নামের আগে ‘মুহাম্মাদ’ ও ‘মুসাম্মাৎ’ লেখার ঐতিহ্য ও তাৎপর্যগত দিক : মুসলিম কম্যুনিটির ফিরিয়ে আনা ঐতিহ্যের সাথে দ্বীনী সম্পর্কের তুলনামূলক আলোচনা ৷
************************** ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমান পুরুষের নামের আগে 'মুহাম্মাদ ''এবং মেয়েদের নামের আগে 'মুসাম্মাৎ' লেখার রীতি বা বলার নিয়ম অতি প্রাচীন না হলেও সত্তাগত ও ঐতিহ্যমন্ডিত ৷ এমন এক সময় পার করতে হয়েছে আমাদের পূর্ব-পুরুষদের যখন নামের আগে হিন্দু সংস্কৃতির হুবহু অনুকরনে শ্রী,শ্রীমান,শ্রীমতী ইত্যাদি লিখতে হতো ৷ এই নিয়মটি ভারতীয় উপমহাদেশেই বেশী প্রচলিত ছিল। যতদূর জানা যায় বৃটিশ ভারতে হিন্দুরা যখন ঢালাওভাবে হিন্দু-মুসলমান সবার নামের আগে শ্রী, শ্রীযুক্ত (যা তাদের নিকট সম্মান সূচক শব্দ) ইত্যাদি ব্যবহার করতে শুরু করে এবং দলীল দস্তাবেজ ও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় নথিপত্রে ঐ শব্দগুলি যখন হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমানদের নামের শুরুতে বসানো ব্যাপকতা লাভ করতে থাকে, তখন মুসলামানগণ নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার নিমিত্তে তাদের নামের শুরুতে পুরুষদের নামের আগে শ্রী/শ্রীমান প্রভৃতির পরিবর্তে ‘মুহাম্মাদ’ ,জনাব ও মহিলাদের নামের আগে শ্রীমতী-এর পরিবর্তে ‘মুসাম্মাৎ’ 'জনাবা' 'বেগম' চালু করেন।
‘মুহাম্মাদ’ (محمد) অর্থ প্রশংসিত,বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ,সম্মানিত,মর্যাদাবান ইত্যাদি ৷আর মুসাম্মাত(مسمات) অর্থ নামীয়া(যার নাম রাখা হয়েছে এমন নারী),নামাঙ্কিতা,সৌন্দর্যমন্ডিতা,পবিত্রা, সম্মানিতা ইত্যাদি ৷ পুরুষের নামের আগে মুহাম্মাদ বসিয়ে নিজেকে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসারী মুসলিম পরিচয় দেওয়া হয় । আর মুসাম্মাৎ শব্দ দ্বারা হিন্দু নারীদের থেকে মুসলিম সম্ভ্রান্ত মহিলার মর্যাদাগত স্বাতন্ত্র ফুটিয়ে তোলা হয় যা ব্রিটিশ আমলে ও হিন্দু শাসিত সমাজে সংরক্ষিত ছিলনা ৷
সহীহ হাদিসে আছে- যে ব্যক্তি যে কওমের সদৃশ হবে, সে ব্যক্তি সেই কওমের অন্তর্ভুক্ত গন্য হবে ৷ (মিশকাত, ‘পোষাক’ অধ্যায়, হা/৪৩৪৭, সনদ হাসান)
বুখারী ও অন্যান্য বর্ণিত হাদীসে ‘মুশরিকদের বিপরীত কর’ অন্য বর্ণনায় ‘আহলে কিতাব ইহুদী-নাছারাদের বিপরীত কর’ (বুখারী ‘পোষাক’ ও ‘আম্বিয়া’ অধ্যায়; মুসলিম, ‘পবিত্রতা’ ও ‘পোষাক’ অধ্যায়; নাসাঈ ‘সৌন্দর্য’ অধ্যায় প্রভৃতি) এর আলোকে হিন্দুদের শ্রী-এর বিপরীতে মুসলামানদের ‘জনাব’ এবং শ্রীযুক্ত ও শ্রীমান-এর বদলে মুসলমানদের ‘মুহাম্মাদ’ এবং শ্রীমতী-র বদলে ‘মুসাম্মাৎ’ ইসলামী স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় বহন করে চলেছে শতাব্দীকাল ধরে ৷
উল্লেখ্য, ঈমানের ধারক,বাহক, সংরক্ষক ও সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে মুসলিম জাতিসত্ত্বার যেমন রয়েছে স্বাতন্ত্রতা ঠিক তেমনি নামের সাথে সাথে কর্মের দ্বারাও ফুটিয়ে তুলতে হবে আমাদের জাতীয় ঐক্য ও সকলক্ষেত্রে সম্মান, কৌলিন্য ও মর্যাদার প্রভাব ৷ অতীব আফসোসের বিষয়,আমাদের অনেকেরই সন্তান জন্মের পর নামকরনের ক্ষেত্রে আমরা মুসলিম ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য যুক্ত নাম রাখার বদলে ফেলে আসা সংস্কৃতির আদলে সন্তানদের নাম করনে যথেষ্ট খামখেয়ালীপনার পরিচয় দিয়ে থাকি যা আদৌ কাম্য নয় ৷পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে —
--- فما حَقُّ الوَلَدِ على الوالِدِ قال أن يُحسِنَ اسمَه ويُحسِنَ أدَبَه
البيهقي (ت ٤٥٨)، شعب الإيمان ٦/٢٨٩٩ •
-----নবজাতকের প্রতি পিতামাতার অন্যতম দায়িত্ব হলো তার সুন্দর নাম রাখা এবং আদব শিক্ষা দেওয়া ৷ (বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান)
আল্লাহ্ সকলকে সামাজিকভাবে মিলেমিশে অথচ মুসলিম ঐতিহ্যের স্বাতন্ত্র নিয়ে বুক ফুলিয়ে সগৌরবে সামনে চলার তাওফীক দিন ৷আমীন৷৷
লেখক, মাওলানা ইউনুছ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন