জিজ্ঞাসা-১২৩৫২:
এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ডিভোর্স
এর কাগজ পাঠিয়ে দেয় অর্থাৎ লিখিত তালাকনামা পাঠিয়ে দেয় উক্ত কাগজ তার স্ত্রীর নিকট
পৌঁছানোর আগেই সেই ব্যক্তি স্ত্রীর নিকট এসে কান্নাকাটি করে এবং সংসার করার ইচ্ছা পোষণ
করে এর কয়েকদিন পরে স্বামীর পাঠানো তালাকনামা স্ত্রী হাতে পায় প্রশ্ন হচ্ছে তালাক
হয়ে গেছে নাকি সংসার করার কোন পদ্ধতি আছে??? তারিখ: ২৩/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা নুরুল
ইসলাম রাঙামাটি থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনি উল্লেখ করেননি যে, তালাক নোটিশের মাধ্যমে কয় তালাক দিয়েছে।
দ্বিতীয় কথা হলো, তালাকটি যদি তালাকে রজয়ি হয়, তাহলে দুই তালাক বা এক তালাক দেয়ার পর স্বামীর অধিকার থাকে, স্ত্রীকে ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে রাজআত করা তথা স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনা। এতে কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে স্ত্রীকে ফিরিয়ে না আনা হয়, তাহলে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে নতুন করে মোহর ধার্য করে বিবাহ করা আবশ্যক। নতুবা স্বামী স্ত্রী হিসেবে উভয়ের বসবাস করা জায়েজ নয়। সূত্র: ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ-৯/৪৪১,২৪৫
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلاَثَةَ قُرُوَءٍ وَلاَ يَحِلُّ لَهُنَّ أَن يَكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللّهُ فِي أَرْحَامِهِنَّ إِن كُنَّ يُؤْمِنَّ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَبُعُولَتُهُنَّ أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَلِكَ إِنْ أَرَادُواْ إِصْلاَحًا
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। (সূরা বাকারা ২২৮)
তৃতীয় কথা হলো, তালাকটি যদি এক/দুই তালাকে বায়েন হয়, তাহলে যদি এক তালাক বায়েন বা দুই তালাক বায়েন দেয় তবে সে মৌখিকভাবে রুজু করার (পুনরায় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার) পথ বন্ধ করে দিল। এখন শুধু একটি পথই খোলা আছে। আর তা হল, নতুনভাবে শরীয়তসম্মত পন্থায় বিবাহ দোহরানো। সূত্র:
চতুর্থ কথা হলো, তালাকটি যদি তিন তালাক হয়, তাহলে হিলা বিবাহ ছাড়া স্ত্রীকে ফিরে পাবার কোন পথ নেই। দলিল:
কুরআনের বাণী-
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কতৃꦣ2453; নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। {সূরা বাকারা-২৩০}
হাদিসের বাণী-
হযরত ইবনে শেহাব হতে বর্নিত:
عن ابن شهاب قال اخبرنى عروة ابن زبير ان عائشة اخبرته ان امرأت رقاعة القرظى جائت الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ان رقاعة طلقنى فبت طلاقى وانى نكحت بعده عبد الرحمن بن زبير القرظى وانما معه مثل الهدبة- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلك تريدين ان ترجعى الى رقاعة – لا حتى يذوق عسليتك وتذوق عسليته- (بخارى شريف ٧٩١)
তিনি বর্ণনা করেন, আমাকে আরওয়া ইবনে জুবাইয়ের (রা.) খবর দিয়েছেন, সে হযরত আয়েশা (রা.) হতে খবর পেয়েছেন, রেফার স্ত্রী একদা হুজুর (সা.) এর দরবারে এসে বলল, হে প্রিয় রসূল (সা.) আমাকে আমার স্বামী রেফায়া তালাকে ‘বাত্তা’ প্রদান করেছেন। তারপর আমি আব্দুর রহমান ইবনে জুবাইয়ের সাথে বিবাহ বসি। কিন্তু তাকে আমি নরম কাপড়ের ন্যায় পেয়েছি, অর্থাৎ কাপুরুষ। হুজুর (সা.) বললেন, তুমি কি আবার রেকায়ার কাছে ফিরে যেতে চাও? ততক্ষণ রেকায়ার কাছে ফিরে যেতে পারবে না, যতক্ষণ আব্দুর রহমান তোমার স্বাদ ও তুমি তার স্বাদ না গ্রহণ কর। বোখারী শরিফে ৭৯১পৃ:
সারকথা হলো, উক্ত ব্যক্তির তালাক কোন প্রকারের সেই ভাবে হুকুম হবে। তালাক নোটিশ/ডিভোর্স দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তবে আমার জানামতে তিন তালাক একসাথে পাঠানো যায় না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন