আল্লাহ তাআলার ওপর তাওয়াক্কুল, সবকিছুকে তার কাছে সপে দেওয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত
(পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ, মহান আসলাফ-আকাবিরের আমল
বনাম আমাদের জিন্দেগি -০৮)
পবিত্র কুরআনের
বাণী-
আয়াত নং-০১
وَمَا
کَانَ لَنَاۤ اَنۡ نَّاۡتِیَکُمۡ بِسُلۡطٰنٍ اِلَّا بِاِذۡنِ اللّٰہِ ؕ وَعَلَی
اللّٰہِ فَلۡیَتَوَکَّلِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ
আল্লাহর
নির্দেশ ব্যতীত তোমাদের কাছে প্রমাণ নিয়ে আসা আমাদের কাজ নয়; ঈমানদারদের আল্লাহর উপর ভরসা করা চাই। সূরা ইব্রাহিম-১১
আয়াত নং-০২
وَتَوَکَّلۡ
عَلَی الۡحَیِّ الَّذِیۡ لَا یَمُوۡتُ وَسَبِّحۡ بِحَمۡدِہٖ ؕ وَکَفٰی بِہٖ
بِذُنُوۡبِ عِبَادِہٖ خَبِیۡرَا ۚۛۙ
তোমরা ওই
আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর যিনি চিরঞ্জীব এবং যার কোনো মৃত্যু নাই।’ সুরা ফুরকান-৫৮
আয়াত নং-০৩
فَإِنْ
تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ অর্থ: ‘এসত্ত্বেও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়,
তবে বলে দাও, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি
ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তার উপরেই আমি ভরসা করি’ সূরা তওবা-১২৯
হাদিসে নববি-
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا
مَالِكُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا إِسْرَائِيلُ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ
أَبِي الضُّحَى، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كَانَ آخِرَ قَوْلِ إِبْرَاهِيمَ
حِينَ أُلْقِيَ فِي النَّارِ حَسْبِيَ اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ.
অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হযরত ইবরাহিম (আ.) যখন আগুনে নিক্ষিপ্ত হলেন তখন তিনি বললেন, ‘মহান আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক।
(ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করা হলো)।’ তাখরিজ: বুখারি-৪৫৬৪
হাদিস নং-০২
আবুবকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,وَأَنَا
فِى الْغَارِ لَوْ أَنَّ أَحَدَهُمْ نَظَرَ تَحْتَ قَدَمَيْهِ لأَبْصَرَنَا.
فَقَالَ : مَا ظَنُّكَ يَا أَبَا بَكْرٍ بِاثْنَيْنِ اللهُ ثَالِثُهُمَا- ‘(ছাওর) গিরিগুহায় থাকাকালে আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বললাম, (হে আল্লাহর রাসূল!) কেউ যদি তার দু’পায়ের নিচ দিয়ে তাকায় তাহ’লে তো সে অবশ্যই আমাদের
দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবুবকর! দু’জন ভাবছ কি? আল্লাহ তো তাদের (আমাদের) তৃতীয়জন’। তাখরিজ: বুখারি-৩৬৫৩; মুসলিম-২৩৭১
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنِي أَبُو عِمْرَانَ، مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرِ بْنِ
زِيَادٍ - وَاللَّفْظُ لَهُ - أَخْبَرَنَا إِبْرَاهِيمُ، - يَعْنِي ابْنَ سَعْدٍ -
عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سِنَانِ بْنِ أَبِي سِنَانٍ الدُّؤَلِيِّ، عَنْ جَابِرِ
بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ غَزَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
غَزْوَةً قِبَلَ نَجْدٍ فَأَدْرَكَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي
وَادٍ كَثِيرِ الْعِضَاهِ فَنَزَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَحْتَ
شَجَرَةٍ فَعَلَّقَ سَيْفَهُ بِغُصْنٍ مِنْ أَغْصَانِهَا - قَالَ - وَتَفَرَّقَ
النَّاسُ فِي الْوَادِي يَسْتَظِلُّونَ بِالشَّجَرِ - قَالَ - فَقَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ رَجُلاً أَتَانِي وَأَنَا نَائِمٌ
فَأَخَذَ السَّيْفَ فَاسْتَيْقَظْتُ وَهُوَ قَائِمٌ عَلَى رَأْسِي فَلَمْ أَشْعُرْ
إِلاَّ وَالسَّيْفُ صَلْتًا فِي يَدِهِ فَقَالَ لِي مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي قَالَ
قُلْتُ اللَّهُ . ثُمَّ قَالَ فِي الثَّانِيَةِ مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي قَالَ
قُلْتُ اللَّهُ . قَالَ فَشَامَ السَّيْفَ فَهَا هُوَ ذَا جَالِسٌ " .
ثُمَّ لَمْ يَعْرِضْ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم .
আবদ ইবনু হুমায়দ,
আবূ ইমরান মুহাম্মাদ ইবনু
জাফর ইবনু যিয়াদ (রহঃ) ..... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে নাজদ এর দিকে একটি
জিহাদে গেলাম। রসূলুল্লাহ (ﷺ) (পেছন
হতে এসে) একটি কাটাবন যুক্ত উপত্যকায় আমাদের পেলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাছের তলায় অবতরণ করলেন এবং তার তলোয়ারটি সে বৃক্ষের
একটি শাখায় লটকিয়ে রাখলেন। বর্ণনাকারী জাবির (রাযিঃ) বলেন, আর
লোকেরা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়ার জন্য প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়ল। বর্ণনাকারী বলেন, পরে
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ জনৈক লোক আমার নিকট
আসলো তখন আমি ঘুমন্ত।
সে তলোয়ারটি হাতে নিল। আমি জেগে উঠলাম, আর
সে আমার মাথার কাছে দণ্ডায়মান। আমি কিছু বুঝে না উঠতেই (দেখি) উন্মুক্ত তলোয়ারটি
তার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। অতঃপর সে আমাকে বলল,
কে তোমাকে আমা হতে রক্ষা
করবে? তিনি বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ!
সে দ্বিতীয় বার বলল, তোমাকে আমার হাত থেকে কে
রক্ষা করবে? তিনি বলেন, আমি
বললাম, আল্লাহ! রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে
তখন তলোয়ারটি ভিতরে ঢুকিয়ে রাখল। আর ওই যে সে বসে আছে। এরপর রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কিছুই বললেন না। তাখরিজ: মুসলিম-৮৪৩
হাদিস নং-০৩ (নবির যুগের ঘটনা)
إِنَّ امْرَأَةً كَانَتْ فِيْهِ فَخَرَجَتْ فِىْ سَرِيَّةٍ مِنَ
الْمُسْلِمِيْنَ وَتَرَكَتْ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ عَنْزاً لَهَا وَصِيْصِيَتَهَا
كَانَتْ تَنْسِجُ بِهَا- قَالَ : فَفَقَدَتْ عَنْزاً مِنْ غَنَمِهَا
وَصِيْصِيَتَهَا فَقَالَتْ يَا رَبِّ إِنَّكَ قَدْ ضَمِنْتَ لِمَنْ خَرَجَ فِى
سَبِيلِكَ أَنْ تَحْفَظَ عَلَيْهِ وَإِنِّى قَدْ فَقَدْتُ عَنْزاً مِنْ غَنَمِى
وَصِيصِيَتِى وَإِنِّى أَنْشُدُكَ عَنْزِى وَصِيصِيَتِى. قَالَ فَجَعَلَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُ شِدَّةَ مُنْاشَدَتِهَا لِرَبِّهَا تَبَارَكَ
وَتَعَالَى قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَصْبَحَتْ عَنْزُهَا
وَمِثْلُهَا وَصِيصِيَتُهَا وَمِثْلُهَا-
‘জনৈকা মহিলা মদীনায় বাড়ীতে ছিল। অতঃপর সে
মুসলিম সেনাদলের সাথে যুদ্ধে যাত্রা করেছিল। বাড়ীতে সে ১২টা ছাগল এবং তার কাপড়
বুননের একটা তাঁত/কাঁটা/মাকু রেখে গিয়েছিল। বাড়ী ফিরে এসে সে দেখে, তার
ছাগপাল থেকে একটা ছাগল আর তার সেই তাঁত/কাঁটা/মাকু নেই। সে তখন আল্লাহর কাছে
ফরিয়াদ করে বলল, হে আমার মালিক! তুমি তো
তোমার রাস্তায় যে বের হবে তার হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছ। এদিকে আমি তোমার রাস্তায়
বের হয়ে ফিরে এসে দেখছি আমার ছাগপাল থেকে একটা ছাগল আর আমার কাপড় বুননের
তাঁত/কাঁটা/মাকু নেই। আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, আমার
ছাগল ও তাঁত/কাঁটা/মাকু ফিরিয়ে দাও। উক্ত মহিলা তার মালিকের নিকট কঠিনভাবে যে শপথ
করেছিল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বার বার তার উল্লেখ করলেন। অবশেষে মহিলাটি সকাল বেলা তার
ছাগল ও অনুরূপ একটা ছাগল আর তাঁত/কাঁটা/মাকু এবং অনুরূপ একটা তাঁত/ কাঁটা/মাকু
ফিরে পেল’। আহমাদ-২০৬৮৩
আসলাফ-আকাবেরদের আমল:
ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,
আলী (রাঃ) যখন খারেজীদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন করছিলেন তখন এক জ্যোতিষী এসে তাঁকে বলে, হে আমিরুল মুমিনীন, আপনি এই যুদ্ধে যাবেন না।
কারণ চাঁদ এখন বৃশ্চিক রাশিতে অবস্থান করছে। চাঁদ বৃশ্চিক রাশিতে থাকাকালে আপনি
যাত্রা করলে আপনার বাহিনী পরাজিত হবে। তখন আলী (রাঃ) বলেছিলেন, আমি বরং আল্লাহর উপর ভরসা ও ভরসার্থে এবং তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণ করতে অবশ্যই
যাত্রা করব। শেষ পর্যন্ত তিনি যাত্রা করেন এবং ঐ সফরে তিনি প্রচুর কল্যাণ লাভ
করেন। অধিকাংশ খারেজী এ যুদ্ধে ধরাশায়ী হয়। আর নবী করীম (ﷺ) -এর আদেশ মতো
যুদ্ধ করে জয়ী হওয়াতে আলী (রাঃ) অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। সূত্র: ইবনে তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা
১/৫৭
আল্লামা আব্দুল ওয়াহহাব শারানি (রহ.) বলেন,
আমার পুত্র আব্দুর রহমানের ঘটনা। এলম ও জ্ঞান অর্জনের কোন আগ্রগই তার ভেতর ছিল না।
এজন্য আমি খুবই দুশ্চিন্তায় ভুগছিলাম। আল্লাহ মহান আমার অন্তরে হঠাৎ এ খেয়াল ঢেলে দিলেন
যে, পুত্রের লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ দান ও প্রস্তুতির বিষয়টি আল্লাহ পাকের ওপর সোপর্দ
করে দাও। বস, আমি তাই করলাম। পরম দয়াময়ের কী মহিমা! ঐ রাত হতে আপনা থেকেই সে কিতাব
পাঠে যেন একেবারে ডুবে গেলো এবং তখন থেকেই সে এলমের স্বাদ আস্বাদন করতে লাগলো। আরও
কয়েক বছর পূর্ব থেকেই যারা নিয়মিত পড়াশুনা করে আসছিল, ওমধা, কিতাবাবি বঝবার ক্ষমতা,
সবকিছুতেই সে তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেলো। আল্লাহ পাকের ওপর তাওয়াকুল্লের বরকতে তিনি
আমাকে দুশ্চিন্তামুক্ত করলেন। আল্লাহ ওকে আমলওয়ালা আলেম হবার তাওফিক দান করুন। সূত্র:
সীরাতুল আউলিয়া-৩১ পৃ. হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী, অনুবাদ আরিফবিল্লাহ শাহ আব্দুল মতীন
বিন হুসাইন হাফিজাহুল্লাহ
নিরীক্ষণ: প্রিয় বন্ধুগণ। আমরা আশরাফুল মাখলুকাত হয়েও, পাখির মত তাওয়াক্কুল নেই মোদের। আমাদের
জীবনের পরতে পরতে কত না সমস্যার সম্মুখীন। আমরা যদি পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর বাতলানো
মহান পূর্বসূরীর দেখানো পথে চলতাম, তাহলে সব সমস্যা সমাধান না হলেও; অন্তত মানসিক প্রশান্তি
লাভ করতাম।
আবেদন/পরামর্শ: আসবাব বা উপকরণ গ্রহণ করা তাওয়াক্কুলের
বিপরীত নয়। বরং তা সুন্নাহর পথ। দলিল:
আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ أَعْقِلُهَا
وَأَتَوَكَّلُ أَوْ أُطْلِقُهَا وَأَتَوَكَّلُ قَالَ : اعْقِلْهَا وَتَوَكَّلْ- ‘এক
ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমি
কি তাকে (আমার উষ্ট্রীটাকে) বেঁধে রেখে (আল্লাহর উপর) ভরসা করব, না
কি তাকে বন্ধনমুক্ত করে দিয়ে ভরসা করব?
তিনি
বললেন, আগে বেঁধে রাখো,
তারপর
ভরসা কর’। তাখরিজ: তিরমিযী-২৫১৭
আসল
কথা হলো, উপকরণ আমরা ব্যবহার করবো ঠিক, কিন্তু অন্তরের বিশ্বাস/আস্থা থাকবে মহান
আল্লাহর ওপর। কেননা তিনিই চাইলে হবে নতুবা
উপকরণ কোন কাজে আসবে না।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন