আল-বুরহানের নীতিমালা
নাম : আল-বুরহান (দলীল-প্রমাণ)
শর্ত: বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী
ধর্ম শিক্ষকগণ শুধু সদস্য হতে পারবেন।
নীতিমালা: আল –বুরহানের
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ঠিক রাখার জন্য এবং
কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন
করা অতীব জরুরী। অভিযোগটি হলো এই, অতিরিক্ত ম্যাসেজ/অপ্রয়োজনীয়
ম্যাসেজ যা সকলের নিকট বিরক্তির কারণ। তাই
অতিরিক্ত ম্যাসেজ রোধকল্পে এবং আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক অটুট রাখার নিমিত্তে কিছু
বিধি-নিষেধ নিম্নে দেওয়া হলো:-
১। মাসয়ালা-মাসায়েল অর্থাৎ সওয়াল-জবাব, প্রশ্ন-উত্তর এবং পেশাগত
সহযোগিতা ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিগত মতামত-চিন্তা, কোন বক্তার বক্তব্য, কোন ইসলামি ব্যক্তিত্বের
চিন্তা-চেতনা লেখা, অডিও,
ভিডিও, পোস্ট/শেয়ার/প্রশ্ন করা যাবে
না। তবে,
(ক) মানবিক বিষয় বিবেচনা করে যদি
কখনো কিছু গ্রুপে প্রকাশ করার প্রয়োজন হয়, তাহলে কোন সদস্য
সরাসরি গ্রুপে দিতে পারবেন না, এডমিন এর মাধ্যমে প্রকাশ করবেন।
(খ) নিজ, পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী
ও আপন ভাইয়ের গুরুতর অসুস্থ এবং মৃত্যু সংবাদ
এডমিনের মাধ্যমে দুআ চাইতে পারবেন।
(গ) অসুস্থ কিংবা মৃত্যুর সংবাদ দেওয়ার পরে কোন সদস্য
আমিন আমিন বা কোন ধরনের কমেন্টস করতে পারবেন না, মনে মনে বা ব্যক্তিগতভাবে
দুআ করবেন।
(ঘ) যদি ‘গ’ নম্বর শর্ত পূরণ না হয়, তাহলে ‘ক’ এবং ‘খ’ সুবিধা বাতিল করা হবে।
(ঙ) আমাদের মাসয়ালাগুলো যেহেতু
ওয়েবসাইটে স্থাপন করা হয়, তাই সরাসরি কেউ গ্রুপে জবাব
দিবে না। এডমিনের কাছে পাঠালে,
এডমিন
সেটাকে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।
২। ব্যক্তিগত আলাপচারিতা ও ঈদের শুভেচ্ছাসহ সকল শুভেচ্ছা বিনিময করা যাবে না।
৩। অপরকে সম্মান দিয়ে কথা বলা এবং কারও সম্মানে আঘাত লাগে এমন কথা বলা যাবে
না।
৪। রাষ্ট্র বিরোধী এবং রাজনৈতিক আলোচনা করা যাবে না।
৫। পরমত সহিঞ্চুতা থাকতে হবে ও বিতর্ক এড়িয়ে চলা।
৬। জানার জন্য প্রশ্ন করা,
ঠেকানো/বিব্রত
করার জন্য প্রশ্ন করা যাবে না। যথাসম্ভব সহজভাবে মাসয়ালার জবাব দেওয়া, (হুবহু কপি ও পেস্ট না করা, কারণ এতে কাঙখিত সমাধান খুজে পেতে কষ্ট হয়) পেঁচানো ও জটিলতা
পরিহার করা।
৭। যে মাসয়ালা সম্পর্কে জ্ঞান নেই; সে বিষয়ে জবাব না দেওয়া।
প্রমাণিত মাসয়ালাই কেবল উপস্থাপন করা যাবে। কোনো মাসয়ালা সম্পর্কে কেউ জবাব দিলে, ঐ একই দালায়েল দ্বারা জবাব দেওয়া যাবে না, তবে সম্পূরক আলোচনা করা যাবে অর্থাৎ যেটা পূর্বের জবাবদাতার
লিখনিতে আসেনি, বাট বিষয়টি উপস্থাপন করলে সবার
উপকার হবে বলে মনে হয়।
৮। কোনো কোনো মাসয়ালায় হানিফি ইমামদের মধ্যেও দ্বিমত বা দুটি মত রয়েছে যা
সবগুলোই সঠিক, এটা পরিস্কারভাবে বলে দেওয়া, যাতে উম্মতের আমল করতে সহজ হয়।
৯। মাসয়ালার সমাধান/জবাব দলিল ভিত্তিক হতে হবে। তবে কমন মাসায়ালার ক্ষেত্রে
না হলেও চলবে। কিন্তু প্রশ্নকর্তা এতে সন্তুষ্ট
না হলে, দলিল অবশ্যই দিতে হবে।
১০। উপরোক্ত বিধি-নিষেধ কোন সদস্য দ্বারা ব্যত্যয় ঘটলে
দু-একবার সর্তক করার পরও পুনরায় করলে,
তাকে
সদস্য থেকে রিমুভ করা হবে।
أسامة بن زيد عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه قال من صنع إليه معروف فقال لفاعله جزاك الله خيرا فقد أبلغ في الثناء رواه الترمذي والنسائي وابن حبان في صحيحه
অর্থ: হযরত উসামা রা. থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ বলেন, তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তখন যদি তুমি তাকে জাযাকাল্লাহ খাইরান (আল্লাহ তোমাকে উত্তম
বিনিময় দান করুন) বল তাহলেই তুমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করলে। তাখরিজ: জামে
তিরমিযী-২০৩৫; সহীহ ইবনে হিববান-৩৪১৩
মুসলিম/আলেম হিসেবে দুআর ভাষা ধন্যবাদ, শুকরান, Thank ইত্যাদির পরিবর্তে প্রিয় নবির (ﷺ) মুখসৃত বাণী “জাযাকাল্লাহু
খয়রান” বলাই উচিত। (তবে যারা আরবি/দ্বীনি বুঝে না, তাদের জন্য দুটাই অর্থাৎ জাযাকাল্লাহু খয়রান + ধন্যবাদ উল্লেখ করাই শ্রেয়।)
প্রশ্ন: ক। শুধু জাযাকাল্লাহ বললে কি হাদিস
অনুযায়ী পূর্ণ দুআ আদায় হবে?
উত্তর: ক। হ্যাঁ, ঠিকই কোনো কোনো ভাই
শুধু জাযাকাল্লাহ বলে। এ শব্দ দ্বারা পূর্ণ কৃতজ্ঞতা
আদায় হয় না, বরং জাযাকাল্লাহু সাথে খয়রান শব্দও বলতে
হবে? দেখুন হাদিসের ভাষা হলো,
أسامة بن زيد عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه قال من صنع إليه معروف فقال لفاعله جزاك الله خيرا فقد أبلغ في الثناء رواه الترمذي والنسائي وابن حبان في صحيحه
অর্থ: হযরত উসামা রা. থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ বলেন, তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার আচরণ করে
তখন যদি তুমি তাকে জাযাকাল্লাহ খাইরান (আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) বল তাহলেই তুমি তার যথাযোগ্য
প্রশংসা করলে। তাখরিজ: জামে তিরমিযী-২০৩৫; সহীহ ইবনে
হিববান-৩৪১৩
জিজ্ঞাসা-১২৪২৪:
তাবলীগ জামাতের ভাই দের কাছে থেকে শোনা, খেদমতে খোদা মেলে আর ইবাদতে জান্নাত মিলে। কথাটি কি কুরআন-হাদিস সমর্থিত? তারিখ: ১৩/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক মাওলানা ঢাকা না প্রকাশে
অনিচ্ছুক থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হ্যাঁ, কথাটি পবিত্র কুরআন-হাদিসের
সমর্থিত। আপনার প্রশ্নকে দুইভাগে ভাগ করছি। ونسأل الله التوفيق وهو الموفق
والمعين
প্রশ্ন: ক। খেদমতে খোদা মেলে।
উত্তর: ক। খেদমত শব্দটি আরবি
বাংলা অর্থ হলো, সেবা করা, পরিচর্চা
করা, সাহায্য করা ইত্যাদি, হাকিমুল উম্মত শাহ আশরাফ আলি থানভি
রহ. এর মুজাজ মহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহ. বলেন, খেদমতের অর্থ হলো রাহাত তথা আরাম পৌঁছানো। খোদা বা আল্লাহ মেলে অর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় এমন কিছু কাজ।
মানুষের খেদমত করলে আল্লাহকে পাওয়া যায় এ মর্মে নিম্নের হাদিস শুরফ দ্বারা পরিষ্কার
বুঝা যায়। দলিল:
« إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا ابْنَ
آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِى. قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ وَأَنْتَ
رَبُّ الْعَالَمِينَ. قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِى فُلاَنًا مَرِضَ فَلَمْ
تَعُدْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِى عِنْدَهُ يَا ابْنَ
آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِى. قَالَ يَا رَبِّ وَكَيْفَ أُطْعِمُكَ
وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ. قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ
عَبْدِى فُلاَنٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ
لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِى يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِى.
قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ قَالَ
اسْتَسْقَاكَ عَبْدِى فُلاَنٌ فَلَمْ تَسْقِهِ أَمَا إِنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ
وَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِى ».
অর্থ: আবু হুরায়রা (رضى الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান,
আমি
অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করো নি।’
বান্দা
বলবে, ‘হে আমার
প্রতিপালক। আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা কিভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?’ তিনি
বলবেন, ‘তুমি
কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ
তাকে তুমি দেখতে যাও নি। তুমি কি জান না,
যদি
তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে।?’ ‘হে আদম সন্তান, আমি
তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাও নি।’
বান্দা
বলবে, ‘হে আমার
রব, তুমি হলে বিশ্ব পালনকর্তা, তোমাকে
আমি কীভাবে আহার করাব?’
তিনি
বলবেন, ‘তুমি
কি জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু
তাকে তুমি খাদ্য দাও নি। তুমি কি জান না যে,
তুমি
যদি তাকে আহার করাতে বে আজ তা প্রাপ্ত হতে।?’
‘হে আদম সন্তান, তোমার
কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাও নি।’
বান্দা
বলবে, ‘হে আমার
প্রভু, তুমি তো রাব্বুল আলামীন তোমাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ তিনি
বলবেন, ‘তোমার
কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাও নি। তাকে যদি পান করাতে
তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ তাখরিজ:
মুসলিম : ৬৭২১; সহীহ ইবন হিব্বান : ৭৩৬
প্রশ্ন: খ। ইবাদতে জান্নাত মিলে।
উত্তর: খ। পবিত্র কুরআন মাজিদে
অসংখ্য জায়গায় ঈমান ও আমল বা ইবাদতের বিনিময়ে জান্নাতের কথা বলা হয়েছে। যেমন,
আয়াত নং-০১
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا
وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম
সম্পাদন করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্যে আছে জান্নাতুল ফেরদাউস।
সূরা কাহাফ-১০৭
আয়াত নং-০২
جَزَاؤُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ
جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَّضِيَ
اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ
তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে
তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। তারা সেখানে
থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা
তার জন্যে, যে তার পালনকর্তাকে ভয় কর। সূরা বাইয়্যিনাহ--৮
প্রশ্ন: গ। উপরোক্ত আয়াতে তো শুধু আমলের কথা বলা হয়নি, পূর্বে ঈমানের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: গ। কোন বিষয়কে গুরুত্ব বুঝানোর জন্য কিছু উৎসাহ দেওয়া, এর অর্থ এই নয় যে, বাকি আমলকে ছেড়ে দিতে হবে, লাগবে না। নিম্নের হাদিস শরিফ দ্বারা বিষয়টি পরিষ্কার হবে
ইনশাল্লাহ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
যে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে, রমযানের রোযা রাখবে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে তাকে বলা
হবে, তুমি জান্নাতের যে কোনো দরজা
দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ কর। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৬১;
মুসনাদে
বায্যার, হাদীস ৭৪৮০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪১৬
এ দ্বারা হাদিস কি ইসলামের
বাকি আমল লাগবে না। এ কথা বুঝানো হয়েছে?
আসলে ব্যাপারটা হলো কোন
বিষয়কে গুরুত্ব আরোপ করার জন্য এ রকম বলা হয়। বাকি আমলকে বাদ দিয়ে নয়।
সুতরাং প্রমাণিত হলো, “খেদমতে খোদা মেলে আর ইবাদতে জান্নাত মিলে”,
কথাটি শরিয়ত সমর্থিত।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪২৫:
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
আমার একটা জানার বিষয় হলো, আমরা জানি অন্য ধর্মাবলম্বীদের কে সালাম দেয়া যায় না। কিন্তু যদি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা
অন্য ধর্মাবলম্বী হয়ে থাকেন এবং একই সাথে তিনি সালাম না পেলে অপমান বোধ করেন ❗ সেক্ষেত্রে
সামাজিকতা রক্ষার জন্য কি সালাম দেয়া যাবে❓ এমতাবস্থায় যদি সালাম দেয় তাহলে কোন
পর্যায়ের গুনাহ হবে ❓ অনুগ্রহ করে জানাবেন ইনশাআল্লাহ ‼ তারিখ: ১৩/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান
বগুড়া থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, অমুসলিমদেরকে
সালাম দেওয়া জায়েয নেই, তা আপনি প্রশ্নে উল্লেখ
করেছেন। দলিল:
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «لَا تبدؤوا الْيَهُودَ وَلَا
النَّصَارَى بِالسَّلَامِ وَإِذَا لَقِيتُمْ أَحَدَهُمْ فِي طريقٍ فَاضْطَرُّوهُ
إِلَى أضيَقِه»
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের আগে বাড়িয়ে সালাম
করো না।’ তাখরিজ: মুসলিম, হাদিস : ২১৬৭; আল
জামি‘উস্ সগীর ১৩১৬০, ইরওয়া
১২৭১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৭২৫, শু‘আবুল ঈমান ৮৯০৩,
তিরমিযী
১৬০২
প্রশ্ন:
ক। যদি কোন অমুসলিম মুসলমানকে সালাম দেয়,
তাহলে
তার জবাব কি হবে?
উত্তর:
ক। কোনো অমুসলিম আগে সালাম দিয়ে ফেললে উত্তরে ‘ওয়া আলাইকুম’ বলতে হবে। দলিল:
إذا سَلَّمَ علَيْكُم أهْلُ
الكِتابِ فَقُولوا وعلَيْكُم.
الراوي : أنس بن مالك | المحدث :
مسلم | المصدر : صحيح مسلم | الصفحة أو الرقم : 2163 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح]
| التخريج : أخرجه البخاري (6258)، ومسلم (2163)
অর্থ:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আহলে কিতাবগণ তোমাদের সালাম দিলে,
তার
উত্তরে তোমরা শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে। অর্থাৎ তোমাদের প্রতিও। তাখরিজ: বুখারি
৬২৫৮ মুসলিম ২১৬৭
প্রশ্ন:
খ। অমুসলিমদেরকে কিভাবে সম্মান/সামাজিক মর্যাদা দেওয়া যাবে?
উত্তর:
وكذلك أيضاً لا يجوز أن نبدأهم
بالتحية مثل "أهلاً وسهلاً" و "مرحباً" وما أشبه ذلك لما في
ذلك من تعظيمهم فهو كابتداء السلام عليهم.
অর্থাৎ কোনো অমুসলিমের সঙ্গে
সাক্ষাৎ হলে সৌজন্য প্রদর্শনস্বরূপ তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে বা অন্য কোনভাবে যেমন,
হাতের দ্বারা ইশারা করে কুশল বিনিময় করা এক ধরনের সৌন্দর্য। সে
হিসেবে তাকে 'আহলান সাহলান', 'মারহাবা'
‘আদাব’ ইত্যাদি বলা যেতে পারে। তবে
কোনভাবেই তাকে ‘নমস্কার’ বা ‘নমস্তে’ বলা যাবে না। রহিমিয়া : ৬/১২৬; কিফায়াতুল মুফতি : ৯/১০৬
প্রশ্ন:
গ। যদি কোন অমুসলিমকে সালাম না করলে ক্ষতির আশঙ্কা হয়, তাহলে
কি করার?
উত্তর:
গ। এ ক্ষেত্রে
السلام
عليكممَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى ( উচ্চারণ: আসসালামুয়ালাইকুম
মানিতে তাবিআল হুদা) অর্থাৎ সালাম তাদের জন্য যারা হেদায়েতের/ইসলামের উপর আছে।
কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ অমুসলিম শাসকদের নিকট চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত দিতে এ জাতীয় শব্দ
ব্যবহার করেছেন। দলিল:
ثُمَّ دَعَا بِكِتَابِ رَسُولِ
اللهِ صلى الله عليه وسلم الَّذِي أُرْسِلَ بِهِ مَعَ دِحْيَةَ الْكَلْبِيِّ إِلَى
عَظِيمِ بُصْرَى، فَدَفَعَهُ إِلَيَّ هِرَقْلُ فَقَرَأَهُ، فَإِذَا فِيهِ:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، مِنْ مُحَمَّدٍ عَبْدِ اللهِ وَرَسُولِهِ
إِلَى هِرَقْلَ عَظِيمِ الرُّومِ، سَلاَّمٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، أَمَّا
بَعْدُ، فَإِنِّي أَدْعُوكَ بِدِعَايَةِ الإِسْلاَمِ،
অর্থ:
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রোমের বাদশা হিরাকল (হিরাক্লিয়াস) আবু
সুফিয়ান ইবনে হারবের নিকট লোক পাঠান। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর চিঠি নিয়ে ডাকেন যা নিয়ে তিনি দিহয়া আল-কালবী (রাঃ)-কে বুসরার
শাসকের নিকট পাঠিয়েছিলেন। তিনি চিঠিখানি হিরাকলের নিকট অর্পণ করেন। তিনি তা পাঠ
করেন। তাতে ছিলঃ “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম। আল্লাহর বান্দা ও
রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে রোমের শাসক হিরাকলকে। যে ব্যক্তি হেদায়াতের অনুসরণ
করে তার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর,
আমি
আপনাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন নিরাপদ থাকুন। তাখরিজ:
আদাবুল মুফরাদ-১১০৯
সারকথা
হলো, কোন অমুসলিমকে সামাজিক মর্যাদা দিতে ধন্যবাদ, স্বাগতম, মারহাবা, Thank you sir ইত্যাদি বলতে কোন দোষ নেই। যদি তিনি দূরে থাকে, তাহলে
শুধু হাত দ্বারা করবেন, যাতে তিনি বুঝে সালাম দিয়েছেন।
আর
যদি কাছাকাছি থেকে সালাম দিতে বাধ্য হন, তাহলে السلام عليكم مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى ( উচ্চারণ: আসসালামুয়ালাইকুম মানিত তাবিআল হুদা) বললেন।
উল্লেখ্য
যে, مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى শব্দগুলো অপেক্ষাকৃত আস্তে বললেন,
যাতে
তিনি বুঝে আপনার ক্ষতি না করে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪২৬:
আসসালামুআলাইকুম,
ছেলেদের লাল ও হলুদ রঙ এর জামা পরিধান এর বিষয়ে শরীয়তের বিধান কি জানাবেন। তারিখ: ১৪/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
জবাব আজহারুল ইসলাম খান
রাজন্দ্রপুর, গাজিপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ছেলেদের
জন্য লাল ও হলুদ রঙ এর জামা পরিধান করা
জায়েজ নেই। দলিল:
হাদিস নং-০১
.
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ: رَأَى
رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ثَوْبَيْنِ
مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ: «إِنَّ هَذِهِ من ثِيَاب الْكفَّار فَلَا تلبسها»
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আছ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার পরনে হলুদ রঙের দু’টি কাপড় দেখে বললেন, নিশ্চয়
এগুলো কাফেরদের পোশাক, অতএব তা পরিধান করো না’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আমি বললাম, কাপড় দু’টি কি ধুয়ে ফেলব? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, বরং জ্বালিয়ে ফেল। তাখরিজ: মুসলিম,
হা/২০২৭; মিশকাত, হা/৪৩২৭
হাদিস নং-০২
.عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ أَنَّ نَبِيَّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا أَرْكَبُ الْأُرْجُوَانَ وَلَا أَلْبَسُ
الْمُعَصْفَرَ وَلَا أَلْبَسُ الْقَمِيْصَ الْمُكَفَّفَ بِالْحَرِيْرِ
ইমরান ইবনু হুছাইন (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, আমি অত্যধিক লাল বর্ণের গদির উপর
আরোহণ করি না। আমি হলুদ রংয়ের কাপড় পরিধান করি না এবং রেশমযুক্ত জামাও পরিধান করি না
তাখরিজ: আবু দাঊদ, হা/৪০৪৮; মিশকাত, হা/৪৩৫৪
প্রশ্ন: ক। কোন কোন হাদিসে লাল বর্ণের
কাপড় পরিধান করার কথা এসেছে, এর ব্যাখ্যা কি?
উত্তর: ক। লালবর্ণের পোশাকের ব্যাপারে বর্ণিত বিপরীতমুখী হাদীছের
মাঝে সমন্বয় হল- লাল রংয়ের কাপড় তখন জায়েয, যখন লাল রংয়ের সাথে
বিভিন্ন রং থাকবে। আর যদি শুধু এক কালারের লাল হয়ে থাকে তাহলে সে কাপড় পরা যাবে না
তবে বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ থাকলেও তাক্বওয়ার পোশাক হিসাবে লাল রঙ এড়িয়ে চলাই উচিত। সূত্র:
শায়খ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, ফাতাওউল ইসলাম
সুওয়াল ও জাওয়াব, প্রশ্ন নং-৮৩৪১
এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে
হাজার রহ. বলেন, والمراد بالحلة الحمراء : بُردان من اليمن منسوجان بخطوط حمر مع سود
, أو خضر ، ووصفت بالحمرة باعتبار ما فيها من الخطوط الحمر ) .
وقد ذهب إلى هذا عدد من أهل
العلم كالحافظ ابن حجر ( فتح الباري شرح صحيح البخاري / رقم 5400 ) وابن القيم
رحمه الله تعالى ( زاد المعاد / 1 - 137 )
অর্থাৎ লাল জামা (কাপড়) বলতে
কী বোঝানো হয়েছে: ইয়েমেনের দুটি পোশাক কালো বা সবুজ রঙের সাথে লাল ফিতে দিয়ে বোনা
এবং এতে লাল ফিতেগুলির বিবেচনায় এটিকে লাল হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। সূত্র: আল-হাফিজ ইবনে হাজার ফাতহ আল-বারি শারহ সহীহ
আল-বুখারি/নং 5400) এবং ইবনে আল-কাইয়িমের মতো বেশ কয়েকজন পণ্ডিত
এই মত পোষণ করেছেন, ঈশ্বর তাঁর প্রতি রহম করুন জাদ আল-মাআদ-১/১৩৭
প্রশ্ন: খ। ছোট বাচ্চাদেরকে যদি পরিধান
করানো হয়, তাহলে গুনাহ কার হবে?
উত্তর: খ। ছোট বাচ্চাদেরকে যদি লাল-হলুদ বা অনৈসলিামিক কাপড় পরিধান করানো হয়, বাচ্চাদের
তো গুনাহ হবে না, গুনাহ হবে অভিভাবকের (পিতা-মাতার)। সূত্র: সূরা তাহরিম-০৬
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪২৭:
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা তরক করলে কি গুনাহ হবে? দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম? তারিখ: ১৬/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক মাওলানা সাভার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, রাসূল (ﷺ) ও সাহাবিদের যুগে আহকামে শরিয়তের স্তর/শ্রেণী বিন্যাস ছিল না অর্থাৎ ফরজ,
ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা-গয়রে মুয়াক্কাদা,নফল, মুস্তাহাব, হারাম,
মাকরুহে তাহরিমি-তানজিহ। প্রথম হিজরির পর আইম্মায়ে মুজতাহিদ ও
মুজতাহিদ ফিল মাজহাব গণের আবিষ্কৃত।
উম্মাহর আমল সহজ প্রকল্পে নসের
(কুরআন-সুন্নাহর) ভিত্তিতে ফরজ,ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফলের স্তর ভাগ
করেছেন। যেরুপ চতুর্থ হিজরির মাঝামাঝি সময়ে জাল হাদিসের কবল থেকে মুসলিম উম্মাহকে
হিফাযত করার জন্য উসূলে হাদিসের কিতাব রচনা করেন। মূলত উসূলে ফিকহ এবং উসূলে হাদিস
প্রথম হিজরির পর আলেমদের আবিষ্কৃত দুটি
শাস্ত্র। বড় পরিতাপের বিষয়, কিছু ভাই উসূলে হাদিস (ছহিহ,
হাসান,জয়িফ, মাওজু,
মারফু, মাকতু, মাশহুর
ইত্যাদি পরিভাষা) মানেন, কিন্তু উসূলে ফিকহ মানেন না। তারা বলে আমরা ইমামদের কথা মানি না, কুরআন হাদিস
মানি। তাদেরকে জিজ্ঞেস করি, আপনি যে হাদিসটি সহিহ বা দুর্বল
বলছেন, এটা কে বলেছেন আল্লাহ না তার রাসূল। যদি বলে থাকে,
তাহলে আয়াত কিংবা হাদিস নাম্বার বলুন। যদি দেখাতে না পারেন, তাহলে প্রমাণিত হলো আপনারাও আলেমদের/উসূলে হাদিসের ইমামদের কথা মানেন।
যাইহোক মূল কথাই ফিরে যাই। আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ
করছি:। ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
প্রশ্ন: ক। সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কাকে বলে?
উত্তর: ক। فإن السنة المؤكدة هي ما فعله النبي صلى الله عليه وسلم
وداوم عليه
অর্থাৎ সুন্নতে
মুআক্কাদা বলা হয়, যে আমলকে রাসূল সাঃ ইবাদত হিসেবে
পাবন্দীর সাথে করেছেন। কখনো ওজর ছাড়া ছেড়ে দিয়েছেন বা নিজেতো ছাড়েননি কিন্তু
যে ছেড়ে দিয়েছে তাকে ভর্ৎসনা করেননি। এরকম আমলকে সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়।
সূত্র: আততাআরিফাতুল ফিক্বহিয়্যাহ-৩২৮, আলমুজিজ ফি উসুলিল
ফিক্বহ-৪৩৯-৪০
সুন্নতে মুআক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ
ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহী করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে
জবাবদিহী করতে হবে। তবে ওয়াজিব তরককারীর জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আর সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়েও যেতে পারে। তবে শাস্তিও
পেতে পারে।
وحكمها كالواجب—- إلا أن تارك الواجب يعاقب وتاركها لا يعاقب- (التعريفات للجرجانى-138
ফরজ নামাযের আগে পরের সুন্নতে মুআক্কাদার
অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। এ কারণেই ফুক্বাহায়ে কেরাম লিখেন যে, যদি কেউ সুন্নতকে হক মনে না
করে এটাকে ছেড়ে দেয়, তাহলে এ কর্ম তাকে কুফরী পর্যন্ত
নিয়ে যেতে পারে।
رجل ترك سنن الصلاة ان لم ير السنن حقا فقد كفر، لأنه
تركها استخفافا (رد المحتار-2/492، بدائع الصنائع- 1/644
তবে কেউ যদি সুন্নতকে সহীহতো মনে করে, কিন্তু অলসতা করে ছেড়ে দেয়।
তাহলে সে গোনাহগার হবে।
وان رآها حقا فالصحيح أنه يأثم، لأنه جاء الوعيد
بالترك، كذا فى محيط السرخسى، (الفتاوى الهندية- 1/112
প্রশ্ন: খ। সুন্নাতে গয়রে মুয়াক্কাদা বা জায়েদা
কাকে বলে?
উত্তর: খ। ويقول العلامة ابن نجيم الحنفي رحمه الله في "البحر الرائق" (1/ 18، ط.
دار الكتاب الإسلامي) -بعدما نقل عدة أقوال لعلماء الحنفية في تعريف السنة ثم
زيَّفها-: [والذي ظهر للعبد الضعيف أن السنة
ما واظب عليه النبي صلى الله عليه وآله وسلم، لكن إن كانت لا مع الترك فهي دليل
السنة المؤكَّدة، وإن كانت مع الترك أحيانًا فهي دليل غير المؤكِّدة] اهـ.
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যে আমল ওজর ব্যতিত মাঝে মাঝে ছেড়ে দিয়েছেন, তাকে
সুন্নাতে গয়রে মুয়াক্কাদা বলে। সূত্র: আলবাহরুক রায়েক-১/১৮
প্রশ্ন: গ। সুন্নাতে মুয়াক্কাদার
হুকুম কি, এর তরককারী কি গুনাহগার হবে?
উত্তর: গ। এ বিষয়ে ওলামাদের মধ্যে মতভেদ
রয়েছে। ফুকাহায়ে আহনাফের মতে, ইচ্ছা
করে বারবার ত্যাগ করলে গুনাহ হবে, অন্য ইমাম এবং বর্তমানে
আহলে হাদিসের মতে গুনাহ হবে না।
ফুকাহায়ে আহনাফ বলেন,
সুন্নতে মুআক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ
ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহী করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে
জবাবদিহী করতে হবে। তবে ওয়াজিব তরককারীর জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আর সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়েও যেতে পারে। তবে শাস্তিও
পেতে পারে।
وحكمها كالواجب—- إلا أن تارك الواجب يعاقب وتاركها لا يعاقب- (التعريفات للجرجانى-138
ফরজ নামাযের আগে পরের সুন্নতে মুআক্কাদার
অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। এ কারণেই ফুক্বাহায়ে কেরাম লিখেন যে, যদি কেউ সুন্নতকে হক মনে না
করে এটাকে ছেড়ে দেয়, তাহলে এ কর্ম তাকে কুফরী পর্যন্ত
নিয়ে যেতে পারে।
رجل ترك سنن الصلاة ان لم ير السنن حقا فقد كفر، لأنه
تركها استخفافا (رد المحتار-2/492، بدائع الصنائع- 1/644
তবে কেউ যদি সুন্নতকে সহীহতো মনে করে, কিন্তু অলসতা করে ছেড়ে দেয়।
তাহলে সে গোনাহগার হবে।
وان رآها حقا فالصحيح أنه يأثم، لأنه جاء الوعيد
بالترك، كذا فى محيط السرخسى، (الفتاوى الهندية- 1/112
ফুকাহায়ে আহনাফের দলিল:
আয়াত নং-০১
Surah Al-Hashr, Verse 7:
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ
فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক
এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। সূরা হাশর-০৭
আয়াত নং-০২
Surah Muhammad, Verse 33:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا
الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং
নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না। সূরা মুহাম্মাদ-৩৩
আয়াত নং-০৩
হাদিস নং-০১
مَن أطاعني فقد أطاع اللهَ ومَن عصاني فقد عصى اللهَ
ومَن أطاع الأميرَ فقد أطاعني ومَن عصى الأميرَ فقد عصاني
الراوي : أبو هريرة |
المحدث : ابن حبان | المصدر :
صحيح ابن حبان | الصفحة أو الرقم : 4556 | خلاصة حكم المحدث : أخرجه في صحيحه من
অর্থ- হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো সে যেন আল্লাহরই আনুগত্য
করলো আর যে আমার নাফরমানি করলো সত্যিকারে সে যেন আল্লাহরই নাফরমানি করলো৷ তাখরিজ:
সহিহ ইবনে হিব্বান-৪৫৫৬
হাদিস নং-০২
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُولَ الله ﷺ قَالَ كُلُّ أُمَّتِي يَدخُلُونَ الجَنَّةَ إلاَّ مَنْ
أبَى قيلَ : وَمَنْ يَأبَى يَا رَسُولَ اللهِ
؟ قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أبَى رواه
البخاري
অর্থ: রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম থেকে বর্ণিত, আমার সমস্ত উম্মত জান্নাতে যাবে কিন্তু যে উম্মত অস্বীকার করলো সে ব্যতিত।
হযরত সাহাবা কেরাম (রা:) প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল
কারা অস্বীকার করল? এরপরে রাসুল বললেন -যে আমার সুন্নাতের
অনুসরণ করল সে জান্নাতে যাবে। এবং যে সুন্নাতে অনুসরণ করলো না সে অস্বীকার করলো।
তাখরিজ: বুখারি-৭২৮০
হাদিস নং-০৩
، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ
مِنِّي
অর্থ: সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ
ভাব পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। তাখরিজ: বুখারি-৫০৬৩
সারকথা হলো, হজরতে সাহাবায়ে কেরাম রা. রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণের ক্ষেত্রে ফরজ, ওয়াজিব,
সুন্নত নফল ভাগ করতেন না। তখন তখন এগুলো শ্রেণীবিন্যাসও ছিল না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ল করতে বলেছে কিনা সেটাই ছিল মূল বিষয়।
শেষ কথা: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে, সে অবশ্যই আমাকে
ভালোবাসে; আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই
থাকবে। তাখরিজ: তিরমিজি-২৭২৬
আমরা প্রিয় রাসূল (ﷺ) কে মনের ভালবাসার সাথে আমলের ভালবাসাও প্রকাশ করবো। রুওয়াইম ইবনে
আহমাদ আল বাগদাদী রাহ. মহব্বতকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন,
المحبة الموافقة في جميع الأحوال (كلمة الإخلاص للحافظ ابن رجب ص৩২)
অর্থাৎ, ভালোবাসা হল প্রেমাষ্পদের সাথে সর্বাবস্থায়
একাত্ম থাকা। সূত্র: কালেমাতুল ইখলাস ৩২ পৃ.হাফেজ ইবনে রজব রহ.
হাকীম মাহমূদ ওয়াররাক রাহ. বলেছেন,
لو كان حبك صادقا لأطعته
إن المحب لمن يحب مطيع
অর্থাৎ, যদি তোমার প্রেম খাঁটি হতো তবে তো তুমি তার
অনুগত হতে। কারণ প্রেমিক তো প্রেমাষ্পদের অনুগত থাকে। সূত্র: শরহুয যুরকানী আলাল
মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যাহ, পৃ. ১১৮
আমার ব্যক্তিগত মতামত:
মানুষ আল্লাহ ও তার রাসূল কে আনুগত্য করে মূলত
দুটি কারণে, এক. ভালোবাসার কারণে দুই. শাস্তি বা আজাবের ভয়ে।
এ কারণেই পবিত্র কোরআনে প্রায় ১০০০ আয়াত
রয়েছে জাহান্নামের বর্ণনা, যাতে মানুষ ভয়েও গুনাহ থেকে ফিরে থাকে।
গত কয়েক বছর আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক
একটি জরিপ হয়েছিল তাতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ১৫% মানুষ নামাজী।
প্রিয় পাঠক! আজকে মুসলিম উম্মাহ ফরজের বিষয়ে
গাফিলতি, সেখানে সুন্নত আরো করুন অবস্থা।
তাই সার্বিক বিবেচনায় উম্মার এই আমলের ঘাটতি
জামানায়
ফুকাহায়ে আহনাফের মতই অধিক যুক্তিযুক্ত। কেননা শাস্তির ভয়ে হলেও
কিছু মানুষ সুন্নতকে অনুসরণ করবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪২৮:
আসসালামু আলাইকুম।
আমার জানার বিষয় হল, দুই তলা অথবা তিন তলা মসজিদে
ইমামের পিছনে মুয়াজ্জিন এর উপর ছাদে যে হাফ ফিট অথবা এক ফিট ছিদ্র বা ফোটা রাখতে
হয় এটার দালিলিক ভিত্তি কতটুকু জানালে উপকৃত হব।
তারিখ: ১৬/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শহিদুল ইসলাম যশোর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর যুগে দোতলা,
তিন তালা মসজিদ ছিল না। তাই উপরে ছাদে হাফ ফিট
ছিদ্র করার প্রশ্নই আসে না।
দ্বিতীয় কথা হলো, ইমাম কখন নামাজ শুরু করছেন,
কখন শেষ করছেন, কখন কোন তাকবীর দিচ্ছেন,
এটা শোনা মুসল্লিদের জরুরী, না হলে ইমামের
অনুসরণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
ইমামে অনুসরণ ছাড়া নামাজ হয় না আর ইমামকে
নির্ধারণ করা হয় অনুসরণের জন্য। দলিল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ” إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَلاَ تَخْتَلِفُوا
عَلَيْهِ،
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়। তাখরিজ: সহীহ বুখারী,
হাদীস নং-৭২২
يُراد بالتبليغ: أن يرفع أحد المُصلّين صوته بترديد أقوالَ الإمام؛ ليُسمِع المُصلّين
صوت الإمام وتكبيره إن كان الصوت ضعيفاً، أو كَثُر عدد المصلّين، أو تباعدت
الصفوف، وقد ثبت في السنة النبويّة أنّ أبا بكر الصدّيق -رضي الله عنه- بلّغ خلف النبي -عليه الصلاة والسلام-،[١٤] حين مرضه؛ بسبب ضعف صوته، ولتحقُّق الحاجة بإسماع
المُصلّين صوت الإمام، وبناءً على ذلك فلا يُشرَع التبليغ خلف الإمام إن لم تتحقّق
حاجةٌ إلى ذلك، كما نقل شيخ الإسلام ابن تيمية إجماع العلماء على ذلك، وقال بكراهة
التبليغ دون حاجةٍ
অর্থ: একজন ইবাদতকারীর জন্য ইমামের বাণী
পুনরাবৃত্তি করে তার আওয়াজ তুলে ধরা; যাতে নামাযীরা ইমামের কণ্ঠস্বর শুনতে পারে
এবং কণ্ঠস্বর দুর্বল হলে, বা মুসল্লির সংখ্যা বেশি হলে,
বা সারি দূরে দূরে থাকলে । তার কণ্ঠস্বরের দুর্বলতার কারণে এবং
ইমামের কণ্ঠ শোনার জন্য, ইবাদতের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার
জন্য, এবং সেই অনুযায়ী, ইমামের পিছনে
বার্তা পৌঁছে দেওয়া। সূত্র: আলফিকহুল মায়সির-২ খণ্ড, ৪৬-৪৭পৃ.
তাই ইমামের আওয়াজ মুসল্লিদের শোনার জন্য লাউড
স্পিকার ব্যবহার, ইমাম বরাবর দোতলা, তিন তলায় ছিদ্র রাখা শুধু জায়েজ
নয়, বরং জরুরি, উত্তম।
উল্লেখ্য যে, ইমাম/ মুয়াজ্জিন বরাবর
ছাদে ছিদ্র বা ফোটা এজন্য রাখা হয়, যখন
কারেন্ট চলে যাবে অথবা লাউডস্পীকারের যান্ত্রিক সমস্যা হবে, তখন
যেন দোতলা বা তিন তালার মুসল্লীগণ ইমামের তাকবীর শুনতে পারে, এ জন্য মূলত এই ছিদ্রটা রাখা হয়।
সারকথা হলো, বিদ্যুত বিভ্রাট অথবা যান্ত্রিক সমস্যার
কারণে ইমামের আওয়াজ উপরে শুনতে অসুবিধা, বিধায় ইমাম বরাবর
ছাদে ছিদ্রটা রাখা হয় যা সুন্দরভাবে নামাজটা সমাপনের জন্য জরুরী একটি বিষয়।
و الله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে,
মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪২৯:
আস্ সালামু আলাইকুম। আপনার মাধ্যমে আমার জানার
বিষয় হলো, নফল নামাজ আদায় করতে ৩য় ৪থ রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা
মিলাইতে ভুলে গেলে কী করতে হবে? তারিখ: ১৬/০১/২৩
ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ শফিকুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সুন্নত ও নফল নামাজে তৃতীয়
চতুর্থ লাগাতে সূরা ফাতেহা সাথে অন্য সূরা মিলানোর বিষয়ে ইমামগণের মধ্যে মতভেদ
রয়েছে।
ফোকাহায়ে আহানাফের মতে সুন্নত ও নফল নামাজের
তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহা সাথে অন্য সূরা মিলাতে মিলানো ওয়াজিব, অন্যান্য ইমামের মতে সুন্নাত।
দ্বিতীয় কথা হলো, নিয়ম হচ্ছে, কেউ যদি ভুলে নামাজের কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দেয় তাহলে তার ওপর সিজদায়ে
সাহু আবশ্যক। সুতরাং
সুন্নত নামাজে সূরা ফাতেহার পর অন্য সূরা মিলাতে ভুলে গেলে সিজদায়ে সাহুর মাধ্যমে
নামাজ পূর্ণ হয়ে যাবে।
তবে কোনো কারণ ছাড়াই সিজদায়ে সাহু ছেড়ে দিলে
ওয়াক্তের মধ্যে নামাজটি পুনরায় পড়া আবশ্যক, অন্যথায় গোনাহগার হবে। সূত্র: সুনানে আবু
দাউদ, হাদীস নং : ১০৩৮; মারাকিউল ফালাহ
: ২৪৮; মারাকিউল ফালাহ (হাশীয়াতুত তাহতাবীসহ) : ২৪৭—২৪৮; আদ্দুররুল মুখতার : ২/৭৮; আল—মুহীতুল বুরহানী : ২/৩০৯; আলবাহরুর
রায়েক : ১/৫১০, ৫১৬
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্ন মতে, তৃতীয়
চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে ভুলে
গেলে। নামাজ শেষ করার আগে মনে পড়লে সাহু সিজদা করে নেবেন আর না করে থাকলে নামাজটি
পুনরায় পড়তে হবে।
و الله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে,
মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৩০:
মোটিভেশন ক্লাস:
আসসালামুআলাইকুম। কেমন আছেন?
কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কের কুফল ও যৌতুকের বিধান সম্পর্কে লেসন প্ল্যান থাকলে দেয়ার অনুরোধ করছি।
জাজাকাল্লাহ খাইর। তারিখ: ১৬/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মাহমুদুল হাসান সিলেট থেকে থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্ন আলোকে নিম্নে
উল্লেখ করা হলো,
Bmjv‡gi `„wó‡Z weevn ewnf©~Z A‰bwZK m¤úK© I e¨w³ Rxe‡b
Gi cÖfve
D‡Ïk¨t AvR‡Ki
K¬v‡ki g~j¨ D‡Ïk¨ n‡jv weevn ewnf©~Z A‰bwZK m¤úK© I e¨w³ Rxe‡b Zvi cÖfve welq
mvaviY aviYv cÖ`vb Kiv|
ce© web¨vmt Av‡jvPbvi myweav‡_© Avgiv G welqwU‡K `yBwU c‡e© Av‡jvPbv Ki‡ev|
1g ce©t Bmjv‡gi `„wó‡Z weev‡ni
¸iZ¡, bvix I cyil weevn e܇b Ave× nIqvi KviY m¤ú‡K© KziAv‡b bex I ivmy‡ji
wb‡`©k mg~n weevn e܇b A‰ea m¤úK© ev ciKxqv Ges e¨w³ Rxe‡b Zvi cÖfve|
2q ce©t wØZxq c‡e© Avgiv
B›Uvi‡b‡Ui eûj e¨envi, Bnvi myweav-Amyweav, Bnvi cÖavb KviY †g‡qi iƒcPP©vi
¸iZ¡, d¨vkb †cvlv‡Ki Kzdj
1| †kÖYx e¨e¯’vcbvt
2| f~wgKvt c„w_ex‡Z cyil I bvix GKB Drm †_‡K cÖevwnZ gvbeZvi `y‡U
†¯ªvZaviv| bvix I cyil GKB Rxeb mËv †_‡K m„ó, GKB esk †_‡K wbtm„Z| `ywbqvi GB
wecyj msL¨K bvix I cyil †mB GKB mËv †_‡K D™¢~Z| bvix †Kvb ¯^Zš¿ Rxeb mËv bq, bv cyil| bvixI cyi‡li gZB gvbyl|
†gŠwjKZvi w`K w`‡q G `y‡qi g‡a¨ †Kvb cv_©K¨ †bB| Df‡qi g‡a¨B gvbexq ˆewk‡ói
¸Yvejx we`¨gvb|
`ywbqvi cÖ_g gvbex nvIqv‡K 1g gv
Av`g †_‡K m„wó Kivi gv‡bB n‡”Q GB †h, Av`g m„wói †gŠwjK Dcv`vb hv wKQz ZvB n‡”Q
nvIqviI g~jZ bvix I cyil RvwZi †Kb G `y‡q wg‡j gvbeZvi GK Awfbœ AefvR¨ mËv|
myiv Avj ûRyivZ-Gi Avjøvn ZvAvjv
Bikv` K‡ib, †n gvbyl Avwg †Zvgv‡`i‡K GKRb cyil I GKRb bvix †_‡K m„wó K‡iwQ| Avi
†Zvgv‡`i wewfbœ †MvÎ I esk kvLvq wef³ K‡iwQ; †hb †Zvgiv ci¯ú‡ii cwiPq Ki‡Z cvi|
Bmjv‡gi `„wó‡Z weev‡ni ¸iZ¡t
Bmjv‡g bvix I cyi‡li g‡a¨ m¤úK©
¯’vc‡bi Rb¨ we‡qB n‡”Q GKgvÎ ˆea Dcvq, GKgvÎ wewae× e¨e¯’v| we‡q Qvov Ab¨ †Kvb
fv‡e Ab¨ c‡_ bvix cyi‡li wgjb m¤ú~Y© A‰ea I m¤úK© ¯’vcb m¤ú~Y© wbwl×, weevn
n‡”Q bvix I cyi‡li gv‡S mvgvwRK cwi‡e‡k I mg_©‡b kixqZ †gvZv‡eK AbywôZ Ggb GK
m¤úK© ¯’vcb hvi d‡j `yR‡bi GK‡Î emevm I ci¯ú‡ii ‡hŠb m¤úK© ¯’vcb m¤ú~Y©fv‡e ˆea
n‡q hvq|
6| bvix I cyil weevn e܇b Ave× nIqvi KviY m¤ú‡K© KyiAv‡bi Av‡jv‡K
bex Kwig (m) Gi wb‡`©kmg~n|t KziAvb gvwR‡` GB weevn I ¯¿x MÖn‡Yi e¨e¯’v‡K bex I ivmyjM‡bi cÖwZ
Avjøvn ZvAvjvi GK we‡kl `vb e‡j D‡jøL Kiv n‡q‡Q| myiv evKvivq ejv n‡q‡Q. ‡n
bex! †Zvgvi c~‡e©I Avwg A‡bK bex ivmyj cvwV‡qwQ Ges Zv‡`i R‡b¨ ¯¿x I mšÍv‡bi
e¨e¯’v K‡i w`‡qwQ|
myiv Avb b~i G eq®‹ †Q‡j †g‡q‡K
I `vm `vmx‡K we‡qi e¨e¯’v Kivi Rb¨ Avjøvn ZvAvjv wb‡`©k w`‡q‡Qb| Ò‡Zvgv‡`i Ggb
me †Q‡j †g‡q‡`i hv‡`i ¯^vgx ev ¯¿x †bB, weevn w`‡q `vI †hvM¨ `vm`vmx‡`i|
cÖ_‡gv³ Avqv‡Z bex I ivmyjM‡Yi
Rb¨ ¯¿x MÖnY I mšÍvb jv‡ei my‡hvM K‡i †`qvi K_v
†NvlYv Kiv n‡q‡Q| Zvi gv‡b weevn Kiv mšÍvb mšÍwZ
jvf Kiv bex ivmyjM‡Yj c‡ÿ †Kvb AvmvgvwRK KvR bq|
1
p£¢ja
p£¢ja
7| weevn ewnf©~Z A‰bwZK m¤úK© ev ciKxqv Ges e¨w³ Rxe‡b Gi cÖfvet †g‡q cyiæ‡li Aeva †`Lv mvÿv‡Zi
Rb¨ GKwU cwimi i‡q‡Q Ges †m cwim‡ii evwn‡i †g‡q cyiæl Aev‡a †`Lv mvÿvZ Kiv, K_v
evZ©v ejv I †Mvcb Awfmv‡i wgjwZ nIqv m¤ú~Y© nvivg I wbwl×|
bex Kwig (m) GKwU nvw`‡m e‡j‡Qb,
†h me gwnjvi ¯^vgx ev wbKUvZ¥xq cyiæl Abycw¯’Z Zv‡`i Kv‡Q †hI bv KviY †Zvgv‡`i
†`‡ni cÖ‡Z¨KwU wkiv I agbx‡Z kqZv‡bi cÖfve i‡³i gZ cÖevwnZ nq|
¯^vgxi Abycw¯’wZ‡Z †Kvb ¯¿xi
Kv‡Q cyiæ‡li Dcw¯’wZ Ges Zvi N‡i cÖ‡ek Kivi Bmjvgx kixq‡Z eoB ¸bv‡ni KvR, wbwl×
Ges Awfmß| nhiZ Avey eKi wmÏxK (iv) GK`v evB‡i †_‡K G‡m Zvi N‡i Zvi ¯¿xi Kv‡Q
eby nvwkg es‡ki wKQz †jv‡K Dcw¯’Z †`L‡Z cvb| wZwb wM‡q bex Kwig (m) Gi Kv‡Q
welqwU wee„Z K‡ib Ges e‡jb †h, NUbv GB wKš‘ fvj Qvov Lvivc wKQz †`L‡Z cvBwb|
ZLb bex Kwig (m) ej‡jb Ges AZtci wZwb wg¤^‡i `vwo‡q fvlY w`‡jb Ges †NvlYv Ki‡jb
AvR‡Ki w`‡bi ci †Kvb cyiælB Aci †Kvb ¯¿xi N‡i ¯^vgxi Abycw¯’wZ‡Z cÖ‡ek Ki‡e bv|
8| B›Uvi‡bU e¨env‡ii myweav I Amyweavt Z_¨ cÖhyw³i GB wek¦vq‡b
cÖhyw³MZ Dbœq‡bi mv‡_ gvby‡li wPšÍv kw³i †hgb
cig DbœwZ mvwaZ n‡q‡Q †Zgwb gvby‡li ˆbwZKZv ewR©Z Aeÿq I NU‡Q| eZ©gvb mf¨Zvq
Avgv‡`i †`‡ki ZiæY Ziæbxiv B›Uvi‡b‡Ui Ace¨env‡ii d‡j Acms¯‹…wZi w`‡K AvK…ó
n‡”Q| Bmjv‡gi `„wó‡Z cwðgv ms¯‹…wZ K…wó KvjPvi, †hŠb Kvgfve m¤ú~Y© A‰ea|
Avgv‡`i †`‡ki hyeK hyeZxiv †b‡Ui Akøxj Qwe, Acms¯‹…wZi gva¨‡g A‰ea m¤ú‡K© Rwo‡q
co‡Q d‡j w`bw`b cvwievwiK Ges mvgvwRK Aw¯’iZv m„wó n‡”Q| cvwievwiK Ges mvgvwRK
Aw¯’iZvi Kvi‡Y cvwievwiK Ges mvgvwRK g~j¨‡eva K‡g hv‡”Q| Aí eq‡mi evj evwjKvMYI
†gvevBj bv‡gi GB hv`yKix B‡jKUªwb· hš¿wUi cÖwZ µ‡gB AvK…ó n‡”Q| Zviv wewfbœ
mdUIqvi e¨envi wkLvi d‡j †jLv covi cÖwZ Ag‡bv‡hvMx n‡”Q, AvK…ó n‡”Q †dBmeyK,
B‡gv, A‡civ wgwb, BDwb eªvDRvi Ges BDwUDe Gi gZ gvby‡li gb avav‡bv Kvg evmbvi
†Lvjv‡gjv gva¨g¸‡jvi cÖwZ| d‡j mvgvwRK I cvwievwiK Aw¯’iZv µ‡gB e„w× cv‡”Q|
mšÍvb-mšÍwZ wcZvgvZvi Aeva¨ n‡”Q| cvwievwiK eÜb wQbœ K‡i A‰bwZK Kg©Kv‡Û Rwo‡q
co‡Q| Bmjv‡gi `„wó‡Z ‰bwZK m¤úK© Movi †Kvb weKí weavb m¤ú~Y© wbwl×| evsjv‡`k
†mbvevwnbx Avgv‡`i Me©, Avgv‡`i AnsKvi| `y-GKRb weevwnZ †mbv m`m¨ ciKxqv †cÖ‡g
c‡o A‰bwZK m¤ú‡K© Rwo‡q co‡Q| mv¤úªwZK †mbvm`‡m¨i Rwi‡c †`Lv hv‡”Q mg‡qi
cwiµgvq Gi msL¨v e„w× cv‡&PQ| Gi cÖavb KiY mg~n h_vµ‡g-
1| B‡jKUªwb· wWfvB‡mi gva¨‡g
Acms¯‹…wZi Aeva cÖPvi|
2| Avgv‡`i †`‡ki ZiæYx, hyewZ
gwnjv‡`i Aeva wePiY bv Kiv|
3| c`©v, kvjxbZvi g‡a¨ bv †_‡K
†Lvjv‡gjv wePiY Kiv|
4| †Q‡j‡g‡q‡`i cÖxwZ wcZvgvZvi
m‡PZbZv †eva m„wó bv Kiv|
5| ‰eevwnK Rxe‡b mšÍvb MÖn‡Y
AbvMÖnZv ev eܨvZ¡|
6|mvgvwRK ixwZ bxwZi cÖwZ
Aeg~j¨vqb Kiv|
7| weevn ewntf©~Z A‰ea m¤ú‡K©i Kzdj
m¤ú‡K© †cÖlYv g~jK Av‡jvPbv/ †mwgbvi bv Kiv|
8| A‰bwZK/A‰ea m¤úK© Movi †ÿ‡Î
K‡Vvi kvw¯Íi weavb _vK‡jI Zvi ev¯Íe cÖ‡qvM bv Kiv|
2
p£¢ja
p£¢ja
11) †g‡q‡`i iƒcPP©vi ¸iæZ¡t
e¯‘Z †g‡q‡`i iƒcPP©v Bmjv‡g
wbwl× bq| wKš‘ Bmjv‡gi `„wó‡Z ‡h iƒcPP©v †jvK‡`i †`Lvq, Zv‡`i `„wó AvKl©Y Kivq
I Zv‡`i g‡b †hŠb D‡ËPbv RvwM‡q †Zv‡j Zv‡`i Db¥v` K‡i †Zvjvi D‡Ïk¨ nIqv G‡Kev‡iB
DwPZ bq| Avi †KD hw` Giƒc fv‡e wb‡Ri †`n m¤ú‡K© weevn e¨wZZ ci cyiæ‡li Kv‡Q m‡c
†`q Zv n‡”Q †Rbv| Z‡e iƒcPP©v Kivi e¨vc‡i Zxeª myMwÜ e¨envi KivI Bmjv‡g Rv‡qR
i‡q‡Q Z‡e Bnv ïay ¯^vgxi Rb¨|
d¨vkb †cvkv‡Ki Kzdjt
eZ©gvb mvgvwRK †cÖÿvcU weevn
ewntf©~Z m¤úK© M‡o DVvi GKwU KviY d¨vk‡b †cvlvK cwiavb Kiv| AvaywbK †g‡qiv UB
†cvkvK cwiavb K‡i _v‡K hv Bmjv‡g Rv‡qh bq| Bmjv‡gi `„wó‡Z Ggb †Kvb ‡cvlvK
cwiavb Kiv DwPZ bq hv †`‡ni A‡ÿi AvKvi AvK…wZ Aeqe cyiæ‡li jvjmv-cswKj `„wó
AvKl©Y K‡i|
‡mbv m`m¨ wn‡m‡e KiYxqt
1. ‰ah© aviY Kivt
2. KZ©e¨wbô nIqvt
3. Dchy³ mg‡q weevn Kivt
4. mg‡qi mبenvi Kivt
5. B›Uvi‡bU I mvgvwRK †hvMv‡hvM
gva¨‡gi h_vh_ e¨envi Kivt
6. cvi®úwiK `vwqZ¡‡evat
7. cvwievwiK ‡hvMv‡hvM I mym¤úK
eRvq ivLvt
8. bvix RvwZi cÖwZ kª×vkxj nIqvt
9. `„wó msiÿY I c`©vi cÖwZ
MyiæZ¡v‡ivc Kivt
10. mr I mZ¨wbô nIqvt
11. agx©q Abykvmb †g‡b Pjvt
12. ZvKIqv ev AvjøvnfxwZ Aej¤^b
Kivt
13. Avjøvni Kv‡Q mvnvh¨ PvIqvt
Dcmsnvit j¾v bvixi f~lY| ivmy‡j Kwig (mt) e‡j‡Qb, †g‡q‡`i cÖK…Z
Kg©‡ÿÎ n‡”Q Zv‡`i Ni| Avi cyiæ‡li Kg©‡ÿÎ n‡”Q evB‡i| cyiæ‡li `„wó‡Z †Kvb weevn
ewnf©~Z ci¯¿x AwZkq my›`ix I jvm¨gqx n‡q †`Lv w`j| cyiæl Zvi `„wó c‡_ †X‡jw`j
cÖvY gvZv‡bv gb fzjv‡bv †cÖg I fvjevmv ¯¿x †jvKwU Zv‡Z AvZ¥nviv n‡q †Mj| GLb
fveyb Gi cwiYvg wK? Gi d‡j cyiæl wK Zvi N‡ii ¯¿xi cÖwZ weivM fvRb n‡e bv? G‡Z
K‡i cwievwiK Rxe‡b ïay †h cswKjZvi welev®ú R‡g DV‡e Zv bq Zv‡Z Avm‡Z cv‡i GK
cÖjqsKi fv½b I wech©q| myZivs weevn ewntf©~Z A‰bwZK m¤ú‡K©i cÖfve cwievwiK Rxeb
Z_v mvgvwRK Rxeb‡K `~we©ln Kivi c~‡e© Avgv‡`i mKj Ávbx, ¸Yx eyw×Rxex mKj‡K
hv`yKix G e¨wa †_‡K gy³ Kivi Rb¨ GwM‡q Avmv DwPZ|
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মাওলানা সাইফুল
ইসলাম কুমিল্লা
জিজ্ঞাসা-১২৪৩১:
আসসালামু আলাইকুম।
শায়খ, আমার জানার বিষয় হলো- "৪০ দিন একাধারে
তাকবীরে উলার সাথে নামায পড়লে জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়" এর দলীল দিলে ভালো হয়। তারিখ: ১৭/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সাইফুল নোয়াখালী থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়, সরাসরি
এ রকম হাদিস নেই। জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হবে এ মর্মে হাদিস রয়েছে। যেমন,
حَدَّثَنَا عُقْبَةُ بْنُ
مُكْرَمٍ، وَنَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَهْضَمِيُّ، قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو
قُتَيْبَةَ، سَلْمُ بْنُ قُتَيْبَةَ عَنْ طُعْمَةَ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ حَبِيبِ
بْنِ أَبِي ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم " مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ
التَّكْبِيرَةَ الأُولَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ
وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ
"
অর্থ: উকবা ইবনে মুকরাম ও নাসর ইবনে আলী
(রাহঃ) ...... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল
(ﷺ) ইরশাদ করেন, কেউ
যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার সাথে জামাআতে নামায আদায় করে তবে তাকে
দুটি মুক্তি সনদ লিখে দেয়া হয় একটি হল জাহান্নাম থেকে মুক্তির, অপরটি
হল মুনাফিকী থেকে মুক্তির। তাখরিজ: জামে তিরমিজি-২৪১
নোট: হাদিসটির সনদ সহিহ।
উপরোক্ত হাদিসটিকে হয় তো কেউ
ব্যাখ্যা স্বরূপ বা বাড়িয়ে বলেছেন "৪০ দিন একাধারে তাকবীরে
উলার সাথে নামায পড়লে জাহান্নাম হারাম হয়ে। যাইহোক মূল বিষয়টি
হাদিস শরিফে রয়েছে। তবে হুবহু হাদিসের অর্থ/মর্ম বলা ভাল।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৩৩:
আস্সালামু আলাইকুম, ধর্মের আলোকে শিষ্ঠাচার
কী সামরিক জীবনে শিষ্ঠাচারের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে গোছালে কোন পাঠ পরিকল্পনা কারো নিকট
আছে? তারিখ: ১৮/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আনওয়ারুল আম্বিয়া যশোর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্ন
সংক্রান্ত মোটিভেশন ক্লাসটি দুটি স্তরে
ভাগ করছি।
ইসলামের
আলোকে আদব বা শিষ্টাচার কি/কাকে বলে এবং সামরিক জীবনে এ প্রভাব/প্রয়োজনীয়তা।
ক। প্রথম স্তর: ইসলামের আলোকে আদব বা শিষ্টাচার কি/কাকে বলে?
ভূমিকা: মুসলিম জীবন বিশেষ করে সামরিক জীবনে শিষ্টাচার (আদব-কায়দার) বিষয়টি খুবই
গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র হাদিসে এসেছে -
عَن عَبْدِ اللهِ بْنِ
عَبَّاسٍ أَنَّ نَبِىَّ اللهِ ﷺ قَالَ إِنَّ الْهَدْىَ الصَّالِحَ وَالسَّمْتَ
الصَّالِحَ وَالاِقْتِصَادَ جُزْءٌ مِنْ خَمْسَةٍ وَعِشْرِينَ جُزْءًا مِنَ
النُّبُوَّةِ
অর্থ:
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেন, নিশ্চয় উত্তম আদর্শ, সুন্দর বেশভূষা এবং মধ্যম
পন্থা নবুঅতের পঁচিশ ভাগের একটি ভাগ। তাখরিজ: আবু দাঊদ ৪৭৭৮, তিরমিজি-২০১০
আদব
বা শিষ্টাচারের সংজ্ঞা:
আদব
শব্দটি আরবি "أدب "শব্দ থেকে বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত ও প্রচলিত শব্দ; যার অর্থ হলো: শিষ্টাচার, বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা, সভ্যতা, কৃষ্টি, সুশিক্ষা, নৈতিকতা, মানবিকতা, শোভনতা, শিষ্টাচার। সূত্র: ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, আল মুনীর আরবী-বাংলা অভিধান, দারুল হিকমা বাংলাদেশ, প্রকাশকাল: জুলাই ২০১০ খ্রি., পৃ. ১৫; বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, পরিমার্জিত সংষ্করণ:
ডিসেম্বর ২০০০, পৃ. ১০৩
প্রমাণ্য
সংজ্ঞা:
(০১) ইবন হাজার ‘আসকালানী রহ. বলেন:
« الأدب: استعمال ما يحمد قولاً
وفعلاً »
“কথায় ও কাজে প্রশংসনীয় ব্যবহারকে আদব বলে।” সূত্র: মাউসু‘য়াতুল বাহুছ ওয়াল মাকালাতুল ‘ইলমিয়্যা’
( موسوعة
البحوث و المقالات العلمية ), পৃ. ১
(০২) আবার কেউ বলেন:
« الأخذ بمكارم الأخلاق »
“উত্তম চরিত্র লালন করাকে আদব বলে।” সূত্র: মাউসু‘য়াতুল বাহুছ ওয়াল মাকালাতুল ‘ইলমিয়্যা’
( موسوعة
البحوث و المقالات العلمية ), পৃ. ১
আবার
কেউ কেউ বলেন:
« هو تعظيم من فوقك والرفق بمن دونك »
“আদব হলো ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিকে সম্মান করা এবং
অধস্তনকে স্নেহ করা।” সূত্র:
প্রাগুক্ত।
আর
আমাদের দেশীয় ভাষায় বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা, সভ্যতা, কৃষ্টি, সুশিক্ষা, নৈতিকতা, মানবিকতা, শোভনতা ইত্যাদি গুণাবলী যে ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাকে ‘মুয়াদ্দাব’ (শালীন, ভদ্র ও সুশিক্ষিত) বলে। আর এসব গুণাবলী যার মধ্যে বিদ্যমান নেই, তাকে ‘বেয়াদব’ (অশালীন, অভদ্র, অসভ্য) বলে।
ইসলামের
দৃষ্টিতে আদব বা শিষ্টাচার:
ইসলাম
আপাদমস্তক পুরাটাই আদব।
ইসলাম স্রষ্টা ও সৃষ্টির সাথে শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন।
ক.
আল্লাহ তাআলার সাথে আদব: যেমন হাদিস শরিফে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ
مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ -صلى الله عليه
وسلم- اسْتَحْيُوا مِنَ اللَّهِ حَقَّ الْحَيَاءِ. قَالَ قُلْنَا يَا رَسُولَ
اللَّهِ إِنَّا لَنَسْتَحْيِى وَالْحَمْدُ لِلَّهِ. قَالَ : لَيْسَ ذَاكَ
وَلَكِنَّ الاِسْتِحْيَاءَ مِنَ اللَّهِ حَقَّ الْحَيَاءِ أَنْ تَحْفَظَ الرَّأْسَ
وَمَا وَعَى وَتَحْفَظَ الْبَطْنَ وَمَا حَوَى وَتَتَذَكَّرَ الْمَوْتَ وَالْبِلَى
وَمَنْ أَرَادَ الآخِرَةَ تَرَكَ زِينَةَ الدُّنْيَا فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدِ
اسْتَحْيَا مِنَ اللَّهِ حَقَّ الْحَيَاءِ-
হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহকে লজ্জা কর সত্যিকারের লজ্জা। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা অবশ্যই আল্লাহকে লজ্জা করি- আলহামদুলিল্লাহ। তিনি
বললেন, কথা সেটা নয়। বরং আল্লাহকে যথার্থভাবে লজ্জা
করার অর্থ এই যে, (১) তুমি তোমার মাথা ও যেগুলিকে সে জমা করে, তার হেফাযত কর। (২) তুমি তোমার পেট ও যেগুলিকে সে জমা করে, তার হেফাযত কর। (৩) আর তোমার বারবার স্মরণ করা উচিৎ মৃত্যুকে ও তার পরে
পচে-গলে যাওয়াকে। (৪) আর যে ব্যক্তি আখেরাত কামনা করে, সে যেন পার্থিব বিলাসিতা পরিহার করে। যে ব্যক্তি উপরোক্ত কাজগুলি করে, সে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে লজ্জা করে’। তাখরিজ: আহমাদ হা/৩৬৭১; তিরমিযী হা/২৪৫৮, মিশকাত হা/১৬০৮, ‘জানায়েয’ অধ্যায় ‘মৃত্যু কামনা’ অনুচ্ছেদ
নোট:
হাদিসটির সনদ হাসান।
ব্যাখ্যা
: ‘তোমরা আল্লাহকে লজ্জা কর’ অর্থ আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর ও শ্রদ্ধা কর। অর্থাৎ তার শাস্তির ভয়ে নয় কিংবা
কিছু পাওয়ার আশায় নয়। বরং তার বড়ত্ব ও সর্বোচ্চ মর্যাদাকে সম্মান কর।
তাইতো
কবি বলেন,
وَإِذا خَلَوتَ بِرِيبَةٍ
في ظُلمَةٍ + وَالنَفسُ داعيَةٌ إِلى الطُّغيانِ
فاِستَحي مِن نَظَرِ
الإِلَهِ وَقُل لَها + إِنَّ الَّذي خَلَقَ الظَّلامَ يَرانِي
অর্থাৎ
‘যখন তুমি অস্থির হয়ে অন্ধকারে
লুকাবে, অথচ প্রবৃত্তি সর্বদা অবাধ্যতার দিকে আহবানকারী’। ‘তখন তুমি আল্লাহর দৃষ্টি থেকে লজ্জিত হও এবং
প্রবৃত্তিকে বল, নিশ্চয়ই যিনি অন্ধকারকে
সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাকে দেখছেন’।
খ. নবির সাথে আদব: নবির সাথে কেমন আচরণ হবে তা
স্বয়ং আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন ইরশাদ হচ্ছে:
Surah Al-Hujraat, Verse 2:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا
لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ
وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
মুমিনগণ!
তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের
সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে
কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না। সূরা
হুজুরাত-০২
গ.
সৃষ্টি জগতের সাথে আদব: সৃষ্টি জীবের প্রতি ভাল
ব্যবহার সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে-
الخَلقُ عيالُ اللَّهِ ،
فأحبُّ الخلقِ إلى اللَّهِ مَن أحسنَ إلى عيالِهِ
الراوي : عبدالله بن مسعود
| المحدث : البيهقي | المصدر : شعب الإيمان
الصفحة أو الرقم : 6/2528 |
خلاصة حكم المحدث
অর্থ:
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)
বলেছেন, সমগ্র সৃষ্টি জগত আল্লাহ তাআলার পরিবার। আল্লাহর নিকট ঐ সৃষ্টি বেশি প্রিয়, যে তার
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাল/ভদ্র ব্যবহার করে। তাখরিজ: সুনানে
বাইয়াকি-২৫২৮
খ।
দ্বিতীয় স্তর: সামরিক জীবনে এ প্রভাব/প্রয়োজনীয়তা।
ভূমিকা: আদব বা শিষ্টাচার হল একটি নির্দিষ্ট
রূপ যা আত্মনিয়ন্ত্রণ, চরিত্র এবং দক্ষতার বিকাশ
ঘটায়। যে কোনো সশস্ত্র বাহিনী সংস্থার দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য শিষ্টাচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । আদব বা শিষ্টাচার সরাসরি একজন সৈনিকের আচরণকে প্রভাবিত করে এবং এটি সামরিক জীবনের প্রতিটি
দিককে প্রভাবিত করে। নিম্নে কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো,
০১.
বড়দের সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন:
হযরত আবু হুরায়রা রা. রাসূলে কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন বিখ্যাত সাহাবী, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন :
من لم يرحم صغيرنا ولم يعرف حق
كبيرنا فليس منا
যে
আমাদের ছোটকে দয়া করে না, আমাদের বড়র হক আদায় করে না
সে আমাদের নয়। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৪৩; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৩৫৩
ব্যাখ্যা: হাদীসের দ্বিতীয় অংশ,
ولم يعرف حق كبيرنا (এবং যে আমাদের বড়র হক আদায় করে না)। বড় বিভিন্নভাবে হতে
পারে। বয়সে বড়, জ্ঞান-প্রজ্ঞায় বড়, অর্থ-বিত্ত-সামাজিক সম্মানের দিক থেকে বড়, পদ-মর্যাদা ও কর্তৃত্বের দিক
থেকে বড়, যে কোনো দিক থেকে যিনি বড়, তার হক আদায় করা ঈমান ও ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। যে সেই হক
আদায় করে না সে فليس منا ‘আমাদের নয়’।
সামরিক
জীবন: সামরিক জীবনে সিনিয়র কে
সম্মান করা একটি অপরিহার্য অংশ। প্রতিটি
সদস্যের রক্ত মাংসে বড়দের সম্মান করা মিশে থাকে।
০২.
ছোটদের স্নেহ করা: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, من لم يرحم صغيرنا (যে আমাদের ছোটকে দয়া করে না...) থেকে বোঝা গেল, ছোটর সাথে আচরণ হবে দয়াপূর্ণ, মমতাপূর্ণ। ছোটর সাথে আচরণের মূল ভিত্তি হবে আর রাহমাহ’ দয়া ও মমতা। দয়া-মায়ার আচরণের দ্বারাই ছোটর
হক আদায় করা সম্ভব হবে।
সামরিক জীবন: দৈনিক/সাপ্তাহিক/মাসিক দরবার, রুল কলে জুনিয়রদের সমস্যা
শোনা হয় এবং কার্যকারী ব্যবস্থা নেয়া হয়। ইউনিটের প্রতিটি সদস্যগণ শান্তিতে আরামে থাকে বড়রা সর্বদাই এই চিন্তা করে।
০৩.
স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা: সুন্দর ও স্পষ্ট ভাবে কথা
বলা ইসলামের শিক্ষা। যেমন,
عَنْ عَائِشَةَ رَحِمَهَا اللَّهُ، قَالَتْ: "كَانَ كَلَامُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلَامًا فَصْلًا يَفْهَمُهُ كُلُّ مَنْ سَمِعَهُ
অর্থ: হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কথা বলতেন, খুব স্পষ্ট পরিস্কার ও আলাদা আলাদাভাবে বলতেন। শ্রোতাদের সবাই তা হৃদয়ঙ্গম কর
নিতে পারত। তাখরিজ: আবু দাউদ-৪৮৩৯
সামরিক জীবন: সিনিয়র জিজ্ঞেস করলে সুন্দর ও স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দেওয়ায় সামরিক জীবনে
ঐতিহ্য।
০৪.
মুরুব্বি বা দলনেতা দ্বারা খাবার শুরু করা:
হজরতে
সাহাবায়ে কেরামগণ! রসূলুল্লাহ (ﷺ) খাবার শুরু না করলে, তারা শুরু করতেন না। যেমন,
عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: كُنَّا إِذَا حَضَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا لَمْ نَضَعْ أَيْدِيَنَا حَتَّى يَبْدَأَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَضَعَ يَدَهُ،.
অর্থ: হজরত হুজাইফা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গে আমরা খাবারে জন্যে
দস্তরখানে একত্রিত হলে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) যত সময় পর্যন্ত খাওয়া শুরু না করতেন, তত সময় পর্যন্ত আমরা খানায় হাত দিতাম না। তাখরিজ : মুসলিম-২০১৭
সামরিক জীবন: সরকারি বড় খানা বা কোন পার্টিতে সিনিয়র দ্বারা খাবার শুরু করা সেনাবাহিনীর
প্রথাগত ঐতিহ্য।
০৫.
সুন্দর নামে ডাকা: ইসলামে মন্দ নামে ডাকা নিষেধ। যেমন, ইরশাদ
হচ্ছে:
Surah Al-Hujraat, Verse 11:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا
نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا
أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ
الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম
হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ
করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ
নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। সূরা হুজুরাত-১১
হজরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ওই ব্যক্তি প্রকৃত মুসলিম; যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য
মুসলিম নিরাপদ। আর যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে, সে-ই প্রকৃত হিজরতকারী৷ তাখরিজ: বুখারি-
সুন্দর নাম মানসিকতা ও স্বভাবের উপর নামের প্রভাব পড়ে। তাই তো আমাদের প্রিয় নবি (ﷺ) সাহাবাদেরকে নাম পরিবর্তন ও সুন্দর
সুন্দর উপাধিতে ডাকতেন। যেমন,
হাদিস
নং-০১
أَخْبَرَنِي عَبْدُ الحَمِيدِ
بْنُ جُبَيْرِ بْنِ شَيْبَةَ، قَالَ: جَلَسْتُ إِلَى سَعِيدِ بْنِ المُسَيِّبِ،
فَحَدّثَنِي: أَنّ جَدّهُ حَزْنًا قَدِمَ عَلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلّمَ فَقَالَ: مَا اسْمُكَ؟ قَالَ: اسْمِي حَزْنٌ، قَالَ: بَلْ أَنْتَ سَهْلٌ.
قَالَ: مَا أَنَا بِمُغَيِّرٍ اسْمًا سَمّانِيهِ أَبِي قَالَ ابْنُ المُسَيِّبِ:
فَمَا زَالَتْ فِينَا الحُزُونَةُ بَعْدُ.
আবদুল
হুমাইদ বিন শায়বা বলেন, আমি হযরত সাঈদ ইবনুল
মুসায়্যিবের কাছে বসা ছিলাম। তিনি তখন বললেন, আমার দাদা ‘হাযান’ একবার নবীজীর দরবারে উপস্থিত
হলেন। নবীজী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? দাদা বললেন, আমার নাম হাযান। (হাযান অর্থ
শক্তভূমি) নবীজী বললেন- না, তুমি হচ্ছ ‘সাহল’
(অর্থাৎ
তোমার নাম হাযানের পরিবর্তে সাহল রাখো; সাহল অর্থ, নরম জমিন।) দাদা বললেন, আমার বাবা আমার যে নাম
রেখেছেন আমি তা পরিবর্তন করব না। সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন, এর ফল এই হল যে, এরপর থেকে আমাদের বংশের
লোকদের মেযাজে রুঢ়তা ও কর্কশভাব রয়ে গেল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৯৩
হাদিস নং-০২
মুহাম্মাদ
ইবনে আমর ইবনে আতা বলেন, আমি আমার মেয়ের নাম রাখলাম-
বাররা (নেককার, ভালো মানুষ)। তখন যয়নব বিনতে
আবি সালামা বললেন-
سُمِّيتُ بَرّةَ، فَقَالَ
رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لَا تُزَكّوا أَنْفُسَكُمْ، اللهُ
أَعْلَمُ بِأَهْلِ الْبِرِّ مِنْكُمْ فَقَالُوا: بِمَ نُسَمِّيهَا؟ قَالَ:
سَمّوهَا زَيْنَبَ.
আমার
নাম ছিল, বাররা। নবীজী (ﷺ)বললেন, তোমরা নিজেরা নিজেদের
পবিত্রতা ঘোষণা কোরো না। (কারণ, বাররা অর্থ, ভালো, নেককার, পূত-পবিত্র) আল্লাহই জানেন তোমাদের মধ্যে ভালো ও পূত-পবিত্র কারা। জিজ্ঞেস করা
হল, তাহলে আমরা তার কী নাম রাখতে পারি? তখন নবীজী বললেন, তার নাম যয়নাব রাখ। (নবীজীর
আদেশে তখন বাররা নাম পরিবর্তন করে তার নাম যয়নাব রাখা হল।) তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৪২
হজরত
আবু বকর রা. কে সিদ্দিক এবং ওমর হলেন আল-ফারুক। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেই রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ``হে
আল্লাহর রাসূল! বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা কত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, ``তোমাকে নিয়ে ৪০ (চল্লিশ) জন। ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু বললেন, এটাই যথেষ্ট। আজ থেকে আমরা
এই চল্লিশ জনই কাবা গৃহে গিয়ে প্রকাশ্যে মহান আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করবো। ভরসা
মহান আল্লাহর। অসত্যের ভয়ে আর সত্যকে চাপা পড়ে থাকতে দেব না। সেদিনই রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে "ফারুক" উপাধি দেন।
হজরত
আলি রা.কে আসাদুল্লাহ এবং বীরশ্রেষ্ঠ খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. কে সাইফুল্লাহ উপাধিতে
ভূষিত করেন।
সামরিক
জীবন: পরস্পরকে সুন্দর নামে
সম্বোধন করা হয়। যেমন, স্টাফ জি,
মেজর
জি, স্যার, সাহেব ইত্যাদি। তাছাড়া বিভিন্ন ইউনিটকে বিভিন্ন উপাধিতে ডাকা হয় বা নামকরণ করা হয়।
চ.
উর্দ্ধতন/ নেতার আনুগত্য করা:
নেতার
বা ওলামা-ফোকাহায়ে কেরামের আনুগত্য করাও ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا
الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ- হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের
নেতৃবৃন্দের। সূরা নিসা-৫৯
‘উলিল আমর’ এর পরিচয়। ‘উলিল আমর’ আভিধানিক অর্থে সে সমস্ত লোককে বলা হয়, যাদের হাতে কোন বিষয়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত থাকে। সে কারণেই হজরত ইবনে আব্বাস (রা.), মুজাহিদ ও হাসান বসরি (রহ.) প্রমুখ মুফাসসেরগণ
ওলামা ও ফোকাহা সম্প্রদায়কে উলিল আমর সাব্যস্ত করেছেন। তাঁরাই হচ্ছেন মহানবী (ﷺ)-এর নায়েব বা প্রতিনিধি। তাঁদের হাতেই দ্বীনী
ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব অর্পিত।
ক। মুফাসসেরীনের অপর এক জামাআত যাদের মধ্যে হজরত
আবু হুরাইরা (রা.) প্রমুখ সাহাবায়ে কেরামও রয়েছেন- বলেছেন যে, উলিল আমর -এর
অর্থ হচ্ছে সে সমস্ত লোক যাদের হাতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত।
খ। এছাড়া তাফসীরে –ইবনে
কাসীর এবং মাজহারীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ শব্দটির দ্বারা ওলামা ও
শাসক (নেতা) উভয় শ্রেণীকেই বুঝায়। কারণ, নির্দেশ দানের বিষয়টি তাঁদের উভয়ের সাথেই সম্পর্কিত। তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন(সংক্ষিপ্ত)- ২৬০ পৃষ্ঠা, মুফতি শফি (রহ.), মাওলানা মুহিউদ্দীন খান কর্তৃক অনূদিত
হাদিসে
বলা হয়েছে,
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ، ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ،
ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺮﺀ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺍﻟﺴﻤﻊ ﻭﺍﻟﻄﺎﻋﺔ ﻓﻴﻤﺎ ﺃﺣﺐ ﻭﻛﺮﻩ ﺍﻻ
ﻳﺄﻣﺮ ﺑﻤﻌﺼﻴﺔ ﻓﺈﺫﺍ ﺃﻣﺮ ﺑﻤﻌﺼﻴﺔ ﻓﻼ ﺳﻤﻊ ، ﻭﻻ ﻃﺎﻋﺔ
অর্থ: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মুসলমানদের উপর নেতার আদেশ
শোনা ও মানা অপরিহার্য কর্তব্য। চাই সে আদেশ তার পছন্দনীয় হোক, আর অপছন্দনীয় হোক। তবে হ্যাঁ, যদি আল্লাহর নাফরমানিমূলক কোন কাজের নির্দেশ হয় তবে সেই নির্দেশ শোনা ও মানার
কোন প্রয়োজন নেই। বুখারি-৭১৪৪; মুসলিম-১৮৩৯; তিরমিজি-১৭০৭; আবু দাউদ-২৬২৬
সামরিক জীবন: পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র
ও সংগঠন সর্বত্র আনুগত্য এক অপরিহার্য বিষয়। এগুলির কোন স্তরে আনুগত্য না থাকলে
সেটা ভালভাবে চলবে না, সেখানে
নিয়ম-শৃংঙ্খলা থাকবে না। ফলে সেখানে কোন কাজ সুচারুরূপে পরিচালিতও হবে না। আর সামরিক
জীবনে আনুগত্যের কোন বিকল্প নেই।
০৬.
নৈতিকতা: নৈতিকতা (ইংরেজি: Morality), যার অর্থ হলো ভদ্রতা,
চরিত্র, উত্তম আচরণ। এটি মূলত উদ্দেশ্য,সিদ্ধান্ত এবং কর্মের মধ্যকার ভালো-খারাপ,উচিত-অনুচিত
এর পার্থক্যকারী। নৈতিকতা হলো কোনো মানদন্ড বা নীতিমালা যা নির্দিষ্ট কোন আদর্শ,
ধর্ম বা সংস্কৃতি থেকে আসতে পারে।
প্রমাণ্য
সংজ্ঞা:
নৈতিকতা
হল সেই শৃঙ্খলা যা ভাল এবং মন্দের সাথে মোকাবিলা করে এবং নৈতিক দায়িত্ব ও
বাধ্যবাধকতার সাথেও আচরণ করে। নৈতিকতা হল নৈতিক নীতি বা মূল্যবোধের একটি
সেট।" - ক্যারল বুচহোল্টজ
নৈতিকতার দিক সমূহ: নৈতিকতা সেই মানদন্ড
সমূহকে বোঝায় যা মিথ্যা, সুদ
-ঘুষ, ধর্ষণ, চুরি, খুন, আক্রমণ, অপবাদ এবং
জালিয়াতি থেকে বিরত থাকার যুক্তিসঙ্গত বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। সততা, সহানুভূতি এবং আনুগত্যের গুণাবলী নির্দেশ করে এমন নৈতিক মানগুলিও
অন্তর্ভুক্ত করে।
এ
সম্পর্কে ইসলামি নির্দেশনা:
০১.মিথ্যা:
وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ
অর্থ:
মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক। সূরা হজ-৩০
হাদিস
শরিফে এসেছে-
يُطْبَعُ الْمُؤْمِنُ عَلَى
الْخِلَالِ كُلِّهَا إِلّا الْخِيَانَةَ وَالْكَذِب
قال الزرقاني في الشرح على
المؤطا: وَضَعّفَ الْبَيْهَقِيّ رَفْعَهُ، وَقَالَ الدّارَقُطْنِيّ: الْمَوْقُوفُ
أَشْبَهُ بِالصّوَابِ، قَالَ غَيْرُهُ: وَمَعَ ذَلِكَ فَحُكْمُهُ الرّفْعُ عَلَى
الصّحِيحِ ; لِأَنّهُ مِمّا لَا مَجَالَ لِلرّأْيِ فِيهِ، انْتَهَى
মুমিনের
চরিত্রে সবকিছুর অবকাশ থাকতে পারে, কিন্তু প্রতারণা ও মিথ্যা নয়। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৬১২১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২১৭০; শুআবুল
ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৪৪৬৯
০২.ব্যভিচার: এ সম্পর্কে কুরআন এসেছে-
Surah Al-Isra, Verse 32:
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا
إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلً
আর ব্যভিচারের
কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। সূরা ইসরা-৩২
ঘুষ:
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ،
حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الرَّاشِي
وَالْمُرْتَشِي فِي الْحُكْمِ . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ
عَمْرٍو وَعَائِشَةَ وَابْنِ حَدِيدَةَ وَأُمِّ سَلَمَةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى
حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ
অর্থ:
কুতায়বা (রাহঃ) ...... আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, বিচার ক্ষেত্রে ঘুষখোর ও ঘুষদাতাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লা‘নত করেছেন। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ ২৩১৩, জামে' তিরমিযী, হাদীস
নং ১৩৩৬ (আন্তর্জাতিক নং ১৩৩৬)
০৩.অপবাদ: সব
ধরনের মিথ্যা অপবাদ ইসলামে হারাম। বিশেষ করে ব্যভিচারের অপবাদ। যেমন, আল্লাহ
তাআলা বলেন,
Surah An-Noor, Verse 23:
إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ
الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا
وَالْآخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
যারা
সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা
ইহকালে ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্যে রয়েছে গুরুতর শাস্তি। সূরা নূর -২৩
০৪.
সুদ: আল্লাহ তাআলা বলেন,
یَمۡحَقُ اللّٰہُ الرِّبٰوا
وَیُرۡبِی الصَّدَقٰتٍِ অর্থ: আল্লাহ তাআলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। সূরা বাকারা-
لَعَنَ رَسولُ اللهِ صَلَّى
اللَّهُ عليه وسلَّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ،
وَقالَ: هُمْ سَوَاءٌ. অর্থ: সুদখোর সুদ দাতা এর লেখক ও সাক্ষী
অভিশপ্ত। তারা সকলেই এক পর্যায়ভুক্ত। তাখরিজ:
সামরিক
জীবন: সামরিক জীবনে মিথ্যা সুদ-ঘুষ, চুরি, অনৈতিক
সম্পর্ক, অবৈধ সম্পদ অর্জনের কোন স্থান নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৩৫:
একজন মিশন ফেরত কর্ণেল জানতে চেয়েছেন, তাঁর কাছে মিশনের টাকা পাশ বাবদ ১০% ঘুষ চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমার টাকার দরকার নাই। কিন্তু কোনো টাকা দিবো না। পরবর্তীতে বিল পাশ করে তাকে অনুরোধ
করা হয়, চা পানি খাওয়ার জন্য যেন কিছু টাকা
দেয়া হয়। তিনি জানতে চেয়েছেন, এই বাবদ টাকা দেয়া ঘুষ হবে কিনা? এবং তিনি টাকা দিবেন কিনা?
আমি বলেছি, আপনি যদি বাধ্য না হন এবং তারা যদি আবদার
করে সেক্ষেত্রে সামান্য কিছু টাকা সহানুভূতির দৃষ্টিতে দিলে ঘুষ হবে না ঠিক যেভাবে
আমরা হোটেল বয়দেরকে দিয়ে থাকি। যেহেতু আপনি ঘুষ দিতে শুরুতেই অস্বীকার করেছেন। এফসিতে এভাবে প্রায় সবাইকেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন বিল পাস
করাতে হয়। এক্ষেত্রে করণীয় কি এবং বর্ণিত অবস্থায় আমার দেয়া জবাব শরীয়তের আলোকে
ঠিক আছে কিনা? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন। তারিখ: ১৭/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাইফুল নোয়াখালী থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার দেওয়া জবাব শরিয়তের
আলোকে সঠিক হয়নি। কারণ উক্ত ব্যক্তি বেতনভুক্ত কর্মচারী। এর বাহিরে অতিরিক্ত এক টাকাও ঘুষের অন্তর্ভুক্ত,যে
নামেই নিক না কেন? যেমন,
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কেউই এটিকে ঘুষ বলতে চান
না। তারা বরং এটিকে ৫%, ১০% অফিস খরচ, বখ্শিশ, চা-মিষ্টি, হাদিয়া
এসব নামে অভিহিত করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। দলিল:
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم
بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا
مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থ:
‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ
অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে
গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে উৎকোচ দিও না। সুরা বাকারা- ১৮৮
আবু
হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)
থেকে বর্ণনা করেন,
«لَعَنَ اللهُ الرَّاشِيَ وَالْمُرْتَشِيَ فِي الْحُكْمِ» অর্থ: বিচার-ফায়সালায় ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা
উভয়ের উপরে আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত
করেছেন। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯০১১
দ্বিতীয়
কথা হলো, কোন রকম চাহিদা ছাড়া, পূর্ব
প্রতিশ্রুতি ব্যতিত যদি লেনদেন শেষ হওয়ার পর,
কিছু
দেয়, তাহলে হাদিয়া হতো( যেমন, আপনি
হোটেল বয়ের কথা উল্লেখ করেছেন) আপনার বর্ণিত ছুরুতে হাদিয়া থাকছে না।
বিখ্যাত
তাবেয়ি হজরত ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) যথার্থ বলেছেন, كانة الهدية فى زمن رسول الله هدية، واليوم رشوة. ‘রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর যুগে উপঢৌকন হাদিয়া ছিল। আর এখন তা ঘুষ’। সূত্র: বুখারী, ‘হেবা ও তার ফযীলত’
অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৭
আর নিজের ন্যায্য অধিকার আদায়ে ঘুষ দিতে বাধ্য
হলে এর বিধান সম্পর্কে আলহামদুলিল্লাহ ইতোমধ্যে আলবুরহানে জিজ্ঞাসা -২০৮ এবং
জিজ্ঞাসা -২৫২ মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। প্রয়োজনে সেটা দেখা যেতে পারে।
শেষ
কথা হলো, আপনার দেওয়া ফাতওয়া
শরিয়তের সঠিক হয়নি, যে নামেই দেওয়া হোক না
কেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৩৬:
আসসালামু আলাইকুম। সম্মানিত শায়েখ গনের কাছে আমার জিজ্ঞাসা সালাতে ইমামের কোন পাশে দাঁড়ালে সওয়াব
বেশি হবে তথা জামাতে দাঁড়ানোর যে নিয়ম আছে সে সম্পর্কে জানতে চাই। তারিখ: ২১/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ মফিদুল ইসলাম ঢাকা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, প্রত্যেক কাতারের বাম পাশ থেকে
ডান পাশ/দিক উত্তম।
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِن
اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى مَيَامِنِ الصُّفُوفِ» . رَوَاهُ أَبُو
دَاوُد
আয়িশাহ
(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেনঃ সালাতের কাতার ডানদিকের মানুষের ওপর
আল্লাহ তা’আলা ও মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) তাদের জন্য
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। তাখরিজ: য‘ঈফ
: আবূ দাঊদ ৬৭৬, ইবনু মাজাহ্ ১০০৫, ইবনু
হিব্বান ২১৬০,
নোট:
আলবানি রহ. বলেন, হাদিসটির সনদ জয়িফ।
দ্বিতীয়
কথা হলো, প্রথম কাতারের ফজিলত বেশি। দলিল:
হাদিস
নং -০১
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ
رَسُوْلُ اللهِ إِنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى الَّذِينَ
يَصِلُوْنَ الصُّفُوْفَ وَمَنْ سَدَّ فُرْجَةً رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً.
আয়েশা
(রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়
আল্লাহ এবং ফেরেশতগণ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যারা
কাতারবন্দী হয়ে ছালাত আদায় করেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে দাঁড়ায়, আল্লাহ
তা‘আলা এর বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।
তাখরিজ:৯৯৫
হাদিস
নং -০২
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ
يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ سُمَىٍّ، مَوْلَى أَبِي بَكْرٍ عَنْ
أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
قَالَ " لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ،
ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلاَّ أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا، وَلَوْ
يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لاَسْتَبَقُوا إِلَيْهِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا
فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا ".
অর্থ:
আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেনঃ আযানে ও প্রথম কাতারে কী (ফযীলত)
রয়েছে, তা যদি লোকেরা জানত,
কুরআহ
(লটারী)-র মাধ্যমে নির্বাচন ব্যতীত এ সুযোগ লাভ করা যদি সম্ভব না হত, তাহলে
অবশ্যই তারা কুরআহ-র মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিত। যোহরে নামায আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করার
মধ্যে কী (ফযীলত) রয়েছে, যদি তারা জানত, তাহলে
তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর ইশা ও ফজরের নামায (জামা’আতে) আদায়ের কী ফযীলত তা যদি তারা জানত, তাহলে
নিঃসন্দেহে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হত। তাখরিজ: বুখারি-৬১৫
প্রশ্ন: ক। জামাতে দাঁড়ানোর নিয়ম কি?
উত্তর:
ক। ফিকহি হানাফির মতে,
১.
মুক্তাদি যদি একজন হয়, তবে সে মুক্তাদি ইমামের একটু পিছনে ডান পাশে
দাঁড়াবে। দলিল:
ثُمَّ جِئْتُ حَتَّى قُمْتُ عَنْ
يَسَارِ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم فَأَخَذَ بِيَدِي فَأَدَارَنِي حَتَّى
أَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ فَجَاءَ ابْنُ صَخْرٍ حَتَّى قَامَ عَنْ يَسَارِهِ
فَأَخَذَنَا بِيَدَيْهِ جَمِيعًا حَتَّى أَقَامَنَا خَلْفَهُ قَالَ وَجَعَلَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَرْمُقُنِي وَأَنَا لَا أَشْعُرُ ثُمَّ
فَطِنْتُ بِهِ فَأَشَارَ إِلَىَّ أَنْ أَتَّزِرَ بِهَا
জাবের
(রাঃ) বলেন, একদা মহানবী (ﷺ) মাগরেবের নামায পড়ার জন্য দাঁড়ালেন। এই সময় আমি এসে তাঁর বাম
দিকে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন। ইতিমধ্যে
জাব্বার বিন সাখার (রাঃ) এলেন। তিনি তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি আমাদের
উভয়ের হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে তাঁর পশ্চাতে দাঁড় করিয়ে দিলেন। তাখরিজ: মুসলিম-৩০১০; আবূ
দাঊদ-৬৩৪; মিশকাত- ১১০৭
২.
দুইজন মুসল্লি হলে ইমামের ইমাম বরাবর একজন এবং ডানে একজন।
৩.
তিনজন হলে ইমাম বরাবর একজন আর ডান পাশে একজন এবং বাম পাশে একজন।
৪.
এর পর নতুন মুসল্লি আসলে, প্রথমে ডানে তার পর বামে এভাবে কাতার পূর্ণ
করবে।
অর্থাৎ
ইমাম কাতারের মাঝে থাকবে। দুই পাশে মুসল্লি সমান থাকবে। দলিল:
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ
اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«تَوَسَّطُوا الْإِمَامَ وَسُدُّوا الْخَلَلَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ
(ﷺ)ইরশাদ করেছেনঃ ইমামকে মধ্যখানে রাখো, কাতারের
মাঝে খালি স্থান বন্ধ করে দিও। তাখরিজ: আবু দাউদ -৬৮১
প্রশ্ন:
খ। কাতার কোথায় থেকে শুরু করবে?
উত্তর:
খ। প্রত্যেক কাতারের বাম দিক থেকে ডান দিক উত্তম। প্রত্যেকটি কাতার ইমামের পিছন
থেকে পূরণ করতে হবে।
হাদিস
নং-০১
عَنْ أَنَسٍ قَالَ صَلَّى
النَّبِىُّ فِىْ بَيْتِ أُمِّ سُلَيْمٍ فَقُمْتُ وَيَتِيْمٌ خَلْفَهُ وَأُمُّ سُلَيْمٍ
خَلْفَنَا.
الراوي : أنس بن مالك | المحدث :
الألباني | المصدر : صحيح النسائي | الصفحة أو الرقم : 868 | خلاصة حكم المحدث :
صحيح | التخريج : أخرجه النسائي (869) واللفظ له، وأخرجه البخاري (727) باختلاف
يسير
আনাস
ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উম্মু সুলাইমের বাড়ীতে ছালাত আদায় করলেন। আমি এবং একজন ইয়াতীম তাঁর পিছনে
দাঁড়ালাম। আর উম্মু সুলাইম আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন। তাখরিজ: বুখারি -৭২৭;
নাসায়ি-৮৬৯
নোট:
উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে ডান দিক থেকে কাতার সোজা না করে ইমামের পিছন থেকেই কাতার
করতে হবে।
হাদিস
নং-০২
لِيَلِني مِنْكُمْ أُولُوا
الأحْلاَمِ وَالنُّهَى، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ
يَلُونَهُمْ». رواه مسلم
রাসূল
(ﷺ) বলেন,
আর
তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত ও বুদ্ধিমান,
তারাই
যেন আমার নিকটে (প্রথম কাতারে আমার পেছনে) থাকে। অতঃপর যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাদের
নিকটবর্তী তারা। অতঃপর তাদের যারা নিকটবর্তী তারা। তাখরিজ: মুসলিম-৪৩২
নোট:
এ হাদিসের আলোকে ফুকাহায়ে আহনাফ বলেন,
ইমামের
কাছে হলো তার বরাবর, তারপর কাছে হলো ডানে, তার
পর কাছে হলো বামে। তারপর কাছে হলো ডানে তার পর কাছে হলো বামে। এভাবে প্রথম কাতার
পূর্ণ করবে দ্বিতীয় কাতারও তাই ইমাম বরাবর থেকে কাতার শুরু হবে।
সারকথা
হলো, ইমামের ডান পাশে সওয়াব বেশি এবং প্রথম কাতারে সওয়াব বেশি।
তবে এর অর্থ এই নয় যে, ইমামের ডান পাশে বেশি
মুসল্লি দাঁড়াবে, বাম পাশে কম দাঁড়াবে। বরং
ইমামে দুই পাশে সমান সমান দাঁড়াবে। তবে দুই পাশে সমান থাকলে ডান পাশে দাঁড়াবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৩৭:
আসসালামু
আলাইকুম।
মুহতারাম, আমার জানার বিষয় হলো: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন, ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার থেকে প্রাপ্ত
সালামের জওয়াব দেওয়া কি জরুরি?
যদি
জরুরি হয়, তাহলে কিভাবে দিতে হবে? এ বিষয়ে শারয়ি সমাধান দিলে উপকৃত হতাম। জাযাকাল্লাহু খয়রান। তারিখ: ২৩/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুর রহমান বগুড়া থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ
বিষয়ে ওলামায়ে দ্বীন ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে,
সালাম
দেওয়া সুন্নাত আর জওয়াব দেওয়া ওয়াজিব। দলিল:
Surah An-Nisa, Verse 86:
وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٍ
فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ
شَيْءٍ حَسِيبًا
আর
তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া (সালাম দেয়) করে,
তাহলে
তোমরাও তার জন্য দোয়া কর; তারচেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী। সূরা নিসা -৮৬
وَعَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ أنَّ
رَسُوْلَ الله ﷺ قَالَ حَقُّ المُسْلِم عَلَى المُسْلِم خَمْسٌ : رَدُّ السَّلامِ
وَعِيَادَةُ المَريض وَاتِّبَاعُ الجَنَائِزِ وَإجَابَةُ الدَّعْوَة وتَشْميتُ
العَاطِسِ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
অর্থ:
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেন,
মুসলিমের
উপর মুসলিমের পাঁচটি অধিকার রয়েছেঃ (১) সালামের জবাব দেওয়া, (২)
রোগী দেখতে যাওয়া, (৩) জানাযায় অংশ গ্রহণ করা, (৪)
দাওয়াত গ্রহণ করা এবং (৫) কেউ হাঁচি দিলে তার জবাব দেওয়া। তাখরিজ: বুখারী ১২৪০, মুসলিম
৫৭৭৬
প্রশ্ন:
ক। লিখিত/মেসেজ এর মাধ্যমে প্রাপ্ত সালামের জওয়াব দেওয়া কি জরুরি?
উত্তর:
ক।
فما جاءك من سلام مكتوب عبر
البريد أو رسائل الهاتف، أو عبر وسائل التواصل على الإنترنت، يكفيك رده كتابة، ولك
رده باللفظ، ويجب أن يكون الرد بهذا أو هذا : على الفور.ফুকাহায়ে
উম্মত কলম বা আধুনিক মেসেজ এর মাধ্যমে লিখিত সালাম, মনের
ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গণ্য করেন। অর্থাৎ সরাসরি/সাক্ষাতে সালামের মত। দলিল
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস এবং নিম্নের হাদিসদ্বয়
হাদিস
নং-০১
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ
عَنهَا، قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:
« هَذَا جِبريلُ يَقْرَأُ عَلَيْكِ السَّلاَمَ» قَالَتْ: قُلْتُ: وَعَلَيْهِ
السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ . متفقٌ عَلَيْهِ
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)আমাকে
বললেন, ’’এই
জিব্রীল (জিব্রাইল/জিবরাঈল) আলাইহিস সালাম তোমাকে সালাম পেশ করছেন।’’
তিনি
বলেন, আমিও উত্তরে বললাম,
’অআলাইহিস সালামু ওয়ারহমাতুল্লহি অবারাকাতুহ।’
তাখরিজ:
বুখারী ৩১১৭, ৩৭৬৮,৬২০১, ৬২৪৯, ৬২৫৩, মুসলিম
২৪৪৭, তিরমিযী ২৬৯৩,
৩৮৮১, ৩৮৮২, নাসায়ী
৩৯৫২, ৩৯৫৩, ৩৯৫৪, আবূ
দাউদ ৫২৩২, ইবনু মাজাহ ৩৬৯৬, আহমাদ
৩২৭৬০, ২৩৯৪১, ২৪০৫৩, ২৫৩৫২
হাদিস
নং-০২
عَنْ سَعِيدِ بْنِ كَثِيرٍ
مَوْلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: سَمِعْتُ عَائِشَةَ،
تَقُولُ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمًا مَعَ
صَاحِبِ فَرَسٍ أَبْيَضَ أَخَذَ بِمَعْرِفَةِ فَرَسِهِ، فَلَمَّا أَتَانِي قُلْتُ:
مَنْ صَاحِبُ الْفَرَسِ؟ قَالَ: «وَقَدْ رَأَيْتِيهِ؟» ، قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ:
«وَمَنْ يُشْبِهُهُ؟» ، قُلْتُ: دِحْيَةُ بْنُ خَلِيفَةَ الْكَلْبِيُّ، قَالَ:
«ذَاكَ جِبْرِيلُ وَهُوَ يُقْرِئُكِ السَّلَامَ» ، قُلْتُ: وَعَلَى مَنْ
أَرْسَلَهُ وَعَلَيْكَ وَعَلَيْهِ السَّلَامُ (المعجم الكبير للطبرانى، رقم
الحديث-84)
নোট:
হজরত আয়েশা রা. হজরত জিবরাঈল আ.এর সালাম জওয়াব দিয়েছেন, সালামটি
সরাসরি ছিল না।
ফিকহি
দলিল:
وَيَجِبُ رَدُّ جَوَابِ كِتَابِ
التَّحِيَّةِ كَرَدِّ السَّلَامِ.
وفى رد المحتار- (قَوْلُهُ
وَيَجِبُ رَدُّ جَوَابِ كِتَابِ التَّحِيَّةِ) لِأَنَّ الْكِتَابَ مِنْ الْغَائِبِ
بِمَنْزِلَةِ الْخِطَابِ مِنْ الْحَاضِرِ مُجْتَبًى وَالنَّاسُ عَنْهُ غَافِلُونَ
ط. أَقُولُ: الْمُتَبَادَرُ مِنْ هَذَا أَنَّ الْمُرَادَ رَدُّ سَلَامِ الْكِتَابِ
لَا رَدُّ الْكِتَابُ. لَكِنْ فِي الْجَامِعِ الصَّغِيرِ لِلسُّيُوطِيِّ رَدُّ
جَوَابِ الْكِتَابِ حَقٌّ كَرَدِّ السَّلَامِ قَالَ شَارِحُهُ الْمُنَاوِيُّ: أَيْ
إذَا كَتَبَ لَك رَجُلٌ بِالسَّلَامِ فِي كِتَابٍ وَوَصَلَ إلَيْك وَجَبَ عَلَيْك
الرَّدُّ بِاللَّفْظِ أَوْ بِالْمُرَاسَلَةِ وَبِهِ صَرَّحَ جَمْعُ شَافِعِيَّةٍ؛
وَهُوَ مَذْهَبُ ابْنِ عَبَّاسٍ (رد المحتار، كتاب الصلاة، فصل فى البيع)
প্রশ্ন:
খ। লিখিত/মেসেজ এর মাধ্যমে প্রাপ্ত সালামের জওয়াব দেওয়ার পদ্ধতি কি?
উত্তর:
খ। লিখিত/মেসেজ এর মাধ্যমে প্রাপ্ত সালামের জওয়াব
লিখেও দেওয়া যায় আবার মুখে উচ্চারণ করে দেওয়া যায়।
উল্লেখ্য
যে, লিখিতভাবে জওয়াব দেওয়া জরুরি নয়। সূত্র: ফয়যুল কাদির-৪র্থ খণ্ড,৩১ পৃষ্ঠা; ফওয়ায়ে
শামি-৬ষ্ঠ খণ্ড,৪১৫ পৃষ্ঠা
শেষ কথা হলো,
সালামের
জওয়াব ওয়াজিব, সালামটি সরাসরি/ কারও মাধ্যমে/লিখিত/মেসেজ
মাধ্যমে প্রাপ্ত হোক না কেন।
পরামর্শ: পত্রের/মেসেজ এর জবাব/রিপ্লাই দেবার ইচ্ছে
থাকলে লিখার সময় জবাব লিখে দিবেন। আর না দেবার ইচ্ছে থাকলে মুখে জবাব দিয়ে দিবেন। তবে
উত্তম ও উচিত হল, পত্রটি পড়ার পর পরই মৌখিক জবাব দিয়ে দেবে। কারণ
পরে যদি পত্রের জবাব দেয়া না হয়, তাহলে যেন ওয়াজিব ছুটে যাবার
গোনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর
প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৩৮:
আসসালামু আলাইকুম।
মুহতারাম, আমার জানার বিষয় হলো: বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন
করার সময় ১/২ বছর কমিয়ে দেওয়ার বিধান কি? যাতে করে চাকুরীতে প্রবেশ ও পরবর্তীতে বেশি চাকুরী করার সুযোগ থাকে। এ বিষয়ে
শারয়ি সমাধান দিলে উপকৃত হবো। জাযাকাল্লাহু খয়রান। তারিখ: ২৩/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ জালাল উদ্দিন
সাভার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة
الله وبركاته
نحمده ونصل على
رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর
প্রথম কথা হলো, ইচ্ছা করে নিজের বা
সন্তানের বয়স কমানো সুস্পষ্ট মিথ্যা, ধোঁকা ও ছলচাতুরির অন্তর্ভুক্ত। যা ইসলামি
শরিয়াতে হারাম। দলিল:
আয়াত নং-০১
Surah Al-Baqara, Verse 42:
وَلَا تَلْبِسُوا
الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে
মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না। সূরা বাকারা-৪২
হাদিস নং -০১
أنَّ رَسولَ اللهِ صَلَّى
اللَّهُ عليه وسلَّمَ مَرَّ علَى صُبْرَةِ طَعامٍ فأدْخَلَ يَدَهُ فيها، فَنالَتْ
أصابِعُهُ بَلَلًا فقالَ: ما هذا يا صاحِبَ الطَّعامِ؟ قالَ أصابَتْهُ السَّماءُ
يا رَسولَ اللهِ، قالَ: أفَلا جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعامِ كَيْ يَراهُ النَّاسُ،
مَن غَشَّ فليسَ مِنِّي.
الراوي : أبو هريرة |
المحدث : مسلم | المصدر : صحيح مسلم
الصفحة أو الرقم: 102 |
خلاصة حكم المحدث : [صحيح]
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে
বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে
ব্যক্তি ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত
নয়।’ তাখরিজ: সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৪; সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২২৫; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৩১৪৭; সুনানে দারিমি, হাদিস
: ২৫৮৩; ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৯০৫
হাদিস নং -০২
إِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي
إِلَى البِرِّ، وَإِنَّ البِرَّ يَهْدِي إِلَى الجَنَّةِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ
لَيَصْدُقُ حَتَّى يُكْتَبَ اللهِ عِنً. وَإِنَّ الكَذِبَ يَهْدِي إِلَى
الفُجُورِ، وَإِنَّ الفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ
لَيَكْذِبُ حَتَّى لَيَكْذِبُ حَتَّى يُكْتًا
'নিশ্চয় সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখা। আর
পুণ্যের জান্নাতের দিকে পথ নির্দেশ করে। আর মানুষ বলতে বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত সামনে তাকে 'মহা-সত্যবাদী' বলা
হয়। আর নিঃসন্দেহে আমারবাদিতা নির্লজ্জতা ও পাচারের দিকে নিয়ে যায়। আর পাচার
জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর মানুষ বলতে বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত সামনে তাকে 'হা-মিথ্যাবাদী' ঈশ্বর
লিপিবদ্ধ করা হয়। তাখরিজ: বুখারী ৬০৯৪; মুসলিম ২৬০৬
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ
بْنُ دَاوُدَ الْمَهْرِيُّ، أَخْبَر يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ - حَدَّثَنَا
سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، أَوْ عاً " . وَزَادَ سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ
وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْمُسْلِمُونَ عَلَى
شُرُوطِهِمْ
" .
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে
বর্ণিত আরেক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলমানরা
তাদের শর্তের ওপর থাকবে।’ তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৯৪; সুনানে
দারা কুতনি, হাদিস : ২৮৯০; শুয়াবুল ঈমান, হাদিস
: ৪০৩৯
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্ন মতে, বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন
করার সময় ১/২ বছর কমিয়ে
দেওয়া, যাতে করে চাকুরীতে প্রবেশ
ও পরবর্তীতে বেশি চাকুরী করার সুযোগ থাকে। এটা হারাম সত্যকে গোপন রাখার শামিল।
পিতা-মাতার উচিত সঠিক তথ্য
দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করা,
ভুল
থাকলে সংশোধন করা। চেষ্টা করার পরও সংশোধন করতে না পারলে এক্ষেত্রে অভিভাবক দায়ী
থাকবে না। সূত্র: আলমাবসূত, সারাখসী ৩০/২১১; মাজমুআতুল ফাতাওয়াশ
শারইয়্যাহ ৩/২১০
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৩৯:
জনাব, সেশন জট কারণে, অথবা দুর্ভিক্ষের কারণে শিক্ষার্থীর বয়স নষ্টহলে,,,জীবনের ক্ষতির দায় কে নেবে,,,,। তারিখ: ২৩/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুল হালিম রামু থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ইসলামি শরীয়তে হালাল অন্বেষণ করা
ফরজ। দলিল:
আয়াত নং-০১
﴿فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ
فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ
كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [الجمعة:10]
অর্থ: সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা
পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে, এবং
আল্লাহকে অধিক স্মরন করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা জুমাআ-১০
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী
(র.) বলেন:
فاذا فرغتم من الصلاة فانتشروا
في الأرض للتجارة والتصرع في حوائجكم
‘‘যখন নামায শেষ হয়ে যাবে,
তখন
তোমরা ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়োজনাদি পূরণে বেড়িয়ে পড়ো। কুরতুবী,
আবু
আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ, আলজামেউ লি আহকামিল কুরআন, খ.১৮,পৃ.৯৬
আয়াত নং-০২
﴿وَءَاخَرُونَ
يَضۡرِبُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ يَبۡتَغُونَ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَءَاخَرُونَ
يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۖ﴾ [الجمعة:9]
‘‘আল্লাহ জানেন যে,
তোমাদের
মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে
দেশভ্রমন করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। সূরা মুযযাম্মিল-২০
أي مسافرين في الأرض يبتغون من
فضل الله في المكاسب والمتاجر.
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা
ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
‘‘অর্থ্যাৎ যারা ব্যবসা-বানিজ্য ও রিযিক উপার্জনের বিভিন্ন উপায়
অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের অন্বেষায় পৃথিবীতে ভ্রমনরত। সূত্র: আবুল দিদা ইসমইল ইবন উমর ইবন কাসীর, তাফসীরুল
কুরআনিল আযীম, ৮/২৫৮
হাদিস নং -০১
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ
مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ» . رَوَاهُ
الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেনঃ অন্যান্য ফরয কাজ আদায়ের সাথে হালাল
রুযী-রোজগারের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরয। তাখরিজ: বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান-৮৩৬৭
দ্বিতীয় কথা হলো, হালাল
রিজিক এর জন্য সবাইকে চাকরি করতে হবে,
এমন
নয়। যার যার অবস্থান থেকে আল্লাহর হুকুম মাফিক রিজিক তালাশ করলে, এটাই
সুমহান ইসলামের শিক্ষা। অবৈধ রাস্তা -পন্থা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তৃতীয় কথা হলো, সরকারি
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আর জন্ম নিবন্ধন বয়স কমানো এক জিনিস নয়।
আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, সরকারি
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন
ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ সংগঠন সরকারের কাছে দাবি দাওয়া করছেন, এটাই
পদ্ধতি।
আর দুর্ভিক্ষ/মহামারি কারণে বয়স
নষ্ট হয়। কথাটি ঠিক আবার সরকার সুযোগ দেয় এটাও ঠিক। যেমন,
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সরকারি
চাকরির পুরনো সীমা ৩৯ মাস বাড়ানোর অনুমোদন করেছে সরকার।
সারকথা হলো, সেশন
জট জটের কারণে অথবা দুর্ভিক্ষের কারনে শিক্ষার্থীর বয়স নষ্ট হলে,,, এই অজুহাতে ইচ্ছা করে বাচ্চাদের বসয় কমানো, মিথ্যার
আশ্রয় নেওয়া, সত্যকে গোপন রাখার ইসলামি শরিয়াহ অনুমোদন করে না।
দলিল:
আয়াত নং-১
Surah Al-Baqara, Verse 42:
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ
بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে
দিও না এবং জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না। সূরা বাকারা-৪২
আয়াত নং-০২
আয়াত
নং-০২
Surah Al-Maeda, Verse 87:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
لَا تُحَرِّمُوا طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا إِنَّ
اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
হে
মুমিনগণ, তোমরা ঐসব সুস্বাদু বস্তু হারাম করো না, যেগুলো
আল্লাহ তোমাদের জন্য হালাল করেছেন এবং সীমা অতিক্রম করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমা
অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না। সূরা মায়েদা-৮৭
সারকথা হলো, তিন-চার
জায়গায় মিথ্যা বলার অবকাশ আছে, তার মধ্যে আপনার কারণটি আওতায়
পড়ে। না, জানা
থাকলে আলেমদের কাছ থেকে জানার সুযোগ রয়েছে।
শেষ কথা হলো, যে বান্দা
আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য অবশ্যই পথ খুলে দিবেন। এটা
তারই ঘোষণা। যেমন,
Surah At-Talaq, Verse 2:
فَإِ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ
يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا
Surah At-Talaq, Verse 3:
وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا
يَحْتَسِبُ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ
أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا
আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।
এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা
থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ
তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন । সূরা তালাক,২-৩
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৪০:
আসসালামু আলাইকুম।
শায়খ, আমার জানার বিষয় হলো- "৪০ দিন একাধারে
তাকবীরে উলার সাথে নামায পড়লে জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়" এর দলীল দিলে ভালো হয়। তারিখ: ১৭/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সাইফুল নোয়াখালী থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৪০:
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
সম্মানিত মুফতি সাহেব, আমি আরটি সাজ্জাদ, ৫০৬ ডিওসি,
বগুড়া
সেনানিবাস।
অনুগ্রহ পূর্বক নিম্নে বর্ণিত
বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রশ্ন: বদলী জনিত টিএডিএ বিল
করার ক্ষেত্রে সাধারণত ট্রাকে মালামাল বহন করিয়ে বিল সাবমিট করার সময় নির্ধারিত ফরমেটের
মাধ্যমে করতে গিয়ে রেল / অন্যান্য যানবাহন উল্লেখ করে বিল করা হয়, অথচ
বাস্তবে সে বিলে উল্লেখকৃত বাহনে গমনাগমন করেনি। ফলে কিছুটা মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়।
এই ফরমেটের অনুসরণের ফলে কেউ
কেউ লাভবান (যখন বিলের চেয়ে খরচ কম হয়) হয়,
আবার
কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় (যখন ফরমেটের চেয়ে খরচ বেশি হয়) । এক্ষেত্রে কোনো পক্ষ (সরকার ও প্রার্থী) একে অপরকে কমতি অংশ বা অতিরিক্ত ফেরত
/ প্রদান করে না।
এভাবে কিছুটা মিথ্যার আশ্রয়
নেয়া, অতিরিক্ত গ্রহণ বা ক্ষতি মেনে নিয়ে টিএডিএ বিল করা এবং তা ভক্ষণ
করা বৈধ হবে কিনা?
شكرا لك و جزاك الله خيرا و تقبل
الله خدماتك القيمة والنافعة. آمين.
তারিখ: ১৭/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সাইফুল নোয়াখালী থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
উত্তর:
মুহতারাম ভাই,
বর্তমান অর্থাৎ অক্টোব ২০২২ সাল
থেকে কার্যকর টিএ/ডিএ প্রজ্ঞাপনের
ধারা- ৪। বদলিজনিত ভ্রমণ ভাতাঃ
নিম্নরূপ,
এতে (ক) উপ ধারায় নিজ ও পরিবারের
জন্য ক্যাটিগরি অনুযায়ী ভ্রমণ ভাতা এবং (খ) উপধারায় নিজস্ব মালামাল পরিবহনের জন্য পরিবহন
খরচের হার ও ফর্মেট উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত নিয়ম ও ধারা অনুযায়ী
সরকারি কর্মচারী মালামাল যেভাবেই পরিবহন করুক না কেনো সরকারি ফরমেট অনুযায়ীই সে পরিবহন
খরচ পাবে। প্রজ্ঞাপনে পরিবহন খরচের হার
ও ফর্মেট নির্ধারিত, এতে পরিবহণের ধরণ উল্লেখ নেই যেমন ট্রাক/ভ্যান/ট্রেন
ইত্যাদি, সুতরাং মালামাল পরিবহনের খরচ সে সরকারি ফরমেট অনুযায়ীই
পাবে।
এতে সে লাভবান হোক বা ক্ষতিগ্রস্ত হোক- তাতে কারো কিছু যায় আসে না।
আর নিজ ও পরিবারের ভ্রমন ভাতাও
সরকারি ফর্মেট অনুযায়ীই প্রাপ্ত হবে তবে প্রজ্ঞাপনে ভ্রমণের মাধ্যম যেহেতু একাধিক উল্লেখ
আছে যেমন বিমান/বাস/ট্রেন/লঞ্চ-স্টিমার ইত্যাদি সেহেতু এ ক্ষেত্রে যথা সাধ্য সততা ও
ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। অর্থাৎ উধাহরণ স্বরূপ সে ১ নং ক্যাটিগরির একজন কর্মচারী, সে যেখানে ভ্রমণ করছে সেখানে বিমান ও বাস উভয় পথই আছে, সে বিমানে
না গিয়ে বাসে গেলো তাহলে সে বাস ভাড়ার ফর্মেটেই বিল করবে, বিমান
ভাড়ার ফর্মেটে না।
আর যেখানে যাতায়াতে রেলওয়ে নাই
সেখানে বাসে ভ্রমণ করে রেলের ভাড়া নিতে পারবে না। তবে যেখানে বাস ও রেল উভয় পথ আছে
সেখানে সে যেটাতে ভ্রমন করেছে সেটা অনুযায়ীই বিল করা বাঞ্ছনীয়। এতে যদি তার ফর্মেট
অনুযায়ী বিল করলে বাস্তব খরচের চেয়ে বিল বেশি হয়ে যায়
তাতে কোনো সমস্যা নাই, সেটা তার জন্য বৈধ। কারণ এটা তার ভ্রমণের উজরত বা পারিশ্রমিক। সরকার তাকে এই হারে উজরত/ভাতা দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তাই সে
এ হারে ভ্রমণের ভাতা/ উজরত/ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত হবে।
দলিল:
১.
عَنْ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ
الْمُزَنِيُّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ الصُّلْحُ جَائِزٌ بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ إِلَّا صُلْحًا حَرَّمَ
حَلَالًا أَوْ أَحَلَّ حَرَامًا
التخريج : أخرجه أبو داود (3594
)، وابن الجارود في ((المنتقى)) (1001 )، وابن حبان (5091 )
২.
وَقالَ رسولُ اللَّهِ صلَّى
اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ :
الْمُسْلِمُونَ عَلَى
شُرُوطِهِمْ إِلَّا شَرْطًا حَرَّمَ حَلَالًا أَوْ أَحَلَّ حَرَامًا قَالَ
أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
التخريج : أخرجه الترمذي (1352) مطولاً، وابن ماجه (2353)
৩.
الفتاوى الهندية (4 / 455):
"قَالَ: نَفَقَةُ الْمُسْتَأْجِرِ عَلَى الْآجِرِ سَوَاءٌ كَانَتْ
الْأُجْرَةُ عَيْنًا أَوْ مَنْفَعَةً، كَذَا فِي الْمُحِيطِ."
و كَذَا فِي البناية شرح الهداية
(10 / 4):
واللہ تعالٰی اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে,
মুফতী আব্দুল হাই নাটোরী
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৪১:
বর্তমানে নারীরা না কি মাহরাম ছাড়া হজ করতে পারছে! সৌদি সরকার নারীদের ক্ষেত্রে
মাহরামের বিষয়টি নাকি শিথিল করেছে।
বলা হচ্ছে এজেন্সিগুলো নারীদের জন্য আলাদা হোটেলের ব্যবস্থাসহ যথাযথ পর্দা পালনের
ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে অনেক নারীরা মাহরাম ছাড়া হজ করেছেনও।
মুআজ্জায মুফতি সাহেবগণের নিকট উদ্ভুত পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণমূলক ও গঠনমূলক ফয়সালা
রেফারেন্সসহ জানতে চাই। তারিখ: ২৪/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জাফর তৈয়ব, বান্দরবান থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে আইম্মায়ে মুজাহিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
يُشْتَرَطُ لوجوبِ أداءِ
الفريضَةِ للمرأةِ رُفْقَةُ الْمَحْرَمِ، وهذا مذهَبُ الحَنَفيَّة، والحَنابِلَة،
واختارَه ابنُ باز، وابنُ عُثيمين، وبه صدرَتْ فتوى اللَّجْنَةِ الدَّائِمَةِ
(تبيين الحقائق)) للزيلعي و((حاشية الشلبي)) (2/5)، ((المبسوط))
للسرخسي (4/100
في فتاوى اللَّجْنَة
الدَّائِمَة: (المرأةُ التي لا مَحْرَمَ لها لا يجب عليها الحَجُّ؛ لأنَّ
الْمَحْرَم بالنسبة لها من السَّبيل، واستطاعَةُ السبيلِ شَرطٌ في وجوب الحَجِّ؛
قال الله تعالى: وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ
إِلَيْهِ سَبِيلًا *البقرة: 97* ولا يجوز لها أن تسافِرَ للحجِّ أو غيره إلا ومعها
زوجٌ أو مَحْرَمٌ لها). ((فتاوى اللَّجْنَة الدَّائِمَة- المجموعة الأولى)) (11/90).
ইমাম আবু হানিফা এবং আহমদ ইবনে
হাম্বলি রহ. সৌদির সাবেক প্রধান মুফতি শায়েখ ইবনে বাজ রহ. , সৌদির বিখ্যাত আলেম ইবনে উসাইমিন
রহ. এবং সৌদি স্থায়ী ফাতওয়া বোর্ড এর মতে
হজের জন্য মাহরাম শর্ত,
অপরপক্ষে ইমাম শাফিয়ি ও ইমাম মালিক (রহ.)-এর মতে, ‘নারীর ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য ‘মাহরাম’ শর্ত
নয়।। সূত্র: আলবাসবুত-৪/১০০; স্থায়ী ফাতওয়া কমিটি-১১/৯০
প্রশ্ন: ক। ফিকহি আহনাফ ও হাম্বলির দলিল কি?
উত্তর: ক। ফিকহি আহনাফ ও হাম্বলির দলিল
নিম্নরূপ:
হাদিস নং-০১
عَنِ ابْنِ عَبّاسٍ، عَنِ
النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ: لاَ يَخْلُوَنّ رَجُلٌ
بِامْرَأَةٍ إِلّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ. فَقَامَ رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ
اللهِ، امْرَأَتِي خَرَجَتْ حَاجّةً، وَاكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا،
قَالَ: ارْجِعْ فَحُجّ مَعَ امْرَأَتِكَ.
হযরত ইবনে আব্বাস রা. নবী কারীম
(ﷺ)থেকে বর্ণনা করেছেন, নবীজী বলেছেন, কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে তার মাহরাম ব্যতিরেকে একাকী অবস্থান না করে।
তখন এক ব্যক্তি উঠে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো অমুক অমুক যুদ্ধের
জন্য নাম লিখিয়েছি। ওদিকে আমার স্ত্রী হজ্বের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে। নবীজী বললেন,
ফিরে যাও। তোমার স্ত্রীর সাথে হজ¦ কর। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস
৫২৩৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪১
হাদিস নং-০২
১৩৩৮
لَا يَحِلّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ
بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ تُسَافِرَ سَفَرًا يَكُونُ ثَلَاثَةَ أَيّامٍ
فَصَاعِدًا، إِلّا وَمَعَهَا أَبُوهَا، أَوِ ابْنُهَا، أَوْ زَوْجُهَا، أَوْ
أَخُوهَا، أَوْ ذُو مَحْرَمٍ مِنْهَا.
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলে কারীম (ﷺ)বলেছেন, যে নারী আল্লাহ এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্য নিজের বাবা,
ছেলে, স্বামী, ভাই বা অন্য
কোনো মাহরামকে সঙ্গে না নিয়ে তিন দিন বা ততোধিক দূরত্বের পথ সফর করা বৈধ নয়। তাখরিজ:
সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪০; সুনানে কুবরা,
বাইহাকী ৩/১৩৮
হাদিস নং-০৩
لَا تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ
ثَلَاثًا، إِلّا وَمَعَهَا ذُو مَحْرَمٍ.
হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ)বলেছেন, মাহরামকে সঙ্গে না নিয়ে কোনো নারী তিন দিন দূরত্বের
পথে সফর করবে না। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস ১০৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৩৮
প্রশ্ন: খ। ফিকহি মালিকি এবং শাফিয়ির দলিল কি?
উত্তর: খ। ফিকহি মালিকি এবং শাফিয়ির দলিল
নিম্নরূপ:
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ
الْحَكَمِ، أَخْبَرَنَا النَّضْرُ، أَخْبَرَنَا إِسْرَائِيلُ، أَخْبَرَنَا سَعْدٌ
الطَّائِيُّ، أَخْبَرَنَا مُحِلُّ بْنُ خَلِيفَةَ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ،
قَالَ بَيْنَا أَنَا عِنْدَ النَّبِيِّ، صلى الله عليه وسلم إِذْ أَتَاهُ رَجُلٌ
فَشَكَا إِلَيْهِ الْفَاقَةَ، ثُمَّ أَتَاهُ آخَرُ، فَشَكَا قَطْعَ السَّبِيلِ.
فَقَالَ " يَا عَدِيُّ هَلْ رَأَيْتَ الْحِيرَةَ ". قُلْتُ لَمْ أَرَهَا
وَقَدْ أُنْبِئْتُ عَنْهَا. قَالَ " فَإِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ لَتَرَيَنَّ
الظَّعِينَةَ تَرْتَحِلُ مِنَ الْحِيرَةِ، حَتَّى تَطُوفَ بِالْكَعْبَةِ، لاَ
تَخَافُ أَحَدًا إِلاَّ اللَّهَ
"
মুহাম্মাদ ইবনুল হাকাম (রাহঃ)
... আদি ইবনে হাতিম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী
(ﷺ) এর মজলিসে বসা
ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে দুর্ভিক্ষের অভিযোগ করল। তারপর আর এক ব্যক্তি এসে ডাকাতের
উৎপাতের কথা বলে অনুযোগ করল। নবী (ﷺ) বললেন, হে আদী, তুমি কি হীরা নামক স্থানটি দেখেছ? আমি বললাম, দেখি নাই, তবে স্থানটি
আমার জানা আছে। তিনি বললেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবি হও তবে দেখতে
পাবে একজন উট সওয়ার হাওদানশীল মহিলা হীরা থেকে রওয়ানা হয়ে বায়তুল্লাহ শরীফে তাওয়াফ
করে যাবে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করবেন না। আমি মনে মনে বলতে লাগলাম তাঈ গোত্রের
ডাকাতগুলো কোথায় থাকবে যারা ফিত। তাখরিজ: বুখারি-৩৫৯৫
নোট: হাদিসটির অংশ বিশেষ উল্লেখ
করা হয়েছে।
প্রশ্ন: গ। পরস্পর বিরোধী হাদিসদ্বয়ের সমন্বয় কি?
উত্তর: গ। আমরা দেখতে পেলাম, এক হাদিসে বলা হয়েছে
لَا تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ
ثَلَاثًا، إِلّا وَمَعَهَا ذُو مَحْرَمٍ.
মাহরামকে সঙ্গে না নিয়ে কোনো
নারী তিন দিন দূরত্বের পথে সফর করবে না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১০৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৩৮
অপর হাদিসে বলা হয়েছে,
"তুমি যদি দীর্ঘজীবি হও তবে
দেখতে পাবে একজন উট সওয়ার হাওদানশীল মহিলা হীরা থেকে রওয়ানা হয়ে বায়তুল্লাহ শরীফে তাওয়াফ
করে যাবে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করবেন না। বুখারি-৩৫৯৫
এ দুটি হাদিসের মধ্যে সমন্বয়
হলো উক্ত মহিলা যে হীরা থেকে কাবা শরীফ তাওয়াফ করবে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবে না। এটি রুপক অর্থে
ব্যবহৃত হয়েছে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইনসাফ, নিরাপত্তা সর্বাঙ্গে সর্বোচ্চ
থাকবে সেই যুগে।
রূপক অর্থ না ধরলে প্রথম হাদিস বাতিল হয়ে যায়।
যেমন, প্রসিদ্ধ আছে,
روي أن الذئاب لم يسجل ضدها - باللفظ العصري - اي اعتداء على الغنم في عهد عمر بن عبدالعزيز رحمه الله تعالى ورضي
عنه، بل كانت الذئاب تمشي الى جنب الغنم وكأنهما قطيع واحد، وذلك في جميع ولايات
المسلمين التي كان عمر بن عبدالعزيز يحكمها.
সারমর্ম: যে এই যুগে নেকড়েরা
আর ভেড়া শিকার করে না। ওমর ইবনে আজিজ রহ. যুগের কথা বলা হয়, বাঘ ও ভেড়া/ মহিষ এক ঘাটে পানি
পান করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো, তার জামানায় ইনসাফ পূর্ণমাত্রায়
ছিল। সূত্র: আরশিফু মুলতাকি আহলিল হাদিস -২, ৪১/১৯১ পৃষ্ঠা.
প্রশ্ন: ঘ। সৌদি আরবের হজ হজ মন্ত্রণালয় কর্তৃক
নারীদের মাহরাম বিষয়ে শিথিল প্রসঙ্গে?
উত্তর: ঘ। আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন, সৌদি সরকার নারীদের ক্ষেত্রে মাহরামের বিষয়টি নাকি শিথিল করেছে।
সিদ্ধান্তটি পরিবর্তন ও সংযোজন
করা হয়েছে। যেমন,
মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের
মুসলিম মনীষীদের কঠোর সমালোচনার পর সৌদি আরব এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত পারিরর্তন করেছে।
খবর আরব নিউজের।
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ কমিটির
সদস্য সাঈদ বাগাশওয়ান মিসরের একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, পুরুষ অভিভাবক বা 'মাহরাম' ছাড়া নারীদের হজ বা ওমরাহ পালনের যে ঘোষণা দেওয়া
হয়েছিল তা সংশোধন করা হয়েছে।
এখন থেকে ৪৫ বছর বা ততোর্ধ্ব
বয়সি নারীরাই কেবল পুরুষ অভিভাবক ছাড়া হজ করতে পারবেন। এর চেয়ে কম বয়সি নারী ও তরুণীদের
অবশ্যই মাহরাম নিয়ে হজে আসতে হবে। সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ২ এপ্রিল ২০২২
وفرَّق الإمام أحمد في رواية بين
الشابة والعجوز، قال المروزي : وسئل عن امرأة عجوز كبيرة ليس لها محرم، ووجدت قوماً صالحين؟ قال: إن تولت هي النزول والركوب، ولم
সৌদির আরবের ওলামায়ে কেরাম সাধারণত
হাম্বলি মাজহাবের অনুসারী। ফিকহি হাম্বলিসহ অন্যদের মতেও বৃদ্ধা মহিলাদের পর্দা রুখছত
রয়েছে। যদিও ৪৫ বছর বয়সকে বৃদ্ধা বলা যায় না।
সূত্র: আকওয়ালুল ওলামা ফি হজ্জিল মারয়াতি বিদুনিল মাহরাম, ফতোয়া নং-১৪৭৯৮
প্রশ্ন: ঙ। এ বিষয়ে শায়েখ বাজ রহ এর ফতোয়া কি?
উত্তর: ঙ। এ সম্পর্কে শায়েখকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,
لسؤال: فهنا سؤال يسأله أحد
الإخوة المستمعين ويقول: حدثونا عن حكم امرأة حجت بدون محرم لكنها مع مجموعة من النساء؟
الجواب: حجها صحيح وعليها التوبة
إلى الله سبحانه؛ لأن الله جل وعلا منعها على لسان نبيه ﷺ من الحج إلا بمحرم، يقول
النبي ﷺ: لا تسافر المرأة إلا مع ذي محرم والله يقول: مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ
فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ [النساء:80] ويقول سبحانه: وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى مَا
ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى [النجم:1-2] صاحبنا هو محمد ﷺ، مَا ضَلَّ
صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا
وَحْيٌ يُوحَى [النجم:2-4] .
فعلينا أن نسمع ونطيع لما وجهنا
إليه عليه الصلاة والسلام، وقد قال عليه الصلاة والسلام: لا تسافر المرأة إلا مع
ذي محرم ولو كان معها نساء، لكن تصح الحجة، حجها صحيح وعليها التوبة والاستغفار.
অর্থাৎ কোন নারী যদি মাহরাম
ছাড়া হজ সম্পাদান করে, তবে তার হজ সহিহ তথা আদায় হবে কিন্তু তার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার
কাছে তওবা করা আশব্যক। কেননা আল্লাহ তাআলা
তার নবির জবানে নিষেধ করেছেন। নবি (ﷺ) বলেছেন, নারীর জন্য মাহরাম ছাড়া কোন সফর নেই। আর যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করলো,
সে মূলত আল্লাহর আনুগত্য করলো। সূরা নিসা-৮০. সূত্র: তাতবিকুল মাউসুআতিল ফাতওয়ায়িল বাজিয়া,
শায়েখ ইবনে বাজ রহ. এর ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত
সারকথা হলো, বিষয়টি এমন না যে নিরাপত্তার ভয়
থাকলে মাহরাম ছাড়া সফর করা জায়েজ নেই। আর যদি নিরাপত্তা পরিপূর্ণ বজায় থাকে,
বদনামের কোনো ভয় না থাকে, তা হলে মাহরাম ছাড়া সফর
করা জায়েজ আছে। বিষয়টি কখনই এমন না। সূত্র: আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৪-৩১৫; আদদুররুল মুখতার ২/৪৬৪-৪৬৫; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী পৃ. ৭৬ ও ৭৮;
গুনয়াতুন নাসিক পৃষ্ঠা ২৬-২৭ ও ২৯; ইমদাদুল ফাতাওয়া
২/১৫৬; বাদায়েস সানায়ে ২/১২৩
শেষ কথা হলো, সার্বিক বিবেচনায়, দলিলের মজবুতি, বর্তমান ফেতনার জামানায় মাহরাম ছাড়া
হজ করা বাঞ্চনীয় নয়। ফুকাহায়ে আহনাফ ও হাম্বলি অধিক যুক্তিযুক্ত। কেননা খোদ রাসূল (ﷺ) এর সহধর্মিনীগণ তার সাথে হজ/ওমরা করেছেন (তাছাড়া খয়রুন কুরুনে কেউ মাহরাম ছাড়া হজ করেছেন, এ
রকম কোন দলিল নেই)। দলিল:
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ
سَعِيدٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ رُمْحٍ، جَمِيعًا عَنِ اللَّيْثِ بْنِ سَعْدٍ، - قَالَ
قُتَيْبَةُ حَدَّثَنَا لَيْثٌ، - عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، - رضى
الله عنه - أَنَّهُ قَالَ أَقْبَلْنَا مُهِلِّينَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله
عليه وسلم بِحَجٍّ مُفْرَدٍ وَأَقْبَلَتْ عَائِشَةُ - رضى الله عنها - بِعُمْرَةٍ
حَتَّى إِذَا كُنَّا بِسَرِفَ عَرَكَتْ حَتَّى إِذَا قَدِمْنَا طُفْنَا
بِالْكَعْبَةِ وَالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ فَأَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله
عليه وسلم أَنْ يَحِلَّ مِنَّا مَنْ لَمْ يَكُنْ مَعَهُ هَدْىٌ - قَالَ -
فَقُلْنَا حِلُّ مَاذَا قَالَ " الْحِلُّ كُلُّهُ " .
فَوَاقَعْنَا النِّسَاءَ وَتَطَيَّبْنَا بِالطِّيبِ وَلَبِسْنَا ثِيَابَنَا
وَلَيْسَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ عَرَفَةَ إِلاَّ أَرْبَعُ لَيَالٍ ثُمَّ أَهْلَلْنَا
يَوْمَ التَّرْوِيَةِ ثُمَّ دَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى
عَائِشَةَ - رضى الله عنها - فَوَجَدَهَا تَبْكِي فَقَالَ " مَا شَانُكِ
" . قَالَتْ شَانِي أَنِّي قَدْ حِضْتُ وَقَدْ حَلَّ النَّاسُ وَ
অর্থ: কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ
ইবনু রুমহ (রহঃ) লায়স (রহঃ) থেকে ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
ইফরাদ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)এর সঙ্গে (মক্কার দিকে) অগ্রসর হলাম আর আয়িশা (রাঃ) উমরার ইহরাম বেঁধে
আসলেন। আমরা যখন সারিফ নামক স্থানে পৌঁছলাম,
আয়িশা
(রাঃ)-এর মাসিক ঋতু শুরু হল। অবশেষে আমরা মক্কায় পৌছে কাবা ঘর তাওয়াফ করলাম এবং সাফা-মারওয়া
পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করলাম। আমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল না রাসুলুল্লাহ
(ﷺ)তাদের ইহরাম খুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। আমরা
বললাম, কি প্রকারে ইহরাম খোলা হবে? তাখরিজ:
মুসলিম -২৮০৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৪৩:
আসসালামু আলাইকুম।
আকিকার হুকুম কি? সন্তান যদি জন্মের চতুর্থ
দিন অথবা সপ্তম দিনের আগে মারা যায় তার আকিকা দেওয়া কি জরুরী এবং ওই সন্তানের জন্য
ক্রয়কৃত পশুটি কি ছদকা করা ওয়াজিব?
তারিখ: ২৬/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিম নাটোর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার
জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি।
আকিকার পরিচয়:
আকিকা আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে
আঘাত করা, ফেলা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায়-
والعقيقة اصطلاحاً:
ما يذكى عن المولود عند حَلْق
شعره شكر لله تعالى.
অর্থাৎ সন্তান জন্মের পর সপ্তম
বিশ্ব তার কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহর শোকরিয়া স্বরুপ কোন হালাল গৃহপালিত জবাই করাকে আকিকা
বলে।
প্রশ্ন: ক। আকিকার হুকুম কি?
উত্তর: ক। اختلف العلماء في حكم العقيقة
على ثلاثة أقوال : فمنهم من ذهب إلى وجوبها ، ومنهم من قال إنها مستحبة ، وآخرون
قالوا : إنها سنة مؤكدة ،
القول الثاني: سنة مؤكدة .
هذا مذهب ال من المالكية،
والشافعية والحنابلة، وغيرهم من السّلف والخلف.
القول الثالث: مسحبة،هذا مذهب
ابو حنيفة رحم الله تعالي
অর্থাৎ আকিকার হুকুম বিষয়ে ওলামাদের
মধ্য মতভেদ রয়েছে। তিনটি তিনটি মতামত রয়েছে ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা ও মুস্তাহাব।
ইমাম মালেক, শাফি ও হাম্বল রহ. এর মতে সুন্নতে
মুয়াক্কাদা। আর ইমামে আজম আবু হানিফা রহ এর মতে মুস্তাহাব। সূত্র: আকিকাতু ওয়া আহকামিল মাওলুদি-২০০১৮ (ফতোয়া নং)
ফিকহি হানাফির দলিল:
«مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَنْسُكَ عَنْ وَلَدِهِ فَلْيَنْسُكْ عَنْهُ عَنِ
الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافَأَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ».
নবী (ﷺ) বলেন, ‘যে তার সন্তানের জন্য কোনো কুরবানী দিতে চায়, তবে
যেন পুত্র হলে দুটি সমবয়সী ছাগল এবং কন্যা হলে একটি ছাগল গিয়ে ইবাদত (তথা আকীকা) করে।’
[নাসায়ী
: ৪২২৯; শরহু মা‘আনিল আছার : ১০১৫।]
প্রশ্ন: খ। সন্তান যদি জন্মের চতুর্থ দিন অথবা সপ্তম দিনের আগে মারা যায়
তার আকিকা দেওয়া কি জরুরী এবং ওই সন্তানের জন্য ক্রয়কৃত পশুটি কি ছদকা করা ওয়াজিব?
উত্তর: খ। আমরা পূর্বেই উল্লেখ করছি যে চার ইমামের কারো মতে আকিকা করা ফরজ বা
ওয়াজিব নয়। সন্তানের আকীকার দ্বারা মূল মাকসাদ
হল, সন্তান থেকে
বিপদ আপদ দূর করা। সুতরাং যে সন্তান মারা গেছে তার ক্ষেত্রে যেহেতু এ বিষয়টি বাকি থাকে
না। তাই মৃত সন্তানের জন্য আকীকা করার কোন প্রয়োজন নেই। তবু যদি করে, তাহলে আকীকা হবে। কিন্তু মূল মাকসাদ বাকি থাকে না।
দলিল:
سَلْمَانُ بْنُ عَامِرٍ
الضَّبِّيُّ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَقُولُ: «مَعَ الغُلاَمِ عَقِيقَةٌ، فَأَهْرِيقُوا عَنْهُ دَمًا، وَأَمِيطُوا
عَنْهُ الأَذَى»
সালমান ইবনে আমের (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি নবী (ﷺ) কে
বলতে শুনেছেনঃ শিশুর পক্ষ থেকে আকীকা করতে হবে অতএব তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত
করো (পশু যবেহ করো) এবং তার থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত দূর করো। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৪৭১, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩২৬৪]
তবে মৃত্যু সন্তানের জন্যও
আকিকা করাই উত্তম। কেননা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেছেন। তিনি বলেন, এটি
সন্তানের শাফা‘আতের বিষয়ে বলা হয়েছে। তিনি মনে করেন, যদি
সন্তানের আক্বীক্বা না করা হয়। অতঃপর সে শিশু অবস্থায় মারা যায়, তাহ’লে সে তার পিতা-মাতার জন্য শাফা‘আত করবে না । সূত্র: ফাতহুল বারী ৯/৫৯৪
প্রশ্ন: গ। শিশু সন্তান মারা গেলে
ফায়দা কি?
উত্তর: গ। এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে
এসেছে-
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
مَا مِنَ النَّاسِ مِنْ مُسْلِمٍ
يُتَوَفَّى لَهُ ثَلاَثٌ لَمْ يَبْلُغُوا الْحِنْثَ، إِلاَّ أَدْخَلَهُ اللَّهُ
الْجَنَّةَ بِفَضْلِ رَحْمَتِهِ إِيَّاهُمْ ”.
“ কোন
মুসলিমের তিনটি সন্তান সাবালক হওয়ার আগে মারা গেলে তাদের প্রতি রহমত অবশ্যই আল্লাহ
তা'আলা ঐ ব্যাক্তিকে জান্নাতে দাখিল করবেন।”
[ সহীহ
বুখারী – ১১৭৬
]
অন্যেরা, انكانَمَنَمَ:
أَيَاتٍ مَا امْرأَةَ مِن
الْوَلَدِ كَانُوا
حِجَابًا জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হবে। তখন এক মহিলা প্রশ্ন, দু' সন্তান
মারা মারা? তিনি বললেন,
দু' সন্তান
মারাও। [ সহীহ বুখারী – ১১৭৭
]
সুতরাং সন্তান মারা গেলে সবর
করে, আল্লাহর
প্রতিদানের আশা করা উচিত।
শেষ কথা হলো, ফিকহি হানাফির মতে, আকিকা হলো মুস্তাহাব একটি আমল। আর
আকিকা মৃত্যু সন্তানের জন্য জরুরি নয়। তবে আকিকা করাই উত্তম। আর ক্রয়কৃত
পশুটি সদকা করাও জরুরি নয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৪৪:
আসসালামু আলাইকুম।
ইসলামের আলোকে নেতার আনুগত্য করার উপকারিতা ও সুফল সম্পর্কে পাঠ পরিকল্পনা বা নোট
থাকলে অনুগ্রহপূর্বক শেয়ার করবেন। তারিখ: ১৭/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শামসুল ইসলাম চৌধুরী সিলেট থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার এ মোটিভেশন ক্লাসটিকে দুটি
স্তরে ভাগ করছি। আনুগত্যের পরিচয় এবং এ
সুফল বা উপকারিতা।
ক।
প্রথম স্তর:
১। ভূমিকা।
মহান আল্লাহ বলেন১
يَاأَيُّهَا
الَّذِيْنَ
آمَنُوْا
أَطِيْعُوا
اللهَ
وَأَطِيْعُوا
الرَّسُوْلَ
وَأُولِي
الْأَمْرِ
مِنْكُمْ-
আল্লাহ তাআলা সকল সৃষ্টির উপর মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান
করেছেন এ কারণে যে মানুষ আনুগত্যশীল। হজরত আদম (আ.) আল্লাহর নিকটে
শিক্ষা গ্রহণ করে তার আনুগত্যের মাধ্যমে ফিরিশতা ও জিন জাতির উপর মর্যাদাবান
হয়েছিলেন। আনুগত্য ও ভালবাসা রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয় থেকে গভীর হয়। বলা হয়- Love and
loyalty runs deeper than blood.
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সংস্থা সর্বত্র আনুগত্য এক অপরিহার্য বিষয়। এগুলোর কোন স্তরে
পূর্ণ আনুগত্য না থাকলে সেটা ভালভাবে পরিচালিত হয় না। সেখানে নিয়ম শৃঙ্খলা থাকে
না। ফলে সেখানে কোন কাজ সুচারুরূপে সম্পাদিত হয় না। তাই সর্বস্তরে আনুগত্যের
বিকল্প নেই। পবিত্র কুরআনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪৬ বার আনুগত্যের কথা উল্লেখ
করা হয়েছে। আনুগত্যতা মানুষকে প্রিয় করে নেয়। যেমন বলা হয়- Blood makes you
related loyalty makes you family.
হাদিস শরিফে এসেছে- উবাদা বিন ছামেত (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি
বলেন,
بَايَعْنَا رَسُولَ
اللهِ
صلى
الله
عليه
وسلم
عَلَى
السَّمْعِ
وَالطَّاعَةِ
فِى
الْعُسْرِ
وَالْيُسْرِ
وَالْمَنْشَطِ
وَالْمَكْرَهِ
وَعَلَى
أَثَرَةٍ
عَلَيْنَا
وَعَلَى
أَنْ
لاَ
نُنَازِعَ
الأَمْرَ
أَهْلَهُ
وَعَلَى
أَنْ
نَقُولَ
بِالْحَقِّ
أَيْنَمَا
كُنَّا
لاَ
نَخَافُ
فِى
اللهِ
لَوْمَةَ
لاَئِمٍ.
‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাতে আনুগত্যের বায়আত
নিয়েছিলাম এই মর্মে যে, আমরা নেতার কথা শ্রবণ করব এবং মান্য করব সচ্ছল অবস্থায় হোক অথবা অসচ্ছল
অবস্থায় হোক। আনন্দে হোক অথবা অপছন্দে হোক। সন্তুষ্ট অবস্থায় হোক অথবা অসন্তষ্ট
অবস্থায় হোক। আমাদের উপরে অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে হোক। আমরা নেতৃত্ব
নিয়ে কখনো ঝগড়া করব না।২
২।
উদ্দেশ্য্। আনুগত্যের পরিচয় ও গুরুত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভের
মাধ্যমে সামরিক জীবনে বাস্তবায়ন করা।
৩। আনুগত্য-এর আভিধানিক
অর্থ । আনুগত্য
শব্দটি সংস্কৃত,
অর্থ হলো বশ্যতা, বাধ্যতা, অনুসরণ,
অনুবর্তন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ইত্যাদি।৩ ইংরেজিতে প্রতিশব্দ হচ্ছে- Obey, Hear, Listen, Respect, Honour, Administer,
Constancy, Adherence, Obedience, Fidelity. আর আরবিতে প্রতিশব্দ
হলো-اطاعة الخضوع الانقياد الاتباع الاستسلام ৪
৪। আনুগত্যের পারিভাষিক সংজ্ঞা।
আনুগত্য বলতে
এমন এক মানসিকতা যার মধ্য দিয়ে কারও কোন কিছুর প্রতি অনুরাগ ও সমর্থন ফুটে ওঠে; যা পরিবার, চাকুরির ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা, ধর্মীয় অথবা বহুত্ববাদী সমাজে যেকোন
প্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রদর্শিত হয়। আনুগত্য স্বভাবতই আত্মস্বার্থ বহির্ভূত একটি
আসক্তি।
৫। মনীষীদের দৃষ্টিতে আনুগত্য। বিশ্বের
জনপ্রিয়, বিখ্যাত মনীষীগণ আনুগত্য সম্পর্কে
বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। নিম্নে কয়েকজনের উক্তি উল্লেখ করা হল।
ক। আয়ারল্যান্ডের বিখ্যাত কবি
স্যামুয়েল বার্কলি বেকিট (জন্ম-১৯০৬,মৃত্যু-১৯৮৯) বলেন, Samuel
said, “Has the Lord as
great delight in burnt offerings and sacrifices, as in obeying the voice of
the Lord?
Behold, to obey is better than sacrifice, and to listen than the fat of rams.
খ। ফরাসি বিজ্ঞানী জন কে (জন্ম-১৭০৪,মৃত্যু-১৭৭৯) বলেন, “For God so loved the world, that he gave his
only Son, that whoever believes in him should not perish but have eternal life.
For God did not send his Son into the world to condemn the world, but in order
that the world might be saved through him.
৬। বিভিন্ন ধর্মে আনুগত্য।
প্রতিটি ধর্মই সৃষ্টিকর্তা, ধর্মগুরু ও বড়দের আনুগত্যের কথা বলেছেন।
ক। খৃস্টান ধর্মে আনুগত্য।
যিশু তার
ঈশ্বরের অনুগত ছিলেন। যিশু বলেন, পিতামাতা, ভাইবোন ও গুরুজনের প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য
কর। বাইবেলে বলা হয়েছে- আমার পাশাপাশি কারও আনুগত্য (উপসনা) করো না। আমার আনুগত্য করতে গিয়ে কোন
প্রতিমুর্তি তৈরি করো না।৫
খ। হিন্দু ধর্মে আনুগত্য।
বেদে বলা হয়েছে- যারা প্রাকৃতিক বস্তুসমূহের আনুগত্য করে তারা অন্ধকারে প্রবেশ করেছে। আর যারা
সৃষ্টি জিনিস এর আনুগত্য করে তারা অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হয়েছে।৬
গ। বৌদ্ধ ধর্মে আনুগত্য। বৌদ্ধ ধর্মে
সংঘ জীবনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নিয়ম-বিধি অনুসরণে একাগ্রতা, গুরুর
প্রতি আনুগত্য করা।
৭। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় আনুগত্য। আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের আদেশ-নিষেধ মান্য করা এবং তারা যাদেরকে মান্য
করতে বলেছেন; তাদেরকে মেনে চলাকে আনুগত্য বা ইতাআত বলে। আনুগত্যের বিপরীতটি নাফরমানি করা, বিশ্বাসঘাতকতা,
হুকুম অমান্য
করা।
খ।
দ্বিতীয় স্তর:
৮। ভূমিকা
। ধর্ম পালন, পরিবার,
সমাজ, রাষ্ট্র ও কর্মক্ষেত্রে সর্বত্র আনুগত্য এক অপরিহার্য বিষয়। এগুলোর কোনো স্তরে আনুগত্য না থাকলে সেটা ভালোভাবে চলবে না, সেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকবে না। ফলে সেখানে কোনো কাজ সুচারুরূপে পরিচালিতও হবে না। তাই সর্বস্তরে আনুগত্যের কোনো বিকল্প নেই।
৯। নেতা বা ওলামা-ফোকাহায়ে কেরামের আনুগত্য । নেতার বা ওলামা-ফোকাহায়ে
কেরামের আনুগত্য করাও ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ
বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ
آمَنُوْا
أَطِيْعُوا
اللهَ
وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ- হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা
আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের।৩৯
১০ । ‘উলিল আমর’ –এর পরিচয়।
‘উলিল
আমর’ আভিধানিক অর্থে সে সমস্ত লোককে বলা হয়, যাদের হাতে কোন বিষয়ের ব্যবস্থাপনার
দায়িত্ব অর্পিত থাকে। সে কারণেই হজরত
ইবনে আব্বাস (রা.),
মুজাহিদ ও হাসান বসরি (রহ.) প্রমুখ মুফাসসেরগণ ওলামা ও ফোকাহা
সম্প্রদায়কে উলিল আমর সাব্যস্ত করেছেন।
তাঁরাই হচ্ছেন মহানবী (ﷺ)-এর নায়েব বা প্রতিনিধি। তাঁদের হাতেই দ্বীনী
ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব অর্পিত।
ক। মুফাসসেরীনের অপর এক জামাআত –যাদের
মধ্যে হজরত আবু হুরাইরা (রা.) প্রমুখ সাহাবায়ে কেরামও রয়েছেন- বলেছেন যে, উলিল আমর –এর অর্থ হচ্ছে সে সমস্ত লোক যাদের হাতে সরকার পরিচালনার
দায়িত্ব ন্যস্ত।
খ। এছাড়া তাফসীরে –ইবনে কাসীর এবং
মাজহারীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ শব্দটির দ্বারা ওলামা ও শাসক (নেতা) উভয় শ্রেণীকেই বুঝায়। কারণ, নির্দেশ দানের বিষয়টি তাঁদের উভয়ের সাথেই
সম্পর্কিত।৪০
১১। নেতার আনুগত্যের সীমারেখা। নেতা বা কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর
নাফরমানির আদেশ দেয়,তাহলে
এ ক্ষেত্রে তার আদেশ মানা যাবে না।
যেমন, হাদীস শরীফে এসেছে-
৯ম হিজরির রবিউস সানি মাসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানতে পারলেন
যে, হাবশার কিছু নৌ-দস্যু জেদ্দা তীরবর্তী এলাকায় সমবেত হয়ে মক্কা আক্রমণের চক্রান্ত করছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শক্রদের
চক্রান্তের কথা ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথেই
হজরত আলকামা (রা.) তিনশত সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। দ্বীপে পৌঁছে দেখলেন দস্যুরা তাদের খবর পেয়ে পালিয়ে গেছে। আলক্বামা পলাতকদের বিরুদ্ধে আব্দুল্লাহ বিন হুযাইফাকে
সৈন্যসহ প্রেরণ করেন। হুযায়ফা রাস্তায় এক স্থানে অবতরণ করেন। সেখানে তিনি একটি অগ্নিকুন্ড তৈরী করেন এবং তাঁতে সৈন্যদের
ঝাঁপ দিতে বলেন। সৈন্যরা ঝাঁপ দিতে উদ্যত হলে তিনি বললেন,أَمْسِكُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ فَإِنَّمَا كُنْتُ أَمْزَحُ مَعَكُمْ، থাম! হে সৈন্যগণ! আমি তোমাদের সাথে ঠাট্টা করছিলাম। মদীনায় এসে একথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জানালে তিনি বললেন,لَوْ دَخَلُوْهَا مَا خَرَجُوا مِنْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ যদি তারা আগুনে প্রবেশ করত তাহলে তারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত
সেখানেই থাকত। এরপর তিনি বলেন, لاطاعة في معصية الله إنما الطاعة في المعروْف আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন আনুগত্য নেই।
আনুগত্য কেবল ন্যায় কর্মে।৪১
হাদিসে বলা হয়েছে,
ﻋﻦ
ﺍﺑﻦ
ﻋﻤﺮ
،
ﺭﺿﻲ
ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻨﻬﻤﺎ ، ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺮﺀ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺍﻟﺴﻤﻊ ﻭﺍﻟﻄﺎﻋﺔ ﻓﻴﻤﺎ ﺃﺣﺐ ﻭﻛﺮﻩ ﺍﻻ ﻳﺄﻣﺮ ﺑﻤﻌﺼﻴﺔ ﻓﺈﺫﺍ ﺃﻣﺮ ﺑﻤﻌﺼﻴﺔ ﻓﻼ ﺳﻤﻊ ، ﻭﻻ ﻃﺎﻋﺔ
হজরত আবদুল্লাহ
ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
মুসলমানদের উপর
নেতার আদেশ শোনা ও মানা অপরিহার্য কর্তব্য।
চাই সে আদেশ তার পছন্দনীয় হোক, আর অপছন্দনীয় হোক।
তবে হ্যাঁ, যদি আল্লাহর নাফরমানিমূলক কোন কাজের নির্দেশ হয় তবে সেই
নির্দেশ শোনা ও মানার কোন প্রয়োজন নেই।৪২
হাদীস শরীফে এসেছে-
ﻋﻦ ﺍﺑﻲ
ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪِ ﻋُﺒَﺎﺩَﺓَ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺼﺎﻣﺖ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗَﺎﻝَ ﺑَﺎﻳَﻌْﻨَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤْﻊِ ﻭَﺍﻟﻄَّﺎﻋَﺔِ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻌُﺴْﺮِ ﻭَﺍﻟْﻴُﺴْﺮِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻨْﺸَﻂِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻜْﺮَﻩِ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺃَﺛَﺮَﺓٍ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻧُﻨَﺎﺯِﻉَ ﺍﻷَﻣْﺮَ ﺃَﻫْﻠَﻪُ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺗﺮﻭﺍ ﻛﻔﺮﺍ ﺑﻮﺍﺣﺎ ﻋﻨﺪﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻴﻪ ﺑﺮﻫﺎﻥ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻧَﻘُﻮﻝَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﺃَﻳْﻨَﻤَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻻَ ﻧَﺨَﺎﻑُ ﻓِﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻮْﻣَﺔَ ﻻَﺋِﻢٍ
হজরত আবু অলিদ
ওবাদা ইবনে ছামেত (রা.) বলেন, আমরা নিম্নোক্ত কাজগুলোর জন্যে রাসূল (ﷺ)-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলাম: ১. নেতার
আদেশ মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে- তা দুঃসময়ে হোক,আর সুসময়ে হোক।
খুশীর মুহূর্তে হোক, আর অখুশীর মুহূর্তে হোক।
২. নিজের তুলনায় অপরের সুযোগ-সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৩. ছাহেবে আমরের সাথে বিতর্কে জড়াবে না, তবে হ্যাঁ, যদি নেতার আদেশ প্রকাশ্য কুফরীর শামিল হয়
এবং সে ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে যথেষ্ট দলিল প্রমাণ থাকে,
তাহলে ভিন্ন কথা। ৪. যেখানে যে অবস্থাতেই থাকি না কেন হক কথা বলতে হবে। আল্লাহর পথে কোন নিন্দুকের ভয় করা চলবে না।৪৩
১২। নেতা বা বিজ্ঞ আলেমদের আনুগত্যের গুরুত্ব।
ক। নেতার আনুগত্য
মানেই আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য। যেমন, রাসূল (ﷺ) বলেন,مَنْ
أَطَاعَنِى
فَقَدْ
أَطَاعَ
اللهَ،
وَمَنْ
عَصَانِى
فَقَدْ
عَصَى
اللهَ،
وَمَنْ
يُطِعِ
الأَمِيْرَ فَقَدْ
أَطَاعَنِى، وَمَنْ يَعْصِ
الأَمِيْرَ فَقَدْ عَصَانِى- যে আমার আনুগত্য করল,
সে আল্লাহর আনুগত্য করল।
আর যে আমার অবাধ্যতা করল সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল।
আর যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল সে আমারই আনুগত্য করল, আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করল সে
আমারই অবাধ্যতা করল”। ৪৪
খ। দলীল-প্রমাণ না থাকা।
আমীরের আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিলে কিয়ামতের দিন তার
কোন দলীল থাকবে না। রাসূল (ﷺ) বলেন,مَنْ خَلَعَ
يَدًا مِنْ طَاعَةٍ
لَقِىَ اللهَ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ لاَ حُجَّةَ
لَهُ যে ব্যক্তি তার হাতকে আনুগত্য থেকে মুক্ত করে
নিল, সে
ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে এমন অবস্থায় যে, তার
কোন দলীল থাকবে না।৪৫
১৩। আনুগত্যের পূর্বশর্ত। আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে এবং
নবী (ﷺ) হাদিসে যত
জায়গায় এই আয়াত উল্লেখ করেছেন, তার প্রায় সব জায়গাতেই এই আয়াতের আগে سمع শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যার শাব্দিক অর্থ হলো শোনা,
শ্রবণ করা। বলা হয়েছে ﺍﺳﻤﻌﻮﺍ ﻭ
ﺍﻃﻴﻌﻮا শোন এবং মান ﺳﻤﻌﻨﺎ ﻭ ﺍﻃﻌﻨﺎ শুনলাম এবং মানলাম।
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﺇِﺫَﺍ ﺩُﻋُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ ﻟِﻴَﺤْﻜُﻢَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﻭَﺃَﻃَﻌْﻨَﺎ ﻭَﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ ﺍﻟﻨﻮﺭ : 51) )
ঈমানদার লোকদের
কাজতো এই যে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ডাকা হবে- যেমন রাসূল
তাদের মামলা মুকাদ্দমার ফায়সালা করে দেয় তখন তারা বলে: আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।৪৬
মুমিনদের একমাত্র পরিচয় হলো যখন তাদেরকে
আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ থেকে কোন ফরমান শুনার জন্যে ডাকা হয় তখন তাদের মুখ থেকে
মাত্র দুটি শব্দই উচ্চারিত হয়। একটা হলো,
আমরা মনোযোগ
দিয়ে শুনলাম; দ্বিতীয়ত হলো, মাথা পেতে এই নির্দেশ মেনে নিলাম। এইরূপ দ্বিধাহীন নির্ভেজাল আনুগত্যই সাফল্যের চাবিকাঠি।
১৪। আনুগত্য ও তওবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাবূক
যুদ্ধে ৫০ দিন অতিবাহিত করে বিজয়ী বেশে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় ফিরে প্রথমে মসজিদে নববীতে দুরাকআত নফল ছালাত আদায় করে
সাধারণ জনগণের সাথে দেখা করার জন্য বসেন। এ
সময় ৮০ জন লোক যুদ্ধে গমন না করার জন্য ওযর পেশ করে ক্ষমা নিয়ে চলে যায়। আনছারদের তিন জন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব স্রেফ সাময়িক
বিচ্যুতির কারণে যুদ্ধে গমন থেকে পিছিয়ে ছিলেন।
(১) কাব বিন মালেক (২) মুরারাহ বিন রবী (৩) হেলাল বিন উমাইয়া।
তারা তিন জন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর কাছে গিয়ে সত্য কথা বলে ক্ষমা
চান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের ক্ষমার বিষয়টি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে বয়কট করেন। আপনজন, বন্ধু-বান্ধব, কেউ তাদের দিকে ফিরে তাকায় না। কথাও বলে না, সালাম দিলে জবাব দেয় না।
মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। এই দুর্বিসহ জীবনে দুঃখ-বেদনায় প্রাণ
ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম। ৪০ দিনের মাথায় তাদের স্ত্রীগণও তাদের থেকে পৃথক হয়ে পিতার
বাড়ী চলে যায়। জীবনের এই সংকটাপন্ন অবস্থায় তারা
সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে কেঁদে কেঁদে বুক ভাষায়। কাব বলেন, এটাও আমার জন্য একটি পরীক্ষা। তিনি পত্রটা জ্বলন্ত চুলায় নিক্ষেপ করে দুনিয়ার সমস্ত
সম্মান আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে ওয়াসওয়াসা দানকারী শয়তানকে পরাজিত করে আমীরের
আনুগত্য ও তওবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
অতঃপর আল্লাহ তার আনুগত্য ও ধৈর্য দেখে খুশি হয়ে আয়াত নাযিল করেন,
وَعَلَى
الثَّلَاثَةِ الَّذِيْنَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَنْ لَا مَلْجَأَ مِنَ اللهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوا إِنَّ اللهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ-
আর ঐ তিন ব্যক্তির প্রতি, যারা (জিহাদ থেকে) পিছনে ছিল। অবশেষে প্রশস্ত পৃথিবী তাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গেল এবং
তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠল। আর তারা বুঝতে
পারল যে, আল্লাহ ব্যতীত তাদের আর কোন আশ্রয়স্থল নেই।
অতঃপর তিনি তাদের প্রতি সদয় হলেন যাতে তারা ফিরে আসে।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী ও অসীম দয়ালু।৪৭
আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্ত এই তিনজন বিখ্যাত আনছার সাহাবি হলেন, কাব বিন মালেক (রা.),
মুরারাহ বিন রবী (রা.) ও
হেলাল বিন উমাইয়া (রা.)।
দীর্ঘ ৫০ দিন পরে তাদের তওবা কবুল হয়। এই দিনগুলিতে
রাসূল (ﷺ) সহ সকল সাহাবি তাদেরকে বয়কট করেন
এবং কথাবার্তা ও যাবতীয় লেনদেন বন্ধ রাখেন।
১৫। আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের সুফল।
ক। নেককার আজাজিল ইবলিস হলো কিভাবে। আমরা জানি
শয়তান অভিশাপ্ত হওয়ার পূর্বে নেককার ছিল। কিন্তু যখন হজরত আদম (আ.) আল্লাহর নিকটে শিক্ষা গ্রহণ করে তাঁর
আনুগত্যের মাধ্যমে ফেরেশতা ও জিন জাতির উপর মর্যাদাবান হয়েছিলেন। কিন্তু ইবলীস তার প্রভুর হুকুম না মেনে আনুগত্যহীন হয়ে
অভিশপ্ত হয়েছিল। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيْسَ لَمْ يَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ، قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِيْنٍ، قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيْهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِيْنَ-
অতঃপর ফেরেশতাদের বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর। তারা সকলে
সিজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আল্লাহ বললেন, আমি যখন তোমাকে নির্দেশ দিলাম, তখন কোন
বস্ত্ত তোমাকে বাধা দিল যে, তুমি সিজদা করলে না? সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে এবং তাকে সৃষ্টি
করেছেন মাটি থেকে। আল্লাহ বললেন, এ স্থান থেকে তুমি নেমে যাও। এখানে তুমি অহংকার করবে, তা হবে না। অতএব তুমি বের
হয়ে যাও। তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।২৯
ইবলীসের মধ্যে উপরোক্ত ঘৃণিত দোষগুলি থাকার কারণে আল্লাহ বললেন,اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُوْمًا مَدْحُوْرًا لَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكُمْ أَجْمَعِيْنَ- তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও
নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায়। (জেনে রেখো)
তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের দ্বারা জাহান্নামকে পূর্ণ করব।৩০
খ। সফলতা ও
কামিয়াবী হাছিল । আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য
করলে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জিত হবে।
আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يُطِعِ
اللهَ
وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا- আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের আনুগত্য করে, সে ব্যক্তি মহা সাফল্য অর্জন করে।৩১
গ। আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াত লাভ।
আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করলে হেদায়াত লাভ হয়। আল্লাহ বলেন,قُلْ
أَطِيْعُوا
اللهَ
وَأَطِيْعُوا الرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ وَإِنْ تُطِيْعُوْهُ تَهْتَدُوْا- বল, তোমরা
আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর।
অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে তার দায়িত্বের জন্য তিনি দায়ী এবং তোমাদের দায়িত্বের জন্য তোমরা
দায়ী। আর যদি তোমরা তাঁর আনুগত্য কর তাহলে
তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হবে।৩২
ঘ। জান্নাতে প্রবেশ করা। আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করলে জান্নাত লাভ হয়, যা মুমিনের চূড়ান্ত লক্ষ্য।
সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই মুমিন সদা সচেষ্ট থাকে।
আল্লাহ বলেন, وَمَنْ
يُطِعِ
اللهَ
وَرَسُولَهُ
يُدْخِلْهُ
جَنَّاتٍ
تَجْرِيْ
مِنْ
تَحْتِهَا
الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ- যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন,
যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিত হয়।
সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হলো
মহা সফলতা।৩৩
ঙ। নবী-রাসূল ও শহীদদের সান্নিধ্য লাভ। যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে
তারা পরকালে নবী-রাসূল, শহীদ, ছিদ্দীক
ও সৎকর্মশীলদের সাথে থাকবে। আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيْقًا- বস্ত্তত যে কেউ আল্লাহ ও
রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, ছিদ্দীক,
শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের সাথী হবে, যাদের
প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। আর এরাই হলেন
সর্বোত্তম সাথী।৩৪
চ। আমল নষ্ট হয়ে যাবে । এ সম্পর্কে কুরআনুল কারীমের ইরশাদ হচ্ছে-
ﻳَﺎ
ﺃَﻳُّﻬَﺎ
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ
ﺁﻣَﻨُﻮﺍ
ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ
ﺍﻟﻠَّﻪَ
ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ
ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ
ﻭَﻟَﺎ
ﺗُﺒْﻄِﻠُﻮﺍ
ﺃَﻋْﻤَﺎﻟَﻜُﻢْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের অনুসরণ কর আর নিজেদের আমল
বিনষ্ট করো না।৩৫
এই আয়াতের পূর্বাপর যোগসূত্র এবং নাযিলের পরিবেশের দৃষ্টিতে এর অর্থ দাঁড়ায়,
আনুগত্যহীনতা
সমস্ত নেক আমলকে বরবাদ করে দেয়। নবী (ﷺ)
এর পেছনে জামায়াতের সাথে নামাজ পড়েছে তারাই যখন যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ অমান্য করল,
তাদের সমস্ত আমল
ধূলায় মিশে গেল। আল্লাহ তাদেরকে মুনাফিক নামে ঘোষণা
করলেন।
ছ। রাসূল -এর অনুসরণ করা হলো
আল্লাহর ভালোবাসা লাভের পূর্বশর্ত। ইরশাদ হচ্ছে- قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ
اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ
وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘হে রাসূল আপনি বলুন, যদি
তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলেই
আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তায়ালা হলেন ক্ষমাশীল ও দয়ালু। হে রাসূল আপনি বলে দিন, আল্লাহ
ও রাসূলের আনুগত্য প্রকাশ করো।৩৬
জ। সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ
করবে তবে? হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, كُلُّ أُمَّتي يَدْخُلُونَ
الجَنَّةَ إِلَّا مَن أَبَى، قالوا: يا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَن يَأْبَى؟ قالَ: مَن أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَن عَصَانِي
فقَدْ أَبَى. আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু যে
অস্বীকার করেছে সে ছাড়া। সাহাবাগণ বললেন,
হে
আল্লাহর রাসূল! কে অস্বীকার করবে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,
যে
আমার আনুগত্য করল; সে জান্নাতে যাবে আর যে
আমার অবাধ্য হলো- সে অস্বীকার করল।৩৭
বর্ণিত হাদিসের ভাষ্য অত্যন্ত পরিষ্কার। নবী করিম (ﷺ)-এর প্রকৃত উম্মতগণ জান্নাতে যাবে, কিন্তু
যারা নবী করিম (ﷺ)-কে মানবে না অথবা অস্বীকার
করবে তাদের কী হবে? অপরদিকে যারা রাসূল (ﷺ)-কে অনুসরণ করছে তারা কতটা করবে? এ
ধরনের কিছু প্রশ্ন আমাদের সামনে আসে। সুতরাং আমরা এ সংক্রান্ত আলোচনা কোরআন-হাদিসের আলোকে
উপস্থাপন করছি।
হাদিসের প্রথম অংশ ‘আমার
সব উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে’ এ
অংশের সঙ্গে মানুষের অনেক কিছু জড়িত। তবে এ হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথমে যে বিষয়টা এসেছে তা
হলো, ‘যে
আমার আনুগত্য করল।’
এই
আনুগত্যের দাবি হলো- নবী করিম (ﷺ)
দীর্ঘ ২৩ বছরে কোরআনের যত নির্দেশনা পেয়েছেন এবং নিজের বিবেকবুদ্ধি প্রয়োগ করে যে
সব কাজ করেছেন তা সবই নিজের পরিমণ্ডলে বাস্তবায়ন করা। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সূরা হাশরের ৭ নং
আয়াতে বলেন, ‘রাসূল যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে
তিনি তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’
ঝ। রাসূলের বিচার না মানলে মুমিন হওয়া যাবে না। হজরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর
আনুগত্য করার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর নির্দেশনা এসেছে কোরআনে কারিমে। নবী করিম (ﷺ)এর কোনো ফয়সালা,
নিয়মাবলী ও কার্যাবলীর ব্যাপারে সামান্যতম কোনো ভিন্নতার মনোভাব পোষণ
করলে তারা মুমিন হিসেবে গণ্য হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ
بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ
وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ‘না, হে
মুহাম্মদ! তোমার রবের কসম, এরা কখনও মুমিন হতে পারে
না, যতক্ষণ এদের পারস্পরিক মতবিরোধের ক্ষেত্রে এরা তোমাকে
ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নেবে, তারপর তুমি যা ফায়সালা
করবে তার ব্যাপারে নিজেদের মনের মধ্যে যেকোনো প্রকার কুণ্ঠা ও দ্বিধার স্থান দেবে
না, বরং সর্বান্তকরণে মেনে নেবে।৩৮
২০।
উপসংহার। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষের কাজ হলো তার
ইবাদত ও আনুগত্য প্রকাশ করা। মহান স্রষ্টা মানুষের মাঝে হাত,
পা, চোখ, মুখ, নাক, কান, জিহ্বাসহ
অগণিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন। এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কারণে আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা। আনুগত্যশীল বান্দার সফলতা হচ্ছে জান্নাত।
তথ্যসূত্র
১। সূরা নিসা-৫৯
২। মুসলিম-৪০৭৪;
মিশকাত-৩৬৬৬
৩। সূত্র: সংসদ বাংলা অভিধান
৪। আল-মুজামুল ওয়াফি
৫। লুক-২/৫১;ইফি-৬/১
৬। ইয়াজুর বেদ,অধ্যায়-৪০,ধারা-৯
৭। সূরা আনআম-১৬২
৮। সুরা বাকারা : আয়াত ২০৮
৯। তফসীরে রুহুল মাআনি
১০। সূরা ইমরান-১০২
১১। ইবন কাসীর
১২। বুখারি-৭১৪৩; মুসলিম-১৮৪৯
১৩।
সূরা আহযাব-৪৮
১৪। সূরা ফুরকান-৫২
১৫। সূরা আলে ইমরান-১০০
১৬। সূরা আনআম-১১৬
১৭। সূরা কলম-৮
১৮। কলম-১০
১৯। সূরা কাহ্ফ-২৮
২০। সূরা আহযাব-৩৬
২১। সূরা আলে ইমরান-১০০
২২। বাকারা-২১৭
২৩। সূরা নিসা-১৪
২৪। সূরা মুহাম্মাদ-৩২
২৫। সূরা নিসা-৫৯
২৬। সূরা লোকমান-১৫
২৭। সূরা আশ-শুআরা-১৫০
২৮। সূরা নিসা-৮০
২৯। সূরা আরাফ ,১১-১৩
৩০। সূরা আরাফ -১৮
৩১। সূরা আহযাব-৭১
৩২। সূরা নূর-৫৪
৩৩। সূরা নিসা-১৩
৩৪। সূরা নিসা-৬৯
৩৫। সূরা মুহাম্মদ-৩৩
৩৬। সূরা ইমরান-৩১
৩৭। সহিহ বুখারি-৭২৮০
৩৮। আন নিসা: ৬৫
৩৯।
সূরা নিসা-৫৯
৪০। তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন(সংক্ষিপ্ত)- ২৬০
পৃষ্ঠা, মুফতি শফি (রহ.), মাওলানা মুহিউদ্দীন
খান কর্তৃক অনূদিত
৪১। বুখারী হা/৭২৫৭; মুসলিম-১৮৪০; যাদুল মাআদ পৃঃ ৪৫০
৪২। বুখারী-৭১৪৪; মুসলিম-১৮৩৯; তিরমিজি-১৭০৭; আবু দাউদ-২৬২৬
৪৩। বুখারী ও মুসলিম
৪৪। বুখারী-২৯৫৭, ৭১৩৭; মুসলিম-১৮৩৫; মিশকাত-৩৬৬১
৪৫। মুসলিম-১৮৫১; মিশকাত-৩৬৭৪
৪৬। আন নূর: ৫১
৪৭। তওবা-১১৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৪৫:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।মুহতারাম মুফতি সাহেব,আমরা বিতির সালাত তিন রাকাত আদায় করে থাকি এক বা পাঁচ রাকাত আদায় করি না কেন?
বিতির সালাতে দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক করা কি জরুরী? শুধু মাত্র শেষ বৈঠক করে সালাম ফিরালে সালাত আদায় হবে কি?
মেহেরবানী করে ব্যাখ্যা করে জানাবেন।মা'আ সসালাম । তারিখ: ২৭/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আবুল কাসেম সিলেট থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
মুহতারাম, এ বিষয়ে
ইতোমধ্যে আলবুরহানে জিজ্ঞাসা -১২৩৪৫: শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। লিংকটি পুনরায়
শেয়ার করা হলো।
এই মাসয়ালাটির সমাধান দেখতে
এখানে ক্লিক করুন
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/11/blog-post_19.html
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৪৫:
আসসালামু
আলাইকুম মোয়াজ্জাজ মুফতি সাহেব আমার জিজ্ঞাসা হল প্রচলিত পদ্ধতি ব্যতীত আদায়ের
আর কি কি সহী পদ্ধতি আছে হাদিসে, দয়া করে জানাবেন।
جزاك الله احسن الجزاء وحياك الله وحياة طيبة
তারিখ:
২৮/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা
আনোয়ার হোসেন সিলেট থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده
ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আমরা তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা
হলো, চার মাজহাবই হক। প্রত্যেক
ইমাম নসের ভিত্তিতে মাসয়ালা ইস্তেমবাত করেছেন।
নামাজের
মৌলিক বিষয়ে মতভেদ নেই। শাখাগত মাসয়ালায় মতভেদ রয়েছে, পদ্ধতি আছে। এ বিষয়ে
কিতাবুল ফিকহি আলাল মাজহাবিল আরবা-লেখক আব্দুর রহমান আলজাযিরি , শরহি মাআনিল আসার এবং
হিদায়া কিতাবের সালাত অধ্যায়,
দেখে
নিলে ইনশাল্লাহ আপনার কাংখিত জবাব পাবেন।
চার
মাজহাব সম্পর্কে আরব আলেমদের মতামত নিম্নরূপ:
(০১) শায়েখ আব্দুল ওয়াহহাব নজদী রহঃ কে
এরা এদের মুরব্বি জ্ঞান করেন। তো তাঁর মাযহাব কি ছিল? চলুন, শুনে নিই নজদী রহঃ এর নিকট থেকেই। তিনি
লিখেছেন-
غيرهم،
لعدم ضبط مذاهب الغير؛ الرافضة، والزيدية، والإمامية، ونحوهم؛ ولا نقرهم ظاهراً
على شيء من مذاهبهم الفاسدة، بل نجبرهم على تقليد أحد الأئمة الأربعة .
অর্থ : আমরা ফিকহী
বিষয়ে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রাহ.-এর মাযহাবের অনুসারী। যারা চার ইমামের কোনো
একজনের তাকলীদ করে আমরা তাদের উপর কোনো আপত্তি করি না। কারণ (চার ইমামের মাযহাব
সংকলিতরূপে বিদ্যমান। পক্ষান্তরে) অন্যদের মাযহাব সংকলিত আকারে বিদ্যমান নেই। তবে
রাফেযী, যাইদিয়া,
ইমামিয়্যাহ
ইত্যাদি বাতিল মাযহাব-মতবাদের অনুসরণকে আমরা স্বীকৃতি দিই না। বরং তাদেরকে চার ইমামের
কোনো একজনের তাকলীদ করতে বাধ্য করি। -আদ দুরারুস সানিয়্যা ১/২৭৭
(০২) সাবেক প্রধান মুফতী বিন বায রহঃ এর
মাযহাবঃ
বিন বায রহঃ বলেন-
مذهبي في
الفقه هو مذهب الإمام أحمد بن حنبل رحمه الله.
‘ফিকহের ক্ষেত্রে আমার মাযহাব হল, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর মাযহাব’। -মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে বায ৪/১৬৬
তিনি আরো বলেছেন,
وأتباع
الشيخ محمد بن عبد الوهاب رحمه الله كلهم من الحنابلة، ويعترفون بفضل الأئمة
الأربعة و يعتبرون أتباع المذاهب الأربعة إخوة لهم في الله.
অর্থ : শাইখ
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নাজদীর অনুসারী সকলেই হাম্বলী মাযহাবের
অন্তর্ভুক্ত। তারা চার ইমামকেই অত্যন্ত শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখেন এবং চার মাযহাবের
অনুসারীদেরকে নিজেদের দ্বীনী ভাই মনে করে থাকেন। -মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে বায ৫/১৫০
(০৩) সালেহ আল ফাউজান এর মাযহাবঃ
সৌদীর প্রসিদ্ধ
আলেম শায়েখ সালেহ আল ফাউজান লিখেন,
هاهم
الأئمة من المحدثين الكبار كانوا مذهبيين، فشيخ الاسلام ابن تيمية وابن القيم كانا
حنبليين، والإمام النووي وابن حجر شافعيين، والإمام الطحاوي كان حنفيا وابن
عبدالبر كان مالكيا.
অর্থ : বড় বড়
হাদীস বিশারদ ইমামগণ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. ও
ইবনুল কায়্যিম রাহ. ছিলেন হাম্বলী,
ইবনে হাজার রাহ. ও
ইমাম নববী রাহ. ছিলেন শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। ইমাম ত্বহাবী রাহ. ছিলেন হানাফী
মাযহাবের অনুসারী। ইবনু আব্দিল বার রাহ. ছিলেন মালেকী মাযাহবের অনুসারী।
-ইয়ানাতুল মুসতাফিদ শরহু কিতাবিত তাওহীদ ১/১২
(০৪) সৌদীর প্রসিদ্ধ আলেম মুহাম্মদ বিন
সালেহ আল উসাইমিন রহঃ এর মাযহাবঃ
তিনি
লিখেছেন, সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা
পরিষদের সদস্য শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আলউছাইমীন রাহ.-এরও মাযহাব ও তাকলীদের
সমর্থনে একাধিক বক্তব্য রয়েছে। তিনি নিজের ফিকহী মাসলাকের পরিচয় দিতে গিয়ে
স্পষ্ট বলেছেন,
نحن الآن مذهبنا مذهب الامام أحمد رحمه الله.
অর্থ
: বর্তমানে আমাদের মাযহাব হল, ইমাম আহমাদ রাহ.-এর মাযহাব। -লিকাআতুল বাবিল
মাফতুহ ১২/১০০
মাযহাব মানার
প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করতে গিয়ে আরো লেখেন-
الانتماء
الى المذهب ودراسة قواعده و أصوله يعين الإنسان على فهم الكتاب والسنة.
অর্থ : কোনো
মাযহাবের সাথে সম্বন্ধযুক্ত হওয়া এবং তাঁর উসূল ও কাওয়ায়েদ অধ্যয়ন করা মানুষকে
কুরআন-সুন্নাহ বুঝতে সহায়তা করে। -মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইলে উছাইমীন ২৬/২৪৫
এছাড়া শাইখ
উছাইমীন রাহ.-এর শরাহ-ভাষ্যসহ প্রকাশিত ইবনে কুদামা মাকদীসী রাহ.-এর ‘লুমআতুল ই‘তিকাদ’
কিতাবে স্পষ্ট
লিখা আছে-
وأما
النسبة إلى إمام في فروع الدين كالطوائف الأربع فليس بمذموم، فإن الاختلاف في
الفروع رحمة، والمختلفون فيه محمودون في اختلافهم، مثابون في اجتهادهم، واختلافهم
رحمة واسعة، واتفاقهم حجة قاطعة.
অর্থ : দ্বীনের
ফুরু‘ তথা শাখাগত বিষয়ে কোনো ইমামের সাথে
সম্বন্ধ নিন্দার বিষয় নয়। যেমন চার মাযহাব। কারণ,
ফুরু‘-এর ক্ষেত্রে মতভেদ হচ্ছে রহমত। এই মতপার্থক্যকারীগণ তাদের মতপার্থক্যের
ক্ষেত্রে প্রশংসিত এবং ইজতিহাদের ক্ষেত্রে আজর ও ছওয়াবের অধিকারী। তাদের
মতপার্থক্য হল, প্রশস্ত রহমত আর তাদের মতৈক্য হচ্ছে
অকাট্ট দলীল।
ইবনে
কুদামা রা.-এর উপরোক্ত বক্তব্যকে দালিলিকভাবে প্রমাণ করতে গিয়ে শাইখ উছাইমীন
রাহ.-এর ব্যাখ্যায় লেখেন,
الفروع: جمع فرع وهو لغة : ما بني على غيره، واصطلاحًا: ما لا
يتعلق بالعقائد، كمسائل الطهارة والصلاة ونحوها.
والاختلاف فيها ليس بمذموم حيث كان صادرًا عن نية خالصة واجتهاد،
لا
عن هوى وتعصب؛ لأنه وقع في عهد النبي -صلى الله عليه وسلم- ولم
ينكره، حيث قال في غزوة بني قريظة: “لا يصلين أحد العصر إلا في بني قريظة، فحضرت
الصلاة قبل وصولهم فأخر بعضهم الصلاة، حتى وصلوا بني قريظة، وصلى بعضهم حين خافوا
خروج الوقت، ولم ينكر النبي -صلى الله عليه وسلم- على واحد منهم” رواه البخاري،
ولأن الاختلاف فيها موجود في الصحابة وهم خير القرون؛ ولأنه لا يورث عداوة ولا
بغضاء ولا تفرق كلمة.
অর্থ
: …আর পরিভাষায় ফুরু‘য়ী বা দ্বীনের শাখাগত মাসায়েল হল, যা আকীদা সম্পৃক্ত নয়, যেমন পবিত্রতা এবং নামাযের
বিভিন্ন মাসায়েল। আর এক্ষেত্রে যে মতপার্থক্য, এটা কোনো নিন্দনীয় বিষয়
নয়। যখন এর ভিত্তি হয় বিশুদ্ধ নিয়্যতের সাথে ইজতিহাদ। খেয়াল-খুশি বা অন্যায় পক্ষপাত
নয়। কারণ তা নবীযুগেও সংঘটিত হয়েছে কিন্তু তিনি এর উপর কোনো আপত্তি করেননি। যেমন
বনু কুরাইযার যুদ্ধের সময় তিনি বললেন, তোমরা বনু কুরাইযায় আসরের নামায পড়বে। অতপর
গন্তব্যে পৌঁছার পূর্বেই আসরের সময় হয়ে গেল। একদল নামাযকে বিলম্বিত করলেন, বনী কুরায়যায় পৌঁছে
নামায পড়লেন। আর একদল সময় চলে যাচ্ছে দেখে পথিমধ্যেই নামায পড়ে নিলেন। কিন্তু
আল্লাহর রাসূল কোনো পক্ষের উপরই আপত্তি করলেন না, তিরষ্কার করলেন না। আর
তাছাড়া এধরনের মতপার্থক্য তো সাহাবীদের মাঝেও হয়েছে। আর তারা হলেন এ উম্মতের
সর্বোত্তম শ্রেণী। আর এই মতপার্থক্য উম্মাহর মাঝে কোনোরূপ হিংসা-বিদ্বেষ বা অনৈক্য
সৃষ্টি করেনা। -শরহু লুমআতুল ই‘তিকাদ পৃষ্ঠা ১৬৪
সারকথা, সকল ইমামের বাতলানো
মাসয়ালা কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক।
والله اعلم بالصواب
উত্তর
প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৪৭:
আসসালামু আলাইকুম।
মৃত্যু ও পরকাল সম্পরক ক্লাস কারো নিকট
থাকলে শিয়ার করুন প্লিজ। তারিখ: ২৯/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সাইফুল নোয়াখালী থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
ciKvj ev AvwLivZ
الحمد لله رب العالمين, والصلوة والسلام علي رسوله الكريم وعلي اله واصحابه
اجمعين- امَّا بعد-
AvR Bs‡iRx ...........gv‡mi
.............ZvwiL Ges Aviex..........gv‡mi .........RygyÔAv|
f~wgKv
ciKvj kãwU evsjv, hvi Aviex cÖwZkã nj
AvwLivZ| AvwLivZ Ò mK‡ji c‡i, me©‡kl, mgvwß, cieZ©x Z_v ciKvj|
g„„„„„„„„„„„„„„„„„„„„„Zz¨i ci †_‡K RvbœvZ ev Rvnvbœv‡g cÖ‡ek Kiv ch©š— G
mgqUzKz‡K ejv nq AvwLivZ| AvwLiv‡Zi we¯—„wZ mxgvnxb| ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb,
عن المستورد بن
شداد قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول : " والله ما الدنيا في
الآخرة إلا مثل ما يجعل أحدكم أصبعه في اليم فلينظر بم يرجع " . رواه مسلم
ÒAvwLiv‡Zi Zzjbvq c„w_exi
`„óvš— nj †Zvgv‡`i †KD Zvi GKwU Av½yj mgy‡`ª Wyev‡j hZUzKz cvwb m‡½ wb‡q
Av½yjwU wd‡i Gj (†mUv nj `ywbqv Avi †h cvwb i‡q †Mj †mUv nj AvwLivZ)|ÕÕ
-gymwjg; wZiwghx-2493
g„Zy¨ t
g„Zy¨i ga¨ w`‡q AvwLiv‡Zi m~ÎcvZ nq|
GKRb e¨w³i `ywbqvex Rxe‡bi mgvwß Kvhµg‡K g„Zy¨ e‡j| cÖ‡Z¨‡Ki Rb¨ g„Zy¨ Awbevh©|
Avjvn ZvÔAvjv e‡j‡Qb,
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ
الْمَوْتِ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ-(سورة العنكبوت-57)
ÒcÖ‡Z¨K cÖvYxB g„Zz¨i ¯^v`
MÖnY Ki‡e, AZtci †Zvgiv Avgvi w`‡KB cÖZ¨veZ©b Ki‡e|ÕÕ -m~iv AvbKveyZ t 57
أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي
بُرُوجٍ مُّشَيَّدَة ٍ﴿النساء: ٧٨﴾
ÒZvgiv †hLv‡bB _vK bv †Kb; g„Zz¨ wKš—y †Zvgv‡`i‡K cvKovI
Ki‡eB| hw` †Zvgiv my`„p `~‡M©i †fZ‡iI Ae¯’vb Ki, ZeyI|Ó -m~iv wbmv t 78
قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ ﴿الجمعة: ٨﴾
Òejyb, †Zvgiv †h g„Zz¨ †_‡K
cjvqbci, †mB g„Zz¨ Aek¨B †Zvgv‡`i gyLvgywL n‡e|Ó -m~iv RygyÕAv t 8
ïay ZvB bq g„Zz¨ Zvi wba©vwiZ
mg‡qB Avm‡e| GK gyûZ© AMÖMvgx wKsev GK gyûZ© wej¤^ NU‡e bv| Avjvn ZvÔAvjv
e‡j‡Qb,
لِكُلِّ
أُمَّةٍ أَجَلٌ إِذَا جَاء أَجَلُهُمْ فَلاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ ﴿يونس: ٤٩﴾
ÒcÖ‡Z¨KwU m¤cÖ`v‡qi Rb¨ (g„Zz¨i) wbav©wiZ mgq i‡q‡Q, hLb
†mB wba©vwiZ mgq G‡m hv‡e ZLb GK gyûZ© Zv AMÖMvgxI Kiv n‡e bv Ges GK gyûZ©
wej¤^I Kiv n‡e bv|ÕÕ -m~iv BDbyQ t 49
Avgv‡`i mevB fvj g„Zy¨i †PóvB _vK‡Z n‡e| fvj g„Zy¨i Dcvq m¤ú‡K© ivm~jyjvn
ﷺ e‡j‡Qb,
وعن أنس قال : قال رسول الله صلى الله عليه و
سلم : " إن الصدقة لتطفئ غضب الرب وتدفع ميتة السوء " . رواه الترمذي
Ò`vb-m`Kv Avjvni †µva‡K cÖkwgZ
K‡i Ges Lvivc g„Zy¨ †iva K‡i|ÕÕ -wZiwghx
ivm~jyjvn ﷺ Av‡iv e‡j‡Qb,
اقل الذنوب يهن عليك الموت
Ò¸bvn Kg Ki, Zvn‡j g„Zy¨ mnR
n‡e| -evBnvKx
Kei Rxeb Z_v Avj‡g eihL
g„Zz¨i ci ‡_‡K ïi“ K‡i wmsMvi Z…Zxq
dzurKvi ch©š— mgq‡K gvby‡li Kei Rxeb Z_v Avj‡g eihL e‡j| Avjvn ZvÔAvjv e‡j‡Qb,
وَمِن
وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ-(المومنون-100)
ÒAvi Zv‡`i g„Zz¨i
ci cybi“Ìvb ch©š— i‡q‡Q GKwU evihvL|ÕÕ gywgbyb-100)
عَن الْبَرَاءِ
بْنِ عَازِبٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:
«وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَهُ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ
رَبِّيَ اللَّهُ فَيَقُولَانِ لَهُ مَا دِينُكَ فَيَقُولُ ديني الْإِسْلَام
فَيَقُولَانِ لَهُ مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ قَالَ فَيَقُول
هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولَانِ وَمَا
يُدْرِيكَ فَيَقُولُ قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ (رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ÒnhiZ eviv Be‡b Av‡he (ivt)
m~‡Î ivm~jyjvn ﷺ †_‡K ewY©Z, wZwb e‡j‡Qb, (gywgb ev›`v‡`i‡K hLb Ke‡i ivLv nq
ZLb) Zvi Kv‡Q `yÕRb †d‡ikZv Av‡m Ges Zv‡K emvq| Zvici Zv‡K wR‡Ám K‡i, †Zvgvi ie
†K? †m DËi †`q, Avgvi ie Avjvn| Zvici wR‡Ám K‡i †Zvgvi Øxb wK? †m Dˇi e‡j
Avgvi Øxb n‡”Q Bmjvg| Zvici Avevi wR‡Ám K‡i, G †jvKwUi e¨vcv‡i †Zvgvi wK aviYv,
hv‡K †Zvgv‡`i g‡a¨ bex wn‡m‡e †cÖiY Kiv n‡qwQj? DËi †`q, wZwb Avjvni mZ¨
ivm~j| †d‡ikZvØq ZLb e‡jb, Zzwg wKfv‡e Rvb‡j †h wZwb Avjvni ivm~j? †m ej‡e,
Avwg Avjvni wKZve c‡owQ (†h wZwb Avjvni ivm~jyjvn), ZvB Avwg Zvui cÖwZ Cgvb
G‡bwQ Ges Zvu‡K mZ¨ bex e‡j †g‡b wb‡qwQ|ÕÕ -Ave~ `vD`-4755
Ke‡ii
mIqvj-Reve t
gvbyl‡K Kei †`qvi ¶wYK c‡iB Zv‡K
KwZcq welq wRÁvmvev` Kiv n‡e| wRÁvmvev‡`i wfwˇZ Kei †_‡KB D³ e¨w³ Zvi K‡g©i
wKQy bgybv †c‡Z _vK‡e| fvj Avgj`vi n‡j myL-kvwš—, Avivg-Av‡qk BZ¨vw`, Avi e`Kvi
n‡j Avhve Z_v kvw¯—|
وافتحوا له بابا إلى الجنة وألبسوه من
الجنة
ÒZvi Rb¨
Rvbœv‡Zi weQvbv wewQ‡q `vI, Zv‡K Rvbœv‡Zi †cvkvK cwo‡q `vI|ÕÕ -Ave~ `vD`-4755
Kei n‡jv
AvwLiv‡Zi cÖ_g Gwhj t
وعن عثمان رضي
الله عنه أنه إذا وقف على قبر بكى حتى يبل لحيته
فقيل له تذكر الجنة والنار فلا تبكي وتبكي من
هذا فقال إن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : " إن القبر أول منزل من
منازل الآخرة فإن نجا منه فما بعده أيسر منه وإن لم ينج منه فما بعده أشد منه قال
وقال رسول الله صلى الله عليه و سلم ما رأيت منظرا قط إلا القبر أفظع منه " .
رواه الترمذي وابن ماجه . وقال الترمذي هذا حديث غريب
ÒAvwLiv‡Zi
gwÄjmg~‡ni g‡a¨ cÖ_g gwÄj nj Kei| G gwÄj n‡Z hw` †KD gyw³ jvf Ki‡Z cv‡i, Zvn‡j
cieZx© gwÄjmg~n Zvi c‡¶ mnR n‡q hv‡e| Avi hw` †KD G‡Z cwiÎvb bv cvq Z‡e cieZ©x
gwÄj¸‡jv Zvi Rb¨ AviI AwaK KwVb n‡q co‡e|ÕÕ -wZiwghx-2478
ivm~jyjvn ﷺ Av‡iv e‡j‡Qb,
قال رسول الله
صلى الله عليه و سلم : " إنما القبر روضة من رياض الجنة أو حفرة من حفر النار
" . رواه الترمذي
ÒKei nqZ Rvbœv‡Zi GKwU evMvb
A_ev Rvnvbœv‡gi GKwU MZ©, G Qvov Avi wKQyB bq|ÕÕ -wZiwghx-2648
النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا وَيَوْمَ
تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ ﴿غافر: ٤٦﴾
ÒmKv‡j I mܨvq Zv‡`i‡K AvMy‡bi
mvg‡b †ck Kiv nq Ges †hw`b †KqvgZ msNwUZ n‡e, †mw`b Av‡`k Kiv n‡e, †divDb
†Mv·K KwVbZi Avhv‡e `vwLj Ki|Ó -m~iv Mvwdi t 46
k¡cl
Lhl A¡k¡h qh e¡ x AhnÉ LuL ®nËZ£l j¡e¤ol Lhl ®L¡e fËL¡l
¢S‘¡p¡h¡c ¢Lwh¡ ®L¡e A¡k¡h ®cu¡ qh e¡z
fËbja x k¡l¡ nq£c a¡cl Lhlz H fËpwN l¡p§m¤mÔ¡qÚ (p¡x) hme,
2502
-عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ
: « كُلُّ الْمَيِّتِ يُخْتَمُ عَلَى عَمَلِهِ إِلاَّ الْمُرَابِطَ فَإِنَّهُ
يَنْمُو لَهُ عَمَلُهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
وَيُؤَمَّنُ
مِنْ فَتَّانِ الْقَبْرِ ».
ÒcÖ‡Z¨K
g„Z e¨w³iB Avgj LZg n‡q hvq, wKš‘ knx`MY e¨wZZ, Avjvn ZvÔAvjv Zv‡`i Avgj‡K
wKqvgZ ch©š— e„w× K‡ib Ges Zv‡`i‡K Ke‡ii Avhve †_‡K wbivc‡` iv‡Lb|ÕÕ -Ave~
`vD`-2502
¢àa£ua x k¡cl jªa¤É Hje ¢ce quR ®k ¢ce Hj¢eaC Lhll
A¡k¡h hå b¡L, ®kje öœ²h¡l ¢ce h¡ l¡az H fËpwN
ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb,
وعن عبد الله بن عمرو قال :
قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : " ما من مسلم يموت يوم الجمعة أو ليلة
الجمعة إلا وقاه الله فتنة القبر " . رواه أحمد والترمذي وقال : هذا حديث
غريب وليس إسناده بمتصل
Ò†h gymjgvbB RygyÔAvi w`b
A_ev RygyÔAvi iv‡Z g„Zz¨eiY K‡i Avjvn ZvÔAvjv Zv‡KB Ke‡ii wdZbv (Avhve) †_‡K
i¶v K‡ib|ÕÕ -wZiwghx-1095, hvbvhv Aa¨vq)
Lhll
A¡k¡hl L¡lZ pj§q x Lhl A¡k¡hl EmÔM k¡NÉ L¡lZl jdÉ qa LuL¢V
¢eÇÀ hZÑe¡ Ll¡ qm¡x
(1) D¤§³ ¯’v‡b ‡ckve A_ev †ckve †_‡K h_vh_ cweÎ bv nIqv t
ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb,
أَكْثَرُ عَذَابِ
الْقَبْرِ مِنَ الْبَوْلِ-(ابن ماجه-375‘ كتاب الطهارة
وسننها)
Òwmsn fvM Kei Avhv‡ei KviYB
nj ‡ckve †_‡K cweÎZv AR©b bv Kiv|ÕÕ -Be‡b gvRvn-375, cweÎZv I Bnvi mybœZ Aa¨vq)
(2) MxeZ ev †PvMj‡Lvix Kiv, nv`xm kix‡d e‡j‡Qb,
وعن ابن عباس
قال مر النبي صلى الله عليه و سلم بقبرين فقال إنهما ليعذبان وما يعذبان في كبير
أما أحدهما فكان لا يستتر من البول - وفي رواية لمسلم : لا يستنزه من البول - وأما
الآخر فكان يمشي بالنميمة ثم أخذ جريدة رطبة فشقها نصفين ثم غرز في كل قبر واحدة
قالوا يا رسول الله لم صنعت هذا قال لعله يخفف عنهما ما لم ييبسا
GK`v Òivm~jyjvn ﷺ `yÕwU Ke‡ii cvk w`‡q hvIqvi mgq ej‡jb: G
`yÕ e¨w³‡K kvw¯— †`qv n‡”Q| †Kvb eo ¸bv‡ni Kvi‡Y Zv‡`i kvw¯— n‡”Q bv| Z‡e n¨vu!
welqUv eoB| Zv‡`i GKRb †PvMjLyix K‡i †eovZ| Avi Ab¨ Rb †ckv‡ei mgq c`©v KiZ
bv|ÕÕ -D¤§y³ ¯’v‡b †ckve KiZ A_ev †ckv‡ei mgq G‡¯—Äv KiZ bv)| AZtci wZwb Mv‡Qi
Zi“ZvRv GKwU Wvj wb‡q Zv‡K `ywU fvM Ki‡jb Ges cÖwZ Ke‡i GKwU K‡i cyu‡Z w`‡jb|
Gi KviY m¤ú‡K© Zvu‡K wR‡Ám Kiv n‡j wZwb ej‡jb: nqZ G kvLv `ywU my‡L hvIqv ch©š—
Zv‡`i kvw¯— GKUz nvjKv Kiv n‡e|ÕÕ -eyLvix-1376, hvbvhv Aa¨vq)
(3) wejvc K‡i Kvu`v t
ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb,
عن المغيرة بن
شعبة قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول : " من نيح عليه فإنه
يعذب بما نيح عليه يوم القيامة " )
Òg„‡Zi Rb¨ †h wejvc Kiv nq
Zvi Rb¨ Zv‡K Ke‡i kvw¯— †`qv nq|ÕÕ -eyLvix-1304, hvbvhv Aa¨vq)
Bjxb I wm¾xb
Bwjq¨xb k‡ãi A_© D”PZv| Bnv mßg AvKv‡k Avi‡ki wb‡Pi GKwU
¯’v‡bi bvg| G‡Z gywgb‡`i iƒn I Avgjbvgv ivLv nq hv ‰bKU¨kxj †d‡ikZvMY †ndvhZ
K‡i _v‡Kb|
كَلَّا إِنَّ كِتَابَ الْأَبْرَارِ
لَفِي عِلِّيِّينَ * وَمَا
أَدْرَاكَ مَا عِلِّيُّونَ *كِتَابٌ مَّرْقُومٌ *
يَشْهَدُهُ الْمُقَرَّبُونَ ﴿المطففين: ٢١- ١٨﴾
ÒKLbI bv, wbðq mr‡jvK‡`i Avgjbvgv Av‡Q Bwjq¨x‡b| Avcwb Rv‡bb Bwjq¨xb wK?
GUv wjwce× LvZv| Avjvn&i ‰bKU¨cÖvß †d‡ikZvMY G‡K
cÖZ¨¶ K‡i| - p§l¡ j¤a¡gÚ¢gg£e x 19-21
wm¾xb A_© wPi¯’vqx K‡q`| GUv we‡kl
GKwU ¯’v‡bi bvg| G‡Z Kvwdi‡`i iƒn _v‡K Ges G‡ZB Zv‡`i Avgjbvgv ivLv nq| Avjvn
e‡j‡Qb,
كَلَّا إِنَّ
كِتَابَ الْفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٍ وَمَا أَدْرَاكَ مَا سِجِّينٌ كِتَابٌ
مَّرْقُومٌ ﴿المطففين:
٧-
٩﴾
ÒGUv
wKQy‡ZB DwPZ bq, wbðq cvcvPvix‡`i Avgjbvgv wm¾x‡b Av‡Q| Avcwb Rv‡bb, wm¾xb wK? GUv wjwce× LvZv|Ó gyZvd&wdwdb t 7-9|
أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا
خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا
تُرْجَعُونَ ﴿المؤمنون: ١١٥﴾
Ò†Zvgiv
wK aviYv Ki †h, Avwg †Zvgv‡`i‡K Ab_©K m„wó K‡iwQ Ges †Zvgiv Avgvi Kv‡Q wd‡i
Avm‡e bv? Ó -m~iv
gywgb~b t 115
قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِي أَنشَأَهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌ
﴿يس: ٧٩﴾
Òejyb, whwb
cÖ_gevi †mMy‡jv‡K m„wó K‡i‡Qb, wZwbB RxweZ Ki‡eb| wZwb me©cÖKvi m„wó m¤c‡K©
mg¨K AeMZ|Ó -m~iv Bqvmxb t 79
أَوَلَيْسَ الَّذِي خَلَقَ
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِقَادِرٍ عَلَىٰ أَن يَخْلُقَ مِثْلَهُم بَلَىٰ وَهُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيمُ ﴿يس: ٨١﴾
Òwhwb
b‡fvgÛj I f~gÛj m„wó K‡i‡Qb, wZwbB wK Zv‡`i Abyiƒc m„wó Ki‡Z m¶g bb? n¨uv wZwb
gnvmªóv, me©Á|Ó -m~iv Bqvmxb t 81
wKqvgZ ev cybi“Ìvb
cvw_©e
Rx‡›`Mxi mgvwß Ges cvi‡jŠwKK Rx‡›`Mxi m~Îcv‡Zi ga¨Lv‡b wmsMvq `ywU dzurKvi †`qv
n‡e| cÖ_g dzurKv‡i mKj gvbyl fxZ-mš¿¯— n‡q Ávb nvwi‡q †dj‡e Ges ci¶‡Y mK‡jB
g„Zz¨eiY Ki‡e GgbwK ZLb Avjvn ZvÔAvjv e¨wZZ †KD Avi RxweZ _vK‡e bv| Gici wØZxq
AviI GKwU dzurKvi †`qv n‡e| ZLb mg¯— Keievmx Kei †_‡K D‡V nZwenej n‡q wKQy¶Y
`vuwo‡q _vK‡e Zvici nvk‡ii gq`v‡bi w`‡K QyU‡Z _vK‡e| G Kvh©µg‡KB e‡j wKqvgZ ev
cybi“Ìvb| Avjvn ZvÔAvjv e‡jb,
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي
الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَىٰ فَإِذَا هُمْ
قِيَامٌ يَنظُرُونَ ﴿الزمر:
٦٨﴾
ÒwksMvq dyuyK †`qv n‡e, d‡j Avmgvb
I hgx‡b hviv Av‡Q mevB †enyuk n‡q hv‡e, Z‡e Avjvn& hv‡K BPQv K‡ib| AZ:ci
Avevi wksMvq dzuK †`qv n‡e, Zr¶Yvr Zviv `Ûvqgvb n‡q †`L‡Z _vK‡e|Ó -m~iv hygvi t 67
f¤el¦›¡e fËp‰ l¡p§m¤mÔ¡qÚ (p¡x) hme,
وعن أبي سعيد
الخدري أنه لما حضره الموت . دعا بثياب جدد فلبسها ثم قال : سمعت رسول الله صلى
الله عليه و سلم يقول : " الميت يبعث في ثيابه التي يموت فيها " . رواه
أبو داود
Òg„Z
e¨w³iv Zv‡`i Kei †_‡K †mB Kvc‡iB DV‡e †h Kvc‡o Zvi g„Zy¨ n‡qwQj|ÕÕ -Ave~
`vD`-3116
nvki
Aviex‡Z nvki k‡ãi A_© nj GKwÎZ Kiv ev
Rgv Kiv| A_©vr c„w_ex Pzovš—fv‡e aŸsm n‡q hvIqvi ci wnmve-wbKv‡ki Rb¨
ev›`v‡`i‡K GKwU we‡kl gq`v‡b cybivq GKwÎZ Kiv‡K nvki e‡j| G we‡kl gq`vbwU
Avgv‡`i emev‡mi G c„„w_exB| Avjvn e‡j‡Qb,
وَإِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ ﴿الإنشقاق:
٣﴾
ÒGes hLb c„w_ex‡K m¤cÖmvwiZ Kiv
n‡e|ÕÕ -m~iv BbwkK¡vK¡ t 3
A¡mÔ¡qÚ
a¡u¡m¡ A¡l¡ hme,
فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا * لَّا
تَرَىٰ فِيهَا عِوَجًا وَلَا أَمْتًا ﴿طه: ١٠٦- ١٠٧﴾
ÒAZ:ci c„w_ex‡K gm„Y mgZjf~wg
K‡i Qvo‡eb| Zzwg Zv‡Z †gvo I wUjv †`L‡e bv|ÕÕ -m~iv
Z¡-nv t 106-107
nvk‡ii
gq`v‡bi Dcw¯’wZUv Kg©‡f‡` G‡KK gvby‡li G‡KK iK‡gi n‡e| ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb,
قال رسول الله صلى الله عليه و سلم :
" يحشر الناس يوم القيامة ثلاثة أصناف : صنفا مشاة وصنفا ركبانا وصنفا على
وجوههم " قيل : يا رسول الله وكيف يمشون على وجوههم ؟ قال : " إن الذي
أمشاهم على أقدامهم قادر على أن يمشيهم على وجوههم أما إنهم يتقون بوجوههم كل حدب
وشوك " . رواه الترمذي
Ò‡jv‡Kiv wZb †kªYx‡Z wef³ n‡q nvk‡ii gq`v‡b Dcw¯’Z n‡e|
(1) cÖ_g †kªYx n‡e c`eª‡R, (2) wØZxq †kªYx n‡e Av‡ivnx Ges (3) Z…Zxq †kªYx n‡e
gy‡Li Dci fi K‡i| wRÁvmv Kiv nj, †n Avjvni ivm~j! ﷺ gvbyl wKfv‡e gy‡Li Dci fi K‡i Pj‡e? wZwb ej‡jb: whwb Zv‡`i‡K
cv‡q fi K‡i nvuUv‡Z m¶g, wZwb Zv‡`i‡K gy‡Li Dci fi K‡iI nvuUv‡Z m¶g Ges H fv‡e
†nu‡UB Zviv wb‡R‡`i‡K wewfbœ KvuUv I ¶wZKi `ªe¨ †_‡K AvZ¥i¶v Ki‡e|ÕÕ
-wZiwghx-3435
H fËp‰ l¡p§m¤mÔ¡qÚ (p¡x) A¡l¡
hme,
وعن عائشة قالت : سمعت رسول الله صلى الله عليه
و سلم يقول : " يحشر الناس يوم القيامة حفاة عراة غرلا " . قلت : يا
رسول الله الرجال والنساء جميعا ينظر بعضهم إلى بعض ؟ فقال : " يا عائشة
الأمر أشد من أن ينظر بعضهم إلى بعض " . متفق عليه
ÒwKqvg‡Zi w`b †jvK‡`i Lvwj cv, DjsM kixi Ges LvZbvnxb Ae¯’vq mg‡eZ Kiv n‡e|
Avwg wR‡Ám Kijvg, Bqv ivm~jyjvn! mg¯— bvix-cyi“l GKmv‡_? Zviv †Zv G‡K Aci‡K
†`L‡Z _vK‡e? wZwb ej‡jb; †n Av‡qkv! gvbyl hv Kíbv K‡i †mw`‡bi cwiw¯’wZ Zvi
†P‡qI fqven iƒc aviY Ki‡e| Aci GK eY©bvq Av‡Q, gvbyl G‡K Ac‡ii w`‡K ZvKv‡e,
†mw`‡bi Ae¯’‡Zv Gi †P‡qI fqven n‡e|ÕÕ -gymwjg-7377
إذا كان يوم القيامة أدنيت الشمس من
العباد حتى تكون قيد ميل او اثنين قال سليم لاأدري أي الميلين عنى ؟ أمسافة الأرض
أم ميل الذي تكتحل به
العين قال فتصهرهم الشمس
فيكونون في العرق بقدر أعمالم فمنهم من يأخذه إلى عقبيه ومنهم من يأخذه إلى ركبتيه
ومنهم من يأخذه إلى حقويه ومنهم من يلجمه إلجاما فرأيت رسول الله صلى الله عليه و
سلم يشير بيده إلى فيه أي يلجمه إلجاما
ÒhLb wKqvg‡Zi w`b Avm‡e ZLb m~h©‡K ev›`v‡`i Ggb wbKeZx© Kiv n‡e †h Zv Zv‡`i gv_vi GK
A_ev `yÕ gvBj Dc‡i Ae¯’vb Ki‡e| m~h© Zv‡`i‡K DËß Ki‡e AZtci Zviv Zv‡`i Avgj
Abyhvqx Zv‡`i Nv‡g nveyWyey Lv‡e| KviI Nvg n‡e UvLby ch©š—, KviI n‡e nvuUz
ch©š—, KviI n‡e †Kvgi ch©š— Ges †KD gyL ch©š— (bexwR Ckviv K‡i gyL ch©š—
†`Lv‡jb) Nv‡g Ae¯’vb Ki‡e|ÕÕ -wZiwghx-2680
nvD‡R KvImvi
cÖ‡Z¨K bexi Rb¨ GKwU SY©v _vK‡e hv †_‡K
Zvuiv wbR wbR wccvmvZ© D¤§Z‡K cvwb cvb Kiv‡eb Ges SY©vq cvbKvix‡`i msL¨v wb‡q
Zvuiv Me© cÖKvk Ki‡eb| Avgv‡`i bexi †mB SY©vwUi bvg nj nvD‡R KvImvi| Avjvn ZvÔAvjv e‡j‡Qb,
إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ﴿الكوثر:
١﴾
Òwbðq Avwg Avcbv‡K `vb K‡iwQ
KvImvi|ÕÕ -m~iv KvImvi t 1
ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb,
إِنَّ لِكُلِّ
نَبِيٍّ حَوْضًا
وَإِنَّهُمْ يَتَبَاهَوْنَ أَيُّهُمْ أَكْثَرُ وَارِدَةً وَإِنِّي أَرْجُو
أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ وَارِدَةً-(ترمذى-2631‘ كتاب صفة القيامة و الرقائق و
الورع)
ÒcÖ‡Z¨K bexi
Rb¨ GKwU SY©v _vK‡e, Zviv Zv‡`i SYv©q cvbKvix‡`i msL¨vi AvwaK¨ wb‡q Me©‡eva
Ki‡eb| Avwg Avkv Kwi †h Avgvi SY©vq cvbKvix‡`i msL¨v n‡e AwaK|ÕÕ -eyLvix-2631
nvI‡R
KvImv‡ii cwiPq m¤ú‡K© ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb,
سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلعم مَا الْكَوْثَرُ قَالَ " ذَاكَ نَهْرٌ
أَعْطَانِيهِ اللَّهُ (يَعْنِي فِي الْجَنَّةِ)
أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ-(ترمذى-2738‘ كتاب
صفة الجنة)
Òivm~jyjvn
ﷺ †K GKevi cÖkœ Kiv n‡qwQj †h nvD‡R KvImvi
Kx? wZwb e‡jwQ‡jb: GwU Ggb GKwU bni hvi cvbxq `y‡ai †P‡qI mv`v Ges gayi †P‡qI
wgwó|ÕÕ -wZiwghx-2738
wePvi
ev wnmve-wbKvk MÖnY
nvk‡ii
gq`v‡b mg‡eZ Kivi ci ev›`v‡`i wePviKvh© Avi¤¢ n‡q hv‡e| Avjvn ZvÔAvjv e‡j‡Qb,
إِنَّ
إِلَيْنَا إِيَابَهُمْ-ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ {سورة الغاشية-25/26}
Òwbðq Avgvi w`‡KB Zv‡`i cÖZ¨veZ©b,
Gici Zv‡`i wnmve MÖnY AvgviB `vwq‡Z¡|ÕÕ -m~iv Mvwkqv t 25/26)
wbi‡c¶
wePvi t
‡mw`‡bi
wePvi n‡e wbi‡c¶, KviI cÖwZ we›`ygvÎ Ryjyg Kiv n‡e bv| Avjvn ZvÔAvjv e‡j‡Qb,
الْيَوْمَ
تُجْزَىٰ كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ ۚ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَ ۚ
إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ ﴿غافر:
١٧﴾
ÒAvR‡K cÖ‡Z¨K‡K Zv‡`i K‡g©i cÖwZ`vb
cÖ`vb Kiv n‡e| KviI cÖwZ †Kvb cÖKv‡ii Ryjyg Kiv n‡e bv| Avjvn ZvÔAvjv Z¡wiZ
wn‡me MÖnYKvix|ÕÕ -m~iv gywgb t 17
wePviK
wb‡qvM t
wePviK
n‡eb ¯^qs gnvb Avjvn iveŸyj Avjvgxb| †mw`b Avmvgx‡`i c‡¶ †Kvb DwKj _vK‡e bv
eis Zviv mivmwi wePvi‡Ki m‡½ K_v ej‡e|
مَا مِنْكُمْ
مِنْ رَجُلٍ إِلاَّ سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ وَلَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ-(ترمذى-2599)
Ò†Zvgv‡`i cÖ‡Z¨‡Ki mv‡_B AwP‡iB Avjvn ZvÔAvjv K_v ej‡eb| ZLb
Zvi I Zvi ev›`v‡`i g‡a¨ †Kvb †`vfvlx
_vK‡ebv|ÕÕ -wZiwghx-2599)
(M) Avgjbvgv
n¯—vš—i
wnmve-wbKv‡ki ci cÖ‡Z¨‡Ki nv‡Z Zv‡`i
wbR wbR Avgjbvgv Z_v K‡g©i †iKW© cÖ`vb Kiv n‡e| hviv mrKg©kxj Zv‡`i Avgjbvgv
†`qv n‡e Wvb nv‡Z Ges hviv e`Kvi Zv‡`i‡K †`qv n‡e Zv‡`i evg nv‡Z| wkw¶Z Awkw¶Z
mK‡jB †mw`b Avgjbvgv cvV Ki‡Z cvi‡e| mrKg©kxj‡`i Avgjbvgv cÖms‡M KziAv‡b i‡q‡Q,
فَأَمَّا مَنْ
أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ هَاؤُمُ اقْرَؤُوا كِتَابِيهْ - إِنِّي
ظَنَنتُ أَنِّي مُلَاقٍ حِسَابِيهْ - فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَّاضِيَةٍ - فِي جَنَّةٍ
عَالِيَةٍ
ÒAvi
hv‡`i Avgjbvgv Zv‡`i Wvb nv‡Z cÖ`vb Kiv n‡e, †m ZLb Avb‡›`-Avnjv‡` ej‡e †`L!
Avgvi wKZve †Zvgiv cvV Ki| Avwg RvbZvg †h Avgv‡K GKevi wn‡me-wb‡K‡ki mv¶vZ n‡Z
n‡e| AZtci ‡m mš‘wóc~Y© Rxeb jvf Ki‡e, DyuPz Rvbœv‡Z|ÕÕ -m~iv nv°vn t 19-22
Acivax‡`i
Avgjbvgv m¤ú‡K© KziAv‡b i‡q‡Q,
وَأَمَّا مَنْ
أُوتِيَ كِتَابَهُ بِشِمَالِهِ فَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُوتَ كِتَابِيهْ -
وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيهْ - يَا لَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ -(سورة
الحاقة-19-27)
ÒAvi
hv‡`i Avgjbvgv Zvi evg nv‡Z Ac©b Kiv n‡e ZLb †m ej‡e nvq Avd‡mvm! Avgv‡K hw` G
AvgjbvgvUv bv †`qv nZ! Avi Zvi wn‡me-wb‡Kk hw` Avwg bv AeMZ nZvg!|ÕÕ -m~iv
nv°vn t 23-27
(K) mv¶x e¨e¯’vcbv
‡mw`b wewfbœ Acivax‡`i Aciva cÖgv‡Yi Rb¨ Avjvn ZvÔAvjv
mv¶x Dcw¯’Z Ki‡eb| wZb ai‡Yi mv‡¶¨i wfwˇZ gvby‡li Aciva cÖgvY Kiv n‡e| KLbI
KLbI bexMYB Zv‡`i wbR wbR D¤§‡Zi e¨vcv‡i mv¶x cÖ`vb Ki‡eb| Avjvn ZvÔAvjv
e‡j‡Qb,
فَكَيْفَ إِذَا
جِئْنَا مِن كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَىٰ هَٰؤُلَاءِ شَهِيدًا﴿النساء: ٤١﴾
ÒAvi ZLb wK Ae¯’v `vuov‡e, hLb
Avwg †W‡K Avbe cÖwZwU D¤g‡Zi ga¨ †_‡K Ae¯’v eY©bvKvix Ges Avcbv‡K WvKe Zv‡`i
Dci Ae¯’v eY©bvKvixiƒ‡c|ÕÕ -m~iv
wbQv t 41
GQvov gvby‡li A½-cÖZ¨½ Ges hwgbI
†mw`b Zv‡`i e¨vcv‡i mv¶x cÖ`vb Ki‡e| Avjvn ZvÔAvjv e‡jb,
الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَىٰ أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا
أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ
أَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ﴿يس: ٦٥﴾
ÒAvR
Avwg Zv‡`i gy‡L †gvni Gu‡U †`e Zv‡`i nvZ Avgvi mv‡_ K_v ej‡e Ges Zv‡`i cv Zv‡`i
K…ZK‡g©i mv¶¨ †`‡e|ÕÕ -m~iv Bqvwmb t 65
A‡bK‡K †mw`b wn‡me QvovB Ae¨nwZ ‡`qv
n‡e
‡mw`b wKQy †jv‡Ki †Kvb cÖKv‡ii wn‡me
MÖnY Kiv n‡e bv, webv wn‡m‡eB Rvbœv‡Z cÖ‡ek Kiv‡bv n‡e| ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb,
يحشر الناس فى
صعيد واحد يوم القيامة فيناد مناد فيقول اين الذين كانت تتجافى جنوبهم عن المضاجع
فيقومون وهم قليل فيدخلون الجنة بغير حساب ثم يومر سائر الناس الى الحساب-(بيهقى)
Ò‡mw`b
†jvK‡`i‡K GK D¤§y³ gq`v‡b mg‡eZ Kiv n‡e, AZtci GKRb AvnevbKvix G g‡g© Avnevb
Ki‡e, hviv weQvbv †_‡K Zv‡`i cvk¦©‡`k‡K (Zvnv¾y‡`i bvgv‡Ri Rb¨) c„_K †i‡LwQ‡j
Zviv †Kv_vq? ZLb Zviv `vuwo‡q hv‡eb Aek¨ Zv‡`i msL¨v n‡e Aí| Zviv webv wn‡m‡e
Rvbœv‡Z cÖ‡ek Ki‡e, Zvici Ab¨vb¨ mKj gvbyl‡K wn‡m‡ei Rb¨ Av‡`k Kiv n‡e|ÕÕ
-evqnvKx
A‡b‡Ki mnRfv‡e wn‡me n‡e
wKQy †jv‡Ki wbKU †_‡K ‡mw`b Lye mnR wn‡me MÖnY Kiv n‡e|
عَنْ
عَائِشَةَ، قَالَتْ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي بَعْضِ صَلَاتِهِ اللَّهُمَّ حَاسِبْنِي حِسَابًا يَسِيرًا فَلَمَّا
انْصَرَفَ
قُلْتُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ مَا الْحِسَابُ الْيَسِيرُ قَالَ أَنْ يَنْظُرَ
فِي كِتَابِهِ فَيَتَجَاوَزَ عَنْه إِنَّهُ مَنْ نُوقِشَ الْحِسَابَ يَوْمَئِذٍ
يَا عَائِشَةُ هَلَكَ-(مسند احمد-23082‘ عن عائشة)
ÒnhiZ Av‡qkv (ivt) †_‡K
ewY©Z, wZwb e‡jb, Avwg ivm~jyjvn ﷺ -Gi wbKU †_‡K Zvui †Kvb †Kvb bvgv‡R `yÕAv
Ki‡Z ï‡bwQ: Ò†n Avjvn! Zywg Avgvi wbKU †_‡K mnR wnmve MÖnY KiÓ| Avwg wR‡Ám
Kijvg, Bqv ivm~jyjvn! mnR wnmve Kx? Rev‡e wZwb ej‡jb: Avjvn ZvÔAvjv Zvi
ev›`vi Avgjbvgvq `„wó w`‡eb, AZtci Zv‡K Zv ¶gv K‡i w`‡eb| GUv mnR wnmve| †n
Av‡qkv! †m w`b hvi wbKU †_‡K KovqMÛvq wnmve MÖnY Kiv n‡e, †m aŸsm n‡q hv‡e|ÕÕ
-gymbv‡` Avng`-23082
cyjwmivZ
Rvbœv‡Z hvIqvi Rb¨ Rvnvbœv‡gi Dci
GKwU †mZz ¯’vcb Kiv n‡e Zv‡KB e‡j cyjwmivZ| nvk‡ii gq`v‡bi hveZxq Kvh©µg mgvß
nIqvi ci cyjwmivZ AwZµg nIqvi cvjv Avi¤¢ n‡e| ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb,
وَيُضْرَبُ الصِّرَاطُ بَيْنَ
ظَهْرَىْ جَهَنَّمَ فَأَكُونُ أَنَا وَأُمَّتِي أَوَّلَ مَنْ يُجِيزُ وَلاَ يَتَكَلَّمُ يَوْمَئِذٍ إِلاَّ الرُّسُلُ
وَدَعْوَى الرُّسُلِ
يَوْمَئِذٍ اللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ-(مسلم-469‘ كتاب الايمان)
ÒRvnv&bœv‡gi Dci cyjwmivZ ¯’vcb Kiv n‡e| me© cÖ_g Avwg
I Avgvi D¤§Z Zv AwZµg Kie| †m w`b bex-ivm~jyjvnMY e¨wZZ Avi †KDB †Kvb K_v ej‡Z
cvi‡e bv| Avi ZvuivI kyay ej‡e, †n Avjvn! wbivc` ivLyb, wbivc` ivLyb!Ó
-gymwjg-469
cyjwmivZ n‡e AÜKviv”Qvbœ GKwU RvqMv| GLv‡b Cgvb`vi‡`i gv‡S
b~i weZiY Kiv n‡e|
يَوْمَ تَرَى
الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعَى نُورُهُم بَيْنَ أَيْدِيهِمْ
وَبِأَيْمَانِهِم بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا
الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ-(سورة
الحديد-12-13)
ÒAvcwb †mw`b †`L‡eb †h
Cgvb`vi bi-bvix‡`i mvg‡b I Wvb w`‡K Zv‡`i b~i Qy‡UvQywU Ki‡e| AvR‡K †Zvgv‡`i
Rb¨ Ggb Rvbœv‡Zi mymsev` hvi Zj‡`k w`‡q SY©vmg~n cÖevwnZ| Z_vq Zviv wPiw`b
Ae¯’vb Ki‡e, Avi HwUB nj Zv‡`i eo mdjZv|Ó -m~iv nv`x` t 12-13
nv`xm kix‡d e‡j‡Qb,
عَنْ
عَائِشَةَ، : أَنَّهَا ذَكَرَتِ النَّارَ فَبَكَتْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلعم مَا يُبْكِيكِ قَالَتْ : ذَكَرْتُ النَّارَ فَبَكَيْتُ، فَهَلْ تَذْكُرُونَ أَهْلِيكُمْ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلعم أَمَّا فِي ثَلاَثَةِ
مَوَاطِنَ فَلاَ يَذْكُرُ أَحَدٌ أَحَدًا : عِنْدَ الْمِيزَانِ حَتَّى يَعْلَمَ أَيَخِفُّ مِيزَانُهُ أَوْ يَثْقُلُ،
وَعِنْدَ الْكِتَابِ حِينَ يُقَالُ {
هَاؤُمُ اقْرَءُوا كِتَابِيَهْ }
حَتَّى يَعْلَمَ أَيْنَ يَقَعُ كِتَابُهُ أَفِي يَمِينِهِ أَمْ فِي شِمَالِهِ أَمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِهِ،
وَعِنْدَ الصِّرَاطِ
إِذَا وُضِعَ بَيْنَ ظَهْرَىْ جَهَنَّمَ-(ابو داؤد-4757‘
كتاب السنة)
ÒGKw`b
Av¤§vRvb Av‡qkv (ivt) Rvnvbœv‡gi K_v ¯§iY K‡i Kvu`wQ‡jb| ivm~jyjvn ﷺ Zvu‡K wR‡Ám Ki‡jb: wK‡m †Zvgv‡K Kvu`vj?
wZwb Reve w`‡jb, Avwg Rvnvbœv‡gi K_v ¯§iY K‡i Kvu`wQ| Avcwb wKqvg‡Zi w`b Avcbvi
cwiev‡ii m`m¨‡`i‡K ¯§iY Ki‡eb? ivm~jyjvn ﷺ ej‡jb: †R‡b †iL! wZb ¯’v‡b †KD KvD‡KB ¯§iY
Ki‡e bv (1) gxhv‡bi wbKU hZ¶Y bv †m Rvb‡Z †c‡i‡Q †h Zvi Avgj nvjKv n‡q‡Q bv
fvix n‡q‡Q| (2) Avgjbvgv n¯—vš—‡ii mgq hZ¶Y †m Rvb‡Z ‡c‡i‡Q †h Zvi AvgjbvgvUv
Zvi Wvb nv‡Z †`qv n‡”Q bv evg nv‡Z|(3) Ges cyjwmiv‡Zi wbKU hLb Zv Rvnvbœv‡gi
Dci ¯’vcb Kiv n‡e|ÕÕ -Ave~ `vD`-4757
RvbœvZ
RvbœvZ Ggb GK ¯’vb‡K ejv nq hv Avjvn
ZvÔAvjv Zvi AbyMZ ev›`v‡`i myL-kvwš—, Avivg-Av‡q‡ki Rb¨ wbw`©ó K‡i †i‡L‡Qb| Gi
wbg©vb ˆkjx I wbg©vb †KŠkj AZ¨š— g‡bvgyyyyyyyyyyyyyyyyyyyy»Ki| ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb,
لَبِنَةٌ مِنْ
فِضَّةٍ وَلَبِنَةٌ مِنْ ذَهَبٍ وَمِلاَطُهَا الْمِسْكُ الأَذْفَرُ وَحَصْبَاؤُهَا اللُّؤْلُؤُ
وَالْيَاقُوتُ وَتُرْبَتُهَا الزَّعْفَرَانُ
مَنْ يَدْخُلْهَا يَنْعَمْ وَلاَ يَبْأَسْ
وَيُخَلَّدْ وَلاَ يَمُوتْ لاَ تَبْلَى ثِيَابُهُمْ
وَلاَ يَفْنَى شَبَابُهُمْ-(ترمذى-2717‘ كتاب صفة الجنة)
ÒRvbœv‡Zi GKwU BU n‡e ¯^‡Y©i Ges GKwU BU n‡e ‡iЇc¨i, Gfv‡e
Mv_ybx †`qv n‡q‡Q| Avi wgkK n‡”Q Zvi wm‡g›U Ges gwb-gy³v I BqvKzZ cv_i n‡”Q Zvi
myiKx| †g‡S evbv‡bv n‡q‡Q RvdivY w`‡q|ÕÕ -wZiwghx-2717
أَهْلُ
الْجَنَّةِ عِشْرُونَ وَمِائَةُ صَفٍّ ثَمَانُونَ مِنْهَا مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ وَأَرْبَعُونَ مِنْ سَائِرِ
الأُمَمِ-(ترمذى-2743‘ كتاب صفة الجنة)
ÒRvbœvZevmx‡`i
GKkZ KzwowU KvZvi n‡e, Zvi g‡a¨ AvwkwU KvZvi n‡e G D¤§‡Z †gvnv¤§v`xi, Aewkó PwjkwU
n‡e Ab¨vb¨ D¤§‡Zi|ÕÕ -wZiwghx-2743
مَنْ سَأَلَ
اللَّهَ الْجَنَّةَ
ثَلاَثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ الْجَنَّةُ اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ . وَمَنِ اسْتَجَارَ مِنَ النَّارِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ
النَّارُ اللَّهُمَّ أَجِرْهُ مِنَ
النَّارِ-(ترمذى-2772‘ كتاب صفة الجنة)
Ò‡h e¨w³
Avjvn ZvÔAvjvi wbKU wZb evi RvbœvZ cÖv_©bv K‡i, ZLb RvbœvZ `yÕAv K‡i †n Avgvi
cªfy! D³ ev›`v‡K Zywg Rvbœv‡Z `vwLj KivBI| Avi †h e¨w³ wZb evi Rvnvbœvg †_‡K
cvbvn Pvq, Rvnvbœvg cÖv_©bv K‡i †n Avgvi cÖfyy! Zywg Zv‡K Rvnvbœvg †_‡K gyw³
w`I|ÕÕ -wZiwghx-2772
Rvnvbœvg
Rvnvbœvg Ggb GK ¯’vb, †hLv‡b Avjvn
ZvÔAvjv Zvi Aeva¨ I bvdigvb ev›`v‡`i‡K kvw¯— w`‡q _v‡Kb| Rvnvbœv‡gi
Av¸‡bi DËvc `ywbqvi Av¸‡bi DËvc A‡c¶v DbmËi ¸Y †ewk| ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb,
نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ
جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ " فُضِّلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا، كُلُّهُنَّ مِثْلُ
حَرِّهَا-(بخارى-3301‘ كتاب الجهاد)
Ò†Zvgv‡`i e¨eüZ Av¸‡bi DËvc,
Rvnvbœv‡gi Av¸‡bi DËv‡ci mËi fv‡Mi GK fvM gvÎ| ejv nj †n Avjvni ivm~j!
Rvnvbœvgx‡`i kvw¯— `v‡bi Rb¨ `ywbqvi Av¸‡bi ZvcB †Zv h‡_ó wQj? wZwb ej‡jb: Zv
m‡Ë¡I Rvnvbœv‡gi Av¸b‡K, `ywbqvi Av¸‡bi Dci Dnvi mgcwigvb Zvc m¤úbœ AviI DbmËi
fvM evwo‡q †`qv n‡q‡Q|ÕÕ -eyLvix-3301
Rvnvbœv‡gi `iRv cÖms‡MAvjvn ZvÔAvjv e‡jb,
لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِّكُلِّ
بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُومٌ -(سورة الحجر-44)
ÒRvnvbœv‡gi
mvZwU `iRv _vK‡e hvi cÖ‡Z¨KwUi Rb¨ mywbw`©ó †`vhLx e›Ub Kiv Av‡Q|ÕÕ -m~iv wnRi
t 44
Rvnvbœv‡gi fqvenZv m¤ú‡K©
ivm~jyjvn ﷺ e‡j‡Qb,
أُوقِدَ عَلَى
النَّارِ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى
احْمَرَّتْ ثُمَّ أُوقِدَ عَلَيْهَا أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى ابْيَضَّتْ ثُمَّ أُوقِدَ عَلَيْهَا أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى
اسْوَدَّتْ فَهِيَ سَوْدَاءُ مُظْلِمَةٌ-(ترمذى-2794‘
كتاب صفة جهنم)
ÒRvnvbœvg‡K
GK nvRvi eQi DËvc †`qv nj, d‡j Zv jvj eY© aviY Kij| AZtci Zv‡Z AviI GK nvRvi
eQi DËvc †`qv nj, d‡j Zv mv`v is aviY Kij| Gici AviI GK nvRvi eQi DËvc †`qv n‡j
Zv K…ò eY© aviY Kij, Avi †mUv nj AÜKviv”Qbœ Kvj|ÕÕ -wZiwghx-2794
wK‡m AvwLivZ‡K ¯§iY K‡i †`q
كُنْتُ
نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُزَهِّدُ فِي الدُّنْيَا
وَتُذَكِّرُ الآخِرَةَ -(ابن ماجه-1638‘ كتاب الجنائز)
ÒAvwg †Zvgv‡`i‡K cÖ_g Ae¯’vq Kei whqviZ Ki‡Z wb‡la
K‡iwQjvg, wKš‘ GLb Kei whqviZ Ki! †Kbbv, Bnv
`ywbqv †_‡K wegyL K‡i Ges AvwLivZ ¯§iY K‡i †`q|ÕÕ -Be‡b gvRvn-1638)
AvwLivZ wegyLZvi KviY t
مَنْ أَحَبَّ
دُنْيَاهُ أَضَرَّ بِآخِرَتِهِ
وَمَنْ أَحَبَّ آخِرَتَهُ أَضَرَّ بِدُنْيَاهُ فَآثِرُوا مَا يَبْقَى
عَلَى مَا
يَفْنَى-(مسند احمد-18866‘ عن ابى موسى)
Ò†h e¨w³ `ywbqv‡K gneŸZ
Ki‡e, †m Zvi ciKv‡ji we‡kl ¶wZ mvab Ki‡e| Avi †h AvwLivZ‡K gneŸZ Ki‡e, †m Aek¨B
`ywbqvi w`K ‡_‡K ¶wZMÖ¯— n‡e| AZtGe †Zvgiv ¶Y¯’vqx `ywbqv‡K cwiZ¨vM K‡i ¯’vqx I
A¶q ciKvj‡K AvuK‡o ai|ÕÕ -gymbv‡` Avng`-18866
Dcmsnvi t
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মাওলানা আব্দুর
রহমান
জিজ্ঞাসা-১২৪৪৭:
মোহতারাম,আমার প্রশ্ন হলো এভাবে শেয়ারে কুরআন
কারীম খতমের নিয়ম সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ছিল কিনা। দলীলসহ জানালে খুশি হবো। তারিখ: ২৮/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নুরুল ইসলাম খুলনা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আমরা আল-হামদুলিল্লাহ
ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসা-১৫৮ শিরোনামে আলোচনা করেছি যে, দুনিয়াবী মাকসুদ হাসিলের জন্য কুরআন খতম করা জায়েজ।
দ্বিতীয় কথা হলো, শেয়ারে কুরআন খতম তথা পারা ভাগ/বণ্টন করে খতম করা শরিয়ত সমর্থিত কি না? বিভিন্ন হাদিস/আসার এবং ফুকাহায়ে কেরামের ফতোয়া
অনুযায়ী এভাবে কুরআন খতম জায়েজ আছে। তবে আহলে হাদিস ভাইয়ের মতে বিদআত/নাজায়েজ।
দলিল:
হাদিস/আসার-০১
اقْرَءُوا عَلَى مَوْتَاكُمْ يس. رواه أحمد وأبو داود والنسائي وابن ماجه وابن حبان
والحاكم.
অর্থ: রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন- তোমরা তোমাদের মৃতদের সামনে সুরা ইয়াসীন
তিলাওয়াত করো। তাখরিজ: আহমদ হাদীস নং- ১৯৭৮৯, আবু দাউদ হাদীস নং- ৩১২১ নাসাঈ,
ইবনু মাজাহ
নোট: ইবনে হিব্বান ও হাকিম হাদীসটির সনদ সহীহ বলেছেন।
হাদিস/আসার-০২
عن ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ:
سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا مَاتَ
أَحَدُكُمْ فَلَا تَحْبِسُوهُ، وَأَسْرِعُوا بِهِ إِلَى قَبْرِهِ، وَلْيُقْرَأْ
عِنْدَ رَأْسِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَعِنْدَ رِجْلَيْهِ بِخَاتِمَةِ
الْبَقَرَةِ فِي قَبْرِهِ
অর্থ: ইবনে উমর রাযি. বলেন: রাসূল
ﷺ ইরশাদ করেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়,
তখন তাকে আটকে রেখো না, বরং দ্রুত তাকে কবরস্থ
করো। আর তার কবরের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা এবং পায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারার
শেষ অংশ তিলাওয়াত করো। তাখরিজ: আল-মুজামুল কাবীর তাবরানী,
হাদীস নং-১৩৬১৩, শুয়াবুল ঈমান বায়হাকী,
হাদীস নং- ৮৮৫৪
নোট: ইবনে হাজার রাহ. ফাতহুল বারীতে এর সনদ হাসান বলেছেন।
হাদিস/আসার-০৩
عن الشعبي، قال: كانت الأنصار
يقرؤون عند الميت بسورة البقرة.
অর্থ: শা’বী থেকে বর্ণিত, আনসার (সাহাবীগণ) মাইয়িতের কাছে
সূরা বাকারা তিলাওয়াত করতেন (অর্থাৎ ভাগ করে সম্মিল্লিতভাবে)
। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,
হাদীস নং- ১০৯৫৩
হাদিস/আসার-০৪
الأنصار اذا حضروا عند المیت قروٴا
سورة البقرة
অর্থ: আনসারীগণ যখন কোনো মায়্যিতের
কাছে উপস্থিত হতেন, তখন তারা সুরা বাকারা তিলাওয়াত করতেন৷ (আত-তিবইয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন)
উপরোক্ত হাদিস ও আসার থেকে
ইশারাতুন নস দ্বারা পারা ভাগ করে সম্মিল্লিত কুরআন খতম জায়েজ প্রমাণিত হয়।
ফকিহদের মতামত:
ইমাম ইবনে কুদামা রাহ.
সম্মিল্লিত খতম ও তিলাওয়াতের সওয়াব
রেসানির বৈধতার দলীল আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
وأنه إجماع المسلمين، فإنهم في
كل عصر ومصر يجتمعون ويقرؤون القرآن، ويهدون ثوابه إلى موتاهم، من غير نكير
এতে মুসলমানদের ইজমা আছে।
প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক শহরে তারা সমবেত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব রেসানি করেছে।
এতে কেউ কোনো আপত্তি করে নি। সূত্র: আলমুগনী ৩/৫২২
সারকথা হলো, কুরআন তেলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র
ইবাদত। খতম মূল কথা নয়, উদ্দেশ্য তেলাওয়াত করা হয়। তাছাড়া
খতমের পরে দুআ কবুল হয়।
কুরআন তিলাওয়াত করে বা খতম করে
দুআ করাও জায়েয আছে৷ হাদীসে এসেছে-
مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ فليسأل
الله بِهِ فَإِنَّهُ سَيَجِيءُ أَقوام يقرؤون الْقُرْآنَ يَسْأَلُونَ بِهِ
النَّاسَ
অর্থ: যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে সে
যেন বিনিময়ে আল্লাহর কাছে কিছু চায়। খুব তাড়াতাড়ি এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে যারা কুরআন
পড়ে বিনিময়ে মানুষের কাছে হাত পাতবে। তাখরিজ: তিরমিযী হাদীস নং- ২৯১৭, ইবনু
আবী শায়বাহ হাদীস নং- ৩০০০২, আহমাদ হাদীস নং- ১৯৮৮৫
নোট: আলবানী রহ. এর সনদ হাসান বলেছেন
روى الدرامي عن ثابت البناني أنه
قال: كان أنس إذا ختم القرآن جمع ولده وأهل بيته فدعا بهم.-
অর্থাৎ হজরত আনাস রা.
কুরআন খতম করলে পরিবারের লোকদের একত্রিত করে দু’আ করতেন।’ তাখরিজ: সুনানে দারিমি-৩৫১৭
নোট: আসারটির সনদ সহিহ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৪৯:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ,সম্মানিত ধর্মীয় শিক্ষক মহোদয়গণের কারো কাছে " প্রাত্যহিক জীবনে ধর্মীয়
মূল্যবোধ" বা এর কাছাকাছি আনুসাঙ্গিক কোন লেশন প্লান, যদি কারো সংগ্রহে থাকে, শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি। ৩০/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ফারুক হুসাইন সিলেট থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আলহামদুলিল্লাহ এ সংক্রান্ত আমি একটি স্বতন্ত্র কিতাব লিখতেছি।
সেখান থেকে কিছু অংশ তুলে ধরছি, আশা করি ফায়দা হবে
ইনশাল্লাহ।
সামরিক পেশা হালাল রিজিক অন্বেষণের একটি
অংশ
বাংলাদেশ সেনাবহিনী: হালাল রিজিক খাওয়া প্রত্যেক মুমিনের ওপর
ফরজ। সামরিক পেশা হালাল রিজিকের অর্জনের একটি অন্যতম পন্থ। একজন সামরিক সদস্য সারা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে, তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করে। সুতরাং বলা যায় সর্বোৎকষ্ঠ হালাল রিজিকের
অংশ হলো সামরিক পেশা। আসুন আমরা জানবো এ সম্পর্কে ইসলামের নিরর্দেশনা কি?
ইসলাম: হালাল খাবার খাওয়ার জন্য কুরআনের নির্দেশ রয়েছে- যেমন,
মহান আল্লাহ বলেন, یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی
الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ
اِنَّهٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ অর্থ: হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও
পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে, তোমরা তা আহার করো এবং কোনোক্রমেই
শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সূরা বাকারা-১৬৮
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ "
أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا اللَّهَ
وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ فَإِنَّ نَفْسًا لَنْ تَمُوتَ حَتَّى تَسْتَوْفِيَ
رِزْقَهَا وَإِنْ أَبْطَأَ عَنْهَا فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ
خُذُوا مَا حَلَّ وَدَعُوا مَا حَرُمَ "
.
অর্থ: হজরত জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং বৈধ
উপায়ে জীবিকা অর্জন করো। কেননা কোনো প্রাণীই তার নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না করে
মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও কিছু বিলম্ব ঘটে। সুতরাং আল্লাহকে
ভয় করো এবং সৎভাবে জীবিক অর্জন করো। যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন
করো। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ-২১৪৪;
মিশকাত ৩৫০০
হারাম মাল দ্বারা গঠিত শরীর জান্নাত
হারাম: এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে-
وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا
يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بالحرَامِ»
. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
অর্থ: আবূ বকর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন, যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে,
সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
তাখরিজ: বায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান-৫৭৫৯
নামাজ সমাপান্তে রিজিক অর্জন করা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: একজন
আদর্শবান সৈনিক আল্লাহ তাআলার মহান হুকুম ফজরের নামাজ শেষে তার পেশাগত কাজে
ঝাঁপিয়ে পড়ে। সকালবেলা বরকত নাজিল হয় এবং রিজিক অন্বেষণের মোক্ষম সময়। কোন ট্রুপ/ব্যাটালিয়নের মুভের উত্তম সময়। তাই তো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রায় সকল মুভ
সেকশন ভোরে যাত্রা করে। আর এটা
ইসলামেরও কাম্য যে, মুমিন শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে
না। বরং নামাজ শেষে তার হালাল রিজিক তালাশ করবে। আসুন এখন আমরা ইসলামের সেই
নির্দেশনা জানবো।
ইসলাম: নামাজ সমাপান্তে রিজিক অর্জন করার নির্দেশ: ইসলাম শুধু নিছক ইবাদত-বন্দেগি পালনের ধর্ম নয়। বরং একটি
গুরুত্বপূর্ণ ফরজ সালাত আদায়ের আল্লাহর জমিনে রিজিক অন্বেষণের তাগিদ করেছেন। যেমন,
ইরশাদ হচ্ছে,
আয়াত নং-০১
﴿فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ
فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا
لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [الجمعة:10]
অর্থ: সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর
অনুগ্রহ সন্ধান করবে, এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে যাতে
তোমরা সফলকাম হও। সূরা জুমাআ-১০
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী (র.)
বলেন:
فاذا فرغتم من الصلاة فانتشروا في الأرض
للتجارة والتصرع في حوائجكم
‘‘যখন নামায শেষ হয়ে যাবে, তখন তোমরা ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়োজনাদি
পূরণে বেড়িয়ে পড়ো। কুরতুবী, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ, আলজামেউ লি
আহকামিল কুরআন, খ.১৮,পৃ.৯৬
আয়াত নং-০২
﴿وَءَاخَرُونَ يَضۡرِبُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ
يَبۡتَغُونَ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَءَاخَرُونَ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۖ﴾ [الجمعة:9]
আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে,
কেউ আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে দেশভ্রমণ করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর
পথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। সূরা মুযযাম্মিল-২০
أي مسافرين في الأرض يبتغون من فضل الله في
المكاسب والمتاجر.
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে
কাসীর (রহ.) বলেন, অর্থ্যাৎ যারা ব্যবসা-বাণিজ্য ও রিযিক উপার্জনের বিভিন্ন উপায় অবলম্বনের
মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের অন্বেষায় পৃথিবীতে ভ্রমণরত। সূত্র: আবুল ফিদা ইসমাইল ইবন উমর ইবন
কাসীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৮/২৫৮
নবিজি (ﷺ) তার বাহিনীকে সকালে
প্রেরণ করতেন:
সখর গামেদি (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (ﷺ) এ দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরুকে বরকতময় করুন। ’ এ জন্যই রাসুল (ﷺ) কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। বর্ণনাকারী
বলেন, সখর (রা.)-ও তার ব্যবসায়ী কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক
উন্নতি হয়। তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন। তাখরিজ: আবু দাউদ-২৬০৬
প্রত্যুষে ওঠার উপকার:
প্রিয় নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, ‘সকালবেলায় রিজিকের অন্বেষণ করো! কেননা সকালবেলা বরকতময় ও সফলতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত
সময়। তাখরিজ: মাজমাউজ জাওয়ায়েদ-৬২২০
ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ (ﷺ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুল
(ﷺ) আমার ঘরে এসে আমাকে ভোরবেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলেন, তখন আমাকে
পা দিয়ে নাড়া দিলেন এবং বললেন, মামণি! ওঠো! তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক গ্রহণ করো! অলসদের দলভুক্ত
হয়ো না। কেননা আল্লাহ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের মধ্যে রিজিক বণ্টন
করে থাকেন। তাখরিজ: আত-তারগিব ওয়াত তারহিব-২৬১৬
হালাল রিজিক তালাশ করা শরিয়তের অনত্যম
ফরজ
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: একজন সেনা সদদ্য সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করেন,
তার পেশাগত দায়িত্ব পালনার্থে। রাতে আবার নিরাপত্তা পাহারায় নিয়োজিত থাকে। আইপিএফটি
পাশ করা যে কত কষ্ট, যে করে সেই বুঝে।
প্রশ্ন: ক। সেনাসদস্যগণ যে তা চাকরি জীবনে
কঠোর পরিশ্রম করে, এত কি তার সওয়াব মিলবে?
উত্তর: ক। এ সম্পর্কে আশরাফ কাননের সর্বশেষ ফুল; ভারতের বিখ্যাত আলেম, বুজুর্গ শাহ আবরারুল হক রহ.
বলেন, একজন ব্যক্তি মসজিদে বসে তাসবিহ পাঠ
করছেন (সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লিাহ,
আল্লাহু আকবর ইত্যাদি পাঠ করা) আর একজন
ব্যক্তি হালাল রিজিকের জন্য গ্রাম-গঞ্জে, শহরের অলিতে-গলিতে ফেরি ওয়ালা হিসেবে হরেক মাল
বিক্রি করছেন বা বাদাম বিক্রি করছেন অথবা যে কোন পণ্য বিক্রির জন্য ডাকা-ডাকি, চিল্লা-চিল্লি করছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, সওয়াব বেশি কার? যে মসজিদে তাসবিহ/জিকির-আজকার তিনি, না যিনি
পণ্যদ্রব্য বিক্রির জন্য বাদাম বাদাম, ভাই রাখবেন কাপড়,
হরেক মাল ইত্যাদি ইত্যাদি। হজরত
বলেন, যিনি মসজিদে বসে তাসবিহ-তাহলিল
পড়ছেন, তিনি নফলের আমলের সওয়াব পাবেন। কেননা তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা নফল। আর যিনি হালাল রিজিকের জন্য পথে-ঘাটে চিল্লা-চিল্লি করছেন, তার
এ প্রতিটি ডাকাডাকি ফরজ আমলের সওয়াব মিলবে। কারণ হালাল রিজিক অন্বেষণ করা ফরজ। সুতরাং প্রমাণিত হলো, সেনাসদদ্যগণ যে সকালে পিটি,আইপিএফটি করে, তার দৌড়ের প্রতিটি কদমে কদমে, তার শরীরে প্রতি ফুটা
ঘামের বিনিময়ে ফরজ আমলের সওয়াব পাবে ইনশাল্লাহ।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আসুন আমরা দেখবো শাহ আবরারুল হক রহ.
এর উক্তির পক্ষে শরিয়তের
কোন দলিল আছে কি?
ইসলাম: এ
সম্পর্কে হাদিস
শরিফে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَلَبُ
كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ»
. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
অন্যান্য ফরয কাজ আদায়ের সাথে হালাল রুযী-রোজগারের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরয।
তাখরিজ: বায়হাকি শুআবুল ঈমান-৮৩৬৭;
আল মুজামুল কবির- ৯৯৯৩
عن رافع بن خديج، قال: قيل: يا
رسول الله، أي الكسب أطيب؟ قال: «عمل الرجل بيده وكل بيع مبرور»
হযরত রাফে ইবনে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা
হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, সর্বোত্তম উপার্জন কোনটি? জবাবে তিনি
বলেন: ব্যক্তির নিজস্ব শ্রমলব্দ উপার্জন ও সততার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়। ইমাম আহমাদ,
মুসনাদ, খ.৪, পৃ. ১৪১.
প্রতিটি কাজ বিসমিল্লাহ (আল্লাহর নাম) বা তাঁর
প্রশংসা দ্বারা শুরু
করা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিরাচরিত
ঐতিহ্য হলো কার্য দিবসের প্রারম্ভে পিটির ফলিনে এবং দরবারে
পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে তথা আল্লাহর নাম/প্রশংসার দ্বারা
শুরু হয়। অবশ্যই
তা অত্র বাহিনীতে কর্মরত ধর্ম শিক্ষকদের মৌলিক দায়িত্বের একটি। উল্লেখ্য যে, ধর্ম শিক্ষকের
অনুপস্থিতিতে কোন সৈনিক দ্বারা তা পাঠ করা হয়। আসুন আমরা এখন জানবো, আল্লাহর নাম নিয়ে
কাজ শুরু করার ইসলামি নির্দেশনা কি?
ইসলাম : যেকোনো কাজে-কর্মে বিসমিল্লাহ (আল্লাহ তাআলার নাম) বা আল্লাহ তাআলার প্রশংসা দ্বারা
শুরু না করলে, সেটা অসম্পূর্ণ-বরকতহীন হয়ে যায়। যেমন হাদিসের বাণী-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ - صلى الله
عليه وسلم - قَالَ: "كُلُّ
أَمْرٍ ذِي بَالٍ لَا يُبْدَأُ فِيهِ بِحَمْدِ اللَّهِ أَقْطَعُ অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ
করেছেন- প্রত্যেকটি কাজই হচ্ছে বিরাট আর তা আল্লাহর প্রশংসা সহকারে
শুরু না করলে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাখরিজ : আবু দাউদ-৪৮৪০; ইবনে মাজাহ-১৮৯৪
নোট : সনদটি হাসান।
বিসমিল্লাহ শব্দের অর্থ, আল্লাহর নামে শুরু করছি। তাই প্রতিটি কাজের শুরুতে (بسم الله) বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করা। কেননা ইহা ব্যতিত কর্মটি/কাজটি
লেজ কাটা (অপূর্ণাঙ্গ) রয়ে যায়। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, كُلُّ كَلَامٍ أَوْ أَمْرٍ ذِي بَالٍ لَا
يُفْتَحُ بِذِكْرِ اللهِ فَهُوَ أَبْتَرُ – أَوْ
قَالَ :
أَقْطَعُ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যদি আল্লাহকে
স্মরণ না করে শুরু করা হয়, তাহলে তা লেজ কাটা (বরকতহীন) হয়ে
যায়। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ ১৪/৩২৯
বিসমিল্লাহর গুরুত্ব
:
(০১) এই বিসমিল্লাহই প্রথম ওহি:
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস বলেন, 'জিবরাইল আ. সর্বপ্রথম
মুহাম্মদ (ﷺ) এর প্রতি যা
অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে জিবরাইল আ. বললেন, হে মুহাম্মদ, আপনি আশ্রয় চান। মুহাম্মদ সা. বললেন,
আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয়
চাই। অতঃপর জিবরাইল আ. বললেন, হে নবী, আপনি
বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। অতঃপর জিবরাইল আ. বললেন,
ইকরা বিস্মি। অর্থাৎ আপনি পড়ূন, আপনার প্রতিপালকের
নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস
রা. বলেন, 'এটাই প্রথম সূরা, যা আল্লাহ
তায়ালা জিবরাইলের আ. মাধ্যমে মুহাম্মদ সা. এর প্রতি অবতীর্ণ করেন।' সূত্র: ত্বাবারি,
তাফসির ইবনু কাছির হা-২৬৩
(০২) হালাল পশুপাখি আল্লাহর নামে
জবাই করা ব্যতিত ভক্ষণ জায়েয নয় :
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ
يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌঅর্থ: . যেসব জন্তুর ওপর আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, তার
কিছুই তোমরা আহার করো না; তা অবশ্যই পাপ। সূরা আনআম-১২১
যেসব জীবজন্তু আল্লাহর নামে জবাই করা হয়নি, তা
আহার করা বৈধ নয়। কোন অমুসলিম
জবেহ করলে তা খাওয়া হারাম। আর কোন মুসলিম ভুলক্রমে আল্লাহর নাম না নিলে তা হালাল; কিন্তু ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ ছেড়ে দিলে তা খাওয়া হারাম। সূত্র : তাফসিরে মাআরেফুল
কুরআন-৪০৬ পৃ.সংক্ষিপ্ত-মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহ.)
বিসমিল্লাহর ফজিলত:
(০১) উসমান
(রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যদি কোনো বান্দা সকালে ও সন্ধ্যায়
তিন বার করে এই দুআটি পাঠ করে তবে ঐ দিনে ও ঐ রাতে কোনো কিছুই তার ক্ষতি করতে
পারবে না। দুআটি এই-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
আমি সে আল্লাহর নামে শুরু করছি যার নামে শুরু করলে জমিন ও আসমানে কেউ কোনো
ক্ষতি করতে পারে না, আর আল্লাহ তো সব কিছু শুনেন ও সবকিছু
দেখেন। তাখরিজ: আবু দাউদ: ৫০৮৮, ইবনে
মাজাহ: ৩৮৬৯
(০২) হুজায়ফা (রা.) বলেন: নবী করিম (ﷺ) বলেছেন,
فقال
رسول الله -صلَّى
الله عليه وسلَّم-: «إِنَّ الشَّيطَانَ يَستَحِلُّ الطَّعَامَ أَن لاَ يُذْكَرَ اسمُ الله -تَعَالَى- عَلَيه،
অর্থ: শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে
নেয়, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না। মুসলিম-২০১৭ আবু দাউদ
(০৩) জাবির (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘বিসমিল্লাহ বলে তুমি তোমার দরজা বন্ধ কর। কারণ
শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। বিসমিল্লাহ বলে বাতি নিভিয়ে দাও। একটু কাঠখড়ি হলেও
আড়াআড়িভাবে বিসমিল্লাহ বলে পাত্রের মুখ ঢেকে রাখ। বিসমিল্লাহ বলে পানির পাত্র ঢেকে
রাখ।’ বুখারি হাদিস:৩২৮০, মুসলিম
হাদিস:২০১২, আবু দাউদ হাদিস: ৩৭৩১, তিরমিজি
হাদিস: ২৮৫৭
ফকিহগণের নিকট বিসমিল্লাহ:
Ø ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের একটি মতে অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
ফরজ।
Ø নামাজের প্রত্যেক রাকাতের শুরুতে
বিসমিল্লাহ পড়া ইমাম আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদসহ আরো বহু ফকিহের
নিকট ওয়াজিব।
Ø ইমাম আবু হানিফা
(রাহ.) এর মতে সুন্নত।
Ø তবে নামাজ যেন সর্বসম্মতিক্রমে শুদ্ধ হয়, সে জন্য ফাতেহার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া উচিত। সূত্র: আব্দুল হাই লখনবি, সিয়াহ
শরহে বেকায়া, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৬৯
শারীরিক সক্ষমতা (Physical Fitness) অর্জন করা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে তাদের
শারীরিক সক্ষমতা অর্জন এবং তা ঠিক রাখার জন্য সপ্তাহে ৫ দিন নিজ উদ্যাগে ৫০ মিনিট
(বর্তমানে) বিভিন্ন আইটেমের পিটি করতে হয়। বছরে দুবার আইপিএফটি
(IPFT=Indidual physical Fitness Test) অর্থাৎ ব্যক্তিগত শারীরিক সক্ষমতা
যাচাই/পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। ফেল করলে অনেক ভর্ৎসনা ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। তাছাড়া ব্যক্তিগত পদোন্নতিতে
(প্রমোশনে) আইপিএফটিতে পাশ করা শর্ত। আসুন এখন আমরা জানবো ইসলামে
শারীরিক যোগত্যর গুরুত্ব।
ইসলাম: ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখার জন্য ইসলাম নির্দেশনা দিয়েছে। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান প্রতিপালক তার
নিপুণ সৃষ্টিরাজিতেও শক্তির সঞ্চার করেছেন। তার ওহির বাহক হজরত জিবরাইল (আ.)-এর
শক্তির প্রশংসা তিনি নিজেই করেছেন। যেমন ইরশাদ হচ্ছে-
عَلَّمَهٗ
شَدِیۡدُ الۡقُوٰی ۙ অর্থ: তাকে
শিক্ষা দান করে শক্তিশালী, (ফিরিশতা জিবরীল)। সূরা নজম-০৫
তাফসীরকারদের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ
অংশ এ ব্যাপারে একমত যে, “মহাশক্তির
অধিকারী” এর অর্থ জিবরীল আলাইহিস সালাম। সূত্র:
ফাতহুল কাদীর
এবং শক্তিশালী মুমিনকে দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম ও আল্লাহর নিকট বেশি পছন্দশীল
বলা হয়ছে। যেমন পবিত্র হাদিসে এসেছে-
হাদিস নং-০১
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله
عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «المُؤْمِنُ
القَوِيُّ خَيرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ المُؤْمِنِ الضَّعيفِ وَفي كُلٍّ
خَيرٌ.
احْرِصْ
عَلَى مَا يَنْفَعُكَ، واسْتَعِنْ بِاللهِ وَلاَ تَعْجَزْ . وَإنْ
أَصَابَكَ شَيءٌ فَلاَ تَقُلْ لَوْ أنّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا، وَلَكِنْ
قُلْ :
قَدرُ
اللّهِ، وَمَا شَاءَ فَعلَ ؛ فإنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيطَانِ». رواه
مسلم
অর্থ: আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
(দেহমনে) সবল মুমিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মুমিন অপেক্ষা বেশী প্রিয়।
আর প্রত্যেকের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন
হয়ো না। যদি তোমার কিছু ক্ষতি হয়, তাহলে এ কথা বলো না যে,
যদি আমি এ রকম করতাম, তাহলে এ রকম হত।’ বরং বলো, আল্লাহর (লিখিত) ভাগ্য এবং তিনি
যা চেয়েছেন তাই করেছেন।’ কারণ,
যদি’ (শব্দ) শয়তানের কাজের দুয়ার খুলে দেয়।
তাখরিজ: বুখারি ২৬৬৪, ইবন মাজাহ ৭৯,
৪১৬৮, আহমদ ৮৫৭৩, ৮৬১১
হাদিস নং-০২
اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابَكَ
قَبْلَ هِرَمِكَ، وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاءَكَ قَبْلَ فَقْرِكَ،
وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ، وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ
অর্থ: পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিস আসার আগে
গনিমতের অমূল্য সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন করো। জীবনকে মৃত্যু আসার আগে। সুস্থতাকে
অসুস্থ হওয়ার আগে। অবসর সময়কে ব্যস্ততা আসার আগে। যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে এবং
সচ্ছলতাকে দরিদ্রতা আসার আগে। তাখরিজ: মুসান্নাফ ইবনে আবি
শায়বা: ৮/১২৭
হাদিস নং-০৩
بْدُ
اللَّهِ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه
وسلم " يَا
عَبْدَ اللَّهِ أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ وَتَقُومُ اللَّيْلَ ". قُلْتُ
بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ " فَلاَ
تَفْعَلْ، صُمْ وَأَفْطِرْ، وَقُمْ وَنَمْ، فَإِنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا،
وَإِنَّ لِعَيْنِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا ".
আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, হে আবদুল্লাহ! আমাকে কি এ
খবর প্রদান করা হয়নি যে, তুমি রাতভর ইবাদতে দাঁড়িয়ে থাক এবং
দিনভর সিয়াম পালন কর? আমি বললাম, হ্যাঁ,
ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, তুমি এরূপ করো
না, বরং সিয়ামও পালন কর, ইফতারও কর,
রাত জেগে ইবাদত কর এবং নিদ্রাও যাও। তোমার শরীরেরও তোমার ওপর হক আছে;
তোমার চোখেরও তোমার উপর হক আছে এবং তোমার স্ত্রীরও তোমার ওপর হক
আছে। তাখরিজ: বুখারি-৫৭০৩; তিরমিজি-২৩৫০
হাদিস নং-০৪
রাসূল (ﷺ) বলেছেন,مَنْ
أَصْبَحَ مِنْكُمْ آمِنًا فِي سِرْبِهِ مُعَافًى فِي جَسَدِهِ عِنْدَهُ قُوتُ
يَوْمِهِ فَكَأَنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا، অর্থ: তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয়, সুস্থ শরীরে দিনাতিপাত করে এবং তার নিকট সারা দিনের খাদ্য থাকে, তবে তার মাঝে যেন দুনিয়ার সকল কল্যাণ একত্রিত করা হলো। তাখরিজ: তিরমিজি-২৩৪৬; ইবনে মাজাহ-৪১৪১;
মিশকাত-৫১৯১
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বারবার বলা/স্মরণ করিয়ে দেওয়া
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি রুলস হলো কোনো চিঠি/আদেশ তিনবার
পড়ে শুনানো। যাতে সবার কাছে ম্যাসেজটি পৌঁছে, কারণ শতভাগ লোক কোন ফলিনে উপস্থিত সম্ভব নয় ( কোথ,
কোয়ার্টার গার্ড বা বিভিন্ন পোস্টে ডিউটি থাকার কারণে)। আর গুরুত্বপূর্ণ একই আদেশ/বিষয় পিটি ও গেমসের ফলিনে, কোম্পানি/ব্যাটারি রুল কলে, সাপ্তাহিক রুল কলে এবং মাসিক রুল কলে
বারবার বলা বা স্মরণ
করিয়ে দেওয়া হয়। আসুন আমরা
এখন দেখবো পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর এ বিষয়ে নির্দেশনা কি?
ইসলাম : ভাল কথা, ন্যায়-সত্য কথা বারবার
বললে মুমিনের ফায়দা হবেই। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَذَكِّرْ
فَإِنَّ الذِّكْرَىٰ تَنفَعُ الْمُؤْمِنِ অর্থ:
এবং বোঝাতে থাকুন; কেননা, বোঝানো মুমিনদের উপকারে আসবে। সূরা যারিয়াত-৫৫
হে নবি! আাপনি উপদেশ দিতে থাক। কেননা উপদেশ
মুমিনদের উপকারে আসে। সূত্র: তাফসিরে তাওজিহুল কুরআন- মুফতী তাকী উসমানী
Ø শ্রোতারা যেন বিষয়টা বুঝতে পারে এ জন্য নবি করিম একটি কথা তিনবার-বারবার
বলতেন। যেমন-হাদিস শরিফে এসেছে-
عَنْ
أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ «إِذَا
تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَعَادَهَا ثَلاَثًا، حَتَّى تُفْهَمَ عَنْهُ، وَإِذَا أَتَى
عَلَى قَوْمٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ، سَلَّمَ عَلَيْهِمْ ثَلاَثًا»
অর্থ: হজরত আনাস (রা.)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন
মুখ দিয়ে কোন কথা বের করতেন। তিন তিনবার তা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতেন। ফলে শ্রোতা খুব ভালভাবেই তা বুঝে নিতে পারত।
যখন তিনি কোন গোত্রের কাছে আসতেন, তাদের সালাম করতেন এবং একাধিকক্রমে সে তিন তিনবার সালাম করতেন। তাখরিজ
: বুখারি-৯৫
عنْ أَبي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه:
أَنَّ رَجُلاً قالَ للنبيِّ - صلى الله عليه وسلم -: أَوْصِنِي. قالَ: "لا تَغْضَبْ"، فَرَدَّدَ
مِرَارًا، قالَ: "لا تَغْضَبْ".
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা (রা.)
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-একজন লোক বললেন, আমাকে
উপদেশ দিন। রসূলুল্লাহ
(ﷺ) তখন ইরশাদ করলেন, তুমি কখনও রাগ করবে না। লোকটি কথাটিকে বাববার বললেন। তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করলেন, কখনো রাগ কর না। তাখরিজ: বুখারি-
عَنْ عَائِشَةَ رَحِمَهَا اللَّهُ، قَالَتْ: "كَانَ كَلَامُ
رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلَامًا فَصْلًا
يَفْهَمُهُ كُلُّ مَنْ سَمِعَهُ
অর্থ: হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কথা বলতেন, খুব স্পষ্ট পরিস্কার ও আলাদা আলাদাভাবে
বলতেন। শ্রোতাদের সবাই তা হৃদয়ঙ্গম কর নিতে পারত। তাখরিজ: আবু
দাউদ-৪৮৩৯
বিস্তারিত
দেখুন,
“ইসলামের
দৃষ্টিতে
সামরিক জীবনের দৈনন্দিন কার্যক্রম”
(প্রকাশিতব্য)
লেখক,
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস ফিলআদব) ধর্ম শিক্ষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
মোবাইল ০১৭৩৫-৭৯১৩৮২; ০১৮৮৭৭০১৬৫৬
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৫২:
আসসালামুয়ালাইকুম। "ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ ও তালাক সম্পর্কে নীতিমালা"
এবিষয়ে মোটিভেশন ক্লাস প্রয়োজন। জাঝাকাল্লাহ। তারিখ: ৩১/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আসাদ চট্রগ্রাম থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে দুটি স্তরে
ভাগ করছি: ইসলামের দৃষ্টিতে
বিবাহ ও তালাক সম্পর্কে নীতিমালা"
প্রথম স্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ।
০১. ভূমিকা:
বিবাহের মাধ্যমে অন্তরের প্রশান্তি বাড়ে। কর্মমুখর দিন শেষে ক্লান্তশ্রান্ত
দেহে স্বস্তি আসে স্ত্রীর মাধ্যমে। জাগতিক জীবনের শত কোলাহল, কষ্ট
মানুষ সহ্য করে প্রিয়তমা স্ত্রীর মুখপানে চেয়ে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
Surah Al-Araf, Verse 189:
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن
نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا فَلَمَّا
تَغَشَّاهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِ فَلَمَّا أَثْقَلَت
دَّعَوَا اللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ آتَيْتَنَا صَالِحًا لَّنَكُونَنَّ مِنَ
الشَّاكِرِينَ
‘তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একজন ব্যক্তি থেকে। তা
থেকেই তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়।
’ সূরা আরাফ- ১৮৯
০২. বিবাহের শাব্দিক সংজ্ঞা:
নিকাহ তথা বিবাহের শাব্দিক অর্থ
যৌন সঙ্গম, দু’টি জিনিস একত্রিত করা। কখনও কখনও নিকাহ বন্ধন বা চুক্তি
অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন বলা হয়, (نكح فلانة) যখন কেউ বিয়ে করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে ও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আবার বলা
হয়, (نكح امرأته) সে তার স্ত্রীর সাথে
যৌন সঙ্গম করল।
০৩. শরী‘আতের
পরিভাষায় বিবাহ:
عقد يعتبر فيه لفظ إنكاح أو
تزويج في الجملة والمعقود عليه منفعة الاستمتاع أو الازدواج أو المشاركة.
বিবাহ বাংলা শব্দ, আরবী ভাষায় বলে (নিকাহ্)। বিবাহ হচ্ছে, ইসলামী নীতি অনুযায়ী যাদের সাথে বিবাহ বৈধ এমন
একজন পুরুষ ও মহিলার মধ্যে নির্ধারিত শব্দের আদান-প্রদানের মাধ্যমে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে চুক্তি সম্পাদিত হয়, যার ফলে দু’জনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কায়েম হয়, যৌন সম্পর্ক
বৈধ হয়, একজন আরেকজনের উপর সুনির্দিষ্ট অধিকার লাভ করে এবং একজনের
জন্য অপর জনের উপর কিছু দায়-দায়িত্ব বর্তায়।
০৪. বিবাহের রুকনসমূহ:
বিয়ের রুকন দু’টি। তা হলো:
১- প্রস্তাব (الإيجاب): অলী তথা অভিভাবক অথবা যিনি তার স্থলাভিষিক্ত
হবেন তার পক্ষ থেকে বিয়ে করার বা বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া। যিনি আরবী ভালো পারেন
তার (إنكاح أو تزويج) শব্দ দ্বারা প্রস্তাব
দেওয়া উত্তম। কেননা এ শব্দদ্বয় কুরআনে এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ
لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ ﴾ [النساء : ٣]
“তাহলে তোমরা বিয়ে কর নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের
ভালো লাগে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩]
২- কবুল (القبول): স্বামী বা তার
২- কবুল (القبول): স্বামী বা তার স্থলাভিষিক্ত থেকে বিয়ে কবুল করার শব্দ। যেমন বলা, (قبلت) আমি বিয়ে কবুল করলাম বা (رضيت هذا النكاح) এ বিয়ে আমি রাজি আছি বা শুধু কবুল করেছি বলা।
ইজাব তথা প্রস্তাব কবুলের আগে হতে হবে, তবে কোনো আলামত থাকলে আগে কবুল বললেও হবে।
০৫. বিবাহের প্রকারভেদ ও তার হুকুম:
ব্যক্তি বিশেষে বিবাহের
হুকুম তারতম্য আছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। সামর্থ বলতে দুইটি জিনিস বুঝায় এক.শারীরিক শক্তি দুই. আর্থিক (শক্তি) স্বাবলম্বী। বিবাহ
মোট ৬ প্রকার
১.ফরজ ২.ওয়াজিব৩.সুন্নাত ৪. মুবাহ ৫.মাকরুহ ৬.হারাম। নিম্নে
আলোচনা করা হলো-
১. ফরজ:
বিবাহ করা ঐ ব্যক্তির উপর ফরজ যার শারীরিক শক্তি ও আর্থিক শক্তি আছে, বিবাহ না করলে যেকোন সময় অপকর্মে লিপ্ত হবার নিশ্চিত বা প্রবল আশংকা। বিবাহ একমাত্র রাস্তা তাকে যিনা থেকে বিরত রাখতে পারে। এমতাবস্থায় তার বিবাহ করা ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন-
(১) Surah An-Noor, Verse
32:
وَأَنكِحُوا الْأَيَامَىٰ
مِنكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِن يَكُونُوا فُقَرَاءَ
يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং
তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা
যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন।
আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। সূরা নূর -৩২
(২)
Surah Al-Anaam, Verse 120:
وَذَرُوا ظَاهِرَ الْإِثْمِ وَبَاطِنَهُ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْسِبُونَ الْإِثْمَ سَيُجْزَوْنَ بِمَا كَانُوا يَقْتَرِفُونَ
তোমরা প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন
গোনাহ পরিত্যাগ কর। নিশ্চয় যারা গোনাহ করেছে, তারা অতিসত্বর তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পাবে।
সূরা আনআম-১২০
(৩) Surah Al-Isra, Verse
32:
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا
إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না।
নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। সূরা ইসরা -৩২
তবে কারো যদি শারীরিক শক্তি থাকে কিন্তু আর্থিক সচ্ছলতা নাই তার উপর
বিবাহ ফরজ নয় সে রোজা রাখবে আর ছবর করবে । যেমন হাদিসে শরীফে আছে-
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصِ
بْنِ غِيَاثٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، قَالَ حَدَّثَنِي
عُمَارَةُ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ، قَالَ دَخَلْتُ مَعَ عَلْقَمَةَ
وَالأَسْوَدِ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ
صلى الله عليه وسلم شَبَابًا لاَ نَجِدُ شَيْئًا فَقَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهُ
صلى الله عليه وسلم " يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ
فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ
لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ ".
আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য সওম রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়। বুখারি-৫০৬৬; মুসলিম-৩৪৬৪
২. ওয়াজিব: বিবাহ
করা ঐ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব যার শারীরিক শক্তি ও আর্থিক শক্তি আছে, বিবাহ না করলে যেকোন সময় অপকর্মে লিপ্ত হবার আশংকা। এমতাবস্থায় তার বিবাহ করা ওয়াজিব। যেমন,
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصِ
بْنِ غِيَاثٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، قَالَ حَدَّثَنِي
عُمَارَةُ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ، قَالَ دَخَلْتُ مَعَ عَلْقَمَةَ
وَالأَسْوَدِ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ
صلى الله عليه وسلم شَبَابًا لاَ نَجِدُ شَيْئًا فَقَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهُ
صلى الله عليه وسلم " يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ
فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ
لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ ".
হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে
হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য সওম রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়। বুখারি-৫০৬৬; মুসলিম-৩৪৬৪
আর আর্থিক শক্তি না থাকলে
রোজা রাখবে।
৩. সুন্নাত:
উপযুক্ত বয়স হলে স্বাভাবিক অবস্থা বিবাহ করা
সুন্নাত।
কেননা অধিকাংশ নবি বিবাহ করেছেন।
Surah Ar-Rad, Verse 38:
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا
مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ
أَن يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ
আপনার পূর্বে আমি অনেক রসূল প্রেরণ
করেছি এবং তাঁদেরকে পত্নী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছি। কোন রসূলের এমন সাধ্য ছিল না যে
আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করে। প্রত্যেকটি ওয়াদা লিখিত আছে। সূরা
রদ-৩৮
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " النِّكَاحُ مِنْ سُنَّتِي
فَمَنْ لَمْ يَعْمَلْ بِسُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي وَتَزَوَّجُوا فَإِنِّي
مُكَاثِرٌ بِكُمُ الأُمَمَ وَمَنْ كَانَ ذَا طَوْلٍ فَلْيَنْكِحْ وَمَنْ لَمْ
يَجِدْ فَعَلَيْهِ بِالصِّيَامِ فَإِنَّ الصَّوْمَ لَهُ وِجَاءٌ " .
অর্থ: আমি নারীকে বিবাহ করি। ( তাই বিবাহ আমার সুন্নত) অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার
দলভুক্ত নয়। বুখারি-৫০৫৬; মুসলিম-৩৪৬৯
৪. মুবাহ: যার
বিবাহ না করলে পাপকার্যে লিপ্ত হবার আশংকা নাই। বরং আল্লাহ প্রেমে বিভোর-বিহ্বল , দ্বীনি কাজে ব্যস্ত যে, স্ত্রী ও সন্তানের হক আদায়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তার বিবাহ না করা জায়েজ, বরং না করাই উত্তম। যেমন- ইয়াহইয়া ও ঈসা আ. বিবাহ করেন নি। হজরত ইয়াহইয়া আ. সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এসেছে। সূরা ইমরান-৩৯ সূত্র: তাফসিরে বুরহানুল
কুরআন-২৩৭ পৃষ্ঠা, বয়ানুল কুরআন,
মাআরিফুল কুরআন
Surah Aal-e-Imran, Verse 39:
فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ
وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَىٰ
مُصَدِّقًا بِكَلِمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَسَيِّدًا وَحَصُورًا وَنَبِيًّا مِّنَ
الصَّالِحِينَ
যখন তিনি কামরার ভেতরে নামাযে
দাঁড়িয়েছিলেন, তখন ফেরেশতারা তাঁকে ডেকে বললেন যে, আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ
দিচ্ছেন ইয়াহইয়া সম্পর্কে, যিনি সাক্ষ্য দেবেন আল্লাহর নির্দেশের
সত্যতা সম্পর্কে, যিনি নেতা হবেন এবং নারীদের সংস্পর্শে যাবেন
না, তিনি অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবী হবেন। সূরা ইমরান -৩৯
৫. মাকরুহ: যে
ব্যক্তি বিবাহ করলে বিবির হক আদায়ে সন্দিহান তার বিবাহ করা মাকরুহ।
৬. হারাম: যার
শারীরিক শক্তি নেই, একেবারে অক্ষম, নপুংশক
(পুরুষত্বহীন) তার বিবাহ করা হারাম। স্ত্রীর মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি হলো জৈবিক চাহিদা পূরণ করা। যেমন, পবিত্র হাদিসে এসেছে-
إنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقًّا،
ولِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، ولِأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، فأعْطِ كُلَّ ذِي
حَقٍّ حَقَّهُ. فأتَى النبيَّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، فَذَكَرَ ذلكَ له،
فَقَالَ النَّبيُّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ: صَدَقَ سَلْمَانُ.
الراوي : وهب بن عبدالله السوائي
أبو جحيفة | المحدث : البخاري | المصدر : صحيح البخاري
الصفحة أو الرقم: 1968 | خلاصة
حكم المحدث : [صحيح]
অর্থাৎ নিশ্চয়
তোমার ওপর তোমার রবের, তোমার দেহের এবং তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেককে তার প্রাপ্য দিয়ে
দাও। বুখারি-১৯৬৮
من حقّ الزّوجة على زوجها أن
يقوم بإعفافها ، وذلك بأن يطأها ، وقد ذهب جمهور الفقهاء – الحن
স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকারের
মধ্যে অন্যতম হল, স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমের মাধ্যমে তার পবিত্র জীবন যাপনের প্রতি যত্নশীল
হবে। হানাফি, মালেকি ও হাম্বলি মাযহাবের অধিকাংশ ফকিহর মতে স্ত্রীর
সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া স্বামীর জন্য ওয়াজিব।’ সূত্র: আল মাউসুয়া’তুল ফিকহিয়্যা-৩০/১২৭
০৬. বিবাহের উপকারিতা বা সুফল:
ইসলাম ও দুনিয়ার দৃষ্টিতে
বিয়ে-শাদীর ফযিলত, উপকারিতা অসামান্য। নিম্নে কয়েকটি তুলে ধরে হলো-
Ø শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। সূরা রুম-২১
Ø অর্থনীতি সাবলম্বী হয়। সূরা নূর-৩৩
Ø মানব জাতির বৈধ বংশ
বিস্তারের মাধ্যম।
Ø তাকওয়ার পথ সুগম হয় । যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- কোন বান্দা যখন বিয়ে করে তখন তো সে
দীনের অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেলল। অতঃপর সে যেন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয়
করে। মিশকাত২/২৬৭
Ø যিনা-ব্যভিচার থেকে সমাজ রক্ষা পায়।
Ø মানসিক ভারসাম্য রক্ষা হয়।
Ø চোখ ও লজ্জাস্থানের হেফাযত হয়। বুখারি-৫০৬৬;
মুসলিম-৩৪৬৪
০৭. বিবাহ না করার অপকারিতা বা কুফল:
বিবাহ না করার নানাবিদ অপকারিতা
রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি বর্ণনা করা
হলো:-
Ø স্বাস্থ্য নষ্ট হয় ।
Ø অর্থের অপচয় হয়।
Ø যিনা-ব্যভিচারের প্রসার ঘটে, যা আল্লাহর গযবের কারণ।
Ø অবৈধ সন্তান বৃদ্ধি পায়।
Ø বংশ বা গোত্রের মর্যাদা ক্ষুণ হয়।
সূত্র: মুসলিম জীবন সাফল্যে চল্লিশ(৪০)হাদিস-৯৮ পৃ.
লেখক :
মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস লিলআদব)
ধর্মীয় শিক্ষক, বাংলাদেশ
সেনাবাহিনী
মোবাইল :
০১৭৩৫-৭৯১৩৮২,০১৮৮৭৭০১৬৫৬
খ। দ্বিতীয় স্তর: তালাক সম্পর্কে নীতিমালা"
০১. ভূমিকা: পারিবারিক
জীবনে সম্পর্ক ঠিকে রাখা যখন সম্ভব নয়। তখন শরিয়ত একটি পদ্ধতি রেখেছে তার নাম
তালাক। হাদিস শরিফে এসেছে-
عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى
عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ابغض الحلال الى الله الطلاق.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। “মহান
আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা অপছন্দনীয় হালাল হচ্ছেন তালাক। আবু দাউদ শরীফ
০২. তালাক কাকে বলে:
تعريف و معنى طلاق في معجم
المعاني الجامع - معجم عربي عربي
طِلاق: (اسم)
طِلاق : جمع طِّلْق
طَلاَق: (اسم)
الطَّلاقُ : التَّطْلِيقُ
الطلاقُ : الطُّلَقَةُ
الطَّلاقُ (في الشرع) :
رَفْعُ قيد النكاح المنعقد بين الزوجين بألفاظ مخصوصة
অর্থাৎ তালাক শব্দের অর্থ
বিচ্ছিন্ন হওয়া, বন্ধন মুক্ত হওয়া ইত্যাদি। পরিভাষায় তালাক অর্থ ‘ নির্দিষ্ট শব্দসমূহ দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাহের বাঁধন খুলে দেওয়া’ বা বিবাহের শক্ত
বন্ধন খুলে দেওয়া। সূত্র: মুজামু ওয়াফি
০৩. তালাকের প্রকারভেদ:
ফক্বীহ বা ফিক্বাহ শাস্ত্রবিদ গণের মান হুকুমের দিক দিয়ে তালাক তিন প্রকার:
১। তালাকে রাজঈ- এমন তালাক যা
প্রদান করে স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার থেকে। স্বামী ইচ্ছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
ব্যতীত নিজের বন্ধনে স্ত্রীকে আনতে পারে। একই স্ত্রীর সাথে নিরিবিলি অবস্থান নেওয়ার
দিকে নিরিবিলি আকর্ষন তৎপরতা লিপ্তাক্ত,
অথবা
খাহেশা সাথে তুর্ক বা বুছা দেওয়া আমি মানসিকতার অবস্থান নির্ধারন রাজাকে মনে মনে মনে
করে। উল্লেখ্য যে, সরীহ বা সুস্পষ্ট তালাক (তালাক শব্দ উচ্চারণ) এর
মাধ্যমে যে, “তুমি তালাক” বলা হয়েছে “আমি
বাধ্যতামূলক তালাক বাধ্যতামূলক। এ সকল শব্দ দ্বারা তালাক প্রকাশ তালাকে রাজঈ পতিত হয়।
২। তালাকে বায়িন: এমন তালাক
যা প্রদান করে তার স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার থাকে না। বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া
যায়। তবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ঐক্যের জন্য (হিলা ব্যতী) নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হতে পারে।
উল্লেখ্য যে তালাকের সাথে যদি
কোন প্রকার, তাহলে তালাকে বায়িন হয়। যেমন- কেউ বলে, প্রতি
তালাকে বায়িন আপনার মনের অকাট্য তালাক৷ তবে তিন তালাকের নিয়ত তিন তালাকই পতিত হবে।
অন্যথায় এক তালাকে বায়িন হবে।
৩। তালাকে মুগাল্লাযা: এমন তালাক
যার কারণে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক আছে। এ স্ত্রী স্বামী স্বামীর
সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ অবস্থান, অঃপর ঐ তার সাথে নিরিবিলি করার
পর তালা দলের স্বামী অথবা স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
আমি এর দিক দিয়ে তালাক দুই প্রকার:
১. সুন্নী তালাক। ২. বিদআতি তালাক।
সুন্নী তালাক আবার দুই প্রকার:
(ক) আহসান (আহসান তালাক) (খ) হাসান (হাসান তালাক)
(ক) আহসান
তালাক- এমন তালাককে বলা হয়, যে নিজের স্ত্রীকে এমন তালে এক
রাজঈ তালাক, যে তহুরে তার সাথে অতী করে। তারপর তাকে এই অবস্থার
উপর ছেড়ে দেওয়া যাবে এবং তার ইদ্দত শেষ বলবে তিন সাধারণ মাজুরতা শেষ হয়ে যাবে। আর
হামেলা হলে সন্তান জন্মগ্রহন করবে। ইদ্দত অতিবাহিত হলে সে আপনাই বায়িন হবে।
(খ) হাসান
তালাক- স্ত্রীকে এমন তহুরে তালাক তুমি তোমার সাথে অতী করে। প্রথম তহূরে তাকে এক তালাক।
তারপর দ্বিতীয় তালাক তাহূরে। আর তিন তাহুরে তিন তালাক নিতে। (মুহিত ছুরুখসী, আলমগীরী)
(২) একই
তহুরে তালাক অথবা তিন তালাক যে তাহূরে অতীব করা হয়েছে সেই তহরে এক তালাক দেওয়া মন্তব্য।
যার অতী করা হয়েছে তাকে সাধারণ মাতারজুর সময় এক তালাকবিদকে তালাকে বলা হয়। এরূপ
তালাক কার্যকর হবে তবে তালাকদাতা কঠিন গুনাহগার হবে।
০৪. শব্দগত দিক দিয়ে তালাকের প্রকারভেদ:
তালাক তালাক উভয় প্রকার শব্দ
ব্যবহার করা হয়
১. তালাকে ছরিহ: পরিষ্কার অর্থ প্রকাশক এবং একার্থবোধক, যাকে
তালাকে সরীহ বলা হয়। যেমন- কেউ আহলিয়াকে বলে,
“আমি কোন ব্যক্তি তালাক তার বিশ্বাসকে”
“আমি আমার আহলিয়াক দাবি।”
২. তালাকে কিয়ানাহ : যার অর্থ পরিষ্কার নয়। তথ্য অর্থের খোলা থাকে। তালাকের
অর্থ ও হতে পারে। আবার অন্য অর্থও হতে পারে। যেমন- আহলিয়াকে বলে, কেউ
তাকে দুর করে। এই কথার অর্থ তালাক হতে পারে,
আবার
এই অর্থ হতে পারে, তালাক ডেইনি। বর্তমানে আমার আহলিয়াকে আমার কাছে
আসতে নিষেধ করেছি। এরূপ শব্দকে শব্দায়া বলে। আপনিয়ার আরো অনেক শব্দ আছে। যেমন- কেউ
তার আহলিয়াকে বলে, তুমি তোমার বাবার বাড়িতে থাকতে, আমি
তোমার খবর নিতে পারবো না, আমার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, আমার
বাড়ি থেকে যাও, দূর যাও ইত্যাদি। এই সব শব্দের দুই অর্থ হতে পারে।
তালাকের অর্থ হতে পারে। আবার অন্য অর্থও হতে পারে।
প্রথম
কথা হলো স্ত্রীকে আমভাবে স্বামীকে তালাক দেওয়ার অধিকার নেই। বরং স্ত্রী বিনাকারণে তালাক চায়লে কঠিক ধমক এসেছে-যেমন,
عَنْ ثَوْبَانَ، أَنَّ
رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَيُّمَا امْرَأَةٍ
سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا مِنْ غَيْرِ بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ
الجَنَّةِ
হযরত
সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যদি কোন মহিলা তার উপর কোন
কষ্ট না হবার পরও স্বামীর কাছে তালাক চায়, তাহলে তার জন্য জান্নাতের
ঘ্রাণও হারাম। তাখরিজ: জামে তিরমিজী-১১৮৭
প্রশ্ন: ক। স্বামীকে তালাক দেওয়ার কোন পদ্ধতি/উপায় আছে কি?
উত্তর: ক। আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি যে, নারীর স্বামীকে তালাক দেওয়া ক্ষমতা নেই, তবে স্ত্রী যদি স্বামী থেকে
তালাক দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়, তাহলে স্বামীকে তালাক দিতে
পারবে। ইসলামি পরিভাষায় থাকে খোলা তালাক বলে। যাইহোক কয়েকটি পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলো,
প্রথম
পদ্ধতি:
খোলা
তালাক: খোলা শব্দটি আরবি বাংলা অর্থ
হলো, বিচ্ছিন্ন হওয়া, বিচ্ছিন্ন করা, সম্পর্ক ছেদ করা ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় খোলা তালাক বলা হয়, কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে স্বামী সে বিনিময়টি
গ্রহণ করে স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে; এ বিনিময়টি স্বামী কর্তৃক
স্ত্রীকে প্রদত্ত মোহরানা হোক কিংবা এর চেয়ে বেশি সম্পদ হোক কিংবা এর চেয়ে কম হোক। দলিল:কুরআনের বাণী-
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا
يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ
بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن
يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٢:٢٢٩
অতঃপর
যদি তোমাদের ভয় হয় যে,তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে
না,তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়,তবে
উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই
একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম। [সূরা বাকারা-২২৯]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ
امْرَأَةَ ثَابِتِ بْنِ قَيْسٍ أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثَابِتُ بْنُ قَيْسٍ، مَا أَعْتِبُ عَلَيْهِ فِي
خُلُقٍ وَلاَ دِينٍ، وَلَكِنِّي أَكْرَهُ الكُفْرَ فِي الإِسْلاَمِ، فَقَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَرُدِّينَ عَلَيْهِ
حَدِيقَتَهُ؟» قَالَتْ: نَعَمْ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «اقْبَلِ الحَدِيقَةَ وَطَلِّقْهَا تَطْلِيقَةً
ইবনু ‘আববাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সাবিত ইবনু কায়স এর স্ত্রী
নাবী (ﷺ) -এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) চরিত্রগত বা দ্বীনী বিষয়ে সাবিত ইবনু
কায়সের উপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি ইসলামের ভিতরে থেকে কুফরী করা অর্থাৎ
স্বামীর সঙ্গে অমিল) পছন্দ করছি না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি বাগানটি গ্রহণ কর এবং মহিলাকে এক তালাক দিয়ে দাও।
বুখারী-৫২৭৩ফুকাহয়ে
কেরামের মতামত:
وأما ركنه فهو كما فى
البدائع: إذا كان بعوض الإيجاب والقبول، لأنه عقد على الطلاق بعوض، فلا تقع الفرقة
ولا يستحق العوض بدون القبول (رد المحتار-3/441، دار الفكر)
وقد اعتبر الحنفية ركن
الخلع هو الإيجاب والقبول، لأنه عقد الطلاق بعوض، فلا تقع الفرقة ولا يستحق العوض
بدون القبول (الفقه الاسلامى وادلته-9/7015، دار الفكر)
الخلع جائز عند السلطان
وغيره، لأنه عقد يعتمد التراضى كسائر العقود، وهو بمنزلة الطلاق بعوض، وللزوج
ولاية إيقاع الطلاق، ولها ولاية التزام العوض، فلا معنى لاشتراط حضرة السلطان فى
هذا العقد (المبسوط للسرخسى-6/173، دار المعرفة
সারকথা
হলো, এ ক্ষেত্রেও স্বামীর অনুমতি লাগবে। সূত্র: রদদুল মুখতার-৩/৪৪১ পৃষ্ঠা, আল-মাসবুত লিল সারাখসি-৬/১৭৩ পৃষ্ঠা
দ্বিতীয়
পদ্ধতি:
প্রচলিত
বাংলাদেশ প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন-১৯৬১ নিকাহ ও তালাক নামার ১৮ নং কলামে একটি ধারা রয়েছে। অর্থাৎ স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার।
এখানে
যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক পতিত করার অধিকার
প্রদান করে থাকে, তা জেনেশুনে স্বামী উক্ত
কাবিন নামার নিচে সাইন করে থাকে, তাহলে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী
নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকারপ্রাপ্তা হয়। তখন উপরোক্ত ধারা অনুপাতে
স্বামী লিখিত তালাকের শর্ত পাওয়া গেলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার
পাবে।
যদি
শর্ত না পাওয়া যায়, কিংবা স্বামী স্ত্রীকে
তালাকের অধিকার প্রদান না করে থাকে, তাহলে স্ত্রী নিজের উপর
তালাক পতিত করার অধিকার পায় না।
তৃতীয়
পদ্ধতি:
উপরে দুটি পদ্ধতি না হলে, পারিবারিকভাবে গ্রাম্য সালিশ বা গ্রহণযোগ্য উলামা সমন্বিত পঞ্চায়েতের মাধ্যমে উক্ত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ
بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن
يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا
خَبِيرًا
অর্থ:
দি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে।
তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত। সূরা নিসা-৩৫
চতুর্থ
পদ্ধতি:
উপরে সব পদ্ধতি যদি ফেল হয় আর স্বামী যদি
জালেম/অযোগ্য হয়, তার সাথে সংসার করা সম্ভব না
হয়, তাহলে স্ত্রীর উচিত তার স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা। আদালতের মাধ্যমে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করানো।
সারকথা হলো, তালাক সংক্রান্ত বিস্তারিত
জানতে সার্চ অপশনে জিজ্ঞাসা-১৩৬,২৩৩,২৯১,২৪০,১২৩১১,১২৩৫২ ও ১২৩৭৯ নং দেখুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৫৩:
আসসালামুয়ালাইকুম। মুহতারাম,
হাদিয়া কাকে বলে, হাদিয়া ও ঘুষের মধ্যে পার্থক্য
কি? কুরআন সুন্নাহ আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।
জাযাকাল্লাহু খয়রান। তারিখ: ২৮/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ মফিদুল ইসলাম ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
প্রশ্ন: ক। হাদিয়া কাকে বলে?
উত্তর: ক। হাদিয়া আরবি শব্দ, বাংলায় এর প্রতিশব্দ হচ্ছে উপঢৌকন,
উপহার, অর্পিত, নিবেদিত,
সংগৃহীত
আহুত আর ইংরেজিতে প্রতিশব্দ হচ্ছে
Gift, donation, present,
presentation,contribution, offering, freebie, prize, donative.
হাদিয়া হল যা অন্য কাউকে খুশি
করা এবং তার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক ভালো প্রকাশ করার জন্য দেয়া হয়। আর এর মাধ্যমে আল্লাহর
সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য থাকে।
কুরআন- হাদিসের আলোকে হাদিয়া:
وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ
ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ
وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ
অর্থ: আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। সূরা বাকারা-১৭৭
হাদিস নং -০১
حَدَّثَنَا عَاصِمُ بْنُ
عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنِ الْمَقْبُرِيِّ، (عَنْ أَبِيهِ،) عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم قَالَ
" يَا نِسَاءَ
الْمُسْلِمَاتِ لاَ تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا، وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ ".
আসিম ইবনু আলী (রহঃ) ... আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে মুসলিম
মহিলাগণ! কোন মহিলা প্রতিবেশিনী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশিনী (প্রদত্ত হাদিয়া) তুচ্ছ
মনে না করে, এমন কি স্বল্প গোশত বিশিষ্ট বকরীর হাঁড় হলেও। তাখরিজ: বুখারি আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৬
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ
مُوسَى، حَدَّثَنَا عَبْدَةُ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ
رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّاسَ، كَانُوا يَتَحَرَّوْنَ بِهَدَايَاهُمْ يَوْمَ
عَائِشَةَ، يَبْتَغُونَ بِهَا ـ أَوْ يَبْتَغُونَ بِذَلِكَ ـ مَرْضَاةَ رَسُولِ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.
ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ...
’আয়িশা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, লোকেরা তাদের হাদিয়া পাঠাবার জন্য ’আয়িশা (রাঃ) এর নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। এতে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করত।তাখরিজ: বুখারি,আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৪
প্রশ্ন: ক। হারাম টাকার হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ আছে কি?
উত্তর: ক। হারাম টাকার হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ নেই।
সন্দেহ হলে তাহকীক করে নিবে।
না জেনে গ্রহণ করলে পরে জানলে তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দিবে। যদি জানা না যায়, তাহলে গ্রহণ করাতে কোন সমস্যা নেই।
দলিল:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ
بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ سُلَيْمَانَ، عَنْ
أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم قَالَ
" لَوْ دُعِيتُ
إِلَى ذِرَاعٍ أَوْ كُرَاعٍ لأَجَبْتُ، وَلَوْ أُهْدِيَ إِلَىَّ ذِرَاعٌ أَوْ
كُرَاعٌ لَقَبِلْتُ
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
যদি আমাকে হালাল পশুর পায়া বা হাতা খেতে আহবান করা হয়, তবু তা আমি গ্রহণ করব আর যদি আমাকে পায়া বা হাতা হাদিয়া দেওয়া হয়, তবে আমি তা গ্রহণ করব। তাখরিজ: বুখারি আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৮
فى الفتاوى الهندية– أهدى إلى رجل شيئا أو أضافه إن كان غالب ماله من الحلال
فلا بأس إلا أن يعلم بأنه حرام ، فإن كان الغالب هو الحرام ينبغي أن لا يقبل
الهدية ، ولا يأكل الطعام إلا أن يخبره بأنه حلال ورثته أو استقرضته من رجل ، كذا
في الينابيع (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية،
كتاب الكراهية-5/342، رد المحتار-6/247
প্রশ্ন: গ। হাদিয়া দাতার আয়ের
উৎস হারাম হলে করণীয় কি?
উত্তর: গ। হাদিয়া দাতার আয়ের
সব উৎস হারাম হলে তার হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েজ নয়। যদি তার বেশির ভাগ আয় হারাম হয় এবং
সে হাদিয়া দেয়ার সময় উল্লেখ না করে যে হালাল আয় থেকে দিচ্ছে না হারাম আয় থেকে, তাহলেও তা গ্রহণ করা জায়েজ নয়।
যদি স্পষ্ট উল্লেখ করে যে এ হাদিয়া হালাল আয় থেকে, তাহলে তা গ্রহণ
করার অবকাশ আছে। যদি বেশির ভাগ আয় হালাল হয়, তাহলে হালাল-হারাম
স্পষ্ট না করলেও হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েজ আছে। তবে বেশির ভাগ আয় হালাল— এমন ব্যক্তির হাদিয়ার ব্যাপারে যদি জানা যায় যে হাদিয়া হারাম আয় থেকে দিচ্ছে
তাহলে তা গ্রহণ করা বৈধ নয়। সূত্র: ফাতাওয়া
হিন্দিয়া: ৫/২৪২-৪
প্রশ্ন: ঘ। হাদিয়া ও ঘুষের পার্থক্য
কি?
উত্তর: ঘ। হাদিয়া ও ঘুসের মধ্যে
বিরাট পার্থক্য রয়েছে। হাদিয়া দেয়ার নিয়তের মধ্যে পারস্পরিক মহব্বত থাকে। পার্থিব কোনো
স্বার্থ হাসিল বা কোনোরূপ সাহায্য পাওয়ার আশা থাকে না। পক্ষান্তরে ঘুষ দেয়ার উদ্দেশ্য
হয় কোনো স্বার্থ হাসিল করা বা সাহায্য পাওয়া। সাধারণত কর্তব্যরত কোনো ব্যক্তির কাছে
থেকে কাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিছু দেয়া ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। বর্ণিত আছে,
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ
مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ
الزُّبَيْرِ، عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ
اسْتَعْمَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً مِنَ الأَزْدِ يُقَالُ لَهُ
ابْنُ اللُّتْبِيَّةِ عَلَى الصَّدَقَةِ، فَلَمَّا قَدِمَ قَالَ هَذَا لَكُمْ،
وَهَذَا أُهْدِيَ لِي.
قَالَ " فَهَلاَّ جَلَسَ فِي بَيْتِ أَبِيهِ أَوْ بَيْتِ
أُمِّهِ، فَيَنْظُرَ يُهْدَى لَهُ أَمْ لاَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ
يَأْخُذُ أَحَدٌ مِنْهُ شَيْئًا إِلاَّ جَاءَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَحْمِلُهُ
عَلَى رَقَبَتِهِ، إِنْ كَانَ بَعِيرًا لَهُ رُغَاءٌ أَوْ بَقَرَةً لَهَا خُوَارٌ
أَوْ شَاةً تَيْعَرُ ـ ثُمَّ رَفَعَ بِيَدِهِ، حَتَّى رَأَيْنَا عُفْرَةَ
إِبْطَيْهِ ـ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ ثَلاَثًا ".
আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ)
... আবু হুমায়দ সাঈদী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) আযদ গোত্রের ইবনে লুত্বিয়া নামক এক ব্যক্তিকে (সাদ্কা সংগ্রহের
কাজে নিয়োগ করেছিলেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, এগুলো আপনাদের (অর্থাৎ সাদ্কার মাল) আর এগুলো
আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে তার বাবার ঘরে কিংবা তার মায়ের
ঘরে কেন বসে থাকল না? তখন সে দেখত, তাকে
কেউ হাদিয়া দেয়া কিনা? যার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, সাদ্কার মাল থেকে সামান্য পরিমাণও যে
আত্মসাৎ করবে, সে তা কাঁধে করে কিয়ামতের দিন হাযির হবে। সে মাল
যদি উট হয় তাহলে তা তার আওয়াজে, আর যদি গাভী হয় তাহলে হাম্বা
হাম্বা রবে আর বকরী হয় তাহলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ রবে (আওয়াজ করতে থাকবে)। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার
দু’হাত এতটুকু উত্তোলন
করলেন যে, আমরা তার উভয় বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি তিন
বার বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি পৌছে দিয়েছি। হে আল্লাহ্ আমি কি
পৌছে দিয়েছি? তাখরিজ: বুখারি, আন্তর্জাতিক
নং ২৫৯৭
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৫৪:
আসসালামুয়ালাইকুম। দাবা খেলা কি জায়েজ? তারিখ: ০১/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জিয়াউল হক ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
يحرم اللعب بالنرد، فإن كان على
مال فهو قمار، وإن خلا من المال فهو محرم أيضا في قول جمهور الفقهاء؛ لعموم الحديث
الوارد في ذلك ؛ ولكونه مما يلهي ويصد عن ذكر الله، ولشبهه بالأزلام ، في الاعتماد
على ما يخرج منه.
অর্থ: দাবা বা পাশা দিয়ে খেলা হারাম। যদি তা অর্থের উপর
হয় তবে তা জুয়া এবং যদি তা অর্থবিহীন হয় তবে তাও অধিকাংশ ফকীহের মতানুযায়ী হারাম।
এর মধ্যে থাকা সাধারণ হাদীসের জন্য; এবং কারণ এটি এমন একটি জিনিস যা বিক্ষিপ্ত করে
এবং আল্লাহর স্মরণে বাধা দেয়।
فأما المحرم : فاللعب بالنرد.
وهذا قول أبي حنيفة، وأكثر أصحاب الشافعي.
وقال بعضهم: هو مكروه، غير محرم.
দ্বিতীয় কথা হলো, দাবা খেলা হারাম এটা ইমাম আবু হানিফা এবং অধিকাংশ শাফিয়ির মত। আবার
কেউ কেউ এটাকে মাকরুহ বলেছেন, হারাম নয়।
ফিকহি হানিফির দলিল:
হাদিস নং-০১
وى مسلم (2260) عن بُرَيْدَةَ،
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ، فَكَأَنَّمَا
صَبَغَ يَدَهُ فِي لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ .
‘যে লুডু (النَّرد) খেলল, সে যেন শুকরের গোশ্ত ও তার রক্তে তার হাত ডুবাল’ । তাখরিজ: মুসলিম ২২৬০
হাদিস নং-০২
: لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى
اللهَ وَرَسُولَهُ
যে লুডু খেলল, সে আল্লাহ্
ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল’। তাখরিজ:
ছহীহ
আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩০৬৩
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَفْشُوا السَّلاَمَ
تَسْلَمُوا، وَالأَشَرَةُ شَرٌّ.
قَالَ أَبُو مُعَاوِيَةَ: الأشَرَةُ: الْعَبَثُ.
বারাআ ইবনে আয়েব (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, শান্তিতে থাকবে। অসার কথাবার্তায়
লিপ্ত হওয়া ক্ষতিকর। তাখরিজ: আদাবুল মুফরাদ- মুসনাদ আবু ইয়ালা
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৫৫:
আসসালামুয়ালাইকুম। টাকা নির্ধারণ করে
কোরআন শেখালে অবৈধ হবে কিনা? তারিখ: ০২/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জিয়াউল হক ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
এ বিষয়ে দুটি মতামত পাওয়া যায়, তবে বিশুদ্ধ মত হলো, কুরআন শিক্ষা দিয়ে বিনিময়ে টাকা নেওয়া এবং নির্ধারণ করা জায়েজ। যেমন সৌদি স্থায়ী কমিটির ফতোয়ায় বলা হয়েছে:
قال علماء اللجنة الدائمة
للإفتاء :
"يجوز لك أن تأخذ أجراً على تعليم القرآن ؛ فإن النبي
صلى الله عليه وسلم زوَّج رجلا امرأة بتعليمه إياها ما معه من القرآن ، وكان ذلك
صداقها ، وأخذ الصحابي أجرة على شفاء مريض كافر بسبب رقيته إياه بفاتحة الكتاب ،
وقال في ذلك النبي صلى الله عليه وسلم : ( إن أحق ما أخذتم عليه أجرا كتاب الله ) أخرجه البخاري ومسلم ، وإنما المحظور : أخذ الأجرة على نفس تلاوة القرآن ، وسؤال الناس بقراءته" انتهى .
الشيخ عبد العزيز بن باز ، الشيخ
عبد الرزاق عفيفي ، الشيخ عبد الله بن غديان ، الشيخ عبد الله بن قعود .
" فتاوى اللجنة الدائمة " ( 15 / 96 )
. ،
অর্থাৎ বিয়ে করা।
ফতোয়া প্রদানকারী স্থায়ী কমিটির
আলেমগণ বলেছেন:
আপনার জন্য কুরআন শিক্ষার জন্য
অর্থ গ্রহণ করা জায়েজ, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মহিলাকে কুরআনের শিক্ষা দিয়ে
একজন পুরুষকে বিয়ে করেছিলেন এবং তা ছিল তার। যৌতুক। এবং তিনি সালাম দিলেন: (তোমরা
যে অর্থের বিনিময় গ্রহণ কর তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যোগ্য হল আল্লাহর কিতাব) আল-বুখারী
ও মুসলিম এতে অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু যা নিষিদ্ধ তা হল একই পরিমাণ
কুরআন তেলাওয়াতের জন্য অর্থ গ্রহণ করা, এবং লোকেদের এটা পড়তে
বলছে। স্বাক্ষরকারী:
শেখ আব্দুল আজিজ বিন বাজ, শেখ আব্দুল রাজ্জাক আফিফি,
শেখ আবদুল্লাহ বিন গাদিয়ান, শেখ আবদুল্লাহ বিন
কাউদ। সূত্র: স্থায়ী কমিটির ফতোয়া-15/96
এ বিষয়ে শায়েখ আব্দুল আজিজ
ইবনে বাজ রহ. বলেছেন,
وقال الشيخ عبد العزيز بن باز
رحمه الله :
"لا حرج في أخذ الأجرة على تعليم القرآن ، وتعليم العلم
؛ لأن الناس في حاجة إلى التعليم ؛ ولأن المعلم قد يشق عليه ذلك ، ويعطله التعليم
عن الكسب , فإذا أخذ أجرة على تعليم القرآن
، وتحفيظه ، وتعليم العلم :
فالصحيح أنه لا حرج في ذلك ... ثم استدل بحديث أخذ الأجرة على الرقية ... ثم قال : وقال صلى الله عليه وسلم : ( إن أحق ما أخذتم عليه أجرا كتاب الله ) رواه البخاري في الصحيح أيضاً , فهذا يدل على أنه لا بأس بأخذ الأجرة على التعليم ، كما
جاز أخذها على الرقية .
" مجموع فتاوى الشيخ ابن باز " ( 5 / 364 ، 365 )
.
অর্থাৎ কুরআন শিক্ষা এবং জ্ঞান
শিক্ষার জন্য অর্থ প্রদানে কোন দোষ নেই, কারণ মানুষ শিক্ষার প্রয়োজন, এবং কারণ শিক্ষক তার পক্ষে এটি কঠিন মনে করতে পারে এবং শিক্ষা তাকে উপার্জন
থেকে বিরত রাখতে পারে। সূত্র: মাজমু’
ফাতাওয়া আল-শাইখ ইবনে বায-৫/৩৬৪, ৩৬৫
দলিল:
হাদিস নং-০১
فَكَرِهُوا ذَلِكَ وَقَالُوا:
أَخَذْتَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ أَجْرًا حَتَّى قَدِمُوا الْمَدِينَةَ فَقَالُوا:
يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخَذَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ أَجْرًا. فَقَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ
عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللَّهِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ:
«أَصَبْتُمُ اقْسِمُوا وَاضْرِبُوا لِي مَعَكُمْ سَهْمًا»
তাঁরা এটা অপছন্দ করে বলতে লাগলেন, আপনি কি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে
পারিশ্রমিক নিলেন? পরিশেষে তাঁরা মদীনায় পৌঁছলেন এবং বললেন,
হে আল্লাহর রসূল! ইনি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়েছেন। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যেসব
জিনিসের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়ে থাকো, তাদের মধ্যে কিতাবুল্লাহ
(আল্লাহর কিতাব) অধিকতর উপযোগী। তাখরিজ: সহীহ : বুখারি-৫৭৩৭, সহীহ ইবনে- হিব্বান ৫১৪৬
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا رَبِيعٌ الْمُؤَذِّنُ
قَالَ: ثنا أَسَدٌ قَالَ: ثنا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ , عَنْ أَبِي حَازِمٍ ,
عَنْ سَهْلٍ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ ,
غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ: «قَدْ أَنْكَحْتُكَ مَعَ مَا مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ» .
রাবী আল-মুয়াযযিন (র) .....
সহল (রা) হতে বর্ণনা করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে
অনুরূপ বর্ণনা পেশ করেন। তবে তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেছেন قَدْ أَنْكَحْتُكَ مَعَ مَا مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ
অর্থাৎ তোমার সাথে কুরআনুল কারীমের
যে অংশ আছে তার পরিবর্তে তোমাকে বিয়ে করিয়ে দিলাম। তাখরিজ: তহাবি -৪২৯৪
প্রশ্ন: ক। নিচের আয়াতের ব্যাখ্যা কি?
وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي
ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ
অর্থ: আর আমার আয়াতসমূহকে তুচ্ছ মূল্যের বিনিময়ে বিক্রি
করো না। আর তোমাদের অন্তরে (অন্য কারও নয়) কেবল আমারই ভয়কে স্থিত কর। সূরা বাকারা-৪১
উত্তর: ক।
وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي
ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ
অর্থ: আর আমার আয়াতসমূহকে তুচ্ছ মূল্যের বিনিময়ে বিক্রি
করো না। সূরা বাকারা-৪১
ব্যাখ্যা: তোমরা আমার আয়াতসমূহ কোনো নগণ্য বস্তুর বিনিময়ে বিক্রয়
করো না। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআ'লার আয়াতসমূহের বিনিময় মূল্য
গ্রহণ নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ হলো মানুষের মর্জি ও স্বার্থের তাগিদে আয়াতসমূহের মর্ম ভুল
বা বিকৃতভাবে প্রকাশ করে কিংবা তা গোপন রেখে টাকা-পয়সা গ্রহণ করা। এ কাজটি উম্মতের
জন্য সর্বতোভাবে হারাম।
কুরআন শিখিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ
করা জায়েজ। এখানে প্রশ্ন থেকে যায়,
আল্লাহর
আয়াতসমূহ ঠিকঠিকভাবে শিক্ষা দিয়ে বা ব্যক্ত করে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সঙ্গত কিনা? এ প্রশ্নটির
সম্পর্ক উল্লেখিত আয়াতের সাথে নয়। স্বয়ং মাসআলাটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য ও পর্যালোচনা
সাপেক্ষ। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-৩৫ পৃ. (সংক্ষিপ্ত)
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান অনূদিত
সারকথা হলো, এ বিষয়ে আইম্মিয়ায়ে আরবার
মদ্যে মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ওলামায়ে
মুতাকাদ্দিমিন ও মুতাআখ্খিরিনদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। বিশুদ্ধ মত হলো জায়েজ। সুতরাং
আপনার প্রশ্নের আলোকে টাকা নির্ধারণ করে কোরআন শেখালে অবৈধ হবে, অসুবধা নেই।
শেষ কথা হলো, যার পক্ষে সম্ভব তার জন্য বা যার
অভাব নেই, তার জন্য না নেওয়াই উত্তম। যেমনটি শায়েখ ইবনে
তাইমিয়া রহ. বলেন,
وقال الشيخ عبد العزيز بن باز
رحمه الله :
"لا حرج في أخذ الأجرة على تعليم القرآن ، وتعليم العلم
؛ لأن الناس في حاجة إلى التعليم ؛ ولأن المعلم قد يشق عليه ذلك ، ويعطله التعليم
عن الكسب , فإذا أخذ أجرة على تعليم القرآن ، وتحفيظه ، وتعليم العلم : فالصحيح
أنه لا حرج في ذلك ... ثم استدل بحديث أخذ الأجرة على الرقية ... ثم قال : وقال
صلى الله عليه وسلم : ( إن أحق ما أخذتم عليه أجرا كتاب الله ) رواه البخاري في
الصحيح أيضاً , فهذا يدل على أنه لا بأس بأخذ الأجرة على التعليم ، كما جاز أخذها
على الرقية
" مجموع فتاوى الشيخ ابن باز " ( 5 / 364 ، 365 ) .
তাই যখন আলেমগণ কুরআন শিক্ষার
জন্য অর্থ নেওয়ার বিষয়ে মতভেদ করেন,
তখন
ইমাম আহমদ ও অন্যান্যদের মাযহাবে তিনটি মত ছিল,
যার
মধ্যে সবচেয়ে ন্যায়সঙ্গত হল এটি অভাবগ্রস্তদের জন্য জায়েয।
আহমদ বলেন: শিক্ষার পুরস্কার
সুলতানের পুরস্কারের চেয়ে উত্তম এবং সুলতানের পুরস্কার ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কের চেয়েও
উত্তম। সূত্র: মাজমু' ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ-৩০/১৯২, ১৯৩
এর সমর্থনে নিম্নের হাদিস
পেশ করা যায়,
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ
مَرْزُوقٍ قَالَ: ثنا أَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ قَالَ: ثنا عَلِيُّ بْنُ
الْمُبَارَكِ , عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ , عَنْ زَيْدِ بْنِ سَلَامٍ ,
عَنْ أَبِي سَلَّامٍ , عَنْ أَبِي رَاشِدٍ الْحُبْرَانِيِّ , عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ
بْنِ شِبْلٍ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " اقْرَءُوا الْقُرْآنَ وَلَا تَغْلُوا فِيهِ ,
وَلَا تَجْفُوا عَنْهُ , وَلَا تَأْكُلُوا بِهِ , وَلَا تَسْتَكْثِرُوا بِهِ
অর্থ: ইবরাহীম ইবন মারযূক (র)
……. আবদুর রহমান ইবন শিবলুল আনসারী
(রা) হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, “কুরআন অধ্যয়ন করবে, তার মধ্যে বাড়াবাড়ি করবেনা,
তার থেকে দূরে সরে যাবে না, তাকে অবলম্বন করে খাবেনা
এবং তাকে অবলম্বন করে পার্থিব সম্পদ বাড়ানোর চেষ্টা করবেনা।" তাখরিজ: ত্বহাবী
শরীফ, হাদীস নং ৪২৯৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৫৬:
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
আমার জানার বিষয় হলো, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের
জন্য নির্মিত স্বর্ণালংকারের যাকাত তাঁর অভিভাবককে আদায় করতে হবে নাকি? তারিখ: ০৩/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুর রহমান সাভার থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, নাবালেক বাচ্চার স্বর্ণ-রৌপ্যের দুটি ছুরত হতে পারে।
প্রথম ছুরত: অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের জন্য
নির্মিত স্বর্ণালংকার যদি অবিভাবক শুধু ব্যবহারের জন্য বানিয়ে দেয়, প্রকৃত মালিক অভিভাবক হয়। তাহলে যাকাতের নিছাব হলে উক্ক সোনা-রূপার যাকাত দিবে হবে।
দ্বিতীয় ছুরত: অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের জন্য
নির্মিত স্বর্ণালংকার যদি উক্ত মেয়েকে মালিক বানিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ঐ স্বর্ণালংকারের উপর যাকাত দিতে হবে না। কেননা নাবালেকদের যাকাত ফরজ
হয় না। দলিল:
আসার নং-০১
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি.
বলেছেন, لا تجب في مال اليتيم زكاة حتى
تجب عليه الصلاة
ইয়াতিমের ওপর নামাজ ফরয হওয়ার আগ পর্যন্ত যাকাত ফরয নয়। সূত্র: আলআমওয়াল ৩/৯৯
আসার নং-০২
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাযি. বলেছেন, ليس في مال اليتيم زكاة ইয়াতিমের
সম্পদে (সে বালেগ হওয়ার আগে) যাকাত নেই। সূত্র: নাসবুররায়া
২/৩৩৪ ফাতহুল কাদীর ২/১১৫
কিয়াসি দলিল:
আল্লাহ তাআলা বলেন,خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ
وَتُزَكِّيهِم بِهَا তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং
সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে। সূরা তাওবা ১০৩
ব্যাখ্যা: এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যাকাত গ্রহণ করার অন্যতম
উদ্দেশ্য হল, সম্পদের মালিককে গুনাহ থেকে পবিত্র করা। أن الصغير ليس من أهل التطهير؛
إذ لا ذنب عليه
আর নাবালেগের তো গোনাহই নেই, সুতরাং তার থেকে
যাকাত গ্রহণ করে তাকে পবিত্র করারও সুযোগ নেই। অর্থাৎ, গুনাহ
না থাকার কারণে নাবালেগ যেহেতু পবিত্রকরণের পাত্র নয়, সুতরাং
সে যাকাত দেয়ারও যোগ্য নয়। সূত্র: আলমাজমূ’ ৫/৩৩০; আলইলমাম ১২৩
সারকথা হলো আপনার প্রশ্নের
আলোকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের জন্য নির্মিত স্বর্ণালংকারের
যাকাত তার অভিভাবককে আদায় করতে হবে না। তবে আহলে হাদিসদের
মতে অভিভাবকদের আদায় করতে হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৫৭:
আসসালামুয়ালাইকুম। টাকা নির্ধারণ করে
কোরআন শেখালে অবৈধ হবে কিনা? তারিখ: ০৫/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ বগুড়া থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
এ বিষয়ে দুটি মতামত পাওয়া যায়,
প্রথম মত: সুন্নাত/মুস্তাহাব।
يُسنُّ الغُسلُ يومَ الجُمُعةِ، وهذا باتِّفاقِ
المذاهبِ الفقهيَّة الأربعة: الحَنَفيَّة، والمالِكيَّة، والشافعيَّة،
والحَنابِلَة، وبه قال جماهيرُ العلماء، وحُكي الإجماعُ على ذلك
الأدلَّة:
অর্থাৎ জুমার দিনে গোসল করা সুন্নত, এ
বিষয়ে আইম্মায়ে আরবা ইমাম আবু হানিফা,
ইমাম
মালেক, ইমাম শাফিয়ি এবং আহমদ ইবনে হাম্বল রহ একমত পোষণ করেছেন। ইবনে জুবায়ের বলেন জুমার দিনে গোসল করা সুন্নত ইমাম পোষণ করেছেন। সূত্র: ইখতিলাফুল আইম্মাতিল উলামা-১/১৫৯
দ্বিতীয় মত:
আহলে
হাদিসের কতিপয় আলেম এর মতে ওয়াজিব। তার মধ্যে এনটিভির আলোচক ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ ।
আইম্মায়ে আরবার দলিল:
আয়াত নং-০১
قال الله تعالى: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا
نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الجُمُعة فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ
وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ [الجُمُعة:
9]
অর্থ: হে ঈমানদারগণ যখন জুমার নামাজের উদ্দেশ্য আযান দেয়া
হয় তখন তোমরা আল্লাহর জিকিরের দিকে ধাবিত হও তোমাদের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে
দাও। সূরা জুমুআ-০৯
وَجْهُ الدَّلالَةِ:
أنَّ سياقَ الآية يُشير إشارةً خفيَّة إلى عدمِ وجوبِ
الغُسل; وذلك لأنَّه لم يَذكُر نوعُ طهارةٍ عندَ السَّعي بعدَ الأذان، ومعلومٌ
أنَّه لا بدَّ من طُهرٍ لها،
আয়াতের প্রেক্ষাপটে গোসল ফরজ না হওয়ার প্রচ্ছন্ন উল্লেখ
রয়েছে; এর কারণ হল নামাযের আযানের পর সা'আ
করার সময় কোন প্রকার শুদ্ধিকরণের কথা উল্লেখ করা হয়নি এবং এটাকে পবিত্র করা
আয়াত-০২
، فيكون إحالةً على الآية الثانية العامَّة في كلِّ الصلواتِ:
إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ... [المائدة: 6]
الآية؛ فيُكتَفَى بالوضوءِ، وتَحصُل الفضيلةُ بالغُسلِ
অর্থ: যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াবে। তখন তোমাদের
মুখমণ্ডল ধৌত করবে। সূরা মায়েদা-০৬
তাই এটি দ্বিতীয় আয়াতের একটি রেফারেন্স যা
সকল নামাযের ক্ষেত্রে সাধারণ।
হাদিস নং -০১
وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَأَبُو بَكْرِ
بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَأَبُو كُرَيْبٍ قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا وَقَالَ
الآخَرَانِ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ،
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "
مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ
وَأَنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ وَزِيَادَةُ ثَلاَثَةِ
أَيَّامٍ وَمَنْ مَسَّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا " .
অর্থ: ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়া, আবু
বকর ইবনে আবি শাঈবা ও আবু কুরায়ব (রাহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে, এরপর
জুমআয় আসে, মনোনিবেশ সহকারে নীরব থাকে, তার
তখন থেকে (পরবর্তী) জুমআ পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া
হয়। যে (অহেতুক) কংকর স্পর্শ করল সে অনর্থক কাজ করল। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ১৮৬১ (আন্তর্জাতিক নং ৮৫৭-২)
وَجْهُ الدَّلالَةِ:
فيه دليلٌ على أنَّ الوضوءَ كافٍ للجُمُعةِ، وأنَّ
المقتصِرَ عليه غيرُ آثمٍ ولا عاصٍ؛ فدلَّ على أنَّ الأمْرَ بالغُسلِ محمولٌ على الاستحبابِ
অর্থাৎ :
জুমার নামাযের জন্য ওযুই যথেষ্ট এবং তা শুধু এর মধ্যেই
সীমাবদ্ধ নয়, পাপীও নয়,
অবাধ্যও
নয়। এটি নির্দেশ করে যে ধোয়ার আদেশটি মানা উত্তম। সূত্র: ফাতহুল বারী-৫/৩৪২, ইবনে
রজব রহ.
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، قَالَ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ،
عَنْ يَحْيَى، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ عُمَرَ ـ رضى
الله عنه ـ بَيْنَمَا هُوَ يَخْطُبُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِذْ دَخَلَ رَجُلٌ
فَقَالَ عُمَرُ لِمَ تَحْتَبِسُونَ عَنِ الصَّلاَةِ فَقَالَ الرَّجُلُ مَا هُوَ
إِلاَّ سَمِعْتُ النِّدَاءَ تَوَضَّأْتُ. فَقَالَ أَلَمْ تَسْمَعُوا النَّبِيَّ
صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا رَاحَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْجُمُعَةِ
فَلْيَغْتَسِلْ ".
আবু নু’আইম (রাহঃ) ... আবু হুরাইরা
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, জুম'আর দিন উমর ইবনে খাত্তাব
(রাযিঃ) খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করেন। উমর
(রাযিঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, নামাযে সময়মত আসতে তোমরা কেন
বাধাগ্রস্থ হও? তিনি বললেন,
আযান
শোনার সাথে সাথেই তো আমি উযু করেছি। তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, তোমরা
কি নবী (ﷺ) কে একথা বলতে
শোননি যে, যখন তোমাদের কেউ জুম'আর
নামাযে রওয়ানা হয়, তখন সে যেন গোসল করে নেয়। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস
নং ৮৩৮ (আন্তর্জাতিক নং ৮৮২)
وَجْهُ الدَّلالَةِ:
أنَّ عُمرَ رَضِيَ اللهُ عنه لم يأمُرْ هذا الصحابيَّ-
(التمهيد)) لابن عبد البر
(10/78)، ((إكمال المعلم)) للقاضي عياض (3/130)وهو عثمانُ بن عفَّانَ على ما جاءَ
في الرِّوايات
অর্থাৎ ওমর রা. উক্ত ব্যক্তিকে গোসল করার আদেশ দেয়নি।
সুতরাং প্রমাণিত হলো গোসল ওয়াজিব নয়। সূত্র: আলতামহিদ-১৭/৭৮, ইবনে
আব্দিল বার রহ.
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا
عَبْدُ الْعَزِيزِ، - يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ - عَنْ عَمْرِو بْنِ أَبِي عَمْرٍو،
عَنْ عِكْرِمَةَ، أَنَّ أُنَاسًا، مِنْ أَهْلِ الْعِرَاقِ جَاءُوا فَقَالُوا يَا
ابْنَ عَبَّاسٍ أَتَرَى الْغُسْلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاجِبًا قَالَ لاَ
وَلَكِنَّهُ أَطْهَرُ وَخَيْرٌ لِمَنِ اغْتَسَلَ وَمَنْ لَمْ يَغْتَسِلْ فَلَيْسَ
عَلَيْهِ بِوَاجِب
অর্থ: আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসলামা .... আমর থেকে ইকরিমা
(রাহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
ইরাকের
একটি প্রতিনিধি দল এসে ইবনে আব্বাস (রাযিঃ)-কে বললেন, হে
ইবনে আব্বাস! আপনার মতে কি জুমআর দিন গোসল করা ওয়াজিব? তিনি
বলেন- না, কিন্তু গোসল করা খুবই উত্তম ও পবিত্রতম কাজ- যে
ব্যক্তি তা করে এবং যে ব্যক্তি তা করে না- তার জন্য এটা
ওয়াজিব নয়। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস
নং ৩৫৩ (আন্তর্জাতিক নং ৩৫৩)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)
কতিপয় আহলে হাদিসের দলিল:
হাদিস নং -০১
حَدَّثَنَا عَلِيٌّ، قَالَ حَدَّثَنَا حَرَمِيُّ بْنُ
عُمَارَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ،
قَالَ حَدَّثَنِي عَمْرُو بْنُ سُلَيْمٍ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ أَشْهَدُ عَلَى
أَبِي سَعِيدٍ قَالَ أَشْهَدُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ
" الْغُسْلُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ، وَأَنْ
يَسْتَنَّ وَأَنْ يَمَسَّ طِيبًا إِنْ وَجَدَ ". قَالَ عَمْرٌو أَمَّا
الْغُسْلُ فَأَشْهَدُ أَنَّهُ وَاجِبٌ، وَأَمَّا الاِسْتِنَانُ وَالطِّيبُ
فَاللَّهُ أَعْلَمُ أَوَاجِبٌ هُوَ أَمْ لاَ، وَلَكِنْ هَكَذَا فِي الْحَدِيثِ.
قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ هُوَ أَخُو مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ وَلَمْ
يُسَمَّ أَبُو بَكْرٍ هَذَا. رَوَاهُ عَنْهُ بُكَيْرُ بْنُ الأَشَجِّ وَسَعِيدُ
بْنُ أَبِي هِلاَلٍ وَعِدَّةٌ. وَكَانَ مُحَمَّدُ بْنُ الْمُنْكَدِرِ يُكْنَى
بِأَبِي بَكْرٍ وَأَبِي عَبْدِ اللَّهِ.
অর্থ: আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ... আমর ইবনে সুলাইম
আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু
সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেনঃ জুম'আর
দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য। আর মিসওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়া
গেলে তা ব্যবহার করবে। আমর (ইবনে সুলাইম) (রাহঃ) বলেন, গোসল
সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তা কর্তব্য। কিন্তু মিসওয়াক ও সুগন্ধ ি কর্তব্য কিনা
তা আল্লাহই ভাল জানেন। তবে হাদীসে এরূপই আছে। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস
নং ৮৩৬ (আন্তর্জাতিক নং ৮৮০)
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، قَالَ حَدَّثَنَا
شَيْبَانُ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ
عُمَرَ ـ رضى الله عنه ـ بَيْنَمَا هُوَ يَخْطُبُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِذْ دَخَلَ
رَجُلٌ فَقَالَ عُمَرُ لِمَ تَحْتَبِسُونَ عَنِ الصَّلاَةِ فَقَالَ الرَّجُلُ مَا
هُوَ إِلاَّ سَمِعْتُ النِّدَاءَ تَوَضَّأْتُ. فَقَالَ أَلَمْ تَسْمَعُوا
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا رَاحَ أَحَدُكُمْ إِلَى
الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ "
আবু নু’আইম (রাহঃ) ... আবু হুরাইরা (রাযিঃ) থেকে । তোমরা কি নবী (ﷺ) কে একথা বলতে শোননি যে, যখন
তোমাদের কেউ জুম'আর নামাযে রওয়ানা হয়, তখন
সে যেন গোসল করে নেয়। তাখরিজ: সহীহ বুখারী,
হাদীস
নং ৮৩৮ (আন্তর্জাতিক নং ৮৮২)
বিরোধপূর্ণ হাদিসগুলোর সমন্বয়:
আমরা দেখলাম কতক হাদিসে ওয়াজিব বলা হয়েছে আবার কতক হাদিসে
আবশ্যক করেননি। এদুটি ধারার বর্ণনা সমন্বয় হচ্ছে:
যাদের শরীরে ঘাম এবং দুর্গন্ধ ছিল তাদের জন্য এ আদেশ ছিল।
দলিল:
হাদিস নং -০১
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ
بْنُ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ
بْنِ أَبِي جَعْفَرٍ، أَنَّ مُحَمَّدَ بْنَ جَعْفَرِ بْنِ الزُّبَيْرِ، حَدَّثَهُ
عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم قَالَتْ كَانَ النَّاسُ يَنْتَابُونَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ مِنْ مَنَازِلِهِمْ
وَالْعَوَالِي، فَيَأْتُونَ فِي الْغُبَارِ، يُصِيبُهُمُ الْغُبَارُ وَالْعَرَقُ،
فَيَخْرُجُ مِنْهُمُ الْعَرَقُ، فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
إِنْسَانٌ مِنْهُمْ وَهْوَ عِنْدِي، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم "
لَوْ أَنَّكُمْ تَطَهَّرْتُمْ لِيَوْمِكُمْ هَذَا ".
অর্থ: আহমদ ইবনে সালিহ (রাহঃ) ... নবী (ﷺ) এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, লোকজন তাদের বাড়ী ও উঁচু এলাকা থেকেও জুমআর নামাযের জন্য
পালাক্রমে আসতেন। আর যেহেতু তারা ধুলো-বালির মধ্য দিয়ে আগমন করতেন, তাই
তারা ধূলিমলিন ও ঘর্মাক্ত হয়ে যেতেন। তাঁদের দেহ থেকে ঘাম বের হত। একদিন তাদের
একজন রাসূল (ﷺ) এর নিকট আসেন।
তখন নবী (ﷺ) আমার নিকট
ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেনঃ যদি তোমরা এ দিনটিতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে।
তাখরিজ: সহীহ বুখারী,
হাদীস
নং ৮৫৬ (আন্তর্জাতিক নং ৯০২)
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا
عَبْدُ الْعَزِيزِ، - يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ - عَنْ عَمْرِو بْنِ أَبِي عَمْرٍو،
عَنْ عِكْرِمَةَ، أَنَّ أُنَاسًا، مِنْ أَهْلِ الْعِرَاقِ جَاءُوا فَقَالُوا يَا
ابْنَ عَبَّاسٍ أَتَرَى الْغُسْلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاجِبًا قَالَ لاَ
وَلَكِنَّهُ أَطْهَرُ وَخَيْرٌ لِمَنِ اغْتَسَلَ وَمَنْ لَمْ يَغْتَسِلْ فَلَيْسَ
عَلَيْهِ بِوَاجِبٍ وَسَأُخْبِرُكُمْ كَيْفَ بَدْءُ الْغُسْلِ كَانَ النَّاسُ
مَجْهُودِينَ يَلْبَسُونَ الصُّوفَ وَيَعْمَلُونَ عَلَى ظُهُورِهِمْ وَكَانَ
مَسْجِدُهُمْ ضَيِّقًا مُقَارِبَ السَّقْفِ إِنَّمَا هُوَ عَرِيشٌ فَخَرَجَ
رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي يَوْمٍ حَارٍّ وَعَرِقَ النَّاسُ فِي
ذَلِكَ الصُّوفِ حَتَّى ثَارَتْ مِنْهُمْ رِيَاحٌ آذَى بِذَلِكَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا
فَلَمَّا وَجَدَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تِلْكَ الرِّيحَ قَالَ "
أَيُّهَا النَّاسُ إِذَا كَانَ هَذَا الْيَوْمُ فَاغْتَسِلُوا وَلْيَمَسَّ
أَحَدُكُمْ أَفْضَلَ مَا يَجِدُ مِنْ دُهْنِهِ وَطِيبِهِ " . قَالَ ابْنُ
عَبَّاسٍ ثُمَّ جَاءَ اللَّهُ بِالْخَيْرِ وَلَبِسُوا غَيْرَ الصُّوفِ وَكُفُوا
الْعَمَلَ وَوُسِّعَ مَسْجِدُهُمْ وَذَهَبَ بَعْضُ الَّذِي كَانَ يُؤْذِي
بَعْضُهُمْ بَعْضًا مِنَ الْعَرَقِ .
অর্থ: আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসলামা .... আমর থেকে ইকরিমা
(রাহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
ইরাকের
একটি প্রতিনিধি দল এসে ইবনে আব্বাস (রাযিঃ)-কে বললেন, হে
ইবনে আব্বাস! আপনার মতে কি জুমআর দিন গোসল করা ওয়াজিব? তিনি
বলেন- না, কিন্তু গোসল করা খুবই উত্তম ও পবিত্রতম কাজ- যে
ব্যক্তি তা করে এবং যে ব্যক্তি তা করে না- তার জন্য এটা ওয়াজিব নয়। আমি তোমাদেরকে
গোসলের ইতিবৃত্ত বলব। অতঃপর তিনি বলেন- ইসলামের প্রথম যুগে মুসলমানরা মোটা কাপড়
পরিধান করে দৈহিক পরিশ্রম- এমন কি বোঝা বহনের কাজও করত। তাদের মসজিদ ছিলাম অত্যন্ত
সংকীর্ণ এবং নীচু ছাদ বিশিষ্ট। একদা গরমের সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে গিয়ে দেখতে পান যে, অত্যধিক
গরমের ফলে মুসল্লীদের শরীরের ঘাম কাপড়ে লেগে তা হতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং এ কারণে
সকলেই কষ্ট অনুভব করছে নবী (ﷺ)
নিজেও এই দুর্গন্ধ অনুভব করে বললেনঃ “হে
লোকসকল! যখন এই (জুমআর) দিন আসবে তোমরা গোসল করে সাধ্যানুযায়ী তৈল ও সুগন্ধ ি
দ্রব্য ব্যবহার করবে”।
অতঃপর ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, পরবর্তীকালে
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যখন মুসলমানদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেন, তখন
তারা মেটা কাপড় পরিধান ত্যাগ করে উত্তম পোশাক পরিধান করতে থাকে, নিজেদের
কাজ অন্যদের দ্বারা করাতে থাকে এবং তাদের মসজিদও প্রশস্ত হয় এর ফলশ্রুতিতে
ইতিপূর্বে তারা ঘর্মাক্ত হওয়ায় যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হত তা দূরীভুত হয়। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৩ (আন্তর্জাতিক
নং ৩৫৩)
ইবনে
বাজ রহ এর ফতোয়া:
হাম্বলি
মাজহাবের অনুসারী সৌদি আরবের বিখ্যাত আলেম ইবনে বাজ রহ. কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে, তিনি
বলেন,
غسل الجمعة سنة مؤكدة للرجال؛
لقول النبي ﷺ: غسل يوم الجمعة واجب على كل
محتلم وأن يستاك ويتطيب وقوله ﷺ: من راح إلى الجمعة فليغتسل في أحاديث أخرى كثيرة، وليس بواجب الوجوب
الذي يأثم من تركه، ولكنه واجب بمعنى: أنه متأكد؛ لهذا الحديث الصحيح، ولقوله ﷺ: من توضأ يوم الجمعة ثم أتى المسجد فصلى ما قدر له ثم
أنصت حتى يفرغ الإمام من خطبته غفر له ما بينه وبين الجمعة الأخرى وفضل ثلاثة أيام
وقوله ﷺ: من توضأ يوم الجمعة فبها ونعمت
ومن اغتسل فالغسل أفضل.
অর্থাৎ
জুমাআর গোসল পুরুষের জন্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। এ আদেশটি ওয়াজিবের জন্য। সুতরাং
কেউ ছেড়ে দিলে গুনাহ হবে না। ওয়াজিব অর্থ থাকিলে।
সারকথা
হলো, সাধারণ
অবস্থায় জুমাআর দিনে গোসল করা সুন্নাত/মুস্তাহাব। তবে শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হলে,
যাতে মুসল্লিদের কষ্ট হবে, তখন গোসল করা
ওয়াজিব। যেমনটি তিনি কাঁচা পিয়াস-রসুন খেয়ে মসজিদে যায়তে নিষেধ করা হয়েছে।
এ
সম্পর্কে শায়েখ ইবনে তায়মিয়া রহ বলেন,
তবে
কোন ব্যক্তি যদি ঘর্মাক্ত হয় এবং শরীরের দুর্গন্ধ অন্য মুছল্লীদের জন্য কষ্টকর
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে তার জন্য গোসল করা ওয়াজিব হবে ।
(ইবনু তায়মিয়াহ, ফাতাওয়া কুবরা ৫/৩০৭)।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৫৮:
আমার চাচা বুড়া বয়সে আমার চাচিকে একসাথে
দুই তালাক দিয়েছে। তারা আমার কাছে মাসআালা জানতে চেয়েছে, আমি বলেছি যে, যদি ২ তালাক দিয়ে থাকেন তাহলে কোনো আলেম / হুজুরের মাধ্যমে স্বাভাবিক নিয়মে বিয়ে
পরিয়ে দিলে আবার স্বামী স্ত্রী এক সাথে বসবাস করতে পারবে। আমি কি সঠিক বিষয়টি বলতে
পেরেছি কিনা? একটু বলবেন পিলিজ। তারিখ: ০৫/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ শামসুল ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার চাচা যদি তালাক দেওয়ার পর
তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হয়ে যায়,
এর মধ্যে
রজাআত বা ফিরিয়ে না নেয় এবং তালাকে বায়েন দেন, তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে।
فإن طلقها ولم يراجعها، بل تركها
حتى انقضت عدتها بانت (بدائع الصنائع-3/283)
নতুন করে মহর ধার্য করে বিবাহ
পড়াতে হবে। এ এক্ষেত্রে আপনার প্রদত্ত ফতোয়া ঠিক আছে। সূত্র: বাদাউস সানায়িআ-৩/২৮৩
আর যদি তালাক দেওয়ার পর তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই
রজাআত করে (তোমাকে ফিরিয়ে নিলাম,
স্ত্রী
সহবাস অথবা শরীরে স্পর্শ করলে), তাহলে বিবাহের প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে আপনার প্রদত্ত ফতোয়া সঠিক হয়নি। সূত্র:
আলহিদায়াহ-২/৭; আলইনায়াহ-৫/৩৯৬
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৫৯:
আসসালামু আলাইকুম জনাব, আমার জানার বিষয় হলো হাত থাকতে চামুচ দিয়ে খাবার খাওয়ার বিধান কি? এতে কি গুণাহ হবে? আমাদের করণীয় কি? তারিখ: ০৬/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শরিফুল ইসলাম খাগড়াছড়ি থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের দুটি মত পাওয়া যায়। যেমন,
প্রথম মত: খেলাফে সুন্নাত। তাদের যুক্তি হলো: রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে কখনো চামুচ দিয়ে খাবার গ্রহণ করেননি, তাই
চামুচ দিয়ে খাবার গ্রহণ করা খেলাফে সুন্নাত।
দ্বিতীয় মত: অসুবিধা নেই। তাদের যুক্তি হলো, যেহেতু
তা শরয়ি ব্যাপার নয়, বরং তা পার্থিব ব্যবহারিক ব্যাপার। যেমন আধুনিক
মাধ্যম বাস-ট্রেন, ইত্যাদি ব্যবহার করা অবৈধ নয়, তাই
খেলাফি সুন্নাত বলা যায় না।
সারকথা হলো: বিশেষ প্রয়োজনে (হাত কেটে গেলে, হাতে
ময়লা থাকলে ইত্যাদি) চামুচ দিয়ে খাবার গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।
তবে স্বাভাবিক অবস্থায় হাত বাদ দিয়ে চামুচ দিয়ে খাবার
গ্রহণ করা উচিত নয়। কেননা পাত্র/বরতন চেটে খাওয়া সুন্নাত এবং বরকতের কারণ।
তাছাড়া মেডিকেল সাইন্স এর মতে হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ করলে হজমের সহযোগিতাসহ
নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। চামুচ দিয়ে খেলে চেটে খাওয়ার সুযোগ থাকে না, বিধায় বরকত থেকে মাহরুম হতে হয়। দলিল:
وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِلَعْقِ الأَصَابِعِ وَالصَّحفَةِ، وَقَالَ:
« إنَّكُمْ لاَ تَدْرُونَ فِي أيِّ طَعَامِكُمُ البَرَكَةُ ». رواه مسلم
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
খাবারান্তে আঙ্গুল ও থালা চেটে খাবার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘‘তোমরা জান না যে, তোমাদের কোন্ খাদ্যে বরকত নিহিত আছে।’’
তাখরিজ:
মুসলিম ২০৩৩, ইবনু মাজাহ ৩২৭০, আহমাদ ১৩৮০৯,
১৩৯৭৯
শেষ কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে ঠেকাবশত সামাজিকতার খাতিরে চামুচ
দিয়ে খাবার গ্রহণ করলে গুনাহ হবে না। আপনার সাধ্যের মধ্যে থাকলে, হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ করার ফজিলত/ফায়দার উৎসাহ প্রদান করা
যেতে পারে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৬০:
আসসালামুয়ালাইকুম। টাকা নির্ধারণ করে
কোরআন শেখালে অবৈধ হবে কিনা? তারিখ: ০২/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আনোয়ারুল আম্বিয়া যশোর থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা
হলো,
ইদানিং কিছু লোককে গানের সুরে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত
করতে শোনা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও হেফজখানার ছাত্রদেরকেও গানের সুরে তেলাওয়াত মাশক
করানো হচ্ছে বলে আমাদের শ্রুতিগোচরে এসেছে। এরকম গানের সুরে কুরআন তেলাওয়াত করা
সংগত কি না- এ প্রসঙ্গ নিয়েই এখনকার আলোচনা।
গানের সুরে তেলাওয়াত বলতে আমাদের উপমহাদেশে
প্রচলিত গানের সুরে তেলাওয়াত হোক বা ইউরোপ আমেরিকায় প্রচলিত গানের সুরে
তেলাওয়াত হোক বা আরব অনারব যেকোনো অঞ্চলে প্রচলিত গানের সুরে তেলাওয়াত হোক
সবগুলোকেই বোঝানো হয়েছে। সবগুলোর হুকুমই অভিন্ন।
গানের সুরে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করাকে
পূর্বসূরী উলামায়ে কেরাম কুরআন হাদীছের আলোকে নিষিদ্ধ বলে আসছেন। হযরত ইবনুল
কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ ‘যাদুল মাআদ’
গ্রন্থে কীভাবে বৈধ সূরতে গেয়ে গেয়ে কুরআন পাঠ করা যায় তার
বর্ণনা প্রদানের পর লিখেছেন-
الوجه الثاني: ما كان من ذلك صناعةً من الصنائع، وليس في الطبع السماحة به، بل لا
يحصُل إلا بتكلُّف وتصنُّع وتمرُّن، كما يتعلم أصوات الغِناء بأنواع الألحان
البسيطة، والمركبة على إيقاعات مخصوصة، وأوزانٍ مخترعة، لا تحصل إلا بالتعلُم
والتكلف، فهذه هي التي كرهها السلفُ، وعابوها، وذمّوها، ومنعوا القراءةَ بها،
وأنكروا على من قرأ بها.
অর্থাৎ, (গেয়ে গেয়ে পাঠ করার) দ্বিতীয় রূপ হচ্ছে যেটা একটা শিল্প। যা স্বভাব
স্বতঃস্ফূর্ত নয়, বরং কৃত্রিম অনুশীলন ও কসরত করেই যা অর্জন
করা হয়। যেমন সুর আরোপের সরল ও যৌগিক বিভিন্ন প্রকারের সুনির্দিষ্ট তাল ও
উদ্ভাবিত মাত্রাযোগে গানের সুর শেখা হয়। এগুলো কৃত্রিম অনুশীলন ছাড়া অর্জিত হয়
না। পূর্বসূরীগণ এটাকে অপছন্দ করেছেন, এটাকে দূষণীয় বলেছেন,
এর নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। তারা এরকম সুরে কুরআন পাঠ করতে নিষেধ
করেছেন এবং যারা এরকম সুরে পাঠ করে তাদের বিরোধিতা করেছেন।
তিনি আরও লিখেছেন-
وكلُّ من له علم بأحوال السلف، يعلم قطعاً أنهم بُرآء من القراءة
بألحان الموسيقي المتكلفة، … ، وأنهم أتقى للّه من أن يقرؤوا بها، ويُسوّغوها.
অর্থাৎ, পূর্বসূরীদের অবস্থা সম্বন্ধে যারা অবগত তারা সকলেই নিশ্চিতভাবে জানেন যে,
পূর্বসূরীগণ কৃত্রিমভাবে অর্জিত সংগীতের সুরে কুরআন পাঠ করা থেকে
মুক্ত। এরকম সুরে কুরআন পাঠ করতে ও অনুমোদন দিতে তারা আল্লাহকে ভয় পেতেন।
রয়ে গেল গানের সুরে তেলাওয়াত করার
বিভ্রান্তিটা এলো কোত্থেকে? যতদূর
মনে হয় একটা হাদীছে উল্লেখিত একটা শব্দের অর্থ বুঝতে ভুল হওয়ায় কিছু লোক গানের
সুরে তেলাওয়াতের আনুকূল্য বুঝে বসেছে। আগে হাদীছটি ও তার সঠিক অর্থ কি তা উল্লেখ
করে নিচ্ছি, তারপর বিভ্রান্তি কোন শব্দ থেকে এসে থাকবে তা
উল্লেখ করছি।
হাদীছটি এই-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ :
مَا أَذِنَ اللَّهُ لِشَيْءٍ مَا أَذِنَ لِنَبِيٍّ
حَسَنِ الصَّوْتِ يَتَغَنَّى بِالْقُرْآنِ ، يَجْهَرُ بِهِ .
(رواه البخاري في صحيحه برقم ٥٠٢٤ ومسلم في صحيحه برقم
١٨٨٣ )
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত- তিনি
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, আল্লাহ সুন্দর আওয়াজ বিশিষ্ট নবীর -যিনি কুরআনকে (আসমানী
কিতাবকে) গেয়ে গেয়ে পাঠ করেন, উচ্চস্বরে পাঠ করেন তার-
পাঠকে যতটা মন দিয়ে শ্রবণ করেন অন্য কোনো কিছুকে ততটা মন দিয়ে শ্রবণ করেন না।
(বোখারী: ৫০২৪ ও মুসলিম: ১৮৮৩)
তালাবা ও উলামায়ে কেরামের উদ্দেশে বলছি, এ হাদীছে উল্লেখিত أَذِنَ শব্দের অর্থ
অনুমতি দেয়া নয় বরং মনোযোগ দেয়া, মন
লাগিয়ে শোনা, কান পেতে শোনা। শব্দটি أذِنَ يَأذَنُ إذْنًا থেকে উদ্ভূত
নয়, যার অর্থ অনুমতি প্রদান করা।
বরং أذِنَ يَأذَنُ أذَنًا থেকে উদ্ভূত, যার
অর্থ মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা, মন দিয়ে শ্রবণ করা, কান পেতে শোনা। যেমন ইবনুল আছীর আন্নিহায়া ফী গারীবিল হাদীছ গ্রন্থে,
বাগাবী শরহুস সুন্নাহ গ্রন্থে, কুরতুবী তার
তাফসীর গ্রন্থে, আরও অনেকে অনেক গ্রন্থে বলেছেন, ما أذِنَ الله لشيءٍ অর্থ ما استمع الله لشيء। তাহযীবুল লুগাহ, লিসানুল
আরব, মাক্বাঈসুল লুগাহ প্রভৃতি অভিধানেও এরূপ অর্থ লেখা
হয়েছে। আর يَتَغَنَّى শব্দের অর্থ এখানে গান গাওয়া বা গানের সুরে পাঠ করা নয়। বরং
গেয়ে গেয়ে পাঠ করা। আর গেয়ে গেয়ে পাঠ করা অর্থ সুন্দর স্বরে পাঠ করা। এই يتغنى শব্দ থেকেই
কিছু লোকের বিভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে যে, يَتَغَنَّى শব্দের অর্থ
যেহেতু অভিধানে ‘গান গাওয়া’- এমনও পাওয়া যায়, তাহলে يَتَغَنَّى بِالْقُرْآنِ
-এর অর্থ দাঁড়াবে গানের মত কুরআন পাঠ করে। অথচ এখানে يَتَغَنَّى শব্দের অর্থ
গান গাওয়া নয় বরং গেয়ে গেয়ে পাঠ করা, আর গেয়ে গেয়ে পাঠ করা অর্থ সুন্দর স্বরে পাঠ করা, যা
পূর্বে বলা হল। এবং এ ব্যাখ্যা এক হাদীছ থেকেই প্রমাণিত। হাদীছটি সামনে উল্লেখ করা
হচ্ছে।
এখানে يَتَغَنَّى শব্দের দ্বারা গানের সুরে পাঠ করা উদ্দেশ্য হতে পারে না তার বিশেষ
দু’টো কারণ উল্লেখ করছি। প্রথম
কারণ হল- কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, গান-বাদ্য শরীয়তে
হারাম। এর হারাম হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা’ রয়েছে।অতএব
যে গান-বাদ্য হারাম তার সুরও অবশ্যই গর্হিত। আর একটা গর্হিত বিষয় পবিত্র কুরআনের
সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে না। দ্বিতীয় কারণ হল- يتغنى بالقرآن কথাটি تركيب অনুসারে حسن الصوت এর ব্যাখ্যা।
আর حسن الصوت বা
সুন্দর আওয়াজ বিশিষ্ট বলতে কী উদ্দেশ্য তা ইবনে মাজার এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
عن جابر بن عبدالله أن رسول الله – صلى الله عليه وسلم – قال: إن من أحسن الناس
صوتًا بالقرآن، الذي إذا سمعتموه يقرأ، حسبتموه يخشى الله.
(رواه ابن ماجه برقم ١٣٣٩ والحديث صححه الألباني)
অর্থ: হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে
বর্ণিত যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মানুষের মধ্যে সুন্দর আওয়াজে কুরআন
তেলাওয়াতকারী হল সেই যাকে কুরআন তেলাওয়াত করতে শুনলে তোমরা মনে করবে সে আল্লাহকে
ভয় করে। (সুনানে ইবনে মাজা: হাদীছ নং ১৩৩৯)
এ হাদীছ থেকে স্পষ্ট যে, সুন্দর আওয়াজ হল সেই আওয়াজ যা থেকে আল্লাহর ভয় নির্ঝরিত
হয়। অতএব يتغنى بالقرآن (গেয়ে গেয়ে কুরআন পাঠ করে) কথাটি যেহেতু সুন্দর আওয়াজ বিশিষ্ট
কথাটিরই ব্যাখ্যা, তাই يتغنى بالقرآن তথা ‘গেয়ে গেয়ে কুরআন পাঠ করে’ দ্বারা গান
গাওয়ার মত করে তথা গানের সুরে পাঠ করে তা উদ্দেশ্য হবে না।
বরং ‘গেয়ে গেয়ে কুরআন পাঠ করে’ দ্বারা উদ্দেশ্য হবে
সুন্দর স্বরে বা সুন্দর আওয়াজে পাঠ করে। আর সুন্দর স্বরে বা সুন্দর আওয়াজে পাঠ
বলতে কী বুঝায় তা তো পূর্বেই হাদীছের বরাতে উল্লেখ করা হল যে, সুন্দর সুন্দর আওয়াজ হল সেই আওয়াজ যা থেকে আল্লাহর ভয় নির্ঝরিত হয়।
ফাতহুল বারী ও তাফসীরে খাযেনসহ কিছু কিতাবে আছে- কেউ কেউ يتغنى بالقرآن -এর ব্যাখ্যা
করেছেন يستغني به عن الناس অর্থাৎ, কুরআন পাঠ করে
মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী হয়ে ওঠে। কোন মনীষীই يتغنى بالقرآن -এর ব্যাখ্যা
গানের সুরে কুরআন তেলাওয়াত- এমন করেননি।
এসব কিছুর ভিত্তিতে মুহাক্কিক উলামায়ে কেরাম
বলেছেন, يتغنى بالقرآن দ্বারা গানের সুরে তেলাওয়াত উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্য সুন্দর
আওয়াজে তেলাওয়াত, সুন্দর স্বরে তেলাওয়াত। যেমন কয়েকজন আলেমের
উক্তি উদ্ধৃত করছি। আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ বলেন,
فليس هذا هو التغني، وإنما المقصود بالتغني تحسين الصوت بالقراءة.
(شرح سنن ابي داود لعبد المحسن العباد)
অর্থাৎ, এটা ঐই গান গাওয়া নয়। এই গাওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য সুন্দর স্বরে পাঠ করা।
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল-উছাইমীন বলেন, يتغنى بالقرآن :
يعني يقرؤه بصوت حسن. (شرح رياض الصالحين) অর্থাৎ, يتغنى بالقرآن দ্বারা
উদ্দেশ্য সুন্দর আওয়াজে কুরআন পাঠ করে।
শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায বলেন,
التغني بالقرآن، يعني تحسين الصوت به، وليس معناه أن يأتي به كالغناء.
(مجموع فتاوى و رسائل الشيخ عبدالعزيز بن عبد الله بن
باز – المجلد الثالث عشر.)
অর্থাৎ, কুরআন গেয়ে গেয়ে পড়া মানে সুন্দর আওয়াজে কুরআন পাঠ করা, গানের মত পড়া নয়। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনের শানে বেহুরমতী করা থেকে রক্ষা
করেন। আমীন!
লেখক, মাওলানা হেমায়েত
উদ্দিন দা.বা.
সূত্র: আওয়ার ইসলাম ২৪.কম
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৬১:
মোটিভেশন ক্লাস: ১১
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু ওয়ামাগফিরাতুহু ওয়াজান্নাতুহু
সম্মানিত শায়েখ আশা করছি আল্লাহ পাক আপনাদের সকলকেই নিরাপদে । জান্নাত ও জাহান্নাম প্রসঙ্গে আলোচনা । এই শিরোনামে কোন লেসন প্লান আছে কি না। তারিখ: ০৭/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নেছার উদ্দিন কঙ্গো থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে আলোচনাকে
দুটি স্তরে ভাগ করছি: ক। জান্নাত খ। জাহান্নাম
ক। প্রথম স্তর: জান্নাতের বর্ণনা।
০১. জান্নাত কি?
جنة এক বচন,
বহুবচনে
جنات, অর্থ
ঘন, সন্নিবেশিত বাগান,
বাগ-বাগিচা।
আরবীতে বাগানকে روضة (রওদ্বাতুন) এবং حديقة (হাদীকাতুন) ও বলা হয়। কিন্তু جنات (জান্নাত) শব্দটি কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের নিজস্ব একটি পরিভাষা। হাদিসসমূহ যেহেতু একার্থে মহাগ্রন্থ
আল কুরআনের ব্যাখ্যা, সেকারণে হাদিসে নববীতে জান্নাত শব্দটি বিভিন্ন স্থানে
বারবার ব্যবহৃত হয়েছে।
পারিভাষিক অর্থে জান্নাত বলতে
এমন স্থানকে বোঝায়, যা আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন তাঁর অনুগত বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। যা
দিগন্ত বিস্তৃত নানারকম ফুলে ফলে সুশোভিত সুরম্য অট্টালিকা সম্বলিত মনোমুগ্ধকর বাগান; যার
পাশ দিয়ে প্রবাহমান বিভিন্ন ধরনের নদী-নালা ও ঝর্ণাধারা। যেখানে চির বসন্ত বিরাজমান।
আমরা জান্নাতকে 'বেহেশত'ও বলে
থাকি। চশমা, তোষক,
নামাজ, ইত্যাদি
অনেক শব্দের মত 'বেহেশত'ও বাংলা ভাষায় অনুপ্রবেশকারী
ফার্সী শব্দ। বিদেশী এরকম হাজারো শব্দ আমাদের বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।
বাংলা ভাষাকে বৈচিত্র্যদান করেছে। আলোচ্য নিবন্ধে আমরা কুরআন হাদিসের আরবি শব্দ 'জান্নাত' কথাটিই
ব্যবহার করবো।
০২. চির শান্তির স্থান জান্নাতঃ
জান্নাত চির শান্তির জায়গা।
সেখানে আরাম- আয়েশ, সুখ-শান্তি,
আমোদ-প্রমোদ, চিত্ত
বিনোদন ও আনন্দ-আহলাদের চরম ও পরম ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে ভোগ-বিলাস ও পানাহারের আতিশয্য।
জান্নাতের অধিবাসীগণ যখন যা কামনা করবেন,
তাদেরকে
তা-ই দেয়া হবে। তারা কোনো কিছু পাওয়ার ইচ্ছে করলেই পেয়ে যাবেন। তাদের কোনো আশা-ইচ্ছে-প্রত্যাশা
অপূর্ণ থাকবে না। সেখানে সবাই যুবক হয়ে বাস করবে। শরীরে কোনো রোগ-শোক, জরাজীর্ণতা, মন্দা, বার্ধক্য, দুর্বলতা
ও অপারগতা থাকবে না। যত ধরনের ফল-ফলাদি,
খাদ্য-খাবার, পানীয়, দুধ, মধু
সুস্বাদু খাবার সব খেতে পারবেন। ভোগ-বিলাসের সকল উপায়-উপকরণ বিদ্যমান। সেগুলো স্বাদ
ও গন্ধে অপূর্ব। আমোদ-প্রমোদ, ভ্রমন-বিহার, খেলা-ধুলা, বেড়ানো, বাজার
করা ও শুভেচ্ছা-স্বাগত জানাতে পারবে। প্রাচুর্যের কোনো অভাব হবে না। তাদের জন্য দ্রুতগামী
যানবাহন থাকবে যার সাহায্যে তাদের মনের ইচ্ছা চোখের নিমিষে তারা পূরণ করতে পারবে।
নারীদের জন্য থাকবে নয়নাভিরাম
স্বামী এবং স্বামীদের জন্য থাকবে নয়নাভিরাম স্ত্রী ও রূপবতী লাবণ্যময়ী হুর। তারা
সেখানে সুখী-সুন্দর দাম্পত্য জীবন-যাপন করবে। মানুষ সেখানে পেশাব-পায়খানা, নাকের
শ্লেষ্মা থেকে মুক্ত এবং নারীরা ঋতুমুক্ত হবে।
এক কথায়, পরম
ও চরম শান্তি বলতে যা বুঝায়, তা সবই জান্নাতে পাওয়া যাবে।
দুনিয়ার সুখ-শান্তির যত ব্যবস্থা আছে,
জান্নাতের
সুখ-শান্তির তুলনায় তা কিছুই না। বরং তা দুনিয়ার সকল আরাম-আয়েশকে হার মানাবে জান্নাতের
অভাবনীয় ব্যবস্থাপনা। মানুষ সুখ পেতে চায়। তাই পরম সুখ লাভের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ
হওয়া উচিত।
জান্নাতের ব্যাপক পরিচিতি সম্পর্কে
সংক্ষেপে এক বর্ণনায় মহান আল্লাহ বলেন:
﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ
مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ
١٧﴾ [السجدة: ١٧]
‘কেউ জানে না তার জন্য কৃতকর্মের কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত
আছে।’’ (সূরা
সাজদাহ: ১৭)
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন এরশাদ করেন,
«أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ
أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، فَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ
فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ»
“আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন নেয়ামত তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো
চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং এমনকি কোনো মানুষ তা কল্পনাও
করতে পারে না। এরপর তিনি বলেন, যদি তোমরা চাও, তাহলে
নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়ো। যার অর্থ হলো: “কেউ
জানে না, তার জন্য কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত আছে।”
(বুখারী, ৩২৪৪; মুসলিম, ২৮২৪)
০৩. জান্নাত মোট আট প্রকারঃ
আট প্রকার জান্নাতের কথা মহাগ্রন্থ
আল-কুরআন ও সহিহ হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে :
১। জান্নাতুল ফিরদাউস।
২। জান্নাতুন্ নায়ীম।
৩। জান্নাতুল মাওয়া।
৪। জান্নাতুল আদন।
৫। জান্নাতু দারুস সালাম।
৬। জান্নাতুদ দারুল খুলদ।
৭। জান্নাতু দারুল মাকাম।
৮। জান্নাতু দারুল কারার।
০৪. জান্নাত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিতঃ
প্রতিটি জান্নাতের রয়েছে স্বতন্ত্র
বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা। জান্নাতগুলোর প্রতিটিই সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (Air condition)। না গরম না ঠান্ডা- এমন চমৎকার ও চমকপ্রদ নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া
সদা বিরাজমান প্রত্যেক জান্নাতে। জান্নাতের অনাবিল এবং অন্তহীন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে
ভিন্নতা দিতে সেখানে রয়েছে চিরকালিন বসন্ত বাতাসের কমনীয়তা। তার ফুল-ফলের সমাহার এবং
সৌন্দর্য্য শ্যামলতা কখনো ম্লান হবে না। এমনকি গোটা জান্নাত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা
Air condition হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَا يَرَوۡنَ فِيهَا
شَمۡسٗا وَلَا زَمۡهَرِيرٗا ١٣ ﴾ [الانسان: ١٣]
অর্থ্যাৎ- ‘তাদেরকে সেখানে (জান্নাতে) না সূর্যতাপ জ্বালাতন করবে না শৈত্য
প্রবাহ।’ (সূরা
দাহর: ১৩)
০৫. জান্নাতে কোন দুঃখ-কষ্ট থাকবে নাঃ
পৃথিবীতে মানুষ যতো বিত্তশালী
হোক এবং যতো সুখ-শান্তিই ভোগ করুক না কেন তবু কোনো না কোনো দুঃখ বা অশান্তি থাকেই, কোনো
মানুষের পক্ষেই সম্পূর্ণ সুখী হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু জান্নাতে কোনো দুঃখই থাকবে না, এমনকি
পৃথিবীতে মাল্টি বিলিয়ন হয়েও আরো বেশী পাওয়ার জন্য এবং ভোগ করার জন্য দুঃখের শেষ
থাকে না। পক্ষান্তরে জান্নাতীগণ- এমনকি যাকে সবচেয়ে ছোট জান্নাত দেয়া হবে তারও কোন
অনুতাপ কিংবা দুঃখ থাকবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ঘোষনা-
﴿ لَا يَمَسُّهُمۡ فِيهَا
نَصَبٞ وَمَا هُم مِّنۡهَا بِمُخۡرَجِينَ ٤٨ ﴾ [الحجر: ٤٨]
অর্থঃ ‘তারা সেখানে কখনও কোন দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হবে না এবং কোনদিন
সেখান থেকে তাদেরকে বের করেও দেয়া হবে না।’ (সূরা হিজর: ৪৮)
অন্যত্র বলা হয়েছে-
﴿ ٱلَّذِيٓ أَحَلَّنَا
دَارَ ٱلۡمُقَامَةِ مِن فَضۡلِهِۦ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٞ وَلَا يَمَسُّنَا
فِيهَا لُغُوبٞ ٣٥ ﴾ [فاطر: ٣٥]
অর্থঃ ‘(জান্নাতীগণ বলবে) তিনি আমাদেরকে
নিজের অনুগ্রহে চিরন্তনী আবাসস্থল দান করেছেন এবং আমাদের কোন দুঃখ এবং ক্লান্তি নেই।’
(সূরা
ফাতির: ৩৫)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يَنْعَمُ لَا يَبْأَسُ، لَا تَبْلَى
ثِيَابُهُ وَلَا يَفْنَى شَبَابُهُ»
অর্থঃ ‘যারা জান্নাতে যাবে তারা সর্বদা স্বচ্ছল অবস্থায় থাকবে, দারিদ্র
ও অনাহারে কষ্ট পাবে না। তাদের পোশাক পুরাতন হবে না এবং তাদের যৌবনও কোনদিন শেষ হবে
না।’ (মুসলিম:
২৮৩৬)
০৬. জান্নাতে অশ্লীল কথা শুনা যাবে
নাঃ
পৃথিবীতে যতো ঝগড়া-ফাসাদ সমস্তই
স্বার্থপরতা, অহংকার ও হিংসার কারণে সংঘটিত হয়ে থাকে। জান্নাতে
স্বার্থপরতা, অহংকার,
হিংসা
ইত্যাদি থাকবে না, তাই সেখানে গীবত, পরনিন্দা, পরচর্চা, ঝগড়া-বিবাদ, অশ্লীল
কথাবার্তা ইত্যাদি থাকবে না। সেখানে শুধু সম্প্রীতি ও সৌন্দর্য্যপূর্ণ উত্তম পরিবেশ
বিরাজ করবে।
মহান আল্লাহ তাআ'লা বলেন-
﴿ لَا يَسۡمَعُونَ فِيهَا
لَغۡوٗا وَلَا تَأۡثِيمًا ٢٥ إِلَّا قِيلٗا سَلَٰمٗا سَلَٰمٗا ٢٦ ﴾ [الواقعة: ٢٥،
٢٦]
অর্থঃ ‘সেখানে তারা বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা শুনতে পাবে না। যে কথাবার্তা
হবে তা ঠিকঠাক ও যথাযথ (সম্প্রীতি পূর্ণ) হবে।’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্:
২৫-২৬)
অন্যত্র বলা হয়েছে-
﴿ لَّا يَسۡمَعُونَ
فِيهَا لَغۡوٗا وَلَا كِذَّٰبٗا ٣٥ ﴾ [النبا: ٣٥]
অর্থঃ ‘সেখানে তারা কোন অপ্রয়োজনীয় তাৎপর্যহীন ও মিথ্যা কথা শুনবে
না।’ (সূরা
নাবা: ৩৫)
অবশ্য এ ব্যাপারে জান্নাতবাসীদেরকে
জান্নাতের দ্বাররক্ষীগণই সুসংবাদ প্রদান করবে। ইরশাদ হচ্ছে-
﴿حَتَّىٰٓ إِذَا
جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ
طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا خَٰلِدِينَ ٧٣ ﴾ [الزمر: ٧٣]
অর্থঃ ‘অতঃপর যখন তারা সেখানে (প্রবেশ করার জন্যে) আসবে, তখন
দ্বাররক্ষীগণ তাদের জন্য দরজাসমূহ খুলে রাখবে এবং জান্নাতীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, আপনাদের
প্রতি অবারিত শান্তি বর্ষিত হোক। অনন্তকালের জন্য এখানে প্রবেশ করুন।’
(সূরা
যুমার: ৭৩)।
০৭. জান্নাতীদের আর মৃত্যু হবে নাঃ
পৃথিবীতে যতোগুলো বাস্তব ও চাক্ষুষ
বস্তু আছে তার মধ্যে মৃত্যু একটি। সত্যি কথা বলতে কি, মানুষ
পার্থিব কোনো বস্তু থেকেই অমনোযোগী ও গাফেল নয় একমাত্র মৃত্যু ছাড়া। যদিও আমাদের
প্রত্যেককেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে। তবুও মৃত্যুকে আমরা ভীতির চোখে দেখি এবং মৃত্যু
থেকে পালিয়ে বেড়াবার ব্যর্থ প্রয়াস পাই। এ ভীতিকর অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি
থাকবে জান্নাতীদের জন্য। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَا يَذُوقُونَ فِيهَا ٱلۡمَوۡتَ
إِلَّا ٱلۡمَوۡتَةَ ٱلۡأُولَىٰۖ وَوَقَىٰهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ٥٦ ﴾ [الدخان: ٥٦]
অর্থঃ ‘সেখানে তারা আর কখনো মৃত্যুর মুখোমুখি হবে না। পৃথিবীতে একবার
যে মৃত্যু হয়েছে সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে
বাঁচিয়ে দেবেন।’ (সূরা
দোখান: ৫৬)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
»يُنَادِي مُنَادٍ: إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُّوا فَلَا تَسْقَمُوا
أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْيَوْا فَلَا تَمُوتُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ
أَنْ تَشِبُّوا فَلَا تَهْرَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوا فَلَا
تَبْأَسُوا أَبَدًا«
‘যখন জান্নাতীগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন এক ঘোষক ঘোষণা করবে-
‘‘হে জান্নাতীগণ! এখন আর তোমরা কোনোদিন অসুস্থ হয়ে
পড়বে না। সর্বদা সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান থাকবে। কোনোদিন আর তোমাদের মৃত্যু হবে না, অনন্তকাল
জীবিত থাকবে। সর্বদা যুবক হয়ে থাকবে কখনো বুড়ো হবে না। সর্বদা অফুরন্ত নেয়ামত ভোগ
করবে কোনোদিন তা শেষ হবে না এবং কখনো দুঃখ ও অনাহারে থাকবে না।’
(মুসলিম, ২৮৩৭; তিরমিযী, ৩২৪৬)
০৮. জান্নাতের প্রশস্ততা হবে আসমান-যমীনের
সমানঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
﴿ ۞وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ
مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ
أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ﴾ [ال عمران: ١٣٣]
“তোমরা তোমাদের প্রভুর ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার
প্রশস্ততা হবে আসমান-যমীনের সমান। যা মুত্তাকীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে”। (সূরা আলে-ইমরান: ১৩৩)
০৯. জান্নাতের দরজাসমূহঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
﴿ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ
يَدۡخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ
وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۖ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣
سَلَٰمٌ عَلَيۡكُم بِمَا صَبَرۡتُمۡۚ فَنِعۡمَ عُقۡبَى ٱلدَّارِ ٢٤ ﴾ [الرعد: ٢٣،
٢٤]
“স্থায়ী জান্নাত,
তাতে
তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা,
পতি-পত্নী
ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও। আর ফেরেশ্তাগণ তাদের কাছে উপস্থিত
হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে এবং বলবে,
তোমরা
ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি;
আর আখেরাতের
এ পরিণাম কতই না উত্তম।”(সূরা
আর-রাদ: ২৩ – ২৪)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿هَٰذَا ذِكۡرٞۚ وَإِنَّ
لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مََٔابٖ ٤٩ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ
٥٠﴾ [ص: ٤٩، ٥٠]
“এ এক স্মরণ। মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস—
চিরস্থায়ী
জান্নাত, যার দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত।”(সূরা সদ: ৪৯ –
৫০)
১০. জান্নাতীদের চেহারা হবে ধবধবে সাদা
এবং তারা ৬০ হাত লম্বা হবেঃ
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خلق الله عز و جل آدم على صورته , طوله ستون ذراعا , فلما خلقه ؛ قال
: اذهب فسلم على أولئك النفر من الملائكة جلوس , فاستمع ما يحيونك ؛ فإنها تحيتك
وتحية ذريتك » . فقال : السلام عليكم . فقالوا : السلام عليك ورحمة الله . فزادوه
: ورحمة الله . فكل من يدخل الجنة على صورة آدم , فلم يزل الخلق ينقص بعد حتى الآن
» . (رواه البخاري و مسلم) .
জান্নাতে প্রবেশকারী ১ম দলটির
চেহারা হবে পূর্ণিমার রাতের উজ্জ্বল চাঁদের আলোর মতো। পরবর্তী দলগুলোর চেহারা হবে উজ্জ্বল
জ্যোতিস্কের মতো। তাদের পেশাব-পায়খানা নাকের শ্লেষ্মা ও থুথু হবে না। চিরুনী হবে সোনার, ঘাম
হবে মেশকের মতো সুঘ্রাণ, আগর কাঠের সুঘ্রাণযুক্ত ধোঁয়া বিতরণ করা হবে, স্ত্রীরা
হবে আয়াতলোচনা, সবার চরিত্র এক ও অভিন্ন এবং আকৃতি হবে তাদের পিতা
আদমের মতো ৬০ হাত লম্বা। (বুখারী, ৬২২৭; ও মুসলিম, ২৮৪১)
১১. নিম্নতম জান্নাতীর মর্যাদাঃ
মুগীরা ইবন শো‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« سَأَلَ مُوسَى رَبَّهُ مَا أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً
قَالَ هُوَ رَجُلٌ يَجِىءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ
فَيُقَالُ لَهُ ادْخُلِ الْجَنَّةَ. فَيَقُولُ أَىْ رَبِّ كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ
النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ فَيُقَالُ لَهُ أَتَرْضَى أَنْ
يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ رَضِيتُ
رَبِّ. فَيَقُولُ لَكَ ذَلِكَ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ.
فَقَالَ فِى الْخَامِسَةِ رَضِيتُ رَبِّ. فَيَقُولُ هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ
أَمْثَالِهِ وَلَكَ مَا اشْتَهَتْ نَفْسُكَ وَلَذَّتْ عَيْنُكَ . فَيَقُولُ
رَضِيتُ رَبِّ. قَالَ رَبِّ فَأَعْلاَهُمْ مَنْزِلَةً قَالَ أُولَئِكَ الَّذِينَ
أَرَدْتُ غَرَسْتُ كَرَامَتَهُمْ بِيَدِى وَخَتَمْتُ عَلَيْهَا فَلَمْ تَرَ عَيْنٌ
وَلَمْ تَسْمَعْ أُذُنٌ وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ » . (رواه مسلم) .
“একবার মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর প্রতিপালককে জিজ্ঞেস
করেছিলেন, জান্নাতে সবচেয়ে নিম্নস্তরের লোকটি কে হবে? আল্লাহ বললেন:
সে হল এমন এক ব্যক্তি, যে জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর
পর আসবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে: হে প্রতিপালক!
তা কিরূপে হবে? জান্নাতীগণ তো নিজ নিজ আবাসের অধিকারী হয়ে গেছেন।
তারা তাদের প্রাপ্য নিয়েছেন। তাকে বলা হবে: পৃথিবীর কোনো সম্রাটের সাম্রাজ্যের সমপরিমাণ
সম্পদ নিয়ে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে: হে প্রভু! আমি এতে
খুশি। আল্লাহ বলবেন: তোমাকে উক্ত পরিমাণ সম্পদ দেয়া হল, সাথে
দেয়া হল আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও
সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ ;
পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, আমি পরিতৃপ্ত, হে আমার রব! আল্লাহ বলবেন: আরও দশগুণ দেয়া হল। এ সবই তোমার জন্য। তাছাড়া
তোমার জন্য রয়েছে এমন জিনিস, যার দ্বারা মন তৃপ্ত হয়,
চোখ জুড়ায়। লোকটি বলবে: হে আমার প্রভু! আমি পরিতৃপ্ত। মূসা আলাইহিস
সালাম বললেন: হে আমার রব! তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ কে? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: এরা তারাই, যাদের মর্যাদা আমি নিজহাতে সুপ্রতিষ্ঠিত
করেছি এবং তার উপর মোহর করে দিয়েছি; এমন জিনিস তাদের জন্য রেখেছি,
যা কোন চক্ষু কখনও দেখেনি, কোন কান কখনও শুনে নি
এবং কারও অন্তরে কখনও কল্পনারও উদয় হয় নি।”[1]
১২. জান্নাতের স্তরসমূহঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَن يَأۡتِهِۦ
مُؤۡمِنٗا قَدۡ عَمِلَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلدَّرَجَٰتُ ٱلۡعُلَىٰ
٧٥ ﴾ [طه: ٧٥]
“আর যারা তাঁর (আল্লাহর) কাছে আসবে সৎকর্ম করে, তাদের জন্যই থাকবে উচ্চতম মর্যাদা।” [সূরা ত্বা-হা: ৭৫]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ كُلّٗا نُّمِدُّ
هَٰٓؤُلَآءِ وَهَٰٓؤُلَآءِ مِنۡ عَطَآءِ رَبِّكَۚ وَمَا كَانَ عَطَآءُ رَبِّكَ
مَحۡظُورًا ٢٠ ٱنظُرۡ كَيۡفَ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ وَلَلۡأٓخِرَةُ
أَكۡبَرُ دَرَجَٰتٖ وَأَكۡبَرُ تَفۡضِيلٗا ٢١ ﴾ [الاسراء: ٢٠، ٢١]
“তোমার প্রতিপালক তাঁর দান দ্বারা এদেরকে এবং ওদেরকে
সাহায্য করেন; আর তোমার প্রতিপালকের দান অবারিত। লক্ষ্য কর, আমি কিভাবে
ওদের এক দলকে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, আর আখেরাত তো নিশ্চয়ই
মর্যাদায় মহত্তর ও গুণে শ্রেষ্ঠতর।” (সূরা আল-ইসরা: ২০-২১)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ
مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ
بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۚ فَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ
وَأَنفُسِهِمۡ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ دَرَجَةٗۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ
وَفَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٩٥
دَرَجَٰتٖ مِّنۡهُ وَمَغۡفِرَةٗ وَرَحۡمَةٗۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا
٩٦ ﴾ [النساء: ٩٥، ٩٦]
“মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে
এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় ধন-প্রাণ
দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে, যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর
মর্যাদা দিয়েছেন; তাদের প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা
করেছেন। যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর যারা জিহাদ করে তাদেরকে আল্লাহ মহাপুরস্কারের
ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এসব তাঁর কাছ থেকে মর্যাদা, ক্ষমা
ও দয়া; আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”(সূরা আন-নিসা: ৯৫ – ৯৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا
تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١ ﴾ [المجادلة: ١١]
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান
দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।”(সূরা আল-মুজাদালা: ১১)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿أَفَمَنِ ٱتَّبَعَ
رِضۡوَٰنَ ٱللَّهِ كَمَنۢ بَآءَ بِسَخَطٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَمَأۡوَىٰهُ جَهَنَّمُۖ
وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ١٦٢ هُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِمَا
يَعۡمَلُونَ ١٦٣ ﴾ [ال عمران: ١٦٢، ١٦٣]
“আল্লাহ যেটাতে সন্তুষ্ট, যে তারই অনুসরণ করে, সে কি ওর মত, যে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং জাহান্নামই
যার আবাস? আর সেটা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! আল্লাহর কাছে
তারা বিভিন্ন স্তরের; তারা যা করে, আল্লাহ
সেসব ভালভাবে দেখেন।”(সূরা আলে ইমরান: ১৬২ – ১৬৩)
১৩. জান্নাতীদের মর্যাদাভেদে জান্নাতের
প্রকারভেদঃ
পবিত্র কালামে হাকিমে জান্নাতীদেরকে
দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:
১) ডান দিকের লোক (২) অগ্রবর্তী
লোক।
ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ فَأَصۡحَٰبُ ٱلۡمَيۡمَنَةِ
مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡمَيۡمَنَةِ ٨ ﴾ [الواقعة: ٨]
‘‘অতঃপর ডান দিকের লোক। ডান দিকের লোকের (সৌভাগ্যের
কথা) কি বলা যায়?’’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ৮)
আরও বলা হয়েছে,
﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلسَّٰبِقُونَ
١٠ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلۡمُقَرَّبُونَ ١١ ﴾ [الواقعة: ١٠، ١١]
‘‘আর অগ্রবর্তী লোকেরা তো (সকল ব্যাপারে) অগ্রবর্তীই।
তারাই তো সান্নিধ্যশালী লোক।’’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ১০-১১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
«إِنَّ أَهْلَ الجَنَّةِ يَتَرَاءَوْنَ أَهْلَ الغُرَفِ
مِنْ فَوْقِهِمْ، كَمَا يَتَرَاءَوْنَ الكَوْكَبَ الدُّرِّيَّ الغَابِرَ فِي
الأُفُقِ، مِنَ المَشْرِقِ أَوِ المَغْرِبِ، لِتَفَاضُلِ مَا بَيْنَهُمْ» قَالُوا
يَا رَسُولَ اللَّهِ تِلْكَ مَنَازِلُ الأَنْبِيَاءِ لاَ يَبْلُغُهَا غَيْرُهُمْ،
قَالَ: «بَلَى وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، رِجَالٌ آمَنُوا بِاللَّهِ وَصَدَّقُوا
المُرْسَلِينَ»
‘‘জান্নাতীরা তাদের উপরতলার লোকদেরকে এমনভাবে দেখতে
পাবে, যেমন করে তোমরা
পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জ্বল তারকাগুলো দেখতে পাও। তাদের পরস্পর মর্যাদা পার্থক্যের
কারণে এরূপ হবে।’’ সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: ‘‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! ঐ স্তরগুলো কি নবীদের যা অন্য
কেউ লাভ করতে পারবে না? তিনি বললেন: ‘‘কেন পারবে না! সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ। যারা আল্লাহর
উপর ঈমান এনেছে এবং নবীদেরকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারা ঐ স্তরে
যেতে সক্ষম হবে।’’ (বুখারী, ৩২৫৬,
মুসলিম, ২৮৩১)
অত্র হাদীস থেকে স্পষ্ট জানা
যায় যে, জান্নাতীদের আমলের তারতম্যের কারণে সেখানে তাদের মর্যাদাও বিভিন্ন রকম হবে।
অনেক হাদীসে জান্নাতীদের নেয়ামতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে নিম্নমানের এক জান্নাতীকে
অমুক অমুক বস্তু দেয়া হবে। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে জান্নাতীদেরকে আল্লাহ তাদের
আমল ও মর্যাদা অনুযায়ী বিভিন্ন মানের জান্নাত দেবেন।
এ থেকে আরও বুঝা যায় যে, কুরআন ও হাদীসে জান্নাতের যে আলোচনা
করা হয়েছে তা সাধাণভাবে সকল জান্নাতীদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রিয়
ও সালেহ বান্দাহ তাদেরকে এর অতিরিক্ত আরও কিছু দেবেন তার বর্ণনা আল্লাহ কোথাও করেন
নি। শুধু ইঙ্গিত দেয়াই যথেষ্ট মনে করেছেন।
১৪. জান্নাতীদের উষ্ণ সম্বর্ধনাঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
﴿وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ
رَبَّهُمۡ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ
أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا
خَٰلِدِينَ ٧٣ وَقَالُواْ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِي صَدَقَنَا وَعۡدَهُۥ وَأَوۡرَثَنَا
ٱلۡأَرۡضَ نَتَبَوَّأُ مِنَ ٱلۡجَنَّةِ حَيۡثُ نَشَآءُۖ فَنِعۡمَ أَجۡرُ ٱلۡعَٰمِلِينَ
٧٤﴾ [الزمر: ٧٣، ٧٤]
“মোত্তাকীদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া
হবে। যখন তারা মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে, জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে এ বলে
অভ্যর্থনা জানাবে, তোমাদের প্রতি সালাম, শুভেচ্ছা, তোমরা সুখে থাকো এবং সর্বদা বসবাসের জন্য তোমরা
জান্নাতে প্রবেশ করো। তারা বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি
আমাদের প্রতি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে এ ভূমির উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন।
আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা বসবাস করবো। মেহনতকারীদের পুরস্কার কতই না চমৎকার।” (সূরা যুমার: ৭৩-৭৪)
১৫. বহুতল ভবন ও নির্ঝরিণীঃ
জান্নাতীদের বাসস্থান সম্পর্কে
আল্লাহ বলেন:
﴿لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ
رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَف مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا
ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠﴾ [الزمر: ٢٠]ٞ
“যারা মোত্তাকী, তাদের জন্য রয়েছে কক্ষের উপর কক্ষ
(বহুতল ভবন) এবং এর নীচে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। আল্লাহ নিজ ওয়াদা কখনও ভঙ্গ করেন না।” (সূরা যুমার: ২০)
১৬. সকল প্রকার মজাদার খাবার ডিশ ও
ফল-ফলাদিঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
﴿يَٰعِبَادِ لَا خَوۡفٌ
عَلَيۡكُمُ ٱلۡيَوۡمَ وَلَآ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ ٦٨ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بَِٔايَٰتِنَا
وَكَانُواْ مُسۡلِمِينَ ٦٩ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ أَنتُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ
تُحۡبَرُونَ ٧٠ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا
مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ
٧١ وَتِلۡكَ ٱلۡجَنَّةُ ٱلَّتِيٓ أُورِثۡتُمُوهَا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٧٢
لَكُمۡ فِيهَا فَٰكِهَةٞ كَثِيرَةٞ مِّنۡهَا تَأۡكُلُونَ ٧٣ ﴾ [الزخرف: ٦٨، ٧٣]
“হে আমার বান্দাগণ, তোমাদের আজ কোনো ভয় নেই এবং তোমরা
দুঃখিত ও পেরেশান হবে না। তোমরা আমার আয়াতসমূহের বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং তোমরা
আমার আজ্ঞাবহ ছিল। জান্নাতে প্রবেশ করো তোমরা এবং তোমাদের বিবিগণ সানন্দে। তাদের কাছে
সোনার তৈরি ডিশ ও পানপাত্র পেশ করা হবে এবং সেখানে রয়েছে মন যা চায় এবং নয়ন যাতে
তৃপ্ত হয়। তোমরা সেখানে চিরকাল থাকবে। এই যে জান্নাতের তোমরা উত্তরাধিকারী হয়েছো,
এটা তোমাদের কর্মের ফল। সেখানে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল-মূল,
তা থেকে তোমরা খাবে।” (সূরা যুমার: ৬৮-৭৩)
জান্নাতে সকল প্রকার ফল-মূল পাওয়া
যাবে তারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে যখনই ইচ্ছা করবে, তখনই খেতে পারবে।
১৭. যা পেতে ইচ্ছে করবে তাই পাবেঃ
পৃথিবীতে কোন জিনিস পেতে হলে
বা ভোগ করতে চাইলে সে জিনিসের জন্য চেষ্টা শ্রম ও কোন কোন ক্ষেত্রে টাকা বা সম্পদের
প্রয়োজন হয়। কিন্তু জান্নাতে ইচ্ছে হওয়া মাত্রই সে জিনিস তার সামনে উপস্থিত পাবে।
এ ব্যাপারে আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেনঃ
﴿وَلَكُمۡ فِيهَا مَا تَشۡتَهِيٓ
أَنفُسُكُمۡ وَلَكُمۡ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ ٣١ نُزُلٗا مِّنۡ غَفُورٖ رَّحِيمٖ ٣٢
﴾ [فصلت: ٣١، ٣٢]
অর্থঃ ‘সেখানে তোমরা যা কিছু চাও এবং যা ইচ্ছে করবে সাথে
সাথে তাই হবে। এটা হচ্ছে ক্ষমাশীল ও দয়াবান আল্লাহর তরফ হতে মেহমানদারী।’ (সূরা হা-মীম আস-সিজদা: ৩০-৩১)
অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
﴿ وَأَمۡدَدۡنَٰهُم
بِفَٰكِهَةٖ وَلَحۡمٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢٢ ﴾ [الطور: ٢٢]
“এবং আমি জান্নাতীদেরকে তাদের ইচ্ছানুযায়ী ফল ও
গোশত প্রদান করতে থাকবো।’ (সূরা আত-তূর: ২২)
এ দান স্থান ও কালের সাথে সীমাবদ্ধ
হবে না, নিয়মিতভাবে
চিরদিন প্রদান করা হবে। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
﴿ وَلَهُمۡ رِزۡقُهُمۡ
فِيهَا بُكۡرَةٗ وَعَشِيّٗا ٦٢ ﴾ [مريم: ٦٢]
অর্থঃ ‘এবং সেখানে তাদেরকে (নিয়মিতভাবে) সকাল সন্ধ্যা
খাদ্য পরিবেশন করা হবে।’ (সূরা মারইয়াম: ৬২)
১৮. অসীম সুখ-সম্ভার কোনোদিন শেষ হবে
নাঃ
পৃথিবীতে যদিও কোনো ব্যাক্তি
সম্পূর্ণ সুখ-সম্ভোগ লাভ করতে পারে না; তবুও যতোটুকু পায় তার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত
ভীত সন্ত্রস্ত থাকে চোর-ডাকাত, প্রতারক এবং মৃত্যুর ভয়ে। কিন্তু
জান্নাতের নিয়ামত এবং সুখ ভোগ কোনো দিনই কমতি বা শেষ হবে না।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেনঃ
﴿فِي سِدۡرٖ مَّخۡضُودٖ
٢٨ وَطَلۡحٖ مَّنضُودٖ ٢٩ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠﴾ [الواقعة: ٢٨، ٣٠]
অর্থঃ ‘তাদের জন্য কাটাবৃক্ষসমূহ, থরে থরে সাজানো কলা, বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী ছায়া, সর্বদা প্রবাহমান পানি,
আর খুব প্রচুর পরিমাণ ফল থাকবে। যা কোনদিন শেষ হবে না এবং ভোগ করতে কোন
বাঁধা-বিপত্তিও থাকবে না।’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ২৮-৩০)
অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
﴿ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ
مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ ٥٠ مُتَّكِِٔينَ فِيهَا يَدۡعُونَ فِيهَا
بِفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ وَشَرَابٖ ٥١ ۞وَعِندَهُمۡ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ أَتۡرَابٌ
٥٢ هَٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِيَوۡمِ ٱلۡحِسَابِ ٥٣ إِنَّ هَٰذَا لَرِزۡقُنَا مَا
لَهُۥ مِن نَّفَادٍ ٥٤ ﴾ [ص: ٥٠، ٥٤]
অর্থঃ ‘চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহ যার দ্বারগুলো তাদের জন্য
উন্মুক্ত হয়ে থাকবে। সেখানে তারা ঠেস দিয়ে বসবে এবং প্রচুর ফল ও পানীয় চেয়ে পাঠাবে, আর তাদের নিকট লজ্জাবনত সমবয়স্কা
স্ত্রী থাকবে। এ জিনিসগুলো এমন যা হিসেবের দিন দান করার জন্য তোমাদের নিকট ওয়াদা করা
হয়েছে। এটা আমাদের দেয়া রিযিক, কোনো দিন শেষ হয়ে যাবে না।’ (সূরা সদ: ৫০-৫৪)
১৯. জান্নাতীদেরকে আল্লাহ পবিত্রা স্ত্রী
ও হুরদের সাথে বিয়ে দেবেনঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেনঃ
﴿ مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ
سُرُرٖ مَّصۡفُوفَةٖۖ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٢٠ ﴾ [الطور: ٢٠]
অর্থঃ ‘তারা সামনা-সামনিভাবে সাজানো সারি সারি আসনের উপর
ঠেস দিয়ে বসে থাকবে এবং আমি তাদের সাথে সুনয়না হুরদের বিবাহ দেবো।’ (সূরা তুর: ২০)
حور বহুবচনের শব্দ। একবচনে حوراء অর্থ অত্যন্ত সুশ্রী, অনিন্দ্য সুন্দর। عين শব্দটিও বহুবচন। একবচনে عيناء অর্থ ভাসা ভাসা ডাগর চক্ষুওয়ালা নারী। যাদেরকে
বাংলা সাহিত্যের ভাষায় হরিণ নয়না বলা হয়। হুর সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুফাচ্ছিরগণ
দু’ভাগে ভাগ করেছেন, এক দলের মতেঃ সম্ভবত এরা হবে সেসব
মেয়ে যারা বালেগা হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছিলো এবং যাদের পিতা-মাতা জান্নাতে
যাওয়ার যোগ্য হয় নি। সে সব মেয়েদেরকে ষোড়শী যুবতী করে হুরে রূপান্তর করা হবে। আর
তারা চিরদিন নব্য যুবতীই থেকে যাবে।
অন্যদের মতেঃ হুরগণ প্রকৃতপক্ষে
স্ত্রী জাতি কিন্তু তাদের সৃষ্টি মানব সৃষ্টির চেয়ে আলাদা এবং আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আপন মহিমায় তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
﴿ فِيهِنَّ خَيۡرَٰتٌ
حِسَانٞ ٧٠ ﴾ [الرحمن: ٧٠]
অর্থঃ ‘(এসব নিয়ামতের মধ্যে থাকবে) তাদের
জন্য সচ্চরিত্রবান ও সুদর্শন স্ত্রীগণ।’ (সূরা আর-রাহমান: ৭০)
সূরা আল-ইমরানে বলা হয়েছেঃ
﴿ لِلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ
عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا
وَأَزۡوَٰجٞ مُّطَهَّرَةٞ وَرِضۡوَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِٱلۡعِبَادِ
١٥ ﴾ [ال عمران: ١٥]
অর্থঃ ‘যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের
জন্য এমন উদ্যান সমূহ রয়েছে যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান। আর সেখানে তারা চিরকাল
অবস্থান করবে। সেখানে তাদের জন্য আরও আছে পবিত্রা স্ত্রীগণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি।
২০. জান্নাতী হুরেরা হবে কুমারীঃ
আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّآ أَنشَأۡنَٰهُنَّ
إِنشَآءٗ ٣٥ فَجَعَلۡنَٰهُنَّ أَبۡكَارًا ٣٦ عُرُبًا أَتۡرَابٗا ٣٧﴾ [الواقعة: ٣٥،
٣٧]
“আমি জান্নাতী নারীদেরকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি।
তারপর তাদেরকে চিরকুমারী, কামিনী ও সমবয়স্কা বানিয়েছি।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ৩৫-৩৮)
ঐ সমস্ত হুর এবং স্ত্রীগণ শুধু
কুমারীই হবে না বরং এমন অবস্থায় থাকবে যে, জান্নাতীদের স্পর্শের পূর্বে কোনো মানুষ অথবা
জ্বীন তাদেরকে স্পর্শ করে নি বা দেখেও নি। কেননা বিচারের পূর্বে কোনো ব্যক্তিই জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবে না তাই তাদেরকে দেখা বা স্পর্শ করাও সম্ভব নয়।
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন নিজেই বলেনঃ
﴿ لَمۡ يَطۡمِثۡهُنَّ
إِنسٞ قَبۡلَهُمۡ وَلَا جَآنّٞ ٧٤ ﴾ [الرحمن: ٧٤]
অর্থঃ তাদেরকে (জান্নাতীদের)
পূর্বে কোনো মানুষ অথবা জ্বীন স্পর্শ করে নি।’ (সূরা আর-রাহমান: ৫৬)
২১. হুরেরা হবে আবরণে রক্ষিত উজ্জ্বল
মণি-মুক্তার মতো সুন্দরীঃ
আল্লাহ বলেন:
﴿ وَحُورٌ عِينٞ ٢٢
كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣ ﴾ [الواقعة: ٢٢، ٢٣]
“হুরের উদাহরণ হলো, আবরণে রক্ষিত মুক্তার মতো সুন্দর
ও উজ্জ্বল এবং আয়তলোচনা। ”(সূরা ওয়াকি‘আহ্: ২৩)
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿وَعِندَهُمۡ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ
عِينٞ ٤٨ كَأَنَّهُنَّ بَيۡضٞ مَّكۡنُونٞ ٤٩﴾ [الصافات: ٤٨، ٤٩]
“তাদের চোখ সর্বদাই অবনত (পবিত্রা যারা অন্যের দিকে
তাকায় না), সুন্দর চোখ বিশিষ্ট এবং তারা যেন ডিমের আবরণের ভেতর সুপ্ত উজ্জ্বল।” (সূরা সাফ্ফাত:৪৮- ৪৯)
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
«وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ
اطَّلَعَتْ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا، وَلَمَلَأَتْهُ
رِيحًا، وَلَنَصِيفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا»
‘জান্নাতীগণের স্ত্রীদের মধ্যে থেকে কোনো একজন স্ত্রী
যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি মেরো দেখতো তবে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সবকিছু আলোকিত হয়ে
যেতো এবং গোটা পৃথিবী সুগন্ধে ভরে যেতো। তার মাথার উড়নাটিও পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত
বস্তুর চেয়ে দামী।’ (বুখারী, ২৭৯৬)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, হুরেরা অত্যন্ত উজ্জ্বল সুন্দরী,
রূপবতী, লাবণ্যময়ী, সুন্দর
ও বড় বড় চোখের অধিকারিণী হবে, কাপড়ের মধ্য দিয়ে তাদের হাড়ের
ভেতরের মজ্জা দেখা যাবে, তাদের দেহ আয়নার মতো স্বচ্ছ হবে এবং
যে কেউ নিজের চেহারা তাতে দেখতে পাবে।
আনাস ইবন মালেক থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন: মোমিনকে জান্নাতে ১শত নারীর সাথে যৌনমিলনের শক্তি দেয়া হবে। (মুসনাদে
আহমাদ, ৪/৩৭১)
অন্য বর্ণনায় আছেঃ
«إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ يَوْمَ
القِيَامَةِ ضَوْءُ وُجُوهِهِمْ عَلَى مِثْلِ ضَوْءِ القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ،
وَالزُّمْرَةُ الثَّانِيَةُ عَلَى مِثْلِ أَحْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي
السَّمَاءِ، لِكُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ عَلَى كُلِّ زَوْجَةٍ سَبْعُونَ
حُلَّةً يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَائِهَا»
“প্রথম যারা কিয়ামতের দিন জান্নাতে যাবে, তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের
মত উজ্জ্বল দেখা যাবে, আর দ্বিতীয় দল, তারা যেন সৌন্দর্যে আকাশের ধ্রুব তারা, তাদের প্রত্যেকের
জন্য থাকবে দু’জন স্ত্রী, প্রত্যেক স্ত্রীর উপর থাকবে সত্তরটি
কাপড়, তথাপি তার ভেতর থেকেও পায়ের নলার ভিতরের মগজ দৃষ্টিগোচর
হবে।” (তিরমিযী, ২৫৩৫)
২২. সোনার খাটে মুখোমুখি হয়ে হেলান
দিয়ে বসবেঃ
﴿عَلَىٰ سُرُرٖ
مَّوۡضُونَةٖ ١٥ مُّتَّكِِٔينَ عَلَيۡهَا مُتَقَٰبِلِينَ ١٦﴾ [الواقعة:١٥، ١٦]
“জান্নাতীরা সোনার খাটে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে হেলান
দিয়ে আরামের সাথে আলাপচারিতা করবে।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্ : ১৫-১৬)
আল্লাহ বলেন:
﴿هُمۡ وَأَزۡوَٰجُهُمۡ
فِي ظِلَٰلٍ عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِ مُتَّكُِٔونَ ٥٦ ﴾ [يس: ٥٦]
“তারা এবং তাদের স্ত্রীরা ছায়ার মধ্যে খাটে হেলান
দিয়ে বসবে। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে ফল-মুল এবং তারা যা চাবে সবই ।” সূরা ইয়াসিন-৫৬)
২৩. হুরদের প্রাণ মাতানো সংগীতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতের মধ্যে হুরদের একটি সমষ্টি থাকবে, যারা এমন
মধুর সুরে গান গাবে, আল্লাহর কোন সৃষ্টি এত সুন্দর কণ্ঠের গান
আর কোনো দিন শোনে নি। তারা এ বলে গাইবে:
‘আমরা চিরস্থায়ী, কোন দিন খতম হবো না,
আমরা চিরসুখী, কোনদিন দুঃখী হবো না।
আমরা চিরসন্তুষ্ট, কোন দিন অসন্তুষ্ট হবো না,
সুসংবাদ, আমরা যাদের জন্য এবং যারা আমাদের
জন্য। (তিরমিযী, ২৫৬৪)[2]
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে
জান্নাতী গানের ধরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি উত্তর দেন: সে সকল গান হবে আল্লাহর
হামদ ও গুণ-কীর্তন, প্রশংসা ও স্তুতি।
জান্নাতীদের খেদমতের জন্য অসংখ্য
গিলমান থাকবেঃ
জান্নাতীদের জন্য হুরের পাশাপাশি
গিলমান (غلمان) থাকবে। غلمان বহুবচন, এক বচনে غلام অর্থ দাস, সেবক ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿ ۞وَيَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ
غِلۡمَانٞ لَّهُمۡ كَأَنَّهُمۡ لُؤۡلُؤٞ مَّكۡنُونٞ ٢٤ ﴾ [الطور: ٢٤]
“আর তাদের (সেবা যত্নে) কাজে নিযুক্ত থাকবে এমন সুন্দর
সুশ্রী বালক, তারা যেন (ঝিনুকে) লুকিয়ে থাকা মুক্ত।” (সূরা তুর: ২৪)
غلمان বা সেবকগণ হবে চিরন্তন বালক। এদের বয়স কোনোদিনই
বাড়বে না। এই সেইসব বালক যারা বালেগ হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছে এবং তাদের বাবা-মা
চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। অথবা তারা হবে এক নতুন সৃষ্টি যাদেরকে আল্লাহ আপন মহিমায়
জান্নাতীদের পরিচর্যা ও সেবার জন্য সৃষ্টি করবেন। (আল্লাহই সর্বজ্ঞ)। ঐ বালকগণ জান্নাতীদেরকে বাসন-কোসন, খাদ্য-পানীয় ইত্যাদি পরিবেশনের
দায়িত্ব নিয়োজিত থাকবে এবং তারা পুরুষ ও মহিলা উভয় ধরনের জান্নাতীদের নিকট অবাধে
যাতায়াত করবে।
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ ۞وَيَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ
وِلۡدَٰنٞ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيۡتَهُمۡ حَسِبۡتَهُمۡ لُؤۡلُؤٗا مَّنثُورٗا ١٩
﴾ [الانسان: ١٩]
‘‘আর তাদের (সেবার জন্য) নির্ধারিত থাকবে এমন সব বালক
যারা চিরদিনই বালক থাকবে। আপনি তাদেরকে দেখলে মনে করবেন এরা যেন ছড়িয়ে দেয়া মুক্তা।’’ (সূরা দাহর: ১৯)
২৪. কচিকাঁচা ছোট শিশুদের আপ্যায়নঃ
শিশুরা আনন্দের খোরাক। তাদের
কচিকাঁচা চালন-চলন মনোহর। যদি তারাই আপ্যায়ন করায় তাহলে তা আরো কত বেশি আনন্দঘন হবে!
আল্লাহ বলেন:
﴿ يَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ
وِلۡدَٰنٞ مُّخَلَّدُونَ ١٧ بِأَكۡوَابٖ وَأَبَارِيقَ وَكَأۡسٖ مِّن مَّعِينٖ ١٨
لَّا يُصَدَّعُونَ عَنۡهَا وَلَا يُنزِفُونَ ١٩ وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا
يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١ ﴾ [الواقعة: ١٧، ٢١]
“তাদের কাছে পানপাত্র ও সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে কচি-কোমল
শিশুরা ঘোরাফেরা করবে। আর যা পান করলে মাথা ব্যাথা হবে না এবং বিকারগ্রস্থ হবে না।
আর তাদের পছন্দসই ফল-মুল ও রুচিসম্মত পাখীর গোশত নিয়ে আপ্যায়নের জন্য ঘোরাফেরা করবে।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ১৭-২১)
২৫. জান্নাতীদের দৈহিক গঠনঃ
রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يَدْخُلُ أَهْلُ الجَنَّةِ الجَنَّةَ جُرْدًا مُرْدًا
مُكَحَّلِينَ أَبْنَاءَ ثَلَاثِينَ أَوْ ثَلَاثٍ وَثَلَاثِينَ سَنَةً»
‘‘জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা থাকবে লোম ও দাড়ি গোঁফ বিহীন,
খৎনাবিহীন, সুরমা লাগানো, ত্রিশ অথবা তেত্রিশ বছরের বয়সের।’’ (তিরমিযী, ২৫৪৫)
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:
«أهل الجنة جرد مرد كحل لايفنى شبابهم ولا يبلى ثيابهم»
‘‘জান্নাতীগণ লোম ও দাড়ি গোঁফ বিহীন হবে, তাদের চোখ থাকবে সুরমায়িত। তাদের
যৌবন কোনদিনই বিলুপ্ত হবে না এবং তাদের কাপড় চোপড়ও পুরানো হবে না।’’ (তিরমিযী, ২৫৩৯)
হাসান বসরী রহ. বলেন,
أَتَتْ عَجُوزٌ إِلَى النَّبِيِّ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم َ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ
أَنْ يُدْخِلَنِي الْجَنَّةَ. فَقَالَ: (يَا أُمَّ فُلَانٍ إِنَّ الْجَنَّةَ لَا
تَدْخُلُهَا عَجُوزٌ) . قَالَ: فَوَلَّتْ تَبْكِي. فَقَالَ: (أَخْبِرُوهَا
أَنَّهَا لَا تَدْخُلُهَا وَهِيَ عَجُوزٌ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ: إِنَّا
أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنْشَاءً. فَجَعَلْنَاهُنَّ أبكارا. عربا أترابا)
একবার রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এক বৃদ্ধা আবেদন করলেন: ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি দু’আ করে দিন আমি যেনো জান্নাতে যেতে পারি।’’ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন: কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। একথা শুনে বৃদ্ধা কাঁদতে লাগলেন।
তখন তিনি তাকে ডেকে বললেন: বুড়ি শোনো, তুমি যখন জান্নাতে যাবে
তখন আর বুড়ি থাকবে না। ষোড়ষী যুবতী হয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে। একথা শুনে বৃদ্ধা
খুশী হয়ে চলে গেলো। [শামায়েলে তিরমিযী, বর্ণনা নং ২০৫,
শাইখ আল-আলবানী বর্ণনাটিকে হাসান বলেছেন]
২৬. জান্নাতের নদী ও ঝর্ণাসমূহঃ
জান্নাতে মোট চার ধরনের নদী প্রবাহিত
হবে। যথাঃ
(১) পানি (২) দু্ধ (৩) মধু (৪) শরাব।
১। পানির ঝর্ণার মধ্যেও থাকবে
বৈচিত্র্যময় অবস্থা। পানির ঝর্ণাগুলোও হবে বিভিন্ন ধরনের। যেমন,
ক. ‘কাফুর’ নামক ঝর্ণা। এই ঝর্ণার পানি সুঘ্রাণযুক্ত এবং
সুশীতল।
খ. সালসাবিল ঝর্ণা। এর পানি ফুটন্ত
চা ও কপির ন্যায়। সুগন্ধিযুক্ত ও উত্তপ্ত।
গ. তাছনীম নামক ঝর্ণা। এর পানি
নাতিশীতোষ্ণ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن
تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ ﴾ [البقرة: ٢٥]
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে শুভ
সংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।” (আল বাকারা:২৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي
وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ
مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٖ
لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗىۖ وَلَهُمۡ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ
﴾ [محمد: ١٥]
“মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে
তার দৃষ্টান্ত: তাতে আছে নির্মল পানির নহরসমূহ, আছে দুধের নহরসমূহ যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়,
আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ, আছে
পরিশোধিত মধুর নহরসমূহ এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে প্রত্যেক প্রকারের ফলমূল।”(মুহাম্মদ:১৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ
فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ ﴾ [الدخان: ٥١، ٥٢]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে— উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে।”(আদ দুখান:৫১-৫২)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ
تَجۡرِيَانِ ٥٠ ﴾ [الرحمن: ٥٠]
“উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ।”(আর রাহমান:৫০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ
نَضَّاخَتَانِ ٦٦ ﴾ [الرحمن: ٦٦]
“উভয় উদ্যানে আছে উচ্ছলিত দুই প্রস্রবণ।” (আর রাহমান:২২)
সূরা যারিয়াতে বলা হয়েছে:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ
فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ١٥ ءَاخِذِينَ مَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡۚ إِنَّهُمۡ
كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُحۡسِنِينَ ١٦ ﴾ [الذاريات: ١٥، ١٦]
‘‘অবশ্য মুক্তাকী লোকেরা সেদিন বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারাসমূহের
পরিবেষ্টনে অবস্থান থাকবে। তাদের রব তাদেরকে যা দেবে সানন্দে তারা তা গ্রহণ করতে থাকবে।
(এটা এজন্য যে) তারা এর আগে মুহসিন (সদাচারী) বান্দা হিসেবে পরিচিত ছিলো।’’ (সূরা যারিয়াত: ১৫-১৬)
বাগানসমূহের নিচ দিয়ে প্রবাহের
অর্থ হচ্ছে, বাগানসমূহের পাশ দিয়ে নদী নালা প্রবাহমান থাকবে। কেননা- বাগ-বাগিচা যদিও নদীর
কিনারে হয় তবু তা নদী থেকে একটু উচু জায়গাই হয়ে থাকে এবং নদী ও বাগান থেকে সামান্য
নিচু নিয়েই প্রবাহিত হয়।
পক্ষান্তরে যে সমস্ত জায়গায়
ঝর্ণার কথা বলা হয়েছে সেখানে বাগান এবং ঝর্ণা একত্রে থাকবে একথাই বলা হয়েছে। আমরা
জানি বাগানের মধ্যে বা একই সমতলে ঝর্ণা থাকা সম্ভব। শুধু সম্ভবই নয় বাগানের শোভা বর্ধনের
একটি অন্যতম উৎসও বটে। তাই কুরআনের ভাষায় হচ্ছে:
﴿ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ
٥٢ ﴾ [الدخان: ٥٢]
“সেদিন তারা বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাসমূহের পরিবেষ্টনে
অবস্থান করবে।”
আরো বলা হয়েছে:
﴿ وَدَانِيَةً عَلَيۡهِمۡ
ظِلَٰلُهَا وَذُلِّلَتۡ قُطُوفُهَا تَذۡلِيلٗا ١٤ ﴾ [الانسان: ١٤]
‘‘জান্নাতের ছায়া তাদের উপর বিস্তৃত হয়ে থাকবে এবং
তার ফলসমূহ সর্বদা আয়ত্বের মধ্যে থাকবে।’’ (সূরা দাহর: ১৪)
একই জায়গায় নানা ধরনের ফুল
ফলের বাগান, বড় বড় ছায়াদার বৃক্ষরাজি, ঝর্ণাসমূহ, সাথে
বিশাল আয়তনের অট্টালিকাসমূহ, পাশ দিয়ে প্রবাহমান নদী, একত্রে
এগুলোর সমাবেশ ঘটলে পরিবেশ কত মোহিনী মনোমুগ্ধকার হতে পারে তা লিখে বা বর্ণনা করে বুঝানো
কোনক্রমেই সম্ভব নয় শুধুমাত্র মনের চোখে কল্পনার ছবি দেখলে কিছুমাত্র অনুমান করা সম্ভব।
মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن في الجنة بحر الماء , وبحر العسل , وبحر اللبن , وبحر الخمر , ثم
تشقق الأنهار بعد » . ( رواه الترمذي ) .
“নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে থাকবে পানির সমুদ্র, মধুর
সমুদ্র, দুধের সমুদ্র এবং মদের সমুদ্র; অতঃপর
নদী-নালার ব্যবস্থা করা হবে।” [তিরিমিযী, ২৫৭১]
২৭. জান্নাতের প্রাসাদ, কক্ষ
ও তাঁবুসমূহঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ
فِي جَنَّٰتِ عَدۡنٖۚ ﴾ [التوبة: ٧٢]
“আরও ওয়াদা দিচ্ছেন,
উত্তম
বাসস্থানের, স্থায়ী জান্নাতসমূহে।”
[সূরা
আত-তাওবাহ: ৭২]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَهُمۡ فِي ٱلۡغُرُفَٰتِ
ءَامِنُونَ ٣٧ ﴾ [سبا: ٣٧]
“আর তারা সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে।”(সূরা সাবা: ৩৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿أُوْلَٰٓئِكَ يُجۡزَوۡنَ
ٱلۡغُرۡفَةَ بِمَا صَبَرُواْ وَيُلَقَّوۡنَ فِيهَا تَحِيَّةٗ وَسَلَٰمًا ٧٥ ﴾
[الفرقان: ٧٤]
“তারাই, যাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের
সুউচ্চ কক্ষ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। আর তারা প্রাপ্ত হবে
সেখানে অভিবাদন ও সালাম।”(সূরা
আল-ফুরকান: ৭৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ
رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٞ مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن
تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠ ﴾
[الزمر: ٢٠]
“তবে যারা তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের
জন্য আছে বহু প্রাসাদ যার উপর নির্মিত আরো প্রাসাদ, যার
পাদদেশে নদী প্রবাহিত; এটা আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি, আল্লাহ্
প্রতিশ্রুতির বিপরীত করেন না।”(সূরা
যুমার: ২০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ حُورٞ مَّقۡصُورَٰتٞ
فِي ٱلۡخِيَامِ ٧٢ ﴾ [الرحمن: ٧٢]
“তারা হূর, তাঁবুতে সুরক্ষিতা।”
(সূরা
আর-রাহমান: ৭২)
আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জান্নাতে মোমিনের জন্য মুক্তার তৈরি তাঁবু থাকবে।
এর দৈর্ঘ্য হবে ৬০ মাইল। সেখানে মোমিনদের পরিবার থাকবে। তারা তাদের কাছে আসা-যাওয়া
করবে, একে অপরকে দেখতে পারবে না। (বুখারী, ৪৮৭৯; মুসলিম, ১৮০)
তাঁবু দীর্ঘ হওয়ার কারণে সাধারণভাবে
একে অপরকে দূরত্বের কারণে দেখতে পাবে না।
আনাস ইবন মালেক থেকে বর্ণিত, তিনি
মিরাজের হাদীস বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বরাত দিয়ে
বলেন: জিবরীল আমাকে সিদরাতুল মোনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলো। এরপর অজ্ঞাত রং দ্বারা চতুর্দিক
আবৃত হয়ে গেলো। পরে আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো। সেখানে মুক্তার তৈরি তাঁবুসমূহ
রয়েছে। এগুলোর মাটি হচ্ছে মেশক।’ (বুখারী, ৩৪৯; মুসলিম, ১৬৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন: জান্নাতের ইট হলো সোনা ও রূপার, মাটি
হলো মেশক, কংকর হলো মুক্তা ও ইয়াকুত, মাটি
হলো যাফরান। যে প্রবেশ করবে সে সুখে থাকবে,
দুঃখী
হবে না, চিরস্থায়ী হবে,
মৃত্যু
বরণ করবে না, পোশাক পুরাতন হবে না এবং যৌবন শেষ হবে না। [তিরমিযী, ২৫২৬; মুসনাদে
আহমাদ ২/৩০৪]
২৮. জান্নাতের বৃক্ষ ও বিহঙ্গকুলঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ
مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ ٢٧ فِي سِدۡرٖ مَّخۡضُودٖ ٢٨ وَطَلۡحٖ مَّنضُودٖ ٢٩
وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ وَفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ ٣٢ ﴾
[الواقعة: ٢٧، ٣٢]
“আর ডান দিকের দল,
কত ভাগ্যবান
ডান দিকের দল! তারা থাকবে এমন উদ্যানে,
যাতে
আছে কাঁটাহীন কুলগাছ এবং কাঁদি ভরা কলা গাছ;
আর সম্প্রসারিত
ছায়া; আর সদা প্রবাহমান পানি এবং প্রচুর ফলমূল।”(সূরা আল-ওয়াকি‘আহ্: ২৭ – ৩২)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَلِمَنۡ خَافَ مَقَامَ
رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٧ ذَوَاتَآ
أَفۡنَانٖ ٤٨ ﴾ [الرحمن: ٤٦، ٤٨]
“আর যে তার রবের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার
জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয়ই
বহু শাখা-পল্লববিশিষ্ট।”(সূরা
আর-রাহমান: ৪৬ – ৪৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ وَمِن دُونِهِمَا
جَنَّتَانِ ٦٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٦٣ مُدۡهَآمَّتَانِ ٦٤
﴾ [الرحمن: ٦٢، ٦٤]
“এ উদ্যান দুটি ছাড়া আরো দুটি উদ্যান রয়েছে। কাজেই তোমরা উভয়ে
তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?
ঘন সবুজ
এ উদ্যান দু’টি।”(সূরা আর-রাহমান: ৬২ –
৬৪)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ
فِي ظِلَٰلٖ وَعُيُونٖ ٤١ ﴾ [المرسلات: ٤١]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণ বহুল স্থানে।”(সূরা আল-মুরসালাত: ৪১)
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن في الجنة شجرة , يسير الراكب في ظلها مائة عام لا يقطعها » . إن
شئتم فاقرؤوا : ﴿ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ ﴾ (رواه البخاري) .
“নিশ্চয়ই জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ হবে, যার
ছায়ার মাঝে একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে, তবুও
বৃক্ষের ছায়াকে অতিক্রম করতে পারবে না। যদি তোমরা চাও, তাহলে
তোমরা পাঠ কর: (আর সম্প্রসারিত ছায়া এবং সদা প্রবাহমান পানি)।”[3]’
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:
«ما في الجنة شجر إلا وساقها من ذهب»
‘‘জান্নাতে এমন কোন বৃক্ষ নেই যার শাখা প্রশাখা স্বর্ণের নয়।’’
(তিরমিযি, ২৫২৫)
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন: একদিন আমি সালমান ফারেসীর নিকট গেলাম। তিনি আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে
ছোট একটি কাঠের টুকরো নিলেন, যা তার দু’
আঙ্গুলের
মাঝে থাকার কারণে ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না। তিনি বললেন: যদি তুমি জান্নাতে এতটুকু
কাঠ সংগ্রহ করতে চাও তা পারবে না। আমি বললাম: তাহলে খেজুর গাছও অন্যান্য গাছপালা কোথায়
যাবে। (যার কথা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ আছে?)
তিনি
বললেন: অবশ্য খেজুর ও অন্যান্য গাছপালা সেখানে থাকবে তবে তা কাঠের হবে না। বরং তা শাখা
প্রশাখাগুলো মোমি ও স্বর্ণের তৈরী হবে। আর তাতে থাকবে কাঁদি কাঁদি খেজুর। (বাইহাকী; আল-বা‘ছে ওয়ান নুশূর,
১/১৯১; শু‘আবুল ঈমান, ৭৭৯৭; শাইখ
আল-আলবানী সহীহুত তারগীবে সেটাকে হাসান বলেছেন)
জান্নাতে শুধু গাছ-পালা, নদী-নালা
ও ঝর্ণাধারাই থাকবে না। সেখানে রং বেরং এর নানা প্রজাতির পাখীও থাকবে। তারা সারাক্ষণ
কুজন কাকলীতে মুখরিত করে রাখবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘‘জান্নাতে লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট উটের ন্যায় পাখীও আছে। যারা সর্বদা
জান্নাতের বৃক্ষারাজীর মধ্যে বিচরণ করে বেড়াবে।’’ আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু শোনে আরজ করলেন: ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা তো খুব আনন্দময় ও সুখময় জীবন যাপন
রত।’’ রাসূলুল্লাহ
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘‘সেগুলো ভক্ষণকারীরা সেখানে আরো
উত্তম জীবন যাপন করবে।’’ একথা
তিনি তিনবার বললেন। (মুসনাদে আহমদ ৩/২৩৬)
২৯. জান্নাতীদের আসবাবপত্রঃ
﴿ وَيُطَافُ عَلَيۡهِم بَِٔانِيَةٖ
مِّن فِضَّةٖ وَأَكۡوَابٖ كَانَتۡ قَوَارِيرَا۠ ١٥ قَوَارِيرَاْ مِن فِضَّةٖ
قَدَّرُوهَا تَقۡدِيرٗا ١٦ ﴾ [الانسان: ١٥، ١٦]
‘‘তাদের সম্মুখে রৌপ্য নির্মিত পাত্র ও কাঁচের পেয়ালা আবর্তিত
করানো হবে। সে কাঁচ যা রৌপ্য জাতীয় হবে এবং সেগুলোকে পরিমাণ মতো ভরতি করে রাখা হবে।’’
(সূরা
দাহর: ১৫-১৬)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ يُطَافُ عَلَيۡهِم
بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ
وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ ﴾ [الزخرف: ٧١]
‘‘তাদের সামনে সোনার থালা ও পান পাত্র আবর্তিত হবে এবং মন ভুলানো
ও চোখ জুড়ানো জিনিসসমূহ সেখানে বর্তমান থাকবে। তাদেরকে বলা হবে এখন তোমরা চিরদিন এখানে
থাকবে।’’ (সূরা
যুখরুফ: ৭০)
এখানেও দেখা যাচ্ছে কোথাও স্বর্ণের
এবং কোথাও রৌপ্যের পাত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ সেখানে স্বর্ণের অথবা রৌপের
পান পাত্র একত্রে অথবা পৃথক পৃথক ব্যবহার করা হবে। তবে রৌপ্য পাত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্যের
কথা বলা হয়েছে যে, সে পাত্রগুলো যদিও রৌপ্যের তৈরী হয় কিন্তু কাঁচের
মতো স্বচ্ছ দেখা যাবে। যা দেখলে কাঁচের মতোই মনে হবে কিন্তু কাঁচের মতো ভঙ্গুর হবে
না। ঠিক তদ্রুপ স্বচ্ছ বালাখানার কথাও হাদীসে উল্লেখ আছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن في الجنة غر فا يرى ظاهرها من باطنها وباطنها من ظاهرها»
‘‘জান্নাতের মধ্যে এমন বালাখানা আছে (স্বচ্ছতার কারণে) যার ভেতরের
অংশ বাইরে থেকে এবং বাইরের অংশ ভেতর থেকে দেখা যায়।’’
(মুসনাদে
আহমাদ ২/১৭৩)
«أمشاطهم الذهب —— ومجامرهم الألوة»
‘‘তাদের চিরুনী হবে স্বর্ণের তৈরি —
তাদের
ধুপদানী সুগন্ধী কাঠ দিয়ে জ্বালানো হবে।’’ (বুখারী,
৩২৪৫; মুসলিম, ২৮৩৪)
৩০. সোনা-রূপার জান্নাতঃ
আবু মূসা আশ‘আরী থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “দুটো
জান্নাত রূপার এবং পানপাত্র ও আসবাপত্রও রূপার। আর দুটো জান্নাত সোনার এবং পানপাত্র
ও আসবাবপত্র সোনার। জান্নাতে আদনে তাদের ও আল্লাহর মধ্যে দৃষ্টির আড়াল হলো আল্লাহর
অহংকারের চাদর।” (বুখারী, ৪৮৭৮; মুসলিম, ১৮০)।
জান্নাতের ইটগুলো সোনা ও রূপার, সিমেন্ট
হচ্ছে মেশক, কংকর হচ্ছে মণি-মুক্তা ও ইয়াকুত পাথর এবং মাটি
হচ্ছে যাফরান।
৩১. জান্নাতের বাজারের বর্ণনাঃ
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“জান্নাতে একজন আওয়াজ দানকারী আওয়াজ দিয়ে বলবে:
তোমরা এখন থেকে চিরসু্স্থ, কখনও অসুস্থ হবে না; তোমরা
এখন থেকে চিরদিন জীবিত, আর মৃত্যু বরণ করবে না, তোমরা
এখন থেকে চিরযুবক, আর কোনদিন বৃদ্ধ হবে না, তোমরা
এখন থেকে চিরস্থায়ী নিয়ামত ও সুখ-শান্তিতে থাকবে, কখনও
দুঃখ-বেদনার সম্মুখীন হবে না।” একথাই
আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াতে বলেন: তাদেরকে ডেকে বলা হবে, তোমাদের
আমলের বিনিময়ে তোমরা এ জান্নাত লাভ করেছো।’ (মুসলিম,
২৮৩৭)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
‘‘জান্নাতে একটি বাজার আছে। সেখানে জান্নাতীগণ প্রতি শুক্রবার
যাবে। সেখানে উত্তর দিকে হতে মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হয়ে জান্নাতীদের মুখমন্ডল ও
পরিধের বস্ত্রাদি সুগন্ধিতে ভরিয়ে দেবে। আর তাদের সৌন্দর্য ও রূপ লাবণ্য পর্যায়ক্রমে
বাড়তে থাকবে। সুতরাং তারা অত্যন্ত সুন্দর ও লাবণ্যময় হয়ে নিজেদের স্ত্রী নিকট ফিরে
আসবে। স্ত্রীগণ তাদেরকে দেখে বলবে,
আল্লাহর
শপথ‘‘ তোমার
যে সৌন্দর্য্য ও লাবণ্যের অধিকারী হয়েছো। আবার পুরুষগণও বলবে, আল্লাহর
কসম! আমরা তোমাদের কাছ হতে যাবার পর তোমাদের রূপলাবণ্য ও সৌন্দর্যও অনেক গুণ বৃদ্ধি
পেয়েছে। (মুসলিম, ২৮৩৩)
৩২. জান্নাতবাসীদের খাদ্য ও পানীয়ঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا
يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١ ﴾ [الواقعة: ٢٠، ٢١]
“আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফলমূল নিয়ে, আর তাদের
ঈপ্সিত পাখীর গোশ্ত নিয়ে। [সূরা আল-ওয়াকি‘আহ:
২০-২১]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ هَٰذَا ذِكۡرٞۚ وَإِنَّ
لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مََٔابٖ ٤٩ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ ٱلۡأَبۡوَٰبُ
٥٠ مُتَّكِِٔينَ فِيهَا يَدۡعُونَ فِيهَا بِفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ وَشَرَابٖ ٥١ ﴾
[ص: ٤٩، ٥١]
“এ এক স্মরণ,
আর মুত্তাকীদের
জন্য রয়েছে উত্তম আবাস, জান্নাত,
যার
দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত। সেখানে তারা আসীন হবে হেলান দিয়ে, সেখানে
তারা বহুবিধ ফলমূল ও পানীয় চাইবে।” [সূরা সদ,
৪৯-৫১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ
يَشۡرَبُونَ مِن كَأۡسٖ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا ٥ عَيۡنٗا يَشۡرَبُ بِهَا
عِبَادُ ٱللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفۡجِيرٗا ٦ ﴾ [الانسان: ٥، ٦]
“নিশ্চয় সৎকর্মশীলেরা পান করবে এমন পূর্ণপাত্র-পানীয় থেকে যার
মিশ্রণ হবে কাফূর — এমন
একটি প্রস্রবণ যা থেকে আল্লাহ্র বান্দাগণ পান করবে, তারা
এ প্রস্রবণকে যথেচ্ছা প্রবাহিত করবে।” [সূরা আল-ইনসান, ৫-৬]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿مَنۡ عَمِلَ سَيِّئَةٗ
فَلَا يُجۡزَىٰٓ إِلَّا مِثۡلَهَاۖ وَمَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ
أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ يُرۡزَقُونَ
فِيهَا بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٤٠﴾ [غافر: ٤٠]
“কেউ মন্দ কাজ করলে সে শুধু তার কাজের অনুরূপ শাস্তিই প্রাপ্ত
হবে। আর যে পুরুষ কিংবা নারী মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে তবে তারা প্রবেশ করবে জান্নাতে, সেখানে
তাদেরকে দেয়া হবে অগণিত রিযিক।”(সূরা
গাফের: ৪০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يُطَافُ عَلَيۡهِم
بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ
وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ ﴾ [الزخرف: ٧١]
“স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে; সেখানে
মন যা চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয় তাই থাকবে। আর সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে।”
(সূরা
যুখরুফ: ৭১)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي
جَنَّٰتٖ وَنَعِيمٖ ١٧ فَٰكِهِينَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ وَوَقَىٰهُمۡ
رَبُّهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ١٨ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيَٓٔۢا بِمَا كُنتُمۡ
تَعۡمَلُونَ ١٩﴾ [الطور: ١٧، ١٩]
‘‘মুত্তাকী লোকেরা সেখানে বাগানসমূহে ও নিয়ামত সম্ভারের মধ্যে
অবস্থান করবে। মজা ও স্বাদ আস্বাদন করতে থাকবে সে সব জিনিসের যা তাদের রব তাদেরকে দেবেন।
আর তাদের রব তাদেরকে জাহান্নামের আজাব হতে রক্ষা করবেন। (তাদেরকে বলা হবে) খাও এবং
পান কর মজা ও তৃপ্তির সাথে। এটা তো তোমাদের সে সব কাজের প্রতিফলন যা তোমরা (পৃথিবীতে)
করছিলে।’’ (সূরা
তুর: ১৭-১৯)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ فَهُوَ فِي عِيشَةٖ
رَّاضِيَةٖ ٢١ فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٖ ٢٢ قُطُوفُهَا دَانِيَةٞ ٢٣ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ
هَنِيَٓٔۢا بِمَآ أَسۡلَفۡتُمۡ فِي ٱلۡأَيَّامِ ٱلۡخَالِيَةِ ٢٤ ﴾ [الحاقة: ٢١،
٢٤]
‘‘সেখানে তারা বাঞ্ছিত সুখভোগ লিপ্ত থাকবে। (তাদের অবস্থান হবে)
জান্নাতের উচ্চতম স্থানে। যা ফলসমূহের গুচ্ছ ঝুলতে থাকবে। (বলা হবে) খাও এবং পান করো, তৃপ্তি
সহকারে। সে সব আমলের বিনিময়ে যা তোমরা অতীত দিনে করেছো। ’’
(সূরা
আল হাক্কাহ: ২১-২৪)
আরো বলা হয়েছে:
﴿ ۖ كُلَّمَا رُزِقُواْ
مِنۡهَا مِن ثَمَرَةٖ رِّزۡقٗا قَالُواْ هَٰذَا ٱلَّذِي رُزِقۡنَا مِن قَبۡلُۖ
وَأُتُواْ بِهِۦ مُتَشَٰبِهٗاۖ ﴾ [البقرة: ٢٥]
‘‘জান্নাতের ফল দেখতে পৃথিবীর ফলের মতোই হবে। যখন কোন ফল তাদের
দেয়া হবে খাবার জন্য, তারা বলবে: এ ধরনের ফল তো আমরা পৃথিবীতেই খেয়েছি।’’
(সূরা
বাকারা: ২৫)
ফলগুলো যদিও পৃথিবীর মতো মনে
হবে কিন্তু স্বাদ ও গন্ধে সম্পূর্ণ উন্নত ও ভিন্ন ধরনের হবে। প্রতিবার খাওয়ার সময়ই
তার স্বাদ গন্ধ শেনৈ: শেনৈ: বৃদ্ধি পাবে।
এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে, পৃথিবীতে
দুঃখ আছে বলেই সুখকে আমরা উপভোগ করতে পারি। কিন্তু জান্নাতে যদি দুঃখ না থাকে তবে শুধু
সুখ উপভোগ করা যাবে কি? বা সুখ ভোগ করতে করতে একঘেয়েমী লাগবে না?
এর দুটি উত্তর হতে পারে-
প্রথমত: জান্নাতীগণ জাহান্নামীদের
অবস্থা অবলোকন করতে পারবে এবং কথপোকথনও হবে। তাই তাদের সুখকে জাহান্নামীদের সাথে তুলনা
করতে কষ্ট হবে না এবং সে সুখে এক ঘেয়েমিও আসবে না।
দ্বিতীয়ত: দুঃখ না থাকলেও সুখের
মাত্রা স্থিতিশীল হবে না, পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কাজেই সে সুখভোগ
কখনো ক্লান্তি আনে না বরং সুখভোগের অনুভুতি তীব্র হতে তীব্রতর হবে।
৩২. জান্নাতীদের প্রস্রাব পায়খানার
প্রয়োজন হবে নাঃ
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি
বলেছেন:
«يأكل أهل الجنة فيها ويشربون لا يتغوطون ولا يمتخطون ولا يبو لون
ولكن طعامهم ذلك جشاء كرشح المسك يلهمون التسبيح والتكبير كما يلهمون النفس»
‘‘জান্নাতীগণ জান্নাতের খাবার খাবে এবং পানীয় বস্তু পান করবে
কিন্তু সেখানে তাদের পায়খানা প্রস্রাবের প্রয়োজন হবে না, এমনকি
তাদের নাকে ময়লাও জমবে না। ঢেকুরের মাধ্যমে তাদের পেটের খাদ্র্যদ্রব্য হজম হয়ে মিশকের
সুগন্ধির মতো বেরিয়ে যাবে। স্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের মতোই তারা তাসবীহ তাকবীরে অভ্যস্ত
হয়ে যাবে।’’ (মুসলিম, ২৮৩৫)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
«لايبولون ولا يتغطون ولا يتفلون ولا يمتخطون»
‘‘তাদেরকে পেশাব পায়খানা করতে হবে না, মুখে
থুথু আসবে না, আর নাকে কোনরূপ ময়লা জমবে না।’’
(বুখারী, ৩৩২৭; মুসলিম, ২৮৩৪)
৩৩. জান্নাতবাসীদের পোষাক-পরিচ্ছদঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ
أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٢٣ ﴾ [الحج: ٢٣]
“সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা
এবং সেখানে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।”(সূরা আল-হাজ্জ: ২৩)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا
مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَيَلۡبَسُونَ ثِيَابًا خُضۡرٗا مِّن سُندُسٖ
وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَّكِِٔينَ فِيهَا عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِۚ نِعۡمَ ٱلثَّوَابُ
وحَسُنَتۡ مُرۡتَفَقٗا ٣١ ﴾ [الكهف: ٣١]
“সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ কংকনে অলংকৃত করা হবে, তারা
পরবে সূক্ষ্ম ও পুরু রেশমের সবুজ বস্ত্র,
আর তারা
সেখানে থাকবে হেলান দিয়ে সুসজ্জিত আসনে;
কত সুন্দর
পুরস্কার ও উত্তম বিশ্রামস্থল!” (সূরা
আল-কাহাফ: ৩১)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ سُندُسٍ
خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ
شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ ﴾ [الانسان: ٢١]
“তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম, আর তারা
অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন
পবিত্র পানীয়।” (সূরা
আল-ইনসান: ২১)
সূরা আর রাহমানে বলা হয়েছে:
﴿ مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ
رَفۡرَفٍ خُضۡرٖ وَعَبۡقَرِيٍّ حِسَانٖ ٧٦ ﴾ [الرحمن: ٧٦]
‘‘তারা সবুজ গালিচা ও সুন্দর সুরঞ্জিত শয্যায় এলায়িতভাবে অবস্থান
করবে।’’ (সূরা
আর রহমান: ৭৬)
উপরোক্ত আয়াতসমূহের আলোকে বুঝা
যায় যে, উক্ত পোশাক এবং অলংকার পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই পরানো
হবে অলংকার সাধারণত: মহিলাগণই পরে থাকে। কিন্তু পুরুষদেরকে পরানো হবে, কথাটি
আমাদের নিকট একটু খটকা লাগে। তবে গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝা যায় যে, প্রাচীনকালে
এমন কি কুরআন যখন অবতীর্ণ হয়েছে তখনো রাজা-বাদশাগণ, সমাজপতি
ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ হাতে, কানে, গলায়
পোষাক পরিচ্ছদের অলংকার ও মুকুট ব্যবহার করতেন। এককালে আমাদের দেশের রাজা বাদশা ও জমিদারগণ
বিভিন্ন প্রকার অলংকার পরতেন সত্যি করা বলতে কি, তখন
পুরুষদের অলংকারদি ছিলো কৌলিন্যের প্রতীক। এ কথাটি সূরা যুখরুফের একটি আয়াতেও প্রমাণিত
হয়। যখন মূসা (আলাইহিস সালাম) জাকজমকহীন পোষাকে শুধুমাত্র একটি লাঠি হাতে ফিরআউনের
দরবারে গেলেন, ফিরআউনকে দাওয়াত দেয়ার জন্য, তখন
সে সভাসদকে লক্ষ্য করে বলে উঠলো:
‘‘এ যদি আসমান জমিনের বাদশাহর নিকট হতে প্রেরিতই হতো তবে তাকে
স্বর্ণের কংকন পরিয়ে দেয়া হলো না কেনো?
কিংবা
ফেরেশতাদের একটা বাহিনীই না হয় তার আর্দালী হয়ে আসতো।’’
(সূরা
যখরুফ: ৫৩)
কোথাও স্বর্ণের কংকন আবার কোথাও
রৌপের কংকন পরানোর কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোনো কোনো আলেম বলেন:
‘‘এ সব কটি আয়াত একত্র করে পাঠ করলে তিনটি অবস্থা সম্ভব বলে মনে
হয়।
প্রথমত: তারা কখনো স্বর্ণের এবং
কখনো রৌপের কংকন পরতে চাবে, আর উভয় জিনিসই তাদের ইচ্ছানুযায়ী থাকবে।
দ্বিতীয়ত: স্বর্ণ ও রৌপ্যের
কংকন তারা একসঙ্গে পরবে। কেননা, তাতে সৌন্দর্য্যের মাত্রা অনেকগুণ
বৃদ্ধি পেয়ে যাবে।
তৃতীয়ত: যার ইচ্ছা হবে স্বর্ণের
কংকন পরবে এবং যার ইচ্ছা হবে রৌপ্যের কংকন পরবে।”
জান্নাতের বিছানাঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ فِيهَا سُرُرٞ
مَّرۡفُوعَةٞ ١٣ وَأَكۡوَابٞ مَّوۡضُوعَةٞ ١٤ وَنَمَارِقُ مَصۡفُوفَةٞ ١٥
وَزَرَابِيُّ مَبۡثُوثَةٌ ١٦ ﴾ [الغاشية: ١٣، ١٦]
“সেখানে থাকবে উন্নত শয্যাসমূহ, আর প্রস্তুত
থাকবে পানপাত্র, সারি সারি উপাধান এবং বিছানা গালিচা।”
(সূরা
আল-গাশিয়া: ১৩ – ১৬)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ
فُرُشِۢ بَطَآئِنُهَا مِنۡ إِسۡتَبۡرَقٖۚ وَجَنَى ٱلۡجَنَّتَيۡنِ دَانٖ ٥٤ ﴾
[الرحمن: ٥٤]
“সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে এমন ফরাশে যার অভ্যন্তরভাগ হবে
পুরু রেশমের। আর দুই উদ্যানের ফল হবে কাছাকাছি।” (সূরা আর-রাহমান: ৫৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ
رَفۡرَفٍ خُضۡرٖ وَعَبۡقَرِيٍّ حِسَانٖ ٧٦ ﴾ [الرحمن: ٧٦]
“তারা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ তাকিয়ায় ও সুন্দর গালিচার উপরে।”
(সূরা
আর-রাহমান: ৭৬)
জান্নাতবাসীদের অলঙ্কার
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا
مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٢٣ ﴾ [الحج:
٢٣]
“সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা
এবং সেখানে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।”(সূরা আল-হাজ্জ: ২৩)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ
سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ
رَبُّهُمۡ شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ ﴾ [الانسان: ٢١]
“তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম, আর তারা
অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন
পবিত্র পানীয়।”(সূরা
আল-ইনসান: ২১)
৩৪. জান্নাতীদের সৌন্দর্য ও সম্প্রীতিঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
«ان اول زمرة يدخلون الجنة على صورة القمر ليلة البدر ثم الذين يلو
نهم كا شد كوكب درى فى السماء اضاءة قلو بهم على قلب رجل واحد لا اختلاف بينهم
ولاتباغض»
‘‘যে দলটি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার
চাঁদের মতো সুন্দর ও উজ্জল হবে। তাদের পর যারা প্রবেশ করবে তাদের চেহারা হবে আকাশের
সর্বাধিক আলোকউজ্জল তারকার মতো জ্যোর্তিময়। আর সকলের অন্তকরণ একটি অন্তকরণ সাদৃশ হবে।
তাদের মধ্যে পারস্পারিক মতভেদ বা বৈপরিত্য থাকবে না। (বুখারী, ৩২৪৬; মুসলিম, ২৮৩৪)
আল্লাহ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেছেন:
﴿ وَنَزَعۡنَا مَا فِي
صُدُورِهِم مِّنۡ غِلٍّ إِخۡوَٰنًا عَلَىٰ سُرُرٖ مُّتَقَٰبِلِينَ ٤٧ ﴾ [الحجر: ٤٧]
‘‘আমি তাদের অন্তর থেকে ঈর্ষা ও বৈরিতা দূর করে দেবো। তারা ভাইয়ের
মতো পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসন সমূহে সমাসীন থাকবে।’’ [সূরা আল-হিজর: ৪৭]
জান্নাতীগণ জান্নাতী বাপদাদা, স্ত্রী
ও সন্তানসহ একান্নবর্তী পরিবারের ন্যায় বসবাস করবেঃ
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ
وَٱتَّبَعَتۡهُمۡ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَٰنٍ أَلۡحَقۡنَا بِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ
وَمَآ أَلَتۡنَٰهُم مِّنۡ عَمَلِهِم مِّن شَيۡءٖۚ كُلُّ ٱمۡرِيِٕۢ بِمَا كَسَبَ
رَهِينٞ ٢١ ﴾ [الطور: ٢١]
‘‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানও ঈমানের কোন মাত্রায় তাদের
পদাংক অনুসরণ করেছে, তাদের সে সন্তানদেরকে আমরা (জান্নাতে) তাদের সাথে
একত্রিত করবো, আর তাদের আমলে কোন কম করা হবে না।’’
(সূরা
তুর: ২১)
সূরা রাদে বলা হয়েছে:
﴿جَنَّٰتُ عَدۡنٖ
يَدۡخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ
وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۖ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣
﴾ [الرعد: ٢٣]
‘‘তারাতো চিরন্তন জান্নাতে প্রবেশ করবেই, তাদের
সাথে তাঁদের বাপ-দাদা, তাদের স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা সৎ
ও নেককার তারাও তাদের সাথে সেখানে (জান্নাতে) যাবে। ফেরেশতাগণ চারদিক হতে তাদেরকে সম্বর্ধনা
দিতে আসবে এবং বলবে তোমাদের প্রতি শান্তি।’’(সূরা রা‘দ: ২৩)
এখানে উল্লেখ্য যে, যে সন্তান
অপ্রাপ্ত বয়সে মৃত্যুবরণ করে তাদের কথা বলা হয় নি, কেননা
তাদের ব্যাপারে তো কুফুর, ঈমান,
আল্লাহর
আনুগত্য ও নাফরমানীর প্রশ্নই উঠে না। সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, ঈমানদের
সন্তান-সন্তুতি এমনিই জান্নাতে যাবে এবং মা বাপের সন্তুষ্টির জন্য তাদের সাথে একত্রিত
করে দেয়া হবে।
৩৫. জান্নাতে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থানঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ كَانَتۡ لَهُمۡ جَنَّٰتُ ٱلۡفِرۡدَوۡسِ
نُزُلًا ١٠٧ خَٰلِدِينَ فِيهَا لَا يَبۡغُونَ عَنۡهَا حِوَلٗا ١٠٨ ﴾ [الكهف: ١٠٧،
١٠٨]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য
রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান
থেকে তারা স্থানান্তরিত হতে চাইবে না।”( সূরা আল-কাহাফ: ১০৭ –
১০৮)
৩৬. রবের সামনে দণ্ডায়মানে ভীত ব্যক্তির
জন্য দু’টি জান্নাতঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلِمَنۡ خَافَ مَقَامَ
رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٧ ذَوَاتَآ
أَفۡنَانٖ ٤٨ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٩ فِيهِمَا عَيۡنَانِ
تَجۡرِيَانِ ٥٠ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٥١ فِيهِمَا مِن كُلِّ
فَٰكِهَةٖ زَوۡجَانِ ٥٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٥٣ ﴾ [الرحمن:
٤٦، ٥٣]
“আর যে তার রবের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার
জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন্ অনুগ্রহে মিথ্যারোপ
করবে? উভয়ই বহু শাখা-পল্লববিশিষ্ট। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের
কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান
দুই প্রস্রবণ। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয়
উদ্যানে রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই দুই প্রকার। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে
মিথ্যারোপ করবে?”(সূরা আর-রাহমান: ৪৬ –
৫৩)
৩৭. জান্নাতীগণ সর্বাধিক বড় নিয়ামত
আল্লাহর দর্শন লাভ করবেঃ
আল্লাহর দর্শনের ব্যাপারে আল-কুরআনের
মাত্র দু’জায়গায় আলোচনা করা হয়েছে। সূরা আল কিয়ামাহ এবং
সূরা আল-মুতাফফিফীনে।
আল্লাহ বলেন:
﴿ وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ
نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ ﴾ [القيامة: ٢٢، ٢٣]
“সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের রবের প্রতি তাকিয়ে
থাকবে।” (সূরা
কিয়ামাহ: ২২-২৩)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
﴿ كَلَّآ إِنَّهُمۡ عَن
رَّبِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ لَّمَحۡجُوبُونَ ١٥ ﴾ [المطففين: ١٥]
‘‘কখনই নয়। নিঃসন্দেহে সেদিন এ লোকদেরকে তাদের রব এর দর্শন হতে
বঞ্চিত রাখা হবে।’’ (সূরা
মুতাফফিফীন: ১৫)
নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, “আল্লাহর কসম,
জান্নাতীদের
জন্য আল্লাহর দর্শন ব্যতিরেকে অধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় আর কিছু হবে না।”
(মুসলিম, ১৮১; তিরমিযী, ২৫৫২)
অন্যত্র বলা হয়েছে:
«إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ لِأَهْلِ الجَنَّةِ: يَا
أَهْلَ الجَنَّةِ؟ فَيَقُولُونَ: لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ، فَيَقُولُ:
هَلْ رَضِيتُمْ؟ فَيَقُولُونَ: وَمَا لَنَا لاَ نَرْضَى وَقَدْ أَعْطَيْتَنَا مَا
لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، فَيَقُولُ: أَنَا أُعْطِيكُمْ أَفْضَلَ مِنْ
ذَلِكَ، قَالُوا: يَا رَبِّ، وَأَيُّ شَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ؟ فَيَقُولُ:
أُحِلُّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِي، فَلاَ أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ أَبَدًا»
“মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ জান্নাতবাসীদের বলবেন, হে জান্নাত
বাসীগণ! তারা বলবে হে আমাদের প্রভূ,
আমরা
উপস্থিত। সমস্ত মঙ্গল ও কল্যাণ আপনার হাতে। (কি আদেশ বলুন!) আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমরা
কি তোমাদের আমলের প্রতিদান পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা
(জান্নাতীগণ) জবাব দিবে-হে আমাদের রব,
আপনি
আমাদেরকে এমন সব নেয়ামত দিয়েছেন যা অন্য কাউকে দেননি। তখন আমরা সন্তুষ্ট হবো না কেনো? তখন
আল্লাহ বলবেন আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও অধিক উত্তম ও উন্নত জিনিস দান করবো না? তারা
বলবে এর চেয়ে অধিক ও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে? তখন
আল্লাহ বলবেন আমি চিরকাল তোমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকবো। কোনদিন আর অসন্তুষ্ট হবো না।
(বুখারী, ৬৫৪৯;
মুসলিম, ২৮২৯)
অন্য হাদীসে আছে এ কথা শুনে জান্নাতীগণ
তাদের সমস্ত নেয়ামতের কথা ভুলে যাবে। কেননা এ সুসংবাদ-ই
হচ্ছে তাদের কাছে সবচেয়ে বড়ো নেয়ামত।
সোহাইব ইবন সেনান আর-রূমী থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، قَالَ: يَقُولُ اللهُ
تَبَارَكَ وَتَعَالَى: تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: أَلَمْ
تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا؟ أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ، وَتُنَجِّنَا مِنَ
النَّارِ؟ قَالَ: فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ، فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ
إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ»
জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের
পর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি আরো কিছু চাও, তাহলে
আমি তা বাড়িয়ে দেবো? তারা উত্তরে বলবে, আপনি
কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করেন নি,
আমাদেরকে
কি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাননি? এরপর
আল্লাহ নিজের নূরের পর্দা খুলে ফেলবেন। আল্লাহর অতিশয় সুন্দর সত্তার প্রতি দৃষ্টি
দান অপেক্ষা তাদেরকে জান্নাতের আর কোন উত্তম নিয়ামত দেয়া হয় নি। (মুসলিম, ১৮১)
৩৮. জান্নাত চাইতে হবে আল্লাহর কাছেঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যখন আল্লাহর কাছে জান্নাত চাইবে তখন জান্নাতুল
ফেরদৌস চাইবে। সেটাই মধ্যম ও সর্বোচ্চ জান্নাত।
জান্নাতীদেরকে অসংখ্য ও অগণিত
নিয়ামত দেয়া হবে। আল্লাহ এক সাথে অনেক নিয়ামতের উল্লেখ করেছেন নিম্নোক্ত আয়াতে :
﴿وَجَزَىٰهُم بِمَا
صَبَرُواْ جَنَّةٗ وَحَرِيرٗا ١٢ مُّتَّكِِٔينَ فِيهَا عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِۖ لَا
يَرَوۡنَ فِيهَا شَمۡسٗا وَلَا زَمۡهَرِيرٗا ١٣ وَدَانِيَةً عَلَيۡهِمۡ ظِلَٰلُهَا
وَذُلِّلَتۡ قُطُوفُهَا تَذۡلِيلٗا ١٤ وَيُطَافُ عَلَيۡهِم بَِٔانِيَةٖ مِّن فِضَّةٖ
وَأَكۡوَابٖ كَانَتۡ قَوَارِيرَا۠ ١٥ قَوَارِيرَاْ مِن فِضَّةٖ قَدَّرُوهَا
تَقۡدِيرٗا ١٦ وَيُسۡقَوۡنَ فِيهَا كَأۡسٗا كَانَ مِزَاجُهَا زَنجَبِيلًا ١٧
عَيۡنٗا فِيهَا تُسَمَّىٰ سَلۡسَبِيلٗا ١٨ ۞وَيَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ وِلۡدَٰنٞ
مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيۡتَهُمۡ حَسِبۡتَهُمۡ لُؤۡلُؤٗا مَّنثُورٗا ١٩ وَإِذَا
رَأَيۡتَ ثَمَّ رَأَيۡتَ نَعِيمٗا وَمُلۡكٗا كَبِيرًا ٢٠ عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ
سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ
رَبُّهُمۡ شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ إِنَّ هَٰذَا كَانَ لَكُمۡ جَزَآءٗ وَكَانَ
سَعۡيُكُم مَّشۡكُورًا ٢٢ ﴾ [الانسان: ١٢، ٢٢]
“এবং তাদের সবর ও ধৈর্যের বিনিময়ে তাদেরকে দেবেন
জান্নাত ও রেশমী পোশাক-আশাক। তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে রোদের
তাপ ও শীতের ঠান্ডা অনুভব করবে না। আর গাছের ছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং ফলসমূহ
তাদের আয়ত্বে রাখা হবে। তাদেরকে খাদ্য ও পানীয় পরিবেশন করা হবে রূপার পাত্রে এবং
স্ফুটিকের মতো পানপাত্রে। পরিবেশনকারীরা তা পরিমাণ করে পূর্ণ করবে। তাদেরকে সেখানে
পান করানো হবে, ‘যানজাবীল’ মিশ্রিত পানপাত্র। এটা জান্নাতে অবস্থিত ‘সালসাবীল’ নামক একটি ঝর্ণা। আর তাদের কাছে আনাগোনা করবে
চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মণি-মুক্তা। আপনি যখন সেখানে
দেখবেন, তখন নিয়ামতরাজি ও বিশাল রাজ্য দেখতে পাবেন। তাদের পোশাক
হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা সবুজ রেশম এবং তাদেরকে পরিধান করানো হবে রৌপ্য নির্মিত কংকন
এবং তাদের প্রতিপালক তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়। এটা তোমাদের প্রতিদান। তোমাদের
আমল ও কাজ স্বীকৃতি লাভ করেছে।” (সূরা আদ-দাহর: ১২-২২)
জান্নাত সর্বাধিক মূল্যবান জিনিস।
তাই তা সংগ্রহের আপ্রাণ ও জোরদার চেষ্টা চালানো উচিত। তাকওয়া মূলত: জান্নাত লাভের
উপায় এবং তা অর্জনের জন্য বাস্তব চেষ্টা ও পরিশ্রমের বাস্তব প্রশিক্ষণ।
[1] মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( كتاب الإيمان ), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের সবচেয়ে নিম্নস্তরের
জান্নাতবাসী (باب أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً فِيهَا), হাদিস নং- ৪৮৫
[2] দুর্বল সনদে; তবে ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা
থেকে ত্বাবারানীর কাছাকাছি অর্থে একটি বর্ণনা রয়েছে, শাইখ আল-আলবানী
সেটাকে হাসান বলেছেন, তাই উপরের বর্ণনাটি রেখে দেওয়া হলো। [সম্পাদক]
[3] বুখারী, আস-সহীহ, হাদিস নং- ৩২৫১; মুসলিম, ২৮২৭।
মহান আরশে আযীমের অধিপতি, জগতসমূহের স্রষ্টা এবং একচ্ছত্র
মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার অনন্য সুন্দর নামসমূহ,
তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা, ইযযত, আজমত ওয়াল জালাল, তাঁর মহত্ম, বড়ত্ব
এবং গুণাবলীর অসীলায় আমরা তাঁর নিকট জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি
কামনা করছি। হে আল্লাহ, হে মালিক, হে জান্নাত-জাহান্নামের
মালিক, হে আশ্রয়দাতা, হে মুক্তিদাতা,
হে ক্ষমাশীল, হে দয়াশীল, আপনি আমাদের হৃদয়ের গহীন থেকে উৎসারিত আন্তরিক দুআ কবুল করুন। আমীন। ইয়া আরহামার
র-হিমীন।।
খ। দ্বিতীয় স্তর:
(ক) . ভূমিকা:
আল্লাহ তা‘আলা পাপিষ্ঠ বান্দাদের জন্য জাহান্নাম
প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। যারা অবাধ্য,
অস্বীকারকারী, পাপী
তাদেরকে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনে পুড়তে হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা‘আলার বিধান অনুযায়ী তার নির্দেশিত পথে চললে জাহান্নাম থেকে মুক্তি
লাভ করে জান্নাতবাসী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করা সম্ভব হবে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে
জান্নাত-জাহান্নামের বিশদ বিবরণ বিধৃত হয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে জাহান্নামের বিভিন্ন শাস্তি
এবং জাহান্নামীদের খাদ্য, পানীয় প্রভৃতির বিবরণ পেশ করা হ’ল-
(খ). অত্যুষ্ণ বায়ু ও কৃষ্ণবর্ণের ছায়া :
জাহান্নামের আগুনের তীব্র তাপদাহ
ও উষ্ণতা এত প্রখর ও যন্ত্রণাদায়ক হবে,
যা কল্পনাতীত।
সেখানে রয়েছে আগুন হ’তে প্রস্ত্ততকৃত পোশাক, বিছানা, ছায়া, ভারী
বেড়ি এবং আগুনের জিঞ্জির, আগুনে উত্তপ্ত ও প্রজবলিত কোটি কোটি টন ভারী লোহা
ও গুর্জ, আগুনে উত্তপ্ত করা আসনসমূহ প্রভৃতি। সুতরাং যার
সৃষ্টি লেলিহান অগ্নিশিখা হবে তার অভ্যন্তরস্থ বায়ুর ধ্বংসলীলা কত ভয়ংকর হ’তে পারে তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ
বলেন, وَأَصْحَابُ الشِّمَالِ مَا أَصْحَابُ الشِّمَالِ، فِيْ
سَمُوْمٍ وَحَمِيْمٍ، وَظِلٍّ مِنْ يَحْمُوْمٍ، لاَ بَارِدٍ وَلاَ كَرِيْمٍ. ‘আর বাম
দিকের দল কত হতভাগ্য, বাম দিকের দল! তারা থাকবে অত্যুষ্ণ বায়ু ও উত্তপ্ত
পানিতে, কৃষ্ণবর্ণের ধূম্রের ছায়ায়, যা শীতলও
নয় আবার আরামদায়কও নয়’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৪১-৪৪)। জাহান্নামীরা
জাহান্নামের আযাবে অতিষ্ঠ হয়ে এক ছায়াকর বৃক্ষের দিকে ছুটে আসবে। যখন সেখানে পৌঁছবে
তখন বুঝতে পারবে যে, এটা কোন ছায়াদানকারী বৃক্ষ নয়, বরং
এটা জাহান্নামের ঘনকালো ধোঁয়া। অনুরূপভাবে জাহান্নামের বিদগ্ধকারী কঠিন লু-হাওয়া দিয়ে
কাফেরদের শাস্তি দেওয়া হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, قَالُوْا إِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِيْ أَهْلِنَا مُشْفِقِيْنَ، فَمَنَّ
اللهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُوْمِ. ‘তারা বলবে,
পূর্বে
আমরা পবিবারবর্গের মধ্যে শংকিত অবস্থায় ছিলাম। তারপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন
এবং আমাদেরকে অগ্নিশাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন’ (তূর ৫২/২৬-২৭)।
জাহান্নামের ছায়ার বর্ণনা দিয়ে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اِنْطَلِقُوْا إِلَى مَا
كُنْتُمْ بِهِ تُكَذِّبُوْنَ، انْطَلِقُوْا إِلَى ظِلٍّ ذِيْ ثَلاَثِ شُعَبٍ، لاَ
ظَلِيْلٍ وَلاَ يُغْنِيْ مِنَ اللَّهَبِ، إِنَّهَا تَرْمِيْ بِشَرَرٍ كَالْقَصْرِ،
كَأَنَّهُ جِمَالَتٌ صُفْرٌ، وَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِلْمُكَذِّبِيْنَ. ‘তোমরা
যাকে অস্বীকার করতে, চল তারই দিকে। চল তিন শাখা বিশিষ্ট ছায়ার দিকে, যে ছায়া
শীতল নয় এবং যে ছায়া অগ্নিশিখা হ’তে রক্ষা করতে পারে না। তা উৎক্ষেপণ
করবে অট্টালিকাতুল্য বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ,
তা পীতবর্ণ
উষ্ট্রশ্রেণী সদৃশ। সেই দিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য’
(মুরসালাত
৭৭/২৯-৩৪)।
জাহান্নামের অগ্নিবায়ুর উষ্ণতা
এত প্রখর ও কঠিন, যা সকল জাহান্নামীকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে। যে
আগুন মানুষকে জীবিত থাকতেও দিবে না,
আবার
মরতেও দিবে না। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا أَدْرَاكَ مَا سَقَرُ، لاَ
تُبْقِيْ وَلاَ تَذَرُ، لَوَّاحَةٌ لِّلْبَشَرِ. ‘তুমি কি জান সাক্বার কি? তা
(মানুষকে) অক্ষতও রাখবে না, আবার ছেড়েও দিবে না। মানুষকে দগ্ধ করবে’
(মুদ্দাচ্ছির
৭৪/২৭-২৯)। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, كَلَّا لَيُنْبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ، وَمَا أَدْرَاكَ مَا
الْحُطَمَةُ، نَارُ اللهِ الْمُوقَدَةُ، الَّتِيْ تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ،
إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُّؤْصَدَةٌ، فِيْ عَمَدٍ مُمَدَّدَةٍ. ‘কখনো না। সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে।
আপনি কি জানেন পিষ্টকারী কি? এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন, যা হৃদয়ে
পৌঁছবে। এতে তাদের বেঁধে দেওয়া হবে লম্বা লম্বা খুঁটিতে’
(হুমাযাহ
১০৪/৪-৯)।
জাহান্নামের আগুন অনবরত প্রজ্বলন
করা হবে। তাপ কমে যাওয়ার সাথে সাথে আবার জ্বালানো হবে। তা কখনো নির্বাপিত হবে না। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ
مَوَازِيْنُهُ، فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ، وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ، نَارٌ حَامِيَةٌ. ‘আর যার
(নেকীর) পাল্লা হালকা হবে তার স্থান হবে হাবিয়া। আপনি কি জানেন হাবিয়া কি? তা হ’ল জ্বলন্ত আগুন’ (ক্বারি‘আহ ১০১/৮-১১)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
رَأَيْتُ اللَّيْلَةَ رَجُلَيْنِ
أَتَيَانِى... قَالاَ الَّذِى يُوْقِدُ النَّارَ مَالِكٌ خَازِنُ النَّارِ. ‘আজ রাতে
আমি স্বপ্ন দেখলাম যে, দু’জন লোক
আমার কাছে এসে বলল,... যিনি আগুন প্রজ্বলিত করছেন তিনি
হ’লেন জাহান্নামের দারোগা ‘মালেক’।[1]
জাহান্নামের আগুনের জ্বালানী
হবে মানুষ ও পাথর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِيْ وَقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِيْنَ ‘অতএব সে আগুনকে ভয় কর,
যার
জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্ত্তত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য’
(বাক্বারাহ
২/২৪)।
জাহান্নামের আগুনের লু-হাওয়া
সহ্য করা মানুষের জন্য অসম্ভব হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لَقَدْ جِىءَ بِالنَّارِ
وَذَلِكُمْ حِيْنَ رَأَيْتُمُونِىْ تَأَخَّرْتُ مَخَافَةَ أَنْ يُصِيْبَنِىْ مِنْ
لَفْحِهَا...
‘(সূর্য গ্রহণের ছালাতের সময়) আমার
নিকট জাহান্নাম উপস্থিত করা হ’ল, যখন
তোমরা আমাকে পিছনে সরে আসতে দেখেছিলে। এভয়ে যাতে আমার শরীরে আগুনের উষ্ণতা না লাগে...’।[2]
গ্রীষ্মকালে গরমের তীব্রতা জাহান্নামের
আগুনের উষ্ণ বাষ্পের কারণেই হয়ে থাকে এবং জ্বরও জাহান্নামের আগুনের একটি অংশ। যেমন
হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ t عَنِ النَّبِىِّ r قَالَ إِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوْا بِالصَّلاَةِ فَإِنَّ شِدَّةَ
الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ وَاشْتَكَتِ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا فَقَالَتْ
يَا رَبِّ أَكَلَ بَعْضِىْ بَعْضًا فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ نَفَسٍ فِى
الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِى الصَّيْفِ فَهُوَ أَشَدُّ مَا تَجِدُوْنَ مِنَ الْحَرِّ
وَأَشَدُّ مَا تَجِدُوْنَ مِنَ الزَّمْهَرِيْرِ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন গরম বৃদ্ধি পায় তখন ছালাত (বিলম্বে আদায়ের)
মাধ্যমে তা ঠান্ডা কর। কারণ গরমের তীব্রতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের কারণে হয়। আর জাহান্নাম
আল্লাহর কাছে অভিযোগ করল যে, হে আমার প্রতিপালক! আমার এক অংশ
অপর অংশকে খেয়ে ফেলছে (অতএব আমাকে নিঃশ্বাস ত্যাগের অনুমতি দিন)। অতঃপর আল্লাহ তাকে বছরে দু’বার
নিঃশ্বাস ত্যাগের অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে আর অপরটি গ্রীষ্মকালে। তোমরা গ্রীষ্মকালে
যে কঠিন গরম অনুভব কর, তা এ নিঃশ্বাস ত্যাগের কারণে আর শীতকালে যে কঠিন
শীত অনুভব কর, তাও ঐ নিঃশ্বাস ত্যাগের কারণে হয়ে থাকে’।[3]
(গ). জাহান্নামের
পানীয় :
জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুনের তীব্রতায়
তার অধিবাসীদের পিপাসায় বুক ফেটে যাবার উপক্রম হবে। তৃষ্ণার্ত পাপীরা পানির জন্য হাহাকার
করবে। বুকফাটা আর্তনাদ করবে একফোঁটা পানির জন্য। সেদিন তাদের গগণবিদারী চিৎকার শুনার
কেউ থাকবে না। এমন কঠিন মুহূর্তে তাদেরকে দেওয়া হবে রক্ত, পূঁজ
মিশ্রিত, দুর্গন্ধযুক্ত উত্তপ্ত পানি। প্রচন্ড পিপাসায় তারা
উউক্ত পানীয় পান করবে। কিন্তু তা তাদের তৃষ্ণা মেটাবে না। বরং আযাবের আরেক অধ্যায়ের
সূচনা হবে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে জাহান্নামীদের প্রদত্ত পাঁচ প্রকার পানীয়ের
বিবরণ পাওয়া যায়।[4] পানীয়গুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হ’ল।
১. حَمِيْمٌ مَاءٌ (উত্তপ্ত পানি)
:
কাফেরদেরকে জাহান্নামে ফুটন্ত
পানীয় পান করতে দেওয়া হবে। এতে তার নাড়ি-ভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে। তাদেরকে যখন খাদ্য
হিসাবে যাক্কূম গাছের তিক্ত কাঁটাযুক্ত ফল দেওয়া হবে, তখন
তা গলায় বিঁধে গেলে তারা পানি চাইবে। তখন তাদেরকে গরম পানি দেয়া হবে এবং তারা তা তৃষ্ণার্ত
উটের ন্যায় পান করতে থাকবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার
বাণী,ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا الضَّالُّوْنَ
الْمُكَذِّبُوْنَ، لَآكِلُوْنَ مِنْ شَجَرٍ مِّنْ زَقُّوْمٍ، فَمَالِئُوْنَ
مِنْهَا الْبُطُوْنَ، فَشَارِبُوْنَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيْمِ، فَشَارِبُوْنَ
شُرْبَ الْهِيْمِ، هَذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّيْنِ. ‘অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যাবাদীরা! তোমরা অবশ্যই
যাক্কূম বৃক্ষ হ’তে আহার করবে এবং তা দিয়ে তোমাদের পেট পূর্ণ করবে।
তারপর তোমরা পান করবে টগবগে ফুটন্ত পানি। তা পান করবে তৃষ্ণার্ত উষ্ট্রের ন্যায়। ক্বিয়ামতের
দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৫১-৫৬)। এ মর্মে
তিনি আরো বলেন, فَإِنَّهُمْ لَآكِلُوْنَ مِنْهَا
فَمَالِئُوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ، ثُمَّ إِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْبًا مِّنْ
حَمِيْمٍ. ‘তা থেকে তারা অবশ্যই আহার করবে এবং তাদের পেট পূর্ণ করবে। অতঃপর
তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ’ (ছাফফাত ৩৭/৬৬-৬৭)। জাহান্নাম অস্বীকারকারীদের শাস্তির বিবরণ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, هَذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِيْ
يُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُوْنَ، يَطُوْفُوْنَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيْمٍ آنٍ. ‘এটা
সেই জাহান্নাম, যাকে অপরাধীরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করত। তারা জাহান্নামের
অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে’ (আর-রহমান ৫৫/৪৩-৪৪)। পৃথিবীর মানুষদের নিকটে আল্লাহ তা‘আলা
চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন,كَمَنْ هُوَ خَالِدٌ فِي
النَّارِ وَسُقُوْا مَاءً حَمِيْمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءَهُمْ ‘(মুত্তাক্বীরা
কি তাদের মত) যারা জাহান্নামের স্থায়ী বাসিন্দা হবে এবং যাদের পান করতে দেওয়া হবে উত্তপ্ত
পানি, যা তাদের নাড়ি-ভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলবে?’ (মুহাম্মাদ
৪৭/১৫)।
২. غَسَّاقٌ مَاءٌ (দুর্গন্ধযুক্ত
পানি) :
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এটি
জাহান্নামীদের গলিত রস বিশেষ।[5] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সুতরাং তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ’
(ছোয়াদ
৩৮/৫৫-৫৮)।
৩. وَغِسْلِيْنٌ مَاءٌ صَدِيْدٌ (ক্ষতস্থান হ’তে নির্গত পুঁজ ও রক্ত):
জাহান্নামীদের শরীরের পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত
মাংসকে বা ফোঁড়া থেকে নির্গত পুঁজ ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিকে غِسْلِيْن বলা হয়।[6]
আর صَدِيد বলা হয় ফোঁড়া বা ক্ষতস্থান থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত
দূষিত রস বা পুঁজকে।[7] উপরোক্ত দুর্গন্ধযুক্ত অপবিত্র পানি, পুঁজ
হবে জাহান্নামীদের পানীয়। যা তারা অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে। মহান আল্লাহ বলেন, مِنْ وَّرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَى مِنْ مَاءٍ صَدِيْدٍ،
يَتَجَرَّعُهُ وَلاَ يَكَادُ يُسِيْغُهُ وَيَأْتِيْهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ
مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ وَمِنْ وَّرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيْظٌ. ‘তাদের
প্রত্যেকের পরিণাম জাহান্নাম এবং সকলকে পান করানো হবে অপবিত্র দুর্গন্ধযুক্ত গলিত পুঁজ।
যা সে অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে, আর তা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে।
তার নিকটে মৃত্যুযন্ত্রণা আসবে চতুর্দিক থেকে। কিন্তু তার মৃত্যু হবে না এবং এরপর সে
কঠোর শাস্তি ভোগ করতে থাকবে’ (ইবরাহীম
১৪/১৬-১৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيْمٌ، وَلاَ طَعَامٌ إِلاَّ
مِنْ غِسْلِيْنٍ، لاَ يَأْكُلُهُ إِلاَّ الْخَاطِئُوْنَ. ‘অতএব সেখানে সেদিন তার কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে
না এবং কোন খাদ্য থাকবে না রক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ ব্যতীত। যা শুধুমাত্র অপরাধীরাই
ভক্ষণ করবে’ (হা-ক্কাহ
৬৯/৩৫-৩৭)।
৪. الْمُهْلِ مَاءُ(তৈলাক্ত গরম পানি)
:
উত্তপ্ত তৈলাক্ত পানীয়কে الْمُهْلِ مَاءُ বলে। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, الْمُهْلُ হ’ল উত্তপ্ত তেলের সর্বশেষ অংশ।[8] ইবনু
আববাস (রাঃ) বলেন, কদর্যপূর্ণ গরম তৈলাক্ত পানীয়কে الْمُهْلُ বলা হয়।[9]
যাহহাক
(রহঃ) বলেন, অতি গাঢ় কৃষ্ণ পানীয়কে الْمُهْلُ বলে।[10]
এটা
জাহান্নামীদের পানীয় হিসাবে প্রদান করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِنْ يَسْتَغِيْثُوْا يُغَاثُوْا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي
الْوُجُوْهَ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا. ‘তারা পানি চাইলে তাদেরকে বিগলিত গরম তৈলাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত
পানীয় প্রদান করা হবে। যা তাদের মুখমন্ডল বিদগ্ধ করবে। এটা নিকৃষ্ট পানীয় আর জাহান্নাম
কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল’! (কাহাফ
১৮/২৯)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, إنَّ شَجَرَتَ الزَّقُّوْمِ، طَعَامُ الْأَثِيْمِ، كَالْمُهْلِ
يَغْلِيْ فِي الْبُطُوْنِ، كَغَلْيِ الْحَمِيْمِ. ‘নিশ্চয়ই যাক্কূম বৃক্ষ হবে পাপীদের খাদ্য, যা গলিত
তাম্রের মত, তা তার পেটে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত পানির মত’
(দুখান
৪৪/৪৩-৪৬)।
৫. طِيْنَةُ الْخَبَالِ (শরীর থেকে নির্গত
ঘাম) :
জাহান্নামীদের শরীর থেকে নির্গত
ঘাম অথবা শরীরের ফোঁড়া থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজকে طِيْنَةُ الْخَبَالِ বলা হয়।[11] পৃথিবীতে
যারা মদ কিংবা নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করত এবং যারা অহংকারে স্ফীত হয়ে দুনিয়ায় চলাচল
করত, তাদেরকে জাহান্নামে শরীর থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম বা বিষাক্ত
পুঁজ পান করতে পুঁজ পান করতে দেওয়া হবে। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ إِنَّ
عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَهْدًا لِمَنْ يَشْرَبُ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ
مِنْ طِيْنَةِ الْخَبَالِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا طِيْنَةُ الْخَبَالِ
قَالَ عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ أَوْ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ.
‘প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্ত্তই হারাম। আর আল্লাহ তা‘আলা অঙ্গীকার করেছেন,
যে ব্যক্তি
নেশাযুক্ত পানীয় পান করবে জাহান্নামে তাকে ‘ত্বীনাতুল
খাবাল’ পান
করানো হবে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন,
হে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ)! ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ কি?
তিনি
বললেন, তা হ’ল জাহান্নামীদের ঘাম বা পুঁজ’।[12] অন্য হাদীছে এসেছে আমর ইবনু শু‘আয়ব তাঁর পিতা থেকে তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী
করীম (ছাঃ) বলেছেন,
يُحْشَرُ الْمُتَكَبِّرُوْنَ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَمْثَالَ الذَّرِّ فِىْ صُوَرِ الرِّجَالِ يَغْشَاهُمُ
الذُّلُّ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَيُسَاقُوْنَ إِلَى سِجْنٍ فِىْ جَهَنَّمَ يُسَمَّى
بُوْلَسَ تَعْلُوْهُمْ نَارُ الأَنْيَارِ يُسْقَوْنَ مِنْ عُصَارَةِ أَهْلِ النَّارِ
طِيْنَةِ الْخَبَالِ.
‘ক্বিয়ামতের দিন অহংকারীরা মানুষরূপী ছোট্ট পিপীলিকা সদৃশ হবে।
লাঞ্ছনা ও অপমান তাদেরকে চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করে রাখবে। জাহান্নামের ‘বুলস’ নামক
কারাগারে তাদেরকে তাড়া করে নিয়ে যাওয়া হবে। জাহান্নামে তাদের জন্য লেলিহান অগ্নি প্রজ্বলিত
করা হবে এবং সেখানে তাদের ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ অর্থাৎ শরীর থেকে নির্গত বিষাক্ত ঘাম বা দুর্গন্ধযুক্ত
পুঁজ জাতীয় পানীয় পান করতে দেওয়া হবে’।[13]
উল্লেখ্য যে, পৃথিবীতে
যারা তথাকথিত অভিজাত ছিল, যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করত
এবং যারা তাদের প্রতিপালক আল্লাহ সম্পর্কে বিভিন্ন কূট-কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করত ও অযথা
তর্ক-বিতর্ক করত, ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে জাহান্নামের মাঝখানে নিয়ে
মাথার উপর ফুটন্ত উত্তপ্ত পানি বর্ষণ করা হবে। এতে তাদের চর্বি, চামড়া, নাড়ি-ভুঁড়ি, কলিজা
সহ সব কিছুই জ্বলে যাবে। অতঃপর তা পশ্চাৎদেশ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়বে। তারপর পুনরায়
পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। এভাবেই চলতে থাকবে শাস্তি। আল্লাহ বলেন, خُذُوْهُ فَاعْتِلُوْهُ إِلَى سَوَاءِ الْجَحِيْمِ، ثُمَّ صُبُّوْا
فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيْمِ، ذُقْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ
الْكَرِيْمُ، إِنَّ هَذَا مَا كُنْتُمْ بِهِ تَمْتَرُوْنَ. ‘তাকে ধর এবং টেনে-হেচড়ে জাহান্নামের মাঝখানে নিয়ে
যাও। অতঃপর তার মাথার উপর ফুটন্ত উত্তপ্ত পানি ঢেলে শাস্তি দাও এবং (বলা হবে) স্বাদ
গ্রহণ কর, তুমিতো ছিলে মর্যাদাবান অভিজাত। এটা তো সেটাই যে
বিষয়ে তোমরা সন্দেহ পোষণ করতে’ (দুখান
৪৪/৪৭-৫০)। অন্য আয়াতে তিনি বলেন, هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوْا فِيْ رَبِّهِمْ فَالَّذِيْنَ
كَفَرُوْا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِنْ نَارٍ يُصَبُّ مِنْ فَوْقِ رُءُوْسِهِمُ
الْحَمِيْمُ، يُصْهَرُ بِهِ مَا فِيْ بُطُوْنِهِمْ وَالْجُلُوْدُ، وَلَهُمْ
مَقَامِعُ مِنْ حَدِيْدٍ، كُلَّمَا أَرَادُوْا أَنْ يَخْرُجُوْا مِنْهَا مِنْ
غَمٍّ أُعِيْدُوْا فِيْهَا وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ. ‘এরা দু’টি বিবদমান
পক্ষ। তারা তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে। আর যারা কুফরী করে তাদের জন্য
প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে আগুনের পোশাক;
তাদের
মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি। যা দ্বারা তাদের পেটে যা আছে তা এবং তাদের চামড়া
বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্য লৌহ নির্মিত হাতুড়ী সমূহ থাকবে। যখনই তারা তাতে যন্ত্রণায়
কাতর হয়ে সেখান থেকে বের হ’তে চাইবে,
তখনই
আবার ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং (বলা হবে) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন কর’
(হজ্জ
২২/১৯-২২)। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ الْحَمِيْمَ لَيُصَبُّ
عَلَى رُءُوْسِهِمْ فَيَنْفُذُ الْجُمْجُمَةَ حَتَّى يَخْلُصَ إِلَى جَوْفِهِ
فَيَسْلُتَ مَا فِىْ جَوْفِهِ حَتَّى يَمْرُقَ مِنْ قَدَمَيْهِ وَهُوَ الصَّهْرُ
ثُمَّ يُعَادُ كَمَا كَانَ. ‘ফুটন্ত উত্তপ্ত পানি কাফেরদের মাথায় ঢালা হবে, যা তাদের
মাথা ছিদ্র করে পেটে গিয়ে পৌঁছবে এবং পেটে যা কিছু আছে তা বের করে ফেলবে এবং তার পেট
থেকে বের হয়ে পায়ে এসে পড়বে। আর এটাই الصَّهْرُ শব্দের
ব্যাখ্যা। অতঃপর পুনরায় সে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে’
(এভাবেই
চলতে থাকবে শাস্তি)।[14]
(ঘ) জাহান্নামীদের
খাদ্য :
জাহান্নাম গহবরে আগুনের লেলিহান
শিখা পাপী মানুষকে উপর-নীচ, ডান-বাম সকল দিক থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে। সেখানে
পার্থিব আগুনের ৭০ গুণ উত্তাপ সম্পন্ন এই মহা হুতাশনে জাহান্নামের অধিবাসীরা দাউ দাউ
করে জ্বলতে থাকবে। সেখানে তাদের কোন সাহায্যকারী বন্ধু থাকবে না। থাকবে না শান্তিদায়ক
কোন উপাদান। সেখানে শুধু থাকবে চূড়ান্ত দুঃখ,
ধিক্কার, অপমান, অনুতাপ
আর লজ্জা। এ রকম জটিল ও কঠিন মুহূর্তে তারা চরম তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে হাহাকার
করবে। কিন্তু কোথাও কোন ঠান্ডা পানীয় ও উত্তম আহারের ব্যবস্থা থাকবে না। থাকবে না পরিতৃপ্ত
হওয়ার মত কোন খাদ্য। থাকবে শুধু রক্ত,
দুর্গন্ধযুক্ত
পুঁজ, কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের ফল,
সর্বাধিক
কদর্যপূর্ণ নোংরা এবং গলায় আটকে যাওয়া খাবার প্রভৃতি। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে জাহান্নামীদের
মোট চার ধরনের খাবারের কথা বর্ণিত হয়েছে। যা নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হ’ল-
১. زَقُّوم (তেতো ফলবিশিষ্ট এক প্রকারের কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ)
: দুর্গন্ধযুক্ত তেতো কাঁটাযুক্ত এক প্রকার ভারী খাবারকে زَقُّوم বলে। যা খাদ্য হিসাবে জাহান্নামীদের দেওয়া হবে।
তা জাহান্নামের নিম্নদেশ থেকে উদ্গত হবে। এর গুচ্ছ হবে শয়তানের মস্তকের ন্যায়। কাফেররা
সেখানে এটা ভক্ষণ করবে এবং তাদের উদর পূর্ণ করবে। এটি এমন একটি বৃক্ষ যা দুনিয়ায় পাওয়া
যায় না। মহান আল্লাহ জাহান্নামের বিভিন্ন শাস্তির মত এটাকেও সৃষ্টি করবেন।[15] এ মর্মে
মহান আল্লাহ বলেন, أَذَلِكَ خَيْرٌ نُزُلًا أَمْ
شَجَرَةُ الزَّقُّوْمِ، إِنَّا جَعَلْنَاهَا فِتْنَةً لِلظَّالِمِيْنَ، إِنَّهَا
شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِيْ أَصْلِ الْجَحِيْمِ، طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوْسُ
الشَّيَاطِيْنِ، فَإِنَّهُمْ لَآكِلُوْنَ مِنْهَا فَمَالِئُوْنَ مِنْهَا
الْبُطُوْنَ. ‘আপ্যায়নের জন্য কি এটাই শ্রেষ্ঠ, নাকি
যাক্কূম বৃক্ষ? এটাকে আমরা অত্যাচারীদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ তৈরী
করেছি। এ বৃক্ষ উদ্গত হয় জাহান্নামের তলদেশ থেকে। তার গুচ্ছ যেন শয়তানের মস্তকের ন্যায়।
অবশ্যই তারা এটা হ’তে ভক্ষণ করবে এবং তাদের পেট পূর্ণ করবে’
(ছাফফাত
৩৭/৬২-৬৬)।
উল্লেখ্য যে, যখন
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাক্কূম গাছের কথা বলে মানুষদের জাহান্নাম সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন
করতেন, তখন আবূ জাহল তার সাথীদের উদ্দেশ্য করে বলত যে, তোমরা
শুন! আগুনে নাকি গাছ হবে? অথচ আগুন গাছকে খেয়ে ফেলে। এটা কোন ধরনের কথা? তখন
আল্লাহ إِنَّهَا
شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِيْ أَصْلِ الْجَحِيْمِ আয়াতটি নাযিল করে তাদেরকে কঠোরভাবে জওয়াব দেন। মূলতঃ
যাক্কূম গাছ আগুন থেকেই তৈরী এবং আগুনই তার খাদ্য’।[16]
২. ضَرِيعٌ(সর্বাধিক কদর্যপূর্ণ কাঁটাযুক্ত শুষ্ক নোংরা খাবার) : মূলত ضَرِيع আগুনের একটি বৃক্ষের নাম এবং জাহান্নামের পাথর।
এতে বিষাক্ত কণ্টক বিশিষ্ট ফল ধরে থাকবে। এটা হবে দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য ও অত্যন্ত নিকৃষ্ট
আহার্য। এটা ভক্ষণে দেহ পরিপুষ্টও হবে না,
ক্ষুধাও
নিবৃত হবে না এবং অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না।[17] আল্লামা
ত্বানতাবী (রহঃ) বলেন, এটি জাহান্নামীদেরর প্রদত্ত আযাবের বিভিন্ন স্তরের
মধ্যে একটি স্তরের আযাব। তাদের মধ্যে কেউ যাক্কূম, কেউ
গিসলীন আবার কেউ যরী‘ ভোগ
করবে।[18] ইমাম বুখারী (রহঃ) মুজাহিদের সূত্রে বলেন, এটি
একপ্রকার কাঁটাযুক্ত গুল্ম। তা যখন সবুজ থাকে তখন তাকে ضَرِيع বলা হয়,
আর যখন
শুকিয়ে যায় তখন হিজাযবাসীরা একেই ضَرِيع বলে।
এটা এক প্রকার বিষাক্ত আগাছা।[19] এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,لَيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلاَّ مِنْ ضَرِيْعٍ، لاَ يُسْمِنُ وَلاَ
يُغْنِيْ مِنْ جُوْعٍ. ‘তাদের জন্য বিষাক্ত কাঁটাযুক্ত গুল্ম ছাড়া কোন খাবার থাকবে না।
যা তাদের পরিপুষ্টও করবে না এবং ক্ষুধাও নিবৃত করবে না’
(গা-শিয়াহ
৮৮/৫-৭)।
৩. ذَا غُصَّةٍ (গলায় আটকে যাওয়া
খাবার) : এটি এমন খাবার যা কণ্ঠনালীতে আটকে থাকে এবং যেখান থেকে কোন কিছু বের হ’তে পারে না ও কোন কিছু ঢুকতেও পারে না। বরং কদর্যতা, দুর্গন্ধ
ও তিক্ততার কারণে সেখানে তা আটকে থাকে।[20]
অন্যত্র
কাঁটাযুক্ত খাবার গলায় আটকে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এমনভাবে তাদের প্রতি শাস্তি অব্যাহত
থাকবে।[21] এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ لَدَيْنَا أَنْكَالاً وَجَحِيْمًا، وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ
وَعَذَابًا أَلِيْمًا. ‘আমাদের নিকটে রয়েছে শৃঙ্খল ও প্রজ্বলিত বহ্নিশিখা। আর আছে এমন
খাদ্য যা গলায় আটকে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তি’
(মুযযাম্মিল
৭৩/১২-১৩)।
৪. غِسْلِيْنٍ (রক্ত ও পুঁজ) : এ বিষয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
(ঙ) জাহান্নামের
আগুন :
জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা বর্ণনায়
মহান আল্লাহ বলেন, كَلَّا إِنَّهَا لَظَى،
نَزَّاعَةً لِلشَّوَى، تَدْعُو مَنْ أَدْبَرَ وَتَوَلَّى، وَجَمَعَ فَأَوْعَى. ‘না, কখনো
নয়, এটাতো (লাযা) লেলিহান অগ্নিশিখা। যা চামড়া তুলে দিবে। সে ঐ ব্যক্তিকে
আহবান করবে যে, (সত্যের প্রতি) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল এবং বিমুখ
হয়েছিল, সম্পদ পুঞ্জীভূত করেছিল এবং তা আগলে রেখেছিল’
(মা‘আরিজ ৭০/১৫-১৮)।
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করার জন্য অত্যন্ত রুক্ষ্ম, নির্দয়
এবং কঠোর স্বভাব সম্পন্ন ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। যাদের সংখ্যা হবে ১৯ জন। এ মর্মে
তিনি বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ
آمَنُوْا قُوْا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَارًا وَقُوْدُهَا النَّاسُ
وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلاَئِكَةٌ غِلاَظٌ شِدَادٌ لاَ يَعْصُوْنَ اللهَ مَا
أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ. ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে
রক্ষা কর ঐ আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ
হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ, যারা
অমান্য করেন না আল্লাহর কোন নির্দেশ। যা করতে আদিষ্ট হন তারা কেবলমাত্র তাই করেন’
(তাহরীম
৬৬/৬)। আর জাহান্নামের ওপর প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত রয়েছে
১৯ ফেরেশতা (মুদ্দাচ্ছির ৭৪/৩০)।
জাহান্নামের প্রহরীরা জাহান্নামের
আগুন অনবরত প্রজ্বলিত করছে এবং সর্বদা করবে। যা কখনো শীতল হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ
سَعِيْرًا ‘যখনই (আগুন) স্তিমিত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে, তখনই
আমরা তাদের জন্য আগুন আরো বৃদ্ধি করে দেব’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৯৭)।
পৃথিবীতে প্রজ্বলিত আগুনের তুলনায়
জাহান্নামে আগুন ৬৯ গুণ অধিক উত্তাপ সম্পন্ন। আর তার প্রতিটি অংশের উত্তাপের তীব্রতা
দুনিয়ার আগুনের তীব্রতার ন্যায়। মূলতঃ তার তীব্রতা ও প্রচন্ডতা এত শক্তিশালী যে তা
ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
نَارُكُمْ هَذِهِ الَّتِىْ
يُوْقِدُ ابْنُ آدَمَ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِيْنَ جُزْءًا مِنْ حَرِّ جَهَنَّمَ
قَالُوْا وَاللهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً يَا رَسُوْلَ اللهِ r قَالَ فَإِنَّهَا فُضِّلَتْ عَلَيْهَا بِتِسْعَةٍ
وَسِتِّيْنَ جُزْءًا كُلُّهَا مِثْلُ حَرِّهَا.
‘তোমাদের এই আগুন যা বনী আদম প্রজবলিত করে তা জাহান্নামের আগুনের
তীব্রতার সত্তর ভাগের এক ভাগ। ছাহাবীগণ বলল,
হে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ)! আল্লাহর কসম! সে আগুন পৃথিবীর ন্যায় হওয়াই তো যথেষ্ট ছিল। তখন তিনি বললেন, তাকে
দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ৬৯ গুণ অধিক উত্তাপ সম্পন্ন করা হয়েছে। আর তার প্রত্যেকটি ভাগ
দুনিয়ার আগুনের মত উত্তাপ সম্পন্ন হবে’।[22]
জাহান্নামের আগুন এত দাহ্যশক্তি
সম্পন্ন হবে যে, সেখানে জাহান্নামীরা জ্বলতে জ্বলতে কয়লায় পরিণত
হবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী
করীম (ছাঃ) বলেছেন,
يَدْخُلُ أَهْلُ الْجَنَّةِ
الْجَنَّةَ وَأَهْلُ النَّارِ النَّارَ ثُمَّ يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى أَخْرِجُوْا
مَنْ كَانَ فِىْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيْمَانٍ
فَيُخْرَجُوْنَ مِنْهَا قَدِ اسْوَدُّوْا فَيُلْقَوْنَ فِىْ نَهَرِ الْحَيَا أَوِ
الْحَيَاةِ شَكَّ مَالِكٌ فَيَنْبُتُوْنَ كَمَا تَنْبُتُ الْحَبَّةُ فِىْ جَانِبِ
السَّيْلِ أَلَمْ تَرَ أَنَّهَا تَخْرُجُ صَفْرَاءَ مُلْتَوِيَةً.
‘জান্নাতীরা জান্নাতে ও জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করার
পর আল্লাহ বলবেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান আছে তাকে জাহান্নাম
থেকে বের কর। তখন জাহান্নাম থেকে তাদের বের করে আনা হবে। সে সময় তারা প্রজ্বলিত কয়লার
ন্যায় হবে। তখন তাদের আবার হায়া বা হায়াত (বর্ণনাকারী মালেক-এর সন্দেহ) নামক নদীতে
নিক্ষেপ করা হবে। এতে তারা সেখানে নতুন জীবন লাভ করবে। যেমনভাবে নদীর তীরে চারা গজায়।
নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমরা কি দেখনি যে, নদীর
তীরে চারা গাছ যেমন হলুদ বর্ণের পেচানো অবস্থায় জন্ম নেয়’।[23] এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত হয়েছে, عَنْ جَابِرٍ t قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ r يُعَذَّبُ نَاسٌ مِنْ أَهْل
التَّوْحِيْدِ فِى النَّارِ
حَتَّى يَكُوْنُوْا فِيْهَا حُمَمًا ثُمَّ تُدْرِكُهُمُ الرَّحْمَةُ
فَيُخْرَجُوْنَ وَيُطْرَحُوْنَ عَلَى أَبْوَابِ الْجَنَّةِ قَالَ فَيَرُشُّ
عَلَيْهِمْ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْمَاءَ فَيَنْبُتُوْنَ كَمَا يَنْبُتُ الْغُثَاءُ
فِىْ حِمَالَةِ السَّيْلِ ثُمَّ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ.
জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, ‘তাওহীদপন্থীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তিদের জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া
হবে। এমনকি তারা জ্বলতে জ্বলতে কয়লায় পরিণত হবে। অতঃপর তারা আল্লাহর রহমত লাভ করবে, তখন
তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তারপর জান্নাতের দরজায় তাদেরকে বসিয়ে দেওয়া হবে।
তারপর তিনি বলেন, জান্নাতবাসীগণ তাদের উপর পানি প্রবাহিত করে দিবে।
তখন তারা এমনভাবে উঠে দাঁড়াবে, যেমন কোন বীজ বন্যার পানিতে ভেসে
এসে নতুন চারা জন্মায়। অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[24]
তাছাড়া সেখানে সঊদ নামক একটি
আগুনের পাহাড় রয়েছে এবং জাহান্নামীদের পরিধেয় বস্ত্র, বিছানাপত্র, ছাতা-বেষ্টনীসহ
সবকিছু হবে অগ্নি নির্মিত। যা ব্যবহারের মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তির চরম সীমায় পৌঁছানো
হবে।
তথ্যসূত্র:
[1]. বুখারী হা/৩২৩৬ ‘সৃষ্টি সূচনা’ অধ্যায়।
[2]. মুসলিম হা/২১৪০; মিশকাত হা/২৯৪২; মুসনাদে
আহমাদ হা/১৪৪৫৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৬৬।
[3]. বুখারী হা/৫৩৬-৫৩৭; মুসলিম হা/১৪৩২; মিশকাত
হা/৫৯১; দারেমী হা/২৮৪৫।
[4]. ড.ওমর ইবনু সুলায়মান আল-আশকার,
আল-জান্নাতু
ওয়ান্নার, ১৬৯ পৃঃ।
[5]. আল-জান্নাতু ওয়ান্নার, পৃঃ ১৬৮।
[6]. ঐ।
[7]. ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, আল-মু‘জামুল ওয়াফী,
(ঢাকা
: রিয়াদ প্রকাশনী, ১১শ সংস্করণ, জানুয়ারী
২০০৫), পৃঃ ৬২৫।
[8]. তাফসীরে ত্বাবারী ২২/৪৬ পৃঃ।
[9]. তাফসীরে কুরতুবী ১০/৩৯৪ পৃঃ; আদ-দুররুল মানছূর ৫/৩৮৫ পৃঃ, তাফসীরে
ইবনু কাছীর ৫/১৫৪ পৃঃ।
[10]. বাহরুল ঊলূম ২/৩৪৫ পৃঃ।
[11]. আদ-দুররুল মানছুর ৩/১৭৫ ও ৭/২৪২ পৃঃ;
তাফসীর
ইবনু কাছীর ৩/১৮৭ পৃঃ; তাফসীরে খাযেন ১/২০৯ পৃঃ।
[12]. মুসলিম হা/৫৩৩৫; মিশকাত হা/৩৬৩৯।
[13].আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৫৭;
তিরমিযী
হা/২৪৯২; মিশকাত হা/৫১১২; ছহীহুল
জামে‘ হা/৮০৪০।
[14]. মুসনাদে আহমাদ হা/৮৮৫১; শারহুস সুন্নাহ হা/৪৪০৬ ‘জাহান্নামের বৈশিষ্ট্য ও তার অধিবাসী’
অনুচ্ছেদ; মুসনাদে
ইবনু মুবারক হা/১২৮; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব হা/৩৬৭৯, হাদীছ
হাসান।
[15]. তাফসীরে ত্বানত্বাবী, পৃঃ ৪০৬৬।
[16]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৭/২০ পৃঃ ‘উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য’।
[17]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৮/৩৮৫ পৃঃ; আদ-দুররুল মানছুর ৮/৪৯১ পৃঃ।
[18]. তাফসীরে ত্বানত্বাবী পৃঃ ৪৪৯৩।
[19]. তাফসীরে ইবনু কাছীর ৮/৩৮৫ পৃঃ;
বুখারী
২/৭৩৬ পৃঃ, অনুচ্ছেদ-৮৮।
[20]. তাফসীরে ত্বানত্বাবী ৪৩৬১ পৃঃ;
তাফসীর
ইবনু কাছীর ৮/২৫৬ পৃঃ; তাফসীরে ত্বাবারী ২৩/৬৯১ পৃঃ।
[21]. তাফসীরে বাহরুল ঊলূম ৩/৪৮৮ পৃঃ;
তাফসীরে
জালালাইন পৃঃ ৭৭৪; তাফসীরে খাযেন ৭/১৬৯ পৃঃ; তাফসীরে
ত্বাবারী ২৩/৬৯১ পৃঃ; তাফসীরে কুরতুবী ১৯/৪৬ পৃঃ।
[22]. মুসলিম হা/৭৩৪৪; তিরমিযী হা/২৫৮৯।
[23]. বুখারী হা/২২; মুসলিম হা/৪৭৫; মিশকাত
হা/৫৫৮০।
[24]. তিরমিযী হা/২৫৯৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৪৫১; ছহীহুল
জামে‘ হা/৮১০৩।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৬২:
মুহতারাম, আসসালামু আলাইকুম। নখ কাটা,
চুল কাটা সম্পর্কে রেফারেন্স সহ কিছু হাদীস প্রয়োজন। জাঝাকাল্লাহ
তারিখ: ০৭/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিম রাজশাহী থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে
বোধগম্যের জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করছি।
ক।
চুলের বিধান:
চুল
বলতে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন, মাথার চুল, গোঁফ,
দাড়ি, বগলের চুল নাভির নিচে চুল ইত্যাদি।
প্রশ্ন:
ক। মাথার চুলের বিধান?
উত্তর:
ক। চুল
রাখার পদ্ধতি হলো তিনটি বাবরী রাখা, ছোট করে রাখা এবং হলক বা
ন্যাড়া করা।
০১.
বাবরী রাখা: পুরুষের জন্য এভাবে রাখা সুন্নত। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সর্বদাই বাবরী রেখেছেন।
বাবরী
তিনি কিভাবে রাখতেন?
এ
বিষয়ে তিন ধরণের বর্ণনা এসেছে। যথা-
১.
ওয়াফরা তথা কানের লতি পর্যন্ত চুল। দলিল:
عَنْ أَنَسٍ،
قَالَ: «كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى شَحْمَةِ أُذُنَيْهِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث-4185)
হযরত
আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল তাঁর দুই কানের
লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৫}
২.
লিম্মা তথা গর্দান ও কানের লতির মাঝামাঝি বরাবর বড় রাখা। দলিল:
عَنْ
عَائِشَةَ، قَالَتْ:
«كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوْقَ الْوَفْرَةِ، وَدُونَالْجُمَّةِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث–4187
হযরত
আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল ঘাড়ের উপর এবং
কানের নীচ পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৭}
৩.জুম্মা
তথা ঘাড় পর্যন্ত আলম্বিত চুল। দলিল:
عَنِ
الْبَرَاءِ، قَالَ:
«مَا رَأَيْتُ مِنْ ذِي لِمَّةٍ
أَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ» زَادَ مُحَمَّدُ بْنُ
سُلَيْمَانَ: «لَهُ شَعْرٌ يَضْرِبُ
مَنْكِبَيْهِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث-4183)
হযরত
বারা বিন আজেব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কোন ব্যক্তিকে কান পর্যন্ত বাবরীধারী,
লাল ইয়ামেনী চাদরের আবরণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে অধিক সুন্দর দেখিনি। রাবী মুহাম্মদ রহঃ অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেন যে, তাঁর চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস নং-৪১৮৩}
০২.
চুল ছোট
চারদিকে সমান করে রাখা: সাহাবায়ে কেরাম চুল ছোট করে রেখেছেন। দলিল:
حَدَّثَنَا
مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هِشَامٍ، وَسُفْيَانُ
بْنُ عُقْبَةَ السُّوَائِيُّ، - هُوَ أَخُو قَبِيصَةَ - وَحُمَيْدُ بْنُ خُوَارٍ عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ، عَنْ عَاصِمِ
بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ أَتَيْتُ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَلِي شَعْرٌ طَوِيلٌ فَلَمَّا رَآنِي رَسُولُ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " ذُبَابٌ ذُبَابٌ " . قَالَ فَرَجَعْتُ فَجَزَزْتُهُ ثُمَّ أَتَيْتُهُ مِنَ الْغَدِ
فَقَالَ " إِنِّي لَمْ أَعْنِكَ وَهَذَا
أَحْسَنُ
" .
ওয়ায়েল
ইবনে হুজ্র (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি নবী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত হই, আর এ সময় আমার মাথার চুল খুবই লম্বা ছিল।
তিনি আমাকে দেখে বলেনঃ অশুভ! অমঙ্গলজনক! তিনি বলেনঃ তখন আমি ফিরে আসি এবং চুল কেটে
ফেলি (ছোট করি)। পরদিন আমি যখন তাঁর কাছে আসি, তখন তিনি
বলেনঃ আমি তোমার কোন ক্ষতি করিনি, ইহাই উত্তম। তাখরিজ:
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৪২ (আন্তর্জাতিক নং ৪১৯০)
তাহকীক:
বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
০৩.
হলক বা ন্যাড়া করা: রাসূলুুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এহরাম থেকে
হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুণ্ডাতেন। এছাড়া তিনি কখনো মাথা মুণ্ডাননি। এ সময় তিনি
মাথা মুণ্ডানোকে চুল ছোট করে রাখার উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। এজন্য ইমাম তাহতাবী রহ.
বলেন, মাথা ন্যাড়া
করাও সুন্নাত । আর কিছু অংশ মুণ্ডানো ও কিছু রেখে দেয়া নিষেধ।
কতিপয়
ফকিহদের দৃষ্টিতে মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলাও সুন্নত। সূত্র: ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৫/১৪৯, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত :
১২/৪৩
০২.
দাড়ি রাখার বিধান: এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আলবুরহানে জিজ্ঞাসা -১৩১ শিরোনামে
মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। লিংকটি পুনরায় শেয়ার করা হবে।
০৩.
গোঁফ, বগলের নিচে
চুল ও নাভির নিচের চুল এর বিধান:
حَدَّثَنَا
أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّا
بْنُ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ، عَنْ طَلْقِ بْنِ حَبِيبٍ،
عَنِ ابْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى
الله عليه وسلم ـ
" عَشْرٌ مِنَ
الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ
وَالاِسْتِنْشَاقُ بِالْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ
الإِبِطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ " . يَعْنِي الاِسْتِنْجَاءَ . قَالَ زَكَرِيَّا قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيتُ
الْعَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ .
আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা (র) …… 'আয়েশা (রা) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ দশটি জিনিস
ফিতরাত বা মানবীয় স্বভাবজাত। তা হলোঃ গোঁফ ছোট করে কাটা, দাঁড়ি
লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকের
ছিদ্রপথ পানি দিয়ে পরিষ্কার করা, নখ কাটা, আঙ্গুলের সংযোগস্থলের ময়লা ধৌত করা বগলের পশম উপড়ে ফেলা নাভির নিচের পশম
পারিষ্কার করা ও শৌচ করা অর্থাৎ পেশাব-পায়খানার পর পানি দিয়ে পবিত্রতা হাসিল
করা।
যাকারিয়া
(র) বলেন, মুসআব (রা) বলেছেনঃ আমি দশম জিনিসটির কথা ভুলে গেছি, তবে
সম্ভবত
তা হলো কুলি করা।
—সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ২৯৩ (আন্তর্জাতিক নং
২৯৩)
তাহকীক:
বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)
নোট:
কেননা হাদীছে যে সকল শব্দ (أَحْفُوْا، أَنْهِكُوْا، جُزُّوْا) ব্যবহৃত হয়েছে তা গোঁফ মুন্ডানো নয়, বরং ছাঁটার অর্থ বহন করে (নববী,
আল-মাজমূ‘ ১/২৮৭; আলবানী,
আদাবুয যিফাফ ২০৯; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮৪, ১২৮)।
এমনকি গোঁফ চেঁছে ফেলাকে ইমাম মালেক বিদ‘আত বলেছেন, যেটি লোকদের মধ্যে প্রচলিত হয়ে আছে। এরূপ আমলকারী ব্যক্তিকে প্রহার করা
উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেছেন (বায়হাক্বী ১/১৫১ পৃ., হা/৬৮২
প্রশ্ন:
ক। অবাঞ্ছিত
লোম এবং নখ কাটার বা পরিষ্কার করার কোন সময়সীমা আছে
কি? না করলে কোন গুনাহ হবে কি?
উত্তর:
ক। হ্যা, চল্লিশ দিন। ৪০ দিন অতিক্রান্ত হলে গুনাহ হবে। দলিল:
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ
يَحْيَى، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، كِلاَهُمَا عَنْ جَعْفَرٍ، - قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، - عَنْ أَبِي عِمْرَانَ الْجَوْنِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ
مَالِكٍ، قَالَ قَالَ أَنَسٌ وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ
الأَظْفَارِ وَنَتْفِ الإِبْطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ
مِنْ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً .
অর্থ:
আনাস ইবনে মালিক (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের জন্য গোঁফ ছাটা,
নখ কাটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা এবং নাড়ির নীচের
পশম কাটার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে যে, চল্লিশ দিনের
অধিক যেন না রাখি। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৯২
(আন্তর্জাতিক নং ২৫৮)
খ।
নখ কাটার বিধান:
يُسَنُّ
تقليمُ الأظفارِ، وهذا باتِّفاقِ المَذاهِبِ الفِقهيَّةِ الأربَعةِ: الحنفيَّة، والمالكيَّة، والشَّافعيَّة، والحنابلةِ،
وحُكِيَ الإجماعُ على ذلك
الأدلَّة مِن
السُّنَّةِ:
অর্থাৎ
নখ কাটা সুন্নত এ বিষয়ে ফিকহি চার ইমাম (ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফিয়ি এবং আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.) ঐক্যমত পোষণ করেছেন। সূত্র:
আলইনাইয়াতু শরহুল হিদায়া -১/৫৬
সুন্নাতের
দলিল:
হাদিস
নং -০১
حَدَّثَنَا
أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ
الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " الْفِطْرَةُ خَمْسٌ - أَوْ خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ - الْخِتَانُ وَالاِسْتِحْدَادُ وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ وَنَتْفُ
الإِبِطِ وَقَصُّ الشَّارِبِ " .
অর্থ:
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ ফিতরাত পাঁচটি, অথবা পাঁচটি জিনিস মানবীয় স্বভাবজাত। খতনা করা, নাভীর
নিচের লোম সাফ করা, নখসমূহ কাটা, বগলের
পশম তুলে ফেলা এবং গোঁফ ছোট করে কাটা।
—সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ২৯২ (আন্তর্জাতিক নং ২৯২)
হাদিস
নং -০২
حَدَّثَنَا
أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّا
بْنُ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ، عَنْ طَلْقِ بْنِ حَبِيبٍ،
عَنِ ابْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى
الله عليه وسلم ـ
" عَشْرٌ مِنَ
الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ
وَالاِسْتِنْشَاقُ بِالْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ
الإِبِطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ " . يَعْنِي الاِسْتِنْجَاءَ . قَالَ زَكَرِيَّا قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيتُ
الْعَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ .
আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা (র) …… 'আয়েশা (রা) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ দশটি জিনিস
ফিতরাত বা মানবীয় স্বভাবজাত। তা হলোঃ গোঁফ ছোট করে কাটা, দাঁড়ি
লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকের
ছিদ্রপথ পানি দিয়ে পরিষ্কার করা, নখ কাটা, আঙ্গুলের সংযোগস্থলের ময়লা ধৌত করা বগলের পশম উপড়ে ফেলা নাভির নিচের পশম
পারিষ্কার করা ও শৌচ করা অর্থাৎ পেশাব-পায়খানার পর পানি দিয়ে পবিত্রতা হাসিল
করা।
যাকারিয়া
(র) বলেন, মুসআব (রা) বলেছেনঃ আমি দশম জিনিসটির কথা ভুলে গেছি, তবে
সম্ভবত
তা হলো কুলি করা।
—সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ২৯৩ (আন্তর্জাতিক নং
২৯৩)
তাহকীক:
বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)
প্রশ্ন:
ক। শুক্রবারে নখ -গোফ কাটা কি সুন্নাত বা কোন হাদিস আছে?
উত্তর:
ক। শুক্রবারের
নখ ও গোঁফ কাটার বিষয়ে কোনো হাদিস নেই। তবে সাহাবায়ে কেরাম শুক্রবার নখ-চুল
কেটেছেন বলে প্রমাণিত আছে। দলিল:
وقد ورد أن
ابن عمر أنه كان يفعله، فقد روى البيهقي في السنن الكبرى: عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ، كَانَ
يُقَلِّمُ أَظْفَارَهُ، وَيَقُصُّ شَارِبَهُ فِي كُلِّ جُمُعَةٍ. وهو أثر صحيح ذكره الإمام النووي في خلاصة الأحكام، ثم
قال بعده: رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ
بِإِسْنَاد صَحِيح، وَصَححهُ. انتهى.
لهذا يذكره
الفقهاء في كتبهم مما يستحب فعله يوم الجمعة، قال الإمام النووي في المجموع: وَقَدْ نَصَّ الشَّافِعِيُّ وَالْأَصْحَابُ -رَحِمَهُمْ اللَّهُ- عَلَى أَنَّهُ يُسْتَحَبُّ تَقْلِيمُالْأَظْفَارِ، وَالْأَخْذُ مِنْ
هَذِهِ الشُّعُورِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ. انتهى.
আজাদ
নাফে রহমাতুল্লাহ আলাই বর্ণনা করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. প্রত্যেক শুক্রবারে
নখ-গোফ কাটতেন। সুনানে বাইয়াকি
নোট:
সনদ সহিহ।
আর এ কারণেই ফোকাহায়ে কেরাম শুক্রবারে নখ-গোফ কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন।
সূত্র: তাকলিমুল আযফার সুন্নাতুন, ফতোয়া নং -২০৪৭
প্রশ্ন:
খ। কর্তনকৃত
নখ কি মাটিতে দাফন করা জরুরি?
উত্তর:
খ। يجوز رَمْيُ الظُّفر في أيِّ
مكانٍ، ولا يجِبُ دَفنُه.
سُئل ابن باز: هل يجب دَفنُ الشَّعرِ المتساقِطِ والأظافر المقصوصة في
التُّراب؟ فقال:
(ليس بلازمٍ؛ يُلقيها في القمامة،
والحمدُ لله، ما فيه دليلٌ على دفنها، إذا ألقاها في القمامةِ كفَى، والحمد لله). ((فتاوى نور على الدرب لابن باز بعناية الشويعر)) (5/62
অর্থাৎ
যেকোনো জায়গায় নখ ফেলা জায়েজ আছে এবং দাফন করা ওয়াজিব নয়। এ বিষয়ে শায়েখ
ইবনে বাজ রহ কে জিজ্ঞেস করা হলো, নখ এবং চুল মাটিতে দাফন করা কি ওয়াজিব? তিনি জবাবে বললেন আবশ্যক নয়। সূত্র: ফাতাওয়া নুরি আলাল দারব লিইবনে বাজ-৫/৬২
তবে
অবশ্য না হলেও ওলামায়ে কেরাম পছন্দ করেছে। যেমন,
فقد استحب
العلماء دفن ما انفصل من الأظافر والشعر، وسئل الإمام أحمد عن ذلك فأمر فيه
بالدفن، وراجع فيه الفتوى رقم: 38921.
অর্থাৎ
আলেমগণ নখ ও চুল থেকে যা আলাদা করা হয়েছে তা দাফন করার সুপারিশ করেছেন এবং ইমাম আহমাদকে এ সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তাতে দাফনের নির্দেশ দেন ।
ফাতওয়া নং-৩৮৯২১
প্রশ্ন:
গ। নখ কাটার তারতীব বা ধারাবাহিকতা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কি?
উত্তর:
গ। এ
সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন,
وقال ابن حجر
أيضًا: (لم يثبُت في ترتيبِ الأصابِعِ
عند القصِّ شيءٌ مِن الأحاديث) ((فتح الباري))
(10/345). وقال
السَّخاويُّ:
কাটার
সময় আঙ্গুলের বিন্যাস সম্পর্কে কোন হাদীসে প্রমাণিত নয়। সূত্র: ফাতহুল বারী -১০
খণ্ড,৩৪৫ পৃষ্ঠা।
তবে ভিন্ন কিতাবে যে
তারতীবগুলো বর্ণিত হয়েছে তা সুন্নত মনে না করে কাটলে সমস্যা নেই। যেমন,
উভয়
হাত (মুনাজাতের আকৃতিতে ধরে) ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে আরম্ভ করে
ধারাবাহিকভাবে বাম হাতের বৃ্দ্ধাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা। অতঃপর সর্বশেষে ডান
হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কাটা। সূত্র: ফাতওয়ায়ে শামি, ৬/৪০৬; ফাতওয়ায়ে
আলমগিরি, ৫/৩৫৮
প্রশ্ন:
ঘ। নখ বড় রাখলে নামাজ হবে কি?
উত্তর:
ঘ। নামাজ হবে। কিন্তু
والحد المطلوب
في قص الظفر إزالة ما يزيد على ما يلامس رأس الإصبع، وذلك حتى لا يمنع الوسخ وصول
الماء إلى البشرة في الطهارة ولو لم يُصَلِّ بَطَل الوضوء .
নখ
কাটার ক্ষেত্রে যে সীমা প্রয়োজন তা হল আঙ্গুলের অগ্রভাগে যা স্পর্শ করে তার চেয়ে
বেশি সরিয়ে ফেলা, যাতে ময়লা পরিষ্কার করার সময় ত্বকে পানি পৌঁছাতে বাধা না দেয়, এমনকি যদি না পৌঁছায় তবে অযু নষ্ট হয়ে যায়।
মূল
কথা হলো,নখ বড় হওয়ার দরুন কোনো কারণে যদি নখের গোড়ায় পানি না পৌঁছে, তাহলে অজু শুদ্ধ হয় না। সূত্র: খুলাসাতুল ফাতাওয়া, খণ্ড:
০১, পৃষ্ঠা: ২২
নিচের
হাদিস শরিফ সেদিকে ইঙ্গিত করে।
وطولها يخدِش
ويضرُّ، يقول أبو أيوب الأنصاري: جاء رجل إلى النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ فسأله عن خبر السماء، فنظر
إليه النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ فرأى أظفاره طِوالاً فقال ” يسأل أحدكم عن خبر السماء وأظفاره كأظفار الطير يجمع
فيها الجَنابة والتَّفَث ”
وهو الخبث. ” تفسير القرطبي ج2 ص 102 ” .
অর্থ:
আবু ওয়াসিল বলেন, আমি আবু আইয়ুব (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলাম। মুসাফাহার সময় তিনি
আমার নখ বড় দেখে বললেন, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ কেউ আসমানের খবর জিজ্ঞাসা করো, অথচ তার
হাতের নখগুলো পাখির নখের মতো, যাতে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে!
তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩০১১; তাফসিরে
কুরতুবি-২য় খণ্ড,১০২ পৃষ্ঠা
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৬৩:
আসসালামুয়ালাইকুম। মুহতারাম, বর্তমানে আমরা যে ক্যাম্পে অবস্থান করছি সেটির
বাইরের যাওয়া নিরাপদ নয়। সে কারণে কর্তৃপক্ষ বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন।
ক্যাম্পে প্রযাপ্ত পানি নেই, অল্প আছে, পানাহারের জন্য এমত অবস্থায় তায়াম্মুম করে নামাজ পড়া জায়েজ হবে কি? জানালে উপকৃত হতাম। জাযাকাল্লাহু খয়রান।
তারিখ: ০৮/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক মাওলানা কঙ্গো থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
ج- إِذا كان في مكان بعيد، وليس
معه إِلا ماء قليل يحتاجه للشرب، ولا يستطيع إِحضار غيره
অর্থাৎ আশেপাশে ১.৭ কিলোমিটারের মধ্যে পানি পাওয়া না যায়।
পানি পেতে যদি শত্রুর, সাপ কিংবা বিপদজনক পশুর আক্রমণের ভয় থাকে। এত
অল্প পানি থাকে যে তা গোসল বা অযুতে ব্যবহার করলে খাওয়ার পানির সংকট হবে , তাহলে
তায়াম্মুম জায়েজ। সূত্র: আলমুগনি-১/১৯২
দলিল:
আয়াত নং -০১
Surah
At-Taghabun, Verse 16:
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا
وَأَطِيعُوا
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শুন, আনুগত্য
কর । সূরা তাগাবুন-১৬
আয়াত নং -০২
Surah
Al-Hajj, Verse 78:
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي
الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ
অর্থ: ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা
রাখেননি। সূরা হজ-৭৮
সুতরাং আপনার প্রশ্নের আলোকে যতদিন বাইরে যাওয়া নিরাপদ না
হবে, পর্যাপ্ত পানি ব্যবস্থা না হবে ততদিন তায়াম্মুম করা নামাজ
পড়া জায়েজ হবে। দলিল:
وعن أبي هريرة t قال: قال رسولُ الله ﷺ: الصَّعيدُ وضوء المسلم وإن لم يجد الماءَ عشر
سنين, فإذا وجد الماءَ فليتَّقِ الله, وليُمِسَّه بشرَتَه. رواه البزَّار, وصحَّحه
ابنُ القطان, لكن صوَّب الدَّارقُطني إرساله. وللترمذي عن أبي ذرٍّ نحوه, وصحَّحه
কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘পবিত্র মাটি মুসলমানের পবিত্রতা অর্জনের বস্তু।
যদিও সে দশ বছর পর্যন্ত পানি না পায়। তাখরিজ: তিরমিজি-১২৪
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৬৪:
আসসালামুয়ালাইকুম
ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
মুহতারাম, আজ ইমাম সাহেব আসর নামাজে সূরা
ফাতিহা প্রথম আয়াত উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করেছেন। তারপর আস্তে পড়েছেন। এখন সাহু
সিজদা কি আবশ্যক হবে?
জানালে
উপকৃত হতাম। জাযাকাল্লাহু খয়রান।
তারিখ:
০৯/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক মাওলানা
সিলেট থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এটি একটি ইজতিহাদি মাসয়ালা।
ফিকহি
হানাফির মতে, সিররি (নিম্নস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাজে বড়
এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত যদি এতটা উচ্চ আওয়াজে পড়েন যে পিছনের
লোকজন শুনতে পায়, তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব
হবে। সূত্র:রদ্দুল মুহতার ১/৫৩৫; শরহুল মুনয়াহ ৪৫৫-৪৫৬; আসসিআয়াহ ২/২৬৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা
মারাকিল ফালাহ ১২৩
নোট:
، ولا يخفى ما فيه. قوله: (تعدل ثلاثا قصارا) أي مثل - * (ثم نظر)
* - الخ وهي ثلاثون حرفا، فلو قرأ آية طويلة قدر ثلاثين حرفا أ
অর্থাৎ
তিন আয়াত সমান ৩০ অক্ষর । সূত্র: হাশিয়ায়ে রদ্দুল মুহতার, ফাতওয়ায়ে শামি- ১ম খণ্ড, ৪৭৪ পৃ.
সারকথা
হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে সূরা
ফাতিহার প্রথম আয়াত ৩০ হরফ বা অক্ষর বিশিষ্ট নয়। সুতরাং সাহু সিজদা ওয়াজিব নয়।
নামাজ সহিহ হয়েছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৬৫:
আসসালামু
আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। বিজ্ঞজনদের নিকট জানার বিষয় হলো, ফরজ গোসলের সময় মহিলাদের মাথার চুলের গোড়া থেকে
আগা পর্যন্ত ধৌত করা ফরজ নাকি শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌছালেই হয়ে যাবে?? জানালে উপকৃত হতাম।
তারিখ:
১২/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মোঃ শফিউল
ইসলাম সিরাজগঞ্জ থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ফরজ গোসলের সময় মহিলাদের চুলের খোপা বা বেনী
খোলা জরুরি নয়। চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছালেই যথেষ্ট। দলিল:
হাদিস
নং-০১
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَعَمْرٌو
النَّاقِدُ، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَابْنُ أَبِي عُمَرَ، كُلُّهُمْ عَنِ
ابْنِ عُيَيْنَةَ، قَالَ إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَيُّوبَ بْنِ
مُوسَى، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ
بْنِ رَافِعٍ، مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ قُلْتُ يَا
رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي امْرَأَةٌ أَشُدُّ ضَفْرَ رَأْسِي فَأَنْقُضُهُ لِغُسْلِ
الْجَنَابَةِ قَالَ " لاَ إِنَّمَا يَكْفِيكِ أَنْ تَحْثِي عَلَى رَأْسِكِ
ثَلاَثَ حَثَيَاتٍ ثُمَّ تُفِيضِينَ عَلَيْكِ الْمَاءَ فَتَطْهُرِينَ " .
আবু
বকর ইবনে আবি শাঈবা, আমর আন-নাকিদ, ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ও ইবনে
আবু উমর (রাহঃ) ... উম্মে সালামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার
মাথার বেণী খুব শক্ত করে বেধে থাকি। আমি কি জানাবাতের গোসলের জন্য তা খুলে ফেলব? তিনি বললেন, না, তোমার মাথায় কেবল তিন আজলা
পানি ঢেলে দিলেই চলবে। এরপর তোমার সর্বাঙ্গে পানি ঢেলে দিবে। এভাবেই তুমি পবিত্রতা
অর্জন করবে। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৩৭ (আন্তর্জাতিক নং ৩৩০-১)
হাদিস
নং-০২
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَوْفٍ، قَالَ قَرَأْتُ فِي أَصْلِ
إِسْمَاعِيلَ بْنِ عَيَّاشٍ - قَالَ ابْنُ عَوْفٍ - وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ
إِسْمَاعِيلَ، عَنْ أَبِيهِ، حَدَّثَنِي ضَمْضَمُ بْنُ زُرْعَةَ، عَنْ شُرَيْحِ
بْنِ عُبَيْدٍ، قَالَ أَفْتَانِي جُبَيْرُ بْنُ نُفَيْرٍ عَنِ الْغُسْلِ، مِنَ
الْجَنَابَةِ أَنَّ ثَوْبَانَ، حَدَّثَهُمْ أَنَّهُمُ، اسْتَفْتَوُا النَّبِيَّ
صلى الله عليه وسلم عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ " أَمَّا الرَّجُلُ فَلْيَنْشُرْ
رَأْسَهُ فَلْيَغْسِلْهُ حَتَّى يَبْلُغَ أُصُولَ الشَّعْرِ وَأَمَّا الْمَرْأَةُ
فَلاَ عَلَيْهَا أَنْ لاَ تَنْقُضَهُ لِتَغْرِفْ عَلَى رَأْسِهَا ثَلاَثَ
غَرَفَاتٍ بِكَفَّيْهَا
" .
মুহাম্মাদ
ইবনে আওফ .... শুরায়হ ইবনে উবাইেদ (রাহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুবায়ের ইবনে নুফায়ের
(রাহঃ) আমার নিকট অপবিত্রতার গোসল সম্পর্কে বলেছেন যে, ছাওবান (রাযিঃ) তাদের নিকট
বর্ণনা করেছেন, একদা তাঁরা এ সম্পর্কে নবী
(ﷺ)কে
জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেনঃ পুরুষ লোক অপবিত্রতার গোসলের সময় এমনভাবে চুল ছেড়ে দিয়ে
গোসল করবে- যেন তার প্রতিটি চুলের গোড়ায় পানি পৌছে। অপরপক্ষে মহিলাদের জন্য গোসলের
সময় চুল ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। তারা অপবিত্রতার গোসলের সময় উভয় হাতে তিনবার তিন
কোষ পানি মাথার উপর ঢালবে। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৫৫ (আন্তর্জাতিক
নং ২৫৫)
হাদীসদ্বয়ের
ব্যখ্যা:
এ
হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ফরয গোসল করার সময় যদি কোন মহিলার চুল শক্ত
করে বাঁধা থাকে তাহলে চুল খোলা এবং পূর্ণ চুল ধুয়া জরুরী নয়। বরং চুলের গোড়ায় পানি
পৌঁছে গেলে গোসল শুদ্ধ হয়ে যাবে। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। আলমগিরী: ১/১৩
সুপ্রসিদ্ধ ফিকহ-গ্রন্থ “আল-বাহরুর রায়িকৎ”-এ রয়েছে—
فى البحر الرائق: (وكفى بل اصل ضفيرتها) اى شعر المراة المضفور
للحرج اما المنقوض فيفرض غسل كله اتفاقا.
খোঁপা বা বেণি খুলে চুল ভেজানো কষ্টকর হওয়াতে
মহিলাদের চুলে খোঁপা থাকাবস্থায় চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। অবশ্য চুলে
খোঁপা না থাকলে পুরো চুল ধোয়া সর্বসম্মতিক্রমে ফরয। (আল-বাহরুর রায়িক : ১/৫৪)
সারকথা
হলো, মহিলাদের
মাথার চুল যদি খোঁপা করে বাঁধা থাকে তাহলে ফরয গোসলের সময় খোঁপা খুলে সমস্ত চুল
পানি দিয়ে ভেজানো জরুরি নয়। বরং এক্ষেত্রে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে দেওয়াই
যথেষ্ট। অর্থাৎ মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে চুলে মর্দন করে দেবে যাতে পানি গোড়ায়
পৌঁছে যায়। আর যদি গোসলের সময় চুলে খোঁপা না থাকে বরং চুল খোলা অবস্থায় ছেড়ে
দেওয়া থাকে তাহলে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোর সাথে সাথে মাথার পুরো চুলও ধৌত করা
জরুরি। যদি চুলের কোনো অংশ এক্ষেত্রে শুকনো থেকে যায় তাহলে গোসল সঠিক হয়েছে বলে
গণ্য হবে না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৬৬:
আসসালামু আলাইকুম। একটা প্রশ্নের জবাব দরকার।
ইনশাআল্লাহ পাবো। রাসুলুল্লাহ
মিরাজে
যাওয়ার সময় নবী (আ) গণকে নিয়ে যে দূ
রাকাত সালাত আদায় করছিলেন তার কেবলা কোন দিকে ছিল। তারিখ: ১৪/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোহাঃ শামছুল হুদা
আনছারী চট্টগ্রাম থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মিরাজের
রজনীতে উত্তর -দক্ষিণ,পূর্ব- পশ্চিম কোন দিকে
নামাজ পড়েছেন এরকম কোন নস নেই। আর স্বয়ং কাবা/বায়তুল মুকাদ্দাস এর ভেতরে নামাজ
আদায় করলে কোন দিক ফিরে নামাজ আদায় করা জরুরি নয়। বিস্তারিত সামনে আসছে।
হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবা ঘর নির্মাণের
৪০ বছর পর, তদীয় পুত্র হজরত ইসহাক
(আ.)–এর সন্তান হজরত ইয়াকুব
(আ.) ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নামক স্থানে আল আকসা মসজিদটি নির্মাণ করেন।
عن أبي ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْه، قال: ((قلتُ: يا
رسولَ الله، أيُّ مسجدٍ وُضِعَ في الأرض أوَّلُ؟ قال: المسجدُ الحرامُ، قال: قلتُ:
ثم أيُّ؟ قال: المسجدُ الأقصى، قلتُ: كم كان بينهما؟ قال: أَرْبَعُونَ سَنةً، ثم
أينما أدركتْك الصَّلاةُ بعدُ فَصلِّهْ؛ فإنَّ الفضلَ فيه ))
অর্থাৎ কাবার ৪০ বছর বায়তুল মুকাদ্দাসকে
তৈরি করা হয়েছে। তাখরিজ: বুখারি-৩৩৬৬;
মুসলিম-৫২০
অতঃপর তদীয় পুত্র হজরত
ইউসুফ (আ.)–এর বংশধর হজরত দাউদ (আ.)–এর সন্তান হজরত সুলাইমান (আ.) তা
পুনর্নির্মাণ করেন।
দ্বিতীয় কথা হলো, অনেক নবির কাবা হলো বায়তুল মুকাদ্দাস এবং হিজরতের পর ১৬
মাস বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেন।
তৃতীয় কথা হলো,
القِبلة في اللغة هي الجهة، أمّا في الاصطلاح فهي
الوجهة التي يستقبلها المسلمون في صلاتهم، وهي الكعبة المشرّفة،[١]
অর্থাৎ কেবলা শব্দের অর্থ হল দিক। পরিভাষা
বলা হয়, মুসলমানগণ তাদের নামাজের
সময় যে দিক করে সালাত আদায় করেন। সূত্র: আলমাআনি
চতুর্থ কথা হলো,
বায়তুল হারাম বা বায়তুল মুকাদ্দাস এর এর
বাইরে সালাত আদায় করলে, কিবলাকে সামনে রাখতে হবে।
তবে কেউ যদি কাবা বা বায়তুল মোকাদ্দাস এর
ভেতরে নামাজ আদায় করে, তাহলে তার জন্য কোন দিক
শর্ত নাই, যেদিকে ইচ্ছা সেদিক করে
আদায় করতে পারবে।
দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا
مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم دَخَلَ الْكَعْبَةَ وَأُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ وَبِلاَلٌ
وَعُثْمَانُ بْنُ طَلْحَةَ الْحَجَبِيُّ فَأَغْلَقَهَا عَلَيْهِ وَمَكَثَ فِيهَا،
فَسَأَلْتُ بِلاَلاً حِينَ خَرَجَ مَا صَنَعَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ
جَعَلَ عَمُودًا عَنْ يَسَارِهِ، وَعَمُودًا عَنْ يَمِينِهِ، وَثَلاَثَةَ
أَعْمِدَةٍ وَرَاءَهُ، وَكَانَ الْبَيْتُ يَوْمَئِذٍ عَلَى سِتَّةِ أَعْمِدَةٍ،
ثُمَّ صَلَّى. وَقَالَ لَنَا إِسْمَاعِيلُ حَدَّثَنِي مَالِكٌ وَقَالَ عَمُودَيْنِ
عَنْ يَمِينِهِ.
আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ
(রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আর উসামা ইবনে যায়েদ,
বিলাল
এবং উসমান ইবনে তালহা হাজাবী (রাযিঃ) কাবায় প্রবেশ করলেন। নবী (ﷺ) এর প্রবেশের সাথে সাথে উসমান (রাযিঃ) কাবার
দরজা বন্ধ করে দিলেন। তাঁরা কিছুক্ষণ ভিতরে ছিলেন। বিলাল (রাযিঃ) বের হলে আমি তাকে
জিজ্ঞাসা করলামঃ নবী (ﷺ) কি করলেন?
তিনি
জওয়াব দিলেনঃ একটা স্তম্ভ বামদিকে,
আর
স্তম্ভ ডানদিকে আর তিনটা স্তম্ভ পেছনে রাখলেন। আর তখন বায়তুল্লাহ ছিল ছয় স্তম্ভ
বিশিষ্ট। তারপর তিনি নামায আদায় করলেন। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮১ (আন্তর্জাতিক নং ৫০৫)
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে ইমাম নববি রহ. বলেন,
وقال النووي : ... وإذا صلى في الكعبة فله أن يستقبل
أي جدار شاء، وله أن يستقبل الباب إن كان مردوداً أو مفتوحاً، وله عتبة قدر ثلثي
ذراع تقريباً.
অর্থাৎ যদি সে কাবাতে নামাজ পড়ে, তবে সে তার ইচ্ছামত যে কোন দেয়ালের মুখোমুখি হতে পারে, এবং দরজাটি ফিরিয়ে বা খোলা থাকলে সে তার মুখোমুখি হতে পারে
এবং তার প্রায় একটি প্রান্তিক এক হাতের দুই-তৃতীয়াংশ। সূত্র: কিবলাতুল মসল্লি
দাখিলুল কাবা, ফতোয়া নং -২৯২৭১
পঞ্চম কথা হলো, বাইতুল মুকাদ্দাস যেহেতু নিজেই কাবা তাই তার ভেতরে কেউ আমার
আদায় করলে, কোন দিকে বা বায়তুল
হারামের দিকে ফিরে সালাত আদায় করা জরুরি নয়। যেদিকে ইচ্ছা সেদিক করে আদায় করতে
পারবে। যেমন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ( أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم قَالَ: « أُتِيتُ بِالْبُرَاقِ وَهُوَ دَابَّةٌ أَبْيَضُ
طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ وَدُونَ الْبَغْلِ يَضَعُ حَافِرَهُ عِنْدَ مُنْتَهَى
طَرْفِهِ، قَالَ: فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ قَالَ
فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي يَرْبِطُ بِها الْأَنْبِيَاءُ، قَالَ: ثُمَّ
دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ
আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার নিকট বোরাক নিয়ে আসা হল, বোরাক হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তু সাদা, লম্বা,
গাধার
চেয়ে বড় ও খচ্চর থেকে ছোট, তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে
সে তার পা রাখে, তিনি বলেন: আমি তাতে সওয়ার
হলাম, অবশেষে আমাকে বায়তুল
মাকদিস নিয়ে আসা হল, তিনি বলেন: আমি তাকে সে
খুঁটির সাথে বাঁধলাম যার সাথে নবীগণ বাঁধেন। তিনি বলেন: অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ
করি, তাতে দু’রাকাত সালাত আদায় করি, অতঃপর বের হই। তাখরিজ: মুসলিম -৯৯
উপরোক্ত হাদিস থেকে বোঝা যায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাসের
ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন। সুতরাং তার জন্য জরুরী ছিল না কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায়
করা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৬৭:
আসসালামু
আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। বিজ্ঞজনের নিকট জানার বিষয় হলো, মেয়ের বাবা যদি কোন ছেলেকে
টাকাপয়সা দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে মেয়েকে
বিবাহ দেয় আর ছেলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তাহলে এই চাকরিটা তার জন্য বৈধ হবে কিনা??
তারিখ: ১৪/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মো: শফিউল ইসলাম সিরাজগঞ্জ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে দুটি ছুরত/পদ্ধতি হতে
পারে, এবং হুকুমও ভিন্ন ভিন্ন।
প্রথম
ছুরত/পদ্ধতি:
বিবাহের
পূর্বে ছেলেপক্ষ যদি মেয়ে পক্ষ থেকে আর্থিক যে কোন ধরনের অনুদান দাবি করে, কৌশল অবলম্বন করে, চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে
এটা যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে যা ইসলাম এবং বাংলাদেশে আইনে নিষিদ্ধ। দলিল:
یٰۤاَیُّہَا
الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ
اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ۟
অর্থাৎ
হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে পারস্পরিক সন্তুষ্টিক্রমে কোন ব্যবসায় করা
হলে (তা জায়েয)। সূরা নিসা-২৯
দ্বিতীয়
ছুরত/পদ্ধতি:
বিয়ের
আগেই বিশেষ কোনো কারণে যদি কন্যা পক্ষ বা অভিভাবক স্বেচ্ছায় বিবাহে আগ্রহী
ব্যক্তিকে অর্থ কড়ি বা উপহার-সাগ্রহী দেওয়ার প্রস্তাব দেয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তির জন্য তা গ্রহণ করা জায়েজ
হবে।
উদাহরণ:
মেয়ের শারীরিক গঠনে ত্রুটি বা অসুন্দর, কুৎসিত
ইত্যাদি কারণে মেয়ে যদি বিয়ে না হয়। বাড়িতে অবিবাহিত থাকার কারণে নানান
ফিতনা-ফ্যাসাদ জড়িয়ে পড়ে আশঙ্কা হয় । এই পরিস্থিতিতে মেয়ের পিতা বা অভিভাবক
যদি অগ্রিম ঘোষণা করে, যে ব্যক্তি আমার মেয়ে বা
কন্যাকে বিবাহ করবে তাকে এত এত টাকা, এত এত উপহার-উপঢৌকন দেয়া হবে। এখন কোন ব্যক্তি যদি এই সুযোগ গ্রহণ করে অক্ত
মেয়েকে বিবাহ করে তাহলে এটা নাজায়েজ হবে না।
দলিল:
হাদিস
নং-০১
عَنْ
أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ , أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ: «لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسِهِ»
হজরত
আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,
কোন
মুসলমানের সম্পদকে তার সন্তুষ্টি ছাড়া গ্রহণ করা হালাল নয়। তাখরিজ: সুনানে দারা
কুতনি-২৮৮৫
ব্যাখ্যা: হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, খুশি মনে, সম্মতিতে
যা প্রদান করা হয় তা বৈধ।
উসূলে
ফিকহির একটি কায়দা আছে,
الضرورات
تبيح المحظورات
অর্থ:
জরুরি/প্রয়োজন নিষিদ্ধ বিষয়কে বৈধ করে দেয়। সূত্র: কিতাবুল কাওয়ায়িদুল ফিকহি
ওয়া তাতবিকাতিহা ফিল মাজাহিবিল আরবাআ -২৭৯ পৃষ্ঠা
সারকথা
হলো, মেয়ের বাবা যদি কোন ছেলেকে
টাকা পয়সা দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে
মেয়েকে বিবাহ দেয় আর ছেলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাহলে এই চাকরিটা তার জন্য
বৈধ হবে।
তবে
চাকরিটা যেন বৈধ পন্থায় হয়। এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৬৮:
معيار حق
সম্পর্কে কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক বিস্তারিত
আলোকপাত করার জন্য বিজ্ঞ মুফতি মহোদয় কে সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি। আগাম ধন্যবাদ।
جزاك ا لله تعالي خيرا في ا لدارين
نورالامين غفرله ولواديه(نيلفاماري) তারিখ: ১৬/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা নুরুল ইসলাম নীলফামরী থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
ইসলামে হজরত সাহাবা কেরামের
গুরুত্ব সমধিক। দ্বীন, ঈমান ও ইসলামের অতন্ত্র প্রহরী। নবি কারিম (ﷺ) এর সকল সাহাবিগণই সম্মান ও মর্যাদা
পাওয়ার হকদার। প্রকাশ থাকে যে, পরবর্তীকালে খারিজী, রাফিজী, মুতাজিলা, জায়েদিয়া, আশারিয়া, ইসমাঈলিয়া তথা শিয়া মাযহাবের লোকজন নিজেদের ভ্রান্ত-ধারণার
বশবর্তী হয়ে নবি কারিম (ﷺ)
এর সম্মানিত সাহাবিদের বিরুদ্ধে অনেক
অপবাদ দেয়ার মত ধৃষ্টতা ও অপরাধপূর্ণ সমালোচনায় হয়
মুসলিম জতিকে পারস্পরিক বিভেদ ও বিচ্ছেদের প্ররোচনা
দিয়েছে। ইমাম ও হাক্কানি আলমগণ শত্রুদের ঐ কৌশল ব্যর্থ
করার জন্য পূর্ব যুগ হতেই সাহাবিদের সম্পর্কে ইসলামের
(Dimad) দাবী নির্ধারিত করে দিয়ে গিয়ছেন; যাতে শত্রুরা তাদের
অপচেষ্টায় কৃতকার্য হওয়ার ছিদ্র পথ পেতে না পারে।
প্রশ্ন: ক। সাহাবায়ে কেরামের সম্মান- মর্যাদা কি ঐতিহাসিক না কুরআন
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত?
উত্তর: ক। সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা কুরআন ও হাদিস দ্বারা জানা যায়
ঐতিহাসিক বর্ণনা দ্বারা নয় : হযরতে সাহাবায়ে-কেরাম সাধারণ উম্মতের ন্যায় নয়। তাঁরা
রসূলুল্লাহ (ﷺ) ও উম্মতের মাঝেখানে আল্লাহর তৈরি সেতু। তাঁদের মাধ্যম ব্যতিত
উম্মতের কাছে কুরআন ও রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর শিক্ষা পৌঁছার কোনো পথ
নেই। তাই ইসলামে তাঁদের একটি বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। তাঁদের এই মর্যাদা ইতিহাস
গ্রন্থের সত্য-মিথ্যা বর্ণনা দ্বারা নয়;
বরং
পবিত্র কুরআন-হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়। শুধু মাগফেরাতেরই নয় رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ
وَرَضُوا عَنْهُ বলে তাঁর সন্তুষ্টিরও নিশ্চিত আশ্বাস দান করেছেন। তাই তাঁদের
পারস্পরে যেসব মতবিরোধ ও বাদানুবাদের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো ভিত্তিতে তাঁদের মধ্যে কাউকে মন্দ বলা অথবা দোষারোপ
করা নিশ্চিতরূপে হারাম, রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর উক্তি অনুযায়ী অভিশপ্ত হওয়ার কারণ এবং
নিজের ঈমানকে বিপন্ন করার শামিল। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল
কুরআন-৫৯১পৃ.সংক্ষিপ্ত-মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহ.)
প্রশ্ন: খ। সাহাবি কেরাম রা. কি সত্যের মাপকাঠি?
উত্তর: খ। তাবেয়ি, তাবা-তাবেয়ি, আইম্মায়ে মুজতাহিদগণ এবং
যুগে যুগে তাদের
লক্ষ কোটি ওলামায়ে অনুসারী দ্বীন, মুহাদ্দিসগণ, বিখ্যাত মুসলিম মনীষীগণ
সকলেই হজরতে সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মেনেছেন, স্বীকার করেছেন। তবে মুষ্টিমেয় দুজনের মতে সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নয়। নিম্নে উভয় পক্ষের দলিল
উল্লেখ করে পর্যালোচনা করা হবে ইনশাল্লাহ।
প্রশ্ন: গ। যারা
সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মানেন না তাদের দলিল কি?
উত্তর: গ। হজরতে সাহাবায়ে কেরাম সত্যের
মাপকাঠি নয় তাদের এর দলিল:
প্রথম যুক্তি/দলিল:
যারা সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মানেন
না তাদের প্রধান যুক্তি হল।
সাহাবা কেরাম ওহি কেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণ ছিল
না, তাই তাদের ফাতওয়া ১০০ ভাগ
সঠিক বলা যায় না। সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নয়। দলিল:
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ إِنْ هُوَ إِلَّا
وَحْيٌ يُوحَى
এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন
ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়। সূরা
নজম-৩,৪
ব্যাখ্যা: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম
ব্যতিত কেউ ওহি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।
দ্বিতীয় যুক্তি/ দলিল :
সত্যের মাপকাঠি কেবল রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য কেউ নয়।
Surah
Al-Ahzab, Verse 21:
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ
أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ
اللَّهَ كَثِيرًا
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং
আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর
মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। সূরা আহযাব-২১
ব্যাখ্যা: এ আয়াতের শুরুতে দুটি (لام و قد ) লাম এবং কদ তাকিদ হরফ
এসেছে, এতে প্রমাণিত হয় একমাত্র
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সত্যের মাপকাঠি।
তৃতীয় দলিল/যুক্তি:
কোন কোন সাহাবার দ্বারা কবিরা গুনাহ ও
ভুল সিদ্ধান্ত সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং তারা সত্যের মাপকাঠি হতে পারে না।
প্রশ্ন: ঘ। যারা হজরতে সাহাবায়ে কেরাম
সত্যের মাপকাঠি মানেন তাদের দলিল কি?
উত্তর: ঘ। যারা হজরতে সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি মানেন
তাদের দলিল নিম্নরূপ:
কুরআনুল কারিম দ্বারা প্রমাণ:
আয়াত নং-০১
Surah
Al-Baqara, Verse 13:
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ
النَّاسُ قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ
السُّفَهَاءُ وَلَٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ
অর্থ: তোমরা ঈমান আনয়ন কর, যেমন ঈমান এনেছে ঐ লোক সকল (সাহাবা কেরাম)। সূরা বাকারা-১৩
তাফসির: «وإذا قيل لهم آمنوا كما آمن الناس» أصحاب النبي «قالوا أنؤمن كما
آمن السفهاء» الجهال أي لا نفعل كفعلهم. قال تعالى ردا َعليهم: «ألا إنهم هم
السفهاء ولكن لا يعلمون» ذلك.
অর্থাৎ যখন যখন তাদেরকে
বলা হয় তোমরা ঈমান আনয়ন করো যে রূপ ঈমান তারা এনেছে অর্থাৎ নাস হলো নবীর
সাহাবীরা। সূত্র: তাফসিরে জালালাইন
تفسير الميسر
وإذا قيل للمنافقين: آمِنُوا -مثل إيمان
الصحابة، وهو الإيمان بالقلب واللسان والجوارح-، جادَلوا وقالوا: أَنُصَدِّق مثل
تصديق ضعاف العقل والرأي، فنكون نحن وهم في السَّفَهِ سواء؟ فردَّ الله عليهم بأن
السَّفَهَ مقصور عليهم، وهم لا يعلمون أن ما هم فيه هو الضلال والخسران
আর যখন মুনাফিকদের বলা হলো তোমরা ঈমান আনো
সাহাবীদের ঈমানের মত। এটি হৃদয়, জিহ্বা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি ঈমান। সূত্র: তাফসিরুল মাইসির
عن ابن عباس في قوله: ( وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ
آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ )، يقول: وإذا قيل لهم صدِّقوا كما صدَّق أصحاب
محمد, قولوا: إنَّه نبيٌّ ورسول, وإنّ ما أنـزل عليه حقّ, وصدِّقوا بالآخرة,
وأنَّكم مبعوثون من بعد الموت (81) .
وإنما أدخِلت
হযরত আব্বাস রাঃ বলেন যখন তাদেরকে বলা হলো
তোমরা বিশ্বাস করো যেরকম বিশ্বাস করেছে মুহাম্মাদের সাহাবীরা। নিশ্চয়ই তিনি নবী।
তার কাছে সত্য সহ কিতাব নাযিল হয়েছে। তাফসিরে তাবারি-২৯১ পৃষ্ঠা
সাহাবিদের ঈমানের মত ঈমান আনয়ন করার নির্দেশ
থেকে প্রমাণিত হয় সাহাবা কেরাম ঈমানের ক্ষেত্রে মাপকাঠি। ঈমান সবার আগে, এতেই যদি মাপকাঠি হয় বাকি অন্যক্ষেত্রে মাপকাঠি তা সহজে
অনুমেয়।
আয়াত নং-০২
فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنذم بِهِ فَقَدِ
اهْذدَوا ۖ وَّإِن ذوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ
اللَّـهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿١٣٧﴾
অর্থঃ(সাহাবাদের লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে) তারা যদি তোমাদের মত
ঈমান আনয়ন করে তাহলে হেদায়াত পাবে আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তারাই হঠকারিকতায়
রয়েছে। সূরায়ে বাকারা আয়াত ১৩৭
আয়াত নং-০৩
Surah
At-Taubah, Verse 100:
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ
الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ
اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا
الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা (ঈমান
গ্রহণের দিক থেকে) প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। সূরা
তাওবা-১০০
তাফসির:
يخبر تعالى عن رضاه عن السابقين من المهاجرين
والأنصار والتابعين لهم بإحسان ، ورضاهم عنه بما أعد لهم من جنات النعيم ، والنعيم
المقيم .
অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তার সন্তুষ্টির খবর দিয়েছেন
মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ
করেছেন। এবং তাদের জন্য জান্নাতুন নাঈম প্রস্তুত করে রেখেছেন। তাফসিরে ইবনে কাসির
-২০৩ পৃষ্ঠা
আয়াত নং-০৪
সাহাবায়ে কেরাম শ্রেষ্ঠ উম্মতঃ
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ
تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ
অর্থঃ তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের
নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবেনা। সুরা
আলে-ইমরান-১১০
তাফসীরে তাবরীতে আয়াতের ব্যাখায় হযরত ওমরের
(রাঃ) একটি উক্তি তুলে ধরেছেন
لو شاء الله لقال انتم فكنا كلنا ولكن قال كنتم
فى خاصة من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسل
অর্থাৎ “যদি আল্লাহপাক ইচ্ছা করতেন
তাহলে কুনতুম না বলে “আনতুম খায়রা উম্মাতিন”বলতে পারতেন এবং
সেক্ষেত্রে আমরা সকলেই এ আয়াতের আওতায় চলে আসতাম। কিন্তু! আল্লাহপাক এখানে
সাহাবাদের মধ্যে বিশেষ জামায়াতকে সম্বোধণ করেছেন। সূত্রঃ তাফসীরে তবারী
খন্ডঃ ৭ পৃষ্টাঃ ১০১ তাফসীরে শাওকানী খ:১ পৃ:৩০৩ হায়াতুস সাহাবাহ খ:১ পৃ:৫২
আয়াত নং-০৫
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا
تبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا
توَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَت مَصِيرًا ﴿١١٥﴾
অর্থঃ আর যে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ
করে এবং মুমনিদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে আমি তাকে সেদিকেই ফিরাব এবং তাকে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা হল নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান। (সূরায়ে নিসা -আয়াত ১১৫)
এই আয়াতে মুমনিদের পথ বলতে প্রথমতঃ যারা উদ্দেশ্য তারা হলেন
জামায়াতে সাহাবা।
আয়াত নং-০৬
Surah
Al-Fath, Verse 18:
لَّقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ
يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ
السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا
আল্লাহ তাআলা সেই মুমিনের প্রতি
সন্তুষ্ট হয়েছেন; যখন তারা (হুদায়বিয়ার সন্ধির
সময়) বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। সূরা ফাতাহ-১৮
ব্যাখ্যা: যাদের ওপর মহান আল্লাহ খুশি/সন্তুষ্টির ঘোষণা
দিয়েছেন তারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।
আয়াত নং-০৭
Surah
Aal-e-Imran, Verse 194:
رَبَّنَا وَآتِنَا مَا وَعَدتَّنَا عَلَىٰ
رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ
হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দাও, যা তুমি ওয়াদা করেছ তোমার রসূলগণের মাধ্যমে এবং কিয়ামতের দিন আমাদিগকে তুমি
অপমানিত করো না। নিশ্চয় তুমি ওয়াদা খেলাফ করো না। সূরা ইমরান -১৯৪
আয়াত নং-০৮
Surah
Al-Hadid, Verse 10:
ا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَىٰ وَاللَّهُ
بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
আর তাদের (মুহাজির ও আনসারগণ)
প্রত্যেকের জন্যই আল্লাহ তাআলা কল্যাণের (ক্ষমা ও জান্নাতের) ওয়াদা দিয়েছেন। সূরা
হাদীদ-১০
আয়াত নং-০৯
Surah
Al-Fath, Verse 10:
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا
يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا
يَنكُثُ عَلَىٰ نَفْسِهِ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ
فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
নিশ্চয় যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ
করে, তারা তো আল্লাহর কাছে
আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের উপর রয়েছে।---এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত
অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহা
পুরস্কার দান করবেন। সূরা ফাতাহ-১০
আয়াত নং -১০
Surah
Aal-e-Imran, Verse 152:
وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللَّهُ وَعْدَهُ إِذْ
تَحُسُّونَهُم بِإِذْنِهِ حَتَّىٰ إِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِي الْأَمْرِ
وَعَصَيْتُم مِّن بَعْدِ مَا أَرَاكُم مَّا تُحِبُّونَ مِنكُم مَّن يُرِيدُ
الدُّنْيَا وَمِنكُم مَّن يُرِيدُ الْآخِرَةَ ثُمَّ صَرَفَكُمْ عَنْهُمْ
لِيَبْتَلِيَكُمْ وَلَقَدْ عَفَا عَنكُمْ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَلَى
الْمُؤْمِنِينَ
আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সাথে তার কৃত প্রতিশ্রুতিকে সত্যে
পরিণত করে দেখিয়েছেন, যখন তোমরা আ্লাহর
অনুমতিক্রমে তাদেরকে প্রচুরহারে হত্যা করছিল । এমনকি তোমরা যখন নিজেরাই
দুর্বল হয়ে
পড়লে এবং নির্দেশ সম্বন্ধে পরস্পর মতভেদ করতে লাগলে। ...আর অবশ্যই
তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বড় অনুগ্রহশীল। সূরা
আলে ইমরান-১৫২
আয়াত নং-১১
Surah
At-Tahrim, Verse 8:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى
اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ
سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
يَوْمَ لَا يُخْزِي اللَّهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ
সেদিন আল্লাহ নবি এবং তার বিশ্বাসী
সহচরদেরকে (সাহাবিদেরকে) অপদস্থ করবেন না। (সূরা আত-তাহরীম) অপদস্থ করবেন না মানে
জাহান্নামে দিবেন না।
এর ব্যাখ্যা অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-হে আমাদর প্রতিপালক!
নিশ্চয় আপনি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করবেন তাকে তো সবসময় অপদস্থ/অপমানিত করলেন আর
জালেমদের জন্যে তো সাহয্যকারী নেই। সূরা আলে ইমরান-১৯২
ব্যাখ্যা: সকল সাহাবি জান্নাতি, জাহান্নামের আগুন তাদেরকে কখনও স্পর্শ করবে না। তারা ক্ষমা প্রাপ্ত দল।
৭নং আয়াতে কতিপয় সাহাবের মতানৈক্যর কথা উল্লেখ করার পরপরই তাদের প্রতি ক্ষমার
ঘোষণা প্রচার করা হয়েছে। অতত্রব, ক্ষমা প্রাপ্ত, জান্নাতি জামাআত অবশ্যই সত্যের মানদণ্ড।
আয়াত নং-১২
Surah
Al-Ahzab, Verse 23:
مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا
عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن
يَنتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا
অর্থ: মুমিনগণের মধ্যে এমন কতক
ব্যক্তি রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ মৃত্যু বরণ করেছে
আবার কেউ প্রতীক্ষায় রযেছে। সূরা আহযাব-২৩
ব্যাখ্যা: যাদের ওয়াদা পূর্ণ করার ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ সাক্ষ্য
দিচ্ছেন। সুতরাং ওয়াদা পূর্ণকারী দল অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।
আয়াত নং-১৩
Surah
Al-Hajj, Verse 78:
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ هُوَ
اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ
অর্থ: আল্লাহ তাআলা (দ্বীনের জন্য)
তোমাদেরকে বাছাই করেছেন এবং তোমাদের জন্য দ্বীনের মধ্যে কোন প্রকারের সংকীর্ণতা
রাখেন নি। সূরা হজ-৭৮
আয়াত নং-১৪
Surah
Fatir, Verse 32:
ثُمَّ أَوْرَثْنَا الْكِتَابَ الَّذِينَ
اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَا فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهِ وَمِنْهُم
مُّقْتَصِدٌ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ بِالْخَيْرَاتِ بِإِذْنِ اللَّهِ ذَٰلِكَ هُوَ
الْفَضْلُ الْكَبِيرُ
অর্থ: তারপর আমি কিতাবের অধিকারী
করলাম আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে আমি মনোনীত করলাম। সূরা ফাতির-৩২
এক হাদিসে আছে, নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন- আল্লাহ তাআলা নবি-রাসূলগণের
পর সমস্ত বিশ্ব ভূ-মণ্ডলে আমার সাহাবিগণকে মনোনীত করেছেন। মুসনাদে বাযযার, সূত্র: মাকামে সাহাবা-৬০ মুফতি শফি রহ. ; আল জামি লিআহকামিল কুরআন, ইমাম কুরতবি রহ.-৮/১৯৬
ব্যাখ্যা: যাদেরকে আল্লাহ তাআলা নিজে
নির্বাচন, মনোনীত করেছেন, তারা সত্যের মাপকাঠি হবে না কেন ?
আয়াত নং-১৫
Surah
Aal-e-Imran, Verse 174:
فَانقَلَبُوا بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ
لَّمْ يَمْسَسْهُمْ سُوءٌ وَاتَّبَعُوا رِضْوَانَ اللَّهِ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ
عَظِيمٍ
অর্থ: অতঃপর তারা আল্লাহর মহা
নেয়ামত ও অনুগ্রহ নিয়ে ফিরে এল, এমতাবস্থায় যে, কোন অনিষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুগত রয়েছে। আর
আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। সূরা আলে ইমরান-১৭৪
এ আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসা করা হয়েছে যে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসনন্ধান করতেন। খারাপি তাদেরকে ষ্পর্শ করেনি।
সুতরাং তারা সত্যর মাপকাঠি।
আয়াত নং-১৬
Surah
Al-Hujraat, Verse 7:
وَلَٰكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ
الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ
وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُولَٰئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ
অর্থ: কিন্তু আল্লাহ তোমাদের
নিকট ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন। আর পাপাচার ও অবাধ্যতাকে
করেছেন তোমাদের নিকট অপ্রিয়। তারাই সৎপথ অবলস্বনকারী। সূরা হুজুরাত-০৭
আয়াত নং-১৭
Surah
Al-Hujraat, Verse 3:
إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ
رَسُولِ اللَّهِ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ
لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ
অর্থ: আল্লাহ তাদের অন্তরকে
শিষ্টাচারের জন্যে শোধিত করেছেন,পরীক্ষা করেছেন। সূরা
হুজুরাত-০৩
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তাআলা নিজে তাঁদের ঈমানের দৃঢ়তা ও পাপাচার
থেকে মুক্ত থাকার আন্তরিক আগ্রহের কথা ঘোষণা করেছেন এবং তাদের অন্তর নিজে যাচাই, পরীক্ষা করেছেন। সুতরাং এ জামাত অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।
আয়াত নং-১৮
Surah
An-Nisa, Verse 115:
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا
تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ
مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
অর্থ: কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের
বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনর পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ
করে তবে যে দিকে সে ফিরে যায় সে দিকই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে
তাকে দগ্ধ করব,আর তা কত মন্দ আবাস। সূরা নিসা-১১৫
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে মুমিন বলতে সাহাবায়ে
কেরামকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তাঁরাই মুমিনের সর্বপ্রথম এব সর্বশ্রেষ্ঠ জামাআত।
তাদের অনুসরণ না করলে বরং জাহান্নামের শাস্তির ঘোষণা এসেছে, অতত্রব তাঁরা তো সত্যের মাপকাঠি তো বটেই, তাদের অনুসরণ করা উম্মতের জন্য ওয়াজিব সাব্যস্ত হলো।
হাদিসে নববি দ্বারা প্রমাণ:
এ সম্পর্কে স্বয়ং নবি কারিম (ﷺ) বলেছেন-
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا
أَبُو دَاوُدَ الْحَفَرِيُّ، عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ، عَنْ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ بْنِ زِيَادِ بْنِ أَنْعُمَ الإِفْرِيقِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ
يَزِيدَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله
عليه وسلم " لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ
حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ
عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي
إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ
أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ
مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا
عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ مُفَسَّرٌ
حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِثْلَ هَذَا إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ .
অর্থ: বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত
হবে তিয়াত্তর দলে। আর তাঁদের একটি দল ব্যতীত সবাই জাহান্নামে যাবে। সাহাবা কেরাম
জিজ্ঞেস করলেন; হে আল্লাহর রাসূল! সেদল
কোনটি? উত্তরে তিনি বললেন, আমি ও আমার সাহাবাগণ যে দলে আছি, তার উপর যারা কায়েম থাকবে তারা। তাখরিজ: জামেউত তিরমিজি-২৮৫৩, কিতাবুল;
ইবনে
মাজাহ-৪৪
হাদিস নং-০২
فإنَّه مَن يَعِشْ منكم فسيَرَى اختِلافًا كثيرًا،
فعليكم بسُنَّتي وسُنَّةِ الخُلَفاءِ الرَّاشِدينَ المَهْدِيِّينَ، عَضُّوا عليها
بالنَّواجِذِ، وإيَّاكم ومُحدَثاتِ الأُمورِ؛ فإنَّ كُلَّ بِدعةٍ ضَلالةٌ
الراوي : العرباض بن سارية | المحدث : محمد ابن
عبد الوهاب | المصدر : الرسائل الشخصية لابن عبد الوهاب | الصفحة أو الرقم : 179 |
خلاصة حكم المحدث : صحيح | التخريج : أخرجه مطولاً أبو داود (4607)، والترمذي
(2676)، وابن ماجه (44)، وأحمد (17144) باختلاف يسير، وابن عبدالبر في ((جامع بيان
অর্থ: আমার পরে যারা জীবিত থাকবে তারা নানান রকম মতভেদ দেখতে
পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নাত ও আমার হেদায়েত প্রাপ্ত খোলাফায়ে
রাশেদার সুন্নাত আঁকড়ে ধরবে এবং দাঁত দ্বারা কামড়ে ধরবে। আবু দাউদ-৪৬০৯, কিতাবুস সুন্নাহ;
তিরমিজি-২৬৭৬
হাদিস নং-০৩
عن عمران بن الحصين قال قال رسول الله صلى الله
عليه وسلم خَيْرُ أُمَّتي قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ
يَلُونَهُمْ
অর্থঃ হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সঃ বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে
সর্বোত্তম তারা যারা আমার যুগে রয়েছে (অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম)। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত (তথা
তাবেয়ীগণ)। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত। (অর্থাৎ, তাবয়ে তাবেয়ীণ) । তাখরিজ: বুখারি-২৬৫২,২৬৫১
হাদিস নং-০৪
قال رسول الله صلي الله عليه
وسلم أوحي الله يا محمد ان اصحابك عندي كالنجوم بعضها اضوأ من بعض ولكل نور فمن
اخذ بشي مماهم عليه من اختلافهم فهو عندي علي الهدي – رواه الدارقطني-
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন আল্লাহ অহী পাঠিয়েছেন যে, হে মুহাম্মাদ! আপনার সাহাবীগণ আমার নিকট নক্ষত্রতুল্য, কেউ অতি উজ্জল কেউ তার চেয়ে কম,
তবে
সকলেরই আলো আছে। অতএব, তাদের মতবিরোধের ক্ষেত্রেও
যে কোন এক পক্ষকে অনুসরণ করলেই সে
অনুসারী আমার নিকট হেদায়াত প্রাপ্ত বলে গণ্য হবে।
নোট: কেননা, তাদের বিরোধ হবে ইজতেহাদী, আর সঠিক ইজতেহাদের কোন অংশকেই নিশ্চিত ভুল বলা যাবে না)
হাদীসটির সনদে দুর্বলতা থাকলেও এমর্মে আরো অনেক হাদীস থাকায় এবং হাদীসটি বিষয়
বস্তু কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও অপরাপর হাদীস সমর্থিত হওয়ায় হাদীসটি সম্পূর্ণ
গ্রহণযোগ্য(অবশ্য কারো মতে কুরআন-হাদীসের সমর্থন গ্রহণযোগ্য না হয়ে নিজের মনের
সমর্থন গ্রহণ যোগ্য হলে তা ভিন্ন কথা)তাফসীরে মাযহারী ২য় খন্ড পৃঃ ১১৬
উম্মাতের ইজমা:
এ বিষয়ে আল্লামা ইবনে কাসির রহ. বলেন,
قال ابنُ كثيرٍ: (الصَّحابةُ كُلُّهم عُدولٌ عِندَ أهلِ
السُّنَّةِ والجَماعةِ؛ لِمَا أثنى اللهُ عليهِم في كِتابِه العَزيزِ، وبِما
نَطَقَتْ به السُّنَّةُ النَّبَويَّةُ في المَدحِ لهم في جَميعِ أخلاقِهِم
وأفعالِهِم، وما بذَلوه مِنَ الأموالِ والأرواحِ بَينَ يَدَي رَسولِ اللهِ صلَّى
اللهُ عليه وسلَّيُنظر: ((اختصار علوم الحديث)) (ص: 181).
অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নিকট সকল
সাহাবি ন্যায়পরায়ণ, সত্যের মাপকাঠি। সূত্র:
ইখতিছারু উলুমিল হাদিস-১৮১পৃ.
এ বিষয়ে ইমামা নববী রহ. বলেনঃ الصحابة كلهم عدول من
لابس الفتن وغيرهم باجماع من يعتد به-
অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য সকলের এ ব্যাপারে ইজ্মা
যে সকল সাহাবী ন্যায়পরায়ণ, নিরপরাধী, এমনকি যারা পরস্পর বিগ্রহে পতিত হয়েছেন তাঁরাও। সূত্র : তাক্বরীব সূত্রঃ মাকামে সাহাবা - পৃঃ৭৭
আসার দ্বারা প্রমাণ:
(০১) عن عمر بن الخطاب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أكرموا
أصحابِي فإنهم خيارُكم
অর্থঃ হযরত উমর রাঃ থেকে বর্ণিত নবিজি সঃ বলেন, তোমরা আমার সাহাবীগণকে সম্মান কর। কেননা তাঁহারা তোমাদের
মধ্যকার উত্তম মানব। সূত্রঃ সুনানে তিরমিযি হাদিস-২১৬৫ ইবনে মাযা-২৩৬৩
(০২) الأثر المشار إليه قول عبد الله بن مسعود رضي الله عنه :
عن ( مَن كانَ مُسْتَنًّا ، فَلْيَسْتَنَّ بمن قد
ماتَ ، فإنَّ الحيَّ لا تُؤمَنُ عليه الفِتْنَةُ ، أولئك أصحابُ محمد - صلى الله
عليه وسلم - ، كانوا أفضلَ هذه الأمة : أبرَّها قلوبًا ، وأعمقَها علمًا ،
وأقلَّها تكلُّفًا ، اختارهم الله لصحبة نبيِّه ، ولإقامة دِينه ، فاعرِفوا لهم
فضلَهم ، واتبعُوهم على أثرهم ، وتمسَّكوا بما استَطَعْتُم من أخلاقِهم وسيَرِهم ،
فإنهم كانوا على الهُدَى المستقيم ) .
والأثر رواه ابن عبد البر في "جامع بيان
العلم وفضله" (2/947ـ رقم 1810) ، وفي إسناده ضعف ، إلا أنه أثر مشهور
متداولفي مصنفات أهل السنة ، ومعناه صحيح مستقر عندهم
অর্থ: আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রা. বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অনুসরণ করতে চায় তবে সে জন্য
মুহাম্মদ (ﷺ) -এর সাহাবিগণেরই অনুসরণ করে। কারণ, তাঁরাই ছিলেন এ উম্মতের মধ্যে আত্মার দিক থেকে সবচে বেশি
নেককার, এলেমের দিক থেকে গভীরতর, লৌকিকতার দিক থেকে সল্পতম, আদর্শের দিক থেকে সঠিকতম, অবস্থার দিক থেকে শুদ্ধতম। তাঁরা এমন সম্প্রদায় আল্লাহ
যাদেরকে আপন নবি (ﷺ) -এর সংস্পর্শ ধন্য হবার জন্য এবং তার দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে
বাছাই করেছেন। অতএব তোমরা তাঁদের মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ
করো। কারণ, তাঁরা ছিলেন সীরাতে
মুস্তাকীমের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাখরিজ: জামেউ বায়ানিল
ইলমি-১৮১০; আবু নাঈম, হিলইয়াতুল আওলিয়া : ৩০৫/১
(০৩) সূরা ইমরানের -১১০ নং আায়াতের তাফসীরে হযরত
ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন,
كنتم خير أمة أخرجت للناس قال هم الذين هاجروا مع
رسول الله صلى الله عليه وسلم من مكة إلى مدينة
অর্থাৎ- “খায়রে উম্মত” দ্বারা ঐ সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম যারা মক্কা হতে মদিনাতে
হিজরত করেছিলেন। নিঃসন্দেহে তাঁরা সাহাবায়ে কেরাম। সূত্রঃ জামিউল মাসানিদি
ওয়াস সুনান খঃ ৩০ পৃঃ ২৬৭ তাফসীরে ইবনে কাসীর খন্ড: ৩ পৃষ্টা: ১৪২ উমদাতুত তাফসীর
খ:৩ পৃ:২০
(০৪) শ্রেষ্ঠতম তাবিঈ হজরত ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহ., সাহাবা কেরামের মর্যাদা সম্বন্ধে বলেন, সাহাবা কেরামের অনুসৃত পথ গ্রহণ করাই সকল মুসলিমের কর্তব্য।
সুনানে আবু দাউদ, সূত্র: মাকামে সাহাবা, মুফতি মুহাম্মাদ শফি রহ.
মনীষীদের দৃষ্টিতে সাহাবা কেরাম:
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সাহাবা কেরামের
নির্ধারিত এ মর্যাদা সম্পর্কে সর্ব যুগে উলামায়ে কেরাম একমত পোষণ করে আসছেন। যেমন,
(০১) আল্লামা ইবন সলাহ রহ. উলূমুল হাদিস গ্রন্থে লিখেছেন- সাহাবায়ে কেরামের একটি
অনন্য বৈশিষ্ট্য এই যে, তাদের কারোই আদালত ও ন্যায়
পরায়ণতা সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধানের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা তা কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের উজমার দ্বারা সুপ্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা তাদের সম্বন্ধে
ইরশাদ করেন- তোমরা মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রেরিত শ্রেষ্ঠ উম্মাত।
(০২) ইমাম মুসলিমের উস্তাদ ইমাম
আবু যুরআ রহ. বলেন,
اذا رأيت الرجل ينتقص أحدا من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم
فاعلم انه زنديق .
অর্থাৎ যখন তুমি কোনো ব্যক্তিকে
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
-এর সাহাবিগণের কোনো একজনের মর্যাদাহানী করতে দেখবে তখন বুঝে নেবে যে সে একজন
ধর্মদ্রোহী নাস্তিক। আর তা এ কারণে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের কাছে সত্য, কুরআন সত্য। আর এ কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের কাছে পৌঁছিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর ছাহাবায়ে কিরাম। নিশ্চয় তারা চায়
আমাদের প্রমাণগুলোয় আঘাত করতে। যাতে তারা কিতাব ও সন্নাহকে বাতিল করতে পারে। এরা
হলো ধর্মদ্রোহী নাস্তিক। এদেরকে আঘাত করাই শ্রেয়। খতীব বাগদাদি, আল-কিফায়াহ ফী ইলমির রিওয়ায়াহ-১১৯/১
(০৩)
قال الإمام ابن أبي زيد القيرواني في رسالته:
"واللجأ إلى كتاب الله عزوجل وسنة نبيه، واتباع سبيل المؤمنين، وخير القرون
من خير أمة أخرجت للناس نجاة، ففي المفزع إلى ذلك العصمة، وفي اتباع السلف الصالح
النجاة".
"ইমাম ইবনে আবি যাইদ বলেন, আল্লাহর কিতাবের বিধান পালন, তার রাসুলের জীবনাদর্শ
বাস্তবায়ন, একনিষ্ঠ মুমিনগণের পদাংক
অনুসরণ এবং মানুষের কল্যাণে উদ্দেশ্যে সৃষ্ট সর্বত্তোম উম্মাতের মধ্য হতে যারা
হলেন সর্বত্তোম প্রজন্মের ধারক বাহক, তাদেরকে অনুকরণের মাঝেই
রয়েছে নাজাতের একমাত্র উপায়। এসকল পথ অবলম্বনের মাঝেই রয়েছে নিরাপত্তা। সত্যাশ্রয়ী
পূর্বসূরিগণের অনুসরণেই মিলবে নিশ্চিত পরকালীন মুক্তি।"
(০৪)
وقال ابن حجر العسقلاني: "فالسعيد من تمسك
بما كان عليه السلف واجتنب ما أحدثه الخلف". [6] وقال الشيخ أحمد بن عبد
الرحيم الدهلوي المعروف بشاه ولي الله: "والملة إنما تثبت بالنقل والتوارث،
ولا توارث إلا بأن يعظم الذين شاهدوا مواقع الوحي وعرفوا تأويله وشاهدوا سيرة
النبي صلى اللّه عليه وسلم ولم يخلطوا معها تعمقًا ولا تهاونًا ولا ملة أخرى"
[7].
ইবনে হাজার আসকালানী (রাহি) বলেন, " প্রকৃত সৌভাগ্যশালী হলেন সেই ব্যাক্তি, যিনি পূর্বসুরীদের (সাহাবা-তাবেয়িদের) জীবনাচারকে আঁকড়ে ধরেছেন এবং পরবর্তী যুগের লোকদের শেঁকড়বিহীন নব্য উদ্ভাবিত
বিষয়কে সযত্নে পরিহার করেছে।"
(০৫)
قال شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله تعالى:
"وقد دل الإجماع على أن خير هذه الأمة في الأقوال والأعمال والاعتقاد، وغيرها
من كل فضيلة، القرن الأول، ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم، وأنهم أفضل من كل خلف
في كل فضيلة من علم وإيمان وعقل ودين وبيان وعبادة، وأنهم أول للبيان من كل مشكل،
هذا لا يدفعه إلا من كابر المعلوم بالضرورة من دين الإسلام وأضله الله على
علم"[9]
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রাহি) বলেন, "আইম্মায়ে উম্মাতের একতাবদ্ধ সিদ্ধান্ত একথাই প্রমাণ করে যে-
কথাবার্তা, কাজকর্ম, আচার-আচরণ, বিশুদ্ধ আকীদা লালনসহ সকল
উত্তম গুণাবলির বিকাশের দিক বিবেচনা করে এই জাতির সর্বোত্তম মানুষ হলেন তাঁরাই, যাঁর ছিলেন প্রথমযুগের ব্যক্তিবর্গ । তাঁদের পরে সর্বোত্তম হলেন তৎপরবর্তী যুগের ব্যক্তিবর্গ। অতঃপর
সর্বোৎকৃষ্ট হলেন তৎপরবর্তীকালের ব্যক্তিবর্গ। অর্থাৎ প্রত্যকেই নিজ পরবর্তী যুগের
লোকদের থেকে
ইলম-আমল, ধর্মচর্চা, বিশুদ্ধ আকীদা পোষণ, চিন্তা-চেতনার পরিশীলতা প্রভৃতি বিষয়ে বহুগুণে অগ্রগামী
ছিলেন। প্রথম যুগের ব্যক্তিবর্গ ছিলেন, উদ্ভুত যেকোন সমস্যার সমধান
প্রদানে অতুলনীয়, প্রতিকূল পরিস্থিতিকে
অনুকূলে পরিণত করার ক্ষেত্রে অদ্বিতীয়, ইলমে ওয়াহির সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানে অনন্য। সন্দেহাতীতভাবে
প্রমাণিত এই ধ্রুব সত্যটির দিকে একমাত্র সেই হতভাগাই সন্দেহের
অংগুলি উত্থাপন করতে পারে, যে ইসলাম ধর্মের স্বতসিদ্ধ
ও সুবিদিত বিষয়গুলোতে হঠকারিতার ছলে সংশয়ের অবতারণা ঘটায়। যার ফলে আল্লাহ
জেনেশুনেই তাকে পথহারা করে ছেড়েছেন।"
(০৬)
وقال العلامة ابن القيم رحمه الله تعالى:
"ولا ريب أنهم أئمة الصادقين، وكل صادق بعدهم فيهم يأتم من صدقه، بل حقيقة
صدقه اتباعه لهم، وكونه معهم"[8].
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রাহি) বলেন, " এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, তাঁরা ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় সর্বমান্য সত্যাশ্রয়ী মহাপুরোধা ব্যক্তিত্ব।
তাঁদের পরবর্তীকে আরও যত মহামনীষীর আবির্ভাব ঘটেছে, তারা সকলেই ছিলেন,পূর্বসূরিদের নিছক পরিপূরক মাত্র। বরং তাদের
প্রকৃত সাধুতা তখনই সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হবে, যখন তারা পূর্বসূরিগণের যথাযথ অনুসরণ করবে ও তাঁদের সাহচর্য গ্রহণ পিয়াসী
হবে।"
যারা সাহাবা কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মানেন না
তাদের যুক্তি খণ্ডন:
প্রথম যুক্তি: সাহাবা কেরাম ওহি কেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণ ছিল না, তাই তাদের ফাতওয়া ১০০ ভাগ সঠিক বলা যায় না। তার তাদেরকে সত্যের মাপকাঠি বলা যাবে
না।
খণ্ডন: হজরতে সাহাবা কেরাম ওহি দ্বারা নিয়ন্ত্রনীত ছিল না কথা
সত্য।
তবে ওহি দ্বারা যদি তাদের ঈমান-তাকওয়া তথা ন্যায়পরায়ণতার
সত্যায়ন করে, তাদের অনুসরণ করতে নির্দেশ করা
হয়, তাহলে মানতে সমস্যা কোথায়?
দলিল:
আয়াত নং-০১
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ
قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ
وَلَٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ
অর্থ: তোমরা ঈমান আনয়ন কর, যেমন
ঈমান এনেছে ঐ লোক সকল (সাহাবা কেরাম)। সূরা বাকারা-১৩
আয়াত নং-০২
فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنذم بِهِ فَقَدِ
اهْذدَوا ۖ وَّإِن ذوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ
اللَّـهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿١٣٧﴾
অর্থঃ(সাহাবাদের লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে) তারা যদি তোমাদের মত
ঈমান আনয়ন করে তাহলে হেদায়াত পাবে আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তারাই হঠকারিকতায়
রয়েছে। -সূরায়ে বাকারা আয়াত ১৩৭
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে সাহাবিদের ঈমানের মত ঈমান
আনয়ন করার নির্দেশ এবং হেদায়েত পাবার থেকে প্রমাণিত
হয় সাহাবা কেরাম ঈমানের ক্ষেত্রে মাপকাঠি। ঈমান সবার আগে, এতেই
যদি মাপকাঠি হয় বাকি অন্যক্ষেত্রে মাপকাঠি তা সহজে অনুমেয়।
তাছাড়া উপরোক্ত ৩-১৮ নং আয়াত দলিল হিসেবে পেশ করা যায়।
দ্বিতীয় যুক্তি:
Surah
Al-Ahzab, Verse 21:
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ
أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ
اللَّهَ كَثِيرًا
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ
করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা
রয়েছে। সূরা আহযাব-২১
এ আয়াতের শুরুতে দুটি (لام و قد ) লাম এবং কদ তাকিদ হরফ এসেছে, এতে প্রমাণিত হয় একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সত্যের
মাপকাঠি।
খণ্ডন: আরবি ব্যাকরণ রীতিমতে লাক্বদ (لقد) অবশ্যই তাকিদের শব্দ। কিন্তু এ আয়াত
দ্বারা যে শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করতে হবে এবং অন্য
কেউ সত্যের মাপকাঠি নয়।এ রকম নস বা বিখ্যাত তাফসিরকারকদের ব্যাখ্যা পেশ করুন।
অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নিজেই তার সাহাবা তথা খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত কে আঁকড়ে ধরতে আদেশ দিয়েছেন।
দলিল:
فإنَّه مَن يَعِشْ منكم فسيَرَى اختِلافًا كثيرًا،
فعليكم بسُنَّتي وسُنَّةِ الخُلَفاءِ الرَّاشِدينَ المَهْدِيِّينَ، عَضُّوا عليها
بالنَّواجِذِ، وإيَّاكم ومُحدَثاتِ الأُمورِ؛ فإنَّ كُلَّ بِدعةٍ ضَلالةٌ
الراوي : العرباض بن سارية | المحدث : محمدباختلاف
يسير، وابن عبدالبر في ((جامع بيان
অর্থ: আমার পরে যারা জীবিত থাকবে তারা নানান রকম মতভেদ
দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নাত ও আমার হেদায়েত প্রাপ্ত
খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত আঁকড়ে ধরবে এবং দাঁত দ্বারা কামড়ে ধরবে। আবু দাউদ-৪৬০৯, কিতাবুস
সুন্নাহ; তিরমিজি-২৬৭৬
তাছাড়া উপরোক্ত ১,৩,৪
নং হাদিস দলিল হিসেবে পেশ করা যায়।
তৃতীয় যুক্তি: কোন কোন সাহাবার দ্বারা কবিরা গুনাহ ও
ভুল সিদ্ধান্ত সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং তারা সত্যের মাপকাঠি হতে পারে
না।
খণ্ডন:
(ক)
সকল সাহাবির জন্যে মাগফেরাত ও রহমতের সুসংবাদ
এবং অবশিষ্ট উম্মত থেকে তাঁদের স্বাতন্ত্র্য : এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ
হচ্ছে: لَا يَسْتَوِي مِنْكُمْ مَنْ أَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ
وَقَاتَلَ أُولَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِنَ الَّذِينَ أَنْفَقُوا مِنْ بَعْدُ
وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ
خَبِيرٌ
অর্থ: তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের
মর্যাদা বড় তাদের অপেক্ষা, যারা পরে ব্যয় করেছে ও জিহাদ
করেছে। তবে আল্লাহ তাআলা উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। সূরা হাদিদ-১০
উল্লেখিত আয়াতে
সাহাবায়ে-কেরামকের মর্যাদা পারস্পরিক তারতম্য উল্লেখ করে শেষে বলা হয়েছেঃ وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ
الْحُسْنَى
অর্থাৎ পারস্পরিক তারতম্য সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা কল্যাণ অর্থাৎ জান্নাত ও
মাগফেরাতের ওয়াদা সবার জন্যেই করেছেন। তাঁদের মধ্যে এরূপ ব্যক্তি খুবই দুর্লভ, যিনি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও
আল্লাহর পথে কিছুই ব্যয় করেননি এবং ইসলামের শত্রুদের মোকাবেলায় অংশ গ্রহণ করেননি
(রসূলের অনুমতিক্রমে কেউ কেউ রয়ে গিয়েছিলেন)। তাই মাগফেরাত ও রহমতের এই কুরআনি ঘোষণা প্রত্যেক সাহাবিকে
শামিল করেছেন।
আল্লামা ইবনে হাজম (রহ.)
বলেন,এর সাথে সূরা আম্বিয়ার অপর একটি আয়াতকে মিলাও, যাতে
বলা হয়েছে-لَا
يَسْمَعُونَ حَسِيسَهَا وَهُمْ فِي مَا اشْتَهَتْ أَنْفُسُهُمْ خَالِدُونَ إِنَّ
الَّذِينَ سَبَقَتْ لَهُمْ مِنَّا الْحُسْنَى أُولَئِكَ عَنْهَا مُبْعَدُونَ অর্থাৎ যাদের
জন্য আমি পূর্বেই কল্যাণ নির্ধারিত করে দিয়েছি,
তারা
জাহান্নাম থেকে দূরে অবস্থান করবে। জাহান্নামের কষ্টদায়ক আওয়াজও তাদের কানে পৌঁছবে
না। সেখানে তাদের মন যা চাইবে,তারা চিরকাল তা ভোগ করবে।
সূরা আম্বিয়া, ১০১-১০২ :
আলোচ্য আয়াতে وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى বলা হয়েছে এবং
সূরা আম্বিয়ার এই আয়াতে যাদের জন্য কল্যাণের ওয়াদা করা হয়েছে, তাদের
জাহান্নাম থেকে দূরে থাকার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এর সারমর্ম এই দাঁড়ায় যে, কুরআন
পাক এই নিশ্চয়তা দেয় যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী
সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কেই যদি সারা জীবনে কোনো গুনাহ করেও ফেলেন, তবে
তিনি তার ওপর কায়েম থাকবেন না, তওবা করে নেবেন। নতুবা
রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সংসর্গ, সাহায্য, ধর্মের
মহান সেবামূলক কার্যক্রম এবং তাঁর অসংখ্য পুণ্যের খাতিরে আল্লাহ তাআলা তাঁকে ক্ষমা
করে দেবেন। গুনাহ মাফ হয়ে পূত-পবিত্র হওয়া অথবা পার্থিব বিপদাপদ ও সর্বোচ্চ কোনো
কষ্টের মাধ্যমে গুনাহের কাফফারা না হওয়া পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু ঘটবে না।
কতক হাদিসে কোনো কোনো সাহাবির মৃত্যুর পর আজাবের কথা উল্লেখ
করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, এই আজাব পরকাল ও
জাহান্নামের আজাব নয়; বরং বরযখ তথা কবর জগতের
আজাব। এটা অসম্ভব নয় যে, কোনো সাহাবি কোনো গুনাহ
করে ঘটনাচক্রে তওবা ব্যতিতই মৃত্যুবরণ করলে তাকে কবর-জগতে আজাব দ্বারা পবিত্র করে
নেওয়া হবে, যাতে পরকালের আজাব ভোগ
করতে না হয়। সূত্র: তাফসিরে জালালাইন-৬/৩৭৮ ইসলামিয়া কুতুবখানা; তাফসিরে
মাআরেফুল কুরআন ১৩৩৪পৃ.সংক্ষিপ্ত
মুহাম্মাদ ইবনে কাআব কুরবি (রা.)-কে কোনো এক ব্যক্তি
জিজ্ঞেস করেছিল যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহাবিগণ সম্পর্কে আপনি কী বলেন ? তিনি
বলেন, সাহাবায়ে কেরামের সবাই জান্নাতবাসী হবেন-যদি দুনিয়াতে
তাঁদের কারও দ্বারা কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েও থাকে তবুও। সে লোকটি জিজ্ঞেস করল, একথা
আপনি কোত্থেকে বলছেন (এর প্রমাণ কী) ?
তিনি
বললেন, কুরআনুল কারিমের আয়াত পড়ে দেখ। وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ এতে
শর্তহীনভাবে সমস্ত সাহাবা সম্পর্কে বলা হয়েছে رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ অবশ্য
তাবেয়িনদের(অথবা সকল মুসলমান) ব্যাপারে اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ –এর শর্তারোপ করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবায়ে
কেরামের সবাই কোনো রকম শর্তাশর্ত ছাড়াই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ধন্য হবেন। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-৫৯১পৃ.সংক্ষিপ্ত-মাওলানা
মুহিউদ্দীন খান (রহ.)
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে নবীরা ব্যতিত
কেউ মাসুম নয়। সাহাবায়ে কেরামের দ্বারা
মাঝে মাঝে ভূল সিদ্ধান্ত হয়েছে। শরিয়াতের পরিভায়ায় তাকে এজতিহাদি খতা বলে।
ইমাম বুখারি একটি বাব কায়েম করেছেন, ‘বিচারক/মুজতাহিদ ইজতিহাদে
সঠিক কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও তার প্রতিদান রয়েছে।’ দলিল
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ،
حَدَّثَنَا حَيْوَةُ، حَدَّثَنِي يَزِيدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْهَادِ، عَنْ
مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ بْنِ الْحَارِثِ، عَنْ بُسْرِ بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ
أَبِي قَيْسٍ، مَوْلَى عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّهُ
سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِذَا حَكَمَ
الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ، وَإِذَا حَكَمَ
فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ ". قَالَ فَحَدَّثْتُ بِهَذَا
الْحَدِيثِ أَبَا بَكْرِ بْنَ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ فَقَالَ هَكَذَا حَدَّثَنِي
أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ. وَقَالَ عَبْدُ
الْعَزِيزِ بْنُ الْمُطَّلِبِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ،
عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ.
আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ (রাহঃ) ... আমর ইবনে
আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
কে এই কথা বলতে শুনেছেন,
কোন
বিচারক ইজতিহাদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে তার জন্য রয়েছে দু’টি পুরস্কার। আর যদি কোন বিচারক ইজতিহাদে
ভুল করেন তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার। রাবী বলেন, আমি হাদীসটি আবু বকর ইবনে
মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে হায়িম (রাহঃ) এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেন, আবু সালামা ইবনে আবদুর
রহমান আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন এবং আবদুল আযীয ইবনে আবদুল
মুত্তালিব আবু সালামা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ)
থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাখরিজ: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮৫০ (আন্তর্জাতিক নং ৭৩৫২)
সুতরাং প্রমাণিত সাহাবাদের
দ্বারা কোন ভুল সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলেও তারা সওয়াব পাবে।
সারকথা হলো, হাদীসের কিতাবের মাঝে যে সনদ আছে। মুহাদ্দিসীনে কেরাম সনদের
প্রতিটি রাবীদের বিষয়ে কালাম করলেও সাহাবাগণের ক্ষেত্রে জারাহ তা’দীলের কিতাবে কোন কালাম নেই। বরং সকলের
ঐক্যমত্ব হলো, সকল সাহাবীগণই ন্যায়নিষ্ঠ
তথা সত্যের মানদণ্ড। [মিরকাত-৫/৫১৭,
উমদাতুল
কারী-২/১০৫]
সুতরাং সকল সাহাবাগণই সত্যের মাপকাঠি। দ্বীন
বুঝার মানদণ্ড। হকের উপর চলার আলোকবর্তিকা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
সহযোগিতায়, মুফতি আসাদুল ইসলাম তানয়িম
জিজ্ঞাসা-১২৪৬৭:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। বিজ্ঞজনের নিকট জানার বিষয় হলো:
শবে মেরাজের রাত্র উপলক্ষে আমল করার ব্যাপারে
হাদিসে কোন নির্দেশনা আছে কিনা? এই রাত্রি উপলক্ষে নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবা কিরাম কি আমল
করতেন? হাদিসের আলোকে জানতে চাই? আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ /তারিখ: ০২/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জিয়াউল হক ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৬৯:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। বিজ্ঞজনের নিকট জানার বিষয় হলো:
শবে মেরাজের রাত্র উপলক্ষে আমল করার ব্যাপারে
হাদিসে কোন নির্দেশনা আছে কিনা? এই রাত্রি উপলক্ষে নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবা কিরাম কি আমল
করতেন? হাদিসের আলোকে জানতে চাই? আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ /তারিখ: ১৭/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম কুড়িগ্রাম থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, রজব মাস সম্মানিত মাস এতে কোন
সন্দেহ নেই। যেমন,
Surah At-Taubah, Verse 36:
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ
اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا
تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا
يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায়
মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত
বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।
সূরা তওবা -৩৬
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ
عَبْدِ الْوَهَّابِ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ
مُحَمَّدٍ، عَنِ ابْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى
الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ
يَوْمَ خَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا
مِنْهَا، أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلاَثٌ مُتَوَالِيَاتٌ، ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو
الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ ".
আব্দুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহাব
(রাহঃ) ... আবু বকর (রাযিঃ) কর্তৃক নবী (ﷺ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেন সেদিন যেভাবে কাল (যামানা) ছিল তা আজও
অনুরূপভাবে বিদ্যমান। বারমাসে এক বছর, তন্মধ্যে চার মাস পবিত্র।
যার তিন মাস ধারাবাহিক যথা যুলক্বাদ, যুলহ্বজ্জ ও মুহাররাম আর
মুযার গোত্রের রজব যা জামাদিউস সানী ও শাবান মাসদ্বয়ের মধ্যবর্তী। তাখরিজ: বুখারি-৪৬৬২, মুসলিম-১৭৬৯
প্রশ্ন: ক। রজব মাসে কি কোন রোজা আছে?
উত্তর: ক। হ্যাঁ, রজব মাসে রোজা আছে। দলিল:
دَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ،
حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ سَعِيدٍ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ أَبِي السَّلِيلِ، عَنْ
مُجِيبَةَ الْبَاهِلِيَّةِ، عَنْ أَبِيهَا، أَوْ عَمِّهَا أَنَّهُ أَتَى رَسُولَ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ انْطَلَقَ صُمْ مِنَ الْحُرُمِ وَاتْرُكْ
صُمْ مِنَ الْحُرُمِ وَاتْرُكْ
মূসা ইবনে ইসমাঈল ..... মুজীবা
আল্-বাহেলীয়্যা তাঁর পিতা হতে অথবা তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তুমি
পবিত্র মাসগুলোতে (মহররম, জিলকদ,
জিলহজ ও রজব মাসগুলোতে) রোযা রাখবে এবং রোযা পরিত্যাগও
করবে। এরূপ তিনি তিনবার বলেন। তাখরিজ: সুনানে আবি দাউদ-২৪২৮
নোট: শায়েখ আলবানি রহ. হাদিসরি সনদকে জয়িফ বলেছেন।
ফজিলত বর্ণনা-আমলের ক্ষেত্রে জয়িফ/দুর্বল হাদিস গৃহীত-গ্রহণীয় যা আহলে এলমেদের নিকট স্বীকৃত।
যেমন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.)
বলেন, “হালাল-হারামের বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে থাকি। তবে ফজিলতের ক্ষেত্রে নমনীয়তা অবল্বমন
করি।” ইমাম নববি(রহ.) বলেন, “ফজিলত, উৎসাহ বা ভীতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে জয়িফ (দুর্বল) হাদিসের আমল করা
উত্তম। কিন্তু জাল হাদিস থেকে পারবে না।” তিনি
আরও বলেন, “এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরাম ঐকমত্য
পোষণ করেছেন।” (সূত্র : আল-আজকার,১১-১২)
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিসের আলোকে ওলামায়ে
কেরাম সম্মানিত চার মাসে (রজব তার মধ্যে একটি) রোজা রাখাকে মুস্তাহাব বলেছেন।
প্রশ্ন: খ। ২৭ রজব তারিখে কোন রোজা, নামাজ বা আমল আছে কিনা?
উত্তর: খ। এ বিষয়ে দুটি মতামত রয়েছে,
প্রথমমত:
নবী করিম (ﷺ) এবং
সাহাবায়ে কেরাম থেকে রজব মাসের রোজা , নামাজ বা কোনা আমল সম্পর্কেও বিশুদ্ধ কোনো হাদিস
বর্ণিত নেই। তাই এটা বিদআত।
যেমন এ সম্পর্কে ইবনুল কাইয়্যেম
(রহ.) বলেন:
وقال ابن القيم رحمه الله:
" كل حديث في ذكر صيام رجب وصلاة بعض الليالي فيه فهو كذب
مفترى." انتهى من "المنار المنيف" (ص96).
“রজব মাসে রোজা রাখা ও নফল নামায পড়ার ব্যাপারে যে কয়টি হাদিস
বর্ণিত হয়েছে সব ক’টি মিথ্যা”[আল মানার আল-মুনিফ, পৃষ্ঠা-
৯৬]
ইবনে হাজার (রহঃ) ‘তাবয়িনুল আজাব’ (পৃষ্ঠা- ১১) বলেন:
وقال الحافظ ابن حجر في
"تبيين العجب" (ص11):
" لم يرد في فضل شهر رجب، ولا في صيامه ولا صيام شيء منه معين، ولا في
قيام ليلة مخصوصة فيه حديث صحيح يصلح للحجة." انتهى.
রজব মাসের ফজিলত, এ মাসে
রোজা রাখা বা এ মাসের বিশেষ বিশেষ দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন কিছু বর্ণিত
হয়নি। অথবা এ মাসের বিশেষ কোন রাত্রিতে নামায পড়ার ব্যাপারে সহিহ কোন হাদিস নেই।
প্রশ্ন: গ। ২৭ রজব নামাজ, রোজা রাখার হুকুম কি?
উত্তর: গ। অধিকাংশ আলেমের মতে, শবে
মেরাজ উপলক্ষে রোজা, নামাজ বিদআত। এ সম্পর্কে শায়েখ ইবনে উসাইমীনকে রজবের সাতাশ তারিখ রোজা রাখা
এবং সেই রাতে নামাজ পড়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।
ا حكم صيام يوم السابع والعشرين
من شهر رجب؟
وسئل الشيخ ابن عثيمين رحمه الله
عن صيام يوم السابع والعشرين من رجب وقيام ليلته.
فأجاب: "صيام اليوم السابع
العشرين من رجب وقيام ليلته وتخصيص ذلك بدعة، وكل بدعة ضلالة." انتهى. "مجموع
فتاوى ابن عثيمين" (20/440).
উত্তরে তিনি বললেনঃ রজবের সাতাশ
তারিখ রোজা রাখা এবং সেই রাতে নামাজে রাত কাটানো বিদআত এবং প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী।
আমি শেষ. মাজমু’ ফাতাওয়া
ইবনে উসাইমীন -20/440
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৭০:
আসসালামু আলাইকুম
নিন্মোক্ত হাদিসের আরবি এবারত ও হাদিস নাম্বার প্রয়োজন,
মেহেরবানি করে কারো জানা থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো
"মেরাজের রাতে আমাকে ৩টি বিষয় দেয়া হয়েছে, পাচওয়াক্ত সালাত, সূরা বাকার শেষ ২ আয়াত, এবং আল্লাহর সাথে যে শরীক করবেনা তার ক্ষমা" । তারিখ: ১৭/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা কামরুল ইসলাম যশোর থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
لما أُسْرِيَ برسولِ اللهِ ،
انتهى به إلى سِدْرَةِ المُنْتَهى ؛ وهي في السماءِ السادسةِ ، وإليها يَنْتَهِي
ما عُرِجَ به مِن تحتِها ، وإليها يَنْتَهِي ما أُهْبِطَ به مِن فوقِها ، حتى
يُقْبَضَ منها . قال : إذ يغشى السدرة ما يغشى قال : فراشٌ مِن ذهبٍ . فأُعْطِيَ
ثلاثًا : الصلواتُ الخمسُ ، وخواتيمُ سورةِ البقرةِ ، ويُغْفَرُ لمَن مات مِن
أمتِه لا يُشْرِكُ باللهِ شيئًا المُقْحِمَاتُ.
الراوي : عبدالله بن مسعود |
المحدث : الألباني | المصدر : صحيح النسائي | الصفحة أو الرقم : 450 | خلاصة حكم
المحدث : صحيح
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৭১:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা তুহ। আমার জানার বিষয় হচ্ছে
"সূরা ফাতিহার সববে নুযূল" কি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো। তারিখ: ১৮/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোহাঃ শামছুল হুদা আনছারী চট্রগ্রাম থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ সূরা
সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেন,
Surah Al-Hijr, Verse 87:
وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا
مِّنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ
আমি আপনাকে সাতটি বার বার পঠিতব্য
আয়াত এবং মহান কোরআন দিয়েছি।
সূরা হিজর-৮৭
সূরা মক্কা মুকাররামায়
অবতীর্ণ। সূরা ফাতিহার শানে নুযুল সম্পর্কে কয়েকটি বর্ণনা রয়েছে, তার মধ্যে একটি নিচে উল্লেখ
করছি:
إنَّ رسول الله عليه الصّلاة
والسّلام (لما شكا إلى خديجة ما يجده عند أوائل الوحي، فذهبت به إلى ورقة فأخبره،
فقال له: إذا خلوت وحدي سمعت نداء خلفي: يا محمد يا محمد يا محمد! فأنطلق هاربًا
في الأرض، فقال: لا تفعل! إذا أتاك فاثبت حتّى تسمع ما يقول، ثم ائتني فأخبرني.
فلما خلا ناداه يا محمد، قل: بسم الله الرّحمن الرّحيم، حتّى بلغ ولا الضالّين).
أنَّ رسولَ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ
علَيهِ وسَلَّمَ كانَ إذا برَزَ سَمِعَ منادِيًا ينادي يا مُحمَّدُ فإذا سَمعَ
الصَّوتَ انطلَق هارِبًا فقال له ورَقَةُ بنُ نَوفَلٍ إذا سَمِعتَ النِّداءَ
فاثبُتْ حتَّى تَسمَعَ ما يقولُ لكَ فلمَّا برزَ سمِعَ النِّداءَ فقالَ لبَّيكَ
قال قُلْ أَشهَدُ أَن لا إِلهَ إِلَّا اللَّهُ وأشهَدُ أنَّ مُحمَّدًا رسولُ
اللَّهِ ثُمَّ قُلْ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
حتَّى فرغَ مِن فاتِحَةِ الكِتابِ
الراوي : عمرو بن شرحبيل |
المحدث : ابن حجر العسقلاني | المصدر : العجاب في بيان الأسباب
الصفحة أو الرقم : 1/224 | خلاصة
حكم المحدث : مرسل ورجاله ثقات
অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাল্লাহু
তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাল্লাহু তা'আলা
আনহাকে বলেন, "আমি এক আহবান শুনে থাকি, যাতে
'ইক্বরা' (আপনি পড়ুন!) বলা হয়।" ওয়ারক্বাহ
ইবনে নওফলকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হলো। তিনি আরয করলেন, "যখন এ আহবান আসে তখন আপনি স্থিরচিত্তে তা শ্রবন করুন।" এরপর হযরত জিবরাঈল
(আলাইহিস সালাম) হুযুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে
হাযির হয়ে আরয করলেন, আপনি বলুন,
"বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহীম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।" সূত্র: আলইজাবু ফি বায়ানিল আসবাব-১/২৪৪, ইবনে হাজার আসকালানি রহ.
এ থেকে বুঝা যায় যে, অবতরণের
দিক দিয়া এটাই প্রথম সূরা। কিন্তু অন্যান্য বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, সর্ব
প্রথম 'সূরা ইক্বরা'
নাযিল
হয়েছে।
সারকথা সূরা ফহিতা পূর্ণাঙ্গ
নাজিলকৃত সূরা আর প্রথম আয়াত/ওহি হলো ‘ইকরা বিসমি,। দো'আ বা প্রার্থনার তরীক্বা শিক্ষা দেওয়ার জন্য এ সুরার
বর্ণনাভঙ্গি বান্দাদের ভাষাই এরশাদ হয়েছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৭২:
আস্সালামু
আলাইকুম, শাইখ দুড়ুল্লা কোন ভাষার শব্দ।
দুড়ুল্লা অর্থ কী। কোন মানুষ নিজেকে অথবা অন্য মানুষকে
এশকে দুড়ুল্লা বলে দাবি করতে পারবে। কুরআন হাদীসের আলোকে উত্তরটা জানালে উপকৃত
হবো। তারিখ: ১৯/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা
আনোয়ারুল আম্বিয়া যশোর
থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
আপনার
প্রশ্নের আলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করছি:
প্রশ্ন:
ক। দুড়ুল্লা/দুরুল্লাহ কোন ভাষার শব্দ?
উত্তর:
ক। দুড়ুল্লা মূলত আরবি শব্দ। دور الله (দুরুল্লাহ) আরবি শব্দ থেকে উৎসারিত।
প্রশ্ন:
খ। দুরুল্লাহ অর্থ কি?
উত্তর:
খ। দুরুল্লাহ যৌগিক শব্দ। دور و الله ر (দুরুন ও আল্লাহ ) دور শব্দটি دار এর শব্দের বহুবচন। دار অর্থ ঘর, বাড়ি ইত্যাদি। সুতরাং
দুরুল্লাহ অর্থ হলো আল্লাহর ঘর (কাবা শরীফ)।
প্রশ্ন:
গ। কোন মানুষ নিজেকে অথবা অন্য মানুষকে এশকে দুরুল্লা বলতে পারে কি?
উত্তর:
গ। ইশক ( আরবি : عشق ) একটি আরবি শব্দ যার অর্থ "ভালোবাসা" বা
"আবেগ",। মুসলিম বিশ্বের এবং ভারতীয় উপমহাদেশের
অন্যান্য ভাষায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় ।
উল্লেখ্য
যে , عشق (এশক)
শব্দটি মাসদার কিন্তু কখনো মাসদারও ইসমে ফায়েলের অর্থে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং অর্থ
দাঁড়ায় প্রেমিক, পাগল, দেওয়ানা ইত্যাদি।
সারকথা
হলো, এশকে দুরুল্লাহ মানে হলো
আল্লাহর ঘরের প্রেমিক, দেওয়ানা বা পাগল।
কোন
মানুষ সাধারণত নিজেকে কোন কিছু দাবি করে না। তবে অন্য কেউ তাকে উপাধি দিলে দোষ
নেই।
দলিল:
Surah Al-Hujraat, Verse
11:
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا
خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا
مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ
الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ
الظَّالِمُونَ
একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো
না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে
তওবা না করে তারাই যালেম। সূরা হুজুরাত-১১
এ
আয়াত থেকে বোঝা যায় মন্দ নামের পরিবর্তে ভালো নামে, ভালো/ সুন্দর উপাধিতে ডাকা যাবে।
সুন্দর
নাম মানসিকতা ও স্বভাবের উপর নামের প্রভাব পড়ে। তাই তো আমাদের প্রিয় নবি (ﷺ) সাহাবাদেরকে নাম পরিবর্তন ও সুন্দর সুন্দর
উপাধিতে ডাকতেন। যেমন,
হাদিস
নং-০১
أَخْبَرَنِي
عَبْدُ الحَمِيدِ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ شَيْبَةَ، قَالَ: جَلَسْتُ إِلَى سَعِيدِ
بْنِ المُسَيِّبِ، فَحَدّثَنِي: أَنّ جَدّهُ حَزْنًا قَدِمَ عَلَى النّبِيِّ صَلّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَقَالَ: مَا اسْمُكَ؟ قَالَ: اسْمِي حَزْنٌ، قَالَ: بَلْ
أَنْتَ سَهْلٌ. قَالَ: مَا أَنَا بِمُغَيِّرٍ اسْمًا سَمّانِيهِ أَبِي قَالَ ابْنُ
المُسَيِّبِ: فَمَا زَالَتْ فِينَا الحُزُونَةُ بَعْدُ.
আবদুল
হুমাইদ বিন শায়বা বলেন, আমি হযরত সাঈদ ইবনুল
মুসায়্যিবের কাছে বসা ছিলাম। তিনি তখন বললেন, আমার
দাদা ‘হাযান’ একবার নবীজীর দরবারে উপস্থিত হলেন। নবীজী তাকে
জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? দাদা বললেন, আমার
নাম হাযান। (হাযান অর্থ শক্তভূমি) নবীজী বললেন- না, তুমি
হচ্ছ ‘সাহল’ (অর্থাৎ তোমার নাম হাযানের পরিবর্তে সাহল রাখো; সাহল অর্থ, নরম
জমিন।) দাদা বললেন, আমার বাবা আমার যে নাম
রেখেছেন আমি তা পরিবর্তন করব না। সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন, এর ফল এই হল যে, এরপর
থেকে আমাদের বংশের লোকদের মেযাজে রুঢ়তা ও কর্কশভাব রয়ে গেল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৯৩
হাদিস নং-০২
মুহাম্মাদ
ইবনে আমর ইবনে আতা বলেন, আমি আমার মেয়ের নাম রাখলাম-
বাররা (নেককার, ভালো মানুষ)। তখন যয়নব বিনতে
আবি সালামা বললেন-
سُمِّيتُ
بَرّةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لَا تُزَكّوا
أَنْفُسَكُمْ، اللهُ أَعْلَمُ بِأَهْلِ الْبِرِّ مِنْكُمْ فَقَالُوا: بِمَ
نُسَمِّيهَا؟ قَالَ: سَمّوهَا زَيْنَبَ.
আমার
নাম ছিল, বাররা। নবীজী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেরা নিজেদের
পবিত্রতা ঘোষণা কোরো না। (কারণ,
বাররা
অর্থ, ভালো, নেককার, পূত-পবিত্র)
আল্লাহই জানেন তোমাদের মধ্যে ভালো ও পূত-পবিত্র কারা। জিজ্ঞেস করা হল, তাহলে আমরা তার কী নাম রাখতে পারি? তখন নবীজী বললেন, তার
নাম যয়নাব রাখ। (নবীজীর আদেশে তখন বাররা নাম পরিবর্তন করে তার নাম যয়নাব রাখা হল।)
তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৪২
হজরত
আবু বকর রা. কে সিদ্দিক এবং ওমর হলেন আল-ফারুক। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেই রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ``হে
আল্লাহর রাসূল! বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা কত? রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, ``তোমাকে
নিয়ে ৪০ (চল্লিশ) জন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এটাই
যথেষ্ট। আজ থেকে আমরা এই চল্লিশ জনই কাবা গৃহে গিয়ে প্রকাশ্যে মহান আল্লাহ তাআলার
ইবাদাত করবো। ভরসা মহান আল্লাহর। অসত্যের ভয়ে আর সত্যকে চাপা পড়ে থাকতে দেব না।
সেদিনই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে "ফারুক" উপাধি দেন।
হজরত
আলি রা.কে আসাদুল্লাহ এবং বীরশ্রেষ্ঠ খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. কে সাইফুল্লাহ উপাধিতে
ভূষিত করেন। উপাধি দেওয়া,
শেষ কথা হলো, কোন লোককে এশকে দুরুল্লাহ
ডাকা
কোন সমস্যা নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৭৩:
আস সালামু আলাইকুম। অন লাইনে বিয়ে বিষয়ে শরীয়ত এর দৃষ্টি ভংগী জানালে কৃতজ্ঞ হব। তারিখ: ২১/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মাহমুদুল করিম সাভার ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক বিবেকবান মুসলিম সাক্ষীর সামনে পাত্র/পাত্রী
প্রস্তাব দিবে আর অপরপক্ষ পাত্র/পাত্রী তা কবুল করবে। আর সাক্ষীগণ উভয়ের কথা সুষ্পষ্টভাবে
শুনবে। দলিল:
عَنْ عَائِشَةَ ، أَنّ رَسُولَ
اللَّهِ ﷺ قَالَ لا نِكَاحَ إِلا بِوَلِيٍّ وَشَاهِدَيْ عَدْلٍ ، وَمَا كَانَ مِنْ
نِكَاحٍ عَلَى غَيْرِ ذَلِكَ ، فَهُوَ بَاطِلٌ
আয়শা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, অভিবাক
ও দু’জন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষীর উপস্থিতি ব্যতিত বিয়ে শুদ্ধ
হয় না। যে বিবাহ অভিবাক ও সাক্ষীর উপস্থিতি ব্যতিত হবে তা বাতিল। তাখরিজ: সহিহ ইবন হিব্বান-৪০৭৫
আল-লাজনাতুদ্দায়িমাহ লিল-ইফতা, সৌদি
আরব-এর ফতোয়াও এটাই যে, টেলিফোন বা মোবাইলে বিবাহ বৈধ হবে না। যেমন, সেখানে
বলা হয়েছে,
نظرا إلى عناية الشريعة
الإسلامية بحفظ الفروج والأعراض ، والاحتياط لذلك أكثر من الاحتياط لغيرها من عقود
المعاملات – رأت اللجنة أنه ينبغي ألا يعتمد في عقود النكاح في الإيجاب والقبول
والتوكيل على المحادثات التليفونية ؛ تحقيقا لمقاصد الشريعة ، ومزيد عناية في حفظ
الفروج والأعراض حتى لا يعبث أهل الأهواء ومن تحدثهم أنفسهم بالغش والخداع
নারীর সম্ভ্রম ও ইজ্জতের হেফাজত, বিবাহের
গুরুত্ব, ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে নিরাপত্তা এবং ইসলামি শরিয়তের
মাকাসিদের প্রতি লক্ষ্য করে ফাতওয়া বোর্ড এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, বিবাহের
ইজাব-কবুল ও প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে ফোনের কথোপকথনের ওপর নির্ভর করা উচিত হবে না।
সূত্র: ফাতওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাহ
১৮/৯০
আর শরয়ী এ শর্তাবলী পরিপূর্ণভাবে
(হ্যাকিং, ক্লোনিং,
ভয়েস
চেঞ্জিং, এডিটিং ও অন্যান্য সমস্যার আশঙ্কা থাকার কারণে)
টেলিফোনে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই মোবাইলে বিবাহ করা জায়েয নয়। সূত্র: ফাতওয়ায় উসমানী-২/৩০৪,৩০৫
দ্বিতীয় কথা হলো,
فى خلاصة الفتاوى- إمراة وكلت
رجلا بأن يزوجها من نفسه فقال الوكيل اشهدوا انى قد تزوجت فلانة من نفسى إن لم
يعرف الشهود فلانة لا يجوز النكاح مالم يذكر إسمها وإسم ابيها وجدها، وإن عرف
الشهود فلانة وعرفوا أنه اراد به تلك المرأة يجوز، (خلاصة الفتاوى-2/15
অর্থাৎ যদি বর ওকীল নিয়োগ দিয়ে থাকে, আর উক্ত
ওকীলের সম্মতিতে বা নির্দেশে ও উপস্থিতিতে কনেকে দুইজন সাক্ষীর সামনে প্রস্তাব করার
পর কনে কবুল করে থাকে, তাহলে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে। সূত্র: খুলাসুল ফাতাওয়া-২য় খণ্ড,১৫
পৃ.
সারকথা হলো, সরাসরি
মোবাইলে বা টেলিফোনে (অনলাইনে) প্রস্তাব ও কবুল করার দ্বারা বিবাহ সহীহ হবে
না। তবে ছেলের পক্ষ থেকে ওয়াকিল নিয়োগ করলে হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৭৪:
প্রিয় বন্ধু, আব্দুর রাজ্জাক, আসসালামুয়ালাইকুম, প্রাইজ বন্ডের ড্রয়ের টাকা
গ্ৰহনের ব্যাপারে মতামত জানতে চাই। ধন্যবাদ। তারিখ: ২২/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জিয়াউল হক ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, প্রাইজবন্ড ক্রয় করা এবং ড্র এর
মাধ্যমে পাওয়া পুরষ্কার/টাকা ব্যবহার করা হালাল কিনা?
অধিকাংশ এবং অনুসন্ধানী
আলেমদের মতে বর্তমান প্রচলিত প্রাইজ বন্ড ও ড্র পদ্ধতিতে সুদের শামিল হওয়ায় তা ক্রয় করা এবং
লাভ
নেওয়া জায়েজ নয়।
কেননা, সরকার প্রাইজবন্ড ছাড়ে। যা
যে কোনো ব্যাংক থেকে ভাঙ্গানো যায়। একটা নির্ধারিত মেয়াদের পর লটারীর মাধ্যমে
ড্র করা হয়। এরপর বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরস্কারটাই রিবা
নাসিয়্যাহ বা সুদ। প্রাইজবন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে ব্যাংককে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। আর
ব্যাংক প্রাইজ বা পুরস্কার দেয়ার নামে ক্রেতাকে সুদ দিচ্ছে। আর সুদ
সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। দলিল:
قوله تعالى- وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ
الرِّبَا
অনুবাদ-আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন, আর
সুদকে করেছেন হারাম। {সূরা বাকারা-২৭৫}
قوله تعالى- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ
اللَّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ (278
অনুবাদ-হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় পাও। আর সুদের অংশকে
ছেড়ে দাও যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। {সূরা বাকারা-২৭৮}
عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم
قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-“যে
সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার
সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ
তায়ালা অভিশাপ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ,
হাদিস
নং-৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস
নং-৪৯৮১)
সারকথা হলো,
প্রাইজবন্ড
একটি ঋণ, আর ঋণ থেকে ফায়দা নেওয়া সুদের অন্তর্ভুক্ত।
তাই প্রচলিত প্রাইজবন্ড জায়েজ নেই। সূত্র: ফাতওয়ায়ে উসমানি -৩/১৭৩-১৭৬
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৭৫:
আমার জিজ্ঞাসা কেউ বেতের বাকি রেখে ঘুমিয়ে গেল শেষ রাতে পড়বে বলে,কিন্তু পড়তে পারলনা,বেতের সে কখন কিভাবে আদায়
করবে। তারিখ: ২২/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুস সালাম সাভার থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আমরা জানি সুবহে সাদিক পর্যন্ত
বেতর নামাজ আদায় করা যায়। দলিল:
মর্মে হাদিস হল:
▪আবূ সা’ঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«أَوْتِرُوا قَبْلَ أَنْ تُصْبِحُوا» رَوَاهُ مُسْلِمٌ
“ভোর (ফজর) হওয়ার পূর্বে তোমরা বিতর সালাত আদায় করো।
[সহীহ মুসলিম ৭৫৪।]
দ্বিতীয় কথা হলো, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত
পযন্ত কোন নফল নামাজ জায়েজ নেই। দলিল:
حَدَّثَنِي أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ
الْحَكَمِ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ زَيْدِ
بْنِ مُحَمَّدٍ، قَالَ سَمِعْتُ نَافِعًا، يُحَدِّثُ عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ
حَفْصَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا طَلَعَ
الْفَجْرُ لاَ يُصَلِّي إِلاَّ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ .
আহমাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হাকাম (রাহঃ) ... হাফসা
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফজরের সময় হলে সংক্ষিপ্ত দু’রাক’আত ছাড়া অন্য কোন নামায আদায়
করতেন না। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৫১ (আন্তর্জাতিক নং ৭২৩-৩)
الجزء رقم :1، الصفحة رقم:443
419 حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدَةَ الضَّبِّيُّ ، قَالَ
: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ ، عَنْ قُدَامَةَ بْنِ مُوسَى ،
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْحُصَيْنِ ، عَنْ أَبِي عَلْقَمَةَ ، عَنْ يَسَارٍ مَوْلَى
ابْنِ عُمَرَ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ : " لَا صَلَاةَ بَعْدَ الْفَجْرِ إِلَّا سَجْدَتَيْنِ ".
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘সুবহে
সাদিক হওয়ার পর দুই রাকাত সুন্নত ছাড়া কোনো (নফল) নামাজ পড়া যাবে না। (মুসান্নাফে আবদুর
রাজ্জাক, হাদিস : ৪৭৫৭)
وَفِي الْبَابِ عَنْ عَبْدِ
اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو وَحَفْصَةَ. حَدِيثُ ابْنِ عُمَرَ حَدِيثٌ غَرِيبٌ لَا
نَعْرِفُهُ إِلَّا مِنْ حَدِيثِ قُدَامَةَ بْنِ مُوسَى، وَرَوَى عَنْهُ غَيْرُ
وَاحِدٍ. وَهُوَ مَا أَجْمَعَ عَلَيْهِ أَهْلُ الْعِلْمِ، كَرِهُوا أَنْ يُصَلِّيَ
الرَّجُلُ بَعْدَ طُلُوعِ الْفَجْرِ إِلَّا رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ. وَمَعْنَى هَذَا
الْحَدِيثِ إِنَّمَا يَقُولُ : لَا صَلَاةَ بَعْدَ طُلُوعِ الْفَجْرِ إِلَّا رَكْعَتَيِ
الْفَجْرِ.
حكم الحديث: صحيح
সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন- ‘(ফজরের) আজানের পর দুই রাকাত সুন্নত ছাড়া কোনো (নফল)
নামাজ নেই।’ (মুসান্নাফে
আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৪৭৫৬)
তৃতীয় কথা হলো, সুবহে সাদিকের পূর্বে বেতর
আদায় করতে না পারলে হারাম ওয়াক্ত ব্যতিত যে কোন সময় আদায় করে নিবে। দলিল:
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ نَامَ عَنِ
الْوِتْرِ أَوْ نَسِيَهُ فَلْيُصَلِّ إِذَا أَصْبَحَ أَوْ ذَكَرَهُ
“যে ব্যক্তি বিত্র সালাত না পড়ে ঘুমিয়ে গেলো বা
তা পড়তে ভুলে গেলো, সে যেন ভোরবেলা অথবা যখন তার স্মরণ হয় তখন তা পড়ে নেয়। [তিরমিযী ৪৬৫,আহমাদ ১৪৩১
সারকথা হলো, শেষ রাতে বা সুবহে
সাদিকের পূর্বে বেতের আদায় করতে না পারলে, ফজর নামাজের সময় অথবা সূর্য উদিত হলে, দিনে অর্থাৎ হারাম ওয়াক্ত ব্যতিত যে কোন কোন সময় আদায় করে নিবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৭৬:
আসসালামুয়ালাইকুম । "ইসলামের দৃষ্টিতে সৈনিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য" সম্পর্কে লেশন প্লান
দরকার। অগ্রীম জাঝাকাল্লাহ। তারিখ: ২৪/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আসাদুল হক, ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
ক। আল্লাহ তাআলার ওপর ঈমান: একজন মানুষের সর্বপ্রথম দায়িত্ব মহান রবের প্রতি
ঈমান আনা। আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস ও ভালবাসায় তাকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে তা জীবন
বিলিয়ে দিবে। ঈমান ও আল্লাহর ভালবাসা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
আয়াত নং-০১
Surah Al-Burooj, Verse 11:
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِيرُ
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্যে আছে জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নির্ঝরিণীসমূহ।
এটাই মহাসাফল্য। সূরা বুরুজ -১১
আয়াত নং-০২
Surah
Al-Baqara, Verse 165:
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللَّهِ
أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا
لِّلَّهِ
আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর
সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন
আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা
ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। সূরা বাকারা-১৬৫
খ। ওয়াদা পূর্ণ করা:
একজন সেনাসদস্য রিক্রুট ট্রেনিং পর যখন পবিত্র কুরআন
নিয়ে গ্রহণ করে। সে তার জীবন বিপন্ন করিয়ে
হলেও নিজ ও জাতিকে রক্ষা করবেন। আর ওয়াদা রক্ষার
ব্যাপারে আদেশ হলো, یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَوۡفُوۡا
بِالۡعُقُوۡدِ অর্থ: ওহে মু’মিনগণ!
তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর। সূরা মায়েদা-০১
গ। নেতা/ সিনিয়রের আনুগত্য করা:
একজন সৈনিকের অন্যতম দায়িত্ব হলো, সিনিয়রের
আনুগত্য করা:
যেমন আল্লাহ
বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ
وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ- হে বিশ্বাসীগণ!
তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের। সূরা নিসা-৫৯
হাদিস নং-০১
,مَنْ أَطَاعَنِى فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَانِى
فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمَنْ يُطِعِ الأَمِيْرَ فَقَدْ أَطَاعَنِى، وَمَنْ يَعْصِ
الأَمِيْرَ فَقَدْ عَصَانِى-
রাসূল (ﷺ) বলেন, যে আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর
আনুগত্য করল। আর যে আমার অবাধ্যতা করল সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। আর যে ব্যক্তি আমীরের
আনুগত্য করল সে আমারই আনুগত্য করল,
আর যে
ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করল সে আমারই অবাধ্যতা করল”। তাখরিজ: বুখারী-২৯৫৭, ৭১৩৭; মুসলিম-১৮৩৫; মিশকাত-৩৬৬১
হাদিস নং-০২
আমীরের
আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিলে কিয়ামতের দিন তার কোন দলীল থাকবে না। রাসূল (ﷺ) বলেন,مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ
لَقِىَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ حُجَّةَ لَهُ যে ব্যক্তি তার হাতকে আনুগত্য থেকে মুক্ত করে নিল, সে ক্বিয়ামতের
দিন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে এমন অবস্থায় যে,
তার
কোন দলীল থাকবে না। তাখরিজ: মুসলিম-১৮৫১; মিশকাত-৩৬৭৪
ঘ। আমানত রক্ষা: এ সম্পর্কে
আল্লাহ তাআলা বলেন, وَالَّذِينَ هُمْ
لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ- ‘আর যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে’
। সূরা মুনিনুন-৮
এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে-
হাদিস নং-০১
আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,أَرْبَعٌ إِذَا كُنَّ فِيكَ فَلاَ عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنَ
الدُّنْيَا : حِفْظُ أَمَانَةٍ وَصِدْقُ حَدِيثٍ وَحُسْنُ خَلِيقَةٍ وَعِفَّةٌ فِي
طُعْمَةٍ- ‘চারটি বিষয় যদি তোমার মধ্যে থাকে, তাহ’লে দুনিয়ায় তুমি কি ছেড়ে গেলে সেটা দেখার বিষয় থাকবেনা। ১. আমানত
রক্ষা করা। ২. সত্য কথা বলা। ৩. সচ্চরিত্রতা এবং ৪. হালাল ও পবিত্র জীবিকা’। তাখরিজ:
আহমাদ হা/৬৬৫২; বায়হাক্বী শো‘আব হা/৪৮৭৮; মিশকাত
হা/৫২২২ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়;
ছহীহাহ
হা/৭৩৩
হাদিস নং-০২
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন,قَلَّمَا خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-
إِلاَّ قَالَ : لاَ إِيمَانَ لِمَنْ لاَ أَمَانَةَ لَهُ، وَلاَ دِينَ لِمَنْ لاَ
عَهْدَ لَهُ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের নিকট খুব কমই ভাষণ দিতেন যেখানে তিনি
বলতেন না যে, ঐ ব্যক্তির ঈমান নেই, যার
আমানতদারিতা নেই। আর ঐ ব্যক্তির দ্বীন নেই,
যার
অঙ্গীকার ঠিক নেই’। তাখরিজ: বায়হাক্বী শো‘আব হা/৪০৪৫;
মিশকাত
হা/৩৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩০০৪
ঙ। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা: এ বিষয়ে
কুরআনুল মাজিদের নির্দেশনা হলো,
وَ اَعِدُّوۡا لَهُمۡ مَّا اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ قُوَّۃٍ
وَّ مِنۡ رِّبَاطِ الۡخَیۡلِ تُرۡهِبُوۡنَ بِهٖ عَدُوَّ اللّٰهِ وَ عَدُوَّکُمۡ وَ
اٰخَرِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِهِمۡ ۚ لَا تَعۡلَمُوۡنَهُمۡ ۚ اَللّٰهُ یَعۡلَمُهُمۡ ؕ وَ
مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ یُوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ
اَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ
অর্থ: আর
প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থের
মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে,যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শত্রুদের
ওপর এবং তোমাদের শত্রুদের ওপর আর তারেকে ছাড়া
অন্যান্যদের ওপর ও যাদেরকে তোমরা জান না;
আল্লাহ
তাদেরকে চেনেন। বস্তুত যা কিছু তোমরা ব্যয়
করবে আল্লাহর রাহে, তা তোরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন
হক অপূর্ণ থাকবে না। সূরা আনফাল-৬০
চ। অসহায়- মাজলুমকে সাহায্য করা:
এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনের নির্দেশ হলো,
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ مَا لَکُمۡ لَا تُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ
وَ الۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الۡوِلۡدَانِ الَّذِیۡنَ
یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡ هٰذِهِ الۡقَرۡیَۃِ الظَّالِمِ اَهۡلُهَا
ۚ وَ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ وَلِیًّا ۚۙ وَّ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ
لَّدُنۡکَ نَصِیۡرًا
অর্থ: তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা
আল্লাহর পথে এবং অসহায় নারী-পুরুষ আর শিশুদের (রক্ষার) জন্য লড়াই করবে না, যারা
দু‘আ করছে- ‘হে আমাদের
প্রতিপালক! আমাদেরকে এ যালিম অধ্যূষিত জনপথ হতে মুক্তি দাও, তোমার
পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের বন্ধু বানিয়ে দাও এবং তোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের সাহায্যকারী
করে দাও। সূরা নিসা-৭৫
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে, জাতিসংঘের
শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী, ১৯৮৮ সালের ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ)
মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে যে অগ্রযাত্রার সূচনা হয়, পরবতীর্
বছরগুলোতে দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাদারিত্ব ও কর্মস্পৃহার
মৃর্তপ্রতীক হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিজেদের অবস্হান সুসংহত করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫টি কন্টিনজেন্টকে ইউনাইটেড
নেশনস ক্যাপাবিলিটি রেডিনেস সিস্টেম (ইউএনপিসিআরএস-এর অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে।
অনন্য মাত্রার অধিকারী আফ্রিকা মহাদেশের ১৫০টির
বেশি মিলিশিয়া বাহিনীর নিরন্তর সংঘাতের পটভূমিতে নিবেদিতপ্রাণ নীল শিরস্ত্রাণধারী বাংলাদেশি
শান্তিরক্ষীদের কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী আজ ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
বাংলাদেশ বর্তমানে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী
দেশ হিসেবে ৯টি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব
পালন করছে। তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক,
২৯ মে
২০২২
ছ। পেশাগত দায়িত্ব পালন করা: চাকুরী এটি জীবিকা
নির্বাহে উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত। এসব চাকুরীর ক্ষেত্রে ইসলামের মূল
দর্শন হলো প্রত্যেক চাকুরে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ নিষ্ঠা, আন্তরিকতা
ও সচ্ছতার সাথে পালন করবে। রাসূল (ﷺ) এ বিষয়ের মূলনীতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
«كلكم راع، وكلكم مسئول عن رعيته »
অর্থ: তোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল। তোমাদের
প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ইমাম বুখারী-৮৯৩ ; ইমাম
মুসলিম-১৮২৯
জ। সত্যবাদী হওয়া: সত্যবাদিতা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে
সকল মানুষের নিকট একটি প্রিয় ও কাঙ্ক্ষিত গুণ। পক্ষান্তরে অসত্য ও মিথ্যাবাদিতা ঘৃণিত
সবার কাছে।
কুরআনের বাণী-
Surah
Al-Ahzab, Verse 70:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ
وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।
সূরা আহযাব -৭০
হাদিসের বাণী-
عليكم بالصِّدق، فإنَّ الصِّدق يهدي إلى البرِّ، وإنَّ
البرَّ يهدي إلى الجنَّة، وما يزال الرَّجل يصدق، ويتحرَّى الصِّدق حتى يُكْتَب
عند الله صدِّيقًا
অর্থ: তোমরা সত্যকে অবলম্বন কর। কারণ সত্যবাদিতা ভালো কাজে উপনীত করে।
আর ভালো কাজ উপনীত করে জান্নাতে। মানুষ সত্য বলে ও সত্যবাদিতার অন্বেষায় থাকে, একপর্যায়ে সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী
হিসেবে লিখিত হয়ে যায়। সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬০৭
ঝ। মিথ্যা কথা না বলা: মিথ্যাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই
কেবল ঘৃণা করা হয় না বরং সব বর্ণের-ধর্মের মানুষ মিথ্যাকে ঘৃণা করে। যারা কোনো ধর্ম
মানে না, তারাও মিথ্যাকে ঘৃণা করে। যারা অনর্গল মিথ্যা বলে, তারাও
মিথ্যাকে ঘৃণা করে। মিথ্যাবাদীও চায়,
অন্যেরা
তার সঙ্গে সত্য কথা বলুক।
কুরআনের বাণী-
وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ
অর্থ: মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক। সূরা হজ-৩০
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. বলেন-
إياكم والكذب فإنه مجانب
الإيمان
‘তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাক, কারণ মিথ্যা ঈমানের পরিপন্থী।’
-আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শায়বা,
হাদীস
২৬১১৫
হযরত সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-
يطبع المؤمن على كل شيء إلا
الكذب والخيانة
অর্থাৎ মুমিনের মধ্যে স্বভাবগত
বিভিন্ন দোষত্রুটি থাকতে পারে। إلا الكذب والخيانة তবে সে মিথ্যুক ও প্রতারক হতে পারে না। -আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শায়বা,
হাদীস
৩০৯৭৫
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৭৪:
প্রিয় বন্ধু, আব্দুর রাজ্জাক, আসসালামুয়ালাইকুম, প্রাইজ বন্ডের ড্রয়ের টাকা
গ্ৰহনের ব্যাপারে মতামত জানতে চাই। ধন্যবাদ। তারিখ: ২২/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জিয়াউল হক ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৭৭:
একজন অফিসার জানতে চেয়েছেন,বাস্তব আর ছবির হুকুম একি রকম কিনা,বাস্তবে দেখা আর ছবিতে দেখা একি রকম অপরাধ মোবাইলে আমরা নানা রকম ছবি দেখে থাকি,এগুলো দেখা কি ধরনের অপরাধ ,জানতে চাই। তারিখ:
২৫/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুস সালাম সাভার, ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, নজর হিফাজত করা। দলিল:
আয়াত নং-০১
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ
وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا
يَصْنَعُونَ (30) وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ
وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ الخ
অর্থ: “মুমিনদেরকে বলুন, তারা
যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম
পন্থা। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদের বলুন তারা
যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। সূরা নূর-৩০,৩১
আয়াত নং-০২
إِنَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ
كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا
“নিশ্চয়
কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদর
প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে”। সূরা
ইসরা: ৩৬
দ্বিতীয় কথা হলো, রাসূল এর যুগে আধুনিক ছবি,ভিডিও ছিল না। হজরতে ফোকাহায়ে কেরাম পর্দার বিধানকে কিয়াস করে হুকুম
দিয়েছেন যে, যাদের সঙ্গে পর্দা করা তথা দেখা জায়েজ নেই,
তাদের ছবি/ভিডিও দেখাও জায়েজ নেই। দলিল:
أن ما لا يجوز النظر إليه، لا يجوز النظر إلى صورته،
سواء في ذلك الأشخاص أو العورات. وأن النظر المحرم إنما منع منه خشية الفتنة
والشهوة، وهذا موجود في النظر إلى الصور أيضا. وراجع في ذلك الفتوى رقم: 352300.
অর্থাৎ যে জিনিসের দিকে বা যাকে দেখা/তাকানো জায়েয নয়, তার
প্রতিচ্ছবি দেখাও জায়েয নয়, তা সে মানুষ হোক বা গোপনাঙ্গে।
আর যে নিষিদ্ধ তাকানো শুধুমাত্র ফিতনা ও লালসার ভয়ে তা থেকে বিরত থাকে এবং এটি ছবি
দেখার ক্ষেত্রেও বিদ্যমান। সূত্র: হুকমুন নজরি ইলা
ছুরিল আওরাত, ফাতওয়া নং-৩৫২৩০০
আর তৃতীয় কথা হলো, অশ্লীল, (পরে্নাগ্রাফি)
ছবি/ভিডিও দেখা হারাম। দলিল:
আয়াত নং-০১
Surah
Al-Araf, Verse 33:
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ
مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا
بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا
لَا تَعْلَمُونَ
আপনি বলে দিন, আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল
বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গোনাহ। সূরা ইসরা -৩৩
আয়াত নং-০২
Surah
Al-Isra, Verse 32:
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً
وَسَاءَ سَبِيلًا
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল
কাজ এবং মন্দ পথ। সূরা ইসরা -৩২
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোন জিনিস নিজস্বভাবে
নিষিদ্ধ না হলেও তাতে যদি কোন নিষিদ্ধ বস্তুর কারণ বা মাধ্যম হওয়ার আশংকা থাকে, তবে তাও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সুতরাং যে কাজ/কর্ম/দেখা হারামের দিকে নিয়ে যাবে
তা হারাম।
সারকথা হলো, সাধারণ অবস্থায় যাকে দেখা জায়েজ নেই (চৌদ্দ শ্রেণীর লোক ব্যতিত), তার ছবি/ভিডিও দেখা জায়েজ নেই। যাকে দেখা জায়েজ , তার ছবি/ভিডিও
দেখাও জায়েজ। বর্তমান নেটের জগতে খুবই
সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা, অবাঞ্চিত, ভীননারী-পুরুষের
ছবি/ভিডিও অনিচ্ছায় আসলে এড়িয়ে চলা কর্তব্য।
শেষ কথা হলো, যাদেরকে সাধারণ অবস্থায় দেখা জায়েজ নেই, তাদের ছবি/ভিডিও
দেখা চোখের যিনার সমতুল্য। কেননা চোখের ব্যভিচার হলো দেখা। দলিল:
ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَا رَأَيْتُ شَيْئًا أَشْبَهَ
بِاللَّمَمِ مِمَّا قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
" إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنَ الزِّنَا، أَدْرَكَ
ذَلِكَ لاَ مَحَالَةَ، فَزِنَا الْعَيْنِ النَّظَرُ، وَزِنَا اللِّسَانِ
الْمَنْطِقُ، وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي، وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ
كُلَّهُ وَيُكَذِّبُهُ ".
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা বানী আদমের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে
অবশ্যই জড়িত হবে। চোখের যিনা হলো দেখা,
জিহবার
যিনা হলো কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খাহেশ সৃষ্টি করা এবং যৌনাঙ্গ
তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে। তাখরিজ: মুসলিম ৪৬/৫, হাঃ
২৬৫৭, আহমাদ ৮২২২] (আধুনিক ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৬)
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৭৮:
আসসালামু আলাইকুম। ফিকহি হানাফির অনুসারে ওমরা হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ কি কি? জানালে উপকৃত হবো। তারিখ: ২৭/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সিরাজুল হক ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, পবিত্র কুরআন-হাদিসে কোথায় হজ ও ওমরার ফরজ,
ওয়াজিব সংখ্যা নির্ধারণ নেই। তবে গুরুত্ব এর কথা
এসেছে। তাই এর সংখ্যা নির্ণয়ে সমআনিত ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
হানাফি মাজহাবের মতে, হজের ফরজ ৩টি। ইমাম শাফেয়ীর নিকট অতিরিক্ত আরও একটি রয়েছে। তাহলো
সাফা ও মারওয়াতে সায়ী করা।
ركان الحج عند المالكية إن
للحجِّ أربعة أركان في المذهب المالكي، وهي: الإحرام، والوقوف بعرفة، والطواف،
والسعي، وفيما يأتي بيان هذه الأركان:
ইমাম মালেক ও শাফেয়ীর আরেক মত মতে মুজদালিফায় অবস্থানও
ফরয। সূত্র: কিতাবুল ফিকহি আলাল মাজাহিবিল আরবা-১ম খণ্ড; ৫৭৭ পৃ.
এক. ইহরাম বাঁধা। দুই. উ’কুফে আ’রাফা
(বা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা)। তিন. তাওয়াফুয জিয়ারাত।
হজের ওয়াজিব ৬টি
এক. ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড়গুলো মধ্যে ৭ বার সায়ি করা।
দুই. অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ)
অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যদয় পর্যন্ত একমুহূর্তের জন্য হলেও অবস্থান করা।
তিন. মিনায় তিন শয়তান (জামারাত)
সমূহকে পাথর নিক্ষেপ করা।
চার. ‘হজে তামাত্তু’ ও ‘কিবরান’ কারীরা ‘হজ’ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
পাঁচ. ইহরাম খোলার পূর্বে মাথার
চুল কাটা।
ছয়. মক্কার বাইরের লোকদের জন্য
তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালে তাওয়াফ করা।
হজের সুন্নতসমূহ:
হজের সুন্নত ১০টি। যথা: ১. তাওয়াফ
করা (ইফরাদ ও কিরান হজকারীর জন্য)। ২. তাওয়াফের
সময় প্রথম তিন চক্কর সৈনিকের মতো বীরদর্পে চলা। ৩. খলিফা অথবা তাঁর প্রতিনিধি তিন দিন
তিন জায়গায় খুতবা প্রদান করা বা ভাষণ দেওয়া। ৭ জিলহজ কাবা শরিফের হারাম শরিফে, ৯ জিলহজ আরাফাতে মসজিদে নামিরাতে,
১১ জিলহজ মিনায়। ৪. ৮ জিলহজ মক্কা শরিফ থেকে মিনায় গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজ আদায় করা এবং রাতে সেখানে অবস্থান করা। ৫. ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের
দিকে রওনা হওয়া। ৬. অকুফে আরাফা বা আরাফাতে অবস্থানের জন্য সকালে গোসল করা। ৭. ৯ জিলহজ
আরাফাতে অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার দিকে রওনা করা। ৯. ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় রাত্রি যাপন করা। ১০. মিনা থেকে মক্কা শরিফ প্রত্যাবর্তনের
সময় ‘মুহাচ্ছার’ নামক জায়গায় কিছু সময় অবস্থান
করা।
ফিকহি হানাফির মতে, ওমরার ফরয দুটি
১। ওমরার ইহরাম করা। অর্থাৎ উমরার
নিয়তে তালবিয়া পাঠ করা।
২। বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ
করা ।
ওমরার ওয়াজিব দুটি
১। সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী
করা।
২। মাথার চুল মুণ্ডানো বা কটা।
দলিল:
আমরা হযরত উসমান (রা.)-এর সঙ্গে
মক্কায় এসেছি। তাঁকে দেখেছি, তিনি মক্কা থেকে বের হওয়ার আগে
ইহরাম খুলতেন না। তিনি শুধু বাইতুল্লাহ শরিফের তাওয়াফ করতেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে
সাঈ করতেন। এরপর মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলতেন।’ [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস:
১৩৭৮৬]
ওমরার সুন্নতসমূহ:
উল্লিখিত রুকন ও ওয়াজিবসমূহ ব্যতীত
উমরার অন্য আমলসমূহ সুন্নত, যেমন:
১ - ইহরামের সময় গোসল করা।
২- একটি চাদর ও একটি সেলাইবিহীন
লুঙ্গিতে ইহরাম করা।
৩ - তালবিয়া পাঠ করা ও তা উঁচু
স্বরে পাঠ করা।
৪- তাওয়াফের সময় ইযতিবা করা।
ইযতিবা হলো ডানবগলের নিচ দিয়ে চাদর পেঁচিয়ে ডানকাঁধ উন্মুক্ত রাখা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৮২:
মোয়া'জ্জাজ, মোহতারামে সমীপে আমার একটি আবেদন হচ্ছে, - হজের ফরজ,ওয়াজিব, ছুন্নাতের মধ্যে তালবিয়া পড়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি, তাহলে তালবিয়া পড়ার বিধান সম্পর্কে জানার জন্য জনাব সমীপে নিবেদন পেশ করছি। তারিখ: ২৭/০২/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা এস এম মাহবুবুর রহমান
পিরোজপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, প্রথমে আপনাকে জাযাকাল্লাহ খায়ের। কেননা আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
দ্বিতীয় কথা হলো, - ‘লাব্বাইকা’। এই শব্দটি আরবি- ‘ইলবাব’ ও ‘তালবিয়াতুন’ হতে গৃহীত। তালবিয়াতুন-এর অর্থ হলো- হে
আল্লাহ! আমি তোমারই সমীপে যথাযথভাবে একবারের পর আর একবার বারবার উপস্থিত হয়েছি। আর
ইলবাব শব্দের অর্থ বিভিন্নভাবে করা হয়ে থাকে। যথা : (ক) ইলবাব অর্থ কোনো স্থানে
দণ্ডায়মান হওয়া। (খ) এর অর্থ হে আল্লাহ! আমি তোমার আনুগত্য ও হুকুম পালনের কাজে
একবারের পর আর একবার, বারবার দণ্ডায়মান হয়েছি, দাঁড়িয়েছি। (গ) এর অর্থ- হে আল্লাহ! আমি তোমার আহ্বানে একবারের পর একবার
বারবার সাড়া দিয়েছি।
প্রশ্ন ক। তালবিয়া পাঠের হুকুম কি?
উত্তর: ক। তালবিয়া পাঠের ব্যাপারে
সম্মানিত ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যেমন,
حُكم التلبية:
اختلف العلماء في حكم التلبية:
فذهب الشافعي وأحمد إلى أنها سنَّة.
وحكى الخطَّابي عن مالك وأبي حنيفة الوجوب[9]، وهذا هو
الراجح؛ لحديث السائب السابق، وفيه الأمر برفع الصوت بالتلبية.
المَطْلَبُ الثَّاني: حُكْمُ التَّلْبِيَة
التَّلْبِيَةُ سُنَّةٌ في الإحرامِ، وهذا مَذْهَبُ
الشَّافِعِيَّة، والحَنابِلَة،مغني المحتاج)) للشربيني (1/481)، ويُنظر: ((الحاوي
الكبير)) للماوردي (4/88).
قال ابن حزم: "وهو فرض، ولو مرة"[10].
অর্থাৎ তালবিয়া পাঠের ব্যাপারে ওলামা কেরাম
মধ্যে মতভেদ রয়েছে,
ইমাম শাফি এবং
হাম্বল রহ. এর মতে সুন্নত।
আর ইমাম আবু হানিফা এবং ইমাম মালেক রহ. এর মতে ওয়াজিব।
আর ইমাম ইবনে হাযম রহ. বলেন, তালবিয়া পাঠ করা ফরজ এবং যদিও
তা একবার হয়। সূত্র: নায়লুল আওতার-৫/৫৩; আলমুহল্লি-৭/১০৪
প্রশ্ন: খ। ইমাম মালেক এবং ইমাম আবু হানিফার রহ.
এর দলিল কি?
উত্তর: খ। ইমাম মালেক এবং ইমাম আবু হানিফার রহ.
এর দলিল নিম্নের হাদিস শরিফ
حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ عَبْدِ
اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ، عَنْ عَبْدِ
الْمَلِكِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ
هِشَامٍ، عَنْ خَلاَّدِ بْنِ السَّائِبِ الأَنْصَارِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ
رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَتَانِي جِبْرِيلُ صلى الله
عليه وسلم فَأَمَرَنِي أَنْ آمُرَ أَصْحَابِي وَمَنْ مَعِي أَنْ يَرْفَعُوا أَصْوَاتَهُمْ
بِالإِهْلاَلِ - أَوْ قَالَ - بِالتَّلْبِيَةِ " . يُرِيدُ أَحَدَهُمَا .
অর্থ: আল কা‘নবী (রাহঃ) ..... খাল্লাদ ইবনুস সায়িব আল আনসারী
(রাযিঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) আমার
নিকট এসে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন আমার সাথী ও
সাহাবীদের নির্দেশ দেই, তারা যেন উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করে।
তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৮১৪, মুসনাদে আহমদ -৪/৫৫; তিরমিজি -৮২৯; ইবনে মাজাহ -২৯২২
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
প্রশ্ন: গ। হজ এবং ওমরাতে বেশি বেশি
তালবিয়া পাঠ করার হুকুম কি?
উত্তর: গ। এ বিষয়ে
اتفق العلماء على أنه يستحب للمحرم بالحج أو العمرة أن
يكثر من التلبية ( لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ
لَبَّيْكَ ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ ، لاَ شَرِيكَ لَكَ)
ثم إذا فرغ منها صلى
হজ ও ওমরাতে বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ
করার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
সূত্র: হুকমুদ দুআ বাদাত তালবিয়া ফিল হজ্জি ওয়াল ওমরাতি- ২২১১৩৫ (ফাতওয়া
নাম্বার)
সারকথা হলো, মৌলিকভাবে হজের ওয়াজিব ছয়টি।
তাছাড়া আরও কয়েকটি আনুসাঙ্গিক ওয়াজিব রয়েছে। যেমন, মীকাতের
পূর্বে ইহরাম বাঁধা, তালবিয়া পাঠ করা, সায়ি সাফা পাহাড় থেকে শুরু করা ইত্যাদি
ইত্যাদি।
সুতরাং তালবিয়া পাঠের অংশ
আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা -১২৪৭৮ শিরোনামে মাসয়ালাটিতে আলোচনা আসেনি।
- والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৮৪:
আসসালামু আলাইকুম, মুহতারাম পোস্ট অফিসের
পারিবারিক সঞ্চয় পত্রের বিধান কী
ফরমেটে মুনাফার কথা লিখা রয়েছে। তারিখ: ০২/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আতিক, বরিশাল থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, বর্তমান প্রচলিত পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সরকারীভাবে বিভিন্ন নামের
সঞ্চয়পত্র স্কীম রয়েছে। এগুলোর প্রত্যেকটি সম্পূর্ণ সুদী, রিবা
নাসিয়্যাহ-এর অন্তর্ভুক্ত। আর সুদ হারাম হওয়া ব্যাপার তো সুস্পষ্ট। যেমন,
কুরআনের বাণী -
قوله تعالى- وَأَحَلَّ اللَّهُ
الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
অনুবাদ-আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল
করেছেন, আর সুদকে করেছেন হারাম। {সূরা
বাকারা-২৭৫}
হাদিসের বাণী -
১৩০}
عبد الله بن مسعود عن أبيه عن
النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ
এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ
খায়, যে সুদ খাওয়ায়,
তার
সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তায়ালা
অভিশাপ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯, মুসনাদে
আবি ইয়ালা, হাদিস নং-৪৯৮১)
দ্বিতীয় কথা হলো, সুদের
পদ্ধতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলে নাম পরিবর্তন করলেই হালাল হয়ে যায় না। সুদ তো সুদি আধুনিক যে নামেই হোক না কেন, মুনাফা/ইন্টারেস্ট/ লভ্যাংশ ইত্যাদি।
সারকথা হলো, প্রচলিত পোস্ট অফিসের
পারিবারিক সঞ্চয় পত্রের উপর প্রদত্ত টাকা সুদী লেনদেনের অন্তর্ভূক্ত। তাই
তা জায়েজ হবে না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
"শরীয়াতের মানদন্ডে শবে বরাত"।
ড. বি. এম. মফিজুর রহমান আল-আযহারী
অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম।
‘শবে বরাত’ নাকি ‘লাইলাতুন নিসফি মিন সাবান’?
আমাদের দেশে এ রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। ফারসী ভাষায়,
শব অর্থ রজনী। আর বরাত অর্থ ভাগ্য। সুতরাং শবে বরাতের অর্থ দাঁড়ায়,
ভাগ্য রজনী। মূলত: এই পরিভাষাটি কুরআন বা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।
বরং একটি আয়াতের অসতর্ক ব্যাখ্যা থেকেই এ ধরনের নামকরণ হতে পারে।
সূরা দুখানে বলা হয়েছে,
﴿ إِنَّا
أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ . فِيهَا
يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ﴾
“নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি
বরকতময় রাতে;
নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত
অনুমোদিত হয়”(সূরা দুখান:৩,৪)।
‘বরকতময় রাত’ বলতে অসাবধানতাবশত কেউ কেউ মধ্য
শাবানকে বুঝেছেন। অথচ এর দ্বারা যে রমাদান মাসে অবস্থিত কদরের রাতকে বুঝানো হয়েছে,
তা একটি অকাট্য বিষয়।
এজন্যই ইবনুল কায়্যীম (র.)
বলেন,
” وهذه هي ليلة القدر قطعا لقوله – تعالى -: إنا
أنزلناه في ليلة القدر ومن زعم أنها ليلة النصف من شعبان فقد غلط “
“এটি অকাট্যভাবে কদরের রাত্রি।
কারণ আল্লাহ বলছেন,
নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে কদরের রাত্রিতে নাযিল করেছি। আর যারা শাবানের মধ্য
রাত্র ধারণা করছে, তারা আসলে ভুল করছে”।
ইবনু কাসিরও বলছেন,
"ومن قال :إنها ليلة النصف من
شعبان فقد أبعد النَّجْعَة فإن نص القرآن أنها في رمضان “
“যারা শাবানের মধ্য রাত্রি বলছেন, তারা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন।
বরং এটি যে রমাদান মাসের একটি রাত, সে ব্যাপারে কুরআনের ভাষা
সুস্পষ্ট”।
আল্লামা শানকিতী বলেন, ” إنها دعوى باطلة ” (মধ্য শাবানের দাবী) একটি ভিত্তিহীন
দাবী”।
এভাবে প্রমাণিত হলো, কুরআনের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে
এ রাতের কোন উল্লেখ নেই। বরং একাধিক হাদীসে এ রাতের উল্লেখ পাওয়া যায়। একটু পরেই
যেগুলোর আলোচনা আসবে। যেথায় এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘শাবানের ১৫তম রজনী’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই
শবে বরাত না বলে এ রাতকে হাদীসের দেয়া ভাষায় নামকরণ করাই বাঞ্জনীয়।
তবে হা, বরাত বলতে যদি আরবী براءة (বারাআত) কে বুঝানো
হয়,
তাহলে অনেকটা মেনে নেয়া যায়। যার অর্থ, মুক্তি
বা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি। তাহলে পুরো অর্থ দাঁড়াবে, গুনাহ
বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত। কারণ হাদীসের আলোকে বুঝা যায়, এ রাতে এমনটি ঘটে থাকে।
শরীয়তের মানদন্ডে শাবানের
১৫তম রজনীর মাহাত্ম্য:
শাবানের মধ্য রজনী একটি পবিত্র
ও মাহাত্ম্যপূর্ণ রজনী। এর রয়েছে স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ করুণা ধন্য এ রাত।
এ রাতে ইবাদাত-বন্দেগী করা উত্তম। এ মর্মে কুরআনে কিছু না থাকলেও হাদীসের মধ্যে রয়েছে
সুস্পষ্ট বক্তব্য। একাধিক হাদীস দ্বারা এই মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত। হযরত মু‘আয বিন জাবাল, আবু বকর, আবু ছা‘লাবাহ, আবু মুসা আশ‘আরী, আবু হুরায়রা, ‘আইশা, আবদুল্লাহ বিন ‘উমার ও আওফ বিন মালিক (রা.)
প্রমুখ সাহাবী থেকে এ সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
নিন্মে হাদীসগুলো সূত্র ও স্তর
বিবরণসহ উল্লেখ করা হলো:
১. মু‘আয বিন জাবালের হাদীস:
হযরত মু‘আয বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (স.) ইরশাদ করেন,
يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى
خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ
إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
“আল্লাহ তাঁর সমস্ত সৃষ্টির
দিকে শাবানের মধ্যরাতে দৃষ্টি দেন। অতঃপর তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে মাফ করে দেন, শুধুমাত্র মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ
পোষণকারী ব্যতীত”।
এ হাদীসটি ইবনি হিব্বান তাঁর
ছহীহের বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাইসামী এ হাদীস প্রসঙ্গে বলেন:
رواه الطبراني في الكبير
والأوسط ورجالهما ثقات.
“হাদীসটি ইমাম তাবারানী তাঁর
আল-মু‘যাম আল-কাবীর ও আছ-ছগীরের মধ্যে
রিওয়ায়িত করেছেন। এ দুটোতেই হাদীসটির বর্ণনাকারীরা নির্ভরযোগ্য”।
২. হযরত আবু বকরের হাদীস:
হযরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন,
রাসূল (স.) বলেছেন,
(إذا كانت ليلة النصف من شعبان ينزل الله تبارك وتعالى
إلى سماء الدنيا فيغفر لعباده إلا ما كان من مشرك أو مشاحن لأخيه
যখন শাবানের মধ্য রাত আসে, আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবর্তীর্ণ
হন। তারপর সব বান্দাকে মাফ করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি
শত্রুতাভাবাপন্ন তাদেরকে ছাড়া”।
ইমাম হাইসামী مجمع الزوائد এ বলেন:
رواه البزار وفيه عبد الملك بن
عبد الملك ذكره ابن أبي حاتم في الجرح والتعديل ولم يضعفه وبقية رجاله ثقات
হাদীসটি ইমাম বাযযার বর্ণনা
করেছেন। এর সনদের মধ্যে আবদুল মালিক বিন আবদিল মালিক নামে একজন রাবী আছেন। ইবনু আবি
হাতিম আল-জারহ অত-তাদিল কিতাবে তার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত
করেন নি। এছাড়া,
সনদের অন্যান্য সব রাবী (বর্ণনাকারী) বিশ্বস্ত”।
৩. আবু ছা‘লাবাহর হাদীস:
হযরত আবু ছা‘লাবাহ থেকে বর্ণিত। নবী (স.)
ইরশাদ করেন,
يطلع الله إلى عباده ليلة
النصف من شعبان فيغفر للمؤمنين ويمهل الكافرين ويدع أهل الحقد لحقدهم حتى يدعوه
“আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি
অর্ধ শাবানের রাতে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং সমস্ত মুমিনকে মাফ করে দেন। তবে কাফিরদেরকে
অবকাশ দেন। আর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে পরিত্যাগ করেন, যতক্ষণ না তারা হিংসা-বিদ্বেষ
বর্জন করে”।
হাদীসটি ইমাম বাযযার তার মুসনাদে
ও ইমাম বায়হাকী তার আস-সুনান আছ-ছুগরাতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাইসামী বলেন:
رواه الطبراني وفيه الأحوص بن
حيكم وهو ضعيف
তাবারানী হাদীসটি বেওয়ায়েত
করেছেন। এর মধ্যে আল-আহওয়াস বিন হাকীম নামে একজন রাবী আছেন। তিনি দুর্বল”।
৪. আবু মুসা আশ‘আরীর হাদীস:
আবু মুসা আশ‘আরী (রা.) রাসূল (স.) থেকে
বর্ণনা করেন,
إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ في
لَيْلَةِ النِّصْفِ من شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خلقة إلا لِمُشْرِكٍ أو
مُشَاحِنٍ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ অর্ধ শাবানের
রাত্রিতে তাকান। তারপর মুশরিক ও মুশাহিন (অন্যের প্রতি বৈরিভাব পোষণকার) ব্যতীত তাঁর
সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন”।
ইমাম ইবনু মাজাহ এ হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন। مجمع الزوائد (মাজমাউয যাওয়াইদ) নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, إسناده ضعيف এর সনদটি দুর্বল। তবে ইমাম আলবানী বলছেন, حديث حسن এটি একটি হাসান হাদীস।
৫. হযরত আবু হুরায়রার হাদীস:
عن أبي هريرة قال قال رسول
الله -صلى الله عليه وسلم-: إذا كان ليلة النصف من شعبان يغفر الله لعباده إلا
لمشرك أو مشاحن
হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূল (স.) বলেন, “যখন অর্ধ শাবানের রাত্রি আসে, আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে ক্ষমা
করে দেন। তবে মুশরিক ও মুশাহিন ব্যতীত”।
ইমাম ইবনুল হাইসামী এ হাদীস
প্রসঙ্গে বলেন,
“হাদীসটি ইমাম বাযযার বর্ণনা
করেছেন। এর সনদের মধ্যে হিশাম বিন আবদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি আছেন। তাকে আমি চিনি
না। তবে অন্যান্য সবাই নির্ভরযোগ্য”।
৬. হযরত ‘আইশার হাদীস:
ক. ইমাম তিরমিযি হযরত ‘আইশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন,
فَقَدْتُ رَسُولَ الله -صلى
الله عليه وسلم- لَيْلَةً فَخَرَجْتُ فإذا هو بِالْبَقِيعِ فقال: أَكُنْتِ
تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ الله عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ، قلت: يا رَسُولَ اللَّهِ إني
ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ، فقال: إِنَّ اللَّهَ عز وجل يَنْزِلُ
لَيْلَةَ النِّصْفِ من شَعْبَانَ إلى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَغْفِرُ لِأَكْثَرَ
من عَدَدِ شَعْرِ غَنَمِ كَلْبٍ
“একদা রাত্রিতে আমি রাসূল (স.)
কে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই তার সন্ধানে বের হলাম। জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে তাকে পেলাম।
তিনি বললেন,
তুমি কি আশঙ্কা করছিলে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল
(স.) তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, হে
আল্লাহর রাসূল! আমি ভেবেছিলাম, আপনি অপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে
গিয়েছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ শাবানের রাত্রিতে
দুনিয়ার আকাশে অবর্তীর্ণ হন এবং বনী কালবের ছাগল পালের লোমের চেয়ে অধিক পরিমাণ মানুষের
গুনাহ মাফ করে দেন”।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা
করে বলেন,
حَدِيثُ عَائِشَةَ لَا
نَعْرِفُهُ إلا من هذا الْوَجْهِ من حديث الْحَجَّاجِ وسَمِعْت مُحَمَّدًا
يُضَعِّفُ هذا الحديث
‘আইশার হাদীসটি হাজ্জাজের এই
সূত্র ছাড়া অন্য কোন ধারা থেকে আমাদের জানা নেই। মুহাম্মাদ এই হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন
বলে শুনেছি’।
হাদীসটি আরো বর্ণনা করেছেন
ইবনু মাজাহ,
ইবনু আবি শাইবাহ, আহমাদ বিন হাম্বল। শুআইব আরনাউত
বলেন, إسناده ضعيف এর সনদটি দুর্বল।
খ. ইমাম বায়হাক্কী বর্ণনা
করেন,
أن عائشة قالت: قام رسول الله
-صلى الله عليه وسلم- من الليل يصلي فأطال السجود حتى ظننت أنه قد قبض فلما رأيتُ
ذلك قمت حتى حركت إبهامه فتحرك فرجعت، فلما رفع الي رأسه من السجود وفرغ من صلاته
قال: يا عائشه أو يا حميراء: أظننت أن النبي قد خاس بك؟ قلت: لا والله يا رسول
الله، ولكنني ظننتُ أنك قبضت لطول سجودك، فقال: أتدرين أي ليلة هذه؟ قلت: الله
ورسوله أعلم قال هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة
النصف من شعبان، فيغفر للمستغفرين، ويرحم المسترحمين، ويؤخر أهل الحقد كما هم)
হযরত ‘আইশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (স.) রাতে
নামাযে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হলো,
তাঁর হয়তো ইনতেকাল হয়ে গেছে। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া
দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন
আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে ‘আইশা, অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল
(স.) তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যু বরণ করেছেন কিনা? নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন,
তুমি কি জান এটা কোন রাত? (শাবানের চৌদ্দ তারিখের
দিবাগত রাত)। আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের
দৃষ্টি প্রদান করেন,
ক্ষমা প্রার্থনাকারীদেও ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ
করেন। বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই”।
গ. ইমাম বায়হাকীর অন্য বর্ণনায়
রয়েছে,
فقال هذه الليلة ليلة النصف من
شعبان، ولله فيها عتقاء من النار بعدد شعور غنم كلب،لا ينظر الله فيها إلى مشرك
ولا إلى مشاحن ولا إلى قاطع رحم ولا إلى مسبل ولا إلى عاقّ لوالديه ولا إلى مدمن
خمر، قال: ثم وضع عنه ثوبيه فقال لي: يا عائشة تأذنين لي في قيام هذه الليلة، فقلت:
نعم بأبي وأمي فقام فسجد ليلا طويلا حتى ظننت أنه قبض، فقمت التمسته ووضعت يدي على
باطن قدميه فتحرك ففرحت وسمعته يقول في سجوده: أعوذ بعفوك من عقابك، وأعوذ برضاك
من سخطك، وأعوذ بك منك جل وجهك لا أحصي ثناءً عليك، أنت كما أثنيتَ على نفسك، فلما
أصبح ذكرتهن له فقال يا عائشة: تعلمتِهنَّ؟ فقلت: نعم. فقال: تعلميهنَّ وعلميهنَّ؛
فإن جبريل عليه السلام علمنيهنَّ وأمرني أن أرددهن في السجود
‘অতঃপর তিনি বললেন, এই রাত্রিটি হচ্ছে অর্ধ শাবানের
রাত্রি। এই রাতে আল্লাহ কালব গোত্রের ছাগলের গায়ে যে পরিমাণ পশম আছে, সেই পরিমাণ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন। তবে আল্লাহ এ রাতে মুশরিক,
বিদ্বেষপোষণকারী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী,
টাখনুর নীচে পোশাক পরিধানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য
সন্তান এবং মাদকাসক্তের প্রতি তাকান না। অতঃপর আবরণ সরিয়ে বললেন, হে ‘আইশা! তুমি কি আমাকে এই রাত্রে
ইবাদাত করার অনুমিত দিবে? আমি বললাম, অবশ্যই,
আমার বাবা-মা আপনার জন্য কুরবান হোক। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং এত লম্বা
সিজদা করলেন যে, আমার ভয় হলো, তিনি মনে
হয় ইনতেকাল করেছেন। তাই আমি উঠে তার শরীর স্পর্শ করলাম। তাঁর পায়ের তলদেশে হাত রাখলাম।
তাঁর পা নড়ে ওঠলো। আমি খুশী হলাম। তাকে শুনতে পেলাম, তিনি বলছেন,
(হে আল্লাহ) তোমার ক্ষমার দ্বারা তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় চাই। তোমার
সন্তুষ্টির দ্বারা তোমার ক্রোধ থেকে বাঁচতে চাই। তোমার থেকেই তোমার কাছে আশ্রয় চাই।
তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে পারব না। তুমি তেমন, যেমনটি তুমি
নিজেই নিজের প্রশংসা করেছ। অতঃপর যখন সকাল হলো, আমি এ দু‘আটি বললাম। রাসূল (স.) বললেন, ‘আইশা, তুমি মুখস্ত করে ফেলেছ?
বললাম, হ্যাঁ। এগুলো মানুষকে জানিয়ে দাও,
শিখিয়ে দাও। জিব্রাইল (আ.) আমাকে এগুলো শিখিয়েছেন এবং সিজদাতে এ দু‘আ পুনরাবৃত্তি করতে বলেছেন’।
ইমাম বায়হাকী হাদীসটি বর্ণনা
করে বলছেন,
এটির সনদ দুর্বল।
৭. হযরত আবদুল্লাহ বিন ‘উমরের হাদীস:
عن عبد الله بن عَمْرٍو انَّ
رَسُولَ الله -صلى الله عليه وسلم- قال: يَطَّلِعُ الله عز وجل إلى خلقة لَيْلَةَ
النِّصْفِ من شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ الا لاِثْنَيْنِ: مُشَاحِنٍ
وَقَاتِلِ نَفْسٍ
হযরত আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল
(স.) বলেন,
“আল্লাহ অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর
সৃষ্টির প্রতি তাকান। অতঃপর সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, দু’ শ্রেণী ব্যতীত: ক. মুশাহিন (বিদ্বেষপোষণকারী)
; খ. মানব হত্যাকারী”।
ইমাম হাইসামী বলেন,
رواه أحمد وفيه ابن لهيعة وهو
لين الحديث وبقية رجاله وثقوا
“ইমাম আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন। এর সনদের মধ্যে রয়েছে, ইবনু লাহীয়াহ। তিনি লাইয়্যেনুল হাদীস (হাদীস
বর্ণনার ক্ষেত্রে কিছুটা কোমলাতা/দুর্বলতা বিশিষ্ট)। তবেঅন্যান্য সব রাবী নির্ভরযোগ্য
ও বিশ্বস্ত”।
এছাড়া, ইমাম বাযযারও এটি বর্ণনা করেছেন।
৮. আওফ বিন মালিকের হাদীস:
عن عوف بن مالك قال قال رسول
الله: – الله عليه وسلم- (يطلع الله تبارك وتعالى على خلقه ليلةَ النصف من شعبان،
فيغفر لهم كلِّهم إلا لمشركٍ أو مشاحن
হযরত আওফ বিন মালিক থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন,
রাসূল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় সৃষ্টির উপর শাবানের
মধ্যরাতে দৃষ্টি নিবন্ধন করেন। এবং তাদের সবাইকেই মাফ করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও
মুশাহিন ছাড়া।
ইমাম হাইসামী বলেন,
رواه البزار وفيه عبدالرحمن بن
زياد بن أنعم وثقه أحمد بن صالح وضعفه جمهور الأئمة وابن لهيعة لين وبقية رجاله
ثقات
বাযযার হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
এতে আবদুর রহমান বিন যিয়াদ বিন আনউম রয়েছে। ইমাম আহমাদ তাকে নির্ভরযোগ্য বলে আখ্যায়িত
করেছেন। তবে অধিকাংশ আলিম তাকে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া , ইবনু লাহিয়াহও আছেন। যিনি একটু
নরম। বাকী সব রাবী সিকাত”।
৯. কাসীর বিন মুররা আল-হাদরামীর
হাদীস।
عن كثير بن مرة الحضرمي، قال:
قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: (إن اللهَ ينزل ليلةَ النصف من شعبان، فيغفر
فيها الذنوب إلا لمشركٍ أو مشاحن
হযরত কাসীর বিন মুররা আল-হাদরামী
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ শাবানের মধ্য
রাতে অবতীর্ণ হন। তারপর এ রাতে মুশরিক ও মুশাহিনের গুনাহ ব্যতীত অন্য সব গুনাহ ক্ষমা
করে দেন”।
হাদীসটি ইবনু আবি শাইবাহ, আবদুর রাজ্জাক তাদের মুছান্নাফে
এবং বাযযার তাঁর মুসনাদের বর্ণনা করেছেন।
এতক্ষণে আমাদের সামনে যে বিষয়টি
পরিষ্কার হয়েছে তাহলো, উপরিউক্ত হাদীসগুলোর সনদসমূহ সমপর্যায়ের নয়।
কিছু শুদ্ধ, আবার কিছু দুর্বল। তবে সবগুলো একত্রিত করলে এ কথা
না বলে কোন উপায় নেই যে, এ রাতটির ফজিলত একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য।
এজন্য গবেষকগণ বলছেন,
أنَّ الأحاديثَ في فضل ليلة
النصف من شعبان ثابتة وفي أقلِّ أحولها أحاديث حسنة لغيرها بمجوع طرقها، ومن
العلماء من صرح أنها صحيحة لغيرها بمجموع طرقها لأنّ من طرقها حسنة بذاتها
বর্ণনার সবগুলো ধারা একত্রিত
করলে হাদীসগুলোর সর্ব নিন্মস্তর হবে ‘হাসান লিগইরিহা’।অনেকগবেষক আবার স্পষ্ট করে
বলছেন যে,
এদের সবগুলো ধারা সমন্বিত করলে ‘ছহীহ লিগইরিহা’র পর্যায়ভুক্ত হবে। কারণ এগুলো
যে সব ধারাই বর্ণিত হয়েছে, তাতে নিজেরাই ‘হাসান’ হিসেবে গণ্য।
এ প্রসঙ্গে শরীয়াহ বিশেষজ্ঞ
সর্বজন স্বীকৃত আলেমদের বক্তব্য বিষয়টিকে আরো প্রতিভাত করবে।
নিন্মেতা প্রদত্ত হলো,
হাফিজ ইবনু রজব বলেন,
اختلف فيها، فضعفها الأكثرون،
وصحح ابن حبان بعضها، وخرجه في صحيحه.
অর্ধ শাবানের রাত সম্পর্কে
বর্ণিত হাদীসগুলো নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। অনেকেই এগুলোকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু হিব্বান
এদের কিছুকে ছহীহ বলেছেন এবং তার ছহীহ কিতাবের মধ্যে তাখরীজ করেছেন।
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেন,
وأما ليلة النصف من شعبان
ففيها فضلٌ، وكان في السلف من يصلي فيها، لكنَّ الاجتماع فيها لإحيائها في المساجد
بدعةٌ، وكذلك الصلاة الألفية
“অর্ধ শাবানের রাতের মাহাত্ম্য
রয়েছে। সালাফদের মধ্যে কেউ কেউ এ রাতে নামায পড়তেন। তবে মসজিদের মধ্যে এ রাতে ইবাদাতের
জন্য একত্রিত হওয়াটা বিদ‘আত। তদ্রƒপ আলফিয়্যাহ নামক বিশেষ নামায আদায় করা”।
তিনি আরো বলেন,
ليلةُ نصف شعبان رويَ فيها من
الأخبار والآثار ما يقتضي أنها مفضلة ومن السلف من خصَّها بالصلاة فيها وصوم شعبان
جاءت فيه أخبار صحيحة أما الصوم يوم نصفه مفرداً فلا أصل له، بل يكره، قال: وكذا
اتخاذه موسماً تصنع فيه الأطعمة والحلوى وتظهر فيه الزينة وهو من المواسم المحدثة
المبتدعة التي لا أصل لها، وما قيل من قَسْمِ الأرزاق فيها لم يثبت
অর্ধ শাবানের রাত্রির ব্যাপারে
অনেক হাদীস ও আছার বর্ণিত হয়েছে। যদ্বরা এ রাতের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়।
সালাফ বা পূর্বসুরীদের মধ্যে কেউ কেউ এ রাতে বিশেষ করে নামায আদায় করতেন। শাবান মাসের
রোজার ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীস এসেছে। তবে শুধুমাত্র পনেরতম দিবসে একটি রোজা পালন করার
কোন মূলভিত্তি নেই। বরং তা মাকরূহ। তিনি আরো বলেন, তদ্রƒপ এটিকে রকমারী খাদ্য, হালুয়া তৈরি ও সাজ-সজ্জা প্রকাশের
উপলক্ষ বানানো বিদআত। যার কোন ভিত্তি নেই। আর এ রাতে রিযিক বন্টিত হয় এ মর্মে যা কিছু
বলা হয় তা প্রমাণিত হয়নি” ।
ইমাম ইবনু নুজাইম আল-মাসরী
বলেন,
ومن المندوبات إحياءُ ليالي
العشر من رمضان وليلتي العيدين وليالي عشر ذي الحجة وليلة النصف من شعبان كما وردت
به الأحاديث وذكرها في الترغيب والترهيب مفصلة والمراد بإحياء الليل قيامه وظاهره
الاستيعاب ويجوز أن يراد غالبه، ويكره الاجتماع على إحياء ليلة من هذه الليالي في
المساجد،
যে রাতগুলোকে জাগ্রহ রাখা মুস্তাহাব, সেগুলো হচ্ছে: রমাদানের দশরাত্র,
দুই ঈদের দুই রাত্র, জিলহাজ্জ মাসের দশ রাত্র ও
শাবানের মধ্যরাত্র। এ মর্মে একাধিক হাদীস রয়েছে। তারগীব ও তারহীব কিতাবে এগুলোর বিস্তারিত
উল্লেখ রয়েছে। রাতকে জাগ্রহ রাখার অর্থ হলো, ইবাদাতের মাধ্যমে
বিনিদ্র রজনী কাটানো। পুরো রাত বা রাতের বেশির ভাগ সময়, দুটোই
হতে পারে। এ সব রাতে ইবাদাতের জন্য মসজিদের একত্রিত হওয়া মাকরুহ”।
আল্লামা মুবারাকপুরী তার তুহফাতুল
আহওয়াজী নামক গ্রন্থে বলেন,
اعلم أنه قد ورد في فضيلة ليلة
النصف من شعبان عدة أحاديث مجموعها يدل على أن لها أصلاً… فهذه الأحاديث بمجموعها
حجة على من زعم أنه لم يثبت في فضيلة ليلة النصف من شعبان شيء والله تعالى أعلم
“অর্ধ শাবানের মাহাত্ম্যের ব্যাপারে
একাধিত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এগুলো সামষ্টিকভাবে প্রমাণ করে যে, এ রাতের একটি ভিত্তি আছে”। এসব হাদীস সামষ্টিকভাবে তাদের
বিরুদ্ধে প্রমাণ যারা মনে করে অর্ধ শাবানের রাতের ব্যাপারে কিছুই সাব্যস্ত হয়নি। আল্লাহই
ভালো জানেন”।
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী
অর্ধ শাবানের রাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি কথা শুরু করেছেন
এভাবে,
্রحديث صحيح روي عن جماعة من
الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضاًগ্ধ،
“হাদীসটি ছহীহ। একদল সাহাবী
থেকে বিভিন্ন সূত্রে তা বর্ণিত হয়েছে। যাদের একটি আরেকটিকে মজবুত করে”।
আরশেষ করেছেন এ কথা বলে,
্রوجملة القول أن الحديث بمجموع
هذه الطرق صحيح بلا ريب، والصحة تثبت بأقل منها عدداً، مادامت سالمة من الضعف
الشديد كما هو الشأن في هذا الحديثগ্ধ،
মোটামুটি কথা হলো, এই সব ধারায় বর্ণিত হাদীসটি
নিঃসন্দেহে ছহীহ বা বিশুদ্ধ। এর চেয়ে কমসংখ্যক সূত্র দিয়েও হাদীসের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত
হয়। যদি না তাতে প্রবল কোন দুর্বলতা থাকে। যেমনটি এই হাদীস”।
এ রাতের ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ
হাদীস নেই,
এ মতের প্রবক্তাদের দাবী খন্ডন করতে গিয়ে আল্লামা আলবানী বলেন,
্রليس مما ينبغي الاعتماد عليه،
ولئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول، فإنما أتي من قبل التسرع، وعدم وسع الجهد
لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديكগ্ধ.
এটা নির্ভরযোগ্য কথা নয়। এ
ধরনের কথা যদি কেউ সাধারণভাবে বলেও থাকে, তবে তা নিতান্তই তাড়াহুরোপ্রসূত।
হাদীসটির সবগুলো সূত্র বা বর্ণনার ধারা গবেষণায় যথাসম্ভব শক্তি ব্যয় না করেই এমনটি
বলা হতে পারে”।
এ রাতে করণীয়:
উপরোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা এ
রাতের মাহাত্ম্য প্রমাণিত হলেও সেগুলোতে এ রাতের করণীয় কি তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
শুধুমাত্র হযরত আইশার হাদীসে কিছু নমুনা পাওয়া যায়। তবে করণীয়র চেয়ে এগুলোতে বর্জণীয়
কাজের প্রতিই অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আর সে গুলো হচ্ছে: ১. শিরক ২. অন্যদের
প্রতি বিদ্বেষ পরায়ণ হওয়া, ৩. কাউকে হত্যা করা, ৪.
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা; ৫.টাখনুর নীচে কাপড় পরা. ৬. মা-বাবার
অবাধ্য হওয়া ৭. মদ সেবন করা। তাই এ রাত্রির মাহাত্ম্য অর্জন করতে হলে প্রথমেই এ সব
কাজ থেকে নিজেকে পবিত্র করতে হবে। তাওবাহ ও পারস্পরিক সম্পর্ক সুসংহত করে নেয়ার মাধ্যমে।
হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানির মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে।
বেশির হাদীসে দুটো জিনিস বেশি
এসেছে। শিরক ও বিদ্বেষ। কারণ এদুটো এমনই মারাত্মক অপরাধ, যা মানুষের ধার্মিকতার মূলে কুঠারাঘাত
করে। শিরকের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে ধার্মিকতার কোন লেশমাত্র
থাকে না। আর হিংসা-বিদ্বেষের মাধ্যমে মানুষের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। সমাজে
অরাজকতা সৃষ্টি হয়। মুসিলম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়। তাদের শক্তি খর্ব হয়ে
যায়। বিজাতীয় অধিপত্য বিস্তৃত হয়। ইসলামের পতাকা হয় অবনমিত। এভাবে এক পর্যায়ে
ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিজাতীয় কৃষ্টিকালচার ও জীবনধারার প্রবল আঘাতে। তাছাড়া,
যে ব্যক্তি অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে তার ধার্মিতাবোধ ও ধর্মানুশীলন
ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে পেয়ে তা শুন্যের কোটায় চলে যায়। কারণ ইসলামের প্রতীকী পর্যায়ের
ইবাদাতগুলো সামষ্টিক চেতনাদীপ্ত। নামায, রোজা, যাকাত, হাজ্জ ও আমরু বিল মারুফ, অননাহই আনিল মুনকার ইত্যাদি। মুশাহিন অন্যদের সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামায
পড়তে যেমন পছন্দ করেনা, তেমনি অভাবীদের প্রতি যাকাতের হাত প্রসারিত
করতে পারে না….এভাবেই তার ধর্মবোধ নষ্ট হয়ে যায়। এক কথায়,
শিরক আল্লাহর সাথে আর বিদ্বেষ মানুষের সাথে সম্পর্ক বিনষ্ট করে দিয়ে
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ধর্মকেই ধ্বংস করে দেয়।
এছাড়া ও যে কাজ গুলো করা যেতে
পারে,
তাহলো,
ক. নফল নামায, জিকির-আজকার, তিলাওয়াত,ইলম চর্চা, দুআ ইত্যাদি।
তবে তা একাকী করাই উত্তম। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ রাতের কোন
নির্দিষ্ট নামায বা অন্যকোন নির্দিষ্ট ইবাদাত নেই। যেমনটি অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়।
এ রাত উপলক্ষ্যে, জামাতের সাথে বিশেষ ধরনের নামায আদায় করা,
কিংবা অনিবার্য মনে করে মিলাদ মাহফিল করা বা মিষ্টি-হালুয়া ইত্যাদি
বিরতণ, কিংবা ভাগ্য রজনী মনে করে সারা বছর ভালো খাওয়া যাবে এ
নিয়্যতে এ রাতে রকমারী সুস্বাদু খাদ্য ব্যঞ্জনা খাওয়া, মসজিদ-মাজার
ইত্যাদি আলোকসজ্জিত করা, ঈদ উৎসবের আমেজ নিয়ে আড়ম্বতাপূর্ণ
পরিবেশে একত্রিত হওয়া, এ রাতকে লাইলাতুল কদরের সমপর্যায়ে নিয়ে
প্রাপ্তির চেয়ে অধিক প্রদান করা এগুলো সবই হচ্ছে বাড়াবাড়ি।
পরের দিন রোজা রাখা যাবে কিনা?
প্রথম কথা হলো, রাসূল (স.) শাবান মাসের বেশির
ভাগই রোজা রাখতেন। মেযনটি নিচের হাদীসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয়।
روى أسامة بن زيد عن رسول الله
صلى الله عليه وعلى آله وسلم، أنه سأله قائلاً: يا رسول الله لم أرك تصوم من شهر
من شهور العام كما تصوم من شهر شعبان ! فقال عليه الصلاة والسلام: ذلك شهر يغفل
عنه كثير من الناس بين رجب ورمضان، وهو شهر ترتفع فيه الأعمال إلى الله عز وجل،
فأحب أن يرتفع عملي إلى الله وأنا صائم
হযরত উসামাহ বিন যাইদ থেকে
বর্ণিত। তিনি রাসূল স. কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, শাবান মাসে আপনি যে পরিমান রোজা রাখেন, আপনাকে অন্য কোন
মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনা। তখন রাসূল বললেন, রজন এবং রমাদানের
মধ্যে অবস্থিত শাবান সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই উদাসীন। তাছাড়া, এ মাসে মানুষের আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়, তাই
আমি চাই রোজাদার অবস্থায় যেন আমার আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়”।
খ. হযরত আইশা থেকে বণিত।
وَلَمْ أَرَهُ صَائِمًا مِنْ
شَهْرٍ قَطُّ أَكْثَرَ مِنْ صِيَامِهِ مِنْ شَعْبَانَ ، كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ
كُلَّهُ ، كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ إِلا قَلِيلا .
রাসলূকে (স.) শাবান মাসের মত
এত রোজা অন্য কোন মাসে রাখতে দেখিনি । তিনি পুরো শাবান কিংবা এর অধিকাংশ অংশই রোজা রাখতেন।
দ্বিতীয়ত: শুধু ১৫ই শাবান
দিবসে একটি রোজা রাখা যাবে কিনা, এ ব্যাপারে একটি হাদীস রয়েছে। তবে হাদীসটি
বিশুদ্ধ না হওয়ায় তা প্রমাণযেগ্য নয়।
হাদীসটি হচ্ছে:
عن عَلِيِّ بن أبي طَالِبٍ
قال، قال رسول الله –صلى الله عليه وسلم-: (إذا كانت لَيْلَةُ النِّصْفِ من
شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا فإن اللَّهَ يَنْزِلُ فيها
لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إلى سَمَاءِ الدُّنْيَا فيقول: ألا من مُسْتَغْفِرٍ لي
فَأَغْفِرَ له، ألا مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ، ألا مبتلى فَأُعَافِيَهُ، ألا
كَذَا ألا كَذَا حتى يَطْلُعَ الْفَجْرُ
“হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন,
রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, অর্ধ শাবান যখন আসে,
তখন তোমরা এর রাত্রিটিকে (ইবাদাতের মাধ্যমে) জাগ্রত রাখো এবং তার (পরবর্তী)
দিবসে রোজা রাখ। কারণ আল্লাহ এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রথম আকাশে নাযিল হন এবং
বলতে থাকেন, কেউকি আছো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো, কেউ কি আছো রিযিক অন্বেষণকারী,
তাকে রিযিক দেবো, কেউ কি আছো বিপদাপন্ন/অসুস্থ,
তাকে বিপদমুক্ত/সুস্থতা দেব। কেউ কি আছো…কেউকি আছো..? এভাবে সুর্যাস্ত পর্যন্ত বলতে
থাকেন”।
এ হাদীসটি ইবনু মাজাহ বর্ণনা
করেছেন। তবে হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল। এ জাতীয় দর্বল সনদবিশিষ্ট হাদীস দিয়ে প্রমাণ
পেশ করা সমীচিন নয়। এ ব্যাপারে সরাসরি হাদীসবিশারদদের মতামত দেখা যাক:
ইমাম ইবনুল যাওযী বলছেন, هذا حديث لا يصحُّ হাদীসটি শুদ্ধ নয়। ইরাকী ও ইমাম আইনী বলেন, إسناده ضعيف এর সনদ দুর্বল। ইমাম ইবনু শিহাব আল-বুসাইরী বলেন,
هذا إسناد فيه ابن أبي سبرة،
واسمه أبو بكر بن عبد الله بن محمد بن أبي سبرة. قال أحمد بن حنبل، ويحيى ابن
معين: يضع الحديث
এর সনদের মধ্যে রয়েছেন ইবনু
আবী সুবরাহ। তার পুরো নাম, আবু বকর বিন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আবি
সুবরাহ। ইমাম আহমাদও ইয়াহইয়া বিন মায়ীন বলেন তার সম্পর্কে: তিনি হাদীস জাল করেন।
ইমাম বুখারী বলেন: লোকটি দুর্বল।
নাসাঈ বলেন,
متروك
الحديث তার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।
ইবনু হিব্বান বলেন,
كان ممن يروي الموضوعات عن
الثقات، لا يجوز الاحتجاج به.
আবু সুবরাহ জাল হাদীস বর্ণনাকারীদের
একজন। তার বর্ণনা দিয়ে প্রমাণ পেশ করা বৈধ নয়।
ইমমা আলবানী বলেন: হাদীসটি
খুবই দুর্বল কিংবা বানোয়াট।
তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
হলো,
أنّ من صام هذا اليوم بنية صوم
يوم من شعبان، أو الأيام البيض أو وافق يوم الاثنين أو الخميس فلا شيَء عليه، بل
أصاب السنة كما هو معلومٌ عند أهل الشأن؛ فالنية هي الحدّ الفاصل في صيام هذا
اليوم، وصدق الصادق المصدوق بقوله: (إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا
لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى..)
যদি কেউ এ নিয়্যাত করে ১৫
শাবানের রোযা রাখে যে, এটি শাবান মাসের একটি দিনের রোযা কিংবা বেজোড়
দিবসসমূহ অথচা তা সোম ও বৃহস্পতিবারের অভ্যাসগত রোযার সাথে মিলে যায়, তাতে কোন সমস্যা নেই। বরং এর মাধ্যমে সে সুন্নতেরই অনুসরণ করলো। নিয়্যাতই
এখানে পার্থক্য নির্ণয়কারী। রাসূল (স.) বলেন, নিয়্যাতের উপরই
নির্ভরশীল মানুষের আমল”।
মোট কথা, এ রাতের মাহাত্ম্য আছে,
তবে সীমালংঘনের সুযোগ নেই।
জিজ্ঞাসা-১২৪৮৬:
মোটিভেশন ক্লাস: ১৩
আসসালামু আলাইকুম
"কুরআন ও হাদিসের আলোকে
ব্যভিচারের শাস্তি, পরিনাম, ও প্রতিকার" এই বিষয় লেসন প্ল্যান থাকলে ওয়ার্ড এবং পিডিএফ
ফাইল শেয়ার করার অনুরোধ রইলো,
তারিখ: ০৩/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মো: কামরুল হাসান যশোর থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
কুরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যভিচারের
শাস্তি, পরিনাম, ও প্রতিকার"
ব্যভিচার চরিত্রহীনতা ও এক মহা
অপরাধ। এ অপরাধ-রাজ্যে বাস করে মানুষ যে সব সময় আনন্দ পায় তা নয়। যেমন আল্লাহর আনুগত্য
ও স্মরণে মন প্রশান্ত থাকে, তেমনি তাঁর অবাধ্যাচরণ ও পাপ-পঙ্কিলতাময় জীবনে মন
বিক্ষিপ্ত ও অশান্তিময় থাকে।
ব্যভিচারের কী?
যিনা বা ব্যভিচার বলতে বুঝায়
ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধন ছাড়া অবৈধ পন্থায় যৌন তৃপ্তি লাভ করাকে। ইসলামী
শরীয়াতে অবৈধ পন্থায় যৌন সম্ভোগ সম্পূর্ণ হারাম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
কারণসমুহ:
১- যুবক-যুবতীর নির্জনতা অবলম্বন, একান্তে
গমন-ভ্রমণ, কোনো বাড়ি বা রুমে একাকী উভয়ের বসবাস বা গাড়িতে
চালকের সাথে একাকিনী যাতায়াত, দোকানে দোকানদারের কাছে একাকিনী
মার্কেট করা, দর্জির কাছে একান্তে পোশাকের মাপ দেওয়া, ডাক্তারের
সহিত নার্সের অথবা রোগিণীর একান্তে চিকিৎসা কাজ, প্রাইভেট
টিউটরের কাছে একাকিনী পড়াশোনা করা ইত্যাদি। এগুলি ব্যভিচারের এক একটি সূক্ষ্ম ছিদ্রপথ।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“কোন মহিলার সাথে কোনো পুরুষ যখন নির্জনতা অবলম্বন
করে, তখন শয়তান তাদের তৃতীয় জন (কুটনা) হয়।[1]
আর এই কারণেই মহিলার জন্য স্বামীর
ভাই ইত্যাদি বেগানা আত্মীয়কে মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয়েছে[2]!
২- অবাধ মেলামেশা। পর্দার সাথে
হলেও পাশাপাশি নারী-পুরুষের অবস্থান ব্যভিচারের এক বিপজ্জনক ছিদ্রপথ। একই বাড়িতে চাচাতো
প্রভৃতি ভাই-বোন, স্কুল-কলেজে ও চাকুরী-ক্ষেত্রে যুবক-যুবতীর অবাধ
দেখা-সাক্ষাৎ, অনুরূপ মার্কেটে, মেলা-খেলায়, বিয়েবাড়ি, মরা-বাড়ি, হাসপাতাল
প্রভৃতি জায়গায় নারী-পুরুষের বারবার সাক্ষাতের ফলে পরিচয় এবং প্রেম, আর তারপরই
শুরু হয় ব্যভিচার।
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘তোমাদের কি শরম নেই?
তোমাদের
কি ঈর্ষা নেই? তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে পর-পুরুষদের মাঝে যেতে
ছেড়ে দাও এবং এরা ওদেরকে ও ওরা এদেরকে দেখাদেখি করে!’[3]
৩- বিবাহে বিলম্ব। সঠিক ও উপযুক্ত
বয়সে বা প্রয়োজন-সময়ে বিয়ে না হলে যৌন ক্ষুধা নিবারণের জন্য ব্যভিচার ঘটা স্বাভাবিক।
অধ্যয়ন শেষ করার আশায় অথবা চাকুরী পাওয়ার অপেক্ষায় অথবা সামাজিক কোনো বাধায় (বিধবা)
বিবাহ না হওয়ার ফলে ব্যভিচারের এক চোরা পথ খোলা যায়।
৪- অতিরিক্ত মাহর অথবা পণ ও যৌতুক-প্রথাও
ব্যভিচারের একটি কারণ। কেননা, উভয় প্রথাই বিবাহের পথে বড় বাধা।
৫- মহিলাদের বেপর্দা চলন ও নগ্নতা।
ব্যভিচার ও ধর্ষণের এটি একটি বড় কারণ। ছিলা কলাতে মাছি বসা স্বাভাবিক। ছিলা লেবু বা
খোলা তেঁতুল দেখলে জিভে পানি আসা মানুষের প্রকৃতিগত ব্যাপার। অনুরূপ পর্দা-হীনা, অর্ধ
নগ্না ও প্রায় পূর্ণ নগ্না যুবতী দেখলে যুবকের মনে কাম উত্তেজিত হওয়াও স্বাভাবিক। আর
এ জন্যই ইসলামে পর্দার বিধান অনুসরণ করা মহিলার উপর ফরয করা হয়েছে। নারীকে তার সৌন্দর্য
বেগানা পুরুষকে প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে। (সূরা নূর, আয়াত:
৩১)
আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে,
«الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ»
“নারী হলো গোপনীয় জিনিস। তাই যখন সে (গোপনীয়তা থেকে) বের হয়, তখন
শয়তান তাকে পুরুষের চোখে শোভনীয়া ও লোভনীয়া করে তোলে[4]।”
৬- নোংরা ফিল্ম দেখা, অশ্লীল
পত্র-পত্রিকা পড়া এবং গান শোনা। যৌবনের কামনায় যৌন-চেতনা বা উত্তেজনা বলে একটা জিনিস
আছে। যার অর্থ এই যে, যৌন-কামনা ঘুমিয়ে থাকে বা তাকে সুপ্ত রাখা যায় এবং
কখনো কখনো তা প্রশান্ত থাকে বা তাকে প্রশমিত রাখা সম্ভব। বলা বাহুল্য নোংরা ফিল্ম, পত্র-পত্রিকা
এবং গান হলো এমন জিনিস, যা সুপ্ত যৌনকামনাকে জাগ্রত করে এবং প্রশান্ত যৌন-বাসনাকে
উত্তেজিত করে। এ ছাড়া এ উম্মতের সম্মানিত উত্তরসূরীগণ বলতেন যে, ‘গান হলো ব্যভিচারের মন্ত্র।’
৭- বেশ্যাবৃত্তির স্বীকৃতি ও
সমাজে তাদের পেশাদারীর অনুমতি। তাদেরকে ‘যৌনকর্মী’
বলে
আখ্যায়িত করে তাদের বৃত্তিকে অর্থোপার্জনের এক পেশা বলে স্বীকার করে নেওয়া ব্যভিচার
প্রসার লাভের অন্যতম কারণ।
৮- মদ ও মাদক-দ্রব্যের ব্যাপক
ব্যবহার। মদ, হিরোইন প্রভৃতির নেশায় নারীর নেশা ও চাহিদা সৃষ্টি
হয় মাতাল মনে। ফলে এর কারণেও ব্যভিচার ব্যাপক হয়।
৯- আর সবচেয়ে বড় ও প্রধান কারণ
হল, দ্বীন ও ঈমানের দুর্বলতা, নৈতিক
চরিত্রের অবক্ষয়। যার মাঝে ঈমান ও তাকওয়া নেই,
সে ব্যভিচার
থেকে বাঁচতে পারে না। এমন ব্যক্তির মনের ডোর শয়তানের হাতে থাকে। অথবা নিজের খেয়াল-খুশী
মত চালাতে থাকে নিজের জীবন ও যৌবনকে।
বলা বাহুল্য, যুবক
যদি উল্লেখিত ব্যভিচারের কারণসমূহ থেকে দূরে থাকতে পারে, তাহলে
অবশ্যই সে ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারবে। পক্ষান্তরে উপরোক্ত কারণসমূহের কোনো একটির কাছাকাছি
গেলেই ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ে পড়বে। আর মহান আল্লাহর ঘোষণা হল,
﴿ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ
إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢ ﴾ [الاسراء: ٣٢]
“তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কারণ তা হলো অশ্লীল এবং
নোংরা পথ।” সূরা ইসরা-৩২
ব্যভিচার ব্যাপক আকারে প্রসার
লাভ করা এই কথার ইঙ্গিত যে, কিয়ামত অতি নিকটে আসছে।
অতএব যত দিন যাবে, ব্যভিচার
পৃথিবীময় তত আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে ঈমানদাররা ঈমান নিয়ে অবশ্যই সর্বদা সে অশ্লীলতা থেকে
দূরে থাকবে।
ব্যভিচারের শাস্তি:
ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি ব্যক্তিভেদে
একটু ভিন্ন। ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়,
তাহলে
তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে
তাকে প্রকাশ্যে একশ’ ছড়ি
মারা হবে। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই শাস্তি।
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
Surah An-Noor, Verse 2:
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي
فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا
رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ
الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ
ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে
দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি
বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। সূরা নূর-০২
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ
بْنُ الْمُنْذِرِ، حَدَّثَنَا أَبُو ضَمْرَةَ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ،
عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ
ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ الْيَهُودَ، جَاءُوا إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم بِرَجُلٍ مِنْهُمْ وَامْرَأَةٍ زَنَيَا، فَأَمَرَ بِهِمَا فَرُجِمَا قَرِيبًا
مِنْ مَوْضِعِ الْجَنَائِزِ عِنْدَ الْمَسْجِدِ.
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ইয়াহূদীরা
তাদের এক পুরুষ ও এক স্ত্রীলোককে হাযির করল, যারা ব্যভিচার করেছিল।
তখন তিনি তাদের উভয়কে রজমের (পাথর নিক্ষেপে হত্যা) নির্দেশ দেন। মসজিদের পাশে জানাযার
স্থানের নিকটে তাদের দু’জনকে রজম করা হল। তাখরিজ: সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৩২৯
এই হাদিসের আলোকে অন্য মাজহাবের
ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, ব্যভিচারী অবিবাহিত হলে তার শাস্তি দুটো। ১. একশ’
বেত্রাঘাত, ২. এক
বছরের জন্য দেশান্তর।
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ
يُوسُفَ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، قَالَ حَدَّثَنِي سَعِيدٌ الْمَقْبُرِيُّ، عَنْ
أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّهُ سَمِعَهُ يَقُولُ قَالَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِذَا زَنَتِ الأَمَةُ فَتَبَيَّنَ زِنَاهَا
فَلْيَجْلِدْهَا، وَلاَ يُثَرِّبْ، ثُمَّ إِنْ زَنَتْ فَلْيَجْلِدْهَا، وَلاَ
يُثَرِّبْ، ثُمَّ إِنْ زَنَتِ الثَّالِثَةَ فَلْيَبِعْهَا، وَلَوْ بِحَبْلٍ مِنْ
شَعَرٍ ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি
বাঁদী ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার প্রমাণিত হয়, তবে
তাকে বেত্রাঘাত করবে। আর তিরস্কার করবে না। তারপর যদি আবার ব্যভিচার করে তবে তাকে বিক্রি
করে দিবে; যদিও পশমের রশির (ন্যায় সামান্য বস্তুর) বিনিময়েও
হয়। হাদিস নং ২১৫২
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ
بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ
عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ ـ رضى الله عنه ـ
عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ أَمَرَ فِيمَنْ زَنَى وَلَمْ
يُحْصِنْ بِجَلْدِ مِائَةٍ وَتَغْرِيبِ عَامٍ.
যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবিবাহিত ব্যভিচারী সম্পর্কে একশ’
বেত্রাঘাত
এবং এক বছরের নির্বাসনের নির্দেশ দিয়েছেন।
আর হানাফি মাজহাবের বিশেষজ্ঞরা
বলেন, এক্ষেত্রে হদ (শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি) হলো- একশ’
বেত্রাঘাত।
আর দেশান্তরের বিষয়টি বিচারকের বিবেচনাধীন। তিনি ব্যক্তি বিশেষে তা প্রয়োগ করতে পারেন।
ইসলামে ধর্ষণ প্রমাণের নীতিমালা:
ব্যভিচার প্রমাণের জন্য ইসলামে
দু’টোর যে কোনোটি জরুরি। ক. ৪ জন সাক্ষী, খ. ধর্ষকের
স্বীকারোক্তি।
তবে সাক্ষী না পাওয়া গেলে আধুনিক
ডিএনএ টেস্ট, সিসি ক্যামেরা, মোবাইল
ভিডিও, ধর্ষিতার বক্তব্য ইত্যাদি অনুযায়ী ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতার করে
স্বীকার করার জন্য চাপ দেওয়া হবে। স্বীকারোক্তি পেলে তার ওপর শাস্তি কার্যকর করা হবে।
ইসলামে ধর্ষণ ও ব্যভিচার, সম্মতি-অসম্মতি
উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। তবে নারীর ক্ষেত্রে ধর্ষিতা হলে কোনো
শাস্তি নেই, সম্মতিতে হলে শাস্তি আছে। যৌন অপরাধ নির্ণয়ে ইসলাম
নির্ধারিত বিভাজনরেখা (বিবাহিত-অবিবাহিত) সর্বোৎকৃষ্ট।
প্রতিকার:
১- পর্দাহীনতা দূর করে, সমাজে
পবিত্র পর্দা-আইন চালু করা। আর এ দায়িত্ব হলো প্রত্যেক মুসলিমের, নারী
ও পুরুষ, যুবক ও বৃদ্ধ, রাজা
ও প্রজা সকলের।
২- ব্যভিচারের ‘হদ্দ্’ দণ্ডবিধি
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চালু করা। এমন শাস্তি প্রয়োগ করা, যাতে
কোনো লম্পট তার লাম্পট্যে সুযোগ ও সাহস না পায়।
৩- মহিলাকে কোনো মাহরাম বা স্বামী
ছাড়া একাকিনী বাড়ির বাইরে না ছাড়া।
৪- কোনো বেগানা (দেওর, বুনাই, নন্দাই, বন্ধু
প্রভৃতি) পুরুষের সাথে নারীকে নির্জনতা অবলম্বন করার সুযোগ না দেওয়া। সে বেগানা পুরুষ
ফিরিশতা তুল্য হলেও তার সহিত মহিলাকে নির্জন বাস বা সফর করতে না দেওয়া।
৫- সৎ-চরিত্র গঠন করার সামাজিক
ভূমিকা পালন করা; অশ্লীল ছবি,
পত্র-পত্রিকা, গানবাজনা, যাত্রা-থিয়েটার
প্রভৃতি বন্ধ করা এবং রেডিও, টিভি ও পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি
প্রচারমাধ্যমে সচ্চরিত্র গঠনের উপর তাকীদ প্রচার করা।
৬- সর্বতোভাবে বিবাহের সকল উপায়-উপকরণ
সহজ করা। সহজে বিবাহ হওয়ার পথে সকল বাধা-বিপত্তি দূর করা।
৭- স্কুল-কলেজে সহশিক্ষা বন্ধ
করে বালক ও বালিকাদের জন্য পৃথক পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। অবিবাহিত তরুণ-তরুণী
ও কিশোর-কিশোরীকে যৌন-শিক্ষা না দেওয়া।
৮- নারীর জন্য পৃথক চাকুরী-ক্ষেত্র
তৈরী করা।
৯- সকল প্রকার বেশ্যাবৃত্তি ও
যৌন-ব্যবসা বন্ধ করা।
কিন্তু বন্ধু! তুমি যদি কোনো
অমুসলিম রাষ্ট্রে বাস কর, তাহলে নোংরামির স্রোতে গা না ভাসিয়ে নিজেকে ও নিজের
পরিবার-পরিজনকে বাঁচানোর জন্য নিম্নের উপদেশমালা গ্রহণ করঃ-
উপদেশমালা:-
১- তোমার পরিবার ও পরিবেশের মাঝে
একটি স্বায়ত্ত-শাসনভুক্ত রাষ্ট্র গঠন কর এবং সেই রাষ্ট্রে যথা-সম্ভব ইসলামী আইন চালু
কর।
২- অশ্লীলতার মোকাবিলা করার জন্য
নিজের আত্মাকে ট্রেনিং দাও। আল্লাহ-ভীতি ও ‘তাকওয়া’
মনের
মাঝে সঞ্চিত রাখ। শয়তান ও খেয়াল-খুশীর দাসত্ব করা থেকে বহু ক্রোশ দূরে থাক। ‘নাফসে আম্মারাহ’কে সর্বদা
দমন করে রাখ। মনে-প্রাণে আল্লাহর স্মরণ রাখ। মন প্রশান্ত থাকবে।
৩- পরিপূর্ণ মু’মিন হলো সেই ব্যক্তি,
যে তার
চরিত্রে সবচেয়ে সুন্দর। অতএব তুমি তোমার চরিত্রকে সুন্দর ও পবিত্র কর।
৪- নোংরা পরিবেশে ধৈর্যশীলতা
অবলম্বন কর। ধৈর্যের ফল বড় মিঠা হয়। অতএব ধৈর্যের সাথে অশ্লীলতার মোকাবিলা কর।
৫- মন্দ পরিণামকে ভয় কর। দুনিয়া
ও আখেরাতের লাঞ্ছনা ও শাস্তির ভয় রাখ।
৬- অশ্লীলতা ও ব্যভিচার থেকে
বাঁচতে পারলে তাতে যে সওয়াব ও মর্যাদা লাভ হয়,
তার
লোভ ও আশা রাখ। কিয়ামতে ছায়াহীন মাঠে আরশের ছায়া লাভ এবং বেহেশতে হুরীদের সহিত ইচ্ছাসুখের
সম্ভোগের কথা মনে রাখ।
৭- মনে রেখো যে, তুমি
যেমন চাও না, তোমার মা-বোন বা স্ত্রী ব্যভিচারিণী অথবা ধর্ষিতা
হোক, তেমনি অন্য কেউই তা চায় না। অতএব সকলের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা
বজায় রাখ।
৮- লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি অংশ
ও শাখা। মু’মিন হিসাবে তুমি সে মহৎ গুণকে তোমার হƒদয় থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিও না। লজ্জাশীলতা তোমার মনের প্রতি
অশ্লীলতার সকল ছিদ্রপথ বন্ধ করুক।
৯- হিম্মত উঁচু রাখ। নিজের সচ্চরিত্রতা
নিয়ে নিজেকে ধন্য মনে কর। আর মনে রেখো যে,
সচ্চরিত্র
এক অমূল্য ধন; যা আর কারো না থাকলে তোমার আছে।
১০- সেই সকল অশ্লীল বই-পুস্তক
ও পত্র-পত্রিকা পড়া অবশ্যই ত্যাগ কর,
যা পড়ে
তোমার হƒদয়ে কামনার উদ্রেক হয়, যৌন
উত্তেজনা সৃষ্টি হয় দেহ-মনে। আর সেই সকল বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা পড়, যাতে
এ সব পাপ ও তার শাস্তির কথা আলোচিত হয়েছে,
যাতে
রয়েছে আল্লাহ-ভীতির কথা।
১১- ইসলাম ও তার শরীয়তকে তোমার
জীবনের সকল ক্ষেত্রে জীবন-বিধান বলে জানো ও মানো। দেখবে, সকল
সমস্যার সমাধান রয়েছে ইসলামে।
১২- সম্ভব হলে সত্বর বিবাহ করে
ফেল। কারণ, বিবাহই হলো এ সমস্যার সবচেয়ে উত্তম সমাধান। বিবাহ
হলো অর্ধেক দ্বীন। বিবাহ হলো শান্তির মলম। বিবাহিতকে আল্লাহ সাহায্য করে থাকেন। সুতরাং
চাকুরী না হলেও, নিজের পায়ে না দাঁড়ালেও, পড়া
শেষ না হলেও তুমি বিবাহ কর। তোমার জন্য আল্লাহর সাহায্য আছে। আর জেনে রেখো যে, ব্যভিচারে
পড়ার ভয় থাকলে তোমার জন্য বিবাহ করা ফরয।
১৩- মনের খেয়াল-খুশী ও প্রবৃত্তির
ডোর নিজের হাতে ধরে থেকো এবং শয়তানের হাতে ছেড়ে দিও না। তোমার মনকে পবিত্র রেখো। কারণ,
﴿ قَدۡ أَفۡلَحَ مَن
زَكَّىٰهَا ٩ وَقَدۡ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا ١٠ ﴾ [الشمس: ٩، ١٠]
“যে তার মনকে পবিত্র করবে, সে হবে
সফলকাম এবং যে তা কলুষিত করবে, সেই হবে অসফল।” সূরা আস-শামস,
আয়াত:
৯-১০
১৪- মনকে নিয়ন্ত্রিত ও সংযত করার
জন্য রোযা রাখ। এই রোযা তোমার যৌন-কামনাও দমন করবে।
১৫- ব্যভিচার থেকে বাঁচার জন্য
চোখের ব্যভিচার থেকে দূরে থাক। আল্লাহর হারামকৃত বস্তুর দিকে দৃষ্টিপাত করো না। হারামের
সামনে নজর ঝুঁকিয়ে চল।
১৬- সকল প্রকার যৌন-চিন্তা মন
থেকে তুলে ফেল। আর এর জন্য ইসলামী ক্যাসেট শোন,
বই পড়।
নেক বন্ধুর কাছে গিয়ে বস এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা আলোচনা কর। একা থাকলে কুরআন
ও তার অর্থ পড়।
১৭- যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী
সকল উপায় ও উপকরণ থেকে দূরে থাক। ভাবী ও চাচাতো-খালাতো-মামাতো-ফুফাতো বোনরা বেপর্দা
হলে তাদেরকে নিজের বোনের মত দেখো। বন্ধুর বউ বেপর্দা হলে তার সাথে বন্ধুত্ব বর্জন কর।
প্রয়োজন ছাড়া বেড়াবার উদ্দেশ্যে এমন স্থানে (হাটে-বাজারে) বেড়াতে যেও না, যেখানে
নেংটা মহিলা নজরে আসে। টিভি-সিনেমা,
নাটক-যাত্রা-থিয়েটার
দেখা বন্ধ কর। ব্যভিচারের মন্ত্র গান শোনা বর্জন কর। স্কুল-কলেজে সহপাঠিনী থেকে দূরে
থাক এবং ধৈর্যের সাথে দৃষ্টি সংযত রাখ।
১৮- সুশীল বন্ধু গ্রহণ কর এবং
এমন বন্ধুর সংসর্গ ত্যাগ কর, যে যৌন ও নারীর কথা আলোচনা করে
মজা নেয় ও আসর জমায়।
১৯- নির্জনতা ত্যাগ কর। বেকারত্ব
দূর কর। কোনো একটা কাজ ধরে নাও এবং সে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাক।
২০- যদি তুমি এমন দেশে থাক, যে দেশে
ব্যভিচার কোনো পাপ বা অপরাধ নয় অথবা এমন জায়গায় চাকুরী কর, যেখানে
মহিলা সহকর্মীরা অযাচিতভাবে তোমার গায়ে পড়তে আসে, তাহলে
সম্ভব হলে তুমি সে দেশ, পরিবেশ ও চাকুরী ত্যাগ করে বিকল্প ব্যবস্থা নাও।
অর্থের জন্য নিজের চরিত্র ও ঈমান হারিয়ো না। আল্লাহ তোমার সহায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর
জন্য কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে বিনিময়ে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করেন।
২১- তওবা ও ইস্তিগফার করতে থাক।
নারীর ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। আল্লাহ তোমাকে নোংরামি থেকে রক্ষা
করবেন।
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ
إِذَا مَسَّهُمۡ طَٰٓئِفٞ مِّنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُم
مُّبۡصِرُونَ ٢٠١ ﴾ [الاعراف: ٢٠٠]
“অবশ্যই যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে, তাদেরকে
শয়তান কুমন্ত্রণা দেওয়ার সাথে সাথে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা-শক্তি
জাগ্রত হয়ে ওঠে। (তারা হয় আত্ম সচেতন মানুষ। সূরা আ’রাফ, আয়াত:
২০১
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মাওলানা জুনাইদ
সাম্পদনায়, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৮৭:
আসসালামু আলাইকুম মুহতারাম।
আমার জানার বিষয় হচ্ছে কোন অবৈধ সন্তান বড়
হয়ে হাফেজ হয়ে একটা এলাকায় মসজিদে ইমাম হিসেবে
দায়িত্ব পালন করছে।এলাকাবাসী তার জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কে অবগত আছে, এমতাবস্থায় তার ইমামতি করার ব্যাপারে শরয়ী কোন বাধা আছে কি? তারিখ: ০৪/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ তাজুল ইসলাম কুমিল্লা
থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ব্যভিচারজাত সন্তানের কোন দোষ নেই। তার মা-বাপের দোষ তার ঘাড়ে
আসতে পারে না। সুতরাং অন্যান্য দিকে যোগ্যতা থাকলে তার ইমামতি এবং তার পশ্চাতে নামায
শুদ্ধ হবে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্-১৯/১৪৭-১৪৮, মাবসুতে
সারাখসি-১/১৩৭-১৩৮, বাদায়েউস সানায়ে-১/১৫০)
ইমামতির উপযুক্ত অন্য কেউ থাকা
অবস্থায় তাকে ইমাম বানানো মাকরুহ, এ ক্ষেত্রে দুটি কারণে ১. অভিভাবকত্বের
ত্রুটি ও ২. সামাজিক মর্যাদার অস্বীকৃতির জন্য তাদের ইমামতি মাকরুহ। তবে যদি সে আলেম
ও উপযুক্ত হয়, তখন তাকে ইমাম বানানো মাকরুহ নয়। (রদ্দুল মুহতার-১/৫৬২)
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মাওলানা মাহমুদুল
হাসান
জিজ্ঞাসা-১২৪৮৮:
আস্ সালামুআলাইকুম, শায়েখ আমার জানার বিষয় হলো মসজিদের/ওয়াকফ স্টেট এর
মুতাওয়াল্লী হওয়ার অধিকারী কারা হবেন এ বিষয়ে সমাধান জানালে উপকৃত হবো। তারিখ: ০৭/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ আমিনুল ইসলাম, সাভার, ঢাকা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
وإن كان الوقف مسجداً , فتعطل في موضعه , كأن خربت
محلته ؛ فإنه يباع ويصرف ثمنه في مسجد آخر , وإذا كان على مسجد وقف زاد ريعه عن
حاجته ؛ جاز صرف الزائد إلى مسجد آخر ؛ لأنه انتفاع به في جنس ما وقف له ، وتجوز
الصدقة بالزائد من غلة الوقف على المسجد على المساكين
ওয়াকফকারী কোন শর্ত না করেন সেক্ষেত্রে হকদার হিসেবে
গরীব-ধনী, নর-নারী সবাই সমান। যদি ওয়াকফকারী কোন
মুতাওয়াল্লি (তত্ত্বাবধায়ক) নিযুক্ত না করেন কিংবা যাকে নিযুক্ত করেছেন তিনি মারা
যান তাহলে যার জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে তিনি যদি সুনির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি হন তিনিই
ওয়াকফের তত্ত্বাবধান করবেন। আর যদি মসজিদের মত কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়াকফ করা হয়
কিংবা এমন সংখ্যক মানুষের জন্য ওয়াকফ করা হয় যাদের সংখ্যা অগণিত, যেমন
গরীব-মিসকীন; সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপ্রধান এই ওয়াকফ সম্পত্তি
তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব পালন করবেন কিংবা তার কোন প্রতিনিধিকে দায়িত্ব দিবেন।
সূত্র: আহকামুল ওয়াকফ ফাতওয়া নং -১৩৭২০
إذا شرط الواقف النظر على وقفه لنفسه أو غيره واحداًكان
أو أكثر جعله مرتباًبينهم كأن يجعل الولاية لفلان فإذا مات فلفلان، إذا شرط ذلك
وجب العمل بشرطه لما روي أن عمر – رضي الله عنه – " كان يلي أمر صدقته – أي
وقفه – ثم جعله إلى حفصة تليه ما عاشت ثم يليه أولوا الرأي من أهلها" رواه
أبو داود.
দানকারীকে তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা, যে
ব্যক্তি তার নিজের বা অন্যদের জন্য,
এক
বা একাধিক, যদি তার দান-দক্ষিণ দেখার শর্ত স্থির করে, তবে
সে তাদের মধ্যে এটির ব্যবস্থা করে দেয়,
যেমন
অমুক-অমুকের অভিভাবকত্ব, এবং যদি তাই হয়। -এবং-মৃত্যু হল, তারপর
তার অবস্থার উপর আমল করতে হবে।
দলিল: حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ الْمَهْرِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ
وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي اللَّيْثُ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ صَدَقَةِ، عُمَرَ
بْنِ الْخَطَّابِ رضى الله عنه قَالَ نَسَخَهَا لِي عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ عَبْدِ
اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ بِسْمِ اللَّهِ
الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ هَذَا مَا كَتَبَ عَبْدُ اللَّهِ عُمَرُ فِي ثَمْغٍ
فَقَصَّ مِنْ خَبَرِهِ نَحْوَ حَدِيثِ نَافِعٍ قَالَ غَيْرَ مُتَأَثِّلٍ مَالاً
فَمَا عَفَا عَنْهُ مِنْ ثَمَرِهِ فَهُوَ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ - قَالَ
وَسَاقَ الْقِصَّةَ - قَالَ وَإِنْ شَاءَ وَلِيُّ ثَمْغٍ اشْتَرَى مِنْ ثَمَرِهِ
رَقِيقًا لِعَمَلِهِ وَكَتَبَ مُعَيْقِيبٌ وَشَهِدَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ
الأَرْقَمِ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ هَذَا مَا أَوْصَى بِهِ عَبْدُ
اللَّهِ عُمَرُ أَمِيرُ الْمُؤْمِنِينَ إِنْ حَدَثَ بِهِ حَدَثٌ أَنَّ ثَمْغًا
وَصِرْمَةَ بْنَ الأَكْوَعِ وَالْعَبْدَ الَّذِي فِيهِ وَالْمِائَةَ سَهْمٍ
الَّتِي بِخَيْبَرَ وَرَقِيقَهُ الَّذِي فِيهِ وَالْمِائَةَ الَّتِي أَطْعَمَهُ
مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم بِالْوَادِي تَلِيهِ حَفْصَةُ مَا عَاشَتْ ثُمَّ
يَلِيهِ ذُو الرَّأْىِ مِنْ أَهْلِهَا أَنْ لاَ يُبَاعَ وَلاَ يُشْتَرَى
يُنْفِقُهُ حَيْثُ رَأَى مِنَ السَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ وَذِي الْقُرْبَى وَلاَ
حَرَجَ عَلَى مَنْ وَلِيَهُ إِنْ أَكَلَ أَوْ آكَلَ أَوِ اشْتَرَى رَقِيقًا مِنْهُ .
কোন ব্যক্তির কোন সম্পদ
ওয়াক্ফ করা সম্পর্কে।
অর্থ: সুলাইমান ইবনে মোহরী (রাহঃ)
..... ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ‘উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) এর
সাদ্কা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমাকে আবদুল হামীদ ইবনে ‘আব্দুল্লাহ্ ইবনে ‘উমর
ইবনে খাত্তাব এরূপ লিখে দিয়েছেনঃ
বিসমিল্লাহির রাহিমানির রাহীম। এ হলো ঐ বর্ণনা, যা ‘আব্দুল্লাহ্ ইবনে ‘উমর
‘ছামাগ’ সম্পর্কে লিখেছিলেন। অতঃপর রাবী নাফি‘(রাহঃ) এর বর্ণিত হাদিসের
ন্যায় বর্ণনা করেছেন যে, ধন-সম্পদ জমাকারী হবে না, আর
যে ফল তাতে পতিত হবে, তা হবে ভিক্ষুক এবং বঞ্চিতদের অংশ। অতঃপর রাবী
এ ঘটনা প্রসঙ্গে বলেনঃ যদি ঐ বাগানের মুতাওয়াল্লী চায়, তবে
সে বাগানের ফল বিক্রি করে সে মূল্য দিয়ে বাগানের কাজের জন্য গোলাম খরিদ করতে পারে।
আর মু‘আয়কীব এ বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন এবং ‘আব্দুল্লাহ্ ইবনে আরকাম এর সাক্ষী হন।
‘‘বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম। এটা ঐ ওসীয়তনামা, যার ওসীয়ত আল্লাহর বান্দা
আমীরুল মু‘মিনীন ‘উমর
(রাযিঃ) করেনঃ যদি তাঁর [উমর (রাযিঃ)] উপর কোন দুর্ঘটনা ঘটে (অর্থাৎ তিনি মারা
যান), তাহলে ‘ছামাগ’
ইবনে
আকুয়ের ‘সুরমা’ [১] এবং সেখানে যে গোলামেরা আছে, তা; আর
খায়বারের একশত হিস্সা এবং সেখানকার গোলামেরা এবং ঐ একশত ভাগ যা মুহাম্মাদ (ﷺ) আমাকে খায়বারের নিকটবর্তী উপত্যকায়
দিয়েছিলেন এ সবের মুতাওয়াল্লী হবে,
যতদিন
সে জীবিত থাকবে, হাফসা (রাযিঃ)।[২] তাঁর অবর্তমানে, তাঁর
পরিবার পরিজনদের মাঝে যারা জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন হবে তারা এর মুতাওয়াল্লী হবে। এ
শর্তে যে, তারা এ বাগান বেচাকেনা করতে পারবে না। কিন্তু
যখন কোন ভিক্ষুক, বঞ্চিত,
নিকটাত্মীয়
বা কোন বন্ধু বান্ধব হবে, তাদের জন্য এ থেকে খরচ করবে। আর এই বাগানের
মুতাওয়াল্লী যদি এ থেকে কিছু ভক্ষণ করে,
অভাবগ্রস্থদের
খাওয়ায় এর মুনাফা হতে (বাগানের কাজের জন্য) কোন গোলাম খরিদ করে, তবে
এত কোন দোষ নেই। তাখরিজ:
সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস
নং ২৮৬৯ (আন্তর্জাতিক নং ২৮৭৯)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সারকথা হলো,
ওয়াকফকারী
যাকে মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত করবেন, তিনিই এর অধিক হকদার।
উল্লেখ্য যে,
মুতাওয়াল্লি
ওয়াকফকারীর আত্মীয়- ওয়ারিশ হলে কোন সমস্যা নেই। আর যার মুতাওয়াল্লি নির্ধারিত
নেই, তার তত্ত্বাবধায়ক হবে,
রাষ্ট্র
বা তার প্রতিনিধি ( মেম্বার, চেয়ারম্যান, টিইও, ডিসি
ইত্যাদি)
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৮৯:
আসসালামু আলাইকুম। বিজ্ঞজনের নিকট জানার
আগ্রহ, মুসাফির সফরের নিয়ত করার
পর হুকুম কখন থেকে শুরু হবে,
নিজ
মহল্লা অতিক্রম করার পরে নাকি ৭২কিলোমিটার অতিক্রমের পরে? বিস্তারিত আদেল্লা এবং হানাফি মাজহারদের বারাহিন সহ জানতে
চাই। হাফিজাকুমুল্লাহ।
তারিখ:
০৫/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাদেকুল ইসলাম, রংপুর থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, يُشترَطُ في قَصْر الصَّلاة في السَّفَر أنْ يكونَ قد خرَج من بيوتِ
بلدِه، وفارَق عمرانَها، وترَكها وراءَ ظَهرِه، وهذا باتِّفاقِ المذاهبِ
الفِقهيَّةِ الأربعةِ: الحَنَفيَّة، والمالِكيَّة، والشافعيَّة، والحَنابِلَة،
وحُكيَ الإجماعُ على ذلك
অর্থাৎ সফরের সময় নামায সংক্ষিপ্ত করার জন্য শর্ত রয়েছে যে, সে তার দেশের বাড়ি-ঘর, শহরাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পিছনে ছেড়ে
গেছে। এটি আইনশাস্ত্রের চারটি মাযহাবের সাথে একমত: হানাফী মাযহাব, এবং মালিকি, এবং
শাফিঈগণ, এবং হাম্বলীএবং এ বিষয়ে চার
ইমামের ইজমা হয়েছে। সূত্র: আলমুগনি -২/১৯১, ইবনে
কুদামা রহ.
দ্বিতীয় কথা হলো,
সফরের
দূরত্বে যাবার নিয়তে নিজ এলাকা থেকে বের হলেই ব্যক্তি মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে।
বর্তমানে ‘নিজ এলাকা’
বলতে
উদ্দেশ্য হলো, যদি শহরে বসবাস করে, তাহলে
স্বীয় শহর অতিক্রম করলে ব্যক্তি মুসাফির। আর গ্রাম থেকে সফরে বের হলে, স্বীয়
গ্রাম অতিক্রম করলে ব্যক্তি মুসাফির হিসেবে পরিগণিত হবে। সেই হিসেবে গ্রামের
সীমানা পাড় হবার পর থেকেই কসর পড়বে।
দলিল:
আয়াত নং-০১
Surah
An-Nisa, Verse 101:
وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ
جُنَاحٌ أَن تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَن يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ
كَفَرُوا إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُوا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِينًا
অর্থ: যখন তোমরা কোন দেশ সফর কর, তখন
নামাযে কিছুটা হ্রাস করলে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, যদি
তোমরা আশঙ্কা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে। নিশ্চয়
কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সূরা নিসা-১০১
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ
حَرْبٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ،
وَإِبْرَاهِيمَ بْنِ مَيْسَرَةَ، سَمِعَا أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ صَلَّيْتُ
مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الظُّهْرَ بِالْمَدِينَةِ أَرْبَعًا
وَالْعَصْرَ بِذِي الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ
অর্থ: যুহায়ের ইবনে হারব (রাহঃ) .... আনাস ইবনে মালিক
(রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে (সফরে রওয়ানা হয়ে) মদীনাতে চার
রাকআত যোহরের নামায আদায় করেছি এবং যুল-হুলায়ফাতে গিয়ে আসরের নামায দুই রাকআত আদায়
করি। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১২০২ (আন্তর্জাতিক
নং ১২০২)
হাদীসের ব্যখ্যা:
মদীনা শহরের বাইরেই জুল হুলাইফা অবস্থিত। রসূল স. হজ্বের
সফরে রওনা হয়ে মদীনা শহরের বাইরে গিয়ে কসর নামায পড়তে শুরু করলেন। এ থেকে প্রমাণিত
হয় যে, সফরের নিয়তে নিজ শহরের সীমানা পার হলেই কসর শুরু হবে। এটাই
হানাফী মাহাবের মত। (শামী: ২/১২১)
কারো আবাসন শহরের বাইরে হলে যে সীমানার মধ্যে তার সামাজিক
যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ থাকে বা দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণে যতটুকু এলাকা জুড়ে সে সচরাচর
চলাফেরা করে থাকে সেটা তার নিজ এলাকা হিসেবে গণ্য হবে। সফরের নিয়তে এ এলাকা ছেড়ে
বাইরে গেলে তার কসরের বিধান শুরু হবে। এমনিভাবে সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় ঐ
এলাকায় ঢুকে পড়লে সে নামায পুরা পড়া শুরু করবে।
হাদিস নং -০২
عن ابن عمر رضى الله عنه أنه كان يقصر الصلاة حين يخرج
من بيوت المدينة، ويقصر إذا رجع حتى يدخل بيوتها (مصنف عبد الرزاق، باب المسافر
متى يقصر إذا خرج مسافرا-2\530، رقم-4323)
অর্থাৎ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি
যখন শহরের বাড়ি থেকে বের হতেন তখন নামায সংক্ষিপ্ত করতেন এবং যখন তিনি ফিরে আসেন
তখন নামায সংক্ষিপ্ত করতেন যতক্ষণ না তিনি তার ঘরে প্রবেশ করেন। তাখরিজ: মুসান্নাফ
আবদ আল-রাজ্জাক, অধ্যায়। ভ্রমণকারী: ভ্রমণে বের হলে কখন কসর
করবেন - 2/530, নং 4323
এ বিষয়ে শায়খ ইবনে বাজ রহ. কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাবে
বলেন,
أما ما دام في البلد فإنه يصلي أربعًا، فإذا غادر البلد
وخرج عن بنيانها وعن عمارتها فإنه يصلي ركعتين في طريقه إلى جهته التي يريد..
وهكذا
অর্থাৎ যতক্ষণ সে শহরে থাকে ততক্ষণ সে চারটি সালাত আদায়
করে এবং যদি সে শহর ত্যাগ করে এবং এর দালান-কোঠা থেকে বেরিয়ে যায়, সে
তার ইচ্ছামত পথে দুই রাকাত সালাত আদায় করে। একজন আবাসিক ইমামের পিছনে নামায পড়েন, তিনি
তার সাথে চারটি সালাত আদায় করেন। এটাই সুন্নাহ।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, কোন
মুসাফির বাসিন্দা চারজনের সাথে সালাত আদায় করে? সূত্র:
ফাতওয়ায়ে নূরুন আলাল দারব, শায়েখ ইবন বাজ রহ
এরওয়েবসাইট থেকে।
সারকথা হলো,
যদি
কোন ব্যক্তি ৭৮ কিলোমিটার দূরে ১৫ দিনের কম নিয়তে সফরে বের, তাহলে
নিজ বসবাস করা গ্রাম বা শহরের সীমানা অতিক্রম হলেই কসর শুরু করবে।
জিজ্ঞাসা-১২৪৯০:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহ। বিজ্ঞজনের নিকট জানার বিষয়,
খতমে
তারাবির ইমামতি করে বিনিময় নেওয়া জায়েয কি না? খতমে তারাবির বিনিময় দেওয়া-নেওয়া দু’টোই নাজায়েজ। হাদিয়ার নামে দিলেও জায়েজ
হবে না। এ মর্মে তারা নিম্নের হাদীস গুলো দলীল হিসেবে পেশ করেন।
১. হজরত আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রা.) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
বলতে শুনেছি যে, তোমরা কোরআন পড় তবে তাতে
বাড়াবাড়ি করো না এবং তার প্রতি বিরূপ হয়ো না। কোরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং
এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না। -মুসনাদে আহমদ: ৩/৪২৮
২. হজরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
হজরত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কোরআন পড় এবং আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করো।
তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে,
যারা
কোরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে। -মুসনাদে আহমদ: ৪/৪৩৭
৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাকিল থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমজান মাসে লোকদের নিয়ে তারাবি পড়লেন। এরপর ঈদের
দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ (রহ.) তার কাছে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ দিরহাম
পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া ও দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন যে, আমরা কোরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না। -মুসান্নাফ ইবনে আবি
শায়বা: ৫/২৩৭
তারিখ: ০৬/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ফারুক হুসাইন সিলেট থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ
বিষয়ে দুটি মতামত পাওয়া যায়,
প্রথম মত: নাজায়েজ,
এটাই
শক্তিশালী, প্রাধান্য মত।
দ্বিতীয় মত: জায়েজ। এটা দুর্বল মত।
প্রথম মতের দলিল: এ মতের দলিল যা আপনি উপরে তিনটি হাদিস
শরিফ উল্লেখ করেছেন।
এবং
اجرة على الطاعة
(উজরত আলাত তাআত ) বা
ইবাদাতের বিনিময় জায়েজ। এ বিষয়ে ওলামায়ে মুতা’আখখীরীনরা জায়েজ কয়েকটি ক্ষেত্রে বলেছেন।
ফুকাহারা اجرة নেয়া জায়েজ বলেছেন কেবল ঐ সকল ইবাদতের ক্ষেত্রে,
ويفتى اليوم بالجواز أي بجواز أخذ الأجرة على الإمامة وتعليم
القرآن والفقه والأذان كما في عامة المعتبرات وهذا على مذهب المتأخرين من مشايخ
بلخي استحسنوا ذلك.
ويراجع أيضا :
إمداد الفتاوى : (1/484) و إمداد المفتين : (365)
অর্থাৎ যেগুলো ضروريات دين তথা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত। যেমন-দ্বীন শিখানো, ইমামতি, মুয়াজ্জিনী, ওয়াজ
করা। এছাড়া আর কোন ইবাদতের বিনিময়ে اجرة নেয়া বৈধ নয়। সূত্র: ইমদাদুল ফাতাওয়া-১/৪৮৪; ইমদাদুল
মুফতিন-৩৬৫ পৃ
সারকথা হলো,
তারাবি
পড়ে বিনিময় নেওয়া أجرة علي الطلعة ইবাদাতের বিনিময় জায়েজ, এ
অন্তর্ভুক্ত করেনি।
দ্বিতীয় মতের দলিল: এ মতের সরাসরি কোন দলিল নেই। হিলা
করেছেন।
অর্থাৎ হাফেজদের দেওয়া বিনিময়কে জায়েয করার জন্য এই হীলা
অবলম্বন করা যে, শুধু রমযান মাসের জন্য তার উপর দু এক ওয়াক্ত
নামাযের ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই হীলার অর্থ হল যে, এ
বিনিময়টা তাকে ফরয নামাযের ইমামতির জন্য দেওয়া হচ্ছে। আর খতম তারাবী সে
বিনিময়হীনভাবেই করে দিচ্ছে।
হিলার পর্যালোচনা:
এ
বিষয়ে হাকিমুল উম্মাহ হযরত মাওঃ আশরাফ আলী থানবী রহ. বলেন,
যদিও তাকে রমাযান মাসের জন্য ইমাম বানিয়ে
নেওয়া হয়, তবুও তার মূল উদ্দেশ্য থাকে তারাবীহের নামায। কেননা- উক্ত
হাফেয সাহেব যদি শুধু ওয়াক্তিয়া নামায পড়ান আর তারাবীহ না পড়ান,
তাহলে তাকে ইমাম
রাখা হবে না। তাই দ্বীনী ব্যাপারে এরূপ হীলা জায়িয নয়। সূত্র: ইমদাদুল ফাতাওয়া-
১ঃ৪৮৫ পৃষ্ঠা
সারকথা হলো, উল্লেখ্য ফাতাওয়ার কিতাবে ঊলামাগনের ইখতিলাফ বর্ণনা করতে
যেয়ে শক্তিশালী ও দুর্বল উভয় ধরনের কাওল উল্লেখ্য থাকে। শেষে নির্ভরযোগ্য ও
বিশুদ্ধ মতটি বর্ণিত হয়, সেটার উপরই মুফতীয়ানে কিরাম ফাতওয়া দিয়ে থাকেন।
শেষ কথা হলো, ইমামতির বেতন ঠিক করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী
ফকীহগণের দৃষ্টিতে জায়েয। কিন্তু খতম তারাবীর বিনিময়টা ইমামতির জন্য হয় না। বরং
তা মূলত কুরআন খতমের বিনিময়ে হয়ে থাকে। আর তেলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা সকল
ফকীহের নিকট হারাম। অধিকন্তু পরবর্তী ফকীহগণ যে ইমামতির বেতন জায়েয বলেছেন সেটা
হল ফরয নামাযের ইমামতি। সুন্নত নামাযের ইমামতি এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
সুতরাং আপনার প্রশ্নে বর্ণিত মাসয়ালাটিই অধিক যুক্তিযুক্ত,
প্রাধান্য মত।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৯১:
আসসালামু আলাইকুম।
মুহতারাম, নামাজের মধ্যে মোবাইল বেজে ওঠা এবং রিংটন সম্পর্কে
মাসায়ালা গুলো জানালে উপকৃত হতাম। জাযাকাল্লাহু খয়রান।
তারিখ: ০৭/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক সম্মানিত মাওলানা বরিশাল থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ
বিষয়ে আওয়ার ইসলাম ২৪. কম নামাজ ও মোবাইল সংক্রান্ত
কয়েকটি মাসআলা আলোচিত হয়েছে,
সেটায়
হুবহু তুলে ধরছি:
নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা। এ জন্য এবং
মনযোগ রাখা উচিত নিবিষ্টভাবে। যাতে কোনোরকম ব্যঘাত না ঘটে। কিন্তু ইদানিং দেখা যায়
মোবাইল ফোন নামাজে ব্যঘাত ঘটিয়ে থাকে। অনেকে কিছু মাসালা জানেন না বলে সেটা সবার
নামাজে বিঘ্ন ঘটায়। আসুন নামাজে মোবাইল সংক্রান্ত কয়েকটি মাসালা জেনে রাখি।
০১
নামাজের আগেই মোবাইল ফোন বন্ধ করে নামাজে
দাঁড়ানো আবশ্যক। এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে অভ্যাসে পরিণত করা চাই। তবে যদি ভুলবশত
বন্ধ না করে নামাজ শুরু করে আর নামাজে তা বেজে উঠে, তখন মোবাইলটি পকেটে রেখেই এক হাত দিয়ে বন্ধ করবে। এর দ্বারা
নামাজে কোন রকমের সমস্যা হবে না। আর মোবাইল বন্ধ করার জন্য নামাজ ছেড়ে দেয়ার
প্রয়োজন নাই। [বাহরুর রায়েক : ২/১১]
০২
নামাজে বারবার মোবাইল বাজা যদি একবার বন্ধ
করার পর (অর্থাৎ একবার পকেটে হাত দিয়ে কল কেটে দেয়ার পর) যদি আবার বেজে উঠে, তাহলে আমলে কালিলের মাধ্যমে তিনবার পর্যন্ত কল বন্ধ করা
যেতে পারে। তবে শর্ত হলো- এ বন্ধ করাটা যাতে আমলে কাছিরের সীমা পর্যন্ত গিয়ে না
পৌঁছে। যদি আমলে কাছির হয়ে যায়,
তাহলে
নামাজ ভেঙ্গে যাবে। [মাজমাউল আনহার : ১/১২]
০৩
নামাজে আমলে কালিল ও আমলে কাছির নির্ধারণের
ব্যাপারে ফোকাহায়ে কেরামের বিভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায়। তন্মধ্যে গ্রহণযোগ্য মত হলো
আমলে কাছির বলা হয়- নামাজে এমন কোন কাজ করা যার দ্বারা নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার
ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। অযথা এমন কোন কাজ করা, যা দেখে সামাজের বাহিরের লোকদের প্রবল ধারণা হয় যে, লোকটি নামাজে নেই। তবে যদি মুসল্লির কাজটি এ পর্যায়ের না
হয়। তাহলে তাকে আমলে কালিল
বলা
হয়। [শামী : ১/৪৩]
০৪
রিংটোন হিসেবে কুরআনের আয়াত অথবা আযানের
আওয়াজকে ব্যবহার করার কোন যৌক্তিকতা নেই, বরং এক হিসেবে এর দ্বারা কালামে পাক ও আযানের মান ক্ষুন্ন
হয়। তাই এর ভিত্তিতে ফোকাহায়ে কেরাম এ ধরনের উদ্দেশ্য হাসিলের ক্ষেত্রে যিকিরের
শব্দগুলো ব্যবহার করাও না জায়েয বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং ফোকাহায়ে কেরামের ঘোষণা
অনুযায়ী মোবাইলে রিংটোন হিসেবে আযান,
কুরআনে
কারিমের আয়াত ও হামদ-নাম ইত্যাদি সেভ করা ঠিক হবে না। অনেক সময় এমনও হয়ে থাকে যে, কেউ মোবাইল নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করলো, আর সেখানে আয়াতে কারিমার আওয়াজ ভেসে উঠলো এতে কুরআনের
অবমাননা হয়। তাই এর থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। [হিন্দিয়া : ৫/৩১৬, আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ের : ৫৩, ইমদাদুল ফাতওয়া : ৩৪৯]
০৫
মোবাইলের রিংটোনে গান বাজানো এবং মিউজিক
লাগানো কখনই জায়েয নয় বরং মহাপাপ। [আত তারগিব ওয়াত তারহিব : ৪/১৮৪, শামী জাকারিয়া : ৯/৫৬৬]
০৬
যদি এমন ব্যক্তিকে মিস্ডকল করা হয় যার সাথে
তার অন্তরঙ্গতা রয়েছে কিংবা মিস্ডকল দিলে খারাপ মনে করবে না; বরং তার সাথে কল মিলাবে, তাহলে এমন ব্যক্তিকে মিস্ডকল দিতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু
যদি কোন অপরিচিত লোক হয়, অথবা এমন কোন লোক হয় যাকে
মিস্ডকল দিলে খারাপ মনে করবে,
তাহলে
এমন লোককে মিস্ডকল দেয়া ঠিক হবে না। [রুহুল মায়ানি : ১০/৩২৩] বিরক্ত করা মোবাইলে
রিং দিয়ে কাউকে বিরক্ত করা বা কষ্ট দেয়া মস্পূর্ণ না জায়েয। [বুখারি]
সূত্র: আওয়ার ইসলাম
- والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৯২:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,
১। জুমুআ' মসজিদে মূল জামাআ' তশুরুর আগে জামাআ'ত করা যাবে কি না।
২। মা মারা গিয়েছে, নানী বেচে আছে। এক্ষেত্রে সন্তানরা সম্পদের ওয়ারিশ হবে কি
না।
তারিখ: ১০/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মো:মিজানুর রহমান কুমিল্লা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর আপনার প্রশ্নের
আলোকে দুটি ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ১। জুমার মসজিদে মূল জামাআ' তশুরুর আগে জামাআ'ত করা যাবে কি না।
প্রথম কথা হলো,
ফিকহি
হানাফির মতে, শর্তসহ দ্বিতীয় জামাআত জায়েজ। আর মূল
জামাআতের আগে জামাআত আরও নিষেধ তা সহজেই অনুমেয়। দলিল:
والمفتى به من قول الحنفية ومن وافقهم: كراهة الجماعة
قبل جماعة الإمام الراتب - لا سيما لمن كان له عذر - وعليه فالصلاة صحيحة مع
الكراهة؛ لأن الأصل فى الصلاة الصحة حتى يقوم دليل على البطلان ولم يقم، والافتيات
على الإمام أمر خارج عن الصلاة فلا ي
আর হানাফীদের কথা এবং তাদের সাথে যারা একমত পোষণ করেছেন
তাদের থেকে এর উপর ফতোয়াঃ নিয়মিত ইমামের জামাতের আগে জামাত করা মাকরুহ তাহরিমি, বিশেষ
করে যাদের ওজর আছে - এবং সে অনুযায়ী নামায মাকরুহ এর আদায় হবে। সূত্র: হাল
তাজুযু সালাতাল জামাআতি ফিল মাসজিদিল কবলা আয় ইউজিনুল ইমামা-১৪/২০২০
المسجد إذا كان له إمام راتب ، فجماعته هي الأصل ، فلا
يجوز لأحد أن يقيم جماعة قبل جماعة الإمام الراتب ؛
.
অর্থাৎ যদি মসজিদে নিয়মিত ইমাম থাকে তবে এর জামাত হচ্ছে
মূলনীতি।কারুর জন্য নিয়মিত ইমামের জামাতের আগে জামাত করা জায়েয নয়। দলিল:
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ،
عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ رَجَاءٍ، عَنْ أَوْسِ بْنِ ضَمْعَجٍ،
عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ
يُؤَمُّ الرَّجُلُ فِي سُلْطَانِهِ وَلاَ يُجْلَسُ عَلَى تَكْرِمَتِهِ فِي
بَيْتِهِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ
صَحِيحٌ
অর্থ: হান্নাদ (রাহঃ) ...... আবু মাসঊদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্
(ﷺ) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির কতৃত্বাধীন স্থানে
বিনা অনুমতিতে তার উপর ইমামতি করা যায় না এবং বিনা অনুমতিতে তার আসনেও বসা যাবে
না। তাখরিজ: জামে' তিরমিযী,
হাদীস
নং ২৭৭২ (আন্তর্জাতিক নং ২৭৭২)
নোট: (আবু ঈসা বলেন) হাদীসটি হাসান-সহীহ।
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
প্রশ্ন: ২।
মা
মারা গিয়েছে, নানী বেচে আছে। এক্ষেত্রে সন্তানরা সম্পদের
ওয়ারিশ হবে কি না?
উত্তর: ২। মা মারা যাওয়ার কারণে নাতি -নাতনী ওয়ারিশ হবে
না। কারণ, মা সম্পত্তির মালিক হওয়ার আগেই মারা গিয়েছেন।
দলিল:
هَذَا بَاب فِي بَيَان إِرْث ابْن ابْن الرجل إِذا لم
يكن لَهُ ابْن لصلبه.
وَقَالَ زَيْدٌ: ولَدُ الأبْناءِ بِمَنْزِلَةِ الوَلَدَ
إذَا لَمْ يَكُنْ دُونَهُمْ وَلَدٌ ذَكَرٌ ذَكَرُهُمْ كَذَكَرِهِمْ، وأُنْثاهُمْ
كأُنْثاهُمْ يَرِثُونَ كَمَا يَرِثُونَ ويَحْجُبُونَ كَما يَحْجُبُونَ، وَلَا
يَرِثُ ولَدُ الابِنِ مَعَ الابِنِ.
ঔরশজাত সন্তানের অনুপস্থিতিতে নাতীদের মীরাসপ্রাপ্তির
বিধান।
নাতী / দৌহিত্র/ পৌত্র/প্রপৌত্রগণ ওয়ারিশের সম্পত্তি
প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিজ ঔরশজাত সন্তানের মতো। তবে শর্ত হলো তাদের অধঃস্তনে কোন
পুত্র সন্তান না থাকা লাগবে। দৌহিত্রগণ বিধানগতভাবে ঔরশজাত পুত্র সন্তানের মতো
হিসাব করে মীরাস প্রাপ্তহবে, আর দৌহিত্রীগণ বিধানগতভাবে
ঔরশজাত কন্যা সন্তানের মতো হিসাব করে মীরাস প্রাপ্ত হবে। অনুরূপভাবে যে সকল
উত্তরাধিকার বিদ্যমান থাকার কারণে ঔরশজাত পুত্র-কন্যা সন্তানগণ মীরাস প্রাপ্তি
থেকে ( সম্পূর্ণরূপে অথবা কিয়দাংশ হতে) বঞ্চিত হয়ে থাকে, সেসকল
ক্ষেত্রে দৌহিত্র- দৌহিত্রীগিণও মীরাসপ্রাপ্তির (সম্পূর্ণ / আংশিক) অধিকার
হারাবেন।
প্রকাশ থাকে যে,
ঐরশজাত
সন্তানের উপস্থিতিতে দৌহিত্রগণ মীরাসী সম্পত্তির অধিকার লাভ করবেননা। সূত্র:
উমদাতুল কারি-২৩/২৩৮; আহকামুল কুরআন লিলজাসসাস-২/১০১
তবে, এক্ষেত্রে একটি পদ্ধতি আছে, তিনি
ইচ্ছা করলে মায়ের পাওনার পরিমাণ বা কিছু কম বেশি (তা অবশ্যই যেন মোট সম্পত্তির এক
তৃতীয়াংশের অধিক না হয়।) অসীয়ত করে যেতে পারতেন। তাহলে বঞ্চিত নাতী/নাতনীরা কিছু
পেয়ে যাবে।
- والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৯৩:
আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম নতুন পূরানো ৭/৮
টি কবর আছে। নতুন করে এখানে আর কাউকে কবরস্থ করা হবেনা।এমতাবস্থায় ঐ কবরগুলোর উপর
দ্বীতল বা তিন তলা বিশিষ্ট মসজিদ তৈরি করা জায়েজ আছে কি না জানাবেন প্লিজ।
উল্লেখ্য যে জমির সল্পতা রয়েছে। আরটি মোঃ তাজুল ইসলাম। ২৩ বীর কুমিল্লা সেনানিবাস।
তারিখ:
১১/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ তাজুল ইসলাম,
কুমিল্লা
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
আলহামদুলিল্লাহ ইতোমধ্যে আলবুরহানে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা-১২৩২৬
শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। তাই নতুন করে লিখলাম না, সেটা
দেখে নিলে ইনশাল্লাহ আপনার কাংখিত জবাব পাবেন। লিংকটি পুনরায় শেয়ার করা হলো:
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/11/highway.html
- والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৯৪:
আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ। মৃত্যু
মানুষের কঙ্কাল চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা। এ ব্যাপারে ইসলামের শরীয়তের
দৃষ্টিভঙ্গি কি?
তারিখ:
১২/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ কাপ্তাই
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, الأصل
المقرر شرعا هو احترام المسلم وعدم إهانته حيا وميتا ، ووجوب دفنه ودفن ما وجد من
أجزائه من عظم وغيره ، لقوله تعالى : ( وَلَقَد كَرَّمنَا بني ءَادَمَ )
الإسراء/70.
وروى أحمد (24730) وأبو داود (3207) وابن
ماجه (1616) عن عائشة رضي الله عنها أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : ( كَسْرُ
عَظْمِ الْمَيِّتِ كَكَسْرِهِ حَيًّا ) وصححه الألباني في صحيح أبي داود .
ইসলামী শারীয়াহ'র সর্বজন স্বীকৃত একটি মূলনীতি হলো,
জীবিত কিংবা মৃত
উভয় অবস্থায় মুসলমান ব্যক্তির মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা। এবং কোনক্রমেই যেন তার
মর্যাদার হানি না হয়, এবিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা।
দলিল:
ولقد كرمنا بني آدم( سوررة الإسراء -٧٠)
অর্থাৎ, নিঃসন্দেহে আমি আদম সন্তানদেরকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত
করেছি। ( সূরা ইসরা-৭০)
তার ইন্তিকাল হয়ে গেলে যথাযথ মর্যাদায় তাকে কবরে সমাহিত করা। এমনকি তার মরদেহের
সম্পূর্ণ অংশ পাওয়া না গেলেও তার দেহাবশেষকেও কবরস্থ করে দেয়া। দলিল:
আয়াত নং-০১
ثم أماته فأقبره( سورة عبس ٢١)
অর্থাৎ তিনিই মানুষের মৃত্যু ঘটান, অতঃপর তাকে কবরস্থ করেন। (সূরা আবাসা-২১)
আয়াত নং -০২
ألم نجعل الأرض كفاتا، أحياء وأمواتا ( سورة المرسلات- (٢٥،٢٦)
অর্থাৎ আমি কি পৃথিবীকে ধারণকারী রূপে সৃষ্টি করিনি?
যা জীবিতদেরকে
ধারণ করে (তার ভূপৃষ্ঠে) এবং মৃতদেরকে ধারণ করে ( তার ভূগর্ভে)! ( সূরা মুরসালাত-
২৫,২৬)
আয়াত নং -০৩
منها خلقناكم وفيها نعيدكم ومنها نخرجكم تارة أخرى ( سورة طه - ٥٥)
আমি মৃত্তিকা হতে তোমাদের সৃজন করেছি, সেই ভূগর্ভেই ( কবরে) তোমাদেরকে ফেরত
পাঠাবো।আবার সেই মাটি হতেই তোমাদের পুনরুত্থান ঘটাবো। ( সূরা ত্বহা-৫৫)
উপরিউক্ত প্রতিটি আয়াতের মূলভাষ্য একটাই, তা হলো- মৃতব্যক্তিকে দাফন করে ফেলতে
হবে। তার লাশে কোন প্রকার অযাচিত হস্তক্ষেপ করা চলবেনা।
এছাড়া নিথর প্রাণহীন প্রতিটি মরদেহকেই জীবন্ত প্রাণবন্ত দেহের মতোই মূল্যায়ন
করার নির্দেশনা জারি করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ : " كَسْرُ عَظْمِ الْمَيِّتِ كَكَسْرِهِ حَيًّا ".رواه
أبو داؤد: ٣٢٠٧
অর্থাৎ মৃতব্যক্তির হাড় চূর্ণ করা, জীবিত অবস্থায় তার হাড্ডি ভেঙে ফেলার
নামান্তর। (আবূ দাঊদ- ৩২০৭)
প্রশ্ন: ক। লাশের পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত করা জায়েজ?
উত্তর: ক। এ ব্যাপারে শায়েখ ইবনে বাজ রহ কে জিজ্ঞেস করা হলে,
তিনি বলেন,
كما جاء في "مجموع فتاوى ابن باز" (22/349) ما يلي :
" إذا كان الميت معصوما في حياته - سواء كان
مسلما أو كافرا ، وسواء كان رجلا أو امرأة - فإنه لا يجوز تشريحه ، لما في ذلك من
الإساءة إليه وانتهاك حرمته ، وقد ثبت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال :
( كسر عظم الميت ككسره حيا ) رواه أبو داود (3207)
.
أما إذا كان غير معصوم كالمرتد والحربي فلا أعلم حرجا في تشريحه
للمصلحة الطبية " انتهى .
والله أعلم .
কেউ যদি কোন প্রকার মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত কিংবা পরোয়ানাভুক্ত না হয়ে
স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করে, ( চাই সে মুসলিম হোক কিংবা কাফের,
নারী হোক কিংবা
পুরুষ) তাহলে কোনভাবেই তার মরদেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা বৈধ হবেনা। কারণ এতে তার
মরদেহকে অবমূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। অথচ প্রতিটি মরদেহকেই জীবন্ত প্রাণবন্ত দেহের
মতোই মূল্যায়ন করার নির্দেশনা জারি করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন,
عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " كَسْرُ عَظْمِ الْمَيِّتِ كَكَسْرِهِ
حَيًّا ".رواه أبو داؤد: ٣٢٠٧
অর্থাৎ মৃতব্যক্তির হাড় চূর্ণ করা, জীবিত অবস্থায় তার হাড্ডি ভেঙে ফেলার নামান্তর।
(আবূ দাঊদ- ৩২০৭)
পক্ষান্তরে সে যদি মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত কিংবা মৃত্যুপরোয়ানাভুক্ত হয়ে থাকে,
( যেমন
ধর্মাদ্রোহী, শত্রুদলের সদস্য) তাহলে সার্বজনীন কল্যাণের দিকে লক্ষ্য করে
তার মরদেহকে কর্তন করাতে কোন সমস্যা আছে বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়নি। আল্লাহই ভালো
জানেন। সূত্র: মাজমাউল ফাতওয়া-২২/২৪৯
প্রশ্ন: খ। মৃত্যু মানুষের
কঙ্কাল চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা। এ ব্যাপারে ইসলামের শরীয়তের
দৃষ্টিভঙ্গি কি?
উত্তর: খ।
وأما بالنسبة لتشريح الجثة لقصد التعليم كما ورد في
السؤال ، وكما يقال إنه أصبح الآن ضرورة لتعلم الطب ونفع الأحياء بذلك ، فهذا إن
أمكن الاستغناء عنه فإنه لا يجوز بحال من الأحوال ، وإذا لم يمكن وتوقف الأمر عليه
فإن جثة المسلم لا يجوز أن تشرح أبداً لأجل الطب ...
فالمسلم لا يجوز أن يتلاعب بجثته ، ولا أن تشرح ، بل
يجب دفنه واحترامه ، أما بالنسبة لجثة الكافر فقد رخص بعض العلماء المعاصرين
بتشريح جثته لأجل الطب والله أعلم .
তবে চিকিৎসা শাস্ত্রের ব্যবচ্ছেদ (পরীক্ষা করার জন্য খণ্ড খণ্ড করা) বিদ্যায় ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ
( যেমন প্লাস্টিক বা অন্য কোন উপাদান দিয়ে কৃত্রিমভাবে মানব দেহ তৈরি করা) করা
অসম্ভবপর হয়ে উঠলে বিশেষ বিবেচনায় বৃহৎ স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে অমুসলিম
ব্যক্তির মরদেহ কাটাছেড়া করার অবকাশ রয়েছে। তবে কোন অবস্থাতেই মুসলিম মরদেহের উপর
ছুরি বা ধাঁরালো বস্তুর সামান্য আঁচড় লাগিয়ে তার মরদেহকে অবমূল্যায়ন করা যাবেনা।
কিতাবু মাওকউল ইসলামি, আলইসতিফাদাতু মিন ইজামিল
মাওতা লিদিরাসাতি- ৫ খণ্ড,৮২২৭ পৃষ্ঠা
সারকথা হলো, চিকিৎসা বিদ্যার জন্য প্রথমে লাশের বিকল্প কাঠের বা
প্লাস্টিকের কঙ্কাল দ্বারা চেষ্টা করতে হবে। যদি এতে সম্ভব না হয়, তাহলে নন মুসলিম এর লাশ/কঙ্কাল ব্যবহার করা যাবে। মুসলিমের
লাশ কিছুতেই ব্যবহার করা যাবে না।
- والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক,
সহযোগিতায়, মুফতি আসাদুল ইসলাম তানয়িম
জিজ্ঞাসা-১২৪৯৫:
আসসালামু আলাইকুম
আমার জানার বিষয় হলো
তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত নাকি ২০রাকাত?
প্রতিবছর একশ্রেণির মানুষ রামাদান আসলে এটা
নিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে তাই এই ব্যাপারে দালিলিক আলোচনা থাকলে শেয়ার করার জন্য
বিশেষ অনুরোধ রইলো।
তারিখ:
১৩/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা কামরুল হাসান যশোর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ
বিষয়ে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়,
০১. চার ইমামের মতামত:
,قال السرخسي وهو من أئمة المذهب
الحنفي :
فإنها عشرون ركعة سوى الوتر عندنا .
"
المبسوط " ( 2 / 145 ) .
وقال ابن قدامة :
والمختار عند أبي عبد الله ( يعني الإمام أحمد ) رحمه
الله ، فيها عشرون ركعة ، وبهذا قال الثوري ، وأبو حنيفة ، والشافعي ، وقال مالك :
ستة وثلاثون .
"
المغني " ( 1 / 457 )
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ বলেনঃ আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামাআত চার মাযহাবে সীমাবদ্ধ। এ চার ইমামের মাঝে প্রথম ইমাম হলেন ইমাম আবু
হানীফা রহঃ [মৃত্যু ১৫০ হিজরী] ও বিশ রাকাত তারাবীহের প্রবক্তা। [ফাতাওয়া
কাজীখান-১/১১২} ইমাম মালিক রহঃ এর একটি বক্তব্য বিশ রাকাতের
পক্ষে, দ্বিতীয় বক্তব্য ৩৬ রাকাতের পক্ষে। [যাতে বিশ তারাবীহ আর ১৬
রাকাত নফল] হেদায়াতুল মুজতাহিদ-১/১৬৭}
ইমাম শাফেয়ী রহঃ বিশ রাকাতের প্রবক্তা। {আলমুগনী-১/৪৫৭}
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ এর মুখতার বক্তব্যও বিশ রাকাতের
পক্ষে। [আলমুগনী-২/১৬৭}
চার মাযহাবের ফিক্বহের ইবারতের মাঝে কোন একটি ইবারতেও শুধু
আট রাকাত তারাবীহকে সুন্নত আর বিশ রাকাততে বিদআত বলা হয়নি।
০২. আহলে হাদিসের মতামত: তারাবির নামাজ ৮ রাকাত।
প্রশ্ন: ক।
বিশ
রাকাত তারাবিহর তথা তিন ইমামের দলিল কি?
উত্তর: ক। বিশ রাকাত তারাবিহর দলিল নিম্নরূপ
হাদিস নং -০১
عن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلى
فى رمضان عشرين ركعة والوتر
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ
রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। {মুসান্নাফে ইবনে আবী
শাইবা-৫/২২৫, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে
আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস
নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস
নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা,
হাদীস
নং-৪৩৯১}
হাদিস নং -০২
عن جابر بن عبد الله قال خرج النبى صلى الله عليه وسلم
ذات ليلة فى رمضان فصلى الناس اربعة وعشرون ركعة واوتر بثلاثة
হযরত জাবের রাঃ বলেনঃ রমজান মাসের এক রাতে রাসূল সাঃ বাহিরে
তাশরীফ নিয়ে এলেন। আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত [৪ রাকাত ঈশার, আর
২০ রাকাত তারাবীহের] নামায পড়ালেন। আর তিন রাকাত বিতির পড়ালেন। [তারীখে জুরজান-২৭}
খুলাফায়ে রাশেদীনের তথা হজরত ওমর রা এর নির্দেশ:
০১.
عن ابى بن كعب ان عمر بن الخطاب امره ان يصلى باليل فى رمضان
فصلى بهم عشرين ركعة
হযরত উবায় বিন কাব রাঃ বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ আমাকে এই মর্মে
আদেশ দিলেন যে, আমি যেন লোকদেরকে তারাবীহ পড়াই। তখন বিশ রাকাত
পড়া হতো। {কানযুল উম্মাল-৮/২৬৪}
০২.
عن يحيى بن سعيد ان عمر بن الخطاب امر رجلا يصلى بهم
عشرين ركعة
হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় ওমর বিন খাত্তাব
রাঃ এক ব্যক্তিকে বিশ রাকাত পড়ার হুকুম দিলেন। {মুসান্নাফে
ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৩}
০৩.
وروى مالك من طريق يزيد بن خصيفة عن السائب بن يزيد
عشرين ركعة
হযরত সায়েব বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ এর সময়কালে বিশ রাকাত তারাবীহ
ছিল। {ফাতহুল বারী-৪/৪৩৬}
যার
সনদ বুখারীতে দুই স্থানে আছে।
০৪. আলী রাঃ এর শাসনামল
عن ابى عبد الرحمن السلمى عن على قال دعى القراء فى
رمضان فامر منهم رجلا يصلى بالناس عشرين ركعة قال وكان على يوتر بهم
হযরত আবু আব্দুর রহমান সুলামী বলেনঃ হযরত হযরত আলী রাঃ
রমজান মাসে কারীদের ডাকতেন। তারপর তাদের মাঝে একজনকে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতে
হুকুম দিতেন। আর বিতিরের জামাত হযরত আলী নিজেই পড়াতেন। {বায়হাকী-৪/৪৯৬}
আসার নং-০১
عن عبد العزيز بن رفيع قال كان ابى بن كعب يصلى بالناس
فى رمضان بالمدينة عشرين ركعة ويوتر بثلاثة
হযরত আব্দুল আজীজ বিন রফী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হযরত
উবায় বিন কাব রাঃ লোকদেরকে রমজান মাসে মদীনা মুনাওয়ারায় বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন
রাকাত বিতির নামায পড়াতেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী
শাইবা-৫/২২৪}
আসার নং-০২
মক্কা মুকাররমায় হযরত আতা বিন আবী রাবাহ রহঃ [মৃত্যু ১১৪হিজরী]
বলেনঃ ادركت الناس وهم يصلون ثلاثة
وعشرون ركعة بالوتر তথা আমি লোকদের [সাহাবা ও তাবেয়ীগণ] বেতের নামাযসহ ২৩ রাকাত পড়তে
দেখেছি। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}
আসার নং-৩
عَنْ أَبِي الْحَسْنَاءِ أَنَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي
طَالِبٍ ” أَمَرَ رَجُلًا أَنْ يُصَلِّيَ، بِالنَّاسِ خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ
عِشْرِينَ رَكْعَةً “
হযরত আবুল হাসনা বলেনঃ হযরত আলী রাঃ এক ব্যক্তিকে পাঁচ
তারবীহা এর সাথে বিশ রাকাত পড়াতে হুকুম দিয়েছেন। {সুনানে
কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪২৯২, ৪৩৯৭, কানযুল
উম্মাল, হাদীস নং-২৩৪৭৪}
আসার নং-০৪
عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ عَبْدِ الْمَلِكِ قَالَ: «كَانَ
سَعِيدُ بْنُ جُبَيْرٍ يَؤُمُّنَا فِي شَهْرِ رَمَضَانَ، فَكَانَ يَقْرَأُ
بِالْقَرَاءَتَيْنِ جَمِيعًا، يَقْرَأُ لَيْلَةً بِقِرَاءَةِ ابْنِ مَسْعُودٍ
فَكَانَ يُصَلِّي خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ،
হযরত ইসমাইল বিন আব্দিল মালিক রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত
সাঈদ বিন যুবায়ের রমজান মাসে আমাদের ইমামতি করতেন।তিনি দুই কিরাতেই তিলাওয়াত
করতেন। এক রাতে পড়তেন ইবনে মাসঈদ রাঃ কিরাতে। তিনি পাঁচ তারবীহায় নামায পড়াতেন।
[মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, বর্ণনা নং-৭৭৪৯]
প্রশ্ন: খ। হজরত ওমর রা এর সুন্নাহ কি আল্লাহর রাসূলের
সুন্নাহ, এর দলিল কি?
উত্তর: খ। হ্যা,
বলতে
দ্বিধা নেই, খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ
মানে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ। দলিল:
হাদিস নং-০১
إِنّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى
اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنّتِي وَسُنّةِ الْخُلَفَاءِ الرّاشِدِينَ
الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسّكُوا بِهَا، وَعَضّوا عَلَيْهَا بِالنّوَاجِذِ.
قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
কোনো সন্দেহ নেই,
আমার
পর যারা বেঁচে থাকবে তারা অনেক এখতেলাফ দেখতে পাবে। তখন আমার সুন্নাহ এবং
হেদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহকে গ্রহণ করবে। এই আদর্শকে দৃঢ়ভাবে
আঁকড়ে ধরবে এবং মাঢ়ীর দাঁত দিয়ে কামড়ে থাকবে। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস
২৬৭৬; সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস
৪৬০৭
হাদিস নং-০২
مَا نَزَلَ بِالنّاسِ أَمْرٌ قَطّ فَقَالُوا فِيهِ:
وَقَالَ فِيهِ عُمَرُ بْنُ الْخَطّابِ: أَوْ قَالَ عُمَرُ إِلّا نَزَلَ الْقُرْآنُ
عَلَى نَحْوٍ مِمّا قَالَ عُمَرُ
قال الترمذي: وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ
مِنْ هَذَا الْوَجْهِ.
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, যখনই
মুসলমানদের কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে আর সাহাবায়ে কেরাম কোনো মত দিয়েছেন, কিন্তু
উমর ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন তখন দেখা যেত উমরের মত অনুযায়ীই কুরআন নাযিল হয়েছে।
তাখরিজ: জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৬৮২;
মুসনাদে
আহমাদ, হাদীস ৫৬৯৭
হাদিস নং-০৩
বেশ কিছু ক্ষেত্রে উমর রা. যেমনটা ভেবেছেন দেখা গেছে পরে ঐভাবেই
কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে। উমর রা. বলেন,
وَافَقْتُ رَبِّي فِي ثَلَاثٍ، فِي مَقَامِ
إِبْرَاهِيمَ، وَفِي الْحِجَابِ، وَفِي أُسَارَى بَدْرٍ.
তিনটি বিষয়ে আমার রবের ইচ্ছার সাথে আমার ইচ্ছা এক হয়েছে। ১.
মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থান বানানোর ক্ষেত্রে। ২. হিজাবের বিধান নাযিল হওয়ার
বিষয়ে। ৩. বদরের বন্দীদের বিষয়ে ফয়সালা দেওয়ার ব্যাপারে। Ñসহীহ
মুসলিম, হাদীস ২৩৯৯
হাদিস নং-০৪
لَقَدْ كَانَ فِيمَا قَبْلَكُمْ مِنَ الأُمَمِ
مُحَدّثُونَ، فَإِنْ يَكُ فِي أُمّتِي أَحَدٌ، فَإِنّهُ عُمَرُ.
পূর্ববর্তী উম্মতের মাঝে কিছু মুহাদ্দাস থাকতেন। এই উম্মতের
মধ্যে যদি কেউ মুহাদ্দাস থেকে থাকে তাহলে সে লোকটি হল উমর। Ñসহীহ
বুখারী ৩৬৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস
২৩৮৯
নোট: হুমায়দী রাহ. বলেন,
الْمُحَدَّثُ الْمُلْهَمُ لِلصَّوَابِ.
মুহাদ্দাস এমন ব্যক্তি, যার হৃদয়ে সত্য ও সঠিক বিষয় ঢেলে দেওয়া হয়। Ñশরহু মাযাহিবি আহলিস সুন্নাহ, ইবনে শাহীন,
পৃ.
৯৮ (৮৫); ফাযাইলুল খুলাফাইর রাশিদীন, আবু নুআইম,
পৃ.
৪২ (১৫)
ইজমায়ে সাহাবা:
ইবনে আবদুল বার রাহ. ও ইবনে কুদামা রাহ.-এর
বক্তব্যও পড়েছেন যে, তারা বিশ রাকাত তারাবীর
বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের ইজমার উদ্ধৃতি দিয়েছেন। ইবনে হাজার হায়তামী রাহ. বলেনÑ
أَجْمَعَ الصّحَابَةُ عَلَى أَنّ التّرَاوِيحَ
عِشْرُونَ رَكْعَةً.
এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ইজমা প্রতিষ্ঠিত যে, তারাবীর নামায বিশ রাকাত। Ñফতহুল ইলাহ ফী শারহিল মিশকাহ ৫/১৩০; মিরকাতুল মাফতীহ ৩/৯৭৩
উম্মতে মুসলিমার ইজমা:
১২৮৪ হিজরীর ইংরেজ আমলের আগে পৃথিবীর কোন
মসজিদে রমজানের পুরো মাস মসজিদে আট রাকাত তারাবীহ জামাতের সাথে পড়ার কোন নজীর নেই।
একটি মসজিদের নাম কোন কথিত আহলে হাদীস দেখাতে পারবে না। না মসজিদে নববীতে কোনদিন
আট রাকাত তারাবীহ পড়া হয়েছে। না বাইতুল্লায়। না পৃথিবীর কোন মুসলিম পল্লিতে। রানী
ভিক্টোরিয়ার আমলে সর্বপ্রথম এ বিদআতের সূচনা হয়।
বিজ্ঞ ফুকাহা-ওলামাদের মতামত:
০১. ইমাম শাফিঈ রাহ. বলেছেন,
رَأَيْتُ النّاسَ يَقُومُونَ بِالْمَدِينَةِ
تِسْعًا وَثَلَاثِينَ رَكْعَةً قَالَ: وَأَحَبّ إِلَيّ عِشْرُونَ، قَالَ:
وَكَذَلِكَ يَقُومُونَ بِمَكّةَ، قَالَ: وَلَيْسَ فِي شَيْءٍ مِنْ هَذَا ضِيقٌ
وَلَا حَدّ يَنْتَهِي إِلَيْه.
মদীনাবাসীদের দেখেছি, উনচল্লিশ রাকাত নামায পড়ে। আমার নিকট তারাবী
বিশ রাকাত পড়া উত্তম। কেননা,
মক্কাবাসীরা
বিশ রাকাত পড়ে। তবে এসব সংখ্যার কোনটি নির্ধারিত নেই যে, এর বেশি পড়া যাবে না। Ñমুখতাছারু কিয়ামিল লাইল, পৃ. ২০২; মারিফাতুস
সুনান, বায়হাকী ৪/৩৯,৪২
০২. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন,
إِنّهُ قَدْ ثَبَتَ أَنّ أُبَيّ بْنَ كَعْبٍ كَانَ
يَقُومُ بِالنّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً فِي قِيَامِ رَمَضَانَ، وَيُوتِرُ
بِثَلَاثٍ. فَرَأَى كَثِيرٌ مِنْ الْعُلَمَاءِ أَنّ ذَلِكَ هُوَ السّنّةُ؛
لِأَنّهُ أَقَامَهُ بَيْنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ، وَلَمْ يُنْكِرْهُ
مُنْكِرٌ.
وَاسْتَحَبّ آخَرُونَ: تِسْعَةً وَثَلَاثِينَ
رَكْعَةً؛ بِنَاءً عَلَى أَنّهُ عَمَلُ أَهْلِ الْمَدِينَةِ الْقَدِيمُ. وَقَالَ
طَائِفَةٌ: قَدْ ثَبَتَ فِي الصّحِيحِ عَنْ عَائِشَةَ أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَمْ يَكُنْ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا غَيْرِهِ عَلَى
ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً.
এ কথা সুপ্রমাণিত যে, উবাই ইবনে কা‘ব রা.
সাহাবাদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবী এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। এ জন্য অনেক উলামায়ে
কেরাম বলেছেন, বিশ রাকাত তারাবীই সুন্নাহ।
কেননা, উবাই ইবনে কাব রা. বিশ রাকাত
তারাবী পড়িয়েছেন মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের উপস্থিতিতে। তখন তাঁদের কেউই এর উপর
কোনো আপত্তি করেননি।
খোদ তারাবিহ শব্দই ২০ রাকাতের দালালত করে:
তারাবীহ : মূল ধাতু رَاحَةٌ
(রা-হাতুন) অর্থ : প্রশান্তি। অন্যতম ধাতু رَوْحٌ(রাওহুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতে কোন কাজ করা। সেখান থেকে ترويحة
(তারবীহাতুন)অর্থ :সন্ধ্যারাতের প্রশান্তি বা প্রশান্তির বৈঠক; যা রামাযান মাসেতারাবীহর ছালাতে প্রতি চার রাক‘আত শেষে করা হয়ে থাকে। বহুবচনে (التراويح) ‘তারা-বীহ’ অর্থ
:প্রশান্তির বৈঠকসমূহ(আল-মুনজিদ)
নোট: আট রাকাত হলে বৈঠক হয় একটি, তারাবিহ মানে বৈঠক সমূহ কমপক্ষে তিন বৈঠক।
প্রশ্ন: গ। ৮ রাকাত
তারাবিহর তথা আহলে হাদিসের দলিল ও খণ্ডন?
উত্তর: গ। আহলে হাদিসের দলিল নিম্নরূপ:
হাদিস নং -০১
عن أبي سلمة بن عبد الرحمن أنه أخبره : أنه سأل عائشة
رضي الله عنها كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ؟ فقالت ما
كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة
يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم
يصلي ثلاثا . قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر ؟ . فقال يا عائشة إن
عيني تنامان ولا ينام قلبي (صحيح البخارى- أبواب التهجد، باب قيام النبي صلى الله
عليه و سلم بالليل في رمضان وغيره1
হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত
তিনি আয়েশা রাঃ এর কাছে জানতে চান নবীজী সাঃ এর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে
বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা।
তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে
আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না। (সহীহ
বুখারী-১/১৫৪)
প্রথম হাদিস খণ্ডন:
খোদ হযরত আয়েশা রাঃ থেকে ১৩ রাকাত তারাবীহের
কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। সুতরাং হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী অস্পষ্টতা ও পরস্পর
বিরোধিতা দূর করতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন-“সঠিক কথা হল এ ব্যাপারে আমি যা উল্লেখ করেছি
এগুলো সব ভিন্ন সময় ও ভিন্ন পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল”
অর্থাৎ
নবীজী একেক সময় একেক রাকাত নামায পড়েছেন তারাবীহের ক্ষেত্রে।(ফাতহুল বারী-৩/১৭)
হাদিসের শব্দ ما كان رسول الله صلى الله
عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره (নবীজী সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া অন্য সময়
বাড়াননা) এটাই বুঝাচ্ছে যে,
প্রশ্নটি
করা হয়েছিল রামাযান ছাড়া অন্য সময়ে যে নামায নবীজী পড়তেন তা রামযানে বাড়িয়ে দিতেন
কিনা?
হাদিস নং -০২
عن جابر بن عبد الله قال : صلى بنا رسول الله صلى
الله عليه و سلم في رمضان ثمان ركعات والوتر فلما كان من القابلة اجتمعنا في
المسجد ورجونا أن يخرج إلينا فلم نزل في المسجد حتى أصبحنا فدخلنا على رسول الله
صلى الله عليه و سلم فقلنا له : يا رسول الله رجونا أن تخرج إلينا فتصل بنا فقال :
كرهت أن يكتب عليكم الوتر (قيام الليل-90)
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-রাসূল
সাঃ আমাদের সাথে রামযানে ৮ রাকাত নামায ও বিতর নামায পড়লেন, তারপর যখন পরদিন হল আমরা মসজিদে একত্রিত হলাম এবং আকাংখা
করলাম নবীজী সাঃ আমাদের কাছে আসবেন। আমরা মসজিদে অবস্থান করতে লাগলাম। প্রভাত হয়ে
গেল। তখন আমরা গেলাম নবীজী সাঃ এর কাছে। তাকে বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আকাংখী
ছিলাম আপনি আমাদের কাছে যাবেন এবং আমাদের নিয়ে নামায পড়বেন, তখন তিনি বললেন-আমি এটি পছন্দ করছিলামনা যে, তোমাদের উপর বিতর ফরয হয়ে যাক।(কিয়ামুল লাইল-৯০)
দ্বিতীয় হাদিস খণ্ডন:
শুধু একজন নয় এই হাদিসের তিনজন রাবীর
ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেন তারা গ্রহণযোগ্য নয়। দেখুন মুহাদ্দিসীনে কিরাম
কি বলে এই হাদিসের বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে।
ইবনে হুমাইদ রাজী নামক রাবি সম্পর্কে
হাফেজ জাহাবী রহঃ
বলেন-তিনি দুর্বল
সারকথা হলো ,এই হারামাইন শরীফাইনে সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত
কত রাকাত তারাবী চলে আসছে? এ দুই মসজিদ, যেখান থেকে সারা বিশ্বের মসজিদগুলোতে ঈমান ও আমলের আলো
ছড়িয়েছে, সেখানে কি যুগ যুগ ধরে বিশ
রাকাত তারাবী পড়া হচ্ছে না?
‘বিশ রাকাত তারাবী’ যদি বিদআত হত তাহলে কি এটা
সম্ভব যে, দ্বীনের মধ্যে একটা মুনকার
ও বিদআতের অনুপ্রবেশ ঘটবে আর সকল মুসলমান একমত হয়ে তা গ্রহণ করে নেবে; এমনকি এর উপর সমস্ত ফকীহ, মুহাদ্দিস ও অন্যান্য উলামায়ে কেরামের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়ে
যাবে।
তারীখুল খুলাফা তথা খুলাফায়ে রাশেদীনের ইতিহাস
অনুযায়ী হযরত ওমর রাঃ ১৫তম হিজরীতে তারাবীহ নামাযের জামাতের শুরু করেন। আর হযরত
সাইয়্যেদা আয়শা রাঃ ৫৭হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন। পুরো ৪২ বছর আম্মাজান আয়শা রাঃ
হুজরার নিকটবর্তী মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবীহের বেদআত জারী হল, অথচ যেই আম্মাজান আয়শা সিদ্দিকা রাঃ চুপচাপ
থাকবে?
এটা কীভাবে সম্ভব যে, নবীজীর সমস্ত উম্মত বিদআত ও গোমরাহির উপর একমত হয়ে যাবে।
অথচ নবীজীর ঘোষণা,
إِنّ أُمّتِي لَا تَجْتَمِعُ عَلَى ضَلَالَةٍ.
এটা নিশ্চিত যে, আমার গোটা উম্মত গোমরাহির উপর একমত হবে না।২ Ñসুনানে আবু দাউদ,
হাদীস
৪২৫৩: সুনানে তিরমিযী, হাদীস ২১৬৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৯৫০
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৯৬:
আসসালামু আলাইকুম ওয়াটসখৈথষৌ রহমাতুল্লাহ।
আমার জানার বিষয় হল, বর্তমান স্বাভাবিক
পরিস্থিতিতে জুমুআর জামাত দুইটা করা যাবে কিনা।
এখানে উল্লেখ্য যে, বর্তমানে একই মসজিদে
(বিদেশে) দুটি জামাত চালু আছে।
তারিখ:
১৩/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ইউনুছ, খুলনা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৯৭:
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
সম্মানিত মুফতি সাহেব, অনেক ইমামকে দেখা যায়, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' বলে মুনাজাত শেষ করে। এটা কি সুন্নাহ, দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম।
তারিখ:
১৩/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুর রহমান সাভার, ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো,
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন বিভিন্ন জায়গায়
মুনাজাতের শেষে ইমাম সাহেবদেরকে এভাবে বলতে শোনা যায়,
হে আল্লাহ! মৃত্যুর সময় যবানে জারি করে দিও- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। অথবা বলেন,
اجعل آخر كلامنا عند الموت "لا إله إلا الله، محمد
رسول الله".
অর্থাৎ কালিমার মাধ্যমে তারা দুআ শেষ করেন।
প্রথম কথা হলো,
মৃত্যুর
সময় যেন কালেমা নসিব হয় এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, আর
হাদিসের ভাষ্য অনুসারে যার শেষ কথা হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সে জান্নাতে যাবে।
দোয়ার মধ্যে এভাবে বলা দোষের কিছু নয়,
বরং
কাম্য। দলিল:
حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ عَبْدِ الْوَاحِدِ
الْمِسْمَعِيُّ، حَدَّثَنَا الضَّحَّاكُ بْنُ مَخْلَدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ
الْحَمِيدِ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنِي صَالِحُ بْنُ أَبِي عَرِيبٍ، عَنْ كَثِيرِ
بْنِ مُرَّةَ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله
عليه وسلم " مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ
الْجَنَّةَ " .
অর্থ: মালিক ইবনে আবদিল ওয়াহিদ মাসমাঈ (রাহঃ) .... মুআয
ইবনে জাবাল (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির সর্বশেষ কালিমা (কথা)
হবে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু,
সে
জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস
নং ৩১০২ (আন্তর্জাতিক নং ৩১১৬)
নোট: মৃত্যুপথযাত্রীর নিকট “কালিমায়ে
তাওহীদ" পাঠ করাকে 'তালকীন'
বলে।
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
প্রশ্ন: ক। 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলা
দ্বারা মোনাজাত শেষ করা কি সূন্নাহ?
উত্তর: ক। না,
এটি
দুআর সুন্নাহ বা আদব নয়; বরং
এর
কারণে দোয়া সমাপ্ত করার মাসনুন আমল ছুটে যায়।
প্রশ্ন: খ।
কি
বাক্য দ্বারা দোয়া- মোনাজাত শেষ করা সুন্নাহ বা আদব?
উত্তর: খ। দুআর একটি আদব বা সুন্নাহ হল, আল্লাহর
হামদ-ছানা (প্রশংসা) ও দরূদ শরীফ দ্বারা দুআ শুরু করা এবং শেষ করা। তাছাড়া হাদীস
থেকে এ-ও বুঝা যায় যে, দুআ সমাপ্ত হবে ‘আমীন’-এর মাধ্যমে । দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ
اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ، حَدَّثَنَا حَيْوَةُ، أَخْبَرَنِي أَبُو هَانِئٍ، حُمَيْدُ
بْنُ هَانِئٍ أَنَّ أَبَا عَلِيٍّ، عَمْرَو بْنَ مَالِكٍ حَدَّثَهُ أَنَّهُ،
سَمِعَ فَضَالَةَ بْنَ عُبَيْدٍ، صَاحِبَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
يَقُولُ سَمِعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً يَدْعُو فِي صَلاَتِهِ
لَمْ يُمَجِّدِ اللَّهَ تَعَالَى وَلَمْ يُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " عَجِلَ هَذَا " .
ثُمَّ دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ " إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ
فَلْيَبْدَأْ بِتَحْمِيدِ رَبِّهِ جَلَّ وَعَزَّ وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ ثُمَّ
يُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ يَدْعُو بَعْدُ بِمَا شَاءَ " .
আহমাদ ইবনে হাম্বল
(রাহঃ) ....... ফাদালা ইবনে
উবাইেদ (রাযিঃ) নবী করীম (ﷺ)
এর সাবাহী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শুনতে পান যে, জনৈক
ব্যক্তি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা ও নবী করীম (ﷺ) এর উপর দরূদ পাঠ ব্যতিরেকে দুআ করতে শুরু করে। তিনি বলেনঃ সে
তাড়াহুড়া করেছে।
রাবী বলেন, অতঃপর তিনি ঐ ব্যক্তিকে বা
অন্য কাউকে ডেকে বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ নামায আদায় করবে, তখন
সে যেন সর্বপ্রথম আল্লাহর প্রশংসা ও নবীর উপর দরূদ পাঠ করে। তাখরিজ:
সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস
নং ১৪৮১ (আন্তর্জাতিক নং ১৪৮১)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا رِشْدِينُ بْنُ
سَعْدٍ، عَنْ أَبِي هَانِئٍ الْخَوْلاَنِيِّ، عَنْ أَبِي عَلِيٍّ الْجَنْبِيِّ،
عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ، قَالَ بَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
قَاعِدًا إِذْ دَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَقَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي
وَارْحَمْنِي . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهَ صلى الله عليه وسلم " عَجِلْتَ
أَيُّهَا الْمُصَلِّي إِذَا صَلَّيْتَ فَقَعَدْتَ فَاحْمَدِ اللَّهَ بِمَا هُوَ
أَهْلُهُ وَصَلِّ عَلَىَّ ثُمَّ ادْعُهُ " . قَالَ ثُمَّ صَلَّى رَجُلٌ آخَرُ
بَعْدَ ذَلِكَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَصَلَّى عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " أَيُّهَا الْمُصَلِّي ادْعُ تُجَبْ
" . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ رَوَاهُ حَيْوَةُ بْنُ شُرَيْحٍ
عَنْ أَبِي هَانِئٍ الْخَوْلاَنِيِّ وَأَبُو هَانِئٍ اسْمُهُ حُمَيْدُ بْنُ
هَانِئٍ وَأَبُو عَلِيٍّ الْجَنْبِيُّ اسْمُهُ عَمْرُو بْنُ مَالِكٍ .
অর্থ: কুতায়বা (রাহঃ) ...... ফাযালা
ইবনে উবাইদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে,
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) একদিন বসা ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে
সেখানে নামায আদায় করল এরপর এ দু’আ করলঃ (اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي
وَارْحَمْنِي) -
হে আল্লাহ তুমি আমাকে মাফ করে দাও তুমি আমাকে রহম কর। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ হে নামায আদায়কারী তুমি বেশ
তাড়াহুড়া করে ফেললে। তুমি নামায আদায় করে যখন বসবে তখন আগে আল্লাহর যথোপযুক্ত
তারীফ করবে এরপর আল্লাহর কাছে দু’আ করবে।
ফাযালা (রাযিঃ) বলেনঃ এরপর আরেক ব্যক্তি এসে নামায আদায়
করে। আল্লাহর হামদ করল এবং নবী (ﷺ) এর উপর নামায ও দরুদ পাঠ করল। নবী (ﷺ) তাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে নামায আদায়কারী!
এখন দু’আ কর। তোমার দু’আ
কবুল হবে। তাখরিজ: জামে' তিরমিযী,
হাদীস
নং ৩৪৭৬ (আন্তর্জাতিক নং ৩৪৭৬)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
হাদিস নং-০৩
باب مَا جَاءَ فِي فَضْلِ
الصَّلاَةِ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ، سُلَيْمَانُ بْنُ سَلْمٍ
الْمَصَاحِفِيُّ الْبَلْخِيُّ أَخْبَرَنَا النَّضْرُ بْنُ شُمَيْلٍ، عَنْ أَبِي
قُرَّةَ الأَسَدِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ عُمَرَ بْنِ
الْخَطَّابِ، قَالَ إِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ لاَ
يَصْعَدُ مِنْهُ شَيْءٌ حَتَّى تُصَلِّيَ عَلَى نَبِيِّكَ صلى الله عليه وسلم .
অর্থ: আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে
মুসলিম আল-মুসহিফী আল-বালখী (রাহঃ) ...... উমর উবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত
যে, তিনি বলেনঃ নবী (ﷺ)-এর উপর সালাত (দরূদ) পাঠ না করা পর্যন্ত দু’আ আসমান ও যমীনের মাঝে মওকূফ অবস্থায় থাকে এবং এর কিছুই
আল্লাহর নিকটে উত্থিত হয় না। তাখরিজ: জামে' তিরমিযী, হাদীস
নং ৪৮৬ (আন্তর্জাতিক নং ৪৮৬)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)
ব্যাখ্যা:
এ
হাদিসের ব্যাখ্যা সম্পর্কে
وقد ذكر العلماء أن الصلاة على الرسول صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مع الدعاء على ثلاث مراتب :
قال الشيخ بكر أبو زيد حفظه الله في كتابه (تصحيح
الدعاء ص : 23) :
"وأكمل المراتب الصلاة على النبي
صلى الله عليه وسلم في فاتحة الدعاء ووسطه وخاتمته . وإنها للدعاء كالجناح يصعد
بخالصه إلى عنان السماء .
আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহর
দরবারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দোয়াসহ দোয়া পাঠানো তিনটি
স্তরের:
শেখ বকর আবু যায়েদ,
আল্লাহ
তাকে রক্ষা করুন, তার বইতে বলেছেন (তাহেহ আল-দুআ পৃ. 23):
এবং প্রার্থনার শুরুতে,
মাঝখানে
এবং শেষে নবীর উপর দরুদ পাঠ করা এবং দ্বিতীয় স্থান: শুরুতে
এবং শেষে। সূত্র: তাছহিহুদ দুআ-২৩
قال الإمام النووي رحمه الله في الأذكار ص ١٧٦: (أجمع
العلماء على استحباب ابتداء الدعاء بالحمد لله تعالى والثناء عليه، ثم الصلاة على
رسول الله صلى الله عليه وسلم، وكذلك تختم الدعاء بهما، والآثار في هذا الباب
كثيرة مرفوعة) .
অর্থাৎ ইমাম নববি রহ. বলেন,
আলেমগণ সর্বসম্মতভাবে একমত যে, সর্বশক্তিমান
আল্লাহর প্রশংসা ও প্রশংসার মাধ্যমে দো‘আ
শুরু করা, তারপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দোয়া করা বাঞ্ছনীয়।
এবং এভাবেই তথা হামদ ও দরুদ এর মাধ্যমে দোয়া শেষ করা। সূত্র: কিতাবুল আজকার-১৮৬
পৃষ্ঠা, ইমাম নববি রহ.
وقال أبو سليمان الداراني : ( من أراد أن يسأل الله
حاجته فليبدأ بالصلاة على النبي ، وليسأل حاجته ، وليختم بالصلاة على النبي ، فإن
الصلاة على النبي مقبولة ، والله أكرم أن يرد ما بينهما )
হযরত আবু সুলাইমান জার্মানি রহ বলেন, যে
ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজন
পুরো করার ইচ্ছা রাখে। সে যেন আল্লাহর নবীর প্রতি দরুদ-সালাম এর মাধ্যমে শুরু করে এবং নিজে প্রয়োজন পেশ করে এবং নবীর প্রতি সালামের মাধ্যমে দোয়া
শেষ করে। কেননা নবীর প্রতি দরুদ নিশ্চিত কবুল হয়। সূত্র: আদাবুজ জিকরি ওয়াদ
দুআ-৩০০৯৭০ (ফাতওয়া নং)
শেষ কথা হলো,
কালিমার
মাধ্যমে দুআ শেষ করা একটি রসম, সুন্নাহ নয়।
বাহক্কে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু”
বা
এ জাতীয় শব্দ বলে মুনাজাত শেষ করা,
এরূপ
সব সময় করতে থাকা বিদ’আত।
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
আসসালামু আলাইকুম। আমার জানার বিষয়,
*** মাহে রমজানে মসজিদে দেরীতে গিয়ে আলাদাভাবে এশার জামায়াত শুরু করে ইমাম সাহেবের
তারাবীহ’র সালাতে সমস্যা সৃষ্টি করা
জায়েজ নয় ।
বরং ইমামের তারাবীহ’র পেছনে এশার ফরজের নিয়ত করতঃ নামাজ আদায় করবেন । ইমাম সাহেবের সালাম প্রদানের
পর বাকি থাকা রাকাতগুলো সম্পন্ন করার পর তারাবীহ’র সালাতে যোগ দেবেন ।
*** নফল/ সু্ন্নত আদায়কারী ব্যক্তির পেছনে ফরজ নামাজ পড়া জায়েজ ।
ছহীহুল বোখারি ৫৭৫৫
ছহীহ মুসলিম ৪৬৫
এটা কি সঠিক, দলিলসহ জানালে
উপকৃত হতাম।
তারিখ : ১৫ / ০৩ / ২৩ ঈসায়ী / ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা বাহাউদ্দিন চাঁদপুর থেকে
حق : وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ - সানার পর প্রথম কথা ,
নফল বা সুন্নাত সালাত আদায়কারী ইমাম/ব্যক্তির পিছনে ফরজ সালাত ইকতিদা সহিহ হবে কি, এ বিষয়ে ইমামদের
মতভেদ রয়েছে।
(০১) ইমাম
শাফেয়ি রহঃ এর মতে,
الشافعية قالوا:
يصح اقتداء المفترض بالمتنفل مع الكراهة
শাফেয়ী মাযহাবের ফিকহবেত্তাগণ বলেন, ফরজ নামাজ
আদায়কারী ব্যক্তি যদি নফল সালাত আদায়কারী ব্যক্তি মুসল্লীর মুক্তাদী হয়ে নামাজ পড়ে
, তাহলে তা আদায় হয়ে গেলেও মাকরূহ হবে। সূত্র: কিতাবুল ফিকহি আলাল মাজাহিল আরবাআ -১ম খন্ড, ৩৮০ পাতা; আব্দুল রহমান
আলজাযরি।
(০২) আহলে হাদিসের
মতে জায়েজ।
আর (০৩)
لا يجوز نفل خلف
فرض، ولا فرض خلف نفل، ولا خلف فرض آخر، قاله الحسن البصري والزهري ويحيى بن سعيد
الأنصاري وربيعة وأبو قلابة، وهو رواية عن مالك، وقال الثوري وأبو حنيفة: لا يجوز
الفرض خلف نفل آخر الزولة النفل خلف فرضي وروي عن مالك مثله. انتهى
আর ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম হাম্বল
হাসান বসরি, ইমাম ইউহরি, ইয়াহইয়া বিন
সাঈদ,
রবিয়া, সুফিয়ান
সাওরি মুখের ইমামের, সুন্নাত/নফল আদায়কারী পিছনে ফরজ ফরজ সালাত
ইকতিদা জায়েজ নেই। তবে ফরজ আদায়কারীর পিছনে নফল পড়তে পারবে।
প্রশ্নঃ ক। আহলে হাদিসের দলিল কি?
উত্তর: ক। তাদের দলিল রূপ:
عَنْ جَابِرِ بْنِ
عَبْدِ اللَّهِ: «أَنَّ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ، كَانَ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ، وَسَلَّمَوَ عَلَيْهِ، وَسَلَّمَوْيُمِيُ»
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাহ. অনেক থেকে। মুয়াজ বিন জাবাল রা. রাসূল (ﷺ) এর সাথে সালাত পড়ান, তারপর ফিরে গিয়ে তার কাওমের ইমামতি করতেন। বুখারী, নং-৭০০
প্রশ্নঃ খ. ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, এবং ইমাম
হাম্বল রহ. এর দলিল কি?
উত্তর: খ। তিন ইমামের দলিল নিম্নরূপ:
হাদিস নং-০১
عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ”
إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ، لِيُؤْتَمُهُ فَلْتِمِهُ لِيُؤْتَمُهُ فَلْمَامُ
جُعِلَ الإِمَامُ، لِيُؤْتَمُهُ فَلْتِمْ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ অনেক থেকে। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, অনুসরণ করার জন্য ইমাম বলা হয়, তাই তার
বিদ্ধাচারণ না করবে। তাখরিজ সহীহ বুখারী, সংখ্যা নং-৭২২
ব্যাখ্যা: জবাবে ইমামের বিরুদ্ধাচারে বলা হয়েছে, আর ইমাম যখন নফল/সুন্নাত নামাযের গতি, আর মুসল্লি গণের তার পরে নি ফরজ নামাযরুদ্ধে দাঁড়ায়, তা পরিস্কার তার বিদ্ধাচরণ। ইক্তিদা কিভাবে সহীহ হতে পারে?
হাদিস/আসার নং-০২
হযরত কাতাদাহ রাহ. থেকে মাত্রা, হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব ও হাসান বসরী রাহ. তিনি বলেন, ব্যক্তি যোহরের জামাত
মনে করে আসরে নামাযরত জামাতে শরীক এবং নামাযের পর সে জানতে পারল, তারা আসর হল বলেছে, ব্যক্তি আসর ও
যোহর নামাযের বড়।'-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৩/৫২৪।
এই হাদিসে আমরা দেখতে পাই মুক্তির ইমামের বিপরীতে নামাজের কারণে নামাজ হয়নি। তাই ফরজ নামাযীকারী ব্যক্তি নফল/সুন্নাত নামাজ কিভাবে হবে?
প্রশ্নঃ গ। আহলে হাদিসের দলিলের খণ্ড/ জবাব কি?
উত্তর: গ। عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ
اللَّهِ: «أَنَّ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ، كَانَ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ، وَسَلَّمَوَ عَلَيْهِ، وَسَلَّمَوْيُمِيُ»
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাহ. অনেক থেকে। মুয়াজ বিন জাবাল রা. রাসূল (ﷺ) এর সাথে সালাত পড়তেন, তারপর ফিরে গিয়ে তার কাওমের ইমামতি করতে। বুখারী, নং-৭০০
বুখারীর মেয়েতে মুয়াজ রা. যে নামাযী নবীজীর
পিছনে ফিরেন, ঠিক সেই নামাযতির ইমামই আবার যেতে যাচ্ছেন না? তা পরিস্কার আসেনি।কিন্তু অন্যান্য কিতাবে তা আসবে।
এখানে বিষয় হল, এটি মুয়াজ রা. এর একটি ব্যক্তিগত আমল ছিল। তুষ্টি প্রকাশ হলে
অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন? ব্যাপারটা বিস্তারিত প্রশ্ন
عَنْ مُعَاذِ بْنِ
رِفَاعَةَ الزُّرَقِيُّ: أَنَّ رَجُلًا، مِنْ بَنِي سَلِمَةَ يُقَالُ لَهُ سَلِيمٌ
أَتَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَالَ: إِنَّا نَظَلُّ
فِي أَعْمَالِنَا , فَنَأْتِي حِينَ نُمْسِي , فَنُصَلِّي فَيَأْتِي مُعَاذُ بْنُ
جَبَلٍ , فَيُنَادَى بِالصَّلَاةِ , فَنَأْتِيهِ فَيُطَوِّلُ عَلَيْنَا. فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا
مُعَاذُ لَا تَكُنْ فَتَّانًا , إِمَّا أَنْ قَنَ تُصَلِّيَ مَعِي , وَخَمْ
تُصَلِّيَ مَعِي»
হযরত মুয়াজ বিন রিফাআ যুরকী রা. অনেক থেকে। বনী সালামার এক ব্যক্তি যার নাম
ছিল সালিম। তিনি (ﷺ) এর কাছে বাস্তবতা। এসে বললেন, আমরা কাজকর্মে
ব্যস্ত। সন্ধ্যায় ফিরে এসে সালাত পাঠ
করি। তখন মুয়াজ বিন জাবাল আসে। সালাতের জন্য আহবান করে। তখন আমরা নামায দখল
আসি। তখন মুয়াজ নামায অনেক দীর্ঘস্থায়ী করে। [ফলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়, এ অভিযোগ] তখন নবীজী (ﷺ)
বললেন,
হে মুয়াজ! ফিতনাকারী হতে হতে, তুমি আমার সাথে নামায পড়ো অথবা তোমার কওমের
সাথে সংক্ষেপে সালাত পড়। তাখরিজ: দামী শরীফ, দল নং-২৩৬২, আল-মুজামুল
কাবীরলিতাবরানী, সংখ্যা নং-৬৩৯১
এ ভোটার মোটামুটি পূর্ণতা পাওয়া যাচ্ছে। যাতে দেখা যাচ্ছে, নবীজী (ﷺ) মুয়াজ রা. কে বলেছে, তুমি সতর্ক, আমার সাথে
নামায পড় অথবা কওমের সাথে সংক্ষেপে নামা পড়ো।
এ বিষয়ে ইমাম আবু জাফর তাহাবি রহ. বলেন,
بَابُ الرَّجُلِ يُصَلِّي
الْفَرِيضَةَ خَلْفَ مَنْ يُصَلِّي تَطَوُّعًا قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: رُوِيَ عَنْ
جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ , «أَنَّ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ كَانَ يُصَلِّي مَعَ
النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ» , ثُمَّ يَرْجِعُ
فَيُصَلِّيَهَا بِقَوْمِهِ فِي بَنِي أَسْلَمَةَ. وَقَدْ ذَكَرْنَا ذَلِكَ بِإِسْنَادِهِ فِي بَابِ الْقِرَاءَةِ فِي
صَلَاةِ الْمَغْرِبِ. فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى أَنَّ
الرَّجُلَ يُصَلِّي النَّافِلَةَ , وَيَأْتَمَّ بِهِ مَنْ يُصَلِّي الْفَرِيضَةَ ,
وَاحْتَجَذَوا الْاْهِ. وَخَالَفَهُمْ فِي ذَلِكَ
آخَرُونَ , فَقَالُوا: لَا يَجُوزُ لِرَجُلٍ أَنْ يُصَلِّيَ فَرِيضَةً خَلْفَ مَنْ
يُصَلِّ نَةً. وَقَالُوا: لَيْسَ فِي حَدِيثِ
مُعَاذٍ هَذَا أَنَّ مَا كَانَ يُصَلِّيهِ بِقَوْمِهِ , كَانَ نَافِلَةً لَهُ أَوْ
فَرِيضَةً. فَقَدْ يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ , كَانَ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
نَافِلَةً , ثُمَّ يَأْتِي قَوْمَهُ فَيُصَلِّي بِهِمْ فَرِيضَةً , فَإِنْ كَانَ
ذَلِكَ كَذَلِكَ , فَلَا حُجَّةَ لَكُمْ فِي هَذَا الْحَدِيثِ. وَيَحْتَمِلُ أَنْ يَكُونَ كَانَ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرِيضَةً وَسَلَّمَ فَرِيضَةً , ثُمَّ يُصَلِّوَ
تَعْتِمُ كَمْ ذَكُمْ تَقَوْتًا فَلَمَّا كَانَ هَذَا الْحَدِيثُ
يَحْتَمِلُ الْمَعْنَيَيْنِ , لَمْ يَكُنْ أَحَدُهُمَا أَوْلَى مِنَ الْآخَرِ ,
وَلَمْ يَكُنْ لِأَحَدٍ أَنْ يَصْرِفَهُ إِلَى أَحَدِ الْمَعْنَيَيْنِ دُونَ
الْمَعْنَى الْآخَرِ إِلَّا بِدَلَالَةٍ تَدُلُّهُ عَلَى ذَلِكَ. ثُمَّ يُصَلِّي بِقَوْمِهِ تَطَوُّعًا كَمَا ذَكَرْتُمْ. فَلَمَّا كَانَ هَذَا الْحَدِيثُ يَحْتَمِلُ الْمَعْنَيَيْنِ , لَمْ
يَكُنْ أَحَدُهُمَا أَوْلَى مِنَ الْآخَرِ , وَلَمْ يَكُنْ لِأَحَدٍ أَنْ
يَصْرِفَهُ إِلَى أَحَدِ الْمَعْنَيَيْنِ دُونَ الْمَعْنَى الْآخَرِ إِلَّا
بِدَلَالَةٍ تَدُلُّهُ عَلَى ذَلِكَ. ثُمَّ يُصَلِّي بِقَوْمِهِ
تَطَوُّعًا كَمَا ذَكَرْتُمْ. فَلَمَّا كَانَ هَذَا الْحَدِيثُ
يَحْتَمِلُ الْمَعْنَيَيْنِ , لَمْ يَكُنْ أَحَدُهُمَا أَوْلَى مِنَ الْآخَرِ ,
وَلَمْ يَكُنْ لِأَحَدٍ أَنْ يَصْرِفَهُ إِلَى أَحَدِ الْمَعْنَيَيْنِ دُونَ
الْمَعْنَى الْآخَرِ إِلَّا بِدَلَالَةٍ تَدُلُّهُ عَلَى ذَلِكَ.
فَقَالَ أَهْلُ
الْمَقَالَةِ الْأُولَى: فَإِنَّا قَدْ وَجَدْنَا فِي بَعْضِ الْآثَارِ أَنَّ مَا
كَانَ يُصَلِّيهِ بِقَوْمِهِ هُوَ تَطَوُّعٌ , وَأَنَّ مَا كَانَ يُصَلِّيهِ مَعَ
رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرِيضَةٌ
وَذَكَرُوا فِي
ذَلِكَ ,
2360 - مَا حَدَّثَنَا
إِبْرَاهِيمُ بْنُ مَرْزُوقٍ , قَالَ: ثنا أَبُو عَاصِمٍ , عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ ,
عَنْ عَمْرٍو , قَالَ: أَخْبَرَنِي جَابِرٌ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: «أَنَّ مُعَاذًا
كَانَ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ ,
ثُمَّ يَنْصَرِفُ إِلَى قَوْمِهِ فَيُصَلِّيَهَا بِهِمْ , هِيَ لَهُ تَطَوُّعٌ ,
وَلَهُمْ فَرِيضَةٌ» فَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ لِلْآخَرِينَ عَلَيْهِمْ , أَنَّ
ابْنَ عُيَيْنَةَ قَدْ رَوَى هَذَا الْحَدِيثَ , عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ ,
كَمَا رَوَاهُ ابْنُعَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَلَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ أَخْبَرَهُ بِهِ لَأَقَرَّهُ عَلَيْهِ أَوْ غَيْرُهُ. وَهَذَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا لَمَّا
أَخْبَرَهُ رِفَاعَةُ بْنُ رَافِعٍ أَنَّهُمْ كَانُوا يُجَامِعُونَ عَلَى عَهْدِ
رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا يَغْتَسِلُونَ , حَتَّى يُنْزِلُوا. فَقَالَ لَهُمْ عُمَرُ رَضِيَ
اللهُ عَنْهُ: فَأَخْبَرْتُمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
بِذَلِكَ , فَرَضِيَكُ؟ , قَالَ: لَا , فَلَمْ يَجْعَلْ
ذَلِكَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ حُجَّةً. فَكَذَلِكَ هَذَا الْفِعْلُ , لَوْ ثَبَتَ أَنَّ مُعَاذًا فَعَلَهُ
فِي عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , لَمْ يَكُنْ فِي
ذَلِكَ دَلِيلٌ أَنَّهُ بِأَمْرِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَقَدْ رَوَيْنَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ مَا يَدُلُّ عَلَى خِلَافِ ذَلِكَ لَوْ ثَبَتَ أَنَّ مُعَاذًا فَعَلَهُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , لَمْ يَكُنْ فِي ذَلِكَ دَلِيلٌ أَنَّهُ
بِأَمْرِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَقَدْ رَوَيْنَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ مَا يَدُلُّ عَلَى خِلَافِ ذَلِكَ لَوْ ثَبَتَ أَنَّ مُعَاذًا فَعَلَهُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , لَمْ يَكُنْ فِي ذَلِكَ دَلِيلٌ أَنَّهُ
بِأَمْرِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَقَدْ رَوَيْنَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ مَا يَدُلُّ عَلَى خِلَافِ ذَلِكَ
নফল অনুসরণকারী অনুসরণ ফরজ পড়া অধ্যয়ন
অর্থ: আবু জাফর তাহাবি (রাহঃ) তিনি বলেন, জাবির ইবন আবদ
(রাযঃ) থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে যে, মু'ইবন জাবাল (রাযিঃ) পুলিশে (ﷺ)-এর সাথে ইসালাতে গিয়ে তিনি
নিজের গাত্রে বন সালিমায় গিয়ে নিজের গাত্রের গাত্রকে নিয়েছিলেন। সালাত পড়ান। এটি আমরা 'মগরিবের সালতারা
কিরাআত 'অনুচ্ছেদ' উল্লেখ করেছি।
একদল আলিম এ মত পাকেশন করেছেন যে, কেউ তার
অনুসরণ ফরয দেখানকারী
ইতিদা করতে এবং তারা এ সদস্য দ্বারা দলিল পেশ করেন। পক্ষান্তরে এ বিষয়ে অপরাপর
আলিম গণের বিরায়েধিতা করে লেখক বলেছেন: ইতিবাদের জন্য ইতিদায করা জায়িয নেই
এবং কর্তাব্যক্তি (রায্যঃ)-এর এ-তার মুহুর্তের বিষয় উল্লেখ নেই, তিনি নিজের গােত্রের ব্লাকদের সালাত নিয়ে তার জন্য ফরয
করেছেন। ছিল। হতে পারে তার সাথে পুলিশ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ফলন তারপর নিজের গাঁয়ে এসে ফরয নির্বাচন। যদি মনে হয় এরূপ হয়ে থাকে তাহলে এ তােমাদের স্বপক্ষে দলীল
হবে না। অথবা ফরয রয়েছে যে, তিনি দলের নেতা (ﷺ)-এর সাথে আবার নিজের গাত্রের লাকেদের নিয়ে ফল দিয়েছেন, যেমন তামরা উল্লেখ করেছেন। যখন এ পরিবারের সদস্যদের অর্থের প্রয়োজন রয়েছে তাই অপরটির উপর একটি
প্রাধান্য পেতে পারে এবং কোন রূপ ব্যতীত অন্য কোন শর্তের অর্থ গ্রহণ করা উচিত নয়।
প্রথম দল আলেম গণের লেখকঃ আমরা অবশ্যই হাদিসে বড়দের নিয়ে যে কোন লোকদের
নিয়ে – সালাত কাউন্সিলন তা নন ছিল এবং সালাত দলের
(সালগুলি) সাথে যার সাথে তার নিজের কোন ফলন তাজ ছিল। আর তারা এ বিষয়ে নিম্নোক্ত দলটি পেশ করেছেনঃ
২৩৬০। ইব্রাহীম ইব্ন মারযূক (রাহঃ)
..... বর্ণনা আমর (রাহঃ) থেকে করেন, তিনি বলেন, আমাকে জা (রাযিঃ) সংবাদদাতা, “মুআযয় (রাযিঃ) পুলিশ্ (ﷺ)-এর সাথে ইশা'র সালাত। কিভাবে করতে
হবে। তারপর নিজের গোত্রের সামনে নিয়ে আসা নিয়ে সালাত প্রাপ্তি। তার জন্য নফল এবং তাদের ফরযের জন্য।
(ক) তাদের
বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দল আলিমদের দলীল হচ্ছে এই যে, আমার ইবন দীনার (রাহঃ) থেকে এ হাদীসটি যেমনিভাবে ইবুন জুরায়জ (রাহঃ)
রিওয়ায়াত করেছেন অনুরূপভাবে ইবুন উয়ায়না (রাহঃ) রিওয়ায়াত করেছেন। এবং তিনি
এটিকে ইব্ন জুরায়জ (রাহঃ) অপেক্ষা পরিপূর্ণ ও উত্তম রূপে রিওয়ায়াত করেছেন।
কিন্তু এতে তিনি সেই বাক্যটি বলেননি যা ইবন জুরায়জ (রাহঃ) বলেছেন অর্থাৎ “তা হতাে তার জন্য নফল এবং তাদের জন্য ফরয”। অতএব সম্ভাবনা রয়েছে
যে, এটি হয়তাে ইবন জুরায়জ (রাহঃ) অথবা আমর ইবন দীনার (রাহঃ)
অথবা জাবির (রাযিঃ)-এর উক্তি । তিনজনের যার উক্তি-ই হউক না কেন এতে কিন্তু মু'আয (রাযিঃ)-এর কর্মের স্বরূপ উৎঘাটনের কোন দলীল বিদ্যমান
নেই যে,
এটি এরূপ ছিলাে বা ছিল না (অর্থাৎ তার সালাত
নফল ছিলাে অথবা ফরয) যেহেতু তারা কেউ মু'আয (রাযিঃ)-এর
উক্তি উদ্ধৃত করেননি বরং তারা নিজ নিজ উক্তি ব্যক্ত করেছেন যে তা অনুরূপ ছিলো।
বাস্তব ঘটনা এর পরিপন্থী হতে পারে। আর যদি ধরে নেয়া হয় যে, এটি
মু'আয (রাযিঃ) থেকে ব্যবহারিত, তাহলেওকে কোন রূপ দলীল-বিদ্যা নেই যে, দলের সদস্য (ﷺ) নির্দেশে চলছিল এবং এটিও
প্রয়োগিত নয় যে, যদি মাতাল (ﷺ) তাঁকে সম্পর্কে বলা হয় তাহলে তার উপর অনেকটাই রাখান। তাকে অন্য
কোন হুকুম করতে।
ইবনে উম ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ)-রিফাবন রাফি' (রাযিঃ) যখন, সেখানে ই এমপি (ﷺ) এর যুগে স্ত্রী সংবাদ সহবাস করতে
এবং বীর্য স্খলন নাভি পর্যন্ত গোসল না করতে। তাদের কে উমর (রাযিঃ) বললেন, এ বিষয়ে তামরা কি
এমপি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অবহিতে এবং এ বিষয়ে
তিনি আমাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন? তিনি বললেন, না। এটিকে উমর (রাযিঃ) দলিল হিসাবে গ্রহণ করেন। অনুরূপ এ কর্মটিও। যদি দেখাত হয় যে, মুআযিঃ (রাযিঃ) দলের ছাত্রে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগ এটি করেছেন, কিন্তু কোনরূপ দলীল নেই যে, এটি তিনি সামনের পক্ষ-এর নির্দেশ দিয়েছেন।
(খ) অবশ্যই
আমরা সামনের পক্ষ থেকে এর পরিপূর্ণ রিওয়ায়াত করেছি।
অংশের ব্যাখ্যা:
এ জন্যে এটা পরিস্কার যে, হযরত মুআয রা. রসূল সস।- এর উত্তর নামায পড়ে কওমে আবার ঐ নামায পড়াতেন। তবে এটা পরিস্কার নয় যে, হযরত মুআয রা. রসূল সস।-এর উর্ধ্বতন ফরয প্রাপ্ত
আর কওমে এসে নফল অর্জন করুন। আমার পূর্ববর্ণিত
বর্ণনায় একই রকম নামায এক দু'বার পাঠ সহ
নিষেধাজ্ঞার দ্বারা এটি পরিপূর্ণ হয় যে, হযরত মুআ রা. ইশার নামায একবারই ভোট; যে নামাযে তিনি তাঁর কওমের ইমামতি করেছেন। আর রল্ল স.-এর উল্লেখ উল্লেখ করা মাযয তাঁর নফল। এ ব্যাখ্যা সমর্থন হলে মারফু'র সদস্য এবং সাহাবার আমলের মধ্যে কোন বিরোধ থাকে না। আর সাংগঠনিক কারণে নফল নামায্যকারীর স্বতন্ত্র ফরয্যকারীর
ইক্তা দলীলও এ দলিলও এ সমর্থন দ্বারা দেখা না। এ ব্যাখ্যার বিপরীতে যে সব অংশে রয়েছে: هِيَ لهُ تَطَوُّعٌ
, وَلَهُمْ فَرِيضَةٌ “হযরত মুআ রা. যে নামায তাঁর কওমে পড়তে গিয়ে
পড়ুন তা তাঁর জন্য নফল, আর কওমের জন্য উল্লেখযোগ্য ফরয”। (তাহাবী: খ--১ পৃষ্ঠা-২৭৩, সদস্য নং-২৩৬০) এটা সত্য হযরত মুআয রা. - নিজের মন্তব্য নয়; আমার এটা অন্যদের মতামতের প্রসূত মন্তব্য যা অপরের নিয়তের ক্ষেত্রে দলিল
গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্তু, আমর বিন দীনার বৌয়ে আইয়ূব সিখিয়ানী, (বুখারী: ৬৭৬) মানসুর বিন মু'তামির (মুসলিম: ৯২৬) এবং সুফ বিন উইয়াইনাও বর্ণনা বর্ণনা করেছেন। (মুসলিম: ৯২৪) কিন্তু বর্ণনায় ঐ শব্দটি (هِيَ لَهُ تَطَوُّعٌ..) নেই। আবার যদি মালিকও আযান হয়, হযরত মুযযা রা. ইশার ফর নামায রসূল অফিস স.- এর
প্রথম ঐ অংশ নিতে, আর দ্বিতীয় বার নামাযের ইমামতি করতে প্রশ্ন
উঠবে,
এটা রসূল কাউন্সিলস। থেকে কি না? কোন অবস্থানের বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্যাপক মুসনাদে আহমাদের এক বর্ণনায় বেশ পরিস্কারভাবে উলেসন্নখ আছে, রসূল অফিস সস। হযরত মুআয রা. বলেছেন, إِمَّا أَنْ تُصَلِّيَ مَعِي،
وَإِمَّا أَنْ تُخَفِّفَ عَلَى قَوْمِكَ “হযরত আমার সাথে নামায পড়ো অথবা সহজ করো”। (মুসনাদে আহমাদ: ২০৬৯৯, তাহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৬৪, কথা নং-২৩৬২) মুসনাদে আহমাদের তাহকীকে শায়খ শুআইব আরনাউত
রাহ। এ যোগে সহীহ লিগাইরিহী লেখক। এরাবী ব্যাখ্যায় ইমাম তাহাবী রাহ. বলেন:فَقَوْلُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
هَذَا لِمُعَاذٍ , يَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُ أَحَدَ الْأَمْرَيْنِ , إِمَّا الصَّلَاةَ
مَعَهُ , أَوْ بِقَوْمِهِ , وَأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ يَجْمَعُهَا
“রসূলুল্লাহ স. ব্যক্তিগত মুআয্য।কে এ কথা বলায় তার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, রসূল পরিষদ। সতর্কতা রসূল স.-এর সাথে নামায পড়া। নয়তো তাঁর কাওমের নামায পড়ানো। এ দু'টি একত্রিত করতে সুবিধা না। (তাহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৬৪) يَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُ أَحَدَ الْأَمْرَيْنِ , إِمَّا الصَّلَاةَ مَعَهُ , أَوْ
بِقَوْمِهِ , وَأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ يَجْمَعُهَا “রসূলুল্লাহ স. ব্যক্তিগত মুআয্য।কে এ কথা বলায় তার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, রসূল পরিষদ। সতর্ক রসূল স.-এর সাথে নামায পড়া। নয়তো তাঁর কাওমের নামায পড়ানো। এ দু'টি একত্রিত করতে সুবিধা না। (তাহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৬৪) يَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُ أَحَدَ الْأَمْرَيْنِ , إِمَّا الصَّلَاةَ مَعَهُ , أَوْ
بِقَوْمِهِ , وَأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ يَجْمَعُهَا “রসূলুল্লাহ স. ব্যক্তিগত মুআয্য।কে এ কথা বলায় তার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, রসূল পরিষদ। সতর্ক রসূল স.-এর সাথে নামায পড়া। নয়তো তাঁর কাওমের নামায পড়ানো। এ দু'টি একত্রিত করতে সুবিধা না। (তাহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৬৪) - এর সাথে নামায পড়া। নয়তো তাঁর কাওমের নামায পড়ানো। এ দু'টি একত্রিত করতে সুবিধা না। (তাহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৬৪) - এর সাথে নামায পড়া। নয়তো তাঁর কাওমের নামায পড়ানো। এ দু'টি একত্রিত করতে সুবিধা না। (তাহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৬৪)
এ প্রশংসা দ্বারা পরিস্কার মূল্য আসে যে, হযরত মুজায
রা. ইশার ফর নামায রসূল সস।- এর ইতিহাস পড়ে দ্বিতীয়বার ঐ একই
নামাযে ইমাম করার অনুমতি রসূলটি সসলতি। দেননি। তাহলে এটা কিভাবে ফরয নামাযের মত
গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়ের দলিল হতে পারে? সর্বোপরি কথা বলার উপর দলের পক্ষের বক্তব্য যদি এটা মনে হয়, তাহলে সতর্কতা কামনা করা হবে এ জাতীয় বিতর্কিত বিষয় ফরয
নামাযকে বাঁচিয়ে রাখা।
—তাহাবী শরীফ, নং ২৩৬০
সার কথা,
ومن شروط الإمامة أن لا يكون الإمام أدنى حالاً من المأموم، فلا يصح
اقتداء مفترض بمتنفل، إلا عند الشافعية، فانظر مذهبهم تحت الخط (١) , وكذا لا يجوز
اقتداء قادر على
সালাতের জামাত/ ইমামতি বৈধ হওয়ার অন্যতম একটি শর্ত হলো, সার্বিক দিক থেকে
ইমাম মুক্তাদীর তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ হওয়া চলবেনা। সেই বিবেচনায়, ফরয সালাত
আদায়কারী মুসল্লী নফল নামাজ আদায়কারী ব্যাক্তির মুক্তাদী হয়ে সালাত আদায় করলে তা শুদ্ধ হবেনা। কারণ নফলের তুলনায় ফরজ অধিক তাৎপর্যসমৃদ্ধ ও
গুরুত্ববহ।
আপনার প্রশ্ন, প্রাধান্য মত অনুযায়ী তারাবিহর ইমামের পিছনে ইশার ফরজ সালাত আদায় করা শুদ্ধ
হবে না। উক্ত সালাত বাতিল বলে গণ্য হবে। তাই তিনি একাকী ফরজ ও দুরাকাত সুন্নাত আদায় করবে, তারপর তারাবিহর নামাজে শরিক হবে। সূত্র: কিতাবুল ফিকহি আলাল মাজাহিবিল আরবাআ -১ম খন্ড, ৩৮০ পাতা; আব্দুল রহমান
আলজাযিরি।
শেষ কথা বলা, এ অঞ্চলে ফিকহে
হানাফী অনুসারে কুরআন -সুন্নাহ উপর আমল করা হয়। তাই শরীয়ত প্রয়োজন ছাড়া বিপরীত ফতোয়া
দিয়ে বিভ্রান্তে ফেলা উচিত নয়। বাহু: আততামহীদ
২৪/৩৬৭; আলমাজমূ' ৪/১৬৯; ফাতহুল বারী ২/২২৬; কিতাবুল উম্মাহ ১/২০০; আলমুহীতুল বুরহানি ২/১৯৬; যাখীরা ২/২৪২; আলমুনতাকা, ইবনে মিডিয়ামিয়া ১/৬৩২; তাসহুল ২/৪৯৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩/৫২৪
1.
و
الله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদান , মুফতি মুহাম্মাদ আবদুল রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪৯৯:
আসসালামু আলাইকুম।
মহিলাদের মুখমন্ডল আবৃত করা ফরজ কিনা এ বিষয়ে ওলামাদের
এখতেলাফ এবং দলিলসমূহ জানতে চাচ্ছি। ইমাম ইবনে তাইমিয়ার এ ক্ষেতে অভিমত কি?
তারিখ:
১৬/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মদ জিয়াউল হক
নোয়াখালী থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
আলহামদুলিল্লাহ ইতোমধ্যে
আলবুরহানে জিজ্ঞাসা -২২৩ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। লিংকটি পুনরায়
শেয়ার করা হলো:
এই মাসয়ালাটির সমাধান দেখতে এখানে ভিজিট করুন
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/07/blog-post_7.html
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৫০০:
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ।মুহতারামের
নিকট আমার জানার বিষয় হলো,আমরা জানি, মসজিদের কাতার ডানদিকে লম্বা হবে এবং মুসল্লি বেশি
থাকবে।কিন্তু যদি মসজিদের বামদিকের কাতার লম্বা হয় এবং মুসল্লি বেশি থাকে তাহলে কাতার এবং নামাজের মাসয়ালা সেক্ষেত্রে কি হবে। কুরআন
সুন্নাহের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।(উল্লেখ্য মসজিদের কাতার বামদিকে স্হায়ীভাবে
বড় করা হয়েছে।) জাজাকাল্লাহ খাইরান।
তারিখ:
১৬/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আশরাফুল ইসলাম, কাপ্তাই,
পার্বত্য
জেলা রাঙ্গামাটি।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, মসজিদের কাতার ডান দিকে বেশি লম্বা এবং মুসল্লি বেশি থাকতে
হবে, এই ধারণা গলত,
সঠিক
নয়।
বরং ইমাম কাতারের মাঝে থাকবে। দুই পাশে মুসল্লি সমান থাকবে।
এটাই কাতারের বিধান। দলিল:
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَوَسَّطُوا
الْإِمَامَ وَسُدُّوا الْخَلَلَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ইমামকে মধ্যখানে রাখো, কাতারের
মাঝে খালি স্থান বন্ধ করে দিও। তাখরিজ: আবু দাউদ -৬৮১
এই হাদিসের আলোকে ফুকাহায়ে কেরামগণ বলেন, কাতারের যেকোনো পাশে বেশি থাকা মাকরুহ। তাই আপনার বর্ণিত ছুরুতে বাম দিকে বেশি
থাকায় নামাজ মাকরুহ হচ্ছে।
দ্বিতীয় কথা হলো,জামাতে দাঁড়ানোর নিয়ম ফিকহি হানাফির মতে,
১. মুক্তাদি যদি একজন হয়, তবে
সে মুক্তাদি ইমামের একটু পিছনে ডান পাশে দাঁড়াবে। দলিল:
ثُمَّ جِئْتُ حَتَّى قُمْتُ عَنْ يَسَارِ رَسُولِ اللهِ
صلي الله عليه وسلم فَأَخَذَ بِيَدِي فَأَدَارَنِي حَتَّى أَقَامَنِي عَنْ
يَمِينِهِ فَجَاءَ ابْنُ صَخْرٍ حَتَّى قَامَ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَنَا
بِيَدَيْهِ جَمِيعًا حَتَّى أَقَامَنَا خَلْفَهُ قَالَ وَجَعَلَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم يَرْمُقُنِي وَأَنَا لَا أَشْعُرُ ثُمَّ فَطِنْتُ بِهِ فَأَشَارَ
إِلَىَّ أَنْ أَتَّزِرَ بِهَا
জাবের (রাঃ) বলেন,
একদা
মহানবী (ﷺ) মাগরেবের
নামায পড়ার জন্য দাঁড়ালেন। এই সময় আমি এসে তাঁর বাম দিকে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত
ধরে ঘুরিয়ে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন। ইতিমধ্যে জাব্বার বিন সাখার (রাঃ) এলেন।
তিনি তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি আমাদের উভয়ের হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে তাঁর
পশ্চাতে দাঁড় করিয়ে দিলেন। তাখরিজ: মুসলিম-৩০১০; আবূ
দাঊদ-৬৩৪; মিশকাত- ১১০৭
২. দুইজন মুসল্লি হলে ইমামের ইমাম বরাবর একজন এবং ডানে
একজন।
৩. তিনজন হলে ইমাম বরাবর একজন আর ডান পাশে একজন এবং বাম
পাশে একজন।
৪. এর পর নতুন মুসল্লি আসলে, প্রথমে
ডানে তার পর বামে এভাবে কাতার পূর্ণ করবে। দলিল:
لِيَلِني مِنْكُمْ أُولُوا الأحْلاَمِ وَالنُّهَى،
ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ». رواه مسلم
রাসূল (ﷺ)
বলেন, আর তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত ও বুদ্ধিমান, তারাই
যেন আমার নিকটে (প্রথম কাতারে আমার পেছনে) থাকে। অতঃপর যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাদের
নিকটবর্তী তারা। অতঃপর তাদের যারা নিকটবর্তী তারা। তাখরিজ: মুসলিম-৪৩২
নোট: এ হাদিসের আলোকে ফুকাহায়ে আহনাফ বলেন, ইমামের
কাছে হলো তার বরাবর, তারপর কাছে হলো ডানে, তার
পর কাছে হলো বামে। তারপর কাছে হলো ডানে তার পর কাছে হলো বামে। এভাবে প্রথম কাতার
পূর্ণ করবে দ্বিতীয় কাতারও তাই ইমাম বরাবর থেকে কাতার শুরু হবে।
তৃতীয় কথা হলো,
ইমামের
ডান পাশে সওয়াব বেশি এবং প্রথম কাতারে সওয়াব বেশি। তবে এর অর্থ এই নয় যে, ইমামের
ডান পাশে বেশি মুসল্লি দাঁড়াবে, বাম পাশে কম দাঁড়াবে। বরং
ইমামে দুই পাশে সমান সমান দাঁড়াবে। তবে দুই পাশে সমান থাকলে ডান পাশে দাঁড়াবে।
আর একজন হলে ইমামের ডানে দাঁড়াবে। দলিল:
আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস
রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-
بِتُّ عِنْدَ خَالَتِي، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ ، فَقُمْتُ أُصَلِّي مَعَهُ ،
فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ ، فَأَخَذَ بِرَأْسِي فَأَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ.৫৪
অর্থ- একদা আমি আমার খালার (উম্মুল মু’মিনীন মাইমূনাহ f
এর)
নিকট রাত্রি যাপন করি। রাছূলুল্লাহ 1
উঠে
রাতের সালাত পড়তে লাগলেন, আমিও উঠে গেলাম তাঁর সাথে নামায পড়তে এবং গিয়ে
তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথায় ধরে (আমাকে তাঁর পিছন দিকে ঘুরিয়ে) ডান
পাশে এনে দাঁড় করালেন। তাখরিজ: বুখারি -৬৯৮
শেষ কথা হলো,
বাম
পাশে মুসল্লি বেশি থাকায় জামাত মাকরুহ এর সাথে আদায় হচ্ছে।
এখন বাঁচার উপায় হলো,
যদি
মেহরাব নতুন করে করার সুযোগ না থাকে,
তাহলে
ইমাম মসজিদের প্রথম কাতারে ঠিক মাঝখানে দাঁড়াবে, আর
মুসল্লিরা দ্বিতীয় কাতার থেকে কাতার বন্দী হবে।
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৫০১:
আসসালামু আলাইকুম।
আজান বিষয়ে জানতে চাওয়া।
আজান দেওয়ার সময়ে কানে আংগুল দেওয়া কতটুকুন
জরুরী ,কানে আংগুল দেওয়া কি,এটা সুন্নাহ কিনা,না দিলে কি অসুবিধা ,,জানতে চাই।
তারিখ:
২০/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুস সালাম সাভার, ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
وقال النووي رحمه الله : " السنة أن يجعل أصبعيه
في صماخي أذنيه ، وهذا متفق عليه ، ونقله المحاملي في المجموع عن عامة أهل العلم .
আল্লামা নববি রহ. বলেন,
তার
জন্য সুন্নাত হল তার কানের গোশতে তার দুটি আঙ্গুল রাখা, এবং
এটি একমত, এবং তিনি এটা নকল করেছেন আল-মাহামালি হতে তার
মাজমু কিতাবে, সাধারণত আহলে ইলেমদের নিকট এটি সুন্নাহ। সূত্র:
শরহ আল-মুহাদ্দাব (3/113)
দলিল:
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ، عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِي
جُحَيْفَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ رَأَيْتُ بِلاَلاً يُؤَذِّنُ وَيَدُورُ
وَيُتْبِعُ فَاهُ هَا هُنَا وَهَا هُنَا وَإِصْبَعَاهُ فِي أُذُنَيْهِ وَرَسُولُ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي قُبَّةٍ لَهُ حَمْرَاءَ أُرَاهُ قَالَ مِنْ أَدَمٍ
فَخَرَجَ بِلاَلٌ بَيْنَ يَدَيْهِ بِالْعَنَزَةِ فَرَكَزَهَا بِالْبَطْحَاءِ
فَصَلَّى إِلَيْهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْهِ
الْكَلْبُ وَالْحِمَارُ وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى
بَرِيقِ سَاقَيْهِ . قَالَ سُفْيَانُ نُرَاهُ حِبَرَةً . قَالَ أَبُو عِيسَى
حَدِيثُ أَبِي جُحَيْفَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَعَلَيْهِ الْعَمَلُ عِنْدَ
أَهْلِ الْعِلْمِ يَسْتَحِبُّونَ أَنْ يُدْخِلَ الْمُؤَذِّنُ إِصْبَعَيْهِ فِي
أُذُنَيْهِ فِي الأَذَانِ . وَقَالَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ وَفِي الإِقَامَةِ
أَيْضًا يُدْخِلُ إِصْبَعَيْهِ فِي أُذُنَيْهِ . وَهُوَ قَوْلُ الأَوْزَاعِيِّ .
وَأَبُو جُحَيْفَةَ اسْمُهُ وَهْبُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ السُّوَائِيُّ .
আযানের সময়ে কানে আঙ্গুল প্রবেশ করান।
অর্থ: মাহমূদ ইবনে গায়লান (রাহঃ) .... আবু জুহায়ফা (রাযিঃ)
থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন আমি বিলাল (রাযিঃ) কে দেখেছি তিনি
আযান দিচ্ছিলেন এবং (হায়্যা আলা বলার সময়) ঘুরছিলেন আর তিনি এদিকে এবং ওদিকে তাঁর
মুখ ফিরাচ্ছিলেন। তাঁর দুই আঙ্গুল ছিল তাঁর কানে। তাখরিজ: জামে' তিরমিযী, হাদীস
নং ১৯৭ (আন্তর্জাতিক নং ১৯৭)
নোট:
ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেনঃ আবু জুহায়ফা
রাদিয়াল্লাহু আনহ বর্ণিত হাদিসটি হাসান ও সহীহ। আলিমগণ এই হাদিস অনুসারে আমল গ্রহণ
করেছেন। তাঁরা বলেন আযানের সময় মুআয্যিন কর্তৃক স্বীয় কর্ণদ্বয়ে আঙ্গুল প্রবেশ
করার মুস্তাহাব। কোন কোন আলিম বলেন ইকামত দেওয়ার সময়ও কানে আঙ্গুল প্রবেশ করাতে
হবে। এ হল ইমাম আওযাঈ (রাহঃ) এর অভিমত। আবু জুহায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নাম
ওয়াহাব ইবনে আবদিল্লাহ আস সুওয়াঈ।
হাদীসের ব্যখ্যা:
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ এবং حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ বলার সময় যথাক্রমে মুখ ডান এবং বামে ঘুরানো সুন্নাত। আর এটাই
হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৩৮৭)
এ হাদীস থেকে এটিও প্রমাণিত হয় যে, আযানের
সময় কানে আঙ্গুল দেয়া সুন্নাত। আর এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৩৮৮)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সারকথা হলো,
আজানের
সময় কানে আঙ্গুল রাখা সুন্নাত বলতে সুন্নাতে জায়েদা বা মুস্তাহাব, জরুরি
নয়। তাই কেউ তরক বা ছেড়ে দিলে গুনাহগার হবে না।
তবে এ সময় কানে আঙ্গুল
দেওয়া হিকমাহ রয়েছে। যেমন, আজানের ধ্বনি মুয়াজ্জিনের, কানের
পর্দার, মস্তিষ্কের ক্ষতি করবে,
আমাদের শ্রবণযন্ত্রের
স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা ১-৭৫ ডেসিবল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। উক্ত মাত্রার উপরের শব্দ
মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণ
ক্ষমতায় ঊর্ধ্বে সৃষ্ট যে কোনো শব্দ যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটায় তাই
হলো শব্দ দূষণ।
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৫০২:
আসসালামু আলাইকুম।
"
হালাল
রুজি উপার্জন ফরজ ইবাদতের পরে একটি ফরজ"
এটা কি হাদীস?
হাদীস হলে কোন কিতাবের,?
তারিখ:
২২/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ফরিদপুর থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
হ্যাঁ, এটি হাদিস। নিম্নে তা
তাখরিজসহ উল্লেখ করা হলো।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ
فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ অন্যান্য ফরয কাজ আদায়ের সাথে হালাল রুযী-রোজগারের
ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরয। তাখরিজ: বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান-৮৩৬৭
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৫০৩:
আসসালামু আলাইকুম আমার প্রশ্ন আল্লাহর ঘর
মসজিদে ফ্লোরে যে টাইলস লাগানো আছে নামাজের সময় হুকুম কিংবা সেজদা নিজের চেহারা
দেখা যায় এই ক্ষেত্রে আমাদের নামাজ হবে কিনা বিষয়টা কুরআন হাদিসের আলোকে জানাবেন
প্লিজ আসসালামুয়ালাইকুম।
তারিখ:
২২/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনাব মশিউর রহমান , যশোর থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,নামাজির
একাগ্রতা নষ্ট হয় এমন জিনিস মসজিদের দেওয়ালে বা ফ্লোরে লাগানো উচিত নয়। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا ابْنُ السَّرْحِ، وَسَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ،
وَمُسَدَّدٌ، قَالُوا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ مَنْصُورٍ الْحَجَبِيِّ،
حَدَّثَنِي خَالِي، عَنْ أُمِّي، صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ قَالَتْ سَمِعْتُ
الأَسْلَمِيَّةَ، تَقُولُ قُلْتُ لِعُثْمَانَ مَا قَالَ لَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم حِينَ دَعَاكَ قَالَ " إِنِّي نَسِيتُ أَنْ آمُرَكَ أَنْ
تُخَمِّرَ الْقَرْنَيْنِ فَإِنَّهُ لَيْسَ يَنْبَغِي أَنْ يَكُونَ فِي الْبَيْتِ
شَىْءٌ يَشْغَلُ الْمُصَلِّيَ " . قَالَ ابْنُ السَّرْحِ خَالِي مُسَافِعُ
بْنُ شَيْبَةَ .
ইবনে আল সারহ্ ..... মানসূর
আল হাজারী (রাহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমার
মামা আমার মাতা (সাফিয়া) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি
আসলামিয়্যাকে এরূপ বলতে শুনেছি যে,
আমি
একদা উসমানকে জিজ্ঞাসা করি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তোমাকে কী বলেন, যখন তিনি তোমাকে আহবান করেন।
জবাবে তিনি (উসমান) বলেন, আমি আপনাকে এতদসম্পর্কে অবহিত করতে ভুলে যাই যে, আপনি
(দুম্বার) ঐ শিং দুটি ঢেকে রাখুন (যা ফিদয়া স্বরূপ ছিল ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) এর
জন্য)। কেননা, বায়তুল্লাহর মধ্যে এমন কিছু থাকা উচিত নয়, যা
মুসল্লীকে তার নামায হতে অন্যমনস্ক করে। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস
নং ২০২৬ (আন্তর্জাতিক নং ২০৩০)
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا أَبُو مَعْمَرٍ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ
عَمْرٍو، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ
بْنُ صُهَيْبٍ، عَنْ أَنَسٍ، كَانَ قِرَامٌ لِعَائِشَةَ سَتَرَتْ بِهِ جَانِبَ
بَيْتِهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " أَمِيطِي عَنَّا
قِرَامَكِ هَذَا، فَإِنَّهُ لاَ تَزَالُ
আবু মা’মার ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাহঃ) .... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আয়েশা (রাযিঃ)-এর কাছে একটা বিচিত্র রঙের পাতলা
পর্দার একটা কাপড় ছিল। তিনি তা ঘরের একদিকে পর্দা হিসাবে ব্যবহার করছিলেন। নবী (ﷺ) বললেনঃ আমার সম্মুখ থেকে এই পর্দা সরিয়ে
নাও। কারণ নামায আদায় করার সময় এর ছবিগুলো আমার সামনে ভেসে ওঠে।
তাখরিজ: সহীহ বুখারী,
হাদীস
নং ৩৬৭ (আন্তর্জাতিক নং ৩৭৪)
উপরোক্ত হাদিসদ্বয় দ্বারা বুঝা নামাজীর
অন্যমনস্ক করে এমন জিনিস রাখা বাঞ্ছনীয় নয়।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে
আল্লাহর ঘর মসজিদে ফ্লোরে
যে টাইলস লাগানো আছে সেজদা নিজের চেহারা দেখা যায় এই ক্ষেত্রে আপনাদের নামাজ
আদায় হবে (নামাজের মধ্যে অন্য দিকে খেয়াল করার কারণে নামাজ হালকা হয়ে যাবে, সওয়াব কম পাবে)। তাই মসজিদ নির্মাণের সময় এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত।
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৫০৪:
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
সম্মানিত মুফতি সাহেব। আমরা জানি প্রিয়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম শুনলে প্রথমবার দরুদ পাঠ করা
ওয়াজিব। তাহলে আজান - ইকামতে
"আশহাদু
আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ" সময় দরুদ পাঠ করা কি ওয়াজিব? দলিল ভিত্তিক সমাধান দিলে উপকৃত হতাম। জাযাকাল্লাহু খয়রান।
তারিখ: ২৩/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাইফুল ইসলাম, ভোলা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
আপনি ঠিকই বলেছেন যে আমাদের প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর শুনলে প্রথমবার দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব।
কিন্তু আজান ও ইকামতে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ
সময় দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব নয়।
এটা হাদিস, সাহাবি, তাবেয়িদের
আমল দ্বারা প্রমাণিত নয় এবং ফুকাহায়ে উম্মতের সিদ্ধান্ত
নয়। দলিল:
হাদিস নং-০১
باب مَا يَقُولُ إِذَا سَمِعَ الْمُؤَذِّنَ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ
الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ
اللَّيْثِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله
عليه وسلم قَالَ " إِذَا سَمِعْتُمُ النِّدَاءَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ
الْمُؤَذِّنُ " .
আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসলামা
.... আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্
(ﷺ) বলেছেনঃ যখন তোমরা আযান শুনবে তখন
মুআযযিনের উচ্চারিত শব্দের অনুরূপ উচ্চারণ করবে।
সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস
নং ৫২২ (আন্তর্জাতিক নং ৫২২), মুআযযিনের আযানের জবাবে যা
বলতে হয় অধ্যায়
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
شرح ألفاظ الأحاديث:
"
إِذَا سَمِعْتُمُ النِّدَاءَ
": أي صوت المؤذن بالأذان.
"
فَقُولُوا مِثْلَ مَا
يَقُولُ": الفاء تدل على التعقيب فتكون لمتابعة عقب كل كلمة، " مِثْلَ
مَا يَقُولُ " أي مثل كل جملة يتلفظ بها المؤذن من أذكار الأذان، والمراد
المشابهة بالألفاظ لا في النغمة ورفع الصوت، ويستثنى من ألفاظ الأذان الحيعلتين
فإن المتابع يقول " لا حول ولا قوة إلا بالله " كما في حديث عمر بن
الخطاب صلى الله عليه وسلم
হাদীসের শব্দ বিশ্লেষণঃ
"যখন তোমরা আযান শুনতে পাবে
" ঃ অর্থাৎ মুয়াযযিনের মুখ নিসৃত আযানের ধ্বনি যখন তোমরা শুনতে পাবে।
"তিনি যেভাবে বলছেন, তোমরাও
তার অনুরূপ বলবে"/ তাঁর বাক্যানুরূপ তোমরাও সেভাবে উচ্চারণ করবে।ঃ
বাক্যস্থ ''ফা" অব্যয়টি কোন যুগপৎ
ঘটনার পরম্পরতা নির্দেশ করে। যার অর্থ হলো,
মুয়াযযিন
সাহেব আযানের একটি বাক্য শেষ করা মাত্রই তাঁর অনুকরণে হুবহু সেই বাক্যটি উচ্চারণ
করতে হবে। তবে এখানে উদ্দেশ্য হলো,
মুয়াজ্জিন
সাহেবের মুখ নিসৃত আযানের বাক্যমালার অনুসরণ করা। তার অনুকরণে সুর- ধ্বনি- তাল- লয়
ইত্যাদির অনুসরণ নয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে আযানের শব্দ চয়নিকা হতে "হাইয়া
আলাস সালাহ " ও "হাইয়্যা আলাল ফালাহ" বলার সময় তার অনুকরণে
বাক্যদ্বয় বলা যাবেনা। বরং বলতে হবে,
"লা
হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহ"। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) কর্তৃক
বর্ণিত হাদীস একথারই নির্দেশ করে। সূত্র: শারহুল হাদিস, ইজা
সামিতুমুন নিদা-১/২০১৮; শায়েখ আবদুল্লাহ ইবনে হামুদ আল-ফারিহ
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ الْمُرَادِيُّ،
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، عَنْ حَيْوَةَ، وَسَعِيدِ بْنِ أَبِي
أَيُّوبَ، وَغَيْرِهِمَا، عَنْ كَعْبِ بْنِ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ
بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّهُ سَمِعَ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ
فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى
عَلَىَّ صَلاَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللَّهَ لِيَ
الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِي إِلاَّ لِعَبْدٍ
مِنْ عِبَادِ اللَّهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِيَ
الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ " .
মুহাম্মাদ ইবনে সালামা আল
মুরাদী (রাহঃ) ... আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
রাসুল কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মু’আযযীনকে
আযান দিতে শুনবে, তখন সে যা বলে তাই বলবে। তারপর আমার ওপর দুরূদ
পাঠ করবে। কারণ যে আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ
তার বিনিময়ে তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করেন। পরে আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলার
দুআ করবে। ওসীলা হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান, যা
আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কোন এক বান্দাকে দেয়া হবে। আমি আশা করি যে,
আমিই
হব সেই বান্দা। যে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে,
তার
জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ৭৩৫ (আন্তর্জাতিক নং ৩৮৪)
হাদীসের ব্যখ্যা:
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুআজ্জিন
আযানের মধ্যে যে সকল শব্দ বলে থাকে আযানের জবাবেও সে সকল শব্দ বলে জবাব দেয়া
সুন্নাত। অবশ্য মুসলিম শরীফের ৭৩৬ নং হাদীসে বর্ণিত আছে যে, হযরত
উমার রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, মুআজ্জিন যখন حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ এবং حَىَّ عَلى الْفَلَاحِ বলেছেন তার
জবাবে তিনি لَا حَوْلَ
وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِالله বলেছেন। সুতরাং এ হাদীসে বর্ণিত শব্দ দ্বারাও আযানের জবাব দেয়া
যেতে পারে। আবার পূর্ববর্ণিত হাদীস এবং ঐ অর্থে বর্ণিত আবু দাউদ: ৫২৪ নং হাদীস
অনুযায়ী حَيَّ عَلَى
الصَّلَاةِ
এবং حَىَّ عَلى الْفَلَاحِ এর জবাবে উক্ত
শব্দ দুটিও ব্যবহার করা যেতে পারে। মুসতাদরাকে হাকেম-২০০৪, আদ-দুআ
লিততবারানী-৪৫৮ এবং ইবনুছ্ছুন্নী সংকলিত আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলা কিতাবের-৯৮ নং
হাদীসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে, মুআজ্জিন حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ এবং حَىَّ عَلى الْفَلَاحِ বললে তার জবাবে
তোমরা حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ এবং حَىَّ عَلى الْفَلَاحِ বলবে। এসকল হাদীস
থেকে যে দুই প্রকার জবাব প্রমাণিত হয় হানাফী মাযহাবেও সে আমল গ্রহণ করা হয়েছে।
(শামী: ১/৩৯৭)
এ হাদীসের আলোকে আরো বলা যেতে পারে যে, মুআজ্জিন
যখন الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنَ
النَّوْمِ
বলবে তখন শ্রোতারাও অনুরূপ বলবে। অবশ্য বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম এ ক্ষেত্রে ভিন্ন জবাবের
কথাও বলেছেন। ইমাম নববী রহ. বলেন قَالَ سَامِعُهُ صَدَقْتَ وَبَرَرْتَ অর্থাৎ
মুআজ্জিন যখন خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ الصَّلَاةُ বলবে তখন শ্রোতা صَدَقْتَ وَبَرَرْتَ বলবে। (আল্
মিনহাজ-৪/৮৮, দারম্ন এহইয়াইত তুরাস, বৈরম্নত
থেকে প্রকাশিত) خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ الصَّلَاةُ এর জবাবে صَدَقْتَ وَبَرَرْتَ বলাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/৩৯৭)
হাদিস নং -০৩
حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، أَخْبَرَنَا
أَبُو جَعْفَرٍ، مُحَمَّدُ بْنُ جَهْضَمٍ الثَّقَفِيُّ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ
بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ عُمَارَةَ بْنِ غَزِيَّةَ، عَنْ خُبَيْبِ بْنِ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ بْنِ إِسَافٍ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ
الْخَطَّابِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ اللَّهُ
أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ . فَقَالَ أَحَدُكُمُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ
أَكْبَرُ . ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ . قَالَ أَشْهَدُ
أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ
اللَّهِ . قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ . ثُمَّ قَالَ حَىَّ
عَلَى الصَّلاَةِ . قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ . ثُمَّ
قَالَ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ . قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ
. ثُمَّ قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ . قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ
اللَّهُ أَكْبَرُ . ثُمَّ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ . قَالَ لاَ إِلَهَ
إِلاَّ اللَّهُ . مِنْ قَلْبِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ " .
অর্থ: ইসহাক ইবনে মানসূর (রাহঃ)
... উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে,
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, মু’আযযিন যখন اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ বলে তখন
তোমাদের কেউ যদি اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ বলে। তারপর মু-আযযিন যখন أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ
اللَّهُ
বলে, তখন সেও أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলে। অতঃপর মু’আযযিন যখন أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলে, তখন
সেওأَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ
اللَّهُ
বলে। পরে মু’আযযিন যখন حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ বলে, তখন
সে لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ
بِاللَّهِ
বলে। এরপর মু’আযযিন যখন اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ বলে, তখন
সেও اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ
أَكْبَرُ
বলল। তারপর মু’আযযিন যখন لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলে,
তখন
সেও لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলল-এসবই যদি
সে বিশুদ্ধ অন্তরে বলে থাকে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
সহীহ মুসলিম,
হাদীস
নং ৭৩৬ (আন্তর্জাতিক নং ৩৮৪)
হাদিস/আসার নং-০৪
عَنْ عِيسَى بْنِ طَلْحَةَ، قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى
مُعَاوِيَةَ فَنَادَى الْمُنَادِي، فَقَالَ: اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ.
فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: ” اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ. قَالَ: أَشْهَدُ أَنْ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ. قَالَ: وَأَنَا أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا
اللَّهُ. قَالَ: أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ. قَالَ: وَأَنَا
أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ” قَالَ يَحْيَى: وَأَخْبَرَنِي بَعْضُ
أَصْحَابِنَا أَنَّهُ لَمَّا قَالَ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، قَالَ: لَا حَوْلَ
وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ، ثُمَّ قَالَ مُعَاوِيَةُ: هكذا سَمِعْتُ
نَبِيَّكُمْ يَقُولُ
ঈসা বিন তালহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
আমি মুয়াবিয়া রাঃ এর দরবারে হাজির হলাম। তখন মুয়াজ্জিন আজান দিচ্ছিল। মুয়াজ্জিন
বলছিল “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু
আকবার”। তখন মুয়াবিয়া রাঃ বলেন,
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু
আকবার”। মুয়াজ্জিন বলল,
“আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। তখন মুয়াবিয়া রাঃ বললেন,
আশহাদু
আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। মুয়াজ্জিন বলল,
আশহাদু
আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ। মুয়াবিয়া রাঃ বললেন, আশহাদু
আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ।
ইয়াহইয়া বলেন,
আমাকে
কতিপয় সাহাবাগণ জানিয়েছেন যে,মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা আলাস
সালাহ বলেন, তখন তিনি বলতেন লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা
ইল্লাবিল্লাহ”। তারপর মুয়াবিয়া রাঃ বলেন, এভাবে
আমি তোমাদের নবীকে (আজানের জবাবে) বলতে শুনেছি। [সুনানে দারেমী, হাদীস
নং-১২৩৮, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস
নং-৪১৪, আলমু’জামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস
নং-৭৩৭, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস
নং-১৯২৮]
সারকথা হলো, আজান ও ইকামতে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ সময়
দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব/সুন্নাহ নয়।
মুয়াজ্জিন যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার
রাসূলুল্লাহ বলবে শ্রোতাগণও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলবে। এ সাথে
অন্য কিছু যোগ করা ওলামায়ে দ্বীন বিদআত বলেছেন।
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৫০৫:
মুহতারাম, আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ , মসজিদে জামায়াতে ইমামের সামনের এবং পার্শ্ববর্তী
বাসাসমুহ/আবাসন থেকে মহিলারা ইকতেদা করতে পারেন কিনা ইহার দালিলীক সমাধান কি, একান্ত প্রয়োজন,
কিংবা
মসজিদের পাশের ঘর থেকে কেউ ইকতেদা করেছেন এমন কোনো বর্ণনা আছে কি, কোন ভাই জানালে কৃতজ্ঞ হবো
তারিখ: ২৪/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা জয়নাল আবেদীন, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
আপনার প্রশ্ন অনুসারে সহজে
বোঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। ইমামের সামনে দাঁড়ালে নামাজ সহিহ
হবে কি?
উত্তর: ক। এ বিষয়ে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ.
কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
فأجاب
"
أما صلاة
المأموم قدَّام الإمام : ففيها ثلاثة أقوال للعلماء :
أحدها : أنها تصح مطلقا , وإن قيل : إنها تكره , وهذا
القول هو المشهور من مذهب مالك , والقول القديم للشافعي .
والثاني : أنها لا تصح مطلقا , كمذهب أبي حنيفة ,
والشافعي , وأحمد في المشهور من مذهبهما .
والثالث : أنها تصح مع العذر دون غيره ، مثل ما إذا
كان زحمة فلم يمكنه أن يصلي الجمعة أو الجنازة إلا قدام الإمام , فتكون صلاته قدام
الإمام خيراً له من تركه للصلاة .
الفتاوى الكبرى " ( 2 / 331 – 333 ) .
অর্থাৎ ইমামের সামনে জামাতের নামাযের
ব্যাপারে আলেমদের তিনটি বক্তব্য রয়েছে:
তাদের মধ্যে একটি হল এটি একেবারে বৈধ, এমনকি যদি বলা হয় যে এটি মাকরুহ। এটি মালিক মাযহাবের
সুপরিচিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং আল-শাফি’র পুরানো উক্তি।
দ্বিতীয়টি: এটি মোটেও বৈধ নয়, যেমনটি আবু হানিফা, আল-শাফিঈ এবং আহমদ তাদের মাযহাবের সুপরিচিত দৃষ্টিভঙ্গিতে
বলেছেন।
এবং তৃতীয়টি: এটি একটি ওজর সহ বৈধ এবং অন্য
কেউ নয়, যেমন যদি সেখানে ভিড় থাকে
এবং সে শুধুমাত্র জুমার নামায বা ইমামের সামনে জানাজা পড়তে পারে, তাই ইমামের সামনে না সামনে নামায পড়া তার জন্য উত্তম হবে।
সূত্র: ফাতাওয়াল কাবির-২/৩৩১-৩৩৩
প্রশ্ন: খ। তিন ইমামের দলিল কি?
উত্তর: খ। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফিয়ি এবং আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এর মতে ইমামের সামনে
দাঁড়ানো জায়েজ নেই। তাদের দলিল নিম্নরূপ:
হাদিস নং-০১
ثُمَّ جِئْتُ حَتَّى قُمْتُ عَنْ يَسَارِ رَسُولِ
اللهِ صلي الله عليه وسلم فَأَخَذَ بِيَدِي فَأَدَارَنِي حَتَّى أَقَامَنِي عَنْ
يَمِينِهِ فَجَاءَ ابْنُ صَخْرٍ حَتَّى قَامَ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَنَا
بِيَدَيْهِ جَمِيعًا حَتَّى أَقَامَنَا خَلْفَهُ قَالَ وَجَعَلَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم يَرْمُقُنِي وَأَنَا لَا أَشْعُرُ ثُمَّ فَطِنْتُ بِهِ فَأَشَارَ
إِلَىَّ أَنْ أَتَّزِرَ بِهَا
জাবের (রাঃ) বলেন, একদা মহানবী (ﷺ) মাগরেবের নামায পড়ার জন্য দাঁড়ালেন। এই সময় আমি এসে তাঁর বাম
দিকে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন। ইতিমধ্যে
জাব্বার বিন সাখার (রাঃ) এলেন। তিনি তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি আমাদের
উভয়ের হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে তাঁর পশ্চাতে দাঁড় করিয়ে দিলেন। তাখরিজ: মুসলিম-৩০১০; আবূ দাঊদ-৬৩৪;
মিশকাত-
১১০৭
নোট: উক্ত হাদিসের আলোকে ফুকাহায়ে আহনাফ
বলেন, ইমাম ব্যতীত দুই অথবা
তিনজন মুসল্লি হলে ইমাম সামনে যাওয়া ওয়াজিব।
হাদিস নং-০২
لِيَلِني مِنْكُمْ أُولُوا الأحْلاَمِ وَالنُّهَى،
ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ». رواه مسلم
রাসূল (ﷺ) বলেন, আর তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত ও বুদ্ধিমান, তারাই যেন আমার নিকটে (প্রথম কাতারে আমার পেছনে) থাকে।
অতঃপর যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাদের নিকটবর্তী তারা। অতঃপর তাদের যারা নিকটবর্তী
তারা। তাখরিজ: মুসলিম-৪৩২
প্রশ্ন: গ। ইমামের সামনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে
চূড়ান্ত/প্রাধান্য মতামত কি?
উত্তর: গ। এ ব্যাপারে শায়েখ উসাইমিন রহ কে
জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি জবাবে বলেন,
وسئل الشيخ ابن عثيمين رحمه الله : هل يجوز تقدم
المأموم على الإمام ؟
فأجاب :
"
الصحيح أن
تقدم الإمام واجب ، وأنه لا يجوز أن يتقدم المأموم على إمامه ، لأن معنى كلمة
" إمام " أن يكون إماماً ، يعني يكون قدوة ، ويكون مكانه قدام المأمومين
، فلا يجوز أن يصلي المأموم قدام إمامه ، وقد كان النبي صلى الله عليه وسلم يصلي
قدام الصحابة رضي الله عنهم ، وعلى هذا فالذين يصلون قدام الإمام ليس لهم صلاة ،
ويجب عليهم أن يعيدوا صلاتهم إلا أن بعض أهل العلم استثنى من ذلك ما دعت الضرورة
إليه مثل أن يكون المسجد ضيقاً ، وما حواليه لا يسع الناس فيصلي الناس عن اليمين
واليسار والأمام والخلف لأجل الضرورة " انتهى .
"مجموع فتاوى ابن عثيمين"
(13/44) .
অর্থাৎ
শাইখ ইবনে উসাইমীন, আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: অনুসারীর জন্য ইমামের পূর্বে
যাওয়া কি জায়েজ?
তিনি জবাব দিলেন:
সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হল ইমামের আগে হওয়া
ওয়াজিব, এবং ইমামের পিছনে নামায
পড়া ব্যক্তির জন্য তার ইমামের আগে হওয়া জায়েয নয়, কারণ "ইমাম" শব্দের অর্থ হল ইমাম হওয়া, অর্থাৎ ইমাম হওয়া। একজন আদর্শ, এবং তার স্থান জামাতের সামনে, তাই অনুসারীর জন্য তার ইমামের সামনে নামায পড়া জায়েয নয়, এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যদি তিনি ইমামের সামনে প্রার্থনা করেন। সাহাবায়ে কেরাম, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন।এর উপর ভিত্তি করে যারা
ইমামের সামনে নামায পড়েন তাদের নামায পড়ার অধিকার নেই এবং তাদের অবশ্যই তাদের
নামায পুনরায় পড়তে হবে, তবে কিছু জ্ঞানী ব্যক্তি
যখন প্রয়োজনে আযান দেয় তখন এর ব্যতিক্রম করেছেন। এর জন্য, যেমন মসজিদ সংকীর্ণ হলে, এবং এর চারপাশে যা আছে তা লোকেদের বসাতে পারে না, তাই লোকেরা ডান এবং বামে নামাজ পড়ে এবং প্রয়োজনের কারণে
সামনে এবং পিছনে। সূত্র: মাজমুউল ফাতাওয়া ইবনে উসাইমিন -১৩/৪৪
প্রশ্ন: ঘ। দুই কাতারের মাঝখানে কতটুকু
দূরত্ব বজায় রাখলে নামাজ সহিহ হবে?
উত্তর: ঘ। দুই কাতারের মাঝখানে কতটুকু দূরত্ব
হলে নামাজ হবে বা হবে না এই বিষয়ে সরাসরি কোন নস নেই। তবে হাদিসে কাছাকাছি কাতার
বন্দী হতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলিল:
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رُصُّوا صُفُوفَكُمْ وَقَارِبُوا بَيْنَهَا
وَحَاذُوا بِالْأَعْنَاقِ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لَأَرَى
الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ» . رَوَاهُ
أَبُو دَاوُد
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
(সালাতে) তোমাদের কাতারগুলো মিলেমিশে দাঁড়াবে এবং কাতারগুলোও কাছাকাছি দাঁড়াবে ।
সহীহ : আবূ দাঊদ ৬৬৭, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৫৪৫, ইবনু হিব্বান ৬৩৩৯, সহীহ আত্ তারগীব ৪৯৪, সহীহ আল জামি‘ ৩৫০৫
ব্যাখ্যা: এ হাদিস থেকেফুকাহায়ে উম্মত দলিল
দলিল গ্রহণ করেছেন, দুই কাতারের মাঝখানে
কতটুকু দূরত্ব বজায় রাখা জায়েয ।
উপরোক্ত হাদিসে কাতার গুলো
কাছাকাছি দাঁড়ানোর ব্যাখ্যা সম্পর্কে শায়েখ ইবনে তায়মিয়া রহ.
ابن تميم، وقال في التلخيص والبلغة: اتصال الصفوف أن
يكون بينهما ثلاثة أذرع
অর্থাৎ তিনি আল-তালখীস এবং আল-বুলগাহ-এ
বলেছেন: সারিগুলির সংযোগ হল যে তাদের মধ্যে তিনটি হাত/গজ (ছয় হাত) রয়েছে।
الأولى : إن كان بين المقتدي والإمام نهر كبير تجري
فيه السفن ( ولو زورقا عند الحنفية ) لا يصح الاقتداء , وهذا باتفاق المذاهب , وإن
اختلفوا في تحديد النهر الكبير والصغير . فقال الحنفية والحنابلة : النهر الصغير
هو ما لا تجري فيه السفن.
وقال المالكية : هو ما لا يمنع من سماع الإمام , أو
بعض المأمومين , أو رؤية فعل أحدهما .
যদি মুক্তাদী ও ইমামের মধ্যে একটি বড় নদী
থাকে যেখানে জাহাজ প্রবাহিত হয় (হানাফীদের মতে এটি একটি নৌকা হলেও), ইমামের অনুসরণ করা বৈধ নয় এবং এটি মাযহাবের মতে। , এমনকি যদি তারা বড় এবং ছোট নদী সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে
ভিন্ন হয়। অর্থাৎ দুই কাতারের সমান বা ছয় হাত। সূত্র: আলফিকহু আলাল মাজহিবিল
আরবা-০০২
প্রশ্ন: ঙ। মসজিদের পাশে কোন রুমে নামাজ
আদায় করলে সহিহ হবে কি?
উত্তর: ঙ। ফিকহি হানাফির মতে মসজিদের বাইরে ইকতিদা সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল, কাতার মিলিত হতে হবে। কাতারের মাঝে কোনো রাস্তা,
নদী
অথবা খালি ময়দান থাকলে ইকতিদা সহীহ হবে না। দলিল:
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ، قَالَ
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي فُدَيْكٍ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنِ
الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ
رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ لَهُ حَصِيرٌ
يَبْسُطُهُ بِالنَّهَارِ، وَيَحْتَجِرُهُ بِاللَّيْلِ، فَثَابَ إِلَيْهِ نَاسٌ،
فَصَلَّوْا وَرَاءَهُ.
অর্থ: ইবরাহীম ইবনে মুনযির (রাহঃ) ... আয়েশা
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) এর একটি চাটাই ছিল। তিনি তা দিনের বেলায়
বিছিয়ে রাখতেন এবং রাতের বেলায় তা দিয়ে কামরা বানিয়ে নিতেন। সাহাবীগণ তাঁর পেছনে
কাতার বন্দী হয়ে দাঁড়ান এবং পেছনে নামায আদায় করেন।
—সহীহ বুখারী,
হাদীস
নং ৬৯৪ (আন্তর্জাতিক নং ৭৩০)
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের হুজরায়/কামরায় ইমামতি করতেন আর সাহাবীরা মসজিদে থেকে
এক্তেদা করতেন।
কাতার থেকে যদি ছয় বা তার বেশি হাত দূরে কোন
ব্যক্তি দাঁড়ায় তাহলে তার নামাজ হবে না।
সারকথা হলো,
وَلَوْ تَقَدَّمَ عَلَى الْإِمَامِ مِنْ غَيْرِ
عُذْرٍ فَسَدَتْ صَلَاتُهُ. كَذَا فِي فَتَاوَى قَاضِي خَانْ.
যদি মুক্তাদী উজর ছাড়াই ইমামের আগে চলে যায়, তাহলে তার নামায ভেঙ্গে যাবে। [ফাতাওয়া আলমগীরী-১/১০৩, মাকতাবায়ে জাকারিয়া দেওবন্দ]
আর আপনার প্রশ্নের বর্ণিত মহিলাদের নামাজ
পড়া জায়গায় যদি মসজিদ সংলগ্ন হয় অর্থাৎ ছয় হাত দূরে না হয় তাহলে নামাজ সহিহ
হবে।
শেষ কথা হলো, মহিলাদের নিজ ঘরে সমস্ত সালাত আদায় করা উত্তম। দলিল:
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: خَيْرُ مَسَاجِدِ النِّسَاءِ قَعْرُ
بُيُوتِهِنَّ.
অর্থ- উম্মু ছালামা রা. হতে বর্ণিত হাদীছে
রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:- মহিলাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম মাছজিদ হলো তাদের
গৃহাভ্যন্তর। ইমাম আহমাদ ৬/২৯৭,
ত্বাবরানী, ইবনে খুযায়মা ও হাকেম ১/২০৯ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) হাকেম
বলেন এর সনদ ছহীহ।
বর্তমান ফিতনার জামানায়
আরও বেশি জরুরি।
মসজিদে নারীর গমন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা-২০৫
শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। সেটা দেখা যেতে পারে।
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৫০৬:
আসসালামু আলাইকুম।
মুহতারাম মুফতি সাহেব!
নিম্নের বিষয়গুলোর সমাধান কুরআন ও হাদীসের
আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
زادك الله علما و بارك فيه وجزاك خيرا في الدارين.
آمين
প্রশ্ন-১ : স্ত্রী যদি স্বামীর পিতা-মাতার
সাথে (পিতার মালিকানাধীন ঘর/ শ্বশুর বাড়িতে) এক ঘরে থাকতে না চায়, পৃথক ঘর দাবী করে, তাহলে স্বামী কি তাকে বাধ্য করতে পারবে? স্ত্রীর এমন দাবি করাতে কি সে গুনাহগার হবে?
তারিখ:
২৫/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সাজ্জাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার
প্রশ্নের বর্ণনা মতে, ঘর দ্বারা যদি একই রুম বা
কক্ষ বোঝায় তাহলে একই কক্ষে সম্মিলিতভাবে বসবাস করা জায়েজ নেই।
এক্ষেত্রে স্ত্রী বাধ্য করা প্রয়োজন নেই বরং স্বামীরই
দায়িত্ব হল পৃথক ঘরের ব্যবস্থা করা।
পরামর্শ: যদি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে একই ঘরে থাকতে হয়, তাহলে
মাঝখানে পর্দা বা হার্ড বোর্ড জাতীয় দিয়ে পৃথক করা যেতে
পারে, যাতে আড়াল হয়।
স্ত্রীর জন্যে পৃথক ঘরের ব্যবস্থা করা। এটা স্ত্রীর অধিকার। এজন্য স্ত্রীর স্বামীকে বাধ্য বা পিড়াপীড়ি করতে পারবেন এবং কোন গুনাহ নেই। দলিল:
أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُم مِّن وُجْدِكُمْ
তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ ঘরে তোমরা বাস কর
তাদেরকেও সেরূপ ঘরে বাস করতে দেবে। (সূরা তালাক ০৬)
প্রশ্ন: ক। স্ত্রীর জন্যে পৃথক ঘর বা বাসস্থান বলতে কি
বুঝায়?
উত্তর: ক। উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ফুকাহায়ে কেরামগণ
লিখেছেন,
فالمسكن الخاص حق للزوجة، وأقل ما يصدق عليه ذلك: حجرة
مستقلة المخرج والمدخل والمرافق، كالمطبخ ومكان قضاء الحاجة
অর্থাৎ ব্যক্তিগত বাসস্থান স্ত্রীর অধিকার, এবং
এটির জন্য সর্বনিম্ন যেটি প্রযোজ্য তা হল: একটি পৃথক রুম, প্রস্থান
এবং প্রবেশের পথ এবং সুযোগ-সুবিধা,
যেমন
রান্নাঘর এবং টয়লেট বা বাথরুম, নিজেকে উপশম করার জায়গা ।
فإذا توفر ذلك في منزلك الصغير في دار والدك، فلا يلزمك
إجابة زوجتك في طلب النقلة، فضلا عن الشروع في بناء بيت مستقل، فهذا لا يلزمك على
أية حال، وإنما الواجب عليك هو توفير سكن بالوصف الذي أشرنا إليه، سواء ببنائه أو
إجارته أو غير ذلك.
অর্থাৎ এটি নির্ধারিত হয় যে বাসস্থানটি তার জন্য উপযুক্ত
হবে, তারপর যদি স্বামী স্ত্রীর জন্য এই ধরণের আবাসন সরবরাহ করে, এমনকি
যদি তা তার পিতার বাড়িতে বা অন্য কোন স্থানে থাকে, তাহলে
তার তা আছে, এবং স্ত্রীর অস্বীকার করার অধিকার নেই, বরং
তাকে অবশ্যই তাকে মানতে হবে। তাদের তৃপ্তি ,
উচ্চতা
এবং নীচে, যদি সুবিধাগুলি আলাদা করা হয়, দুটি
বাসস্থান। সূত্র: ফিকহুল উসরাতিল মুসলিমা;
ফাতওয়া
নং-৩৯৮৮০৯
সারকথা হলো,
স্ত্রীর
জন্য আলাদা আবাসস্থল যদি শ্বশুর বাড়িতেই করা সম্ভব হয়, তাহলে
আলাদা বাড়ি করতে স্বামী বাধ্য নয়। এক্ষেত্রে স্বামীকে পীড়াপীড়ি করলে স্ত্রী
অন্যায় হবে।
তবে হাকিমুল উম্মাহ হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর
পরামর্শ মোতাবেক পারিবারিক ঝগড়া- দ্বন্দ্ব মীমাংসা নিমিত্তে পৃথক বাড়ি, সংসার
হওয়াই উচিত, উত্তম।
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৫০৭:
আস্সালামু আলাইকুম। শাইখ আমার জানার বিষয়
হলোঃ এক ব্যক্তি জমি/ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য নিসাব পরিমাণ টাকা বিক্রেতাকে দিয়ছিল।
দুই বছর পর বিক্রেতা বলে জমি/ফ্ল্যাট দিবে না
কিছুদিন পরে টাকা ফেরৎ দেবে। এমতাবস্থায় টাকার মালিক ঐ দুই বছরের যাকাত দিতে হবে
নাকি যখন থেকে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছে তখন থেকে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে
দিতে হবে। দলীল সহ জানালে উপকৃত হবো। -
তারিখ:
২৬/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
আনোয়ারুল আম্বিয়া, যশোর
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার
প্রশ্ন মতে তিনটি সুরত/পদ্ধতি হতে পারে।
(০১) যদি উক্ত ব্যক্তি বাড়ি
বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য অ্যাডভান্স বা বায়না স্বরূপ টাকা দিয়ে থাকে, তাহলে
ওই টাকার যাকাত দিতে হবে।
(০২) আর যদি নিজের বসবাস করার
জন্য বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মূল্য হিসেবে পরিশোধ করে, তাহলে
উক্ত ফেরত টাকার যাকাত দিতে হবে না।
(০৩) আর যদি ব্যবসার নিয়তে
বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধ বাবদ টাকা দিয়ে থাকে, তাহলে
উক্ত ফেরত টাকার যাকাত দিতে হবে। সূত্র: মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৪৮৪, ৪৮৬; ফাতাওয়া
খানিয়া ১/২৫২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৮; আলবাহরুর
রায়েক ২/২০৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১৫৭; আদ্দুররুল
মুখতার ৫/১২০; ফাতহুল কাদীর ২/১২৩
সারকথা হলো, ১ ও ৩ নং সুরতে উক্ত ব্যক্তির দুই বছরের জাকাত দিতে হবে আর
২ নং সুরতে জাকাত দিতে হবে না।
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৫০৯:
আসসালামু আলাইকুম।
মুহতারাম মুফতি সাহেব!
নিম্নের বিষয়গুলোর সমাধান কুরআন ও হাদীসের
আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
زادك الله علما و بارك فيه وجزاك خيرا في الدارين.
آمين
স্ত্রী স্বামীর পিতা-মাতার খেদমত (খাবার
প্রস্তুত করা, কাপড় ধৌত করা, শারীরিক সেবা ..) করতে অস্বীকৃতি জানালে স্বামী তাকে বাধ্য
করতে পারবে কিনা? ইসলাম স্ত্রীর উপর এই
দায়িত্ব পালন করতে আদেশ দেয় কি?
তারিখ:
২৮/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সাজ্জাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, পিতা-মাতার খেদমত এবং তাদের হক পূরণে সন্তানের ওপর
বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিন্তু স্বামীর পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনের দের খেদমত সম্পর্কে স্ত্রীর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এ বিষয়ে
স্ত্রীর দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে কোন নস বর্ণিত হয়নি। পিতা মাতার খেদমত এর জন্য
সন্তান নিজে দায়ী। স্ত্রী দায়ী নয়। যদি স্ত্রী করে এটা এহসান মাত্র। এ বিষয়ে ওলামায়ে দ্বীনের ফতোয়া হলো,
فلا يجب على المرأة أن تخدم أم زوجها، وليس من حق
الزوج أن يلزم زوجته بخدمتها، وإلا كان ظالما لها، ولا يجب على زوجته طاعته في
ذلك. وبره بأمه مطلوب، ولكن لا يكون بظلم زوجته وإلزامها بما لا يلزمها شرعا.ة
الفتوى رق 66237.
একজন মহিলা তার স্বামীর মায়ের সেবা করতে বাধ্য নয়, এবং স্বামীর তার স্ত্রীকে তার সেবা করার জন্য বাধ্য করার
অধিকার নেই, অন্যথায় সে তার প্রতি অবিচার
করবে এবং তার স্ত্রীর তাতে তার আনুগত্য করা উচিত নয়। তার মায়ের প্রতি তার
বিশ্বস্ততা প্রয়োজন, তবে এটি তার স্ত্রীকে
নিপীড়ন করা এবং তাকে যা করতে বাধ্য করা আইনত বাধ্য নয়।
فلا يجب على المرأة خدمة أبوى زوجها وإخوانه، ولو طلب
منها زوجها ذلك لا تلزمها طاعته لأن طاعته إنما تجب في النكاح وتوابعه، قال ابن
نجيم: لأن المرأة لا يجب عليها طاعة الزوج في كل ما يأمر به إنما ذلك فيما يرجع
إلى النكاح وتوابعه خصوصاً إذا كان في أمره إضرار بها
একজন মহিলার জন্য তার স্বামীর পিতা-মাতা এবং
ভাইদের সেবা করা ওয়াজিব নয় এবং যদি তার স্বামী তাকে তা করতে বলে তবে সে তার
আনুগত্য করতে বাধ্য নয়, কারণ তার আনুগত্য কেবল
বিবাহ এবং তার আনুষাঙ্গিক ক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলক। সূত্র: ফিকহুল উসরাতিল মুসলিমা, আলহুকুকু বাইনায যাওজাইন- ফতোয়া নং 66237
এ বিষয়ে শায়েখ মুহাম্মাদ ইবনে উসাইমিন রহ কে জিজ্ঞেস করা
হলে, তিনি জবাবে বলেন,
فتاوى اللجنة الدائمة " ( 19 / 264 ، 265 ) .
وسئل الشيخ محمد بن صالح العثيمين - رحمه الله - :
هل لأم الزوج حق على الزوجة ؟ .
فأجاب :
لا ، أم الزوج ليس لها حق واجب على الزوجة بالنسبة
للخدمة ؛ لكن لها حق مِن المعروف ، والإحسان ، وهذا مما يجلب مودة الزوج لزوجته ،
أن تراعي أمه في مصالحها ، وتخدمها في الأمر اليسير ، وأن تزورها من حين لآخر ،
وأن تستشيرها في بعض الأمور ، وأما وجوب الخدمة : فلا تجب ؛ لأن المعاشرة بالمعروف
تكون بين الزوج والزوجة .
"
لقاءات الباب المفتوح " (
68 / السؤال 14 )
না, স্বামীর মায়ের এমন কোন
অধিকার নেই যা স্ত্রীর জন্য খেদমতের ক্ষেত্রে ওয়াজিব। কিন্তু তার অনুগ্রহ ও
কল্যাণের অধিকার রয়েছে এবং এটিই তার স্ত্রীর প্রতি স্বামীর স্নেহ, তার
স্বার্থে তার মায়ের যত্ন নেওয়া, সহজ বিষয়ে তার সেবা করা, সময়ে
সময়ে তার সাথে দেখা করা এবং পরামর্শ করার অধিকার এনে দেয়। কিছু বিষয়ে তার কেননা
অনুগ্রহ সহ সহবাস স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। সূত্র: সৌদি আরবের স্থায়ী ফাতওয়া
বোর্ড-১৯/২৬৪,২৬৫
فيجب على الزوج أن يقف عند هذا الحكم الشرعي ، ولا يطلب
من الزوجة ما لا يلزمها شرعاً ، وعليه أن يعلم
أنه لا طاعة له عليها لو أنه أمر زوجته بخدمة أهله ؛ لأن أمره ذاك ليس من شرع الله
تعالى
স্বামীকে অবশ্যই এই ইসলামি বিধানের প্রতি অটল
থাকতে হবে এবং স্ত্রীর কাছে এমন কিছু চাইবে না যা তার জন্য শরী‘আত ওয়াজিব নয়। কারণ তার আদেশ সর্বশক্তিমান
আল্লাহর বিধান থেকে নয়। সূত্র: সৌদি আরবের স্থায়ী
ফাতওয়া বোর্ড-১৪/৬৮
সার কথা হলো, স্ত্রী স্বামীর পিতা-মাতার খেদমত (খাবার প্রস্তুত করা, কাপড় ধৌত করা,
শারীরিক
সেবা ..) করতে অস্বীকৃতি জানালে স্বামী তাকে বাধ্য করতে পারবে না। ইসলাম স্ত্রীর উপর এই দায়িত্ব পালন করতে আদেশ দেয়নি।
তবে মানবিক এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে
স্ত্রীর উচিত স্বামীর পিতা-মাতার খেদমত
করে, স্বামীর সন্তুষ্টি ও সুখী
সংসার গড়া।
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৫০৮:
আসসালামু আলাইকুম।
মুহতারাম মুফতি সাহেব!
নিম্নের বিষয়গুলোর সমাধান কুরআন ও হাদীসের
আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
زادك الله علما و بارك فيه وجزاك خيرا في الدارين.
آمين
প্রশ্ন-২ : পিতা-মাতার নিজ খরচ চালানোর সম্পদ
আছে, এমন পিতা-মাতার জন্য
সন্তানের খরচ দেয়া কি আবশ্যক?
তথাপি
তারা চান যে তাদের নিয়মিত মাসিক ভাতার বাহিরে আরো অতিরিক্ত দেয়া হোক? এক্ষেত্রে গুনাহগার না হওয়ার জন্য সন্তানের জন্য কী করণীয়? উল্লেখ্য সন্তানের উপার্জনের উপর তার স্ত্রী ও নিজ সন্তানও
রয়েছে?
তারিখ:
২৭/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সাজ্জাদ হোসেন নারায়ণগঞ্জ
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
পিতা-মাতার জন্য ব্যয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
আয়াত নং-০১
Surah
Al-Baqara, Verse 215:
يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلْ مَا أَنفَقْتُم
مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ
وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ
তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি
তারা ব্যয় করবে? বলে দাও-যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা
হবে পিতা-মাতার জন্যে, আত্নীয়-আপনজনের জন্যে। সূরা বাকারা-২১৫
আয়াত নং -০২
Surah
An-Nisa, Verse 36:
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا
وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
আর উপাসনা কর আল্লাহর,
শরীক
করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর । সূরা নিসা -৩৬
মাসয়ালা বা ব্যাখ্যা:
فلقد أمرنا الله بالإحسان إلى الوالدين، وجعل ذلك من
أعظم الفرائض بعد الإيمان بالله، ومن الإحسان إلى الوالدين، الإنفاق عليهما عند
حاجتهما، قال ابن المنذر: أجمع أهل العلم على أن نفقة الوالدين الفقيرين الذين لا
كسب لهما ولا مال واجبة في مال الولد.
অর্থাৎ আল্লাহ আমাদেরকে পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার
নির্দেশ দিয়েছেন, এবং তিনি এটিকে আল্লাহর প্রতি ঈমানের পর
সবচেয়ে বড় কর্তব্য বানিয়েছেন এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের
প্রয়োজনের সময় তাদের জন্য ব্যয় করা। আল্লামা ইবনে মুনজির রহ. বলেন, আহলে
ইলেমগণ! ইজমা করেছেন যে, দরিদ্র পিতা-মাতা যাদের উপার্জন বা অর্থ নেই, তাদের
জন্য সন্তানের টাকায় খরচ করা ওয়াজিব।
فأما نفقة الأولاد الموسرين على أبيهم وأمهم الفقيرين
فإنها واجبة بإجماع أهل العلم , وراجع في ذلك الفتوى رقم: 115678.
أما إذا كان الوالدان موسرين فإنه لا يجب على ولدهما أن
يبذل لهما شيئا من المال إلا ما كان على سبيل الندب والاستحباب تطييبا لخاطرهما
خصوصا إذا علم تعلق قلوبهما بشيء من هذا, وقد بينا هذا في الفتوى رقم: 111110.
দরিদ্র পিতা ও মাতার উপর সচ্ছল সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য, এটি
পণ্ডিতদের ঐক্যমত অনুসারে ওয়াজিব। সূত্র: ফিকহুল উসরাতিল মুসলিমা, নাফকাতুল
আকারিব- ১১৫৬৭৮ (ফতোয়া নং)
কিন্তু পিতা-মাতা যদি সচ্ছল হন, তবে
তাদের হৃদয়কে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রশংসা ও আকাঙ্ক্ষার উপায় ব্যতীত অর্থের কিছু
দেওয়া তাদের ছেলের জন্য বাধ্যতামূলক নয়,
বিশেষত
যদি জানা যায় যে তাদের হৃদয় এর সাথে কিছু সংযুক্ত আছে। সূত্র: ফিকহুল উসরাতিল
মুসলিমা, নাফকাতুল আকারিব- ১১১১১০ (ফতোয়া নং) , মুগনিল
মুহতাজ-৩/৫৬৯; আলমুগনী-১১/৩৭৩; বাদায়ে-৩/৪৪৬
সারকথা হলো,
মুসলিম
মনীষীগণ এ বিষয়ে একমত যে, পিতামাতা দরিদ্র হলে এবং পিতার নিজের কোনো
উপার্জন না থাকলে তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সচ্ছল সন্তানের।
অর্থাৎ পিতামাতা দরিদ্র হলে তাদের ভরণ পোষণ সন্তানের উপর
ফরয হয়, অন্যথায় নয়।
সুতরাং এমতাবস্থায় তাদেরকে
সহযোগিতা না করলে সন্তান গুনাহগার হবে না। তবে তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সাধ্য
অনুসারে কিছু টাকা- পয়সা দেওয়া উত্তম,
এতে
কোন সন্দেহ নেই।
1. والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা
-১২৫১০:
assalamu alaikum. আমার একটি প্রশ্ন ছিলো দয়া করে
জানাবেন। এক ব্যক্তির গরীব ভাই আছে। তিনি তার যাকাত আংশিক দিয়ে দিতে চান। আর বাকী যাকাত
ঐ ভাইয়ের জন্য রেখে দিতে চান যখন বিপদে পড়বে বা মেয়ের বিয়ে দেবে তখন একত্রে কয়েক
বছরের যাকাত জমিয়ে পরবর্তীতে দিতে চান। উক্ত সুরতে যাকাত জমিয়ে রেখে পরে দেয়া যাবে
কি না??
তারিখ:
২৮/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ
মাওলানা নুরুল আলম দিনাজপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة
الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার প্রশ্নের বর্ণিত অনুসারে উক্ত ব্যক্তি
যাকাতের বাকী অংশ তার ভাইয়ের জন্য রেখে দিয়ে একসাথে দিতে পারবে।
আর
আপন ভাইকে (আত্মীয়-স্বজন) যাকাত দেওয়া উত্তম এবং ডবল সাওয়াব। দলিল:
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْأَعَلَى قَالَ حَدَّثَنَا
خَالِدٌ قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ عَوْنٍ عَنْ حَفْصَةَ عَنْ أُمِّ الرَّائِحِ عَنْ
سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ
إِنَّ الصَّدَقَةَ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ وَعَلَى ذِي الرَّحِمِ اثْنَتَانِ
صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ
অর্থ:
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল আ’লা (রাহঃ) ... সালমান ইবনে
আমির (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মিসকীনকে দান করার মধ্যে
শুধু সাদ্কার সওয়াব রয়েছে আর আত্মীয়-স্বজনকে দান করার মধ্যে দুটি সওয়াব
রয়েছে, দান করার সওয়াব এবং
আত্মীয়াত্রার সম্পর্ক বজায় রাখার সওয়াব।
—সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ২৫৮২
(আন্তর্জাতিক নং ২৫৮২)
পরামর্শ:
ভাইয়ের জন্য জমানো টাকা তৃতীয় কারও কাছে রাখলে উত্তম হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর
প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৫০৫:
আসসালামু আলাইকুম।
ওমরা হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ কি কি? জানালে উপকৃত হবো।
তারিখ: ০২/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুস সালাম সাভার, ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৫১১:
আসসালামু আলাইকুম।
ওমরা হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ কি কি? জানালে উপকৃত হবো।
তারিখ: ২৮/০৩/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুস সালাম সাভার, ঢাকা থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
সারকথা হলো,
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক
والله اعلم بالصواب
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
মর্যাদা নবি (ﷺ)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
তিনি কুরআন খতম করলে
পরিবার-পরিজন সকলের জন্য দো‘আ করতেন।[57] . ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ১/৩০৪।
নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না
এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না’ (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; ছহীহাহ হা/২৫০)।
বিভাগের
নাম্বার দিচ্ছি- ০১৭১১-৯৬১৩৭৪, বাদ আসর থেকে ইশা পর্যন্ত মোবাইল : 01923-295995 ; ০১৭১১-৯৬১৩৭৪
অবগতি
গত ১৯/১১/২২ তারিখে আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-১২৩৪৬ শিরোনামে প্রকাশিত মাসয়ালাটি কিছু ভাইয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে,
যাচাই-বাচাই পর কিছু সংশোধন- সংযোজন-বিয়োজন তথা সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। তাই কাঙ্খিত প্রর্থীদের পুনরায় দেওয়ার সুযোগ রযেছে এবং পুনরায় দেখার জন্য অনুরোধ রইল।
উল্লেখ যে, আমার মাত্র দুটি চোখ, একটি মাথা। অপর পক্ষে ২৩৬জন সদস্যের ৪৭২টি চোখ। সুতরাং সহজেই অনুমেয় অনেক কিছু ভুল ধরা পড়বে। আমি পূর্বেই বলেছি যে,
যেকোন ধরণের ভুল/ক্রুটি দৃষ্টিগোচর হলে, ইকরামুল মুসলিমিনের অংশ হিসেবে অবশ্যই অবগতি করবেন।
তবে অবগতিটা গ্রুপে না করে,
আমার ব্যক্তিগত আইডিতে নক করলে,
ভাল হয়। কেননা গ্রুপে বিভিন্ন বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
যা কাম্য নয়।
আল-হামদুলিল্লাহ এতটুকু সৎ সাহস আছে যে, আমার কোনো ভুল বুঝতে পারলে, তা স্বীকার করকে এবং সবাইকে অবগতি করতে কার্পণ্য করবো না ইনশাল্লাহ। ইতিপূর্বেও আমি কয়েকটি মাসয়ালা সংশোধন- সংযোজন-বিয়োজন করে অবগতি করেছি।
ইনশাল্লাহ তা অব্যাহত থাকবে।
নিবেদক
মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
ইউনিটের প্রতিষ্ঠা
বার্ষিকীর মুনাজাত:
হে আল্লাহ,
ফেরোশাস ফোরটিন এর ৫১ তম প্রতিষ্ঠা
বার্ষিকীতে আমরা আপনার দরবারে হাত উত্তোলন করলাম। মেহেরবানী করে আমাদের দোয়া কালাম
এবং তা জীবনের যাবতীয় নেক আমল সমূহ কবুল করে নিন। আমাদের নেক আমলের সওয়াব বহুগুণে
বৃদ্ধি করে মহানবী (সা:) এর রওজা মুবারকে পৌঁছিয়ে দিন।
হে আল্লাহ,
ফেরোশাস ফোরটিন এর প্রাতিষ্ঠানিক
রূপ দেয়ার জন্য এবং উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য যারা অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন, শ্রম দিয়েছেন ,মেধা ব্যায় করেছেন, সহযোগিতা করেছেন এবং বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে এর উত্তম বিনিময় প্রদান করুন। তাদের মধ্য থেকে যারা এ দুনিয়া
থেকে বিদায় নিয়ে কবরবাসী হয়েছেন তাদেরকে চির সুখের জান্নাত নসিব করুন এবং যারা জীবিত
রয়েছেন তাদেরকে সুখে-শান্তিতে ও সম্মানের সাথে বসবাস করার তৌফিক দান করুন।
রব্বুল আলামিন,
বর্তমানে যারা অত্র ব্যাটালিয়নে
কর্মরত রয়েছি আমরা যেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশের প্রতি অনুগত থেকে আমাদের উপর অর্পিত
দায়িত্ব ও কর্তব্য অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করে ইউনিটের সম্মান এবং গৌরব কে আরো উজ্জ্বল করতে
পারি আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুন।
হে আল্লাহ,
অত্র ব্যাটালিয়নের সকল সদস্য
ও তাদের পরিবারবর্গকে হেফাজত করুন। সকলকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখুন। যারা অসুস্থ
রয়েছেন বা সিএমএইচ এ ভর্তি রয়েছেন তাদেরকে পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করুন। যারা ইউএন
মিশনে বা অন্যত্র কর্মরত রয়েছেন তাদেরকে সকল প্রকার বিপদ আপদ থেকে হেফাজত করুন।
হে আল্লাহ,
বিগত দিনগুলোতে অত্র ব্যাটালিয়নের
যে ভালো কাজ এবং ভালো অর্জন রয়েছে তা অব্যাহত রাখার তৌফিক দান করুন। বিভিন্ন কম্পিটিশনে
অত্র ইউনিটকে সম্মানজনক ফলাফল অর্জন করার সুযোগ করে দিন। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আমাদেরকে
আরো অধিক পরিমাণে সফলতার স্বাক্ষর রাখার তাওফিক দান করুন।
আমাদের দেশ ও জাতির
উপর রহমতের ছায়া দান করুন। আমাদের দেশে পরিপূর্ণ শান্তি, শৃঙ্খলা,উন্নতি-অগ্রগতি ও সার্বিক নিরাপত্তা দান করুন। বাংলাদেশ
সেনাবাহিনী বিশেষ করে ৫৫ পদাতিক ডিভিশন ও যশোর এরিয়ার সকল সামরিক ও অসামরিক সদস্যের
উপর রহমত নাজিল করুন।
হে আল্লাহ,
যারা আপনার দরবারে হাত উত্তোলন
করেছি আমাদের মা-বাবা আত্মীয়-স্বজনসহ উপস্থিত সকলকে মাফ করে দিন। আমাদের পরিবার-পরিজনের
উপর রহমত নাযিল করুন। আমাদের সন্তানদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার তাওফিক দান
করুন। সকল প্রকার বালা মুসিবত ও বিপদ- আপদ থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন।
হে আল্লাহ,
পরিশেষে আপনার কাছে আকুল আবেদন,
ফেরোশাস ফোরটিন এর উত্তরোত্তর
উন্নতি,অগ্রগতি, সুখ ও সমৃদ্ধি দান করুন এবং ফেরোশাস ফোরটিন এর সকল
কর্মকান্ডে সাফল্য দান করুন। আমিন।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন