وَ لَا
تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا عَلَیْهَا١ۚ وَ لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ
اُخْرٰى١ۚ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ مَّرْجِعُكُمْ
প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু উপার্জন করে সেজন্য
সে নিজে দায়ী, কেউ কারো বোঝা বহন
করবে না তারপর তোমাদের
সবাইকে তোমাদের রবের দিকে ফিরে যেতে হবে।
لَا یُكَلِّفُ اللّٰهُ نَفْسًا اِلَّا
وُسْعَهَا١ؕ لَهَا
مَا كَسَبَتْ وَ عَلَیْهَا مَا اكْتَسَبَتْ
আল্লাহ কারোর ওপর তার
সামর্থের অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা চাপান না। প্রত্যেক ব্যক্তি যে নেকী উপার্জন
করেছে তার ফল তার নিজেরই জন্য এবং যে গোনাহ সে অর্জন করেছে, তার প্রতিফলও তারই উপর বর্তাবে।
আসসালামু আলাইকুম।
প্রশ্ন:
কোন ব্যক্তি যদি তার জীবদ্দশায় যে কোনভাবেই হোক কারো কোন দাবি রেখে মারা যায়
অথবা কারো কোন ক্ষতি করে মারা যায় কিংবা কারো কাছে কোন প্রতিশ্রুতি রেখে মারা যায় উক্ত আয়াত দ্বয়ের
আলোকে তার সন্তানগণ কি ইহকালে হোক বা পরকালে হোক তার জন্য দায়ী থাকবে অথবা আল্লাহর
কাছে তারা কি তাদের পিতামাতার অপরাধের শাস্তির সম্মুখীন হবে?দলিলসহ জানা থাকলে জানানোর জন্য অনুরুধ করা হল?
জবাব: অআলাইকুমুসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। প্রথম কথা হলো,
মানুষের
দাবি দুই ধরনের হয়ে থাকে।
(০১) মানবিক দাবি
অর্থাৎ কাউকে গালি দেওয়া, মারধর করা অপমান
করা ইত্যাদি। এ ধরণের দাবি রেখে
মারা গেলে, সন্তানগণ পিতার পক্ষ থেকে
ক্ষমা চেয়ে নিলে, তাকে খুশি করলে,আশা করা যায় তার ক্ষমা হয়ে যাবে।
(০২) অর্থনৈতিক দাবি/হক
রেখে মারা গেলে। পাওয়াদার যদি
দাবি ছেড়ে দেয়, তাহলে তো মাফ
পেয়ে যাবে। আর না হলে টাকা
পরিশোধ করতে হবে। ঋণ থাকলে মৃত্যু ব্যক্তির
ক্ষতি
সম্মুখীন হতে হয়। যেমন,
হাদিস নং-০১
এমনকি কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও
হয়, তবুও সে জান্নাতে প্রবেশ
করতে পারবে না যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা হয় তাখরিজ: নাসাঈ হা/৪৬৮৪; মিশকাত হা/২৯২৯
হাদিস নং-০২
الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهِ
حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ
‘মুমিনের আত্মা ঝুলন্ত
অবস্থায় রাখা হয় তার ঋণের কারণে, যতক্ষণ না তার
পক্ষ হ’তে ঋণ পরিশোধ করা হয়’। তাখরিজ: তিরমিজি-১০৭৮; মিশকাত -২৯১৫
দ্বিতীয় কথা হলো,
উক্ত
ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে
ঋণ পরিশোধ করা ওয়ারিশদের ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, ঋণ আদায় ওসিয়াতের উপর প্রাধান্য পাবে। ঋণ পরিশোধ এবং ওসিয়ত পূরণ করার আগে অনেকের মধ্যে সম্পদ বন্টন করা জায়েজ নেই।
সূত্র: তাফসিরে তাওজীহুল কুরআন, আল্লামা তাকী
উসমানি দা.বা. । দলিল:
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ
لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ فَإِن كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ
فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ
وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ
لَهُ وَلَدٌ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ
الثُّلُثُ فَإِن كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ
يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ
أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا
حَكِيمًا
আল্লাহ তোমাদেরকে
তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু?জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু' এর অধিক,
তবে
তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য
থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং
পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন
ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ *ওছিয়্যতের পর, যা করেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর।* তোমাদের
পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ
কতৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ,
রহস্যবিদ।
সূরা নিসা-১১
بينا أنا جالس عند رسول الله صلى الله
عليه وسلم، إذ أتته امرأة، فقالت: إني تصدقت على أمي بجارية، وإنها ماتت إنها لم
تحج قط، أفأحج عنها؟ قال: حجي عنها.
অর্থ: হজরত ইবনে আব্বাস
রা. থেকে বর্ণিত, জুহায়না গোত্রের
এক মহিলা এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, আমার মা হজ্বের মানত করেছিলেন কিন্তু তা পূরণ
করার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্ব করতে পারব? তিনি বললেন, হাঁ, তার পক্ষ থেকে
হজ্ব কর। আচ্ছা তোমার মা’র উপর ঋণ থাকলে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না? আল্লাহর ঋণ পরিশোধ কর। তাঁর ঋণই অধিকতর
পরিশোধযোগ্য। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৫২
তৃতীয় কথা হলো, যদি পিতার সম্পদ ঋণ থেকে কম হয় অথবা মোটেও না থাকে, তাহলে সন্তানদের উপর দায়িত্ব নয়, নিজের সম্পদ থেকে ঋণ আদায় করা। দলিল:
وَ لَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ اِلَّا
عَلَیْهَا١ۚ وَ لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰى١ۚ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ
مَّرْجِعُكُمْ
প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু উপার্জন করে সেজন্য
সে নিজে দায়ী, কেউ কারো বোঝা বহন
করবে না তারপর তোমাদের
সবাইকে তোমাদের রবের দিকে ফিরে যেতে হবে।
لَا یُكَلِّفُ اللّٰهُ نَفْسًا اِلَّا
وُسْعَهَا١ؕ لَهَا
مَا كَسَبَتْ وَ عَلَیْهَا مَا اكْتَسَبَتْ
অর্থ: আল্লাহ কারোর ওপর
তার সামর্থের অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা চাপান না। প্রত্যেক ব্যক্তি যে নেকী উপার্জন
করেছে তার ফল তার নিজেরই জন্য এবং যে গোনাহ সে অর্জন করেছে, তার প্রতিফলও তারই উপর বর্তাবে। সূরা
বাকারা-২৮৬
তবে নিজ সম্পদ পিতার ঋণ পরিশোধ
করা ওয়াজিব না হলেও, সন্তানের উচিত
সাধ্যমত পিতাকে দায় মুক্ত করা। যেমন,
*হাদিস নং-০১*
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদা রা.-এর অনুপস্থিতিতে তার মা
ইন্তেকাল করেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি
যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার কোনো
উপকারে আসবে? বললেন, হাঁ। সাদ রা. বললেন, আমি আপনাকে সাক্ষী রাখছি যে, আমার ‘মিখরাফ’
নামক
বাগানটি আমার মা’র জন্য সদকা। তাখরিজ: বুখারী- ২৭৫৬
হাদিস নং-০২
عن ابن عباس رضي الله عنهما: أن سعد بن
عبادة رضي الله عنه توفيت أمه وهو غائب عنها، فقال: يا رسول الله! إن أمي توفيت
وأنا غائب عنها، أينفعها شيء إن تصدقت به عنها؟ قال: نعم. قال: فإني أشهدك أن
حائطي المخراف صدقة عليها.
অর্থ: আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, একলোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন, কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয়, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন, তাহলে সদকা করে যেতেন। আমি তার পক্ষ থেকে সদকা করলে কি তিনি এর সওয়াব পাবেন? বললেন, হাঁ। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১০০৪
হাদিস নং-০৩
عن عائشة أن رجلا أتى النبي صلى الله
عليه وسلم فقال: يا رسول الله! إن أمي افتلتت نفسها ولم توص، وأظنها لو تكلمت
تصدقت، أفلها أجر، إن تصدقت عنها؟ قال: نعم.
৩. আবু হুরায়রা. থেকে
বর্ণিত, একব্যক্তি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, *আমার পিতা ইন্তেকাল করেছেন এবং ধন-সম্পদ রেখে গেছেন কিন্তু
অসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার (গোনাহের) কাফফারা হবে? বললেন,
হাঁ।
সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৩০*
সারকথা কথা হলো, আপনি জানতে চেয়েছেন, সন্তানগণ কি ইহকালে হোক বা পরকালে হোক তার
জন্য দায়ী থাকবে অথবা আল্লাহর কাছে তারা কি তাদের পিতামাতার অপরাধের শাস্তির
সম্মুখীন হবে?
না, পিতা-মাতার ঋণের/অপরাধের কারণে সন্তানগণ দায়ি
বা গুনাহগার হবেন না। তবে পিতা-মাতার পরিত্যক্ত সম্পদ থাকলে ঋণ আদায় করা ওয়াজিব
হবে।
সূত্র: নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/২২৯; ইবনু কুদামা, মুগনী ২/৪৮২
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন