)। তোমরা কি দেখ না যে, উহা কেমন সোনালী ও কোঁকড়ানো অবস্থায় বের হয়ে
আসে। বুখারি
(বিস্তারিত
দেখুন-লেখকের কিতাব ‘মহান আল্লাহর নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের সম্মান-মর্যাদা’)
ঈমানের পরিপূরক কি?
(১) রাসূল (ﷺ) কে ভালবাসা : হজরত আনাস ইবনে মালেক রা.
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না; যে পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ হতে অধিক ভালবাসার পাত্র না হবো। বুখারি-মুসলিম, মিশকাতুল মাছাবিহ-৫
(২) আল্লাহর জন্য ভালবাসা : হজরত আবু উমামা
রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলে আকরাম (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তাআলা উদ্দেশ্যই কাউকে ভালবাসে এবং কারো সাথে শত্রুতা পোষণ করে। আর আল্লাহর উদ্দেশ্যই কাউকে কিছু দান করে এবং আল্লাহ তাআলার কারণেই কাউকে দান করা হতে বিরত থাকে,
তবে সে তো অবশ্যই তার ঈমানকে পরিপূর্ণ করে নিল। সুনানে আবু দাউদ;
মিশকাতুল মাছাবিহ-২৭
মুসলিম বিশ্ব যদি এই মূলনীতি
অনুসরণ করত তাহলে এত ফেতনা-ফাসাদ
ঘটতো
না। সাহাবায়ে কেরামের শানে
পবিত্র কুরআন ইরশাদ হচ্ছে- মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল আর তার সাথে যারা থাকে
(সাহাবারা) তাদের সিফাত হলো-কাফেরদের সাথে তাঁরা বজ্র কঠোর, মুমিনের সাথে নরম-কমল, রহম দিলওয়ালা। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি
কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সিজদারত দেখবেন। সূরা ফাতাহ-২৯
প্রিয় বন্ধুগণ! আমরা নিজেকে জিজ্ঞেস করি আমার ভালবাসা, শত্রুতা,
দান
করা, না করা সবই
কি আল্লাহর জন্য? না
অন্য কিছুর মিশ্রণ আছে?
হাদিস নং-০৩,
রাসূলে আকরাম (ﷺ)
এর ভালবাসা ও তার অনুসরণ |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى قَالُوا
يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ
وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى
অর্থ: আবু
হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন: আমার সকল উম্মাত
জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্ত যে অস্বীকার করবে সে ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হল, কে
অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যারা আমার
অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে
সে-ই ( জান্নাতে প্রবেশ করতে) অস্বীকার করল। বুখারি-৭২৮০; আহমদ-৮৭২৮
রাসূলের আনুগত্য মানেই
আল্লাহর আনুগত্য : মহান আল্লাহ তার প্রিয় রাসূলের আনুগত্য ফরজ করেছেন, যেমন আল্লাহ তাআলাবলেন-
(১) যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে প্রকারান্তরে আল্লাহরই
আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, আমি আপনাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে
প্রেরণ করিনি। সূরা নিসা- ৮০
রাসূল (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করল, সে আল্লাহরই অনুসরণ করল, আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানি
করল, সে তো আল্লাহর নাফরমানি করল। বুখারি- ২৯৫৭
ঈমানের স্বাদ কে পেয়েছে? মুহাম্মাদকে যে ব্যক্তি রাসূল পেয়ে
খুশি এবং তাঁকে অধিক ভালবাসে, সেই ঈমানের স্বাদ পেয়েছে-
যেমন রাসূল (ﷺ) বলেছেন-(১)
সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে রব হিসেবে
আল্লাহকে, দ্বীন হিসেবে ইসলামকে এবং রাসূল হিসেবে মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়েছে। মুসলিম- ৩৪
(২) তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ঈমানের সাধ গ্রহণ
করবে। এক- আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল তার নিকট দুনিয়ার সব কিছু হতে প্রিয় হওয়া। দুই- কোন মানুষকে
একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসা। তিন- ঈমান আনার পর কুফরিতে ফিরে যাওয়াতে এমন অপছন্দ করবে, যেমন
আগুনে নিক্ষেপ করাকে অপছন্দ করে। বুখারি: ১৬
রাসূলের ব্যাখ্যা
ছাড়া কুরআন বুঝা অসম্ভব : এ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেন-(১) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন,
যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা
তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে। সূরা নহল-৪৪
(২) আর সে মনগড়া কথাও বলে না। তাতো ওহি যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ
করা হয়। সূরা নজম,৩-৪
আমরা কার অনুসরণ
করবো হাদিস না সুন্নাহর ? হাদিসের শাব্দিক অর্থ কথা, বাণী, খবর, নতুন ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ রাসূলুল্লাহর
কথা, কাজ, মৌন সম্মতি আর সুন্নাহের শাব্দিক অর্থ পথ,
রাস্তা, তরিকা, চলার রাস্তা,
পন্থা ইত্যাদি। পরিভাষায় বলা হয়, রাসূল (ﷺ) যেসব কর্ম নিজ উম্মতের জন্য রেখে
গিয়েছেন এবং তা উম্মতের জন্য অনুসরণীয়। আমরা
এখন কোনটা মানবো সুন্নাহ বা হাদিস ? রাসূল (ﷺ) এর সব কথা, কর্ম তো হাদিসে
উল্লেখ আছে, ইসলামের শুরুতে অনেক বিষয় জায়েজ ছিল, পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ হয়েছে, যেমন নামাযের মধ্যে কথা
বলা। এছাড়া এমন কিছু বিষয় আছে যা শুধু নবির জন্যই নির্দিষ্ট, উম্মতের
জন্য নয়। যেমন, সওমে বিসাল, একত্রে চার এর অধিক বিবাহ এবং বিনা
দেরমোহরে বিবাহ সম্পন্ন করা ইত্যাদি। যেমন আল্লাহর তাআলার বাণী- এ বিধান
বিশেষ করে আপনারই জন্য, অন্য মুসলমানের জন্য নয়। সূরা আহযাব-৫০
তাছাড়া স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সুন্নাহ অনুসরণ করার কথা
বলেছেন, সরাসরি হাদিসের ওপর নয়। যেমন, (১) মালিক ইবনু আনাস
(রহ.) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন: “আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দুটি
জিনিস আঁকড়ে থাকবে, পথভ্রষ্ট হবে না: আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ”। মুয়াত্তা ইমাম
মালেক- ৩৩৩৮
(২) তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে আর শুনবে ও মানবে, যদিও
তোমাদের নেতা হাবশী গোলাম হয়। আমার পরে অচিরেই তোমরা কঠিন মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের উপর
আমার সুন্নাত ও হিদায়েত প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শের উপর অবিচল থাকা
অপরিহার্য। তোমরা তা শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। সাবধান! তোমরা বিদআত
পরিহার করবে। কেননা প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহি-পথভ্রষ্ট। সুনানে ইবন মাজাহ- ৪২
(৩) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন: বনি ইসরাঈলের যে
অবস্থা এসেছিল অবশ্যই আমার উম্মাতের মধ্যে অনুরূপ অবস্থা
আসবে। এমনকি তাদের কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে তবে
আমার উম্মাতেরও কেউ তাতে লিপ্ত হবে। বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত ৭৩ দলে
বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সবাই হবে জাহান্নামী। বলা হল একটি দল (যারা জান্নাতী) কারা ? তিনি
বললেন: আমি এবং আমার সাহাবিরা আজকের দিনে যার উপর (প্রতিষ্ঠিত)। তিরমিযি- ২৬৪১
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা
প্রমাণিত হয় আমরা সুন্নাহর অনুসরণ করবো, যদি সরাসরি হাদিস
মানতে যায় তাহলে পথভ্রষ্ট হয়ে যাব। ইমাম আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়াহহাব
মিশরি রহ.বলতেন, উলামা ছাড়া অন্যদের জন্য হাদিস বিভ্রান্তকারী। তরতীবুল মাদারেক
১/৯৬
ইমাম সুফিয়ান ইবনে
উয়াইনাহ রহ. বলেন, ফুকাহা ছাড়া অন্যদের জন্য হাদিস গুমরাহকারী। আল জামিউলি
আখলাকির রাবি পৃ.১১৮
উল্লেখিত কথার মর্ম হল;
উলামা, ফুকাহা ব্যতীত অন্যদের বেলায় এমন
সম্ভবনা রয়েছে যে, তারা কোনো হাদিসকে তার বাহ্যিক অর্থে
প্রয়োগ করবে, অথচ অন্য হাদিসের আলোকে এর অন্য কোনো মর্ম
রয়েছে; অথবা এর বিপরীতে অন্য কোনো দলীল আছে যা তার নিকট
অস্পষ্ট। অথবা খোদ এ হাদিসটিই পরিত্যায্য যার একাধিক কারণ বিদ্যমান আছে; যা কেবল
এমন ব্যক্তিই অনুধাবন করতে সক্ষম যিনি শরীয়াতের
বিষয়ে গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী। সূত্র : মুফতী
জহীরুল ইসলাম
রাসূলের আনুগত্যেই
নাজাত নিহিত : আল্লাহ তাআলা
বলেন-
(১) এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের হুকুম
অনুযায়ী চলবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে ঝর্ণা ধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল
থাকবে এবং এটা বিরাট সাফল্য। সূরা নিসা-১৩
(২) আল্লাহর ও রাসূলের হুকুম মান্য কর, যাতে তোমরা কৃপা
প্রাপ্ত হতে পার।
সূরা আলে ইমরান- ১৩২
(৩) যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে সে সাফল্য লাভ করে-মহা
সাফল্য।সূরা আহযাব-৭১
(৪) আর যে কেউ ই আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য
করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করাবেন, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণা ধারা প্রবাহিত। আর যে কেউ পিঠ ফিরিয়ে নিবে, তিনি তাকে ভয়াবহ শাস্তি দিবেন। সূরা নিসা-১৩
রাসূলের আনুগত্য না করলে শাস্তির ঘোষণা : আল্লাহ তাআলা বলেন- আর যে ব্যক্তি
আল্লাহ এবং তার রাসূলের নাফরমানি করবে এবং তার নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করাবেন, সে তাতে
চিরকাল থাকবে এবং সে অবমাননাকর শাস্তি ভোগ করবে। সূরা নিসা-
১৪
রাসূলের ফয়সলা না মানলে মুমিন হওয়া যায় না: এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-
(১) কিন্তু না, তোমার
প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না, যে পর্যন্ত না তারা
তাদের বিবাদ-বিস্বাদের মীমাংসার ভার তোমার উপর ন্যস্ত না করে, অতঃপর তোমার ফয়সলার ব্যাপারে তাদের মনে কিছু মাত্র কুণ্ঠাবোধ না থাকে,
আর তারা তার সামনে নিজেদেরকে পূর্ণরূপে সমর্পণ করে। সূরা নিসা-৬৫
(২) মুমিনদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সলা করার
জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন মুমিনদের জওয়াব
তো এই হয় যে, তারা বলে, আমরা শুনলাম ও
মেনে নিলাম, আর তারাই সফলকাম।সূরা
নূর- ৫১
রাসূলের জীবন মুমিনের জন্য মডেল : একজন মুমিনের জন্য রাসূল (ﷺ) এর জীবনীর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। অল্লাহ তাআলা ঘোষণা- তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা
আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। সূরা আহযাব-২১
মহান আল্লাহর ভালবাসা
ও করুনা পেতে হলে ? সর্বশক্তি আল্লাহর করুণা ও মহব্বত পাবার একমাত্র মাধ্যম হল প্রিয় নবির
অনুসরণ। আল্লাহ
পাক ফরমান- হে নবি! আপনি বলে দিন, যদি
তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো তবে আমার অনুসরণ কর আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ
ক্ষমা করবেন, বস্তুত,আল্লাহ অতি
ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু। সূরা আল ইমরান-৩১
আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসার মূল্য : হজরত আনাস রা.
হতে বর্ণিত আছে। এক বেদুইন (গ্রাম্যলোক) ইয়া রাসূলুল্লাহ
কিয়ামত কবে হবে? তিনি বললেন, কিয়ামতের
জন্য তোমার কিছু সম্বল আছে কি? সে লোকটি বলল আমি এর জন্য বহু নামাজ, রোজার সম্বল তো
নাই, কিন্তু আমি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসি,তাদের সাথে গভীর মহব্বত রাখি।
হুযুর (ﷺ) বললেন, মানুষ
তার সঙ্গী হবে,যাকে সে ভালবাসে। হজরত আনাস রা. বলেন,আমি মুসলমানদেকে ঈমান আনার পরে এত খুশী হতে আর দেখি নাই। বুখারি-মুসলিম
এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, মহব্বতও এক প্রকার আমল। আর কত বড় সুসংবাদ যে, কেহ যদি ইবাদত-বন্দেগি অধিক না থাকে, তবুও আল্লাহ ও তার রাসূলের
মহব্বতের কারণে অতি উচ্চ মর্যাদা লাব করতে পারবে।
সকল ধর্ম বাতিল, একমাত্র মুহাম্মাদ (ﷺ)
এর আনীত ধর্মই মানতে হবে : প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)
এর শুভাগমনের মাধ্যমে পূর্বের সকল ধর্ম
বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামকে একমাত্র আল্লাহর মনোনীত ধর্ম হিসেবে
পরিগণিত করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-(১) আজ আমি তোমাদের
জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং
ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবুল করে নিলাম।
সূরা মায়েদা-০৩
(২) আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন
দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনও তার সেই দ্বীন কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে
ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সূরা আলে ইমরান-৮৫
রাসূল (ﷺ) বলেন- আল্লাহর কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন। যদি মুসা (আ.) তোমাদের মাঝে প্রকাশ পেতেন, তাহলে তোমরা তার আনুগত্য করতে আর আমাকে ত্যাগ করতে, ফলে
তোমরা সহজ -সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। অথচ মুসা আ. যদি এখন জীবিত থাকতেন ও আমার নবুওয়াতের কাল
পেতেন তাহলে তিনি নিশ্চিত আমার আনুগত্য করতেন”।
সুনানে দারেমি-৪৪৯
সাহাবা কেরামের নবির
অনুসরণের নমুনা : হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত যে,
তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র,
তুমি কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবি
(ﷺ) কে তোমায় চুম্বন করতে না
দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। বুখারি-
১৫৯৭
সুন্নাতের পথই সর্বশ্রেষ্ঠ, পরিপূর্ণ, সবচেয়ে
সুন্দর : মহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক (রহ.) বলেন, সুন্নাতের রাস্তায়
আফযাল (সর্বশ্রেষ্ঠ) হ্যায়, আকমাল (পরিপূর্ণ) হ্যায়,
আজমাল (সবচেয়ে সুন্দর) হ্যায়। কথাগুলো ১০০% সত্য, বাস্তবসম্মত। অজুতে একবার অঙ্গ ধোয়া ফরজ, যদি একবার ধোয়া হয় অনেক সময় পানি সব জায়গায়
পৌঁছে না। কিন্তু তিনবার প্রত্যেকটা অঙ্গ ঢলে ঢলে ধোয়া সুন্নাত। এখন পানি না পৌছার সম্ভবনা নাই।
এজন্য বলা হয়, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সুন্নাত সেটাকে পরিপূর্ণ করে দেয়।
সুন্নাত ও বিজ্ঞান : হজরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, জ্বর হলো জাহান্নামের হালকা, সুতরাং পানি দিয়ে তা শীতল
কর। জামে তিরমিজি-২০৮০ পৃ ই ফা বা, সহিহ
মুসলিম-৫৫৬৭পৃ. ই.ফা. বা.
জ্বরকে পানি দ্বারা ঠান্ডা করার বৈজ্ঞানিক সুফল : যে চিকিৎসা বিজ্ঞান (ﷺ)-এর উক্তিকে বিদ্রুপ করতো তারাই গবেষণার মাধ্যমে
দেখেছেন, পিত্ত জ্বরের রোগীর শরীরে শুধু ঠান্ডা পানিই নয়,
বরফের পানি প্রবাহিত করাই হচ্ছে জ্বরের প্রতিষেধক। প্রচণ্ড জ্বরের অস্থির কালে ডাক্তারগণ ঔষধ প্রয়োগের পূর্বেই
মাথায় পানি দেয়ার উপদেশ দেন। মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো
শীতল হলে জ্বর আস্তে আস্তে কমে আসে। টাইপেড জ্বরে আক্রান্ত
রোগীরা মস্তিষ্কের যন্ত্রণায় পাগল হয়ে যায়, তখন কোনো ঔষধ কার্যকারী হয়না যেমন কার্যকারী হয় পানি। সূত্র : বৈজ্ঞানিক মুহাম্মাদ (ﷺ)-মু.নুরুল ইসলাম, হাদিসের নূর ও আধুনিক বিজ্ঞান- মু.আইযুব আলি
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত : বুযুর্গানে দ্বীন তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন যে, তিনটি
এমন সুন্নাত আছে যেগুলো ওপর আমল করতে পারলে অন্যান্য সকল সুন্নাতের ওপর আমল করা
সহজ হয়ে যায় এবং অন্তরে সুন্নাতের প্রতি আমল করার স্পৃহা সৃষ্টি হয়।
১. আগে আগে সালাম করা ও সর্বত্র সলামের ব্যাপক প্রসার করা। বি.দ্র.
শুদ্ধ উচ্চারণে আসসলামু আলাইকুম পরিষ্কার ভাবে বলে সালাম দেওয়া চাই। বিশেষত: আস-সলামু এর হামযা স্পষ্ট করে উচ্চারণ করবে। সলামের
উত্তর শুনিয়ে দেয়া জরুরি।
২.প্রত্যেক
ভাল কাজে ভাল স্থানে ডান দিককে প্রাধান্য
দেয়া।যথা: মসজিদে ও ঘরে প্রবেশ কালে ডান পা আগে রাখা। পোশাক পরিধানের সময় ডান হাত ও ডান পা আগে প্রবেশ করানো। এবং প্রত্যেক নিম্ন বা
নিচুমানের কাজে ও স্থানে বাম দিককে
প্রাধান্য দেয়া। যথা: বামরুমে প্রবেশ কালে বাম পা আগে রাখা,বাম হাতে নাক পাপরিষ্কার করা,পোষাকের
ভেতর হতে বাম বা হাত পা আগে বের করা। ৩.আল্লাহ তাআলার জিকির বেশি বেশি করা। যথা:
(ক) প্রতিদিন কুরআন কারিম থেকে কিছু পরিমাণ তেলাওয়াত করা বা অন্যের তেলাওয়াত
শোনা।
(খ) পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর তাসবিহে
ফাতেমি অর্থাৎ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল-হামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার।
(গ) সকাল-বিকাল তিন তাসবিহ
তথা ১০০ বার কালেমায়ে সুওম সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ১০০ বার
ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ শরিফ পড়া।
(ঘ) ওপরে ওঠার সময় আল্লাহু আকবার, নীচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ এবং সমতল ভূমিতে চলার সময় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে থাকা।
সূত্র: প্রিয় নবির(ﷺ) প্রিয় সুন্নাত-শাহ হাকীম আখতার রহ., মেয়েদের
সুন্দর জীবন সাইয়েদা খায়রুন্নেছা রহ.
হাদিস নং-০৪, বিদআত থেকে পরহেজ |
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذَا خَطَبَ ، احْمَرَّتْ عَيْنَاهُ ، وَعَلَا صَوْتُهُ ،
وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ ، حَتَّى كَأَنَّهُ مُنْذِرُ جَيْشٍ يَقُولُ : صَبَّحَكُمْ
وَمَسَّاكُمْ ، وَيَقُولُ : أَمَّا بَعْدُ ، فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ
كِتَابُ اللَّهِ ، وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ ، وَشَرَّ الْأُمُورِ
مُحْدَثَاتُهَا وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
رَوَاهُ مُسْلِمٌ ، وَلِلنَّسَائِيِّ
وَكُلَّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ
অর্থ: সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে-আল্লাহর বাণী/কিতাব। আর সর্বোত্তম জীবন ব্যবস্থা
হচ্ছে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর জীবন ব্যবস্থা। আর নিকৃষ্টতম বিষয় হচ্ছে যা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হয়েছে। আর প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই (বিদআত) হচ্ছে ভ্রষ্টতা
নাসায়ির রেওয়াতে আছে ,প্রত্যেক গোমরাহি জাহান্নামি । সহিহ
মুসলিম-৮৬৭; আবু দাউদ-২৯৫৪; নাসায়ি-১৫৭৮; ইবনে মাজাহ-৪৫,২৪১৬
প্রাসঙ্গিক আলোচনা : বিদআত অর্থ: নতুন সৃষ্টি। প্রশ্ন হলো, রেলগাড়ী, বিমান, মোবাইল
ইত্যাদি কি কি বিদআত ? না, বিদআত হবে
না, কেননা শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত হলো- দ্বীনের মধ্যে কোন নতুন সৃষ্টিকে অর্থাৎ দ্বীনের মধ্যে ইবাদত মনে করা হয় এবং অতিরিক্ত ছওয়াবের আশায় বা
নফলকে সুন্নাত/ওয়াজিব/ফরজ মনে করা,
জরুরি মনে করা,এমন কিছু আকীদা বা আমল সংযোজন ও
বৃদ্ধি করা,যা রাসূল (ﷺ), সাহাবি ও তাবেয়িদের যুগে অর্থাৎ অনুসরণীয়/আদর্শ যুগে ছিল না।
কয়েকটি বিদআতের উদাহরণ:- উরস করা। কবর পাকা করা। কবরে ফুল দেওয়া। কবরের ওপর গম্বুজ বানানো। জানাযার
নামাযের পর জোর আওয়াজে কালেমা পড়তে পড়তে লাশ বহন করে নিয়ে যাওয়া। শুধু
ফরজ নামাজে পাগড়ি পরিধান করা জরুরি মনে করা। দুআকে নামাযের অংশ মনে করা।মৃত ব্যক্তির নামে খানা খাওয়া শর্তসাপেক্ষে নিষেধ নয়, বরং ছওয়াবের কাজ। কিন্তু ৩, ৫, ৭, ৪০ দিনেই খাওয়াতে হবে,
এটা নিষেধ।
বিস্তারিত দেখুন- আহকামে জিন্দেগী-৭৪; ইসলামি আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ; ফাতোয়ায়ে মাদানিয়া;
বিদআত অধ্যায়।
হাদিস নং-০৫, মুনাফিকের আলামত |
عَن
أبي هُرَيْرَة رَضِيَ اللَّهُ عَنْه ، أَن رَسُول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ : " آيَة الْمُنَافِق ثَلَاث
إذا حَدّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أخْلَفَ، وَإِذَا اؤتُمن خَانَ " .هِ
নোট : কোন কোন হাদিসে
চারটির কথা আছে।
প্রাসঙ্গিক আলেোচনা : মুনাফিক দুই প্রকার। যথা:
১.বিশ্বাসগত মুনাফিক: যে ব্যক্তি বিশ্বাসের
দিক থেকে মুনাফিক সে কাফের। অর্থাৎ অন্তরে কুফুরি বাহিরে ইসলাম, তার নিস্তার
নাই। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক ফরমান-নিশ্চয় মুনাফিকদের
জায়গা হলো জান্নামের তলদেশে। সূরা আন নিসা-১৪৫
২.কর্মের দিক
থেকে মুনাফিক: হাদিসে বর্ণিত ৩/৪টি
স্বভাবের কোন একটি পাওয়া গেলে তাকে কর্মের দিক থেকে মুনাফিক বলা হয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাতএর মতে-তারা কবিরা গোনাহকারী ফলে কঠিন শাস্তি হবে, তবে তওবা
করলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন। তারা কাফের নয়। সুতরাং মুসলমানের মধ্যে
উক্ত দোষ থাকলে তাকে মুনাফিক বলা যাবে না, তবে তোমার আমল ভাই মুনাফিকের মত বলা যাবে।
অন্য হাদিসে
মুনাফিকদের স্বভাব সম্পর্কে এসেছে- (১) মুনাফিকদের পক্ষে ফজর ও ঈশা অপেক্ষা কোন
কঠিন নামাজ নাই। যদি তারা জানত ঐ দুই নামাযে কি রয়েছে, তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলও আদায়ের জন্য আসত। বুখারি-মুসলিম
(২) ওটা মুনাফিকের নামাজ। যে সূর্য অস্তমিত যাওয়ার প্রতীক্ষায় বসে থাকে, করে, সূর্য অস্ত যেতে শুরু করে এমনকি শয়তানের দুই শিং-এর মাঝামাঝি চলে যায়, তখন সে
দাঁড়িয়ে চারটি ঠোকর মারে। (অর্থাৎ খুব দ্রুত পাখির দানা নেওয়ার মত সিজদা করে )
আল্লাহকে তারা খুব কমই স্মরণ করে। সহিহ মুসলিম-১৪৪৩
হাদিস নং-০৬,
ওসওয়াসা/মনের ধাঁধাঁ বা খটকা |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ " –متفق عليه
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- আমার
উম্মতের অন্তরের মধ্যে যে খটকা বা ধাঁধা সৃষ্টি হয়, আল্লাহ তাআলা তা ক্ষমা করে
দিবেন; যে পর্যন্ত তারা তা কার্যে পরিণত
না করে অথবা মুখে প্রকাশ না করে। বুখারি-২৫২৮; মুসলিম-১২৭; তিরমিজি-১১৮৩; নাসায়ি-৩৪৩৩
প্রাসঙ্গিক আলোচনা : ওসওয়াসা আরবি শব্দ
এর অর্থ-মৃদু ধ্বনি, মেয়েদের গহনার আওয়াজ। হাদিসের অর্থ: মনের কুকল্পনা
ও শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্ররোচনা, মনের খটকা: মনের সুচিন্তা ফেরেশতার সুমন্ত্রণাকে ইলহাম বলে। মানুষের মনে যে কু-কল্পনার উদয়
হয় তার চারটি স্তর রয়েছে।
(১) বিনা ইচ্ছায় হঠাৎ কল্পনা এসে যদি চলে যায়, একে হাজিছ
বলে। এটা মাফ।
(২) যা এসে অন্তরে স্থায়ী থাকে, তাকে খাতির বলে। এটাও মাফ।
(৩) কল্পনা আসার
পরে মনে যদি মহব্বত ও লাভের আকাঙ্খা জন্মে, তাকে হাম্ম বলে। এটা এ উম্মতের জন্য
মাফ। এটা তাদের আমলনামায়
লেখা হবে না,
যে পর্যন্ত না তারা একে কার্যে পরিণত করে।
(৪) কোন কু-কল্পনা মনে আসার পর যদি তাকে বদ্ধমূল করে নেওয়া
বা তার ওপর সংকল্প দৃঢ় হয়ে যায়, তাকে আযম বিল যজম বলে। এটাও মাফ, একদল উলামা
এ মত পোষণ করেন। কিন্তু অধিকাংশ আলিমই কুরআন-হাদিসের অন্যান্য নছের
(দলিলের) পরিপ্রেক্ষিতে আযমের ওপর মুয়াখাজা বা
কিছুটা শাস্তি হবে বলে মনে করেন। সূত্র : ফয়জুল কালাম-৪২;
আশিয়্যা
তবে অতীতের কোন গোনাহের কথা ইচ্ছা করে মনে করে এবং খায়েশাতের কোন গোনাহের
প্ল্যান-প্রোগ্রাম বানিয়ে (অর্থাৎ তাকে এভাবে ধরবো, ছুবো) মজা নেয়া; এটা অন্তরের খেয়ানত, হারাম, গোনাহের
কাজ। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন- চোখের চুরি (খেয়ানত)
এবং অন্তরের গোপন বিষয় (খেয়ানত) তিনি জানেন। সূরা গাফির-১৯
ঈমানের নিদর্শন কি? হজরত আবু উমামা
বাহেলি রা. হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করলেন, ঈমান কি? তিনি বললেন, যখন তোমার ভাল কাজ
তোমাকে আনন্দ দিবে এবং খারাপ কাজ
তোমাকে পীড়া দিবে, তখন তুমি মুমিন। সে পুনরায় জিজ্ঞেস
করলো, মন্দকাজ কি? তিনি বললেন, যখন কোন কাজ করতে তোমার অন্তরে বাধে/খটকা লাগে তখন (মনে
করবে তা মন্দ কাজ) তা ছেড়ে দিবে। মুসনাদে আহমদ
সুতরাং ওসওয়াসায় যদি মনে
কষ্ট লাগে, তাহলে বুঝতে হবে তার ঈমান তাজা।
ওসওয়াসা আসলে
করণীয় কি ?
Ø
প্রথম কাজ হলো ঐ দিকে মনযোগ
না দেওয়া ইচ্ছা করে মনকে অন্য দিকে ধাবিত করা, ভাল অন্য কোন চিন্তা করা।
Ø
আউযু বিল্লাহিমিনাশ শাইত্বনির
রাজীম পড়া।
Ø
আমানতু বিল্লাহি পড়া। আল্লাহর আজাবের কথা
চিন্তা করা।
Ø
আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি-কুদরত নিয়ে
গবেষণা করা কিন্তু আল্লাহকে নিয়ে চিন্তা করা যাবে না। কেননা সসীম বান্দা অসীমের সম্পর্কে
চিন্তা করার শক্তি নাই।
৬ নং হাদিস সমাপ্ত
-------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
পিতা-মাতা বা মৃত্যুর ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা
(১) হজরত আবু হুরাইরা রা.বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- আল্লাহ তাআলা বেহেশতে তার কোনো নেক বান্দার মর্যাদা বুলন্দ করবেন আর
সে বলবে, হে প্রভু আমার এ মর্যাদা বৃদ্ধি কি কারণে হলো (অর্থাৎ আমি তো এগুলো আমল
করিনি এতসব কোথায় থেকে এলো) তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার সন্তান তোমার জন্য
ক্ষমা চাওয়ার কারণে। মুসনাদে আহমদ
(২) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেন-কিয়ামতের দিন কোন
কোন বান্দা তার পাশে পাহাড়সমূহ বরাবর নেকি আর নেকির ঢের দেখে বলতে আরম্ভ করবে, আরে!
নেকির এ ঢের আসল কোথা হতে ? কিভাবে?
উত্তরে বলা হবে, এটা তোমার সন্তানাদি কর্তৃক তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার
ফসল। তাবারানি-শরহে ছুদুর
হাদিস নং-০৭, তাকদির/ভাগ্য-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন |
عن عبد الله بن عمرو ، قال : سمعت
رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : كَتَبَ
الله تعَالَى مَقَادِيرَ الخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخَلُقَ السَّموَاتِ وَالأَرْضَ
بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ وَعَرْشُهُ عَلَى المَاءِ অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- আল্লাহ তাআলা সকল সৃষ্টির তাকদির আসমান-যমিন সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাজার
বছর পূর্বে লিখে রেখেছেন। তিনি বলেন, তখন আল্লাহর আরশ পানির ওপর
ছিল। সহিহ আল-মুসলিম-২৬৫৩; তিরমিজি-২১৫৬;
মিশকাত-৭২
তাকদির কাকে বলে : তাকদির অর্থ পরিকল্পনা বা নকশা। আল্লাহ তাআলা সবকিছুর
সৃষ্টির করার পূর্বে সৃষ্টি জগতের একটা নকশা ও পরকিল্পনাও রেখেছেন, সবকিছুর পরিকল্পনা আবার লিখেও রেখেছেন। এ নকশা ও
পরিকল্পনাকেই বলা হয় তাকদির। ভাল ও মন্দ উভয়টার
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা, এ বিশ্বাস রাখা ফরজ বা অপিরহার্য। এর বিপরীতে কেউ
যদি ভাল বা ‘সু’এর জন্য একজজন সৃষ্টিকর্তা আর মন্দ বা‘কু’এর জন্য
সৃষ্টিকর্তা অন্য একজনকে মানে তাহলে সেটা ঈমানের পরিপন্থী। কুফর ও শিরক হয়ে যাবে।
যেমন- অনেকে ‘সু’ এর সৃষ্টিকর্তা
লক্ষ্মীদেবী এবং ‘কু’এর সৃষ্টিকর্তা শনি দেবতাক মানে। এটা কুফর ও শিরক।
আল্লাহ তাআলা না
চাইলে কেউ বিন্দু মাত্র ক্ষতি করতে পারবে
না : হজরত আব্বাস রা. বলেন, আমি
একদিন নবি (ﷺ) এর পিছনে ছিলাম, তখন তিনি
আমাকে সম্বোধন করে বললেন, হে বৎস! আমি
তোমাকে তিনটি কথা শিক্ষা দিতেছি- (১)
তুমি আল্লাহ তাআলার খেয়াল রাখ, তাহলে তিনিই
তোমার হেফাযত করবেন। তুমি আল্লাহ তাআলার খেয়াল রাখ, তাহলে তুমি তাঁকে তোমার সামনে পাবে। (২)
যখন তোমার কোন কিছুর সাহায্য চায়বে, তখন
আল্লাহর কাছেই চায়বে।(৩) মনে দৃঢ় বিশ্বাস রাখ যে, সমস্ত পৃথিবীর লোক একত্র হয়ে যদি তোমার উপকার করতে চায়, তবুও আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য যা কিছু লেখে রেখেছেন, তা ছাড়া অন্য কোন উপকার তারা কিছুতেই করতে পারবে না। তেমনিভাবে যদি
পৃথিবীর সব লোক একতাবদ্ধ হয়ে তোমার কোন ক্ষতি
করতে ইচ্ছা করে, তবুও আল্লাহ তাআলা যা কিছু লেখে রেখেছেন,
তা ব্যতীত অন্য ও কোন ক্ষতি তারা কস্মিনকালেও করতে পারবে না। জামে তিরমিজি-২৫১৬
উট বেঁধে, না ছেড়ে তাওয়াক্কুল করবো ? হজরত আনাস রা থেকে বর্ণিত। এক গ্রামবাসী
আরবিয় লোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞেস
করলো, উট বেঁধে তাওয়া করবো, না ছেড়ে দিয়ে তাওয়াক্কুল করবো ?
হুজুর (ﷺ) বললেন, উট বেঁধে তাওয়াক্কুল কর এবং খোদার উপর ভরসা কর। জামেউত তিরমিজি
আল্লাহর ওপর ভরসার
ফায়দা : কুরআনের বাণী- অতঃপর যখন কোন কাজের
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে
ভালবাসেন। সূরা ইমরান-১৫৯
হাদিসের বাণী- যদি তোমরা
আল্লাহ প্রতি যথাযত তাওয়াক্কুল (ভরসা) কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে অনুরুপ রিযিক দান
করবেন, যেরুপ পাখিকে রিযিক দিয়ে থাকেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের
হয় এবং দিনের শেষে ভরা পেটে ফিরে আসে। জামেউত তিরমিজি; সুনানে
ইবনে মাজাহ
তাকদির সম্পর্কে
বিশ্বাস রাখতে হয় কয়েকটি বিষয়ে :- সবকিছু
সৃষ্টি করার পর্বেই আল্লাহ তাআলা সবকিছু লিখে
রেখেছেন। সবকিছু ঘটার পূর্বেই আল্লাহ তাআলা অনাদী জ্ঞান এবং তার জানা ও
ইচ্ছানুসারে সবকিছু সংঘটিত হয়।
তিনি ভাল ও মন্দের
সৃষ্টিকর্তা। তবে মন্দ সৃষ্টির জন্য তিনি দোষী নন, বরং যে মাখলুক মন্দ উপার্জন করবে, সে দায়ী। কেননা মন্দ সৃষ্টি
মন্দ নয়, বরং মন্দ উপার্জন মন্দ। তাকদীরে যা আছে,তা-ই হবে
বলে হাত-পা ছেড়ে দেওয়া চলবে না আবার তাকদিরকে এড়িয়ে মানুষ
খোদার সৃষ্টির বাইরেও কিছু করে ফেলতে সক্ষম- এমনও মনে করা
যাবে না। মানুষের ওপর আরোপিত হুকুম-আহকাম, তার সাধ্যের
বাহিরে নয়। আল্লাহ তাআলার ওপর কোনকিছু ওয়াজিব নয়। তিনি কাউকে কিছু দিতে
বাধ্য নন, তার ওপর কারও কোন হুকুম চলে না, যা কিছু তিনি দান
করেন,সব কিছু তার রহমত ও মেহেরবানি মাত্র। সূত্র: আহকামে জিন্দাগী-৪৭-৪৮ পৃষ্টা
জানা দরকার যে, তাকদির
দুই প্রকার (১)
অকাট্য (অপরিবর্তনীয়) (২)
ঝুলন্ত। যেমন হাদিসে শরিফে এসেছে- দুআ দ্বারা তাকদির
পরিবর্তন হয়। আর এটাও মূল তাকদীরে লেখা
থাকে।
তাকদিরের উপর বসে
থাকবে না আমল করবে ? এর জবাবে একটি হাদিস
উল্লেখ করছি হজরত আলি রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- তোমাদের এমন কেউ নেই যারা দোযখের বা
বেহেশতের ঠিকানা লিখে রাখা হয়নি। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাহলে আমরা কি আমাদের সে লেখার উপর
নির্ভর করে আমল করা ছেড়ে দিব না? হুযুর বলবেন, (না) আমল করতে থাক। ---------
অতঃপর তিনি পাঠ করলেন---(সূরা লাইলের ৪-১০ আয়াত)। বুখারি; মুসলিম; মিশকাতুল মাছাবিহ-২০ পৃষ্ঠা
বিস্তারিত দেখুন- হায়াতুল
মুসলিমীন- হজরত থানভি রহ.
হাদিস নং-০৮,
সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব-কর্তব্য |
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلاَّ يُلِدَ عَلَى
الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ وَيُنَصِّرَانِهِ وَيُشَرِّكَانِهِ فَقَالَ
رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ لَوْ مَاتَ قَبْلَ ذَلِكَ قَالَ « اللَّهُ
أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ ».
অর্থ: আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-প্রত্যেক শিশু নিস্পাপ অবস্হায় ভূমিষ্ঠ হয়। এরপর তার
পিতামাতা তাকে ইয়াহুদি বানায়, খৃষ্টান বানায় এবং মুশরিক বানায় । তখন এক ব্যক্তি
বলল, ইয়া রসুলুল্লাহ (ﷺ) ! যদি সে এর আগেই মারা যায় তাহলে সে সম্পর্কে আপনার অভিমত কি ? তিনি বলেন, আল্লাহ ভাল জানেন তারা কি কাজ করত। সহিহ মুসলিম-২৬৫৮; বুখারি-১৩৫৮; দাউদ-৪৭১৪
নোট : বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় শব্দের কম-বেশি রয়েছে।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা : ইসলাম দাবি
হলো-ব্যক্তি নিজে পাপ তথা জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে পশাপাশি তার পরিবারকে দোযখের
আগুন থেকে রক্ষা করবে। যেমন-আল্লাহ তাআলার ঘোষণা- হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং
তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে বাঁচাও, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সূরা আত-তাহরিম-০৬
আমাদের উপর
সন্তানদের যে হকগুলো রয়েছে তা এখানে আলোচনা করা হলো :
১. কানে
আযান দেয়া : সন্তান দুনিয়াতে আসার পর গোসল দিয়ে
পরিষ্কার করে তার ডান কানে আযান দেয়া, তা ছেলে হোক বা মেয়ে
হোক। এটি পিতা-মাতার উপর এজন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ
দায়িত্ব যে, শিশুর কানে সর্বপ্রথম আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের
আওয়াজ পৌঁছে দেয়া এবং ওত পেতে থাকা শয়তান যাতে তার
কোন ক্ষতি না করতে পারে। হাদিসে এসেছে, আবু রাফে রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল
(ﷺ) কে হাসান ইবনে
আলির কানে আযান দিতে দেখেছি। সুনান আবু দাউদ-৫১০৫
২. সুন্দর
নাম রাখা : বাচ্চার জন্য
সুন্দর নাম নির্বাচন করা পিতা-মাতার
অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। হায়! আফসোস! আজকে
নাম শুনে বুঝা যায় না, মুসলিম না অমুসলিম। আবার অনেকে নাম
রাখার পর জিজ্ঞেস করে এর অর্থ কি? উচিত ছিল আগে জিজ্ঞেস করা। নাম
অর্থবহ হওয়া নামের সৌন্দর্য। কেননা, রাসূল (ﷺ) অনেক অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। আবু দাউদ
৪৯৫২-৪৯৬১
৩. আকিকা
করা : ইসলামি সংস্কৃতির
অন্যতম বিষয় হলো সন্তানের আকিকা
করা। ছেলের পক্ষ থেকে ২টি ছাগল এবং মেয়ের পক্ষ থেকে ১টি ছাগল আল্লাহর নামে যবেহ
করা। ৭ম দিনে আকিকা
করা সুন্নাত; তবে কোন কারণে ঐ দিনে করতে না পারলে ১৪, ২১ দিনে
অথবা জীবনের যে কোন সময় করা যাবে। কেননা রাসূল (ﷺ) নিজের আকিকা নিজে করেছেন। বায়হাকি
৪. সদকাহ
করা : ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সপ্তম দিবসে চুল কাটা এবং
চুল পরিমাণ রৌপ্য সদকাহ করা সুন্নাত। জামেউত তিরমিজি: ১৫১৯ এছাড়া রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) শিশুদেরকে খেজুর দিয়ে তাহনিক এবং বরকতের জন্য
দুআ করতেন। সহিহ বুখারি: ৩৯০৯; মুসলিম: ২১৪৬
৫. খাতনা করা : ছেলেদের খাতনা করানো একটি অন্যতম সুন্নাত। আল-মুজামুল
৬. তাওহিদ
শিক্ষা দেয়া : শিশু যখন কথা
বলা আরম্ভ করবে তখন থেকেই আল্লাহর তাওয়াহ্য়িদ শিক্ষা দিতে
হবে। ২০নং পৃষ্ঠায় ইবনে আব্বাস রা.এর হাদিস দ্রষ্টব্য
৭. কুরআন
শিক্ষা দান : ছোট বেলা থেকেই
সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিতে হবে। কেননা কুরআন শিক্ষা করা ফরজ। আলি রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের
সন্তানদের তিনটি বিষয় শিক্ষা দাও। তন্মধ্যে রয়েছে তাদেরকে
কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা ও কুরআনের জ্ঞান দাও। জামিউল কাবির
৮. সালাত
শিক্ষা দেয়া ও সালাত আদায়ে অভ্যস্ত করা : এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার যে পিতা -মাতা তার সন্তানকে সালাত শিক্ষা দিবেন এবং সালাত আদায়ে অভ্যস্ত করাবেন। নবি (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের সালাতের
নির্দেশ দাও সাত বছর বয়সে। আর দশ বছর বয়সে সালাতের জন্য মৃদু প্রহার
কর এবং বিছানা আলাদা করে দাও। আবু দাউদ-৪৯৫
৯. আদব
বা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া : সন্তানদের
আচরণ শিক্ষা দেয়া উপর দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভূক্ত। লুকমান আলাইহিস সালাম
তার সন্তানকে বললেন, আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যমীনে দম্ভভরে
চলাফেরা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে
পছন্দ করেন না। আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, তোমার
আওয়াজ নীচু কর; নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার
আওয়াজ। সূরা লোকমান, ১৮-১৯
১০. আদর
স্নেহ ও ভালবাসা দেয়া : সন্তানদেরকে
স্নেহ করা এবং তাদেরকে আন্তরিকভাবে ভালবাসতে হবে।
১১. দ্বীনি
এলম শিক্ষা দেয়া : সন্তানকে দ্বীনি
এলম শিক্ষা দেয়া ফরজ করা হয়েছে। কারণ দ্বীনি এলম না জানা থাকলে সে বিভ্রান্ত
এবং ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে। হাদিসে এসেছে- প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরজ। সুনানে ইবন মাজাহ- ২২৪
১২. প্রাপ্ত
বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করা : সন্তানদেরকে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত লালন-পালন করতে হবে এবং তাদের জন্য
প্রয়োজনীয় খরচ করতে হবে। উম্মে সলামাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবি (ﷺ) কে আমি জিজ্ঞেস করলাম আবু সলামার সন্তানদের জন্য আমি যদি খরচ করি
এতে কি আমার জন্য প্রতিদান রয়েছে? নবি (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ যতদিন তুমি খরচ করবে ততদিন তোমার
জন্য প্রতিদান থাকবে। সহিহ বুখারি- ৫৩৬৯
১৩. বিবাহ
দেয়া : সুন্নাহ পদ্ধতিতে
বিবাহ দেয়। যেমন হাদিস শরিফে-নিশ্চয়ই পিতার উপর সন্তানের হকের মধ্যে রয়েছে, সন্তান
প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিবাহ দেবে। জামিউল কাবির
১৪. দ্বীনের
পথে পরিচালিত করা : পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব হলো সন্তানদেরকে দ্বীনের পথে, কুরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনা করা, দ্বীনের বিধান
পালনের ক্ষেত্রে পরিচালিত করা ।
১৫. সন্তানদের
মাঝে ইনসাফ করা : রসূলুল্লাহ্
(ﷺ) এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন, তোমরা
আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো। সহিহ বুখারি-২৫৮৭
১৬. পাপকাজ,
অশ্লিলতা, বেহায়াপনা, অপসংস্কৃতি
থেকে বিরত রাখা : সন্তান দুনিয়ার আসার সাথে সাথে শয়তান
তার পেছনে লেগে যায় এবং বিভিন্নভাবে, ভিন্ন ভিন্ন রুপে,পোশাক-পরিচ্ছেদের মাধ্যমে, বিভিন্ন ফ্যাশনে, বিভিন্ন ডিজাইনে, বিভিন্ন শিক্ষার নামে জাহান্নামের
দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করে।
হাদিসে
এসেছে (১) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও
নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। সহিহ বুখারি-৫৮৮৫
(২) যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য
হবে। সুনান আবু দাউদ-৪০৩১
১৭. দুআ
করা : আমাদের সন্তানদের জন্য দুআ
করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে, আল্লাহর
নেক বান্দা তারাই যারা বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে
মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন। সূরা ফুরকান-৭৪
সম্মানিত পিতামাতাবৃন্দ আমরা কি সন্তানের হকগুলো পালন
করতে পেরেছি ? আসুন,
আমরা আমাদের সন্তানদেরকে নেকসন্তান হিসেবে গড়ে তুলি। যে সম্পর্কে
হাদিসে এসেছে, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়,
তিনটির একটি হলো, এমন নেক সন্তান- যে তার
জন্য দুআ করে। সহিহ মুসলিম-১৬৩১
আল্লাহ তাআলা আমাদের সন্তানদেরকে
কবুল করুন, তাদের হকসমূহ যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক
দিন। আমীন! সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ,
সৌদি আরব
হাদিস নং-০৯, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব |
عبدالله بن مسعود سَأَلْتُ النبيَّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ: أيُّ
العَمَلِ أحَبُّ إلى اللَّهِ؟ قالَ: الصَّلاةُ
علَى وقْتِها، قالَ:
ثُمَّ أيٌّ؟ قالَ: ثُمَّ
برُّ الوالِدَيْنِ، قالَ:
ثُمَّ أيٌّ؟ قالَ: الجِهادُ
في سَبيلِ اللَّهِ অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহর
সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি ? তিনি বললেন, সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম তাররপর
কোনটি ? তারপর তিনি বললেন, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা। সহিহ মুসলিম-৮৫, কিতাবুল
ঈমান; বুখারি-৫২৭; তিরমিজি-১৭৩; নাসায়ি-৬১০; দারেমি-১২৬১
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: আমরা এ পৃথিবীতে
অস্তিত্বের জন্য পিতা-মাতার কাছে ঋণী।তাই তো মহান আল্লাহ ও তার রাসূল তাঁদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের তাগিদ করেছেন।
পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব:
কুরআনুল কারিমের বাণী-(১) তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি
সদ্ব্যবহার করবে। পিতা-মাতা উভয়ে বা তাদের
একজন যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন তাহলে তাদেরকে উফ বলবে না, তাদেরকে
ধমক দিবে না এবং তাদের সাথে সম্মানজনক বিনম্র কথা বলবে। মমতাবশে তাদের জন্য
ভালবাসার ডানা অবনমিত করে রাখবে এবং বলবে- হে আমার রব! আপনি তাদেরকে দয়া করুন
যেমনিভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছেন। সূরা বানী ইসরাঈল, ২৩-২৪
(২) আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। সূরা আনকাবুত-৮
হাদিসের বাণী-(৩) এক লোক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার উত্তম ব্যহারের পাওয়ার জন্য কে সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত ? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে ?
তিনি বললেন, তোমার মা। সে আবার প্রশ্ন
করল, তারপর কে ? তিনি বললেন, তোমার
মা। সে আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে ? তিনি বললেন, তোমার পিতা। বুখারি-মুসলিম অত্র হাদিস
প্রমাণ বহন করে, পিতার তুলনায় মা তিন গুণ সদাচারণ পাওয়ার অধিকারী। কারণ, গর্ভে
ধারণ, ভূমিষ্ট ও দুগ্ধদানের ক্ষেত্রে কেবল মাকেই অবর্ণনীয়
কষ্ট সহ্য করতে হয়।
(৪) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি
আল্লাহ তাআলা তাকাবেন না। তাদের মধ্যে একজন হল, পিতা-মাতার অবাধ্য
সন্তান। সুনানে নাসায়ি; মুসনাদে আহমাদ, হাকেম
(৫)
হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- সে ব্যক্তির নাক ধুলি মলিন হোক, সে
ব্যক্তির নাক ধুলি মলিন হোক, সে ব্যক্তির নাক ধুলি মলিন হোক, তাঁকে বলা হলো কোন
ব্যক্তি হে আল্লাহর রাসূল ? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতামাতা উভয়কে কিংবা
একজনকে বার্ধক্যাবস্থায় পেল এবং সে তাদের খেদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না। সহিহ মুসলিম-৬১৮৯
(৬) হজরত আবু বাকারাহ রা. থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- প্রত্যেক পাপ (শিরক ছাড়া) আল্লাহ পাক
যতটুকু ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। কিন্তু পিতামাতার অবাধ্যতা ক্ষমা করেন না। বরং এর শাস্তি
আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেই তার মৃত্যুর পূর্বেই তাকে প্রদান করেন। সুননে বাইহাকি; মিশকাতুল মাছাবিহ-৪২১
মাতা-পিতার জন্য
সন্তানের করণীয়: পিতা-মাতার হক ১৪টি
জীবিত অবস্থায় ৭টি
১. আজমত
অর্থাৎ পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
২. মনে
প্রাণে মুহাব্বত করা।
৩. সর্বদা
তাঁদেরকে মেনে চলা।
৪. তাঁদের
খেদমত করা।
৫. তাঁদের
জরুরত (প্রয়োজন ) পুরা করা।
৬. তাদেরকে
সর্বদা আরাম পৌঁছানোর ফিকির(চিন্তা-ভাবনা)
করা।
৭. নিয়মিত
তাঁদের সাথে সাক্ষাৎ ও দেখাশুনা করা।
মৃত্যুর পর ৭টি
১. তাঁদের
মাগফেরাতের জন্য দুআ করা।
২. সওয়াব
রেছানী করা (পৌঁছানো)।
৩. তাঁদের
সাথী-সঙ্গী ও আত্মীয়-স্বজনদের সম্মান
করা।
৪. সাথী-সঙ্গী ও আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য করা।
৫. ঋণ পরিশোধ
ও আমানত আদায় করা।
৬. শরিয়ত
সম্মত ওসিয়ত পুরা করা।
৭. মাঝে মাঝে
তাঁদের কবর যিয়ারত করা।
সূত্র: তোহফায়ে
সুন্নাহ-মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান
হাফিজাহুল্লাহ
হাদিসনং-১০,
সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু (কবিরা গোনাহ) |
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى
الله عليه وسلم-
قَالَ :« اجْتَنِبُوا
السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ ». قَالُوا : يَا
رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ؟ قَالَ :« الشِّرْكُ
بِاللَّهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ
بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَالتَّوَلِّى يَوْمَ
الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْغَافِلاَتِ الْمُؤْمِنَاتِ ». হজরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা
করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- তোমরা
সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেচে থাকবে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রসূলাল্লাহ
ঐ ধ্বংসাত্মাক বিষয় গুলি কি ? তিনি জবাবে বলেন-১- আল্লাহর সাথে শরিক করা, ২- যাদু করা, ৩- অন্যায়
ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ তাআলা হারাম করে দিয়েছেন, ৪- সুদ খাওয়া, ৫-এতিমের
সম্পদ আত্মসা করা, ৬- জিহাদের
ময়দান থেকে পলায়ন করা, ৭- সতী
সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া। বুখারি-২৭৬৬; মুসলিম-৮৯; আবু দাউদ-২৮৭৪
প্রাসঙ্গিকআলোচনা: (১)
শিরক সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন-নিশ্চয় শিরক বড়
গোনাহ। সূরা লোকমান-১৩
শিরক দুই প্রকার: ১. শিরকে
আকবার: আল্লাহর সাথে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর ইবাদত
করা।
২. শিরকে
আসগার বা ছোট শিরক: রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্য
নিয়ে আমাল করা ইত্যাদি। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন- অতএব দুর্ভোগ সে সব মুসল্লীর
যারা তাদের সালাত সম্পর্কে বে-খবর যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে। সূরা মাউন, ৪-৬
(২) যাদু করা
হারাম। বর্তমানে যাদুর মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করা, গণকের কাছে যাওয়া, রাশি চক্র বিশ্বাস করা মুসলিম সমাজে মহামারি রুপ ধারণ করেছে অথচ গণক, জ্যোতিষীর সম্পর্কে হাদিসে এসেছে,
যে ব্যক্তি গণকের কাছে যায় এবং (তার কথা সত্য মনে
করে) তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করে তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল করা
হয় না। মুসলিম-২২৩০; মুসনাদে আহমদ-১৬২০২,
২২৭১১
(৪) সুদ খাওয়া
হারাম আল্লাহ তাআলা বলেন,যারা সুদ খায় তারা দাড়াবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান
স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দেয়। সুরা বাকারা-২৭৫
রাসূলে কারিম (ﷺ) বলেছেন- সুদের গোনাহের ৭৩টি
স্তর রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে হাল্কা হল নিজ মাতাকে বিবাহ করা। সর্বনিম্নস্তর
হলো কোন মুসলিমের ইজ্জত সম্ভ্রম হরণ করা। হাকেম
(৫)
আল্লাহ তাআলা বলেন-যারা এতিমের মাল অন্যায়ভাবে
খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং অতিসত্তরই তারা
অগ্নিতে প্রবেশ করবে। সূরা আন নিসা-১০
কবিরা গোনাহ থেকে
বাঁচার ফযিলত: মহান আল্লাহ বলেন- যে সকল বড় গোনাহ
সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সে সব বড় গোনাহ থেকে বেচে থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের ত্রুটি
বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দিব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব। সূরা আন-নিসা-৩১
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা যারা কবিরা গোনাহ থেকে
বেঁচে থাকবে তাদেরকে দয়া ও অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন,
কারণ ছগিরা গোনাহ বিভিন্ন নেক আমাল যেমন- সালাত, সওম, জুমআ, রমাদান ইত্যাদির মাধ্যমে মাফ হয়ে যাবে।
কবিরা গোনাহ কাকে বলে ? এ সম্পর্কে
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রহ. বলেন, কবিরা গোনাহ হল: যে সব গোনাহের কারণে
দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক শাস্তির বিধান আছে এবং আখিরাতে শাস্তির ধমক দেয়া
হয়েছে।
কবিরা গোনাহর
তালিকা: নিম্নে উল্লিখিত হাদিসে বর্ণনা ব্যতীত কবিরা গোনাহর তালিকা দলিলসহ, দেওয়া
হলো:
১. মানুষ হত্যা করা। দলিল- সূরা ফোরকান, ৬৮-৭০
২. সালাত /নামাজ
ছেড়ে দেওয়া। দলিল: সূরা মারইয়াম,৫৯-৬০; মুসলিম-১১৬; মুসনাদে
আহমদ-২১৮৫৯
৩. যাকাত আদায় না
করা।
দলিল:
সূরা আত তওবা-৩৪; সূরা আলে ইমরান-১৮০
৪ .সামর্থ থাকা
সত্ত্বেও সিয়াম/রোজা না রাখা। দলিল: সূরা বাকারা,১৮৩-১৮৫
৫. সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ না করা। দলিল: সূরা আলে
ইমরান-৯৭; জামেউত তিরমিজি-হ্জ্ব অধ্যায়
৬. বা-মা’র অবাধ্য
হওয়া। দলিল: সূরা লোকমান-১৪; সূরা আহকাফ-১৫; বুখারি-৬৪৬০;সুনানে বাইহাকি;মিশকাত-৪৬১
৭. আত্মীয়তার
বন্ধন ছিন্ন করা। দলিল: সূরা মুহাম্মাদ,২২-২৩;সহিহ মুসলিম-৪৬৩৩
৮. যিনা-ব্যভিচার
করা।
দলিল:
সূরা আননূর-০২; সূরা মুমিনুন,৫-৬; ইসরা-৩২; মুসলিম:৪৮০২
৯. সমকামিতা ও
স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাস করা। দলিল: সূরা আরাফ,৮০-৮১; জামেউত তিরমিজি-১
১০.
আল্লাহ এবং তার রাসূলের উপর মিথ্যা আরোপ করা। দলিল: সূরা
যুমার-৬০; বুখারি-১০৭
১১.শাসক
ব্যক্তি কর্তৃক প্রজাদেরকে ধোকা দেয়া এবং তাদের উপর অত্যাচার করা। দলিল: সূরা আশ-শূরা-৪২; মুসলিম-৪৮৬৭; বুখারি-২২৬৭
১২.
অহংকার,আত্মগরিমা,হটকারিতা। দলিল: সুরা নাহল-২৩, মুসলিম-১৩১
১৩. মিথ্যা
সাক্ষ্য দেওয়া। দলিল: সূরা মায়েদা-২; সূরা ফোরকান-৭২; বুখারি-৬৪৬০
১৪. নেশা বা মাদক
দ্রব্য সেবন করা। দলিল: সূরা বাকারা-২১৯;সূরা-মায়েদা-৯০;
মুসলিম-৩৭৩৪;সুনানে আবু দাউদ-৩১৮৯
১৫. জুয়া খেলা। দলিল: সূরা
মায়েদা-৯০
১৬. গনীমতের মাল
আত্মসাৎ করা। দলিল: সূরা ইমরান -১৬১
১৭. চুরি করা। দলিল: সূরা মায়েদা-৩৮;সূ রা
নিসা-২৯
১৮. ডাকাতি করা। দলিল: সূরা
মায়েদা-৩৩
১৯. মিথ্যা শপথ
করা।
দলিল:
বুখারি-৬৬৪৭,৬১৮২
২০.
যুলুম-অত্যাচার করা। দলিল: শূরা-২২৭; মুসলিম-৪৬৭৫
২১.
চাঁদাবাজি করা। দলিল: সূরা নিসা-২৯; শূরা-৪২;
মুসলিম-৭৬৮৬
২২. হারাম খাওয়া। দলিল: সূরা বাকারা-১৮৮,১৮৬, ১৭২; সূরা
মুমিনুন-৫১; সহিহ মুসলিম-১৬৮৬
২৩. আত্মহত্যা করা। দলিল: সূরা নিসা; ২৯-৩০;
মুসলিম-১৫৮
২৪.মিথ্যা। দলিল:
সূরা-ইমরান-৬১, বুখারি-৫৬২৯; তিরমিজি-২১০০
২৫. আল্লাহর বিধান
পরিত্যাগ করা। দলিল: সূরা মায়েদা-৪৪,৪৫,৪৭
২৬. ঘুষ খাওয়া। দলিল: মুসনাদে
আহমদ-৬৬৮৯
২৭. মহিলা পুরুষের
এবং পুরুষ মহিলার বেশ ধারণ করা। দলিল: সুনানে আবু
দাউদ-৩৫৭৪
২৮. আপন স্ত্রীকে
ব্যভিচারের সুযোগ দেওয়া। দলিল: মুসনাদে আহমদ-৫৮৩৯
২৯. হালালকারী এবং
যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ে গোনাহগার।দলিল: আহমাদ:৭৯৩৭এর ব্যাখ্যা হল: কেউ কারো তিন
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিবাহ করে যে, সে সহবাস করে আবার তালাক
দিয়ে দিবে, যাতে প্রথম স্বামী পুণরায় বিবাহ করতে পারে,
এই ব্যক্তিকে মুহাল্লিল বা হালালকারী বলে।
৩০. পেশাব থেকে না
বাঁচা। দলিল: মুসলিম-৬১১
৩১. চতুষ্পদ
জন্তুর চেহেরা বিকৃতি করে। দলিল: সুনানে দাউদ-২২০১
৩২. সত্যকে গোপন
করা এবং দুনিয়ার জন্য এলমে দ্বীন শিক্ষা করা। দলিল: সূরা বাকারা,১৫৯-১৬০;
সুনানে ইবনে মাজাহ-১৫৬;সু নানে আবু দাউদ-৩১৭৯
৩৩. খেয়ানত করা। দলিল:সূরানিসা-১০৭; সূরা আনফাল-২৭; বুখারি-৩৩
৩৪. খোঁটা দেওয়া। দলিল: সূরা
বাকারা-২৬৪; মুসলিম-১৫৫
৩৫. তাকদিরকে অস্বীকার
করা।
দলিল:কিতাঁবুস
সুন্নাহ- ইবনে আবি আসিম আশ-শায়বানি
৩৬. গীবত করা। দলিল: সূরা
হুজুরাত-১২
৩৭. চোগলখুরী করা। দলিল: বুখারি
৩৮. অভিশাপ দেওয়া।দলিল: বুখারি-৪৬;সুননে আবু
দাউদ-৪৬৫৯
৩৯. ওয়াদা রক্ষা
না করা। দলিল: সূরা মায়েদা ০১; বুখারি-৩৩
৪০. গণক বা জ্যোতির্বিদদের নিকট গমন এবং তাদের কথা বিশ্বাস করা। দলিল: মুসনাদে আহমদ-১২৫
৪১. স্বামীর
অবাধ্য হওয়া। দলিল: বুখারি-২৯৯৮; আবুদাউদ-২১৪৩
৪২. প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা। দলিল: বখারী-৪৭৮৩,৫৪৯৮
৪৩. অন্যায়ভাবে
বিদ্রোহ করা। দলিল: সূরা শূরা-৪২; মুসনাদে আহমদ-৪২০১
৪৪. মুসলমানকে
কষ্ট ও গালি দেওয়া। দলিল: সূরা আহযাব-৫৮; বুখারি-৫৫৭২;
মুসলিম-৪৭৩৪
৪৫. প্রতিবেশীকে
কষ্ট দেওয়া। দলিল: মুসলিম-৬৬
৪৬. টাখনুর নিচে
কাপড় পরিধান করা। দলিল: বুখারি-৫৩৪১,৫৩৪২
৪৭. সোনা-রুপার
পাত্রে পানাহার করা। দলিল: বুখারি-৫২০৩
৪৮. পুরুষের সোনা
ও রেশমী কাপড় পরিধান করা। দলিল: বুখারি-৬০৫৫
৪৮. নিজের পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে স্বীকৃতি দেয়া। দলিল: বুখারি-৩৯৮২
৪৯. মাপে বা ওজনে
কম দেওয়া। দলিল: সূরা মুতাফফীন-০১
৫০. জুমাআর আযানের
পরও দুনিয়াবী কাজ করা ও জুমাআর সালাত
পরিত্যাগ করা। দলিল: সূরা
জুমাআ-০৮
৫১. আল্লাহর রহমত
হতে নিরাশ হওয়া। দলিল: সূরা যুমার-৫৩,সহিহ মুসলিম-২৫
৫২. মুসলমানকে
কাফের, বেঈমান,নাস্তিক বলে গালি বা আখ্যায়িত করা। দলিল: সূরানিসা-৯৪;
বুখারি-৫৬৮৩
৫৩. ধোঁকা
দেওয়া। দলিল: সূরা বাকারা-০৮; সুনানে বাইহাকি
৫৪. কুধারণা ও
গোপন বিষয় তালাশ করা। দলিল: সূরা হুজুরাত-১২
৫৫. সাহাবা
কেরামদের গালি দেওয়া। দলিল: জামেউত তিরমিজি-৪২৪০;
বুখারি-৩৩৯৮; তাবারানি
৫৬. অন্যায় বিচার
করা। দলিল: সূরা
ছোদ-২৬; সূরা নিসা-৫৮,১০৫; তিরমিজি-১২৪৪
৫৭. আইল (জমিনের
সীমানা) ঠেলা। দলিল: মুসলিম-৩৬৫৭
৫৮. বিদআত বা
গোমরাহি চালু করা। দলিল: সূরা নিসা-৮৫; মুসলিম-১৬৯১
৫৯. নারী অন্যের
চুল ব্যবহার করা, শরীরে উলকি আকা, ভ্রু উপড়ানো, দাতঁ ফাক করা। দলিল: মুসলিম- ৩৯৬৬;
বুখারি- ৫৪৭৭
৬০. ধারালো অস্ত্র
দিয়ে কারো দিকে ইশারা করা। দলিল: মুসলিম-৪৭৪১
৬১ .হারাম শরিফে
নাফারমানি করা। দলিল: সূরা হজ-২৫; মুসলিম-৭৬৮২
৬২. নিষিদ্ধ সময়ে
স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা। দলিল: সূরা
বাকারা-২২২
৬৩. মিথ্যা হাদিস
বলা। দলিল: বুখারি-১০৯
৬৪. মনগড়া তাফসির
করা। দলিল: জামেউত তিরমিজি-৩২০৬
৬৫. মানুষকে
অবজ্ঞা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। দলিল: সূরা
লোকমান-১৮
৬৬. উপহাস করা। দলিল: সূরা
হুজুরাত-১১
৬৭. আলেম-হাফেজ-ক্বারীদের অসম্মান ও অবজ্ঞা করা। দলিল: আবু দাউদ-২০২২
৬৮. অপবাদ
দেওয়া। দলিল: সূরা-নিসা-১১২
৬৯. অন্যায়ভাবে
ভূমি আত্মসাতকারী। দলিল: বুখারি-২৪৫৪
৭০. পশু-পাখিকে কষ্ট দেওয়া। দলিল: সহিহ মুসলিম-৫৯৮৯
নোট: এ বিষয়ে
বিস্তারিত দেখুন-‘কিতাবুল কাবায়ের’কবিরা গোনাহ ইমাম হাফিজ শামসুদ্দীন যাহাবি রহ. ইসলামিক
ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ; কবিরা গোনাহ আল্লামা ইবনে হাজার রহ.
আবরার প্রকাশনী; ফাতহুল বারি শরহে বুখারি;
আশআতুল লুমআত; এক মিনিটের মাদ্রাসা-শাহ আবরারুল হক রহ. ও শাহ হাকীম মুহাম্মদ আখতার রহ.।
১০নং
হাদিস সমাপ্ত
-------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে একবার সূরা ইয়াসিন পাঠ করা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন- প্রত্যেক বস্তুর একটি কলব বা মূল আছে, আর কুরআনের কলব হচ্ছে সূরা ইয়াসিন। যে কেহ (একবার) ইয়াসিন সূরা পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে এর কারণে দশবার কুরআন (দশ খতম) পাঠ করার সওয়াব দিবেন। জামেউত
তিরমিজি; সুনানে দারেমি
হাদিস নং-১১, সালাম বিনিময় বা অভিবাদন ইসলামি পদ্ধতি |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : وَالَّذِي
نَفْسِي بِيَدِهِ لا تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا ، وَلا تُؤْمِنُوا
حَتَّى تَحَابُّوا ، أَوَلا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ
تَحَابَبْتُمْ ؟ أَفْشُوا السَّلامَ بَيْنَكُمْ
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা রা.
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-তোমরা
বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না , যতক্ষণ না তোমরা ঈমান গ্রহণ করবে আর ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান গ্রহণ হবে না,
যতক্ষণ না তোমরা পরস্পর ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দিব যার ওপর আমল করলে তোমাদের
পারস্পরিক ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে ? তোমরা সালামের খুব প্রচলন কর অর্থাৎ পরিচিত-অপরিচিত প্রত্যেককে সালাম কর। মুসলিম-৫৪;
তিরমিজি-২৬৮৮; ইবনে
মাজাহ-৬৮; আহমদ-৯০৮৪,১০৬৫০
সালামের সূচনা: আল্লাহ তাআলা সর্ব
প্রথম আদম (আ.) কে সালামের
শিক্ষা দেন। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা
আদম (আ.)কে সৃষ্টি করে বললেন, যাও
ফেরেশতাদের দলকে সালাম দাও এবং মন দিয়ে শুন তার তোমার
সালামের কি জবাব দেয়। এটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সালাম
তাই আদম (আ.) গিয়ে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। ফেরেশতাগণ
জবাব দিলেন, আসসালামু আলাইকা
ওয়া রহমাতুল্লাহ। ফেরেশতাগণ রহমাতুল্লাহ বৃদ্ধি করলেন। মিশকাত-৪৬২৮,শিষ্টাচার অধ্যায়, সালাম
অনুচ্ছেদ।
সালামের মহত্ব : ইসলাম
পূর্ব যুগে আরবরা পরস্পরে সাক্ষাতে একে অন্যকে حياك
الله বা انعم
الله بك عينا বা انعم
صباحاবলতো, ইসলাম এসে السلام عبيكم বলার নীতি প্রচলন করেন। আল্লামা ইবুল আরাবি রহ. আহকামুল
কুরআন গ্রন্থে লেখেন-সালাম শব্দটি আল্লাহ তাআলার উত্তম
নামসমূহের অন্যতম। السلام عبيكم এর অর্থ এই যে,الله
رقيب عليكم অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদের
রক্ষক।
জগতর প্রত্যেক
জাতির মধ্যে পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতের সময় ভালবাসা ও সম্প্রীতি
প্রকাশার্থে কোন না কোন বাক্য আদান-প্রদান করার রীতি চালু আছে। যেমন হ্যালো, গুডমর্নিং, গুড এ্যাভিনিং, নমস্কার, কুর্ণিশ,
আদাব ইত্যাদি বলে থাকে। কিন্তু তুলনা করলে দেখা
যায়, ইসলামের সালাম যতটুকু অর্থবোধক, অন্য কোন সালাম ততটুকু নয়। কেননা এতে শুধু
ভালবাসাই প্রকাশ পায় না; বরং
ভালবাসার যথার্থ হকও আদায় হয়। মোট্কথা ইসলামি সালামে বিরাট অর্থগত ব্যাপ্তি রয়েছে। যেমন-(১)
এতে রয়েছে আল্লাহর যিকির (২) আল্লাহর কথা মনে করে দেওয়া (৩) মুসলমান ভাইয়ের প্রতি ভালবাসা ও সম্প্রীতি প্রকাশ (৪)
মুসলমান ভাইয়ের জন্য সর্বোত্তম দুআ (৫) ভাইয়ের সাথে এ চুক্তি যে,আমার হাত ও মুখ দ্বারা আপনার কোন কষ্ট হবে না। সূত্র: তাফসিরে
বুরহানুল কুরআন-৩৭৬; মাআরিফুল কুরআন
ইসলামে কোন আমল
উত্তম? এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন আমল উত্তম ? তিনি বলবেন, (অনাহারিকে) খানা
খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপিরিচিত
সকলকে সালাম করা। বুখারি কিাতাবুল ঈমান
সালাম করার
উপকারিতা: লক্ষ্য করলেই দেখা
যাবে কোন ব্যক্তি কারো সাথে
সাক্ষাতের সময় হ্যালো সম্বোধন করে, তাহলে এ
সম্বোধনের দ্বারা তার কি কোন ফায়দা হল ? এ বলার দ্বারা না
দুনিয়ার কোন কোন ফায়দা হল, না আখেরাতের কোন ফায়দা ? অথচ السلام عليكم و رحمة الله و
بركاته এর মাধ্যমে ঐ ব্যক্তি মূল্যবান তিনটি দুআ করে দিল ও কমপক্ষে দশ নেকি। (১) আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক (২)বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত এবং (৩) তার পূণ্য ও বরকত।
সালামের গুরুত্ব : যে
ব্যক্তি সালাম করে তাকে অমুসলিম বলা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন- এবং এমন
ব্যক্তিকে যে তোমাদের সালাম করে এরুপ বলো না যে, তুমি
মুসলমান নও। সূরা নিসা-৯৪
মৃত্যু শয্যায় সালাম: মহান
আল্লাহ কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন- ঐ সকল লোক যাদের প্রাণ
ফেরেশতা কবয করেন ঐ অবস্থায় যে,তারা (শিরক
হতে)পবিত্র। তখন ফেরেশতাগণ বলতে থাকেন আসসালামু আলাইকুম (তোমার ওপর
শান্তি বর্ষিত হোক) তোমরা বেহেশতে প্রবেশ কর, নিজেদের (সৎ) আমলের কারণে। সূরা নাহল-৩২
বেহেতশতে সালাম: কুরআনুল
মাজিদে অনেক জায়গায় বেহেশতের সালামের কথা
উল্লেখ করেছেন। (১) সেখানে তারা (মুমিনরা) সালাম ব্যতীত অসার কোন কথাবার্তা শুনবে না। সূরা মারইয়াম-৬২
(২) করুণাময় পালনকর্তা পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম। সূরা ইয়াসিন-৫৮
(৩) তথায় তারা অবান্তর ও খারাপ কোন কথা শুনবে না, কিন্তু
শুনবে শুধু সালাম আর সালাম। সূরা ওয়াকিয়াহ, ২৫-২৬
সালাম সম্বন্ধে কতিপয়
বিধান:
Ø
কথা-বার্তা বলার পূর্বে সালাম। জামে তিরমিজি; মিশকাত-৩৯৯
পৃ.
Ø
ঘরে, অফিসে প্রবেশের
পূর্বে সালাম। সূরা নূর-২৭
Ø
সাক্ষাতে-বিদায়ে সালাম। সুনানে নাসায়ি, মিশকাত-৩৯৭
পৃষ্ঠা
Ø
আরোহী ব্যক্তি হাঁটা
ব্যক্তিকে, হাঁটা ব্যক্তি বসা বা দাঁড়ানো ব্যক্তিকে সালাম দিবে। বুখারি; মুসলিম
Ø
সালামের সময় হাত দিয়ে ইশারা
বা হাত কপালে কিংবা মাথা ঝুঁকবে না। তবে দূরবর্তী লোকের ক্ষেত্রে শুধু বোঝানোর জন্য ইশারা করা
যেতে পারে। জামেউত তিরমিজি,মিশকাত-৩৯৯
Ø
একদলকে সালাম দিলে, একজন
জবাব দিলে যথেষ্ট হবে। সুনানে বাইহাকি; মিশকাত-৩৯৯ পৃষ্ঠ
Ø
সালাম দাতা ‘আসসালামু
আলাইকুম’ বললে, তার জবাবে ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম’ বলা। বৃদ্ধি করে দিলে আরও
উত্তম। সূরা নিসা-৮৬
Ø
সালামে ওয়া বারাকাতুহ-এর পর শব্দ
বাড়ানো ঠিক নয়। মুয়াত্তা মালেক
Ø
কোন মজলিসে মুসলিম-অমুসলিম
থাকলে মুসলমানেরর নিয়তে দিবে কিংবা নিম্নরুপ বাক্যেও সালাম দেওয়া যায়। আসসালামু আলা মানিত্তাবাল হুদা। মুসান্নেফে আবি শায়বা
Ø
আবু হুরায়রা (রা.) হতে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ছোট বড়কে সালাম দিবে, পথচারী বসা ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোকদেরকে সালাম প্রদান করবে। (মিশকাত,৬৪৩২-৩৩) তাই শিক্ষকের উচিত ক্লাসে ঢুকে সালাম দেয়া। অথচ আমাদের সমাজে দেখা
যায় উল্টো।
Ø
অমুসলিম সালাম দিলে
জবাবে ‘আলাইকা’বা ‘ওয়াআলাইকুম’ বলা। বুখারি, মুসান্নেফে
আব্দুর রাযযাক
Ø
কোন পাপাচার ব্যক্তিকে সালাম
দেওয়া মাকরুহ। কিতাবুল আযকার
মুসাফাহার বিধান:
মুসাফাহা হল সালামের
পরিপূরক। মুসাফাহা করা সুন্নাত।
Ø উভয় হাতে মুসাফাহা করা সুন্নাত।
Ø গায়রে মাহরাম নারীর সাথে মুসাফাহা হারাম।
Ø মুসাফাহা করতে গিয়ে কাউকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়, কেননা এটা সুন্নাত আর কষ্ট দেওয়া
হারাম।
Ø মুসাফাতে গোনাহ মাফ হয়।
Ø এক নারী অপর নারীর সাথে মুসাফাহা করতে পারে।
تهذيب و تعليم الدين ماجوذ
از اسلام বিস্তারিত দেখুন- ফয়যুল কালাম, ৩৮৭-৩৯৩ পৃষ্ঠা; নামাজ সালাম মুসাফাহা ও দুআর মাসনূন তরিকা-
জাস্টিস আল্লামা তাকি উসমানি দা.বা., আল-ইসলাম পাবলিকেশন্স।
হাদিস নং-১২, পানাহারের আদব বা
শিষ্টাচার |
عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ قَالَ أسلم رجل وكان يأكل أكلا كثيرا فلما
أسلم جعل يأكل أكلا قليلا فقال رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم إن الْكَافِرُ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ
وإن المؤمن يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ
অর্থ: হজরত হুরাইরা
রা. হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি খুব বেশি পরিমাণে
আহার করতো। সে ইসলাম গ্রহণ করলে অল্প আহার করতে লাগলো। ব্যাপারটি নবি (ﷺ)-এর নিকট ব্যক্ত করলে, তিনি বললেন,
মুমিন ব্যক্তি এক উদর খায় আর কাফের সাত উদরে খেয়ে থাকে। বুখারি-৫৩৯৭;
মুসলিম-২০৬২; ইবনে মাজাহ-৩২৫৬; মুয়াত্তা মালেক-২৬৭৪
নোট : বুখারির বর্ণনায়
শব্দের কিছু পরিবর্তন রয়েছে।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: আলোচ্য হাদিসে
উদ্দেশ্য এই যে, মুমিন ব্যক্তি তার প্রত্যেক কাজেই ইবাদত-বন্দেগির প্রতি দৃষ্টি রাখবে। এমনকি পানাহারের মধ্যেও সে
সতর্কতা অবলম্বন করবে। আর কাফেরদের সেই বালাই নাই; ভোগ- বিলাসই
তাদের একমাত্র কাম্য, তাই একজনে সাতজনের পানাহারে তৃপ্তি লাভ
করে।
অতিভোজনের ক্ষতিসমূহ : জীবন ধারণের
জন্য খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি, তবে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে
শারীরিক-আত্মিক নানাবিধ ক্ষতি রয়েছে।
যেমন-১. নফস ও শয়তান প্রবল হয়।
২. ইবাদতে অলসতা
আসে।
৩. অন্তরে অন্ধকার
আসে।
৪. জেহেন (বুদ্ধি) লোপ পায়।
৫. দুশ্চিন্তা
গ্রস্ততা ও মনস্তাত্ত্বিক রোগ।
৬. মস্তিষ্কের
রোগ।
৭. চক্ষুরোগ।
৮. জিহ্বা ও গোলার
রোগ।
৯. বক্ষ ও ফুসফুসের
ব্যাধি।
১০. হৃয়রোগ।
১১. ডায়াবেটিস।
১২. উচ্চরক্ত চাপ।
১৩. মস্তিষ্কের
শিরা ফেটে যাওয়া।
বিস্তারিত দেখুন- ইমাম গাজালি
রহ. এর –কিমিয়ায়ে সাদাত; মুসলিম চরিত্র
গঠন; আল্লামা শারণি রহ. এর –সিরাতুল আউলিয়া।
পেটকে তিন ভাগ করতে
হবে: আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে মহাবিজ্ঞানী
বিশ্ব নবি হজরত মুহাম্মাদ
বলেছেন-পেটের এক তৃতীয়াংশ ভাগ আহারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানির
জন্য আর এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য। সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৩৪৯
বর্তমান মেডিক্যাল স্যায়েন্স একথার
ওপর একমত হয়েছে। আমরা জানি দেহের ৭৫% পানি, সুতরাং পানির কত
প্রয়োজন। যেমন-১. খাদ্য হজম করতে ২. শরীরের তাপমাত্রা
নিয়ন্ত্রণ করতে ৩. শরীরের অপয়োজনীয় দূষিত বর্জ নির্গত করতে ৪.
শরীরের অম্ল-ক্ষারের স্বাভাবিকতা ঠিক রাখতে রক্ত
তৈরি করতে ৫. হরমোন তৈরি করতে। অতিরিক্ত ওজন, মেদকমানোর
জন্য এ মূলনীতি মানতে হবে।
ফ্যাট (মেদ),
ওভার ওয়েটের (অতিরিক্ত ওজন) কারণ ও প্রতিকার :
শরীরে, পেটে মেদ মজা
এবং অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য আজ অনেকে চিন্তিত, বিভিন্ন হারবাল
এর সরণাপন্ন হচ্ছে। আসুন কেন মেদ জমে জেনে নিই, ধরুন- আপনার
প্রতিদিন ২০০০ (দুই হাজার) ক্যালিরির প্রয়োজন,
আপনি খাদ্য গ্রহণ করলেন
৩০০০ (তিন হাজার) ক্যালিরির, এখন ৩০০০-২০০০= ১০০০ ক্যালিরি একদিন, আর
একমাসে ১০০০ × ৩০ = ৩০,০০০ (ত্রিশহাজার ) অতিরিক্ত ক্যালিরি। এটাই আপনার শরীরের
ফ্যাট করবে। ৩৫০০ ক্যালিরি= এক পাউন্ড (এক কেজি= ২.২পাউন্ড) /হাফ কেজি শরীরে ওজন
বা ফ্যাট হয়। সুতরাং পরিমিত ক্যালিরি খাবার প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে আর যদি
অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করি, তাহলে সেটা Burn বা পোড়তে/ক্ষয় করতে হবে,
পরিশ্রম-ব্যায়াম-হাঁটার মাধ্যমে। নিম্নে খাবারের ক্যালরি
মান (Food Calorie Value) দেওয়া হলো:
প্রস্তুতকৃত |
পরিমাণ |
ক্যালরি (কিলো.) |
গরুর গোস্ত |
১কাপ |
৩৪০ |
খাশির গোস্ত |
১কাপ |
৩২৫ |
মুরগির গোস্ত |
১কাপ |
৩০০ |
কাস্টার্ড কেক |
১টি (মধ্যম) |
৩০০ |
সাদা চালের ভাত |
১ কাপ |
২০০-২৯০ |
চিকেন বিরিয়ানি |
১ কাপ |
৪১৮ |
সবজি বিরিয়ানি |
১ কাপ |
২২০ |
খাসির বিরিয়ানি |
১ প্লেট |
৪৭০ |
ফ্রাইড রাইস |
১ কাপ |
১২০-৩৯০ |
সাদা পাউরুটি |
১ স্লাইস |
৬৭-৯৬ |
লাল পাউরুটি |
১ স্লাইস |
৬০-৮৯ |
বান রুটি |
১টি |
১৫০ |
সাদা আটার রুটি |
১টি |
৭২ |
লাল আটার রুটি |
১টি |
৬০ |
মিষ্টি |
১টি (মধ্যম) |
১৪০ |
গরুর দুধ (২চামচ চিনিসহ) |
১কাপ |
১১০ |
কাজু বাদাম |
১০টি |
৯৫ |
মিষ্টি আলু |
১০০ গ্রাম |
৭০ |
আম |
১টি (মাঝারি) |
১৮০ |
কলা |
১টি (মাঝারি) |
৯০ |
আপেল |
১টি (মাঝারি) |
৬৫ |
পেয়ারা |
১টি (মাঝারি) |
৫০ |
কমলা |
১টি (মাঝারি) |
৪০ |
গাজর |
১টি (মাঝারি) |
৩০ |
তথ্যসূত্র: https/cmed.com.bd
সুস্বাস্থ্যের জন্য কিছু বিধি-নিষেধ:
১. আঁশ যুক্ত খাবার বেশি খান।
২. তৈল-চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করুন।
৩. ভাজা-পোড়া, ফাস্ট ফুট
খাবার ত্যাগ করুন।
৪. কোমল পানীয় ( আরসি, পেপসি, কোকা-কলা, জুস ইত্যাদি) বর্জন করুন।
৫. প্রাণিজ আমিষ কম খান পরিবর্তে উদ্ভিদ আমিষ বেশি খান।
৬. সপ্তাহে ৩-৫ দিন ব্যায়াম করুন।
৭. প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটুন।
৮. ফ্রিজের পানি পরিহার করুন।
৯. সকালের নাস্তা কখনো ছাড়বেন না।
১০. রাতে হালকা খাবার খান, ঘুমানোর নূণ্যতম ২ঘণ্টা
পূর্বে খাবার খান।
১১. ৭০-৮০% খাবার বা ক্যালিরি
দিনে গ্রহণ করুন এবং রাতে ২০-৩০ ক্যালিরি গ্রহণ করুন।
১২. রাতে আহারের পর কিছু পায়চারি করুন। এটা সুন্নাতও বটে।
১৩. খাবার ধীরে ধীরে ও চিবিয়ে খান।
১৪. খাবার শেষ হওয়ার সাথে সাথে পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। কমপক্ষে ৩০ মিনিট পরে পানি পান করুন। এটা বিশ্বনবির সুন্নাতও বটে। ১৫. Frying,
Boiling, Roasting, Stewing and G rilling ইত্যাদি ছাড়াই রান্না করার
চেষ্টা করুন।
১৬. সকালে খালি পেটে পানি পান করুন, এতে বহুবিধ
উপকার নিহিত।
১৭. চিনি যুক্ত খাবার কম খান।
১৮. খাওয়ার পর খাওয়া নয়, তবে ফল, মিষ্টি-দই খাওয়া ভাল।
খাবার গ্রহণের দুটি
মূলনীতি : মানুষ যদি এ দুটি মূলনীতি মেনে চলত,
তাহলে পেটের পীড়া সংক্রান্ত
৯০% ভাল হয়ে যেত। তাহলো ১. ক্ষুধা না লাগলে না খাওয়া ২. পেট ভরে না খাওয়া। কথিত আছে, আমিরুল মুমিনিন ওমর রা. এর যামানায় রোম থেকে একজন ডাক্তার মদিনা আসেন। অনেক দিন অবস্থায় করার সে কোন
রুগী পেল না,
তখন মদিনাবাসীকে জিজ্ঞেস করলেন রোগ না হওয়ার কারণ। জবাবে মদিনাবাসী বললেন, আমরা ক্ষুধা
না লাগলে খায় না এবং পেট ভরে খায় না। তখন ডাক্তার বললেন এ কারণেই রোগ-বালাই নাই।
মেডিক্যাল স্যায়েন্স
বলে, একবার খাবার গ্রহণ করলে কমপক্ষে তিন-চার ঘণ্টা লাগে হজম
হতে।
ক্ষুধা কাকে বলে: এ
সম্পর্কে জনৈক মনীষী বলেন, ভাত যখন তরকারী ছাড়াই শুধু লবণ দিয়েই খাওয়ার মত অবস্থা সৃষ্টি হয়, তখন তাকে ক্ষুধা বলে।
পানহারের কতিপয়
সুন্নাত ও আদব: প্রাণী বলতেই খাবারের প্রয়োজন। আর আমরা মানুষ হিসেবে
নানান সুস্বাদু খাদ্য প্রতিদিন গ্রহণ করি। সুতরাং এ পানাহারটা প্রিয় নবি মুহাম্মাদ (ﷺ) এর সুন্নাত তরিকানুযায়ী হলে
ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। আসুন আমরা কতিপয় সুন্নাত-আদব জেনে নিয়।
ü
আল্লাহ তাআলার আদেশ মনে
করে খাওয়া। সূরা বাকারা-১৭২,আনয়াম-১৪২
ü
দস্তরখানা বিছানো। বুখারি শরিফ
ü
আগে দস্তরখান উঠিয়ে পরে
নিজে ওঠা। সুনানে ইবনে মাজাহ
ü
খাবারের শুরুতে এবং শেষে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়া। তিরমিজি
ü
বিসমিল্লাহ বলে তথা ‘বিসমিল্লাহ ওআলা বারাকাতিল্লাহ’ শুরু করা, তবে ভুলে গেলে মধ্যখানে মনে হলে ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’ বলা। বুখারি-মুসলিম শরিফ
ü
ডান হাতে পানাহার করা। বুখারি-মুসলিম শরিফ
ü
বসে পান করা। কারণ দাঁড়িয়ে পান
করা নিষেধ। মুসলিম শরিফ
ü
তিন শ্বাসে পান করা আর শ্বাস
ছাড়ার সময় পানির পাত্র সরিয়ে
নেওয়া, কারণ তখন
কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিত্যাগ করে। মুসলিম ও জামে তিরমিজি
শরিফ
ü
পানি পরিবেশনকারী সবার শেষে পান করবে। জামে তিরমিজি
ü
পান করার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ এবং শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা।
ü
কোন মজলিসে উপস্থিত
ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যিনি সবচেয় বুযুর্গ, মুরুব্বী, সিনিয়র
তাদের দ্বারা প্রথমে খাওয়া আরম্ভ করা আদব। মুসলিম শরিফ ২/১৭১ পৃ.
ü
হাত এবং পাত্র চেটে খাওয়া, পরিষ্কারকরে খাওয়া সুন্নাত। এতে ঐ সকল পাত্র খানে ওয়ালার জন্য মাগফিরাতের দুআ করে
থাকে। ক্ষতিকর না হলে অপচয় করা হারাম। সুনানে ইবনে মাজাহ
ü
খানা শেষে উভয় হাত ধোয়া। জামে তিরমিজি; সুনানে
আবু দাউদ
ü
খানা খাওয়া শেষে কুলি করা। বুখারি শরিফ
ü
খাবারের শেষে এ দুআ পড়া- আলহামদু
লিল্লাহিল্লাযি আত্বআমানী, ওয়া সাকানী ওয়া জাআলানী মিনাল
মুসলিমীন। জামে তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে ইবনে মাজাহ শরিফ
ü
খাবারের শেষে মেজবানের
জন্য দোয়া এ করা-‘আল্লাহুম্মা আত্বয়িত মান
আত্বআমানী ওয়াসকি মান সাকানী’। অর্থ: হে আল্লাহ,আমাকে যে আহার করালো তুমি তাকে আহার করাও এবং আমাকে যে পান করালো তুমি
তাকে পান করাও। সহিহ মুসলিম শরিফ
ü
সোনা ও রুপার পাত্র বা
বরতন ব্যবহার করা হারাম।
ü
কোন পরিবারের কেউ
মারা গেলে, (সে সময় ) সে বাড়িতে খানা পাঠানো সুন্নাত। অথচ আজ কাল উল্টা আমরা আরও
খাই।
সুনানে
ইবনে মাজাহ
পানাহারে নিষেদ্ধ
কাজসমূহ:
ü
বাম হাতে পানাহার করা। তবে কোন সমস্যা থাকলে ভিন্ন কথা।
ü
হেলান দিয়ে পানাহার করা। সহিহ মুসলিম-৩৭৬৩
ü
পেট পূর্ণ করে খাওয়া। বুখারি শরিফ-২১১৩
ü
খাবারের দোষ ধরা। বুখারি শরিফ-৪৯৮
ü
অপচয় করা। কারণে অপচয়কারী
শয়তানের ভাই। সূর আরাফ-৩১
ü
দাঁড়িয়ে পানাহার করা। তবে যমযমের পানি
পান করা ও অসুবিধাবশত দাঁড়িয়ে করা পানাহার করা অনুমতি আছে। সহিহ
মুসলিম-৩৭৭, ৫১৭৫
ü
খাওয়ার পাত্রে ফু এবং তার
ভেতর নি:শ্বাস ফেলা। তিরমিজি-১৮১০
ü
সোনা ও রুপার পাত্র বা
বরতন ব্যবহার করা হারাম।
ü
হালাল-পবিত্র ও
সন্দেহযুক্ত খাবার গ্রহণ করা। সূরা আরাফ-১৬০
ü
বিস্তারিত দেখুন- প্রিয় নবির
(ﷺ) প্রিয় সুন্নাত- মুহিউস সুন্নাহ মাও. আবরারুল হক রহ. মাওলানা হাকীম মুহাম্মাদ আখতার রহ.
মাকতাবুল আশরাফ; ওসওয়ায়ে রাসূলে আকরাম (ﷺ) -ডা. আব্দুল হাই রহ.,
মদিনা পাবলিকেশন্স; আহকামে জিন্দাগী, ৪১১-৪১৮ পৃষ্ঠা
হাদিসনং-১৩,
ঢোল,বাদ্যযন্ত্র, গান হতে নিষেধাজ্ঞা |
عَنْ
أَبِي عَامِرٍ أَوْ أَبِي مَالِكٍ الأَشْعَرِيِّ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم لَيَكُونَنَّ فِي أُمَّتِي قَوْمٌ يَسْتَحِلُّونَ الْخَزَّ وَالْحَرِيرَ
وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ.
অর্থ: অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় হবে; যারা ব্যভিচার, (পুরুষের জন্য) রেশম বস্ত্র, মদ এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার (হারাম হওয়া সত্ত্বেও) হালাল মনে করবে। বুখারি-৫৫৯০; আবু দাউদ-৪০৩৯
প্রাসঙ্গিক আলোচনা : বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের যুব সমাজ
ধ্বংসের অন্যতম কারণ। কারণ, আজ আমরা আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ভুলে আল্লাহ তাআলার নাফারমান, শত্রুদের সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছি যা তিনি
কঠোর নিষেধ করেছেন- তোমরা
সীমালঙ্ঘনকারীদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ো না, অন্যথায় অগ্নি
তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। আর এই অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোনো বন্ধু থাকবে না
এবং তোমরা সাহায্যও পাবে না। সূরা হূদ-১১৩
এছাড়াও অন্য
সাদৃশ্য প্রিয় নবি (ﷺ) নিষেধ করেছেন- যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত হবে। আহমাদ-২/৫০, আবু দাউদ ৪০৩১
গান হারাম : যেসব গান, কবিতা যৌন
উত্তেজক, শিরক, বাজে বা ফাহেশা কথা
থাকে সে গান ও কবিতা বলা ও শোনা জায়েজ নাই। যেমন কুরআনের
বাণী- আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত
করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে
গ্রহণ করে, তারা ঐ সব লোক যাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। সূরা লোকমান-০৬
বেশির
ভাগ তাফসিরকারক ‘লাহওয়াল হাদিস’ বলতে গানকে
বুঝিয়েছেন। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: এটাহচ্ছে গান। ইমাম হাসান বসরি (র.) বলেন: এটা গান ও বাদ্যের ব্যাপারে নাযিল হয়েছ। আব্দুল্লাহ
ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তিন তিনবার কসম খেয়ে বলেছেন, উক্ত আয়াতে ‘অসার বাক্য’ বলতে ‘গান’কে
বুঝানো হয়েছে। অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) এবং জাবের (রা.) ও ইকরামা (রা.) হতে।
হাদিসের
বাণী-(১) মহানবি
(ﷺ) নগ্নতা ও পর্দা-হীনতা
এবং গানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আহমাদ, সহীহুল জামে, হাদিস: ৬৯১৪ গান হলো ‘ব্যভিচারেরমন্ত্র’, অবৈধ ভালোবাসার আজব আকর্ষণ সৃষ্টিকারী যন্ত্র।
(২) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন- গান মানুষের অন্তরে এমনভাবে মুনাফেকি উৎপাদন করে, যেমন পানি শস্য
উৎপাদন করে । বাইহাকি, মিশকাত- ৪১১
আল্লামা নববি
রহ.
বলেন, গান মানুষকে বদকার ও দুশ্চরিত্র বানায়। এর স্বর শোনা মাকরুহ। অপরিচিতা নারীর কণ্ঠস্বর শোনা হারাম।
বাদ্যযন্ত্র
তথা ঢোল-তবলা-মিউজিক হারাম : মিউজিক বা বাজনা শোনাও মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। কারণ, বাজনা-ঝংকারও মানুষের মন মাতিয়ে তোলে, বিভোরে
উদাস করে ফেলে এবং উন্মত্ততায় আন্দোলিত করে। ফলে তা সামাজিক অবক্ষয়, নীতি নৈতিকতার চন্দপতন ঘটায়। (১) হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য
মদ, জুয়া, ঢোল তবলা এবং
বীণা-জাতীয় বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছেন। আহমাদ, মিশকাত-৩৮৬
(২) হজরত আবু উমামা (রা.)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
আমাকে বলেছেন- নিশ্চয় অল্লাহ তাআলা আমাকে দুনিয়বাসীর জন্য রহমত-বরকত এবং হেদায়েত-পথপ্রদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছেন। এবং আমার মহাপরাক্রমশালী প্রভু
সর্বপ্রকারের ঢোল ও যাবতীয় বাদ্যযন্ত্র, দেব-দেবীর
মূর্তিসমূহ, শূলিও
ক্রশ এবং জাহেলি যুগের কু-প্রথা ও কুসংস্কার
নির্মূল ও ধ্বংস করার জন্য আমাকে নির্দেশ করেছেন। আহমদ, মিশকাত-৩১৮
গান ও
বাদ্যযন্ত্রের ভয়াবহতা : গান-বাদ্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেন-(১) অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক
মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে, তাদের মাথার উপরে
বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে এবং নর্তকী নাচবে। আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন এবং বানর ও শূকরে পরিণত করবেন! ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, ত্বাবারানি
গান বা
বাদ্যের আওয়াজ আসলে করণীয় কি ? হজরত নাফে (রহ.) বলেন,
একদিন কোন পথে আমি হজরত
ইবনে ওমর রা. এর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় তিনি
বাঁশির সূর শুনতে পেলেন। তখনই
তিনি নিজের দুই অঙ্গুলী দুই কানের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন । বহুদূর যাওয়ার পর আমাকে বললেন, হে নাফে! এখন কি তুমি শোনতে পাও ?
আমি বললাম না। এবার তিনি উভয় অঙ্গুলী সরিয়ে ফেললেন। অতঃপর
বললেন- একবার আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর
সঙ্গে ছিলাম তখন তিনি বাঁশির আওয়াজ শোনতে পেলেন এবং আমি যা করেছি তিনিও তা
করেছিলেন। নাফে বলেন তখন আমি ছোট ছিলাম। মুসনাদে
আহমদ; সুনানে আবু দাউদ; মিশকাত-৪১১
হাদিস নং-১৪,
দুনিয়ার ধোঁকাবাজী |
. وَعَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ : أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَنْكِبَيَّ ، فَقَالَ : كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّك غَرِيبٌ ، أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَقُولُ : إذَا أَمْسَيْفَلَتَنْتَظِرْ الصَّبَاحَ ، وَإِذَا أَصْبَحْت فَلَا تَنْتَظِرْ الْمَسَاءَ ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِك لِسَقَمِك ، وَمِنْ حَيَاتِك لِمَوْتِك . أَخْرَجَهُ الْبُخَارِيُّ
অর্থ: হজরত
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- আমার কাঁধ ধরে বললেন, দুনিয়াতে মুসাফির বা পথিকের মত অবস্থান কর। আর ইবনে ওমর রা. বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে
আর ভোরের অপেক্ষা কর না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা কর না। তোমার সুস্থতার
অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর
জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর। বুখারি-৬৪১৬;
তিরমিজি-২৩৩৩; ইবনে
মাজাহ-৪১১৪
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: একজন
মুসাফির পথ চলার সময় অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস দেখতে পায়। কিন্তু সেগুলো ভোগ-দখল করার
চিন্তা সে কখনো করতে পারে না। কারণ পথিক পথের জিনিস সংগ্রহ করা শুরু করলে পথ কখনো শেষ হবে না। ফলে সে মনযিলে
মাকসুদে পৌঁছতে পারবে না। অনুরূপ অস্থায়ী দুনিয়ার চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়ে দুনিয়া হাসিলের
চেষ্টা করলে আখেরাতের মনযিল হাসিল করা
যাবে না। আখেরাতের মনযিলে মাকসুদে তারই পৌঁছতে পারবে,যারা দুনিয়ার জীবনকে পথিকের
জীবন মনে করে দুনিয়ার জিন্দেগীতে নিজেদেরকে অহেতুক জড়িত করবে না। সূত্র: আলফিয়্যাতুল
হাদিস
দুনিয়া হলো
পরীক্ষার স্থান : এ দুনিয়া হলো পরীক্ষার হল। জীবন-মরণ এ
জন্যই রেখেছেন যেন পরীক্ষা করতে পারে কী আমল আমরা করি ? যেমন
আল্লাহ তাআলা বলেন- যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন,যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে
শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। সূরা মূলক-০২
দুনিয়ার সবই
অভিশপ্ত তবে? দুনিয়ার সবকিছু অভিশাপ্ত তবে কিছু জিনিস
বাদে যেমন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- নিশ্চয় দুনিয়া এবং এর মধ্যে যা
কিছু আছে সবই অভিশপ্ত। তবে আল্লাহর জিকির এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট সহায়ক অপরাপর আমল, আলিম
এবং তালিবে ইলম ব্যতিত। জামেউত তিরমিজি;
সুনানে ইবনে মাজাহ
আখেরাতের তুলনায়
দুনিয়া খবুই নগণ্য :
মহান আল্লাহ বলেন- (১)
হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কী হল, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহর রাস্তায় (যুদ্ধে) বের হও,
তখন তোমরা যমীনের প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়? তবে
কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ
দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। সূরা তওবা-৩৮
প্রিয় নবি রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- আখেরাতের তুলনায়
দুনিয়ার দৃষ্টান্ত হল তোমাদের কোন ব্যক্তি সমুদ্রের মধ্যে তার আঙ্গুল ডুবালো,
এখন দেখ আঙ্গুলে কতটুকু পানি লেগে এসেছে। মুসলিম
দুনিয়া ক্ষণস্থায়ীর
একটি উদাহরণ : এ সম্পর্কে হজরত মাওলানা মুফতি রশীদ আহমদ লুধিয়ানভী রহ.বলেন, “ বাসের পাদানীতে পা
রাখার তিল পরিমাণ জায়গা নেই। তবুও আরও মানুষ বাসের হ্যান্ডেল ধরে ওঠার চেষ্টা করছে। অথচ এতে আছে নানা রকমের
দুর্ঘটনার ঝুঁকি। কিন্তু মানুষ কি তাতে দমে যাচ্ছে ? যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসে কিংবা অন্য কোন
যানবাহনের মাধ্যমে গন্তব্য স্থলে যাবার প্রানান্তকর চেষ্টা চালান তাদেরকে না হয় একটু
জিজ্ঞেস করুন, ভাই কেন এভাবে কষ্ট করে বাসে গাড়িতে উঠেছেন ?
কেন বিপদের ঝুঁকি নিচ্ছেন ? তারা কি উত্তর দিবেন
তখন ? নিশ্চয় বলবেন, আরে এ-তো পাঁচ সাত মিনিটের ব্যাপর। একটু পরেই পৌঁছে যাচ্ছি গন্তব্য স্থলে। এ কোন ভাবে না কোনভাবে
কেটেই যাবে। সিটে বসেই হোক আর বাদুড় ঝোলা হয়েই হোক এতে আর এমনকি–ই বা কষ্ট।
আসলে আখেরাতের সাথে
তুলনা করলে দুনিয়ার জীবনটাও ঠিক বাসের পাদানীতে ঝোলার মতই স্বল্পস্থায়ী, ক্ষণিকের। প্রকৃত ঠিকানা আখেরাতের
কথা আমরা যতটা ভাববো, আল্লাহর কথা স্মরণ করবো, তার সাথে সম্পর্ক
গড়ে তুলবো, ঠিক ততটুকু অন্তর্দৃষ্টি আখেরাতের ব্যাপারে আমরা লাভ
করবো। দুনিয়ার সুখ-দুখ তখন বাসের পাদানীতে কোন রকম ঝুলে থাকার মতই মনে হবে,
হালকা হয়ে যাবে দুঃখ-কষ্ট। সূত্র: হার পেরেশানিকা
এলাজ-অনুবাদ মাওলানা মুহাম্মাদ বেলাল হাফিজাহুল্লাহু
দুনিয়ার তুচ্ছতা : জাবের
ইবনে আব্দুল্লাহ রা.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
রসুলুল্লাহ (ﷺ) আলিয়া অঞ্চল হতে মদিনায় আসার পথে এক বাজার
দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় রসুলুল্লাহ (ﷺ) -এর উভয় পার্শ্বে বেশ লোকজন ছিল। যেতে যেতে তিনি
ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচচার নিকট পৌছঁলেন। অতঃপর তিনি এর কান ধরে
বললেন, তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের বিনিময়ে উহা নিতে আগ্রহি। তখন উপস্থিত
লোকেরা বললেন, কোন কিছুর বিনিময়ে আমরা উহা নিতে আগ্রহী নই এবং এটি নিয়ে আমরা
কি করব? তখন রসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ বিনা পয়সায়
তোমরা কি উহা নিতে আগ্রহী?...তিনি বলবেন, আল্লাহর শপথ! এ তোমাদের কাছে যতটা নগণ্য, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর তুলনায় আরও বেশি মূল্যহীন। সহিহ মুসলিম-৭১৫০ ই.ফা.
সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে
বর্ণিত । তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন-যদি আল্লাহর কাছে মাছির ডানার সমান দুনিয়ার মূল্য
থাকতো, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে তার (দুনিয়ায়)
এক ঢোক পানিও পান করাতেন না। জামে তিরমিজি-২৩২০;
সুনানে ইবনে মাজাহ-৪১১০
দুনিয়া কামনা করলে
আখেরাত বরবাদ : যে ব্যক্তি দুনিয়া তালাশ-কামনা করলো,
সে আখেরাত খোয়ালো। আর আখেরাত চাইলে দুনিয়া এমনিতে পাওয়া যাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা
বলেন- যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য সে ফসল বাড়িয়ে
দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে তার কিছু দিয়ে দেয় এবং পরকালে তার
কোন অংশ থাকবে না। সূরা শূরা-২০
দুনিয়ার প্রতারণা থেকে
সাবধান : এ ধোঁকার ঘর সম্পর্কে হুশিয়ার করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
(১) হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য; অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে; আর বড় প্রতারক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে। নিশ্চয় শয়তান
তোমাদের শত্রু, অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই
ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়। সূরা ফাতির,৫-৬
(২) পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক
ব্যতীত কিছূই নয়। পরকালের আবাস পরহেযগারদের জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা কি বুঝ না? সূরা আনয়াম-৩২
এখানে পার্থিব
জীবন বলতে দুনিয়ার বিভিন্ন পাপ কর্ম এবং অর্থহীন মোবাহ কর্মে মশগুল হওয়াকে বুঝানো
হয়েছে। অন্যথায় পার্থিব জীবন নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বড় নেয়ামত। সূত্র: তাসফীরে
বুরহানুল কুরআন-৫১২ পৃষ্ঠা
প্রিয় নবিজী(ﷺ) এর দুনিয়া বিমুখতার উদাহরণ :
(১) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- একদা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
চাটাইয়ের উপর ঘুমালেন। অতঃপর ঘুম থেকে উঠলেন, তার দেহের পাশে ছিল চাটাইয়ের
ছাপ, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল,
আমরা যদি আপনার জন্য একটি নরম বিছানার ব্যবস্থা করে দিতাম ! তিনি বললেন দুনিয়ার ভোগ বিলাসের সাথে আমার কীসের সম্পর্ক, আমি কেবল একজন
আরোহী, যে গাছের ছায়াতলে বিশ্রাম নিল, অতপর তা ত্যাগ করে রওয়ান দিল। তিরমিজি-২২৯৯
অন্য রেওয়াতে
আছে- (২) হে ইবনুল খাত্তাব, তুমি কি এ কথায় রাজি হবে না যে, আমাদের জন্য পরকাল
এবং তাদের (কাফের-মুশরিকের)জন্য ইহকাল। আমি বললাম হ্যাঁ। সহিহ মুসলিম-২৭০৪
দুনিয়ার প্রতি বিকর্ষণ
ইসলামের জন্য বক্ষ উন্মুক্ত হওয়ার আলামত : মহান আল্লাহ বলেন-‘ অতএব
আল্লাহ যাকে হেদায়েত করতে ইচ্ছা করেন তিনি তার বক্ষকে (অন্তরকে)
ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন। সূরা আনআম-১২৫
একদা কোন সাহাবি রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) কে জিজ্ঞেস করলেন যে, বক্ষ প্রশস্ত হয় কিভাবে ? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা মুমিনের অন্তরে এক প্রকার
নূর দান করেন, যার ফলে তার বক্ষ তথা অন্তর প্রশস্ত ও উন্মুক্ত
হয়ে যায়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, এর কি কোন লক্ষণ আছে, যদ্বারা সে নূর চেনা যায়? তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ, পরকালে প্রতি আকর্ষণ, দুনিয়া থেকে বিমুখ এবং মৃত্যু আসার আগে মৃত্যুর
প্রস্তুতি গ্রহণ এর আলামত। আর বক্ষ সংকীর্ণ হওয়ার অর্থ হেদায়াত গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত না
হওয়া। সূত্র: তাফসিরে জালালাইন ও তার টীকা; আবুস সাউদ; তাফসিরে বুরহানুল কুরআন-৫৫৯পৃ.
আদম সন্তানের কামনা- বাসনা শেষ হবার নয়: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-কোন আদম সন্তানের এক ময়দান ভরা সোনা লাভ হলে, সে আরও দুই ময়দানের অভিলাষী হবে। তার মুখ একমাত্র মাটির
দ্বারাই ভর্তি হতে পারে। অবশ্য যে আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয় আল্লাহ তাকে গ্রহণ করে নেন। বুখারি-২৪৩২ হামিদিয়া
লাইব্রেরি
এ হাদিসের সমর্থনে
আয়াত হলো- প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল রাখে, এমনকি তোমরা
কবরস্থানে পৌঁছে যাও। সূরা তাকাছুর,১-২
জাগতিক ব্যাপারে
নিজ হতে নিম্নের প্রতি তাকানো উচিত : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- তোমাদের কারও যদি নিজের অপেক্ষা অধিক ধন-সম্পদের অধিকারী উন্নত দেহের অধিকারীর প্রতি নজর হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে নিম্ন স্তরের মানুষের প্রতি দৃষ্টি করবে। বুখারি শরিফ-২৪৫৭
হামিদিয়া লাই.
মুমিনের জন্য এ
দুনিয়া কয়েদখানা আর কাফেরর জন্য বেহেশত: আবু হুরাইরা রা থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, দুনিয়া মুমিনের
জন্য জেলখানা এবং কাফিরের জন্য জান্নাত স্বরুপ। সহিহ মুসলিম-৭৩০৩
আদম সন্তান তিনটি জিনিস
ব্যতীত কোন কিছুরই মালিক নয় : মুতাররিফ রা. -এর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবি (ﷺ) -এর নিকট আসালাম। তখন তিনি { أَلْهَاكُمُالتَّكَاثُرُ } ‘আল হাকুমুত্তা
কাছুর’ পাঠ করছিলেন। তিনি বলেন, আদাম সন্তানগণ বলে, আমার
মাল আমার মাল। বস্তুত হে, আদাম সন্তান! তোমার মাল উহাই যা তুমি
খেয়েছো ও শেষ করে দিয়েছে, পরিধান করেছ ও পুরাতন করে ফেলেছ
এবং দান করেছে ও অব্যাহত রেখেছ। সহিহ মুসলিম- ৭১৫২ ই.ফা.
বিস্তারিত দেখুন- ইয়াহউ উলূমুদ্দীন, কিমেয়ায়ে সাদাত-ইমাম গাজালি রহ.; রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দৃষ্টিতে দুনিয়ার
হাকীকত-শাহ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার রহ.
১৪
নং হাদিস সমাপ্ত
------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাযের পর একবার আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত
করা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন-যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর আয়াতুল কুরসি
(সূরা বাকারার
২৫৫ নং আয়াত) পাঠ করবে, একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন কিছু তাকে বেহেশতে
প্রবেশ করতে বাধা দিবে না। ছিদ্দিক এবং যাহিদ লোকই আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পাঠ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
আরও বলেছেন,কেহ যদি ঘুমাবার সময় এটা পাঠ করে,তারপর ঘুমায়,তবে আল্লাহ তাআলা তাকে, তার প্রতিবেশীকে, তার প্রতিবেশীর প্রতিবেশীকে এবং তাদের আশেপাশের
ঘর-বাড়ীগুলোকে নিরাপদ রাখেন। সূত্র: তাফসিরে
রুহুল বয়ান; সুনানে আবু দাউদ, হাশিয়া জালালাইন-৩৯, সুনানে বাইহাকি, মিশকাতুল
মাছাবিহ-৮৯
টিকা: যে সকল নামাযের পরে সুন্নাতে মোয়াক্কাদা নামাজ আছে, তাতে সুন্নাতের পরে
আয়াতুল কুরসি বা অন্য আমল করবে। কারণ- সুন্নাত
নামাজ ঐ ফরজ নামাযেরই অধীন।
হাদিসনং-১৫, মৃত্যুর কামনা হতে নিধেষজ্ঞা |
روينا في صحيحي البخاري ومسلم،
عن أنس رضي اللّه عنه قال :
قال النبيُّ صلى اللّه عليه وسلم : " لا
يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ المَوْتَ مِنْ ضُرّ أصَابَهُ، فإنْ كانَ لا بُدَّ
فاعِلاً فَلْيَقُلْ : اللَّهُمَّ أحْيِني ما كانَتِ الحَياةُ خَيْراً لي، وَتَوَفَّنِي
إذَا كَانَتِ الوَفاةُ خَيْراً لِي
অর্থ: হজরত আনাস
(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে তবে
যেন যেই বিপদে পৌঁছেছে তার কারণে। অগত্যা তা যদি সে
করতেই চায় তবে যেন বলে অর্থাৎ হে আল্লাহ ! আমাকে জীবত রাখ যে পর্যন্ত আমার জন্য কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দান কর যখন
মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়। বুখারি-৫৬৭১;
মুসলিম-২৬৮০
প্রাসঙ্গিক আলোচনা : দুঃখ-কষ্ট বা অভাব-অনটনের কারণে মৃত্যু কামনা করা নিষেধ। এটা আল্লাহর
ইচ্ছার প্রতি অসন্তুষ্টির লক্ষণ। অবশ্য আল্লাহ তাআলার সাক্ষাতের বাসনায় মৃত্যু কামনা করা নিষেধ নয়। মৃত্যূর স্মরণ
মানুষকে গোনাহ হতে বেঁচে রাখে এবং আল্লাহর স্মরণ করে দেয়। হায়াত আল্লাহ হুকুম,এর অপসারণ
কামনা করা আল্লাহর হুকুমে রাজি না থাকার নামান্তার, তাই
মৃত্যু কামনা বিপদের কারণে বৈধ নয়। মিরকাত
মৃত্যু কামনার বৈধতার ক্ষেত্রসমূহ: ইমাম নববি
রহ. বলেন- দ্বীনী ফিৎনার আশংকায় মৃত্যু কামনা করা মাকরূহ নয় বরং মুস্তাহাব। ইমাম শাফেয়ি ও ওমর
ইবনে আজিজ রহ. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা মৃত্যু
কামনা করতেন। আল্লাহর রাস্তায়ও মৃত্যু কামনা করা বা শাহাদত কামনা করাও
মুস্তাহাব। যেমন তা হজরত ওমর রা. হজরত মুয়াজ রা. প্রভৃতি
সাহাবাদের থেকে বর্ণিত রয়েছে। মুসলিম শরিফে আছে, যে ব্যক্তি সত্য সত্যেই অন্তর থেকে
শাহাদতের কামনা করে তার শাহাদতের সওয়াব অর্জিত হয়।(যদিও সে
বাস্তবে শাহাদত প্রাপ্ত না হয় ) এরুপভাবে মদিনায় মৃত্যু
কামনা করাও মুস্তাহাব। বুখারি শরিফে এ ধরণের দুআ সম্পর্কিত হাদিসে হরেত ওমর রা.থেকে
বর্ণিত আছে। তাফসির মাজাহির সূত্র: ফয়যুল কালাম -৩২৬ পৃ.
মৃত্যুকে বেশি
বেশি স্মরণ করার নির্দেশ: মানুষ পাপ করে দুনিয়ার মহব্বতে। তাই এ দুনিয়া ভালবাসা মন থেকে কমাতে বা দূর করতে পারলে পাপ
থেকে বাঁচা সবার জন্য সহজ। এ কারণেই আমাদের
প্রিয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আদেশ দিয়েছেন মরণের কথা বেশি বেশি স্মরণ করতে। যেমন তিনি বলেন- তোমরা
দুনিয়ার ভোগবিলাস বিনষ্টকারী জিনিস মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর। জামেতিরমিজি-২৩০৭
কবি হজরত খাজা
আজিজুল হাসান মজযূব রহ. বলেন-
“দুনিয়াবাসী মানুষ মাত্রই গাফলত মহা ভুল,
সদা মৃত্যু ধ্যান
রাখিলে আখেরাতে হয় ফুল।
জগত মাঝে পা
রাখিতেই মৃত্যু কহে ডাকি,
আমিও আছি তোমার
সাথে,চলিও ধ্যানে রাখি।
এ মহাসত্যকে (মৃত্যুকে)
পৃথিবীর কেউ অস্বীকার করে না: চিফ
জাস্টিস মুফতি তাকি উসমানি দা.বা. বলেন,
পৃথিবীতে বিভিন্ন আকিদার মানুষ আছে যেমন, কেউ
বলে আল্লাহ একজন কেউ বলে দুইজন/তিনজন আবার কেউ বলে আল্লাহ
বলতে কেউ নেই (There is no god), কেউ রাসূলকে মানে আবার কেউ
মানে না, কেউ পরকালকে বিশ্বাস করে আবার কেউ বিশ্বাস করে
না। কিন্তু পৃথিবীর
এমন কোন মানুষ নাই যে মৃত্যুকে অস্বীকার করে।
মৃত্যুর সময় ও
স্থান কারো জানা নেই : কখন কার মরণ হবে এবং কোথায় হবে এটা এক আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে
না। আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান,অভিজ্ঞতা-আলামতের দ্বারা মানুষ অনেক কিছু সম্ভাব্য বলে দেয়,তা
অনেক সময় ঠিক হয়,
আবার হয় না। কিন্তু মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় ও স্থান কেউ বলতে পারে না। যেমন পবিত্র
কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- কেউ জানে না আগামীকাল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না
কোন দেশে, জায়গায় সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ব
বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। সূরা লোকমান-৩৪
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- যখন আল্লাহ কোন বান্দার জান (রূহ)
কোন ভূখণ্ডে কবজ করতে চান, তখন সেখানে তার কোন
প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন। মুসনাদে আহমদ-১৫৫৩৯
মৃত্যু থেকে
বাঁচার কোন পথ নাই, প্রতিহত করার কেউ নেই: এ চিরন্তন
সত্য মৃত্যু থেকে কেউ রেহাই পাইনি, পাবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ
তাআলা বলেন-(১) হে নবি আপনি বলে দিন! তোমরা
যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি
হবে। সূরা জুমাআ-৮
(২) তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যূ তোমাদের
পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ দূর্গে থাক,তবুও। সূরা নিসা-৭৮
সবচেয়ে বুদ্ধিমান
ও বিচক্ষণ কে? সত্যিকার
বুদ্ধিমান ঐ ব্যক্তি যে দুনিয়া ও পরকালের জীবনের তুলনামূলক চিন্তা-ফিকির করে। মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য আমল করে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- বুদ্ধিমান ঐ ব্যক্তি যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যু
পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। পক্ষান্তরে নির্বোধ ও বেওকুফ এ ব্যক্তি যে নিজের নফসের আনুগত্য করে এবং আল্লাহর তাআলাওপর
ভরসা করে। তিরমিজি; সুনানে
ইবনে মাজাহ
এ সম্পর্কে আল্লাহ
তাআলা বলেন- মুমিনগণ!তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের
জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা
চিন্তা করা। সূরা হাশর-১৮
মৃত্যু হল ছোট
কেয়ামত: কোন বান্দা যখন মারা যায়, তখনই তার প্রতি কেয়ামত তথা
ছোট কেয়ামত কায়েম হয়ে যায়। যেমন, হজরত
আয়েশা রা.বলেন, শক্ত দিলের কিছু বেদুইন
নবিজি (ﷺ) এর কাছে আসত এবং তাঁকে প্রশ্ন করত.কেয়ামত কবে
? রাসূল (ﷺ) তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট
ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে বলতেন, এ যদি জীবত থাকে, তা
হলে এর বুড়ো হওয়ার আগেই তোমাদের কেয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে। বুখারি-৬৫১১
অর্থাৎ এ শিশুটি বার্ধক্যে হওয়ার পূর্বেই তোমাদের মৃত্যু হবে । এ শিশুটি মরণ
তোমাদের সবার পরে হবে ।
পরকাল: পরকাল
বলতে মৃত্যুর জীবনকে বুঝায়। life after life জীবনের পর জীবন। মৃত্যুই মানুষের হায়াতের পরিসমাপ্তি নয়। মৃত্যু হল একটি
সেতু যার মাধ্যমে মানুষ আখেরাতে প্রবেশ করে। এখন মৃত্যুর
ধারাবাহিক জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করব। এক কবি চমৎকার বলেছেন :
“যদি এমন হত আমরা মরে যাবো আর আমাদের ছেড়ে দেয়া হবে
তাহলে মৃত্যু হত
সকল প্রাণীর জন্য শান্তির বার্তা।
কিন্তু কথা হল
আমরা যখন মরে যাবো তখন আমাদের হাজির করা হবে
আর এরপর প্রশ্ন
করা হবে সকল বিষয় সম্পর্কে।”
কবর বা আলামে বরযখ: সাধারণত
মানুষ মারা গেলে তার দেহ, অক্ষত হোক বা পোড়া অংশ হোক মাটির
নিচে, মধ্যে রাখা হয়
,তাকে কবর বলা হয়, আখেরাতের প্রথম
মনযিল হল কবর। মৃত্যুর পর থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত সময়টাকে বলা হয় আলামে
বরযখ বা মধ্যবর্তী জগত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন- অবশেষে যখন তাদের কারো
মৃত্যু আসে, সে বলে, হে আমার রব,
আমাকে ফেরত পাঠান, যেন আমি সৎ কাজ করতে পারি
যা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম।’ কখনো নয়, এটি একটি বাক্য যা সে বলবে। যেদিন তাদেরকে
পুনরুত্থিত করা হবে সেদিন পর্যন্ত তাদের সামনে থাকবে বরযখ। সূরা মুমিনুন, ৯৯-১০০
মৃত্যু
বরণ করার পরপরই মৃত ব্যক্তির উপর ছোট কিয়ামত কায়েম হয়ে যায়।
কবর আজাবের প্রমাণ: কবর আজাব
সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
অতঃপর তাদের
ষড়যন্ত্রের অশুভ পরিণাম থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করলেন আর ফিরআউনের অনুসারীদেরকে
ঘিরে ফেলল কঠিন আজাব। আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত
করা হয়, আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে (সেদিন ঘোষণা করা হবে),
ফিরআউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম আযাবে প্রবেশ করাও। সূরা গাফির ,৪৫-৪৬
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-(১) আমি তোমার কাছে কবরের
আজাব থেকে আশ্রয় চাই। বুখারি-২৮২২
(২) নবি (ﷺ) দুটি কবরের পাশ
দিয়ে অতিক্রমকালে বললেন- এই দুইজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে খুব বড় অপরাধে এদেরকে শাস্তি
দেওয়া হচ্ছে না। এদের একজন চোগলখোরী করে বেড়াত। আরেক জন প্রসাবের সময় পর্দা করত না। বুখারি-মুসলিম
কবরে সওয়াল-জবাব: আবু
হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: যখন তোমাদের
মধ্য হতে কোন মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয় তখন কালো ও নীল বর্ণের দু জন ফেরেশতা আগমন
করে। একজনের নাম
মুনকার অন্যজনের নাম হল নাকির। তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা কী
বলতে? সে বলবে, সে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আমি স্বাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তার বান্দা ও রাসূল। তখন ফেরেশতাদ্বয়
বলবে, আমরা আগেই জানতাম তুমি এ উত্তরই দেবে। এরপর তার কবরকে সত্তর হাত
প্রশস্ত করে দেয়া হয়। সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর তাকে বলা হয়, এখন তুমি
নিদ্রা যাও। সে বলবে, আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাবো, তাদেরকে (আমার অবস্থা সম্পর্কে) এ সংবাদ দেব। তখন ফেরেশতাদ্বয় তাকে বলে, তুমি ঘুমাও
সেই নব বধুর মত যাকে তার প্রিয়জন ব্যতীত কেহ জাগ্রত করে না। এমনিভাবে একদিন
আল্লাহ তাকে জাগ্রত করবেন।
আর যদি সে ব্যক্তি মুনাফেক হয়,
সে উত্তর দেবে আমি তার (রাসূলুল্লাহ) সম্পর্কে মানুষকে যা বলতে
শুনেছি তাই বলতাম। বাস্তব অবস্থা আমি জানি না। তাকে ফেরেশতাদ্বয় বলবে, আমরা
জানতাম, তুমি এই উত্তরই দেবে। তখন মাটিকে বলা হবে তার
উপর চাপ সৃষ্টি করো। মাটি এমন চাপ সৃষ্টি করবে যে, তার
হাড্ডিগুলো আলাদা হয়ে যাবে। কেয়ামত সংঘটনের সময় তার উত্থান পর্যন্ত এ শাস্তি অব্যাহত
থাকবে। জামেউত তিরমিজি
কবরের আজাব
সম্পর্কে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদা : ইমাম নববি রহ. বলেন:
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে কবরের শাস্তি একটি সত্য
বিষয়। আর এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের বহু সংখ্যক প্রমাণ রয়েছে। খারেজি, অধিকাংশ
মুতাযিলা ও মুরজিয়াদের একটি দল কবরের শাস্তির বিষয়টি অস্বীকার করে।তিনি আরো বলেন:
যদি মৃত ব্যক্তির শরীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বা পুড়ে ছাই হয়ে যায় কিংবা কোন
জীব-জন্তুর পেটে চলে যায় তাহলেও কবরের শাস্তি ভোগ করা সম্ভব।যদি বলা হয়, আমরা দেখি
মৃত ব্যক্তিকে কবরে যেভাবে রাখা হয়েছে সেভাবেই আছে। কখন তাকে বসানো হল আর
কিভাবে তাকে শাস্তি দেয়া হল?
এর উত্তরে বলা যায়, আমরা
অনুভব না করলেও এটা ঘটা সম্ভব। যেমন আমাদের
পাশে কোন ব্যক্তি নিদ্রায় থাকে আর সে স্বপ্নে কত
খারাপ অবস্থা ভোগ করতে থাকে বা কত সুখ ভোগ করতে থাকে। অথচ আমরা তার পাশে থেকেও
তার কোন কষ্ট বা সুখ অনুভব করি না বা দেখি না।
এমনিভাবে
নবি কারিম (ﷺ) এর কাছে জিবরিল অহি নিয়ে আসতো। আর রাসূল কষ্ট
করে সে অহী ধারণ করতেন কিন্তু পাশে উপস্থিত সাহাবিগণ তা টের পেতেন না। শরহু মুসলিম- ইমাম নববি
রহ.
কবরের আজাব থেকে
মুক্তির দুআ: নবি কারিম (ﷺ) বলতেন- اللَّهُمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنَ العَجْزِ
والكَسَلِ والجُبْنِ والبُخْلِ والهَرَمِ وعَذابِ القَبْرِ হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি
ব্যর্থতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের আজাব থেকে। সহিহ মুসলিম-৬৩৬৭
কেয়ামত বা
মহাপ্রলয়: এ বিশ্বজগত একদিন সব শেষ হয়ে যাবে, কিছুই
থাকবে না। শুধু মহান রব বাকি থাকবে। যেমন তিনি বলেন-
কেয়ামত যেভাবে
সংঘটিত হবে? মহান আল্লাহ ইসরাফিল আ. এর শিংগায় ফুৎকারে মাধ্যমে কেয়ামত কায়েম করবেন,এতে পাহাড়-পর্বত,সাগর-মহাসাগর, আসমান-যমীন সব ধ্বংস
এবং গ্রহ-নক্ষত্র আলোহীন হয়ে পড়বে। যেমন আল্লাহ বলেন- প্রথম
ফুঁক (১) অতঃপর যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে- একটি মাত্র
ফুঁক। আর যমীন ও পর্বতমালাকে সরিয়ে নেয়া হবে এবং মাত্র একটি আঘাতে এগুলো
চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সে দিন মহাঘটনা সংঘটিত হবে। সূরা হাক্কাহ, ১৪-১৫
(২) যখন
সূর্যকে আলোহীন করে দেওয়া হবে। যখন তারকারাজি মলিন হয়ে যাবে। সূরা তাকভির, ১-২
দ্বিতীয় ফুঁক এতে
সবাই কবর থেকে উঠবে যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে,তখনই তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে চলবে। সূরা ইয়াসিন-৫১
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দুই শিঙ্গায় ফুৎকারের মধ্যে সময় হল চল্লিশ। লোকেরা প্রশ্ন
করল, হে আবু হুরাইরা উহা কি চল্লিশ দিন? আমি (আবু
হুরাইরা) না বললাম। তারা জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি চল্লিশ মাস? আমি বললাম, না। তারা জিজ্ঞেস করল তাহলে
কি চল্লিশ বছর? আমি বললাম, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: এরপর আল্লাহ তাআলা আকাশ থেকে পানি বর্ষণ
করবেন। তখন মানুষেরা জেগে উঠবে যেমন উদ্ভিদ উদগত হয়। মানুষের দেহের কিছুই
অবশিষ্ট থাকবে না। থাকবে শুধু মেরুদণ্ডের একটি হাড্ডি। আর এটি দিয়েই কেয়ামতের
দিন সৃষ্টিজীবকে আবার তৈরি করা হবে। বুখারি ও মুসলিম
কেয়ামতের ভয়ংকর
অবস্থা: এ ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
(১)
হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা
দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিনী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং
প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আজাবই কঠিন। সূরা হজ, ১-২
(২) যখন আসমান বিদীর্ণ হবে। আর যখন নক্ষত্রগুলো ঝরে পড়বে। আর যখন
সমুদ্রগুলোকে একাকার করা হবে। আর যখন কবরগুলো উন্মোচিত হবে। তখন প্রত্যেকে জানতে
পারবে, সে যা আগে পাঠিয়েছে এবং যা পিছনে রেখে গেছে। সূরা ইনফেতার, ১-৫
(৩) আর তারা তোমাকে পাহাড় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বল, আমার রব
এগুলোকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন, তারপর তিনি
তাকে মসৃণ সমতলভূমি করে দিবেন তাতে তুমি কোন বক্রতা ও উচ্চতা দেখবে না। সেদিন তারা
আহ্বানকারীর (ফেরেশতার) অনুসরণ করবে। এর কোন এদিক সেদিক হবে না এবং পরম করুণাময়ের সামনে সকল
আওয়াজ নিচু হয়ে যাবে। তাই মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না। সূরা ত্বহা,১০৫-১০
নবি কারিম (ﷺ) বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আকাশসমূহকে ভাঁজ করে ফেলবেন। অতঃপর তা ডান হাতে ধারণ
করবেন আর বলবেন, আমি বাদশা। কোথায় আজ সীমালংঘনকারীরা? কোথায় আজ
অহংকারীরা? এরপর পৃথিবীগুলোকে বাম হাতে ভাঁজ করে ধরবেন। অত:পর বলবেন, কোথায় আজ সীমালংঘনকারীরা?
কোথায় আজ অহংকারীরা? সহিহ মুসলিম
দিন হবে লম্বা: কেয়ামতের
দিন দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- সেই বিশাল
দিনে। যেদিন মানুষ দাঁড়াবে রব্বুল আলামীনের সামনে। সূরা মুতাফফিফীন, ৫-৬
সূর্য থাকবে
মানুষের খুবই নিকটে: নবি কারিম (ﷺ) বলেন- সুতরাং
সূর্য তাদেরকে দগ্ধ করবে এবং মানুষ তাদের আমল অনুসারে ঘামের মধ্যে ডুবতে থাকবে। কারও ঘাম হবে
গোড়ালী পর্যন্ত;কারও হাঁটু পর্যন্ত; কারও কাঁধ পর্যন্ত
এবং কারও মুখ পর্যন্ত । জামে তিরমিজি-২৪২১
ময়দানে মাহশার বা
হাশরের ময়দান: হাশরের ময়দানে পৃথিবীর শুরু হতে কেয়ামত পর্যন্ত সব মানুষকে
একত্রিত করবেন। যেমন তিনি বলেন- আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে
ছাড়ব না। সূরা কাহাফ-৪৭
আয়েশা
(রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি তিনি বলতেন: কেয়ামতের দিন
মানুষকে উলঙ্গ, খালি পায়ে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্র করা হবে। আমি বললাম, ইয়া
রসূলাল্লাহ! পুরুষ ও নারী সকলকে একত্র করা হবে আর একজন অপর জনের দিকে তাকাবে?
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: হে আয়েশা! সেদিন
অবস্থা এমন ভয়াবহ হবে যে একজন অপর জনের দিকে তাকানোর ফুরসত পাবে না। বুখারি ও মুসলিম
কারা
সেদিন আরশের নিচে ছায়া পাবে? সাত শ্রেণীর ব্যক্তি আল্লাহর
রহমতের তলে ছায়া পাবে। যেমন হাদিসে আছে- আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: কেয়ামত দিবসে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তার
ছায়া ব্যতীত ভিন্ন কোন ছায়া থাকবে না- ন্যায়পরায়ন বাদশা; এমন
যুবক যে তার যৌবন ব্যয় করেছে আল্লাহর ইবাদতে; ঐ ব্যক্তি যার
হৃদয় সর্বদা সংশিষ্ট থাকে মসজিদের সাথে ; এমন দু ব্যক্তি,
যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে
ভালোবেসেছে, এবং বিচ্ছিন্ন হয়েছে তারই জন্য ; এমন ব্যক্তি, যাকে কোন সুন্দরী নেতৃস্থানীয়া এক রমণী
আহ্বান করল অশ্লীল কর্মের প্রতি, কিন্তু প্রত্যাখ্যান করে সে
বলল, আমি আল্লাহকে ভয় করি; এমন ব্যক্তি,
যে এরূপ গোপনে দান করে যে, তার বাম হাত ডান
হাতের দান সম্পর্কে অবগত হয় না। আর এমন ব্যক্তি, নির্জনে
যে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দু-চোখ বেয়ে বয়ে যায় অশ্রুধারা। বুখারি ও মুসলিম
অপর এক হাদিসে এসেছে, আবু ইয়াসার কাআব ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন: যে কোন ঋণগ্রস্ত
বা অভাবী ব্যক্তিকে সুযোগ দেবে অথবা তাকে ঋণ আদায় থেকে অব্যাহতি দেবে আল্লাহ তাআলা
তাকে নিজ ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। সহিহ মুসলিম- ১০৩
আমলনামা প্রদান: দুনিয়াতে
মানুষ যা করে সবকিছু আল্লাহ তাআলা লিপিবদ্ধ-হেফাযত
করেন, হাশরের মাঠে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অর্জিত আমলনামা
প্রদান করা হবে। যেমন মহান রব্বুলালামিন বলেন- আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবালগ্ন করে রেখেছি। কেয়ামতের দিন বের
করে দেখাব তাকে একটি কিতাব,যা সে খোলা অবস্থায় পাবে। তুমি পাঠ করো
তোমার তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসেব গ্রহণের জন্য তুমিই যথেষ্ট। সূরা ইসরা,১৩-১৪
যারা ডান হাতে
আমলনামা পাবে: যাদেরকে ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। তারা সৌভাগ্যশীল
হবে । যেমন কুরআনের বাণী- অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে,সে
বলবে নাও!.......সে সুখী জীবনযাপন করবে, সুউচ্চ জান্নাতে। সূরা আল-হাক্কাহ, ১৯-২০
যারা বাম হাতে
আমলনামা পাবে: আর যাদেরকে তাদের আমলনামা বাম হাতে দেওয়া
হবে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন কুরআনে ইরশাদ
হচ্ছে- যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে,
হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া হত..। সূরা আল-হাক্কাহ, ২৫-২৯
হাউজে কাউসার: হাশরের
মাঠে মানুষ দীর্ঘ সময় অবস্থান করবে। সবাই পিপাসিত থাকবে,তাই
প্রত্যেকে এক ঢোক পানি পান করার জন্য ব্যাকুল থাকবে। প্রত্যেক উম্মত তার
নিজ নিজ নবির নিকট থেকে পানি পান করবে। তবে কতক মানুষ পান
করার সুযোগ পাবে; কতক মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
এর বর্ণনা করতে গিয়ে নবি কারিম (ﷺ) বলেন: আমার হাউজের প্রশস্ততা হবে এক মাসের সমান
দূরত্ব। তার পানি দুধের চেয়েও সাদা, সুঘ্রান মেশকের চেয়ে উত্তম। আর তার পাত্রগুলো
আকাশের নক্ষত্রের মত। যে তা থেকে পান করবে কখনো পিপাসিত হবে না। বুখারি ও মুসলিম
হিসেব-নিকাশ: হিসেব
শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো গণনা করা, দর, কৈফিয়ত দেওয়া ইত্যাদি। দয়ালু আল্লাহ সেদিন নিজ বান্দাদের হিসেব গ্রহণ
করবেন। যেমন তিনি বলেন- নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট। অতঃপর তাদের হিসেব-নিকাশ
আমারই দায়িত্বে। সূরা গাশিয়া, ২৫-২৬
সহজ হিসেব কাকে
বলে ? হজরত আয়েশা রা বলেন, নবি কারিম (ﷺ) কে কোন কোন নামাজে বলতে শুনেছি, হে আল্লাহ
! আপনি আমার নিকট থেকে খুব সহজ হিসেব গ্রহণ করুন। তার নামাজ শেষ হলে
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সহজ হিসেব
কি ? তিনি বললেন, (মহান আল্লাহ)
তার আমলনামা দেখবেন,
এরপর তাকে মাফ করে দিবেন। মুসনাদে আহমদ-২৪২১৫
পক্ষান্তরে তার হিসেব নেওয়া হবে সে আটকে পড়বে।
মিযান বা দাঁড়িপাল্লা: হাশরে
মাঠে আল্লাহ তাআলা মিযান তথা দাঁড়িপাল্লা কায়েম করবেন। যার নেকির পাল্লা ভারি হবে
সে সফলকাম হবে, আর যার পাল্লা হালকা হবে, সে জাহান্নামে
প্রবেশ করবে। যেমন তিনি বলেন-(১) আমি কেয়ামতের দিন
ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম করা হবে না। যদি কোন আমল
সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা হাজির করব এবং হিসেব গ্রহণের জন্য আমিই যথেষ্ট। সূরা আম্বিয়া-৪৭
(২) অতত্রব যার পাল্লা ভারি হবে,সে সুখী জীবন যাপন করবে। আর যার পাল্লা
হালকা হবে, তার ঠিকানা হাবিয়া। সূরা করিয়াহ, ৬-৯
শাফায়াত: শাফায়াত
শব্দের বাংলা অর্থ সুপারিশ করা। আর পারিভাষিক অর্থ হলো অন্যের জন্য কল্যাণের
আবেদন করা। শরীয়তের পরিভাষায় বলা হয়, কেয়ামতের মাঠে আল্লাহর অনুমতিক্রমে যেসব
ব্যক্তিবর্গ (নবি-রাসূল, ফেরেশতা, আলেম-হাফেজ, আল্লাহর নেক বান্দাগণ, কুরআন-সিয়াম
বা রোজা, দেখুন লেখকের কিতাব মহান আল্লাহ নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা -১৫ পৃ.) গোনাহগার
মুসলমানকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন- দয়াময়
অল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন, সে
ছাড়া কারও সুপারিশ সে দিন উপকারে আসবে না। সূরা ত্বহা-১০৯
আবু হুরাইরা (রা.)
থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন: প্রত্যেক নবির রয়েছে কিছু দুআ যা অবশ্যই কবুল করা হয়। সকল নবি এ দুআগুলো
করার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করেছেন। কিন্তু আমার উম্মতকে কেয়ামতের দিন শাফাআত করার জন্য এ দুআগুলো
আমি ব্যবহার করিনি। ইনশাআল্লাহ সেই শাফাআত পাবে আমার অনুসারী ঐ সকল
ব্যক্তিবর্গ যারা কখনো আল্লাহ তাআলার সাথে কোন কিছু শরীক করেনি। বুখারি ও মুসলিম
বিস্তারিত
দেখুন- পরকাল (মহাপ্রলয়-২)ড. মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান
আরিফি হাফিজাহুল্লাহু
পুলসিরাত কী: পুলসিরাত
হচ্ছে হাশরের মাঠের পাশে দোযখের ওপর স্থাপিত একটা সেতু ।
এটা কি সবার পার
হতে হবে:
হ্যাঁ যা অতিক্রম সবাই করবে, এটা মহান রবের
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। মুত্তাকি-নেককার লোকেরা পার হবে কাফের-মুশরিক-মুনাফিক, নাফারমানরা নিচে
তথায় জাহান্নামে পতিত হবে । যেমন আল্লাহ তাআলা
বলেন- তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তথায় পৌছবে (পুলসিরাতে)
না । এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য সিদ্ধান্ত । অতঃপর
পরহেযগারদেরকে উদ্ধার করব এবং জালেমদেরকে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেব । সূরা মারইয়াম,৭১-৭২
সিরাতের বৈশিষ্ট্যাবলি: পুরসিরাত
তলোয়ারের চেয়ে ধারালো, চুলের চেয়েও চিকন, সাদান উদ্ভিদের কাঁটার মত অসংখ্যা কাঁটা । এর দৈর্ঘ্য এক মাসের রাস্তা এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন
। যেমন হাদিসে এসছে- সাহাবা
কেরাম, জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ!
পুলসিরাত কী জিনিস? তিনি বললেন, এটা এমন এক স্থান (পথ), যেখানে
পা পিছলে যায় । আরও রয়েছে নানা প্রকার লোহার শলা ও কাঁটা, যেগুলো
দেখতে নজদের সাদান গুল্মের কাঁটার মত । সহিহ মুসলিম-৪৭২
পুলসিরাত পার
হওয়ার গতি: এটা অতিক্রম করার গতি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলছেন- ঈমানদাররা এই পথ কেউ চোখের পলকে, কেউ
বিদ্যুতের গতিতে, কেউ বায়ুর গতিতে,কেউ
দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে,কেউ উটের গতিতে পার হয়ে যাবে। কেউ অক্ষত
অবস্থায় পার হয়ে যাবে;কেউ ক্ষতবিক্ষত হয়ে। কেউ কাঁটাবিদ্ধ হয়ে দোযখে
নিক্ষিপ্ত হবে। এমন কি শেষজন পার হবে এভাবে যে, তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে
যাওয়া হবে। বুখারি-৭৪৩৯
পুরসিরাতে
সাহায্যকারী আমল কি? এ কঠিন মুহূর্তে এমন
কিছু আমল আছে যা সেখানে পুলসিরাতে উপস্থিত থাকবে। এ সম্পর্কে রাসূলে আরারি (ﷺ) বলেন- আমানত ও আত্মীয়তাকে উন্মক্ত করে দেওয়া হবে।এ দুটি আমল
পুলসিরাতের দুই পাশে ডানে ও বামে দাঁড়িয়ে যাবে। সহিহ মুসলিম-৫০৩
আরাফবাসীদের পরিচয়: আরাফ হল,
জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে একটি প্রাচীর। জান্নাতে
প্রবেশের প্রতীক্ষায় কিছু সময়ের জন্য যারা সেখানে অবস্থান করবেন তাদের-কে বলা হয় আরাফবাসী। আল্লাহ তাআলা বলেন: এবং
আরাফের উপর থাকবে কিছু লোক, যারা প্রত্যেককে তাদের চিহ্ন
দ্বারা চিনবে। আর তারা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, তোমাদের
উপর সালাম,তারা এখনও বেহেশতে প্রবেশ করেনি তারা আশায় রয়েছে। সূরা আল আরাফ-৪৬
আররি ভাষায় উঁচু
স্থানকে আরাফ বলা হয়: আরাফবাসী কারা হবে এ সম্পর্কে তাফসিরবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে সকলের মতামত
একত্র করলে যে ফলাফল বের হয়ে আসে তা হল, যাদের সৎকর্ম ও পাপাচারের পরিমাণ সমানে
সমান হবে তারাই হবে আরাফবাসী। সাহাবি হুযাইফা, ইবনে আব্বাস, ইবনে
মাসউদ (রা.) প্রমূখের মতামত এ রকমই। তাফসিরে ইবনে কাসির
অনুসারীদের থেকে
শয়তানের দায়মুক্তি: আর যখন যাবতীয় বিষয়ের ফয়সলা হয়ে যাবে, তখন
শয়তান বলবে, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলেন সত্য
ওয়াদা। আর তোমাদের উপর আমার কোন আধিপত্য ছিল না, তবে আমিও তোমাদেরকে ওয়াদা
দিয়েছিলাম, এখন আমি তা ভঙ্গ করলাম। তোমাদেরকে দাওয়াত
দিয়েছি, আর তোমরা আমার দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ। সুতরাং তোমরা আমাকে
তিরস্কার করো না, বরং নিজদেরকেই তিরস্কার কর। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী
নই, আর তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। ইতিপূর্বে তোমরা আমাকে
যার সাথে শরীক করেছ, নিশ্চয় আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় যালিমদের জন্য
রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব। সূরা ইব্রাহীম-২২
জাহান্নাম কি? মহান রবের অসন্তুষের ঠিকানা হলো
জাহান্নাম। এটা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে একটা মাখলুক। যার জ্বালানি-লাকড়ি হবে
মানুষ ও পাথর। আল্লাহ এতে কাফের-মুশরিক-মোনাফেক ও
পাপিষ্ঠদেরকে বিভিন্ন ধরণের কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি প্রদান করবেন। দোযখের সংখ্যা হলো
সাতটি (৭) ১.
জাহান্নাম ২. সাঈর ৩. সাকার
৪. জাহিম ৫. লাজা ৬. হুতামা ৭. হাবিয়া
জাহন্নামের
শাস্তির ধরণ: মহান আল্লাহ যেমন দয়ালু তেমনি শাস্তি দানে বড় কঠোর। পাপের স্তরের
কারণে শাস্তিরও ম্তর থাকবে। মোনাফেকরা জাহান্নামের তলদেশে অবস্থান করবে। আর সর্বনিস্ন
শাস্তি হলো দোযখের আগুনের জুতো পরিধান করানো। নিম্নে আজাবের ধরণ বর্ণনা
করা হলো:
শিকলে বাঁধা থাকবে: আল্লাহ তাআলা
বলেন: আর সে দিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে
আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে। সূরা ইবরাহিম, ৪৯-৫০
পোশাক: আল্লাহ তাআলা
বলেন- অতএব যারা কাফের, তাদের জন্য
আগুনের পোশাক তৈরি করা হয়েছে। সূরা হজ-১৯
তাদের খাবার: তাদের
খাদ্য হবে রক্ত, পুঁজ,
গরম পানি ও যাক্কুম গাছ, কাঁটাযুক্ত গুল্ম। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-(১)নিশ্চয় যাক্কুম বৃক্ষ পাপীর খাদ্য; গলিত তামার মত,
উদরসমূহে ফুটতে থাকবে। ফুটন্ত পানির মত (বলা হবে) ওকে ধর, অতঃপর
তাকে জাহান্নামের মধ্যস্থলে টেনে নিয়ে যাও। তারপর তার মাথার উপর
ফুটন্ত পানির আজাব ঢেলে দাও। (বলা হবে) তুমি আস্বাদন কর, নিশ্চয় তুমিই সম্মানিত,
অভিজাত। নিশ্চয় এটা তা-ই যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে। সূরা আদদুখান, ৪৩-৫০
(২) আর তারা বিজয় কামনা করল আর ব্যর্থ হল সকল স্বৈরাচারী হঠকারী। এর সামনে রয়েছে
জাহান্নাম, আর তাদের পান করানো হবে গলিত পুঁজ থেকে। সে তা গিলতে চাইবে এবং
প্রায় সহজে সে তা গিলতে পারবে না। আর তার কাছে সকল স্থান থেকে মৃত্যু ধেঁয়ে আসবে, অথচ সে
মরবে না। আর এর পরেও রয়েছে কঠিনআজাব। সূরা ইবরাহিম,১৫-১৭ জাহান্নামীদের আকার-আকৃতি: দোযখীদের আকার-আকৃতি
সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলছেন-(১)
কাফেরের দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব দ্রুতগামী বাহনে তিন
দিনের রাস্তা। বুখারি-৬৫৫১
(২) কাফেরের দাঁত হবে উহুদের মত। তার চামড়ার পুরুত্ব তিনদিনের রাস্তা। মুসলিম-৭৩৬৪
(৩) আগুন দোযখীকে ঝলসে ফেলবে। ফলে তার ওপরে ঠোঁট জড় হতে হত মাথার মাঝখান
পর্যন্ত ওঠবে। আর নীচের ঠোঁট ঝুরতে ঝুলতে নাভী পর্যন্ত নামবে। মুস্তাদরেক হাকেম-২৯৭১
আগুন তাদেরকে দগ্ধ
করবে: আল্লাহ তাআলা বলেন-(১) আগুন
তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারণ করবে। সূরা মুমিনূন-১০৪
(২) আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে,
তখন আবার আমি তা পাল্টে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে
তারা আজাব আস্বাদন করতে থাকে । সূরা
নিসা-৫৬
(৩) এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন,যা হৃদয় পর্যন্ত পৌছবে। সূরা হুমাজাহ,৬-৭
জাহান্নাম
থেকে মুক্তির দোআ: . رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً
وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ِ অর্থ: হে আমাদের রব! দুনিয়াতে
আমাদেরকে কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতে ও কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে মুক্তি দিন
দোযখের আজাব থেকে। সূরা বাকারা-২০১
اللَّهُمَّ إِني أعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمنْ عَذَابِ
القَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ المَحْياوالمَماتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَة المَسِيحِ
الدَّجَّالِ "
.
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা
আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের আজাব থেকে। আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের
আজাব থেকে। আপনার থেকে আশ্রয় চাই মাসীহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে এবং আপনার কাছে আশ্রয় চাই
জীবন-মরণের ফেতনা থেকে। সহিহ মসলিম-১৩৬১
জাহান্নাম থেকে
মুক্তির ছোট আমল: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলছেন- তোমরা
জাহান্নাম থেকে বাঁচো, একখণ্ড খেজুরের মাধ্যমে হলেও। যদি তুমি তা না পাও,তা হলে
একটি ভাল কথার মাধ্যমে। বুখারি-১০৫৮
জান্নাত কি ? দয়াময়
রবের খুশির স্থান, বহিঃপ্রকাশ হলো জান্নাত। এতে রয়েছে হাজার
নাজ-নেয়ামত যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কান কখনো শুনেনি,
মন কখনো কল্পনা করেনি। সবচেয়ে নেয়ামত হলো সকল নেয়ামতের স্রষ্টা মহান
রব্বুলামীনের দিদার। জান্নাতের সংখ্যা হলো আটটি (৮) ১,দারুস সালাম ২.দারুল মুকাম ৩. জান্নাতুল
আদন ৪.দারুল খুলদ ৫,জান্নাতুন নাঈম ৬.জান্নাতুল মাওয়া ৭.জান্নাতুল আকার৮.জান্নাতুল ফেরদাউস নিম্নে জান্নাতের নেয়ামতের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
জান্নাতে কে সর্বপ্রথম প্রবেশ করবে: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আমি কেয়ামতের দিন জান্নাতের গেটে এসে জান্নাত খুলে দিতে বলবো। তখন দারোয়ান প্রশ্ন করবে, আপনি কে? আমি বলবো,
আমি মুহাম্মদ। তখন সে বলবে, আমাকে নির্দেশ দেয়া আছে যে, আপনার পূর্বে আমি যেন কারো জন্য জান্নাতের দরজা খুলে না দেই। সহিহ
মুসলিম
সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে: এক ব্যক্তি জাহান্নামের দিকে মুখ করা
অবস্থায় থাকবে। তখন সে বলবে, হে আমার প্রভূ! জাহান্নামের গরম বায়ু আমাকে
শেষ করে দিল। আমার চেহারাটা আপনি জাহান্নাম থেকে অন্য
দিকে ফিরিয়ে দিন। সে এভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে বার বার
প্রার্থনা করতে থাকবে। আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার এ প্রার্থনা কবুল হলে এরপর তুমি যেন
আর কিছু না চাও। সে বলবে, আপনার মর্যাদার কসম করে বলছি, এরপর আপনার কাছে আর কিছু চাবো না।
তখন জাহান্নামের দিক থেকে তার চেহারা ফিরিয়ে দেয়া হবে।
তারপর সে আবার বলতে শুরু করবে, হে আমার প্রভূ! আমাকে একটু জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করে দেন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে না? ধিক
হে মানব সন্তান। তুমি কোন কথা রাখো না। কিন্তু এ ব্যক্তি প্রার্থনা করতেই থাকবে। আল্লাহ তাআলাবলবেন, আমার তো মনে হয় তোমার এ দাবী পুরণ করা হলে আবার অন্য কিছু
চাইবে। সে বলবে, আপনার মর্যাদার কসম করে বলছি, এরপর আপনার কাছে আর কিছু চাইবো না।
সে আর কিছু চাইবে না এ শর্তে আল্লাহ তাআলাতাকে জান্নাতের গেটের নিকটবর্তী করে
দিবেন। যখন সে জান্নাতে গেটের দিকে তাকিয়ে
জান্নাতের সুখ শান্তি দেখবে তখন কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার প্রার্থনা করতে শুরু করবে, হে আমার প্রভু আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে
দিন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে না?
ধিক হে মানব সন্তান।
তুমি কোন কথা রাখো না। সে বলবে, হে আমার প্রভূ আমাকে আপনার সৃষ্টির মধ্যে
সবচেয়ে দুর্ভাগা করে রাখবেন না। এভাবে সে
প্রার্থনা করতে থাকবে। অবশেষে আল্লাহ হাসি দিবেন। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। বুখারি ও মুসলিম
যা চাবে তাই পাবে: আবু
হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন
বস্তু প্রস্তুত করে রেখেছি যা কোন চোখ দেখেনি।
আর যা কোন কান শোনেনি। এবং কোন মানুষের অন্তর তা কল্পনা করতে
সক্ষম হয়নি। বুখারি ও মুসলিম
জান্নাতের গেট কেমন হবে: জান্নাতের আটটি গেট রয়েছে। গেটগুলো এত বিশাল যে, একটি গেটের দুপাশের মধ্যে দুরত্ব হল মক্কা থেকে হিজর পর্যন্ত
(প্রায় ১১৬০ কিলোমিটার) অথবা মক্কা থেকে বসরা পর্যন্ত (প্রায় ১২৫০ কি.মি) প্রত্যেক
সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের তাদের আমাল অনুযায়ী বিশেষ বিশেষ গেট থেকে আহবান করা হবে। যে
ছদকাহ করেছে তাকে ছদকার গেট থেকে আহবান করা হবে। যে সওম রেখেছে তাকে রাইয়ান নামক গেট থেকে
আহবান করা হবে।
খাওয়া-দাওয়া করবে কিন্তু মানবিক প্রয়োজন হবে না: জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন, আমি নবি কারিম (ﷺ)
কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: জান্নাতবাসীরা জান্নাতে খাবে,
পান করবে কিন্তু তারা থুথু ফেলাবে না, প্রসাব
করবে না, পায়খানা করবে না, বমি করবে না। এ কথা শুনে সাহাবিগণ প্রশ্ন করলেন, তাহলে খাবার দাবার কোথায় যাবে? তিনি বললেন: ঢেকুর হয়ে মৃগনাভীর সুগন্ধ নিয়ে বের হয়ে যাবে। যেভাবে শাস-প্রশ্বাস নেয়া হয়, এভাবেই জান্নাতবাসীরা আল্লাহ তাআলার তাসবিহ
ও তাহমিদ করতে থাকবে। সহিহ মুসলিম
জান্নাতের তাঁবু: এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে- জান্নাতে
মুমিনদের জন্য মুক্তা খচিত তাঁবু থাকবে।
যার প্রশস্ততা হবে ষাট মাইল। সেখানে
মুমিনদের পরিবার পরিজন একত্র হবে ও পরস্পরে দেখা সাক্ষাত করবে। বুখারি ও মুসলিম
জান্নাতের নদ-নদী : এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার অবস্থা
নিম্নরুপ তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, নির্মল দুধের ঝর্নাধারা,যার স্বাদ
পরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু শরাবের নহরসমূহ এবং
আছে পরিশোধিত মধুর ঝর্নাধারা। সূরা মুহাম্মাদ-১৫
খাদ্য: আল্লাহ
তাআলা বলেন-
(১) তথায় তাদের জন্য আছে রকমারি ফলমূল আর
তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। সূরা মুহাম্মাদ-১৫
(২) এতে রয়েছে প্রচুর ফলমূল, যা শেষ হবার নয় এবং
নিষিদ্ধও নয়। সূরা ওয়াকিয়া, ৩২-৩৩
(৩) তাদের পালনকর্তা তাদেরকে পান করাবেন,
পবিত্র শরবত। সূরা ইনসান-২১
প্রথম খাবার কি হবে? এক সাহাবির প্রশ্নের জবাবে নবি কারিম (ﷺ)
বললেন, মাছের বর্ধিত কলিজা।
মুসনাদে আহমদ-১২৩৮৫
তাদের বাসন: জান্নাতীদের বাসন-কাসন হবে সোনা-রুপার। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-তাদের কাছে পরিবেশন করা সোনার থালা ও পান
পাত্র। সূরা যুখরুফ-৭১
তাদের পোশাক: জান্নাতীদের পোশাক সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- নিশ্চয় খোদাভীরুরা নিরাপদ স্থানে থাকবে, তারা পরিধান
করবে চিকন ও পুরু রেশমী বস্ত্র, মুখোমুখী হয়ে বসবে। সূরা দুখান, ৫১-৫৩
তাদের হুর-গিলমান: আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের কাছে থাকবে
আনতনয়না, ডাগরচোখা।
তারা যেন আচ্ছাদিত ডিম। সূরা সফফাত, ৪৮-৪৯ নবি কারিম (ﷺ)
বলেছেন- তাদের প্রত্যেকের জন্য দুজন করে স্ত্রী
থাকবে, যাদের পায়ের হাড়ের মজ্জা গোশত ভেদ করে দেখা যাবে। সহিহ
মুলিম-৭৩৩
মহা নেয়ামত আল্লাহ তাআলার দিদার লাভ: আল্লাহ পাক বলেন, সেদিন
অনেক মুখমণ্ডল হবে উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে। সূরা আল কিয়ামাহ, ২২-২৩
বিস্তারিত দেখুন-মৃত্যুর পূর্বে ও
পরে-মাও. আশেকে এলাহি বলুন্দ শহরী রহ.-এসহাক প্রকাশনী, পরকাল-ড.মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আরিফি দা.বা. হুদহুদ
(১৫ নং হাদিস সমাপ্ত)
-------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
আল্লাহ তাআলা বলেন- বুদ্ধিমান হলো সে সমস্ত লোক, যারা
দাঁড়িয়ে, বসে শোয়া অবস্থায় অর্থাৎ সর্বাবস্থায় আল্লাহকে
স্মরণ করে এবং আসমান-যমিন সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে। (তারা বলে) পরোয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করোনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদেরকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। সূরা আলে ইমরান-১৯১
টিকা: তাসবিহ-তাহলিলের দ্বারা আল্লাহকে স্মরণ করা। সূত্র: তাফসিরে জালালাইন
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
ইরশাদ করছেন-একশতবার (১০০ বার) সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী পাঠ করবে, তার সমস্ত পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তা সমুদ্রের বুদবুদ (ফেনা) পরিমাণ অসংখ্যা হলেও। বুখারি-মুসলিম
** অপর এক হাদিসে এসেছে- দু’টি কথা মুখে উচ্চারণে খুব হালকা, মিযান-পাল্লায় খুব ভারি
এবং অল্লাহ তাআলার নিকট বেশি প্রিয়। ১. সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী ২. সুবহানাল্লাহিল
আযীম। বুখারি; মুলিম; মিশকাত-২০০
হাদিস নং-১৬, এলেম(জ্ঞান) ও আলেমের মর্যাদা |
معاوية
بن أبي سفيان يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلميقول مَنْ
يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ-ترمذ
অর্থ: আল্লাহ
যার মঙ্গল কামনা করেন তাকে দ্বীনের ব্যুৎপত্তি দান করেন। বস্তুত আমি বণ্টনকারী এবং দাতা হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। বুখারি-৩১১৬;
মুসলিম-১০৩৭; তিরমিজি-২৩০; মুসনাদে আহমদ-১৬৮৩৪
এলেমের আভিধানিক
অর্থ: এলম শব্দটি আরবি শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- জ্ঞান, পরিচয় লাভ করা, অনুধাবন করা, উপলব্ধি
করা, জানা, বুঝা করা ইত্যাদি।
পারিভাষিক অর্থ: আবদুল্লাহ
ইবন মাসউদ রা. মতে, বেশি বর্ণনা করা ও
অধিক পরিমাণ আক্ষরিক জ্ঞান হাসিল করার নাম এলম নয়, বরং এলম
হচ্ছে আল্লাহ তাআলার ভয়ের নাম। বস্তুত এলম হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সিফাত বা অনন্য
গুণাবলিসমূহের একটি, যা অর্জনকারীকে
মর্যাদার আসনে সমাসীন করে।
এলেমের প্রকারভেদ : ইলেম তিন
প্রকার। যথা:
১.ফরযে আইন
২.ফরযে
কিফায়া
৩.নফল এলম
১.ফরযে আইন: যে
বিশ্বাস, আকীদা ও আমল মুসলমানের ওপর ফরজ তা হাসিল করাও ফরজ। যেমন, ঈমানের
মুফাসসাল, হালাল-হারাম, পাক-পবিত্রতা। উদাহরণ: যে নামাজ
আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে, হ্জ্জ
করবে, ব্যবসা-বাণিজ্য, বেচা-কেনা করবে উপরোক্ত ব্যক্তি তার সংশ্লিট বিষয়ে
জ্ঞান অর্জন করা ফরযে আইন।
কাজি সানাউল্লাহ পানিপথি রহ. তার বিখ্যাত তাফসিরে মাজহারি উল্লেখ
করেন- করণীয় ও বর্জনীয় বাতেনি আমলসমূহ যেগুলোর জ্ঞানকে এলমে
তাসাউফ সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাও প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।
এ ক্ষেত্রে ফরজ
আইন বলতে, বিশুদ্ধ আকাইদ, সবর-শোকর,
কানাআত, গর্ব-অহংকার,
হিংসা-বিদ্বেষ, কৃপণতা,
কুধারণা, আত্মগরিমা, দুনিয়ার
মোহ ইত্যাদি যা কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে হারাম। এসব বিষয়ের স্বরূপ
ও প্রকৃতি অবগত হওয়া গ্রহণীয় বিষয় বিষয়সমূহ অর্জন করা এবং হারাম ও নিষিদ্ধ
বিষয়সমূহ বর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য
ফরজ। এ সকল বিষয়ের ওপরই এলমে তাসাওউফের ভিত্তি যা শিক্ষা করা সকলের জন্য ফরযে আইন। সূত্র: দৈনন্দিন
জীবনে ইসলাম-ইসলামিক ফাউণ্ডশেন ।
ফরযে কিফায়া: যে সমস্ত এলম
জরুরি বটে, কিন্তু
সকলের জন্য ব্যক্তিগতভাবে অর্জন
করা আবশ্যক নয়, সমাজের এক শ্রেণী বিশেষভাবে তা অর্জন করলেই
গোটা সমাজ দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়। এ এলমকে
ফরযে কিফায়া পর্যায়ের এলম বলা হয়ে থাকে। যেমন: গোটা
কুরআনুল কারিমের পূর্ণ জানা বরং কুরআনের বর্ণিত সকল বিষয়াদি অনুধাবন করা, সমুদয় হাদিসের
মর্ম উপলদ্ধি করা, হাদিস শাস্ত্রের বুৎপত্তি অর্জন এবং কুরআন
ও হাদিসের আলোকে গৃহীত বিধানবলীর জ্ঞান লাভ করা এতো ব্যাপক ও
গুরুত্বপূর্ণ কাজ যে, সারা জীবন ব্যয় করেও এতে পূর্ণ জ্ঞান
করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপর। তাই ইসলামি শরীয়তে
একে ফরযে কিফায়া বলে গণ্য করা হয়েছে। সূত্র: তাফসিরে মাআরিফুল কুরআন(সংক্ষিপ্ত), ৫৯৭ পৃ.
চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান প্রভৃতিও এ পর্যায়ের
পড়ে। মুয়ামালাত, অসিয়্যত ও ফারাইয বা উত্তারিধকার বণ্টনের জন্য প্রয়োজনীয়
বিদ্যাও এ পর্যায়েরেই এলম।
নফল এলম: নফল অর্থ অতিরিক্ত। শরীয়তের দৃষ্টিতে ফরজ, ওয়াজিব বা
অত্যাবশ্যক পর্যায়ের নয় অথচ এর বিনিময়ে
সওয়াব লাভ হয়, এগুলোর এলম হাসিল করা নফল। অর্থাৎ নফল সংক্রান্ত
বিষয়াদির এলম হাসিল করা নফল।
বর্জনীয় বিষয়: বিদ্যা
নামে কিছু কিছু এমন আছে যেগুলো মানবাত্মা
তথা মানবজাতির জন্য রীতিমত ক্ষতিকর। অশ্লীল শিক্ষা ও
সাহিত্য-অপসংস্কৃতি, যাদু-টোনা,
ভবিষ্যৎ বাণী, কূটতর্ক।
অশ্লীল সাহিত্য: লজ্জাশীলতা
ঈমানের অংশ। কিন্তু এমনকিছু বইপত্র ও পত্রিকা ম্যাগাজিন রয়েছে যেগুলোতে
অশ্লীল কথাবর্তা ও কুরুচিপূর্ণ ছবিতে
ভরপুর। এগুলোকে ইংরেজিতে ‘পর্ণোগ্রাফি’ বলা হয়ে থাকে। অধুনা সিনেমা, ভিসিআর,
ডিস এন্টিনা এবং মোবাইলের সুবাদে বিদেশী ন্যক্কারজনক যৌনতাপূর্ণ
ব্লু ফিল্ম মহামারীর মত কিশোর-কিশোরীদের চরিত্র নষ্ট করছে। আপত্তিকর কবিতা, গল্প,
নাটক, উপন্যাস সাহয্যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইসলামি
জীবনবোধ ও আকীদা সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলা হচ্ছে। যে সমস্ত সাহিত্যকর্ম
আমাদের তরুণ-তরুণীদেরকে বিপথ ও হীনমন্যতাগ্রস্ত করে তোলে,এগুলো অবশ্যই বিষতুল্য পরিত্যজ্য। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজিদে
ইরশাদ হচ্ছে-
যারা মুমিনের মধ্যে
অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে মর্মান্তিক শাস্তি
এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। সূরা নূর-১৯
যাদু-টেনা,
ভবিষ্যৎ গণনা: যাদু-টোনা এমন অদ্ভুত
কর্মকাণ্ড, যাতে কুফর, শিরক এবং
পাপাচার অবলম্বনে জিন ও শয়তানের সন্তুষ্ট করে তাদের সাহায্য নেওয়া হয় এবং মানুষের
ক্ষতিসাধন করা হয়। এ জাতীয় যাদু-টোনা
কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চার মাধ্যমে বা হাতের রেখার ওপর ভিত্তি করে ভবিষৎবাণী করা
শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। কেননা ভবিষ্যতের নিশ্চিত জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে। এ জন্যই রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- যে
ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর কাছে ভবিষ্যত
সম্পর্কে কোন কিছু জানতে চায় চল্লিশ দিন
পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হয় না। মুসলিম, মিশকাত-৩৯৩ সূত্র:
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম-ইসলামিক ফাউণ্ডশেন।
এলেমের গুরুত্ব ও
ফযিলত: আল্লাহ তাআলার বাণী-
(১) বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি
সমান ? সূরা যমুার-০৯
(২) তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত প্রদান করেন এবং যাকে হিকমত প্রদান করা হয় তাকে
প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। সূরা বাকারা-১৬৯
রাসূলের বাণী-
(১) এলম অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলিমের (নারী-পুরুষ সবার ) ওপর ফরজ। সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৪
(২) যে ব্যক্তি এলম অন্বেষণের পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের
পথ সহজ করে দেন। মুসলিম-২৬৯৯
(৩) মৃত্যুর পর মুমিনের সঙ্গে যেসব আমাল যুক্ত হবে সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে এলম,
যা সে অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং যার প্রচার-প্রসার করেছে; পুণ্যবান সন্তান যে সে রেখে গিয়েছে; কুরআন যার সে
উত্তরাধিকারী বানিয়েছে; মসজিদ যা সে বানিয়েছে; মুসাফিরদের আশ্রয়কেন্দ্র যা সে নির্মাণ করেছে; নদী
যা সে খনন করেছে এবং সাদাকা যে সে নিজ জীবদ্দশায় ও সুস্থতাকালে আপন সম্পদ থেকে দান
করেছে- এসব তার মৃত্যুর পর তার সঙ্গে যুক্ত হবে। ইবনে মাজাহ-২৪২;
সহিহ ইবন খুযাইমা: ২৪৯০,
(৪) আল্লাহর যে ঘরে মানুষ
একত্রিত হয় এবং তার কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে এলেমের দরসে লিপ্ত হয় সেই ঘরে
রহমত অবতীর্ণ হয়, ফেরেশতারা সেই ঘরকে বেষ্টন করে নেন এবং আল্লাহ তাআলা তার আশে পাশে
যারা আছেন (ফেরেশতারা) তাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন। সহিহ মুসলিম-২৬৯৯
(৫) যে ব্যক্তি এলম অন্বেষণের জন্য বের হয় আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের রাস্তা
সহজ করে দেন। ফেরেশতারা তার সম্মানে নিজেদের পাখা বিছিয়ে দেয়। আলেমের জন্য
আসমান-জমিনের সবাই দুআ করতে থাকে। এমনকি সাগর ও খাল-বিলের মাছ ও তার জন্য দুআ করতে থাকে...। সুনানে ইবনে
মাজাহ (৬) মানুষ যখন মারা যায় তখন তিনটি আমাল ছাড়া তার
যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়। আমল তিনটি হচ্ছে চলমান সাদাকা, এমন এলম,
যা দ্বারা (অন্যরা) উপকৃত হয় তথা এলমে নাফে এবং নেক সন্তান, যে মৃতের জন্য দুআ করে। মুসলিম: ১৬৩১
(৭) যে ব্যক্তি এলম অন্বেষণের জন্য বের হয় সে আল্লাহর রাস্তায় থাকে, যাবত না সে ফিরে আসে। জামেউত তিরমিজি-২৬৪৭
(৮) হেকমত ও এলেমের একটি কথা জ্ঞানীর জন্য হারানো মূল্যবান সম্পদের মতো। সুতরাং যেখানে
পায় সেখান থেকেই যেন সে তা সংগ্রহ করে নেয়। সুনানে বাইহাকি-৪১২
(৯) আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির জীবন সুখী-সমৃদ্ধ করুন, যে
আমার হাদীছ
শ্রবণ করে অতঃপর
তা মুখস্থ করে এবং অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়। সহিহ ইবনে হিব্বান:
৬৯
(১০)
আবুদ্দারদা রা. বলেন, একটি
মাসআলা শিক্ষা করা আমার দৃষ্টিতে ইবাদতের জন্য সারারাত জাগ্রত থাকার চেয়ে শ্রেয়।
আলেম-ফকিহর
মর্তবা: আলেমদের ফযিলত-মর্তবা সম্পর্কে স্বয়ং
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল হাকীমে বলেন-(১) তোমাদের
মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায়
সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত। সূরা মুজাদালা-১১
(২) আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে,
তাঁকে ছাড়া আর কোন উপাস্য
নেই ।
ফেরেশতাগণ এবং
ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই । তিনি পরাক্রমশালী
প্রজ্ঞাময় । সূরা আলে ইমরান-১৮
ইমাম কুরতুবি
(রহ.) তাফসিরে লেখেন- আলোচ্য আয়াত এলম ও ওলামায়ে কেরামের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের
দলিল। কেননা ওলামায়ে কেরাম ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক সম্মানিত হলে তিনি
নিজের নামের সঙ্গে তাদের নামই উল্লেখ করতেন।
(৩) কেবলমাত্র আলেমগণই আল্লাহকে ভয় করে, নিশ্চয় আল্লাহ
প্রবল পরাক্রমশালী ক্ষমাশীল। সূরা ফাতির-২৮
v
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন-
(১) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দুইজন ব্যক্তির কথা আলোচনা
করা হলো। একজন আবেদ আর অপরজন আলেম। জবাবে তিনি বললেন, ওই দুইজনের মধ্যে আলেমের মর্যাদা তেমন
সুউচ্চ, যেমন আমার মর্যাদা একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে সুউচ্চ। এরপর তিনি বললেন, স্বয়ং
আল্লাহ তাআলা আলেমের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতা, আসমান
ও জমিনবাসী, এমনকি গর্তের পিপিলিকা এবং সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত
আলেমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। জামেউত তিরমিজি-২৬৮৫
(২) wbðq GKRb
Av‡e‡`i Dci GKRb Av‡j‡gi gh©v`v Ggb †hgb ZviKvivRxi Dci c~wY©gvi iv‡Zi Pvu‡`i
gh©v`v| Avey `vD`-3643, G‡jg Aa¨vq
(৩) আলেমগণ হলেন নবিগণের ওয়ারিশ। আর নবিগণ ধনসম্পদের মিরাছ রেখে যান না, বরং
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ এলেমের মিরাছ রেখে যান। সুতরাং যে ব্যক্তি এই
মহামূল্যবান মিরাছ গ্রহণ করল সে বিরাট মূল্যবান বস্তু গ্রহণ করল। সুনানে ইবনে মাজাহ
(৪)
ইবন আব্বাস রা. বলেন, সাধারণ
মুমিনের চেয়ে আলেমের মর্যাদা সাতশত গুণ বেশি। এবং প্রতিটি মর্যাদার
মধ্যে দূরত্ব পাঁচশত বছরের সমান।
(৫) ইয়াহইয়া ইবন মুয়াজ (রহ.) বলেন, ওলামায়ে কেরাম
উম্মাতে মুহাম্মাদীর সবচেয়ে কল্যাণকামী ব্যক্তি। এমনকি ব্যক্তির পিতা-মাতার
চেয়েও বেশি করুণাকামী তারা। জিজ্ঞেস করা হলো; এটা কীভাবে? জবাবে
তিনি বললেন, কেননা ব্যক্তির পিতা-মাতা
তাকে দুনিয়ার আগুন থেকে বাঁচায় মাত্র, কিন্তু আলেমগণ বাঁচান আখেরাতের আগুন থেকে।
হায় আফসোস ! সমাজের ধনবান-বিত্তশালী-প্রভাবশালী
লোকদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয় আমরা
তা জানি, বুঝি। ক্ন্তিু আলেম, হাফেজ, হুজুরদের
সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়,তা জনি না: জানলেই
মানি না। একজন বিত্তবান যদি ভুল করে,তাহলে আমরা ধমক দিয়ে কথা বলি না; অথচ একজন ইমাম, মুয়াজ্জিন ভুল করলে আমাদের মাথা ঠিক
থাকে না, দুর্ব্যবহার করি। তাহলে বুঝা গেল, একজন বিত্তবানের মান-সম্মান-ইজ্জত আপনার কাছে যেই পরিমাণ ইমাম, মুয়াজ্জিনের
মর্যাদা আপনার কাছে তার চেয়েও কম। সুতরাং আমাদের ঈমানের অবস্থা কি? নিজেকে
জিজ্ঞেস করি?
আলেম-ওলামারাও
মানুষ। মানুষ মাত্রেই ভুল-ত্রুটি আছে (তবে সব নবি-রাসূল বাদ) সেটা সুন্দরভাবে, আদবের
সাথে, গোপনে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।
আলেমকুল শিরমনি, ফকিহুন
নফস হজরত মাওলানা রশিদ আহমদ গঙ্গহি রহ. বলেছেন- যে ব্যক্তি হক্কানি আলেমদের অপমান, বেইজ্জত করে (দ্বীনের কারণে) তাকে কবরে রাখার পর তার চেহেরা কেবলার দিকে থাকে না, ঘুরে যায় । তোমরা বিশ্বাস না করলে, কবর খুঁড়ে দেখ। আল্লাহ তাআলা আমাকে
ও সব মুসলমানরেক আহলে এলম তথা আলেম, হাফেজ,
বুজুর্গদের মহব্বত-ইজ্জত করার তাওফিক দান করুন।
জাহেল বা মূর্খতার
নিন্দা: মূর্খতা পাপ, এটা হচ্ছে আত্মার মৃত্যুতুল্য। মুমিনের শান
অজ্ঞতা হতে পারে না। আল্লাহ তা থেকে নিষেধ করেছেন, যেমন তিনি বলেন-
(১) আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, যেন মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত
না হও। সূরা হূদ-৪৬
শিক্ষকের আখলাক: একজন
আদর্শ শিক্ষক বা দ্বীনের দায়ীর আচরণ কেমন
হওয়া উচিত তা প্রিয় নবি (ﷺ) বলে গিয়েছেন -
দুনিয়ার মানুষ
তোমাদের অনুসারী। আর তোমাদের কাছে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে লোকেরা আসবে দ্বীন শেখার জন্য। সুতরাং তারা যখন তোমাদের
কাছে আসবে, তখন তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। তিরমিজি-২৬৫০
তালিবে এলম বা
ছাত্রের আবশ্যক গুণাবলী:
ü
নিয়ত বিশুদ্ধ করা । কেননা রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি এমন জ্ঞান শিক্ষা করলো, যার দ্বারা
আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা সে কেবল পার্থিব
স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করলো, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধ পাবে না। আবু দাউদ: ৩৬৬৪
ü
ধৈর্য-এর সাথে এলম
হাসিল করা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-
আল্লাহ তাআলা মুসা(আ.)
-এর ওপর রহম করুন। আক্ষেপ, তিনি যদি আরেকটু ধৈর্যধারণ করতেন তবে আমরা
তাদের আরও অনেক কিছু জানতে পারতাম। বুখারি-১২২; মুসলিম-১৭০
ü
ওস্তাদকে আদব করা। ইমাম শাফেয়ি (রহ.)
এলম হাসিল করার জন্য এক কবিতায় এই ছয়টি
বস্তুকে একত্রিত করেছেন। যথা-
ভাই! ছয়টি বস্তু ছাড়া তুমি এলম
হাসিল করতে পারবে না। আমি তোমাকে সেই ছয়টি বস্তু বর্ণনা করে শোনাবো। মেধা, বাসনা,
আগ্রহ, সফর, উস্তাদের
সাহচার্য এবং দীর্ঘ সময় ব্যয়।
ü
গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। ইমাম শাফেয়ি রহ. তার
সম্মানিত ওস্তাদ ইমাম ওয়াকির নিকট ভুলে
যাওয়ার অভিযোগ করলে তিনি বলেন-(যা কবিতা আকারে)-আমি উস্তাদ ওয়াকি (রহ.)-এর কাছে স্মরণ শক্তির দুর্বলতার অভিযোগ করলাম। তিনি আমাকে পাপ
ছেড়ে দেয়ার আদেশ করলেন এবং বললেন, এলম হচ্ছে নূর। আর আল্লাহ তাআলা তার নূর কোনো
পাপীক দান করেন না।
ü
ইলমানুযায়ী আমল করা। যারা ইলমানুযায়ী
আমল করে না, তাদেরকে গাধার সাথে তুলনা করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-যাদেরকে
তাওরাতের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছিল তারপর তারা তা বহন করেনি, তারা
গাধার মত! যে বহু কিতাবের বোঝা বহন করে। সে সম্প্রদায়ের উপমা
কতইনা নিকৃষ্ট, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে। আর আল্লাহ যালিম
সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। সূরা আল-জুমাআ-০৫
অন্য আয়াতে বলেন- তোমরা কি
মানুষকে ভাল কাজের আদেশ দিচ্ছ আর নিজদেরকে ভুলে যাচ্ছ? অথচ
তোমরা কিতাব তিলাওয়াত কর। তোমরা কি বুঝ না? সূরা আল-বাকারা-৪৪
গোমরাহীর কারণ: হজরত
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন-আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের অন্তর হতে ইলেম টেনে বের করে উঠিয়ে দেবেন না;
বরং আলেমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে এলম উঠিয়ে নিবেন। এমনকি যখন দুনিয়ায় আর কোনো
আলেম অবশিষ্ট থাকবে না; তখন লোকজন মূর্খ লোকদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। অতঃপর তাদের নিকট বিভিন্ন মাসয়ালা
জিজ্ঞেস করা হলে, তারা এলম ছাড়া ফতোওয়া দিবে। নিজেরা পথ ভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকে পথ ভ্রষ্ট করবে। বুখারি-মুসলিম
ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, যতদিন মানুষ এলম
অর্জন করবে নিজেদের প্রবীণ, বিশ্বস্ত ও আলেমদের কাছ থেকে,
তারা কল্যাণের মধ্যেই থাকবে। আর যখন এলম গ্রহণ করবে নবিন
ও অশিষ্টদের কাছ থেকে, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। [বাইহাকি, মাদখাল-২৭৫] অবশ্য নবিনের সংজ্ঞা নিয়ে মতভেদ আছে। ইবন কুতায়বা বলেন, এর দ্বারা
বয়সে নবিন উদ্দেশ্য।
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম
(রহ.) বলেন, ইমাম শাফেয়ি (রহ.) কোন ব্যক্তিকে দেখলে প্রথমে তাকে
বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন। যদি তিনি আলেম ও আমলদার হতেন তবে ছেড়ে দিতেন। অন্যথায় তাকে
তিক্ত ভাষায় ভর্ৎসনা করতেন এবং বলতেন, আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় না দিন- না
তোমার নিজের থেকে না ইসলাম থেকে। তুমি নিজেকেও ধ্বংস করেছ, ইসলামকেও
ধ্বংস করেছ।
এলমে দ্বীন কার
কাছ থেকে শিখবে: বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত আবু হুরাইরা রা. এর ছাত্র মুহাম্মাদ
ইবনে সিরিন রহ. বলেন- নিশ্চয় এ (কিতাব ও সুন্নাহর) এলম হচ্ছে দ্বীন। সুতরাং তোমরা
লক্ষ্য রাখবে যে, তোমাদের এ দ্বীন কার নিকট থেকে গ্রহণ করবে। মুকাদ্দামুল
মুসলিম
আমাদের অসুখ হলে
ইঞ্জিনিয়ারের কাছে যায় না,বিল্ডিং করতে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস
করি না, মামলা-মোকাদ্দামা মুখ করার
জন্য শিক্ষকের কাছে যায় না অর্থাৎ প্রত্যেক বিষয়ে অজ্ঞিভ লোকের কাছে ধরণা ধরি,
মুখাপেক্ষী হয়, জিজ্ঞেস করি। এটাই
চিরাচরিত নিয়ম। অতত্রব একজন প্রফেসর, ডাক্তার,
ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ারের কাছে আমরা কেন দ্বীন শিখবো ?
পৃথিবীর মানুষ দ্বীন শেখার
ক্ষেত্রে আলেমদের মুখাপেক্ষী। যারা মনে করে আলেম কেন প্রয়োজন সরাসরি কুরআন-হাদিস থেকে
আমল করবো। তাদের কাছে প্রশ্ন, মেডিক্যাল স্যায়ন্সের
কিতাবে কোন রোগের কি ওষুধ তা লেখা আছে। সুচিকিৎসা, আরোগ্য
লাভের জন্য কি ওষুধের কেটালকই যথেষ্ট ? ডাক্তরের প্রয়োজন নাই। আমার ভাই! রোগ
নির্ণয়, ওষুধ প্রয়োগের মাত্রা যেমন ডাক্তার সাহেব নির্ধারণ
করে, ঠিক তেমনি ফকিহ-আলেম-মুজতাহিদগণ আমলের সঠিক পন্থা-পদ্ধতি নির্ধারণ করেন।
অনেকে প্রচারণা করে, কুরআন-হাদিসে
তো সবই আছে, কথা সত্য। আলেমদের কেন অনুসরণ করতে
হবে।
কিন্তু
জানার বিষয় হলো-শরীয়তের সব বিধান (শাখাগত) সুস্পষ্ট-বিস্তারিত বর্ণিত হয়নি অথবা নিত্য-নতুন
সমস্যা-আবিষ্কার কারণে, ব্যাখ্যার
অবকাশ আছে, কিয়াসের প্রয়েজন আছে। আর যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
এর অনুমদিত। সেসব ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আলেম-মুজতাহিদগণ মাসয়ালা ইসতেমবাত
করে। তার উকৃষ্ট উদাহরণ-রাসূলের জামানায় রেল গাড়ী, বিমান ছিল না,
এখন তথায় কিভাবে নামাজ পড়তে হবে? ইনজেকশন ছিল
না, এটা নিলে, পুশ করলে রোজা হবে কি না
? টেলিফোন-মোবাইলে বিবাহ হবে কি না ?
ব্যাংক-শেয়ার বাজার ছিল না, এখন কিভাবে লেনদেন করতে হবে,
তা কিয়াস ছাড়া কোন পথ নাই।
এলেমের জন্য আপদ
কি :**আলি ইবন ছাবেত (রহ.) বলেন,
এলেমের আপদ হলো
আত্মতুষ্টি ও ক্রোধ। আর সম্পদের আপদ অপচয় ও ছিনতাই।
**আরবিতে
একটি প্রবাদ আছে-জ্ঞানের বিপদ হলো ভুলে যাওয়া ।
হাদিস নং-১৭,
গোনাহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা |
عن أنس قال إنَّكُمْ لَتَعْمَلُونَ أعْمالًا، هي أدَقُّ
في أعْيُنِكُمْ مِنَ الشَّعَرِ، إنْ كُنَّا لَنَعُدُّها علَى عَهْدِ النَّبيِّ
صلَّى اللهُ عليه وسلَّم مِنَ المُوبِقاتِ.
অর্থ: হজরত আনাস
রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা অনেক
কাজ কর যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়েও সরু (অতি সাধারণ ও তুচ্ছ
মনে কর) কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে আমরা সে সবকে বড় অপরাধ তথা
ধ্বংসকারী জিনিস বলে মনে করতাম। বুখারি-৬৪৯২; মুস.আহমদ-১২৬০৪
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: ছোট
গোনাহ সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করা হবে। হজরত আয়েশা রা. হতে
বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বলেছেন, হে আয়েশা ছোট্ট গোনাহ হতে
বেঁচে থাক। কেননা আল্লাহ তাআলা পক্ষ হতে এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করা হবে। নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন- তোমরা ছোট ছোট গোনাহ থেকে বিরত থাকো। কেননা ছোট ছোট
গোনাহের উদাহরণ হচ্ছে এমন, যেমন কোন কওম একটি উপত্যকায় অবতরণ করল। তারপর এ নিয়ে এলো
একটি কাঠ, ও নিয়ে এলো একটি কাঠ, এভাবে তারা তাদের রুটি সেকে
ফেলল। নিশ্চয় ছোট ছোট গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তিকে যখন পাকড়াও করা হবে, তখন
সেগুলো তাকে ধ্বংস করে দিবে। মুসনাদে আহমদ-২২৮০৮
গোনাহ
কি? নাওয়াস ইবনু সামআন আনসারি রা. থেকে
বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে
প্রশ্ন করলাম । তখন উত্তর দিলেন, পূণ্যকর্ম হচ্ছে সচ্চরিত্র । আর পাপ হচ্ছে যা
তোমার অন্তরে খটকা করে এবং লোকে তা জানুক তা তুমি অপছন্দ কর । সহিহ মুসলিম-৬৪১০
সবচেয়ে অসহায়-গরিব কে? আবু
হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন, তোমরা কি জান দরিদ্র অসহায় ব্যক্তি কে? সাহাবায়ে
কেরাম বললেন, আমাদের মধ্যে দরিদ্র অসহায় ব্যক্তিতো সে যার
কোন টাকা পয়সা বা সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: আমার উম্মতের
মধ্যে সত্যিকার দরিদ্র অসহায় হলো সেই ব্যক্তি যে কেয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও
যাকাতসহ অনেক ভাল কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে, অথচ দুনিয়াতে বসে সে
কাউকে গালি দিয়েছিল, -------কারও রক্তপাত ঘটিয়েছিল, কাউকে মার-ধোর করেছিল ফলে তার নেক আমলগুলো থেকে নিয়ে
তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করা হবে। এভাবে যখন তার নেক
আমলগুলো শেষ হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার জন্য আর কিছু থাকবে না তখন তাদের
পাপগুলো তাকে দেয়া হবে ফলে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। সহিহ মুসলিম
ভাল-দ্বীনি কথা
ভাল লাগে না কেন? প্রতিটি মানুষ যখন জন্মগ্রহণ করে তখন
পরিচ্ছন্ন অন্তর নিয়েই আসে। কিন্তু বড় হওয়ার পর সে নানান গুনাহে লিপ্ত হয়, ফলে তার
অন্তরে মরিচা পরে, অন্ধকারাচ্ছন্ন-শক্ত
হয়ে যায়, ফলে ভাল-দ্বীনি কথা তার ভাল লাগে না। হাদিস শরিফে এসেছে- মানুষ যখন
প্রথম কোন একটি গোনাহ কর,তখন তার অন্তরের ওপর একটা কাল দাগ
পড়। তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও তওবা করে, তাহলে সে দাগ মুছে ফেলা হয়। আর যদি পুনরায়
করে গোনাহ করে,তাহলে ঐ দাগ বৃদ্ধি পায়, এমনকি দেল
একেবার কাল হয়ে যায়। এ মরিচা ও
কালোঅন্তরের কথা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন, কখনও না,
বরং তারা যা করে, তাই তাদের হৃদয়-অন্তর মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে। (সূরা মুতাফফ্ফিীন-১৪)
জামে তিরমিজি
গোনাহ করার পরও
আমাদের অন্তরে আঘাত লাগে না কেন? কোন লোককে যদি সাপে কামড় দেয়, কী সাপ কামড় দিয়েছে তা পরীক্ষা করার জন্য মুরুব্বিরা তাকে মরিচ খাওয়ায়,
যদি ঝাল লাগে বুঝতে হবে, তাকে জাতি-বিষধর সাপ কামড় দেয়নি আর যদি ঝাল না লাগে বুঝবে জাতি সাপ কামড় দিয়েছে। তাই যদি মাপকাঠি
তাহলে আমরা হাজরো গোনাহ করার পরেও কেন অন্তরে চোট-আঘাত লাগে না, বুঝতে আমাদের ঈমানে জাতি সাপ কামড়
দিয়েছে। অথচ হাদিসে গোনাহ করার পর অন্তরে ব্যাথা লাগার কথা
আছে এটা ঈমানের পরিচায়ক।
নিজ স্ত্রী, বন্ধু-বান্ধব, চাকরি ক্ষেত্রে
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি কোন কারণে নারাজ-অসন্তুষ হয়, তখন আমাদের আর ভাল লাগে না,
ঘুম আসে, কাজে মন বসে না। হায় আফসোস! আমাদের কি হলো
যে, মহান রব্বুলালামীনের নারাজে-অসন্তুষে আমাদের কিছুই হয় না, অনুভূতিহীন। এ অবস্থার জন্য
কি আমাদের অনুশোচনা-বিলাপ করা উচিত নয়?
গোনাহ কুফুরির
দিকে নিয়ে যাচ্ছে: কোন কবিরা গোনাহ করলে তাকে আহলে সুন্নাত ওয়াল এর মতে সে ফাসেক বলে গন্য হয়। কিন্তু গোনাহকে
হালাল-বৈধ মনে করলে সে কাফের হয়ে যাবে। আজ আমাদের সমাজের অবস্থা লক্ষ্য করি- গোনাহ করে,
ধর্ষণ করে, কে কয়জনের সাথে অবৈধ প্রেম করে
মেয়েদেরকে ঠকিয়েছে, তা নিয়ে
গর্ববোধ করছে, আনন্দ-উল্লাস
করছে। এটা ঈমান বিধ্বংসী-বিনাশকারী নয় কি? এ রকম কয়েকটি গোনাহ
আমাদের সমাজে স্বাভাবিক হয়েছে। যেমন-বেপর্দা, বিনা
প্রয়োজনে ছবি তোলা সুদ-ঘুষ, মুসলমানদের
রন্দ্রে-রন্দ্রে, শিরা-উপশিরায় ঢুকে গেছে।
বিস্তারিত দেখুন-লেখকের ‘সমস্ত বিপদাপদের
কারণ চারটি’, এক
মিনিটের মাদ্রাসা- হজরত শাহ আবরারুল হক ও শাহ হাকীম আখতার রহ.
হাদিস নং-১৮, অজু তথা পবিত্রার গুরুত্ব ও ফযিলত |
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ
-صلى الله عليه وسلم- قَالَ
:« أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا
وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ ». قَالُوا : بَلَى
يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ :« إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى
الْمَكَارِهِ ، وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ ، وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ
بَعْدَ الصَّلاَةِ ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ
অর্থ: হজরত হুরাইরা
রা.থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- আমি কি
তোমাদের সে বিষয় সম্পর্কে অবগতি করব না,
যদ্বারা আল্লাহ তাআলা অপরাধসমূহ মিটে দেন এবং পদমর্যাদা উন্নত করেন। উপস্থিত সাহাবারা
বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি
বললেন, কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণতার সাথে অজু করা, মসজিদের পানে অধিক গমন করা। এটাই হলো তোমাদের জন্য রিবাত বা প্রস্তুতি। সহিহ মুসলিম-২৫১; তিরমিজি-৫১; নাসায়ি-১৪৩
পবিত্রতার গুরুত্ব: পবিত্রতা
সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
(১) হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় কনুইসহ ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর
ও পদযুগল টাখনুসহ ধৌত কর.....’। মায়েদা-০৬
(২)আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করুন এবং আপন পোশাক পবিত্র করুন। সূরা মুদ্দাসসির,৩-৪
v
রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন-
(১) পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক।সহিহ মুসলিম-৪২৫ ই.ফা.
(২) সালাতের চাবি হল অজু। সুনানে আবুদাউদ, তিরমিজি, সুনানে দারেমি
পবিত্রতা বা অজুর ফযিলত: আল্লাহ তাআলার বাণী-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ (অন্তর থেকে) তওবাকারী ও (দৈহিকভাবে) পবিত্রতা
অর্জনকারীদের
ভালবাসেন’। সূরা
বাকারা-২২২
v নবিজির (ﷺ) বাণী-
Ø
কালো ঘোড়া সমূহের মধ্যে
কপাল চিতা ঘোড়া যে ভাবে চেনা যায়.. কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের অজুর অঙ্গগুলির ঔজ্জ্বল্য দেখে আমি তাদেরকে অনুরূপভাবে চিনব এবং তাদেরকে হাউয
কাওছারের পানি পান করানোর জন্য আগেই পৌঁছে যাব। অতএব যে চায় সে যেন তার
ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে চেষ্টা করে। বুখারি-মুসলিম
Ø
মুসলিম যখন ফরজ সালাত
আদায়ের উদ্দেশ্যে সুন্দরভাবে অজু করে
এবং পূর্ণ মনোনিবেশ ও ভীতিসহকারে সুষ্ঠুভাবে রুকূ-সিজদা আদায় করে, তখন ঐ অজু ও সালাত
তার বিগত সকল গুনাহের কাফফারা হিসেবে গৃহীত হয়। তবে গোনাহে কাবিরা ব্যতীত। মুসলিম, মিশকাত
হা/২৮৬ পবিত্রত অধ্যায়-৩, পরিচ্ছেদ-১।
Ø
অজু করার পর নিম্নোক্ত দুআ
পাঠ করবে- আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকা লাহূ, ওয়া
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহু ওয়া রসূলুহু। আল্লা-হুম্মাজ্ আলনী মিনাত্তাউয়াবীনা
ওয়াজ্ আলমিনাল মুতাত্বহহিরীন। তিরমিজি
Ø
ওমর ফারুক (রা.) হতে বর্ণিত উক্ত হাদীছে রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে অজু করবে ও কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে,
তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। যেটা দিয়ে ইচ্ছা
সে প্রবেশ করবে।. মুসলিম-২৩৪; তিরমিজি, মিশকাতুল মাছাবিহ-২৮৯ পবিত্রতা অধ্যায়
নোট: অজু বা বিভিন্ন
নেক আমল দ্বারা যে গোনাহ মাফের কথা বলা হয়েছে, তাদ্বারা উদ্দেশ্য শুধু সগীরা
(ছোট) গোনাহ, কেননা কবিরা
গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না।
মাসয়ালা: অনেকে বলে,
প্রস্রাবের পর ৪০ কদম হাঁটতে হয়। এটা ভুল। কারণ সবার হুকুম এক
নয়, শারীরিক গঠন এক নয়। তাই যতক্ষণ প্রস্রাব আসা বন্ধ না হয়, ততক্ষণ অপেক্ষা
করতে হবে, ৪০/৫০/১০০
কদম যাই লাগুক না কেন? অনেকে ঢিলা নিয়ে লাফালাফি-ছোটা চুটির করে এটা ঠিক নয়। বরং আঁড়ালে-আবডালে জরুরত পরা করা উচিত।
মাসয়ালা: প্রস্রাব যদি
এক দিরহাম (একটা কাঁচা পয়সা) পরিমাণ বা
তার চেয়ে কম জায়গায় লাগে, তাহলে পানি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। কিন্তু যদি এক দিরহামের
চেয়ে বেশি হয়, তাহলে পানি ব্যবহার করা ওয়াজিব।
মাসয়ালা: মশা-মাছির রক্ত, কবুতর, শালিক,
চুরই পাখির বিষ্ঠা পাক। কেরোসিন, ডিজেল,
মবিল ইত্যাদি পাক। সূত্র: এসো ফিকহ শিখি, মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দা.বা.
এস্তেঞ্জার (টয়লেটের)
আদব ও সুন্নাতসমূহ:
১. এস্তেঞ্জাখানায়
(বাথরুমে) প্রবেশের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে মাথা ঢেকে নেওয়া
২.বিসমিল্লাহ
বলে প্রথমে ডান পায়ের জুতো-সেন্ডেল পায়ে দেওয়া।
৩. প্রবেশের পূর্বে এ দুআ পড়া ।
اَللَّهُمَّ إِنِّى
أَعُوْذُبِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুবছি
ওয়াল খাবাইছ
(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি
দুষ্ট পুরুষ ও মহিলা জিনের অনিষ্ট হতে
আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ) অন্য বর্ণনায় শুধু
বিসমিল্লাহ বলার কথা এসেছে।
৪. বাম পায়ের
ওপর ভর দিয়ে এস্তেঞ্জা করা।
৫. কেবলা
(পশ্চিম) দিকে মুখ বা পিঠ করে না বসা।
৬. বাম পা দিয়ে
ঢোকা আর ডান পা দিয়ে বের হওয়া।
৭. বের হওয়ার
পর এ দুআ পড়া। গুফরকনাকা আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আযহাবা আন্নীল আযা ওয়া আফানী।
৮. কবরস্থান,
মানুষের চলাচলের রাস্তার পাশে, গোসল খানায়,
ছায়াদার ও ফলদার গাছের নিচে, গর্তে, বিনা ওজরে পানিতে, দাঁড়িয়ে, হেঁটে
হেঁটে প্রস্রাব-পায়খানা করা নিষেধ। মাটির নিকটবর্তী না
হয়ে কাপড় না উঠানো, হাটুর ওপর কাপড় না উঠানো। সূত্র: বুখারি;
মুসলিম; আবু দাউদ; তিরমিজি; আহমদ;
তোহফায়ে
সুন্নাহ-৮পৃ.
মেসওয়াকের গুরুত্ব ও ফায়দা: ঘুম থেকে
উঠে, ঘুমানোর পূর্বে, অজুর পূর্বে ভালভাবে মিসওয়াক করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
এরশাদ করেন, (১) আমার উম্মতের উপর কষ্টকর মনে না
করলে আমি তাদেরকে এশার সালাত দেরীতে এবং প্রতি সলাতে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। বুখারি-মুসলিম,
মিশকাত-৩৪৬
(২) মেসওয়াক হল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি
লাভের কারণ। সুনানে নাসায়ি-০৫; মিশকাত -৩৮১
(৩) বিখ্যাত ফকিহ আল্লামা ইবনে আবেদ্বীন
শামি রহ. বলেন-মেসওয়াকের সুন্নাতের ওপর আমলের বরকতে মৃত্যুর সময়
কালেমায়ে-শাহাদত স্মরণ হয়ে যায়। শামি ১ম খণ্ড, ৮৫ পৃ.
Ø
উল্লেখ যে, প্রিয় নবি
মুহাম্মাদ (ﷺ) এর শেষ আমল ছিল মেসওয়াক অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে
তিনি মেসওয়াক করেছিলেন।
ব্রাশ করলে কি মেসওয়াকের
ফায়দা হবে? এ সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম আল্লামা তকি উসমানি বা.দা. বলেন- মেসওয়াকের দুটি
ফায়দা ১. মুখ পরিস্কারের
ফায়দা ২. ডালের ফায়দা (ডালের রস-কস)। সুতরাং ব্রাশ করলে
পরিস্কারের সুন্নাত/ফায়দা আদায় হবে, তবে ডালের
সুন্নাত আদায় হবে না।
পরামর্শ: মানুষ যখন
ঘুম থেকে ওঠে, তখন তার অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো
নরম থাকে। তাই তখন ব্রাশ করলে দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি হয়। উত্তম সময় হলো ঘুমানোর
আগে।
আর
বাকি পাঁচ ওয়াক্তে নামাযে মেসওয়াক করা। যতদূর সম্ভব ব্রাশ পরিহারই ভাল।
হাদিস নং-১৯,
সালাতের (নামাযের) গুরুত্ব ও ফযিলত |
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَال: قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَرَأَيْتُمْ
لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيهِ كُلَّ
يَوْمٍ خَمْسًا هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوا: لَا
يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ. قَالَ: فَذَلِكَ
مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا
অর্থ: আবু হুরাইরা
রা. হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আচ্ছা তোমরা বলতো, যদি তোমাদের কার ও বাড়ির দরজার সামনে
একটি নহর থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে,
তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে কি? সাহাবিরা
বললেন, না, কোন ময়লা বাকি থাকবে না। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, পাঁচ
ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণও সেইরুপ। এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা পাপসমূহ নিশ্চিন্ত করে
দেন।
বুখারি-৫২৮;
মুসলিম-৬৬৭; দারেমি-১২২১; মিশকাত-৫৬৫ সালাত অধ্যায়। হবে তবে
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: নদী/সমুদ্র/ঝর্ণা প্রবহমান পানি যত গভীর হয়, ততই পানি স্বচ্ছ-পরিষ্কার হয়। এই পরিষ্কার পানিতে
গোসল করলে যেমন শরীর পরিচ্ছন্নতা লাভ করে। তেমনি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বান্দার সব গোনাহকে সাফ
করে দেয়।
ইসলামে সালাতের গুরুত্ব: ঈমানের পর
সব চাইতে গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হলো সালাত। ইসলামের সব বিধান যমীনে ফরজ
হয়েছে, কিন্তু সালাত মিরাজের রজনিতে আসমানে ফরজ হয়েছে। পবিত্র কুরআনুল কারিমে
৮২ বার সালাতের কথা বলা হয়েছে।
Ø
আল্লাহ তাআলার বাণী-
(১) যখন আপনি তাদের মধ্যে থাকেন, অতঃপর নামাযে দাঁড়ান,
তখন যেন একদল দাঁড়ায় আপনার সাথে এবং তারা যেন নিজ অস্ত্র সাথে নেয়। (অর্থাৎ
সমস্ত সৈন্যবাহিনীকে দুইভাগে ভাগ করেবে।) সূরা নিসা-১০২
কঠিন যুদ্ধের
মাঝেও নামাজ ত্যাগ করা যাবে না।
(২) অতঃপর যদি তোমাদের কারো ব্যাপারে ভয় থাকে, তাহলে
পদচারী অবস্থাতেই পড়ে নাও অথবা সওয়ারীর ওপরে। সূরা বাকারা-২৩৯
এ আয়াতে সলাতুল
খওফের কথা বলা হয়েছে, শত্রু বা কোন কারণে যদি ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়, তাহলে দাঁড়ানো অবস্থায় ইশারায় ও সওয়ার অবস্থায় নামা্জ পড়ে নিবে। তবুও নামাজ ত্যাগ
করা যাবে না। সূত্র: তাফসিরে বুরহানুল কুরআন-১৮০ পৃ.
Ø
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বাণী-
(১) কিয়ামতের দিবসে সর্ব প্রথম নামাযেরেই হিসেব হবে। যদি নামাজ ঠিক
থাকে তবে বাকি আমলও ঠিক হবে। আর যদি নামাজ খারাপ হয়ে থাকে, তবে বাকি আমলও খারাপ হবে। তিরমিজি-৯৪ পৃষ্ঠা,
তারগিব ১/২৪৫, তাবরানি
(২) যে ব্যক্তি নামাজকে হেফাজত করবে না তার জন্য তা নূর , দলিল এবং মুক্তির ওসিলাও হবে না। বরং কিয়ামতের দিন কারুন,ফেরাউন,
হামান ও উবাই বিন খালফের সাথে তার হাশর হবে। মুসনাদে আহমদ-৬২৮৮
(৩) যে ব্যক্তি আসরের নামাজ পরিত্যাগ করল, যেন তার
যাবতীয় আমলই বরবাদ হয়ে গেল। বুখারি-৫৫২, নামাজের সময়
অধ্যায়
(৪) রাসূল (ﷺ) এর (মৃত্যুর
পূর্বে) সর্বশেষ কথা ছিল, সালাত!
সালাত! আর তোমরা তোমাদের অধিনস্তদের ব্যাপারে
আল্লাহকে ভয় কর। সুনানে আদু দাউদ
ফজরের সালাতের গুরুত্ব
ও ফযিলত:
অধিকাংশ মানুষ ফজর সালাতকে বিলম্ব করে, এ সালাত
নিয়ে বড় উদাসীনতা। ফজরের সলাতে গাফলতি মুনাফেকের আলামত বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। ফজরের সালাতের গুরুত্ব
সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- (১) সুতরাং সূর্য উদয় ও অস্তমিত হওয়ার পূর্বে সালাত আদায় করো। সূরা ত্বহা-১৩
(২) ফজরের তেলাওয়াতে
(ফেরেশতাগণ) উপস্থিত হন। সূরা ইসরা-৭৮
Ø
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেন-
(৩) উসমান
বিন আফফান (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার সালাত আদায় কর, সে যেন অর্ধ রাত্রি এবাদতে
কাটিয়ে দিল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতের সাথে আদায় করল সে
যেন পুরো রাত্রিই সলাতে যাপন করল। মুসলিম- ৬
(৪) যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতে আদায় করে, সে আল্লাহর
জিম্মায়-দায়িত্বেই থাকে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মা-দায়িত্ব
বিনষ্ট করে আল্লাহ তাকে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। তিবরানি
নামাজ প্রকৃত, সত্তাগত ও
সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত: ইসলামি পরিভাষায় এই সীমাহীন বেইজ্জতি ও নীচতার
নামই ইবাদত। আপনি ভেবে দেখেন তবে দেখতে পাবেন যে, এ সর্বোচ্চহীনতা
মানুষ কেবল নামাযের মাধ্যমেই প্রকাশ করতে পারে, অন্য কোন ইবাদতের
মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে না। কেননা সর্বোচ্চ অপদস্থতা ও হিনতার যতগুলো ধরণ রয়েছে তার সবই
মধ্যে বিদ্যামান। চাকরের মত হাত বেধে মাথা নত করে দাঁড়ানো, অতঃপর এ অপদস্থতায় ও সন্তুষ্ট না হয়ে রুকু করে
মাথা ঝুঁকিয়ে দিয়ে আরও বেশি অপদস্থতা প্রকাশ করা। অতঃপর এতেই তুষ্ট নয়, মানুষের সবচেয়ে
ইজ্জতের জিনিস নাক ও কপালকে সিজদায় গিয়ে যমিনে ঘষতে থাকে। যেন বলতে থাকে- হে আল্লাহ!
তোমার সীমাহীন ইজ্জতের সামনে আমি আমার সীমাহীন বেইজ্জতি পেশ করছি। এতেই শেষ নয়, সবশেষে গিয়ে
ভিক্ষা চায়, হে আল্লাহ! আমাকে সওয়াব দাও,
রিযিক দাও ইত্যাদি ইত্যাদি। ভিক্ষা চাওয়ার চেয়ে বেশি বেইজ্জতি
আর কিছুই নেই। আর সিজদা শেষে দুআর মাধ্যমে তাই করা হয়।
নামাজ ব্যতীত প্রকৃত
ইবাদতের আর কোন জিনিসনেই যার দ্বারা মানুষ ইবাদত করতে পারে। কারণ ইবাদতের অর্থ হল সর্বোচ্চহীনতা
পেশ করা। আর তাকে বল নামাযের মধ্যেই রয়েছে, অন্য কোন ইবাদতের মধ্যে নেই। যেমন, যাকাত-সদকা এগুলো প্রকৃত ইবাদত নয়, এতে তো হীনতা নেই,
বরং এতে তো আল্লাহর সাথে সাদৃশ্য হয়, যেভাবে আল্লাহ
তার মাখলুককে দান করেন, তদ্রুপ আপনিও দান করলেন। দান করা বা দয়া করা
চরম সম্মানের কাজ। সুতরাং যাকাত-সদকা দেওয়া সত্তাগত ইবাদত নয়, আদেশ পালন করার কারণে এতে ইবাদতের শান পয়দা হয়েছে।
এভাবে আপনি রোজা রাখুন, রোজা তার সত্তাগতভাবে ইবাদত
নয়, এ জন্য যে, রোজার অর্থ হল পানাহার ও স্ত্রী
সঙ্গম থেকে নিজেকে বিরত রাখা। এ সবের যেন কোন প্রয়োজন নেই, সব থেকে অমুখাপেক্ষী। আর এ হল আ্ল্লাহ তাআলার শান, তিনি পানাহার, স্ত্রী ইত্যাদি থেকে পবিত্র। আল্লাহ তাআলার সাদৃশ্য
গ্রহণ কি অপদস্থার বিষয় হতে পারে। সুতরাং রোজা হল একান্তই সম্মানের কাজ। আদেশ পালনের কারণে ইবাদত হয়েছে।
আমরা সত্য কথা বলাকে ইবাদত বলি। কিন্তু সত্য কথা বলা
তার সত্তাগতভাবে ইবাদত নয়; কেননা সত্য কথা বলা আল্লাহ তাআলার কাজ। আল্লাহ বলেন- আল্লাহর কথার চেয়ে কার কথা
অধিক সত্য। সুরা নিসা-১২২ কাজেই সত্য কথা বলা অপমানের কাজ নয়। সত্য বলা ইবাদত হয়েছে এ জন্য যে, আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন, তোমরা সত্য কথা বল, মিথ্যা কথা বলনা। আদেশ পালিত হচ্ছে বিধায়
এতে ইবাদতের শান সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো নিয়ত ও উদ্দেশ্যের
কারণে ইবাদত হয়ে যায়। কিন্তু নামাজে যে সব ক্রিয়া কর্ম রয়েছে এগুলোর দ্বারা তার সত্তাগত
হীনতা প্রকাশ পায়। দাঁড়ানো, রুকু করা, সিজদা করা, দুআ ও প্রার্থনা করা এ সব হীনতার প্রকাশ, অবমানতার দৃশ্য। এ জন্যই যে জিনিসটি
সত্তাগতভাবেই ইবাদত, তাহেল একমাত্র নামাজ। সূত্র: খুতুবাতে হাকীমুল ইসলাম, অনুবাদ মাওলানা আবু সাকী মাহবুব, বইঘর প্রকাশনী।
নামাজ পূর্ণাঙ্গ ইবাদত: আল্লাহ তাআলা কেবল মানুষের
ওপরই নামাজকে ফরজ করেননি বরং বিশ্বের প্রতিটি অনু-পরমাণুর ওপর নামাজ ফরজ করেছেন (অবশ্য সবার পদ্ধতি এক নয়)। কুরআন মাজিদে ইরশাদ
করা হয়েছে- প্রতিটি বস্তু তার
নামাজ ও তাসবিহ পাঠের পদ্ধতি জানে। সূরা নূর-৪১
ওলামায়ে কেরাম বলেন-জান্নাত ও জাহান্নামের নামাজ
হল দুআ করা। ফেরেশতাদের নামাজ হল সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। মানবজাতি, বিশেষ করে মুসলমানদের নামাযের
ভেতর সমস্ত সৃষ্টি জগতের নামাজকে আল্লাহ তাআলা একত্র করে দিয়েছেন। গাছপালার মত কিয়াম, চতুষ্পদ প্রাণীদের মত রুকু, সরিসৃপের মত সিজদা, জান্নাত ও জাহান্নামের মত দুআ, পাহাড়-পর্বতের মত তাশাহুদ, ফেরেশতাদের মত কাতার বন্দি
এবং চাঁদ-সরুজ ও পৃথিবীর মত
ঘূর্ণয়মানতাও নামাজে আছে। এ কারণেই নামাজই দুই রাকাতের কম নয়। দুই. তিন কিংবা
চার রাকাত রয়েছে। আপনি এক রাকাত পড়ে কি করেন? প্রথম রাকাতে যে সব কাজ করেছেন সেসব কাজ দ্বিতীয়
ও চতুর্থ রাকাতে ও করেন। এ কারণেই বলা যায় যে, ঘূর্ণয়মানতা ও প্রদক্ষিণ করণ নামাযের মধ্যে রয়েছে।
মানুষকে যেমন আল্লাহ
তাআলা এ পূর্ণাঙ্গ সত্তা বানিয়েছেন, তদ্রুপ ইবাদত ও দান করেছেন পূর্ণাঙ্গ। এ দ্বারা দ্বীনের পূর্ণতা ও
স্পষ্ট হয়। সূত্র: খুতুবাতে হাকীমুল ইসলাম, অনুবাদ মাওলানা আবু সাকী মাহবুব, বইঘর প্রকাশনী
জামাতের গুরুত্ব ও
ফযিলত: আল্লাহ তাআলার বাণী-
Ø
আর নামাজ কায়েম কর, যাকাত দান
কর এবং নাযাজে অবনত হও তাদের সাথে যারা অবনত হয়। সূরা আল বাকারা-৪৩
এখানে মায়ার রকিয়ীন
অর্থাৎ শব্দের দ্বারা নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল
কুরআন, জাসসাস
Ø
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন- কখনো কখনো আমার ইচ্ছা জাগে যে আমি সালাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান করি,
এবং তা কায়েম করা হয়, অত:পর এক ব্যক্তিকে আদেশ
প্রদান করি, সে মানুষকে নিয়ে(জামাতে)সালাত আদায় করবে ; আমি একদল লোক নিয়ে বের হব,
যাদের সাথে থাকবে লাকড়ির বোঝা। আমরা খুঁজে বের করব এমন
লোকদের, যারা উপস্থিত হয়নি সলাতে। আমরা তাদেরসহ তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেব। বুখারি-৬৫৭;
মুসলিম-৬৫১; আবু দাউদ-৮৪০
Ø
একজন ব্যক্তির জামাতের সাথে
নামাজ আদায় তার একাকী নামাজ আদায় অপেক্ষা সাতাশ গুণ বেশি উত্তম| বুখারি;
মুসলিম; তারগীব; ইবনে মাজাহ-৮৩৮
Ø
যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায়
ফরজ সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে ঘর হতে বের হয়, তার সওয়াব
এহরাম বেঁধে হজের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সম পরিমাণ। -সুনানে আবু
দাউদ-৪৭১
Ø
সম্প্রদায়ের লোকেরা হয়
জামাত ত্যাগ করা হতে বিরত থাকবে, অন্যথায় আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে
দেবেন অত:পর তারা গাফেল লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইবনে মাজাহ-৭৮৬
Ø
তোমাদের কেউ সালাতের
অপেক্ষা করতে থাকলে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার ওজু নষ্টনাহয়, সে সালাতের সওয়াব পেতে থাকবে। আর ফেরেশতারা তার
জন্য এ বলে দুআ করবে-হে আল্লাহ তাকে মাফ কর; তাকে রহম কর ও দয়া কর। সহিহ মুসলিম-১০৬৩
খুশূ-খুযূএর বর্ণনা
ও গুরুত্ব: খুশূ খযূ অর্থ ধীর স্থিরতা এবং উগ্রতা পরিহার করা। দেহ মন স্থির করে ইবাদত
করা, একাগ্রতা সহকারে ইবাদত করা এবং চলা-ফেরা উঠ-বসায় উগ্রতা পরিহার করাকে বলা হয় খুশূ খুযু। ইবাদতের মধ্যে দেহস্থির করার
অর্থ হল অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়ানা করা। আর মনস্থির করার অর্থ হল ইচ্ছাকৃতভাবে অন্তরে আল্লাহ ব্যতীত
অন্য কিছুকে উপস্থিত না করা এবং ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় অন্য কিছু সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা না করা। অনিচ্ছাকৃতভাবে যেটা
মনে এসে যায় তার জন্য দায়ী নয়। সূত্র: ফাযায়েলে যিন্দেগী-১৫৫পৃ.
আল্লাহ রব্বুল আলামীন
বলেন-(১) মুমিনগণ! সফলকাম হয়েছে যারা
তাদের নামাজে বিনয়ী। সূরা মুমিনুন, ১-২
হাদিসের বাণী-(২)
হজরত আবু জর গিফারি রা.হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেন-বান্দার
নামাযের মধ্যে আল্লাহ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত তার বান্দার প্রতি মনোযোগী থাকেন,
যতক্ষণ বান্দা এদিক-ওদিক না তাকায়। যখন বান্দা এদিক-ওদিক তাকায়,
তখন আল্লাহ তার মনোযোগ ফিরে নেন। মুসনাদে আহমদ-২০৫৩১
(৩) নামাজে এদিক-ওদিক তাকানো খুশূ-খুজুর
খেলাফ। যেমন হজরত আয়েশা রা. বলেন- আমি রাসূল (ﷺ) কে নামাযের মধ্যে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম; জবাবে তিনি বললেন: এটা হল ছোঁ মারা। শয়তান বান্দার নামাযের (সওয়াবের)
কিছু অংশ ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। বুখারি-৭৫৮;
সুনানে আবু দাউদ-৯১০
জামাতে শরীক হবার জন্য
দৌড় দেওয়া যাবে কি? দৌড়ে এসে জামাতে শরীক হলে নামাজে খুশূ-খুজুর
ব্যাঘাত, প্রতিবন্ধকতা হবে বলেই বিশ্বনবি নিষেধ করেছেন। যেমন-তিনি এক হাদিসে
বলেছেন, যখন নামাযের একামত দেয়া হবে, তখন
তোমরা জামায়াত পাওয়ার জন্য দৌড়ে আসবে না। বরং শান্ত ও ধীরস্থীরভাবে আসবে। অতঃপর নামাযের যতটুকু
পাবে পড়ে নিবে আর যতটুকু পাবে না পরে আদায় করে নিবে, কেননা তোমাদের কেউ যখন নামাযের
সংকল্প করেছ, তখন তোমরা নামাজেই আছো। মুসলিম-১৩৯০
খুশূ-খুজুর তিনটি
স্তর আছে। যথা:
এক. মুখে যা উচ্চারিত
হয় এবং যা আমল করা হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। যাতে বিশুদ্ধ তেলাওয়াত
হয়।
দুই. অর্থের দিকে
খেয়াল করা।
তিন. আল্লাহ তাআলার
যাতে পাকের দিকে শুধু খেয়াল করা। আল্লাহ ভিন্ন সবকিছু অন্তর থেকে বের করে একমাত্র
তারাই ধ্যান করা। এটা সর্বোচ্চ স্তর, যা আরেফগণের হাসিল হয়।
নিকৃষ্ট চোর কে? রাসূল (ﷺ) বলেন-নিকৃষ্ট চোর হল সে, যে তার
নামাজ চুরি করে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মানুষ কিভাবে তার নামাজ চুরি করে? তিনি বললেন:
নামাযের মধ্যে হল যে, সে রুকু-সিজদা ঠিকমত করবে না এবং রুকু-সিজদার মধ্যে তার পিঠকে
বরাবর করবে না। মুয়াত্তা মালেক-৪০৩ অর্থাৎ মুরগির মত করলে (সে খাবার সময় দ্রুত মাথা উঠা-নামা করে) নামাজ হবে না। রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো; এক তাসবিহ পরিমাণ (এক তাসবিহ হলো সুবহানা রব্বি ইয়াল আলা একবার বলা যায় পরিমাণ সময়) দেরী করা ওয়াজিব। ঠিক তেমনি দুই সিজদার মাঝে স্থির গিয়ে বসা এক তাসবিহ পরিমাণ
ওয়াজিব। এদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
আযানের দেওয়ার ফযিলত: হাদিস শরিফে
আছে-
(১) মুযাজ্জিন কেয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা লম্বা ঘাড় ওয়ালা হবে। মুসলিম-৮৫২
(২) যে ব্যক্তি বার বৎসর আযান দিয়েছে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব
হয়ে গেছে। প্রত্যেক আযানের বিনিময়ে
ষাট নেকি লেখা হয় এবং প্রত্যেক একামতের বিনিময়ে ত্রিশ নেকি লেখা হয়। মুসতাদরাকে হাকেম-১/২০৫
হজরত ওমর রা. বলেন- যদি আমার উপর খেলাফতের দায়িত্ব না থাকতো;
তাহলে আমি নিয়মিত আযান দিতাম। নামাজে বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। যেমন:
ধর্মীয় দিক থেকে নামাযের
উপকারিতা:
১. করুণাময় রবের
নৈকাট্যের প্রধান মাধ্যম।
২. নামাজ
মানুষের রুটি-রুজিতে বরকত দান করে।
৩. নামাজ অন্তরকে করে শীতল ও শক্তিশালী।
৪. নামাজ মু`মিনের আনন্দের খোরাক।
৫. নামাজ মানুষের অন্তরের বন্ধ দরজাগুলো খুলে দেয়।
৬. নামাজ আত্মার খোরাক।
৭. নামাজে দিল বা ক্বলবের মরিচীকা দূর করে আত্মাকে আলোকিত করে।
৮. নামাজ আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের রক্ষাকারী।
৯. নামাজ আল্লাহর ভয়াবহ আজাবওরাগথেকে রক্ষা করে।
১০. নামাজ বান্দাকে অশ্লীল-পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।
১১. নামাজ শ্রেষ্ঠতম জিকির।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দিক
থেকে নামাজেরে উপকারিতা:
১. নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন আমাদের
মস্তিস্কে রক্ত দ্রুত প্রবাহিত হয়। ফলে আমাদের স্মৃতি শক্তি অনেক বৃদ্ধি পায়।
২. নামাজ মানুষের দেহের কাঠামো বজায় রাখে। ফলে শারীরিক
বিকলাঙ্গতা লোপ পায়।
৩. নামাজ মানুষের ত্বক পরিষ্কার রাখে। যেমন, ওজুর সময়
আমাদের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার করা হয়;এর ফলে
বিভিন্ন প্রকার জীবানু হতে আমরা সুরক্ষিত থাকে।
৪. নামাজে ওজুর সময় মুখমণ্ডল ৩ বার ধৌত করার
ফলেআমাদের মুখের ত্বক উজ্জল হয় এবং মুখের দাগ কমদেখা যায়।
৫. কেবল মাত্র নামাযের মাধ্যমেই চোখের নিয়মমত
যত্ন নেওয়া হয়; ফলে অধিকাংশ নামাজ আদায়কারী মানুষের
দৃষ্টি শক্তি বজায় থাকে।
৬. নামাজ
মানুষের মানসিক, স্নায়ুবিক, মনস্তাত্ত্বিক,
অস্থিরতা, হতাশা-দুশ্চিন্তা, হার্ট অ্যাটাক, হাড়ের জোড়ার ব্যাথা, ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ, পাকস্থলীর আলসার,
প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস,
চোখ এবং গলা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
৭. নামাজি ব্যক্তি
সহজে বুড়া হয় না। সূত্র: ইমাম বাতায়ন, বিডিটাইম
নামাযের সামাজিক উপকারিতা: ১.কিশোর বয়সে নামাজ আদায় করলে মন পবিত্র থাকে; এর
ফলে নানা প্রকার অসামাজিক কাজ সে বিরতথাকে।
২. নামাজ আদায়কারী
ব্যক্তি বিভিন্ন অসামাজিক ও খারাপ কার্যকালাপ থেকে দূরে থাকে। ফলে সমাজে শৃঙখলা বজায়
থাকে।
৩. নামাজ আদায়কারী
ঈমানদার ব্যক্তি সুদ-ঘুষ ও দুর্নীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখে। ফলে সুন্দর সমাজ সমাজ
গঠিত হয়।
মানসিক দিক থেকে নামাযের উপকারিতা:
১. সময়ের কাজ
সময়ে আদায় করার মানসিকতা তৈরি হয়।
২. নামাযের মাধ্যমে
মানুষের মন-মানসিকতায় অসাধরণ পরিবর্তন আসে। গোনাহ, ভয়,
নীচতা, হতাশা, অস্থিরতা,
পেরেশানী ইত্যাদি দূরভীত হয়। ফলে বিশুদ্ধ মন নিয়ে সব কাজে
সম্পৃক্ত হওয়া যায়।
৩.নামাজ আদায়
করলে মন প্রফুল্ল থাকে।
৪.নামাজ
আদায় করলে মানুষের জীবনী শক্তি বৃদ্ধিপায়।
৫. নামাজে
অলসতা দূর হয়। সূত্র: fancim .com
নামাযের বিভিন্ন আমলের উপকারিতা:
দাঁড়ানো: মানুষ যখন
নামাজে দাঁড়ায়; তখন সব চোখ সিজদার স্থানে স্থির থাকে। ফলে মানুষের
একাগ্রতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
রুকু: নামাজ ব্যক্তি যখন রুকু করে এবং
রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে দাঁড়ায় তখন মানুষের কোমর ও হাঁটুর ভারসাম্য রক্ষা হয়। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি
পায়। ফলে কোমর ও হাঁটু
ব্যাথা উপশম হয়।
সিজদা: নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন নামাজ
ব্যক্তির মস্তিস্কে দ্রুত রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে তার স্মৃতি শক্তি
বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আবার সিজদা থেকে ওঠে যখন দুই সিজদার মাঝখানে বসে এতে তার
পায়ের উরু ও হাঁট সংকোচন এবং প্রসরণ ঘটে। এতে করে মানুষের হাঁটু ও কোমরের ব্যথা উপশম
হয়।
ওঠা বসা: পৃথিবীর
অন্যান্য ধর্মের মধ্যে নামাযের মতো এমন সামগ্রিক ইবাদত আর নেই। নামাজর জন্য এটা
একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, এটা একান্তই সামগ্রিক ব্যায়াম। যার প্রভাব মানুষের সব
অঙ্গগুলোতে পড়ে এবং মানুষের প্রতিটি অঙ্গ নড়াচড়ার ফলে শক্তি সৃষ্টি হয় এবং
সুস্বাস্থ্য অটুট থাকে।
(১৯ নং হাদিস সমাপ্ত)
-------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
লা-হাওলা ওয়া কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ এর যিকির
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
ইরশাদ করেন- নিরানব্বইটি রোগের ওষধ হচ্ছে-লা-হাওলা ওয়া কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ এর মধ্যে
হতে সবচেয়ে সহজ ও ছোট রোগ হলো, চিন্তা-টেনশন । সুনানে বাইহাকি ; মিশকাত-২০২ পৃষ্ঠা।
দেখুন-খাযায়েনে কোরআন ও হাদিস, হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী,বাংলা বাজার ঢাকা।
হাদিস নং-২০, সিয়াম বা রোজার ফযিলত |
إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ
مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ-(بخارى-1930‘ كتاب الصوم) অর্থ: জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যার নাম হল রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন রোজাদারগণ
এ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। বুখারি-১৮৯৬,
সিয়াম অধ্যায়; মুসলিম-১১৫২;
তিরমিজি-৭৬৫
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: এ রকম বহু
হাদিস বর্ণিত আছে সিয়ামের ফযিলত সম্পর্কে। যেমন: (১)
প্রত্যেক নবি আদমের আমলের নেকি আল্লাহর ইচ্ছায় দশ গুণ থেকে সাতশগুণে
বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু রোজা ব্যতীত। কেননা রোজা আমার জন্যই, আর আমি নিজেই
এর প্রতিদান দিব। সে তার জৈবিক চাহিদা ও পানাহার আমার জন্য পরিহার করেছে। মুসলিম-২৭৬৩,
সিয়াম অধ্যায়
(২) প্রতিরাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতিরাত ও দিবসে মুসলিমের
দুআ-প্রার্থনা কবুল করা হয়। সহিহ আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব
তাই আমাদের উচিত এ গণিমতকে কাজে
লাগিয়ে নিজের দুনো জাহানের (দুই) কল্যাণের
জন্য যেমন দুআ-প্রার্থনা করবে, তেমনি সকল
মুসলিমের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর
কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন করা।
(৩) যখন রমাদান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে। শয়তানদের শিকল পড়ানোহয়। মুসলিম
ইফতার করানোর ফযিলত:
এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে
এসেছে- যে এ মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, তা তার গোনাহসমূহ
ক্ষমা এবং দোযখের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া তার সওয়াব হবে সেই রোজাদার
ব্যক্তির সমান অথচ তাতে রোজাদের সওয়াবও কম করা হবে না। আমরা (সাহাবারা)
বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তো এমন সামর্থ রাখে না, যাদ্বারা
রোজাদারকে ইফতার করাতে পারে ? তিনি বললেন, আল্লাহ পাক এ সওয়াব সে ব্যক্তিকেও দান করবেন যে রোজাদারকে এক চুমুক দুধ কিংবা
একটি খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে
তৃপ্তির সাথে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে আমার হাউজে কাওসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন,
যার ফলে জান্নাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে আর তৃষ্ণার্ত হবে না। সুনানে বাইহাকি-৪৮২
খেজুর দ্বারা ইফতার
করা সুন্নাত:
রাসূল (ﷺ) বলেন-যখন
তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। যদি খেজুর না পায় তাহলে যেন
ইফতার করে পানি দ্বারা, কেননা পানি পবিত্রকারী। জামেউত তিরমিজি-৬৬০,
যাকাত অধ্যায়
সিয়াম বা রোজার উদ্দেশ্য
কী ? এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ বলেন- হে মুমিনগণ!
তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের
উপর যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। সূরা বাকারা : ১৮৩
পৃথিবীর সব কর্মের
জন্য প্রশিক্ষণ দরকার, ঠিক তেমনি তাকওয়ার প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে আল্লাহ তাআলা দীর্ঘ
এক মাস সিয়াম-সাধনা ফরজ করেছেন। একজন রোজাদার ব্যক্তিকে প্রচণ্ড
ক্ষুধা-পিপাসা লাগা সত্ত্বেও সে খায় না এই কারণে যে খেলে তো রোজা ভেঙ্গে যাবে কেউ
না দেখলে ও একজন তো অবশ্যই দেখবে। রোজাদার এই শিক্ষা-বিশ্বাস যদি
সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করতো তাহলে দেশ থেকে অপরাধ-অনাচার,
দুর্নীতি-দুষ্কৃতি অধিকাংশ নিপাত যেত। মহান আল্লাহ আমাদেরকে
রোজার মাধ্যমে তাকওয়া হাসিল করার তাওফিক দান করুন।
রোজার ক্ষতি পূরণ স্বরুপ
সদকাতুল ফিতরা দেয়া: হাদিস শরিফে এসেছে-রাসূল (ﷺ) সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করে দিয়েছেন
যা রোজাদারদের জন্য অনর্থক ও অশ্লীল কর্ম থেকে পবিত্রতার মাধ্যম এবং মিসকীনের জন্য
কিছু আহারের ব্যবস্থা। যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পূর্বে ইহা আদায় করবে তার সে দান কবুল
সদকাহ (ফিতরাহ) হিসেবে গণ্য হবে, আর যে
ব্যক্তি ঈদের নামাযের পরে ইহা আদায় করবে, সেটা হবে দানের ন্যায়
সাধারণ দান। সুনানে আবু দাউদ-১৬১১, যাকাত অধ্যায়
সিয়াম বা রোজা শুদ্ধ
হওয়ার ছয়টি আদব: রাসূল (ﷺ) বলেছেন-যে ব্যক্তি রোজা রেখে
মিথ্যা কথা ও অনর্থক কর্ম পরিহার করে না, তার খানা-পিনা-ত্যাগ করে রোজা রাখায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। বুখারি-১৯৩৭ ,সিয়াম অধ্যায়
সুতরাং বুঝা গেল শুধু
না খেয়ে থাকার নাম রোজা নয়, বরং আরও কিছু আছে। ছয়টি জিনিস থেকে পরহেয
থাকলে পরিপূর্ণ রোজা হবে। নিম্ন রুপ:
প্রথম: চক্ষুর হেফাযত
অর্থাৎ যাদেরকে দেখা হারাম; তাদেরকে না দেখা এবং অশ্লীল ছবি-কার্টুন-পর্ণো না দেখা। আল্লাহ তাআলার বাণী- হে নবি আপনি
মুমিনদেরকে বলে দিন তারা যেন স্বীয় দৃষ্টি সংযত রাখে, কুদৃষ্টি
না করে। সূরা আন নূর-৩১
দ্বিতীয়: জবানের হেফাযত
করা অর্থাৎ গীবত, মিথ্যা, চোগলখুরী,
বাজে কথা, কটুবাক্য হতে জিহবাকে সংযত রাখা। আল্লাহ তাআলার বাণী-আর মুমিনদের
অনত্যম সিফাত হলো অনর্থক কথা-কাজ-চিন্তা
থেকে বিরত থাকা। সূরা মুমিনূন-০৩
তৃতীয়: কর্ণের হেফাযত:
গীবত করা ও হারাম শুনা ও হারাম। ঐ সব অপ্রিয় বস্তু যা মুখে
উচ্চারণ করা নাজায়েজ, তার প্রতি কর্ণপাত করাও নাজায়েজ। যেমন গান-বাদ্য থেকে। হজরত জাবের রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন- গান মানুষের অন্তরে এমনভাবে মুনাফেকি উৎপাদন করে যেমন পানি শস্য উৎপাদন করে। সুনানে বাইহাকি, রাসূল (ﷺ) বলেছেন- আমার উম্মতের মধ্যে জমিনে ধ্বসে যাওয়া ও আকৃতি বিবরণ/বিকৃতি মসিবতের আজাব হবে। যখন গায়িকা ও গান-বাজনা বিভিন্ন
পদে প্রকাশ পাবে। জামেউত তিরমিজি
চতুর্থ: বাকি অঙ্গ-প্রতঙ্গের হেফাযত: যেমন, হাত-পা-পেট। হাত দ্বারা নিষিদ্ধ বস্তু ধরা, পা দ্বারা
হাঁটা, পেটে হারাম/সন্দেহজনক খাবার থেকে
হেফাযত করা। যেমন মহান আল্লাহর নির্দেশ- হে মানব মণ্ডলী! পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষণ কর। সূরা বাকারা-১৬৮
পঞ্চম: ইফতারের সময়
হালাল মাল দ্বারা হলেও উদর পূর্ণ করে না খাওয়া: পেট ভরে খেলে
নসফ শক্তিশালী হয়, কামরিপু প্রবল থাকে। তাই উদরপূর্ণ করে না
খাওয়া; যাতে নফস দুর্বল থাকে। কেননা নফস বড় দুষ্ট। যেমন আল্লাহ তাআলার বাণী- আমি নিজেকে
নির্দোষ বলি না। নিশ্চয় মানুষের মন (নফস) মন্দ কর্ম প্রবণ
কিন্তু সে নয়-আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। সূরা ইউসুফ-৫৩
ষষ্ঠ: ভয় করা ও দুআ
করা: অর্থাৎ রোজা কবুল হয় কিনা এই ভয়ে সব সময় কম্পিত থাকা এবং
আল্লাহ তাআলার কাছে বিনতভাবে দুআ করা। যেমন কাবা ঘরের মত মহান কার্য
সাম্পাদন করে হজরত ইব্রাহিম আ. দুআ করেছিলেন- হে আমাদের
প্রতিপালক! আমাদের এই মেহনত (কাবা নির্মাণ)
আপনি কবুল করে নিন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। সূরা বাকারা-১২৭
v
রোজা বা সিয়ামের আত্মাধিক উপকারিতা:
১. তাকওয়া অর্জন
ও তাকওয়ার প্রশিক্ষণ।
২. আল্লাহ তাআলার
নৈকাট্য হাসিল ও তার সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন।
৩. ধৈর্য,
সংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ।
৪. নফস ও শয়তানকে
পরাভূত করা সহজ হয়।
৫. রোজা
আদায়কারী বিনা হিসেবে প্রতিদান লাভ করে থাকেন।
৬. রোজা জাহান্নামের
ঢাল স্বরুপ।
v
রোজার সামাজিক উপকার:
১. গরীব-দুখীদের কষ্ট সহজে অনুমেয়।
২. মুসলিম সমাজে
খোদাভীতির ও ইসলামিক পরিবেশের চর্চা।
৩. মুসলিম ভ্রাতৃত্বের
বন্ধন মজবুত হয়।
৪. যাকাত-ফেতরা আদায়ের মাধ্যমে অসহায় মানুষের অর্থনীতিক মুক্তি লাভ করে।
শারীরিক বা চিকিৎসা
বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে রোজার উপকারিতা:
১. পাকস্থলী
ও পরিপাকতন্ত্রকে বিশ্রাম দিয়ে থাকে।ফলে তা সজীব ও সতেজ হয়ে কার্যকারিতা বহুগুণে
বৃদ্ধি হয়।
২. রোজাদের
দেহে নতুন কোষ গঠন করে।
৩. অতিরিক্ত
ওজন ও মেদ কমায়।
৪. শরীরের মোটা
শরীরের স্থূলতা কমায়।
৫. কোলেস্টেরল কমায়।
৬. ক্যান্সার
ঝুঁকি কমায়।
৭.
রক্তচাপ/ব্লাডপ্রেসার কমায়।
৮.
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
৯. কঠিন
মানসিক চাপ/স্ট্রেস কমায়।
১০. গ্যাস্ট্রিক
ভাল হয়।
( ২০ নং হাদিস
সমাপ্ত)
---------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
বাজারে গেলে নিম্নোক্ত দুআটি কমপক্ষে একবার পাঠ করা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি বাজারে গিয়ে নিম্নের দুআটি পাঠ করবে, আল্লাহ
তাআলাতার জন্য দশ লাখ নেকি লিখবেন, দশ লাখ গোনাহ মিটিয়ে দিবেন, দশ লাখ মর্যাদা উন্নয়ন করবেন এবং বেহেশতে একখানা ঘর
নির্মাণ করবেন। জামেউত তিরমিজি-৩৪২৯; সুনানে ইবনে মাজাহ্।
বাংলা উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা
শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউয়ী ওয়া ইউমীতু ওয়া হুয়া হাইয়্যূল লা ইয়ামূতু বিইয়াদিহিল খয়রু
ওয়া হুয়া আলা কুল্লিা শাইয়িন ক্বদীর।
হাদিস নং-২১, যাকাত আদায় না করার শাস্তি |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ
آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ شُجَاعًا
أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَأْخُذ
بِلِهْزِمَتَيْهِ -
يَعْنِي بشدقيه - يَقُولُ: أَنَا
مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ رواهالبخاريفيالصحيح অর্থ: ‘আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলাল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যাকে আল্লাহ
সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে)
টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া
হবে। সাপটি তার মুখের দু’পাশ্ব কমড়ে ধরে
বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। তারপর রসূলাল্লাহ (ﷺ) তিলাওয়াত করেন, {لاَيَحْسِبَنَّالَّذِينَيَبْخَلُونَ} আল্লাহ যাদেরকে
সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের
ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে,
বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরে কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে
কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃংখলাবদ্ধ করা হবে। (সূরা আলে ইমরান-১৮০) বুখারি-১৪০৩ ; কিতাবুয
যাকাত; নাসায়ি-২৪৪৮; মুয়াত্তা মালেক-৬৯৬; ইবনে
মাজাহ-১৭৮৬
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: যাকাত ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। যাকাত আদায়ের
মাধ্যমে মাল পবিত্রতা লাভ করে। না আদায় করলে বিভিন্ন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। যেমন- বুখারি-মুসলিম শরিফে হাদিস এসেছে যে- কিয়ামতের ময়দানে গরু, মহিষ, উঠ ইত্যাদি জন্তু শিং দ্বারা আঘাত করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন- যারা
সোনা রূপা সঞ্চয় করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না; অতএব
আপনি সুসংবাদ শুনিয়ে দিন, অতি যন্ত্রণাময় শাস্তির। যা সেদিন ঘটবে, যেদিন
জাহান্নামের অগ্নিতে সেগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর সেগুলো
দ্বারা তাঁদের ললাটসমূহে এবং তাঁদের পার্শ্বদেশসমূহে এবং তাঁদের পৃষ্টসমূহে দাগ
দেয়া হবে, এটা তা-ই যা তোমরা নিজেদের
জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে, সুতরাং এখন স্বাদ গ্রহণ কর নিজেদের
সঞ্চয়ের। সূরা তাওবা-৩৪
কোন কোন অর্থ/সম্পদ কি
পরিমাণ থাকলে যাকাত ফরজ হয়:
মানুষের সমস্ত
সম্পদ ৫ (পাঁচ) ধরণের। তার মধ্যে এক ধরণের উপর
শুধু যাকাত ফরজ হয় না, তাহলো মৌলিক নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদ। উদাহরণ: বসবাসের
বাড়ি-ঘর, দালান-কোঠা,
ব্যবহ্নত গাড়ি, পোশাক-পরিচ্ছেদ, এসি-ফ্যান-বাতি ইত্যাদি। বাকি চার ধরণের সম্পদে
যাকাত আসে। যেমন-
এক. জমি । জমি আবার
তিন ধরণের, (ক) ব্যবসার
জমি (খ) ওশরি জমি (গ) অন্য সমস্ত জমি।
দুই. পশুর
যাকাত। ব্যবসা ও সায়মা পশুর উপর যকাত আসে কিন্তু প্রয়োজনীয় পশুর উপর আসে না।
তিন. সোনা-রুপা ও নগদ টাকার যাকাত।
Ø
হজ্বের
উদ্দেশ্যে কিংবা ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের
জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হচ্ছে তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়।
সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা
অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে
এবং নিসাবের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ফরজ হবে।
বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তা যদি খরচ হয়ে যায় তাহলে যাকাত ফরজ হবে না।-মুসান্নাফে
আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৩২;
মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হাদীস
১০৩২৫
Ø
যদি কারো নিকট শুধু স্বর্ণ
থাকে। রৌপ্য, টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছুই না থাকে, তাহলে সাড়ে সাত ভরি/তোলা বা তার চেয়ে বেশি স্বর্ণ
থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয় হয়।
Ø
আর যদি শুধু রূপা থাকে
অন্য কিছু না থাকে, তাহলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা তার চেয়ে বেশি থাকলে
বৎসরান্তে যাকাত ফরজ হয়।
Ø
প্রয়োজনের
উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য-দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার
সমপরিমাণ হয় তাহলে যাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়েছে ধরা হবে এবং এর যাকাত দিতে হবে।-মুসান্নাফে
আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৭৯৭,৬৮৫১; মুসান্নাফে
ইবনে আবি শায়বা হাদীস ৯৯৩৭
Ø
যদি
সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা
কিংবা বাণিজ্য-দ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু
এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার
সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে সকল সম্পদ হিসাব করে যাকাত দিতে
হবে।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৬৬,৭০৮১; মুসান্নাফে
ইবনে আবি শায়বা ৬/৩৯৩
বর্তমানে সাড়ে
বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য ৩৬,৭০০(ছত্রিশ হাজার
সাতশত টাকা )-আগস্ট ২০১৮। উদাহরণ: কারো কাছে
সিকি সোনা, হাফ ভরি রুপা/,নগদ হ্যাণ্ডক্যাশ
পনের হাজার টাকা, সিকি সোনা ১২৫০০+পঁচিশ ভরি রুপা ১৭৫০০+১৫০০০=৪৫,০০০ টাকা, তাহলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ।
বি: দ্র: যাকাত এবং ছদকাতুল
ফিতর/কুরবানি যার উপর ওয়াজিব পার্থক্য হলো- যাকাত ফরজ হতে
এক বছর সময় লাগবে কিন্তু ছদকাতুল ফিতর ও কুরবানি বছর মালিকনা শর্ত নয় বরং ঐ দিনে
নিসাব পরিমাণ (৩৬৭০০টাকা) সম্পদ থাকলেই
হবে।
বিস্তারিত জানার
জন্য দেখুন- যাকাত হিসেব করার সহজ পদ্ধতি (ছোট কিতাব,কিন্তু খুবই উপকারী)-মাহমুদুল হাসান ০১৭৩৮-৬০৫১৩১; আহকামে
জিন্দাগী-২২৩ পৃষ্ঠা; আহকামে যাকাত ও ইসলামি
ব্যাংকিং ও অর্থায়ন পদ্ধতি-মুফতি তকি উসমানি দা.বা. মাকতাবাতুল আশরাফ; ফাতাওয়ায়ে
মাদানিয়া-যাকাত অধ্যায়; ফাতাওয়ায়ে উসমানি-বইঘর প্রকাশনী
কি পরিমাণ সম্পদ
যাকাত দিতে হয়? যাকাতেরর পরিমাণ হলো ২.৫%
শতকরা আড়াই টাকা আর প্রতি হাজারে ২৫(পঁচিশ) টাকা হিসেবে
যাকাত দিতে হবে। উদাহরণ: কারো কাছে যাকাতের ১, ০০,০০০ (এক লাখ) টাকা আছে, তাহলে তার যকাত দিতে হবে ১০০×২৫=২৫০০ টাকা।
দানের মাহাত্ম্য ও
কৃপণতার নিন্দা: হাদিস শরিফে এসেছে-
(১) বান্দার সকাল হলেই দুজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ!
করচকারীকে যথোচিত বিনিময় দান কর। অপর জন বলেন, হে আল্লাহ!
কৃপণের ধন নষ্ট করে দাও। বুখারি-১৪৬৪
(২) নিঃসন্দেহে সদকাতার (দানকারীর) বয়স বৃদ্ধি করে, মন্দ মৃত্যু থেকে রক্ষা করে এবং আল্লাহ
তাআলা তাদ্বারা তার অহংকার ও রোগের নিরাময় করেন। তাবারানি
(৩) দান-সদকা আল্লাহর রাগ প্রশমিত করে এবং মন্দ বা অপমৃত্যু
রোধ করে। তিরমিজি-৬৬৬,যাকাত অধ্যায়
(৪) তোমরা দানের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি কর। কেননা বিপদাপদ তা অতিক্রম করতে
পারে না। মিশকাতুল মাছাবিহ
(৫) যে ব্যক্তি তার হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুরের মূল্য সমান দান করে,
বলা বাহুল্য আল্লাহ তাআলা ও হালাল জিনিস ছাড়া অন্য কিছুই গ্রহণ করেন
না; আল্লাহ তাআলা তা তার কুদরতি ডান হাতে গ্রহণ করেন। এর পর তাকে (দান কৃত সম্পদকে)
দানকারীর জন্য বাড়াতে থাকেন। যেমন তোমার কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে
প্রতিপালন করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ঐ টুকুদান একদিন পাহাড় সমান উঁচু হয়ে
থাকে। বুখারি-১৪৩০, যাকাত অধ্যায়
(৬) একজন ব্যক্তির মৃত্যুকালে একশত দিরহাম দান করা অপেক্ষা, জীবনকালে মাত্র এক দিরহাম দান করা অধিক উত্তম। সুনানে আবু দাউদ-২৮৬৮,
অসিয়ত অধ্যায়
মৃত্যূ ব্যক্তির পক্ষে
দান করলে কিসে উপকৃত হবে:
হজরত সাদ বিন উবাদা
রা. বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার আম্মা যখন ইন্তেকাল করেন, তখন আমি বাড়িতে
ছিলাম না। এবার আমি যদি তার পক্ষ থেকে কিছু সদকা করি। এটা দ্বারা তার কি কোন উপকার
হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর আমি বললাম, আপনাকে সাক্ষী
রেখে আমার মেখরাফ নামক বাগানটি তার (মায়ের) জন্য দান করে দিলাম। বুখারি-২৭৯৫, অসিয়ত অধ্যায়
দান নষ্ট হয় কিসে? আল্লাহ তাআলা
বলেন- হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা
প্রকাশ করে/খোটা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদকা বরবাদ-বিনষ্ট কর না। সূরা বাকারা-২৬৪
হাদিস নং-২২,
হজ-ওমরার ফযিলত |
عَن
أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : الْعُمْرَةُ
إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا ، وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ
لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةَ অর্থ: আবু হুরাইরা রা. হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, এক ওমরা থেকে আরেক
ওমরা পালন উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের ছগিরা গোনাহ সমূহের কাফফারা স্বরূপ। আর কবুল হজের
বিনিময় জান্নাত বৈ কিছুই
নয়। বুখারি-১৭৭৩;
মুসলিম-১৩৪৯; তিরমিজি-৯৩৩
প্রাসঙ্গিক আলেচনা: হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। হজ হলো
যৌগিক ইবাদত তথা-আর্থিক, শারীরিক ও মানুসিক
ইবাদত। এ ফযিলত
সম্পর্কে বহু হাদিস
বর্ণিত হয়েছে। যেমন- রাসূল (ﷺ)
বলেছেন-
তোমরা হজ ও ওমরা পাশাপাশি
আদায় কর, কেননা এ দুটো আমল মানুষের দরিদ্রতা
ও গোনাহ এমনভাবে দূর করে দেয়; যেমনিভাবে হাপর লোহা
ও সোনা-রূপার ময়লা দূরে করে দেয়। আর কবুল হওয়া হজ্বের
একমাত্র সওয়াব হচ্ছে জান্নাত। তিরমিজি-৮১৫, হ্জ অধ্যায়
**যে ব্যক্তি হজ সম্পাদন করল এবং
কোন প্রকারের অশ্লীল কথা ও কর্ম কিংবা গোনাহ করল না। সে যেন সে দিনের ন্যায় নিষ্পাপ অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করল; যে দিন তার মাতাকে প্রসব করেছিল। বুখারি-১৫৪৬
তাওয়াফ করার সময়
প্রত্যেকটি কদমে কদমে একটি গুনাহ মাফ হয়
** ZvIqvd
Kivi mgq cÖ‡Z¨KwU K`‡g K`‡g GKwU ¸bvn gvd nq I GKwU K‡i †bKx †jLv nq|
wZiwgwh-974, n¾ Aa¨vq
হজ্জে মাবরুর কাকে
বলে?
Ø বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত হাসান বসরি রহ.
বলেন- দুনিয়া ত্যাগী মনোভাব ও আখেরাত লাভের আগ্রহ প্রবণতাসহ
হজ ফেরত আসলে তাকে মাবরুরর হজ বলে।
Ø আল্লামা মুহিউদ্দীন ইবনে আরাবি রহ. বলেন- যে হজের পর কোন গুনাহের
কাজ হয়না, তাকে মাবরুর হজ বলে।
Ø আল্লামা তিবি রহ. বলেন- মাবরুর হজের নিদর্শন হলো সকল ফরজ ও ওয়াজিবসমূহ
বিশুদ্ধ নিয়তের সাথে আদায় করা এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকা।
প্রিয় মুসলিম ভাইগণ! নিজের মনের কাছে প্রশ্ন করি, হজ করার পর আমার কি পরিবর্তন হয়েছে? না আগের মত সব পাপ জারি আছে ? যেমন-
বেপর্দা, বদমেজাজ,
জামাতে
না আদায় না করা, সুদ-ঘুষ খাওয়া, জমির আইল ঠেলা, নিজ পরিবারের পর্দা না করানো, কথায় কথায় রাগ করা, গীবত-অহংকার করা ইত্যাদি।
কাদের উপর হজ ফরজ?
মহান আল্লাহর নির্দেশ-আর এ ঘরের হজ আদায় করা হল মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। সূরা আল ইমরান-৯৭
সামর্থের ব্যাখ্যা
হলো- যার নিকট মক্কা মুকাররমা থেকে
হজ করে ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারে আবশ্যকীয় খরচবাদে মক্কা শরিফ যাতায়াতের মোটামুটি খরচ
পরিমাণ অর্থ থাকে, তার উপর হজ ফরজ। ব্যবসায়িক পণ্য ও প্রয়োজনের
অতিরিক্ত জমির মূল্য এ অর্থের হিসেবে গণ্য হবে। অতিরিক্ত জমি বলতে- ধরুন,
কারও
১০বিঘা জমি আছে যা দিয়ে তার সংসার চলে,
এখন যদি
১ বিঘা জমি বিক্রি করে বাকি ৯ বিঘা দ্বারা যদি তার সংসার চলতে পারে তাহলে তার উপর হজ
ফরজ।
মেয়েদের জন্য নিজ স্বামী
বা বিশ্বস্ত মাহরাম (যা সাথে বিবাহ স্থায়ীভাবে
হারাম) পুরুষ ব্যতীত হজ্জে যাওয়া দুরস্ত
নহে।
যেমন- রাসূল (ﷺ) বলেছেন-আল্লাহ ও আখেরাতের
প্রতি ঈমান আনয়নকারী কোন নারীর জন্য ইহা বৈধ নয় যে, সে একদিন ও একরাতের (৪৮ মাইল বা ৭৮কি.) দূরবর্তী কোন স্থানে একা সফর করবে অথচ তার সাথে কোন মুহরিম পুরুষ
থাকবে না। বুখারি-১০৯৬, কিতাবুত তাকছির
অন্ধের উপর হজ ফরজ
নয়, তার যতই সম্পদ থাকুক কেন। নাবালেগেরই পর হজ ফরজ না। নাবালেগ অবস্থায় হজ
করলেও বালেগ হবার পর সম্বল হলে পুনরায় হজ করতে হবে।
এক ইলাহ এর বান্দার
নিদর্শন:
বিভিন্ন দেশ হতে আগত তাঁদের শারীরিক কাঠামো ভিন্ন, ভাষা ভিন্ন, কিন্তু মীকাতের কাছে এসে তাঁরা সবাই নিজেদের
পোশাক খুলে একই ধরণের কাপড় পরিধান করে, তখন তাঁদের মধ্যে একই
ইলাহ-এর বান্দা হওয়ার চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়।
আল্লাহ প্রেমের অপূর্ব
নিশানা: বান্দা তার নিজ বাড়িতে নানান ইবাদত করে পরম প্রেমাস্পদ মহান মালিকের নৈকট্য
হাসিল, তাঁকে পাওয়ার জন্য, কেমন যেন তার
কাঙ্খিত মিলন হলো না, তাই এবার সে মাশুকের দিদারের আশায় তার ঘরের
(কাবার) চার পাশে বারবার খুঁজছে আর বলছে
সে হে দয়াময়! আমি তোমার দুয়ারে উপস্থিত সুতরাং তুমি কোথায়?
দুনিয়ার প্রেমিক যেমন তার প্রেমিকার জন্য দেওয়া না হয়ে, নিজ বাড়ি-ঘর, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদের খবর থাকে
না, তেমনি হাজি মাহবুবে হাকীকি আল্লাহর তালাশে সবকিছু বিসর্জন
দিয়ে তার তালাশে মগ্ন। প্রেমিক ছাড়া কেউ আর আছে কি এ বেশ ভূষা ধরতে?
হজের সামাজিক, রাজনৈতিক ও
আন্তর্জাতিক গুরুত্ব: হজ একান্তই ব্যক্তিগত আমল। তা সত্ত্বেও সামাজিক, রাজনৈতিক ও
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হজের বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। বস্তুত হজের মৌসুম এমন এক বসন্ত
মৌসুম, যার আগমনে নতুন প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা মুসলিম উম্মাহ। হজ যেহেতু মুসলিম উম্মাহর
এমন এক বিশ্ব সম্মেলন, সেখানে সব শ্রেণীর মানুষই এসে সমবেত হয়। তাই সময়ে বিশ্ব শান্তি
স্থাপনে এবং জাতিসমূহের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ মিটিয়ে, লড়াই-ঝগড়ার পরিবর্তে ভালবাসা, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের
জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়।
মানসিক ও ধর্মীয় প্রস্তুতি: ১.
পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনকে
তাকওয়া তথা ইসলামি জীবন যাপনের উপদেশ দান।
২. কারও সাথে
লেনদেন থাকলে তা যথাসাধ্য চুকিয়ে ফেলা এবং পুরাপুরি সম্ভবনা হলে তা লিখে রাখা এবং কয়েকজন
সাক্ষী রাখা।
৩. অতীতের গোনাহ
রাশির জন্যে আল্লাহর দরবারে তওবা করে নেওয়া। (তওবার শর্ত
পৃষ্ঠায় দেখুন)
৪. কারও ধন সম্পদ
জমি-জিরাত বা অন্য কোন হক নিজের জিম্মায় থাকলে তা আদায় করা। কারও মনে কষ্ট দিলে
তার থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া।
৫. হালাল মাল
দ্বারা হজ করা।
৬. নিয়ত সহিহ
করা। লোকে হাজি বলবে এ জন্য নয় বরং আল্লাহকে রাযি-খুশির জন্য।
৭. হজ ও ওমরার
মাসয়ালাসমূহ শিক্ষা করে নেওয়া।
৮. উত্তম সফর
সঙ্গী নির্বাচন, কেননা সফর সঙ্গী ইবাদত বন্দেগির সহায়ক হয়ে থাকে। হজের মাসয়ালা জানা
অভিজ্ঞ আলিম ও সুন্নাতের পূর্ণ অনুসারী সাথী মকবুল হজ হাসিলের বিশেষ সহায়ক।
৯. নিজেকে সতর্কভাবে
গুনাহের কাজসমূহ থেকে বেঁচে থাকা। কেননা অশ্লীল কার্যাদি ও কথাবার্তা হতে বিরত থেকে
হজ পালনকারীর জন্যে কবুলিয়ত ও জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি: ১.
হজের নিয়ন্ত্রণ যেহেতু ধর্ম মন্ত্রণালয়ে হাতে, তাই তাদের জারীকৃত নির্দেশাদি ও তাদের বিলিকৃত পুস্তিকা ও ইশতেহারাদি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে
পড়ে সেমতে কাজ করা।
২. যথাসময়ে হাজি ক্যাম্পে পৌঁছে স্বাস্থ্যগত আনুষ্ঠিক বিষয়,
ইনকেজন ও স্বাস্থ্য সার্টিফিকেট ইত্যাদি গ্রহণ করা। ৩. ইহরামের কাপড়, হালকা বিছানা
পত্র (মশারীসহ) মজবুত সুটকেস বা ব্যাগ,
জরুরি কাগজ পত্র ও টাকা-পয়সা রাখার মত একটি প্রশস্ত কোমর বন্ধ সাথে নেওয়া। খাদ্য সঙ্গে না নেওয়া।
৪. বাক্স বা ব্যাগে
নিজের নাম ঠিকানা ও নাম্বার পরিষ্কারভাবে লিখে নেওয়া।
৫. পাসপোর্ট ও
সার্টিফিকেট ও বিমানের টিকিট ইত্যাদি সাবধানে রাখার ব্যবস্থা অবলম্বলন।
৬. মহিলাদের বোরকা
সাথে নেওয়া, অলংকারাদি যত দূর সম্ভব কম নেওয়া উত্তম। কেননা অনেক সময় তা
বিপদের ও পেরেশানির কারণ হয়ে যায়।
৭. প্রয়োজনীয়
আরবি কথোপকথন শিখে নেওয়া, যাতে টুকটাক কথা বলা ও বোঝা যায়।
৮. মক্কা,
মদিনা, আরাফাত ও মিনায় বাংলাদেশ দূতবাস ও হজ মিশনের
সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। সূত্র: দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম হজ অধ্যায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হজ ফরজ হওয়ার পরেও
না করলে কঠোর হুশিয়ারি : হজরত আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন, যাকে শক্ত অভাব বা অত্যাচারী
শাসক কিংবা গুরুতর রোগ বাঁধা
দেয়নি অথচ সে হজ ফরজ হওয়ার
পরেও হজ না করে মরতে বসেছে, তাহলে সে চায়
তো মরুক ইয়াহুদি
হয়ে বা নাসারা
হয়ে। সুনানে দারেমি
একটা কুসংস্কার: মাতা-পিতার পূর্বে, ছেলে-মেয়ে বিবাহ
দেওয়ার পূর্বে হজ করা যাবে না, এ কথা সঠিক নয় (ছেলে-মেয়ে বড় হলে উপযুক্ত পাত্র পেলে বিবাহ দেওয়া উচিত,
বিবাহ না দেয়ার কারণে সন্তানরা পাপ করলে, সে গোনাহ
পিতার উপর বর্তাবে। হজ ফরজ হলে বিলম্বে আদায় করা বিনা ওযরে ঠিক নয় বরং গুনাহের কাজ।
বিস্তারিত দেখুন- দৈনন্দিন জীবনে
ইসলাম হজ অধ্যায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
( ২২ নং হাদিস সমাপ্ত )
------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
পাপ হয়ে গেলে কি করণীয়
হজরত আলি ইবনে আবু তালেব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- কোন ব্যক্তি গোনাহ করার পর উত্তমরুপে অজু
করে দুরাকাত সালাত পড়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা
করে দেন। জামে তিরমিজি-৪০৬,৩৩০৬; সুনানে আবু দাউদ-১৫২১; মিশকাত-১৩২৪
হাদিস নং-২৩, হালাল উপার্জন করা |
عن
المقدام بنِ مَعْدِ يكرِبَ - رضي الله عنه - عن
النبي - صلى الله عليه وسلم - قَالَ
: « مَا أكَلَ أَحَدٌ طَعَاماً قَطُّ خَيْراً مِنْ أنْ يَأكُلَ مِنْ
عَمَلِ يَدِه ، وَإنَّ نَبيَّ الله دَاوُدَ - عليه
السلام - كَانَ يَأكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ » অর্থ: হজরত
মিকদাম রা থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নিজ হাতে উপার্জিত জীবিকার খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায়না। মহান আল্লাহ
তাআলার নবি দাউদ আ.নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। বুখারি শরিফ-১৯৪২ ইসলামিক
ফাউণ্ডেশন
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: হালাল মাল
উপার্জন করা আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেছেন- ফরজ ইবাদত-বন্দেগির পর হালাল পথে উপার্জন করাও একটি ফরজ। সুনানে বাইহাকি রাসূল
(ﷺ) আরও বলেন- মানুষের সামনে এমন যুগ আসবে, যখন মানুষ মোটেই পরওয়া
(খেয়াল) করবে না যে, সে যা
নিচ্ছে বা গ্রহণ করছে, তা কি হালাল উপায়ে হচ্ছে না হারাম উপায়ে। বুখারি-২০৯৮,
ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়
প্রিয় বন্ধু গণ! আমাদের সমাজের চিত্র তাই নয় কি? ৯০% মুসলমান প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সুদের সাথে জড়িত। বাঁচার জন্য চেষ্টা
না করা অথচ সত্যিকার অর্থে হারাম থেকে বাঁচতে চাইলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই পথ খুলে দিবেন। মহান আল্লাহ ওয়াদা
করেছেন- যারা আমার জন্য চেষ্টা-ফিকির করে,আমি অবশ্যই তাদের জন্য অসংখ্য পথ/রাস্তা খুলে দিই। সূরা আনকাবুত-৬৯ অন্য আয়াতে
তিনি বলেন-আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কজের ভার/বোঝা দেন না। সূরা বাকারা-২৮৬
ফেরিওয়ালার
ডাকাডাকি সুবহানাল্লাহর চেয়েও সওয়াব বেশি: মহিউস সুন্নাহ
শাহ আবরারুল হক রহ. বলেন, এক ব্যক্তি হালাল
রুজি কামাইর জন্য বলছে রাখেন হরেক মাল, কাপড় লাগবে কাপড়, আছে ভাঙ্গা লোহা-কড়াই (অর্থাৎ ফেরিওয়ালা
এভাবে ওলি-গলিতে ডাকাডাকি করে), আরেক ব্যক্তি
মসজিদে ফরজ নামাযের পর মসজিদে বসে সুবহানাল্লাহি, ওয়াল হামুলিল্লাহ,
আল্লাহু আকবার ইত্যাদি তাসবিহ পড়তেছে। এখন সওয়াব বেশি কার। যে ব্যক্তি মাল
বিক্রি করার জন্য চিল্লাচিল্লি করছে তার এ ডাকাডাকি ফরজের সওয়াব পাবে, কেননা হালাল
রিযিক তালাশ করা ফরজ। আর সে তাসবিহ পাঠকারী ব্যক্তি নফলের সওয়াব পাবে। কারণ স্বাভাবিক তাসবিহ
পাঠ করা নফল।
হারাম মালে ইবাদত-দুআ কবুল হয়
না: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন-(১) কোন ব্যক্তি যদি দশ দিরহাম দ্বারা একটি কাপড় ক্রয়
করে, যার এক দিরহাম হারাম পন্থায় অর্জিত, তবে ঐ কাপড় যতদিন তার পরনে থাকবে, ততদিন আল্লাহ তাআলা
তার কোন প্রকার নামাজ কবুল করবেন না। মুসনাদে আহমদ-৫৪৭৩
(২) রাসূল (ﷺ) একবার একব্যক্তির কথা আলোচনা করলেন,
যে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে। ফলে তার চেহেরা হয়ে গেছে উস্কু-খুস্কু ও ধুলি-ধুসরিত। এ অবস্থায় সে তার হাত দুখানি আসমানের দিকে তুলে বলতে থাকে, হে প্রভূ!
হে প্রভূ! (এ বলে দুআ করতে থাকে) অথচ সে যা কিছু পানাহার করে, যা কিছু পরিধান করে,
যা কিছু ব্যবহার করে, তার সবটাই হারাম। কাজেই কিভাবে তার দুআ
কবুল হবে। তিরমিজি-৩২৫৭
হারাম জান্নাতের প্রতিবন্ধক: রাসূল (ﷺ) বলেছেন- ঐ দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা
হারাম উপায়ে বর্ণিত হয়েছে। সুনানে দারেমি-২৬৫৭ কিতাবুর রিকাক
সুদ হারাম ও এর সাথে
জড়িত সবার উপর লানত/অভিশাপ: এ সম্পর্কে
কুরআনুল কারিমের ঘোষণা হলো- যারা সুদ খায়, তারা তার মতই
দাঁড়িয়ে যাবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল
বানিয়ে দেয়। এটা
এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ
আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ
হারাম করেছেন। সূরা বাকারা-২৭৫
রাসূল (ﷺ) বলেছেন- সুদখোর, সুদদাতা, সুদের
লেখক এবং সুদের ব্যাপরে সাক্ষ্যদাতাকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং বলেছেন গুনাহের ব্যাপারে
এরা সকলেই সমান। মুসলিম; তিরমিজি-১২৪৮,
ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়
ঘুষ দাতা ও গ্রহীতার
উপর অভিশাপ: রাসূল (ﷺ) বলেছেন-সুদ গ্রহণকারী ও সুদ প্রদানকারী
উভয়ের উপর অভিশাপ করেছেন। সুনানে আবু দাউদ-৩৫৮২
সঠিক ব্যবসায়ীর ফযিলত: সত্যবাদী,
আমানতদার, ব্যবসায়ী (হাশরের
দিন) আম্বিয়া, সিদ্দিকীন ও শহীদগণের সাথে
থাকবে। জামে তিরমিজি-১২৫২, ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়
বিক্রয় লব্ধ বস্তুর
দোষ-ক্রটি থাকলে তা প্রকাশ করার ফযিলত: বিক্রির জন্য
কোন দ্রব্যের মধ্যে কোন দোষ-ক্রটি থাকলে তা গোপন করা হারাম। আর দোষ-ক্রটি বলে দিলে
বরকত রয়েছে। যেমন-রাসূল (ﷺ) বলেছেন-তারা (ক্রেতা-বিক্রেতা)
উভয়ে যদি সত্য বলে এবং দোষ-ক্রটি সাফ বলে দেয়,
তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি মিথ্যা বলে
এবং গোপন তাহলে তাদের বেচা-কেনায় বরকত মোচন (দূর)
হয়ে যায়। বুখারি শরিফ, কিতাবুল বুয়ু
ঋণীকে অবকাশ দানের
ফযিলত: আবু কাতাদা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূল
(ﷺ)কে
বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অক্ষম ঋণীকে সময় দান করবে আথবা ঋণ কর্তন
(মাফ) করে দিবে। আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিবসের
দুঃখ-কষ্ট হতে তাকে মুক্তি দান করবেন। মুসলিম; মিশকাতুল মাছাবিহ-২৭৭৭
হে! মেহেরবান মালিক!
আমাকেসহ সব মুসলমানকে হারাম থেকে বাঁচাও। আমীন !! দেখুন-ইসলামে ধন-সম্পদ অর্জনের তাগিদ গুরুত্ব ও বিধান-থানভি রহ.-আল-হিকমাহ লাইব্রেরি
( ২৩ নং হাদিস সমাপ্ত)
----------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
সাইয়্যেদুল ইসতিগফার : সকাল ও সন্ধ্যায় একবার
যে ব্যক্তি এ দুআটি একান্ত বিশ্বাসের সাথে সকালে পাঠ করবে অত:পর
ঐ দিন সন্ধ্যার পূর্বে মৃত্য বরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অনুরূপ সকালেও।
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي ، لا إِلَه إِلاَّ
أَنْتَ خَلَقْتَني وأَنَا عَبْدُكَ ، على عهْدِكَ و وعْدِكَ ما اسْتَطَعْتُ ، أَعُوذُ
بِكَ مِنْ شَرِّ ما صنَعْتُ ، أَبوءُ لَكَ بِنِعْمتِكَ علَيَ ، وأَبُوءُ بذَنْبي
فَاغْفِرْ لي ، فَإِنَّهُ لا يغْفِرُ الذُّنُوبِ إِلاَّ أَنْتَ "
হে আল্লাহ তুমি আমার রব, তুমি ছাড়া আর কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তুমি আমায় সৃষ্টি করছে,আর আমি তোমার বান্দা।
আমি আমার সাধ্য-মত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছি।
আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার আশ্রয় চাই।
আমার প্রতি তোমার নিয়ামতের স্বীকৃতি প্রদান করছি, আর আমি আমার গোনাহ-খাতা স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও, নিশ্চয়ই তুমি ভিন্ন আর কেউ গোনাহ মার্জনাকারী
নেই। বুখারি-৬৩০৬,৬৩২৩; তিরমিজি-৩৩৯৩; মুসনাদে আহমদ-১৬৬৬২
হাদিসনং-২৪, কোন নারীকে বিবাহ
করব |
عَن أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى
الله عليه وسلم ، قَالَ :
تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا
، وَلِحَسَبِهَا ، وَلِجَمَالِهَا ، وَلِدِينِهَا ، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ
تَرِبَتْ يَدَاكَ
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা
রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি (ﷺ) বলেছেন, চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করে। (এক) নারীর ধন-সম্পদ (দুই) বংশ-মর্যাদা (তিন) সৌন্দর্য (চার) ধর্ম পরায়ণতার কারণে। যদি বাকি
তিনটি নাও মিলে
তবে ধর্মভীরতাকে প্রাধান্য দাও অর্থাৎ
ধর্ম পরায়ণাকে বিবাহ কর; তোমার হাতগুলো ধুলায় ধূসরিত হোক ( এটি আরবদের একটি পরিভাষা অর্থাৎ তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে)। বুখারি-৫০৯০; মুসলিম-১৪৬৬; আবুদাউদ-২০৪৭; নাসায়ি-৩২৩০
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: উল্লিখিত চারটি
গুণের মধ্যে দ্বীনদারির দিকটাকে প্রাধান্য দিতে আদেশ করা হয়েছে। কেননা ধন-সম্পদ,
সৌন্দর্য ক্ষণিকের তরে। ভাল বংশে খারাপ আবার খারাপ
বংশে ভাল লোক পয়দা হয়। সুখময় জীবনের জন্য খোদাভীতি প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলার কসম! নাফারমানির
ভেতরে কখনও শান্তি আসতে পারে না। আমি যে মেয়েটাকে বিবাহ দিচ্ছি বা ছেলেকে বিবাহ
করাচ্ছি কার সঙ্গে ? নামাজি তো ? পর্দা ওয়ালা তো / নিশা খোর নয় তো? নবির সুন্নাত মানে তো? মনে রাখবেন ! পয়গাম্বরের কথা যে মানবে না (দ্বীনদারি খেয়াল করলো না) তাকে অশান্তি-বিপদ থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
নেককার বিবি/স্বামী
পাবার আমল: হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলি থানভি রহ. বলেন-কোন ব্যক্তি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের
পর সূরা ফুরকানের ৭৪ নং আয়াত (রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা
ওয়া জুররিইয়াতিনা কুররাতা আইউনি ওয়াজআল না লিল মুত্তাকিনা ইমামা ) পাঠ করে। ইনশাল্লাহ তার নেককার বিবি/স্বামী আল্লাহ তাআলা মিলাবেন। শুধু তাই নয়, সে-যে রকম শারীরিক গঠনের চায় সেই রকমই পাবে (অর্থাৎ
লম্বা, ফর্সা, মোটা-চিকন, হালকা-পাতলা, মাঝারি ইত্যাদি) সন্তানও নেককার হবে। (পরিবার-পরিজনের দ্বীনদারি
বানানোর জন্য এ আয়াতটি খুবই কার্যকরি)
ইস্তেখারা করা: ইস্তেখারা
মানে কল্যাণ চাওয়া। সুতরাং বিবাহের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নিকট কল্যাণ করা উচিত। জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যখন তোমাদের কেউ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় সে
যেন দুরাকাত নফল সালাত পড়ে অতঃপর বল………….। বুখারি -১১৬৬;
আবু দাউদ-১৫৪০
দুআ ও নিয়ম জানতে
দেখুন-খাযায়েনে কুরআন ও হাদিস-হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী,
৭১-৭৪ পৃষ্ঠা
বিবাহের
প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখা ও সতর প্রসঙ্গে: মুসলিম নর-নারীর জীবনে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই যখন তারা বিবাহের সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের জন্য কর্তব্য হলো ইস্তিখারা তথা আল্লাহর কাছে
কল্যাণ কামনা করা।
বিবাহের পূর্বে পাত্রী
দেখে নেয়া সুন্নাত। নিজে না দেখলে বা সম্ভব না হলে কোন মহিলাকে পাঠিয়েও দেখার ব্যবস্থা
করা। পাত্রীর চেহেরা ও হাত
দেখার অনুমতি রয়েছে। ছেলে ব্যতীত অন্য কোন পুরুষ মেয়েকে দেখা বৈধ নয়।
(যেমন-
বাবা, চাচা, ভাই,
দুলাভাই, নানা, দাদা প্রমূখ)
বিস্তরিত জানার জন্য- আহকামে জিন্দাগী,
৩৪৮-৩৬৫ পৃষ্ঠা পড়ুন। নববধূর উপহার- মুফতি রুহুল
আমীন যশোরী রহ.
বিবাহে অভিভাবক ও কনের
অনুমতি গ্রহণ:
বিবাহের জন্য কনের
অনুমতির প্রয়োজন। অনুমতি না দিলে বিবাহ হবে না। অবশ্য চুপ থাকা অনুমতির লক্ষণ। কনে যদি বালেগা (বয়স প্রাপ্ত
) হয় তাহলে অভিভাবকের অনুমতির জরুরি নয়।
বর-কনের
পারস্পরিক যোগাযোগ করা : প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে ফোন বা মোবাইলে এবং চিঠি ও মেইলের
মাধ্যমে শুধু বিবাহের চুক্তি
ও শর্তাদি বোঝা-পড়ার জন্য যোগাযোগের অনুমতি রয়েছে শর্তাপেক্ষে
যেমন- প্রেম বিনিময় করতে পারবে না, মাহরাম
ব্যক্তির সাথে যেরুপ কথা বলার বিধান সেভাবে করতে। কেননা বিবাহের পূর্বে তারা
স্বামী-স্ত্রী নয়। উল্লেখ্য, এ যোগাযোগ উভয়ের অভিভাবকেরে সম্মতিতে হওয়া শ্রেয়।
এ্যাংগেজমেন্ট করা: ইদানীং
পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে বিয়েতে এ্যাংগেজমেন্ট করার রেওয়াজ ব্যাপকতা পেয়েছে। এই আংটি পরানোতে
যদি এমন ধরে নেওয়া হয় যে এর মাধ্যমে বিবাহের কথা
পাকাপোক্ত হয়ে গেল তবে তা শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম। কেননা, মুসলিম
সমাজ বা শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। আরও নিন্দনীয় ব্যাপার হলো, এ আংটি
প্রস্তাব দানকারী পুরুষ নিজ হাতে কনেকে পরিয়ে দেয়। কারণ, এ পুরুষ
এখনো তার জন্য বেগানা। এখনো সে মেয়েটির স্বামী হয়নি। কেননা, কেবল
বিবাহ চুক্তি সম্পাদিত হবার পরেই তারা স্বামী-স্ত্রী বলে
গণ্য হবেন। সূত্র: ফাতাওয়া জামেয়া লিল-মারআতিল মুসলিমা।
উপযুক্ত পাত্রের
প্রস্তাব ফিরিয়ে না দেওয়া: উপযুক্ত পাত্র পেলে তার প্রস্তাব নাকচ করা
উচিত নয়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যদি এমন কেউ তোমাদের
বিয়ের প্রস্তাব দেয় যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে তোমরা তার সঙ্গে
বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না করো তবে পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজতা সৃষ্টি হবে। তিরমিজি: ১০৮
বিবাহের প্রকারভেদ
ও তার হুকুম: ব্যক্তি বিশেষে বিবাহের হুকুম তারতম্য আছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে
যেন বিয়ে করে। সামর্থ বলতে দুইটি জিনিস বুঝায় এক.শারীরিক
শক্তি দুই. আর্থিক (শক্তি) স্বাবলম্বী। বিবাহ মোট ৬ প্রকার
১.ফরজ ২.ওয়াজিব৩.সুন্নাত ৪. মুবাহ ৫.মাকরুহ ৬.হারাম। নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. ফরজ: বিবাহ করা ঐ ব্যক্তির উপর ফরজ যার শারীরিক শক্তি ও আর্থিক শক্তি আছে,
বিবাহ না করলে যেকোন সময় অপকর্মে লিপ্ত হবার নিশ্চিত বা প্রবল আশংকা। বিবাহ একমাত্র
রাস্তা তাকে যিনা থেকে বিরত রাখতে পারে। এমতাবস্থায় তার বিবাহ করা ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন-(১)
তোমাদের মধ্যে যারা সঙ্গী বিহীন পুরুষ বা মহিলা তোমরা তাদেরকে বিবাহ দাও আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাব মুক্ত না করা পর্যন্ত যেন তারা সংযম অবলম্বন
করে।
সূরা
নূর৩২-৩৩ আয়াত (২) তোমরা প্রকাশ্য ও
প্রচ্ছন্ন গোনাহ পরিত্যাগ কর। নিশ্চয় যারা গুনাহে করেছে, তারা অতিসত্বর তাদের কৃত কর্মের
শাস্তি পাবে। সূরা আনআম-১২০
(৩) আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল ও মন্দ
পথ। সূরা ইসরা-৩২
তবে কারো যদি
শারীরিক শক্তি থাকে কিন্তু আর্থিক সচ্ছলতা
নাই তার উপর বিবাহ ফরজ নয় সে রোজা রাখবে আর ছবর করবে । যেমন হাদিসে শরীফে আছে- আর যে এর
সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য সওম রাখা। কেননা তা যৌন
উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়। বুখারি-৫০৬৬; মুসলিম-৩৪৬৪
২. ওয়াজিব:
বিবাহ করা ঐ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব যার শারীরিক শক্তি ও আর্থিক শক্তি
আছে, বিবাহ না করলে যেকোন সময় অপকর্মে লিপ্ত হবার আশংকা। এমতাবস্থায় তার বিবাহ করা
ওয়াজিব। যেমন, হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে
অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার
কর্তব্য সওম রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়। বুখারি-৫০৬৬;
মুসলিম-৩৪৬৪
আর আর্থিক শক্তি
না থাকলে রোজা রাখবে।
৩. সুন্নাত: উপযুক্ত বয়স হলে স্বাভাবিক অবস্থা বিবাহ করা সুন্নাত। কেননা অধিকাংশ নবি বিবাহ
করেছেন। আর অবশ্যই তোমার পূর্বে
আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি। সূরা রাদ-৩৮
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- আমি নারীকে বিবাহ করি। ( তাই বিবাহ আমার সুন্নত) অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার
দলভুক্ত নয়। বুখারি-৫০৫৬; মুসলিম-৩৪৬৯
৪. মুবাহ:
যার বিবাহ না করলে পাপকার্যে লিপ্ত হবার আশংকা নাই। বরং আল্লাহ প্রেমে
বিভোর-বিহ্বল , দ্বীনি কাজে ব্যস্ত যে, স্ত্রী ও সন্তানের হক আদায়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তার বিবাহ না করা জায়েজ, বরং না করাই
উত্তম। যেমন- ইয়াহইয়া ও ঈসা আ. বিবাহ করেন নি। হজরত ইয়াহইয়া আ. সম্পর্কে পবিত্র
কুরআনে এসেছে। সূরা ইমরান-৩৯ সূত্র: তাফসিরে বুরহানুল
কুরআন-২৩৭ পৃষ্ঠা, বয়ানুল কুরআন,
মাআরিফুল কুরআন
৫. মাকরুহ:
যে ব্যক্তি বিবাহ করলে বিবির হক আদায়ে সন্দিহান তার বিবাহ করা মাকরুহ।
৬. হারাম:
যার শারীরিক শক্তি নেই, একেবারে অক্ষম,
নপুংশক (পুরুষত্বহীন) তার
বিবাহ করা হারাম।
পরামর্শ: ইদানিং দেখা
যাচ্ছে- মোবাইল, ই-মেল, ফেসবুক, ইন্টারনেট-এর মাধ্যামে সম্পর্ক হয়ে ছেলে-মেয়ে ইচ্ছামত বিবাহ-অবৈধ সম্পর্ক গড়ছে কিন্তু অধিকাংশ এ অবৈধ সম্পর্ক, বিবাহ
টিকছে না; ফলে বাবা-মার কাছেই ফিরে আসতে
হয়। বিবেকবান তরুণ-তরুণীরা! এক মাস/এক বছর/দুই বছরের প্রেমের
সম্পর্ক কি পিতা-মাতার সঙ্গে ১৮/২০ বছরের
সম্পর্কের চেয়ে দামি? এ রকম বহু ঘটনা সমাজে ঘটেছে যে,
না দেখে প্রেম করে অনেক প্রতারণার শিকার হচ্ছে। ছেলে বলে আমি ব্যাংকে
চাকরি করি, দোকানের মালিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অবিবাহিত ইত্যাদি পরে জানা গেল কিছুই না, বিবাহিত কয়েক
সন্তানের জনক। তখন শুধু হায় হায় করে। আর কি লাভ? ভাবা উচিত
ছিল আগে, আমি কার হাত ধরে যাচ্ছি, এর পরিনাম
কি? প্রেমের ফাঁদে পড়ে মানুষ পাচার হচ্ছে, আটকিয়ে টাকা দাবি করছে, জীবন পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। নরসিংদিতে কলেজ ছাত্রের
৬ টুকরা করে হত্যা তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ বহন করে।
প্রিয় মুসলিম ভাই-বোনেরা! অতীতের গ্লানি মুছে সামনে পবিত্র জীবনের শপথ
নেয়। মনে রাখবেন! অবৈধ প্রেম-ভালবাসা করলে শাস্তি পেতে হবে। আর পিতা-মাত কখনও সন্তানের
অমঙ্গল চায় না।
লাভ ম্যারেজ নয়; লাভ আফটার
ম্যারেজ: আজকাল অমুসলিম দেশের মত আমাদের দেশেও লাভ ম্যারেজ মহামারি আকার
ধারণ করেছে। তারা বিয়ের আগেই সম্পর্ক স্থাপন করে, এক সঙ্গে বসবাস
করে, এটা ইসলামি শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম। ইসলামে love marriage বা ভালবাসার বিয়ের চিন্তাও করা যায় না,
love after marriage বা বিয়ের পর ভালবাসার অবকাশ আছে তাই না,
বরং ভালবাসাই কাম্য। বিয়ের পর যতো সম্পর্ক ও ভালবাসা স্থাপন করবে ততো
সওয়াব হবে।
বিয়ে কঠিন হলে ব্যভিচার
সস্তা হবে : যেখানে বিয়ে সস্তা সেখানে ব্যভিচার চড়া মূল্যের হবে। আর যেখানে বিয়ে হবে
দামি সেখানে ব্যভিচার হবে অতিসস্তা।
বিবাহের কয়েকটি রছম
ও কুপ্রথা:
Ø
বিবাহের গেটে টাকা ধরা
নাজায়েজ। ফতোয়ায়ে মাহমূদিয়া-৩য় খণ্ড
Ø
বিবাহের পর বর সবাইকে সালাম-মোসাফাহ
করা, এটা ভিত্তিভীন ও বেদআত। ফতোয়ায়ে মাহমূদিয়া-৩য় খণ্ড
Ø
বিবাহের পর বধূর মুখ
দেখানো (পর পুরুষদেরকে) নাজায়েজ। ফতোয়ায়ে মাহমূদিয়া-৩য় খণ্ড
Ø
কনের পরিবারের পক্ষ থেকে
ভোজের ব্যবস্থা করা খুশি মনে হলে জায়েজ, কিন্তু তাদের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া,
এটা শরিয়ত সম্মত নয়। বিবাহের দিন কনের বাড়িতে খাবাবের ব্যবস্থা
ইসলামে নেই। ওলিমা তথা ছেলের পক্ষ থেকে আছে।
Ø
দাওয়াত খাওয়ার পরে দান
উপঢৌকন অধিকাংশ সময় হারাম হয়।
Ø
কনের টাকা দিয়ে ওলিমার (বৌভাত)
অনুষ্ঠান করা হারাম। ফতোয়া শামি ৯ম খণ্ড;৫০১ পৃষ্ঠা,ফতোয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪২ ,মিশকাত -১/২৫৫
বিবাহে মসনূন তরিকা: ইসলামি
আইনে বিবাহকার্য ও বিবাহ অননুষ্ঠান একটি পবিত্র ও ইবাদতের অনুষ্ঠান। যা মসজিদে
প্রকাশ্য সম্পূর্ণ করা বাঞ্ছরীয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-তোমরা
বিবাহের প্রচার করবে, বিবাহকার্য মসজিদে সম্পন্ন কবে।(জামে তিরমিজি)
আকদ অনুষ্ঠানে সময় খুতবা পাঠ করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সকল বিবাহে খুতবা পাঠ
করা হয়েছে। সুনানে আবু দাউদ, তিরমিজি,
নাসায়ি ইত্যাদি হাদিস গ্রন্থে সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.
থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর একটি খুতবা
উল্লিখিত আছে। বিবাহ পড়ানোর পর সামর্থানুযায়ী খুরমা(মিষ্টি বা যে সমাজে যা প্রচলন আছে ) বিতরণ করা সুন্নাত।
ওলিমা: বাসর ঘর
হওয়ার পর (তিন দিনের মধ্য বা আকদের সময়) আপন বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-মিসকিনদেরকে ওলিমা বা বৌভাত খাওয়ানো
সুন্নাত। শুধু ধনী ও দুনিয়াদারদেরকে দাওয়াত করা ও দ্বীনদার, গরীব-মিসকিনকে দাওয়াত না করা হাদিসের বর্ণনানুযায়ী তা হল সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওলিমা। যেমন- রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- ওলিমা অনুষ্ঠানে কেবল ধনীদের দাওয়াত দেওযা
হয় এবং গরীবদের উপেক্ষা করা হয় সেই ওলিমা খাদ্য সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট খাদ্য। বুখারি ও মুসলিম
জন্মনিয়ন্ত্রণ(Birth Control): উহা দুই
প্রকার। ১. স্থায়ী পদ্ধতি ২. অস্থায়ী /সাময়িক
পদ্ধতি।
স্থায়ী পদ্ধতি: এটা
সর্বাবস্থায় হারাম। কেননা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করার শামিল, যা
সম্পূর্ণ হারাম। সূত্র: বুখারি-মুসলিম;
মিশকাতুল মাছাবিহ-২৯৪৭
অস্থায়ী/সাময়িক
পদ্ধতি: খাদ্য সংকট ও অভাব অনটনের ভয় করা হারাম। সূত্র: সূরা বনী
ইসরাঈল-৩১; সূরা হুদ-০৬ ; মুসলিম; মিশকাত ২৯৪৭
কিন্তু যদি
স্ত্রীর স্বাস্থ্যগত দুর্বলতা, গর্ভধারণ ক্ষমতা একেবারে হারিয়ে ফেলে এবং
গর্ভধারণে মুত্যুর আশংকা থাকে এমতাবস্থায় দ্বীনদার বিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তারের
পরামর্শে সাময়িক/স্থায়ী গর্ভরোধ করা জায়েজ হবে। সূত্র: ফতোয়ায়ে
রহিমিয়া-২/২৩৩, নিযামুল ফতোয়া-১/৩৭৩
বিবাহের উপকারিতা
বা সুফল:
ইসলাম ও দুনিয়ার দৃষ্টিতে
বিয়ে-শাদীর ফযিলত, উপকারিতা
অসামান্য। নিম্নে কয়েকটি তুলে ধরে হলো-
Ø
শারীরিক ও মানসিক
প্রশান্তি লাভ হয়। সূরা রুম-২১
Ø
অর্থনীতি সাবলম্বী হয়। সূরা নূর-৩৩
Ø
মানব জাতির বৈধ বংশ বিস্তারের মাধ্যম।
Ø
তাকওয়ার পথ সুগম হয় । যেমন রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- কোন বান্দা যখন বিয়ে করে তখন তো সে
দীনের অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেলল। অতঃপর সে যেন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে
ভয় করে। মিশকাত২/২৬৭
Ø
যিনা-ব্যভিচার
থেকে সমাজ রক্ষা পায়।
Ø
মানসিক ভারসাম্য রক্ষা হয়।
Ø
চোখ ও লজ্জাস্থানের হেফাযত
হয়। বুখারি-৫০৬৬;
মুসলিম-৩৪৬৪
Ø
বিবাহ না করার অপকারিতা বা
কুফল: বিবাহ না করার নানাবিদ অপকারিতা রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি বর্ণনা করা
হলো:-
Ø
স্বাস্থ্য নষ্ট হয় ।
Ø
অর্থেরঅপচয়হয়।
Ø
যিনা-ব্যভিচারের
প্রসার ঘটে,যা আল্লাহর গযবের কারণ।
Ø
অবৈধ সন্তান বৃদ্ধি পায়।
Ø
বংশ বা গোত্রের মর্যাদা
ক্ষুণ হয়।
কে ইবলিসের সবচেয়ে
প্রিয়? ইবলিস শয়তান পানির ওপর তার
সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের
মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টির উদ্দেশ্য তার সৈন্যদেরকে প্রেরণ করে। আর তার নিকট সে
বেশি মর্যাদার অধিকারী যে বিপর্যয় সৃষ্টির ব্যাপরে বড়। তাদের মধ্য হতে কেউ এসে
বলে-আমি এরুপ করেছি তখন ইবলিস বল; না তুমি কিছুই করনি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, এরপর অপর একজন এসে বলে আমি মানুষদেরকে
এমনিতেই ছেড়ে দিয়ে আসিনি,বরং আমি
তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, অতঃপর ইবলিস তাকে নৈকট্য দান করে এবং বলে,
হ্যাঁ, তুমিই উত্তম ব্যক্তি। বর্ণনাকারী হজরত
আমাশ রহ. বলেন, আমি মনে করি জাবির রা. এ
কথাও বলেছেন, অতঃপর ইবলিস তার সাথে আলিঙ্গন (কোলাকুলি)করে। মুসলিম,মিশকাত-৬৪
স্বামীর মর্যাদা: রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন -আমি যদি আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে
সিজদা করার জন্য কাউকে নির্দেশ দিতাম,
তাহলে অবশ্যই মেয়েদের আদেশ দিতাম তারা যেন তাদের স্বামীকে সিজদা করে। সুনানে আবু দাউদ
স্বামীর
সন্তুষ্টির ফযিলত: হজরত উম্মে সলামা রা. বর্ণনা
করেন, আমি রাসূল (ﷺ) বলতে শুনেছি-যে নারী এমন
অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে, তার স্বামী তার প্রতি খুশি,
সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মুস্তাদরক হাকেম ,জামে তিরমিজি
স্বামীর হুকুম মানা স্ত্রীর উপর ফরজ,
যদি তা আল্লাহর নাফারমানির কিছু না হয়।
নববধূর জন্য দশটি
অসিয়্যত: আরবের জনৈক প্রসিদ্ধ
মহিলা তার সদ্য বিবাহিতা কন্যাকে শ্বশুরালয়ে পথে বিদায়ের প্রাক্কাল্লে হেদায়েতমূলক
কথাগুলো বলেছিলেন। এর ওপর আমল কলে তাদের ঘর-সংসার ও পরিবার জান্নাতের সুখের নমুনা হয়ে যাবে। ইনশাল্লাহ। ১.অল্পে তুষ্ট থাকা।২.মান্যতা ও
আনুগত্যের সাথে জীবন যাপন করা। ৩. সাজসজ্জা ও রুপের
দ্বারা স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা। ৪.সুরমা ব্যবহার ও পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা। ৫. সময়মত খানা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা। ৬. স্বামীর ঘর ও ধন-সম্পত্তির হেফাযত করা। ৭.স্বামীর ঘরের গোপন কথা প্রকাশ না করা। ৮. সুখে-দুঃখে স্বামীর
সাথে শরীক থাকা। ৯.স্বামীর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা বজায় রাখা। ১০.স্বামীর চাওয়া-পাওয়াকে নিজের ওপর
প্রাধান্য দেওয়া। বিস্তারিত দেখুন-নব বধূর উপহার-মুফতি রূহুল আমীন যশোরী রহ.
স্বামীর ১০টি
মারাত্মক ভুল: ১.স্ত্রীকে উপেক্ষা করা ২.তালাকের ধমক ৩.দ্বিতীয় বিবাহের
হুমকি ৪.অপমান করা ৫.সময় না দেওয়া ৬.নিজে স্বাধীন,স্ত্রীর জন্য
বাধ্যবাধকতা ৭.কথায় কথায় দোষ
খোঁজার অভ্যাস ৮. দোষারোপ করা ১০. স্ত্রীর নিকটাত্মীর প্রতি বিরুক্তিপ্রকাশ
স্বামীর জন্য ১০টি
সোনালিনীতি: ১. সবসময় মুচকি হেসে
ঘরে ঢুকবেন। ২. স্ত্রীর ভালকাজের প্রশংসা
করুন। ৩.স্ত্রীর কাজের প্রতি
মনোযোগ দিন। ৪.স্ত্রীকে মাঝে মাঝে উপহার
দিন। ৫.স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা আকর্ষণ প্রকাশ করুন। ৬.মনকাড়া কথা বলবেন। ৭.ধৈর্য ও
সহিষ্ণুতার সঙ্গে কাজ করা উচিত। ৮. সংসারের শরীয়তের
অনুশাসন চালু করুন। ৯. স্বামী-স্ত্রীর উভয়ে
একসঙ্গে রাগ না করা। ১০. পরস্পরে অসন্তুষ্ট অবস্থায় কখনো ঘুমাবে না।
স্ত্রীদের জন্য
২০টি সোনালিনীতি: ১.খাবার পাকাবেন জিকিরের সঙ্গে। ২. যথাসময়ে কাজ শেষ
করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ৩. ঘর-বাড়ি পুরস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। ৪. শোনা কথা বলে বেড়াবে না। ৫.স্বামীকে দু’আদিয়ে বিদায় জানাবেন। ৬.
স্বামীকে
ঘরে ফেরার আগেই নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিন। ৭.আত্মীয়-স্বজনের কাছে
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার জন্য যাবেন। ৮. স্বামীকে দান-সদকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করুন।৯. ঘরে একটি জায়গা নামাযের
জন্য নির্দিষ্ট রাখুন। ১০. ফোনে কথা সংপেক্ষ
করার অভ্যাস করুন। ১১.গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
নোট করার জন্য একটি নোট বুক রাখুন। ১২. প্রয়োজনীয় কিছু
জিনিস হাতের কাছে রাখুন। ১৩. এমন কোন কাজ করবেন
না যার কারণে স্বামীর নজর থেকে ছিটকে পড়েন। ১৪. সন্তানের ব্যাপারে স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করুন। ১৫. স্বামীর প্রয়োজন পূরণে দ্বিধা করবে না। ১৬. পেরেশানির সময় স্বামীকে সান্ত্বনা দিন। ১৭.ভুল স্বীকার করায় সম্মান এবং চুপ থাকায় প্রশান্তি। ১৮. মনের চিন্তার শুধুই আল্লাহর কাছেই বলুন। ১৯. স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করুন। ২০. সষ্টার অবাধ্যতা
হলে সৃষ্টির অনুগত হবেন না।
দশটি বোকামি: দশটি বিষয় বোকামির নিদর্শন। ওসব বোকা লোকদের
থেকে বেঁচে থাকতে হবে যদি আপনি ঘর আবাদ করতে চান।
১. কেউ ভালকাজ সামান্য সামান্যও করে না কিন্তু
জান্নাতের আশা করে। বুযুর্গরা বলেন,এটা বোকামির
নিদর্শন।
২. কোনো লোক নিজে অকৃতজ্ঞ কিন্তু অন্যের কাছ থেকে
কৃতজ্ঞতা পাওয়ার আশা করে। সে-ও এক ধরণের বোকা।
৩. কারো প্রকৃতিতে অলসতা প্রবলভাবে রয়েছে অথচ সে
চায় তার সবচাহিদা পূরণ হয়ে যাক। এটাও এক ধরণের বোকামি। নিজের মনোবাসনা পূরণ করার
জন্য করতে হয়।
৪. কেউ তার বড়দের অবাধ্য অথচ আশা করে ছোটরা তার
সঙ্গে বাধ্যতামূলক আচরণ করে। এটাও এক ধরণের
বোকামি।
৫. অসুস্থ অবস্থায় ক্ষতিকর বিষয় থেকে বিরত থাকে
না অথচ সুস্থতার আশা করে। ডায়বেটিক অথচ মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকে না। তা সত্ত্বেও বলে, Complication (সমস্যা) হচ্ছে। এজন্য ক্ষতিকর
বিষয় থেকে বিরত না থেকে সুস্থতার আশা করা বোকামি বৈ কিছু নয়।
৬. যেলোক তার আয়ের চেয়েও বেশি খরচ করে আর
স্বাচ্ছন্দে চলার আশাপোষণ করে-এটাও এক ধরণের বোকামি। অনেক সময় মহিলারা এ ভুলটা
বেশি করে বসে। স্বামীর আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়িয়ে দেয়।
৭. বিপদের মুহূর্তে কারো কোনো সহযোগিতা করে না
কিন্তু এ আশাপোষণ করে যে, আমার বিপদের সময়
লোকেরা আমার সাহায্যে এগিয়ে আসবে।
৮. কাউকে গোপন কথা বলে একথা বলে দেয়া অন্য কাউকে
বলবে না। অন্য কাউকে না বলার আশা করাটা বোকামি।
৯. দু-চারবার গোনাহ করে
তা ছেড়ে দেয়ার আশা করাও এক ধরণের বোকামি। যুবকেরা এমনটা করে। গোনাহ করলে তা অভ্যাস হয়ে যায়।তখন আর গোনাহ থেকে বাঁচতে
পারবে না।
১০. স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে প্রতিদিন ঝগড়া করে
অথচ এ আশা করে যে, সংসার সুখের হবে –এটা নিছক বোকামি।
বিস্তারিত দেখুন-সংসার সুখের হয় দুজনের গুণে –মাওলানা জুলফিকার আহমদ নকশাবন্দি দা.বা.- দিলরুবা প্রকাশনী ( ২৪ নং
হাদিস সমাপ্ত)
-------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
দরুদ পাঠের ফলিলত
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে,
তার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশ বার দরুদ পাঠ করবেন অর্থাৎ দশবার
রহমত নাযিল করবেন। মুসলিম-৩৮৪; আবুদাউদ-৫২৩; তিরমিজি-৩৬১৪; মুসনাদে আহমদ-৬৫৬৮
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) ইরশাদ করেছেন- কেয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হবে ঐ লোক,
যে আমার উপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠ করত। জামে তিরমিজি ও সহিহ ইবনে হিব্বান-৮৯৯
হাদিস নং-২৫, অহংকার |
عن عبد بن مسعود رضى الله هنه قال فال رسول الله صلى الله عليه سلم -لاَ
يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَفِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ قَالَ
رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَيُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً
قَالَإِنَّاللَّهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ
النَّاسِ- مسلم-275‘
অর্থ:
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবি মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমান অহংকার
থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, যদি কেউ সুন্দর জামা আর সুন্দর জুতো পরিধান করতে ভালবাসে? তখন নবি কারিম (ﷺ) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে
পছন্দ করেন। অহংকার মানে
হল সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা। সহিহ মুসলিম-৯১,কিতাবুল ঈমান; আবু দাউদ-৪০৯১; তিরমিজি-১৯৯৮; ইবনে মাজাহ-৫৯; আহমদ-৩৬৪৪
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: আলোচ্য হাদিসে তিনটি বিষয় আলোকপাত করেছেন।
এক. অহংকার: অহংকার অত্যন্ত খবিছ,
জঘন্য
যে, জাররা পরিমাণ থাকলে
বেহেশতে ঢোকার অনুমতি নাই। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ
হচ্ছে-
সুতরাং তোমরা দ্বারগুলি দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেখানে স্থায়ী হবার জন্যে; দেখ অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট। সূরা নাহল-২৯
দুই. সুন্দর পোশাক, জোতা কি অহংকার: না তা অহংকার নহে। বরং তাহলো সৌন্দর্য-প্রিয়তা। আল্লাহ পাক নিজে পরম সুন্দর, সুন্দরকে খুব পছন্দ করেন। সামর্থানুযায়ী উত্তম পোশাক
পরিধান করা, এটা আল্লাহ তাআলার দেওয়া নেয়ামতের
বহিঃপ্রকাশ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-
নিশ্চয়
আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন, আপন বান্দার ও পর নিজের অনুগ্রহের প্রভাব দেখতে। তার প্রদত্ত নেয়ামতের
বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে।
মাসয়ালা : নিজের মনের খুশির জন্য দামি উত্তম পোশাকাদি
পরিধান করা জায়েজ। কিন্তু নিজের
বড়ত্ব, অহংকার প্রকাশ
করার জন্য কিংবা প্রভাব খাটানোর জন্য
পরিধান করা জায়েজ নাই। সূত্র: সূরা আরাফ-২৬, সূরা বানী ইসরাঈল-৩৭
যে ব্যক্তি
দুনিয়ায় প্রসিদ্ধি লাভের পোশাক পরবে কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর সে কাপড়ে তাকে প্রজ্বলিত করবেন। ইবন মাজাহ-৩৬০৭
তিন. সত্যকে বাতিল করা ,মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা : আসল অহংকার হল সত্যকে কবুল না করা ও লোকদেরকে হেয়-প্রতিপন্ন করা। আমি যেটা বুঝেছি সেটাই সঠিক। সারা দুনিয়ার
মুফতিগণ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফতোয় প্রদান
করে,তবুও আমি মানব না। আমি শিক্ষিত-আলেম-হাফেজ, সে মুর্খ, গয়রে আলেম আমারদাম বেশি। আমি নামাজ সে বেনামাজ,অতত্রব আমি জান্নাতি,
সে
জাহান্নমি। আমার ভাই! এক গোলাম আরেক
গোলামের মূল্য নির্ধারণ করে, না মালিক নির্ধারণ
করে।আমরা তো সবাই গোলাম। কে কামিয়াব/সফলকাম এখন তে বলার সুযোগ নাই, ফয়সলার আগে।
অহংকার অর্থ- কোন দ্বীনি বা দুনিয়াবী গুণে নিজেকে অন্যের
তুলনায় বড় এবং অন্যকে নিজের চেয়ে হেয় মনে করা। হজরত থানভি রহ.
বলেন-আমি বর্তমান হালতে সব মুসলমানের চেয়ে নিজেকে নিকৃষ্ট এবং ভবিষতের
চিন্তা ভাবনায় কাফের-বেদ্বীনের চেয়েও
খারাপ মনে করি; এমনকি কুকুর-শিয়াল-শুকুরের চেয়েও
নিকৃষ্ট। কারণ মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে মুসলমানের বিভিন্ন ভাল আ্মলের বিনিময়ে
জান্নাত দিতে পারেন আর আমার একটি গুনাহের
কারণেও আমাকে শাস্তি দিতে পারেন। আর কাফের মুশরিকরাও
তো ঈমানি আনার সুযোগ আছে,আমি কি ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারব? যদি না পারি, তাহলে তে কুকুর-শুকুরে চেয়েও
জঘন্য, কেননা তাদের শাস্তি নাই, মাটির সাথে মিশে যাবে। আমার শাস্তি আছে।
অহংকারের চিকিৎসা : শরীরে রোগের জন্য যেমন ডাক্তর প্রয়োজন, তেমনি আত্মার
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য কামেল শায়েখ
প্রয়োজন। তাই উম্মুল আমরায তথা অহংকার থেকে বাঁচার
জন্য কোন কামেল শায়েখের হাতে
ন্যস্ত হতে হবে। এ ছাড়া কিয়ামত পর্যন্ত কারো ইসলাহ হবে না।( কামেল
শায়েখের পরিচয় সম্পর্কে আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. কসদুস
সাবিল দেখুন।)
§
কয়েকটি মোরাকাবা, এটা করলে
ইনশাল্লাহ ফায়দা হবে।
১. (এই
ধ্যান করবে যে, ) যদিও
আমার মধ্যে এই গুণ বা প্রতিভা রয়েছে,
কিন্তু এ তো আমার সৃষ্টি নয়,বরং নিছক আল্লাহর পাকের দান।
২. এই দান
আল্লাহ পাক যখন ইচ্ছা; তা ছিনিয়ে নিতে পারেন।
৩. অথবা
বর্তমানেও হয়ত তার মধ্যে বড় কোন গুণ ও মর্যাদার বিষয় বর্তমান আছে, যা আমার কাছে অজ্ঞাত, কিন্তু অন্যদের কাছে তা স্পষ্ট।
৪. তার জন্য দুআ
করা (যার সাথে অহংকার হয়)।
বিস্তরিত জানার
জন্য পড়ুন- তারবিয়াতুস সালিকীন, আশরাফ চরিত-মাকতাবতুল আশরাফ
প্রকাশনী, আরিফ বিল্লাহ শাহ হাকীম আখতার রহ. এর কিতাব, অহংকার ও প্রতিকার, আত্মার
ব্যাধি ও তার প্রতিকার
হাদিস নং-২৬, জবান বা জিহবা সংযত রাখা |
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ ، أَنَّ رَسُولَ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ، قَالَ : مَنْ
يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ
অর্থ: হজরত সাহল ইবনে সাদ রা.রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করে, তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হেফাযতের দায়িত্ব নিবে আমি
তার জন্যে জান্নাতের যিম্মাদার হব। বুখারি-৬৪৭৪,কিতাবুর রিকাক; তিরমিজি-২৪০৮;
মুসনাদে আহমদ-২২৮২৩
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: আলোচ্য হাদিসে
মুখ-রসনা ও লজ্জাস্থানের নিরাপত্তা বিধান করবে আমি তার
বেহেশতের জামিন হব। এখানে একটি প্রশ্ন
উত্থাপিত হয,তাহল এ দুটি আমল করলে কি হবে আর কিছু লাগবে না? জবাব
হল বস্তুত মানুষের অধিকাংশ গোনাহই মুখ ও লজ্জাস্থান দ্বারা সংঘটিত হয়। যে ব্যক্তি এই দুটি
হেফাযত করতে পারবে, বাকি অঙ্গগুলো হেফাযত করা সহজ হয়ে যাবে।
জবানের হেফাযতের
গুরুত্ব: বাকশক্তি আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত ও মহা দান। মনের ভাব, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, আবেগ-উল্লাস মানুষ জবান
দ্বারা প্রকাশ করে এক কথায় সে সব অঙ্গ-প্রতঙ্গের মুখপাত্র। তাই এর নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ
ব্যবহার কাম্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-(১) মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত আছে,
সে (লেখার জন্য) সদা প্রস্তুত। সূরা ক্ফ-১৮
(২) যেদিন তাদের
কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও পা সাক্ষ্য দিবে। সূরা নূর-২৪
(৩) হে মুমিনগণ!
তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য-সঠিক কথাবল। তাহলে তিনি তোমাদের আমলসমূহ সংশোধন করে দিবেন এবং পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন। সূরা আহযাব-৭০
জবান হেফাযতের
ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অনেক গুরুত্বরোপ করেছেন। যেমন তিনি বলেন-(৪) যে
আল্লাহ ও শেষ দিবসের বিশ্বাস রাখে সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। সহিহ বুখারি-৬০১৮
(২)
যে চুপ থাকে সে বেঁচে যায়, মুক্তি পায়। জামেউত তিরমিজি-২৫০১
(৩) বান্দা চিন্তা-ভাবনা ছাড়া এমন কথা বলে ফেলে, যার দরুণ সে পূর্ব-পশ্চিমের দূরবর্তী পরিমাণ জাহান্নামের
অতলে নিক্ষিপ্ত হবে। সহিহ বুখারি-৬৪৭৭
(৪) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দীর্ঘসময় চুপ থাকতেন এবং কম হাসতেন। মুসনাদে আহমদ-২০৮১০
এক
দার্শনিকের অভিব্যক্তি- আমি কখনো
আমার নীরবতার ওপর অনুতপ্ত হইনি।
তবে বহুবার কথার কারণে লজ্জিত হয়েছি। বান্দার বহুবিধ
কল্যাণ এতে রয়েছে। অপর দিকে এর অপব্যবহারে নানাবিধ দুনিয়া-আখেরাতে লোকসান
নিহিত।
প্রকৃত/উত্তম মুসলমানকে ? প্রকৃত বা
উত্তম মুসলমানের পরিচয় স্বয়ং রাসূলুল্লাহ তুলে ধরেছেন, যেমন তিনি
বলেন- সেই (প্রকৃত) মুসলমান; যার হাত ও জবান হতে মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে। আর (প্রকৃত)
মুহাজির (হিজরতকারী) সে ব্যক্তি
যে আল্লাহ তাআলা যা নিষেধ করেছেন তা পরিহার করে চলেন। বুখারি
আলোচ্য হাদিসে দুটি
প্রশ্ন উত্থাপিত হয় এক. হাত ও মুখ দিয়ে কষ্ট দেয়া নাজায়েয তাহলে অন্য অঙ্গ দ্বারা কি জায়েয। দুই. মুসলমানকে
কষ্ট দেয়া হারাম তাহলে অমুসলিমকে কষ্ট দেয়া জায়েয। জবাব এক. যেহেতু মানুষ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুখের ভাষা ও হাত দ্বারাই অপরকে কষ্ট দিয়ে থাকে, তাই এ দুটি অঙ্গকে সংযত রাখার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুই. সাধারণত মুসলমানগণ
মুসলমানদের সাথেই চলাফেরা, উঠাবসা করে তাই মুসলমানের কথা উল্লেখ
করেছেন। জবানের দ্বারা অনেক গোনাহ সংঘটিত হয়।
নেক লোক কারা : মহান
আল্লাহ বলেন- নেক মানবগণ বেহেশতে সুখ ও আনন্দে ডুবে থাকবে। এ লোক লোক
কারা এর পরিচয়, সংজ্ঞায়
বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত হাসান বসরি রহ. বলেন নেক লোক তারা যারা
পিঁপড়াকেও কষ্ট দেয় না এবং যারা কোন খারাপ
কাজে কোন নাফারমানীর কাজে আনন্দিত হয় না।
নিম্নে কয়েকটি জবানের গুনাহ উল্লেখ করা হল:
গীবত: গীবত কাকে
বলে? হাদিসের
পরিভাষায় বলা হয়- আবু হুহাইরা রা. থেকে
বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন তোমরা কি জান, গীবত কী জিনিস! তাঁরা বললেন, আল্লাহ
ও তার রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, (গীবত হল) তোমার ভাই-এর সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে
অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হল, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাই -এর মধ্যে থেকে থাকে তবে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন,
তুমি তার সম্পর্কে যা বলছ তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার
গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তা হলে তো তুমি তার প্রতি
অপবাদ আরোপ করলে।’ মুসলিম-২৫৮৯
গীবতের ভয়াবহতা: আল্লাহ
পাক বলেন- তোমাদের কেউ যেন কারও পিছনে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ
করবে? তোমরা তো সেটাকে ঘৃণাই করে থাক। আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ খুব বেশি তাওবা কবুলকারী, অতি দয়ালু........পর্যন্ত। সূরা হুজুরাত-১২
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন- গীবত ব্যভিচারের চেয়েও ভয়ংকর। ব্যভিচারি তওবা
করলে, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষামা
করেন; কিন্তু পরোক্ষ
নিন্দাকারীকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা না,
যতক্ষণ
না যার নিন্দা করা হয় সে না ক্ষমা করে। সুনানে বাইহাকি, দেখুন-
গীবত
ভয়াবহ-আল্লামা নাখলভি রহ.
গীবতের কাফফারা : গীবতের কাফফরা হল,
যার
গীবত করেছে,তার জন্য মাগফিরাত
প্রর্থনা করা এবং এভাবে বলা,হে আল্লাহ আমাকে ও
তাকে ক্ষমা কর। (এ পন্থা হলো যার গীবত করেছে সে যদি মারা যায়/সাক্ষাতের আসা নাই নতুবা তার কাছে সরাসরি মাফ চায়তে হবে।)
মাসয়ালা : শিশু, পাগল ও কাফের
যিম্মীর গীবতও হারাম। কেননা তাদেরকে পীড়া দেয়াও হারাম। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন
মাসয়লা : গীবত যেমন কথা দ্বারা হয়, তেমনি কর্ম ও ইশারা দ্বারা হয়। উদাহরণ: খোড়াকে হেয় করার উদ্দেশ্য তারমত হেঁটে দেখানো, মুখ ভেঙ্গিয়ে কথা বলা। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন
মাসয়ালা : কখনও কখনও গীবত করা জরুরি। যেমন- কারও ভ্রান্ত আকিদা দ্বারা যদি সাধারণ
মুসলমানের ঈমান-আমল নষ্ট করে। এ অবস্থায় ওলামায়ে
কেরামের দায়িত্ব হলো লোকদেরকে সাবধান করা। সূত্র:
তাফসিরে
বয়ানুল কুরআন, তাফসিরে রুহুল মাআনি
বিস্তারিত জানার
জন্য দেখুন- গীবত ভয়াবহ-আল্লামা নখলভি রহ.,তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন, সূরা হুজুরাতের ১২ আয়াতের তাফসির।
মিথ্যাবাদী কে ? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদীর হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে তাই বলে বেড়ায়। সহিহ মুসলিম, মিশকাত-১৪৮
যাছাই-বাচাই ছাড়া কোন কথা বিশ্বাস করা যাবে না এবং কোন সিদ্ধান্ত
নেওয়া যাবে না। যেমন মহান আল্লাহ বলেন- মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন
সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত
তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও। সূরা হুজুরাত-০৬
মিথ্যা কথা বা কসম
করা : রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন- যখন বান্দা মিথ্যা বলে,তখন ফেরেশতা মিথ্যার দুর্গন্ধে এক ক্রোশ দূরে চলে যায়। জামে তিরমিজি
চোগলখোরী করা : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি দুনিয়ায় দুমুখী হবে, কিয়ামতের দিন তার মুখে আগুনে জিহ্বা হবে। সুনানে দারেমি
মাসয়ালা: দুই মুসলমানকে
মিলানেনার জন্য মিথ্যা কথা বলা জায়েজ। যেমন হাদিস শরিফে
এসেছে- সেই ব্যক্তি মিথ্যুক না, যে লোকদের মধ্যে মীমাংসা করে, ভালোভালো কথা বলে এবং ভালো কথা আদান-প্রদান করে। বুখারি, মুসলিম
মিথ্যা কৌতুক করা : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- ধ্বংস তাদের জন্য, যারা কথা বলে আর জনতাকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে। তার ওপর ধ্বংস,তার ওপর ধ্বংস। মুসনাদে আহমদ, জামে তিরমিজি,
সুনানে
আবু দাউদ ও সুনানে দারেমি।
যাচাই ছাড়া কাউকে
কাফের বলা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি কাউকে
কাফের বলে ডাকে অথবা আল্লাহর দুশমন বলে,
অথচ
সে ব্যক্তি প্রকৃত পক্ষে এরুপ না হয়,
তবে
এ বাক্য তার দিকে ফিরে যাবে। বুখারি-মুসলিম
উপহাস করা: মহান আল্লাহ
উপহাস করতে নিষেধ করেছেন। যেমন- হে মুমিনগণ! কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন
নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী
অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। সূরা হুজুরাত-১১
গালিগালাজ/অশ্লীল কথাবার্তা বলা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-মুসলমানদের গালিগালাজ করা ফাসেকি (গোনাহ) আর খুনাখনি/হত্যা/লড়াই করা কুফরি। বুখারি, মুসলিম
অভিসাম্পাত করা: রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- যখন কোনো
ব্যক্তি বলে যে, মানুষ ধ্বংস হোক, তখন
সে নিজেই সবচেয়ে বেশি ধ্বংসপ্রাপ্ত। মুসলিম
অনেক সময় পিতা-মাতা সন্তানকে অভিসাপ দেয়, তা সাথে সাথে কবুল হয়। পরে বাবা-মা কান্নাকাটি করে সন্তানের
কষ্ট দেখে তখন কখন লাভ হয় না,তাই পিতা-মাতার উচিত নিজ
সন্তানকে কথায় কথায় অভিসাপ না দেয়া।
খোশামোদ, তোষামোদ ও অতিশয় প্রশংসাকরা খোশামোদ, তোষামোদ এবং কারো প্রশংসায় অতিশয় উক্তি করা নীচুতা ও লজ্জাহীনতার আলামত। মাত্রাতিরিক্ত
প্রশংসা করলে প্রশংসিত ব্যক্তি অহংকারী হয়ে যাবে, তার জীবনের গতি থেমে যাবে এবং
তার নিজের দোষ আর তখন তার নযরে পড়বে না। এ কারণে মুখের উপর
প্রশংসাকারী ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- তোমরা যদি কাউকে মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করতে দেখ
তাহলে তাদের মুখে মাটি ছুঁড়ে মারবে। মুসলিম
কোন পাপাচার
ব্যক্তির প্রশংসা করা আরও জঘন্য। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- কোন ফাসিক (পাপাচার) ব্যক্তির প্রশংসা করা হলে আল্লাহ তাআলা ক্রোধান্বিত হন এবং এতে তার আরশ
প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সুনানে বাইহাকি
প্রিয় বন্ধুগণ! সমাজের
অধিকাংশ ফেতনা-ফ্যাসাদ-ঝগড়া ইত্যাদির
কারণ এ মুখ/জবান। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল
করার তাওফিক দান করুন।
লজ্জাস্থান হিফাযত: হাদিসে
দ্বিতীয় অংশে লজ্জাস্থানের হিফাযতের কথা বলা হয়েছে। ব্যভিচার হারাম এটা সবাই
বুঝে। কিন্তু অশ্লীল ছবি,গান-বাদ্য,বেপর্দা,
ছেলেমেয়েদের আপোষে যোগাযোগ, মোবাইলে কথা বলা,
মহিলাদের নরম/মায়াবী কণ্ঠে পরপুরুষের সাথে কথা
বলা সবই হারাম, এটা সবাই বুঝে না। অথচ যে কথা, কাজের
কারণে যিনা-ব্যভিচারের দিকে করে, তা
সবই হারাম।
হাদিসনং-২৭,
ছবি তোলা বা আঁকা |
عَنْ أَبِي طَلْحَةَ ـ رضى
الله عنهم ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ (ﷺ)
" لاَ تَدْخُلُ الْمَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيرُ - رواه
البخارى
আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি (ﷺ) বলেছেন, ফিরিশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর
থাকে এবং ঐ ঘরেও না, যে ঘরে ছবি থাকে। বুখারি-৫৯৪৯ কিতাবুল লিবাস; মুসলিম-২১০৬; মিশকাত-৪২৯০
ছবি তোলার ভয়াবহতা: বিভিন্ন হাদিসে
ছবি তোলার ভয়াবহতা বর্ণিত হয়েছে। যেমন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-(১)
কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন আজাব ভোগ করবে, এমন
সব লোকেরা যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্যতা করে(ছবি তোলা)। বুখারি; মুসলিম;
,মিশকাত-৪২৯৬
(২) (কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে
তাদের, যারা ছবি বানায়। বুখারি, মুসলিম-২১০৯, মুসনাদে আহমদ-৩৫৫৮
(৩) যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোন প্রাণীর ছবি নির্মাণ করে, কিয়ামতের
দিন তাকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হবে ঐ ছবির মধ্যে রূহ দান করার জন্য। কিন্তু সে রূহ
দান করতে পারবে না। বুখারি-৫৪২৫, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন
(৪) আয়িশা রা. থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি (ﷺ) নিজের ঘরের এমন কিছুই না ভেঙ্গে ছাড়তেন না,
যাতে কোন (প্রানীর) ছবি
থাকত। বুখারি
-৫৪১৫
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
প্রিয় বন্ধুগণ! আমরা কেমন
উম্মত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মূর্তি, ছবি
ভেঙ্গেছেন আর আমরা জমা করছি।
(৫) মুসলিম, তিরমিজি ও আবু দাউদ শরিফে একটি হাদিস এসেছে যার সারমর্ম হলো-জিব্রাঈল আ. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে রাতে দেখা করার
ওয়াদা করেছিল, কিন্তু তিনি আসেননি। পরে এর কারণ জানা
গেল- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ঘরের মধ্যে কুকুর/ঘরের দরজায় একখানা পর্দা ঝুলানোছিল,তাতে অনেকগুলো ছবি ছিল। প্রিয় পাঠক! একটু গভীর চিন্তা করুন। সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা
ওয়াদা করেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ নবির সঙ্গে। এই ওয়াদা কি খেলাফ হবার
কথা ? কিন্তু ছবি/কুকুররের কারণে ওয়াদা ঠিক রাখতে পারিনি।আমরা যদি আমাদের
ঘরে ছবি, মূর্তি দ্বারা ভরপুর করে রাখি। তাহলে কি রহমতের ফেরেশতারা
ঘরে ঢুকবে?
কোন ছবি আকা জায়েজ: হজরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যদি
তোমাকে একান্তই ছবি তৈরি করতে হয়, তাহলে গাছ-গাছড়া এবং এমন জিনিসের ছবি তৈরি কর যার
মধ্যে প্রাণ নেই । বুখারি, মুসলিম, মিশকাত-৪২৯৯
প্রশ্ন।। চাকরি, ব্যবসা,
হজের জন্য পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য
ছবি উঠানো যাবে কি ?
উত্তর।। একান্ত প্রয়োজন
ছাড়া ছবি তোলা জায়েজ নয়। সুতরাং কেউ চাকরি, ব্যবসা, পরিচয় পত্রের
জন্য ছবি উঠানো বাধ্য হলে তার অবকাশ আছে। সূত্র: আল আশবাহ
ওয়ান-নাযায়ের-৮৫,কিফায়াতুল
মুফতি ৯/২৪৪-২৪৫
বিস্তারিত জানার
জন্য দেখুন- ফাতাওয়ায়ে মাদানিয়া ২য় খণ্ড; ২০৬-২১৫ পৃষ্ঠা, আল্লামা মাহমুদুল হাসান দা.বা. এর কিতাব, ইসলামের আলোকে
ফটোর বিধান মজলিসে এলম, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪, ডিজিটাল ছবি ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়া সম্পর্কে
ইসলামের বিধান- মুফতি ইহসানুল্লাহ শায়েক, মাকতাবাতুল আযহার, মোবা.০১৯২৪-০৭৬৩৬৫, ফতোয়ায়ে উসমানি-মুফতি
তকি উসমানি দা.বা.-বইঘর প্রকাশনী-০১৭১১-৭১১৪০৯
(২৭ নং হাদিস সমাপ্ত)
-----------------------------------------------------------------
একটি আমল
সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার
আবান ইবনে উসমান রা. বলেন,আমি আমার পিতার যবানে শুনছি যে,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদকরেছেন- যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল
তিনবার করে এই দুআ পাঠ করবে, কেহই এবং কিছুই তার কোন প্রকার ক্ষতি
করতে পারবে না। দুআ.
"بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَايَضُرُّمَعَ
اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَ افِي السَّمَاءِ وَهُوَالسَّمِيعُ الْعَلِيمُ"
অর্থ: মহান আল্লাহর নামে (শুরু করছি, যার নামের সাথে আকাশ ও যমীনে কোনো কিছু ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। সুনানে আবু
দাউদ-৫০৮৮; মিশকাতুল মাছাবিহ-২০৯ পৃ.
হাদিস নং-২৮, ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা |
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى
الله عليه وسلم-
:« مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ
لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا ، وَمِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ
حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ».
অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি
সর্বদা ক্ষমা চায় (ক্ষমা চাওয়া নিজের প্রতি আবশ্যক করে)
আল্লাহ তাআলা তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হতে একটি পথ বের করে দেন এবং
প্রত্যেক চিন্তা হতে তাকে মুক্তি দেন. আর তাকে রিযিক দান করেন
যেখানে হত সে কখন ও ভাবেনি। মুসনাদে আহমদ-২২৩৪; সুনানে আবু দাউদ-১৫১৮, কিতাবুস সালাত; ইবনে মাজাহ-৩৮১৯
তওবা-এস্তেগফারের
গুরুত্ব ও ফযিলত: গোনাহর পর বান্দার তওবার পর সুযোগ করুনাময়
আল্লাহর পক্ষ থেকে মস্তবড় নেয়ামত, নচেৎ বান্দার শাস্তি ভোগ
করা ছাড়া গন্তব্য ছিল না। তিনি নিজ বান্দাদেরকে তওবা নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন-
(১) হে মুমিনগণ তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর কাছে তওবা কর। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হতে পারবে। সূরা নূর-৩১
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন-
(২) হে মানবজাতি তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর এবং আমি প্রতি দিনে
একশতবার তওবা করে থাকি। (মুসলিম)
আর যখনই সব
শর্তানুযায়ী তওবাকরা হয় তখন তওবা কবুল করা হয় এবং আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা
বড় ধরনের অপরাধও ক্ষমা করে দিবেন।
তওবার সময়: জান কবজের
পূর্বে এবং সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হওয়ার পূর্বে (কিয়ামতের
দিন প্রকাশ পাবার পূর্বে) তওবা কবুল হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ
তাআলা বলেন- আর তাদের তওবা কোন কাজে আসবে না যারা খারাপ আমাল
করে যতক্ষণ না তাদের নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়। আর মৃত্যু কালিন সময়ে
বলে যে, আমি এখন তওবা করলাম। সূরা আন নিসা-১৮
রাসূল (ﷺ) বলেছেন-যে ব্যক্তি সূর্য পশ্চিম দিক উদয় হবার পূর্ব সময় পর্যন্ত তওবা করবে তার তওবা
আল্লাহ কবুল করবেন। মুসলিম
প্রিয় মুসলিমগণ! আজকাল হঠাৎ
মৃত্যু বেড়ে গিয়েছে যেমন-হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, এক্সিডেন্ট ইত্যাদি সুতরাং এক সেকেণ্ড দেরি
না এখন খাঁটি তওবা করা উচিত। শয়তান মানুষকে ধোঁকা, প্রবঞ্চনা দেয় যে, আরে
অরেক সময় আছে পরেত ও বা করে নিলে ইহবে।
পাপীদের বিরুদ্ধে চারটি
সাক্ষী: মানুষ যখন গোনাহ করে তার বিরুদ্ধে চারটি সাক্ষী প্রস্তুত হয়ে যায়।
প্রথম সাক্ষী যমীন: যমীন
সাক্ষী সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- সেদিন যমীন তার খবরসমূহ
বর্ণনা করবে। সূরা যিলযাল-০৪
দ্বিতীয় সাক্ষী
দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ: পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-আজ আমি তাদের মুখের উপর মোহর লাগিয়ে দিবো আর তাদের হাত আমার সাথে বলবে এবং
তাদের পা সাক্ষ্য দান করবে ঐ সকল বিষয়াদি সম্পর্কে যা তারা (দুনিয়ার
জীবনে) করেছে। সূরা ইয়াসিন-৬৫
তৃতীয় সাক্ষী
ফেরেশতাগণ: পবিত্র কুরআনে এসেছে-কেরামান-কাতেবিন ( আমল লেখক সম্মানিত ফেরেশতাগণ) তোমরা যা-কিছু কর, তারা তা
জানে (লিপিবদ্ধ করে)। সূরা আল-ইনফিতার,১১-১২
চতুর্থ সাক্ষী আমলনামা: কালামে
পাকে এসেছে- পাঠ কর তুমি তোমার কিতাব আমলনামা। আজ তোমার হিসেব গ্রহণের
জন্যে তুমিই যথেষ্ট। সূরা বণী-ইসরাঈল-১৪
সাক্ষী চারটি নিশ্চিহ্ন(মিটানো )
করার তরিকা: বান্দা যখন গোনাহ হতে তওবা করে, আল্লাহ পাক আমল
লেখক ফেরেশতাদেরকে তার গোনাহসমূহ ভুলিয়ে দেন এবং সে সকল অঙ্গের দ্বারা ও যে-যে যমীনের উপর গোনাহ করেছে, ঐ সকল অঙ্গ ও যমীনকেও গোনাহসমূহের কথা এমনভাবে ভুলিয়ে দেন এবং পাপের চিহ্নসমূহ এমনভাবে মুছে
দেন যে, কিয়ামতের
দিন যখন আল্লাহ পাকের সাথে সাক্ষাত করবে তখন তার কোনও গুনাহের ব্যাপারে সাক্ষী
দানের মত একটি সাক্ষীও বাকি থাকবে না। জামেউছ-ছগীর ১ম
খণ্ড;২১ পৃষ্ঠা
একটি ঘটনা:
একদিন বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত হাসান বসরি রহ.
তার সাথীদের সঙ্গে বসা
ছিলেন, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বলল; হজুর! আমি গোনাহগার! কি করব?
তিনি বললেন, এস্তেগফার কর (ক্ষমা চাও) । একটুপর আরেক ব্যক্তি এস বলল, অনাবৃষ্টি চলছে, কি করব ? তিনি বললেন, এস্তেগফার
কর (ক্ষমা চাও)। একটুপর আরেক ব্যক্তি এসে
বলল; আমি গরীব-অসহায়, কি করব ?
(জবাবে) তিনি বললেন, এস্তেগফার
কর।আবার আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আমার সন্তান নাই (হয়
না)। তিনি বললেন, এস্তেগফার কর।
উপস্থিত সাথী-বর্গ
জিজ্ঞেস করলেন, আপনি যে
সবাইকে একই আমলের (এস্তেগফার কর) কথা বললেন ব্যাপার কি? হাসান বসরি রহ. বললেন, এই আয়াতে কারিমার আলোকে বলেছি তোমরা তোমাদের
পালনকরর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত
ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টি ধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বড়িয়ে দিবেন,তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন
করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন। সূরা নূহ,১০-১২
গোনাহ ত্যাগের
শক্তি লাভের উপায়: গোনাহ ত্যাগের হিম্মত লাভের জন্য হাকীমুল উম্মত হজরত থানভি রহ.
কামালাতে আশরাফিয়া কিতাবের মধ্যে তিনটি কাজকরতে বলেছেন। আমরা যারা গোনাহ ত্যাগ করতে চাই, আমাদের
উচিত তিনটি কাজ সম্পন্ন করা ।
১. নিজে
হিম্মত করা (দৃঢ় সংকল্প ও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা)।
২. হিম্মত
দানের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট দুআ করা ।
৩. আল্লাহর
খাছ বান্দাদের নিকট হিম্মতের জন্য দুআর দরখাস্ত করা ।
পরীক্ষিত যে, এই তিনটি
কাজ করতে পারলে। ইনশাল্লাহ গুনাহের অভ্যাস
অবশ্যই ছুটে যাবে।
সূত্র: আল্লাহর
মহব্বত লাভের পরীক্ষিত তিনটি কিতাব-হাকীম মুহাম্মাদ আখতার রহ. হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী
তওবা কবুল হবার
শর্তাবলী: তওবা কবুল হবার শর্ত চারটি (কেউ কেউ
আবার তিনটি/পাঁচটি বলেছেন )। যথা:
১. সর্ব প্রথম
ঐ গোনাহ হতে পৃথক হওয়া
২. অনুতাপ-অনুশোচনা পয়দা হওয়া(লজ্জিত হওয়া) ও ক্ষমা চাওয়া।
৩. ভবিষ্যতে
না করার দৃঢ় হিম্মত বা নিয়ত করা। (আয় আল্লাহ!
আর কখনও এই গোনাহ করবো না )
৪. বান্দার
হক আদায় করা অর্থাৎ কাউকে কষ্ট দিলে মাফ
চেয়ে নেয়া আর পাওনা থাকলে তা পরিশোধ করা অথবা অক্ষম হলে মাফ চেয়ে
নেয়া।
দেখুন-আল্লামা নববির
রহ. এর শরহে মুসলিম ২য় খণ্ড; ৩৪৬
পৃষ্ঠা ।
আল্লাহ তাআলার
রহমত ও দয়ার ব্যাপকতা: কুরআনুল কারিমে
ইরশাদ হচ্ছে- হে রাসূল আপনি বলে দিন যে, হে আমার বান্দাহরা যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছ তোমরা কখনোই আল্লাহর
রহমত হতে হতাশ হয়ে যেওনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সব গুণাহকে ক্ষমাকরে দিবেন। কেননা তিনি
অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সূরা যুমার-৫৩
বিস্তারিত দেখুন-জান্নাতের দুটি
রাস্তা তাকওয়া ও তওবা-শায়খ আব্দুল মতীন বিন হুসাইন
হাফিজাহুল্লাহু হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী, হতাশ হবেন না-ড.আয়েয আল কারনি মাকতাবুল হেরা
হাদিসনং-২৯,
দুআর গুরুত্ব ও ফযিলত |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ لَا يَزَالُ يُسْتَجَابُ
لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ
قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الِاسْتِعْجَالُ قَالَ يَقُولُ قَدْ دَعَوْتُ
وَقَدْ دَعَوْتُ فَلَمْ أَرَ يَسْتَجِيبُ لِي فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ
وَيَدَعُ الدُّعَاءَ.
হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন-বান্দার দুআ
কবুল হয় যতক্ষণ না সে গুনাহের কাজের অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নের দুআ করে এবং
যতক্ষণ না সে তাড়াতাড়ি করে । জিজ্ঞেস করা হলো,হে আল্লাহ রাসূল! তাড়াতাড়ি
কি? তিনি বললেন,এরুপ বলা-আমি দুআ করেছি, আমি দুআ করেছি; কই দুআ তো কবুল হতে দেখলাম না ! অতঃপর সে
অবসাদগ্রস্থ ও নিরাশ হয়ে পড়ে এবং দোআ ছেড়ে দেয়। মুসলিম-২৭৩৫;
আদু দাউদ-১৪৮৪; মুয়াত্তা
মালেক-৫৬৯; মিশকাত-১৯৪
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: দুআর গুরুত্ব
ও মহত্ব সম্পর্কে কুরআন-হাদিসে অনেক বর্ণনা এসেছে- যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-
(১)
আর আমার বান্দারা
যখনআপনার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুত
আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের
প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। সূরা বাকারা-১৮৬
(২) তোমার পালনবকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দিব। সূরা মুমিন-৬০
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-
(৩) দুআ-ই হল ইবাদতের মূল বা মগজ। তিরমিজি-৩৬৯৯
(৪))
দুআ-ই হল ইবাদত।তিরমিজি-৩৬৯৭
(৫) আল্লাহর তায়লার নিকট দুআর চেয়ে উত্তম কোন আমল নেই। তিরমিজি-৩৬৯৬
(৬) যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কাছে কিছু চায় না, তার উপর
আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন। তিরমিজি-৭০০০
দুআ কবুল হয় তিন অবস্থা: হজরত আবু
সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত। নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন- কোন (মুসলমান) ব্যক্তি যখন এমন
কোন দুআ করে যার মধ্যে কোন গোনাহের কথা থাকে না অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার
কথা থাকে না, তাহলে তাকে তিনটি জিনিসের যে কোন একটি অবশ্যই প্রদান
করেন (১) হয়ত তাকে প্রার্থিত জিনিসই দিয়ে
দেয়া হয় (২) অথবা দুআকে তার জন্য আখেরাতের
সম্বল হিসেবে সঞ্চিত রাখা হয় (৩) অথবা দুআর
কারণে তার উপর থেকে সম্ভাব্য বিপদাপদ দূর করে দেয়া হয়। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, যখন এমনই হয়
তাহলে আমরা বেশি করে দুআ করব। রাসূল (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তাআলার কাছে তা চেয়ে ও বেশি রয়েছে। মুসনাদে আহমদ-১০৭০৯
দুআ/মোনাজাতের
আদবসমূহ:
Ø
কেবলা মুখী হয়ে বসা ।
Ø
আদব, তাওয়ায়ু ও
বিনয়ের সাথে বসা।
Ø
অজু সহকারে বসা।
Ø
দুআর শুরু এবং শেষে
আল্লাহর হামদ-ছানা বয়ান
করা এবং দরুদ সালাম পড়া। উদাহরণ-শুরুতে এভাবে বলা: আল-হামদুলিল্লাহি রব্বিলআলামীন ওয়াসসলাতু ওয়াসসালামু আলা রসূলিহিল কারিম।আর শেষে: সুবহানা
রব্বিকা রব্বি ইজ্জাতি আম্মা ইয়াছিফুন ওয়া সালামুন আলাই মুরসালিন ওয়াল হামদুলিল্লাহি
রব্বিল আলামীন।
Ø
নাছোড় মনোভাব নিয়ে দুআ করা।
Ø
দুআ কবুল হওয়ার দৃঢ় আশা
করা।
Ø
সীনা বা কাঁধ বরাবর হাত
ওঠানো।
Ø
উভয় হাতের তালু আসমানের
দিকে রাখা।
Ø
উভয় হাতের মাঝে সামান্য
পরিমাণ ফাঁক রাখা।
Ø
দুনিয়া ও আখেরাত উভয়
জগতের কল্যাণ চাওয়া।
Ø
দুআ শেষে কালেমা তথা লা
ইলাহা ইল্লাহু বলে শেষ করা সুন্নাত বা মুস্তাহাব প্রমাণিত নয়। তাই পরিত্যাগ করা উচিত।
দুআ কবুল হওয়ার
বিশেষ সময়:
১. ফরজ নামাযের
পর ও শেষ রাতে।
২. রমযানের
২৪ ঘণ্টা, বিশেষ করে ইফতারের সময়। শবে ক্দর, শবে বরাত,
দুই ঈদের রাত, জুমাআর রাত।
৩. সফর অবস্থায়।
৪.অসুস্থ
ব্যক্তির (রোগীর।
৫. জুমাআর
দুই খুতবার মাঝে (মনে মনে দুআ করা), জুমাআর
দিনে মাগরিবের নামাযের আগে।
বিস্তারিত দেখুন- লেখকের
ইসলামে দুআর বিধান ও ফযিলত, আহকামে জিন্দাগী, ১৫০-১৫৯ পৃষ্ঠা
হাদিসনং-৩০,
মুসলমানের মর্যাদা |
عَنْ
أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: “ لَا
تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ: اللَّهُ اللَّهُ .
অর্থ:হজরত আনাস রা.হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন- পৃথিবীতে যতদিন “আল্লাহ আল্লাহ” বলা হবে ততদিন কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে না। মুসলিম-১৪৮,
কিতাবুল ফিতান; সুনানে নাসায়ি-২২০৭; মুসনাদে আহমদ-১২০৪৩ অন্য
বর্ণনায় রয়েছে- আল্লাহ আল্লাহ বলার মত একটি মানুষ বাকি থাকতে
কিয়ামত হবে না। তাখরিজ : মুসলিম-১৪৮; মুসনাদে আহমদ-১২৬৬০
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: মুমিনের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-নিশ্চয় একজন মুমিন গোলাম এককজন
আযাদ মুশরিক পুরুষ হতে অনেক উত্তম; যদিও মুশরিক পুরুষ
তোমাদের নিকট কতই না ভাল মনে হয়। সূরা বাকারা-২২১
হাদিসে শরিফে
এসেছে-(১) দরিদ্র মুসলমানরা ধনী মুসলমানদের চল্লিশ বছর
পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। জামেউত তিরমিজি-২৩৫৫
(২) তোমাদের
দুর্বল ও অসহায়দের বরকতে তোমাদেরকে সাহায্য করা হয় এবং তোমাদেরকে রিযিক দান করা হয়। বুখারি-২৮৯৬
(৩) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উম্মুছ ছায়েবকে লক্ষ্য
করে বলেছেন- দেখ, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ, জ্বর আদম-সন্তানের গোনাহসমূহ মুছে ফেলে, যেভাবে কর্মকারের
যাঁতা লোহাকে জংমুক্ত ও পরিষ্কার করে দেয়। সহিহ আল মুসলিম
বিস্তারিত জানার
জন্য –‘শওকে ওয়াতান’ (আখেরাতের প্রেরণা)-হজরত
থানভি রহ. এবং লেখকের
‘মহান আল্লাহর নিকট একজন
মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা’; ‘মুমিনের প্রতি আল্লাহর তাআলার দয়া-রহমত’ কিতাব দেখুন
হাদিসনং-৩১,
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ (মন্দ)
কাজের নিষেধ |
قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ : سَمِعْتُ
رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ، يَقُولُ : مَنْ
رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يُغَيِّرَهُ بِيَدِهِ
فَلْيَفْعَلْ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ
فَبِقَلْبِهِ ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ
অর্থ: হজরত আবু সাঈদ
খুদরি রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ
যখন কোন মন্দ কাজ হতে দেখে, তখন সে যেন তা (শক্তি থাকলে) হাত দ্বারা প্রতিরোধ করে, যদি হাত দ্বারা প্রতিরোধ করার শক্তি না থাকে, তবে যেন
মুখ (কথা) দ্বারা প্রতিবাদ করে। যদি মুখ দ্বারা সম্ভব
না হয়; তাহলে সে যেন অন্তর দ্বারা ঘৃণা করে, পরিবর্তনের চিন্তা-ফিকির করে। আর এটা হচ্ছে ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর। মুসলিম-৪৯,
ঈমান অধ্যায়; আবু দাউদ-১১৪০;
তিরমিজি-২১৭২; নাসায়ি-৫০০৮; মুসনাদে আহমদ-১১০৭৩
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: সৎ কাজের
আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের গুরুত্ব: আল্লাহ তাআলার বাণী-
(১) তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানব জাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ
দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। সূরা ইমরান-১১০
(২) মুমিন নারী ও মুমিন পুরুষগণ পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তারা লোকদেরকে
সৎকাজের আদেশ দেয় আর মন্দ কাজে নিষেধ করে।সূরা তওবা-৭১
(৩) হে বৎস! নামাজ কায়েম কর, সৎ কাজের
আদেশ দাও মন্দ কাজে নিষেধ কর, আর বিপদাপদে ধৈর্য ধর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার
কাজ।
সূরা
লোকমান-১৭
সৎ কাজের আদেশ দেয়ার
ফযিলত: পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- (১) তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা কল্যাণের দিকে ডাকবে। অর্থাৎ সৎকাজের আদেশ
করবে এবং মন্দকাজের বারণ করবে, তারাই প্রকৃত সফলকাম জামাত (দল)। সূরা আলে ইমরান-১০৪
নবিয়ে কারিম (ﷺ) বলেছেন- (২) যে
ব্যক্তি কাউকে সৎকর্মের পথ দেখায়, তার সওয়াব আমলকারীর অনুরূপ। মুসলিম
(৩) তোমার ভাইয়ের জন্য তোমার মুসকি হাসি তোমার জন্য সদকা, সৎকাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের বারণ তোমার জন্য সদকা। পথহারা ব্যক্তিকে
সঠিক পথ দেখানো, তোমার জন্য সদকা। রাস্তা থেকে কাঁটা-হাড়-পাথর ইত্যাদি দূর করে দেয়া সদকা, তোমার বালতি হতে
তোমার ভাইয়ের বালতিতে পানি ঢেলে দেয়াও সদকা। জামে তিরমিজি-২০৮৩
মন্দ কাজের নিষেধ
না করার শাস্তি: আল্লাহ তাআলার বাণী-(১) বনি ইসরাঈলের মধ্যে যারা কাফির, তাদেরকে দাউদ আ. ও মারইয়াম পুত্র
ঈসার আ.মুখে অভিশাপ দেয় হয়েছে। এটা এর কারণে যে, তারা
অবাধ্যতা এবং সীমা লংঘন করত। তারা পরস্পরকে মন্দ কাজের নিষেধ করত না। সূরা মায়েদা-৭৮
রাসূলের (ﷺ) বাণী-
(২) যে লোক এমন কোন এক সম্প্রদায়ে বসবাস করে যে সম্প্রদায়ে পাপকাজ সংঘটিত হয় আর
লোকটি সে সব কর্মরোধ করতে শক্তি থাকা সত্ত্বেও তা রোধ না করে, তাহলে তারা মৃত্যুর পূর্বেই অবশ্যই আল্লাহর শাস্তি তাদেরকে পাকড়াও করবে। সুনানে আবু দাউদ-৪৩৪১
(৩) সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই সৎকাজের
আদেশ এবং মন্দকাজের প্রতিরোধ করবে। নচেৎ অচিরেই আল্লাহর নিকট থেকে তোমাদের উপর আজাব
নাযিল হবে। আর তোমরা আল্লাহর নিকট দুআ করবে, কিন্তু তোমাদের দুআ কবুল হবে না। তিরমিজি-২১৬৯;
মুসনাদে আহমদ-২৩৩০১
আমাদের অবস্থা: হে ইসলাম ও
মুসলমানের দরদী বন্ধু গণ! এটাই কি আমাদের (মুসলমানদের) ধ্বংসের কারণ নয় কি? প্রত্যেক ব্যক্তি অন্যের কথা বা সমকক্ষ ব্যক্তির কথা বাদ দিয়ে আপন পরিবার-পরিজন, স্ত্রী,
ছেলে-মেয়ে.অধীনস্থ লোকদের
প্রতি একটু লক্ষ্য করি। দেখুন, তারা প্রকাশ্যে পাপে লিপ্ত, বেনামাজ, মোবাইল বাজি, জুয়া-তাস, মাদকাসক্তি, গান-বাদ্য ইত্যাদি বড় অভ্যাস্ত। কিন্তু আফসোস! তাদেরকে ফিরানোর জন্য আমরা কি-বা চেষ্টা করছি। লোকেরা বলে, হুজুর আমরা চেষ্টা করছি, বারণ করেছি; কিন্তু মানেনা। আমি তাদেরকে প্রশ্ন
করি, আপনার অবুঝ শিশু সন্তান যদি আগুনে ঝাঁপ দেয়ার উপক্রম হয়। আপনি তাকে মানা করলেন, কিন্তু সে
শুনলোনা, বরং সে আগুনের দিকে এগোচ্ছে, তাহলে
আপনি কি করবেন? শুধু বারণ করেই কি ক্ষান্ত, নিবৃত্ত হবেন, মানা করাই কি যথেষ্ট? না, জোর করে তাকে আগুন থেকে বাঁচাতে হবে। সন্তান যদি আগুনে পতিত
হয়, দুনিয়ার আদালতে আপনি দোষী সাব্যস্ত হবেন না? তাই যদি
হয়, দ্বীনের বেলায় কেন? শুধু মানা করা যথেষ্ট
হবে এবং আল্লাহ আদালতকে দোষী হবেন না। মহান আল্লাহ নির্দেশ করেন- হে মুমিনগণ!
তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই
অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ পাথর। সূরা আত-তাহরিম-০৬
আমর বিল মারুফ ও নাহি
আনিল মুনকারের অপব্যাখ্যা: আহকামে শরিয়ত সম্পর্কে বেখবর কিছুলোক আমর বিল
মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার এ বিধানটা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ (কিতাল)
নামে জোর প্রচার চালাচ্ছে। আবার দ্বীনি দাওয়াত এর কাজ
আসল জিহাদ, আত্মশুদ্ধির কোন দরকারনেই বলে প্রচার চালাচ্ছে।
আমর বিল মারুফ-নাহি আনিল মুনকার, জিহাদ, দাওয়াত,
তাযকিয়া, তালিম ইত্যাদি প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা
বিষয়। যার কর্ম পন্থা আহকামে শরিয়ত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। যারা এ সব এক বলে, বা অপব্যাখ্যা
করে, তাদের কথা ঠিক নয়। তাদের তওবা করা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের
সবাইকে সিরাতিম মুস্তাকিমের পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন !
বিস্তারিত জানার জন্য
দেখুন-হায়াতুল মুসলিমীন, ইসলাহুর রুসুম, আশরাফ চরিত, হজরত থানভি রহ. এর
রাজনীতিক চিন্তা ধারা-মুফতি তকি উসমানি দা.বা.নায়লুল হাজাহ শরহে সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৬২-২৬৫পৃ.শিবলি প্র.
( ৩১ নং হাদিস সমাপ্ত)
-------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
সাইয়্যেদুল ইসতিগফার : সকাল ও সন্ধ্যায় একবার
যে ব্যক্তি এ দুআটি একান্ত বিশ্বাসের সাথে সকালে পাঠ করবে অত:পর
ঐ দিন সন্ধ্যার পূর্বে মৃত্য বরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অনুরূপ সকালেও।
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي ، لا إِلَه إِلاَّ
أَنْتَ خَلَقْتَني وأَنَا عَبْدُكَ ، على عهْدِكَ و وعْدِكَ ما اسْتَطَعْتُ ،
أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ ما صنَعْتُ ، أَبوءُ لَكَ بِنِعْمتِكَ علَيَ ، وأَبُوءُ
بذَنْبي فَاغْفِرْ لي ، فَإِنَّهُ لا يغْفِرُ الذُّنُوبِ إِلاَّ أَنْتَ "
হে আল্লাহ তুমি আমার রব, তুমি ছাড়া আর কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তুমি আমায় সৃষ্টি করছে,আর আমি তোমার বান্দা।
আমি আমার সাধ্য-মত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছি।
আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার আশ্রয় চাই।
আমার প্রতি তোমার নিয়ামতের স্বীকৃতি প্রদান করছি, আর আমি আমার গোনাহ-খাতা স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও, নিশ্চয়ই তুমি ভিন্ন আর কেউ গোনাহ
মার্জনাকারী নেই। বুখারি-৬৩০৬,৬৩২৩; তিরমিজি-৩৩৯৩; মুসনাদে আহমদ-১৬৬৬২
হাদিস নং-৩২, আল্লাহ-ওয়ালাদের ছুহবতের প্রয়োজনীয়তা |
عَنْ أَبِي كَبْشَةَ ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا
مُوسَى ، يَقُولُ :
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :
" مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ مَثَلُ
الْعَطَّارِ ، إِنْ لَا يُحْذِكَ يَعْبَقْ بِكَ مِنْ رِيحِهِ ، وَمَثَلُ
الْجَلِيسِ السُّوءِ مَثَلُ الْقَيْنِ إِنْ لَا يُحْرِقْ ثِيَابَكَ يَعْبَقْ بِكَ
مِنْ رِيحِهِ
অর্থ: হজরত আবু মুসা রা. থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- সৎ লোকের সাহচর্য ও অসৎ লোকের সাহচর্য যথাক্রমে আতর বিক্রেতা
ও কর্মকারের হাপরে ফুঁক দেয়ার মতো। আতর বিক্রেতা হয়তো তোমাকে এমনিতেই কিছু দান
করবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে কিছু আতর কিনবে। আর অন্ততপক্ষে কিছু না
হলেও তার সুঘ্রাণ তোমার অন্তর ও মস্তিষ্ককে সঞ্জীবিত করবে। পক্ষান্তরে হাপরে ফুঁক দানকারী তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দিবে। আর কিছু না হলেও
তার দুর্গন্ধ তুমি পাবে। বুখারি-২১০১,কিতাবুল বুয়ু;
মুসলিম-১০২৩; মুসনাদে
আহমদ-১৯৬২৪; তিরমিজি-১৯২৮; মিশকাত-৪৭৯১
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: ঈমান দৃঢ়-মজবুত করার জন্য এবং অন্তর স্বচ্ছ, নির্মল ও পরিষ্কার
করার জন্য নেককার ছুহবত একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় ঈমান নষ্ট করার
জন্য, কুটিলতা, জটিলতা, অনুদারতা,
স্বার্থপরতা ও পাপে অন্তর পরিপূর্ণ করার জন্য কুসংসর্গের মত
মারাত্মক বিষ আর কিছুই নেই।
ছদিকীন তথা আল্লাহ
ওয়ালাদের সঙ্গীর হওয়ার নির্দেশ: আল্লাহ পাক ফরমান- হে
ঈমান ওয়ালারা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর আর তাকওয়া হাসিলের জন্য
সাদেকীনদের সাথে থাক। সূরা আত-তওবা-১১৯এ আয়াতের তাফসির
করতে গিয়ে তাফসিরে রুহুল মাআনির লেখক আল্লামা সাইয়্যিদ আলূসি আল-বাগদাদি রহ. লিখেন- অর্থাৎ
তুমি তাদের (আল্লাহ ওয়ালাদের) সাথে
এমনভাবে জুড়ে থাক এবং এতদিন পর্যন্ত তাদের ছুহবত অবলম্বন কর, যতদিন তুমি তাদের মত হয়ে যাও। সূত্র: তাফসিরে
রুহুল মাআনি-১০ খণ্ড;৪২৮ পৃষ্ঠা
সকাল-বিকাল
আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে অবস্থানের নির্দেশ: কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে-
হে নবি! যারা সকাল-বিকাল
শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তাঁকে স্মরণ করে, আপনি
এমন লোকের সঙ্গে অবস্থান করুন। সূরা কাহাফ-২৮
এ আয়াত নাযিল হবার পর হুজুর (ﷺ) এই জন্য শুকরিয়া আদায় করতেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে এমন লোক
পয়দা করেছেন, যাদের মজলিসে জমিয়ে বসার জন্য স্বয়ং আমাকে আদেশ
করা হয়েছে এবং আল্লাহর যিকির থেকে গাফেল, খাহেশাতের তাবেদারিও
সীমা অতিক্রম করে তাদের অনুসরণ হতে বিরত রাখা হয়েছে।
প্রতিনিয়িত
ছালিহীনদের পথই কামনা: আমরা যে সূরা ফাতিহা নামাজে তিলাওয়াত করি। একটি আয়াত
হলো হে আল্লাহ! তাদের পথে
যারা আপনার নিয়ামত প্রাপ্ত। এ আয়াতের ব্যাখ্যা হলো-অর্থ: যাদের
প্রতি আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করেছেন,
নবি, সিদ্দীক, শহীদ এবং
সৎকর্মশীল (ছলিহীন)। সূরা আন নিসা-৬৯
সমস্ত বরকত মহান
আকাবির-আসলাফের পথেই: হজরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন- অর্থ:
তোমাদের পূর্বসরী ও আকাবিরদের সাথেই (সংস্পর্শে)
বররকত ও পূন্য (অর্জন সম্ভব)। (মুস্তাদরেক
হাকেম) সালফে-সালিহীনের মাঝে এমন একটি
বিশাল দল অতিবাহিত হয়েছেন, যারা আল্লাহ ওয়ালা বুযুর্গ
ব্যক্তির কাছে কেবলমাত্র এ উদ্দেশ্য গমন করেছেন, রাসূলে
আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হাদিসের) মূল ও মুখ্য উদ্দেশ্য এবং পন্থা-পদ্ধতি কিরুপ ছিল,
তা স্বচক্ষে সেই বুযুর্গের দেখে-বুঝে আসতে
পারেন। সুতরাং তাঁদের ছুহবতের পাশাপাশি মহান আকাবির-আসলাফের জীবনী পাঠ করতে হবে। সাঈদুল খাতির, সূত্র:
তারীকে দাওয়াত ও আযীমত, ১ম খণ্ড; ২২৭-২২৮ পৃষ্ঠা ।
এক শ্রেণীর মানুষ আছে, তারা
ছুহবতকে অস্বীকার করে, তারা বলে, সরাসরি কুরআন-হাদিস মানবো। আরে ভাই মহান
আল্লাহই সরাসরি মানুষের প্রতি কিতাব নাযিল করেননি। বরং নবির প্রতি নাযিল
করেছেন। উম্মতকে নবি হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। নবির ছুহবতে সাহাবি, সাহাবির
ছুহবতে তাবেয়ি, তাঁদের ছুহবতে
তাবে-তাবেয়ি পয়দা হয়েছে। এভাবে যুগে যুগে
কামেলীনদের হাতে আরেক কামেল পয়দা হয়েছে। মেডিক্যাল স্যায়েন্সের কিতাব পড়েই কি শুধু
ডাক্তার হওয়া যায়। না, ইন্টারনি, অভিজ্ঞ ডাক্তারের
সান্নিধ্য দরকার হয়। এ মহা সত্যকে
কিভাবে অস্বীকার করা যায়؟ ?
আল্লাহ-ওয়ালাদের
ছুহবত-মহব্বত ঈমানের সাথে মৃত্যুর আমল: যাকিরীন
তথা ছালিহীন ও আল্লাহর ওলিদের মর্তবা
সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে-এক ব্যক্তি তার নিজের উদ্দেশ্যে
যাওয়ার পথে কিছুক্ষণের জন্য ছালিহীন বা
আল্লাহ ওয়ালাদের সঙ্গে যিকিরের মজলিসে বসল। অতঃপর আল্লাহ পাক যখন
ফিরিশতাগণ তখন বলতে লাগলো, আয় আল্লাহ,অমুক
ব্যক্তি তো নিছক নিজের কাজেই এসেছিল এবং সে সুবাদেই কিছুক্ষণ ওখানে বসেছিল। জবাবে আল্লাহ পাক ইরশাদ
করেন- অর্থ: এরা আমার এমনই মাকবুল ও মাহবুব বা্ন্দা যে, তাদের
মজালসে অংশগ্রহণকারীও (আমার রহমত হতে) বঞ্চিত হয় না। আমি আমার ঐ পাপী
বান্দাটিকে ক্ষমা করে দিলাম। বুখারি-মুসলিম, মিশকাত-২১৬০ বাবে যিকরুল্লাহ আয্যা-জাল্লা তারা হতভাগা হয়
না মানে জাহান্নামী হয় না। আর জান্নাতে যেতে হলে ঈমান লাগবে। সুতরাং প্রমাণিত হলো ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু নসীব হবে।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন- অর্থ: এটা
নিঃসন্দেহ যে, আল্লাহ পাক তার ওলিদেরকে যত নিয়ামত ও অনুগ্রহ
দান করেন, তাঁদের সম্মানার্থে তাঁদের মজলিসে ওঠা-বসাকারী বান্দাদেরকেও তিনি ঐ সকল নিয়ামত দান করে দেন।যেভাবে মহামান্য
মেহমানের খাতিরে তার নগণ্য খাদেমওে ঐ সকল সম্মানজনক খাদ্য-সামগ্রী
দ্বারা আপ্যায়ন করা হয়,যা মূলত ঐ মেহমানের জন্যই তৈরি করা হয়ে থাকে। ফাতহুল বারি-১১খণ্ড;
২১৩ পৃষ্ঠা ।
আল্লাহ ওয়ালাদের
সঙ্গে মহব্বতের সম্পর্কের ফায়দা: আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের
দিন বলবেন, যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছে আমারই জন্য তারা আজ কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করবো। আজ এমন দিন আমার ছায়া
ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই। সহিহ মুসলিম- ১৯৮৮
এ কথা সত্য যে, নেক লোকের
সঙ্গেই একমাত্র প্রকৃত ভালবাসা পয়দা হয়। আল্লাহ ওয়ালা ব্যতীত অন্য
কার সঙ্গে ভালবাসায় দুনিয়ার স্বার্থ যুক্ত থাকে। সুতরাং আল্লাহর অনুগত
বান্দাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে ইনশাল্লাহ
এর বদলতে আরশের নিচে ঠাই পাওয়া যাবে।
আল্লাহ ওয়ালাদের
পরিচয়: তিনি মুত্তাকি তিনিই আল্লাহ ওয়ালা অর্থাৎ যিনি জাহের-বাতেন সব ধরণের গোনাহ থেকে বিরত থাকেন। কখন কোন ভুল-গোনাহ হয়ে
গেলে জলদি তওবা করে। এক হাদিসে তাঁদের আলামত বলা হয়েছে যে, যাদেরকে দেখলে আল্লাহর স্মরণ হয়, দ্বীন-ধর্মের জ্ঞান বাড়ে এবং আখেরাতের কথা স্মরণ হয় (দেল আখেরাতের দিকে ধাবিত হয়)।
দেখুন-খাযায়েনে
কুরআন ও হাদিস-হাকীমুল
উম্মত প্রকাশনী।
হাদিস নং-৩৩,
কুদৃষ্টি হতে হেফাযত |
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ
الْخُدْرِيِّ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ، قَالَ : إِيَّاكُمْ
وَالْجُلُوسَ بِالطُّرُقَاتِ ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، مَا لَنَا مِنْ
مَجَالِسِنَا بُدٌّ نَتَحَدَّثُ فِيهَا ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه
وسلم : إِذَا أَبَيْتُمْ إِلاَّ الْمَجَالِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ
حَقَّهُ ، قَالُوا : وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ ؟ قَالَ : غَضُّ الْبَصَرِ ، وَكَفُّ
الأَذَى ، وَرَدُّ السَّلامِ ، وَالأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ ، وَالنَّهْيُ عَنِ
الْمُنْكَرِ
অর্থ: হজরত আবু
সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন তোমরা
রাস্তা বা মানুষের চলাচলের পথে বসা থেকে বিরত থাক। সাহাবিরা বলল, হে
আল্লাহর রাসূল! রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নাই আমরা
রাস্তায় বসে কথা-বার্তা বলি-আলোচনা করি। রাসূল (ﷺ) বললেন, যদি তোমাদের বসতেই হয়, তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায়
কর। তারা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি?
তিনি বললেন, চক্ষু অবনত করা, কষ্ট দায়ক বস্তু পথের থেকে সরানো, সলামের উত্তর দেয়া,
সৎকাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা। বুখারি-২৪৬৫,কিতাবুল মাজালিম; মুসলিম-২১২১;
আবু দাউদ-৪৮১৫; আহমদ-১১৩-৯
নজর হেফাযতের গুরুত্ব: আল্লাহ তাআলার
নির্দেশ- মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা
তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য
অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর আপনি মুমিন নারীদের
বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিশক্তিকে নত করে। সূরা নূর,৩০-৩১ প্রিয় বন্ধুগণ ! লক্ষ্যণীয় যে, পবিত্র কালামে পাকে সাধারণত আল্লাহ তাআলা পুরুষদেরকে সম্বোধন করে, এর মধ্যে
মহিলাদেরকে শামিল করেছেন। কিন্তু ৩০ নং
আয়াতে পুরুষ আর ৩১ আয়াতে নারীদেরকে পৃথক পৃথকভাবে চোখ অবনত রাখার নির্দেশ করছেন। এতে প্রমাণিত হয়, নজর
হেফাযতের গুরুত্ব কতখানি?
নবির (ﷺ) নির্দেশ- চোখ দুটির ব্যভিচার হল, দৃষ্টি। মুসলিম
আমি রাসূল (ﷺ)কে হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলে, তিনি আমাকে আমার চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ
দেন। মুসলিম-২১৫৯, তিরমিযি- ২৭৭৬
সালফে সালেহীন তথা
এ উম্মতের ভালো পূর্বসূরীগণ চক্ষুকে অবনত রাখা বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকতেন। যেমন, আনাস ইবন
মালেক রা.বলেন, যদি তোমার পাশ দিয়ে
কোনো নারী অতিক্রম করে, তখন অতিক্রম না করা পর্যন্ত তুমি
তোমার চোখকে অবনত রাখ। আর সুফিয়ান রহ. যখন ঈদের দিন ঘর থেকে বের হতেন, তখন তিনি বলতেন-আজকের দিন আমি সর্বপ্রথম যে জিনিসটি
দিয়ে শুরু করব, তা আমরা আমাদের চক্ষুকে অবনত রাখব।
এক ব্যক্তি যখন হাসান বসরিকে
বলল, অনারব নারীরা তাদের বক্ষ ও মাথাকে খোলা রাখে, তখন সে
বলল, তুমি তোমার চোখকে বিরত রাখ।
রবি ইবন খাসইয়াম
তিনি সর্বদা দৃষ্টিকে নিচু করে রাখতেন। একদিন তার পাশ দিয়ে কতিপয় নারী অতিক্রম করলে, তিনি তার
মাথাকে নিচু করে তার বুক পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। তখন মহিলা মনে করল, তিনি অন্ধ,
ফলে তার অন্ধত্ব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করল।
কুদৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত
তীর: আল্লাহ পাক বলেন- কুদৃষ্টি ইবলীসের বিষাক্ত তীর। যে আমার ভয়ে তা বর্জন
করবে , এর বদলে আমি তাকে এমন ঈমান নসীব করবো যার মাধুর্য ও মধুর তা সে তার অন্তরে
মধ্যে অনুভব করবে। ত্বাববরানী, কানযুল উম্মাল ৫ম খণ্ড; ২২৮পৃষ্ঠা।(হাদিসে কুদসী )
নজর হেফাযতের
বরকতে ঈমানের সাথে মৃত্যু: হজরত মোল্লা আলি কারি রহ. লিখেছেন: (আমি তাকে এমন ঈমান নসীব করবো যার মাধুর্য
ও মধুরতা সে তার অন্তরে মধ্যে অনুভব করবে) এ হাদিসের
ব্যাখ্যায়- অর্থ: রেওয়ায়েত আছে যে,
একবার যদি কারও অন্তরে ঈমানের
মাধুর্য ও মধুরতা প্রবেশ করে তবে আর কখনও তা ছিনিয়ে নেয়া হয় না। মেরকাত ১ম খণ্ড; ৭৪ পৃ.
অতত্রব, এতে
ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু বরণের সুসংবাদ বিদ্যামান আছে। আজকাল এ দৌলত অহরহ রাস্তা-ঘাটে বণ্টন
হতেছে। তাই যেখানে কুদৃষ্টি হতে বিরত থেকে দৌলত হাসিল করতে থাকুন।
কুদৃষ্টিকারী
আল্লাহর গযবের পাত্র: স্বয়ং রাসূল (ﷺ) বদ-দুআ করে
বলেছেন-
অর্থ: আল্লাহ তাআলা
লানত বর্ষণ করুন নজরকারীর ওপর এবং যার প্রতি নজর করা হয় তার ওপর। সুনানে বাইহাকি
অর্থাৎ বেপর্দা চলাফেরার দ্বারা কুদৃষ্টির আহবান জানায় তার উপরও গযব নাযিল হোক। যারা ওলি-আল্লাহদের
বদ-দুআকে ভয় করেন, তাদেরকে আল্লাহ রাসূল
(ﷺ) এর বদ-দুআকে ভয় করা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে
সবাইকে হেফাযত করুন।
চিন্তার বিষয় হলো: তায়েফের ময়দানে কাফেরদের হাতে
রক্তাক্ত হয়েও তিনি বদ-দুআ করেননি অথচ কুদৃষ্টিকারী এবং যারা
সেজে গুজে সুযোগ দেয় তাদের প্রতি বদ-দুআ করেছেন। তাহলে বুঝা যায়, কুদৃষ্টি
কত জঘন্য কাজ।
চিকিৎসা শাস্ত্রের
আলোকে কুদৃষ্টির ক্ষতিসমূহ জানতে দেখুন আত্মার ব্যাধি ও প্রতিকার-৭৪ পৃ.
চেহেরা/মুখমণ্ডল
হিজাব/পর্দার অন্তর্ভুক্ত কি না?
চেহেরা পর্দার অংশ
কি না এ সম্পর্কে দুএকের মত আছে যে, অংশ নয়। কিন্তু কুরআন-হাদিস, উম্মতের ইজমা,
কিয়াস, উম্মতের আমল, বিজ্ঞ
আলেমদের মতামত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে
মুখমণ্ডল পর্দার অংশ।
কুরআনুল কারিমের
আদেশ:
(১)
হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের
চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে
তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। সূরা আল আহযাব-৫৯
পর্দা বিষয়ে এ
আয়াত অত্যন্ত পরিষ্কার ও স্পষ্ট। কারণ, এ আয়াত থেকে জানা যায়, পর্দার নির্দেশের মধ্যে মুখমণ্ডলও অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া এ আয়াতে
আযওয়াজে মুতাহহারাত (রাসূলুল্লাহর (ﷺ) -এর পুতঃপবিত্র সহধর্মীনীগণ) ও নবি (ﷺ) -এর কন্যাগণের সঙ্গে মুসলিম মহিলাদেরও সম্বোধন করা হয়েছে। এ আয়াতে ‘জালাবিব’ শব্দ ব্যবহার করা
হয়েছে, যা ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। আরবি অভিধানের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লিসানুল ‘আরাব’–এ লেখা হয়েছে, ‘জিলবাব’ ওই চাদরকে বলা হয় যা মহিলারা নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত
ঢাকার জন্য ব্যবহার করে। ১/২৭
অভিধান
থেকে সরে গিয়ে মুফাসসিরগণের বক্তব্য দেখলেও জানা যায়, ‘জিলবাব’ এমন কাপড়কে বলে যা দ্বারা মহিলারা নিজেদের শরীর ঢাকেন। ‘জিলবাব’ অর্থ বড় চাদর, যা দ্বারা
মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়। কুরতুবি, আল-জামে‘ লিআহকামিল কুরআন : ১৪/২
এ আয়াত সম্পর্কে
বিখ্যাত তাফসিরকারকদের মতামত:
(ক)
আল্লামা আলূসি রহ. আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. বরাত
দিয়ে
লিখেন, ‘জিলবাব’ সেই চাদরকে বলে
যা মহিলারা দেহের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত উড়িয়ে ছেড়ে দেয়। রুহুল মাআনি : ২২/৮৮
(খ) আল্লামা নাসাফি আল-হানাফি রহ. লিখেছেন,
মহিলারা চাদর বা অন্য কিছু নিজেদের মাথার ওপর ছেড়ে দেবে এবং নিজেদের
মুখমণ্ডল ও দেহের অন্যান্য অঙ্গ ঢেকে নেবে। মাদারিকুত- তানযীল
(গ) আল্লামা ইবন হাযম রহ. লিখেন, আরবি ভাষায় ‘জিলবাব’ এমন কাপড়কে বলা
হয় যা সারা শরীর আচ্ছাদন করে। যে কাপড় সমস্ত শরীর ঢাকে না, সে কাপড়ের ক্ষেত্রে ‘জিলবাব’ শব্দটির প্রয়োগ
সঠিক ও শুদ্ধ নয়। আল-মুহাল্লা : ৩/২১৭
তাই শত শত বছর যাবৎ মুসলিম
বিশ্বের সর্বত্র যে দ্বীনদার নারীগণ নিকাব ও হিজাব পরিধান করে আসছেন তাঁরা এই
জিলবাব ধারণের বিধানই পালন করছেন।
(ঘ) আল্লামা যামাখশারি রহ. শব্দটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেন, এর অর্থ, মহিলারা নিজেদের মুখমণ্ডলের ওপর চাদর টেনে
দেবে। যেমন : কোনো মহিলার মুখমণ্ডল থেকে নিকাবসরে যায় তখন তাকে আরবিতে বলা হয় : ইউদনি ছাওবিকে আলা ওয়াজহিকে তোমার মুখমণ্ডলের
ওপর তোমার কাপড় ফেলে দাও। (প্রাগুক্ত) এ থেকে বুঝা গেল, কুরআন কারিমের এই আয়াতে মুখমণ্ডল ঢাকার স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।
ঙ) আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. মুখমণ্ডলের ওপর ‘জিলবাব’ ফেলার যে পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন তা হলো, ‘মুসলিম মহিলারা নিজেদের চাদর দ্বারা নিজ নিজ মাথা ও
মুখমণ্ডল ঢেকে বের হবে। তারা কেবল একটি চোখ খোলা রাখতে পারে। শাওকানি, ফাতহুল
কাদির-৩০৭
(চ) জনৈক ব্যক্তি উবায়দা ইবন সুফইয়ান ইবন হারিছ হাযরামি রা. কাছে এর নিয়ম জানতে চান। তিনি নিজের চাদরটি উঠিয়ে
এমনভাবে ছড়িয়ে দেন যে, তার মাথা ও কপাল ভ্রূ পর্যন্ত ঢেকে যায়। তারপর চাদরের কিছু অংশ মুখমণ্ডলের ওপর এমনভাবে রাখেন যে, গোটা
মুখমণ্ডল ঢেকে যায়, কেবল একটি চোখ খোলা থাকে। তাফসিরে কুরতুবি : ৪/২৩৪
(ছ) আবু বকর আর-রাজি ও আল-জাস্সাস আল-হানাফি রহ. বলেন, এ
আয়াত দ্বারা
প্রমাণিত হয়,
যুবতী মহিলারা ঘর থেকে বাইরে বেরোনোর সময় বেগানা পুরুষের দৃষ্টি
থেকে তাদের মুখমণ্ডল আবশ্যিকভাবে ঢেকে রাখবে, যাতে দুষ্ট
প্রকৃতির লোক তাদেরকে বিরক্ত করতে না পারে। আহকামুল কুরআন : ৩/৩৭১
সূরা আল-আহযাবের উল্লেখিত আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে সকল মুফাসসির
মুখমণ্ডল ঢাকা হিজাবের অত্যাবশ্যক অংশ গণ্য করেছেন। আল্লামা সুয়ুতি আশ-শাফিঈ রহ. উল্লেখিত আয়াতের তাফসির
করতে গিয়ে লিখেন, হিজাবের আয়াত সব
নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মাথা ও মুখমণ্ডল ঢাকা যে ওয়াজিব তা এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত
হয়। আওনুল মাবুদ-১১/১৫৪
(ঝ)
হাফিয
ইবনুল কারবি মালেকি রহ.ও এই আয়াতের তাফসির
করতে গিয়ে লিখেন, ‘অভিজাত আরব
মহিলারা দাসীদের মত মুখমণ্ডল খোলা অবস্থায় ঘোরাফেরা করতো। এতে পুরুষের দৃষ্টি
আন্দোলিত হতো। এজন্য আল্লাহ তাআলাতাদেরকে নির্দেশ দেন,
তারা
যেন শরীরের ওপর জিলবাব পরে নেয়। তাহলে তাদের মুখমণ্ডল তাদের দৃষ্টির আড়ালে চলে যাবে। আত-তাসহিল লি ‘উলুমি তানজিল :
৩/১৪৪
(ঞ) আল্লামা বাহুতি হাম্বলি রহ. -এরও এই মত যে, সালাতের বাইরে স্বাধীন ও প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর দুহাতের কবজি
এবং মুখমণ্ডলও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতই পর্দার অন্তর্ভুক্ত। কাশফুল কান্না-১/২৬৬
(২) তোমরা তাদের (নবি পত্নীগণের) কাছে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল
থেকে চাইবে, এটা তোমাদের ও তাদের
অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। সূরা আহযাব-৫৩
এ আয়াতকে সাহাবা
কেরামের যুগ হতেই ‘আয়াতে হিযাব বা পর্দাবিধানের আয়াত বলা
হয়ে থাকে।হজরত ওমর রা. আনাস রা. এরুপ উক্তি রয়েছে ।
মুখমণ্ডল যদি
পর্দার অন্তভুক্ত না হতো, তাহলে সামনে
যেতে দোষ কি ছিল ? পর্দার আড়াল থেকে
চাইতে হবে কেন ? অথচ নবির সম্মানিত
স্ত্রীগণ এ উম্মাতের মা,তাদেরকে আপন মায়ের
মতই বিবাহ হারাম। এ আয়াত থেকে বলিষ্ঠভাবে, সুদৃঢ়ভাবে
প্রমাণিত হয় যে, মুখমণ্ডল পর্দার
অন্তর্ভুক্ত। সূত্র: তাফসিরে বুরহাননুল কুরআন, মাআরিফুল কুরআন
(৩) বৃদ্ধা নারী যারা
বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা সৌন্দর্য
প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে,
তাদের
জন্য দোষ নেই।.... তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। সূরা নূর-৬০
আলোচ্য আয়াতে পর্দার
অপরিহার্যতা এভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে,
আল্লাহ
বলেন বৃদ্ধনারী বার্ধক্যের কারণে) যার প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না, তারা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে
রাখতে পারে। এখানে বস্ত্র খুলে রাখা মানে উলঙ্গ বা নিরাবরণ হওয়া নয়, বরং যেসব বস্ত্র দ্বারা হাত, মুখমণ্ডল ইত্যাদি আবৃত রাখা হয়- যথা- চাদর, বোরকা ইত্যাদি। এ আয়াতে বস্ত্র খুলে
রাখার অনুমতি শুধুমাত্র বৃদ্ধা নারীদের জন্যেই নির্দিষ্ট। যুবতী নারীর মুখ-মণ্ডল
বিপদ সংকুলস্থান হওয়ায় তা ঢেকে রাখা জরুরি। যদি বস্ত্র খুলে রাখার
হুকুম (নির্দেশ) বৃদ্ধা, যুবতী, তরুণী সকলের জন্যে অভিন্ন হত, তা হলে বৃদ্ধাকে যুবতী থেকে পৃথক করে উল্লেখ
করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
(৪)
মুমিন
পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের
দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক
পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।[৩০] আর মুমিন
নারীদেরকে বল, তারা তাদের
দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ
পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না
দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে,
ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে,
আপন
নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক
হয়েছে, অধীনস্থ যৌন কামনা মুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের
গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন
নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। সূরা নূর-৩১
সূরা নূরের ৩১ নং
আয়াতে তিনবার زِينَتَهُنَّ যীনাত শব্দটি
ব্যবহৃত হয়েছে ।
وَلاَيُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّمَا ظَهَرَمِنْهَا (১)
وَلاَيُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ
(২)
وَلَايَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ
زِينَتِهِن(৩)
এসব জায়গায় যীনাত
শব্দের অর্থ সৌন্দর্য হলেও তিন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
(১) وَلاَيُبْدِينَزِينَتَهُنَّإِلاَّمَاظَهَرَمِنْهَا এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে-
তারা যেন
তাদের পোশাকের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে। তবে যা অনিচ্ছাকৃত প্রকাশ পেয়ে যায়।
এ আয়াতে
উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহিলাদের বাহিরে ঐ সমস্ত সৌন্দর্য যা পর পুরুষদের দৃষ্টি থেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও গোপন করা সম্ভব হয় না। যেমন কাপড় ও চাদরের ওপরের
অংশ।
বর্তমানে
যুগে যেমন বোরকার বাহিরের অংশের সৌন্দর্য ও পায়ের নিচের অংশের সৌন্দর্য। সুতরাং এগুলো
পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়,তাতে কোন
পরপুরুষের দৃষ্টি পড়লে মহিলারা দায়ী হবে না;বরং দায়ী হবে
পুরুষ।
(২) আর وَلاَيُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ আয়াতের এ অংশের পূর্ণ অর্থ হচ্ছে- মহিলারা যখন কোন প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে বের হবে, তখন মুখমণ্ডলসহ চুল ও গলার
আশপাশের সৌন্দর্য এমন একটি ওড়না বা চাদর দ্বারা মাথার ওপর দিক থেকে ঢেকে নিবে, যদ্দরুন তার এসব অংশেনর সৌন্দর্য প্রকাশ না
পায়।
তবে
এ বিধান মাহরামদের ব্যাপারে নয়। তাই স্বমী, শ্বশুর, পুত্র আরো
এ জাতীয় আম্তীয় যাদের সাথে বিবাহ
হারাম,তাদের সাথে
উপরোক্ত পর্দা জরুরি নয়।
এ অংশে যীনাত
দ্বারা মুখমণ্ডল ও বক্ষ দেশের পর্দা করাটা
গায়রে মাহরামেরে ক্ষেত্রে জরুরি নয়;
বরং
মুখমণ্ডল ইত্যাদি তাদের সামনে খোলা রাখা
যাবে।
(৩) আর وَلَايَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ
زِينَتِهِن এ আয়াতে, অলংকারের ঝংকার
পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণের কারণ হয়, তাই তার
সৌন্দর্যকে রক্ষা করে চলার নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে।
সারকথা: এ কথা সর্বস্বীকৃতি যে, অলংকারের আওয়াজের তুলনায়
পুরুষের জন্য নারীর চেহেরা অত্যধিক
আকর্ষণীয়। বিধায় মুখমণ্ডল পর্দার অন্তর্ভক্ত হওয়ার ব্যাপারে আয়াতের এ অংশ থেকেও প্রমাণিত
হয়।
পবিত্র কুরআনে
নারীদের হিজাব এবং তদসংক্রান্ত প্রায় আটটি আয়াত আছে। সেগুলো থেকেও একথা জানা
যায়, শরীয়তের দাবী কেবল শরীর
ঢাকা নয়, বরং মুখমণ্ডল ঢাকাও জরুরি।
হাদিস তথা রাসূল (ﷺ) এর আদেশ: (১) আনাস রা. স্বয়ং বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন মক্কা থেকে মদিনা পৌঁছিলেন তখন আমার বয়স দশ বছর। …..উম্মুল মুমিনিন যয়নাব রা. এর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দাম্পত্য জীবন আরম্ভ করার প্রথম দিনই এ আয়াতটি (সূরা আহযাব-৫৩ নং) নাযিল হয়। …….আমি তার পিছনে ঘরে প্রবেশের জন্য। উদ্যত হয়ে আছি। হজরতের (নবির) এক পা হুজুরার
দরজার ভিতরে আরেক পা বাহিরে, এমতাবস্থায় নবি (ﷺ) আমার ও তাঁ মধ্যে পর্দা ফেলে দিলেন। (আমি হুজুরায় প্রবেশ করতে
বিরত থাকলাম এবং জানা গেল পর্দার বিধানের আয়াত নাযিল হয়েছে )। বুখারি শরিফ-৬/২৩৬৮ আল্লামা
আজিজুল হক রহ.
(২) তোমাদের কেউ কোনো নারীর প্রতি বিয়ের প্রস্তাব প্রদানের পর
তাকে দেখলে কোন গুণাহ হবে না। মুসানদে আহমাদ উল্লেখিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, বিয়ের প্রস্তাব দাতা যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে পাত্রীকে দেখে,
তাহলে
গুণাহ হবে না। এতে প্রতীয়মান হলো যে, যারা বিয়ের
উদ্যোগ না নিয়ে, এমনিই দেখে তারা গোনাহগার
হবে।
(৩) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর প্রিয়তমা পত্নী আয়িশা রা.বলেন- আল্লাহ হিজরতকারী
অগ্রবর্তী নারীদের ওপর রহমত করুন। যখন তিনি নাযিল করলেন, আর তারা যেন তাদের বক্ষের ওপর ওড়না টেনে দেয়’ তখন তারা তাদের
নিম্নাংশের কাপড়ের প্রান্ত ছিঁড়ে ফেলেন এবং তা দিয়ে ওড়না বানিয়ে নেন। বুখারি : ৮৫৭৪
আলোচ্য বর্ণনায় ‘ইখতামারনা’ শব্দটি এসেছে। সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাকার হাফিয
ইবন হাজার ‘আসকালানী রহ. ‘ইখতামারনা’ শব্দের ব্যাখ্যা
করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘গাত্তাইনা উজুহাহুন্না’। অর্থা তারা নিজেদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখতেন। ফাতহুল বারি : ৮/৩৪৭
(৪) যখন তোমাদের (নারীদের) কারো কাছে মুক্তির
জন্যে চুক্তিবদ্ধ কৃতদাস থাকে এবং তার নিকট চুক্তি অনুযায়ী মুক্তিপণ থাকে। তাহলে সে নারী
কৃতদাসের সামনে পর্দা করবে। মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, জামে
তিরমিজি
এ হাদিস শরিফ দ্বারা পর্দার অপরিহর্যতা
প্রমাণিত হয়, কারণ কৃতদাসের
সাথে পর্দার বিধান নাই। কিন্তু যখন সে স্বাধীন হবে তখন পর্দা কার্যকর হবে।
(৫) নারীর সর্বাঙ্গই সতর-অঙ্গ। (গোপনীয় বস্তু
কাজেই নারীদেহ সম্পূর্ণটাই ঢেকে রাখা অপরিহার্য।)
(৬) আবদুল্লাহ ইবন উমর রা. থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)
বলেছেন,‘আর ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নিকাব ও হাত মোজা পরিধান না করে। বুখারি
: ১৮৩৮ এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, নবি (ﷺ) এর যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও চেহারা ঢাকতেন। এ কারণে ইহরামের
সময় নেকাব ও দস্তানা না পরার আদেশ করতে হয়েছে।
(৭) ইফক-এর ঘটনা থেকেও আমরা মুখ ঢাকার প্রমাণ সংগ্রহ
করতে পারি। বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন পথে এক স্থানে বিশ্রামের জন্য শিবির স্থাপন করেন। এই সফরে আয়িশা রা.রাসূলুল্লাহর (ﷺ) -এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি প্রকৃতির
ডাকে সাড়া দিতে শিবির থেকে বাইরে যান। ….এমতাবস্থায় তিনি
লক্ষ্য করেন তার গলার হারটি কোথাও হারিয়ে গেছে। যেখানে হারটি পড়ার
সম্ভাবনা ছিল তিনি সেখানে গেলেন এবং তালাশ করলেন, কিন্তু পেলেন না। ….. আয়িশা রা.বলেন, আমি সেখানে বসে
থাকতে থাকতে ঘুমে আমার চোখ বন্ধ হয়ে যায়। সাফওয়ান ইবন মুওয়াত্তাল রা.ছিলেন কাফেলার পশ্চাৎগামী ব্যক্তি। তিনি দেখেন এক ব্যক্তি
শুয়ে আছে। নিকটে এসে দেখে আমাকে চিনতে পারেন। কারণ,
হিজাবের
পূর্বে তিনি আমাকে দিখেছিলেন। আমাকে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে তিনি জোরে ‘ইন্না লিল্লাহি
ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করেন। সাফওয়ানের শব্দ শুনে আমি উঠে বসি এবং খুব দ্রুত চাদর মুড়ি
দিই। আরেকটি বর্ণনায়
এসেছে, আমি আমার চাদর দ্বারা আমার
মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলি। বুখারি : ৪৪৭৩; মুসলিম :
২৭৭০
ইজমায়ে উম্মত: ইমাম নাববি রহ.
স্বীয়
গ্রন্থ ‘আল-মিনহাজ’-এ লিখেছেন, যদি ফিতনার আশংকা
থাকে তাহলে কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য কোনো প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর মুখমণ্ডল ও
হাত দেখা জায়িয নেই। আল্লামা রামালী রহ.
‘আল-মিনহাজ’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় এই মতের ওপর আলিমগণের ইজমা’র কথা বর্ণনা
করেছেন। তিনি এও লিখেছেন, সঠিক মতানুযায়ী
ফিতনার আশংকা না থাকলেও প্রাপ্ত বয়স্কা নারীকে দেখা হারাম। এর দ্বারা বুঝা যায়, মুখমণ্ডল খোলা অবস্থায় মহিলাদের বাইরে বের
হওয়া জায়িয নেই। কারণ, সে অবস্থায় পুরুষ তাদেরকে
দেখবে এবং দেখার মাধ্যমে ফিতনা ও কুপ্রবৃত্তির সৃষ্টি হবে। নিহায়াতুল মিনহাজ ইলা
শারহিল মিনহাজ-৬/১৮৮
মুখমণ্ডলের পর্দার বিষয়টি ইজমার ভিত্তিতে স্থিরকৃত হয়েছে। কোনো মাযহাবের
কোনো একজন উল্লেখযোগ্য ‘আলিম এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেননি। শায়খ ইবনে বায রাহ., শায়খ ইবনে উছাইমীন ও শায়খ ইবনে জিবরীনও একই
ফতোয়া দিয়েছেন। দেখুন : রিসলাতুন ফিল-হিজাবি ওয়াস-সুফূর : ১৯;
ফাতাওয়া
উলামাইল বালাদিল হারাম : ১১৬৯
কিয়াসের আলোকে
চেহেরা ঢাকা অপরিহার্যতা: আল্লাহ তাআলার বাণী-
(১)
আর
তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলি যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। তাদেরকে গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করার নির্দেশ
প্রদান করেছেন। নারীর ভেতরে বস্তু বাহিরের বস্তু নয়। নারী এ উম্মতের জন্য ফেতনা স্বরুপ। যেমন রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন-(ক) আমি আমার পর পুরুষদের জন্য নারীদের ফিতনার চেয়ে বড়
ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে যাইনি। বুখারি ও মুসলিম
(খ) তোমরা দুনিয়াকে
ভয় কর এবং নারীকে ভয় কর, কারণ, বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনা ছিল নারীর ফিতনা। মুসলিম
(২) হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর। এরপর যেখানে থেকে
ইচ্ছে খাও। আর এ গাছের নিকটে যেও না। তাহলে তোমরা জালেমদের অন্তরভুক্ত হবে। সূরা আরাফ-১৯, এ আয়াতে গাছের
কাছে যেতে বারণ করেছেন। অথচ প্রকৃত নিষেধাজ্ঞা হলো ফল খাওয়ার প্রতি।
(৩) আর ব্যভিচারের
কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা মন্দ কাজ এবং মন্দ পথ। সূরা ইসরা-৩২ যেনা-ব্যভিচার হলো মূল হারাম। অথচ তার কাছেও যেতে বারণ
করেছেন।
এতে (২ এবং ৩ নং আয়াত দ্বারা) প্রমাণিত হয় যে, কোন জিনিস নিজস্বভাবে নিষিদ্ধ না হলেও তাতে যদি কোন নিষিদ্ধ
বস্তুর কারণ বা মাধ্যম হওয়ার আশংকা থাকে, তবে তাও নিষিদ্ধ
হয়ে যায়। আলোচ্য মূলনীতির ভিত্তিতে গভীরভাবে চিন্তা করলে উপলব্ধি করা যায় যে, নারীর জন্যে পরপুরুষের সামনে মুখমণ্ডল খোলা
রাখাতে (নৈতিকতা বিধ্বংসী) অনেক ফাসাদ ও অনাচার নিহিত রয়েছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও
নেওয়া যায় যে, মুখমণ্ডল খোলা
রাখাতে কিছু কল্যাণ নিহিত রয়েছে তবে তা অকল্যাণ ও ফাসাদের তুলনায় নগণ্য। কাজেই নারীর
জন্যে পর পুরুষের সম্মুখে চেহারা খোলা রাখা হারাম এবং আবৃত রাখা ওয়াজিব বলে
প্রমাণিত হল।
বিজ্ঞ ফকিহ-আলেমদের মত:
(ক) মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ. লিখেছেন, ‘ইমাম চতুষ্টয়ের
মধ্য থেকে ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. তিনজনই মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার মোটেই অনুমতি দেননি- তা ফিতনার আশংকা থাকুক বা না থাকুক। ইমাম আবু হানিফা রহ. ফিতনার
আশংকা যদি না থাকে- এই শর্তে খোলা রাখার কথা বলেন। কিন্তু
স্বাভাবিকভাবে এই শর্ত পূরণ হবার নয়, তাই হানাফি ফকিহগণ গায়র মাহরাম পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল ও
হাতের কবজি খোলা রাখার অনুমতি দেন নি। মাআরিফুল কুরআন -৭/২১৪
(খ)
ইবনু তাইমিয়্যা রহ. বলেন,
বেগানা পুরুষ দেখতে পারে এমনভাবে মহিলাদের মুখমণ্ডল খোলা রাখা জায়িয
নেই। দায়িত্বশীল পুরুষদের (স্বামী, পিতা, ভাই প্রমুখের) উচিত ‘আমর বিল মা‘রুফ’ ও ‘নাহি ‘আনিল মুনকার’ তথা ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধে’র অংশ হিসেবে তাদেরকে এমন কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া। অধীনস্থ নারীদের পর্দাহীনতা থেকে বিরত না রাখাও দায়িত্বশীল পুরুষদের জবাবদিহিতামূলক অপরাধ। এজন্য তাদেরকে
শাস্তিও দেয়া যেতে পারে। মাজমু ফাতাওয়া-২৪/৩৮২
(গ) হাফিফ ইবনে কাইয়ি্যম লিখেন, স্বাধীন
নারী মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি পর্যন্ত খোলা রেখে সালাত আদায় করতে পারে (এই শর্তে যে সেখানে কোনো বেগানা পুরুষ থাকবে না)। তবে এ অবস্থায় সে
বাজারে এবং পুরুষের ভীড়ের মধ্যে যেতে পারবে না। ই‘লাম আল-মুওয়াককিঈন-২/৮০
আধুনিককালের
প্রখ্যাত আলিম ও ফকিহগণ একই মত পোষণ করেন। উপমহাদেশের
আলিমদের কথা না হয় বাদ দিন। কারণ, তাদের অধিকাংশই হানাফি এবং তাদেরকে ফিকহ
সংক্রান্ত মাসআলা ও বিষয়সমূহে কট্টরপন্থি মনে করা হয়। কিন্তু আরব বিশ্বের
সমকালীন সকল আলিম ও মুফতিদের মতও এই যে, মহিলাদের জন্য মুখমণ্ডল ঢাকা একান্ত আবশ্যক। তাদের মধ্যে শায়খ
আব্দুর রহমান ইবন সাদি, মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহিম আলে আশ-শায়খ,
মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানকিতি,
শায়খ ‘আবদুল্লাহ ইবনু
বায, শায়খ আবু বাকর জাবির আল-জাযায়িরি, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু গুনায়মিন, শায়খ আবদুল্লাহ ইবনু
জুবরিন, শায়খ সালিহ আল-ফাওযান, শায়খ বাকর ইবনু ‘আবদিল্লাহ আবু
যায়েদ, মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইসমা’ঈল আল-মাকদাম, আবু, ইসহাক আল-হুওয়ায়তি, মুসতাফা আল-‘আদাবি, মুহাম্মাদ হাসসান ও আরো অনেকের নাম বিশেষ
উল্লেখযোগ্য।
স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং ফকিহগণের
চূড়ান্ত ফাতওয়াসমূহ থাকার পরও কোনো ‘আলিম নিকাবকে অস্বীকার করতে পারেন না। যারা মুখ না ঢাকার ব্যাপারটি জোর করে সপ্রমাণ
করতে চান তারা খেয়াল করেন না যে, তাদের এহেন মত পশ্চিমা ও তাদের ভাব
শিষ্যদের অতি পুলকিত করবে। তারা এই রায়কে ব্যবহার করবে হাতিয়ার হিসেবে।
আসলাফ
তথা সাহাবিদের আমল:
(১)আয়েশা রাদিআল্লাহু
‘আনহা হজ অবস্থায় মহিলা সাহাবিদের পর্দার
যে বিবরণ দিয়েছেন তা থেকে অনুমান করা যায় পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা আন্তরিক ছিলেন। তাঁরা স্বাভাবিক অবস্থায়
তো বটেই ইহরাম অবস্থায় যখন মুখ ঢাকতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানেও পরপুরুষের সামনে
থেকে নিজেদের চেহারা আড়াল করেছেন। যেমন,আয়েশা (রা.) বলেন,‘আমরা ইহরাম অবস্থায় রসূল (ﷺ) -এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আরোহীরা আমাদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। যখন তারা আমাদের আড়াআড়ি
হন, আমাদের সঙ্গীনীরা তাদের বড় চাদর মাথা থেকে চেহারায় ঝুলিয়ে দেন। তারা আমাদের
অতিক্রম করে চলে যাবার পরই আমরা তা উন্মুক্ত করি। আবু দাউদ : ৫৩৮১; বাইহাকি : ৩৩৮৮
উম্মত জননী আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, আমরা রাসূলের
সাথে এহরাম অবস্থায় ছিলাম, উষ্ট্রারোহী পুরুষরা আমাদের
পার্শ্বদিয়ে অতিক্রম কালে আমাদের মুখামুখি হলে আমরা মাথার উপর থেকে চাদর টেনে
চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম। তারা আমাদেরকে অতিক্রম করে চলে গেলে আমরা মুখমণ্ডল খুলে
দিতাম। মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ
(২)আসমা বিনত আবি বাকর রা. বলেন, আমরা পুরুষদের থেকে
আমাদের চেহারা
আবৃত রাখতাম। মুস্তাদরাক হাকেম-১৬৬৪
(৩) ফাতিমা বিনতুল মুনযির রহ. বলেন, ‘আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের চেহারা ঢেকে
রাখতাম। ইমাম মালেক, মুয়াত্তা
: ১/৩২৮; হাকিম,
মুসতাদরাক : ১/৪৫৪
নারীর মুখমণ্ডল
খোলা রাখার যুক্তির জবাব:
পরপুরুষের
সামনে নারীর মুখমণ্ডল প্রদর্শন বৈধতার পক্ষের প্রবক্তাগণ প্রমাণের জন্য পূর্বোক্ত
সূরা নূরের ৩১ নং আয়াত তুলে ধরেন। তাদের বক্তব্য, ‘সাধারণত প্রকাশমান সৌন্দর্য’ এর ব্যাখ্যায়
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাসএ দ্বারা করতল ও চেহারা উদ্দেশ্য। একটি বিশেষ লক্ষনীয় যে, পুরুষের দেহ ঢাকা সম্পর্কে
একটি বিধান আছে তাহলো ‘সতর’-যা নাভি থেকে
হাঁটু পর্যন্ত । আর নারীদের দেহ ঢাকার সম্পর্কে দুইটি বিধান আছে-একটি হলো সতর দ্বিতীয়টি হলো হিজাব বা পর্দা । মহান আল্লাহর বাণী-(১)
َلاَيُبْدِينَزِينَتَهُنَّإِلاَّمَاظَهَرَمِنْهَا(২)وَلاَيُبْدِينَزِينَتَهُنَّإِلاَّلِبُعُولَتِهِنَّ আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস রা. দ্বিতীয়
নিষেধাজ্ঞাটি তো পর্দা বিধানের জন্য নিয়েছেন কিন্তু প্রথম নিষেধাজ্ঞা তিনি সতর
বিধানের জন্য বলেছেন; তাই তিনি إِلاَّمَا ظَهَرَمِنْهَا দ্বারা যে পরিমাণ নিষেধাজ্ঞা হতে
বাদ পড়েছে তার ব্যাখ্যায় উভয় হাতের কজ্বি এবং মুখমণ্ডলকে উল্লেখ করেছেন, কারণ এসব নারীদের সতর
অর্ন্তভূক্ত নয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর ব্যাখ্যা যে
একমাত্র সতর বিধানের দৃষ্টিতে হয়েছে তার সুস্পর্কে বলেছেন। তাফসিরে ইবনে জারির কিতাবে
বর্ণিত আছে-كالرداء و الثياب يعنى على
----لا يمكنها اخفاءه অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস রা. অবশ্য যতটুকু সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়ে থাকে এর ব্যাখ্যার
বলেছেন, তা হলো মুখমণ্ডল, চোখের সুরমা, হাতের মেহদি ও আঙ্গুল । নারীগণ এসব অঙ্গ
ও তার সজ্জা অন্দর মহলে ঐ শ্রেণীর লোকদের সামনে অনাবৃত রাখতে পারে। যারা অন্দর মহলে যাতয়াতের অধিকারী (অর্থাৎ যাদের ক্ষেত্রে পর্দার আদেশ নাই )
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. বলেন,‘ইল্লা মা যাহারা মিনহা’- যতটুকু সাধারণত প্রকাশ পায়, যেমন- আরবের
মহিলাগণ সাধারণত বড় একটি চাদর দ্বারা
পরিধেয় আবৃত করে নিত। হাঁটার সময় পরিধেয় কাপড়ের নিম্ন অংশ ঐ চাদরের
আবরণ মুক্ত থাকে। এ চাদর এবং কাপড়ের নিচের অংশ প্রকাশ হওয়ার দরুণ নারীগণ গোনাহগার হবে না, কারণ এতটুকু প্রকাশ না করে
গত্যন্তর নাই। অর্থাৎ এর হলো চাদর ও কাপড় ,হাত-চেহেরা নয়। তাফসিরে ইবনে কাসির-৩-২৮৪
‘হাসান বসরি, মুহাম্মাদ ইবনু সিরিন, ইবনুল জাওযি, ইবরাহিম নাখয়ি প্রমুখ মনীষীও অনুরূপ
ব্যাখ্যা করেছেন।’ তাফসিরুল কুরআনিল
আজিম-৩/৩১২
পবিত্র
কুরআনের শব্দ ও বাক্য, আলোচ্য বিষয়ের হাদিস ও আছার এবং
উসূলে ফিকহের নীতি ও বিধান ইত্যাদি বিবেচনায় ইবন মাসউদ রা. এর ব্যাখ্যাই অগ্রগণ্য। কারণ সূরা আল-আহযাবের ৫৯ নম্বর আয়াতে জিলবাবের একাংশ চেহারার ওপর নামিয়ে মুখমণ্ডল আবৃত রাখার আদেশ করা হয়েছে। তা সূরা নূরের আলোচ্য আয়াতে ইবন মাসঊদ রা.এর ব্যাখ্যাকেই প্রতিষ্ঠিত করে। তাছাড়া সহিহ হাদিসসমূহে নারীদের চেহারা ঢেকে রাখার যে নির্দেশ ও বিবরণ দেখা যায় তা-ও তার ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে।
চুড়ান্ত মতামত বা
সিদ্ধান্ত: যারা মুখ খোলার
পক্ষে বলেছেন প্রথমত তাদের মতটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মত নয় আর দ্বিতীয়ত তাঁরা সবাই
এর জন্য নিরাপদ ও ফিতনামুক্ত হওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। আজ যৌন হয়রানি সবখানে। সংবাদপত্র
পাঠকালে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এমন কোন দিন নাই নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে না । খোদ ফ্রি সেক্সের
দেশেও। দেখুন ২ নভেম্বর
২০১৮ প্রথম আলোর শিরোনাম, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ,“কাজ ছেড়ে রাজ পথে গুগলের কর্মীরা”। শুধু ২০১৮ সালে
বাংলাদেশে ৭৩২ জন ধর্ষিত হয়েছে
এবং
ধর্ষণজনিত ৬৬ জনকে হত্যা করা হয়। প্রথম আলোরে জরিপ,
১৯
জানুয়ারি ২০১৯। যে সমাজে ছয় মাসের শিশু নারী ধর্ষিত হচ্ছে, জন্মদাতা পিতার কাছে আজ নারী নিরাপদ নয়। তারপরও ফেতনার যুগ, সময় আসেনি;তবে কবে আসবে ? তারপর মুখ ঢাকা জরুরি
হবে ? তাড়াও মানুষের মধ্যে
আল্লাহভীতি,লজ্জা কমে গেছে। সাজসজ্জার নানা
উপায় ও উপকরণ আবিষ্কৃত হওয়ায় ফিতনার মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। পরিশেষে পবিত্র কুরআন-হাদিস, ইজমা-কিয়াস ও বিজ্ঞ আলেম-ফকিহগণের মতামতের
ভিত্তিতে এ চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত উপনিত হলাম
যে,বর্তমান যামানায়
মুখমণ্ডলের পর্দা করা ফরজ, এর বিপরীত বলার
কোন সুযোগ নাই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সব মুসলিম মা-বোনকে যথাযথভাবে পর্দা করার তাওফিক দান
করুন। আমীন।
কোন প্রথম নজর মাফ: অনেকে বলে একবার দেখলে মাফ, কিন্ত সেটা কোন দেখা তা বুঝতে হবে। সহিহ মুসলিমে
বর্ণিত আছে- ইচ্ছা ছাড়াই হঠাৎ কোন
বেগানা নারীর ওপর দৃষ্টি পতিত হলে সেদিক (হতে) থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
হজরত
আলি রা. এর হাদিস আছে- প্রথম দৃষ্টি মাফ এবং দ্বিতীয় দৃষ্টিপাত গোনাহ। এর উদ্দেশ্যও এটা
যে,প্রথম দৃষ্টিপাত হঠাৎ ও
অনিচ্ছাকৃত হওয়ার কারণে ক্ষমার্হ। নতুবা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রথম
নজরও ক্ষমার্হ নয়। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-৯৩৮ পৃষ্ঠা
আতর বা সুগদ্ধি
ব্যবহার করে নারী কি বাহিরে যেতে পারবে? আতর বা সুগদ্ধি ব্যবহার করে নারী কি বাহিরে
যেতে পারবে না, শুধু ঘরের ভেতর পারবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু (ﷺ) নিষেধ করেছেন-
“প্রতিটি চোখই
ব্যভিচারী। আর নারী যখন সুগন্ধি ব্যবহার করে জনসমাগমের পাশ দিয়ে অতিক্রম তখন সে এটা
সেটা অর্থাৎ ব্যভিচারী হয়।’ (কারণ সুগন্ধি পুরুষকে আকর্ষণ করে তার মধ্যে কামাগ্নি জ্বালিয়ে
দেয়। আর শেষাবধি এটিই তাকে ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যায়।) তিরমিজি-২৭৮৬
পাতলা-আঁটশাট
পোশাক পরা কি জায়েজ ? নারীর জন্য
স্বামী ব্যতীত অন্য কারো সামনে পাতলা-আঁটশাট পোশাক পরিধান করা জায়েজ নেই (কেননা
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন পর্দা নেই )।অর্থাৎ পোশাক পরিধান করা জায়েজ নেই যা পরলে শরীরের রং,অবয়ব বুঝা যায় তা যদি বোরকাও হয়
তবুও। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলছেন- জাহান্নামবাসী দুটি দল রয়েছে। যাদেরকে আমি এখনো দেখিনি। একদল এমন লোক
যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন
নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকে। তারা অন্যদের তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে নিজেরাও অন্যদের
প্রতি ঝুঁকবে। তাদের মস্তক উটের পিঠের কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের
ঘ্রাণও পাবে না। অথচ এর ঘ্রাণ এত এত দূর থেকেও পাওয়া যায়। মুসলিম : ২১২৮
হাদিসে উল্লেখিত ‘পোশাক পরেও উলঙ্গ’ এর ব্যাখ্যায়
বলা হয়েছে, এমন সংক্ষিপ্ত পোশাক যা নারীর আবরণীয়
অংশ ঢাকতে যথেষ্ট নয়। এমন পাতলা পোশাক যা ভেদ করে সহজেই নারীর
ত্বক দেখা যায়। এমনকি টাইট কাপড় যা ভেদ করে ত্বক দেখা যায় না বটে তবে তা নারীর আকর্ষণীয়
অবয়বকে পরিস্ফূট করে দেয়।
রাসূল (ﷺ) তাদের বিষয়ে আরও বলেন, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের
সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে। [মুসলিম] এতে এ
কথা স্পষ্ট হয়, নারীদের জন্য
পাতলা ও মসৃণ কাপড় পরিধান করা মারাত্মক কবিরা গোনাহ।
“ইসলাম ধ্বংস করার
সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো,
মুসলিম নারীদের বেপর্দায় ঘর থেকে বের করা ।
হে নারী,তুমি কাদের এজেন্ডা
বাস্তবায়ন করছো,
একবার ভেবেছো কি ?!!
সূত্র:
হে
আমার মেয়ে-ড.আলি তানতাবি রহ.-হুদহুদ প্রকাশন ।
নারীরা পুরুষের পোশাক পরিধান করা কি জায়েজ? নারীর জন্য পুরুষের
পোশাক সাদৃশ্য এবং পুরুষের জন্য নারীর পোশাকের সাদৃশ্য পরিধান করা জায়েজ নেই। যেমন-হাদিস শরিফে এসেছে-
(১) যে নারী পুরুষের
সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
(২) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা নারীদের পোশাক পরে এবং সেসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে। আবু দাউদ-৪০৯৮
(৩) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
পুরুষদের বেশধারী নারীদের এবং নারীদের বেশধারী পুরুষদের অভিসম্পাত করেছেন। মুসনাদ আহমাদ-২০০৬
হিজাব/বোরকা
পরিধান করলেই কি পর্দা হবে ? পর্দার আসল উদ্দেশ্য হলো পরপুরুষ থেকে নারীর
সৌন্দর্য-অবয়ব ঢেকে রাখা যাতে পুরুষ লোক নারীর প্রতি আকর্ষিত না হয় সুতরাং এমন
বোরকা/হিজাব পরলে পর্দা হবে না যা দ্বারা পর্দা উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। যেমন কবি বলেন-
পর্দা নামে বোরকা
পরে, পর্দা কিন্তু করে না।
সত্য কথা বলছি
আমি, রাগ তো ভাই করো না।
অন্য কবি বলেন-পর্দা করতে তোমার যদি লজ্জা লাগে
তবে পুরুষদের
খারাপ ও লোলুপ দৃষ্টি
যখন তোমার সস্তা
দেহের ওপর পড়ে,
তখন কোথায় থাকে
তোমার লজ্জা,
কোথায় থাকে
আত্মমর্যাদাবোধ ?
হাদিস নং-৩৪,
সবর (ধৈর্য)
ও শুকর (কৃতজ্ঞতা) করা |
عن صهيب قال قال رسول الله صلىالله عليه وسلم
عَجَباً لأمْرِ المُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ لَهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذلِكَ
لأَحَدٍ إلا لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ وَكَانَ خَيْراً لَهُ
وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكانَ خَيْراً لَهُ
অর্থ: হজরত ছুহাইব
রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন- ঈমানদারের ব্যাপারটাই অদ্ভুত। বস্তুত ঈমানদারের প্রতিটি কাজই
তার জন্য মঙ্গলময়। আর এটা একমাত্র মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য। তার স্বচ্ছলতা অর্জিত হলে সে
শোকর করে, এটা তার জন্য কল্যাণকর। আবার তার ওপর কোনো বিপদ আসলে সে সবর করে, এটা তার জন্য
কল্যাণকর। সহিহ মুসলিম-২৯৯৯কিতাবুয যুহদ; সুনানে দারেমি-২৮১৯; মুসনাদে আহমদ-১৮৯৩৪,২৩৯৩০
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: মানুষের অবস্থা
দুই ভাগে বিভক্ত। ১. কিছু অবস্থা মানুষের মনের মত ও পছন্দনীয়। ২. আর এক অবস্থা
মানুষের মনের বিরোধী ও অপছন্দনীয়। প্রাপ্ত বস্তু, জিনিস মনের মত হলে শুকর আদায় করতে
হবে আর মনের বিরোধী- অপছন্দ হলে সবর করতে হবে। এখন আমরা জানবো, শুকর-সবর কাকে বলে এবং তা আদায়ের পদ্ধতি কি?
শুকর-এর আভিধানিক
অর্থ: শুকর শব্দটি আরবি। বাংলা এর প্রতি শব্দ হলো-কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করা, প্রশংসা করা, ধন্যবাদ দেয়া ইত্যাদি।
শুকর এর পারিভাষিক
সংজ্ঞা: উপকারীর উপকার মনে রাখে ও স্বীকার করে এমন। সূত্র: বাংলা অভিধান।
শুকর আদায়ের পদ্ধতি: সুখের অবস্থাকে,
(১) নিজ ক্ষমতায় অর্জিত মনে না করে আল্লাহর অনুগ্রহের
দান মনে করা। (২) আল্লাহর দান পেয়ে খুশী প্রকাশ করা। (৩)
ঐ অবস্থাকে নিজের প্রাপ্য দাবীর হক মনে না করে; বরং পজিশন বা মর্যাদা অপেক্ষা ঐ দানকে অতিরিক্ত-অধিক
মনে করা। (৪) আল্লাহর নেয়ামত পেয়ে মনে ও মুখে আলহামদুলিল্লাহ বারবার
বলে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং (৫) ঐ নেয়ামতকে
আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে কাজে খরচ না করে আরও অধিক আল্লাহর তাবেদারি ও লোকের উপকারের
দিকে ঝুঁকে পড়া। সূত্র: হায়াতুল মুসলিমিন; ২০১;
হজরত থানভি রহ.
সবর কাকে বলে? এ শব্দটি ও
আরবি আভিধানিক অর্থ ধৈর্য, ধীরতা, স্থিরতা,
সহ্য করা ইত্যাদি। পরিভায়ায় বলা হয়, যে গুণ দিয়ে
বিপদের সময়ও স্থির থাকা যায়। ইমাম নববি রহ. বলেন- অর্থাৎ আত্মাকে
অপছন্দীয় কাজ হতে বিরত রাখাকে সবর বলে। কেউ কেউ বলেন- অর্থাৎ কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলের
ওপর অটল থাকাই সবর।
সবর বা ধৈর্যের প্রকারভেদ: ইমাম
গাজালি (রহ.)-এর মতে সবর বা ধৈর্য পাঁচ প্রকার। যেমন-
১. আল্লাহর
ইবাদতে সবর। আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজ পালনে ধৈর্য ধারণকরা। উদাহরণ-ঠাণ্ডা পানি
দ্বারা অজু করা, বড় দিন ও গরমের দিনে রোজা রাখা।
২. আনন্দ
ও খুশীর সময় সবর। মানুষের ব্যক্তিগত
জীবনে, এমনকি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এমন অনেক সময় উপস্থিত হয়, যখন কাজের সফলতার জন্য আনন্দ ও খুশীতে আত্মহারা হয়ে সীমালংঘন করে। সে সময় ধৈর্যের সাথে
আল্লাহর শোকর আদায় করতে হবে, যাতে সীমালংঘন না হয়। ৩. অন্যায়
থেকে আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে সবর। অর্থাৎ নাফারমানি কাজ হতে ফিরতে যে অন্তরে চোট/আঘাত লাগে তাতে
ধৈর্য ধরা। উদাহরণ-নজর হেফাজত করা, যিনা থেকে
বিরত থাকা।
৪. বিপদ-আপদে সবর। বিপদ-মসিবতে ওপর সবর ইখতেয়ার করা। উদাহণ-নিজে বা পরিবার-পরজিন, আত্মীয়-স্বজন অসুস্থ হলে,
মারা গেলে, অভাব-অনটনে থাকলে
সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলার ওপর খুশি থাকা, অভিযোগ না করা।
৫. জুলুম ও
অত্যাচারের সময় । মানুষের জীবনে
কোনো কোনো সময় অত্যাচার নির্যাতন নেমে
আসতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশোধ গ্রহণ করার
ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জালিমকে ক্ষমা করা সবরের অন্তর্ভুক্ত।
হজরত লোকমান হাকিমের
নসিহত: তিনি তার সন্তানকে উপদেশ দিয়েছেন, এটা আল্লাহ পবিত্র
কুরআনে বর্ণনা করেছেন-হে বৎস! নামাজ কায়েম
কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর
এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা (ধৈর্য)
সাহসিকতার কাজ। সূরা লোকমান-১৭
সবর বা ধৈর্যের ফযিলত: অল্লাহ তাআলা বলেন-
(১) তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা
কর। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে
আছেন। সূরা বাকার-১৫৩
(২) আর যারা ধৈর্যশীল তাদেরকে আমি অবশ্যই তাদের কর্মের
চেয়ে উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করব। সূরা নাহল-৯৬
§ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন-
(৩) তোমার মধ্যে এমন দুটি স্বভাব রয়েছে, যা আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন, একটি হল ধৈর্য-সহিষ্ণুতা ও অপরটি হচ্ছে ধির-স্থিরতা। তিরমিজি-২১৪৩
(৪) যাকে চারটি জিনিস দান করা হয়েছে, তাকে যেন দুনিয়া-আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণই দান করা হয়েছে। (১) কৃজ্ঞত অন্তর (২) জিকিরকারী জিহ্বা (৩)
বিপদাপদে ধৈর্যশীল দেহ এবং (৪) এমন স্ত্রী যে নিজের শরীর (লজ্জাস্থানের) ও স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে খেয়ানত করে না। সুনানে বাইহাকি
(৫) কিয়ামতের দিন যখন (দুনিয়ার)
বিপদগ্রস্ত লোকের অগণিত সওয়াব দেয়া হতে থাকবে, তখন যারা বিপদ মসিবতে থেকে নিরাপদ ছিল, তারা কামনা করবে, হায়! যদি দুনিয়াতে তাদের চামড়া কাঁচি দ্বারা কাটা হত। (যাতে বিনিময়ে আজ দুনিয়ার বিপদগ্রস্তদের ন্যায় সওয়াব পেত।) জামে তিরমিজি-২৫৮২,কিতাবুয যুহদ
৩৪ নং হাদিস সমাপ্ত
---------------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
আল্লাহ তাআলার জাতি নাম আল্লাহ ও নিরানব্বইটি (৯৯টি) সিফাতি নামের
যিকির করা
আল্লাহ পাক বলেন- আর আল্লাহ অনেক উত্তম নাম রয়েছে, কাজেই
তোমরা তাঁকে সে নামসমূহ ধরে ডাক।
সূরা আরাফ-১৮০
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম আছে। যে ব্যক্তি তার হিফাযত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ
করবে। আর আল্লাহ তাআলা বেজোড়। তিনি বেজোড় পছন্দ করেন। ইবনে
উমর (রা.)
–এর বর্ননায় [مَنْحَفِظَهَا ] (হিফাযত করে) এর স্থলে [
" مَنْأَحْصَاهَا " ] (যে গণনা করে)
উল্লেখ আছে। সহিহ মুসলিম-৬৭০২; অনুচ্ছেদ: আল্লাহর নাম সমূহ ও তার
হিফাযতকারীর ফযীলত। আর সেগুলো
হচ্ছে-
আল্লাহ যিনি
ব্যতীত কোন মাবুদ নাই। (১) আররহমান (২) আররহীম
(৩) আলমালিকু (৪)
আলকুদ্দুসু (৫) আসসলামু (৬) আলমুমিনু (৭) আরমুহাইমিনু (৮) আলআযীযু (৯) আলজাব্বারু (১০) আলমুতাকাব্বিরু (১১) আলখলিকু (১২) আলবারি (১৩) আল মুসাব্বিরু (১৪) আলগফ্ফারু (১৫) আলকহহারু (১৫) আলকহহারু (১৬) আলওয়াহহাবু (১৭) আররাজ্জাকু (১৮) আলফাত্তাহু (১৯) আলআলিমু (২০) আলকবেযু (২১) আলবাসিতু (২২) আলখবেযু (২৩) আররফিয়ু (২৪) আলিবাসীরু (২৫) আলমুইযযু (২৬) আলমুযিল্লু (২৭) আসসামীউ
(২৮) আল বাছিরু (২৯)
আলহাকামু (৩০) আলআদলু (৩১) আললাতিফু (৩২) আলখবিরুর (৩৩) আলহালিমু (৩৪) আলআযীমু (৩৫) আলগফুরু (৩৬) আশশাকুরু (৩৭) আলআলিয়্যু-সর্বোচ্চ (৩৮) আলকাবীরু (৩৯) আলহাফীযু (৪০) আলমুকীতু (৪১) আলহাসীবু (৪২) আলজালীলু (৪৩) আলকারীমু (৪৪) আররকীবু (৪৫) আলমুজীবু (বাকি অংশ ১৪৬ পৃষ্ঠায় দেখুন)
হাদিসনং-৩৫,
রাগ সংবরণ করা |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصِنِي
قَالَ لَا تَغْضَبْ فَرَدَّدَ مِرَارًا قَالَ لَا تَغْضَبْ
হজরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবি (ﷺ) এর কাছে আরজ করলো, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বলবে, তুমি
রাগ কর না। লোকটি কয়েকবার একই কথা জিজ্ঞেস করলো। রাসূল (ﷺ) ও প্রত্যেক বারই বলবেন, তুমি
রাগ কর না। বুখারি-৬১১৬, কিতাবুল আদাব; তিরমিজি-২০২০; আহমদ-৮৭৪৪
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: আসল বাহাদুর
কে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-মল্লযুদ্ধে পরাজিত করতে পারে সেই প্রকৃত
বীর নয়, প্রকৃত বীর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারে। বুখারি ও মুসলিম
রাগ সংবরণের ফযিলত: পবিত্র কুরআনে
ইরশাদ হচ্ছে-(১) যারা রাগ সংবরণ ও দমন
করে, আমার বান্দাদেরকে দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দেয় এবং শুধু ক্ষমাই করে না; বরং তাদের
প্রতি এহসান ও দান-দাক্ষিণ্যও করে। এ সকল গুণের অধিকারী বান্দাগণ আল্লাহ তাআলার
মাহবুব ও প্রিয়পাত্র। সূরা আলে ইমরান-১৩৪
(২) প্রকৃত
মুমিনদের বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে যেয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন: “তারা কবিরা গোনাহসমূহ
ও অশ্লীল কর্ম বর্জন করে এবং যখন তারা রাগান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে। সূরা শূরা-৩৭
রাসূলে আরাবি (ﷺ) বলেছেন-(১) বিরক্তি ও রাগে উত্তেজিত অবস্থায় যদি কেউ রাগ প্রকাশ ও কার্যকর করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও
তা সংবরণ করে তবে আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার হৃদয়কে পরিতৃপ্তি ও সন্তুষ্টি দ্বারা
পূর্ণ করবেন। সূত্র: তাফসিরে রুহুল মাআনি , মাজমাউয যাওয়াইদ
(২) যে ব্যক্তি
তার জিহ্বার হেফাযত করে আল্লাহ তাআলাতার দোষ ঢেকে রাখবেন। আর যে ব্যক্তি নিজের রাগ
দমন করবে আল্লাহ তাআলার নিকট ত্রুটির ক্ষমা চায়বে,আল্লাহ তাআলাতার ওযর কবুল করবেন। সুনানে বাইহাকি
ফি শোয়াবুল ঈমান
রাগের ক্ষতি: বন্ধুগণ! রাগের ক্ষতি কত যে ভয়াবহ। আমরা সমাজের দিকে একটু
লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবো। রাগের কারণে কত সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে, খুনাখুনি,
ঝগড়া-ঝাটি, মামলা-মোকদ্দামা ইত্যদি হচ্ছে। রাগের মাধ্যমে শয়তান তার
কারসাজি হাসিল করে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন আমার বান্দাদেরকে বল, তারা যেন অধিকতর উত্তম কথা বলে; কারণ শয়তান তাদের মধ্যে মনোমালিন্য-অশান্তি-শত্রুতা সৃষ্টি করে; নিশ্চয় শয়তান মানুষের সুস্পষ্ট শত্রু। সূরা বাণী ইসরাঈল-৫৩
নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন- রাগ/গোস্বা মানুষের ঈমানকে নষ্ট করে দেয়
যেমনিভাবে তিক্ত ফল মধুকে নষ্ট করে দেয়। সুনানে বাইহাকি
রাগ/গোস্বার চিকিৎসা: কুরআন-হাদিস
ও অভিজ্ঞতার আলোকে মাশায়েখগণ এ রোগের চিকিৎসা লিখেন-
ü
সর্ব প্রথম যার ওপর রাগ এসেছে, তাকে সামনে
থেকে হটিয়ে দেয়া।
ü
আঊযু বিল্লাহিমিনাশ শাইত্বানির
রজীম বার বার মুখে বলা।
ü
পানি পান করবে।
ü
অজু করবে।
ü
দাঁড়িয়ে থাকলে বসবে, আর বসে থাকলে
শুয়ে পড়বে।
ü
চুপ থাকবে।
ü
শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন হলে, রাগ প্রশমিত
হলে দিবে।
ü
অতঃপর এ চিন্তা করবে যে, সে আমার নিকট
যতটা অপরাধী, আমি আল্লাহ তাআলার নিকট তার চেয়ে অনেক বেশি অপরাধী। যেভাবে আমি এ কামনা
করি যে, আল্লাহ তাআলা আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেন, আমারও উচিত
আমি তার অপরাধ ক্ষমা করে দিই।
একটি পরীক্ষিত আমল: কোন পরিবারের
সবার বা স্বামী/স্ত্রীর রাগ বেশি
হয় তাহলে মহিলাগণ যখন
খাবার রান্না করে, তা পরিবেশন করার আগে উক্ত খাবারে (ভাত,
রুটি, তরকারি, পানি,
ফল যাই হোক না কেন) তিনবার ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ বলে ফুঁ (ফুঁক) দিবে এবং এ খাবার
সবাই খাবে ইনশাল্লাহ এভাবে (৪০ দিন বা তার বেশি) আমল করলে সবার রাগ কমে যাবে।
সূত্র: আত্মার ব্যাধি
ও প্রতিকার, ক্রোধ দমন নূর অর্জন-হাকীম
আখতার রহ.
৩৫
নং হাদিস সমাপ্ত
-----------------------------------------------------------------------------
(৪৬)
আলওয়াসিউ (৪৭) আলহাকীমু (৪৮) আলওয়াদূদু (৪৯)আলমাজীদু (৫০) আলবায়িছু (৫১) আশশাহীদু (৫২) আল হাক্কু (৫৩) আলওয়াকীলু (৫৪) আলকবিয়্যু (৫৫) আলমাতীনু ৫৬) আলওয়ালিয়্যূ (৫৭) আলহামীদু (৫৮) আলমুহছি (৫৯) আলমুদিউ-আদি (৬০) আল মুহ্য়ী (৬১) আলমুমীতু
(৬২) আলহাইয়্যু (৬৩) আলকইয়্যূম (৬৪) আলওয়াজিদু (৬৫) আলমাজিদু (৬৬) আলওয়াহিদু (৬৭) আলআহাদু (৬৮) আসসামাদু (৬৯) আলকদিরু (৭০) আলমুকতাদিরু ৭১)আলমুকাদ্দিমু
(বাকি অংশ ১৫২ পৃষ্ঠায় দেখুন)
হাদিসনং-৩৬,
সাহাবা কেরামের মর্যাদা |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
لا تَسبُّوا أصحابي فوالَّذي نَفسي بيدِهِ
لَو أنَّ أحدَكُم أنفَقَ مثلَ أُحُدٍ ذَهَبًا ما أدرَكَ مُدَّ أحدِهِم ولا نصيفَهُ
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা আমার সাহাবিগণকে গালমন্দ করো না। তোমরা আমার সাহাবিগণকে
গালমন্দ করবে না। সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন, যদি তোমাদের মধ্যে
কেউ উহুদ পাহাড় বরাবর স্বর্ণ ব্যয় করে তাহলেও তাঁদের কারোর এক মুদ অথবা অর্ধ মুদের
সমান হবে না। সহিহ মুসলিম-২৫৪০,কিতাবু ফাযায়েলুছ ছাহাবা; সুনানে মাজাহ১৬১; বুখারি-৩৬৭৩
নোট : বুখারির
বর্ণনায় শব্দ কিছু কম রয়েছে।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: ইসলামে হজরত সাহাবা কেরামের গুরুত্ব সমধিক। দ্বীন, ঈমান ও ইসলামের অতন্ত্র প্রহরী। নবি কারিম (ﷺ) এর সকল সাহাবিগণই সম্মান ও মর্যাদা পাওয়ার হকদার। প্রকাশ থাকে যে,
পরবর্তীকালে খারিজী, রাফিজী, মুতাজিলা, জায়েদিয়া, আশারিয়া, ইসমাঈলিয়া তথা শিয়া
মাযহাবের লোকজন নিজেদের ভ্রান্ত-ধারণার বশবর্তী হয়ে নবি কারিম (ﷺ) এর সম্মানিত সাহাবিদের বিরুদ্ধে অনেক অপবাদ দেয়ার মত ধৃষ্টতা ও
অপরাধপূর্ণ সমালোচনায় হয় মুসলিম
জতিকে পারস্পরিক বিভেদ ও বিচ্ছেদের প্ররোচনা
দিয়েছে। ইমাম ও হাক্কানি আলমগণ শত্রুদের ঐ
কৌশল ব্যর্থ করার জন্য পূর্ব যুগ হতেই সাহাবিদের
সম্পর্কে ইসলামের (Dimad) দাবী নির্ধারিত
করে দিয়ে
গিয়ছেন; যাতে শত্রুরা তাদের অপচেষ্টায় কৃতকার্য হওয়ার ছিদ্র পথ পেতে
না পারে।
সাহাবি কেরাম রা. কি সত্যের মাপকাঠি ? হজরতে
সাহাবা কেরাম রা. ছিলেন। ইসলামের ধারক-বাহক ,যাদের মাধ্যমে পূর্ণ দ্বীন হেফাযত হয়েছেন। আফসোস কিছু ভাই এ সম্মানিত
জামাআতকে সত্যের মাপকাঠি/মানদণ্ড মানেন না। নিম্নে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের
আলোকে প্রমাণ করবো যে, তারা সকলেই সত্যের মাপকাঠি।
কুরআনুল কারিম
দ্বারা প্রমাণ: হজরতে সাহাবা কেরাম যে, সত্যের
মানদণ্ড আল্লাহ তাআলা বলেন-
(১) তোমরা ঈমান আনয়ন কর, যেমন ঈমান এনেছে ঐ লোক সকল (সাহাবা কেরাম)। সূরা বাকারা-১৩
ব্যাখ্যা: সাহাবিদের
ঈমানের মত ঈমান আনয়ন করার নির্দেশ থেকে প্রমাণিত হয় সাহাবা কেরাম ঈমানের ক্ষেত্রে মাপকাঠি। ঈমান সবার আগে, এতেই যদি মাপকাঠি
হয় বাকি অন্যক্ষেত্রে মাপকাঠি তা সহজে অনুমেয়।
(২) মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা (ঈমান গ্রহণের দিক থেকে)
প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। সূরা তাওবা-১০০
(৩) আল্লাহ তাআলা সেই মুমিনের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন; যখন
তারা (হুদায়বিয়ার সন্ধির সময়) বৃক্ষের নীচে
আপনার কাছে শপথ করল। সূরা ফাতাহ-১৮
ব্যাখ্যা: যাদের ওপর মহান
আল্লাহ খুশি/সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন তারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।
(৪) আর যারা হিজরত করেছে এবং নিজ ব্সস্থান থেকে বিতাড়িত হয়েছে, আমার রাস্তায় নির্যাতিত হয়েছে, লড়াই করেছে ও শহীদ
হয়েছে। আমি তাদের মন্দকর্ম নিশ্চিহ্ন করে দিব এবং এমন এক জান্নাতে তাদের প্রবেশ
করাবো; যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত। সূরা ইমরান-১৯৪
(৫) আর তাদের
(মুহাজির ও আনসারগণ) প্রত্যেকের জন্যই আল্লাহ
তাআলা কল্যাণের (ক্ষমা ও জান্নাতের) ওয়াদা
দিয়েছেন। সূরা হাদীদ-১০
(৬) নিশ্চয় যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর
কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের উপর রয়েছে।---এবং যে আল্লাহর
সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহা পুরস্কার
দান করবেন। সূরা ফাতাহ-১০
(৭) আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সাথে তার কৃত প্রতিশ্রুতিকে সত্যে পরিণত করে
দেখিয়েছেন,যখন তোমরা আ্লাহর অনুমতিক্রমে তাদেরকে প্রচুরহারে
হত্যা করছিল । এমনকি তোমরা যখন নিজেরাই দুর্বল হয়ে পড়লে এবং নির্দেশ সম্বন্ধে পরস্পর মতভেদ করতে
লাগলে। ...আর অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বড়
অনুগ্রহশীল। সূরা আলে ইমরান-১৫২
(৮) সেদিন
আল্লাহ নবি এবং তার বিশ্বাসী সহচরদেরকে (সাহাবিদেরকে) অপদস্থ করবেন না। (সূরা
আত-তাহরীম) অপদস্থ করবেন না মানে জাহান্নামে দিবেন না। এর ব্যাখ্যা অন্য
আয়াতে আল্লাহ বলেন-হে আমাদর প্রতিপালক! নিশ্চয় আপনি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করবেন তাকে
তো সবসময় অপদস্থ/অপমানিত করলেন আর জালেমদের জন্যে তো সাহয্যকারী নেই। সূরা আলে
ইমরান-১৯২
ব্যাখ্যা: সকল সাহাবি
জান্নাতি, জাহান্নামের আগুন তাদেরকে কখনও স্পর্শ করবে না। তারা ক্ষমা প্রাপ্ত দল। ৭নং আয়াতে কতিপয় সাহাবের মতানৈক্যর
কথা উল্লেখ করার পরপরই তাদের প্রতি ক্ষমার ঘোষণা প্রচার করা হয়েছে। অতত্রব, ক্ষমা প্রাপ্ত,
জান্নাতি জামাআত অবশ্যই সত্যের মানদণ্ড।
(৯) মুমিনগণের মধ্যে এমন কতক ব্যক্তি রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ মৃত্যু বরণ
করেছে আবার কেউ প্রতীক্ষায় রযেছে। সূরা আহযাব-২৩
ব্যাখ্যা: যাদের ওয়াদা
পূর্ণ করার ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন। সুতরাং ওয়াদা পূর্ণকারী দল
অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।
(১০)
আল্লাহ তাআলা (দ্বীনের জন্য) তোমাদেরকে বাছাই করেছেন এবং তোমাদের জন্য দ্বীনের মধ্যে কোন প্রকারের সংকীর্ণতা
রাখেন নি। সূরা হজ-৭৮
(১১)
তারপর আমি কিতাবের অধিকারী করলাম আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে আমি মনোনীত
করলাম। সূরা ফাতির-৩২
এক হাদিসে আছে, নবি কারিম
(ﷺ) বলেছেন- আল্লাহ তাআলা নবি-রাসূলগণের
পর সমস্ত বিশ্ব ভূ-মণ্ডলে আমার সাহাবিগণকে মনোনীত করেছেন। মুসনাদে বাযযার, সূত্র:
মাকামে সাহাবা-৬০ মুফতি শফি রহ. ; আল জামি লিআহকামিল কুরআন, ইমাম কুরতবি রহ.-৮/১৯৬
ব্যাখ্যা: যাদেরকে আল্লাহ
তাআলা নিজে নির্বাচন, মনোনীত করেছেন, তারা
সত্যের মাপকাঠি হবে না কেন ?
(১২)
অতঃপর তারা আল্লাহর মহা নেয়ামত ও অনুগ্রহ নিয়ে ফিরে এল, এমতাবস্থায় যে, কোন অনিষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং
তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুগত রয়েছে। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। সূরা আলে ইমরান-১৭৪
এ আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের
প্রশংসা করা হয়েছে যে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসনন্ধান করতেন। খারাপি তাদেরকে ষ্পর্শ
করেনি। সুতরাং তারা সত্যর মাপকাঠি।
(১৩)
কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং তোমাদের
হৃদয়গ্রাহী করেছেন। আর পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের নিকট অপ্রিয়। তারাই সৎপথ
অবলস্বনকারী। সূরা হুজুরাত-০৭
(১৪)
আল্লাহ তাদের অন্তরকে শিষ্টাচারের জন্যে শোধিত করেছেন,পরীক্ষা করেছেন। সূরা হুজুরাত-০৩
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তাআলা
নিজে তাঁদের ঈমানের দৃঢ়তা ও পাপাচার থেকে মুক্ত থাকার আন্তরিক আগ্রহের কথা ঘোষণা
করেছেন এবং তাদের অন্তর নিজে যাচাই,পরীক্ষা করেছেন। সুতরাং এ জামাত
অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।
(১৫)
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং
মুমিনর পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে তবে
যে দিকে সে ফিরে যায় সে দিকই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব,আর তা কত মন্দ আবাস। সূরা নিসা-১১৫
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে
মুমিন বলতে সাহাবায়ে কেরামকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তাঁরাই মুমিনের
সর্বপ্রথম এব সর্বশ্রেষ্ঠ জামাআত। তাদের অনুসরণ না করলে বরং জাহান্নামের শাস্তির ঘোষণা এসেছে, অতত্রব
তাঁরা তো সত্যের মাপকাঠি তো বটেই, তাদের অনুসরণ করা উম্মতের
জন্য ওয়াজিব সাব্যস্ত হলো।
হাদিসে নববি দ্বারা
প্রমাণ: এ সম্পর্কে স্বয়ং নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন-
(১) বনী ইসরাঈল
বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত হবে তিয়াত্তর দলে। আর তাঁদের একটি দল ব্যতীত
সবাই জাহান্নামে যাবে। সাহাবা কেরাম জিজ্ঞেস করলেন; হে আল্লাহর রাসূল! সেদল কোনটি? উত্তরে তিনি বললেন, আমি ও আমার সাহাবাগণ যে দলে আছি, তার উপর যারা কায়েম
থাকবে তারা। জামেউত তিরমিজি-২৮৫৩, কিতাবুল ঈমান
(২) আমার পরে যারা জীবিত থাকবে তারা নানান রকম মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য
হবে আমার সুন্নাত ও আমার হেদায়েত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত আঁকড়ে ধরবে এবং
দাঁত দ্বারা কামড়ে ধরবে। আবু দাউদ-৪৬০৯, কিতাবুস সুন্নাহ
(৩) আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি (সাহাবাগণ),
অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী (তাবেঈগণ),
অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী (তাবে তাবেঈনগণ)। বুখারি-২৬৫২,২৬৫১
(৪) আবদুল্লাহ
ইবন মাসঊদ রা. বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ
যদি অনুসরণ করতে চায় তবে সে জন্য মুহাম্মদ (ﷺ) -এর সাহাবিগণেরই অনুসরণ করে। কারণ, তাঁরাই
ছিলেন এ উম্মতের মধ্যে আত্মার দিক থেকে সবচে বেশি নেককার, এলেমের
দিক থেকে গভীরতর, লৌকিকতার দিক থেকে সল্পতম, আদর্শের দিক থেকে সঠিকতম, অবস্থার দিক থেকে শুদ্ধতম। তাঁরা এমন
সম্প্রদায় আল্লাহ যাদেরকে আপন নবি (ﷺ) -এর সংস্পর্শ ধন্য হবার জন্য এবং তার দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে
বাছাই করেছেন। অতএব তোমরা তাঁদের মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করো। কারণ, তাঁরা
ছিলেন সীরাতে মুস্তাকীমের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আবু নাঈম, হিলইয়াতুল
আওলিয়া : ৩০৫/১
মনীষীদের দৃষ্টিতে
সাহাবা কেরাম: কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সাহাবা কেরামের নির্ধারিত
এ মর্যাদা সম্পর্কে সর্ব যুগে উলামায়ে কেরাম একমত পোষণ করে আসছেন। যেমন,
(১) শ্রেষ্ঠতম তাবিঈ হজরত ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহ., সাহাবা
কেরামের মর্যাদা সম্বন্ধে বলেন, সাহাবা কেরামের অনুসৃত পথ গ্রহণ
করাই সকল মুসলিমের কর্তব্য। সুনানে আবু দাউদ, সূত্র: মাকামে সাহাবা,
মুফতি মুহাম্মাদ শফি রহ.
(২) আল্লামা ইবন সলাহ রহ. উলূমুল হাদিস গ্রন্থে লিখেছেন-
সাহাবায়ে কেরামের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য এই যে, তাদের কারোই আদালত ও ন্যায় পরায়ণতা সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধানের কোন প্রয়োজন
নেই। কেননা তা কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের উজমার দ্বারা সুপ্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা তাদের
সম্বন্ধে ইরশাদ করেন- তোমরা মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রেরিত শ্রেষ্ঠ উম্মাত।
(৩) ইমাম আবু যুরআ (রহ.) বলেন,
যখন তুমি কোনো ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সাহাবিগণের কোনো একজনের
মর্যাদাহানী করতে দেখবে তখন বুঝে নেবে যে সে একজন ধর্মদ্রোহী নাস্তিক। আর তা এ কারণে যে, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) আমাদের কাছে সত্য, কুরআন
সত্য। আর এ কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের কাছে পৌঁছিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর ছাহাবায়ে কিরাম। নিশ্চয় তারা চায়
আমাদের প্রমাণগুলোয় আঘাত করতে। যাতে তারা কিতাব ও সন্নাহকে বাতিল করতে পারে। এরা হলো
ধর্মদ্রোহী নাস্তিক। এদেরকে আঘাত করাই শ্রেয়। খতীব বাগদাদি, আল-কিফায়াহ
ফী ইলমির রিওয়ায়াহ-১১৯/১
সাহাবা কেরামের সমালোচনা
ও গালি দেওয়া হওয়া হারাম: এ মোবারক জামাতের যে কাউকে গালি বা সমালোচনা
করা হারাম। এ সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেন-(১) আমার সাহাবায়ে কেরামের
ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তাঁদেরকে গালিগালাজ ও ঠাট্টা-বিদ্রুপের
লক্ষ্যস্থলে পরিণত কর না। জেনে রাখ! যে ব্যক্তি তাঁদের ভালবাসল, সে যেন আমাকেই ভালবাসল। আর যে ব্যক্তি তাঁদের সাথে শত্রুতা পোষণ করল,সে যেন
আমার সাথেই শত্রুতা করল।যে ব্যক্তি তাঁদেরকে কষ্ট দিল, পক্ষান্তরে
সে আমাকেই কষ্ট দিল। আর আমাকে যে কষ্ট দিল, সে তো আল্লাহ তাআলাকে কষ্ট দিল। আর খুব সম্ভবনা
আছে যে, আল্লাহ তাআলা এমন লোকদেরকে শাস্তিতে লিপ্ত করবেন। জামেউত তিরমিজি-৪২৪০,
কিতাবুল মানাকিব
(২) যে ব্যক্তি আমার সাহাবিকে গালি দেয় তার উপর আল্লাহ তাআলা, ফেরেশতা এবং সমস্ত মানুষের অভিসাপ। তাবারানি, সহিহ আল
জামে
বিজ্ঞ আলেমদের
দৃষ্টিতে গালি-সমালোচনা করা: (১) হজরত আবু যুরআ রা.
বলেন, যখন তোমরা এমন লোককে দেখ, যারা সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করছে, তাহলে বুঝে নিবে যে সে হলো যিন্দীক। আল-আছাবা, ১ম খণ্ড;
পৃ.১১
(২) ইমাম মালেক রহ. বলেন, সাহাবাদেরকে
যারা হেয় প্রতিপন্ন করতে চায়, তাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) কে হেয় প্রতিপন্ন
করা।
সাহাবায়ে
কেরামারের মধ্যে যে যুদ্ধ বিগ্রহ সংঘটিত হয়েছে এ সম্বন্ধে মুসলিম উম্মাহর সর্বজনীন
সিন্ধান্ত এই যে, তাঁদের এ সব কর্মকাণ্ড ইজতিহাদের ভিত্তিতে সংঘটিত হয়েছে। এ সম্পর্কে এক প্রশ্নের
জওয়াবে হজরত হাসান বসরি রহ. বলেন, এ সব যুদ্ধে সাহাবিগণ
উপস্থিত ছিলেন এবং আমরা ছিলাম অনুপস্থিত। তাঁরা সম্পূর্ণ অবস্থা জানতেন
কিন্তু আমরা জানি না। সুতরাং যে বিষয়ে সাহাবিগণ একমত আমরা তা অনুসরণ করবো। আর যে বিষয়ে তারা দ্বিধা
বিভক্ত আমরা তাতে নীরবতা অবলম্বন করবো।
(৩) আল্লামা হাফেয যাহাবি রহ. বলেন-যে ব্যক্তি সাহাবা কেরামকে কোন প্রকার অপবাদ দিল বা তাদেরকে মন্দ বললো,
সে ইসলাম ধর্ম থেকে বের হয়ে গেল এবং মুসলমানের দল থেকে সে ছিটকে পড়লো। তিনি আরও বলেন- যে ব্যক্তি
সাহাবা কেরামের ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করে, তাদের বদনাম ছড়াতে
থাকে এবং তাঁদের ব্যাপারে কোন মিথ্যা অপবাদ দেয়, সে ব্যক্তি অবশ্যই
মুনাফেক। আল-কাবায়ের-২৩৯
বিস্তারিত দেখুন-বুখারি শরিফ;
৭মখণ্ড, ২৩৫পৃ.-আল্লামা আজিজুল
হক রহ. হামিদিয়া লাইব্রেরি, ইতিহাসের কাঠগড়ায়
হজরত মোয়াবিয়া রা.-আল্লামা বিচারপতি
তকি উসমানি দা.বা.
-------------------------------------------------------------------------------
(৭২)আলমুআখখিরু (৭৩) আলআউয়ালু (৭৪) আল আখিরু (৭৫) আযযাহিরু (৭৬) আলবাতিনু (৭৭) আলওয়ালী (৭৮) আল মুতাআরী (৭৯) আর বারু (৮০) আততাওয়াবু (৮১) আলমুনতাকিমু (৮২) আলআফুব্বু (৮৩) আররউফু- (৮৪) মালিকুল মুলক (৮৫) যুলজালালি ওয়া ইকরাম (৮৬) আলমুকসিতু (৮৭) আলজামিউ (৮৮)আর গনিয়্যু (৮৯) আরমুগনিয়ু (৯০) আলমানিউ (৯১) আদদ্বররু (৯২) আননাফিউ (৯৩) আননূরু (৯৪) আলহাদিয়ু (৯৫)
আলবাদিউ (৯৬) আলবাকী (৯৭) আরওয়ারিছু (৯৮) আররশীদু (৯৯) আসসবুরু।
হাদিসনং-৩৭, পুরুষের টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করার বিধান |
أَبِي،هُرَيْرَةَ قَالَ
قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صلى
الله عليه
وسلم: مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِفَفِي النَّارِ"-رواه البخارى
অর্থ: আবু
হুরায়রা
(রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে
ব্যক্তি টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে সে জাহান্নামি। বুখারি-৫৭৮৭, কিতাবুল লিবাস; মুসলিম-২০৮৭; আদু দাউদ-৬৩৮; নাসায়ি-৫৩৩০; মুয়াত্তা মালেক-২৬৫৫
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: বুখারি শরিফের অপর এক হাদিস শরিফে এসেছে- আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার (টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী) রহমতের নজরে তাকাবেন না । কিতাবুল লিবাস-৫৭৯১ এতে প্রমাণিত হয় যে,
টাখনু ঢাকা কবিরা গোনাহ কারণ ছগিরা গোনাহের জন্য দোযখের শাস্তি হয়
না। হজরত মাওলানা খলীল
আহমদ সাহারানপুরি রহ. বলেন-হাদিসে উযার শব্দের দ্বারা ঐ সকল
পোশাক উদ্দেশ্য যা ওপর থেকে নিচের দিকে
আসে। যেমন-লুঙ্গি, পায়জামা, কোর্তা,
পাগড়ি ইত্যাদি। পক্ষান্তরে যে পোশাক নিচ থেকে ওপরের দিকে আসে এমন পোশাক
দ্বারা টাখনু ঢাকলে কোন গোনাহ হবে না।যেমন –মোজা। সূত্র: বযলুল মাজহুদ শরহে আবু দাউদ
স্মরণীয় যে, দুই অবস্থায় টাখনু না ঢাকা
ওয়াজিব(১) দাঁড়ানো অবস্থায় (২) চলমান অবস্থায়। হ্যাঁ, বসা বা
শোয়াবস্থায় ঢাকা থাকলে কোন গোনাহ নাই। সূত্র: দরসে তিরমিজি-মুফতি তকি উসমানি দা.বা.,আল্লাহর প্রেমের
সন্ধানে –হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী
দাড়ি রাখার হুকুম
কি? এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখা ওয়াজিব। বেতর, দুই ঈদের নামাজ যেমন ওয়াজিব। এ বিষয়ে আলেমদের
কোন দ্বিমত নাই। অবশ্য দু’একজন বিছিন্ন মত দিয়েছেন তা উম্মতের কাছে পরিত্যাজ্য। কেননা রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)
আমরের সীগা ব্যবহার করেছেন অর্থাৎ নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন
করা অবশ্য কর্তব্য/ওয়াজিব। দাড়ি রাখা সকল
মুসলমান পুরুষের জন্য ওয়াজিব। দাড়ি না রেখে
মুণ্ডন করা আল্লাহর
সৃষ্টিকে বিকৃত করার শামীল। কেননা আল্লাহ তাআলা পুরুষদের চেহারাকে দাড়ি দ্বারা
সৌন্দর্য মণ্ডিত করেছে। সূত্র: তাফসিরে বয়ানুল
কুরআন, তাফসিরে হক্কাকি
কুরআনুল কারিম দ্বারা
দলিল: আল্লাহ তাআলা বলেছেন: তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের
উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি যার উপর মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন
পরিবর্তন নেই। এটাই সরল-সঠিক ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। সূরা রূম-৩০ কাজেই যারা
দাড়ি কামায় তারা আল্লাহর সৃষ্টি ও প্রকৃতিতে বিকৃত করে যা হারাম।
(২) তাঁরা সে সব মানব (নবি-রাসূল)
যাদেরকে আল্লাহ তাআলা হেদায়েত দান করেছেন, কাজেই
তাদের পথই তোমরা অনুসরণ কর। সূরা আনয়াম-৯০ এক লাখ চব্বিশ হাজার (এ রকম-বেশি আল্লাহ ভাল জানে) নবি-রাসূলের সম্মিলিত বা ঐক্যমতে সুন্নাত। তাঁদের মুবারক-পবিত্র জামাতের
অনুসরণ করতে উক্ত আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হাদিসে নববি দ্বারা
দলিল:
(১)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা গোঁফ বেশী ছোট রাখবে এবং দাড়ি বড় রাখবে। বুখারি-৫৪৬৫
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
(২) তোমরা মুশরিকের বিপরীত কর, দাড়ি লম্বা কর এবং গোঁফকে কর ছোট। বুখারি; মুসলিম-২৫৯ ই.ফা.; মুসনাদে আহমদের-২১২৫২ বর্ণনায়, ইয়াহুদি-নাসারাদের বিরোধিতা করে দাড়ি লম্বা আর গোঁফ ছোট করার নির্দেশ
দিয়েছেন।
(৩) দশটি বিষয় হল ফিতরাতের
(স্বভাব ধর্মের) অন্তর্ভুক্ত। (১) গোঁফ খাটো করা (২)
দাড়ি
লম্বা করা---------। ইবনে মাজাহ-২৯৩; মুসলিম
এ প্রসঙ্গে বুখারি শরিফের প্রসিদ্ধ
ব্যাখ্যাকার হাফেজ ইবনে হযুর রহ.
বলেছেন, তৎকালে মোশরেক-মজুসীরা দাড়ি ছেঁটে-কেটে ছোট করে রাখত। তাদের কেহ কেহ
সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলত। সুতরাং দাড়ি সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলা যে রূপ ইসলামের আদর্শের
পরিপন্থী, তদ্রূপ কেঁটে-ছেটে বিশেষ পরিমাণ হতে ছোট করে ফেলা ও ইসলামের
আদর্শের পরিপন্থী। সূত্র: বুখারি শরিফ -৬ষ্ঠ খণ্ড; ২৫০ পৃ.আল্লামা আজিজুল
হক রহ.
হানাফি মাযহাবের
প্রসিদ্ধ গ্রন্থ দুররুল মুখতারে (২য় খণ্ড/৪৫৯ পৃ.) বলা হয়েছে, পুরুষের জন্য দাড়ি কর্তন করা নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, দাড়ি এক মুষ্টির বেশী হলে তা কেটে ফেলা
ওয়াজিব। কিন্তু এর চাইতে বেশী কর্তন করা হারাম। যেমনটি পশ্চিমা দেশের লোকেরা এবং খোঁজা
পুরুষেরা করে তা কেউ বৈধ বলেননি। আর দাড়ি সম্পূর্ণটাই কেটে চেঁছে ফেলা হিন্দুস্থানের ইয়াহুদি
ও কাফের-মুশরেকদের কাজ।” মালেকী মাযহাব মতে
দাড়ি কাটা হারাম। (আল আদাভি আলা শারহে
কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানি ৮ম খণ্ড ৮৯ পৃ.)
ইমাম শাফেঈ (রহ.) তার
প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘আল উম্ম’ উল্লেখ করেছেন যে, দাড়ি কর্তন করা হারাম। শাফেঈ মাযহাবের
আলেম আযরাঈ বলেন, সঠিক কথা হচ্ছে কোন কারণ ছাড়া সম্পূর্ণ দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম। হাওয়াশি শারওয়ানি ৯ম খণ্ড ৩৭৬ পৃ.
হাম্বলী মাযহাবের
বিদ্বানগণও দাড়ি মুণ্ডনকে হারাম। বলেছেন। (ইনসাফ,
শরহে
মুন্তাহা)
অতএব দাড়ি মুণ্ডন
করা বড় পাপ। এ থেকে তওবা করা আবশ্যক। অবশ্য দাড়ি মুণ্ডন করা ও কেটে ছোট করার পাপ এক সমান নয়। যদিও উভয়টিই
পাপের কাজ। অনেক মানুষ দাড়ি মুণ্ডন করাটাকে খুবই ছোট ও তুচ্ছ ব্যাপার মনে করে। কিন্তু ইহা মুণ্ডন
করা কোন সময় সবচেয়ে বড় গুনাহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। কেননা এটা
প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম। আর প্রকাশ্যে এভাবে অন্যায়ে লিপ্ত হয়ে তওবা
না করলে হতে পারে দাড়ী মুণ্ডনকারী আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে না। কেননা নবি (ﷺ) বলেন,
كُلُّأُمَّتِيمُعَافًىإِلاالْمُجَاهِرِينَ আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে
পাপের কাজে লিপ্ত হয় তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না। বুখারি
দাড়ি কি পরিমাণ
লম্বা রাখা উচিত বা ওয়াজিব: এক মুষ্ঠি দাড়ি
রাখা ওয়াজিব। হজরত ইবনে ওমর রা.
যখন হজ
করতেন, তখন নিজ দাড়িকে হাতের
মুঠার মধ্যে ধরে একমুষ্ঠি চেয়ে বাড়তি অংশ
কেটে ফেলতেন। বুখারি ২য় খণ্ড,৮৭৫ পৃষ্ঠা। এরূপ আমল হজরত ওমর রা. এবং আবু হুরাইরা রা. হতেও বর্ণিত আছে। ফাতহুল বারি -১০/২৮৮
আল্লামা শামিরহ. লিখেছেন- অর্থাৎ যেভাবে কিছু মাগরেবের (স্পেন,মরক্কো) বাসিন্দা ও হিজড়া
লোকেরা এক মুষ্ঠির চেয়ে খাট করে দাড়ি কেটে ফেলে, কোন ইমামের
(আলেম) মতেই তা জায়েজ নাই। সূত্র: ফতোয়ায়ে শামি ২য় খণ্ড; ১২২ পৃষ্ঠা।
অনেকে দাড়ি বেশি
লম্বা করে, এটা ঠিক নয়। কারণ ইহুদিরা এখন লম্বা
দাড়ি রাখে। আর হজরত ইবনে ওমর রা. এর চেয়ে আমরা বেশি সুন্নাতে অনুসারী নয়। তিনিই যখন এক
মুষ্ঠির বাড়তি অংশ কেটে ফেলেছেন তথন আমাদের কি করণীয় ?
বিস্তারিত দেখুন- নায়লুল হাজাহ শরহে সুনানে ইবনেব মাজাহ-৩১৪ পৃষ্ঠা,
মাআরেফে
আবরার-১৪০ পৃষ্ঠা,‘দাড়ি কা ওজুব’ দাড়ি রাখার আবশ্যকীয়তা
মুমিন!
তুমি কি চাও না যে
তোমার মুখচ্ছবিটি
হোক ঠিক ঐ রকম
যে রকম ছিল তোমার
প্রিয় নবি
হজরত
মুহাম্মাদ
(ﷺ) –এর মুখচ্ছবি ।
হাদিস নং-১,৩৮, ৩৯,৪০ |
চারটি
হাদিসের পটভূমি
মুসলমানদের মাঝে হাদিস
শরিফের প্রসিদ্ধ ৬টি কিতাব যাকে ছিয়া ছিত্তাহ/কুতুবে ছিত্তাহ বলা হয়। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ
হলো-সুনানে আবু দাউদ এ গ্রন্থের লেখক বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আবু দাউদ সুলাইমান
ইবনে আশয়াস সিজিস্তানি রহ. বলেন-আমি আমার
এ সুনানে পাঁচ লাখ হাদিস থেকে বাছাই করে রচনা করছি। উল্লেখ্য, এ কিতাবে ৪,৮০০ (চার হাজার আটশত) হাদিস আছে। অতঃপর তিনি তার কিতাব
থেকে ইসলামি জীবন বিধানের সার্বজনীনতা ও স্বয়ং সম্পূর্ণ তার নমুনা হিসেবে চারটি (৪টি)
হাদিস নির্বাচন করে পেশ করেছেন-)সূত্র: আদওয়ায়ু আলাস সুনানিল মাহমুদিয়া-২/৬১)
(১) عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ (ﷺ) " إِنَّمَاا لْعَمَلُ بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لاِمْرِئٍ مَا
نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى
اللَّهِ وَرَسُولِهِ (ﷺ)
وَمَنْ
كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا،
فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ "
(২)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مِنْ
حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ " অর্থ: মানুষের (জন্য) ইসলামের সৌন্দর্য হল, নিরর্থক কথা-কাজ-চিন্তা বর্জন
করা। তাখরীজ: জামে তিরমিজি -২৩১৭; ইবনে মাজাহ-৩৯৭৬
(৩) عَنْ النُّعْمَانِ
بْنِ بَشِيرٍ
- رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا
- قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يَقُولُ - وَأَهْوَى النُّعْمَانُ بِأُصْبُعَيْهِ إلَى أُذُنَيْهِ - «إنَّ الْحَلَالَ
بَيِّنٌ،
وَالْحَرَامَ
بَيِّنٌ،
وَبَيْنَهُمَا
مُشْتَبِهَاتٌ،
لَا يَعْلَمُهُنَّ
كَثِيرٌ مِنْ النَّاسِ،
فَمَنْ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ
فَقَدْ اسْتَبْرَأَ
لِدِينِهِ
وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ: كَالرَّاعِي
يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى
يُوشِكُ أَنْ يَقَعَ فِيهِ، أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى، أَلَا وَإِنَّ حِمَى اللَّهِ مَحَارِمُهُ،
أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ
مُضْغَةً
إذَا صَلُحَتْ
صَلُحَ الْجَسَدُ
كُلُّهُ،
وَإِذَا فَسَدَتْ
فَسَدَ الْجَسَدُ
كُلُّهُ،
أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
অর্থ: হালাল সুস্পষ্ট,
হারাম ও সুস্পষ্ট। উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট-সন্দেহজনক বিষয়
রয়েছে। অধিকাংশ লোকই অবগত নয় যে, এ গুলো হালাল না কি হারাম। সুতরাং যে ব্যক্তি
এ সব সন্দেহজনক জিনিস থেকে দুরে থাকল, সে তার দ্বীন ও ইজ্জতকে হেফাযত করল। আর যে ব্যক্তি সন্দেজনক
বিষয়সমূহে জড়িয়ে পড়লো, সে হারাম বিষয়ের মধ্যে পতিত হলো। যেমন কোন রাখাল রাষ্ট্রের সংরক্ষিত
চারণ ভূমির আশে পাশে তার পশু পাল চড়ালে সেগুলো তাতে ঢুকে পড়ার আশংকা থাকে। জেনে রাখ! প্রত্যেক শাসকের
একটি নিষিদ্ধ (সংরক্ষিত) চারণ ভূমি থাকে। জেনে রাখ! আল্লাহ তায়ালা
চারণ ভূমি হচ্ছে তার হারাম কৃত বিষয়সমূহ। জেনে রাখ! মানব দেহের
মধ্যে একটি গোস্তের টুকরা আছে। যদি তা সুস্থ থাকে, তাহলে পুরো
শরীরই সুস্থ থাকে। আর যদি তা নষ্ট হয়ে যায়, তবে সর্ব শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। জেনে রাখ! সেটাই হলো
কলব (অন্তর)। তাখরীজ: নাসায়ি-৪৪৫৩; ইবনে মাজাহ-৩৯৮৪; বুখারি-২০৫১, মুসলিম-১৫৯৯
নোট : ইবনে মাজাহর
বর্ণনার শব্দ বেশি আছে।
(৪) عَنْ
أَنَسٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ، قَالَ : لا
يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ অর্থ: মুমিন ততক্ষণ পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না সে মুসলমান ভাইয়ের জন্য সেই
জিনিস পছন্দ করবে, যা সে নিজের
জন্য পছন্দ করে। তাখরীজ: বুখারি-১৩; মুসলিম-৪৫; নাসায়ি-৫০১৬; তিরমিজি-২৫১৫
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: একটু চিন্তা করলে দেখা
যায়, বাস্তবে একজন প্রকৃত
মুমিন-মুসলমান যদি উপরোক্ত
হাদিসের মূলনীতির ওপর আমল
করে, তাহলে অবশ্যই সে দুনিয়া-আখেরাতে চূড়ান্ত
সফলতা লাভ করবে।
প্রথম হাদিস: প্রথম হাদিসটি ১নং হাদিস
শিরোনামে কিতাবের শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় হাদিস: একজন মুসলমানের কেমন গুণ
থাকা প্রয়োজন তথা ইসলামের
সৌন্দর্য ও পূর্ণনার
দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ নিরর্থক কথা, কাজ, দৃষ্টি ও চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদি বর্জন করে চলা
এবং আল্লাহ আদেশ-নিষেধ সমূহকে যথাযথ ভাবে শিরোধার্য
করে নেওয়া। আল্লাহ পাক কৃতকার্য
মুমিনদের গুণাগুণ বর্ণনা করতে বলেন- মুমিনগণ সফলকাম
হয়ে গেছে। যারা
নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র;
যারা
অনর্থক কথা-কাজ-চিন্তা থেকে বিরত থাকে। সূরা মুমিনুন, ১-৩
সময়ের গুরুত্ব: রাসূলে আকরাম (ﷺ) বলেন- স্বাস্থ্য ও অবসর-এ দুইটি নেয়ামতের
(সদ্ব্যাবহারের) ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ
ধোঁকার মধ্যে রয়েছে। বুখারি, মিশকাত-৪৯২৮
জনৈক বুযুর্গ
বলেন- الوقت هي حياة فلا تقتله অর্থ: আরে সময়
সে তোই জীবন, সুতরাং তাকে তুমি (অযথা কাজে-কর্মে) হত্যা কর না। আল্লামা সুয়ূতি রহ. তার জমউল জাওয়ামে গ্রন্থে একটি হাদিস
সংকলন করেছেন: রাসূল (ﷺ) বলেছেন- প্রতিদিন সকালে
যখন সূর্য উদিত হয়, তখন দিন এ মর্মে ঘোষণা
করে-অর্থাৎ আজ যদি কেউ নেক আমল করতে পারে,
তাহলে সে তো করে নিক কেননা আমি তোমাদের কাছে আর কখনই পুনরায় আসব না । (আর যে দিন যায়
সেদিন আর কখনও ঠিরে আসে না )
আবুদ্দারদা (রা.) বলেছেন, মানুষের বুদ্ধিমত্তার অংশ বিশেষ হল নিরর্থক বিষয়ে কথার স্বল্পতা। আদাবুল মুজালিসাহ
: পৃ : ৬৮
“Time tide and life wait for none.But one
person is waiting for you.Do you know? Who is he ?He is Azrail .So be carful.He
must came and take you jan.”
অর্থাৎ “সময়, ঢেউ ও জীবন কারো জন্য অপেক্ষা করে না। কিন্তু একজন
ব্যক্তি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে । তুমি কি তা জান? সে কে ? তিনিই হলেন
আজরাঈল আ। সুতরাং সতর্ক হও। সে অবশ্যই তোমার কাছে আসবে এবং তোমার জান নিয়ে যাবে।” হে আমার জাতি! আমি তোমাদের জন্য বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য দরদী বন্ধু; কল্যাণকামী।( অতত্রব,
বুঝার কিছু থাকল বুঝ! করার কিছু থাকলে কর,শয়তানের ধোঁকায় পরো না
যে, আগামীকাল করবো ।)
তৃতীয় হাদিস: নেককার
তথা যারা আল্লাহ তাআলা মানতে চায় তাদেরকে
শয়তান সরাসরি হারাম কাজে লিপ্ত করে না বরং তাদেরকে নেক ছুরোতে ধোঁকা দেয়। বিভিন্ন ইসলামি
নাম দিয়ে হারামে লিপ্ত করে। যেমন- ইসলামের নামে বিমা, ইনসিওরেন্স, ইসলামের নামে
জঙ্গিবাদ ইত্যাদি। সুতরাং আল্লাহর নিষিদ্ধ বর্ডারে ঘুরাঘরি করা নিরাপদ নয়। কম মানুষই গোনাহ থেকে
বাঁচতে পারে। একথাই হাদিসে বলা হয়েছে।
হাদিসের শেষাংশে (ইবনে
মাজাহর বর্ণনায়) নবি (ﷺ) আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। মানবদেহে একটি
গোশতের টুকরা আছে,যার নাম কলব বা অন্তর। যা মানবদেহের বাদশাতুল্য আর অন্য
অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্রজাতুল্য।তাই কলবের ইসলাহ সর্বাগ্রে। অনেকে বলে, দাওয়াত দিলে বা
দ্বীনি এলম শিক্ষা করলেই যথেষ্ট। ইসলাহের কোন প্রয়োজন নাই। নিঃসন্দেহে এটা গোমরাহি
কথা। পবিত্র কুরআনে রাসূলে
কারিম (ﷺ) এর মৌলিক যে চারটি (৪টি) দ্বীনি দায়িত্বের কথা
উল্লেখ করেছেন, তন্মধ্যে দ্বিতীয় নম্বরে হলো- তাযকিয়ায়ে নফস বা সাহাবিদের
আত্মার সংশোধন। আল্লাহ তাআলাবলেন- তিনিই
নিরক্ষরদের মধ্যে থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন,যিনি তাদেরকাছে পাঠ করেন তার
আয়াতসমূহ, তাঁদেরকে (সাহাবিদেরকে) পবিত্র/আত্মশুদ্ধি করেন। সূরা জুমাআ-০২; এছাড়া
সূরা বাকারার-১২৯,১৫১,সূরা ইমরান-১৬৪
যা প্রত্যেক
মুসলমানের ওপর ফরজ। স্বয়ং ইবনে আবেদ্বীন
শামি রহ. বিখ্যাত ফতোয়া গ্রন্থ ফতোয়ায়ে শামীর ১ম খণ্ড,১১৭ পৃষ্ঠায় এ লিখেছেন-
ইসলাহ ও আ্খলাকের এলম হসিল করা ফরযে আইন। যেমন-অহংকার, লোভ,
হিংসা-বিদ্বেষ, গীবত, রিয়া, আত্মগরিমা, অন্তরের খেয়ানত ইত্যাদি। এ সকল দুশ্চরিত্র
হতে মুক্ত হওয়া ফরজ।
বিস্তারিত দেখুন- দরসে
তিরমিজি ও এ যুগের অপ্রচার মুফতি তকি উসমানি দা. বা.; আত্মার
ব্যাধি ও প্রতিকার, শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রহ. এর আপবীতী, শরিয়ত ও তাসাউফ, আকাবি
কা সুলূক ও ইহসান।
চতুর্থ হাদিস: হজরতে ওলামায়ে
কেরাম এ হাদিসটিকে এর অন্তর্ভক্ত করেছেন। যদি বিশ্ববাসী
শুধু এ হাদিসের ওপর আমল করত, তাহলে সমস্ত অন্যায়-অনাচার দূর হয়ে যেত। চোর সিঁধ কাটার
সময়, পকেটমার কারো পকেটে হাত দেওয়া, কারো স্ত্রী, কন্যার দিকে কুনজরবা অবৈধ
সম্পর্কের করার, পরকীয়া, সুদ-ঘুষ গ্রহণ করার সময় যদি একথা চিন্তা করে, আমি যা করতে চাই, এ আচরণ আমার সাথে কেউ করত, তাহলে
আমি কি তা পছন্দ করতাম?
হাফেজ ইবনে কাসির রহ., ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর মসনদে একটি হাদিস বর্ণনা
করেছেন-যা সারকথা হলো- এক যুবক রাসূলে (ﷺ) এর কাছে যিনার অনুমতি চাইলো। রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন-তুমি কি এ কথা পছন্দ করবে যে, অন্য
লোকেরা তোমার মা,কন্যা,বোনের সাথে অশোভনীয় আচরণ করুক ? সে বলল, কখনও নয়। আমি তো তলোয়ার দিয়ে তার খবর করে দিব। যার সাথে তুমি এ
মন্দ আচরণ করতে চাও, সেও তো কারো মা, বোন, কন্যা! সুবহানাল্লাহ! বুঝানো ও উপদেশের
ধরণ কত প্রিয়। আর তার ওপর হাত মোবরক রেখে
দুআ করলেন- তারপর থেকে তিনি (ঐ যুবক সাহাবি)
কারও প্রতি কুনজর করেননি। মুসনাদে আহমদ-৫/২৫৬; সুনানে বায়হাকি-৫৪১৫
এ হাদিসটিকে বিশেষ
করে পরামর্শের সাথে সংশ্লিষ্ট সাব্যস্ত করা হয়। অন্যকে সে পরামর্শই দিবেন
যা নিজের জন্য পছন্দ করন। সূত্র: নাসরুল বারি শরহে বুখারি, ১ম খণ্ড; ৩১৪ পৃষ্ঠা।
চল্লিশ
হাদিস সমাপ্ত
মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ(৪০)হাদিস
লেখক : মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস লিলআদব)
ধর্মীয়
শিক্ষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
মোবাইল :
০১৭৩৫-৭৯১৩৮২,০১৮৮৭৭০১৬৫৬
গ্রন্থস্বত্ব : লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কম্পিউটার
কম্পোজ: মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক(লেখক নিজে)
বিসমিল্লাহির
রহমানির রহিম
লেখকের
ভূমিকা
তামাম প্রশংসা ও
তারিফ বিনা মূল্যে অক্সিজেন দাতা মহাবিজ্ঞানী আল্লাহ তাআলার জন্য ও পরিপূর্ণ দরূদ
ও সালাম মানব-দানব তথা সারা মাখলুকের সেরা হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের উপর যাঁর শুভাগমন সমগ্র
বিশ্বের জন্য রহমত স্বরুপ আর তার পরিবার-পরিজন ও সাহাবাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক
যাঁরা ছিলেন হিদায়াতের নক্ষত্র এবং পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর প্রচারের জন্য জীবন
উৎসর্গকারী। হাদিস শরিফ হলো ইসলামি শরিয়ত ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস-ভান্ডার। হাদিস মূলত পবিত্র কুরাআনেরই ব্যাখ্যা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন- আমি আপনার
নিকট উপদেশ গ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যেগুলো
তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে। যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সূরা নাহল-৪৪) তাই বক্ষ্যমাণ এই কিতাবে এমন সব চল্লিশটি বুনিয়াদি
হাদিস শরিফ চয়ন করেছি, যা মুমিন জীবনে সফলতার দ্বার উন্মুক্ত
হবে এবং বাকি আমল সহজ হবে ইনশাল্লাহ। একারণেই কিতাবের নাম রাখলাম, “মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ হাদিস”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলাجامع الكلم (কথার সমষ্টি অর্থাৎ এক
কথার ভিতর অনেক বিষয় লুকায়িত ) দান করেছেন। সুতরাং অনেক ক্ষেত্রে ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। সংশ্লিষ্ট হাদিসের
ব্যাখ্যায় অনেক মাসয়ালা-মাসায়েল বর্ণনা করা হয়েছে এবং নির্ভরযোগ্য কিতাবের সন্ধান
দেয়া হয়েছে। আশা করি পরিপূর্ণ ফায়দা
হাসিল করতে উল্লিখিত কিতাব সংগ্রহ করলে বেশি লাভবান হবে। উসূলে হাদিসের আলোকে যেসব হাদিস
গ্রহণযোগ্য সেসব হাদিস উদ্ধৃতি দিয়েছি। তারপরেই যদি বিজ্ঞ ওলামা-কেরামের
নিকট কোন ভুল-ত্রুটি দৃষ্টি গোচর হলে ইকরামুল মুসলিমীনের অংশ হিসেবে অবহিত করলে,
চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। পরিশেষে এ কিতাব রচনায়-প্রকাশ করতে যারা বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন,
মহান আল্লাহ তাদেরকে দুনো জাহানে সম্মান-নিরাপত্তার
জীবন দান করুন।
সূচীপত্র
বিষয়
পৃষ্ঠা
হাদিস নং-০৩, রাসূলে আকরাম
(ﷺ)
এর ভালবাসা ও তার অনুসরণ
হাদিস নং-০৬, ওসওয়াসা/মনের ধাঁধাঁ বা খটকা
হাদিস নং-০৭, তাকদির/ভাগ্য-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
হাদিস নং-০৮, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব-কর্তব্য
হাদিস নং-০৯, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব
হাদিসনং-১০, সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু (কবিরা গোনাহ)
হাদিস নং-১১, সালাম বিনিময় বা অভিবাদন ইসলামি পদ্ধতি
হাদিসনং-১২, পানাহারের আদব বা শিষ্টাচার
হাদিসনং-১৩, ঢোল,বাদ্যযন্ত্র,গান হতে নিষেধাজ্ঞা
হাদিস নং-১৪, দুনিয়ার ধোঁকাবাজী
হাদিসনং-১৫, মৃত্যুর কামনা হতে নিধেষজ্ঞা
হাদিস নং-১৬, এলেম(জ্ঞান) ও আলেমের মর্যাদা
হাদিস নং-১৭, গোনাহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা
হাদিস নং-১৯, সালাতের (নামাযের) গুরুত্ব ও ফযিলত
হাদিস নং-২০, সিয়াম বা রোজার ফযিলত
হাদিস নং-২১, যাকাত আদায় না
করার শাস্তি
হাদিস নং-২৩, হালাল উপার্জন করা
হাদিসনং-২৪, কোন নারীকে বিবাহ করব
হাদিস নং-২৮, ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা
হাদিসনং-২৯, দুআর গুরুত্ব ও ফযিলত
হাদিসনং-৩১, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ (মন্দ) কাজের নিষেধ
হাদিস নং-৩২, আল্লাহ-ওয়ালাদের ছুহবতের প্রয়োজনীয়তা
হাদিসনং-৩৩, কুদৃষ্টি হতে হেফাযত
হাদিসনং-৩৪, সবর (ধৈর্য) ও শুকর (কৃতজ্ঞতা) করা
হাদিসনং-৩৬, সাহাবা কেরামের মর্যাদা
হাদিসনং-৩৭, পুরুষের টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করার বিধান
হাদিস নং-০১, নিয়ত সহিহ করা |
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه
ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ (ﷺ) " إِنَّمَاا لْعَمَلُ
بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لاِمْرِئٍ مَا
نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى
اللَّهِ وَرَسُولِهِ (ﷺ)
وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا
يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ ".
অর্থ: আমিরুল মুমিনিন
হজরত ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- সকল কর্মই নিয়তের
ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক
মানুষের জন্য তা-ই রয়েছে যা সে নিয়ত করে। অতত্রব, যার হিজরত
আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে (উদ্দেশ্য)
হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকেই (পরিগণিত) হবে। হিজরত দুনিয়া লাভের
উদ্দেশ্যে কিংবা কোন নারীকে বিবাহ করার
উদ্দেশ্যে হবে; তার হিজরত সে দিকেই গণ্য হবে, যে উদ্দেশ্য সে হিজরত করেছে। বুখারি-০১৫৪, ২৫২৯;
মুসলিম-১৯০৭; তিরমিজি-১৬৪৭; আবু দাউদ-২২০১; নাসায়ি-৭৫; আহমদ-১৬৮
প্রাসঙ্গিক
আলোচনা : এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-(১) যে সমস্ত লোক নিজেদের মাল আল্লাহর রাস্তায় খরচ
করে, তাদের উদাহরণ হলো ঐ দানার মত, যা হতে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয় আর প্রত্যেকটি শীষে
একশতটি করে দানা রয়েছে। আর আল্লাহ তাআলা
যাকে চান (তার মাল ) বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা মহান
দাতা, মহাজ্ঞানী। সূরা আল
বাকারা-২৬১
অতত্রব, এ আয়াতে প্রমাণ হয়,
আল্লাহর জন্য কোন আমল করা হলো দশ-সাতশ পযর্ন্ত বাড়ানো হবে, তার এখলাস যত বেশি হবে,
আমলের দাম তত বাড়বে। এই জন্য কুরআনুল কারিমে
আমল গণনা করার কথা বলা হয়নি; বরং ওজন করার কথা বলা হয়েছে।
(২) আল্লাহর নিকট না ঐ সব কুরবানীর গোশত পৌঁছে আর না ঐ গুলোর রক্ত। বরং তার নিকট তো তোমাদের পরহেজগারি পৌঁছে। অথাৎ তোমাদের
সামনে জযবা (এখলাস) দেখা হয়। সূরা
হজ-০৩
v
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-(৩)
তোমাদের কাহারও ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান-খয়রাত করা তাঁদের
(সাহাবাদের) কোন একজনের মাত্র এক মুদ্দ (প্রায় চৌদ্দ ছটাক) বা তার কম পরিমাণ বস্তু
দানের সমানও হতে পারবে না। বুখারি-৩৬৭৩
বুখারি শরিফ এই হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হজরতে
সাহাবা কেরাম রা. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ছুহবতের বরকতে এমন এক অন্তরের অধিকারী ছিল, তাঁদের ঈমান, আমল
বরাবর পৃথিবীর কোন ওলি, গাউস, আবদাল পৌঁছেতে পারবে না।
(৪) আল্লাহ পাক তোমাদের বাহ্যিক ছূরত ও সম্পদের প্রতি লক্ষ্য করেন না, বরং
তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। সহিহ মুসলিম-৬৫৪
(৫) যখন মানুষ সওয়াবের নিয়তে আপন পরিবাবের উপর খরচ করে, সে সদকার সওয়াব পায়। বুখারি-৫৫
মুসলমানদের
প্রত্যেক কাজই ইবাদত যদি নিয়ত ছহীহ হয়।
(৬) যে ব্যক্তি নিজের বিছানায় আসে এবং তার নিয়ত এই যে, রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ
পড়বো। কিন্তু ঘুম প্রবল হওয়ার
কারণে সকালেই চোখ খুলে। তার জন্য
তাহাজ্জুদের সওয়াব লেখে দেয়া হয় এবং ঘুম তার রবের পক্ষ হতে তার জন্য দান স্বরুপ হয়। সুনানে নাসায়ি-১৭৮৮
(৭) এক
ব্যক্তি উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলুল্লাহ! ঈমান কি ? তিনি
বললেন, ঈমান হল এখলাস। সুনানে বাইহাকি-৩৪২
রিয়া বা লোক ইবাদত
শিরক : বন্ধুগণ! ইখলাস-এর বিপরীত হলো রিয়া
যাকে ছোট শিরক বলা হয়। যেমন হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি দেখানোর জন্য নামাজ পড়ল সে শিরক
করল, যে ব্যক্তি দেখানোর জন্য রোজা রাখল সে শিরক করল আর যে ব্যক্তি
দেখানোর জন্য দান-খয়রাত করল সেও শিরক করল। মুসনাদে আহমদ-১৯/২২১
রিয়ার ভয়াবহতা: ইখলাস ব্যতীত
কোন ইবাদতই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং জাহান্নামের ধমক
দেওয়া হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তাআলা বলেন- অতএব দুর্ভোগ সে সব নামাজির,
যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে বে-খবর; যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে। সূরা মাউন, ৪-৬
হজরত আবু হুরাইরা
রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি- নিশ্চয় সর্ব
প্রথম ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যার ওপর ফয়সলা করা হবে, সে ব্যক্তি
যে শহীদ হয়েছিল। তাকে আনা হবে, অতঃপর তাকে তার (আল্লাহর)
নেয়ামত রাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বললেন, তুমি এতে কি
আমল করেছ? সে বলবে, আপনার জন্য জিহাদ করে
এমনকি শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বললেন, মিথ্যা বলেছ,
তবে তুমি এ জন্য জিহাদ করেছ যেন বলা হয় বীর। অতএব বলা হয়েছ। অতঃপর তার ব্যাপারে
নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হেঁচড়ে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আরও এক ব্যক্তি যে
এলম শিখেছে, শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন তেলাওয়াত করেছে, তাকে আনা হবে। অতঃপর তাকে তার (আল্লাহর)
নেয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। আল্লাহ বললেন, তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবে, আমি এলম শিখেছি, শিক্ষা
দিয়েছি ও আপনার জন্য কুরআন তেলাওয়াত করেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, তবে
তুমি এলম শিক্ষা করেছ যেন বলা হয়, আলেম, কুরআন তেলাওয়াত করেছ বলা হয়, সে কারী, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে
------টেনে-হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আরও এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ স্বচ্ছলতা দান করেছেন, তাকে আনা হবে। অতঃপর তাকে তার (আল্লাহর) নেয়ামতরাজি জানানো
হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বললেন, তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবে এমন খাত নেই যেখানে খরচ করা আপনি পছন্দ করেন আমি তাতে আপনার জন্য খরচ
করি নাই। আল্লাহ বললেন, মিথ্যা বলেছ,
তবে তুমি করেছ যেন বলা হয়, সে দানশীল, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে তার চেহারার
ওপর ভর করে টেনে-হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। মুসলিম-০৫; নাসায়ি
প্রশ্ন : অনেক
সময় বান্দা গোপনে বা প্রকাশ্যে ইবাদত, ভাল কাজ করে। অতঃপর লোকের মাঝে তা প্রকাশ পেলে, লোকজন
প্রশংসা করলে বা সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে; এতে তার ভাল
লাগলে, অথচ সে সেটা চায়নি, এর ফলে কি
তার নেক আমল বরবাদ বা রিয়া হবে কি?
উত্তর : মনে সুনামের
কামনা না থাকা সত্ত্বেও যদি মানুষের মাঝে কারো সুনাম হয়। তবে তাতে তার পরকালের সওয়াব বরবাদ হয়ে যাবে না। একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে জিজ্ঞেস
করা হল; বলুন, যে মানুষ সৎকাজ করে,
আর লোকে তার প্রশংসা করে থাকে, (তাহলে এরূপ কাজ কি রিয়া বলে গণ্য হবে?) তিনি বললেন, এটা মুমিনের নগদ সুসংবাদ। মুসলিম-১৩৬
প্রিয়! মুসলিম ভাই
বোন! এরকম অসংখ্যা আয়াত ও হাদিস বর্ণিত আছে নিয়ত ছহিহ ও রিয়ার ভয়াবহতা ব্যাপারে। আল্লাহ তাআলা আমাকে ও সব মুমিনকে আমল করার তাওফিক দান করুন।
পরামর্শ: এখলাস
পয়দা করার উপায় হল-(১) আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্যে চাওয়া আয় আল্লাহ আপনার
জন্য সব কিছু করার তাওফিক দিন।
(২) খাঁটি আল্লাহ ওয়ালাদের ছুহবতে থাকা
হাদিস নং-০২, ঈমান |
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى
الله عليه وسلم-
قَالَ « الإِيمَانُ
بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَفْضَلُهَا قَوْلُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَدْنَاهَا
إِمَاطَةُ الْعَظْمِ عَنِ الطَّرِيقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ » অর্থ হজরত আবু
হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- ঈমানের সত্তরটিরও বেশি
শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম হচ্ছে- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’
বলা (তাতে বিশ্বাস স্থাপন করা ) আর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে পথের মধ্যে হতে
কষ্টদায়ক বস্তু দূর করে দেয়া এবং লজ্জা হলো ঈমানের একটি (গুরুত্বপূর্ণ ) শাখা
বিশেষ। বুখারি-৯; মুসলিম-৩৫; আবু দাউদ-৪৬৭৬; তিরমিজি-২০০৯; নাসায়ি-৫০০৪; ইবনে মাজাহ-৫৭; আহমদ-৮৯২৬
নোট : উক্ত হাদিসে বুখারি ও
মুসলিম বর্ণনার মধ্যে শব্দের কম বেশি আছে।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা : ঈমান হলো বহু শাখা
বিশিষ্ট একটি সতেজ গাছের তুল্য। আমল হলো শাখা স্বরুপ। ঈমান এমন নয় যে, তার কোন শাখা ধ্বংস বা কেটে গেলে
মূলই ধ্বংস হয়ে যাবে। বরং শাখা ছাড়াও ঈমান নামক গাছটি অবশিষ্ট থাকে। কেননা ঈমান হলো (التصديق البسيط)
একক
আন্তরিক বিশ্বাস। ফাতহুল বারি, ফয়জুল
বারি
জান্নাতের চাবি কি? হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন যে,
জান্নাতের চাবি হলো এই সাক্ষ্য দেয়া, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নাই। মুসনাদে আহমদ
জাহান্নাম হারাম হয়
কিসে ? হজরত ওমর রা. বর্ণনা করেন, নবি (ﷺ) বলেন আমি এমন এক কালেমা জানি, যা আন্তরিকতার সাথে কেহ পাঠ করলে
এবং এই অবস্থায় তার মৃত্যু হলে দোযখ তার উপর হারাম হয়ে যাবে। তা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। মুস্তাদরাকে হাকেম
বিখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলি কারি রহ. এই সব হাদিস ঐ সময়ের
জন্য ছিল, যখন আহকাম নাযিল হয়নি, হাদিসের অর্থ হলো অনন্ত কালের জন্য সে জাহান্নামে
থাকবে না।(মিরকাত) যেমন ইমাম বুখারি রহ. বলেন, লজ্জিত হয়ে তওবার সাথে এই কালেমা পড়লে,
তার এই অবস্থা হবে। আল্লামা তিবি রহ. বলেন, হায়ার সাথে ঈমানের গভীর সর্ম্পক
রয়েছে বিধায় হায়াকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। লজ্জা হলো অশ্লীলতা ও
রুচিবর্জিত কার্য পরিহারের মূলশক্তি। যেমন হাদিসে এসেছে-যখন তোমার লজ্জা থাকবে না, তখন যা ইচ্ছা
তা কর।
ঈমান বৃদ্ধির উপায় : হুজুরে
আকরাম (ﷺ) বলেন, তোমরা তোমাদের ঈমানকে তাজা করতে থাক।ছাহাবারা বললেন, আমরা কিভাবে ঈমানকে নবায়ন করব। জবাবে তিনি বললেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বেশী বেশী করে পড়। মুসনাদে আহমদ
ঈমানের দাম : হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা.
হতে বর্ণিত, নবি (ﷺ) এরশাদ করেন,
যখন জান্নাতিগণ জান্নাতে ও দোযখীগণ দোযখে চলে যাবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন,
যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান রয়েছে তাকেও জাহান্নাম হতে বের লও। তাদের অবস্থা এরুপ হবে যে, জ্বালিয়া কালো বর্ণ
হয়ে গেছে। অতঃপর তাদেরকে নহরে হায়াতে ফেলা হবে। তখন তারা এমন ভাবে বের হয়ে আসবে, যেমন ঢলের (বৃষ্টির কারণে) আবর্জনাতে দানা
অঙ্কুরিত হয় (গাছ জন্মায়)। তোমরা কি দেখ না যে, উহা কেমন সোনালী ও কোঁকড়ানো অবস্থায় বের হয়ে
আসে। বুখারি
(বিস্তারিত
দেখুন-লেখকের কিতাব ‘মহান আল্লাহর নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের সম্মান-মর্যাদা’)
ঈমানের পরিপূরক কি?
(১) রাসূল (ﷺ) কে ভালবাসা : হজরত আনাস ইবনে মালেক রা.
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না; যে পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ হতে অধিক ভালবাসার পাত্র না হবো। বুখারি-মুসলিম, মিশকাতুল মাছাবিহ-৫
(২) আল্লাহর জন্য ভালবাসা : হজরত আবু উমামা
রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলে আকরাম (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তাআলা উদ্দেশ্যই কাউকে ভালবাসে এবং কারো সাথে শত্রুতা পোষণ করে। আর আল্লাহর উদ্দেশ্যই কাউকে কিছু দান করে এবং আল্লাহ তাআলার কারণেই কাউকে দান করা হতে বিরত থাকে,
তবে সে তো অবশ্যই তার ঈমানকে পরিপূর্ণ করে নিল। সুনানে আবু দাউদ;
মিশকাতুল মাছাবিহ-২৭
মুসলিম বিশ্ব যদি এই মূলনীতি
অনুসরণ করত তাহলে এত ফেতনা-ফাসাদ
ঘটতো
না। সাহাবায়ে কেরামের শানে
পবিত্র কুরআন ইরশাদ হচ্ছে- মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল আর তার সাথে যারা থাকে
(সাহাবারা) তাদের সিফাত হলো-কাফেরদের সাথে তাঁরা বজ্র কঠোর, মুমিনের সাথে নরম-কমল, রহম দিলওয়ালা। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি
কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সিজদারত দেখবেন। সূরা ফাতাহ-২৯
প্রিয় বন্ধুগণ! আমরা নিজেকে জিজ্ঞেস করি আমার ভালবাসা, শত্রুতা,
দান
করা, না করা সবই
কি আল্লাহর জন্য? না
অন্য কিছুর মিশ্রণ আছে?
হাদিস নং-০৩,
রাসূলে আকরাম (ﷺ)
এর ভালবাসা ও তার অনুসরণ |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى قَالُوا
يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ
وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى
অর্থ: আবু
হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন: আমার সকল উম্মাত
জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্ত যে অস্বীকার করবে সে ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হল, কে
অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যারা আমার
অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে
সে-ই ( জান্নাতে প্রবেশ করতে) অস্বীকার করল। বুখারি-৭২৮০; আহমদ-৮৭২৮
রাসূলের আনুগত্য মানেই
আল্লাহর আনুগত্য : মহান আল্লাহ তার প্রিয় রাসূলের আনুগত্য ফরজ করেছেন, যেমন আল্লাহ তাআলাবলেন-
(১) যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে প্রকারান্তরে আল্লাহরই
আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, আমি আপনাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে
প্রেরণ করিনি। সূরা নিসা- ৮০
রাসূল (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করল, সে আল্লাহরই অনুসরণ করল, আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানি
করল, সে তো আল্লাহর নাফরমানি করল। বুখারি- ২৯৫৭
ঈমানের স্বাদ কে পেয়েছে? মুহাম্মাদকে যে ব্যক্তি রাসূল পেয়ে
খুশি এবং তাঁকে অধিক ভালবাসে, সেই ঈমানের স্বাদ পেয়েছে-
যেমন রাসূল (ﷺ) বলেছেন-(১)
সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে রব হিসেবে
আল্লাহকে, দ্বীন হিসেবে ইসলামকে এবং রাসূল হিসেবে মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়েছে। মুসলিম- ৩৪
(২) তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ঈমানের সাধ গ্রহণ
করবে। এক- আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল তার নিকট দুনিয়ার সব কিছু হতে প্রিয় হওয়া। দুই- কোন মানুষকে
একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসা। তিন- ঈমান আনার পর কুফরিতে ফিরে যাওয়াতে এমন অপছন্দ করবে, যেমন
আগুনে নিক্ষেপ করাকে অপছন্দ করে। বুখারি: ১৬
রাসূলের ব্যাখ্যা
ছাড়া কুরআন বুঝা অসম্ভব : এ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেন-(১) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন,
যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা
তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে। সূরা নহল-৪৪
(২) আর সে মনগড়া কথাও বলে না। তাতো ওহি যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ
করা হয়। সূরা নজম,৩-৪
আমরা কার অনুসরণ
করবো হাদিস না সুন্নাহর ? হাদিসের শাব্দিক অর্থ কথা, বাণী, খবর, নতুন ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ রাসূলুল্লাহর
কথা, কাজ, মৌন সম্মতি আর সুন্নাহের শাব্দিক অর্থ পথ,
রাস্তা, তরিকা, চলার রাস্তা,
পন্থা ইত্যাদি। পরিভাষায় বলা হয়, রাসূল (ﷺ) যেসব কর্ম নিজ উম্মতের জন্য রেখে
গিয়েছেন এবং তা উম্মতের জন্য অনুসরণীয়। আমরা
এখন কোনটা মানবো সুন্নাহ বা হাদিস ? রাসূল (ﷺ) এর সব কথা, কর্ম তো হাদিসে
উল্লেখ আছে, ইসলামের শুরুতে অনেক বিষয় জায়েজ ছিল, পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ হয়েছে, যেমন নামাযের মধ্যে কথা
বলা। এছাড়া এমন কিছু বিষয় আছে যা শুধু নবির জন্যই নির্দিষ্ট, উম্মতের
জন্য নয়। যেমন, সওমে বিসাল, একত্রে চার এর অধিক বিবাহ এবং বিনা
দেরমোহরে বিবাহ সম্পন্ন করা ইত্যাদি। যেমন আল্লাহর তাআলার বাণী- এ বিধান
বিশেষ করে আপনারই জন্য, অন্য মুসলমানের জন্য নয়। সূরা আহযাব-৫০
তাছাড়া স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সুন্নাহ অনুসরণ করার কথা
বলেছেন, সরাসরি হাদিসের ওপর নয়। যেমন, (১) মালিক ইবনু আনাস
(রহ.) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন: “আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দুটি
জিনিস আঁকড়ে থাকবে, পথভ্রষ্ট হবে না: আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ”। মুয়াত্তা ইমাম
মালেক- ৩৩৩৮
(২) তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে আর শুনবে ও মানবে, যদিও
তোমাদের নেতা হাবশী গোলাম হয়। আমার পরে অচিরেই তোমরা কঠিন মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের উপর
আমার সুন্নাত ও হিদায়েত প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শের উপর অবিচল থাকা
অপরিহার্য। তোমরা তা শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। সাবধান! তোমরা বিদআত
পরিহার করবে। কেননা প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহি-পথভ্রষ্ট। সুনানে ইবন মাজাহ- ৪২
(৩) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন: বনি ইসরাঈলের যে
অবস্থা এসেছিল অবশ্যই আমার উম্মাতের মধ্যে অনুরূপ অবস্থা
আসবে। এমনকি তাদের কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে তবে
আমার উম্মাতেরও কেউ তাতে লিপ্ত হবে। বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত ৭৩ দলে
বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সবাই হবে জাহান্নামী। বলা হল একটি দল (যারা জান্নাতী) কারা ? তিনি
বললেন: আমি এবং আমার সাহাবিরা আজকের দিনে যার উপর (প্রতিষ্ঠিত)। তিরমিযি- ২৬৪১
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা
প্রমাণিত হয় আমরা সুন্নাহর অনুসরণ করবো, যদি সরাসরি হাদিস
মানতে যায় তাহলে পথভ্রষ্ট হয়ে যাব। ইমাম আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়াহহাব
মিশরি রহ.বলতেন, উলামা ছাড়া অন্যদের জন্য হাদিস বিভ্রান্তকারী। তরতীবুল মাদারেক
১/৯৬
ইমাম সুফিয়ান ইবনে
উয়াইনাহ রহ. বলেন, ফুকাহা ছাড়া অন্যদের জন্য হাদিস গুমরাহকারী। আল জামিউলি
আখলাকির রাবি পৃ.১১৮
উল্লেখিত কথার মর্ম হল;
উলামা, ফুকাহা ব্যতীত অন্যদের বেলায় এমন
সম্ভবনা রয়েছে যে, তারা কোনো হাদিসকে তার বাহ্যিক অর্থে
প্রয়োগ করবে, অথচ অন্য হাদিসের আলোকে এর অন্য কোনো মর্ম
রয়েছে; অথবা এর বিপরীতে অন্য কোনো দলীল আছে যা তার নিকট
অস্পষ্ট। অথবা খোদ এ হাদিসটিই পরিত্যায্য যার একাধিক কারণ বিদ্যমান আছে; যা কেবল
এমন ব্যক্তিই অনুধাবন করতে সক্ষম যিনি শরীয়াতের
বিষয়ে গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী। সূত্র : মুফতী
জহীরুল ইসলাম
রাসূলের আনুগত্যেই
নাজাত নিহিত : আল্লাহ তাআলা
বলেন-
(১) এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের হুকুম
অনুযায়ী চলবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে ঝর্ণা ধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল
থাকবে এবং এটা বিরাট সাফল্য। সূরা নিসা-১৩
(২) আল্লাহর ও রাসূলের হুকুম মান্য কর, যাতে তোমরা কৃপা
প্রাপ্ত হতে পার।
সূরা আলে ইমরান- ১৩২
(৩) যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে সে সাফল্য লাভ করে-মহা
সাফল্য।সূরা আহযাব-৭১
(৪) আর যে কেউ ই আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য
করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করাবেন, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণা ধারা প্রবাহিত। আর যে কেউ পিঠ ফিরিয়ে নিবে, তিনি তাকে ভয়াবহ শাস্তি দিবেন। সূরা নিসা-১৩
রাসূলের আনুগত্য না করলে শাস্তির ঘোষণা : আল্লাহ তাআলা বলেন- আর যে ব্যক্তি
আল্লাহ এবং তার রাসূলের নাফরমানি করবে এবং তার নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করাবেন, সে তাতে
চিরকাল থাকবে এবং সে অবমাননাকর শাস্তি ভোগ করবে। সূরা নিসা-
১৪
রাসূলের ফয়সলা না মানলে মুমিন হওয়া যায় না: এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-
(১) কিন্তু না, তোমার
প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না, যে পর্যন্ত না তারা
তাদের বিবাদ-বিস্বাদের মীমাংসার ভার তোমার উপর ন্যস্ত না করে, অতঃপর তোমার ফয়সলার ব্যাপারে তাদের মনে কিছু মাত্র কুণ্ঠাবোধ না থাকে,
আর তারা তার সামনে নিজেদেরকে পূর্ণরূপে সমর্পণ করে। সূরা নিসা-৬৫
(২) মুমিনদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সলা করার
জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন মুমিনদের জওয়াব
তো এই হয় যে, তারা বলে, আমরা শুনলাম ও
মেনে নিলাম, আর তারাই সফলকাম।সূরা
নূর- ৫১
রাসূলের জীবন মুমিনের জন্য মডেল : একজন মুমিনের জন্য রাসূল (ﷺ) এর জীবনীর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। অল্লাহ তাআলা ঘোষণা- তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা
আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। সূরা আহযাব-২১
মহান আল্লাহর ভালবাসা
ও করুনা পেতে হলে ? সর্বশক্তি আল্লাহর করুণা ও মহব্বত পাবার একমাত্র মাধ্যম হল প্রিয় নবির
অনুসরণ। আল্লাহ
পাক ফরমান- হে নবি! আপনি বলে দিন, যদি
তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো তবে আমার অনুসরণ কর আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ
ক্ষমা করবেন, বস্তুত,আল্লাহ অতি
ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু। সূরা আল ইমরান-৩১
আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসার মূল্য : হজরত আনাস রা.
হতে বর্ণিত আছে। এক বেদুইন (গ্রাম্যলোক) ইয়া রাসূলুল্লাহ
কিয়ামত কবে হবে? তিনি বললেন, কিয়ামতের
জন্য তোমার কিছু সম্বল আছে কি? সে লোকটি বলল আমি এর জন্য বহু নামাজ, রোজার সম্বল তো
নাই, কিন্তু আমি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসি,তাদের সাথে গভীর মহব্বত রাখি।
হুযুর (ﷺ) বললেন, মানুষ
তার সঙ্গী হবে,যাকে সে ভালবাসে। হজরত আনাস রা. বলেন,আমি মুসলমানদেকে ঈমান আনার পরে এত খুশী হতে আর দেখি নাই। বুখারি-মুসলিম
এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, মহব্বতও এক প্রকার আমল। আর কত বড় সুসংবাদ যে, কেহ যদি ইবাদত-বন্দেগি অধিক না থাকে, তবুও আল্লাহ ও তার রাসূলের
মহব্বতের কারণে অতি উচ্চ মর্যাদা লাব করতে পারবে।
সকল ধর্ম বাতিল, একমাত্র মুহাম্মাদ (ﷺ)
এর আনীত ধর্মই মানতে হবে : প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)
এর শুভাগমনের মাধ্যমে পূর্বের সকল ধর্ম
বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামকে একমাত্র আল্লাহর মনোনীত ধর্ম হিসেবে
পরিগণিত করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-(১) আজ আমি তোমাদের
জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং
ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবুল করে নিলাম।
সূরা মায়েদা-০৩
(২) আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন
দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনও তার সেই দ্বীন কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে
ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সূরা আলে ইমরান-৮৫
রাসূল (ﷺ) বলেন- আল্লাহর কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন। যদি মুসা (আ.) তোমাদের মাঝে প্রকাশ পেতেন, তাহলে তোমরা তার আনুগত্য করতে আর আমাকে ত্যাগ করতে, ফলে
তোমরা সহজ -সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। অথচ মুসা আ. যদি এখন জীবিত থাকতেন ও আমার নবুওয়াতের কাল
পেতেন তাহলে তিনি নিশ্চিত আমার আনুগত্য করতেন”।
সুনানে দারেমি-৪৪৯
সাহাবা কেরামের নবির
অনুসরণের নমুনা : হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত যে,
তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র,
তুমি কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবি
(ﷺ) কে তোমায় চুম্বন করতে না
দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। বুখারি-
১৫৯৭
সুন্নাতের পথই সর্বশ্রেষ্ঠ, পরিপূর্ণ, সবচেয়ে
সুন্দর : মহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক (রহ.) বলেন, সুন্নাতের রাস্তায়
আফযাল (সর্বশ্রেষ্ঠ) হ্যায়, আকমাল (পরিপূর্ণ) হ্যায়,
আজমাল (সবচেয়ে সুন্দর) হ্যায়। কথাগুলো ১০০% সত্য, বাস্তবসম্মত। অজুতে একবার অঙ্গ ধোয়া ফরজ, যদি একবার ধোয়া হয় অনেক সময় পানি সব জায়গায়
পৌঁছে না। কিন্তু তিনবার প্রত্যেকটা অঙ্গ ঢলে ঢলে ধোয়া সুন্নাত। এখন পানি না পৌছার সম্ভবনা নাই।
এজন্য বলা হয়, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সুন্নাত সেটাকে পরিপূর্ণ করে দেয়।
সুন্নাত ও বিজ্ঞান : হজরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, জ্বর হলো জাহান্নামের হালকা, সুতরাং পানি দিয়ে তা শীতল
কর। জামে তিরমিজি-২০৮০ পৃ ই ফা বা, সহিহ
মুসলিম-৫৫৬৭পৃ. ই.ফা. বা.
জ্বরকে পানি দ্বারা ঠান্ডা করার বৈজ্ঞানিক সুফল : যে চিকিৎসা বিজ্ঞান (ﷺ)-এর উক্তিকে বিদ্রুপ করতো তারাই গবেষণার মাধ্যমে
দেখেছেন, পিত্ত জ্বরের রোগীর শরীরে শুধু ঠান্ডা পানিই নয়,
বরফের পানি প্রবাহিত করাই হচ্ছে জ্বরের প্রতিষেধক। প্রচণ্ড জ্বরের অস্থির কালে ডাক্তারগণ ঔষধ প্রয়োগের পূর্বেই
মাথায় পানি দেয়ার উপদেশ দেন। মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো
শীতল হলে জ্বর আস্তে আস্তে কমে আসে। টাইপেড জ্বরে আক্রান্ত
রোগীরা মস্তিষ্কের যন্ত্রণায় পাগল হয়ে যায়, তখন কোনো ঔষধ কার্যকারী হয়না যেমন কার্যকারী হয় পানি। সূত্র : বৈজ্ঞানিক মুহাম্মাদ (ﷺ)-মু.নুরুল ইসলাম, হাদিসের নূর ও আধুনিক বিজ্ঞান- মু.আইযুব আলি
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত : বুযুর্গানে দ্বীন তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন যে, তিনটি
এমন সুন্নাত আছে যেগুলো ওপর আমল করতে পারলে অন্যান্য সকল সুন্নাতের ওপর আমল করা
সহজ হয়ে যায় এবং অন্তরে সুন্নাতের প্রতি আমল করার স্পৃহা সৃষ্টি হয়।
১. আগে আগে সালাম করা ও সর্বত্র সলামের ব্যাপক প্রসার করা। বি.দ্র.
শুদ্ধ উচ্চারণে আসসলামু আলাইকুম পরিষ্কার ভাবে বলে সালাম দেওয়া চাই। বিশেষত: আস-সলামু এর হামযা স্পষ্ট করে উচ্চারণ করবে। সলামের
উত্তর শুনিয়ে দেয়া জরুরি।
২.প্রত্যেক
ভাল কাজে ভাল স্থানে ডান দিককে প্রাধান্য
দেয়া।যথা: মসজিদে ও ঘরে প্রবেশ কালে ডান পা আগে রাখা। পোশাক পরিধানের সময় ডান হাত ও ডান পা আগে প্রবেশ করানো। এবং প্রত্যেক নিম্ন বা
নিচুমানের কাজে ও স্থানে বাম দিককে
প্রাধান্য দেয়া। যথা: বামরুমে প্রবেশ কালে বাম পা আগে রাখা,বাম হাতে নাক পাপরিষ্কার করা,পোষাকের
ভেতর হতে বাম বা হাত পা আগে বের করা। ৩.আল্লাহ তাআলার জিকির বেশি বেশি করা। যথা:
(ক) প্রতিদিন কুরআন কারিম থেকে কিছু পরিমাণ তেলাওয়াত করা বা অন্যের তেলাওয়াত
শোনা।
(খ) পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর তাসবিহে
ফাতেমি অর্থাৎ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল-হামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার।
(গ) সকাল-বিকাল তিন তাসবিহ
তথা ১০০ বার কালেমায়ে সুওম সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ১০০ বার
ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ শরিফ পড়া।
(ঘ) ওপরে ওঠার সময় আল্লাহু আকবার, নীচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ এবং সমতল ভূমিতে চলার সময় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে থাকা।
সূত্র: প্রিয় নবির(ﷺ) প্রিয় সুন্নাত-শাহ হাকীম আখতার রহ., মেয়েদের
সুন্দর জীবন সাইয়েদা খায়রুন্নেছা রহ.
হাদিস নং-০৪, বিদআত থেকে পরহেজ |
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذَا خَطَبَ ، احْمَرَّتْ عَيْنَاهُ ، وَعَلَا صَوْتُهُ ،
وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ ، حَتَّى كَأَنَّهُ مُنْذِرُ جَيْشٍ يَقُولُ : صَبَّحَكُمْ
وَمَسَّاكُمْ ، وَيَقُولُ : أَمَّا بَعْدُ ، فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ
كِتَابُ اللَّهِ ، وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ ، وَشَرَّ الْأُمُورِ
مُحْدَثَاتُهَا وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
رَوَاهُ مُسْلِمٌ ، وَلِلنَّسَائِيِّ
وَكُلَّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ
অর্থ: সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে-আল্লাহর বাণী/কিতাব। আর সর্বোত্তম জীবন ব্যবস্থা
হচ্ছে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর জীবন ব্যবস্থা। আর নিকৃষ্টতম বিষয় হচ্ছে যা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হয়েছে। আর প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই (বিদআত) হচ্ছে ভ্রষ্টতা
নাসায়ির রেওয়াতে আছে ,প্রত্যেক গোমরাহি জাহান্নামি । সহিহ
মুসলিম-৮৬৭; আবু দাউদ-২৯৫৪; নাসায়ি-১৫৭৮; ইবনে মাজাহ-৪৫,২৪১৬
প্রাসঙ্গিক আলোচনা : বিদআত অর্থ: নতুন সৃষ্টি। প্রশ্ন হলো, রেলগাড়ী, বিমান, মোবাইল
ইত্যাদি কি কি বিদআত ? না, বিদআত হবে
না, কেননা শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত হলো- দ্বীনের মধ্যে কোন নতুন সৃষ্টিকে অর্থাৎ দ্বীনের মধ্যে ইবাদত মনে করা হয় এবং অতিরিক্ত ছওয়াবের আশায় বা
নফলকে সুন্নাত/ওয়াজিব/ফরজ মনে করা,
জরুরি মনে করা,এমন কিছু আকীদা বা আমল সংযোজন ও
বৃদ্ধি করা,যা রাসূল (ﷺ), সাহাবি ও তাবেয়িদের যুগে অর্থাৎ অনুসরণীয়/আদর্শ যুগে ছিল না।
কয়েকটি বিদআতের উদাহরণ:- উরস করা। কবর পাকা করা। কবরে ফুল দেওয়া। কবরের ওপর গম্বুজ বানানো। জানাযার
নামাযের পর জোর আওয়াজে কালেমা পড়তে পড়তে লাশ বহন করে নিয়ে যাওয়া। শুধু
ফরজ নামাজে পাগড়ি পরিধান করা জরুরি মনে করা। দুআকে নামাযের অংশ মনে করা।মৃত ব্যক্তির নামে খানা খাওয়া শর্তসাপেক্ষে নিষেধ নয়, বরং ছওয়াবের কাজ। কিন্তু ৩, ৫, ৭, ৪০ দিনেই খাওয়াতে হবে,
এটা নিষেধ।
বিস্তারিত দেখুন- আহকামে জিন্দেগী-৭৪; ইসলামি আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ; ফাতোয়ায়ে মাদানিয়া;
বিদআত অধ্যায়।
হাদিস নং-০৫, মুনাফিকের আলামত |
عَن
أبي هُرَيْرَة رَضِيَ اللَّهُ عَنْه ، أَن رَسُول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ : " آيَة الْمُنَافِق ثَلَاث
إذا حَدّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أخْلَفَ، وَإِذَا اؤتُمن خَانَ " .هِ
নোট : কোন কোন হাদিসে
চারটির কথা আছে।
প্রাসঙ্গিক আলেোচনা : মুনাফিক দুই প্রকার। যথা:
১.বিশ্বাসগত মুনাফিক: যে ব্যক্তি বিশ্বাসের
দিক থেকে মুনাফিক সে কাফের। অর্থাৎ অন্তরে কুফুরি বাহিরে ইসলাম, তার নিস্তার
নাই। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক ফরমান-নিশ্চয় মুনাফিকদের
জায়গা হলো জান্নামের তলদেশে। সূরা আন নিসা-১৪৫
২.কর্মের দিক
থেকে মুনাফিক: হাদিসে বর্ণিত ৩/৪টি
স্বভাবের কোন একটি পাওয়া গেলে তাকে কর্মের দিক থেকে মুনাফিক বলা হয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাতএর মতে-তারা কবিরা গোনাহকারী ফলে কঠিন শাস্তি হবে, তবে তওবা
করলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন। তারা কাফের নয়। সুতরাং মুসলমানের মধ্যে
উক্ত দোষ থাকলে তাকে মুনাফিক বলা যাবে না, তবে তোমার আমল ভাই মুনাফিকের মত বলা যাবে।
অন্য হাদিসে
মুনাফিকদের স্বভাব সম্পর্কে এসেছে- (১) মুনাফিকদের পক্ষে ফজর ও ঈশা অপেক্ষা কোন
কঠিন নামাজ নাই। যদি তারা জানত ঐ দুই নামাযে কি রয়েছে, তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলও আদায়ের জন্য আসত। বুখারি-মুসলিম
(২) ওটা মুনাফিকের নামাজ। যে সূর্য অস্তমিত যাওয়ার প্রতীক্ষায় বসে থাকে, করে, সূর্য অস্ত যেতে শুরু করে এমনকি শয়তানের দুই শিং-এর মাঝামাঝি চলে যায়, তখন সে
দাঁড়িয়ে চারটি ঠোকর মারে। (অর্থাৎ খুব দ্রুত পাখির দানা নেওয়ার মত সিজদা করে )
আল্লাহকে তারা খুব কমই স্মরণ করে। সহিহ মুসলিম-১৪৪৩
হাদিস নং-০৬,
ওসওয়াসা/মনের ধাঁধাঁ বা খটকা |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ " –متفق عليه
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- আমার
উম্মতের অন্তরের মধ্যে যে খটকা বা ধাঁধা সৃষ্টি হয়, আল্লাহ তাআলা তা ক্ষমা করে
দিবেন; যে পর্যন্ত তারা তা কার্যে পরিণত
না করে অথবা মুখে প্রকাশ না করে। বুখারি-২৫২৮; মুসলিম-১২৭; তিরমিজি-১১৮৩; নাসায়ি-৩৪৩৩
প্রাসঙ্গিক আলোচনা : ওসওয়াসা আরবি শব্দ
এর অর্থ-মৃদু ধ্বনি, মেয়েদের গহনার আওয়াজ। হাদিসের অর্থ: মনের কুকল্পনা
ও শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্ররোচনা, মনের খটকা: মনের সুচিন্তা ফেরেশতার সুমন্ত্রণাকে ইলহাম বলে। মানুষের মনে যে কু-কল্পনার উদয়
হয় তার চারটি স্তর রয়েছে।
(১) বিনা ইচ্ছায় হঠাৎ কল্পনা এসে যদি চলে যায়, একে হাজিছ
বলে। এটা মাফ।
(২) যা এসে অন্তরে স্থায়ী থাকে, তাকে খাতির বলে। এটাও মাফ।
(৩) কল্পনা আসার
পরে মনে যদি মহব্বত ও লাভের আকাঙ্খা জন্মে, তাকে হাম্ম বলে। এটা এ উম্মতের জন্য
মাফ। এটা তাদের আমলনামায়
লেখা হবে না,
যে পর্যন্ত না তারা একে কার্যে পরিণত করে।
(৪) কোন কু-কল্পনা মনে আসার পর যদি তাকে বদ্ধমূল করে নেওয়া
বা তার ওপর সংকল্প দৃঢ় হয়ে যায়, তাকে আযম বিল যজম বলে। এটাও মাফ, একদল উলামা
এ মত পোষণ করেন। কিন্তু অধিকাংশ আলিমই কুরআন-হাদিসের অন্যান্য নছের
(দলিলের) পরিপ্রেক্ষিতে আযমের ওপর মুয়াখাজা বা
কিছুটা শাস্তি হবে বলে মনে করেন। সূত্র : ফয়জুল কালাম-৪২;
আশিয়্যা
তবে অতীতের কোন গোনাহের কথা ইচ্ছা করে মনে করে এবং খায়েশাতের কোন গোনাহের
প্ল্যান-প্রোগ্রাম বানিয়ে (অর্থাৎ তাকে এভাবে ধরবো, ছুবো) মজা নেয়া; এটা অন্তরের খেয়ানত, হারাম, গোনাহের
কাজ। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন- চোখের চুরি (খেয়ানত)
এবং অন্তরের গোপন বিষয় (খেয়ানত) তিনি জানেন। সূরা গাফির-১৯
ঈমানের নিদর্শন কি? হজরত আবু উমামা
বাহেলি রা. হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করলেন, ঈমান কি? তিনি বললেন, যখন তোমার ভাল কাজ
তোমাকে আনন্দ দিবে এবং খারাপ কাজ
তোমাকে পীড়া দিবে, তখন তুমি মুমিন। সে পুনরায় জিজ্ঞেস
করলো, মন্দকাজ কি? তিনি বললেন, যখন কোন কাজ করতে তোমার অন্তরে বাধে/খটকা লাগে তখন (মনে
করবে তা মন্দ কাজ) তা ছেড়ে দিবে। মুসনাদে আহমদ
সুতরাং ওসওয়াসায় যদি মনে
কষ্ট লাগে, তাহলে বুঝতে হবে তার ঈমান তাজা।
ওসওয়াসা আসলে
করণীয় কি ?
Ø
প্রথম কাজ হলো ঐ দিকে মনযোগ
না দেওয়া ইচ্ছা করে মনকে অন্য দিকে ধাবিত করা, ভাল অন্য কোন চিন্তা করা।
Ø
আউযু বিল্লাহিমিনাশ শাইত্বনির
রাজীম পড়া।
Ø
আমানতু বিল্লাহি পড়া। আল্লাহর আজাবের কথা
চিন্তা করা।
Ø
আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি-কুদরত নিয়ে
গবেষণা করা কিন্তু আল্লাহকে নিয়ে চিন্তা করা যাবে না। কেননা সসীম বান্দা অসীমের সম্পর্কে
চিন্তা করার শক্তি নাই।
৬ নং হাদিস সমাপ্ত
-------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
পিতা-মাতা বা মৃত্যুর ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা
(১) হজরত আবু হুরাইরা রা.বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- আল্লাহ তাআলা বেহেশতে তার কোনো নেক বান্দার মর্যাদা বুলন্দ করবেন আর
সে বলবে, হে প্রভু আমার এ মর্যাদা বৃদ্ধি কি কারণে হলো (অর্থাৎ আমি তো এগুলো আমল
করিনি এতসব কোথায় থেকে এলো) তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার সন্তান তোমার জন্য
ক্ষমা চাওয়ার কারণে। মুসনাদে আহমদ
(২) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেন-কিয়ামতের দিন কোন
কোন বান্দা তার পাশে পাহাড়সমূহ বরাবর নেকি আর নেকির ঢের দেখে বলতে আরম্ভ করবে, আরে!
নেকির এ ঢের আসল কোথা হতে ? কিভাবে?
উত্তরে বলা হবে, এটা তোমার সন্তানাদি কর্তৃক তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার
ফসল। তাবারানি-শরহে ছুদুর
হাদিস নং-০৭, তাকদির/ভাগ্য-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন |
عن عبد الله بن عمرو ، قال : سمعت
رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : كَتَبَ
الله تعَالَى مَقَادِيرَ الخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخَلُقَ السَّموَاتِ وَالأَرْضَ
بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ وَعَرْشُهُ عَلَى المَاءِ অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- আল্লাহ তাআলা সকল সৃষ্টির তাকদির আসমান-যমিন সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাজার
বছর পূর্বে লিখে রেখেছেন। তিনি বলেন, তখন আল্লাহর আরশ পানির ওপর
ছিল। সহিহ আল-মুসলিম-২৬৫৩; তিরমিজি-২১৫৬;
মিশকাত-৭২
তাকদির কাকে বলে : তাকদির অর্থ পরিকল্পনা বা নকশা। আল্লাহ তাআলা সবকিছুর
সৃষ্টির করার পূর্বে সৃষ্টি জগতের একটা নকশা ও পরকিল্পনাও রেখেছেন, সবকিছুর পরিকল্পনা আবার লিখেও রেখেছেন। এ নকশা ও
পরিকল্পনাকেই বলা হয় তাকদির। ভাল ও মন্দ উভয়টার
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা, এ বিশ্বাস রাখা ফরজ বা অপিরহার্য। এর বিপরীতে কেউ
যদি ভাল বা ‘সু’এর জন্য একজজন সৃষ্টিকর্তা আর মন্দ বা‘কু’এর জন্য
সৃষ্টিকর্তা অন্য একজনকে মানে তাহলে সেটা ঈমানের পরিপন্থী। কুফর ও শিরক হয়ে যাবে।
যেমন- অনেকে ‘সু’ এর সৃষ্টিকর্তা
লক্ষ্মীদেবী এবং ‘কু’এর সৃষ্টিকর্তা শনি দেবতাক মানে। এটা কুফর ও শিরক।
আল্লাহ তাআলা না
চাইলে কেউ বিন্দু মাত্র ক্ষতি করতে পারবে
না : হজরত আব্বাস রা. বলেন, আমি
একদিন নবি (ﷺ) এর পিছনে ছিলাম, তখন তিনি
আমাকে সম্বোধন করে বললেন, হে বৎস! আমি
তোমাকে তিনটি কথা শিক্ষা দিতেছি- (১)
তুমি আল্লাহ তাআলার খেয়াল রাখ, তাহলে তিনিই
তোমার হেফাযত করবেন। তুমি আল্লাহ তাআলার খেয়াল রাখ, তাহলে তুমি তাঁকে তোমার সামনে পাবে। (২)
যখন তোমার কোন কিছুর সাহায্য চায়বে, তখন
আল্লাহর কাছেই চায়বে।(৩) মনে দৃঢ় বিশ্বাস রাখ যে, সমস্ত পৃথিবীর লোক একত্র হয়ে যদি তোমার উপকার করতে চায়, তবুও আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য যা কিছু লেখে রেখেছেন, তা ছাড়া অন্য কোন উপকার তারা কিছুতেই করতে পারবে না। তেমনিভাবে যদি
পৃথিবীর সব লোক একতাবদ্ধ হয়ে তোমার কোন ক্ষতি
করতে ইচ্ছা করে, তবুও আল্লাহ তাআলা যা কিছু লেখে রেখেছেন,
তা ব্যতীত অন্য ও কোন ক্ষতি তারা কস্মিনকালেও করতে পারবে না। জামে তিরমিজি-২৫১৬
উট বেঁধে, না ছেড়ে তাওয়াক্কুল করবো ? হজরত আনাস রা থেকে বর্ণিত। এক গ্রামবাসী
আরবিয় লোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞেস
করলো, উট বেঁধে তাওয়া করবো, না ছেড়ে দিয়ে তাওয়াক্কুল করবো ?
হুজুর (ﷺ) বললেন, উট বেঁধে তাওয়াক্কুল কর এবং খোদার উপর ভরসা কর। জামেউত তিরমিজি
আল্লাহর ওপর ভরসার
ফায়দা : কুরআনের বাণী- অতঃপর যখন কোন কাজের
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে
ভালবাসেন। সূরা ইমরান-১৫৯
হাদিসের বাণী- যদি তোমরা
আল্লাহ প্রতি যথাযত তাওয়াক্কুল (ভরসা) কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে অনুরুপ রিযিক দান
করবেন, যেরুপ পাখিকে রিযিক দিয়ে থাকেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের
হয় এবং দিনের শেষে ভরা পেটে ফিরে আসে। জামেউত তিরমিজি; সুনানে
ইবনে মাজাহ
তাকদির সম্পর্কে
বিশ্বাস রাখতে হয় কয়েকটি বিষয়ে :- সবকিছু
সৃষ্টি করার পর্বেই আল্লাহ তাআলা সবকিছু লিখে
রেখেছেন। সবকিছু ঘটার পূর্বেই আল্লাহ তাআলা অনাদী জ্ঞান এবং তার জানা ও
ইচ্ছানুসারে সবকিছু সংঘটিত হয়।
তিনি ভাল ও মন্দের
সৃষ্টিকর্তা। তবে মন্দ সৃষ্টির জন্য তিনি দোষী নন, বরং যে মাখলুক মন্দ উপার্জন করবে, সে দায়ী। কেননা মন্দ সৃষ্টি
মন্দ নয়, বরং মন্দ উপার্জন মন্দ। তাকদীরে যা আছে,তা-ই হবে
বলে হাত-পা ছেড়ে দেওয়া চলবে না আবার তাকদিরকে এড়িয়ে মানুষ
খোদার সৃষ্টির বাইরেও কিছু করে ফেলতে সক্ষম- এমনও মনে করা
যাবে না। মানুষের ওপর আরোপিত হুকুম-আহকাম, তার সাধ্যের
বাহিরে নয়। আল্লাহ তাআলার ওপর কোনকিছু ওয়াজিব নয়। তিনি কাউকে কিছু দিতে
বাধ্য নন, তার ওপর কারও কোন হুকুম চলে না, যা কিছু তিনি দান
করেন,সব কিছু তার রহমত ও মেহেরবানি মাত্র। সূত্র: আহকামে জিন্দাগী-৪৭-৪৮ পৃষ্টা
জানা দরকার যে, তাকদির
দুই প্রকার (১)
অকাট্য (অপরিবর্তনীয়) (২)
ঝুলন্ত। যেমন হাদিসে শরিফে এসেছে- দুআ দ্বারা তাকদির
পরিবর্তন হয়। আর এটাও মূল তাকদীরে লেখা
থাকে।
তাকদিরের উপর বসে
থাকবে না আমল করবে ? এর জবাবে একটি হাদিস
উল্লেখ করছি হজরত আলি রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- তোমাদের এমন কেউ নেই যারা দোযখের বা
বেহেশতের ঠিকানা লিখে রাখা হয়নি। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাহলে আমরা কি আমাদের সে লেখার উপর
নির্ভর করে আমল করা ছেড়ে দিব না? হুযুর বলবেন, (না) আমল করতে থাক। ---------
অতঃপর তিনি পাঠ করলেন---(সূরা লাইলের ৪-১০ আয়াত)। বুখারি; মুসলিম; মিশকাতুল মাছাবিহ-২০ পৃষ্ঠা
বিস্তারিত দেখুন- হায়াতুল
মুসলিমীন- হজরত থানভি রহ.
হাদিস নং-০৮,
সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব-কর্তব্য |
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلاَّ يُلِدَ عَلَى
الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ وَيُنَصِّرَانِهِ وَيُشَرِّكَانِهِ فَقَالَ
رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ لَوْ مَاتَ قَبْلَ ذَلِكَ قَالَ « اللَّهُ
أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ ».
অর্থ: আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-প্রত্যেক শিশু নিস্পাপ অবস্হায় ভূমিষ্ঠ হয়। এরপর তার
পিতামাতা তাকে ইয়াহুদি বানায়, খৃষ্টান বানায় এবং মুশরিক বানায় । তখন এক ব্যক্তি
বলল, ইয়া রসুলুল্লাহ (ﷺ) ! যদি সে এর আগেই মারা যায় তাহলে সে সম্পর্কে আপনার অভিমত কি ? তিনি বলেন, আল্লাহ ভাল জানেন তারা কি কাজ করত। সহিহ মুসলিম-২৬৫৮; বুখারি-১৩৫৮; দাউদ-৪৭১৪
নোট : বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় শব্দের কম-বেশি রয়েছে।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা : ইসলাম দাবি
হলো-ব্যক্তি নিজে পাপ তথা জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে পশাপাশি তার পরিবারকে দোযখের
আগুন থেকে রক্ষা করবে। যেমন-আল্লাহ তাআলার ঘোষণা- হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং
তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে বাঁচাও, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সূরা আত-তাহরিম-০৬
আমাদের উপর
সন্তানদের যে হকগুলো রয়েছে তা এখানে আলোচনা করা হলো :
১. কানে
আযান দেয়া : সন্তান দুনিয়াতে আসার পর গোসল দিয়ে
পরিষ্কার করে তার ডান কানে আযান দেয়া, তা ছেলে হোক বা মেয়ে
হোক। এটি পিতা-মাতার উপর এজন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ
দায়িত্ব যে, শিশুর কানে সর্বপ্রথম আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের
আওয়াজ পৌঁছে দেয়া এবং ওত পেতে থাকা শয়তান যাতে তার
কোন ক্ষতি না করতে পারে। হাদিসে এসেছে, আবু রাফে রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল
(ﷺ) কে হাসান ইবনে
আলির কানে আযান দিতে দেখেছি। সুনান আবু দাউদ-৫১০৫
২. সুন্দর
নাম রাখা : বাচ্চার জন্য
সুন্দর নাম নির্বাচন করা পিতা-মাতার
অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। হায়! আফসোস! আজকে
নাম শুনে বুঝা যায় না, মুসলিম না অমুসলিম। আবার অনেকে নাম
রাখার পর জিজ্ঞেস করে এর অর্থ কি? উচিত ছিল আগে জিজ্ঞেস করা। নাম
অর্থবহ হওয়া নামের সৌন্দর্য। কেননা, রাসূল (ﷺ) অনেক অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। আবু দাউদ
৪৯৫২-৪৯৬১
৩. আকিকা
করা : ইসলামি সংস্কৃতির
অন্যতম বিষয় হলো সন্তানের আকিকা
করা। ছেলের পক্ষ থেকে ২টি ছাগল এবং মেয়ের পক্ষ থেকে ১টি ছাগল আল্লাহর নামে যবেহ
করা। ৭ম দিনে আকিকা
করা সুন্নাত; তবে কোন কারণে ঐ দিনে করতে না পারলে ১৪, ২১ দিনে
অথবা জীবনের যে কোন সময় করা যাবে। কেননা রাসূল (ﷺ) নিজের আকিকা নিজে করেছেন। বায়হাকি
৪. সদকাহ
করা : ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সপ্তম দিবসে চুল কাটা এবং
চুল পরিমাণ রৌপ্য সদকাহ করা সুন্নাত। জামেউত তিরমিজি: ১৫১৯ এছাড়া রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) শিশুদেরকে খেজুর দিয়ে তাহনিক এবং বরকতের জন্য
দুআ করতেন। সহিহ বুখারি: ৩৯০৯; মুসলিম: ২১৪৬
৫. খাতনা করা : ছেলেদের খাতনা করানো একটি অন্যতম সুন্নাত। আল-মুজামুল
৬. তাওহিদ
শিক্ষা দেয়া : শিশু যখন কথা
বলা আরম্ভ করবে তখন থেকেই আল্লাহর তাওয়াহ্য়িদ শিক্ষা দিতে
হবে। ২০নং পৃষ্ঠায় ইবনে আব্বাস রা.এর হাদিস দ্রষ্টব্য
৭. কুরআন
শিক্ষা দান : ছোট বেলা থেকেই
সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিতে হবে। কেননা কুরআন শিক্ষা করা ফরজ। আলি রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের
সন্তানদের তিনটি বিষয় শিক্ষা দাও। তন্মধ্যে রয়েছে তাদেরকে
কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা ও কুরআনের জ্ঞান দাও। জামিউল কাবির
৮. সালাত
শিক্ষা দেয়া ও সালাত আদায়ে অভ্যস্ত করা : এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার যে পিতা -মাতা তার সন্তানকে সালাত শিক্ষা দিবেন এবং সালাত আদায়ে অভ্যস্ত করাবেন। নবি (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের সালাতের
নির্দেশ দাও সাত বছর বয়সে। আর দশ বছর বয়সে সালাতের জন্য মৃদু প্রহার
কর এবং বিছানা আলাদা করে দাও। আবু দাউদ-৪৯৫
৯. আদব
বা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া : সন্তানদের
আচরণ শিক্ষা দেয়া উপর দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভূক্ত। লুকমান আলাইহিস সালাম
তার সন্তানকে বললেন, আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যমীনে দম্ভভরে
চলাফেরা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে
পছন্দ করেন না। আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, তোমার
আওয়াজ নীচু কর; নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার
আওয়াজ। সূরা লোকমান, ১৮-১৯
১০. আদর
স্নেহ ও ভালবাসা দেয়া : সন্তানদেরকে
স্নেহ করা এবং তাদেরকে আন্তরিকভাবে ভালবাসতে হবে।
১১. দ্বীনি
এলম শিক্ষা দেয়া : সন্তানকে দ্বীনি
এলম শিক্ষা দেয়া ফরজ করা হয়েছে। কারণ দ্বীনি এলম না জানা থাকলে সে বিভ্রান্ত
এবং ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে। হাদিসে এসেছে- প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরজ। সুনানে ইবন মাজাহ- ২২৪
১২. প্রাপ্ত
বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করা : সন্তানদেরকে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত লালন-পালন করতে হবে এবং তাদের জন্য
প্রয়োজনীয় খরচ করতে হবে। উম্মে সলামাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবি (ﷺ) কে আমি জিজ্ঞেস করলাম আবু সলামার সন্তানদের জন্য আমি যদি খরচ করি
এতে কি আমার জন্য প্রতিদান রয়েছে? নবি (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ যতদিন তুমি খরচ করবে ততদিন তোমার
জন্য প্রতিদান থাকবে। সহিহ বুখারি- ৫৩৬৯
১৩. বিবাহ
দেয়া : সুন্নাহ পদ্ধতিতে
বিবাহ দেয়। যেমন হাদিস শরিফে-নিশ্চয়ই পিতার উপর সন্তানের হকের মধ্যে রয়েছে, সন্তান
প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিবাহ দেবে। জামিউল কাবির
১৪. দ্বীনের
পথে পরিচালিত করা : পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব হলো সন্তানদেরকে দ্বীনের পথে, কুরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনা করা, দ্বীনের বিধান
পালনের ক্ষেত্রে পরিচালিত করা ।
১৫. সন্তানদের
মাঝে ইনসাফ করা : রসূলুল্লাহ্
(ﷺ) এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন, তোমরা
আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো। সহিহ বুখারি-২৫৮৭
১৬. পাপকাজ,
অশ্লিলতা, বেহায়াপনা, অপসংস্কৃতি
থেকে বিরত রাখা : সন্তান দুনিয়ার আসার সাথে সাথে শয়তান
তার পেছনে লেগে যায় এবং বিভিন্নভাবে, ভিন্ন ভিন্ন রুপে,পোশাক-পরিচ্ছেদের মাধ্যমে, বিভিন্ন ফ্যাশনে, বিভিন্ন ডিজাইনে, বিভিন্ন শিক্ষার নামে জাহান্নামের
দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করে।
হাদিসে
এসেছে (১) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও
নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। সহিহ বুখারি-৫৮৮৫
(২) যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য
হবে। সুনান আবু দাউদ-৪০৩১
১৭. দুআ
করা : আমাদের সন্তানদের জন্য দুআ
করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে, আল্লাহর
নেক বান্দা তারাই যারা বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে
মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন। সূরা ফুরকান-৭৪
সম্মানিত পিতামাতাবৃন্দ আমরা কি সন্তানের হকগুলো পালন
করতে পেরেছি ? আসুন,
আমরা আমাদের সন্তানদেরকে নেকসন্তান হিসেবে গড়ে তুলি। যে সম্পর্কে
হাদিসে এসেছে, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়,
তিনটির একটি হলো, এমন নেক সন্তান- যে তার
জন্য দুআ করে। সহিহ মুসলিম-১৬৩১
আল্লাহ তাআলা আমাদের সন্তানদেরকে
কবুল করুন, তাদের হকসমূহ যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক
দিন। আমীন! সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ,
সৌদি আরব
হাদিস নং-০৯, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব |
عبدالله بن مسعود سَأَلْتُ النبيَّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ: أيُّ
العَمَلِ أحَبُّ إلى اللَّهِ؟ قالَ: الصَّلاةُ
علَى وقْتِها، قالَ:
ثُمَّ أيٌّ؟ قالَ: ثُمَّ
برُّ الوالِدَيْنِ، قالَ:
ثُمَّ أيٌّ؟ قالَ: الجِهادُ
في سَبيلِ اللَّهِ অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহর
সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি ? তিনি বললেন, সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম তাররপর
কোনটি ? তারপর তিনি বললেন, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা। সহিহ মুসলিম-৮৫, কিতাবুল
ঈমান; বুখারি-৫২৭; তিরমিজি-১৭৩; নাসায়ি-৬১০; দারেমি-১২৬১
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: আমরা এ পৃথিবীতে
অস্তিত্বের জন্য পিতা-মাতার কাছে ঋণী।তাই তো মহান আল্লাহ ও তার রাসূল তাঁদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের তাগিদ করেছেন।
পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব:
কুরআনুল কারিমের বাণী-(১) তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি
সদ্ব্যবহার করবে। পিতা-মাতা উভয়ে বা তাদের
একজন যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন তাহলে তাদেরকে উফ বলবে না, তাদেরকে
ধমক দিবে না এবং তাদের সাথে সম্মানজনক বিনম্র কথা বলবে। মমতাবশে তাদের জন্য
ভালবাসার ডানা অবনমিত করে রাখবে এবং বলবে- হে আমার রব! আপনি তাদেরকে দয়া করুন
যেমনিভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছেন। সূরা বানী ইসরাঈল, ২৩-২৪
(২) আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। সূরা আনকাবুত-৮
হাদিসের বাণী-(৩) এক লোক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার উত্তম ব্যহারের পাওয়ার জন্য কে সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত ? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে ?
তিনি বললেন, তোমার মা। সে আবার প্রশ্ন
করল, তারপর কে ? তিনি বললেন, তোমার
মা। সে আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে ? তিনি বললেন, তোমার পিতা। বুখারি-মুসলিম অত্র হাদিস
প্রমাণ বহন করে, পিতার তুলনায় মা তিন গুণ সদাচারণ পাওয়ার অধিকারী। কারণ, গর্ভে
ধারণ, ভূমিষ্ট ও দুগ্ধদানের ক্ষেত্রে কেবল মাকেই অবর্ণনীয়
কষ্ট সহ্য করতে হয়।
(৪) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি
আল্লাহ তাআলা তাকাবেন না। তাদের মধ্যে একজন হল, পিতা-মাতার অবাধ্য
সন্তান। সুনানে নাসায়ি; মুসনাদে আহমাদ, হাকেম
(৫)
হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- সে ব্যক্তির নাক ধুলি মলিন হোক, সে
ব্যক্তির নাক ধুলি মলিন হোক, সে ব্যক্তির নাক ধুলি মলিন হোক, তাঁকে বলা হলো কোন
ব্যক্তি হে আল্লাহর রাসূল ? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতামাতা উভয়কে কিংবা
একজনকে বার্ধক্যাবস্থায় পেল এবং সে তাদের খেদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না। সহিহ মুসলিম-৬১৮৯
(৬) হজরত আবু বাকারাহ রা. থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- প্রত্যেক পাপ (শিরক ছাড়া) আল্লাহ পাক
যতটুকু ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। কিন্তু পিতামাতার অবাধ্যতা ক্ষমা করেন না। বরং এর শাস্তি
আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেই তার মৃত্যুর পূর্বেই তাকে প্রদান করেন। সুননে বাইহাকি; মিশকাতুল মাছাবিহ-৪২১
মাতা-পিতার জন্য
সন্তানের করণীয়: পিতা-মাতার হক ১৪টি
জীবিত অবস্থায় ৭টি
১. আজমত
অর্থাৎ পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
২. মনে
প্রাণে মুহাব্বত করা।
৩. সর্বদা
তাঁদেরকে মেনে চলা।
৪. তাঁদের
খেদমত করা।
৫. তাঁদের
জরুরত (প্রয়োজন ) পুরা করা।
৬. তাদেরকে
সর্বদা আরাম পৌঁছানোর ফিকির(চিন্তা-ভাবনা)
করা।
৭. নিয়মিত
তাঁদের সাথে সাক্ষাৎ ও দেখাশুনা করা।
মৃত্যুর পর ৭টি
১. তাঁদের
মাগফেরাতের জন্য দুআ করা।
২. সওয়াব
রেছানী করা (পৌঁছানো)।
৩. তাঁদের
সাথী-সঙ্গী ও আত্মীয়-স্বজনদের সম্মান
করা।
৪. সাথী-সঙ্গী ও আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য করা।
৫. ঋণ পরিশোধ
ও আমানত আদায় করা।
৬. শরিয়ত
সম্মত ওসিয়ত পুরা করা।
৭. মাঝে মাঝে
তাঁদের কবর যিয়ারত করা।
সূত্র: তোহফায়ে
সুন্নাহ-মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান
হাফিজাহুল্লাহ
হাদিসনং-১০,
সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু (কবিরা গোনাহ) |
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى
الله عليه وسلم-
قَالَ :« اجْتَنِبُوا
السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ ». قَالُوا : يَا
رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ؟ قَالَ :« الشِّرْكُ
بِاللَّهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ
بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَالتَّوَلِّى يَوْمَ
الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْغَافِلاَتِ الْمُؤْمِنَاتِ ». হজরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা
করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- তোমরা
সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেচে থাকবে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রসূলাল্লাহ
ঐ ধ্বংসাত্মাক বিষয় গুলি কি ? তিনি জবাবে বলেন-১- আল্লাহর সাথে শরিক করা, ২- যাদু করা, ৩- অন্যায়
ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ তাআলা হারাম করে দিয়েছেন, ৪- সুদ খাওয়া, ৫-এতিমের
সম্পদ আত্মসা করা, ৬- জিহাদের
ময়দান থেকে পলায়ন করা, ৭- সতী
সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া। বুখারি-২৭৬৬; মুসলিম-৮৯; আবু দাউদ-২৮৭৪
প্রাসঙ্গিকআলোচনা: (১)
শিরক সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন-নিশ্চয় শিরক বড়
গোনাহ। সূরা লোকমান-১৩
শিরক দুই প্রকার: ১. শিরকে
আকবার: আল্লাহর সাথে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর ইবাদত
করা।
২. শিরকে
আসগার বা ছোট শিরক: রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্য
নিয়ে আমাল করা ইত্যাদি। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন- অতএব দুর্ভোগ সে সব মুসল্লীর
যারা তাদের সালাত সম্পর্কে বে-খবর যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে। সূরা মাউন, ৪-৬
(২) যাদু করা
হারাম। বর্তমানে যাদুর মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করা, গণকের কাছে যাওয়া, রাশি চক্র বিশ্বাস করা মুসলিম সমাজে মহামারি রুপ ধারণ করেছে অথচ গণক, জ্যোতিষীর সম্পর্কে হাদিসে এসেছে,
যে ব্যক্তি গণকের কাছে যায় এবং (তার কথা সত্য মনে
করে) তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করে তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল করা
হয় না। মুসলিম-২২৩০; মুসনাদে আহমদ-১৬২০২,
২২৭১১
(৪) সুদ খাওয়া
হারাম আল্লাহ তাআলা বলেন,যারা সুদ খায় তারা দাড়াবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান
স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দেয়। সুরা বাকারা-২৭৫
রাসূলে কারিম (ﷺ) বলেছেন- সুদের গোনাহের ৭৩টি
স্তর রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে হাল্কা হল নিজ মাতাকে বিবাহ করা। সর্বনিম্নস্তর
হলো কোন মুসলিমের ইজ্জত সম্ভ্রম হরণ করা। হাকেম
(৫)
আল্লাহ তাআলা বলেন-যারা এতিমের মাল অন্যায়ভাবে
খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং অতিসত্তরই তারা
অগ্নিতে প্রবেশ করবে। সূরা আন নিসা-১০
কবিরা গোনাহ থেকে
বাঁচার ফযিলত: মহান আল্লাহ বলেন- যে সকল বড় গোনাহ
সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সে সব বড় গোনাহ থেকে বেচে থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের ত্রুটি
বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দিব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব। সূরা আন-নিসা-৩১
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা যারা কবিরা গোনাহ থেকে
বেঁচে থাকবে তাদেরকে দয়া ও অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন,
কারণ ছগিরা গোনাহ বিভিন্ন নেক আমাল যেমন- সালাত, সওম, জুমআ, রমাদান ইত্যাদির মাধ্যমে মাফ হয়ে যাবে।
কবিরা গোনাহ কাকে বলে ? এ সম্পর্কে
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রহ. বলেন, কবিরা গোনাহ হল: যে সব গোনাহের কারণে
দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক শাস্তির বিধান আছে এবং আখিরাতে শাস্তির ধমক দেয়া
হয়েছে।
কবিরা গোনাহর
তালিকা: নিম্নে উল্লিখিত হাদিসে বর্ণনা ব্যতীত কবিরা গোনাহর তালিকা দলিলসহ, দেওয়া
হলো:
১. মানুষ হত্যা করা। দলিল- সূরা ফোরকান, ৬৮-৭০
২. সালাত /নামাজ
ছেড়ে দেওয়া। দলিল: সূরা মারইয়াম,৫৯-৬০; মুসলিম-১১৬; মুসনাদে
আহমদ-২১৮৫৯
৩. যাকাত আদায় না
করা।
দলিল:
সূরা আত তওবা-৩৪; সূরা আলে ইমরান-১৮০
৪ .সামর্থ থাকা
সত্ত্বেও সিয়াম/রোজা না রাখা। দলিল: সূরা বাকারা,১৮৩-১৮৫
৫. সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ না করা। দলিল: সূরা আলে
ইমরান-৯৭; জামেউত তিরমিজি-হ্জ্ব অধ্যায়
৬. বা-মা’র অবাধ্য
হওয়া। দলিল: সূরা লোকমান-১৪; সূরা আহকাফ-১৫; বুখারি-৬৪৬০;সুনানে বাইহাকি;মিশকাত-৪৬১
৭. আত্মীয়তার
বন্ধন ছিন্ন করা। দলিল: সূরা মুহাম্মাদ,২২-২৩;সহিহ মুসলিম-৪৬৩৩
৮. যিনা-ব্যভিচার
করা।
দলিল:
সূরা আননূর-০২; সূরা মুমিনুন,৫-৬; ইসরা-৩২; মুসলিম:৪৮০২
৯. সমকামিতা ও
স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাস করা। দলিল: সূরা আরাফ,৮০-৮১; জামেউত তিরমিজি-১
১০.
আল্লাহ এবং তার রাসূলের উপর মিথ্যা আরোপ করা। দলিল: সূরা
যুমার-৬০; বুখারি-১০৭
১১.শাসক
ব্যক্তি কর্তৃক প্রজাদেরকে ধোকা দেয়া এবং তাদের উপর অত্যাচার করা। দলিল: সূরা আশ-শূরা-৪২; মুসলিম-৪৮৬৭; বুখারি-২২৬৭
১২.
অহংকার,আত্মগরিমা,হটকারিতা। দলিল: সুরা নাহল-২৩, মুসলিম-১৩১
১৩. মিথ্যা
সাক্ষ্য দেওয়া। দলিল: সূরা মায়েদা-২; সূরা ফোরকান-৭২; বুখারি-৬৪৬০
১৪. নেশা বা মাদক
দ্রব্য সেবন করা। দলিল: সূরা বাকারা-২১৯;সূরা-মায়েদা-৯০;
মুসলিম-৩৭৩৪;সুনানে আবু দাউদ-৩১৮৯
১৫. জুয়া খেলা। দলিল: সূরা
মায়েদা-৯০
১৬. গনীমতের মাল
আত্মসাৎ করা। দলিল: সূরা ইমরান -১৬১
১৭. চুরি করা। দলিল: সূরা মায়েদা-৩৮;সূ রা
নিসা-২৯
১৮. ডাকাতি করা। দলিল: সূরা
মায়েদা-৩৩
১৯. মিথ্যা শপথ
করা।
দলিল:
বুখারি-৬৬৪৭,৬১৮২
২০.
যুলুম-অত্যাচার করা। দলিল: শূরা-২২৭; মুসলিম-৪৬৭৫
২১.
চাঁদাবাজি করা। দলিল: সূরা নিসা-২৯; শূরা-৪২;
মুসলিম-৭৬৮৬
২২. হারাম খাওয়া। দলিল: সূরা বাকারা-১৮৮,১৮৬, ১৭২; সূরা
মুমিনুন-৫১; সহিহ মুসলিম-১৬৮৬
২৩. আত্মহত্যা করা। দলিল: সূরা নিসা; ২৯-৩০;
মুসলিম-১৫৮
২৪.মিথ্যা। দলিল:
সূরা-ইমরান-৬১, বুখারি-৫৬২৯; তিরমিজি-২১০০
২৫. আল্লাহর বিধান
পরিত্যাগ করা। দলিল: সূরা মায়েদা-৪৪,৪৫,৪৭
২৬. ঘুষ খাওয়া। দলিল: মুসনাদে
আহমদ-৬৬৮৯
২৭. মহিলা পুরুষের
এবং পুরুষ মহিলার বেশ ধারণ করা। দলিল: সুনানে আবু
দাউদ-৩৫৭৪
২৮. আপন স্ত্রীকে
ব্যভিচারের সুযোগ দেওয়া। দলিল: মুসনাদে আহমদ-৫৮৩৯
২৯. হালালকারী এবং
যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ে গোনাহগার।দলিল: আহমাদ:৭৯৩৭এর ব্যাখ্যা হল: কেউ কারো তিন
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিবাহ করে যে, সে সহবাস করে আবার তালাক
দিয়ে দিবে, যাতে প্রথম স্বামী পুণরায় বিবাহ করতে পারে,
এই ব্যক্তিকে মুহাল্লিল বা হালালকারী বলে।
৩০. পেশাব থেকে না
বাঁচা। দলিল: মুসলিম-৬১১
৩১. চতুষ্পদ
জন্তুর চেহেরা বিকৃতি করে। দলিল: সুনানে দাউদ-২২০১
৩২. সত্যকে গোপন
করা এবং দুনিয়ার জন্য এলমে দ্বীন শিক্ষা করা। দলিল: সূরা বাকারা,১৫৯-১৬০;
সুনানে ইবনে মাজাহ-১৫৬;সু নানে আবু দাউদ-৩১৭৯
৩৩. খেয়ানত করা। দলিল:সূরানিসা-১০৭; সূরা আনফাল-২৭; বুখারি-৩৩
৩৪. খোঁটা দেওয়া। দলিল: সূরা
বাকারা-২৬৪; মুসলিম-১৫৫
৩৫. তাকদিরকে অস্বীকার
করা।
দলিল:কিতাঁবুস
সুন্নাহ- ইবনে আবি আসিম আশ-শায়বানি
৩৬. গীবত করা। দলিল: সূরা
হুজুরাত-১২
৩৭. চোগলখুরী করা। দলিল: বুখারি
৩৮. অভিশাপ দেওয়া।দলিল: বুখারি-৪৬;সুননে আবু
দাউদ-৪৬৫৯
৩৯. ওয়াদা রক্ষা
না করা। দলিল: সূরা মায়েদা ০১; বুখারি-৩৩
৪০. গণক বা জ্যোতির্বিদদের নিকট গমন এবং তাদের কথা বিশ্বাস করা। দলিল: মুসনাদে আহমদ-১২৫
৪১. স্বামীর
অবাধ্য হওয়া। দলিল: বুখারি-২৯৯৮; আবুদাউদ-২১৪৩
৪২. প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা। দলিল: বখারী-৪৭৮৩,৫৪৯৮
৪৩. অন্যায়ভাবে
বিদ্রোহ করা। দলিল: সূরা শূরা-৪২; মুসনাদে আহমদ-৪২০১
৪৪. মুসলমানকে
কষ্ট ও গালি দেওয়া। দলিল: সূরা আহযাব-৫৮; বুখারি-৫৫৭২;
মুসলিম-৪৭৩৪
৪৫. প্রতিবেশীকে
কষ্ট দেওয়া। দলিল: মুসলিম-৬৬
৪৬. টাখনুর নিচে
কাপড় পরিধান করা। দলিল: বুখারি-৫৩৪১,৫৩৪২
৪৭. সোনা-রুপার
পাত্রে পানাহার করা। দলিল: বুখারি-৫২০৩
৪৮. পুরুষের সোনা
ও রেশমী কাপড় পরিধান করা। দলিল: বুখারি-৬০৫৫
৪৮. নিজের পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে স্বীকৃতি দেয়া। দলিল: বুখারি-৩৯৮২
৪৯. মাপে বা ওজনে
কম দেওয়া। দলিল: সূরা মুতাফফীন-০১
৫০. জুমাআর আযানের
পরও দুনিয়াবী কাজ করা ও জুমাআর সালাত
পরিত্যাগ করা। দলিল: সূরা
জুমাআ-০৮
৫১. আল্লাহর রহমত
হতে নিরাশ হওয়া। দলিল: সূরা যুমার-৫৩,সহিহ মুসলিম-২৫
৫২. মুসলমানকে
কাফের, বেঈমান,নাস্তিক বলে গালি বা আখ্যায়িত করা। দলিল: সূরানিসা-৯৪;
বুখারি-৫৬৮৩
৫৩. ধোঁকা
দেওয়া। দলিল: সূরা বাকারা-০৮; সুনানে বাইহাকি
৫৪. কুধারণা ও
গোপন বিষয় তালাশ করা। দলিল: সূরা হুজুরাত-১২
৫৫. সাহাবা
কেরামদের গালি দেওয়া। দলিল: জামেউত তিরমিজি-৪২৪০;
বুখারি-৩৩৯৮; তাবারানি
৫৬. অন্যায় বিচার
করা। দলিল: সূরা
ছোদ-২৬; সূরা নিসা-৫৮,১০৫; তিরমিজি-১২৪৪
৫৭. আইল (জমিনের
সীমানা) ঠেলা। দলিল: মুসলিম-৩৬৫৭
৫৮. বিদআত বা
গোমরাহি চালু করা। দলিল: সূরা নিসা-৮৫; মুসলিম-১৬৯১
৫৯. নারী অন্যের
চুল ব্যবহার করা, শরীরে উলকি আকা, ভ্রু উপড়ানো, দাতঁ ফাক করা। দলিল: মুসলিম- ৩৯৬৬;
বুখারি- ৫৪৭৭
৬০. ধারালো অস্ত্র
দিয়ে কারো দিকে ইশারা করা। দলিল: মুসলিম-৪৭৪১
৬১ .হারাম শরিফে
নাফারমানি করা। দলিল: সূরা হজ-২৫; মুসলিম-৭৬৮২
৬২. নিষিদ্ধ সময়ে
স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা। দলিল: সূরা
বাকারা-২২২
৬৩. মিথ্যা হাদিস
বলা। দলিল: বুখারি-১০৯
৬৪. মনগড়া তাফসির
করা। দলিল: জামেউত তিরমিজি-৩২০৬
৬৫. মানুষকে
অবজ্ঞা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। দলিল: সূরা
লোকমান-১৮
৬৬. উপহাস করা। দলিল: সূরা
হুজুরাত-১১
৬৭. আলেম-হাফেজ-ক্বারীদের অসম্মান ও অবজ্ঞা করা। দলিল: আবু দাউদ-২০২২
৬৮. অপবাদ
দেওয়া। দলিল: সূরা-নিসা-১১২
৬৯. অন্যায়ভাবে
ভূমি আত্মসাতকারী। দলিল: বুখারি-২৪৫৪
৭০. পশু-পাখিকে কষ্ট দেওয়া। দলিল: সহিহ মুসলিম-৫৯৮৯
নোট: এ বিষয়ে
বিস্তারিত দেখুন-‘কিতাবুল কাবায়ের’কবিরা গোনাহ ইমাম হাফিজ শামসুদ্দীন যাহাবি রহ. ইসলামিক
ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ; কবিরা গোনাহ আল্লামা ইবনে হাজার রহ.
আবরার প্রকাশনী; ফাতহুল বারি শরহে বুখারি;
আশআতুল লুমআত; এক মিনিটের মাদ্রাসা-শাহ আবরারুল হক রহ. ও শাহ হাকীম মুহাম্মদ আখতার রহ.।
১০নং
হাদিস সমাপ্ত
-------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে একবার সূরা ইয়াসিন পাঠ করা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন- প্রত্যেক বস্তুর একটি কলব বা মূল আছে, আর কুরআনের কলব হচ্ছে সূরা ইয়াসিন। যে কেহ (একবার) ইয়াসিন সূরা পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে এর কারণে দশবার কুরআন (দশ খতম) পাঠ করার সওয়াব দিবেন। জামেউত
তিরমিজি; সুনানে দারেমি
হাদিস নং-১১, সালাম বিনিময় বা অভিবাদন ইসলামি পদ্ধতি |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : وَالَّذِي
نَفْسِي بِيَدِهِ لا تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا ، وَلا تُؤْمِنُوا
حَتَّى تَحَابُّوا ، أَوَلا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ
تَحَابَبْتُمْ ؟ أَفْشُوا السَّلامَ بَيْنَكُمْ
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা রা.
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-তোমরা
বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না , যতক্ষণ না তোমরা ঈমান গ্রহণ করবে আর ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান গ্রহণ হবে না,
যতক্ষণ না তোমরা পরস্পর ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দিব যার ওপর আমল করলে তোমাদের
পারস্পরিক ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে ? তোমরা সালামের খুব প্রচলন কর অর্থাৎ পরিচিত-অপরিচিত প্রত্যেককে সালাম কর। মুসলিম-৫৪;
তিরমিজি-২৬৮৮; ইবনে
মাজাহ-৬৮; আহমদ-৯০৮৪,১০৬৫০
সালামের সূচনা: আল্লাহ তাআলা সর্ব
প্রথম আদম (আ.) কে সালামের
শিক্ষা দেন। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা
আদম (আ.)কে সৃষ্টি করে বললেন, যাও
ফেরেশতাদের দলকে সালাম দাও এবং মন দিয়ে শুন তার তোমার
সালামের কি জবাব দেয়। এটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সালাম
তাই আদম (আ.) গিয়ে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। ফেরেশতাগণ
জবাব দিলেন, আসসালামু আলাইকা
ওয়া রহমাতুল্লাহ। ফেরেশতাগণ রহমাতুল্লাহ বৃদ্ধি করলেন। মিশকাত-৪৬২৮,শিষ্টাচার অধ্যায়, সালাম
অনুচ্ছেদ।
সালামের মহত্ব : ইসলাম
পূর্ব যুগে আরবরা পরস্পরে সাক্ষাতে একে অন্যকে حياك
الله বা انعم
الله بك عينا বা انعم
صباحاবলতো, ইসলাম এসে السلام عبيكم বলার নীতি প্রচলন করেন। আল্লামা ইবুল আরাবি রহ. আহকামুল
কুরআন গ্রন্থে লেখেন-সালাম শব্দটি আল্লাহ তাআলার উত্তম
নামসমূহের অন্যতম। السلام عبيكم এর অর্থ এই যে,الله
رقيب عليكم অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদের
রক্ষক।
জগতর প্রত্যেক
জাতির মধ্যে পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতের সময় ভালবাসা ও সম্প্রীতি
প্রকাশার্থে কোন না কোন বাক্য আদান-প্রদান করার রীতি চালু আছে। যেমন হ্যালো, গুডমর্নিং, গুড এ্যাভিনিং, নমস্কার, কুর্ণিশ,
আদাব ইত্যাদি বলে থাকে। কিন্তু তুলনা করলে দেখা
যায়, ইসলামের সালাম যতটুকু অর্থবোধক, অন্য কোন সালাম ততটুকু নয়। কেননা এতে শুধু
ভালবাসাই প্রকাশ পায় না; বরং
ভালবাসার যথার্থ হকও আদায় হয়। মোট্কথা ইসলামি সালামে বিরাট অর্থগত ব্যাপ্তি রয়েছে। যেমন-(১)
এতে রয়েছে আল্লাহর যিকির (২) আল্লাহর কথা মনে করে দেওয়া (৩) মুসলমান ভাইয়ের প্রতি ভালবাসা ও সম্প্রীতি প্রকাশ (৪)
মুসলমান ভাইয়ের জন্য সর্বোত্তম দুআ (৫) ভাইয়ের সাথে এ চুক্তি যে,আমার হাত ও মুখ দ্বারা আপনার কোন কষ্ট হবে না। সূত্র: তাফসিরে
বুরহানুল কুরআন-৩৭৬; মাআরিফুল কুরআন
ইসলামে কোন আমল
উত্তম? এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন আমল উত্তম ? তিনি বলবেন, (অনাহারিকে) খানা
খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপিরিচিত
সকলকে সালাম করা। বুখারি কিাতাবুল ঈমান
সালাম করার
উপকারিতা: লক্ষ্য করলেই দেখা
যাবে কোন ব্যক্তি কারো সাথে
সাক্ষাতের সময় হ্যালো সম্বোধন করে, তাহলে এ
সম্বোধনের দ্বারা তার কি কোন ফায়দা হল ? এ বলার দ্বারা না
দুনিয়ার কোন কোন ফায়দা হল, না আখেরাতের কোন ফায়দা ? অথচ السلام عليكم و رحمة الله و
بركاته এর মাধ্যমে ঐ ব্যক্তি মূল্যবান তিনটি দুআ করে দিল ও কমপক্ষে দশ নেকি। (১) আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক (২)বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত এবং (৩) তার পূণ্য ও বরকত।
সালামের গুরুত্ব : যে
ব্যক্তি সালাম করে তাকে অমুসলিম বলা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন- এবং এমন
ব্যক্তিকে যে তোমাদের সালাম করে এরুপ বলো না যে, তুমি
মুসলমান নও। সূরা নিসা-৯৪
মৃত্যু শয্যায় সালাম: মহান
আল্লাহ কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন- ঐ সকল লোক যাদের প্রাণ
ফেরেশতা কবয করেন ঐ অবস্থায় যে,তারা (শিরক
হতে)পবিত্র। তখন ফেরেশতাগণ বলতে থাকেন আসসালামু আলাইকুম (তোমার ওপর
শান্তি বর্ষিত হোক) তোমরা বেহেশতে প্রবেশ কর, নিজেদের (সৎ) আমলের কারণে। সূরা নাহল-৩২
বেহেতশতে সালাম: কুরআনুল
মাজিদে অনেক জায়গায় বেহেশতের সালামের কথা
উল্লেখ করেছেন। (১) সেখানে তারা (মুমিনরা) সালাম ব্যতীত অসার কোন কথাবার্তা শুনবে না। সূরা মারইয়াম-৬২
(২) করুণাময় পালনকর্তা পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম। সূরা ইয়াসিন-৫৮
(৩) তথায় তারা অবান্তর ও খারাপ কোন কথা শুনবে না, কিন্তু
শুনবে শুধু সালাম আর সালাম। সূরা ওয়াকিয়াহ, ২৫-২৬
সালাম সম্বন্ধে কতিপয়
বিধান:
Ø
কথা-বার্তা বলার পূর্বে সালাম। জামে তিরমিজি; মিশকাত-৩৯৯
পৃ.
Ø
ঘরে, অফিসে প্রবেশের
পূর্বে সালাম। সূরা নূর-২৭
Ø
সাক্ষাতে-বিদায়ে সালাম। সুনানে নাসায়ি, মিশকাত-৩৯৭
পৃষ্ঠা
Ø
আরোহী ব্যক্তি হাঁটা
ব্যক্তিকে, হাঁটা ব্যক্তি বসা বা দাঁড়ানো ব্যক্তিকে সালাম দিবে। বুখারি; মুসলিম
Ø
সালামের সময় হাত দিয়ে ইশারা
বা হাত কপালে কিংবা মাথা ঝুঁকবে না। তবে দূরবর্তী লোকের ক্ষেত্রে শুধু বোঝানোর জন্য ইশারা করা
যেতে পারে। জামেউত তিরমিজি,মিশকাত-৩৯৯
Ø
একদলকে সালাম দিলে, একজন
জবাব দিলে যথেষ্ট হবে। সুনানে বাইহাকি; মিশকাত-৩৯৯ পৃষ্ঠ
Ø
সালাম দাতা ‘আসসালামু
আলাইকুম’ বললে, তার জবাবে ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম’ বলা। বৃদ্ধি করে দিলে আরও
উত্তম। সূরা নিসা-৮৬
Ø
সালামে ওয়া বারাকাতুহ-এর পর শব্দ
বাড়ানো ঠিক নয়। মুয়াত্তা মালেক
Ø
কোন মজলিসে মুসলিম-অমুসলিম
থাকলে মুসলমানেরর নিয়তে দিবে কিংবা নিম্নরুপ বাক্যেও সালাম দেওয়া যায়। আসসালামু আলা মানিত্তাবাল হুদা। মুসান্নেফে আবি শায়বা
Ø
আবু হুরায়রা (রা.) হতে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ছোট বড়কে সালাম দিবে, পথচারী বসা ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোকদেরকে সালাম প্রদান করবে। (মিশকাত,৬৪৩২-৩৩) তাই শিক্ষকের উচিত ক্লাসে ঢুকে সালাম দেয়া। অথচ আমাদের সমাজে দেখা
যায় উল্টো।
Ø
অমুসলিম সালাম দিলে
জবাবে ‘আলাইকা’বা ‘ওয়াআলাইকুম’ বলা। বুখারি, মুসান্নেফে
আব্দুর রাযযাক
Ø
কোন পাপাচার ব্যক্তিকে সালাম
দেওয়া মাকরুহ। কিতাবুল আযকার
মুসাফাহার বিধান:
মুসাফাহা হল সালামের
পরিপূরক। মুসাফাহা করা সুন্নাত।
Ø উভয় হাতে মুসাফাহা করা সুন্নাত।
Ø গায়রে মাহরাম নারীর সাথে মুসাফাহা হারাম।
Ø মুসাফাহা করতে গিয়ে কাউকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়, কেননা এটা সুন্নাত আর কষ্ট দেওয়া
হারাম।
Ø মুসাফাতে গোনাহ মাফ হয়।
Ø এক নারী অপর নারীর সাথে মুসাফাহা করতে পারে।
تهذيب و تعليم الدين ماجوذ
از اسلام বিস্তারিত দেখুন- ফয়যুল কালাম, ৩৮৭-৩৯৩ পৃষ্ঠা; নামাজ সালাম মুসাফাহা ও দুআর মাসনূন তরিকা-
জাস্টিস আল্লামা তাকি উসমানি দা.বা., আল-ইসলাম পাবলিকেশন্স।
হাদিস নং-১২, পানাহারের আদব বা
শিষ্টাচার |
عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ قَالَ أسلم رجل وكان يأكل أكلا كثيرا فلما
أسلم جعل يأكل أكلا قليلا فقال رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم إن الْكَافِرُ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ
وإن المؤمن يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ
অর্থ: হজরত হুরাইরা
রা. হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি খুব বেশি পরিমাণে
আহার করতো। সে ইসলাম গ্রহণ করলে অল্প আহার করতে লাগলো। ব্যাপারটি নবি (ﷺ)-এর নিকট ব্যক্ত করলে, তিনি বললেন,
মুমিন ব্যক্তি এক উদর খায় আর কাফের সাত উদরে খেয়ে থাকে। বুখারি-৫৩৯৭;
মুসলিম-২০৬২; ইবনে মাজাহ-৩২৫৬; মুয়াত্তা মালেক-২৬৭৪
নোট : বুখারির বর্ণনায়
শব্দের কিছু পরিবর্তন রয়েছে।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: আলোচ্য হাদিসে
উদ্দেশ্য এই যে, মুমিন ব্যক্তি তার প্রত্যেক কাজেই ইবাদত-বন্দেগির প্রতি দৃষ্টি রাখবে। এমনকি পানাহারের মধ্যেও সে
সতর্কতা অবলম্বন করবে। আর কাফেরদের সেই বালাই নাই; ভোগ- বিলাসই
তাদের একমাত্র কাম্য, তাই একজনে সাতজনের পানাহারে তৃপ্তি লাভ
করে।
অতিভোজনের ক্ষতিসমূহ : জীবন ধারণের
জন্য খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি, তবে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে
শারীরিক-আত্মিক নানাবিধ ক্ষতি রয়েছে।
যেমন-১. নফস ও শয়তান প্রবল হয়।
২. ইবাদতে অলসতা
আসে।
৩. অন্তরে অন্ধকার
আসে।
৪. জেহেন (বুদ্ধি) লোপ পায়।
৫. দুশ্চিন্তা
গ্রস্ততা ও মনস্তাত্ত্বিক রোগ।
৬. মস্তিষ্কের
রোগ।
৭. চক্ষুরোগ।
৮. জিহ্বা ও গোলার
রোগ।
৯. বক্ষ ও ফুসফুসের
ব্যাধি।
১০. হৃয়রোগ।
১১. ডায়াবেটিস।
১২. উচ্চরক্ত চাপ।
১৩. মস্তিষ্কের
শিরা ফেটে যাওয়া।
বিস্তারিত দেখুন- ইমাম গাজালি
রহ. এর –কিমিয়ায়ে সাদাত; মুসলিম চরিত্র
গঠন; আল্লামা শারণি রহ. এর –সিরাতুল আউলিয়া।
পেটকে তিন ভাগ করতে
হবে: আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে মহাবিজ্ঞানী
বিশ্ব নবি হজরত মুহাম্মাদ
বলেছেন-পেটের এক তৃতীয়াংশ ভাগ আহারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানির
জন্য আর এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য। সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৩৪৯
বর্তমান মেডিক্যাল স্যায়েন্স একথার
ওপর একমত হয়েছে। আমরা জানি দেহের ৭৫% পানি, সুতরাং পানির কত
প্রয়োজন। যেমন-১. খাদ্য হজম করতে ২. শরীরের তাপমাত্রা
নিয়ন্ত্রণ করতে ৩. শরীরের অপয়োজনীয় দূষিত বর্জ নির্গত করতে ৪.
শরীরের অম্ল-ক্ষারের স্বাভাবিকতা ঠিক রাখতে রক্ত
তৈরি করতে ৫. হরমোন তৈরি করতে। অতিরিক্ত ওজন, মেদকমানোর
জন্য এ মূলনীতি মানতে হবে।
ফ্যাট (মেদ),
ওভার ওয়েটের (অতিরিক্ত ওজন) কারণ ও প্রতিকার :
শরীরে, পেটে মেদ মজা
এবং অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য আজ অনেকে চিন্তিত, বিভিন্ন হারবাল
এর সরণাপন্ন হচ্ছে। আসুন কেন মেদ জমে জেনে নিই, ধরুন- আপনার
প্রতিদিন ২০০০ (দুই হাজার) ক্যালিরির প্রয়োজন,
আপনি খাদ্য গ্রহণ করলেন
৩০০০ (তিন হাজার) ক্যালিরির, এখন ৩০০০-২০০০= ১০০০ ক্যালিরি একদিন, আর
একমাসে ১০০০ × ৩০ = ৩০,০০০ (ত্রিশহাজার ) অতিরিক্ত ক্যালিরি। এটাই আপনার শরীরের
ফ্যাট করবে। ৩৫০০ ক্যালিরি= এক পাউন্ড (এক কেজি= ২.২পাউন্ড) /হাফ কেজি শরীরে ওজন
বা ফ্যাট হয়। সুতরাং পরিমিত ক্যালিরি খাবার প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে আর যদি
অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করি, তাহলে সেটা Burn বা পোড়তে/ক্ষয় করতে হবে,
পরিশ্রম-ব্যায়াম-হাঁটার মাধ্যমে। নিম্নে খাবারের ক্যালরি
মান (Food Calorie Value) দেওয়া হলো:
প্রস্তুতকৃত |
পরিমাণ |
ক্যালরি (কিলো.) |
গরুর গোস্ত |
১কাপ |
৩৪০ |
খাশির গোস্ত |
১কাপ |
৩২৫ |
মুরগির গোস্ত |
১কাপ |
৩০০ |
কাস্টার্ড কেক |
১টি (মধ্যম) |
৩০০ |
সাদা চালের ভাত |
১ কাপ |
২০০-২৯০ |
চিকেন বিরিয়ানি |
১ কাপ |
৪১৮ |
সবজি বিরিয়ানি |
১ কাপ |
২২০ |
খাসির বিরিয়ানি |
১ প্লেট |
৪৭০ |
ফ্রাইড রাইস |
১ কাপ |
১২০-৩৯০ |
সাদা পাউরুটি |
১ স্লাইস |
৬৭-৯৬ |
লাল পাউরুটি |
১ স্লাইস |
৬০-৮৯ |
বান রুটি |
১টি |
১৫০ |
সাদা আটার রুটি |
১টি |
৭২ |
লাল আটার রুটি |
১টি |
৬০ |
মিষ্টি |
১টি (মধ্যম) |
১৪০ |
গরুর দুধ (২চামচ চিনিসহ) |
১কাপ |
১১০ |
কাজু বাদাম |
১০টি |
৯৫ |
মিষ্টি আলু |
১০০ গ্রাম |
৭০ |
আম |
১টি (মাঝারি) |
১৮০ |
কলা |
১টি (মাঝারি) |
৯০ |
আপেল |
১টি (মাঝারি) |
৬৫ |
পেয়ারা |
১টি (মাঝারি) |
৫০ |
কমলা |
১টি (মাঝারি) |
৪০ |
গাজর |
১টি (মাঝারি) |
৩০ |
তথ্যসূত্র: https/cmed.com.bd
সুস্বাস্থ্যের জন্য কিছু বিধি-নিষেধ:
১. আঁশ যুক্ত খাবার বেশি খান।
২. তৈল-চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করুন।
৩. ভাজা-পোড়া, ফাস্ট ফুট
খাবার ত্যাগ করুন।
৪. কোমল পানীয় ( আরসি, পেপসি, কোকা-কলা, জুস ইত্যাদি) বর্জন করুন।
৫. প্রাণিজ আমিষ কম খান পরিবর্তে উদ্ভিদ আমিষ বেশি খান।
৬. সপ্তাহে ৩-৫ দিন ব্যায়াম করুন।
৭. প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটুন।
৮. ফ্রিজের পানি পরিহার করুন।
৯. সকালের নাস্তা কখনো ছাড়বেন না।
১০. রাতে হালকা খাবার খান, ঘুমানোর নূণ্যতম ২ঘণ্টা
পূর্বে খাবার খান।
১১. ৭০-৮০% খাবার বা ক্যালিরি
দিনে গ্রহণ করুন এবং রাতে ২০-৩০ ক্যালিরি গ্রহণ করুন।
১২. রাতে আহারের পর কিছু পায়চারি করুন। এটা সুন্নাতও বটে।
১৩. খাবার ধীরে ধীরে ও চিবিয়ে খান।
১৪. খাবার শেষ হওয়ার সাথে সাথে পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। কমপক্ষে ৩০ মিনিট পরে পানি পান করুন। এটা বিশ্বনবির সুন্নাতও বটে। ১৫. Frying,
Boiling, Roasting, Stewing and G rilling ইত্যাদি ছাড়াই রান্না করার
চেষ্টা করুন।
১৬. সকালে খালি পেটে পানি পান করুন, এতে বহুবিধ
উপকার নিহিত।
১৭. চিনি যুক্ত খাবার কম খান।
১৮. খাওয়ার পর খাওয়া নয়, তবে ফল, মিষ্টি-দই খাওয়া ভাল।
খাবার গ্রহণের দুটি
মূলনীতি : মানুষ যদি এ দুটি মূলনীতি মেনে চলত,
তাহলে পেটের পীড়া সংক্রান্ত
৯০% ভাল হয়ে যেত। তাহলো ১. ক্ষুধা না লাগলে না খাওয়া ২. পেট ভরে না খাওয়া। কথিত আছে, আমিরুল মুমিনিন ওমর রা. এর যামানায় রোম থেকে একজন ডাক্তার মদিনা আসেন। অনেক দিন অবস্থায় করার সে কোন
রুগী পেল না,
তখন মদিনাবাসীকে জিজ্ঞেস করলেন রোগ না হওয়ার কারণ। জবাবে মদিনাবাসী বললেন, আমরা ক্ষুধা
না লাগলে খায় না এবং পেট ভরে খায় না। তখন ডাক্তার বললেন এ কারণেই রোগ-বালাই নাই।
মেডিক্যাল স্যায়েন্স
বলে, একবার খাবার গ্রহণ করলে কমপক্ষে তিন-চার ঘণ্টা লাগে হজম
হতে।
ক্ষুধা কাকে বলে: এ
সম্পর্কে জনৈক মনীষী বলেন, ভাত যখন তরকারী ছাড়াই শুধু লবণ দিয়েই খাওয়ার মত অবস্থা সৃষ্টি হয়, তখন তাকে ক্ষুধা বলে।
পানহারের কতিপয়
সুন্নাত ও আদব: প্রাণী বলতেই খাবারের প্রয়োজন। আর আমরা মানুষ হিসেবে
নানান সুস্বাদু খাদ্য প্রতিদিন গ্রহণ করি। সুতরাং এ পানাহারটা প্রিয় নবি মুহাম্মাদ (ﷺ) এর সুন্নাত তরিকানুযায়ী হলে
ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। আসুন আমরা কতিপয় সুন্নাত-আদব জেনে নিয়।
ü
আল্লাহ তাআলার আদেশ মনে
করে খাওয়া। সূরা বাকারা-১৭২,আনয়াম-১৪২
ü
দস্তরখানা বিছানো। বুখারি শরিফ
ü
আগে দস্তরখান উঠিয়ে পরে
নিজে ওঠা। সুনানে ইবনে মাজাহ
ü
খাবারের শুরুতে এবং শেষে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়া। তিরমিজি
ü
বিসমিল্লাহ বলে তথা ‘বিসমিল্লাহ ওআলা বারাকাতিল্লাহ’ শুরু করা, তবে ভুলে গেলে মধ্যখানে মনে হলে ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’ বলা। বুখারি-মুসলিম শরিফ
ü
ডান হাতে পানাহার করা। বুখারি-মুসলিম শরিফ
ü
বসে পান করা। কারণ দাঁড়িয়ে পান
করা নিষেধ। মুসলিম শরিফ
ü
তিন শ্বাসে পান করা আর শ্বাস
ছাড়ার সময় পানির পাত্র সরিয়ে
নেওয়া, কারণ তখন
কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিত্যাগ করে। মুসলিম ও জামে তিরমিজি
শরিফ
ü
পানি পরিবেশনকারী সবার শেষে পান করবে। জামে তিরমিজি
ü
পান করার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ এবং শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা।
ü
কোন মজলিসে উপস্থিত
ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যিনি সবচেয় বুযুর্গ, মুরুব্বী, সিনিয়র
তাদের দ্বারা প্রথমে খাওয়া আরম্ভ করা আদব। মুসলিম শরিফ ২/১৭১ পৃ.
ü
হাত এবং পাত্র চেটে খাওয়া, পরিষ্কারকরে খাওয়া সুন্নাত। এতে ঐ সকল পাত্র খানে ওয়ালার জন্য মাগফিরাতের দুআ করে
থাকে। ক্ষতিকর না হলে অপচয় করা হারাম। সুনানে ইবনে মাজাহ
ü
খানা শেষে উভয় হাত ধোয়া। জামে তিরমিজি; সুনানে
আবু দাউদ
ü
খানা খাওয়া শেষে কুলি করা। বুখারি শরিফ
ü
খাবারের শেষে এ দুআ পড়া- আলহামদু
লিল্লাহিল্লাযি আত্বআমানী, ওয়া সাকানী ওয়া জাআলানী মিনাল
মুসলিমীন। জামে তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে ইবনে মাজাহ শরিফ
ü
খাবারের শেষে মেজবানের
জন্য দোয়া এ করা-‘আল্লাহুম্মা আত্বয়িত মান
আত্বআমানী ওয়াসকি মান সাকানী’। অর্থ: হে আল্লাহ,আমাকে যে আহার করালো তুমি তাকে আহার করাও এবং আমাকে যে পান করালো তুমি
তাকে পান করাও। সহিহ মুসলিম শরিফ
ü
সোনা ও রুপার পাত্র বা
বরতন ব্যবহার করা হারাম।
ü
কোন পরিবারের কেউ
মারা গেলে, (সে সময় ) সে বাড়িতে খানা পাঠানো সুন্নাত। অথচ আজ কাল উল্টা আমরা আরও
খাই।
সুনানে
ইবনে মাজাহ
পানাহারে নিষেদ্ধ
কাজসমূহ:
ü
বাম হাতে পানাহার করা। তবে কোন সমস্যা থাকলে ভিন্ন কথা।
ü
হেলান দিয়ে পানাহার করা। সহিহ মুসলিম-৩৭৬৩
ü
পেট পূর্ণ করে খাওয়া। বুখারি শরিফ-২১১৩
ü
খাবারের দোষ ধরা। বুখারি শরিফ-৪৯৮
ü
অপচয় করা। কারণে অপচয়কারী
শয়তানের ভাই। সূর আরাফ-৩১
ü
দাঁড়িয়ে পানাহার করা। তবে যমযমের পানি
পান করা ও অসুবিধাবশত দাঁড়িয়ে করা পানাহার করা অনুমতি আছে। সহিহ
মুসলিম-৩৭৭, ৫১৭৫
ü
খাওয়ার পাত্রে ফু এবং তার
ভেতর নি:শ্বাস ফেলা। তিরমিজি-১৮১০
ü
সোনা ও রুপার পাত্র বা
বরতন ব্যবহার করা হারাম।
ü
হালাল-পবিত্র ও
সন্দেহযুক্ত খাবার গ্রহণ করা। সূরা আরাফ-১৬০
ü
বিস্তারিত দেখুন- প্রিয় নবির
(ﷺ) প্রিয় সুন্নাত- মুহিউস সুন্নাহ মাও. আবরারুল হক রহ. মাওলানা হাকীম মুহাম্মাদ আখতার রহ.
মাকতাবুল আশরাফ; ওসওয়ায়ে রাসূলে আকরাম (ﷺ) -ডা. আব্দুল হাই রহ.,
মদিনা পাবলিকেশন্স; আহকামে জিন্দাগী, ৪১১-৪১৮ পৃষ্ঠা
হাদিসনং-১৩,
ঢোল,বাদ্যযন্ত্র, গান হতে নিষেধাজ্ঞা |
عَنْ
أَبِي عَامِرٍ أَوْ أَبِي مَالِكٍ الأَشْعَرِيِّ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم لَيَكُونَنَّ فِي أُمَّتِي قَوْمٌ يَسْتَحِلُّونَ الْخَزَّ وَالْحَرِيرَ
وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ.
অর্থ: অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় হবে; যারা ব্যভিচার, (পুরুষের জন্য) রেশম বস্ত্র, মদ এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার (হারাম হওয়া সত্ত্বেও) হালাল মনে করবে। বুখারি-৫৫৯০; আবু দাউদ-৪০৩৯
প্রাসঙ্গিক আলোচনা : বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের যুব সমাজ
ধ্বংসের অন্যতম কারণ। কারণ, আজ আমরা আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ভুলে আল্লাহ তাআলার নাফারমান, শত্রুদের সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছি যা তিনি
কঠোর নিষেধ করেছেন- তোমরা
সীমালঙ্ঘনকারীদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ো না, অন্যথায় অগ্নি
তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। আর এই অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোনো বন্ধু থাকবে না
এবং তোমরা সাহায্যও পাবে না। সূরা হূদ-১১৩
এছাড়াও অন্য
সাদৃশ্য প্রিয় নবি (ﷺ) নিষেধ করেছেন- যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত হবে। আহমাদ-২/৫০, আবু দাউদ ৪০৩১
গান হারাম : যেসব গান, কবিতা যৌন
উত্তেজক, শিরক, বাজে বা ফাহেশা কথা
থাকে সে গান ও কবিতা বলা ও শোনা জায়েজ নাই। যেমন কুরআনের
বাণী- আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত
করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে
গ্রহণ করে, তারা ঐ সব লোক যাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। সূরা লোকমান-০৬
বেশির
ভাগ তাফসিরকারক ‘লাহওয়াল হাদিস’ বলতে গানকে
বুঝিয়েছেন। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: এটাহচ্ছে গান। ইমাম হাসান বসরি (র.) বলেন: এটা গান ও বাদ্যের ব্যাপারে নাযিল হয়েছ। আব্দুল্লাহ
ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তিন তিনবার কসম খেয়ে বলেছেন, উক্ত আয়াতে ‘অসার বাক্য’ বলতে ‘গান’কে
বুঝানো হয়েছে। অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) এবং জাবের (রা.) ও ইকরামা (রা.) হতে।
হাদিসের
বাণী-(১) মহানবি
(ﷺ) নগ্নতা ও পর্দা-হীনতা
এবং গানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আহমাদ, সহীহুল জামে, হাদিস: ৬৯১৪ গান হলো ‘ব্যভিচারেরমন্ত্র’, অবৈধ ভালোবাসার আজব আকর্ষণ সৃষ্টিকারী যন্ত্র।
(২) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন- গান মানুষের অন্তরে এমনভাবে মুনাফেকি উৎপাদন করে, যেমন পানি শস্য
উৎপাদন করে । বাইহাকি, মিশকাত- ৪১১
আল্লামা নববি
রহ.
বলেন, গান মানুষকে বদকার ও দুশ্চরিত্র বানায়। এর স্বর শোনা মাকরুহ। অপরিচিতা নারীর কণ্ঠস্বর শোনা হারাম।
বাদ্যযন্ত্র
তথা ঢোল-তবলা-মিউজিক হারাম : মিউজিক বা বাজনা শোনাও মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। কারণ, বাজনা-ঝংকারও মানুষের মন মাতিয়ে তোলে, বিভোরে
উদাস করে ফেলে এবং উন্মত্ততায় আন্দোলিত করে। ফলে তা সামাজিক অবক্ষয়, নীতি নৈতিকতার চন্দপতন ঘটায়। (১) হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য
মদ, জুয়া, ঢোল তবলা এবং
বীণা-জাতীয় বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছেন। আহমাদ, মিশকাত-৩৮৬
(২) হজরত আবু উমামা (রা.)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
আমাকে বলেছেন- নিশ্চয় অল্লাহ তাআলা আমাকে দুনিয়বাসীর জন্য রহমত-বরকত এবং হেদায়েত-পথপ্রদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছেন। এবং আমার মহাপরাক্রমশালী প্রভু
সর্বপ্রকারের ঢোল ও যাবতীয় বাদ্যযন্ত্র, দেব-দেবীর
মূর্তিসমূহ, শূলিও
ক্রশ এবং জাহেলি যুগের কু-প্রথা ও কুসংস্কার
নির্মূল ও ধ্বংস করার জন্য আমাকে নির্দেশ করেছেন। আহমদ, মিশকাত-৩১৮
গান ও
বাদ্যযন্ত্রের ভয়াবহতা : গান-বাদ্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেন-(১) অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক
মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে, তাদের মাথার উপরে
বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে এবং নর্তকী নাচবে। আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন এবং বানর ও শূকরে পরিণত করবেন! ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, ত্বাবারানি
গান বা
বাদ্যের আওয়াজ আসলে করণীয় কি ? হজরত নাফে (রহ.) বলেন,
একদিন কোন পথে আমি হজরত
ইবনে ওমর রা. এর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় তিনি
বাঁশির সূর শুনতে পেলেন। তখনই
তিনি নিজের দুই অঙ্গুলী দুই কানের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন । বহুদূর যাওয়ার পর আমাকে বললেন, হে নাফে! এখন কি তুমি শোনতে পাও ?
আমি বললাম না। এবার তিনি উভয় অঙ্গুলী সরিয়ে ফেললেন। অতঃপর
বললেন- একবার আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর
সঙ্গে ছিলাম তখন তিনি বাঁশির আওয়াজ শোনতে পেলেন এবং আমি যা করেছি তিনিও তা
করেছিলেন। নাফে বলেন তখন আমি ছোট ছিলাম। মুসনাদে
আহমদ; সুনানে আবু দাউদ; মিশকাত-৪১১
হাদিস নং-১৪,
দুনিয়ার ধোঁকাবাজী |
. وَعَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ : أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَنْكِبَيَّ ، فَقَالَ : كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّك غَرِيبٌ ، أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَقُولُ : إذَا أَمْسَيْفَلَتَنْتَظِرْ الصَّبَاحَ ، وَإِذَا أَصْبَحْت فَلَا تَنْتَظِرْ الْمَسَاءَ ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِك لِسَقَمِك ، وَمِنْ حَيَاتِك لِمَوْتِك . أَخْرَجَهُ الْبُخَارِيُّ
অর্থ: হজরত
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- আমার কাঁধ ধরে বললেন, দুনিয়াতে মুসাফির বা পথিকের মত অবস্থান কর। আর ইবনে ওমর রা. বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে
আর ভোরের অপেক্ষা কর না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা কর না। তোমার সুস্থতার
অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর
জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর। বুখারি-৬৪১৬;
তিরমিজি-২৩৩৩; ইবনে
মাজাহ-৪১১৪
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: একজন
মুসাফির পথ চলার সময় অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস দেখতে পায়। কিন্তু সেগুলো ভোগ-দখল করার
চিন্তা সে কখনো করতে পারে না। কারণ পথিক পথের জিনিস সংগ্রহ করা শুরু করলে পথ কখনো শেষ হবে না। ফলে সে মনযিলে
মাকসুদে পৌঁছতে পারবে না। অনুরূপ অস্থায়ী দুনিয়ার চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়ে দুনিয়া হাসিলের
চেষ্টা করলে আখেরাতের মনযিল হাসিল করা
যাবে না। আখেরাতের মনযিলে মাকসুদে তারই পৌঁছতে পারবে,যারা দুনিয়ার জীবনকে পথিকের
জীবন মনে করে দুনিয়ার জিন্দেগীতে নিজেদেরকে অহেতুক জড়িত করবে না। সূত্র: আলফিয়্যাতুল
হাদিস
দুনিয়া হলো
পরীক্ষার স্থান : এ দুনিয়া হলো পরীক্ষার হল। জীবন-মরণ এ
জন্যই রেখেছেন যেন পরীক্ষা করতে পারে কী আমল আমরা করি ? যেমন
আল্লাহ তাআলা বলেন- যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন,যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে
শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। সূরা মূলক-০২
দুনিয়ার সবই
অভিশপ্ত তবে? দুনিয়ার সবকিছু অভিশাপ্ত তবে কিছু জিনিস
বাদে যেমন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- নিশ্চয় দুনিয়া এবং এর মধ্যে যা
কিছু আছে সবই অভিশপ্ত। তবে আল্লাহর জিকির এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট সহায়ক অপরাপর আমল, আলিম
এবং তালিবে ইলম ব্যতিত। জামেউত তিরমিজি;
সুনানে ইবনে মাজাহ
আখেরাতের তুলনায়
দুনিয়া খবুই নগণ্য :
মহান আল্লাহ বলেন- (১)
হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কী হল, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহর রাস্তায় (যুদ্ধে) বের হও,
তখন তোমরা যমীনের প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়? তবে
কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ
দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। সূরা তওবা-৩৮
প্রিয় নবি রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- আখেরাতের তুলনায়
দুনিয়ার দৃষ্টান্ত হল তোমাদের কোন ব্যক্তি সমুদ্রের মধ্যে তার আঙ্গুল ডুবালো,
এখন দেখ আঙ্গুলে কতটুকু পানি লেগে এসেছে। মুসলিম
দুনিয়া ক্ষণস্থায়ীর
একটি উদাহরণ : এ সম্পর্কে হজরত মাওলানা মুফতি রশীদ আহমদ লুধিয়ানভী রহ.বলেন, “ বাসের পাদানীতে পা
রাখার তিল পরিমাণ জায়গা নেই। তবুও আরও মানুষ বাসের হ্যান্ডেল ধরে ওঠার চেষ্টা করছে। অথচ এতে আছে নানা রকমের
দুর্ঘটনার ঝুঁকি। কিন্তু মানুষ কি তাতে দমে যাচ্ছে ? যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসে কিংবা অন্য কোন
যানবাহনের মাধ্যমে গন্তব্য স্থলে যাবার প্রানান্তকর চেষ্টা চালান তাদেরকে না হয় একটু
জিজ্ঞেস করুন, ভাই কেন এভাবে কষ্ট করে বাসে গাড়িতে উঠেছেন ?
কেন বিপদের ঝুঁকি নিচ্ছেন ? তারা কি উত্তর দিবেন
তখন ? নিশ্চয় বলবেন, আরে এ-তো পাঁচ সাত মিনিটের ব্যাপর। একটু পরেই পৌঁছে যাচ্ছি গন্তব্য স্থলে। এ কোন ভাবে না কোনভাবে
কেটেই যাবে। সিটে বসেই হোক আর বাদুড় ঝোলা হয়েই হোক এতে আর এমনকি–ই বা কষ্ট।
আসলে আখেরাতের সাথে
তুলনা করলে দুনিয়ার জীবনটাও ঠিক বাসের পাদানীতে ঝোলার মতই স্বল্পস্থায়ী, ক্ষণিকের। প্রকৃত ঠিকানা আখেরাতের
কথা আমরা যতটা ভাববো, আল্লাহর কথা স্মরণ করবো, তার সাথে সম্পর্ক
গড়ে তুলবো, ঠিক ততটুকু অন্তর্দৃষ্টি আখেরাতের ব্যাপারে আমরা লাভ
করবো। দুনিয়ার সুখ-দুখ তখন বাসের পাদানীতে কোন রকম ঝুলে থাকার মতই মনে হবে,
হালকা হয়ে যাবে দুঃখ-কষ্ট। সূত্র: হার পেরেশানিকা
এলাজ-অনুবাদ মাওলানা মুহাম্মাদ বেলাল হাফিজাহুল্লাহু
দুনিয়ার তুচ্ছতা : জাবের
ইবনে আব্দুল্লাহ রা.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
রসুলুল্লাহ (ﷺ) আলিয়া অঞ্চল হতে মদিনায় আসার পথে এক বাজার
দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় রসুলুল্লাহ (ﷺ) -এর উভয় পার্শ্বে বেশ লোকজন ছিল। যেতে যেতে তিনি
ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচচার নিকট পৌছঁলেন। অতঃপর তিনি এর কান ধরে
বললেন, তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের বিনিময়ে উহা নিতে আগ্রহি। তখন উপস্থিত
লোকেরা বললেন, কোন কিছুর বিনিময়ে আমরা উহা নিতে আগ্রহী নই এবং এটি নিয়ে আমরা
কি করব? তখন রসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ বিনা পয়সায়
তোমরা কি উহা নিতে আগ্রহী?...তিনি বলবেন, আল্লাহর শপথ! এ তোমাদের কাছে যতটা নগণ্য, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর তুলনায় আরও বেশি মূল্যহীন। সহিহ মুসলিম-৭১৫০ ই.ফা.
সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে
বর্ণিত । তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন-যদি আল্লাহর কাছে মাছির ডানার সমান দুনিয়ার মূল্য
থাকতো, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে তার (দুনিয়ায়)
এক ঢোক পানিও পান করাতেন না। জামে তিরমিজি-২৩২০;
সুনানে ইবনে মাজাহ-৪১১০
দুনিয়া কামনা করলে
আখেরাত বরবাদ : যে ব্যক্তি দুনিয়া তালাশ-কামনা করলো,
সে আখেরাত খোয়ালো। আর আখেরাত চাইলে দুনিয়া এমনিতে পাওয়া যাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা
বলেন- যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য সে ফসল বাড়িয়ে
দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে তার কিছু দিয়ে দেয় এবং পরকালে তার
কোন অংশ থাকবে না। সূরা শূরা-২০
দুনিয়ার প্রতারণা থেকে
সাবধান : এ ধোঁকার ঘর সম্পর্কে হুশিয়ার করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
(১) হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য; অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে; আর বড় প্রতারক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে। নিশ্চয় শয়তান
তোমাদের শত্রু, অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই
ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়। সূরা ফাতির,৫-৬
(২) পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক
ব্যতীত কিছূই নয়। পরকালের আবাস পরহেযগারদের জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা কি বুঝ না? সূরা আনয়াম-৩২
এখানে পার্থিব
জীবন বলতে দুনিয়ার বিভিন্ন পাপ কর্ম এবং অর্থহীন মোবাহ কর্মে মশগুল হওয়াকে বুঝানো
হয়েছে। অন্যথায় পার্থিব জীবন নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বড় নেয়ামত। সূত্র: তাসফীরে
বুরহানুল কুরআন-৫১২ পৃষ্ঠা
প্রিয় নবিজী(ﷺ) এর দুনিয়া বিমুখতার উদাহরণ :
(১) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- একদা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
চাটাইয়ের উপর ঘুমালেন। অতঃপর ঘুম থেকে উঠলেন, তার দেহের পাশে ছিল চাটাইয়ের
ছাপ, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল,
আমরা যদি আপনার জন্য একটি নরম বিছানার ব্যবস্থা করে দিতাম ! তিনি বললেন দুনিয়ার ভোগ বিলাসের সাথে আমার কীসের সম্পর্ক, আমি কেবল একজন
আরোহী, যে গাছের ছায়াতলে বিশ্রাম নিল, অতপর তা ত্যাগ করে রওয়ান দিল। তিরমিজি-২২৯৯
অন্য রেওয়াতে
আছে- (২) হে ইবনুল খাত্তাব, তুমি কি এ কথায় রাজি হবে না যে, আমাদের জন্য পরকাল
এবং তাদের (কাফের-মুশরিকের)জন্য ইহকাল। আমি বললাম হ্যাঁ। সহিহ মুসলিম-২৭০৪
দুনিয়ার প্রতি বিকর্ষণ
ইসলামের জন্য বক্ষ উন্মুক্ত হওয়ার আলামত : মহান আল্লাহ বলেন-‘ অতএব
আল্লাহ যাকে হেদায়েত করতে ইচ্ছা করেন তিনি তার বক্ষকে (অন্তরকে)
ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন। সূরা আনআম-১২৫
একদা কোন সাহাবি রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) কে জিজ্ঞেস করলেন যে, বক্ষ প্রশস্ত হয় কিভাবে ? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা মুমিনের অন্তরে এক প্রকার
নূর দান করেন, যার ফলে তার বক্ষ তথা অন্তর প্রশস্ত ও উন্মুক্ত
হয়ে যায়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, এর কি কোন লক্ষণ আছে, যদ্বারা সে নূর চেনা যায়? তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ, পরকালে প্রতি আকর্ষণ, দুনিয়া থেকে বিমুখ এবং মৃত্যু আসার আগে মৃত্যুর
প্রস্তুতি গ্রহণ এর আলামত। আর বক্ষ সংকীর্ণ হওয়ার অর্থ হেদায়াত গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত না
হওয়া। সূত্র: তাফসিরে জালালাইন ও তার টীকা; আবুস সাউদ; তাফসিরে বুরহানুল কুরআন-৫৫৯পৃ.
আদম সন্তানের কামনা- বাসনা শেষ হবার নয়: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-কোন আদম সন্তানের এক ময়দান ভরা সোনা লাভ হলে, সে আরও দুই ময়দানের অভিলাষী হবে। তার মুখ একমাত্র মাটির
দ্বারাই ভর্তি হতে পারে। অবশ্য যে আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয় আল্লাহ তাকে গ্রহণ করে নেন। বুখারি-২৪৩২ হামিদিয়া
লাইব্রেরি
এ হাদিসের সমর্থনে
আয়াত হলো- প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল রাখে, এমনকি তোমরা
কবরস্থানে পৌঁছে যাও। সূরা তাকাছুর,১-২
জাগতিক ব্যাপারে
নিজ হতে নিম্নের প্রতি তাকানো উচিত : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- তোমাদের কারও যদি নিজের অপেক্ষা অধিক ধন-সম্পদের অধিকারী উন্নত দেহের অধিকারীর প্রতি নজর হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে নিম্ন স্তরের মানুষের প্রতি দৃষ্টি করবে। বুখারি শরিফ-২৪৫৭
হামিদিয়া লাই.
মুমিনের জন্য এ
দুনিয়া কয়েদখানা আর কাফেরর জন্য বেহেশত: আবু হুরাইরা রা থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, দুনিয়া মুমিনের
জন্য জেলখানা এবং কাফিরের জন্য জান্নাত স্বরুপ। সহিহ মুসলিম-৭৩০৩
আদম সন্তান তিনটি জিনিস
ব্যতীত কোন কিছুরই মালিক নয় : মুতাররিফ রা. -এর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবি (ﷺ) -এর নিকট আসালাম। তখন তিনি { أَلْهَاكُمُالتَّكَاثُرُ } ‘আল হাকুমুত্তা
কাছুর’ পাঠ করছিলেন। তিনি বলেন, আদাম সন্তানগণ বলে, আমার
মাল আমার মাল। বস্তুত হে, আদাম সন্তান! তোমার মাল উহাই যা তুমি
খেয়েছো ও শেষ করে দিয়েছে, পরিধান করেছ ও পুরাতন করে ফেলেছ
এবং দান করেছে ও অব্যাহত রেখেছ। সহিহ মুসলিম- ৭১৫২ ই.ফা.
বিস্তারিত দেখুন- ইয়াহউ উলূমুদ্দীন, কিমেয়ায়ে সাদাত-ইমাম গাজালি রহ.; রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দৃষ্টিতে দুনিয়ার
হাকীকত-শাহ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার রহ.
১৪
নং হাদিস সমাপ্ত
------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাযের পর একবার আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত
করা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন-যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর আয়াতুল কুরসি
(সূরা বাকারার
২৫৫ নং আয়াত) পাঠ করবে, একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন কিছু তাকে বেহেশতে
প্রবেশ করতে বাধা দিবে না। ছিদ্দিক এবং যাহিদ লোকই আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পাঠ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
আরও বলেছেন,কেহ যদি ঘুমাবার সময় এটা পাঠ করে,তারপর ঘুমায়,তবে আল্লাহ তাআলা তাকে, তার প্রতিবেশীকে, তার প্রতিবেশীর প্রতিবেশীকে এবং তাদের আশেপাশের
ঘর-বাড়ীগুলোকে নিরাপদ রাখেন। সূত্র: তাফসিরে
রুহুল বয়ান; সুনানে আবু দাউদ, হাশিয়া জালালাইন-৩৯, সুনানে বাইহাকি, মিশকাতুল
মাছাবিহ-৮৯
টিকা: যে সকল নামাযের পরে সুন্নাতে মোয়াক্কাদা নামাজ আছে, তাতে সুন্নাতের পরে
আয়াতুল কুরসি বা অন্য আমল করবে। কারণ- সুন্নাত
নামাজ ঐ ফরজ নামাযেরই অধীন।
হাদিসনং-১৫, মৃত্যুর কামনা হতে নিধেষজ্ঞা |
روينا في صحيحي البخاري ومسلم،
عن أنس رضي اللّه عنه قال :
قال النبيُّ صلى اللّه عليه وسلم : " لا
يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ المَوْتَ مِنْ ضُرّ أصَابَهُ، فإنْ كانَ لا بُدَّ
فاعِلاً فَلْيَقُلْ : اللَّهُمَّ أحْيِني ما كانَتِ الحَياةُ خَيْراً لي، وَتَوَفَّنِي
إذَا كَانَتِ الوَفاةُ خَيْراً لِي
অর্থ: হজরত আনাস
(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে তবে
যেন যেই বিপদে পৌঁছেছে তার কারণে। অগত্যা তা যদি সে
করতেই চায় তবে যেন বলে অর্থাৎ হে আল্লাহ ! আমাকে জীবত রাখ যে পর্যন্ত আমার জন্য কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দান কর যখন
মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়। বুখারি-৫৬৭১;
মুসলিম-২৬৮০
প্রাসঙ্গিক আলোচনা : দুঃখ-কষ্ট বা অভাব-অনটনের কারণে মৃত্যু কামনা করা নিষেধ। এটা আল্লাহর
ইচ্ছার প্রতি অসন্তুষ্টির লক্ষণ। অবশ্য আল্লাহ তাআলার সাক্ষাতের বাসনায় মৃত্যু কামনা করা নিষেধ নয়। মৃত্যূর স্মরণ
মানুষকে গোনাহ হতে বেঁচে রাখে এবং আল্লাহর স্মরণ করে দেয়। হায়াত আল্লাহ হুকুম,এর অপসারণ
কামনা করা আল্লাহর হুকুমে রাজি না থাকার নামান্তার, তাই
মৃত্যু কামনা বিপদের কারণে বৈধ নয়। মিরকাত
মৃত্যু কামনার বৈধতার ক্ষেত্রসমূহ: ইমাম নববি
রহ. বলেন- দ্বীনী ফিৎনার আশংকায় মৃত্যু কামনা করা মাকরূহ নয় বরং মুস্তাহাব। ইমাম শাফেয়ি ও ওমর
ইবনে আজিজ রহ. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা মৃত্যু
কামনা করতেন। আল্লাহর রাস্তায়ও মৃত্যু কামনা করা বা শাহাদত কামনা করাও
মুস্তাহাব। যেমন তা হজরত ওমর রা. হজরত মুয়াজ রা. প্রভৃতি
সাহাবাদের থেকে বর্ণিত রয়েছে। মুসলিম শরিফে আছে, যে ব্যক্তি সত্য সত্যেই অন্তর থেকে
শাহাদতের কামনা করে তার শাহাদতের সওয়াব অর্জিত হয়।(যদিও সে
বাস্তবে শাহাদত প্রাপ্ত না হয় ) এরুপভাবে মদিনায় মৃত্যু
কামনা করাও মুস্তাহাব। বুখারি শরিফে এ ধরণের দুআ সম্পর্কিত হাদিসে হরেত ওমর রা.থেকে
বর্ণিত আছে। তাফসির মাজাহির সূত্র: ফয়যুল কালাম -৩২৬ পৃ.
মৃত্যুকে বেশি
বেশি স্মরণ করার নির্দেশ: মানুষ পাপ করে দুনিয়ার মহব্বতে। তাই এ দুনিয়া ভালবাসা মন থেকে কমাতে বা দূর করতে পারলে পাপ
থেকে বাঁচা সবার জন্য সহজ। এ কারণেই আমাদের
প্রিয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আদেশ দিয়েছেন মরণের কথা বেশি বেশি স্মরণ করতে। যেমন তিনি বলেন- তোমরা
দুনিয়ার ভোগবিলাস বিনষ্টকারী জিনিস মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর। জামেতিরমিজি-২৩০৭
কবি হজরত খাজা
আজিজুল হাসান মজযূব রহ. বলেন-
“দুনিয়াবাসী মানুষ মাত্রই গাফলত মহা ভুল,
সদা মৃত্যু ধ্যান
রাখিলে আখেরাতে হয় ফুল।
জগত মাঝে পা
রাখিতেই মৃত্যু কহে ডাকি,
আমিও আছি তোমার
সাথে,চলিও ধ্যানে রাখি।
এ মহাসত্যকে (মৃত্যুকে)
পৃথিবীর কেউ অস্বীকার করে না: চিফ
জাস্টিস মুফতি তাকি উসমানি দা.বা. বলেন,
পৃথিবীতে বিভিন্ন আকিদার মানুষ আছে যেমন, কেউ
বলে আল্লাহ একজন কেউ বলে দুইজন/তিনজন আবার কেউ বলে আল্লাহ
বলতে কেউ নেই (There is no god), কেউ রাসূলকে মানে আবার কেউ
মানে না, কেউ পরকালকে বিশ্বাস করে আবার কেউ বিশ্বাস করে
না। কিন্তু পৃথিবীর
এমন কোন মানুষ নাই যে মৃত্যুকে অস্বীকার করে।
মৃত্যুর সময় ও
স্থান কারো জানা নেই : কখন কার মরণ হবে এবং কোথায় হবে এটা এক আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে
না। আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান,অভিজ্ঞতা-আলামতের দ্বারা মানুষ অনেক কিছু সম্ভাব্য বলে দেয়,তা
অনেক সময় ঠিক হয়,
আবার হয় না। কিন্তু মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় ও স্থান কেউ বলতে পারে না। যেমন পবিত্র
কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- কেউ জানে না আগামীকাল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না
কোন দেশে, জায়গায় সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ব
বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। সূরা লোকমান-৩৪
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- যখন আল্লাহ কোন বান্দার জান (রূহ)
কোন ভূখণ্ডে কবজ করতে চান, তখন সেখানে তার কোন
প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন। মুসনাদে আহমদ-১৫৫৩৯
মৃত্যু থেকে
বাঁচার কোন পথ নাই, প্রতিহত করার কেউ নেই: এ চিরন্তন
সত্য মৃত্যু থেকে কেউ রেহাই পাইনি, পাবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ
তাআলা বলেন-(১) হে নবি আপনি বলে দিন! তোমরা
যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি
হবে। সূরা জুমাআ-৮
(২) তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যূ তোমাদের
পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ দূর্গে থাক,তবুও। সূরা নিসা-৭৮
সবচেয়ে বুদ্ধিমান
ও বিচক্ষণ কে? সত্যিকার
বুদ্ধিমান ঐ ব্যক্তি যে দুনিয়া ও পরকালের জীবনের তুলনামূলক চিন্তা-ফিকির করে। মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য আমল করে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- বুদ্ধিমান ঐ ব্যক্তি যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যু
পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। পক্ষান্তরে নির্বোধ ও বেওকুফ এ ব্যক্তি যে নিজের নফসের আনুগত্য করে এবং আল্লাহর তাআলাওপর
ভরসা করে। তিরমিজি; সুনানে
ইবনে মাজাহ
এ সম্পর্কে আল্লাহ
তাআলা বলেন- মুমিনগণ!তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের
জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা
চিন্তা করা। সূরা হাশর-১৮
মৃত্যু হল ছোট
কেয়ামত: কোন বান্দা যখন মারা যায়, তখনই তার প্রতি কেয়ামত তথা
ছোট কেয়ামত কায়েম হয়ে যায়। যেমন, হজরত
আয়েশা রা.বলেন, শক্ত দিলের কিছু বেদুইন
নবিজি (ﷺ) এর কাছে আসত এবং তাঁকে প্রশ্ন করত.কেয়ামত কবে
? রাসূল (ﷺ) তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট
ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে বলতেন, এ যদি জীবত থাকে, তা
হলে এর বুড়ো হওয়ার আগেই তোমাদের কেয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে। বুখারি-৬৫১১
অর্থাৎ এ শিশুটি বার্ধক্যে হওয়ার পূর্বেই তোমাদের মৃত্যু হবে । এ শিশুটি মরণ
তোমাদের সবার পরে হবে ।
পরকাল: পরকাল
বলতে মৃত্যুর জীবনকে বুঝায়। life after life জীবনের পর জীবন। মৃত্যুই মানুষের হায়াতের পরিসমাপ্তি নয়। মৃত্যু হল একটি
সেতু যার মাধ্যমে মানুষ আখেরাতে প্রবেশ করে। এখন মৃত্যুর
ধারাবাহিক জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করব। এক কবি চমৎকার বলেছেন :
“যদি এমন হত আমরা মরে যাবো আর আমাদের ছেড়ে দেয়া হবে
তাহলে মৃত্যু হত
সকল প্রাণীর জন্য শান্তির বার্তা।
কিন্তু কথা হল
আমরা যখন মরে যাবো তখন আমাদের হাজির করা হবে
আর এরপর প্রশ্ন
করা হবে সকল বিষয় সম্পর্কে।”
কবর বা আলামে বরযখ: সাধারণত
মানুষ মারা গেলে তার দেহ, অক্ষত হোক বা পোড়া অংশ হোক মাটির
নিচে, মধ্যে রাখা হয়
,তাকে কবর বলা হয়, আখেরাতের প্রথম
মনযিল হল কবর। মৃত্যুর পর থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত সময়টাকে বলা হয় আলামে
বরযখ বা মধ্যবর্তী জগত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন- অবশেষে যখন তাদের কারো
মৃত্যু আসে, সে বলে, হে আমার রব,
আমাকে ফেরত পাঠান, যেন আমি সৎ কাজ করতে পারি
যা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম।’ কখনো নয়, এটি একটি বাক্য যা সে বলবে। যেদিন তাদেরকে
পুনরুত্থিত করা হবে সেদিন পর্যন্ত তাদের সামনে থাকবে বরযখ। সূরা মুমিনুন, ৯৯-১০০
মৃত্যু
বরণ করার পরপরই মৃত ব্যক্তির উপর ছোট কিয়ামত কায়েম হয়ে যায়।
কবর আজাবের প্রমাণ: কবর আজাব
সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
অতঃপর তাদের
ষড়যন্ত্রের অশুভ পরিণাম থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করলেন আর ফিরআউনের অনুসারীদেরকে
ঘিরে ফেলল কঠিন আজাব। আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত
করা হয়, আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে (সেদিন ঘোষণা করা হবে),
ফিরআউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম আযাবে প্রবেশ করাও। সূরা গাফির ,৪৫-৪৬
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-(১) আমি তোমার কাছে কবরের
আজাব থেকে আশ্রয় চাই। বুখারি-২৮২২
(২) নবি (ﷺ) দুটি কবরের পাশ
দিয়ে অতিক্রমকালে বললেন- এই দুইজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে খুব বড় অপরাধে এদেরকে শাস্তি
দেওয়া হচ্ছে না। এদের একজন চোগলখোরী করে বেড়াত। আরেক জন প্রসাবের সময় পর্দা করত না। বুখারি-মুসলিম
কবরে সওয়াল-জবাব: আবু
হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: যখন তোমাদের
মধ্য হতে কোন মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয় তখন কালো ও নীল বর্ণের দু জন ফেরেশতা আগমন
করে। একজনের নাম
মুনকার অন্যজনের নাম হল নাকির। তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা কী
বলতে? সে বলবে, সে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আমি স্বাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তার বান্দা ও রাসূল। তখন ফেরেশতাদ্বয়
বলবে, আমরা আগেই জানতাম তুমি এ উত্তরই দেবে। এরপর তার কবরকে সত্তর হাত
প্রশস্ত করে দেয়া হয়। সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর তাকে বলা হয়, এখন তুমি
নিদ্রা যাও। সে বলবে, আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাবো, তাদেরকে (আমার অবস্থা সম্পর্কে) এ সংবাদ দেব। তখন ফেরেশতাদ্বয় তাকে বলে, তুমি ঘুমাও
সেই নব বধুর মত যাকে তার প্রিয়জন ব্যতীত কেহ জাগ্রত করে না। এমনিভাবে একদিন
আল্লাহ তাকে জাগ্রত করবেন।
আর যদি সে ব্যক্তি মুনাফেক হয়,
সে উত্তর দেবে আমি তার (রাসূলুল্লাহ) সম্পর্কে মানুষকে যা বলতে
শুনেছি তাই বলতাম। বাস্তব অবস্থা আমি জানি না। তাকে ফেরেশতাদ্বয় বলবে, আমরা
জানতাম, তুমি এই উত্তরই দেবে। তখন মাটিকে বলা হবে তার
উপর চাপ সৃষ্টি করো। মাটি এমন চাপ সৃষ্টি করবে যে, তার
হাড্ডিগুলো আলাদা হয়ে যাবে। কেয়ামত সংঘটনের সময় তার উত্থান পর্যন্ত এ শাস্তি অব্যাহত
থাকবে। জামেউত তিরমিজি
কবরের আজাব
সম্পর্কে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদা : ইমাম নববি রহ. বলেন:
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে কবরের শাস্তি একটি সত্য
বিষয়। আর এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের বহু সংখ্যক প্রমাণ রয়েছে। খারেজি, অধিকাংশ
মুতাযিলা ও মুরজিয়াদের একটি দল কবরের শাস্তির বিষয়টি অস্বীকার করে।তিনি আরো বলেন:
যদি মৃত ব্যক্তির শরীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বা পুড়ে ছাই হয়ে যায় কিংবা কোন
জীব-জন্তুর পেটে চলে যায় তাহলেও কবরের শাস্তি ভোগ করা সম্ভব।যদি বলা হয়, আমরা দেখি
মৃত ব্যক্তিকে কবরে যেভাবে রাখা হয়েছে সেভাবেই আছে। কখন তাকে বসানো হল আর
কিভাবে তাকে শাস্তি দেয়া হল?
এর উত্তরে বলা যায়, আমরা
অনুভব না করলেও এটা ঘটা সম্ভব। যেমন আমাদের
পাশে কোন ব্যক্তি নিদ্রায় থাকে আর সে স্বপ্নে কত
খারাপ অবস্থা ভোগ করতে থাকে বা কত সুখ ভোগ করতে থাকে। অথচ আমরা তার পাশে থেকেও
তার কোন কষ্ট বা সুখ অনুভব করি না বা দেখি না।
এমনিভাবে
নবি কারিম (ﷺ) এর কাছে জিবরিল অহি নিয়ে আসতো। আর রাসূল কষ্ট
করে সে অহী ধারণ করতেন কিন্তু পাশে উপস্থিত সাহাবিগণ তা টের পেতেন না। শরহু মুসলিম- ইমাম নববি
রহ.
কবরের আজাব থেকে
মুক্তির দুআ: নবি কারিম (ﷺ) বলতেন- اللَّهُمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنَ العَجْزِ
والكَسَلِ والجُبْنِ والبُخْلِ والهَرَمِ وعَذابِ القَبْرِ হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি
ব্যর্থতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের আজাব থেকে। সহিহ মুসলিম-৬৩৬৭
কেয়ামত বা
মহাপ্রলয়: এ বিশ্বজগত একদিন সব শেষ হয়ে যাবে, কিছুই
থাকবে না। শুধু মহান রব বাকি থাকবে। যেমন তিনি বলেন-
কেয়ামত যেভাবে
সংঘটিত হবে? মহান আল্লাহ ইসরাফিল আ. এর শিংগায় ফুৎকারে মাধ্যমে কেয়ামত কায়েম করবেন,এতে পাহাড়-পর্বত,সাগর-মহাসাগর, আসমান-যমীন সব ধ্বংস
এবং গ্রহ-নক্ষত্র আলোহীন হয়ে পড়বে। যেমন আল্লাহ বলেন- প্রথম
ফুঁক (১) অতঃপর যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে- একটি মাত্র
ফুঁক। আর যমীন ও পর্বতমালাকে সরিয়ে নেয়া হবে এবং মাত্র একটি আঘাতে এগুলো
চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সে দিন মহাঘটনা সংঘটিত হবে। সূরা হাক্কাহ, ১৪-১৫
(২) যখন
সূর্যকে আলোহীন করে দেওয়া হবে। যখন তারকারাজি মলিন হয়ে যাবে। সূরা তাকভির, ১-২
দ্বিতীয় ফুঁক এতে
সবাই কবর থেকে উঠবে যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে,তখনই তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে চলবে। সূরা ইয়াসিন-৫১
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দুই শিঙ্গায় ফুৎকারের মধ্যে সময় হল চল্লিশ। লোকেরা প্রশ্ন
করল, হে আবু হুরাইরা উহা কি চল্লিশ দিন? আমি (আবু
হুরাইরা) না বললাম। তারা জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি চল্লিশ মাস? আমি বললাম, না। তারা জিজ্ঞেস করল তাহলে
কি চল্লিশ বছর? আমি বললাম, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: এরপর আল্লাহ তাআলা আকাশ থেকে পানি বর্ষণ
করবেন। তখন মানুষেরা জেগে উঠবে যেমন উদ্ভিদ উদগত হয়। মানুষের দেহের কিছুই
অবশিষ্ট থাকবে না। থাকবে শুধু মেরুদণ্ডের একটি হাড্ডি। আর এটি দিয়েই কেয়ামতের
দিন সৃষ্টিজীবকে আবার তৈরি করা হবে। বুখারি ও মুসলিম
কেয়ামতের ভয়ংকর
অবস্থা: এ ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
(১)
হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা
দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিনী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং
প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আজাবই কঠিন। সূরা হজ, ১-২
(২) যখন আসমান বিদীর্ণ হবে। আর যখন নক্ষত্রগুলো ঝরে পড়বে। আর যখন
সমুদ্রগুলোকে একাকার করা হবে। আর যখন কবরগুলো উন্মোচিত হবে। তখন প্রত্যেকে জানতে
পারবে, সে যা আগে পাঠিয়েছে এবং যা পিছনে রেখে গেছে। সূরা ইনফেতার, ১-৫
(৩) আর তারা তোমাকে পাহাড় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বল, আমার রব
এগুলোকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন, তারপর তিনি
তাকে মসৃণ সমতলভূমি করে দিবেন তাতে তুমি কোন বক্রতা ও উচ্চতা দেখবে না। সেদিন তারা
আহ্বানকারীর (ফেরেশতার) অনুসরণ করবে। এর কোন এদিক সেদিক হবে না এবং পরম করুণাময়ের সামনে সকল
আওয়াজ নিচু হয়ে যাবে। তাই মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না। সূরা ত্বহা,১০৫-১০
নবি কারিম (ﷺ) বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আকাশসমূহকে ভাঁজ করে ফেলবেন। অতঃপর তা ডান হাতে ধারণ
করবেন আর বলবেন, আমি বাদশা। কোথায় আজ সীমালংঘনকারীরা? কোথায় আজ
অহংকারীরা? এরপর পৃথিবীগুলোকে বাম হাতে ভাঁজ করে ধরবেন। অত:পর বলবেন, কোথায় আজ সীমালংঘনকারীরা?
কোথায় আজ অহংকারীরা? সহিহ মুসলিম
দিন হবে লম্বা: কেয়ামতের
দিন দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- সেই বিশাল
দিনে। যেদিন মানুষ দাঁড়াবে রব্বুল আলামীনের সামনে। সূরা মুতাফফিফীন, ৫-৬
সূর্য থাকবে
মানুষের খুবই নিকটে: নবি কারিম (ﷺ) বলেন- সুতরাং
সূর্য তাদেরকে দগ্ধ করবে এবং মানুষ তাদের আমল অনুসারে ঘামের মধ্যে ডুবতে থাকবে। কারও ঘাম হবে
গোড়ালী পর্যন্ত;কারও হাঁটু পর্যন্ত; কারও কাঁধ পর্যন্ত
এবং কারও মুখ পর্যন্ত । জামে তিরমিজি-২৪২১
ময়দানে মাহশার বা
হাশরের ময়দান: হাশরের ময়দানে পৃথিবীর শুরু হতে কেয়ামত পর্যন্ত সব মানুষকে
একত্রিত করবেন। যেমন তিনি বলেন- আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে
ছাড়ব না। সূরা কাহাফ-৪৭
আয়েশা
(রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি তিনি বলতেন: কেয়ামতের দিন
মানুষকে উলঙ্গ, খালি পায়ে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্র করা হবে। আমি বললাম, ইয়া
রসূলাল্লাহ! পুরুষ ও নারী সকলকে একত্র করা হবে আর একজন অপর জনের দিকে তাকাবে?
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: হে আয়েশা! সেদিন
অবস্থা এমন ভয়াবহ হবে যে একজন অপর জনের দিকে তাকানোর ফুরসত পাবে না। বুখারি ও মুসলিম
কারা
সেদিন আরশের নিচে ছায়া পাবে? সাত শ্রেণীর ব্যক্তি আল্লাহর
রহমতের তলে ছায়া পাবে। যেমন হাদিসে আছে- আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: কেয়ামত দিবসে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তার
ছায়া ব্যতীত ভিন্ন কোন ছায়া থাকবে না- ন্যায়পরায়ন বাদশা; এমন
যুবক যে তার যৌবন ব্যয় করেছে আল্লাহর ইবাদতে; ঐ ব্যক্তি যার
হৃদয় সর্বদা সংশিষ্ট থাকে মসজিদের সাথে ; এমন দু ব্যক্তি,
যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে
ভালোবেসেছে, এবং বিচ্ছিন্ন হয়েছে তারই জন্য ; এমন ব্যক্তি, যাকে কোন সুন্দরী নেতৃস্থানীয়া এক রমণী
আহ্বান করল অশ্লীল কর্মের প্রতি, কিন্তু প্রত্যাখ্যান করে সে
বলল, আমি আল্লাহকে ভয় করি; এমন ব্যক্তি,
যে এরূপ গোপনে দান করে যে, তার বাম হাত ডান
হাতের দান সম্পর্কে অবগত হয় না। আর এমন ব্যক্তি, নির্জনে
যে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দু-চোখ বেয়ে বয়ে যায় অশ্রুধারা। বুখারি ও মুসলিম
অপর এক হাদিসে এসেছে, আবু ইয়াসার কাআব ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন: যে কোন ঋণগ্রস্ত
বা অভাবী ব্যক্তিকে সুযোগ দেবে অথবা তাকে ঋণ আদায় থেকে অব্যাহতি দেবে আল্লাহ তাআলা
তাকে নিজ ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। সহিহ মুসলিম- ১০৩
আমলনামা প্রদান: দুনিয়াতে
মানুষ যা করে সবকিছু আল্লাহ তাআলা লিপিবদ্ধ-হেফাযত
করেন, হাশরের মাঠে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অর্জিত আমলনামা
প্রদান করা হবে। যেমন মহান রব্বুলালামিন বলেন- আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবালগ্ন করে রেখেছি। কেয়ামতের দিন বের
করে দেখাব তাকে একটি কিতাব,যা সে খোলা অবস্থায় পাবে। তুমি পাঠ করো
তোমার তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসেব গ্রহণের জন্য তুমিই যথেষ্ট। সূরা ইসরা,১৩-১৪
যারা ডান হাতে
আমলনামা পাবে: যাদেরকে ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। তারা সৌভাগ্যশীল
হবে । যেমন কুরআনের বাণী- অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে,সে
বলবে নাও!.......সে সুখী জীবনযাপন করবে, সুউচ্চ জান্নাতে। সূরা আল-হাক্কাহ, ১৯-২০
যারা বাম হাতে
আমলনামা পাবে: আর যাদেরকে তাদের আমলনামা বাম হাতে দেওয়া
হবে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন কুরআনে ইরশাদ
হচ্ছে- যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে,
হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া হত..। সূরা আল-হাক্কাহ, ২৫-২৯
হাউজে কাউসার: হাশরের
মাঠে মানুষ দীর্ঘ সময় অবস্থান করবে। সবাই পিপাসিত থাকবে,তাই
প্রত্যেকে এক ঢোক পানি পান করার জন্য ব্যাকুল থাকবে। প্রত্যেক উম্মত তার
নিজ নিজ নবির নিকট থেকে পানি পান করবে। তবে কতক মানুষ পান
করার সুযোগ পাবে; কতক মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
এর বর্ণনা করতে গিয়ে নবি কারিম (ﷺ) বলেন: আমার হাউজের প্রশস্ততা হবে এক মাসের সমান
দূরত্ব। তার পানি দুধের চেয়েও সাদা, সুঘ্রান মেশকের চেয়ে উত্তম। আর তার পাত্রগুলো
আকাশের নক্ষত্রের মত। যে তা থেকে পান করবে কখনো পিপাসিত হবে না। বুখারি ও মুসলিম
হিসেব-নিকাশ: হিসেব
শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো গণনা করা, দর, কৈফিয়ত দেওয়া ইত্যাদি। দয়ালু আল্লাহ সেদিন নিজ বান্দাদের হিসেব গ্রহণ
করবেন। যেমন তিনি বলেন- নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট। অতঃপর তাদের হিসেব-নিকাশ
আমারই দায়িত্বে। সূরা গাশিয়া, ২৫-২৬
সহজ হিসেব কাকে
বলে ? হজরত আয়েশা রা বলেন, নবি কারিম (ﷺ) কে কোন কোন নামাজে বলতে শুনেছি, হে আল্লাহ
! আপনি আমার নিকট থেকে খুব সহজ হিসেব গ্রহণ করুন। তার নামাজ শেষ হলে
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সহজ হিসেব
কি ? তিনি বললেন, (মহান আল্লাহ)
তার আমলনামা দেখবেন,
এরপর তাকে মাফ করে দিবেন। মুসনাদে আহমদ-২৪২১৫
পক্ষান্তরে তার হিসেব নেওয়া হবে সে আটকে পড়বে।
মিযান বা দাঁড়িপাল্লা: হাশরে
মাঠে আল্লাহ তাআলা মিযান তথা দাঁড়িপাল্লা কায়েম করবেন। যার নেকির পাল্লা ভারি হবে
সে সফলকাম হবে, আর যার পাল্লা হালকা হবে, সে জাহান্নামে
প্রবেশ করবে। যেমন তিনি বলেন-(১) আমি কেয়ামতের দিন
ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম করা হবে না। যদি কোন আমল
সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা হাজির করব এবং হিসেব গ্রহণের জন্য আমিই যথেষ্ট। সূরা আম্বিয়া-৪৭
(২) অতত্রব যার পাল্লা ভারি হবে,সে সুখী জীবন যাপন করবে। আর যার পাল্লা
হালকা হবে, তার ঠিকানা হাবিয়া। সূরা করিয়াহ, ৬-৯
শাফায়াত: শাফায়াত
শব্দের বাংলা অর্থ সুপারিশ করা। আর পারিভাষিক অর্থ হলো অন্যের জন্য কল্যাণের
আবেদন করা। শরীয়তের পরিভাষায় বলা হয়, কেয়ামতের মাঠে আল্লাহর অনুমতিক্রমে যেসব
ব্যক্তিবর্গ (নবি-রাসূল, ফেরেশতা, আলেম-হাফেজ, আল্লাহর নেক বান্দাগণ, কুরআন-সিয়াম
বা রোজা, দেখুন লেখকের কিতাব মহান আল্লাহ নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা -১৫ পৃ.) গোনাহগার
মুসলমানকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন- দয়াময়
অল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন, সে
ছাড়া কারও সুপারিশ সে দিন উপকারে আসবে না। সূরা ত্বহা-১০৯
আবু হুরাইরা (রা.)
থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন: প্রত্যেক নবির রয়েছে কিছু দুআ যা অবশ্যই কবুল করা হয়। সকল নবি এ দুআগুলো
করার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করেছেন। কিন্তু আমার উম্মতকে কেয়ামতের দিন শাফাআত করার জন্য এ দুআগুলো
আমি ব্যবহার করিনি। ইনশাআল্লাহ সেই শাফাআত পাবে আমার অনুসারী ঐ সকল
ব্যক্তিবর্গ যারা কখনো আল্লাহ তাআলার সাথে কোন কিছু শরীক করেনি। বুখারি ও মুসলিম
বিস্তারিত
দেখুন- পরকাল (মহাপ্রলয়-২)ড. মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান
আরিফি হাফিজাহুল্লাহু
পুলসিরাত কী: পুলসিরাত
হচ্ছে হাশরের মাঠের পাশে দোযখের ওপর স্থাপিত একটা সেতু ।
এটা কি সবার পার
হতে হবে:
হ্যাঁ যা অতিক্রম সবাই করবে, এটা মহান রবের
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। মুত্তাকি-নেককার লোকেরা পার হবে কাফের-মুশরিক-মুনাফিক, নাফারমানরা নিচে
তথায় জাহান্নামে পতিত হবে । যেমন আল্লাহ তাআলা
বলেন- তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তথায় পৌছবে (পুলসিরাতে)
না । এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য সিদ্ধান্ত । অতঃপর
পরহেযগারদেরকে উদ্ধার করব এবং জালেমদেরকে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেব । সূরা মারইয়াম,৭১-৭২
সিরাতের বৈশিষ্ট্যাবলি: পুরসিরাত
তলোয়ারের চেয়ে ধারালো, চুলের চেয়েও চিকন, সাদান উদ্ভিদের কাঁটার মত অসংখ্যা কাঁটা । এর দৈর্ঘ্য এক মাসের রাস্তা এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন
। যেমন হাদিসে এসছে- সাহাবা
কেরাম, জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ!
পুলসিরাত কী জিনিস? তিনি বললেন, এটা এমন এক স্থান (পথ), যেখানে
পা পিছলে যায় । আরও রয়েছে নানা প্রকার লোহার শলা ও কাঁটা, যেগুলো
দেখতে নজদের সাদান গুল্মের কাঁটার মত । সহিহ মুসলিম-৪৭২
পুলসিরাত পার
হওয়ার গতি: এটা অতিক্রম করার গতি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলছেন- ঈমানদাররা এই পথ কেউ চোখের পলকে, কেউ
বিদ্যুতের গতিতে, কেউ বায়ুর গতিতে,কেউ
দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে,কেউ উটের গতিতে পার হয়ে যাবে। কেউ অক্ষত
অবস্থায় পার হয়ে যাবে;কেউ ক্ষতবিক্ষত হয়ে। কেউ কাঁটাবিদ্ধ হয়ে দোযখে
নিক্ষিপ্ত হবে। এমন কি শেষজন পার হবে এভাবে যে, তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে
যাওয়া হবে। বুখারি-৭৪৩৯
পুরসিরাতে
সাহায্যকারী আমল কি? এ কঠিন মুহূর্তে এমন
কিছু আমল আছে যা সেখানে পুলসিরাতে উপস্থিত থাকবে। এ সম্পর্কে রাসূলে আরারি (ﷺ) বলেন- আমানত ও আত্মীয়তাকে উন্মক্ত করে দেওয়া হবে।এ দুটি আমল
পুলসিরাতের দুই পাশে ডানে ও বামে দাঁড়িয়ে যাবে। সহিহ মুসলিম-৫০৩
আরাফবাসীদের পরিচয়: আরাফ হল,
জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে একটি প্রাচীর। জান্নাতে
প্রবেশের প্রতীক্ষায় কিছু সময়ের জন্য যারা সেখানে অবস্থান করবেন তাদের-কে বলা হয় আরাফবাসী। আল্লাহ তাআলা বলেন: এবং
আরাফের উপর থাকবে কিছু লোক, যারা প্রত্যেককে তাদের চিহ্ন
দ্বারা চিনবে। আর তারা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, তোমাদের
উপর সালাম,তারা এখনও বেহেশতে প্রবেশ করেনি তারা আশায় রয়েছে। সূরা আল আরাফ-৪৬
আররি ভাষায় উঁচু
স্থানকে আরাফ বলা হয়: আরাফবাসী কারা হবে এ সম্পর্কে তাফসিরবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে সকলের মতামত
একত্র করলে যে ফলাফল বের হয়ে আসে তা হল, যাদের সৎকর্ম ও পাপাচারের পরিমাণ সমানে
সমান হবে তারাই হবে আরাফবাসী। সাহাবি হুযাইফা, ইবনে আব্বাস, ইবনে
মাসউদ (রা.) প্রমূখের মতামত এ রকমই। তাফসিরে ইবনে কাসির
অনুসারীদের থেকে
শয়তানের দায়মুক্তি: আর যখন যাবতীয় বিষয়ের ফয়সলা হয়ে যাবে, তখন
শয়তান বলবে, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলেন সত্য
ওয়াদা। আর তোমাদের উপর আমার কোন আধিপত্য ছিল না, তবে আমিও তোমাদেরকে ওয়াদা
দিয়েছিলাম, এখন আমি তা ভঙ্গ করলাম। তোমাদেরকে দাওয়াত
দিয়েছি, আর তোমরা আমার দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ। সুতরাং তোমরা আমাকে
তিরস্কার করো না, বরং নিজদেরকেই তিরস্কার কর। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী
নই, আর তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। ইতিপূর্বে তোমরা আমাকে
যার সাথে শরীক করেছ, নিশ্চয় আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় যালিমদের জন্য
রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব। সূরা ইব্রাহীম-২২
জাহান্নাম কি? মহান রবের অসন্তুষের ঠিকানা হলো
জাহান্নাম। এটা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে একটা মাখলুক। যার জ্বালানি-লাকড়ি হবে
মানুষ ও পাথর। আল্লাহ এতে কাফের-মুশরিক-মোনাফেক ও
পাপিষ্ঠদেরকে বিভিন্ন ধরণের কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি প্রদান করবেন। দোযখের সংখ্যা হলো
সাতটি (৭) ১.
জাহান্নাম ২. সাঈর ৩. সাকার
৪. জাহিম ৫. লাজা ৬. হুতামা ৭. হাবিয়া
জাহন্নামের
শাস্তির ধরণ: মহান আল্লাহ যেমন দয়ালু তেমনি শাস্তি দানে বড় কঠোর। পাপের স্তরের
কারণে শাস্তিরও ম্তর থাকবে। মোনাফেকরা জাহান্নামের তলদেশে অবস্থান করবে। আর সর্বনিস্ন
শাস্তি হলো দোযখের আগুনের জুতো পরিধান করানো। নিম্নে আজাবের ধরণ বর্ণনা
করা হলো:
শিকলে বাঁধা থাকবে: আল্লাহ তাআলা
বলেন: আর সে দিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে
আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে। সূরা ইবরাহিম, ৪৯-৫০
পোশাক: আল্লাহ তাআলা
বলেন- অতএব যারা কাফের, তাদের জন্য
আগুনের পোশাক তৈরি করা হয়েছে। সূরা হজ-১৯
তাদের খাবার: তাদের
খাদ্য হবে রক্ত, পুঁজ,
গরম পানি ও যাক্কুম গাছ, কাঁটাযুক্ত গুল্ম। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-(১)নিশ্চয় যাক্কুম বৃক্ষ পাপীর খাদ্য; গলিত তামার মত,
উদরসমূহে ফুটতে থাকবে। ফুটন্ত পানির মত (বলা হবে) ওকে ধর, অতঃপর
তাকে জাহান্নামের মধ্যস্থলে টেনে নিয়ে যাও। তারপর তার মাথার উপর
ফুটন্ত পানির আজাব ঢেলে দাও। (বলা হবে) তুমি আস্বাদন কর, নিশ্চয় তুমিই সম্মানিত,
অভিজাত। নিশ্চয় এটা তা-ই যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে। সূরা আদদুখান, ৪৩-৫০
(২) আর তারা বিজয় কামনা করল আর ব্যর্থ হল সকল স্বৈরাচারী হঠকারী। এর সামনে রয়েছে
জাহান্নাম, আর তাদের পান করানো হবে গলিত পুঁজ থেকে। সে তা গিলতে চাইবে এবং
প্রায় সহজে সে তা গিলতে পারবে না। আর তার কাছে সকল স্থান থেকে মৃত্যু ধেঁয়ে আসবে, অথচ সে
মরবে না। আর এর পরেও রয়েছে কঠিনআজাব। সূরা ইবরাহিম,১৫-১৭ জাহান্নামীদের আকার-আকৃতি: দোযখীদের আকার-আকৃতি
সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলছেন-(১)
কাফেরের দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব দ্রুতগামী বাহনে তিন
দিনের রাস্তা। বুখারি-৬৫৫১
(২) কাফেরের দাঁত হবে উহুদের মত। তার চামড়ার পুরুত্ব তিনদিনের রাস্তা। মুসলিম-৭৩৬৪
(৩) আগুন দোযখীকে ঝলসে ফেলবে। ফলে তার ওপরে ঠোঁট জড় হতে হত মাথার মাঝখান
পর্যন্ত ওঠবে। আর নীচের ঠোঁট ঝুরতে ঝুলতে নাভী পর্যন্ত নামবে। মুস্তাদরেক হাকেম-২৯৭১
আগুন তাদেরকে দগ্ধ
করবে: আল্লাহ তাআলা বলেন-(১) আগুন
তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারণ করবে। সূরা মুমিনূন-১০৪
(২) আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে,
তখন আবার আমি তা পাল্টে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে
তারা আজাব আস্বাদন করতে থাকে । সূরা
নিসা-৫৬
(৩) এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন,যা হৃদয় পর্যন্ত পৌছবে। সূরা হুমাজাহ,৬-৭
জাহান্নাম
থেকে মুক্তির দোআ: . رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً
وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ِ অর্থ: হে আমাদের রব! দুনিয়াতে
আমাদেরকে কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতে ও কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে মুক্তি দিন
দোযখের আজাব থেকে। সূরা বাকারা-২০১
اللَّهُمَّ إِني أعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمنْ عَذَابِ
القَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ المَحْياوالمَماتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَة المَسِيحِ
الدَّجَّالِ "
.
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা
আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের আজাব থেকে। আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের
আজাব থেকে। আপনার থেকে আশ্রয় চাই মাসীহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে এবং আপনার কাছে আশ্রয় চাই
জীবন-মরণের ফেতনা থেকে। সহিহ মসলিম-১৩৬১
জাহান্নাম থেকে
মুক্তির ছোট আমল: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলছেন- তোমরা
জাহান্নাম থেকে বাঁচো, একখণ্ড খেজুরের মাধ্যমে হলেও। যদি তুমি তা না পাও,তা হলে
একটি ভাল কথার মাধ্যমে। বুখারি-১০৫৮
জান্নাত কি ? দয়াময়
রবের খুশির স্থান, বহিঃপ্রকাশ হলো জান্নাত। এতে রয়েছে হাজার
নাজ-নেয়ামত যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কান কখনো শুনেনি,
মন কখনো কল্পনা করেনি। সবচেয়ে নেয়ামত হলো সকল নেয়ামতের স্রষ্টা মহান
রব্বুলামীনের দিদার। জান্নাতের সংখ্যা হলো আটটি (৮) ১,দারুস সালাম ২.দারুল মুকাম ৩. জান্নাতুল
আদন ৪.দারুল খুলদ ৫,জান্নাতুন নাঈম ৬.জান্নাতুল মাওয়া ৭.জান্নাতুল আকার৮.জান্নাতুল ফেরদাউস নিম্নে জান্নাতের নেয়ামতের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
জান্নাতে কে সর্বপ্রথম প্রবেশ করবে: আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আমি কেয়ামতের দিন জান্নাতের গেটে এসে জান্নাত খুলে দিতে বলবো। তখন দারোয়ান প্রশ্ন করবে, আপনি কে? আমি বলবো,
আমি মুহাম্মদ। তখন সে বলবে, আমাকে নির্দেশ দেয়া আছে যে, আপনার পূর্বে আমি যেন কারো জন্য জান্নাতের দরজা খুলে না দেই। সহিহ
মুসলিম
সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে: এক ব্যক্তি জাহান্নামের দিকে মুখ করা
অবস্থায় থাকবে। তখন সে বলবে, হে আমার প্রভূ! জাহান্নামের গরম বায়ু আমাকে
শেষ করে দিল। আমার চেহারাটা আপনি জাহান্নাম থেকে অন্য
দিকে ফিরিয়ে দিন। সে এভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে বার বার
প্রার্থনা করতে থাকবে। আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার এ প্রার্থনা কবুল হলে এরপর তুমি যেন
আর কিছু না চাও। সে বলবে, আপনার মর্যাদার কসম করে বলছি, এরপর আপনার কাছে আর কিছু চাবো না।
তখন জাহান্নামের দিক থেকে তার চেহারা ফিরিয়ে দেয়া হবে।
তারপর সে আবার বলতে শুরু করবে, হে আমার প্রভূ! আমাকে একটু জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করে দেন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে না? ধিক
হে মানব সন্তান। তুমি কোন কথা রাখো না। কিন্তু এ ব্যক্তি প্রার্থনা করতেই থাকবে। আল্লাহ তাআলাবলবেন, আমার তো মনে হয় তোমার এ দাবী পুরণ করা হলে আবার অন্য কিছু
চাইবে। সে বলবে, আপনার মর্যাদার কসম করে বলছি, এরপর আপনার কাছে আর কিছু চাইবো না।
সে আর কিছু চাইবে না এ শর্তে আল্লাহ তাআলাতাকে জান্নাতের গেটের নিকটবর্তী করে
দিবেন। যখন সে জান্নাতে গেটের দিকে তাকিয়ে
জান্নাতের সুখ শান্তি দেখবে তখন কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার প্রার্থনা করতে শুরু করবে, হে আমার প্রভু আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে
দিন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে না?
ধিক হে মানব সন্তান।
তুমি কোন কথা রাখো না। সে বলবে, হে আমার প্রভূ আমাকে আপনার সৃষ্টির মধ্যে
সবচেয়ে দুর্ভাগা করে রাখবেন না। এভাবে সে
প্রার্থনা করতে থাকবে। অবশেষে আল্লাহ হাসি দিবেন। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। বুখারি ও মুসলিম
যা চাবে তাই পাবে: আবু
হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন
বস্তু প্রস্তুত করে রেখেছি যা কোন চোখ দেখেনি।
আর যা কোন কান শোনেনি। এবং কোন মানুষের অন্তর তা কল্পনা করতে
সক্ষম হয়নি। বুখারি ও মুসলিম
জান্নাতের গেট কেমন হবে: জান্নাতের আটটি গেট রয়েছে। গেটগুলো এত বিশাল যে, একটি গেটের দুপাশের মধ্যে দুরত্ব হল মক্কা থেকে হিজর পর্যন্ত
(প্রায় ১১৬০ কিলোমিটার) অথবা মক্কা থেকে বসরা পর্যন্ত (প্রায় ১২৫০ কি.মি) প্রত্যেক
সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের তাদের আমাল অনুযায়ী বিশেষ বিশেষ গেট থেকে আহবান করা হবে। যে
ছদকাহ করেছে তাকে ছদকার গেট থেকে আহবান করা হবে। যে সওম রেখেছে তাকে রাইয়ান নামক গেট থেকে
আহবান করা হবে।
খাওয়া-দাওয়া করবে কিন্তু মানবিক প্রয়োজন হবে না: জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন, আমি নবি কারিম (ﷺ)
কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: জান্নাতবাসীরা জান্নাতে খাবে,
পান করবে কিন্তু তারা থুথু ফেলাবে না, প্রসাব
করবে না, পায়খানা করবে না, বমি করবে না। এ কথা শুনে সাহাবিগণ প্রশ্ন করলেন, তাহলে খাবার দাবার কোথায় যাবে? তিনি বললেন: ঢেকুর হয়ে মৃগনাভীর সুগন্ধ নিয়ে বের হয়ে যাবে। যেভাবে শাস-প্রশ্বাস নেয়া হয়, এভাবেই জান্নাতবাসীরা আল্লাহ তাআলার তাসবিহ
ও তাহমিদ করতে থাকবে। সহিহ মুসলিম
জান্নাতের তাঁবু: এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে- জান্নাতে
মুমিনদের জন্য মুক্তা খচিত তাঁবু থাকবে।
যার প্রশস্ততা হবে ষাট মাইল। সেখানে
মুমিনদের পরিবার পরিজন একত্র হবে ও পরস্পরে দেখা সাক্ষাত করবে। বুখারি ও মুসলিম
জান্নাতের নদ-নদী : এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার অবস্থা
নিম্নরুপ তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, নির্মল দুধের ঝর্নাধারা,যার স্বাদ
পরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু শরাবের নহরসমূহ এবং
আছে পরিশোধিত মধুর ঝর্নাধারা। সূরা মুহাম্মাদ-১৫
খাদ্য: আল্লাহ
তাআলা বলেন-
(১) তথায় তাদের জন্য আছে রকমারি ফলমূল আর
তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। সূরা মুহাম্মাদ-১৫
(২) এতে রয়েছে প্রচুর ফলমূল, যা শেষ হবার নয় এবং
নিষিদ্ধও নয়। সূরা ওয়াকিয়া, ৩২-৩৩
(৩) তাদের পালনকর্তা তাদেরকে পান করাবেন,
পবিত্র শরবত। সূরা ইনসান-২১
প্রথম খাবার কি হবে? এক সাহাবির প্রশ্নের জবাবে নবি কারিম (ﷺ)
বললেন, মাছের বর্ধিত কলিজা।
মুসনাদে আহমদ-১২৩৮৫
তাদের বাসন: জান্নাতীদের বাসন-কাসন হবে সোনা-রুপার। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-তাদের কাছে পরিবেশন করা সোনার থালা ও পান
পাত্র। সূরা যুখরুফ-৭১
তাদের পোশাক: জান্নাতীদের পোশাক সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- নিশ্চয় খোদাভীরুরা নিরাপদ স্থানে থাকবে, তারা পরিধান
করবে চিকন ও পুরু রেশমী বস্ত্র, মুখোমুখী হয়ে বসবে। সূরা দুখান, ৫১-৫৩
তাদের হুর-গিলমান: আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের কাছে থাকবে
আনতনয়না, ডাগরচোখা।
তারা যেন আচ্ছাদিত ডিম। সূরা সফফাত, ৪৮-৪৯ নবি কারিম (ﷺ)
বলেছেন- তাদের প্রত্যেকের জন্য দুজন করে স্ত্রী
থাকবে, যাদের পায়ের হাড়ের মজ্জা গোশত ভেদ করে দেখা যাবে। সহিহ
মুলিম-৭৩৩
মহা নেয়ামত আল্লাহ তাআলার দিদার লাভ: আল্লাহ পাক বলেন, সেদিন
অনেক মুখমণ্ডল হবে উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে। সূরা আল কিয়ামাহ, ২২-২৩
বিস্তারিত দেখুন-মৃত্যুর পূর্বে ও
পরে-মাও. আশেকে এলাহি বলুন্দ শহরী রহ.-এসহাক প্রকাশনী, পরকাল-ড.মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আরিফি দা.বা. হুদহুদ
(১৫ নং হাদিস সমাপ্ত)
-------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
আল্লাহ তাআলা বলেন- বুদ্ধিমান হলো সে সমস্ত লোক, যারা
দাঁড়িয়ে, বসে শোয়া অবস্থায় অর্থাৎ সর্বাবস্থায় আল্লাহকে
স্মরণ করে এবং আসমান-যমিন সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে। (তারা বলে) পরোয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করোনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদেরকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। সূরা আলে ইমরান-১৯১
টিকা: তাসবিহ-তাহলিলের দ্বারা আল্লাহকে স্মরণ করা। সূত্র: তাফসিরে জালালাইন
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
ইরশাদ করছেন-একশতবার (১০০ বার) সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী পাঠ করবে, তার সমস্ত পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তা সমুদ্রের বুদবুদ (ফেনা) পরিমাণ অসংখ্যা হলেও। বুখারি-মুসলিম
** অপর এক হাদিসে এসেছে- দু’টি কথা মুখে উচ্চারণে খুব হালকা, মিযান-পাল্লায় খুব ভারি
এবং অল্লাহ তাআলার নিকট বেশি প্রিয়। ১. সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী ২. সুবহানাল্লাহিল
আযীম। বুখারি; মুলিম; মিশকাত-২০০
হাদিস নং-১৬, এলেম(জ্ঞান) ও আলেমের মর্যাদা |
معاوية
بن أبي سفيان يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلميقول مَنْ
يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ-ترمذ
অর্থ: আল্লাহ
যার মঙ্গল কামনা করেন তাকে দ্বীনের ব্যুৎপত্তি দান করেন। বস্তুত আমি বণ্টনকারী এবং দাতা হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। বুখারি-৩১১৬;
মুসলিম-১০৩৭; তিরমিজি-২৩০; মুসনাদে আহমদ-১৬৮৩৪
এলেমের আভিধানিক
অর্থ: এলম শব্দটি আরবি শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- জ্ঞান, পরিচয় লাভ করা, অনুধাবন করা, উপলব্ধি
করা, জানা, বুঝা করা ইত্যাদি।
পারিভাষিক অর্থ: আবদুল্লাহ
ইবন মাসউদ রা. মতে, বেশি বর্ণনা করা ও
অধিক পরিমাণ আক্ষরিক জ্ঞান হাসিল করার নাম এলম নয়, বরং এলম
হচ্ছে আল্লাহ তাআলার ভয়ের নাম। বস্তুত এলম হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সিফাত বা অনন্য
গুণাবলিসমূহের একটি, যা অর্জনকারীকে
মর্যাদার আসনে সমাসীন করে।
এলেমের প্রকারভেদ : ইলেম তিন
প্রকার। যথা:
১.ফরযে আইন
২.ফরযে
কিফায়া
৩.নফল এলম
১.ফরযে আইন: যে
বিশ্বাস, আকীদা ও আমল মুসলমানের ওপর ফরজ তা হাসিল করাও ফরজ। যেমন, ঈমানের
মুফাসসাল, হালাল-হারাম, পাক-পবিত্রতা। উদাহরণ: যে নামাজ
আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে, হ্জ্জ
করবে, ব্যবসা-বাণিজ্য, বেচা-কেনা করবে উপরোক্ত ব্যক্তি তার সংশ্লিট বিষয়ে
জ্ঞান অর্জন করা ফরযে আইন।
কাজি সানাউল্লাহ পানিপথি রহ. তার বিখ্যাত তাফসিরে মাজহারি উল্লেখ
করেন- করণীয় ও বর্জনীয় বাতেনি আমলসমূহ যেগুলোর জ্ঞানকে এলমে
তাসাউফ সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাও প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।
এ ক্ষেত্রে ফরজ
আইন বলতে, বিশুদ্ধ আকাইদ, সবর-শোকর,
কানাআত, গর্ব-অহংকার,
হিংসা-বিদ্বেষ, কৃপণতা,
কুধারণা, আত্মগরিমা, দুনিয়ার
মোহ ইত্যাদি যা কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে হারাম। এসব বিষয়ের স্বরূপ
ও প্রকৃতি অবগত হওয়া গ্রহণীয় বিষয় বিষয়সমূহ অর্জন করা এবং হারাম ও নিষিদ্ধ
বিষয়সমূহ বর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য
ফরজ। এ সকল বিষয়ের ওপরই এলমে তাসাওউফের ভিত্তি যা শিক্ষা করা সকলের জন্য ফরযে আইন। সূত্র: দৈনন্দিন
জীবনে ইসলাম-ইসলামিক ফাউণ্ডশেন ।
ফরযে কিফায়া: যে সমস্ত এলম
জরুরি বটে, কিন্তু
সকলের জন্য ব্যক্তিগতভাবে অর্জন
করা আবশ্যক নয়, সমাজের এক শ্রেণী বিশেষভাবে তা অর্জন করলেই
গোটা সমাজ দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়। এ এলমকে
ফরযে কিফায়া পর্যায়ের এলম বলা হয়ে থাকে। যেমন: গোটা
কুরআনুল কারিমের পূর্ণ জানা বরং কুরআনের বর্ণিত সকল বিষয়াদি অনুধাবন করা, সমুদয় হাদিসের
মর্ম উপলদ্ধি করা, হাদিস শাস্ত্রের বুৎপত্তি অর্জন এবং কুরআন
ও হাদিসের আলোকে গৃহীত বিধানবলীর জ্ঞান লাভ করা এতো ব্যাপক ও
গুরুত্বপূর্ণ কাজ যে, সারা জীবন ব্যয় করেও এতে পূর্ণ জ্ঞান
করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপর। তাই ইসলামি শরীয়তে
একে ফরযে কিফায়া বলে গণ্য করা হয়েছে। সূত্র: তাফসিরে মাআরিফুল কুরআন(সংক্ষিপ্ত), ৫৯৭ পৃ.
চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান প্রভৃতিও এ পর্যায়ের
পড়ে। মুয়ামালাত, অসিয়্যত ও ফারাইয বা উত্তারিধকার বণ্টনের জন্য প্রয়োজনীয়
বিদ্যাও এ পর্যায়েরেই এলম।
নফল এলম: নফল অর্থ অতিরিক্ত। শরীয়তের দৃষ্টিতে ফরজ, ওয়াজিব বা
অত্যাবশ্যক পর্যায়ের নয় অথচ এর বিনিময়ে
সওয়াব লাভ হয়, এগুলোর এলম হাসিল করা নফল। অর্থাৎ নফল সংক্রান্ত
বিষয়াদির এলম হাসিল করা নফল।
বর্জনীয় বিষয়: বিদ্যা
নামে কিছু কিছু এমন আছে যেগুলো মানবাত্মা
তথা মানবজাতির জন্য রীতিমত ক্ষতিকর। অশ্লীল শিক্ষা ও
সাহিত্য-অপসংস্কৃতি, যাদু-টোনা,
ভবিষ্যৎ বাণী, কূটতর্ক।
অশ্লীল সাহিত্য: লজ্জাশীলতা
ঈমানের অংশ। কিন্তু এমনকিছু বইপত্র ও পত্রিকা ম্যাগাজিন রয়েছে যেগুলোতে
অশ্লীল কথাবর্তা ও কুরুচিপূর্ণ ছবিতে
ভরপুর। এগুলোকে ইংরেজিতে ‘পর্ণোগ্রাফি’ বলা হয়ে থাকে। অধুনা সিনেমা, ভিসিআর,
ডিস এন্টিনা এবং মোবাইলের সুবাদে বিদেশী ন্যক্কারজনক যৌনতাপূর্ণ
ব্লু ফিল্ম মহামারীর মত কিশোর-কিশোরীদের চরিত্র নষ্ট করছে। আপত্তিকর কবিতা, গল্প,
নাটক, উপন্যাস সাহয্যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইসলামি
জীবনবোধ ও আকীদা সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলা হচ্ছে। যে সমস্ত সাহিত্যকর্ম
আমাদের তরুণ-তরুণীদেরকে বিপথ ও হীনমন্যতাগ্রস্ত করে তোলে,এগুলো অবশ্যই বিষতুল্য পরিত্যজ্য। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজিদে
ইরশাদ হচ্ছে-
যারা মুমিনের মধ্যে
অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে মর্মান্তিক শাস্তি
এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। সূরা নূর-১৯
যাদু-টেনা,
ভবিষ্যৎ গণনা: যাদু-টোনা এমন অদ্ভুত
কর্মকাণ্ড, যাতে কুফর, শিরক এবং
পাপাচার অবলম্বনে জিন ও শয়তানের সন্তুষ্ট করে তাদের সাহায্য নেওয়া হয় এবং মানুষের
ক্ষতিসাধন করা হয়। এ জাতীয় যাদু-টোনা
কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চার মাধ্যমে বা হাতের রেখার ওপর ভিত্তি করে ভবিষৎবাণী করা
শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। কেননা ভবিষ্যতের নিশ্চিত জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে। এ জন্যই রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- যে
ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর কাছে ভবিষ্যত
সম্পর্কে কোন কিছু জানতে চায় চল্লিশ দিন
পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হয় না। মুসলিম, মিশকাত-৩৯৩ সূত্র:
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম-ইসলামিক ফাউণ্ডশেন।
এলেমের গুরুত্ব ও
ফযিলত: আল্লাহ তাআলার বাণী-
(১) বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি
সমান ? সূরা যমুার-০৯
(২) তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত প্রদান করেন এবং যাকে হিকমত প্রদান করা হয় তাকে
প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। সূরা বাকারা-১৬৯
রাসূলের বাণী-
(১) এলম অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলিমের (নারী-পুরুষ সবার ) ওপর ফরজ। সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৪
(২) যে ব্যক্তি এলম অন্বেষণের পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের
পথ সহজ করে দেন। মুসলিম-২৬৯৯
(৩) মৃত্যুর পর মুমিনের সঙ্গে যেসব আমাল যুক্ত হবে সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে এলম,
যা সে অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং যার প্রচার-প্রসার করেছে; পুণ্যবান সন্তান যে সে রেখে গিয়েছে; কুরআন যার সে
উত্তরাধিকারী বানিয়েছে; মসজিদ যা সে বানিয়েছে; মুসাফিরদের আশ্রয়কেন্দ্র যা সে নির্মাণ করেছে; নদী
যা সে খনন করেছে এবং সাদাকা যে সে নিজ জীবদ্দশায় ও সুস্থতাকালে আপন সম্পদ থেকে দান
করেছে- এসব তার মৃত্যুর পর তার সঙ্গে যুক্ত হবে। ইবনে মাজাহ-২৪২;
সহিহ ইবন খুযাইমা: ২৪৯০,
(৪) আল্লাহর যে ঘরে মানুষ
একত্রিত হয় এবং তার কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে এলেমের দরসে লিপ্ত হয় সেই ঘরে
রহমত অবতীর্ণ হয়, ফেরেশতারা সেই ঘরকে বেষ্টন করে নেন এবং আল্লাহ তাআলা তার আশে পাশে
যারা আছেন (ফেরেশতারা) তাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন। সহিহ মুসলিম-২৬৯৯
(৫) যে ব্যক্তি এলম অন্বেষণের জন্য বের হয় আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের রাস্তা
সহজ করে দেন। ফেরেশতারা তার সম্মানে নিজেদের পাখা বিছিয়ে দেয়। আলেমের জন্য
আসমান-জমিনের সবাই দুআ করতে থাকে। এমনকি সাগর ও খাল-বিলের মাছ ও তার জন্য দুআ করতে থাকে...। সুনানে ইবনে
মাজাহ (৬) মানুষ যখন মারা যায় তখন তিনটি আমাল ছাড়া তার
যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়। আমল তিনটি হচ্ছে চলমান সাদাকা, এমন এলম,
যা দ্বারা (অন্যরা) উপকৃত হয় তথা এলমে নাফে এবং নেক সন্তান, যে মৃতের জন্য দুআ করে। মুসলিম: ১৬৩১
(৭) যে ব্যক্তি এলম অন্বেষণের জন্য বের হয় সে আল্লাহর রাস্তায় থাকে, যাবত না সে ফিরে আসে। জামেউত তিরমিজি-২৬৪৭
(৮) হেকমত ও এলেমের একটি কথা জ্ঞানীর জন্য হারানো মূল্যবান সম্পদের মতো। সুতরাং যেখানে
পায় সেখান থেকেই যেন সে তা সংগ্রহ করে নেয়। সুনানে বাইহাকি-৪১২
(৯) আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির জীবন সুখী-সমৃদ্ধ করুন, যে
আমার হাদীছ
শ্রবণ করে অতঃপর
তা মুখস্থ করে এবং অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়। সহিহ ইবনে হিব্বান:
৬৯
(১০)
আবুদ্দারদা রা. বলেন, একটি
মাসআলা শিক্ষা করা আমার দৃষ্টিতে ইবাদতের জন্য সারারাত জাগ্রত থাকার চেয়ে শ্রেয়।
আলেম-ফকিহর
মর্তবা: আলেমদের ফযিলত-মর্তবা সম্পর্কে স্বয়ং
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল হাকীমে বলেন-(১) তোমাদের
মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায়
সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত। সূরা মুজাদালা-১১
(২) আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে,
তাঁকে ছাড়া আর কোন উপাস্য
নেই ।
ফেরেশতাগণ এবং
ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই । তিনি পরাক্রমশালী
প্রজ্ঞাময় । সূরা আলে ইমরান-১৮
ইমাম কুরতুবি
(রহ.) তাফসিরে লেখেন- আলোচ্য আয়াত এলম ও ওলামায়ে কেরামের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের
দলিল। কেননা ওলামায়ে কেরাম ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক সম্মানিত হলে তিনি
নিজের নামের সঙ্গে তাদের নামই উল্লেখ করতেন।
(৩) কেবলমাত্র আলেমগণই আল্লাহকে ভয় করে, নিশ্চয় আল্লাহ
প্রবল পরাক্রমশালী ক্ষমাশীল। সূরা ফাতির-২৮
v
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন-
(১) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দুইজন ব্যক্তির কথা আলোচনা
করা হলো। একজন আবেদ আর অপরজন আলেম। জবাবে তিনি বললেন, ওই দুইজনের মধ্যে আলেমের মর্যাদা তেমন
সুউচ্চ, যেমন আমার মর্যাদা একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে সুউচ্চ। এরপর তিনি বললেন, স্বয়ং
আল্লাহ তাআলা আলেমের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতা, আসমান
ও জমিনবাসী, এমনকি গর্তের পিপিলিকা এবং সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত
আলেমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। জামেউত তিরমিজি-২৬৮৫
(২) wbðq GKRb
Av‡e‡`i Dci GKRb Av‡j‡gi gh©v`v Ggb †hgb ZviKvivRxi Dci c~wY©gvi iv‡Zi Pvu‡`i
gh©v`v| Avey `vD`-3643, G‡jg Aa¨vq
(৩) আলেমগণ হলেন নবিগণের ওয়ারিশ। আর নবিগণ ধনসম্পদের মিরাছ রেখে যান না, বরং
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ এলেমের মিরাছ রেখে যান। সুতরাং যে ব্যক্তি এই
মহামূল্যবান মিরাছ গ্রহণ করল সে বিরাট মূল্যবান বস্তু গ্রহণ করল। সুনানে ইবনে মাজাহ
(৪)
ইবন আব্বাস রা. বলেন, সাধারণ
মুমিনের চেয়ে আলেমের মর্যাদা সাতশত গুণ বেশি। এবং প্রতিটি মর্যাদার
মধ্যে দূরত্ব পাঁচশত বছরের সমান।
(৫) ইয়াহইয়া ইবন মুয়াজ (রহ.) বলেন, ওলামায়ে কেরাম
উম্মাতে মুহাম্মাদীর সবচেয়ে কল্যাণকামী ব্যক্তি। এমনকি ব্যক্তির পিতা-মাতার
চেয়েও বেশি করুণাকামী তারা। জিজ্ঞেস করা হলো; এটা কীভাবে? জবাবে
তিনি বললেন, কেননা ব্যক্তির পিতা-মাতা
তাকে দুনিয়ার আগুন থেকে বাঁচায় মাত্র, কিন্তু আলেমগণ বাঁচান আখেরাতের আগুন থেকে।
হায় আফসোস ! সমাজের ধনবান-বিত্তশালী-প্রভাবশালী
লোকদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয় আমরা
তা জানি, বুঝি। ক্ন্তিু আলেম, হাফেজ, হুজুরদের
সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়,তা জনি না: জানলেই
মানি না। একজন বিত্তবান যদি ভুল করে,তাহলে আমরা ধমক দিয়ে কথা বলি না; অথচ একজন ইমাম, মুয়াজ্জিন ভুল করলে আমাদের মাথা ঠিক
থাকে না, দুর্ব্যবহার করি। তাহলে বুঝা গেল, একজন বিত্তবানের মান-সম্মান-ইজ্জত আপনার কাছে যেই পরিমাণ ইমাম, মুয়াজ্জিনের
মর্যাদা আপনার কাছে তার চেয়েও কম। সুতরাং আমাদের ঈমানের অবস্থা কি? নিজেকে
জিজ্ঞেস করি?
আলেম-ওলামারাও
মানুষ। মানুষ মাত্রেই ভুল-ত্রুটি আছে (তবে সব নবি-রাসূল বাদ) সেটা সুন্দরভাবে, আদবের
সাথে, গোপনে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।
আলেমকুল শিরমনি, ফকিহুন
নফস হজরত মাওলানা রশিদ আহমদ গঙ্গহি রহ. বলেছেন- যে ব্যক্তি হক্কানি আলেমদের অপমান, বেইজ্জত করে (দ্বীনের কারণে) তাকে কবরে রাখার পর তার চেহেরা কেবলার দিকে থাকে না, ঘুরে যায় । তোমরা বিশ্বাস না করলে, কবর খুঁড়ে দেখ। আল্লাহ তাআলা আমাকে
ও সব মুসলমানরেক আহলে এলম তথা আলেম, হাফেজ,
বুজুর্গদের মহব্বত-ইজ্জত করার তাওফিক দান করুন।
জাহেল বা মূর্খতার
নিন্দা: মূর্খতা পাপ, এটা হচ্ছে আত্মার মৃত্যুতুল্য। মুমিনের শান
অজ্ঞতা হতে পারে না। আল্লাহ তা থেকে নিষেধ করেছেন, যেমন তিনি বলেন-
(১) আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, যেন মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত
না হও। সূরা হূদ-৪৬
শিক্ষকের আখলাক: একজন
আদর্শ শিক্ষক বা দ্বীনের দায়ীর আচরণ কেমন
হওয়া উচিত তা প্রিয় নবি (ﷺ) বলে গিয়েছেন -
দুনিয়ার মানুষ
তোমাদের অনুসারী। আর তোমাদের কাছে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে লোকেরা আসবে দ্বীন শেখার জন্য। সুতরাং তারা যখন তোমাদের
কাছে আসবে, তখন তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। তিরমিজি-২৬৫০
তালিবে এলম বা
ছাত্রের আবশ্যক গুণাবলী:
ü
নিয়ত বিশুদ্ধ করা । কেননা রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি এমন জ্ঞান শিক্ষা করলো, যার দ্বারা
আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা সে কেবল পার্থিব
স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করলো, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধ পাবে না। আবু দাউদ: ৩৬৬৪
ü
ধৈর্য-এর সাথে এলম
হাসিল করা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-
আল্লাহ তাআলা মুসা(আ.)
-এর ওপর রহম করুন। আক্ষেপ, তিনি যদি আরেকটু ধৈর্যধারণ করতেন তবে আমরা
তাদের আরও অনেক কিছু জানতে পারতাম। বুখারি-১২২; মুসলিম-১৭০
ü
ওস্তাদকে আদব করা। ইমাম শাফেয়ি (রহ.)
এলম হাসিল করার জন্য এক কবিতায় এই ছয়টি
বস্তুকে একত্রিত করেছেন। যথা-
ভাই! ছয়টি বস্তু ছাড়া তুমি এলম
হাসিল করতে পারবে না। আমি তোমাকে সেই ছয়টি বস্তু বর্ণনা করে শোনাবো। মেধা, বাসনা,
আগ্রহ, সফর, উস্তাদের
সাহচার্য এবং দীর্ঘ সময় ব্যয়।
ü
গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। ইমাম শাফেয়ি রহ. তার
সম্মানিত ওস্তাদ ইমাম ওয়াকির নিকট ভুলে
যাওয়ার অভিযোগ করলে তিনি বলেন-(যা কবিতা আকারে)-আমি উস্তাদ ওয়াকি (রহ.)-এর কাছে স্মরণ শক্তির দুর্বলতার অভিযোগ করলাম। তিনি আমাকে পাপ
ছেড়ে দেয়ার আদেশ করলেন এবং বললেন, এলম হচ্ছে নূর। আর আল্লাহ তাআলা তার নূর কোনো
পাপীক দান করেন না।
ü
ইলমানুযায়ী আমল করা। যারা ইলমানুযায়ী
আমল করে না, তাদেরকে গাধার সাথে তুলনা করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-যাদেরকে
তাওরাতের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছিল তারপর তারা তা বহন করেনি, তারা
গাধার মত! যে বহু কিতাবের বোঝা বহন করে। সে সম্প্রদায়ের উপমা
কতইনা নিকৃষ্ট, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে। আর আল্লাহ যালিম
সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। সূরা আল-জুমাআ-০৫
অন্য আয়াতে বলেন- তোমরা কি
মানুষকে ভাল কাজের আদেশ দিচ্ছ আর নিজদেরকে ভুলে যাচ্ছ? অথচ
তোমরা কিতাব তিলাওয়াত কর। তোমরা কি বুঝ না? সূরা আল-বাকারা-৪৪
গোমরাহীর কারণ: হজরত
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন-আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের অন্তর হতে ইলেম টেনে বের করে উঠিয়ে দেবেন না;
বরং আলেমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে এলম উঠিয়ে নিবেন। এমনকি যখন দুনিয়ায় আর কোনো
আলেম অবশিষ্ট থাকবে না; তখন লোকজন মূর্খ লোকদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। অতঃপর তাদের নিকট বিভিন্ন মাসয়ালা
জিজ্ঞেস করা হলে, তারা এলম ছাড়া ফতোওয়া দিবে। নিজেরা পথ ভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকে পথ ভ্রষ্ট করবে। বুখারি-মুসলিম
ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, যতদিন মানুষ এলম
অর্জন করবে নিজেদের প্রবীণ, বিশ্বস্ত ও আলেমদের কাছ থেকে,
তারা কল্যাণের মধ্যেই থাকবে। আর যখন এলম গ্রহণ করবে নবিন
ও অশিষ্টদের কাছ থেকে, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। [বাইহাকি, মাদখাল-২৭৫] অবশ্য নবিনের সংজ্ঞা নিয়ে মতভেদ আছে। ইবন কুতায়বা বলেন, এর দ্বারা
বয়সে নবিন উদ্দেশ্য।
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম
(রহ.) বলেন, ইমাম শাফেয়ি (রহ.) কোন ব্যক্তিকে দেখলে প্রথমে তাকে
বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন। যদি তিনি আলেম ও আমলদার হতেন তবে ছেড়ে দিতেন। অন্যথায় তাকে
তিক্ত ভাষায় ভর্ৎসনা করতেন এবং বলতেন, আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় না দিন- না
তোমার নিজের থেকে না ইসলাম থেকে। তুমি নিজেকেও ধ্বংস করেছ, ইসলামকেও
ধ্বংস করেছ।
এলমে দ্বীন কার
কাছ থেকে শিখবে: বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত আবু হুরাইরা রা. এর ছাত্র মুহাম্মাদ
ইবনে সিরিন রহ. বলেন- নিশ্চয় এ (কিতাব ও সুন্নাহর) এলম হচ্ছে দ্বীন। সুতরাং তোমরা
লক্ষ্য রাখবে যে, তোমাদের এ দ্বীন কার নিকট থেকে গ্রহণ করবে। মুকাদ্দামুল
মুসলিম
আমাদের অসুখ হলে
ইঞ্জিনিয়ারের কাছে যায় না,বিল্ডিং করতে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস
করি না, মামলা-মোকাদ্দামা মুখ করার
জন্য শিক্ষকের কাছে যায় না অর্থাৎ প্রত্যেক বিষয়ে অজ্ঞিভ লোকের কাছে ধরণা ধরি,
মুখাপেক্ষী হয়, জিজ্ঞেস করি। এটাই
চিরাচরিত নিয়ম। অতত্রব একজন প্রফেসর, ডাক্তার,
ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ারের কাছে আমরা কেন দ্বীন শিখবো ?
পৃথিবীর মানুষ দ্বীন শেখার
ক্ষেত্রে আলেমদের মুখাপেক্ষী। যারা মনে করে আলেম কেন প্রয়োজন সরাসরি কুরআন-হাদিস থেকে
আমল করবো। তাদের কাছে প্রশ্ন, মেডিক্যাল স্যায়ন্সের
কিতাবে কোন রোগের কি ওষুধ তা লেখা আছে। সুচিকিৎসা, আরোগ্য
লাভের জন্য কি ওষুধের কেটালকই যথেষ্ট ? ডাক্তরের প্রয়োজন নাই। আমার ভাই! রোগ
নির্ণয়, ওষুধ প্রয়োগের মাত্রা যেমন ডাক্তার সাহেব নির্ধারণ
করে, ঠিক তেমনি ফকিহ-আলেম-মুজতাহিদগণ আমলের সঠিক পন্থা-পদ্ধতি নির্ধারণ করেন।
অনেকে প্রচারণা করে, কুরআন-হাদিসে
তো সবই আছে, কথা সত্য। আলেমদের কেন অনুসরণ করতে
হবে।
কিন্তু
জানার বিষয় হলো-শরীয়তের সব বিধান (শাখাগত) সুস্পষ্ট-বিস্তারিত বর্ণিত হয়নি অথবা নিত্য-নতুন
সমস্যা-আবিষ্কার কারণে, ব্যাখ্যার
অবকাশ আছে, কিয়াসের প্রয়েজন আছে। আর যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
এর অনুমদিত। সেসব ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আলেম-মুজতাহিদগণ মাসয়ালা ইসতেমবাত
করে। তার উকৃষ্ট উদাহরণ-রাসূলের জামানায় রেল গাড়ী, বিমান ছিল না,
এখন তথায় কিভাবে নামাজ পড়তে হবে? ইনজেকশন ছিল
না, এটা নিলে, পুশ করলে রোজা হবে কি না
? টেলিফোন-মোবাইলে বিবাহ হবে কি না ?
ব্যাংক-শেয়ার বাজার ছিল না, এখন কিভাবে লেনদেন করতে হবে,
তা কিয়াস ছাড়া কোন পথ নাই।
এলেমের জন্য আপদ
কি :**আলি ইবন ছাবেত (রহ.) বলেন,
এলেমের আপদ হলো
আত্মতুষ্টি ও ক্রোধ। আর সম্পদের আপদ অপচয় ও ছিনতাই।
**আরবিতে
একটি প্রবাদ আছে-জ্ঞানের বিপদ হলো ভুলে যাওয়া ।
হাদিস নং-১৭,
গোনাহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা |
عن أنس قال إنَّكُمْ لَتَعْمَلُونَ أعْمالًا، هي أدَقُّ
في أعْيُنِكُمْ مِنَ الشَّعَرِ، إنْ كُنَّا لَنَعُدُّها علَى عَهْدِ النَّبيِّ
صلَّى اللهُ عليه وسلَّم مِنَ المُوبِقاتِ.
অর্থ: হজরত আনাস
রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা অনেক
কাজ কর যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়েও সরু (অতি সাধারণ ও তুচ্ছ
মনে কর) কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে আমরা সে সবকে বড় অপরাধ তথা
ধ্বংসকারী জিনিস বলে মনে করতাম। বুখারি-৬৪৯২; মুস.আহমদ-১২৬০৪
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: ছোট
গোনাহ সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করা হবে। হজরত আয়েশা রা. হতে
বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বলেছেন, হে আয়েশা ছোট্ট গোনাহ হতে
বেঁচে থাক। কেননা আল্লাহ তাআলা পক্ষ হতে এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করা হবে। নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন- তোমরা ছোট ছোট গোনাহ থেকে বিরত থাকো। কেননা ছোট ছোট
গোনাহের উদাহরণ হচ্ছে এমন, যেমন কোন কওম একটি উপত্যকায় অবতরণ করল। তারপর এ নিয়ে এলো
একটি কাঠ, ও নিয়ে এলো একটি কাঠ, এভাবে তারা তাদের রুটি সেকে
ফেলল। নিশ্চয় ছোট ছোট গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তিকে যখন পাকড়াও করা হবে, তখন
সেগুলো তাকে ধ্বংস করে দিবে। মুসনাদে আহমদ-২২৮০৮
গোনাহ
কি? নাওয়াস ইবনু সামআন আনসারি রা. থেকে
বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে
প্রশ্ন করলাম । তখন উত্তর দিলেন, পূণ্যকর্ম হচ্ছে সচ্চরিত্র । আর পাপ হচ্ছে যা
তোমার অন্তরে খটকা করে এবং লোকে তা জানুক তা তুমি অপছন্দ কর । সহিহ মুসলিম-৬৪১০
সবচেয়ে অসহায়-গরিব কে? আবু
হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন, তোমরা কি জান দরিদ্র অসহায় ব্যক্তি কে? সাহাবায়ে
কেরাম বললেন, আমাদের মধ্যে দরিদ্র অসহায় ব্যক্তিতো সে যার
কোন টাকা পয়সা বা সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: আমার উম্মতের
মধ্যে সত্যিকার দরিদ্র অসহায় হলো সেই ব্যক্তি যে কেয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও
যাকাতসহ অনেক ভাল কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে, অথচ দুনিয়াতে বসে সে
কাউকে গালি দিয়েছিল, -------কারও রক্তপাত ঘটিয়েছিল, কাউকে মার-ধোর করেছিল ফলে তার নেক আমলগুলো থেকে নিয়ে
তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করা হবে। এভাবে যখন তার নেক
আমলগুলো শেষ হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার জন্য আর কিছু থাকবে না তখন তাদের
পাপগুলো তাকে দেয়া হবে ফলে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। সহিহ মুসলিম
ভাল-দ্বীনি কথা
ভাল লাগে না কেন? প্রতিটি মানুষ যখন জন্মগ্রহণ করে তখন
পরিচ্ছন্ন অন্তর নিয়েই আসে। কিন্তু বড় হওয়ার পর সে নানান গুনাহে লিপ্ত হয়, ফলে তার
অন্তরে মরিচা পরে, অন্ধকারাচ্ছন্ন-শক্ত
হয়ে যায়, ফলে ভাল-দ্বীনি কথা তার ভাল লাগে না। হাদিস শরিফে এসেছে- মানুষ যখন
প্রথম কোন একটি গোনাহ কর,তখন তার অন্তরের ওপর একটা কাল দাগ
পড়। তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও তওবা করে, তাহলে সে দাগ মুছে ফেলা হয়। আর যদি পুনরায়
করে গোনাহ করে,তাহলে ঐ দাগ বৃদ্ধি পায়, এমনকি দেল
একেবার কাল হয়ে যায়। এ মরিচা ও
কালোঅন্তরের কথা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন, কখনও না,
বরং তারা যা করে, তাই তাদের হৃদয়-অন্তর মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে। (সূরা মুতাফফ্ফিীন-১৪)
জামে তিরমিজি
গোনাহ করার পরও
আমাদের অন্তরে আঘাত লাগে না কেন? কোন লোককে যদি সাপে কামড় দেয়, কী সাপ কামড় দিয়েছে তা পরীক্ষা করার জন্য মুরুব্বিরা তাকে মরিচ খাওয়ায়,
যদি ঝাল লাগে বুঝতে হবে, তাকে জাতি-বিষধর সাপ কামড় দেয়নি আর যদি ঝাল না লাগে বুঝবে জাতি সাপ কামড় দিয়েছে। তাই যদি মাপকাঠি
তাহলে আমরা হাজরো গোনাহ করার পরেও কেন অন্তরে চোট-আঘাত লাগে না, বুঝতে আমাদের ঈমানে জাতি সাপ কামড়
দিয়েছে। অথচ হাদিসে গোনাহ করার পর অন্তরে ব্যাথা লাগার কথা
আছে এটা ঈমানের পরিচায়ক।
নিজ স্ত্রী, বন্ধু-বান্ধব, চাকরি ক্ষেত্রে
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি কোন কারণে নারাজ-অসন্তুষ হয়, তখন আমাদের আর ভাল লাগে না,
ঘুম আসে, কাজে মন বসে না। হায় আফসোস! আমাদের কি হলো
যে, মহান রব্বুলালামীনের নারাজে-অসন্তুষে আমাদের কিছুই হয় না, অনুভূতিহীন। এ অবস্থার জন্য
কি আমাদের অনুশোচনা-বিলাপ করা উচিত নয়?
গোনাহ কুফুরির
দিকে নিয়ে যাচ্ছে: কোন কবিরা গোনাহ করলে তাকে আহলে সুন্নাত ওয়াল এর মতে সে ফাসেক বলে গন্য হয়। কিন্তু গোনাহকে
হালাল-বৈধ মনে করলে সে কাফের হয়ে যাবে। আজ আমাদের সমাজের অবস্থা লক্ষ্য করি- গোনাহ করে,
ধর্ষণ করে, কে কয়জনের সাথে অবৈধ প্রেম করে
মেয়েদেরকে ঠকিয়েছে, তা নিয়ে
গর্ববোধ করছে, আনন্দ-উল্লাস
করছে। এটা ঈমান বিধ্বংসী-বিনাশকারী নয় কি? এ রকম কয়েকটি গোনাহ
আমাদের সমাজে স্বাভাবিক হয়েছে। যেমন-বেপর্দা, বিনা
প্রয়োজনে ছবি তোলা সুদ-ঘুষ, মুসলমানদের
রন্দ্রে-রন্দ্রে, শিরা-উপশিরায় ঢুকে গেছে।
বিস্তারিত দেখুন-লেখকের ‘সমস্ত বিপদাপদের
কারণ চারটি’, এক
মিনিটের মাদ্রাসা- হজরত শাহ আবরারুল হক ও শাহ হাকীম আখতার রহ.
হাদিস নং-১৮, অজু তথা পবিত্রার গুরুত্ব ও ফযিলত |
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ
-صلى الله عليه وسلم- قَالَ
:« أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا
وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ ». قَالُوا : بَلَى
يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ :« إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى
الْمَكَارِهِ ، وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ ، وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ
بَعْدَ الصَّلاَةِ ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ
অর্থ: হজরত হুরাইরা
রা.থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- আমি কি
তোমাদের সে বিষয় সম্পর্কে অবগতি করব না,
যদ্বারা আল্লাহ তাআলা অপরাধসমূহ মিটে দেন এবং পদমর্যাদা উন্নত করেন। উপস্থিত সাহাবারা
বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি
বললেন, কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণতার সাথে অজু করা, মসজিদের পানে অধিক গমন করা। এটাই হলো তোমাদের জন্য রিবাত বা প্রস্তুতি। সহিহ মুসলিম-২৫১; তিরমিজি-৫১; নাসায়ি-১৪৩
পবিত্রতার গুরুত্ব: পবিত্রতা
সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
(১) হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় কনুইসহ ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর
ও পদযুগল টাখনুসহ ধৌত কর.....’। মায়েদা-০৬
(২)আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করুন এবং আপন পোশাক পবিত্র করুন। সূরা মুদ্দাসসির,৩-৪
v
রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন-
(১) পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক।সহিহ মুসলিম-৪২৫ ই.ফা.
(২) সালাতের চাবি হল অজু। সুনানে আবুদাউদ, তিরমিজি, সুনানে দারেমি
পবিত্রতা বা অজুর ফযিলত: আল্লাহ তাআলার বাণী-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ (অন্তর থেকে) তওবাকারী ও (দৈহিকভাবে) পবিত্রতা
অর্জনকারীদের
ভালবাসেন’। সূরা
বাকারা-২২২
v নবিজির (ﷺ) বাণী-
Ø
কালো ঘোড়া সমূহের মধ্যে
কপাল চিতা ঘোড়া যে ভাবে চেনা যায়.. কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের অজুর অঙ্গগুলির ঔজ্জ্বল্য দেখে আমি তাদেরকে অনুরূপভাবে চিনব এবং তাদেরকে হাউয
কাওছারের পানি পান করানোর জন্য আগেই পৌঁছে যাব। অতএব যে চায় সে যেন তার
ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে চেষ্টা করে। বুখারি-মুসলিম
Ø
মুসলিম যখন ফরজ সালাত
আদায়ের উদ্দেশ্যে সুন্দরভাবে অজু করে
এবং পূর্ণ মনোনিবেশ ও ভীতিসহকারে সুষ্ঠুভাবে রুকূ-সিজদা আদায় করে, তখন ঐ অজু ও সালাত
তার বিগত সকল গুনাহের কাফফারা হিসেবে গৃহীত হয়। তবে গোনাহে কাবিরা ব্যতীত। মুসলিম, মিশকাত
হা/২৮৬ পবিত্রত অধ্যায়-৩, পরিচ্ছেদ-১।
Ø
অজু করার পর নিম্নোক্ত দুআ
পাঠ করবে- আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকা লাহূ, ওয়া
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহু ওয়া রসূলুহু। আল্লা-হুম্মাজ্ আলনী মিনাত্তাউয়াবীনা
ওয়াজ্ আলমিনাল মুতাত্বহহিরীন। তিরমিজি
Ø
ওমর ফারুক (রা.) হতে বর্ণিত উক্ত হাদীছে রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে অজু করবে ও কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে,
তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। যেটা দিয়ে ইচ্ছা
সে প্রবেশ করবে।. মুসলিম-২৩৪; তিরমিজি, মিশকাতুল মাছাবিহ-২৮৯ পবিত্রতা অধ্যায়
নোট: অজু বা বিভিন্ন
নেক আমল দ্বারা যে গোনাহ মাফের কথা বলা হয়েছে, তাদ্বারা উদ্দেশ্য শুধু সগীরা
(ছোট) গোনাহ, কেননা কবিরা
গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না।
মাসয়ালা: অনেকে বলে,
প্রস্রাবের পর ৪০ কদম হাঁটতে হয়। এটা ভুল। কারণ সবার হুকুম এক
নয়, শারীরিক গঠন এক নয়। তাই যতক্ষণ প্রস্রাব আসা বন্ধ না হয়, ততক্ষণ অপেক্ষা
করতে হবে, ৪০/৫০/১০০
কদম যাই লাগুক না কেন? অনেকে ঢিলা নিয়ে লাফালাফি-ছোটা চুটির করে এটা ঠিক নয়। বরং আঁড়ালে-আবডালে জরুরত পরা করা উচিত।
মাসয়ালা: প্রস্রাব যদি
এক দিরহাম (একটা কাঁচা পয়সা) পরিমাণ বা
তার চেয়ে কম জায়গায় লাগে, তাহলে পানি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। কিন্তু যদি এক দিরহামের
চেয়ে বেশি হয়, তাহলে পানি ব্যবহার করা ওয়াজিব।
মাসয়ালা: মশা-মাছির রক্ত, কবুতর, শালিক,
চুরই পাখির বিষ্ঠা পাক। কেরোসিন, ডিজেল,
মবিল ইত্যাদি পাক। সূত্র: এসো ফিকহ শিখি, মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দা.বা.
এস্তেঞ্জার (টয়লেটের)
আদব ও সুন্নাতসমূহ:
১. এস্তেঞ্জাখানায়
(বাথরুমে) প্রবেশের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে মাথা ঢেকে নেওয়া
২.বিসমিল্লাহ
বলে প্রথমে ডান পায়ের জুতো-সেন্ডেল পায়ে দেওয়া।
৩. প্রবেশের পূর্বে এ দুআ পড়া ।
اَللَّهُمَّ إِنِّى
أَعُوْذُبِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুবছি
ওয়াল খাবাইছ
(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি
দুষ্ট পুরুষ ও মহিলা জিনের অনিষ্ট হতে
আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ) অন্য বর্ণনায় শুধু
বিসমিল্লাহ বলার কথা এসেছে।
৪. বাম পায়ের
ওপর ভর দিয়ে এস্তেঞ্জা করা।
৫. কেবলা
(পশ্চিম) দিকে মুখ বা পিঠ করে না বসা।
৬. বাম পা দিয়ে
ঢোকা আর ডান পা দিয়ে বের হওয়া।
৭. বের হওয়ার
পর এ দুআ পড়া। গুফরকনাকা আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আযহাবা আন্নীল আযা ওয়া আফানী।
৮. কবরস্থান,
মানুষের চলাচলের রাস্তার পাশে, গোসল খানায়,
ছায়াদার ও ফলদার গাছের নিচে, গর্তে, বিনা ওজরে পানিতে, দাঁড়িয়ে, হেঁটে
হেঁটে প্রস্রাব-পায়খানা করা নিষেধ। মাটির নিকটবর্তী না
হয়ে কাপড় না উঠানো, হাটুর ওপর কাপড় না উঠানো। সূত্র: বুখারি;
মুসলিম; আবু দাউদ; তিরমিজি; আহমদ;
তোহফায়ে
সুন্নাহ-৮পৃ.
মেসওয়াকের গুরুত্ব ও ফায়দা: ঘুম থেকে
উঠে, ঘুমানোর পূর্বে, অজুর পূর্বে ভালভাবে মিসওয়াক করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
এরশাদ করেন, (১) আমার উম্মতের উপর কষ্টকর মনে না
করলে আমি তাদেরকে এশার সালাত দেরীতে এবং প্রতি সলাতে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। বুখারি-মুসলিম,
মিশকাত-৩৪৬
(২) মেসওয়াক হল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি
লাভের কারণ। সুনানে নাসায়ি-০৫; মিশকাত -৩৮১
(৩) বিখ্যাত ফকিহ আল্লামা ইবনে আবেদ্বীন
শামি রহ. বলেন-মেসওয়াকের সুন্নাতের ওপর আমলের বরকতে মৃত্যুর সময়
কালেমায়ে-শাহাদত স্মরণ হয়ে যায়। শামি ১ম খণ্ড, ৮৫ পৃ.
Ø
উল্লেখ যে, প্রিয় নবি
মুহাম্মাদ (ﷺ) এর শেষ আমল ছিল মেসওয়াক অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে
তিনি মেসওয়াক করেছিলেন।
ব্রাশ করলে কি মেসওয়াকের
ফায়দা হবে? এ সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম আল্লামা তকি উসমানি বা.দা. বলেন- মেসওয়াকের দুটি
ফায়দা ১. মুখ পরিস্কারের
ফায়দা ২. ডালের ফায়দা (ডালের রস-কস)। সুতরাং ব্রাশ করলে
পরিস্কারের সুন্নাত/ফায়দা আদায় হবে, তবে ডালের
সুন্নাত আদায় হবে না।
পরামর্শ: মানুষ যখন
ঘুম থেকে ওঠে, তখন তার অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো
নরম থাকে। তাই তখন ব্রাশ করলে দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি হয়। উত্তম সময় হলো ঘুমানোর
আগে।
আর
বাকি পাঁচ ওয়াক্তে নামাযে মেসওয়াক করা। যতদূর সম্ভব ব্রাশ পরিহারই ভাল।
হাদিস নং-১৯,
সালাতের (নামাযের) গুরুত্ব ও ফযিলত |
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَال: قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَرَأَيْتُمْ
لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيهِ كُلَّ
يَوْمٍ خَمْسًا هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوا: لَا
يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ. قَالَ: فَذَلِكَ
مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا
অর্থ: আবু হুরাইরা
রা. হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আচ্ছা তোমরা বলতো, যদি তোমাদের কার ও বাড়ির দরজার সামনে
একটি নহর থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে,
তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে কি? সাহাবিরা
বললেন, না, কোন ময়লা বাকি থাকবে না। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, পাঁচ
ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণও সেইরুপ। এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা পাপসমূহ নিশ্চিন্ত করে
দেন।
বুখারি-৫২৮;
মুসলিম-৬৬৭; দারেমি-১২২১; মিশকাত-৫৬৫ সালাত অধ্যায়। হবে তবে
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: নদী/সমুদ্র/ঝর্ণা প্রবহমান পানি যত গভীর হয়, ততই পানি স্বচ্ছ-পরিষ্কার হয়। এই পরিষ্কার পানিতে
গোসল করলে যেমন শরীর পরিচ্ছন্নতা লাভ করে। তেমনি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বান্দার সব গোনাহকে সাফ
করে দেয়।
ইসলামে সালাতের গুরুত্ব: ঈমানের পর
সব চাইতে গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হলো সালাত। ইসলামের সব বিধান যমীনে ফরজ
হয়েছে, কিন্তু সালাত মিরাজের রজনিতে আসমানে ফরজ হয়েছে। পবিত্র কুরআনুল কারিমে
৮২ বার সালাতের কথা বলা হয়েছে।
Ø
আল্লাহ তাআলার বাণী-
(১) যখন আপনি তাদের মধ্যে থাকেন, অতঃপর নামাযে দাঁড়ান,
তখন যেন একদল দাঁড়ায় আপনার সাথে এবং তারা যেন নিজ অস্ত্র সাথে নেয়। (অর্থাৎ
সমস্ত সৈন্যবাহিনীকে দুইভাগে ভাগ করেবে।) সূরা নিসা-১০২
কঠিন যুদ্ধের
মাঝেও নামাজ ত্যাগ করা যাবে না।
(২) অতঃপর যদি তোমাদের কারো ব্যাপারে ভয় থাকে, তাহলে
পদচারী অবস্থাতেই পড়ে নাও অথবা সওয়ারীর ওপরে। সূরা বাকারা-২৩৯
এ আয়াতে সলাতুল
খওফের কথা বলা হয়েছে, শত্রু বা কোন কারণে যদি ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়, তাহলে দাঁড়ানো অবস্থায় ইশারায় ও সওয়ার অবস্থায় নামা্জ পড়ে নিবে। তবুও নামাজ ত্যাগ
করা যাবে না। সূত্র: তাফসিরে বুরহানুল কুরআন-১৮০ পৃ.
Ø
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বাণী-
(১) কিয়ামতের দিবসে সর্ব প্রথম নামাযেরেই হিসেব হবে। যদি নামাজ ঠিক
থাকে তবে বাকি আমলও ঠিক হবে। আর যদি নামাজ খারাপ হয়ে থাকে, তবে বাকি আমলও খারাপ হবে। তিরমিজি-৯৪ পৃষ্ঠা,
তারগিব ১/২৪৫, তাবরানি
(২) যে ব্যক্তি নামাজকে হেফাজত করবে না তার জন্য তা নূর , দলিল এবং মুক্তির ওসিলাও হবে না। বরং কিয়ামতের দিন কারুন,ফেরাউন,
হামান ও উবাই বিন খালফের সাথে তার হাশর হবে। মুসনাদে আহমদ-৬২৮৮
(৩) যে ব্যক্তি আসরের নামাজ পরিত্যাগ করল, যেন তার
যাবতীয় আমলই বরবাদ হয়ে গেল। বুখারি-৫৫২, নামাজের সময়
অধ্যায়
(৪) রাসূল (ﷺ) এর (মৃত্যুর
পূর্বে) সর্বশেষ কথা ছিল, সালাত!
সালাত! আর তোমরা তোমাদের অধিনস্তদের ব্যাপারে
আল্লাহকে ভয় কর। সুনানে আদু দাউদ
ফজরের সালাতের গুরুত্ব
ও ফযিলত:
অধিকাংশ মানুষ ফজর সালাতকে বিলম্ব করে, এ সালাত
নিয়ে বড় উদাসীনতা। ফজরের সলাতে গাফলতি মুনাফেকের আলামত বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। ফজরের সালাতের গুরুত্ব
সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- (১) সুতরাং সূর্য উদয় ও অস্তমিত হওয়ার পূর্বে সালাত আদায় করো। সূরা ত্বহা-১৩
(২) ফজরের তেলাওয়াতে
(ফেরেশতাগণ) উপস্থিত হন। সূরা ইসরা-৭৮
Ø
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেন-
(৩) উসমান
বিন আফফান (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার সালাত আদায় কর, সে যেন অর্ধ রাত্রি এবাদতে
কাটিয়ে দিল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতের সাথে আদায় করল সে
যেন পুরো রাত্রিই সলাতে যাপন করল। মুসলিম- ৬
(৪) যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতে আদায় করে, সে আল্লাহর
জিম্মায়-দায়িত্বেই থাকে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মা-দায়িত্ব
বিনষ্ট করে আল্লাহ তাকে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। তিবরানি
নামাজ প্রকৃত, সত্তাগত ও
সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত: ইসলামি পরিভাষায় এই সীমাহীন বেইজ্জতি ও নীচতার
নামই ইবাদত। আপনি ভেবে দেখেন তবে দেখতে পাবেন যে, এ সর্বোচ্চহীনতা
মানুষ কেবল নামাযের মাধ্যমেই প্রকাশ করতে পারে, অন্য কোন ইবাদতের
মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে না। কেননা সর্বোচ্চ অপদস্থতা ও হিনতার যতগুলো ধরণ রয়েছে তার সবই
মধ্যে বিদ্যামান। চাকরের মত হাত বেধে মাথা নত করে দাঁড়ানো, অতঃপর এ অপদস্থতায় ও সন্তুষ্ট না হয়ে রুকু করে
মাথা ঝুঁকিয়ে দিয়ে আরও বেশি অপদস্থতা প্রকাশ করা। অতঃপর এতেই তুষ্ট নয়, মানুষের সবচেয়ে
ইজ্জতের জিনিস নাক ও কপালকে সিজদায় গিয়ে যমিনে ঘষতে থাকে। যেন বলতে থাকে- হে আল্লাহ!
তোমার সীমাহীন ইজ্জতের সামনে আমি আমার সীমাহীন বেইজ্জতি পেশ করছি। এতেই শেষ নয়, সবশেষে গিয়ে
ভিক্ষা চায়, হে আল্লাহ! আমাকে সওয়াব দাও,
রিযিক দাও ইত্যাদি ইত্যাদি। ভিক্ষা চাওয়ার চেয়ে বেশি বেইজ্জতি
আর কিছুই নেই। আর সিজদা শেষে দুআর মাধ্যমে তাই করা হয়।
নামাজ ব্যতীত প্রকৃত
ইবাদতের আর কোন জিনিসনেই যার দ্বারা মানুষ ইবাদত করতে পারে। কারণ ইবাদতের অর্থ হল সর্বোচ্চহীনতা
পেশ করা। আর তাকে বল নামাযের মধ্যেই রয়েছে, অন্য কোন ইবাদতের মধ্যে নেই। যেমন, যাকাত-সদকা এগুলো প্রকৃত ইবাদত নয়, এতে তো হীনতা নেই,
বরং এতে তো আল্লাহর সাথে সাদৃশ্য হয়, যেভাবে আল্লাহ
তার মাখলুককে দান করেন, তদ্রুপ আপনিও দান করলেন। দান করা বা দয়া করা
চরম সম্মানের কাজ। সুতরাং যাকাত-সদকা দেওয়া সত্তাগত ইবাদত নয়, আদেশ পালন করার কারণে এতে ইবাদতের শান পয়দা হয়েছে।
এভাবে আপনি রোজা রাখুন, রোজা তার সত্তাগতভাবে ইবাদত
নয়, এ জন্য যে, রোজার অর্থ হল পানাহার ও স্ত্রী
সঙ্গম থেকে নিজেকে বিরত রাখা। এ সবের যেন কোন প্রয়োজন নেই, সব থেকে অমুখাপেক্ষী। আর এ হল আ্ল্লাহ তাআলার শান, তিনি পানাহার, স্ত্রী ইত্যাদি থেকে পবিত্র। আল্লাহ তাআলার সাদৃশ্য
গ্রহণ কি অপদস্থার বিষয় হতে পারে। সুতরাং রোজা হল একান্তই সম্মানের কাজ। আদেশ পালনের কারণে ইবাদত হয়েছে।
আমরা সত্য কথা বলাকে ইবাদত বলি। কিন্তু সত্য কথা বলা
তার সত্তাগতভাবে ইবাদত নয়; কেননা সত্য কথা বলা আল্লাহ তাআলার কাজ। আল্লাহ বলেন- আল্লাহর কথার চেয়ে কার কথা
অধিক সত্য। সুরা নিসা-১২২ কাজেই সত্য কথা বলা অপমানের কাজ নয়। সত্য বলা ইবাদত হয়েছে এ জন্য যে, আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন, তোমরা সত্য কথা বল, মিথ্যা কথা বলনা। আদেশ পালিত হচ্ছে বিধায়
এতে ইবাদতের শান সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো নিয়ত ও উদ্দেশ্যের
কারণে ইবাদত হয়ে যায়। কিন্তু নামাজে যে সব ক্রিয়া কর্ম রয়েছে এগুলোর দ্বারা তার সত্তাগত
হীনতা প্রকাশ পায়। দাঁড়ানো, রুকু করা, সিজদা করা, দুআ ও প্রার্থনা করা এ সব হীনতার প্রকাশ, অবমানতার দৃশ্য। এ জন্যই যে জিনিসটি
সত্তাগতভাবেই ইবাদত, তাহেল একমাত্র নামাজ। সূত্র: খুতুবাতে হাকীমুল ইসলাম, অনুবাদ মাওলানা আবু সাকী মাহবুব, বইঘর প্রকাশনী।
নামাজ পূর্ণাঙ্গ ইবাদত: আল্লাহ তাআলা কেবল মানুষের
ওপরই নামাজকে ফরজ করেননি বরং বিশ্বের প্রতিটি অনু-পরমাণুর ওপর নামাজ ফরজ করেছেন (অবশ্য সবার পদ্ধতি এক নয়)। কুরআন মাজিদে ইরশাদ
করা হয়েছে- প্রতিটি বস্তু তার
নামাজ ও তাসবিহ পাঠের পদ্ধতি জানে। সূরা নূর-৪১
ওলামায়ে কেরাম বলেন-জান্নাত ও জাহান্নামের নামাজ
হল দুআ করা। ফেরেশতাদের নামাজ হল সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। মানবজাতি, বিশেষ করে মুসলমানদের নামাযের
ভেতর সমস্ত সৃষ্টি জগতের নামাজকে আল্লাহ তাআলা একত্র করে দিয়েছেন। গাছপালার মত কিয়াম, চতুষ্পদ প্রাণীদের মত রুকু, সরিসৃপের মত সিজদা, জান্নাত ও জাহান্নামের মত দুআ, পাহাড়-পর্বতের মত তাশাহুদ, ফেরেশতাদের মত কাতার বন্দি
এবং চাঁদ-সরুজ ও পৃথিবীর মত
ঘূর্ণয়মানতাও নামাজে আছে। এ কারণেই নামাজই দুই রাকাতের কম নয়। দুই. তিন কিংবা
চার রাকাত রয়েছে। আপনি এক রাকাত পড়ে কি করেন? প্রথম রাকাতে যে সব কাজ করেছেন সেসব কাজ দ্বিতীয়
ও চতুর্থ রাকাতে ও করেন। এ কারণেই বলা যায় যে, ঘূর্ণয়মানতা ও প্রদক্ষিণ করণ নামাযের মধ্যে রয়েছে।
মানুষকে যেমন আল্লাহ
তাআলা এ পূর্ণাঙ্গ সত্তা বানিয়েছেন, তদ্রুপ ইবাদত ও দান করেছেন পূর্ণাঙ্গ। এ দ্বারা দ্বীনের পূর্ণতা ও
স্পষ্ট হয়। সূত্র: খুতুবাতে হাকীমুল ইসলাম, অনুবাদ মাওলানা আবু সাকী মাহবুব, বইঘর প্রকাশনী
জামাতের গুরুত্ব ও
ফযিলত: আল্লাহ তাআলার বাণী-
Ø
আর নামাজ কায়েম কর, যাকাত দান
কর এবং নাযাজে অবনত হও তাদের সাথে যারা অবনত হয়। সূরা আল বাকারা-৪৩
এখানে মায়ার রকিয়ীন
অর্থাৎ শব্দের দ্বারা নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল
কুরআন, জাসসাস
Ø
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন- কখনো কখনো আমার ইচ্ছা জাগে যে আমি সালাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান করি,
এবং তা কায়েম করা হয়, অত:পর এক ব্যক্তিকে আদেশ
প্রদান করি, সে মানুষকে নিয়ে(জামাতে)সালাত আদায় করবে ; আমি একদল লোক নিয়ে বের হব,
যাদের সাথে থাকবে লাকড়ির বোঝা। আমরা খুঁজে বের করব এমন
লোকদের, যারা উপস্থিত হয়নি সলাতে। আমরা তাদেরসহ তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেব। বুখারি-৬৫৭;
মুসলিম-৬৫১; আবু দাউদ-৮৪০
Ø
একজন ব্যক্তির জামাতের সাথে
নামাজ আদায় তার একাকী নামাজ আদায় অপেক্ষা সাতাশ গুণ বেশি উত্তম| বুখারি;
মুসলিম; তারগীব; ইবনে মাজাহ-৮৩৮
Ø
যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায়
ফরজ সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে ঘর হতে বের হয়, তার সওয়াব
এহরাম বেঁধে হজের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সম পরিমাণ। -সুনানে আবু
দাউদ-৪৭১
Ø
সম্প্রদায়ের লোকেরা হয়
জামাত ত্যাগ করা হতে বিরত থাকবে, অন্যথায় আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে
দেবেন অত:পর তারা গাফেল লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইবনে মাজাহ-৭৮৬
Ø
তোমাদের কেউ সালাতের
অপেক্ষা করতে থাকলে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার ওজু নষ্টনাহয়, সে সালাতের সওয়াব পেতে থাকবে। আর ফেরেশতারা তার
জন্য এ বলে দুআ করবে-হে আল্লাহ তাকে মাফ কর; তাকে রহম কর ও দয়া কর। সহিহ মুসলিম-১০৬৩
খুশূ-খুযূএর বর্ণনা
ও গুরুত্ব: খুশূ খযূ অর্থ ধীর স্থিরতা এবং উগ্রতা পরিহার করা। দেহ মন স্থির করে ইবাদত
করা, একাগ্রতা সহকারে ইবাদত করা এবং চলা-ফেরা উঠ-বসায় উগ্রতা পরিহার করাকে বলা হয় খুশূ খুযু। ইবাদতের মধ্যে দেহস্থির করার
অর্থ হল অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়ানা করা। আর মনস্থির করার অর্থ হল ইচ্ছাকৃতভাবে অন্তরে আল্লাহ ব্যতীত
অন্য কিছুকে উপস্থিত না করা এবং ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় অন্য কিছু সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা না করা। অনিচ্ছাকৃতভাবে যেটা
মনে এসে যায় তার জন্য দায়ী নয়। সূত্র: ফাযায়েলে যিন্দেগী-১৫৫পৃ.
আল্লাহ রব্বুল আলামীন
বলেন-(১) মুমিনগণ! সফলকাম হয়েছে যারা
তাদের নামাজে বিনয়ী। সূরা মুমিনুন, ১-২
হাদিসের বাণী-(২)
হজরত আবু জর গিফারি রা.হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেন-বান্দার
নামাযের মধ্যে আল্লাহ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত তার বান্দার প্রতি মনোযোগী থাকেন,
যতক্ষণ বান্দা এদিক-ওদিক না তাকায়। যখন বান্দা এদিক-ওদিক তাকায়,
তখন আল্লাহ তার মনোযোগ ফিরে নেন। মুসনাদে আহমদ-২০৫৩১
(৩) নামাজে এদিক-ওদিক তাকানো খুশূ-খুজুর
খেলাফ। যেমন হজরত আয়েশা রা. বলেন- আমি রাসূল (ﷺ) কে নামাযের মধ্যে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম; জবাবে তিনি বললেন: এটা হল ছোঁ মারা। শয়তান বান্দার নামাযের (সওয়াবের)
কিছু অংশ ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। বুখারি-৭৫৮;
সুনানে আবু দাউদ-৯১০
জামাতে শরীক হবার জন্য
দৌড় দেওয়া যাবে কি? দৌড়ে এসে জামাতে শরীক হলে নামাজে খুশূ-খুজুর
ব্যাঘাত, প্রতিবন্ধকতা হবে বলেই বিশ্বনবি নিষেধ করেছেন। যেমন-তিনি এক হাদিসে
বলেছেন, যখন নামাযের একামত দেয়া হবে, তখন
তোমরা জামায়াত পাওয়ার জন্য দৌড়ে আসবে না। বরং শান্ত ও ধীরস্থীরভাবে আসবে। অতঃপর নামাযের যতটুকু
পাবে পড়ে নিবে আর যতটুকু পাবে না পরে আদায় করে নিবে, কেননা তোমাদের কেউ যখন নামাযের
সংকল্প করেছ, তখন তোমরা নামাজেই আছো। মুসলিম-১৩৯০
খুশূ-খুজুর তিনটি
স্তর আছে। যথা:
এক. মুখে যা উচ্চারিত
হয় এবং যা আমল করা হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। যাতে বিশুদ্ধ তেলাওয়াত
হয়।
দুই. অর্থের দিকে
খেয়াল করা।
তিন. আল্লাহ তাআলার
যাতে পাকের দিকে শুধু খেয়াল করা। আল্লাহ ভিন্ন সবকিছু অন্তর থেকে বের করে একমাত্র
তারাই ধ্যান করা। এটা সর্বোচ্চ স্তর, যা আরেফগণের হাসিল হয়।
নিকৃষ্ট চোর কে? রাসূল (ﷺ) বলেন-নিকৃষ্ট চোর হল সে, যে তার
নামাজ চুরি করে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মানুষ কিভাবে তার নামাজ চুরি করে? তিনি বললেন:
নামাযের মধ্যে হল যে, সে রুকু-সিজদা ঠিকমত করবে না এবং রুকু-সিজদার মধ্যে তার পিঠকে
বরাবর করবে না। মুয়াত্তা মালেক-৪০৩ অর্থাৎ মুরগির মত করলে (সে খাবার সময় দ্রুত মাথা উঠা-নামা করে) নামাজ হবে না। রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো; এক তাসবিহ পরিমাণ (এক তাসবিহ হলো সুবহানা রব্বি ইয়াল আলা একবার বলা যায় পরিমাণ সময়) দেরী করা ওয়াজিব। ঠিক তেমনি দুই সিজদার মাঝে স্থির গিয়ে বসা এক তাসবিহ পরিমাণ
ওয়াজিব। এদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
আযানের দেওয়ার ফযিলত: হাদিস শরিফে
আছে-
(১) মুযাজ্জিন কেয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা লম্বা ঘাড় ওয়ালা হবে। মুসলিম-৮৫২
(২) যে ব্যক্তি বার বৎসর আযান দিয়েছে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব
হয়ে গেছে। প্রত্যেক আযানের বিনিময়ে
ষাট নেকি লেখা হয় এবং প্রত্যেক একামতের বিনিময়ে ত্রিশ নেকি লেখা হয়। মুসতাদরাকে হাকেম-১/২০৫
হজরত ওমর রা. বলেন- যদি আমার উপর খেলাফতের দায়িত্ব না থাকতো;
তাহলে আমি নিয়মিত আযান দিতাম। নামাজে বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। যেমন:
ধর্মীয় দিক থেকে নামাযের
উপকারিতা:
১. করুণাময় রবের
নৈকাট্যের প্রধান মাধ্যম।
২. নামাজ
মানুষের রুটি-রুজিতে বরকত দান করে।
৩. নামাজ অন্তরকে করে শীতল ও শক্তিশালী।
৪. নামাজ মু`মিনের আনন্দের খোরাক।
৫. নামাজ মানুষের অন্তরের বন্ধ দরজাগুলো খুলে দেয়।
৬. নামাজ আত্মার খোরাক।
৭. নামাজে দিল বা ক্বলবের মরিচীকা দূর করে আত্মাকে আলোকিত করে।
৮. নামাজ আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের রক্ষাকারী।
৯. নামাজ আল্লাহর ভয়াবহ আজাবওরাগথেকে রক্ষা করে।
১০. নামাজ বান্দাকে অশ্লীল-পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।
১১. নামাজ শ্রেষ্ঠতম জিকির।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দিক
থেকে নামাজেরে উপকারিতা:
১. নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন আমাদের
মস্তিস্কে রক্ত দ্রুত প্রবাহিত হয়। ফলে আমাদের স্মৃতি শক্তি অনেক বৃদ্ধি পায়।
২. নামাজ মানুষের দেহের কাঠামো বজায় রাখে। ফলে শারীরিক
বিকলাঙ্গতা লোপ পায়।
৩. নামাজ মানুষের ত্বক পরিষ্কার রাখে। যেমন, ওজুর সময়
আমাদের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার করা হয়;এর ফলে
বিভিন্ন প্রকার জীবানু হতে আমরা সুরক্ষিত থাকে।
৪. নামাজে ওজুর সময় মুখমণ্ডল ৩ বার ধৌত করার
ফলেআমাদের মুখের ত্বক উজ্জল হয় এবং মুখের দাগ কমদেখা যায়।
৫. কেবল মাত্র নামাযের মাধ্যমেই চোখের নিয়মমত
যত্ন নেওয়া হয়; ফলে অধিকাংশ নামাজ আদায়কারী মানুষের
দৃষ্টি শক্তি বজায় থাকে।
৬. নামাজ
মানুষের মানসিক, স্নায়ুবিক, মনস্তাত্ত্বিক,
অস্থিরতা, হতাশা-দুশ্চিন্তা, হার্ট অ্যাটাক, হাড়ের জোড়ার ব্যাথা, ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ, পাকস্থলীর আলসার,
প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস,
চোখ এবং গলা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
৭. নামাজি ব্যক্তি
সহজে বুড়া হয় না। সূত্র: ইমাম বাতায়ন, বিডিটাইম
নামাযের সামাজিক উপকারিতা: ১.কিশোর বয়সে নামাজ আদায় করলে মন পবিত্র থাকে; এর
ফলে নানা প্রকার অসামাজিক কাজ সে বিরতথাকে।
২. নামাজ আদায়কারী
ব্যক্তি বিভিন্ন অসামাজিক ও খারাপ কার্যকালাপ থেকে দূরে থাকে। ফলে সমাজে শৃঙখলা বজায়
থাকে।
৩. নামাজ আদায়কারী
ঈমানদার ব্যক্তি সুদ-ঘুষ ও দুর্নীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখে। ফলে সুন্দর সমাজ সমাজ
গঠিত হয়।
মানসিক দিক থেকে নামাযের উপকারিতা:
১. সময়ের কাজ
সময়ে আদায় করার মানসিকতা তৈরি হয়।
২. নামাযের মাধ্যমে
মানুষের মন-মানসিকতায় অসাধরণ পরিবর্তন আসে। গোনাহ, ভয়,
নীচতা, হতাশা, অস্থিরতা,
পেরেশানী ইত্যাদি দূরভীত হয়। ফলে বিশুদ্ধ মন নিয়ে সব কাজে
সম্পৃক্ত হওয়া যায়।
৩.নামাজ আদায়
করলে মন প্রফুল্ল থাকে।
৪.নামাজ
আদায় করলে মানুষের জীবনী শক্তি বৃদ্ধিপায়।
৫. নামাজে
অলসতা দূর হয়। সূত্র: fancim .com
নামাযের বিভিন্ন আমলের উপকারিতা:
দাঁড়ানো: মানুষ যখন
নামাজে দাঁড়ায়; তখন সব চোখ সিজদার স্থানে স্থির থাকে। ফলে মানুষের
একাগ্রতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
রুকু: নামাজ ব্যক্তি যখন রুকু করে এবং
রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে দাঁড়ায় তখন মানুষের কোমর ও হাঁটুর ভারসাম্য রক্ষা হয়। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি
পায়। ফলে কোমর ও হাঁটু
ব্যাথা উপশম হয়।
সিজদা: নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন নামাজ
ব্যক্তির মস্তিস্কে দ্রুত রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে তার স্মৃতি শক্তি
বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আবার সিজদা থেকে ওঠে যখন দুই সিজদার মাঝখানে বসে এতে তার
পায়ের উরু ও হাঁট সংকোচন এবং প্রসরণ ঘটে। এতে করে মানুষের হাঁটু ও কোমরের ব্যথা উপশম
হয়।
ওঠা বসা: পৃথিবীর
অন্যান্য ধর্মের মধ্যে নামাযের মতো এমন সামগ্রিক ইবাদত আর নেই। নামাজর জন্য এটা
একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, এটা একান্তই সামগ্রিক ব্যায়াম। যার প্রভাব মানুষের সব
অঙ্গগুলোতে পড়ে এবং মানুষের প্রতিটি অঙ্গ নড়াচড়ার ফলে শক্তি সৃষ্টি হয় এবং
সুস্বাস্থ্য অটুট থাকে।
(১৯ নং হাদিস সমাপ্ত)
-------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
লা-হাওলা ওয়া কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ এর যিকির
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
ইরশাদ করেন- নিরানব্বইটি রোগের ওষধ হচ্ছে-লা-হাওলা ওয়া কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ এর মধ্যে
হতে সবচেয়ে সহজ ও ছোট রোগ হলো, চিন্তা-টেনশন । সুনানে বাইহাকি ; মিশকাত-২০২ পৃষ্ঠা।
দেখুন-খাযায়েনে কোরআন ও হাদিস, হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী,বাংলা বাজার ঢাকা।
হাদিস নং-২০, সিয়াম বা রোজার ফযিলত |
إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ
مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ-(بخارى-1930‘ كتاب الصوم) অর্থ: জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যার নাম হল রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন রোজাদারগণ
এ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। বুখারি-১৮৯৬,
সিয়াম অধ্যায়; মুসলিম-১১৫২;
তিরমিজি-৭৬৫
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: এ রকম বহু
হাদিস বর্ণিত আছে সিয়ামের ফযিলত সম্পর্কে। যেমন: (১)
প্রত্যেক নবি আদমের আমলের নেকি আল্লাহর ইচ্ছায় দশ গুণ থেকে সাতশগুণে
বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু রোজা ব্যতীত। কেননা রোজা আমার জন্যই, আর আমি নিজেই
এর প্রতিদান দিব। সে তার জৈবিক চাহিদা ও পানাহার আমার জন্য পরিহার করেছে। মুসলিম-২৭৬৩,
সিয়াম অধ্যায়
(২) প্রতিরাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতিরাত ও দিবসে মুসলিমের
দুআ-প্রার্থনা কবুল করা হয়। সহিহ আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব
তাই আমাদের উচিত এ গণিমতকে কাজে
লাগিয়ে নিজের দুনো জাহানের (দুই) কল্যাণের
জন্য যেমন দুআ-প্রার্থনা করবে, তেমনি সকল
মুসলিমের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর
কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন করা।
(৩) যখন রমাদান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে। শয়তানদের শিকল পড়ানোহয়। মুসলিম
ইফতার করানোর ফযিলত:
এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে
এসেছে- যে এ মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, তা তার গোনাহসমূহ
ক্ষমা এবং দোযখের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া তার সওয়াব হবে সেই রোজাদার
ব্যক্তির সমান অথচ তাতে রোজাদের সওয়াবও কম করা হবে না। আমরা (সাহাবারা)
বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তো এমন সামর্থ রাখে না, যাদ্বারা
রোজাদারকে ইফতার করাতে পারে ? তিনি বললেন, আল্লাহ পাক এ সওয়াব সে ব্যক্তিকেও দান করবেন যে রোজাদারকে এক চুমুক দুধ কিংবা
একটি খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে
তৃপ্তির সাথে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে আমার হাউজে কাওসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন,
যার ফলে জান্নাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে আর তৃষ্ণার্ত হবে না। সুনানে বাইহাকি-৪৮২
খেজুর দ্বারা ইফতার
করা সুন্নাত:
রাসূল (ﷺ) বলেন-যখন
তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। যদি খেজুর না পায় তাহলে যেন
ইফতার করে পানি দ্বারা, কেননা পানি পবিত্রকারী। জামেউত তিরমিজি-৬৬০,
যাকাত অধ্যায়
সিয়াম বা রোজার উদ্দেশ্য
কী ? এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ বলেন- হে মুমিনগণ!
তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের
উপর যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। সূরা বাকারা : ১৮৩
পৃথিবীর সব কর্মের
জন্য প্রশিক্ষণ দরকার, ঠিক তেমনি তাকওয়ার প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে আল্লাহ তাআলা দীর্ঘ
এক মাস সিয়াম-সাধনা ফরজ করেছেন। একজন রোজাদার ব্যক্তিকে প্রচণ্ড
ক্ষুধা-পিপাসা লাগা সত্ত্বেও সে খায় না এই কারণে যে খেলে তো রোজা ভেঙ্গে যাবে কেউ
না দেখলে ও একজন তো অবশ্যই দেখবে। রোজাদার এই শিক্ষা-বিশ্বাস যদি
সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করতো তাহলে দেশ থেকে অপরাধ-অনাচার,
দুর্নীতি-দুষ্কৃতি অধিকাংশ নিপাত যেত। মহান আল্লাহ আমাদেরকে
রোজার মাধ্যমে তাকওয়া হাসিল করার তাওফিক দান করুন।
রোজার ক্ষতি পূরণ স্বরুপ
সদকাতুল ফিতরা দেয়া: হাদিস শরিফে এসেছে-রাসূল (ﷺ) সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করে দিয়েছেন
যা রোজাদারদের জন্য অনর্থক ও অশ্লীল কর্ম থেকে পবিত্রতার মাধ্যম এবং মিসকীনের জন্য
কিছু আহারের ব্যবস্থা। যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পূর্বে ইহা আদায় করবে তার সে দান কবুল
সদকাহ (ফিতরাহ) হিসেবে গণ্য হবে, আর যে
ব্যক্তি ঈদের নামাযের পরে ইহা আদায় করবে, সেটা হবে দানের ন্যায়
সাধারণ দান। সুনানে আবু দাউদ-১৬১১, যাকাত অধ্যায়
সিয়াম বা রোজা শুদ্ধ
হওয়ার ছয়টি আদব: রাসূল (ﷺ) বলেছেন-যে ব্যক্তি রোজা রেখে
মিথ্যা কথা ও অনর্থক কর্ম পরিহার করে না, তার খানা-পিনা-ত্যাগ করে রোজা রাখায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। বুখারি-১৯৩৭ ,সিয়াম অধ্যায়
সুতরাং বুঝা গেল শুধু
না খেয়ে থাকার নাম রোজা নয়, বরং আরও কিছু আছে। ছয়টি জিনিস থেকে পরহেয
থাকলে পরিপূর্ণ রোজা হবে। নিম্ন রুপ:
প্রথম: চক্ষুর হেফাযত
অর্থাৎ যাদেরকে দেখা হারাম; তাদেরকে না দেখা এবং অশ্লীল ছবি-কার্টুন-পর্ণো না দেখা। আল্লাহ তাআলার বাণী- হে নবি আপনি
মুমিনদেরকে বলে দিন তারা যেন স্বীয় দৃষ্টি সংযত রাখে, কুদৃষ্টি
না করে। সূরা আন নূর-৩১
দ্বিতীয়: জবানের হেফাযত
করা অর্থাৎ গীবত, মিথ্যা, চোগলখুরী,
বাজে কথা, কটুবাক্য হতে জিহবাকে সংযত রাখা। আল্লাহ তাআলার বাণী-আর মুমিনদের
অনত্যম সিফাত হলো অনর্থক কথা-কাজ-চিন্তা
থেকে বিরত থাকা। সূরা মুমিনূন-০৩
তৃতীয়: কর্ণের হেফাযত:
গীবত করা ও হারাম শুনা ও হারাম। ঐ সব অপ্রিয় বস্তু যা মুখে
উচ্চারণ করা নাজায়েজ, তার প্রতি কর্ণপাত করাও নাজায়েজ। যেমন গান-বাদ্য থেকে। হজরত জাবের রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন- গান মানুষের অন্তরে এমনভাবে মুনাফেকি উৎপাদন করে যেমন পানি শস্য উৎপাদন করে। সুনানে বাইহাকি, রাসূল (ﷺ) বলেছেন- আমার উম্মতের মধ্যে জমিনে ধ্বসে যাওয়া ও আকৃতি বিবরণ/বিকৃতি মসিবতের আজাব হবে। যখন গায়িকা ও গান-বাজনা বিভিন্ন
পদে প্রকাশ পাবে। জামেউত তিরমিজি
চতুর্থ: বাকি অঙ্গ-প্রতঙ্গের হেফাযত: যেমন, হাত-পা-পেট। হাত দ্বারা নিষিদ্ধ বস্তু ধরা, পা দ্বারা
হাঁটা, পেটে হারাম/সন্দেহজনক খাবার থেকে
হেফাযত করা। যেমন মহান আল্লাহর নির্দেশ- হে মানব মণ্ডলী! পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষণ কর। সূরা বাকারা-১৬৮
পঞ্চম: ইফতারের সময়
হালাল মাল দ্বারা হলেও উদর পূর্ণ করে না খাওয়া: পেট ভরে খেলে
নসফ শক্তিশালী হয়, কামরিপু প্রবল থাকে। তাই উদরপূর্ণ করে না
খাওয়া; যাতে নফস দুর্বল থাকে। কেননা নফস বড় দুষ্ট। যেমন আল্লাহ তাআলার বাণী- আমি নিজেকে
নির্দোষ বলি না। নিশ্চয় মানুষের মন (নফস) মন্দ কর্ম প্রবণ
কিন্তু সে নয়-আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। সূরা ইউসুফ-৫৩
ষষ্ঠ: ভয় করা ও দুআ
করা: অর্থাৎ রোজা কবুল হয় কিনা এই ভয়ে সব সময় কম্পিত থাকা এবং
আল্লাহ তাআলার কাছে বিনতভাবে দুআ করা। যেমন কাবা ঘরের মত মহান কার্য
সাম্পাদন করে হজরত ইব্রাহিম আ. দুআ করেছিলেন- হে আমাদের
প্রতিপালক! আমাদের এই মেহনত (কাবা নির্মাণ)
আপনি কবুল করে নিন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। সূরা বাকারা-১২৭
v
রোজা বা সিয়ামের আত্মাধিক উপকারিতা:
১. তাকওয়া অর্জন
ও তাকওয়ার প্রশিক্ষণ।
২. আল্লাহ তাআলার
নৈকাট্য হাসিল ও তার সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন।
৩. ধৈর্য,
সংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ।
৪. নফস ও শয়তানকে
পরাভূত করা সহজ হয়।
৫. রোজা
আদায়কারী বিনা হিসেবে প্রতিদান লাভ করে থাকেন।
৬. রোজা জাহান্নামের
ঢাল স্বরুপ।
v
রোজার সামাজিক উপকার:
১. গরীব-দুখীদের কষ্ট সহজে অনুমেয়।
২. মুসলিম সমাজে
খোদাভীতির ও ইসলামিক পরিবেশের চর্চা।
৩. মুসলিম ভ্রাতৃত্বের
বন্ধন মজবুত হয়।
৪. যাকাত-ফেতরা আদায়ের মাধ্যমে অসহায় মানুষের অর্থনীতিক মুক্তি লাভ করে।
শারীরিক বা চিকিৎসা
বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে রোজার উপকারিতা:
১. পাকস্থলী
ও পরিপাকতন্ত্রকে বিশ্রাম দিয়ে থাকে।ফলে তা সজীব ও সতেজ হয়ে কার্যকারিতা বহুগুণে
বৃদ্ধি হয়।
২. রোজাদের
দেহে নতুন কোষ গঠন করে।
৩. অতিরিক্ত
ওজন ও মেদ কমায়।
৪. শরীরের মোটা
শরীরের স্থূলতা কমায়।
৫. কোলেস্টেরল কমায়।
৬. ক্যান্সার
ঝুঁকি কমায়।
৭.
রক্তচাপ/ব্লাডপ্রেসার কমায়।
৮.
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
৯. কঠিন
মানসিক চাপ/স্ট্রেস কমায়।
১০. গ্যাস্ট্রিক
ভাল হয়।
( ২০ নং হাদিস
সমাপ্ত)
---------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
বাজারে গেলে নিম্নোক্ত দুআটি কমপক্ষে একবার পাঠ করা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি বাজারে গিয়ে নিম্নের দুআটি পাঠ করবে, আল্লাহ
তাআলাতার জন্য দশ লাখ নেকি লিখবেন, দশ লাখ গোনাহ মিটিয়ে দিবেন, দশ লাখ মর্যাদা উন্নয়ন করবেন এবং বেহেশতে একখানা ঘর
নির্মাণ করবেন। জামেউত তিরমিজি-৩৪২৯; সুনানে ইবনে মাজাহ্।
বাংলা উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা
শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউয়ী ওয়া ইউমীতু ওয়া হুয়া হাইয়্যূল লা ইয়ামূতু বিইয়াদিহিল খয়রু
ওয়া হুয়া আলা কুল্লিা শাইয়িন ক্বদীর।
হাদিস নং-২১, যাকাত আদায় না করার শাস্তি |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ
آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ شُجَاعًا
أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَأْخُذ
بِلِهْزِمَتَيْهِ -
يَعْنِي بشدقيه - يَقُولُ: أَنَا
مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ رواهالبخاريفيالصحيح অর্থ: ‘আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলাল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যাকে আল্লাহ
সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে)
টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া
হবে। সাপটি তার মুখের দু’পাশ্ব কমড়ে ধরে
বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। তারপর রসূলাল্লাহ (ﷺ) তিলাওয়াত করেন, {لاَيَحْسِبَنَّالَّذِينَيَبْخَلُونَ} আল্লাহ যাদেরকে
সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের
ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে,
বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরে কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে
কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃংখলাবদ্ধ করা হবে। (সূরা আলে ইমরান-১৮০) বুখারি-১৪০৩ ; কিতাবুয
যাকাত; নাসায়ি-২৪৪৮; মুয়াত্তা মালেক-৬৯৬; ইবনে
মাজাহ-১৭৮৬
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: যাকাত ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। যাকাত আদায়ের
মাধ্যমে মাল পবিত্রতা লাভ করে। না আদায় করলে বিভিন্ন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। যেমন- বুখারি-মুসলিম শরিফে হাদিস এসেছে যে- কিয়ামতের ময়দানে গরু, মহিষ, উঠ ইত্যাদি জন্তু শিং দ্বারা আঘাত করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন- যারা
সোনা রূপা সঞ্চয় করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না; অতএব
আপনি সুসংবাদ শুনিয়ে দিন, অতি যন্ত্রণাময় শাস্তির। যা সেদিন ঘটবে, যেদিন
জাহান্নামের অগ্নিতে সেগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর সেগুলো
দ্বারা তাঁদের ললাটসমূহে এবং তাঁদের পার্শ্বদেশসমূহে এবং তাঁদের পৃষ্টসমূহে দাগ
দেয়া হবে, এটা তা-ই যা তোমরা নিজেদের
জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে, সুতরাং এখন স্বাদ গ্রহণ কর নিজেদের
সঞ্চয়ের। সূরা তাওবা-৩৪
কোন কোন অর্থ/সম্পদ কি
পরিমাণ থাকলে যাকাত ফরজ হয়:
মানুষের সমস্ত
সম্পদ ৫ (পাঁচ) ধরণের। তার মধ্যে এক ধরণের উপর
শুধু যাকাত ফরজ হয় না, তাহলো মৌলিক নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদ। উদাহরণ: বসবাসের
বাড়ি-ঘর, দালান-কোঠা,
ব্যবহ্নত গাড়ি, পোশাক-পরিচ্ছেদ, এসি-ফ্যান-বাতি ইত্যাদি। বাকি চার ধরণের সম্পদে
যাকাত আসে। যেমন-
এক. জমি । জমি আবার
তিন ধরণের, (ক) ব্যবসার
জমি (খ) ওশরি জমি (গ) অন্য সমস্ত জমি।
দুই. পশুর
যাকাত। ব্যবসা ও সায়মা পশুর উপর যকাত আসে কিন্তু প্রয়োজনীয় পশুর উপর আসে না।
তিন. সোনা-রুপা ও নগদ টাকার যাকাত।
Ø
হজ্বের
উদ্দেশ্যে কিংবা ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের
জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হচ্ছে তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়।
সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা
অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে
এবং নিসাবের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ফরজ হবে।
বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তা যদি খরচ হয়ে যায় তাহলে যাকাত ফরজ হবে না।-মুসান্নাফে
আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৩২;
মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হাদীস
১০৩২৫
Ø
যদি কারো নিকট শুধু স্বর্ণ
থাকে। রৌপ্য, টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছুই না থাকে, তাহলে সাড়ে সাত ভরি/তোলা বা তার চেয়ে বেশি স্বর্ণ
থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয় হয়।
Ø
আর যদি শুধু রূপা থাকে
অন্য কিছু না থাকে, তাহলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা তার চেয়ে বেশি থাকলে
বৎসরান্তে যাকাত ফরজ হয়।
Ø
প্রয়োজনের
উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য-দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার
সমপরিমাণ হয় তাহলে যাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়েছে ধরা হবে এবং এর যাকাত দিতে হবে।-মুসান্নাফে
আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৭৯৭,৬৮৫১; মুসান্নাফে
ইবনে আবি শায়বা হাদীস ৯৯৩৭
Ø
যদি
সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা
কিংবা বাণিজ্য-দ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু
এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার
সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে সকল সম্পদ হিসাব করে যাকাত দিতে
হবে।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৬৬,৭০৮১; মুসান্নাফে
ইবনে আবি শায়বা ৬/৩৯৩
বর্তমানে সাড়ে
বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য ৩৬,৭০০(ছত্রিশ হাজার
সাতশত টাকা )-আগস্ট ২০১৮। উদাহরণ: কারো কাছে
সিকি সোনা, হাফ ভরি রুপা/,নগদ হ্যাণ্ডক্যাশ
পনের হাজার টাকা, সিকি সোনা ১২৫০০+পঁচিশ ভরি রুপা ১৭৫০০+১৫০০০=৪৫,০০০ টাকা, তাহলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ।
বি: দ্র: যাকাত এবং ছদকাতুল
ফিতর/কুরবানি যার উপর ওয়াজিব পার্থক্য হলো- যাকাত ফরজ হতে
এক বছর সময় লাগবে কিন্তু ছদকাতুল ফিতর ও কুরবানি বছর মালিকনা শর্ত নয় বরং ঐ দিনে
নিসাব পরিমাণ (৩৬৭০০টাকা) সম্পদ থাকলেই
হবে।
বিস্তারিত জানার
জন্য দেখুন- যাকাত হিসেব করার সহজ পদ্ধতি (ছোট কিতাব,কিন্তু খুবই উপকারী)-মাহমুদুল হাসান ০১৭৩৮-৬০৫১৩১; আহকামে
জিন্দাগী-২২৩ পৃষ্ঠা; আহকামে যাকাত ও ইসলামি
ব্যাংকিং ও অর্থায়ন পদ্ধতি-মুফতি তকি উসমানি দা.বা. মাকতাবাতুল আশরাফ; ফাতাওয়ায়ে
মাদানিয়া-যাকাত অধ্যায়; ফাতাওয়ায়ে উসমানি-বইঘর প্রকাশনী
কি পরিমাণ সম্পদ
যাকাত দিতে হয়? যাকাতেরর পরিমাণ হলো ২.৫%
শতকরা আড়াই টাকা আর প্রতি হাজারে ২৫(পঁচিশ) টাকা হিসেবে
যাকাত দিতে হবে। উদাহরণ: কারো কাছে যাকাতের ১, ০০,০০০ (এক লাখ) টাকা আছে, তাহলে তার যকাত দিতে হবে ১০০×২৫=২৫০০ টাকা।
দানের মাহাত্ম্য ও
কৃপণতার নিন্দা: হাদিস শরিফে এসেছে-
(১) বান্দার সকাল হলেই দুজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ!
করচকারীকে যথোচিত বিনিময় দান কর। অপর জন বলেন, হে আল্লাহ!
কৃপণের ধন নষ্ট করে দাও। বুখারি-১৪৬৪
(২) নিঃসন্দেহে সদকাতার (দানকারীর) বয়স বৃদ্ধি করে, মন্দ মৃত্যু থেকে রক্ষা করে এবং আল্লাহ
তাআলা তাদ্বারা তার অহংকার ও রোগের নিরাময় করেন। তাবারানি
(৩) দান-সদকা আল্লাহর রাগ প্রশমিত করে এবং মন্দ বা অপমৃত্যু
রোধ করে। তিরমিজি-৬৬৬,যাকাত অধ্যায়
(৪) তোমরা দানের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি কর। কেননা বিপদাপদ তা অতিক্রম করতে
পারে না। মিশকাতুল মাছাবিহ
(৫) যে ব্যক্তি তার হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুরের মূল্য সমান দান করে,
বলা বাহুল্য আল্লাহ তাআলা ও হালাল জিনিস ছাড়া অন্য কিছুই গ্রহণ করেন
না; আল্লাহ তাআলা তা তার কুদরতি ডান হাতে গ্রহণ করেন। এর পর তাকে (দান কৃত সম্পদকে)
দানকারীর জন্য বাড়াতে থাকেন। যেমন তোমার কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে
প্রতিপালন করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ঐ টুকুদান একদিন পাহাড় সমান উঁচু হয়ে
থাকে। বুখারি-১৪৩০, যাকাত অধ্যায়
(৬) একজন ব্যক্তির মৃত্যুকালে একশত দিরহাম দান করা অপেক্ষা, জীবনকালে মাত্র এক দিরহাম দান করা অধিক উত্তম। সুনানে আবু দাউদ-২৮৬৮,
অসিয়ত অধ্যায়
মৃত্যূ ব্যক্তির পক্ষে
দান করলে কিসে উপকৃত হবে:
হজরত সাদ বিন উবাদা
রা. বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার আম্মা যখন ইন্তেকাল করেন, তখন আমি বাড়িতে
ছিলাম না। এবার আমি যদি তার পক্ষ থেকে কিছু সদকা করি। এটা দ্বারা তার কি কোন উপকার
হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর আমি বললাম, আপনাকে সাক্ষী
রেখে আমার মেখরাফ নামক বাগানটি তার (মায়ের) জন্য দান করে দিলাম। বুখারি-২৭৯৫, অসিয়ত অধ্যায়
দান নষ্ট হয় কিসে? আল্লাহ তাআলা
বলেন- হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা
প্রকাশ করে/খোটা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদকা বরবাদ-বিনষ্ট কর না। সূরা বাকারা-২৬৪
হাদিস নং-২২,
হজ-ওমরার ফযিলত |
عَن
أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : الْعُمْرَةُ
إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا ، وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ
لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةَ অর্থ: আবু হুরাইরা রা. হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, এক ওমরা থেকে আরেক
ওমরা পালন উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের ছগিরা গোনাহ সমূহের কাফফারা স্বরূপ। আর কবুল হজের
বিনিময় জান্নাত বৈ কিছুই
নয়। বুখারি-১৭৭৩;
মুসলিম-১৩৪৯; তিরমিজি-৯৩৩
প্রাসঙ্গিক আলেচনা: হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। হজ হলো
যৌগিক ইবাদত তথা-আর্থিক, শারীরিক ও মানুসিক
ইবাদত। এ ফযিলত
সম্পর্কে বহু হাদিস
বর্ণিত হয়েছে। যেমন- রাসূল (ﷺ)
বলেছেন-
তোমরা হজ ও ওমরা পাশাপাশি
আদায় কর, কেননা এ দুটো আমল মানুষের দরিদ্রতা
ও গোনাহ এমনভাবে দূর করে দেয়; যেমনিভাবে হাপর লোহা
ও সোনা-রূপার ময়লা দূরে করে দেয়। আর কবুল হওয়া হজ্বের
একমাত্র সওয়াব হচ্ছে জান্নাত। তিরমিজি-৮১৫, হ্জ অধ্যায়
**যে ব্যক্তি হজ সম্পাদন করল এবং
কোন প্রকারের অশ্লীল কথা ও কর্ম কিংবা গোনাহ করল না। সে যেন সে দিনের ন্যায় নিষ্পাপ অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করল; যে দিন তার মাতাকে প্রসব করেছিল। বুখারি-১৫৪৬
তাওয়াফ করার সময়
প্রত্যেকটি কদমে কদমে একটি গুনাহ মাফ হয়
** ZvIqvd
Kivi mgq cÖ‡Z¨KwU K`‡g K`‡g GKwU ¸bvn gvd nq I GKwU K‡i †bKx †jLv nq|
wZiwgwh-974, n¾ Aa¨vq
হজ্জে মাবরুর কাকে
বলে?
Ø বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত হাসান বসরি রহ.
বলেন- দুনিয়া ত্যাগী মনোভাব ও আখেরাত লাভের আগ্রহ প্রবণতাসহ
হজ ফেরত আসলে তাকে মাবরুরর হজ বলে।
Ø আল্লামা মুহিউদ্দীন ইবনে আরাবি রহ. বলেন- যে হজের পর কোন গুনাহের
কাজ হয়না, তাকে মাবরুর হজ বলে।
Ø আল্লামা তিবি রহ. বলেন- মাবরুর হজের নিদর্শন হলো সকল ফরজ ও ওয়াজিবসমূহ
বিশুদ্ধ নিয়তের সাথে আদায় করা এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকা।
প্রিয় মুসলিম ভাইগণ! নিজের মনের কাছে প্রশ্ন করি, হজ করার পর আমার কি পরিবর্তন হয়েছে? না আগের মত সব পাপ জারি আছে ? যেমন-
বেপর্দা, বদমেজাজ,
জামাতে
না আদায় না করা, সুদ-ঘুষ খাওয়া, জমির আইল ঠেলা, নিজ পরিবারের পর্দা না করানো, কথায় কথায় রাগ করা, গীবত-অহংকার করা ইত্যাদি।
কাদের উপর হজ ফরজ?
মহান আল্লাহর নির্দেশ-আর এ ঘরের হজ আদায় করা হল মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। সূরা আল ইমরান-৯৭
সামর্থের ব্যাখ্যা
হলো- যার নিকট মক্কা মুকাররমা থেকে
হজ করে ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারে আবশ্যকীয় খরচবাদে মক্কা শরিফ যাতায়াতের মোটামুটি খরচ
পরিমাণ অর্থ থাকে, তার উপর হজ ফরজ। ব্যবসায়িক পণ্য ও প্রয়োজনের
অতিরিক্ত জমির মূল্য এ অর্থের হিসেবে গণ্য হবে। অতিরিক্ত জমি বলতে- ধরুন,
কারও
১০বিঘা জমি আছে যা দিয়ে তার সংসার চলে,
এখন যদি
১ বিঘা জমি বিক্রি করে বাকি ৯ বিঘা দ্বারা যদি তার সংসার চলতে পারে তাহলে তার উপর হজ
ফরজ।
মেয়েদের জন্য নিজ স্বামী
বা বিশ্বস্ত মাহরাম (যা সাথে বিবাহ স্থায়ীভাবে
হারাম) পুরুষ ব্যতীত হজ্জে যাওয়া দুরস্ত
নহে।
যেমন- রাসূল (ﷺ) বলেছেন-আল্লাহ ও আখেরাতের
প্রতি ঈমান আনয়নকারী কোন নারীর জন্য ইহা বৈধ নয় যে, সে একদিন ও একরাতের (৪৮ মাইল বা ৭৮কি.) দূরবর্তী কোন স্থানে একা সফর করবে অথচ তার সাথে কোন মুহরিম পুরুষ
থাকবে না। বুখারি-১০৯৬, কিতাবুত তাকছির
অন্ধের উপর হজ ফরজ
নয়, তার যতই সম্পদ থাকুক কেন। নাবালেগেরই পর হজ ফরজ না। নাবালেগ অবস্থায় হজ
করলেও বালেগ হবার পর সম্বল হলে পুনরায় হজ করতে হবে।
এক ইলাহ এর বান্দার
নিদর্শন:
বিভিন্ন দেশ হতে আগত তাঁদের শারীরিক কাঠামো ভিন্ন, ভাষা ভিন্ন, কিন্তু মীকাতের কাছে এসে তাঁরা সবাই নিজেদের
পোশাক খুলে একই ধরণের কাপড় পরিধান করে, তখন তাঁদের মধ্যে একই
ইলাহ-এর বান্দা হওয়ার চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়।
আল্লাহ প্রেমের অপূর্ব
নিশানা: বান্দা তার নিজ বাড়িতে নানান ইবাদত করে পরম প্রেমাস্পদ মহান মালিকের নৈকট্য
হাসিল, তাঁকে পাওয়ার জন্য, কেমন যেন তার
কাঙ্খিত মিলন হলো না, তাই এবার সে মাশুকের দিদারের আশায় তার ঘরের
(কাবার) চার পাশে বারবার খুঁজছে আর বলছে
সে হে দয়াময়! আমি তোমার দুয়ারে উপস্থিত সুতরাং তুমি কোথায়?
দুনিয়ার প্রেমিক যেমন তার প্রেমিকার জন্য দেওয়া না হয়ে, নিজ বাড়ি-ঘর, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদের খবর থাকে
না, তেমনি হাজি মাহবুবে হাকীকি আল্লাহর তালাশে সবকিছু বিসর্জন
দিয়ে তার তালাশে মগ্ন। প্রেমিক ছাড়া কেউ আর আছে কি এ বেশ ভূষা ধরতে?
হজের সামাজিক, রাজনৈতিক ও
আন্তর্জাতিক গুরুত্ব: হজ একান্তই ব্যক্তিগত আমল। তা সত্ত্বেও সামাজিক, রাজনৈতিক ও
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হজের বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। বস্তুত হজের মৌসুম এমন এক বসন্ত
মৌসুম, যার আগমনে নতুন প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা মুসলিম উম্মাহ। হজ যেহেতু মুসলিম উম্মাহর
এমন এক বিশ্ব সম্মেলন, সেখানে সব শ্রেণীর মানুষই এসে সমবেত হয়। তাই সময়ে বিশ্ব শান্তি
স্থাপনে এবং জাতিসমূহের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ মিটিয়ে, লড়াই-ঝগড়ার পরিবর্তে ভালবাসা, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের
জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়।
মানসিক ও ধর্মীয় প্রস্তুতি: ১.
পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনকে
তাকওয়া তথা ইসলামি জীবন যাপনের উপদেশ দান।
২. কারও সাথে
লেনদেন থাকলে তা যথাসাধ্য চুকিয়ে ফেলা এবং পুরাপুরি সম্ভবনা হলে তা লিখে রাখা এবং কয়েকজন
সাক্ষী রাখা।
৩. অতীতের গোনাহ
রাশির জন্যে আল্লাহর দরবারে তওবা করে নেওয়া। (তওবার শর্ত
পৃষ্ঠায় দেখুন)
৪. কারও ধন সম্পদ
জমি-জিরাত বা অন্য কোন হক নিজের জিম্মায় থাকলে তা আদায় করা। কারও মনে কষ্ট দিলে
তার থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া।
৫. হালাল মাল
দ্বারা হজ করা।
৬. নিয়ত সহিহ
করা। লোকে হাজি বলবে এ জন্য নয় বরং আল্লাহকে রাযি-খুশির জন্য।
৭. হজ ও ওমরার
মাসয়ালাসমূহ শিক্ষা করে নেওয়া।
৮. উত্তম সফর
সঙ্গী নির্বাচন, কেননা সফর সঙ্গী ইবাদত বন্দেগির সহায়ক হয়ে থাকে। হজের মাসয়ালা জানা
অভিজ্ঞ আলিম ও সুন্নাতের পূর্ণ অনুসারী সাথী মকবুল হজ হাসিলের বিশেষ সহায়ক।
৯. নিজেকে সতর্কভাবে
গুনাহের কাজসমূহ থেকে বেঁচে থাকা। কেননা অশ্লীল কার্যাদি ও কথাবার্তা হতে বিরত থেকে
হজ পালনকারীর জন্যে কবুলিয়ত ও জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি: ১.
হজের নিয়ন্ত্রণ যেহেতু ধর্ম মন্ত্রণালয়ে হাতে, তাই তাদের জারীকৃত নির্দেশাদি ও তাদের বিলিকৃত পুস্তিকা ও ইশতেহারাদি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে
পড়ে সেমতে কাজ করা।
২. যথাসময়ে হাজি ক্যাম্পে পৌঁছে স্বাস্থ্যগত আনুষ্ঠিক বিষয়,
ইনকেজন ও স্বাস্থ্য সার্টিফিকেট ইত্যাদি গ্রহণ করা। ৩. ইহরামের কাপড়, হালকা বিছানা
পত্র (মশারীসহ) মজবুত সুটকেস বা ব্যাগ,
জরুরি কাগজ পত্র ও টাকা-পয়সা রাখার মত একটি প্রশস্ত কোমর বন্ধ সাথে নেওয়া। খাদ্য সঙ্গে না নেওয়া।
৪. বাক্স বা ব্যাগে
নিজের নাম ঠিকানা ও নাম্বার পরিষ্কারভাবে লিখে নেওয়া।
৫. পাসপোর্ট ও
সার্টিফিকেট ও বিমানের টিকিট ইত্যাদি সাবধানে রাখার ব্যবস্থা অবলম্বলন।
৬. মহিলাদের বোরকা
সাথে নেওয়া, অলংকারাদি যত দূর সম্ভব কম নেওয়া উত্তম। কেননা অনেক সময় তা
বিপদের ও পেরেশানির কারণ হয়ে যায়।
৭. প্রয়োজনীয়
আরবি কথোপকথন শিখে নেওয়া, যাতে টুকটাক কথা বলা ও বোঝা যায়।
৮. মক্কা,
মদিনা, আরাফাত ও মিনায় বাংলাদেশ দূতবাস ও হজ মিশনের
সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। সূত্র: দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম হজ অধ্যায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হজ ফরজ হওয়ার পরেও
না করলে কঠোর হুশিয়ারি : হজরত আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন, যাকে শক্ত অভাব বা অত্যাচারী
শাসক কিংবা গুরুতর রোগ বাঁধা
দেয়নি অথচ সে হজ ফরজ হওয়ার
পরেও হজ না করে মরতে বসেছে, তাহলে সে চায়
তো মরুক ইয়াহুদি
হয়ে বা নাসারা
হয়ে। সুনানে দারেমি
একটা কুসংস্কার: মাতা-পিতার পূর্বে, ছেলে-মেয়ে বিবাহ
দেওয়ার পূর্বে হজ করা যাবে না, এ কথা সঠিক নয় (ছেলে-মেয়ে বড় হলে উপযুক্ত পাত্র পেলে বিবাহ দেওয়া উচিত,
বিবাহ না দেয়ার কারণে সন্তানরা পাপ করলে, সে গোনাহ
পিতার উপর বর্তাবে। হজ ফরজ হলে বিলম্বে আদায় করা বিনা ওযরে ঠিক নয় বরং গুনাহের কাজ।
বিস্তারিত দেখুন- দৈনন্দিন জীবনে
ইসলাম হজ অধ্যায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
( ২২ নং হাদিস সমাপ্ত )
------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
পাপ হয়ে গেলে কি করণীয়
হজরত আলি ইবনে আবু তালেব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- কোন ব্যক্তি গোনাহ করার পর উত্তমরুপে অজু
করে দুরাকাত সালাত পড়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা
করে দেন। জামে তিরমিজি-৪০৬,৩৩০৬; সুনানে আবু দাউদ-১৫২১; মিশকাত-১৩২৪
হাদিস নং-২৩, হালাল উপার্জন করা |
عن
المقدام بنِ مَعْدِ يكرِبَ - رضي الله عنه - عن
النبي - صلى الله عليه وسلم - قَالَ
: « مَا أكَلَ أَحَدٌ طَعَاماً قَطُّ خَيْراً مِنْ أنْ يَأكُلَ مِنْ
عَمَلِ يَدِه ، وَإنَّ نَبيَّ الله دَاوُدَ - عليه
السلام - كَانَ يَأكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ » অর্থ: হজরত
মিকদাম রা থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নিজ হাতে উপার্জিত জীবিকার খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায়না। মহান আল্লাহ
তাআলার নবি দাউদ আ.নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। বুখারি শরিফ-১৯৪২ ইসলামিক
ফাউণ্ডেশন
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: হালাল মাল
উপার্জন করা আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেছেন- ফরজ ইবাদত-বন্দেগির পর হালাল পথে উপার্জন করাও একটি ফরজ। সুনানে বাইহাকি রাসূল
(ﷺ) আরও বলেন- মানুষের সামনে এমন যুগ আসবে, যখন মানুষ মোটেই পরওয়া
(খেয়াল) করবে না যে, সে যা
নিচ্ছে বা গ্রহণ করছে, তা কি হালাল উপায়ে হচ্ছে না হারাম উপায়ে। বুখারি-২০৯৮,
ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়
প্রিয় বন্ধু গণ! আমাদের সমাজের চিত্র তাই নয় কি? ৯০% মুসলমান প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সুদের সাথে জড়িত। বাঁচার জন্য চেষ্টা
না করা অথচ সত্যিকার অর্থে হারাম থেকে বাঁচতে চাইলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই পথ খুলে দিবেন। মহান আল্লাহ ওয়াদা
করেছেন- যারা আমার জন্য চেষ্টা-ফিকির করে,আমি অবশ্যই তাদের জন্য অসংখ্য পথ/রাস্তা খুলে দিই। সূরা আনকাবুত-৬৯ অন্য আয়াতে
তিনি বলেন-আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কজের ভার/বোঝা দেন না। সূরা বাকারা-২৮৬
ফেরিওয়ালার
ডাকাডাকি সুবহানাল্লাহর চেয়েও সওয়াব বেশি: মহিউস সুন্নাহ
শাহ আবরারুল হক রহ. বলেন, এক ব্যক্তি হালাল
রুজি কামাইর জন্য বলছে রাখেন হরেক মাল, কাপড় লাগবে কাপড়, আছে ভাঙ্গা লোহা-কড়াই (অর্থাৎ ফেরিওয়ালা
এভাবে ওলি-গলিতে ডাকাডাকি করে), আরেক ব্যক্তি
মসজিদে ফরজ নামাযের পর মসজিদে বসে সুবহানাল্লাহি, ওয়াল হামুলিল্লাহ,
আল্লাহু আকবার ইত্যাদি তাসবিহ পড়তেছে। এখন সওয়াব বেশি কার। যে ব্যক্তি মাল
বিক্রি করার জন্য চিল্লাচিল্লি করছে তার এ ডাকাডাকি ফরজের সওয়াব পাবে, কেননা হালাল
রিযিক তালাশ করা ফরজ। আর সে তাসবিহ পাঠকারী ব্যক্তি নফলের সওয়াব পাবে। কারণ স্বাভাবিক তাসবিহ
পাঠ করা নফল।
হারাম মালে ইবাদত-দুআ কবুল হয়
না: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন-(১) কোন ব্যক্তি যদি দশ দিরহাম দ্বারা একটি কাপড় ক্রয়
করে, যার এক দিরহাম হারাম পন্থায় অর্জিত, তবে ঐ কাপড় যতদিন তার পরনে থাকবে, ততদিন আল্লাহ তাআলা
তার কোন প্রকার নামাজ কবুল করবেন না। মুসনাদে আহমদ-৫৪৭৩
(২) রাসূল (ﷺ) একবার একব্যক্তির কথা আলোচনা করলেন,
যে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে। ফলে তার চেহেরা হয়ে গেছে উস্কু-খুস্কু ও ধুলি-ধুসরিত। এ অবস্থায় সে তার হাত দুখানি আসমানের দিকে তুলে বলতে থাকে, হে প্রভূ!
হে প্রভূ! (এ বলে দুআ করতে থাকে) অথচ সে যা কিছু পানাহার করে, যা কিছু পরিধান করে,
যা কিছু ব্যবহার করে, তার সবটাই হারাম। কাজেই কিভাবে তার দুআ
কবুল হবে। তিরমিজি-৩২৫৭
হারাম জান্নাতের প্রতিবন্ধক: রাসূল (ﷺ) বলেছেন- ঐ দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা
হারাম উপায়ে বর্ণিত হয়েছে। সুনানে দারেমি-২৬৫৭ কিতাবুর রিকাক
সুদ হারাম ও এর সাথে
জড়িত সবার উপর লানত/অভিশাপ: এ সম্পর্কে
কুরআনুল কারিমের ঘোষণা হলো- যারা সুদ খায়, তারা তার মতই
দাঁড়িয়ে যাবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল
বানিয়ে দেয়। এটা
এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ
আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ
হারাম করেছেন। সূরা বাকারা-২৭৫
রাসূল (ﷺ) বলেছেন- সুদখোর, সুদদাতা, সুদের
লেখক এবং সুদের ব্যাপরে সাক্ষ্যদাতাকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং বলেছেন গুনাহের ব্যাপারে
এরা সকলেই সমান। মুসলিম; তিরমিজি-১২৪৮,
ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়
ঘুষ দাতা ও গ্রহীতার
উপর অভিশাপ: রাসূল (ﷺ) বলেছেন-সুদ গ্রহণকারী ও সুদ প্রদানকারী
উভয়ের উপর অভিশাপ করেছেন। সুনানে আবু দাউদ-৩৫৮২
সঠিক ব্যবসায়ীর ফযিলত: সত্যবাদী,
আমানতদার, ব্যবসায়ী (হাশরের
দিন) আম্বিয়া, সিদ্দিকীন ও শহীদগণের সাথে
থাকবে। জামে তিরমিজি-১২৫২, ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়
বিক্রয় লব্ধ বস্তুর
দোষ-ক্রটি থাকলে তা প্রকাশ করার ফযিলত: বিক্রির জন্য
কোন দ্রব্যের মধ্যে কোন দোষ-ক্রটি থাকলে তা গোপন করা হারাম। আর দোষ-ক্রটি বলে দিলে
বরকত রয়েছে। যেমন-রাসূল (ﷺ) বলেছেন-তারা (ক্রেতা-বিক্রেতা)
উভয়ে যদি সত্য বলে এবং দোষ-ক্রটি সাফ বলে দেয়,
তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি মিথ্যা বলে
এবং গোপন তাহলে তাদের বেচা-কেনায় বরকত মোচন (দূর)
হয়ে যায়। বুখারি শরিফ, কিতাবুল বুয়ু
ঋণীকে অবকাশ দানের
ফযিলত: আবু কাতাদা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূল
(ﷺ)কে
বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অক্ষম ঋণীকে সময় দান করবে আথবা ঋণ কর্তন
(মাফ) করে দিবে। আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিবসের
দুঃখ-কষ্ট হতে তাকে মুক্তি দান করবেন। মুসলিম; মিশকাতুল মাছাবিহ-২৭৭৭
হে! মেহেরবান মালিক!
আমাকেসহ সব মুসলমানকে হারাম থেকে বাঁচাও। আমীন !! দেখুন-ইসলামে ধন-সম্পদ অর্জনের তাগিদ গুরুত্ব ও বিধান-থানভি রহ.-আল-হিকমাহ লাইব্রেরি
( ২৩ নং হাদিস সমাপ্ত)
----------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
সাইয়্যেদুল ইসতিগফার : সকাল ও সন্ধ্যায় একবার
যে ব্যক্তি এ দুআটি একান্ত বিশ্বাসের সাথে সকালে পাঠ করবে অত:পর
ঐ দিন সন্ধ্যার পূর্বে মৃত্য বরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অনুরূপ সকালেও।
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي ، لا إِلَه إِلاَّ
أَنْتَ خَلَقْتَني وأَنَا عَبْدُكَ ، على عهْدِكَ و وعْدِكَ ما اسْتَطَعْتُ ، أَعُوذُ
بِكَ مِنْ شَرِّ ما صنَعْتُ ، أَبوءُ لَكَ بِنِعْمتِكَ علَيَ ، وأَبُوءُ بذَنْبي
فَاغْفِرْ لي ، فَإِنَّهُ لا يغْفِرُ الذُّنُوبِ إِلاَّ أَنْتَ "
হে আল্লাহ তুমি আমার রব, তুমি ছাড়া আর কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তুমি আমায় সৃষ্টি করছে,আর আমি তোমার বান্দা।
আমি আমার সাধ্য-মত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছি।
আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার আশ্রয় চাই।
আমার প্রতি তোমার নিয়ামতের স্বীকৃতি প্রদান করছি, আর আমি আমার গোনাহ-খাতা স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও, নিশ্চয়ই তুমি ভিন্ন আর কেউ গোনাহ মার্জনাকারী
নেই। বুখারি-৬৩০৬,৬৩২৩; তিরমিজি-৩৩৯৩; মুসনাদে আহমদ-১৬৬৬২
হাদিসনং-২৪, কোন নারীকে বিবাহ
করব |
عَن أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى
الله عليه وسلم ، قَالَ :
تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا
، وَلِحَسَبِهَا ، وَلِجَمَالِهَا ، وَلِدِينِهَا ، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ
تَرِبَتْ يَدَاكَ
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা
রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি (ﷺ) বলেছেন, চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করে। (এক) নারীর ধন-সম্পদ (দুই) বংশ-মর্যাদা (তিন) সৌন্দর্য (চার) ধর্ম পরায়ণতার কারণে। যদি বাকি
তিনটি নাও মিলে
তবে ধর্মভীরতাকে প্রাধান্য দাও অর্থাৎ
ধর্ম পরায়ণাকে বিবাহ কর; তোমার হাতগুলো ধুলায় ধূসরিত হোক ( এটি আরবদের একটি পরিভাষা অর্থাৎ তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে)। বুখারি-৫০৯০; মুসলিম-১৪৬৬; আবুদাউদ-২০৪৭; নাসায়ি-৩২৩০
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: উল্লিখিত চারটি
গুণের মধ্যে দ্বীনদারির দিকটাকে প্রাধান্য দিতে আদেশ করা হয়েছে। কেননা ধন-সম্পদ,
সৌন্দর্য ক্ষণিকের তরে। ভাল বংশে খারাপ আবার খারাপ
বংশে ভাল লোক পয়দা হয়। সুখময় জীবনের জন্য খোদাভীতি প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলার কসম! নাফারমানির
ভেতরে কখনও শান্তি আসতে পারে না। আমি যে মেয়েটাকে বিবাহ দিচ্ছি বা ছেলেকে বিবাহ
করাচ্ছি কার সঙ্গে ? নামাজি তো ? পর্দা ওয়ালা তো / নিশা খোর নয় তো? নবির সুন্নাত মানে তো? মনে রাখবেন ! পয়গাম্বরের কথা যে মানবে না (দ্বীনদারি খেয়াল করলো না) তাকে অশান্তি-বিপদ থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
নেককার বিবি/স্বামী
পাবার আমল: হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলি থানভি রহ. বলেন-কোন ব্যক্তি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের
পর সূরা ফুরকানের ৭৪ নং আয়াত (রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা
ওয়া জুররিইয়াতিনা কুররাতা আইউনি ওয়াজআল না লিল মুত্তাকিনা ইমামা ) পাঠ করে। ইনশাল্লাহ তার নেককার বিবি/স্বামী আল্লাহ তাআলা মিলাবেন। শুধু তাই নয়, সে-যে রকম শারীরিক গঠনের চায় সেই রকমই পাবে (অর্থাৎ
লম্বা, ফর্সা, মোটা-চিকন, হালকা-পাতলা, মাঝারি ইত্যাদি) সন্তানও নেককার হবে। (পরিবার-পরিজনের দ্বীনদারি
বানানোর জন্য এ আয়াতটি খুবই কার্যকরি)
ইস্তেখারা করা: ইস্তেখারা
মানে কল্যাণ চাওয়া। সুতরাং বিবাহের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নিকট কল্যাণ করা উচিত। জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যখন তোমাদের কেউ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় সে
যেন দুরাকাত নফল সালাত পড়ে অতঃপর বল………….। বুখারি -১১৬৬;
আবু দাউদ-১৫৪০
দুআ ও নিয়ম জানতে
দেখুন-খাযায়েনে কুরআন ও হাদিস-হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী,
৭১-৭৪ পৃষ্ঠা
বিবাহের
প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখা ও সতর প্রসঙ্গে: মুসলিম নর-নারীর জীবনে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই যখন তারা বিবাহের সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের জন্য কর্তব্য হলো ইস্তিখারা তথা আল্লাহর কাছে
কল্যাণ কামনা করা।
বিবাহের পূর্বে পাত্রী
দেখে নেয়া সুন্নাত। নিজে না দেখলে বা সম্ভব না হলে কোন মহিলাকে পাঠিয়েও দেখার ব্যবস্থা
করা। পাত্রীর চেহেরা ও হাত
দেখার অনুমতি রয়েছে। ছেলে ব্যতীত অন্য কোন পুরুষ মেয়েকে দেখা বৈধ নয়।
(যেমন-
বাবা, চাচা, ভাই,
দুলাভাই, নানা, দাদা প্রমূখ)
বিস্তরিত জানার জন্য- আহকামে জিন্দাগী,
৩৪৮-৩৬৫ পৃষ্ঠা পড়ুন। নববধূর উপহার- মুফতি রুহুল
আমীন যশোরী রহ.
বিবাহে অভিভাবক ও কনের
অনুমতি গ্রহণ:
বিবাহের জন্য কনের
অনুমতির প্রয়োজন। অনুমতি না দিলে বিবাহ হবে না। অবশ্য চুপ থাকা অনুমতির লক্ষণ। কনে যদি বালেগা (বয়স প্রাপ্ত
) হয় তাহলে অভিভাবকের অনুমতির জরুরি নয়।
বর-কনের
পারস্পরিক যোগাযোগ করা : প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে ফোন বা মোবাইলে এবং চিঠি ও মেইলের
মাধ্যমে শুধু বিবাহের চুক্তি
ও শর্তাদি বোঝা-পড়ার জন্য যোগাযোগের অনুমতি রয়েছে শর্তাপেক্ষে
যেমন- প্রেম বিনিময় করতে পারবে না, মাহরাম
ব্যক্তির সাথে যেরুপ কথা বলার বিধান সেভাবে করতে। কেননা বিবাহের পূর্বে তারা
স্বামী-স্ত্রী নয়। উল্লেখ্য, এ যোগাযোগ উভয়ের অভিভাবকেরে সম্মতিতে হওয়া শ্রেয়।
এ্যাংগেজমেন্ট করা: ইদানীং
পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে বিয়েতে এ্যাংগেজমেন্ট করার রেওয়াজ ব্যাপকতা পেয়েছে। এই আংটি পরানোতে
যদি এমন ধরে নেওয়া হয় যে এর মাধ্যমে বিবাহের কথা
পাকাপোক্ত হয়ে গেল তবে তা শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম। কেননা, মুসলিম
সমাজ বা শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। আরও নিন্দনীয় ব্যাপার হলো, এ আংটি
প্রস্তাব দানকারী পুরুষ নিজ হাতে কনেকে পরিয়ে দেয়। কারণ, এ পুরুষ
এখনো তার জন্য বেগানা। এখনো সে মেয়েটির স্বামী হয়নি। কেননা, কেবল
বিবাহ চুক্তি সম্পাদিত হবার পরেই তারা স্বামী-স্ত্রী বলে
গণ্য হবেন। সূত্র: ফাতাওয়া জামেয়া লিল-মারআতিল মুসলিমা।
উপযুক্ত পাত্রের
প্রস্তাব ফিরিয়ে না দেওয়া: উপযুক্ত পাত্র পেলে তার প্রস্তাব নাকচ করা
উচিত নয়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যদি এমন কেউ তোমাদের
বিয়ের প্রস্তাব দেয় যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে তোমরা তার সঙ্গে
বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না করো তবে পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজতা সৃষ্টি হবে। তিরমিজি: ১০৮
বিবাহের প্রকারভেদ
ও তার হুকুম: ব্যক্তি বিশেষে বিবাহের হুকুম তারতম্য আছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে
যেন বিয়ে করে। সামর্থ বলতে দুইটি জিনিস বুঝায় এক.শারীরিক
শক্তি দুই. আর্থিক (শক্তি) স্বাবলম্বী। বিবাহ মোট ৬ প্রকার
১.ফরজ ২.ওয়াজিব৩.সুন্নাত ৪. মুবাহ ৫.মাকরুহ ৬.হারাম। নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. ফরজ: বিবাহ করা ঐ ব্যক্তির উপর ফরজ যার শারীরিক শক্তি ও আর্থিক শক্তি আছে,
বিবাহ না করলে যেকোন সময় অপকর্মে লিপ্ত হবার নিশ্চিত বা প্রবল আশংকা। বিবাহ একমাত্র
রাস্তা তাকে যিনা থেকে বিরত রাখতে পারে। এমতাবস্থায় তার বিবাহ করা ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন-(১)
তোমাদের মধ্যে যারা সঙ্গী বিহীন পুরুষ বা মহিলা তোমরা তাদেরকে বিবাহ দাও আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাব মুক্ত না করা পর্যন্ত যেন তারা সংযম অবলম্বন
করে।
সূরা
নূর৩২-৩৩ আয়াত (২) তোমরা প্রকাশ্য ও
প্রচ্ছন্ন গোনাহ পরিত্যাগ কর। নিশ্চয় যারা গুনাহে করেছে, তারা অতিসত্বর তাদের কৃত কর্মের
শাস্তি পাবে। সূরা আনআম-১২০
(৩) আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল ও মন্দ
পথ। সূরা ইসরা-৩২
তবে কারো যদি
শারীরিক শক্তি থাকে কিন্তু আর্থিক সচ্ছলতা
নাই তার উপর বিবাহ ফরজ নয় সে রোজা রাখবে আর ছবর করবে । যেমন হাদিসে শরীফে আছে- আর যে এর
সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য সওম রাখা। কেননা তা যৌন
উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়। বুখারি-৫০৬৬; মুসলিম-৩৪৬৪
২. ওয়াজিব:
বিবাহ করা ঐ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব যার শারীরিক শক্তি ও আর্থিক শক্তি
আছে, বিবাহ না করলে যেকোন সময় অপকর্মে লিপ্ত হবার আশংকা। এমতাবস্থায় তার বিবাহ করা
ওয়াজিব। যেমন, হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে
অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার
কর্তব্য সওম রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়। বুখারি-৫০৬৬;
মুসলিম-৩৪৬৪
আর আর্থিক শক্তি
না থাকলে রোজা রাখবে।
৩. সুন্নাত: উপযুক্ত বয়স হলে স্বাভাবিক অবস্থা বিবাহ করা সুন্নাত। কেননা অধিকাংশ নবি বিবাহ
করেছেন। আর অবশ্যই তোমার পূর্বে
আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি। সূরা রাদ-৩৮
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- আমি নারীকে বিবাহ করি। ( তাই বিবাহ আমার সুন্নত) অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার
দলভুক্ত নয়। বুখারি-৫০৫৬; মুসলিম-৩৪৬৯
৪. মুবাহ:
যার বিবাহ না করলে পাপকার্যে লিপ্ত হবার আশংকা নাই। বরং আল্লাহ প্রেমে
বিভোর-বিহ্বল , দ্বীনি কাজে ব্যস্ত যে, স্ত্রী ও সন্তানের হক আদায়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তার বিবাহ না করা জায়েজ, বরং না করাই
উত্তম। যেমন- ইয়াহইয়া ও ঈসা আ. বিবাহ করেন নি। হজরত ইয়াহইয়া আ. সম্পর্কে পবিত্র
কুরআনে এসেছে। সূরা ইমরান-৩৯ সূত্র: তাফসিরে বুরহানুল
কুরআন-২৩৭ পৃষ্ঠা, বয়ানুল কুরআন,
মাআরিফুল কুরআন
৫. মাকরুহ:
যে ব্যক্তি বিবাহ করলে বিবির হক আদায়ে সন্দিহান তার বিবাহ করা মাকরুহ।
৬. হারাম:
যার শারীরিক শক্তি নেই, একেবারে অক্ষম,
নপুংশক (পুরুষত্বহীন) তার
বিবাহ করা হারাম।
পরামর্শ: ইদানিং দেখা
যাচ্ছে- মোবাইল, ই-মেল, ফেসবুক, ইন্টারনেট-এর মাধ্যামে সম্পর্ক হয়ে ছেলে-মেয়ে ইচ্ছামত বিবাহ-অবৈধ সম্পর্ক গড়ছে কিন্তু অধিকাংশ এ অবৈধ সম্পর্ক, বিবাহ
টিকছে না; ফলে বাবা-মার কাছেই ফিরে আসতে
হয়। বিবেকবান তরুণ-তরুণীরা! এক মাস/এক বছর/দুই বছরের প্রেমের
সম্পর্ক কি পিতা-মাতার সঙ্গে ১৮/২০ বছরের
সম্পর্কের চেয়ে দামি? এ রকম বহু ঘটনা সমাজে ঘটেছে যে,
না দেখে প্রেম করে অনেক প্রতারণার শিকার হচ্ছে। ছেলে বলে আমি ব্যাংকে
চাকরি করি, দোকানের মালিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অবিবাহিত ইত্যাদি পরে জানা গেল কিছুই না, বিবাহিত কয়েক
সন্তানের জনক। তখন শুধু হায় হায় করে। আর কি লাভ? ভাবা উচিত
ছিল আগে, আমি কার হাত ধরে যাচ্ছি, এর পরিনাম
কি? প্রেমের ফাঁদে পড়ে মানুষ পাচার হচ্ছে, আটকিয়ে টাকা দাবি করছে, জীবন পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। নরসিংদিতে কলেজ ছাত্রের
৬ টুকরা করে হত্যা তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ বহন করে।
প্রিয় মুসলিম ভাই-বোনেরা! অতীতের গ্লানি মুছে সামনে পবিত্র জীবনের শপথ
নেয়। মনে রাখবেন! অবৈধ প্রেম-ভালবাসা করলে শাস্তি পেতে হবে। আর পিতা-মাত কখনও সন্তানের
অমঙ্গল চায় না।
লাভ ম্যারেজ নয়; লাভ আফটার
ম্যারেজ: আজকাল অমুসলিম দেশের মত আমাদের দেশেও লাভ ম্যারেজ মহামারি আকার
ধারণ করেছে। তারা বিয়ের আগেই সম্পর্ক স্থাপন করে, এক সঙ্গে বসবাস
করে, এটা ইসলামি শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম। ইসলামে love marriage বা ভালবাসার বিয়ের চিন্তাও করা যায় না,
love after marriage বা বিয়ের পর ভালবাসার অবকাশ আছে তাই না,
বরং ভালবাসাই কাম্য। বিয়ের পর যতো সম্পর্ক ও ভালবাসা স্থাপন করবে ততো
সওয়াব হবে।
বিয়ে কঠিন হলে ব্যভিচার
সস্তা হবে : যেখানে বিয়ে সস্তা সেখানে ব্যভিচার চড়া মূল্যের হবে। আর যেখানে বিয়ে হবে
দামি সেখানে ব্যভিচার হবে অতিসস্তা।
বিবাহের কয়েকটি রছম
ও কুপ্রথা:
Ø
বিবাহের গেটে টাকা ধরা
নাজায়েজ। ফতোয়ায়ে মাহমূদিয়া-৩য় খণ্ড
Ø
বিবাহের পর বর সবাইকে সালাম-মোসাফাহ
করা, এটা ভিত্তিভীন ও বেদআত। ফতোয়ায়ে মাহমূদিয়া-৩য় খণ্ড
Ø
বিবাহের পর বধূর মুখ
দেখানো (পর পুরুষদেরকে) নাজায়েজ। ফতোয়ায়ে মাহমূদিয়া-৩য় খণ্ড
Ø
কনের পরিবারের পক্ষ থেকে
ভোজের ব্যবস্থা করা খুশি মনে হলে জায়েজ, কিন্তু তাদের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া,
এটা শরিয়ত সম্মত নয়। বিবাহের দিন কনের বাড়িতে খাবাবের ব্যবস্থা
ইসলামে নেই। ওলিমা তথা ছেলের পক্ষ থেকে আছে।
Ø
দাওয়াত খাওয়ার পরে দান
উপঢৌকন অধিকাংশ সময় হারাম হয়।
Ø
কনের টাকা দিয়ে ওলিমার (বৌভাত)
অনুষ্ঠান করা হারাম। ফতোয়া শামি ৯ম খণ্ড;৫০১ পৃষ্ঠা,ফতোয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪২ ,মিশকাত -১/২৫৫
বিবাহে মসনূন তরিকা: ইসলামি
আইনে বিবাহকার্য ও বিবাহ অননুষ্ঠান একটি পবিত্র ও ইবাদতের অনুষ্ঠান। যা মসজিদে
প্রকাশ্য সম্পূর্ণ করা বাঞ্ছরীয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-তোমরা
বিবাহের প্রচার করবে, বিবাহকার্য মসজিদে সম্পন্ন কবে।(জামে তিরমিজি)
আকদ অনুষ্ঠানে সময় খুতবা পাঠ করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সকল বিবাহে খুতবা পাঠ
করা হয়েছে। সুনানে আবু দাউদ, তিরমিজি,
নাসায়ি ইত্যাদি হাদিস গ্রন্থে সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.
থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর একটি খুতবা
উল্লিখিত আছে। বিবাহ পড়ানোর পর সামর্থানুযায়ী খুরমা(মিষ্টি বা যে সমাজে যা প্রচলন আছে ) বিতরণ করা সুন্নাত।
ওলিমা: বাসর ঘর
হওয়ার পর (তিন দিনের মধ্য বা আকদের সময়) আপন বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-মিসকিনদেরকে ওলিমা বা বৌভাত খাওয়ানো
সুন্নাত। শুধু ধনী ও দুনিয়াদারদেরকে দাওয়াত করা ও দ্বীনদার, গরীব-মিসকিনকে দাওয়াত না করা হাদিসের বর্ণনানুযায়ী তা হল সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওলিমা। যেমন- রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- ওলিমা অনুষ্ঠানে কেবল ধনীদের দাওয়াত দেওযা
হয় এবং গরীবদের উপেক্ষা করা হয় সেই ওলিমা খাদ্য সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট খাদ্য। বুখারি ও মুসলিম
জন্মনিয়ন্ত্রণ(Birth Control): উহা দুই
প্রকার। ১. স্থায়ী পদ্ধতি ২. অস্থায়ী /সাময়িক
পদ্ধতি।
স্থায়ী পদ্ধতি: এটা
সর্বাবস্থায় হারাম। কেননা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করার শামিল, যা
সম্পূর্ণ হারাম। সূত্র: বুখারি-মুসলিম;
মিশকাতুল মাছাবিহ-২৯৪৭
অস্থায়ী/সাময়িক
পদ্ধতি: খাদ্য সংকট ও অভাব অনটনের ভয় করা হারাম। সূত্র: সূরা বনী
ইসরাঈল-৩১; সূরা হুদ-০৬ ; মুসলিম; মিশকাত ২৯৪৭
কিন্তু যদি
স্ত্রীর স্বাস্থ্যগত দুর্বলতা, গর্ভধারণ ক্ষমতা একেবারে হারিয়ে ফেলে এবং
গর্ভধারণে মুত্যুর আশংকা থাকে এমতাবস্থায় দ্বীনদার বিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তারের
পরামর্শে সাময়িক/স্থায়ী গর্ভরোধ করা জায়েজ হবে। সূত্র: ফতোয়ায়ে
রহিমিয়া-২/২৩৩, নিযামুল ফতোয়া-১/৩৭৩
বিবাহের উপকারিতা
বা সুফল:
ইসলাম ও দুনিয়ার দৃষ্টিতে
বিয়ে-শাদীর ফযিলত, উপকারিতা
অসামান্য। নিম্নে কয়েকটি তুলে ধরে হলো-
Ø
শারীরিক ও মানসিক
প্রশান্তি লাভ হয়। সূরা রুম-২১
Ø
অর্থনীতি সাবলম্বী হয়। সূরা নূর-৩৩
Ø
মানব জাতির বৈধ বংশ বিস্তারের মাধ্যম।
Ø
তাকওয়ার পথ সুগম হয় । যেমন রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- কোন বান্দা যখন বিয়ে করে তখন তো সে
দীনের অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেলল। অতঃপর সে যেন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে
ভয় করে। মিশকাত২/২৬৭
Ø
যিনা-ব্যভিচার
থেকে সমাজ রক্ষা পায়।
Ø
মানসিক ভারসাম্য রক্ষা হয়।
Ø
চোখ ও লজ্জাস্থানের হেফাযত
হয়। বুখারি-৫০৬৬;
মুসলিম-৩৪৬৪
Ø
বিবাহ না করার অপকারিতা বা
কুফল: বিবাহ না করার নানাবিদ অপকারিতা রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি বর্ণনা করা
হলো:-
Ø
স্বাস্থ্য নষ্ট হয় ।
Ø
অর্থেরঅপচয়হয়।
Ø
যিনা-ব্যভিচারের
প্রসার ঘটে,যা আল্লাহর গযবের কারণ।
Ø
অবৈধ সন্তান বৃদ্ধি পায়।
Ø
বংশ বা গোত্রের মর্যাদা
ক্ষুণ হয়।
কে ইবলিসের সবচেয়ে
প্রিয়? ইবলিস শয়তান পানির ওপর তার
সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের
মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টির উদ্দেশ্য তার সৈন্যদেরকে প্রেরণ করে। আর তার নিকট সে
বেশি মর্যাদার অধিকারী যে বিপর্যয় সৃষ্টির ব্যাপরে বড়। তাদের মধ্য হতে কেউ এসে
বলে-আমি এরুপ করেছি তখন ইবলিস বল; না তুমি কিছুই করনি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, এরপর অপর একজন এসে বলে আমি মানুষদেরকে
এমনিতেই ছেড়ে দিয়ে আসিনি,বরং আমি
তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, অতঃপর ইবলিস তাকে নৈকট্য দান করে এবং বলে,
হ্যাঁ, তুমিই উত্তম ব্যক্তি। বর্ণনাকারী হজরত
আমাশ রহ. বলেন, আমি মনে করি জাবির রা. এ
কথাও বলেছেন, অতঃপর ইবলিস তার সাথে আলিঙ্গন (কোলাকুলি)করে। মুসলিম,মিশকাত-৬৪
স্বামীর মর্যাদা: রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন -আমি যদি আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে
সিজদা করার জন্য কাউকে নির্দেশ দিতাম,
তাহলে অবশ্যই মেয়েদের আদেশ দিতাম তারা যেন তাদের স্বামীকে সিজদা করে। সুনানে আবু দাউদ
স্বামীর
সন্তুষ্টির ফযিলত: হজরত উম্মে সলামা রা. বর্ণনা
করেন, আমি রাসূল (ﷺ) বলতে শুনেছি-যে নারী এমন
অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে, তার স্বামী তার প্রতি খুশি,
সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মুস্তাদরক হাকেম ,জামে তিরমিজি
স্বামীর হুকুম মানা স্ত্রীর উপর ফরজ,
যদি তা আল্লাহর নাফারমানির কিছু না হয়।
নববধূর জন্য দশটি
অসিয়্যত: আরবের জনৈক প্রসিদ্ধ
মহিলা তার সদ্য বিবাহিতা কন্যাকে শ্বশুরালয়ে পথে বিদায়ের প্রাক্কাল্লে হেদায়েতমূলক
কথাগুলো বলেছিলেন। এর ওপর আমল কলে তাদের ঘর-সংসার ও পরিবার জান্নাতের সুখের নমুনা হয়ে যাবে। ইনশাল্লাহ। ১.অল্পে তুষ্ট থাকা।২.মান্যতা ও
আনুগত্যের সাথে জীবন যাপন করা। ৩. সাজসজ্জা ও রুপের
দ্বারা স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা। ৪.সুরমা ব্যবহার ও পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা। ৫. সময়মত খানা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা। ৬. স্বামীর ঘর ও ধন-সম্পত্তির হেফাযত করা। ৭.স্বামীর ঘরের গোপন কথা প্রকাশ না করা। ৮. সুখে-দুঃখে স্বামীর
সাথে শরীক থাকা। ৯.স্বামীর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা বজায় রাখা। ১০.স্বামীর চাওয়া-পাওয়াকে নিজের ওপর
প্রাধান্য দেওয়া। বিস্তারিত দেখুন-নব বধূর উপহার-মুফতি রূহুল আমীন যশোরী রহ.
স্বামীর ১০টি
মারাত্মক ভুল: ১.স্ত্রীকে উপেক্ষা করা ২.তালাকের ধমক ৩.দ্বিতীয় বিবাহের
হুমকি ৪.অপমান করা ৫.সময় না দেওয়া ৬.নিজে স্বাধীন,স্ত্রীর জন্য
বাধ্যবাধকতা ৭.কথায় কথায় দোষ
খোঁজার অভ্যাস ৮. দোষারোপ করা ১০. স্ত্রীর নিকটাত্মীর প্রতি বিরুক্তিপ্রকাশ
স্বামীর জন্য ১০টি
সোনালিনীতি: ১. সবসময় মুচকি হেসে
ঘরে ঢুকবেন। ২. স্ত্রীর ভালকাজের প্রশংসা
করুন। ৩.স্ত্রীর কাজের প্রতি
মনোযোগ দিন। ৪.স্ত্রীকে মাঝে মাঝে উপহার
দিন। ৫.স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা আকর্ষণ প্রকাশ করুন। ৬.মনকাড়া কথা বলবেন। ৭.ধৈর্য ও
সহিষ্ণুতার সঙ্গে কাজ করা উচিত। ৮. সংসারের শরীয়তের
অনুশাসন চালু করুন। ৯. স্বামী-স্ত্রীর উভয়ে
একসঙ্গে রাগ না করা। ১০. পরস্পরে অসন্তুষ্ট অবস্থায় কখনো ঘুমাবে না।
স্ত্রীদের জন্য
২০টি সোনালিনীতি: ১.খাবার পাকাবেন জিকিরের সঙ্গে। ২. যথাসময়ে কাজ শেষ
করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ৩. ঘর-বাড়ি পুরস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। ৪. শোনা কথা বলে বেড়াবে না। ৫.স্বামীকে দু’আদিয়ে বিদায় জানাবেন। ৬.
স্বামীকে
ঘরে ফেরার আগেই নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিন। ৭.আত্মীয়-স্বজনের কাছে
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার জন্য যাবেন। ৮. স্বামীকে দান-সদকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করুন।৯. ঘরে একটি জায়গা নামাযের
জন্য নির্দিষ্ট রাখুন। ১০. ফোনে কথা সংপেক্ষ
করার অভ্যাস করুন। ১১.গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
নোট করার জন্য একটি নোট বুক রাখুন। ১২. প্রয়োজনীয় কিছু
জিনিস হাতের কাছে রাখুন। ১৩. এমন কোন কাজ করবেন
না যার কারণে স্বামীর নজর থেকে ছিটকে পড়েন। ১৪. সন্তানের ব্যাপারে স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করুন। ১৫. স্বামীর প্রয়োজন পূরণে দ্বিধা করবে না। ১৬. পেরেশানির সময় স্বামীকে সান্ত্বনা দিন। ১৭.ভুল স্বীকার করায় সম্মান এবং চুপ থাকায় প্রশান্তি। ১৮. মনের চিন্তার শুধুই আল্লাহর কাছেই বলুন। ১৯. স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করুন। ২০. সষ্টার অবাধ্যতা
হলে সৃষ্টির অনুগত হবেন না।
দশটি বোকামি: দশটি বিষয় বোকামির নিদর্শন। ওসব বোকা লোকদের
থেকে বেঁচে থাকতে হবে যদি আপনি ঘর আবাদ করতে চান।
১. কেউ ভালকাজ সামান্য সামান্যও করে না কিন্তু
জান্নাতের আশা করে। বুযুর্গরা বলেন,এটা বোকামির
নিদর্শন।
২. কোনো লোক নিজে অকৃতজ্ঞ কিন্তু অন্যের কাছ থেকে
কৃতজ্ঞতা পাওয়ার আশা করে। সে-ও এক ধরণের বোকা।
৩. কারো প্রকৃতিতে অলসতা প্রবলভাবে রয়েছে অথচ সে
চায় তার সবচাহিদা পূরণ হয়ে যাক। এটাও এক ধরণের বোকামি। নিজের মনোবাসনা পূরণ করার
জন্য করতে হয়।
৪. কেউ তার বড়দের অবাধ্য অথচ আশা করে ছোটরা তার
সঙ্গে বাধ্যতামূলক আচরণ করে। এটাও এক ধরণের
বোকামি।
৫. অসুস্থ অবস্থায় ক্ষতিকর বিষয় থেকে বিরত থাকে
না অথচ সুস্থতার আশা করে। ডায়বেটিক অথচ মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকে না। তা সত্ত্বেও বলে, Complication (সমস্যা) হচ্ছে। এজন্য ক্ষতিকর
বিষয় থেকে বিরত না থেকে সুস্থতার আশা করা বোকামি বৈ কিছু নয়।
৬. যেলোক তার আয়ের চেয়েও বেশি খরচ করে আর
স্বাচ্ছন্দে চলার আশাপোষণ করে-এটাও এক ধরণের বোকামি। অনেক সময় মহিলারা এ ভুলটা
বেশি করে বসে। স্বামীর আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়িয়ে দেয়।
৭. বিপদের মুহূর্তে কারো কোনো সহযোগিতা করে না
কিন্তু এ আশাপোষণ করে যে, আমার বিপদের সময়
লোকেরা আমার সাহায্যে এগিয়ে আসবে।
৮. কাউকে গোপন কথা বলে একথা বলে দেয়া অন্য কাউকে
বলবে না। অন্য কাউকে না বলার আশা করাটা বোকামি।
৯. দু-চারবার গোনাহ করে
তা ছেড়ে দেয়ার আশা করাও এক ধরণের বোকামি। যুবকেরা এমনটা করে। গোনাহ করলে তা অভ্যাস হয়ে যায়।তখন আর গোনাহ থেকে বাঁচতে
পারবে না।
১০. স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে প্রতিদিন ঝগড়া করে
অথচ এ আশা করে যে, সংসার সুখের হবে –এটা নিছক বোকামি।
বিস্তারিত দেখুন-সংসার সুখের হয় দুজনের গুণে –মাওলানা জুলফিকার আহমদ নকশাবন্দি দা.বা.- দিলরুবা প্রকাশনী ( ২৪ নং
হাদিস সমাপ্ত)
-------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
দরুদ পাঠের ফলিলত
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে,
তার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশ বার দরুদ পাঠ করবেন অর্থাৎ দশবার
রহমত নাযিল করবেন। মুসলিম-৩৮৪; আবুদাউদ-৫২৩; তিরমিজি-৩৬১৪; মুসনাদে আহমদ-৬৫৬৮
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) ইরশাদ করেছেন- কেয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হবে ঐ লোক,
যে আমার উপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠ করত। জামে তিরমিজি ও সহিহ ইবনে হিব্বান-৮৯৯
হাদিস নং-২৫, অহংকার |
عن عبد بن مسعود رضى الله هنه قال فال رسول الله صلى الله عليه سلم -لاَ
يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَفِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ قَالَ
رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَيُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً
قَالَإِنَّاللَّهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ
النَّاسِ- مسلم-275‘
অর্থ:
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবি মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমান অহংকার
থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, যদি কেউ সুন্দর জামা আর সুন্দর জুতো পরিধান করতে ভালবাসে? তখন নবি কারিম (ﷺ) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে
পছন্দ করেন। অহংকার মানে
হল সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা। সহিহ মুসলিম-৯১,কিতাবুল ঈমান; আবু দাউদ-৪০৯১; তিরমিজি-১৯৯৮; ইবনে মাজাহ-৫৯; আহমদ-৩৬৪৪
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: আলোচ্য হাদিসে তিনটি বিষয় আলোকপাত করেছেন।
এক. অহংকার: অহংকার অত্যন্ত খবিছ,
জঘন্য
যে, জাররা পরিমাণ থাকলে
বেহেশতে ঢোকার অনুমতি নাই। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ
হচ্ছে-
সুতরাং তোমরা দ্বারগুলি দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেখানে স্থায়ী হবার জন্যে; দেখ অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট। সূরা নাহল-২৯
দুই. সুন্দর পোশাক, জোতা কি অহংকার: না তা অহংকার নহে। বরং তাহলো সৌন্দর্য-প্রিয়তা। আল্লাহ পাক নিজে পরম সুন্দর, সুন্দরকে খুব পছন্দ করেন। সামর্থানুযায়ী উত্তম পোশাক
পরিধান করা, এটা আল্লাহ তাআলার দেওয়া নেয়ামতের
বহিঃপ্রকাশ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-
নিশ্চয়
আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন, আপন বান্দার ও পর নিজের অনুগ্রহের প্রভাব দেখতে। তার প্রদত্ত নেয়ামতের
বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে।
মাসয়ালা : নিজের মনের খুশির জন্য দামি উত্তম পোশাকাদি
পরিধান করা জায়েজ। কিন্তু নিজের
বড়ত্ব, অহংকার প্রকাশ
করার জন্য কিংবা প্রভাব খাটানোর জন্য
পরিধান করা জায়েজ নাই। সূত্র: সূরা আরাফ-২৬, সূরা বানী ইসরাঈল-৩৭
যে ব্যক্তি
দুনিয়ায় প্রসিদ্ধি লাভের পোশাক পরবে কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর সে কাপড়ে তাকে প্রজ্বলিত করবেন। ইবন মাজাহ-৩৬০৭
তিন. সত্যকে বাতিল করা ,মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা : আসল অহংকার হল সত্যকে কবুল না করা ও লোকদেরকে হেয়-প্রতিপন্ন করা। আমি যেটা বুঝেছি সেটাই সঠিক। সারা দুনিয়ার
মুফতিগণ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফতোয় প্রদান
করে,তবুও আমি মানব না। আমি শিক্ষিত-আলেম-হাফেজ, সে মুর্খ, গয়রে আলেম আমারদাম বেশি। আমি নামাজ সে বেনামাজ,অতত্রব আমি জান্নাতি,
সে
জাহান্নমি। আমার ভাই! এক গোলাম আরেক
গোলামের মূল্য নির্ধারণ করে, না মালিক নির্ধারণ
করে।আমরা তো সবাই গোলাম। কে কামিয়াব/সফলকাম এখন তে বলার সুযোগ নাই, ফয়সলার আগে।
অহংকার অর্থ- কোন দ্বীনি বা দুনিয়াবী গুণে নিজেকে অন্যের
তুলনায় বড় এবং অন্যকে নিজের চেয়ে হেয় মনে করা। হজরত থানভি রহ.
বলেন-আমি বর্তমান হালতে সব মুসলমানের চেয়ে নিজেকে নিকৃষ্ট এবং ভবিষতের
চিন্তা ভাবনায় কাফের-বেদ্বীনের চেয়েও
খারাপ মনে করি; এমনকি কুকুর-শিয়াল-শুকুরের চেয়েও
নিকৃষ্ট। কারণ মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে মুসলমানের বিভিন্ন ভাল আ্মলের বিনিময়ে
জান্নাত দিতে পারেন আর আমার একটি গুনাহের
কারণেও আমাকে শাস্তি দিতে পারেন। আর কাফের মুশরিকরাও
তো ঈমানি আনার সুযোগ আছে,আমি কি ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারব? যদি না পারি, তাহলে তে কুকুর-শুকুরে চেয়েও
জঘন্য, কেননা তাদের শাস্তি নাই, মাটির সাথে মিশে যাবে। আমার শাস্তি আছে।
অহংকারের চিকিৎসা : শরীরে রোগের জন্য যেমন ডাক্তর প্রয়োজন, তেমনি আত্মার
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য কামেল শায়েখ
প্রয়োজন। তাই উম্মুল আমরায তথা অহংকার থেকে বাঁচার
জন্য কোন কামেল শায়েখের হাতে
ন্যস্ত হতে হবে। এ ছাড়া কিয়ামত পর্যন্ত কারো ইসলাহ হবে না।( কামেল
শায়েখের পরিচয় সম্পর্কে আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. কসদুস
সাবিল দেখুন।)
§
কয়েকটি মোরাকাবা, এটা করলে
ইনশাল্লাহ ফায়দা হবে।
১. (এই
ধ্যান করবে যে, ) যদিও
আমার মধ্যে এই গুণ বা প্রতিভা রয়েছে,
কিন্তু এ তো আমার সৃষ্টি নয়,বরং নিছক আল্লাহর পাকের দান।
২. এই দান
আল্লাহ পাক যখন ইচ্ছা; তা ছিনিয়ে নিতে পারেন।
৩. অথবা
বর্তমানেও হয়ত তার মধ্যে বড় কোন গুণ ও মর্যাদার বিষয় বর্তমান আছে, যা আমার কাছে অজ্ঞাত, কিন্তু অন্যদের কাছে তা স্পষ্ট।
৪. তার জন্য দুআ
করা (যার সাথে অহংকার হয়)।
বিস্তরিত জানার
জন্য পড়ুন- তারবিয়াতুস সালিকীন, আশরাফ চরিত-মাকতাবতুল আশরাফ
প্রকাশনী, আরিফ বিল্লাহ শাহ হাকীম আখতার রহ. এর কিতাব, অহংকার ও প্রতিকার, আত্মার
ব্যাধি ও তার প্রতিকার
হাদিস নং-২৬, জবান বা জিহবা সংযত রাখা |
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ ، أَنَّ رَسُولَ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ، قَالَ : مَنْ
يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ
অর্থ: হজরত সাহল ইবনে সাদ রা.রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করে, তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হেফাযতের দায়িত্ব নিবে আমি
তার জন্যে জান্নাতের যিম্মাদার হব। বুখারি-৬৪৭৪,কিতাবুর রিকাক; তিরমিজি-২৪০৮;
মুসনাদে আহমদ-২২৮২৩
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: আলোচ্য হাদিসে
মুখ-রসনা ও লজ্জাস্থানের নিরাপত্তা বিধান করবে আমি তার
বেহেশতের জামিন হব। এখানে একটি প্রশ্ন
উত্থাপিত হয,তাহল এ দুটি আমল করলে কি হবে আর কিছু লাগবে না? জবাব
হল বস্তুত মানুষের অধিকাংশ গোনাহই মুখ ও লজ্জাস্থান দ্বারা সংঘটিত হয়। যে ব্যক্তি এই দুটি
হেফাযত করতে পারবে, বাকি অঙ্গগুলো হেফাযত করা সহজ হয়ে যাবে।
জবানের হেফাযতের
গুরুত্ব: বাকশক্তি আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত ও মহা দান। মনের ভাব, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, আবেগ-উল্লাস মানুষ জবান
দ্বারা প্রকাশ করে এক কথায় সে সব অঙ্গ-প্রতঙ্গের মুখপাত্র। তাই এর নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ
ব্যবহার কাম্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-(১) মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত আছে,
সে (লেখার জন্য) সদা প্রস্তুত। সূরা ক্ফ-১৮
(২) যেদিন তাদের
কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও পা সাক্ষ্য দিবে। সূরা নূর-২৪
(৩) হে মুমিনগণ!
তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য-সঠিক কথাবল। তাহলে তিনি তোমাদের আমলসমূহ সংশোধন করে দিবেন এবং পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন। সূরা আহযাব-৭০
জবান হেফাযতের
ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অনেক গুরুত্বরোপ করেছেন। যেমন তিনি বলেন-(৪) যে
আল্লাহ ও শেষ দিবসের বিশ্বাস রাখে সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। সহিহ বুখারি-৬০১৮
(২)
যে চুপ থাকে সে বেঁচে যায়, মুক্তি পায়। জামেউত তিরমিজি-২৫০১
(৩) বান্দা চিন্তা-ভাবনা ছাড়া এমন কথা বলে ফেলে, যার দরুণ সে পূর্ব-পশ্চিমের দূরবর্তী পরিমাণ জাহান্নামের
অতলে নিক্ষিপ্ত হবে। সহিহ বুখারি-৬৪৭৭
(৪) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দীর্ঘসময় চুপ থাকতেন এবং কম হাসতেন। মুসনাদে আহমদ-২০৮১০
এক
দার্শনিকের অভিব্যক্তি- আমি কখনো
আমার নীরবতার ওপর অনুতপ্ত হইনি।
তবে বহুবার কথার কারণে লজ্জিত হয়েছি। বান্দার বহুবিধ
কল্যাণ এতে রয়েছে। অপর দিকে এর অপব্যবহারে নানাবিধ দুনিয়া-আখেরাতে লোকসান
নিহিত।
প্রকৃত/উত্তম মুসলমানকে ? প্রকৃত বা
উত্তম মুসলমানের পরিচয় স্বয়ং রাসূলুল্লাহ তুলে ধরেছেন, যেমন তিনি
বলেন- সেই (প্রকৃত) মুসলমান; যার হাত ও জবান হতে মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে। আর (প্রকৃত)
মুহাজির (হিজরতকারী) সে ব্যক্তি
যে আল্লাহ তাআলা যা নিষেধ করেছেন তা পরিহার করে চলেন। বুখারি
আলোচ্য হাদিসে দুটি
প্রশ্ন উত্থাপিত হয় এক. হাত ও মুখ দিয়ে কষ্ট দেয়া নাজায়েয তাহলে অন্য অঙ্গ দ্বারা কি জায়েয। দুই. মুসলমানকে
কষ্ট দেয়া হারাম তাহলে অমুসলিমকে কষ্ট দেয়া জায়েয। জবাব এক. যেহেতু মানুষ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুখের ভাষা ও হাত দ্বারাই অপরকে কষ্ট দিয়ে থাকে, তাই এ দুটি অঙ্গকে সংযত রাখার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুই. সাধারণত মুসলমানগণ
মুসলমানদের সাথেই চলাফেরা, উঠাবসা করে তাই মুসলমানের কথা উল্লেখ
করেছেন। জবানের দ্বারা অনেক গোনাহ সংঘটিত হয়।
নেক লোক কারা : মহান
আল্লাহ বলেন- নেক মানবগণ বেহেশতে সুখ ও আনন্দে ডুবে থাকবে। এ লোক লোক
কারা এর পরিচয়, সংজ্ঞায়
বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত হাসান বসরি রহ. বলেন নেক লোক তারা যারা
পিঁপড়াকেও কষ্ট দেয় না এবং যারা কোন খারাপ
কাজে কোন নাফারমানীর কাজে আনন্দিত হয় না।
নিম্নে কয়েকটি জবানের গুনাহ উল্লেখ করা হল:
গীবত: গীবত কাকে
বলে? হাদিসের
পরিভাষায় বলা হয়- আবু হুহাইরা রা. থেকে
বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন তোমরা কি জান, গীবত কী জিনিস! তাঁরা বললেন, আল্লাহ
ও তার রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, (গীবত হল) তোমার ভাই-এর সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে
অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হল, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাই -এর মধ্যে থেকে থাকে তবে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন,
তুমি তার সম্পর্কে যা বলছ তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার
গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তা হলে তো তুমি তার প্রতি
অপবাদ আরোপ করলে।’ মুসলিম-২৫৮৯
গীবতের ভয়াবহতা: আল্লাহ
পাক বলেন- তোমাদের কেউ যেন কারও পিছনে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ
করবে? তোমরা তো সেটাকে ঘৃণাই করে থাক। আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ খুব বেশি তাওবা কবুলকারী, অতি দয়ালু........পর্যন্ত। সূরা হুজুরাত-১২
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন- গীবত ব্যভিচারের চেয়েও ভয়ংকর। ব্যভিচারি তওবা
করলে, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষামা
করেন; কিন্তু পরোক্ষ
নিন্দাকারীকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা না,
যতক্ষণ
না যার নিন্দা করা হয় সে না ক্ষমা করে। সুনানে বাইহাকি, দেখুন-
গীবত
ভয়াবহ-আল্লামা নাখলভি রহ.
গীবতের কাফফারা : গীবতের কাফফরা হল,
যার
গীবত করেছে,তার জন্য মাগফিরাত
প্রর্থনা করা এবং এভাবে বলা,হে আল্লাহ আমাকে ও
তাকে ক্ষমা কর। (এ পন্থা হলো যার গীবত করেছে সে যদি মারা যায়/সাক্ষাতের আসা নাই নতুবা তার কাছে সরাসরি মাফ চায়তে হবে।)
মাসয়ালা : শিশু, পাগল ও কাফের
যিম্মীর গীবতও হারাম। কেননা তাদেরকে পীড়া দেয়াও হারাম। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন
মাসয়লা : গীবত যেমন কথা দ্বারা হয়, তেমনি কর্ম ও ইশারা দ্বারা হয়। উদাহরণ: খোড়াকে হেয় করার উদ্দেশ্য তারমত হেঁটে দেখানো, মুখ ভেঙ্গিয়ে কথা বলা। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন
মাসয়ালা : কখনও কখনও গীবত করা জরুরি। যেমন- কারও ভ্রান্ত আকিদা দ্বারা যদি সাধারণ
মুসলমানের ঈমান-আমল নষ্ট করে। এ অবস্থায় ওলামায়ে
কেরামের দায়িত্ব হলো লোকদেরকে সাবধান করা। সূত্র:
তাফসিরে
বয়ানুল কুরআন, তাফসিরে রুহুল মাআনি
বিস্তারিত জানার
জন্য দেখুন- গীবত ভয়াবহ-আল্লামা নখলভি রহ.,তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন, সূরা হুজুরাতের ১২ আয়াতের তাফসির।
মিথ্যাবাদী কে ? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদীর হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে তাই বলে বেড়ায়। সহিহ মুসলিম, মিশকাত-১৪৮
যাছাই-বাচাই ছাড়া কোন কথা বিশ্বাস করা যাবে না এবং কোন সিদ্ধান্ত
নেওয়া যাবে না। যেমন মহান আল্লাহ বলেন- মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন
সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত
তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও। সূরা হুজুরাত-০৬
মিথ্যা কথা বা কসম
করা : রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন- যখন বান্দা মিথ্যা বলে,তখন ফেরেশতা মিথ্যার দুর্গন্ধে এক ক্রোশ দূরে চলে যায়। জামে তিরমিজি
চোগলখোরী করা : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি দুনিয়ায় দুমুখী হবে, কিয়ামতের দিন তার মুখে আগুনে জিহ্বা হবে। সুনানে দারেমি
মাসয়ালা: দুই মুসলমানকে
মিলানেনার জন্য মিথ্যা কথা বলা জায়েজ। যেমন হাদিস শরিফে
এসেছে- সেই ব্যক্তি মিথ্যুক না, যে লোকদের মধ্যে মীমাংসা করে, ভালোভালো কথা বলে এবং ভালো কথা আদান-প্রদান করে। বুখারি, মুসলিম
মিথ্যা কৌতুক করা : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- ধ্বংস তাদের জন্য, যারা কথা বলে আর জনতাকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে। তার ওপর ধ্বংস,তার ওপর ধ্বংস। মুসনাদে আহমদ, জামে তিরমিজি,
সুনানে
আবু দাউদ ও সুনানে দারেমি।
যাচাই ছাড়া কাউকে
কাফের বলা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি কাউকে
কাফের বলে ডাকে অথবা আল্লাহর দুশমন বলে,
অথচ
সে ব্যক্তি প্রকৃত পক্ষে এরুপ না হয়,
তবে
এ বাক্য তার দিকে ফিরে যাবে। বুখারি-মুসলিম
উপহাস করা: মহান আল্লাহ
উপহাস করতে নিষেধ করেছেন। যেমন- হে মুমিনগণ! কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন
নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী
অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। সূরা হুজুরাত-১১
গালিগালাজ/অশ্লীল কথাবার্তা বলা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-মুসলমানদের গালিগালাজ করা ফাসেকি (গোনাহ) আর খুনাখনি/হত্যা/লড়াই করা কুফরি। বুখারি, মুসলিম
অভিসাম্পাত করা: রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- যখন কোনো
ব্যক্তি বলে যে, মানুষ ধ্বংস হোক, তখন
সে নিজেই সবচেয়ে বেশি ধ্বংসপ্রাপ্ত। মুসলিম
অনেক সময় পিতা-মাতা সন্তানকে অভিসাপ দেয়, তা সাথে সাথে কবুল হয়। পরে বাবা-মা কান্নাকাটি করে সন্তানের
কষ্ট দেখে তখন কখন লাভ হয় না,তাই পিতা-মাতার উচিত নিজ
সন্তানকে কথায় কথায় অভিসাপ না দেয়া।
খোশামোদ, তোষামোদ ও অতিশয় প্রশংসাকরা খোশামোদ, তোষামোদ এবং কারো প্রশংসায় অতিশয় উক্তি করা নীচুতা ও লজ্জাহীনতার আলামত। মাত্রাতিরিক্ত
প্রশংসা করলে প্রশংসিত ব্যক্তি অহংকারী হয়ে যাবে, তার জীবনের গতি থেমে যাবে এবং
তার নিজের দোষ আর তখন তার নযরে পড়বে না। এ কারণে মুখের উপর
প্রশংসাকারী ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- তোমরা যদি কাউকে মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করতে দেখ
তাহলে তাদের মুখে মাটি ছুঁড়ে মারবে। মুসলিম
কোন পাপাচার
ব্যক্তির প্রশংসা করা আরও জঘন্য। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- কোন ফাসিক (পাপাচার) ব্যক্তির প্রশংসা করা হলে আল্লাহ তাআলা ক্রোধান্বিত হন এবং এতে তার আরশ
প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সুনানে বাইহাকি
প্রিয় বন্ধুগণ! সমাজের
অধিকাংশ ফেতনা-ফ্যাসাদ-ঝগড়া ইত্যাদির
কারণ এ মুখ/জবান। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল
করার তাওফিক দান করুন।
লজ্জাস্থান হিফাযত: হাদিসে
দ্বিতীয় অংশে লজ্জাস্থানের হিফাযতের কথা বলা হয়েছে। ব্যভিচার হারাম এটা সবাই
বুঝে। কিন্তু অশ্লীল ছবি,গান-বাদ্য,বেপর্দা,
ছেলেমেয়েদের আপোষে যোগাযোগ, মোবাইলে কথা বলা,
মহিলাদের নরম/মায়াবী কণ্ঠে পরপুরুষের সাথে কথা
বলা সবই হারাম, এটা সবাই বুঝে না। অথচ যে কথা, কাজের
কারণে যিনা-ব্যভিচারের দিকে করে, তা
সবই হারাম।
হাদিসনং-২৭,
ছবি তোলা বা আঁকা |
عَنْ أَبِي طَلْحَةَ ـ رضى
الله عنهم ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ (ﷺ)
" لاَ تَدْخُلُ الْمَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيرُ - رواه
البخارى
আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি (ﷺ) বলেছেন, ফিরিশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর
থাকে এবং ঐ ঘরেও না, যে ঘরে ছবি থাকে। বুখারি-৫৯৪৯ কিতাবুল লিবাস; মুসলিম-২১০৬; মিশকাত-৪২৯০
ছবি তোলার ভয়াবহতা: বিভিন্ন হাদিসে
ছবি তোলার ভয়াবহতা বর্ণিত হয়েছে। যেমন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-(১)
কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন আজাব ভোগ করবে, এমন
সব লোকেরা যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্যতা করে(ছবি তোলা)। বুখারি; মুসলিম;
,মিশকাত-৪২৯৬
(২) (কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে
তাদের, যারা ছবি বানায়। বুখারি, মুসলিম-২১০৯, মুসনাদে আহমদ-৩৫৫৮
(৩) যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোন প্রাণীর ছবি নির্মাণ করে, কিয়ামতের
দিন তাকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হবে ঐ ছবির মধ্যে রূহ দান করার জন্য। কিন্তু সে রূহ
দান করতে পারবে না। বুখারি-৫৪২৫, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন
(৪) আয়িশা রা. থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি (ﷺ) নিজের ঘরের এমন কিছুই না ভেঙ্গে ছাড়তেন না,
যাতে কোন (প্রানীর) ছবি
থাকত। বুখারি
-৫৪১৫
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
প্রিয় বন্ধুগণ! আমরা কেমন
উম্মত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মূর্তি, ছবি
ভেঙ্গেছেন আর আমরা জমা করছি।
(৫) মুসলিম, তিরমিজি ও আবু দাউদ শরিফে একটি হাদিস এসেছে যার সারমর্ম হলো-জিব্রাঈল আ. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে রাতে দেখা করার
ওয়াদা করেছিল, কিন্তু তিনি আসেননি। পরে এর কারণ জানা
গেল- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ঘরের মধ্যে কুকুর/ঘরের দরজায় একখানা পর্দা ঝুলানোছিল,তাতে অনেকগুলো ছবি ছিল। প্রিয় পাঠক! একটু গভীর চিন্তা করুন। সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা
ওয়াদা করেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ নবির সঙ্গে। এই ওয়াদা কি খেলাফ হবার
কথা ? কিন্তু ছবি/কুকুররের কারণে ওয়াদা ঠিক রাখতে পারিনি।আমরা যদি আমাদের
ঘরে ছবি, মূর্তি দ্বারা ভরপুর করে রাখি। তাহলে কি রহমতের ফেরেশতারা
ঘরে ঢুকবে?
কোন ছবি আকা জায়েজ: হজরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যদি
তোমাকে একান্তই ছবি তৈরি করতে হয়, তাহলে গাছ-গাছড়া এবং এমন জিনিসের ছবি তৈরি কর যার
মধ্যে প্রাণ নেই । বুখারি, মুসলিম, মিশকাত-৪২৯৯
প্রশ্ন।। চাকরি, ব্যবসা,
হজের জন্য পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য
ছবি উঠানো যাবে কি ?
উত্তর।। একান্ত প্রয়োজন
ছাড়া ছবি তোলা জায়েজ নয়। সুতরাং কেউ চাকরি, ব্যবসা, পরিচয় পত্রের
জন্য ছবি উঠানো বাধ্য হলে তার অবকাশ আছে। সূত্র: আল আশবাহ
ওয়ান-নাযায়ের-৮৫,কিফায়াতুল
মুফতি ৯/২৪৪-২৪৫
বিস্তারিত জানার
জন্য দেখুন- ফাতাওয়ায়ে মাদানিয়া ২য় খণ্ড; ২০৬-২১৫ পৃষ্ঠা, আল্লামা মাহমুদুল হাসান দা.বা. এর কিতাব, ইসলামের আলোকে
ফটোর বিধান মজলিসে এলম, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪, ডিজিটাল ছবি ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়া সম্পর্কে
ইসলামের বিধান- মুফতি ইহসানুল্লাহ শায়েক, মাকতাবাতুল আযহার, মোবা.০১৯২৪-০৭৬৩৬৫, ফতোয়ায়ে উসমানি-মুফতি
তকি উসমানি দা.বা.-বইঘর প্রকাশনী-০১৭১১-৭১১৪০৯
(২৭ নং হাদিস সমাপ্ত)
-----------------------------------------------------------------
একটি আমল
সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার
আবান ইবনে উসমান রা. বলেন,আমি আমার পিতার যবানে শুনছি যে,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদকরেছেন- যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল
তিনবার করে এই দুআ পাঠ করবে, কেহই এবং কিছুই তার কোন প্রকার ক্ষতি
করতে পারবে না। দুআ.
"بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَايَضُرُّمَعَ
اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَ افِي السَّمَاءِ وَهُوَالسَّمِيعُ الْعَلِيمُ"
অর্থ: মহান আল্লাহর নামে (শুরু করছি, যার নামের সাথে আকাশ ও যমীনে কোনো কিছু ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। সুনানে আবু
দাউদ-৫০৮৮; মিশকাতুল মাছাবিহ-২০৯ পৃ.
হাদিস নং-২৮, ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা |
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى
الله عليه وسلم-
:« مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ
لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا ، وَمِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ
حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ».
অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি
সর্বদা ক্ষমা চায় (ক্ষমা চাওয়া নিজের প্রতি আবশ্যক করে)
আল্লাহ তাআলা তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হতে একটি পথ বের করে দেন এবং
প্রত্যেক চিন্তা হতে তাকে মুক্তি দেন. আর তাকে রিযিক দান করেন
যেখানে হত সে কখন ও ভাবেনি। মুসনাদে আহমদ-২২৩৪; সুনানে আবু দাউদ-১৫১৮, কিতাবুস সালাত; ইবনে মাজাহ-৩৮১৯
তওবা-এস্তেগফারের
গুরুত্ব ও ফযিলত: গোনাহর পর বান্দার তওবার পর সুযোগ করুনাময়
আল্লাহর পক্ষ থেকে মস্তবড় নেয়ামত, নচেৎ বান্দার শাস্তি ভোগ
করা ছাড়া গন্তব্য ছিল না। তিনি নিজ বান্দাদেরকে তওবা নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন-
(১) হে মুমিনগণ তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর কাছে তওবা কর। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হতে পারবে। সূরা নূর-৩১
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন-
(২) হে মানবজাতি তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর এবং আমি প্রতি দিনে
একশতবার তওবা করে থাকি। (মুসলিম)
আর যখনই সব
শর্তানুযায়ী তওবাকরা হয় তখন তওবা কবুল করা হয় এবং আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা
বড় ধরনের অপরাধও ক্ষমা করে দিবেন।
তওবার সময়: জান কবজের
পূর্বে এবং সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হওয়ার পূর্বে (কিয়ামতের
দিন প্রকাশ পাবার পূর্বে) তওবা কবুল হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ
তাআলা বলেন- আর তাদের তওবা কোন কাজে আসবে না যারা খারাপ আমাল
করে যতক্ষণ না তাদের নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়। আর মৃত্যু কালিন সময়ে
বলে যে, আমি এখন তওবা করলাম। সূরা আন নিসা-১৮
রাসূল (ﷺ) বলেছেন-যে ব্যক্তি সূর্য পশ্চিম দিক উদয় হবার পূর্ব সময় পর্যন্ত তওবা করবে তার তওবা
আল্লাহ কবুল করবেন। মুসলিম
প্রিয় মুসলিমগণ! আজকাল হঠাৎ
মৃত্যু বেড়ে গিয়েছে যেমন-হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, এক্সিডেন্ট ইত্যাদি সুতরাং এক সেকেণ্ড দেরি
না এখন খাঁটি তওবা করা উচিত। শয়তান মানুষকে ধোঁকা, প্রবঞ্চনা দেয় যে, আরে
অরেক সময় আছে পরেত ও বা করে নিলে ইহবে।
পাপীদের বিরুদ্ধে চারটি
সাক্ষী: মানুষ যখন গোনাহ করে তার বিরুদ্ধে চারটি সাক্ষী প্রস্তুত হয়ে যায়।
প্রথম সাক্ষী যমীন: যমীন
সাক্ষী সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- সেদিন যমীন তার খবরসমূহ
বর্ণনা করবে। সূরা যিলযাল-০৪
দ্বিতীয় সাক্ষী
দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ: পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-আজ আমি তাদের মুখের উপর মোহর লাগিয়ে দিবো আর তাদের হাত আমার সাথে বলবে এবং
তাদের পা সাক্ষ্য দান করবে ঐ সকল বিষয়াদি সম্পর্কে যা তারা (দুনিয়ার
জীবনে) করেছে। সূরা ইয়াসিন-৬৫
তৃতীয় সাক্ষী
ফেরেশতাগণ: পবিত্র কুরআনে এসেছে-কেরামান-কাতেবিন ( আমল লেখক সম্মানিত ফেরেশতাগণ) তোমরা যা-কিছু কর, তারা তা
জানে (লিপিবদ্ধ করে)। সূরা আল-ইনফিতার,১১-১২
চতুর্থ সাক্ষী আমলনামা: কালামে
পাকে এসেছে- পাঠ কর তুমি তোমার কিতাব আমলনামা। আজ তোমার হিসেব গ্রহণের
জন্যে তুমিই যথেষ্ট। সূরা বণী-ইসরাঈল-১৪
সাক্ষী চারটি নিশ্চিহ্ন(মিটানো )
করার তরিকা: বান্দা যখন গোনাহ হতে তওবা করে, আল্লাহ পাক আমল
লেখক ফেরেশতাদেরকে তার গোনাহসমূহ ভুলিয়ে দেন এবং সে সকল অঙ্গের দ্বারা ও যে-যে যমীনের উপর গোনাহ করেছে, ঐ সকল অঙ্গ ও যমীনকেও গোনাহসমূহের কথা এমনভাবে ভুলিয়ে দেন এবং পাপের চিহ্নসমূহ এমনভাবে মুছে
দেন যে, কিয়ামতের
দিন যখন আল্লাহ পাকের সাথে সাক্ষাত করবে তখন তার কোনও গুনাহের ব্যাপারে সাক্ষী
দানের মত একটি সাক্ষীও বাকি থাকবে না। জামেউছ-ছগীর ১ম
খণ্ড;২১ পৃষ্ঠা
একটি ঘটনা:
একদিন বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত হাসান বসরি রহ.
তার সাথীদের সঙ্গে বসা
ছিলেন, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বলল; হজুর! আমি গোনাহগার! কি করব?
তিনি বললেন, এস্তেগফার কর (ক্ষমা চাও) । একটুপর আরেক ব্যক্তি এস বলল, অনাবৃষ্টি চলছে, কি করব ? তিনি বললেন, এস্তেগফার
কর (ক্ষমা চাও)। একটুপর আরেক ব্যক্তি এসে
বলল; আমি গরীব-অসহায়, কি করব ?
(জবাবে) তিনি বললেন, এস্তেগফার
কর।আবার আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আমার সন্তান নাই (হয়
না)। তিনি বললেন, এস্তেগফার কর।
উপস্থিত সাথী-বর্গ
জিজ্ঞেস করলেন, আপনি যে
সবাইকে একই আমলের (এস্তেগফার কর) কথা বললেন ব্যাপার কি? হাসান বসরি রহ. বললেন, এই আয়াতে কারিমার আলোকে বলেছি তোমরা তোমাদের
পালনকরর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত
ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টি ধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বড়িয়ে দিবেন,তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন
করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন। সূরা নূহ,১০-১২
গোনাহ ত্যাগের
শক্তি লাভের উপায়: গোনাহ ত্যাগের হিম্মত লাভের জন্য হাকীমুল উম্মত হজরত থানভি রহ.
কামালাতে আশরাফিয়া কিতাবের মধ্যে তিনটি কাজকরতে বলেছেন। আমরা যারা গোনাহ ত্যাগ করতে চাই, আমাদের
উচিত তিনটি কাজ সম্পন্ন করা ।
১. নিজে
হিম্মত করা (দৃঢ় সংকল্প ও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা)।
২. হিম্মত
দানের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট দুআ করা ।
৩. আল্লাহর
খাছ বান্দাদের নিকট হিম্মতের জন্য দুআর দরখাস্ত করা ।
পরীক্ষিত যে, এই তিনটি
কাজ করতে পারলে। ইনশাল্লাহ গুনাহের অভ্যাস
অবশ্যই ছুটে যাবে।
সূত্র: আল্লাহর
মহব্বত লাভের পরীক্ষিত তিনটি কিতাব-হাকীম মুহাম্মাদ আখতার রহ. হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী
তওবা কবুল হবার
শর্তাবলী: তওবা কবুল হবার শর্ত চারটি (কেউ কেউ
আবার তিনটি/পাঁচটি বলেছেন )। যথা:
১. সর্ব প্রথম
ঐ গোনাহ হতে পৃথক হওয়া
২. অনুতাপ-অনুশোচনা পয়দা হওয়া(লজ্জিত হওয়া) ও ক্ষমা চাওয়া।
৩. ভবিষ্যতে
না করার দৃঢ় হিম্মত বা নিয়ত করা। (আয় আল্লাহ!
আর কখনও এই গোনাহ করবো না )
৪. বান্দার
হক আদায় করা অর্থাৎ কাউকে কষ্ট দিলে মাফ
চেয়ে নেয়া আর পাওনা থাকলে তা পরিশোধ করা অথবা অক্ষম হলে মাফ চেয়ে
নেয়া।
দেখুন-আল্লামা নববির
রহ. এর শরহে মুসলিম ২য় খণ্ড; ৩৪৬
পৃষ্ঠা ।
আল্লাহ তাআলার
রহমত ও দয়ার ব্যাপকতা: কুরআনুল কারিমে
ইরশাদ হচ্ছে- হে রাসূল আপনি বলে দিন যে, হে আমার বান্দাহরা যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছ তোমরা কখনোই আল্লাহর
রহমত হতে হতাশ হয়ে যেওনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সব গুণাহকে ক্ষমাকরে দিবেন। কেননা তিনি
অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সূরা যুমার-৫৩
বিস্তারিত দেখুন-জান্নাতের দুটি
রাস্তা তাকওয়া ও তওবা-শায়খ আব্দুল মতীন বিন হুসাইন
হাফিজাহুল্লাহু হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী, হতাশ হবেন না-ড.আয়েয আল কারনি মাকতাবুল হেরা
হাদিসনং-২৯,
দুআর গুরুত্ব ও ফযিলত |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ لَا يَزَالُ يُسْتَجَابُ
لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ
قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الِاسْتِعْجَالُ قَالَ يَقُولُ قَدْ دَعَوْتُ
وَقَدْ دَعَوْتُ فَلَمْ أَرَ يَسْتَجِيبُ لِي فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ
وَيَدَعُ الدُّعَاءَ.
হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন-বান্দার দুআ
কবুল হয় যতক্ষণ না সে গুনাহের কাজের অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নের দুআ করে এবং
যতক্ষণ না সে তাড়াতাড়ি করে । জিজ্ঞেস করা হলো,হে আল্লাহ রাসূল! তাড়াতাড়ি
কি? তিনি বললেন,এরুপ বলা-আমি দুআ করেছি, আমি দুআ করেছি; কই দুআ তো কবুল হতে দেখলাম না ! অতঃপর সে
অবসাদগ্রস্থ ও নিরাশ হয়ে পড়ে এবং দোআ ছেড়ে দেয়। মুসলিম-২৭৩৫;
আদু দাউদ-১৪৮৪; মুয়াত্তা
মালেক-৫৬৯; মিশকাত-১৯৪
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: দুআর গুরুত্ব
ও মহত্ব সম্পর্কে কুরআন-হাদিসে অনেক বর্ণনা এসেছে- যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-
(১)
আর আমার বান্দারা
যখনআপনার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুত
আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের
প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। সূরা বাকারা-১৮৬
(২) তোমার পালনবকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দিব। সূরা মুমিন-৬০
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-
(৩) দুআ-ই হল ইবাদতের মূল বা মগজ। তিরমিজি-৩৬৯৯
(৪))
দুআ-ই হল ইবাদত।তিরমিজি-৩৬৯৭
(৫) আল্লাহর তায়লার নিকট দুআর চেয়ে উত্তম কোন আমল নেই। তিরমিজি-৩৬৯৬
(৬) যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কাছে কিছু চায় না, তার উপর
আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন। তিরমিজি-৭০০০
দুআ কবুল হয় তিন অবস্থা: হজরত আবু
সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত। নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন- কোন (মুসলমান) ব্যক্তি যখন এমন
কোন দুআ করে যার মধ্যে কোন গোনাহের কথা থাকে না অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার
কথা থাকে না, তাহলে তাকে তিনটি জিনিসের যে কোন একটি অবশ্যই প্রদান
করেন (১) হয়ত তাকে প্রার্থিত জিনিসই দিয়ে
দেয়া হয় (২) অথবা দুআকে তার জন্য আখেরাতের
সম্বল হিসেবে সঞ্চিত রাখা হয় (৩) অথবা দুআর
কারণে তার উপর থেকে সম্ভাব্য বিপদাপদ দূর করে দেয়া হয়। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, যখন এমনই হয়
তাহলে আমরা বেশি করে দুআ করব। রাসূল (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তাআলার কাছে তা চেয়ে ও বেশি রয়েছে। মুসনাদে আহমদ-১০৭০৯
দুআ/মোনাজাতের
আদবসমূহ:
Ø
কেবলা মুখী হয়ে বসা ।
Ø
আদব, তাওয়ায়ু ও
বিনয়ের সাথে বসা।
Ø
অজু সহকারে বসা।
Ø
দুআর শুরু এবং শেষে
আল্লাহর হামদ-ছানা বয়ান
করা এবং দরুদ সালাম পড়া। উদাহরণ-শুরুতে এভাবে বলা: আল-হামদুলিল্লাহি রব্বিলআলামীন ওয়াসসলাতু ওয়াসসালামু আলা রসূলিহিল কারিম।আর শেষে: সুবহানা
রব্বিকা রব্বি ইজ্জাতি আম্মা ইয়াছিফুন ওয়া সালামুন আলাই মুরসালিন ওয়াল হামদুলিল্লাহি
রব্বিল আলামীন।
Ø
নাছোড় মনোভাব নিয়ে দুআ করা।
Ø
দুআ কবুল হওয়ার দৃঢ় আশা
করা।
Ø
সীনা বা কাঁধ বরাবর হাত
ওঠানো।
Ø
উভয় হাতের তালু আসমানের
দিকে রাখা।
Ø
উভয় হাতের মাঝে সামান্য
পরিমাণ ফাঁক রাখা।
Ø
দুনিয়া ও আখেরাত উভয়
জগতের কল্যাণ চাওয়া।
Ø
দুআ শেষে কালেমা তথা লা
ইলাহা ইল্লাহু বলে শেষ করা সুন্নাত বা মুস্তাহাব প্রমাণিত নয়। তাই পরিত্যাগ করা উচিত।
দুআ কবুল হওয়ার
বিশেষ সময়:
১. ফরজ নামাযের
পর ও শেষ রাতে।
২. রমযানের
২৪ ঘণ্টা, বিশেষ করে ইফতারের সময়। শবে ক্দর, শবে বরাত,
দুই ঈদের রাত, জুমাআর রাত।
৩. সফর অবস্থায়।
৪.অসুস্থ
ব্যক্তির (রোগীর।
৫. জুমাআর
দুই খুতবার মাঝে (মনে মনে দুআ করা), জুমাআর
দিনে মাগরিবের নামাযের আগে।
বিস্তারিত দেখুন- লেখকের
ইসলামে দুআর বিধান ও ফযিলত, আহকামে জিন্দাগী, ১৫০-১৫৯ পৃষ্ঠা
হাদিসনং-৩০,
মুসলমানের মর্যাদা |
عَنْ
أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: “ لَا
تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ: اللَّهُ اللَّهُ .
অর্থ:হজরত আনাস রা.হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন- পৃথিবীতে যতদিন “আল্লাহ আল্লাহ” বলা হবে ততদিন কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে না। মুসলিম-১৪৮,
কিতাবুল ফিতান; সুনানে নাসায়ি-২২০৭; মুসনাদে আহমদ-১২০৪৩ অন্য
বর্ণনায় রয়েছে- আল্লাহ আল্লাহ বলার মত একটি মানুষ বাকি থাকতে
কিয়ামত হবে না। তাখরিজ : মুসলিম-১৪৮; মুসনাদে আহমদ-১২৬৬০
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: মুমিনের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-নিশ্চয় একজন মুমিন গোলাম এককজন
আযাদ মুশরিক পুরুষ হতে অনেক উত্তম; যদিও মুশরিক পুরুষ
তোমাদের নিকট কতই না ভাল মনে হয়। সূরা বাকারা-২২১
হাদিসে শরিফে
এসেছে-(১) দরিদ্র মুসলমানরা ধনী মুসলমানদের চল্লিশ বছর
পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। জামেউত তিরমিজি-২৩৫৫
(২) তোমাদের
দুর্বল ও অসহায়দের বরকতে তোমাদেরকে সাহায্য করা হয় এবং তোমাদেরকে রিযিক দান করা হয়। বুখারি-২৮৯৬
(৩) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উম্মুছ ছায়েবকে লক্ষ্য
করে বলেছেন- দেখ, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ, জ্বর আদম-সন্তানের গোনাহসমূহ মুছে ফেলে, যেভাবে কর্মকারের
যাঁতা লোহাকে জংমুক্ত ও পরিষ্কার করে দেয়। সহিহ আল মুসলিম
বিস্তারিত জানার
জন্য –‘শওকে ওয়াতান’ (আখেরাতের প্রেরণা)-হজরত
থানভি রহ. এবং লেখকের
‘মহান আল্লাহর নিকট একজন
মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা’; ‘মুমিনের প্রতি আল্লাহর তাআলার দয়া-রহমত’ কিতাব দেখুন
হাদিসনং-৩১,
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ (মন্দ)
কাজের নিষেধ |
قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ : سَمِعْتُ
رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ، يَقُولُ : مَنْ
رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يُغَيِّرَهُ بِيَدِهِ
فَلْيَفْعَلْ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ
فَبِقَلْبِهِ ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ
অর্থ: হজরত আবু সাঈদ
খুদরি রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ
যখন কোন মন্দ কাজ হতে দেখে, তখন সে যেন তা (শক্তি থাকলে) হাত দ্বারা প্রতিরোধ করে, যদি হাত দ্বারা প্রতিরোধ করার শক্তি না থাকে, তবে যেন
মুখ (কথা) দ্বারা প্রতিবাদ করে। যদি মুখ দ্বারা সম্ভব
না হয়; তাহলে সে যেন অন্তর দ্বারা ঘৃণা করে, পরিবর্তনের চিন্তা-ফিকির করে। আর এটা হচ্ছে ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর। মুসলিম-৪৯,
ঈমান অধ্যায়; আবু দাউদ-১১৪০;
তিরমিজি-২১৭২; নাসায়ি-৫০০৮; মুসনাদে আহমদ-১১০৭৩
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: সৎ কাজের
আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের গুরুত্ব: আল্লাহ তাআলার বাণী-
(১) তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানব জাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ
দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। সূরা ইমরান-১১০
(২) মুমিন নারী ও মুমিন পুরুষগণ পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তারা লোকদেরকে
সৎকাজের আদেশ দেয় আর মন্দ কাজে নিষেধ করে।সূরা তওবা-৭১
(৩) হে বৎস! নামাজ কায়েম কর, সৎ কাজের
আদেশ দাও মন্দ কাজে নিষেধ কর, আর বিপদাপদে ধৈর্য ধর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার
কাজ।
সূরা
লোকমান-১৭
সৎ কাজের আদেশ দেয়ার
ফযিলত: পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- (১) তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা কল্যাণের দিকে ডাকবে। অর্থাৎ সৎকাজের আদেশ
করবে এবং মন্দকাজের বারণ করবে, তারাই প্রকৃত সফলকাম জামাত (দল)। সূরা আলে ইমরান-১০৪
নবিয়ে কারিম (ﷺ) বলেছেন- (২) যে
ব্যক্তি কাউকে সৎকর্মের পথ দেখায়, তার সওয়াব আমলকারীর অনুরূপ। মুসলিম
(৩) তোমার ভাইয়ের জন্য তোমার মুসকি হাসি তোমার জন্য সদকা, সৎকাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের বারণ তোমার জন্য সদকা। পথহারা ব্যক্তিকে
সঠিক পথ দেখানো, তোমার জন্য সদকা। রাস্তা থেকে কাঁটা-হাড়-পাথর ইত্যাদি দূর করে দেয়া সদকা, তোমার বালতি হতে
তোমার ভাইয়ের বালতিতে পানি ঢেলে দেয়াও সদকা। জামে তিরমিজি-২০৮৩
মন্দ কাজের নিষেধ
না করার শাস্তি: আল্লাহ তাআলার বাণী-(১) বনি ইসরাঈলের মধ্যে যারা কাফির, তাদেরকে দাউদ আ. ও মারইয়াম পুত্র
ঈসার আ.মুখে অভিশাপ দেয় হয়েছে। এটা এর কারণে যে, তারা
অবাধ্যতা এবং সীমা লংঘন করত। তারা পরস্পরকে মন্দ কাজের নিষেধ করত না। সূরা মায়েদা-৭৮
রাসূলের (ﷺ) বাণী-
(২) যে লোক এমন কোন এক সম্প্রদায়ে বসবাস করে যে সম্প্রদায়ে পাপকাজ সংঘটিত হয় আর
লোকটি সে সব কর্মরোধ করতে শক্তি থাকা সত্ত্বেও তা রোধ না করে, তাহলে তারা মৃত্যুর পূর্বেই অবশ্যই আল্লাহর শাস্তি তাদেরকে পাকড়াও করবে। সুনানে আবু দাউদ-৪৩৪১
(৩) সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই সৎকাজের
আদেশ এবং মন্দকাজের প্রতিরোধ করবে। নচেৎ অচিরেই আল্লাহর নিকট থেকে তোমাদের উপর আজাব
নাযিল হবে। আর তোমরা আল্লাহর নিকট দুআ করবে, কিন্তু তোমাদের দুআ কবুল হবে না। তিরমিজি-২১৬৯;
মুসনাদে আহমদ-২৩৩০১
আমাদের অবস্থা: হে ইসলাম ও
মুসলমানের দরদী বন্ধু গণ! এটাই কি আমাদের (মুসলমানদের) ধ্বংসের কারণ নয় কি? প্রত্যেক ব্যক্তি অন্যের কথা বা সমকক্ষ ব্যক্তির কথা বাদ দিয়ে আপন পরিবার-পরিজন, স্ত্রী,
ছেলে-মেয়ে.অধীনস্থ লোকদের
প্রতি একটু লক্ষ্য করি। দেখুন, তারা প্রকাশ্যে পাপে লিপ্ত, বেনামাজ, মোবাইল বাজি, জুয়া-তাস, মাদকাসক্তি, গান-বাদ্য ইত্যাদি বড় অভ্যাস্ত। কিন্তু আফসোস! তাদেরকে ফিরানোর জন্য আমরা কি-বা চেষ্টা করছি। লোকেরা বলে, হুজুর আমরা চেষ্টা করছি, বারণ করেছি; কিন্তু মানেনা। আমি তাদেরকে প্রশ্ন
করি, আপনার অবুঝ শিশু সন্তান যদি আগুনে ঝাঁপ দেয়ার উপক্রম হয়। আপনি তাকে মানা করলেন, কিন্তু সে
শুনলোনা, বরং সে আগুনের দিকে এগোচ্ছে, তাহলে
আপনি কি করবেন? শুধু বারণ করেই কি ক্ষান্ত, নিবৃত্ত হবেন, মানা করাই কি যথেষ্ট? না, জোর করে তাকে আগুন থেকে বাঁচাতে হবে। সন্তান যদি আগুনে পতিত
হয়, দুনিয়ার আদালতে আপনি দোষী সাব্যস্ত হবেন না? তাই যদি
হয়, দ্বীনের বেলায় কেন? শুধু মানা করা যথেষ্ট
হবে এবং আল্লাহ আদালতকে দোষী হবেন না। মহান আল্লাহ নির্দেশ করেন- হে মুমিনগণ!
তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই
অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ পাথর। সূরা আত-তাহরিম-০৬
আমর বিল মারুফ ও নাহি
আনিল মুনকারের অপব্যাখ্যা: আহকামে শরিয়ত সম্পর্কে বেখবর কিছুলোক আমর বিল
মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার এ বিধানটা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ (কিতাল)
নামে জোর প্রচার চালাচ্ছে। আবার দ্বীনি দাওয়াত এর কাজ
আসল জিহাদ, আত্মশুদ্ধির কোন দরকারনেই বলে প্রচার চালাচ্ছে।
আমর বিল মারুফ-নাহি আনিল মুনকার, জিহাদ, দাওয়াত,
তাযকিয়া, তালিম ইত্যাদি প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা
বিষয়। যার কর্ম পন্থা আহকামে শরিয়ত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। যারা এ সব এক বলে, বা অপব্যাখ্যা
করে, তাদের কথা ঠিক নয়। তাদের তওবা করা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের
সবাইকে সিরাতিম মুস্তাকিমের পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন !
বিস্তারিত জানার জন্য
দেখুন-হায়াতুল মুসলিমীন, ইসলাহুর রুসুম, আশরাফ চরিত, হজরত থানভি রহ. এর
রাজনীতিক চিন্তা ধারা-মুফতি তকি উসমানি দা.বা.নায়লুল হাজাহ শরহে সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৬২-২৬৫পৃ.শিবলি প্র.
( ৩১ নং হাদিস সমাপ্ত)
-------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
সাইয়্যেদুল ইসতিগফার : সকাল ও সন্ধ্যায় একবার
যে ব্যক্তি এ দুআটি একান্ত বিশ্বাসের সাথে সকালে পাঠ করবে অত:পর
ঐ দিন সন্ধ্যার পূর্বে মৃত্য বরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অনুরূপ সকালেও।
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي ، لا إِلَه إِلاَّ
أَنْتَ خَلَقْتَني وأَنَا عَبْدُكَ ، على عهْدِكَ و وعْدِكَ ما اسْتَطَعْتُ ،
أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ ما صنَعْتُ ، أَبوءُ لَكَ بِنِعْمتِكَ علَيَ ، وأَبُوءُ
بذَنْبي فَاغْفِرْ لي ، فَإِنَّهُ لا يغْفِرُ الذُّنُوبِ إِلاَّ أَنْتَ "
হে আল্লাহ তুমি আমার রব, তুমি ছাড়া আর কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তুমি আমায় সৃষ্টি করছে,আর আমি তোমার বান্দা।
আমি আমার সাধ্য-মত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছি।
আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার আশ্রয় চাই।
আমার প্রতি তোমার নিয়ামতের স্বীকৃতি প্রদান করছি, আর আমি আমার গোনাহ-খাতা স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও, নিশ্চয়ই তুমি ভিন্ন আর কেউ গোনাহ
মার্জনাকারী নেই। বুখারি-৬৩০৬,৬৩২৩; তিরমিজি-৩৩৯৩; মুসনাদে আহমদ-১৬৬৬২
হাদিস নং-৩২, আল্লাহ-ওয়ালাদের ছুহবতের প্রয়োজনীয়তা |
عَنْ أَبِي كَبْشَةَ ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا
مُوسَى ، يَقُولُ :
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :
" مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ مَثَلُ
الْعَطَّارِ ، إِنْ لَا يُحْذِكَ يَعْبَقْ بِكَ مِنْ رِيحِهِ ، وَمَثَلُ
الْجَلِيسِ السُّوءِ مَثَلُ الْقَيْنِ إِنْ لَا يُحْرِقْ ثِيَابَكَ يَعْبَقْ بِكَ
مِنْ رِيحِهِ
অর্থ: হজরত আবু মুসা রা. থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- সৎ লোকের সাহচর্য ও অসৎ লোকের সাহচর্য যথাক্রমে আতর বিক্রেতা
ও কর্মকারের হাপরে ফুঁক দেয়ার মতো। আতর বিক্রেতা হয়তো তোমাকে এমনিতেই কিছু দান
করবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে কিছু আতর কিনবে। আর অন্ততপক্ষে কিছু না
হলেও তার সুঘ্রাণ তোমার অন্তর ও মস্তিষ্ককে সঞ্জীবিত করবে। পক্ষান্তরে হাপরে ফুঁক দানকারী তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দিবে। আর কিছু না হলেও
তার দুর্গন্ধ তুমি পাবে। বুখারি-২১০১,কিতাবুল বুয়ু;
মুসলিম-১০২৩; মুসনাদে
আহমদ-১৯৬২৪; তিরমিজি-১৯২৮; মিশকাত-৪৭৯১
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: ঈমান দৃঢ়-মজবুত করার জন্য এবং অন্তর স্বচ্ছ, নির্মল ও পরিষ্কার
করার জন্য নেককার ছুহবত একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় ঈমান নষ্ট করার
জন্য, কুটিলতা, জটিলতা, অনুদারতা,
স্বার্থপরতা ও পাপে অন্তর পরিপূর্ণ করার জন্য কুসংসর্গের মত
মারাত্মক বিষ আর কিছুই নেই।
ছদিকীন তথা আল্লাহ
ওয়ালাদের সঙ্গীর হওয়ার নির্দেশ: আল্লাহ পাক ফরমান- হে
ঈমান ওয়ালারা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর আর তাকওয়া হাসিলের জন্য
সাদেকীনদের সাথে থাক। সূরা আত-তওবা-১১৯এ আয়াতের তাফসির
করতে গিয়ে তাফসিরে রুহুল মাআনির লেখক আল্লামা সাইয়্যিদ আলূসি আল-বাগদাদি রহ. লিখেন- অর্থাৎ
তুমি তাদের (আল্লাহ ওয়ালাদের) সাথে
এমনভাবে জুড়ে থাক এবং এতদিন পর্যন্ত তাদের ছুহবত অবলম্বন কর, যতদিন তুমি তাদের মত হয়ে যাও। সূত্র: তাফসিরে
রুহুল মাআনি-১০ খণ্ড;৪২৮ পৃষ্ঠা
সকাল-বিকাল
আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে অবস্থানের নির্দেশ: কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে-
হে নবি! যারা সকাল-বিকাল
শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তাঁকে স্মরণ করে, আপনি
এমন লোকের সঙ্গে অবস্থান করুন। সূরা কাহাফ-২৮
এ আয়াত নাযিল হবার পর হুজুর (ﷺ) এই জন্য শুকরিয়া আদায় করতেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে এমন লোক
পয়দা করেছেন, যাদের মজলিসে জমিয়ে বসার জন্য স্বয়ং আমাকে আদেশ
করা হয়েছে এবং আল্লাহর যিকির থেকে গাফেল, খাহেশাতের তাবেদারিও
সীমা অতিক্রম করে তাদের অনুসরণ হতে বিরত রাখা হয়েছে।
প্রতিনিয়িত
ছালিহীনদের পথই কামনা: আমরা যে সূরা ফাতিহা নামাজে তিলাওয়াত করি। একটি আয়াত
হলো হে আল্লাহ! তাদের পথে
যারা আপনার নিয়ামত প্রাপ্ত। এ আয়াতের ব্যাখ্যা হলো-অর্থ: যাদের
প্রতি আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করেছেন,
নবি, সিদ্দীক, শহীদ এবং
সৎকর্মশীল (ছলিহীন)। সূরা আন নিসা-৬৯
সমস্ত বরকত মহান
আকাবির-আসলাফের পথেই: হজরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন- অর্থ:
তোমাদের পূর্বসরী ও আকাবিরদের সাথেই (সংস্পর্শে)
বররকত ও পূন্য (অর্জন সম্ভব)। (মুস্তাদরেক
হাকেম) সালফে-সালিহীনের মাঝে এমন একটি
বিশাল দল অতিবাহিত হয়েছেন, যারা আল্লাহ ওয়ালা বুযুর্গ
ব্যক্তির কাছে কেবলমাত্র এ উদ্দেশ্য গমন করেছেন, রাসূলে
আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হাদিসের) মূল ও মুখ্য উদ্দেশ্য এবং পন্থা-পদ্ধতি কিরুপ ছিল,
তা স্বচক্ষে সেই বুযুর্গের দেখে-বুঝে আসতে
পারেন। সুতরাং তাঁদের ছুহবতের পাশাপাশি মহান আকাবির-আসলাফের জীবনী পাঠ করতে হবে। সাঈদুল খাতির, সূত্র:
তারীকে দাওয়াত ও আযীমত, ১ম খণ্ড; ২২৭-২২৮ পৃষ্ঠা ।
এক শ্রেণীর মানুষ আছে, তারা
ছুহবতকে অস্বীকার করে, তারা বলে, সরাসরি কুরআন-হাদিস মানবো। আরে ভাই মহান
আল্লাহই সরাসরি মানুষের প্রতি কিতাব নাযিল করেননি। বরং নবির প্রতি নাযিল
করেছেন। উম্মতকে নবি হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। নবির ছুহবতে সাহাবি, সাহাবির
ছুহবতে তাবেয়ি, তাঁদের ছুহবতে
তাবে-তাবেয়ি পয়দা হয়েছে। এভাবে যুগে যুগে
কামেলীনদের হাতে আরেক কামেল পয়দা হয়েছে। মেডিক্যাল স্যায়েন্সের কিতাব পড়েই কি শুধু
ডাক্তার হওয়া যায়। না, ইন্টারনি, অভিজ্ঞ ডাক্তারের
সান্নিধ্য দরকার হয়। এ মহা সত্যকে
কিভাবে অস্বীকার করা যায়؟ ?
আল্লাহ-ওয়ালাদের
ছুহবত-মহব্বত ঈমানের সাথে মৃত্যুর আমল: যাকিরীন
তথা ছালিহীন ও আল্লাহর ওলিদের মর্তবা
সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে-এক ব্যক্তি তার নিজের উদ্দেশ্যে
যাওয়ার পথে কিছুক্ষণের জন্য ছালিহীন বা
আল্লাহ ওয়ালাদের সঙ্গে যিকিরের মজলিসে বসল। অতঃপর আল্লাহ পাক যখন
ফিরিশতাগণ তখন বলতে লাগলো, আয় আল্লাহ,অমুক
ব্যক্তি তো নিছক নিজের কাজেই এসেছিল এবং সে সুবাদেই কিছুক্ষণ ওখানে বসেছিল। জবাবে আল্লাহ পাক ইরশাদ
করেন- অর্থ: এরা আমার এমনই মাকবুল ও মাহবুব বা্ন্দা যে, তাদের
মজালসে অংশগ্রহণকারীও (আমার রহমত হতে) বঞ্চিত হয় না। আমি আমার ঐ পাপী
বান্দাটিকে ক্ষমা করে দিলাম। বুখারি-মুসলিম, মিশকাত-২১৬০ বাবে যিকরুল্লাহ আয্যা-জাল্লা তারা হতভাগা হয়
না মানে জাহান্নামী হয় না। আর জান্নাতে যেতে হলে ঈমান লাগবে। সুতরাং প্রমাণিত হলো ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু নসীব হবে।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন- অর্থ: এটা
নিঃসন্দেহ যে, আল্লাহ পাক তার ওলিদেরকে যত নিয়ামত ও অনুগ্রহ
দান করেন, তাঁদের সম্মানার্থে তাঁদের মজলিসে ওঠা-বসাকারী বান্দাদেরকেও তিনি ঐ সকল নিয়ামত দান করে দেন।যেভাবে মহামান্য
মেহমানের খাতিরে তার নগণ্য খাদেমওে ঐ সকল সম্মানজনক খাদ্য-সামগ্রী
দ্বারা আপ্যায়ন করা হয়,যা মূলত ঐ মেহমানের জন্যই তৈরি করা হয়ে থাকে। ফাতহুল বারি-১১খণ্ড;
২১৩ পৃষ্ঠা ।
আল্লাহ ওয়ালাদের
সঙ্গে মহব্বতের সম্পর্কের ফায়দা: আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের
দিন বলবেন, যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছে আমারই জন্য তারা আজ কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করবো। আজ এমন দিন আমার ছায়া
ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই। সহিহ মুসলিম- ১৯৮৮
এ কথা সত্য যে, নেক লোকের
সঙ্গেই একমাত্র প্রকৃত ভালবাসা পয়দা হয়। আল্লাহ ওয়ালা ব্যতীত অন্য
কার সঙ্গে ভালবাসায় দুনিয়ার স্বার্থ যুক্ত থাকে। সুতরাং আল্লাহর অনুগত
বান্দাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে ইনশাল্লাহ
এর বদলতে আরশের নিচে ঠাই পাওয়া যাবে।
আল্লাহ ওয়ালাদের
পরিচয়: তিনি মুত্তাকি তিনিই আল্লাহ ওয়ালা অর্থাৎ যিনি জাহের-বাতেন সব ধরণের গোনাহ থেকে বিরত থাকেন। কখন কোন ভুল-গোনাহ হয়ে
গেলে জলদি তওবা করে। এক হাদিসে তাঁদের আলামত বলা হয়েছে যে, যাদেরকে দেখলে আল্লাহর স্মরণ হয়, দ্বীন-ধর্মের জ্ঞান বাড়ে এবং আখেরাতের কথা স্মরণ হয় (দেল আখেরাতের দিকে ধাবিত হয়)।
দেখুন-খাযায়েনে
কুরআন ও হাদিস-হাকীমুল
উম্মত প্রকাশনী।
হাদিস নং-৩৩,
কুদৃষ্টি হতে হেফাযত |
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ
الْخُدْرِيِّ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ، قَالَ : إِيَّاكُمْ
وَالْجُلُوسَ بِالطُّرُقَاتِ ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، مَا لَنَا مِنْ
مَجَالِسِنَا بُدٌّ نَتَحَدَّثُ فِيهَا ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه
وسلم : إِذَا أَبَيْتُمْ إِلاَّ الْمَجَالِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ
حَقَّهُ ، قَالُوا : وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ ؟ قَالَ : غَضُّ الْبَصَرِ ، وَكَفُّ
الأَذَى ، وَرَدُّ السَّلامِ ، وَالأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ ، وَالنَّهْيُ عَنِ
الْمُنْكَرِ
অর্থ: হজরত আবু
সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন তোমরা
রাস্তা বা মানুষের চলাচলের পথে বসা থেকে বিরত থাক। সাহাবিরা বলল, হে
আল্লাহর রাসূল! রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নাই আমরা
রাস্তায় বসে কথা-বার্তা বলি-আলোচনা করি। রাসূল (ﷺ) বললেন, যদি তোমাদের বসতেই হয়, তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায়
কর। তারা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি?
তিনি বললেন, চক্ষু অবনত করা, কষ্ট দায়ক বস্তু পথের থেকে সরানো, সলামের উত্তর দেয়া,
সৎকাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা। বুখারি-২৪৬৫,কিতাবুল মাজালিম; মুসলিম-২১২১;
আবু দাউদ-৪৮১৫; আহমদ-১১৩-৯
নজর হেফাযতের গুরুত্ব: আল্লাহ তাআলার
নির্দেশ- মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা
তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য
অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর আপনি মুমিন নারীদের
বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিশক্তিকে নত করে। সূরা নূর,৩০-৩১ প্রিয় বন্ধুগণ ! লক্ষ্যণীয় যে, পবিত্র কালামে পাকে সাধারণত আল্লাহ তাআলা পুরুষদেরকে সম্বোধন করে, এর মধ্যে
মহিলাদেরকে শামিল করেছেন। কিন্তু ৩০ নং
আয়াতে পুরুষ আর ৩১ আয়াতে নারীদেরকে পৃথক পৃথকভাবে চোখ অবনত রাখার নির্দেশ করছেন। এতে প্রমাণিত হয়, নজর
হেফাযতের গুরুত্ব কতখানি?
নবির (ﷺ) নির্দেশ- চোখ দুটির ব্যভিচার হল, দৃষ্টি। মুসলিম
আমি রাসূল (ﷺ)কে হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলে, তিনি আমাকে আমার চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ
দেন। মুসলিম-২১৫৯, তিরমিযি- ২৭৭৬
সালফে সালেহীন তথা
এ উম্মতের ভালো পূর্বসূরীগণ চক্ষুকে অবনত রাখা বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকতেন। যেমন, আনাস ইবন
মালেক রা.বলেন, যদি তোমার পাশ দিয়ে
কোনো নারী অতিক্রম করে, তখন অতিক্রম না করা পর্যন্ত তুমি
তোমার চোখকে অবনত রাখ। আর সুফিয়ান রহ. যখন ঈদের দিন ঘর থেকে বের হতেন, তখন তিনি বলতেন-আজকের দিন আমি সর্বপ্রথম যে জিনিসটি
দিয়ে শুরু করব, তা আমরা আমাদের চক্ষুকে অবনত রাখব।
এক ব্যক্তি যখন হাসান বসরিকে
বলল, অনারব নারীরা তাদের বক্ষ ও মাথাকে খোলা রাখে, তখন সে
বলল, তুমি তোমার চোখকে বিরত রাখ।
রবি ইবন খাসইয়াম
তিনি সর্বদা দৃষ্টিকে নিচু করে রাখতেন। একদিন তার পাশ দিয়ে কতিপয় নারী অতিক্রম করলে, তিনি তার
মাথাকে নিচু করে তার বুক পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। তখন মহিলা মনে করল, তিনি অন্ধ,
ফলে তার অন্ধত্ব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করল।
কুদৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত
তীর: আল্লাহ পাক বলেন- কুদৃষ্টি ইবলীসের বিষাক্ত তীর। যে আমার ভয়ে তা বর্জন
করবে , এর বদলে আমি তাকে এমন ঈমান নসীব করবো যার মাধুর্য ও মধুর তা সে তার অন্তরে
মধ্যে অনুভব করবে। ত্বাববরানী, কানযুল উম্মাল ৫ম খণ্ড; ২২৮পৃষ্ঠা।(হাদিসে কুদসী )
নজর হেফাযতের
বরকতে ঈমানের সাথে মৃত্যু: হজরত মোল্লা আলি কারি রহ. লিখেছেন: (আমি তাকে এমন ঈমান নসীব করবো যার মাধুর্য
ও মধুরতা সে তার অন্তরে মধ্যে অনুভব করবে) এ হাদিসের
ব্যাখ্যায়- অর্থ: রেওয়ায়েত আছে যে,
একবার যদি কারও অন্তরে ঈমানের
মাধুর্য ও মধুরতা প্রবেশ করে তবে আর কখনও তা ছিনিয়ে নেয়া হয় না। মেরকাত ১ম খণ্ড; ৭৪ পৃ.
অতত্রব, এতে
ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু বরণের সুসংবাদ বিদ্যামান আছে। আজকাল এ দৌলত অহরহ রাস্তা-ঘাটে বণ্টন
হতেছে। তাই যেখানে কুদৃষ্টি হতে বিরত থেকে দৌলত হাসিল করতে থাকুন।
কুদৃষ্টিকারী
আল্লাহর গযবের পাত্র: স্বয়ং রাসূল (ﷺ) বদ-দুআ করে
বলেছেন-
অর্থ: আল্লাহ তাআলা
লানত বর্ষণ করুন নজরকারীর ওপর এবং যার প্রতি নজর করা হয় তার ওপর। সুনানে বাইহাকি
অর্থাৎ বেপর্দা চলাফেরার দ্বারা কুদৃষ্টির আহবান জানায় তার উপরও গযব নাযিল হোক। যারা ওলি-আল্লাহদের
বদ-দুআকে ভয় করেন, তাদেরকে আল্লাহ রাসূল
(ﷺ) এর বদ-দুআকে ভয় করা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে
সবাইকে হেফাযত করুন।
চিন্তার বিষয় হলো: তায়েফের ময়দানে কাফেরদের হাতে
রক্তাক্ত হয়েও তিনি বদ-দুআ করেননি অথচ কুদৃষ্টিকারী এবং যারা
সেজে গুজে সুযোগ দেয় তাদের প্রতি বদ-দুআ করেছেন। তাহলে বুঝা যায়, কুদৃষ্টি
কত জঘন্য কাজ।
চিকিৎসা শাস্ত্রের
আলোকে কুদৃষ্টির ক্ষতিসমূহ জানতে দেখুন আত্মার ব্যাধি ও প্রতিকার-৭৪ পৃ.
চেহেরা/মুখমণ্ডল
হিজাব/পর্দার অন্তর্ভুক্ত কি না?
চেহেরা পর্দার অংশ
কি না এ সম্পর্কে দুএকের মত আছে যে, অংশ নয়। কিন্তু কুরআন-হাদিস, উম্মতের ইজমা,
কিয়াস, উম্মতের আমল, বিজ্ঞ
আলেমদের মতামত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে
মুখমণ্ডল পর্দার অংশ।
কুরআনুল কারিমের
আদেশ:
(১)
হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের
চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে
তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। সূরা আল আহযাব-৫৯
পর্দা বিষয়ে এ
আয়াত অত্যন্ত পরিষ্কার ও স্পষ্ট। কারণ, এ আয়াত থেকে জানা যায়, পর্দার নির্দেশের মধ্যে মুখমণ্ডলও অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া এ আয়াতে
আযওয়াজে মুতাহহারাত (রাসূলুল্লাহর (ﷺ) -এর পুতঃপবিত্র সহধর্মীনীগণ) ও নবি (ﷺ) -এর কন্যাগণের সঙ্গে মুসলিম মহিলাদেরও সম্বোধন করা হয়েছে। এ আয়াতে ‘জালাবিব’ শব্দ ব্যবহার করা
হয়েছে, যা ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। আরবি অভিধানের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লিসানুল ‘আরাব’–এ লেখা হয়েছে, ‘জিলবাব’ ওই চাদরকে বলা হয় যা মহিলারা নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত
ঢাকার জন্য ব্যবহার করে। ১/২৭
অভিধান
থেকে সরে গিয়ে মুফাসসিরগণের বক্তব্য দেখলেও জানা যায়, ‘জিলবাব’ এমন কাপড়কে বলে যা দ্বারা মহিলারা নিজেদের শরীর ঢাকেন। ‘জিলবাব’ অর্থ বড় চাদর, যা দ্বারা
মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়। কুরতুবি, আল-জামে‘ লিআহকামিল কুরআন : ১৪/২
এ আয়াত সম্পর্কে
বিখ্যাত তাফসিরকারকদের মতামত:
(ক)
আল্লামা আলূসি রহ. আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. বরাত
দিয়ে
লিখেন, ‘জিলবাব’ সেই চাদরকে বলে
যা মহিলারা দেহের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত উড়িয়ে ছেড়ে দেয়। রুহুল মাআনি : ২২/৮৮
(খ) আল্লামা নাসাফি আল-হানাফি রহ. লিখেছেন,
মহিলারা চাদর বা অন্য কিছু নিজেদের মাথার ওপর ছেড়ে দেবে এবং নিজেদের
মুখমণ্ডল ও দেহের অন্যান্য অঙ্গ ঢেকে নেবে। মাদারিকুত- তানযীল
(গ) আল্লামা ইবন হাযম রহ. লিখেন, আরবি ভাষায় ‘জিলবাব’ এমন কাপড়কে বলা
হয় যা সারা শরীর আচ্ছাদন করে। যে কাপড় সমস্ত শরীর ঢাকে না, সে কাপড়ের ক্ষেত্রে ‘জিলবাব’ শব্দটির প্রয়োগ
সঠিক ও শুদ্ধ নয়। আল-মুহাল্লা : ৩/২১৭
তাই শত শত বছর যাবৎ মুসলিম
বিশ্বের সর্বত্র যে দ্বীনদার নারীগণ নিকাব ও হিজাব পরিধান করে আসছেন তাঁরা এই
জিলবাব ধারণের বিধানই পালন করছেন।
(ঘ) আল্লামা যামাখশারি রহ. শব্দটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেন, এর অর্থ, মহিলারা নিজেদের মুখমণ্ডলের ওপর চাদর টেনে
দেবে। যেমন : কোনো মহিলার মুখমণ্ডল থেকে নিকাবসরে যায় তখন তাকে আরবিতে বলা হয় : ইউদনি ছাওবিকে আলা ওয়াজহিকে তোমার মুখমণ্ডলের
ওপর তোমার কাপড় ফেলে দাও। (প্রাগুক্ত) এ থেকে বুঝা গেল, কুরআন কারিমের এই আয়াতে মুখমণ্ডল ঢাকার স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।
ঙ) আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. মুখমণ্ডলের ওপর ‘জিলবাব’ ফেলার যে পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন তা হলো, ‘মুসলিম মহিলারা নিজেদের চাদর দ্বারা নিজ নিজ মাথা ও
মুখমণ্ডল ঢেকে বের হবে। তারা কেবল একটি চোখ খোলা রাখতে পারে। শাওকানি, ফাতহুল
কাদির-৩০৭
(চ) জনৈক ব্যক্তি উবায়দা ইবন সুফইয়ান ইবন হারিছ হাযরামি রা. কাছে এর নিয়ম জানতে চান। তিনি নিজের চাদরটি উঠিয়ে
এমনভাবে ছড়িয়ে দেন যে, তার মাথা ও কপাল ভ্রূ পর্যন্ত ঢেকে যায়। তারপর চাদরের কিছু অংশ মুখমণ্ডলের ওপর এমনভাবে রাখেন যে, গোটা
মুখমণ্ডল ঢেকে যায়, কেবল একটি চোখ খোলা থাকে। তাফসিরে কুরতুবি : ৪/২৩৪
(ছ) আবু বকর আর-রাজি ও আল-জাস্সাস আল-হানাফি রহ. বলেন, এ
আয়াত দ্বারা
প্রমাণিত হয়,
যুবতী মহিলারা ঘর থেকে বাইরে বেরোনোর সময় বেগানা পুরুষের দৃষ্টি
থেকে তাদের মুখমণ্ডল আবশ্যিকভাবে ঢেকে রাখবে, যাতে দুষ্ট
প্রকৃতির লোক তাদেরকে বিরক্ত করতে না পারে। আহকামুল কুরআন : ৩/৩৭১
সূরা আল-আহযাবের উল্লেখিত আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে সকল মুফাসসির
মুখমণ্ডল ঢাকা হিজাবের অত্যাবশ্যক অংশ গণ্য করেছেন। আল্লামা সুয়ুতি আশ-শাফিঈ রহ. উল্লেখিত আয়াতের তাফসির
করতে গিয়ে লিখেন, হিজাবের আয়াত সব
নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মাথা ও মুখমণ্ডল ঢাকা যে ওয়াজিব তা এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত
হয়। আওনুল মাবুদ-১১/১৫৪
(ঝ)
হাফিয
ইবনুল কারবি মালেকি রহ.ও এই আয়াতের তাফসির
করতে গিয়ে লিখেন, ‘অভিজাত আরব
মহিলারা দাসীদের মত মুখমণ্ডল খোলা অবস্থায় ঘোরাফেরা করতো। এতে পুরুষের দৃষ্টি
আন্দোলিত হতো। এজন্য আল্লাহ তাআলাতাদেরকে নির্দেশ দেন,
তারা
যেন শরীরের ওপর জিলবাব পরে নেয়। তাহলে তাদের মুখমণ্ডল তাদের দৃষ্টির আড়ালে চলে যাবে। আত-তাসহিল লি ‘উলুমি তানজিল :
৩/১৪৪
(ঞ) আল্লামা বাহুতি হাম্বলি রহ. -এরও এই মত যে, সালাতের বাইরে স্বাধীন ও প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর দুহাতের কবজি
এবং মুখমণ্ডলও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতই পর্দার অন্তর্ভুক্ত। কাশফুল কান্না-১/২৬৬
(২) তোমরা তাদের (নবি পত্নীগণের) কাছে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল
থেকে চাইবে, এটা তোমাদের ও তাদের
অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। সূরা আহযাব-৫৩
এ আয়াতকে সাহাবা
কেরামের যুগ হতেই ‘আয়াতে হিযাব বা পর্দাবিধানের আয়াত বলা
হয়ে থাকে।হজরত ওমর রা. আনাস রা. এরুপ উক্তি রয়েছে ।
মুখমণ্ডল যদি
পর্দার অন্তভুক্ত না হতো, তাহলে সামনে
যেতে দোষ কি ছিল ? পর্দার আড়াল থেকে
চাইতে হবে কেন ? অথচ নবির সম্মানিত
স্ত্রীগণ এ উম্মাতের মা,তাদেরকে আপন মায়ের
মতই বিবাহ হারাম। এ আয়াত থেকে বলিষ্ঠভাবে, সুদৃঢ়ভাবে
প্রমাণিত হয় যে, মুখমণ্ডল পর্দার
অন্তর্ভুক্ত। সূত্র: তাফসিরে বুরহাননুল কুরআন, মাআরিফুল কুরআন
(৩) বৃদ্ধা নারী যারা
বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা সৌন্দর্য
প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে,
তাদের
জন্য দোষ নেই।.... তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। সূরা নূর-৬০
আলোচ্য আয়াতে পর্দার
অপরিহার্যতা এভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে,
আল্লাহ
বলেন বৃদ্ধনারী বার্ধক্যের কারণে) যার প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না, তারা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে
রাখতে পারে। এখানে বস্ত্র খুলে রাখা মানে উলঙ্গ বা নিরাবরণ হওয়া নয়, বরং যেসব বস্ত্র দ্বারা হাত, মুখমণ্ডল ইত্যাদি আবৃত রাখা হয়- যথা- চাদর, বোরকা ইত্যাদি। এ আয়াতে বস্ত্র খুলে
রাখার অনুমতি শুধুমাত্র বৃদ্ধা নারীদের জন্যেই নির্দিষ্ট। যুবতী নারীর মুখ-মণ্ডল
বিপদ সংকুলস্থান হওয়ায় তা ঢেকে রাখা জরুরি। যদি বস্ত্র খুলে রাখার
হুকুম (নির্দেশ) বৃদ্ধা, যুবতী, তরুণী সকলের জন্যে অভিন্ন হত, তা হলে বৃদ্ধাকে যুবতী থেকে পৃথক করে উল্লেখ
করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
(৪)
মুমিন
পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের
দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক
পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।[৩০] আর মুমিন
নারীদেরকে বল, তারা তাদের
দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ
পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না
দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে,
ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে,
আপন
নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক
হয়েছে, অধীনস্থ যৌন কামনা মুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের
গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন
নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। সূরা নূর-৩১
সূরা নূরের ৩১ নং
আয়াতে তিনবার زِينَتَهُنَّ যীনাত শব্দটি
ব্যবহৃত হয়েছে ।
وَلاَيُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّمَا ظَهَرَمِنْهَا (১)
وَلاَيُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ
(২)
وَلَايَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ
زِينَتِهِن(৩)
এসব জায়গায় যীনাত
শব্দের অর্থ সৌন্দর্য হলেও তিন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
(১) وَلاَيُبْدِينَزِينَتَهُنَّإِلاَّمَاظَهَرَمِنْهَا এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে-
তারা যেন
তাদের পোশাকের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে। তবে যা অনিচ্ছাকৃত প্রকাশ পেয়ে যায়।
এ আয়াতে
উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহিলাদের বাহিরে ঐ সমস্ত সৌন্দর্য যা পর পুরুষদের দৃষ্টি থেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও গোপন করা সম্ভব হয় না। যেমন কাপড় ও চাদরের ওপরের
অংশ।
বর্তমানে
যুগে যেমন বোরকার বাহিরের অংশের সৌন্দর্য ও পায়ের নিচের অংশের সৌন্দর্য। সুতরাং এগুলো
পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়,তাতে কোন
পরপুরুষের দৃষ্টি পড়লে মহিলারা দায়ী হবে না;বরং দায়ী হবে
পুরুষ।
(২) আর وَلاَيُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ আয়াতের এ অংশের পূর্ণ অর্থ হচ্ছে- মহিলারা যখন কোন প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে বের হবে, তখন মুখমণ্ডলসহ চুল ও গলার
আশপাশের সৌন্দর্য এমন একটি ওড়না বা চাদর দ্বারা মাথার ওপর দিক থেকে ঢেকে নিবে, যদ্দরুন তার এসব অংশেনর সৌন্দর্য প্রকাশ না
পায়।
তবে
এ বিধান মাহরামদের ব্যাপারে নয়। তাই স্বমী, শ্বশুর, পুত্র আরো
এ জাতীয় আম্তীয় যাদের সাথে বিবাহ
হারাম,তাদের সাথে
উপরোক্ত পর্দা জরুরি নয়।
এ অংশে যীনাত
দ্বারা মুখমণ্ডল ও বক্ষ দেশের পর্দা করাটা
গায়রে মাহরামেরে ক্ষেত্রে জরুরি নয়;
বরং
মুখমণ্ডল ইত্যাদি তাদের সামনে খোলা রাখা
যাবে।
(৩) আর وَلَايَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ
زِينَتِهِن এ আয়াতে, অলংকারের ঝংকার
পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণের কারণ হয়, তাই তার
সৌন্দর্যকে রক্ষা করে চলার নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে।
সারকথা: এ কথা সর্বস্বীকৃতি যে, অলংকারের আওয়াজের তুলনায়
পুরুষের জন্য নারীর চেহেরা অত্যধিক
আকর্ষণীয়। বিধায় মুখমণ্ডল পর্দার অন্তর্ভক্ত হওয়ার ব্যাপারে আয়াতের এ অংশ থেকেও প্রমাণিত
হয়।
পবিত্র কুরআনে
নারীদের হিজাব এবং তদসংক্রান্ত প্রায় আটটি আয়াত আছে। সেগুলো থেকেও একথা জানা
যায়, শরীয়তের দাবী কেবল শরীর
ঢাকা নয়, বরং মুখমণ্ডল ঢাকাও জরুরি।
হাদিস তথা রাসূল (ﷺ) এর আদেশ: (১) আনাস রা. স্বয়ং বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন মক্কা থেকে মদিনা পৌঁছিলেন তখন আমার বয়স দশ বছর। …..উম্মুল মুমিনিন যয়নাব রা. এর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দাম্পত্য জীবন আরম্ভ করার প্রথম দিনই এ আয়াতটি (সূরা আহযাব-৫৩ নং) নাযিল হয়। …….আমি তার পিছনে ঘরে প্রবেশের জন্য। উদ্যত হয়ে আছি। হজরতের (নবির) এক পা হুজুরার
দরজার ভিতরে আরেক পা বাহিরে, এমতাবস্থায় নবি (ﷺ) আমার ও তাঁ মধ্যে পর্দা ফেলে দিলেন। (আমি হুজুরায় প্রবেশ করতে
বিরত থাকলাম এবং জানা গেল পর্দার বিধানের আয়াত নাযিল হয়েছে )। বুখারি শরিফ-৬/২৩৬৮ আল্লামা
আজিজুল হক রহ.
(২) তোমাদের কেউ কোনো নারীর প্রতি বিয়ের প্রস্তাব প্রদানের পর
তাকে দেখলে কোন গুণাহ হবে না। মুসানদে আহমাদ উল্লেখিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, বিয়ের প্রস্তাব দাতা যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে পাত্রীকে দেখে,
তাহলে
গুণাহ হবে না। এতে প্রতীয়মান হলো যে, যারা বিয়ের
উদ্যোগ না নিয়ে, এমনিই দেখে তারা গোনাহগার
হবে।
(৩) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর প্রিয়তমা পত্নী আয়িশা রা.বলেন- আল্লাহ হিজরতকারী
অগ্রবর্তী নারীদের ওপর রহমত করুন। যখন তিনি নাযিল করলেন, আর তারা যেন তাদের বক্ষের ওপর ওড়না টেনে দেয়’ তখন তারা তাদের
নিম্নাংশের কাপড়ের প্রান্ত ছিঁড়ে ফেলেন এবং তা দিয়ে ওড়না বানিয়ে নেন। বুখারি : ৮৫৭৪
আলোচ্য বর্ণনায় ‘ইখতামারনা’ শব্দটি এসেছে। সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাকার হাফিয
ইবন হাজার ‘আসকালানী রহ. ‘ইখতামারনা’ শব্দের ব্যাখ্যা
করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘গাত্তাইনা উজুহাহুন্না’। অর্থা তারা নিজেদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখতেন। ফাতহুল বারি : ৮/৩৪৭
(৪) যখন তোমাদের (নারীদের) কারো কাছে মুক্তির
জন্যে চুক্তিবদ্ধ কৃতদাস থাকে এবং তার নিকট চুক্তি অনুযায়ী মুক্তিপণ থাকে। তাহলে সে নারী
কৃতদাসের সামনে পর্দা করবে। মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, জামে
তিরমিজি
এ হাদিস শরিফ দ্বারা পর্দার অপরিহর্যতা
প্রমাণিত হয়, কারণ কৃতদাসের
সাথে পর্দার বিধান নাই। কিন্তু যখন সে স্বাধীন হবে তখন পর্দা কার্যকর হবে।
(৫) নারীর সর্বাঙ্গই সতর-অঙ্গ। (গোপনীয় বস্তু
কাজেই নারীদেহ সম্পূর্ণটাই ঢেকে রাখা অপরিহার্য।)
(৬) আবদুল্লাহ ইবন উমর রা. থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)
বলেছেন,‘আর ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নিকাব ও হাত মোজা পরিধান না করে। বুখারি
: ১৮৩৮ এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, নবি (ﷺ) এর যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও চেহারা ঢাকতেন। এ কারণে ইহরামের
সময় নেকাব ও দস্তানা না পরার আদেশ করতে হয়েছে।
(৭) ইফক-এর ঘটনা থেকেও আমরা মুখ ঢাকার প্রমাণ সংগ্রহ
করতে পারি। বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন পথে এক স্থানে বিশ্রামের জন্য শিবির স্থাপন করেন। এই সফরে আয়িশা রা.রাসূলুল্লাহর (ﷺ) -এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি প্রকৃতির
ডাকে সাড়া দিতে শিবির থেকে বাইরে যান। ….এমতাবস্থায় তিনি
লক্ষ্য করেন তার গলার হারটি কোথাও হারিয়ে গেছে। যেখানে হারটি পড়ার
সম্ভাবনা ছিল তিনি সেখানে গেলেন এবং তালাশ করলেন, কিন্তু পেলেন না। ….. আয়িশা রা.বলেন, আমি সেখানে বসে
থাকতে থাকতে ঘুমে আমার চোখ বন্ধ হয়ে যায়। সাফওয়ান ইবন মুওয়াত্তাল রা.ছিলেন কাফেলার পশ্চাৎগামী ব্যক্তি। তিনি দেখেন এক ব্যক্তি
শুয়ে আছে। নিকটে এসে দেখে আমাকে চিনতে পারেন। কারণ,
হিজাবের
পূর্বে তিনি আমাকে দিখেছিলেন। আমাকে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে তিনি জোরে ‘ইন্না লিল্লাহি
ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করেন। সাফওয়ানের শব্দ শুনে আমি উঠে বসি এবং খুব দ্রুত চাদর মুড়ি
দিই। আরেকটি বর্ণনায়
এসেছে, আমি আমার চাদর দ্বারা আমার
মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলি। বুখারি : ৪৪৭৩; মুসলিম :
২৭৭০
ইজমায়ে উম্মত: ইমাম নাববি রহ.
স্বীয়
গ্রন্থ ‘আল-মিনহাজ’-এ লিখেছেন, যদি ফিতনার আশংকা
থাকে তাহলে কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য কোনো প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর মুখমণ্ডল ও
হাত দেখা জায়িয নেই। আল্লামা রামালী রহ.
‘আল-মিনহাজ’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় এই মতের ওপর আলিমগণের ইজমা’র কথা বর্ণনা
করেছেন। তিনি এও লিখেছেন, সঠিক মতানুযায়ী
ফিতনার আশংকা না থাকলেও প্রাপ্ত বয়স্কা নারীকে দেখা হারাম। এর দ্বারা বুঝা যায়, মুখমণ্ডল খোলা অবস্থায় মহিলাদের বাইরে বের
হওয়া জায়িয নেই। কারণ, সে অবস্থায় পুরুষ তাদেরকে
দেখবে এবং দেখার মাধ্যমে ফিতনা ও কুপ্রবৃত্তির সৃষ্টি হবে। নিহায়াতুল মিনহাজ ইলা
শারহিল মিনহাজ-৬/১৮৮
মুখমণ্ডলের পর্দার বিষয়টি ইজমার ভিত্তিতে স্থিরকৃত হয়েছে। কোনো মাযহাবের
কোনো একজন উল্লেখযোগ্য ‘আলিম এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেননি। শায়খ ইবনে বায রাহ., শায়খ ইবনে উছাইমীন ও শায়খ ইবনে জিবরীনও একই
ফতোয়া দিয়েছেন। দেখুন : রিসলাতুন ফিল-হিজাবি ওয়াস-সুফূর : ১৯;
ফাতাওয়া
উলামাইল বালাদিল হারাম : ১১৬৯
কিয়াসের আলোকে
চেহেরা ঢাকা অপরিহার্যতা: আল্লাহ তাআলার বাণী-
(১)
আর
তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলি যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। তাদেরকে গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করার নির্দেশ
প্রদান করেছেন। নারীর ভেতরে বস্তু বাহিরের বস্তু নয়। নারী এ উম্মতের জন্য ফেতনা স্বরুপ। যেমন রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন-(ক) আমি আমার পর পুরুষদের জন্য নারীদের ফিতনার চেয়ে বড়
ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে যাইনি। বুখারি ও মুসলিম
(খ) তোমরা দুনিয়াকে
ভয় কর এবং নারীকে ভয় কর, কারণ, বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনা ছিল নারীর ফিতনা। মুসলিম
(২) হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর। এরপর যেখানে থেকে
ইচ্ছে খাও। আর এ গাছের নিকটে যেও না। তাহলে তোমরা জালেমদের অন্তরভুক্ত হবে। সূরা আরাফ-১৯, এ আয়াতে গাছের
কাছে যেতে বারণ করেছেন। অথচ প্রকৃত নিষেধাজ্ঞা হলো ফল খাওয়ার প্রতি।
(৩) আর ব্যভিচারের
কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা মন্দ কাজ এবং মন্দ পথ। সূরা ইসরা-৩২ যেনা-ব্যভিচার হলো মূল হারাম। অথচ তার কাছেও যেতে বারণ
করেছেন।
এতে (২ এবং ৩ নং আয়াত দ্বারা) প্রমাণিত হয় যে, কোন জিনিস নিজস্বভাবে নিষিদ্ধ না হলেও তাতে যদি কোন নিষিদ্ধ
বস্তুর কারণ বা মাধ্যম হওয়ার আশংকা থাকে, তবে তাও নিষিদ্ধ
হয়ে যায়। আলোচ্য মূলনীতির ভিত্তিতে গভীরভাবে চিন্তা করলে উপলব্ধি করা যায় যে, নারীর জন্যে পরপুরুষের সামনে মুখমণ্ডল খোলা
রাখাতে (নৈতিকতা বিধ্বংসী) অনেক ফাসাদ ও অনাচার নিহিত রয়েছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও
নেওয়া যায় যে, মুখমণ্ডল খোলা
রাখাতে কিছু কল্যাণ নিহিত রয়েছে তবে তা অকল্যাণ ও ফাসাদের তুলনায় নগণ্য। কাজেই নারীর
জন্যে পর পুরুষের সম্মুখে চেহারা খোলা রাখা হারাম এবং আবৃত রাখা ওয়াজিব বলে
প্রমাণিত হল।
বিজ্ঞ ফকিহ-আলেমদের মত:
(ক) মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ. লিখেছেন, ‘ইমাম চতুষ্টয়ের
মধ্য থেকে ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. তিনজনই মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার মোটেই অনুমতি দেননি- তা ফিতনার আশংকা থাকুক বা না থাকুক। ইমাম আবু হানিফা রহ. ফিতনার
আশংকা যদি না থাকে- এই শর্তে খোলা রাখার কথা বলেন। কিন্তু
স্বাভাবিকভাবে এই শর্ত পূরণ হবার নয়, তাই হানাফি ফকিহগণ গায়র মাহরাম পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল ও
হাতের কবজি খোলা রাখার অনুমতি দেন নি। মাআরিফুল কুরআন -৭/২১৪
(খ)
ইবনু তাইমিয়্যা রহ. বলেন,
বেগানা পুরুষ দেখতে পারে এমনভাবে মহিলাদের মুখমণ্ডল খোলা রাখা জায়িয
নেই। দায়িত্বশীল পুরুষদের (স্বামী, পিতা, ভাই প্রমুখের) উচিত ‘আমর বিল মা‘রুফ’ ও ‘নাহি ‘আনিল মুনকার’ তথা ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধে’র অংশ হিসেবে তাদেরকে এমন কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া। অধীনস্থ নারীদের পর্দাহীনতা থেকে বিরত না রাখাও দায়িত্বশীল পুরুষদের জবাবদিহিতামূলক অপরাধ। এজন্য তাদেরকে
শাস্তিও দেয়া যেতে পারে। মাজমু ফাতাওয়া-২৪/৩৮২
(গ) হাফিফ ইবনে কাইয়ি্যম লিখেন, স্বাধীন
নারী মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি পর্যন্ত খোলা রেখে সালাত আদায় করতে পারে (এই শর্তে যে সেখানে কোনো বেগানা পুরুষ থাকবে না)। তবে এ অবস্থায় সে
বাজারে এবং পুরুষের ভীড়ের মধ্যে যেতে পারবে না। ই‘লাম আল-মুওয়াককিঈন-২/৮০
আধুনিককালের
প্রখ্যাত আলিম ও ফকিহগণ একই মত পোষণ করেন। উপমহাদেশের
আলিমদের কথা না হয় বাদ দিন। কারণ, তাদের অধিকাংশই হানাফি এবং তাদেরকে ফিকহ
সংক্রান্ত মাসআলা ও বিষয়সমূহে কট্টরপন্থি মনে করা হয়। কিন্তু আরব বিশ্বের
সমকালীন সকল আলিম ও মুফতিদের মতও এই যে, মহিলাদের জন্য মুখমণ্ডল ঢাকা একান্ত আবশ্যক। তাদের মধ্যে শায়খ
আব্দুর রহমান ইবন সাদি, মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহিম আলে আশ-শায়খ,
মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানকিতি,
শায়খ ‘আবদুল্লাহ ইবনু
বায, শায়খ আবু বাকর জাবির আল-জাযায়িরি, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু গুনায়মিন, শায়খ আবদুল্লাহ ইবনু
জুবরিন, শায়খ সালিহ আল-ফাওযান, শায়খ বাকর ইবনু ‘আবদিল্লাহ আবু
যায়েদ, মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইসমা’ঈল আল-মাকদাম, আবু, ইসহাক আল-হুওয়ায়তি, মুসতাফা আল-‘আদাবি, মুহাম্মাদ হাসসান ও আরো অনেকের নাম বিশেষ
উল্লেখযোগ্য।
স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং ফকিহগণের
চূড়ান্ত ফাতওয়াসমূহ থাকার পরও কোনো ‘আলিম নিকাবকে অস্বীকার করতে পারেন না। যারা মুখ না ঢাকার ব্যাপারটি জোর করে সপ্রমাণ
করতে চান তারা খেয়াল করেন না যে, তাদের এহেন মত পশ্চিমা ও তাদের ভাব
শিষ্যদের অতি পুলকিত করবে। তারা এই রায়কে ব্যবহার করবে হাতিয়ার হিসেবে।
আসলাফ
তথা সাহাবিদের আমল:
(১)আয়েশা রাদিআল্লাহু
‘আনহা হজ অবস্থায় মহিলা সাহাবিদের পর্দার
যে বিবরণ দিয়েছেন তা থেকে অনুমান করা যায় পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা আন্তরিক ছিলেন। তাঁরা স্বাভাবিক অবস্থায়
তো বটেই ইহরাম অবস্থায় যখন মুখ ঢাকতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানেও পরপুরুষের সামনে
থেকে নিজেদের চেহারা আড়াল করেছেন। যেমন,আয়েশা (রা.) বলেন,‘আমরা ইহরাম অবস্থায় রসূল (ﷺ) -এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আরোহীরা আমাদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। যখন তারা আমাদের আড়াআড়ি
হন, আমাদের সঙ্গীনীরা তাদের বড় চাদর মাথা থেকে চেহারায় ঝুলিয়ে দেন। তারা আমাদের
অতিক্রম করে চলে যাবার পরই আমরা তা উন্মুক্ত করি। আবু দাউদ : ৫৩৮১; বাইহাকি : ৩৩৮৮
উম্মত জননী আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, আমরা রাসূলের
সাথে এহরাম অবস্থায় ছিলাম, উষ্ট্রারোহী পুরুষরা আমাদের
পার্শ্বদিয়ে অতিক্রম কালে আমাদের মুখামুখি হলে আমরা মাথার উপর থেকে চাদর টেনে
চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম। তারা আমাদেরকে অতিক্রম করে চলে গেলে আমরা মুখমণ্ডল খুলে
দিতাম। মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ
(২)আসমা বিনত আবি বাকর রা. বলেন, আমরা পুরুষদের থেকে
আমাদের চেহারা
আবৃত রাখতাম। মুস্তাদরাক হাকেম-১৬৬৪
(৩) ফাতিমা বিনতুল মুনযির রহ. বলেন, ‘আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের চেহারা ঢেকে
রাখতাম। ইমাম মালেক, মুয়াত্তা
: ১/৩২৮; হাকিম,
মুসতাদরাক : ১/৪৫৪
নারীর মুখমণ্ডল
খোলা রাখার যুক্তির জবাব:
পরপুরুষের
সামনে নারীর মুখমণ্ডল প্রদর্শন বৈধতার পক্ষের প্রবক্তাগণ প্রমাণের জন্য পূর্বোক্ত
সূরা নূরের ৩১ নং আয়াত তুলে ধরেন। তাদের বক্তব্য, ‘সাধারণত প্রকাশমান সৌন্দর্য’ এর ব্যাখ্যায়
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাসএ দ্বারা করতল ও চেহারা উদ্দেশ্য। একটি বিশেষ লক্ষনীয় যে, পুরুষের দেহ ঢাকা সম্পর্কে
একটি বিধান আছে তাহলো ‘সতর’-যা নাভি থেকে
হাঁটু পর্যন্ত । আর নারীদের দেহ ঢাকার সম্পর্কে দুইটি বিধান আছে-একটি হলো সতর দ্বিতীয়টি হলো হিজাব বা পর্দা । মহান আল্লাহর বাণী-(১)
َلاَيُبْدِينَزِينَتَهُنَّإِلاَّمَاظَهَرَمِنْهَا(২)وَلاَيُبْدِينَزِينَتَهُنَّإِلاَّلِبُعُولَتِهِنَّ আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস রা. দ্বিতীয়
নিষেধাজ্ঞাটি তো পর্দা বিধানের জন্য নিয়েছেন কিন্তু প্রথম নিষেধাজ্ঞা তিনি সতর
বিধানের জন্য বলেছেন; তাই তিনি إِلاَّمَا ظَهَرَمِنْهَا দ্বারা যে পরিমাণ নিষেধাজ্ঞা হতে
বাদ পড়েছে তার ব্যাখ্যায় উভয় হাতের কজ্বি এবং মুখমণ্ডলকে উল্লেখ করেছেন, কারণ এসব নারীদের সতর
অর্ন্তভূক্ত নয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর ব্যাখ্যা যে
একমাত্র সতর বিধানের দৃষ্টিতে হয়েছে তার সুস্পর্কে বলেছেন। তাফসিরে ইবনে জারির কিতাবে
বর্ণিত আছে-كالرداء و الثياب يعنى على
----لا يمكنها اخفاءه অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস রা. অবশ্য যতটুকু সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়ে থাকে এর ব্যাখ্যার
বলেছেন, তা হলো মুখমণ্ডল, চোখের সুরমা, হাতের মেহদি ও আঙ্গুল । নারীগণ এসব অঙ্গ
ও তার সজ্জা অন্দর মহলে ঐ শ্রেণীর লোকদের সামনে অনাবৃত রাখতে পারে। যারা অন্দর মহলে যাতয়াতের অধিকারী (অর্থাৎ যাদের ক্ষেত্রে পর্দার আদেশ নাই )
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. বলেন,‘ইল্লা মা যাহারা মিনহা’- যতটুকু সাধারণত প্রকাশ পায়, যেমন- আরবের
মহিলাগণ সাধারণত বড় একটি চাদর দ্বারা
পরিধেয় আবৃত করে নিত। হাঁটার সময় পরিধেয় কাপড়ের নিম্ন অংশ ঐ চাদরের
আবরণ মুক্ত থাকে। এ চাদর এবং কাপড়ের নিচের অংশ প্রকাশ হওয়ার দরুণ নারীগণ গোনাহগার হবে না, কারণ এতটুকু প্রকাশ না করে
গত্যন্তর নাই। অর্থাৎ এর হলো চাদর ও কাপড় ,হাত-চেহেরা নয়। তাফসিরে ইবনে কাসির-৩-২৮৪
‘হাসান বসরি, মুহাম্মাদ ইবনু সিরিন, ইবনুল জাওযি, ইবরাহিম নাখয়ি প্রমুখ মনীষীও অনুরূপ
ব্যাখ্যা করেছেন।’ তাফসিরুল কুরআনিল
আজিম-৩/৩১২
পবিত্র
কুরআনের শব্দ ও বাক্য, আলোচ্য বিষয়ের হাদিস ও আছার এবং
উসূলে ফিকহের নীতি ও বিধান ইত্যাদি বিবেচনায় ইবন মাসউদ রা. এর ব্যাখ্যাই অগ্রগণ্য। কারণ সূরা আল-আহযাবের ৫৯ নম্বর আয়াতে জিলবাবের একাংশ চেহারার ওপর নামিয়ে মুখমণ্ডল আবৃত রাখার আদেশ করা হয়েছে। তা সূরা নূরের আলোচ্য আয়াতে ইবন মাসঊদ রা.এর ব্যাখ্যাকেই প্রতিষ্ঠিত করে। তাছাড়া সহিহ হাদিসসমূহে নারীদের চেহারা ঢেকে রাখার যে নির্দেশ ও বিবরণ দেখা যায় তা-ও তার ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে।
চুড়ান্ত মতামত বা
সিদ্ধান্ত: যারা মুখ খোলার
পক্ষে বলেছেন প্রথমত তাদের মতটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মত নয় আর দ্বিতীয়ত তাঁরা সবাই
এর জন্য নিরাপদ ও ফিতনামুক্ত হওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। আজ যৌন হয়রানি সবখানে। সংবাদপত্র
পাঠকালে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এমন কোন দিন নাই নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে না । খোদ ফ্রি সেক্সের
দেশেও। দেখুন ২ নভেম্বর
২০১৮ প্রথম আলোর শিরোনাম, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ,“কাজ ছেড়ে রাজ পথে গুগলের কর্মীরা”। শুধু ২০১৮ সালে
বাংলাদেশে ৭৩২ জন ধর্ষিত হয়েছে
এবং
ধর্ষণজনিত ৬৬ জনকে হত্যা করা হয়। প্রথম আলোরে জরিপ,
১৯
জানুয়ারি ২০১৯। যে সমাজে ছয় মাসের শিশু নারী ধর্ষিত হচ্ছে, জন্মদাতা পিতার কাছে আজ নারী নিরাপদ নয়। তারপরও ফেতনার যুগ, সময় আসেনি;তবে কবে আসবে ? তারপর মুখ ঢাকা জরুরি
হবে ? তাড়াও মানুষের মধ্যে
আল্লাহভীতি,লজ্জা কমে গেছে। সাজসজ্জার নানা
উপায় ও উপকরণ আবিষ্কৃত হওয়ায় ফিতনার মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। পরিশেষে পবিত্র কুরআন-হাদিস, ইজমা-কিয়াস ও বিজ্ঞ আলেম-ফকিহগণের মতামতের
ভিত্তিতে এ চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত উপনিত হলাম
যে,বর্তমান যামানায়
মুখমণ্ডলের পর্দা করা ফরজ, এর বিপরীত বলার
কোন সুযোগ নাই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সব মুসলিম মা-বোনকে যথাযথভাবে পর্দা করার তাওফিক দান
করুন। আমীন।
কোন প্রথম নজর মাফ: অনেকে বলে একবার দেখলে মাফ, কিন্ত সেটা কোন দেখা তা বুঝতে হবে। সহিহ মুসলিমে
বর্ণিত আছে- ইচ্ছা ছাড়াই হঠাৎ কোন
বেগানা নারীর ওপর দৃষ্টি পতিত হলে সেদিক (হতে) থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
হজরত
আলি রা. এর হাদিস আছে- প্রথম দৃষ্টি মাফ এবং দ্বিতীয় দৃষ্টিপাত গোনাহ। এর উদ্দেশ্যও এটা
যে,প্রথম দৃষ্টিপাত হঠাৎ ও
অনিচ্ছাকৃত হওয়ার কারণে ক্ষমার্হ। নতুবা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রথম
নজরও ক্ষমার্হ নয়। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-৯৩৮ পৃষ্ঠা
আতর বা সুগদ্ধি
ব্যবহার করে নারী কি বাহিরে যেতে পারবে? আতর বা সুগদ্ধি ব্যবহার করে নারী কি বাহিরে
যেতে পারবে না, শুধু ঘরের ভেতর পারবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু (ﷺ) নিষেধ করেছেন-
“প্রতিটি চোখই
ব্যভিচারী। আর নারী যখন সুগন্ধি ব্যবহার করে জনসমাগমের পাশ দিয়ে অতিক্রম তখন সে এটা
সেটা অর্থাৎ ব্যভিচারী হয়।’ (কারণ সুগন্ধি পুরুষকে আকর্ষণ করে তার মধ্যে কামাগ্নি জ্বালিয়ে
দেয়। আর শেষাবধি এটিই তাকে ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যায়।) তিরমিজি-২৭৮৬
পাতলা-আঁটশাট
পোশাক পরা কি জায়েজ ? নারীর জন্য
স্বামী ব্যতীত অন্য কারো সামনে পাতলা-আঁটশাট পোশাক পরিধান করা জায়েজ নেই (কেননা
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন পর্দা নেই )।অর্থাৎ পোশাক পরিধান করা জায়েজ নেই যা পরলে শরীরের রং,অবয়ব বুঝা যায় তা যদি বোরকাও হয়
তবুও। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলছেন- জাহান্নামবাসী দুটি দল রয়েছে। যাদেরকে আমি এখনো দেখিনি। একদল এমন লোক
যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন
নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকে। তারা অন্যদের তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে নিজেরাও অন্যদের
প্রতি ঝুঁকবে। তাদের মস্তক উটের পিঠের কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের
ঘ্রাণও পাবে না। অথচ এর ঘ্রাণ এত এত দূর থেকেও পাওয়া যায়। মুসলিম : ২১২৮
হাদিসে উল্লেখিত ‘পোশাক পরেও উলঙ্গ’ এর ব্যাখ্যায়
বলা হয়েছে, এমন সংক্ষিপ্ত পোশাক যা নারীর আবরণীয়
অংশ ঢাকতে যথেষ্ট নয়। এমন পাতলা পোশাক যা ভেদ করে সহজেই নারীর
ত্বক দেখা যায়। এমনকি টাইট কাপড় যা ভেদ করে ত্বক দেখা যায় না বটে তবে তা নারীর আকর্ষণীয়
অবয়বকে পরিস্ফূট করে দেয়।
রাসূল (ﷺ) তাদের বিষয়ে আরও বলেন, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের
সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে। [মুসলিম] এতে এ
কথা স্পষ্ট হয়, নারীদের জন্য
পাতলা ও মসৃণ কাপড় পরিধান করা মারাত্মক কবিরা গোনাহ।
“ইসলাম ধ্বংস করার
সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো,
মুসলিম নারীদের বেপর্দায় ঘর থেকে বের করা ।
হে নারী,তুমি কাদের এজেন্ডা
বাস্তবায়ন করছো,
একবার ভেবেছো কি ?!!
সূত্র:
হে
আমার মেয়ে-ড.আলি তানতাবি রহ.-হুদহুদ প্রকাশন ।
নারীরা পুরুষের পোশাক পরিধান করা কি জায়েজ? নারীর জন্য পুরুষের
পোশাক সাদৃশ্য এবং পুরুষের জন্য নারীর পোশাকের সাদৃশ্য পরিধান করা জায়েজ নেই। যেমন-হাদিস শরিফে এসেছে-
(১) যে নারী পুরুষের
সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
(২) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা নারীদের পোশাক পরে এবং সেসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে। আবু দাউদ-৪০৯৮
(৩) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
পুরুষদের বেশধারী নারীদের এবং নারীদের বেশধারী পুরুষদের অভিসম্পাত করেছেন। মুসনাদ আহমাদ-২০০৬
হিজাব/বোরকা
পরিধান করলেই কি পর্দা হবে ? পর্দার আসল উদ্দেশ্য হলো পরপুরুষ থেকে নারীর
সৌন্দর্য-অবয়ব ঢেকে রাখা যাতে পুরুষ লোক নারীর প্রতি আকর্ষিত না হয় সুতরাং এমন
বোরকা/হিজাব পরলে পর্দা হবে না যা দ্বারা পর্দা উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। যেমন কবি বলেন-
পর্দা নামে বোরকা
পরে, পর্দা কিন্তু করে না।
সত্য কথা বলছি
আমি, রাগ তো ভাই করো না।
অন্য কবি বলেন-পর্দা করতে তোমার যদি লজ্জা লাগে
তবে পুরুষদের
খারাপ ও লোলুপ দৃষ্টি
যখন তোমার সস্তা
দেহের ওপর পড়ে,
তখন কোথায় থাকে
তোমার লজ্জা,
কোথায় থাকে
আত্মমর্যাদাবোধ ?
হাদিস নং-৩৪,
সবর (ধৈর্য)
ও শুকর (কৃতজ্ঞতা) করা |
عن صهيب قال قال رسول الله صلىالله عليه وسلم
عَجَباً لأمْرِ المُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ لَهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذلِكَ
لأَحَدٍ إلا لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ وَكَانَ خَيْراً لَهُ
وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكانَ خَيْراً لَهُ
অর্থ: হজরত ছুহাইব
রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন- ঈমানদারের ব্যাপারটাই অদ্ভুত। বস্তুত ঈমানদারের প্রতিটি কাজই
তার জন্য মঙ্গলময়। আর এটা একমাত্র মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য। তার স্বচ্ছলতা অর্জিত হলে সে
শোকর করে, এটা তার জন্য কল্যাণকর। আবার তার ওপর কোনো বিপদ আসলে সে সবর করে, এটা তার জন্য
কল্যাণকর। সহিহ মুসলিম-২৯৯৯কিতাবুয যুহদ; সুনানে দারেমি-২৮১৯; মুসনাদে আহমদ-১৮৯৩৪,২৩৯৩০
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: মানুষের অবস্থা
দুই ভাগে বিভক্ত। ১. কিছু অবস্থা মানুষের মনের মত ও পছন্দনীয়। ২. আর এক অবস্থা
মানুষের মনের বিরোধী ও অপছন্দনীয়। প্রাপ্ত বস্তু, জিনিস মনের মত হলে শুকর আদায় করতে
হবে আর মনের বিরোধী- অপছন্দ হলে সবর করতে হবে। এখন আমরা জানবো, শুকর-সবর কাকে বলে এবং তা আদায়ের পদ্ধতি কি?
শুকর-এর আভিধানিক
অর্থ: শুকর শব্দটি আরবি। বাংলা এর প্রতি শব্দ হলো-কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করা, প্রশংসা করা, ধন্যবাদ দেয়া ইত্যাদি।
শুকর এর পারিভাষিক
সংজ্ঞা: উপকারীর উপকার মনে রাখে ও স্বীকার করে এমন। সূত্র: বাংলা অভিধান।
শুকর আদায়ের পদ্ধতি: সুখের অবস্থাকে,
(১) নিজ ক্ষমতায় অর্জিত মনে না করে আল্লাহর অনুগ্রহের
দান মনে করা। (২) আল্লাহর দান পেয়ে খুশী প্রকাশ করা। (৩)
ঐ অবস্থাকে নিজের প্রাপ্য দাবীর হক মনে না করে; বরং পজিশন বা মর্যাদা অপেক্ষা ঐ দানকে অতিরিক্ত-অধিক
মনে করা। (৪) আল্লাহর নেয়ামত পেয়ে মনে ও মুখে আলহামদুলিল্লাহ বারবার
বলে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং (৫) ঐ নেয়ামতকে
আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে কাজে খরচ না করে আরও অধিক আল্লাহর তাবেদারি ও লোকের উপকারের
দিকে ঝুঁকে পড়া। সূত্র: হায়াতুল মুসলিমিন; ২০১;
হজরত থানভি রহ.
সবর কাকে বলে? এ শব্দটি ও
আরবি আভিধানিক অর্থ ধৈর্য, ধীরতা, স্থিরতা,
সহ্য করা ইত্যাদি। পরিভায়ায় বলা হয়, যে গুণ দিয়ে
বিপদের সময়ও স্থির থাকা যায়। ইমাম নববি রহ. বলেন- অর্থাৎ আত্মাকে
অপছন্দীয় কাজ হতে বিরত রাখাকে সবর বলে। কেউ কেউ বলেন- অর্থাৎ কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলের
ওপর অটল থাকাই সবর।
সবর বা ধৈর্যের প্রকারভেদ: ইমাম
গাজালি (রহ.)-এর মতে সবর বা ধৈর্য পাঁচ প্রকার। যেমন-
১. আল্লাহর
ইবাদতে সবর। আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজ পালনে ধৈর্য ধারণকরা। উদাহরণ-ঠাণ্ডা পানি
দ্বারা অজু করা, বড় দিন ও গরমের দিনে রোজা রাখা।
২. আনন্দ
ও খুশীর সময় সবর। মানুষের ব্যক্তিগত
জীবনে, এমনকি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এমন অনেক সময় উপস্থিত হয়, যখন কাজের সফলতার জন্য আনন্দ ও খুশীতে আত্মহারা হয়ে সীমালংঘন করে। সে সময় ধৈর্যের সাথে
আল্লাহর শোকর আদায় করতে হবে, যাতে সীমালংঘন না হয়। ৩. অন্যায়
থেকে আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে সবর। অর্থাৎ নাফারমানি কাজ হতে ফিরতে যে অন্তরে চোট/আঘাত লাগে তাতে
ধৈর্য ধরা। উদাহরণ-নজর হেফাজত করা, যিনা থেকে
বিরত থাকা।
৪. বিপদ-আপদে সবর। বিপদ-মসিবতে ওপর সবর ইখতেয়ার করা। উদাহণ-নিজে বা পরিবার-পরজিন, আত্মীয়-স্বজন অসুস্থ হলে,
মারা গেলে, অভাব-অনটনে থাকলে
সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলার ওপর খুশি থাকা, অভিযোগ না করা।
৫. জুলুম ও
অত্যাচারের সময় । মানুষের জীবনে
কোনো কোনো সময় অত্যাচার নির্যাতন নেমে
আসতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশোধ গ্রহণ করার
ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জালিমকে ক্ষমা করা সবরের অন্তর্ভুক্ত।
হজরত লোকমান হাকিমের
নসিহত: তিনি তার সন্তানকে উপদেশ দিয়েছেন, এটা আল্লাহ পবিত্র
কুরআনে বর্ণনা করেছেন-হে বৎস! নামাজ কায়েম
কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর
এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা (ধৈর্য)
সাহসিকতার কাজ। সূরা লোকমান-১৭
সবর বা ধৈর্যের ফযিলত: অল্লাহ তাআলা বলেন-
(১) তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা
কর। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে
আছেন। সূরা বাকার-১৫৩
(২) আর যারা ধৈর্যশীল তাদেরকে আমি অবশ্যই তাদের কর্মের
চেয়ে উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করব। সূরা নাহল-৯৬
§ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন-
(৩) তোমার মধ্যে এমন দুটি স্বভাব রয়েছে, যা আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন, একটি হল ধৈর্য-সহিষ্ণুতা ও অপরটি হচ্ছে ধির-স্থিরতা। তিরমিজি-২১৪৩
(৪) যাকে চারটি জিনিস দান করা হয়েছে, তাকে যেন দুনিয়া-আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণই দান করা হয়েছে। (১) কৃজ্ঞত অন্তর (২) জিকিরকারী জিহ্বা (৩)
বিপদাপদে ধৈর্যশীল দেহ এবং (৪) এমন স্ত্রী যে নিজের শরীর (লজ্জাস্থানের) ও স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে খেয়ানত করে না। সুনানে বাইহাকি
(৫) কিয়ামতের দিন যখন (দুনিয়ার)
বিপদগ্রস্ত লোকের অগণিত সওয়াব দেয়া হতে থাকবে, তখন যারা বিপদ মসিবতে থেকে নিরাপদ ছিল, তারা কামনা করবে, হায়! যদি দুনিয়াতে তাদের চামড়া কাঁচি দ্বারা কাটা হত। (যাতে বিনিময়ে আজ দুনিয়ার বিপদগ্রস্তদের ন্যায় সওয়াব পেত।) জামে তিরমিজি-২৫৮২,কিতাবুয যুহদ
৩৪ নং হাদিস সমাপ্ত
---------------------------------------------------------------------------------------
একটি আমল
আল্লাহ তাআলার জাতি নাম আল্লাহ ও নিরানব্বইটি (৯৯টি) সিফাতি নামের
যিকির করা
আল্লাহ পাক বলেন- আর আল্লাহ অনেক উত্তম নাম রয়েছে, কাজেই
তোমরা তাঁকে সে নামসমূহ ধরে ডাক।
সূরা আরাফ-১৮০
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম আছে। যে ব্যক্তি তার হিফাযত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ
করবে। আর আল্লাহ তাআলা বেজোড়। তিনি বেজোড় পছন্দ করেন। ইবনে
উমর (রা.)
–এর বর্ননায় [مَنْحَفِظَهَا ] (হিফাযত করে) এর স্থলে [
" مَنْأَحْصَاهَا " ] (যে গণনা করে)
উল্লেখ আছে। সহিহ মুসলিম-৬৭০২; অনুচ্ছেদ: আল্লাহর নাম সমূহ ও তার
হিফাযতকারীর ফযীলত। আর সেগুলো
হচ্ছে-
আল্লাহ যিনি
ব্যতীত কোন মাবুদ নাই। (১) আররহমান (২) আররহীম
(৩) আলমালিকু (৪)
আলকুদ্দুসু (৫) আসসলামু (৬) আলমুমিনু (৭) আরমুহাইমিনু (৮) আলআযীযু (৯) আলজাব্বারু (১০) আলমুতাকাব্বিরু (১১) আলখলিকু (১২) আলবারি (১৩) আল মুসাব্বিরু (১৪) আলগফ্ফারু (১৫) আলকহহারু (১৫) আলকহহারু (১৬) আলওয়াহহাবু (১৭) আররাজ্জাকু (১৮) আলফাত্তাহু (১৯) আলআলিমু (২০) আলকবেযু (২১) আলবাসিতু (২২) আলখবেযু (২৩) আররফিয়ু (২৪) আলিবাসীরু (২৫) আলমুইযযু (২৬) আলমুযিল্লু (২৭) আসসামীউ
(২৮) আল বাছিরু (২৯)
আলহাকামু (৩০) আলআদলু (৩১) আললাতিফু (৩২) আলখবিরুর (৩৩) আলহালিমু (৩৪) আলআযীমু (৩৫) আলগফুরু (৩৬) আশশাকুরু (৩৭) আলআলিয়্যু-সর্বোচ্চ (৩৮) আলকাবীরু (৩৯) আলহাফীযু (৪০) আলমুকীতু (৪১) আলহাসীবু (৪২) আলজালীলু (৪৩) আলকারীমু (৪৪) আররকীবু (৪৫) আলমুজীবু (বাকি অংশ ১৪৬ পৃষ্ঠায় দেখুন)
হাদিসনং-৩৫,
রাগ সংবরণ করা |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصِنِي
قَالَ لَا تَغْضَبْ فَرَدَّدَ مِرَارًا قَالَ لَا تَغْضَبْ
হজরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবি (ﷺ) এর কাছে আরজ করলো, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বলবে, তুমি
রাগ কর না। লোকটি কয়েকবার একই কথা জিজ্ঞেস করলো। রাসূল (ﷺ) ও প্রত্যেক বারই বলবেন, তুমি
রাগ কর না। বুখারি-৬১১৬, কিতাবুল আদাব; তিরমিজি-২০২০; আহমদ-৮৭৪৪
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: আসল বাহাদুর
কে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-মল্লযুদ্ধে পরাজিত করতে পারে সেই প্রকৃত
বীর নয়, প্রকৃত বীর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারে। বুখারি ও মুসলিম
রাগ সংবরণের ফযিলত: পবিত্র কুরআনে
ইরশাদ হচ্ছে-(১) যারা রাগ সংবরণ ও দমন
করে, আমার বান্দাদেরকে দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দেয় এবং শুধু ক্ষমাই করে না; বরং তাদের
প্রতি এহসান ও দান-দাক্ষিণ্যও করে। এ সকল গুণের অধিকারী বান্দাগণ আল্লাহ তাআলার
মাহবুব ও প্রিয়পাত্র। সূরা আলে ইমরান-১৩৪
(২) প্রকৃত
মুমিনদের বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে যেয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন: “তারা কবিরা গোনাহসমূহ
ও অশ্লীল কর্ম বর্জন করে এবং যখন তারা রাগান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে। সূরা শূরা-৩৭
রাসূলে আরাবি (ﷺ) বলেছেন-(১) বিরক্তি ও রাগে উত্তেজিত অবস্থায় যদি কেউ রাগ প্রকাশ ও কার্যকর করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও
তা সংবরণ করে তবে আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার হৃদয়কে পরিতৃপ্তি ও সন্তুষ্টি দ্বারা
পূর্ণ করবেন। সূত্র: তাফসিরে রুহুল মাআনি , মাজমাউয যাওয়াইদ
(২) যে ব্যক্তি
তার জিহ্বার হেফাযত করে আল্লাহ তাআলাতার দোষ ঢেকে রাখবেন। আর যে ব্যক্তি নিজের রাগ
দমন করবে আল্লাহ তাআলার নিকট ত্রুটির ক্ষমা চায়বে,আল্লাহ তাআলাতার ওযর কবুল করবেন। সুনানে বাইহাকি
ফি শোয়াবুল ঈমান
রাগের ক্ষতি: বন্ধুগণ! রাগের ক্ষতি কত যে ভয়াবহ। আমরা সমাজের দিকে একটু
লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবো। রাগের কারণে কত সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে, খুনাখুনি,
ঝগড়া-ঝাটি, মামলা-মোকদ্দামা ইত্যদি হচ্ছে। রাগের মাধ্যমে শয়তান তার
কারসাজি হাসিল করে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন আমার বান্দাদেরকে বল, তারা যেন অধিকতর উত্তম কথা বলে; কারণ শয়তান তাদের মধ্যে মনোমালিন্য-অশান্তি-শত্রুতা সৃষ্টি করে; নিশ্চয় শয়তান মানুষের সুস্পষ্ট শত্রু। সূরা বাণী ইসরাঈল-৫৩
নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন- রাগ/গোস্বা মানুষের ঈমানকে নষ্ট করে দেয়
যেমনিভাবে তিক্ত ফল মধুকে নষ্ট করে দেয়। সুনানে বাইহাকি
রাগ/গোস্বার চিকিৎসা: কুরআন-হাদিস
ও অভিজ্ঞতার আলোকে মাশায়েখগণ এ রোগের চিকিৎসা লিখেন-
ü
সর্ব প্রথম যার ওপর রাগ এসেছে, তাকে সামনে
থেকে হটিয়ে দেয়া।
ü
আঊযু বিল্লাহিমিনাশ শাইত্বানির
রজীম বার বার মুখে বলা।
ü
পানি পান করবে।
ü
অজু করবে।
ü
দাঁড়িয়ে থাকলে বসবে, আর বসে থাকলে
শুয়ে পড়বে।
ü
চুপ থাকবে।
ü
শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন হলে, রাগ প্রশমিত
হলে দিবে।
ü
অতঃপর এ চিন্তা করবে যে, সে আমার নিকট
যতটা অপরাধী, আমি আল্লাহ তাআলার নিকট তার চেয়ে অনেক বেশি অপরাধী। যেভাবে আমি এ কামনা
করি যে, আল্লাহ তাআলা আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেন, আমারও উচিত
আমি তার অপরাধ ক্ষমা করে দিই।
একটি পরীক্ষিত আমল: কোন পরিবারের
সবার বা স্বামী/স্ত্রীর রাগ বেশি
হয় তাহলে মহিলাগণ যখন
খাবার রান্না করে, তা পরিবেশন করার আগে উক্ত খাবারে (ভাত,
রুটি, তরকারি, পানি,
ফল যাই হোক না কেন) তিনবার ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ বলে ফুঁ (ফুঁক) দিবে এবং এ খাবার
সবাই খাবে ইনশাল্লাহ এভাবে (৪০ দিন বা তার বেশি) আমল করলে সবার রাগ কমে যাবে।
সূত্র: আত্মার ব্যাধি
ও প্রতিকার, ক্রোধ দমন নূর অর্জন-হাকীম
আখতার রহ.
৩৫
নং হাদিস সমাপ্ত
-----------------------------------------------------------------------------
(৪৬)
আলওয়াসিউ (৪৭) আলহাকীমু (৪৮) আলওয়াদূদু (৪৯)আলমাজীদু (৫০) আলবায়িছু (৫১) আশশাহীদু (৫২) আল হাক্কু (৫৩) আলওয়াকীলু (৫৪) আলকবিয়্যু (৫৫) আলমাতীনু ৫৬) আলওয়ালিয়্যূ (৫৭) আলহামীদু (৫৮) আলমুহছি (৫৯) আলমুদিউ-আদি (৬০) আল মুহ্য়ী (৬১) আলমুমীতু
(৬২) আলহাইয়্যু (৬৩) আলকইয়্যূম (৬৪) আলওয়াজিদু (৬৫) আলমাজিদু (৬৬) আলওয়াহিদু (৬৭) আলআহাদু (৬৮) আসসামাদু (৬৯) আলকদিরু (৭০) আলমুকতাদিরু ৭১)আলমুকাদ্দিমু
(বাকি অংশ ১৫২ পৃষ্ঠায় দেখুন)
হাদিসনং-৩৬,
সাহাবা কেরামের মর্যাদা |
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
لا تَسبُّوا أصحابي فوالَّذي نَفسي بيدِهِ
لَو أنَّ أحدَكُم أنفَقَ مثلَ أُحُدٍ ذَهَبًا ما أدرَكَ مُدَّ أحدِهِم ولا نصيفَهُ
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা আমার সাহাবিগণকে গালমন্দ করো না। তোমরা আমার সাহাবিগণকে
গালমন্দ করবে না। সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন, যদি তোমাদের মধ্যে
কেউ উহুদ পাহাড় বরাবর স্বর্ণ ব্যয় করে তাহলেও তাঁদের কারোর এক মুদ অথবা অর্ধ মুদের
সমান হবে না। সহিহ মুসলিম-২৫৪০,কিতাবু ফাযায়েলুছ ছাহাবা; সুনানে মাজাহ১৬১; বুখারি-৩৬৭৩
নোট : বুখারির
বর্ণনায় শব্দ কিছু কম রয়েছে।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: ইসলামে হজরত সাহাবা কেরামের গুরুত্ব সমধিক। দ্বীন, ঈমান ও ইসলামের অতন্ত্র প্রহরী। নবি কারিম (ﷺ) এর সকল সাহাবিগণই সম্মান ও মর্যাদা পাওয়ার হকদার। প্রকাশ থাকে যে,
পরবর্তীকালে খারিজী, রাফিজী, মুতাজিলা, জায়েদিয়া, আশারিয়া, ইসমাঈলিয়া তথা শিয়া
মাযহাবের লোকজন নিজেদের ভ্রান্ত-ধারণার বশবর্তী হয়ে নবি কারিম (ﷺ) এর সম্মানিত সাহাবিদের বিরুদ্ধে অনেক অপবাদ দেয়ার মত ধৃষ্টতা ও
অপরাধপূর্ণ সমালোচনায় হয় মুসলিম
জতিকে পারস্পরিক বিভেদ ও বিচ্ছেদের প্ররোচনা
দিয়েছে। ইমাম ও হাক্কানি আলমগণ শত্রুদের ঐ
কৌশল ব্যর্থ করার জন্য পূর্ব যুগ হতেই সাহাবিদের
সম্পর্কে ইসলামের (Dimad) দাবী নির্ধারিত
করে দিয়ে
গিয়ছেন; যাতে শত্রুরা তাদের অপচেষ্টায় কৃতকার্য হওয়ার ছিদ্র পথ পেতে
না পারে।
সাহাবি কেরাম রা. কি সত্যের মাপকাঠি ? হজরতে
সাহাবা কেরাম রা. ছিলেন। ইসলামের ধারক-বাহক ,যাদের মাধ্যমে পূর্ণ দ্বীন হেফাযত হয়েছেন। আফসোস কিছু ভাই এ সম্মানিত
জামাআতকে সত্যের মাপকাঠি/মানদণ্ড মানেন না। নিম্নে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের
আলোকে প্রমাণ করবো যে, তারা সকলেই সত্যের মাপকাঠি।
কুরআনুল কারিম
দ্বারা প্রমাণ: হজরতে সাহাবা কেরাম যে, সত্যের
মানদণ্ড আল্লাহ তাআলা বলেন-
(১) তোমরা ঈমান আনয়ন কর, যেমন ঈমান এনেছে ঐ লোক সকল (সাহাবা কেরাম)। সূরা বাকারা-১৩
ব্যাখ্যা: সাহাবিদের
ঈমানের মত ঈমান আনয়ন করার নির্দেশ থেকে প্রমাণিত হয় সাহাবা কেরাম ঈমানের ক্ষেত্রে মাপকাঠি। ঈমান সবার আগে, এতেই যদি মাপকাঠি
হয় বাকি অন্যক্ষেত্রে মাপকাঠি তা সহজে অনুমেয়।
(২) মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা (ঈমান গ্রহণের দিক থেকে)
প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। সূরা তাওবা-১০০
(৩) আল্লাহ তাআলা সেই মুমিনের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন; যখন
তারা (হুদায়বিয়ার সন্ধির সময়) বৃক্ষের নীচে
আপনার কাছে শপথ করল। সূরা ফাতাহ-১৮
ব্যাখ্যা: যাদের ওপর মহান
আল্লাহ খুশি/সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন তারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।
(৪) আর যারা হিজরত করেছে এবং নিজ ব্সস্থান থেকে বিতাড়িত হয়েছে, আমার রাস্তায় নির্যাতিত হয়েছে, লড়াই করেছে ও শহীদ
হয়েছে। আমি তাদের মন্দকর্ম নিশ্চিহ্ন করে দিব এবং এমন এক জান্নাতে তাদের প্রবেশ
করাবো; যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত। সূরা ইমরান-১৯৪
(৫) আর তাদের
(মুহাজির ও আনসারগণ) প্রত্যেকের জন্যই আল্লাহ
তাআলা কল্যাণের (ক্ষমা ও জান্নাতের) ওয়াদা
দিয়েছেন। সূরা হাদীদ-১০
(৬) নিশ্চয় যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর
কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের উপর রয়েছে।---এবং যে আল্লাহর
সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহা পুরস্কার
দান করবেন। সূরা ফাতাহ-১০
(৭) আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সাথে তার কৃত প্রতিশ্রুতিকে সত্যে পরিণত করে
দেখিয়েছেন,যখন তোমরা আ্লাহর অনুমতিক্রমে তাদেরকে প্রচুরহারে
হত্যা করছিল । এমনকি তোমরা যখন নিজেরাই দুর্বল হয়ে পড়লে এবং নির্দেশ সম্বন্ধে পরস্পর মতভেদ করতে
লাগলে। ...আর অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বড়
অনুগ্রহশীল। সূরা আলে ইমরান-১৫২
(৮) সেদিন
আল্লাহ নবি এবং তার বিশ্বাসী সহচরদেরকে (সাহাবিদেরকে) অপদস্থ করবেন না। (সূরা
আত-তাহরীম) অপদস্থ করবেন না মানে জাহান্নামে দিবেন না। এর ব্যাখ্যা অন্য
আয়াতে আল্লাহ বলেন-হে আমাদর প্রতিপালক! নিশ্চয় আপনি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করবেন তাকে
তো সবসময় অপদস্থ/অপমানিত করলেন আর জালেমদের জন্যে তো সাহয্যকারী নেই। সূরা আলে
ইমরান-১৯২
ব্যাখ্যা: সকল সাহাবি
জান্নাতি, জাহান্নামের আগুন তাদেরকে কখনও স্পর্শ করবে না। তারা ক্ষমা প্রাপ্ত দল। ৭নং আয়াতে কতিপয় সাহাবের মতানৈক্যর
কথা উল্লেখ করার পরপরই তাদের প্রতি ক্ষমার ঘোষণা প্রচার করা হয়েছে। অতত্রব, ক্ষমা প্রাপ্ত,
জান্নাতি জামাআত অবশ্যই সত্যের মানদণ্ড।
(৯) মুমিনগণের মধ্যে এমন কতক ব্যক্তি রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ মৃত্যু বরণ
করেছে আবার কেউ প্রতীক্ষায় রযেছে। সূরা আহযাব-২৩
ব্যাখ্যা: যাদের ওয়াদা
পূর্ণ করার ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন। সুতরাং ওয়াদা পূর্ণকারী দল
অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।
(১০)
আল্লাহ তাআলা (দ্বীনের জন্য) তোমাদেরকে বাছাই করেছেন এবং তোমাদের জন্য দ্বীনের মধ্যে কোন প্রকারের সংকীর্ণতা
রাখেন নি। সূরা হজ-৭৮
(১১)
তারপর আমি কিতাবের অধিকারী করলাম আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে আমি মনোনীত
করলাম। সূরা ফাতির-৩২
এক হাদিসে আছে, নবি কারিম
(ﷺ) বলেছেন- আল্লাহ তাআলা নবি-রাসূলগণের
পর সমস্ত বিশ্ব ভূ-মণ্ডলে আমার সাহাবিগণকে মনোনীত করেছেন। মুসনাদে বাযযার, সূত্র:
মাকামে সাহাবা-৬০ মুফতি শফি রহ. ; আল জামি লিআহকামিল কুরআন, ইমাম কুরতবি রহ.-৮/১৯৬
ব্যাখ্যা: যাদেরকে আল্লাহ
তাআলা নিজে নির্বাচন, মনোনীত করেছেন, তারা
সত্যের মাপকাঠি হবে না কেন ?
(১২)
অতঃপর তারা আল্লাহর মহা নেয়ামত ও অনুগ্রহ নিয়ে ফিরে এল, এমতাবস্থায় যে, কোন অনিষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং
তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুগত রয়েছে। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। সূরা আলে ইমরান-১৭৪
এ আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের
প্রশংসা করা হয়েছে যে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসনন্ধান করতেন। খারাপি তাদেরকে ষ্পর্শ
করেনি। সুতরাং তারা সত্যর মাপকাঠি।
(১৩)
কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং তোমাদের
হৃদয়গ্রাহী করেছেন। আর পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের নিকট অপ্রিয়। তারাই সৎপথ
অবলস্বনকারী। সূরা হুজুরাত-০৭
(১৪)
আল্লাহ তাদের অন্তরকে শিষ্টাচারের জন্যে শোধিত করেছেন,পরীক্ষা করেছেন। সূরা হুজুরাত-০৩
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তাআলা
নিজে তাঁদের ঈমানের দৃঢ়তা ও পাপাচার থেকে মুক্ত থাকার আন্তরিক আগ্রহের কথা ঘোষণা
করেছেন এবং তাদের অন্তর নিজে যাচাই,পরীক্ষা করেছেন। সুতরাং এ জামাত
অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।
(১৫)
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং
মুমিনর পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে তবে
যে দিকে সে ফিরে যায় সে দিকই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব,আর তা কত মন্দ আবাস। সূরা নিসা-১১৫
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে
মুমিন বলতে সাহাবায়ে কেরামকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তাঁরাই মুমিনের
সর্বপ্রথম এব সর্বশ্রেষ্ঠ জামাআত। তাদের অনুসরণ না করলে বরং জাহান্নামের শাস্তির ঘোষণা এসেছে, অতত্রব
তাঁরা তো সত্যের মাপকাঠি তো বটেই, তাদের অনুসরণ করা উম্মতের
জন্য ওয়াজিব সাব্যস্ত হলো।
হাদিসে নববি দ্বারা
প্রমাণ: এ সম্পর্কে স্বয়ং নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন-
(১) বনী ইসরাঈল
বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত হবে তিয়াত্তর দলে। আর তাঁদের একটি দল ব্যতীত
সবাই জাহান্নামে যাবে। সাহাবা কেরাম জিজ্ঞেস করলেন; হে আল্লাহর রাসূল! সেদল কোনটি? উত্তরে তিনি বললেন, আমি ও আমার সাহাবাগণ যে দলে আছি, তার উপর যারা কায়েম
থাকবে তারা। জামেউত তিরমিজি-২৮৫৩, কিতাবুল ঈমান
(২) আমার পরে যারা জীবিত থাকবে তারা নানান রকম মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য
হবে আমার সুন্নাত ও আমার হেদায়েত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত আঁকড়ে ধরবে এবং
দাঁত দ্বারা কামড়ে ধরবে। আবু দাউদ-৪৬০৯, কিতাবুস সুন্নাহ
(৩) আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি (সাহাবাগণ),
অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী (তাবেঈগণ),
অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী (তাবে তাবেঈনগণ)। বুখারি-২৬৫২,২৬৫১
(৪) আবদুল্লাহ
ইবন মাসঊদ রা. বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ
যদি অনুসরণ করতে চায় তবে সে জন্য মুহাম্মদ (ﷺ) -এর সাহাবিগণেরই অনুসরণ করে। কারণ, তাঁরাই
ছিলেন এ উম্মতের মধ্যে আত্মার দিক থেকে সবচে বেশি নেককার, এলেমের
দিক থেকে গভীরতর, লৌকিকতার দিক থেকে সল্পতম, আদর্শের দিক থেকে সঠিকতম, অবস্থার দিক থেকে শুদ্ধতম। তাঁরা এমন
সম্প্রদায় আল্লাহ যাদেরকে আপন নবি (ﷺ) -এর সংস্পর্শ ধন্য হবার জন্য এবং তার দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে
বাছাই করেছেন। অতএব তোমরা তাঁদের মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করো। কারণ, তাঁরা
ছিলেন সীরাতে মুস্তাকীমের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আবু নাঈম, হিলইয়াতুল
আওলিয়া : ৩০৫/১
মনীষীদের দৃষ্টিতে
সাহাবা কেরাম: কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সাহাবা কেরামের নির্ধারিত
এ মর্যাদা সম্পর্কে সর্ব যুগে উলামায়ে কেরাম একমত পোষণ করে আসছেন। যেমন,
(১) শ্রেষ্ঠতম তাবিঈ হজরত ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহ., সাহাবা
কেরামের মর্যাদা সম্বন্ধে বলেন, সাহাবা কেরামের অনুসৃত পথ গ্রহণ
করাই সকল মুসলিমের কর্তব্য। সুনানে আবু দাউদ, সূত্র: মাকামে সাহাবা,
মুফতি মুহাম্মাদ শফি রহ.
(২) আল্লামা ইবন সলাহ রহ. উলূমুল হাদিস গ্রন্থে লিখেছেন-
সাহাবায়ে কেরামের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য এই যে, তাদের কারোই আদালত ও ন্যায় পরায়ণতা সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধানের কোন প্রয়োজন
নেই। কেননা তা কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের উজমার দ্বারা সুপ্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা তাদের
সম্বন্ধে ইরশাদ করেন- তোমরা মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রেরিত শ্রেষ্ঠ উম্মাত।
(৩) ইমাম আবু যুরআ (রহ.) বলেন,
যখন তুমি কোনো ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সাহাবিগণের কোনো একজনের
মর্যাদাহানী করতে দেখবে তখন বুঝে নেবে যে সে একজন ধর্মদ্রোহী নাস্তিক। আর তা এ কারণে যে, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) আমাদের কাছে সত্য, কুরআন
সত্য। আর এ কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের কাছে পৌঁছিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর ছাহাবায়ে কিরাম। নিশ্চয় তারা চায়
আমাদের প্রমাণগুলোয় আঘাত করতে। যাতে তারা কিতাব ও সন্নাহকে বাতিল করতে পারে। এরা হলো
ধর্মদ্রোহী নাস্তিক। এদেরকে আঘাত করাই শ্রেয়। খতীব বাগদাদি, আল-কিফায়াহ
ফী ইলমির রিওয়ায়াহ-১১৯/১
সাহাবা কেরামের সমালোচনা
ও গালি দেওয়া হওয়া হারাম: এ মোবারক জামাতের যে কাউকে গালি বা সমালোচনা
করা হারাম। এ সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেন-(১) আমার সাহাবায়ে কেরামের
ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তাঁদেরকে গালিগালাজ ও ঠাট্টা-বিদ্রুপের
লক্ষ্যস্থলে পরিণত কর না। জেনে রাখ! যে ব্যক্তি তাঁদের ভালবাসল, সে যেন আমাকেই ভালবাসল। আর যে ব্যক্তি তাঁদের সাথে শত্রুতা পোষণ করল,সে যেন
আমার সাথেই শত্রুতা করল।যে ব্যক্তি তাঁদেরকে কষ্ট দিল, পক্ষান্তরে
সে আমাকেই কষ্ট দিল। আর আমাকে যে কষ্ট দিল, সে তো আল্লাহ তাআলাকে কষ্ট দিল। আর খুব সম্ভবনা
আছে যে, আল্লাহ তাআলা এমন লোকদেরকে শাস্তিতে লিপ্ত করবেন। জামেউত তিরমিজি-৪২৪০,
কিতাবুল মানাকিব
(২) যে ব্যক্তি আমার সাহাবিকে গালি দেয় তার উপর আল্লাহ তাআলা, ফেরেশতা এবং সমস্ত মানুষের অভিসাপ। তাবারানি, সহিহ আল
জামে
বিজ্ঞ আলেমদের
দৃষ্টিতে গালি-সমালোচনা করা: (১) হজরত আবু যুরআ রা.
বলেন, যখন তোমরা এমন লোককে দেখ, যারা সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করছে, তাহলে বুঝে নিবে যে সে হলো যিন্দীক। আল-আছাবা, ১ম খণ্ড;
পৃ.১১
(২) ইমাম মালেক রহ. বলেন, সাহাবাদেরকে
যারা হেয় প্রতিপন্ন করতে চায়, তাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) কে হেয় প্রতিপন্ন
করা।
সাহাবায়ে
কেরামারের মধ্যে যে যুদ্ধ বিগ্রহ সংঘটিত হয়েছে এ সম্বন্ধে মুসলিম উম্মাহর সর্বজনীন
সিন্ধান্ত এই যে, তাঁদের এ সব কর্মকাণ্ড ইজতিহাদের ভিত্তিতে সংঘটিত হয়েছে। এ সম্পর্কে এক প্রশ্নের
জওয়াবে হজরত হাসান বসরি রহ. বলেন, এ সব যুদ্ধে সাহাবিগণ
উপস্থিত ছিলেন এবং আমরা ছিলাম অনুপস্থিত। তাঁরা সম্পূর্ণ অবস্থা জানতেন
কিন্তু আমরা জানি না। সুতরাং যে বিষয়ে সাহাবিগণ একমত আমরা তা অনুসরণ করবো। আর যে বিষয়ে তারা দ্বিধা
বিভক্ত আমরা তাতে নীরবতা অবলম্বন করবো।
(৩) আল্লামা হাফেয যাহাবি রহ. বলেন-যে ব্যক্তি সাহাবা কেরামকে কোন প্রকার অপবাদ দিল বা তাদেরকে মন্দ বললো,
সে ইসলাম ধর্ম থেকে বের হয়ে গেল এবং মুসলমানের দল থেকে সে ছিটকে পড়লো। তিনি আরও বলেন- যে ব্যক্তি
সাহাবা কেরামের ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করে, তাদের বদনাম ছড়াতে
থাকে এবং তাঁদের ব্যাপারে কোন মিথ্যা অপবাদ দেয়, সে ব্যক্তি অবশ্যই
মুনাফেক। আল-কাবায়ের-২৩৯
বিস্তারিত দেখুন-বুখারি শরিফ;
৭মখণ্ড, ২৩৫পৃ.-আল্লামা আজিজুল
হক রহ. হামিদিয়া লাইব্রেরি, ইতিহাসের কাঠগড়ায়
হজরত মোয়াবিয়া রা.-আল্লামা বিচারপতি
তকি উসমানি দা.বা.
-------------------------------------------------------------------------------
(৭২)আলমুআখখিরু (৭৩) আলআউয়ালু (৭৪) আল আখিরু (৭৫) আযযাহিরু (৭৬) আলবাতিনু (৭৭) আলওয়ালী (৭৮) আল মুতাআরী (৭৯) আর বারু (৮০) আততাওয়াবু (৮১) আলমুনতাকিমু (৮২) আলআফুব্বু (৮৩) আররউফু- (৮৪) মালিকুল মুলক (৮৫) যুলজালালি ওয়া ইকরাম (৮৬) আলমুকসিতু (৮৭) আলজামিউ (৮৮)আর গনিয়্যু (৮৯) আরমুগনিয়ু (৯০) আলমানিউ (৯১) আদদ্বররু (৯২) আননাফিউ (৯৩) আননূরু (৯৪) আলহাদিয়ু (৯৫)
আলবাদিউ (৯৬) আলবাকী (৯৭) আরওয়ারিছু (৯৮) আররশীদু (৯৯) আসসবুরু।
হাদিসনং-৩৭, পুরুষের টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করার বিধান |
أَبِي،هُرَيْرَةَ قَالَ
قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صلى
الله عليه
وسلم: مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِفَفِي النَّارِ"-رواه البخارى
অর্থ: আবু
হুরায়রা
(রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে
ব্যক্তি টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে সে জাহান্নামি। বুখারি-৫৭৮৭, কিতাবুল লিবাস; মুসলিম-২০৮৭; আদু দাউদ-৬৩৮; নাসায়ি-৫৩৩০; মুয়াত্তা মালেক-২৬৫৫
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: বুখারি শরিফের অপর এক হাদিস শরিফে এসেছে- আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার (টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী) রহমতের নজরে তাকাবেন না । কিতাবুল লিবাস-৫৭৯১ এতে প্রমাণিত হয় যে,
টাখনু ঢাকা কবিরা গোনাহ কারণ ছগিরা গোনাহের জন্য দোযখের শাস্তি হয়
না। হজরত মাওলানা খলীল
আহমদ সাহারানপুরি রহ. বলেন-হাদিসে উযার শব্দের দ্বারা ঐ সকল
পোশাক উদ্দেশ্য যা ওপর থেকে নিচের দিকে
আসে। যেমন-লুঙ্গি, পায়জামা, কোর্তা,
পাগড়ি ইত্যাদি। পক্ষান্তরে যে পোশাক নিচ থেকে ওপরের দিকে আসে এমন পোশাক
দ্বারা টাখনু ঢাকলে কোন গোনাহ হবে না।যেমন –মোজা। সূত্র: বযলুল মাজহুদ শরহে আবু দাউদ
স্মরণীয় যে, দুই অবস্থায় টাখনু না ঢাকা
ওয়াজিব(১) দাঁড়ানো অবস্থায় (২) চলমান অবস্থায়। হ্যাঁ, বসা বা
শোয়াবস্থায় ঢাকা থাকলে কোন গোনাহ নাই। সূত্র: দরসে তিরমিজি-মুফতি তকি উসমানি দা.বা.,আল্লাহর প্রেমের
সন্ধানে –হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী
দাড়ি রাখার হুকুম
কি? এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখা ওয়াজিব। বেতর, দুই ঈদের নামাজ যেমন ওয়াজিব। এ বিষয়ে আলেমদের
কোন দ্বিমত নাই। অবশ্য দু’একজন বিছিন্ন মত দিয়েছেন তা উম্মতের কাছে পরিত্যাজ্য। কেননা রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)
আমরের সীগা ব্যবহার করেছেন অর্থাৎ নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন
করা অবশ্য কর্তব্য/ওয়াজিব। দাড়ি রাখা সকল
মুসলমান পুরুষের জন্য ওয়াজিব। দাড়ি না রেখে
মুণ্ডন করা আল্লাহর
সৃষ্টিকে বিকৃত করার শামীল। কেননা আল্লাহ তাআলা পুরুষদের চেহারাকে দাড়ি দ্বারা
সৌন্দর্য মণ্ডিত করেছে। সূত্র: তাফসিরে বয়ানুল
কুরআন, তাফসিরে হক্কাকি
কুরআনুল কারিম দ্বারা
দলিল: আল্লাহ তাআলা বলেছেন: তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের
উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি যার উপর মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন
পরিবর্তন নেই। এটাই সরল-সঠিক ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। সূরা রূম-৩০ কাজেই যারা
দাড়ি কামায় তারা আল্লাহর সৃষ্টি ও প্রকৃতিতে বিকৃত করে যা হারাম।
(২) তাঁরা সে সব মানব (নবি-রাসূল)
যাদেরকে আল্লাহ তাআলা হেদায়েত দান করেছেন, কাজেই
তাদের পথই তোমরা অনুসরণ কর। সূরা আনয়াম-৯০ এক লাখ চব্বিশ হাজার (এ রকম-বেশি আল্লাহ ভাল জানে) নবি-রাসূলের সম্মিলিত বা ঐক্যমতে সুন্নাত। তাঁদের মুবারক-পবিত্র জামাতের
অনুসরণ করতে উক্ত আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হাদিসে নববি দ্বারা
দলিল:
(১)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা গোঁফ বেশী ছোট রাখবে এবং দাড়ি বড় রাখবে। বুখারি-৫৪৬৫
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
(২) তোমরা মুশরিকের বিপরীত কর, দাড়ি লম্বা কর এবং গোঁফকে কর ছোট। বুখারি; মুসলিম-২৫৯ ই.ফা.; মুসনাদে আহমদের-২১২৫২ বর্ণনায়, ইয়াহুদি-নাসারাদের বিরোধিতা করে দাড়ি লম্বা আর গোঁফ ছোট করার নির্দেশ
দিয়েছেন।
(৩) দশটি বিষয় হল ফিতরাতের
(স্বভাব ধর্মের) অন্তর্ভুক্ত। (১) গোঁফ খাটো করা (২)
দাড়ি
লম্বা করা---------। ইবনে মাজাহ-২৯৩; মুসলিম
এ প্রসঙ্গে বুখারি শরিফের প্রসিদ্ধ
ব্যাখ্যাকার হাফেজ ইবনে হযুর রহ.
বলেছেন, তৎকালে মোশরেক-মজুসীরা দাড়ি ছেঁটে-কেটে ছোট করে রাখত। তাদের কেহ কেহ
সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলত। সুতরাং দাড়ি সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলা যে রূপ ইসলামের আদর্শের
পরিপন্থী, তদ্রূপ কেঁটে-ছেটে বিশেষ পরিমাণ হতে ছোট করে ফেলা ও ইসলামের
আদর্শের পরিপন্থী। সূত্র: বুখারি শরিফ -৬ষ্ঠ খণ্ড; ২৫০ পৃ.আল্লামা আজিজুল
হক রহ.
হানাফি মাযহাবের
প্রসিদ্ধ গ্রন্থ দুররুল মুখতারে (২য় খণ্ড/৪৫৯ পৃ.) বলা হয়েছে, পুরুষের জন্য দাড়ি কর্তন করা নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, দাড়ি এক মুষ্টির বেশী হলে তা কেটে ফেলা
ওয়াজিব। কিন্তু এর চাইতে বেশী কর্তন করা হারাম। যেমনটি পশ্চিমা দেশের লোকেরা এবং খোঁজা
পুরুষেরা করে তা কেউ বৈধ বলেননি। আর দাড়ি সম্পূর্ণটাই কেটে চেঁছে ফেলা হিন্দুস্থানের ইয়াহুদি
ও কাফের-মুশরেকদের কাজ।” মালেকী মাযহাব মতে
দাড়ি কাটা হারাম। (আল আদাভি আলা শারহে
কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানি ৮ম খণ্ড ৮৯ পৃ.)
ইমাম শাফেঈ (রহ.) তার
প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘আল উম্ম’ উল্লেখ করেছেন যে, দাড়ি কর্তন করা হারাম। শাফেঈ মাযহাবের
আলেম আযরাঈ বলেন, সঠিক কথা হচ্ছে কোন কারণ ছাড়া সম্পূর্ণ দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম। হাওয়াশি শারওয়ানি ৯ম খণ্ড ৩৭৬ পৃ.
হাম্বলী মাযহাবের
বিদ্বানগণও দাড়ি মুণ্ডনকে হারাম। বলেছেন। (ইনসাফ,
শরহে
মুন্তাহা)
অতএব দাড়ি মুণ্ডন
করা বড় পাপ। এ থেকে তওবা করা আবশ্যক। অবশ্য দাড়ি মুণ্ডন করা ও কেটে ছোট করার পাপ এক সমান নয়। যদিও উভয়টিই
পাপের কাজ। অনেক মানুষ দাড়ি মুণ্ডন করাটাকে খুবই ছোট ও তুচ্ছ ব্যাপার মনে করে। কিন্তু ইহা মুণ্ডন
করা কোন সময় সবচেয়ে বড় গুনাহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। কেননা এটা
প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম। আর প্রকাশ্যে এভাবে অন্যায়ে লিপ্ত হয়ে তওবা
না করলে হতে পারে দাড়ী মুণ্ডনকারী আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে না। কেননা নবি (ﷺ) বলেন,
كُلُّأُمَّتِيمُعَافًىإِلاالْمُجَاهِرِينَ আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে
পাপের কাজে লিপ্ত হয় তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না। বুখারি
দাড়ি কি পরিমাণ
লম্বা রাখা উচিত বা ওয়াজিব: এক মুষ্ঠি দাড়ি
রাখা ওয়াজিব। হজরত ইবনে ওমর রা.
যখন হজ
করতেন, তখন নিজ দাড়িকে হাতের
মুঠার মধ্যে ধরে একমুষ্ঠি চেয়ে বাড়তি অংশ
কেটে ফেলতেন। বুখারি ২য় খণ্ড,৮৭৫ পৃষ্ঠা। এরূপ আমল হজরত ওমর রা. এবং আবু হুরাইরা রা. হতেও বর্ণিত আছে। ফাতহুল বারি -১০/২৮৮
আল্লামা শামিরহ. লিখেছেন- অর্থাৎ যেভাবে কিছু মাগরেবের (স্পেন,মরক্কো) বাসিন্দা ও হিজড়া
লোকেরা এক মুষ্ঠির চেয়ে খাট করে দাড়ি কেটে ফেলে, কোন ইমামের
(আলেম) মতেই তা জায়েজ নাই। সূত্র: ফতোয়ায়ে শামি ২য় খণ্ড; ১২২ পৃষ্ঠা।
অনেকে দাড়ি বেশি
লম্বা করে, এটা ঠিক নয়। কারণ ইহুদিরা এখন লম্বা
দাড়ি রাখে। আর হজরত ইবনে ওমর রা. এর চেয়ে আমরা বেশি সুন্নাতে অনুসারী নয়। তিনিই যখন এক
মুষ্ঠির বাড়তি অংশ কেটে ফেলেছেন তথন আমাদের কি করণীয় ?
বিস্তারিত দেখুন- নায়লুল হাজাহ শরহে সুনানে ইবনেব মাজাহ-৩১৪ পৃষ্ঠা,
মাআরেফে
আবরার-১৪০ পৃষ্ঠা,‘দাড়ি কা ওজুব’ দাড়ি রাখার আবশ্যকীয়তা
মুমিন!
তুমি কি চাও না যে
তোমার মুখচ্ছবিটি
হোক ঠিক ঐ রকম
যে রকম ছিল তোমার
প্রিয় নবি
হজরত
মুহাম্মাদ
(ﷺ) –এর মুখচ্ছবি ।
হাদিস নং-১,৩৮, ৩৯,৪০ |
চারটি
হাদিসের পটভূমি
মুসলমানদের মাঝে হাদিস
শরিফের প্রসিদ্ধ ৬টি কিতাব যাকে ছিয়া ছিত্তাহ/কুতুবে ছিত্তাহ বলা হয়। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ
হলো-সুনানে আবু দাউদ এ গ্রন্থের লেখক বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আবু দাউদ সুলাইমান
ইবনে আশয়াস সিজিস্তানি রহ. বলেন-আমি আমার
এ সুনানে পাঁচ লাখ হাদিস থেকে বাছাই করে রচনা করছি। উল্লেখ্য, এ কিতাবে ৪,৮০০ (চার হাজার আটশত) হাদিস আছে। অতঃপর তিনি তার কিতাব
থেকে ইসলামি জীবন বিধানের সার্বজনীনতা ও স্বয়ং সম্পূর্ণ তার নমুনা হিসেবে চারটি (৪টি)
হাদিস নির্বাচন করে পেশ করেছেন-)সূত্র: আদওয়ায়ু আলাস সুনানিল মাহমুদিয়া-২/৬১)
(১) عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ (ﷺ) " إِنَّمَاا لْعَمَلُ بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لاِمْرِئٍ مَا
نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى
اللَّهِ وَرَسُولِهِ (ﷺ)
وَمَنْ
كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا،
فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ "
(২)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مِنْ
حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ " অর্থ: মানুষের (জন্য) ইসলামের সৌন্দর্য হল, নিরর্থক কথা-কাজ-চিন্তা বর্জন
করা। তাখরীজ: জামে তিরমিজি -২৩১৭; ইবনে মাজাহ-৩৯৭৬
(৩) عَنْ النُّعْمَانِ
بْنِ بَشِيرٍ
- رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا
- قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يَقُولُ - وَأَهْوَى النُّعْمَانُ بِأُصْبُعَيْهِ إلَى أُذُنَيْهِ - «إنَّ الْحَلَالَ
بَيِّنٌ،
وَالْحَرَامَ
بَيِّنٌ،
وَبَيْنَهُمَا
مُشْتَبِهَاتٌ،
لَا يَعْلَمُهُنَّ
كَثِيرٌ مِنْ النَّاسِ،
فَمَنْ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ
فَقَدْ اسْتَبْرَأَ
لِدِينِهِ
وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ: كَالرَّاعِي
يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى
يُوشِكُ أَنْ يَقَعَ فِيهِ، أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى، أَلَا وَإِنَّ حِمَى اللَّهِ مَحَارِمُهُ،
أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ
مُضْغَةً
إذَا صَلُحَتْ
صَلُحَ الْجَسَدُ
كُلُّهُ،
وَإِذَا فَسَدَتْ
فَسَدَ الْجَسَدُ
كُلُّهُ،
أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
অর্থ: হালাল সুস্পষ্ট,
হারাম ও সুস্পষ্ট। উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট-সন্দেহজনক বিষয়
রয়েছে। অধিকাংশ লোকই অবগত নয় যে, এ গুলো হালাল না কি হারাম। সুতরাং যে ব্যক্তি
এ সব সন্দেহজনক জিনিস থেকে দুরে থাকল, সে তার দ্বীন ও ইজ্জতকে হেফাযত করল। আর যে ব্যক্তি সন্দেজনক
বিষয়সমূহে জড়িয়ে পড়লো, সে হারাম বিষয়ের মধ্যে পতিত হলো। যেমন কোন রাখাল রাষ্ট্রের সংরক্ষিত
চারণ ভূমির আশে পাশে তার পশু পাল চড়ালে সেগুলো তাতে ঢুকে পড়ার আশংকা থাকে। জেনে রাখ! প্রত্যেক শাসকের
একটি নিষিদ্ধ (সংরক্ষিত) চারণ ভূমি থাকে। জেনে রাখ! আল্লাহ তায়ালা
চারণ ভূমি হচ্ছে তার হারাম কৃত বিষয়সমূহ। জেনে রাখ! মানব দেহের
মধ্যে একটি গোস্তের টুকরা আছে। যদি তা সুস্থ থাকে, তাহলে পুরো
শরীরই সুস্থ থাকে। আর যদি তা নষ্ট হয়ে যায়, তবে সর্ব শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। জেনে রাখ! সেটাই হলো
কলব (অন্তর)। তাখরীজ: নাসায়ি-৪৪৫৩; ইবনে মাজাহ-৩৯৮৪; বুখারি-২০৫১, মুসলিম-১৫৯৯
নোট : ইবনে মাজাহর
বর্ণনার শব্দ বেশি আছে।
(৪) عَنْ
أَنَسٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ، قَالَ : لا
يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ অর্থ: মুমিন ততক্ষণ পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না সে মুসলমান ভাইয়ের জন্য সেই
জিনিস পছন্দ করবে, যা সে নিজের
জন্য পছন্দ করে। তাখরীজ: বুখারি-১৩; মুসলিম-৪৫; নাসায়ি-৫০১৬; তিরমিজি-২৫১৫
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: একটু চিন্তা করলে দেখা
যায়, বাস্তবে একজন প্রকৃত
মুমিন-মুসলমান যদি উপরোক্ত
হাদিসের মূলনীতির ওপর আমল
করে, তাহলে অবশ্যই সে দুনিয়া-আখেরাতে চূড়ান্ত
সফলতা লাভ করবে।
প্রথম হাদিস: প্রথম হাদিসটি ১নং হাদিস
শিরোনামে কিতাবের শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় হাদিস: একজন মুসলমানের কেমন গুণ
থাকা প্রয়োজন তথা ইসলামের
সৌন্দর্য ও পূর্ণনার
দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ নিরর্থক কথা, কাজ, দৃষ্টি ও চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদি বর্জন করে চলা
এবং আল্লাহ আদেশ-নিষেধ সমূহকে যথাযথ ভাবে শিরোধার্য
করে নেওয়া। আল্লাহ পাক কৃতকার্য
মুমিনদের গুণাগুণ বর্ণনা করতে বলেন- মুমিনগণ সফলকাম
হয়ে গেছে। যারা
নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র;
যারা
অনর্থক কথা-কাজ-চিন্তা থেকে বিরত থাকে। সূরা মুমিনুন, ১-৩
সময়ের গুরুত্ব: রাসূলে আকরাম (ﷺ) বলেন- স্বাস্থ্য ও অবসর-এ দুইটি নেয়ামতের
(সদ্ব্যাবহারের) ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ
ধোঁকার মধ্যে রয়েছে। বুখারি, মিশকাত-৪৯২৮
জনৈক বুযুর্গ
বলেন- الوقت هي حياة فلا تقتله অর্থ: আরে সময়
সে তোই জীবন, সুতরাং তাকে তুমি (অযথা কাজে-কর্মে) হত্যা কর না। আল্লামা সুয়ূতি রহ. তার জমউল জাওয়ামে গ্রন্থে একটি হাদিস
সংকলন করেছেন: রাসূল (ﷺ) বলেছেন- প্রতিদিন সকালে
যখন সূর্য উদিত হয়, তখন দিন এ মর্মে ঘোষণা
করে-অর্থাৎ আজ যদি কেউ নেক আমল করতে পারে,
তাহলে সে তো করে নিক কেননা আমি তোমাদের কাছে আর কখনই পুনরায় আসব না । (আর যে দিন যায়
সেদিন আর কখনও ঠিরে আসে না )
আবুদ্দারদা (রা.) বলেছেন, মানুষের বুদ্ধিমত্তার অংশ বিশেষ হল নিরর্থক বিষয়ে কথার স্বল্পতা। আদাবুল মুজালিসাহ
: পৃ : ৬৮
“Time tide and life wait for none.But one
person is waiting for you.Do you know? Who is he ?He is Azrail .So be carful.He
must came and take you jan.”
অর্থাৎ “সময়, ঢেউ ও জীবন কারো জন্য অপেক্ষা করে না। কিন্তু একজন
ব্যক্তি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে । তুমি কি তা জান? সে কে ? তিনিই হলেন
আজরাঈল আ। সুতরাং সতর্ক হও। সে অবশ্যই তোমার কাছে আসবে এবং তোমার জান নিয়ে যাবে।” হে আমার জাতি! আমি তোমাদের জন্য বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য দরদী বন্ধু; কল্যাণকামী।( অতত্রব,
বুঝার কিছু থাকল বুঝ! করার কিছু থাকলে কর,শয়তানের ধোঁকায় পরো না
যে, আগামীকাল করবো ।)
তৃতীয় হাদিস: নেককার
তথা যারা আল্লাহ তাআলা মানতে চায় তাদেরকে
শয়তান সরাসরি হারাম কাজে লিপ্ত করে না বরং তাদেরকে নেক ছুরোতে ধোঁকা দেয়। বিভিন্ন ইসলামি
নাম দিয়ে হারামে লিপ্ত করে। যেমন- ইসলামের নামে বিমা, ইনসিওরেন্স, ইসলামের নামে
জঙ্গিবাদ ইত্যাদি। সুতরাং আল্লাহর নিষিদ্ধ বর্ডারে ঘুরাঘরি করা নিরাপদ নয়। কম মানুষই গোনাহ থেকে
বাঁচতে পারে। একথাই হাদিসে বলা হয়েছে।
হাদিসের শেষাংশে (ইবনে
মাজাহর বর্ণনায়) নবি (ﷺ) আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। মানবদেহে একটি
গোশতের টুকরা আছে,যার নাম কলব বা অন্তর। যা মানবদেহের বাদশাতুল্য আর অন্য
অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্রজাতুল্য।তাই কলবের ইসলাহ সর্বাগ্রে। অনেকে বলে, দাওয়াত দিলে বা
দ্বীনি এলম শিক্ষা করলেই যথেষ্ট। ইসলাহের কোন প্রয়োজন নাই। নিঃসন্দেহে এটা গোমরাহি
কথা। পবিত্র কুরআনে রাসূলে
কারিম (ﷺ) এর মৌলিক যে চারটি (৪টি) দ্বীনি দায়িত্বের কথা
উল্লেখ করেছেন, তন্মধ্যে দ্বিতীয় নম্বরে হলো- তাযকিয়ায়ে নফস বা সাহাবিদের
আত্মার সংশোধন। আল্লাহ তাআলাবলেন- তিনিই
নিরক্ষরদের মধ্যে থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন,যিনি তাদেরকাছে পাঠ করেন তার
আয়াতসমূহ, তাঁদেরকে (সাহাবিদেরকে) পবিত্র/আত্মশুদ্ধি করেন। সূরা জুমাআ-০২; এছাড়া
সূরা বাকারার-১২৯,১৫১,সূরা ইমরান-১৬৪
যা প্রত্যেক
মুসলমানের ওপর ফরজ। স্বয়ং ইবনে আবেদ্বীন
শামি রহ. বিখ্যাত ফতোয়া গ্রন্থ ফতোয়ায়ে শামীর ১ম খণ্ড,১১৭ পৃষ্ঠায় এ লিখেছেন-
ইসলাহ ও আ্খলাকের এলম হসিল করা ফরযে আইন। যেমন-অহংকার, লোভ,
হিংসা-বিদ্বেষ, গীবত, রিয়া, আত্মগরিমা, অন্তরের খেয়ানত ইত্যাদি। এ সকল দুশ্চরিত্র
হতে মুক্ত হওয়া ফরজ।
বিস্তারিত দেখুন- দরসে
তিরমিজি ও এ যুগের অপ্রচার মুফতি তকি উসমানি দা. বা.; আত্মার
ব্যাধি ও প্রতিকার, শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রহ. এর আপবীতী, শরিয়ত ও তাসাউফ, আকাবি
কা সুলূক ও ইহসান।
চতুর্থ হাদিস: হজরতে ওলামায়ে
কেরাম এ হাদিসটিকে এর অন্তর্ভক্ত করেছেন। যদি বিশ্ববাসী
শুধু এ হাদিসের ওপর আমল করত, তাহলে সমস্ত অন্যায়-অনাচার দূর হয়ে যেত। চোর সিঁধ কাটার
সময়, পকেটমার কারো পকেটে হাত দেওয়া, কারো স্ত্রী, কন্যার দিকে কুনজরবা অবৈধ
সম্পর্কের করার, পরকীয়া, সুদ-ঘুষ গ্রহণ করার সময় যদি একথা চিন্তা করে, আমি যা করতে চাই, এ আচরণ আমার সাথে কেউ করত, তাহলে
আমি কি তা পছন্দ করতাম?
হাফেজ ইবনে কাসির রহ., ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর মসনদে একটি হাদিস বর্ণনা
করেছেন-যা সারকথা হলো- এক যুবক রাসূলে (ﷺ) এর কাছে যিনার অনুমতি চাইলো। রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন-তুমি কি এ কথা পছন্দ করবে যে, অন্য
লোকেরা তোমার মা,কন্যা,বোনের সাথে অশোভনীয় আচরণ করুক ? সে বলল, কখনও নয়। আমি তো তলোয়ার দিয়ে তার খবর করে দিব। যার সাথে তুমি এ
মন্দ আচরণ করতে চাও, সেও তো কারো মা, বোন, কন্যা! সুবহানাল্লাহ! বুঝানো ও উপদেশের
ধরণ কত প্রিয়। আর তার ওপর হাত মোবরক রেখে
দুআ করলেন- তারপর থেকে তিনি (ঐ যুবক সাহাবি)
কারও প্রতি কুনজর করেননি। মুসনাদে আহমদ-৫/২৫৬; সুনানে বায়হাকি-৫৪১৫
এ হাদিসটিকে বিশেষ
করে পরামর্শের সাথে সংশ্লিষ্ট সাব্যস্ত করা হয়। অন্যকে সে পরামর্শই দিবেন
যা নিজের জন্য পছন্দ করন। সূত্র: নাসরুল বারি শরহে বুখারি, ১ম খণ্ড; ৩১৪ পৃষ্ঠা।
চল্লিশ
হাদিস সমাপ্ত
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন