জিজ্ঞাসা-১২৫৭৬
আসসালামুয়ালাইকুম। কোনো অল্প বয়স্কা নারীর স্বামী প্রবাসে কারাগারে থাকে আর দশ বছরের জেল অথবা ফাঁসির রায় হয় (কার্যকর হবে কি না অনিশ্চিত) তাহলে ওই নারীর হুকুম কি এই নারীর যেহেতু স্বামী বেঁচে আছে তাদের বিচ্ছেদ হয়নি আবার দেখাশোনার কোনো মাহরুম পুরুষ নেই। সেই নারীর জন্য হুকুম কি হবে? চাই।
তারিখ: ০৪/০৫/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শাহজাহান শেখ কুমিল্লা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, স্বামীর কারাদণ্ড হলে, স্বামীর পক্ষ থেকে ভরণপোষণের ব্যবস্থা না থাকলে তালাক চাওয়া সর্বসম্মতিক্রমে জায়েজ আর ভরণপোষণের ব্যবস্থা থাকলে মতভেদ রয়েছে। তবে চূড়ান্ত কথা তালাক চাইতে পারবে।
إما أن يكون الزوج لم يترك لها ما تنفق به أو أن يكون ترك لها ذلك، فإن كانت الأولى فإنها مخيرة بين فراقه وبين الصبر عليه وانتظار خلاصه.
قال ابن قدامة في المغني: وجملته أن الرجل إذا منع امرأته النفقة لعسرته وعدم ما ينفقه فالمرأة مخيرة بين الصبر عليه وبين فراقه.... 8/162.
وإن كان ترك لها ما تنفق به، فقد اختلف أهل العلم في جواز التفريق لطول الغيبة وفي عدم جوازه، ومبنى أقوالهم في ذلك هو: هل استدامة الوطء هي حق للزوجة مثلما هي حق للزوج أم لا؟
فذهب جمهور العلماء إلى أن دوام الوطء إنما هو حق للزوج فقط، وأما الزوجة فحقها فيه ينقضي بالمرة الواحدة، ما لم يتركه الزوج إضراراً بها، وذهب المالكية ومن والاهم إلى أن استدامة الوطء حق لكل واحد من الزوجين، وعليه فأيما تضرر حصل للزوجة من عدم الوطء كان موجباً لها أن ترفع أمرها إلى القضاء وتطلب التفريق إن شاءت.
ولعل القول الأخير أولى بالصواب، قال في المغني: .... ولأن النكاح شرع لمصلحة الزوجين ودفع الضرر عنهما، وهو مفض إلى دفع ضرر الشهوة عن المرأة كإفضائه إلى دفع ذلك عن الرجل، فيجب تعليله بذلك، ويكون النكاح حقاً لهما جميعاً، ولأنه لو لم يكن لها فيه حق لما وجب استئذانها في العزل.... 7/231.
অর্থাৎ যদি একজন মহিলার স্বামীকে কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়, তার দুটি পরিস্থিতি রয়েছে:
০১.হয় স্বামী তার সাথে ব্যয় করার জন্য কিছু রেখে যাননি,
০২. অথবা তিনি তাকে তা দিয়েই রেখে গেছেন।
যদি এটি প্রথম হয়, তবে তার কাছে তাকে ছেড়ে যাওয়া এবং তার সাথে ধৈর্য্য ধারণ করা এবং তার পরিত্রাণের জন্য অপেক্ষা করার মধ্যে একটি বিকল্প রয়েছে।
ইবনে কুদামাহ আল-মুগনি গ্রন্থে বলেছেন: এর সমষ্টি এই যে, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর কষ্ট এবং ব্যয় করার মতো অর্থের অভাবের কারণে তার স্ত্রীর জন্য ব্যয় করতে অস্বীকার করে, তবে মহিলার কাছে তার সাথে ধৈর্য ধরা বা তাকে ছেড়ে যাওয়ার মধ্যে একটি পছন্দ রয়েছে। সূত্র: কিতাবুল মুগনি- 8/162
এবং যদি সে তার সাথে ব্যয় করার জন্য কিছু রেখে যায়, তবে আলেমগণ অনুপস্থিতির দৈর্ঘ্যের কারণে বিচ্ছেদের অনুমতি এবং এর অগ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে মতভেদ করেছেন এবং তাদের বক্তব্যের ভিত্তি হল: সহবাসের ধারাবাহিকতা কি স্ত্রীর অধিকার? এটা স্বামীর অধিকার কি না?
জমহুর উলামার মতে, চিরস্থায়ী সহবাস শুধুমাত্র স্বামীর জন্য একটি অধিকার, এবং স্ত্রীর জন্য তার অধিকার একবারেই শেষ হয়ে যায়, যতক্ষণ না স্বামী তার ক্ষতি করার জন্য তাকে ছেড়ে না দেয়। তাকে তার মামলাটি বিচার বিভাগে নিয়ে যেতে এবং সে চাইলে বিচ্ছেদ চাইতে পারে।
সম্ভবত শেষ কথাটি আরও সঠিক, তিনি আল-মুগনিতে বলেছেন: .... এবং কারণ বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর উপকারের জন্য এবং তাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য নির্ধারিত হয়েছিল এবং এটি লালসার ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য সহায়ক। নারীর পক্ষ থেকে, ঠিক যেমন এটি পুরুষের কাছ থেকে এটিকে প্রতিহত করার দিকে পরিচালিত করে, তবে এটি অবশ্যই তার দ্বারা ন্যায়সঙ্গত হতে হবে, এবং বিবাহ তাদের উভয়ের জন্য একটি অধিকার, এবং কারণ যখন তাকে জিজ্ঞাসা করার সময় তার এটির অধিকার ছিল না। তাকে বরখাস্ত করার অনুমতি। সূত্র: কিতাবুল মুগনি -৭/২৩১
প্রশ্নঃ ক। স্বামী বন্দী থাকায় বন্দী বা রিমান্ড বন্দীর স্ত্রীর কি তালাকের অনুরোধ করার অধিকার আছে?
উত্তর: ক । না.. পাঠ্যের উপর প্রসারিত করা জায়েজ নয় এবং এটি একটি চূড়ান্ত রায়ের অস্তিত্বকে শর্ত দেয়, অর্থাৎ রায় হওয়ার আগে তালাক চাওয়া জায়েজ নেই।
প্রশ্ন: খ। একজন নারীর স্বামী বন্দী থাকলে তালাক চাওয়া জায়েজ আছে?
উত্তর: খ। نعم ، يجوز للمرأة إذا حُبس زوجها ، وتضررت بترك المعاشرة الزوجية ، أو بترك النفقة أن تطلب الطلاق .
جاء في " الموسوعة الفقهية " ( 29 / 66 ، 67 ) :
অর্থাৎ হ্যাঁ, একজন মহিলার জন্য জায়েজ, যদি তার স্বামী বন্দী হয় এবং সে বৈবাহিক সম্পর্ক ত্যাগ করে বা ভরণপোষণ ত্যাগ করে, তালাক চাওয়া। সূত্র: আল-মাওসুআহ আল ফিকহিয়্যাহ (29/66, 67)
প্রশ্ন: গ। প্রশ্নে বর্ণিত মহিলার এখন করণীয় কি?
উত্তর: গ। যদি ধৈর্য ধারণ করে,ব্যভিচারের লিপ্ত হওয়ার ভয় না থাকে, তাহলে প্রাপ্ত স্বামীর জন্য অপেক্ষা করবে। আর যদি ধৈর্য ধারণ করতে না পারে এবং ভরণপোষণের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে তালাক চাইতে পারবে।
আর যদি ফাঁসির আদেশ হয়, তাহলে তা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তালাক চাওয়া জায়েজ নেই।
প্রশ্ন: ঘ। উক্ত মহিলার তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের পদ্ধতি কি?
উত্তর: ঘ। ঐ মহিলার সামনে বন্দী স্বামী থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানোর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। যথা:
ক. খুল’ বা ‘খুলা’ তালাক,
খ. মুবারাত এবং
গ. আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ।
ক. খুলা তালাক:
১। স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকেন,
২। স্বামী ওই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে থাকেন।
৩। স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় স্বামী বিনিময়ে স্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিদান নিয়ে থাকেন এবং স্ত্রী তা দিয়ে থাকেন বা দিতে সম্মত হন।
তাছাড়া বিয়ের কাবিননামার ১৮ ও ১৯ নম্বর দুটি কলাম রয়েছে। সেখানে বলা আছে যে, স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পন করেছে কি-না এবং স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করেছে কি-না। সেখানে যদি স্ত্রীর ঘরটিতে হ্যাঁ থাকে এবং স্বামীর স্বজ্ঞানে অনুমতি থাকে, তাহলে তিনি সহজেই তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন। এ তালাককে তালাক-ই-তাওফিজ বলে।
খ মুবারাত:
মুবারাত হলো পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ। এ ধরনের বিবাহ বিচ্ছেদের বেলায় উভয়ই বিবাহ বিচ্ছেদে সম্মত হয় বলে কাউকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগে না। ( জেল থেকে তালাক নামা পাঠিয়ে দিবে)
গ. আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ:
স্ত্রী যদি তালাক-ই-তৌফিজ ও খুলার মাধ্যমে বিয়েবিচ্ছেদ ঘটাতে ব্যর্থ হন এবং বিয়েবিচ্ছেদ হওয়া একান্ত প্রয়োজন মনে করেন তাহলে তাকে ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিয়েবিচ্ছেদ আইনে বর্ণিত নিয়ম অনুসরণ করতে হবে (ধারা ২)। সেই আইনে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে কোন কোন কারণে একজন স্ত্রী আদালতে বিয়েবিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবেন।
অর্থাৎ স্বামীর সাত বছর কিংবা তার চেয়ে বেশী কারাদণ্ড হলে, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবেন।
সারকথা হলো, উক্ত নারী যদি ধৈর্য ধারণ করে থাকতে না পারে, উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটনানোর পর ইদ্দত পালন করে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন