জিজ্ঞাসা-২২৩: মহিলাদের চেহারা বা মুখ মন্ডল হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত
কিনা ? দালিলিক বিশ্লেষণ আশা করি। তারিখ-০৭/০৭/২২ ঈসায়ি/
মোহাম্মাদ আব্দুর রহমান, সাভার,ঢাকা-থেকে---
জবাব: জাযাকাল্লাহু খয়র, আমার একান্ত স্নেহেরর ছোট ভাই আব্দুর রহমান সাহেবকে, তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সওয়াল করেছেন। এই ফেতনার জামানায় মাসয়ালাটি অতীব জরুরি; যখন কিছু লোক এটাকে ঐচ্ছিক বলে প্রচার করছে; অথচ এটি একটি স্বতন্ত্র বিধান; তারা সতর আর হিজাবকে একই মনে
করছে। আল্লাহ
তাদেরকে সহিহ বুঝ দান করুন।
প্রশ্ন: ক। চেহেরা/মুখমণ্ডল হিজাব/পর্দার অন্তর্ভুক্ত কি না?
উত্তর: ক। হ্যাঁ, কুরআন-হাদিস, উম্মতের ইজমা, কিয়াস, উম্মতের আমল, বিজ্ঞ আলেমদের মতামত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে মুখমণ্ডল পর্দার অংশ। তবে ইবনে আব্বাস (রা.) এর এক ব্যাখ্যার কারণে কেউ কেউ জায়েজ বলে, কিন্তু তার অন্য আয়াতের
ব্যাখ্যা দ্বারা তা টিকে না। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
প্রশ্ন: খ। দালিলিক বিশ্লেষণ আশা করি।
উত্তর: খ। নিম্নে কুরআন হাদিস
ইজমা কিয়াস ও ফুকাহায়ে কিরামের সিদ্ধান্ত উম্মাহর আমল তুলে ধরা হল:
v কুরআনুল কারিমের আদেশ:
আয়াত নং-০১
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ
অর্থ: হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের
নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের
কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে
না। সূরা আল আহযাব-৫৯
পর্দা বিষয়ে এ আয়াত অত্যন্ত পরিষ্কার ও স্পষ্ট। কারণ, এ আয়াত থেকে জানা যায়, পর্দার নির্দেশের মধ্যে
মুখমণ্ডলও অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া
এ আয়াতে আযওয়াজে মুতাহহারাত (রাসূলুল্লাহর (ﷺ) -এর পুতঃপবিত্র সহধর্মীনীগণ) ও নবি (ﷺ) -এর কন্যাগণের সঙ্গে মুসলিম মহিলাদেরও সম্বোধন করা হয়েছে। এ আয়াতে ‘জালাবিব’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। আরবি অভিধানের বিখ্যাত
গ্রন্থ ‘লিসানুল ‘আরাব’–এ লেখা হয়েছে,
‘জিলবাব’ ওই চাদরকে বলা হয় যা মহিলারা নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকার জন্য
ব্যবহার করে। ১/২৭
অভিধান থেকে সরে গিয়ে
মুফাসসিরগণের বক্তব্য দেখলেও জানা যায়,
‘জিলবাব’ এমন কাপড়কে বলে যদ্বারা মহিলারা নিজেদের শরীর ঢাকেন। ‘জিলবাব’ অর্থ বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়। কুরতুবি, আল-জামে‘ লিআহকামিল কুরআন : ১৪/২
এ আয়াত সম্পর্কে বিখ্যাত
তাফসিরকারকদের মতামত:
(ক) ইমাম যাসসাস রহঃ বলেন,
فى هذه الآية دلالة على أن المرأة الشابة مأمورة بستر وجهها من
الأجنبيين
এ আয়াত একথা বোঝাচ্ছে যে, যুবতী মেয়েরা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এমনভাবে বের হবে যেন তাদের চেহারা
পরপুরুষের সামনে প্রকাশিত না হয়। সূত্র: আহকামুল কুরআন ইমাম
জাসসাসকৃত-৩/৩৭২
(খ) আল্লামা আলূসি রহ. আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. বরাত দিয়ে লিখেন, ‘জিলবাব’ সেই চাদরকে বলে যা মহিলারা
দেহের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত উড়িয়ে ছেড়ে দেয়। রুহুল মাআনি : ২২/৮৮
(গ)
قال ابن عباس وأبو عبيدة: أمر نساء المؤمنين أن يغطين رؤوسهن ووجوهن بالجلابيب إلا عينا واحدة
ليعلم أنهن حرائر.
ইমাম বাগাবী রহ. বলেন, ইবনে আব্বাস এবং আবু উবাইদা রাযি. বলেছেন, মুমিন নারীদেরকে ওড়না
দ্বারা তাদের মাথা এবং মুখমণ্ডল আবৃত করে রাখার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে
একটি চক্ষু খোলা রাখার অবকাশ দেওয়া হয়েছে, যাতে বুঝা যায় তারা স্বাধীন
নারী। তাফসীরে বাগাবী ৩/৪৬৯
(ঘ)
وأخرج ابن المنذر وابن
أبي حاتم عن محمد بن سيرين رضي الله عنه قال : سألت عبيدا السلماني رضي الله عنه عن قوله الله يدنين عليهن من جلابيبهن
فتقنع بملحفة فغطى رأسه ووجهه وأخرج احدى عينيه.
আল্লামা সুয়ূতী রহ. বলেন, ইবনুল মুনযির এবং ইবনু আবী হাতেম সূত্রে বর্ণিত, মুহাম্মদ ইবনে সীরীন রহ. বলেন, আমি আবিদাতুস সালমানী রহ. কে
আল্লাহর বাণী يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ الخ সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি কম্বল দ্বারা তার একটি চক্ষু ব্যাতিরেকে তার মাথা ও
মুখমণ্ডলসহ সমস্ত শরীর ঢেকে দিলেন। আদ্দুররুল মানসূর ৬/৬৬১
তাই শত শত বছর যাব মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র যে দ্বীনদার নারীগণ নিকাব ও হিজাব
পরিধান করে আসছেন তাঁরা এই জিলবাব ধারণের বিধানই পালন করছেন।
(ঙ)
ومعنى يُدْنِينَ
عَلَيْهِنَّ مِن جلابيبهن يرخينها عليهنّ، ويغطين بها وجوههنّ وأعطافهنّ.
আল্লামা যামাখসারী রহ. বলেন, ‘তারা তাদের ওড়না নিজেদের উপর টেনে দিবে’ এর অর্থ হলো, তারা তাদের দেহের উপর ওড়না ঝুলিয়ে দিবে এবং এর দ্বারা তাদের চেহারা ও দেহের
পার্শ্বসমূহ ঢেকে নিবে। (আল কাশ্শাফ ৩/২৭৪)
(চ) নাহব্ তথা আরবী ব্যাকরণ শাস্ত্রের ইমাম ও মুফাসসির আবু হাইয়ান আল আন্দালুসী
রহ. বলেন, من جلابيبهن এর মধ্যে من অব্যয়টি ‘কতেক’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর عليهن এটা নারীদের
সমস্ত শরীরকে ব্যাপৃত করে। অথবা عليهن অর্থ على وجوههن। অর্থাৎ তারা তাদের মুখমণ্ডলের উপর ওড়না টেনে
দিবে। কেননা নারীরা জাহেলী যুগে তাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করে রাখত তা হলো
মুখমণ্ডল। (আলবাহরুল মুহীত; ‘সূরা আহযাব’ ৭/২৪০)
সূরা আল-আহযাবের উল্লেখিত আয়াতের
তাফসির করতে গিয়ে সকল মুফাসসির মুখমণ্ডল ঢাকা হিজাবের অত্যাবশ্যক অংশ গণ্য করেছেন।
(জ)আল্লামা
সুয়ূতি আশ-শাফিঈ রহ. উল্লেখিত আয়াতের তাফসির করতে
গিয়ে লিখেন, হিজাবের আয়াত সব নারীর
ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মাথা ও মুখমণ্ডল ঢাকা যে
ওয়াজিব তা এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়। আওনুল মাবুদ-১১/১৫৪
আয়াত-০২
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ
حِجَابٍ
অর্থ : তোমাদের যদি নবী-পত্নীদের কাছ থেকে কোনো
জিনিসপত্র চাওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে পর্দার আড়াল থেকে চেয়ে নিবে। সূরা আহযাব- ৫৩
এ আয়াতকে সাহাবা কেরামের যুগ হতেই ‘আয়াতে
হিযাব বা পর্দাবিধানের আয়াত বলা হয়ে থাকে।হজরত ওমর রা. আনাস রা. এরুপ উক্তি রয়েছে ।
মুখমণ্ডল যদি পর্দার অন্তভুক্ত না হতো, তাহলে সামনে যেতে দোষ কি ছিল ? পর্দার আড়াল থেকে চাইতে হবে কেন ? অথচ নবির সম্মানিত স্ত্রীগণ
এ উম্মাতের মা,তাদেরকে আপন মায়ের মতই বিবাহ হারাম। এ আয়াত থেকে বলিষ্ঠভাবে, সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে, মুখমণ্ডল পর্দার অন্তর্ভুক্ত। সূত্র: তাফসিরে বুরহাননুল কুরআন, মাআরিফুল কুরআন
ইমাম জাস্সাস রহ. বলেন,
وهذا الحكم وإن نزل خاصا
في النبي صلى الله عليه وسلم وأزواجه فالمعنى عام فيه وفي غيره إذ كنا مأمورين
باتباعه والإقتداء به
অর্থ : উক্ত আয়াতের বিধানটি যদিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং
তাঁর স্ত্রীদের ব্যাপারে বিশেষভাবে অবতীর্ণ হয়েছে তবে এর অর্থ ব্যাপক। কেননা আমরা
তাঁর অনুসরণ ও অনুকরণের ব্যাপারে আদিষ্ট। সূত্র: আহকামুল কুরআন ৮/৪১৫
আয়াত নং-৩
لَا جُنَاحَ عَلَيْهِنَّ
فِي آبَائِهِنَّ وَلَا أَبْنَائِهِنَّ وَلَا إِخْوَانِهِنَّ
অর্থ : নবী-পত্নীগণের তাদের পিতা-পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, সহধর্মিনী নারী এবং অধিকারভুক্ত দাস-দাসীগণের সামনে যেতে কোনো সমস্যা নেই।
সূরা আহযাব’- ৫৫
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন,
لما أمر تعالى النساء
بالحجاب من الأجانب، بيَّن أن هؤلاء الأقارب لا يجب الاحتجاب منهم.
অর্থ : যখন আল্লাহ তা‘আলা নারীদেরকে অপরিচিত পুরুষের থেকে পর্দা
পালনের নির্দেশ দিলেন। এখন উক্ত আয়াতে ঐ সকল নিকটাত্মীয়দের উল্লেখ করেছেন যাদের
সাথে তাদের পর্দা পালন করা ওয়াজিব নয়। সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর ৬/৪৭৬
আয়াত নং-০৪
وَالْقَوَاعِدُ
مِنَ النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ
أَنْ يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ
অর্থ:
বৃদ্ধা
নারী যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা সৌন্দর্য প্রকাশ না
করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে, তাদের জন্য দোষ নেই।.... তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। সূরা নূর-৬০
আলোচ্য আয়াতে পর্দার অপরিহার্যতা এভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, আল্লাহ বলেন বৃদ্ধনারী বার্ধক্যের কারণে) যার প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না, তারা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখতে পারে। এখানে বস্ত্র খুলে রাখা
মানে উলঙ্গ বা নিরাবরণ হওয়া নয়, বরং যেসব বস্ত্র দ্বারা হাত, মুখমণ্ডল ইত্যাদি আবৃত রাখা হয়- যথা- চাদর, বোরকা ইত্যাদি। এ আয়াতে বস্ত্র খুলে
রাখার অনুমতি শুধুমাত্র বৃদ্ধা নারীদের জন্যেই নির্দিষ্ট। যুবতী নারীর মুখ-মণ্ডল
বিপদ সংকুলস্থান হওয়ায় তা ঢেকে রাখা জরুরি। যদি বস্ত্র খুলে রাখার হুকুম (নির্দেশ)
বৃদ্ধা, যুবতী, তরুণী সকলের জন্যে অভিন্ন হত, তা হলে বৃদ্ধাকে যুবতী থেকে
পৃথক করে উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
আয়াত নং-০৫
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ
فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا
অর্থ: মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক
পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে
সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।[৩০] আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায়
তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে
আবৃত করে রাখে। আর তারা
যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক
হয়েছে, অধীনস্থ যৌন কামনা মুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ
বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য
প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। সূরা নূর-৩১
সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে তিনবার زِينَتَهُنَّ যীনাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
وَلاَيُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّمَا ظَهَرَمِنْهَا (১)
وَلاَيُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ (২)
وَلَايَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ
زِينَتِهِن(৩)
এসব জায়গায় যীনাত শব্দের অর্থ সৌন্দর্য হলেও
তিন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
(১) وَلاَيُبْدِينَزِينَتَهُنَّإِلاَّمَاظَهَرَمِنْهَا এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে- তারা যেন তাদের পোশাকের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে। তবে যা অনিচ্ছাকৃত প্রকাশ পেয়ে যায়।
এ আয়াতে উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহিলাদের বাহিরে ঐ সমস্ত সৌন্দর্য যা পর পুরুষদের দৃষ্টি থেকে ইচ্ছা থাকা
সত্ত্বেও গোপন করা সম্ভব হয় না। যেমন কাপড় ও চাদরের ওপরের
অংশ। বর্তমানে যুগে যেমন বোরকার বাহিরের অংশের
সৌন্দর্য ও পায়ের নিচের অংশের সৌন্দর্য। সুতরাং এগুলো পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়,তাতে
কোন পরপুরুষের দৃষ্টি পড়লে মহিলারা দায়ী হবে না;বরং
দায়ী হবে পুরুষ।
(২) আর وَلاَيُبْدِينَ
زِينَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ আয়াতের এ অংশের পূর্ণ অর্থ হচ্ছে- মহিলারা যখন কোন প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে বের হবে, তখন মুখমণ্ডলসহ চুল ও গলার আশপাশের সৌন্দর্য এমন একটি ওড়না বা চাদর দ্বারা
মাথার ওপর দিক থেকে ঢেকে নিবে, যদ্দরুন তার এসব অংশেনর
সৌন্দর্য প্রকাশ না পায়। তবে এ বিধান মাহরামদের ব্যাপারে নয়। তাই স্বমী, শ্বশুর, পুত্র আরো এ জাতীয় আম্তীয় যাদের সাথে বিবাহ হারাম,তাদের
সাথে উপরোক্ত পর্দা জরুরি নয়।
এ অংশে যীনাত দ্বারা মুখমণ্ডল ও বক্ষ দেশের পর্দা
করাটা গায়রে মাহরামেরে ক্ষেত্রে জরুরি নয়; বরং মুখমণ্ডল ইত্যাদি তাদের সামনে খোলা রাখা যাবে।
(৩) আর وَلَايَضْرِبْنَ
بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِن এ আয়াতে, অলংকারের ঝংকার পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণের কারণ হয়, তাই তার সৌন্দর্যকে রক্ষা করে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সারকথা: এ কথা সর্বস্বীকৃতি যে, অলংকারের আওয়াজের তুলনায় পুরুষের জন্য নারীর চেহেরা অত্যধিক আকর্ষণীয়। বিধায় মুখমণ্ডল পর্দার অন্তর্ভক্ত হওয়ার
ব্যাপারে আয়াতের এ অংশ থেকেও প্রমাণিত হয়।
পবিত্র কুরআনে নারীদের হিজাব এবং তদসংক্রান্ত
প্রায় আটটি আয়াত আছে। সেগুলো
থেকেও একথা জানা যায়, শরীয়তের দাবী কেবল শরীর ঢাকা
নয়, বরং মুখমণ্ডল ঢাকাও জরুরি।
v হাদিস তথা রাসূল (ﷺ) এর আদেশ:
হাদিস নং-০১
আনাস রা. স্বয়ং বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন মক্কা থেকে মদিনা পৌঁছিলেন তখন আমার
বয়স দশ বছর। …..উম্মুল
মুমিনিন যয়নাব রা. এর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দাম্পত্য জীবন আরম্ভ করার প্রথম
দিনই এ আয়াতটি (সূরা আহযাব-৫৩
নং) নাযিল হয়। …….আমি তার পিছনে ঘরে প্রবেশের
জন্য। উদ্যত হয়ে আছি। হজরতের (নবির) এক পা হুজুরার দরজার ভিতরে
আরেক পা বাহিরে, এমতাবস্থায় নবি (ﷺ) আমার ও তাঁ মধ্যে পর্দা ফেলে দিলেন। (আমি হুজুরায় প্রবেশ করতে বিরত থাকলাম এবং
জানা গেল পর্দার বিধানের আয়াত নাযিল হয়েছে )। বুখারি শরিফ-৬/২৩৬৮
আল্লামা আজিজুল হক রহ.
হাদিস নং-০২
হযরত আয়েশা রাযি. বর্ণনা করেন,
كان الركبان يمرون بنا ونحن مع رسول الله صلى الله عليه وسلم محرمات
فإذا حاذوا بنا سدلت إحدانا جلبابها من رأسها على وجهها فإذا جاوزنا كشفناه.
অর্থ : আমরা রাসূলে কারীম (ﷺ) এর সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। এ সময় আমাদের পাশ
দিয়েই মানুষের বাহনগুলো চলাচল করছিল। যখন বাহনগুলো আমাদের কাছাকাছি চলে আসত তখন
আমরা আমাদের চাদর চেহারার উপর টেনে দিতাম। আর যখন বাহনগুলো আমাদের থেকে দূরে চলে
যেত তখন আমরা আমাদের চেহারা থেকে চাদর সরিয়ে নিতাম। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ১৮৩৩
হাদিস নং-০৩
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: ” لَمَّا نَزَلَتْ: {يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ} [الأحزاب: 59]، خَرَجَ نِسَاءُ
الْأَنْصَارِ كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِهِنَّ الْغِرْبَانَ مِنَ الأَكْسِيَةِ “
হযরত উম্মে সালামা রা: বলেন, যখন কুরআনে কারীমের এ আয়াত يُدْنِينَ
عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ
তথা “তারা যেন তাদের চাদরের
কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। [মাথার দিক থেকে]” -সূরা আহযাব-৫৯} নাজিল হয়, তখন আনসারী মহিলারা স্বীয় ঘর
থেকে এমনভাবে বের হতো যেন তাদের মাথায় কাক বসে আছে। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১০১
হাদিস নং-০৪
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ امْرَأَةً فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَّنْظُرَ إِلَيْهَا إِذَا كَانَ إِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا لِخِطْبَتِهِ وَإِنْ كَانَتْ لاَ تَعْلَمُ-
‘যখন তোমাদের কেউ কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব
দিবে, তখন তাকে দেখাতে কোন গুনাহ হবে না। তবে কেবল
বিয়ে করার উদ্দেশ্যেই দেখতে হবে, যদিও মেয়ে জানতে না পারে।
মুসনাদ
আহমাদ হা/২৩৬৫০-৫১; সিলসিলা সহীহাহ হা/৯৭
এতে প্রতীয়মান হলো যে, যারা বিয়ের উদ্যোগ না নিয়ে, এমনিই দেখে তারা গোনাহগার
হবে।
হাদিস নং-০৫
عَنْ عَبْدِ الْخَبِيرِ بْنِ ثَابِتِ بْنِ قَيْسِ بْنِ شَمَّاسٍ،
عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يُقَالُ لَهَا أُمُّ خَلَّادٍ وَهِيَ مُنْتَقِبَةٌ، تَسْأَلُ عَنِ ابْنِهَا،
وَهُوَ مَقْتُولٌ، فَقَالَ لَهَا بَعْضُ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: جِئْتِ تَسْأَلِينَ عَنِ ابْنِكِ وَأَنْتِ مُنْتَقِبَةٌ؟ فَقَالَتْ: إِنْ أُرْزَأَ ابْنِي
فَلَنْ أُرْزَأَ حَيَائِي،
হযরত আব্দুল খায়ের বিন সাবেত বিন কায়েস বিন
শাম্মাস তার পিতা, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা
করেন যে, একদা এক মহিলা রাসূল সা: এর
কাছে এলেন। যাকে উম্মে খাল্লাদ বলা হয়। তিনি এমতাবস্থায় এলেন যে, তার চেহারা পর্দাবৃত ছিল। সে এসে তার নিহত সন্তানের ব্যাপারে অভিযোগ জানায়।
তখন কতিপয় সাহাবী তাকে বলেন, “তুমি তোমার ছেলের ব্যাপারে অভিযোগ দাখিল করতে এসেছে, তারপরও তুমি পর্দাবৃত হয়ে এলে?” তখন উম্মে খাল্লাদ বলেন, যদিও আমার ছেলের উপর বিপদ এসেছে, এর মানে তো আমার লজ্জা
শরমেরও বিপদ আসেনি। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৪৮৮
হাদিস নং-০৬
রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর প্রিয়তমা পত্নী আয়িশা রা.বলেন- আল্লাহ হিজরতকারী অগ্রবর্তী নারীদের ওপর রহমত করুন। যখন তিনি নাযিল করলেন, আর তারা যেন তাদের বক্ষের ওপর ওড়না টেনে দেয়’ তখন তারা তাদের নিম্নাংশের কাপড়ের প্রান্ত ছিঁড়ে ফেলেন এবং তা দিয়ে ওড়না
বানিয়ে নেন। বুখারি : ৮৫৭৪
আলোচ্য বর্ণনায় ‘ইখতামারনা’ শব্দটি এসেছে। সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাকার হাফিয ইবন হাজার ‘আসকালানী রহ.
‘ইখতামারনা’ শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘গাত্তাইনা উজুহাহুন্না’। অর্থা তারা নিজেদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখতেন। ফাতহুল বারি : ৮/৩৪৭
হাদিস নং-০৭
যখন তোমাদের (নারীদের) কারো কাছে মুক্তির জন্যে
চুক্তিবদ্ধ কৃতদাস থাকে এবং তার নিকট চুক্তি অনুযায়ী মুক্তিপণ থাকে। তাহলে সে নারী কৃতদাসের
সামনে পর্দা করবে। মুসনাদে
আহমাদ, আবু দাউদ, জামে তিরমিজি
এ হাদিস শরিফ দ্বারা পর্দার
অপরিহর্যতা প্রমাণিত হয়, কারণ কৃতদাসের সাথে পর্দার
বিধান নাই। কিন্তু যখন সে স্বাধীন হবে
তখন পর্দা কার্যকর হবে।
হাদিস নং-০৮
عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ
النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, নারী জাতি হল আপাদমস্তক সতর। যখনি সে বের হয়, তখনি শয়তান তাকে চমৎকৃত করে তোলে। তাখরিজ: সুনানে তিরমিজী-১১৭৩, মুসনাদুল বাজ্জার-২০৬৫, সহীহ ইবনে খুজাইমা-১৬৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান-৫৫৯৮
হাদিস নং-০৯
আবদুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, وَلاَ تَنْتَقِبِ المَرْأَةُ المُحْرِمَةُ، وَلاَ تَلْبَسِ
القُفَّازَيْنِ‘আর ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন
নিকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে। বুখারী : ১৮৩৮
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, নবি (ﷺ) এর যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও
চেহারা ঢাকতেন। এ কারণে ইহরামের সময়
নেকাব ও দস্তানা না পরার আদেশ করতে হয়েছে।
হাদিস নং-১০
- ইফক-এর
ঘটনা থেকেও আমরা মুখ ঢাকার প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারি। বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন পথে এক স্থানে বিশ্রামের
জন্য শিবির স্থাপন করেন। এই সফরে
আয়িশা রা.রাসূলুল্লাহর (ﷺ) -এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে শিবির থেকে বাইরে যান। ….এমতাবস্থায়
তিনি লক্ষ্য করেন তার গলার হারটি কোথাও হারিয়ে গেছে। যেখানে হারটি পড়ার সম্ভাবনা ছিল তিনি
সেখানে গেলেন এবং তালাশ করলেন, কিন্তু পেলেন না। ….. আয়িশা রা.বলেন, আমি সেখানে বসে থাকতে থাকতে ঘুমে আমার চোখ বন্ধ হয়ে যায়। সাফওয়ান ইবন মুওয়াত্তাল রা.ছিলেন
কাফেলার পশ্চাৎগামী ব্যক্তি। তিনি দেখেন এক ব্যক্তি শুয়ে আছে। নিকটে এসে দেখে আমাকে চিনতে পারেন। কারণ, হিজাবের পূর্বে তিনি আমাকে দিখেছিলেন। আমাকে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে তিনি
জোরে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করেন। সাফওয়ানের শব্দ শুনে আমি উঠে বসি এবং
খুব দ্রুত চাদর মুড়ি দিই। আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আমি আমার চাদর দ্বারা আমার
মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলি। বুখারি : ৪৪৭৩; মুসলিম : ২৭৭০
হাদিস নং-১১
عَنْ عَائِشَةَ: «أَنَّهَا كَانَتْ تَطُوفُ بِالْبَيْتِ وَهِيَ مُنْتَقِبَةً»
হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ বাইতুল্লাহ তওয়াফ করতেন
পর্দাবৃত অবস্থায়। {মুসন্নাফ
আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৮৮৫৯}
হাদিস নং-১২
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ
ﻋُﻤَﺮَ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻤَّﺎ ﺍﺟْﺘَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺻَﻔِﻴَّﺔَ ﺭَﺃَﻯ
ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻣُﻨْﺘَﻘِﺒَﺔً ﻭَﺳْﻂَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓَﻌَﺮَﻓَﻬَﺎ
ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী করীম (ﷺ) সাফিয়্যাহকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন, তখন তিনি আয়েশা (রাঃ)-কে
মানুষের মাঝে নিকাব পরিহিত দেখে চিনতেপারলেন। (ইবনে সা‘দ-৮/৯০, ইবনে আসাকির)
v ইজমায়ে উম্মত:
ইমাম নাববি রহ. স্বীয় গ্রন্থ ‘আল-মিনহাজ’-এ লিখেছেন, যদি ফিতনার আশংকা থাকে তাহলে
কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য কোনো প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর মুখমণ্ডল ও হাত দেখা
জায়িয নেই। আল্লামা রামালী রহ. ‘আল-মিনহাজ’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় এই মতের ওপর
আলিমগণের ইজমা’র কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি এও লিখেছেন, সঠিক মতানুযায়ী ফিতনার আশংকা না থাকলেও প্রাপ্ত বয়স্কা নারীকে দেখা হারাম। এর দ্বারা বুঝা যায়, মুখমণ্ডল খোলা অবস্থায় মহিলাদের বাইরে বের হওয়া জায়িয নেই। কারণ, সে অবস্থায় পুরুষ তাদেরকে দেখবে এবং দেখার মাধ্যমে ফিতনা ও কুপ্রবৃত্তির
সৃষ্টি হবে। নিহায়াতুল মিনহাজ ইলা
শারহিল মিনহাজ-৬/১৮৮
মুখমণ্ডলের পর্দার বিষয়টি ইজমার
ভিত্তিতে স্থিরকৃত হয়েছে। কোনো
মাযহাবের কোনো একজন উল্লেখযোগ্য ‘আলিম
এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেননি। শায়খ ইবনে বায রাহ., শায়খ ইবনে উছাইমীন ও শায়খ
ইবনে জিবরীনও একই ফতোয়া দিয়েছেন। দেখুন : রিসলাতুন ফিল-হিজাবি
ওয়াস-সুফূর : ১৯; ফাতাওয়া উলামাইল বালাদিল হারাম : ১১৬৯
চার মাযহাব এবং জমহূরে উলামার বর্তমান সম্মিলিত
অবস্থান হলো নারীর চেহারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত, তা পর পুরুষের সামনে খোলা
রাখা বৈধ নয়। বর্তমান ফেতনার যুগে এর বাইরে বলার সুযোগও নেই।
نستطيع أن نخلص مما تقدم بأن علماء المذاهب الأربعة يكادون يتفقون
على تغطية المرأة جميع بدنها عن الأجانب، سواء منهم من يرى أن الوجه والكفين عورة،
ومن يرى أنهما غير عورة لكنه يوجب تغطيتهما فى هذا الزمان لفساد أكثر الناس. أدلة الحجاب: ٤٧٤
সূত্র: মিশর আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট
লাইব্রেরি দারু ইবনিল যাওজী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ, আদিল্লাতুল হিযাব )أدلة الحجاب পৃষ্ঠা:৪৭৪, প্রথম সংস্করণ, ২০০৫ ইং ফতহুল বারী: ৯/৩৩৭, নাইলুল আওতার: ৬/১১০ রওযাতুত তালেবীন:৫/৩৩৬
v কিয়াসের আলোকে চেহেরা ঢাকা অপরিহার্যতা:
:আল্লাহ তাআলার বাণী-
(১) আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলি যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন
করো না। তাদেরকে গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। নারীর ভেতরে বস্তু বাহিরের
বস্তু নয়। নারী এ উম্মতের জন্য ফেতনা স্বরুপ।
যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-
(ক) , « ما تركتُ بعدي فتنةً هي أَضَرُّ على الرجال من النساء » . متفق عليه . আমি আমার পর পুরুষদের জন্য
নারীদের ফিতনার চেয়ে বড় ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে যাইনি। বুখারি ও মুসলিম
(খ) « فاتقوا الدنيا , واتقوا النساء , فإن أول فتنةِ بني إسرائيل
كانت في النساء »
[مسلم] অর্থ : তোমরা দুনিয়াকে ভয় কর এবং
নারীকে ভয় কর, কারণ, বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনা ছিল নারীর ফিতনা। মুসলিম
(২)
وَيَا آَدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ
حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ
الظَّالِمِينَ (1
অর্থ: হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী
জান্নাতে বসবাস কর। এরপর যেখানে থেকে ইচ্ছে
খাও। আর এ গাছের নিকটে যেও না। তাহলে তোমরা জালেমদের অন্তরভুক্ত হবে। সূরা আরাফ-১৯, এ আয়াতে গাছের কাছে যেতে বারণ করেছেন। অথচ প্রকৃত নিষেধাজ্ঞা হলো ফল খাওয়ার প্রতি।
(৩) وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ کَانَ فَاحِشَۃً ؕ وَ سَآءَ
سَبِیۡلًا ﴿۳۲﴾ অর্থ: আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা মন্দ কাজ এবং মন্দ পথ। সূরা ইসরা-৩২ যেনা-ব্যভিচার
হলো মূল হারাম। অথচ তার কাছেও যেতে বারণ
করেছেন।
এতে (২ এবং ৩ নং আয়াত দ্বারা) প্রমাণিত হয় যে, কোন জিনিস নিজস্বভাবে
নিষিদ্ধ না হলেও তাতে যদি কোন নিষিদ্ধ বস্তুর কারণ বা মাধ্যম হওয়ার আশংকা থাকে, তবে তাও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আলোচ্য মূলনীতির ভিত্তিতে গভীরভাবে চিন্তা করলে উপলব্ধি করা
যায় যে, নারীর জন্যে পরপুরুষের সামনে
মুখমণ্ডল খোলা রাখাতে (নৈতিকতা বিধ্বংসী) অনেক ফাসাদ ও অনাচার নিহিত রয়েছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও
নেওয়া যায় যে, মুখমণ্ডল খোলা রাখাতে কিছু
কল্যাণ নিহিত রয়েছে তবে তা অকল্যাণ ও ফাসাদের তুলনায় নগণ্য। কাজেই নারীর জন্যে পর পুরুষের সম্মুখে
চেহারা খোলা রাখা হারাম এবং আবৃত রাখা ওয়াজিব বলে প্রমাণিত হল।
v বিজ্ঞ ফকিহ-আলেমদের মত:
(ক) মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ. লিখেছেন, ‘ইমাম চতুষ্টয়ের মধ্য থেকে ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. তিনজনই মুখমণ্ডল ও হাতের
কবজি খোলা রাখার মোটেই অনুমতি দেননি- তা ফিতনার আশংকা থাকুক বা না
থাকুক। ইমাম আবু হানিফা রহ. ফিতনার আশংকা যদি না থাকে- এই শর্তে খোলা রাখার কথা
বলেন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এই
শর্ত পূরণ হবার নয়, তাই হানাফি ফকিহগণ গায়র মাহরাম
পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার অনুমতি দেন নি। মাআরিফুল কুরআন -৭/২১৪
তিনি আরও বলেন, হযরত মুফতী শফী রহঃ “আহকামুল কুরআন” গ্রন্থে লিখেন যে,
فى هذه الآية دلالة على أن المرأة الشابة مأمورة بستر وجهها من
الأجنبيين
এ আয়াত একথা বুঝাচ্ছে যে, যুবতী মেয়েরা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এমনভাবে বের হবে যেন তাদের চেহারা
পরপুরুষের সামনে প্রকাশিত না হয়। আহকামুল কুরআন-৩/১৪৫৮
(খ) ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার
পূর্বে নারীরা হিজাব ব্যতীত বের হতো। ফলে পুরুষরা তাদের চেহারা ও হাত দেখতে পেত।
তখন দেখাও বৈধ ছিল। কারণ নারীদের জন্য মুখমণ্ডল ও হাত প্রকাশ করাও বৈধ ছিল। অতঃপর
যখন পর্দার আয়াত يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ
قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ الخ অবতীর্ণ হলো তখন নারীরা পুরুষদের থেকে পর্দা করতে শুরু করল। (ইয়ানাতুল
মুখতারীন বাইনান নিকাবি ওয়াল খিমার ১/১৬)
তিরি আরও বলেন, বেগানা পুরুষ দেখতে পারে এমনভাবে মহিলাদের মুখমণ্ডল খোলা রাখা জায়িয নেই। দায়িত্বশীল পুরুষদের (স্বামী, পিতা, ভাই প্রমুখের) উচিত ‘আমর বিল মা‘রুফ’ ও ‘নাহি ‘আনিল মুনকার’ তথা ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধে’র অংশ হিসেবে তাদেরকে এমন কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া। অধীনস্থ নারীদের পর্দাহীনতা থেকে বিরত না রাখাও
দায়িত্বশীল পুরুষদের জবাবদিহিতামূলক অপরাধ। এজন্য তাদেরকে শাস্তিও দেয়া যেতে পারে। মাজমু ফাতাওয়া-২৪/৩৮২
(গ) হাফিয ইবনুল কা ইয়্যিম র. লিখেন, স্বাধীন নারী মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি পর্যন্ত খোলা রেখে সালাত আদায় করতে পারে (এই শর্তে যে সেখানে কোনো
বেগানা পুরুষ থাকবে না)। তবে এ অবস্থায় সে বাজারে এবং পুরুষের ভীড়ের মধ্যে যেতে
পারবে না। ই‘লাম
আল-মুওয়াককিঈন-২/৮০
(ঘ) শাইখ ইবনে বায ও শাইখ ইবনে উসাইমিনও একই ফতওয়া দিয়েছেন। (রিসালাতুন ফিল
হিজাব; পৃষ্ঠা ১৭, ফাতাওয়া উলামাই বালাদিল
হারামাইন; পৃষ্ঠা ১১৬৯)
(ঙ) বর্তমানকালে আলিম ও প্রখ্যাত ফকিহগণও একই মত পোষণ করেন। পাক-হিন্দের
আলিমদের কথা না হয় বাদ দিন। কারণ, তাদের অধিকাংশই হানাফি এবং
তাদেরকে ফিকহ সংক্রান্ত মাসআলা ও বিষয়সমূহে কট্টরপন্থি মনে করা হয়। কিন্তু আরব বিশ্বের
সমকালীন সকল আলিম ও মুফতিদের মতও এই যে, মহিলাদের জন্য মুখমণ্ডল ঢাকা
একান্ত আবশ্যক। তাদের মধ্যে শায়খ আব্দুর
রহমান ইবন সাদি, মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহিম আলে
আশ-শায়খ, মুহাম্মাদ আল-আমীন
আশ-শানকিতি, শায়খ ‘আবদুল্লাহ
ইবনু বায, শায়খ আবু বাকর জাবির আল-জাযায়িরি, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু গুনায়মিন, শায়খ আবদুল্লাহ ইবনু জুবরিন, শায়খ সালিহ আল-ফাওযান, শায়খ বাকর ইবনু ‘আবদিল্লাহ
আবু যায়েদ, মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইসমা’ঈল আল-মাকদাম, আবু, ইসহাক আল-হুওয়ায়তি, মুসতাফা আল-‘আদাবি, মুহাম্মাদ হাসসান ও আরো অনেকের
নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং
ফকিহগণের চূড়ান্ত ফাতওয়াসমূহ থাকার পরও কোনো ‘আলিম নিকাবকে অস্বীকার করতে
পারেন না। যারা মুখ না ঢাকার
ব্যাপারটি জোর করে সপ্রমাণ করতে চান তারা খেয়াল করেন না যে, তাদের এহেন মত পশ্চিমা ও তাদের ভাব শিষ্যদের অতি পুলকিত করবে। তারা এই রায়কে ব্যবহার
করবে হাতিয়ার হিসেবে।
v আসলাফ তথা সাহাবিদের আমল:
(১) হযরত আয়েশা রাযি. বর্ণনা করেন,
كان الركبان يمرون بنا ونحن مع رسول الله صلى الله عليه وسلم محرمات فإذا حاذوا بنا سدلت إحدانا جلبابها من رأسها على وجهها فإذا جاوزنا كشفناه.
অর্থ : আমরা রাসূলে কারীম (ﷺ)এর
সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। এ সময় আমাদের পাশ দিয়েই মানুষের বাহনগুলো চলাচল
করছিল। যখন বাহনগুলো আমাদের কাছাকাছি চলে আসত তখন আমরা আমাদের চাদর চেহারার উপর
টেনে দিতাম। আর যখন বাহনগুলো আমাদের থেকে দূরে চলে যেত তখন আমরা আমাদের চেহারা
থেকে চাদর সরিয়ে নিতাম। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ১৮৩৩
(২) উম্মত জননী আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, আমরা রাসূলের সাথে এহরাম
অবস্থায় ছিলাম, উষ্ট্রারোহী পুরুষরা আমাদের
পার্শ্বদিয়ে অতিক্রম কালে আমাদের মুখামুখি হলে আমরা মাথার উপর থেকে চাদর টেনে
চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম। তারা আমাদেরকে অতিক্রস করে চলে গেলে আমরা মুখমণ্ডল খুলে দিতাম। মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ
(৩)আসমা
বিনতে আবি বাকর রা. বলেন, আমরা পুরুষদের থেকে আমাদের চেহারা আবৃত রাখতাম। মুস্তাদরাক হাকেম-১৬৬৪
(৪) ফাতিমা বিনতুল মুনযির রহ. বলেন, ‘আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার
সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম। ইমাম মালেক, মুয়াত্তা : ১/৩২৮; হাকিম, মুসতাদরাক : ১/৪৫৪
(৫) আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন,
استمرار العمل على جواز خروج النساء إلى المساجد والاسواق والاسفار
منتقبات لئلا يراهن الرجال.
অর্থ : নারীদের মসজিদ, বাজার এবং সফরে নেকাব পরিহিত অবস্থায় বের হওয়ার আমল যুগ পরম্পরায় চলে
এসেছে। যাতে করে পুরুষরা তাদের না দেখতে পারে। (ফাতহুল বারী ৯/৩৩৭)
v যারা চেহেরাকে হিজাব মানেন
না/আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) –এর ব্যাখ্যার জবাব:
পরপুরুষের সামনে নারীর
মুখমণ্ডল প্রদর্শন বৈধতার পক্ষের প্রবক্তাগণ প্রমাণের জন্য পূর্বোক্ত সূরা নূরের
৩১ নং لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَهُنَّ اِلَّا مَا ظَهَرَ
مِنۡهَا
অর্থ: আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। সূরা
নূর-৩১
এখানে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ব্যাখ্যা করেছেন, হাতের কজি ও মুখমণ্ডল। অথচ
তিনি সূরা আহযাবের ৫৯ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি মুখমণ্ডল ঢাকার কথা বলেছেন। এর সমন্বয় কি? নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, ইবনে আব্বাস রাযি. يدنين عليهن-এর ব্যাখ্যায়
বলেছেন, নারীরা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে একটি চক্ষু
ব্যতীত পুরো শরীর আবৃত করে বের হবে। আর এখানে الا ما ظهر منها এর ব্যাখ্যায় তিনি মুখমণ্ডল এবং উভয় হাতের তালু খোলা রাখার কথা বলবেন
এতে তো স্ববিরোধী বক্তব্য প্রমাণিত হয়। মূলত তার দুটি ব্যাখ্যার মাঝে কোনো বিরোধ
নেই। কারণ আল্লামা ইবনে জারীর রহ. সহীহ সূত্রে ইবনে আব্বাস রাযি. এ একটি বর্ণনা
উদ্ধৃত করেছেন। বর্ণনাটি হলো
حدثنى على قال حدثنا عبد الله قال حدثنى معاوية عن على عن ابن عباس
ولا يدنين زينتهن الا ما ظهر منها قال الزينة الظاهرة الوجه وكحل العين وخضا الكف
والخاتم فهذه تظهر فى بيتها لمن دخل من الناس عليها.
অর্থ : ইবনে আব্বাস রাযি. ولا يدنين زينتهن الا ما ظهر منها ‘তারা
তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবে না। তবে যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তার কথা
ভিন্ন’ এর ব্যাখ্যায় বলেন, দৃশ্যমান সৌন্দর্য হলো
মুখমণ্ডল, চোখের সুরমা, হাতের মেহেদী এবং আংটি। সুতরাং নারীরা তাদের গৃহে যে সকল লোক প্রবেশ করে তাদের
সামনে এগুলো প্রকাশ করতে পারবে। (তাফসীরে ইবনে জারীর ত্ববারী ১২/১৮৬)
এই বর্ণনার দ্বারা উভয় বক্তব্যের বিরোধ
নিষ্পত্তি হয়ে গেল। কারণ ইবনে আব্বাস রাযি. উক্ত বর্ণনায় সুস্পষ্টরূপে বলে
দিয়েছেন, নারীরা মুখমণ্ডল এবং উভয়
হাতের তালু তাদের গৃহে যারা প্রবেশ করে তাদের সামনেই শুধু প্রকাশ করতে পারবে। আর
তারা হলেন মাহরাম। কারণ নারীগৃহে অপরিচিত লোকদের অবাধ প্রবেশকে কেউ বৈধ বলেন না।
সুতরাং ইবনে আব্বাস রাযি.-এর ব্যাখ্যাকে মুখমণ্ডল হিজাবের অংশ না হওয়ার পক্ষে
দলীল হিসেবে পেশ করা সম্পূর্ণ ভুল ও অগ্রহণযোগ্য। এতে স্পষ্ট হয়ে গেল, ইবনে আব্বাস রাযি.-এর মতেও নারীদের জন্য তাদের মুখমণ্ডল পরপুরুষের সামনে
অনাবৃত রাখা বৈধ নয়।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. বলেন,‘ইল্লা মা যাহারা মিনহা’- যতটুকু সাধারণত প্রকাশ পায়, যেমন- আরবের মহিলাগণ সাধারণত বড় একটি
চাদর দ্বারা পরিধেয় আবৃত করে নিত। হাঁটার সময় পরিধেয় কাপড়ের নিম্ন অংশ ঐ চাদরের আবরণ মুক্ত
থাকে। আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ উক্ত আয়াতের তাফসীরে
লেখেন:
{وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلا مَا ظَهَرَ مِنْهَا} أَيْ: لَا يُظهرْنَ شَيْئًا
مِنَ الزِّينَةِ لِلْأَجَانِبِ، إِلَّا مَا لَا يُمْكِنُ إِخْفَاؤُهُ.
“তারা যেন সাধারণত প্রকাশমান অঙ্গ ব্যতীত তাদের
সৌন্দর্য প্রকাশ না করে” মানে হল, পরপুরুষের সামনে সৌন্দর্যের
কোন কিছুই প্রকাশ করবে না, তবে যা লুকানো সম্ভব হয় না, তা ভিন্ন।
অর্থাৎ এর হলো চাদর ও কাপড় ,হাত-চেহেরা
নয়। তাফসিরে ইবনে কাসির-৩-২৮৪
‘হাসান বসরি, মুহাম্মাদ ইবনু সিরিন, ইবনুল জাওযি, ইবরাহিম নাখয়ি প্রমুখ মনীষীও
অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেন।’ তাফসিরুল কুরআনিল আজিম-৩/৩১২
পবিত্র কুরআনের শব্দ ও বাক্য, আলোচ্য বিষয়ের হাদিস ও আছার এবং উসূলে ফিকহের নীতি ও বিধান ইত্যাদি বিবেচনায় ইবন মাসউদ রা. এর ব্যাখ্যাই অগ্রগণ্য। কারণ সূরা আল-আহযাবের ৫৯ নম্বর আয়াতে জিলবাবের একাংশ চেহারার ওপর নামিয়ে মুখমণ্ডল আবৃত রাখার আদেশ করা হয়েছে। তা সূরা নূরের আলোচ্য আয়াতে ইবন মাসঊদ রা.এর ব্যাখ্যাকেই প্রতিষ্ঠিত করে। তাছাড়া সহিহ হাদিসসমূহে নারীদের চেহারা ঢেকে রাখার যে নির্দেশ ও বিবরণ দেখা যায় তা-ও তার ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে।
তাদের দ্বিতীয় দলিল হলো এই হাদিস: দলীল :
عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها أَنَّ أَسْمَاءَ بِنْتَ أَبِىْ بَكْرٍ
دَخَلَتْ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَعَلَيْهَا ثِيَابٌ رِقَاقٌ
فَأَعْرَضَ عَنْهَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ يَا أَسْمَاءُ
إِنَّ الْمَرْأَةَ إِذَا بَلَغَتِ الْمَحِيْضَ لَمْ تَصْلُحْ أَنْ يُرَى مِنْهَا
إِلاَّ هَذَا وَهَذَا. وَأَشَارَ إِلَى وَجْهِهِ وَكَفَّيْهِ-
আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আসমা বিনতে আবী বকর (রাঃ) পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট
প্রবেশ করলেন। রাসূল (ছাঃ) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন, হে আসমা! নারী যখন যৌবনে পদার্পণ করে তখন তার এটা ওটা ব্যতীত প্রকাশ করা বৈধ
নয়। তিনি চেহারা ও দু’কব্জির দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন। আবু দাঊদ
হা/৪১০৬; মিশকাত হা/৪৩৭২,
এর জবাব হলো :
আসমা বিনতে আবি বকর সম্বন্ধে আয়েশা (রাঃ)
কর্তৃক বর্ণিত হাদীছটি দুই কারণে দুর্বল বা যঈফ-
এ বর্ণনার সাথেই আবু দাউদ রাহ.-এর মন্তব্যও আছে, যা নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়নি। তিনি বলেছেন,
‘এর সূত্র (সনদ) বিচ্ছিন্ন।’ তাছাড়া এতে ‘সায়ীদ
ইবনে বাশীর’ নামক একজন অগ্রহণযোগ্য রাবী আছে। বিশেষত কাতাদা রাহ. থেকে তার যে বর্ণনাগুলো, তা পরীক্ষা করে হাদীস বিশারদগণ বলেছেন,
‘এই ব্যক্তি কাতাদা থেকে অগ্রহণযোগ্য কথা বর্ণনা
করে।’ আলোচ্য বর্ণনাও ঐসব বর্ণনারই একটি। এর মতন (বক্তব্য) ‘নাকারাত’ দোষে এবং সনদ (সূত্র) ‘ইযতিরাব’ দোষেও দুষ্ট।
সূত্র: আননাকদুল বান্না, আবু মুয়ায তারিক ইবনে
আউযুল্লাহ পৃ. ২৮-৪০; তাফসীরুল কুরআনিল আজীম, ইবনে কাছীর-৩/৩১২; আলকামিল, ইবনে আদী-৩/১২০৯; কিতাবুল ইলাল, ইবনে আবী হাতিম-১৪৬৩; আন নাযার ফী আহকামিন নাযার, ইবনুল কাত্তান-১৬৭,১৬৮; আলজাওহারুন নাকী, সুনানে কুবরা বাইহাকীর সাথে মুদ্রিত-৭/৮৬পৃ
দ্বিতীয় কথা হলো, এছাড়া এটা বিশুদ্ধ ধরা হলে এটা পর্দার আয়াত নাযিলের পূর্বের ঘটনার উপর প্রমাণ
বহন করে। হজরত আশরাফ আলি থানভি রহ. তার লিখিত “ইসলামে পর্দার বিধান” নামক কিতাবে প্রমাণ করেছেন
যে, এ সংক্রান্ত হাদিস পর্দার
বিধান নাজিল হওয়ার পূর্বে। সূতরাং আর কোন দ্বন্দ্ব রইলো না।
তৃতীয় কথা হলো, মুস্তাদরাকে হাকিম এর সহীহ হাদীস
ﻋَﻦْ ﺃَﺳْﻤَﺎﺀَ ﺑِﻨْﺖِ ﺃَﺑِﻲْ ﺑَﻜْﺮٍ ﺍﻟﺼِّﺪِّﻳْﻖِ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻛُﻨَّﺎ
ﻧُﻐَﻄِّﻲْ ﻭُﺟُﻮْﻫَﻨَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ، ﻭَﻛُﻨَّﺎ ﻧَﻤْﺘَﺸِﻂُ ﻗَﺒْﻞَ ﺫَﻟِﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻻِﺣْﺮَﺍﻡِ-
আসমা বিনতে আবুবকর (رضي الله عنه) বলেন, আমরা পুরুষদের থেকে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম এবং ইহরামের পূর্বে চিরুনী
করতাম। তাখরিজ: মুস্তাদরাকে হাকিম:১/৪৫৪, হাদীস নং-১৬৬৮, ইরওয়া হা/১০২৩; ছহীহ ইবনু খুযাইমা-হা/২৬৯০
ফিকহ-এর উসূল মোতাবেক একই রাবির
বিপরীত মুখি বর্ণনা হলে, তার ফতোয়া ঠিকে না, অন্য কারোর সাথে সেই মত প্রধান্য পাবে না।
v চুড়ান্ত মতামত বা সিদ্ধান্ত:
যারা মুখ খোলার পক্ষে বলেছেন
প্রথমত তাদের মতটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মত নয় আর দ্বিতীয়ত তাঁরা সবাই এর জন্য নিরাপদ
ও ফিতনামুক্ত হওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। আজ যৌন হয়রানি সবখানে। সংবাদপত্র পাঠকালে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এমন কোন দিন নাই নারীরা ধর্ষিত
হচ্ছে না । খোদ
ফ্রি সেক্সর দেশেও। দেখুন ২ নভেম্বর ২০১৮ প্রথম
আলোর শিরোনাম, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ,“কাজ ছেড়ে রাজ পথে গুগলের কর্মীরা”। শুধু ২০১৮ সালে বাংলাদেশে
৭৩২ জন ধর্ষিত হয়েছে এবং ধর্ষণজনিত ৬৬ জনকে হত্যা করা হয়। প্রথম আলোরে জরিপ, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯। যে সমাজে ছয় মাসের শিশু নারী ধর্ষিত হচ্ছে, জন্মদাতা পিতার কাছে আজ নারী নিরাপদ নয়। তারপরও ফেতনার যুগ, সময় আসেনি;তবে
কবে আসবে ? তারপর মুখ ঢাকা জরুরি হবে ? তাড়াও মানুষের মধ্যে
আল্লাহভীতি,লজ্জা কমে গেছে। সাজসজ্জার নানা উপায় ও উপকরণ আবিষ্কৃত
হওয়ায় ফিতনার মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। পরিশেষে পবিত্র কুরআন-হাদিস, ইজমা-কিয়াস ও বিজ্ঞ আলেম-ফকিহগণের
মতামতের ভিত্তিতে এ চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত উপনিত হলাম যে,বর্তমান
যামানায় মুখমণ্ডলের পর্দা করা ফরজ, এর বিপরীত বলার কোন সুযোগ
নাই।
মুফতি তাকী ওসমানী (দা. বা.) হদিস ও ফকীহগণের
দীর্ঘ মতামত পর্যলোচনা করে বলেন ‘চার মাজহাবের অভিমতগুলোর ওপর দৃষ্টিপাত করলে এ
কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে সবকয়টি মাজহাবই এই বিষয়ে একমত যে, কামবাসনা পূরাণার্থে কিংবা ফেতনায় জড়িয়ে যাওয়ার শংকাযুক্ত অবস্থায় নারীদের
মুখমণ্ডলের ওপর দৃষ্টিপাত করা হারাম।
বিশেষত
বর্তমান এই চারিত্রিক অধঃপতনের যুগে এখন সর্বত্র ফেতনা ফাসাদের ছড়ছড়ি। এই জন্য
হানাফী মাজহাবের মুতাআখখিরিন ওলামায়ে কেরাম সাধারণভাবে প্রয়োজন ছাড়া কোনো নারীর
মুখমণ্ডলের ওপর দৃষ্টিপাত নিষিদ্ধ করেছেন। সূত্র: তাকমিলায়ে ফাতহুল মূলহীম খণ্ড- ৪/ পৃষ্ঠা ২৬১
আল্লাহ তাআলা আমাদের সব
মুসলিম মা-বোনকে যথাযথভাবে পর্দা করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
তথ্য সহযোগিতায়- “মুসলিম
জীবনে চল্লিশ হাদিস” -১২৮ পৃষ্ঠা, লেখক, মাওলানা
মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি
মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
2 Comments:
মাশাআল্লাহ অসাধারণ
উড়িষ্যার প্রকাশ করেন মাশাল্লাহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন