সৈনিক জীবনে দৈনন্দিন কার্যকলাপে ইসলাম
লেখক
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির,
দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস লিলআদব) ধর্ম শিক্ষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
মোবাইল
০১৭৩৫-৭৯১৩৮২
গ্রন্থস্বত্ব
লেখক
কর্তৃক সংরক্ষিত
কম্পিউটার
কম্পোজ
মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (লেখক নিজে)
র্যা
সামরিক পেশা হালাল রিজিক অন্বেষণের একটি
অংশ
বাংলাদেশ সেনাবহিনী: হালাল রিজিক খাওয়া প্রত্যেক মুমিনের ওপর ফরজ। সামরিক পেশা হালাল রিজিকের
অর্জনের একটি অন্যতম পন্থ। একজন সামরিক সদস্য সারা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে, তার পেশাগত দায়িত্ব পালন
করে। সুতরাং বলা যায় সর্বোৎকষ্ঠ হালাল রিজিকের অংশ হলো সামরিক পেশা। আসুন আমরা
জানবো এ সম্পর্কে ইসলামের নিরর্দেশনা কি?
ইসলাম: হালাল খাবার খাওয়ার জন্য কুরআনের নির্দেশ রয়েছে- যেমন,
মহান আল্লাহ বলেন, یٰۤاَیُّهَا
النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا
خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّهٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ অর্থ: হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র
খাদ্যবস্তু রয়েছে, তোমরা তা আহার করো এবং কোনোক্রমেই শয়তানের
পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সূরা বাকারা-১৬৮
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ
صلى الله عليه وسلم ـ " أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا اللَّهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ
فَإِنَّ نَفْسًا لَنْ تَمُوتَ حَتَّى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا وَإِنْ أَبْطَأَ
عَنْهَا فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ خُذُوا مَا حَلَّ وَدَعُوا
مَا حَرُمَ " .
অর্থ: হজরত জাবির ইবনু
আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, হে লোকেরা! তোমরা
আল্লাহকে ভয় করো এবং বৈধ উপায়ে জীবিকা অর্জন করো। কেননা কোনো প্রাণীই তার
নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও কিছু
বিলম্ব ঘটে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং সৎভাবে জীবিক অর্জন করো। যা হালাল তাই
গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ-২১৪৪; মিশকাত ৩৫০০
হারাম মাল দ্বারা গঠিত শরীর জান্নাত হারাম: এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে-
وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بالحرَامِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
অর্থ: আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে,
সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
তাখরিজ: বায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান-৫৭৫৯
নামাজ সমাপান্তে রিজিক অর্জন করা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: একজন আদর্শবান সৈনিক আল্লাহ
তাআলার মহান হুকুম ফজরের নামাজ শেষে তার পেশাগত কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সকালবেলা বরকত
নাজিল হয় এবং রিজিক অন্বেষণের মোক্ষম সময়। কোন ট্রুপ/ব্যাটালিয়নের
মুভের উত্তম সময়। তাই তো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রায় সকল মুভ সেকশন ভোরে যাত্রা
করে। আর এটা
ইসলামেরও কাম্য যে, মুমিন শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে
না। বরং নামাজ শেষে তার হালাল রিজিক তালাশ করবে। আসুন এখন আমরা ইসলামের সেই
নির্দেশনা জানবো।
ইসলাম: নামাজ সমাপান্তে রিজিক অর্জন করার
নির্দেশ: ইসলাম
শুধু নিছক ইবাদত-বন্দেগি পালনের ধর্ম নয়। বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ সালাত আদায়ের
আল্লাহর জমিনে রিজিক অন্বেষণের তাগিদ করেছেন। যেমন, ইরশাদ
হচ্ছে,
আয়াত নং-০১
﴿فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ
وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ
تُفۡلِحُونَ﴾ [الجمعة:10]
অর্থ: সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান
করবে, এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা জুমাআ-১০
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী (র.) বলেন:
فاذا فرغتم من الصلاة فانتشروا في الأرض للتجارة والتصرع في حوائجكم
‘‘যখন নামায শেষ হয়ে যাবে, তখন তোমরা ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়োজনাদি পূরণে বেড়িয়ে পড়ো। কুরতুবী, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ, আলজামেউ লি আহকামিল কুরআন,
খ.১৮,পৃ.৯৬
আয়াত নং-০২
﴿وَءَاخَرُونَ يَضۡرِبُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ يَبۡتَغُونَ مِن فَضۡلِ
ٱللَّهِ وَءَاخَرُونَ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۖ﴾ [الجمعة:9]
আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ আল্লাহর
অনুগ্রহের সন্ধানে দেশভ্রমণ করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। সূরা
মুযযাম্মিল-২০
أي مسافرين في الأرض يبتغون من فضل الله في المكاسب والمتاجر.
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, অর্থ্যাৎ যারা ব্যবসা-বাণিজ্য ও রিযিক
উপার্জনের বিভিন্ন উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের অন্বেষায়
পৃথিবীতে ভ্রমণরত। সূত্র: আবুল ফিদা ইসমাইল ইবন উমর ইবন কাসীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৮/২৫৮
নবিজি (ﷺ) তার বাহিনীকে সকালে প্রেরণ করতেন:
সখর গামেদি (রা.) সূত্রে
বর্ণিত, রাসুল (ﷺ) এ দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরুকে বরকতময় করুন। ’ এ জন্যই রাসুল (ﷺ) কোনো যুদ্ধ অভিযানে
বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। বর্ণনাকারী বলেন, সখর (রা.)-ও তার ব্যবসায়ী কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু
করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয়। তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন। তাখরিজ: আবু দাউদ-২৬০৬
প্রত্যুষে ওঠার উপকার:
প্রিয় নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, ‘সকালবেলায় রিজিকের
অন্বেষণ করো! কেননা সকালবেলা বরকতময় ও সফলতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত সময়। তাখরিজ: মাজমাউজ জাওয়ায়েদ-৬২২০
ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ
(ﷺ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুল (ﷺ) আমার ঘরে এসে আমাকে ভোরবেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলেন, তখন আমাকে পা দিয়ে নাড়া দিলেন এবং বললেন, মামণি! ওঠো! তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক গ্রহণ
করো! অলসদের দলভুক্ত হয়ো না। কেননা আল্লাহ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের
মধ্যে রিজিক বণ্টন করে থাকেন। তাখরিজ: আত-তারগিব ওয়াত তারহিব-২৬১৬
হালাল রিজিক তালাশ করা শরিয়তের অনত্যম
ফরজ
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: একজন সেনা সদদ্য সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করেন, তার
পেশাগত দায়িত্ব পালনার্থে। রাতে আবার
নিরাপত্তা পাহারায় নিয়োজিত থাকে। আইপিএফটি পাশ করা যে কত কষ্ট, যে করে সেই বুঝে।
প্রশ্ন: ক। সেনাসদস্যগণ যে তা চাকরি জীবনে কঠোর পরিশ্রম
করে, এত কি তার সওয়াব মিলবে?
উত্তর: ক। এ সম্পর্কে আশরাফ কাননের সর্বশেষ ফুল; ভারতের বিখ্যাত আলেম,বুজুর্গ শাহ আবরারুল হক রহ.
বলেন, একজন ব্যক্তি মসজিদে বসে তাসবিহ পাঠ
করছেন (সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লিাহ,
আল্লাহু আকবর ইত্যাদি পাঠ করা) আর একজন
ব্যক্তি হালাল রিজিকের জন্য গ্রাম-গঞ্জে, শহরের অলিতে-গলিতে ফেরি ওয়ালা হিসেবে হরেক মাল বিক্রি
করছেন বা বাদাম বিক্রি করছেন অথবা যে কোন পণ্য বিক্রির জন্য ডাকা-ডাকি, চিল্লা-চিল্লি করছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, সওয়াব বেশি কার? যে
মসজিদে তাসবিহ/জিকির-আজকার তিনি,
না যিনি পণ্যদ্রব্য বিক্রির জন্য বাদাম বাদাম, ভাই রাখবেন কাপড়, হরেক মাল ইত্যাদি ইত্যাদি। হজরত বলেন, যিনি মসজিদে
বসে তাসবিহ-তাহলিল পড়ছেন, তিনি নফলের
আমলের সওয়াব পাবেন। কেননা তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা নফল। আর
যিনি হালাল রিজিকের জন্য পথে-ঘাটে চিল্লা-চিল্লি করছেন, তার এ প্রতিটি ডাকাডাকি ফরজ আমলের
সওয়াব মিলবে। কারণ হালাল রিজিক অন্বেষণ করা
ফরজ। সুতরাং প্রমাণিত হলো, সেনাসদদ্যগণ যে সকালে পিটি,আইপিএফটি করে, তার দৌড়ের প্রতিটি কদমে কদমে, তার শরীরে প্রতি ফুটা ঘামের বিনিময়ে ফরজ আমলের সওয়াব পাবে ইনশাল্লাহ। প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আসুন
আমরা দেখবো শাহ আবরারুল হক রহ. এর উক্তির পক্ষে শরিয়তের কোন দলিল আছে কি?
ইসলাম: এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَلَبُ
كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অন্যান্য ফরয কাজ আদায়ের সাথে হালাল
রুযী-রোজগারের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরয। তাখরিজ: বায়হাকি
শুআবুল ঈমান-৮৩৬৭; আল মুজামুল কবির- ৯৯৯৩
عن رافع بن خديج، قال: قيل: يا
رسول الله، أي الكسب أطيب؟ قال: «عمل الرجل بيده وكل بيع مبرور»
হযরত রাফে ইবনে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা
করা হয়েছিল যে, সর্বোত্তম উপার্জন কোনটি?
জবাবে তিনি বলেন: ব্যক্তির নিজস্ব শ্রমলব্দ উপার্জন ও সততার
ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়। ইমাম আহমাদ, মুসনাদ, খ.৪, পৃ. ১৪১.
প্রতিটি কাজ বিসমিল্লাহ (আল্লাহর নাম) বা তাঁর প্রশংসা দ্বারা শুরু করা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর
চিরাচরিত ঐতিহ্য হলো কার্য দিবসের প্রারম্ভে পিটির ফলিনে এবং
দরবারে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে তথা আল্লাহর নাম/প্রশংসার দ্বারা
শুরু হয়। অবশ্যই তা অত্র বাহিনীতে কর্মরত ধর্ম
শিক্ষকদের মৌলিক দায়িত্বের একটি। উল্লেখ্য যে, ধর্ম শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে কোন
সৈনিক দ্বারা তা পাঠ করা হয়। আসুন আমরা এখন জানবো, আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু করার ইসলামি নির্দেশনা
কি?
ইসলাম : যেকোনো
কাজে-কর্মে বিসমিল্লাহ (আল্লাহ তাআলার
নাম) বা আল্লাহ তাআলার
প্রশংসা দ্বারা শুরু না করলে, সেটা অসম্পূর্ণ-বরকতহীন হয়ে যায়। যেমন হাদিসের বাণী-
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ - صلى الله
عليه وسلم - قَالَ: "كُلُّ
أَمْرٍ ذِي بَالٍ لَا يُبْدَأُ فِيهِ بِحَمْدِ اللَّهِ أَقْطَعُ অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ
করেছেন- প্রত্যেকটি কাজই হচ্ছে বিরাট আর তা আল্লাহর প্রশংসা সহকারে
শুরু না করলে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাখরিজ : আবু দাউদ-৪৮৪০; ইবনে মাজাহ-১৮৯৪
নোট : সনদটি হাসান।
বিসমিল্লাহ
শব্দের অর্থ, আল্লাহর নামে শুরু করছি। তাই প্রতিটি
কাজের শুরুতে (بسم الله) বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করা। কেননা ইহা ব্যতিত কর্মটি/কাজটি
লেজ কাটা (অপূর্ণাঙ্গ) রয়ে যায়। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, كُلُّ
كَلَامٍ أَوْ أَمْرٍ ذِي بَالٍ لَا يُفْتَحُ بِذِكْرِ اللهِ فَهُوَ أَبْتَرُ – أَوْ
قَالَ :
أَقْطَعُ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যদি আল্লাহকে
স্মরণ না করে শুরু করা হয়, তাহলে তা লেজ কাটা (বরকতহীন) হয়ে
যায়। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ ১৪/৩২৯
বিসমিল্লাহর
গুরুত্ব :
(০১) এই বিসমিল্লাহই
প্রথম ওহি:
আব্দুল্লাহ ইবনু
আব্বাস বলেন,
'জিবরাইল আ. সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (ﷺ) এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে
জিবরাইল আ. বললেন, হে মুহাম্মদ, আপনি
আশ্রয় চান। মুহাম্মদ সা. বললেন, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা
আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। অতঃপর জিবরাইল আ. বললেন, হে নবী, আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম। অতঃপর জিবরাইল আ. বললেন, ইকরা বিস্মি।
অর্থাৎ আপনি পড়ূন, আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. বলেন, 'এটাই প্রথম সূরা, যা আল্লাহ তায়ালা জিবরাইলের আ.
মাধ্যমে মুহাম্মদ সা. এর প্রতি অবতীর্ণ করেন।' সূত্র: ত্বাবারি,
তাফসির ইবনু কাছির হা-২৬৩
(০২) হালাল পশুপাখি আল্লাহর নামে জবাই করা ব্যতিত ভক্ষণ জায়েয নয় :
وَلَا
تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌঅর্থ: . যেসব জন্তুর ওপর আল্লাহর নাম নেওয়া
হয়নি, তার কিছুই তোমরা আহার করো না; তা অবশ্যই পাপ। সূরা আনআম-১২১
যেসব জীবজন্তু
আল্লাহর নামে জবাই করা হয়নি, তা আহার করা বৈধ নয়। কোন অমুসলিম
জবেহ করলে তা খাওয়া হারাম। আর কোন মুসলিম ভুলক্রমে আল্লাহর নাম না নিলে তা হালাল; কিন্তু
ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ ছেড়ে দিলে তা খাওয়া হারাম। সূত্র : তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-৪০৬ পৃ.সংক্ষিপ্ত-মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহ.)
বিসমিল্লাহর ফজিলত:
(০১) উসমান (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যদি কোনো বান্দা সকালে
ও সন্ধ্যায় তিন বার করে এই দুআটি পাঠ করে তবে ঐ দিনে ও ঐ রাতে কোনো কিছুই তার
ক্ষতি করতে পারবে না। দুআটি এই-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
আমি সে আল্লাহর
নামে শুরু করছি যার নামে শুরু করলে জমিন ও আসমানে কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারে না, আর আল্লাহ
তো সব কিছু শুনেন ও সবকিছু দেখেন। তাখরিজ: আবু দাউদ: ৫০৮৮,
ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৯
(০২)
হুজায়ফা (রা.) বলেন: নবী করিম (ﷺ) বলেছেন,
فقال رسول الله -صلَّى الله عليه وسلَّم-: «إِنَّ الشَّيطَانَ يَستَحِلُّ الطَّعَامَ أَن لاَ
يُذْكَرَ اسمُ الله
-تَعَالَى- عَلَيه،
অর্থ: শয়তান সেই
খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর
বিসমিল্লাহ বলা হয় না। মুসলিম-২০১৭ আবু দাউদ
(০৩)
জাবির (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘বিসমিল্লাহ
বলে তুমি তোমার দরজা বন্ধ কর। কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। বিসমিল্লাহ বলে
বাতি নিভিয়ে দাও। একটু কাঠখড়ি হলেও আড়াআড়িভাবে বিসমিল্লাহ বলে পাত্রের মুখ ঢেকে
রাখ। বিসমিল্লাহ বলে পানির পাত্র ঢেকে রাখ।’ বুখারি
হাদিস:৩২৮০, মুসলিম হাদিস:২০১২, আবু
দাউদ হাদিস: ৩৭৩১, তিরমিজি হাদিস: ২৮৫৭
ফকিহগণের নিকট বিসমিল্লাহ:
Ø ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের একটি মতে অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা ফরজ।
Ø নামাজের প্রত্যেক রাকাতের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া ইমাম আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদসহ আরো বহু ফকিহের নিকট ওয়াজিব।
Ø ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) এর মতে
সুন্নত।
Ø তবে নামাজ যেন সর্বসম্মতিক্রমে শুদ্ধ হয়, সে জন্য ফাতেহার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া
উচিত। সূত্র: আব্দুল হাই লখনবি,
সিয়াহ শরহে বেকায়া, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৬৯
শারীরিক সক্ষমতা (Physical Fitness) অর্জন করা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: সেনাবাহিনীর
প্রতিটি সদস্যকে তাদের শারীরিক সক্ষমতা অর্জন এবং তা ঠিক রাখার জন্য সপ্তাহে ৫ দিন
নিজ উদ্যাগে ৫০ মিনিট (বর্তমানে) বিভিন্ন
আইটেমের পিটি করতে হয়। বছরে দুবার আইপিএফটি (IPFT=Indidual physical Fitness Test) অর্থাৎ
ব্যক্তিগত শারীরিক সক্ষমতা যাচাই/পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। ফেল করলে অনেক ভর্ৎসনা
ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। তাছাড়া ব্যক্তিগত পদোন্নতিতে (প্রমোশনে)
আইপিএফটিতে পাশ করা শর্ত। আসুন এখন আমরা জানবো ইসলামে শারীরিক যোগত্যর গুরুত্ব।
ইসলাম: ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখার
জন্য ইসলাম নির্দেশনা দিয়েছে। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান প্রতিপালক তার নিপুণ
সৃষ্টিরাজিতেও শক্তির সঞ্চার করেছেন। তার ওহির বাহক হজরত জিবরাইল (আ.)-এর শক্তির
প্রশংসা তিনি নিজেই করেছেন। যেমন ইরশাদ হচ্ছে-
عَلَّمَهٗ شَدِیۡدُ الۡقُوٰی ۙ অর্থ: তাকে শিক্ষা দান করে শক্তিশালী, (ফিরিশতা
জিবরীল)। সূরা নজম-০৫
তাফসীরকারদের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ
অংশ এ ব্যাপারে একমত যে, “মহাশক্তির অধিকারী” এর অর্থ জিবরীল আলাইহিস সালাম। সূত্র: ফাতহুল কাদীর
এবং শক্তিশালী মুমিনকে
দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম ও আল্লাহর নিকট বেশি পছন্দশীল বলা হয়ছে। যেমন পবিত্র হাদিসে
এসেছে-
হাদিস নং-০১
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «المُؤْمِنُ القَوِيُّ خَيرٌ
وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ المُؤْمِنِ الضَّعيفِ وَفي كُلٍّ خَيرٌ. احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ،
واسْتَعِنْ بِاللهِ وَلاَ تَعْجَزْ . وَإنْ أَصَابَكَ شَيءٌ فَلاَ تَقُلْ لَوْ
أنّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا، وَلَكِنْ قُلْ : قَدرُ اللّهِ، وَمَا شَاءَ فَعلَ ؛ فإنَّ
لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيطَانِ». رواه مسلم
অর্থ: আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
(দেহমনে) সবল মুমিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মুমিন অপেক্ষা বেশী প্রিয়।
আর প্রত্যেকের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন
হয়ো না। যদি তোমার কিছু ক্ষতি হয়, তাহলে এ কথা বলো না যে,
যদি আমি এ রকম করতাম, তাহলে এ রকম হত।’
বরং বলো, আল্লাহর (লিখিত) ভাগ্য এবং তিনি যা
চেয়েছেন তাই করেছেন।’ কারণ, যদি’
(শব্দ) শয়তানের কাজের দুয়ার খুলে দেয়। তাখরিজ: বুখারি ২৬৬৪, ইবন মাজাহ ৭৯, ৪১৬৮,
আহমদ ৮৫৭৩, ৮৬১১
হাদিস নং-০২
اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابَكَ
قَبْلَ هِرَمِكَ، وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاءَكَ قَبْلَ فَقْرِكَ،
وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ، وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ
অর্থ: পাঁচটি
জিনিসকে পাঁচটি জিনিস আসার আগে গনিমতের অমূল্য সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন করো। জীবনকে
মৃত্যু আসার আগে। সুস্থতাকে অসুস্থ হওয়ার আগে। অবসর সময়কে ব্যস্ততা আসার আগে। যৌবনকে
বার্ধক্য আসার আগে এবং সচ্ছলতাকে দরিদ্রতা আসার আগে। তাখরিজ: মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৮/১২৭
হাদিস নং-০৩
بْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرِو بْنِ
الْعَاصِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَا عَبْدَ اللَّهِ أَلَمْ
أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ وَتَقُومُ اللَّيْلَ ". قُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ
اللَّهِ. قَالَ " فَلاَ تَفْعَلْ، صُمْ
وَأَفْطِرْ، وَقُمْ وَنَمْ، فَإِنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ
لِعَيْنِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا ".
আবদুল্লাহ ইবনু
আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, হে আবদুল্লাহ! আমাকে কি এ খবর প্রদান করা
হয়নি যে, তুমি রাতভর ইবাদতে দাঁড়িয়ে থাক এবং দিনভর সিয়াম
পালন কর? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, তুমি এরূপ করো না,
বরং সিয়ামও পালন কর, ইফতারও কর, রাত জেগে ইবাদত কর এবং নিদ্রাও যাও। তোমার শরীরেরও তোমার ওপর হক আছে;
তোমার চোখেরও তোমার উপর হক আছে এবং তোমার স্ত্রীরও তোমার ওপর হক
আছে। তাখরিজ: বুখারি-৫৭০৩; তিরমিজি-২৩৫০
হাদিস নং-০৪
রাসূল (ﷺ) বলেছেন,مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ آمِنًا
فِي سِرْبِهِ مُعَافًى فِي جَسَدِهِ عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ فَكَأَنَّمَا حِيزَتْ
لَهُ الدُّنْيَا، অর্থ: তোমাদের
মধ্যে যে ব্যক্তি পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয়, সুস্থ
শরীরে দিনাতিপাত করে এবং তার নিকট সারা দিনের খাদ্য থাকে, তবে
তার মাঝে যেন দুনিয়ার সকল কল্যাণ একত্রিত করা হলো। তাখরিজ: তিরমিজি-২৩৪৬; ইবনে মাজাহ-৪১৪১;
মিশকাত-৫১৯১
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বারবার বলা/স্মরণ করিয়ে দেওয়া
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি রুলস হলো কোনো চিঠি/আদেশ তিনবার
পড়ে শুনানো। যাতে সবার কাছে ম্যাসেজটি পৌঁছে, কারণ শতভাগ
লোক কোন ফলিনে উপস্থিত সম্ভব নয় ( কোথ, কোয়ার্টার গার্ড বা বিভিন্ন পোস্টে ডিউটি থাকার কারণে)। আর গুরুত্বপূর্ণ একই
আদেশ/বিষয় পিটি ও গেমসের ফলিনে, কোম্পানি/ব্যাটারি রুল কলে, সাপ্তাহিক রুল কলে এবং মাসিক রুল কলে
বারবার বলা বা স্মরণ
করিয়ে দেওয়া হয়। আসুন আমরা এখন দেখবো পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর এ
বিষয়ে নির্দেশনা কি?
ইসলাম : ভাল কথা, ন্যায়-সত্য কথা বারবার বললে মুমিনের ফায়দা হবেই। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَىٰ تَنفَعُ
الْمُؤْمِنِ অর্থ: এবং বোঝাতে থাকুন; কেননা,
বোঝানো মুমিনদের উপকারে আসবে। সূরা যারিয়াত-৫৫
হে নবি! আাপনি উপদেশ
দিতে থাক। কেননা উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসে। সূত্র: তাফসিরে তাওজিহুল
কুরআন- মুফতী তাকী উসমানী
Ø
শ্রোতারা যেন বিষয়টা বুঝতে
পারে এ জন্য নবি করিম একটি কথা তিনবার-বারবার
বলতেন। যেমন-হাদিস
শরিফে এসেছে-
عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ «إِذَا تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَعَادَهَا
ثَلاَثًا، حَتَّى تُفْهَمَ عَنْهُ، وَإِذَا أَتَى عَلَى قَوْمٍ فَسَلَّمَ
عَلَيْهِمْ، سَلَّمَ عَلَيْهِمْ ثَلاَثًا»
অর্থ: হজরত আনাস
(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন মুখ দিয়ে কোন কথা বের করতেন। তিন তিনবার তা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতেন। ফলে শ্রোতা খুব ভালভাবেই তা বুঝে নিতে পারত।
যখন তিনি কোন গোত্রের কাছে আসতেন, তাদের সালাম করতেন এবং একাধিকক্রমে সে তিন তিনবার সালাম করতেন। তাখরিজ :
বুখারি-৯৫
عنْ أَبي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَجُلاً قالَ للنبيِّ - صلى
الله عليه وسلم -: أَوْصِنِي. قالَ: "لا تَغْضَبْ"،
فَرَدَّدَ مِرَارًا، قالَ: "لا تَغْضَبْ".
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা
(রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-একজন
লোক বললেন, আমাকে উপদেশ দিন। রসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন ইরশাদ করলেন, তুমি কখনও
রাগ করবে না। লোকটি কথাটিকে বাববার বললেন। তখন রসূলুল্লাহ
(ﷺ) ইরশাদ করলেন, কখনো রাগ কর না। তাখরিজ: বুখারি-
عَنْ
عَائِشَةَ رَحِمَهَا اللَّهُ، قَالَتْ: "كَانَ كَلَامُ رَسُولِ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلَامًا فَصْلًا
يَفْهَمُهُ كُلُّ مَنْ سَمِعَهُ
অর্থ: হজরত আয়েশা (রা.)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কথা বলতেন, খুব স্পষ্ট পরিস্কার ও আলাদা আলাদাভাবে
বলতেন। শ্রোতাদের সবাই তা হৃদয়ঙ্গম কর নিতে পারত। তাখরিজ: আবু
দাউদ-৪৮৩৯
যুদ্ধের প্রস্তুতি, যুদ্ধ হলো কৌশল
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী : একজন সুদক্ষ, অভিজ্ঞ ও চৌকস যোদ্ধা হতে হলে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই । বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীর একটি স্লোগান হল- “কঠিন প্রশিক্ষণ, সহজ যুদ্ধ”। এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত সেনাসদস্যগণ ব্যক্তিগত (রিক্রুট ট্রেনিং,কমান্ড,
নিজ নিজ কোরের পেশাগত কোর্স-ক্যাডার-প্রশিক্ষণ) ও দলগত (বছরে চারটি
চক্রে, গ্রীষ্মকালীন-শীতকালন প্রশিক্ষণ) প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। অর্থাৎ
বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন সেনাসদস্য সার্বক্ষণিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত
থাকে। শুধু পেশি শক্তি-অস্ত্র শষক্তি দিয়ে যুদ্ধে জয়লাভ করা
সম্ভব নয়। প্রয়োজন কৌশল-প্রতারণা। তাই তো সেনাসদস্যগণ গুপ্তাশ্রয়, (ফামবেস) ফাঁদ,
রেড-এ্যামবুস, গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, তাছাড়া বিশেষ অভিযান পরিচালনা ও সন্ত্রাস দমনোর জন্য প্যারা কমান্ডো ইউনিট
গড়ে ওঠেছে। আসুন এখন আমরা জানবো পবিত্র
কুরআন-হাদিসে এ বিষয়ে কি নির্দেশনা?
ইসলাম : যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য
আল্লাহ তাআলার ঘোষণা হল :
আয়াত নং-০১
وَ اَعِدُّوۡا لَهُمۡ مَّا اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ قُوَّۃٍ وَّ مِنۡ
رِّبَاطِ الۡخَیۡلِ تُرۡهِبُوۡنَ بِهٖ عَدُوَّ اللّٰهِ وَ عَدُوَّکُمۡ وَ
اٰخَرِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِهِمۡ ۚ لَا تَعۡلَمُوۡنَهُمۡ ۚ اَللّٰهُ یَعۡلَمُهُمۡ ؕ وَ
مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ یُوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ
اَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ
অর্থ: আর
প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি
সামর্থের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে,যেন প্রভাব পড়ে
আল্লাহর শত্রুদের ওপর এবং তোমাদের
শত্রুদের ওপর আর তারেকে ছাড়া অন্যান্যদের ওপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুত যা
কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোরা পরিপূর্ণভাবে
ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ
থাকবে না। সূরা আনফাল-৬০
গোটা মুসলিম উম্মাহর প্রতি এটা এক
স্থায়ী নির্দেশ যে, তারা যেন ইসলাম ও মুসলিমদের প্রভাব-প্রতিপত্তি
প্রতিষ্ঠিত রাখার লক্ষ্যে সব রকম প্রতিরক্ষা শক্তি গড়ে তোলে। কুরআন মাজীদ
সাধারণভাবে ‘শক্তি’ শব্দ ব্যবহার করে
বোঝাচ্ছে যে, রণপ্রস্তুতি বিশেষ কোনও অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল
নয়। বরং যখন যে ধরনের প্রতিরক্ষা-শক্তি কাজে আসে, তখন সেই
রকম শক্তি অর্জন করা মুসলিমদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। সুতরাং সর্বপ্রকার আধুনিক
অস্ত্র-শস্ত্রও এর অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া মুসলিমদের জাতীয়, সামাজিক
ও সামরিক উন্নতির জন্য যত রকমের আসবাব-উপকরণ দরকার হয়, সে
সবও এর মধ্যে পড়ে। আফসোস! আজকের মুসলিম বিশ্ব এ ফরয আদায়ে
চরম অবহেলা প্রদর্শন করেছে। ফলে আজ তারা অন্যান্য জাতির আশ্রিত ও বশীভূত জাতিতে
পরিণত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ সূরতহাল থেকে পরিত্রাণ দিন। সূত্র: তাফসিরে তাওজিহুল কুরআন-মুফতি তাকি উসমানি দা.বা.
আয়াত নং-০২
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا خُذُوۡا
حِذۡرَکُمۡ فَانۡفِرُوۡا ثُبَاتٍ اَوِ انۡفِرُوۡا جَمِیۡعًا
অর্থ: হে মুমিনগণ, নিজেদের অস্ত্র তুলে নাও এবং পৃথক পৃথক সৈন্যদলে কিংবা সমবেতভাবে বেরিয়ে
পড়। সূরা নিসা-
৭১
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে
তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিতেছেন।
শত্রুর বিরুদ্ধে মুমিনের অস্ত্রের ব্যবস্থা করা, নিজেদের সংখ্যা করা।
তাফসিরে ইবনে কাসির-৩য় খণ্ড; ১৭৪ পৃষ্ঠা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যুদ্ধ
হল একটা সম্পূর্ণ কৌশল ও প্রতারণার অপর
নাম: তাইতো আমাদের প্রিয় রসূল (ﷺ) এটিকে কৌশল নামে অবিহিত করেছেন। যেমন, হাদিসে এসেছে- جَابِرٌ، قَالَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْحَرْبُ
خُدْعَةٌ» অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা (রা.)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- যুদ্ধ হচ্ছে
কৌশল (প্রতারণামূলক এক ধরণের চক্রান্ত)। তাখরিজ: বুখারি-৩০৩০; মুসলিম-
যুদ্ধ ক্ষেত্রে আর্টিলারির গুরুত্ব
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: কালের বিবর্তনে যুদ্ধের অস্ত্রও পরিবর্তন
হয়েছে। আর্টিলারি/ গোলন্দাজ মানে গোলা
নিক্ষেপক, কামান চালক। এ কথা বলতে অপেক্ষা করে না যে, গোলাকে দূরে নিক্ষেপ/ফেলতে আর্টিলারির কোন বিকল্প নেই। শত্রুকে পরাজিত করতে পারমানবিক,
ক্ষেপণাস্ত্র; রকেট, মিসাইল এর ব্যবহার
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাইতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
অত্যাধুনিক আর্টিলারি ইউনিট সংযোজন করছেন। যেমন, SP (Self-propelled),
MLRS (Multiple Launch Rocket
System). আসুন আমরা এখন দেখি
নিক্ষেপণ সম্পর্কে আল্লাহর নবি কি বলেছেন?
ইসলাম: যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিক্ষেপণ যে মহাশক্তি তা
আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর কয়েকটি হাদিস দ্বারা বুঝা যায়। যেমন,
হাদিস নং-০১
سَمِعْتُ رَسولَ اللهِ صَلَّى
اللَّهُ عليه وَسَلَّمَ وَهو علَى المِنْبَرِ يقولُ: {وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ} [الأنفال: 60]، أَلَا إنَّ القُوَّةَ
الرَّمْيُ، أَلَا إنَّ القُوَّةَ الرَّمْيُ، أَلَا إنَّ القُوَّةَ الرَّمْيُ.
الراوي : عقبة بن عامر | المحدث : مسلم | المصدر : صحيح مسلم
অর্থ: হজরত উকবা ইবনে আমের রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
এ আয়াত (সূরা আনফালের ৬০ নং আয়াত) তেলাওয়াত করে বললেনঃ ( قُوَّةٍ বা
শক্তির ব্যাখ্যা সম্পর্কে)
জেনে রাখ, শক্তি হল, তীরন্দাযী। শক্তি
হলো তিরন্দাযী। তাখরিজ: মুসলিম-১৯১৭
হাদিস নং-০২
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
"ارْمُوا وَارْكَبُوا، وَأَنْ تَرْمُوا خَيْرٌ
مِنْ أن تركبوا রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা তিরন্দাযী কর এবং
ঘোড়সওয়ার হও, তবে তীরন্দাযী করা ঘোড়সওয়ারী হওয়ার চেয়ে
উত্তম। তাখরিজ: আবু দাউদ-২৫১৩, তিরমিজি-১৬৩৭
হাদিস নং-০৩
وعْن عقبة بن عامر أَنَّهُ قَالَ:
قَال رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: منْ عُلِّمَ الرَّمْيَ
ثُمَّ تركَهُ، فَلَيس
مِنَّا،
أوْ فقَد عَصى رواه مسلم.
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তীর পরিচালনা
শিখলো তারপর তার অভ্যাস ছেড়ে দিল সে আমাদের (উম্মতের দলভুক্ত) নয়। অথবা তিনি
বলেছেন, সে পাপ করলো। মুসলিম-৪৭৯৬
হাদিস নং-০৪
عَنْ
سَلَمَةَ بْنِ الأَكْوَعِ قَالَ مَرَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى نَفَرٍ
مِنْ أَسْلَمَ يَنْتَضِلُوْنَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ارْمُوْا بَنِيْ
إِسْمَاعِيْلَ فَإِنَّ أَبَاكُمْ كَانَ رَامِيًا ارْمُوْا وَأَنَا مَعَ بَنِيْ
فُلَانٍ قَالَ فَأَمْسَكَ أَحَدُ الْفَرِيْقَيْنِ بِأَيْدِيْهِمْ فَقَالَ رَسُوْلُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا لَكُمْ لَا تَرْمُوْنَ فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ
اللهِ نَرْمِيْ وَأَنْتَ مَعَهُمْ قَالَ ارْمُوْا وَأَنَا مَعَكُمْ كُلِّكُمْ
অর্থ: হজরত সালামা
ইবনু আকওয়া (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) গোত্রের একদল লোকের কাছ
দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তারা তীরন্দাজীর প্রতিযোগিতা করছিল। তখন রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বললেন, হে বনী
ইসমাঈল! তোমরা তীরন্দাজী করে দাও। কেননা তোমাদের পূর্বপুরুষ তীরন্দাজ ছিলেন।
সুতরাং তোমরাও তীরন্দাজী করে যাও আর আমি অমুক গোত্রের লোকদের সঙ্গে আছি। রাবী বলেন,
তাদের এক পক্ষ হাত চালনা হতে বিরত হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাদের
কী হল, তোমরা যে তীরন্দাজী করছ না? তখন
তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিভাবে তীর ছুঁড়তে পারি,
অথচ আপনি তো তাদের সঙ্গে রয়েছেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা তীর ছুঁড়তে থাক, আমি তোমাদের সবার সঙ্গেই আছি।
বুখারি-২৮৯৯
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সেই নিক্ষেপণই/তীর
নিক্ষেপই অধুনা যুগের যুদ্ধাস্ত্র হলো,
ক্ষেপণাস্ত্র; রকেট, মিসাইল,
ট্যাঙ্ক, কামান, বোমারু
বিমান, ড্রোন এবং সামুদ্রিক যুদ্ধের জন্য সাবমেরিন প্রভৃতি।
কাতার বা লাইন সোজা করার গুরুত্ব
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী : বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে
প্রতিটি ফলিনে লাইন সোজা করার গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। এ জন্য অনেক সময় দাগ
দেওয়া হয়, যাতে লাইন সোজা করতে সহজ হয়। শুধু দাঁড়ানো অবস্থায় লাইন সোজা করে না; বরং চেয়ারে
বসাবস্থায় কাতার সোজা রাখে।
ইসলাম : কাতার সোজা করা শৃঙ্খলার একটি অংশ,
তাইতো ইসলাম নামাজের মত প্রধান ইবাদতে কাতার সোজা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হাদিসে
শরিফে এসেছে-
عَنْ
أَنَسٍ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَوُّوا
صُفُوفَكُمْ، فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ تَمَامِ الصَّلَاةِ» وفي رواية:
(فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إِقَامَةِ الصَّلَاةِ)
অর্থ: হজরত আনাস (রা.)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-তোমাদের কাতারগুলো
সোজা ও সমান কর। কারণ কাতার সোজা ও সমান করা নামাজকে পূর্ণনা দান করার মধ্যে শামিল। অপর বর্ণনায় আছে- কারণ লাইনগুলো সোজা করা নামাজ কায়েম করার অন্তর্ভুক্ত। তাখরিজ : ইবনে মাজাহ-৯৯৩; আহমদ-১২৮৩৬; মুসলিম-৪৩৩; আবু দাউদ-৬৬৮;.বুখারি-৬৯০
রুহের জগতে মানুষের
রুহ কিভাবে ছিল? এ সম্পর্কে এসেছে-
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهَا قَالَتْ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " الأَرْوَاحُ جُنُودٌ
مُجَنَّدَةٌ فَمَا تَعَارَفَ مِنْهَا ائْتَلَفَ وَمَا تَنَاكَرَ مِنْهَا اخْتَلَفَ .
সপ্তাহে একদিন ওয়াজ-নছিহত করা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: কোনো কোনো সেকশন, কোম্পনি/ব্যাটরি বা
ইউনিট প্রতিদিন রুল কল হলেও
সাপ্তাহিক সেন্টার রুল রেজিমেন্ট/ব্যাটলিয়ন হয়। রুল কলে
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চিঠি পড়ে শুনানো হয়, বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়। আসুন এখন আমরা দেখবো হাদিসে সাপ্তাহিক ওয়াজ-নছিহত আছে কিনা?
ইসলাম: হজরতে সাহাবায়ে কেরাম সপ্তাহে একদিন ওয়াজ-নছিহত করা পছন্দ করতেন। যেমন,
عَنْ
أَبِي وَائِلٍ، قَالَ: كَانَ
عَبْدُ اللَّهِ يُذَكِّرُ النَّاسَ فِي كُلِّ خَمِيسٍ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ:
يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ لَوَدِدْتُ
أَنَّكَ ذَكَّرْتَنَا كُلَّ يَوْمٍ؟ قَالَ: أَمَا إِنَّهُ يَمْنَعُنِي مِنْ ذَلِكَ أَنِّي أَكْرَهُ أَنْ
أُمِلَّكُمْ، وَإِنِّي أَتَخَوَّلُكُمْ بِالْمَوْعِظَةِ، كَمَا كَانَ النَّبِيُّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَخَوَّلُنَا بِهَا، مَخَافَةَ السَّآمَةِ
عَلَيْنَا " , (خ) 70
অর্থ: আবু ওয়াইল
শাকিক ইবনে সালমা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে মাসউদ
(রা.) প্রত্যেক বৃহস্পতিবার একবার আমাদের উদ্দেশ্যে
ওয়াজ-নছিহত করতেন। একজন লোক তাকে বলল, হে আবু আব্দুর
রহমান! আমার কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় যে, আপনি
প্রতিদিন আমাদের ওয়াজ-নছিহত শুনাবেন। তিনি বললেন, দেখো প্রতিদিন
ওয়াজ করার পথে একটা বাধা যে, পাছে বসে তোমরা ওয়াজ শুনে বিরক্ত
হয়ে না যাও্। বস্তুত সেটা আমি মোটই পছন্দ করি না। আমি তোমাদের উপদেশ দেবার সময়
সে নীতিই অনুসরণ করে থাকি,যে নীতি স্বয়ং রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের বেলায়
প্রয়োগ করতেন। আর তিনি খেয়াল রাখতেন পাছে আমরা যেন বিরক্ত না হয়ে যায়। তাখরিজ: বুখারি-৭০; মুসলিম-
বড়দের/সিনিয়র মাধ্যমে খানা শুরু করা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি নিয়ম যে, সিনিয়র যতক্ষণ খাবার শুরু না করেন, ততক্ষণ তারা শুরু করে না, তবে তিনি যদি অনুমতি দেন
তাহলে ঠিক আছে। আসুন আমরা এখন
জানবো এ বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা কি?
ইসলাম: হজরতে সাহাবায়ে কেরামগণ! রসূলুল্লাহ
(ﷺ) খাবার শুরু না করলে, তারা শুরু করতেন না। যেমন,
عَنْ
حُذَيْفَةَ، قَالَ: كُنَّا
إِذَا حَضَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا لَمْ
نَضَعْ أَيْدِيَنَا حَتَّى يَبْدَأَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ فَيَضَعَ يَدَهُ،.
অর্থ: হজরত হুজাইফা
(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গে আমরা খাবারে
জন্যে দস্তরখানে একত্রিত হলে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) যত সময় পর্যন্ত খাওয়া শুরু না করতেন, তত সময় পর্যন্ত আমরা খানায় হাত দিতাম না। তাখরিজ : মুসলিম-২০১৭
গেটে/প্রবেশের পথে পরিচয় জিজ্ঞাসাবাদ
বাংলাদেশ সেনাবহিনী: “সদা জাগ্রত আপন
সত্ত্বা, সবার আগে নিরাপত্তা ”। তাই ব্যক্তি,বস্তু ও তথ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীর প্রতিটি সেনানিবাস/সেনা ক্যাম্পের মূল ফটকে এমপি
চেক পোস্ট রয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি ছোট-বড় ইউনিটে আরপি চেক
পোস্ট রয়েছে। যেখানে পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হয়, চেক-বেক করা হয়। আসুন আমরা এখন দেখবো
প্রবেশ দ্বারে জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
ইসলাম: এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে-
عَنْ
أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ،
فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ، فَقِيلَ: مَنَ أَنْتَ؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ
مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟
قَالَ: َ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا، فَإِذَا أَنَا بِآدَمَ، فَرَحَّبَ
بِي، وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ، ثُمَّ عُرِجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ،
فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَقِيلَ: مَنَ أَنْتَ؟ قَالَ:
جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ
إِلَيْهِ؟ قَالَ: قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ، فَفُتِحَ لَنَا অর্থ: হজরত আনাস
ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তারপর জিবরিল (আ.) আমাকে নিয়ে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত
পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হলো আপনি কে? জবাবে বললেন,
আমি জিবরিল। আবার জিজ্ঞেস করলেন,আপনার সঙ্গে
কে? জবাবে বললেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)। বলা হলো, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠানো হয়েছে (তাঁকে কি ডাকা
হয়েছে)? বললেন,হ্যাঁ। অনন্তর
আমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয় হলো্। সেখানে হজরত আদম (আ.-এর সাক্ষাত পাই। তিনি আমাকে মোবারকবাদ/অভ্যর্থনা
জানালেন এবং আমার মঙ্গলের জন্য দোআ করলেন।
তারপর জিবরিল আমাকে
ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে চললেন এবং দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত পৌঁছে দরজা খুলতে
বললেন। বলা হলো আপনি কে? জবাবে বললেন, আমি জিবরিল। আবার জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সঙ্গে কে?
জবাবে বললেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)। বলা হলো,তাঁকে কি আনতে পাঠানো হয়েছিল? বললেন,হ্যাঁ। অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয় হলো্। সেখানে আমি
ঈসা ইবন মারইয়াম ও ইয়াহইয়াইবন যাকারিয়া (আঃ) দুই খালাত ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেলাম ।
তারা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দুআ করলেন। ---(এভাবে তৃতীয়,চতুর্থ , সপ্তম আকাশ পর্যন্ত প্রশ্নোত্তর পর বিভিন্ন নবিদের সঙ্গে সাক্ষাত
হয়)। তাখরিজ: মুসলিম-বুখারি-৭৫১৭
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দাওয়াত প্রাপ্ত সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গম্বর
ও মানুষ তার দরবারে প্রবেশদ্বারে জিজ্ঞাসাবাদ প্রমাণ করে অপরিচিত লোক জিজ্ঞাসা করা
অপরাধের কিছু না।
না চিনলে বা সন্দেহ হলে পরিচয় জিজ্ঞেস করা:
عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: خَرَجْتُ لَيْلَةً مِنَ اللَّيَالِي، فَإِذَا
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي وَحْدَهُ، فَجَعَلْتُ
أَمْشِي فِي ظِلِّ القَمَرِ، فَالْتَفَتَ فَرَآنِي، فَقَالَ: «مَنْ هَذَا» قُلْتُ: أَبُو
ذَرٍّ، অর্থ: হজরত আবু জর
(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি এক রাতে
বাইরে বের হয়ে দেখলাম রসূলুল্লাহ (ﷺ) একাকী হাটাহাটি
করছেন। আমি চাদের ছায়ায় চলতে লাগলাম। তিনি
চোখ ফিরালেন এবং আমাকে লক্ষ্য করে বললেন
কে? জবাব দিলাম আমি আবু জর। তাখরিজ: বুখারি-৬৪৪৩;মুসলিম-৯৪; রিয়াদুস সালেহিন-৮৮০;
তিরমিজি-২৬৪৪
এশার পূর্বে রাতের খাবার খাওয়া
বাংলাদশ সেনাবাহিনী: সৈনিক মেসে সন্ধ্যা ০৬.০০
থেকে রাতের খাবার শুরু হয়। চিকিৎসাবিদ ও পুষ্টিবিদদের মতে, রাতের
খাবার ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে খেলে তা শরীরের জন্য ভালো। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে
ও শরীর ভালো থাকবে।
পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে রাতে
আগে খাবার খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানা গেছে। আসুন জেনে নিই রাতের খাবার আগে
খাওয়ার উপকারিতা-
ওজন নিয়ন্ত্রণ: রাতে আগে খাবার খাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড়
প্রেষণা হল ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকা। বিশেষজ্ঞদেরমতে, সন্ধ্যা ৬
থেকে ৭টার মধ্যে খাবার খাওয়া হলে কম ক্যালরি গ্রহণ করা হয় এবং শরীরতা সঠিকভাবে
ব্যবহার করার সুযোগ পায়।
স্থূলতার ঝুঁকি হ্রাস: নিয়মিত রাতে দেরিতে
খাওয়া হলে নিয়মিত ক্যালরি জমতে থাকে ফলে স্থূলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস: গবেষণায় দেখা গেছে,
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগেরাতের খাবার খাওয়া উচিত।
পুরুষের ২৬ শতাংশ প্রোস্টেট ক্যানসার ও নারীদের ১৬ শতাংশ স্তনক্যানসারের ঝুঁকি
কমানোর জন্য রাতে তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়া জরুরি।
মন ভালো রাখে ও শক্তি বাড়ায়: রাতে তাড়াতাড়ি
খাবার খাওয়া হলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বেশি শক্তি ও কার্যক্ষমতা লাভ করা যায়।
হজমে সহায়তা: ঘুমের
আগ মুহূর্তে খাবার খাওয়া হলে তা ঠিক মতো হজম হয় না। ফলে অ্যাসিড সৃষ্টি, গ্যাস, ফোলাভাব বা
পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এসব সমস্যা দূর করতে খাওয়া ও ঘুমের মাঝে যথেষ্ট ব্যবধান
থাকা উচিত।
ভালো ঘুম: ঘুমের কাছাকাছি সময়ে খাবার খাওয়া হলে
ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। ঘুমালে হজমক্রিয়া সচল থাকে, যা গভীর ঘুম
বা অনিদ্রা ও অস্থিরতাকে প্রভাবিত করে। দেরিতে খাওয়া হলে তা হজমে ব্যাঘাত
সৃষ্টিকরে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।
হৃদযন্ত্র উন্নত রাখা: যারা রাতে দেরিতে
খায় তারা সম্ভবত বেশি খাবার খান। দেরিতে খাওয়ারকারণে ক্যালরি খরচ হয় কম এবং তা ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’ নামক ফ্যাটি অ্যাসিডে
রূপান্তরিতহয় যা হৃদরোগের ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। রাতের খাবার আগে খাওয়া হলে ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’ গঠিত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস
পায়। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর, লাইফস্টাইল
ডেস্ক. ১৫ অক্টোবর ২০১৯
ইসলাম: ইসলামের শিক্ষা হলো ঈশার আগে
রাতের খাবার খাওয়া। যেমন হাদিস শরিফে
এসেছে-
عَنْ عبدالرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ،وَإِنَّ أَبَا بَكْرٍ
تَعَشَّى عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ ثُمَّ لَبِثَ حَيْثُ صُلِّيَتِ العِشَاءُ،
অর্থ: আবু মুহাম্মাদ
আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (রা.)থেকে বর্ণনা
করেন। হজরত আবু বকর রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে রাতের খাবার খেলেন। তারপর তাঁর
সঙ্গে অবস্থান করলেন ও এশার নামাজ আদায় করলেন। তাখরিজ: বুখারি-মুসলিম-১৫০৪
নোটঃ হাদিসটির অংশ বিশেষ উল্লেখ করা হয়েছে।
এই হাদিস শরিফ দ্বারা প্রমাণিত হয় ঈশার পূর্বে খাবার গ্রহণ
করা সুন্নাত এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
দুআর গুরুত্ব ও ফজিলত
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী :
দুআ একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। এর মাধ্যমে পূরিপূর্ণ দাসত্ব ফুটে ওঠে,
আল্লাহর সমীপে নিবেদনের একটি সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। তাই তো বাংলাদেশ
সেনাবাহিনী দোআর খুবই গুরুত্ব দেন। যেমন কয়েকটি দোআর স্থান উল্লেখ করছি :
·
কোথায় মুভ (যাত্রা) করার পূর্বে দোআ করা।
·
বৃক্ষরোপনে দোআ।
·
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দোআ।
·
বিভিন্ন স্থাপনা উদ্বোধনে দোআ।
·
বিভিন্ন দিবসে বিশেষ দোআ।
·
জুমাআর সালাতের পর দোআ।
·
যাত্রার শেষে শুকরিয়া দোআ।
·
ইউনিটের যেকোনো সদস্যদের যেকোন সমস্যার জন্য দোআ।
·
ইউনিটের সকল সদস্য (সামরিক ও অসামরিক) ও
তাদের পরিবার-পরিজনের রোগ মুক্তির জন্য দোআ।
·
ইউনিটের সকল সদস্য ও তাদের
আত্মীয়দের মধ্যে কেহ মৃত্যুবরণ করলে, তাদের রুহের মাগফিরাত
কামনা করা।
·
ইফতারের পূর্বে দোআ।
·
আসুন এখন আমরা ইসলামের দৃষ্টিতে দুআর গুরুত্ব জানবো।
ইসলাম: আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (ﷺ) কোন মুজাহিদ বাহিনীকে
প্রেরণের সময় তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করতেন। যেমন,
وعن عبدِاللَّهِ
بنِ يزيدَ الخَطْمِيِّ
الصَّحَابيِّ t قَالَ: كَانَ
رسولُ اللَّه ﷺ
إِذا أَرَادَ أَنْ
يُوَدِّعَ الجَيْشَ قالَ: أَسْتَوْدِعُ اللَّهَ
دِينَكُمْ، وَأَمَانَتكُم، وَخَوَاتِيمَ أَعمَالِكُمْ حديثٌ صحيحٌ،
অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ
ইবনে ইয়াজিদ খাতমি সাহাবি (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কোন
সেনাবাহিনীকে বিদায় দেওয়ার ইচ্ছা করতেন-তখন বলতেন, আসতাওদি উল্লাহ দিনাকুম---অর্থাৎ আমি তোমাদের দীন,তোমাদের আমানত ও তোমাদের শেষ
আমলসমূহকে মহান আল্লাহর কাছে সোর্পদ করছি। তাখরিজ: সুনানে
আবু দাউদ-২৬০১; তিরমিজি-৩৪৪৪
দুআর গুরুত্ব ও ফজিলত:
v
আল কুরআনের বাণী-
আয়াত নং-০১
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ إِنَّ الَّذِينَ
يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
অর্থ : তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি
তোমাদের ডাকে সারা দিব। যারা অহংকারে আমার উপাসনা বিমুখ, ওরা
লাঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। সূরা আল মুমিন-৬০
এই আয়াতের
ব্যাখ্যায় তাফসিরে মাআরেফুল কোরানে বলা হয়েছে, দোয়ার শাব্দিক অর্থ ডাকা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ
কোন প্রয়োজনে ডাকার অর্থে ব্যবহৃত হয়। কখনও যিকিরকেও দোয়া বলা হয়। উম্মতে
মোহাম্মাদীয়ার বিশেষ সম্মানের কারণে এই আয়াতে তাদেরকে দোয়া করার আদেশ করা হয়েছে
এবং তা কবুল করার ওয়াদা করা হয়েছে। যারা দোয়া করে না, তাদের
জন্য শাস্তিবানী উচ্চারণ করা হয়েছে। কাবে আহবার (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, পূর্ব যুগে কেবল নবিগণকেই বলা হত, দোয়া করুন;
আমি কবুল করব। এখন এই আদেশ সকলের জন্য ব্যাপক করে দেয়া হয়েছে এবং
উম্মতে মোহাম্মাদিরই বৈশিষ্টি। আলোচ্য আয়াতে দোয়া অর্থে ইবাদত বর্জনকারীকে
জাহান্নামের শাস্তি বানী শোনানো হয়েছে। যদি সে অহংকার বশতঃ বর্জন করে। কেননা
অহংকার বশতঃ দোয়া বর্জন করা কুফরের লক্ষন। তাই সে জাহান্নামারে যোগ্য হয়ে যায়।
নতুবা সাধারণ দোয়া ফরজ বা ওয়াজিব নয়। দোয়া না করলে গোনাহ হয় না। তবে দোয়া করা
সমস্ত আলেমের মতে মোস্তাহাব ও উত্তম। এবং হাদীস অনুযায়ী বরকত লাভের কারণ। সংক্ষিপ্ত
তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন- পৃ: ১১৯৩
Ø
ইমাম শাওকানী রহ. বলেন : এ আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দুআ অন্যতম
ইবাদত। আর এটা পরিহার করা আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করার নামান্তর। তুহফাতুয যাকিরীন :
আশ-শাওকানী
আয়াত নং-০২
وَ اِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ ؕ اُجِیۡبُ
دَعۡوَۃَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ ۙ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لِیۡ وَ لۡیُؤۡمِنُوۡا
بِیۡ لَعَلَّهُمۡ یَرۡشُدُوۡنَ
অর্থ: আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি
ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে। সূরা বাকারা-১৮৬
আয়াত নং-০৩
اَمَّنۡ یُّجِیۡبُ الۡمُضۡطَرَّ اِذَا دَعَاهُ وَ یَکۡشِفُ
السُّوۡٓءَ وَ یَجۡعَلُکُمۡ خُلَفَآءَ الۡاَرۡضِ ؕ ءَ اِلٰهٌ مَّعَ اللّٰهِ ؕ
قَلِیۡلًا مَّا تَذَکَّرُوۡنَ
অর্থ: কে আর্তের আহবানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং
বিপদ-আপদ দূর করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেন? আল্লাহর
সাথে অন্য কোন মা‘বূদ আছে কি? তোমরা
উপদেশ অতি সামান্যই গ্রহণ করে থাকো। সূরা নামল-৬২
v হাদিসে নববি:
হাদিস নং-০১
عَنْ أَنَسِ
بْنِ مَالِكٍ عَنِ النَّبِيِّ (صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمْ) قَالَ “الدُّعَاءُ
مُخُّ الْعِبَادَةِ
অর্থ: দুআ হলো ইবাদতের
মগজ। জামে তিরমিজি-৩৩৭১; তাবারানি-৩১৯৬
হাদিস নং-০২
عَنِ النُّعْمَانِ
بْنِ بَشِيرٍ عَنِ النَّبِيِّ (صَلَّى
اللَّهُ
عَلَيْهِ
وَ سَلَّمْ) قَالَ: “الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ.” ثُمَّ قَرَأَ ﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِى أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِى سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ
دَاخِرِينَ﴾
অর্থাৎ দুআ-ই হল ইবাদত। তাখরিজ: আবু দাউদ-১৪৭৯;
তিরমিজি-২৯৬৯; ইবনে মাজাহ-৩৮২৮
হাদিস নং-০৩
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا : أَفْضَلُ الْعِبَادَةِ هُوَ الدُّعَاءُ
সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হল দুআ। তাখরিজ: হাকেম-১৮০৫; ছহিহুল জামে-১১২২
হাদিস নং-০৪
ليسَ شيءٌ أَكْرَمَ على اللَّهِ تعالى منَ
الدُّعاءِالراوي : أبو
هريرة
অর্থ: আল্লাহর কাছে দুআর চেয়ে উত্তম কোনো ইবাদত নেই। তাখরিজ: তিরমিজি-৩৩৭০; ইবনে মাজাহ-৩৮২৯; মুসনাদে আহমদ-৮৭৪৮
হাদিস নং-০৫
عَنْ
سَلْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ رَبَّكُمْ تَبَارَكَ وَتَعَالٰـى حَيِىٌّ كَرِيمٌ يَسْتَحْيِى مِنْ عَبْدِهِ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَيْهِ أَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا
সালমান (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের বরকতময় মহান প্রভু লজ্জাশীল
অনুগ্রহপরায়ণ, বান্দা যখন তাঁর দিকে দুই হাত তোলে, তখন তা শূন্য ও নিরাশভাবে ফিরিয়ে দিতে বান্দা থেকে লজ্জা করেন। তাখরিজ:
আবু দাউদ-১৪৯০; তিরমিজি-৩৫৫৬
হাদিস নং-০৬
أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يَغْضَبْ
عَلَيْهِ
অর্থ:
যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার
উপর ক্রোধান্বিত হন। তাখরিজ: তিরমিজি-
৩৩৭৩; ইবনে মাজাহ-৩৮২৭; আহমদ-৯৭১৯
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অসহায়-মাজলুম মানুষদের পাশে দাঁড়ানো
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী/সশস্ত্রবাহিনী: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলছে।
দেশের লাল-সবুজ পতাকা অশান্ত দেশগুলোর মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছে ‘বাংলা বন্ধু’ দেশের
পতাকা হিসাবে। অশান্ত দেশগুলোতে শান্তি ফেরাতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা মিশনে
সাফল্যের অন্যান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের সাফল্যের কারণে বাংলাদেশের
সম্মান দিন দিন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে, বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসাবে এক নম্বর স্থানে উঠে এসেছে।
বিভিন্ন মিশনে তারা রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে। দক্ষিণ সুদানে
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের তৈরি একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে “বাংলাদেশ রোড”। সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
জাতিসংঘের
শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী,
১৯৮৮ সালের ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ
(ইউনিমগ) মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে যে অগ্রযাত্রার
সূচনা হয়, পরবতীর্ বছরগুলোতে দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয়
দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাদারিত্ব ও কর্মস্পৃহার মৃর্তপ্রতীক হিসেবে জাতিসংঘ
শান্তিরক্ষা মিশনে নিজেদের অবস্হান সুসংহত করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫টি কন্টিনজেন্টকে ইউনাইটেড নেশনস ক্যাপাবিলিটি
রেডিনেস সিস্টেম (ইউএনপিসিআরএস-এর অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে। অনন্য মাত্রার অধিকারী আফ্রিকা মহাদেশের ১৫০টির বেশি মিলিশিয়া বাহিনীর
নিরন্তর সংঘাতের পটভূমিতে নিবেদিতপ্রাণ নীল শিরস্ত্রাণধারী বাংলাদেশি
শান্তিরক্ষীদের কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী আজ ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
বাংলাদেশ
বর্তমানে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে ৯টি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে
অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে। তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৯ মে ২০২২
প্রিয় পাঠক বৃন্দ! আসুন এখন আমরা জানবো বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায়, অসহায়-মাজলুম মানবতার পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে পবিত্র ইসলামের দিক নির্দেশনা কি?
ইসলাম: ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। মানবসমাজ
থেকে ফেতনা ফাসাদ জুলুম অনাচার দূর করে ন্যায় ও ইনসাফের সমাজ উপহার দেয়া ইসলামের
অন্যতম লক্ষ্য। অন্যায়ভাবে হত্যা করলে মানবতা বিপন্ন
হয়। সেক্ষেত্রে অসহায় জনতার আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আসে।
অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যার ভয়াবহতা: এ
সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
আয়াত নং-০১
مِنۡ اَجۡلِ ذٰلِکَ ۚۛؔ کَتَبۡنَا عَلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ
اَنَّهٗ مَنۡ قَتَلَ نَفۡسًۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ اَوۡ فَسَادٍ فِی الۡاَرۡضِ
فَکَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ
অর্থ: এ কারণেই আমি বানী ইসরাঈলের জন্য বিধান দিয়েছিলাম যে, যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা যমীনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ব্যতীত কাউকে
হত্যা করবে সে যেন তামাম মানুষকেই হত্যা করল। সূরা মায়েদা-৩২
আয়াত নং-০২
অর্থ: যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার
শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন,
তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ভয়ংকর শাস্তি। সুরা নিসা-৯৩
হাদিস নং-০১
কেয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম রক্তপাত তথা হত্যার বিচার হবে। তাখরিজ: বুখারি-৬৫৩৩
হাদিস নং-০২
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)
এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ইসলামী রাষ্ট্রে
বসবাসকারী কোনো কাফেরকে (জিম্মিকে) হত্যা করবে, সে জান্নাতের
ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছর দূরের পথ হতেও পাওয়া যাবে। তাখরিজ:
বুখারি : ৩১৬৬
হাদিস নং-০৩
রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, মুসলমানকে গালি দেওয়া গুনাহর কাজ আর তাকে
হত্যা করা কুফরী কাজের অন্তর্ভুক্ত । তাখরিজ: মুসলিম-১১৬
মানব জীবন রক্ষার গুরুত্ব: আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, ؕ وَ مَنۡ اَحۡیَاهَا
فَکَاَنَّمَاۤ اَحۡیَا النَّاسَ جَمِیۡعًا অর্থ: আর যে কারো প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন সব মানুষের
প্রাণ রক্ষা করল। সূরা মায়েদা-৩২
পৃথিবীতে ফেতনা-ফ্যাসাদ হত্যার চেয়ে জঘণ্য ও আল্লাহর নিকট
অপছন্দীয়:
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ফেতনা (দাঙ্গা, বিশৃঙ্খলা ও গৃহযুদ্ধ) হত্যা অপেক্ষা
গুরুতর পাপ। সূরা বাকারা-১৯১
পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হইও না। নিশ্চয়ই
আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না। সূরা কাসাস-৭৭
অসহায়-মাজলুম
মানবতাকে রক্ষায় যুদ্ধের নির্দেশ: মহান আল্লাহ বলেন,
وَ مَا لَکُمۡ لَا تُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ
الۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الۡوِلۡدَانِ الَّذِیۡنَ
یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡ هٰذِهِ الۡقَرۡیَۃِ الظَّالِمِ اَهۡلُهَا
ۚ وَ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ وَلِیًّا ۚۙ وَّ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ
لَّدُنۡکَ نَصِیۡرًا
অর্থ: তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে এবং অসহায়
নারী-পুরুষ আর শিশুদের (রক্ষার) জন্য লড়াই করবে না, যারা দু‘আ করছে- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ যালিম
অধ্যূষিত জনপথ হতে মুক্তি দাও, তোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের
বন্ধু বানিয়ে দাও এবং তোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের সাহায্যকারী করে দাও। সূরা নিসা-৭৫
সেনাবহিনীর চেতনা বনাম ইসলাম
০১। সততা
ও সত্যনিষ্ঠা:
০২। আনুগত্য:
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: সেনাবাহিনীর অন্যতম চেতনা হলো
অন্যতম। আল্লাহ তাআলা সকল সৃষ্টির উপর
মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এ কারণে যে মানুষ আনুগত্যশীল। হজরত আদম (আ.) আল্লাহর নিকটে শিক্ষা গ্রহণ করে তার আনুগত্যের
মাধ্যমে ফিরিশতা ও জিন জাতির উপর মর্যাদাবান হয়েছিলেন। আনুগত্য ও ভালবাসা রক্ত
সম্পর্কিত আত্মীয় থেকে গভীর হয়। বলা হয়-
Love and loyalty runs deeper than blood.
পরিবার,
সমাজ, রাষ্ট্র ও সংস্থা সর্বত্র আনুগত্য এক অপরিহার্য বিষয়। এগুলোর কোন স্তরে
পূর্ণ আনুগত্য না থাকলে সেটা ভালভাবে পরিচালিত হয় না। সেখানে নিয়ম শৃঙ্খলা থাকে
না। ফলে সেখানে কোন কাজ সুচারুরূপে সম্পাদিত হয় না। তাই সর্বস্তরে আনুগত্যের
বিকল্প নেই। পবিত্র কুরআনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪৬ বার আনুগত্যের কথা উল্লেখ
করা হয়েছে। আনুগত্যতা মানুষকে প্রিয় করে নেয়। যেমন বলা হয়- Blood makes you related loyalty makes you
family.
১। আনুগত্য-এর আভিধানিক অর্থ: আনুগত্য শব্দটি সংস্কৃত, অর্থ হলো বশ্যতা, বাধ্যতা,
অনুসরণ, অনুবর্তন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ইত্যাদি। সূত্র: সংসদ বাংলা অভিধান
ইংরেজিতে
প্রতিশব্দ হচ্ছে- Obey, Hear, Listen, Respect, Honour, Administer,
Constancy, Adherence, Obedience, Fidelity. আর আরবিতে প্রতিশব্দ
হলো-اطاعة الخضوع الانقياد الاتباع الاستسلام . সূত্র: আল-মুজামুল ওয়াফি
২। আনুগত্যের পারিভাষিক সংজ্ঞা: আনুগত্য বলতে এমন এক মানসিকতা যার মধ্য দিয়ে কারও কোন কিছুর প্রতি অনুরাগ
ও সমর্থন ফুটে ওঠে; যা পরিবার, চাকুরির
ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা, ধর্মীয় অথবা বহুত্ববাদী সমাজে যেকোন
প্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রদর্শিত হয়। আনুগত্য স্বভাবতই
আত্মস্বার্থ বহির্ভূত একটি আসক্তি।
৩। মনীষীদের
দৃষ্টিতে আনুগত্য। বিশ্বের
জনপ্রিয়, বিখ্যাত মনীষীগণ আনুগত্য
সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। নিম্নে কয়েকজনের উক্তি উল্লেখ করা হল।
ক।
আয়ারল্যান্ডের বিখ্যাত কবি স্যামুয়েল বার্কলি বেকিট (জন্ম-১৯০৬,মৃত্যু-১৯৮৯) বলেন, Samuel said, “Has the Lord as great
delight in burnt offerings and sacrifices, as in obeying the voice of
the Lord? Behold, to obey is better than sacrifice, and to listen than the
fat of rams.
খ। ফরাসি
বিজ্ঞানী জন কে (জন্ম-১৭০৪,মৃত্যু-১৭৭৯) বলেন, “For God so loved the world, that he gave his only Son,
that whoever believes in him should not perish but have eternal life. For God
did not send his Son into the world to condemn the world, but in order that the
world might be saved through him.
৪। বিভিন্ন
ধর্মে আনুগত্য। প্রতিটি
ধর্মই সৃষ্টিকর্তা, ধর্মগুরু ও বড়দের আনুগত্যের কথা বলেছেন।
ক। খৃস্টান
ধর্মে আনুগত্য। যিশু
তার ঈশ্বরের অনুগত ছিলেন। যিশু বলেন, পিতামাতা, ভাইবোন ও গুরুজনের প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য
কর।
বাইবেলে বলা হয়েছে- আমার পাশাপাশি কারও
আনুগত্য (উপসনা) করো না। আমার আনুগত্য
করতে গিয়ে কোন প্রতিমুর্তি তৈরি করো না। লুক-২/৫১;ইফি-৬/১
খ। হিন্দু
ধর্মে আনুগত্য। বেদে
বলা হয়েছে- যারা প্রাকৃতিক
বস্তুসমূহের আনুগত্য করে তারা অন্ধকারে প্রবেশ করেছে। আর যারা সৃষ্টি জিনিস এর
আনুগত্য করে তারা অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হয়েছে।৬ ইয়াজুর বেদ,অধ্যায়-৪০,ধারা-৯
গ। বৌদ্ধ
ধর্মে আনুগত্য। বৌদ্ধ ধর্মে
সংঘ জীবনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নিয়ম-বিধি অনুসরণে একাগ্রতা, গুরুর
প্রতি আনুগত্য করা।
৫। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় আনুগত্য।
আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের আদেশ-নিষেধ
মান্য করা এবং তারা যাদেরকে মান্য করতে বলেছেন; তাদেরকে মেনে
চলাকে আনুগত্য বা ইতাআত বলে। আনুগত্যের
বিপরীতটি নাফরমানি করা, বিশ্বাসঘাতকতা, হুকুম অমান্য করা।
৬। আনুগত্যের
গুরুত্ব। ধর্ম পালন, পরিবার,
সমাজ, রাষ্ট্র ও কর্মক্ষেত্রে সর্বত্র আনুগত্য এক অপরিহার্য বিষয়। এগুলোর কোনো
স্তরে আনুগত্য না থাকলে সেটা ভালোভাবে চলবে না, সেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকবে না। ফলে সেখানে
কোনো কাজ সুচারুরূপে পরিচালিতও হবে না। তাই সর্বস্তরে আনুগত্যের কোনো বিকল্প নেই।
ক। ইসলামের
সাথে আনুগত্যের সম্পর্ক । ইসলাম ও আনুগত্য অর্থের দিক দিয়ে এক ও অভিন্ন, তেমনি
দ্বীন এবং এতাআতও অর্থের দিক দিয়ে একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইসলামের
শাব্দিক অর্থও তাই আনুগত্য বা আত্মসমর্পণ করা, এতাআত শব্দের অর্থ তাই। এভাবে দ্বীন শব্দটির চারটি অর্থ আছে, তার একটি আনুগত্য বা এতাআত। দ্বীন ও ইসলাম
যে বৃহত্তর আদর্শ ও জীবন ব্যবস্থা উপস্থাপন করে, সেই আদর্শ ও জীবন ব্যবস্থার মধ্যে দ্বীন ও ইসলামের আভিধানিক অর্থের,
ধাতুগত অর্থের ছাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই শাব্দিক
অর্থের আলোকে দ্বীনের এবং ইসলামের অন্তর্নিহিত দাবী অনুধাবন করলে দেখা যাবে যে, এখানে আনুগত্যই মূল কথা। সুতরাং আমরা
এটা বলতে পারি, ইসলামই আনুগত্য অথবা
আনুগত্যই ইসলাম। দ্বীনের অপর নাম আনুগত্য। আনুগত্যেরই অপর
নাম দ্বীন।
যেখানে আনুগত্য নেই সেখানে দ্বীন নেই, ইসলাম নেই। বাহ্যত সে ইসলামের যত বড় পাবন্দই হোক না কেন, যতই দ্বীনদার হোক না কেন, তার মধ্যে দ্বীন নেই, ইসলাম নেই। কারণ আনুগত্যই
দ্বীন ইসলামের প্রাণসত্তা।
এ কথাই আল্লাহর নবি হজরত ইবরাহিম বলেছেন- বলুন! নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার
মৃত্যু সবকিছু মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত। যার কোনো
অংশীদার নেই। এ
কথার প্রতিই আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম আত্মসর্পণকারী। সূরা আনআম-১৬২
ইবাদত শব্দের অর্থ হলো উপাসনা করা, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে তার
দেয়া বিধান অনুযায়ী কোনো কাজ করা। সওয়াব ও প্রতিদানের জন্য কোনো কাজ করা।
খ। ইসলামে
আনুগত্য ও শৃঙ্খলার গুরুত্ব আরও অনেক বেশি। ইসলামের বিজয়ের শুভ সংবাদ, বিশ্বজোড়া খেলাফতের ওয়াদা, আল্লাহর পক্ষ থেকে সূরায়ে
নূরের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। এই ওয়াদার আগে ঈমানদারদের যে পরিচয় দেয়া হচ্ছে, তাতে আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা দেখাবার কথাই
উল্লিখিত হয়েছে।
আল্লাহর নির্দেশ হলো-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ ادْخُلُواْ فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং
শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সূরা বাকারা : আয়াত ২০৮
শানে নুযুল : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. হজরত আসাদ ইবনে উবাইদ সায়লাবা রা. প্রমুখ ছাহাবায়ে-কেরাম (রা.), তারা ইসলাম
গ্রহণের পূর্বে ইহুদী পণ্ডিত ছিলেন, তাদের সম্পর্কেই এ
পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে বলে মুফাসসিরীনে কিরামগণ বর্ণনা করেছেন। ইহুদী ধর্মের
বিধানানুসারে শনিবার ছিল সপ্তাহের পবিত্র দিন এবং এ দিনকে সম্মান করা ছিল ওয়াজিব। আর খাদ্য
হিসাবে উটের গোশত ছিল হারাম। যেহেতু উনারা ইহুদী পণ্ডিত ছিলেন, ইহুদী থাকা অবস্থায় এ ধর্মের অনুশাসনগুলি
ঠিকভাবেই মেনে চলতেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পর উনাদের মাঝে
ইহুদী ধর্মের ঐ দুটি অনুশাসনের প্রভাব রয়ে গিয়েছিল। (কেননা
স্বাভাবিকভাবেই হঠাৎ করে কোন কঠিন বিষয়, যা বহুদিনের অভ্যাস তা পরিবর্তন করা যায় কঠিন, যেমন
মহান আল্লাহ তাআলা তিনি নিজে মদ একবারে হঠাৎ করে হারাম ঘোষণা করেননি) উপরন্তু তারা
ধারণা করলেন দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে শনিবারকে অসম্মান করা ওয়াজিব নয়, কাজেই যদি যথারীতি শনিবারকে সম্মান প্রদর্শন করা হয় এবং উটের গোশত হালাল
জেনেই তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা যায় তবে একদিকে যেমন হজরত মুসা (আ.) তার শরীয়তের প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করা হবে
তেমনি অপরদিকে ইসলাম ধর্মেরও। অধিকন্তু এতে মহান আল্লাহ তাআলা উনার অধিকতর আনুগত্য এবং
বিনয় প্রকাশ পাবে বলে মনে হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ তাআলা তিনি এ পবিত্র আয়াত
শরীফ নাযিল করেন।
আল্লামা আলুসি (র.) বলেন-
(১) হে মুমিনগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে
প্রবেশ করো গোপন ও প্রকাশ্যে ইসলামের কোন হুকুমের প্রতি অবহেলা করো না।
(২) হে মুমিনগণ! তোমরা এক ইসলামী শরীয়তের
পূর্ণ অনুগত হও, এর মধ্যে পরস্পর বিভেদ বা দলাদলি সৃষ্টি করো
না। তফসীরে রুহুল মাআনি
হে মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন
কর(১) এবং তোমরা মুসলিম (পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণকারী) না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ
করো না। সূরা ইমরান-১০২
আলোচ্য আয়াতে
তাকওয়া অর্জনের হক আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ
তাকওয়ার ঐ স্তর অর্জন কর, যা তাকওয়ার হক। কিন্তু তাকওয়ার হক বা যথার্থ তাকওয়া কি? আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, রবী, কাতাদাহ ও হাসান রা. বলেন,
তাকওয়ার হক হল, প্রত্যেক কাজে আল্লাহর
আনুগত্য করা, আনুগত্যের বিপরীতে কোন কাজ না করা, আল্লাহকে সর্বদা স্মরণে রাখা- কখনো বিস্মৃত না হওয়া এবং সর্বদা তার
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা- অকৃতজ্ঞ না হওয়া। ইবন কাসীর
তাফসীরে ফাতহুল কাদীরে বলা হয়েছে- এর অর্থ হল, ইসলামের
যাবতীয় বিধান মেনে চলা, তার ওয়াজেব কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে
পালন করা এবং যত নিষিদ্ধ বস্তু আছে, তার ধারে-কাছেও না যাওয়া। এ সম্পর্কে
হাদীস শরীফে এসেছে-
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻊَ ﻳَﺪًﺍ ﻣِﻦْ ﻃَﺎﻋَﺔ ﻟَﻘِﻰَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻻَ
ﺣُﺠَّﺔَ ﻟَﻪُ ﻭَﻣَﻦْ ﻣَﺎﺕَ ﻭَﻟَﻴْﺲَ ﻓِﻰ ﻋُﻨُﻘِﻪِ ﺑَﻴْﻌَﺔٌ ﻣَﺎﺕَ ﻣِﻴﺘَﺔً ﺟَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔ
অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা
করেছেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আনুগত্যের বন্ধন থেকে হাত খুলে নেয়, সে
কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে এমন অবস্থায় হাজির হবে যে, নিজের
আত্মপক্ষ সমর্থনে তার বলার কিছুই থাকবে না। আর যে ব্যক্তি
বাইয়াত ছাড়া মারা যাবে তার মৃত্যু হবে জাহেলীয়াতের মৃত্যু। তাখরিজ: বুখারি-৭১৪৩; মুসলিম-১৮৪৯
৭। আনুগত্যের
প্রকার।
আনুগত্যকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক। নিষিদ্ধ আনুগত্য।
খ। ফরয ও ওয়াজিব আনুগত্য।
৮। নিষিদ্ধ আনুগত্য। নিষিদ্ধ আনুগত্য বলতে বুঝায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) যাদের আনুগত্য
ও অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। যেমন-
ক। কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য। মুসলমানদের জন্য কাফের ও
মুনাফিকদের আনুগত্য নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন,وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ
وَالْمُنَافِقِيْنَ
وَدَعْ أَذَاهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ وَكَفَى بِاللهِ وَكِيْلاً- আর তুমি কাফের ও মুনাফিকদের অনুসরণ কর না। তাদের দেওয়া
কষ্টসমূহ উপেক্ষা কর এবং আল্লাহর উপর ভরসা কর। বস্ত্ততঃ
তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। সূরা আহযাব-৪৮
কাফেরদের আনুগত্য না করে বরং তাদের সাথে
জিহাদ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, فَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ
وَجَاهِدْهُم
بِهِ جِهَادًا كَبِيْرًا অতএব তুমি
কাফেরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি তাদের বিরুদ্ধে এর সাহায্যে কঠোর সংগ্রাম কর। সূরা ফুরকান-৫২
খ। মিথ্যাবাদী, পাপিষ্ঠদের আনুগত্য। যারা মিথ্যা কথা বলে ও মিথ্যাচার করে তাদের আনুগত্য করতে আল্লাহ নিষেধ করে
বলেন, فَلَا تُطِعِ الْمُكَذِّبِيْنَ অতএব তুমি
মিথ্যারোপ- কারীদের আনুগত্য করবে না। সূরা কলম-৮
সীমালংঘনকারীদের
আনুগত্য করতে নিষেধ করে আল্লাহ বলেন, وَلَا تُطِيْعُوْا أَمْرَ الْمُسْرِفِيْنَ আর তোমরা সীমালংঘনকারীদের আদেশ মান্য কর না।১৮ (শুআরা -১৫১)। উদাসীন ও
প্রবৃত্তির অনুসারীদের আনুগত্য করতে নিষেধ করে তিনি বলেন,وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا- আর তুমি ঐ ব্যক্তির আনুগত্য কর না যার অন্তরকে আমরা আমাদের স্মরণ থেকে
গাফেল করে দিয়েছি এবং সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও তার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম
করে গেছে।
সূরা কাহ্ফ-২৮
৯। ফরয বা ওয়াজিব আনুগত্য। ফরজ বা ওয়াজিব আনুগত্য আবার তিন প্রকার। (১) আল্লাহর আনুগত্য (২) রাসূলের
আনুগত্য ও (৩) নেতার বা ওলামা-ফোকাহা কেরামের আনুগত্য। যেমন আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ-
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও
তোমাদের নেতৃবৃন্দের। সূরা নিসা-৫৯
ক। আল্লাহর আনুগত্য। আল্লাহর আনুগত্য করা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির উপরে ফরয। আল্লাহর
আনুগত্যের ক্ষেত্রে কোন কিছু বাধা হয়ে দাঁড়ালে সেটা পরিহার করে আল্লাহর আনুগত্যের
উপরে অটল থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন,وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ-
“আর যদি পিতা-মাতা তোমাকে চাপ দেয় আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য,
যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি
তাদের কথা মানবে না। তবে পার্থিব জীবনে তাদের সাথে সদ্ভাব রেখে বসবাস করবে। আর যে ব্যক্তি
আমার অভিমুখী হয়েছে, তুমি তার রাস্তা অবলম্বন
কর।
অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকটে। অতঃপর আমি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করব”। সূরা লোকমান-১৫
খ। রাসূলের আনুগত্য। রাসূলের আনুগত্য করাও ফরয। কোরআনের ঘোষণা: ﻓَﺎﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﻥِ আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য
কর। সূরা আশ-শুআরা-১৫০
আর রাসূলের আনুগত্য করা হলে আল্লাহর আনুগত্য করা হয়। আল্লাহ বলেন, مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ
যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। সূরা নিসা-৮০
১০। আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের গুরুত্ব।
ক। নেককার
আজাজিল ইবলিস হলো কিভাবে। আমরা জানি শয়তান অভিশাপ্ত হওয়ার
পূর্বে নেককার ছিল। কিন্তু যখন হজরত আদম (আ.) আল্লাহর নিকটে শিক্ষা গ্রহণ করে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ফেরেশতা ও জিন
জাতির উপর মর্যাদাবান হয়েছিলেন। কিন্তু ইবলীস তার প্রভুর হুকুম না মেনে আনুগত্যহীন হয়ে
অভিশপ্ত হয়েছিল। এ
বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ
اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيْسَ لَمْ يَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ، قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِيْنٍ، قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيْهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِيْنَ-
অতঃপর ফেরেশতাদের বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর। তারা সকলে সিজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে
সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আল্লাহ বললেন, আমি যখন তোমাকে নির্দেশ দিলাম, তখন কোন বস্ত্ত
তোমাকে বাধা দিল যে, তুমি সিজদা করলে না? সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে
সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। আল্লাহ বললেন, এ স্থান থেকে তুমি নেমে যাও। এখানে তুমি
অহংকার করবে, তা হবে না। অতএব তুমি বের
হয়ে যাও।
তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত। সূরা আরাফ, ১১-১৩
ইবলীসের মধ্যে উপরোক্ত ঘৃণিত দোষগুলি থাকার কারণে আল্লাহ বললেন,اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُوْمًا مَدْحُوْرًا لَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكُمْ أَجْمَعِيْنَ-
তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায়। (জেনে রেখো)
তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের দ্বারা জাহান্নামকে পূর্ণ করব। সূরা আরাফ -১৮
খ। সফলতা ও কামিয়াবী হাছিল । আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য করলে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জিত
হবে।
আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا- আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে
ব্যক্তি মহা সাফল্য অর্জন করে। সূরা আহযাব-৭১
গ। আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াত লাভ। আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করলে হেদায়াত
লাভ হয়।
আল্লাহ বলেন,قُلْ أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ وَإِنْ تُطِيْعُوْهُ تَهْتَدُوْا- বল, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি
তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে তার দায়িত্বের
জন্য তিনি দায়ী এবং তোমাদের দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। আর যদি তোমরা
তাঁর আনুগত্য কর তাহলে তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হবে। সূরা নূর-৫৪
ঘ। জান্নাতে
প্রবেশ করা। আল্লাহ ও রাসূলের
আনুগত্য করলে জান্নাত লাভ হয়, যা মুমিনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য
অর্জনের জন্যই মুমিন সদা সচেষ্ট থাকে। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ- যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি
তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ
প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হলো
মহা সফলতা।
সূরা নিসা-১৩
ঙ। নবী-রাসূল
ও শহীদদের সান্নিধ্য লাভ। যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা পরকালে নবী-রাসূল, শহীদ, ছিদ্দীক ও সৎকর্মশীলদের সাথে থাকবে। আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ
فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيْقًا-
বস্ত্তত যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও
সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের সাথী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ
করেছেন।
আর এরাই হলেন সর্বোত্তম সাথী। সূরা নিসা-৬৯
চ। আমল নষ্ট হয়ে যাবে । এ সম্পর্কে কুরআনুল
কারীমের ইরশাদ হচ্ছে-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ
ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺒْﻄِﻠُﻮﺍ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟَﻜُﻢْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের অনুসরণ
কর আর নিজেদের আমল বিনষ্ট করো না। সূরা মুহাম্মদ-৩৩
এই আয়াতের পূর্বাপর যোগসূত্র এবং নাযিলের পরিবেশের দৃষ্টিতে এর অর্থ
দাঁড়ায়, আনুগত্যহীনতা সমস্ত নেক আমলকে বরবাদ করে দেয়। নবী (ﷺ) এর পেছনে
জামায়াতের সাথে নামাজ পড়েছে তারাই যখন যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ অমান্য করল, তাদের সমস্ত আমল ধূলায় মিশে গেল। আল্লাহ তাদেরকে
মুনাফিক নামে ঘোষণা করলেন।
ছ। রাসূল
-এর অনুসরণ করা হলো আল্লাহর ভালোবাসা লাভের পূর্বশর্ত। ইরশাদ হচ্ছে- قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ
اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ ‘হে রাসূল আপনি বলুন, যদি
তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলেই
আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তায়ালা
হলেন ক্ষমাশীল ও দয়ালু। হে রাসূল আপনি বলে দিন, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য প্রকাশ করো। সূরা ইমরান-৩১
জ। সকল
উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে তবে? হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে
বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, كُلُّ أُمَّتي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَن أَبَى، قالوا: يا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَن يَأْبَى؟ قالَ: مَن أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَن
عَصَانِي فقَدْ أَبَى. আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু যে অস্বীকার করেছে সে ছাড়া। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কে অস্বীকার করবে?
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, যে আমার আনুগত্য করল;
সে জান্নাতে যাবে আর যে আমার অবাধ্য হলো- সে অস্বীকার করল। সহিহ বুখারি-৭২৮০
বর্ণিত
হাদিসের ভাষ্য অত্যন্ত পরিষ্কার। নবী করিম (ﷺ)-এর প্রকৃত উম্মতগণ জান্নাতে যাবে, কিন্তু যারা নবী করিম (ﷺ)-কে মানবে না অথবা
অস্বীকার করবে তাদের কী হবে? অপরদিকে যারা রাসূল (ﷺ)-কে অনুসরণ করছে তারা কতটা করবে? এ ধরনের কিছু প্রশ্ন আমাদের সামনে আসে। সুতরাং আমরা এ
সংক্রান্ত আলোচনা কোরআন-হাদিসের আলোকে উপস্থাপন করছি।
হাদিসের প্রথম অংশ ‘আমার
সব উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে’ এ অংশের সঙ্গে মানুষের অনেক
কিছু জড়িত। তবে এ হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথমে যে বিষয়টা এসেছে তা
হলো, ‘যে আমার আনুগত্য করল।’ এই আনুগত্যের দাবি হলো- নবী
করিম (ﷺ)
দীর্ঘ ২৩ বছরে কোরআনের যত নির্দেশনা পেয়েছেন এবং নিজের বিবেকবুদ্ধি প্রয়োগ করে যে
সব কাজ করেছেন তা সবই নিজের পরিমণ্ডলে বাস্তবায়ন করা। এ ব্যাপারে
আল্লাহ তায়ালা সূরা হাশরের ৭ নং আয়াতে বলেন, ‘রাসূল যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে তিনি তোমাদের
বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
১১। নেতা বা ওলামা-ফোকাহায়ে কেরামের আনুগত্য । নেতার বা ওলামা-ফোকাহায়ে কেরামের আনুগত্য করাও
ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ-
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও
তোমাদের নেতৃবৃন্দের। সূরা নিসা-৫৯
১২। ‘উলিল আমর’ এর পরিচয়। ‘উলিল আমর’ আভিধানিক অর্থে সে সমস্ত লোককে বলা হয়, যাদের হাতে কোন বিষয়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত থাকে। সে কারণেই হজরত
ইবনে আব্বাস (রা.), মুজাহিদ ও হাসান বসরি (রহ.) প্রমুখ
মুফাসসেরগণ ওলামা ও ফোকাহা সম্প্রদায়কে
উলিল আমর সাব্যস্ত করেছেন। তাঁরাই হচ্ছেন মহানবী (ﷺ)-এর নায়েব বা প্রতিনিধি। তাঁদের হাতেই দ্বীনী
ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব অর্পিত।
ক। মুফাসসেরীনের অপর এক জামাআত
যাদের মধ্যে হজরত আবু হুরাইরা (রা.) প্রমুখ
সাহাবায়ে কেরামও রয়েছেন- বলেছেন যে, উলিল
আমর -এর অর্থ হচ্ছে সে সমস্ত লোক যাদের হাতে সরকার পরিচালনার
দায়িত্ব ন্যস্ত।
খ। এছাড়া তাফসীরে –ইবনে কাসীর এবং মাজহারীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ
শব্দটির দ্বারা ওলামা ও শাসক (নেতা) উভয়
শ্রেণীকেই বুঝায়। কারণ, নির্দেশ দানের বিষয়টি তাঁদের উভয়ের সাথেই সম্পর্কিত। তাফসীরে
মাআরিফুল কুরআন(সংক্ষিপ্ত)- ২৬০ পৃষ্ঠা, মুফতি শফি (রহ.),
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান কর্তৃক অনূদিত
১৩। নেতার আনুগত্যের সীমারেখা।
নেতা বা কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর নাফরমানির আদেশ দেয়,তাহলে এ ক্ষেত্রে তার আদেশ মানা যাবে না। যেমন, হাদীস শরীফে এসেছে- ৯ম
হিজরির রবিউস সানি মাসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানতে পারলেন যে, হাবশার কিছু নৌ-দস্যু জেদ্দা তীরবর্তী এলাকায় সমবেত
হয়ে মক্কা আক্রমণের চক্রান্ত করছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শক্রদের চক্রান্তের কথা ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথেই হজরত আলকামা (রা.) তিনশত সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে
পড়লেন।
দ্বীপে পৌঁছে দেখলেন দস্যুরা তাদের খবর পেয়ে পালিয়ে গেছে। আলক্বামা
পলাতকদের বিরুদ্ধে আব্দুল্লাহ বিন হুযাইফাকে সৈন্যসহ প্রেরণ করেন। হুযায়ফা
রাস্তায় এক স্থানে অবতরণ করেন। সেখানে তিনি একটি অগ্নিকুন্ড তৈরী করেন এবং তাঁতে সৈন্যদের
ঝাঁপ দিতে বলেন।
সৈন্যরা ঝাঁপ দিতে উদ্যত হলে তিনি বললেন,أَمْسِكُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ فَإِنَّمَا كُنْتُ أَمْزَحُ مَعَكُمْ، থাম! হে সৈন্যগণ! আমি তোমাদের সাথে ঠাট্টা করছিলাম। মদীনায় এসে একথা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
কে জানালে তিনি বললেন,لَوْ دَخَلُوْهَا مَا خَرَجُوا مِنْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
যদি তারা আগুনে প্রবেশ করত তাহলে তারা
ক্বিয়ামত পর্যন্ত সেখানেই থাকত। এরপর তিনি বলেন, لاطاعة في معصية الله إنما الطاعة في المعروْف আল্লাহর
অবাধ্যতায় কোন আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবল ন্যায় কর্মে। বুখারি-৭২৫৭;
মুসলিম-১৮৪০; যাদুল মাআদ
পৃ. ৪৫০
হাদিসে বলা হয়েছে,
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ،
ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ، ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺮﺀ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺍﻟﺴﻤﻊ ﻭﺍﻟﻄﺎﻋﺔ ﻓﻴﻤﺎ ﺃﺣﺐ ﻭﻛﺮﻩ ﺍﻻ ﻳﺄﻣﺮ ﺑﻤﻌﺼﻴﺔ
ﻓﺈﺫﺍ ﺃﻣﺮ ﺑﻤﻌﺼﻴﺔ ﻓﻼ ﺳﻤﻊ ، ﻭﻻ ﻃﺎﻋﺔ
অর্থ: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মুসলমানদের উপর নেতার
আদেশ শোনা ও মানা অপরিহার্য কর্তব্য। চাই সে আদেশ তার পছন্দনীয় হোক, আর অপছন্দনীয় হোক। তবে হ্যাঁ, যদি আল্লাহর নাফরমানিমূলক কোন কাজের
নির্দেশ হয় তবে সেই নির্দেশ শোনা ও মানার কোন প্রয়োজন নেই। বুখারি-৭১৪৪;
মুসলিম-১৮৩৯; তিরমিজি-১৭০৭; আবু দাউদ-২৬২৬
ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪِ ﻋُﺒَﺎﺩَﺓَ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺼﺎﻣﺖ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗَﺎﻝَ
ﺑَﺎﻳَﻌْﻨَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤْﻊِ ﻭَﺍﻟﻄَّﺎﻋَﺔِ ﻓِﻰ
ﺍﻟْﻌُﺴْﺮِ ﻭَﺍﻟْﻴُﺴْﺮِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻨْﺸَﻂِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻜْﺮَﻩِ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺃَﺛَﺮَﺓٍ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻋَﻠَﻰ
ﺃَﻥْ ﻻَ ﻧُﻨَﺎﺯِﻉَ ﺍﻷَﻣْﺮَ ﺃَﻫْﻠَﻪُ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺗﺮﻭﺍ ﻛﻔﺮﺍ ﺑﻮﺍﺣﺎ ﻋﻨﺪﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻴﻪ
ﺑﺮﻫﺎﻥ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻧَﻘُﻮﻝَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﺃَﻳْﻨَﻤَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻻَ ﻧَﺨَﺎﻑُ ﻓِﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻮْﻣَﺔَ
ﻻَﺋِﻢٍ
হজরত আবু অলিদ ওবাদা ইবনে ছামেত (রা.) বলেন, আমরা
নিম্নোক্ত কাজগুলোর জন্যে রাসূল (ﷺ)-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ
করেছিলাম: ১. নেতার আদেশ মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে- তা দুঃসময়ে হোক,আর সুসময়ে হোক। খুশীর মুহূর্তে হোক, আর অখুশীর মুহূর্তে হোক। ২. নিজের তুলনায় অপরের সুযোগ-সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ৩. ছাহেবে
আমরের সাথে বিতর্কে জড়াবে না, তবে হ্যাঁ, যদি নেতার আদেশ প্রকাশ্য কুফরীর শামিল হয়
এবং সে ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে যথেষ্ট দলিল প্রমাণ থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা। ৪. যেখানে যে অবস্থাতেই থাকি না কেন হক কথা বলতে হবে। আল্লাহর পথে
কোন নিন্দুকের ভয় করা চলবে না। বুখারি
ও মুসলিম
১৪। নেতা বা বিজ্ঞ আলেমদের আনুগত্যের গুরুত্ব।
ক। নেতার
আনুগত্য মানেই আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য। যেমন, রাসূল (ﷺ) বলেন,مَنْ أَطَاعَنِى فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمَنْ يُطِعِ الأَمِيْرَ فَقَدْ أَطَاعَنِى، وَمَنْ يَعْصِ الأَمِيْرَ فَقَدْ عَصَانِى- যে আমার আনুগত্য করল, সে
আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে আমার অবাধ্যতা করল সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। আর যে ব্যক্তি
আমীরের আনুগত্য করল সে আমারই আনুগত্য করল, আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করল সে আমারই অবাধ্যতা করল। বুখারি-৭১৪৪;
মুসলিম-১৮৩৯; তিরমিজি-১৭০৭; আবু দাউদ-২৬২৬
খ। দলীল-প্রমাণ
না থাকা। আমীরের আনুগত্য থেকে হাত
গুটিয়ে নিলে কিয়ামতের দিন তার কোন দলীল থাকবে না। রাসূল (ﷺ) বলেন,مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِىَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ حُجَّةَ لَهُ যে ব্যক্তি তার
হাতকে আনুগত্য থেকে মুক্ত করে নিল, সে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে এমন অবস্থায় যে, তার কোন দলীল থাকবে না। মুসলিম-১৮৫১; মিশকাত-৩৬৭৪
১৫। আনুগত্যের পূর্বশর্ত। আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে এবং
নবী (ﷺ)
হাদিসে যত জায়গায় এই আয়াত উল্লেখ করেছেন, তার প্রায় সব জায়গাতেই এই আয়াতের আগে سمع শব্দটি ব্যবহার
করেছেন, যার শাব্দিক অর্থ হলো
শোনা, শ্রবণ করা। বলা হয়েছে ﺍﺳﻤﻌﻮﺍ ﻭ ﺍﻃﻴﻌﻮا
শোন এবং মান ﺳﻤﻌﻨﺎ
ﻭ ﺍﻃﻌﻨﺎ শুনলাম এবং
মানলাম।
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﺇِﺫَﺍ ﺩُﻋُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ ﻟِﻴَﺤْﻜُﻢَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﻭَﺃَﻃَﻌْﻨَﺎ ﻭَﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ
ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ
অর্থ: ঈমানদার লোকদের কাজতো এই যে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ডাকা হবে- যেমন রাসূল তাদের মামলা
মুকাদ্দমার ফায়সালা করে দেয় তখন তারা বলে: আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। আন নূর: ৫১
মুমিনদের একমাত্র পরিচয় হলো যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ থেকে কোন
ফরমান শুনার জন্যে ডাকা হয় তখন তাদের মুখ থেকে মাত্র দুটি শব্দই উচ্চারিত হয়। একটা হলো, আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম; দ্বিতীয়ত হলো, মাথা পেতে এই নির্দেশ মেনে নিলাম। এইরূপ
দ্বিধাহীন নির্ভেজাল আনুগত্যই সাফল্যের চাবিকাঠি।
২০। উপসংহার। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষের কাজ হলো তার ইবাদত ও
আনুগত্য প্রকাশ করা। মহান স্রষ্টা মানুষের মাঝে হাত, পা, চোখ, মুখ, নাক, কান, জিহ্বাসহ অগণিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন। এসব
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কারণে আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা। আনুগত্যশীল
বান্দার সফলতা হচ্ছে জান্নাত।
পেশাগত দায়িত্ববোধ
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: চাকুরী এটি জীবিকা নির্বাহে
উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত। এসব চাকুরীর ক্ষেত্রে ইসলামের মূল দর্শন
হলো প্রত্যেক চাকুরে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সচ্ছতার সাথে পালন করবে। রাসূল (ﷺ) এ বিষয়ের
মূলনীতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
«كلكم راع، وكلكم مسئول عن رعيته »
অর্থ: তোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ
দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাখরিজ: বুখারি-৮৯৩ ; ইমাম মুসলিম-১৮২৯
ঝ। দেশ রক্ষা/সীমান্ত পাহারার ফজিলত:
হাদিস নং-০১
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللهِ
خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ مِنَ
الجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا وَالرَّوْحَةُ يَرُوحُهَا
العَبْدُ في سَبِيلِ اللهِ تَعَالَى أَوِ الغَدْوَةُ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا
عَلَيْهَا متفقٌ عليه
অর্থ: হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) বলেছেন, আল্লাহর রাহে একদিন সীমান্ত প্রহরায় রত
থাকা, পৃথিবী ও ভূ-পৃষ্ঠের যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা উত্তম। আর
তোমাদের কারো একটি বেত্র পরিমাণ জান্নাতের স্থান, দুনিয়া তথা
তার পৃষ্ঠস্থ যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর তোমাদের কোন ব্যক্তির আল্লাহর পথে
(জিহাদ কল্পে) এক সকাল অথবা এক সন্ধ্যা গমন করা পৃথিবী ও তার মধ্যে যা কিছু আছে
তার চেয়ে উত্তম। বুখারি-২৮৯২, মুসলিম
৪৯৮২-৪৯৮৩
হাদিস নং-০২
عَنْ سَلمَانَ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُرِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ
وَقِيَامِهِ وَإنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِيْ كَانَ يَعْمَلُ
وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَأَمِنَ الفَتَّانَ رواه مسلم
অর্থ: হজরত সালমান (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ ) কে বলতে
শুনেছি যে, একদিন ও একরাত সীমান্ত
প্রহরায় রত থাকা, একমাস ধরে (নফল) রোযা পালন তথা (নফল) নামায
পড়া অপেক্ষা উত্তম। আর যদি ঐ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, তাহলে
তাতে ঐ সব কাজের প্রতিদান দেওয়া হবে, যা সে পূর্বে করত এবং
তার বিশেষ রুযী চালু ক’রে দেওয়া হবে এবং তাকে (কবরের) ফিৎনা
ও বিভিন্ন পরীক্ষা হতে মুক্ত রাখা হবে। তাখরিজ: মুসলিম-৫০৪৭
হাদিস নং-০৩
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُعَيْنَانِ لاَ تَمسُّهُمَا النَّارُ : عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ
بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبيلِ اللهِرواه الترمذي وقال حديث حسن
অর্থ: হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) কে বলতে শুনেছি যে, দুই প্রকার চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। আল্লাহর ভয়ে যে
চক্ষু ক্রন্দন করে। আর যে চক্ষু আল্লাহর পথে প্রহরায় রত থাকে। তাখরিজ: তিরমিযী-১৬৩৯
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ
)বলেছেন, লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম জীবন হচ্ছে সেই ব্যক্তির যে
ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে সবসময় আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য তৈরী থাকে। যেখানেই সে
শুনতে পায় কোন বিপদ বা পেরেশানীর কথা সঙ্গে সঙ্গেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে বাতাসের বেগে
ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ে। হত্যা ও মৃত্যুকে তার পথে তালাশ করতে থাকে। তাখরিজ:
মুসলিম
সামান্য আমলে বিপুল প্রতিদান। বারাআ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সঃ) এর নিকট এক
ব্যক্তি এলো অস্ত্র সজ্জিত হয়ে। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি প্রথমে জিহাদ করবো, না প্রথমে
ইসলাম গ্রহন করবো? জবাব দিলেনঃ প্রথমে ইসলাম গ্রহন করো, তারপর জিহাদ করো। লোকটি
ইসলাম গ্রহন করলো, তারপর জিহাদে লিপ্ত হলো এবং শহীদ হয়ে গেল। রাসূল (সঃ) বলেনঃ এই ব্যক্তি সামান্য আমল করলো
কিন্তু বিপুল প্রতিদান লাভ করলো। (বুখারি ও মুসলিম)
যুদ্ধাহত ব্যক্তির ফজিলত: আবু হুরাইরা (রা.) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন, আল্লাহর
পথে আহতদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আসবে যে, তার আহত
স্থান থেকে রক্ত ঝরতে থাকবে। এর বর্ণ হবে রক্ত বর্ণ এবং এর গন্ধ হবে মিশকের গন্ধ।
(বুখারি ও মুসলিম)
সেনা পরিবারকে
সাহায্য না করার পরিণতি। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত।
রাসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জিহাদ
করেনি, কোনো গাযীকে জিহাদের সরঞ্জামও সংগ্রহ করে দেয়নি এবং কোন গাযীর অনুপস্থিতিতে
তার পরিবার-পরিজনের দেখাশুনাও করেনি, আল্লাহ কিয়ামতের পূর্বে তাকে কঠিন বিপদে
ফেলবেন। (আবু দাউদ)
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের যদি নিয়ত সহিহ থাকে
ইনশাল্লাহ সেই উপরোক্ত হাদিসগুলোর ফজিলত প্রাপ্ত হবে। যেমন, হাদিসে বলা
হয়েছে-
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ (ﷺ) " إِنَّمَاا لْعَمَلُ
بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لاِمْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ
فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ (ﷺ) وَمَنْ
كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا،
فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ ".
অর্থ: আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
ইরশাদ করেন- সকল কর্মই নিয়তের ওপর
নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক মানুষের জন্য তা-ই রয়েছে যা সে
নিয়ত করে।
অতত্রব, যার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে (উদ্দেশ্য) হবে; তার হিজরত
আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকেই (পরিগণিত) হবে। হিজরত দুনিয়া
লাভের উদ্দেশ্যে কিংবা কোন নারীকে বিবাহ করার
উদ্দেশ্যে হবে; তার হিজরত সে দিকেই গণ্য হবে, যে উদ্দেশ্য সে হিজরত করেছে। বুখারি-০১৫৪, ২৫২৯; মুসলিম-১৯০৭; তিরমিজি-১৬৪৭; আবু দাউদ-২২০১; নাসায়ি-৭৫; আহমদ-১৬৮
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা
বাংলাদেশ সেনাবহিনী: বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীতে চার ধরনের মেস, যেমন-স্টেশন অফিসার্স মেস, অফিসার্স ফিল্ড মেস, জেসিও’স মেস এবং সৈনিক মেস রয়েছে।
ছ। কুক হাউজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। কুক হাউজের পরিষ্কার
পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিবর্গকে
সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে পাঁচকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত
করতে হবে এবং ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট মেসের বাহিরে রক্ষিত তথ্যবোর্ডে টাঙ্গিয়ে
রাখতে হবে। পাঁচকদের অবশ্যই টয়লেট ব্যবহার করে কুক হাউজে প্রবেশের পূর্বে সাবান
দিয়ে হাত ভাল করে ধুঁতে হবে। মেস সার্জেন্ট সব সময় এই বিষয়গুলো পরীক্ষা করে
নিশ্চিত করবেন।
সেনাবাহিনীতে প্রচলিত ধর্মীয় সংস্কৃতি (ইসলামী অনুষ্ঠান)
১। i§¢jL¡z Cpm¡j öd¤ j¡œ
e¡j¡S ®l¡S¡l e¡j euz hlw Ha S£he-k¡fe Be¾c-M¤n£, n¡l£¢lL-j¡e¢pL J BaÈ£L k¡ha£u
Q¡¢qc¡ ¢jV¡e¡l h¾c¡hÙ¹ luRz Hje p¡j¢NËL J p¤¾cl djÑ ¢àa£u¢V ®eCz Cpm¡j£
S£hel fË¢a¢V L¡S luR Be¾cz ah a¡ p£j¡q£ei¡h euz fËaÉL¢V L¡Sl J M¤n£l
p£j¡lM¡ ®Ve ®cu¡ quR HM¡ez a¡C Be¾c Evph Lla qh dj£Ñu ¢hd¡e¡e¤k¡u£z
Cpm¡j p¡jÉl djÑ a¡ ¢h¢iæ Ch¡ca J Evphl j¡dÉj fËL¡¢na qu ¢nr¡j§mL Ae¤ù¡el©f
f¢lN¢Za qu b¡Lz ah Cpm¡j£ Ae¤ù¡e¡¢c Ch¡ca ¢i¢šLz
২। ইসলামী অনুষ্ঠানাদি।
ক। আকীকা/ জন্মোৎসব
খ। বিবাহ মজলিশ
খ। মিলাদ মাহাফিল
ঘ। জানাযা
ঙ। ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী
চ। শবে মিরাজ
ছ। শবে বরাত
জ। শবে কদর
ঝ। আখেরী চাহার শোম্বা
ঞ। ফাতিহা ইয়াজদাহাম
ট। দুই ঈদের সালাত
ঠ। আশুরা
৩। ব্যক্তি কেন্দ্রিক
ইসলামী অনুষ্ঠানাদি।
Lz BL£L¡z ﻋﻗﻳﻗﺔ Blh£ nëz Hl AbÑ ¢hfc j¤š² Ll¡z
hÉ¡fL AbÑ ¢nöl S¾jl fl pçj ¢chp e¡jLlZ J ®Lnj¤äe Efmr fö Shq Ll¡l e¡jz
Bh¡l L¡l¡ ja ¢nöl L¢aÑa ®LnLJ BL£L¡ hm¡ quz Cpm¡jl ¢hd¡e Ae¤k¡u£ ®p¢ce eh
S¡aLl e¡j l¡M¡, a¡l Q¥m L¡V¡ J fö Sh¡C Ll¡ R¤æaz BL£L¡l föl j¡wnl ¢ae i¡Nl
HL i¡N c¢lâ J c¤xÙÛcl jdÉ, HLi¡N BaÈ£u üSel jdÉ ¢halZ Ll¡ qkz HL i¡N
¢fa¡-j¡a¡ J ¢eLV BaÈ£uNZ NËqZ Llez pjÙ¹ ®N¡Ù¹
l¡æ¡ Ll ®m¡LSe c¡Ju¡a Ll M¡Ju¡eJ ®~hdz Bõ¡j¡ c¡Ec
S¡ql£l ja BL£L¡ Ll¡ Ju¡¢Shz Cj¡j Bh¤ q¡¢eg¡ (lx) Hl ja BL£L¡ Ll¡ j¤Ù¹¡q¡hz
Cj¡j n¡gu£, j¡mL J Bqjc (lx) Hl ja BL£L¡ Ll¡ R¤æ¡a j¤u¡‚¡c¡z l¡p¤p¤õ¡q (px)
¢eSl BL£L¡ ¢eSC Ll¢Rme Hhw q¡R¡e-®q¡R¡Cel (l¡x) BL£L¡J L¢luRez a¡C rja¡ b¡Lm fËaÉLlC BL£L¡ Ll¡ E¢Qvz ®Lee¡
®h¡M¡l£ J e¡p¡D nl£gl q¡c£R Cw¢Na luR, ®k p¿¹¡e ¢he¡ BL£L¡u মারা ¢NuR, ®LÅu¡jal ¢ce ®p a¡l ¢fa¡-j¡a¡l SeÉ p¤f¡¢ln Llh e¡ z p¿¹¡e
i¨¢jù qJu¡l 7,14 ¢Lwh¡ 21 a¡¢lM h¡ ¢eS p¤¢hd¡ ja AeÉ pju BL£L¡ Llhz A¡L£L¡l
fö ®L¡lh¡e£l fn¤l jaC qa qhz BL£L¡l ¢ce j¡b¡ j¤äe Ll¡ i¡m Hhw L¢aÑa Q¥m
f¢lj¡e ®p¡e¡-l©f¡ RcL¡ Lla quz ®Rml SeÉ 2¢V, ®jul SeÉ HL¢V is¡/R¡Nm/c¤ð¡
Shq Ll¡ Ešjz BL£L¡l ®N¡Ù¹ h¡ M¡e¡ j¡-h¡h¡, c¡c¡-c¡c£, e¡e¡-e¡e£, de£-c¢lâ
pLmC ®Ma f¡lz p¿¹¡ecl S¾j¡vph h¡ BL£L¡ AhnÉC nl£ua pÇja Ef¡u f¡me Ll¡
E¢Qaz ®L¡e hc lRj ®lJu¡Sl Ae¤plZ Ll¡ hSÑe Lla qhz f¡ÕQ¡aÉl Ae¤Lle S¾j
h¡¢oÑL£ f¡me Ll¡ Hhw a¡a ®LLÚ L¡V¡ Cpm¡j£ pwúª¢al f¢lf¢¿Ûz
Mz ¢hh¡q
jS¢mnz qkla j¤q¡Çjc (px)
el-e¡l£ J k¤hL-k¤ha£l L¡je¡-h¡pe¡ ¢hQ¡l ¢hnÔoZ Ll Hje HL f§ZÑ¡wN hÉhÙÛ¡
®O¡oZ¡ Llme k¡ pj¡S, djÑ, S¡¢a, S£he J ®k±hel SeÉ HL jq¡ EfL¡l£ J flj p¤MLl
hÉhÙÛ¡ ¢hnÄ fËQ¢ma k¡ha£u p¡j¡¢SL J ®k±e ¢euj L¡e¤e ®bL H hÉhÙÛ¡ phÑ¡šj J
pËØV¡l fR¾ce£uz Bjl¡ HL ¢hh¡q håe h¡ c¡ÇfaÉ S£he l©f ®Se b¡¢Lz ¢hh¡ql
B¢id¡¢eL AbÑ ®k±e ¢jmez hÉ¡fL AbÑ p¡j¡¢SL, dj£Ñu J l¡øÊ£u l£¢a-e£¢al j¡dÉj
el-e¡l£L ®~c¢qL ¢jmel J HLœ hph¡pl ®k ®~hd pec ®cu¡ qu a¡LC hm¡ qu ¢hh¡qz
j¡e¤o j¡e¤o ÙÛ¡u£ i¡mh¡p¡ S¾j¡e, p¿¹¡e p¿¹¢a Evf¡ce J ®k±e r¥d¡ ¢jV¡e¡l H
¢ae¢VC qm¡ ¢hh¡ql fËd¡e EŸnÉz a¡C L¡ji¡hl EšSe¡ pqÉ Lla f¡lmJ ¢hh¡q Ll¡
R¤æ¡az pqÉ Lla Arj qm ¢hh¡q Ll¡ glSz Bh¡l Ù»£l fËuS¡e£u Aæ, hÙ», h¡pÙÛ¡e J
®k±e a«¢ç ¢jV¡a ApjbÑ qm ¢hh¡q Ll¡ ®c¡oe£u (j¡Ll¦q)z l¡R¤m (px) hmRex ¢hh¡q
Ll¡ Bj¡l R¤æ¡az ®k a¡ f¡me Ll e¡ ®p Bj¡l দলভূক্ত নয়। (h¡M¡l£)
hl ¢eS ¢Lwh¡ A¢ii¡hLl j¡dÉj ¢hh¡q ¢ÙÛl Ll Be¤ù¡¢eLi¡h Ù»£L NËqZ
Llhz fËbjC ®ce jql d¡kÑ Ll ¢ea quz jql Hjei¡h d¡kÑ Ll¡ E¢Qv k¡ Bc¡u Ll¡
ü¡j£l fr pñh quz Lel fr ®bL ®S¡l f§hÑL h¡ naÑ p¡fr ®k±a¥L NËqZ Ll¡ A®~hdz
fËbj c¤Se p¡r£pq f¡œl A¢ii¡hL f¡œ£l ¢eLV qa pÇj¢a (HSe) NËqe Llhz Aaxfl
®M¡vh¡ fs f¤el¡u hll pÇj¤M f¡œ£l A¢ii¡hL jql¡e¡ EõM Llax f¡œ£L ¢hh¡q ®cu¡l
Lb¡ hÉš² Llm hl Eš² jql¡e¡pq f¡œ£ NËqZ Ll¡l pÇj¢ap§QL në/h¡LÉ Ef¢ÙÛa pLmL
ö¢eu EµQ¡lZ Llhz Aaxfl hl-Lel SeÉ ®c¡u¡ Llhz ¢hh¡q jS¢mp h¡ h¡s£a®L¡el©f
e¡S¡uS L¡S J ¢hdj£Ñcl Ae¤LlZ Llh e¡z jql¡e¡ M¤h ®hn£ qm hll fr ®h¡T¡ qu
k¡h, Bh¡l AbÑ®e¢aL ¢cL ¢hhQe¡ e¡ Ll A¢a AÒf jql¡e¡ p¡hÉÙ¹ Ll¡J c¤oZ£uz
Nz ¢jm¡c j¡q¢gmz ¢jm¡c
Blh£ nëz Hl AbÑ ®L¡e hÉ¢š²l S¾jL¡m, S¾jÙÛ¡e, S¾j¢ce Hhw SÇj¡vphz ah ¢hnoax
qkla j¤q¡Çjc (px) Hl S¾jL¡m AbÑ ¢jm¡c nël hÉhq¡l qu b¡Lz qklal S¾j ¢ceL
f¢hœ ¢ce ¢qph Eck¡fe Ll¡ pÇfLÑ phÑ fËbj Che Sh¡ul (jªa¥É
1217 Mªx 614 ¢qx) abÉ ®fn Lle ®k, f§hÑ qCaC j‚¡u eh£ (px) Hl S¾j Ol (k¡ fl
q¡l¦e-অর-l¢ncl j¡a¡ LaѪL jp¢Sc l©f¡¢¿¹¢la quR) fË¢a
hvpl 12C l¢hEm BEu¡m AaÉ¡¢dL ®m¡LSe Sj¡ua qaz L¡mœ²j qklal S¾j¢chp Eck¡fel
SeÉ ea¥e¡šl l£¢a fËQ¢ma qu Hhw L¡m J ÙÛ¡eic phÑœC j£m¡c¤æh£ Eck¡¢fa quz
¢jnl g¡aj£ Bjm l¡S LjÑQ¡l£ Hhw d¡¢jÑL hÉ¢š²NZl pjeÄu J hš²ªa¡l j¡dÉj Eq¡
Eck¡fe Ll¡ qaz ah j¤p¢mj N˿ۡL¡lNZ j¡J¢mcl B¢c Evp pÇfLÑ ®k ILÉja fËc¡e
Lle a¡a ®cM¡ k¡u 604 ¢qS¢l p¡m ইরাকের Blh¡m¡a j£m¡c Ae¤ù¡e phÑ fËbj fËhaÑe Lle p¤ma¡e p¡m¡q E¢Ÿel i¢NÀf¢a
Bm j¡¢mL j¤S¡ggl E¢Ÿe ®L¡Lh¤l£z ah œ²jnx a¡a Mªø¡e fËi¡h Y¥L fsz aMe ¢hl¡V
Se pj¡hn, jn¡m ®n¡i¡k¡œ¡, Ju¡S, i¥¢li¡Se N£ah¡cÉ J Bj¡c fËj¡c fËi«¢a
Ae¤ù¡el n¡¢jm b¡Laz 1910 p¡m ®bL Cq¡ ¢h¢iæ j¤p¢mj ®cn S¡a£u Evph l©f
fË¢af¡¢ma qµRz EõMÉ ®k, fË¡u phÑ k¤N j¤p¢mj pj¡S ¢jm¡cl ¢hl¦Ü fËhm
¢hl¡¢da¡J quR ®Lee¡ fË¢a frl ja H Evph HL¢V eh Eá¡¢ha fËb¡ h¡ ¢hcBaz ah
¢jm¡cl pjbÑLNZ HL ¢hcBa q¡Re¡q l©f ü£L«¢a ®cez ¢jm¡c f¡L-i¡la h¡wm¡cn hým
fËp¡l m¡i Ll¡ pšÆJ Bqm q¡c£R pÇfÐc¡u Hhw ®cJh¾cf¿Û£ q¡e¡g£NZ ¢jm¡c¡e¤ù¡eL
¢hcBa je Lle Hhw ¢Lu¡jL A¢pÜ je Llez AbQ Afl¡fl q¡e¡g£NZ ¢jm¡cL A¢a öi Aনুù¡e je Ll b¡Le Hhw 12C l¢hEm BEu¡m R¡s¡J AeÉ¡eÉ pju S¡a£u/l¡øÊ£u Hhw
®pe¡ ¢chp, hÉhp¡u fË¢aù¡e, h¡pÙÛ¡e, ú¥m-LmS, L¡l¡ S¾j-jªa¥É qm, ¢h¢nø
g¢Smal l¡œ, öi L¡kÑ¡l¡ñ, ¢hfc¡fc, EŸnÉ pgm ¢jm¡cl Ae¤ù¡e L¢lu b¡Lez
Oz S¡e¡k¡z S¡e¡k¡ nël AbÑ M¡V h¡ M¡¢Vu¡, M¡¢Vu¡l Efl l¢ra jªacq h¡
m¡n Hhw c¡ge-L¡ge h¡ djÑ£u ®noL«aÉz L¥lBe nl£g k¢cJ c¡ge-L¡ge pÇfLÑ fËaÉr
EõM ®eCz ¢L¿¹ q¡¢cpl Efl ¢eiÑl Ll ¢gLql ¢La¡hpj§q c¡ge-L¡gel ¢hÙ¹ªa
¢h¢d-¢eod fËcš quRz ®L¡e j¤pmj¡el jªa¥É qJu¡l flC a¡L M¡¢Vu¡l Efl
¢Lhm¡j¤M£ Ll öCu ®cu¡ quz Aaxfl kb¡l£¢a Nlj f¡¢e à¡l¡ ®N¡pm ¢cu f¤l¦oL HL
®bL ¢ae L¡fs Hhw j¢qm¡L ¢ae ®bL f¡yQ L¡fs à¡l¡ L¡ge fl¡a quz Ab¡Ñv f¤l¦oL
L¡¢jS, CS¡l J ®mg¡g¡ Bl Ù»£m¡LL L¡¢jS, j¡b¡ hå, CS¡l, mg¡g¡ J hrh¾c fl¡a
quz L¡gel L¡fs jªal q¡yV¥a, q¡al a¡m¤a, e¡L J Lf¡m p¤N¢å m¡N¡e Ešjz
S¡e¡k¡l e¡j¡k glS ®Lg¡u¡z k¢cJ 2/4
Sel à¡l¡ HL¡S pj¡d¡ qu k¡uz ¢L¿º pj¡Sl pLm BLm h¡mN f¤l¦ocl Ef¢ÙÛa qJu¡
E¢Qvz S¡e¡k¡l e¡j¡k/®c¡u¡ Bc¡u¡¿¹ c¡ge Ll f¤el¡u ®Su¡lal ¢eua ®c¡u¡/j¤e¡S¡a
Llhz
৪। সামষ্টিক
ইসলামী অনুষ্ঠানাদি।
Lz Dc
j£m¡c¤æh£z qkla j¤q¡Çjc (px) Hl S¾j ¢chp Efmr
®k M¤¢n/Evph/öL¢lu¡q Bc¡u Ll¡ qu a¡L Dc j£m¡c¤¤æh£ hm¡ quz Cq¡ fËaÉL
Q¡¾cÐhvpll a«a£u j¡p l¢hEm BEu¡ml à¡cn a¡¢lM Ae¤¢ùa qu b¡Lz H ¢ce L¡wN¡m£
®i¡S, c¡e-Mul¡a, l¡p§ml S£he¡m¡Qe¡, cl¦cnl£g f¡W, ®c¡u-j¤e¡S¡a, fËi«¢a Ch¡ca
h¾cN£l Ae¤ù¡e Ll¡ qu b¡Lz
Mz nh hl¡az nh hl¡a AbÑ i¡NÉ lSe£z H l¡¢œ fË¢a
Q¡¾cÐhoÑl Aøj j¡p n¡h¡el ®Q±Ÿ a¡¢lM ¢ch¡Na l¡œ Ae¤¢ùa qu b¡Lz H l¡œ …e¡qÚ
j¡g Hhw Bõ¡ql p¿º¢ø ASÑel SeÉ j¤pmj¡el¡ ¢hnoi¡h egm e¡j¡S, ®L¡lBe ®am¡Ju¡a,
cl¦c f¡W, jªacl SeÉ ¢hno ®c¡u¡, ¢j¢ø M¡cÉ ¢halZ, c¡e-Mul¡a J ¢ce ®l¡S¡ hÊa
f¡mel j¡dÉj Eck¡fe Ll b¡Lz ¢h¢iæ ®cn Hl e¡j ¢h¢iæ lLjz S¡i¡l A¢dh¡p£NZ HL
l¦Bq¡ hm BMÉ¡¢ua Llz Bl ¢VNË ®N¡œ HL h¡Ÿ¡Ne hm¡ quz BQe£uNZ (C¾c¡en£u
à£fh¡p£) HL L¥¾c¤¢lh¤ (M¡e¢eu¡S ¢halZ) hmz I l¡œ Bõ¡q phÑ¢ejÀ Bpj¡e Hp
jlen£m j¡eh jäm£L a¡cl f¡fl j¡SÑe¡ fË¡bÑe¡l Bqh¡e S¡e¡ez f¡L-i¡la, h¡wm¡cn
J Cl¡e H l¡¢œ¢V ¢hnoi¡h Eck¡¢fa quz
Nz nh ¢jl¡S। nh AbÑ l¡¢œ, ¢jl¡S AbÑ ¢py¢s, EdÄÑ Nje, Bl¡qez Cpm¡j£ f¢li¡o¡u qkla
j¤q¡Çjc (cx) Hl j‚¡ ®bL h¡ua¥m j¤L¡Ÿ¡R (®Sl¦S¡mj) Efe£a qJu¡ Hhw ®pM¡e ®bL
pç¡L¡n J ®c¡kMhqÙ¹ cnÑe Ll Bõ¡ql p¡¢ædÉ Ef¢ÙÛa qJu¡l OVe¡L ¢jl¡S hmz
¢jl¡S Lh LMe J Lah¡l quR H ¢eu ®hn jaic cªø quz ah ¢qSlal f§hÑ 27n lSh
a¡¢lM l¡¢œhm¡ ýS¤l (px) ¢nu¡h Bh¤ a¡¢mhl EÇjq¡e£l Nªq O¤¢ju ¢Rmez
¢ShË¡Cm (Bx) pq ¢aeSe ¢g¢lÙ¹¡ a¡yl ¢eLV Hp a¡yL L¡h¡l q¡¢aj ¢eu ®Nmez avfl
®h¡l¡L (â¦ak¡e) Q¢su h¡ua¥m ®j¡L¡Ÿ¡R Efe£a qmez h¡Cl ®h¡l¡L ®hyd ®lM
jp¢Sc Y¥L c¤l¡L¡a e¡j¡k pLm eh£cl Ef¢ÙÛ¢aa Bc¡u Llmez a¡lfl S£hË¡Cm pq
l¡p§m (px) f¤ex EdÄÑ¡L¡n k¡œ¡ öl¦ Llmez fËbj Bpj¡e fËhn Ll Bcj (Bx) Hl
p¡b p¡r¡v quz Aaxfl ¢àa£u, a«a£u, Qa¥bÑ, f’j, où J pçj Bpj¡e kb¡œ²j Dp¡,
CEp¤g, Ccl£R, q¡l¦e, j¤R¡ J ChË¡¢qj (Bx) Hl p¡b a¡yl p¡r¡v OVz avfl ¢Rcl¡a¥m
j¤ea¡q¡l ®f±Rmez Aaxfl Bõ¡ql pwN p¡r¡v OVz EÇjal SeÉ Bõ¡ql alg ®bL EfY±Le
üÚl©f f¡yQ Ju¡š² glS e¡j¡k J HLj¡p glS ®l¡S¡ ¢eu h¡ua¥m ®j¡L¡Ÿ¡R qu j‚¡ nl£g
¢gl Bpez l¡p§m (px) ü-nl£l J S¡NËa AhÙÛ¡u A¢a AÒf pju H ïje J p¡r¡v L¡kÑ
pj¡d¡ qu¢Rmz l¡p¤m i¢hoÉv LjÑ fÜ¢a J eh ®fËlZ¡ ¢eu Hme ¢jl¡S ®bLz a¡C
¢jl¡Sl ¢nr¡ ¢hno a¡vfkÑf§ZÑ J Ni£l ‘¡el Bd¡lz
Oz ®no h¤dh¡l (BMl£ চাq¡l
n¡ð¡)z Q¡¾cÐhvpll ¢àa£u j¡p
pgll ®no h¤dh¡l BMl£ Q¡q¡l শোð¡ ej Cpm¡j
SNa fË¢pÜz l¡p§m¤mÓ¡q (cx) HL¡cn ¢qSl£ pe pgl j¡pl ®no h¤dh¡l jªaɧl ®l¡N
BH²¡¿¹ qez k¡l f¢le¢aa l¡p§m (px) Cqd¡j aÉ¡N Ll Bõ¡ql p¡¢ædÉ q¡¢Sl qu¢Rmez
Afl ja¡e¤k¡u£ LuL¢ce ®bL l¡p§m (px) SÆl J j¡b¡ hÉb¡u M¤h LÖV f¡¢µRmez Aaxfl
h¤dh¡l HLV¥ p¤Øqh¡d Llmez H ¢ce ¢a¢e ®N¡Rm LlRe, S¡æ¡a¥m h¡L£ LhlØq¡e ®ku¡la LlRe Hhw ¢hnoi¡h BaÈ£u üSel ®M¡yS Mhl ¢euRez
Hlfl ¢chp¡¿¹ a¡yl AhØq¡l Ahe¢a OVa b¡L Aaxfl 12 C l¢hEm BJu¡m ®p¡jh¡l
Afl¡q² flf¡ll X¡L p¡s¡ ¢cu j¤p¢mj S¡¢aL ®n¡Lp¡Nl i¡¢pu k¡ez
Pz g¡aj¡ Cu¡Sc¡qjz Hl AbÑ HL¡cn a¡¢lM jªal
SeÉ ®c¡u¡z HM¡e Qâj¡p l¢hERR¡e£l HN¡l a¡¢lM J¢mL¥m ¢nl¡j¢e Bhc¤m L¡cl
¢Sm¡e£ (lqx) Cqd¡j aÉ¡N Llez a¡yl l²q R¡Ju¡h ®f±R¡e¡l SeÉ j¤p¢mj ¢hnÄl pLm
iJ²hª¾c H¢ce ¢hno ®c¡u¡ / j¤e¡S¡a, ®L¡lBe M¡e£, c¡e-Mul¡a fËi«¢a pvL¡S Ll
b¡Lez Bhc¤m L¡¢cl ¢Sm¡e£ (lx) 470 ¢qSl£ 1077 pe Sj NËqZ Llez H jq¡je£o£l
C¿¹L¡m ¢chp 11C l¢hERR¡e£ 561 ¢qSl£ h¡ 1166 Mªø¡®ëz
Rz দুই Dcl সালাতz Dc j§max Ec në ®bL Evfæz
AbÑ O¤l Bp¡, ¢gl Bp¡ h¡ f¤Zl¡Njez B¢id¡¢eL cª¢øL¡e ®bL Hl AbÑ x
(1) ®pC pLm ¢ce k¡a ®m¡L pjha quz
(2) M¤n£ J Be¾c ¢gl Bp¡l jJp¤jz
(3) ®pC ¢ce k¡ fË¢ahRl Be¾c J M¤n£ ¢eu
Bpz Dc nël hÉhq¡l ®L¡lBe q¡L£j ®cM¡
k¡u,
ﻗﺎﻞﻋﻳﺳﻰ ﺒﻦ ﻤﺭﻳﻡ ﺍﻟﻟﻬﻡ ﺮﺑﻧﺎ ﺍﻨﺯﻞﻋﻠﻳﻨﺎ
ﻣﺎﺋﺩﺓ ﻤﻥ ﺍﻠﺳﻤﺎﺀ ﺗﻗﻝ ﻠﻧﺎﻋﻳﺪﺍ ﻠﺍﻭﻠﻧﺎ ﻭﺍﺨﺭﻧﺎ ﻭﺍﻳﺔ ﻣﻧﻚ
AhnÉ Dc nël
fËL«a AbÑ M¤n£, Be¾c h¡ Evph eu k¢cJ HC AbÑC Ll¡ quz Hl fËL«a AbÑ f¤el¡Njez
®kqa¥ H pju HL j¡p ¢pu¡j p¡de¡ Hhw aÉ¡Nl j¡dÉj h¡¾c¡l ®cq-jel f¢hœa¡ m¡i qu a¡C DcL Dc hm¡ quz
DcL Dc ¢qph e¡j LlZ Ll¡l Bl¡ HLV¡ L¡lZ qµR Bõ¡q H ¢ce ¢eS h¡¾c¡cl ¢eLV rj¡ J LmÉ¡Z ¢eu BNje Llez a¡C HLV¡ Bec J M¤n£l
¢houz
ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর আরবী শব্দ। অর্থ হলো খুশি, আনন্দ ও উপবাস ভঙ্গকরণ। সুদীর্ঘ একটি
মাস আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে রোযা রাখার পর বিশ্ব মুসলিম এই দিনটিতে রোযা ভঙ্গ
করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে আনন্দোৎসব করে বলে এর নামকরণ করা ঈদুল ফিতর। ঈদুল
ফিতরের দু’রাকাত সালাত আদায় করা ওয়াজিব। দায়িত্ব প্রাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষক এ সালাত
পরিচালনা করে থাকে।
ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা শব্দদ্বয় আরবী। বিশ্ব মুসলিম পরম ত্যাগের নিদর্শনসরূপ যিলহজ্জ মাসের ঐতিহাসিক দশ তারিখে মহা সমারোহে পশু যবেহের
মাধ্যমে কুরবানীর যে আনন্দোৎসব পালন করে থাকেন তাই ঈদুল আযহা।
বস্তুত হযরত ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে
প্রানপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানী করার মত যে ঐতিহাসিক নযীর স্থাপন
করে গেছেন সেই সুন্নাত পালনার্থে মুসলিম জাতি আজও কুরবানী করে থাকে। যিলহজ্জ মাসের
দশ তারিখ বিশ্ব মুসলিম ঈদগাহে জমায়েত হয়ে দুই রাকাত ঈদুল আযহার ওয়াজিব সালাত আদায়
করেন। ঈদুল ফিতরের সালাতের নিয়মে ঈদুল আযহার সালাত আদায় করতে হয়। দায়িত্ব প্রাপ্ত
ধর্মীয় শিক্ষক এই সালাত পরিচালনা করে থাকেন।
Sz Böl¡z jqllj j¡pl cnj a¡¢lM¢V Böl¡ e¡j f¢l¢Qaz
A¢afË¡Q£eL¡m ®bL p¡l¡ ¢hnÄ ¢hno Ll Blh ®cn Böরা ¢ce¢V ¢hnoi¡h f¡¢ma qu BpRz q¡c£Rl hZÑe¡ja Ejl
(l¡x) l¡p§m L¡l£j (px) ®L ¢S‘¡p¡ Llme ,Cu¡ l¡p¤m¤õ¡q, Böl¡l ¢ce Bõ¡q ¢L
Bj¡cl Jfl HaC ®jqlh¡e? l¡p¤m L¡l£j (px) Ešl Cln¡c Llme, qyÉ¡, Bõ¡q Bu¡m¡
H Böl¡l ¢ceC Bpj¡e, kj£e, f¡q¡s fhÑa, Q¾cÐ-a¡lL¡ Bln L¥l¢p, m¡Jq j¡qg¥S,
¢Shl¡Cm J AeÉ¡eÉ ¢g¢lÙ¹¡NZ, Bcj (Bx) J Chl¡q£j (Bx) ®L pª¢ø LlRez H ¢ceC
Chl¡¢qj (Bx) ejl²cl A¢NÀL¥ä ®bL j¤¢J² ®fuRe, f¤œ Cpj¡CmL (Bx) L¥lh¡e£
LlRez H ¢ceC j¤p¡ (Bx) J hZ£ Cpl¡CmNZ ¢glBEel Lhm ®bL j¤¢J² m¡i Ll¢Rme
Hhw ®glBEe J a¡l cmhm e£m ec X¥h jl¢Rm, BCk¤h (Bx) ®l¡Nj¤¢J² m¡i Ll¢Rme Hhw Dp¡ (Bx) S¾j NËqZ
Ll¢Rmez H ¢ceC Bcj (Bx) Hl aJh¡ Lh¤m qu¢Rm, c¡Ec (Bx) rj¡ ®fu¢Rme Hhw p¤m¡uj¡e (Bx) a¡yl l¡SaÄ ¢gl fu¢Rmez
Böl¡l ¢ceC Bõ¡q Bln pj¡p£e quRe Hhw H ¢ceC fª¢bh£ dÄwpfË¡ç qhz
fª¢bh£l h¤L fËbj hª¢ø Hhw Bõ¡ql lqja H
¢ceC Aha£ZÑ qu¢Rmz Bl H ¢ceC L¡lh¡m¡ fË¡¿¹l jjÑ¡¢¿¹Li¡h n¡q¡ca hlZ Lle Cj¡j ®q¡p¡Ce (l¡x)z Blhcn fË¡Q£e L¡m
®bLC Böl¡l ¢ce ®l¡k¡ l¡M¡l fËQme ¢Rmz fª¢bh£l ph ®cn ph k¤NC ®l¡k¡
f¡me Ll¡l fËj¡e ¢h¢iæ p¤œ f¡Ju¡ k¡u, ah
®l¡k¡l fÜ¢a ¢Ll²f ¢Rm a¡
Øfø euz j‚¡u AhØq¡eL¡m l¡p§m L¡l£j (px) J Böl¡l ¢ce ®l¡k¡ l¡Mae hm ®L¡e
®L¡e q¢cp EõM Ll¡ q®u|Rz AeL j¿¹hÉ
Lle ®k, ljk¡el ®l¡k¡ glS qJu¡l f§hÑ Böl¡l ®l¡k¡ l¡M¡ j¤pmj¡ecl SeÉ glS ¢Rmz ¢L¿º ljk¡el ®l¡k¡ glS qJu¡l fl jq¡eh£
(px) Böl¡l ®l¡k¡ l¡M¡l SeÉ HaV¡ a¡¢Lc
Lle ¢e, ah Böl¡l ®l¡k¡ f¡me Lla j¤pmj¡eclL Evp¡¢qa LlRez
ঝ। লায়লাতুল কদর। কদরের অর্থ মাহাত্ম্য ও
সম্মান। রমযান মাসের বিশেষ এক রাতকে লায়লাতুল কদর বলা হয়। কদরের আর এক অর্থ হলো
তাকদির। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের নির্ধারিত লিপিব্যবস্থাপক ফেরেশতাগণের কাছে
হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের হায়াত, মউত, রিযিক, ইত্যাদির
বিবরণ থাকে। ইমাম আবু হানীফা (রা.) থেকে একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, শবে কদর সারা বছরে
অনির্দিষ্টভাবে পাওয়া যায়। অধিকাংশ আলীমের মতে রমযানের শেষ দশ দিনের মধ্যে বিজোড়
রাতগুলোতে রয়েছে লায়লাতুল কদর। বিশেষত সাতাশে রাতে এর সম্ভাবনা অধিক। লায়লাতুল কদর
খুবই ফযিলতপূর্ণ রাত। এ রাত সম্পর্কে আল্লাহ তা’লা বলেন, “লায়লাতুল কদর” এ মর্যাদাপূর্ণ রাতটি হাজার মাসের চেয়ে
উত্তম।” (সূরা কদরঃ ৩)
৫z Efl¡š²
Ae¤ù¡e…m¡ R¡s¡J j¤pmj¡ecl SeÉ AeL Ae¤ù¡e J djÑ£u LaÑhÉ luRz ®p…m¡aJ Bjl¡
Be¤ù¡¢eLi¡h ®cn J S¡¢al LmÉ¡Z L¡je¡bÑ ®L¡lBe J j£m¡c nl£g fs b¡¢Lz l¡øÊ£u h¡
S¡a£u Ae¤ù¡e¡¢c :
Lz A¡¿¹SÑ¡¢aL
j¡a«i¡o¡ ¢chp-21n ®gh˦u¡¢lz
Mz ü¡d£ea¡
¢chp-26 n j¡QÑz
Nz S¡a£u
®n¡L ¢chp-15 BNøz
Oz ¢hSu
¢chp - 16 ¢Xpðlz
Pz pnÙ»h¡¢qe£
¢chp - 21 eiðlz
৬। উপসংহার। Cpm¡j£ Ae¤ù¡e¡¢c
Eck¡fel jdÉ ®k ¢hno EŸnÉ¢V ¢e¢qa, a¡ qm Cpm¡j£ j§mÉh¡dL E‹£¢ha Ll
A¯epm¡j£ l£¢ae£¢a J fÜ¢aL pj¡S S£he ®bL EvM¡a Ll¡z Aj¤p¢mjcl Aå Ae¤LlZ ®ke
Ll¡ e¡ qu hlw Cpm¡j ®k HL¢V f§Z¡Ñ‰ S£he ¢hd¡e Hhw Afl S¡¢a ®bL Cpm¡jl ®L¡e
¢LR¤ d¡l Ll¡l fËu¡Se ®eC, H Lb¡ i¡mi¡h je l¡Ma qhz Bö¹l¡l ¢ce¢V Bj¡cl
pj¡S haÑj¡e ®k OVe¡¢V ¢hnoi¡h pÈlZ L¢lu ®ck a¡ qm, paÉ J eÉ¡ul fË¢aù¡l
pwNË¡j L¡lh¡m¡ fË¡¿¹l Cj¡j ®q¡p¡Cel (l¡x) jjÑ¡¢¿¹L n¡q¡ca hlZz ¢L¿º n£u¡cl
ja a¡¢Su¡ ®hl Ll¡, Banh¡S£ Ll¡ h¡ L¡lh¡m¡ ®~al£ Ll¡ p¤æ£cl ja ®L¡e f§ZÉl L¡S
®a¡ euC hlw Cpm¡j£ ®j±me£¢al f¢lf¿Û£z ph BQ¡l Ae¤ù¡el Qlj mrÉ qJu¡ E¢Qv Bõ¡ql
p¿º¢ø ASÑe Hhw ®p SeÉ H ¢cel hs LaÑhÉ qh Cj¡j ®q¡p¡Cel Ae¤LlZ Bõ¡ql à£eL
L¡ujl SeÉ n¡q¡c¡al nfb ®eu¡। সূত্র: ইসলামি আদর্শবাদ-
যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকের ঈমানী চেতনা ও মনোবল বৃদ্ধির উপায়
খ। মানবতার মুক্তির জন্য যুদ্ধ। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আক্রান্ত হলে আগ্রাসী বাহিনীর দ্বারা দেশে
ব্যাপক অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। মানবতা বিপন্ন হয়। লক্ষ লক্ষ নারী শিশু আক্রান্ত হয়।
ঘর-বাড়ি ছাড়া হয়ে মহা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। সেক্ষেত্রে অসহায় জনতার আর্তনাদে
আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আসে। যুদ্ধের এরূপ একটি চিত্র আল্লাহ তা’য়ালা সূরা নিসার ৭৫ নং আয়াতে তুলে ধরেছেন। “তোমাদের এ কি হয়েছে, তোমরা আল্লাহর পথে সে সব অসহায় নর-নারী ও শিশু
সন্তানদের বাঁচাবার জন্যে লড়াই করো না, যারা নির্যাতনে কাতর হয়ে ফরিয়াত করছে, হে
আমাদের রব, আমাদেরকে জালেমদের এই জনপদ থেকে বের করে অন্য কোথাও নিয়ে যাও, অতপর
তুমি আমাদের জন্যে তোমার কাছ থেকে একজন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাঠিয়ে দাও।” সুতরাং আগ্রাসী শক্তির হাত থেকে মানবতাকে উদ্ধারের জন্য মহান আল্লাহর
নির্দেশ পালনে সৈনিকদের উদাত্ত আহবান জানাতে হবে।
৬। পুরষ্কার ও খেতাব
প্রদান। মহানবী
(সঃ) যুদ্ধে মুসলীম সৈনিকদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য পুরষ্কার ও খেতাব প্রদান করতেন।
খন্দকের যুদ্ধে শত্রুদের মধ্যে গোয়েন্দাগিরীর মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার জন্য
জান্নাতে তার সাথী করার ঘোষণা প্রদান করেন। খায়বারের দূর্গ জয় করার জন্য তিনি হযরত আলী (রা.) কে আসাদুল্লাহ উপাধী এবং
খালিদ বিন ওয়ালিদকে মূতার যুদ্ধে সাইফুল্লাহ উপাধীতে ভূষিত করেন।
৭। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে
পলায়নের পরিণতি। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা কঠিনতম কবিরা
গুনাহ্ হিসেবে হাদিসে উল্লেখ আছে। মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা আনফালের ১৫ এবং ১৬ নং
আয়াতে বলেন
হে মুমিন বান্দাগণ তোমরা যখন যুদ্ধের ময়দানে কাফেরদের মুখোমুখি মোকাবেলা
করবে তখন পৃষ্ঠ প্রদর্শণ করবে না। যেনে রেখো, এ যুদ্ধের দিন যে ব্যক্তি তার পৃষ্ঠ
প্রদর্শণ করবে সে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার গজবে পতিত হবে, তবে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে
কিংবা নিজ বাহিনীর সাথে মিলিত হবার উদ্দেশ্য ছাড়া
যদি কেউ এমনটি করে তাহলে তার জন্য জাহান্নামই হবে একমাত্র আশ্রয়স্হল। আর
জাহান্নাম হলো সত্যিই নিকৃষ্ট জায়গা।
১২। শৃংখলা রক্ষা করা। যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের সংহত রাখতে চেইন অব
কমান্ড মেনে চলতে এবং শৃংখলা বজায় রাখতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসংগে সূরা
আনফালের ৪৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন
তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো, নিজেদের মধ্যে পরস্পর ঝগড়া বিবাদ করো
না। অন্যথায় তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের প্রতিপত্তি খতম হয়ে যাবে, তোমরা
ধৈর্য ধারণ করো। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা
ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।
১৪। মানবাধিকার লংঘন না
করা। যুদ্ধক্ষেত্রে বা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কোনোভাবে
মানবাধিকার লংঘন করা যাবেনা। কেননা এ ব্যাপারে মহানবী (সঃ) কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ
করেছেন। যে কোন নারী, শিশু, বৃদ্ধ, ধর্মীয় উপাসনালয়, ধর্মীয় পুরোহিত, সবুজ বৃক্ষ,
ফসলাদি, বেসামরিক ব্যক্তি, রাস্তা ঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট এর কোন ক্ষতি সাধন করা
যাবেনা। কেননা এ জাতীয় মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডে সৈনিকদের নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন
ঘটায় এবং বাহিনীতে বিপর্যয় অনিবার্য ডেকে আনে।
১৫। উপসংহার। যুদ্ধ একটি কঠিন জীবন মরণের খেলা।
এক্ষেত্রে শৃংখলা, দক্ষতা, নৈতিকতাসহ সত্য ও ন্যায়ের পথে যুদ্ধে সাফল্য লাভ করাই
একটি সুসংগঠিত সেনাবাহিনীর দায়িত্ব। আর তা
অর্জিত হয় যোদ্ধা সৈনিকদের উঁচু মনোবলের উপর। এজন্য প্রতিটি সৈনিককে ইসলামের
ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ের যুদ্ধের সেই মূল্যবোধগুলোকে বেশী বেশী চর্চা করতে হবে। যে ঈমানী
মূল্যবোধগুলো চর্চা করে ইসলামের বীর সেনানিগণ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।
রসূলুল্লাহ(ﷺ)-এর নিকটবর্তী হওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারঃ
عَنْ عَبْدِ
اللَّهِ
بْنِ
مَسْعُودٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لِيَلِنِيمِنْكُمْ ، أُولُو الْأَحْلَامِ وَالنُّهَى ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثَلَاثًا ، وَإِيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الْأَسْوَاقِঅর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে যারা বুদ্ধিমান
ও বয়স্ক তারা যেন আমার কাছে প্রথম কাতরে থাকে। অতঃপর
যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাদের কাছাকাছি তারা দাঁড়াবে। তিনি
তিনবার বললেন। তোমরা
সবাই মসজিদকে বাজারে পরিণত করা হতে দূরে থাক। বাজারের
ন্যায় মসজিদ শোরগোল করো না।” তাখরিজ: মুসলিম-৪৩২;আবু দাউদ-৬৭৪;নাসায়ি-৮০৭;ইবনে মাজাহ-৯৭৬;দারেমি-১৩০২;আহমদ -১৭১০২
বসার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার :
عُبيد اللَّه بن عمر بن موسى يقول:كُنْتُ عِنْدَ سُلَيْمَانَ بْنِ عَلِيٍّ، فَدَخَلَ
شَيْخٌ
مِنْ قُرَيْشٍ، فَقَالَ سُلَيْمَانُ : انْظُرَ الشَّيْخَ، فَأَقْعِدْهُ مَقْعَدًا صَالِحًا অর্থ: ওবায়দুল্লাহ বিন ওমর বলেন, ‘আমি সুলাইমান বিন আলির নিকট ছিলাম। এ সময় কুরাইশ গোত্রের জনৈক প্রবীণ ব্যক্তি
প্রবেশ করল। সুলাইমান বললেন, এই প্রবীণ ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য কর, তাকে উপযুক্ত আসনে বসাও’। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ-৪৬০;ছহিহ ইবনে হিব্বান-৬২৬৯
নোটঃ হাদিসটি হাসান গায়রিহী
কথা বলার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার : আব্দুর রহমান
ইবনে সাহল (রা.)এবং মাসউদের দুই পুত্র
মুহাইয়য়াসা ও হুয়াইয়াসা রসূলুল্লাহ(ﷺ)-এর কাছে এলেন, আব্দুর রহমান (রা.)কথা বলতে উদ্যত হলেন,তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, বড়কে বড়কে কথা বলতে দাও,বড়কে কথা বলতে দাও।
তিনি ছিলেন দলের ভেতর বয়ঃকণিষ্ঠ। তাই
তিনি চুপ করলেন। অতঃপর
তাঁরা দু’জন কথা বলবেন।
তাখরিজ:
বুখারি-৩১৭৩; মুসলিম-১৬৬৯; আবু দাউদ-৪৫২০; তিরমিজি-১৪২২;নাসায়ি-৪৭১০;দারেমি-২৩৯৮;আহমদ -১৬০৯১
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, মুমিনের হক
অপর মুমিনের উপর এই যে, তাকে অধিক পছন্দীয় নাম ও পদবী সহকারে
ডাকবে। এ কারণেই আরবে ডাকনামের প্রচলন ছিল। রসূলুল্লাহ (ﷺ)ও তা পছন্দ করেছিলেন। তিনি বিশেষ বিশেষ সাহাবিকে কিছু পদবী দিয়েছিলেন-হজরত আবু বকর সিদ্দিক(রা.)-কে আতিক,হজরত ওমর(রা)-কে ফারুক,হজরত হামজা (রা.)-কে আসাদুল্লাহ
এবং খালেদ ইবনে ওলিদ (রা.)-কে সাইফুল্লাহ
পদবী দান করেছিলেন। সূত্র : তাফসিরে আআরেফুল কুরআন-১২৮৩ পৃ.সংক্ষিপ্ত-মাওলানা মুহিউদ্দীন
খান (রহ.)
রসূল (ﷺ)-এর দৃষ্টিতে ওমর (রা.)-এর মর্যাদা
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ بَيْنَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذْ قَالَ
بَيْنَا
أَنَا
نَائِمٌ
رَأَيْتُنِيْ
فِي الْجَنَّةِ فَإِذَا امْرَأَةٌ تَتَوَضَّأُ إِلَى جَانِبِ قَصْرٍ فَقُلْتُ لِمَنْ هَذَا الْقَصْرُ قَالُوْا لِعُمَرَ فَذَكَرْتُ غَيْرَتَهُ فَوَلَّيْتُ مُدْبِرًا فَبَكَى عُمَرُ وَقَالَ أَعَلَيْكَ أَغَارُ يَا رَسُوْلَ اللهِ অর্থ: আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সময় আমরা আল্লাহর রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকটে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, একবার আমি ঘুমিয়েছিলাম। স্বপ্নে আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি। এক মহিলাকে প্রাসাদ চূড়ায় বসে ওজু করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম – ‘এটা কার প্রাসাদ ?’ ফেরেশতাগণ বললেন,‘ওমর বিন খাত্তাবের।’ রসূলুল্লাহ (ﷺ ) বললেন,‘হে ওমর, আমি তোমার মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রেখে সে প্রাসাদে প্রবেশ করিনি।’ একথা শুনে হজরত ওমর কেঁদে ফেললেন । তাখরিজ : বুখারি-৩২৪২; মুসলিম-২৩৯৫;ইবনে মাজাহ-১০৭; আহমদ-৮৪৭০
** সময়ানুবর্তিতা
** পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা।
আনুগত্য :
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য কর আর আনুগত্য কর তোমাদের যারা কর্তৃত্বশীল তাদের। সূরা নিসা-৫৯
عَنْ
عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، قَالَ: «السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى المَرْءِ المُسْلِمِ فِيمَا
أَحَبَّ وَكَرِهَ، مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ
سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ» , (خ) 7144 অর্থ: হজরত ইবনে
ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- প্রত্যেক মুসলমানের ওপর শাসকের ও নেতার কথা
শ্রবণ করা ও আনুগত্য করা অবশ্য কর্তব্য যা তার পছন্দ হোক বা অপছন্দ হোক। যত সময় পর্যন্ত না আল্লাহর নাফারমানি আদেশ দেওয়া হয়। আল্লাহর নাফরমানির
আদেশ দেওয়া হলে তা শ্রবণ করা ও তার আনুগত্য করা যাবে না। তাখরিজ : বুখারি-৭১৪৪;মুসলিম-১৮৩৯
وَعَنْ
أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه
وسلم -: " اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا، وَإِنْ اسْتُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ
حَبَشِيٌّ , كَأَنَّ رَأسَهُ زَبِيبَةٌ অর্থ: হজরত আনাস (রা.)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- তোমরা শ্রবণ কর ও তার আনুগত্য কর,যদিও তোমাদের ওপর কোন হাবশি গোলামকেও শাসক নিয়োগ করা হয় এবং তার মাথা দেখতে
আঙ্গুরের মতই হোক না কেন? তাখরিজ : বুখারি-৬৭২৩;ইবনে মাজাহ-২৮৬০
পরামর্শ করা
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ
أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ
قَالَ رِبَاطُ
يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا وَمَوْضِعُ
سَوْطِ أَحَدِكُمْ مِنَ الجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا
وَالرَّوْحَةُ يَرُوحُهَا العَبْدُ في سَبِيلِ اللهِ تَعَالَى أَوِ الغَدْوَةُ
خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا متفقٌ عليه
সাহল ইবনে সা’দ সায়েদী (রা.)হতে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) বলেছেন, আল্লাহর
রাহে একদিন সীমান্ত প্রহরায় রত থাকা, পৃথিবী ও ভূ-পৃষ্ঠের
যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা উত্তম। আর তোমাদের কারো একটি বেত্র পরিমাণ জান্নাতের স্থান,
দুনিয়া তথা তার পৃষ্ঠস্থ যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর তোমাদের
কোন ব্যক্তির আল্লাহর পথে (জিহাদ কল্পে) এক সকাল অথবা এক সন্ধ্যা গমন করা পৃথিবী ও
তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।
(বুখারি
২৮৯২, মুসলিম ৪৯৮২-৪৯৮৩)
عَنْ سَلمَانَ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُرِبَاطُ يَوْمٍ
وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ وَإنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ
عَمَلُهُ الَّذِيْ كَانَ يَعْمَلُ وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَأَمِنَ
الفَتَّانَ رواه مسلم
সালমান (রা.)হতে
বর্ণিত, নবী (ﷺ ) কে বলতে
শুনেছি যে, একদিন ও একরাত সীমান্ত প্রহরায় রত থাকা, একমাস ধরে
(নফল) রোযা পালন তথা (নফল) নামায পড়া অপেক্ষা উত্তম। আর যদি ঐ অবস্থায় মৃত্যু বরণ
করে, তাহলে তাতে ঐ সব কাজের প্রতিদান দেওয়া হবে, যা সে পূর্বে করত এবং তার বিশেষ রুযী চালু ক’রে
দেওয়া হবে এবং তাকে (কবরের) ফিৎনা ও বিভিন্ন পরীক্ষা হতে মুক্ত রাখা হবে।
(মুসলিম
৫০৪৭)
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ
رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ مَاتَ مُرَابِطًا فِى
سَبِيلِ اللهِ أَجْرَى عَلَيْهِ أَجْرَ عَمَلِهِ الصَّالِحِ الَّذِى كَانَ
يَعْمَلُ وَأَجْرَى عَلَيْهِ رِزْقَهُ وَأَمِنَ مِنَ الْفَتَّانِ وَبَعَثَهُ اللهُ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ آمِنًا مِنَ الْفَزَعِ
(১৯১২) আবু
হুরাইরা (রা.)হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ ) বলেন, ’’যে
ব্যক্তি (শত্রু সীমান্তে) প্রতিরক্ষার কাজে রত থাকা অবস্থায় আল্লাহর রাস্তায় মারা
যাবে, সে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তার সেই আমল জারী রাখবেন;
যা সে জীবিতাবস্থায় করত, তার রুজীও জারী করা
হবে, (কবরের) সকল প্রকার ফিতনা হতে সে নিরাপদে থাকবে,
আর আল্লাহ তাকে মহাত্রাস থেকে নির্বিঘ্নে রেখে কিয়ামতের দিন
পুনরুত্থিত করবেন।
عَنْ وَاثِلَةَ بن الأَسْقَعِ،
عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ وَمَنْ مَاتَ
مُرَابِطًا فِي سَبِيلِ اللهِ جَرَى لَهُ أَجْرُ الْمُرَابِطِ حَتَّى يُبْعَثَ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ
ওয়াসিলাহ বিন আসকা’ (রা.)কর্তৃক
বর্ণিত, নবী (ﷺ ) বলেছেন, ...যে ব্যক্তি প্রতিরক্ষা-বাহিনীর কার্যে
থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সে ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে পুনরুত্থিত হওয়া পর্যন্ত তার
ঐ প্রতিরক্ষা-বাহিনীর কাজের সওয়াব জারী থাকে।
(ত্বাবারানীর
কাবীর ১৭৬৪৫, সহীহ তারগীব ৬২)
وَعَنْ فَضَالَةَ بنِ عُبَيْدٍ
أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ
قَالَكُلُّ
مَيِّتٍ يُخْتَمُ عَلَى عَمَلِهِ إِلاَّ المُرَابِطَ فِي سَبيلِ اللهِ فَإِنَّهُ
يُنْمَى لَهُ عَمَلهُ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ وَيُؤَمَّنُ فِتْنَةَ القَبْرِرواه
أَبُو داود والترمذي، وقال : حديث
حَسَنٌ صَحِيْحٌ
ফাযবালা ইবনে
উবাইদ (রা.)হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) বলেছেন, প্রতিটি মৃত্যুগামী ব্যক্তির পরলোকগমনের পর
তার কর্মধারা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় পাহারা রত ব্যক্তির নয়। কেননা,
তার আমল কিয়ামতের দিন পর্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করা হবে এবং সে কবরের
পরীক্ষা থেকে নিষ্কৃতি পাবে।
(আবূ দাঊদ
২৫০২, তিরমিযী ১৬২১, হাসান সহীহ)
وَعَن عُثمَانَ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُول اللهِ ﷺ يَقُولرِبَاطُ يَوْمٍ في سَبيلِ
اللهِ خَيْرٌ مِنْ ألْفِ يَوْمٍ فِيمَا سِوَاهُ مِنَ المَنَازِلِرواه الترمذي وقال
حديث حَسَنٌ صَحِيْحٌ
উসমান ইবনে আফফান (রা.)হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর
পথে একদিন সীমান্তে পাহারা দেওয়া, অন্যত্র হাজার দিন পাহারা
দেওয়া অপেক্ষা উত্তম।
(তিরমিযী
১৬৬৭, তিনি বলেন, হাদীসটি উত্তম ও
বিশুদ্ধ)
وَعَنهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَا مِنْ مَكْلُومٍ يُكْلَم فِي
سَبيِلِ الله إِلاَّ جَاءَ يَومَ القِيَامةِ، وَكَلْمُهُ يُدْمِي : اللَّوْنُ لَوْنُ دَمٍ
وَالرِّيحُ ريحُ مِسكٍ متفقٌ عليه
উক্ত রাবী (রা.)হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) বলেছেন, যে কোন
ক্ষত আল্লাহর রাহে পৌঁছে, কিয়ামতের দিনে ক্ষতগ্রস্ত মুজাহিদ
এমন অবস্থায় আগমন করবে যে, তার ক্ষত হতে রক্ত ঝরবে। রক্তের
রং তো (বাহ্যতঃ) রক্তের মত হবে, কিন্তু তার গন্ধ হবে
কস্তুরীর মত।
(বুখারি
৫৫৩৩, মুসলিম ৪৯৭০)
وَعَن أَبي عَبْسٍ عَبدِ
الرَّحمَانِ بنِ جَبْرٍ قَالَ : قَالَ
رَسُولُ اللهِ ﷺ
مَا
اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ فِي سَبيلِ اللهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ رواه البخاري
আবূ আবস আব্দুর
রহমান ইবনে জাবর (রা.)হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ ) বলেছেন, যে
বান্দার পদযুগল আল্লাহর পথে ধূলিমলিন হবে, তাকে জাহান্নাম
স্পর্শ করবে না।
(বুখারি ৯০৭,
২৮১১)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ
اللهُ عَنْهُمَا قَالَ :
سَمِعْتُ
رَسُولَ اللهِ ﷺ
يَقُولُعَيْنَانِ
لاَ تَمسُّهُمَا النَّارُ : عَيْنٌ
بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبيلِ اللهِرواه
الترمذي وقال حديث حسن
ইবনে আব্বাস (রা.)হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) কে বলতে শুনেছি যে, দুই
প্রকার চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। আল্লাহর ভয়ে যে চক্ষু ক্রন্দন
করে। আর যে চক্ষু আল্লাহর পথে প্রহরায় রত থাকে।
(তিরমিযী
১৬৩৯, হাসান)
عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ
الْجُهَنِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ جَهَّزَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللهِ
كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَجْرِ الْغَازِي
شَيْئًا
যায়দ বিন খালেদ
জুহানী (রা.)হতেই বর্ণিত, নবী (ﷺ ) বলেন, যে ব্যক্তি (জিহাদের জন্য) কোন যোদ্ধাকে (তার রসদ সহ) সাজিয়ে
দেয়, সেই ব্যক্তিও ঐ যোদ্ধার সমপরিমাণই সওয়াব লাভ করে,
এতে ঐ যোদ্ধার সওয়াবও কিছু পরিমাণ কম হয়ে যায় না।
(ইবনে মাজাহ
২৭৫৯, বাইহাকী, সহীহুল জামে ৬১৯৪)
Ø ডাবল সওয়াব
Ø ধৈরর
**দ্বিতীয় আসনধারী
ওয়াদা পূর্ণ করা: একজন সেনাসদস্য রিক্রুট ট্রেনিং পর যখন পবিত্র কুরআন নিয়ে গ্রহণ করে। সে তার জীবন বিপন্ন করিয়ে হলেও নিজ
ও জাতিকে রক্ষা করবেন। আর ওয়াদা রক্ষার
ব্যাপারে আদেশ হলো, یٰۤاَیُّهَا
الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَوۡفُوۡا بِالۡعُقُوۡدِ অর্থ: ওহে
মু’মিনগণ!
তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর। সূরা মায়েদা-০১
অর্থ:আল্লাহর নামে
অঙ্গীকার করার পর সে অঙ্গীকার পূর্ণ কর এবং পাকাপাকি কসম করার পর তা ভঙ্গ করো না,
আল্লাহ তোমরা আল্লাহকে জামিন করেছ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন। সূরা নাহল-৯১
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন