আসসালামু আলাইকুম।
মুহতারাম মুফতি সাহেব!
নিম্নের বিষয়গুলোর সমাধান কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
زادك الله علما و بارك فيه وجزاك خيرا في الدارين. آمين
স্ত্রী স্বামীর পিতা-মাতার খেদমত (খাবার প্রস্তুত করা, কাপড় ধৌত করা, শারীরিক সেবা ..) করতে অস্বীকৃতি জানালে স্বামী তাকে বাধ্য করতে পারবে কিনা? ইসলাম স্ত্রীর উপর এই দায়িত্ব পালন করতে আদেশ দেয় কি?
তারিখ: ২৮/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সাজ্জাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
ليس للرجل أن يستخدم امرأته الحرة (المطيح البرهانى-4/237، رقم-4151، الفتاوى التاترخانية-4/309، رقم-6271)
অর্থাৎ মা-বাবার সেবা-শুশ্রূষা করা সন্তানের দায়িত্ব— কোনোভাবেই পুত্রবধূর নয়। (আল-বাহরুর রায়েক : ৪/১৯৩; কিফায়াতুল মুফতি : ৫/২৩০)
পিতা-মাতার খেদমত এবং তাদের হক পূরণে সন্তানের ওপর বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিন্তু স্বামীর পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনের দের খেদমত সম্পর্কে স্ত্রীর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এ বিষয়ে স্ত্রীর দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে কোন নস বর্ণিত হয়নি। পিতা মাতার খেদমত এর জন্য সন্তান নিজে দায়ী। স্ত্রী দায়ী নয়। যদি স্ত্রী করে এটা এহসান মাত্র। এ বিষয়ে ওলামায়ে দ্বীনের ফতোয়া হলো,
فلا يجب على المرأة أن تخدم أم زوجها، وليس من حق الزوج أن يلزم زوجته بخدمتها، وإلا كان ظالما لها، ولا يجب على زوجته طاعته في ذلك. وبره بأمه مطلوب، ولكن لا يكون بظلم زوجته وإلزامها بما لا يلزمها شرعا.ة الفتوى رق 66237.
একজন মহিলা তার স্বামীর মায়ের সেবা করতে বাধ্য নয়, এবং স্বামীর তার স্ত্রীকে তার সেবা করার জন্য বাধ্য করার অধিকার নেই, অন্যথায় সে তার প্রতি অবিচার করবে এবং তার স্ত্রীর তাতে তার আনুগত্য করা উচিত নয়। তার মায়ের প্রতি তার বিশ্বস্ততা প্রয়োজন, তবে এটি তার স্ত্রীকে নিপীড়ন করা এবং তাকে যা করতে বাধ্য করা আইনত বাধ্য নয়।
فلا يجب على المرأة خدمة أبوى زوجها وإخوانه، ولو طلب منها زوجها ذلك لا تلزمها طاعته لأن طاعته إنما تجب في النكاح وتوابعه، قال ابن نجيم: لأن المرأة لا يجب عليها طاعة الزوج في كل ما يأمر به إنما ذلك فيما يرجع إلى النكاح وتوابعه خصوصاً إذا كان في أمره إضرار بها
একজন মহিলার জন্য তার স্বামীর পিতা-মাতা এবং ভাইদের সেবা করা ওয়াজিব নয় এবং যদি তার স্বামী তাকে তা করতে বলে তবে সে তার আনুগত্য করতে বাধ্য নয়, কারণ তার আনুগত্য কেবল বিবাহ এবং তার আনুষাঙ্গিক ক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলক। সূত্র: ফিকহুল উসরাতিল মুসলিমা, আলহুকুকু বাইনায যাওজাইন- ফতোয়া নং 66237
এ বিষয়ে শায়েখ মুহাম্মাদ ইবনে উসাইমিন রহ কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি জবাবে বলেন,
فتاوى اللجنة الدائمة " ( 19 / 264 ، 265 ) .
وسئل الشيخ محمد بن صالح العثيمين - رحمه الله - :
هل لأم الزوج حق على الزوجة ؟ .
فأجاب :
لا ، أم الزوج ليس لها حق واجب على الزوجة بالنسبة للخدمة ؛ لكن لها حق مِن المعروف ، والإحسان ، وهذا مما يجلب مودة الزوج لزوجته ، أن تراعي أمه في مصالحها ، وتخدمها في الأمر اليسير ، وأن تزورها من حين لآخر ، وأن تستشيرها في بعض الأمور ، وأما وجوب الخدمة : فلا تجب ؛ لأن المعاشرة بالمعروف تكون بين الزوج والزوجة .
" لقاءات الباب المفتوح " ( 68 / السؤال 14 )
না, স্বামীর মায়ের এমন কোন অধিকার নেই যা স্ত্রীর জন্য খেদমতের ক্ষেত্রে ওয়াজিব। কিন্তু তার অনুগ্রহ ও কল্যাণের অধিকার রয়েছে এবং এটিই তার স্ত্রীর প্রতি স্বামীর স্নেহ, তার স্বার্থে তার মায়ের যত্ন নেওয়া, সহজ বিষয়ে তার সেবা করা, সময়ে সময়ে তার সাথে দেখা করা এবং পরামর্শ করার অধিকার এনে দেয়। কিছু বিষয়ে তার কেননা অনুগ্রহ সহ সহবাস স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। সূত্র: সৌদি আরবের স্থায়ী ফাতওয়া বোর্ড-১৯/২৬৪,২৬৫
فيجب على الزوج أن يقف عند هذا الحكم الشرعي ، ولا يطلب من الزوجة ما لا يلزمها شرعاً ، وعليه أن يعلم أنه لا طاعة له عليها لو أنه أمر زوجته بخدمة أهله ؛ لأن أمره ذاك ليس من شرع الله تعالى
স্বামীকে অবশ্যই এই ইসলামি বিধানের প্রতি অটল থাকতে হবে এবং স্ত্রীর কাছে এমন কিছু চাইবে না যা তার জন্য শরী‘আত ওয়াজিব নয়। কারণ তার আদেশ সর্বশক্তিমান আল্লাহর বিধান থেকে নয়। সূত্র: সৌদি আরবের স্থায়ী ফাতওয়া বোর্ড-১৪/৬৮
সার কথা হলো, স্ত্রী স্বামীর পিতা-মাতার খেদমত (খাবার প্রস্তুত করা, কাপড় ধৌত করা, শারীরিক সেবা ..) করতে অস্বীকৃতি জানালে স্বামী তাকে বাধ্য করতে পারবে না। ইসলাম স্ত্রীর উপর এই দায়িত্ব পালন করতে আদেশ দেয়নি।
তবে মানবিক এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে স্ত্রীর উচিত স্বামীর পিতা-মাতার খেদমত করে, স্বামীর সন্তুষ্টি ও সুখী সংসার গড়া।
- والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন