জিজ্ঞাসা-১২৪২৫:
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
আমার একটা জানার বিষয় হলো, আমরা জানি অন্য ধর্মাবলম্বীদের কে সালাম দেয়া যায় না। কিন্তু যদি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা
অন্য ধর্মাবলম্বী হয়ে থাকেন এবং একই সাথে তিনি সালাম না পেলে অপমান বোধ করেন ❗ সেক্ষেত্রে
সামাজিকতা রক্ষার জন্য কি সালাম দেয়া যাবে❓ এমতাবস্থায় যদি সালাম দেয় তাহলে কোন
পর্যায়ের গুনাহ হবে ❓ অনুগ্রহ করে জানাবেন ইনশাআল্লাহ ‼ তারিখ: ১৩/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান বগুড়া থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, অমুসলিমদেরকে সালাম দেওয়া জায়েয নেই, তা আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন। দলিল:
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «لَا تبدؤوا الْيَهُودَ وَلَا النَّصَارَى بِالسَّلَامِ وَإِذَا لَقِيتُمْ أَحَدَهُمْ فِي طريقٍ فَاضْطَرُّوهُ إِلَى أضيَقِه»
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের আগে বাড়িয়ে সালাম করো না।’ তাখরিজ: মুসলিম, হাদিস : ২১৬৭; আল জামি‘উস্ সগীর ১৩১৬০, ইরওয়া ১২৭১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৭২৫, শু‘আবুল ঈমান ৮৯০৩, তিরমিযী ১৬০২
প্রশ্ন: ক। যদি কোন অমুসলিম মুসলমানকে সালাম দেয়, তাহলে তার জবাব কি হবে?
উত্তর: ক। কোনো অমুসলিম আগে সালাম দিয়ে ফেললে উত্তরে ‘ওয়া আলাইকুম’ বলতে হবে। দলিল:
إذا سَلَّمَ علَيْكُم أهْلُ الكِتابِ فَقُولوا وعلَيْكُم.
الراوي : أنس بن مالك | المحدث : مسلم | المصدر : صحيح مسلم | الصفحة أو الرقم : 2163 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح] | التخريج : أخرجه البخاري (6258)، ومسلم (2163)
অর্থ: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আহলে কিতাবগণ তোমাদের সালাম দিলে, তার উত্তরে তোমরা শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে। অর্থাৎ তোমাদের প্রতিও। তাখরিজ: বুখারি ৬২৫৮ মুসলিম ২১৬৭
প্রশ্ন: খ। অমুসলিমদেরকে কিভাবে সম্মান/সামাজিক মর্যাদা দেওয়া যাবে?
উত্তর: وكذلك أيضاً لا يجوز أن نبدأهم بالتحية مثل "أهلاً وسهلاً" و "مرحباً" وما أشبه ذلك لما في ذلك من تعظيمهم فهو كابتداء السلام عليهم.
অর্থাৎ কোনো অমুসলিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সৌজন্য প্রদর্শনস্বরূপ তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে বা অন্য কোনভাবে যেমন, হাতের দ্বারা ইশারা করে কুশল বিনিময় করা এক ধরনের সৌন্দর্য। সে হিসেবে তাকে 'আহলান সাহলান', 'মারহাবা' ‘আদাব’ ইত্যাদি বলা যেতে পারে। তবে কোনভাবেই তাকে ‘নমস্কার’ বা ‘নমস্তে’ বলা যাবে না। রহিমিয়া : ৬/১২৬; কিফায়াতুল মুফতি : ৯/১০৬
প্রশ্ন: গ। যদি কোন অমুসলিমকে সালাম না করলে ক্ষতির আশঙ্কা হয়, তাহলে কি করার?
উত্তর: গ। এ ক্ষেত্রে السلام عليكممَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى ( উচ্চারণ: আসসালামুয়ালাইকুম মানিতে তাবিআল হুদা) অর্থাৎ সালাম তাদের জন্য যারা হেদায়েতের/ইসলামের উপর আছে। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ অমুসলিম শাসকদের নিকট চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত দিতে এ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করেছেন। দলিল:
ثُمَّ دَعَا بِكِتَابِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم الَّذِي أُرْسِلَ بِهِ مَعَ دِحْيَةَ الْكَلْبِيِّ إِلَى عَظِيمِ بُصْرَى، فَدَفَعَهُ إِلَيَّ هِرَقْلُ فَقَرَأَهُ، فَإِذَا فِيهِ: بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، مِنْ مُحَمَّدٍ عَبْدِ اللهِ وَرَسُولِهِ إِلَى هِرَقْلَ عَظِيمِ الرُّومِ، سَلاَّمٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، أَمَّا بَعْدُ، فَإِنِّي أَدْعُوكَ بِدِعَايَةِ الإِسْلاَمِ،
অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রোমের বাদশা হিরাকল (হিরাক্লিয়াস) আবু সুফিয়ান ইবনে হারবের নিকট লোক পাঠান। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চিঠি নিয়ে ডাকেন যা নিয়ে তিনি দিহয়া আল-কালবী (রাঃ)-কে বুসরার শাসকের নিকট পাঠিয়েছিলেন। তিনি চিঠিখানি হিরাকলের নিকট অর্পণ করেন। তিনি তা পাঠ করেন। তাতে ছিলঃ “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম। আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে রোমের শাসক হিরাকলকে। যে ব্যক্তি হেদায়াতের অনুসরণ করে তার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর, আমি আপনাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন নিরাপদ থাকুন। তাখরিজ: আদাবুল মুফরাদ-১১০৯
সারকথা হলো, কোন অমুসলিমকে সামাজিক মর্যাদা দিতে ধন্যবাদ, স্বাগতম, মারহাবা, Thank you sir ইত্যাদি বলতে কোন দোষ নেই। যদি তিনি দূরে থাকে, তাহলে শুধু হাত দ্বারা করবেন, যাতে তিনি বুঝে সালাম দিয়েছেন।
আর যদি কাছাকাছি থেকে সালাম দিতে বাধ্য হন, তাহলে السلام عليكم مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى ( উচ্চারণ: আসসালামুয়ালাইকুম মানিত তাবিআল হুদা) বললেন।
উল্লেখ্য যে, مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى শব্দগুলো অপেক্ষাকৃত আস্তে বললেন, যাতে তিনি বুঝে আপনার ক্ষতি না করে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন