জিজ্ঞাসা-১২৪৫৭:
আসসালামু আলাইকুম।
জুমাআর দিনে গোসল করা কি ওয়াজিব ? দলিলসহ সমাধান কামনা করছি। তারিখ: ০৫ /০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ বগুড়া থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে দুটি মতামত পাওয়া যায়,
প্রথম মত: সুন্নাত/মুস্তাহাব।
يُسنُّ الغُسلُ يومَ الجُمُعةِ، وهذا باتِّفاقِ المذاهبِ الفقهيَّة الأربعة: الحَنَفيَّة، والمالِكيَّة، والشافعيَّة، والحَنابِلَة، وبه قال جماهيرُ العلماء، وحُكي الإجماعُ على ذلك
অর্থাৎ জুমার দিনে গোসল করা সুন্নত, এ বিষয়ে আইম্মায়ে আরবা ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফিয়ি এবং আহমদ ইবনে হাম্বল রহ একমত পোষণ করেছেন। ইবনে জুবায়ের বলেন জুমার দিনে গোসল করা সুন্নত ইমাম পোষণ করেছেন। সূত্র: ইখতিলাফুল আইম্মাতিল উলামা-১/১৫৯
দ্বিতীয় মত: আহলে হাদিসের কতিপয় আলেম এর মতে ওয়াজিব। তার মধ্যে এনটিভির আলোচক ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ ।
আইম্মায়ে আরবার দলিল:
আয়াত নং-০১
قال الله تعالى: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الجُمُعة فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ [الجُمُعة: 9]
অর্থ: হে ঈমানদারগণ যখন জুমার নামাজের উদ্দেশ্য আযান দেয়া হয় তখন তোমরা আল্লাহর জিকিরের দিকে ধাবিত হও তোমাদের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে দাও। সূরা জুমুআ-০৯
وَجْهُ الدَّلالَةِ:
أنَّ سياقَ الآية يُشير إشارةً خفيَّة إلى عدمِ وجوبِ الغُسل; وذلك لأنَّه لم يَذكُر نوعُ طهارةٍ عندَ السَّعي بعدَ الأذان، ومعلومٌ أنَّه لا بدَّ من طُهرٍ لها،
আয়াতের প্রেক্ষাপটে গোসল ফরজ না হওয়ার প্রচ্ছন্ন উল্লেখ রয়েছে; এর কারণ হল নামাযের আযানের পর সা'আ করার সময় কোন প্রকার শুদ্ধিকরণের কথা উল্লেখ করা হয়নি এবং এটাকে পবিত্র করা
আয়াত-০২
، فيكون إحالةً على الآية الثانية العامَّة في كلِّ الصلواتِ: إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ... [المائدة: 6] الآية؛ فيُكتَفَى بالوضوءِ، وتَحصُل الفضيلةُ بالغُسلِ
অর্থ: যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াবে। তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ধৌত করবে। সূরা মায়েদা-০৬
তাই এটি দ্বিতীয় আয়াতের একটি রেফারেন্স যা সকল নামাযের ক্ষেত্রে সাধারণ।
হাদিস নং -০১
وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَأَبُو كُرَيْبٍ قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا وَقَالَ الآخَرَانِ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ وَزِيَادَةُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ وَمَنْ مَسَّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا " .
অর্থ: ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়া, আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা ও আবু কুরায়ব (রাহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে, এরপর জুমআয় আসে, মনোনিবেশ সহকারে নীরব থাকে, তার তখন থেকে (পরবর্তী) জুমআ পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। যে (অহেতুক) কংকর স্পর্শ করল সে অনর্থক কাজ করল। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৬১ (আন্তর্জাতিক নং ৮৫৭-২)
وَجْهُ الدَّلالَةِ:
فيه دليلٌ على أنَّ الوضوءَ كافٍ للجُمُعةِ، وأنَّ المقتصِرَ عليه غيرُ آثمٍ ولا عاصٍ؛ فدلَّ على أنَّ الأمْرَ بالغُسلِ محمولٌ على الاستحبابِ
অর্থাৎ : জুমার নামাযের জন্য ওযুই যথেষ্ট এবং তা শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, পাপীও নয়, অবাধ্যও নয়। এটি নির্দেশ করে যে ধোয়ার আদেশটি মানা উত্তম। সূত্র: ফাতহুল বারী-৫/৩৪২, ইবনে রজব রহ.
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، قَالَ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ عُمَرَ ـ رضى الله عنه ـ بَيْنَمَا هُوَ يَخْطُبُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِذْ دَخَلَ رَجُلٌ فَقَالَ عُمَرُ لِمَ تَحْتَبِسُونَ عَنِ الصَّلاَةِ فَقَالَ الرَّجُلُ مَا هُوَ إِلاَّ سَمِعْتُ النِّدَاءَ تَوَضَّأْتُ. فَقَالَ أَلَمْ تَسْمَعُوا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا رَاحَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ ".
আবু নু’আইম (রাহঃ) ... আবু হুরাইরা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, জুম'আর দিন উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করেন। উমর (রাযিঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, নামাযে সময়মত আসতে তোমরা কেন বাধাগ্রস্থ হও? তিনি বললেন, আযান শোনার সাথে সাথেই তো আমি উযু করেছি। তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, তোমরা কি নবী (ﷺ) কে একথা বলতে শোননি যে, যখন তোমাদের কেউ জুম'আর নামাযে রওয়ানা হয়, তখন সে যেন গোসল করে নেয়। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৩৮ (আন্তর্জাতিক নং ৮৮২)
وَجْهُ الدَّلالَةِ:
أنَّ عُمرَ رَضِيَ اللهُ عنه لم يأمُرْ هذا الصحابيَّ-
(التمهيد)) لابن عبد البر (10/78)، ((إكمال المعلم)) للقاضي عياض (3/130)وهو عثمانُ بن عفَّانَ على ما جاءَ في الرِّوايات
অর্থাৎ ওমর রা. উক্ত ব্যক্তিকে গোসল করার আদেশ দেয়নি। সুতরাং প্রমাণিত হলো গোসল ওয়াজিব নয়। সূত্র: আলতামহিদ-১৭/৭৮, ইবনে আব্দিল বার রহ.
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، - يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ - عَنْ عَمْرِو بْنِ أَبِي عَمْرٍو، عَنْ عِكْرِمَةَ، أَنَّ أُنَاسًا، مِنْ أَهْلِ الْعِرَاقِ جَاءُوا فَقَالُوا يَا ابْنَ عَبَّاسٍ أَتَرَى الْغُسْلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاجِبًا قَالَ لاَ وَلَكِنَّهُ أَطْهَرُ وَخَيْرٌ لِمَنِ اغْتَسَلَ وَمَنْ لَمْ يَغْتَسِلْ فَلَيْسَ عَلَيْهِ بِوَاجِب
অর্থ: আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসলামা .... আমর থেকে ইকরিমা (রাহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইরাকের একটি প্রতিনিধি দল এসে ইবনে আব্বাস (রাযিঃ)-কে বললেন, হে ইবনে আব্বাস! আপনার মতে কি জুমআর দিন গোসল করা ওয়াজিব? তিনি বলেন- না, কিন্তু গোসল করা খুবই উত্তম ও পবিত্রতম কাজ- যে ব্যক্তি তা করে এবং যে ব্যক্তি তা করে না- তার জন্য এটা ওয়াজিব নয়। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৩ (আন্তর্জাতিক নং ৩৫৩) তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)
কতিপয় আহলে হাদিসের দলিল:
হাদিস নং -০১
حَدَّثَنَا عَلِيٌّ، قَالَ حَدَّثَنَا حَرَمِيُّ بْنُ عُمَارَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، قَالَ حَدَّثَنِي عَمْرُو بْنُ سُلَيْمٍ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ أَشْهَدُ عَلَى أَبِي سَعِيدٍ قَالَ أَشْهَدُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الْغُسْلُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ، وَأَنْ يَسْتَنَّ وَأَنْ يَمَسَّ طِيبًا إِنْ وَجَدَ ". قَالَ عَمْرٌو أَمَّا الْغُسْلُ فَأَشْهَدُ أَنَّهُ وَاجِبٌ، وَأَمَّا الاِسْتِنَانُ وَالطِّيبُ فَاللَّهُ أَعْلَمُ أَوَاجِبٌ هُوَ أَمْ لاَ، وَلَكِنْ هَكَذَا فِي الْحَدِيثِ. قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ هُوَ أَخُو مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ وَلَمْ يُسَمَّ أَبُو بَكْرٍ هَذَا. رَوَاهُ عَنْهُ بُكَيْرُ بْنُ الأَشَجِّ وَسَعِيدُ بْنُ أَبِي هِلاَلٍ وَعِدَّةٌ. وَكَانَ مُحَمَّدُ بْنُ الْمُنْكَدِرِ يُكْنَى بِأَبِي بَكْرٍ وَأَبِي عَبْدِ اللَّهِ.
অর্থ: আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ... আমর ইবনে সুলাইম আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ জুম'আর দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য। আর মিসওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে। আমর (ইবনে সুলাইম) (রাহঃ) বলেন, গোসল সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তা কর্তব্য। কিন্তু মিসওয়াক ও সুগন্ধ ি কর্তব্য কিনা তা আল্লাহই ভাল জানেন। তবে হাদীসে এরূপই আছে। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৩৬ (আন্তর্জাতিক নং ৮৮০)
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، قَالَ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ عُمَرَ ـ رضى الله عنه ـ بَيْنَمَا هُوَ يَخْطُبُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِذْ دَخَلَ رَجُلٌ فَقَالَ عُمَرُ لِمَ تَحْتَبِسُونَ عَنِ الصَّلاَةِ فَقَالَ الرَّجُلُ مَا هُوَ إِلاَّ سَمِعْتُ النِّدَاءَ تَوَضَّأْتُ. فَقَالَ أَلَمْ تَسْمَعُوا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا رَاحَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ "
আবু নু’আইম (রাহঃ) ... আবু হুরাইরা (রাযিঃ) থেকে । তোমরা কি নবী (ﷺ) কে একথা বলতে শোননি যে, যখন তোমাদের কেউ জুম'আর নামাযে রওয়ানা হয়, তখন সে যেন গোসল করে নেয়। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৩৮ (আন্তর্জাতিক নং ৮৮২)
বিরোধপূর্ণ হাদিসগুলোর সমন্বয়:
আমরা দেখলাম কতক হাদিসে ওয়াজিব বলা হয়েছে আবার কতক হাদিসে আবশ্যক করেননি। এদুটি ধারার বর্ণনা সমন্বয় হচ্ছে:
যাদের শরীরে ঘাম এবং দুর্গন্ধ ছিল তাদের জন্য এ আদেশ ছিল। দলিল:
হাদিস নং -০১
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي جَعْفَرٍ، أَنَّ مُحَمَّدَ بْنَ جَعْفَرِ بْنِ الزُّبَيْرِ، حَدَّثَهُ عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ كَانَ النَّاسُ يَنْتَابُونَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ مِنْ مَنَازِلِهِمْ وَالْعَوَالِي، فَيَأْتُونَ فِي الْغُبَارِ، يُصِيبُهُمُ الْغُبَارُ وَالْعَرَقُ، فَيَخْرُجُ مِنْهُمُ الْعَرَقُ، فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنْسَانٌ مِنْهُمْ وَهْوَ عِنْدِي، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " لَوْ أَنَّكُمْ تَطَهَّرْتُمْ لِيَوْمِكُمْ هَذَا ".
অর্থ: আহমদ ইবনে সালিহ (রাহঃ) ... নবী (ﷺ) এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন তাদের বাড়ী ও উঁচু এলাকা থেকেও জুমআর নামাযের জন্য পালাক্রমে আসতেন। আর যেহেতু তারা ধুলো-বালির মধ্য দিয়ে আগমন করতেন, তাই তারা ধূলিমলিন ও ঘর্মাক্ত হয়ে যেতেন। তাঁদের দেহ থেকে ঘাম বের হত। একদিন তাদের একজন রাসূল (ﷺ) এর নিকট আসেন। তখন নবী (ﷺ) আমার নিকট ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেনঃ যদি তোমরা এ দিনটিতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে।
তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৫৬ (আন্তর্জাতিক নং ৯০২)
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، - يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ - عَنْ عَمْرِو بْنِ أَبِي عَمْرٍو، عَنْ عِكْرِمَةَ، أَنَّ أُنَاسًا، مِنْ أَهْلِ الْعِرَاقِ جَاءُوا فَقَالُوا يَا ابْنَ عَبَّاسٍ أَتَرَى الْغُسْلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاجِبًا قَالَ لاَ وَلَكِنَّهُ أَطْهَرُ وَخَيْرٌ لِمَنِ اغْتَسَلَ وَمَنْ لَمْ يَغْتَسِلْ فَلَيْسَ عَلَيْهِ بِوَاجِبٍ وَسَأُخْبِرُكُمْ كَيْفَ بَدْءُ الْغُسْلِ كَانَ النَّاسُ مَجْهُودِينَ يَلْبَسُونَ الصُّوفَ وَيَعْمَلُونَ عَلَى ظُهُورِهِمْ وَكَانَ مَسْجِدُهُمْ ضَيِّقًا مُقَارِبَ السَّقْفِ إِنَّمَا هُوَ عَرِيشٌ فَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي يَوْمٍ حَارٍّ وَعَرِقَ النَّاسُ فِي ذَلِكَ الصُّوفِ حَتَّى ثَارَتْ مِنْهُمْ رِيَاحٌ آذَى بِذَلِكَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا فَلَمَّا وَجَدَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تِلْكَ الرِّيحَ قَالَ " أَيُّهَا النَّاسُ إِذَا كَانَ هَذَا الْيَوْمُ فَاغْتَسِلُوا وَلْيَمَسَّ أَحَدُكُمْ أَفْضَلَ مَا يَجِدُ مِنْ دُهْنِهِ وَطِيبِهِ " . قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ ثُمَّ جَاءَ اللَّهُ بِالْخَيْرِ وَلَبِسُوا غَيْرَ الصُّوفِ وَكُفُوا الْعَمَلَ وَوُسِّعَ مَسْجِدُهُمْ وَذَهَبَ بَعْضُ الَّذِي كَانَ يُؤْذِي بَعْضُهُمْ بَعْضًا مِنَ الْعَرَقِ .
অর্থ: আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসলামা .... আমর থেকে ইকরিমা (রাহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইরাকের একটি প্রতিনিধি দল এসে ইবনে আব্বাস (রাযিঃ)-কে বললেন, হে ইবনে আব্বাস! আপনার মতে কি জুমআর দিন গোসল করা ওয়াজিব? তিনি বলেন- না, কিন্তু গোসল করা খুবই উত্তম ও পবিত্রতম কাজ- যে ব্যক্তি তা করে এবং যে ব্যক্তি তা করে না- তার জন্য এটা ওয়াজিব নয়। আমি তোমাদেরকে গোসলের ইতিবৃত্ত বলব। অতঃপর তিনি বলেন- ইসলামের প্রথম যুগে মুসলমানরা মোটা কাপড় পরিধান করে দৈহিক পরিশ্রম- এমন কি বোঝা বহনের কাজও করত। তাদের মসজিদ ছিলাম অত্যন্ত সংকীর্ণ এবং নীচু ছাদ বিশিষ্ট। একদা গরমের সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে গিয়ে দেখতে পান যে, অত্যধিক গরমের ফলে মুসল্লীদের শরীরের ঘাম কাপড়ে লেগে তা হতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং এ কারণে সকলেই কষ্ট অনুভব করছে নবী (ﷺ) নিজেও এই দুর্গন্ধ অনুভব করে বললেনঃ “হে লোকসকল! যখন এই (জুমআর) দিন আসবে তোমরা গোসল করে সাধ্যানুযায়ী তৈল ও সুগন্ধ ি দ্রব্য ব্যবহার করবে”।
অতঃপর ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, পরবর্তীকালে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যখন মুসলমানদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেন, তখন তারা মেটা কাপড় পরিধান ত্যাগ করে উত্তম পোশাক পরিধান করতে থাকে, নিজেদের কাজ অন্যদের দ্বারা করাতে থাকে এবং তাদের মসজিদও প্রশস্ত হয় এর ফলশ্রুতিতে ইতিপূর্বে তারা ঘর্মাক্ত হওয়ায় যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হত তা দূরীভুত হয়। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৩ (আন্তর্জাতিক নং ৩৫৩)
ইবনে
বাজ রহ এর ফতোয়া:
হাম্বলি মাজহাবের অনুসারী সৌদি আরবের বিখ্যাত আলেম ইবনে বাজ রহ. কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন,
غسل الجمعة سنة مؤكدة
للرجال؛ لقول النبي ﷺ: غسل يوم الجمعة واجب على كل محتلم وأن يستاك ويتطيب وقوله
ﷺ: من راح إلى الجمعة فليغتسل في أحاديث أخرى كثيرة، وليس بواجب الوجوب الذي يأثم
من تركه، ولكنه واجب بمعنى: أنه متأكد؛ لهذا الحديث الصحيح، ولقوله ﷺ: من توضأ يوم
الجمعة ثم أتى المسجد فصلى ما قدر له ثم أنصت حتى يفرغ الإمام من خطبته غفر له ما
بينه وبين الجمعة الأخرى وفضل ثلاثة أيام وقوله ﷺ: من توضأ يوم الجمعة فبها ونعمت
ومن اغتسل فالغسل أفضل.
অর্থাৎ
জুমাআর গোসল পুরুষের জন্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। এ আদেশটি ওয়াজিবের জন্য। সুতরাং
কেউ ছেড়ে দিলে গুনাহ হবে না। ওয়াজিব অর্থ থাকিলে।
সারকথা
হলো, সাধারণ
অবস্থায় জুমাআর দিনে গোসল করা সুন্নাত/মুস্তাহাব। তবে শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হলে,
যাতে মুসল্লিদের কষ্ট হবে, তখন গোসল করা
ওয়াজিব। যেমনটি তিনি কাঁচা পিয়াস-রসুন খেয়ে মসজিদে যায়তে নিষেধ করা হয়েছে।
এ
সম্পর্কে শায়েখ ইবনে তায়মিয়া রহ বলেন,
তবে
কোন ব্যক্তি যদি ঘর্মাক্ত হয় এবং শরীরের দুর্গন্ধ অন্য মুছল্লীদের জন্য কষ্টকর
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে তার জন্য গোসল করা ওয়াজিব হবে ।
(ইবনু তায়মিয়াহ, ফাতাওয়া কুবরা ৫/৩০৭)।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন