জিজ্ঞাসা-২৪৯: মুহতারাম, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি
ভালই আছেন। জানার বিষয় আমরা যে বিদায় প্রাক্কালে আল্লাহ হাফেজ বা ফি আমানিল্লাহ
বলি থাকি। এটা বলা কি বিদআত হবে দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম? তারিখ-১৫/০৮/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা মোজাম্মেল হোসেন কুমিল্লা থেকে--
জবাব:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد
بسم الله الرحمن الرحيم
হামদ ও সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত
বাক্যদ্বয় অর্থাৎ “আল্লাহ হাফেজ/খোদা
হাফেজ” ও “ফি আমানিল্লাহ” সরাসরি পবিত্র কুরআন-হাদিসে
বর্ণিত হয়নি; তবে কাছাকাছি শব্দ ব্যবহৃত
হয়েছে; তাছাড়া ‘হাফিজ’ আল্লাহ তাআলার একটি গুণবাচক নাম। যেমন,
فَاللَّهُ خَيْرٌ حَافِظًا وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
অর্থ: সুতরাং আল্লাহই শ্রেষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু। সূরা
ইউসুফ-৬৪
أَسْتَوْدِعُ اللَّهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيمَ عَمَلِكَ
অর্থঃ আমি আল্লাহর নিকট তোমার দীন, আমানাত ও সর্বশেষ আমলের
হিফাযাতের জন্য দু‘আ
করছি। তাখরিজ: তিরমিজি- ৩৪৪২ অধ্যায়: ৪৫/ দুআসমূহ,
প্রথম কথা হলো, আল্লাহ হাফেজ ও ফি আমানিল্লাহ দুটি অর্থবহ বাক্য । 'ফি
আমানিল্লাহ' মানে আপনাকে আল্লাহর
নিরাপত্তায় দিয়ে দিলাম, তিনি যেন আপনাকে নিরাপদ
রাখেন। এটি
মানুষের নিরাপত্তা কামনায় সুন্দর একটি দুআ। আর আল্লাহ হাফেজ মর্মার্থ: আল্লাহ তাআলা তোমাকে হিফাজত করুন, বা তিনি হিফাজতকারী/রক্ষাকারী
ইত্যাদি।
দ্বিতীয় কথা হলো, কোনো মুমিন অন্য মুমিনের জন্য যে কোনো দুআ করতে পারেন, বরং কল্যাণকামিতাই দ্বীন। যেমন,
হাদিস নং-০১
عَنْ تَمِيمٍ الدَّارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ:” الدِّينُ النَّصِيحَةُ , فَقُلْنَا: لِمَنْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: لِلهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ “
অর্থ: হজরত আবু রুকাইয়া তামিম ইবনে আওস আদ-দারি (রা.) হতে বর্ণিত। নবি (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, দীন ইসলামের মুল কথা হচ্ছে কল্যাণকামিতা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার জন্য? তিনি বললেন, মহান আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রসূল, মুসলমানদের ইমাম ও সমস্ত
মুসলমানদের জন্য। তাখরিজ : মুসলিম-৫৫; আবু দাউদ-৪৯৪৪; দারেমি-৪১৯৭; মুসনাদে আহমদ-১৬৯৪০
হাদিস নং-০২
عَنْ جَرِيرٍ قَالَ:
«بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى إِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ»
অর্থ: জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর
নিকট বায়আত গ্রহণ করেছি সালাত কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা এবং সমস্ত
মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার ওপর। তাখরিজ : বুখারি-৫৭; মুসলিম-৫৬; তিরমিজি-১৯২৫; নাসায়ি-৪১৫৬; আহমদ-১৯১৯১
উপরোক্ত বাক্যেদ্বয় উত্তম দুআর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং স্বাভাবিক অবস্থায় বললে বিদআত হবে না। তবে এটাকে জরুরি বা বিদায়কালের সুন্নাত মনে করলে বিদআত হবে।
তৃতীয় কথা হলো, বিদায়ক্ষণে সুন্নাত হলো সালাম দেওয়া এবং নিম্নের দোয়া পড়া। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ دَاوُدَ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ
إِسْمَاعِيلَ بْنِ جَرِيرٍ، عَنْ قَزَعَةَ، قَالَ: قَالَ لِي ابْنُ عُمَرَ هَلُمَّ أُوَدِّعْكَ كَمَا وَدَّعَنِي
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَسْتَوْدِعُ اللَّهَ دِينَكَ
وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيمَ عَمَلِكَ
অর্থ: কাযা‘আহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমাকে বললেন, এসো তোমাকে ঐভাবে বিদায় জানাই, যেভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বিদায় দিয়েছেন, ‘‘আমি আল্লাহর নিকট তোমার দীন, আমানাত ও সর্বশেষ আমলের হিফাযাতের জন্য দু‘আ করছি। তাখরিজ: আবু দাউদ-২৬০০; তিরমিজি- ৩৪৪২ অধ্যায়: ৪৫/ দুআসমূহ
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا
اللَّيْثُ، عَنِ ابْنِ عَجْلاَنَ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا انْتَهَى أَحَدُكُمْ إِلَى
مَجْلِسٍ فَلْيُسَلِّمْ فَإِنْ بَدَا لَهُ أَنْ يَجْلِسَ فَلْيَجْلِسْ ثُمَّ إِذَا
قَامَ فَلْيُسَلِّمْ فَلَيْسَتِ الأُولَى بِأَحَقَّ مِنَ الآخِرَةِ "
আবূ হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোন মাজলিসে উপস্থিত হলে সে যেন সালাম করে, তারপর তার ইচ্ছা হলে বসে পড়বে। তারপর সে যখন উঠে দাড়াবে, তখনো যেন সালাম করে। কেননা পরের সালামের চাইতে প্রথম সালাম বেশি গুরুত্বপূর্ণ
নয়। তাখরিজ: তিরমিজি- ২৭০৬
হাদিস নং-০৩
নবীজী একটি মজলিসে ছিলেন, এক ব্যক্তি পাশ দিয়ে অতিক্রমের সময় বলল, আস সালামু আলাইকুম। নবীজী বললেন, দশ নেকি।... এক ব্যক্তি সালাম দেয়া ছাড়া উঠে গেল। তখন নবীজী বললেন, সে মনে হয় ভুলে গেছে। যখন তোমাদের কেউ কোনো মজলিসে পৌঁছবে তখন সালাম দিবে। যদি উক্ত মজলিসে বসতে চায় বসবে। এরপর যখন মজলিস থেকে উঠে যাবে (বিদায় নিবে) তখনও সালাম দিবে। কারণ প্রথম সালাম দ্বিতীয় সালাম অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়। অর্থাৎ উভয়টির গুরুত্ব সমান। -আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৯৮৬
শেষকথা: বিদায়বেলা সালাম ও দুআ বলা সুন্নাত। কোনো কোনা আলেম, শুধু আল্লাহ হাফেজ ও ফি আমানিল্লাহ বলা খেলাফে সুন্নাত বলেছেন। আর তা জরুরি বা
সুন্নাত মনে করা বিদআত। কেহ যদি সালাম এর সাথে সাথে আল্লাহ হাফেজ/খোদা
হাফেজ, ফি আমানিল্লাহ বলে, তাহলে সেটিরও অবকাশ রয়েছে। তবে মুসলিম হিসেবে সবক্ষেত্রে সুন্নাত পালন করা
বাঞ্চণীয়।
وَعَن أنس قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا بُنَيَّ إِنْ قَدَرْتَ أَنْ تصبح
وتمسي لَيْسَ فِي قَلْبِكَ غِشٌّ لِأَحَدٍ فَافْعَلْ» ثُمَّ قَالَ: «يَا بني
وَذَلِكَ من سنتي وَمن أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي وَمَنْ أَحَبَّنِي
كَانَ مَعِي فِي الْجنَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
অর্থাৎ যে আমার সুন্নাতকে ভালবাসলো, সে যেন আমাকেই ভালোবাসলো। আর যে আমাকে ভালোবাসে, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। তাখরিজ: জামে তিরমিজি-২৬৭৮
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
2 Comments:
মাশা-আল্লাহ
শায়খ! জাযাকাল্লাহু খইর।
খুব সময়োপযোগী প্রশ্নটির উত্তর চমৎকার ভাবে দিয়ে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করলেন।
জাযাকাল্লাহ খায়ের
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন