ইমাম হাসান (রা.)-এর খিলাফাত ও শাহাদত
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির,
দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস ফিলআদব) ধর্ম শিক্ষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
উপস্থাপনা: রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সম্মান ও মহব্বত সবকিছুর চাইতে বেশি হওয়া আমাদের ঈমানের অঙ্গ ও ভিত্তি। অতঃপর রসূলুল্লাহ (ﷺ)–এর সাথে যার যত নিকট সম্পর্ক আছে, তাঁর সম্মান ও মহব্বত এবং সে অনুপাতে জরুরী হওয়া অপরিহার্য। ঔরসজাত সন্তান সর্বাধিক নিকটবর্তী আত্মীয়। তাই তাঁদের মহব্বত নিশ্চিতরূপে ঈমানের অঙ্গ।
অনেকেই এ ব্যাপারে শৈথিল্যের পরিচয় দিতে শুরু করলে হজরত ইমাম শাফেয়ি (রহ.) কয়েক লাইন কবিতায় তাদের তীব্র নিন্দা করেছেন। এতে প্রকৃতপক্ষে তিনি অধিকাংশ আলেমদের মতাদর্শই তুলে ধরেছেন। তাঁর কবিতা নিম্নে উদ্ধৃত হল-
হে অশ্বারোহী! তুমি মুহাস্সাব উপত্যকার অদূরে দাম। প্রত্যুষে যখন হাজিদের স্রোত সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের ন্যায় মিনার দিকে রওয়ানা হবে, তখন সেখানকার প্রত্যেক বাসিন্দা ও পথচারীকে ডেকে তুমি ঘোষণা কর, যদি কেবল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর বংশধরের প্রতি মহব্বত রাখলেই মানুষ রাফেজি হয়ে যায়, তবে বিশ্বজগতের সমস্ত জিন ও মানব সাক্ষী থাকুক, আমিও রাফেজি।[1]
খ। ইমাম হাসান (রা.) এর পরিচয়:
নাম : হাসান ইবনে আলী
জন্ম : ৪ঠা মার্চ ৬২৫ / ১৫ রমজান ৩ হিজরী
মৃত্যু : ৯ বা ৩০ মার্চ ৬৭০ / ৭ সফর বা ২৮ সফর ৫০ হিজরী ।
জন্ম স্থান : মদিনা, সৌদি আরব ।
পিতার নাম : হযরত আলী ( রা. )
মাতার নাম : হযরত ফাতিমা ( রা. )
উপাধী সমূহ : সিবত, সাইয়্যেদ, যাকি, মুজতবা উল্লেখযোগ্য ।
কুনিয়াহ্ : আবু আবদিল্লাহ্। মহানবী (ﷺ) ইমাম
হুসাইনের জন্য এ কুনিয়াহটি পছন্দ করেছিলেন। এছাড়া ‘আবুল আয়িম্মাহ্’ । আবাল
মাসাকিন । আবাশ্ শুহাদা ইত্যাদি ।
وقد ورث من النبي صلى الله عليه
وسلم كثيرا من المكارم؛ حتى قيل: إنه كان أشبه الناس برسول الله صلى الله عليه
وسلم خِلقة وخُلقا، واختار له النبي صلى الله عليه وسلم اسم الحسن من بين سائر
الأسماء ليكون دالا على حسنه
তিনি নবীর কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে
পেয়েছেন অনেক সম্মান। এমনকি বলা হয়েছিল: তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূলের সাথে মানুষের
মধ্যে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ,
চরিত্র ও চরিত্রে আল্লাহর সালাত ও শান্তি তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য এই নামটি বেছে নিয়েছিলেন। আল-হাসানের মধ্যে
থেকে সব নাম তার নেকীর পরিচায়ক।
নবি পরিবারের সম্মান ও মহব্বত : ذَلِكَ
الَّذِي يُبَشِّرُ اللَّهُ عِبَادَهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ قُلْ لَا
أَسْأَلُكُمْ
عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى অর্থ: এরই সুসংবাদ দেন আল্লাহ তার সেসব বান্দাকে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে। বলুন, আমি আমার দাওয়াতের জন্যে তোমাদের কাছে কেবল আত্মীয়তাজনিত সৌহার্দ্য চাই।[2]
قَامَ
رَسُولُ اللهِ
صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَوْمًا فِينَا
خَطِيبًا، بِمَاءٍ
يُدْعَى خُمًّا
بَيْنَ مَكَّةَ
وَالْمَدِينَةِ
فَحَمِدَ اللهَ
وَأَثْنَى عَلَيْهِ،
وَوَعَظَ وَذَكَّرَ،
ثُمَّ قَالَ:
" أَمَّا
بَعْدُ، أَلَا
أَيُّهَا النَّاسُ
فَإِنَّمَا
أَنَا بَشَرٌ
يُوشِكُ أَنْ
يَأْتِيَ رَسُولُ
رَبِّي فَأُجِيبَ،
وَأَنَا تَارِكٌ
فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ:
أَوَّلُهُمَا
كِتَابُ اللهِ
فِيهِ الْهُدَى
وَالنُّورُ
فَخُذُوا بِكِتَابِ
اللهِ، وَاسْتَمْسِكُوا
بِهِ " فَحَثَّ
عَلَى كِتَابِ
اللهِ وَرَغَّبَ
فِيهِ، ثُمَّ
قَالَ: "وَأَهْلُ
بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ
اللهَ فِي
أَهْلِ بَيْتِي،
أُذَكِّرُكُمُ
اللهَ فِي
أَهْلِ بَيْتِي،
أُذَكِّرُكُمُ
اللهَ فِي
أَهْلِ بَيْتِي"
فَقَالَ لَهُ
حُصَيْنٌ: وَمَنْ
أَهْلُ بَيْتِهِ؟
يَا زَيْدُ
أَلَيْسَ نِسَاؤُهُ
مِنْ أَهْلِ
بَيْتِهِ؟ قَالَ:
نِسَاؤُهُ مِنْ
أَهْلِ بَيْتِهِ،
وَلَكِنْ أَهْلُ
بَيْتِهِ مَنْ
حُرِمَ الصَّدَقَةَ
بَعْدَهُ، قَالَ:
وَمَنْ هُمْ؟
قَالَ: هُمْ
آلُ عَلِيٍّ
وَآلُ عَقِيلٍ،
وَآلُ جَعْفَرٍ،
وَآلُ عَبَّاسٍ
قَالَ: كُلُّ
هَؤُلَاءِ حُرِمَ
الصَّدَقَةَ؟
قَالَ: نَعَم.
অর্থ: একদিন রসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি খুম নামক
স্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে বক্তৃতা দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা
শেষে ওয়াজ-নসিহত করলেন। অতঃপর বললেন : শোনো হে লোক সকল! আমি তো কেবল একজন মানুষ,
অতি সত্ত্বরই আল্লাহর পক্ষ
থেকে প্রেরিত দূত (মৃত্যুর ফেরেশতা) আসবেন, আর আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেবো। আমি
তোমাদের নিকট ২টি ভারি জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন)।
এতে পথনির্দেশ এবং আলোকবর্তিকা আছে। অতএব তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অনুসরণ করো,
একে শক্ত করে আঁকড়ে রাখো।
তারপর তিনি কুরআনের প্রতি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন। এরপর বলেন,
আর [অন্যটি হলো] আমার আহলে
বাইত [আলি, ফাতেমা,
হাসান ও হোসাইন (রা.)]। আর
আমি আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমার আহলে
বাইতের ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি,
আমার আহলে বাইতের বিষয়ে
তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি …।[3]
ইমাম বুখারি (রহ.)---আবু বকর সিদ্দিক (রা.) হতে বর্ণনা করেন যে,
আবু বকর সিদ্দিক
(রা.)
বলেছেন : তোমরা
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর মত তাঁর আহলে বাইতকে সম্মান, শ্রদ্ধা ও সমীহ কর।
ছহিহ হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে যে, আবু বকর সিদ্দিক (রা.) আলি (রা.)-কে বলেন, ‘আমি আমার আত্মীয়দের চেয়ে রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আত্মীয়দেরকে অধিক ভালবাসি।’
ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) আব্বাস(রা.)-কে বলেছেন, ‘তোমার ইসলাম গ্রহণ করা আমার নিকট আমার পিতা খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ করার চেয়েও প্রিয়। কেননা রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ করার চেয়ে তোমার ইসলাম গ্রহণ করা অধিক প্রিয় ছিল।’
অতত্রব প্রত্যেকের উচিত হজরত আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)-এর মত রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আত্মীয়-স্বজনকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা করা। যেমন তাঁরা করতেন এই জন্যই তাঁরা নবি ও রসূলগণের পরে সকল সাহাবা ও মুমিনগণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ।[4]
নবি বংশ-পরিবারের বিশেষত্ব : নবি বংশ ও তাঁর পরিবার-পরিজনের জন্য জাকাত-ফেতরা-সদকার
মাল খাওয়া জায়েজ নয়। এমনকি তাঁদের
আজাদকৃত দাসের জন্যও সদকা খাওয়া জায়েজ নয়। যেমন পবিত্র হাদিসে এসেছে- قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: أَخَذَ الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، تَمْرَةً مِنْ تَمْرِ الصَّدَقَةِ، فَجَعَلَهَا فِي فِيهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كِخْ كِخْ» لِيَطْرَحَهَا، ثُمَّ قَالَ: «أَمَا شَعَرْتَ أَنَّا لاَ نَأْكُلُ الصَّدَقَةَ»
অর্থ: আবু হুরাইরা (রা.)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাসান ইবনে আলি
(রা.) সদকার একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলেন। নবি (ﷺ) তা
ফেলে দেওয়ার জন্য ওয়াক ওয়াক (বমির পূর্বের আওয়াজের মত) বললেন। অতঃপর বললেন, তুমি
কি জান না যে, আমরা সদকা ভক্ষণ করি না।[5]
সাহাবিগণও নবি-পরিবার বলতে বুঝতেন, যাদের জন্য সদকা হারাম। আর
তারা হলেন, বনু হাশেম ও বনু মুত্তালিব। এর পরিবর্তে তারা
গনিমতের এক-পঞ্চমাংশ পেতেন। যেমন-আল্লাহ তাআলা বলেন, আর এ কথাও জেনে রাখ যে, কোনো বস্তু-সামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনিমত হিসেবে পাবে, তার এক পঞ্চমাংশ হল আল্লাহর জন্য, রসূলের জন্য,
তাঁর নিকটাত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং এতিম-অসহায় ও মুসাফিরের জন্য।[6]
জুবায়ের ইবনে মুতইম রা. বলেন, একবার আমি ও ওসমান
ইবনে আফফান নবিজির কাছে গিয়ে বললাম, আল্লাহর রাসুল, আপনি বনু মুত্তালিবকে দান করেছেন, আমাদের দিচ্ছেন
না। অথচ তারা ও আমরা আপনার বংশে এক স্তরের। তিনি বললেন, না,
বরং বনু মুত্তালিব ও বনু হাশিম এক।[7]
হজরত আলি (রা.) –এর শাহাদত: এ বিষয়ে সবাই একমত যে, ৪০ হিজরি সনের ১৭ রমজান জুমাআবার হজরত আলি (রা.)কে আঘাত করা হয়। তবে তার ওফাত দিবস সম্পর্কে কেউ বলেছেন, ওই দিনই তার ওফাত হয়েছে। কেউ বলেছেন, ১৯ রমজান রবিবারে তার ওফাত হয়েছেন। তখন তার বয়স ৫৮ কিংবা ৫৯ বছর। কেউ বলেছেন, তখন তার বয়স ছিল ৬৩ বছর। এটিই প্রসিদ্ধ মত। মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া আবু জাফর বাকির, আবু ইসহাক সুবাঈ এবং আবু বকর আইয়াশ রহ. শেষ অভিমতটি সমর্থন করেছেন। আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৮ম
খণ্ড; ৩৭ পৃষ্ঠা,হাফেজ ইবনে কাসির
(রহ.),ই.ফাই
ইসলামের পঞ্চম
খলিফা কে হজরত হাসান রা. না হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ
রহ.?
হাদিস শরিফ
দ্বারা প্রমাণিত যে হজরত হাসান রা. খুলাফা রাশেদার অন্তর্ভুক্ত। হজরত ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহ. কিংবা হজরত মুআবিয়া রা. নয়।
فالخليفة
الراشد الخامس هو الحسن بن علي رضي الله تعالى عنه، ولا شك أن معاوية رضي الله عنه
وعمر بن عبد العزيز كانا عادلين راشدين
পঞ্চম খলিফা রাশেদ হলেন আল-হাসান বিন আলি রা এবং এতে কোন
সন্দেহ নেই যে মুয়াবিয়া রা. এবং ওমর বিন আবদুল আজিজ ন্যায়পরায়ণ, সঠিকভাবে পরিচালিত ছিলেন।
أما
خلافة الحسن فقد ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: الخلافة في أمتي ثلاثون
سنة، ثم يكون بعد ذلك الملك... رواه أحمد والترمذي.
অর্থাৎ আর হজরত ইমাম হাসান রা এর খিলাফত নাবি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত। যেমন,
حَدَّثَنَا
سَوَّارُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ
سَعِيدِ بْنِ جُمْهَانَ، عَنْ سَفِينَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله
عليه وسلم " خِلاَفَةُ النُّبُوَّةِ ثَلاَثُونَ سَنَةً ثُمَّ يُؤْتِي اللَّهُ
الْمُلْكَ - أَوْ مُلْكَهُ - مَنْ يَشَاءُ " . قَالَ سَعِيدٌ قَالَ لِي
سَفِينَةُ أَمْسِكْ عَلَيْكَ أَبَا بَكْرٍ سَنَتَيْنِ وَعُمَرَ عَشْرًا
وَعُثْمَانَ اثْنَتَىْ عَشْرَةَ وَعَلِيٌّ كَذَا . قَالَ سَعِيدٌ قُلْتُ
لِسَفِينَةَ إِنَّ هَؤُلاَءِ يَزْعُمُونَ أَنَّ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلاَمُ لَمْ
يَكُنْ بِخَلِيفَةٍ . قَالَ كَذَبَتْ أَسْتَاهُ بَنِي الزَّرْقَاءِ يَعْنِي بَنِي
مَرْوَانَ .
সওয়ার ইবনে
আব্দুল্লাহ (রাহঃ) .... সাফীনা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ নবুওয়াতের খিলাফত এর সময়কাল
হলো ত্রিশ বছর। এরপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রাজত্ব বা বাদশাহী দান করবেন।
রাবী সাঈদ
(রাহঃ) বলেনঃ সাফীনা (রাযিঃ) আমাকে বলেনঃ তুমি হিসাব কর। আবু বকর (রাযিঃ)-এর শাসনকাল
হবে দু’ বছর, উমর (রাযিঃ)-এর
দশ বছর, উছমান (রাযিঃ)-এর বার বছর এবং আলী (রাযিঃ)-এর অর্থাৎ ছ’বছর।
রাবী সাঈদ
বলেনঃ তখন আমি সাফীনা (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞাসা করি যে, বনু-মারওয়ান
এরূপ ধারণা করে যে, আলী (রাযিঃ) খলীফাদের অন্তর্ভুক্ত
নন। তিনি বলেনঃ বনু-মারওয়ানরা মিথ্যা বলেছে।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৪৬-৪৬৪
তাহকীক: বিশুদ্ধ
(পারিভাষিক হাসান)
ব্যাখ্যা:
এ হাদিসের ব্যাখ্যা সম্পর্কে হাফিজ ইবনে হাজার রহ. বলেন,
قال
الحافظ في الفتح: والمراد به خلافة النبوة. اهـ، وقال القاضي: المراد بها الخلافة
التي لا يشوبها ملك بعده. وقال بن أبي العز في شرح الطحاوية: كانت خلافة أبي بكر
سنتين وثلاثة أشهر، وخلافة عمر عشر سنين ونصفاً، وخلافة عثمان اثنتي عشر سنة،
وخلافة علي أربع سنين وتسعة أشهر، وخلافة الحسن ستة أشهر، وأول ملوك المسلمين
معاوية رضي الله عنه، وهو خير ملوك المسلمين. انتهى
অর্থাৎ এ
দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খিলাফাতে নবুওয়া। এবং কাজি ইয়াজ রহ. বলেন, এ খিলাফত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সেটা পরবর্তী
বাদশাহীর সাথে কোন কোন সামঞ্জস্য নেই।
ইবনে আবি আজ রহ. শারহে তাহাবিতে বলেন,
হজরত আবু
বকর সিদ্দিক রা. খিলাফত ২ বছর ৩ মাস
হজরত ওমর
রা ১০ বছর ৬ মাস
হজরত ওসমান
রা. খিলাফত ১২ বছর
হজরত আলি
রা ৪ বছর ৯ মাস
আর হজরত হাসান
রা ৬ মাস।
আরশিফু মুলতাকি
আহলিল হাদিস -১৫৩/২৫৮, মাকতাবাতুশ শামেলা
قال
سَعيدُ بنُ جُمْهانَ: قال لي سَفينةُ: "أَمْسِكْ عليكَ"، أي: احْسُبْ
مَعي، "أبو بَكْرٍ"، أي: كانت مُدَّةُ خلافتِه، "سنَتينِ، وعُمَرُ
عشرًا، وعثمانُ اثْنَتِي عَشْرةَ، وعليٌّ كَذا"، أي: هذه سَنواتُ خِلافةِ
هؤلاء المَذْكورينَ، وقد اسْتَغْرقَتْ مُدَدُهم ثَلاثينَ سَنَةً، وعلى هذا تكونُ
مُدَّةُ خِلافةِ عليِّ بنِ أبي طالبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْه: سِتَّ سنواتٍ، وقد
أَحْصى البعضُ مُدَّةَ خِلافةِ الحَسَنِ بنِ عليٍّ سِتَّةَ أَشْهُرٍ، وبها تَمَّت
ثلاثون سَنَةً.
সাঈদ বিন
জুমহান বলেন, সাফিনাহ আমাকে বললেন: “আমি তোমাকে আঁকড়ে ধরেছি” অর্থ: আমার সাথে গণনা কর, “আবু বকর” অর্থাৎ: তাঁর খিলাফতের সময়কাল ছিল “দুই বছর, উমর দশ, উসমান বারো এবং আলী রা. এই, "অর্থ: এইগুলি
হল মতবিরোধের বছর, এইগুলি পূর্বোক্তগুলি, এবং তাদের মেয়াদ ত্রিশ বছর স্থায়ী হয়েছিল এবং সেই অনুসারে আলী ইবনে আবি তালিবের
খিলাফত হবে এবং ইমাম হাসান (রা.) এর দ্বারা ত্রিশ বছর খিলাফত পূর্ণ হয়েছে। মুজিবাতুল
ইনজিমামি, লিলদাওলাতিল ইসলামিয়াতি ফিল ইরাক
ওয়াশ শাম- শায়েখ আবুল হাসান আল- আজদি হাফিজাহুল্লাহ, প্রকাশকাল -১৪৩৪ হিজরি,২০১৩ ইংরেজি
وأما عمر
بن عبد العزيز رحمه الله فقد تولى الحكم سنة 99 هـ. وقد كان عادلاً عالماً ورعاً
زاهداً، وقد سماه كثير من العلماء الخليفة الخامس لأنه جاء في زمن ابتعد الولاة
فيه عن الهدي النبوي في الحكم وعن سيرة الخلفاء الراشدين فجدد مسيرتهم، أو لعله
لقلة فترة خلافة الحسن رضي الله عنه، ولاضطراب أمر المسلمين في هذه الفترة.
ওমর বিন আবদুল
আজিজ রহ. তিনি নিরানব্বই হিজরিতে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন
ন্যায়পরায়ণ, পণ্ডিত, ধার্মিক ও তপস্বী এবং অনেক পণ্ডিত তাকে পঞ্চম খলিফা বলেছেন কারণ তিনি এমন এক সময়ে
এসেছিলেন যখন শাসকরা শাসনে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দিকনির্দেশনা থেকে এবং প্রাপ্তবয়স্ক খলিফাদের
জীবনী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন, তাই তিনি তাদের পথকে নবায়ন
করেছিলেন। কিতাবু শারহি সহিহ মুসলিম-১৭/১২; হাসান আবুল আশবালি, আয-যহিরি, মাকতাবাতুশ শামেলা
হজরত হাসান ইবনে আলি (রা.) –এর খিলাফাত: হজরত আলি (রা.) আহত অবস্থায় লোকজন তাকে বলেছিল হে আমিরুল মুমিনিন! আপনার পরে খলিফা কে হবে তা নির্ধারণ করে দিন। তিনি উত্তরে বলেছিলেন না, তা আমি করব না, বরং রসূলুল্লাহ (ﷺ) তোমাদেরকে যেমন খলিফা নির্ধারণ না করে রেখে গিয়েছিলেন আমিও তেমনি রেখে যাব। মহান আল্লাহ যদি তোমাদের কল্যাণ চান, তাহলে তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠতম, তার খলিফা নির্ধারণে তিনি তোমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে দিবেন, যেমন রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পরে উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির খলিফা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছিলেন।
তিনি ইন্তেকাল করলেন। হজরত ইমা হাসান (রা.)
তার জানাযার নামাজে ইমামতি করলেন। তিনি ছিলেন হজরত আলি (রা.) –এর বড় পুত্র। রাজধানীতে তাকে দাফন করা হল , এটিই বিশুদ্ধ মত। আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৮ম খণ্ড; ৪১ পৃষ্ঠা, হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.), ই.ফা.
হজরত আলি (রা.)
–এর দাফন-কাফন বিষয়াদি সমাপ্ত
করার পর সর্বপ্রথম কায়স ইবনে সাদ ইবনে ওবাদা (রা.) হজরত হাসান (রা.)-এর সম্মুখে এলেন
এবং বললেন, আপনার হাত প্রসারিত করুন। আল্লাহর কিতাব ও রসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সুন্নাত বাস্তবায়নের মর্মে আমি আপনার হাতে
বায়আত করব। হজরত হাসান (রা.) কিছুই বললেন না। তারপর কায়স ইবনে সাদ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার হাতে বায়আত করেন। এরপর অন্যান্য লোকজন তার হাতে বায়আত করে। এটি ঠিক সেদিনেই অনুষ্ঠিত হয় যে দিন হজরত আলি (রা.)-এর ওফাত হয়।
মূলত যেদিন হজরত আলি (রা.) আক্রান্ত ও আহত হয়েছিলেন, সেদিনই তার ওফাত হয়েছিল। দিনটি ছিল ৪০ হিজরি ১৭ রমজান জুমাআবার। কারও মতে তার ওফাত হয় রমজানের শেষ
দশ দিনের কোন একদিন। বস্তুত সেদিন
হতে হজরত হাসান (রা.) খলিফা হিসেবে কাজ
শুরু করেন। কায়স ইবনে সাদ ছিলেন আজারবাইজানের
গভর্নর। তার অধীনের ছিল চল্লিশ হাজার লড়াকু
যোদ্ধা। তারা সকলে আমৃত্যু হজরত আলি (রা.) –এর প্রতি আনুগত্যের শপথ করেছিল।
হজরত আলি (রা.)-এর ইন্তিকালের পর গভর্নর কায়স ইবনে সাদ নব নিযুক্ত খলিফা হজরত হাসান
(রা.)-কে সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে
চাপ দিতে লাগলেন। এক পর্যায়ে হজরত হাসান (রা.)
গভর্নর কায়সকে বরখাস্ত করে তার স্থলে উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্বাস
(রা.)-কে আজারবাইজানের গভর্নর নিযুক্ত করেন। কারও বিরদ্ধে যুদ্ধ করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু অন্যদের অভিমতই জয়ী হল। তিনি সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনায় রাজি হলেন। জনসাধারণ বিশাল যুদ্ধ সমাবেশ একত্রিত হল। ইতোপূর্বে এত বড় যোদ্ধা দল দেখা যায়নি, শোনাও যায়নি।
তখন মাদাইনের
গভর্নর ছিল তারাই নিযুক্ত সাদ ইবনে মাসউদ সাকাফি। তিনি ছিলেন সেনাপতি আবু উবায়দার ভাই। এ সময় দুর্ভাগা মুখতার ইবনে আবু উবায়দ তার চাচা মাদাইনের গভর্নর
সাদ ইবনে মাসউদকে বলল, চাচা! আপনি কি ধন-সম্পদের অধিকারী হতে চান। সাদ বললেন, তা কিভাবে? মুখতার বলল
তা এভাবে যে, আপনি খলিফা হাসান (রা.)কে বন্দী করে মুয়াবিয়া (রা.)-এর
নিকট পাঠিয়ে দিবেন। উত্তরে তার চাচা বললেন, ওহে দুর্ভাগা আল্লাহ তোকে এবং তোর পরিকল্পনাকে
ব্যর্থ করে দিন, আমি কি রসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর দৌহিত্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করব?
হজরত হাসান (রা.) যখন তার নিজের সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙখলা ও তার প্রতি
অসন্তুষ্টি লক্ষ করলেন, তখন মীমাংসায় রাজি করানোর জন্যে হজরত
মুআবিয়া (রা.) –এর নিকট চিটি লিখলেন। হজরত মুআবিয়া (রা.) তখন সিরিয়াবাসীদেরকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রা করে একটি
বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। হজরত মুআবিয়া (রা.) তার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি
হিসেবে আব্দুল্লাহ ইবনে আমির ও আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাকে প্রেরণ করলেন। তারা কুফা এসে হজরত হাসান (রা.) –এর সাথে সাক্ষাত করেন। বিভিন্ন শর্তে মীমাংসা ও আপোষরফা করলেন এবং মুআবিয়া (রা.) একক খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন।
হজরত হাসান (রা.)-এর ভাই হজরত হুসাইন (রা.)
এই সিদ্ধান্তে তার ভ্রাতা হজরত হাসানের সমালোচনা করে এবং তিনি এই মীমাংসা
মেনে নেননি। অবশ্য সার্বিক বিবেচনায় হজরত হাসান (রা.) এর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। এ বিষয়ে প্রমাণাদি আমরা অবিলম্বে উল্লেখ করব।
হজরত হাসান (রা.) তার নিযুক্ত অগ্রবর্তী দলের সেনাপতি কায়স ইবনে সাদ
এর প্রতি লোক পাঠালেন এই মর্মে যে, সে যেন মীমাংসা মেনে নেয়। কিন্তু সেনাপতি কায়স এ মীমাংসা অস্বীকার করলেন। ফলে সে হজরত হাসান এবং মুআবিয়া (রা.) উভয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং তার অনুগত সৈন্য নিয়ে
পৃথক সেনা দল গঠন করে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পৃথক হয়ে যায়। অবশ্য অল্প কিছুদিন র সে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে এবং মুআবিয়া (রা.)- এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তার হাতে বায়আত করে।
প্রসিদ্ধ অভিমত এই যে, খলিফা হিসেবে হজরত মুআবিয়া (রা.) –এর প্রতি হজরত হাসান (রা.) আনুগত্যের এ ঘটনা ঘটে ৪০ হিজরি সনে। এজন্য এই বছরটি ‘ঐক্যের বছর’ নামে প্রসিদ্ধ । যেহেতু এই বছর খলিফারূপে হজরত মুআবিয়া (রা.) –এর পক্ষে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়। অবশ্য ইবনে জারীর ও অন্যান্য কতক ইতিহাস বিশারদের মতে এই ঘটনা
ঘটেছিল ৪১ হিজরি সনের শুরুতে। এই বছর আমরি-ই হজ হয়ে জনসাধারন নিয়ে হজ সম্পদন করেন হজরত
মুগিরা বিন শুবা (রা.)। আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৮ম
খণ্ড; ৪১ পৃষ্ঠা,
হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.), ই.ফা.
হজরত হাসানের
নিয়মানুবর্তিতা ও ইবনে মুলজিমকে হত্যা:
হজরত আলি
রা. এর হত্যাকারী আব্দুর রহমান বিন মুলজিমকে সামনে আনা হলো। সে হজরত লা. কে বলল,
হাসান আপনি কি একটি প্রস্তাবের ওপর চিন্তাভাবনা করতে রাজি আছেন?
আল্লাহর কসম, আমি যখনই আল্লাহর সাথে কোনো অঙ্গীকার
করেছি, তা পূর্ণ করেই ছেড়েছি। আর আমি কাবার হাতিমে বসে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছিলাম, হয় আমি আলি ও মুআবিয়া উভয়কে হত্যা করব, না হয় আমি নিহত
হবো। এখন যদি আপনি ভালা মনে করেন, তা হলে আমাকে সুযোগ দিন, আমি মুআবিয়কে নিঃশেষ করে দিই। তারপর যদি আমি বেঁচে যাই, তা হলে ফিরে এসে নিজেকে আপনার হাতে ন্যস্ত করবো। কিনতু হজরত হাসান রা. তার প্রস্তাব অস্বীকার করে তার জন্য মৃত্যুদণ্ডর আদেশ জরি করেন। ফলে তাকে হত্যা করা হয়। তারিখুত তারাবি, ৫/১৪৮,১৪৯;
মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস- ৫ম খণ্ড,
১৮০ পৃষ্ঠা, মাওলানা ইসমাইল রেহান, ইত্তিহাদ প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রকাশকাল-ফেব্রয়ারি ২০২১ ঈসায়ি
হজরত হাসান (রা.) কি ভীত হয়ে সন্ধি করেছিরেন?
হজরত মুআবিয়া (রা.) হজরত আলি
(রা.) এর শাহাদতের পর ইলহা (বায়তুল মাকদিসে) শামবাসী থেকে তার খেলাফতের বায়আত গ্রহণ
করেছিলেন। তখন তাকে আমিরুল মুমিনিন বলা শুরু
হয়েছিল।
মুসলিম বিশ্বের
রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি ছিল এক নতুন পরিবর্তন। কেননা হজরত আলি রা. এর জীবদ্দশায় হজরত আমুআবিয়া রা. খেলাফতের দাবি করেননি। তখন থাকে শুধু আমি বলা হতো।
খেলাফতের
দুজন দাবিদারের উপস্থিতিতে ঐকমত্যপৃষ্ট খিলাফত প্রতিষ্ঠার তিনটি উপায় ছিল। যথা:
(০১) শামের লোকদের হজরত হাসান রা. এর হাতে বায়আত হয়ে যাওয়া।
(০২) শামদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদেরকে একটিখিলাফতের অধীনে
আনার চেষ্টা করা।
(০৩) খিলাফতের পদ ছেড়ে দিয়ে হজরত মুআবিয়া লা. কে খলিফা হিসেবে মেনে নেওয়া।
শামরা যদি অন্য কারো হাতে বায়আত হতে
রাজি থাকত, তা হলে তো হজররত আলির হাতেই হতো। তাই প্রথম উপায় বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভবনা ছিল না। এখন হজরত হাসানের সম্মুখে একটি বিরাট পরীক্ষা এসে
দাঁড়াল। তিনি
এই কঠিক পরিস্থিতিতে কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন?
তখন হজরত হাসান (রা.) সিদ্ধান্ত নিলেন, উম্মাহকে
ঐক্যবদ্ধ করার জন্য নিজের ক্ষমতা বিসর্জন দিতে তিনি কুন্ঠাবোধ করবেব না।
হজরত হাসানের এ সিদ্ধান্তে কেনা দুর্বলতা বা কাপুরসতা
ছিল না। সহিহ বর্ণনার ভাষ্য অনুযায়ী হজরত হাসান
রা. পূর্ণ ক্ষমতা ও মক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও উক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করেছিলেন।
ইরাকিদের যে গোষ্ঠি শামিদের সাথে সন্ধির
পক্ষে ছিল না, তারা বায়আতের এ কথাগুলো শুনে ছটফট করতে লাগল এবং
বলতে লাগল, হজরত হাসান আমাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লোক নন,
তিনি তো লড়াই করতেই চান না। সূত্র: তারিখুত
তারাবি-৫/১৬২; মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস- ৫ম খণ্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা, মাওলানা ইসমাইল
রেহান, ইত্তিহাদ প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা,
প্রকাশকাল-ফেব্রয়ারি ২০২১ ঈসায়ি
ইরাকিদের
উদ্দেশে হজরত হাসান রা. এর ভাষণ এবং দাঙ্গাবাজদের ধৃষ্ঠতা:
হজরত হাসান
রা. ইরাকের লোকদের হজরত মুআবিয়া রা. এর পক্ষে
একমত করার জন্য ‘সাবাত’ নামক স্থানে সমবেত করেন। তার উন্মুক্ত সমাবেশে তিনি বাসন দেন। তিনি অত্যন্ত আবেগ ও দরদের সাথে বলেন, আমি নিজের জন্য যেমন কল্যাণ কামনা করি, আপনাদের জন্যও
তেমনই কামনা করি। আমি একটি
সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনারা আমার প্রস্তাব ফেলে দেবেন না
নিঃসন্দেহে উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়ে বহুগুণ উত্তম।
হজরত হাসান
কেবল এটুকুই বলেছেন, এর মদ্যেই আশপাশের খারেজি ও সাবায়ি চিন্তা-চেতনার বহু মানুস একযোগে হইচই শুরু করল। তারা বলতে লাগলো, হাসানও তার পিতার
মতো কাফের হয়ে গেছে। কেই তো হাসানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। মুজামুল কাবির লিত কাবারানি-৩/৯৩;
মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস- ৫ম খণ্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা, মাওলানা ইসমাইল রেহান, ইত্তিহাদ প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, প্রকাশকাল-ফেব্রয়ারি ২০২১ ঈসায়ি
হজরত হাসানের
উপর প্রাণঘাতী আক্রমণ:
হজরত হাসান (রা.) কায়স ইবনে সাদ (রা.)-কে বার হাজার সৈন্য সমন্বয়ে গঠিত সম্মুখ শাখার দায়িত্ব দিলেন। আর তিনি নিজে তার পিছনে পেছনে অবশিষ্ট সৈন্যের
নেতৃত্ব দিয়ে মুআবিয়া (রা.) ও সিরিয়াবাসীদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে সিরিয়া অভিমুখে যাত্রা করলেন। মাদাইন অতিক্রম করে তার যাত্রা বিরতি ও শিবির স্থাপন
করলেন। সম্মুখ শাখার সৈন্যদেরকে সম্মুখ পানে
এগিয়ে যেতে বললেন। হজরত হাসান (রা.) সৈন্য পরিবেষ্টিত অবস্থায় মাদাইনের উপকণ্ঠে অবস্থান
করছিলেন। এমন সময়ে জনৈক চিৎকারকারী লোক, সজোরে চিৎকার দিয়ে বলল, সম্মুখ সেনাদলের সেনাপতি কায়স
ইবনে সাদ (রা.) নিহত হয়েছেন। এ ঘোষলা শনে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশৃঙখলা সৃষ্টি
হয়। একে অন্যের মালপত্র লুপপাট করে রিতে
লাগল। এমনকি তারা হজরত হাসান (রা.)-এর তাঁবুর সরঞ্জমাদিও খুলে নিতে লাগল। তিনি যখন সওয়ারীতে আরোহণ করছিলেন কে একজন এসে তাকে
বর্শার আঘাত করে। এমন পরিস্থিতি দেখে হজরত হাসান (রা.) ভীষণভাবে বিরক্ত হয়ে পড়েন। তিনি সওয়ারীতে চড়ে মদীনার সুরক্ষিত প্রাসাদ ‘কাসর আল-আবয়াদ’ বা শ্বেত প্রাসাদে আশ্রয়
নিলেন। আহত অবস্থায় তিনি সেখানেই অবস্থান
করছিলেন। আল-বিদায়া ওয়ান
নিহায়া-৮ম খণ্ড;
৪০ পৃষ্ঠা, হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.), ই.ফা.
সহিহ বুখারিতে
সন্ধির ঘটনা:
بَابُ
قَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ، وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ
بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ عَظِيمَتَيْنِ» وَقَوْلِهِ جَلَّ ذِكْرُهُ: {فَأَصْلِحُوا
بَيْنَهُمَا} [الحجرات: 9] "
2704 - حَدَّثَنَا
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ:
سَمِعْتُ الحَسَنَ، يَقُولُ: اسْتَقْبَلَ وَاللَّهِ الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ
مُعَاوِيَةَ بِكَتَائِبَ أَمْثَالِ الجِبَالِ، فَقَالَ عَمْرُو بْنُ العَاصِ:
إِنِّي لَأَرَى كَتَائِبَ لاَ تُوَلِّي حَتَّى تَقْتُلَ أَقْرَانَهَا، فَقَالَ
لَهُ مُعَاوِيَةُ وَكَانَ وَاللَّهِ خَيْرَ الرَّجُلَيْنِ: أَيْ عَمْرُو إِنْ
قَتَلَ هَؤُلاَءِ هَؤُلاَءِ، وَهَؤُلاَءِ هَؤُلاَءِ مَنْ لِي بِأُمُورِ النَّاسِ
مَنْ لِي بِنِسَائِهِمْ مَنْ لِي بِضَيْعَتِهِمْ، فَبَعَثَ إِلَيْهِ رَجُلَيْنِ
مِنْ قُرَيْشٍ مِنْ بَنِي عَبْدِ شَمْسٍ: عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ سَمُرَةَ،
وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَامِرِ بْنِ كُرَيْزٍ، فَقَالَ: اذْهَبَا إِلَى هَذَا
الرَّجُلِ، فَاعْرِضَا عَلَيْهِ، وَقُولاَ لَهُ: وَاطْلُبَا إِلَيْهِ،
فَأَتَيَاهُ، فَدَخَلاَ عَلَيْهِ فَتَكَلَّمَا، وَقَالاَ لَهُ: فَطَلَبَا
إِلَيْهِ، فَقَالَ لَهُمَا الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ: إِنَّا بَنُو عَبْدِ
المُطَّلِبِ، قَدْ أَصَبْنَا مِنْ هَذَا المَالِ، وَإِنَّ هَذِهِ الأُمَّةَ قَدْ
عَاثَتْ فِي دِمَائِهَا، قَالاَ: فَإِنَّهُ يَعْرِضُ عَلَيْكَ كَذَا وَكَذَا،
وَيَطْلُبُ إِلَيْكَ وَيَسْأَلُكَ قَالَ: فَمَنْ لِي بِهَذَا، قَالاَ: نَحْنُ لَكَ
بِهِ، فَمَا سَأَلَهُمَا شَيْئًا إِلَّا قَالاَ: نَحْنُ لَكَ بِهِ، فَصَالَحَهُ،
فَقَالَ الحَسَنُ: وَلَقَدْ سَمِعْتُ أَبَا بَكْرَةَ يَقُولُ: رَأَيْتُ رَسُولَ
اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى المِنْبَرِ وَالحَسَنُ بْنُ
عَلِيٍّ إِلَى جَنْبِهِ، وَهُوَ يُقْبِلُ عَلَى النَّاسِ مَرَّةً، وَعَلَيْهِ
أُخْرَى وَيَقُولُ: «إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ
بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ عَظِيمَتَيْنِ مِنَ المُسْلِمِينَ» ، قَالَ أَبُو عَبْدِ
اللَّهِ: " قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ: إِنَّمَا ثَبَتَ لَنَا
سَمَاعُ الحَسَنِ مِنْ أَبِي بَكْرَةَ، بِهَذَا الحَدِيثِ
"
অধ্যয়: হাসান ইবনে আলী (রাযিঃ) সম্পর্কে নবী (ﷺ) এর উক্তিঃ আমার এ সন্তনটি নেতৃস্থানীয় । সম্ভবত
আল্লাহ এর মাধ্যমে দু’টি বড় দলের মাঝে সন্ধি স্থাপন করাবেন।
আর আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তোমরা তাদের উভয় দলের মাঝে মীমাংসা করে দাও। (৪৯ঃ ৯)
২৫২৩। আব্দুল্লাহ
ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) .... হাসান (বসরী) (রাহঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, হাসান ইবনে আলী (রাযিঃ) পর্বত সদৃশ সেনাদল
নিয়ে মুআবিয়া (রাযিঃ) এর মুখোমুখি হলেন। আমর ইবনে আ'স (রাযিঃ)
বললেন, আমি এমন সেনাদল দেখতে পাচ্ছি যারা প্রতিপক্ষকে হত্যা না
করে ফিরে যাবে না। মুআবিয়া (রাযিঃ) তখন বললেন, আল্লাহর কসম! আর
(মুআবিয়া ও আমর ইবনে আস) উভয়ের মধ্যে মুআবিয়া (রাযিঃ) ছিলেন উত্তম ব্যক্তি। ‘হে আমর! এরা ওদের এবং ওরা এদের হত্যা করলে আমি কাকে দিয়ে লোকের
সমস্যার সমাধান করব? তাদের নারীদের কে তত্ত্বাবধান করবে?
তাদের দূর্বল ও শিশুদের কে রক্ষণাবেক্ষণ করবে? তারপর তিনি কুরাইশের বনু আব্দে শামস শাখার দু’জন
আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ ও আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিঃ) কে হাসান (রাযিঃ) এর কাছে
পাঠালেন। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা
উভয়ে এই লোকটির কাছে যাও এবং তার কাছে (সন্ধির) প্রস্তাব পেশ করো, তাঁর সঙ্গে আলোচনা কর ও তার বক্তব্য জানতে চেষ্টা কর।’
তারা হাসান
(রাযিঃ) এর কাছে গেলেন এবং তার সঙ্গে কখা বললেন, আলাপ-আলোচনা করলেন এবং তার বক্তব্য জানলেন। হাসান ইবনে আলী (রাযিঃ) তাদের বললেন,
আমরা আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান, এই সম্পদ (বায়তুল
মালের) আমরা পেয়েছি। আর এরা রক্তপাতে লিপ্ত হয়েছে।’ তারা উভয়ে বললেন, (মুআবিয়া (রাযিঃ) আপনার কাছে এরূপ বক্তব্য
পেশ করেছেন। আর আপনার বক্তব্যও জানতে চেয়েছেন ও সন্ধি কামনা করেছেন। তিনি বললেন,
‘এ দায়িত্ব কে নেবে? তারা বললেন, আমরা আপনার জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণ করছি।’ এরপর তিনি তাদের কাছে যে সব প্রশ্ন করলেন, তারা (তার
জওয়াবে) বললেন, আমরা এ দায়িত্ব নিচ্ছি।’ তারপর তিনি তার সাথে সন্ধি করলেন।
হাসান (বসরী)
(রাহঃ) বলেন, আমি আবু বাকরা (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) কে আমি মিম্বরের
উপর দেখেছি, হাসান (রাযিঃ) তাঁর পাশে ছিলেন। তিনি একবার
লোকদের দিকে আর একবার তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, আমার
এ সন্তান নেতৃস্থানীয়। সম্ভবত তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুসলমানের দু’টি
বড় দলের মধ্যে মীমাংসা করাবেন।’ আবু আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) বলেন, আলী ইবনে আব্দুল্লাহ আমাকে
বলেছেন যে, এ হাদীসের মাধ্যমেই আবু বাকরা (রাযিঃ) থেকে হাসানের
শ্রুতি আমাদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে। তাখরিজ: সহীহ বুখারী ২৭০৪
সন্ধি চুক্তর
ঘোষণায় হজরত ইবনে ওমর রা. -এর অংশ গ্রহণ:
কুফার অদূর
শামগামী পতের পাশে অবস্থিত নুখাইলা নামক এলাকায় একটি সমাবেশ করে নিময়তান্ত্রিকভাবে
সন্ধির ঘোষণা করা হয়। তারপর একটি উন্মুক্ত সমাবেশের আয়োজনকরা
হয়। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ তাতে অংশগ্রহণ
করে।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.
প্রথম মনের ক্ষোভে এ সমাবেশে অংশ গ্রহণ করেননি। কিন্তু পরে তিনিও মদিনা থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি তার বোন হজরত হাফসা রা.
কে বলেছিলেন, আপনি কি দেখেছেন, মানুষ কী করছে? তারা এক্ষেত্রে আমাকে কোনো মূল্য দেয়নি।
হজরত হাফসা রা. সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন, এ সন্ধি থেকে দূরে থাকা আপনার
মর্যাদায় শোভা পায় না। এ সন্ধির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ (ﷺ)- এর উম্মতে ঐক্য ফিরিয়ে দিয়েছেন। আপনি আল্লাহর নবির শ্যালক এবং হজরত ওমর রা. –এর পুত্র। সুতরাং আপনি তাদের কাছে যান। তারা আপনার অপেক্ষা করছেন। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, আপনার না যাওয়ার কারণে আবার কোথাও কোনা মতভেদ
দেখা না দেয়।
এভাবে হজরত সাফিয়া রা. তাগিদ দিয়ে তাকে রওনা করিয়ে দেন এবং হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. ওই
সমাবেশে অংশ গ্রহণ করেন।
যখন উম্মাহর সকল বিশিষ্ট ব্যক্তি
সমবেত হন এবং সন্ধির সমস্ত ধারা-উপধারা চূড়ান্ত হয়, তখন হজরত মুআবিয়া রা.
হজরত হাসান রা. কে বলেন, উঠুক, ঘোষণা করে দিন যে, আপনি খেলাফতের
দায়িত্ব আমার হাতে সঁপে দিয়েছেন।
হজরত হাসান মিম্বারে আরোহণ করে বলেন,
সবচেয়ে বড় বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করা। আর সবচেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা হচ্ছে আল্লাহর নাফরমানি
করা। খেলাফতের বিষয়ে আমার ও মুআবিয়ার মধ্যে
মতভেদ ছিল। এক্ষেত্রে আমি যদি সত্যের উপর থেকে
থাকি, তাহলে উম্মাহর শান্তি ও নিরাপত্তা এবং রক্ত সংরক্ষিত রাখার জন্য
আমি আমার অধিকার ছেড়ে দিলাম। আর যদি অন্য কেউ বেশি অধিকার প্রাপ্ত হয়ে থাকে, তা হলে তার
অধিকার আমি তাকেই দিয়ে দিলাম।
তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন,
وَإِنْ
أَدْرِي لَعَلَّهُ فِتْنَةٌ لَّكُمْ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ
আমি জানি
না সম্ভবতঃ বিলম্বের মধ্যে তোমাদের জন্যে একটি পরীক্ষা এবং এক সময় পর্যন্ত ভোগ করার
সুযোগ। সূরা আম্বিয়া -১১১
এভাবে ক্ষমতার পালাবাদলের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর হজরত মুআবিয়া রা. বিশিষ্ট ব্যক্তিদের
সম্মুখে ভাষণ প্রদান করেন। তারপর তিনি কুফায় গমন করেন এবং লোকদের থেকে বায়আত গ্রহণ করেন। কিতাবুল মাগাযি , অধ্যায়,
খন্দকের যুদ্ধ, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,
হাদিস-৯৭৭৯, তারিখুত তারাবি-৫/১৬২; মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস-
৫ম খণ্ড, ১৮৭ পৃষ্ঠা, মাওলানা
ইসমাইল রেহান, ইত্তিহাদ প্রকাশনী, বাংলাবাজার
ঢাকা, প্রকাশকাল-ফেব্রয়ারি ২০২১ ঈসায়ি
ইমাম হাসান(রা.) মুসলমানদের
মাঝে রক্তপাত বন্ধ করার নিমিত্তে নিজ ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন
হজরত মুআবিয়া (রা.)-এর সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করার পর হজরত হাসান
(রা.) যখন কুফায় ফিরে এলেন, তখন আমির সাঈদ ইবনে নাতল নামে আমাদের এক লোক তাঁকে সম্বোধন করে বলল,
السلام عليك يا مذل المؤمنين ‘হে মুমিনদেরকে লাঞ্ছিতকারী! আপনাকে সালাম।’ হজরত হাসান(রা.) বললেন,
‘হে আবু আমির! এমন কথা বলো
না। আমি মুমিনদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত
করিনি বরং রাজত্বের লোভে মুমিনদেরকে হত্যা করাকে ঘৃণা করেছি।’
উক্ত ঘটনায়
তিনি ছিলেন পুন্যবান, সত্যানুসারী এবং প্রশংসিত
এ কাজের জন্য তিনি মানসিকভাবে
সামান্যও দুঃখিত কিংবা মর্মাহত
হননি। বরং তাতে
তিনি সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত ও আনন্দিত। তাঁর পরিবাবের সমর্থকদের
মধ্যে বহু লোক তাঁর
সমালোনা করেছে বটে। দীর্ঘ
সময় পর এ যুগেও
অনেক লোক ওই সমালোচনার
পথে চলেছে। বস্তুত
এই ঘটনার সত্য বিষয়
এই যে, ইমাম হাসান (রা.) রসূলে কারিম (ﷺ)-এর
হাদিসের অনুসরণ করেছেন এবং উম্মতের রক্তপাত বন্ধ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। হজরত হাসান (রা.)-এর এই আপোষ-রফাকে বহু আগেই করেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রশংসা করে গিয়েছেন। যেমন
হাদিস শরিফে এসেছে-
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ
رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُ، أَخْرَجَ
النَّبِيُّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ ذَاتَ
يَوْمٍ الحَسَنَ،
فَصَعِدَ بِهِ
عَلَى المِنْبَرِ،
فَقَالَ: «ابْنِي
هَذَا سَيِّدٌ،
وَلَعَلَّ اللَّهَ
أَنْ يُصْلِحَ
بِهِ بَيْنَ
فِئَتَيْنِ مِنَ
المُسْلِمِينَ»
অর্থ: হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,একদিন নবি কারিম (ﷺ)
হাসান (রা.)
কে নিয়ে বেরিয়ে এলেন
এবং তাঁকে সহ মিম্বারে
আরোহণ করলেন। অতঃপর
বললেন, আমার এ ছেলেটি সরদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে
বিবাদমান দুদল মুসলমানের মাঝে
সমঝোতা-মীমাংসা করিয়ে দিবেন।[8]
হজরত হাসান
বসরি (রহ.)বলেন,‘আল্লাহর কসম! হজরত হাসান (রা.) খেলাফতের দায়িত্ব
গ্রহণের পর শিঙ্গা লাগানোর শিঙ্গা পরিমাণ রক্তপাতও ঘটেনি।’
এভাবে হজরত হাসান (রা.) ধ্বংসশীল
এই দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করেছেন এবং এই উম্মতের রক্তপাত বন্ধের পথ অবলম্বন করেছেন। তিনি খেলাফতের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এবং রাজত্ব সোপর্দ করেছেন মুআবিয়া (রা.)-এর হাতে। ফলে সকলে এক শাসকের পেছনে ঐক্যবদ্ধ
হয়েছে।[9]
ইমাম হাসান (রা.) এর মানাকিব
বা গুণাবলী, বিশেষত্ব:
باب مَنَاقِبُ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ رضى الله عنهما قَالَ
نَافِعُ بْنُ جُبَيْرٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَانَقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَسَنَ
3747 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا
المُعْتَمِرُ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عُثْمَانَ، عَنْ
أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ كَانَ يَأْخُذُهُ وَالحَسَنَ وَيَقُولُ: «اللَّهُمَّ
إِنِّي أُحِبُّهُمَا فَأَحِبَّهُمَا» أَوْ كَمَا قَالَ
উসামা ইবনে যায়দ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) তাঁকে এবং হাসান (রাযিঃ) কে এক সাথে
কোলে তুলে নিয়ে বলতেন, হে আল্লাহ্! আমি এদের দু’জনকে মহব্বত করি, আপনিও এদেরকে মহব্বত করুন। অথবা এরূপ কিছু বলেছেন।
তাখরিজ: বুখারি- ৩৭৪৭ , হাসান ও হুসাইন (রাযিঃ) এর মর্যাদা। নাফি
ইবনে জুবাইর (রাহঃ) আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (ﷺ) হাসান (রাযিঃ) এর সাথে আলিঙ্গণ করেছেন
অধ্যায়।
3750 - حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ
اللَّهِ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ أَبِي حُسَيْنٍ، عَنِ ابْنِ
أَبِي مُلَيْكَةَ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ الحَارِثِ، قَالَ: رَأَيْتُ أَبَا بَكْرٍ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، وَحَمَلَ الحَسَنَ وَهُوَ يَقُولُ: «بِأَبِي شَبِيهٌ
بِالنَّبِيِّ، لَيْسَ شَبِيهٌ بِعَلِيٍّ» وَعَلِيٌّ يَضْحَكُ
উকবা ইবনে হারিস (রাযিঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু বকর
(রাযিঃ) কে দেখলাম, তিনি হাসান (রাযিঃ) কে কোলে তুলে নিলেন এবং
বলতে লাগলেন, এ-ত নবী (ﷺ) এর সদৃশ, আলীর সদৃশ নয়। তখন আলী
(রাযিঃ) (নিকটেই দাঁড়িয়ে) হাঁসছিলেন। তাখরিজ: বুখারি -৩৭৫৯
حَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى،
أَخْبَرَنَا هِشَامُ بْنُ يُوسُفَ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ
أَنَسٍ، وَقَالَ: عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ لزُّهْرِيِّ،
أَخْبَرَنِي َنَسٌ، قَالَ: «لَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَشْبَهَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ»
ইবরাহীম ইবনে মুসা (রাহঃ)
......... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) এর পরিবারে হাসান ইবনে আলী (রাযিঃ) এর চেয়ে
নবী (ﷺ) এর অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিলেন না। তাখরিজ: সহীহ বুখারি - ৩৭৫২
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلَانَ
قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الحَفَرِيُّ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ
أَبِي زِيَادٍ، عَنْ ابْنِ أَبِي نُعْمٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الحَسَنُ وَالحُسَيْنُ
سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الجَنَّةِ» حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ قَالَ:
حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، وَمُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ يَزِيدَ، نَحْوَهُ. هَذَا
حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ. وَابْنُ أَبِي نُعْمٍ هُوَ: عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ
أَبِي نُعْمٍ الْبَجَلِيُّ الْكُوفِيُّ ويكنى أبا الحكم
আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ হাসান ও হুসায়ন হল জান্নাতী যুবকদের
সর্দার। জামে' তিরমিযী, ৩৭৬৮)
নোট: সুফইয়ান ইবনে ওয়াকী (রাহঃ)... ইয়াযীদ (রাহঃ) সূত্রে অনুরূপ বর্নিত
আছে।
এ হাদীসটি হাসান-সাহীহ।
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ،
وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، قَالَا: حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ قَالَ:
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ يَعْقُوبَ الزَّمْعِيُّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي
بَكْرِ بْنِ زَيْدِ بْنِ المُهَاجِرِ قَالَ: أَخْبَرَنِي مُسْلِمُ بْنُ أَبِي
سَهْلٍ النَّبَّالُ قَالَ: أَخْبَرَنِي الحَسَنُ بْنُ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ
قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبِي أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ، قَالَ: طَرَقْتُ النَّبِيَّ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ فِي بَعْضِ الحَاجَةِ فَخَرَجَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُشْتَمِلٌ عَلَى شَيْءٍ لَا
أَدْرِي مَا هُوَ، فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنْ حَاجَتِي. قُلْتُ: مَا هَذَا الَّذِي
أَنْتَ مُشْتَمِلٌ عَلَيْهِ؟ فَكَشَفَهُ فَإِذَا حَسَنٌ وَحُسَيْنٌ عَلَى
وَرِكَيْهِ، فَقَالَ: «هَذَانِ ابْنَايَ وَابْنَا ابْنَتِيَ، اللَّهُمَّ إِنِّي
أُحِبُّهُمَا فَأَحِبَّهُمَا وَأَحِبَّ مَنْ يُحِبُّهُمَا». «هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ
غَرِيبٌ»
حدثنا سفيان بن وكيع، وعبد بن حميد،
قالا: حدثنا خالد بن مخلد قال: حدثنا موسى بن يعقوب الزمعي، عن عبد الله بن أبي
بكر بن زيد بن المهاجر قال: أخبرني مسلم بن أبي سهل النبال قال: أخبرني الحسن بن
أسامة بن زيد قال: أخبرني أبي أسامة بن زيد، قال: طرقت النبي صلى الله عليه وسلم
ذات ليلة في بعض الحاجة فخرج النبي صلى الله عليه وسلم وهو مشتمل على شيء لا أدري
ما هو، فلما فرغت من حاجتي. قلت: ما هذا الذي أنت مشتمل عليه؟ فكشفه فإذا حسن
وحسين على وركيه، فقال: «هذان ابناي وابنا ابنتي، اللهم إني أحبهما فأحبهما وأحب
من يحبهما». «هذا حديث حسن غريب»
সুফইয়ান ইব্ন ওয়াকী' ও আব্দ ইব্ন হুমায়দ (রাহঃ)... উসামা ইবন যায়দ (রাযিঃ) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কাছে কোন এক প্রয়োজনে গেলাম। নবী (ﷺ) কোন একটি বস্তু পেঁচিয়ে ঘর থেকে বের হলেন।
আমি বুঝতে পারলাম না বস্তুটি কি? আমার কাজ শেষ হওয়ার পর আমি তাঁকে বললামঃ আপনি এটা কি পেঁচিয়ে নিয়ে এসেছেন?
তিনি তাঁর চাদর উন্মোচন করলেন। তখন তাঁর দুই উরূতে হাসান আর হুসায়ন
(রাযিঃ) ছিলেন। তিনি বললেনঃ এরা দু'জন হলো আমার সন্তান ও আমার
কন্যার সন্তান। হে আল্লাহ্! আমি এদের দু’জনকে ভালবাসি তুমি তাদের উভয়কে ভালবাস এবং যারা এ দু'জনকে ভালবাসে, তাদেরও তুমি ভালবাস। জামে' তিরমিযী,
হাদীস নং ৩৭৬৯ (আন্তর্জাতিক নং ৩৭৬৯); পরিচ্ছেদ
: হাসান এবং হুসায়ন (রাযিঃ)-এর গুণাবলী
নোট: এ হাদীসটি হাসান-গারীব ।
حَدَّثَنَا عُقْبَةُ بْنُ مُكْرَمٍ
الْبَصْرِيُّ الْعَمِّيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرِ بْنِ حَازِمٍ
قَالَ: حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي يَعْقُوبَ، عَنْ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي نُعْمٍ، أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ العِرَاقِ سَأَلَ ابْنَ
عُمَرَ عَنْ دَمِ البَعُوضِ يُصِيبُ الثَّوْبَ، فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ: انْظُرُوا
إِلَى هَذَا يَسْأَلُ عَنْ دَمِ البَعُوضِ وَقَدْ قَتَلُوا ابْنَ رَسُولِ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ الحَسَنَ وَالحُسَيْنَ هُمَا رَيْحَانَتَايَ
مِنَ الدُّنْيَا»: «هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ» وَقَدْ رَوَاهُ شُعْبَةُ، وَمَهْدِيُّ
بْنُ مَيْمُونٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي يَعْقُوبَ، وَقَدْ رُوِيَ عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوَهُ
উকবা ইব্ন মুকরাম বসরী আম্মী (রাহঃ)...
আব্দুর রহমান ইব্ন আবু নু'ম (রাহঃ) থেকে
বর্ণিত যে, ইরাকবাসী এক ব্যক্তি ইবন উমার (রাযিঃ)-কে কাপড়ে মশার
রক্ত লাগা সম্পর্কে ফতওয়া জিজ্ঞাসা করেছিল।
ইবন উমার (রাযিঃ) বললেনঃ এ লোকটিকে
তোমরা লক্ষ্য কর, মশার রক্ত সম্পর্কে
প্রশ্ন করছে অথচ এরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সন্তান (হুসায়ন)-কে হত্যা করেছে। আমি রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) -কে বলতে শুনেছি যে, হাসান-হুসায়ন হলেন দুনিয়ায় আমার দুইটি পুষ্প।
নোট:
এ হাদীসটি সাহীহ। শু’বা এবং মাহদী
ইব্ন মায়মূন (রাহঃ) এ হাদীসটি মুহাম্মদ ইব্ন আবূ ইয়াকূব (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
আবূ হুরায়রা (রাযিঃ) নবী (ﷺ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭৭০ (আন্তর্জাতিক নং
৩৭৭০)
حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ
قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ الأَحْمَرُ قَالَ: حَدَّثَنَا رَزِينٌ، قَالَ:
حَدَّثَتْنِي سَلْمَى، قَالَتْ: دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، وَهِيَ تَبْكِي،
فَقُلْتُ: مَا يُبْكِيكِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تَعْنِي فِي المَنَامِ، وَعَلَى رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ
التُّرَابُ، فَقُلْتُ: مَا لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «شَهِدْتُ قَتْلَ
الحُسَيْنِ آنِفًا» هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
আবু সাঈদ
আশাজ্জ (রাহঃ)... সালমা (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি একবার উন্মু সালামা (রাযিঃ)-এর কাছে গেলাম । তিনি কাঁদছিলেন।
আমি বললামঃ কাঁদছেন কেন? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম। তাঁর মাথা ও দাড়ি ধূলি
মলিন। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্। কি হয়েছে আপনার? তিনি বললেনঃ এইমাত্র দেখে এলাম হুসায়নকে হত্যা করা হয়েছে। জামে' তিরমিযী,
হাদীস নং ৩৭৭১ (আন্তর্জাতিক নং ৩৭৭১
নোট: এ হাদীসটি গারীব।
حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ
قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ الأَحْمَرُ قَالَ: حَدَّثَنَا رَزِينٌ، قَالَ:
حَدَّثَتْنِي سَلْمَى، قَالَتْ: دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، وَهِيَ تَبْكِي،
فَقُلْتُ: مَا يُبْكِيكِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تَعْنِي فِي المَنَامِ، وَعَلَى رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ
التُّرَابُ، فَقُلْتُ: مَا لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «شَهِدْتُ قَتْلَ
الحُسَيْنِ آنِفًا» هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
আবু সাঈদ
আশাজ্জ (রাহঃ)... সালমা (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি একবার উন্মু সালামা (রাযিঃ)-এর কাছে গেলাম । তিনি কাঁদছিলেন।
আমি বললামঃ কাঁদছেন কেন? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম। তাঁর মাথা ও দাড়ি ধূলি
মলিন। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্। কি হয়েছে আপনার? তিনি বললেনঃ এইমাত্র দেখে এলাম হুসায়নকে হত্যা করা হয়েছে। জামে' তিরমিযী,
হাদীস নং ৩৭৭১ (আন্তর্জাতিক নং ৩৭৭১
নোট: এ হাদীসটি গারীব।
হযরত হাসান রা. হযরত মুয়াবিয়া রা. এর সাথে সন্ধি চুক্তি
সম্পাদন করে মদীনায় স্থায়ী বসবাস শুরু করেন।
ঐতিহাসিকরা লিখেনঃ হযরত হাসান রা. একটি স্বপ্ন দেখেন। যাতে
তিনি তার কপালে “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ” লেখা
দেখতে পান।
এ স্বপ্ন দেখে তিনি খুব খুশি হন। এটিকে সুসংবাদ মনে করেন।
তখন উক্ত বিষয়টি সে সময়কার এক প্রসিদ্ধ বুযুর্গ সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব রহঃ শুনতে
পেলে বলেন, যদি এ স্বপ্ন হযরত হাসান রা. দেখে থাকেন,
তাহলে এর তাবীর হল, হযরতের হায়াত খুব কম বাকি
আছে। অচিরেই তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিবেন।
বর্ণনাকারী বলেন, হযরত হাসান রা.
এর কিছুদিন পরেই ইন্তেকাল করেন।
ঘটনাটি ইবনে কাসীর রহঃ তার বিখ্যাত গ্রন্থ “আলবিদায়া ওয়াননিহায়া” গ্রন্থের ৮ নং খন্ডের ৪২ নং
পৃষ্ঠায় নিম্ন শব্দে এনেছেনঃ
وَقَالَ الْأَصْمَعِيُّ عَنْ سَلَّامِ بْنِ مِسْكِينٍ عَنْ
عِمْرَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ.
قَالَ: رَأَى الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ فِي مَنَامِهِ
أَنَّهُ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ، * (قُلْ
هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) * فَفَرَحِ بِذَلِكَ فَبَلَغَ ذَلِكَ سَعِيدَ
بْنَ الْمُسَيَّبِ فَقَالَ: إِنْ كَانَ رَأَى هَذِهِ الرُّؤْيَا فَقَلَّ مَا
بَقِيَ مِنْ أَجْلِهِ.
قَالَ: فَلَمْ يَلْبَثِ الحسن بن علي بَعْدَ ذَلِكَ
إِلَّا أَيَّامًا حتَّى مَاتَ.
এ ছাড়া স্বপ্নের এ ঘটনাটি এসেছেঃ মুখতাছার তারীকে ইবনে
আসাকীর-৭/৩৮।
বিষপান
হযরত হাসান রা. এর অসুস্থ্যতা ও ইন্তিকাল বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ
বিভিন্ন বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন।
এর মাঝে প্রসিদ্ধ হল, হযরতের একজন
স্ত্রীর নাম ছিল মুসাম্মাত যা’দাহ বিনতে আশআছ বিন কায়েশ
কুন্দী। এ মহিলা হযরত হাসান রা. কে বিষ পান করায়। যার কারণে হযরত প্রচন্ড অসুস্থ্য
হয়ে পড়েন। বারবার টয়লেটে যাবার প্রয়োজন হতো। এ করূণ অসুস্থ্যতা প্রায় চল্লিশ দিন
স্থায়ী ছিল।
ইমাম যাহাবী রহঃ সীয়ারু আলামিন নুবালা গ্রন্থে নি¤œ শব্দে ঘটনাটি উদ্ধৃত করেছেনঃ
أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ مُغِيْرَةَ، عَنْ أُمِّ مُوْسَى, أنَّ
جَعْدَةَ بِنْتَ الأَشْعَثِ بنِ قَيْسٍ سَقَتِ الحَسَنَ السمَّ، فَاشْتَكَى،
فَكَانَ تُوضَعُ تَحْتَهُ طِشْتٌ، وَتُرفَعُ أُخْرَى
نَحْواً مِنْ أَرْبَعِيْنَ يَوْماً.
সীয়ারু আলামিন নুবালা লিজযাহাবী-৩/১৮৪, ভিন্ন মাকতাবা-৩/২৭৫, ভিন্ন মাকতাবা-৪/৩৪৪।
মুখতাছার তারীখে ইবনে আসাকীর লিইবনে মানজূর-৭/৩৯।
আরেকটি বর্ণনা
এ বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ আরেকটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। যদ্বারা এ
ঘটনার সংশ্লিষ্ট আরো কিছু বিষয় পরিস্কার হয়।
সেই সময়কার এক ব্যক্তি ছিল। যার নাম ছিল আমর বিন ইসহাক।
তিনি বলেন, আমি হযরত হাসান রা. অসুস্থ্য থাকাকালে তাকে
দেখতে গেলাম। আমরা তার অবস্থা জিজ্ঞাসা করাকালীন সময়ে তিনি বারবার টয়লেটে
যেতেছিলেন। হযরত হাসান রা. তখন তার শারিরীক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ আল্লাহর
কসম! আমাকে কয়েকবার বিষ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এবার যতটা কঠিন বিষ দেয়া হয়েছে,
আগে কখনো এতটা মারাত্মক বিষ দেয়া হয়নি। মনে হচ্ছে আমার কলিজা আলাদা
হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।
আমর বললেন, আমি দ্বিতীয় দিন আবার হযরতের
খিদমাতে উপস্থিত হলাম। দেখি হযরতের অবস্থা খুবই খারাপ।
সেই সময় হযরত হুসাইন রা. উপস্থিত হলেন। তিনি হযরত হাসান রা.
কে বললেনঃ ভাই! তুমি আমাকে বল কে তোমাকে বিষ খাইয়েছে?
হযরত হাসান বললেনঃ তুমি কেন জিজ্ঞাসা করছেন? তুমি কি তাকে হত্যা করবেন?
হযরত হুসাইন রা. বললেনঃ হ্যাঁ।
তখন হযরত হাসান রা. বললেনঃ আমি তোমাকে এ বিষয়ে কিছুই বলবো
না। যদি যার ব্যাপারে আমার ধারণা, সেই যদি হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলাই কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন। আর যদি আমার ধারণা ভুল হয়,
তাহলে আমি এটা চাই না যে, আমার কারণে কোন নিরাপরাধ মানুষ নিহত হোক।
এরপর হযরত হাসান রা. এ ইন্তেকাল হয়ে গেল। সেদিন ছিল ৫ই
রবিউল আওয়াল ৪৯ বা ৫০ হিজরী। ইংরেজী মাসের ফেব্রুয়ারী ৬৬৯ ঈসাব্দ।
উক্ত বিষয়টি সিয়ারু আলামিন নুবালায় নিম্ন শব্দে উদ্ধৃত
হয়েছেঃ
ابْنُ عُلَيَّةَ: عَنِ ابْنِ عَوْنٍ، عَنْ
عُمَيْرِ بنِ إِسْحَاقَ، قَالَ:
دَخَلْنَا عَلَى الحَسَنِ بنِ عَلِيٍّ نَعُوْدُهُ، فَقَالَ
لِصَاحِبِي: يَا فُلاَنُ! سَلْنِي.
ثُمَّ قَامَ مِنْ عِنْدِنَا، فَدَخَلَ كَنِيْفاً، ثُمَّ خَرَجَ،
فَقَالَ: إِنِّيْ -وَاللهِ – قَدْ
لَفظْتُ طَائِفَةً مِنْ كَبِدِي قَلَبْتُهَا بِعُوْدٍ، وَإِنِّي قَدْ سُقِيْتُ
السُّمَّ مِرَاراً، فَلَمْ أُسْقَ مِثْلَ هَذَا.
فَلَمَّا كَانَ الغَدُ، أَتيتُهُ وَهُوَ يَسُوْقُ، فَجَاءَ
الحُسَيْنُ، فَقَالَ: أَيْ أَخِي! أَنْبِئنِي
مَنْ سَقَاكَ؟
قَالَ: لِمَ! لِتَقْتُلَهُ؟
قَالَ: نَعَمْ.
قَالَ: مَا أَنَا مُحدِّثُكَ شَيْئاً، إِنْ يَكُنْ
صَاحِبِي الَّذِي أَظُنُّ، فَاللهُ أَشَدُّ نِقْمَةً، وَإِلاَّ – فَوَاللهِ
–
لاَ
يُقتلُ بِي بَرِيْءٌ
সিয়ারু আলামিন নুবালা-৩/২৭৩, ভিন্ন
মাকতাবা-৪/৩৪৩, ভিন্ন মাকতাবা-৩/১৮৩, হিলয়াতুল
আওলিয়া-২/৩৮, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/৪২।
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেলঃ
১
হযরত হাসান রা. এর মৃত্যুর বাহ্যিক কারণ ছিল বিষ পান।
২
কে বিষ পান করিয়েছিল হযরত তার নাম বলেননি। গোপন রেখেছেন।
৩
মুমুর্ষ অবস্থায়ও ধৈর্য্য ও সবরের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা
প্রদর্শন করেছেন।
৪
জীবনভর অন্যের ক্ষতি সাধন থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছেন।
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের হাকীকী অবস্থা হযরত হাসান রা. এর এ
প্রশংসনীয় আখলাক দ্বারা পরিস্ফুটিত হয়ে উঠে।
অনেক ঐতিহাসিক বিষ পান করানোর বিষয়টি উল্লেখ করেননি। অনেকেই
উল্লেখ করেছেন। যারা উল্লেখ করেছেন, তাদের অনেকেই বিষ
পান করিয়েছিল তার নাম উল্লেখ করেননি। অনেকেই হযরতের স্ত্রীর নাম উল্লেখ করেছেন।
প্রশ্ন হল, উক্ত স্ত্রী কেন স্বামীকে বিষ
পানে হত্যা করল?
এ বিষয়টি যদিও পরিস্কার নয়। তবে একটি ইংগিত পাওয়া যায়।
আল্লাহ মাফ করুন। হযরতের শানের খিলাফ শব্দে বিষয়টি উল্লেখ করা থেকে আল্লাহ তাআলা
আমাদের হিফাযত করুন।
ইমাম হাসান রা. অধিক বিয়ে করতেন। সেই সাথে আবার তালাক
প্রদান করতেন। বিষয়টি তার পিতা হযরত আলী মুরতাজা রা. এর বক্তব্য দ্বারা পরিস্কার।
হাদীসে এসেছেঃ
قَالَ عَلِيٌّ: «يَا أَهْلَ الْعِرَاقِ، أَوْ
يَا أَهْلَ الْكُوفَةِ، لَا تُزَوِّجُوا حَسَنًا،
فَإِنَّهُ رَجُلٌ مِطْلَاقٌ
হযরত আলী রা. বলেন, হে ইরাকবাসী! হে
কুফাবাসী! তোমরা হাসানের কাছে কন্যা বিয়ে দিও না, কেননা অনেক
তালাক দেয়। [মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯১৯৫]
قَالَ عَلِيٌّ: «مَازَالَ الْحَسَنُ يَتَزَوَّجُ
وَيُطَلِّقُ، حَتَّى حَسِبْتُ أَنْ يَكُونَ عَدَاوَةً فِي الْقَبَائِلِ
হযরত আলী রা. বলেন, হাসান রা. বিয়ে
করে, আবার তালাক দেয়। এভাবে চলছে। আমার শংকা হচ্ছে গোত্রে
গোত্রে এ নিয়ে শত্রুতা না তৈরী হয়। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯১৯৬]
মহিলারা স্বাভাবিকভাবে প্রচন্ড আক্রোশপ্রবণ হয়। আর স্বামীর
বিষয়ে থাকে অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক। এ বিষয়ে ছাড় দিতে মোটেও রাজি হয় না। মাথায়
বুদ্ধিও অনেক মহিলার কম থাকে। ইল্লামাশাআল্লাহ।
এ হিসেবে স্ত্রীদের মাঝে কোন প্রকার আক্রোশ জমে থাকতে পারে।
আক্রোশবশতঃ কোন স্ত্রীলোক একাজ করে বসতে পারে বলে মনে হয়। বাকি নিশ্চিতভাবে কিছুই
বলা যায় না। আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।
যাইহোক, হযরত হাসান রা. এর ইন্তেকালের
পর আমীরে মুয়াবিয়া রা. এর নিযুক্ত মদীনার গভর্নর সাঈদ বিন আছ রা. জানাযারা ইমামতী
করেন।
হযরত হুসাইন রা. হযরত সাঈদ বিন আস রা. কে নামায পড়ানোর জন্য
আগে পাঠান। আর বললেনঃ যদি এ পদ্ধতি সুন্নত না হতো, তাহলে আমি
আপনাকে আগে পাঠাতাম না। [উসদুল গাবাহ-২/১৫, মাকাতিলুত
তালেবীন-১/৫১, আলমারিফা ওয়াত তারীখ-১/২১৬}
উক্ত ঘটনার আরবী পাঠ!
حدثنا سعيد عن سفيان عن سالم بن ابى حفصة عن ابى حازم الاشجعى ان
حسين بن على قال لسعيد بن العاص: اقدم يعنى على الحسن، فلولا انها
سنة ما قدمت
কিতাবুল মারেফা ওয়াততারীখ-১/২১৬]
হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রা. এর নিযুক্ত গভর্ণর সাঈদ বিন আস রা.
জানাযা পড়ালেন। অতঃপর তাকে স্বীয় দাদী হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদের কবরের পাশে
জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৪৭ বছর।
ইবনে হাজার মক্কী রহঃ লিখেছেনঃ হযরত হাসান রা. রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় ছিলেন সাত বছর। তারপর স্বীয় পিতা হযরত
আলী রা. এর সাথে ছিলেন ৩০ বছর। তারপর ছয় মাস খলীফাতুল মুসলিমীন ছিলেন। তারপর সাড়ে
নয় বছর মদীনায় বসবাস করে ইন্তেকাল করেন। [আসসাওয়ায়েকুল মুহাররামাহ-১৪১]
বক্তব্যটির আরবী পাঠ
وصلى عليه سعيد بن العاص، لأنه كان واليا على المدينة من قبل
معاوية، ودفن عند جدته بنت اسد بقبة المشهورة، وعمره سبع واربعون سنة، كان منها مع
رسول الله صلى الله عليه وسلم سبع سنين ثم مع ابيه ثلاثون سنة، ثم خليفة ستة اشهر
ثم تسع سنين ونصف سنة بالمدينة (الصواعق المحرمة لابن حجر المكى-141)
والله اعلم بالصواب
মৃত্যু স্থান : কারবালা, ইরাক ।
বয়স : ৪৭ বছর বয়স ।
[1] তাফসিরে মাআরেফুল
কুরআন-১২১৫পৃ.সংক্ষিপ্ত-মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহ.)
[2] সূরা শুরা-২৩
[3] তাখরিজ :
মুসলিম-২৪০৮; আহমদ-১৯২৬৫; দারেমি-৩৩৫৯
[4] তাফসিরে
ইবনে কাসির-১০ খণ্ড;৪৬পৃষ্ঠা; অধ্যাপক মাওলানা আখতার ফারূক (রহ.) অনূদিত,ই.ফা.
[5] তাখরিজ : বুখারি-১৪৯১; মিশকাত-১৮২২
[6] সূরা আনফাল-৪১
[7] বুখারি-৩১৪০
[8] বুখারি-৩৬২৯; আবুদাউদ-৪৬৬২;তিরমিজি-৩৭৭৩;নাসায়ি-১৪১০;আহমদ-২০৩৯
[9] আল-বিদায়া ওয়ান
নিহায়া-৮ম খণ্ড;৩৯-৫০ পৃষ্ঠা,হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.),ই.ফা.
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন