জিজ্ঞাসা-১২৫৪৬:
আসসালামু আলাইকুম।
প্রশ্ন: ইতিকাফের শরয়ী বিধান দলীল সহ সমাধান প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি।
তারিখ: ১৬/০৪/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ওলিউল্লাহ, সিলেট থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
Surah Al-Ahzab, Verse 21:
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
অর্থ:“নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাঝে আছে উত্তম আদর্শ। তাদের জন্যযারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” সূরা আল-আহযাব-২১
ইবনে কাছীর রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
“এই মহান আয়াতটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহিওয়া সাল্লাম এরপ্রতিটি কথা, কাজ ও প্রতিটি মুহূর্ত অনুসরণের ব্যাপারে একটি মহান মূলনীতি।”(তাফসীরে ইবনে কাসীর-৩/৭৫৬)
দ্বিতীয় কথা হলো, আমরা জানি, রসূলের যুগে শরেীয়তের বিধান ভাগ ছিল না(ফরজ,ওয়াজিব,সুন্নাতে মুয়াক্কাদা-জায়েদা, নফল ও মুস্তাহাব ইত্যাদি) পরবর্তীতে ফুকাহায়ে কেরামগণ এই ভাগটা করেছেন গুরুত্বের উপর। যেমন যে কাজ রসূল নিয়মিত করতেন, সেটাকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আর যেটা নিয়মিত করতে না সেটাকে সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা বা জায়েদা বলা হয়। উদাহরণ ফজরের দুরাকাত সুন্নাত, যহরের ছয় রাকাত সুন্নাত, মাগরিবের দুরাকাত এবং ঈশার পর রাকাত এগুলো নবীজি সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মত আদায় করতেন কিন্তু আছরের পূর্বে এবং ঈশার পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত নিয়মিত পড়তেন না (তাই এইগুলো সুন্নতে গয়রে মুয়াক্কাদা)।
তৃতীয় কথা হলো, এখন আমরা দেখবো এতেকাফ নবীজি সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মত করতেন কী না ? হাদিসের দলিল:
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। দলিল:
হাদিস নং-০১
أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ، حَتّى تَوَفّاهُ اللهُ عَزّ وَجَلّ، ثُمّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ.
আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। নবীজীর পর তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭২; সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৬
হাদিস নং-০২
كَانَ يَعْرِضُ عَلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ القُرْآنَ كُلّ عَامٍ مَرّةً، فَعَرَضَ عَلَيْهِ مَرّتَيْنِ فِي العَامِ الّذِي قُبِضَ فِيهِ، وَكَانَ يَعْتَكِفُ كُلّ عَامٍ عَشْرًا، فَاعْتَكَفَ عِشْرِينَ فِي العَامِ الّذِي قُبِضَ فِيهِ.
হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, জিবরীল প্রতি বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার কুরআন শোনাতেন। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর দুই বার শোনান। নবীজী প্রতি বছর দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ইন্তেকালের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন। সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৯৯৮, ২০৪৪
উপরোক্ত হাদিসগুলো দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন সম্মানিত তিন ইমাম। যেমন
الحنابلة قالوا: يكون سنة مؤكدة في شهر رمضان وآكده في العشر الأواخر منه.
الشافعية قالوا: إن الاعتكاف سنة مؤكدة في رمضان وغيره، وهو في العشر الأواخر منه آكد.
الحنفية قالوا: هو سنة كفاية مؤكدة في العشر الأواخر من
অর্থাৎ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ, ইমাম শাফিয়ি রহ এর মতে রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং ইমাম আবু হানিফা এর মতে রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। সূত্র: কিতাবুল ফিকহি আলাল মাজাহিবিল আরবাআ-১/৫২৯
চতুর্থ কথা হলো, কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবে। আর কেউই আদায় না করলে সবাই সুন্নাত তরকের দায়ে দায়ী থাকবে।
ইতেকাফের হুকুম:
أحكام الاعتكاف: أن أركان الاعتكاف: هو السنة. ليس إلزاميا. ومع ذلك ، من حلف يميناً كان واجباً عليه. بما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: (من نذر على طاعة الله فليتم تلك الطاعة). ومن نذر على معصية الله فلا يعص الله ". [صحيح البخاري (6696)].
ومنذ أن قال عمر (رضي الله عنه): يا رسول الله! نذرت أن أعتكف ليلة واحدة في المسجد الحرام في العصر الجاهلي. قال: أوفيت نذرك. [6697]
ইতিকাফের হুকুম:
ইতিকাফের মূল বিধান হচ্ছে- এটি সুন্নত; ওয়াজিব নয়। তবে, কেউ মানত করলে তার উপর ওয়াজিব হবে। দলিল:
হাদিস নং -০১
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا مَالِكٌ، عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ الْمَلِكِ، عَنِ الْقَاسِمِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللَّهَ فَلْيُطِعْهُ، وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلاَ يَعْصِهِ ".
আবু নুয়াঈম (রাহঃ) ... আয়েশা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এরূপ মান্নত করে যে, সে আল্লাহর আনুগত্য করবে তাহলে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে এরূপ মান্নত করে, সে আল্লাহর নাফরমানী করবে তাহলে সে যেন তার নাফরমানী না করে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৩৯ (আন্তর্জাতিক নং ৬৬৯৬)
হাদিস নং -০২
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ أَبُو الْحَسَنِ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ عُمَرَ، قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي نَذَرْتُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ أَنْ أَعْتَكِفَ لَيْلَةً فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ. قَالَ " أَوْفِ بِنَذْرِكَ ".
মুহাম্মাদ ইবনে মুকাতিল আবুল হাসান (রাহঃ) ... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর (রাযিঃ) একদা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি জাহিলী যুগে মান্নত করেছিলাম যে, মসজিদে হারামে এক রাত ইতিকাফ করব। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার মান্নত পুরা করে নাও। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৪০ (আন্তর্জাতিক নং ৬৬৯৭)
ইজমা:
قال ابن المنذر في كتابه "الإجماع" (ص 53):
اتفق العلماء على أن الاعتكاف سنة ، فهل هذا صحيح؟ ليس واجب. ولكن من ألزم نفسه بقسم ، فإنه يصبح واجباً ".
ইবনুল মুনযির তাঁর ‘আল-ইজমা’ নামক গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-৫৩) বলেন:
আলেমগণ ইজমা করেছেন যে, ইতিকাফ সুন্নত; ফরয নয়। তবে কেউ যদি মানত করে নিজের উপর ফরয করে নেয় তাহলে ফরয (ওয়াজিব) হয়।” সূত্র: আল-ইজমা-৫৩ পৃষ্ঠা
সারকথা হলো, ফিকহি হানাফির মতে,
الاعتكاف على تقدير كونه سُنَّةُ كفاية كما هو الحق، هل هو سُنَّة كفايةٍ على أهلِ البلدة (٣) ، كَصَلاة الجنازة (٤) ، أم سُنَّة كفايةٍ على أهلِ كُلِّ مَحلَّةٍ، كصلاةِ التراويح بالجمَاعة (٥) ؟
অর্থাৎ ইতিকাফ হলো সুন্নাতে কিফায়া, এটি কি শহরের লোকদের জন্য সুন্নাতে কিফায়া। যেমন জানাজার নামাজ বা শহরের লোকদের জন্য সুন্নাতে কিফায়া? প্রতিটি এলাকা, যেমন তারাবীহ নামায জামাআতের সাথে আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। সূত্র: কিতাবুল ইনসফি ফি হুকমিল ইতেকাফ -৩৬ পৃষ্ঠা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন