জিজ্ঞাসা-১২৩৫৬:
শুকনো গোবর দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়া জায়েজ কিনা? আমাদের এলাকায় অনেকের মুখে সোনা যাচ্ছে গোবর দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়া জায়েজ নয়। বিষয়টি কোরআন হাদিসের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন। তারিখ: ২৮/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক হাফেজ মাওলানা গাইবান্ধা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সমাজে প্রচলিত সুসংস্কারের মধ্যে একটি হলো গোবর দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়া জায়েজ নয়।
দ্বিতীয় কথা হলো, আল্লাহ তাআলা হালাল ও পবিত্র জিনিস খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দলিল:
আয়াত নং-০১
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দান করেছি এবং শুকরিয়া আদায় কর আল্লাহর, যদি তোমরা তাঁরই বন্দেগী কর। সূরা বাকারা-১৭২
আয়াত নং-০২
Surah An-Nahl, Verse 114:
فَكُلُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ حَلَالًا طَيِّبًا وَاشْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
অতএব, আল্লাহ তোমাদেরকে যেসব হালাল ও পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তাঁরই এবাদতকারী হয়ে থাক। সূরা নাহল-১১৪
ব্যাখ্যা: গোবর দিয়ে রান্না করলে হারামের কোন সংমিশ্রণ নেই। সুতরাং তা ১০০% হালাল।
তৃতীয় কথা হলো, গ্রহণকৃত খাদ্য পবিত্র হওয়া জরুরি, কিন্তু লাকড়ি পবিত্র হওয়া জরুরি নয়। এ বিষয়ে কোন নস নেই। কেননা গোবর লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার হয়।
চতু্র্থ কথা হলো, অনেকে গোবর দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়া জায়েজ নয়। দলিল হিসেবে এই হাদিস পেশ করে।
عَنْ عَبْدِ الرّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ: قِيلَ لَهُ: قَدْ عَلّمَكُمْ نَبِيكُمْ كُلّ شَيْءٍ حَتى الْخِرَاءَةَ قَالَ: فَقَالَ: أَجَلْ لَقَدْ نَهَانَا أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ لِغَائِطٍ، أَوْ بَوْلٍ، أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِالْيَمِينِ، أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِأَقَلّ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ، أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِرَجِيعٍ أَوْ بِعَظْمٍ.
মুসলিম রাহ. বর্ণনা করেন, আব্দুর রহমান বিন ইয়াযীদ রাহ. বলেন, সালমান ফারসী রা.-কে বলা হল, তোমাদের নবী তোমাদের সবকিছু শিক্ষা দিয়েছেন; এমনকি শৌচাগার ব্যবহারের পদ্ধতিও! আব্দুর রহমান বিন ইয়াযীদ রাহ. বলেন, সালমান রা. বললেন, ‘হাঁ, অবশ্যই! তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, আমরা যেন ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করি, ইস্তিঞ্জার সময় তিন পাথরের কম ব্যবহার না করি এবং গোবর বা হাড্ডি দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করি। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম-২৬২
ব্যাখ্যা: গোবর টিস্যু হিসেবে ব্যবহার না করার কারণ হলো, গোবরের জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া এটা জিনদের খাদ্য এ কারণে নিষেধ করেছেন। যেমন অন্য হাদিসে এসেছে-
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّهُ كَانَ يَحْمِلُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِدَاوَةً لِوَضُوئِهِ وَحَاجَتِهِ فَبَيْنَمَا هُوَ يَتْبَعُهُ بِهَا فَقَالَ مَنْ هَذَا فَقَالَ أَنَا أَبُوْ هُرَيْرَةَ فَقَالَ ابْغِنِيْ أَحْجَارًا أَسْتَنْفِضْ بِهَا وَلَا تَأْتِنِيْ بِعَظْمٍ وَلَا بِرَوْثَةٍ فَأَتَيْتُهُ بِأَحْجَارٍ أَحْمِلُهَا فِيْ طَرَفِ ثَوْبِيْ حَتَّى وَضَعْتُهَا إِلَى جَنْبِهِ ثُمَّ انْصَرَفْتُ حَتَّى إِذَا فَرَغَ مَشَيْتُ فَقُلْتُ مَا بَالُ الْعَظْمِ وَالرَّوْثَةِ قَالَ هُمَا مِنْ طَعَامِ الْجِنِّ وَإِنَّهُ أَتَانِيْ وَفْدُ جِنِّ نَصِيْبِيْنَ وَنِعْمَ الْجِنُّ فَسَأَلُونِي الزَّادَ فَدَعَوْتُ اللهَ لَهُمْ أَنْ لَا يَمُرُّوْا بِعَظْمٍ وَلَا بِرَوْثَةٍ إِلَّا وَجَدُوْا عَلَيْهَا طَعَامًا
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি নবী (ﷺ)-এর উযু ও ইস্তিন্জার ব্যবহারের জন্য পানি ভর্তি একটি পাত্র নিয়ে পিছনে পিছনে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তিনি তাকিয়ে বললেন, কে? আমি বললাম, আমি আবূ হুরাইরাহ। তিনি বললেন, আমাকে কয়েকটি পাথর তালাশ করে দাও। আমি তা দিয়ে ইস্তিন্জা করব। তবে, হাড় এবং গোবর আনবে না। আমি আমার কাপড়ের কিনারায় কয়েকটি পাথর এনে তাঁর কাছে রেখে দিলাম এবং আমি সেখান থেকে কিছুটা দূরে গেলাম। তিনি যখন ইস্তিন্জা হতে বেরোলেন, তখন আমি এগিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হাড় ও গোবর এর ব্যাপার কী? তিনি বললেন, এগুলো জ্বিনের খাবার। আমার কাছে নাসীবীন নামের জায়গা হতে জ্বিনের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা ভাল জ্বিন ছিল। তারা আমার কাছে খাদ্যদ্রব্যের আবেদন জানাল। তখন আমি আল্লাহর নিকট দু‘আ করলাম যে, যখন কোন হাড্ডি বা গোবর তারা লাভ করে তখন তারা যেন তাতে খাদ্য পায়। তাখরিজ: বুখারি-৩৮৬০
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনুত্তীম বলেন- আল্লাহ হাড্ডি বা গোবরকে জ্বীনদের খাবারে পরিণত করেন। অথবা তা থেকে খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করান। সূত্র- ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড ২১৯ পৃষ্ঠা
সারকথা কথা হলো, গোবর আগুনে পুরানো দ্বারা তার বৈশিষ্ট্য ও গুনাবলী সব পরিবর্তন হয়ে যায়। সুতরাং গোবরের লাকরী দ্বারা খানা পাকানো বা খাবার রান্না করা জায়েজ এবং উক্ত খানা ভক্ষন করাও জায়েজ। সূত্র: ফতুয়ায়ে হক্বানিয়্যা ২/৫৮৮, দুররে মুখতার ১/৩৩২, রদ্দুল মুহতার ৫/৫৮, ইমদাদুল ফাতওয়া ১/৭৮, ফতওয়ায়ায়ে রহিমিয়া ৪/২৫৭, ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১/১৭৩
আর গোবর দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়া জায়েজ নয়। এধরণের আকিদা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থ: হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়। তাহরিম-০১
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন