আল-বুরহানের
নীতিমালা
নাম : আল-বুরহান (দলীল-প্রমাণ)
শর্ত: বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী
ধর্ম শিক্ষকগণ শুধু সদস্য হতে পারবেন।
নীতিমালা: আল –বুরহানের
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ঠিক রাখার জন্য এবং
কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন
করা অতীব জরুরী। অভিযোগটি হলো এই, অতিরিক্ত ম্যাসেজ/অপ্রয়োজনীয়
ম্যাসেজ যা সকলের নিকট বিরক্তির কারণ। তাই
অতিরিক্ত ম্যাসেজ রোধকল্পে এবং আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক অটুট রাখার নিমিত্তে কিছু
বিধি-নিষেধ নিম্নে দেওয়া হলো:-
১। মাসয়ালা-মাসায়েল অর্থাৎ সওয়াল-জবাব, প্রশ্ন-উত্তর এবং পেশাগত
সহযোগিতা ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিগত মতামত-চিন্তা, কোন বক্তার বক্তব্য, কোন ইসলামি ব্যক্তিত্বের
চিন্তা-চেতনা লেখা, অডিও,
ভিডিও, পোস্ট/শেয়ার/প্রশ্ন করা যাবে
না। তবে,
(ক) মানবিক বিষয় বিবেচনা করে যদি
কখনো কিছু গ্রুপে প্রকাশ করার প্রয়োজন হয়, তাহলে কোন সদস্য
সরাসরি গ্রুপে দিতে পারবেন না, এডমিন এর মাধ্যমে প্রকাশ করবেন।
(খ) নিজ, পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী
ও আপন ভাইয়ের গুরুতর অসুস্থ এবং মৃত্যু সংবাদ
এডমিনের মাধ্যমে দুআ চাইতে পারবেন।
(গ) অসুস্থ কিংবা মৃত্যুর সংবাদ দেওয়ার পরে কোন সদস্য
আমিন আমিন বা কোন ধরনের কমেন্টস করতে পারবেন না, মনে মনে বা ব্যক্তিগতভাবে
দুআ করবেন।
(ঘ) যদি ‘গ’ নম্বর শর্ত পূরণ না হয়, তাহলে ‘ক’ এবং ‘খ’ সুবিধা বাতিল করা হবে।
(ঙ) আমাদের মাসয়ালাগুলো যেহেতু
ওয়েবসাইটে স্থাপন করা হয়, তাই সরাসরি কেউ গ্রুপে জবাব
দিবে না। এডমিনের কাছে পাঠালে,
এডমিন
সেটাকে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।
২। ব্যক্তিগত আলাপচারিতা ও ঈদের শুভেচ্ছাসহ সকল শুভেচ্ছা বিনিময করা যাবে না।
৩। অপরকে সম্মান দিয়ে কথা বলা এবং কারও সম্মানে আঘাত লাগে এমন কথা বলা যাবে
না।
৪। রাষ্ট্র বিরোধী এবং রাজনৈতিক আলোচনা করা যাবে না।
৫। পরমত সহিঞ্চুতা থাকতে হবে ও বিতর্ক এড়িয়ে চলা।
৬। জানার জন্য প্রশ্ন করা,
ঠেকানো/বিব্রত
করার জন্য প্রশ্ন করা যাবে না। যথাসম্ভব সহজভাবে মাসয়ালার জবাব দেওয়া, (হুবহু কপি ও পেস্ট না করা, কারণ এতে কাঙখিত সমাধান খুজে পেতে কষ্ট হয়) পেঁচানো ও জটিলতা
পরিহার করা।
৭। যে মাসয়ালা সম্পর্কে জ্ঞান নেই; সে বিষয়ে জবাব না দেওয়া।
প্রমাণিত মাসয়ালাই কেবল উপস্থাপন করা যাবে। কোনো মাসয়ালা সম্পর্কে কেউ জবাব দিলে, ঐ একই দালায়েল দ্বারা জবাব দেওয়া যাবে না, তবে সম্পূরক আলোচনা করা যাবে অর্থাৎ যেটা পূর্বের জবাবদাতার
লিখনিতে আসেনি, বাট বিষয়টি উপস্থাপন করলে সবার
উপকার হবে বলে মনে হয়।
৮। কোনো কোনো মাসয়ালায় হানিফি ইমামদের মধ্যেও দ্বিমত বা দুটি মত রয়েছে যা
সবগুলোই সঠিক, এটা পরিস্কারভাবে বলে দেওয়া, যাতে উম্মতের আমল করতে সহজ হয়।
৯। মাসয়ালার সমাধান/জবাব দলিল ভিত্তিক হতে হবে। তবে কমন মাসায়ালার ক্ষেত্রে
না হলেও চলবে। কিন্তু প্রশ্নকর্তা এতে সন্তুষ্ট
না হলে, দলিল অবশ্যই দিতে হবে।
১০। উপরোক্ত বিধি-নিষেধ কোন সদস্য দ্বারা ব্যত্যয় ঘটলে
দু-একবার সর্তক করার পরও পুনরায় করলে,
তাকে
সদস্য থেকে রিমুভ করা হবে।
জিজ্ঞাসা-২৭৯: আসসালামু আলাইকুম। স্ত্রী+ মাতা+2বোন+2বৈপিত্রেয়
ভাই কে কতটুকুন পাবে।। তারিখ-২৩/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর
রহমান বগুড়া থেকে---
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর, এ মাসআলায় যেহেতু মৃতের সন্তানাদী এজন্য স্ত্রী ৪/১ চার ভাগের এক পাবে, আবার
ভাই বোন যেহেতু একের অধিক একারণে মায়ের অংশ এক ষষ্টাংশ ৬/১, এখন সহোদর বোন একের অধিক হওয়ায় তারা দুই তৃতীয়াংশ পাবে। কিন্তু ভাই
এখানে বৈপিত্রিয় ভাই দুইজন তাদের এক তৃতীয়াংশ। অর্থাৎ
মা = ১/৬
স্ত্রী= ১/৪
আপন
২বোন= ২/৩
বৈপিত্রেয়
২ ভাই= ১/৩
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুশ শাকুর
ও মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৮০: আসসালামু আলাইকুম,
প্রশ্নঃ পালক পুত্র এর জন্মনিবন্ধনে পিতা এবং মাতার নামের
ক্ষেত্রে তার জন্মদাতা পিতা মাতার নাম না দিয়ে পালক পিতা- মাতার নাম
দেয়া যাবে কিনা?
( হিন্দু বা সনাতন
ধর্মাবলম্বী একটা ছেলে- মেয়ের পারিবারিক ভাবে বিবাহ হয়, বিবাহের পর সন্তান গর্ভে আসার পর উক্ত দম্পতির ডিভোর্স হয়ে
যায়. মেয়ের পরিবার গরিব হওয়ায় নবজাতক সন্তানের খরচ বহন এবং উক্ত ডিভোর্সী মেয়ের বিবাহের কথা চিন্তা করে নবজাতক সন্তান কে কাউকে দিয়ে দিতে চায়,
এক মুসলিম দম্পতি নিঃসন্তান, তারা উক্ত সন্তান টি নিয়ে নেয়,
)
১, সন্তান বড় হলে তার শিক্ষার
ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন দরকার হবে, মুসলিম ঘরে লালিত হয়ে
অমুসলিম পিতা- মাতার নাম কিভাবে ব্যবহার করবে?
২, পালক পিতা- মাতা সেনা সদস্য, সেনা সদস্যের সন্তান সেনাবাহিনী থেকে যে সুবিধাগুলো পেয়ে থাকে সেগুলো উক্ত সন্তান ভোগ করতে
পারবে কি?
তারিখ-২৩/০৯/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ যশোর
থেকে---
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, ইয়াতিম-অসহায়কে লালন-পালন
করা বড় ফজিলতের কাজ। যেমন,
سهل بن سعد رضي الله عنه أن
النبي صلى الله عليه وسلم قال: "أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ
هَكَذَا"، وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى، وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا
شَيْئًا
নবি করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
‘আমি ও এতিমের অভিভাবক জান্নাতে দুই আঙুলের
ন্যায় অতি কাছাকাছি থাকব। তাখরিজ: বুখারি-৬০০৫
নবি করিম (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এতিমের খোরপোশ ও লালন-পালনের যাবতীয়
দায়িত্ব গ্রহণ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাত
দান করবেন। ’
(তিরমিজি
: ১৯১৭)
আপনার প্রশ্ন আলোকে উত্তরটি কয়েকভাগ ভাগ করছি। ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
প্রশ্ন: ক। পালক পুত্র এর জন্মনিবন্ধনে
পিতা এবং মাতার নামের ক্ষেত্রে তার জন্মদাতা পিতা মাতার নাম না দিয়ে পালক পিতা-
মাতার নাম দেয়া যাবে কিনা?
উত্তর: ক।
আসল কথা হলো, পালক/দত্তক পিতা-মাতা প্রকৃত পিতা-মাতা হয়।
দলিল:
وَمَا جَعَلَ
أَدْعِيَاءَكُمْ أَبْنَاءَكُمْ ذَٰلِكُمْ قَوْلُكُم بِأَفْوَاهِكُمْ وَاللَّهُ
يَقُولُ الْحَقَّ وَهُوَ يَهْدِي السَّبِيلَ ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ
أَقْسَطُ عِندَ اللَّهِ فَإِن لَّمْ تَعْلَمُوا آبَاءَهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ فِي
الدِّينِ وَمَوَالِيكُمْ
অর্থ: তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে
তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন
এবং পথ প্রদর্শন করেন। তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে
ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। সূরা আহজাব-৪,৫
আয়াতদ্বয়ের নাযিলের প্রেক্ষাপেট:
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) জায়েদ নামে এক সাহাবিকে দত্তক/পালতে নিয়েছিলেন। তাঁর পিতার নাম
ছিল হারেসা। তাঁকে সবাই জায়েদ ইবনে মোহাম্মাদ—অর্থাত্ মোহাম্মাদের পুত্র
বলে ডাকত। যা জাহিলি যুগের প্রথা ছিল। এমন পরিস্থিতে সংশোধনের জন্য আয়াতদ্বয় অবতীর্ণ
হয়। পরে সবাই তাঁকে জায়েদ ইবনে
হারেসা বলেই ডাকা আরম্ভ করে।
ব্যাখ্যা: অনেকে যে অপরের সন্তানকে নিজ পুত্র বলে আহবান করে, তা
যদি নিছক স্নেজনিত হয়-পালক পুত্র পরিণত করার উদ্দেশে না হয়, তবে
যদিও জায়েজ;কিন্তু তবুও ব্যহতঃ যা নিষিদ্ধ, তাতে
জড়িত হওয়া সমীচীন নয়। অর্থাৎ লালন-পালনকারীকে সম্মান ও কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মা-বাবা ডাকা বৈধ হলেও অনুত্তম ও
অনুচিত। সুত্র: তাফসিরে রূহুল বয়ান, বায়যাবি, তাফসিরে
মাআরেফুল কুরআন-১০৭০ পৃষ্ঠা, সংক্ষিপ্ত মাওলানা মহিউদ্দিন
খান অনূদিত।
এ বিষয়ে হাদিস শরিফে কঠোর ধমক এসেছে-
عَنْ سَعْدٍ رَضِيَ
اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
يَقُولُ: «مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ
أَبِيهِ، فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ»
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজের
পিতাকে ছাড়া অন্য কাউকে পিতা বলে দাবি করে, তার জন্য জান্নাত হারাম।’ তাখরিজ: বুখারি-৪৩২৬
সুতরাং পালক পিতা-মাতাকে সম্মানসূচক বাবা-মা
ডাকা জায়েজ হলেও পালক পুত্র এর জন্মনিবন্ধনে
পিতা এবং মাতার নামের ক্ষেত্রে তার জন্মদাতা পিতা মাতার নাম না দিয়ে পালক পিতা-
মাতার নাম দেয়া যাবে না, জায়েজ
হবে না।
প্রশ্ন: খ। সন্তান বড় হলে তার শিক্ষার ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন দরকার হবে, মুসলিম ঘরে লালিত হয়ে অমুসলিম পিতা- মাতার নাম কিভাবে ব্যবহার করবে?
উত্তর: খ। আমরা ইতোপূর্বে প্রমাণ করেছি
যে, যেহেতু পালক/দত্তক পিতা-মাতা প্রকৃত
পিতা-মাতা নয়। সুতরাং শিক্ষার ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধনে আপন অমুসলিম পিতা-মাতার নাম ব্যবহার করবে। এতে লজ্জা/শরমের কিছু নেই। বড় বড় সাহাবির
পিতা কাফের অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। তারাও পিতার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করেনি; হাদিসের
পাতায় সেভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন, হজরত আলি ইবনে আবু তালেব (রা.), ইকরামা বিন আবু জাহেল (রা.)
প্রমুখ সাহাবি।
প্রশ্ন: গ। পালক পিতা- মাতা সেনা সদস্য, সেনা সদস্যের সন্তান সেনাবাহিনী থেকে যে
সুবিধাগুলো পেয়ে থাকে সেগুলো উক্ত সন্তান ভোগ করতে পারবে কি?
উত্তর: গ। সাধারণত পালক সন্তানকে নিজ সন্তান বলে পরিচয় দিয়ে মিথ্যা আশ্রয় নিয়ে
সরকারি খাতায় রেজিস্ট্রেশন তথা পার্ট-২ করা বৈধ হবে না। সরকারি
সুয়োগ-সুবিধা যেমন, রেশন-শিক্ষা ভাতা-চিকিৎসা ইত্যাদি নেওয়া বৈধ
হবে না।
তবে বাংলাদেশ সেনাবিাহিনী দত্তক সন্তানের জন্য
একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করেছেন, যার
ফলে সেনাসদস্যগণ দত্তক সন্তানের বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে; যা
বৈধ হবে। কেননা এখানে পিতৃ পরিচয় গোপন রাখে হচ্ছে না।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে
প্রচলিত আইনে মুসলিমের জন্য পালক সন্তান প্রকৃত সন্তান হয় না। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের
উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশের পর শুধুমাত্র হিন্দু আইনে হিন্দু পুত্র সন্তানের
ক্ষেত্রে বিষয়টি আইনসিদ্ধ। আর বাংলাদেশের খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারীরাও শুধু
অভিভাবকত্ব নিতে পারবেন।
মূলকথা হলো, অভিভাবকত্ব আর দত্তক এক
বিষয় নয়। মূলত শিশু দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনে কোন বিধান না থাকায়
১৯৮৫ সালের পারিবারিক আইনের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি একটি শিশুর দায়ভার নিতে পারেন
একজন অভিভাবক হিসেবে।
প্রশ্ন: ঘ। পালক সন্তানের সম্পত্তির অধিকার।
উত্তর: ঘ। পালক মা–বাবার মৃত্যুর পর তাঁদের
আত্মীয়রা এসে যদি সম্পত্তি থেকে পালক সন্তানকে বঞ্চিত করেন, তাহলে আইনত তার কিছুই করার থাকে না। কারণ মুসলিম আইনে দত্তক সন্তান কোন
সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। তবে পালক পিতা-মাতা জীবিত থাকতে চাইলে পালক
সন্তানকে সম্পতি হেবা বা দান করতে পারেন;
অথবা মোট সম্পত্তির সর্বোচ্চ ৩ ভাগের ১ ভাগ ওসিয়ত করতে পারেন। সূত্র: তাকমিলাতু ফাতহিল কাদির-১০ খণ্ড, ১২২
পৃষ্ঠা
প্রশ্ন:
ঙ। দত্তক/পালক সন্তানের সঙ্গে পর্দা করতে হবে কি?
প্রশ্ন:
ঙ।
আমরা
শুরুতে সূরা আল আহজাবের আয়াত উল্লেখ করেছি, তাতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শুধু মুখের কথায় রক্তের সম্পর্ক কায়েম হয় না। সুতরাং পালক ছেলে তার পালক মায়ের সঙ্গে এবং পালক মেয়ে তার
পালক বাবার সঙ্গে মাহরাম হিসাবে গণ্য হবে
না। সূত্র: আহযাব ৩৭,
৪০, তাফসীর ইবনে কাছীর
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পালকপুত্র যায়েদ বিন হারেছার তালাক দেওয়া স্ত্রী যয়নাব
বিনতে জাহশকে বিবাহ করেছিলেন (বুখারী, মুসলিম,
মিশকাত
হা/৩২১১-১২ ‘ওয়ালীমা’
অনুচ্ছেদ)। এর মাধ্যমে তিনি পালক
ছেলে-মেয়ে যে মাহরাম নয়, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
বালেগ হওয়ার সাথে সাথে তাদের ক্ষেত্রে হুরমতের বিধান প্রযোজ্য হবে তথা পর্দা ফরয
হয়ে যাবে।
সারকথা হলো, জন্মনিবন্ধনে পালক সন্তান তার আসল পিতামাতার নাম ব্যবহার করবে এবং শুধুমাত্র
সেনাবাহিনীর জন্য দত্তক সন্তানের
জন্য বিশেষ সুবিধাটি ভোগ করা জায়েজ হবে। কিন্তু
সত্যকে গোপন করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
Surah Al-Baqara, Verse 42:
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ
بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং
জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না। সূরা বাকারা-৪২
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন,
মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৮১: আসসালামু আলাইকুম। নামাজ তরককারীর
শাস্তি সম্পর্কে ইমামদের মতামত জানতে চাই কষ্ট করে যদি দলিলসহ জানাতেন। তারিখ-২৩/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ রবিউল ইসলাম কঙ্গো থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর প্রথম
কথা হলো,
وقد أجمع الفقهاء على كفر من ترك الصلاة جاحداً لوجوبها أنه فاسق
ارتكب معصية وكبيرة من الكبائر ولكنه ليس بكافر وهذا قول أكثر أهل العلم (أبوحنيفة
ومالك ووجه عند الشافعي ورواية عند الإمام أحمد)
অর্থাৎ
ফুকাহায়ে কিরামগণ! একথার ওপর ইজমা (ঐক্যমত পোষণ করেছেন) করেছেন যে, নামাজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে যে
অস্বীকার করবে অর্থা্ৎ নামাজকে যে অস্বীকার করবে সে কাফের হয়ে যাবে। দলিল:
، واستدلّوا بقول الله -تعالى-: (يَوْمَ
يُكْشَفُ عَن سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ،
خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ۖ وَقَدْ كَانُوا يُدْعَوْنَ إِلَى
السُّجُودِ وَهُمْ سَالِمُونَ)،
অর্থ: গোছা পর্যন্ত পা খোলার দিনের
কথা স্মরণ কর, সেদিন তাদেরকে সেজদা করতে আহবান জানানো হবে, অতঃপর
তারা সক্ষম হবে না।
৪৩)
তাদের দৃষ্টি অবনত থাকবে; তারা লাঞ্ছনাগ্রস্ত হবে, অথচ
যখন তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল,
তখন
তাদেরকে সেজদা করতে আহবান জানানো হত। সূরা কলাম,৪২,৪৩
كما واستدلّوا بحديث النبيّ الذي
ضعّفه بعض العلماء: (لا تُشرِكوا باللَّهِ شيئًا وإن قطِّعتُمْ أو حُرِّقتُمْ أو
صُلِّبتُمْ، ولا تترُكوا الصَّلاةَ متَعمِّدينَ فمن ترَكَها متعمِّدًا فقد خرجَ عن
الملَّةِ আবুদ্
দারদা (রা.)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু (রসূলুল্লাহ (ﷺ)আমাকে উপদেশ দিয়েছেনঃ (১) তুমি আল্লাহর সাথে
কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে খণ্ডবিখন্ড করা হয় বা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়; (২) ইচ্ছা করে কোন ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করবে না, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করবে তার ওপর
থেকে ইসলাম প্রদত্ত নিরাপত্তা উঠে যাবে; (৩) মদ পান করবে না,
কারণ মদ হচ্ছে সকল মন্দের চাবিকাঠি। হাসান লিগয়রিহী : ইবনু মাজাহ্
৪০৩৪, সহীহ আত্ তারগীব ৫৬৭।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সিদ্ধান্ত হলো, অলসতাবশত নামাজ ত্যাগকারী কাফের হয় না। দলিল:
ودليلهم على ذلك قول الله تعالى:
“إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن
يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ” (النساء – 48)
নিশ্চয়ই
আল্লাহ এ বিষয়কে ক্ষমা করেন না যে, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করা হবে। এর চেয়ে
নিচের যে-কোন বিষয়ে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। ৪১ যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করে, সে এক
গুরুতর পাপে লিপ্ত হল। সূরা নিসা-৪৮
فقالوا أن الله يغفر جميع الذنوب
ما عدا الشرك وترك الصلاة تهاونًا وكسلًا ليس من الشرك
অর্থাৎ
শিরক ব্যতিত সব গুনাহ ক্ষমার যোগ্য। আর নফসের কামনা ও অলসতাবশত নামাজ ত্যাগ করা
শিরক নয়। অতত্রব প্রমাণিত হলো অলসতাবশত নামাজ ত্যাগকারী কাফের হয় না; ইচ্ছা করলে আল্লাহ তাকে মাফ করতে পারেন।
তবে
নামাজ ত্যাগকারীর শাস্তি কি হবে এ ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছেন। যেমন,
ইমাম
শাফেয়ি, ইমাম মালেক এবং ইমাম আহমদ (রহ.) এর ফতোয়া হলো, সে কাফের
হবে না, কিন্তু নামাজ না পড়ার শাস্তিস্বরূপ তাকে তিন দিন জেলখানায় বন্দি
রাখতে হবে। এর মধ্যে সে তওবা করলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তওবা না করলে তাকে মৃত্যুদন্ড
দেওয়া হবে।
তিন
ইমামের দলিল:
আয়াত
নং-০১
مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوهُ
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
অর্থ: সবাই তাঁর অভিমুখী হও এবং ভয় কর, নামায
কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। সূরা রুম-৩১
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে নামাজ না পড়লে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত কথা বলা হয়েছে।
আয়াত
নং-০২
﴿ فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُواْ
ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُواْ ٱلشَّهَوَٰتِۖ فَسَوۡفَ يَلۡقَوۡنَ غَيًّا ٥٩ إِلَّا
مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ
وَلَا يُظۡلَمُونَ شَيۡٔٗا ٦٠ ﴾ [مريم: ٥٩، ٦٠]
“তাদের পরে আসল অযোগ্য
উত্তরসূরীরা তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হলো। কাজেই অচিরেই
তারা ক্ষতিগ্রস্ততার সম্মুখীন হবে। কিন্তু তারা নয় যারা তাওবা করেছে ঈমান এনেছে ও
সৎকাজ করেছে; তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।” সূরা মারইয়াম আয়াত: ৫৯-৬০
ব্যাখ্যা: এ আয়াত সালাত বর্জনকারীর
কুফুরী এইভাবে প্রমাণ করে যে আল্লাহ তা‘আলা সালাত বিনষ্টকারী
ও প্রবৃত্তির অনুগামী অবস্থায় ঈমান থাকে না।
হাদিস
নং-০১
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ
الْكُفْرِ ترك الصَّلَاة» . رَوَاهُ مُسلم
অর্থ
: হজরত জাবির (রা.)হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, (মু’মিন) বান্দা ও
কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করা। তাখরিজ:
মুসলিম-৮২, আবু দাঊদ-৪৬৭৮, নাসায়ী-৪৬৪, তিরমিযী-২৬২০, ইবনু মাজাহ্-১০৭৮
হাদিস
নং-০২
عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا
وَبَيْنَهُمْ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ
وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
অর্থ: হজরত বুরায়দাহ্ ((রা.))হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমাদের ও তাদের (মুনাফিক্বদের) মধ্যে যে
প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা হলো সালাত। অতএব যে সালাত
(সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করবে, সে (প্রকাশ্যে) কুফরী
করলো (অর্থাৎ- কাফির হয়ে যাবে)। তাখরিজ: তিরমিযী ২৬২১,
নাসায়ী ৪৬৩, ইবনু মাজাহ্ ১০৭৯ সহীহ আত্ তারগীব
৫৬৪, আহমাদ ২২৯৩৭
অর্থাৎ
উপরোক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, যে নামাজ ছেড়ে দিলো, সে কাফের
হয়ে গেলো। এ ধরনের কাফেরের জন্য মুরতাদের শাস্তি তথা মৃত্যুদন্ড দেওয়াই নিয়ম।
ইমাম
আবু হানিফা (রহ.) এবং ইমাম আহমদের (রহ.) আরেক মতে, নামাজ
ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তি কাফের নয়। তাকে হত্যা করাও ঠিক নয়। তবে নামাজ ত্যাগকারীকে জেলখানায়
বন্দি করে রাখতে হবে এবং প্রতিদিন জুতাপেটা করতে হবে। এ শাস্তি ততদিন চলবে যতদিন সে
পুনরায় নামাজে না ফেরে। দলিল:
আয়াত-০১
ودليلهم على ذلك قول الله تعالى:
“إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن
يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ” (النساء – 48)
فقالوا أن الله يغفر جميع الذنوب
ما عدا الشرك وترك الصلاة تهاونًا وكسلًا ليس من الشرك.
অর্থাৎ
শিরক ব্যতিত সব গুনাহ ক্ষমার যোগ্য। আর নফসের কামনা ও অলসতাবশত নামাজ ত্যাগ করা
শিরক নয়। অতত্রব প্রমাণিত হলো অলসতাবশত নামাজ ত্যাগকারী কাফের হয় না; ইচ্ছা করলে আল্লাহ তাকে মাফ করতে পারেন।
আয়াত
নং-০২
(وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ
السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ
الآنَ)
‘‘আর তাদের
জন্য ক্ষমা নেই, যারা ঐ পর্যন্ত পাপ করতে থাকে যখন তাদের
কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলেঃ নিশ্চয়ই আমি এখন
তাওবা করছি’’। সূরা
নিসা-১৮
ব্যাখ্যা: এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তওবা কবুল হয়, সুতরাং তওবার সুযোগ দিতে
হবে; হত্যা করা যাবে না।
আয়াত
নং-০৩
أَفَلَا يَتُوبُونَ إِلَى
اللَّهِ وَيَسْتَغْفِرُونَهُ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
“তবে কি তারা আল্লাহ্র কাছে তওবা করবে না (ফিরে আসবে না), তাঁর কাছে ইস্তিগফার করবে না
(ক্ষমাপ্রার্থনা করবে না)?! আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” সূরা মায়িদা-৭৪
আয়াত
না-০৪
তুমি
কি দেখ না যে হত্যার প্রসঙ্গে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার বাণী যাতে তিনি বলেছেন:
﴿فَمَنۡ
عُفِيَ لَهُۥ مِنۡ أَخِيهِ شَيۡءٞ فَٱتِّبَاعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَأَدَآءٌ
إِلَيۡهِ بِإِحۡسَٰن﴾ [البقرة: ١٧٨]
“তবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে
কোন ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার রক্ত-বিনিময়
আদায় করা কর্তব্য।” সূরা আল-বাকারা আয়াত: ১৭৮
ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকারীকে নিহত ব্যক্তির ভাই বলে আখ্যায়িত করেছেন
অর্থাৎ কাফের নয়। সুতরাং তাকে হত্যা করা যাবে না।
আয়াত নং-০৫
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ
الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا
بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ
إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى
فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي
حَتَّى تَفِيءَ إِلَى
أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ
فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا
بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ
اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ অর্থ: মুমিনের দুই
দল দ্বন্দ্বে
লিপ্ত হলে
তোমরা তাদের
মধ্যে মীমাংসা
করে দিবে।
অতঃপর তাদের
একদল অপর
দলকে আক্রমণ
করলে তোমরা
আক্রমণকারী দলের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করবে, যতক্ষণ না
তারা আল্লাহর
নির্দেশের দিকে
ফিরে আসে।
যদি তারা
ফিরে আসে
তাদের মধ্যে
ন্যায়ের সাথে
ফয়সালা করবে
এবং সুবিচার করবে।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। সূরা হুজুরাত,৯-১০
ব্যাখ্যা: পরস্পর দ্বন্দ্বরত
দুই দলের
মাঝে মীমাংসা
করে দেওয়ার
আদেশ দিয়েছেন।
বলা বাহুল্য
যে, দ্বন্দ্ব সংঘাত
লিপ্ত হওয়া
সত্ত্বেও আল্লাহ
তাআলা তাদেরকে
ঈমানদার আখ্যা
দিয়েছেন। তাই
এ আয়াতের
ওপর ভিত্তি
করে আলহে
সুন্নাত ওয়াল
জামাআত মত
পেশ করেছেন
যে, যত বড়
পাপই করুক,
তাতে মুমিন
বে-ঈমান হয়ে
যায় না।
পক্ষান্তরে খারিজি
ও মুতাজিলাদের
একাংশের মতে কবিরা
গুনাহ করলে
ঈমান থাকে
না। বিস্তারিত দেখুন- ‘মহান আল্লাহর
নিকট একজন
মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা-মূল্য’ লেখক মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
হাদিস
নং-০১
حكم تارك الصلاة عند الحنفية جاء
عن أبي حنيفة قوله بأن تارك الصلاة ليس بكافر ولا يجوز الحكم بذلك؛ ولكنّه مُتهم
بالفسق ومرتكب لكبيرة.[٦] ومن الأدلة التي استدل بها الحنفية في هذه المسألة، قول
رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: (خَمْسُ صَلَواتِ كتَبهنَّ اللهُ على العِباد،
فمن جاءَ بهن لم يُضَيعْ منهُن شيئاً استخفافاً بحقهنَّ كان له عندَ الله عَهدٌ أن
يُدْخِلَه الجَنَّة، ومَنْ لم يأتِ بهِن، فلَيسَ له عندَ الله عهد: إن شاءَ عَذبه،
وإن شَاءَ أدْخَلَه الجَنة)[٧] وأما القول في عقوبته، : ، فعند أبي حنيفة أنه
يُعزّر على تركه الصلاة ولا يُقتل.[٨]
ইবনু
মুহাইরীয (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। বনু কিনানাহর আল-মুখদাজী সিরিয়াতে আবূ মুহাম্মাদ নামক
এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছেন, বিতর ওয়াজিব। মুখদাজী বলেন, আমি
’উবাদাহ ইবনুস সামিত (রা.)এর কাছে গিয়ে বিষয়টি অবহিত
করলে তিনি বললেন, আবূ মুহাম্মাদ মিথ্যা বলেছে। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফারয করেছেন। যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে পালন করবে, আর অবহেলাহেতু
এর কোনটি পরিত্যাগ করবে না, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অঙ্গীকার
করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (যথাযথভাবে) আদায় করবে না, তার
জন্য আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন কিংবা জান্নাতে প্রবেশ
করাবেন। তাখরিজ: আহমাদ ২২৭০৪, আবূ
দাঊদ-৪২৫, মালিক-১৪,
নাসায়ী-৪৬১, সহীহ আত্
তারগীব -৩৭০
এ
হাদিসে নামাজ ত্যাগ করার পরও আল্লাহ তাআলা চাইলে জান্নাতে যেতে পারবেন। সুতরাং
নামাজ ত্যাগকারী কাফের হয় না এবং তাকে হত্যা করা যাবে না।
হাদিস
নং-০২
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ
أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ
وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ سِنِين وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ
فِي الْمَضَاجِعِ» .
অর্থ: হজরত ’আমর
ইবনু শু’আয়ব (রহঃ) তার পিতার মাধ্যমে, তিনি
তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমার সন্তানদের বয়স সাত বছরে পৌঁছবে
তখন তাদেরকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য নির্দেশ দিবে। আর (সালাত আদায়
করার জন্য) তাদের শাস্তি দিবে যখন তারা দশ বছরে পৌঁছবে এবং তাদের ঘুমানোর স্থান
পৃথক করে দিবে। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ- ৪৯৫, আহমাদ ২/১৮০ ও ১৮৭
এ
হাদিস শরিফে সন্তান নামাজ পড়ার কারণে
সন্তানদেরকে প্রহার করার কথা বলা হয়েছে, হত্যা করতে বলা হয়নি।
হাদিস
নং-০৩
إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ
الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ
অর্থ: নবি (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করেন যতক্ষণ
পর্যন্ত না গড়গড় শব্দ (মৃত্যুর যন্ত্রণা) শুরু হয়।” তাখরিজ:
জামে তিরমিযি-৩৫৩৭
এ
হাদিস শরিফ থেকে প্রমাণিত হয় জানকবজের আগ পর্যন্ত তওবার সুযোগ আছে, তাই তাকে হত্যা করা যাবে
না।
মৃত্যুদন্ড
না দেওয়ার যৌক্তিকতা উল্লেখ করে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, নামাজ
না পড়লে কাফের হওয়ার হাদিসে কুফরি ইতেকাদি বা বিশ্বাসী কাফের বলা হয়নি, বলা
হয়েছে কুফরি আমলি অর্থাৎ সে কাফেরের মত কবিরা গোনাহ করল। আর আহলে সুন্নাতের মতে, কবিরা
গোনাহকারী কাফের নয়। সুতরাং তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া জায়েজ হবে না।
বিস্তারিত
জানার জন্য দেখুন- শরহে মুআজ্জাব, ৩য় খন্ড, ১২ পৃষ্ঠা; আল মুগনি, ২য় খন্ড, ২৯৮
পৃষ্ঠা; ফতোয়ায়ে শামী,
১ম খন্ড, ৩৯২
পৃষ্ঠা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৮২: আসসালামুআলাইকুম ভাই, আমার
জিজ্ঞাসা শরিয়তের দৃষ্টিতে স্বামী স্ত্রী কতদিন একে অন্যকে ছাড়া (Intercourse)দাম্পত্য জীবন পরিচালনা করতে পারবে।এর কি কোনো শরঈ সিদ্ধান্ত
রয়েছে এবং বিবাহ সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাচ্ছি। প্লিজ জানাবেন। মাআসসালাম।। তারিখ-২৪/০৯/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ রমজান সৈয়দপুর
নীলফামারি থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্ন
আলোকে আলোচনাটিকে দুটি ভাবে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। শরিয়তের দৃষ্টিতে স্বামী স্ত্রী
কতদিন একে অন্যকে ছাড়া (Intercourse)
দাম্পত্য
জীবন পরিচালনা করতে পারবে।এর কি কোনো শরঈ সিদ্ধান্ত রয়েছে?
উত্তর: ক। প্রথম কথা হলো, স্ত্রীর মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি হলো জৈবিক চাহিদা পূরণ করা। যেমন, পবিত্র হাদিসে
এসেছে-
إنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقًّا،
ولِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، ولِأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، فأعْطِ كُلَّ ذِي
حَقٍّ حَقَّهُ. فأتَى النبيَّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، فَذَكَرَ ذلكَ له،
فَقَالَ النَّبيُّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ: صَدَقَ سَلْمَانُ.
الراوي : وهب بن عبدالله السوائي
أبو جحيفة | المحدث : البخاري | المصدر : صحيح البخاري
الصفحة أو الرقم: 1968 | خلاصة
حكم المحدث : [صحيح]
অর্থাৎ
নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার রবের, তোমার দেহের এবং তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে।
সুতরাং প্রত্যেককে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও। বুখারি-১৯৬৮
দ্বিতীয়
কথা হলো, স্বামী স্ত্রী কতদিন একে অন্যকে ছাড়া (Intercourse) দাম্পত্য জীবন করতে পারবে এ বিষয়ে কুরআন-হাদিসে সরাসরি কোন নির্দেশনা
আসেনি। তবে ঈঙ্গিত দেওয়া হয়েছে-
আয়াত
নং-০১
لِلَّذِیۡنَ یُؤۡلُوۡنَ مِنۡ
نِّسَآئِہِمۡ تَرَبُّصُ اَرۡبَعَۃِ اَشۡہُرٍ ۚ فَاِنۡ فَآءُوۡ فَاِنَّ اللّٰہَ
غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
অর্থঃ
যারা নিজেদের স্ত্রীদের নিকট গমন করবেনা বলে কসম খেয়ে বসে তাদের জন্য চার মাসের
অবকাশ রয়েছে অতঃপর যদি পারস্পরিক মিল-মিশ করে নেয়, তবে আল্লাহ ক্ষামাকারী
দয়ালু। সূরা বাকারা-২২৬
আয়াত
নং-০২
وَالَّذِیۡنَ یُتَوَفَّوۡنَ
مِنۡکُمۡ وَیَذَرُوۡنَ اَزۡوَاجًا یَّتَرَبَّصۡنَ بِاَنۡفُسِہِنَّ اَرۡبَعَۃَ
اَشۡہُرٍ وَّعَشۡرًا ۚ فَاِذَا بَلَغۡنَ اَجَلَہُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ
فِیۡمَا فَعَلۡنَ فِیۡۤ اَنۡفُسِہِنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا
تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ
অর্থ: আর তোমাদের মধ্যে যারা
মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে
স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর
যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত
ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি
রয়েছে। সূরা বাকারা-২৩৪
উপরোক্ত
আয়াতদ্বয় থেকে ইশারাতুন নস দ্বারা বুঝা যায়, একজন নারী চার (০৪)
মাস স্বামী ছাড়া থাকতে পারবে। যদিও আয়াতদ্বয়ের অন্যান্য হিকমাহও
রয়েছে।
তবে
আসার (সাহাবাদের
আমল-নির্দেশনা) রয়েছে- উল্লেখ্য যে, খুলাফায়ে রাশেদীন,সাহাবি, তাবেয়ি-তাবে তাবেয়ি গণের আমল-কথাও শরিয়তের দলিলের
অন্তর্ভুক্ত। যেমন, ইমাম মালেক রহ. বর্ণনা
করেন,
হাদিস/আসার নং-০১
خَرَجَ
عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ مِنَ اللَّيْلِ فَسَمِعَ امْرَأَةً
تَقُولُ : تَطَاوَلَ هَذَا اللَّيْلُ وَاسْوَدَّ جَانِبُهُ وَأَرَّقَنِى أَنْ لاَ
حَبِيبٌ أُلاَعِبُهُ فَوَاللَّهِ لَوْلاَ اللَّهُ إِنِّى أُرَاقِبُهُ تَحَرَّكَ
مِنْ هَذَا السَّرِيرِ جَوَانِبُهُ فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِىَ
اللَّهُ عَنْهُ لِحَفْصَةَ بِنْتِ عُمَرَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُمَا : كَمْ
أَكْثَرُ مَا تَصْبِرُ الْمَرْأَةُ عَنْ زَوْجِهَا؟ فَقَالَتْ : سِتَّةَ أَوْ
أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ.
فَقَالَ عُمَرُ رَضِىَ اللَّهُ
عَنْهُ : لاَ أَحْبِسُ الْجَيْشَ أَكْثَرَ مِنْ هَذَ
অর্থ: হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. একদিন
রাতে বের হলেন। অতঃপর তিনি নারীকে এই
কবিতা পাঠ করতে শুনলেন—
تَطَاوَلَ
هَذَا اللَّيْلُ وَاسْوَدَّ جَانِبُهُ وَأَرَّقَنِى أَنْ لاَ حَبِيبٌ أُلاَعِبُهُ
فَوَاللَّهِ لَوْلاَ اللَّهُ إِنِّى أُرَاقِبُهُ تَحَرَّكَ مِنْ هَذَا السَّرِيرِ
جَوَانِبُهُ
বীভৎস
এ রজনী হয়েছে আরও প্রলম্বিত নাহি আজ প্রেমাস্পদ মোর আকাঙ্ক্ষিত। আল্লাহর ভয় যদি না
থাকতো এ অন্তরে পালঙ্ক মোর কলঙ্কিত হতো প্রণয়ের ভারে।
এরপর
তিনি তার কন্যা উম্মুল মুমিনিন হাফসা রা. কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মেয়েলোক
স্বামী ছাড়া সর্বোচ্চ কতদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধরে থাকতে পারে?’ হাফসা বললেন, ‘চার মাস অথবা ছমাস।’
তখন
উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘মুজাহিদদের মধ্যে কাউকে আমি এ সময়ের অধিক যুদ্ধে আটকে রাখব
না।’ তিনি খলীফাতুল মুসলিমিন হিসেবে সব সেনাপতিকে লিখে
পাঠালেন। উপরোক্ত সময়ের অধিক কোনো বিবাহিত মুজাহিদই যেন তার স্ত্রী-পরিজন থেকে
বিচ্ছিন্ন না থাকে। তাখরিজ: সুনানে বাইহাকি-১৮৩০৭
হাদিস/আসার নং-০২
لما أصبح عمر أرسل إلى المرأة
فسأل عنها فقيل هذه فلانة بنت فلان وزوجها غاز فى سبيل الله فأرسل إليها امرأة
فقال كونى معها حتى يأتى زوجها وكتب إلى زوجها فأقفله ثم ذهب عمر إلى حفصة بنته
فقال لها يا بنية كم تصبر المرأة عن زوجها فقالت له يا أبه يغفر الله لك أمثلك
يسأل مثلى عن هذا فقال لها إنه لو لا أنه شى أريد أن انظر فيه للرعية ما سألتك عن
هذا قالت أربعة أشهر أو خمسة أشهر أو ستة أشهر فقال عمر يغزو الناس يسيرون شهرا
ذاهبين ويكونون فى غزوهم أربعة أشهر ويقفلون شهرا فوقت ذلك للناس فى سنتهم فى
غزوهم.
سنن سعيد بن منصور 2/ 210 ح (2463)، وعمر بن شبة في تاريخ
المدينة 1/ 403، وذكره ابن قدامة في المغني 10/ 42.
অর্থাৎ
তখন হাফসা রা. বললেন, মেয়েরা তাদের স্বামী থেকে চার মাস পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে।
এরপর থেকে উমর রা. চার মাস অন্তর তার মুজাহিদ বাহিনীকে ফেরত নিয়ে আসতেন এবং নতুন
বাহিনী পাঠিয়ে দিতেন। সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূর, হাদীস ২৪৬৩
; ইবনে কুদামা-১০/৪২
হাদিস/আসার নং-০৩
فأصبح عمر فأرسل إليها فقال أنت
القائلة كذا وكذا قالت نعم قال ولم قالت أجهزت زوجي في هذه البعوث قال فسأل عمر
حفصة كم تصبر المرأة من زوجها فقالت ستة أشهر فكان عمر بعد ذلك يقفل بعوثه لستة
اشهر.
مصنف عبد الرزاق 7/ 152 ح 12594.
অর্থাৎ
ওমর রা. তার মেয়েকে
জিজ্ঞেস করলেন কতদিন একজন নারী স্বামী ছাড়া ধৈর্য ধরতে পারে, তিনি বলণে, ছয় মাস। তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক,
হাদীস ১২৫৯৪
উপরোক্ত
হাদিসের ওপর ভিত্তি করে ফোকাহায়ে কেরামগণ বলেন, স্বামী তার
স্ত্রীর অনুমতিক্রমে সর্বোচ্চ ছয় মাস দূরে থাকতে পারবে। আর সন্তোষজনক অনুমতি ব্যতীত ছয় মাস দৈহিক
সম্পর্ক না রাখলে গুনাহ হবে।
বিয়ে
করার পর বউ রেখে অনেকেই বিদেশ চলে যায়; এটা মোটেও উচিত নয়। কত খারাপি হচ্ছে তা
আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি।
প্রশ্ন: খ। সরকারি কাজে বা অর্থ উপার্জনের জন্য ৬ মাসের বেশি সময় বিদেশগমণ করা কি
জায়েজ।
উত্তর: খ। ফুকাহায়ে কিরামগণ! কয়েকটি শর্তাসাপেক্ষে স্বামীকে সরকারি কাজে বা অর্থ উপার্জনের জন্য ৬
মাসের বেশি সময় বিদেশগমণ করা অনুমতি দিয়েছেন।
(০১) চার মাসের অধিক হলেও স্ত্রীর
অনুমতির প্রয়োজন।
(০২) ভরণ-পোষণের
ব্যবস্থা করে যাওয়া।
(০৩) পর্দার ব্যবস্থা করে যাওয়া। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ
মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের
পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর। সূরা তাহরিম-০৬
নবি (ﷺ) বলেন,‘দাইয়ূছ (যে ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনকে পর্দায় রাখে না তাকে দাইয়ূছ বলে) জান্নাতে প্রবেশ
করবে না।’ দারামি-৩৩৯৭
(০৪) যদি দূরে থাকার কারণে স্বামী বা স্ত্রী কোনো গুনাহে লিপ্ত হওয়ার প্রবল
আশঙ্কা থাকে, তাহলে চার মাসের কম সময়ও স্ত্রী থাকা জায়েজ
নেই। সূত্র: ফাতাওয়ায়ে
শামি-৪/৩৭৯; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ২৯/৪৮
প্রশ্ন: গ। বিবাহ সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি কি?
উত্তর: গ। বিবাহের প্রকারভেদ ও তার
হুকুম: ব্যক্তি বিশেষে বিবাহের হুকুম তারতম্য আছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- قَالَ لَنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ
مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ
فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّه“ لَه“
وِجَاءٌ.
অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। সামর্থ বলতে দুইটি জিনিস বুঝায় এক.শারীরিক শক্তি দুই. আর্থিক (শক্তি) স্বাবলম্বী। বিবাহ
মোট ৬ প্রকার। যথা:
১.ফরজ ২.ওয়াজিব৩.সুন্নাত ৪. মুবাহ ৫.মাকরুহ ৬.হারাম। নিম্নে
আলোচনা করা হলো-
১. ফরজ:
বিবাহ করা ঐ ব্যক্তির উপর ফরজ যার শারীরিক শক্তি ও আর্থিক শক্তি আছে, বিবাহ না করলে যেকোন সময় অপকর্মে লিপ্ত হবার নিশ্চিত বা প্রবল আশংকা। বিবাহ একমাত্র রাস্তা তাকে যিনা থেকে বিরত রাখতে পারে। এমতাবস্থায় তার বিবাহ করা ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন-(১) وَ لۡیَسۡتَعۡفِفِ الَّذِیۡنَ
لَا یَجِدُوۡنَ نِکَاحًا حَتّٰی یُغۡنِیَهُمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ ؕ ٌ অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা সঙ্গী বিহীন পুরুষ বা মহিলা তোমরা তাদেরকে বিবাহ দাও আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাব মুক্ত না করা পর্যন্ত যেন তারা
সংযম অবলম্বন করে। সূরা নূর-৩৩
(২) وَذَرُوۡا ظَاہِرَ الۡاِثۡمِ
وَبَاطِنَہٗ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡسِبُوۡنَ الۡاِثۡمَ سَیُجۡزَوۡنَ بِمَا
کَانُوۡا یَقۡتَرِفُوۡنَ অর্থ: তোমরা প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন
গোনাহ পরিত্যাগ কর। নিশ্চয় যারা গুনাহে করেছে, তারা অতিসত্বর তাদের কৃত কর্মের
শাস্তি পাবে।
সূরা আনআম-১২০
(৩) وَلَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّہٗ کَانَ فَاحِشَۃً ؕ
وَسَآءَ سَبِیۡلًا অর্থ: আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল ও মন্দ পথ। সূরা ইসরা-৩২
তবে
কারো যদি শারীরিক শক্তি থাকে কিন্তু
আর্থিক সচ্ছলতা নাই তার উপর বিবাহ ফরজ নয় সে রোজা রাখবে আর ছবর করবে । যেমন হাদিসে শরীফে আছে- قَالَ لَنَا النَّبِيُّ
صلى الله عليه
وسلم يَا مَعْشَرَ
الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ
مِنْكُمْ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ وَمَنْ
لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ
بِالصَّوْمِ فَإِنَّه“ لَه“
وِجَاءٌ. অর্থ: আর যে এর সামর্থ্য রাখে না,
তার কর্তব্য সওম রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়। বুখারি-৫০৬৬; মুসলিম-৩৪৬৪
২. ওয়াজিব: বিবাহ
করা ঐ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব যার শারীরিক শক্তি ও আর্থিক শক্তি আছে, বিবাহ না করলে যেকোন সময় অপকর্মে লিপ্ত হবার আশংকা। এমতাবস্থায় তার বিবাহ করা ওয়াজিব। যেমন, نْ عَبْدِاللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ t: قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ،
مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ
الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ
أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ
لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ
يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ؛
فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ..
অর্থ; হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য সওম রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়। বুখারি-৫০৬৬; মুসলিম-৩৪৬৪
আর
আর্থিক শক্তি না থাকলে রোজা রাখবে।
৩. সুন্নাত:
উপযুক্ত বয়স হলে স্বাভাবিক অবস্থা বিবাহ করা
সুন্নাত।
কেননা অধিকাংশ নবি বিবাহ করেছেন।
দলিল: وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا رُسُلًا مِّنۡ قَبۡلِکَ وَ جَعَلۡنَا لَهُمۡ
اَزۡوَاجًا وَّ ذُرِّیَّۃً ؕ
অর্থ: আর
অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও
সন্তান-সন্ততি। সূরা রাদ-৩৮
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ
رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي অর্থ: আমি নারীকে বিবাহ করি। ( তাই বিবাহ আমার সুন্নাত) অতএব যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার
দলভুক্ত নয়। বুখারি-৫০৫৬; মুসলিম-৩৪৬৯
৪. মুবাহ: যার
বিবাহ না করলে পাপকার্যে লিপ্ত হবার আশংকা নাই। বরং আল্লাহ প্রেমে বিভোর-বিহ্বল , দ্বীনি কাজে ব্যস্ত যে, স্ত্রী ও সন্তানের হক আদায়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তার বিবাহ না করা জায়েজ, বরং না করাই উত্তম। সূত্র: তাফসিরে বুরহানুল কুরআন-২৩৭ পৃষ্ঠা, বয়ানুল কুরআন, মাআরিফুল
কুরআন
ইয়াহইয়া
ও ঈসা আ. বিবাহ করেন নি। হজরত
ইয়াহইয়া আ. সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এসেছে। দলিল:
اَنَّ اللّٰہَ یُبَشِّرُکَ
بِیَحۡیٰی مُصَدِّقًۢا بِکَلِمَۃٍ مِّنَ اللّٰہِ وَسَیِّدًا وَّحَصُوۡرًا
وَّنَبِیًّا مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ
অর্থ: আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ
দিচ্ছেন ইয়াহইয়া সম্পর্কে, যিনি সাক্ষ্য দেবেন আল্লাহর
নির্দেশের সত্যতা সম্পর্কে, যিনি নেতা হবেন এবং নারীদের
সংস্পর্শে যাবেন না, তিনি অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবি হবেন। সূরা ইমরান-৩৯
৫. মাকরুহ: যে
ব্যক্তি বিবাহ করলে বিবির হক আদায়ে সন্দিহান তার বিবাহ করা মাকরুহ। দলিল:
عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا - قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يَقُولُ «إنَّ الْحَلَالَ بَيِّنٌ، وَالْحَرَامَ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ،
অর্থ: হালাল সুস্পষ্ট, হারাম ও সুস্পষ্ট। উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট-সন্দেহজনক বিয়ষ রয়েছে। তাখরীজ: নাসায়ি-৪৪৫৩; ইবনে মাজাহ-৩৯৮৪; বুখারি-২০৫১, মুসলিম-১৫৯৯
৬. হারাম: যার
শারীরিক শক্তি নেই, একেবারে অক্ষম, নপুংশক
(পুরুষত্বহীন) তার বিবাহ করা হারাম। দলিল:
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ
مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ
الْبَاءَةَ অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে
করে। الْبَاءَة – অর্থ সামর্থ বলতে দুইটি জিনিস বুঝায় একটি হলো.শারীরিক শক্তি, সহবাস করার করার শক্তি। সুতরাং
শারীরিক শক্তি না থাকলে বিবাহ হারাম। সূত্র: মুসলিম জীবন
সাফল্যে চল্লিশ(৪০)হাদিস-৯৮ পৃষ্ঠা লেখক
: মাওলানা মুহাম্মাদ
আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া), ধর্মীয় শিক্ষক,
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সারকথা কথা হলো, স্ত্রীর অনুমতিক্রমে ছয় মাস দূরে
থাকা যাবে। আর উভয়ের যে কোন একজন পাপে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে চার মাসের কম সময়
হলেও দূরে থাকতে পারবে না। আর উপরে
শর্তাবলিগুলো পূরণ করতে পারলে, স্বামী সরকারি বা অর্থ
উপার্জনের জন্য প্রবাসে থাকতে পারবেন। এবং
ব্যক্তি বিশেষে বিবাহের হুকুম বিভিন্ন হয়ে থাকে।
যা আমি দলিলসহ উল্লেখ করেছি।
والله اعلم بالصواب
উত্তর
দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৮৩: আসসালামুআলাইকুম মুহতারাম! অনুগ্রহ
পূর্বক কবরের প্রকারভেদ ও গায়েবানা জানাযাসহ বিধান সম্পর্কে জানালে ভালো হয়। তারিখ-২৬/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম
সিলেট থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্ন
আলোকে আলোচনাটিকে
প্রশ্ন: ক। কবরের প্রকারভেদ?
উত্তর: ক। কবর দুই প্রকার। (০১) আশ-শাক্কু বা সিন্দুক কবর (০২) আল-লাহদ বা বহলী কবর। বগলী ও সিন্দুকী উভয় প্রকার কবরই বৈধ। কারণ,
নবি (ﷺ)
এর যুগে উভয় প্রকার কবরই প্রচলিত ছিল। আনাস বিন মালেক (রা.)বলেন, মদীনায় কবর খননকারী ২টি লোক
ছিল। একজন বগলী এবং অপরজন সিন্দুকী কবর খনন করত। সূত্র: ইবনে
মাজাহ ১৫৫৭, আহমাদ ৩/৯৯
الشق: وهو أن يحفر في وسط القبر حفرة
على قدر الميت، ويُبنى جانباها بالطوب اللبن حتى لا تنضم على الميت، ويوضع فيها الميت على
جنبه الأيمن مستقبلاً القبلة، ثم تسقف هذه الحفرة بأحجار أو غيرها ويرفع السقف قليلاً بحيث لا
يمس الميت، ثم يهال التراب عليه.
অর্থাৎ আশশাক্কু বা সিন্ধুকী কবর: কবরের মাঝখানে মৃতের সমান গর্ত খনন করা এবং মাটির ইট দিয়ে তার দুপাশ নির্মাণ
করা যাতে মৃতের সাথে মিলিত না হয় এবং মৃতকে তার ডান দিকে কেবলামুখী করে রাখা। এই
গর্তটি পাথর বা অন্য কিছু দিয়ে ছাদ করুন এবং ছাদটি একটু উঁচু করুন যাতে মৃত
ব্যক্তি স্পর্শ না করে, তারপরে তার উপর ময়লা ছড়িয়ে পড়ে।
اللحد: أن يحفر في أسفل جدار القبر
الأقرب إلى القبلة مكاناً يوضع فيه الميت على جنبه الأيمن مستقبل القبلة ثم تسد هذه الحفرة بالطوب اللبن خلف ظهر الميت، ثم يهال التراب عليه
অর্থাৎ আল-লাহদ বা বগ্লী কবর" : কিবলার সবচেয়ে কাছের কবরের দেয়ালের নিচ দিয়ে এমন একটি জায়গা খনন করতে যেখানে মৃতকে তার ডান পাশে কিবলার দিকে মুখ করে রাখা হয়, তারপর এই
গর্তটি মৃতের পিঠের পিছনে মাটির ইট দিয়ে ভরা হয়, তারপর ময়লা ফেলা হয়।
প্রশ্ন: খ। কোন কবর উত্তম?
উত্তর: খ। উভয় প্রকার কবরের মধ্যে বগলী কবরই আফযাল উত্তম। কারণ এই কবরেই মহানবি (ﷺ)-কে দাফন করা হয়েছিল। আসল কথা হলো, যে স্থানের মাটি আলগা ও নরম,
সে স্থানের সিন্দুকী এবং যে স্থানের মাটি টাইট ও শক্ত; ধসার ভয় থাকে না, সে স্থানে বগলী কবর খনন করা
উত্তম। সূত্র: মাজমু,
নওবী ৫/২৮৫, আউনুল মা'বুদ
৯১৯ প্রভৃতি
আর এ কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের
শক্ত মাটিতে বগ্লী কবর খোদাই করা হয়। আবার বাংলাদেশের মাটি নরম বিধায় সাধারণত
সিন্ধুকী কবর করা হয়।
প্রশ্ন: গ। কেউ যদি সাগরে
জাহাজে মৃত্যবরণ করে, কুলে নিতে দেরি হবে, এমতাবস্থায় কি করা যাবে?
উত্তর: গ। সমুদ্রের মাঝে জাহাজ-স্টীমারে কারও মৃত্যু হলে এবং তীরে জাহাজ লাগতে অসাধারণ দেরী হলে এবং
ফ্রিজ না থাকলে ও লাশের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে গোসল-কাফন দিয়ে জানাযা পড়ে
পিঠের নিচে একটি ভারি কিছু বেঁধে সমুদ্রে সলিল-সমাধি দেওয়াও প্রয়োজনে বৈধ। সূত্র:
ইবনে আবী শাইবাহ ১১৮৪৯-১১৮৫০
প্রশ্ন: ঘ। গায়েবানা জানাজার বিধান?
উত্তর: ঘ।
وَشَرْطُ صِحَّتِهَا إسْلَامُ
الْـمَيِّتِ وَطَهَارَتُهُ وَوَضْعُهُ
أَمَامِ الْـمُصَلِّيْ، فَلِهَذَا
الْقَيْدِ لَا تَجُوزُ
عَلَىٰ غَائِبٍ وَلَا
حَاضِرٍ مَحْمُوْلٍ عَلَىٰ
دَابَّةٍ أَوْ غَيْرِهَا،
وَلَا مَوْضُوْعٍ مُّتَقَدِّمٍ
عَلَيْهِ الْـمُصَلِّيْ، وَهُوَ
كَالْإِمَامِ مِنْ وَجْهٍ.
‘জানাযা সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত
হলো, মৃতকে
মুসলমান হতে হবে, পবিত্র হতে হবে এবং লাশ মুসল্লিদের সামনে
রাখতে হবে। কাজেই অনুপস্থিত লাশের ওপর গায়েবানা জানাযা জায়েয নয়। সূত্র: ইবনুল হুমাম, ফতহুল কদীর শরহুল হিদায়া, দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন,
খ. ২, পৃ. ১১৭
এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনু আবদিল বার (রহ.) গায়েবানা জানাযা নাজায়েয
হওয়ার উক্তিকে জমহুর ফুক্বাহা তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের মতামত বলে অভিহিত
করেছেন। সূত্র: লামিউদ দারারী- ৪/৪৩২ পৃষ্ঠা। নিচে সম্মানিত ইমামদের মতামত
তুলে ধরা হলো,
لا يُصلَّى على الميِّتِ إلَّا
إذا وُجِد أكثرُه، وهو مذهبُ الحَنفيَّة، والمالِكيَّة ؛ لأنَّه إذا صُلِّي على أكثرِه لم يُحتجْ إلى الصَّلاةِ على
الباقي إنْ وُجِدَ، أمَّا إذا صُلِّى على الأقلِّ فتلزمُ الصَّلاةُ على أكثرِه إنْ
وُجِدَ مراقي الفلاح)) للشرنبلالي (ص: 218). ويُنظر: ((بدائع الصنائع))
للكاساني (1/311). وعندهم لا يُصلَّى على الميِّت إلَّا مع حضورِ أكثرِ بَدَنِه،
أو نِصْفِه مع رأسه.
ইমাম
আযম আবু হানিফা (রহ.) ও তার অনুসারি সকল ইমাম-ফুকাহা এবং ইমাম মালেক (রহ.)এর
মতে- গায়েবানা জানাযা জায়েয নেই। চাই দাফনের আগে হোক বা পরে। মাইয়্যিত শহরের ভিতরে
থাক বা বাইরে। সূত্র: মারাকিল ফালাহ -২১৮
পৃ. বাদাউস সানায়ে-১/৩১১
ইমামদ্বয়ের
দলিল:
হাদিস/আসার-০১
كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا انْتَهَى إِلَى جِنَازَةٍ وَقَدْ صُلِّيَ
عَلَيْهَا دَعَا وَانْصَرَفَ وَلَمْ يُعِدِ الصّلَاةَ.
অর্থ: নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. কোনো জানাযায় পৌঁছতে পৌঁছতে জানাযা নামায শেষ
হয়ে গেলে মৃতের জন্য দুআ করে ফিরে আসতেন। দ্বিতীয় বার জানাযা পড়তেন না। তাখরিজ:
মুছান্নাফে আবদুর রাযযাক-৬৫৪৫
হাদিস/আসার-০২
كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ
صلى الله عليه وسلم إذَا تَضَايَقَ بِهِمَ الْمَكَانُ رَجَعُوا ، وَلَمْ يُصَلُّوا.
সালেহ ইবনে নাবহান রাহ. বলেন, সাহাবাগণ রা. জানাযা নামাযের
জায়গা সংকীর্ণ হলে (মসজিদে) নামায না পড়ে ফিরে যেতেন। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-১২০৯৭
মাইয়াতের অলির অনুমতিতে একবার জানাযা পড়া হলে, দ্বিতীয়বার পড়া জায়েজ নেই।
উপরোক্ত আসার দ্বারা প্রমাণিত হয়, সাহাবা তাবেঈনের যুগে
দ্বিতীয়, তৃতীয় জানাযার প্রচলন ছিল না। একাধিক জানাযা যদি
জায়েয হত তবে তারা ফিরে যেতেন না।
হাদিস/আসার নং-০৩
হজরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) বলেন- وَمَا نَحْسِبُ الْجِنَازَةَ
إِلَّا مَوْضُوعَةً بَيْنَ يَدَيْهِতথা আমরা জানাযার ব্যাপারে এটাই অনুধাবন করছিলাম যে, তা আমাদের সামনে রাখা আছে। তাখরিজ:
মুসনাদে আহমাদ-২০০০৫
হাদিস/আসার নং-০৪
হজরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) বলেন- وَهُمْ لَا يَظُنُّونَ إِلَّا
أَنَّ جَنَازَتَهُ بَيْنَ يديهতথা “সাহাবায়ে কেরামের বিশ্বাস এটাই ছিল যে, জানাযা
হুযূর (ﷺ) এর সামনে
উপস্থিত। তাখরিজ: সহীহ ইবনে হিব্বান-৩১০২
হাদিস/আসার নং-০৫
হজরত আবান (রাহ.) সূত্রে হজরত ইমরান ইবনে হাছীন থেকে বর্ণিত
হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে, “যখন নবিজী (ﷺ) এর
পিছনে জানাযা পড়েছি, তখন নাজাশীর লাশকে আমাদের সামনে উপস্থিত দেখতে পেয়েছি।” সূত্র: উমদাতুল
কারী শরহুল বুখারী- ৭/৩৩
জানাযা পড়ার জন্য লাশ সামনে থাকা জরুরি, না হলে জানাযা পড়া জায়েজ নেই।
উপরোক্ত আসার দ্বারা প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ বাদশা নাজাশির লাশ নবিজি (ﷺ) ও সাহাবাদের সামনে ছিল।
ইমাম
আহমদ ইবনে হাম্বল (রাহ.) থেকে জায়েয হওয়ার একটি উক্তি থাকলেও স্বীয় শাগরিদ ইবনে
আবী মুসা তাঁর থেকে নাজায়েয হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ
ফিক্বাহ্বিদ আল্লামা ইবনে কুদামা (রাহ.) এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, অর্থাৎ- “ইমাম মালেক (রাহ.) ও ইমাম আবু হানীফা (রাহ.) উভয়ে বলেন, গায়েবানা জানাযা জায়েয নেই। ইমাম আহমদ (রাহ.) থেকে ইবনে আবী মুসা উক্ত
ইমামদ্বয়ের অনুরূপ (নাজায়েয হওয়ার) একটি উক্তি বর্ণনা করেছেন।” সূত্র: আলমুগনী,
ইবনে কুদামা (রাহ.)- ২/৩৮৬ পৃষ্ঠা
ইমাম
শাফেয়ী (রাহ.) ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রাহ.)এর মতে মাইয়্যিত ভিন্ন শহরে থাকলে
গায়েবানা জানাযা জায়েয। لكن يجوز الصلاة على الميت
الغائب الذي يموت في بلاد غير المسلمين ولم يصلَّ عليه، কিন্তু শহরের ভিতরে থাকার মাইয়্যেতের গায়েবানা
জানাযা জায়েজ নয়। মাইয়্যেতকে উপস্থিত করতে
হবে। সূত্র: আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু- ১/৫০৪
ইমামদ্বয়ের
দলিল:
إِنّ
أَخَاكُمْ النّجَاشِيّ تُوُفِّيَ فَصَلُّوا عَلَيْهِ. قَالَ: فَصَفّ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، وَصَفَفْنَا
خَلْفَهُ فَصَلّى عَلَيْهِ، وَمَا نَحْسِبُ الْجِنَازَةَ إِلّا مَوْضُوعَةً بَيْنَ
يَدَيْهِ.
অর্থ: ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তিনি বলেন, তোমাদের ভাই নাজাশী ইন্তেকাল
করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাযা আদায় কর। ইমরান রা. বলেন, অতপর রাসূলে কারীম (ﷺ) দাঁড়ালেন। আর আমরা তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে
দাঁড়ালাম। অতপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। আমাদের মনে হচ্ছিল যে, নাজাশীর লাশ তাঁর সামনেই রাখা
ছিল। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ-২০০০৫;
সহীহ ইবনে হিব্বান-৩০৯৮
أنها تشرع
الصلاة على الغائب بشرط ألا يكون قد صُلِّي عليه في المكان الذي مات فيه ، فإن صُلِّي
عليه فلا تشرع صلاة الغائب عليه .
وهذا القول
رواية أخرى عن الإمام أحمد ، واختارها شيخ الإسلام ابن تيمية وتلميذه ابن القيم ،
ومال إليها من المتأخرين : الشيخ ابن عثيمين .
واستدل لذلك:
بأن الصلاة على الجنازة عبادة، والعبادة لا تشرع إلا من الكتاب والسنة، ولم يحفظ
عن النبي صلّى الله عليه وسلّم أنه صلى على غائب إلا على النجاشي؛ لأنه مات بين
أمة مشركة، ليسوا من أهل الصلاة، وإن كان أحد منهم آمن،
অর্থাৎ
ইমাম আহমদ, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, তার ছাত্র ইবনুল কাইয়েম এবং শাইখ উসাইমীন, আলবানি রহ.
প্রমুখদের মতে, যার জানাযা হয়েছে তার পুনরায় গায়েবানা জানাযা পড়া ঠিক নয়। দলীল ও যুক্তির
নিরিখে এটি অধিক সঠিক মত বলে প্রতিয়মান হয়। কেননা বাদশাহ নাজশি মুশরিকদের মধ্যে
মারা গিয়ে ছিলেন এবং তার জানাযা পড়া হয়নি। সূত্র: আল-ইসলামু সুওয়াল ওয়া জওয়াব- প্রশ্নং ৩৫৮৫৩
বিশুদ্ধতম
মত ও জায়েজ প্রবক্তাদের দলিল খণ্ডন:
أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه،
أَنَّ رَسُولَ اللهِ نَعَى النَّجَاشِيَّ فِي الْيَوْمِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ،
خَرَجَ إِلَى الْمُصَلَّى فَصَفَّ بِهِمْ وَكَبَّرَ أَرْبَعًا
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাজাশী যেদিন মারা যান সেদিন-ই আল্লাহর রসূল (ﷺ) তাঁর মৃত্যুর খবর দেন এবং জানাযাহ্’র স্থানে গিয়ে লোকদের
কাতারবন্দী করে চার তাকবীর আদায় করলেন। তাখরিজ: বুখারি- ১২৪৫; মুসলিম-৯৫১
এই
হাদিস থেকে বুঝা গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েজ, কেননা
রসূল (ﷺ)
পড়েছেন।
এ
ঘটনার ব্যাখ্যা সম্পর্কে ফুকাহায়ে কিরাম বলেন,
(০১) প্রথম ব্যাখ্যা:
قال الخرشي (مالكي) (2/142) : " وصلاته عليه الصلاة والسلام على النجاشي من خصوصياته " انتهى . ونحوه في
" بدائع الصنائع " للكاسائي
( حنفي ) ( 1/ 312) .
অর্থাৎ
এটা ছিল নববী জীবনের স্বাভাবিক রীতি বহির্ভূত মাত্র একটি ঘটনা। যা রাসূল (ﷺ) –এর সাথে খাছ ছিল।
(০২) দ্বিতীয় ব্যাখ্যা:
مَا مَاتَ
مِنْكُمْ مَيِّتٌ مَا كُنْتُ بَيْنَ أَظْهُرِكُمْ إِلّا آذَنْتُمُونِي بِهِ فَإِنّ
صَلَاتِي عَلَيْه رَحْمَةٌ.
অর্থ: তোমাদের কেউ মারা গেলে আমাকে
জানাবে। কেননা আমার জানাযা নামায মৃতের জন্য রহমত। তাখরিজ: সহীহ
ইবনে হিব্বান-৩০৮৩
بِي
هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ شَهِدَ الْجَنَازَةَ حَتَّى يُصَلِّي عَلَيْهَا
فَلَهُ قِيرَاطٌ، وَمَنْ شَهِدَ حَتَّى تُدْفَنَ كَانَ لَهُ قِيرَاطَانِ، قِيلَ: وَمَا الْقيرَاطَانِ قَالَ: مِثْلُ الْجَبَلَيْنِ الْعظيمَيْنِ
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায়
করা পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কীরাত, আর
যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দু’ কীরাত। জিজ্ঞেস করা হল দু’ কীরাত কী? তিনি বললেন, দু’টি বিশাল পর্বত
সমতুল্য (সাওয়াব)। তাখরিজ: বুখারি-
১৩২৫; মুসলিম- ৯৪৫
দুটি
হাদিস থেকে বুঝা যায়, জানাযা মৃত্যু ব্যক্তির জন্য রহমত এবং জীবিতের জন্য অনেক সওয়াব রয়েছে।
সুতরাং এমন কাজ সাহাবা-তাবেয়িরা ছাড়তে পারে না।
অথচ
খোলাফায়ে রাশেদীন থেকেও গায়েবানা জানাযা নামায পড়ার প্রমাণ নেই। অথচ তাদের
খেলাফতকালে বিভিন্ন মুজাহিদ শহীদ হয়েছেন। গায়েবানা জানাযা নামায যদি সুন্নাহসম্মত
হত তাহলে সাহাবীগণ অবশ্যই উক্ত সুন্নাহর অনুসরণ করতেন। কখনো পরিত্যাগ করতেন না।
(০৩) তৃতীয় ব্যাখ্যা: বাদশা বাদশা নাজাশী ইন্তেকাল করেছেন নবম হিজরীর
রজব মাসে। আর গায়েবানা জানাযার হাদিস বর্ণনাকারী (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) সাহাবাগণ মৃত্যবরণ
করেছেন অনেক পরে, কিন্তু তারা কখনও গায়েবানা সালাত আদায়
করেনি। সূত্র: হাশিয়ায়ে মুয়াত্তা
মালিক-২০৮
(০৪) চতুর্থ ব্যাখ্যা: রসূল (ﷺ) মুজিজার অংশ হিসেবে বাদশা নাজাশি জানাযা
পড়ার সময় লাশ সামনে ছিল, সাহাবারা তা ধারণা করতেন এবং দেখেছেন। দলিল:
হজরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) বলেন- وَمَا نَحْسِبُ الْجِنَازَةَ
إِلَّا مَوْضُوعَةً بَيْنَ
يَدَيْهِতথা আমরা জানাযার ব্যাপারে
এটাই অনুধাবন করছিলাম যে, তা আমাদের সামনে রাখা আছে। তাখরিজ: মুসনাদে
আহমাদ-২০০০৫
হজরত আবান (রাহ.) সূত্রে হজরত ইমরান ইবনে হাছীন থেকে বর্ণিত
হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে, “যখন নবিজী (ﷺ) এর পিছনে জানাযা পড়েছি, نحن لا نرى ان الجنازة قدمنا তখন নাজাশীর লাশকে আমাদের সামনে উপস্থিত দেখতে পেয়েছি।” সূত্র: উমদাতুল কারী
শরহুল বুখারী- ৭/৩৩
সুতরাং আমাদের গায়েবানা জানাযায় লাশ সামনে থাকা
অনিশ্চিত। তাই তা আদায় করার প্রশ্নেই
আসেনা।
শেষ কথা হলো, আমি
সেই কথাই বললো, যা বলেছিলেন,হাম্বলী
মাযহাবের ইমাম ইবনুল কায়্যিম বলেন,
وَلَـمْ يَكُنْ مِنْ
هَدْيِهِ وَسُنَّتِهِ الصَّلَاةُ
عَلَىٰ كُلِّ مَيِّتٍ
غَائِبٍ فَقَدْ مَاتَ
خَلْقٌ كَثِيْرٌ مِنَ
الْـمُسْلِمِيْنَ وَهُمْ غُيَّبٌ
فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِمْ.
“গায়েবানা জানাযা পড়া রসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত পরিপন্থি। কেননা রাসুল (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় দূর-দূরান্তে বহু সাহাবায়ে
কেরাম ইন্তেকাল করেছেন; কিন্তু তিনি তাদের গায়েবানা জানাযা
পড়েননি।’’ সূত্র: আওনুল মা’বুদ শরহু সুনানি আবী দাউদ, দারু আল-খ. ৯, পৃ. ; যাদুল মাআদ ১/১৪৮
সুতরাং
বর্তমানে যেসব অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাযা পড়া হয় তা সুন্নাহসম্মত নয় এবং
সালাফের আমলের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এ প্রথা অবশ্যই বর্জনীয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৮২ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ, বিজ্ঞজনদের নিকট জানার বিষয় হলো, মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মাতৃভূমি
মক্কায় অবস্থান না করে মদীনাতে কেন অবস্থান করলেন?? তারিখ-২৭/০৯/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ শফিউল ইসলাম সিলেট থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, এ রহস্যে
সম্পর্কে সরাসরি কোন নস আমার জানা নেই। তবে চারটি কারণ/ রহস্যে উল্লেখ করছি।
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق
والمعين
(০১) নবিজি (ﷺ) জীবন ওহি দ্বারা পরিচালিত হয়েছে; বিশেষ করে নবুওয়াতের পর মৃত্যু
পর্যন্ত। দলিল:
وَمَا يَنطِقُ عَنِ
الْهَوَىٰإِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ
অর্থ: এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়। সূরা আন-নজম-৩,৪
(০২) আমার জানামতে কোন নবি হিজরত করার
পর আর স্বদেশে ফিরে আসেননি, অর্থাৎ স্থায়ীভাবে বসবাস করেননি।
উদাহরণ স্বরূপ, হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ইরাকের বাবেল
শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। হিজরত করেন সিরিয়া এবং তার করব হলো হিব্রোণ সিরিয়া , হজরত মুসা আলাইহিস সালাম মিশরে জন্ম গ্রহণ করেন। হিজরত করেন সিরিয়া এবং
তার সমাধি/কবর হলো নবো পর্বত সিরিয়া। সুত্র: বিএন. এম. উইকিপিডিয়া
মদিনায় হিজরত সম্পর্কে
পবিত্র কুরআনের বর্ণনা,
وَاِذۡ یَمۡکُرُ بِکَ الَّذِیۡنَ
کَفَرُوۡا لِیُثۡبِتُوۡکَ اَوۡ یَقۡتُلُوۡکَ اَوۡ یُخۡرِجُوۡکَ ؕ وَیَمۡکُرُوۡنَ
وَیَمۡکُرُ اللّٰہُ ؕ وَاللّٰہُ خَیۡرُ الۡمٰکِرِیۡنَ ‘(হে নবি!) আপনি ঐ সময়টি স্মরণ করুন, যখন
কাফিররা চক্রান্ত আঁটছিল যে, তারা আপনাকে বন্দী করবে, অথবা
হত্যা করবে কিংবা করবে দেশান্তর। তারা তাদের ষড়যন্ত্র করছিল আর আল্লাহ আপন কৌশল করছিলেন।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোত্তম কৌশলী। সূরা আনফাল : ৩০
আল্লাহ নবিজীকে নির্দেশ দিলেন, রাতে
স্বীয় গৃহে শয়ন না করে তাঁর স্থানে হজরত আলী রা.কে রাখতে। এভাবে নবিজীর অপেক্ষার প্রহর
শেষ হল, জিবরীল আ. হিজরতের নির্দেশ সম্বলিত আসমানী বার্তা নিয়ে এলেন।
আয়াত নাযিল হল,
وَقُلۡ رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ
مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّاَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّاجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ
سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا ‘আর (হে নবি) আপনি বলুন, হে আমার
রব! আমাকে প্রবেশ করান কল্যাণের সাথে এবং আমাকে বের করান কল্যাণের সাথে। আর আমাকে আপনার
পক্ষ হতে দান করুন সাহায্যকারী শক্তি।’সূরা
বনী ইসরাইল : ৮০
(০৩) আমাদের রসূল (ﷺ) –এর রওজা মুবারক যে
মদিনায় হবে, তা আল্লাহ তাআলার পূর্ব সিদ্ধান্ত ছিল। যা পূর্বে আসমানি কিতাবেও উল্লেখ ছিল। নবিজি (ﷺ) -এর জন্মের প্রায় ৬০০ বছর আগে বাদশাহ তুব্বা
কর্তৃক রসূল (ﷺ)-এর জন্য অট্রালিকা বানানো তারই
প্রমাণ বহন করে। সূত্র: তাফরিহুল আজকিয়া আহওয়ালিল আম্বিয়া- ২য় খণ্ড, ১১০ পৃষ্ঠা
(০৪) রাসুল
(ﷺ)- এর রওজা মক্কায় না হয়ে মদিনা
হলো কেন? এর রহস্যে
সম্পর্কে আমি একটি ব্যাখ্যা শুনেছি
যা আমার ভাল লেগেছে ও সত্য মনে হয়েছে।
ব্যাখ্যাটি করেছেন, পাকিস্তানের বিখ্যাত বুজুর্গ আরিফ বিল্লাহ শাহ হাকিম মুহাম্মাদ
আখতার রহ. যা আমি শুনেছি তারই শিষ্য জামেআ হাকিমুল উম্মতের
প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন দা.বা. কাছ থেকে---
(ব্যাখ্যাটি এই) এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রতিটি মুসলমানের
অন্তরে পবিত্র কাবা ঘর ও প্রিয়তম রাসূল (ﷺ) প্রতি রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ-অদম্য ভালবাসা। যদি রসূল (ﷺ) –এর রওজা মুবারক মক্কায় হতো; তাহলে আশেক মুসলমান একনিষ্ঠভাবে কাবার জিয়ারত ও রসূল (ﷺ) রওজা জিয়ারত করতে বাঁধা সৃষ্টি করতো। যেমন, যখন কেউ কাবা তাওয়াফ করত, তখনই আবার রসূল (ﷺ)-এর কথা মনে হয়ে , দিল সেদিকে ধাবিত হত। আবার যখন
রওজা মুবারক জিয়ারত করতো, তখন একই সাথে কাবার কথা মনে পড়লে,
মন সেদিকে ধাবিত হতো। অর্থাৎ একজনের ভালবাসার মধ্যে অন্য ভালবাসা ঢুকে
যেত। ( বিষয়টি এ রকম, ধরুন! একই সাথে আপনার দুজন শ্রদ্ধাভাজন ওস্তাদ ডেকেছে, এখন
কার কাছে আগে যাবেন। কারণ দুজনই সম্মানিত। একজনের কাছে গেলেও আরেকজনের ভালবাসা
টানতে থাকে। বিষয়টি যেমন জটিল, তেমনি কাবার পাশে রওজা হলে একই সমস্যা হতো। এটি আমার নিজস্ব উদাহরণ/মন্তব্য)
শাহ হাকিম আখতার রহ বলেন, এজন্যই আল্লাহ তাআলা মক্কা
থেকে রসূল (ﷺ)-এর রওজা মদিনা রেখেছেন। যাতে
করে প্রেমিকগণ যখন যেখানে থাকবে প্রাণ উজার মনের জমানো মহব্বত নিবেদন করতে পারে।
কোন রকম বাঁধা ছাড়া।
তিনি আরও বলেন, মক্কায় আল্লাহ তাআলা কোন/তেমন গাছ-পালা পয়দা করেননি, শুধু পাহাড় আর পাহাড়। এর রহস্যে
হলো, আল্লাহর প্রেমিকগণ যেন প্রাণ জুড়ে-চোখ জুড়ে শুধু কাবার সৌন্দর্যই অবলোকন করে। মক্কায় যদি সেরকম প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য থাকতো মানুষ সেদিকেই তাকাতো, এতে কাবার ভালবাসায়
কিছুটা ভাটা পড়তো। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কাবার চতুর্পাশে পাহাড় রেখেছেন। যাতে কাবার নূর/জ্যোতির
প্রতি চোখ চাতক পাখির ন্যায় নিবিষ্ট থাকে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৮৫: আসসালামু অলাইকুম. দয়া করে একটি প্রশ্নের উত্তর জানাবেন.
এক মহিলার নামে 20 বিঘা জমি আছে. মহিলার
স্বামী ও একমাত্র কন্যা সন্তান আছে কোনো ছেলে নেই. এখন উক্ত মহিলা মারা গেলে সম্পদ কিভাবে বন্টন hobe?তারিখ-২৮/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা নুরুল ইসলাম
রাঙামাটি থেকে থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, প্রথমত মেয়ে ১/২ পুরো সম্পদের অর্ধেক পাবে এবং স্বামী পাবে ১/৪ আর
রদ্দের মাসয়ালায় বাকি ১/৪ সম্পদ আবার মেয়ে পাবে।
সুতরাং আপনার প্রশ্ন আলোকে বলা
যায়, মেয়ে ১৫ বিঘা আর স্বামী ৫ বিঘা পাবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা:২৮৬:
Assalamualaikum wa
Rahmatullah.
জনৈক
ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রীর প্রচন্ড দূর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করে দ্বিতীয়
বিবির সাথেই বসবাস করেন। প্রথম স্ত্রীর ভরণপোষণের সকল ব্যয় নির্বাহ করেন তবে তার
সাথে শারীরিক সম্পর্ক নেই স্ত্রীর আপত্তির কারণে । স্ত্রীর শর্ত যে দ্বিতীয়া কে তালাক না দিলে তিনি তাকে স্পর্শ করতে দেবেন না।
প্রশ্ন হলো এমতাবস্থায় এহেন জটিলতার জন্য স্বামীর
পক্ষে ইনসাফ বজায় রাখা সম্ভব না হওয়ায়
তিনি কি গুনাহগার হবেন?
মাওলানা
নুরুল আমিন দিনাজপুর থেকে---
জবাব:
ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনার প্রশ্নকে সহজ ভাবে বোঝার জন্য কয়েকটি ভাগে ভাগ করছি।
আল্লাহই একমাত্র তাওফিক দাতা।
প্রশ্ন: ক। দ্বিতীয় বিবাহ করতে হলে কি প্রথম স্ত্রীর
অনুমতি প্রয়োজন?
উত্তর:
ক। ইসলামী শরীয়তে দ্বিতীয় বা
একাধিক বিবাহ করতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতির প্রয়োজন নেই। দলিল:
فَانكِحُوا
مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ
أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً [٤:٣]
সেসব
মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা
চারটি পর্যন্ত। সূরা নিসা-০৩
তবে
জরুরি না হলেও দাম্পত্য জীবনে সুখময় করতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেওয়া উচিত।
দলিল:
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: “أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خلقا، وخياركم خياركم
لنسائهم”
হজরত
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে পূর্ণতর মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আচার আচারণ উত্তম। আর তোমাদের মাঝে উত্তম
সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীদের কাছে উত্তম। সহীহ ইবনে হিব্বান-৪১৭৬
সুখময়
দাম্পত্য জীবনের জন্য স্ত্রীকে খুশি রাখা জরুরি। হাদিস থেকে বোঝা যায় যে স্ত্রীর
অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন যাতে পরবর্তীতে ঝামেলা না হয়।
দ্বিতীয়
কথা হলো, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে,
মুসলিম
পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৬ ধারামতে, দ্বিতীয়
বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের কাছে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। আর তাই
প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ বলে গণ্য হবে। এ অবস্থায়
প্রতিকার পেতে আপনি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দণ্ডবিধি আইন-১৮৬০-এর ৪৯৪-এর বিধানমতে
মামলা করতে পারেন।
প্রশ্ন:
খ। একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে
শর্ত কি?
উত্তর:
খ। একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে
শর্ত হলো স্ত্রীদের মধ্য সমতা বিধান করতে হবে। সেটা ভরণ-পোষণ, বাসস্থান কাপড়-চোপড়,সহবাস সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত।
মহান
আল্লাহ তাআলা স্ত্রীদের মধ্য সমতা বিধান না করতে পারলে একজনকে নিয়ে সন্তুষ্ট
থাকতে বলেছেন। যেমন,
আয়াত
নং-০১
فَانكِحُوا
مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ
أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً [٤:٣]
সেসব
মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা
চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের
মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই। সূরা নিসা-০৩
আয়াত
নং-০২
"তোমরা যতই আগ্রহ রাখো না কেন, তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে
কখনো সক্ষম হবে না……”।সুরা নিসা-১২৭
উপরের
দুটি আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ইসলামে চারটি বিবাহ করা বৈধ কিন্তু একটি
বিবাহ করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং বহু বিবাহে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
হাদিস
নং -০১
وَعَنْ
أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ : «إِذَا كَانَتْ عِنْدَ الرَّجُلِ
امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ بَيْنَهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّه
سَاقِطٌ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُوْ دَاودَ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ
مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ
আবূ
হুরায়রাহ্ (রা.)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি (ﷺ)বলেছেনঃ যদি কোনো পুরুষের দু’জন সহধর্মিণী থাকে আর সে তাদের মধ্যে যদি
ন্যায়বিচার না করে, তবে সে কিয়ামতের দিন একপাশ
ভঙ্গ (অঙ্গহীন) অবস্থায় উঠবে। তাখরিজ: তিরমিজি-১১৭১
হাদিস
নং -০২
হাদিসে
আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবি করিম (ﷺ) স্ত্রীদের মধ্যে পালাবণ্টন করতেন এবং ন্যায়বিচার করতেন। আর বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আমার শক্তি-সামর্থ্যানুযায়ী
পালাবণ্টন করলাম। সুতরাং যাতে শুধু তোমার ক্ষমতা রয়েছে, তাতে আমার শক্তি নেই। কাজেই তাতে তুমি আমাকে
ভর্ৎসনা করো না। তাখরিজ: তিরমিজি : ১১৭০, আবু
দাউদ : ২১৩৬
উপরোক্ত
আয়াত এবং হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, যদি
আপনার প্রশ্ন বর্ণিত ব্যক্তি যদি ইনসাফ/সমতা বিধান না করে তাহলে অবশ্যই গুনাগার
হবে।
প্রশ্ন:
ঘ। স্বামী যদি তার স্ত্রীকে একান্ত প্রয়োজনে আহবান করে, কিন্তু সাড়া না দেয়, তাহলে
স্ত্রী কি গুনাহ হবে?
উত্তর:
ঘ। স্বামীর আহবানে স্ত্রীর
সাড়া দেওয়া জরুরী। দলিল:
হাদীস
নং-০১
إذا
دعا الرجل زوجته لحاجته فالتأته، وإن كانت على التنور
স্বামী
যখন নিজ প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকবে তখন সে যেন তাতে সাড়া দেয়, যদিও সে চুলায় (রান্নার কাজে) থাকে। তাখরিজ:
জামে তিরমিযী-১১৬০; সুনানে নাসাঈ-৮৯৭১
হাদিস
নং-০২
ثَلاَثَةٌ
لاَ يُقبَلُ منهُم صَلاَةٌ وَلاَ تَصعُدُ إلَى السَّمَاءِ وَلاَ تَجَاوزُ
رُءُوسُهُم : رَجُلٌ أَمَّ قَوماً وَهُم لَه كَارِهُونَ ، وَرَجُلٌ صَلَّى عَلَى
جَنَازَةٍ وَلَمْ يُؤمَر ، وَامرَأَةُ دَعَاهَا زَوجُهَا من اللَّيلِ فَأَبَتْ
عَلَيه.
‘‘তিন ব্যক্তির নামায কবুল হয়
না, আকাশের দিকে উঠে না; মাথার উপরে যায় না; এমন ইমাম যার ইমামতি (অধিকাংশ) লোকে অপছন্দ করে, বিনা আদেশে যে কারো জানাযা পড়ায় এবং রাত্রে
সঙ্গমের উদ্দেশ্যে স্বামী ডাকলে যে স্ত্রী তাতে অসম্মত হয়। তাখরিজ: সহিহ
তারগিব-১৬৫৫
হাদিস
নং-০৩
إِذَا
دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ أَنْ تَجِيءَ لَعَنَتْهَا
الْمَلَائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ.
‘‘ স্বামী যখন তার স্ত্রীকে নিজ
বিছানার দিকে (সঙ্গম করতে) আহ্ববান করে তখন যদি স্ত্রী না আসে, অতঃপর সে তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি
কাটায়, তবে সকাল পর্যন্ত
ফিরিশ্তাবর্গ তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন।’’ অন্য
এক বর্ণনায় ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বামী
তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরিশ্তা তার
উপর অভিশাপ করতে থাকেন।’’ তাখরিজ: বুখারি-৫১৯৩
উপরোক্ত
হাদিসের আলোকে ফোকাহায়ে কেরাম বলেছেন, যদি
স্ত্রী শারীরিক অক্ষম ছাড়া স্বামীকে সহবাস করতে বাধা দেয়, তাহলে সে গুনাগার হবে। সূত্র: দুররুল
মুখতার-৪/৩৮০; ফাতহুল মুলহিম-৬/৫৯৯
সারকথা
হল, স্বামী যদি দুই স্ত্রীর মাঝে
সমতা বিধানে ত্রুটি করেন, তাহলে স্বামী অবশ্যই গুনাগার
হবে। বাকি স্ত্রী যে তার স্বামীকে সহবাস করতে দিচ্ছে না শর্ত আরোপ করেছেন
এক্ষেত্রে স্ত্রী গুনাহগার হবে।
আর দ্বিতীয়
স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা এতেও প্রথমে স্ত্রী গুনাগার হবেন।
আর
সবচেয়ে বড় ভুল হলো তিনি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি দেননি। সুতরাং এমন অবস্থায় তাকে
আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে এবং প্রথম স্ত্রীকে বোঝাতে হবে যাতে দ্বিতীয়
স্ত্রীকে মেনে নেয়।
والله
اعلم بالصواب
উত্তর
দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা
-২৮৭:
আসসালামু
আলাইকুম। মাহরাম ব্যক্তি অমুসলিম হলে তার সাথে পর্দা করতে হবে কিনা? যেমন বোন যদি মুসলিম হয় আর ভাই যদি কাফের থাকে
তাহলে তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবে কিনা? এ
ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কি?
দয়া
করে জানাবেন ধন্যবাদ। তারিখ-২৯/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা
আনোয়ার হোসেন যশোর থেকে---
জবাব:
ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তাসলিমবাদ কথা হলো, প্রথমত তিন ধরনের মাহরাম হয়ে থাকে। যথা : (১)
বংশীয়/ঔরসজাত সম্পর্ক। (২) দুধ সম্পর্ক ও (৩) বৈবাহিক সম্পর্ক।
দ্বিতীয়
কথা হলো, ইসলামী শরীয়ত মাহরুম
নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিমের মধ্যে পার্থক্য করেননি। দলিল:
ولا
يبدين زينتهن الا لبعولتهن او ابآئهن او ابآء بعولتهن او ابنآئهن او ابنآء بعولتهن
او اخوانهن او بنى اخوانهن او بنى اخوتهن او نسائهن او ما ملكت ايمانهن او التبعين
غير اولى الاربة من الرجال او الطفط الذين لم يظهروا على عورت النساء
অর্থ:
তারা যেন নিজেদের আবরণ প্রকাশ না করে তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের
মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যারা যৌন
কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত অন্য কারো
নিকট। সূরা নূর-৩১
তৃতীয়
কথা হলো, পিতা-মাতা কাফের হলেও তাদের
সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলিল:
وَإِن
جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا
تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ [٣١:١٥]
অর্থ:
পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে
তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। সূরা লুকমান-১৫
চতুর্থ কথা হলো, সাহাবায়ে কেরাম তাদের অমুসলিম মাহরাম এর সাথে
দেখা করেছেন। দলিল:
قدم
أبو سفيان إلى المدينة لأجل بعض الشؤون السياسية بين قريش وبين رسول الله -صلّى
الله عليه وسلّم-، وقد كان أبو سفيان ما زال مشركًا، فدخل بيت ابنته أم حبيبة قبل
دخوله إلى رسول الله، فقامت أم حبيبة بطيّ الفراش عنه حتّى لا يجلس عليه. فقال لها: "
فقال
لها: "يا بنية! ما أدري أرغبت بي عن هذا الفراش؟ أم رغبت به عني؟ قالت: بل هو
فراش رسول الله -صلّى الله عليه وسلّم-، قال: والله لقد أصابك يا بنية بعدي
شر"،[١] وورد في روايات أخرى أنّها قالت له: "بل هو فراش رسول الله
-صلّى الله عليه وسلّم-، وأنت امرؤ نجس مشرك"، فوضّحت له سبب عدم رغبتها
بجلوسه على الفراش
অর্থাৎ আবু সুফিয়ান রা মদিনায় আসলেন।কুরাইশ এবং
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর মধ্যে সন্ধি নবায়নের জন্য। অবশ্য তখন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু
আনহু তখন মুশরিক ছিলেন।
এবং
কন্যা উম্মে হাবিবা (রা.)-এর সাথে দেখা করতে যান। সে সময় হজরত উম্মে হাবিবা (রা.)
রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর
নিকট অবস্থান করছিলেন এবং তিনি পিতা আবু সুফিয়ানকে রসূলুল্লাহ ((ﷺ) )-এর পবিত্র বিছানায় মোশরেক হওয়ার কারণে
বসতে দেননি। আবু সুফিয়ান বললেন: ‘বেটি! বিছানা উঠিয়ে দিলে কেন, আমার বসার উপযোগী মনে করলে না?’ তিনি বললেন: ‘এটি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিছানা এবং আপনি মোশরেক ও অপবিত্র।
এ জন্য আমি ভালো মনে করিনি আপনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
বিছানায় বসুন।’ এ কথা শুনে আবু সুফিয়ান
সেখান হতে চলে যান। সূত্র: কিতাবুল ইসাবাতি ফি তাময়িজিল সাহাবাতি-১৪২পৃ. ইবনে
হাজার আসকালানি রহ.,যাদুল মাআদ-৩/৩০০-৩০৯পৃ.
প্রশ্ন: ক। অমুসলিম মেয়ে ও বেপর্দা/দুষ্ট মুসলিম নারীদের সাথে মুসলিম
মেয়েদের পর্দা করার বিধান?
উত্তর:
ক। অমুসলিম/বেপর্দা মেয়েদের সামনে মুসলিম নারীদের পর্দা করতে হবে কিনা, সেই ব্যপারে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ
পাওয়া যায়।
কেহ
কেহ বলেছেন যে যদিও তাদের সামনে মুসলিম নারীদের পর্দা করা ফরজ নয়,তবে কম আয কম মুসতাহাব অবশ্যই। তাই তাদের সামনে পর্দা করাই
উচিত। সূত্র: কিতাবুন নাওয়াজেল
৬/৩৫
তবে
ফাতওয়ায়ে সামিতে অমুসলিম নারীদের থেকে মুসলিম নারীদেরকে পর্দা করা জরুরী/ফরজ
বলেছেন।
প্রশ্ন:
খ। মাহরমের সামনেও কি মাথা ঢাকা বা ওড়না পড়তে হবে?
উত্তর:
খ। স্বাভাবিক অবস্থায় মাহরুমের
হাত-পা, চুল, গলা, মাথা
দেখা জায়েজ আছে। তবে শাহওয়াতের
সাথে
দৃষ্টি হারাম।
তবে
স্বাভাবিক অবস্থা জায়েজ হলেও পূর্বসূরীরা এটা অপছন্দ করেছেন। নিচে কয়েকটি মতামত
উল্লেখ্ করা হলো,
ইমাম
শা’বি রহ. ও ইকরিমা রহ. বলেন,
لا
تضع خمارها عند العم والخال.
“নারী তার চাচা বা মামার
সামনে ওড়না ছাড়া থাকবে না।” -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা:
১৭৫৮০
ভাইয়ের
সামনে ওড়না ছাড়া থাকা যাবে কি না,
এ
প্রসঙ্গে হাসান বসরী রহ. বলেন,
والله
ما لها ذاك.
“আল্লাহর কসম, তার জন্য এই সুযোগ নেই।” -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১৭৫৬৮
ইমাম
যুহরি রহ. বলেন,
أما
أن تسلخ الخمار فلا.
“মাহরামের সামনে ওড়না খুলে
রাখার সুযোগ নেই।” -মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক:
১২৮৩০
তাঊস
রহ. থেকেও এমন বর্ণনা রয়েছে। -মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ১২৮৩১
শা’বি রহ. থেকে আরো বর্ণিত আছে,
أنه
كره أن ينظر إلى شعر كل ذي محرم.
“যেকোনো মাহরাম মহিলার চুলের
দিকে তাকানো তিনি অপছন্দ করতেন।”
-মুসান্নাফে
ইবনে আবি শাইবা: ১৭৫৬৮
যাইহোক
সারকথা হল, অমুসলিম মাহরামের সাথে দেখা
করা জায়েয আছে। তবে যতটুকু অংশ মাহরামের সামনে খোলা জায়েজ আছে এর বেশি যেন না হয়, সে
বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
و
الله اعلم بالصواب
উত্তর
দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক বগুড়া
জিজ্ঞাসা-২৮৮:
আসসালামু
আলাইকুম। কবরে ফুল দেয়া এবং সেলুটিং করার ব্যাপরে কোরআন হাদীসের আলোকে বিস্তারিত
জানতে চাই।
হাফেজ
মাওলানা ইয়াহিয়া মাহমুদ রামু কক্সবাজার থেকে----
জবাব:
ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
نحمده
ونصلي على رسوله الكريم اما بعد
তাসলিমবাদ প্রথম কথা হলো, কবরে ফুল দেওয়া, আগরবাতি
জ্বালানো, কবরের সামনে নীরবতা পালন করা, সেলুট দেওয়া এগুলো ইসলামী শরীয়ত সম্মত নয়, বেদআত।
বেদআত
বলা হয়, যার অস্তিত্ব কোরআন হাদিসে
নেই এবং খয়রুল কুরুনে যুগে নেই। দলিল:
হাদিস
নং-০১
عَنْ
عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ
رَدٌّ
‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের
মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করল যা মূলত তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা অগ্রাহ্য। বুখারি- ২৫০১
হাদিস
নং-০২
وَإِيَّاكُمْ
وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالَةٌ
“দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্ট
বিষয়াদি থেকে সাবধান! কারণ প্রতিটি নতুন আবিষ্কৃত বিষয়ই গোমরাহি। আবু দাউদ-৪০৬৭; মুসতাদরাক
হাদিস
নং -০৩
وَعَن
عِمْرَانَ بنِ الحُصَيْنِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، أنّه قَالَ :
«خَيْرُكُمْ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ
». قَالَ عِمْرَانُ: فَمَا أدْري قَالَ النَّبِيُّ ﷺ مَرَّتَيْنِ أَو ثَلاَثاً«
ثُمَّ يَكُونُ بَعْدَهُمْ قَوْمٌ يَشْهَدُونَ وَلاَ يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَخُونُونَ
وَلاَ يُؤْتَمَنُونَ، وَيَنْذِرُونَ وَلاَ يُوفُونَ، وَيَظْهَرُ فِيهمُ السَّمَنُ
». متفقٌ عَلَيْهِ
অর্থ:
ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবি (ﷺ) বলেছেন, আমার
উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম যুগ হল আমার সাহাবিদের যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেয়িদের)
যুগ।’’ ইমরান বলেন, নবি (ﷺ) তাঁর যুগের পর উত্তম যুগ হিসাবে দুই যুগ উল্লেখ করেছেন, না তিন যুগ তা আমার জানা (স্মরণ) নেই।’ অতঃপর তোমাদের পর এমন এমন কিছু লোকের আবির্ভাব
ঘটবে, যারা সাক্ষ্য দেবে অথচ
তাদেরকে সাক্ষী মানা হবে না। তারা খেয়ানত করবে এবং তাদের নিকট আমানত রাখা যাবে না।
তারা আল্লাহর নামে মানত করবে কিন্তু তা পুরা করবে না। আর তাদের দেহে স্থূলত্ব
প্রকাশ পাবে।’’ তাখরিজ: বুখারি ২৬৫১, ৩৬৫০, ৬৪২৮, ৬৬৯৫, মুসলিম
২৫৩৫, তিরমিযি ২২২১, ২২২২, নাসায়ি৩৮০৯
সুতরাং
যে আমল কোরআন হাদিস অনুসরণীয় যুগে অস্তিত্ব পাওয়া যায় না তা পরিত্যাজ্য।
দ্বিতীয়
কথা হলো, কবরে ফুল দেওয়া, নিরবতা
পালন করা ইত্যাদি মুসলিমদের সংস্কৃতি নয়, বিজাতীয়
সংস্কৃতি সুতরাং তা পরিত্যাগ করা কর্তব্য। দলিল:
عَنِ
ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
‘হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে
বর্ণিত। রাসূল (ﷺ)ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।’ তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-৪০৩১
যেমন,আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটির
ফতওয়াসমগ্রতে এসেছে,
وضع
الزهور على قبور الشهداء أو قبور غيرهم- من البدع التي أحدثها بعض المسلمين في
الدول التي اشتدت صلتها بالدول الكافرة، استحسانا لما لدى الكفار من صنيعهم مع موتاهم،
وهذا ممنوع شرعا لما فيه من التشبه بالكفار،
শহিদদের
কবরে কিংবা অন্যদের কবরে ফুল দেয়া এমন এক বেদআত যা আবিস্কার করেছে এমন কিছু মুসলিম
রাষ্ট্র যেগুলোর বন্ধন অমুসলিম রাষ্ট্রেগুলোর সঙ্গে দৃঢ়। কাফেররা তাদের মৃতদের
সঙ্গে যা করে এরাও তাদের অনুকরণে তা করে। এটি শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। কেননা, এতে কাফেরদের সাদৃশ্যতা গ্রহণ বিদ্যমান। সূত্র:
ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা, ফতওয়া নং ৪০২৩
তৃতীয়
কথা হলো, কবরের উপর ফুল দেওয়া, মোমবাতি জ্বালানো নিরবতা পালন করা, চুমু খাওয়া, সেলুট
দেওয়া ইত্যাদি অর্থাৎ কবরকে কেন্দ্র করে এই জাতীয় তাজিম/সম্মান ধীরে ধীরে
মুসলমানদেরকে কুফুর শিরকের দিকে ধাবিত করে, তাই
ইসলাম দূর দূর থেকে সাবধানতা অবলম্বন শিক্ষা দেয়। দলিল:
হাদিস
নং-০১
لَعْنَةُ
اللهِ عَلَى اليَهُودِ وَالنصَارَى، اتخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ
‘ইহুদী ও নাসারাদের উপর আল্লাহর
লা‘নত, কারণ তারা তাদের নবিদের কবরগুলোকে সিজদার স্থান
বানিয়েছে। তাখরিজ: বুখারি-৪৩৫
হাদিস
নং-০২
لَا
تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا
‘আমার কবরকে তোমরা উৎসবের
স্থান বানিও না।’ তাখরিজ: আবু দাউদ-২০৪২
সারকথা
হলো, কবরে ফুল দেওয়া কবরকে
সম্মান করা নীরবতা পালন করা এগুলো মুসলমানদের সংস্কৃতি নয়, সুতরাং তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তবে কোন মুসলিম
চাকরি ক্ষেত্রে করতে বাধ্য হলে তার জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার পাঠ করবেন।
কবর-যিয়ারতের
পদ্ধতি:
নবি (ﷺ)কবর যিয়ারতের এই তরীকা বলেছেন যে, কেউ যখন কবরস্থানে যায়, তো কবরবাসীদের যেন এ বলে সালাম দেয়-
السلام
عليكم دار قوم مؤمنين، أنتم لنا فرط ونحن لكم تبع، وإنا إن شاء الله بكم لاحقون،
نسأل الله لنا ولكم العافية.
অর্থ
: হে মুমিনদের বসতি! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা আমাদের পূর্বসূরী আর
আমরা তোমাদের উত্তরসূরী। আর ইনশাআল্লাহ আমরা তোমাদের সাথে যুক্ত হব।
আমরা আল্লাহর কাছে আফিয়াত চাই। আমাদেরও জন্য এবং তোমাদেরও জন্য। তাখরিজ: মুসলিম
১/৩১৩,৩১৪; সুনানে নাসায়ী ১/২২২; মুসনাদে আহমাদ- ২২৯৮৫
والله
اعلم بالصواب
উত্তর
দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৮৯:
আসসালামু
আলাইকুম, "জানাযার নামাজে ডান দিকে
সালাম ফেরানোর সময় তাহরিমার ডান হাত ছেড়ে দিতে হবে এবং বাম দিকে সালাম ফেরানোর বাম
হাত ছেড়ে দিতে হবে। " এমন কোন নিয়ম ইসলামী শরীয়তে আছে নাকি? আমার তো জানা আছে নামাজের আরকান গুলোর মধ্যে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করা একটি ফরজ, আর এই ফরজ বাম দিকে সালাম ফেরানোর মাধ্যমেই শেষ
করতে হয়ে। তার আগেই যদি ডান হাত ইচ্ছে পূর্বক নামাতে হয় তাহলে কি নামাজ ফাসেদ হবে না? তারিখ-৩০/০৯/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক
হাফেজ মাওলানা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক --
জবাব:
ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
نحمد
و نصلي على رسوله الكريم اما بعد
তাসলিম
ও হামদ_সানার পর প্রথম কথা হল, জানাযা নামাজে সালাম কয়টি দুটি না একটি, এ
বিষয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছেন। যেমন,
اختلَفَ
أهلُ العِلمِ في عددِ التَّسليمِ في صلاةِ الجِنازة: هل هو تسليمةٌ أو تسليمتان ؛
على قولين:
القول
الأوّل: يُستحَبُّ في صَلاةِ الجِنازة التَّسليمُ تَسليمتَينِ، وهو مذهبُ
الحَنفيَّة، والأصحُّ عند الشَّافعيَّة، وهو قولُ ابنِ حزمٍ
الأدلَّة:
أولًا:
من السُّنَّة
عن
ابنِ مسعودٍ رَضِيَ اللَّهُ عنه، قال: ((ثلاثُ خِلالٍ كان رسولُ اللهِ صلَّى الله
عليه وسلَّم يفعلهنَّ، ترَكَهنَّ النَّاسُ؛ إحداهنَّ: التسليمُ على الجِنازة مِثل
التَّسليمِ في الصَّلاةِ...))
ثانيًا:
قياسًا على سائرِ الصَّلواتِ في كونِها تَسليمتَينِ
القول
الثاني: يُستحبُّ في صَلاةِ الجِنازة الاقتصارُ على تسليمةٍ واحدةٍ، وهو مذهبُ المالِكيَّة،
والحَنابِلَة،
অর্থাৎ
ইমাম আবু হানিফা ও শাফিয়ি রহ. মতে সালাম দুটি আর ইমাম মালেক এবং হাম্বল রহ. এর মতে সালাম একটি। সূত্র: আলমাসবুত-৫/৬৫; আল মাজমু-২/২৪০
দ্বিতীয়
কথা হলো, জানাজার নামাজ শেষে কখন হাত
ছাড়তে হবে এ বিষয়ে ফকিহদের থেকে দুটো মত পাওয়া যায়।
১.
চতুর্থ তাকবিরের পর উভয় হাত ছেড়ে দেওয়া। এরপর সালাম ফেরানো।
২.
উভয় দিকে সালাম ফেরানোর পর হাত ছাড়া। দুটি মতই শুদ্ধ। যেকোনোটির ওপর আমল করা যেতে
পারে।
আর
প্রশ্নে তৃতীয় যে পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থাৎ
ডানদিকে সালাম ফিরিয়ে ডান হাত ছেড়ে দেওয়া এবং বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে বাম হাত ছাড়া, তা দলিল-প্রমাণের নিরিখে বিশুদ্ধ নয়।
মুফতী
মাহমুদ গঙ্গুহী রহঃ, মুফতী আজীজুর রহমান দেওবন্দী
রহঃ, মুফতী আব্দুর রহীম লাজপুরী
রহঃ এর মতে উভয় দিকে সালাম ফিরানোর পরই হাত ছাড়াকে আমলযোগ্য এবং আকাবীরদের আমল বলে
উল্লেখ করেছেন।
তাদের
মতের পক্ষে দলীল হল-
وهو
سنة قيام له قرار فيه مسنون فيضع حالة الثناء وفى القنوت وتكبيرات الجنازة (الدر
المختار، كتاب الصلاة، فصل اذا اداء الشروع الخ-1/487-488)
যেহেতু
জানাযা নামাযে চতুর্থ তাকবীরের পর মাসনুন জিকির হল সালাম। তাই এ সময় হাত বেঁধে
রাখাই উচিত।
وفى
الهداية: فيعتمد فى حالة القنوت وصلاة الجنازة، (الهداية، كتاب الصلاة، باب صفة
الصلاة-1/102)
বাহ্যিকভাবে
এটিই বুঝা যায় যে, পূর্ণ নামায শেষে সালাম
ফিরানো হবে।
ويسلم
بلا دعاء بعد تسليمتين، (الدر المختار، كتاب الصلاة، باب الجنائز-2/212)
সুতরাং
বুঝা গেল যে, সালাম পর্যন্ত উভয় হাত বেঁধে
রাখা উচিত। এসব দলীল ছাড়াও সমস্ত আকাবীরে উলামাগণের আমলও এটি ছিল যে, তারা সালাম ফিরানো পর্যন্ত উভয় হাত বেঁধে
রাখতেন।
বিস্তারিত
জানতে হলে পড়ুন-ফাতাওয়া রহীমিয়া-জানাযা অধ্যায়, জানাযার
নামায পরিচ্ছেদ-৭/৩৮, ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, প্রশ্ন নাম্বার-২৮৭৩, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-২১৮।
ফাতওয়া
মাহমুদিয়া-৭/৫৫৭-৫৫৮}
কিন্তু
ফক্বীহুন নফছ মুফতী রশীদ আহমাদ লুধিয়ানবি রহঃ এবং আব্দুল হাই লাক্ষ্মৌবী রহঃ এর
মতে চতুর্থ তাকবীরের পর হাত ছেড়ে দেয়া উচিত। সালাম ফিরানো পর্যন্ত হাত বেঁধে রাখা
জরুরী নয়।
তাদের
দলীল
وفى
الخلاصة: ولا يعقد بعد الكتبير الرابع، لانه لا يبقى ذكر مسنون حتى يعقد فالصحيح
انه يحل اليدين ثم يسلم تسليمتين، (خلاصة الفتاوى، كتاب الصلاة، الفصل الخامس
والعشرون فى الجنائز، نوع منه اذا اجتمعت الجنائز-1/225)
ومن
ههنا يخرج الجواب عما سئلت فى سنة وثمانين أيضا من أنه هل يضع مصلى الجنازة بعد
التكبير الأخير من تكبيراته ثم يسلم أم يرسل، ثم يسلم، وهو أنه ليس بعد التكبير
الأخير ذكر مسنون، فيسن فيه الإرسال، (سعاية، كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة، بيان
ارسال يدين….. بعد التكبير الأخير من تكبيرات صلاة الجنازة-2/159)
বিস্তারিত
জানতে দেখুন-আহসানুল ফাতাওয়া-৪/২৩৯}
যাইহোক, আকাবীর মুফতীয়ানে কেরাম যেহেতু এ মাসআলায় একমত
নন। তাই আমাদের বক্তব্য হল উভয় হাত ছেড়েও দিতে পারেন চতুর্থ তাকবীরের পর বা উভয়
দিকে সালাম ফিরানোর পর হাত ছাড়তে পারেন।
তবে
একদিকে সালাম ফিরিয়ে এক হাত অপরদিকে সালাম ফিরিয়ে অপর হাত এটির স্বপক্ষে শক্তিশালী
দলীল পাওয়া যায় না। তাই এটি পরিত্যাগ করা উচিত।
সূত্র:
খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/২২৫; ফাতাওয়া শামি : ১/৪৮৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ১/৫০৩; কেফায়াতুল মুফতি : ৫/৩৫২
তথ্য
সহায়তায়, মাসিক আল কাউসার, আহলে হক মিডিয়া
والله
اعلم بالصواب
উত্তর
দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক বগুড়া
জিজ্ঞাসা-২৯০:
কবুল
না পড়ে শুধু রেজিস্ট্রি করলে বিবাহ হবে কিনা?
স্বামী
স্ত্রী এক সাথে থাকতে পারবে কি না? তারিখ-০১/১০/২২
ইংরেজি
মাওলানা
হেলাল উদ্দিন চট্টগ্রাম থেকে-----
জবাব:
نحمد هو ونصلي على رسوله
الكريم ما بعد
হামদ-সানা
ও দরুদের পর কথা হলো, এ বিষয়ে
فصيغة
الإيجاب والقبول لا يصح النكاح إلا بها في قول جمهور الفقهاء، ومنهم المذاهب
الأربعة
অর্থাৎ
ইজাব (প্রস্তাব) এবং কবুল (সম্মতি) ব্যতীত বিবাহ শুদ্ধ হবে না এটা জমহুর ফোকাহা
এবং এর মধ্য চার ইমামও রয়েছেন।
يُشتَرَطُ
اتِّحادُ مجلِسِ الإيجابِ والقَبولِ، وذلك باتِّفاقِ المَذاهِبِ الفِقهيَّةِ
الأربَعةِ: الحَنَفيَّةِ، والمالِكيَّةِ، والشَّافِعيَّةِ، والحَنابِلةِ ؛ وذلك
لأنَّ عدَمَ الرَّدِّ في المجلِسِ إعراضٌ عنه أشبَهَ ما لو رَدَّه
অর্থাৎ
সম্মানিত চার ইমামের এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো একই
মজলিসে/বৈঠকে ইজাব ও কবুল হতে হবে। যেমন,
1/الحَنَفيَّةُ لا يشترطون الفَورَ بين الإيجابِ والقَبولِ، لكِنْ مع عدم
الفَصلِ الكثير. ((الدر المختار للحصكفي وحاشية ابن عابدين)) (3/14)، ((البحر
الرائق)) لابن نجيم (3/89).
(2) المالِكيَّة يرون تراخيَ القَبولِ عن الإيجابِ إن كان يسيرًا، وبعضُهم
صَرَّح بأنَّه يلزم الفَورُ من الطرفينِ، فإن تأخَّر القَبولُ يسيرًا جاز. ((مواهب
الجليل)) للحطاب (5/47)، ((الشرح الكبير للدردير وحاشية الدسوقي)) (2/221)، ((منح
الجليل)) لعليش (3/268).
(3) الشَّافِعيَّةُ يشترطون الفورَ بين الإيجاب والقبولِ، ولا يضُرُّ الفَصلُ
اليسيرُ. ((روضة الطالبين)) للنووي (7/37)، ((أسنى المطالب)) لزكريا الأنصاري
(3/117).
(4) الحَنابِلةُ لا يشترطون الفَورَ ما لم يتفَرَّقا من المجلسِ حتى لو طال
الفَصلُ، أو لم يتشاغلَا بما يقطَعُه عُرفًا. ((شرح منتهى الإرادات)) للبهوتي
(2/633).
(5) ((مطالب أولي النهى)) للرحيباني (5/50)
لأن
الأصل في العقود هو الرضا، لقوله تعال: {إلا أن تكون تجارة عن تراض منكم} [النساء:29/
4] وقوله عليه الصلاة والسلام:
«إنما البيع عن تراض».
অর্থাৎ
ফোকাহায়ে কেরামগণ বিয়ে কে একটি চুক্তির সাথে তুলনা করেছেন, আর চুক্তিটি সন্তুষ্ট চিত্তে হতে হবে, যেমন, আল্লাহ
তাআলা বলেন,
Surah An-Nisa, Verse 29
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ
إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ
হে
ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের
পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। সূরা নিসা-২৯
রাসুল
(ﷺ)বলেন, নিশ্চয়ই
বেচাকেনা হল সন্তুষ্টির ওপর নির্ভরশীল। ইবনে মাজাহ-২১৮৫
যেমন, একজন বলল আমি মালটি বিক্রি করলাম আর একজন বলল
আমি কিনলাম, বিয়েটি তদ্রুপ একজন বলল আমি
তোমাকে বিবাহ করব অপরজন বলল আমি কবুল করলাম।
مادة
اللفظ: وعليه فلا يشترط في العقود كالبيع والإيجار والرهن والهبة ونحوها لفظ معين
أو عبارة مخصوصة، كأن يقول البائع
উপরোক্ত
আলোচনার মূল কথা হলো, যদি কোন পক্ষই দুজন পুরুষ
সাক্ষীর সামনে, অথবা একজন পুরুষ দুইজন মহিলা
সাক্ষীর সামনে মুখে ইজাব কবুল না করে থাকে, শুধু
শুধু রেজিস্ট্রি করে/ কাবিন করে থাকে, তাহলে
উপরোক্ত পদ্ধতিতে বিবাহ শুদ্ধ হয়নি।
সুতরাং
কবুল না পড়ে শুধু রেজিস্ট্রি করলে বিবাহ হবে না এবং স্বামী স্ত্রী হিসেবে যেকোনো
ধরনের সম্পর্ক ও এক জায়গায় অবস্থান করতে পারবে না। কেননা সে এখনো স্ত্রী হয়
নাই। সূত্র: দররুল মুখতার-৩ খন্ড ৯ পৃষ্টা; খুলাসাতুল
ফাতাওয়া-২/৪৮, জাদীদ ফিক্বহী
মাসায়েল-১/২৮৭-২৮৮
والله
اعلم بالصواب
উত্তর
দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক বগুড়া
জিজ্ঞাসা
-২৯১:
তালাক নোটিশ পাঠালে বিবাহ
বিচ্ছেদ ঘটে না কি? মুখোমুখি অথবা কোন লোক
মারফতে তালাক শব্দ উচ্চারণ করে নাই? তারিখ-০২/১০/২২
ঈসায়ি/ ইংরেজি
মাওলানা
আব্দুর রহমান বগুড়া থেকে ----
জবাব:
نحمده ونصلي على رسوله
الكريم اما بعد
হামদ-সানা
ও দরুদের পরে কথা হলো, আমার জানামতে তালাকের মতো
অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা বিষয় আর নেই।
পুরুষ
ব্যক্তি কারও সাক্ষাতে- অসাক্ষাতে (অর্থাৎ বিবাহের জন্য সাক্ষী প্রয়োজন, কিন্তু তালাকের জন্য সাক্ষীর প্রয়োজন হয় না)
ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, রাগে-ঠান্ডা মাথায়, ঠাট্টায় সরাসরি তালাক শব্দ কিংবা সামর্থবোধক
শব্দ লিখিত বা মুখে উচ্চারণ করলে তালাক পতিত হয়ে যাবে। দলিল:
রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন,
ثَلاثٌ
جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ : النِّكَاحُ ، وَالطَّلاقُ ، وَالرَّجْعَةُ
তিনটি
বিষয় এমন রয়েছে যা গোস্বায় হোক বা হাসি ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় কার্যকরী হয়ে
থাকে। বিবাহ্, তালাক ও রজয়াত। তাখরিজ: আবু
দাউদ -২১৯৪ তিরমিজি-১১৮৪
إن
الكتابة يقع بها الطلاق، ولو كان الكاتب قادرا على النطق، فكما أن للزوج أن يطلق
زوجته باللفظ، فله أن يكتب إليها الطلاق.
নিশ্চয়
চিঠি/নোটিশ (ম্যাসেজ) দ্বারাও তালাক পতিত হয়। যদিও লেখক বলতে সক্ষম হয়। সুতরাং যেমনিভাবে স্বামী
মুখে তালাক দিতে পারে, তেমনিভাবে লিখিতভাবেও দিতে
পারে। সূত্র: ফিকহুস সুন্নাহ
-৩/১৬৫
আপনার
প্রশ্নের আলোকে,
যদি
নোটিশের মাধ্যমে দুই/এক তালাকে বাইন দিলে বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইসলামী
শরীয়তে এমতাবস্থায় আবার সংসার করতে চাইলে নতুন করে আবার বিবাহ পড়াতে হবে।
সূত্র: ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৭২;
আদ্দুররুল
মুখতার ৩/৩০০
আর
বাংলাদেশ সরকারি আইন হিসেবে দুই তালাক দেওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে মীমাংসা না করলে
তিন তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। আমার জানামতে, নোটিশের
মাধ্যমে একসাথে তিন তালাক দেওয়া যায় না।
উত্তর
দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক বগুড়া
জিজ্ঞাসা - ২৯২
আচ্ছালামু আলাইকুম। জানার বিষয়
হলো- আবাসন সংকুলান না হওয়ায় কিছু সংখ্যক জনবলকে মসজিদে ঘুমাতে দেওয়া
হয়। প্রশ্ন হলো ফজরের সময় লোকজন মসজিদে ঘুমিয়ে ছিল, নামাজ
আদায় করা হয় বারান্দায়। এভাবে মসজিদে অবস্থানের বিধান জানতে চাই,,, মুহাক্কিক
উলামায়ে কিরামগণ, দয়া করে হেল্প করবেন।
মাওলানা জাফর তৈয়্যব রুমা, বান্দরবান থেকে----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্ন
সহজভাবে বুঝার জণ্য কয়েকভাগে ভাগ করছি—
প্রশ্ন: ক। মসজিদে ঘুমানো জায়েজ কি না?
প্রশ্ন: ক। মুসাফির কিংবা মুকিম ব্যক্তি
প্রয়োজনে/স্বাভাবিক অবস্থায়
মসজিদে ঘুমানো জায়েজ। দলিল:
হাদিস নং-০১
” أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ مُسْتَلْقِيًا فِي الْمَسْجِدِ وَاضِعًا
إِحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرَى
অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আনসারী রা. বলেন আমি
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে দেখেছি, মসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে
আছেন। তাখরিজ: বুখারি-৪৭৫
হাদিস নং-০২
عَبْدُ اللَّهِ، ” أَنَّهُ كَانَ
يَنَامُ وَهُوَ شَابٌّ أَعْزَبُ لَا أَهْلَ لَهُ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ . ولفظ ابن ابى شيبة-كنا ونحن شباب نبيت في عهد
رسول الله صلى الله عليه و سلم في المسجد ونقيل. وهكذا لفظ الترمذى.
অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. নিজের সম্পর্কে বলেন,
তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক। স্ত্রী-পুত্র কেউ ছিল না। তখন তিনি মসজিদে
নববীতেই (রাতে ও দিনে) ঘুমাতেন। তাখরিজ: বুখারি-৪৪০
জামে তিরমিযী (তিরমিযী শরীফ) ও ইবনে আবীশাইবার বর্ণনায় বক্তব্যটি তুলে ধরা
হয়েছে এভাবে, ‘আমারা একদল যুবক রাতে ও দিনে মসজিদে শয়ন করতাম’।
হাদিস/আসার নং-০৩
عَنْ عَائِشَةَ “أَنَّ وَلِيدَةً كَانَتْ سَوْدَاءَ لِحَيٍّ مِنْ …فَجَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْلَمَتْ قَالَتْ عَائِشَةُ فَكَانَ لَهَا خِبَاءٌ فِي
الْمَسْجِدِ أَوْ حِفْشٌ قَالَتْ فَكَانَتْ تَأْتِينِي فَتَحَدَّثُ عِنْدِي
قَالَتْ فَلاَ تَجْلِسُ عِنْدِي مَجْلِسًا إِلاَّ قَالَتْ: وَيَوْمَ الْوِشَاحِ مِنْ تعَاجِيبِ رَبِّنَا … أَلاَ إِنَّهُ مِنْ بَلْدَةِ الْكُفْرِ أَنْجَانِي
অর্থ; হজরত আয়শা রা.। তিনি বলেন
মহিলাটি ইসলাম গ্রহণ করলে তাঁর থাকার জন্য মসজিদে একটি তাবু খাটানো হল। তাখরিজ:
বুখারি-৪৩৯
হাদিস/আসার-০৩
أَنَّ أَبَا ذَرٍّ الْغِفَارِيَّ
كَانَ يَخْدُمُ النَّبِيَّ صلى الله عليه و سلم فَإِذَا فَرَغَ مِنْ خِدْمَتِهِ،
آوَى إِلَى الْمَسْجِدِ، فَكَانَ هُوَ بَيْتُهُ، يَضْطَجِعُ فِيهِ، فَدَخَلَ
رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم الْمَسْجِدَ لَيْلَةً، فَوَجَدَ أَبَا ذَرٍّ
نَائِمًا مُنْجَدِلًا فِي الْمَسْجِدِ، فَنَكَتَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه
و سلم بِرِجْلِهِ حَتَّى اسْتَوَى جَالِسًا، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى
الله عليه و سلم :” أَلَا أَرَاكَ نَائِمًا؟ “،…
হজরত হারেস ইবনে আব্দুর রহমান
বলেন, হজরত সুলায়মান
ইবনে ইয়াসারকে জিজ্ঞেস করলাম, মসজিদে ঘুমানোর বিধান কী?
তিনি উত্তরে বললেন, তোমরা কেন এবিষয়ে প্রশ্ন কর? আহলে ছুফফাতো মসজিদেই থাকতেন,
মসজিদেই নামাজ পড়তেন। অর্থাৎ মসজিদে ঘুমানো জায়েয। আহলে ছুফফার মসজিদে
ঘুমানোটাই এর দলীল। মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১১
ওলামা কেরামের মতামত: এ সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন,
قوله: “باب نوم الرجال في
المسجد” أي جواز ذلك، وهو قول الجمهور،
অর্থাৎ পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয। এটাই অধিকাংশের মত। ফাতহুল বারী-১খণ্ড, ৫৩৫ পৃ.
প্রশ্ন: খ। বারান্দা মসজিদের
অন্তর্ভুক্ত কিনা?
উত্তর: খ। সাধারণত বাংলাদেশের
মসজিদের বারান্দাগুলো মসজিদের অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-১৫৯ শিরোনামে
আলোচনা করা হয়েছে, দ্বিতীয়বার আলোচনা করতে চাচ্ছি না। লিংকটি এখানে
দেওয়া হচ্ছে।
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/06/blog-post_18.html
সুতরাং আপনার প্রশ্ন আলোকে আপনারা
যেহেতু মসজিদে বারান্দায় জামাত হয়েছেন তাই মসজিদের নামাজ পড়ার সওয়াব পেয়ে যাবেন।
তবে বিষয়টি দৃষ্টিকটু, আমাদের
সামাজিক প্রেক্ষাপটে অপছন্দনীয় মসজিদের ভেতরে ঘুমাবে আর আমরা বারান্দা নামাজ পড়বো, সুতরাং
এটা পরিহার করা উচিত।
পরামর্শ: আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন যে, জায়গা সংকলন হচ্ছে না। তাই
মানবিক বিষয় বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে, তারা
বারান্দায় ঘুমাবে আর আপনারা মসজিদের জামাত আদায় করবেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৯৩: আসসালামুআলাইকুম জমি লিখিত অছিয়তনামা
দিয়েছেন, অছিয়তকারী জীবিত কিন্তু অছিয়তগ্রহিতা মারা গেছেন, এই অছিয়ত
কি টিকবে??? তারিখ-০৩/১০/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক
মাওলানা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক --
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো,
موت الموصى له المعين قبل موت
الموصي: تبطل به الوصية باتفاق المذاهب الأربعة؛ لأن الوصية عطية، وقد صادفت
المعطى ميتاً، فلا تصح كالهبة للميت، ولأن الوصية لا تلزم إلا بوفاة الموصي وقبول
الموصى ل مغني المحتاج 4/ 10]
অর্থাৎ সম্মানিত চার ইমামের
এ বিষয়ে একমত যে, অসিয়তকৃত ব্যক্তি অসিয়তকারীর আগে মারা গেলে তাতেও অসিয়ত বাতিল হয়ে যাবে।
সূত্র: আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাতুল
কুয়েত-৪৩ খণ্ড;২৭৩ প. মুগনিল মুহতাজ-৪ খণ্ড; ১০ প.
দররুল মুখতার
সুতরাং আপনার প্রশ্নের আলোকে, অছিয়তকারী জীবিত কিন্তু অছিয়তগ্রহিতা
মারা গেছেন। তাই এই অসিয়তটি টিকবে না; বাতিল
হিসেবে গণ্য হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৯৪: আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আপনাদের কাছে আমার একটা জানার বিষয় হলো, কোন
টুপিতে/ক্যাপে টাইগার এর একটা ছোট প্রতিকৃতি লক্ষ করা যায়, এই green cap পড়ে নামাজ আদায় করা যাবে কি না এবং এই ক্যাপটি সাধারণ টুপির স্হলাভিষিক্ত ধরা
যাবে কিনা প্রয়োজনের মুহূর্তে (সাধারণ টুপির অনুপস্থিতিতে) ?
তারিখ-০৬/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর
রহমান বগুড়া থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার
প্রশ্ন সহজভাবে বুঝার জন্য দুভাগে ভাগ
করছি।
প্রশ্ন: ক। ছবিযুক্ত কাপড় বা টুপি দ্বারা নামাজ আদায় করা যাবে কি?
উত্তর: ক। প্রথম কথা হলো,
: لا يجوز له أن يصلي في ملابس فيها صور ذوات الأرواح من
إنسان أو طيور أو أنعام أو غيرها من ذوات الأرواح ، ولا يجوز للمسلم لبسها في غير
الصلاة ، وتصح صلاة من صلى في ثوب فيه صور مع الإثم في حق من علم الحكم الشرعي ،
ولا يجوز كتابة اسم الله على الثوب ، وكره دخول بيت الخلاء به إلا لحاجة لما في
ذلك من امتهان اسمه تعالى " انتهى
"فتاوى اللجنة الدائمة" (6/179)
: يَحرُمُ لُبسُ الثِّيابِ التي عليها تصاويرُ ذَواتِ
الأرواحِ، وهو مذهَبُ الشَّافعيَّة، والحَنابِلة، وقولٌ عند الحَنَفيَّة، واختيارُ
ابنِ تيميَّة، والشوكاني، وابنِ باز، وابنِ عُثَيمين
الأدِلَّةُ مِن السُّنَّةِ:
عن زَيدِ بنِ خالدٍ الجُهَنيِّ
رَضِيَ اللهُ عنه، قال: ((إنَّ أبا طلحةَ حَدَّثَه أنَّ النبيَّ صلَّى اللهُ عليه
وسلَّم قال: لا تدخُلُ الملائِكةُ بيتًا فيه صورةٌ ))
অর্থাৎ সম্মানিত চার ইমাম, ইবনে তাইমিয়া, ইবনে বায়, শাওকানি, উসায়মিন রহ. প্রমুখ-এর
মতে প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করা জায়েজ নেই হারাম।
কোনো ছবিযুক্ত কাপড় দিয়ে
নামাজ আদায় করা হোক বা না হোক, উভয় অবস্থায় তা মাকরুহে তাহরিমি বা হারাম। আল-বাহরুর রায়েক :
২/২৯
দ্বিতীয় কথা হলো, ছবিযুক্ত কাপড়/টুপি পরিধান করে নামাজ হবে কিনা। এ সম্পর্কে -
عَنْ أَنَسٍ: "كَانَ قِرَامٌ لِعَائِشَةَ سَتَرَتْ بِهِ جَانِبَ
بَيْتِهَا، فَقَالَ النَّبِيُّ -صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-: «أَمِيطِي عَنَّا قِرَامَكِ هَذَا، فَإِنَّهُ لاَ تَزَالُ
تَصَاوِيرُهُ تَعْرِضُ فِي صَلاَتِي» (رواه البخاري٣٧٤)
হজরত আনাস (রা,) থেকে বর্ণিত উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা সিদ্দীকা (রা.)-এর একটি চাদর ছিলো, যা
দ্বারা তিনি নিজ ঘরের পার্শ্বদেশ ঢেকে রাখতেন। রাসূল (ﷺ) তাঁকে বললেন, হে আয়েশা! এটা আমার সামনে থেকে
সরিয়ে ফেল। কেননা নামাযের মধ্যে এর ছবিগুলো আমার সামনে প্রদর্শিত হতে থাকে। তাখরিজ: বুখারী ৩৭৪
ইমাম বুখারী রহ. হাদীসটি “ছবিযুক্ত ঘরে নামায পড়া মাকরূহ”
অধ্যায়ে-২/৮৮১ উল্লেখ করেছেন।
আর আল্লামা আইনী রাহ. এর
ব্যাখ্যায় বলেন-
قال العلامة بدر الدين العيني
رحمه الله: هذاباب (باب كراهية الصلاةفي التصاوير)في بيان كراهية الصلاة في البيت الذي فيه الثياب التي فيها
التصاوير فإذا كرهت في مثل هذا فكراهتها هو لابسها أقوى وأشد. (عمدة القاري شرح صحيح البخاري: 15/130)
ঘরে ছবিযুক্ত কাপড় ঝুলন্ত
থাকার কারণেই যদি নামায মাকরূহ হয়, তাহলে ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়লে
শক্তিশালীভাবে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেই নামায মাকরূহ হবে। সূত্র: উমদাতুল কারী: ১৫/১৩০
মোটকথা, কোন প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরে
নামায পড়লে ফরয আদায় হবে। তবে মাকরূহে তাহরীমী হবে। রদ্দুল মুহতার: ২/৪১৭
তবে হ্যা ছবিযুক্ত কাপড় যদি
উল্টিয়ে ফেলার কারণে ছবিটি আবৃত হয়ে থাকে, তাহলে এ জাতীয় পোশাকে নামায পড়া মাকরূহ হবে
না। সূত্র: আল বাহরুর রায়েক: ২/৪৭
প্রশ্ন: খ। এই ক্যাপটি সাধারণ টুপির স্হলাভিষিক্ত
ধরা যাবে কিনা প্রয়োজনের মুহূর্তে (সাধারণ টুপির অনুপস্থিতিতে)?
উত্তর: খ। না, কিছুই
সেই ক্যাপটি টুপির স্হলাভিষিক্ত করা যাবে,
প্রয়োজনে খালি মাথায় নামাজ আদায় করবে। সূত্র: রদ্দুল
মুহতার: ২/৪১৭
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে বাঘের
ছবিযুক্ত ক্যাপ দ্বারা নামাজ আদায় করলে, নামাজ মাকরূহের সাথে
আদায় হবে। সুতরাং বিকল্প কিছু না পেলে
টুপি ছাড়াই নামাজ আদায় করবে। অবশ্য টুপি যেন নামাজের সময় পড়া হয় এ বিষয়ে খেয়াল
রাখতে হবে। কেননা যে নামাজে সুন্নাত যত বেশি হবে, নামাজের গুণগত
মান তত বেড়ে যাবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৯৫: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
দাড়িতে খিজাব, কলপ ,
মেহেদি
লাগানোর ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি? তারিখ-০৩/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক হাফেজ মাওলানা নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নকে
সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। পুরুষের দাড়িতে ও চুলে খেজাব (কলপ)/মেহেদি ব্যবহার করার হুকুম কি?
উত্তর: ক। ফোকাহায়ে আহনাফের মতে, পুরুষের
জন্য সাদা দাড়িতে ও চুলে খেজাব (কলপ)/মেহেদি
ব্যবহার করা মুস্তাহাব (করলে সওয়াব হবে; না করলে গুনাহ নেই)। তবে কালো রংয়ের
ব্যতিত। দলিল:
হাদিস নং-০১
أُتِيَ بِأَبِي قُحَافَةَ يَوْمَ
فَتْحِ مَكَّةَ وَرَأْسُهُ وَلِحْيَتُهُ كَالثَّغَامَةِ بَيَاضًا، فَقَالَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: غَيِّرُوا هَذَا بِشَيْءٍ، وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ، ‘মক্কা বিজয়ের দিন
আবু কুহাফাহ ((রা.))-কে নিয়ে আসা হ’ল। তার চুল-দাড়ি ছিল
ছাগামার (কাশফুলের) ন্যায় শুভ্র। সে সময় রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘একে একটা কিছু দিয়ে পরিবর্তন করে দাও,
তবে কালো রং থেকে বিরত থাকবে। তাখরিজ: মুসলিম-২১০২ (আন্তর্জাতিক
নাম্বার)
হাদিস নং-০২
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَلْبَسُ النِّعَالَ السِّبْتِيَّةَ، وَيُصَفِّرُ
لِحْيَتَهُ بِالْوَرْسِ، وَالزَّعْفَرَانِ، وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَفْعَلُ ذَلِكَ- হজরত আব্দুল্লাহ
ইবনু ওমর (রা.)বলেন ‘নবি করীম (ﷺ)সিবতি চামড়ার তৈরি জুতা পরিধান করতেন এবং
ওয়ার্স ঘাস ও জা‘ফরান দ্বারা নিজের দাড়িকে হলুদ রঙে রঞ্জিত করতেন। ইবনু ওমরও অনুরূপ করতেন’। তাখরিজ: নাসায়ি-৫২৪৪; আবু দাউদ-৪২১০
হাদিস/আসার-০৩
ইবনু সীরীন (রহঃ) আরো বলেন, আনাস ((রা.))-কে প্রশ্ন করা হ’ল,هَلْ خَضَبَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّهُ لَمْ
يَكُنْ رَأَى مِنَ الشَّيْبِ إِلاَّ قَالَ ابْنُ إِدْرِيْسَ كَأَنَّهُ يُقَلِّلُهُ
وَقَدْ خَضَبَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ- ‘রাসূল (ﷺ) কি খেযাব লাগাতেন? তিনি বললেন, তিনি তো তেমন বার্ধক্য দেখেননি। তবে ইবনু ইদরীস (রহ.)
বলেন, তিনি [আনাস ((রা.))] যেন কম বুঝাচ্ছিলেন। অবশ্য আবুবকর
ও ওমর (রা.)মেহেদী এবং কাতাম ঘাস দ্বারা খেযাব লাগিয়েছেন। তাখরিজ: মুসলিম-২৩৪১
কালো ছাড়া মেহেদি রঙ বা অন্য খেজাব ব্যবহারের উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং কালো
খেজাব ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রশ্ন: খ। কালো রংয়ের খেজাব(কলপ) ব্যবহার করার বিধান বা জায়েজ ছুরত আছে কি?
উত্তর: সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! দাড়িতে কলব/খেজাব সংক্রান্ত আল বুরহানে জিজ্ঞাসা- ১২৪ শিরোনামে আলোচনা হয়েছে। মাসয়ালাটি লিংক শেয়ার করা হলো।
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/06/blog-post_89.html
প্রশ্ন: গ। মেয়েদের মেহেদি ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তর:গ। নারীদের জন্য হাতে ও পায়ে মেহেদি ব্যবহার করা
মুস্তাহাব। সুতরাং নারীরা পায়ে মেহেদি ব্যবহার করতে পারবে না , এটা কুসংস্কার মাত্র। দলিল:
أن امرأة أتت عائشة رضي الله
عنها فسألتها عن خضاب الحناء فقالت لا بأس به ولكني أكرهه كان حبيبي [ رسول الله ] صلى الله عليه و سلم يكره ريحه
এক মহিলা হজরত আয়শা রা. এর
কাছে মেহেদি লাগানো বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাবে বলেন, এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু
রাসূল (ﷺ) মেহেদির ঘ্রাণ অপছন্দ করতেন। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-৪১৬৪
প্রশ্ন: ঘ। পুরুষের হাতে-পায়ে মেহেদি ব্যবহারের হুকুম কি?
উত্তর: ঘ। এ বিষয়ে বিধান হলো,
وهو حرام على الرجال الا لحاجة
التداوى ونحوه (شرح المهذب-1/294
পুরুষের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদি লাগানো নিষেধ। তবে
চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার জায়েজ আছে। সূত্র: শারহুল মাজহাব-১ খণ্ড;২৯৪ পৃ.
সারকথা কথা হলো, কালো খেজাব (কলপ) ব্যতিত যেকোন কালার পুরুষ ব্যবহার করতে পারবে,
তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কালো
খেজাব ব্যবহার ফুকাহায়ে কিরামগণ জায়েজ বলেছেন। নারীরা পায়ে ও হাতে মেহেদি ব্যবহার
করতে পারবে। আর পুরুষরা দাড়িতে ও চুলে
মেহেদি ব্যবহার করতে পারেবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৯৬: যদি কোন সরকারি চাকুরিজীবি
ব্যক্তি টিফিন ভাতা না পেয়ে থাকেন (প্রাধিকার না থাকে); তাহলে যারা নিচ্ছেন তাদের এই কাজটি শরীয়তের দৃষ্টিতে কি হবে? বিস্তারিত
জানতে চাই। তারিখ-০৮/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা হারুনুর রশিদ
রামু, কক্সবাজার
থেকে----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সরকারি
কর্মচারিগণ বিভিন্ন খাতে বেতন নির্ধারণ হয়, যেমন মূল বেসিক,
বাড়ি ভাড়া, শিক্ষা সহায়ক ভাতা, যাতয়াত ভাতা ইত্যাদি। তবে সবাই সব খাতের অংশ পান না। সুতরাং আপনার
প্রশ্নের আলোকে উক্ত ব্যক্তি যদি টিফিন ভাতা না পেয়ে থাকে, তাহলে
বেতনের সাথে এ অতিরিক্ত টাকাটা নেওয়া জায়েজ হবে না। কেননা কে কোন খাতের টাকা পাবে
তা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত। দলিল:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ لَا تَأْكُلُوٓاْ أَمْوَٰلَكُم بَيْنَكُم بِٱلْبَٰطِلِ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। সূরা নিসা-২৯
لَا تَأْكُلُو আয়াতে বলা
হয়েছে। যার অর্থ ‘খেয়ো না’। পরিভাষার বিচারে ‘খেয়ো না’ বলতে যে কোনভাবে ভোগদখল বা হস্তক্ষেপ করো না বোঝানো হয়েছে। সেটা খেয়ে, পরিধান করে কিংবা অন্য অন্য যে কোন পন্থায়
ব্যবহার করেই হোক না কেন! কেননা, সাধরণ পরিভাষায় সম্পদ যে কোন হস্তক্ষেপকেই খেয়ে ফেলা বলা
হয়।
উক্ত আয়াতে بِٱلْبَٰطِلِ ‘বাতিল’ শব্দটির তরজমা করা হয়েছে ‘অন্যায় পন্থায়’, । এর ব্যাখ্যা করতে
গিয়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এবং অন্যান্য সাহাবিগণ বলেন, শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ এবং
না জায়েজ সবগুলো পন্থাকেই বাতিল বলা হয়। যেমন চুরি, ডাকাতি,
আত্মসাৎ, বিশ্বাসঘাতকতা, ঘুষ, সুদ, জুয়া ইত্যাদি। সব
প্রকার অন্যায় পন্থা এ বাতিল শব্দের অন্তর্ভুক্ত। সুত্র: বাহরে
মুহিত; তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-২৪৩ পৃ.
সংক্ষিপ্ত মাওলানা মহিউদ্দিন খান রহ. অনূদিত
দ্বিতীয় কথা হলো, যেহেতু অতিরিক্ত টিফিন ভাতাটা
তার নেওয়া হারাম। তাই যে পরিমান নিয়েছে, সেই পরিমান টাকা
সরকারকে ফেরত দিতে হবে। দলিল:
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ
تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا
নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে
নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। সূরা নিসা-৫৮
ব্যাখ্যা: কারও নিকট অপর কারও কোন বস্তু
বা সম্পদ গচ্ছিত রাখাটাই শুধুমাত্র আমানত নয়, যাকে সাধারণত
আমানাত বলে সব কিছুই আমানতের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলা আদেশ দিচ্ছেন
যে, “তোমরা আমানতসমূহ তার অধিকারীর নিকট অর্পণ করে
দাও”। এ হুকুমের লক্ষ্য সাধারণ মুসলমানও হতে পারে কিংবা বিশেষ
ক্ষমতাসীন শাসকবর্গ হতে পারে। সূত্র: তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-২৫৮পৃ. সংক্ষিপ্ত, মাওলানা
মহিউদ্দিন খান রহ. অনূদিত
সারকথা কথা হলো, উক্ত
সরকারি কর্মচারি/কর্মকর্তা ব্যক্তি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেভাবেই
অতিরিক্ত টিফিন ভাতা নিয়েছে, তা সরকারের কাছে জমা দিতে
হবে। টিয়ারের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়া যায়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
হলো, যারা বেতন-ভাতা বাবদ অতিরিক্ত টাকা
গ্রহণ করে, অবসর যাওয়ার সময়, অর্থ
বিভাগ সুদে-আসলে কেটে নিবে। যা আমি বড়দের কাছে শুনেছি। তাই এ বিষয়েও আমাদের খেয়ার রাখতে হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৯৭: আসসালামু আলাইকুম। ঈদে মিলাদুন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা দিয়েন? তারিখ-০৮/১০/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা নুরুল হক সাউদ
সুদান থেকে -----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
সম্মানিত উপস্থিতি! আমরা সবাই অবগত আছি যে,
আজ ১২ রবিউল আউয়াল। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩০টি (প্রায়)
মুসলিম রাষ্ট্র ১২ রবিউল আউয়ালকে সরকারি বন্ধ ঘোষণা করেছেন। গত ১৫ ফেব্রয়ারি ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার ১২
রবিউল আউয়ালকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। (সরকারি-বেসরকারি
ভবন-অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে)।
ভূমিকা: হজরত মুহাম্মাদ (ﷺ) –এর আগমন হলো বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ। যেমন, ইরশাদ হচ্ছে-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا
رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ.
অর্থ: আমি
তোমাকে বিশ্ব জগতের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি। সূরা আম্বিয়া- ১০৭
ব্যাখ্যা:
أن الله أرسل نبيه محمدا صلى
الله عليه وسلم رحمة لجميع العالم، مؤمنهم وكافرهم. فأما مؤمنهم فإن الله هداه به،
وأدخله بالإيمان به، وبالعمل بما جاء من عند الله الجنة. وأما كافرهم فإنه دفع به
عنه عاجل البلاء الذي كان ينزل بالأمم المكذّبة رسلها من قبله.
অর্থাৎ নবি কারীম (ﷺ) জগতের সকলের প্রতি আল্লাহ পাকের রহমত। মুমিন-কাফির
নির্বিশেষে সকল মাখলুকই কিয়ামত পর্যন্ত এই মহান রহমতের মাধ্যমে উপকৃত হতে থাকবে। মুমিনকে
তো আল্লাহ তাআলা তাঁর মাধ্যমে হিদায়াত দান করেছেন। তাঁর উপর ঈমান আনা এবং তিনি আল্লাহ
তাআলার পক্ষ থেকে যে পয়গাম নিয়ে এসেছেন সে অনুযায়ী আমল করার কারণে তাকে জান্নাত দেবেন।
আর এই উম্মতের অবিশ্বাসীকে তাঁর কারণে পূর্ববর্তী উম্মতের অবিশ্বাসীর মতো নগদ শাস্তি
দেবেন না। সূত্র: তাফসীরে
ত্ববারী-১৮ খণ্ড, ৫৫২পৃ.
সংক্ষিপ্ত উল্লেখ যোগ্য
ঘটনাবলী:
(ক) জন্ম:
২৯ আগস্ট, ৫৭০ খৃ. মোতাবেক
৮/৯/১২ রবিউল আউয়াল। এ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মতভেদ রয়েছে। তবে আমাদের
সমাজে ১২ তারিখই প্রসিদ্ধ।
(খ) ৫৬৯
সালে পিতা আবদুল্লাহ'র মৃত্যু।
(গ) ৫৭৬ সালে মাতা আমিনার মৃত্যু।
(ঘ) ১২ বছরে চাচা খাজা আবু তালেবের সঙ্গে সিরিয়া গমন এবং পাদ্রি বুহাইরার সাথে সাক্ষাত।
(ঙ) ১৮/২৫ বয়সে তিনি ‘হিলফুল ফুজুল’ গঠন করেন।
(চ) ৫৯৫ খৃ. খাদিজার (রা.) সাথে বিয়ে ।
(ছ) ৬০৫ খৃ. ৩৫ বছর
বয়সে কাবা নির্মাণ করেন।
(জ) ৬১০ খৃ. ওহি
নাজিল শুরু হয় অর্থৎ নবুয়ত লাভ করেন।
(ঝ) ৬২২ খৃ. হিজরত
করেন।
(ঞ) ১৫ মার্চ ৬২৪ খৃ. বা ২ হিজরি ১৭ রমজান বদর যুদ্ধ।
(ত) ২৩ মার্চ ৬২৫ খৃ, বা ২ হিজরি উহুদ যুদ্ধ।
(থ)
৬২৭ খৃ. মোতাবেক ৩ হিজরি খন্দক যুদ্ধ।
(দ) হুদাইবিয়ার সন্ধি ৬২৮ খৃ. ,৬ হিজরি।
(ধ) খায়বার বিজয়-৬২৮
খৃ., ৬হি.
(ণ) মুতার যুদ্ধ-৬২৯
খৃ.,৭ হি.
(ট) মক্কা বিজয়-৬৩০
খৃ. ১১ ডিসেম্বর ৮ হিজরি
(ঠ) হুসাইন-৬৩০ খৃ.
(ন) মৃত্যু- ৮ জুন
৬২৩ খৃ. মোকাবেক ১২ রবিউল আউয়াল ১১ হিজরি।
(প) চারবার বক্ষ বিদারণ: (১) চার বছর বয়সে (২) দশ বছর বয়সে (৩) চল্লিশ বছর
বয়সে ও (৪) ৫৩ বছর বয়সে মিরাজ রজনিতে।
উম্মতের জন্য তার দয়ামায়া:
হাদিস নং-০১
أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: تَلَا قَوْلَ اللهِ
عَزّ وَجَلّ فِي إِبْرَاهِيمَ: رَبِّ اِنَّهُنَّ اَضْلَلْنَ كَثِیْرًا مِّنَ
النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِیْ فَاِنَّهٗ مِنِّیْ، وَقَالَ عِيسَى عَلَيْهِ
السّلَامُ: اِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَاِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَ اِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ
فَاِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ، فَرَفَعَ يَدَيْهِ وَقَالَ: اللهُمّ
أُمّتِي أُمّتِي، وَبَكَى، فَقَالَ اللهُ عَزّ وَجَلّ: يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ إِلَى
مُحَمّدٍ، وَرَبّكَ أَعْلَمُ، فَسَلْهُ مَا يُبْكِيكَ؟ فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ
عَلَيْهِ الصّلَاةُ وَالسّلَامُ، فَسَأَلَهُ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللهِ صَلّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِمَا قَالَ، وَهُوَ أَعْلَمُ، فَقَالَ اللهُ: يَا
جِبْرِيلُ، اذْهَبْ إِلَى مُحَمّدٍ، فَقُلْ: إِنّا سَنُرْضِيكَ فِي أُمّتِكَ،
وَلَا نَسُوءُكَ.
অর্থাৎ, আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস
রা. বলেছেন নবি কারীম (ﷺ) এই আয়াত পাঠ করলেন, যাতে
ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কথা উল্লেখ আছে : “হে আমার
রব! এসব প্রতীমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার
দলভুক্ত হবে।” (আর সেই
আয়াতও পড়লেন যেখানে আছে) (তরজমা) “(এবং ঈসা আলাইহিস সালাম বললেন,) যদি
আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে
নিশ্চয়ই আপনার ক্ষমতাও পরিপূর্ণ এবং হিকমতও পরিপূর্ণ।”
অতপর
নবিজী (ﷺ) দু’হাত তুলে কেঁদে কেঁদে বললেন,
اللهُمّ أُمّتِي أُمّتِي.
‘হে আল্লাহ, আমার
উম্মত! আমার উম্মত!!’ তখন
আল্লাহ তাআলা বললেন, হে জিবরাঈল! মুহাম্মাদকে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর সে কেন
কাঁদে? যদিও তোমার রবই ভালো জানেন। অতপর জিবরাঈল আলাইহিস সালাম নবিজীর
কাছে এসে তা জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)সব খুলে বললেন। যদিও আল্লাহ তাআলা সব জানেন। অতপর আল্লাহ তাআলা বললেন, হে জিবরাঈল!
মুহাম্মাদকে গিয়ে বলো, আমি অচিরেই তোমার উম্মতের ব্যাপারে তোমাকে সন্তুষ্ট
করব, ব্যথিত করব না। তাখরিজ: মুসলিম-২০২
হাদিস নং-০২
لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ يَدْعُو بِهَا فَيُسْتَجَابُ
لَهُ، فَيُؤْتَاهَا، وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ
الْقِيَامَةِ.
অর্থাৎ, নবি কারীম (ﷺ)বলেছেন, প্রত্যেক নবিকে এমন একটি বিশেষ দুআর অধিকার দেয়া হয়েছে, যা কবুল
করা হবে। তারা (দুনিয়াতে) সে দুআ করেছেন এবং তা কবুলও করা হয়েছে। আর আমি আমার দুআ কিয়ামতের
দিন আমার উম্মতের শাফাআতের উদ্দেশ্যে মূলতবী রেখেছি। তাখরিজ: মুসলিম-১৯৯
হাদিস নং-০৩
مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَوْقَدَ نَارًا، فَجَعَلَ
الْجَنَادِبُ وَالْفَرَاشُ يَقَعْنَ فِيهَا، وَهُوَ يَذُبُّهُنَّ عَنْهَا، وَأَنَا
آخِذٌ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ، وَأَنْتُمْ تَفَلَّتُونَ مِنْ يَدِي.
অর্থাৎ, আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত সে
ব্যক্তির দৃষ্টান্তের মত, যে আগুন জ্বালালো, ফলে
ফড়িংদল পতঙ্গরাজি তাতে পড়তে লাগল। আর সে ব্যক্তি তাদের তা থেকে তাড়াতে লাগল। অনুরূপ
আমিও আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমর ধরে টানছি, আর তোমরা
আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ। তাখরিজ: মুসলিম-২২৮৫
প্রাণের চেয়েও প্রিয় রাসূল (ﷺ): এ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেন,
اَلنَّبِیُّ اَوۡلٰی بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ مِنۡ اَنۡفُسِهِمۡ অর্থ:
নবি মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। সূরা আহজাব-০৬
হজরত আনাস রা. বলেছেন
قَالَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لاَ يُؤْمِنُ
أَحَدُكُمْ، حَتّى أَكُونَ أَحَبّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنّاسِ
أَجْمَعِينَ.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ
না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ
থেকে প্রিয় হব। তাখরিজ: বুখারী-১৫
নবির প্রতি সাহাবিদের অকৃম-অদম্য ভালবাসা:
আসার-০১
হজরত আবু সুফিয়ান রা. ইসলাম গ্রহণের
আগেই এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন,
ما رأيت من الناس أحدا يحب أحدا
كحب أصحاب محمد صلى الله عليه وسلم محمدا
অর্থাৎ, আমি
কাউকে এতটা ভালবাসতে দেখিনি, মুহাম্মদ (ﷺ)-কে তাঁর সঙ্গীরা যতটা ভালবাসে। সূত্র: সীরাতে
ইবনে হিশাম ২/১৭২; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/৬৫
আসার-০২
এমনিভাবে হজরত উরওয়া ইবনে মাসঊদ
রা. ইসলাম গ্রহণের আগে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় মুশরিকদের পক্ষ হয়ে কথা বলতে এসেছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর
সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর তিনি নিজ কওমের নিকট এই অনুভূতি পেশ করেছিলেন,
وَاللهِ لَقَدْ وَفَدْتُ عَلَى
المُلُوكِ، وَوَفَدْتُ عَلَى قَيْصَرَ، وَكِسْرَى، وَالنّجَاشِيِّ، وَاللهِ إِنْ
رَأَيْتُ مَلِكًا قَطّ يُعَظِّمُهُ أَصْحَابُهُ مَا يُعَظِّمُ أَصْحَابُ مُحَمّدٍ
مُحَمّدًا، وَاللهِ إِنْ تَنَخّمَ نُخَامَةً إِلّا وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ
مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمْ ابْتَدَرُوا
أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ.
অর্থাৎ, আমি অনেক রাজা বাদশাহদের কাছে প্রতিনিধি
হয়ে গিয়েছি। কায়সার কিসরা ও নাজাশীর কাছেও গিয়েছি। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে তার সঙ্গীরা যেভাবে ভক্তি করে সেভাবে আমি
আর কাউকে দেখিনি তাদের বাদশাহকে ভক্তি করতে। আল্লাহর কসম! তিনি থুথু ফেললেই তাদের কেউ
না কেউ তা হাতে নিয়ে নেয় এবং তা চেহারায় ও শরীরে মাখে। তিনি যখন তাদেরকে আদেশ করেন
তখন তারা তাঁর আদেশ পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর যখন তিনি অযু করেন তখন তাঁর ওযুতে ব্যবহৃত
পানি পাওয়ার জন্য লড়াই করার উপক্রম হয়। তাখরিজ: বুখারি-২৫৮১
আসার-০৩
হজরত আবু বকর সিদ্দীক রা. মৃত্যুশয্যায়
আয়েশা সিদ্দীকা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
فِي أَيِّ يَوْمٍ تُوُفِّيَ
رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ؟ قَالَتْ: يَوْمَ الِاثْنَيْنِ،
قَالَ: فَأَيّ يَوْمٍ هَذَا؟ قَالَتْ: يَوْمُ الِاثْنَيْنِ، قَالَ: أَرْجُو فِيمَا
بَيْنِي وَبَيْنَ اللّيْلِ.
নবিজি (ﷺ)কোন্ দিন ইন্তেকাল করেছেন? আয়েশা রা. জানালেন, সোমবার। তিনি বললেন, আজ কী বার? জবাব দিলেন, সোমবার। তখন তিনি বললেন, হায় যদি আমার মওত রাতের আগেই হতো! তাখরিজ: বুখারি- ১৩৮৭
আসার-০৪
হজরত জাবের রা. বলেন, উহুদ যুদ্ধের সময় এই উহুদ যুদ্ধেরই
ভয়াবহ মুহূর্তে আরেক সাহাবী হজরত আবু তালহা রা. নিজে ঢাল হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর আক্রমণ প্রতিহত করছিলেন। একপর্যায়ে যখন
নবিজী উঁকি দিয়ে দেখতে উদ্যত হলেন তখন আবু তালহা রা. বলে উঠলেন,
يَا نَبِيّ اللهِ، بِأَبِي
أَنْتَ وَأُمِّي، لاَ تُشْرِفْ يُصِيبُكَ سَهْمٌ مِنْ سِهَامِ القَوْمِ، نَحْرِي
دُونَ نَحْرِكَ.
ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমার মা-বাবা আপনার জন্য কুরবান
হোক! আপনি উঁকি দেবেন না; পাছে আপনার গায়ে কোনো তীর এসে লাগে।
আমার বুক আপনার জন্য উৎসর্গিত। তাখরিজ: বুখারি-৩৮১১
রাসূল র-এর সৌন্দর্য: عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ
قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي لَيْلَةٍ إِضْحِيَانٍ فَجَعَلْتُ أَنْظُرُ إِلَى
رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِلَى الْقَمَرِ وَعَلَيْهِ
حُلَّةٌ حَمْرَاءُ فَإِذَا هُوَ أَحْسَنُ عِنْدِي مِنَ الْقَمَرِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ والدارمي
জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রা.)হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি চাঁদনি রাতে নবি (ﷺ) -কে দেখলাম। অতঃপর একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দিকে তাকাতাম আর একবার চাঁদের দিকে। সে
সময় তিনি (ﷺ) লাল বর্ণের
পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। তখন তাকে আমার কাছে চাঁদের তুলনায় অধিকতর সুন্দর
মনে হলো। তাখরিজ: তিরমিজি-২৮১১; দারিমি-৫৭
রাসূল (ﷺ)-এর চুল মুবারক:
لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ
صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَالْحَلّاقُ يَحْلِقُهُ، وَأَطَافَ بِهِ
أَصْحَابُهُ، فَمَا يُرِيدُونَ أَنْ تَقَعَ شَعْرَةٌ إِلّا فِي يَدِ رَجُلٍ.
অর্থ: হজরত আনাস রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)-কে দেখেছি, তাঁর চুল মুবারক মুন্ডানো করা হচ্ছে আর তাঁর সাহাবীরা তাঁকে ঘিরে আছে। তাঁরা
চাইছিলেন তাঁর একটি চুলও যেন মাটিতে না পড়ে। বরং কারো না কারো হাতেই পড়ে। তাখরিজ:
মুসলিম-২৩২৫
রাসূল (ﷺ)-এর শরীরের সুগন্ধি : وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ أَزْهَرَ اللَّوْنِ كَانَ عَرَقُهُ اللُّؤْلُؤُ إِذَا مَشَى تَكَفَّأَ
وَمَا مَسَسْتُ دِيبَاجَةً وَلَا حَرِيرًا أَلْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا شمَمتُ مسكاً وَلَا عَنْبَرَةً أَطْيَبَ
مِنْ رَائِحَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) গৌরবর্ণের
ছিলেন। তাঁর ঘর্ম ছিল মুক্তার মতো। হাঁটার সময় তিনি (ﷺ) সম্মুখের দিকে কিছুটা ঝুঁকে চলতেন এবং আমি
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর
হাতের তালুর তুলনায় অধিকতর নরম কোন রেশম কিংবা কোন গরদ স্পর্শ করিনি। আর নবি (ﷺ) -এর শরীরের সুগন্ধ অপেক্ষা অধিকতর সুগন্ধ
কস্তুরী কিংবা মিশকে আম্বার আমি কখনো শুকিনি। তাখরিজ: বুখারী-৫৭৮৭; মুসলিম
وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَسْلُكْ طَرِيقًا فَيَتْبَعُهُ أَحَدٌ
إِلَّا عرفَ أَنه قد سلكه من طيب عرقه - أَوْ قَالَ:
مِنْ رِيحِ عَرَقِهِ - رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ
জাবির (রা.)হতে বর্ণিত। নবি (ﷺ) যে পথ দিয়ে চলে যেতেন, পরে কেউ সে পথে গেলে সে সহজে
বুঝতে পারত যে, নবি (ﷺ) উক্ত পথে গমন করেছেন। আর তা তাঁর গায়ের
সুগন্ধির কারণে অথবা (রাবী বলেছেন) তাঁর ঘামের সুগন্ধির কারণে। তাখরিজ: মুসলিম-২৩৩০
তিরমিজি-৩৬৩৭
রাসূল (ﷺ) এর ঘাম মুবারক:
عَنْ أُمِّ سُلَيْمٍ أَنَّ
النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْتِيهَا فَيَقِيلُ
عِنْدَهَا فَتَبْسُطُ نِطْعًا فَيَقِيلُ عَلَيْهِ وَكَانَ كَثِيرَ الْعَرَقِ
فَكَانَتْ تَجْمَعُ عَرَقَهُ فَتَجْعَلُهُ فِي الطِّيبِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا؟» قَالَتْ: عَرَقُكَ نَجْعَلُهُ فِي طِيبِنَا وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيبِ
وَفِي رِوَايَةٍ قَالَتْ:
يَا رَسُولَ اللَّهِ نَرْجُو
بَرَكَتَهُ لِصِبْيَانِنَا قَالَ: «أصبت»
. مُتَّفق عَلَيْهِ
হজরত উম্মে সুলাইমান (রা.) বলেন, হুযুরে
আকরাম (ﷺ) দ্বিপ্রহরে আমাদের
ঘরে তশরীফ এনে বিশ্রাম নিতেন । বিশ্রামকালে
তাঁর দেহ মোবারক থেকে ঘাম মুবারক নির্গত হয়ে বিছানা ভিজে যেত।আর আমি সে ঘাম মুবারক
একত্রিত করতাম, একদা নবিজী আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন-
হে উম্মে সুলাইমান তুমি কি করছো
? আমি বললাম-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আঁপনার পবিত্র ঘাম মুবারক হতে আমাদের
চেহারা বরকত হাসিল করবে।আমাদের কাছে যত সুগন্ধি রয়েছে তন্মধ্যে অধিক সুগন্ধি হচ্ছে
আঁপনার ঘাম মুবারক।একথা শুনে নবিজী জবাব দিলেন,হে উম্মে সুলাইমান তুমি সত্যিই
বলেছ। তাখরিজ: মুসলিম-৫৮৪৯
অমুসলিম মনীষীর
দৃষ্টিতে মুহাম্মাদ(ﷺ)
-এর সম্মান-মর্যাদা : পৃথিবীর অসংখ্য খ্যাতনামা
অমুসলিম বিজ্ঞানী-মনীষীগণ মহানবি (ﷺ)
সম্পর্কে প্রশংসার বাণী উচ্চারণ করেছেন। তারমধ্যে কয়েকজনের বাণী উল্লেখ করলাম:
(১) Annie Besant
in ‘The Life and Teachings of Mohammad,’ Madras, 1932. ‘যে কেউ আরবের মহান নবির জীবন
এবং চরিত্র অধ্যয়ন করেন তার হৃদয়ে মহান নবির প্রতি শ্রদ্ধার উদ্রেক না হয়ে পারে না,-------
তথাপি যখনই আমি মুহাম্মদের জীবনি পুনরায় পাঠ করি প্রতিবারই আরবের
মহান শিক্ষকের প্রতি আমার মনে মুগ্ধতা ও শ্রদ্ধার নতুন ভাব জাগ্রত হয়।’
(২) ইংরেজ
কবি জন কিটস বলেন, ‘পৃথিবীর যা কিছু মঙ্গলময়, যা কিছু মহৎ ও সুন্দর সবই নবি মুহাম্মাদ (ﷺ).। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।’
বিশ্বনবিকে নিয়ে অমুসলিমের
লেখা বইসমূহ :
এই পৃথিবীতে বিশ্বমানবতার কাণ্ডারি আখেরি নবি হজরত মুহাম্মাদ (ﷺ) কে
নিয়ে, তাঁর সম্পর্কে
বই রচিত হয়েছে, সমকক্ষ আর কেউ নেই। শুধু মুসলিম লেখকগণই নয় বহু অমুসলিম লেখক-গবেষক, কবি-সাহিত্যিক, রাজনৈতিক-বিজ্ঞানীগণ
তাঁর সুমহান আদর্শ, মহত্ব, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য,
সম্মান-ইজ্জত বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। নিম্নে কয়েকটি নাম উল্লেখ করা হল :
১.দ্য হান্ড্রেড : লেখক, মাইকেল এইচ হার্ট;১৯৭৮ সালে
প্রকাশিত,১৯৯২ সালে পূণর্মূদ্রিত।
২.তোমাকে ভালবাসি হে নবি : লেখক,
গুরুদত্ত সিং, অনুবাদ মাও.আবু তাহের মিসবাহ
৩.দ্য ফাস্ট মুসলিম : দ্য স্টোরি
অব মুহাম্মাদ, লেখক; দ্য লেসলি হাজলেটন;
প্রকাশ ২০১৩
৪.ইন সার্চ অব
মুহাম্মাদ(মুহাম্মাদের খোঁজে): লেখক,ক্লিন্টন বেনেট
বিস্তারিত দেখুন, মহান আল্লাহর নিকট একজন মুমিন-মুসলমানের মর্যাদা-মূল্য-১০৫ পৃষ্ঠা; লেখক মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস লিলআদব) ধর্ম শিক্ষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
শেষ কথা: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে, সে অবশ্যই আমাকে ভালোবাসে; আর যে আমাকে ভালোবাসে সে
জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে। তাখরিজ:
তিরমিজি-২৭২৬
আমরা প্রিয় রাসূল (ﷺ) কে মনের ভালবাসার সাথে আমলের ভালবাসাও
প্রকাশ করবো। রুওয়াইম ইবনে আহমাদ আল বাগদাদী
রাহ. মহব্বতকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন,
المحبة الموافقة في جميع الأحوال (كلمة الإخلاص للحافظ ابن رجب ص৩২)
অর্থাৎ, ভালোবাসা হল প্রেমাষ্পদের সাথে
সর্বাবস্থায় একাত্ম থাকা। সূত্র: কালেমাতুল ইখলাস ৩২ পৃ.হাফেজ ইবনে রজব রহ.
হাকীম মাহমূদ ওয়াররাক রাহ. বলেছেন
لو كان حبك صادقا لأطعته
إن المحب لمن يحب مطيع
অর্থাৎ, যদি তোমার প্রেম খাঁটি হতো তবে
তো তুমি তার অনুগত হতে। কারণ প্রেমিক তো প্রেমাষ্পদের অনুগত থাকে। সূত্র: শরহুয যুরকানী আলাল
মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যাহ, পৃ. ১১৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৯৮: আসসালামু আলাইকূম
মুহতারাম প্রশ্ন হলো জাকাত
অগ্রিম দিতে চাইলে কত আগে দেয়া যায়? তারিখ-০৯/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমান
বরিশাল থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আমরা
জানি, নেসাব পরিমাণ সম্পদ যদি কারও মালিকানায় এক বছর থাকে, তখন
ওই মালের উপর যাকাত ফরজ হয়।
দ্বিতীয় কথা হলো, এখন
কেউ যদি বছর পূর্তি হওয়ার আগেই দিতে চান,
এ বিষয়ে
ফোকাহায়ে কেরামের মতামত হলো,
إنه يجوز إخراج زكاة المال قبل
موعدها، عند جمهور العلماء كأبي حنيفة والشافعي وأحمد، منبهًا على أنه لا يجوز
تأخيرها عن موعدها لأنها دين في رقبة صاحبها.
অর্থাৎ ইমাম আবু হানিফা, শাফেয়ি এবং আহমদের মত অধিকাংশ আলেমদের মতে, নির্ধারিত
তারিখের আগে অর্থের উপর যাকাত প্রদান করা জায়েজ। , সতর্ক
করে যে এটি তার মালিকের ঘাড়ে ঋণ কারণ এটি তার তারিখ থেকে বিলম্ব করা জায়েয নয়। দলিল:
أَنّ العَبّاسَ سَأَلَ رَسُولَ
اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي تَعْجِيلِ صَدَقَتِهِ قَبْلَ أَنْ
تَحِلّ، فَرَخّصَ لَهُ فِي ذَلِكَ.
হজরত আলী রা. থেকে বর্ণিত আছে-‘হজরত আব্বাস রা. নবি কারীম (ﷺ)-কে বর্ষ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে অগ্রিম যাকাত আদায়
করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে এ বিষয়ের অনুমতি প্রদান করেন।’
তাখরিজ:
জামে তিরমিজি-৬৭৮
তৃতীয় কথা হলো, واختلفوا في عدد السنوات التي
يجوز تقديم إخراج الزكاة عنها، والاقتصار على سنتين هو الأوفق بانضباط الموارد
المالية السنوية للفقراء، ولكن لا مانع من الأخذ بقول القائلين بجواز تعجيل الزكاة
لسنتين فأكثر عند وجود الحاجة العامة أو الخاصة إلى ذلك.
অর্থাৎ কত আগে যাকাত দেওয়া যেতে
পারে তা নিয়ে মতভেদ আছে এবং এটিকে দুই বছরের
মধ্যে সীমাবদ্ধ করা দরিদ্রদের বার্ষিক আর্থিক সংস্থানগুলিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য
সবচেয়ে উপযুক্ত, তবে যারা বলে তাদের কথা গ্রহণ করতে কোন আপত্তি নেই।
সরকারি বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে দুই বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য জাকাত অগ্রিম
প্রদান করা জায়েয।
প্রাধান্য মত: قد ذهب الأحناف إلى قياس زكاة الفطر على زكاة المال
فقالوا بجواز تعجيلها .
قال السرخسي في
"المبسوط" (3/110): "والصحيح من المذهب عندنا أن
تعجيله (زكاة الفطر) جائز لسنة
ولسنتين.." انتهى .
অর্থাৎ আল্লামা সারাখসি এ বলেছেন:
আমাদের মাসলাকের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হল এক বা দুই বছরের জন্য অগ্রিম যাকাত ও ফেতরা প্রদান
করা জায়েজ। আল-মাবসাউত-৩-১১০
সারকথা কথা হলো, এক
বা দুই বছরের যাকাত অগ্রিম দেয়া যাবে। এটাই গ্রহণ যোগ্য মত। তবে সতর্কতা হলো, অগ্রিম যা দেওয়া হলো তা লেখে
রাখতে হবে এবং যেদিন যাকাতের মালের বছর পূর্ণ হবে, সেদিন
হিসেব করে দেখতে হবে যে অগ্রিম আদায়কৃত যাকাত কম না বেশি। যদি কম হয় বাকিটুকু দিতে
হবে আর বেশি হলে
পরবর্তী বছরের সাথে যাকাতের টাকা হিসেবে যুক্ত হবে। দলিল-
ولو مر بأصحاب الصدقات، فأخذوا
منه كثيراً مما عليه ظناً منهم أن ذلك عليه لما أن ماله أكثر يحتسب الزيادة للسنة
الثانية؛ (المحيط البرهانى، كتاب الزكاة، الفصل التاسع فى المسائل المتعلقة بمعطى
الزكاة-3/226، طحطاوى على مراقى الفلاح-588
অর্থাৎ যদি যাকাত দাতার কাছ থেকে কোনো বছর অতিরিক্ত যাকাত
নেওয়া হয়,তাহলে অতিরিক্ত কে পরের বছরের
যাকাত হিসেবে ধরে নেওয়া যাবে। সূত্র: মারকিল ফালাহ-৫৮৮প.
আল-মুহিত-৩/২২৬, আদদররুল মুখতার-২/২৯৩
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-২৯৯: আসসালামু আলাইকুম। মোটিভেশন
ক্লাস- চরিত্র গঠন ও নেতৃত্বের উন্নতি করণ। এ বিষয়ে কিছু
লেখার জন্য অনুরোধ করছি। তারিখ-০৯/১০/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক মাওলানা নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্ন
আলোকে আলোচনাটিকে প্রথমত দুটিভাগে ভাগ করছি।
১। চরিত্র গঠন।
ক। ভূমিকা: The crown and
glory of life is charater ‘চরিত্র মানুষের মহার্ঘতম বস্তু I শ্রেষ্ঠতম অলংকার’। চরিত্র একটি জাতির জীবনী শক্তি। যে জাতির
চরিত্র যত সুন্দর, সে জাতির তত উন্নত ও শক্তিশালী। যে জাতির চরিত্র নেই, সে জাতি পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারে
না। তাই চরিত্রবান ব্যক্তি যেমন সমাজের চোখে ভাল, তেমনি মহান আল্লাহর নিকটও প্রিয়।
আমাদের প্রিয় নবি (ﷺ) ছিলেন
সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন,
وَإِنَّكَ
لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ –
অর্থাৎ নিশ্চয় আপনি মহান
চরিত্রের অধিকারী। (সূরা K¡jvg- ৪)
im~jyjøvn (ﷺ)
বলেন, )
- إِنَّ اللَّهَ بَعَثَنِي
لِتَمَامِ مَكَارِمِ الْأَخْلَاقِ
খ চরিত্রের আভিধানিক অর্থ: চরিত্র শব্দটি সংস্কৃত (চর+ইত), প্রতিশব্দ আচরণ,
স্বভাব, রীতি,সদাচার,কার্যকলাপ, ক্রিয়াকলাপ ইত্যাদি। ইংরেজিতে প্রতিশব্দ -character,letter,Nature,Role,Figure,conduct,Disposition.
আরবিতে প্রতিশব্দ হলো, لاخلاق. سيرة.الطبيعة.الاسرة.الخصلة و غيرذالك
গ। চরিত্রের পারিভাষিক
সংজ্ঞা: চরিত্র
বলা হয়, কোনো
ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যসূচক গুণাবলি, যা অপর থেকে আলাদা করে।
ইসলামী চিন্তাবিদগণ খুলুককে
বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ইব্ন জাহিয (মৃ·২৫৫ হি) বলেছেন, “ কোন
কোন মানুষের মধ্যে খুলুক থাকে স্বভাবজাত এবং প্রকৃতিগত, আবার
কোন কোন মানুষের মধ্যে চেষ্টা সাধনা ছাড়া তা অর্জিত হয় না।
মাওয়ার্দ্দী (মৃঃ ৪৫০ হি·) বলেন, “আখলাক
হচ্ছে স্বভাবজাত প্রচ্ছন্ন জিনিস।
মুহাদ্দিসগণ আখলাককে আরো
চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের মতে “আখলাক হলো এমন মূল্যবোধ যে অনুযায়ী মানুষের
আচরণ হওয়া প্রয়োজন।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আব্দুল
ওয়াদুদ মাকরূম বলেছেন, “আখলাক হচ্ছে আচরণের রীতি-নীতির সমষ্টি, যা মানুষের
আচরণকে নিয়ন্ত্রিত ও সংহত করে এবং যাকে চিন্তা ও আচরণের ক্ষেত্রে মানুষের অনুসরণ
করা উচিত।
অপর একজন মুহাদ্দিস আব্দুর
রহমান মাযদানীর মতে আখলাক হচ্ছে ‘মানব মনে প্রোথিত একটি স্থায়ী গুণ, তা
স্বভাবসিদ্ধ হোক বা অর্জিত, আচার-আচরণে যার প্রভাব পড়ে।
ঘ। চরিত্রের প্রকারভেদ: চরিত্র দুই। যথা:
(০১) আখলাকে হামিদা (প্রশংসনীয় গুণাবলী )
(০২) আখলাকে রাজিলা (মন্দ গুণাবলী)
(০১) আখলাকে হামিদা (প্রশংসনীয় গুণাবলী ): হাদিস শরিফে এসেছে-আবু দারদা ((রা.)) থেকে বর্ণিত, রাসূল((ﷺ) ) বলেন, “উত্তম চরিত্র থেকে মীযানেঅধিক উত্তম কোন
আমল নেই। তাখরিজ: দাউদ-৪১৬৬
আবু হুরায়রা ((রা.)) থেকে বর্ণিত একবার রাসূল((ﷺ) )কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কোন আমলের দ্বারা
মানুষ অধিক হারে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, “উত্তম চরিত্রেরদ্বারা মানুষ অধিক হারে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। তাখরিজ:
মুসনাদে আহমদ-৭৫৬৬
উত্তম চরিত্র মধ্যে হলো, বিনয়, উদারতা,
দয়া, তাকওয়া, সত্যবাদিতা,
আমানতদারিতা, ক্ষমাশীলতা, অল্পে তুষ্ট, দানশীলতা, মিতাচারী,
ধৈরর্য, সাহসিকতা-বীরত্ব
ইত্যাদি।
(০২) আখলাকে রাজিলা (মন্দ গুণাবলী):
মানব চরিত্রের সকল
বৈশিষ্ট্যই ভাল নয়। বরং তাতে এমন কিছু দিক রয়েছে যা অপছন্দনীয় ও নিন্দনীয়। মানব
চরিত্রের এসব নিন্দনীয় স্বভাবকে আরবীতে আখলাকে যামিমাহ বা আখলাকে সায়্যিআহ বলা হয়। এসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে- মিথ্যা
বলা, ধোঁকা-প্রতারণা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ, বিশ্বাসঘাতকতা, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা,
পরনিন্দা, পরচর্চা, অপব্যয়, কৃপণতা, ক্রোধ, গর্ব-অহংকার, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই,
কুধারণা, অশ্লীল চিন্তা, বিদ্রোহ, ফিতনা-ফাসাদ, গালি-গালাজ, চোগল খুরী, সুদ-ঘুষের
লেনদেন ইত্যাদি।
সুতরাং আমাদের মন্দ
স্বভাবগুলো দূর করে উত্তম গুণাবলী অর্জন করতে হবে। আর তা অর্জনের পন্থা হলো নেক/আল্লাহ ওয়ালাদের ছহবতে থাকা।
খ । ভূমিকা: মাঝি ছাড়া যেমন নৌকা চলে না তেমনি নেতৃত্ব ছাড়া
দেশ, জাতি,
সমাজ চলতে পারে না। নেতা যদি যোগ্য হন তাহলে তিনি তার জনগোষ্ঠীকে
সফলতার সাথে লক্ষ্যপানে নিয়ে যেতে পারেন। সফলতার সাথে যদি আদর্শের সমন্বয় ঘটে
তাহলে ঐ নেতৃত্ব হয় মডেল নেতৃত্ব।
Elder L. Tom Perry বলেন-
“We live in a world that is crying for
righteous leadership based on trust worthy Principles.”
নেতৃত্বের
পরিচয়
শাব্দিক অর্থে নেতৃত্ব হচ্ছে-
১. To conduct (চালিত করা)
২. To guide (পথ দেখানো)
৩. To direct (আদেশ করা)
সাধারণত: কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কোন
ব্যক্তিবর্গ, গোষ্ঠী অথবা দলকে
প্রভাবিত করার দক্ষতাকে বলা হয় নেতৃত্ব।
সমাজ বিজ্ঞানী বেনিসের
মতে, নেতৃত্ব হচ্ছে একটি বিশেষ প্রক্রিয়া যার
মাধ্যমে একজন প্রতিরিধি তার অধীনস্থদের কাঙ্খিত আচরণে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি আরও
বলেন, নেতৃত্ব হলো মানুষকে
প্রভাবিত করার এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে তাদের দলীয় লক্ষ্য অর্জনে স্বেচ্ছায় উদ্যমী
হয়।
ভ্যান ফ্লিট (Van Fleet)-এর মতে,
“নেতৃত্ব হলো একটি প্রভাব-প্রক্রিয়া যা অন্যদের আচরণ পরিবর্তনে
ব্যবহৃত হয়।” (Leadership
is an influence process directed at shaping the behavior of others)।
নেতৃত্বের উপাদান:
এখানে একজন নেতার ৩০ টি
সাধারণ (আবশ্যক) গুনাবলি উল্লেখ করা হলো-
(০১) সাহসীকতা: যিনি নেতা হবেন তাকে হতে
হবে নির্ভীক। ভয়-ডরহীন ভাবে তিনি প্রত্যাশিত লক্ষ্যে যাবেন অধীনস্থদের নিয়ে।
(০২) মোহনীয় ব্যক্তিত্ব: একজন সফল নেতাকে হতে হবে মোহনীয়
ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি তার আচরনে সবাইকে মুগ্ধ করে প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যের
দিকে পরিচালিত করবেন।
(০৩) সুদূরপ্রসারী কল্পনাশক্তি: একজন সফল নেতার সুদূরপ্রসারী কল্পনাশক্তির
অধিকারী হতে হবে। তাকে পরিকল্পনা প্রনয়নে ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্বাচনের জন্য
কল্পনাশক্তির আশ্রয় নিতে হবে। সুদূরপ্রসারী কল্পনাশক্তি যার মধ্যে নেই সে নেতা
হলেও উত্তম নেতা হতে পারে না।
(০৪) সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা: লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনামাফিক একজন
নেতা বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকবেন, যা স্বাভাবিক। আর তাই নেতাকে অবশ্যই
সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে বা যে-কোনো সঠিক ও দ্রুত
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সক্ষমতা প্রদর্শন করে দল বা গোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হয়।
(০৫) সার্বিক দায়-দায়িত্ব গ্রহণের মানসিকতা: একজন প্রসাসককে সকল
অবস্থায় সকল দায়-দায়িত্ব গ্রহনের মানসিকতা থাকতে হবে। যে-কোনো মুহুর্তে যে-কোনো
যৌক্তিক ঝুঁকি গ্রহণ করার
মানসিকতা একজন নেতার থাকা চাই।
(০৬) শারীরিক সুস্থ্যতা: যিনি নেতা হবে তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ্য
থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রুগ্ন ও দুর্বল হয়ে কখনো নেতার আসনে বসা যায় না। তবে
বাস্তবক্ষেত্রে যদি এমন লক্ষ্য করা যায়, তা নামমাত্র নেতার উদাহরণ।
(০৭) পরিবেশ ও সংগঠন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা: নেতার অবশ্যই পরিবেশ ও
সংগঠন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। নানা ধরনের উন্নয়নে তাকে পরিবেশ ও সংঠনের
মধ্য দিয়েই কাজ করতে হয়।
(০৮) মানবচরিত্র অনুধাবনের ক্ষমতা: একজন নেতা, বিশেষ ক্ষেত্রে প্রশাসক,
যেহেতু মানুষ নিয়ে কাজ করবেন সেহেতু তাকে মানুষের চরিত্র ও আচরণ
সম্বন্ধে সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গিগত জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়।
(০৯) সাংগঠনিক জ্ঞান: একজন নেতার সাংগঠনিক জ্ঞানের অধিকারী হতে
হবে। সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক জ্ঞান তাকে নিজ ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে কাজ করতে সাহায্য
করবে।
(১০) যোগাযোগের দক্ষতা: সংগঠনের সকলের সাথে ও সংশ্লিষ্ট সমাজের সাথে
উত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থা একজন নেতাকে গড়ে তুলতে হয়। তিনি এমন যোগাযোগ কৌশল
নির্ধারন করবেন যেন প্রতিষ্ঠানের সকলের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
(১১) আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সংযমশীলতা: একজন নেতার অবশ্যই আত্মনিয়ন্ত্রণ দক্ষতা
থাকতে হবে এবং সংযমী হতে হবে। আবেগ ও যথেচ্ছাচার সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস ডেকে
আনে।
(১২) ন্যায়পরায়ণতা: নেতা হবেন ন্যায় পরায়ণ। তিনি অন্যায় ও
অবিচারের প্রতি বশীভূত হবেন না।
(১৩) সহযোগিতামূলক মননশীলতা: সকলের সাথে সকল কাজে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সহযোগিতামূলক
সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। অধস্তন কর্মচারী ও সমাজ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সহযোগিতা
বৃদ্ধির মাধ্যমে সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ঘটানো সম্ভব।
(১৪) বশীভুতকরণ ক্ষমতা:
(১৫) বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা: প্রশাসক বা নেতাকে সব
সময়ই বিচার বিবেচনা করে চলতে হয়। তার অজ্ঞতা ও অবিবেচনাপ্রসূত অনেক বড় ধরনের
ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
(১৬) বন্ধুপ্রতিমতা: নেতা হবেন সকলের প্রতি বন্ধু প্রতিম। তিনি
সকলের বন্ধু ও দুর্দিনের সহায়ক হিসেবে থাকবেন।
(১৭) বিশ্লেষণমূলক ক্ষমতা: নেতার অবশ্যই বিশ্লেষণমূলক ক্ষমতা থাকতে হবে
কারণ তাকে বিভিন্ন রকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
(১৮) সাহস ও উদ্যম: সাহস ও উদ্যম নেতার যেকোন নেতার একটি মৌলিক
গুণ হিসেবে স্বীকৃত। যে-কোনো বিপদে নেতা ভেঙ্গে না পড়ে সাহসের সাথে এগিয়ে যাবেন
উদ্যমি মনোভাব নিয়ে প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাবেন।
(১৯) সময় সচেতনতা: নেতাকে সময় সচেতন হতে হবে কারণ তিনি সময়
সচেতন না হলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে ব্যঘাত ঘটবে, অধস্তন ব্যক্তিরা কাজে
ফাঁকি দিতে চাইবে।
(২০) সংশ্লিষ্ট কার্যবিষয় জ্ঞান: নেতা যে প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের প্রধান সে
প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের যাবতীয় কাজ সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক, অন্যথায় দক্ষতার সাথে
কার্য পরিচালনা সম্ভব না।
(২১) ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা: পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সংগঠন
পরিচালনা না করে কর্মির ক্ষমতা ও দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। যদি
প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি ও মতভেদ থাকে তবে তাঁদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে
হবে।
(২২) নমনীয় মনোভাব: নেতার বা প্রশাসকের সব সময় নমনীয় মনোভাব
নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা উচিৎ। প্রয়োজনে নীতি, সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা, আদেশ, নির্দেশ
পরিবর্তন করে উপযোগী ধারা প্রবর্তন করা নেতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
(২৩) অনুসন্ধিৎসু: নেতাকে অনুসন্ধিৎসু হতে হয়। কোনো ঘটনা বা
সমস্যার কারণ অনুসন্ধানে উৎসাহী হলে তা সমাধান করাও সহজ হবে।
(২৪) সৃজনী প্রতিভা: প্রশাসক বা নেতাকে সৃজনী প্রতিভার অধিকারী
হতে হয়। এর বিকাশ ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনা সম্ভব।
(২৫) আন্তরিকতা: প্রশাসক হবেন প্রতিষ্ঠান ও কথা কর্মিদের প্রতি আন্তরিক।
(২৬) পরমতের ওপর শ্রদ্ধাশীলতা: পরমতের প্রতি স্রদ্ধাশীলতা যে-কোনো মানুষের
অন্যতম একটি সুন্দর গুণ যা একজন প্রশাসক বা নেতার মধ্যে অবশ্যই থাকতে হয় যার
দ্বারা তিনি সবার মতামতই সমান গুরুত্ব দিয়ে শুনবেন এবং উপযুক্ত হলে কাজে লাগাবেন।
(২৭) সাধারণ জ্ঞান: নেতা হবেন ব্যাপক সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী।
অজ্ঞ লোক কখনো নেতৃত্ব কিংবা সংগঠন চালাতে পারে না।
(২৮) অধ্যবসায়: নেতাকে অধ্যবসায়ী হতে হবে। দৈনন্দিন খবর ও অন্যান্য
প্রয়োজনীয় বিষয়ে তিনি হবেন অধ্যবাসায়ী।
(২৯) আত্মসমালোচনা: এক জন নেতার জন্য আত্মসমালোচনা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ভুল তিনি খুঁজে পেলে ভবিষ্যতে ভুল কম হবে।
(৩০) সার্বিক ধারণা: নেতাকে প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের সাথে জড়িত
কর্মি, কাজ,
সমাজ, বাজার, চাহিদা,
মানুষের আচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে সার্বিক ধারণা থাকতে হবে।
والله اعلم بالصواب
লেখক/সংকলক মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
(বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-৩০০: আসসালামু আলাইকুম।মুহতারাম মুফতি
সাহেব। আমরা যে খাবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারকাতিল্লাহু’ (بسم الله و علي بركة الله ) বলি।
এটা বলা কি বিদআত। দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম। তারিখ-১০/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাইফুল ইসলাম ত্রিশাল, ময়মনসিংহ থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর, প্রথম কথা হলো, খানা খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহ (بسم الله و بركة الله ) পড়ার কথা সহীহ
হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। দলিল:
وإنما الموجود في المستدرك: من حديث ابن عباس رضي الله
عنهما ... أتوا بيت أبي أيوب فلما أكلوا و شعبوا قال النبي صلى الله عليه و سلم:
خبز و لحم و تمر و بسر و رطب إذا أصبتم مثل هذا فضربتم بأيدكم فكلوا بسم الله و
بركة الله
هذا حديث صحيح الإسناد و لم
يخرجاه
تعليق الذهبي قي التلخيص: صحيح.
4/ 107 و 7163 من إخراج الوادعي.
অর্থ: ‘তোমরা বিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহ বলে খাবার গ্রহণ কর।’ তাখরিজ: মুসতাদরাকে
হাকেম ৫/১৪৬, তাবারানি-২২৪৭
নোট: হাকেম
ও হাফেয যাহাবি (রহ.) হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন।
প্রশ্ন: ক। উপরোক্ত ছহিহ দ্বারা জানতে পারলাম (بسم الله و بركة الله ) হাদিসের শব্দ কিন্তু আলা যুক্ত হলো কিভাবে
বা কবে থেকে?
উত্তর: ক।
بسم الله وبركة الله শব্দটি হাদীসের বিভিন্ন গ্রন্থে
পাওয়া যায়। بسم الله وعلى بركة الله শব্দটি
পরবর্তীকালের আলেমদের দু'আ বইতে পাওয়া যায় যেমন,
هكذا ورد لفظ الحديث في كتاب " سلاح المؤمن " لابن الإمام، وكتاب " الحصن الحصين " لابن الجزري. لاحظ أن لفظ الحديث: " وعلى بركة الله "
في " المستدرك فأين هذا اللفظ من رواية أبي هريرة
অর্থাৎ আল্লামা ইবনুল-ইমাম রহিমাহুল্লা (৭৪৫ হিঃ) রচিত
"সিলাহ আল-মুমিন" এবং "আল-হিসন আল-হাসিন"। আল্লামাহ আল-জাযারী রাহিমাহুল্লাহ (৮৩৩ হিঃ)।
পরবর্তীতে তাদের অনুসরণে বিভিন্ন ফিকাহ ও দুআর কিতাবে
লিপিবদ্ধ হয়, যা আমাদের পর্যন্ত এসে পৌঁছিছে। যেমন, ফতোয়ায়ে
শামিতে এসেছে-
খাবারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহি
ওয়া আলা বারকাতিল্লাহ’ বলা।
যদি শুরুতে ভুলে যায়, তাহলে যখন স্মরণ হবে তখন ‘বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’
বলা।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার
: ৬/৩৪০
প্রশ্ন: খ। তাহলে ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারকাতিল্লাহু’ (بسم الله و علي بركة الله ) বলা
কি বিদআত হবে?
উত্তর: খ। মূল হাদিসের সঙ্গে শুধু হরফে
জার ‘আলা’ শব্দটি যুক্ত করে বিসমিল্লাহি ওয়া আলাবারাকাতিল্লাহ পড়ে তাহলে
সমস্যা নেই। কেননা এতে অর্থগত কোনো পরিবর্তন হয় না এবং ভাষার দিক থেকে আলা এর ব্যবহারকে
ভুলও বলা যায় না।
এক্ষেত্রে অর্থ হয়, আল্লাহর
নামে ও তাঁর বরকতের উপর ভরসা করে খানা শুরু করছি।
সূত্র: রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৪০
কুরআন- হাদিসের দুআর ক্ষেত্রে দুএকটি
শব্দ পরিবর্তন করে, একবচনকে বহুবচনে অথবা বহুবচনকে একবচন বলা
কিংবা কোনো শব্দ দেওয়া কোন সমস্যা নেই।
উদাহরণ:
(০১) وَقُلۡ رَّبِّ ارۡحَمۡہُمَا
کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا ؕ সূরা ইসরা-২৪ নং আয়াত পূর্ণ আয়াতটি হলো এটা, কিন্তু আমরা বলার সময় وَقُل বাদ দেয়। বাদ দেওয়াই উচিত। কারণ وَقُل দুআ নয়। দুআ হলো পরে অংশ। এখন وَقُل বাদ দিলে কি বিদআত হবে।
(০২) رواه
الإمام أحمد في المسند ( 17362 ) وأبو داود ( 5079 ) ، ولفظه :
اللهم أجرني من النار
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। মুসনাদে আহমদ-১৭৩৬২; আবু দাউদ-৫০৭৯
দেখুন এখানে أجرني একবচন শব্দ ব্যবহার করা
হয়েছে, এখন কেউ বহুবচন أجرنا ব্যবহার করে, ইমাম তো বহুবচন শব্দই ব্যবহার করবে। তাহলে কি
এটা বিদআত হবে?
(০৩) رب اغفر وارحم وأنت خير الراحمين অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আপনি ক্ষমা করুন, দয়া করুন এবং আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ
দয়ালু।
সূরা মুমিনুন-১১৮
এখন কেউ যদি اغفر وارحم এর সাথে কোন জমির/সর্বনাম যুক্ত করে, যেমন, اغفرلي ) اغفرنا
وارحمنا وارحم ليহে আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা ও রহম করুন) তাহলে
কি বিদআত হবে?
সারকথা কথা হলো, খাবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারকাতিল্লাহু’ (بسم الله و علي بركة الله )
পড়লে বিদআত বলার কোনো সুযোগ নেই। তবে সরাসরি হাদিস শরিফের শব্দ ব্যবহার করলে আর
কোন প্রশ্ন থাকে না। অর্থাৎ বিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহ (بسم الله و بركة الله )
কিন্তু আয় আফসোস! ঐ সকল ভাইয়ের প্রতি যারা যাচাই-বাচাই না করে, এক তরফা কথা শুনে বলে (بسم الله و بركة الله ) কোন হাদিস
নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে মহান
পূর্বসূরিদের পথে চলার তাওফিক দান করুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩০১: আসসালামুয়ালাইকুম। মুহতারাম, কি কি আমল করলে কিয়ামতে ও জান্নাতে প্রিয় রাসূল (ﷺ)এর নিকটতম হওয়া যাবে? দলিল সহ জানালে উপকৃত হতাম। জাযাকাল্লাহ খাইরান। তারিখ-১০/১০/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ফরিদউজ্জামান জামালপুর থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, শুরুতে আপনাকে জাযাকাল্লাহু খয়র। কেননা আপনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে চেয়েছেন।
যাই হোক প্রতিটি মুমিনের কামনা রাসূল (ﷺ) এর ভালবাসা-নৈকট্য। এ মুহূর্তে আমার
চরটি আমলের কথা মনে পড়ছে-
(০১) তাকওয়াবান হওয়া: দলিল:
عَن مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ
اللهِ ﷺ إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِي الْمُتَّقُونَ مَنْ كَانُوا وَحَيْثُ كَانُوا
অর্থ: হজরত মুআয বিন জাবাল ((রা.)) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেছেন, নিশ্চয় আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী মুত্তাক্বীনগণ; তারা যেই হোক, যেখানেই থাক। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ ২২০৫২
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ
وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ
اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও
এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক
সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। সূরা হুজুরাত-১৩
সুতরাং প্রমাণিত হলো আল্লাহর নিকট সে অধিক সম্মানিত, সেই
আবার তার রাসল (ﷺ)–এর কাছের লোকও।
(০২) বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা: দলিল:
إنَّ أولى النَّاسِ بي يَومَ القيامةِ أَكْثرُهُم
عليَّ صلاةً
الراوي : عبدالله بن مسعود | المحدث : ابن حبان |
المصدر : بلوغ المرام
الصفحة أو الرقم: 455 | خلاصة حكم المحدث : صحيح
التخريج : أخرجه الترمذي (484) باختلاف يسير، وابن
حبان (911)، والبيهقي في ((شعب الإيمان)) (1563) واللفظ
অর্থ: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ
(রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের তুলনায় আমার
বেশি নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি
আমার ওপর দরুদ পড়বে। তাখরিজ: তিরমিজি-৪৮৪; ছহিহ ইবনে হিব্বান-৯১১; বায়হাকি-১৫৬৩
প্রশ্ন: ক। বেশি বেশি দরুদের কোনো সংখ্যা আছে?
উত্তর: ক। আসলে বেশির কোনো সংখ্যা
নেই। তবে এ বিষয়ে ফকিহুন নফস তাপস কুল শিরোমনি মাওলানা
রশিদ আহমেদ গঙ্গহি (রহ.)-কে
জিজ্ঞেস করা হলে , জবাবে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি দৈনিক ৩০০
বার দরুদ শরিফ পড়ে, তাহলে সে বেশি দরুদ পড়ার
ব্যক্তির মধ্যে গণ্য হবে।
প্রশ্ন: খ। কোনো ব্যক্তি বেশি বেশি দরুদ পড়লো; কিন্তু তাকওয়ার ওপর চললো না, সে কি রাসূল (ﷺ) –এর নৈকট্যশীল হবে? উপরোক্ত দুটি হাদিসের মধ্যে
সমন্বয় কী?
উত্তর: খ। এ দুটি হাদিসের
সমন্বয় সম্পর্কে আল্লামা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন দা.বা. বলেন, যাকে আল্লাহ বেশি বেশি
দরুদ পাঠের তাওফিক দিবেন, তাকে গুনাহ ছাড়ারও তাওফিক
দিবেন। সুতরাং আর কোনো থাকলো না।
(০৩) সুন্নাতে অনুসরণ:
أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ
لِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَا بُنَىَّ إِنْ قَدَرْتَ أَنْ
تُصْبِحَ وَتُمْسِيَ لَيْسَ فِي قَلْبِكَ غِشٌّ لأَحَدٍ فَافْعَلْ " .
ثُمَّ قَالَ لِي " يَا بُنَىَّ وَذَلِكَ مِنْ سُنَّتِي وَمَنْ أَحْيَا
سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي . وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِي فِي الْجَنَّةِ
" . وَفِي الْحَدِيثِ قِصَّةٌ طَوِيلَةٌ . قَالَ أَبُو
অর্থ: হজরত আনাস ইবনু মালিক ((রা.))
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বলেছেনঃ হে বৎস! তুমি যদি সকাল-সন্ধ্যা এমনভাবে কাটাতে পার
যে, তোমার অন্তরে কারো প্রতি কোন রকম বিদ্বেষ নেই, তাহলে তাই কর। তিনি আমাকে পুনরায় বললেন, হে বৎস! এটা হল আমার
সুন্নাত। আর যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে জীবিত করল, সে আমাকেই ভালবাসল, আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসল সে তো জান্নাতে আমার সাথেই
থাকবে। তখিরিজ: জামে তিরমিজি-২৬৭৮
(০৪) ইয়াতিমদের প্রতিপালন: দলিল:
وَأنا وكافِلُ اليَتِيمِ في الجَنَّةِ هَكَذا
وأَشارَ بالسَّبَّابَةِ والوُسْطَى، وفَرَّجَ بيْنَهُما شيئًا.
الراوي : سهل بن سعد الساعدي | المحدث : البخاري | المصدر : صحيح البخاري | الصفحة أو الرقم : 5304 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح
অর্থ: হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব। (তিনি তর্জনী ও মধ্য অঙ্গুলি
দিয়ে ইঙ্গিত করেন। এবং এ দুটির মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক করেন)। বুখারি- ৫৩০৪
(০৫) সুন্দর আখলাকের
অধিকারী হওয়া: দলিল:
عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ رَسُولَ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ "
إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَىَّ
وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلاَقًا
وَإِنَّ أَبْغَضَكُمْ إِلَىَّ وَأَبْعَدَكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ
الْقِيَامَةِ الثَّرْثَارُونَ وَالْمُتَشَدِّقُونَ وَالْمُتَفَيْهِقُونَ " . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ عَلِمْنَا
الثَّرْثَارُونَ وَالْمُتَشَدِّقُونَ فَمَا الْمُتَفَيْهِقُونَ قَالَ " الْمُتَكَبِّرُونَ " . قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ . وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِي
অর্থ: জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যার চরিত্র ও ব্যবহার
ভাল সে ব্যক্তি আমার নিকট তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় এবং কিয়ামত দিবসে সে আমার সবচেয়ে
নিকট অবস্থান করবে। আর আমার নিকট তোমাদের মধ্যে সবচে’ ঘৃণ্য ব্যক্তি
কিয়ামত দিবসে যারা আমার থেকে দূরে থাকবে সেই ব্যক্তিরা হল যারা, ছারছারূন অনর্থক বক বক করে এবং মুতাশাদ্দিকুন যারা উপহাস করে এবং মুতাফায়হিকুন
যারা অহংকার প্রদর্শন করে। সাহাবীগন বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল!ছারছারূন
এবংমুতাশাদ্দিকুন তো আমরা জানি কিন্তু মুতাফায়হিকুন কি? তিনি
বললেন, যারা অহংকার করে। তাখরিজ: তিরমিজি- ২০১৮
শেষ কথা হলো, আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উপরোক্ত আমলগুলো করার মাধ্যমে
প্রিয় নবি (ﷺ)-এর নিকটতম হওয়ার তৌফিক দান করুন আর আমি যে আমলগুলো উল্লেখ করলাম এর বাইরে যদি কারো জানা থাকলে আমাকে অবহিত করলে ইনশাআল্লাহ
এর সাথে যুক্ত করে দিব।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩০২
আসসালামু আলাইকুম।
মুহতারাম! অনুগ্রহ পূর্বক যুদ্ধবন্দী
হওয়ার পূর্বে তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষার্থে যুদ্ধ ক্ষেত্রে আত্নহত্যার বিধান সম্পর্কে
জানালে ভালো হয়।
جزاكم الله خيرا
হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম নোয়াখালী থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আমরা জানি আত্মহত্যা মহাপপপ। ইসলাম কোনো অবস্থায় আত্মহত্যা অনুমোদন করেননি।
দলিল:
আয়াত নং-০১
: وَلَا تَقْتُلُوا
أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
‘তোমরা তোমাদের নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ
তোমাদের ওপর করুণাময়।’ সুরা নিসা-২৯
আয়াত নং-০২
وَلَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡکُمۡ
اِلَی التَّہۡلُکَۃِ ۚۖۛ
তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদের জীবন
ধ্বংসের মুখে ফেলো না।’ সুরা
বাকারা-১৯৫
হাদিস নং-০১
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: شَهِدْنَا مَعَ
رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لِرَجُلٍ مِمَّنْ
يَدَّعِي الإِسْلاَمَ: «هَذَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ»، فَلَمَّا حَضَرَ القِتَالُ قَاتَلَ
الرَّجُلُ قِتَالًا شَدِيدًا فَأَصَابَتْهُ جِرَاحَةٌ، فَقِيلَ: يَا رَسُولَ
اللَّهِ، الَّذِي قُلْتَ لَهُ إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَإِنَّهُ قَدْ
قَاتَلَ اليَوْمَ قِتَالًا شَدِيدًا وَقَدْ مَاتَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِلَى النَّارِ»، قَالَ: فَكَادَ بَعْضُ النَّاسِ أَنْ
يَرْتَابَ، فَبَيْنَمَا هُمْ عَلَى ذَلِكَ، إِذْ قِيلَ: إِنَّهُ لَمْ يَمُتْ،
وَلَكِنَّ بِهِ جِرَاحًا شَدِيدًا، فَلَمَّا كَانَ مِنَ اللَّيْلِ لَمْ يَصْبِرْ
عَلَى الجِرَاحِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ، فَأُخْبِرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ بِذَلِكَ، فَقَالَ: «اللَّهُ أَكْبَرُ، أَشْهَدُ أَنِّي عَبْدُ اللَّهِ
وَرَسُولُهُ»، ثُمَّ أَمَرَ بِلاَلًا فَنَادَى بِالنَّاسِ: «إِنَّهُ لاَ يَدْخُلُ
الجَنَّةَ إِلَّا نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ، وَإِنَّ اللَّهَ لَيُؤَيِّدُ هَذَا الدِّينَ
بِالرَّجُلِ الفَاجِرِ
অর্থ: হজরত
আবু হুরাইরাহ্ ((রা.)) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। তখন
তিনি ইসলামের দাবীদার এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, এ ব্যক্তি জাহান্নামী অথচ যখন
যুদ্ধ শুরু হল, তখন সে লোকটি ভীষণ যুদ্ধ করল এবং আহত হল। তখন
বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! যে লোকটি সম্পর্কে আপনি বলেছিলেন
সে লোকটি জাহান্নামী, আজ সে ভীষণ যুদ্ধ করেছে এবং মারা গেছে।
নাবী (ﷺ) বললেন, সে জাহান্নামে গেছে। রাবী বলেন,
একথার উপর কারো কারো অন্তরে এ বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির উপক্রম হয় এবং
তাঁরা এ সম্পর্কিত কথাবার্তায় রয়েছেন, এ সময় খবর এল যে,
লোকটি মরে যায়নি বরং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। যখন রাত্রি হল,
সে আঘাতের কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে পারল না এবং আত্মহত্যা করল। তখন
নাবী (ﷺ)-এর
নিকট এ সংবাদ পৌঁছানো হল, তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহ্ আকবার! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, আমি অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলার বান্দা
এবং তাঁর রাসুল। অতঃপর নাবী (ﷺ) বিলাল ((রা.))-কে আদেশ করলেন, তখন তিনি লোকদের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে,
মুসলিম ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা এই দ্বীনকে মন্দ লোকের দ্বারা সাহায্য করেন। তাখরিজ: বুখারি-৩০৬২
হাদিস নং-০২
كما قال النبي صلى الله عليه وسلم للرجل الذي قال: (يا
رسول الله! الرجل يأتيني يريد مالي؟ فقال: لا تعطه مالك، قال: فإن قاتلني؟ قال:
قاتله، قال: فإن قتلته، قال: هو في النار، قال: فإن قتلني؟ قال: فأنت شهيد) فدل
على أن من يقتل مظلوماً دون ماله أو نفسه أو نسائه فهو شهيد.
অর্থাৎ কেউ তাকে হত্যা করলে
হত্যাকারী জাহান্নামি হবে আর সে হবে শহিদ্। তাখরিজ: মুসলিম -140
তবে জীবনের ঝুকি নিয়ে আক্রমণ
জায়েজ। অর্থাৎ ফিদায়ী আক্রমণের বা আত্মোৎসর্গমূলক অপারেশন বলতে এমন অপারেশন বুঝায়
যেখানে এক বা একাধিক ব্যক্তি তাদেরথেকে অস্ত্রশস্ত্রে এবং সংখ্যাধিক্যে প্রবল
শত্রুর বিরূদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করে; যদিও তারা জানে যে এতে নিশ্চিতভাবে তাদের
মৃত্যু ঘটবে। দলিল:
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ
بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ
وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا ُ
অর্থ: মু’মিনদের
থেকে তাদের জান এবং মাল জান্নাতের বিনিময়ে ত্রুয় করে নিয়েছেন; তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, হত্যা করে এবং নিহত হয়। সূরা তওবা-১১১
সারকথা কথা হলো, যুদ্ধবন্দী হওয়ার পূর্বে তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষার্থে
যুদ্ধ ক্ষেত্রে আত্নহত্যা করা জায়েজ হবে না, হারাম। এ সম্পর্কে ইমাম বায (রহ.) জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন,
أسرى المسلمين إذا خَشَوا أن
يُؤتى المسلمين من ناحيتهم، إذ يخافون إفشاء معلومات، هل يقتلون أنفسهم؟
الجواب:
لا، ما يجوز، لا يقتلون أنفسهم،
يجتهدون في السلامة، والحمد لله، ولا يقتلون أنفسهم.
অর্থাৎ না, এটা জায়েজ নয়, তারা নিজেদের হত্যা করে না, তারা নিরাপত্তার জন্য
চেষ্টা করে, আল্লাহর প্রশংসা, এবং
তারা নিজেদের হত্যা করে না। সূত্র: তাতলিকু মাউসুআতুল
ফাতওয়াতিল বাযিয়্যা (অনলাইন থেকে প্রাপ্ত)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা -১২৩০৩
আসসালামুয়ালাইকুম। একজন জানতে চেয়েছেন, জুম্মার
দিন বাংলা আলোচনার সময়, অথবা যে কোন বক্তব্যের মাঝে কোরানের আয়াত উল্লেখ
করলে প্রতিবারেই কি بسم الله বলতে
হবে?
فَإِذَا قَرَأْتَ ٱلْقُرْءَانَ
فَٱسْتَعِذْ بِٱللَّهِ مِنَ ٱلشَّيْطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ
এই আয়াতের আলোকে প্রতিবারেই
কি تعوذ পাঠ করতে হবে❓
উল্লেখ্য আন্তর্জাতিক ক্বারীদেরকে
দেখা যায় প্রথম তেলাওয়াতের সময়,
تعوذ، تسمية দুইটাই পড়ে, মাঝে
কথা বলার পরে আবার শুরু করলে শুধু تعوذ পাঠ
করেন!
মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুর রহমান, বগুড়া থেকে ----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্ন জবাবের
আগে একটি বিষয় আগে পরিস্কার হতে হবে,
সেটা
হলো তেলাওয়াত ও বক্তব্যর মাঝে আয়াতের উদ্ধৃতি এক নয়। সুতরাং হুকুমও ভিন্ন ভিন্ন।
আপনি যে আয়াতটি উল্লেখ করেছেন,
لمن أراد أن يقرأ، لقوله تعالى:
(فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ
الرَّجِيمِ) [النحل:98]. وأما عن حكم
البسملة، فقد تقدم برقم: 5566
অর্থ: সুতরাং আপনি যখন কুরআন
পড়বে, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবেন। সূরা নাহল-৫৪
ব্যাখ্যা:
هذا أمر من الله تعالى لعباده
على لسان نبيه - صلى الله عليه وسلم - : إذا أرادوا قراءة القرآن أن يستعيذوا
بالله من الشيطان الرجيم .
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তার নবির
জবানে বান্দাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যখন তোমরা কোরআন তেলাওয়াতের ইচ্ছা করো তখন বিতাড়িত
শয়তানকে আশ্রয় প্রার্থনা করো। সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসির
অর্থাৎ অধিকাংশ তাফসীরকারকগণ!
বলেছেন যখন কোরআন পাঠ করার ইচ্ছা করো (অর্থাৎ তেলাওয়াতের সময়), তখন
শয়তান হতে পানাহ চাও।
আপনি যে প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন, আন্তর্জাতিক
ক্বারীদেরকে দেখা যায় প্রথম তেলাওয়াতের সময়,
تعوذ، تسمية দুইটাই পড়ে, মাঝে
কথা বলার পরে আবার শুরু করলে শুধু تعوذ পাঠ
করেন! এটাই সঠিক পদ্ধতি।
প্রশ্ন: ক। জুম্মার দিন বাংলা
আলোচনার সময়, অথবা যে কোন বক্তব্যের মাঝে কোরানের আয়াত উল্লেখ
করলে প্রতিবারেই কি بسم الله বলতে
হবে?
উত্তর: ক।
না, বক্তব্যর মধ্যে (যে ভাষায় হোক না কেন) আয়াত উদ্ধৃতি
দিলে বা দলিল পেশ করলে, শুরুতে তাউস বা তাসমিয়া কোনটাই পড়া জরুরি নয়।
হাদিস ও আসারে তার প্রমাণ বহন করে। দলিল:
হাদিস নং-০১
مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا،
فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ شُجَاعًا
أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُ
بِلِهْزِمَتَيْهِ -يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ- ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا
كَنْزُكَ، ثُمَّ تَلاَ : "لَا يَحْسِبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ... "
الآيَةَ.
অর্থ: রাসূল (ﷺ) বলেন, যাকে
আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, সে তার যাকাত আদায় করল না, তার
সম্পদকে তার জন্যে বিষধর সাপে রূপান্তরিত করা হবে। সাপটার চোখের উপর থাকবে দুটি কালো
বিন্দু। কেয়ামত দিবসে সাপটি তার গলা পেঁচিয়ে ধরবে। তারপর দুই চোয়ালে তাকে চেপে ধরে
বলতে থাকবে- আমি তোমার সম্পদ। আমি তোমার সঞ্চিত ধনভান্ডার। অতপর হজরত রাসূলে কারীম
(ﷺ) এই আয়াত তিলাওয়াত করেন-
وَ لَا یَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ یَبْخَلُوْنَ
بِمَاۤ اٰتٰىهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَیْرًا لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَیُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ یَوْمَ
الْقِیٰمَةِ ؕ وَ لِلهِ مِیْرَاثُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ ؕ وَ اللهُ بِمَا
تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرٌ۠
আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদের
দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তা তাদের জন্য মঙ্গল এ যেন কিছুতেই মনে না করে। না এ
তাদের জন্য অমঙ্গল। যাতে তারা কৃপণতা করেছে কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলার বেড়ি হবে।
আসমান ও যমীনের স্বত্ত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তোমরা যা কর আল্লাহ তা বিশেষভাবে
অবহিত। (সূরা আলে ইমরান-১৮০) তাখরিজ:
বুখারি-১৪০৩
হাদিস নং-০২
عن بُريدةَ ، قالَ : خطبَنا رسولُ اللَّهِ صلَّى اللهُ
عليْهِ وسلَّمَ ، فأقبلَ الحسنُ ، والحسينُ رضيَ اللَّهُ عنْهما ، عليْهما
قَميصانِ أحمرانِ يعثُرانِ ويقومانِ ، فنزلَ فأخذَهما ، فصعِدَ بِهما المنبرَ ،
ثمَّ قالَ : صدقَ اللَّهُ : أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ ،
رأيتُ هذينِ فلم أصبِرْ ، ثمَّ أخذَ في الخطبةِ
الراوي : بريدة بن الحصيب الأسلمي | المحدث : الألباني | المصدر : صحيح أبي داود
الصفحة أو الرقم: 1109 | خلاصة حكم المحدث
: صحيح
একদা মহানবি (ﷺ) খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় হজরত হাসান ও হুসাইন
((রা.)) পড়ে-উঠে তাঁর সামনে আসতে লাগলে তিনি মিম্বর থেকে নিচে নেমে তাঁদেরকে উপরে তুলে
নিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআলা সত্যই বলেছেন,
(إنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلاَدُكُمْ فِتْنَةٌ)
(অর্থাৎ, তোমাদের
ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য ফিতনাই তো।) আমি এদেরকে পড়ে-উঠে চলে আসতে দেখে
ধৈর্য রাখতে পারলাম না। বরং খুতবা বন্ধ করে এদেরকে তুলে নিলাম। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-১১০৯
হাদিস/আসার নং-০৩
روى الطبري في
"التفسير" (8 / 467)، قال: حَدَّثَنِي يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ،
قَالَ: حدثنا هُشَيْمٌ، قَالَ: أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ أَبِي سُلَيْمٍ،
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ عَلْقَمَةَ وَمَسْرُوقٍ: أَنَّهُمَا سَأَلَا
ابْنَ مَسْعُودٍ عَنِ الرِّشْوَةِ، فَقَالَ: مِنَ السُّحْتِ. قَالَ: فَقَالَا:
أَفِي الْحُكْمِ؟ قَالَ: ذَاكَ الْكُفْرُ. ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ: وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ
هُمُ الْكَافِرُونَ
".
وهذا إسناد رواته ثقات،
وصححه الشيخ سعد الحميد في تحقيق "سنن سعيد بن منصور" (4 / 1472).
অর্থাৎ তিনি বললেন, এটা কুফরী। তারপর তিনি তিলাওয়াত
করলেন এবং যে না করে। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দ্বারা বিচার করুন, তারাই অবিশ্বাসী। তাখরিজ: সুনানে সাদ ইব মানছুর-৪/১৪৭২; তাফসিরে তাবারি-৮/৪৬৭
প্রিয় পাঠক আমি উপরে দুটি
হাদিস একটি আসার উল্লেখ করলাম দেখুন সাধারণ নছিহত ও খুতবাকালে আয়াত পাঠকালে তাউস-তাসমিয়া পড়া হয়নি।
সারকথা হলো, তেলাওয়াত ও উদ্ধৃতি এক নয়।
সুতরাং বক্তব্যের মাঝে বা কখনও দলিল হিসেবে আয়াত পেশ করলে তাউস-তাসমিয়া (আউজু-বিসমিল্লাহ)
পড়া লাগবে না, সুন্নাহ নয়। তবে আমার জানামতে
জুমুআ/ঈদের প্রথম খুতবার শেষে যে আয়াত পাঠ করা হয়, তখন শুধু তাউস (আউজুবিল্লাহ) পড়তে
হবে, কেননা এটা তেলাওয়াত হিসেবে পাঠ করা হয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩০৪
আসসালামু আলাইকুম।
মুহতারাম! একজন ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে
মাঝে মাঝে বেহুঁশ থাকতো, এখন উক্ত সময়ের নামাজ না আদায় করলে ঐ
নামাজের কাফফারা দিতে হবে কি?
জনৈক মাওলানা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, কাফফারা দিতে হবে
কিনা তার আগে একটি বিষয় পরিষ্কার হতে হবে, কি পরিমান
সময় বেহুশ বা অজ্ঞান থাকলে নামাজ মাফ হয়ে যায়।
প্রশ্ন: ক। কত সময় বেহুশ/ অজ্ঞান থাকলে নামাজ মাফ হয়ে যায়।
উত্তর: ক। এ বিষয়ে ইমাম আবু হানিফা বলেন,
وقال أبو حنيفة: إن أغمى عليه
خمس صلوات قضاها، وإن زادت سقط فرض القضاء في الكل، لأن ذلك يدخل في التكرار،
فأسقط القضاء كالجنون. ولنا ما روي أن عماراً غُشي عليه أياماً لا يصلي ثم استفاق
بعد ثلاث فقال: هل صليت؟ فقيل: ما صليت منذ ثلاث، فقال: أعطونى وضوءً
সারকথা হলো, ৫ ওয়াক্ত নামাজ বা একদিন একরাত
যদি বেহুশ/অচেতন থাকে, তাহলে নামাজ
কাজা আদায় করতে হবে আর যদি এর বেশি হয়, তাহলে ঐ সময়ের নামাজ
আদায় করতে হবে না। দলিল:
আসার নং-০১
عن نافعٍ: (أنَّ عبدَ اللهِ بنَ
عُمرَ رَضِيَ اللهُ عَنْه أُغمي عليه، فذَهَب عقْلُه، فلمْ يقضِ الصَّلاةَ
অর্থ: হজরত নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. দুই দিন অজ্ঞান ছিলেন কিন্তু
ঐ সময়ের নামায কাযা করেননি। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা-৬৬৬২
আসার নং-০২
6502 حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ ، عَنْ مَنْصُورٍ ، عَنِ
الْحَارِثِ ، عَنْ إِبْرَاهِيمِ ، قَالَ : كَانَ يَقُولُ فِي الْمُغْمَى عَلَيْهِ
إِذَا أُغْمِيَ عَلَيْهِ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ : أَعَادَ وَإِذَا كَانَ أَكْثَرَ مِنْ
ذَلِكَ لَمْ يُعِدْ
অর্থ: হজরত ইব্রাহিম (রহ.) বলেন, একদিন একরাত অজ্ঞান
থাকলে কাজা করবে; কিন্তু
এর বেশি হলে কাজা লাগবে না। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা-৬৫০২
হজরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন-
إِذَا أُغْمِيَ عَلَيْهِ يَوْمٌ
وَلَيْلَةٌ أَعَادَ، وَإِذَا كَانَ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ لَمْ يُعِدْ
এক দিন এক রাত অজ্ঞান থাকলে নামায
কাযা করবে। এর চেয়ে বেশি হলে কাযা করবে না। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৬৬৫৪
সুতরাং আপনার প্রশ্নে বর্ণিত
আলোকে বলা যায়, উক্ত ব্যক্তি একাধারে ২৪ ঘন্টা বা ৫ ওয়াক্তের
বেশি সময় ধরে অজ্ঞান থাকে, এমতাবস্থায় তার নামাজের কাফফারা লাগবে না। আর
যদি ২৪ ঘন্টার কম সময় অচেতন থাকে, তাহলে ঐ সময়ের কাজাকৃত
নামাজের কাফফরা দিতে হবে। সূত্র: সূত্র: কিতাবুল আছল ১/১৯০;
ফাতওয়ায়ে শামি- ২য় খণ্ড,
৭২
পৃষ্ঠা
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩০৫: আসসালামু আলাইকুম। বাইআত কত প্রকার । গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
ও আত্মশুদ্ধির জন্য কোন খাঁটি শায়েখের হাতে বাইআত হওয়া কি বিদআত? পবিত্র কুরআন-হাদিসের আলোকে সমাধান দিলে উপকৃত হতাম। তারিখ-১৪/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতার হোসেন
লালমনিহাট থেকে----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن
الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানা-দরুদের
পর কথা হলো, আপনার
প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য দুভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। বাইআত কত প্রকার।
উত্তর: ক। বাইআত কত প্রকার এ
ব্যাপারে উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেমেদ্বীন
শাহ ওলীউল্লাহ দেহলভি (রহ.) স্বীয় কিতাব ‘আল কাওলুল জামিল’ এ বলেন,
فالحق ان البيعة
على اقسام، منها
بيعة الخلافة، ومنها
بيعة الاسلام، ومنها
بيعة التمسك بحبل
التقوى، ومنها بيعة
الهجرة والجهاد، ومنها
بيعة التوثق فى
الجهاد، (القول الجميل
مع شرح شفاء
العليل-1/6
অর্থাৎ বাইয়াত ৫ প্রকার। যথা:
(০১) খিলাফাতের
বাইয়াত। যা ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের আনুগত্বের প্রতীক হিসেবে নেয়া হয়ে
থাকে।
(০২) বাইয়াতে
ইসলাম। তথা ইসলাম গ্রহণের জন্য
বাইয়াত নেয়া।
(০৩) তাকওয়া
পরহেযগারীতে অগ্রগামী হবার শপথের বাইয়াত। যাকে বাইয়াতে তাসাওউফও বলা হয়।
(০৪) বাইয়াতে
জিহাদ ও হিজরত।
(০৫) জিহাদের
ময়দানে দৃঢ় থাকার বাইয়াত। সূত্র: আল-কওলুল জামিল মাআ শারহি শিফায়িল আলিল- ১ম খণ্ড, ৬ পৃ.
(০১) খিলাফাতের
বাইয়াত: যা ইসলামী
রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের আনুগত্বের প্রতীক হিসেবে নেয়া হয়ে থাকে। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ
بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ فُرَاتٍ
الْقَزَّازِ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا حَازِمٍ، قَالَ قَاعَدْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ
خَمْسَ سِنِينَ، فَسَمِعْتُهُ يُحَدِّثُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
قَالَ “ كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ
تَسُوسُهُمُ الأَنْبِيَاءُ، كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبِيٌّ، وَإِنَّهُ
لاَ نَبِيَّ بَعْدِي، وَسَيَكُونُ خُلَفَاءُ فَيَكْثُرُونَ. قَالُوا فَمَا تَأْمُرُنَا قَالَ فُوا بِبَيْعَةِ
الأَوَّلِ فَالأَوَّلِ، أَعْطُوهُمْ حَقَّهُمْ، فَإِنَّ اللَّهَ سَائِلُهُمْ
عَمَّا اسْتَرْعَاهُمْ ”( )
হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবি
করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, বনী ইসরাইলের নবিগণ তাদের
উম্মতগণকে শাসন করতেন এবং যখন কোন নবি ইন্তেকাল করতেন তখন আরেকজন তার স্থলাভিষিক্ত
হতেন। আর আমার পরে কোন নবি আসবে না তবে অনেক খলিফা হবে সাহাবারা আরজ করলেন ইয়া
রাসূল (ﷺ) আপনি আমাদের কি নির্দেশ করছেন। তিনি বললেন তোমরা
ধারাবাহিকভাবে তাদের বাইয়াতের হক আদায় করবে তোমাদের উপর তাদের যে হক রয়েছে তা আদায়
করবে, নিশ্চয়
আল্লাহ তাদেরকে ওই সব বিষয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন যার দায়িত্ব তাদের উপর অর্পন
করা হয়েছিল । তাখরিজ: বুখারী-৩৪৫৫,
মুসলিম-১৮৪২
হাদিস নং-০২
عَنْ مُعَاوِيَةَ أَنّ رَسُولَ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ مَاتَ وَلَيْسَ عَلَيْهِ
إِمَامٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً হজরত
মুআবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মারা গেল, অথচ তার কোন ইমাম নেই, সে আসলে জাহেলিয়াতের মরণ মারা
গেল। মাজমাউল জাওয়ায়িদ-৫/২২৪,২২৫
হাদিস নং-০৩
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ : جَاءَ ابْنُ عُمَرَ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُطِيعٍ
، فَلَمَّا رَآهُ قَالَ :
هَاتُوا وِسَادَةً لأَبِي عَبْدِ
الرَّحْمَنِ ، قَالَ :
إِنِّي لَمْ أَجِئْكَ لأَجْلِسَ
، إِنَّمَا جِئْتُكَ لأُحَدِّثَكَ بِحَدِيثٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، سَمِعْتُهُ يَقُولُ : ” مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللَّهَ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ لا حُجَّةَ لَهُ ” . قَالَ :
” وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي
عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مَيْتَةً جَاهِلِيَّةً ( )
“যে ব্যক্তি আনুগত্যের হাত উঠিয়ে নিল সে ব্যক্তি এমন অবস্থায় কেয়ামত
দিবসে আল্লাহ তাআলার সামনে উপস্থিত হবে যে, তার মুক্তির
স্বপক্ষে কোনও যুক্তি-প্রমান থাকবেনা, আর যে ব্যাক্তি এমন
অবস্থায় মারা যাবে যার ঘাড়ে বায়আত নেই। সে যেন জাহিলিয়্যাতের অর্থাৎ অজ্ঞতার যুগের
মৃত্যুবরন করল।
তাখরিজ: মুসলিম-১৮৫১
(০২) বাইয়াতে
ইসলাম। তথা ইসলাম গ্রহণের জন্য
বাইয়াত নেয়া। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ
عَبَّاسٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ مُحَمَّدِ
بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرٍ ـ رضى الله عنه ـ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ النَّبِيَّ
صلى الله عليه وسلم فَبَايَعَهُ عَلَى الإِسْلاَمِ، فَجَاءَ مِنَ الْغَدِ
مَحْمُومًا، فَقَالَ أَقِلْنِي، فَأَبَى ثَلاَثَ مِرَارٍ، فَقَالَ "
الْمَدِينَةُ كَالْكِيرِ، تَنْفِي خَبَثَهَا، وَيَنْصَعُ طَيِّبُهَا ".
জাবির ইবনি আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। এক বেদুঈন লোক রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর হাতে ইসলামের উপর বায়াত গ্রহণ করিল।
পরে সে মদীনায় জ্বরে আক্রান্ত হলে রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর নিকট উপস্থিত হল এবং বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার বায়াত
প্রত্যাহার করুন। তিনি তা করিলেন না। কিন্তু সে পুনরায় এসে বলিল, আমার বায়াত প্রত্যাহার করুন। তিনি এবারও তা করিলেন না। এরপর সে চলে গেল,
তখন রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেন, মদীনা কামারের হাপরের মত,
যে এর ময়লা দূর করে এবং নিখুঁতটুকু রেখে দেয়। তাখরিজ: বুখারি-১৮৮৩
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنِي الْحَبِيبُ
الْأَمِينُ، أَمَّا هُوَ فَحَبِيبٌ إِلَيَّ، وَأَمَّا هُوَ عِنْدِي، فَأَمِينٌ
عَوْفُ بْنُ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيُّ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً، فَقَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» وَكُنَّا حَدِيثَ عَهْدٍ بِبَيْعَةٍ، فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» قَالَ: فَبَسَطْنَا أَيْدِيَنَا وَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَعَلَامَ
نُبَايِعُكَ؟ قَالَ:
«عَلَى أَنْ تَعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا،
وَالصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، وَتُطِيعُوا – وَأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيَّةً – وَلَا تَسْأَلُوا النَّاسَ شَيْئًا» فَلَقَدْ رَأَيْتُ بَعْضَ أُولَئِكَ النَّفَرِ يَسْقُطُ سَوْطُ
أَحَدِهِمْ، فَمَا يَسْأَلُ أَحَدًا يُنَاوِلُهُ إِيَّاهُ
আউফ বিন মালিক আশজাঈ বলেন, আমাদের সাত বা আট নয়জন লোকের
উপস্থিতিতে রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর
কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? অথচ আমরা ইতোপূর্বে বাইয়াত গ্রহণের সময় তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি।
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরাতো আপনার কাছে বাইয়াত
গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর
কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ইতোপূর্বে
বাইয়াত হয়েছি। তিনি পুনরায় বললেন, তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর
কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
হে আল্লাহর রাসূল! আমরাতো ইতোপূর্বে আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি।
এখন আবার আপনার কাছে কিসের বাইয়াত নিবো? তিনি বললেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, এবং তার সাথে কাউকে শরীক
করো না, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় কর এবং আল্লাহর আনুগত্ব কর।
তিনি আর একটি কথা বললেন চুপে চুপে। তা হল-লোকের কাছে কোন কিছুর জন্য হাত পাতবে না।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমি দেখেছি, সেই
বাইয়াত গ্রহণকারী দলের কারো কারো উটের পিঠে থাকা অবস্থায় হাত থেকে চাবুক পরে গেছে
কিন্তু সে কাউকে তা তুলে দিতে অনুরোধ করেনি, বরং সে নিজেই
নিচে নেমে তুলে নিয়েছে। তাখরিজ: মুসলিম-১০৪৩
(০৩) তাকওয়া
পরহেযগারীতে অগ্রগামী হবার শপথের বাইয়াত। যাকে বাইয়াতে তাসাওউফও বলা হয়।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ
عَلَى أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ
وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ
بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ
فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ “হে নবি, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না,
ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা
করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন র্গভজাত সন্তান
বলে মথ্যিা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা
র্প্রাথনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।”
সূরা মুমতাহিনা- ১২
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ أَلَا تُبَايِعُونِي عَلَى مَا
بَايَعَ عَلَيْهِ النِّسَاءُ أَنْ لَا تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا
تَسْرِقُوا وَلَا تَزْنُوا وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ وَلَا تَأْتُوا بِبُهْتَانٍ تَفْتَرُونَهُ بَيْنَ
أَيْدِيكُمْ وَأَرْجُلِكُمْ وَلَا تَعْصُونِي فِي مَعْرُوفٍ قُلْنَا بَلَى يَا
رَسُولَ اللَّهِ فَبَايَعْنَاهُ عَلَى ذَلِكَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَنْ أَصَابَ بَعْدَ ذَلِكَ شَيْئًا فَنَالَتْهُ
عُقُوبَةٌ فَهُوَ كَفَّارَةٌ وَمَنْ لَمْ تَنَلْهُ عُقُوبَةٌ فَأَمْرُهُ إِلَى
اللَّهِ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ وَإِنْ شَاءَ عَاقَبَهُ
উবাদা ইবনি সামিত (রা.)হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সাহাবা বেষ্টিত অবস্থায় বললেন, তোমরা আমার নিকট এ কথার উপর
বায়াত কর যে, তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করিবে না,
চুরি করিবে না, ব্যাভিচার করিবে না, স্বীয় সন্তানদের হত্যা করিবে না। আর তোমরা কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেবে
না এবং ন্যায় কাজে আমার অবাধ্যতা প্রকাশ করিবে না; যে
ব্যক্তি এরূপ বায়য়াত পূর্ণ করিবে, তার সওয়াব আল্লাহর
যিম্মায়, আর যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে কোন অপরাধ করিবে,
তারপর শাস্তি ভোগ করিবে, তা তার জন্য কাফ্ফারা
হইয়া যাবে। আর কেউ যদি কোন অপরাধ করে এবং আল্লাহ তায়ালা তা ঢেকে রাখেন, তার ব্যাপার আল্লাহর ইচ্ছাধীন। যদি তিনি ইচ্ছে করেন, তবে তাকে ক্ষমাও করিতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও
দিতে পারেন। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-৪১৬১
(০৪) বাইয়াতে
জিহাদ ও হিজরত। জিহাদ বা কাফেরদের জুলুমী রাষ্ট্র ছেড়ে দেয়ার বাইয়াত।
হাদিস নং-০১
عَنْ
أَنَسٍ، أَنَّ أَصْحَابَ، مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم كَانُوا يَقُولُونَ يَوْمَ الْخَنْدَقِ نَحْنُ الَّذِينَ بَايَعُوا مُحَمَّدًا عَلَى الإِسْلاَمِ مَا بَقِينَا أَبَدًا أَوْ قَالَ عَلَى الْجِهَادِ . شَكَّ حَمَّادٌ وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " اللَّهُمَّ إِنَّ الْخَيْرَ خَيْرُ الآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَهْ "
.
অর্থ: হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, রাসুল স. শীতের এক সকাল বেলা বের হলেন। মুহাজির ও আনসারগণ তখন পরীখা খননের
কাজে লিপ্ত ছিলেন তখন নবি (ﷺ) বললেন, হে আল্লাহ তুমি আনসার ও
মুজাহিরদের ক্ষমা করে দাও। তখন তারা সাড়া দিয়ে জবাব দিলেন আমরাও সেই জামায়াত যারা
আজীবন জিহাদ করার জন্য মুহাম্মদ স. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। তাখরিজ: মুসলিম-১৮০৫; বুখারি-৭২০১
হাদিস নং-০২
أَنَّ يَعْلَى بْنَ أُمَيَّةَ قَالَ جِئْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَبِي أُمَيَّةَ يَوْمَ الْفَتْحِ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بَايِعْ أَبِي عَلَى الْهِجْرَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُبَايِعُهُ عَلَى الْجِهَادِ وَقَدْ انْقَطَعَتْ الْهِجْرَةُ
হজরত ইয়ালা ইবনি উমাইয়া (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আমি আমার পিতা উমাইয়াকে
রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর
নিকট নিয়ে আসলাম এবং বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমার পিতা থেকে হিজরত করার উপর
বায়য়াত গ্রহন করুন। তিনি বললেন, আমি তার থেকে জিহাদ করার বায়াত নেব। কারন হিজরত শেষ হইয়া
গেছে। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-৪১৬০
হাদিস নং-০৩
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنِّي جِئْتُ أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَلَقَدْ تَرَكْتُ أَبَوَيَّ يَبْكِيَانِ قَالَ ارْجِعْ إِلَيْهِمَا فَأَضْحِكْهُمَا كَمَا أَبْكَيْتَهُمَا
হজরত আবদুল্লাহ ইবনি আমর (রা.)হতে
বর্ণিত। এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর নিকট উপস্থিত হইয়া বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমি আপনার
নিকট হিজরতের উপর বায়য়াত গ্রহন করছি আর আমি আমার মাতাপিতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায়
রেখে এসেছি। তিনি বললেন, তুমি তাহাদের কাছে ফিরে যাও এবং
তাহাদেরকে হাসাও যেমন তুমি তাহাদেরকে কাঁদিয়েছ। তাখরিজ:
সুনানে নাসায়ি-৪১৬৩
(০৫) জিহাদের
ময়দানে দৃঢ় থাকার বাইয়াত: অর্থাৎ যদি কখনো জিহাদের ময়দানে
ভয়ে পালিয়ে যাবার শংকা দেখা দেয়, তখন আমীরে জিহাদের হাতে
দৃঢ়তার বাইয়াত গ্রহণ করা। দলিল:
হাদিস নং-০১
عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيْمٍ
قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ الْحَرَّةِ وَالنَّاسُ يُبَايِعُوْنَ لِعَبْدِ اللهِ
بْنِ حَنْظَلَةَ فَقَالَ ابْنُ زَيْدٍ عَلَى مَا يُبَايِعُ ابْنُ حَنْظَلَةَ
النَّاسَ قِيْلَ لَهُ عَلَى الْمَوْتِ
হজরত আববাদ ইবনে তামীম রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
হারররার গটনার দিন যখন লোকজন আব্দুল্লাহ ইবনে হানজালা রা. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন,তখন ইবনে জায়েদ রা.
জিজ্ঞেস করলেন, ইবনে হানজালা লোকদের কিসের উপর
বাইয়াত গ্রহণ করছেণ। তখন
তাকে বলা হল দ্বীনের ওপর অটল থেকে মৃত্য বরণ করার উপর বাইয়াত গ্রহণ করেছেন। বুখারি-৪১৬৭,১৯৫৯
হাদিস নং-০২
عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي
عُبَيْدٍ قَالَ قُلْتُ لِسَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ عَلَى أَيِّ شَيْءٍ
بَايَعْتُمْ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْحُدَيْبِيَةِ
قَالَ عَلَى الْمَوْتِ
হজরত ইয়াযীদ ইবনি আবু উবায়দ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি সালামা ইবনি আকওয়া (রা.) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা হুদায়বিয়ার দিনে রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর নিকট কোন কথার উপর বায়য়াত গ্রহন
করেছিলেন? তিনি বলেন, মৃত্যুর উপর। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-৪১৫৯
হুদাইবিয়ার দিনে বাইআত
গ্রহণকারীদের সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে-
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ
إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ فَمَن نَّكَثَ
فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَى نَفْسِهِ وَمَنْ أَوْفَى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ
فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا “হে রাসুল, যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করল,
তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করল। আল্লাহর কুদরতের হাত তাদরে
হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে অবশ্যই সে তা নিজের
ক্ষতির জন্যই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার র্পূণ করে আল্লাহ সত্ত্বরই
তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।” সূরা ফাতাহ- ১০
আল্লাহ তাআলা আরও এরশাদ করেন, لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ
يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ
السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا “আল্লাহ মুমিনদের প্রতি
সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল।
আল্লাহ অবগত যা তাদের অন্তরে বিদ্যমান। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল
করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন। সূরা ফাতাহ- ১৮
প্রশ্ন: খ। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা ও
আত্মশুদ্ধির জন্য কোন খাঁটি শায়েখের হাতে বাইআত হওয়া কি বিদআত?
উত্তর: খ। উপরোক্ত আয়াতে কারিমা এবং
হাদিস শরিফসমূহ প্রমাণ করে বাইয়াত গ্রহণ করা শরীয়ত সম্মত কাজ। দলিল:
حَدَّثَنِي الْحَبِيبُ
الْأَمِينُ، أَمَّا هُوَ فَحَبِيبٌ إِلَيَّ، وَأَمَّا هُوَ عِنْدِي، فَأَمِينٌ
عَوْفُ بْنُ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيُّ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً، فَقَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» وَكُنَّا حَدِيثَ عَهْدٍ بِبَيْعَةٍ، فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» قَالَ: فَبَسَطْنَا أَيْدِيَنَا وَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَعَلَامَ
نُبَايِعُكَ؟ قَالَ:
«عَلَى أَنْ تَعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا،
وَالصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، وَتُطِيعُوا – وَأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيَّةً – وَلَا تَسْأَلُوا النَّاسَ شَيْئًا» فَلَقَدْ رَأَيْتُ بَعْضَ أُولَئِكَ النَّفَرِ يَسْقُطُ سَوْطُ
أَحَدِهِمْ، فَمَا يَسْأَلُ أَحَدًا يُنَاوِلُهُ إِيَّاهُ
আউফ বিন মালিক আশজাঈ (রা.)
বলেন, আমাদের সাত
বা আট নয়জন লোকের উপস্থিতিতে রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর
কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? অথচ আমরা ইতোপূর্বে বাইয়াত গ্রহণের সময় তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি।
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরাতো আপনার কাছে বাইয়াত
গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর
কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ইতোপূর্বে
বাইয়াত হয়েছি। তিনি পুনরায় বললেন, তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর
কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
হে আল্লাহর রাসূল! আমরাতো ইতোপূর্বে আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি।
এখন আবার আপনার কাছে কিসের বাইয়াত নিবো? তিনি বললেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, এবং তার সাথে কাউকে শরীক
করো না, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় কর এবং আল্লাহর আনুগত্ব কর।
তিনি আর একটি কথা বললেন চুপে চুপে। তা হল-লোকের কাছে কোন কিছুর জন্য হাত পাতবে না।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমি দেখেছি, সেই
বাইয়াত গ্রহণকারী দলের কারো কারো উটের পিঠে থাকা অবস্থায় হাত থেকে চাবুক পরে গেছে
কিন্তু সে কাউকে তা তুলে দিতে অনুরোধ করেনি, বরং সে নিজেই
নিচে নেমে তুলে নিয়েছে। তাখরিজ: মুসলিম-১০৪৩
বাইয়াত হওয়ার বিধান: হজরত থানভি (রহ.) ও ইদ্রিস কান্ধলবী (রহ.) এ প্রসঙ্গে লেখেন, ‘কোরআনের বহু আয়াত ও রাসূল (ﷺ) এর হাদিসে বাইয়াতের বিষয়টি উল্লেখ থাকায়, বাইয়াত সুন্নাত, কল্যাণকর ও বরকতের বিষয় হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। রাসূল (ﷺ) উম্মতের শিক্ষক ও তাদের আত্মাকে
পরিশুদ্ধকারী ছিলেন। তেমনিভাবে তিনি ছিলেন ইসলামি রাষ্ট্রের প্রধান। অতএব, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি যে বাইয়াত
নিয়েছিলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্যও ওই বাইয়াত সুন্নাত। তিনি উম্মতের অন্তরকে পরিশুদ্ধকারী হিসেবে
উম্মত থেকে যে বাইয়াত নিয়েছিলেন, তার স্থলাভিষিক্ত হক্কানী রব্বানী উলামাদের জন্য সে বাইয়াত সুন্নাত। (তবে আত্মশুদ্ধি ফরজ, ইনশাল্লাহ
পরে কখনও এ বিষয়ে আলোচনা হবে) সূত্র: সিরাতে মোস্তফা, খণ্ড-২,
পৃষ্ঠা-৩৯১, ইসলামিয়া লাইব্রেরি, বাংলাবাজার ঢাকা
সারকথা কথা হলো, উপরের হাদিসটিতে উক্ত সাহাবি বললেন, তিনি ইসলামের বাইয়াত নিয়েছেন তারপরও রাসূল (ﷺ) তাকে কয়েকটি গুনাহ না করার ব্যাপারে বাইআত বা অঙ্গীকার
নিলেন। সুতরাং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা ও
আত্মশুদ্ধির জন্য কোন খাঁটি শায়েখের হাতে বাইআত হওয়াকে বিদআত বলার কোনো সুয়োগ নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩০৬
আসসালামু আলাইকুম।
পান্জেগানা মসজিদে যেখানে নির্ধারিত
মুয়াজ্জিন নাই, সেখানে কোন ওয়াক্তে আজান ছাড়া নামাজ আদায় করলে কি নামাজ আদায়ে কোন সমস্যা
হবে। উল্লেখ্য, এই পান্জেগানা মসজিদে পার্শ্ববর্তী
জামে মসজিদের আজান এসে পৌঁছায়। তারিখ: ১৫/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুর রহমান
সাভার থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
اتفق الفقهاء على أن الأذان من
خصائص الإسلام وشعائره الظاهرة . ولكنهم اختلفوا في حكمه ،
অর্থাৎ হজরতে ফোকাহায়ে
কেরামগণ! এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, নিশ্চয় আজান হলো,
ইসলামের বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি এবং প্রকাশ্য নিদর্শন। তবে হুকুমের
ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যেমন,
اتَّفقَ الأئمَّةُ الثَّلاثةُ
علَى أنَّ الأذانَ سنَّةٌ مؤكَّدةٌ، مَا عدَا الحنابلةُ، وكذلكَ الظَّاهريَّةُ،
وأهلُ الحديثِ، فإنَّهمْ قالُوا: إنَّهُ فرضُ كفايةٍ
অর্থাৎ সম্মানিত তিন ইমাম
ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, আজান
হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, তবে
ইমাম আহমদ (রহ.) ভিন্নমত পোষণ করেছেন। এরকমভাবে আহলে জাহের, আহলে হাদিসদের মতে আজান দেওয়া ফরজে
কিফায়া।
প্রশ্ন: ক। পান্জেগানা মসজিদে কোন ওয়াক্তে আজান ছাড়া নামাজ আদায় করলে কি নামাজ
আদায়ে কোন সমস্যা হবে।
উত্তর: ক। ফিকহে হানাফির মতে,:
وَيُكْرَهُ
أَدَاءُ الْمَكْتُوبَةِ بِالْجَمَاعَةِ فِي الْمَسْجِدِ بِغَيْرِ أَذَانٍ
وَإِقَامَةٍ. كَذَا فِي فَتَاوَى قَاضِي خَانْ (الفتاوى الهندية، كتاب الصلاة،
الباب الثانى فى الاذان-1/54
পান্জেগানা মসজিদে কোন ওয়াক্তে আজান ছাড়া নামাজ আদায় করলে মাকরুহ হবে। সূত্র: ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৫৪
একই রকম মতামত দিয়েছেন
হাম্বলি মাজহবের অনুসারি ইমাম ইবনে বায (রহ.)-
ا
ذا كنا نصلي في مسجد صغير ونسمع
أذان مسجد كبير فهل السنة أن يؤذن في هذا المسجد الصغير أم نكتفي بالأذان الذي
سمعناه بالمسجد الكبير؟
الجواب
الحمد لله.
"ما دام المسجد
يُصلى فيه ، فالسنة أن يكون فيه أذان ويكون فيه إقامة ، ولو سمعتم أذان المسجد
الآخر ، فإن المسافة بعيدة في الغالب ولا سيما مع هذه المكبرات فيسمع من خلالها
بعضهم بعضاً ، والسنة أن كل مسجد يؤذن فيه ويقام فيه ، ومن سمع الأذان في أي مسجد
أجابه
لمصدر: سماحة الشيخ عبد العزيز
بن باز رحمه الله - "فتاوى نور على الدرب"(2/685)
অর্থাৎ তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, বড়
মসজিদের আজান দ্বারা ছোট মসজিদের আজান যথেষ্ট হবে কি না আলাদা দিতে হবে? তিনি
বললেন, যেখানে নিয়মিত নামাজ সেখানে আলাদা আজান ও ইকামত দিতে হবে।
সূত্র: ফাতওয়ায়ে নূরুন
আলাল দারব-২/৬৮৫, শায়েখ
আব্দুল আজিজ ইবনে বায (রহ.)
প্রশ্ন: খ।
আজান-ইকামত ছাড়া নামাজ
সহিহ হবে কি?
উত্তর: খ।
এ ব্যাপারে, تصحُّ الصلاةُ بغير أذانٍ ولا
إقامةٍ، وهذا باتِّفاقِ المذاهبِ الفقهيَّة الأربعة: الحنفيَّة، والمالكيَّة،
والشافعيَّة، والحنابلة
অর্থাৎ ইমাম আবু হানিফা, শাফেয়ি, মালেক ও আহমদ (রহ.) এর ঐক্যমতে
আজান ও ইকামত ছাড়া নামাজ সহিহ হবে। দলিল:
أَتَيْنَا عَبْدَ اللهِ بْنَ
مَسْعُودٍ فِي دَارِه، فَقَالَ: أَصَلّى هؤُلَاءِ خَلْفَكُمْ؟ فَقُلنَا: لَا،
قَالَ: فَقُومُوا فَصَلّوا، فَلَمْ يَأمُرْنَا بِأَذَانٍ وَلَا إِقَامَةٍ.
অর্থ: হজরত আসওয়াদ ও আলকামা রাহ. থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন-
আমরা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর ঘরে এলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের পেছনের লোকেরা কি নামায পড়েছে? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, (তাহলে) তোমরা দাঁড়াও, নামায পড়। তখন তিনি আমাদের আযান ও ইকামতের নির্দেশ দেননি। তাখরিজ: মুসলিম-৫৩৪
সারকথা হলো, আপনার
প্রশ্নে উল্লেখিত পাঞ্জেগানা মসজিদে আজান ও ইকমাত দিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। না
করলে মাকরুহ হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩০৭
আসসালামু আলাইকুম।
বাধাই মাল যেমন পাট, পিয়াজ ইত্যাদির ব্যাবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার। কতদিন
তা রাখা যায়? তারিখ: ১৫/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সাধারণত
গ্রাম-গঞ্জের মানুষ যখন নতুন ফসল কাটা হয়, তখন ফসলের দাম কম থাকে,
তাই
কম দামে ক্রয় করে গুদামজাত করে রাখে। আর যখন বাজারে বেশি দাম হয় তখন বিক্রি করে। খাদ্যদ্রব্য-পণ্য সামগ্রীর গুদামজাতকরণ এ
পদ্ধতি কি জায়েজ?
এর জবাব হলো, অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে খাদ্য-শস্য
বা সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য অধিক পরিমাণে আটকে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি
করা শরীয়তে নিষিদ্ধ। দলিল:
مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ
الراوي : معمر بن أبي معمر |المصدر : صحيح الترغيب | الصفحة أو الرقم : 1781 | خلاصة حكم المحدث
: صحيح | التخريج : أخرجه مسلم (1605)
অর্থ: রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি (প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী) আটকে রাখে
সে গুনাহগার। তাখরিজ: মুসলিম-১৬০৫; সহিহ তারগিব-১৭৮১
আর যদি খাদ্য ও পণ্য সামগ্রী
জমা করে রাখার বিষয়টি স্বাভাবিক পর্যায়ের হয়,
মানুষের
ক্ষতি ও অনটনের আশঙ্কা না থাকে এবং বাজারে ঐ পণ্যের সঙ্কট দেখা না দেয় তাহলে এ জাতীয়
সাধারণ গুদামজাত করা নাজায়েয নয়। যেমন ফকিহদের মতামত-
ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন,اَلْحُكْرَةُ فِي كُلِّ شَيْءٍ فِي السُّوقِ مِنَ الطَّعَامِ
وَالْكَتَّانِ وَالزَّيْتِ وَجَمِيعِ الْأَشْيَاءِ وَالصُّوفِ وَكُلِّ مَا يَضُرُّ
بِالسُّوقِ... فَلَا بَأْسَ بِذَلِكَ إذَا كَانَ لَا يَضُرُّ بِالسُّوقِ.
‘অর্থাৎ বাজারে
প্রত্যেকটা জিনিসে মজুদদারী হয়। যেমন খাদ্যদ্রব্য, লিনেন
বস্ত্র, তেল, পশম এবং অন্য সকল জিনিসে, যার
মজুদ বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ... তবে বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত না করলে এতে কোন সমস্যা
নেই’। সূত্র: আল-মুদাওয়ানাহ ৩/৩১৩
ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) বলেন,كُلُّ مَا أَضَرَّ بِالْعَامَّةِ حَبْسُهُ فَهُوَ احْتِكَارٌ وَإِنْ
كَانَ ذَهَبًا أَوْ فِضَّةً أَوْ ثَوْبًا- ‘যে কোন জিনিস মজুদ করলে যদি জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত
হয়, তবে সেটাই মজুদদারী হিসাবে গণ্য হবে। যদিও মজুদকৃত বস্ত্ত স্বর্ণ, রৌপ্য
বা কাপড় হয়’। সূত্র: আল-হেদায়া ৪ খণ্ড, ৪৭০পৃ.
সারকথা হলো, মজুদদারী নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ যেহেতু মুসলমানদেরকে
ক্ষতিগ্রস্ত করা, সেহেতু তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হ’লে মজুদদারী হারাম হবে না। সুতরাং আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত পাট, পিয়াজ ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য
মূল্য বেশি হলে বিক্রয় করলে ( ৪-৬ মাস বা তার বেশি
গুদামজাত করে রাখলে) আমাদের বর্তমান স্বাভাবিক বাজারে নাজায়েজ হবে না। সূত্র: নায়লুল
আওতার ৩/৬০৪, ‘মজুদদারী’ অনুচ্ছেদ;
আলজামেউস সাগীর পৃ.৪৮১
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩০৮
আসসালামু আলাইকুম।
হিজড়াগণ কি ওয়ারিশ পাবেন? তারিখ: ১৬/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সমাজসেবা
অধিদফতরের জরিপ মতে বর্তমানে বাংলাদেশে
হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার।
সূত্র: সমাজসেবা অধিদফতর, গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশ সরকার
হিজড়াও তাদের উত্তরাধিকার
হিসেবে সকল সম্পদের অংশ পাবে। কারণ তারাও বাবা-মার সন্তান। তবে হিজড়ারা কতটুকু সম্পদের অংশ পাবে, তা বুঝতে হলে আগে হিজড়ার পরিচয় ও প্রকারভেদ জানতে হবে।
প্রশ্ন: ক। হিজড়া কাকে বলে?
উত্তর: ক। ইসলামী
শরিয়তে হিজড়া বলা হয় যার পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ উভয়টি রয়েছে। অথবা কোনটিই নেই, শুধু
প্রশ্রাবের জন্য একটি মাত্র ছিদ্রপথ রয়েছে। মোটকথা যার শরীরে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ
উভয়টি বিদ্যামান তবে ত্রুটিযুক্ত। সূত্র: কামুসুল ফিকহ
প্রশ্ন: খ। হিজড়া কত প্রকার?
উত্তর: খ। হিজড়া তিন প্রকার। যথা:
(০১) পুরুষ হিজড়া : بعد البلوغ إن نبتت له لحية أو
أتى النساء أو احتلم كما يحتلم الرجال فهو ذكر
অর্থাৎ যেসব হিজড়াদের দাড়ি মোচ গোঁফ
গড়ায়, স্বপ্নদোষ হয় এবং সহবাসের শখ জাগে, সঙ্গে
সঙ্গে শরীরের আকার আকৃতি সবদিক দিয়ে পুরুষের মতো মনে হয়।
(০২) নারী হিজড়া
: وإن ظهر له
ثدي كثدي المرأة أو دُرَّ له لبن أو حاض أو حبل فهو أنثى অর্থাৎ যেসব হিজড়াদের স্তন ঋতুস্রাব সহবাসের উপযোগিতা, গর্ভ
সঞ্চার হওয়াসহ নারীজনিত সকল কিছু বিদ্যমান থাকে।
(০৩) পুরুষস্ত্রী
হিজড়া/উভয়লিঙ্গ হিজড়া : فإن لم يعرف أذكر هو أم أنثى،
بأن لم تظهر علامة من العلامات أو ظهرت وتعارضت فهو الخنثى المشكل.. অর্থাৎ যেসক হিজড়াদের মাঝে নারীপুরুষের
কোনো নিদর্শন নেই অথবা উভয় ধরনের নিদর্শন সমানভাবে বিদ্যমান তারাই তৃতীয় শ্রেণির হিজড়া
বা প্রকৃত হিজড়া । শরিয়তে তাদেরকে ‘খুনসায়ে মুশকিলা’ বা প্রকৃত হিজড়া বলে।
প্রশ্ন: গ। কে কতটুকু মিরাসের অংশ পাবে?
উত্তর: গ। وقد أجمع العلماء على أن الخنثى يورث حسب ما يظهر فيه
من علامات مميزة، فمثلا: إن بال من حيث يبول الرجل ورث ميراث الرجل، وإن بال من
حيث تبول المرأة ورث ميراث المرأة، وقد نقل الإجماع على هذا ابن المنذر وغيره.
أما إذا لم يظهر حاله، فهو خنثى
مشكل، وللخنثى المشكل حالتان
সারকথা হলো, হজরতে ওলামায়ে কেরামগণ! এ বিষয়ে ইজমা (ঐক্যমত) হয়েছে
যে, ১ নং পুরুষ হিজড়া হলে, পুরুষের অংশ,
২ নং নারী হিজড়া হলে নারীর অংশ পাবে আর পুরুষস্ত্রী হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গের) হলে, প্রসাবে
রাস্তা দ্বারা নারী বা পুরুষ নির্ণয় হবে। দলিল:
عن بن عباس أن رسول الله صلى
الله عليه و سلم سئل عن مولود ولد له قبل وذكر من أين يورث فقال النبي صلى الله
عليه و سلم يورث من حيث يبول.
অর্থাৎ : হজরত আব্দুল্লাহ আব্বাস
(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, কোনো এক গোত্রের নবজাতকের মীরাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে
যে, যে নারী নয়,
পুরুষও
নয়’ তার
মীরাস কী? উত্তরে নবি (ﷺ) বলেন তার মীরাস নির্ণিত হবে তার প্রস্রাবের পথকে কেন্দ্র করে।
তাখরিজ: মুসান্নেফে
আব্দুর রাজ্জাক-১৯২০৪; মুসান্নেফে ইবনে
আবি শায়বা-৩২০১৪
أن عليا رضي الله عنه سئل عن
المولود لا يدري أرجل أم امرأة فقال علي رضي الله عنه يورث من حيث يبول
অর্থাৎ : হজরত আলী (রাযি.) বর্ণনা
করেন, রাসূলের কাছে জানতে চাওয়া যার নারী পুরুষ হওয়ার কোনটাই স্পষ্ট
নয় তার বিধান কী? মিরাসে ক্ষেত্রে। তিনি বলেন তার হুকুম আরোপিত হবে
তার প্রস্রাবের রাস্তা দেখে। তাখরিজ: সুনানি বাইহাকি কবরা ১২২৯৪
অর্থাৎ যদি পুরুষালী লিঙ্গ দিয়ে
পেশাব করে তাহলে পুরুষ, আর যদি নারী লিঙ্গ দিয়ে পেশাব করে তাহলে নারী। আর
যদি দু’টি দিয়েই পেশাব করে, তাহলে
পেশাব আগে যে অঙ্গ দিয়ে বের হয়, সেই অঙ্গ হিসেবে নারী পুরুষ নির্ধারিত
হবে। অর্থাৎ যদি পেশাব প্রথমে পুরুষাঙ্গ দিয়ে বের হয়, তাহলে
পুরুষ আর যদি নারী অঙ্গ দিয়ে বের হয়,
তাহলে
তাকে নারী ধরা হবে এবং তারা সেই হিসেবে অংশ পাবে।
যদি উভয়টা দিয়ে একই সময়ে বের
হয়, তাহলে তাকে খুনছায়ে মুশকিল বলবে।
প্রশ্ন: ঘ। যদি প্রসাবে রাস্তা তথা
ছেলে-মেয়ে নির্ণয় সম্ভব
না হয়, তাহলে কিভাবে মিরাস পাবে।
উত্তর: ঘ। যদি উভয়টা দিয়ে একই সময়ে বের
হয়, নারী-পুরুষ নির্ণয় সম্ভব না হয়, তাহলে, মিরাসের ব্যাপারে ফোকাহায়ে কেরামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
এ বিষয়ে ইমামে আজম আবু
হানিফা বলেন, فقال أبو حنيفة: إنه يفرض أنه ذكر، ثم يفرض أنه أنثى،
ويعامل بعد ذلك بأسوأ الحالين، حتى لو كان يرث على اعتبار، ولا يرث على اعتبار آخر
لم يعط شيئًا. وإن ورث على كل الفرضين
অর্থাৎ নারী-পুরুষ পার্থক্য করা যায় না,
প্রকৃত/তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়াগণ উত্তরাধিকার সূত্রে
প্রাপ্ত সম্পদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের প্রাপ্ত অংশের মধ্য হতে কম অংশ যেটা হবে তাকে
তাই দেয়া হবে। উদাহরণস্বরূপ,
যদি
কোনো মৃত ব্যক্তি এক ছেলে, এক মেয়ে এবং একজন হিজড়া সন্তান রেখে মারা যায়, তাহলে
হিজড়াকে মেয়ের সমপরিমাণ অংশ দেয়া হবে। তদ্রƒপ মৃত
ব্যক্তি যদি এক ছেলে এবং এক হিজড়া রেখে মারা যায় তাহলে ছেলে পাবে দুই তৃতীয়াংশ সম্পদ
আর হিজড়া পাবে এক তৃতীয়াংশ সম্পদ। সূত্র: ফাতাওয়া শামী ১০/৪৫০, আলমউসূআতুল
ফিকহিয়্যাহ আলকুওয়াইতিয়্যাহ ২০/৩২,
আররাযী
শরহে সিরাজী; পৃষ্ঠা ৯৪
মূলকথা হলো, পুরুষ হিজড়া হলে পুরুষের,
নারী হিজড়া হলে নারীর অংশ পাবে। আর কোনটাও নির্ণয় না করা যায়,
তাহলে নারী-পুরুষের প্রাপ্ত অংশ হতে কম পাবে,
যা উপরে উদাহরণসহ দেখানো হয়েছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩০৯
আসসালামু আলাই কুম, আমার প্রশ্ন: ফরজ নামাজে একামত দেওয়ার সময় মুসুল্লিগণ নামাজের
জন্য কখন দাড়াবে ?মেহেরবানী করে দলীল ভিত্তিক
জবাব পেলে কৃতজ্ঞ থাকব, আল্লাহ সকলকে হেফাজত করুন আমিন। তারিখ: ১৭/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতার হোসেন যশোর থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, জামাতের কাতার সোজা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এ
ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই। তবে ফরজ নামাজে
একামত দেওয়ার সময় মুসুল্লিগণ নামাজের জন্য কখন দাঁড়াবে, এ
বিষয়ে ফুকাহায়ে কেরামের কয়েকটি মত পাওয়া যায়। যা সবকটি করারই সুযোগ রয়েছে। নিম্নে দুটি ছুরত বর্ণনা করবো
ইনশাল্লাহ। ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
(ক) প্রথম
ছুরত:
ذهب الجمهور إلى أنه إذا كان الإمام خارج المسجد، فلا يقوم المصلون
حتى يروا الإمام
وإن لم يروا
الإمام، فيقومون عند
نهاية الإقامة.
অর্থাৎ জমহুর (অধিকাংশ) এর
মতে, ইমাম যদি মসজিদের বাহিরে থাকে, তাহলে
মুসল্লিরা ইমামকে না দেখা পর্যন্ত দাঁড়াবে না।
ইমামকে দেখা না গেলে ইকামতের শেষে দাঁড়াবে। দলিল:
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِذَا أُقِيمَتْ الصَّلاَةُ فَلاَ تَقُومُوا حَتَّى تَرَوْنِي.» (صحیح البخاري ۱؍۱۸۸)
অর্থ: হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন
নামাজের ইকামত দেওয়া হবে, তখন আমাকে দেখার আগ পর্যন্ত
দাড়াবেনা। তাখরিজ: বুখারি-৬৩৭; মুসলিম-৬০৪
(খ) দ্বিতীয় ছুরত: وأما إذا كان الإمام حاضراً، ففي المسألة أقوال: অর্থাৎ ইমাম যদি উপস্থিত থাকে, এ বিষয়ে কয়েকটি মতামত রয়েছে। যেমন,
فقال الحنفية عند قوله: "حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ".
وقال المالكية: إنه ليس في ذلك حد محدود، وإنما على قدر طاقة الناس.
وقال الشافعية: يقومون بعد فراغ المؤذن من الإقامة.
وقال الحنابلة وزفر: يقومون عند قوله: "قد قامت الصلاة".
অর্থাৎ (০১) ইমাম আবু হানিফা
(রহ.) এর মতে, হাইয়া আলাস সালাহ বলার সময়।
(০২) নামাযের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই, বরং
ইকামতের শুরুতে, চলাকালীন বা শেষে উঠা নামাযীর জন্য জায়েয। আর এ
কথাই বলেছেন মালেকীগণ।
(০৩) মুয়াজ্জিন
যদি ইকামাত শেষ করে ফেলে তাহলে এটা বৈধ এবং শাফেঈ (রহ.) এটাই
বলেছেন।
(০৪) কদ
কমাতিস সালাহ বলার সময় দাঁড়াবে, এটা ইমাম আহমদ ইবনে
হাব্বলির (রহ.)
মতে।
আরেক মত আছে, মুয়াজ্জিন যখন হাইয়া আলাস
সালাহ বললে, তখন দাঁড়ানো মুস্তাহাব। দলিল:
আসার-০১
عن أنس بن مالك أنه : إذا قيل : «قد قامت الصلاة وثب فقام»
অর্থাৎ, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত,
যখন 'ক্বাদক্বামাতিস সালাহ' বলা হত, তখন তিনি লাফদিয়ে দাঁড়িয়ে যেতেন। তাখরিজ: সুনানে বায়হাকি-২/২০
আসার-০২
1.
عن عطية قال: كنا جلوسا عند
ابن عمر فلما أخذ المؤذن في الإقامة قمنا، فقال ابن عمر: «اجلسوا فإذا
قال: قد قامت الصلاة فقوموا عبدالرزاق (1/506).»
অর্থ: হজরত আতিয়্যা রহ. থেকে বর্ণিত। আমরা ইবনে উমর রা. এর কাছে বসা ছিলাম। যখন
মুয়ায্যিন ইকামত শুরু করল আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন ইবনে উমর রা. বললেনঃ তোমরা
বস। মুয়ায্যিন যখন قد قامت الصلاة বলবে তখন দাঁড়াবে। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-১/৫০৬
প্রশ্ন: ক। হাইয়া আলাস সালাহ
পূর্বে কি দাঁড়ানো যাবে না?
উত্তর: ক। হ্যাঁ, অবশ্যই দাঁড়ানো যাবে। দলিল:
হাদিস নং-০১
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ
أُقِيمَتْ الصَّلاَةُ فَسَوَّى النَّاسُ صُفُوفَهُمْ فَخَرَجَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم فَتَقَدَّمَ وَهُوَ جُنُبٌ ثُمَّ قَالَ عَلَى
مَكَانِكُمْ فَرَجَعَ فَاغْتَسَلَ ثُمَّ خَرَجَ وَرَأْسُهُ يَقْطُرُ مَاءً
فَصَلَّى بِهِمْ.
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একবার)
সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেয়া হয়ে গেছে,
লোকেরা
তাদের কাতার সোজা করে নিয়েছে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ)বেরিয়ে আসলেন । --- তাখরিজ: বুখারি-৬৪০; মুসলিম-৬০৫
হাদিস নং০২
بِأَنَّ بِلَالًا كَانَ يُرَاقِبُ خُرُوجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأول مايراه يَشْرَعُ فِي الْإِقَامَةِ قَبْلَ أَنْ يَرَاهُ
غَالِبُ النَّاسِ ثُمَّ إِذَا رَأَوْهُ قَامُوا فَلَا يَقُومُ فِي مَقَامِهِ
حَتَّى تَعْتَدِلَ صُفُوفُهُمْ
হজরত বেলাল রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বের হবার জন্য অপেক্ষা
করতেন। তিনি অধিকাংশ লোকদের দেখার পূর্বে প্রথমে দেখেই ইকামত শুরু করে দিতেন।
তারপর যখন সকলে নবীকে দেখতে পেতেন, তখন তারাও দাঁড়িয়ে যেতেন। নবীজী (ﷺ)কাতার সোজা হবার আগে স্বীয় স্থানে দাঁড়াতেন
না। সূত্র: ফাতহুল বারী, দারুল ফিকির বাইরূত-৩/১৪১, আশরাফিয়া দেওবন্দ-২/১৫৩, নং-৬৩৭, উমদাতুল কারী, বাইরূত-৫/১৫৩
হাদিস নং০৩
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: «أَنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ تُقَامُ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَأْخُذُ النَّاسُ مَصَافَّهُمْ، قَبْلَ أَنَّ يَقُومَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامَهُ»
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(ﷺ)এর জন্য
সালাতের ইকামাত বলা হতো। তিনি আপন জায়গায় দাঁড়াবার পূর্বেই লোকেরা নিজ নিজ কাতারে
দাঁড়িয়ে যেত। তাখরিজ: মুসলিম-৬০৪
আসার-০৪
وَعَن سعيد بن الْمسيب وَعمر بن عبد الْعَزِيز: إِذا قَالَ الْمُؤَذّن: الله إكبر، وَجب الْقيام، وَإِذا قَالَ: حَيّ على الصَّلَاة، اعتدلت الصُّفُوف، وَإِذا قَالَ: لَا إِلَه إِلَّا الله، كبر الإِمَام. وَذَهَبت عَامَّة الْعلمَاء إِلَى أَنه: لَا يكبر حَتَّى يفرغ الْمُؤَذّن من الْإِقَامَة
হজরত সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব এবং উমর বিন আব্দুল আজীজ রহঃ থেকে বর্ণিত। যখন
মুয়াজ্জিন আল্লাহু আকবার বলে, তখন নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া আবশ্যক। আর যখন ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ বলে ততক্ষণে কাতার সোজা হয়ে
যাবে। আর যখন বলবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তখন ইমাম সাহেব তাকবীরে তাহরীমা বলবে। জমহুর উলামাগণ বলেন যে, তাকবীরে তাহরীমা ততক্ষণ বলবে না, যতক্ষণ না
মুয়াজ্জিন ইকামত শেষ করে। তাখরিজ: উমদাতুল কারী, বাইরূত-৫/১৫৩,
যাকারিয়া-৪/২১৫, ফাতহুল বারী, দারুল ফিকির বাইরূত-৩/১৪১, আশরাফিয়া দেওবন্দ-২/১৫৩
প্রশ্ন: খ। হাইয়া আলাস সালাহ/ হাইয়া আলাল ফালাহ বলার সময় দাঁড়ানো উদ্দেশ্য কি?
উত্তর: খ। এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ফক্বীহ লিখেছেন, “যেসব বর্ণনায় ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ এর সময় দাড়ানো যে প্রমাণ রয়েছে এর দ্বারা
উদ্দেশ্য হল, এটি হল শেষ সীমা। এর পর আর বসে থাকবে না। এর
দ্বারা উদ্দেশ্য এটা নয় যে, এর আগে বসে থাকতেই হবে, দাড়ানো যাবে না। বরং উদ্দেশ্য হল, সীমা
নির্দিষ্টকরণ। এরপর আর বসে থাকা যাবে না। দাঁড়িয়ে পড়তে হবে।
তাইতো ইলাউস সুনানে এ বিষয়ে সকল বক্তব্য উদ্ধৃত করার পর আল্লামা তাহতাবী রহঃ
এর বক্তব্য নকল করা হয়েছে-
والظاهر احتراز عن التاخير لا التقديم، حتى لو قام اول الإقامة لا
بأس به (اعلاء السنن، باب وقت قيام
الإمام والمأمومين للصلاة-4/328، ادارة القرآن كرتاشى)
স্পষ্ট হল এই যে, এর চেয়ে [হাইয়া আলাল ফালাহ এর চেয়ে] দেরী করা যাবে না, কিন্তু আগে করা যাবে না এমন নয়। সুতরাং কেউ যদি ইকামতের শুরুতেই দাড়িয়ে
পড়ে, তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। সূত্র: ইলাউস সুনান-৪ খণ্ড;৩২৮পৃ.
হাইয়া আলাস সালাহ বলার পর যেনো কেউ বসে না থাকে,সকলেই যেনো তার আগেই দাড়িয়ে
যায়। এখানে আগে দাড়ানোকে কোনো ভাবেই আগে দাড়াবেনা,বলা বুঝানো হয়নি।
সূত্র: কিতাবুন নাওয়াজেল ৩/২০৮)
প্রশ্ন: গ। ইকামতের শুরুতে বসে যাওয়া আর হাইয়া আলাস সালাহ/ফালাহ বা কাদকমাতিস সালাহ সময় দাঁড়ানো ঠিক হবে কি?
উত্তর: গ। মুয়াজ্জিন যখন ইকামত শুরু করে,
তখন ইমাম বা কোনো মুক্তাদীর দাঁড়ানো থেকে বসে যাওয়া অতপর
হাইয়াআলাল সালাহ/ফালাহ বা কাদকমাতিস সালাহ বলার পর
দাঁড়ানোর প্রচলনটি শরীয়তসম্মত নয়। কেননা পূর্বে বর্ণিত সহীহ মুসলিমের হাদীস
থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে মসজিদে আসতে দেখলেই ইকামত শুরু হয়ে যেত এবং সাহাবায়ে কেরাম
শুরুতেই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতেন আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)সোজা ইমামের জায়গায় পৌঁছে যেতেন। এমন
ক্ষেত্রে মসজিদে প্রবেশ করে নবীজীর বা কোনো সাহাবীর বসে যাওয়া অতপর হাইয়াআলাস
সালাহ বলার সময় দাঁড়ানোর কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে বিখ্যাত আলেম শায়েখ ইবনে উসাইমিনকে জিজ্ঞেস করা হলে, যেমন-
وسئل الشيخ محمد بن عثيمين رحمه الله : هل ورد في السنة وقت محدد
للقيام للصلاة عند الإقامة؟
فأجاب :
"لم ترد السنة محددة لموضع
القيام؛ إلا أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: (لا تقوموا حتى تروني) فمتى قام
الإنسان في أول الإقامة، أو في أثنائها، أو عند انتهائها فكل ذلك جائز" انتهى.
"مجموع فتاوى ابن عثيمين"
(13/8) .
শেখ মুহাম্মাদ বিন উসাইমিন, আল্লাহ তার উপর রহম করুন, তাকে
জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: ইকামাতের সময় নামাজের জন্য দাঁড়ানোর জন্য বছরে একটি নির্দিষ্ট
সময় আছে কি?
এবং তিনি উত্তর দিলেন:
সুন্নাতে দাঁড়ানোর স্থান নির্দিষ্ট করা হয়নি, কেবলমাত্র
নবী (ﷺ)বলেছেন: (আমাকে না দেখা পর্যন্ত উঠো না), সুতরাং
যখন ব্যক্তি ইকামতের শুরুতে উঠবে, অথবা এটি চলাকালীন বা এর শেষে, সবই
জায়েয। সূত্র: মাজমু’
ফাতাওয়া
ইবনে উসাইমীন-১৩/৮
প্রশ্ন: ঘ। প্রধান্য মত কি?
উত্তর: ঘ। ইমাম নামাযের জন্য প্রস্ত্তত হওয়ার পরই ইকামত শুরু করা উচিত। ইমামের
প্রস্ত্তত হওয়ার আগে ইকামত শুরু করা ঠিক নয়। তদ্রূপ মুসল্লিদের জন্যও আগে থেকে
দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকা ঠিক নয়; বরং মুসল্লিগণ ইকামত
আরম্ভ হওয়ার সময় দাঁড়িয়ে যাবে। যাতে ইকামতের শেষ পর্যন্ত কাতার সোজা হয়ে যায়
এবং ইকামত শেষ হওয়ার পর ইমাম সাহেব নামায শুরু করতে পারেন।
একথাতো পরিস্কার যে, ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলার সময় মুসল্লিগণ দাঁড়ালে ইকামত
শেষ হতে হতে মুসল্লিদের কাতার ভাল করে সোজা হবে না। এক্ষেত্রে হয়তো কাতার সোজা করা
ছাড়াই নামায শুরু হবে, কিংবা কাতার সোজা করার জন্য দেরী করতে
হবে, যা ইকামত ও নামায শুরু করার মাঝে দেরী করিয়ে ফেলবে। যা
প্রমাণিত সত্য কথা।
সারকথা হলো, ইকামতের শুরুতে, না মাঝে, না
শেষে দাঁড়াবে এটা মুস্তাহাব একটি বিষয়। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। একে
অপরকে অভিযোগ উত্থাপন ও ভর্ৎসনা করা বিদআত
হবে। কারণ গায়রে জরুরী বিষয়কে জরুরী মনে করা বিদআত। তবে ইমাম নামাজ শুরু করার আগেই যেন কাতার সোজা হয় সে বিষয়ে
সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩১০
আসসালামু আলাইকুম,
প্রশ্নঃ পান্জাবীর উপর পরিহিত আবা কি টাখনুর নিচে পরিধান করা যাবে?
যদি কেউ পরিধান করে নামাজ পড়ায় তাহলে কি ইমাম ও মূসল্লীদের নামাজ হবে
কিনা। তারিখ: ১৭/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ওলিউল্লাহ রাজবাড়ি থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার
পর কথা হলো, পাঞ্জাবির উপরে
যে আবা/জুব্বা পরিধান করা তা টাখনুর নিচে পরিধান করা
অন্যান্য পোশাকের ন্যায় হারাম।
প্রশ্ন: ক। কোন কোন পোশাককে টাখনুর নিচে পড়া যাবে না?
أَبِي،هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِفَفِي النَّارِ"-رواه البخارى
অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি টাখনুর নীচে কাপড়
ঝুলিয়ে পরবে সে জাহান্নামি। বুখারি-৫৭৮৭, কিতাবুল লিবাস; মুসলিম-২০৮৭;
আদু দাউদ-৬৩৮; নাসায়ি-৫৩৩০; মুয়াত্তা মালেক-২৬৫৫
ব্যাখ্যা: এতে প্রমাণিত হয়
যে, টাখনু ঢাকা কবিরা গোনাহ কারণ ছগিরা গোনাহের জন্য দোযখের
শাস্তি হয় না। হজরত মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরি রহ. বলেন-হাদিসে উযার শব্দের দ্বারা ঐ সকল
পোশাক উদ্দেশ্য যা ওপর থেকে নিচের দিকে
আসে। যেমন-লুঙ্গি, পায়জামা, কোর্তা,
পাগড়ি, আবা, অ্যারাবিয়ান
জুব্বা ইত্যাদি। পক্ষান্তরে যে পোশাক
নিচ থেকে ওপরের দিকে আসে এমন পোশাক দ্বারা
টাখনু ঢাকলে কোন গোনাহ হবে না। যেমন মোজা, জোতা ইত্যাদি। সূত্র: বযলুল মাজহুদ শরহে
আবু দাউদ; মুসলিম জীবনে সাফল্যে চল্লিশ হাদিস-১৫৩ পৃষ্ঠা
প্রশ্ন: খ। টাখনু নিচে কাপড় পরিধান করা কি
হারাম?
উত্তর: খ। এ বিষয়ে حرُمُ الإسبالُ للخُيَلاءِ، وهذا باتِّفاقِ المذاهِبِ
الفقهيَّةِ الأربعةِ: الحَنَفيَّة، والمالِكيَّة، والشَّافعيَّة، والحَنابِلة অর্থাৎ সম্মানিত চার
ইমাম আবু হানিফা, শাফেয়ি, মালেকি ও হাম্বলি (রহ.)- ও পৃথিবীর সকল
আলেমদের মতে অহংকারবশত টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান হারাম। তবে অংহকার না থাকে, তাহলে পরা যাবে কি না আলেমদের মধ্যে মতভেদ
রয়েছে।
প্রশ্ন: গ। যারা বলে অহংকার ব্যতিত টাখনুর নিচে পরা জায়েজ তাদের
দলিল কি?
উত্তর: গ। যারা বলে অহংকার ব্যতিত টাখনুর নিচে পরা জায়েজ তাদের
দলিল হলো,
عن
ابنِ
عُمَرَ
رَضِيَ
اللهُ
عنهما،
أنَّ
رَسولَ
الله
صلَّى
اللهُ
عليه
وسلَّم
قال:
((مَن
جَرَّ
ثوبَه
خُيَلاءَ،
لم
يَنظُرِ
اللهُ
إليه
يومَ
القيامةِ অর্থ: “যে ব্যাক্তি
অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করবে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্ তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত
করবেন না” তাখরিজ: তিরমিজি-১৬৫৩; নাসায়ি-৫২৪১; আহমদ-৪৫৪১
ইবন উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন,
«الْإِسْبَالُ فِي الْإِزَارِ،
وَالْقَمِيصِ،
وَالْعِمَامَةِ،
مَنْ
جَرَّ
مِنْهَا
شَيْئًا
خُيَلَاءَ،
لَمْ
يَنْظُرِ
اللَّهُ
إِلَيْهِ
يَوْمَ
الْقِيَامَةِ»
‘লুঙ্গি, জামা ও পাগড়ীতে ইসবাল (ঝুলিয়ে পরা) রয়েছে। এগুলো থেকে
যেকোনো একটিকে কোনো ব্যক্তি অহংকার বশে টেনে-ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়ালে কিয়ামত দিবসে
আল্লাহ তার প্রতি সদয় দৃষ্টি দিবেন না”।
প্রশ্ন: ঘ। অহংকার থাকুক
বা না থাকুক সর্বাবস্থায় টাখনুর নিচে পরিধান করা হারাম তাদের দলিল কী?
উত্তর: ঘ। যারা বলে অহংকারমুক্ত কিংবা যুক্ত হোক না কেন সর্বাবস্থায় টাখনুর নিচে
পরিধান করা হারাম। তাদের দলিল নিম্নরুপ:
হাদিস নং-০১
أَبِي،هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِفَفِي النَّارِ"-رواه البخارى
অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি টাখনুর নীচে কাপড়
ঝুলিয়ে পরবে সে জাহান্নামি। বুখারি-৫৭৮৭, কিতাবুল লিবাস; মুসলিম-২০৮৭;
আদু দাউদ-৬৩৮; নাসায়ি-৫৩৩০; মুয়াত্তা মালেক-২৬৫৫
হাদিস নং-০২
ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلّمُهُمُ
اللّهُ يَوْمَ الْقِياَمَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكّيْهِمْ وَلَهُمْ
عَذاَبٌ ألِيْم: المُسْبِلُ وَالمَنَّانُ وَالْمُنْفِقُ سِـلْعَتَهُ
بـاِلْحَلِفِ الكـاَذِبِ
নবী (ﷺ) বলেন, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্ তা’আলা তিনি
ব্যাক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না,
তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
সেই তিনি ব্যাক্তি হল –
১) পায়ের টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধানকারী,
২) দান করে খোটাদানকারী
৩) মিথ্যা শপথ করে পন্য বিক্রয়কারী “
প্রশ্ন: ঙ। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ/শক্তিশালী মত কী?
উত্তর: ঙ। আমাদের সমোজে
অনেকে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করে। জিজ্ঞেস করলে, যুক্তি দেখায় যে আমি তো অহংকার বশতঃ কাপড় টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে
পরি নাই, সতরাং এতে তেমন অসুবিধা নেই। তাদের বক্তব্য আরেক হাদিসের সামনে টিকে না। দলিল:
إِزْرَةُ الْمُؤْمِنِ إِلَى
نِصْفِ السَّاقِ وَلا حَرَجَ أَوْ لا جُنَاحَ فِيمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ
الْكَعْبَيْنِ ومَا كَانَ أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ فَهُوَ فِي النَّارِ وَمَنْ
جَرَّ إِزَارَهُ بَطَرًا لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِياَمَةِ
অর্থ: হজরত সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে
বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “মুমিম ব্যক্তির কাপড় নেসফে
সাক তথা অর্ধ হাঁটু পর্যন্ত, এতে কোন অসুবিধা নেই” (হাঁটু থেকে পায়ের তোলার মধ্যভাগকে নেসফে সাক বলা হয়) অন্য বর্ণনায় তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরুপ বলেন, “পায়ের টাখনু এবং হাটুর মধ্যবর্তী স্থানে কাপড় পরিধান করাতে কোন অসুবিধা
নেই। যে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা হবে তা জাহান্নামে যাবে, এবং যে ব্যাক্তি অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, কিয়ামত
দিবসে আল্লাহ্ তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না”।
এ হাদিসগুলি থেকে স্পষ্ট
হয়ে গেল যে, তাদের যুক্তি সম্পূর্ণ অসাড়। কারণ হাদিসে অহংকার ছাড়া
এবং অহংকারসহ দুটিরও বর্ণনা/শাস্তির কথা এসেছে।
আরেকটি যুক্তি/প্রশ্ন দ্বারা বিষয়টি পরিষ্কার হবে ইনশাল্লাহ।
০১ নং যুক্তি/প্রশ্ন
عن ابن مسعودٍ - رضِي الله عنْه
- قال: سألتُ رسولَ الله - صلَّى الله عليه وسلَّم -: أيُّ الذنب أعظم؟ قال: «أن
تَجعل له ندًّا وهو خلقك»، قلتُ: ثمَّ أي؟ قال: «أن تقتُل ولدك خشية أن يطعم معك»،
قلت: ثمَّ أي؟ قال: «أن تزْنِيَ بِحليلة جارك».
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল সা:,
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি?’ তিনি বললেন,
‘কাউকে আল্লøাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করা।’
আমি বললাম, ‘এটি নিশ্চয়ই জঘন্যতম গুনাহ। তারপর
কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘তোমার সন্তান তোমার
সাথে আহারে অংশ নেবে এ আশঙ্কায় সন্তানকে হত্যা করা।’ আমি বললাম,
এরপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া’ । বুখারি-৪৪৭৭, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২;
মুসলিম-৮৬; আবু দাউদ-২৩১০
এ হাদিস শরিফে প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করাকে বড়
গুনাহ বলা হয়েছে। তাই বলে কি প্রতিবেশী ছাড়া অন্য কারও সাথে ব্যভিচার করলে গুনাহ
হবে না? তাহলে
অন্যর সাথে ব্যভিচার করা কি জায়েজ প্রমাণিত হয়?
প্রিয় পাঠক! প্রতিবেশী স্ত্রী ছাড়া যেমন অন্যের সঙ্গে ব্যভিচার হারাম, যা অন্য নস দ্বারা প্রমাণিত। তবে প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে করলে আরও বেশি
হারাম-জঘণ্য সেটাই উদ্দেশ্য। ঠিক তেমনি সাধারণ অবস্থায়
টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করার চেয়ে অহংকার বশত পরিধান করলে আরও বেশি পাপ হবে।
২ নং যুক্তি/প্রশ্ন
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ
اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوا الرِّبٰۤوا اَضۡعَافًا مُّضٰعَفَۃً ۪ وَ اتَّقُوا
اللّٰهَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ -
হে ঈমানদারগণ! তোমরা
চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। সূরা আল-ইমরান-১৩০
তাহেলে কি চক্রবৃদ্ধি হার
ব্যতিত সুদ খাওয়া জায়েজ হবে?
প্রিয় পাঠক! সুদ হারাম হারামের ব্যাপারে অন্য নস রয়েছে। তবে এখানে উদ্দশ্য হলো, চক্রবৃদ্ধিহারে
আরও ববেশি হারাম । ঠিক
তেমনি সাধারণ অবস্থায় টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করার চেয়ে অহংকার বশত পরিধান করলে
আরও বেশি পাপ হবে। সুতরাং যারা যুক্তি দেয়
অহংকার ছাড়া জায়েজ; তাদের যুক্তি ঠিকে না।
শায়েখ বিন বায (রহ.) বলেন, ‘যে কোন অবস্থায় টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়াকে
রাসুল (ﷺ)অহংকারের অন্তর্ভুক্ত
বলেছেন। কারণ, তিনি বলেন,
‘টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়া থেকে সাবধান! কারণ
তা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত।’ এখানে
তিনি বিশেষ কোনো অবস্থাকে বাদ দেননি। সুতরাং যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে
কাপড় পরবে, সে এ শাস্তির আওতায় চলে আসবে। চাই তা পায়জামা হোক
বা লুঙ্গি, কুর্তা বা অন্য কোন পোশাক। কোনো পোশাকের ক্ষেত্রেই
টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পড়ার সুযোগ নেই।’ তথ্যসূত্র
: ফাতাওয়া আল-বালাদিল হারাম,
পৃষ্ঠা
: ১৫৪৭, ১৫৪৯, ১৫৫০
প্রশ্ন: চ। যদি কেউ টাখনুর নিচে আবা পরিধান
করে নামাজ পড়ায় তাহলে কি ইমাম ও মূসল্লীদের
নামাজ হবে কিনা?
উত্তর: চ। والمطلوب من المسلم رفع ثوبه إلى
ما فوق الكعبين لا سيما في الصلاة، অর্থাৎ মুসলমানের জন্য যা আবশ্যক
তা হল তার কাপড় টাখনুর উপরে উঠানো,
বিশেষ
করে নামাযের সময়। তবে নামাজের টাখনুর
নিচে থাকলে নামাজ মাকরুহ হবে। দলিল:
فعن أبي هريرة قال: بينما رجل
يصلي مسبلا إزاره إذ قال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: اذهب فتوضأ، فذهب فتوضأ
ثم جاء، ثم قال: اذهب فتوضأ، فذهب فتوضأ، ثم جاء، فقال له رجل: يا رسول الله ما لك
أمرته أن يتوضأ ثم سكت عنه؟ فقال: إنه كان يصلي وهو مسبل إزاره، وإن الله تعالى لا
يقبل صلاة رجل مسبل إزاره. رواه أبو داود بإسناد صحيح كما قال الإمام النووي رحمه
الله.
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন: এক ব্যক্তি যখন তার নিচের পোশাকটি নিচু করে নামায পড়ছিল, তখন
আল্লাহর রসূল (ﷺ)
দোয়া করছিলেন। তিনি বললেনঃ যাও
এবং উযূ কর, অতঃপর তিনি আসলেন এবং এক ব্যক্তি তাঁকে বললেনঃ হে
আল্লাহর রাসূল, আপনি কেন তাকে উযূ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, অতঃপর
চুপ করে থাকলেন? তিনি বললেনঃ সে তার নিচের জামা নামিয়ে নামায পড়তেন, আর আল্লাহতায়ালা
তার নিচের জামা নামিয়ে কোন মানুষের দোয়া কবুল করেন না। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস
: ৬৩৮
নোট: ইমাম নববি (রহ.) বলেন, এটি ইমাম আবু দাউদ বর্ণনাকারীদের
একটি প্রামাণিক শৃঙ্খল সহ বর্ণনা করেছেন। তবে আলবানি (রহ.) এটিকে জয়িফ বলেছেন।
তাই নামাজ ও নামাজের বাইরে সর্বাবস্থায়
যেন পুরুষের কাপড় টাখনুর উপরে থাকে সে ব্যাপারে যত্নবান হওয়া অবশ্য কর্তব্য। সূত্র: ইমদাদুল আহকাম : ৪/৩৩৬
في رواية عن ابن عباس: أمر النبي
صلى الله عليه وسلم أن يسجد على سبعة، ونهى أن يكف شعره أو ثيابه. فمعناه جمعه
وضمه فيما سوى ذلك، قال الإمام النووي رحمه الله: والكفت الجمع والضم.... واتفق
العلماء على النهي عن الصلاة وثوبه مشمر أو كمه أو نحوه، أو رأسه معقوص، أو مردود
شعره تحت عمامته أو نحو ذلك، فكل هذا منهي عنه باتفاق العلماء، وهو كراهة تنزيه،
فلو صلى كذلك فقد أساء وصحت صلاته،
অর্থ: ইবনে আব্বাসের থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) সাতটি সিজদা করার আদেশ দিয়েছেন
এবং তাকে তার চুল বা কাপড় বন্ধ করতে নিষেধ করেছেন। এর অর্থ হল বহুবচন এবং অন্য কিছুতে
বহুবচন। ইমাম আল-নওয়াবী, রহ. বলেছেন: এবং বহুবচন এবং বহুবচন নিষিদ্ধ।... আলেমগণ
তার পোশাক গুটিয়ে নেওয়ার সময় নামাযের নিষেধের বিষয়ে একমত হয়েছেন, তার হাতা বা অনুরূপ, অথবা তার মাথা কুঁচকানো,
অথবা তার চুল তার পাগড়ি বা অনুরূপ টাখনু ঢেকে দেওয়া, এই সব হারাম, আলেমদের ঐক্যমত অনুযায়ী, এবং এটি মাকরুহ এবং তার নামায সহিহ।
সূত্র: ইসলামি ওয়েব ফতোয়া নং-২১৪৬৫
শেষকথা হলো, পায়জামা-পাঞ্জেবি-জুব্বার
মতও আবা টাখনুর নিচে পরিধান হারাম (কমপক্ষে মাকরুহ) আর
এ অবস্থায় নামাজ আদায় করলে, নামাজ আদায় হবে, তবে
মাকরুহের সাথে। সুতরাং আপনা প্রশ্নে বর্ণিত ইমাম মুসল্লির নামাজ আদায় হয়েছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩১২
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
মুহতারাম, জামায়াতের
নির্ধারিত সময়ের পর কোনো ব্যক্তি বিশেষের জন্য দেরি করা কি জায়েজ হবে আর মসজিদে জায়নামাজ
বিছিয়ে জায়গা দখল করে রাখা জায়েয হবে কি? তারিখ: ১৯/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ আহসান
হাবিব ঢাকা -----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما
بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, মসজিদের জামাত যথাসময়ে
আদায় করাই বাঞ্ছনীয়। অবশ্য ইমাম মুকতাদা
হাল বুঝে (পরিস্থিতি বুঝে ) মুসল্লিদের সুবিধার্থে দুচার মিনিট দেরি করা অসুবিধা নেই।
যেমন ওজুর সুযোগ দেওয়া,আজান
যথাসময়ে না হওয়ায়
তবে মুসল্লিদের কষ্ট দিয়ে, কোনো ব্যক্তি বিশেষের জন্য দেরি করা ঠিক হবে না।
কিন্তু উক্ত ব্যক্তির জন্য দেরি না করলে,
যদি
জুলুমের শিকার হওয়ার ভয় হয়, এ ক্ষেত্রে ইমামের জন্য দেরি করা জায়েয হবে।
আর জামায়াতের নামাজ আদায় করার
অনেক হিকমাহ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো গরিব-ধনী, আমির-ফকির, সাদা-কালোর
মধ্যে ভেদাভেদ দূর করা। ইমাম ব্যতিত অন্য কারও
জন্য জায়গা নির্ধারিত নেই। অবশ্য যারা জ্ঞানী (ইমামের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে) তারা ইমামের কাছাকাছি থাকবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত
আলবুরহানে জিজ্ঞাসা-১৪০ শিরোনামে আলোচিত হয়েছে।
উক্ত লিংকটি দেওয়া হলো,
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/06/blog-post_27.html
যাই হোক, কোনো
ব্যক্তি বর্গের জন্য জায়নামাজ বিছিয়ে জায়গা দখল করে রাখা জায়েয নেই, মাকরুহ।
সূত্র: রদ্দুল মুখতার- ১ম খণ্ড,৬৬২ পৃষ্ঠা, ফাতওয়ায়ে
মাহমুদিয়া-১০ খণ্ড,৫৩ পৃষ্ঠা;
ফাতওয়ায়ে
হিন্দিয়া-৫/৩২১
সারকথা হলো, কোনো ব্যক্তি বিশেষের জন্য দেরিতে জামাত শুরু করলে, হক্কুল
ইবাদ নষ্ট হয়। এমতাবস্থায় ইমামের করণীয় হলো,
قَالَ أَبُو سَعِيدٍ
الْخُدْرِيُّ :
سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم ، يَقُولُ :
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا
فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يُغَيِّرَهُ بِيَدِهِ فَلْيَفْعَلْ ، فَإِنْ لَمْ
يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ ، وَذَلِكَ
أَضْعَفُ الإِيمَانِ
অর্থ: হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
কে বলতে শুনেছি, তোমদের কেউ যখন কোন মন্দ কাজ হতে দেখে, তখন সে যেন তা
(শক্তি থাকলে) হাত দ্বারা প্রতিরোধ করে,
যদি হাত দ্বারা প্রতিরোধ করার শক্তি না থাকে, তবে
যেন মুখ (কথা) দ্বারা প্রতিবাদ করে। যদি মুখ দ্বারা সম্ভব না হয়; তাহলে সে যেন অন্তর দ্বারা ঘৃণা
করে, পরিবর্তনের চিন্তা-ফিকির করে। আর এটা হচ্ছে ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর। মুসলিম-৪৯, ঈমান অধ্যায়; আবু দাউদ-১১৪০; তিরমিজি-২১৭২; নাসায়ি-৫০০৮; মুসনাদে আহমদ-১১০৭৩
এ হাদিস জানা গেল, কোন
অন্যায়কে প্রতিরোধ করার তিনটি স্তর রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আলেম/ইমাম
সমাজের প্রশাসকের ভূমিকা নেই। তাই পরের দুটি পদ্ধতিতে কাজ করবে।
সুতরাং বলা যায়, উক্ত
ব্যক্তি/কর্তৃপক্ষকে হিকমাহর সাথে বুঝানো।
তারপরও যদি তারা না মানে, এর দায়ভার তাদের উপর, আলেম/ইমামের
নয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩১৪
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ২টি
প্রশ্নের উত্তর দিবেন আশা করি
১.নবী (ﷺ) উম্মতের সালাম সরাসরি শুনেন নাকি ফেরেস্তা গণ
পৌছে দেয়?
২.নবী (ﷺ) রওজা থেকে উম্মতকে সাহায্য করেতে পারেন কিনা? এবং
তার রওজাতে কোন উম্মত সাহায্য চাইতে পারেন কিনা? তারিখ: ২১/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা গিয়াস উদ্দিন কুমিল্লা থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নের
আলোকে আলোচনাটিকে দুটি ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ১। নবী (ﷺ) উম্মতের
সালাম সরাসরি শুনেন নাকি ফেরেস্তা গণ পৌছে দেয়?
উত্তর: ১। এ বিষয়ে প্রথম কথা হলো, রওজার পাশে সালাম দিলে রাসূল
সরাসরি শুনেন আর দূরে থেকে সালাম দিলে তার কাছে পৌঁছানো হয়। দলিল:
مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ
قَبْرِي سَمِعْتُهُ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيّ َنَائِيًا مِنْهُ أُبْلِغْتُه.
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা
করেন,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-
“যে আমার কবরের পাশে আমার উপর সালাত পেশ করে আমি তা শুনি। এবং যে দূরে থেকে
আমার উপর দরূদ পড়ে তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়”। সূত্র: কিতাবুস সওয়াব, আবু হাইয়ান ইবনু আবিশ শায়খ ইছফাহানী, ফাতহুল
বারী ৬/৬০৫, আল-কাওলুল বাদী পৃ. ১৬০
নোট: হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (ফাতহুল বারী
৬/৬০৫), হাফেজ সাখাবী রাহ. আল-কওলুল বাদী পৃ.১৬০ ও অনেকে এ
হাদীসকে শক্তিশালী বলেছেন।
এ বিষয়ে ইবনে তাইমিয়া হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন,
إِنَّ مِن ْأَفْضَلِ
أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ قُبِضَ، وَفِيهِ
النَّفْخَةُ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ فَإِنَّ
صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ" قَالَ:
قَالُوا: يَارَسُولَ اللَّهِ، وَكَيْف َتُعْرَضُ صَلَاتُنَا
عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ؟ يَقُولُونَ: بَلِيتَ، فَقَالَ: "إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ".
‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি
হল জুমার দিন। এ দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর
মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, আর
এ দিনেই সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে। সুতরাং এ দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে ছালাত
ও সালাম পাঠাও। তোমাদের ছালাত আমার কাছে পেশ করা হবে। সাহাবাগণ বললেন, আমাদের ছালাত আপনার কাছে কীভাবে পেশ করা হবে, তখন
যে আপনি (মাটির সাথে মিশে) ক্ষয়প্রাপ্ত (নিঃশেষিত) হয়ে যাবেন? নবী (ﷺ)বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মাটির
জন্য নবীগণের দেহ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন’। তাখরিজ: সুনানে
আবি দাউদ-১০৪৭
ﻓﺄﺧﺒﺮ ﺃﻧﻪ ﻳﺴﻤﻊ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻣﻨﺎ
ﻟﻘﺮﻳﺐ ﻭﺃﻧﻪ ﻳﺒﻠﻐﻪ ﺫﻟﻚ ﻣﻨﺎ ﻟﺒﻌﻴﺪ .
এ হাদীসে নবীজী (ﷺ) জানিয়েছেন,তিনি
নিকটবর্তী ব্যক্তির কাছ থেকে সালাত ও সালাম শুনেন,আর দূরবর্তী
ব্যক্তিদের কাছ থেকে সালাত ও সালাম তাঁর কাছে পৌঁছে। সূত্র: মাজমুউল
ফাতাওয়া-২৬খণ্ড, ১৪৭ পৃ.
প্রশ্ন: ক। রওজার পাশে দরুদ পড়লে সরাসরি শুনে তার দলিল কি?
উত্তর: ক। নিচে কয়েকটি হাদিস শরিফ উল্লেখ করছি।
আয়াত নং-০১
وَلاَ
تَقُولُواْ لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبيلِ اللّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاء وَلَكِن
لاَّ تَشْعُرُونَ
আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত
বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। সূরা
বাকারা-১৫৪
ব্যাখ্যা: আর নবীগণ যেহেতু শহীদগণ থেকে আরো
উচ্চ মর্যাদার অধিকারী সেহেতু এই আয়াত দ্বারা নবীগণও জীবিত থাকা সুস্পষ্টভাবে
প্রমানিত হয়। সূত্র: তাকমেলা শরহে মুসলিম খন্ড নং৫ পৃষ্টা:
২৮
বরং বরযখের এই জীবিত থাকার ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা শক্তি সম্পন্ন হলো
নবীগণ অত:পর শহীদগণ। সূত্র: মাআরেফুল কোরআন পৃষ্ঠা-৮০ মাওলানা মহিউদ্দিন খান অনুদিত
হাদিস নং-০১
الأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي
قُبُورِهِمْ يُصَلُّون.
অর্থ: রাসূল (ﷺ) ‘নবীগণ কবরে জীবিত, নামায আদায় করেন’। তাখরিজ: মুসনাদে আবু ইয়ালা-৩৪২৫; হায়াতুল আম্বিয়া লিল বাইহাকী, ১-৪
وقال ابنُ تَيمِيَّةَ:
(الأنبياءُ أحياءٌ في
قُبورِهم، وقد يُصَلُّون
كما رأى مُحَمَّدٌ
موسى -صَلَواتُ اللهِ
وسلامُه عليهما وعلى
سائِرِ الأنبياءِ- في
قَبْرِه ليلةَ الإسراءِ يُنظر: ((المستدرك على مجموع الفتاوى)) (1/ 101
অর্থ: ইবনে
তাইমিয়া (রহ.)
বলেন, সমস্ত
নবিরা কবরে জীবিত। আর তারা কবরে নামাজ পড়ে যেমন মিরাজের রজনীতে মুহাম্মাদ (ﷺ) দেখেছেন। মাজমুউল ফাতাওয়া-১/১০১
وقال السخاوي: (نحن
نؤمِنُ ونُصَدِّقُ بأنَّه صلَّى اللهُ عليه وسلَّم حيٌّ يُرزَقُ في قبرِه، وأنَّ
جَسَدَه الشَّريفَ لا تأكُلُه الأرضُ، والإجماعُ على هذا يُنظر: ((القول البديع في
الصلاة على الحبيب الشفيع)) (ص: 172
অর্থাৎ সাখাভি রহ. বলেন, আমরা
ঈমান রাখি এবং সত্যায়ন করি যে, রাসূল (ﷺ) জীবিত কবরে রিজিক প্রাপ্ত। তিনি শরীরে আছেন,তবে দুনিয়ার খাবার খান না এ
বিষয়ে ইজমা হয়েছে। সূত্র: আলকওলুল বাদি-১৭২ পৃ.
হাদিস নং-০২
فنبي الله
حي يرزق “সুতরাং আল্লাহর নবী জীবিত এবং রিযিক প্রাপ্ত”। তাখরিজ: সুনানে
ইবনে মাজাহ-১৬৩৭
হাদিস নং-০৩
مَا مِن أَحَدٍ
يُسَلِّمُ عَلَيَّ، إِلَّا
رَدَّ اللَّهُ عَلَيّ
رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ
عَلَيْهِ السَّلَام.
হজরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)বলেন-‘(মৃত্যুর পর) যে কেউ আমাকে
সালাম করবে, সেই আমাকে এ অবস্থায়
(জীবিত) পাবে যে, আল্লাহ তাআলা আমার মধ্যে (এর
পূর্বেই) রূহ ফিরিয়ে দিয়েছেন। (অর্থাৎ মৃত্যুর পরই আমার রূহ আমার মধ্যে ফিরিয়ে
দিয়ে জীবিত করে দেবেন) যাতে আমি তার সালামের জবাব দেই’। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-২০৪১
হাদিস নং-০৪
إِنَّ مِن ْأَفْضَلِ
أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ قُبِضَ، وَفِيهِ
النَّفْخَةُ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ
فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ" قَالَ:
قَالُوا: يَارَسُولَ اللَّهِ، وَكَيْف َتُعْرَضُ صَلَاتُنَا
عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ؟ يَقُولُونَ: بَلِيتَ، فَقَالَ: "إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ".
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- ‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর
একটি হল জুমার দিন। এ দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর
মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, আর
এ দিনেই সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে। সুতরাং এ দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে ছালাত
ও সালাম পাঠাও। তোমাদের ছালাত আমার কাছে পেশ করা হবে। সাহাবাগণ বললেন, আমাদের ছালাত আপনার কাছে কীভাবে পেশ করা হবে, তখন
যে আপনি (মাটির সাথে মিশে) ক্ষয়প্রাপ্ত (নিঃশেষিত) হয়ে যাবেন? নবী (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মাটির
জন্য নবীগণের দেহ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন’। তাখরিজ: সুনানে আবি দাউদ-১০৪৭
অর্থাৎ কবরে নবীগণের দেহ
দুনিয়ায় জীবিত মানুষের মতই অক্ষত থাকে। এর সাথে রূহের গভীর সম্পর্কও থাকে। ফলে
কবরে থেকেও সালাত ও সালাম পাওয়াতে কোনো অসুবিধা হবে না। তাখরিজ সুনানে আবু দাউদ-১০৪৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা-১৭৩৩; মুসতাদরাকে
হাকেম-১০২৯; মুসনাদে আহমাদ-১৬১৬২
হাদিস নং-০৫
مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ
أُسْرِيَ بِي، عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي
قَبْرِهِ.
হজরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- ‘আমি মিরাজের রাতে (বাইতুল
মাকদিসের পাশে) লাল বালুর ঢিবির কাছে মূসা আ.-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি। তখন
তিনি তাঁর কবরে দাড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন’। তাখরিজ: মুসলিম-২৩৪৭
প্রিয় পাঠক! উপরাক্ত আয়াত ও হাদিস প্রমাণিত
হলো যে, নবিরা কবরে জীবিত, সুতরাং
রওজার পাশে গিয়ে সালাম দিলে সরাসরি শুনতে পারেন।
হাদিস নং-০৬
وما من رجُلٍ يمرُّ بقبرِ
الرَّجلِ كانَ يعرفُهُ في الدُّنيا فيسلِّمُ عليْهِ إلَّا ردَّ اللَّهُ عليْهِ
روحَهُ حتَّى يردَّ عليْهِ السَّلامَ
الراوي : - | المحدث : ابن تيمية | المصدر : مجموع الفتاوى | الصفحة أو الرقم : 24/173 | خلاصة حكم المحدث : صحيح
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন “যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়াতে পরিচিত তার
কোনো মৃত্যু ভাইয়ের কবরের পাশ দিয়ে গমন করে এবং তাকে সালাম দিলে তখন তার সালামের
উত্তর দেওয়ার জন্য আল্লাহ তার রূহকে ফেরত দেন।” সূত্র: মাজমুউল ফাতওয়া-২৪/১৭৩
হাদিস নং-০৭
روی عبد اللّٰہ بن عباسص انہ ﷺ قال ان المیت اذا دفن سمع خفق نعالھم اذا ولوا منصر فیلن۔
অর্থ-হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন- রাসুলে আকরাম ﷺ এরশাদ
করেছেন-”যখন লোকেরা মৃত ব্যক্তিকে কবর দিয়ে বাড়ি ফিরে যায়-তখন কবরবাসী তাদের জুতার
মৃদু শব্দও শুনতে পায়। সূত্র: ফাতহুল কবীর ১ম খন্ড ১৬৯
পৃষ্ঠা
হাদিস নং-০৮
انہ ﷺ امر بقتلی بدر فالقوا فی قلیب ۔ ثم جا ء حتی وقف علیھم
وناداھم باسماء ھم یا فلان بن فلان ویافلان بن فلان ھل وجدتم ما وعدکم ربکم حقا۔
فانی وجدت ما وعدنی ربی حقا ۔ فقال لہ عمر یا رسول اللہّٰ ﷺ ما تخاطبوا من اقوام قد جیفوا ۔ فقال والذی بعثنی
بالحق ما انتم باسمع لما اقول منھم ولکنھم لا یستطیعون جوابا۔
অর্থ- “রাসুল করিম (ﷺ) বদরের যুদ্ধে নিহত ৭০ জন কোরাইশ নেতার লাশ
একটি গর্তে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এর কিছুদিন পর (৩ দিন) তিনি ঐ গর্তের নিকট এসে
দাঁড়ালেন এবং তাদেরকে নাম ধরে ধরে সম্মোধন করে বললেন- হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক!
আল্লাহ্পাক তোমাদের ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- তোমরা কি তা সত্য পেয়েছো?
আমি তো আমার সাথে আল্লাহর প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি সত্য পেয়েছি। হজরত
ওমর (রা.) আরয করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি কি এমন মৃত লাশের সাথে কথা বলছেন-
যারা পঁচে দুর্গন্ধময় হয়ে গেছে? রাসুল করিম (ﷺ) বললেন- আমি ঐ পবিত্র যাতের (সত্বার) শপথ
করে বলছি- যিনি আমাকে সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন- তোমরা আমার কথা তাদের চেয়ে বেশি
শুনতে পাচ্ছোনা- কিন্তু তারা জওয়াব দিতে অক্ষম” । তাখরিজ: বুখারি- ৬৯৫৮ ই.ফা.
উপরে ৬,৭ ও ৮ নং হাদিস থেকে জানা গেল
যে, মৃত্যু ব্যক্তিরা শুনতে পায়, সুতরাং
প্রমাণিত হলো রাসূল (ﷺ)ও তার রওজার কাছে সালাম পেশ করলে, তিনিও শোনেন এবং জবাব দেন।
প্রশ্ন: খ। রাসূল প্রতি দরুদ তার কাছে
পৌঁছানো হয় দলিল কি?
উত্তর: খ। নিম্নে হাদিস উল্লেখ করা হলো,
হাদিস নং-০১
لَاتَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ
قُبُورًا، وَلَاتَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا، وَصَلُّوا عَلَيَّ، فَإِنَّ
صَلَاتَكُمْ تَبْلُغُنِي حَيْثُ كُنْتُم.
হজরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা
করেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)বলেন- “তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও
না। আর আমার কবরে উৎসব করো না (বার্ষিক, মাসিক
সাপ্তাহিক কোনো আসরের আয়োজন করো না)।(১৭) আমার উপর সালাত পাঠাও। কেননা তোমরা
যেখানেই থাক তোমাদের সালাত আমার কাছে পৌঁছবে। তাখরিজ:
আবু দাউদ-২০৪২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকি-৩৮৬৫
হাদিস নং-০২
إِنَّ لِلَّهِ
مَلائِكَةً سَيَّاحِين فِي الأَرْض ِيُبَلِّغُونِي عَنْ أُمَّتِي السَّلامَ.
.
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ
করেন- “আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত একদল
ফেরেশতা রয়েছেন যারা দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে
পৌঁছে দেন”। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৯১৪
হাদিস নং-০৩
ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲَّ
ﻋِﻨْﺪَ ﻗَﺒْﺮِﻱ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻪُ ، ﻭَﻣَﻦْ
ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲَّ ﺑَﻌِﻴْﺪًﺍ ﺃُﻋْﻠِﻤْﺘُﻪ
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) ইরশাদ করেন–
“যে কেউ আমার কবরের নিকটে
এসে আমার প্রতি দরূদ পড়বে, আমি তা নিজেই শুনবো এবং যে দূর থেকে
আমার প্রতি দরূদ পড়বে, তা আমাকে জানানো হবে।”
সূত্র: আল-কাওলুল বাদী‘ লিল-সাখাবী,
৩য় খণ্ড, ৯২৯ পৃ্ষ্ঠা/ আল-লাআলী লিল- সুয়ূতী,
১ম খণ্ড, ২৮৩ পৃষ্ঠা
প্রশ্ন: গ। দূরে থেকে কেউ যদি দরুদ পড়ে
সেটা কি রাসূল (ﷺ)
সরাসরি শুনতে পারেন?
উত্তর: গ। আসলে দূরে থেকে কেউ যদি
দরুদ-সালাম পড়ে সেটা
রাসূল (ﷺ)
সরাসরি শুনতে পারেন, এ রকম কোন নস নেই। তবে কোন কোন
বুজুর্গ কাশফ-কারামতের মাধ্যমে সরাসরি সাক্ষাত/শোনার ঘটনা হতে পারে। এটা শুধু
তার জন্যই খাস। এ হুকুম সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, কারামাতে আওলিয়া
হক। যেমন, ইমাম বুখারি হাদিস লেখার প্রক্কালে মুরাকাবায়
রাসূল (ﷺ)এর
সাক্ষাত এবং সৈয়দ আহমদ কবির রেফায়ি রহ. এর কারামত সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। সূত্র: সাওয়াদুল আইনাঈন-১০-১১
প্রশ্ন: ২। নবী (ﷺ) রওজা
থেকে উম্মতকে সাহায্য করেতে পারেন কিনা?
এবং
তার রওজাতে কোন উম্মত সাহায্য চাইতে পারেন কিনা?
উত্তর: ২। মৃত্যুর পর কোন ব্যক্তি কাউকে সাহায্য করতে পারে, এরকম আকিদা কুফরি। যদি তাই তো
উনার তিন খলিফার শাহাদত বরণ করতে হতো না এবং প্রিয়তম দৈহিত্র ইমাম হুসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তে নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করতো
না। মহান আল্লাহ বলেন,
قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِي
نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا إِلاَّ مَا شَاء اللّهُ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ
لاَسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَاْ إِلاَّ
نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অর্থ: আপনি বলে দিন, আমি
আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু
যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে
বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে
পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য। সূরা
আরাফ-১৮৮
রওজা মোবারক থেকে কাউকে
সাহায্য করতে হলে তো আগে সংবাদটা জানতে হবে অথচ আল্লাহ তাআলা ছাড়া কেই গায়েব জানে
না। দলিল:
আয়াত নং-০১
قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِى
خَزَآٮِٕنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّى
مَلَكٌۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّۚ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِى ٱلۡأَعۡمَىٰ
وَٱلۡبَصِيرُۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ (٥٠)
অর্থ: বল, "আমি তোমাদের বলি নাই যে, আমার নিকট আল্লাহ্র ধনভান্ডার
রয়েছে। আমি অদৃশ্য সম্বন্ধে জানি না। আমি তোমাদের এ কথা বলি না যে, আমি
একজন ফেরেশতা। আমার নিকট যে প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ হয়েছে, আমি
শুধু তার অনুসরণ করি। বল, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি এক হতে পারে? তোমরা
কি বিবেচনা করবে না? আনাআম-৫০
আয়াত নং-০২
قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِى ٱلسَّمَـٰوَٲتِ
وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ وَمَا يَشۡعُرُونَ أَيَّانَ يُبۡعَثُونَ (٦٥)
অর্থ: তাদেরকে বল, আল্লাহ
ছাড়া পৃথিবীতে ও আকাশে কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না৷ এবং তারা জানেনা কবে তাদেরকে উঠিয়ে
নেয়া হবে। সূত্র: নামল-৬৫
তবে কখনও কখনও রাসূল (ﷺ) স্বপ্নযোগে কোন কোন নির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন, আওলাদে রাসূল সৈয়দ আব্দুর রহমান জামি (রহ.) কে বাদশাহ কর্তৃক গ্রেফতার এবং পরে ছেড়ে দেওয়া এবং ইহুদি কর্তৃক
বিশ্বনবির লাশ মোবারক চুরির ঘটনা যা স্বপ্নযোগে রাসূল (ﷺ) তৎকালীন বাদশাহ নূরউদ্দিনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমরা
সেই ইতিহাস একটু তালাশ করলেই পেয়ে যাবো
ইনশাল্লাহ।
সারকথা হলো, দূরের সালাম নবি (ﷺ) এর কাছে পৌছানো হয় আর রওজা পাশের সালাম
সরাসরি শুনতে পান। আলহামদুলিল্লাহ! আমার পরিচিত একজন ব্যক্তি রওজা মোবারক
জিয়ারতকালে সরাসরি রাসূল (ﷺ) এর সালামের জওয়াব শুনতে পেরেছেন। এছাড়া আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ, স্বপ্নে/মোরাকাবায়
রাসূলের সাক্ষাত হতে পারে।
আর রাসূল (ﷺ) সরাসরি কাউকে সাহায্য করতে পারে না। এটা আল্লাহ তাআলার নিজামের
খেলাফ। তবে স্বপ্নে/মোরাবাকায় কাউকে দিক-নির্দেশনা দিতে পারে। বিস্তারিত জানতে দেখুন- মাওলানা
মহিউদ্দিন খান অনূদিত-স্বপ্নে রাসূল (ﷺ), মদিনা পাবলিকেশন্স, ঢাকা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩১৫
আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ
অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ
করার বিধান জানিয়ে কৃতার্থ করবেন
যাঝাকুমুল্লাহু খাইরান। তারিখ: ২১/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মঈন উদ্দিন সিলেট থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, দুএকটি
বিচ্ছিন্ন মত ব্যতিত পৃথিবীর সমস্ত ওলামা-ফোকাহা সম্মানিত
চারসহ সবার ঐক্যমতে পবিত্র ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। এ সম্পর্কে আল্লামা
ইবনে আব্দিল বার রহ. বলেন,
قال ابن عبد البر في الاستذكار (8/10): ((أجمع فقهاء الأمصار الذين تدور عليهم الفتوى وعلى أصحابهم
بأن المصحف لا يمسه إلا طاهر
অর্থাৎ সমগ্র পৃথিবীর সকল
ফক্বীহগণ ও তাদের অনুসারীগণ একমত এবং এর উপরই সকলে ফাতওয়া প্রদান করে থাকেন যে, কুরআনে কারীম পবিত্র হওয়া
ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ নেই। সূত্র: আল ইসতিজকার-১০ খণ্ড;
৮পৃ.
দলিল:
আয়াত নং-০১
لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا
الْمُطَهَّرُونَ
যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। সূরা ওয়াকিয়া-৭৯
হাদিস নং-০১
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي
بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ
إِلَّا طَاهِرٌ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর
বিন হাযম বলেন, রাসূল ﷺ আমর বিন হাযম
এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া
কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না। তাখরিজ: মুয়াত্তা মালিক-৬৮০, কানযুল উম্মাল ২৮৩০, মারেফাতুস
সুনান ওয়াল আসার-২০৯, আল মুজামুল
কাবীর-১৩২১৭, আল মুজামুস সাগীর-১১৬২, সুনানে দারেমি-২২৬৬
হাদিস নং-০২
عن عبد الله بن عمر أن رسول الله
ﷺ قال:لا يمس القرآن إلا طاهر
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা.
থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ)
ইরশাদ করেছেন, পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। তাখরিজ: মাযমাউজ যাওয়ায়েদ ৫১২
নোট: আল্লামা হাফেজ নূরুদ্দীন বিন
আবু বকর হায়সামী বলেন, ইমাম তাবারানী কাবীর ও সাগীর উভয়
গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন। আর এর সকল বর্ণনাকারী সিকা তথা গ্রহণযোগ্য।
হাদিস নং-০৩
كان رسول الله ﷺ يقضي حاجته, ثم يخرج فيقرأ القرآن ويأكل معنا اللحم, ولا يحجبه ” وربما قال لا يحجزه ” من القرآن شيء ليس الجنابة
আলী রাযি. বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ পায়খানা হতে বের হয়ে কোরআন পড়তেন এবং আমাদের সাথে গোশত খেতেন।
গোসল ফরয হওয়া ছাড়া কোরআন হতে তাঁকে কোন কিছু বাধা দিতে পারত না। তাখরিজ: মুসনাদে আহমাদ-৬৪০
প্রশ্ন: ক। যারা ওজুবিহীন কুরআন শরিফ
স্পর্শ করা জায়েজ বলে তাদের দলিল কি?
উত্তর: ক। তাদের দলিল হলো,
لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا
الْمُطَهَّرُونَ
যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। সূরা ওয়াকিয়া-৭৯
ব্যাখ্যা: কতিপয় গবেষকগণ বলেন যে,
আয়াতে ‘মুতাহহারুন’ দ্বারা ফেরেশতা উদ্দেশ্য আর
‘হু’ দ্বারা লাওহে মাহফুজ সংরক্ষিত কুরআন উদ্দেশ্য।
অর্থাৎ সম্মানিত ফেরেশতাগণ ব্যতিত কেহই সেখানে স্পর্শ করতে পারবে না। দুনিয়ার কুরআন উদ্দেশ্য নয়।
প্রশ্ন: খ। বিশুদ্ধ/শক্তিশালী মত কোনটি?
উত্তর: খ। আমরা উপরে তাদের যুক্তি
দেখলাম যে, দুনিয়ার
কিতাব/কুরআন উদ্দেশ্য নয়। তাদেরকে একটি প্রশ্ন যদি তাই হয়, তাহলে
পবিত্র কুরআনের শুরুতে সূরা বাকারায়
আল্লাহ তাআলা দূরবর্তী শব্দ (এসমে ইশারা বায়িদ) ব্যবহার করে বলেছেন-
ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ
فِيهِ
অর্থাৎ ঐ কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই। সূরা
বাকারা-২
এ আয়াতে দূরবর্তী শব্দ ذَلِكَ ব্যবহার করার কারণে অর্থ কি এই যে, শুধুমাত্র ঐ দূরে লৌহে মাহফুজে
সংরক্ষিত কুরআনেই কেবল কোন সন্দেহ নেই। আর জমিনে অবস্থিত কুরআনে সন্দেহ আছে
[নাউজুবিল্লাহ]?
নাকি আমরা বলে থাকি যে, এখানে দূরবর্তী শব্দ ব্যবহার
করা হলেও এখানে আসমান ও জমিনের উভয় কুরআনকেই সন্দেহমুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে?
নিশ্চয় আমরা এ ব্যাখ্যাই করে থাকি। আর সুনিশ্চিতভাবে ব্যাখ্যা এটাই
যে, দূরবর্তী শব্দ ব্যবহার করা হলেও এখানে আসমান ও জমিনের
উভয় কুরআনই এখানে উদ্দেশ্য। যেমন ইমাম বায (রহ.) বলেন,
لا يجوز للمسلم مس المصحف وهو على غير وضوء عند جمهور
أهل العلم وهو الذي عليه الأئمة الأربعة وهو الذي كان يفتي به أصحاب النبي عليه الصلاة والسلام،
قد ورد في ذلك حديث صحيح لا بأس-مجموع فتاوى ومقالات الشيخ ابن باز: 4/383)
অর্থাৎ কোন মুসলমানের জন্য
ওজুবিহীন মাসহাফ (কুরআন) স্পর্শ
করা জায়েজ নেই, এটাই জমহুর আহলে এলমদের মত। আর চার ইমাম
ও নবি (ﷺ) সাহাবিদের ফতোয়া। সূত্র: মাজমাউল ফাতওয়া ; মাকালাতুশ
শায়েখ ইবনে বায-৪/৩৮৩ (ইবনে বায (রহ.) এর ওয়েবসাইট
থেকে প্রাপ্ত)
وقال شيخ الإسـلام ابن تيمية في
مجموع الفتاوى (21/266):
“وهو قول سلمان الفارسي، وعبد
الله بن عمر، وغيرهما، ولا يعلم لهما من الصحابة مخالف
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া
রহঃ বলেন, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ নিষেধ বক্তব্যটির পক্ষে মত দিয়েছেন
হযরত সালমান ফারসী রা., হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. এবং
অন্যান্যরা। কোন সাহাবী থেকে এর বিপরীত বক্তব্য বর্ণিত নেই। মাজমূউল
ফাতাওয়া-২১/২৬৬
সাহাবিদের পক্ষ থেকে যেহেতু
বিপরীত কোন মত নেই, সুতরাং ইজমায়ে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত হলো, ওজু ছাড়া ধরা জায়েজ নেই।
প্রশ্ন: গ। যদি কোন কুরআন শরিফে আরবি
বাংলা/অন্য ভাষা মিশ্রিত থাকে, সেটা কি
ওজু ছাড়া স্পর্শ সকরা যাবে?
উত্তর: গ। এ বিষয়ে বিধান হলো, যদি
কোনো কিতাবে কুরআনুল মাজিদের সাথে অন্য লিখা সংযোজিত থাকে এবং অন্যান্য লিখার
তুলনায় কুরআন বেশী থাকে, তাহলে সে কিতাবকে স্পর্শকে করা যাবে
না। আর কম থাকলে ধরা যাবে, তবে মূল আরবি মতনের উপর হাত রাখা
যাবে না। সূত্র: ইমদাদুল
ফাতাওয়া ৪/২৪৫
শেষ কথা হলো, যে মুসলমান কুরআন স্পর্শ করতে ও তা পাঠ করতে ইচ্ছুক- তাকে অবশ্যই
দৈহিকভাবে পবিত্র হতে হবে। অন্যথায় তাকে গুনাহগার হতে হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩১৬
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
প্রশ্ন: বেশি বেশি মসজিদ নির্মাণ
করা বিষয়ে শরিয়তের পক্ষ থেকে কোনো সীমানা বা কোনো শর্ত আছে কিনা? প্রতিটি ইউনিটে একটি করে মসজিদ হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা
কী ? যেখানে সৈনিকদের সময় সুযোগ
ও দূরত্ব বিবেচনায় জুমাসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় সহজ হয়/ সম্ভব হয়/
অধিক লোক অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয় ।
উল্লেখ্য নিজ ইউনিটে মসজিদ
না হলে পাশের মসজিদে গিয়ে তারা হয়ত জামাতে আদায় করবে না/ সময় হবে না/ মসজিদ সংক্রান্ত
ফযিলত থেকেও বঞ্চিত হবে।
সেনানিবাসের বিবেচনা এবং সাধারণভাবে
এভাবে বেশি বেশি মসজিদ নির্মাণ বিষয়ে ইসলামের
নির্দেশনা কী?
জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
মহান আল্লাহ আপনার/আপনাদের
দীনী খেদমতসমূহ কবুল করুন আমীন?
তারিখ: ২৩/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সাজ্জাদ হোসেন নারায়ণগঞ্জ থেকে-----
মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো
لأن المساجد إنما بُنِيَت لتجميع
المسلمين لا لتفريقهم
অর্থাৎ মসজিদগুলো মুসলমানদেরকে একত্রিত করার জন্য
নির্মিত হয়েছিল, তাদের বিভক্ত করার জন্য নয়। দুনিয়ার সমস্ত ফোকাহা-ওলামায়ে কেরামগণ। এ বিষয়ে একমত
যে, ইসলাম ও
মুসলমানের মধ্যে ফাটল-বিভেদ সৃষ্টির নতুন মসজিদ তৈরি হারাম।
দলিল:
لَا تَقُمْ فِيهِ أَبَدًا ۚ
لَمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَىٰ مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَنْ تَقُومَ
فِيهِ ۚ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا ۚ وَاللَّهُ يُحِبُّ
الْمُطَّهِّرِينَ
অর্থ: তুমি এতে (মুনাফিকদের নির্মিত ইবাদতখানায়) কখনো
দাঁড়িয়ো না (নামাজ পড়ো না)। প্রথম দিন থেকেই যে মসজিদের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে
তাকওয়ার ওপর, সেটাই তোমার নামাজের জন্য অধিক যোগ্য। সুরা
তাওবা-১০৮
এক মসজিদের কাছে অন্য মসজিদ
নির্মাণ : মুফতি শফি (রহ.) লিখেছেন,
বর্তমান যুগে কোনো মসজিদের কাছাকাছি অন্য মসজিদ নির্মাণ করা হলে এবং
এর পেছনে যদি মুসলমানদের বিভক্ত করা ও আগের মসজিদে মুসল্লি হ্রাস করার অসৎ ইচ্ছা
থাকে, তাহলে এতে মসজিদ নির্মাতার সওয়াব তো হবেই না, বরং বিভেদ সৃষ্টির কারণে সে গুনাহগার হবে। তা সত্ত্বেও শরিয়ত মতে, সে জায়গাকে মসজিদ বলা হবে এবং মসজিদের বিধিবিধান এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য
হবে। একে ধ্বংস করা কিংবা আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া জায়েজ হবে না। সূত্র:
তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন-৫৯২ পৃষ্ঠা, মাওলানা মহিউদ্দিন খান (রহ.) অনূদিত
দ্বিতীয় কথা হলো, পাঁচ সালাত আদায়ের লক্ষ্যে পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়
ওয়াক্তিয়া মসজিদ নির্মাণ করা উত্তম। দলিল:
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَمَرَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه
وسلم بِبِنَاءِ الْمَسَاجِدِ
فِى الدُّورِ وَأَنْ
تُنَظَّفَ وَتُطَيَّبَ. ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করতে, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে
এবং সুবাসিত করতে হুকুম দিয়েছেন’। তাখরিজ: তিরমিজি-৫৯৪; ইবনে
মাজাহ-৭৫৯; আবু দাঊদ-৪৫৫
তৃতীয় কথা হলো, ইসলামে ওয়াক্তিয়া মসজিদ বেশি
বেশি তৈরি করা কাম্য হলেও জুমুআর মসজিদ বেশি হওয়া কাম্য নয়।
মসজিদে যিরার উদ্দেশ্য না নতুন ওয়াক্তিয়া/জুমুআর
মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ আছে। তবে জুমুআর মসজিদ বেশি বেশি হওয়া ইসলামের সুমহান
শিক্ষার খেলাফ। যেমন, ইরশাদ হচ্ছে-
ز وجل : ( وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا
وَلَا تَفَرَّقُوا ) ، وقوله سبحانه : ( وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا
وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ )
، وقول النبي صلى الله عليه وسلم في الحديث الصحيح إنَّ اللَّهَ
يَرْضَى لَكُمْ ثَلاثًا، ويَكْرَهُ لَكُمْ ثَلاثًا، فَيَرْضَى لَكُمْ: أنْ
تَعْبُدُوهُ، ولا تُشْرِكُوا به شيئًا، وأَنْ تَعْتَصِمُوا بحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا
ولا تَفَرَّقُوا، ويَكْرَهُ لَكُمْ: قيلَ وقالَ، وكَثْرَةَ السُّؤالِ، وإضاعَةِ
المالِ. وفي رواية: مِثْلَهُ، غيرَ أنَّه قالَ: ويَسْخَطُ لَكُمْ ثَلاثًا، ولَمْ
يَذْكُرْ: ولا تَفَرَّقُوا.
الراوي : أبو هريرة | المحدث : مسلم | المصدر : صحيح مسلم
الصفحة أو الرقم: 1715 | خلاصة حكم المحدث
: [صحيح]
অর্থ: নবি (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ
তোমাদের জন্য তিনটি বিষয়ে সন্তুষ্ট এবং তিনটি বিষয়ে অসন্তুষ্ট, তিনি তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট যে, তোমরা তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না কর, তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং বিভক্ত
না হও। এবং তোমরা তাদেরকে উপদেশ দাও যাদেরকে আল্লাহ তোমাদের উপর নিযুক্ত করেছেন।” তাখরিজ: মুসলিম-১৭১৫
আমার জানা মতে, রাসূল (ﷺ) এর যুগে মদিনার আশ-পাশে সাহাবায়ে কেরামগণ খণ্ড
খণ্ড ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় করতেন। যেমন, নিম্নের হাদিস
عَنْ مُعَاذِ بْنِ رِفَاعَةَ
الزُّرَقِيُّ: أَنَّ رَجُلًا، مِنْ بَنِي
سَلِمَةَ يُقَالُ لَهُ سَلِيمٌ أَتَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ , فَقَالَ: إِنَّا نَظَلُّ فِي أَعْمَالِنَا , فَنَأْتِي حِينَ نُمْسِي , فَنُصَلِّي فَيَأْتِي مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ , فَيُنَادَى بِالصَّلَاةِ , فَنَأْتِيهِ فَيُطَوِّلُ عَلَيْنَا. فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «يَا مُعَاذُ لَا تَكُنْ
فَتَّانًا , إِمَّا أَنْ تُصَلِّيَ مَعِي , وَإِمَّا أَنْ تُخَفِّفَ عَنْ قَوْمِكَ»
হযরত মুয়াজ বিন রিফাআ যুরকী
রা. থেকে বর্ণিত। বনী সালামার এক ব্যক্তি যার নাম ছিল সালীম। তিনি রাসূল (ﷺ) এর কাছে আসলেন। এসে বললেন, আমরা কাজকর্মে ব্যস্ত থাকি। সন্ধ্যায় ফিরে এসে সালাত আদায় করি। তখন মুয়াজ
বিন জাবাল আসে। এসে সালাতের জন্য আহবান করে। তখন আমরা নামায পড়তে আসি। তখন মুয়াজ
নামায অনেক দীর্ঘায়িত করে। [ফলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়, এ
অভিযোগ শুনে] তখন নবীজী (ﷺ)
বললেন, হে
মুয়াজ! ফিতনা সৃষ্টিকারী হইয়োনা, তুমি হয়তো আমার সাথে
নামায পড়ো অথবা তোমার কওমের সাথে সংক্ষেপে সালাত পড়। তাখরিজ: তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২৩৬২, আল-মু’জামুল
কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৬৩৯১
এ হাদিস থেকে প্রমাণ হয়, সাহাবারা মদিনার বিভিন্ন
প্রান্তে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। কিন্তু জুমুআর সালাত শুধু মসজিদে নববিতেই
হতো। ( আমার জানার বিপরীতে যদি কাহও নস জানা থাকে, তাহলে আমাকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো)
প্রশ্ন: ক। প্রয়োজন হলে নতুন জুমুআর মসজিদ নির্মাণ করা
জায়েজ হবে?
উত্তর: ক। হ্যাঁ, নিয়ত
খারাপ না থাকলে যদি একটি মসজিদে মুসল্লির জায়গা সংকুলান না, তাহলে
নতুন মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ, যদিও নিকটে হয়। সূত্র: আলমাবসূত, সারাখসী
২/১২০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৮৬
প্রশ্ন: খ। এক মসজিদ থেকে অন্য মসজিদের
দূরত্ব কতটুকু?
উত্তর: খ। পূর্বে
উল্লেখ করেছি, যদি কোনো মসজিদে মুসল্লিদের
স্থান সংকুলান না হয়, তাহলে আরেকটি মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে সতর্কতা
হলো, এতটুকু দূরত্বে মসজিদ নির্মাণ করবে, যাতে এক ইমামের কিরাতের সঙ্গে অন্য মসজিদের ইমামের কিরাত সাংঘর্ষিক না হয়।
তবে উভয় মসজিদের মাঝখানে যদি কেবল একটি দেয়াল থাকে, তবু উভয়
স্থানে পৃথক জামাত আদায় করা বৈধ। সূত্র: ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া-১৪/৪১০
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে সেনানিবাসের
বিবেচনা এবং সাধারণভাবে এভাবে বেশি বেশি মসজিদ
নির্মাণ করা জায়েজ, অসুবিধা
নেই। তবে ইসলামের শিক্ষা ও হিকমাহর দিকে লক্ষ্যে করে,
জুমুআর জামাত যত বড়ই করা যাবে, ততই উত্তম। অর্থাৎ
ছোট ছোট মসজিদগুলোতে জুমআ না পড়ে সকল লোক
বড় মসজিদে একত্র হয়ে জুমআ আদায় করা উত্তম। যদি ইমাম-আলেম ওলামার
সুযোগ থাকে, বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা। যাতে জুমুআর মসজিদ
বড় করে নির্মাণ করা হয়। সূত্র: আলইখতিয়ার ১/৮৯; শরহুল
মুনইয়া ৫৫১; রদ্দুল মুহতার ২/১৪৪; ইমদাদুল
ফাতাওয়া ১/৪৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৮৬
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩১৭
ইয়াকুব (আ) কতো বছর পরে ইউসুফ (আ) এর সাথে মিশরে স্বপরিবারে মিলিত হন? তারিখ: ২৬/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের
মধ্যে মতভেদ রয়েছে,
واختلفوا في مدة غيبة يوسف عن
أبيه ، فقال الكلبي : اثنتان وعشرون سنة .
وقيل : أربعون سنة .
وقال الحسن : ألقي يوسف في الجب
وهو ابن سبع عشرة سنة ، وغاب عن أبيه ثمانين سنة ،
অর্থাৎ হজরত কালবি রহ. বলেন, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম তার পিতা
থেকে ১২ বছর দূরে ছিলেন। কেউ বলেন, ৪০ বছর।
হাসান বসরি রহ. রহমতুল্লাহি আলাই বলেন ইউসুফ আলাইহিস
সালামকে যখন কুপে নিক্ষেপ করা হয় তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর আর পিতা থেকে দূরে ছিল ৮০বছর।
সূত্র: জামিয়াতুল মুলুকি সাউদি (অনলাইন)
আল-বিদায়া-ওয়ান-নিহায়া (আরবি)-1/366
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মাওলানা আবদুল হালিম ও মাওলানা
রায়হানুল মোবারক
জিজ্ঞাসা-১২৩১৮: ইয়াহুদি-খৃস্টানের থেকে অস্ত্র কিনা যাবে কি? তারিখ: ২৬/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মিজানুর রহমান চন্দ্রপুরি খোলাহাটি দিনাজপুর থেকে -----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য দুভাগে ভাগ
করছি।
প্রশ্ন: ক। ইয়াহুদি-নাসারাদের (অমুসলিম) সাথে
লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের হুকুমকি?
প্রশ্ন: ক। অমুসলিমদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য জায়েজ। দলিল:
আয়াত নং-০১
وَاَحَلَّ اللّٰہُ الۡبَیۡعَ
وَحَرَّمَ الرِّبٰوا অর্থ: আল্লাহ তা‘আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। সূরা বাকারা-২৭৫
এখানে আল্লাহ তা‘আলা ব্যবসা করার জন্য মুসলিম ও কাফির
আলাদা করেননি বরং সাধারণভাবে ব্যবসাকে বৈধতা দিয়েছেন।
হাদিস নং-০১
عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها
ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم اشْتَرَى مِنْ يَهُودِيٍّ طَعَامًا إِلَى
أَجَلٍ وَرَهَنَهُ دِرْعَهُ.
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) জনৈক
ইয়াহুদীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদে খাদ্যশষ্য খরিদ করেন এবং নিজের বর্ম তার কাছে
বন্ধক রাখেন। আন্তর্জাতিক নাম্বার ২৫০৯
হাদিস নং-০২
عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِى
بَكْرٍ، قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِىِّ، عليه السَّلام، ثُمَّ جَاءَ رَجُلٌ
مُشْرِكٌ مُشْعَانٌّ طَوِيلٌ بِغَنَمٍ يَسُوقُهَا، فَقَالَ له النَّبىُّ، عليه
السَّلام: (بَيْعًا أَمْ عَطِيَّةً - أَوْ قَالَ: أَمْ هِبَةً) فَقَالَ: لاَ، بَلْ
بَيْعٌ، فَاشْتَرَى مِنْهُ شَاةً.
অর্থাৎ দীর্ঘ দেহী এলামেলো চুলওয়ালা এক মুশরিক এক পাল
বকরী হাঁকিয়ে নিয়ে এলো। রসুল (ﷺ) জিজ্ঞেস
করলেন,বিক্রি করবে,
না উপহার দিবে? সে বলল না বরং বিক্রি করব।
অতঃপর রসুল (সাঃ) তার নিকট হতে একটা বকরী কিনে নিলেন। তাখরিজ: বুখারি-২২১৬
প্রশ্ন: খ। অমুসলিমদের সাথে কোন লেনদেন,
ব্যবসা-বাণিজ্য নিষেধ?
উত্তর: খ। ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে খ্রিস্টান ও অন্যান্য কাফেরদের
সাথে লেনদেন করা; এটা জায়েয,
হারাম
জিনিস ব্যতীত বা যা হারামকে সাহায্য করে,
তা জায়েয
নয়। এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে বাত্তাল (রহ.) শরহে বুখারিতে বলেন,
فيه: عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِى بَكْرٍ، قَالَ:
كُنَّا مَعَ النَّبِىِّ، عليه السَّلام، ثُمَّ جَاءَ رَجُلٌ مُشْرِكٌ مُشْعَانٌّ
طَوِيلٌ بِغَنَمٍ يَسُوقُهَا، فَقَالَ له النَّبىُّ، عليه السَّلام: (بَيْعًا أَمْ
عَطِيَّةً - أَوْ قَالَ: أَمْ هِبَةً)
فَقَالَ: لاَ، بَلْ
بَيْعٌ، فَاشْتَرَى مِنْهُ شَاةً. الشراء والبيع من الكفار كلهم جائز، إلا أن أهل
الحرب لا يباع منهم ما يستعينون به على إهلاك المسلمين من العدة والسلاح، ولا ما
يقوون به عليهم. قال ابن المنذر: واختلف العلماء فى مبايعة من الغالب على ماله
الحرام وقبول هداياه وجوائزه، فرخصت طائفة فى ذلك، كان الحسن البصرى
অর্থ: (এ হাদিসটি উপরে উল্লেখ করা
হয়েছে) কাফেরদের কাছ থেকে ক্রয়-বিক্রয় সবই জায়েজ, তবে
যুদ্ধের লোকদের তাদের কাছ থেকে বিক্রি করা হয় না যা তারা মুসলমানদেরকে ধ্বংস করার
জন্য ব্যবহার করে সরঞ্জাম ও অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে এবং না তারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার
করতে পারে। সূত্র: শারহু ছহিহিল বুখারি ইবনে বাত্তাল- ৬খণ্ড,৩৩৮ পৃষ্ঠা. মুশরিক ও যুদ্ধের লোকদের সাথে ক্রয়-বিক্রয়
অধ্যায়
এ সম্পর্কে ইমাম বায (রহ.)কে
জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,
لجواب: النبي ﷺ مات ودرعه مرهون عند يهودي، والمحرم الموالاة، أما البيع والشراء
فما فيه شيء، اشترى ﷺ من وثني أغنامًا، ووزعها على
أصحابه ﷺ.
وإنما المحرم موالاتهم ومحبتهم،
ونصرهم على المسلمين، أما كون المسلم يشتري منهم ويبيع عليهم، أو يضع عندهم حاجة،
فما في ذلك بأس، حتى النبي ﷺ أكل طعام اليهود، وطعامهم حل لنا، كما قال سبحانه: وَطَعَامُ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ حِلٌّ لَّكُمْ
وَطَعَامُكُمْ حِلُّ
لَّهُمْ [المائدة:5][1].
من ضمن الأسئلة المقدمة لسماحته
في حج 1407هـ. (مجموع فتاوى ومقالات الشيخ ابن باز 19/ 60).
অর্থাৎ নবি (ﷺ) ইন্তেকাল
করেছেন এবং তাঁর ঢাল একজন ইহুদীর কাছে বন্ধক রাখা হয়েছে, এবং আনুগত্য হারাম। ক্রয়-বিক্রয়ের
ক্ষেত্রে এতে কিছুই নেই। তিনি পৌত্তলিকদের কাছ থেকে ভেড়া কিনেছিলেন, এবং সেগুলি তাঁর সাহাবীদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। কিন্তু যা হারাম তা হল তাদের
আনুগত্য ও ভালবাসা এবং মুসলমানদের উপর তাদের বিজয়।যেমন কোন মুসলমান তাদের কাছ থেকে
ক্রয় করে তাদের কাছে বিক্রি করে বা তাদের কাছে কোন প্রয়োজন রাখে, এতে কোন দোষ নেই, এমনকি নবী (ﷺ) তাঁর উপর শান্তি ও বরকত বর্ষিত হোক, ইহুদীদের খাবার খেয়েছি এবং তাদের
খাবার আমাদের জন্য হালাল, যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন: আর যাদেরকে
কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের খাবার তোমাদের জন্য হালাল। সূত্র: মাজমুউন ফাতাওয়া ওয়া মাকালাতুল শায়েখ ইবনে বায-১৯/৬০
সারকথা হলো, প্রশ্নের বর্ণিত আলোকে ইয়াহুদি-নাসারাদের থেকে অস্ত্র কিনা যাবে কোন সমস্যা নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
আসসালামু আলাইকুম।
সালাতের জামায়াতের জন্য যখন ইক্বামাত দেওয়া হয়
তখন حى على الصلاة বলার সময় মুয়াজ্জিন ডান দিকে
এবং حى على الفلاح বলার সময় মুয়াজ্জিন বাম দিকে
মুখ ঘুরাচ্ছেন সহিহ হাদিসের ভিত্তিতে এটার কোন ব্যাখ্যা আছে কি?
( আরটি
আবুল কালাম আজাদ,৫৫ এমপি ,যশোর)
জিজ্ঞাসা-১২৩১৯
আসসালামু আলাইকুম।
সালাতের জামায়াতের জন্য যখন
ইক্বামাত দেওয়া হয় তখন حى على الصلاة বলার
সময় মুয়াজ্জিন ডান দিকে এবং حى على الفلاح বলার
সময় মুয়াজ্জিন বাম দিকে মুখ ঘুরাচ্ছেন সহিহ হাদিসের ভিত্তিতে এটার কোন ব্যাখ্যা আছে কি?
তারিখ: ২৭/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ফরিদপুর থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আজানের মত
ইকামতের সময়ও حى على الصلاة বলার
সময় ডান দিকে এবং حى على الفلاح বলার
সময় বাম দিকে মুখ ফিরানো সুন্নাতে জায়েদা
বা মুস্তাহাব ।
আমার জানামতে ইকামতের সময়
মুখ ফিরানোর হাদিস নেই। (আসার থাকতে পারে,আমার সংগ্রহে নেই)। ফুকাহায়ে কিরাম আজানের হাদিসকে মুতলাক ধরে
ইকামতের সময়ও حى على الصلاة বলার
সময় ডান দিকে এবং حى على الفلاح বলার
সময় বাম দিকে মুখ ফিরানো সুন্নাতে জায়েদা
বা মুস্তাহাব বলেছেন। দলিল:
عن أبي جُحَيفةَ رَضِيَ اللهُ عَنْه، قال: ((رأيتُ بلالًا يؤذِّن، فجعلتُ
أتتبَّع فاه هاهنا وهاهنا، يقول يمينًا وشمالًا: حيَّ على الصلاة، حيَّ على الفلاح
رواه البخاري (634)، ومسلم (503
আবু জুহাইফা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি বিলাল (রা.)কে নামাযের
জন্য আযান দিতে দেখেছি, তাই আমি এখানে এবং সেখানে তার
মুখ অনুসরণ করেছি, সে ডানে হাইয়া আলাস সালাহ এবং বামে হাইয়া আলাল
ফালাহ বলেছে। তাখরিজ: বুখারি-৬৩৪;
মুসলিম-৫০৩
ويسن أن يلتفت في الأذان والإقامة بوجهه لا بصدره من غير أن ينتقل عن
محله ولو على منارة محافظة على الاستقبال يمينا مرة في قوله حي على الصلاة مرتين
ويسارا أخرى في حي على الفلاح كذلك حتى يتمهما في الالتفاتتين لما رواه الشيخان عن
أبي جحيفة قال { رأيت بلالا يؤذن ، فجعلت أتتبع فاه ههنا وههنا ، يقول يمينا
وشمالا حي على الصلاة حي على
(3/378) نهاية المحتاج
إلى شرح المنهاج
অর্থাৎ আজান ও ইকামতের সময়
বুক না ঘুরে ডানে-বামে মুখ ফিরানো সুন্নাত। সূত্র: নিহাইয়াতুল মুহতাজ
ইলা শারহেল মিনহাজ-৩ খণ্ড, ৩৭৮ পৃষ্ঠা
এ সম্পর্কে ফতোয়ায়ে শামির
ভাষ্য হলো,
(ويلتفت) أي يحول وجهه لا صدره.
قهستاني. ولا قدميه نهر. قوله:
(وكذا فيها مطلقا) أي في الإقامة سواء كان المحل متسعا أو لا. قوله:
حاشية رد المحتار - ابن عابدين - ج ١ - الصفحة ٤١٧
অর্থাৎ মুখ ফিরাবে বুক
ঘুরাবে না। তার পা সরে যাবে না। এই হুকুমটি মুতলাক (সাধারণ) ইকামতের সময়ও। সূত্র: শামি ১ খণ্ড; ৪১৭ পৃ. কিতাবুল নাওয়াজিল-৩৫০ পৃ. আল্লামা সালমান মানসুরপুরী দা.বা.
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩২০
মুহতারাম
আসসালামু আলাইকুম ।
আমার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও মুসল্লির
প্রশ্নঃ
পবিত্র কুরআন মাজীদে সুরাহ্ হুদের ৪১নং আয়াতে একটি
মাত্র এমালাহ্ পড়তে হয় এর কারণ কি?
অনুগ্রহ
করে জানাবেন। তারিখ: ২৮/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ আমজাদ হোসেন সিরাজগঞ্জ থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, কুরআন কি শুধু
শব্দের নাম না অর্থের নাম এ বিষয়ে মতভেদ থাকলেও চূড়ান্ত কথা হল অর্থ এবং শব্দের সমন্বয়েই
হলো কুরআন। আর কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণের দায়িত্ব
আল্লাহ তাআলা নিজে গ্রহণ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে-
اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا
الذِّكْرَ وَ اِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوْنَ.
অর্থ: বস্তুত এই উপদেশ বাণী (কুরআন) আমিই
অবতারণ করেছি এবং আমিই এর রক্ষাকর্তা। সূরা হিজর- ৯
প্রতি রমজানে হযরতে জিবরিল আমিন সম্পূর্ণ কোরআন শরীফ (ﷺ)কে শুনাতেন আবার রাসূল (ﷺ) হজরত জিবরিল আমিন কে শুনাতেন।
কুরআন পাঠের যে পদ্ধতি সেখান
থেকে আমাদের পর্যন্ত ধারাবাহিকতায় পৌঁছেছে। সুতরাং পঠন পদ্ধতিও আসমান থেকে নাযিলকৃত।
দ্বিতীয় কথা হলো, রাসূল (ﷺ)এর
যুগে পবিত্র কুরআন গ্রন্থাকার ছিল না হযরত
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুও জামানায় ১২ হিজরিতে ইয়ামামার যুদ্ধের পর গ্রন্থাকারে
লিপিবদ্ধ করা হয়, এবং
হাদিসও রাসুল (ﷺ)এর
যুগে গ্রন্থাকারে ছিল না। হিজরি প্রথম শতাব্দীর শেষভাগে সাহাবি ও তাবেয়ীগণ
প্রয়োজন অনুসারে কিছু হাদীস লিপিবদ্ধ করেন।
ঠিক তেমনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর যুগে কুরআন পাঠের নিয়মাবলী ছিল, কিন্তু গ্রন্থাকারে আকারে ছিল না।
পবিত্র কুরআনকে বিশুদ্ধ এবং সর্বোত্তম
পদ্ধতিতে পাঠের শাস্ত্রীয় সম্পর্কে তৃতীয়
হিজরির শেষাংশে লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন,
رائيّة أبي مزاحم الخاقاني 325هـ، وهو أوّل وأقدم من
صنّف في علم التجويد، وهي أوّل ما نُظِّم في هذا العلم، في نهاية القرن الثالث
الهجريّ. نونيّة علم الدين السخاوي 643هـ، والمسمّاة: عمدة المفيد وعدة المجيد في
معرفة التجويد. الرعاية لتجويد القراءة وتحقيق لفظ التلاوة،
ص186 - كتاب مقدمات في علم القراءات - المصنفات في علم التجويد -
المكتبة الشاملة الحديثةالمسماة: «عمدة المفيد وعدة المجيد في معرفة التجويد
অর্থাৎ তাজবীদের ক্ষেত্রে যে
সকল গ্রন্থ ও গ্রন্থ রচিত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল: রাইয়া আবি মুজাহিম আল-খাকানি (৩২৫ হিজরি) এবং
তিনিই প্রথম এবং প্রাচীনতম যিনি ইলমে তাজবিদ লিখেছেন এবং এটি তৃতীয় শতাব্দী হিজরির
শেষের দিকে এ ইলমে তাজবিদের সংকলন (গ্রন্থ) হওয়া প্রথম। নোনিয়া
আলম আল-দীন আল-সাখাভি (৬৪৩ হি) বলা
হয়: তাজবীদের জ্ঞানে উমদাত আল-মুফিদ এবং উদ্দাহ আল-মাজিদ। সূত্র: কিতাবু মুকাদ্দামাতি ফি ইলমিল কিরায়া-১৮৬ পৃ.
উমদাতুল মুফিদ ওয়া ইদ্দাতুল মাজিদ ফি মাআরিফাতিল তাজবিদ
পরবর্তী উপমহাদেশে প্রাচীন
কিতাব অনুসারে জামালুল কুরআন, ইরশাদুল কুরআন, তাসহীলুত তাজবীদ ইত্যাদি লিখিত
হয়।
তৃতীয় কথা হলো, আরবিতে জের বাংলায় ি উচ্চারণ হয়। আরবিতে
ে কার নেই। শুধু মাত্র একটি জায়গায় ে হয় (যা আপনি
প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন)। যাকে খেলাপি কিয়াস বা নিয়ম বহির্ভুত নীতি বলে। পৃথিবীর
প্রায় সকল ভাষায় কিছু শব্দ এমন আছে, যা নিয়মনীতির বাহিরে লিখিত বা
উচ্চারিত হয়।
সারকথা হলো, মুজাব্বিদগণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী وَقَالَ ارۡکَبُوۡا فِیۡہَا
بِسۡمِ اللّٰہِ مَجۡؔرٖىہَا وَمُرۡسٰىہَا ؕ اِنَّ رَبِّیۡ لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
সূরা হুদের ৪১ নং আয়াত
খেলাপি কিয়াস হিসেবে শুধু মাজরেহা (ে) পড়া হয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩২১
সম্মানিত মুফতি সাহেব। আমার
জানার বিষয় হলো, ইদানিং স্কুল কলেজের ছাত্র
ছাত্রীদের জন্য হাফ ভাড়ার বিধান চালু করা হয়েছে, বিভিন্ন সময় এ দাবিতে আন্দোলন করে। তা কি ইসলামি শরীয়ত সম্মত?
দলীলসহ জানালে খুব উপকৃত হতাম।
তারিখ: ২৯/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান সাভার থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, অন্যের সম্পদের হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্রে শরিয়তের
মূলনীতি হলো, সন্তুষ্টচিত্তে হতে হবে। সন্তুষ্টি ব্যতিত কারও
এক পয়সাও টাকা হরণ/গ্রহণ জায়েজ নেই, হারাম। দলিল:
আয়াত নং-০১
وَآتُوا النِّسَاءَ
صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا
فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের
মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ
কর। সূরা নিসা-০৪
এ আয়াতে প্রমাণ করে খুশিমনে
কেহ তার হক ছেড়ে দিলে কেবল সেটাই বৈধ হবে।
আয়াত নং-০২
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم
بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ [٢:١٨٨
অর্থ: তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ
ভোগ করো না। সূরা বাকারা-১৮৮
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ
اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ
تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ۟
অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমরা
পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে পারস্পরিক সন্তুষ্টিক্রমে
কোন ব্যবসায় করা হলে (তা জায়েয)। সূরা নিসা-২৯
হাদিস নং-০১
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَحِلُّ مَالُ
امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسِهِ»
হজরত আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, কোন
মুসলমানের সম্পদকে তার সন্তুষ্টি ছাড়া গ্রহণ করা হালাল নয়। তাখরিজ: সুনানে দারা কুতনি-২৮৮৫
উপরোক্ত তিনটি আয়াতে কারিমা
ও একটি হাদিসে নববির ইশারাতুন নস দ্বারা প্রমাণ
করে যে, জোর কোন হক
খর্ব করা যায় না এবং খুশিমনে কেহ তার হক
ছেড়ে দিলে কেবল সেটাই বৈধ হবে।
ফোকাহায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত: ইমাম
ইবনে আবেদিন শামি (রহ.)
বলেন,
لا يجوز التصرف فى مال غيره بلا
إذنه ولا ولايته (الدر المختار مع رد المحتار-9\291)
অর্থাৎ অন্যের সম্পদ তার
অনুমতির ব্যতিত জায়েজ নেই। সূত্র: দুররুর মখতার-৯ খণ্ড, ২৯১
পৃ.
সারকথা হলো, আপনার
প্রশ্নের আলোকে যদি কোন ছাত্র গাড়িতে উঠে আর সেই পরিবহনের মালিক স্বেচ্ছায় শিক্ষার্থীদের জন্য
হাফ ভাড়া গ্রহণ করে থাকে, তাহলে হাফ ভাড়া দিয়ে ছাত্রদের যাতায়াত জায়েজ আছে।
কিন্তু পরিবহন মালিকদের বাধ্য
করে তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে হাফ ভাড়া প্রদান করা জায়েজ নেই। এতে করে হাফ ভাড়া প্রদানকারীরা অন্যের হক নষ্ট করার গোনাহে দণ্ডিত হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
وعليكم السلام ورحمة الله
وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق
والمعين
মর্যাদা নবি (ﷺ)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩২২
জনাব উত্তরদাতা,আচ্ছালামু আলাকুম। ছাত্রদের হাফ ভাড়ার ক্ষেত্রে প্রদত্ত উত্তরটি
যদি সঠিক ধরে নেই,তাহলে بطيب نفسه এর সূত্রে ১৬০০০.০০ টাকা থেকে
তদূর্ধ বেসিকহোল্ডারদের জন্য প্রদেয় সররকারী আয়করও তো দিতে হবেনা,কারণ,সেখানে طيب نفس অনুপস্হিত। খলিফা ওমর (রা.) ই তো প্রথম আয়কর নির্ধারণ
করেছিলন ২.৫%। আসলে কি,
ছাত্রদের
কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেয়ার শর্তেই বাস মালিকরা রাস্তায় গাড়ী নামায়।এটি আবহমান কাল
থেকে সরকারী নির্দেশ।এখানে طيب نفس এর প্রশ্ন প্রযোজ্য কি-না, পূনর্বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। তারিখ: ২৯/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শরফউদ্দীন তাহের রামু থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথমে মুহতারামকে জাযাকাল্লাহু খায়ের যেহেতু
তিনি বিষয়টি পরিস্কার করার নিমিত্তে প্রশ্নের অবতারণা করেছেন।
যাইহোক, সরকারী আদেশ আর ব্যক্তিগত জীবনের গাড়ি ভাড়া এক নয়। তবে
মালিক সমিতির সুপারিশে সড়ক পরিবহন
মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাও সরকারে হুকুমের
অন্তর্ভুক্ত হবে। শরিয়ত বিরোধী না হলে সরকারি আদেশ মান্য করা সকল নাগরিকদের
কর্তব্য। সূত্র: সূরা নিসা-৫৯
গত ২১ ডিসেম্বর ২০২১ সালে দেশের সব মহানগরে বেসরকারি বাসে
শিক্ষার্থীদের হাফ পাস নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু
মন্ত্রণালয়। রবিবার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ধারা ৩৪ (২) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে
এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে মোট ৫টি শর্ত দেওয়া হয়েছে।
যে ৫টি শর্তে হাফ ভাড়া
কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে- সেগুলো হলো- এ ভাড়া বিদ্যমান ভাড়ার ৫০ শতাংশ কম হবে, শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নিজ নিজ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা ছবিযুক্ত হালনাগাদ বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে
এবং প্রয়োজনে প্রদর্শন করতে হবে, সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা
পর্যন্ত বেসরকারি বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা এ হাফ ভাড়া দেওয়ার সুযোগ
পাবেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির দিনে এ হাফ ভাড়া প্রযোজ্য
হবে না এবং দূরপাল্লার বাসে হাফ ভাড়া কার্যকর হবে না। সূত্র: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, দৈনিক ইত্তেফাক
সারকথা হলো, শুধু সিটি কর্পোরেশনে ছাত্ররা
উপরোক্ত ৫ শর্তে হাফ ভাড়া দিতে পারবে। সিটির বাহিরের ছাত্রদের হাফ ভাড়া দেওয়ার সরকারি নির্দেশনা
নেই। সুতরাং এসব এলাকায় ( সিটির বাহিরে) মালিক সমিতির অনুমতির ব্যতিত হাফ
দেওয়া জায়েজ নেই।
শেষ কথা হলো, কারও হকের হ্রাসের ব্যাপারে
মালিকের সন্তুষ্টি/অনুমতির প্রয়োজন, এটা
ইসলামি মূলনীতি। আর মালিক সমিতির সাথে
আলোচনার পর সরকারি কোন আদেশ জারি করলে, সেটাই মালিক সমিতির
অনুমতির অন্তর্ভুক্ত হবে। সুতরাং প্রমাণিত
হলো এখানেই طيب نفس অনুপস্থিত নয়, তাই জিজ্ঞাসা-১২৩২১ শিরোনামে প্রকাশিত
মাসয়ালা সাথে বর্তমান প্রশ্নের সংঘর্ষিক
নয়। সূত্র: দুররুর মুখতার-৯ খণ্ড, ২৯১ পৃ.
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩২৩
আসসালামুয়ালাইকুম ভাই আশা
করছি আল্লাহ পাক ভালো রেখেছেন। আমি ও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। পর জানতে চাই বাসে বা
যানবাহনে চলাচলের সময় নামাজ আদায়ের দালিলিক প্রমাণ সহ সিদ্ধান্ত। গতকাল আমি বলেছিলাম
কেবলামুখি হয়ে নামাজের নিয়ত করা র পর গারি যেকোন দিকে যাক নামাজ হবে। এই বিষয়টি
নিয়ে মতানৈক্য দেখা যাচ্ছে। যদি সম্ভব হয় আজকে জানতে চাই। তারিখ: ৩০/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক মাওলানা নাম প্রকাশে অননিচ্ছুক থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, রাসূল (ﷺ) জামানায় বর্তমান যুগের বাস-ট্রেন-বিমান ছিল না।
আর যথাসময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনের উপর ফরজ। তবে রাসূল (ﷺ) উটের উপর সালাত আদায় করেছেন এবং নৌকা-জাহাজে নামাজ পড়ার অনুমতি
দিয়েছেন। হজরতে ফোকাহায়ে কেরামগণ উঠের উপর কিয়াস করে আধুনিক যুগের যানবাহনের উপর
নামাজ আদায় করা জায়েজ বলেছেন। দলিল:
কুরআন থেকে দলিল:
قال الله تعالى: فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ [البقرة: 115]
قال ابنُ عمر وطائفةٌ: نزلت هذه الآيةُ في الصَّلاةِ على الراحلةِ ي الصلاة على الراحلة قولٌ حسن
أيضًا تُعضِّده السنَّة في ذلك) ((التمهيد))
(17/73).
অর্থাৎ হজরত ওমর (রা.) এই
আয়াতটি আরোহন অবস্থায় নামাজ আদায় করার ব্যাপারে নাজিল হয়েছে। সূত্র: আততামহিদ-১৭/৭৩
হাদিস নং-০১
عن ابنِ
عُمرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهما، قال: ((كان
رسولُ الله يُصلِّي وهو مُقبلٌ من مكَّةَ إلى المدينةِ على راحلتِه حيث كان وجهُه؛ قال:
وفيه نزلت: فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ [البقرة: 115] )
رواه مسلم (700)
অর্থ: ইবনে উমর (রা.) এর সূত্রে, আল্লাহ তাদের উভয়ের প্রতি সন্তুষ্ট হতে
পারেন, তিনি বলেন: (( আল্লাহর রসূল (ﷺ) মক্কা থেকে মদিনায় আসার সময় তাঁর উটে চড়ে সালাত আদায় করতেন, যেখানে তাঁর মুখ ছিল; তিনি বললেনঃ আর তাতে অবতীর্ণ হয়েছেঃ
তারা যেদিকেই মুখ ফিরিয়ে নেয়, সেখানেই আল্লাহর চেহারা (আল- বাকারা. ১১৫) তাখরিজ: মুসলিম-৭০০
হাদিস নং-০২
عن عامرِ بنِ رَبيعةَ رَضِيَ اللهُ
عَنْه قال: ((رأيتُ
رسولِ اللهِ يُصلِّي على راحلتِه حيث توجَّهتْ به واه البخاري (1093) واللفظ له، ومسلم (701) بمعناه.
আমের বিন রাবিয়াহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন: (আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে তাঁর উটের উপর
নামায পড়তে দেখেছি, যখন এটি তাঁর দিকে অগ্রসর হয়েছিল। বুখারি-১০৯৩
হাদিস নং-০৩
ن ابنِ عُمرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهما
قال: (سُئِل
النبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم عن الصَّلاة في السَّفينة؟ فقال: صَلِّ فيها
قائمًا إلَّا أن تخافَ الغرقَ رواه
الحاكم (1/409)، والبيهقي (3/155) (5698). حسَّنه البيهقيُّ، وصحَّحه الألبانيُّ
على شرْط مسلم في ((أصل صفة الصلاة)) (1/101). ))
ইবনে উমর রা. থেকে, যিনি
বলেছেন: ((নবী (ﷺ) কে একটি জাহাজে
নামায পড়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল? তিনি বললেন: নামায পড়। তার উপর দাঁড়ানো যদি
না আপনি ডুবে যাওয়ার ভয় পান । তাখরিজ: মুস্তাদরাকে হাকেম-১/৪০৯
ওলামাদের ইজমা:
ا: من الإجماع
نقَل الإجماعَ على ذلك: الترمذيُّ، وابنُ عبد البرِّ، وابنُ قُدامةَ،
والنوويُّ، وابنُ تَيميَّة، والعينيُّ، والشوكانيُّ
قال ابنُ قُدامة: (لا نعلمُ
خلافًا بين أهل العِلم في إباحة التطوُّع على الراحلة في السَّفر الطويل. قال الترمذي:
هذا عند عامَّة أهل العلم) ((المغني)) (1/315) ((الاستذكار)) (2/255).
অর্থাৎ ইমাম তিরমিজি, ইবনে আব্দিল বার, নববি. কুদামা, তাইমিয়া,
শাওকানি রহ. প্রমুখ ইজমা বর্ণনা করেছেন।
আল্লামা ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন,
আমরা জানি না এ বিষয়ে খেলাফ করেছেন আহলে এলেমদের মধ্যে (ওলামা-ফোকাহা কেহও এর বিরোধিতা করেননি)
দীর্ঘ সফরে বাহনে সালাত আদায়
করা। সূত্র: কিতাবুল মুগনি-১/৩১৫; আল-ইসতিজকার-২/২৫৫
দ্বিতীয় কথা হলো, আপনার বক্তব্যটি সঠিক নয়।
কেননা কিবলা দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা ফরজ। দলিল:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ
فِي السَّمَاءِ ۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا ۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ
شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ
شَطْرَهُ ۗ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن
رَّبِّهِمْ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ [٢:١٤٤]
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আপনব আক্কাতে জানব।
তাই, অবশ্যই আমি আপনাকে কেবলার দিকে ঘুরিয়ে দেব যাকে
আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদ-হারামের দিকে এগিয়ে যান এবং তোমরা যেখানে থাক, সে দিকে (কাবার দিকে) মুখ কর। সূরা বাকারা-১৪৪
গাড়িতে/যানবাহনে
সালাত আদায়ের ব্যাপারে ফোকাহায়ে কেরামের মতামত হলো, প্রথমে
দেখতে হবে গন্তব্য স্থলে পৌঁছে নামাজের ওয়াক্ত থাকে কিনা,
যদি
থাকে তাহলে গাড়িতে নামাজ পড়বে না। আর না থাকলে গাড়িতে নামাজ পড়বে।
সেক্ষেত্রে কিবলামুখি হতে যথাসাধ্য
চেষ্টা করবে। যদি গাড়ি কিবলামুখ থেকে অন্যদিকে ঘুরে যায় তবে নামাযে থাকা অবস্থায়
কিবলামুখি ঘুরে যাবে। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে যেদিকে মুখ হয়, সেদিকে ফিরেই নামায শেষ করবে। কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্বেও কিবলামুখি হয়ে নামায
আদায় করতে না পারলে এই নামায পরে কাযা করতে হবে। কিবলামুখি ফিরে নামায আদায় করতে
পারলে পরে তা আদায় করার কোন প্রয়োজন নেই। দলিল:
فى الفتاوى الهندية- ولو ترك
تحويل وجهة الى القبلة وهو قادر عليه لا يجزيه (الفتاوى الهندية –كتاب الصلاة
،الباب الخمس العشر فى صلاة المسافر-1/144)
যার সারমর্ম হলো যদি কিবলার দিক
হয়ে নামাজ পড়া সম্ভবপর হওয়া সত্ত্বেও কিবলার দিক না হয়, তাহলে
নামাজ হবেনা। সূত্র: ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি- ১খণ্ড; ১৪৪ পৃ.
শেষ কথা হলো, যদি
গাড়িতে পড়তেই তাহলে কিবলা নির্ধারণের জন্য কম্পাস, GPS ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে,
যদি
নামাজরত অবস্থায় কিবলা ঘুরে যাচ্ছে বলে বুঝা যায়, তাহলে
ওই দিকে সীনা ঘুরিয়ে নিতে হবে। আর সর্বঅবস্থায় ওলামায়ে কেরাম সতর্কতামূলক
পরবর্তীতে এই নামাজ পুনরায় পড়ে নেওয়া উত্তম হবে বলে পরামর্শ দেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩২৪
আসসালামু আলাইকুম
একটি মাসআলা জানতে চাই,
আপন খালাতো ভাইবোন বিয়ে হওয়ার
২০ বছর হলো। তাদের চার সন্তান আছে।
এখন
ছেলেটি জানতে পেরেছে, তিনি তার নানির দুধ পান করেছে।
মেয়েটি পান করে নি। তাদের বিয়ে কি বৈধ হয়েছে? অর্থাৎ তারা একে অপরের মাহরাম? তারিখ: ৩১/১০/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা হাদিউজ্জামান ঢাকা থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, রিযাআতের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, দুধ
পান করানো। শরয়ী পরিভাষায় ‘রিযাআত’ বলা হয়,
নির্ধারিত
সময়ে, মা ভিন্ন অন্য কোনো মহিলার দুধ পান করা। সূত: আত তারিফাত লিজ জুরজানী-১১১
দুধ পান করার কারণে নিজ
মায়ের মত হুরমত ও বংশীয় সম্পর্ক কায়েম হয়। দলিল:
Surah An-Nisa, Verse 23:
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ
أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ
وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ
وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে,
তোমাদের দুধ-বোন। সূরা নিসা-২৩
হাদিস নং-০১
٢٦٤٥ -حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا
هَمَّامٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ جَابِرِ بْنِ زَيْدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ فِي بِنْتِ حَمْزَةَ: «لاَ تَحِلُّ لِي، يَحْرُمُ مِنَ الرَّضَاعِ مَا
يَحْرُمُ مِنَ النَّسَبِ، هِيَ بِنْتُ أَخِي مِنَ الرَّضَاعَةِ –
ইবনে আব্বাস (রা.) হযরত হামজা
(রা.) এর কন্যাকে বিবাহের বিষয়ে রাসূল (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
তাকে
বিবাহ করা তোমার জন্য বৈধ না। কেননা দুধ পান করার দ্বারা যেমন বিবাহ হারাম হয়, তেমনি
বংশের কারণেও হারাম হয়, আর হামজা (রা.) এর কন্যা তোমার দুধবোন। তাখরিজ: বুখারি-২৬৪৫
তবে দুধ পানের বয়স ও কতুটুকু
পান করলে হুরমত সাবস্ত্য হবে এ বিয়সে ফুকাহায়ে কিরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। নিম্নে
তা তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: ক। শিশুকে কত বছর মধ্যে দুধ পান
করালে হুরমত সাবস্ত্য হবে?
উত্তর: ক।
عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ رَسُولَ
اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا رَضَاعَ بَعْدَ فِصَالٍ
হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত।
রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, দুধ
ছাড়ানোর [সময়সীমা শেষ হবার] পর আর দুগ্ধপান [সম্পর্কিত হুরমতের বিধান] নেই। তাখরিজ: মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালিছী-১৮৭৬
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মত হচ্ছে, শিশুর
বয়স আড়াই বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত দুধ পান দ্বারা দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে। আড়াই বছরের
উর্ধ্বে কোনো শিশু দুধ পান করলে দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে না।
ইমাম মালেক,
শাফেয়ি
ও সাহেবাইন ইমাম আবু ইউসূফ ও মুহাম্মাদ (রহ.) প্রমুখের মত হচ্ছে, দুই
বছরের আগ পর্যন্ত দুধ পান দ্বারা দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে। এর উর্ধ্বের কোনো শিশু
দুধ পান দ্বারা দুধ সম্পর্ক স্থাপন হবে না।
প্রশ্ন : খ। কতটুকু দুধ পান করালে হুরমত/দুধ সম্পর্ক সাবস্ত্য হবে?
উত্তর: খ। হানাফি মাজহবের মতে, এক ফোটা
পরিমাণও দুধ যদি কোন শিশু গলধঃকরণ করে,
তাহলে
এর দ্বারাই দুগ্ধপান সম্পর্কিত হুরমত সাব্যস্ত হয়।
হাম্বল মাজহাব এবং প্রচলিত
আহলে হাদিসের মতে, কোনও শিশু কমপক্ষে পাঁচবার কোন মহিলার
দুধ পান করে, তাহলে দুধ দানকারীনী মহিলা দুধ মা, তার
স্বামী পিতা এবং তার সন্তানগণ তার দুধ ভাইবোন হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
হাম্বলি মাজহাবের অনুসারি
ইমাম ইবনে বাজ (রহ.) কে নানী/দাদি দুধ পান
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, জবাবে তিনি বলেন,
الجواب: إذا كانت جدة السائل قد
أرضعته رضاعاً تاماً خمس رضعات فأكثر حال كونه في الحولين فإنه يكون أخاً لأبيه
وأعمامه، وعماً لبنات أعمامه، فلا يحل له أن ينكح منهن أحداً؛ لأنه صار عماً لهن
بالرضاع، فلابد من التثبت في هذا الأمر، فإذا كانت الجدة قد در لها لبن أرضعتك منه
-أيها السائل- خمس مرات يعني: خمس رضعات فأكثر حال كونك في الحولين فإنها تكون أمك
من الرضاعة وتكون أنت أخاً لأبيك وأعمامك من الرضاعة، وعماً لبنات أعمامك من
الرضاعة، فلا يحل لك نكاح أحد منهن، والله سبحانه وتعالى أعلم.
অর্থাৎ যদি কোন শিশু নানি/দাদি দুই বছর বয়সে তাকে সম্পূর্ণরূপে
পাঁচ বা তার বেশি বার দুধ পান করান,
তাহলে
স্তন্যপান করানো থেকে সে মা হবে এবং স্তন্যপান করানো থেকে চাচাদের/মামাদের দুধ ভাই হবে, খালাদের/ফুফুদের দুধ বোন এবং মামা/চাচা এবং ফুফু/খালাদের কন্যাদের ব্যাপারে তাদের কাউকে বিয়ে করা জায়েয হবে না এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহই ভালো জানেন। সূত্র: ইমাম বাজ (রহ.) ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত
সারকথা হলো, উক্ত খালাতো ভাই যদি দুই/আড়াই বছরের মধ্যে এক ফুটাও দুধ পান করে থাকে, তাহলে
খালাতো বোনকে বিবাহ জায়েজ হয় নাই. হারাম হয়েছে। এরকম একটি
ঘটনা রাসূল (ﷺ) এর যুগেও ঘটেছিলো। পরে বিষয়টি
জানাজানি হলে, তিনি তাদেরকে আলাদা করে দেন। দলিল:
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ،
أَنَّهُ تَزَوَّجَ ابْنَةً لأَبِي إِهَابِ بْنِ عَزِيزٍ، فَأَتَتْهُ امْرَأَةٌ
فَقَالَتْ قَدْ أَرْضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي تَزَوَّجَ. فَقَالَ لَهَا
عُقْبَةُ مَا أَعْلَمُ أَنَّكِ أَرْضَعْتِنِي وَلاَ أَخْبَرْتِنِي. فَأَرْسَلَ إِلَى
آلِ أَبِي إِهَابٍ يَسْأَلُهُمْ فَقَالُوا مَا عَلِمْنَا أَرْضَعَتْ
صَاحِبَتَنَا. فَرَكِبَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ
فَسَأَلَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ كَيْفَ وَقَدْ قِيلَ
”. فَفَارَقَهَا، وَنَكَحَتْ زَوْجًا غَيْرَهُ.
উকবা ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
আবু ইহাব ইবনে আজিজের কন্যাকে বিবাহ করলেন। পরে এক মহিলা এসে বলল, আমি
তো উকবাহ এবং যাকে সে বিয়ে করেছে দু জনকেই দুধ পান করিয়েছি। উকবাহ রা. তাকে বললেন, এটা
তো আমার জানা নেই যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন আর আপনিও এ বিষয়ে আমাকে
অবহিত করেন নি।
অতঃপর আবু ইহাব পরিবারের নিকট
লোক পাঠিয়ে তিনি তাদের নিকট জানতে চাইলেন। তারা বলল, সে আমাদের
মেয়েকে দুধ পান করিয়েছে বলে তো আমাদের জানা নেই। তখন তিনি মদিনার উদ্দেশে সওয়ার হলেন
এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন।
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “যখন এরূপ বলা হয়েছে তখন এ (বিবাহ) কিভাবে সম্ভব?” অত:পর উকবাহ রা. তাকে ত্যাগ করলেন।
আর সে অন্য জনকে বিয়ে করল। তাখরিজ:
বুখারি-২৬৪০
শেষ কথা হলো, যদি
অজ্ঞতাবশত বিবাহ হয়ে থাকে আশা করা যায় পাপ হবে না। দলিল:
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ
نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
অর্থ: “হে আমাদের
পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাওয়ার কারণে কিংবা অনিচ্ছাবশত: অন্যায়
করে ফেলি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না।” সূরা বাকারা-২৮৬
এ সম্পর্কে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন:
فإن المسلمين متفقون على أن كل
نكاح اعتقد أنه نكاح سائغ إذا وطئ فيه فإنه يلحقه فيه ولده ويتوارثان باتفاق
المسلمين، وإن كان ذلك النكاح باطلاً في نفس الأمر باتفاق المسلمين. انتهى مجموع الفتاوى" (34/13).
আর যেহেতু বিষয়টি তাঁদের অজানা
বশত: হয়েছিল সেহেতু ইনশাআল্লাহ তারা গুনাহগার হবে না। সুত্র: মাজমুউল ফাতাওয়া-১৩ খণ্ড. ৩৪ পৃ.
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩২৫
আসসালামুআলাইকুম হুজুর ভালো
আছেন, আমি হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজারি
করি, তো রাস্তায় মাঝেমধ্যে লোক
উঠাই,,আমার যে ম্যানেজার আছে যার
আন্ডারে আমরা চলি সে বলেছে রাস্তায় খাওয়ার খরচ উঠায় নিয়েন কিন্তু খাওয়ার চেয়েও
বেশি টাকা মাঝেমধ্যে হয়ে যায় তাহলে সে টাকাটা কি আমার জন্য বৈধ হবে??
উপরোক্ত মাসয়ালা আমার একজন
ঘনিষ্ঠ ভক্ত পাঠিয়েছেন। অনুগ্রহ করে উত্তরের প্রতিক্ষায়। তারিখ: ০১/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আমজাদ হোসেন সিরাজগঞ্জ থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, রোগীর রোগের
পূর্ণ বর্ণনা যারা যেমন সঠিক টিটম্যান কঠিন, ঠিক তেমনি
মাসয়ালার ক্ষেত্রেও। যাইহোক আপনার মাসয়ালাকে
সহজভাবে বুঝার জন্য দুটি ছুরত/পদ্ধতি বর্ণনা করছি।
আমার জানামতে, সাধারণত বাস/মটরযান দুটি পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়।
প্রথম ছুরত/পদ্ধতি: বাসের/গাড়ির
মালিক ড্রাইভার/সুপারভাইজারের সাথে চুক্তি করে যে, প্রতিদিন আমাকে এত পরিমাণ টাকা দিতে হবে। বাকি লাভ-লোকসান
স্টাফের। এ ক্ষেত্রে মালিককে নির্ধারিত
টাকা দেওয়ার অতিরিক্ত টাকার মালিক হবে
ড্রাইভার/সুপারভাইজার।
দ্বিতীয় ছুরত: বাস/গাড়ির স্টাফের জন্য ডেইলি/মাসিক
বেতন নির্ধারিত থাকে। এ ক্ষেত্রে সমস্ত
টাকা মালিককে দিতে হবে।
সারকথা হলো, ম্যানেজার তো গাড়ির মালিক নয়,
হ্যাঁ, তাকে যদি সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়, তবে ভিন্ন কথা। মালিকের সঙ্গে যদি প্রথম
ছুরতে চুক্তি হয়; তাহলে খাবার পর অতিরিক্ত টাকা নিজেরা ভাগ করে নিতে পারবে। আর যদি দ্বিতীয়
ছুরতে চুক্তি হয়; তাহলে খাবাবের পর অতিরিক্ত টাকা মালিককে
ফেরত দিতে হবে। আর যদি মালিকের পক্ষ থেকে
অনুমতি থাকে; সমস্যা নেই অর্থাৎ অতিরিক্ত টাকা নিতে পারবে।
ইমাম ইবনে আবেদিন শামি (রহ.) বলেন,
لا يجوز التصرف فى مال غيره بلا إذنه ولا ولايته
(الدر المختار مع رد المحتار-9\291)
অর্থাৎ অন্যের সম্পদ তার অনুমতির ব্যতিত জায়েজ নেই। সূত্র: দুররুর মুখতার-৯ খণ্ড,
২৯১
পৃ.
একটি বিশেষ লক্ষ্যণীয় যে, ভিআইপি বাসের কিছু নিয়মনীতি
আছে। যেমন, টিকিট/ছিট ছাড়া লোক না
উঠানো। নিয়ম ভঙ্গ করে লোক উঠালে এর
ক্ষেত্রে অবশ্যই মালিকির অনুমতির
প্রয়োজন। তাই সবকিছু মালিকের/কর্তৃপক্ষের সাথে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩২৬
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার কাছে একজন জানতে চেয়েছেন তার বাবার কবর ১২ বছর আগে একস্হানে
দেয়া হয়েছে, জনৈক প্রভাবশালী ব্যাক্তির
ব্যক্তিগত গাড়ি যাতায়াতের সুবিধার্থে কবরকে সরানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করছে, এ মুহূর্তে তার করনীয় কি এবং সাধারণ সময়ে highway 🛣️ অথবা মসজিদ সম্প্রসারনের জন্য কবর স্হানান্তরের
বিধান জানিয়ে উপকৃত করবেন! তারিখ: ০১/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুর রহমান
বগুড়া থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, জীবিত মুমিন যেমন সম্মানিত তেমনি মৃত্যু মুমিনও
সম্মানিত। তাই সাধারণ অবস্থায় কবর স্থানান্তর জায়েজ নেই। যাই আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে
বুঝার জন্য তিনটি ভাগে ভাগ করছি।
প্রশ্ন: ক। কবর যদি অন্যের জায়গায় হয়, তাহলে স্থানান্তরিত
জায়েজ হবে?
উত্তর: ক। কবর যদি
নতুন হয়, নতুন কবর বলতে যার লাশ এখন অবশিষ্ট আছে, জায়গার প্রকৃত মালিক সে কবর সরিয়ে নিতে বাধ্য করে, তাহলে শুধু সে ক্ষেত্রে মাইয়েত কিংবা মাইয়েতের দেহাবশেষ অন্যত্র
স্থানান্তর করার অবকাশ আছে, অন্যথায় জায়েজ নেই। সূত্র:
হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাদ্দুর ১/৩৮২, রদ্দুল মুহতার ২/২৩৯, তাতারখানিয়া ৩/৮০
প্রশ্ন: খ। সাধারণ সময়ে highway সম্প্রসারনের জন্য কবর স্হানান্তরের
বিধান কি?
উত্তর: খ। যদি কেউ কোনো জায়গাকে
কবরস্থানের জন্য ওয়াকফ্ করে থাকে, তাহলে সে জায়গাকে অন্য কোনো কাজে লাগানো জায়েয হবে না।
কেননা ওয়াক্বিফের শর্ত শরীয়তের বিধানের মতই কর্যকর হিসেবে ধর্তব্য হবে।হ্যা রেফাহে
আম তথা জনস্বার্থে যদি সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, যেমন
রাস্তা ইত্যাদি তাহলে এমতাবস্থায় কবররের জন্য ওয়াক্বফের জায়গাকেও জনস্বার্থে
ব্যবহার করা যাবে এবং কবরকে স্থানান্তরিত করা যাবে। সূত্র: রদ্দুল মুখতার -৪/৩৬৬
প্রশ্ন: গ। মসজিদ সম্প্রসারনের জন্য কবর স্হানান্তরের বিধান
কি?
উত্তর: গ। দলিল:
وَلَوْ بَلَى الْمَيِّتُ وَصَارَ تُرَابًا جَازَ
دَفْنُ غَيْرِهِ فِي قَبْرِهِ وَزَرْعُهُ وَالْبِنَاءُ عَلَيْهِ، كَذَا فِي التَّبْيِينِ.
(الفتاوى الهندية، كتاب الصلاة، الباب الحادى عشر فى الجنائز، الفصل السادس فى
القبر الدفن-1/167
إذا غلب الماء على القبر فقيل يجوز تحويله لما روي
أن صالح بن عبيد الله رؤي في المنام وهو يقول حولوني عن قبري فقد آذاني الماء
ثلاثا فنظروا فإذا شقه الذي يلي الماء قد أصابه الماء فأفتى ابن عباس رضي الله
عنهما بتحويله (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح، كتاب الصلاة، باب احكام الجنائز،
فصل في حملها ودفنها-61
অর্থাৎ যতদিন লাশ একেবারে
মাটি না হবে, ততদিন কবরের সম্মান বাকি থাকে। যখন লাশ মাটির সাথে মিশে যাওয়ার প্রবল
ধারণা হবে তখন কবর সমতল করে দিয়ে সে জায়গা মসজিদ, রাস্তা বা
বাড়ি-ঘর অন্য কোন কাজেও ব্যবহার করা যাবে। এমতাবস্থায় কবর স্থানান্তরিত করা কোন
প্রয়োজন নেই। সূত্র: তাতাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; ফাতহুল
কাদীর ২/১০১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৩৬; শরহুল মুনয়া পৃ. ৬০৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৭; ইমদাদুল আহকাম ৩/২৮৬
সারকথা হলো, আপনার বর্ণনা অনুযায়ী ১২ বছর পূর্বের কবরটি এখন আর দেহ অবশিষ্ট মনে হয় নেই। ( অভিজ্ঞ লোকদের জিজ্ঞেস করে নিলে ভাল হয়)। তাই উক্ত কবরটি স্থানান্তরিত করার প্রয়োজন নেই। জায়গার
মালিক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে।
আর যদি কবরটি ওয়াকফকৃত জায়গা
না হয়, পুরাতন কবর
হয়। যখন লাশ মাটির সাথে মিশে যাওয়ার প্রবল ধারণা হবে, তখন
কবর সমতল করে দিয়ে সে জায়গা মসজিদ, রাস্তা বা বাড়ি-ঘর অন্য
কোন কাজেও ব্যবহার করা যাবে। এমতাবস্থায় কবর স্থানান্তরিত করা কোন প্রয়োজন নেই।
এ সংক্রান্ত আলোচনা আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-২৬০ শিরোনামে আলোচিত হয়েছে। লিংকটি নিম্নে দেওয়া হলো:
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/09/blog-post.html
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩২৭
মসজিদে প্রজেক্টর স্লাইডে খুৎবার
অনুবাদ দেখানো সম্পর্কে কী মতামত,
জানতে
চাই
بينوا توجروا? তারিখ: ০২/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা ইউনুস আলী সুদান থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, জুমুআর
খুতবা শোনা ওয়াজিব, অনুবাদ দেখা ওয়াজিব নয়। তাই খুতবা
চলাকালীন অন্য কোন কর্ম করা নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাই কমপক্ষে নিঃসন্দেহে মসজিদে প্রজেক্টর স্লাইডে খুৎবার অনুবাদ দেখানো
খেলাফে সুন্নাত, এতে কোন সন্দেহ নেই। নিম্নে মাসয়ালাটিকে ধারাবাহিক দালিলিক উপস্থাপন
করছি। ونسأل الله التوفيق وهو الموفق والمعين
প্রশ্ন: ক। খুতবা
শোনা ওয়াজিব তার দলিল কি?
উত্তর: ক। الفَرعُ الأوَّلُ: حُكمُ
الإنصاتِ أثناءَ الخُطبةِ
يجِبُ الإنصاتُ أثناءَ الخُطبةِ،
ويَحرُمُ الكلامُ، وهو مذهبُ الجمهور: الحَنَفيَّة، والمالِكيَّة، والحَنابِلَة،
وقولٌ للشافعي في القديمِ، وبه قال أكثرُ أهلِ العِلمِ
الأدلَّة:
أولًا: من الكِتاب
قال الله تعالى: وَإِذَا قُرِئَ
الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا [الأعراف: 204]
قال الإمامُ أحمدُ: أجمَعُوا
أنَّها نزلتْ في الصَّلاةِ والخُطبةِ
(فتح الباري)) لابن رجب (5/499).
ثانيًا: من السُّنَّة
অর্থাৎ খুতবার সময় শোনার হুকুম: আর এটা সংখ্যাগরিষ্ঠদের অভিমত হানাফি
এবং মালিকিরা, এবং হাম্বলি এবং শাফির পুরাতন মত আর এটা অধিকাংশ আহলে এলেমগণ বলেছেন। দলিল:
প্রথম: কিতাব থেকে:
قال الله تعالى: وَإِذَا قُرِئَ
الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا [الأعراف: 204]
অর্থ: এবং যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হয়,
তখন তা শোন এবং আনুগত্য কর। সূরা আরাফ-২০৪
ব্যাখ্যা: ইমাম আহমাদ বলেন: তারা সর্বসম্মতিক্রমে
একমত যে এটি নামায ও খুতবায় অবতীর্ণ হয়েছে। সূত্র: ফাতহুল
বারি-৫ খণ্ড, ৩৯৯ পৃ. আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.)
সুন্নাত থেকে দলিল:
হাদিস/আসার নং-০১
وَجَبَ الْإِنْصَاتُ فِي
أَرْبَعَةِ مَوَاطِنَ: الْجُمُعَةِ،وَالْفِطْرِ،وَالْأَضْحَى، وَالِاسْتِسْقَاءِ.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে
আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-চারটি স্থানে চুপ
থাকা ওয়াজিব ; জুমা, ঈদুল
ফিতর, ঈদুল আযহা এবং ইসতিসকার খুতবার সময়। মুসান্নাফে
আবদুর রাযযাক-৫৬৪২
হাদিস/আসার নং-০২
مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ
الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا
بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ وَزِيَادَةُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ وَمَنْ مَسَّ
الْحَصَى فَقَدْ لَغَا
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল
(ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি
উত্তমরূপে অজু করল অতঃপর জুমায় এসে চুপ করে মনোযোগ সহকারে (খুতবা) শুনল, তার পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং
আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে কঙ্কর স্পর্শ করল সে
অনর্থক কাজ করল। তাখরিজ: মুসলিম-৮৫৭
হাদিস/আসার নং-০৩
عن أبي هُرَيرَة رَضِيَ اللهُ عنه، أنَّ رسولَ اللهِ
صلَّى اللهُ عليه وسلَّم قال: ((إذا قُلتَ لصاحبِكَ يومَ الجُمُعةِ: أنصِتْ والإمامُ يَخطُبُ،
فقد لغوتَ. رواه البخاري (934)، ومسلم851
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল
(ﷺ) বলেছেন, জুমার দিন ইমাম খুতবা দিচ্ছেন
এমন সময় যদি তোমার পাশের ব্যক্তিকে বল ‘চুপ কর’ তবে তুমি অনর্থক কাজ করলে। তাখরিজ: বুখারি-৯৩৪; মুসলিম-৮৫১
ব্যাখ্যা: হাদিসটি খুতবার সময় সব ধরণের কথাবার্তার
নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দেয় এবং এটি অন্য সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে সতর্ক করে। কারণ যদি তিনি
বলেন: শুনুন, এবং এটি মূলত একটি ভাল আদেশ, এবং তিনি এটিকে অলস কথা বলেছেন। তাই তার জন্য হারাম হওয়ার চেয়ে কথা বলা সহজ
হাদিস/আসার নং-০৪
عن ابن عمر قال : سمعت النبي صلى الله عليه و سلم يقول إذا دخل أحدكم
المسجد والإمام يخطب على المنبر فلا صلاة ولا كلام حتى يفرغ الإمام
অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. বলেন-আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে আর ইমাম
খুতবা দিচ্ছে মিম্বরের উপর, তাহলে ইমাম ফারিগ হওয়ার আগ
পর্যন্ত কোন নামায নেই কোন কথাও নেই। তাখরিজ: মাযমাউজ
জাওয়ায়েদ-২০১৪
ফকিহদের মতামত:
لا يجوز الكلام والإمام يخطب مع
الناس، لا مع العاطس ولا مع غيره، الواجب الإنصات لسماع الخطيب، إلا
ইমাম বায (রহ.) বলেন,
ইমাম যখন খুতবা দিচ্ছেন তখন লোকদের সাথে কথা বলা জায়েজ নয়, হাঁচিও
নয়, অন্য কারো সাথেও নয়। খতিব ছাড়া খতীবের কথা শোনা ওয়াজিব।
সূত্র: তাতবিকু
মাওসুউল ফাতাওয়াল বাযিয়্য, ইমাম ইবনে বাযের ওয়েবসাইট থেকে
আল্লামা ইবনে আব্দুল বার
বলেন: ফিকাহবিদদের মাঝে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই যে, যে ব্যক্তির কানে খোতবার শব্দ
পৌঁছে তার উপর চুপ থাকা ফরজ। সূত্র: আল-ইসতিযকার-৫/৪৩
শাইখ উছাইমিন বলেন: الإنسان إذا جاء والإمام يخطب
يوم الجمعة فإنه ويجلس، ولا يسلم على أحد، فالسلام على الناس في هذه الحال محرم؛
لأن
অর্থাৎ জুমার খোতবা চলাকালে
সালাম দেয়া হারাম। অতএব, ইমামের খোতবা চলাকালে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল তার জন্য সালাম দেয়া
জায়েয নয় এবং অন্যদের সে সালামের উত্তর দেয়াও জায়েয নয়। সূত্র:ফাতওয়ায়ে নূরি আলাল দারব-১০০; বিন
উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র-১৬/১০০
প্রশ্ন: খ। ইমামের খুতবা শুনার
পাশাপাশি প্রজেক্টরে অনুবাদ দেখলে সমস্যা কি?
উত্তর: খ। অনেকে যুক্তি দেয় যে, আমরা
তো ইমামের আরবি খুতবা শুনি এবং প্রজেক্টরে অনুবাদও দেখি। সুতরাং সমস্যা নেই। এর
জবাব হলো,
আল্লাহ তাআলার বাণী-
Surah Al-Ahzab, Verse 4:
مَّا جَعَلَ اللَّهُ لِرَجُلٍ
مِّن قَلْبَيْنِ فِي جَوْفِهِ
অর্থ: আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি
হৃদয় স্থাপন করেননি। সূরা আহজাব-০৪
প্রিয় পাঠক! মহান রব বলছেন যে মানুষের দুটি
অন্তর নেই, তাহলে এক সাথে খুতবা শুনা ও দেখা কিভাবে
সম্ভব। সুতরাং তাদের দাবি মিথ্যা প্রমাণিত
হলো। অনুবাদ দেখতে গেলে অবশ্যই আরবি খুতবা
শুনার ব্যত্যয় ঘটবে।
প্রশ্ন: গ। জুমুআর খুতবা কি দুরাকাত নামাজের স্থলাভিষিক্ত, এর
দলিল কি?
উত্তর: গ। হ্যাঁ, দুরাকাতের কায়েম-মুকাম। দলিল:
হাদিস/আসার নং-০১
عن عمر بن
الخطاب قال: كانت
الجمعة اربعا فجعلت
ركعتين من أجل
الخطبة
হযরত উমর (রা.) বলেন, জুমু’আর
নামায চার রাক’আত ছিল। এরপর খুতবার কারণে দুই রাক’আত করা হয়েছে। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস-৫৩৭৪
হাদিস/আসার নং-০২
عن عمر بن
الخطاب أنه قال:
إنما جعلت الخطبة
مكان الركعتين
হযরত উমর রা. বলেন, জুমুআর
খুতবাকে দুই রাকআত নামাযের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। তাখরিজ: মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস-৫৩৬৭
উপরোক্ত হাদিসদ্বয়ের
ইশারাতুন নস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যেহেতু খুতবা নামাজের স্থলাভিষিক্ত সুতরাং নামাজে যেমন কোন
কর্ম করা যায় না, তেমনি খুতবাকালীন কোনো কর্ম করা যায় না।
প্রশ্ন: ঘ। খুতবার অর্থ বুঝার জন্য
আমরা অনুবাদ দেখি তাহলে অসুবিধা কি?
উত্তর: ঘ। হ্যাঁ, খুতবার অর্থ বুঝা অবশ্যই কাম্য।
তবে যেহেতু খুতবা শোনা একটি স্বাতন্ত্র ইবাদত, শোনার
জন্য নির্দেশনা এসেছে, তাই অর্থ বুঝার জন্য ইসলামি কোন বিধান
মাওকুফ নয়। যেমন নামাজের তেলাওয়াত শুনা ফরজ/ওয়াজিব; কিন্তু আমরা কয় জনও বা সূরার অর্থ বুঝি।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, খুতবার আলোচ্য বিষয়
মুসলমানদেরকে বুঝানোর জন্য তো আরবি খুতবার আগে ৩০-৪০ মিনিট
ওয়াজ-নছিহত করা হয়।
আর জুমুআর প্রথম আজান হওয়ার
পর কোনো ফুকাহায়া-মুফাস্সিরগণ দুনিয়ার কাজ-কর্ম নিষিদ্ধ বলেছেন। যেমন
ইরশাদ হচ্ছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ
اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ
‘হে মুমিনগণ, জুমআর দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত
হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি
তোমরা উপলব্ধি কর। সূরা জুমুআ-০৯
এই আয়াতে মৌলিক ভাবে খুতবার
আজান উদ্দেশ্য হলেও মুফাসসির ও ফকীহগণের অগ্রগণ্য মত হল জুমার প্রথম আজানও এর
অন্তর্ভুক্ত হবে। সুতরাং প্রথম আজানের পর থেকেই ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করে জুমার নামজের
প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। এ সময় অন্য কাজ করা নিষিদ্ধ। সূত্র: ফাতওয়ায়ে ইসমানি-সালাত অধ্যায়; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/২০৫;
আদ্দুররুল মানছুর ২/২১৯; বয়ানুল কুরআন ৩/৫৪৭
সুতরাং ইসলামের নির্দেশনা
হলো, আজান হয়ে
গেলে তাড়াতাড়ি মসজিদে আসা। এ হুকুম বাস্তবায়ন করলে তো অনুবাদ দেখার প্রয়োজন পড়ে না,
কারণ খতিব তো আগেই তার ব্যাখ্যা করেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহিহ বুঝ
দান করুন।
সারকথা হলো, জুমুআর খুতবার গুরুত্ব অনেক।
আমরা জানি আমর বিল মারুফ-নাহি আনিল মুনকার ফরজ ইবাদত;
কিন্তু আমরা হাদিসে দেখতে পেলাম, কেউ কথা বললে,
তাকে চুপ থাকো বলা যাবে না। এতে প্রতিয়মান হয় যে, খুতবার গুরুত্ব কত বড়। উক্ত হাদিসে মুখের কর্ম নিষিদ্ধ করা হয়েছে,
তাহলে চোখের কর্ম কিভাবে জায়েজ হবে।
শেষ কথা হলো, খুতবা শোনা জুরুরি, তাই খুতবা শোনার কাজে বাধাগ্রস্থ হবে এমন কাজ-কর্ম
ইসলাম নিষিদ্ধ করেছেন। আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত মসজিদে প্রজেক্টর স্লাইডে খুৎবার অনুবাদ দেখানো খুতবার উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক এতে কোনো
সন্দেহ নেই। তাই এটা পরিত্যাজ্য , খেলাফে সুন্নাহ, নাজায়েজ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩২৮
আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম, আশা করি ভালো আছেন।
আমার জানার বিষয় হল শুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা কি বিদআত?
দলিলসহ জানালে উপকৃত হতাম।
তারিখ: ০৩/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতার হোসেন লালমনিহাট থেকে-----
জবাব:
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن
الرحيم
হামদ-সানা ও দরুদের পর প্রথম কথা হলো,
শুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা যাবে কিনা এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। সম্মানিত চার ইমাম এবং অধ্যাবদি তাদের অনুসারি লক্ষ লক্ষ ওলামা-ফোকাহা, ওলামায়ে মোতাকাদ্দিমিন-মুখায়াখ্খিরিন কেহই শুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা বিদআত বলিনি। অপরপক্ষে ইবনে তাইমিয়া রহ., নিকটতম
যুগের তার অনুসারি শায়েখ আলবানি রহ.
, শায়েখ উসায়মিন রহ. এবং বর্তমানে তাদের
অনুসারীরা (আহলে হাদিসরা) এটাকে বিদআত
বলে।
দ্বিতীয় কথা হলো, বিদআত বলা হয়, যার অস্তিত্ব কুরআন-সুন্নাহ ও খয়রুন করুনে পাওয়া যায়
না্। সুতরাং যার অস্তিত্ব কুরআনে-সুন্নাহয় পাওয়া যায়, তা কখনও বিদআত হতে পারে না। দলিল:
আয়াত নং-০১
قُلِ ادۡعُوا اللّٰہَ اَوِ
ادۡعُوا الرَّحۡمٰنَ ؕ اَیًّا مَّا تَدۡعُوۡا فَلَہُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ۚ
وَلَا تَجۡہَرۡ بِصَلَاتِکَ وَلَا تُخَافِتۡ بِہَا وَابۡتَغِ بَیۡنَ ذٰلِکَ
سَبِیۡلًا
অর্থঃ বলে দাও, তোমরা আল্লাহকে ডাক বা রহমানকে
ডাক, যে নামেই তোমরা (আল্লাহকে) ডাক, (একই
কথা। কেননা) সমস্ত সুন্দর নাম তো তাঁরই। তুমি
নিজের নামায বেশি উঁচু স্বরে পড়বে না এবং অতি নিচু স্বরেও নয়; বরং উভয়ের মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করবে। সূরা ইসরা-১১০
তাফসির: এ আয়াত সম্পর্কে আল্লামা ইবনে কাসির
রহ. বলেন,
يَقُول تَعَالَى قُلْ يَا
مُحَمَّد لِهَؤُلَاءِ الْمُشْرِكِينَ الْمُنْكِرِينَ صِفَة الرَّحْمَة لِلَّهِ
عَزَّ وَجَلَّ الْمَانِعِينَ مِنْ تَسْمِيَته بِالرَّحْمَنِ " اُدْعُوا اللَّه أَوْ اُدْعُوا الرَّحْمَن أَيًّا مَا
تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى " أَيْ لَا فَرْق بَيْن دُعَائِكُمْ لَهُ بِاسْمِ اللَّه أَوْ بِاسْمِ
الرَّحْمَن فَإِنَّهُ ذُو الْأَسْمَاء الْحُسْنَى كَمَا قَالَ تَعَالَى " َ
তাফসীর: আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুহাম্মাদ ! আপনি ঐ সকল মুশরিকদেরকে বলে দির যারা
আল্লাহর রহমান নামকে অস্বীকার করে।
তোমরা চাও আল্লাহ বলে ডাক কিংবা
রহমান বরে ডাক এই দুই নামে কোন পার্থক্য নেই। অতত্রব যেই নামে ডাক ডাকিতে পার। তাফসীরে ইবনে কাসির-৬খন্ড,৩৯২ পৃষ্ঠা, অধ্যাপক মাওলানা
আখতার ফারুক অনূদিত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আয়াত নং-০২
فَذَكِّرْ إِنْ نَفَعَتِ
الذِّكْرَى (9) سَيَذَّكَّرُ مَنْ يَخْشَى
অনুবাদ অনুবাদ সফলকাম তারাই যারা
আত্মশুদ্ধি অর্জন করবে,আল্লাহর নামে যিকির করবে,এবং নামাজ আদায় করবে। সূরা
আলা-৯-১০
তাফসির: এখানে আল্লাহ তায়ালা কিন্তু وذكر ربك বলেননি,বরং বলেছেন৷ وذكر اسم ربك এর দ্বারা এই দিকে ইশারা যে এখানে
আল্লাহ শব্দ বলে যিকির করাও উদ্দেশ্য। সূত্র: মাআরিফুল কুরআন ৮ খণ্ড; ৫৮৪পৃ.
আয়াত নং-০৩
وَاذْكُرْ اسْمَ رَبِّكَ
وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلاً (8) رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لا إِلَهَ إِلاَّ هُوَ فَاتَّخِذْهُ
وَكِيلاً (9)
অর্থ: কিন্তু (দিন হোক বা রাত)
সবসময়ই তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিবেদিত
থাকো। সূরা মুযাজ্জিম্মিল-০৮
তাফসির:
واذكر -أيها النبي- اسم ربك,
فادعه به, وانقطع إليه انقطاعًا تامًا في عبادتك, وتوكل عليه. هو مالك المشرق والمغرب لا معبود بحق إلا هو, فاعتمد عليه, وفوِّض أمورك إليه.
التفسير
الميسر الصفحة رقم 574 من القرآن الكريم
অর্থ: হে নবি আপনার রবের নামে জিকির করুন। অর্থাৎ
আল্লাহ দ্বারা/বলে ডাক। সূত্র: তাফসিরে মায়সির-৫৭৪ পৃষ্ঠা
হাদিস নং-০১
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ: "لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى
لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ:
اللهُ، اللهُ".
صحيح مسلم (1/ 131) (148)، إكمال المعلم (1/459)، شرح النووي
على مسلم (2/178)، تحفة الأحوذي (6/ 375)، البحر المحيط الثجاج (4/163).
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামত তখনই সংঘটিত হবে, যখন জমিনের মধ্যে ’আল্লাহ’ ’আল্লাহ’ বলার মতো কেউ
থাকবে না। অপর এক বর্ণনায় আছে- এমন কোন লোকের ওপরে কিয়ামত সংঘটিত হবে না,
যে ’আল্লাহ’ ’আল্লাহ’
বলেছে। তাখরিজ: মুসলিম-১৪৮;
ইকমালুল মলিম-১/৪৫৯
ব্যাখ্যা: এ হাদিসটির দুটি ব্যাখ্যা
পাওয়া যায়, প্রথমত একদল আলেম বলেন, এর
দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, لا تقوم الساعة حتى لا يقال لا إله إلا الله অর্থাৎ কিয়ামত হবে না লা ইলাহা বলার মত কেউ
থাকা পর্যন্ত অর্থাৎ একজন ঈমানদার থাকা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না।
দ্বিতীয়ত আরেকদল মুহাদ্দিসগণ
বলেন, এর উদ্দেশ্য
হলো লফজি জিকির। দলিল:
ব্যাখ্যা নং-০১
الله الله فيها ذكر للتاكيد و
قيل في تكرره عبارة تكثير
অর্থাৎ এখানে আল্লাহ আল্লাহ
দ্বারা জিকিরে তাকিদ বুঝানো হয়েছে। এবং কেহ কেহ বলেন, এখানে আল্লাহ শব্দের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে
অধিক এর কারণে অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নামের জিকিরের কারণে। মিশকাতুল মাসাবিহ-৪০ পৃ. ১০ নং হাশিয়া
ব্যাখ্যা নং-০২
أخبر الرسول صلى
الله عليه وسلم
أن الساعة لن
تقوم حتى لا
يكون في الأرض
من يذكر اسم
الله و يعبده،
অর্থাৎ আল্লাহর নামের জিকির
ও ইবাদত করনেওয়ালা থাকা পর্যন্ত কিয়ামত
হবে না। সূত্র: মাওসুআতুল আহাদিসুল নবুওয়া
ব্যাখ্যা নং-০৩
ومعنى الحديث –كما
هو جلي- أنه
لا يبقى على
الأرض من يذكر
الله. ويوضح ذلك
ما جاء في
صحيح مسلم من
حديث النواس بن
سمعان الطويل في
ذكر الدجال وعلامات
الساعة وفيه:... فبينما
هم كذلك إذ
بعث الله ريحا
طيبة فتأخذهم تحت
آباطهم فتقبض روح
كل مؤمن وكل
مسلم، ويبقى شرار
الناس يتهارجون فيها
تهارج الحمر فعليهم
تقوم الساعة. رقم الفتوى:
137365
অর্থাৎ একজন আল্লাহ আল্লাহ মুখে বললেওয়ালা থাকা পর্যন্ত
কিয়ামত হবে না। সূত্র: aluah.net ফাতওয়া নং-১৩৭৩৬৫
ব্যাখ্যা নং-০৪
الحديث فيه فضل الله تعالى على المؤمنين حيث أكرمهم بقبض أرواحهم
بريح اليمن، وعدم قيام الساعة عليهم؛ لأنها تقوم على شرار الخلق الذين لا يقولون
الله الله.
مستلة من إبهاج المسلم بشرح صحيح مسلم (كتاب الإيمان(
অর্থাৎ খারাপ লোক/নিকৃষ্ট সৃষ্টির উপর কিয়ামত
সংঘটিত হবে, যারা বলবে না আল্লাহ আল্লাহ। সূত্র: ইবহাজুল মুসলিম বিশারহি সহিহ মসলিম, কিতাবুল ঈমান
অধ্যায়
ব্যাখ্যা: নং-০৫
يقول النووي رحمه الله في "شرح
مسلم" (2/178) :
" ( يقول الله الله ) : هو برفع اسم الله
تعالى ، وقد يغلط فيه بعض الناس فلا يرفعه " انتهى
ويقول الطيبي كما في "تحفة
الأحوذي" (6/375) :
" معنى ( حتى لا يقال ) حتى لا يذكر اسم
الله ولا يعبد "
অর্থাৎ কেহই আল্লাহর নাম
নিবে না এবং ইবাদত করবে না। সূত্র: শারহুল মুসলিম-২/১৭৮ ইমাম নববি রহ.
হাদিস নং-০২
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ
رضي الله عنها، قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «أَلَا أُعَلِّمُكِ كَلِمَاتٍ تَقُولِينَهُنَّ عِنْدَ الْكَرْبِ أَوْ
فِي الْكَرْبِ؟ أَللَّهُ أَللَّهُ رَبِّي لَا أُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا».
আসমা বিনতে উমাইসের সূত্রে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হতে
পারেন, তিনি বলেন: আল্লাহর রসূল, আল্লাহর
দোয়া ও সালাম, আমাকে বলেছেন: "আপনি আমার সম্পর্কে যা জানেন
তা কি আমি আপনাকে শেখাব না? আল্লাহ, আল্লাহ,
আমার প্রভু, আমি তার সাথে কাউকে শরীক করি না।
তাকরিজ: আবু দাউদ-১৫২৫; আল-নাসাঈ আল-সুনান আল-কুবরা-১০৪০৮; ইবনে মাজাহ-৩৮৮২;
আহমদ-২৭০৮২
ব্যাখ্যা: التي علَّمها النبيُّ ﷺ أن تقول: الله ربي تكررت لفظة
الجلالة مرتين، الله، الله ربي، فلفظ الجلالة (الله) الأول مُبتدأ، والثاني تأكيدٌ
لفظي له.
وهذا التَّكرار للفظ الجلالة فيه
إشارة إلى عِظم هذا الاسم الكريم، وما تضمّنه من صفة الإلهية، وكذلك أيضًا
الاستلذاذ بذكره -تبارك وتعالى-، واستحضار لعظمته، والتَّأكيد لوحدانيَّته، فهذا
الاسم عرفنا في الكلام
এগুলি বলুন , এবং
এগুলি এমন শব্দ যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শিখিয়েছিলেন: আল্লাহ
আমার প্রভু। আল্লাহ শব্দটি দুবার পুনরাবৃত্তি
হয়। আল্লাহ, আল্লাহ আমার প্রভু ।
"আল্লাহ তাআলার মহামান্বিত" শব্দটির এই পুনরাবৃত্তিটি এই মহৎ নামের মহত্ত্বের
একটি ইঙ্গিত, এবং এতে যে স্বর্গীয় গুণ রয়েছে, সেইসাথে
তাঁকে - ধন্য ও সর্বশক্তিমান - এবং তাঁর মহত্ত্বকে আহ্বান করা এবং তাঁর একত্বের উপর
জোর দেওয়া আনন্দ। তিনি তাকে মৌখিকভাবে উল্লেখ করেন। সূত্র: -শারহুল কিতাব মাআনিল আজকার হিসনুল
মুসলিম-২১৬
সারকথা হলো, শুধু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করা
যাবে এমন একটি নসও নেই নিষেধাজ্ঞার কোন দলিল নেই। আর পবিত্র
কুরআন সুন্নাহর সরাসরি নস থাকতে, এটাকে বিদআত বলা ঠিক হবে
না। একই আয়াত/হাদিসের একাধিক ব্যাখ্যা থাকলে (যা সবই সঠিক) উম্মত যে একটি আমল করতে পারে, আমলকারীকে বিদআত বলার অবকাশ নেই।
দেখুন, একজন আল্লাহ বলনেওয়ালা থাকতে কিয়ামত
হবে না-- এটা দ্বারা ঈমান মাকসাদ একমাত্র ব্যাখ্যা নয়, আমি উপরে উল্লেখ করেছি যে
মুহাদ্দিসদের এক জামাত এ দ্বারা লফজি জিকির
উদ্দেশ্য নিয়েছেন।
বড় আফসোসের বিষয় হলো, কিছু
ভাইয়েরা যে, এ আমলের বিষয়ে খয়রুন কুরুনের উপামা
দিচ্ছেন। কিন্তু নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলে তখন বলে হাদিস থাকতে সাহাবির আমল মানা যাবে
না। যেমন ২০ রাকাত তারাবির,
জামাত
শুরু হলে ফজরের সুন্নাত ইত্যাদি বিষয়ে পল্টি দেয়। তখন এই উসূল মনে থাকে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ছহিহ পথে চলার তাওফিক
দান করুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩৩৮
আসসালামু আলাইকুম।
একবার এক ছেলে খেজুর গাছে পাথর
ছুড়ছিল। ছেলেটি কে নবীজীর কাছে আনা হল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন
,কীরে বাবা, খেজুর গাছে পাথর ছুড়ছ কেন?......…............
......... এই বর্ণনা হাদীস কিনা জানালে উপকৃত হবো। তারিখ: ১৩/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ
ফরিদপুর থেকে।
----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আমাদের প্রিয়
নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদেরকেও আদব-আখলাক শিক্ষা দিয়েছেন।
যেমন,
হাদিস নং-০১
تعليمهم آداب الأكل:
عن عمر بن أبي سلمة رضي الله عنه
قال: ((كُنتُ في حجر النبي صلى الله عليه وسلم، وكانت يدي تطيش في الصحفة، فقال:
يا غلام، سمِّ الله وكُل بيمينك وكل مما يليك))؛
অর্থ:
ওমর ইবনে আবি সালামাহ রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: (আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
ঘরে ছিলাম, আর আমার হাত থালায় এদিক ওদিক করে খাচ্ছিলাম, এবং
তিনি বললেন: হে বালক, আল্লাহর নাম নাও এবং ডান হাতে খাও এবং যা তোমার
অনুসরণ করে তা খাও) )। তাখরিজ: বুখারি -৫৩৭৬, মুসলিম
-২০২২
হাদিস নং-০২
عن أبي هريرة رضي الله عنه،
قال: الحسن رضي الله عنهما تمرة من تمر
الصدقة، فجعلها في فيه، فقال النبي صلى الله عليه
وسلم: كخ، كخ، ارمِ بها، أما علمت أنا لا نأكل الصدقة))؛
অর্থ: হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু
তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হাসান
রা. সদকার খেজুর থেকে একটু খেজুর গ্রহণ করলেন,
খেয়ে
ফেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কাখ
কাখ বলে বের করার নির্দেশ দিলেন। তুমি কি জানো
না আমরা সদকার মাল খাই না। তাখরিজ: বুখারি -১৪৯১; মুসলিম
-২০২২
দ্বিতীয় কথা হলো, আপনার
প্রশ্নের বর্ণিত কথাগুলো আমাদের অনুসন্ধানে
হাদিস হিসেবে পাওয়া যায়নি।
সারকথা হলো, আপনার
প্রশ্নের উল্লেখিত কথাগুলো আমাদের গবেষণায় হাদিস হিসেবে পাওয়া যায়নি। আরও অধিক অনুসন্ধানের
জন্য কোন উলুমুল হাদিস বিভাগে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হল।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩৩৯
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
আমার একজন জেসিও আমাকে এই নাম
গুলো পাঠিয়েছে উনার ২ মেয়ের নাম।এখনো জন্মনিবন্ধন করেনি তাই ভুল থাকলে সংশোধন করবে
এজন্য নাম গুলোর অর্থ এবং সঠিক কিনা জানতে চেয়েছে।দয়া করে উত্তর দিলে কৃতজ্ঞ হব
আসসালামু আলাইকুম।
পিতা: মোঃ রবিউল হাসান
মেয়ে
১। সাবাহ রাইসা হাসান তাসফিয়া
২। সাবাহ যীনাত হাসান তাবাসসুম? তারিখ: ১৩/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নজরুল ইসলাম চাঁদপুর থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, জন্মের পর
শিশুর একটি সুন্দর নাম রাখা পিতা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যেমন, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল
(ﷺ) বলেছেন-
من حق الولد على الوالد أن يحسن اسمه ويحسن أدبه.
অর্থ : সন্তানের
সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তারবিয়াতের ব্যবস্থা করা বাবার উপর সন্তানের হক।
তাখরিজ: মুসনাদে বাযযার- ৮৫৪০
০১। সাবাহ অর্থ- সকাল।
রাইসা অর্থ- নেত্রী, রানী ।
হাসান অর্থ - সুন্দর, উত্তম, চমৎকার
ইত্যাদি।
তাসফিয়া
অর্থ- পবিত্র, বিশুদ্ধ
০২। সাবাহ অর্থ- সকাল।
যীনাত অর্থ- শোভা, সৌন্দর্য
হাসান অর্থ - সুন্দর, উত্তম, চমৎকার
ইত্যাদি।
তাবাস্সুম
অর্থ- মিষ্টি হাসি, মুচকি
হাসি, মৃদু হাসি ইত্যাদি।
উপরোক্ত
শব্দগুলো সবকটিই আরবি শব্দ ও অর্থই ভাল। তবে এভাবে না রেখে দুটি শব্দ রাখলে অর্থবহ
হবে।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত নামদ্বয় অসঙ্গতিপূর্ণ। নামটি শুধু
আরবি হলেই চলবে না, অর্থপূর্ণ, অর্থবহ,
সুন্দর অর্থ বহন করে এভাবে মিলিয়ে রাখাই উচিত।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩৪০
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
আমার একজন স্যার আমাকে এই নাম
গুলো পাঠিয়েছে উনার ১ছেলে ও ১ মেয়ের নাম। ভুল
থাকলে সংশোধন করবে। এজন্য নাম গুলোর অর্থ সঠিক
কিনা জানতে চেয়েছে।দয়া করে উত্তর দিলে কৃতজ্ঞ হব
১। রিকাজুল করিম (রাফিফ)
২।রুজায়না করিম (রিফা) । তারিখ: ১৫/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক মাওলানা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
০১। রিকাজুল করিম (রাফিফ)
রিকাজ ركاز এর মাসদার থেকে অনেকগুলো অর্থ হতে পারে। তারমধ্যে একটি উল্লেখ
করছি:
: رِكاز: اسم
الرِّكازُ :
ما ركزه الله تعالى في الأرض من المعادن في حالتها الطبيعية
الرِّكازُ
:الكَنْزُ
رِكَاز: (اسم)
رِكَاز : جمع
رِّكَازَةُ
الركاز:
(مصطلحات)
الكنز المدفون
في الأرض ، الذي لا يعرف له مالك معدنا كان أم نقدا. (فقهية)
রিকাজ- ইসম
রিকাজ : আল্লাহ তায়ালা খনিজ
পদার্থের পৃথিবীতে যাকে তাদের প্রাকৃতিক অবস্থায় কেন্দ্রীভূত করেছেন
রিকাজ : ধন-সম্পদ, ধনভাণ্ডার
রিকাজ : (নাম)
রিকাজ : রিকাজের বহুবচন
আল-রিকাজ : (পরিভাষা)
মাটিতে পুঁতে রাখা ধন, যার জন্য ধাতু বা নগদ টাকার মালিক
অজানা। (বিচারগত)
করিম: সম্মানিত, দয়ালু।
নোট: শব্দটি করিম নয়, কারিম শুদ্ধ আরবি।
রাফিফ একটিও
আরবি নাম । রাফীফ
নামের বাংলা অর্থ হলোঃ নয়নতারা, উজ্জল,লিলিফুল।
০২। রুজায়না করিম (রিফা) :
রুজাইনা: মর্যাদাপূর্ণ, সম্মানিত , রচিত ইত্যাদি
করিম: সম্মানিত, দয়ালু।
রিফা অর্থ উত্তম, শ্রেষ্ঠ
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত সব
শব্দগুলোই আরবি। অর্থও ভাল/সুন্দর, তাই
উক্ত রাখাদ্বয় রাখা যেতে পারে। সুতরাং
রিকাজুল কারিম অর্থ হবে আল্লাহর/কারিমের (অর্থাৎ কেননা কারিম আল্লাহর একটি
গুণবাচক নাম) ধনবান ব্যক্তি।
আর রুজাইনা কারিম অর্থ হবে
আল্লাহর মর্যাদাপূর্ণ/ মর্যাদাবান বান্দা/বান্দি।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক (বগুড়া)
জিজ্ঞাসা-১২৩৪১
আসসালামু আলাইকুম
আমার জিজ্ঞাসা
জনৈক মৃত ব্যক্তির ওয়ারিস
০৩ মেয়ে + ১স্ত্রী,
ভাই জীবিত ০২+ মৃত ০১ মোট-
০৩ জন,
বোন-০৩ জন
০২ ভাই ০৩ বোন জীবিত
অপর মৃত ভাইয়ের ০২ ছেলে।
অতএব সম্পত্তির ভাগ কে কত
% পাবে? আর কারা পাবেনা
জানালে কৃতজ্ঞ হই। তারিখ: ১৫/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা সিরাজুল হক
ঢাকা থেকে-----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো,
আপনার প্রশ্নের আলোকে
৩ মেয়ে -২/৩
১ স্ত্রী- ১/৮
২ ভাই ও ৩ বোন – বাকি অংশ
ধরুন মোট সম্পদের টাকার
পরিমাণ ১০০ টাকা এখন
৩ মেয়ে পাবে ৬৬.৬৬% টাকা,
প্রত্যেকে পাবে-২২.২২%
টাকা
স্ত্রী পাবে, ১২.৫০ %
টাকা
২ ভাই ও ৩ বোন পাবে- ২০.৮৪%
টাকা
তবে দুই বোন সমান এক ভাই
পাবে অর্থাৎ ভাইয়েরা বোনের দ্বিগুন পাবে। যেমন, ২০.৮৪% ভাগ করলে হবে। প্রত্যেক ভাই পাবে- ৫.৯৪% টাকা আর প্রত্যেক বোন পাবে ২.৯৭ % টাকা ।
শেষকথা হলো, আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত মৃত
ভাইয়ের পুত্ররা বঞ্চিত হবে। ভগ্নাংশ কম
বেশি হতে পারে , তাই যারা দক্ষ লোকের মাধ্যমে অংক করার জন্য
পরামর্শ দেওয়া হলো।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মাওলানা মুহাম্মদ শাহ আলম ও মুফতি
মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৩৮
আসসালামু আলাইকুম।
একবার এক ছেলে খেজুর গাছে পাথর
ছুড়ছিল। ছেলেটি কে নবীজীর কাছে আনা হল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন
,কীরে বাবা, খেজুর গাছে পাথর ছুড়ছ কেন?......…............
......... এই বর্ণনা হাদীস কিনা জানালে উপকৃত হবো। তারিখ: ১৩/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ
ফরিদপুর থেকে।
----
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৪২
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
ট্রাস্ট ব্যাংকের ঋন নেয়া বৈধ
হবে কিনা? উত্তর প্রদান করে বাধিত করবেন। তারিখ: ১৬/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা গিয়াস উদ্দিন
কুমিল্লা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সুদের
মাসয়ালা সুস্পষ্ট। সুদী ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করা জায়েজ নয়, চাই সেটা বাড়ির করার জন্য হোক, ব্যবসার জন্য হোক,
গাড়ি কেনার জন্য হোক বা যেভাবেই হোক। দলিল:
আয়াত নং-০১
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا
اتَّقُوا اللهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ
مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَ
رَسُوْلِهٖ.
হে ঈমানদারগণ! তোমরা
আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা পরিত্যাগ করো। যদি তোমরা মুমিন
হও। যদি তা না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সংবাদ জেনে নাও। সূরা বাকারা,২৭৮-২৭৯
আয়াত নং-০২
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا
لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ
الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ
وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ
رَبِّهِ فَانْتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ
فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٢:٢٧٥
অর্থ: যারা সুদ খায়, তারা
কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে
শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা
বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লাহ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার
কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে
যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর
যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।
সূরা বাকারা-২৭৫
হাদিস নং-০১
عبد الله بن مسعود عن أبيه عن
النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) এর পিতা
থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ
করেছেন-“যে সুদ খায়,
যে সুদ
খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়,
আর দলিল
যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তাআলা অভিশাপ করেছেন। সূত্র: মুসনাদে আহমাদ-৩৮০৯, মুসনাদে
আবি ইয়ালা-৪৯৮১
হাদিস নং-০২
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا، أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ
الرَّجُلُ أُمَّهُ»
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন
মাকে বিবাহ (যেনা) করা। তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৭৪,
শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী-৫১৩১
দ্বিতীয় কথা হলো, নিরুপায় সুদি ব্যাংক বা সুদের
ভিত্তিতে লোন নেওয়া জায়েজ আছে। দলিল:
: {إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ
وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ فَمَنِ اضْطُرَّ
غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ}
سورة البقرة:173.
অর্থ: তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন,
মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস
এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক
অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার
জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত
দয়ালু। সূরা বাকারা-১৭৩
উপরোক্ত আয়াতের উপর কিয়াস
করে ফুকাহায়ে উম্মত বলেছেন, যদি সুদি লোন নেওয়া ছাড়া খাদ্য-পানীয় অভাবে জীবন
নাশের হুমকি হয়, তাহলে
জায়েজ।
تطرق ممتاز بعد ذلك إلى قضية
الاضطرار لهذا النوع من القروض فقال إنه بحال كانت الحاجة تتعلق بحفظ النفس
بالطعام أو الشراب بحيث إن المحتاج لا يستطع هذا الحفظ إلا بالقرض بزيادة ربوية
فحينئذٍ يجوز له ذلك وأضاف: "فمن يضطر لدفع الهلاك عن نفسه يبقى اضطراره
مقيداً بهذا، وهو الطعام أو الشراب أو نحو ذلك مما يحفظ النفس من الهلاك، ولا
يتعدى إلى شراء السيارة مثلاً إذ لا ضرورة لها في حفظ النفس."
অর্থাৎ এই ধরনের ঋণের বাধ্যবাধকতার
বিষয়টি স্পর্শ করেন এবং তিনি বলেন যে প্রয়োজন যদি খাদ্য বা পানীয়ের সাথে স্ব-সংরক্ষণের
সাথে সম্পর্কিত হয়, যাতে অভাবী ব্যক্তিরা সুদ বৃদ্ধির সাথে ঋণ ছাড়া
এই সংরক্ষণ করতে না পারে, তাহলে এটা তার জন্য জায়েজ। এটা খাদ্য, পানীয়, বা অনুরূপ
যে আত্মা ধ্বংস থেকে রক্ষা করে, এবং একটি গাড়ী কেনার বাইরে যায়
না, উদাহরণস্বরূপ,
কারণ
আত্মা রক্ষা করা আবশ্যক নয়।
أنّ الضرورة التي يلجأ لها الشخص
تكون حينما لا يُوجد أيّ بديل آخر؛ كبنوك تتعامل بتعاملات إسلامية، أو قرض حسن، أو
قبول أموال الزكاة، أو قبول أموال الصدقات، وغيرها؛ فالمضطر الذي يزعم أنّه يقبل
مال الربا ولا يقبل مال الزكاة مُكابر؛ لأنّ مال الزكاة حلال له إن كان من أهله
المستحقين له؛ فيما أنّ مال الربا حرام؛ ولهذا يقول سيدنا الإمام أحمد : " لا
تحل الميتة لمن قدر على دفع ضرورته بالمسألة" [ المغني لابن قدامة : 11 /74 ]
অর্থাৎ যে প্রয়োজনীয়তা একজন
ব্যক্তি অবলম্বন করে যখন অন্য কোন বিকল্প নেই;
ইসলামী
লেনদেন, একটি ভাল ঋণ,
যাকাতের
টাকা গ্রহণ, বা ভিক্ষার টাকা গ্রহণ, এবং
অন্যান্য নিয়ে ব্যাংক হিসাবে; বাধ্য ব্যক্তি যে দাবি করে যে
সে সুদের টাকা গ্রহণ করে কিন্তু যাকাতের টাকা গ্রহণ করে না সে অহংকারী। কারণ যাকাতের
টাকা তার জন্য হালাল যদি সে তার যোগ্য লোকদের একজন হয়। যদিও সুদের টাকা হারাম; তাই
আমাদের ওস্তাদ, ইমাম আহমাদ বলেন: “যে ব্যক্তি ভিক্ষা করে তার প্রয়োজনীয় জিনিস পরিশোধ করতে সক্ষম
তার জন্য মৃত্যু জন্তু খাওয়া জায়েজ নয়।”
সূত্র: ইবনে কুদামাহ দ্বারা আল-মুগনি-১১ খণ্ড; ৭৪
পৃ.
তৃতীয় কথা হলো, সুতরাং সুদি ঋণ কোনো অবস্থায়ই
জায়েজ নেই। এতে কোনো আলেমের দ্বিমতও নেই। ইসলামি ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে বাইয়ে মুরাবাহা/বিভিন্ন সিস্টেম চালু আছে। এই পদ্ধতিতে মূলত ঋণ হিসেবে টাকা দেওয়া হয় না; দেওয়া হয় পণ্য। আর এই পদ্ধতিও
জায়েজ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত আছে। আর সত্য
কথা হলো, খাতা কলমে শরিয়া পদ্ধতি লেখা থাকলেও,
বাস্তবে সেই নীতি মানা হচ্ছে না
(আমার সম্মানিত প্রশিক্ষক মুহতারাম মাওলানা আবিদ আলি
স্যারের কাছে শুনেছি, ইসলামি ব্যাংকে কেন্দ্রীয়ভাবে বাৎসরিক রিপোট যে, কত
পারসেন শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত হয়নি) তাই তাকওয়া হলো এসব
লেনদেন থেকেই দূরে থাকা।
সারকথা কথা হলো, শরিয়তে যা সুস্পষ্ট হারাম তা
হালাল করার চেষ্টা করা জঘন্য অন্যায়, কুফুরি। সুতরাং সুদের ভিত্তিতে বাড়ি/গাড়ি/ব্যবসার নিমিত্তে টাস্ট্র ব্যাংক বা যেকোন
ব্যাংক লোন নেওয়া হারাম। তবে কোন ব্যক্তি একান্ত বাধ্য হয়ে, খাদ্য-পানীয়-চিকিৎসার জন্য ভিক্ষার করার দ্বারাও যদি সম্ভব
না হয়, জীবনকে রক্ষার করার জন্য সুদ ভিত্তিক লোন জায়েজ আছে,
তাও খুশিমনে নয়, ঘৃণার সাথে গ্রহণ করা,
তওবা-এসতেগফার করা। সূত্র: ফাতাওয়া আশ-শাবকাতুল ইসলামিয়াহ ১২/৬৯২৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৪১১
উল্লেখ যে, অনেকে বলে, এখানে সুদ কম মাত্র ১% বা ৫% । প্রিয় ভাইয়েরা হারামের এক কোটি যেমন হারাম, তেমনি এক টাকায় হারাম। সূত্র: সূরা তাহরিম-০১
(والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৪২
আসসালামু আলাইকুম।
ফজরের নামাজের পর সূরা হাশরের
শেষ তিন আয়াত পড়ার কোন হাদীস আছে নাকি? তারিখ: ১৬/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মাহফুজুর রহমান
চাদপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হ্যাঁ,
হাদিস আছে। তবে হাদিসের ভাষা ফজরের নামাজের পর নয়, সকাল ও সন্ধ্যায় পাঠের কথা উল্লেখ রয়েছে। বলা বাহুল্য যে, ফজরের পর সময়টুকু সকালের অন্তর্ভুক্ত। দলিল:
عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ رضي
الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: ((مَنْ قَالَ حِينَ
يُصْبِحُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ،
وَقَرَأَ ثَلَاثَ آيَاتٍ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْحَشْرِ؛ وُكِّلَ بِهِ سَبْعُونَ
أَلْفَ مَلَكٍ يُصَلُّونَ عَلَيْهِ حَتَّى يُمْسِيَ، وَإِنْ مَاتَ فِي ذَلِكَ
الْيَوْمِ مَاتَ شَهِيدًا، وَإِنْ قَالَهَا حِينَ يُمْسِي؛ كَانَ بِتِلْكَ
الْمَنْزِلَةِ)).
تخريج الحديث وتحقيقه:
ضعيف: أخرجه أحمد (5/ 26)، والترمذي
(2922)، وابن السني في ((عمل اليوم والليلة)) (81، 682)، والأصبهاني في ((الترغيب
والترهيب)) (1309)، وابن الضريس في ((فضائل القرآن)) (231)، وابن بشران في
((الأمالي)) (209)، والمزي في ((تهذيب الكمال)) (29/ 295)، وابن حجر في ((نتائج
الأفكار)) (2/ 382)، والدارمي (2/ 458)، والطبراني في ((المعجم الكبير)) (20/ 383،
537)، و((الدعاء)) (308)، والبيهقي في ((الشعب)) (2502)، والرافعي في ((التدوين في
أخبار قزوين)) (2/ 495)، والبغوي في ((تفسيره)) (8/ 88
অর্থ: হযরত মাকাল বিন ইয়াসার (রা.) রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সকাল বেলা তিন বার পড়বে
“আউজুবিল্লাহিস সামীয়িল আলীমি
মিনাশ শাইতানির রাজীম”। তারপর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত [ হুয়াল্লাহুল্লাজী লা-ইলাহা
শেষ পর্যন্ত] তিলাওয়াত করবে। তাহলে আল্লাহ তাআলা উক্ত ব্যক্তির জন্য ৭০ হাজার ফেরেস্তা
নিযুক্ত করেন। যারা উক্ত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দ্আু করতে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
আর এ সময়ের মাঝে যদি লোকটি মারা যায়, তাহলে সে শহীদের মৃত্যু লাভ করে। আর যে ব্যক্তি
এটি সন্ধ্যার সময় পড়বে, তাহলে তার একই মর্যাদা রয়েছে। [তথা মাগরিব
থেকে সকাল পর্যন্তের জন্য ৭০ হাজার ফেরেস্তা গুনাহ মাফীর জন্য দুআ করে, আর সে সময়ে মারা গেলে শহীদের সওয়াব পাবে]। তাখরিজ: জামে তিরমিজি-২৯২২,কানযুল উম্মাল-৩৫৯৭; আত তারগীব ওয়াত তারহীব-৩৭৯;
সুনানে দারেমি-৩৪২৫; শুয়াবুল ঈমান-২৫০২
নোট: কতক মুহাদ্দিস বলেন, এ হাদীসটি হাসান পর্যায়ের হাদীস আবার কেউ কেউ জয়িফ বলেছেন।
নোট: বলা বাহুল্য যে, ফজরের পর সময়টুকু সকালের অন্তর্ভুক্ত। সকাল হলো
দিনের প্রথমাংশ। একে পূর্বাহ্ন ও বলা হয়ে থাকে। স্থানভেদের কারণে সকালের সংজ্ঞার
কোন ভিন্নতা নেই। ভোরের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে বেলা ১২:০০টা পর্যন্ত সময়কে
এশিয়ার কিছু অঞ্চলে ও ভারতীয় উপমহাদেশে সকাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সূত্র:
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
উল্লেখ যে, হাদিসের
সনদ নির্ণয়টা ইজতিহাদি বিষয়(গবেষণালব্ধ)। আর আমলের ক্ষেত্রে জয়িফ
হাদিস গ্রহণযোগ্য। যেমন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেন,
“হালাল-হারামের বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে
থাকি। তবে ফজিলতের ক্ষেত্রে নমনীয়তা অবল্বমন করি।” ইমাম নববি(রহ.) বলেন, “ফজিলত, উৎসাহ বা ভীতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে জয়িফ (দুর্বল) হাদিসের আমল করা
উত্তম। কিন্তু জাল হাদিস থেকে পারবে না।” তিনি
আরও বলেন, “এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরাম ঐকমত্য
পোষণ করেছেন।” সূত্র : আল-আজকার,১১-১২
আরেকটি বিষয় স্মরণীয় যে, সূরা
হাশরটি ইনফিরাদি আমল (ব্যক্তিগত আমল) ; ইজমায়ি
আমল নয় (দলবদ্ধভাবে আমল নয়)। তবে ইমাম বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিক্ষাদানের
উদ্দেশ্য সম্মিলিতভাবে পাঠ করতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো সারাজীবন কি শুধু সূরা
হাশরের শেষ তিন আয়াত শিক্ষা দিবেন?
সুতরাং
আমাদের সমাজে যেটা চালু আছে তা সুন্নাহ নয়। দলিল উপরের হাদিস, এখানে
জামাতবদ্ধ হয়ে আমলের কথা বর্ণিত হয়নি। সুতরাং দলবদ্ধভাবে পাঠ করা সুন্নাহ মনে করলে বিদআত হবে। সূত্র: উমদাতুল
কারি শরহুল বুখারি- ৫ম খণ্ড,
৩৫৬
পৃ.
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৪৪
إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ
أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَىٰ مِن ثُلُثَىِ ٱلَّيْلِ وَنِصْفَهُۥ وَثُلُثَهُۥ
وَطَآئِفَةٌ مِّنَ ٱلَّذِينَ مَعَكَۚ وَٱللَّهُ يُقَدِّرُ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَۚ
عَلِمَ أَن لَّن تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْۖ فَٱقْرَءُوا۟ مَا تَيَسَّرَ مِنَ ٱلْقُرْءَانِۚ
عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَىٰۙ وَءَاخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِى ٱلْأَرْضِ
يَبْتَغُونَ مِن فَضْلِ ٱللَّهِۙ وَءَاخَرُونَ يُقَٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِۖ
فَٱقْرَءُوا۟ مَا تَيَسَّرَ مِنْهُۚ وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ
وَأَقْرِضُوا۟ ٱللَّهَ قَرْضًا حَسَنًاۚ وَمَا تُقَدِّمُوا۟ لِأَنفُسِكُم مِّنْ
خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيْرًا وَأَعْظَمَ أَجْرًاۚ وَٱسْتَغْفِرُوا۟
ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌۢ
ফজরের নামাজের শেষ রাকাতে সূরা
মুজ্জাম্মিলের শেষ আয়াত তিলাওয়াত করা হয়েছে,
ইমাম সাহেবের মনে হচ্ছে তিনি
পুরো আয়াত সঠিক ভাবেই তিলাওয়াত করেছেন,
একজন মুসল্লি বলছেন,
فاقرئوا ما تيسر من القرآن
না পড়ে
فاقرئوا ما تيسر منه
তে চলে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত
তিলাওয়াত করে নামাজ শেষ করেছেন,
এখন প্রশ্ন হল, যদি মুসল্লির কথা সঠিক হয় তাহলে
কি নামাজ সহিহ হয়েছে?
নাকি আবার পড়তে হবে? দয়াকরে জানাবেন! আগাম কৃতজ্ঞতা
জাযাকাল্লাহ খাইর। তারিখ: ১৮/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রায়হানুল মোবারক
সোনারগাঁ,
নারায়ণগঞ্জ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ফিকহি হানাফির মতে তিন আয়াত অথবা তিন আয়াত
পরিমাণ শব্দ/অক্ষরের পরে মুশাব্বাহ আয়াত পড়লে, কোন সমস্যা নেই। ফরজিয়াত আদায় হয়ে যাবে। দলিল:
قُدِّرَ الْفَرْضُ بِآيَةٍ طَوِيلَةٍ
كَآيَةِ الْكُرْسِيِّ، وَآيَةِ الدَّيْنِ، أَوْ ثَلَاثِ آيَاتٍ قِصَارٍ، وَبِهِ
أَخَذَ أَبُو يُوسُفَ وَمُحَمَّدٌ، وَأَصْلُهُ قَوْله تَعَالَى: {فَاقْرَءُوا مَا
تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ} [المزمل: 20] فَهُمَا يَعْتَبِرَانِ الْعُرْفَ، (بدائع
الصنائع، كتاب الصلاة، باب الكلام فى القراءة-1/297)
সুতরাং আপনার প্রশ্নের
বর্ণিত ছুরুতে উক্ত মুসল্লির কথা সঠিক হলেও, নামাজ হয়ে গেছে, পুনরায়
পড়তে হবে না। কেননা আপনার পঠিত সূরা মুজ্জাম্মিলের শেষ আয়াত ৩ আয়াতের
সমপরিমাণের চেয়েও বেশি। সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ১/২৯৭; আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ ৩৩/৪৮
নোট: তিন আয়াত সমান ৩০ অক্ষর ।
ফাতওয়ায়ে শামি- ২য় খণ্ড, ১৪৯ পৃ.
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৪৫
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
সম্মানিত মুফতি মহোদয়ের নিকট
নিম্নের মাসয়ালাটির জবাব দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি
★ বাংলাদেশে প্রচলিত বিতির নামাজ
এবং জানাযার নামাজ এবং ছয় তাকবিরে ঈদের নামাজের সহিহ হাদিসের দলীল দিয়ে উত্তর প্রদান
করলে উপকৃত হব।
ধর্ম শিক্ষক মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। তারিখ: ১৯/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন
নোয়াখালি থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, জানাযা
নামাজ এবং ঈদের নামাজের তাকবির সম্পর্কে জবাব দেওয়া হয়েছে। তবুও শেষাংশে লিংকটি
আবার শেয়ার করা হবে ইনশাল্লাহ।
দ্বিতীয় কথা হলো, বিতর নামাজ নিয়ে মতভেদ নতুন
কিছু নয়। আয়িম্মায়ে মুজতাহিদগণের মধ্যে এখতেলাফ রয়েছে। বিধায় বর্তমান সময়ে তাদের
অনুসারিগণের মধ্যে মতভেদ দেখা দিচ্ছে। সুতরাং যে যার অনুসারি সেভাবে আমল করবে,
বড়াবাড়ি করা যাবে না।
নিম্নে বিতর নামাজের হুকুম, পদ্ধতি, রাকাত সংখ্যার নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা রাখি। ونسأل الله التوفيق وهو الموفق
والمعين
প্রশ্ন: ক। বিতর নামাজের হুকুম কি অর্থাৎ সুন্নাত না
ওয়াজি ও পদ্ধতি কি?
উত্তর: ক। ফুকাহায়ে আহনাফের মতে বিতর নামাজ ওয়াজিব। বাকি
ইমামদের মতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যেমন,
صلاة الوتر عند المذهب الحنفي
واجبة، والواجب في المذهب الحنفي يأتي بأقل من الفرض، وعدد ركعات صلاة الوتر ثلاث
ركعات بتسليمة واحدة، ويقرأ في كل ركعة بسورة الفاتحة وسورة أخرى من القرآن
الكريم، فإذا انتهى المصلي من القراءة في الركعة الثالثة عليه أن يرفع يديه، ويكبر
كما يكبر في تكبيرة الإحرام، ثم يقرأ بدعاء الاستفتاح
অর্থাৎ হানাফী মাযহাবের মতে বিতরের
নামায ওয়াজিব, এবং হানাফী মাযহাবে যা ওয়াজিব তা ফরযের চেয়ে হালকা/কম এবং বিতর নামাযের রাকাত সংখ্যা
এক সালামের সাথে তিন রাকাত,
এবং
প্রতি রাকাতে। আহ তিনি পবিত্র কুরআনের সূরা আল ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পাঠ করেন।
যদি নামাযী তৃতীয় রাকাতে পাঠ শেষ করে তবে তাকে অবশ্যই তার হাত উঠাতে হবে এবং সে তাকবীর
বলে শুরু করার তাকবীর বলে , তারপর সে তেলাওয়াত করে--- । সূত্র: আলফিকহু আলালা মাজাহিবিল আরবাআ-৩০৫ পৃ.
এর হুকুম সম্পর্কে হাম্বলি
মাজহাবের ইমাম হজরত ইবনু কুদামা রহ. বলেন,
قال أبو حنيفة : هو واجب . ثم
قال : قال أحمد : من ترك الوتر عمدا فهو
رجل سوء ، ولا ينبغي أن تقبل له شهادة ، وأراد المبالغة في تأكيده لما قد ورد فيه
من الأحاديث في الأمر به ، والحث عليه
আবু হানিফা বলেছেন, ‘এটি ওয়াজিব।’ এরপর তিনি বলেন, আহমাদ
বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি
ইচ্ছা করে বিতিরের নামায পড়ে না সে একজন খারাপ লোক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা উচিত নয়।
এ বিষয়ের প্রতি নির্দেশ ও উৎসাহ প্রদানকারী অনেক হাদিস বর্ণিত হওয়ার কারণে তিনি জেনে-বুঝে
এর উপর জোর তাগিদ দিয়েছেন। সূত্র: আল-মুগনি ১ খণ্ড; ৮২৭
পৃ.
হানাফি মাজহাবের দলিল:
হাদিস নং-০১
يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ ،
أَوْتِرُوا ، فَإِنَّ اللَّهَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ
হজরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,ওহে
আহলে কুরআন, তোমরা বিতর (বেজোড়) নামায আদায় কর। কারণ নিশ্চয়
আল্লাহ হচ্ছেন- বেজোড়। তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন। তাখরিজ: আবু দাউদ-১৪১৬ নাসায়ি- ১৮৭৮; ইবনে মাজাহ-১১৬৯
হাদিস নং-০২
الْوِتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ
يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنَّا الْوِتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنَّا
الْوِتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنَّا
অর্থ: হজরত বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন, বিতর
নামাজ অপরিহার্য। যে বিতর পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিতর নামাজ অপরিহার্য।
যে বিতর পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিতর নামাজ অপরিহার্য। যে বিতর পড়বে না
সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাখরিজ: আবু দাউদ-১৪২১
হাদিস নং-০৩
مَنْ نَامَ عَنْ وِتْرِهِ أَوْ
نَسِيَهُ فَلْيُصَلِّهِ إِذَا ذَكَرَهُ
অর্থ: আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি
নিদ্রা বা ভুলের কারণে বিতরের নামায আদায় করে নাই, সে যেন
তা স্মরণ হওয়ার পরপরই আদায় করে নেয়। তাখরিজ: আবু দাউদ-১৪৩১
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে ফুকাহায়ে আহনাফ বিতর নামাজকে
ওয়াজিব বলেছেন। সুন্নাত-নফল নামাজের কাজা হয় না বা আদায় করা জরুরি নয়। কিন্তু বিতর ওয়াজিব বিধায় কেউ
যদি সময় মত না পড়ে তাহলে কাজা করতে হয়।
বিতর নামাজের দুআ কুনুতের
দলিল:
سألتُ أنس بن مالك رضي الله عنه
عن القنوت في الصَّلَاةِ، فَقَالَ: نَعَمْ، فَقُلْتُ: كَانَ قَبْلَ الرُّكُوعِ أَوْ بَعْدَهُ؟ قَالَ: قَبْلَهُ، قُلْتُ: فَإِنَّ فُلَانًا أَخْبَرَنِي عَنْك أَنَّكَ قُلْتَ بَعْدَهُ؟ قَالَ: كَذَبَ إِنَّمَا قَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ الرُّكُوعِ شَهْرًا أَنَّهُ كَانَ بَعَثَ نَاسًا
يُقَالُ لَهُمْ الْقُرَّاءُ – وَهُمْ سَبْعُونَ رَجُلًا – إِلَى نَاسٍ مِنْ الْمُشْرِكِينَ – وَبَيْنَهُمْ وَبَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ عَهْدٌ –
قِبَلَهُمْ، فَظَهَرَ هَؤُلَاءِ
الَّذِينَ كَانَ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ عَهْدٌ، فَقَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
بَعْدَ الرُّكُوعِ شَهْرًا يَدْعُو عَلَيْهِمْ تعليق-١٢
অর্থ: আসিম আহ্ওয়াল বলেন: আমি
হযরত আনাস রা. কে কুনুত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, হ্যাঁ কুনূত আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম রুকুর আগে না পরে? তিনি বললেন: রুকুর আগে। বললাম একজন আমাকে বলল: আপনি রুকুর পরে কুনূত পড়ার
কথা বলেছেন? তিনি বললেন: সে ভুল বলেছে। রুকুর পরে তো নবী (ﷺ) শুধু এক মাস কুনূত পড়েছেন। (যা ছিল মূলত কুনূতে নাযেলা)। তাখরিজ: সহীহ বুখারি-.৪০৯৬
এ ব্যাপারে লা-মাযহাবীদের
আস্থাভাজন আলেম স্বয়ং নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব বলেন:
وذلك أنه قد صح عنه صلى الله
عليه وآله وسلم أنه كان يقنت في الوتر قبل الركوع كما يأتي بعد حديثٍ، ويشهدُ له
أثار كثيرة عن كِبار الصحابة كما سنُحققه في الحديث الآتي بإذن الله تعالى. والخلاصة أن الصحيح الثابت عن الصحابة هو القنوت قبل
الركوع في الوتر وهو الموافق للحديث الآتي، انتهى من إرواء الغليل للألباني (۲/۱٦٦)
অর্থ:… সহীহ সূত্রে প্রমাণিত আছে
নবীজী (ﷺ)বিত্র নামাযে
রুকুর পূর্বে কুনুত পড়েছেন। যার আলোচনা একটি হাদীস পরেই আসবে। উপরন্তু বিশিষ্ট্য
সাহাবীদের থেকে বর্ণিত অনেক আছার এর বিশুদ্ধতার জন্য দলিল। … সারকথা হল, সাহাবীদের থেকে সহীহ সূত্রে এটিই প্রমাণিত যে, বিত্রের
কুনূত রুকুর পূর্বে। সূত্র: ইরওয়াউল গালীল ২/১৬৬
প্রশ্ন: খ। বিতর নামাজ রাকাত সংখ্যা কত?
উত্তর: খ। ফিকহি হানাফির মতে বিতর
নামাজের রাকাতের সংখ্যা তিন। দলিল:
হাদিস/আসার নং-০১
سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ أَخْبَرَهُ
أَنَّهُ، سَأَلَ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى
عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ
وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ
وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا، قَالَتْ عَائِشَةُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ
اللَّهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ. فَقَالَ
" يَا
عَائِشَةُ، إِنَّ عَيْنَىَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ
অর্থ: আবু সালামাহ্ ইবনে আবদুর
রাহমান (রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি ‘আয়িশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন,
রমযান মাসে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)-এর সালাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ) রমযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতে) এগার রাক’আতের অধিক সালাত আদায় করতেন না।
তিনি চার রাক’আত সালাত আদায় করতেন। তুমি সেই সালাতের
সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাক’আত সালাত আদায় করতেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা
সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি তিন রাক’আত (বিত্র)
সালাত আদায় করতেন। ‘আয়িশা (রা.) বলেন, (একদা) আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি
কি বিত্রের পূর্বে ঘুমিয়ে থাকেন? তিনি ইরশাদ করলেনঃ আমার
চোখ দু’টি ঘুমায়, কিন্তু আমার হৃদয়
ঘুমায় না। তাখরিজ: বুখারি-১১৪৭; সহীহ
মুসলিম-৭৩৮; সুনানে
নাসায়ি-১৬৯৭; সুনানে
আবু দাউদ-১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ- ২৪০৭৩
হাদিস/আসার নং-০২
قلت لعائشة : بكم كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر؟ قالت: كان يوتر بأربع وثلاث, وست وثلاث,
وثمان وثلاث, وعشر وثلاث, ولم يكن يوتر بأنقص من سبع, ولا بأكثر من ثلاث عشرة.
আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস (রহ.) বলেন, আমি হযরত আয়েশা রা.-এর
কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন?
উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট
এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের
রাকাতের অধিক পড়তেন না। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-১৩৫৭; তহাবী শরীফ ১/১৩৯; মুসনাদে
আহমদ-২৫১৫৯
নোট: আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি রহ.
باب كيف صلاة
الليل, كتاب التهجد)- এ লেখেন- هذا أصح ما وقفت عليه من ذلك, وبه يجمع بين ما اختلف عن عائشة في
ذلك. والله أعلم আমার
জানামতে এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাধিক সহীহ রেওয়ায়াত। এ বিষয়ে হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের মাঝে যে
বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় এর দ্বারা সে সবের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব। সূত্র: ফাতহুল বারি- ৩/২৬
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা বুঝা
গেল রাসূল (ﷺ) কখনো
তাহাজ্জুদ নামায চার রাকাত পড়তেন, কখনো ছয় রাকাত পড়তেন। কখনো আট রাকাত
পড়তেন। কখনো দশ রাকাত পড়তেন। কিন্তু বিতর সর্বদা তিন রাকাতই পড়তেন।
হাদিস/আসার নং-০৩
عن عائشة رضي الله تعالى عنها
قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاثٍ، لا يسلم إلا في آخرهن
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং শুধু সর্বশেষ রাকাতে
সালাম ফেরাতেন। হাকেম রাহ. এই রেওয়ায়াতের পর লেখেন, আমীরুল
মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.ও এভাবে বিতর পড়তেন এবং তাঁর সূত্রে মদীনাবাসীগণ
তা গ্রহণ করেছেন। তাখরিজ: মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন-১১৮১
হাদিস/আসার নং-০৪
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُوتِرُ بِثَلاَثٍ يَقْرَأُ فِي
الأُولَى بِـ (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى) وَفِي الثَّانِيَةِ بِـ (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ) وَفِي الثَّالِثَةِ بِـ (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) أَوْقَفَهُ زُهَيْرٌ .
হুসায়ন ইবনু ঈসা (রহঃ) ...
ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তিন রাকআত বিতেরের সালাত আদায় করতেন। প্রথম
রাকআত –“সাব্বিহিস্মা
রাব্বিকাল আলা” দ্বিতীয় রাকআতে “কুল
ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং তৃতীয় রাকআতে “কুলহুয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-১৭০৫; ইবন মাজাহ-১১৭২
হাদিস/আসার নং-০৫
عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ، قَالَ
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الْوَتْرِ بِـ (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى) وَفِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ بِـ (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ) وَفِي الثَّالِثَةِ بِـ (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) وَلاَ يُسَلِّمُ إِلاَّ فِي آخِرِهِنَّ وَيَقُولُ
يَعْنِي بَعْدَ التَّسْلِيمِ " سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ " . ثَلاَثًا .
অর্থ: ইয়াহইয়া ইবনু মুসা (রহঃ) ...
উবাই ইবনু কা’ব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বিতরের
সালাতে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” দ্বিতীয় রাকআতে “কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং শেষ রাকআতে “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন। আর শুধুমাত্র শেষ
রাকআতেই সালাম ফিরাতেন অর্থাৎ সালামের পর তিনবারسُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ বলতেন। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-১৭০২,
ইবন মাজাহ-১১৭২; তিরমিজি-৪৬২
হাদিস/আসার নং-০৬
قال: قال أنس:
يا أبا محمد خذ عني فإني أخذت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم, وأخذ رسول الله
صلى الله عليه وسلم عن الله, ولن تأخذ عن أحد أوثق مني, قال: ثم صلى بي العشاء, ثم
صلى سب ركعات يسلم بين الركعتين, ثم أوتر بثلاث يسلم في آخرهن (الروياني وابن
عساكر, ورجاله ثقات, كما في كنز العم
অর্থাৎ প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সাবেত
বুনানী রাহ., বলেন,
আমাকে
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাহ. বলেছেন,
হে আবু
মুহাম্মাদ! (সাবেত রা.-এর কুনিয়াত-উপনাম) আমার কাছ থেকে শিখে নাও। আমি রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)থেকে গ্রহণ করেছি। আর তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
থেকে নিয়েছেন। তুমি শেখার জন্য আমার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য কাউকে পাবে না। একথা বলে
তিনি আমাকে নিয়ে ইশার নামায আদায় করেন। এরপর ছয় রাকাত পড়েন, তা এভাবে
যে, প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফেরান। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়েন এবং
সবশেষে সালাম ফেরান। তাখরিজ: কানযুল উম্মাল ৮/৬৬-৬৭, হাদীস
২১৯০২ ‘আলবিতরু মিন কিতাবিস সালাত, কিসমুল
আফআল
নোট: মুসনাদে রুয়ানী, তারীখে ইবনে আসাকির; ইমাম
সুয়ূতী রাহ. বলেন, এই হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য।
হাদিস/আসার নং-০৭
كان أبي بن كعب يوتر بثلاث لا
يسلم إلا في الثالثة مثل المغرب. تعليق-٥
অর্থ: হাসান বছরী র. বলেন: হযরত
উবাই ইবনে কা‘ব রা. তিন রাকাতে বিতর পড়তেন এবং তাতে মাগরিবের
মতই তৃতীয় রাকাতের আগে সালাম ফিরাতেন না। তাখরিজ: মুসান্নাফে
আব্দুর রাযযাক হা.৪৬৫৯-৪৬৬০
নোট: এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।
বিরুদ্ধবাদীদের জবাব:
যারা বিতর নামাজ এক রাকাত
পড়ে তাদের অন্যতম দলিল হলো এই হাদিস
যেমন-
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنْ
رَسُوْلِ اللهِ قَالَ لاَ تُوْتِرُوْا بِثَلاَثٍ أَوْتِرُوْا بِخَمْسٍ أَوْ سَبْعٍ
وَلاَ تُشَبِّهُوْا بِصَلاَةِ الْمَغْرِبِ.
আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন, তোমরা (মাগরিবের ছালাতের
ন্যায়) তিন রাক‘আত বিতর পড় না, পাঁচ,
সাত রাক‘আত পড়। আর মাগরিবের ছালাতের ন্যায় আদায়
কর না’। তাখরিজ: দারাকুৎনী ২/২৪ পৃঃ, সনদ ছহীহ كُلُّهُمْ ثِقَاتٌ; ত্বাহাবী হা/১৭৩৯ لَا تُوتِرُوْا بِثَلَاثِ رَكَعَاتٍ تَشَبَّهُوْا
بِالْمَغْرِبِ ।
প্রথম কথা হলো, সরাসরি এ হাদিসের বিপরীত হাদিস/আসার রয়েছে। যেমন,
হাদিস/আসার নং-০১
الوتر كصلاة المغرب.تعليق-٦
অর্থ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
আব্বাস রা. বলেন:: বিতর নামায মাগরিবেরই অনুরূপ। মুয়াত্তা মুহাম্মদ পৃ.১৫০ কিতাবুল
হুজ্জাহ আলা আহলিল মদীনাহ ১/১৩৬
হাদিস/আসার নং-০২
عن النبي صلى الله عليه وسلم قال
: صلاة المغرب وتر النهار فأوتروا
صلاة الليل تعليق-٢
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
উমর রা. বলেন:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: দিনের বিত্র হল মাগরিবের নামায। তোমরা রাতের নামাযকেও
অনুরূপ বিতর করে পড়। তাখরিজ: মুসনাদে আহমদ হা.৪৮৪৭ এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য: শুয়াইব
আরনাউত। ইবনে আবী শাইবা ৪/৪ হা.৬৭৭৩, ৬৭৭৮
হাদিস/আসার নং-০৩
سألت عبد الله بن عمر رضي الله
عنهما عن الوتر؟ فقال :
أَتَعْرِفُ وِتْرَ النَّهَارِ؟
قُلْتُ : نَعَمْ ، صَلَاةُ الْمَغْرِبِ
قَالَ : صَدَقْتَ أَوْ أَحْسَنْتَ . تعليق-٤
অর্থ: উক্বা ইবনে মুসলিম
বলেন:
আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরকে জিজ্ঞেস করলাম: বিতর নামায পদ্ধতি
সম্পর্কে। তিনি বললেন: তুমি দিনের বিতর চেন না? বললাম হাঁ,
মাগরিবের নামায। বললেন, ঠিক বলেছ। (রাতের বিতরও
ঠিক এরকমই)। [তহাবী ২/১৯৭]
দ্বিতীয় কথা হলো, মাগরিবের মত বিতর পড় না অর্থাৎ
মাগরিবের মত আগে কোন নফল ছাড়া শুধু তিন রাকাত বিতর পড়া পছন্দনীয় নয়। হাদীস শরীফে আছে-
لا توتروا
بثلاث تشبهوا بصلاة المغرب,
ولكن أوتروا بخمس, أو بسبع, أو بتسع,
أو بإحدى عشرة ركعة, أو أكثر من ذلك. তোমরা শুধু তিন রাকাত বিতর পড়ো না, এতে মাগরিবের সাদৃশ্যপূর্ণ করে
ফেলবে; বরং পাঁচ, সাত, নয়, এগার বা এরও অধিক রাকাতে বিতর পড়ো। তাখরিজ:
মুস্তাদরাকে হাকেম -১১৭৮; সুনানে কুবরা বাইহাকি ৩/৩১, ৩২
প্রশ্ন: গ। প্রতি দুই রাকাতে তাশাহুদ
পড়তে হয়, এর কোন দলিল আছে?
উত্তর: গ। হ্যাঁ, দলিল আছে। যেমন,
হাদিস/আসার নং-০১
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ، - يَعْنِي الأَحْمَرَ - عَنْ حُسَيْنٍ الْمُعَلِّمِ، ح قَالَ وَحَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ
إِبْرَاهِيمَ، -
وَاللَّفْظُ لَهُ - قَالَ أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا حُسَيْنٌ
الْمُعَلِّمُ، عَنْ بُدَيْلِ بْنِ مَيْسَرَةَ، عَنْ أَبِي الْجَوْزَاءِ، عَنْ
عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.....وَكَانَ يَقُولُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ التَّحِيَّةَ
وَكَانَ يَفْرِشُ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَيَنْصِبُ رِجْلَهُ الْيُمْنَى
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) প্রতি
দু-রাক’আত পর পর
আত-তাহিয়্যাতু পড়তেন এবং বাম পা বিছিয়ে রাখতেন আর ডান পা খাড়া করে রাখতেন। তাখরিজ:
মুসলিম- ৯৯৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন,মিশকাত- ৭৯১
হাদিস/আসার নং-০২
أَخْبَرَنَا الْفَضْلُ بْنُ الْحُبَابِ
الْجُمَحِيُّ قَالَ:
حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ
وَمُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ قَالَا: أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو إِسْحَاقَ قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو الْأَحْوَصِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ،
أَنَّهُ قَالَ:
كُنَّا لَا نَدْرِي مَا نَقُولُ
فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ إِلَّا أَنْ نُسَبِّحَ وَنُكَبِّرَ وَنُحَمِّدَ رَبَّنَا
وَإِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُلِّمَ فَوَاتِحَ
الْخَيْرِ وَخَوَاتِمَهُ أَوْ قَالَ جَوَامِعَهُ فَقَالَ: " إِذَا قَعَدْتُمْ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ، فَقُولُوا: التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَوَاتُ
وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ
وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ،
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ
وَرَسُولُهُ
"
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রা. বলেন,
‘‘আমরা জানতাম না প্রতি দু’ রাকাতে কী বলা
হবে। তবে আমরা আমাদের রবের তাসবীহ, তাকবীর ও হামদ করতাম।
(আল্লাহর নবী হযরত) মুহাম্মাদ (ﷺ) আমাদেরকে দান করেছেন সকল কল্যাণের শিক্ষা। তিনি বললেন, ‘যখন তোমরা দুই রাকাতে বসবে
তখন বলবে-আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ ...’। তাখরিজ: ইবনে হিব্বান-১৯৫১,মুসনাদে আহমদ-৪১৬০
হাদিস/আসার নং-০৩
أَخْبَرَنَا الْفَضْلُ بْنُ
الْحُبَابِ الْجُمَحِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ وَمُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ قَالَا: أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو إِسْحَاقَ قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو الْأَحْوَصِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ
مَسْعُودٍ، أَنَّهُ قَالَ:
كُنَّا لَا نَدْرِي مَا نَقُولُ
فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ إِلَّا أَنْ نُسَبِّحَ وَنُكَبِّرَ وَنُحَمِّدَ رَبَّنَا
وَإِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُلِّمَ فَوَاتِحَ
الْخَيْرِ وَخَوَاتِمَهُ أَوْ قَالَ جَوَامِعَهُ فَقَالَ: " إِذَا قَعَدْتُمْ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ، فَقُولُوا: التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَوَاتُ
وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ
وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ،
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ
وَرَسُولُهُ
"
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রা. বলেন,
‘‘আমরা জানতাম না প্রতি দু’ রাকাতে কী বলা
হবে। তবে আমরা আমাদের রবের তাসবীহ, তাকবীর ও হামদ করতাম।
(আল্লাহর নবী হযরত) মুহাম্মাদ আমাদেরকে দান করেছেন সকল কল্যাণের শিক্ষা। তিনি
বললেন, ‘যখন তোমরা দুই রাকাতে বসবে তখন বলবে-আত্তাহিয়্যাতু
লিল্লাহ ...’।’’ তাখরিজ:
ইবনে হিব্বান-১৯৫১; মুসনাদে
আহমদ-৪১৬০
সারকথা হলো, বিতর নামাজ ওয়াজিব, দুই বৈঠকে, এক সালামে এবং রাকাত সংখ্যা হলো তিন।
স্বয়ং ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন:
فإنه قد ثبت أن أبي بن كعب كان
يقوم بالناس عشرين ركعة في رمضان ويوتر بثلاث، فرأى كثير من العلماء أنَّ ذلك هو
السنة، لأنه أقامه بين المهاجرين والأنصار ولم ينكره منكر، كذا فى الفتاوى الكبرى (২/২৪৫)
অর্থ: বিশুদ্ধ সূত্রে
প্রমাণিত, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. তাঁর ইমামতিতে লোকদের নিয়ে
বিশ রাকাত তারাবীহ, অতঃপর তিন রাকাত বিতর পড়তেন। তাই অনেক
উলামা মনে করেন তারাবীহর এটিই প্রকৃত সুন্নত। কারণ তিনি অনেক মুহাজির-আনছারের
সামনে এ নামায পড়েছেন। তাঁদের কেউই এর বিরোধিতা করেননি বা একে ভুল আখ্যা দেননি।
সূত্র: আল-ফাতাওয়াল কুবরা:২খণ্ড; ২৪৫পৃ.
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৪৬
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
তাশাহুদ সম্পর্কে মিরাজের সাথে সম্পৃক্ত একটা
ঘটনা যা হলো আল্লাহ এবং রাসুলের মধ্যে কথোপকথন যেমন-আপনি বন্ধুর কাছে আসলেন কি
নিয়ে আসছেন তিনি বললেন আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি.......
এরপরে আল্লাহ বললেন আসসালামু আলাইকা
আইয়ুহাননাবিয়্যু.....
এরপরে ফেরেস্তারা
এই ঘটনাটির পক্ষে হাদিস বা আসার প্রয়োজন
উল্লেখ্যঃ আবুল কালাম আজাদ বাশার সাহেবের
মিরাজ ও আধুনিক বিজ্ঞান বইয়ে এই বিষয়টাকে ভিত্তিহীন লিখেছেন ওইটা পড়েই ডাউট টা
আসলো। তারিখ: ১৯/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মো: নজরুল ইসলাম চাঁদপর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, মিরাজ
রজনিতে তাশাহুদের ঘটনা সম্পর্কে হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায় না। তবে ইমাম কুরতুবি রহ. এবং বাহরুল উলুম তথা তাফসীরে
শমরকন্দি, সূরা বাকারার ২৮৫ নং আয়াতের তাফসির
করতে ইবনে আব্বাস রা. মুজাহিদ (রহ.) ও ইমাম হাসান বসরি (রহ.) সনদে বর্ণনা করেছেন।
যেমন,
{ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ
أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ
وَمَلَـٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن
رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ
ٱلۡمَصِيرُ} (285)
فيه إحدى عشرة مسألة :
الأولى : قوله تعالى : " آمن الرسول بما أنزل إليه من ربه " روي عن الحسن ومجاهد والضحاك : أن هذه الآية كانت في
قصة المعراج ، وهكذا روي في بعض الروايات عن ابن عباس ، وقال بعضهم : جميع القرآن نزل به جبريل عليه
السلام على محمد صلى الله عليه وسلم إلا هذه الآية فإن النبي صلى الله عليه وسلم :
هو الذي سمع ليلة المعراج ، وقال بعضهم : لم يكن ذلك في قصة المعراج ؛ لأن ليلة المعراج كانت بمكة وهذه السورة
كلها مدنية ، فأما من قال : إنها كانت ليلة المعراج قال :
لما صعد النبي صلى الله عليه وسلم وبلغ في السماوات في مكان مرتفع ومعه جبريل حتى
جاوز سدرة المنتهى فقال له جبريل : إني لم أجاوز هذا الموضع ولم يؤمر بالمجاوزة
أحد هذا الموضع غيرك ، فجاوز النبي صلى الله عليه وسلم حتى بلغ الموضع الذي شاء
الله ، فأشار إليه جبريل بأن سلم على ربك ، فقال النبي صلى الله عليه وسلم : التحيات لله والصلوات والطيبات . قال الله تعالى : السلام عليك أيها النبي ورحمة
الله وبركاته ، فأراد النبي صلى الله عليه وسلم
أن يكون لأمته حظ في السلام فقال : السلام علينا وعلى عباد الله
الصالحين ، فقال جبريل وأهل السماوات كلهم : أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد
أن محمدا عبده ورسوله . قال الله تعالى : " آمن الرسول " على معنى الشكر ؛ أي : صدق الرسول " بما أنزل إليه من ربه " فأراد النبي صلى الله عليه وسلم أن يشارك أمته في
الكرامة والفضيلة فقال :
অর্থাৎ হযরত হাসান বসরি রহ., হযরত মুজাহিদ রহঃ, হযরত জাহহাক রহঃ থেকে
বর্ণিত। নিশ্চয় এ আয়াত মিরাজের ঘটনার সময়কার। এমনিভাবে হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকেও
কিছু বর্ণনায় তা পাওয়া যায়।
তবে
কেউ কেউ বলেছেনঃ পূর্ণ কুরআন জিবরাঈল আঃ হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)এর কাছে নিয়ে এসেছেন এ আয়াত ছাড়া। যা রাসূল
মেরাজের রাতে শুনেছেন।
আর
কেউ কেউ বলেন, এ আয়াত মিরাজের ঘটনার সময়কার
নয়। কেননা, মেরাজের ঘটনা হয়েছে মক্কায়।
আর এ পূর্ণ সুরা নাজিল হয়েছে মদীনায়।
তবে
যারা বলেন যে, এ আয়াত মেরাজের রাতে নাজিল
হয়েছে তারা বলেন, রাসুল (ﷺ)যখন আসমানে উঠলেন এবং উঁচু স্থানে পৌঁছলেন
সাথে ছিলেন জিবরাঈল আঃ। এমনকি তারা সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছলেন। তখন তাঁকে জিবরাঈল
আঃ বললেন, নিশ্চয় আমি এ স্থান অতিক্রম
করতে পারবো না। আর আপনাকে ছাড়া আর কাউকে এ স্থান অতিক্রম করার অধিকার দেয়া হয়নি।
তারপর রাসূল (ﷺ)
তার অতিক্রম করলেন এবং এমন স্থানে পৌঁছলেন যেখানে আল্লাহ তাআলা তাঁকে পৌঁছাতে
চাইলেন। তখন জিবরাঈল আঃ তাঁকে [রাসূল সাঃ] ইশারা করলেন, আল্লাহ তাআলাকে সালাম করার জন্য। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি
ওয়াসসালাওয়াতু ওয়াত ত্বায়্যিবাতু। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। তখন
রাসূল (ﷺ) চাইলেন
সালামের একটি অংশ উম্মতীদের জন্যও বরাদ্দ হোক। তাই তিনি বললেন, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালেহীন। তারপর জিবরাঈল আঃ এবং আসমানবাসী
সবাই বলতে লাগল, আশহাদু আল্লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু। সূত্র: আল-মাউসুআতুল
কুরআনিয়া, আলজামেউ লিআহকামিল কুরআন-৪২৫ পৃ. বাহরুল উলুম তথা তাফসীরে
শমরকন্দি
উল্লেখখিত বর্ণনা বিষয়ে ওলামায়ে কেরামগনের মতভেদ
দেখা দেয়। দুটি মত পাওয়া যায়।
প্রথম মত: ওলামাদের েএকটি জামাত উক্ত রেওয়ায়েত গ্রহণ করতে নারাজ। তাদের দলিল হলো,
হাদিসটির সনদ তাবেয়ি পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। তারপর আর কোন সনদ উল্লেখ করেননি। এবং কোন কিতাবের হাওলা উল্লেখ করেননি। তাছাড়া ইমাম বাসান বসরি (রহ.) এর
জন্ম
৬৪২, মৃত্যু-৭২৮ খ্রিষ্টাব্দ আর ইমাম কুরতুবি (রহ.) জন্ম-১২১৪, মৃত্যু-১২৭৩ খ্রিষ্টাব্দ।
দ্বিতীয়
মত:
মুহাদ্দিসগণের অপর জামাতটি উক্ত
হাদিসটিকে গ্রহণ করেন। তাদের যুক্তি/দলিল হলো, ইমাম কুরতুবি
(রহ.) জগতখ্যাত মুফাস্সির, মুহাদ্দিস ও ফকিহ ছিলেন।
তিনি ফিকহি মালিকির অনুসারি ছিলেন। তার ব্যক্তিত্ব ইলম আহলে ইলেমদের
নিকট সমাদৃত। তিনি যেহেতু তাবেয়ি পর্যন্ত সনদ বর্ণনা
করেছেন। বাকিটুকু তিনি হয়তো ভুলেে/ইচ্ছা সনদ উল্লেখ করেননি। সুতরাং তা গ্রহণযোগ্য।
সারকথা
হলো,
যারা তাশাহুদের ঘটনাকে ভিত্তিহীন বলেন, হয়তো
তাদের কাছে ইমাম কুরতুবি (রহ.) এর বর্ণনা পৌঁছিনি। আর যারা ইমাম কুরতুবি (রহ.)-এর
রেওয়ায়েতটিকে গ্রহণ করেন না, তারা উসূলে হাদিসের নিয়ম মেনে
গ্রহণ করেন না। যেহেতু তিনি তাবেয়ির পর সনদ উল্লেখ করেননি।
আর
যারা উক্ত রেওয়ায়েতটিকে গ্রহণ করেছেন বা সঠিক বলেছেন, তারা আসলে ইমাম কুরতুবি (রহ.)
উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে গ্রহণ করেছেন। এটাই একটা উসুলে হাদিসের রীত। তাই পরবর্তী
জামানায় কিছু ইসলামি লেখকগণ ইমাম কুরতুবির থেকে নকল করেছেন।
শেষ কথা, যারা উক্ত ঘটনাটিকে বর্ণনা
করতে চাই, তাদের উচিত সতর্কতার সাথে বর্ণনা করা।
উম্মতকে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া যে, ইমাম
কুরতুবি (রহ.) তাবেয়ির পর কোন সনদ উল্লেখ করেননি। আর
যারা ইমাম কুরতুবি (রহ.) -এর রেওয়ায়েত গ্রহণ/সহিহ মনে করেন না। তাদেরও উচিত মিরাজ
রজনিতে তাশাহুদের ঘটনাটিকে সরাসরি বানায়াট-জালিয়াতি-ভিত্তিহীন
না বল। বরং এভাবে বলা যেহেতু তিনি পূর্ণ
সনদ বর্ণনা করেনি, তাই আমাদের নিকট তা গ্রহণযোগ্য নয়।
( আমার নিজস্ব গবেষণায় উভয় পক্ষের একটি সমন্বয় করলাম, এরপরও কোন কিছুর সংযোজন বা বিয়োজন দরকার হলে, আমার
ব্যক্তিগত আইডিতে/কমেন্ট বক্সে জানানোর অনুরোধ রইল।)
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৪৮
আসসালামু আলাইকুম।
একটি
মাসয়ালা সম্পর্কে জানতে চাই,
আমার
ইউনিট থেকে বি কোম্পানি দলগত এক্সারসাইজের করতে সেনানিবাস থেকে ১২/১৫ কিলোমিটার
দূরে ১০দিনের জন্য অবস্থান করছে,
আমার
জানামতে কসর হবেনা, বাকি বিজ্ঞ আলেমদের দৃষ্টি
আকর্ষণ করছি, স্বল্প সফরের ক্ষেত্রে কসরের
বিধানের কোনো সহীহ হাদিস অথবা দলীল আছে কি না?
তারিখ: ২০/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা
মোঃকামরুল হাসান
যশোর থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
اختلَفَ العُلماءُ في مدَّة الإقامةِ,اختَلف أهلُ
العِلمِ في مِقدارِ مَسافةِ السَّفرِ الذي تُقصَرُ فيه الصَّلاةُ على أقوالٍ
عِدَّة، أقواها قولان:
কতটুকু
দূরত্ব হলে এবং কয়দিন অবস্থান করলে মুসাফির হবে, এ
বিষয়ে আইম্মায়ে মুজতাহিদগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সূত্র: উমদাতুল কারি-৭/১২৫
ফুকাহায়ে
আহনাফের মতে ১৫ দিনের কম হলে ৪৮ মাইল বা ৭৮ (প্রায়) কিলোমিটার দূরে হলে সে
মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে।
প্রশ্ন:
ক। ৪৮ মাইল অথবা ৭৮ কিলোমিটার দূরে গেলে মুসাফির হবে এ বিষয়ে হানাফিদের দলিল কি?
উত্তর:
ক। এ বিষয়ে হানাফিদের দলিল হলো নিম্নের হাদিস।
হাদিস
নং -০১
হজরত
ইবন আব্বাস রা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
يَا
أَهْلَ مَكَّةَ ، لا تَقْصُرُوا الصَّلاةَ فِي أَدْنَى مِنْ أَرْبَعَةِ بُرُدٍ
হে
মক্কাবাসী! চার বারীদের কমে কসর করবে না। তাখরিজ: দারা কুতনি ১/৩৮৭
হাদিস
নং-০২
وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ، وَابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ،
يَقْصُرَانِ، وَيُفْطِرَانِ فِي أَرْبَعَةِ بُرُدٍ وَهِيَ سِتَّةَ عَشَرَ
فَرْسَخًا
ইবনে
উমর রাযি এবং ইবনে আব্বাস রাযি চার বারীদ সফরের সময় কসর পড়া এবং রোযা ভাঙ্গার কথা
বলেছেন। আর সেটি হল, ১৬ ফরসখ। তাখরিজ:
বুখারি-১০৮৬, নামায কসর করা অধ্যায়
ব্যাখ্যা:
এক
ফরসখ তিন মাইল হয়ে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক বারীদ হয় ১২ মাইল। আর চার বারীদকে ১২
দিয়ে গুণ দিলে কিংবা ষোল ফরসখকে তিন দিয়ে গুণ দিলে হয় ৪৮ মাইল। অতএব, সফরের দূরত্ব দাঁড়াচ্ছে ৪৮ মাইল। সূত্র:
কামুসুল ফিকহ ২/৩১৪ আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ১/৭৫
হাদিস
নং-০৩
عن
عمر رضي الله عنه قال: تقصر الصلاة في مسيرة ثلاث ليال
উমার
রা. বলেন, তিন রাতের দূরত্বে সালাত
সংক্ষিপ্ত করা হবে। তাখরিজ: ফিকহুস সুনান, হাদীস
নং ৯৩৩
নোট:
মুহাম্মাদ
কিতাবুল হাজ্জ-এ সহীহ সনদে সুওয়াইদ ইবন গাফলাহ থেকে অনুরূপ মতামত সঙ্কলিত
করেছেন)। [তাবারি, তাহযীবুল আসার, হাদীস-১২৫৯; মুসান্নাফ
ইবন আবী শাইবা, হাদীস-৮১৩০]
ব্যাখ্যা:
একজন ব্যক্তি সাধারণত একদিনে ১৬ মাইল হাঁটতে পারে। তিন দিয়ে গুণ করলে ৪৮ মাইল
হয়।
হাদিস
নং-০৪
عن
علي بن ربيعة الوالبي قال: سألت عبد الله بن عمر رضي الله عنهما إلى كم تقصر
الصلاة؟ فقال: أتعرف السويداء؟ قال: قلت: لا ولكني سمعت بها. قال: هي ثلاث ليال
قواصد فإذا خرجنا إليها قصرنا الصلاة
কসরের
দূরত্ব
তাবিয়ি
আলী ইবন রাবীআহ ওয়ালিবি বলেন,
আমি
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রা.কে জিজ্ঞাসা করলাম, কতদূরে
সালাত সংক্ষিপ্ত (কসর) করতে হয়?
তিনি
বলেন, তুমি কি ‘সুওয়াইদা' নামক
স্থান চেন? আমি বললাম, না, তবে
আমি তার নাম শুনেছি। তিনি বলেন,
স্থানটির
দূরত্ব এখান থেকে তিন রাতের স্বাভাবিক চলার পথ। যদি আমরা সেই স্থানের উদ্দেশ্যে
বের হই তাহলে সালাত সংক্ষেপ করি। তাখরিজ: ফিকহুস সুনান, হাদীস নং ৯৩২
নোট:
(মুহাম্মাদ কিতাবুল আসারে
সহীহ সনদে)। [মুহাম্মাদ, কিতাবুল আসার, হাদীস-১৯২]
হাম্বলী
মাযাবের অনুসারী বিখ্যাত আলেম শায়েখ বিন বাজ রহ. কে সফরের দূরত্ব সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন,
هل
صحيح أن المسافر يقصر الصلاة مهما طالت مدة السفر ولو بلغت سنينًا؟ أم أن هناك
زمنًا محددًا ينتهي فيه القصر؟ وما حكم السفر فيمن يسافر للدراسة أو العمل خارج
بلده، هل الصحيح أنه يقصر حتى يرجع من الدراسة أو العمل؟
ج:
السنة للمسافر أن يقصر الصلاة في السفر تأسيًا بالنبي ﷺ، وعملًا بسنته إذا كانت
المسافة ثمانين كيلو تقريبًا أو أكثر،
অর্থাৎ
৮০ মাইল বা তার চেয়ে বেশি হলে মুসাফির হবে। সূত্র: মাজমাউল ফাতওয়া
প্রশ্ন:
খ। ১৫ দিনের কম হলে মুসাফির হবে এর দলিল কি?
উত্তর:
খ। যেমন,
হাদিস/আসার
নং-০১
عن
ابن عمر رضي الله عنهما: إذا كنت مسافراً فوطنت نفسك على إقامة خمسة عشر يوماً
فأتمم الصلاة وإن كنت لا تدري فاقصر
ইবন
উমার রা. বলেন, তুমি যদি মুসাফির হও এবং ১৫
দিন অবস্থানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর তাহলে সালাত পূর্ণ করবে। আর যদি তুমি না জান যে
কতদিন থাকবে তাহলে সালাত সংক্ষেপ (কসর) করবে।
নোট:
তাহাবি
ইবন আব্বাস ও ইবন উমার থেকে অনুরূপ মত সঙ্কলন করেছেন)। [মুহাম্মাদ, কিতাবুল আসার, হাদীস-১৮৮]
হাদিস/আসার
নং-০২
عن
مجاهد قال: كان ابن عمر رضي الله عنهما كان إذا أجمع على إقامة خمسة عشر يوماً أتم
الصلاة
মুসাফির
কখন সালাত পূর্ণ করবে
(৯৩৮) তাবিয়ি মুজাহিদ বলেন, ইবন উমার রা. যখন ১৫ দিন অবস্থানের সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করতেন তখন সালাত পূর্ণরূপে (চার রাকআত) আদায় করতেন। তাখরিজ: ফিকহুস সুনান, হাদীস নং ৯৩৮
নোট:
(ইবন আবী শাইবা ও মুহাম্মাদ
কিতাবুল হাজ্জ-এ। তাদের উভয়ের সনদ সহীহ)। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস-৮২১৭]
হাদিস/আসার
নং -০৩
حَدَّثَنَا
أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا أَبُو شِهَابٍ، عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ عِكْرِمَةَ،
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ أَقَمْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي
سَفَرٍ تِسْعَ عَشْرَةَ نَقْصُرُ الصَّلاَةَ. وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ وَنَحْنُ
نَقْصُرُ مَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ تِسْعَ عَشْرَةَ، فَإِذَا زِدْنَا أَتْمَمْنَا.
حدثنا
أحمد بن يونس، حدثنا أبو شهاب، عن عاصم، عن عكرمة، عن ابن عباس، قال أقمنا مع
النبي صلى الله عليه وسلم في سفر تسع عشرة نقصر الصلاة. وقال ابن عباس ونحن نقصر
ما بيننا وبين تسع عشرة، فإذا زدنا أتممنا.
আহমাদ ইবনে ইউনুস (রাহঃ) ...
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি
বলেন, (মক্কা বিজয়ের সময়ে) সফরে
আমরা নবী (ﷺ)
এর সঙ্গে উনিশ দিন (মক্কায়) অবস্থান করেছিলাম* এ সময়ে আমরা নামায়ে কসর করেছিলাম।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেছেন,
আমরা
সফরে উনিশ দিন পর্যন্ত কসর করতাম। এর চাইতে অধিক দিন অবস্থান করলে আমরা পূর্ণ
নামায আদায় করতাম। (অর্থাৎ চার রাকআত আদায় করতাম)। তাখরিজ: বুখারি- ৪২৯৯
ব্যাখ্যা/সমন্বয়:
*আনাস (রাযিঃ) এবং ইবনে
আব্বাস (রাযিঃ) বর্ণিত হাদীসদ্বয়ে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর অবস্থানের মেয়াদ বর্ণনায় পার্থক্য
দেখা গেলেও । বিশারদগণ বলেছেন,
মূলত
হযরত আনাস (রাযিঃ)-এর বর্ণিত হাদীসটি বিদায় হজ্জের সফরে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর অবস্থান মেয়াদ এবং ইবনে আব্বাস
(রাযিঃ)-এর হাদীসে মক্কা বিজয়ের সফরে তাঁর অবস্থান মেয়াদের কথা উল্লেখ করা
হয়েছে। সূত্র: ফিকহুস সুনান,
হাদীস
নং ৯৩৯
و
الله اعلم بالصواب
উত্তর
প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৪৯:
আমার প্রশ্ন হলো , আমরা যে দোয়ায়ে কুনুত পড়ে থাকি ।
اللهم إنا نستعينك ونستغفرك
ونؤمن بك
......
এর সহীহ দলীল আছে কি ? উল্লেখ করার জন্য অনুরোধ করছি।
তারিখ: ২১/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ মিজানুর রহমান
খাগড়াছড়ি থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হ্যাঁ,
সহিহ সনদে আমরা যে বিতর নামাজে শেষ রাকাতে দুআয়ে কুনুত পাঠ করি তা
বর্ণিত আছে। যেমন,
أما
بعد: فالذكر الثالث مما أورده المؤلفُ فيما يُقال في قنوت الوتر: هو ما يرويه
عبيدُ بن عُمير قال: "صليتُ خلف عمر بن الخطاب t صلاةَ الغداة، فقنتَ فيها بعد
الركوع، وقال في قنوته: اللهم إنا نستعينك، ونستغفرك، ونُثني عليك الخيرَ كلّه،
ونشكرك ولا نكفرك، ونخلع ونترك مَن يفجرك، اللهم إياك نعبد، ولك نُصلي ونسجد،
وإليك نسعى ونحفد، نرجو رحمتَك، ونخشى عذابك، إنَّ عذابَك بالكفَّار مُلحق"،
يقول بعضُ رواته -وهو الخزاعي-: "ونُثني عليك ولا نكفرك، ونخشى عذابَك
الجدّ"، هكذا في رواياته.
هذا
الحديث أخرجه ابنُ خزيمة[1]، والبيهقي في "السُّنن الكبرى"[2]، وفي "الدَّعوات
الكبير"[3]، كذلك أخرجه أبو داود في
كتابه "المراسيل"[4]، والبيهقي قال عنه في
"السُّنن الكبرى"، وفي "الدَّعوات الكبير": "أنَّه مُرسل".
والمرسَل
هو: ما يرفعه التَّابعيُّ إلى النبي ﷺ.
وقال
البيهقي في "السنن الكبرى" في موضعٍ آخر: "إسناده صحيحٌ"[5]،
- "صحيح
ابن خزيمة" (2/155)، برقم (1100).
- "السنن
الكبرى" للبيهقي (2/298)، برقم (3142).
- "الدَّعوات
الكبير" (1/558)، برقم (432).
- "المراسيل"
لأبي داود (ص118)، برقم (89).
- "السنن
الكبرى" للبيهقي (2/299)، برقم (3144).
নোট: ইমাম বাইহাকি (রহ.) বলেন, হাদিসটির সনদ সহিহ।
সূত্র: সুনানুল কুবরা লিলবাইহাকি-২/২৯৯ পৃ.
اللهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ , وَنُثْنِي
عَلَيْكَ الْخَيْرَ كُلَّهُ وَنَشْكُرُكَ وَلَا نَكْفُرُكَ
وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّي , وَنَسْجُدُ وَإِلَيْكَ
نَسْعَى وَنَحْفِدُ نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ إِنَّ عَذَابَكَ
بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
তাখরিজ: শরহু মাআনিল আছার, হাদীস
নং-১৪৭৫
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৫০:
★ বিড়ি, সিগারেট,
গুল,জর্দ্দা,পান তামাক ও হেরোইন,গাঁজা আফিং সহ মাদকের হুকুম সম্পর্কে জানাবেন ৷
لله تأمنوا و تؤجروا ، তারিখ: ২১/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস আলী,সুদান থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হেরোইন,গাঁজা-আফিম তথা মাদক দ্রব্যের সরাসরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বিড়ি,সিগারেট,গুল-জর্দা, পান তামাক এর ব্যাপারে সরাসরি নিষেধাজ্ঞার নস নেই। যাই হোক আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য
কয়েকভাগে ভাগ করছি। ونسأل الله التوفيق وهو الموفق
والمعين
প্রশ্ন: ক। বিড়ি-সিগারেট ধুমপান করার বিধান
কি?
উত্তর: ক। এ
বিষয়ে ওলামাদের দুটি মত পাওয়া যায়। একটি
মত মাকরুহ অপরটি হারাম।
প্রথম মত মাকরুহ: যারা মাকরুহ বলেন, তাদের দলিল/যুক্তি হলো-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ،
قَالَ: وَلَا أَعْلَمُهُ
إِلَّا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ:
«كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ، وَكُلُّ
خَمْرٍ حَرَامٌ
অর্থ: হযরত
আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি মাতাল করে দেয়া বস্তুই মদ। আর প্রতিটি মদই হারাম। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম-২০০৩, ইবনে
মাজাহ-৩৩৯০, মুসনাদে আহমাদ-৪৮৩০
ব্যাখ্যা: বিড়ি-সিগারেট যেহেতু ব্যক্তিকে মাতাল করে না। আর তা মাতাল হবার
জন্য খাওয়া হয় না। তাই হারাম নয়।
দ্বিতীয় মত, হারাম: হারামের প্রবক্তাগণও সরাসরি হারাম
বলেন না। বরং কিছু উসূলের ভিত্তিতে বা
ইল্লত-এর কারণে হারাম বলেন। তিনটি কারণে হারাম হয়।
(০১)
এতে রয়েছে অনর্থক অর্থ অপচয়-অপব্যয়। আর ইসলামে
তা হারাম। দলিল:
আয়াত নং-০১
وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِیۡرًا
إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا
إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا
এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না।
নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।
সূরা ইসরা,২৬-২৭
আয়াত নং-০২
وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ
إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ এবং আহার করবে ও পান করবে। কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ
করেন না। সূরা আরাফ-৩১
রাসুল (ﷺ) বলেছেন,
إِنّ اللهَ كَرِهَ لَكُمْ ثَلاَثًا قِيلَ
وَقَالَ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ وَكَثْرَةَ السّؤَالِ আল্লাহ তোমাদের জন্যে তিনটি
বিষয়কে অপছন্দ করেন- ১. অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করা ২. সম্পদ নষ্ট করা,
৩. অধিক প্রশ্ন করা। তাখরিজ: বুখারি-১৪৭৭; মুসলিম-৫৯৩
(০২)
এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি। যা (বিভিন্ন রোগের মাধ্যমে) ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে
যায়। আর যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর,
ইসলামে তা হারাম। দলিল:
আয়াত নং-০১
وَلَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ
بِکُمۡ رَحِیۡمًا অর্থ: আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না।
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। সূরা নিসা-২৯
আয়াত নং-০২
وَاَنۡفِقُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ
اللّٰہِ وَلَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡکُمۡ اِلَی التَّہۡلُکَۃِ
তোমরা আল্লাহ্ র পথে ব্যয় কর
আর নিজেদের হাতে নিজে-দেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কর না। সূরা বাকারা-১৯৫
ব্যাখ্যা: ধুমপান করা পরোক্ষভাবে নিজেকে
হত্যা করার শামিল।
(০৩) এতে দুর্গন্ধ আছে। এর দুর্গন্ধে অধূমপায়ীরা
কষ্ট পায়। অপরকে/কোন মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া হারাম। দলিল:
وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ
الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا
بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا অর্থ: যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। সূরা আহজাব-৫৮
প্রশ্ন: খ। গুল,
জর্দা, তামাক পাতা খাওয়া কি?
উত্তর: খ। গুল-জর্দা, তামাক পাতাও সম্পর্কে দুটি মতামত রয়েছে। হারাম ও মাকরুহ ।
প্রথমমত হারাম: যারা হারাম বলেন, তাদের যুক্তি হলো গুল-জর্দা সরাসরি তামাক পাতা থেকে
তৈরি। আর তামাক বা তামাকজাত নেশাদ্রব্য তাই সেটাও হারাম।
দ্বিতীয়মত মাকরুহ: যারা মাকরুহ বলেন, তাদের যুক্তি হলো,
তামাককে খানিক পরিশোধন করে জর্দা বানানো হয়ে থাকে। ফলে
জর্দায় তেমন কোন নেশাই থাকে না। শুধুমাত্র নেশার প্রাথমিক উপকরণ হওয়াই যদি কোন
কিছু নিষিদ্ধ হবার মানদণ্ড হয়।
এখন প্রশ্ন হল, যেহেতু খেজুর, আঙ্গুর ও কিশমিশ মদের উপকরণ হিসেবে
ব্যবহৃত হয়, তাই কি এসব খাওয়া নাজায়েজ?
অবশ্যই নয়। কারণ, কোন কিছু মাদকের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হলেই যতক্ষণ না তা মাদকে পরিণত হয়,
ততক্ষণ সেটিকে হারাম বলার কোন সুযোগ নেই।
প্রশ্ন: গ। হেরোইন,গাঁজা আফিম বা মাদকের হুকুম কি?
উত্তর: গ।
আমার জানামতে হেরোইন, গাঁজা, বাবা ,
ফেনসিডিল বা নেশাজাত দ্রব্য যা মাতাল করে মস্তিষ্ককে বিকৃত করে
হারাম। দলিল:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ
وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ
لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٥:٩٠
হে মুমিনগণ,এই যে
মদ,জুয়া,প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক
শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো
থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। [সূরা মায়িদা-৯০]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: وَلَا أَعْلَمُهُ إِلَّا عَنِ
النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ، وَكُلُّ
خَمْرٍ حَرَامٌ
অর্থ: হযরত
আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি মাতাল
করে দেয়া বস্তুই মদ। আর প্রতিটি মদই হারাম। তাখরিজ: সহীহ মুসলিম-২০০৩, ইবনে মাজাহ-৩৩৯০, মুসনাদে আহমাদ-৪৮৩০
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِرَجُلٍ قَدْ شَرِبَ الْخَمْرَ، فَجَلَدَهُ
بِجَرِيدَتَيْنِ نَحْوَ أَرْبَعِينَ»، قَالَ: وَفَعَلَهُ أَبُو بَكْرٍ،
فَلَمَّا كَانَ عُمَرُ اسْتَشَارَ النَّاسَ، فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ:
أَخَفَّ الْحُدُودِ ثَمَانِينَ، «فَأَمَرَ بِهِ عُمَرُ»،
হযরত আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) এর কাছে মাদ পান করা এক
ব্যক্তি আসল। তখন তাকে খেজুর গাছের দু’টি ডাল দিয়ে চল্লিশ বেত্রাঘাত করা হয়।[এক বেতে চল্লিশ হলে, দুই বেতের দ্বারা হচ্ছে আশি]
একই পদ্ধতিতে আবু বকর রা. ও এ অপরাধের শাস্তি দিতেন। তারপর যখন হযরত উমর রা. এর
সময় আসল। তিনি লোকদের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ করলেন। তখন আব্দুর রহমান পরামর্শ দিলেন
যে, কমপক্ষে আশি বেত্রাঘাত। [দুই ডাল একসাথে নয়, বরং আলাদা করে আশিটি] তখন হযরত উমর রা. আশিটি বেত্রাঘাতের হুকুম দিলেন।
তাখরিজ: মুসলিম-১৭০৬
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا:
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ شَرِبَ الخَمْرَ فِي الدُّنْيَا، ثُمَّ لَمْ يَتُبْ مِنْهَا، حُرِمَهَا
فِي الآخِرَةِ»
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করেছে
অতঃপর তা থেকে তাওবাহ করেনি, সে আখিরাতে তা থেকে বঞ্চিত থাকবে। তাকরিজ: মুসলিম ৩৬/৮, হাঃ ২০০৩, আহমাদ
৪৬৯০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৬২
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا:
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ شَرِبَ الخَمْرَ فِي الدُّنْيَا، ثُمَّ لَمْ يَتُبْ مِنْهَا،
حُرِمَهَا فِي الآخِرَةِ»
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করেছে অতঃপর তা
থেকে তাওবাহ করেনি, সে আখিরাতে তা থেকে বঞ্চিত থাকবে।
[মুসলিম ৩৬/৮, হাঃ ২০০৩, আহমাদ ৪৬৯০]
(আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৬২)
সারকথা হলো, গাঁজা, ইয়াবা,
বাবা, ফেনসিডিল, হিরোইন,
ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, মরফিন,বিয়ার, জাওয়া ইত্যাদি যে নামই হোক কেন, যা মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃতি সাধন করে,অচেতন, মাতাল করে এ ধরণের নেশাজাতীয় দ্রব্য হারাম। তবে বিড়ি-সিগারেট সরাসরি হারাম বলা না হলেও
কমপক্ষে মাকরুহ তাহরিমি, কেননা সেগুলোও ধীরে ধীরে মাদকের মতই
ক্ষতি করে। আর গুল-জর্দা যেহেতু স্বাস্থ্যগত ক্ষতি রয়েছে,
সেটাও পরিহার যোগ্য।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৫১:
আমার জানার বিষয় হলোঃ ১। বিতর নামাজে দোয়ায়ে ক্বুনুত পড়ার আগে তাকবীর দেয়া
২। দোয়া ক্বুনুত পড়ার আগে রফউল
ইয়াদাইন করা না করা ব্যাপারে।
মুহতারাম মুফতী সাহেব দলীলসহ উত্তর দিলে উপকৃত হবো।
তারিখ: ২২/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আনোয়ারুল আম্বিয়া যশোর
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নানুসারে বিষয়টি দুভাগে ভাগ করছি।
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق
والمعين
প্রশ্ন: ক। বিতর নামাজে দোয়ায়ে ক্বুনুত
পড়ার আগে তাকবীর দেয়া এর দলিল কি?
উত্তর: ক। দলিল নিম্নে পেশ করা হলো-
হাদিস/আসার নং-০১
وفي الإستيعاب لابن عبد البر : أم عبد أم عبد الله بن مسعود روى عنها ابنها عبد الله
بن مسعود أنها قالت :
رأيت رسول الله صلى الله عليه
وسلم قنت في الوتر قبل الركوع. ويعرف أيضا بها حديث أم بن مسعود يرويه حفص بن سليمان عن أبان بن
عياش عن إبراهيم النخعي عن علقمة عن عبد الله قال أرسلت أمي ليلة لتبيت عند النبي
صلى الله عليه وسلم فتنظر كيف يوتر فباتت عند النبي صلى الله عليه وسلم فصلى ما
شاء الله أن يصلي حتى إذا كان آخر الليل وأراد الوتر قرأ بسح اسم ربك الأعلى في
الركعة الأولى وقرأ في الثانية قل يا أيها الكافرون ثم قعد ثم قام ولم يفصل بينهما
بالسلام ثم قرأ بقل هو الله أحد حتى إذا فرغ كبر ثم قنت فدعا بما شاء الله أن
يدعوه ثم ركع فكبر.
অর্থাৎ হাফেয ইবনে আবদিল বার ‘আলইসতীআব ফী মা’রিফাতিল আসহাব’ কিতাবে লেখেন, ‘উম্মে আবদ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর মহিয়সী জননী। তাঁর থেকে পুত্র
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেন যে, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে রুকুর আগে কুনূত পড়তে দেখেছি।’ তাঁর সম্পর্কেই ঐ হাদীসটি
প্রসিদ্ধ, যা হাফ্স ইবনে আবু সুলায়মান বর্ণনা করেন
আবান ইবনে আবী আইয়াশ থেকে, তিনি ইবরাহীম নাখায়ী থেকে, তিনি আলকামা থেকে বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে
মাসউদ রা. বলেন, ‘আমি আমার আম্মাকে বললাম তিনি যেন নবী (ﷺ)-এর গৃহে রাত্রিযাপন করেন এবং তাঁর বিতর
পড়া দেখেন। আম্মা তা করলেন (এবং জানালেন যে,) নবী (ﷺ) রাতে নামায পড়লেন যে পরিমাণ আল্লাহর ইচ্ছা, রাতের শেষ অংশে। এরপর
বিতর নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা
কাফিরূন পড়লেন। এরপর বৈঠক করলেন এবং সালাম না ফিরিয়ে (তৃতীয় রাকাতে) দাঁড়ালেন।
এই রাকাতে সূরা ইখলাস পড়লেন। এরপর তাকবীর দিয়ে দুআয়ে কুনূত পাঠ করলেন এবং
যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা দুআ করলেন। এরপর তাকবীর দিয়ে রুকু করলেন।’ তাখরিজ: আলইসতীআব ৪/৪৫০; (ইসাবার
টীকায়)
হাদিস/আসার নং-০২
عن مسروق والأسود وأصحاب عبد
الله قالوا كان عبد الله لا يقنت إلا في الوتر وكان يقنت قبل الركوع يكبر إذا فرغ
من قراءته حين يقنت
অর্থাৎ আবু ইসহাক থেকে
বর্ণিত, মাসরূক
রাহ., আসওয়াদ রাহ. ও ইবনে মাসউদ রা.-এর অন্য শাগরিদগণ
বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু বিতর নামাযে
কুনূত পড়তেন আর তিনি কুনূত পড়তেন রুকুর আগে এবং কিরাআত সমাপ্ত হওয়ার পর কুনূত
পড়ার সময় তাকবীর দিতেন। তাখরিজ: শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪
;মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৭
এই রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করার
পর ইমাম তহাবী রাহ. বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় যুক্তি ও ইস্তিম্বাতের
ভিত্তিতে বলা (বা করা) যায় না। তা একমাত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট শিক্ষা থেকেই গৃহীত হতে পারে।
হাদিস/আসার নং-০৩
إذ كان مثله لا يقال بالاستنباط
ولا بالاستخراج وإنما يقال بالتوقيف الذي وقف رسول الله صلى الله عليه وسلم الناس
عليه.
শরহু মুশকিলিল আছার
১১/৩৭৪-৩৭৫
ইমাম তহাবী রাহ. আরো বলেন, হযরত ওমর ফারূক রা.-এর
আমলও এ পদ্ধতি সমর্থন করে। কারণ তিনি ফজরের নামাযে রুকুর আগে যখন কুনূত পড়তেন তখন
কুনূতের জন্য তাকবীর দিতেন। তাকরিখশরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৫-৩৭৬
প্রশ্ন: খ। দোয়া ক্বুনুত পড়ার আগে রফউল ইয়াদাইন করার দলিল
কি?
উত্তর: খ। ফিকহি হানাফির দলিল পেশ
করা হলো,
হাদিস/আসার নং-০১
عن الأسود قال عن عبد الله مسعود
رضي الله عنه كان يرفع يديه إذا قنت في الوتر
আসওয়াদ রাহ. বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিতরের কুনূতের জন্য রাফয়ে
ইয়াদাইন করতেন। তাখরিজ: মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/২৭-২৮
হাদিস/আসার নং-০২
ইমাম বুখারীর ‘রিসালা রাফয়িল ইয়াদাইনে’
(পৃ. ২৪) আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রা. বিতরের শেষ রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন, এরপর রাফয়ে
ইয়াদাইন করতেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
أنه كان يقرأ في آخر ركعة من
الوتر قل هو الله احد ثم رفع يديه فيقنت قبل الركعة
হাদিস/আসার নং-০৩
عن أبي عثمان كان عمر رضي الله
عنه يرفع يديه في القنوت
অর্থাৎ আবু উছমান বলেন, ‘উমর রা. কুনূতে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।’ তাখরিজ: জুয্উ রাফয়িল ইয়াদাইন পৃ. ২৮
বিখ্যাত তাবে-তাবায়ি ও ফকিহ ইব্রাহিম নাখায়ী
রহ এর আমল:
محمد قال : أخبرنا أبو حنيفة عن حماد عن إبراهيم أن ألقنوت في الوتر واجد في شهر رمضان وغيره وإذا أردت أن تقنت فكبر وإذا أردت أن تركع فكبر أيضا
ইমাম মুহাম্মাদ বলেন, ইমাম আবু হানিফা বর্ণনা
করেছেন। ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেছেন,
‘বিতর নামাযে কুনূত ওয়াজিব, রমযানে ও রমযানের বাইরে।
যখন তুমি কুনূত পড়ার ইচ্ছা করবে তখন তাকবীর দিবে, এরপর
(কুনূতের পর) যখন রুকু করার ইচ্ছা করবে তখন পুনরায় তাকবীর দিবে। তাখরিজ: কিতাবুল
আছার ১/৫৭৯; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০০
ইমাম তহাবী রাহ. বলেন,
وأما التكبير في القنوت في الوتر
فإنها تكبيرة زائدة في تلك الصلاة وقد أجمع الذين يقنتون قبل الركوع على الرفع
معها.
অর্থাৎ বিতর নামাযে কুনূতের তাকবীর
হল এই নামাযে একটি অতিরিক্ত তাকবীর। যারা রুকুর পূর্বে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের
ইজমা রয়েছে যে, এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইনও করতে হবে। তাখরিজ: তহাবী ১/৩৩২
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৫২:
এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ডিভোর্স এর কাগজ
পাঠিয়ে দেয় অর্থাৎ লিখিত তালাকনামা পাঠিয়ে দেয় উক্ত কাগজ তার স্ত্রীর নিকট
পৌঁছানোর আগেই সেই ব্যক্তি স্ত্রীর নিকট এসে কান্নাকাটি করে এবং সংসার করার ইচ্ছা
পোষণ করে এর কয়েকদিন পরে স্বামীর পাঠানো তালাকনামা স্ত্রী হাতে পায় প্রশ্ন হচ্ছে
তালাক হয়ে গেছে নাকি সংসার করার কোন পদ্ধতি আছে??? তারিখ: ২৩/১১/২২
ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা নুরুল ইসলাম রাঙামাটি থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা
হলো, আপনি উল্লেখ করেননি যে, তালাক নোটিশের মাধ্যমে কয় তালাক দিয়েছে।
দ্বিতীয় কথা হলো,
তালাকটি
যদি তালাকে রজয়ি হয়, তাহলে দুই তালাক বা এক তালাক দেয়ার
পর স্বামীর অধিকার থাকে, স্ত্রীকে ইদ্দত তথা তিন
হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে রাজআত করা তথা স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনা। এতে
কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে স্ত্রীকে
ফিরিয়ে না আনা হয়, তাহলে স্ত্রীকে পুনরায়
ফিরিয়ে আনতে নতুন করে মোহর ধার্য করে বিবাহ করা আবশ্যক। নতুবা স্বামী স্ত্রী
হিসেবে উভয়ের বসবাস করা জায়েজ নয়। সূত্র: ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম
দেওবন্দ-৯/৪৪১,২৪৫
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ
ثَلاَثَةَ قُرُوَءٍ وَلاَ يَحِلُّ لَهُنَّ أَن يَكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللّهُ فِي
أَرْحَامِهِنَّ إِن كُنَّ يُؤْمِنَّ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ
وَبُعُولَتُهُنَّ أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَلِكَ إِنْ أَرَادُواْ إِصْلاَحًا
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয
পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে
আল্লাহ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে
চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের
স্বামীরা সংরক্ষণ করে। (সূরা বাকারা ২২৮)
তৃতীয় কথা হলো,
তালাকটি
যদি এক/দুই তালাকে বায়েন হয়, তাহলে যদি এক তালাক বায়েন
বা দুই তালাক বায়েন দেয় তবে সে মৌখিকভাবে রুজু করার (পুনরায় স্ত্রী হিসেবে
গ্রহণ করার) পথ বন্ধ করে দিল। এখন শুধু একটি পথই খোলা আছে। আর তা হল, নতুনভাবে
শরীয়তসম্মত পন্থায় বিবাহ দোহরানো। সূত্র: হেদায়া
৩/৩৭৯; আল বাহরুর রায়েক ৪/৯৪
চতুর্থ কথা হলো, তালাকটি
যদি তিন তালাক হয়, তাহলে হিলা বিবাহ ছাড়া স্ত্রীকে ফিরে পাবার কোন পথ নেই। দলিল:
কুরআনের বাণী-
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ
حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا
أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ
يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া
হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত
তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার
জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে
করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ
কতৃꦣ2453; নির্ধারিত সীমা; যারা
উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। {সূরা
বাকারা-২৩০}
হাদিসের বাণী-
হযরত ইবনে শেহাব হতে বর্নিত:
عن ابن شهاب قال اخبرنى عروة ابن زبير ان عائشة
اخبرته ان امرأت رقاعة القرظى جائت الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت يا
رسول الله صلى الله عليه وسلم ان رقاعة طلقنى فبت طلاقى وانى نكحت بعده عبد الرحمن
بن زبير القرظى وانما معه مثل الهدبة- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلك تريدين
ان ترجعى الى رقاعة – لا حتى يذوق عسليتك وتذوق عسليته- (بخارى شريف ٧٩١)
তিনি বর্ণনা করেন, আমাকে আরওয়া ইবনে জুবাইয়ের (রা.) খবর দিয়েছেন, সে হযরত আয়েশা (রা.) হতে খবর পেয়েছেন, রেফার স্ত্রী একদা হুজুর (সা.) এর দরবারে এসে
বলল, হে প্রিয় রসূল (সা.) আমাকে
আমার স্বামী রেফায়া তালাকে ‘বাত্তা’ প্রদান করেছেন। তারপর আমি আব্দুর রহমান ইবনে
জুবাইয়ের সাথে বিবাহ বসি। কিন্তু তাকে আমি নরম কাপড়ের ন্যায় পেয়েছি, অর্থাৎ কাপুরুষ। হুজুর (সা.) বললেন, তুমি কি আবার রেকায়ার কাছে ফিরে যেতে চাও? ততক্ষণ রেকায়ার কাছে ফিরে যেতে পারবে না, যতক্ষণ আব্দুর রহমান তোমার স্বাদ ও তুমি তার
স্বাদ না গ্রহণ কর। বোখারী শরিফে ৭৯১পৃ:
সারকথা হলো, উক্ত
ব্যক্তির তালাক কোন প্রকারের সেই ভাবে হুকুম হবে। তালাক নোটিশ/ডিভোর্স দেখে
সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তবে আমার জানামতে তিন তালাক একসাথে পাঠানো যায় না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৫৩:
আসসালামু আলাইকুম, হাত উঠিয়ে তাকবীর বলার হাদিস
দ্বারা প্রমাণিত নয় বরং আপনি উল্টা বুঝেছেন, সেটা হল হাদিসে
হাত উঠিয়ে মোনাজাত করার বিষয়টি প্রমাণিত কিন্তু তাকবির বলার সময় হাত উঠানো যেটা
আমাদের দেশে উল্টা তাকবীর বলে সেটা আপনি প্রমাণিত করতে পারেননি প্রমাণিত করার জন্য
স্পষ্ট নছ দরকার।তারিখ: ২১/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আবু তাহের
নেত্রকনা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই! গত
২২/১১/২২ তারিখে আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-১২৩৫১ শিরোনামে প্রকাশিত মাসয়ালাটি
বিষয়ে আপনি আপত্তি তুলেছেন। বিষয়টি হলো, আমি দুআ কুনুতে পড়ার
আগে তাকবিরে সময় হাত তোলা সম্পর্কে দলিল হিসেবে কয়েকটি হাদিস শরিফ উল্লেখ করেছিলাম,
তার মধ্যে একটি নিম্নরূপ:
عن الأسود قال عن عبد الله مسعود
رضي الله عنه كان يرفع يديه إذا قنت في الوتر
আসওয়াদ রাহ. বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.
বিতরের কুনূতের জন্য রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন। তাখরিজ: মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/২৭-২৮
আপনি বলেছেন যে,
আপনি
উল্টা বুঝেছেন,
সেটা হল হাদিসে হাত উঠিয়ে মোনাজাত করার বিষয়টি প্রমাণিত। অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের রা. হাদীসটার ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ দ্বারা মুনাজাত বুঝানো হয়েছে। আপনার কাছে প্রশ্ন হলো ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ দ্বারা যদি
মুনাজাত অর্থ হয়, তাহলে নিচের হাদিস
দ্বারা কি অর্থ বুঝিয়েছে- সম্মানিত ইমাম বা ফকিহ বা
আলেমদের ব্যাখ্যা ছাড়া।
হাদিস নং-০১
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ
النَّبِيَّ - صلى الله عليه وسلم - كَانَ ★يَرْفَعُ يَدَيْهِ★ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ، وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوعِ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
বুখারী ৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৮,
৭৩৯, মুসলিম ৩৯০, তিরমিযী
২৫৫, নাসায়ী ৮৭৭, ৮৭৮, ১০২৫, ১১৪৪, আৰু দাউদ ৭২১,
৭২২, ইবনু মাজাহ ৮৫৮,৮৬৬,
আহমাদ ৪৫২৬, ৪৬৬০, মালেক
১৬৫, দারেমী ১৩০৮, বুলুগুল মারাম,
হাদিস নং ২৭৫
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَهِشَامُ
بْنُ عَمَّارٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ صَالِحِ بْنِ
كَيْسَانَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ
رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ★يَرْفَعُ يَدَيْهِ★ فِي الصَّلاَةِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ حِينَ يَفْتَتِحُ الصَّلاَةَ وَحِينَ يَرْكَعُ وَحِينَ يَسْجُدُ .
বুখারী ৭৮৫, ৭৮৯, ৮০৩;
মুসলিম ৩৯১-২, তিরমিযী ২৫৪, নাসায়ী ১০২৩, আবূ দাঊদ ৮৩৬, আহমাদ
৭১৭৯, ৭১৬০১, ১০১৪১, ১০৪৪০; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৬৮, দারিমী ১২৩৮, সহীহ আবী দাউদ ৭২৪, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৮৬০
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنَا أَيُّوبُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْهَاشِمِيُّ،
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ رِيَاحٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ،
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ كَان★ يَرْفَعُ يَدَيْهِ★ عِنْدَ كُلِّ تَكْبِيرَةٍ .
অর্থ: ইবনু আব্বাস(রা.) থেকে বর্ণিতঃ। রসূলুল্লাহ (ﷺ)প্রতি তাকবীরের সময় রফউল ইয়াদাইন করতেন। তাখরীজ
আলবানী: সহীহ আবী দাউদ ৭২৪; ইবনে মাজাহ, হাদিস নং
৮৬৫
হাদিস নং-০৪
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ
سُفْيَانَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَسْوَدِ،
عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ أَلاَ أُصَلِّي
بِكُمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَصَلَّى فَلَمْ ★يَرْفَعْ يَدَيْهِ★ إِلاَّ فِي أَوَّلِ مَرَّةٍ .
অর্থ: ‘আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা.) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) এর (নিয়মে) নামায আদায় করে দেখাব না? তিনি (‘আবদুল্লাহ) নামায আদায় করলেন, কিন্তু প্রথম বার (তাকবীরে তাহরীমার
সময়) ছাড়া আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন করেননি। তাখরিজ: সিফাতুস সালাত, মূল-মিশকাত-(৮০৯)
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫৭
হাদিস নং-০৫
أَخْبَرَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلَانَ
الْمَرْوَزِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ
عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ
عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّهُ قَالَ: «أَلَا أُصَلِّي بِكُمْ صَلَاةَ
رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَصَلَّى فَلَمْ ★يَرْفَعْ يَدَيْهِ★ إِلَّا مَرَّةً وَاحِدَةً»
আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি
বলেন,
আমি কি তোমাদের নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)–এর সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করবো না? এরপর তিনি সালাত আদায় করলেন,
তখন তিনি একবারের অধিক হাত উঠান নি। তাখরিজ: সুনানে
আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১০৫৮
হাদিস নং-০৬
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْوَكِيلُ
, ثنا الْحَسَنُ بْنُ عَرَفَةَ , ثنا هُشَيْمٌ , عَنْ حُصَيْنٍ , وَحَدَّثَنَا
الْحُسَيْنُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ , وَعُثْمَانُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ جَعْفَرٍ ,
قَالَا: نا يُوسُفُ بْنُ مُوسَى , نا جَرِيرٌ , عَنْ حُصَيْنِ بْنِ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ , قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى إِبْرَاهِيمَ فَحَدَّثَهُ عَمْرُو بْنُ
مُرَّةَ , قَالَ: صَلَّيْنَا فِي مَسْجِدِ الْحَضْرَمِيِّينَ , فَحَدَّثَنِي
عَلْقَمَةُ بْنُ وَائِلٍ , عَنْ أَبِيهِ , أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ★«يَرْفَعُ يَدَيْهِ★حِينَ يَفْتَتِحُ الصَّلَاةَ وَإِذَا رَكَعَ وَإِذَا سَجَدَ». فَقَالَ إِبْرَاهِيمُ: مَا أَرَى أَبَاكَ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا ذَلِكَ الْيَوْمَ الْوَاحِدَ فَحَفِظَ ذَلِكَ , وَعَبْدُ اللَّهِ لَمْ يَحْفَظْ ذَلِكَ
مِنْهُ , ثُمَّ قَالَ إِبْرَاهِيمُ: إِنَّمَا رَفْعُ الْيَدَيْنِ عِنْدَ
افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ
হযরত হুসাইন বিন আব্দুর রহমান
বলেন: আমি হযরত ইবরাহীম নাখঈ রহ.-এর নিকটে গেলাম। তখন হযরত আমর বিন মুররাহ তাঁকে হাদীস
শুনালেন যে,
আমরা হাযরামীদের মসজিদে নামায পড়লাম। অতঃপর আলকামা বিন ওয়ায়েল আমাদেরকে
তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করলেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ স.কে হাত
উঠাতে দেখেছেন নামাযের শুরুতে এবং রুকু-সিজদার সময়ে। এ কথা শুনে হযরত ইবরাহীম নাখঈ
রহ. বললেন, তোমার পিতা রসূলুল্লাহ (ﷺ).কে ওই একদিন দেখে স্মরণ রাখলেন আর ইবনে মাসউদ রা. তা স্মরণ
রাখতে পালেন না?
অতঃপর তিনি বললেন: রফউল ইয়াদাইন শুধু নামাযের শুরুতে হবে। (দারাকুতনী:
১১২১)
নোট: সহীহ। ইমাম দারাকুতনী এ হাদীসটিকে দু’টি সনদে বর্ণনা করেছেন। প্রথম
সনদে হাসান বিন আরাফা এবং আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ ব্যতীত সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
আর হাসান বিন আরাফার ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (আল কাশেফ: ১০৪২) আহমাদ বিন
আব্দুল্লাহও ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (তারীখে বাগদাদ: ২২০৬) সুতরাং
এ সনদটি সহীহ।
হাদিস নং-০৭
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ، - يَعْنِي
ابْنَ زُرَيْعٍ - حَدَّثَنَا الْمَسْعُودِيُّ، حَدَّثَنِي عَبْدُ الْجَبَّارِ بْنُ
وَائِلٍ، حَدَّثَنِي أَهْلُ، بَيْتِي عَنْ أَبِي أَنَّهُ، حَدَّثَهُمْ أَنَّهُ،
رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم★ يَرْفَعُ يَدَيْهِ★مَعَ التَّكْبِيرَةِ .
‘আবদুল জাব্বার ইবনু ওয়ায়িল থেকে বর্ণিতঃ:আমার
পরিবারের লোকজন আমার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (আমার পিতা) রসূলুল্লাহ
(ﷺ)কে তাকবীর বলার সময় দু’হাত উঠাতে দেখেছেন। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৭২৫
হাদিস নং-০৮
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، عَنْ حَسَنِ بْنِ
عَيَّاشٍ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبْجَرَ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ،
عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، قَالَ: «صَلَّيْتُ مَعَ عُمَرَ، فَلَمْ ★يَرْفَعْ يَدَيْهِ★ فِي شَيْءٍ مِنْ صَلَاتِهِ إِلَّا حِينَ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ» قَالَ عَبْدُ الْمَلِكِ : وَرَأَيْت الشَّعْبِيَّ ، وَإِبْرَاهِيمَ ، وَأَبَا إِسْحَاقَ ، لاَ يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلاَّ حِينَ يَفْتَتِحُونَ الصَّلاَةَ.
হযরত আসওয়াদ রহ. বলেন: আমি হযরত উমার রা.-এর সাথে
নামায পড়েছি। তিনি নামায শুরু করার সময় ব্যতীত নামাযে আর কোথাও হাত উঠাননি। আব্দুল
মালেক বলেন: আমি শা’বী, ইবরাহীম ও আবু ইসহাককে দেখেছি;
তাঁদের কেউ নামাযের শুরু ব্যতীত হাত উঠাননি। তাখরিজ: ইবনে আবী শাইবা: ২৪৬৯, ত্বহাবী: ১৩৬৪
হাদীসটির মান : সহীহ। এ হাদীসটির রাবীগণ সবাই-ই
বুখারী/মুসলিমের ثقة “নির্ভরযোগ্য” রাবী। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: وَهَذَا رِجَاله ثِقَات “এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য”। (আদ দিরায়াহ: ১৮১ নম্বর হাদীসের
আলোচনায়) আল্লামা যাইলাঈ রহ. বলেন: وَالْحَدِيثُ صَحِيحٌ، “হাদীসটি সহীহ”। (নাসবুর রায়াহ: সিফাতুস সলাত
অধ্যায়,
৩৯ নম্বর হাদীস-এর আলোচনায়)
হাদিস নং-০৯
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ
اللَّهِ بْنِ قِطَافٍ النَّهْشَلِيِّ،عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ عَنْ
أَبِيهِ«أَنَّ عَلِيًّا كَانَ ★يَرْفَعُ يَدَيْهِ★ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ ثُمَّ لَا يَعُودُ» قَالَ عَبْدُ الْمَلِكِ: «وَرَأَيْتُ الشَّعْبِيَّ، وَإِبْرَاهِيمَ، وَأَبَا إِسْحَاقَ، لَا يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلَّا حِينَ يَفْتَتِحُونَ الصَّلَاةَ»
হযরত আছেম বিন কুলাইব তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন:
হযরত আলী রা. শুধু নামাযের শুরুতে হাত উঠাতেন পরবর্তীতে আর উঠাতেন না। (ইবনে আবী শাইবা:
২৪৫৭,
ত্বহাবী: ১৩৫৩ ও ১৩৫৪)
হাদীসটির মান: সহীহ। হযরত আছেমের পিতা কুলাইব
ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর কুলাইব ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (আল কাশেফ: ৪৬৭১) হাফেজ ইবনে
হাজার আসকালানী রহ. বলেন: وَرِجَاله ثِقَات وَهُوَ مَوْقُوف “এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই-ই
নির্ভরযোগ্য আর হাদীসটি মাউকুফ”। (আদ দিরায়াহ: ১৮১ নম্বর হাদীসের আলোচনায়) আল্লামা
যাইলাঈ রহ. বলেন: وَهُوَ أَثَرٌ صَحِيحٌ، “এ হাদীসটি সহীহ”। (নাসবুর রায়াহ: সিফাতুস সলাত
অধ্যায়,
৩৯ নম্বর হাদীস-এর আলোচনায়)
হাদিস নং-১০
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ
حُصَيْنٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، قَالَ: «مَا رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ، ★يَرْفَعُ يَدَيْهِ★ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَا يَفْتَتِحُ»
হযরত মুজাহিদ রহ. বলেন: আমি ইবনে উমর রা.কে(শেষ
জীবনে) তাকবীরে তাহরিমা ব্যতীত রফউল ইয়াদাইন করতে দেখিনি। তাখরিজ: ইবনে আবী শাইবা: ২৪৬৭,
ত্বহাবী: ১৩৫৭
হাদীসটির মান : সহীহ, মাউকুফ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই
বুখারী-মুসলিমের ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য” রাবী।
উপরোক্ত ১০টি হাদিসে يَرْفَعُ يَدَيْه শব্দগুলোর দিকে খেয়াল করুন !!! একই শব্দ !! পৃথিবীর কোন আলেম-ফকিহ এটা দ্বারা মুনাজাত অর্থ করেননি। সুতরাং ওটার অর্থ
মুনাজাত নয়,,বরং রফউল ইয়াদাইন ই হবে অর্থাৎ কান পর্যন্ত হাত
উঠানো ৷ এটাই ফুকাহায়ে আহনাফ গ্রহণ করেছেন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন يَرْفَعُ يَدَيْه যদি মুনাজাত হয়, তাহলে রুকুতে যেতে আসতে রফউল ইয়াদাইন يَرْفَعُ يَدَيْه না করে মুনাজাত করেন না কেনো?
তৃতীয় প্রশ্ন: দ্বিতীয় প্রশ্ন يَرْفَعُ يَدَيْه যদি মুনাজাত হয়, তাহলে তাকবিরে তাহরিমার সময় মুনাজাত করেন নাকেন?
কেননা, ঐ হাদীস দ্বারা যদি(কিবলার দিকে হাতের তালু করে) রফউল ইয়াদাইন
না বুঝিয়ে (আসমানের দিকে হাতের তালু করে) মুনাজাত ধরা বুঝানো হয়,,তবে,
রুকুতে
যেতে আসতে রফউল ইয়াদাইনের হাদীসগুলো দ্বারা কী মুনাজাত বুঝানো হবে???
সারকথা হলো, রুকুতে যেতে আসতে রফউল ইয়াদাইন
করা বা শুধু তাকবীর তাহরিমায় রফউল ইয়াদাইন
করার প্রায় সকল হাদীসেই রফউল ইয়াদাইন বুঝাতে ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ শব্দগুলো ব্যবহ্নত হয়েছে ৷
বিতরে কুনুতে ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ শব্দ ব্যবহার হয়েছে, তাহলে সব জায়গায় মুনাজাত অর্থ হবে?
প্রশ্ন: ক। বিতরের কুনুতের সময় মুনাজাত
করা কি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত?
উত্তর: ক। না, হাদিস দ্বারা
প্রমাণিত নয়। দেখুন স্বয়ং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল ও তার মাজহাবের অনুসারি
ইবনে বায রহ. বলেছেন,
ﺳﺌﻞ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺣﻤﺪ – ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ - ﻋﻦ
ﺍﻟﻘﻨﻮﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﻮﺗﺮ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﺃﻡ ﺑﻌﺪﻩ ، ﻭﻫﻞ ﺗﺮﻓﻊ ﺍﻷﻳﺪﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻓﻲ ﺍﻟﻮﺗﺮ ؟
ﻓﻘﺎﻝ : ﺍﻟﻘﻨﻮﺕ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ، ﻭﻳﺮﻓﻊ
ﻳﺪﻳﻪ ، ﻭﺫﻟﻚ ﻋﻠﻰ ﻗﻴﺎﺱ ﻓﻌﻞ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓﻲ ﺍﻟﻘﻨﻮﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﻐﺪﺍﺓ ﻣﺨﺘﺼﺮ
ﻗﻴﺎﻡ ﺍﻟﻠﻴﻞ ( ﺹ 318 ) .
ﻳﺸﺮﻉ ﺭﻓﻊ ﺍﻟﻴﺪﻳﻦ ﻓﻲ ﻗﻨﻮﺕ ﺍﻟﻮﺗﺮ؛ ﻷﻧﻪ
ﻣﻦ ﺟﻨﺲ ﺍﻟﻘﻨﻮﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﻮﺍﺯﻝ، ﻭﻗﺪ ﺛﺒﺖ ﻋﻨﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﺃﻧﻪ ﺭﻓﻊ ﻳﺪﻳﻪ ﺣﻴﻦ ﺩﻋﺎﺋﻪ
ﻓﻲ ﻗﻨﻮﺕ ﺍﻟﻨﻮﺍﺯﻝ
ﺣﻴﻦ ﺩﻋﺎﺋﻪ ﻓﻲ ﻗﻨﻮﺕ ﺍﻟﻨﻮﺍﺯﻝ . ﺧﺮﺟﻪ
ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ - ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ - ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﻴﺢ .
ﻓﺘﺎﻭﻯ ﺇﺳﻼﻣﻴﺔ ، ﺟﻤﻊ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﻤﺴﻨﺪ
( 1/349 )
অর্থাৎ “'ফজরের কুনুতে নাযেলায়’”
যেহেতু
রাসুল সা. হাত তুলে দোয়া/মুনাজাত করেছেন,
তাই
ফজরের কুনুতের উপর কিয়াস করে বেতের কুনুতেও হাত তুলে দোয়া করা যায়। সূত্র: মুখতাসার কিয়ামুল লাইল-৩১৮, ফাতাওয়া
ইসলামিয়া ইবনে বায-১/৩৪৯
.
প্রশ্ন: খ। মুসলমানদের শত্রুদের
বিরুদ্ধে বদদুআ ছাড়া ফজরের নামাজে কুনুত/নাজেলায় মুনাজাত করা
কি বিদআত?
উত্তর: খ । হ্যাঁ, মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে
বদদুআ ছাড়া ফজরের নামাজে কুনুত/নাজেলায় মুনাজাত করা কি
বিদআত। দলিল:
হাদিস নং-০১
ﻭَﻋَﻦْ ﺳَﻌْﺪِ ( 1 ) ﺑْﻦِ ﻃَﺎﺭِﻕٍ
ﺍﻟْﺄَﺷْﺠَﻌِﻲِّ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ ﻟِﺄَﺑِﻲ : ﻳَﺎ ﺃَﺑَﺖِ ! ﺇِﻧَّﻚَ ﻗَﺪْ
ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﺧَﻠْﻒَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻭَﺃَﺑِﻲ ﺑَﻜْﺮٍ، ﻭَﻋُﻤَﺮَ،
ﻭَﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ، ﻭَﻋَﻠَﻲٍّ، ﺃَﻓَﻜَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻘْﻨُﺘُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﻱْ ﺑُﻨَﻲَّ،
ﻣُﺤْﺪَﺙٌ . ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟْﺨَﻤْﺴَﺔُ، ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﺑَﺎ ﺩَﺍﻭُﺩَ
সা'দ ইবনু তারেক আল-আশজাঈ (রহঃ) থেকে
বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, হে পিতা ! আপনি অবশ্যই রসূলুল্লাহ (ﷺ) আবু বাকর, ‘উমার, উসমান ও ‘আলী (রা.) -এর পিছনে সলাত আদায় করেছেন। তারা কি ফজরের সলাতে
দু'আ কুনৃত পড়তেন?
তিনি বলেন, হে বৎস! এটা তো বিদআত। তাখরিজ:
তিরমিযী ৪০২, ইবনু মাজাহ ১২৪১, নাসায়ী ১০৮০, আহমাদ ১৫৪৪৯, ২৬৬৬৮,
বুলুগুল মারাম ৩০৭, হাদিসের মানঃ হাসান-সহিহ
হাদিস নং-০২
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺜﻨﻲ ﻗﺎﻟﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ
ﻗﺎﻟﻨﺎ ﻫﺸﺎﻡ ﻋﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﻗﻦ ﺍﻧﺲ ﺭﺿـ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻـ ﻗﻨﺖ ﺷﻬﺮﺍً ﻳﺪﻋﻮ ﻋﻠﻲ ﺣﻲ ﻣﻦ ﺍﺣﻴﺎﺀ ﺍﻟﻌﺮﺏ
ﺛﻢ ﺗﺮﻛﻪ – ( ﻣﺴﻠﻢ – ১/২৩৭)
ﺍﻧﺲ ﺭﺿـ ﻗﺎﻝ ﻗﻨﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻـ ﺷﻬﺮﺍً
ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻳﺪﻋﻮ ﻋﻠﻲ ﺣﻲ ﻣﻦ ﺍﺣﻴﺎﺀ ﺍﻟﻌﺮﺏ ﺛﻢ ﺗﺮﻛﻪ – ( ﺷﺮﺡ ﻣﻌﺎﻧﻲ ﺍﻻﺛﺎﺭ - ১/১৭৪)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) (ফজরের সালাতে) একমাস কুনুত পড়েছিলেন, তিনি আরবের গোত্র সমূহের একটি গোত্রকে
বদদোয়া করেছেন। অতঃপর কুনুত পড়া #ছেড়ে দেন। তাখরিজ: সহিহ মুসলিম-১/২৩৭, শরহে মা'আনিল
আছার ত্বহাভী-১/১৭৪
হাদিস নং-০৩
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻳَﻘْﻨُﺖُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﺪْﻋُﻮَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ
ﻋَﻠَﻰ ﻗَﻮْﻡٍ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺃَﻥْ ﻳَﺪْﻋُﻮَ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﻮْﻡٍ ﺃَﻭْ ﻳَﺪْﻋُﻮَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ،
ﻗَﻨَﺖَ ﺣِﻴﻦَ ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮَّﻛْﻌَﺔِ ﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻴَﺔِ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ফজরের
নামাযের সময় সর্বদা কুনুত [নাজেলাহ] পড়তেন না। শুধু পড়তেন কোন জাতির জন্য দুআ করতে
বা বদদুআ করার প্রয়োজন হলে।তিনি কুনুত পড়তেন যখন ফজরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতের রুকু
থেকে মাথা উঠাতেন। তাখরিজ: সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১০৯৭, নসবুর রায়াহ, আলমুসনাদুল জামে, আসারুস সুনান-২/২০
নোট: আল্লামা নিমাভী রহঃ বলেন,
এ হাদীসের সনদ সহীহ।
হাদিস নং-০৪
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ
ﻋَﻨْﻪُ : « ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﻢْ ﻳَﻘْﻨُﺖْ ﻓِﻲ
ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﺇِﻟَّﺎ ﺷَﻬْﺮًﺍ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ، ﻟَﻢْ ﻳُﺮَ ﻗَﺒْﻞَ ﺫَﻟِﻚَ، ﻭَﻟَﺎ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ﻳَﺪْﻋُﻮ
ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻧَﺎﺱٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ »
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রা.
থেকে বর্ণিতঃ নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ফজরের
নামাযের সময় কুনুত পড়তেন না, শুধুই একমাস পড়েছিলেন। এর আগে বা পড়ে আর এমনটি করতে দেখা যায়নি।
সে সময় তিনি কিছু মুশরিকদের উপর বদদুআ করতে পড়েছিলেন। তাখরিজ: মুসনাদে আবী হানীফা বিরিওয়াতে হিসকাফী, হাদীস নং-৩৪
প্রশ্ন: গ। তাকবির বলার সময় হাত উঠানো যেটা আমাদের দেশে
উল্টা তাকবীর বলে সেটা আপনি প্রমাণিত করতে পারেননি?
উত্তর: গ। প্রিয় পাঠক! খ নং উত্তরের ১নং হাদিস দেখুন। ফজরের নামাজে কুনুতে মুনাজাত বিদআত
বলেছেন। এই যদি হয় ফজরের কুনুতে মুনাজাত
আর এটার উপর কিয়াস করে বিতরে সময় কুনুতে মুনাজাত কত দুর্বল তা সহজেই অনুমেয়। বিখ্যাত সাহাবি, খাদেমুর রসূল হজরত আনাস লা.
বলেন,
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻧَﺼْﺮُ ﺑْﻦُ ﻋَﻠِﻲٍّ ﺍﻟْﺠَﻬْﻀَﻤِﻲُّ،
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻳَﺰِﻳﺪُ ﺑْﻦُ ﺯُﺭَﻳْﻊٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺳَﻌِﻴﺪُ ﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﺮُﻭﺑَﺔَ، ﻋَﻦْ
ﻗَﺘَﺎﺩَﺓَ، ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲِ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﺃَﻥَّ ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ـ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
ـ ﻛَﺎﻥَ ﻻَ ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻓِﻲ ﺷَﻰْﺀٍ ﻣِﻦْ ﺩُﻋَﺎﺋِﻪِ ﺇِﻻَّ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻻِﺳْﺘِﺴْﻘَﺎﺀِ
ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺮْﻓَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺮَﻯ ﺑَﻴَﺎﺽُ ﺇِﺑْﻄَﻴْﻪِ .
আনাস বিন মালিক (রাঃ)
নবী (ﷺ) ইস্তিসকার সালাত ব্যতিত তাঁর অন্য কোন দুআয়
তাঁর দু’হাত উঠাতেন না (হাত তুলে মোনাজাত
করতেন না)। তিনি ইস্তিসকার সলাতে এতটা উপরে হাত উঠাতেন যে, তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দৃষ্টিগোচর
হতো। তাখরিজ: বুখারী ১০৩১,৩৫৬৫, মুসলিম
৮৯৫/১-২, নাসাঈ ১৫১৩, আহমাদ ১১৭০,
দারিমী ১৫৩৫। সহীহ আবী দাউদ ১০৬২, সুনানে ইবনে
মাজাহ, হাদিস নং ১১৮০, হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
অর্থাৎ,রাসুলুল্লাহ (ﷺ) 'শুধুমাত্র ইস্তিসকার ‘সালাতের মধ্যেই’ মুনাজাত করেছিলেন, বেতেরের
স্বালাতে কখনি মুনাজাত করেননি ।
সুতরাং আমাদের দেশে ফিকহি
হানাফির অনুসারিগণ যে বিতরে সময় মুনাজাত করে না, শুধু কাধ পর্যন্ত হাত উঠায়,
এটাই সুন্নাহ। বিতরে কুনুতে মুনাজাত কিয়াস ভিত্তিক যা খুবই দুর্বল।
শেষ কথা হলো, হাদিসের বাস্তব অর্থ, কোন
হাদিস আম, কোন হাদিস খাস আর কোন হাদিস মুতলাক এ
ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে উম্মত হাদিসের মর্ম
উদ্ধারে অগ্রগামী। যেমন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম
তিরমিজি (রহ.) বলেন, الفقهاء و هم اعلم يعني الحديث অর্থাৎ ফুকাহায়ে কেরাম হাদিসের অর্থ বিষয়ে
অধিক জ্ঞাত। সূত্রঃ জামে তিরমিজি-৩/৩১৫পৃ.
বিখ্যাত ফকিহ ইমাম তহাবী
রাহ. বলেন,
وأما التكبير في القنوت في الوتر
فإنها تكبيرة زائدة في تلك الصلاة وقد أجمع الذين يقنتون قبل الركوع على الرفع
معها.
অর্থাৎ বিতর নামাযে কুনূতের
তাকবীর হল এই নামাযে একটি অতিরিক্ত তাকবীর। যারা রুকুর পূর্বে কুনূত পড়ার কথা
বলেন তাদের ইজমা রয়েছে যে, এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইনও (কাধ পর্যন্ত
হাত উত্তোলন) করতে হবে। তাখরিজ: তহাবী
১/৩৩২
কোন মাজহাবের ফকিহগণকে আমরা
প্রত্যাখ্যান/তাচ্ছিল্য করি না। কিন্তু ফিকহি হানফির উপর আস্তা বেশি রাখি দলিলের
ভিত্তিতে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৫৫:
আসসালামু আলাইকুম, মারার জন্য বাজারে এখন বিভিন্ন
ধরনের ইলেক্ট্রিক ব্যাট/র্যাকেট ও যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়। এখন আমার জানার বিষয় হলো- ইলেক্ট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা
মারা যাবে কি? নাকি এটা জায়েজ নেই? তারিখ: ২৮/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মাহবুবুর রহমান
গোপালগঞ্জ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের দুটি মত পাওয়া যায়।
যেমন,
প্রথম মত: অধিকাংশ আলেমদের মতে, কোনো প্রাণীকে আগুনে পুড়ে মারা/হত্যা করা একমাত্র আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত শাস্তি কোন বান্দার প্রয়োগ
করা জায়েজ নয় এবং কোনো প্রাণীকে পুড়ে হত্যা করা হারাম। দলিল:
عَنْ عِكْرِمَةَ أَنَّ عَلِيًّا
عَلَيْهِ السَّلاَمُ أَحْرَقَ نَاسًا ارْتَدُّوا عَنِ الإِسْلاَمِ فَبَلَغَ ذَلِكَ
ابْنَ عَبَّاسٍ فَقَالَ لَمْ أَكُنْ لأَحْرِقَهُمْ بِالنَّارِ إِنَّ رَسُولَ
اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « لاَ تُعَذِّبُوا بِعَذَابِ اللَّهِ »
হযরত ইকরিমা রা. থেকে বর্ণিত। হযরত আলী রা. একদল মুরতাদকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলেন। এ সংবাদ ইবনে আব্বাস রাঃ এর কাছে পৌঁছলে
তিনি বলেনঃ আমি হলে তাদের আগুন দিয়ে পুড়াতাম না। কারণ, রাসূল
সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ “তোমরা আল্লাহর শাস্তি দিয়ে কাউকে শাস্তি দিও না।
তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-৪৩৫৩, সুনানে
বায়হাকী কুবরা-১৬৬৩৫, সুনানে তিরমিজি-১৪৫৮, সুনানে
দারা কুতনি-৯০
দ্বিতীয় মত: কতিপয় আলেমদের মতে, মতে বৈধ। তাদর যুক্তি হলো,
কারণ ইলেক্ট্রিক ব্যাট দিয়ে সরাসরি মশাকে পুড়িয়ে মারা হয় না। বরং প্রথমে
কারেন্টের শক দিয়ে মারা হয়। তারপর আগুনে পুড়ে।
আর তবে যদি কখনও পরিস্থিতি এমন
হয় যে, কোন কষ্টদায়ক প্রাণীকে আগুন ছাড়া মারার উপায় নাই তাহলে তাকে
আগুন দিয়ে মারাও জায়েজ আছে। তাদের দলিল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ
رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّ نَمْلَةً قَرَصَتْ
نَبِيًّا مِنَ الْأَنْبِيَاءِ، فَأَمَرَ بِقَرْيَةِ النَّمْلِ فَأُحْرِقَتْ،
فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ أَفِي أَنْ قَرَصَتْكَ نَمْلَةٌ، أَهْلَكْتَ أُمَّةً
مِنَ الْأُمَمِ تُسَبِّحُ
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: “কোন এক নবীকে একটি পিঁপড়া কামড়ায়। তখন তার নির্দেশে আগুন দ্বারা
পুরো পিঁপড়ার বস্তিকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তখন আল্লাহ তার প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন: ”তোমাকে তো মাত্র একটা পিঁপড়া কামড়েছিল, অথচ
তুমি এমন একটা জাতীকে ধ্বংস করে দিলে- যারা (আমার) তাসবীহ পাঠ করতো!” তাখরিজ: বুখারি-৩০১৯ কিতাবুল
জিহাদ ওয়াস সায়র; আবু দাউদ-৫২৬৬
এ হাদিস শরিফ থেকে বুঝা যায়, যে প্রাণী মানুষকে কষ্ট দেয় তাকে শাস্তি দেয়া জায়েয
রয়েছে এবং বিশেষ প্রয়োজনে আগুন দিয়ে মারাও জায়েয আছে-যদি তাকে অন্যভাবে হত্যা করা কঠিন
হয়। অন্যথায় আগুন দিয়ে প্রাণী হত্যা করা হারাম।
সারকথা হলো, ইলেক্ট্রিক ব্যাট/র্যাকেট দিয়ে মশা মারার ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রথম মতের উপর রয়েছে। এ কারণে
অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম একে অবৈধ বলেছেন। তাছাড়া যারা আগুন/ইলেক্ট্রিক ব্যাট দিয়ে মারার
কথা বৈধ বলেছেন, তারাও শর্ত করেছে যে, যদি
অন্য উপায়ে মারা/হত্যা করা না যায়। উল্লেখ্য যে, এয়ারসল এবং কয়েলের দ্বারা মশা মারলে তাকে আগুনে পুড়ানো বুঝায় না। অতএব এভাবে
মারতে কোন বাধা নেই। সূত্র:
ফাতাওয়া
লাজনা দায়েমা, ফতওয়া নং-৫১৭৬, উসায়মীন, লিকাউল
বাবিল মাফতূহ ৫৯/১২
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৫৬:
শুকনো গোবর দিয়ে রান্না করা
খাবার খাওয়া জায়েজ কিনা? আমাদের এলাকায় অনেকের মুখে
সোনা যাচ্ছে গোবর দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়া জায়েজ নয়। বিষয়টি কোরআন হাদিসের
আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন। তারিখ: ২৮/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মোঃ সিদ্দিকুর রহমান পলাশবাড়ী
গাইবান্ধা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, সমাজে প্রচলিত সুসংস্কারের মধ্যে একটি হলো গোবর দিয়ে রান্না করা খাবার
খাওয়া জায়েজ নয়।
দ্বিতীয় কথা হলো, আল্লাহ তাআলা হালাল ও পবিত্র
জিনিস খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দলিল:
আয়াত নং-০১
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ
إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার
কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দান করেছি এবং শুকরিয়া
আদায় কর আল্লাহর, যদি তোমরা তাঁরই বন্দেগী কর। সূরা বাকারা-১৭২
আয়াত নং-০২
Surah An-Nahl, Verse 114:
فَكُلُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ
اللَّهُ حَلَالًا طَيِّبًا وَاشْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ
تَعْبُدُونَ
অতএব, আল্লাহ তোমাদেরকে যেসব হালাল ও
পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের
জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তাঁরই এবাদতকারী হয়ে থাক। সূরা নাহল-১১৪
ব্যাখ্যা: গোবর দিয়ে রান্না করলে হারামের
কোন সংমিশ্রণ নেই। সুতরাং তা ১০০% হালাল।
তৃতীয় কথা হলো, গ্রহণকৃত খাদ্য পবিত্র হওয়া
জরুরি, কিন্তু লাকড়ি পবিত্র হওয়া জরুরি নয়। কেননা গোবর লাকড়ি
হিসেবে ব্যবহার হয়।
চতু্র্থ কথা হলো, অনেকে গোবর দিয়ে রান্না করা খাবার
খাওয়া জায়েজ নয়।দলিল হিসেবে এই হাদিস পেশ করে।
عَنْ عَبْدِ الرّحْمَنِ بْنِ
يَزِيدَ، عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ: قِيلَ لَهُ: قَدْ عَلّمَكُمْ نَبِيكُمْ كُلّ
شَيْءٍ حَتى الْخِرَاءَةَ قَالَ: فَقَالَ: أَجَلْ لَقَدْ نَهَانَا أَنْ
نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ لِغَائِطٍ، أَوْ بَوْلٍ، أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ
بِالْيَمِينِ، أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِأَقَلّ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ، أَوْ
أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِرَجِيعٍ أَوْ بِعَظْمٍ.
মুসলিম রাহ. বর্ণনা করেন, আব্দুর
রহমান বিন ইয়াযীদ রাহ. বলেন, সালমান ফারসী রা.-কে বলা হল, তোমাদের
নবী তোমাদের সবকিছু শিক্ষা দিয়েছেন;
এমনকি
শৌচাগার ব্যবহারের পদ্ধতিও! আব্দুর রহমান বিন ইয়াযীদ রাহ. বলেন, সালমান
রা. বললেন, ‘হাঁ, অবশ্যই! তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, আমরা
যেন ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করি,
ইস্তিঞ্জার
সময় তিন পাথরের কম ব্যবহার না করি এবং গোবর বা হাড্ডি দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করি। তাখরিজ:
সহীহ
মুসলিম-২৬২
ব্যাখ্যা: গোবর টিস্যু হিসেবে ব্যবহার
না করার কারণ হলো, গোবরের
জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া এটা জিনদের খাদ্য এ কারণে নিষেধ করেছেন।
যেমন অন্য হাদিসে এসেছে-
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّهُ
كَانَ يَحْمِلُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِدَاوَةً لِوَضُوئِهِ
وَحَاجَتِهِ فَبَيْنَمَا هُوَ يَتْبَعُهُ بِهَا فَقَالَ مَنْ هَذَا فَقَالَ أَنَا
أَبُوْ هُرَيْرَةَ فَقَالَ ابْغِنِيْ أَحْجَارًا أَسْتَنْفِضْ بِهَا وَلَا
تَأْتِنِيْ بِعَظْمٍ وَلَا بِرَوْثَةٍ فَأَتَيْتُهُ بِأَحْجَارٍ أَحْمِلُهَا فِيْ
طَرَفِ ثَوْبِيْ حَتَّى وَضَعْتُهَا إِلَى جَنْبِهِ ثُمَّ انْصَرَفْتُ حَتَّى
إِذَا فَرَغَ مَشَيْتُ فَقُلْتُ مَا بَالُ الْعَظْمِ وَالرَّوْثَةِ قَالَ هُمَا
مِنْ طَعَامِ الْجِنِّ وَإِنَّهُ أَتَانِيْ وَفْدُ جِنِّ نَصِيْبِيْنَ وَنِعْمَ
الْجِنُّ فَسَأَلُونِي الزَّادَ فَدَعَوْتُ اللهَ لَهُمْ أَنْ لَا يَمُرُّوْا
بِعَظْمٍ وَلَا بِرَوْثَةٍ إِلَّا وَجَدُوْا عَلَيْهَا طَعَامًا
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত যে, তিনি নবী (ﷺ)-এর
উযু ও ইস্তিন্জার ব্যবহারের জন্য পানি ভর্তি একটি পাত্র নিয়ে পিছনে পিছনে
যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তিনি তাকিয়ে বললেন, কে? আমি
বললাম, আমি আবূ হুরাইরাহ। তিনি বললেন, আমাকে
কয়েকটি পাথর তালাশ করে দাও। আমি তা দিয়ে ইস্তিন্জা করব। তবে, হাড় এবং গোবর আনবে না। আমি
আমার কাপড়ের কিনারায় কয়েকটি পাথর এনে তাঁর কাছে রেখে দিলাম এবং আমি সেখান থেকে
কিছুটা দূরে গেলাম। তিনি যখন ইস্তিন্জা হতে বেরোলেন, তখন আমি
এগিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হাড় ও গোবর এর ব্যাপার কী?
তিনি বললেন, এগুলো জ্বিনের খাবার। আমার কাছে
নাসীবীন নামের জায়গা হতে জ্বিনের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা ভাল জ্বিন ছিল।
তারা আমার কাছে খাদ্যদ্রব্যের আবেদন জানাল। তখন আমি আল্লাহর নিকট দু‘আ করলাম যে, যখন কোন হাড্ডি বা গোবর তারা লাভ করে
তখন তারা যেন তাতে খাদ্য পায়। তাখরিজ: বুখারি-৩৮৬০
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায়
ইবনুত্তীম বলেন- আল্লাহ হাড্ডি বা গোবরকে জ্বীনদের খাবারে পরিণত করেন। অথবা তা থেকে
খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করান। সূত্র- ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড ২১৯ পৃষ্ঠা
সারকথা কথা হলো, গোবর আগুনে পুরানো দ্বারা তার বৈশিষ্ট্য
ও গুনাবলী সব পরিবর্তন হয়ে যায়। সুতরাং গোবরের লাকরী দ্বারা খানা পাকানো বা খাবার
রান্না করা জায়েজ এবং উক্ত খানা ভক্ষন করাও জায়েজ। সূত্র: ফতুয়ায়ে
হক্বানিয়্যা ২/৫৮৮, দুররে
মুখতার ১/৩৩২, রদ্দুল মুহতার ৫/৫৮, ইমদাদুল
ফাতওয়া ১/৭৮, ফতওয়ায়ায়ে রহিমিয়া ৪/২৫৭, ফতওয়ায়ে
দারুল উলুম দেওবন্দ ১/১৭৩
আর গোবর দিয়ে রান্না করা খাবার
খাওয়া জায়েজ নয়। এধরণের আকিদা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ
تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ وَاللَّهُ
غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থ: হে নবী, আল্লাহ
আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার
জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল,
দয়াময়।
তাহরিম-০১
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৫৭:
আসসালামু আলাইকুম। আমার জানার
বিষয় হলো মসজিদে হিন্দু লেখকদের বা মুসলমানদের
উপন্যাস জাতীয় কোন বই রাখা যাবে কি না? তারিখ: ২১/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শরিফুল ইসলাম খাগড়াছড়ি
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হিন্দু লেখকের বই যদি শিক্ষাণীয়/ভাল/উপকারি/গিরিশ চন্দ্রের
অনুবাদকৃত বাংলা কুরআন শরিফ হয়, তাহলে মসজিদ লাইব্রেরিতে রাখতে দোষ নেই। আর যদি কুফর/শিরক/বাতিল আকিদা সংক্রান্ত হয়, তাহলে থা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ বাতিল আকিদা/কুফর-শিরক হাকিকতান (প্রকৃত)
অপবিত্র। দলিল:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ
عَامِهِمْ هَٰذَا وَإِنْ خِفْتُمْ عَيْلَةً فَسَوْفَ يُغْنِيكُمُ اللَّهُ مِن
فَضْلِهِ إِن شَاءَ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র।
সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল-হারামের নিকট না আসে। আর যদি তোমরা দারিদ্রে?
আশংকা কর, তবে আল্লাহ চাইলে নিজ করুনায় ভবিষ্যতে
তোমাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
সূরা তওবা -২৮
তাফসির: কোন কোন মুফাসসির বলেন,
কাফেরগণ ব্যহ্যিক ও আত্মিক সর্ব দিক থেকেই অপবিত্র। কুরতুবী;
ফাতহুল কাদীর তবে অধিকাংশ মুফাসসির বলেন, এখানে
নাপাক বলতে তাদের দেহ সত্তা বুঝানো হয়নি, বরং দ্বীনী
বিষয়াদিতে তাদের অপবিত্রতা বোঝানো হয়েছে। সে হিসেবে এর অর্থ, তাদের আকীদাহ-বিশ্বাস, আখলাক-চরিত্র, আমল ও কাজ, তাদের জীবন — এসবই
নাপাক। সূত্র: ইবন কাসীর অবলম্বনে
দ্বিতীয় কথা হলো, মুসলমানদের উপন্যাস জাতীয় বই যা দ্বীনের চেতনা জোগায়, তা
রাখতে সমস্যা নেই। তবে প্রেম কাহিনীযুক্ত উপন্যাস
মসজিদ লাইব্রেরিতে না ঠিক হবে না। আমার জানামতে, প্রেম
কাহিনী ছাড়া কোন উপন্যাস নেই। (দামেস্কের কারাগারে, ইরান দুহিতা, লৌহ মানব ইত্যাদি)
পরামর্শ : এ জাতীয় বই মসজিদ লাইব্রেরিতে
না রেখে ইউনিট লাইব্রেরিতে স্থান্তারিত করা যেতে পারে।
শেষ কথা হলো, যদি মসজিদ লাইব্রেরিতে রাখতেই
হয়, সরবাবস্থায় খেয়াল রাখতে হবে। কিতাবের (মলাটের,পেজ কভারের ) ছবি
মসজিদে দৃশ্যমান না থাকে। কেননা ছবিযুক্ত/ ছবিওয়ালা ঘরে/মসজিদে নামাজ আদায় করা মাকরুহে তাহরিমি। সূত্র: ইমদাদুল
ফাতওয়া, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১৬৭ ;
ফতোয়ায়ে শামী, ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা
: ৫২০
দলিল:
হাদিস নং-০১
عَنْ أَبِي طَلْحَةَ ـ رضى الله
عنهم ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ (ﷺ) " لاَ تَدْخُلُ الْمَلاَئِكَةُ
بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيرُ - رواه البخارى
আবু তলহা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবি (ﷺ) বলেছেন, ফিরিশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না,
যে ঘরে কুকুর থাকে এবং ঐ ঘরেও না, যে ঘরে ছবি থাকে।
বুখারি-৫৯৪৯ কিতাবুল লিবাস; মুসলিম-২১০৬; মিশকাত-৪২৯০
হাদিস নং-০২
«أَنَّهَا اشْتَرَتْ نُمْرُقَةً فِيهَا تَصَاوِيرُ،
فَلَمَّا رَآهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ عَلَى
البَابِ فَلَمْ يَدْخُلْ، فَعَرَفَتْ فِي وَجْهِهِ الكَرَاهِيَةَ، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَتُوبُ إِلَى اللَّهِ وَإِلَى
رَسُولِهِ، مَاذَا أَذْنَبْتُ؟ قَالَ: «مَا بَالُ هَذِهِ النُّمْرُقَةِ» فَقَالَتْ:
اشْتَرَيْتُهَا لِتَقْعُدَ
عَلَيْهَا وَتَوَسَّدَهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: " إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ
الصُّوَرِ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَيُقَالُ لَهُمْ: أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ " وَقَالَ: «إِنَّ البَيْتَ الَّذِي فِيهِ الصُّوَرُ لاَ تَدْخُلُهُ
المَلاَئِكَةُ»
“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা একটি ছোট বালিশ ক্রয় করেছিলেন। তাতে ছবি আঁকা ছিল। ঘরে প্রবেশের সময় রাসূল
(ﷺ)এর দৃষ্টি এতে পতিত হলে তিনি আর ঘরে প্রবেশ করলেন না।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর মুখমণ্ডল দেখেই তা বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন: আমি আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের নিকট তাওবা করছি। আমি কি গোনাহ করেছি? রাসূল (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন: এ ছোট বালিশটি কোথায় পেলে? তিনি বললেন: আমি এটা এ জন্য খরিদ
করেছি যাতে আপনি এতে হেলান দিয়ে বিশ্রাম করতে পারেন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন: যারা এ সমস্ত ছবি অংকন করেছে কিয়ামতের মাঠে তাদেরকে ‘আযাব দেওয়া হবে। তাদের বলা হবে:
তোমরা যাদের সৃষ্টি করেছিলে তাদের জীবিত কর। অতঃপর তিনি বললেন: যে ঘরে ছবি আছে সে ঘরে
ফিরিশতাগণ প্রবেশ করেন না।” বুখারী-৫৯৬১
হাদিস নং-০৩
عن انس رضى الله تعالى عنه قال
كان قر ام لعائشة سترت به جانب بيتها , فقال النبى صلى الله عليه وسلم اميطى عنى لا تزال تصاوير. تعرض لى فى صلاتى.
অর্থঃ হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত| তিনি বলেন, হযরত আয়িশা উনার একখানা (প্রাণীর ছবিযুক্ত)
পর্দা ছিল, যা তিনি উনার ঘরের এক পাশে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন|
হুযূর (ﷺ) উনাকে
বললেন, “হে আয়িশা পর্দাটি
আমার থেকে দূরে সরিয়ে নাও| কারণ এর ছবিগুলো নামাযে আমার দৃষ্টি
ও মন আকৃষ্ট করে|”
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৫৮:
আস্সালামু আলাইকুম, আমার জানার বিষয় হলোঃ বাজারে যে পারফিউম বিক্রি হয় তা ব্যবহার
সম্পর্কে শরীয়তের দৃষ্টি কী?
তারিখ: ২৯/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আনোয়ারুল আম্বিয়া যশোর
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর মুহতারাম ভাইকে জাযাকাল্লাহু খয়র। কেননা তিনি
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সুওয়াল করেছেন।
প্রথম কথা হলো, সুগন্ধি হলো, প্রিয় নবিজি (ﷺ)
এর প্রিয় বস্তু। যেমন,
حُبِّبَ إليَّ من دُنْياكمُ
النِّساءُ والطِّيبُ وجُعِلَت قُرَّةُ عَيني في الصَّلاةِ
الراوي : أنس بن مالك | المحدث :
ابن الملقن | المصدر : البدر المنير | الصفحة أو الرقم : 1/501 | خلاصة حكم المحدث
: إسناده صحيح | التخريج : أخرجه النسائي (3939)، وأحمد (14069) باختلاف يسير،
والبيهقي (13836) واللفظ له
অর্থাৎ আনাস (রা.)-এর অন্য
বর্ণনায় রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘তোমার পৃথিবীর সুগন্ধি আমার
কাছে প্রিয় করা হয়েছে এবং নামাজের ভেতর আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে। ’ তাখরিজ: নাসাঈ, হাদিস নং :
৩৯৩৯; আহমদ-১৩৮৩৬
দ্বিতীয় কথা হলো, যে পারফিউম এর অ্যালকোহল এর
পরিমাণ বেশি থাকে, যা নেশার উদ্রেক করে , তা সর্বসম্মতভাবে হারাম। যেমন,
وفي فتاوى اللجنة الدائمة ( برئاسة الشيخ ابن باز ) : " العطور
المشتملة على نسبة من الكحول يسكر كثيرها ، في
نجاستها خلاف بين العلماء ، مبني على نجاسة الخمر وطهارتها ، فمن حكم على الخمر
بالنجاسة ، أثبت لهذه العطور النجاسة ، ومن قال بطهارة الخمر ، قال: إن هذه العطور طاهرة .
وبكلِّ حال ، فلا يجوز استعمال
العطور التي فيها كحول ، سواء قلنا بنجاسة الخمر أو طهارتها ؛ لوجوب إتلاف الخمر ،
وعدم الاستفادة منها ، والعطور التي فيها كحول يسكر كثيرها : حكمها حكم الخمر " انتهى من "فتاوى اللجنة الدائمة" (22/144).
وجاء في " فتاوى اللجنة الدائمة " أيضاً :
" إذا كانت نسبة
الكحول بالعطور بلغت درجة الإسكار ، بشرب الكثير من تلك العطور ، فالشرب من تلك
العطور محرم ، والاتجار فيها محرم ، وكذا سائر أنواع الانتفاع ؛ لأنه خمر ، سواء
كثر أم قل .
অর্থাৎ সৌদি স্থায়ী কমিটির ফতোয়ায়
(শেখ ইবনে বাজের নেতৃত্বে): যে পারফিউমগুলিতে শতকরা একভাগ অ্যালকোহল থাকে, যার বেশিরভাগই নেশা করে। ওয়াইনের
অপবিত্রতা এবং এর বিশুদ্ধতা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যে মদকে অপবিত্র বলে
বিচার করে, সে প্রমাণ করে যে এই সুগন্ধিগুলি অপবিত্র,
এবং যে বলে যে মদ খাঁটি, সে বলে: এই সুগন্ধিগুলি
খাঁটি।
আমরা যে মদকে নাপাক বা বিশুদ্ধ
বলি তা যাই হোক না কেন, অ্যালকোহলযুক্ত পারফিউম ব্যবহার করা জায়েজ নয়। আরও বলা হয়েছে: যদি অ্যালকোহল
এবং সুগন্ধির অনুপাত নেশার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এই পারফিউমগুলি, তাই এই সুগন্ধিগুলি থেকে পান করা হারাম, এবং সেগুলিতে
ব্যবসা করা হারাম, সেইসাথে সব ধরণের ব্যবহার; কারণ এটা ওয়াইন, সেটা কম হোক বা কম হোক। সূত্র:
ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ (22/144) থেকে শেষ
উদ্ধৃতি।
আর যদি নেশার স্তরে না পৌঁছে, তাহলে জায়েজ। যেমন,
وإن لم يبلغ المخلوط من العطور
بالكحول درجة الإسكار بشرب الكثير منه : جاز استعماله والاتجار فيه " انتهى من "فتاوى اللجنة الدائمة" (13/54
সুগন্ধি ও অ্যালকোহলের মিশ্রণ
যদি প্রচুর পরিমাণে পান করে নেশার স্তরে না পৌঁছায়, তবে তা ব্যবহার করা এবং ব্যবসা
করা বৈধ। . সূত্র: ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ -১৩/৫৪
প্রশ্ন: ক। আমাদের দেশে বা প্রচলিত বডি
স্প্রে, সেন্ট কি অ্যালকোহলযুক্ত?
উত্তর: ক। আর এখনকার সেন্ট বা বডি
স্প্রেগুলোতে সাধারণত আঙুর, খেজুর বা কিসমিস থেকে
প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল থাকে না; বরং বিভিন্ন শস্যদানা,
গাছপালার ছাল, ভাত, মধু,
শস্য, যব, আনারসের রস,
গন্ধক ও সালফেট, অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান
ইত্যাদি থেকে প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল মেশানো হয়। সূত্র: এনসাইক্লোপিডিয়া
অব ব্রিটানিকা: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৪৪- প্রকাশকাল ১৯৫০
এ বিষয়ে ফিকহি হানাফির
ফাতওয়া হলো,
যেসব অ্যালকোহল খেজুর বা
আঙ্গুর দ্বারা তৈরি করা হয়নি, সেগুলো মৌলিকভাবে নাপাক নয় এবং যতটুকু ব্যবহারে নেশার উদ্রেক
হয় না ততটুকু ব্যবহার জায়েজ। এটি ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এবং ইমাম আবু
ইউসুফের (রহ.) মতানুসারে। সূত্র: ফাতহুল ক্বদীর-৮/১৬০, তানভীরুল আবসার মা'আত দুররিল মুখতার ২/২৫৯
প্রশ্ন: খ। বর্তমান যুগের অ্যালকোহল সম্পর্কে সাম্প্রতিক আলেমদের গবেষণা
কি?
উত্তর: খ। বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম
আলেমেদ্বীন বিচারপতি আল্লামা মুফতি তাকি
উসমানি দা.বা. সহ বেশ কিছু আলেমদের
স্বতন্ত্র গবেষণাতেও দেখা গেছে যে, বর্তমানে বেশিরভাগ
অ্যালকোহল আঙ্গুর ও খেজুর থেকে তৈরি হয় না।
সুতরাং এসব বৈধ উদ্দেশ্যে
ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। তদ্রুপ ওষুধ তৈরিতে বা চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা যাবে।
অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যাবে। সূত্র: তাকমিলাতু
ফাতহিল মুলহিম ১/৩৪৮,৩/৩৩৭; ফিকহুল
বুয়ূ ১/২৯৮
সারকথা হলো,
أن الذي عليه فتوى كثير من
العلماء : أن الحكم في استعمال هذه العطور
يتوقف على نسبة الكحول الموجودة فيها ، فإن كانت نسبة كثيرة تؤثر فيها، فلا يجوز
استعمالها ، وأما إن كانت نسبة ضئيلة ، لا يظهر لها أثر فيها ، فيجوز استعمالها في هذه الحال .
অ্থাৎ এই পারফিউমগুলির ব্যবহার
সংক্রান্ত হুকুম তাদের মধ্যে কত শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে তার উপর নির্ভর করে। সূত্র: আলইসলামু সুওয়ালু ও জওয়াব-২২১৭৫৫(প্রশ্নং)
বর্তমান পারফিউম বা সেন্ট বা
বডি স্প্রেগুলোতে মদের উপাদান থেকে তৈরি নয়, সুতরাং তা ব্যবহার জায়েজ। আর কেহ যদি ব্যবহার
না করে, সেটা তার জন্য অধিক তাকওয়া।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৬০:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ, বিজ্ঞজনদের নিকট জানার বিষয়
হলো, দেনমোহরের টাকার পরিবর্তে স্বামী
তার স্ত্রীকে ২ শতক জমি লিখে দিতে চায় যার মূল্য ধার্যকৃত মোহরের চেয়ে কিছু কম, কিন্তু স্বামী এই জমির দাম ধার্যকৃত মোহরের সমপরিমাণ দাম ধরে
দিচ্ছে এবং স্ত্রীও এতে রাজি আছে। এমতাবস্থায় মোহর আদায় হবে কিনা?? জানালে উপকৃত হতাম। তারিখ: ৩০/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শফিউল ইসলাম
সিরাজগঞ্জ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ইসলামে
মোহরের গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম এবং বিয়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না।
আকদের সময় উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেওয়ার
শর্ত করলেও মোহর বাতিল হয় না। মোহর সম্পূর্ণরূপে
নারীর প্রাপ্য। মোহর আদায় করা ফরয। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন।
যেমন,
আয়াত নং-০১
Surah An-Nisa, Verse 4:
وَآتُوا النِّسَاءَ
صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ا
অর্থ: আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর
দিয়ে দাও খুশীমনে। সূরা নিসা -০৪
আয়াত নং-০২
أَن تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُم
مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ
فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم
بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
অর্থ: উল্লিখিত নারীরা ছাড়া অন্যদেরকে
তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে,
যে স্বীয়
সম্পদ দ্বারা প্রয়াসী হবে তাদের সাথে বিবাহবন্ধনে, ব্যভিচারে
নয়। অতএব তাদের নিকট থেকে তোমরা যে আনন্দ উপভোগ করেছ (সে কারণে) তাদের ধার্যকৃত মোহর
তাদেরকে প্রদান করবে। আর মোহর নির্ধারিত থাকার পরও কোনো বিষয়ে পরস্পর সম্মত হলে তাতে
তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
সূরা নিসা- ২৪
দ্বিতীয় কথা হলো, মোহর এমন কিছু হতে হবে, যা শরীয়তের
দৃষ্টিতে ‘মাল’ (সম্পদ) বলে গণ্য। এ বিষয়ে আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-২৭১ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। নিম্নে লিংকটি শেয়ার করা হলো:
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/09/blog-post_27.html
তৃতীয় কথা হলো, স্ত্রী
যদি সন্তুষ্টচিত্তে (প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে চাপ ব্যতিত)
নিজ মহরানা ছেড়ে দেয়, তাহলে সেটা স্বামীর জন্য বৈধ। দলিল:
Surah An-Nisa, Verse 4:
وَآتُوا النِّسَاءَ
صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا
فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
অর্থ: আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর
দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে
তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। সূরা নিসা -০৪
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত; দেনমোহরের টাকার পরিবর্তে স্বামী তার স্ত্রীকে
২ শতক জমি লিখে দিতে চায় যার মূল্য ধার্যকৃত মোহরের চেয়ে কিছু কম, কিন্তু স্বামী এই জমির দাম ধার্যকৃত মোহরের সমপরিমাণ দাম ধরে
দিচ্ছে এবং স্ত্রীও এতে রাজি আছে। সুতরাং এমতাবস্থায়
মোহর আদায় হবে,
অসুবিধা নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৬১:
আসসালামু আলাইকুম, মুহতারাম! অজুতে মাথা মাসেহ করার সাথে কান ও ঘাড় মাসেহ করার বিধান? ঘাড় মাসেহ করা কি বিদআত? দলীল সহ জানতে চাই। তারিখ: ০১/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক মাওলানা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/11/blog-post_57.html
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
প্রশ্ন-১৬৮: আসসালামু আলাইকুম, হজরত অজুতে মাথা মাসেহ করার
সাথে কান ও ঘাড় মাসেহ করার বিধান দলীল সহ জানতে চাই।
মাওলানা সাইফুল ইসলাম, ত্রিশাল, মোমেনশাহী
থেকে---
উত্তর: ওয়ালাইকুমুস সালাম
ওয়া রহমাতুল্লাহ ও বারাকাতুহ। আল্লাহ তাআলা আপনাকে নিরাপদে ও শান্তিতে রাখুন। তাসলিমবাদ কথা হলো, এ বিষয়ে আইম্মায়ে মুজতাহিদগণের
মতভেদ রয়েছে।
প্রশ্ন: ক। কান মাসেহ করা বিধান।
উত্তর: ক। প্রথম কথা হলো, আমাদের কিছু ভাই কোন দালায়িল
যদি বুখারি ও মুসলিমে না থাকে, তখন ঐ হাদিস বা দলীল
মানতে চান না। তাদের কাছে প্রশ্ন, বুখারি-মুসলিমের হাদিসে যে সহিহ/এটাই মানতে হবে এ বিষয়ে কোন নস আছে কি? একমাত্র সহিহ
হাদিসই শরিয়তের দলীল, এ বিষয়ে কোন নস আছে কি? (তাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত সময় দেওয়া হলো)
দ্বিতীয় কথা হলো, অযুতে কান মাসেহ
করা সুন্নত। মাথা মাসেহর পর ভেজা হাত দিয়ে কান মাসেহ করে নিবে। এজন্য নতুন পানি
নিবে না।
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ
أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِدْرِيسَ، عَنِ ابْنِ عَجْلاَنَ،
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ،
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ مَسَحَ أُذُنَيْهِ دَاخِلَهُمَا
بِالسَّبَّابَتَيْنِ وَخَالَفَ إِبْهَامَيْهِ إِلَى ظَاهِرِ أُذُنَيْهِ فَمَسَحَ
ظَاهِرَهُمَا وَبَاطِنَهُمَا .
অর্থ: বকর ইবন আবু শায়বা (র)..........ইবন 'আব্বাস
(রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উভয় কান মাসেহ করেন। তিনি তাঁর শাহাদাত আঙ্গুলীদ্বয় দুই কানের
ছিদ্রপথে প্রবেশ করান এবং তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় কানের বাইরের অংশে রাখেন। এভাবে তিনি
দুই কানের ভেতর ও বাহির উভয় অংশ মাসেহ করেন। তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজাহ-৪৩৯
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ
أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ
بْنِ عَقِيلٍ، عَنِ الرُّبَيِّعِ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ
تَوَضَّأَ فَمَسَحَ ظَاهِرَ أُذُنَيْهِ وَبَاطِنَهُمَا .
অর্থ: আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা (র) …... রবী' (রা)
থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) উযূ
করেন এবং তিনি তাঁর উভয় কানের ভেতর ও বাইরের অংশ মাসেহ করেন। তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজাহ-৪৪০
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক হাসান)
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ
عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، حَدَّثَنَا حَرِيزُ بْنُ عُثْمَانَ، عَنْ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ بْنِ مَيْسَرَةَ، عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ، أَنَّ
رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ تَوَضَّأَ فَمَسَحَ بِرَأْسِهِ
وَأُذُنَيْهِ ظَاهِرَهُمَا وَبَاطِنَهُمَا .
হিশাম ইবন 'আম্মার (র)......... মিকদাম ইবন
মা'দি কারিব (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উযূ করেন। এবং তাঁর মাথা মাসেহ করেন, আর তাঁর উভয় কানের ভেতর ও বাইরের
অংশ মাসেহ করেন। তাখরিজ: সুনানে ইবনে মাজাহ-৪৪২
তাহকীক: বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
হাদিস নং-০৪
রুবাইয়ি বিনতে মুয়াওয়িয
রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অযু করতে দেখেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাথার সম্মুখ
ভাগ ও পিছন ভাগ এবং মাথার উভয় পার্শ্ব ও কান একবার মাসেহ করেছেন। তাখরিজ: জামে তিরমিযী ১/৭
তাহকীক: ইমাম তিরমিযী রাহ.
হাদীসটিকে হাসানুন সহীহ বলেছেন।
তৃতীয় কথা হলো, শরীয়তের বিধান অনুযায়ী অযুর ভিতর কানের লতির বাহ্যিক অংশের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌছানো ফরজ।
সূরা মায়েদার ০৬ নং আয়াতে
যে মুখ মণ্ডল ধোয়ার কথা বলা হয়েছে। মুখমন্ডলের সীমানা হলো, কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত পানি
পৌঁছানো। একবার ধোয়া ফরয, তিন বার ধোয়া সুন্নাত।
সূত্র: ইমদাদুল আহকাম ১/৩৬৬
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
অর্থ : “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা
সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখ
মন্ডল ও দুই হাত কনুই সহ ধৌত করবে, এবং তোমাদের মাথা
মাসেহ করবে, আর দুই পা গোড়ালীসহ ধৌত করবে।” সূরা মায়িদা-৬
প্রশ্ন: খ। ঘাড়/গর্দান মাসেহ করার বিধান।
উত্তর: খ। এ বিষয়ে আইম্মায়ে মুজতাহিদগণের মতভেদ রয়েছে।
لهذا لم يستحب مالك والشافعي
وأحمد في ظاهر مذهبهم ، ومن استحبه فاعتمد فيه على أثر يروى عن أبي هريرة رضي الله
عنه ، أو حديث يضعف نقله : أنه مسح رأسه حتى بلغ القَذَال . ومثل ذلك لا يصلح عمدة
، ولا يعارض ما دلت عليه الأحاديث ، ومن ترك مسح العنق فوضوءه صحيح باتفاق العلماء
" انتهى .
"مجموع الفتاوى" (21/127
ফুকাহায়ে আহনাফের মতে, ওযুতে ঘাড় মাসাহ করা
মুস্তাহাব। বাকি তিন ইমামের মতে মুস্তাহাব নয়। সুতরাং কেউ ওজুতে ঘাড় মাসেহ ছেড়ে
দিলে ওজু সহিহ হবে। সূত্র: মাজমুউল ফাতওয়া-২১/১২৭
কিন্তু সম্প্রতি সময়ে কিছু ভাই
এটাকে বিদআত বলে প্রচার করে মুসলিম সমাজে ফেতনা ছড়াচ্ছেন।
ফুকাহায়ে আহনাফের দলীল:
হাদিস নং-০১
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ
مَعْدِيكَرِبَ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَوَضَّأَ
فَلَمَّا بَلَغَ مَسْحَ رَأْسِهِ وَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى مُقَدَّمِ رَأْسِهِ
فَأَمَرَّهُمَا حَتَّى بَلَغَ الْقَفَا ثُمَّ رَدَّهُمَا إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي
بَدَأَ مِنْهُ
অর্থাৎ মিকদাদ ইবনু
মাদীকারাব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে উযু করতে দেখেছি। উযু করতে করতে যখন মাথা
মাসেহ্ পর্যন্ত পৌছান, তখন তিনি এভাবে মাথা মাসেহ্ করেন যে, উভয় হাতের
তালু মাথার সামনের অংশে স্থাপন করে তা ক্রমান্বয়ে মাথায় পশ্চাদভাগ ( ঘাড়ের
সংযোগস্থান) পর্যন্ত নেন। অতঃপর তিনি পেছনের দিক হতে সামনের দিকে তা শুরুর স্থানে
ফিরিয়ে আনেন। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ হাদিস-১২২
নোট:
الحديث : ( أنه صلى الله عليه
وسلم مسح رأسه حتى بلغ الْقَذَالَ ، وَهُوَ أَوَّلُ الْقَفَا ) . رواه أبو داود
(132) وضعفه الألباني في ضعيف أبي داود .
অর্থাৎ আলবানি হাদিসটির
সনদকে জয়িফ বলেছেন।
হাদিস নং-০২
عن نافع عن ابن عمر أن النبي صلى الله عليه وسلم قال
من توضأ ومسح بيديه على عنقه وقي الغل يوم القيامة
অর্থ: নাফে হযরত ইবনে উমর
রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ)
ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অজু করে এবং উভয় হাত দিয়ে গর্দান মাসাহ করে, তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন [আযাবের] বেড়ি থেকে বাঁচানো হবে।
সূত্রঃ- নাইলুল আওওতার খ: ১ পৃষ্টা: ২০৬
নোটা:
ইমাম
আবুল হাসান ফারেছ রহ. বলেন-
هَذَا إنْ شَاءَ اللَّهُ حَدِيثٌ
صَحِيحٌ
অর্থাৎ ইনশাআল্লাহ হাদীসটি সহীহ। সূত্রঃ- নাইলুল আওতার ১ম খণ্ড; ২০৬ পৃ.
এবং আলবানি (রহ.) এই
হাদিসটিকে মাওজু বলেছেন।
হাদিস নং-০৩
ﻋﻦ ﻣﻮﺳﻰ ﺑﻦ ﻃﻠﺤﺔ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﻣﺴﺢ ﻗﻔﺎﻩ ﻣﻊ ﺭﺃﺳﻪ ﻭﻗﻲ ﺍﻟﻐﻞ
ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ
অর্থাৎ মুসা ইবনে তালহা থেকে
বর্ণিত, যে
ব্যক্তি মাথার সাথে গর্দানকেও মাসেহ করবে, ক্বিয়ামতের
দিন জান্নামের বেড়ী পড়ানো থেকে তাকে মুক্ত রাখা হবে।
সূত্র: তালখীসুল হাবীর খ:১ পৃ: ১৬২ নাইলুল আওতার খ: ১ পৃষ্টা: ২০৩
তাহকীক: হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ
বলেন,
فيحتمل أن يقال هذا وإن كان
موقوفا فله حكم الرفع لان هذا لا يقال من قبل الرأي فهو على هذا مرسل
অর্থাৎ বর্ণনাটি সম্পর্কে একথা
বলা যায় যে, যদিও তা মাওকুফ (একজন তাবেয়ীর কথা) হিসেবে পাওয়া
যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা মারফুউ (রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদীস) হিসাবে গণ্য হবে। কেননা, তিনি
ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এমন সংবাদ দেওয়া সম্ভব নয়। সূত্র:
তালখীসুল হাবীর খ:১ পৃ: ১৬২ নাইলুল আওতার খ: ১ পৃষ্টা:২০৩
হাদিস নং-০৪
عَنْ طَلْحَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ
جَدِّهِ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ
فَمَسَحَ رَأْسَهُ هَكَذَا وَأَمَرَّ حَفْصٌ بِيَدَيْهِ عَلَى رَأْسِهِ حَتَّى
مَسَحَ قَفَاهُ
অর্থ: হযরত তালহা তিনি তার পিতা, তিনি
তার দাদারসূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন,
আমি
নবীজী (ﷺ)কে দেখেছি, তিনি
অজু করছেন। তখন তিনি এভাবে মাথা মাসাহ করেছেন। উভয় হাতকে জমা করে পাস কাটিয়ে তা দিয়ে
গর্দান মাসাহ করতেন। তাখরিজ: মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা খ: ১ পৃ: ২৯১ হাদীস: ১৫০
হাদিস নং-০৫
عَنْ كَعْبَ بْنَ عَمْرٍو قَالَ
رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ فَمَسَحَ بَاطِنَ
لِحْيَتِهِ وَقَفَاهُ
অর্থ: হযরত কা‘ব বিন আমর রা. বলেছেন,
আমি
নবী করীম (ﷺ) কে দেখেছি তিনি
ওযূ করলেন, এরপর তিনি তার দাঁড়ির অভ্যন্তরভাগ এবং ঘাড় মাসাহ
করলেন।
সূত্র: মু’জামে কাবীর (তবরানী) হাদিস: ৪১২
আসার নং-০১
عن مجاهد عَنِ ابْنِ عُمَرَ
أَنَّهُ كَانَ إِذَا مَسَحَ رَأْسَهُ مَسَحَ قَفَاهُ مَعَ رَأْسِهِ
হজরত মুজাহিদ হতে বর্ণিত। হযরত
ইবনে উমর রাঃ যখনি মাথা মাসাহ করতেন, তখন মাথা মাসাহের সাথে গর্দানও
মাসাহ করতেন। তাখরিজ: সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী হাদীস নং-২৭৯
গ। একটি প্রশ্ন :
অনেকে ভাইয়েরা বিশেষ করে আহলে হাদিস ভাইয়েরা বলে, উপরোক্ত
গুলো যেহেতু জয়িফ সুতরাং এর উপর আমল করা যাবে না; বরং
বিদআত।
গ। তার উত্তর:
প্রথম কথা হলো, বিদআত বলা হয়, যে আমল/ইবাদতের অস্তিত্ত্ব খয়রুল কুরুনে নেই। আমরা ঘাড় মাসেহ করার ব্যাপরে উপরে একাধিক সহিহ
হাদিস এবং একটি আসার উল্লেখ করলাম, তারপরও বিদআত কিভাবে হয়।
এটা একটি সুপ্রসিদ্ধ মত যে, জয়িফ হাদিস আমল করা
জায়েজ। এসম্পর্কে খোদ আল্লামা নববী রহ. বলেন,
ويجوز عند أهل الحديث وغيرهم التساهل
في الأسانيد ورواية ما سوى الموضوع من الضعيف والعمل به من غير بيان ضعفه في غير
صفات الله تعالى والأحكام
অর্থাৎ হাদীস বিশারদকারীদের
নিকট যঈফ সনদ সমূহে শিথিলতা করা এবং জাল ছাড়া দুর্বল হাদীসের দুর্বলতা উল্লেখ করা
ব্যতীত বর্ণনা করা জায়েয। আর তার উপর আমল করা বৈধ। যখন তা আহকাম এবং আল্লাহ
তায়ালার ছিফাতের ব্যাপারে না হয়। সূত্র: তাদরীবুর রাবী পৃষ্ঠা ৩৫০
এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেন,
“হালাল-হারামের বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে
থাকি। তবে ফজিলতের ক্ষেত্রে নমনীয়তা অবল্বমন করি।”
শুধু তাই নয় তাদের কিতাবেও জায়েজ
বলে উল্লেখ আছে,
حدیث ضعیف سے جو موضوع نہ ہو
استحباب و جواز ثابت ہوتا ہے
অর্থাৎ যেটা জাল নয় এমন যয়ীফ
হাদিস দ্বারা (যেকোনো আমল) মুস্তাহাব এবং জায়েয প্রমাণ হয়। সূত্র: ফাতাওয়ায়ে
উলামায়ে হাদিস খ: পৃ: ২১৭
দেখুন আমরা তো বলছি না যে, ঘাড় মাসেহ করা ফরজ/সুন্নাত। সুতরাং উপরোক্তগুলো দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত।
সারকথা হলো, যে আমলের অস্তিত্ত্ব হাদিস
আসারে বিদ্যমান তাকে বিদআত বলার অবকাশ নেই।
সম্মানিত তিন ইমাম নিজেদের ঘাড় মাসেহ মতে মুস্তাহাব বলিনি, কিন্তু তারা এটাকে বিদআতও বলিনি।
যদি তাদের কথা মেনেও নিই যে, হাদিসগুলো জয়িফ। জয়িফ হাদিস সম্পর্কে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল
(রহ.) বলেন, “হালাল-হারামের বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে থাকি। তবে
ফজিলতের ক্ষেত্রে নমনীয়তা অবল্বমন করি।” ” (সূত্র : আল-আজকার,১১-১২)
সুতরাং তাদের মতামতের চেয়ে
জয়িফ হাদিসের ক্ষেত্রে ইমাম হাম্বল (রহ.) –এর
মতকে আমরা অগ্রগণ্য মনে করি।
والله اعلم بالصواب
আল্লাহপাকই সকল বিষয়ে সঠিক
জ্ঞানের অধিকারী।
উত্তর দিচ্ছেন, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৬২:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
প্রশ্নঃ এক ব্যক্তি গৃহ নির্মাণ
করার উদ্দেশ্যে কিছু মালামাল(৮ লক্ষ টাকায়)
ক্রয় করে রেখেছে এবং সেই মালামাল ক্রয় করার পর এক বছর অতিবাহিত হয়েছে এবং
এখন সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে গৃহ নির্মাণ করবে না এবং সেই মালামাল গুলো বিক্রি করে দেবে
প্রশ্ন হচ্ছে, এখন মালামাল বিক্রয় করার পর কখন থেকে যাকাত আদায় করতে
হবে? মালামাল
ক্রয় করার পর এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নাকি বিক্রয় করার এক বছর পর? জাজাকাল্লাহ খাইরান। তারিখ: ০১/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শরিফুল ইসলাম বগুড়া
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো,
উক্ত ব্যক্তি মালামাল বিক্রয় করার পর বিক্রত টাকার যাকাত
দিতে হবে। বিগত এক বছর তার কাছে যে
মালামাল ছিল তার জন্য যাকাত আদায় করতে হবে
না। সূত্র: রদ্দুল মুহতার(ফতওয়ায়ে শামি)-
২খণ্ড;২৬২ পৃষ্ঠা
উল্লেখ যে, উক্ত ব্যক্তি যদি পূর্ব থেকেই
সাহেবে নিসাব হয়ে থাকে, তাহলে বিক্রিত টাকা তার সাথে যুক্ত
হবে। আর যদি সাহেবে নিসাব না হয়ে থাকে, তাহলে বিক্রিত মালের
টাকা চন্দ্রমাসের এক বছর থাকার পর যাকাত ফরজ হবে। সূত্র: -মুসান্নাফে
আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৮৭২,৭০৪০,৭০৪৪;
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩২৫,১০৩২৭
সারকথা হলো, উক্ত ব্যক্তি মালামাল বিক্রি
করার পর যাকাত দিবেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৬৩:
আসসালামু আলাইকুম
প্রশ্ন : ইমাম না থাকলে জামে
মসজিদে জুমার জামাত বন্ধ রাখা জায়েজ আছে?
(যে কয় জুমা ইমাম থাকবে না
অন্য মসজিদে জুমা পড়বে) তারিখ: ৩০/১১/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রায়হানুল মোবারক
সোনারগাঁ,
নারায়ণগঞ্জ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, স্বাভাবিক কোনো অবস্থা বিরাজ করলে কিংবা কোনো
ধরনের শরয়ি কারণ ছাড়া শরয়ি জামে মসজিদে
জুমাআর জামাত বন্ধ করা জায়েজ নেই। কোন মসজিদে জুমাআর জামাত চালু হওয়ার পর বন্ধ করে
দেওয়া মসজিদ বিরান করার অন্তর্ভুক্ত, যা করতে আল্লাহ তাআলা নিষেধ
করেছেন। দলিল:
وَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ مَّنَعَ
مَسٰجِدَ اللّٰہِ اَنۡ یُّذۡکَرَ فِیۡہَا اسۡمُہٗ وَسَعٰی فِیۡ خَرَابِہَا ؕ
অর্থাৎ যে আল্লাহর মসজিদসমূহে
তাঁর নাম নিতে বাধা দেয় এবং একে বিরান করার চেষ্টা করে। সূরা বাকারা-১১৪
তাফসির/ব্যাখ্যা: মুফতী শফী রাহ. সূরা বাকারার ১১৪ নং আয়াত (অর্থাৎ যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর
নাম নিতে বাধা দেয় এবং একে বিরান করার চেষ্টা করে...)-এর অধীনে লিখেছেন, ‘(এ থেকে)
বোঝা গেল যে, মসজিদ বিরান করার যত পন্থা আছে সবই নিষিদ্ধ। এতে
খোলাখুলিভাবে মসজিদ বিধ্বস্ত করা যেমন শামিল তেমনি এমন কোনো উপায়-উপকরণ সৃষ্টি করাও
শামিল, যাতে তা বিরান হয়ে যায়। মসজিদের বিরান এই যে, তাতে
নামাযের জন্য মানুষজন আসে না (জামাত বন্ধ করা) বা কম হয়। কেননা মসজিদের
প্রকৃত আবাদ প্রাচীর বা কারুকার্য দ্বারা নয়, আল্লাহর
যিকিরকারীদের দ্বারা...।’ সূত্র: তাফসীরে
মাআরিফুল কুরআন ১/৩০০
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত,
হজরত
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, মসজিদ
হলো- নামাজ, জিকির ও কোরআন পড়ার জন্য। তাখরিজ: মুসলিম-২৮৫
ব্যাখ্যা: মসজিদ হলো নামাজ তথা জামাতের
জন্য, সুতরাং জামাত বন্ধ করা যাবে না।
দ্বিতীয় কথা হলো, মসজিদ আবাদ তথা রক্ষণাবেক্ষণ করা মধ্যে ইমাম নিয়োগ
করা অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ইমাম ছুটিতে গেলে/না থাকলে, নতুন ইমামের ব্যবস্থা করা এলাকাবাসি/কমিটি/কর্তৃপক্ষের পবিত্র দায়িত্ব। যদি এ দায়িত্বে অবহেলা করে, তাহলে সবাই গুনাহগার হবে। যেমন,
اِنَّمَا یَعۡمُرُ مَسٰجِدَ
اللّٰهِ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ
অর্থ: নিশ্চয়ই মসজিদ আবাদ করবে যারা আল্লাহ
ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।’ সুরা তওবা- ১৮
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ
عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «أَلا
كلُّكُمْ راعٍ وكلُّكُمْ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ
আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেনঃ সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল, আর
(পরকালে) নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে তোমাদের প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে। তাখরিজ: বুখারি-৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯, আবূ দাঊদ ২৯২৮, তিরমিযী
১৭০৫, আহমাদ ৫১৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৯২২
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৬৪:
আসসালামু আলাইকুম
একজন মা জীবিত অবস্থায় তার
নিজের সম্পত্তি বন্টন করতে পারবেন কিনা??
পারলে ছেলে মেয়ে কত অংশ পাবে? তারিখ: ০৩/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মাহমুদুল হাসান
চাঁদপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের
দুটি মত পায়।
প্রথম মত: ওলামাদের একটি জামাত
বলেন, জীবদ্দাশায়
ওয়ারিশদের মধ্যে সমভাবে (প্রাপ্যানুয়ায়ী) বণ্টন করা নাজায়েজ। সুতরাং এ
কাজটি তিনি যদি করে থাকেন, তিনি কবিরা গুনাহ করেছেন। আর এ
জন্য তাঁকে কেয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে।
তাদের যুক্তি
হলো, তার কারণ হচ্ছে, তিনি তো
জানেন না কারা ওয়ারিশ আর কারা ওয়ারিশ নন। উত্তরাধিকার তো মৃত্যুর পরে হবে। মৃত্যুর
আগে দিয়ে দিলে এমন হতে পারে যে, যখন মৃত্যু হবে তখন হয়তো কেউ
মারা যাবে বা থাকবে না, তখন এটি ইনসাফপূর্ণ হবে না।
দ্বিতীয় মত: ওলামাদের অপর জামাত বলেন, মৃত্যুর পর
সন্তানদের মধ্যে সম্পদের বণ্টন নিয়ে ঝগড়া মিটানোর নিমিত্তে জীবিত থাকতে ।
প্রাপ্যতানুযায়ী বণ্টন করা জায়েজ হবে। যেমন, এ বিষয়ে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম-মুফতি, সৌদি শরিয়াহ বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট
আল্লামা তাকি উসমানি দা.বা. বলেন,
যদি জীবিত অবস্থায় সম্পদ
বণ্টনের উদ্দেশ্য হয় পিতার ইন্তেকালের পর যেন সন্তানদের মাঝে ঝগড়া না হয় সে জন্য
মিরাছসূত্রে অগ্রিম সম্পদ বণ্টন করে দেয়া, তাহলে সেখানে
শরীয়তের ফারায়েয নীতি অনুসারে ছেলেকে মেয়ের দ্বিগুণ দেয়া যাবে। তিনি বলেন, এই মাসআলাটি যদিও আমি স্পষ্টভাবে ফুকাহায়ে কেরামের বক্তব্যে পাইনি তবুও
আশা করি মাসআলাটি তাঁদের মূলনীতির বাইরে যাবে না। সূত্র: তাকমেলায়ে
ফাতহুল মুলহিম শরহুল মসলিম-২খণ্ড; ৭৫
পৃ.; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৬/৪৬৩
প্রশ্ন: ক। জীবিত অবস্থায় বণ্টন করে
দিলে ছেলে
মেয়ে কত অংশ পাবে?
উত্তর: ক। কতিপয় ওলামাদের মতে,
কোনো ব্যক্তি যদি তার জীবদ্দশায় নিজ সন্তানদের
মাঝে সম্পদ বণ্টন করে তাহলে তার জন্য সব ছেলে-মেয়ের মাঝে সমানহারে সম্পদ বণ্টন করা
মুস্তাহাব। মেয়েকেও ছেলের সমান সম্পদ দিবে।
কিন্তু জুমহুর ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, সম্পদ বণ্টনে ছেলে-মেয়ের মাঝে
বৈষম্য না করার বিষয়টি শরয়ী দলীলের আলোকে অধিক শক্তিশালী এবং অগ্রগণ্য এবং এর ওপরই
ফতোয়া। সূত্র: ফাতাওয়া আলমগীরী ৪/৩০১; আলবাহরুর
রায়েক ৭/৪৯০; কিতাবুন
নাওয়াযেল ১২/১৮৫, ১৮৭
দলিল:
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي
أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ
অর্থ: আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের
সম্পর্কে আদেশ করেন। একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর
অংশের সমান। সূরা নিসা-১১
সারকথা হলো, ত্যাজ্য সম্পদ বা মীরাছের সম্পর্ক
মৃত্যুর পরের সাথে। অর্থাৎ ব্যক্তি মারা যাবার পর তার সম্পদে মীরাছ জারী হয়। জীবিত
অবস্থায় সম্পদ বন্টন করলে তা মূলত হেবা হয়। তাই সাধারণ দানের ক্ষেত্রে সকলকে সমান সমান
করে দেয়া যাবে। যেমন,
قال ابن قدامة رحمه الله : " يجب على الإنسان
التسوية بين أولاده في العطية , إذا لم يختص أحدهم بمعنى يبيح التفضيل , فإن خص
بعضهم بعطيته , أو فاضل بينهم فيها أثم , ووجبت عليه التسوية بأحد أمرين ; إما رد
ما فَضَّل به البعض , وإما إتمام نصيب الآخر . قال طاوس : لا يجوز ذلك , ولا رغيف
محترق . وبه قال ابن المبارك وروي معناه عن مجاهد , وعروة " انتهى من
"المغني" (5/ 387) .
ইবনে কুদামা (রহ.) বলেছেন: একজন ব্যক্তি
অবশ্যই তার সন্তানদের উপহারের ক্ষেত্রে সমান আচরণ করতে হবে, যদি সে তাদের একটিকে পছন্দের অনুমতি দেয় এমন অর্থে আলাদা না
করে অন্যটির অংশ। তাওউস বলেছেন: এটি জায়েজ নয়, এমনকি পোড়া রুটিও নয়। ইবনুল মুবারক এটিই বলেছেন এবং এর অর্থ মুজাহিদ ও উরওয়াহ
থেকে বর্ণিত হয়েছে। সূত্র: আল-মুগনী -৫/৩৮৭
عَنْ عَامِرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ
النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، وَهُوَ عَلَى المِنْبَرِ
يَقُولُ: أَعْطَانِي أَبِي عَطِيَّةً، فَقَالَتْ عَمْرَةُ بِنْتُ رَوَاحَةَ: لاَ
أَرْضَى حَتَّى تُشْهِدَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: إِنِّي
أَعْطَيْتُ ابْنِي مِنْ عَمْرَةَ بِنْتِ رَوَاحَةَ عَطِيَّةً، فَأَمَرَتْنِي أَنْ أُشْهِدَكَ
يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «أَعْطَيْتَ سَائِرَ وَلَدِكَ مِثْلَ هَذَا؟»، قَالَ:
لاَ، قَالَ: «فَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْدِلُوا بَيْنَ أَوْلاَدِكُمْ»، قَالَ:
فَرَجَعَ فَرَدَّ عَطِيَّتَهُ
আমির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি যে, আমার পিতা আমাকে কিছু দান করেছিলেন। তখন (আমার মাতা) আমরা বিনতে রাওয়াহা
(রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সাক্ষী রাখা ব্যতীত সম্মত নই। তখন তিনি
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর
নিকট আসলেন এবং বললেন, আমরা বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার পুত্রকে কিছু দান করেছি। হে আল্লাহর
রাসূল! আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
তোমার সব ছেলেকেই কি এ রকম করেছ? তিনি বললেন,
না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তবে আল্লাহকে ভয় কর এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। [নু‘মান (রাঃ)] বলেন, অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং তার দান
ফিরিয়ে নিলেন। তাখরিজ: সহীহ বুখারী-১/৩৫২, হাদীস নং-২৫৮৭, ই’লাউস
সুনান-১৬/১১৬, হাদীস নং-৫২৭৭
আর জীবিত অবস্থায় মিরাসের
বনণ্টনের ক্ষেত্রে - يجوز للإنسان أن يقسم ماله بين
ورثته في حياته بشرط ألا يقصد الإضرار ببعض الورثة ، فيمنع بعضهم أو يعطيهم دون
حقهم إضراراً بهم .
ويعتبر هذا هبة منه لأولاده ،
ويلزمه العدل بينهم وعدم تفضيل أحدهم إلا لمسوّغ .
অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি জীবিত থাকা
অবস্থায় তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে তার অর্থ বণ্টন করা জায়েজ, এই শর্তে
যে, সে কোন কোন উত্তরাধিকারীর ক্ষতি করার ইচ্ছা পোষণ করবে না, তাদের
কিছুকে আটকে রেখে বা তাদের ক্ষতি করার অধিকার ছাড়াই প্রদান করবে। সূত্র: আলইসলামু সুওয়াল ওয়া জওয়াব-১২২৯৭(প্রশ্ন নং)
বর্তমানে যেহেতু মৃত্যুর পরের
বন্টন পূর্বে করে দেয়া হয়, তাই মিরাস অনুযায়ী বন্টন করাই শ্রেয়। সূত্র: সূরা নিসা-১১
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৬৫:
আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম,
খেলাধুলা সম্পর্কে শরিয়ি সীমা
রেখা কি? কুরআন হাদিসের আলোকে জানালে
উপকৃত হতাম। জাযাকাল্লাহু খইর। তারিখ: ০৪/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোজাম্মেল হোসেন
কুমিল্লা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, একজন মুমিনের জীবন খেল-তামাশার
জন্য। জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে সময় নামক পুঁজি দিয়ে রব্বুলামীন আমাদেরকে পাঠিয়েন,
আমল করার জীবন। যেমন, ইরশাদ হচ্ছে-
Surah Al-Mulk, Verse 2:
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ
وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ
الْغَفُورُ
অর্থ: যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন,
যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ?
তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। সূরা মুলক-০২
বান্দার দুনিয়াবি কিংবা
আখেরাতের ক্ষতি এরকম কাজের অনুমতি ইসলাম দেননি। তাই ঢালাওভাবে খেলাধুলা বা বিনোদনের
অনুমতি ইসলাম নেই। আবার সর্ব প্রকারের খেলাধুলা
বা বিনোদনকে নিষিদ্ধও করেনি। খেলাধুলা বা বিনোদন সম্পর্কে ইসলামে দৃষ্টিভঙ্গি আমরা
অনেকেই জানি না, আবার অনেকে জানলেও পুরোপুরি মানিনা।
দ্বিতীয় কথা হলো, হজরতে ওলামায়ে কেরাম সর্বপ্রকার খেলাধুলাকে ৫ ভাগে ভাগ করেছেন। তবে ইসলামের
দৃষ্টিতে প্রত্যেক প্রকারের বিধান ভিন্ন। নিম্নে তা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হবে
ইনশাল্লাহ। ونسأل الله التوفيق وهو الموفق
والمعين
এক: হারাম। এমন কিছু খেলাধুলা
রয়েছে, যে খেলাগুলো মৌলিকভাবেই হারাম। যেমন জুয়া,
তাস-পাশা, ষাড়ের লড়াই, মোরগের
লড়াই, রেসলিং। কারণ এই খেলাগুলোতে বিনোদনের নামে প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া
হয়। এক পক্ষের সম্পদ নষ্ট হয়। যা বৈধ হতে পারে না। এমন খেলার আয়োজন করা, খেলা, দেখা, সবই
নিষেধ। দলিল:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ
عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ: হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক
শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে
বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। সূরা মায়েদা-৯০
দুই: নীতিগত কারণে হারাম। এমন
কিছু খেলাধুলা রয়েছে, যেগুলো মৌলিকভাবে হারাম ছিল না কিন্তু খেলার মধ্যে
এমন কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে যেগুলো হারাম। নিম্নোক্ত
নীতিগত শর্তাবলী উপস্থিত না থাকার কারণে খেলাধুলাগুলো হারাম।
(১) ধর্মীয়
জরুরি কর্তব্য পালন থেকে উদাসীন হওয়া:
কোনো খেলা বৈধ হতে হলে তার মধ্যে
এ বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে যে তার নেশার ঘোর যেন মহান আল্লাহর কোনো ফরজ বিধান পালনের কথা
দিব্যি ভুলিয়ে না দেয়। খেলার ছলে যেন ফরজ ছুটে না যায়। যেমন কোনো ফরজ নামাজের সময় খেলাধুলা
করা।:
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي
لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا
هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
অর্থ: ‘মানুষের
মধ্যে এক শ্রেণির মানুষ এমন আছে, যারা খেলাধুলা-কৌতুকাবহ কথা ক্রয়
করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য। আর এটা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদের
জন্য রয়েছে অবনামনাকর শাস্তি।’
সূরা
লোকমান-৬
তাফসির/ব্যাখ্যা: (০১) আলোচ্য আয়াতটি খেলাধুলা ও অনর্থক কাজের নিন্দায় সুস্পষ্ট
ও প্রকাশ্য। রুহুল মাআনি- ৫৬৪৪ পৃ.
(০২) বিংশ শতাব্দির
প্রখ্যাত মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ শফী (র.) তার ‘আহকামুল ককোরআনে’ বর্ণিত আয়াতের হুকুম প্রসঙ্গে বলেন, পবিত্র
কোরআনের এ আয়াতে ঐসকল কথা, কাজ,
বস্তু
ও বিষয়কে হারাম করা হয়েছে, যা মানুষকে আল্লাহ তায়ালার এবাদত ও তাঁর স্মরণ থেকে
গাফিল করে দেয়। তা গান-বাজনা হোক বা খেলাধুলা কিংবা ক্রিড়া-কৌতুক-সবই এর অন্তর্ভুক্ত।
তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন-১০৫২ (সংক্ষিপ্ত) মাওলানা
মুহিউদ্দন খান অনূদিত
(০৩) এ আয়াত দ্বারা কেউ ব্যাখ্যা করেছেন যে, অতিরিক্ত
খেলাধুলাও মানুষকে আল্লাহর পথ বা বিধান পালন থেকে বিরত রাখে।
(২) শরিয়তের
মহৎ লক্ষ্যের প্রতি খেয়াল না রাখা:
মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীমাত্রেই
জানেন, পৃথিবীতে আমাদের আগমন অহেতুক নয়। পৃথিবীতে আমাদের জীবন লক্ষ্যহীন
নয়। যেমন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ
وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
অর্থ: ‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’
সূরা:
আয-যারিয়াত-৫৬
অতএব খেলার লক্ষ্য যেন উদ্দেশ্যহীন
খেলায়ই সীমাবদ্ধ না থাকে।
(৩) সতর
আবৃত না থাকা এবং যৌন সুড়সুড়িদায়ক হওয়া:
যেমন ফুটবল। যে খেলাটি আসলে হারাম
ছিল না, কিন্তু খেলার একটি নীতি সেটাকে হারাম করে দিয়েছে। সেটা হল এই
খেলা হয় হাফপ্যান্ট পরে। আর প্রত্যেক পুরুষের জন্য নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত অন্য পুরুষকে
দেখানো হারাম। অন্যের জন্য দেখাও হারাম। খেলায় হাটুর উপরাংশ খোলা থাকায় এই খেলাটি হারাম।
তাই এই খেলার আয়োজন করা, খেলা,
দেখা, সবই
নিষেধ। দলিল:
لاَ تَكْشِفْ فَخِذَكَ وَلاَ
تَنْظُرْ إِلَى فَخِذِ حَىٍّ وَلاَ مَيِّتٍ.
আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেন, ‘তুমি নিজের উরু উন্মুক্ত করো না এবং কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির
উরুর দিকে দৃষ্টি দিও না।’ তাখরিজ:
আবু
দাউদ : ৪০১৭
আর যদি নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত
ঢেকে খেলা যায়, তাহলে নীতিগতভাবে হারাম হবে না।
স্যাটেলাইন চ্যানেলগুলো জনপ্রিয়
খেলা সম্প্রচার করে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ আয় করছে। যে আয়ের ভাগ গিয়ে পড়ছে ওই খেলার আন্তর্জাতিক
নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সংশ্লিষ্ট দেশের বোর্ড এবং প্রতিটি খেলোয়াড় পর্যায়ে।
আর টিভি চ্যানেলগুলোর প্রধান উৎস অবশ্যই বিজ্ঞাপন। বল্গাহীন পুঁজিবাদী ও নৈতাকতাহীন
অর্থলোভীরা তাদের সব ধরনের বিজ্ঞাপন হজম করাচ্ছে সব জাতি ও দেশকে। অথচ এসব বিজ্ঞাপনের
অধিকাংশই বহু দেশ ও জাতি বিশেষত মুসলিম রাষ্ট্র ও উম্মাহর চেতনা ও সংস্কৃতির সঙ্গে
মানানসই নয়। কেউ টিভিতে খেলা দেখবেন অথচ অশ্লীল বিজ্ঞাপন তার চোখে পড়বে না, এটা
এখন আর সম্ভব নয়। তাই এসব দেখা ও এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ কোনোটাই যে অবৈধতামুক্ত
নয়, তা বলাবাহুল্য।
খেলা দেখায় বিজ্ঞাপন মতো আরেক
সমস্যা প্রমিলা দর্শক। স্টেডিয়ামে নারীদের উপস্থিতি এখন অপরিহার্য।
﴿ وَقَرۡنَ فِي
بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ وَأَقِمۡنَ
ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ إِنَّمَا
يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ
تَطۡهِيرٗا ٣٣ ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য
প্রদর্শন করো না। ----তোমরা মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।’
সূরা
আল-আহযাব- ৩৩
যাদের অধিকাংশের বেশভূষাই শুধু ইসলামের দৃষ্টিতে
নয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর স্থানীয় সংস্কৃতির দৃষ্টিকোণেও
সমর্থনযোগ্য নয়। মিডিয়া ও পুঁজিবাদীরা নিজেদের স্বার্থে বরাবরই এদের পালে হাওয়া দিয়ে
আসছে। অমুসলিম দেশগুলোয় স্টেডিয়ামে মেয়েদের খোলামেলা উপস্থিতি দেখে অতি দ্রুত মুসলিম
মেয়েরা তাদের অনুসরণ করছে। আপনি খেলা দেখতে চাইলে বিজ্ঞাপনের মতো এদেরও না দেখে উপায়
নেই। এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন কিভাবে খেলা দেখবেন।
(৪) জীবনের
জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া:
খেলাটি এমন হতে হবে যাতে জীবন
নাশের নিশ্চিত বা প্রবল সম্ভাবনা ন থাকে। কেননা নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলা বা ধ্বংসের
মুখে ঠেলে দেওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই। দলিল:
وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ
وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوَاْ إِنَّ اللّهَ
يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ: আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে
নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে
ভালবাসেন। সূরা: আল-বাকারা-১৯৫
لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ
আমর ইবন ইয়াহইয়া মাযেনী থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন
‘ইসলামে
কারও ক্ষতি করা নেই, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াও নেই।’ তাখরিজ: মুয়াত্তা মালেক-২৭৫৬; দারা
কুতনী-৪৫৯
২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৪৫ বছর
বয়সী মাইকেল শুমাখার ফ্রেঞ্চ আল্পসে স্কি দুর্ঘটনার শিকার হন। দীর্ষ ১৮ দিন তিনি কোমায়
রয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি স্কি হেলমেট পড়েছিলেন কিন্তু তাঁর মাথা একটি শিলার সঙ্গে
আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং তাঁর হেলমেট ভেঙ্গে দুই খণ্ড হয়ে যায়। জার্মানির কিংবদন্তী এ ফর্মুলা
ওয়ান চ্যাম্পিয়নকে বাকি জীবনটা কোমায় কাটাতে হতে পারে। টিম ম্যানেজমেন্ট ও পরিবারের
নীরবতা থেকে এমন অনুমান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডেইলি মেইল। সূত্র : ডেইলি মেইল অন
লাইন/স্কাই স্পোর্টস
(৫) প্রতিযোগিতার জয়-পরাজয়ে শত্রুতা-মিত্রতা সৃষ্টি
না হওয়া:
খেলাধুলাকে শত্রুতা-মিত্রতার
মাপকাঠি বানালে সে খেলাটি তার স্বাভাবিক বৈধতা হারায়। ভালো খেলার কারণে অতিভক্তি বা
খারাপ খেলার কারণে অতিভক্তি কোনোটাই ইসলামে কাম্য নয়। ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার
সমর্থক কিংবা ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের সমর্থকদের মধ্যে নিজেদের সমর্থিত দল নিয়ে মারামারি, হানাহানি
ও শত্রুতা তৈরির ঘটনা পত্র-পত্রিকা প্রায়ই চোখে পড়ে। মানুষকে শয়তানের এসব দুরভিসন্ধিমূলক
ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে তাই মহান আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার ঘোষণা করেছেন,
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ
أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاء فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ
وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللّهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ
অর্থ:‘নিশ্চয়
শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর
(চায়) আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা
কি বিরত হবে না?’ সূরা মায়েদা-৯১
ভালাবাসা-শত্রুতা তো ইকমাত্র আল্লাহর
জন্যই। যেমন,
مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ
لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الإِيمَانَ.
আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে,
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেন, ‘যে কেউ আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করে এবং
(কাউকে কিছু) দিয়ে থাকে আল্লাহর জন্যই এবং (কাউকে কিছু) দেয়া থেকে বিরত থাকেও আল্লাহরই
জন্য; তাহলে তার ঈমান পরিপূর্ণ হলো।’ তাখরিজ: আবু দাউদ-৪৬৮১
তিন: সংযুক্ত হারাম। مباريات كرة القدم التي على مال
أو نحوه من جوائز حرام ; لكون ذلك قمارا ; لأنه لا يجوز أخذ السَّبَق وهو العوض
إلا فيما أذن فيه الشرع، وهو المسابقة على الخيل والإبل والرماية، وعلى هذا فحضور المباريات
حرام، ومشاهدتها كذلك، لمن علم أنها على عوض ؛ لأن في حضوره لها إقرارا لها
অর্থাৎ খেলাধুলা/ ফুটবল ম্যাচ' যেগুলো টাকা অথবা এমন পুরষ্কারের
জন্য খেলা হয় – কারণ নাজায়েজ, এটা হচ্ছে
জুয়া। টাকার প্রবেশে স্বাস্থ্য/ক্রিকেট খেলা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। সূত্র: ফতওয়া আল-লাজনাহ আদ-দাইয়িমাহ-১৫/২৩৮। সৌদি স্থায়ী ফতওয়া ফতওয়া নম্বর: ১৮৯৫১
এমন খেলা যেগুলো মৌলিকভাবে হারাম
ছিল না, হারাম শর্ত সংযুক্ত করণে হারাম হয়েছে। যেমন; বাজি।
যেকোন খেলায় যদি বাজি ধরা হয়, তাহলে সেটা হারাম হয়ে যাবে। বাজির
খেলার আয়োজন করা, খেলা,
দেখা, সবই
নিষেধ। বাজির টাকা লেন-দেনও নিষেধ।
আয়াত নং-০১
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ
كُلُواْ مِمَّا فِي ٱلۡأَرۡضِ حَلَٰلٗا طَيِّبٗا وَلَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ
إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوّٞ مُّبِينٌ ١٦٨ ﴾ [البقرة: ١٦٨]
‘হে মানুষ, জমিনে যা রয়েছে, তা থেকে
হালাল পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য
সুস্পষ্ট শত্রু।’ সূরা
বাকারা-১৬৮
আয়াত নং-০২
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ
إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ
الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ: ‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয়
মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক
তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে
তোমরা সফলকাম হও। সূরা মায়েদা ৯০
হাদিস নং-০১
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ شِيْرٍ
فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِيْ لَحْمِ خِنْزِيْرٍ وَدَمِهِ
অর্থঃ “যে ব্যক্তি দাবা খেলল সে যেন শুকরের রক্ত-মাংসে নিজের হাত রঞ্জিত
করল”
মুসলিম-১৭৭০
হাদিস নং-০২
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ
عَصَى اللهَ وَ رَسُوْلَهُ
অর্থঃ “যে ব্যক্তি দাবা খেলে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানকে অমান্য
করল”
তাখরিজ: আহমাদ
৪/৩৯৪, ছহীহুল জামে-৬৫০৫
চার: শর্তসাপেক্ষে হালাল। যেসব
খেলাধুলা উপরোল্লিখিত ৩ পর্যায়ের নয়,
সেসব
খেলাধুলা কিছু শর্তে হালাল হবে। শর্তের মধ্যে রয়েছে- খেলায় ব্যক্তি, সমাজ
বা রাষ্ট্রের ক্ষতিকারক কিছু থাকতে পারবে না। খেলাটি খেলোয়াড় বা দর্শকদের ইসলামের আবশ্যকীয়
বিধান পালনে প্রতিবন্ধক হবে না, যেমন নামাজ, রোজা
ইত্যাদি। যদি খেলা বা দেখার কারণে নামাজ,
রোজা
ইত্যাদি আদায় করা যায় না, তাহলে সে খেলা হালাল হবে না।
পাঁচ : সুন্নত। অবাক হলেও কিছু
খেলা আছে সুন্নত। যেমন তীর নিক্ষেপ,
পর্দ্দা
রক্ষা করে স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা। এখানে দুটি পর্যায়ের খেলা রয়েছে।
এক. তীর নিক্ষেপ। রাসুল সা. এর
যুগে তীর ছিল অন্যতম যুদ্ধাস্ত্র। যুদ্ধের ট্রেনিং স্বরূপ সাহাবায়ে কেরাম রা. এর মধ্যে
তীর নিক্ষেপ খেলা হয়েছে। তাই যুদ্ধের ট্রেনিং সংক্রান্ত খেলা বা প্রতিযোগিতা সুন্নতি
খেলার তালিকায় গণ্য হবে। অতএব সৈনিকদের জন্য যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা সুন্নত।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেন,
لاَ سَبَقَ إِلاَّ فِى نَصْلٍ
أَوْ حَافِرٍ أَوْ خُفٍّ
‘প্রতিযোগিতা বৈধ কেবল তীরন্দাজিতে, উট ও
ঘোড় দৌড়ে। তাখরিজ: তিরমিযী-১৭০০; নাসাঈ-৩৬০০
দুই. শরীয়তের বিধান মেনে স্ত্রীর
সাথে বিনোদনমূলক খেলাধুলা সুন্নত। রাসুল (ﷺ)
আম্মাজান আয়েশা রা. এর দৌড় খেলায় অংশ নিয়েছেন।
সারকথা হলো, এসব শর্তে খেলাধুলার বৈধতা দেওয়া
হলেও বর্তমানে প্রচলিত খেলাধুলায় ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন প্রায়ই পরিলক্ষিত হয় না।
এসব খেলার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি,
নামাজেরর
প্রতি অবহেলা, অন্য ধর্মের অনুসরণ, সময়
ও অর্থের অপচয়, জুয়া-বাজিধরা, রঙখেলা, গ্যালারিতে
উদ্দাম নৃত্য-গান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, উল্কী
আঁকা ইত্যাদির বাহুল্য থাকে। তাই এসব খেলাধুলা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম।
لأصل في مثل هذه الألعاب
الرياضية الجواز إذا كانت هادفة وبريئة ، كما أشار إلى ذلك ابن القيم في كتاب "
الفروسية " وذكره الشيخ تقي الدين ابن تيمية وغيره ، وإن كان فيها تدريب على
الجهاد والكر والفر وتنشيط للأبدان وقلع للأمراض المزمنة وتقوية للروح المعنوية :
فهذا يدخل في المستحبات إذا صلحت نية فاعله ، ويشترط للجميع أن لا يضر بالأبدان
ولا بالأنفس ، وأن لا يترتب عليه شيء من الشحناء والعداوة التي تقع بين المتلاعبين
غالباً ، وأن لا يشغل عما هو أهم منه ، وأن لا يصد عن ذكر الله وعن الصلاة "
انتهى .
" فتاوى ابن إبراهيم " ( 8 / 118 ) .
এই ধরনের খেলাধুলার ব্যাপারে
মৌলিক নীতি হল যে এটি যদি উদ্দেশ্যমূলক এবং নির্দোষ হয়, যেমনটি
ইবনুল কাইয়্যিম "ফুরুসিয়া" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং শেখ তাকি আল-দীন
ইবনে তাইমিয়া এবং অন্যান্যদের দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি সুপারিশ করা হয় যদি
যে এটি করে তার উদ্দেশ্য ভাল, এবং এটি প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত
হয় যে এটি দেহ বা আত্মার ক্ষতি করে না এবং এটি হেরফেরকারীদের মধ্যে প্রায়শই উদ্ভূত
বিরক্তি এবং শত্রুতার কারণ হয় না এবং এটি করে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে বিক্ষিপ্ত
হবেন না এবং এটি কাউকে আল্লাহকে স্মরণ করা এবং প্রার্থনা করতে বাধা দেয় না। সূত্র: ফাতাওয়া ইবনে ইব্রাহীম ৮ খণ্ড;
১১৮পৃ.
শেষকথা, যেসব খেলা মৌলিকভাবে হারাম, খেলার
রীতি-নীতি হারাম, খেলায় সংযুক্ত বিষয় হারাম সেসব খেলার আয়োজন, খেলা, দেখা, সহযোগিতা
করা, সাপোর্ট করা সবই হারাম। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সহিহ বুঝ দান করে
এবং আমল করার তাওফীক দান করুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৬৬:
আমার এক বড় ভাই মসজিদে কিছু
টাকা দেওয়ার নিয়ত করেছিলেন,
মানত
করেননি। কিন্তু ইতিমধ্যে তার এক দরিদ্র বোন অসুস্থ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সে কি মসজিদে
টাকা না দিয়ে তার বোনকে টাকা দিতে পারবে? তারিখ: ০৪/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ হারুনুর রশিদ রামু, কক্সবাজার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, মানত হোক কিংবা সাধারণ নিয়ত হোক নির্দিষ্ট
জায়গায় বা ব্যক্তিকে অবশ্যক নয়। দলিল:
قال الشامى تحت قوله (فإنه لا
يجوز تعجيله الخ) وكذا يظهر منه أنه لا يتعين فيه المكان والدرهم والفقير (رد
المحتار، كتاب الصوم، باب ما يفسد الصوم ومالا يفسد-3/424)
وإن كان مقيدا بمكان بأن قال لله
تعالى على أن أصلى ركعتين فى موضع كذا، وأ أتصدق على فقراء بلد كذا، يجوز أداؤه فى
غير ذلك المكان عند أبى حنيفة وصاحبيه لأن المقصود من النذر هو التقرف إلى الله
عزوجل، وليس لذات المكان دخل فى القربة (الفقه الاسلامى وأدلته-3/484، دار
الفكر-4/2568)
অর্থাৎ ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.) ও
সাহেবাইন (ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ.)-এর মতে- যদি নির্দিষ্ট স্থানে ইবাদত করার ইচ্ছা করে, সে বলে
আল্লাহর জন্য সেখানে (নিন্দিষ্ট স্থানে) দুরাকাত নামাজ আদায় করবো। এবং ঐ ব্যক্তিকে দান করবো। এমতাবস্থায় অন্য
স্থানে নামাজ আদায় করা এবং অন্য ব্যক্তিক দান করা জায়েজ হবে। কেননা তার মান্নতের
মাকসুদ/উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তাআলার নৈকট্য। নির্দিষ্ট জায়গা
বা স্থান নয়। সূত্র: আল-ফিকহুল ইসলামি
ওয়া আদিল্লাহ- ৩য় খণ্ড; ৪৮৪ পৃষ্ঠা,
দারুল ফিকর-৪/২৫৬৮;
রদ্দুল মুহতার-৩/৪২৪
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ছুরতে
উক্ত ব্যক্তি মসজিদে টাকা না দিয়ে তার বোনকে
টাকা দিতে পারবে, কোনো অসুবিধা নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৬৭:
আস্সালামু আলাইকুম, আমার জানার বিষয় হলোঃ জুমাআর সানি/দ্বিতীয় আজান মিম্বার/ইমামের সামনে দেওয়া সুন্নাহ না বিদআত? তারিখ: ০৬/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর
রহমান থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, বর্তমানে
প্রচলিত জুমাআর সানি/দ্বিতীয় আজান রাসূল এর জামানায় ছিল না।
ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান (রা.) জামানা
থেকে অদ্যাবধি জারি রয়েছে । দলিল:
عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي
السَّائِبُ بْنُ يَزِيدَ، أَنَّ الأَذَانَ، كَانَ أَوَّلُهُ حِينَ يَجْلِسُ
الإِمَامُ عَلَى الْمِنْبَرِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِي عَهْدِ النَّبِيِّ صلي الله
عليه وسلم وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ - رضى الله عنهما - فَلَمَّا كَانَ خِلَافَةُ عُثْمَانَ وَكَثُرَ النَّاسُ أَمَرَ
عُثْمَانُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِالأَذَانِ الثَّالِثِ فَأُذِّنَ بِهِ عَلَى
الزَّوْرَاءِ فَثَبَتَ الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ
আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)
সূত্রে বর্নিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবূ
বকর এবং ’উমার (রাঃ) এর যুগে জুমু’আহর প্রথম আযান দেয়া হতো
ইমাম মিম্বারে বসলে। কিন্তু ’উসমান (রাঃ) এর খিলাফাতের সময়
জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি জুমু’আহর সালাতের জন্য তৃতীয়
আযানের নির্দেশ দেন। এ আযান সর্বপ্রথম (মদীনার) আয-যাওরা নামক স্থানে দেয়া হয়।
এরপর থেকেই এ নিয়ম বহাল হয়ে যায়। তাখরিজ: বুখারি-৯১২; আবু দাউদ-১০৮৭; নাসায়ি-১৩৯১
প্রশ্ন: ক। ইমামের সামনে সানি খুতবা দেওয়া
কি বিদআত?
উত্তর: ক। বিদআত বলা হয়, যে আমলের অস্তিত্ব খয়রুল কুরুনের জামানায় ছিল না। এখন যদি আমরা প্রমাণ করি
যে, ইমামের সামনে সানি দেওয়া একাধিক হাদিস/আসারে এবং মুহাদ্দিসে কেরামগণ ইমামের সামনে ব্যাখ্যা করেছেন, তাহলে কি বিদআত থাকবে? দলিল:
হাদিস নং-০১
عَنِ ابْنِ شِهَابٍ،
أَخْبَرَنِي السَّائِبُ بْنُ
يَزِيدَ، أَنَّ الأَذَانَ،
كَانَ أَوَّلُهُ حِينَ
يَجْلِسُ الإِمَامُ عَلَى
الْمِنْبَرِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ
فِي عَهْدِ النَّبِيِّ
صلي الله عليه
وسلم وَأَبِي بَكْرٍ
وَعُمَرَ - رضى الله
عنهما - فَلَمَّا كَانَ
خِلَافَةُ عُثْمَانَ وَكَثُرَ
النَّاسُ أَمَرَ عُثْمَانُ
يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِالأَذَانِ
الثَّالِثِ فَأُذِّنَ بِهِ
عَلَى الزَّوْرَاءِ فَثَبَتَ
الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ
ব্যাখ্যা: এর
হাদিসটির ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন,
فالظاهر أنه كان لمطلق الإعلام لا لخصوص الإنصات نعم
لما زيد الأذان الأول كان للإعلام وكان الذي بين يدي الخطيب للانصات (قوله فلما
كان عثمان) أي خليفة (قوله وكثر الناس) أي بالمدينة وصرح به في رواية الماجشون
وظاهره أن عثمان أم.. فتح الباري - ابن حجر - ج ٢ - الصفحة ٣٢٧
অর্থাৎ ওসমান (রা.) এর জামানায়
দ্বিতীয় আজান বৃদ্ধি করা হলো, তখন প্রথম ছিল জানানোর
(সর্তক করার) জন্য এবং দ্বিতীয় আজান ইমামের
সামনে শ্রোতাদের জন্য। সূত্র: ফাতহুল বারি শারহুল বুখারি-২য় খণ্ড,৩২৭ পৃ.
হাদিস নং-০২
دَّثَنَا النُّفَيْلِيُّ،
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، عَنِ
الزُّهْرِيِّ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ، قَالَ كَانَ يُؤَذَّنُ بَيْنَ يَدَىْ
رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم إِذَا جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ
عَلَى بَابِ الْمَسْجِدِ وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ . ثُمَّ سَاقَ نَحْوَ حَدِيثِ يُونُسَ .
আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)
সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জুআআর
দিন যখন মিম্বারের উপর বসতেন তখন তাঁর সামনে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে আযান দেয়া হতো।
আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ) এর সামনেও অনুরূপ করা হতো। অতঃপর হাদীসের পরবর্তী অংশ ইউনুস
বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-১০৮৮; ইবনে
মাজাহ-১১৩৫; আহমাদ-৩/৪৪৯; ইবনু খুযাইমাহ-১৮৩৭
সকলে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক হতে।
নোট: হাদিসটির সনদ সম্পর্কে
মুহাদ্দিসদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
ব্যাখ্যা:
قال ـ رحمه
الله ـ في
تعليقه على الترمذي
(ج2 ص393): “فائدة”
في رواية عند
أبي داود في
هذا الحديث: كان
يؤذن بين يدي
رسول الله صلى
الله عليه وسلم
إذا جلس على
المنبر يوم الجمعة
على باب المسجد،
فظن العوام بل
كثير من أهل
العلم أن هذا
الأذان يكون أمام
الخطيب مواجهة، فجعلوا
مقام المؤذن في
مواجهة الخطيب. (قريباً
من المنبر)
অর্থাৎ ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেন,
অধিকাংশ আহলে এলেমদের নিকট সানি আজান ইমামের সামনে হবে। সূত্র:
তালীকা আলাত তিরমিজি-২/৩৯৩
فائدة : في رواية عند أبي داود في هذا الحديث :
অর্থাৎ মিশকাতুল মাসাবিহর
ব্যাখ্যাদাতা মোল্লা আলি কারি (রহ.) একই
ব্যাখ্যা করেছেন। মিরকাতুল মাফাতিহ শারহুল মিশকাতুল মাসাবিহ-৪/৪৮৬
قَالَ الْمُنْذِرِيُّ : وَأَخْرَجَهُ
الْبُخَارِيّ وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْن
مَاجَهْ.
( كَانَ
يُؤَذَّن بَيْن يَدَيْ
رَسُول اللَّه صَلَّى
اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
) : قَالَ
فِي لِسَان الْعَرَب
: قَالَ الْفَرَّاء فِي
تَفْسِير قَوْله تَعَالَى
{ جَعَلْنَاهَا نَكَالًا لِمَا
بَيْن يَدَيْهَا } يَعْنِي
الْمِسْخَة جُعِلَت نَكَالًا
لِمَا مَضَى مِنْ
الذُّنُوب وَلِمَا تُعْمَل
بَعْدهَا وَيُقَال بَيْن
يَدَيْك كَذَا لِكُلِّ
شَيْء أَمَامك , قَالَ
اللَّه عَزَّ وَجَلَّ
{ مِنْ بَيْن أَيْدِيهمْ
وَمِنْ خَلْفهمْ } وَقَالَ
الزَّجَّاج فِي قَوْله
تَعَالَى { وَلَا بِاَلَّذِي
بَيْن يَدَيْهِ } أَرَادَ
بِاَلَّذِي بَيْن يَدَيْهِ
عون المعبود على
شرح سنن أبي
داود: أبي الطيب
محمد شمس الحق
العظيم آبادي
অর্থাৎ আওনুল মাবুদ আলা
শারহু সুনানে আবি দাউদ এর লেখক, كَانَ يُؤَذَّن بَيْن
يَدَيْ رَسُول اللَّه
صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ এর দ্বারা যে সামনে উদ্দেশ্য তার দলিল
হিসেবে কুরআনের কয়েকটি এনেছেন।
যেমন, , وَلَا بِاَلَّذِي بَيْن
يَدَيْه مِنْ
بَيْن أَيْدِيهمْ وَمِنْ
خَلْفهمْ
আসার-০১
خْرَجَ اِبْن أَبِي شَيْبَة فِي الْمُصَنَّف حَدَّثَنَا
عَبْد الصَّمَد
عَنْ الْمُسْتَمِرّ
بْن الرَّيَّان
قَالَ " رَأَيْت أَنَسًا عِنْد الْبَاب الْأَوَّل
يَوْم الْجُمُعَة
قَدْ اِسْتَقْبَلَ
الْمِنْبَر ". المصنف -
ابن أبي شيبة الكوفي - ج ٢ - الصفحة ٢٧
অর্থ: মুসাতামির
বিন রাইয়ান (রহ.)
বলেন, আমি
আনাস (রা.) কে প্রথম দরজার নিকট মিম্বারে (ইমামের) সামনে
আজান দিতে দেখেছি। তাখরিজ: মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা- ২য়
খণ্ড; ২৭পৃ.
আসার-০২
المصنف - ابن أبي شيبة الكوفي - ج ٢ - الصفحة ٢٧
وكيع عن واصل بن السائب الرقاشي
قال رأيت عطاء وطاوسا ومجاهدا يستقبلون الامام يوم الجمعة.
অর্থাৎ ওয়াকি ইবনে ওয়াসিল (রহ.) বলে,
আমি আতা , তাউস ও মুজাহিদ ইমামের সামনে সানি
আজান দিতে দেখেছি। তাখরিজ: মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা- ২য়
খণ্ড; ২৭পৃ.
ইমামদের মতামত:
أول للجمعة بل علق الحنفية وجوب
السعي وترك البيع به، ففي الدر المختار من كتبهم: وَوَجَبَ سَعْيٌ إلَيْهَا
وَتَرْكُ الْبَيْعِ بِالْأَذَانِ الْأَوَّلِ فِي الْأَصَحِّ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ
فِي زَمَنِ الرَّسُولِ، بَلْ فِي زَمَنِ عُثْمَانَ، وَيُؤَذِّنُ ثَانِيًا بَيْنَ
يَدَيْهِ أَيْ الْخَطِيبِ. انتهى مختصرا
ففي إرشاد السالك من كتب
المالكية:وَلَهَا أَذَانَانِ: الأَوَّلُ عَلَى الْمَنَارَةِ وَالآخَرُ بَيْنَ
يَدَيِ الإِمَامِ إِذَا جَلَسَ عَلَى الْمنْبَرِ، فَإِذَا فَرَغَ أَخَذَ فِي
الْخُطْبَةِ. انتهى
قوال الأئمة الأربعة في الأذان
يوم الجمعة
অর্থাৎ ইমাম আবু হানিফা এবং ইমাম মালেকের মতে, ইমামের সামনে দেওয়া সুন্নাত। সূত্র: আকওয়ালুল আইম্মাতুল আরবা ফিল আজানি ইয়াওমিল
জুমাআ
ফুকাহায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত:
وإذا صعد الإمام
المنبر جلس وأذن
المؤذن بين يدى
المنبر بذلك جرى
التوارث (هداية-1/151،
مجمع الأنهر-1/171،
ملتقى الأبحر-1/171)
ويؤذن ثانيا بين
يديه أى الخطيب
فى رد المحتار،
أى على سبيل
السنية كما يظهر
من كلامهم (رد
المحتار-3/98)
إن التأذين عند
الخطبة محله عند
الإمام وبذلك جرى
التوارث على ما
قال صاحب الهداية،
قلت فبطل بذلك
قول من زعم
أن التأذين عند
الخطبة فى المسجد
بدعة (حاشية آثار
السنن-2/95، العرف
الشذى على هامش
الترمذى-1/116)
وكذا فى الهندية-1/149، جديد-1/210،
كبيرى، كتاب الصلاة،
فصل فى صلاة
الجمعة-520، 561،
البحر الرائق-2/274،
مراقى الفلاح-515
সারকথা হলো, উসমান রা. এর আমল থেকে জুমআর সানি আজান চালু হয়, রাসূলের যুগে ইমাম বরাবর দরজায় এবং ওসমান রা.
যুগ থেকে জুমাআর সানি আজান
ইমামের সামনে মিম্বরের নিকট দেয়া শুরু হয়। খুলাফাদের সুন্নাত আকড়ে ধরতে হবে। যেমন,
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي
وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا
وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ
এবং আমলে তাওয়াতির এর মাধ্যমে
আমাদের কাছে এসেছে। সুতরাং সানী আজান মানলে তা মিম্বরের কাছে, ইমামের সামনে দেয়াই সুন্নাহ
সম্মত। বিদআত বলার অবকাশ নেই।
তবে জুমাআর সানি আজান মিম্বারের
সামনে, দরজার কাছে,
মসজিদের ভিতরে, বারান্দায়, মসজিদের যেকোন স্থানেই দেয়া জায়েজ আছে। তাই এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত।
শেষ কথা, আমরা সেই কথা বলবো যা ইমাম
তিরমিজি রহ. বলেন যে, كثير من أهل
العلم أن هذا
الأذان يكون أمام
الخطيب অধিকাংশ আহলে এলেমদের নিকট সানি আজান ইমামের
সামনে হবে। সূত্র: তালীকা আলাত তিরমিজি-২/৩৯৩
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৬৮:
নিম্নোক্ত হাদিসের মূল
ইবারত ও রেফারেন্সসহ জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো? তারিখ: ০৬/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ যশোর
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর হাদিস শরিফগুলো নিম্নরূপ:
০১। যে আজকের দিনটিকে গতকালের চেয়ে বেশি কাজে লাগাতে পারল না সে
উন্নতি করতে পারল না। কামফুল খিফা-২য় খণ্ড;২৩৩ পৃ.
আরবি:
من استوى يوماه فهو مغبون، ومن
كان آخِر يوميه شرًّا فهو ملعون، ومن لم يكن على الزيادة فهو في النقصان، ومن كان
في النقصان، فالموت خير له، ومَن اشتاق إلى الجنة، سارَعَ في الخيرات، ومن أشفق من
النار، لهِيَ عن الشهوات، ومن ترقَّب الموت، هانت عليه اللذات، ومن زهد في الدنيا،
هانت عليه المصيبات)) كشف الخفاء - العجلوني - ج
٢ - الصفحة ٢٣٣
নোট: মুহাদ্দিসগণ হাদিসটির সম্পর্কে
বলেন, হাদিসটি সহিহ নয়, মাওজু
০২। আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
(ﷺ)বলেছেনঃ তোমরা ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। ধারণা
বড় মিথ্যা ব্যাপার। তোমরা দোষ তালাশ করো না,
গোয়েন্দাগিরি
করো না, পরস্পর হিংসা পোষণ করো না, একে
অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হয়ো না; বরং
তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। তাখরিজ: বুখারি-৬০৬৪
আরবি: حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ
اللَّهِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ، عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِيَّاكُمْ
وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ، وَلاَ تَحَسَّسُوا، وَلاَ
تَجَسَّسُوا، وَلاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَكُونُوا
عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا ".
০৩। তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম।
তাখরিজ: তিরমিজি-৩৮৯৫
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ
يَحْيَى ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا
سُفْيَانُ ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ عَائِشَةَ ،
قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : "
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ، وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي، وَإِذَا مَاتَ
صَاحِبُكُمْ فَدَعُوهُ ". هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ. وَرُوِيَ هَذَا،
عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُرْسَلٌ.
حكم الحديث: صحيح
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৬৯:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি
ওয়া বারাকাতুহ,
জানার জন্য সহোযোগিতায় কামনা
করছি।
,,, প্রতেক ফরজ সালাতের পরে সম্মিলিত দোয়া আছে কি নাই? তারিখ: ০৪/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মাহমুদুল হাসান
দিনাজপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আলহামদুলিল্লাহ
এ সংক্রান্ত ইতোমধ্যে আলবুরহানে জিজ্ঞাসা-১৯২ শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। আশা
করি লিংকটি পড়লে আপনার যথাযথ সমাধান পাবেন।
এই মাসয়ালাটির সমাধান দেখতে
এখানে ক্লিক করুন
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/06/blog-post_70.html
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা -১২৩৭০:
আসসালামু আলাইকুম। বিষয়গুলো সম্পর্কে
জানানোর সবিনয় আবেদন-
কুরআন হাদিসের আলোকে বিতরের নামাজের
রাকাত সংখ্যা ও পড়ার পদ্ধতি, বিশেষত হাদিসের আলোকে হানাফি
মাসলাক অনুসারে।
হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান কুয়েত মিলিটারি কলেজে
কর্মরত।
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া
রহমাতুল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ ইতোমধ্যে আলবুরহানে বিতর নামাজ সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা -১২৩৪৫
শিরোনামে মাসয়ালাটি আলোচিত হয়েছে। আশা করি
পূর্বে লিখিত মাসয়ালাটি দেখলে সমাধান পেয়ে যাবেন।
এই মাসয়ালাটির সমাধান দেখতে
এখানে ক্লিক করুন
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/11/blog-post_19.html
উত্তর প্রদানে, ধর্ম
শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক বগুড়া
জিজ্ঞাসা-১২৩৭১:
আসসালামু আলাইকুম। আমরা জানি
যে আত্মহত্যাকারী জাহান্নামী এখন যুদ্ধের সময় যদি যুদ্ধে জয়ের জন্য আত্মঘাতী হামলার
প্রয়োজন হয় তাহলে কি হবে? তারিখ:
০৭/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শরিফুল ইসলাম দিনাজপুর
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আত্মহত্যা একটি মহাপাপ এবং হারাম। এ সম্পর্কে
কঠিক আজাবের ধমক এসেছে। যেমন,
عَنْ ثَابِتِ بْنِ الضَّحَّاكِ، عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لَيْسَ عَلَى
رَجُلٍ نَذْرٌ فِيمَا لاَ يَمْلِكُ وَلَعْنُ الْمُؤْمِنِ كَقَتْلِهِ وَمَنْ قَتَلَ
نَفْسَهُ بِشَىْءٍ فِي الدُّنْيَا عُذِّبَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
রাসূল ইরশাদ করেছেন- “যদি কেউ কোন জিনিস দ্বারা
আত্মহত্যা করে, তাহলে কিয়ামতের দিন ঐ জিনিস দ্বারাই তাকে
আযাব দেয়া হবে। সহীহ মুসলিম-২০৯
দ্বিতীয় কথা হলো, ইসলামে শরিআতে আত্মহত্যার কোন
স্থান নেই। পক্ষান্তরে জিহাদে নিজের জান ব্যবহার করার উৎসাহ ও হুকুম দেয়া হয়েছে
এবং এ কথাও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা
জান্নাতের পরিবর্তে মুমিনের জান মাল ক্রয় করেছেন। দলিল:
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ
وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ
وَالْإِنْجِيلِ وَالْقُرْآَنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ
فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ
الْعَظِيمُ
অর্থ: “আল্লাহ তা‘আলা ক্রয় করে নিয়েছেন মুমিনদের থেকে তাঁদের জান ও মাল এই মূল্যে যে,
তাঁদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তাঁরা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে; অতঃপর হত্যা করে ও নিহত হয়।” সূরা তাওবা-১১১
কুরআনের আলোকে আত্মোৎসর্গ
আয়াত নং-০১
وَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡرِیۡ
نَفۡسَہُ ابۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ اللّٰہِ ؕ وَاللّٰہُ رَءُوۡفٌۢ بِالۡعِبَادِ
আর মানুষের মাঝে এক শ্রেণীর
লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে নিজেদের জানের বাজি রাখে। আল্লাহ হলেন
তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান। সূরা বাকারা-২০৭
তাফসি:
ولما حمل هشام بن عامر بين
الصفين ، أنكر عليه بعض الناس ، فرد عليهم عمر بن الخطاب وأبو هريرة وغيرهما ،
وتلوا هذه الآية : { ومن الناس من يشري نفسه ابتغاء مرضاة الله والله رءوف بالعباد }
ইবনে কাসীর রাহ. এ আয়াতের
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নকল করেন, একবার হিশাম ইবনে আমের রাযি. শত্রু বাহিনীর দুই কাতারের মাঝে
হামলা করলে কিছু লোক এর বিরোধিতা করে। তখন হযরত ওমর রাযি., হযরত
আবু হুরায়রা রাযি. সহ অন্যান্যরা আপত্তিকারী ব্যক্তিদের মত প্রত্যাখ্যান করে এই
আয়াত তেলাওয়াত করেন- “মানুষদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে আল্লাহর সন্তুিষ্ট লাভের উদ্দেশ্যে আত্ম-বিক্রয় করে থাকে। আল্লাহ তাঁর
বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াবান।”
তাফসীরে ইবনে কাসীর: ১/৩৬৯, দারু ইবনুল জাওযী,
কায়রো
হাদিসের আলোকে আত্মোৎসর্গ:
হাদিস নং-০১
باب غَزْوَةُ مُوتَةَ مِنْ
أَرْضِ الشَّأْمِ
أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ أَبِي
بَكْرٍ، حَدَّثَنَا مُغِيرَةُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ
سَعِيدٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ
أَمَّرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةِ مُوتَةَ زَيْدَ بْنَ
حَارِثَةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنْ قُتِلَ زَيْدٌ
فَجَعْفَرٌ، وَإِنْ قُتِلَ جَعْفَرٌ فَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَوَاحَةَ ".
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ كُنْتُ فِيهِمْ فِي تِلْكَ الْغَزْوَةِ فَالْتَمَسْنَا
جَعْفَرَ بْنَ أَبِي طَالِبٍ، فَوَجَدْنَاهُ فِي الْقَتْلَى، وَوَجَدْنَا مَا فِي
جَسَدِهِ بِضْعًا وَتِسْعِينَ مِنْ طَعْنَةٍ وَرَمْيَةٍ.
অর্থ: আহমদ ইবনে আবু বকর (রাহঃ) ... আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুতার যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) যায়েদ ইবনে হারিসা
(রাযিঃ) কে সেনাপতি নিযুক্ত করে বলেছিলেন, যদি যায়েদ (রাযিঃ) শহীদ হয়ে যায় তাহলে জাফর
ইবনে আবু তালিব (রাযিঃ) সেনাপতি হবে। যদি জাফর (রাযিঃ)-ও শহীদ হয়ে যায় তাহলে আব্দুল্লাহ
ইবনে রাওয়াহা (রাযিঃ) সেনাপতি হবে। আব্দুল্লাহ [ইবনে উমর (রাযিঃ)] বলেন, ঐ যুদ্ধে তাদের সাথে আমিও ছিলাম। যুদ্ধ শেষে আমরা জাফর ইবনে আবু তালিব (রাযিঃ)
কে তালাশ করলে তাকে শহীদগণের মধ্যে পেলাম। তখন আমরা তার দেহে তরবারী ও বর্শার নব্বইটিরও
অধিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি।*
বুখারি- ৪২৬১, সিরিয়ায়
সংঘটিত মূতার যুদ্ধের বর্ণনা অধ্যয়
ব্যাখ্যা: তিন সাহাবি মৃত্যুর কথা
নিশ্চিত জানার পরও জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছেন।
হাদিস নং-০২
أﻓﺮد ﻳﻮم أﺣﺪ
ﻓﻰ ﺳـــﺒﻌﺔ ﻣﻦ اﻷﻧﺼـــﺎر ورﺟﻠﻴﻦ ﻣﻦ ﻗﺮﻳﺶ ﻓﻠﻤﺎ رﻫﻘﻮﻩ ﻗﺎل :ﻣﻦ ﻳﺮدﻫ
ﻢ ﻋﻨﺎ أن رﺳـــﻮل اﻟﻠﻪ
وﻟﻪ اﻟﺠﻨﺔ أو ﻫﻮ
رﻓﻴﻘﻲ ﻓﻲ اﻟﺠﻨﺔ ﻓﺘﻘﺪم رﺟﻞ
ﻣﻦ اﻷﻧﺼـﺎر ﻓﻘﺎﺗﻞ
ﺣﺘﻰ ﻗﺘﻞ ﺛﻢ رﻫﻘﻮﻩ أﻳﻀـﺎ
ﻓﻠﻢ ﻳﺰل ﻛﺬﻟﻚ ﺣﺘﻰ ﻗﺘﻞ اﻟﺴﺒﻌﺔ .
আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত- “উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ
এর সাথে সাতজন আনসারী ও দুইজন কুরাইশী সাহাবী ছিলেন। এক সময় মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ
এর কাছে চলে আসল, তখন তিনি বললেন, তোমাদের
মধ্যে কে আছ যে তাদের প্রতিহত করবে? তার জন্য জান্নাত রয়েছে,
অথবা সে জান্নাতে আমার সাথী হবে। তখন এক আনসারী সাহাবী সামনে এগিয়ে
লড়াই করলেন এবং শহীদ হয়ে গেলেন অতঃপর আবার তারা রাসূল এর কাছে চলে আসলে একে একে
সাতজনই শহীদ হয়ে গেলেন। মুসলিম-১৭৮৯
ব্যাখ্যা : উহুদের দিন অনেক সাহাবায়ে
কেরাম একা শত্রুর মাঝে ঢুকে আক্রমণ করেন এবং শাহাদাত বরণ করেন, যেখানে নিশ্চিত মত্যুর আশঙ্কা ছিল। রাসূল তাঁদের প্রশংসাও করেছেন।
হাদিস নং-০৩
وﺑﻠﻐﻨﺎ
أن اﻟﺒﺮاء ﻳﻮم ﺣﺮب ﻣﺴﻴﻠﻤﺔ اﻟﻜﺬاب أﻣﺮ أﺻﺤﺎﺑﻪ أن ﻳﺤﺘﻤﻠﻮﻩ ﻋﻠﻰ ﺗﺮس، ﻋﻠﻰ
أﺳﻨﺔ رﻣﺎﺣﻬﻢ، وﻳﻠﻘﻮﻩ ৭৭৫. ﻓﻲ اﻟﺤﺪﻳﻘﺔ .ﻓﺎﻗﺘﺤﻢ إﻟﻴﻬﻢ، وﺷﺪ ﻋﻠﻴﻬﻢ، وﻗﺎﺗﻞ
ﺣﺘﻰ اﻓﺘﺘﺢ ﺑﺎب اﻟﺤﺪﻳﻘﺔ
হযরত বারা ইবনে মালেক রাযি.
মুসায়লামা কাযযাবের সাথে যুদ্ধের দিন সাথীদেরকে বর্শার আগায় ঢাল রেখে তাঁকে তার
উপর বসিয়ে বাগানের মধ্যে ছুঁড়ে দিতে বললেন। অতঃপর তিন তাদের মাঝে ঢুকে প্রচন্ড বেগে আক্রমণ করলেন এবং
তাদের হত্যা করে বাগানের দরজা খুলে দিলেন। সনানে বাইহাকি
আত্মোৎসর্গ ও ফুকাহায়ে কেরাম
আল্লামা শামী রাহ. শরহুস
সিয়ারের উদ্ধৃতিতে বলেন-
ذﻛﺮ ﻓﻲ ﺷﺮح اﻟﺴﻴﺮ أﻧﻪ
ﻻ ﺑﺄس أن ﻳﺤﻤﻞ اﻟﺮﺟﻞ وﺣﺪﻩ
وإن
ﻇﻦ أﻧﻪ ﻳﻘﺘﻞ إذا ﻛﺎن ﻳﺼﻨﻊ ﺷﻴﺌﺎ ﺑ ﻘﺘﻞ أو ﻳﻮم أﺣﺪ
وﻣﺪﺣﻬﻢ ﻋﻠﻰ ذﻟﻚ، ﺑﺠﺮح أو ﺑﻬﺰم، ﻓﻘﺪ ﻓﻌﻞ ذﻟﻚ
ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻣﻦ اﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺑﻴﻦ ﻳﺪي رﺳﻮل اﻟﻠﻪ
ﻓﺄﻣﺎ إذا ﻋﻠﻢ أﻧﻪ ﻻ ﻳﻨﻜﻲ ﻓﻴﻬﻢ ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﻳﺤﻞ ﻟﻪ أن ﻳﺤﻤﻞ ﻋﻠﻴﻬﻢ، ﻻﻧﻪ
ﻻ ﻳﺤﺼﻞ ﺑﺤﻤﻠﺘﻪ ﺷ ﻲء ﻣﻦ
إﻋﺰاز اﻟﺪﻳﻦ .
“নিহত হওয়ার প্রবল ধারণা থাকা
সত্ত্বেও একা এক ব্যক্তি শত্রুর উপর হামলা করতে পারবে, যদি
সে দুশমনকে হত্যা, আহত অথবা পরাস্ত করার মাধ্যমে কোন ক্ষতি
করতে পারে। কেননা অনেক সাহাবী রাযি. উহুদের দিন রাসূল এর সামনে এ ধরনের হামলা
করেছেন এবং হুজুর তাদের প্রশংসা করেছেন। আর যদি এ ধারণা হয় যে, সে তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, তবে তার
জন্য তাদের উপর হামলা করা জায়েয হবে না। কেননা তার এই হামলার দ্বারা দ্বীনের কোন
ফায়দা হবে না।”(ফাতাওয়ায়ে শামী: ৬/২০৬,)মাকতাবায়ে যাকারিয়া, দেওবন্দ)
আত্মোৎসর্গের শর্তসমূহ:
কুরআন, হাদীস ও ফুকাহায়ে কেরামের
উপরোল্লিখিত বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, আত্মোৎসর্গ হামলা
জায়েয, তবে কিছু শর্তের সাথে।
১. নিয়ত সহীহ হওয়া। তথা ই‘লায়ে কালিমাতুল্লাহ, দ্বীনের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্য হতে হবে।
২. আক্রমণকারীর প্রবল ধারণা থাকা যে, তার এই হামলার দ্বারা শত্রুর
ক্ষতি সাধিত হবে।
৩. যে কোনভাবে তার হামলা
দ্বারা মুসলামানদের উপকার হতে হবে।
৪.কিন্তু যেসব রাষ্ট্রে যুদ্ধ
চলছে না। বরং বিধর্মী এবং মুসলিমরা একত্র বসবাস করছে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে
যেমন বাংলাদেশ এর মত যেসব রাষ্ট্রে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ
চলছে না, এসব এলাকা ও রাষ্ট্রে আত্মঘাতি হামলা কিছুতেই বৈধ
নয়।
সারকথা কথা হলো, আত্মহত্যা ও আত্মঘাতী হামলা বাহ্যিকভাবে
এক মনে হলেও হাকিকতান এক নয়। উপরোক্ত শর্তাবলীর ভিত্তিতে আত্মঘাতী জায়েজ আছে।
কিছুইতেই ফেতনা করা যাবে না। যেমন ইরশাদ হচ্ছে-
وَالۡفِتۡنَۃُ اَکۡبَرُ مِنَ الۡقَتۡلِ ؕ
আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা
সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ। সূরা বাকারা-২১৭
বিস্তারিত দেখুন, দারুল উলূম হাজহাজারি প্রকাশিত-আত্মঘাতী হামলা কি বৈধ?
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৭২:
আসসালামুআলাইকুম। আমার জানার বিষয় টি হলো, ইসলাম যে গোটা দুনিয়ার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়বে, ইসলামের আলো সবখানে ছড়িয়ে পরবে,কোথায় কোনো জনপদ বাকী থাকবে না, এই বিষয়ে কোরআন এবং হাদিসের দৃষ্টিভঙ্গি জানিয়ে বাধিত করবেন।
তারিখ:
০৭/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রমজান আলি সৈয়দপুর, লীলফামারী থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما
بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, ইসলাম যে গোটা দুনিয়ার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়বে, ইসলামের আলো সবখানে ছড়িয়ে পরবে,কোথায় কোনো জনপদ বাকী থাকবে না।
এ কথাগুলো পবিত্র কুরআনের
সূরাতুন নিসার-১৫৯ আয়াতে ইঙ্গিত রয়েছে। এবং একাধিক
সহিহ সনদে এ জাতীয় কথা রয়েছে। দলিল:
আয়াত নং-০১
وَاِنۡ مِّنۡ اَہۡلِ
الۡکِتٰبِ اِلَّا لَیُؤۡمِنَنَّ بِہٖ
قَبۡلَ مَوۡتِہٖ ۚ وَیَوۡمَ
الۡقِیٰمَۃِ یَکُوۡنُ عَلَیۡہِمۡ
شَہِیۡدًا ۚ
অর্থ: আর আহলে-কিতাবদের মধ্যে যত
শ্রেণী রয়েছে তারা সবাই ঈমান আনবে ঈসার উপর তাদের মৃত্যুর পূর্বে। আর কেয়ামতের দিন
তাদের জন্য সাক্ষীর উপর সাক্ষী উপস্থিত হবে। সূরা নিসা-১৫৯
তাফসির: وقال ابن كثير رحمه الله :
" الضَّمِيرُ فِي قَوْلِهِ:
(قَبْلَ مَوْتِهِ) عَائِدٌ عَلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ ، أَيْ: وَإِنْ مِنْ
أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا يُؤْمِنُ بِعِيسَى قُبَلَ مَوْتِ عِيسَى ، وَذَلِكَ
حِينَ يَنْزِلُ إِلَى الْأَرْضِ قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ، فَحِينَئِذٍ
يُؤْمِنُ بِهِ أَهْلُ الْكِتَابِ كُلُّهُمْ ؛ لِأَنَّهُ يَضَعُ الْجِزْيَةَ وَلَا
يَقْبَلُ إِلَّا الْإِسْلَامَ
" .
انتهى من "تفسير ابن كثير"
(2/ 47)
.
وقال أيضا :
" سَيَنْزِلُ قَبْلَ يَوْمِ
الْقِيَامَةِ ، كَمَا دَلَّتْ عَلَيْهِ الْأَحَادِيثُ الْمُتَوَاتِرَةُ فَيَقْتُلُ
مَسِيحَ الضَّلَالَةِ ، وَيَكْسِرُ الصَّلِيبَ ، وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيرَ،
وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ - يَعْنِي : لَا يَقْبَلُهَا مِنْ أَحَدٍ مِنْ أَهْلِ
الْأَدْيَانِ ، بَلْ لَا يَقْبَلُ إِلَّا الْإِسْلَامَ أَوِ السَّيْفَ -
فَأَخْبَرَتْ هَذِهِ الْآيَةُ الْكَرِيمَةُ أَنْه يُؤْمِنَ بِهِ جَمِيعُ أَهْلِ
الْكِتَابِ حِينَئِذٍ، وَلَا يَتَخَلَّفُ عَنِ التَّصْدِيقِ بِهِ وَاحِدٌ مِنْهُمْ
" انتهى من " تفسير ابن كثير" (2/ 454) .
অর্থাৎ আল্লামা ইবনে কাসির
রহ.
বলেন, কিয়ামতের পূর্বে হজরত ঈসা আ. যখন আগমন ঘটবে,তখন সমস্ত আহলে কিতাবগণ তার প্রতি ঈমান আনবে। সে শুধু ইসলামই কবুল করবে।
সূত্র: তাফসিরে ইবনে কাসির-২/৪৭
হাদিস নং-০১
جزء رقم :15، الصفحة رقم:153
9270 حَدَّثَنَا عَفَّانُ ، قَالَ : حَدَّثَنَا هَمَّامٌ ،
قَالَ : أَخْبَرَنَا قَتَادَةُ ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ آدَمَ ، عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : "
الْأَنْبِيَاءُ إِخْوَةٌ لِعَلَّاتٍ ، أُمَّهَاتُهُمْ شَتَّى، وَدِينُهُمْ
وَاحِدٌ، وَإِنِّي أَوْلَى النَّاسِ بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ؛ لِأَنَّهُ لَمْ
يَكُنْ بَيْنِي وَبَيْنَهُ نَبِيٌّ، وَإِنَّهُ نَازِلٌ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ،
فَاعْرِفُوهُ : رَجُلٌ مَرْبُوعٌ إِلَى الْحُمْرَةِ وَالْبَيَاضِ، عَلَيْهِ
ثَوْبَانِ مُمَصَّرَانِ ، كَأَنَّ رَأْسَهُ يَقْطُرُ، وَإِنْ لَمْ يُصِبْهُ
بَلَلٌ، فَيَدُقُّ الصَّلِيبَ، وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيرَ، وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ،
وَيَدْعُو النَّاسَ إِلَى الْإِسْلَامِ، فَيُهْلِكُ اللَّهُ فِي زَمَانِهِ
الْمِلَلَ كُلَّهَا، إِلَّا الْإِسْلَامَ، وَيُهْلِكُ اللَّهُ فِي زَمَانِهِ
الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ، ثُمَّ تَقَعُ الْأَمَنَةُ عَلَى الْأَرْضِ، حَتَّى
تَرْتَعَ الْأُسُودُ مَعَ الْإِبِلِ، وَالنِّمَارُ مَعَ الْبَقَرِ، وَالذِّئَابُ
مَعَ الْغَنَمِ، وَيَلْعَبَ الصِّبْيَانُ بِالْحَيَّاتِ، لَا تَضُرُّهُمْ،
فَيَمْكُثُ أَرْبَعِينَ سَنَةً، ثُمَّ يُتَوَفَّى، وَيُصَلِّي عَلَيْهِ
الْمُسْلِمُونَ
".
حكم الحديث: حديث صحيح
অর্থ: হজরত আবু হুরাইরা লা. থেকে বর্ণিত। নবি বলেন, নবিগণ সকলেই পরস্পর বৈমাত্রেয় ভাই। মাতা ভিন্ন, কিন্তু ধর্ম এক। ঈসা বিন মরিয়মের সবচে কাছাকাছি
হলাম আমি। --------অচিরেই সে অবতরণ করবেন। --অতঃপর ক্রুস ভেঙে দিবেন। শুকর হত্যা করবেন। জিযয়া রহিত
করবেন। সকল বিধর্মীকে ইসলামের দাওয়াত দিবেন। তার সময়ে আল্লাহ তাআলা ইসলাম ছাড়া
অন্যসব ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। তার সময়ে দাজ্জাল নিহত হবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার
পর ইসলাম সেদিন প্রশান্তচিত্তে ভূমিতে স্থির পাবে। ---------। মুসনাদে আহমদ-৯২৭০
নোট: হাদিসটির সনদ সহিহ।
হাদিস নং-০২
الجزء رقم :13، الصفحة رقم:280
7903 حَدَّثَنَا يَزِيدُ ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ ، عَنِ
الزُّهْرِيِّ ، عَنْ حَنْظَلَةَ ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " يَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ
مَرْيَمَ فَيَقْتُلُ الْخِنْزِيرَ، وَيَمْحُو الصَّلِيبَ، وَتُجْمَعُ لَهُ
الصَّلَاةُ، وَيُعْطَى الْمَالُ حَتَّى لَا يُقْبَلَ، وَيَضَعُ الْخَرَاجَ ،
وَيَنْزِلُ الرَّوْحَاءَ فَيَحُجُّ مِنْهَا أَوْ يَعْتَمِرُ أَوْ يَجْمَعُهُمَا
". قَالَ : وَتَلَا أَبُو هُرَيْرَةَ : { وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ
إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ
شَهِيدًا }. فَزَعَمَ حَنْظَلَةُ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ : يُؤْمِنُ بِهِ
قَبْلَ مَوْتِهِ : عِيسَى، فَلَا أَدْرِي هَذَا كُلُّهُ حَدِيثُ النَّبِيِّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْ شَيْءٌ قَالَهُ أَبُو هُرَيْرَةَ.
حكم الحديث: إسناده صحيح على شرط
مسلم.
অর্থাৎ ঈসা আ. অবতরণ করবেন। শুকর হত্যা
করবেন। জাকাত গ্রহণ করার মত কাউকে পাবেনা।
অত:পর আবু হুরাইরা এ আয়াত তেলাওয়াত করেন, وَاِنۡ مِّنۡ اَہۡلِ الۡکِتٰبِ
اِلَّا لَیُؤۡمِنَنَّ بِہٖ قَبۡلَ مَوۡتِہٖ ۚ وَیَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ یَکُوۡنُ
عَلَیۡہِمۡ شَہِیۡدًا ۚ
আর আহলে-কিতাবদের মধ্যে যত
শ্রেণী রয়েছে তারা সবাই ঈমান আনবে ঈসার উপর তাদের মৃত্যুর পূর্বে। আর কেয়ামতের দিন
তাদের জন্য সাক্ষীর উপর সাক্ষী উপস্থিত হবে। (সূরা নিসা-১৫৯) । মুসনাদে আহমদ-৭৯০৩
নোট: হাদিসটি ইমাম মুসলিমের শর্ত
মোতাবেক সহিহ।
হাদিস নং-০৩
وروى البخاري (3593) ، ومسلم
(2921) عن عَبْد اللَّهِ بْن عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ: سَمِعْتُ
رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ: ( تُقَاتِلُكُمُ
اليَهُودُ فَتُسَلَّطُونَ عَلَيْهِمْ ، ثُمَّ يَقُولُ الحَجَرُ : يَا مُسْلِمُ
هَذَا يَهُودِيٌّ وَرَائِي، فَاقْتُلْهُ ) .
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ইয়াহূদীরা
তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। তখন জয়লাভ করবে তোমরাই। স্বয়ং পাথরই বলবে, হে মুসলিম, এইতো
ইয়াহূদী আমার পিছনে, একে হত্যা কর। তাখরিজ: বুখারি-৩৫৯৩; মুসলিম-২৯২১
হাদিস নং-০৪
لا تَقُومُ السَّاعَةُ حتَّى
تُقاتِلُوا اليَهُودَ، حتَّى يَقُولَ الحَجَرُ وراءَهُ اليَهُودِيُّ: يا مُسْلِمُ،
هذا يَهُودِيٌّ وَرائي فاقْتُلْهُ.
الراوي : أبو هريرة | المحدث :
البخاري | المصدر : صحيح البخاري
الصفحة أو الرقم: 2926 | خلاصة
حكم المحدث : [صحيح]
অর্থ: কিয়ামত আসবে না যতক্ষণ না তুমি
ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না ইহুদীর পিছনের পাথর বলবেঃ
হে মুসলিম, এই ইহুদী আমার পিছনে আছে, তাই
তাকে হত্যা কর। বর্ণনাকারীঃ আবু হুরাইরাহ | বর্ণনাকারীঃ আল-বুখারী
| তাখরিজ: সহীহ আল-বুখারী-2926
নোট: উপরোক্ত ৩ ও ৪ নং হাদিস শরিফ
ইশারাতুন নস দ্বারা বুঝা যায়, কোন কাফের-ইয়াহুদি থাকবে, শুধু মুসলমান তথা ইসলামই থাকবে।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে উল্লিখিত ইসলাম যে গোটা দুনিয়ার আনাচে
কানাচে ছড়িয়ে পড়বে, ইসলামের আলো সবখানে ছড়িয়ে পরবে,কোথায় কোনো জনপদ বাকী থাকবে না। মূলত এটা পবিত কুরআন হাদিসের ভাষ্য এবং
সমর্থিত।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৭৫:
আসসালামু আলাইকুম। বিষয়গুলো
সম্পর্কে জানানোর সবিনয় আবেদন-
কুয়েতে প্রচলিত আছে- উদাহরণতঃ
জোহরের নামাজের সময় বৃষ্টি হচ্ছে,
এমতাবস্থায়
তারা জোহরের নামাজ পড়ে পরপরই আসরের নামাজও পড়ে ফেলে। অথচ তখনও আসরের ওয়াক্ত হতে বহু
সময় বাকী! তারা বলে, হলে এরকম পড়া যায়। উল্লেখ্য
যে, সেসময় বৃষ্টির প্রাবল্য খুবই
সাধারণ!
তারিখ: ১০/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ
আল নোমান কুয়েত থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো
যে, মূল অলোচনার পূর্বে জমা বাইনাস সালাতাইন সম্পর্কে জানবো।
প্রশ্ন : ক। জমা বাইনাস সালাতাইন কত
প্রকার?
উত্তর: ক। দুই প্রকার। যথা:
জমউত তাকদীম ও তাখীর । প্রথম
প্রকার দুইভাবে হতে পারে।
প্রথমত: মজউত তাকদিম অর্থ হলো দ্বিতীয়
নামাজকে এগিয়ে এনে, েপ্রথম নামাজের সময়ে আদায় করা। জোহর ও
আসরের নামাজ জোহরের সময় একত্রে আদায় করা।
দ্বিতীয়ত: জমউত তাখির অর্থ হলো প্রথম
নামাকে বিলম্বিত করে দ্বিতীয় নামাজের সময়ে আদায় করা। যেমন, মাগরিব
ও ঈশা একত্রে আদায় করা।
জমা জাহিরি: দ্বিতীয় পদ্ধতিকে বলা হয় জমা জাহিরি। এর অর্থ
প্রথম নামাজ তার শেষ ওয়াক্তের মেষ অংশে আর দ্বিতীয় নামাজ পরের ওয়াক্তের প্রথম
অংশে আদায় করা। এভাবে বাহ্যত দুই নামাজ
একত্র পড়া হলো ও কোন নামাজকেই তার ওয়াক্ত থেকে সরানো হয়নি। উদাহরণ জোহরের নামাজের
সময় বেলা বারোটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত এবং আসরের সময় চারটা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত
হয়। তাহলে জমা জাহিরি এভাবে হতে পারে যে, জোহরের নামাজ পৌঁনে
চারটায় আদায় করা হলো আর আসর চারটায়।
প্রশ্ন: খ। দুই সালাত একত্র করার বিধান কি?
উত্তর: খ। আরাফার দিন যোহর ও আসরকে
এগিয়ে নিয়ে যোহরের সময়ে জমা করে আদায় করা শরী‘আতসম্মত। আলেমগণ
এ ব্যাপারে ইজমা‘ বা ঐকমত্য পোষণ করেছেন অনুরূপভাবে তারা এ
ব্যাপারেও একমত পোষণ করেছেন যে, আরাফার দিন সূর্য ডুবার পর
নাহরের রাতে মুযদালিফায় মাগরিব এবং ‘ইশা একত্র করে ইশার সময়ে
পড়া শরী‘আতসম্মত। সূত্র: আল-ইজমা‘ ইবনুল
মুনযির, পৃ. ৩৮; মারাতিবুল ইজমা‘
পৃ. ৪৫
তবে এর বাইরে অন্য সময়ে
অর্থাৎ বৃষ্টি, সফর বা ভয়ভীতির সময়ে সালাত একত্রে
আদায় করার ব্যাপারে আলেমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
প্রথম মত: আইম্মায়ে সালাছা, ইবনে তাইমিয়া (রহ.) ও আহলে হাদিসদের মতে, বৃষ্টি, সফর বা ভয়ভীতির কারণে যোহর এবং আসর
অনুরূপভাবে মাগরিব ও ইশার সালাতকে একত্রে আদায় করা জায়েয। সূত্র: আশ-শারহুল কাবীর, ১/৩৬৮; মুগনিল
মুহতাজ, ১/৫২৯, কাশশাফুল কিনা‘,
২/৫
দ্বিতীয় মত: ইমামে আজম আবু হানিফা এবং তার অনুসারিগণের মতে,
فى الفتاوى الهندية- ولا يجمع بين الصلاتين في وقت واحد لا في السفر ولا في الحضر بعذر ما عدا عرفة والمزدلفة كذا
في المحيط(الفتاوى الهندية -كتاب الصلاة، الفصل الثاني في بيان فضيلة
الأوقات -1/52)
আরাফা ও মুযদালিফা ব্যতীত
দুফরয সালাতকে একত্র করে আদায় করা যাবে না। তবে আকৃতিগতভাবে একত্রিত করা যাবে, আর তা হচ্ছে যোহরকে তার শেষ
সময় পর্যন্ত দেরী করে আদায় করা তারপর আসরকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। সূত্র:
ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৫২
প্রশ্ন: গ। আইম্মায়ে সালাছার দলিল কি?
উত্তর: গ। আইম্মায়ে সালাছার দলিলসমূহ নিম্নরূপ:
হাদিস নং-০১
صلّی رسول الله (ص) الظهر و العصر
جمیعاً بالمدینة فی غیر خوف و لا سفر.
হযরত ইবনে আব্বাসের (রা.) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় অবস্থানকালীন সময়ে কোনরূপ ভীত ও সফরের কারণ ছাড়াই যোহর ও
আসরের নামায একত্রে আদায় করেছেন।” তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-১২১০
হাদিস নং-০২
عن ابن عبَّاسٍ جمعَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ
وسلَّمَ بينَ الظُّهرِ والعصرِ والمغربِ والعشاءِ بالمدينةِ من غيرِ خوفٍ ولا مطرٍ
فقيلَ لابنِ عبَّاسٍ ما أرادَ إلى ذلِك قالَ أرادَ أن لا يحرجَ أمَّتَه
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে
বর্ণিত। “মহানবী (ﷺ) মদীনাতে কোনরূপ ভয় কিংবা বৃষ্টির আশংকা ছাড়াই যোহর-আসর এবং
মাগরিব ও এশার নামায একত্রে আদায় করতেন। হযরত ইবনে আব্বাসের (রা.) নিকট জিজ্ঞাসা
করা হয়: এক্ষেত্রে রাসূলের (ﷺ) উদ্দেশ্য
কি ছিল? জবাবে তিনি
বলেন: রাসূল (ﷺ) চেয়েছিলেন
যে, কোন মুসলমান
যেন নামায আদায়ের ক্ষেত্রে কষ্টের শিকার না হয়। তাখরিজ: সুনানে
আবু দাউদ-১২১১; মুসলিম-৭০৫
হাদিস নং-০৩
জাবের ইবনে জায়েদ বলেন: ইবনে আব্বাস (রা.) হতে
বর্ণিত হয়েছে,
صلّی النبی (ص) سبعاً جمیعاً و ثمانیاً جمیعاً.
“রাসূল (সা.) সাত রাকাত (মাগরিব ও এশা’র) নামায একই
সময়ে এবং আট রাকাত (যোহর ও আসরে’র) নামায একই সময়ে আদায়
করেছেন। তাখরিজ: বুখারি ১ম
খণ্ড, পৃ. ১৪০
প্রশ্ন: ঘ। হানাফি মাজহাবের দলিল কি?
উত্তর: ঘ। ফুকাহায়ে আহনাফের দলিলসমূহ
নিম্নরূপ:
আয়াত নং-০১
اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی
الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا
فَاِذَا اطۡمَاۡنَنۡتُمۡ
فَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ ۚ
অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামায ঠিক করে পড়। নিশ্চয়
নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। সূরা নিসা-১০৩
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصِ
بْنِ غِيَاثٍ ، حَدَّثَنَا أَبِي ، حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ ، قَالَ : حَدَّثَنِي
عُمَارَةُ ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُ، قَالَ : مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
صَلَّى صَلَاةً بِغَيْرِ مِيقَاتِهَا، إِلَّا صَلَاتَيْنِ : جَمَعَ بَيْنَ
الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ، وَصَلَّى الْفَجْرَ قَبْلَ مِيقَاتِهَا.
অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি কখনও নবি কে
দেখেনি যে, তিনি নির্ধারিত সময় থেকে সরিয়ে আদায় করেছেন। তবে
দুই নামাজ ব্যতিক্রম হজে মধ্যে মাগরিব-ঈশা একত্রে পড়েছেন। আর
ফজর নামাজ অন্য দিনের তুলনায় আগেই আদায়অ করেছেন। তাখরিজ: বুখারি-১৬৮২; মুসলিম-১২৮৯
হাদিস নং-০২
عن عبد الله رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي الصلاة لوقتها
إلا بجمع وعرفات
ইবন মাসউদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সালাত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করতেন, শুধুমাত্র মুযদালিফা ও আরাফাহ
ছাড়া। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-৩০১০;
ফিকহুস সুনান-৩৩৩
নোট: সনদ সহিহ
হাদিস নং-০৩
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ
لَيْسَ فِي النَّوْمِ التَفْرِيطٌ إِنَّمَا التَّفْرِيطُ فِي الْيَقَظَةِ فاذا
نَسِيَ أَحَدُكُمْ صَلَاةً اَوْ نَامَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا
فَإِنَّ اللّهَ تَعَالى قَالَ أَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
অর্থ: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ ঘুমিয়ে থাকার কারণে সলাত আদায় করতে
না পারলে তা গুনাহ নেই। গুনাহ এই যে, ইচ্ছাকৃত নামাজ বিলম্বিত করা( আর পরবর্তী ওয়াক্ত এসে গেল)। সুতরাং তোমাদের কেউ
সলাত আদায় করতে ভুলে গেলে অথবা সলাতের সময় ঘুমিয়ে থাকলে, যে সময়েই তার কথা স্মরণ হবে,
আদায় করে নিবে। তাখরিজ: মুসলিম ৬৮১, ৬৮৪, আবূ দাঊদ ৪৪১, নাসায়ী ৬১৫, তিরমিযী
১৭৭, ইবনু মাজাহ্ ৬৯৮
হাদিস নং-০৪
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مَا صَلّى رَسُولُ اللهِ ﷺ صَلَاةً لِوَقْتِهَا الْآخِرِ مَرَّتَيْنِ حَتّى
قَبَضَهُ اللّهُ تَعَالى.
رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
অর্থ : হজরত আয়েশা (রা.) বলেন,
আল্লাহ্ তা‘আলা রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি
কোন সলাতকে এর শেষ ওয়াক্তে দু’বারও আদায় করেননি। তাখরিজ: তিরমিযী ১৭৪, হাকিম ১/১৯০
নোট: ইমাম তিরমিযী যদিও হাদীসটি
মুনক্বাতি‘ বলেছেন কিন্তু ইমাম হাকিম হাদীসটি মুত্তাসিল
সূত্রে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং সহিহ।
হাদিস নং-০৫
1111 حَدَّثَنَا حَسَّانُ الْوَاسِطِيُّ ، قَالَ :
حَدَّثَنَا الْمُفَضَّلُ بْنُ فَضَالَةَ ، عَنْ عُقَيْلٍ ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ ،
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا ارْتَحَلَ قَبْلَ أَنْ تَزِيغَ الشَّمْسُ،
أَخَّرَ الظُّهْرَ إِلَى وَقْتِ الْعَصْرِ، ثُمَّ يَجْمَعُ بَيْنَهُمَا، وَإِذَا
زَاغَتْ صَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ رَكِبَ.
অর্থ: আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) সূর্য ঢলে পড়ার পূর্বে সফর শুরু করলে আসরের
ওয়াক্ত পর্যন্ত যুহর বিলম্বিত করতেন এবং উভয় সালাত একত্রে আদায় করতেন। আর (সফর
শুরুর আগেই) সূর্য ঢলে গেলে যুহর আদায় করে নিতেন। অতঃপর সওয়ারীতে উঠতেন। তাখরিজ: ১১১১; মুসলিম-৭০৪
হাদিস/আসার নং-০৬
ن عمر بن الخطاب رضي الله عنه
عنه كتب إلى عامل له ثلاث من الكبائر الجمع بين الصلاتين إلا في عذر والفرار من
الزحف والنهبى)
অর্থ: হজরত ওমর (রা.) তার এক প্রশাসককে লিখেছিলেন, তিনটি বিষয় বিষয় কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। এক. বিনা
ওজরে দুই নামাজকে একত্র করা দুই. জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন
করা তিন. অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন করা। তাখরিজ: সুনানে বায়হাকি- ৩য় খণ্ড,১৬৯
পৃ. ইলাউস সুনান-২য় খণ্ড ৪৬৫পৃ. হাদিস নং-৭৩০
হাদিস/আসার নং-০৭
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى
الله عليه و سلم أَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ ؟ قَالَ : « الصَّلاَةُ لِوَقْتِهَا »
.
“আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজটি সর্বোত্তম? রাসূল বললেন, সময়মত সালাত আদায় করা”।
প্রশ্ন: ঙ। উভয় পক্ষের হাদিসের
দ্বন্দ্ব-এর সমাধান কি?
উত্তর: ঙ। আমরা প্রথম মতের হাদিস
দেখলাম, হযরত ইবনে আব্বাসের (রা.) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় অবস্থানকালীন সময়ে কোনরূপ ভীত ও সফরের কারণ ছাড়াই যোহর ও
আসরের নামায একত্রে আদায় করেছেন।
আবার দ্বিতীয় মতের হাদিস হলো, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি কখনও নবি (ﷺ) কে দেখেনি যে, তিনি নির্ধারিত সময় থেকে সরিয়ে
আদায় করেছেন। তবে দুই নামাজ ব্যতিক্রম হজে মধ্যে মাগরিব-ঈশা
একত্রে পড়েছেন। আর ফজর নামাজ অন্য দিনের তুলনায় আগেই আদায়অ করেছেন।
ফুকাহায়ে আহনাফ বলেন, সালাত জমা করতে হলে প্রথম
ওয়াক্তকে দেরী করে শেষ ওয়াক্তে নিয়ে গিয়ে এবং দ্বিতীয় ওয়াক্তকে একটু আগে টেনে দু’ওয়াক্তের মাঝখানে জমা করতে হবে। অর্থাৎ যুহরের
আওয়াল ওয়াক্তে ‘আসর জমা হবে না এবং ‘আসরের আউয়াল ওয়াক্তে যুহর জমা হবে না। বরং
যুহরের শেষ ওয়াক্তে যুহর ও ‘আসরকে জমা করতে হবে। দলিল:
হজরত আনাস (রা.) বলেন,
কোন সফর যদি নবি করিম এর তাড়া থাকতো, তাহলে
তিনি জোহরকে আসরের ওয়াক্তের সূচনা পর্যন্ত বিলম্বিত করতেন আর দুেই দুই নামাজ একত্র
পড়তেন এবং মাগরিবকে লালিমা ডোবা পন্ত বিলম্বিত করতেন আর মাগরিব-ঈশা একত্র আদায় করতেন। তাখরিজ: বুখারি-১১১১;মুসলিম-৭০৪
ইমাম তহাবি (রহ.) বিষয়টি
পরিষ্কার করে বলেন,
» قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ:
فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى
أَنَّ الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ
وَقْتُهُمَا وَاحِدٌ , قَالُوا:
وَلِذَلِكَ جَمَعَ النَّبِيُّ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ بَيْنَهُمَا فِي
وَقْتِ إِحْدَاهُمَا , وَكَذَلِكَ
الْمَغْرِبُ وَالْعِشَاءُ , فِي
قَوْلِهِمْ وَقْتُهُمَا وَقْتٌ
لَا يَفُوتُ إِحْدَاهُمَا
حَتَّى يَخْرُجَ وَقْتُ
الْأُخْرَى مِنْهُمَا. وَخَالَفَهُمْ فِي
ذَلِكَ آخَرُونَ , فَقَالُوا:
بَلْ كُلُّ وَاحِدَةٍ
مِنْ هَذِهِ الصَّلَوَاتِ
وَقْتُهَا مُنْفَرِدٌ مِنْ
وَقْتِ غَيْرِهَا. وَقَالُوا:
أَمَّا مَا رَوَيْتُمُوهُ عَنْ
رَسُولِ اللهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
مِنْ جَمْعِهِ بَيْنَ
الصَّلَاتَيْنِ , فَقَدْ رُوِيَ
عَنْهُ كَمَا ذَكَرْتُمْ.
وَلَيْسَ فِي ذَلِكَ
دَلِيلٌ أَنَّهُ جَمَعَ
بَيْنَهُمَا فِي وَقْتِ
إِحْدَاهُمَا , فَقَدْ يُحْتَمَلُ
أَنْ يَكُونَ جَمْعُهُ
بَيْنَهُمَا كَانَ كَمَا
ذَكَرْتُمْ وَيُحْتَمَلُ أَنْ
يَكُونَ صَلَّى كُلَّ
وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا فِي
وَقْتِهَا كَمَا ظَنَّ
جَابِرُ بْنُ زَيْدٍ
, وَهُوَ رَوَى ذَلِكَ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ
, وَعَمْرِو بْنِ دِينَارٍ
, مِنْ بَعْدِهِ. فَقَالَ
أَهْلُ الْمَقَالَةِ الْأُولَى:
قَدْ وَجَدْنَا فِي
بَعْضِ الْآثَارِ , مَا
يَدُلُّ عَلَى أَنَّ
صِفَةَ الْجَمْعِ الَّذِي
فَعَلَهُ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا
قُلْنَا. فَذَكَرُوا فِي
ذَلِكَ
ইমাম আবূ জা'ফর তাহাবী (র) বলেনঃ একদল আলিম
এই মত গ্রহণ করেছেন যে, যুহর ও আসরের সালাতের একই ওয়াক্ত।
তাঁরা বলেন, এজন্যই নবী (ﷺ) এ এই দুই সালাতকে ওই দুইটির একটির ওয়াক্তে
একত্রে আদায় করেছেন। অনুরূপভাবে তাঁদের মতে মাগরিব ও ইশার সালাতের ওয়াক্তও
অভিন্ন। যতক্ষণ পর্যন্ত দ্বিতীয় সালাতের ওয়াক্ত শেষ না হবে প্রথম সালাত কাযা হবে
না। পক্ষান্তরে এ বিষয়ে অপরাপর আলিমগণ তাঁদের বিরোধিতা করে বলেছেন, (বিষয়টি এরূপ নয়) বরং এই
সমস্ত সালাতের প্রত্যেকটির ওয়াক্ত অপরটির ওয়াক্ত থেকে পৃথক। তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ থেকে দুই সালাত একত্রে আদায় করার যে রিওয়ায়াত আপনারা
উদ্ধৃত করেছেন, এটা তাঁর থেকে সেই ভাবেই বর্ণিত আছে। কিন্তু
তাতে একথার কোন প্রমাণ নেই যে, তিনি তা এক সালাতের ওয়াক্তে
আদায় করেছেন। দুই সালাতের মাঝে একত্রীকরণ সেইভাবেও হতে পারে, যেভাবে আপনারা উল্লেখ করেছেন। আবার একথারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, তিনি প্রত্যেক সালাত তার নিজস্ব ওয়াক্তে আদায় করেছেন। যেমনটি জাবির ইব্ন
যায়দ (র) ধারণা পোষণ করেছেন এবং তিনি তা ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে রিওয়ায়াত
করেছেন। আর তাঁর পরে আমর ইব্ন দীনার (র) ও রিওয়ায়াত করেছেন।
প্রথমোক্ত অভিমত পোষণকারীগণ বলেন, কিছু সংখ্যক
হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, (দুই সালাতকে) একত্রে আদায় করার
পদ্ধতি তা–ই, যা আমরা বলেছি। তাঁরা এ বিষয়ে
নিম্নোক্ত রিওয়ায়াত উল্লেখ করেছেনঃ
হাদিস/আসার নং-০১
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ
يَحْيَى، قَالَ:
ثنا مُحَمَّدُ بْنُ إِدْرِيسَ،
قَالَ: أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، قَالَ: ثنا عَمْرُو بْنُ دِينَارٍ، قَالَ: أنا جَابِرُ بْنُ زَيْدٍ، أَنَّهُ سَمِعَ ابْنَ
عَبَّاسٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , يَقُولُ:
" صَلَّيْتُ
مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ ثَمَانِيًا
جَمِيعًا , وَسَبْعًا جَمِيعًا. قُلْتُ لِأَبِي الشَّعْثَاءِ: أَظُنُّهُ أَخَّرَ الظُّهْرَ وَعَجَّلَ الْعَصْرَ , وَأَخَّرَ الْمَغْرِبَ , وَعَجَّلَ الْعِشَاءَ , قَالَ:
وَأَنَا أَظُنُّ ذَلِكَ "
ইসমাইল ইবন ইয়াহইয়া
(র)..... ইবন আব্বাস (রা) বলেছেন, আমি মদীনাতে নবী (সা)–এর সঙ্গে আট রাক'আত (যুহর ও আসর) একত্রে এবং সাত রাক'আত (মাগরিব ও
ইশা) একত্রে আদায় করেছি। আমর ইবন দীনার (র) বলেন, আমি আশ শা'সা (জাবির ইবন যায়দ র)–কে বললাম, আমার ধারণা মতে তিনি যুহরের সালাতকে বিলম্ব করে শেষ ওয়াক্তে ও আসরের
সালাতকে জলদি করে প্রথম ওয়াক্তে, আবার মাগরিবকে বিলম্ব করে
শেষ ওয়াজে ও ইশাকে জলদি করে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করেছেন। তিনি বললেন, আমার ধারণাও তাই। তাখরিজ: শারহুল মাআনি আসার-৯৬৬
হাদিস/আসার নং-০২
حَدَّثَنَا فَهْدٌ، قَالَ: ثنا الْحِمَّانِيُّ، قَالَ: ثنا ابْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ ابْنِ أَبِي نَجِيحٍ، عَنْ
إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي ذُؤَيْبٍ، قَالَ: كُنْتُ مَعَ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فَلَمَّا غَرَبَتِ
الشَّمْسُ , هِبْنَا أَنْ نَقُولَ لَهُ
الصَّلَاةَ , فَسَارَ , حَتَّى ذَهَبَتْ فَحْمَةُ الْعِشَاءِ , وَرَأَيْنَا بَيَاضَ الْأُفُقِ , فَنَزَلَ فَصَلَّى ثَلَاثًا الْمَغْرِبَ , وَاثْنَتَيْنِ الْعِشَاءَ , ثُمَّ قَالَ: «هَكَذَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَفْعَلُ»
ফাহাদ (র)..... ইসমাঈল ইব্ন
আবী যুওয়াইব (র) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, একবার
আমি ইব্ন উমার (রা) এর সঙ্গে ছিলাম। যখন সূর্য ডুবে গেল আমরা তাঁকে সালাতের কথা
স্মরণ করিয়ে দিতে সাহস পেলাম না। তিনি চলতে চলতে যখন রাতের প্রথমাংশের অন্ধকার
এগিয়ে আসতে লাগল এবং আমরা দিগন্তের শুভ্রতা দেখলাম, তখন
তিনি অবতরণ করে মাগরিবের সালাত তিন রাক'আত এবং ইশার সালাত দু'রাক'আত আদায় করলেন। তারপর বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে এভাবেই (সালাত আদায়) করতে দেখেছি।
তাখরিজ: শারহুল
মাআনি আসার-৯৭৫
হাদিস/আসার নং-০৩
ا حَدَّثَنَا ابْنُ مَرْزُوقٍ , قَالَ: ثنا عَارِمُ بْنُ الْفَضْلِ , قَالَ:
ثنا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ , عَنْ أَيُّوبَ , عَنْ نَافِعٍ:
أَنَّ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ
عَنْهُمَا اسْتُصْرِخَ عَلَى صَفِيَّةَ بِنْتِ أَبِي عُبَيْدٍ , وَهُوَ بِمَكَّةَ , فَأَقْبَلَ إِلَى الْمَدِينَةِ , فَسَارَ حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ , وَبَدَتِ النُّجُومُ , وَكَانَ رَجُلٌ يَصْحَبُهُ , يَقُولُ:
الصَّلَاةَ الصَّلَاةَ. قَالَ وَقَالَ لَهُ سَالِمٌ: الصَّلَاةَ. فَقَالَ:
«إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا عَجَّلَ بِهِ السَّيْرُ فِي سَفَرٍ،
جَمَعَ بَيْنَ هَاتَيْنِ الصَّلَاتَيْنِ، وَإِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَجْمَعَ
بَيْنَهُمَا، فَسَارَ حَتَّى غَابَ الشَّفَقُ، ثُمَّ نَزَلَ فَجَمَعَ بَيْنَهُمَا»
ইবনে মারযূক (র).... নাফি' (র) থেকে বর্ণনা করেন যে,
ইব্ন উমার (রা) মক্কায় অবস্থানকালে (তাঁর স্ত্রী) সফিয়া বিন্ত
আবূ উবায়দ এর অসুস্থতার সংবাদ পেলেন। তিনি মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হলেন এবং সফর
শুরু করলেন। সফর করতে করতে (এক পর্যায়ে) সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল এবং তারকারাজি
দৃশ্যমান হয়ে পড়ল। তার সফর সঙ্গী জনৈক ব্যক্তি বলতে লাগল, সালাত
আদায় করুন। সালাত আদায় করুন। রাবী বলেন, সালিম (র) ও তাঁকে
বললেন, সালাত আদায় করুন। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ –এর যখন সফরে কোন ত্বরা থাকত তখন এই দুই সালাত (মাগরিব ও ইশা) একত্রে আদায়
করতেন। আমিও এ দু'টি একত্রে আদায় করতে চাচ্ছি। তিনি সফর
অব্যাহত রেখে আরো অগ্রসর হলেন। এমনকি ‘শাফাক' অদৃশ্য হয়ে গেল। তারপর তিনি অবতরণ করে উভয় সালাত একত্রে আদায় করলেন।
তাখরিজ: শারহুল মাআনি আসার-৯৭৯
হাদিস/আসার নং-০৪
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي دَاوُدَ،
قَالَ: ثنا مُسَدَّدٌ، قَالَ: ثنا يَحْيَى، عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ
ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ كَانَ إِذَا جَدَّ بِهِ السَّيْرُ
جَمَعَ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ , بَعْدَمَا يَغِيبُ الشَّفَقُ , وَيَقُولُ:
«إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا جَدَّ بِهِ السَّيْرُ , جَمَعَ بَيْنَهُمَا» قَالُوا:
فَفِي هَذَا دَلِيلٌ عَلَى
صِفَةِ جَمْعِهِ ,
كَيْفَ كَانَ. فَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ عَلَيْهِمْ لِمُخَالِفِهِمْ
أَنَّ حَدِيثَ أَيُّوبَ ,
الَّذِي قَالَ فِيهِ: فَسَارَ حَتَّى غَابَ الشَّفَقُ ثُمَّ نَزَلَ كُلُّ
أَصْحَابِ نَ
ইব্ন আবী দাউদ (র).... ইবন
উমার (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁর যখন সফরে কোন ত্বরা থাকত তখন তিনি ‘শাফাক’ অদৃশ্য হওয়ার পর মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায়
করতেন। আর বলতেন, যখন সফরে কোন ত্বরা থাকত তখন রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)ওই দুই সালাত একত্রে আদায় করতেন।
ইমাম তাহাবী (র)–এর ভাষ্য
তাঁরা বলেন এতে (রিওয়ায়াত সমূহে) তাঁর একত্রীকরণের পদ্ধতি কিরূপ
ছিল তার দলীল বিদ্যমান রয়েছে। তাঁদের বিরোধী গণ তাঁদের বিরুদ্ধে দলীল দিতে গিয়ে
বলেছেন যে, আয়্যূব (র) এর রিওয়ায়াত যাতে বলা হয়েছে,
তিনি সফর করতে ছিলেন তারপর 'শাফাক' অদৃশ্য হয়ে গেল। তারপর তিনি অবতরণ কররেন।
নাফি' (র)–এর কোন সাথীই
ওই কথাটি উল্লেখ করেননি, উবায়দুল্লাহ (র), মালিক (র) ও লায়স (র) কেউ না। ঐ ব্যক্তি যার থেকে আমরা এই বিষয়ে ইবন
উমার (রা)–এর হাদীস বর্ণনা করেছি। এই হাদীসে ইব্ন উমার (রা)–এর আমলের সংবাদ দেয়া হয়েছে। তিনি নবী থেকে (সালাতসমূহ) একত্রে আদায়
করার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কিভাবে একত্রে আদায় করেছেন তা তিনি উল্লেখ করেননি।
উবায়দুল্লাহ্ (র)–এর হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)ওই
দুই সালাতকে একত্রে আদায় করেছেন। তারপর তিনি ইব্ন উমার (রা)–এর একত্রে আদায় করা কিরূপ ছিল
তা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, তিনি ‘শাফাক' অদৃশ্য হওয়ার পর এরূপ করেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য
এটা হতে পারে যে, যখন উভয় সালাতকে একত্রে আদায় করেছেন
তাহলে ইশার সালাত ‘শাফাক 'অদৃশ্য
হওয়ার পর ছিল এবং মাগরিবের সালাত ‘শাফাক' অদৃশ্য হওয়ার পূর্বে আদায় করে ফেলেছিলেন।
যেহেতু ইশার সালাত আদায় না করা পর্যন্ত তিনি 'দুই সালাতের মাঝে একত্রে আদায়কারী' গণ্য হবেন না।
তাই এভাবে তিনি মাগরিব ও ইশার মাঝখানে একত্রে আদায়কারী হয়েছিলেন। আমাদের
বক্তব্যের স্বপক্ষে আয়্যব (র) ব্যতীত অন্য রাবীগণ তা ব্যাখ্যা করে বিস্তারিতভাবে
রিওয়ায়াত করেছেন। তাখরিজ: শারহুল মাআনি আসার-৯৮০
হাদিস/আসার নং-০৫
ا حَدَّثَنَا يُونُسُ قَالَ: أنا ابْنُ وَهْبٍ قَالَ: أَخْبَرَنِي جَابِرُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ , عَنْ عُقَيْلِ بْنِ خَالِدٍ , عَنِ ابْنِ شِهَابٍ , عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ مِثْلَهُ يَعْنِي «أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
كَانَ إِذَا عَجَّلَ بِهِ السَّيْرُ يَوْمًا , جَمَعَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ , وَإِذَا أَرَادَ السَّفَرَ لَيْلَةً , جَمَعَ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ، يُؤَخِّرُ
الظُّهْرَ إِلَى أَوَّلِ وَقْتِ الْعَصْرِ , فَيَجْمَعُ بَيْنَهُمَا، وَيُؤَخِّرُ الْمَغْرِبَ حَتَّى يَجْمَعَ
بَيْنَهَا وَبَيْنَ الْعِشَاءِ , حَتَّى يَغِيبَ الشَّفَقُ» قَالُوا:
فَفِي هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّهُ
صَلَّى الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ فِي وَقْتِ الْعَصْرِ , وَأَنَّ جَمْعَهُ بَيْنَهُمَا كَانَ كَذَلِكَ. فَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ عَلَيْهِمْ لِأَهْلِ
الْمَقَالَةِ الْأُولَى أَنَّ هَذَا الْحَدِيثَ قَ
ইউনুস (র).... আনাস ইবন
মালিক (রা) থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। অর্থাৎ যখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে কোন দিন সফরে দ্রুত চলতে হত তখন তিনি
যুহর ও আসরকে একত্রে আদায় করতেন। আর যখন রাতে সফরের ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন মাগরিব
ও ইশার সালাতকে একত্রে আদায় করতেন। তিনি যুহরের সালাতকে আসরের প্রথম ওয়াক্ত
পর্যন্ত বিলম্ব করে উভয়কে একত্রে আদায় করতেন। এবং মাগরিবকে বিলম্ব করে মাগরিব ও
ইশাকে একত্রে আদায় করতেন, যাতে করে শাফাক অদৃশ্য হয়ে যেত। তাখরিজ: শারহুল
মাআনি আসার-৯৮৪
ব্যাখ্যা
তাঁরা বলেন, এই হাদীসে ব্যক্ত হয়েছে যে,
তিনি আসরের ওয়াক্তে যুহর ও আসরের সালাত আদায় করেছেন এবং উভয়ের
মাঝে তাঁর একত্রীকরণের পদ্ধতি এরূপই ছিল।
حَدَّثَنَا فَهْدٌ، قَالَ: ثنا الْحَسَنُ بْنُ بِشْرٍ، قَالَ: ثنا الْمُعَافَى بْنُ عِمْرَانَ، عَنْ مُغِيرَةَ بْنِ
زِيَادٍ الْمَوْصِلِيِّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ
اللهُ عَنْهَا ,
قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
فِي السَّفَرِ ,
يُؤَخِّرُ الظُّهْرَ وَيُقَدِّمُ
الْعَصْرَ , وَيُؤَخِّرُ الْمَغْرِبَ
وَيُقَدِّمُ الْعِشَاءَ»
ثُمَّ هَذَا عَبْدُ اللهِ بْنُ
مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَيْضًا , قَدْ رَوَيْنَا عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ «أَنَّهُ كَانَ يَجْمَعُ بَيْنَ
الصَّلَاتَيْنِ فِي السَّفَرِ» ثُمَّ قَدْ رُوِيَ عَنْهُ
ফাহাদ (র)...... আয়েশা (রা)
থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)সফর অবস্থায় যুহরের সালাতকে বিলম্বে ও
আসরের সালাতকে আগে (প্রথম ওয়াক্তে) এবং মাগরিবের সালাতকে বিলম্বে ও ইশার সালাতকে
আগে (প্রথম ওয়াক্তে) আদায় করতেন। তারপর আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা)–এর সূত্রেও আমরা রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)থেকে রিওয়ায়াত করেছি যে, তিনি সফর অবস্থায় দুই সালাতকে
একত্রে আদায় করতেন। তাখরিজ: শারহুল মাআনি আসার-৯৮৫
প্রধান্য মত: কুরআন হাদিস পরস্পর বিরোধিতা
হলে প্রথমে সমন্বয় করতে সাধন/ব্যাখ্যা করতে হবে। সুতরাং দুই ফরজ নামাজ একত্রিত করে পড়ার হাদিসগুলোতে
একথা উল্লেখ নেই যে, একই ওয়াক্তে জমা করেছেন। বিষয়টি অন্য
হাদিস দ্বারা পরিষ্কার হয়ে যায় যে,
জমা বাইনাস সালাতাইন জাহিরি অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
কুরআন হাদিস পরস্পর বিরোধিতা হলে দ্বিতীয়ত কুরআন প্রধান্য পাবে। তাই ঠিক সময়েই তা
আদায় করতে হয়। দলিল:
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ
عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا
مَّوْقُوتًا [٤:١٠٣]
নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর
ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। [সূরা নিসা-১০৩]
তৃতীয় কথা হলো, দুটি ফরজ নামাজকে যদি একত্রিত
জায়েজ হতো, তাহলে যুদ্ধের বিভীষিকাময় অবস্থায় সালাতুল খওফ এর
বিধান নাজিল করতেন না। দলিল:
(وَإِذَا كُنتَ
فِيهِمۡ فَأَقَمۡتَ لَهُمُ
ٱلصَّلَوٰةَ فَلۡتَقُمۡ طَآئِفَةٞ
مِّنۡهُم مَّعَكَ وَلۡيَأۡخُذُوٓاْ أَسۡلِحَتَهُمۡۖ فَإِذَا
سَجَدُواْ فَلۡيَكُونُواْ مِن
وَرَآئِكُمۡ وَلۡتَأۡتِ طَآئِفَةٌ
أُخۡرَىٰ لَمۡ يُصَلُّواْ
فَلۡيُصَلُّواْ مَعَكَ وَلۡيَأۡخُذُواْ حِذۡرَهُمۡ
وَأَسۡلِحَتَهُم )
অর্থ: আর যখন তুমি তাদের মধ্যে
থাকবে। অতঃপর তাদের জন্য সালাত কায়েম করবে, তখন যেন তাদের
মধ্য থেকে একদল তোমার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা তাদের অস্ত্র ধারণ করে। এরপর যখন সিজদা
করে ফেলবে, তখন তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান নেয়। আর অপর
একটি দল যারা সালাত আদায় করেনি তারা যেন তোমার সাথে এসে সালাত আদায় করে এবং তারা
যেন তাদের সতর্কতা অবলম্বন ও অস্ত্র ধারণ করে| সূরা নিসা-১০২
পক্ষান্তরে জমা বাইনাস
সালাতাইন হাকিকতান এর পক্ষের হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণের বলেন, জমা করা মুস্তাহাব নয়, বরং ত্যাগ করাই উত্তম।
সুতরাং প্রমাণিত হলো, জমা বাইনাস সালাতাইন হাকিকতান
জায়েজ নেই এবং এটাই সর্বোচ্চ সতর্কতা; তবে জাহিরি সর্বসম্মত
জায়েজ।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত আলোকে
বুঝা যায় কুয়েতের লোকেরা হানাফি মাজহাবের অনুসারি নয়। সুতরাং তারা তাদের মাজহাব অনুযায়ী
আমল করবে, আর আপনি যেহেতু ফিকহি হানাফির অনুসারি, তাই আপনি সঠিক সময়ে আদায় করনে। অথবা জমা বাইনাস সালাতাইন জাহিরি করতে
পারেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৭৬:
আসসালামু আলাইকুম
মাহতাব আল ওয়াসী নামের অর্থ
কি এবং এই নাম টি কি অর্থবহ কিনা??এই নামটি রাখা যাবে কিনা।যদি
কোন কারেকশন থাকে দেওয়া যেতে পারে। তারিখ: ১০/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ নজরুল ইসলাম বান্দরবান
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, শব্দটি
মুরাক্কাব বা যৌগিক । মাহতাব শব্দটি ফারসি ভাষার, অর্থ চাঁদ,
চন্দ্র, চাদনী ইত্যাদি আর ওয়াসি শব্দটি আরবি
আল্লাহ তাআলার গুনবাচক নাম। অর্থ: অসীম, ব্যাপক, বিশাল, বড়,
সুপরিসর ইত্যাদি। যেমন, পবিত্র কুরআনে এসেছে-
নামের দলিল হলো আল্লাহর নিম্নোক্ত
বাণী,
﴿وَٱللَّهُ يَعِدُكُم
مَّغۡفِرَةٗ مِّنۡهُ وَفَضۡلٗاۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ٢٦٨﴾ [البقرة: ٢٦٨]
“আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি
দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”
[সূরা
আল-বাকারা, আয়াত: ২৬৮]
আল-ওয়াসি‘
হলেন, যিনি
সিফাত, গুণাবলী ও এর সম্পৃক্ত সবকিছুতে এতোই প্রশস্ত ও ব্যাপক যে, কেউ
তার প্রশংসা গণনা করতে সক্ষম হবে না;
বরং
তিনি নিজের প্রশংসা নিজে যেভাবে করেছেন তিনি সে রকমই, তিনি
বড়ত্বে, ক্ষমতায়, মালিকানায়, দয়া, ইহসানে
অসীম, প্রশস্ত। তিনি দয়া ও দানশীলতায়
মহান।
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত মাহতাব
আল-ওয়াসি এর অর্থ দাঁড়ায় বড় চাঁদ, (বড়
চাঁদ যার আলো সর্বব্যাপী, পৃথিথীজুড়ে) বিশাল চাঁদ, প্রশস্ত চাঁদ। সুতরাং উক্ত নামটি
রাখতে কোন সমস্যা নেই বলে আমি মনে করি।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৭৭:
আসসালামু আলাইকুম। কারো সন্তান
যে বাচ্চার সাথে দুধ পান করেছে সেই বাচ্চার অন্য ভাই বোনের সাথে উক্ত ব্যক্তির হুরমাতে
রদ্বাআত প্রমাণিত হবে কিনা? তারিখ: ১২/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুল্লাহ আল কাফী ঝিনাইদহ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, رضاعة রিদাআতের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, দুধ
পান করানো। শরয়ী পরিভাষায় ‘রিদাআত’ বলা হয়,
নির্ধারিত
সময়ে, মা ভিন্ন অন্য কোনো মহিলার দুধ পান করা। সূত: আত তারিফাত লিজ
জুরজানী-১১১
দুধ পান করার কারণে নিজ মায়ের
মত হুরমত ও বংশীয় সম্পর্ক কায়েম হয়। দলিল:
কুরআনুল কারিম
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ
أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ
وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ
وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ
অর্থ: তোমাদের সে মাতা, যারা
তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন। সূরা নিসা-২৩
হাদিস
٢٦٤٥ -حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا
هَمَّامٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ جَابِرِ بْنِ زَيْدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ فِي بِنْتِ حَمْزَةَ: «لاَ تَحِلُّ لِي، يَحْرُمُ مِنَ الرَّضَاعِ مَا
يَحْرُمُ مِنَ النَّسَبِ، هِيَ بِنْتُ أَخِي مِنَ الرَّضَاعَةِ –
অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) হযরত হামজা
(রা.) এর কন্যাকে বিবাহের বিষয়ে রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
তাকে
বিবাহ করা তোমার জন্য বৈধ না। কেননা দুধ পান করার দ্বারা যেমন বিবাহ হারাম হয়, তেমনি
বংশের কারণেও হারাম হয়, আর হামজা (রা.) এর কন্যা তোমার দুধবোন। তাখরিজ:
বুখারি-২৬৪৫
ইজমায়ে উম্মাহ: ইসলাম দুধ সম্পর্ককে বংশীয় সম্পর্কের
ন্যায় মনে করে। ইজমায়ে উম্মত হচ্ছে,
বংশীয়
কারণে যারা হারাম, দুধ সম্পর্কের কারণেও তারা হারাম। সূত্র: মূফতী
তকী উসমানী হাফিজাহুল্লাহ, ফিকহুল বূউ,
খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩১৫; শহীদুল
ইসলাম অনূদিত
সুতরাং আপনার প্রশ্নে আলোকে
যে বাচ্চা/শিশু যে নারীর দুধ পান করেছে ঐ নারীর (দুধ মায়ের)
সকল সন্তান দুধপানকারীর শিশুর সন্তান হুরমত সাবস্ত্য হবে।
আর দুধ পানের বয়স ও কতুটুকু পান
করলে হুরমত সাবস্ত্য হবে এ বিষয়ে বুরহানে জিজ্ঞাসা-১২৩২৪ শিরোনামে মাসয়ালাটি
আলোচিত হয়েছে। লিংকটি নিম্নে দেওয়া হলো:
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/10/blog-post_31.html
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৭৮:
আসসালামু আলাইকুম।
"মানুষের মন ভাঙ্গা আর মসজিদ
ভাঙ্গা সমান।" এটি কি কোন হাদীসের বাণী? তারিখ: ১৫/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ যশোর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত
কথাটি সরাসরি হাদিস নয়। তবে কথাটি পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর সমর্থিত।
যেমন,
মুমিনদেরকে শারীরিক-মানসিক কষ্ট দেওয়া কবিরা গুনাহ ।
وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ
الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا
فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا
আর যারা মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদেরকে কষ্ট দেয় তাদের কোন অপরাধ ছাড়াই, তারা
অপবাদের ও সুস্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে। সূরা আহযাব-৫৮
❐ আবদুল্লা বিন উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে তিনি
বলেন: একদা গুরুত্বপূর্ণ পদ ওয়াসাল্লাম মিম্বারে জোরে উচ্চ স্বরে বলেন:
يَا مَعْشَرَ مَنْ أَسْلَمَ
بِلِسَانِهِ، وَلَمْ يُفْضِ الْإِيْمَانُ إِلَى قَلْبِهِ! لَا تُؤْذُوْا
الْـمُسْلِمِيْنَ، وَلَا تُعَيِّرُوْهُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ ;
فَإِنَّهُ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيْهِ الْـمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللهُ
عَوْرَتَهُ، وَمَنْ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ رَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ
وَفِيْهُ فِيْهُلْ عَوْرَتَهُ
''হে লোক
সকল! আপনারা যারা ইসলাম গ্রহণ লোক সকল! আপনারা যারা ইসলাম গ্রহণ
করেছেন; প্রকাশ্যে আমার অন্তরে জানে, তোমরা
মুসলিমদেরকে কষ্ট দিও না।
তাখরিজ: তিরমিযী ২০৩২, মুসনাদে
আহমেদ, সহিহ আবু দাউদ-৪৮৮০
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ،
قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ
وَيَقُولُ " مَا أَطْيَبَكِ وَأَطْيَبَ
رِيحَكِ مَا أَعْظَمَكِ وَأَعْظَمَ حُرْمَتَكِ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ
بِيَدِهِ لَحُرْمَةُ الْمُؤْمِنِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ حُرْمَةً مِنْكِ مَالِهِ
وَدَمِهِ وَأَنْ نَظُنَّ بِهِ إِلاَّ خَيْرًا "
অর্থ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ
(ﷺ)-কে কাবা ঘর তাওয়াফ করতে দেখলাম এবং
তিনি বলেছিলেন: কত
উত্তম তুমি
হে কাবা! আকর্ষণীয় তোমার
খোশবু, কত উচ্চ
মর্যাদা
তোমার (হে কাবা)! কত মহান
সম্মান তোমার।
সেই সত্তার
শপথ! যাঁর হাতে
মুহাম্মদের প্রাণ! আল্লাহর নিকট
মুমিন ব্যক্তির
জান-মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা তোমার
চেয়ে অনেক
বেশি। আমরা
মুমিন ব্যক্তি
সম্পর্কে
সুধারণা-ই
পোষণ করি।
তাখরিজ
: সুনানে ইবনে
মাজাহ-৩৯৩২; ছহিহুত তারগিব-২/৬৩০
ونظر ابن عمر
يوما إلى البيت
فقال : ما أعظمك
و أعظم حرمتك
وللمؤمن أعظم عند
الله حرمة منك অর্থ : হজরত নাফে (রহ.)বলেন, একদিন হজরত
ইবনে ওমর (রা.)
বাইতুল্লাহ বা
কাবার দিকে
তাকিয়ে বললেন, তুমি কতই না
ব্যাপক ও বিরাট! তুমি কতই
না সম্মানিত, কিন্তু তোমার চেয়েও
মুমিনের সম্মান
ও মর্যাদা
আল্লাহর নিকটে
অনেক বেশি। তাখরিজ : তিরিমিজি-২০৩২; ছহিহ ইবনে
হিব্বান-৫৭৬৩; শরহুস সুন্নাহ-৩৫২৬
নোট : ইমাম তিরমিজি (রহ.)বলেন, হাদিস হাসান
গরিব।
জিজ্ঞাসা-১২৩৭৯:
আসসালামু আলাইকুম।
"একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার এক
পর্যায়ে
তালাক তালাক তিন বার বলে। উক্ত ব্যক্তি তোমাকে তালাক দিলাম এসব কিছু
বলেনি শুধু তালাক শব্দ বলেছে এতে কি তালাক কার্যকর হবে? তারিখ: ১৬/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
জনৈক মাওলানা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, তালাকের
শব্দসমূহ দুই প্রকার ছরিহ (সুস্পষ্ট) ও কিনায়া (ইঙ্গিত)। স্বয়ং তালাক শব্দ দ্বারা তালাক পতিত হবে, শব্দটি ছরিহ-এর অন্তভুক্ত। এ বিয়ষে কোন ওলামাদের মতভেদ নেই। ইমাম শাফেয়ি (রহ.)
বলেন,
الطلاق باللفظ: واللفظ قد يكون
صريحاً، وقد يكون كناية، فالصريح هو الذي يفهم من معنى الكلام عند التلفظ به، مثل:
أنت طالق ومطلقة، وكل ما اشتق من لفظ الطلاق.
قال الشافعي رضي الله عنه: ألفاظ
الطلاق الصريحة ثلاثة: الطلاق، والفراق، والسراح، وهي المذكورة
অর্থাৎ তালাকে ছরিহের শব্দ
তিনটি। যথা: তালাক ফারাক ও সিরাহ। সূত্র: শরহুল মুনতাহিল ইরাদাত- ৫খণ্ড; ৪০৪ পৃ. ; কিতাবু শরহি যাদিল মুসতাকনা-৬খণ্ড;২৯০ পৃ.
দ্বিতীয় কথা হলো, আনতি তালাক/তোমাকে তালাক দিলাম এ কথা বলা জুররি নয়। কেননা
তালাক শব্দের মধ্যেই বিচ্ছেদ রয়েছে। যেমন,
تعريف و معنى طلاق في معجم المعاني الجامع - معجم عربي
عربي
طِلاق: (اسم)
طِلاق : جمع طِّلْق
طَلاَق: (اسم)
الطَّلاقُ : التَّطْلِيقُ
الطلاقُ : الطُّلَقَةُ
الطَّلاقُ (في الشرع) : رَفْعُ قيد النكاح المنعقد بين
الزوجين بألفاظ مخصوصة
অর্থাৎ তালাক শব্দের অর্থ বিচ্ছিন্ন
হওয়া, বন্ধন মুক্ত হওয়া ইত্যাদি। পরিভাষায়
তালাক অর্থ ‘ নির্দিষ্ট শব্দসমূহ দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাহের বাঁধন খুলে দেওয়া’ বা বিবাহের শক্ত বন্ধন খুলে দেওয়া।
সূত্র: মুজামু ওয়াফি
তৃতীয় কথা হলো, প্রতিটি ভাষায় শব্দ সংক্ষেপকরণ
পদ্ধতি রয়েছে। যেমন, কেহ যদি বলে সাপ সাপ। এর পূর্ণ অর্থ হলো
সাপ থেকে আমাকে বাঁচাও। ঠিক আরবিতে ফেলকে মাহজুফ (গোপন করে)
শুধু মাফউলকে উল্লেখ করার রেওয়াজ রয়েছে। যেমন, বাঘ, বাঘ। এখানে ইত্তাকিল আসাদ (আমাকে বাঘ থেকে বাঁচাও)
ঠিক আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত
শুধু তালাক অর্থ তোমাকে তালাক দিলাম হবে। যদি তালাক উদ্দেশ্য না হয়, তাহলে শব্দটি বললো কেন? অন্য শব্দ/গালি ব্যবহার করতো। সুতরাং প্রমাণিত হলো শুধু তালাক দ্বারা তালাক কার্যকর
হবে। সূত্র: কাশশাফুল কানা-১২/২২৬
চতুর্থ কথা হলো, উক্ত ব্যক্তির স্ত্রী তার উপর হারাম হয়ে গেছে।
এখন স্ত্রীকে ফিরে পাবার
একমাত্র মাধ্যম হলো হিলা বিবাহ। এর পদ্ধতি
হলো, তালাক বলার পর থেকে উক্ত মহিলার তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পর যদি অন্যত্র
বিবাহ হয়, তারপর সেই দ্বিতীয় স্বামীর সাথে
স্বাভাবিক ঘর সংসার করতে থাকে,
তারপর
দ্বিতীয় স্বামীও কোন কারণে তালাক দেয়,
বা মারা
যায়, তাহলে ইদ্দত শেষে আবার প্রথম স্বামী
বিয়ে করতে পারবে।
এছাড়া আর কোনভাবেই প্রথম স্বামী
উক্ত তিন তালাক দেয়া স্ত্রীর সাথে ঘর সংসার করা জায়েজ হবে না। দলিল:
আয়াতে কারিমা
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ
لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا
جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ
[٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার)
তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে
ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর
হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। সূরা বাকারা-২৩০
হাদিসে নববি
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر
إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم
أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’
(রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে
আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী
হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ
করা পর্যন্ত। তাখরিজ: বুখারী-৫৩৬৪
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে উক্ত
ব্যক্তি তালাক শব্দ তিনবার বলার কারণে তালাকে মুগাল্লাজা (চূড়ান্ত)
তালাক পতিত হয়েছে। তাই এখন পরবর্তী পদক্ষেপ (ইদ্দত
পালন) নিতে হবে। আর একসঙ্গে তিন তালাক দিলে কয় তালাক পতিত হয়। এ
বিষয়ে আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-১৯২
শিরোনামে মাসয়ালাটি প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের ওয়েবসাইটে সার্চ অপশনে তালাশ করলে
পাওয়া যাবে ইনশাল্লাহ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা
-১২৩৮০:
আসসালামুয়ালাইকুম।
আজকে আমি আসরের নামাজ পাঁচ রাকাত আদায় করেছি। উল্লেখ্য যে, সাহু সিজদাও করিনি। সুতরাং এমতাবস্থায় নামাজ কি
সহিহ হয়েছে?
জনৈক
সম্মানিত মাওলানা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
জবাব:
ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। نحمده و نصلي على رسوله الكريم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর, প্রথম কথা হলো, হানাফি মাযহাবসহ অন্যান্য ইমামের মতেও আখেরি
বৈঠক ফরজ। দলিল:
إن
الجلوس مقدار التشهد فرض، وليس التشهد ولا السلام بواجب فرضا. قاله أبو حنيفة وأصحابه
وجماعة من الكوفيين. واحتجوا بحديث ابن المبارك عن الإفريقي عبد الرحمن بن زياد
وهو ، وفيه أن النبي ﷺ قال: "إذا جلس أحدكم في آخر صلاته فأحدث قبل أن يسلم
فقد تمت صلاته". قال ابن العربي: وكان شيخنا فخر الإسلام ينشدنا في الدرس:
দ্বিতীয়
কথা হলো, যদি আরেখি বৈঠক করে, ৫ /৬ রাকাতে সাহু সিজদা দিয়ে সালাম ফিরালে
নামাজ সহিহ হতো।
তৃতীয়
কথা হলো, যদি আপনি আরেখি বৈঠক না করে
থাকেন, তাহলে নামাজ শুদ্ধ হয়নি। এ
এক্ষেত্রে সাহু সিজদা দিলেও নামাজ শুদ্ধ হতো না, আখেরি
বৈঠক ব্যতীত নামাজ হয় না। দলিল:
الجلوسُ للتشهُّدِ الأخيرِ ركنٌ مِن أركانِ الصَّلاةِ.
الأدلَّة:
أوَّلًا:
من السُّنَّة
عن
أبي حُمَيدٍ السَّاعديِّ رضيَ اللهُ عنه، قال: ((أنا أعلَمُكم بصلاةِ رسولِ اللهِ
صلَّى اللهُ عليه وسلَّم - وفيه - حتَّى إذا كانتِ الرَّكعةُ التي تنقضي فيها
الصَّلاةُ، أخَّرَ رِجْلَه اليُسرى، وقعَد على شِقِّه متورِّكًا ثم سلَّمَ ))
أخرجه
أبو داود (730)، والترمذي (304)، والنسائي (1262)، وابن ماجه (1061)، وأحمد
(23647) باختلاف يسير. قال الترمذيُّ: حسنٌ صحيح. وصحَّحه البيهقي في ((السنن
الصغير)) (1/160)، وابن العربي في ((عارضة الأحوذي)) (1/339)، وابن القيِّم في
((تهذيب السنن)) (2/416) وقال: صحيح متلقًّى بالقَبول لا عِلَّةَ له. وصحَّحه
الألباني في ((صحيح سنن أبي داود)) (730).
অর্থাৎ
অতঃপর তিনি সর্বশেষ রাকআতে স্বীয় বাম পা ডান দিকে বের করে দিয়ে বাম পাশের পাছার
উপর ভর করে বসতেন। তখন তারা সকলে বলেন, হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এই রূপেই নামায আদায় করতেন।*
তাখরিজ:
সুনানে আবু দাউদ- ৭৩০, তিরমিজি-৩০৪;নাসায়ি-১২৬২; ইবনে
মাজাহ-১০৬১
নোট:
হাদিসটির শেষাংশ উল্লেখ করা হয়েছে।
هذا
النصِّ على الإجماع إلَّا أنَّ ابن عبد البرِّ ذكَر خلافًا ضعيفًا في المسألة. قال
ابن عبد البرِّ: (وكذلك الجلسة الآخِرة عند جمهور العلماء فرضٌ واجب (أيضًا)، وما
أعلم أحدًا خالف فيها إلَّا بعض البصريِّين بحديث ضعيف انفرد به من لا حُجَّة في
نقله). ((التمهيد)) (10/190). وقال أيضًا: (واختلفوا في الجلسة الأخيرة؛ هل هي فرض
أيضًا أم لا؟ فذهب جمهورُ أهل العلم وجماعةُ فقهاء الأمصار إلى أنَّها فرض واجب،
تفسد صلاةُ مَن لم يأتِ بها ساهيًا كان أو عامدًا، إلَّا فرقة صغيرة منهم ابن
عُليَّة؛ فإنَّه ذهب إلى أنَّ الجلسة الآخرة ليست بفرض واجب قياسًا على الجلسة
الوسطى) ((الاستذكار)) (1/524).
অর্থাৎ
জমহুর আহলে এলেম ও ফোকাহায়ে কেরামের জামাতের নিকট শেষ জলসা ফরজ। সুতরাং যে ছেড়ে
তার নামাজ বাতিল হবে। সূত্র: আলইসতিসকার-১/৫২৪, ইমাম
নববি রহ.;তামহিদ-১০/১৯০
সারকথা
হলো, আপনার আজকের আসরের নামাজটি
সহিহ হয়নি। তাই নামাজে অংশগ্রহণকারী মুসল্লীকে যদি চিনে থাকেন, তাহলে তাদেরকে পুনরায়
নামাজটি পড়ার জন্য বলতে হবে অথবা মসজিদে ঘোষণা করতে হবে যেন নামাজটি পুনরায় পড়ে
নেয়। সূত্র: আলবাহরুর রায়েক ২/১০২; আলমুহীতুল বুরহানী
و الله اعلم بالصواب
উত্তর
প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৮১:
হিজরতের
প্রাক্কালে রসূলুল্লাহ্ (ﷺ)হযরত আবুবকর (রা)এর দরজায় নক করার সাথে সাথে দরজা খোলা, দরজার গায়ে হেলান দিয়ে হিজরতের আদেশের অপেক্ষা
----সংশ্লিষ্ট ঘটনাটির রেফারেন্স জরুরী ৷ কারো জানা থাকলে শেয়ার করবেন প্লিজ ৷
মাওলানা
ইউনুছ আলী,সুদান,আফ্রিকা থেকে ৷ مع السلامة الكاملة
জবাব:
ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। نحمده و نصلي على رسوله الكريم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর, প্রথম কথা হলো, হজরতে সাহাবায়ে কেরামের দ্বীনের জন্য
কুরবানী-আত্মত্যাগ কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, সর্বজন
স্বীকৃত।
আর এ
দলের অগ্রনয়াক ছিলেন সিদ্দিকে আকবর আবু বকর রা.। তার জন্য দরজার সাথে পিঠ লাগিয়ে
থাকা অসম্ভব কিছু না।
দ্বিতীয়
কথা হলো, আমাদের অনুসন্ধানে
নির্ভরযোগ্য হাদিস ও সিরাত গ্রন্থে সরাসরি আপনার প্রশ্নের উল্লেখিত ঘটনাটি পাওয়া
যায়নি। তবে নিম্নোক্ত ঘটনাটি পাওয়া যায়:
قَالَتْ:
فَلَمَّا رَآهُ أَبُو بَكْرٍ، قَالَ: مَا جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذِهِ السَّاعَةَ إلَّا لِأَمْرٍ حَدَثَ. قَالَتْ: فَلَمَّا
دَخَلَ، تَأَخَّرَ لَهُ أَبُو بَكْرٍ عَنْ سَرِيرِهِ، فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَيْسَ عِنْدَ أَبِي بَكْرٍ إلَّا أَنَا
وَأُخْتِي أَسَمَاءُ بِنْتُ أَبِي بَكْرٍ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “أَخْرِجْ عَنِّي مَنْ عِنْدَكَ“، فَقَالَ: يَا رَسُولَ
اللَّهِ، إنَّمَا هُمَا ابْنَتَايَ، وَمَا ذَاكَ؟ فِدَاكَ أَبِي وَأُمِّي!
فَقَالَ: “إنَّ اللَّهَ قَدْ أَذِنَ لِي فِي الْخُرُوجِ وَالْهِجْرَةِ“. قَالَتْ:
فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: الصُّحْبَةَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: “الصُّحْبَة
অর্থাৎ
হজরত আয়েশা রা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যখন (আবু বকর রা. এর গৃহে) প্রবেশ করলেন, তখন আবু বকর (রাঃ) তাঁর বিছানা থেকে সরে গেলেন।
অতঃপর
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহিসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে গেলেন এবং আমি ও আমার
বোন আসমা বিনতে আবু বকর ব্যতীত রসূলের সাথে কেউ ছিল না। সূত্র: আলবিদায়া ওয়ান
নিহায়া; আসসিরাতুন নুবুওয়া- ইবনে
হিশাম হামিরি(সিরাতে ইবনে হিশাম)-২ খণ্ড,৩৩৫
পৃ.
و الله اعلم بالصواب
উত্তর
প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক বগুড়া
জিজ্ঞাসা
-১২৩৮২:
الدنياء مزرعة الاخرة
এটা
হাদিস কিনা? কাইন্ডলি রেফারেন্স সহ জানালে
খুশি হব।
মাওলানা
আব্দুল হালিম রাজেন্দ্রপুর থেকে
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহ। نحمده و نصلي على رسوله الكريم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এটা সরাসরি হাদিস নয়, বরং মনীষীর বাণী। তবে এটা
কুরআন সুন্নাহর নির্যাস কথা।
এ
বিষয়ে হানাফি মাজহাবের অন্যতম ফকিহ-মুহাদ্দিস মোল্লা আলী কারী রহ. বলেছেন। যেমন,
فإن هذا الحديث ذكره الملا علي القاري في الموضوعات ونقل عن
السخاوي أنه قال: لم أقف عليه. وذكر الملا علي القاري أن معناه صحيح يقتبس من قوله
تعالى: مَن كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ {الشورى:20}.
অর্থাৎ
এই হাদিসটি মুল্লা আলী আল-কারি আল-মাওজুআতে (জাল) উল্লেখ করেছেন এবং তিনি
আল-সাখাভির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন: আমি এটি খুঁজে পাইনি।
এবং
মোল্লা আলী আল-কারী বলেছেন যে এর অর্থ সঠিক। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি পরকালের ফসল
কামনা করে, আমরা তার চাষাবাদে তার
জন্য বৃদ্ধি করব। সূরা আল-শুরা-20
সূত্র:
মাকাতাবাতুশ শামেলা,ফাতওয়াশ শাবকাতুল ইসলামিয়া
-১০৭৯৭ পৃ.
و الله اعلم بالصواب
জিজ্ঞাসা
-১২৩৮৩:
জনাব
আসসালামু আলাইকুম। একজন হাফেজ দশ ব্যক্তির জান্নাতের সুপারিশ করতে পারবে।দয়া করে
রেফারেন্স সহ হাদীসটি জানাবেন।
মাওলানা মোঃ ছমির উদ্দিন
ঘাটাইল টাঙ্গাইল থেকে
জবাব:
ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
نجده
و نصلي على رسوله الكريم
তাসলিম
ও হামদ-সানার পর কথা হলো, হাদিসটি নিম্নে উল্লেখ করা
হলো,
عَنْ
عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَاسْتَظْهَرَهُ
فَأَحَلَّ حَلاَلَهُ وَحَرَّمَ حَرَامَهُ أَدْخَلَهُ اللَّهُ بِهِ الْجَنَّةَ
وَشَفَّعَهُ فِي عَشَرَةٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ كُلُّهُمْ وَجَبَتْ لَهُ النَّارُ
" . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ
مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَلَيْسَ إِسْنَادُه
ইবনে
আবু তালেব রা: হতে বর্ণিত হয়েছে,
হজরত
রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে
এবং উহা মুখস্থ করেছে অতঃপর কুরআন যা হালাল করেছে সে নিজের জন্য তা হালাল করেছে
এবং কুরআন যা হারাম করেছে সে নিজের জন্য তা হারাম করেছে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ
করাবেন এবং নিজ পরিবারের এমন দশজনের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে। যাদের পরিণাম
জাহান্নাম অবধারিত ছিল।’ তাখরিজ: তিরমিজি-২৯০৫, ইবনে মাজাহ-২১৬
নোট:
ইমাম তিরমিজি রহ বলেন, হাদিসটির সনদ গরিব।
আর
কতক মুহাদ্দেস হাদিসটির সনদ দুর্বল বলেছেন।
و الله اعلم بالصواب
উত্তর
প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর
রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৮৪:
জনাব আসসালামু আলাইকুম। সত্তর হাজার
ফেরেস্তাসহ জানাজা হয়েছে এমন সাহবা কে?
দয়া করে
জানাবেন। তারিখ: ২০/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم
اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর আপনার প্রশ্নের আলোকে উক্ত
সাহাবির সম্পর্কে হাদিস উল্লেখ করা হলো,
أَخْبَرَنَا إِسْحَاقُ بْنُ
إِبْرَاهِيمَ، قَالَ حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مُحَمَّدٍ الْعَنْقَزِيُّ، قَالَ
حَدَّثَنَا ابْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ
عُمَرَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " هَذَا الَّذِي
تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ وَفُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَشَهِدَهُ
سَبْعُونَ أَلْفًا مِنَ الْمَلاَئِكَةِ لَقَدْ ضُمَّ ضَمَّةً ثُمَّ فُرِّجَ عَنْهُ " .
أخبرنا إسحاق بن إبراهيم، قال
حدثنا عمرو بن محمد العنقزي، قال حدثنا ابن إدريس، عن عبيد الله، عن نافع، عن ابن
عمر، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال " هذا الذي تحرك له العرش وفتحت له
أبواب السماء وشهده سبعون ألفا من الملائكة لقد ضم ضمة ثم فرج عنه " .
অর্থ: ইসহাক ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ... ইবনে উমর (রা.) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
সেই
ব্যক্তি যার জন্য আরশ কেঁপে উঠেছিল এবং যার জন্য আকাশের দ্বারসমুহ খূলে গিয়েছিল এবং
যার জানাযার সত্তর হাজার ফেরেশতা উপস্থিত হয়েছিল তার কবরও সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর
তা প্রশস্ত হয়ে গিয়েছিল। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ী, হাদীস
নং ২০৫৫
তাহকীক: হাদিসটির সনদ ছহিহ/বিশুদ্ধ
ব্যাখ্যা:
قَوْله ( هَذَا
الَّذِي تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ ) زَادَ الْبَيْهَقِيُّ فِي كِتَاب عَذَاب
الْقَبْر يَعْنِي سَعْد بْن مَعَاذ وَزَادَ فِي دَلَائِل النُّبُوَّة قَالَ
الْحَسَن تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ فَرَحًا بِرُوحِهِ وَرَوَى أَحْمَد
وَالْبَيْهَقِيُّ مِنْ حَدِيث عَائِشَة عَنْ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه تَعَالَى
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ لِلْقَبْرِ ضَغْطَةً لَوْ كَانَ أَحَدٌ نَاجِيًا
مَا نَجَا مِنْهَا سَعْد بْن مَعَاذ.
حاشية السندي على سنن النسائي:
أبو الحسن، محمد بن عبد الهادي نور الدين السندي (المتوفى: 1138هـ)
অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি/ সাহাবির নাম হলো সাদ বিন মুয়াজ
(রা.) । সূত্র; হাশিয়াতুল সানাদি আলা সুনানিন নাসায়ি
শেষ কথা হলো, কবরের সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া এটা আযাবের
আলামত মোটেই নয়, এটা মুমিন-কাফির নির্বিশেষে সকলের সাথে কবরের প্রাথমিক
আচরণ, এজন্যেই কবর থেকে এতো বেশী আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ সাদ
বিন মুয়াজ (রা.) কে
কববের চাপ দিয়েছে, এটা সত্য নয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৮৫:
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি
ওয়াবারাকাতুহ।সম্মানিত শাইখের নিকট কালালাহ এর (নিঃসন্তান ও পিতা-মাতা হীন ব্যক্তির
) সম্পদ বন্টন সম্পর্কে জানতে চাই। প্রশ্নঃ মৃত ব্যক্তির বোন,ভাই এক বা একাধিক থাকলে সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতের আলোকে সম্পদ প্রাপ্ত হবে। আমার
প্রশ্ন হলো মৃত ব্যক্তির যদি কোন ভাই বা বোন তার আগে মৃত্যু বরণ করে তাহলে তার ভাই
বা বোনের ছেলে -মেয়েরা কি তার চাচা ওফুফুদের সাথে (কালালাহ) সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে।
জাযাকাল্লাহ। তারিখ: ২১/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আশরাফুল ইসলাম, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, মৃত্যু ব্যক্তির ভাই-বোন
জীবিত থাকলে ভাতিজা-ভাতিজি বা ভাগ্না-ভাগ্নি
কোন অংশ পাবে না। দলিল:
وى الرحم هو كل قريب ليس بذى سهم
ولا عصبة…….. وذووالأرحام أصناف أربعة:……. والصنف الثالث ينتمى إلى أبوى الميت،
وهم أولاد الأخوات، وبنات الإخوة (السراجى فى الميراث-75)
لرد على ذوى الفروض النسبية بقدر
حقوقهم، ثم ذوى الأرحام (السراجى فى الميراث-11-12)
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে মৃত ব্যক্তির যদি কোন ভাই বা বোন তার আগে মৃত্যু বরণ
করে, তাহলে তার ভাই বা বোনের ছেলে -মেয়েরা তার চাচা ওফুফুদের সাথে (কালালাহ) সম্পত্তির ওয়ারিশ
হবে না, বঞ্চিত হবে। সূত্র: আস সিরাজি
ফিল মিরাস, ১১-১২ পৃ.
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৮৮:
জনাব আসসালামু আলাইকুম। গণকবর
বা একই কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন দেওয়া সম্পর্কে শরয়ি বধান কি? তারিখ: ২১/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-মামুন
কুমিল্লা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, স্বাভাবিক
অবস্থায় এক কবরে একজনকেই কবর দেওয়া উত্তম এবং একাধিক ব্যক্তিকে দাফন করা অনুত্তম।
বিশেষ প্রয়োজনে, বিশেষ করে যুদ্ধের ময়দানে জায়েজ, কোন সমস্যা নেই। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا إِسْحَقُ بْنُ
يُوسُفَ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ
هِلَالٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ: شَكَوْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أُحُدٍ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ،
الْحَفْرُ عَلَيْنَا لِكُلِّ إِنْسَانٍ شَدِيدٌ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «احْفِرُوا وَأَعْمِقُوا وَأَحْسِنُوا، وَادْفِنُوا
الِاثْنَيْنِ وَالثَّلَاثَةَ فِي قَبْرٍ وَاحِدٍ»، قَالُوا: فَمَنْ نُقَدِّمُ يَا
رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «قَدِّمُوا أَكْثَرَهُمْ قُرْآنًا»، قَالَ: فَكَانَ أَبِي
ثَالِثَ ثَلَاثَةٍ فِي قَبْرٍ وَاحِدٍ
অর্থ: হিশাম ইব্ন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন। আমরা উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ্
(ﷺ) এর কাছে অভিযোগ করে বললাম, ইয়া
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের
পক্ষে প্রত্যেক মানুষের জন্য কবর খনন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেন, তোমরা কবর খনন কর এবং কবরকে গভীর কর আর মৃতদের উত্তমরূপে
দাফন কর এবং দুইজন, তিনজনকে এক এক কবরে দাফন কর। সাহাবীগণ বললেন। ইয়া
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)! কাকে প্রথমে রাখব? তিনি
বললেন, যে কুরআন বেশি জানে তাকে প্রথমে রাখ। রাবী বলেন, এভাবে
আমার পিতা একই কবরের তিনজনের অন্যতম ছিলেন। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-২০১০; সুনানে
ইবনে মাজাহ-১৫৬০; মিশকাতুল মাসাবিহ-১৭০৩
হাদিস নং-০২
حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرٍ،
قَالَ: حَدَّثَنَا أَبِي، قَالَ: سَمِعْتُ حُمَيْدَ بْنَ هِلَالٍ، عَنْ سَعْدِ
بْنِ هِشَامِ بْنِ عَامِرٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: لَمَّا كَانَ يَوْمُ أُحُدٍ
أُصِيبَ مَنْ أُصِيبَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ، وَأَصَابَ النَّاسَ جِرَاحَاتٌ،
فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «احْفِرُوا
وَأَوْسِعُوا، وَادْفِنُوا الِاثْنَيْنِ وَالثَّلَاثَةَ فِي الْقَبْرِ،
وَقَدِّمُوا أَكْثَرَهُمْ قُرْآنًا»
সা'দ এর পিতা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি
বলেন, যখন উহুদের দিন অনেক মুসলমানের উপর বিপদ আসল আর সাহাবীগণ
ক্ষত-বিক্ষত হলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেন, তোমরা কবর খনন কর এবং তা প্রশস্থ কর। আর দুই
দুইজন তিন তিনজন ব্যক্তিকে এক এক কবরে দাফন কর এবং যে ব্যক্তি কুরআন বেশী জানে তাকে
প্রথমে রাখ। তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-২০১১
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৮৯:
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি
ওয়াবারাকাতুহ।সম্মানিত শাইখের নিকট সালাতুল কসর এর একটি বিধান জানতে চাই। বিষয়টি হলো
আমরা যখন এক্সারসাইজে গমন করি তখন যদি কেউ 16 দিনের নিয়তে বের হয় এমত অবস্থায় সে
ছয় দিন এমন জায়গায় অবস্থান করল যার দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার এরপর আবার সে তার নির্দিষ্ট
স্থান ত্যাগ করে ৮০ কিলোমিটার অতিক্রান্ত করলো
সেখানে কিছুদিন থাকলো আবার সে আরেক জায়গায় চলে গেল সেখানেও কিছুদিন থাকলো সে ক্ষেত্রে
মুসাফিরের কসরের বিধান কি হবে বা মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে কিনা । জাযাকাল্লাহ। তারিখ: ২১/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আবুল ফজল সাভার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
আলহামদুল্লিাহ কসর সালাত ও মুসাফির
সম্পর্কে আল-বুরহানে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসা-১২৮, ১৭৫ ও ১২৩৪৮ শিরোনামে আলোচিত হয়েছে।
দ্বিতীয় কথা হলো, হানাফি মাজহাবের সিদ্ধান্ত
অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ৪৮ মাইল (৭৭.২৪৬৪কিলোমিটার)
বা এর বেশি সফর করার নিয়তে কেউ যদি নিজ গ্রাম বা শহরের সীমানা অতিক্রম করে এবং
সফর অবস্থায় কোনো স্থানে একসাথে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত না করা পর্যন্ত মুসাফির
থাকবে। কোনো স্থানে একসাথে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করলে মুকীম গণ্য হবে এবং পূর্ণ
নামায পড়তে হবে। সূত্র: শরহুল মুনয়াহ-৫৩৫ ; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২১
ফিকহি হানাফির দলিল:
হাদিস/আসার নং-০১
وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ، وَابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُمْ، يَقْصُرَانِ، وَيُفْطِرَانِ فِي أَرْبَعَةِ بُرُدٍ وَهِيَ سِتَّةَ
عَشَرَ فَرْسَخًا
ইবনে উমর রাযি এবং ইবনে আব্বাস রাযি চার বারীদ সফরের সময়
কসর পড়া এবং রোযা ভাঙ্গার কথা বলেছেন। আর সেটি হল, ১৬ ফরসখ। তাখরিজ: বুখারি-১০৮৬, নামায কসর করা অধ্যায়
ব্যাখ্যা:
এক ফরসখ তিন মাইল হয়ে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক বারীদ হয় ১২
মাইল। আর চার বারীদকে ১২ দিয়ে গুণ দিলে কিংবা ষোল ফরসখকে তিন দিয়ে গুণ দিলে হয় ৪৮
মাইল। অতএব, সফরের দূরত্ব দাঁড়াচ্ছে ৪৮
মাইল। সূত্র: কামুসুল ফিকহ ২/৩১৪ আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ১/৭৫
হাদিস/আসার নং-০২
عن عمر رضي الله عنه قال: تقصر الصلاة في مسيرة ثلاث ليال
উমার রা. বলেন, তিন
রাতের দূরত্বে সালাত সংক্ষিপ্ত করা হবে। তাখরিজ: ফিকহুস সুনান, হাদীস নং ৯৩৩
নোট:
মুহাম্মাদ কিতাবুল হাজ্জ-এ সহীহ সনদে সুওয়াইদ ইবন গাফলাহ
থেকে অনুরূপ মতামত সঙ্কলিত করেছেন)। [তাবারি, তাহযীবুল
আসার, হাদীস-১২৫৯; মুসান্নাফ ইবন আবী
শাইবা, হাদীস-৮১৩০]
ব্যাখ্যা: একজন ব্যক্তি সাধারণত একদিনে ১৬ মাইল হাঁটতে
পারে। তিন দিয়ে গুণ করলে ৪৮ মাইল হয়।
হাদিস/আসার নং-০৩
عن ابن عمر رضي الله عنهما: إذا كنت مسافراً فوطنت نفسك على إقامة خمسة عشر يوماً فأتمم الصلاة
وإن كنت لا تدري فاقصر
ইবন উমার রা. বলেন, তুমি
যদি মুসাফির হও এবং ১৫ দিন অবস্থানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর তাহলে সালাত পূর্ণ করবে।
আর যদি তুমি না জান যে কতদিন থাকবে তাহলে সালাত সংক্ষেপ (কসর) করবে।
নোট: তাহাবি ইবন আব্বাস ও ইবন উমার থেকে অনুরূপ মত সঙ্কলন
করেছেন)। [মুহাম্মাদ, কিতাবুল আসার, হাদীস-১৮৮]
হাদিস/আসার নং-০৪
عن مجاهد قال: كان ابن عمر رضي
الله عنهما كان إذا أجمع على إقامة خمسة عشر يوماً أتم الصلاة
তাবিয়ি মুজাহিদ
বলেন, ইবন উমার রা. যখন ১৫ দিন অবস্থানের সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করতেন তখন সালাত পূর্ণরূপে (চার রাকআত) আদায় করতেন। তাখরিজ: ফিকহুস সুনান,
হাদীস নং ৯৩৮
নোট: ইবন আবী শাইবা ও মুহাম্মাদ কিতাবুল হাজ্জ-এ। তাদের
উভয়ের সনদ সহীহ। [মুসান্নাফ ইবন আবী
শাইবা, হাদীস-৮২১৭]
সারকথা হলো, আপনার
প্রশ্নের আলোকে প্রথম জায়গায় ৬ দিন অবস্থান, ৭০ কিলো.
দূরে সেখানে মুকিম এর সালাম তথা পূর্ণ সালাম আদায় করতে হবে। আর দ্বিতীয়/তৃতীয় জায়গায় ৮০ কিলো. দূরে সেখানে কসর সালাত আদায় করতে হবে। সূত্র: শরহুল মুনয়াহ-৫৩৫ ; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২১
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৯০:
আসসালামু আলাইকুম। আমার একটা
জিজ্ঞাসা হলো, নফল রোজা অবস্থায় সহবাস করলে তার কাফ্ফারা আছে কি? তারিখ:
২২/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা নূরুল হক সুদান
থেকে
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, নফল রোজা
নষ্ট/ভেঙ্গে ফেললে কাফফারা দিতে হবে না। তবে কাজা আদায় করতে হবে। এ বিষয়ে
هو قول أبي حنيفة ومالك؛ أن من
شرع في صوم يوم تطوعاً يلزمه إتمامه، وإذا أفطر لعذر من الأعذار فيجب عليه قضاؤه،
এটি আবু হানিফা ও মালিকের
উক্তি ; যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় রোজা রাখা শুরু করে তার জন্য
তা পূর্ণ করা ওয়াজিব, এবং যদি সে কোনো অজুহাতের কারণে রোজা
ভঙ্গ করে, তবে তাকে অবশ্যই তা কাযা করতে হবে।
ইমামদ্বয়ের দলিল:
পবিত্র কুরআন থেকে দলিল:
আয়াত নং -০১
وَلاَ تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ “(محمد: آية 33)،
অর্থ: আর তোমরা তোমাদের
আমলসমূহ নষ্ট/বাতিল করো। সূরা মুহাম্মাদ -৩৩
ব্যাখ্যা: আমল বিভিন্নভাবে
নষ্ট হতে পারে, তার মধ্যে একটি হল শুরু করে আবার ছেড়ে দেওয়া।
আয়াত নং -০২
Surah Al-Hadid, Verse 27:
وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا
مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللَّهِ فَمَا رَعَوْهَا
حَقَّ رِعَايَتِهَا
আর বৈরাগ্য, সে তো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে; আমি এটা তাদের
উপর ফরজ করিনি; কিন্তু তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে এটা
অবলম্বন করেছে। অতঃপর তারা যথাযথভাবে তা পালন করেনি। সূরা হাদিদ -২৭
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে ইশারাতুন
নস দ্বারা বোঝা যায়, নফল আমল শুরু করলে তা পুরো করা উচিত।
হাদিসে নববি:
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ
أُهْدِيَ لِي وَلِحَفْصَةَ طَعَامٌ وَكُنَّا صَائِمَتَيْنِ فَأَفْطَرْنَا ثُمَّ
دَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْنَا لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ
إِنَّا أُهْدِيَتْ لَنَا هَدِيَّةٌ فَاشْتَهَيْنَاهَا فَأَفْطَرْنَا فَقَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لاَ عَلَيْكُمَا صُومَا مَكَانَهُ يَوْمًا آخَرَ
অর্থ: ‘আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদা আমার ও হাফসার জন্য কিছু খাবার হাদিয়া স্বরূপ
আসে। এ সময় আমরা উভয়ে রোজাদার ছিলাম। কিন্তু (খাবার পাওয়াতে) আমরা রোজা ভেঙ্গে তা
খেয়ে ফেলি। এরপর রাসূল (ﷺ)
হাজির হলে, আমরা তাঁকে বলি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নিশ্চয়ই আমাদের
জন্য কিছু খাবার হাদিয়া স্বরূপ আসে, আর আমাদের তা খেতে ইচ্ছা
হওয়াতে আমরা রোজা ভেঙ্গে খেয়ে ফেলেছি। রাসূল (ﷺ) বলেন, ক্ষতি নেই। তোমাদের উভয়ের জন্য অন্য
কোনোদিন কাযা রোযা রাখতে হবে।’ তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-
২৪৫৭
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে উক্ত
ব্যক্তি শুধু কাযা আদায় করবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না । সূত্র: আল জাওহারাতুন
নিয়ারাহ-১ খণ্ড,১৪১ পৃ. ফাতহুল কাদির- ২ খণ্ড,৩৬৫ পৃ.
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৯১:
বাড়ির মালিককে ভাড়া না দিয়ে এককালীন
(মালিক-ভাড়াটিয়ার ঐক্যমতে) নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত নেয়ার
শর্তে ভাড়া থাকা জায়েজ আছে কি না?
তারিখ: ২২/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, বন্ধক
পদ্ধতির বৈধতা সম্পর্কে ফিকহি হানাফির অন্যতম ফকিহ
ইবনে
আবেদীন শামী রহ. বলেন,
[ كِتَابُ الرَّهْنِ] هُوَ مَشْرُوعٌ، لِقَوْلِهِ تَعَالَى - {فَرِهَانٌ مَقْبُوضَةٌ} [ البقرة:
283] - وَبِمَا
رُوِيَ «أَنَّهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - اشْتَرَى مِنْ يَهُودِيٍّ طَعَامًا وَرَهَنَهُ بِهِ
دِرْعَهُ» وَانْعَقَدَ عَلَيْهِ
الْإِجْمَاعُ.
অর্থাৎ- বন্ধক পদ্ধতি কোরআনে
কারীমের সূরা বাকারার ২৮৮নং আয়ত দ্বারা প্রমাণিত এবং নবীজী (ﷺ) কর্তৃক নিজ বর্মকে বন্ধক রাখা দ্বারাও প্রমাণিত হয়।সর্বোপরি
বৈধতার উপর উলমায়ে কেরামদের ইজমা বা ঐক্যমত ও রয়েছে। সূত্র: রদ্দুল মুহতার-৬/৪৭৭
দ্বিতীয় কথা হলো, বন্ধককৃত বস্তু বন্ধকগ্রহীতার কাছে
আমানতস্বরূপ। বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতার কোনো ফায়দা
হাসিল করা নাজায়েজ ও হারাম। এমনকি বন্ধকদাতা এর অনুমতি দিলেও পারবে না। কারণ
বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতা কোনো ধরনের ফায়দা উপভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত, যা হারাম। সূত্র: বাদায়েউস
সানায়ে : ৬/১৪৬ দলিল:
হাদিস/আসার নং-০১
ফাযালাহ ইবুন উবাইদ
(রা.) বলেন,
كُلُّ قَرْضٍ جَرَّ مَنْفَعَةً
فَهُوَ وَجْهٌ مِنْ وُجُوهِ الرِّبَا
‘যে ঋণ থেকে ঋণদাতা উপকৃত হয় তা
সুদের একটি প্রকার।’তাখরিজ: সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদিস: ১১২৫২
হাদিস/আসার নং-০২
اسْتَقْرَضَ رَجُلٌ مِنْ رَجُلٍ خَمْسَمِائَةِ دِينَارٍ عَلَى أَنْ
يُفْقِرَهُ ظَهْرَ فَرَسِهِ فَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ : مَا أَصَبْتَ مِنْ ظَهْرِ فَرَسِهِ فَهُوَ رِبًا
ইবনে সিরিন (রহ.) সূত্রে
বর্ণিত, তিনি
বলেন, জনৈক লোক সাহাবি ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কাছে
জিজ্ঞেস করল, এক ব্যক্তি আমার কাছে একটি ঘোড়া বন্ধক
রেখেছে, তা আমি আরোহণের কাজে ব্যবহার করেছি। ইবনে মাসউদ
(রা.) বলেন, তুমি আরোহণের মাধ্যমে এর থেকে যে উপকার লাভ
করেছ তা সুদ হিসেবে গণ্য হবে। তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৭১
হাদিস/আসার নং-০৩
إذا أقرض أحدكم قرضاً فأهدى إليه
أو حمله على الدابة فلا يركبه ولا يقبلها إلا أن يكون جرى بينه وبينه قبل ذلك.
অর্থাৎ প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ (কাউকে) ঋণ দেয়।
অতঃপর (ঋণগ্রহীতার তরফ থেকে) তাকে কোন উপঢৌকন দেওয়া হয় অথবা তাকে (ঋণগ্রহীতা নিজের
গাড়ি বা) সওয়ারীতে চড়িয়ে কোথাও পৌঁছিয়ে দিতে চায়, তবে
সে যেন তার সওয়ারীতে না চড়ে এবং তার উপঢৌকনও গ্রহণ না করে। তবে হ্যাঁ, যদি এরূপ সদ্ব্যবহার (উপঢৌকন আদান-প্রদান ঋণ দেওয়ার) পূর্ব থেকেই জারী
থাকে তবে (তার পরে) অনুরূপ কিছু গ্রহণ করায় দোষ নেই।’’ মুসনাদে
আহমদ ১/৩৯৫, ৪২৪, ইবনে মাজাহ
২২৭৯, বাইহাকী, মিশকাত ২৮২৭
নং
হাদিস/আসার নং-০৪
বিখ্যাত তাবেয়ি ইমাম কাজি
শুরাইহ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সুদ পান করা কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বলেন, বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকি গাভির দুধ পান
করা সুদ পানের অন্তর্ভুক্ত। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৬৯,
সারকথা কথা হলো, বাড়ির মালিককে ভাড়া না দিয়ে এককালীন (মালিক-ভাড়াটিয়ার
ঐক্যমতে) নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত নেয়ার শর্তে ভাড়া থাকা
আমাদের দেশে প্রচলিত জমি কটের/বন্ধকের মত।
ঋণদাতার জন্য বন্ধকি মাল/বস্তু/জমি/বাড়ি ফায়দা নেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটি মূলত ঋণ প্রদান করে বিনিময়ে সুদ
গ্রহণেরই একটি প্রকার। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত পদ্ধতিটি জায়েজ
হবে না।
তবে বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে এ
সম্পর্কে আল-বুরহানের জিজ্ঞাসা-২৩৮ এবং বন্ধক সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা-২৩৭,১০৪ শিরোনামে আলোচিত হয়েছে সার্চ অপশনে তালাশ করলে পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৯৩:
ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট
কোন ফজিলত পূর্ণ দিন আছে? বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার। তারিখ: ২২/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোহাম্মাদ আব্দুর রহমান
বগুড়া থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
يجوزُ للمُسلم أن يؤدِّي العُمرة
في أيِّ وقتٍ من أوقات العام، وفي أيِّ شهرٍ من شهوره؛ فأداؤها لا يختصُّ بوقتٍ
محدد، فللمسلم أن يؤدِّيها متى شاء،[٧] ولا يُكره تأديتُها في أيِّ وقتٍ، سواءً
كانت في أشهر الحجِّ أو غيرها.[٨]
একজন মুসলমানের জন্য বছরের যে
কোন সময় এবং এর যে কোন মাসে ওমরাহ করা জায়েয । এর কার্যকারিতা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট নয়, তাই
মুসলিম যখনই ইচ্ছা তা পালন করতে পারে। সূত্র: শরহু কিতালি জামে লিলআহকামিল ওমরা ওয়াল হজ
ওয়াল জিয়ারাত-৩ খণ্ড, ৩ পৃ.
দ্বিতীয় কথা হলো, রজমান মাসে ওমরা করার বিশেষ
ফজিলত রয়েছে। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا عَبْدَانُ،
أَخْبَرَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، أَخْبَرَنَا حَبِيبٌ الْمُعَلِّمُ، عَنْ
عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ لَمَّا رَجَعَ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم مِنْ حَجَّتِهِ قَالَ لأُمِّ سِنَانٍ الأَنْصَارِيَّةِ "
مَا مَنَعَكِ مِنَ الْحَجِّ ". قَالَتْ أَبُو فُلاَنٍ ـ تَعْنِي زَوْجَهَا ـ
كَانَ لَهُ نَاضِحَانِ، حَجَّ عَلَى أَحَدِهِمَا، وَالآخَرُ يَسْقِي أَرْضًا
لَنَا. قَالَ " فَإِنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً مَعِي
". رَوَاهُ ابْنُ جُرَيْجٍ عَنْ عَطَاءٍ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: আবদান (রাহঃ) ... ইবনে ‘আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী (ﷺ) হজ্জ
থেকে ফিরে এসে উম্মে সিনান (রাযিঃ) নামক এক আনসারই মহিলাকে বললেনঃ হজ্জ আদায় করাতে
তোমাকে কিসে বাধা দিল? তিনি বলেন,
অমুকের
আব্বা অর্থাৎ তাঁর স্বামী, কারণ পানি টানার জন্য আমাদের মাত্র দু’টি উট আছে। একটিতে সওয়ার হয়ে তিনি হজ্জ আদায় করতে গিয়েছেন। আর
অন্যটিতে আমাদের জমিতে পানি সিঞ্চনের কাজ করছে। নবী (ﷺ) বললেনঃ রমযান মাসে একটি ‘উমরা আদায় করা একটি ফরজ হজ্জ আদায় করার সমান অথবা বলেছেনঃ আমার
সাথে একটি হজ্জ আদায় করার সমান। তাখরিজ: বুখারি-১৮৬৩; মুসলিম-১২৫৬
হাদিস নং-০২
عُمرةٌ في رمضانَ تعدِلُ حَجَّةً
الراوي : هرم بن خنبش | | المصدر : صحيح ابن ماجه | الصفحة أو الرقم :
2441 | خلاصة حكم المحدث : صحيح | التخريج : أخرجه ابن ماجه (2992)، وأحمد (17600)
অর্থাৎ রমজানে ওমরাহ করা
হজের সমতুল্য। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ-২৪৪১,২৯৯২; মুসনাদে আহমদ-১৭৬০০
হাদিস নং-০৩
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল কাজ করবে, সে যেন
অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে, সে যেন
অন্য মাসের ৭০টি ফরজ সম্পাদন করল।’ তাখরিজ: বায়হাকি-৩০৫,৩০৬; মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস
: ১৯৬৫
নোট: হাদিসটির সনদ দুর্বল।
তৃতীয় কথা হলো, সোম ও বৃহস্পতিবারের আমল নামা
আল্লাহ তাআলার দরবারে পৌঁছে, তাই এ দিনে নফল ইবাত করা উত্তম।
দলিল:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ
يَحْيَى، حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ رِفَاعَةَ، عَنْ سُهَيْلِ
بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم قَالَ " تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ
وَالْخَمِيسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ " . قَالَ
أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ فِي هَذَا الْبَابِ حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ . মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহইয়া
(রাহঃ) ...... আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন,
প্রতি
সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমল পেশ করা হয়। সুতরাং আমি ভালবাসি সায়িম অবস্থায় আমার আমলসমূহ
পেশ করা হয়। তাখরিজ: জামে' তিরমিজি- ৭৪৭
নোট: ইমাম আবু ঈসা তিরমিজি (রহঃ) বলেন, এই বিষয়ে
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বর্ণিত হাদীসটি হাসান-গারীব।
সারকথা কথা, ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন ফজিলত পূর্ণ তথা বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার ব্যাপারে সরাসরি
কোন নস নেই। সোম ও বৃহস্পতিবার উত্তম হতে পারে রোজার হাদিসের উপর কিয়াস করে। আর
রমজান মাসের ব্যাপারে,
هذا وتجدر الإشارة إلى أن أجر
أداء العمرة في شهر رمضان المبارك -كأجر حجة مع الرسول صلى الله عليه وسلم- يحصل
بمجرد تأدية العمرة في أيِّ يومٍ من رمضان؛ سواءً كان ذلك في أوَّله أو آخِره،[٥]
ولكنَّ أداءها في العُشر الأواخر من رمضان أفضل بلا شك؛ لأنَّها أفضلُ أيام
الشَّهر الكريم উল্লেখ্য যে রমজানের বরকতময় মাসে ওমরাহ করার সওয়াব
- রাসূলের সাথে হজের সওয়াবের মতো - রমজানের যে কোনও দিনে কেবল ওমরাহ করার মাধ্যমে
পাওয়া যায়। শুরুতে হোক বা শেষ, তবে রমজানের শেষ দশদিনে এর
আমল নিঃসন্দেহে ভালো; কারণ এটি পবিত্র মাসের শ্রেষ্ঠ দিন। সূত্র: ফাতওয়ায়ে নুরু আলাল দারব-১৭ খণ্ড; ১৭২ পৃ.
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৯২:
দোকান বা বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে
যে advance
নেওয়া হয়, এরপর আবার মাসে মাসে ভাড়াও নেওয়া হয়
এর বৈধতা কতটুকু? অগ্রিম যেটা নেওয়া হয়েছে তাকি দোকান
বা বাড়ির মালিক ভোগ করতে পারবে? সবিনয়ে জানতে
চাই।
তারিখ: ২৩/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
রফিকুল ইসলাম বগুড়া থেকে।
আল্লাহ তাকে নিরাপদে ও শান্তিতে রাখুন।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনি একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন করেছেন। আপনি
শুধু অ্যাডভান্স সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। কিন্তু সিকিউরিটি মানি এর সাথে
সম্পর্কিত। সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাডভান্স ও সিকিউরিটি
মানি বহুল আলোচিত দুটি মাসয়ালা । আপনা এ সংক্রান্ত
সহজে বুঝার জন্য কয়েক ভাগে ভাগ করেছি-
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق
والمعين
প্রশ্ন: ক। অ্যাডভান্স
কাকে বলে?
উত্তর: ক। এককালীন
গ্রহণ করা টাকা প্রতি মাসেই কিছু কিছু করে ভাড়া হিসাবে কাটা হয়, যাকে অ্যাডভান্স বলে।
প্রশ্ন: খ। সিকিউরিটি
মানি কাকে বলে?
উত্তর: খ। ভাড়াদাতা
জামানত হিসেবে ভাড়াগ্রহিতা থেকে যে টাকাটা গ্রহণ করে থাকে, ভাড়ার
চুক্তি শেষে তা আবার ভাড়াগ্রহিতাকে ফেরত দিয়ে দিতে হয়, যাকে
সিকিউরিটি মানি বলে।
প্রশ্ন:
গ। দোকান বা বাড়ি
ভাড়ার ক্ষেত্রে যে advance/সিকিউরিটি মানি নেওয়া হয় জায়েজ কি?
উত্তর: গ। হ্যাঁ,
দোকান বা বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে যে advance/সিকিউরিটি
মানি দেওয়াকে ইসলামি আইনের পরিভাষায় বন্ধক বলা হয়। আর
কোনো কিছু বন্ধক রাখা শরিয়তে জায়েয আছে। দলিল:
وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ عَلٰی سَفَرٍ
وَّ لَمۡ تَجِدُوۡا کَاتِبًا فَرِهٰنٌ مَّقۡبُوۡضَۃٌ ؕ فَاِنۡ اَمِنَ بَعۡضُکُمۡ
بَعۡضًا فَلۡیُؤَدِّ الَّذِی اؤۡتُمِنَ اَمَانَتَهٗ وَ لۡیَتَّقِ اللّٰهَ رَبَّهٗ
ؕ وَ لَا تَکۡتُمُوا الشَّهَادَۃَ ؕ وَ مَنۡ یَّکۡتُمۡهَا فَاِنَّهٗۤ اٰثِمٌ
قَلۡبُهٗ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ
অর্থ: আর যদি তোমরা সফরে থাক
এবং কোন লেখক না পাও, তাহলে হস্তান্তরিত বন্ধক রাখবে। --- - সূরা
বাকারা-২৮৩
عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ وَلَقَدْ رَهَنَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم دِرْعَهُ بِشَعِيرٍ،
নবী করীম (ﷺ) ও তাঁর লোহার বর্মটি একজন ইয়াহুদীর কাছে বন্ধক রেখেছিলেন।
বুখারী-২২০০,মুসলিম
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.),
ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.), শাবী (রহ.) প্রমুখ
সাহাবা-তাবেয়ি থেকে বর্ণিত আছে, তারা বলেন, আগাম বিক্রিতে বিক্রেতা থেকে বন্ধক নিলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস: ১৪০৮৬, ১৪০৮৭, ১৪০৯০
প্রশ্ন: ঘ। অগ্রিম যেটা নেওয়া হয়েছে তাকি দোকান বা বাড়ির
মালিক ভোগ করতে পারবে?
উত্তর: ঘ।
না, অগ্রিম যেটা নেওয়া হয়েছে তাকি
দোকান বা বাড়ির মালিক ভোগ-ব্যবহার করতে পারবে না। তা
হারাম এবং সুদ হিসেবে পরিগিণিত হবে। কারণ বন্ধকী বস্তু
থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়।
দলিল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى
الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم. " الرَّهْنُ يُرْكَبُ بِنَفَقَتِهِ إِذَا كَانَ
مَرْهُونًا، وَلَبَنُ الدَّرِّ يُشْرَبُ بِنَفَقَتِهِ إِذَا كَانَ مَرْهُونًا،
وَعَلَى الَّذِي يَرْكَبُ وَيَشْرَبُ النَّفَقَةُ ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন, বাহনর পশু বন্ধক থাকলে তার
খরচের পরিমাণে তাতে আরোহণ করা যাবে। তদ্রুপ দুধেল প্রাণী বন্ধক থাকলে তার খরচের
পরিমাণে দুধ পান করা যাবে (এর অতিরিক্ত যাবে না)। (মোট কথা) আরোহণকারী এবং দুধ
পানকারীকেই খরচ বহন করতে হবে। বুখারি-২৩৪৭, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন
ইবনে সিরিন (রহ.) থেকে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর নিকট এক
ব্যক্তি এসে বলল, আমার কাছে এক ব্যক্তি একটি ঘোড়া বন্ধক
রেখেছে। আমি এতে আরোহণ করেছি। তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন, তুমি এর পিঠ থেকে (আরোহণ করে) যে উপকৃত হয়েছ তা সুদের অন্তর্ভুক্ত।
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস: ১৫০৭১
প্রশ্ন: ঙ। অ্যাডভান্স ও
সিকিউরিটি মানি মালিকের ব্যবহার করার
বৈধ কোনো বিকল্প পদ্ধতি আছে কি?
উত্তর: ঙ।
হ্যাঁ, অ্যাডভান্স ও সিকিউরিটি মানি মালিকের ব্যবহার করার বৈধ কোনো
বিকল্প পদ্ধতি আছে। যেমন,
সিকিউরিটির টাকা ভাড়াগ্রহিতা
থেকে ঋণ হিসেবে নিলে তা ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু তখন এ সিকিউরিটি মানির কারণে
ভাড়া কমানো যাবে না। কেননা ঋণ নিয়ে কোনো সুবিধা দিলে তা সুদ হিসেবে গণ্য হয়।
সূত্র: মুসনাদে
আহমদ : ৬৬২৮; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ
আতাসী : ৩/১৪৫, ১৯৬; মাবসুত, সারাখসি : ১৪/৩৫, ২১/১০৮; কিতাবুল
আসল : ৩/১৬৩; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ মাদ্দাহ : ৪৬৮
প্রশ্ন: চ। অ্যাডভান্স ও
সিকিউরিটি মানি জমা থাকার কারণে প্রতিমাসে টাকা কম কাটা/ নেওয়া জায়েজ আছে কি?
উত্তর: চ। সিকিউরিটি মানির কারণে
ভাড়া কম রাখা জায়েজ নয়। অর্থাৎ সিকিউরিটি মানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ভাড়া কমে
যাওয়ার যে প্রচলন আমাদের সমাজে রয়েছে, তা জায়েজ নয়। কেননা
সিকিউরিটি মানি ভাড়াদাতার কাছে ঋণ হিসেবে থাকে। তাই এ টাকার কারণে ভাড়ার পরিমাণ
কমিয়ে দিলে তা ঋণ দিয়ে ঋণগ্রহিতা থেকে অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত,
যা সুদ ও হারাম। দলিল:
ফাযালা বিন উবাইদ (রা.) বলেন, ‘যে ঋণ কোনো মুনাফা নিয়ে আসে,
তা রিবার অন্তর্ভুক্ত। সুনানে বাইহাকি : ৫/৩৫০
তবে সিকিউরিটি মানি না হয়ে
যদি অ্যাডভান্স তথা অগ্রীম ভাড়া প্রদান করার কারণে ভাড়া কিছুটা কমানো হয়, তবে তাতে সমস্যা নেই। কেননা
অ্যাডভান্সের টাকাটা ভাড়াদাতার কাছে ঋণ হিসেবে থাকে না। ফলে ভাড়া কমানো হলেও তা
ঋণের পরিবর্তে কমানো হয়েছে বলে গণ্য হয় না। সূত্র: আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকি : ৫/৫৭৩; আলমাবসুত, সারাখসি
: ১৪/৩৫; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ : ৪৬৮; আলমাআয়িরুশ শরইয়্যাহ : ১৪৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৯৪:
পুরুষ ও মহিলা সলাত আদায়ের ক্ষেত্র
রুকু ও সিজদাহ করার সময় কোন পার্থক্য আছে কি? তারিখ: ২৩/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আনওয়ারুল আম্বিয়া যশোর
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, নারী-পুরুষ মধ্যে শারীরিক
গঠন,অবয়ব, সক্ষমতা এক নয়, তাই তো নামাজ-রোজা-হজ ইত্যাদি
ইবাদতের ক্ষেত্রে পার্থক্য-ছাড় রয়েছে। তাই রুকু-সিজদার ক্ষেত্রে পার্থক্য
রয়েছে। নিম্নে হাদিস ও আসার উল্লেখ করা
হলো, ونسأل الله التوفيق وهو الموفق
والمعين
নারীদের রুকুর পদ্ধতি:
মহিলাগণ রুকুর সময় পুরুষদের
মত পূর্ণাঙ্গ ঝুঁকবে না। বরং উভয় হাত হাটুতে রাখবে। কিন্তু জড়োসড়ো হয়ে পুরুষদের
চেয়ে কম ঝুঁকবে। দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا حَفْصٌ عَنِ
الْجَعْدِ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ عَنِ ابْنَةٍ لِسَعْدٍ أَنَّهَا
كَانَتْ تُفْرِطُ فِي الرُّكُوع تَطَأْطُؤًا مُنكَرَاً ، فَقَالَ لَهَا سَعْدٌ : إنَّمَا يَكْفِيك إذَا وَضَعْت يَدَيْك عَلَى
رُكْبَتَيْك.
আয়েশা বিনতে সা’দ থেকে বর্ণিত, তিনি রুকুতে খুব বেশী ঝুঁকতেন যা দৃষ্টিকটু। অতঃপর হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. তাকে বললেন: তোমার দুই হাত হাঁটুতে রাখলে তোমার
জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। তাখরিজ: ইবনে আবী শাইবা- ২৫৯২
নোট: এ হাদীসের রাবিগণ সবাই বুখারি ও মুসলিমের রাবি।
হাদিস/আসার নং-০২
حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ
الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي أَيُّوبَ ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ
أَبِي حَبِيبٍ ، عَنْ بُكَيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الأَشَجِّ ، عَنِ ابْنِ
عَبَّاسٍ ؛ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ صَلاَةِ الْمَرْأَةِ ؟ فَقَالَ : تَجْتَمِعُ وَتَحْتَفِزُ. (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب الصلاة، في المرأة كَيْفَ تَجْلِسُ فِي
الصَّلاَةِ، رقم الحديث-2794)
হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা
হল-মহিলারা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন-“খুব জড়সড়
হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। তাখরিজ: মুসান্নাফে
ইবনে আবী শাইবা-২৭৯৪
হাদিস/আসার নং-০২
عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ
عَطَاءٍ قَالَ:
تَجْتَمِعُ الْمَرْأَةُ إِذَا
رَكَعَتْ تَرْفَعُ يَدَيْهَا إِلَى بَطْنِهَا، وَتَجْتَمِعُ مَا اسْتَطَاعَتْ،
فَإِذَا سَجَدَتْ فَلْتَضُمَّ يَدَيْهَا إِلَيْهَا، وَتَضُمَّ بَطْنَهَا
وَصَدْرَهَا إِلَى فَخِذَيْهَا، وَتَجْتَمِعُ مَا اسْتَطَاعَتْ “
হযরত আতা বিন আবী রবাহ রহ. বলেন: মহিলারা যখন
রুকু করবে তখন জড়োসড়ো হয়ে করবে। হাত উঁচু করে পেটের সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং
যথাসম্ভব জড়োসড়ো হয়ে থাকবে। অতঃপর যখন সিজদা করবে দুই হাত শরীরের সাথে মিলিয়ে
রাখবে। পেট ও সিনা রানের সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়োসড়ো হয়ে থাকবে। তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক-৫০৬৯
নারীদের সিজদা পদ্ধতি:
হাদিস নং-০১
3016 – أخبرناه أبو بكر محمد بن محمد أنبأ أبو الحسين الفسوي
ثنا أبو علي اللؤلؤي ثنا أبو داود ثنا سليمان بن داود أنبأ بن وهب أنبأ حيوة بن
شريح عن سالم بن غيلان عن يزيد بن أبي حبيب : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم مر على امرأتين تصليان فقال إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة
ليست في ذلك كالرجل (سنن الكبرى للبيهقى، كتاب الحيض، باب ما يستحب للمرأة من ترك
التجافي في الركوع والسجود، رقم الحديث-3016)
তাবেয়ী ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহ. বলেন-একবার
রাসূল সা. দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন-“যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের
সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। তাখরিজ: সুনানুল বায়হাকি-৩০১৬, কিতাবুল মারাসিল লি ইমাম আবু
দাউদ-৮০
নোট: হাদিসটির সনদ সম্পর্কে আহলে হাদিসের
অন্যতম নেতা/আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের
ব্যাখ্যাগ্রন্থ “আওনুল বারী” (১/৫২০)
তে লিখেছেন-“উল্লেখিত হাদিসটি সকল ইমামদের উসুল অনুযায়ী দলীল
হিসেবে পেশ করায় যোগ্য”।
হাদিস নং-০২
وَالآخَرُ حَدِيثُ أَبِى مُطِيعٍ : الْحَكَمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَلْخِىِّ عَنْ
عُمَرَ بْنِ ذَرٍّ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :« إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى
الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ
أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ
اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا (السنن الكبرى، كتاب الصلاة، باب مَا يُسْتَحَبُّ
لِلْمَرْأَةِ مِنْ تَرْكِ التَّجَافِى فِى الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ، رقم الحديث-3324)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর
রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ)
ইরশাদ করেছন-“মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর
যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক
উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেখে বলেন-ওহে আমার ফেরেস্তারা! তোমরা সাক্ষী থাক। আমি
তাকে ক্ষমা করে দিলাম। তখিরিজ: সুনানে বায়হাকি-৩৩২৪
নোট: এই হাদিসটির সনদ হাসান।
হাদিস/আসার নং-০৩
5072 – عبد الرزاق عن إسرائيل عن أبي
إسحاق عن الحارث عن علي قال إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها (مصنف عبد الرزاق، كتاب الصلاة،
باب تكبير المرأة بيديها وقيام المرأة و ركوعها وسجودها، رقم الحيث-5072)
হযরত আলী রা. বলেছেন-মহিলা যখন সেজদা করে তখন
সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৫০৭২,
মুসান্নাফে ইবনে শাইবা-২৭৯৩, সুনানে কুবরা
বায়হাকী-২/২২২
. হাদিস/আসার
নং-০৪
5068 – عبد الرزاق عن معمر عن الحسن وقتادة قالا إذا سجدت المرأة فإنها تنضم
ما استطاعت ولا تتجافى لكي لا ترفع عجيزتها
হযরত হাসান বসরী ও কাতাদা রহ. বলেন-“মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে
যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবেনা যাতে কোমড় উঁচু
হয়ে না থাকে”। তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩
হাদিস নং-০৫
5071 – عبد الرزاق عن معمر والثوري عن منصور عن إبراهيم قال كانت تؤمر المرأة أن تضع ذراعها وبطنها على فخذيها
إذا سجدت ولا تتجافى كما يتجافى الرجل لكي لا ترفع عجيزتها
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. আরো বলেন-“মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন
সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা
না রাখে। যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে। তাখরিজ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৫০৭১
আইম্মায়ে আরবার মতামত:
১. ইমামে আজম আবু হানিফার মত:
روى امامنا الأعظم عن نافع عن
ابن عمر رضى الله عنهما أنه سئل كيف كان النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله
عليه وسلم؟ قال كن يتربعن أمرن أن يحتفزن،
أخرجه أبو محمد الحارثى
والأشنانى وابن خسرو من طريقه عن سفيان الثورى عنه، راجع جامع الماسانيد-1/400، وهذا أقوى واحسن ما روى فى هذا الباب، ولذا احتج به
امامنا وجعله مذهبه وأخذ به،
আমাদের ইমামে আজম আবু হানীফা
রহ. নাফে রহ. থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-“হযরত আব্দুল্লাহ বিন
ওমর রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল-“রাসূল (ﷺ) এর যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন?” তিনি বললেন-“আগে তারা চারজানু হয়ে বসতেন, পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে
বসতে বলা হয়েছে”। তাখরিজ: জামেউল মাসানিদ-১/৪০০
২ ইমাম
শাফেয়ি রহ.
( قال الشافعي ) وقد أدب الله تعالى النساء بالاستتار وأدبهن بذلك رسوله صلى الله
عليه وسلم وأحب للمرأة في السجود أن تضم بعضها إلى بعض وتلصق بطنها بفخذيها وتسجد
كأستر ما يكون لها وهكذا أحب لها في الركوع والجلوس وجميع الصلاة أن تكون فيها
كأستر ما يكون لها (كتاب الأم، باب الذكر في السجود)
ইমাম শাফেয়ী রহঃ বলেন-“আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি
আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূল (ﷺ) ও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দীয় হল-সেজদা
অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে
রাখবে। আর সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে
থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়। তাখরিজ: কিতাবুল
উম্ম-১/১৩৮
৩. ইমাম মালেকী রহ. এর
মত:
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ইমাম আবুল
আব্বাস আল কারাফী রঃ ইমাম মালিক রহঃ এর মত উল্লেখ করেন-
وأما مساواة النساء للرجال ففي النوادر عن مالك تضع
فخذها اليمنى على اليسرى وتنضم قدر طاقتها ولا تفرج في ركوع ولا سجود ولا جلوس
بخلاف الرجل
নামাযে মহিলা পুরুষের মত কিনা? এ বিষয়ে ইমাম মালিক রহঃ থেকে
বর্ণিত। মহিলা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু সেজদা
ও বৈঠকে কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেনা। পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি হল ভিন্ন। {আয যাখীরা-২/১৯৩}
৪. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এর মত:
ইমাম আহমদ রহঃ এর ফাতওয়া উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে
কুদামা রহঃ এর আল মুগীনী কিতাবে।
فأما المرأة فذكر القاضي فيها روايتين عن أحمد إحداهما
ترفع لما روى الخلال بإسناده عن أم الدرداء وحفصة بنت سيرين أنهما كانتا ترفعان
أيديهما وهو قول طاوس ولأن من شرع في حقه التكبير شرع في حقه الرفع كالرجل فعلى
هذا ترفع قليلا قال أحمد رفع دون الرفع والثانية لا يشرع لأنه في معنى التجافي ولا
يشرع ذلك لها بل تجع نفسها في الركوع والسجود وسائر صلاتها
তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে না? এ বিষয়ে কাজী [আবু ইয়াজ] ইমাম
আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ থেকে দু’টি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত
হল হাত উঠাবে। কেননা খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফসা বিন সীরীন থেকে
সনদসহ বর্ণনা করেন যে, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের
বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত
উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসেবে মহিলারাও হাত উঠাবে। তবে
সামান্য। আহমাদ রহঃ বলেন-“তুলনামূলক কম উঠাবে”।
সারকথা কথা হলো, নারী-পুরুষদের
সালাতের মধ্যে রুকু-সিজদাসহ আরও অন্যান্য আমলে ভিন্নতা
রয়েছে। যা হাদিস, আসার, তাবেয়ি,
তাবে তাবায়ি আইয়ামে আরবার মতা দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং যারা বলে
নারী-পুরুষ নামাজের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, তাদের কথা সঠিক নয়।
তথ্য সহযোগিতায়: ‘দলীলসহ নামাযের মাসায়েল’ আল্লামা আব্দুল মতীন হাফিজাহুল্লাহ
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৯৫:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,
মুহতারাম, হজ্বের সফরে আমরা কসর পড়বো নাকি পূর্ণ পড়বো?
আর আরাফার ময়দানে তাবুতে অবস্থান কারিদের
জন্যে জোহর-আসর পড়ার নিয়ম দলিলসহ বিস্তারিত জানতে চাই। তারিখ: ২৪/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শামসুল আলম ঢাকা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো,
মুহতারাম ভাই,
হজ্বের সফরে হাজ্বী সাহেবগণ মক্কা, মিনা, মমুজদালিফা
ও আরাফায় নামায দুই রাকাত পড়বে নাকি চার রাকাত,
এ মাসআলায়
মতভিন্নতার একটি ক্ষেত্র হলো, মালেকী মাযহাবসহ কারও কারও মত
হলো, হজ্ব নিজেই কসরের কারণ,
যেমনিভাবে
শরয়ী সফর কসরের কারণ। বাস্তবে হাজ্বী মুসাফির হোক বা না হোক, শুধু
হজ্বের কারণেই তাকে কসর নামায পড়তে হবে। সালাফীরাও বর্তমানে এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।
অন্যদিকে এ মাসয়ালায় হানাফী মাযহাবসহ জুমহুরের মত হলো, মিনা-আরাফায়
থাকা কালে হাজ্ববী মুসাফির হলে চার রাকাতের নামায দুই রাকাত পড়বে। আর মুকীম হলে চার
রাকাত নামাজ চার রাকাতই পড়বে। অর্থাৎ আমরা যারা হজ্বে যাই তারা মক্কায় ১৫ দিন বা তার
বেশি সময় অবস্থানের নিয়ত করলে পূর্ন নামায পড়তে হবে। আর যদি ১৫ দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করে তাহলে কসর করতে হবে
।
২. যদি এমন হয় যে, সুনির্দিষ্টভাবে
কত দিন অবস্থান করতে হবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, আর আজ
যাব বা কাল যাব করতে করতে ১৫ দিনের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তবুও কসরই পড়তে হবে, যেমনটি
হুজুর স. তাবুকের যুদ্ধে ২০ দিন কসর করেছিলেন এবং হযরত
ইবনে ওমর রা. আজরেবাইজানে ৬ মাস করেছিলেন এই কারণেই।
৩. রাসূল্লালাহ (ﷺ)থেকে সফরের বিভিন্ন সময়সীমা বর্নিত হয়েছে।
তবে সাহাবায়ে কিরাম যেহেতু এগুলোর প্রেক্ষাপট সম্পর্কেও অবগত ছিলেন এবং রাসূল্লালাহ
(ﷺ) এর কর্মপদ্ধতি, বিশেষত
রাসূল্লালাহ (ﷺ) এর
পবিত্র জীবনের শেষ আমল ছিল সাহাবীদের সামনে তাই তারা যখন এ সময়সীমা ১৫ দিন নির্ধারণ
করেন তখন তা সুন্নাহ থেকে আহরিত হওয়ার বিষয়ে কোনই সন্দেহ থাকে না ।
হানাফী মাযহাবের মতটি দলীলের দিক থেকে শক্তিশালীও বটে।
1. আল-মুগনী গ্রন্থে এসেছে-
عن ابن عباس وابن عمر أنهما قالا
: إذا قدمت بلدة وأنت مسافر وفي نفسك أن تقيم خمسة عشر يوما فأكمل الصلاة
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ)
ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন ,
”যদি তুমি কোন শহরে সফর করে আসো আর সেখানে ১৫ দিন
অবস্থানের পাক্কা নিয়ত কর তাহলে পূর্ন নামায আদায় করবে।
[আল-মুগনী, ২য়
খন্ড, ২৮৮ পৃষ্ঠা,
অধ্যায়: সালাতুল্ মুসাফির]
2. সুনানে তিরমিজী শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর
(রাঃ) থেকে বর্নিত– তিনি
বলেন,
من اقام خمسة عشر يوما اتم الصلاة
"যে ব্যক্তি ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করল সে পূর্ন নামায আদায় করবে।" [জামে
তিরমিযী : ১/৭১]
3. ত্বাহাবী শরীফে হযরত উমর বিন যর রহ. থেকে বর্ণিত,
عَنْ عُمَرَ بْنِ ذَرٍّ قَالَ: سَمِعْتُ مُجَاهِدًا يَقُولُ: «كَانَ
ابْنُ عُمَرَ إِذَا قَدِمَ مَكَّةَ فَأَرَادَ أَنْ يُقِيمَ خَمْسَ عَشْرَةَ
لَيْلَةً سَرَّحَ ظَهْرَهُ فَأَتَمَّ الصَّلَاةَ
তিনি বলেন, আমি
মুজাহিদ রহ.কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন,
হযরত
ইবনে উমর রা. যখন মক্কায় আসতেন এবং ১৫ দিন থাকার ইচ্ছা পোষণ
করতেন তখন তিনি সওয়ারীর বাধন খুলে দিতেন এবং পূর্ণ নামাজ আদায় করতেন।
(ত্ববহাবী
শরীফ, হাদিস নং ৩৪৭,
মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস
নং ৪৩৪৩)
4.
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ:
«إِذَا كُنْتَ مُسَافِرًا، فَوَطَّنْتَ نَفْسَكَ عَلَى إِقَامَةِ خَمْسَةَ عَشَرَ
يَوْمًا، فَأَتْمِمِ الصَّلَاةَ، وَإِنْ كُنْتَ لَا تَدْرِي مَتَى تَظْعَنُ
فَأَقْصِرْ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রা.
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যখন তুমি মুসাফির অবস্থায়
থাকো অতপর কোনো স্থানে ১৫ দিন থাকার পাক্কা নিয়ত করো তখন তুমি পূর্ণ নামাজ পড়বে
আর যদি তুমি না জানো যে কবে তুমি যাবে তাহলে তুমি নামাজ কসর করো।
(ত্বহাবী
শরীফ, হাদিস নং ৩৪৬,
কিতাবুল আসার, হাদিস
নং ১৮৮)
5.
عن سعيد بن المسيب، قال: " إذا أقام المسافر خمس عشرة ليلة أتم
الصلاة، وما دون ذلك فليقصر
হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যেব রহ.
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
যখন
মুসাফির ১৫ দিন থাকার নিয়ত করবে তখন সে পূর্ণ নামাজ পড়বে আর যদি তার চেয়ে কম থাকার
নিয়ত করে তাহলে কসর করবে।
(ত্বহাবী
শরীফ, হাদিস নং ৩৪৯
আওসাসুল মাসালেক ৩/১৯৭)
উল্লেখ্য, হুজুর
(ﷺ) বিদায় হজ্বের সময় মক্কা, মিনা, আরাফা, মুজদালিফা
ও মিনা মিলে মোট ১০ দিন ছিলেন, (০৪ জিল হজ্ব সকালে মক্কায় পৌঁছেছেন
এবং ১৪ জিল হজ্ব মক্কা থেকে চলে গিয়েছেন) তাই হানাফি মাযহাব মতে তিনি মুসাফির ছিলেন বিধায় কসর করেছেন।
1.
عن
أَنَسً، يَقُولُ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم مِنَ الْمَدِينَةِ إِلَى مَكَّةَ، فَكَانَ يُصَلِّي
رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ حَتَّى رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ. قُلْتُ
أَقَمْتُمْ بِمَكَّةَ شَيْئًا قَالَ أَقَمْنَا بِهَا عَشْرًا.
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা নবী (ﷺ) এর সাথে মদীনা ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি দু’রাক’আত,
দু’রাক’আত সালাত আদায় করেছেন। (রাবী বলেন) আমি (আনাস রা.)-কে
বললাম, আপনারা (হজ্জকালীন সময়) মক্কায় কয় দিন অবস্থান করেছিলেন? তিনি
বললেন, সেখানে আমরা দশ দিন অবস্থান করেছিলাম।
(সহি বুখারী শরীফ, হাদিস নং ১০৮১)
2.
قال الشيخ ابن عثيمين في رسالة
قصر الصلاة (ص50)
إن النبي صلى الله عليه وسلم
أقام بمكة في حجة الوداع عشرة أيام
শায়েখ ইবনে উসাইমিন রহ, বলেন, হযরত
নবী করিম স. বিদায় হজ্বের সময় মক্কায় মোট ১০ দিন ছিলেন। (কসরুস সালাত, পৃ. ৫০)
সতরাং যেহেতু রাসুলে কারিম (ﷺ) সব মিলিয়ি ১০ দিন অবস্থান করেছিলেন তাই হানাফি
মাযহাব অনুযায়ী হুজুর (ﷺ) পুরা
সফরে মুসাফির হিসাবে ছিলেন, এই জন্য তিনি কসর করেছিলেন। এবং আরাফা ও মুজদালিফার
ময়দানে জমা বাইনাস সলাতাইনেও কসর করেছিলেন।
আর যারা হজকে স্বতন্ত্র কসরের
কারণ বলেন তাদের দলীল হলো, রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কেরাম বিদায় হজের সময় মিনা-আফায় কসর নামায পড়েছেন। এমনকি
যারা মক্কার স্থানীয় মুসলমান ছিলেন তারাও কসর করেছেন, অথচ
তারা মুসাফির ছিলেন না! এ ব্যাপারে মালেকী মাযহাবের মতটি এমন-
‘কেননা নবী (ﷺ) আরাফায় কসর নামায পড়ে পেছনের কাউকে ভিন্নভাবে নামায পড়ার কথা বলেননি।
এমনকি মক্কার অধিবাসীদেরকেও বলেননি,
أَتِمُّوا صلاتكم
“তোমরা পূর্ণ নামায পড়”;
অথচ এ জায়গায় বিষয়টি স্পষ্ট করে
বলার প্রয়োজন ছিল!’-(ইলাউস
সুনান ৭/৩৪৯৪, দারুল ফিকর,
বৈরুত)
হযরত ইমাম মালেক রহ.সহ অন্যদের
শুধু এটুকু যুক্তি ছাড়া সরাসরি বর্ণিত কোনো হাদীস নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে হানাফী মাযহাব
কয়েক কারণে শক্তিশালী।
প্রথমত: শরয়ী সফর সাব্যস্ত হওয়ার
জন্য যতটুকু দূরত্বে সফর করা লাগে,
মিনা-আরাফার
দূরত্ব কোনোভাবেই সেই আওতায় পড়ে না। কারণ মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব তিন মাইল এবং আরাফাহর
দূরত্ব ১২ মাইল। অথচ জুমহুর উলামায়ে কেরামের মত অনুযায়ী শরয়ী সফর সাব্যস্ত হওয়ার জন্য
কমপক্ষে ৪৮ মাইল হওয়া লাগে। আল্লামা যাফর আহমদ উসমানী রহ. লিখেন-
‘যখন একথা সাব্যস্ত হয়ে গেল- তার দাবী হলো, মক্কার
অধিবাসী এবং যারা মক্কায় মুকীম হিসেবে আছেন তাদের জন্য আরাফায় কসর করা জায়েয হবে না।
কারণ মক্কা এবং আরাফাহর মাঝে দূরত্ব কম। কারণ আরাফাহ ১২ মাইলের বেশি দূরত্বে হবে না।
এমনিভাবে মিনায় কসর করাও জায়েয হবে না। কারণ মিনার দূরত্বও তিন মাইলের বেশি হবে না।
অথচ এতটুকু দূরত্বে নামায কসর করার মতামত কোনো ইমামই দেননি।’-(ইলাউস সুনান ৭/৩৪৯২-৩৪৯৩)
আমাদের দ্বিতীয় দলীল হলো, হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আহলে মক্কাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,
لا تقصروا الصلاة في أقل من
أربعة بُرُد من مكة إلى عسفان
‘হে মক্কার অধিবাসীরা! তোমরা চার বুরদের কমে (৪৮ মাইল) মক্কা
থেকে আসফান পর্যন্ত নামায কসর করবে না।’-(তাবরানী ১১/৯৭; বায়হাকী
৩/১৩৩; দারাকুতনী ১/৩৮৭;
ইলাউস
সুনান ৭/৩৪৯৪)
হাদীসটি সনদসূত্রে যয়ীফ হলেও
অন্য সহীহ সনদে বর্ণিত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি.-এর উক্তি দ্বারা সমর্থিত। আর যখন
কোনো যয়ীফ বর্ণনা সাহাবীর আমল দ্বারা সমর্থিত হয় তা শক্তিশালী হয়ে যায়। এছাড়া এ কথাটি
জমহুরের মত দ্বারাও সমর্থিত। সুতরাং এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, মক্কাবাসীর
জন্য হজ এবং হজের বাইরে সফরের দূরত্বে যাওয়া ব্যতীত কসর করার সুযোগ নেই।
এছাড়া ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত
উসমান রা. তার খেলাফতের প্রথম ছয় বছর কসর পড়লেও পরবর্তীতে তিনি মক্কায় বিবাহ করে মুকিমের
হুকুমে হয়ে যাওয়ার কারণে পূর্ণ নামাজ পড়েছেন।
যথা-
عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ
عنهما، قال: صلَّى رسولُ الله صلَّى اللهُ عليه وسلَّم بمِنًى ركعتينِ، وأبو بكرٍ
بَعْدَه، وعُمَرُ بعد أبي بكرٍ، وعُثمانُ صَدْرًا من خلافِتَه، ثم إنَّ عثمانَ
صَلَّى بعدُ أربعًا
رواه البخاري (1082)، ومسلم
(694) واللفظ له
عن عبد الرحمن بن يزيد، يقول صلى
بنا عثمان بن
عفان رضى الله عنه ـ بمنى أربع
ركعات
البخارى 1084
أنَّ مِن أوجُهِ تفسيرِ سَبَبِ
إتمامِ عثمانَ رَضِيَ اللهُ عنه بمِنًى أنَّه تأهَّلَ بمكَّةَ، فلم يكن مسافرًا،
فصلَّى صلاةَ المقيمِ، فدلَّ على أنَّ أهلَ مكَّةَ يُتِمُّونَ بمِنًى ولا
يَقْصُرون
المغني لابن قُدامة
(3/367)
شرح النووي على مسلم
(5/195)
فتح الباري
لابن حجر
(2/570)
فدل هذا على أن عثمان رضي الله
عنه كان يتم في مكة، وفي منى في حال إقامته فيها.
أما عن عذره رضي الله عنه في هذا
الإتمام، فمن أحسن ما اعتذر به عنه: [إنه كان قد تأهل بـ منى، والمسافر إذا أقام
في موضع وتزوج فيه، أو كان له به زوجة أتم، وقد نصّ أحمد، وابن عباس قبله أن
المسافر إذا تزوج لزمه الإتمام، وهذا قول أبي حنيفة ومالك وأصحابهما
(زاد المعاد لابن القيم (1/470، 471).
এতেও বুঝা যায় কসরের হুকুম হলো
শরয়ী মুসাফির হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত,
শুধু
হজ্বের সাথে সম্পৃক্ত নয় যেমনটু বর্তমান সালাফী আলেমগণ দাবী করে থাকেন।
আর মালেকী মাযহাব ও সালাফী আলেমগণের
পক্ষ থেকে যে দলীল দেয়া হয়েছে যে, 'আল্লাহর নবী আরাফায় কসর করে মক্কাবাসীকে
পুরো পড়তে বলেননি’ এ যুক্তি
দিয়ে হাজীদের ওপর কসর চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসূল (ﷺ) বিদায় হজের সময় কসরের কথা না বললেও মক্কাবাসীকে
ফাতেহ মক্কার দিন নামায পুরো পড়ার কথা বলে রেখেছেন। আল্লামা যফর আহমদ উসমানী রহ. লিখেন-
‘রাসূল (ﷺ) থেকে
যেহেতু এ বিষয়টি সাব্যস্ত যে, তিনি যখন ফাতেহ মক্কার দিন মক্কায়
নামায কসর করেছিলেন সেদিন মক্কাবাসীকে বলেন,
“তোমরা নামায পুরো পড়ো, কারণ
আমরা মুসাফির”, সেহেতু
বিদায় হজের দিন এ কথা পুনরায় বলার প্রয়োজন ছিল না। কারণ নবীজি জানতেন, তাঁর
সাহাবীরা নামায ও আহকামে নামাযের বিষয়ে অনেক বেশি সতর্ক এবং সচেতন।’-(ইলাউস সুনান ৭/৩৪৯৫; নসবুর
রায়াহ ২/১৮৭; আততারীখুস সগীর, ইমাম
বুখারী ১/২৭)
ولم يقل لأهل مكة أتموا؛ لأن ذلك
معلوم في حق المقيمين في مكة.
আর আরাফার ময়দানে যারা মসজিদে
নামিরার জামাতের সাথে শরীক না হয়ে তাবুতে নামাজ পড়বে চাই স্বতন্ত্র জামাতের সহিত অথবা
একাকি, তারা জোহরের সময় জোহর আর আসরের সময় আসর পড়বে। মুসাফির হলে
কসর করবে আর মুকিম হলে পূর্ণ নামাজ পড়বে। জমা বায়নাস সলাতাইন করবে না।
দলিল,
১।
عالمگیري: ج۱ ص۲۲۸
ولو فاتتا مع الإمام أو فاتتہ
واحدة منھما صلی العصر لوقتہ ولا یجوز لہ تقدیم العصر علی قول أبي حنیفة رحمہ اللہ
২।
فتاوى دارالعلوم دیوبند
Fatwa: 1353-1320/L=11/1438
جواب نمبر: 153481
جمع بین الصلاتین کی منجملہ
شرطوں میں سے ایک شرط امام کی اقتداء میں نماز پڑھنا بھی ہے اور چوں کہ عرفات کے میدان
میں خیموں میں ٹھہرنے والے حجاج امام کے پیچھے نماز نہیں پڑھ پاتے؛ لہٰذا وہ خیمہ
میں رہتے ہوئے ظہر کی نماز ظہر کے وقت میں اور عصر کی نماز عصر کے وقت میں پڑھیں
گے....
ولو فقد شرط منہا یصلي کل صلاة
في الخیمة علی حدة في وقتہا بجماعة أو غیرہا (غنیة الناسک: ۱۵۳)
دیگر ائمہ کے نزدیک خیمہ میں بھی
جمع بین الصلاتین کی اجازت ہے؛ اس لیے اگر کوئی شخص خیمہ میں جمع بین الصلاتین
کررہا ہو تو اس سے تعرض کرنے کی ضرورت نہیں۔
واللہ تعالیٰ اعلم
دارالافتاء
دارالعلوم دیوبند
৪।
جواب نمبر: 167166
Fatwa:360-371/N=5/1440
احناف کے نزدیک قرآن وسنت کی
روشنی میں صحیح یہ ہے کہ قصر مناسک حج میں سے نہیں ہے، یعنی: جو شخص حج میں شرعاً
مسافر ہو، وہی قصر کرے گا اور جو مسافر نہ ہو، وہ قصر نہیں کرے گا؛ یعنی: محض حج کی
وجہ سے قصر کا حکم نہیں ہوتا.
دار العلوم
دیوبند
৫।
عمدۃ القاری: (119/7)
"وقال اکثر اھل العلم منھم عطاء والزھری والثوری والکوفیون وابو حنیفۃ
واصحابہ والشافعی واحمد و ابو ثور لایقصر الصلوٰۃ اھل مکۃ بمنیٰ وعرفات اذا کانوا
حجاجا اتموا
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতী আব্দুল হাই নাটোরী
জিজ্ঞাসা-১২৩৯৬:
কেও মসজিদে প্রবেশ করলে ফেরশ্তা
গুনা নিয়ে দরজায় দারিয়ে থাকবে -- এমন কোন হাদিস / দলিল আছে কি। তারিখ: ২৩/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, মসজিদে
অবস্থান করলে, নামাজের জন্য অপেক্ষা করলে ফজিলত সহিহ হাদিস
দ্বারা প্রমাণিত। যেমন,
হাদিস নং-০১
نَّ رسولَ اللهِ صلَّى اللهُ
عليه وسلَّم قال : تقعدُ الملائكةُ على بابِ المسجدِ يومَ الجمعةِ , يكتبون مجيءَ
النَّاسِ حتَّى يخرُجَ الإمامُ , فإذا خرج طوَوْا الصُّحفَ ورُفِعت الأقلامُ ,
فتقولُ الملائكةُ بعضُهم لبعضٍ : ما حبس فلانًا ؟ ! وما حبس فلانًا ؟! قال :
فتقولُ الملائكةُ : اللَّهمَّ إن كان مريضًا فاشْفِه , وإن كان ضالًّا فاهدِه ,
وإن كان عائلًا فأغْنِه .
الراوي : [جد عمرو بن شعيب] |
المحدث : الذهبي | المصدر : المهذب في اختصار السنن | الصفحة أو الرقم : 3/1156 |
خلاصة حكم المحدث : إسناده صالح
হাদিস নং-০২
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال:
قال النبي صلى الله عليه وسلم : «إذا كان يوم الجمعة وقَفَتِ الملائكةُ على باب
المسجد يَكْتُبون الأوّلَ فالأوّلَ، ومَثَلُ المُهَجِّر كمثل الذي يُهْدي بَدَنةً،
ثم كالذي يُهْدي بقرة، ثم كَبْشا، ثم دَجاجة، ثم بَيضة، فإذا خرج الإمام طَوَوُا
صُحُفَهم، ويسْتَمعون الذِّكرَ».
[صحيح] - [متفق عليه]
দ্বিতীয় কথা হলো, কোনো
ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের সময় ফিরিশতারা তার গুনাহ মাথায় করে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন, যাতে
গুনাহসহ কোনো ব্যক্তিকে পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করতে না হয়। ওই ব্যক্তি বেশি দেরি করলে
একসময় ফিরিশতারা বলেন, আল্লাহ! তার গুনাহ বহন করতে আমাদের তো খুব কষ্ট
হচ্ছে। তখন আল্লাহ বলেন, গুনাহগুলো সমুদ্রে ফেলে দাও।
এটা হাদিস নয়। মানুষের
বানানো, আজগুবি কথা,
তা হাদিস নামে চালানো বড় অন্যায়। সূত্র: মাসিক
আল-কাউসার-ডিসেম্বর, ২০১৩
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৯৭:
আসসালামু আলাইকুম। জানতে চাই, ইবলিশ ৭০ লক্ষ বছর আল্লাহর ইবাদত
করেছে, এটার তথ্য কোথায় আছে? এটা কি
সহিহ? তারিখ: ২৫/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা সাইফুল ইসলাম ভোলা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, শয়তান
মারদুদ (অভিশাপ্ত) হওয়ার আগে হাজার/লক্ষ বছর ইবাদত করেছেন, এ রকম কোন বর্ণনা
নির্ভরযোগ্য কিতাবে নেই। তবে ইসরাঈলি বর্ণনা এবং শিয়াদের কিতাবে পাওয়া। যেমন,
العلل: عن أبيه عن سعد بن عبد
الله عن أحمد بن محمد بن عيسى عن علي بن حسان عن علي بن عطية قال: قال أبو عبد
الله عليه السلام: إن إبليس عبد الله في السماء سبعة آلاف سنة في ركعتين فأعطاه
الله ما أعطاه ثوابا له بعبادته (2).
85 - ومنه بالاسناد المذكور (3) قال: قلت لأبي عبد الله عليه
السلام: حدثني كيف قال الله عز وجل لإبليس: (4) " فإنك من المنظرين * إلى يوم
الوقت ا goلمعلوم " قال:
لشئ كان تقدم شكره عليه، قلت:
وما هو؟ قال: ركعتان ركعهما في السماء في ألفي سنة أو
অর্থাৎ আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন ঈসার থেকে, তিনি আলী বিন হাসানের থেকে,
আলী বিন আতিয়ার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আবু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেনঃ
শয়তান জান্নাতে সাত হাজার বছর ধরে দুই রাকাতে আল্লাহর ইবাদত করেছে, তাই আল্লাহ তাকে তার ইবাদতের পুরস্কার হিসেবে যা দিয়েছেন তা দিয়েছিলেন।
এবং এটি থেকে বর্ণনাকারীদের উপরোল্লিখিত
সনদসহ তিনি বলেন: আমি আবি আবদুল্লাহ (ﷺ)কে বলেছিলাম: আমাকে বলুন কিভাবে সর্বশক্তিমান আল্লাহ ইবলিসকে বলেছিলেন:
“তোমকে সময়
দেওয়া হলো, কিয়ামত দিবস পর্যন্ত।” তিনি বললেন: এমন কিছুর জন্য যার
জন্য তিনি তাকে শুকরিয়া জানিয়েছেন, আমি বললাম: আর এটা কী?
তিনি বললেন: দুই একক নামায যা তারা আসমানে দুই হাজার বছরে বা চার হাজার বছরে করেছিল।
এবং অন্য বর্ণনায়: তিনি জান্নাতে দুই রাকাতে সাত
হাজার বছর ধরে আল্লাহর উপাসনা করেছিলেন , তা আল্লাহ তাকে তার ইবাদতের পুরস্কার হিসাবে
যা দিয়েছিলেন তা দিয়েছিলেন। সূত্র: বাহারুল আনওয়ার- ২য় খণ্ড, ৫২৬ পৃ. (শিয়াদের
কিতাব)
দ্বিতীয় কথা হলো, ইবলিসের ইবাদত সম্পর্কে
সু্ন্নি ওলামায়ে কেরামগণ স্বীকার করেছেন, তবে তার সময়/দিন/বছর উল্লেখ করেননি। যেমন,
বিখ্যাত মুফাস্সির, ইতিহাসবেত্তা আল্লামা ইবনে
কাসির রহ. বলন,
وكان إبليس مجتهدًا في عبادته
كثيرًا حتّى إنّه فاق الملائكة في العبادة، ولم يكن اسمه إبليس بل كان اسمه
عزازيل، ولكن حين عصا ربّه واستكبر مُسِخَ وصار اسمه إبليس، وبدأت قصة إبليس
অর্থাৎ শয়তান তার ইবাদতে এতটাই
তৎপর ছিল যে সে ইবাদতে ফেরেশতাদেরকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল এবং তার নাম শয়তান নয়, তার নাম ছিল আজাজেল, কিন্তু যখন সে তার পালনকর্তার অবাধ্য হয়েছিল এবং অহংকার করেছিল তখন সে পাগল
হয়ে যায় এবং তার নাম হয় শয়তান----। সূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৫৫
শায়েখ আরব জাহানের বিখ্যাত
আলেম ইবনে বাজ এবং শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহ. ইবলিশের ইবাদতের কথা উল্লেখ
করেছেন, কিন্তু সময়/দিন উল্লেখ করেননি।
যেমন,
ولكن جماعة من المحققين يرجحون
أن الجن غير الملائكة، وأنه كان مع الملائكة يصلي معهم، ويتعبد معهم، فعمه الأمر،
فلما أبى، وفسق، وتكب
ولهذا اختار هذا شيخ الإسلام ابن
تيمية، وجماعة، وقالوا: إنه من الجن، وهو أبوهم، خلقه الله من مارج من نار، وليس
من الملائكة، ولكنه كان معهم في السماء، كان يتعبد، فلما استكبر؛ طرد ولعن -نسأل
الله العافية-.
অর্থাৎ ইবলিশ ফিরিশতাদের
অন্তর্ভুক্ত ছিল না বা ফিরিশতা জাতিন নয়। সে ছিল জিন জাতির। ফিরিশতাদের সাথে
আসমানে থাকতো। তাদের সঙ্গে ইবাদত করতো। সূত্র: শায়েখ ইবনে বাজের ওয়েবসাইট থেকে
সারকথা কথা হলো, ইবলিশ অভিশপ্ত হওয়ার আগে
নেককার ছিল, যা ইশারাতুন নস দ্বারা প্রমাণিত, আমাদের ওয়ামায়ে দ্বীন নিজ নিজ কিতাবে তা উলে্লখ করেছেন। আর ইবাদতের সময়/দিন/বছর তাফসিরে
কুরতুবিসহ অন্যান্য তাফসির গ্রন্থে পাওয়া যায়, তা ইসরাঈলি
বর্ণনা এবং শিয়াদের কিতাবে পাওয়া যায়। সুতরাং এ বিষয়ে কুরআন-হাদিসের
বর্ণনায় যথেষ্ট। যেমন
আল্লামা ইবনে কাসির রহ. বলেন,
وَقَدْ رُوِيَ فِي هَذَا آثَارٌ
كَثِيرَةٌ عَنِ السّلَفِ، وَغَالِبُهَا مِنَ الْإِسْرَائِيلِيّاتِ الّتِي تُنْقَلُ
لِيُنْظَرَ فِيهَا، وَاللهُ أَعْلَمُ بِحَالِ كَثِيرٍ مِنْهَا، وَمِنْهَا مَا قَدْ
يُقْطَعُ بِكَذِبِهِ لِمُخَالَفَتِهِ لِلْحَقِّ الّذِي بِأَيْدِينَا، وَفِي
الْقُرْآنِ غُنْيَةٌ عَنْ كُلِّ مَا عَدَاهُ مِنَ الْأَخْبَارِ الْمُتَقَدِّمَةِ
لِأَنّهَا لَا تَكَادُ تَخْلُو مِنْ تَبْدِيلٍ وَزِيَادَةٍ وَنُقْصَانٍ، وَقَدْ
وُضِعَ فِيهَا أَشْيَاءٌ كَثِيرَةٌ...
অর্থাৎ, ইবলিস বিষয়ে বেশ কিছু বক্তব্য উল্লেখিত
হয়েছে। এর অধিকাংশই ইসরাঈলী বর্ণনা। এগুলোরসত্যাসত্য বিষয়ে আল্লাহই ভালো জানেন। এগুলোর
মধ্যে কিছু তো এমন রয়েছে, যেগুলো মিথ্যা হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিতভাবেই
বলা যায়; কারণ তা প্রমাণিত বিষয়ের বিপরীত। এসকল বিষয়ে কুরআনের
বর্ণনা-ই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এসব ইসরাঈলী বর্ণনার দিকে যাওয়ার আমাদের কোনো প্রয়োজন
নেই। কারণ, এগুলোর কোনোটা বিকৃত, কোনোটাতে
বাড়ানো-কমানো হয়েছে। আবার তাতে অনেক বানোয়াট কথাও রয়েছে...। সূত্র: তাফসীরে
ইবনে কাসীর, সূরা কাহফের ৫০ নং আয়াতের তাফসীর; আলামুল জিন্নি ওয়াশ শায়াতীন,
ড. উমার সুলাইমান আলআশকার, পৃ. ১৭-১৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৯৮:
আসসালামু আলাইকুম, এক্সারসাইজ এলাকায় কারো ব্যক্তি
মালিকানাধীন জমিতে জুমার জামাত শুদ্ধ হবে কি না জানতে চাই । উল্লেখ্য এক্সারসাইজ এলাকা নিজ ইউনিট থেকে ১০ কিলো
দূরে। তারিখ: ২৫/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মুহাম্মদ জুনাইদ আল কাওকাব, ময়মনসিংহ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে,
এক্সারসাইজে
সাধারণত সরকারি মালিকনা জায়গা কমই হয়।
যাইহোক, আপনার প্রশ্নকে সহজভাবে বুঝার জন্য কয়েকভাগে ভাগ করছি:
প্রশ্ন: ক। মসজিদ/জামে
মসজিদ ব্যতিত জুমাআ সালাত জায়েজ হবে কি?
উত্তর: ক। لا مانع من أداء صلاة الجمعة
خارج المسجد ولو لغير أي سبب عند من لم يشترط إقامتها في المسجد وهم الحنابلة
والشافعية والحنفية، أما المالكية فيشترطون لصحة الخطبة والصلاة كونهما داخل
المسجد المبني بناء معتادا لأهل القرية. وراجع الأجوبة التالية أرقامها:
13870،31086،7637. ما حكم
صلاة الجمعة في الخلاء
ইমাম হাম্বলি, শাফেয়ি
ও হানাফি (রহ) এর মতে মসজিদের
বাইরে জুমাআর নামাজ পড়তে কোনো আপত্তি নেই, এমনকি
কোনো কারণ ছাড়াই।
তিন ইমামের দলিল:
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ
يَحْيَى، أَخْبَرَنَا هُشَيْمٌ، عَنْ سَيَّارٍ، عَنْ يَزِيدَ الْفَقِيرِ، عَنْ
جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم " أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ قَبْلِي
كَانَ كُلُّ نَبِيٍّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى كُلِّ
أَحْمَرَ وَأَسْوَدَ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ وَلَمْ تُحَلَّ لأَحَدٍ
قَبْلِي وَجُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ طَيِّبَةً طَهُورًا وَمَسْجِدًا فَأَيُّمَا
رَجُلٍ أَدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ صَلَّى حَيْثُ كَانَ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ
بَيْنَ يَدَىْ مَسِيرَةِ شَهْرٍ وَأُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)
..... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আল আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
দান করা হয়েছে যা অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি। প্রত্যেক নবীকে শুধু তার কওমের জন্য
পাঠানো হতো। কিন্তু আমাকে সাদা ও কালো সবার জন্য নবী করে পাঠানো হয়েছে। আমার জন্য
গনীমাত বা যুদ্ধলব্ধ অর্থ-সম্পদ হালাল করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমার পূর্বে আর কারো
(কোন নবীর) জন্য তা হালাল ছিল না। আমার জন্য গোটা পৃথিবী পাক-পবিত্র ও মসজিদ করে দেয়া
হয়েছে। সুতরাং সালাতের সময় হলে যে কোন লোক যে কোন স্থানে সালাত আদায় করে নিতে পারে।
আমাকে একমাসের পথের দূরত্ব পর্যন্ত অত্যন্ত শান শাওকাত সহকারে (শত্রুও অন্তর ভীতি দ্বারা)
সাহায্য করা হয়েছে। আর আমাকে শাফা’আতের সুযোগ দান করা হয়েছে। তাখরিজ: মুসলিম -৫২১
হাদিস নং-০২
عَنْ أبِي ذَرٍّ، قالَ: قُلتُ يا
رَسولَ اللهِ، : أيُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ في الأرْضِ أوَّلُ؟ قالَ: المَسْجِدُ
الحَرَامُ قُلتُ: ثُمَّ أيٌّ؟ قالَ: المَسْجِدُ الأقْصَى قُلتُ: كَمْ بيْنَهُمَا؟
قالَ: أرْبَعُونَ سَنَةً، وأَيْنَما أدْرَكَتْكَ الصَّلَاةُ فَصَلِّ فَهو مَسْجِدٌ.
الراوي : أبو ذر الغفاري |
المحدث : مسلم | المصدر : صحيح مسلم | الصفحة أو الرقم : 520 | خلاصة حكم المحدث :
[صحيح]
অর্থাৎ আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ)কে পৃথিবীতে নির্মিত সর্বপ্রথম মসজিদ সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, মসজিদুল হারাম (সর্বপ্রথম নির্মিত হয়েছিল) আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোন মসজিদ (নির্মিত হয়েছিল?) তিনি বললেন,
মসজিদুল আকসা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এ দুটি
মসজিদের (নির্মিত কাজের) মধ্যে কতদিনের ব্যবধান? তিনি বললেন,
চল্লিশ বছর। এছাড়া গোটা পৃথিবীই তো মসজিদ। সুতরাং যেখানেই সালাতের সময়
হবে সেখানেই সালাত আদায় করে। তাখরিজ: মুসলিম-৫২০
প্রশ্ন: খ। জুমাআর নামাজের জন্য সকলের জন্য আম অনুমতি থাকা
আবশ্যক কি?
উত্তর: খ। হ্যাঁ, জুমাআর নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য
মসজিদে/কোন স্থানে সাধারণ অনুমতি থাকবে হবে। দলিল:
إن صلاة الجمعة ظلت تقام في
المساجد والمصليات على مرِّ التاريخ، كما اتفق جمهور علماء الإسلام على اختلاف
مذاهبهم بالأكثرية المطلقة على هذا الحكم. وبتعبير آخر، فإن علماء الإسلام قد
خلصوا إلى أن صلاة الجمعة يجب أن تعقد جماعةً وفي مكان مفتوح للجميع، وذلك عملاً
بما طبّقه رسول الله صلى الله عليه وسلم والصحابة الكرام الكرام (السرخسي،
المبسوط، اسطنبول، 1983، 2/ 23؛ ابن رشد، بداية المجتهد، القاهرة، 2004، 1/167 وما
يليها؛ ابن عابدين، ردُّ المحتار، بيروت، 1992، 2/ 136-140؛ 151 – 152).،
والاتجاه العام بين العلماء
والقائل بوجوب إقامة صلاة الجمعة في المساجد أو في الساحات التي تم تخصيصها لها،
بحضور ومشاركة جميع المسلمين، حالَ دون طرح هذا الأمر. (الجصاص، شرح مختصر
الطحاوي، المدينة المنورة 2010، 2/ 134؛ المرغيناني، الهداية، بيروت، بدون تاريخ
النشر (دار إحياء التراث العربي)، 1/ 82؛ الشربيني، مغني المحتاج، بيروت 1994، 1/
543؛ القرافي، الذخيرة، بيروت، 1994، 2/ 335؛ الصاوي، حاشية على الشرح الصغير،
القاهرة، بدون تاريخ النشر (دار المعارف)، 1/ 499-500).
প্রশ্ন: গ। এক্সারসাইজ এলাকা নিজ ইউনিট থেকে
১০ কিলো দূরে?
উত্তর: গ। এক্সারসাইজ
এলাকা নিজ ইউনিট থেকে ১০ কিলো দূরে দ্বারা কি বুঝিয়েছেন, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। যদি উদ্দেশ্য হয় কসর-মুসাফির, তাহলে
ফিকহি হানাফিসহ অধিকাংশ ওলামাদের মতে মুসাফির শর্ত হলো ৭৮/৮০/১০০ কিলোমিটার দূরে সফর
করতে হবে।
তবে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. শায়েখ ইবনে উসাইমিন রহ. এবং বর্তমানে তাদের অনুসারীদের
মতে কোন দূরত্ব শর্ত নাই যেকোনো সফরে কসর পড়া যাবে। এ বিষয়ে আলবুরহানের জিজ্ঞাসা-১৩৪৮ শিরোনামে বিস্তারিত আলোচিত
হয়েছে। লিংকটি দেওয়া হলো:
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/11/blog-post_20.html
সারকথা হলো, আপনার প্রশ্নের আলোকে পরামর্শ হলো প্রথমে যে
এলাকায় থাকবেন, যদি নিকটে জামে মসজিদ থাকে, তাহলে
সেখানেই জুমাআর সালাত আদায় করা উচিত। কিন্তু দূরে/নিরাপত্তার
স্বার্থে আলাদা জুমাআর সালাত করতে কোন অসুবিধা নেই।
আর নিজেরা আলাদা জুমাআর
সালাত আদায় করলে, সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ করার অনুমতি থাকা উচিত।
তারপরও যদি নিরাপত্তার স্বার্থে সর্বসাধারণকে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া হয়, তাহলে
অসুবিধা নেই। কিন্তু সর্বাবস্থায় জুমাআর নামাজ বড় জামাত কাম্য। সূত্র: আলমাবসূত,
সারাখসী
২/১২০; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৫১;
ফাতহুল
কাদীর ২/১৫; ইলাউস সুনান ৮/৯১
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৩৯৯:
আস্সালামু আলাইকুম, আমি টাখনু ঢেকে মোজা পরিধান প্রসঙ্গে জানতে
চাই। তারিখ: ২৬/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আনোয়ারুল আম্বিয়া যশোর
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
আলহামদুল্লিাহ টাখনু ঢেকে রাখার বিষয়ে আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-১২৩১০ শিরোনামে আলোচিত হয়েছে। রাসূল (ﷺ) মোজা পরিধান করেছেন। দলিল:
وَعَنْ عَلِيٍّ - رضى الله عنه - قَالَ:
{ لَوْ كَانَ اَلدِّينُ
بِالرَّأْيِ لَكَانَ أَسْفَلُ اَلْخُفِّ أَوْلَى بِالْمَسْحِ مِنْ أَعْلَاهُ, وَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اَللَّهِ - صلى الله عليه وسلم -يَمْسَحُ عَلَى ظَاهِرِ خُفَّيْهِ } أَخْرَجَهُ أَبُو دَاوُدَ بِإِسْنَادٍ حَسَن ٍ 1 .
অর্থ: আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন,
যদি দীন যুক্তি দ্বারা হতো তাহলে মোজার নীচের অংশ মাসেহ করা উত্তম
হতো উপরের অংশ থেকে। অথচ, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে দেখেছি, তিনি তার মোজার উপরিভাগের ওপর মাসেহ করেন”। তাখরিজ: ১৬২
দ্বিতীয় কথা হলো, মোজা পরিহিত অবস্থায় টাখনু
ঢাকা যাবে না। এই মর্মে কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে ইহরাম অবস্থায় শুধু পুরুষদের জন্য মোজা পরিধান করা নিষেধ। মহিলাদের জন্য জায়েজ।
দলিল:
হাদিস নং-০১
عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ
رَجُلاً قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا يَلْبَسُ الْمُحْرِمُ مِنْ الثِّيَابِ قَالَ
رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ تَلْبَسُوا الْقُمُصَ وَلاَ الْعَمَائِمَ
وَلاَ السَّرَاوِيلاَتِ وَلاَ الْبَرَانِسَ وَلاَ الْخِفَافَ إِلاَّ أَحَدٌ لاَ
يَجِدُ النَّعْلَيْنِ فَلْيَلْبَسْ خُفَّيْنِ وَلْيَقْطَعْهُمَا أَسْفَلَ مِنْ
অর্থ: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)
বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, মুহরিম
(ইহরাম পরিহিত) কী কী কাপড় পরতে পারবে?
তখন
তিনি বলেন, জামা-পাগড়ি,
পাজামা, টুপি
ও মোজা পরবে না। তবে জুতা না থাকলে চামড়ার মোজা গিরার নিচ পর্যন্ত কেটে পরতে পারবে।
তোমরা এমন কোনো কাপড় পরিধান করো না যাতে ‘জাফরান’
বা ‘ওয়ারছ’ লেগেছে। তাখরিজ: মুসলিম- ৩৭২
হাদিস নং-০২
دَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ
سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، قَالَ
ذَكَرْتُ لاِبْنِ شِهَابٍ فَقَالَ حَدَّثَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ
عَبْدَ اللَّهِ، - يَعْنِي ابْنَ عُمَرَ - كَانَ يَصْنَعُ ذَلِكَ - يَعْنِي
يَقْطَعُ الْخُفَّيْنِ لِلْمَرْأَةِ الْمُحْرِمَةِ - ثُمَّ حَدَّثَتْهُ صَفِيَّةُ
بِنْتُ أَبِي عُبَيْدٍ أَنَّ عَائِشَةَ حَدَّثَتْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم قَدْ كَانَ رَخَّصَ لِلنِّسَاءِ فِي الْخُفَّيْنِ فَتَرَكَ ذَلِكَ .
. কুতায়বা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ....
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) মুহরিম স্ত্রীলোকদের (লম্বা) মোজা কেটে দিতেন। অতঃপর তাঁর
স্ত্রী সাফিয়্যা বিনতে আবু উবাইদ তাঁর নিকট বর্ণনা করেন যে, আয়েশা
(রাযিঃ) তাঁকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মুহরিম স্ত্রীলোকদের মোজা পরিধানের অনুমতি প্রদান করেছেন (লম্বা অংশ
কর্তন ব্যতীত)। ফলে তিনি (ইবনে উমর) তা কর্তন করা থেকে বিরত থাকেন।
তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ- ১৮৩১
তৃতীয় কথা হলো, মোজার ওপর মাসেহ করার শর্ত ওজুর
জাগয়া মোজা দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে অর্থাৎ ওজুতে টাখনুসহ ধোয়া ফরজ। যেমন,
اتفقت المذاهب الأربعة على أن من
شروط المسح على الخفين، أن يكون ساتراً لمحل فرض الغسل - الكعبان مع القدم - فإن
لم يستر الكعبين لم يصح المسح عليهما، قياساً على الوضوء؛ ولأن ما ظهر فرضه الغسل
، وما ستر فرضه المسح ، ولا يمكن أن يجمع بين البدل والمبدل منه في عضو واحد.
ينظر شرح "مختصر خليل"
للخرشي (/179) وحاشية قليوبي وعميرة(1/68) و"الموسوعة الفقهية" (37/264)
অর্থাৎ সম্মানিত চার ইমাম এ
বিষয়ে একমত যে, মোজার ওপর মাসেহ করারশর্ত হলো,
যতটুকু জাগয়া ধৌত করা ফরজ ততটুকু ঢেকে রাখা জরুরি। টাখনুসহ ঢেকে
রাখতে হবে। যদি টাখনু খোলা থাকে তাহলে মাসেহ সহিহ হবে। সূত্র: আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়াহ-৩৭/২৬৪
সুতরাং প্রমাণিত হলো মোজা
দ্বারা টাখনু ঢাকা সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: ক। যেসব হাদিসে টাখনু নিচে কাপড় পরিধান করার ব্যাপারে কঠোর ধমক এসেছে, তার ব্যাখ্যা কি?
উত্তর: ক। যেমন হাদিস শরিফে এসেছে-
أَبِي،هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِفَفِي النَّارِ"-رواه البخارى
অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে সে
জাহান্নামি। বুখারি-৫৭৮৭, কিতাবুল লিবাস; মুসলিম-২০৮৭; আদু দাউদ-৬৩৮; নাসায়ি-৫৩৩০; মুয়াত্তা
মালেক-২৬৫৫
ব্যাখ্যা: হজরত
মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরি রহ. বলেন-হাদিসে ইযার শব্দের দ্বারা ঐ সকল পোশাক
উদ্দেশ্য যা ওপর থেকে নিচের দিকে আসে। যেমন-লুঙ্গি, পায়জামা, কোর্তা, পাগড়ি, আবা, অ্যারাবিয়ান
জুব্বা ইত্যাদি। পক্ষান্তরে যে পোশাক নিচ থেকে ওপরের দিকে আসে এমন পোশাক
দ্বারা টাখনু ঢাকলে কোন
গোনাহ হবে না। যেমন মোজা, জোতা ইত্যাদি। সূত্র: বযলুল
মাজহুদ শরহে আবু দাউদ; মুসলিম জীবনে সাফল্যে চল্লিশ হাদিস-১৫৩ পৃষ্ঠা
সারকথা হলো, হজ-ওমরার সময় ব্যতিত
পুরুষের জন্য মোজা দ্বারা টাখনু ঢেকে রাখা কো সমস্যা নেই। যারা বলে, তাদের কথা সঠিক নয়। টাখনু ঢেকে রাখার সূত্র হলো যা উপর থেকে নিচে ঝুলে পড়ে,
নিচের দিক থেকে যা পরিধান করা তা এর আওতায় পড়বে না, যেমন, মোজা ও জোতা। দেখুন হাদিসের ভাষা হলো যা
ঝুলিয়ে পড়া হয়। ( একথা
সত্য যে, নিচ থেকে কোন কিছু ঝুলানো যায় না)
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন,
«الْإِسْبَالُ فِي الْإِزَارِ، وَالْقَمِيصِ، وَالْعِمَامَةِ، مَنْ جَرَّ مِنْهَا شَيْئًا خُيَلَاءَ، لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
‘লুঙ্গি, জামা ও
পাগড়ীতে ইসবাল (ঝুলিয়ে পরা) রয়েছে। এগুলো থেকে যেকোনো একটিকে কোনো ব্যক্তি অহংকার
বশে টেনে-ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়ালে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার প্রতি সদয় দৃষ্টি দিবেন না”।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪০০:
Muhtaram,
Assalamualaikum. একজন ধার্মিক স্বল্পশিক্ষিত
যুবক আমাকে বলেছেন, "তিনি অজ্ঞতাবশতঃ ফরজ রোজারত অবস্থায় বেহিসাব আপন বিবির
সাথে রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছেন। একদিন এক বয়ানে এটা হারাম জেনে তিনি অনুতপ্ত এবং আল্লাহ
তায়ালার আজাবের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত। বেশুমার এই রোজার কাজা তিনি কিভাবে আদায় করবেন? পেশায় তিনি নিম্নবিত্ত কৃষক। বেশি কাজা রোজা আদায় করতে গেলে
তার সংসার অচল হবে আর কাফফারা আদায়ের আর্থিক
সংগতি নেই। সহজ সমাধান জানাবেন প্লিজ মুফতি মহোদয়। তারিখ: ২৭/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
হাফেজ মাওলানা নূরুল আমীন, জলঢাকা, নীলফামারী
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আপনার
প্রশ্নে অজ্ঞতাবশতঃ বিষয়টি পরিস্কার নয়। অজ্ঞতাবশতঃ দুটি অর্থ হতে পারে, একটি হলো রোজার কথা ভুলে গিয়েছিল আর দ্বিতীয় অর্থ হলো, রোজাবস্থায় সহবাসের বিধান জানা ছিল না।
যদি প্রথম অর্থ ধরা হয় অর্থাৎ
তিনি রোজা রাখার কথা ভুলে গিয়েছিল, তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়নি। তবে রোজার কথা
মনে পড়ার সাথে সাথেই পৃথক হতে হবে, নাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে
এবং কাজা-কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে। সূত্র: মুসলিম ১ম খণ্ড, ২০২ পৃ.
আর যদি দ্বিতীয় অর্থ হয় অর্থাৎ
রোজাবস্থায় সহবাসের বিধান জানা না থাকে, তাহলে
ফিকহি হানাফি ও মালিকির মতে, রোজা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস
করলে কাজা ও কাফফরা দুটি ওয়াজিব হয়।
ইমামদ্বয়ের দলিল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ:
أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ فَقَالَ: هَلَكْتُ،
قَالَ: «وَمَا أَهْلَكَكَ؟» قَالَ: وَقَعْتُ عَلَى امْرَأَتِي فِي رَمَضَانَ،
فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْتِقْ رَقَبَةً» قَالَ:
لَا أَجِدُ، قَالَ: «صُمْ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ» قَالَ: لَا أُطِيقُ، قَالَ:
«أَطْعِمْ سِتِّينَ مِسْكِينًا
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল
(ﷺ) এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি
ধ্বংস হয়ে গেছি। রাসূল (ﷺ) জিজ্ঞাসা
করলেন, তোমাকে কে ধ্বংস করেছে?
সাহাবী
বললেন, রমজানে আমি আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে ফেলেছি। রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন, তাহলে
এর বদলে একটি গোলাম আযাদ কর। সাহাবী বললেন,
আমি
এতে সক্ষম নই। নবীজী (ﷺ) বললেন, তাহলে
লাগাতার দুই মাস রোযা রাখ। সাহাবী বললেন,
আমি
এতেও সক্ষম নই। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, তাহলে
তুমি ৬০ জন মিসকিনকে খানা খাওয়াও। তাখরিজ:
সুনানে
ইবনে মাজাহ-১৬৭১, মুসনাদে আহমাদ-৬৯৪৪, মুসনাদুল
বাজ্জার-১১০৭, সহীহ ইবনে খুজাইমা-১৯৪৯, সহীহ
ইবনে হিব্বান-৩৫২৭
দ্বিতীয় কথা হলো, কাফফারা বিষয়টি শরিয়ত কর্তৃক
নির্ধারিত। যা কম-বেশি করার সুযোগ নেই। তবে কোন ব্যক্তি যদি
প্রকৃত অক্ষম হয়, তা মাফ যোগ্য। দলিল:
আয়াত নং-০১
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا
إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا
আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন
কাজের ভার দেন না। সূরা বাকারা-২৮৬
আয়াত নং-০২
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا
اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَأَنفِقُوا خَيْرًا لِّأَنفُسِكُمْ وَمَن
يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে
ভয় কর, শুন,
আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পন্য
থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। সূরা তাগাবুন-১৬
হাদিস নং-০১
اب إِذَا جَامَعَ فِي رَمَضَانَ
وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَىْءٌ فَتُصُدِّقَ عَلَيْهِ فَلْيُكَفِّرْ
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ،
أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي حُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ
جُلُوسٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ، فَقَالَ يَا
رَسُولَ اللَّهِ هَلَكْتُ. قَالَ " مَا لَكَ ". قَالَ وَقَعْتُ عَلَى
امْرَأَتِي وَأَنَا صَائِمٌ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "
هَلْ تَجِدُ رَقَبَةً تُعْتِقُهَا ". قَالَ لاَ. قَالَ " فَهَلْ
تَسْتَطِيعُ أَنْ تَصُومَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ ". قَالَ لاَ. فَقَالَ
" فَهَلْ تَجِدُ إِطْعَامَ سِتِّينَ مِسْكِينًا ". قَالَ لاَ. قَالَ
فَمَكَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم، فَبَيْنَا نَحْنُ عَلَى ذَلِكَ أُتِيَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِعَرَقٍ فِيهَا تَمْرٌ ـ وَالْعَرَقُ الْمِكْتَلُ
ـ قَالَ " أَيْنَ السَّائِلُ ". فَقَالَ أَنَا. قَالَ " خُذْهَا
فَتَصَدَّقْ بِهِ ". فَقَالَ الرَّجُلُ أَعَلَى أَفْقَرَ مِنِّي يَا رَسُولَ
اللَّهِ فَوَاللَّهِ مَا بَيْنَ لاَبَتَيْهَا ـ يُرِيدُ الْحَرَّتَيْنِ ـ أَهْلُ
بَيْتٍ أَفْقَرُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي، فَضَحِكَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم
حَتَّى بَدَتْ أَنْيَابُهُ ثُمَّ قَالَ " أَطْعِمْهُ أَهْلَكَ ".
বাব: যদি রমযানে স্ত্রী সঙ্গম করে এবং
তার নিকট কিছু না থাকে এবং তাকে সাদ্কা দেওয়া হয়, তা হলে সে
যেন তা কাফফারা স্বরূপ দিয়ে দেয়
আবুল ইয়ামান (রাহঃ) ... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট বসাছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ধ্বংস হয়ে
গিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ
তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ
আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ
তুমি কি একাধারে দু’মাস রোযা পালন করতে পারবে? সে বলল, না।
এরপর তিনি বললেনঃ ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল,
না।
রাবী বলেন, তখন নবী (ﷺ) থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী
(ﷺ) এর কাছে এক ‘আরাক পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। ‘আরাক হল ঝুড়ি। নবী (ﷺ) বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি।
তিনি বললেনঃ এগুলো নিয়ে সাদ্কা করে দাও। তখন লোকটি বলল, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আমার চাইতেও বেশী অভাবগ্রস্থকে সাদ্কা করব? আল্লাহর
শপথ, মদীনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের
চাইতে অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত (আনইয়াব) দেখা গেল। এরপর তিনি বললেন এগুলো
তোমার পরিবারকে খাওয়াও। তাখরিজ: বুখারি-১৮৩৬; মুসলিম-১১১১
সারকথা হলো, উপরোক্ত আয়াতদ্বয় ও হাদিস শরিফ
থেকে ইশারাতুন নস দ্বারা বুঝা যায়,
আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যক্তিটি খাঁটি তওবা করলে, মাফ পেয়ে যাবে। তবে জীবনে কখনো কাফফারা আদায় করার সুযোগ আসলে তা আদায় করতে
হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪০১:
আসসালামুয়ালাইকুম ভাই আমরা জানি
বড় মসজিদ বা খোলা মাঠ হলে নামাজি ব্যাক্তির
দুই কাতার সামনে দিয়ে যাওয়া যাবে কিন্তূ অনেক ভাই বলেন সেজদার স্হানের বাহিরে দিয়ে
যাতায়াত করা যাবে ।এর কি কোন নস বা কোন আহলে ইলমের মতামত কি আছে ? তারিখ: ২৭/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতারুজ্জামান, রংপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম মারাত্মক
গুনাহের কাজ। যেমন পবিত্র হাদিসে এসেছে,
لو يَعْلَمُ المَارُّ بيْنَ
يَدَيِ المُصَلِّي مَاذَا عليه، لَكانَ أنْ يَقِفَ أرْبَعِينَ خَيْرًا له مِن أنْ
يَمُرَّ بيْنَ يَدَيْهِ. قالَ أبو النَّضْرِ: لا أدْرِي أقالَ: أرْبَعِينَ
يَوْمًا، أوْ شَهْرًا، أوْ سَنَةً
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
নামাজি-ব্যক্তির
সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কীরূপ শাস্তি-ভোগের আশংকা রয়েছে, তবে
চল্লিশ পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাও ভালো মনে করতো।
বর্ণনাকারী আবুন নাযর বলেন, আমার
জানা নেই, হাদীসে চল্লিশের কী অর্থ, চল্লিশ
দিন, চল্লিশ মাস,
নাকি
চল্লিশ বছর! তাখরিজ: বুখারি- ৫১০ ; মুসলিম-৫০৭
দ্বিতীয় কথা হলো, নামাজি ব্যক্তির কতদূর সামনে
দিয়ে যেতে পারবে, এ বিষয়ে সরাসরি কোন হাদিস নেই। এটি একটি
কিয়াসি মাসয়ালা।
فإذا كان المصلي يصلي إلى سترة
جاز المرور من ورائها، وإذا كان يصلي إلى غير سترة جاز المرور بعيدا منه، وضابط
البعد والقرب هو العرف على الراجح، كما في الفتوى رقم:
অর্থাৎ যখন নামাজির সামনে
সুতরা থাকবে, তখন নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েজ। আর যদি সুতরা না থাকে, তাহলে দূর দিয়ে যাওয়া জায়েজ এবং নিকট দিয়ে যাওয়া জায়েজ নেই। সূত্র:
আহকামুল মুরুরি বাইনা ইয়াদিল মুসল্লি ফাতওয়া নং-১২৯২৯
তৃতীয় কথা হলো, দূরের বা بيْنَ يَدَيِ المُصَلِّي মুসল্লির সামনে দিয়ে এর পরিমাপ কি? ফুকাহায়ে কেরামগণ এর ব্যাখ্যা করেছেন,
মুসল্লির দৃষ্টি সেজদার স্থানে
থাকলে সাধারণত যে স্থান পর্যন্ত নজরে আসে,
যার
পরিমাণ মোটামুটি মুসল্লির কাতারসহ সামনের আরোও দুই কাতার হয়, তবে
ততটুকু জায়গার বাইরে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে। সূত্র: আদ দুররুল মুখতার ১/৬৩৬ হেদায়া
১/১১৮
এ বিষয়ে ইমাম বাজ (রহ.) কে
জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,
أما إذا كان بعيد فوق الثلاثة
أذرع، فهذا لا حرج فيه؛ لأن رده يشق لبعده، ولأنه لا يعد بين يديه في الحقيقة.
والأصل في هذا أنه ﷺ لما صلى في
الكعبة جعل بينه وبين الجدار الغربي ثلاثة أذرع، فهذا يدل على أن محل السترة بهذه
المثابة فأقل، والأولى أن يبعد أكثر عن المصلي خروجًا من الخلاف، أما إذا كان له
سترة فلا يمر بينه وبينها، ولكن يمر من ورائها، نعم.
المقدم
অর্থাৎ তিন গজের বেশি দূরে হলে তাতে দোষের কিছু নেই। কারণ তার প্রতিক্রিয়া
তার দূরত্বের জন্য কঠিন, এবং কারণ সে আসলে তার হাতে নেই।
এর মূল বা কিয়াস হিসেবে এ
হাদিস বলা যায়, রাসূল (ﷺ) যখন
কাবাতে সালাত আদায় করতেন, তখন তিনি এর এবং পশ্চিম দেয়ালের মাঝখানে তিন গজ দূরে করেছিলেন। সূত্র: তাতলিকু মাওসুআতুল ফাতওয়াল বাজিয়া
সারকথা হলো, নামাজির নিজের কাতার ব্যতিত
সামনে আরও দুটি কাতার এর পর অতিক্রম করা যাবে। এটি بيْنَ يَدَيِ المُصَلِّي এবং هذا أنه ﷺ لما صلى في الكعبة جعل
بينه وبين الجدار الغربي ثلاثة أذرع হাদিস দুটির কিয়াস করে ফুকাহায়ে উম্মত এ ফয়সালা দিয়েছেন। সুতরাং নিজের ফয়সালার চেয়ে
ফুকাহায়ে উম্মতের সিদ্ধান্ত নিরাপদ।
যেমন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেন, الفقهاء و هم اعلم يعني الحديث অর্থাৎ ফুকাহায়ে কেরাম হাদিসের অর্থ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত। সূত্রঃ জামে তিরমিজি-৩/৩১৫পৃ.
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪০২:
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লহ জানতে চাই
স্ত্রী সন্তানদেরকে কি সম্পদ দান করা যাবে? অথবা সম্পদ ক্রয় করে তাদের নামে দেয়া যাবে। দলিল সহ জানতে চাই। তারিখ: ২৮/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃমনছুর রহমান নওগাঁ থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আলহামদুলিল্লাহ
ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আলবুরহানে জিজ্ঞাসা-২৪৩ শিরোনাম মাসয়ালাটি
আলোচিত হয়েছে। লিংকটি শেয়ার করা হলো, আশা করি আপনার জবাব
পেয়ে যাবেন।
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/08/blog-post_11.html
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪০৪:
'আল্লাহ হাফেজ' অথবা 'খোদা হাফেজ' বলা বৈধ হবে
কি? তারিখ: ২৯/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান
বগুড়া থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, আলহামদুলিল্লাহ
ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আলবুরহানে জিজ্ঞাসা-২৪৯ শিরোনাম মাসয়ালাটি
আলোচিত হয়েছে। লিংকটি নিম্নে শেয়ার করা
হলো, আশা করি আপনার জবাব পেয়ে যাবেন।
https://al-burhaan.blogspot.com/2022/08/blog-post_15.html
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪০৫:
আসসালামুয়ালাইকুম,যে কোন বিপদ গ্ৰস্ত মুসলিম কে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না আল্লাহ সে যখন বিপদ গ্ৰস্ত
হয় তখন সাহায্য করা থেকে বিরত থাকবেন। এই হাদিস এর আরবি ইবারত দরকার কারো জানা থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ করছি। তারিখ: ৩০/১২/২২ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতারুজ্জামান
দিনাজপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত হাদিসটির কাছাকাছি/সংক্রান্ত
মতন ও অনুবাদসহ উল্লেখ করা হলো:
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ
الصَّبَّاحِ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي
مَرْيَمَ، أَخْبَرَنَا
اللَّيْثُ، قَالَ حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ سُلَيْمٍ، أَنَّهُ سَمِعَ إِسْمَاعِيلَ
بْنَ بَشِيرٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، وَأَبَا، طَلْحَةَ
بْنَ سَهْلٍ الأَنْصَارِيَّ يَقُولاَنِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
" مَا مِنِ امْرِئٍ يَخْذُلُ امْرَأً مُسْلِمًا فِي مَوْضِعٍ تُنْتَهَكُ
فِيهِ حُرْمَتُهُ وَيُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ إِلاَّ خَذَلَهُ اللَّهُ فِي
مَوْطِنٍ يُحِبُّ فِيهِ نُصْرَتَهُ وَمَا مِنِ امْرِئٍ يَنْصُرُ مُسْلِمًا فِي
مَوْضِعٍ يُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ وَيُنْتَهَكُ فِيهِ مِنْ حُرْمَتِهِ
إِلاَّ نَصَرَهُ اللَّهُ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ نُصْرَتَهُ " . قَالَ يَحْيَى
وَحَدَّثَنِيهِ عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ وَعُقْبَةُ بْنُ
شَدَّادٍ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ يَحْيَى بْنُ سُلَيْمٍ هَذَا هُوَ ابْنُ زَيْدٍ
مَوْلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَإِسْمَاعِيلُ بْنُ بَشِيرٍ مَوْلَى بَنِي
مَغَالَةَ وَقَدْ قِيلَ عُتْبَةُ بْنُ شَدَّادٍ مَوْضِعَ عُقْبَةَ .
অর্থ: আবু তালহা ইবন সাহল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা
উভয়ে বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে এমন স্থানে অপদস্থ করে, যেখানে
তার ইযযাত নষ্ট হতে সারে, তবে আল্লাহ্ তাকে এমন স্থানে অপমানিত করবেন, যেখানে
আল্লাহ্র সাহায্যের মুখাপেক্ষী হবে। অপর পক্ষে, যদি
কেউ কোন মুসলিমকে এমন স্থানে সাহায্য করে,
যেখানে
তার অপদস্থ হওয়ার আশংকা থাকে; তবে আল্লাহ্ তাকে এর বিনিময়ে
এমন স্থানে সাহায্য করবেন, যেখানে তাঁর সাহায্য অধিক প্রয়োজন হবে। তাখরিজ: আবু দাউদ- ৪৮৮৪, ৪৮০৬ ই.ফা.
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪০৮:
আসসালামু আলাইকুম।
একজন লোক হযরত ওমর ফারুক (রা.)
এর কাছে একটি ছেলেকে সঙ্গে করে উপস্থিত হয়ে বলল: এটা আমার ছেলে, কিন্তু আমার সাথে সকল সম্পর্ক
ছিন্ন করেছে ।’ তখন হযরত ওমর (রা.) ছেলেটিকে এ বিষয় জিজ্ঞেস
করলে,
ছেলেটি বলল হে আমীরুল মুমিনীন!
পিতামাতার উপরও কি সন্তানের কোন হক আছে? হযরত ওমর (রা.) বললেন; নিশ্চয়ই।’ তিনটি হক রয়েছে। ছেলেটি বলল: আল্লাহর শপথ, আমার
এ পিতা আমার এ হকগুলোর একটিও আদায় করেননি।
এই ঘটনা কি সহিহ? তারিখ: ০১/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মুবাশ্বির নীলফামারী থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়টির আরবি পাঠ
নিম্নরূপ:
جاء رجل إلى عمر بن الخطاب " رضي الله عنه" يشكو إليه عقوق ابنه ، فأحضر عمر الولد وأنَّبَه على عقوقه لأبيه ،
ونسيانه لحقوقه ، فقال الولد : يا أمير المؤمنين أليس للولد حقوق على أبيه ؟ قال : بلى ، قال : فما هي يا أمير المؤمنين ؟ قال عمر : أن ينتقي أمه ، ويحسن أسمه ، ويعلمه الكتاب ( أي القرآن ) ، قال الولد :
يا أمير المؤمنين إن أبي لم يفعل
شيئاً من ذلك ، أما أمي فإنها ونجية كانت لمجوسي ، وقد سماني جُعلاً ( أي خنفساء ) ، ولم يعلمني من الكتاب حرفاً واحداً
فالتفت عمر إلى الرجل وقال له : جئت إليَّ تشكو عقوق ابنك ، وقد عققته قبل أن يعقك ،
وأسأت إليه قبل أن يسيء إليك ؟! )
অর্থ: এক ব্যক্তি ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর কাছে এসেছিলেন, তার কাছে তার ছেলের অবাধ্যতার অভিযোগ
করেন। অতঃপর তিনি ছেলেটিকে উপস্থিত করলেন এবং পিতা-মাতাকে কষ্ট দেওয়া ও হক সম্পর্কে ভুলে যাওয়া জিজ্ঞেস করলেন। অতঃপর ছেলেটি বললেন, হে আমিরুল মুমিনিন, ছেলের প্রতি কি কোন হক নেই বাবার?
তিনি বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই। সে বলল, তা কি হে আমিরুল
মুমিনিন? তিনি বললেন, (১) মায়ের দুধ পান করানো, (২) সুন্দর
নাম রাখা এবং (৩)
কিতাব (অর্থাৎ কুরআন)
শিক্ষা দেওয়া। ছেলেটি বলল এর কোনটিও আমাকে শিক্ষা দেয়নি।
তারপর ওমর (রা.) লোকটির দিকে ফিরে বললেন: আপনি আমার
কাছে আপনার ছেলের অবাধ্যতার অভিযোগ করতে এসেছিলেন এবং সে তোমাকে শাস্তি দেওয়ার আগে
তুমি তাকে শাস্তি দিয়েছ, আর সে তোমাকে গালি দেওয়ার আগে তুমি
তাকে গালি দিয়েছ। সূত্র: তারবিয়াতুল আওলাদি ফিল ইসলাম-
১ম খণ্ড; ১২৭ পৃ.
এ বর্ণনা সম্পর্কে শায়েখ আলি
আল-হালাবি রহ.
বলেন, এ সনদের কোন ভিত্তি নেই।
দ্বিতীয় কথা হলো, উক্ত বর্ণনায় সন্তানের প্রতি তিনটি হক যা
কুরআন-সুন্নাহ
দ্বারা সমর্থিত-প্রমাণিত। যেমন,
وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ
أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَن يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ
আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে
পূর্ন দু’বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়াবার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত
করতে চায়। আর সন্তানের অধিকারী অর্থাৎ, পিতার উপর হলো সে সমস্ত
নারীর খোর-পোষের দায়িত্ব প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী। সূরা বাকারা-২৩৩
হাদিস নং-০১
من حق الولد على الوالد أن يحسن
اسمه ويحسن أدبه.
অর্থ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রা. ও আয়েশা
রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তারবিয়াতের ব্যবস্থা
করা বাবার উপর সন্তানের হক। তাখরিজ: মুসনাদে বাযযার (আলবাহরুয যাখখার), হাদীস ৮৫৪০
হাদিস নং-০২
عن أبي هريرة - رضي الله عنه – قال :
قال رسول الله صلى الله عليه
وسلم : ( حق الولد على والده أن يحسن اسمه
، ويعلمه الكتاب ، ويزوجه إن أدرك ) ( ذكره الزبيدي في " إتحاف السادة المتقين " – 6 / 317 ، 318
، والهندي في " كنز العمال " – برقم 45191
، 45192 ، 45193 ، والقرطبي في تفسيره – 18 / 195 ، وأبو نعيم في " الحلية "
– 1 / 184 ، وذكره
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) নবী করীম
(ﷺ) থেকে এ সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন : পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের হক হচ্ছে প্রথমত তিনটি: জন্মের পরপরই তার
জন্য উত্তম একটি নাম রাখতে হবে, জ্ঞান বুদ্ধি বাড়লে তাকে কুরআন শরীফ তথা ইসলাম শিক্ষা দিতে হবে।
আর সে যখন পূর্ণবয়স্ক হবে, তখন তার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কানযুল উম্মাল-৪৫১৯১,৪৫১৯২; কুরতুবি-১৮/১৯৫; মুসনাদে আবু নাঈম-১/১৮৪
হাদিস নং-০৩
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, ‘যার সন্তান রয়েছে সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে
উত্তম চরিত্র শেখায়। যখন সে বালেগ হবে তখন তার বিয়ে দেয়। বালেগ হওয়ার পরও যদি
বিয়ে না দেয় আর সে কোনো গুনাহ করে ফেলে তবে তার এ গুনাহ তার পিতার উপর বর্তাবে।’ তাখরিজ: শুআবুল ঈমান, বায়হাকী
৬/৪০১, হাদীস ৮৬৬৬
হাদিস নং-০৪
كلُّ مولودٍ يولَدُ على الفطرةِ
فأبواه يُهوِّدانِه أو يُنصِّرانِه أو يُمجِّسانِه
الراوي : أبو هريرة
‘প্রত্যেক শিশু (ইসলামের)
ফিতরতের উপর জন্মলাভ করে। কিন্তু পিতা-মাতা তাকে ইহুদী বানায়, খৃষ্টান বানায়, অগ্নিপূজক
বানায়। তাখরিজ: বুখারী ১/১৮৫, হাদীস ১৩৮৫;
সহীহ মুসলিম ২/৩৩৬, হাদীস ২৬৫৮
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪০৯:
আসসালামু আলাইকুম। বিশাল অট্টালিকা
নির্মানে কোন কল্যাণ নেই " এমন কোন হাদিস আছে কি? তারিখ: ০২/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার,ঢাকা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো,
আপনার প্রশ্নে বর্ণিত
কথাটির কাছাকাছি বা এ সংক্রান্ত হাদিস নিম্নে উল্লেখ করা হলো,
حَدَّثَنَا الْعَبَّاسُ بْنُ
عُثْمَانَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا
عِيسَى بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى بْنِ أَبِي فَرْوَةَ، حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ
أَبِي طَلْحَةَ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ
بِقُبَّةٍ عَلَى بَابِ رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالَ " مَا هَذِهِ
" . قَالُوا قُبَّةٌ بَنَاهَا فُلاَنٌ . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى
الله عليه وسلم ـ " كُلُّ مَالٍ يَكُونُ هَكَذَا فَهُوَ وَبَالٌ عَلَى
صَاحِبِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ " . فَبَلَغَ الأَنْصَارِيَّ ذَلِكَ
فَوَضَعَهَا فَمَرَّ النَّبِيُّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ بَعْدُ فَلَمْ يَرَهَا
فَسَأَلَ عَنْهَا فَأُخْبِرَ أَنَّهُ وَضَعَهَا لِمَا بَلَغَهُ عَنْكَ فَقَالَ
" يَرْحَمُهُ اللَّهُ يَرْحَمُهُ اللَّهُ " .
অর্থ: আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) এক আনসারীর গোলাকার ঘরের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এটা কী? তারা বলেন, এটা
অমুকের তৈরী একটি গোলাকার ঘর। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ এরূপ যে কোন সম্পদ কিয়ামতের দিন তার মালিকের জন্য বিপদের কারণ
হবে। এ কথা আনসারীর নিকট পৌঁছলে তিনি ঘরখানি ভেঙ্গে ফেলেন। পরে নবী (ﷺ) সেই পথে যেতে ঘরটি না দেখতে পেয়ে এ সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করেন। তাঁকে জানানো হলো, আপনার কথা তার কানে পৌঁছার পর
সে তা ভেঙ্গে ফেলেছে। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, আল্লাহ
তার প্রতি দয়া করুন। তাখরিজ: সুনানে আবু দাউদ-৫২৩৭; সুনানে ইবনে মাজাহ-৪১৬১ বিল্ডিং নির্মাণ ও ধ্বংস
অধ্যায়
নোট: আলবানী রহ. বলেন, হাদিসটির সনদ জয়িফ/দুর্বল। ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি
সিকাহ। সূত্র: তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩১৩২,
১৪/২৩৩
নং পৃষ্ঠা
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪১০:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ،
وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلَامَةِ، وَالْإِسْلَامِ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ،
وَجَوَازٍ مِنَ الشَّيْطَانِ .
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মাঝে এ বছরে আগমন ঘটান শান্তি ও নিরাপত্তা এবং ঈমান ও ইসলামের
(উপর অবিচলতার) সাথে; শয়তান থেকে সুরক্ষা ও দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে।
এ দুআটি কি নতুন বছর আগমনের
জন্য, এ বিষয়ে কোন নস আছে কি? সনদের হুকুম কি? তারিখ: ০২/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা নাছির উদ্দিন কঙ্গো ও
মাওলানা আনোয়ার সিলেট থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হ্যাঁ,
দুআটি নতুন মাস/বছরের জন্য সাহাবায়ে কেরাম আমল
করতেন। দলিল:
هذا الخبر رواه الطبراني في
“المعجم الأوسط” (6 / 221)، قال: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الصَّائِغُ
قَالَ: أخبرنا مَهْدِيُّ بْنُ جَعْفَرٍ الرَّمْلِيُّ قَالَ: أخبرنا رِشْدِينُ بْنُ
سَعْدٍ، عَنْ أَبِي عُقَيْلٍ زُهْرَةُ بْنُ مَعْبَدٍ، عَنْ جَدِّهِ عَبْدُ اللَّهِ
بْنُ هِشَامٍ قَالَ: ” كَانَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، يَتَعَلَّمُونَ هَذَا الدُّعَاءَ إِذَا دَخَلْتِ السَّنَةُ أَوِ الشَّهْرُ: اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ،
وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلَامَةِ، وَالْإِسْلَامِ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ،
وَجَوَازٍ مِنَ الشَّيْطَانِ .
অর্থাৎ ইবনে হিশাম (রহ.) বলেন,
নবি এর সাহাবাগণ এই দুআটি বছর অথবা মাসের শুরুতে আমল করতেন, اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا
بِالْأَمْنِ، وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلَامَةِ، وَالْإِسْلَامِ، وَرِضْوَانٍ مِنَ
الرَّحْمَنِ، وَجَوَازٍ مِنَ الشَّيْطَانِ .
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মাঝে এ বছরে আগমন ঘটান শান্তি ও নিরাপত্তা এবং ঈমান ও ইসলামের
(উপর অবিচলতার) সাথে; শয়তান থেকে সুরক্ষা ও দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে। তাখরিজ: তাবারানি মুজামুল আউসাত-৬ খণ্ড;২২১ পৃ.
দ্বিতীয় কথা হলো, হাদিস/আসারটি
সনদের হুকুম নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যেমন,
قال الحافظ ابن حجر رحمه الله
تعالى:
” رِشْدِينُ بْنُ سَعْدٍ… ضعيف رجح أبو حاتم عليه ابن لهيعة، وقال ابن يونس: كان صالحا في دينه، فأدركته غفلة الصالحين، فخلط في
الحديث ” انتهى من “تقريب التهذيب” (ص 209).
لكن قد تابع رشدين حيوةُ بإسناد
صحيح، رواه البغوي في “معجم الصحابة” (3 / 543
অর্থাৎ হাফেজ ইবনে হাজার
আসকালানি রহ. বলেন, এর সনদ জয়িফ, কেননা রশিদ
ইবনে সাদ নামক রাবি জয়িফ। সূত্র: তাকরিবুত তাহজিব-২০৯ পৃ.
ইমাম বাগবি রহ.বলেন, সনদ
সহিহ। সূত্র: মুজামুল
সাহাবি-৩/৫৪৩ পৃ.
প্রশ্ন: ক। জয়িফ/দুর্বল হাদিসের হুকুম কি?
উত্তর: ক। এ বিষয়ে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল
(রহ.) বলেন, “হালাল-হারামের বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে থাকি। তবে
ফজিলতের ক্ষেত্রে নমনীয়তা অবল্বমন করি।”
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, “ফজিলত, উৎসাহ বা ভীতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে জয়িফ (দুর্বল) হাদিসের আমল করা
উত্তম। কিন্তু জাল হাদিস থেকে পারবে না।” তিনি
আরও বলেন, “এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরাম ঐকমত্য
পোষণ করেছেন।” সূত্র : আল-আজকার,১১-১২
শেষ কথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত আসারটি
নতুন বছর/মাস শুরুতে আমলযোগ্য কোন অসুবিধা নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪১১:
এই হাদিস এর আরবি ইবারত টা একটু
শেয়ার করার জন্য মুহতারাম মুকাররাম মুফতি সাহেব নিকট বিনীত অনুরোধ করছি।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অবশ্যই মানুষের কাছে এমন যুগ আসবে
তারা মসজিদগুলোতে একত্র হবে এবং সালাত আদায় করবে কিন্তু তাদের মধ্য একজনও মুমিন নেই
অথচ বহুত মানুষ সালাত আদায় করছে। রাসূল (ﷺ)-এর এ কথা শুনে সাহাবারা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কোন সময়ে এ ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে
আসবে, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, ওই মুসল্লিরা সুদ খাবে এবং
সুউচ্চ অট্রালিকা নির্মাণ
করবে। তাখরিজ: মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-৪০
এটা কি সহিহ? তারিখ: ০৩/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আখতারুজ্জামান রংপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো,
আপনার প্রশ্নে বর্ণিত হাদিসটির আরবি ইবারত নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
ن عبد الله بن عمرو بن العاص
قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " ليأتين على الناس زمان يجتمعون في
المساجد ويصلون وما فيهم مؤمن ". قيل: يا رسول الله , ومتى ذلك؟ قال: "
إذا أكلوا الربا , وشرفوا البناء , ولا يزال قول لا إله إلا الله يرد عن العباد سخط
الله , حتى إذا ما يبالوا ما رزئ من دينهم إذا سلمت لهم دنياهم , فإذا قالوا لا
إله إلا الله , قال الله عز وجل كذبتم لستم بها بصادقين ".
ـ[أحمد بن سالم
المصري]ــــــــ[18 - 12 - 03, 01:40 م]ـ
أخرجه ابن أبي شيبة في
"المصنف" (30355و37586 - ط. الرشد)، وفي "الإيمان" (101)، والفريابي
في "صفة المنافق" (108و109و110)، والطحاوي في "مشكل الآثار"
(590)، والآجري في "الشريعة" (236)، والحاكم في "المستدرك"
(4/ 489/8365) من طرق عن الأعمش، عن خيثمة، عن عبد الله بن عمرو قال:
((لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَجْتَمِعُونَ [ويصلون] فِي الْمَسَاجِدِ
وَمَا فِيهِمْ مُؤْمِن)).
وقال الحاكم: (صحيح الإسناد على
شرط الشيخين، ولم يخرجاه).
নোট: ইমাম হাকেম রহ.
বলেন, হাদিসটির সনদ বুখারি ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহিহ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
মোটিভেশন ক্লাস:
জিজ্ঞাসা-১২৪১৩:
"দেন মোহর সম্পর্কে সঠিক নিয়ম"--এটার
লেসনপ্লান দরকার। তারিখ: ০৪/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোজাম্মেল হক কুমিল্লা
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ইসলামে মোহরের গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম এবং বিয়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না। আকদের সময় উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেওয়ার শর্ত করলেও মোহর বাতিল হয় না। মোহর সম্পূর্ণরূপে নারীর প্রাপ্য। মোহর আদায় করা ফরয। স্বয়ং
আল্লাহ তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন। যেমন,
আয়াত নং-০১
Surah
An-Nisa, Verse 4:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ا
অর্থ: আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের
মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। সূরা নিসা -০৪
আয়াত নং-০২
أَن تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ
غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ
أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن
بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
অর্থ: উল্লিখিত নারীরা ছাড়া
অন্যদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, যে স্বীয় সম্পদ দ্বারা
প্রয়াসী হবে তাদের সাথে বিবাহবন্ধনে, ব্যভিচারে নয়। অতএব তাদের
নিকট থেকে তোমরা যে আনন্দ উপভোগ করেছ (সে কারণে) তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে
প্রদান করবে। আর মোহর নির্ধারিত থাকার পরও কোনো বিষয়ে পরস্পর সম্মত হলে তাতে
তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। সূরা নিসা- ২৪
মোহর আদায় করা স্বামীর উপর ফরয এবং বিয়ের
অপরিহার্য শর্ত। মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না। আকদের সময় উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেওয়ার শর্ত করলেও মোহর বাতিল হয় না। সূত্র: আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৪০-১৪৬; আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ১/৩৮৪-৩৯০; তাফসীরে উছমানী পৃ. ১০৫
প্রশ্ন: ক। মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ
কত?
মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ কুরআন মজীদে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
মোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ শরিয়ত নির্ধারণ করেনি।
বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৭৫, মিরকাতুল মাফাতিহ : ৬/৩৫৮
তবে সর্বনিম্ন হাদিস-আসারে
রয়েছে। ফিকহে
হানাফী অনুসারে সর্বনিম্ন মোহর দশ দিরহাম।
দলিল:
হাদিস নং-০১
عن علي -رضي الله عنه- قال: «لا تُقطع اليدُ إلا
في عَشرة دَراهِم, ولا يكون المهرُ أقلَّ مِن عشرة دَراهِمسنن الدارقطني, ت: شعيب
الارنؤوط وجماعة, مؤسسة الرسالة، بيروت - الطبعة الأولى، 1424هـ.
হাদিস নং-০২
لا مَهْرَ أَقَلُّ مِنْ عَشْرَةِ دَرَاهِمَ
“দশ দিরহামের কম মহর নেই। ” তাখরিজ: দারা কুতনী-৩৯২
দশ দিরহামের পরিমাপ : প্রতি দিরহামে ৩ মাশা ০.৮.রতি হয়। ৮ রতিতে ১ মাশা, ১২ মাশায় ১ তোলা হয়। এ হিসেবে দশ দিরহামের পরিমাণ হলো ৩১ মাশা রূপা বা ২ তোলা ৭ মাশা (প্রায়
আড়াই ভরি রূপা) অথবা তার সমমূল্য টাকা। এটাই বিবাহের মহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ।
আজকের বাজারে প্রতি ভরি রুপার দাম, ১৫১৬ টাকা (১৩ সেপ্টেম্ব বাজুস কর্তৃক
নির্ধারিত) হয়, তাহলে দশ দিরহাম বা আড়াই ভরি রূপার মূল্য হবে (১৫১৬×২.৭)=৪০৯৩
টাকা।
সূত্র: শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৪/৩৯৮ আযীযুল ফাতাওয়া, ৪৫১/ ফাতাওয়া দারুল উলূম ৮ : ২৬৪/ আহসানুল ফাতাওয়া ৪ : ৩৮২; ৫/৩১২, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত :
৬/২৪৩
প্রশ্ন: খ। কি দ্বারা মহর আদায় হবে?
উত্তর: খ। মোহর এমন কিছু হতে হবে, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘মাল’ (সম্পদ) বলে গণ্য। টাকা-পয়সা
হওয়া জরুরি নয়। দলিল:
لما تزوج عليٌّ رضيَ اللهُ عنهُ فاطمةَ رضيَ اللهُ
عنها ، قال له رسولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّم : أعطِهَا شيئًا ، قال : ما
عندي . قال : فأين درعُك الحطميَّةُ
الراوي : عبدالله بن عباس : صحيح النسائي
الصفحة أو الرقم: 3376 |
خلاصة حكم المحدث : صحيح
অর্থ: রাসূলে আকরাম (ﷺ) হযরত আলী (রা.)-কে নির্দেশ দিয়েছেন, কিছু দেয়ার আগে বিবির কাছে যেয়ো না। হযরত আলী (রা.) ওজরখাহি করলেন, আমার কাছে তো কিছুই নেই। রাসূলে কারিম (ﷺ) বললেন, তোমার কাছে যে লোহার বর্মটি
ছিল সেটি কোথায়? ওটাই ফাতেমাকে (রা.) দিয়ে
দাও। সাহাবী হযরত আলী (রা.) নির্জনবাসে যাওয়ার পূর্বেই বর্মটি ফাতেমাকে (রা.) দিয়ে
দেন।’ তাখরিজ: সুনানে নাসায়ি-৩৩৭৬; আবু দাউদ-২১২৬
প্রশ্ন: গ। মহরে ফাতেমির পরিমাণ কত বর্তমান বাজারে?
উত্তর:
গ। মোহরে ফাতেমির পরিমাণ পাঁচ শ দিরহাম তথা ১৩১.২৫
ভরি (এক কেজি ৫৩০.৯০০ গ্রাম) খাঁটি রুপা অথবা এর বাজারমূল্য। সতর্কতামূলক ১৫০ তোলা
খাঁটি রুপার কথা বলা হয়ে থাকে। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস : ২৭৪২; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৩/২১৫; ফতোয়ায়ে রহিমিয়া : ৮/২৩১)
১৫০
ভরি রৌপ্য
আজকের
বাজারে মহরে ফাতিমির সমমূল্য হলো,১৫০*১৫১৬=২২৭৪০০ টাকা
প্রশ্ন: ঘ। মহর কত প্রকার?
উত্তর: ঘ। আমাদের মধ্যে দুই ধরনের মোহরের প্রচলন রয়েছে। এক. مهر معجل (মোহরে মু‘আজ্জাল) বা নগদ মোহর। দুই.مهر مؤجل (মোহরে মুয়াজ্জাল) বা বাকি মোহর। এ শব্দগুলো যেহেতু বিয়ের মজলিস ছাড়া
সচরাচর শোনা যায় না তাই অনেকে এ শব্দ দুটির অর্থ বুঝে না। শরীয়তের দৃষ্টিতে
মোহরে মু‘আজ্জাল হল সেই মোহর, যা বিয়ে
সম্পন্ন হওয়ামাত্র নগদ আদায় করা অপরিহার্য হয়ে যায়। হয়তো সে বিয়ের সময়ই তা পরিশোধ
করে দিবে অথবা বিয়ের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিশোধ করবে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর তা
দাবি করার অধিকার আছে। যেহেতু আমাদের সমাজে নারীরা সাধারণত মোহর দাবি করে না তাই
এরূপ মনে করা উচিত হবে না যে, সেটা পরিশোধ করা আমাদের জন্য
জরুরি নয়; বরং কর্তব্য হল স্ত্রীর চাওয়ার অপেক্ষা না করে
যত দ্রুত সম্ভব এই ফরয দায়িত্ব হতে মুক্ত হওয়া।
প্রশ্ন: ঙ। স্ত্রী যদি স্বামীকে মহর মাফ করে, তাহলে জায়েজ হবে কি?
উত্তর: ঙ। স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে
(প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে চাপ ব্যতিত) নিজ মহরানা ছেড়ে দেয়, তাহলে
সেটা স্বামীর জন্য বৈধ। দলিল:
Surah
An-Nisa, Verse 4:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن
طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
অর্থ: আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের
মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। সূরা নিসা -০৪
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪১৪:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ, বিজ্ঞজনদের নিকট জানার বিষয় হলো, আমাদের ইউনিটে সৈনিকদের জন্য যে
ফ্রেশ আসে তা থেকে যদি কোন সৈনিক কিছু ফ্রেশ নিয়ে নেয় যেমন কেউ কয়েকটি পেয়াজ/রসুন
/ মরিচ নিয়ে থাকেন তাহলে এটা জায়েজ হবে কিনা বা হক্কুল ইবাদ নষ্ট করার মধ্যে শামিল
হবে কিনা? তারিখ: ০৫/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ শফিউল ইসলাম সিরাজগঞ্জ
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, ইসলামে
বান্দার হকের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন হাদিস শরিফে এসেছে,
قال النبيٌّ- صلى الله عليه وسلم
-: ((أَتَدرُونَ مَا المُفلِسُ؟ قَالُوا: المُفلِسُ فِينَا مَن لَا دِرهَمَ لَهُ
وَلَا مَتَاعَ، فَقَالَ: إِنَّ المُفلِسَ مِن أُمَّتِي يَأتِي يَومَ القِيَامَةِ
بِصَلَاةٍ, وَصِيَامٍ, وَزَكَاةٍ,، وَيَأتِي قَد شَتَمَ هَذَا، وَقَذَفَ هَذَا،
وَأَكَلَ مَالَ هَذَا، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ هَذَا، فَيُعطَى هَذَا مِن
حَسَنَاتِهِ، وَهَذَا مِن حَسَنَاتِهِ، فَإِن فَنِيَت حَسَنَاتُهُ قَبلَ أَن
يُقضَى مَا عَلَيهِ أُخِذَ مِن خَطَايَاهُم فَطُرِحَت عَلَيهِ، ثُمَّ طُرِحَ فِي
النَّارِ)) رواه مسلم
অর্থাৎ রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তোমরা কি জান নিংস্ব কে? ‘আমার উম্মতের মধ্যে (আসল) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের
দিন অনেক নামাজ, রোজা ও জাকাতের নেকি নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু এর
সঙ্গে সে এমন অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে। কারও প্রতি
মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারও মাল (অবৈধভাবে) ভক্ষণ করেছে, কারও
রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে। অতঃপর অমুক অমুক
(অত্যাচারিত) ব্যক্তিকে তার নেকিগুলো
দেওয়া হবে। পরিশেষে যদি তার নেকি অন্যদের দাবি পূরণ করার আগেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে
তাদের পাপরাশি নিয়ে তার ওপর চাপানো হবে। অতঃপর (অন্যদের পাপের বোঝার কারণে) তাকে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হবে। তাখরিজ: মুসলিম-২৫৮১ ; তিরমিজি-২৪১৮
এই হাদিস থেকে হক্কুল
ইবাদতের গুরুত্ব বুঝে আসে।
দ্বিতীয় কথা হলো, যেহেতু প্রতিটি সৈনিকের জন্য
সবার জন্য সমান রেশন-রশদ বরাদ্দ। তাই কেউ বেশি খাওয়ার সুযোগ
নেই। মেস থেকে পেয়াজ/রসুন / মরিচ ইত্যাদি
নিয়ে অন্যের হক নষ্ট করা, ঘার্তি ফেলানো, জায়েজ নেই। দলিল:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ
لاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَن تَكُونَ
تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ (29
অর্থাৎ হে মুমিনরা! তোমরা পরস্পরের
সম্পদকে অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না। তবে ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে পারস্পরিক সন্তুষ্টচিত্তে
হলে ভিন্ন কথা। সূরা নিসা-২৯
তৃতীয় কথা হলো, মেসের রান্না করার পর (স্বাভাবিক পাক করার পর) যদি অতিরিক্ত পেয়াজ/রসুন / মরিচ
থাকে এবং কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অনুমতি থাকে, তাহলে কেউ কয়েকটি
পেয়াজ/রসুন / মরিচ নিয়ে থাকেন, তাহলে এটা নাজায়েজ হবে না। সূত্র:
ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-২৭/২৬৭
সারকথা হলো, সবার জন্য সমান বরাদ্দ থাকলেও,
সুষম বণ্টনের দায়ভার কর্তৃপক্ষের উপর। তাই অতিরিক্ত রেশন থেকে কোন কিছু ভোগ করতে
চায়লে, কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন। সুতরাং পরামর্শ হলো, বিষয়টি
ইউনিট কর্মকর্তা থেকে পেয়াজ/রসুন / মরিচ ইত্যাদি অনুমতি নেওয়া।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪১৫:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,আপনাদের কাছে আমার একটি জানার বিষয় হলো, টাকা দেওয়ার জন্য মহিলাদের নাম পোস্টারে
লাগানো যাবে কিনা? তারিখ: ০৫/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ ছাব্বির হোসাইন টাঙ্গাইল
থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, দান করে
প্রচার করা ইসলামে কাম্য নয়। যদিও প্রকাশ্যে দান করা অনেক সময় উত্তম।
দ্বিতীয় কথা হলো, মহিলার নাম পোস্টারে দেওয়া
যাবে না, এরকম নিষেধাজ্ঞা নস সরাসরি নেই। তবে নিম্নের বর্ণনা
দ্বারা
Surah Al-Ahzab, Verse 33:
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا
تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
অর্থ: তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা
যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। সূরা আহজাব-৩৩
আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) এ আয়াতের
ব্যাখ্যায় বলেন, নারীর প্রকৃত অবস্থানক্ষেত্র হচ্ছে তার গৃহ। নারী
প্রয়োজন ব্যতীত গৃহের বাইরে যাবে না বরং গৃহেই অবস্থান করবে। সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৬/৪০৯
হাদিস নং-০১
عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ
النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ
থেকে বর্ণিত। রাসূল রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, নারী জাতি হল আপাদমস্তক সতর। তাখরিজ:
সুনানে তিরমিজী-১১৭৩, মুসনাদুল বাজ্জার-২০৬৫, সহীহ ইবনে খুজাইমা-১৬৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান-৫৫৯৮
হাদিস নং-০২
إنَّ المرأةَ عورةٌ ، فإذا خرجتِ
استشرفها الشَّيطانُ ، وأقربُ ما تكونُ من وجهِ ربِّها وهي في قَعرِ بيتِها
الراوي : عبدالله بن مسعود |
المحدث : ابن خزيمة | المصدر : التوحيد لابن خزيمة | الصفحة أو الرقم : 40/1 | خلاصة
حكم المحدث : [أشار في المقدمة أنه صح وثبت بالإسناد الثابت الصحيح] | التخريج :
أخرجه الترمذي (1173) مختصراً، وابن خزيمة (1685)، وابن حبان (5598)
অর্থ: নবি (ﷺ) বলেন,
নারী
তার পালনকর্তার সর্বাদিক নিকটে তখনই থাকে যখন সে তার গৃহে অবস্থান করে। তাখরিজ: সহীহ ইবনে হিব্বান-৫৫৯৯, ইবনে খুজাইমা-১৬৮৫
উপরোক্ত আয়াতে কারিমা ও
হাদিসে নববির বর্ণনা ইশারাতুন নস দ্বারা বুঝা যায়, নারীদের বাহিরের জগতে নারীর
প্রচার-প্রসার কাম্য নয়। সুতরাং আপনার প্রশ্নের আলোকে টাকা দেওয়ার জন্য মহিলাদের নাম
পোস্টারে লাগানো নাজায়েজ না হলেও, ঠিক হবে না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪১৬:
আসসালামু আলাইকুম। জাহানান্নামীদের
দুটি প্রকার যা এখনো আমি দেখিনি" এ হাদীসটি দরকার? তারিখ: ০৭/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাভার, ঢাকা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো, আপনার প্রশ্নে বর্ণিত হাদিসটির মতন, অনুবাদ ও
ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হলো,
عَنْ أَبِـىْ هُرَيْرَةَ قَالَ
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ
مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ
كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ
الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا
لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا
অর্থ: আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ﷺ) বলেছেন, দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের
অধিবাসী; যাদেরকে আমি দেখিনি। (তারা ভবিষ্যতে আসবে।) প্রথম শ্রেণী
(অত্যাচারীর দল) যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক, যদ্দ্বারা
তারা লোককে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সেই নারীদল; যারা
কাপড় তো পরিধান করবে, কিন্তু তারা বস্তুতঃ উলঙ্গ থাকবে,
যারা পুরুষদের আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে,
যাদের মস্তক (খোঁপা বাঁধার কারণে) উটের হিলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা
জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তার গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ
এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে। তাখরিজ: আহমাদ ৮৬৬৫,
মুসলিম ৫৭০৪
ব্যাখ্যা:
الحديث، وهذا وعيد عظيم، يجب
الحذر مما دل عليه، فالرجال الذين بأيديهم سياط كأذناب البقر هم من يتولى ضرب
الناس بغير حق من شرطة، أو رجال آخرين من غيرهم، كل من يتولى ضرب الناس بغير حق هو
داخل في هذا الحديث، سواء كان بأمر الدولة أو بغير أمر الدولة؛ لأن الدولة إنما
تطاع في المعروف، يقول ﷺ: إنما الطاعة في المعروف، لا طاعة لمخلوق في معصية
الخالق، وأما قوله ﷺ: نساء كاسيات عاريات مائلات مميلات فقد فسر ذلك
০১. গরুর লেজের মত চাবুক, যদ্দ্বারা তারা লোককে প্রহার করবে। অর্থাৎ
এটি যা ইঙ্গিত করে সে সম্পর্কে
সতর্ক থাকতে হবে, কারণ গরুর লেজের মতো যাদের
হাতে চাবুক রয়েছে তারাই পুলিশের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে লোকেদের প্রহার করে, বা অন্যদের থেকে অন্য পুরুষদের প্রহার করে। তাদের চেয়ে, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে মানুষকে মারধর করবে তাকে এই হাদীসের
অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা রাষ্ট্রের আদেশে হোক বা
রাষ্ট্রের আদেশ ব্যতীত;
০২. তারা বস্তুতঃ উলঙ্গ থাকবে,
যারা পুরুষদের আকৃষ্ট করবে । অর্থাৎ যার অর্থ হল (পোশাক): এর অর্থ: নামমাত্র পোশাক
যার কোন বাস্তবতা নেই, এর অর্থ হল: এটি এমন পোশাক
যা অর্জন করে না উদ্দেশ্য উদ্দেশ্য;
এজন্য
তিনি বলেছেন: (উলঙ্গ) পোশাক আছে,
কিন্তু
তার কোনো মূল্য নেই, এবং এর কোনো উপকার নেই; হয় তার স্বল্পতার জন্য; এবং হয় তার পাতলা হওয়ার কারণে, পাতলা যার মধ্য দিয়ে গোপনাঙ্গ দেখা যায়, অথবা ছোট যার মাধ্যমে পা দেখা যায়, অথবা হাত,
স্তন
ইত্যাদির অন্যান্য অংশ।
এটি এমন একটি পোশাক যা উদ্দেশ্যমূলক উদ্দেশ্য অর্জন
করে না। এজন্য একে নগ্ন বলা হয়। কেননা কিসওয়াতে যথেষ্ট পরিমাণ নেই, বরং এটি একটি পাতলা কিসওয়া যা গোপনাঙ্গকে প্রকাশ করে, অথবা একটি ছোট যা পুরো শরীরকে ঢেকে রাখে না। সূত্র: তাতবিকু মাওসুআতুল
ফাতাওয়ায়িল বাজিয়া
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪১৭:
আস্ সালামুআলাইকুম, সম্মানিত শায়েখ, আমার জানার বিষয় হলো একব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্ত্রী
তাকে বলে আমি তোমাকে তালাক দিলাম এ কথাটি তিনবার বলেছেন। এখন স্ত্রী তার ভূল বুঝতে
পেরে ক্ষমা চেয়ে ঐ স্বামীর সাথে সংসার করতে চাচ্ছে, এখন কী/কীভাবে
তারা সংসার করতে পারবে?এ বিষয়ে সমাধান জানালে উপকৃত হব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।? তারিখ: ০২/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ আমিনুল ইসলাম
দিনাজপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
ফকিহ সাহাবি, (যেমন, হযরত উমর, আলী, ‘উসমান, ইবনে মাসউদ, ইবনে উমর, ইবনে আমর, উবাদাহ বিন সামিত, আবূ হুরাইরা, ইবনে আব্বাস, ইবনে যুবায়ের, আসেম বিন উমর ও হযরত আয়িশা রা.) আয়িম্মায়ে আরবা (ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ) ইমাম বুখারী রহ.-সহ অধিকাংশ তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈদের মতামত হলো: এক মাজলিসে বা
একসাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক হয়ে যাবে। সুতরাং আপনার প্রশ্নে বর্ণিত ব্যক্তি
তিনবার তালাক শব্দ উচ্চারণ দ্বারা তিন তালাকে মুগাল্লাযা পতিত হয়েছে।
এখন নতুনভাবে সংসার করতে হলে একমাত্র পন্থা হলো, হিলা বিবাহ অর্থাৎ অন্যত্র বিবাহের পর দ্বিতীয় স্বামীর সাথে
মেলামেশা না হওয়া পর্যন্ত প্রথম স্বামীর জন্য উক্ত স্ত্রী হালাল হবে না।দলিল:
আয়াতে কারিমা
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ
حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا
أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া
হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত
তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে
দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই
পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা
থাকে। সূরা বাকারা-২৩০
হাদিসে নববি
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق
ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن
طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে
জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক
দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে
স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী
গ্রহণ করা পর্যন্ত। তাখরিজ: বুখারী-৫৩৬৪
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪১৮:
আসসালামু আলাইকুম,
আমার জানার বিষয় ছিল, একই ব্যক্তি আযান, ইক্বামত ও ইমামত করতে পারবেন কিনা? শরীয়তের দৃষ্টিতে এর সুনির্দিষ্ট
মতামত থাকলে জানালে উপকৃত হবো। তারিখ: ০৭/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-মামুন
কুমিল্লা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, হ্যাঁ,
একই ব্যক্তি
আযান, ইক্বামত ও ইমামত করতে পারবেন। কোন অসুবিধা নেই। কেননা নবীজী (ﷺ) থেকেও
ইকামত দিয়ে নিজেই ইমামতী করার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন,
عن عقبة بن عامرالجهنى قال: كنت
مع النبى صلى الله عليه وسلم فى سفر، فلما طلع الفجر أذن وأقام، ثم أقامنى عن
يمينه (المصنف لابن ابى شيبة، كتاب الصلاة، باب ما كان يخفف القراءة فى
السفر-3/254، رقم-3708)
অর্থাৎ হজরত ওকবা ইবনে আমের (রা.) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবি (ﷺ)
এর সঙ্গে সফরে ছিলাম। অতঃপর
যখন ফজর উদিত হলে তিনি আজান দিলেন এবং একামত দিলেন। অতঃপর তিনি আমাকে তার ডান পাশে
দাঁড় করিয়ে দিলেন (তিনি ইমামতি করলেন)। তাখরিজ: মুসান্নেফে
ইবনে আবি শায়বা-৩৭০৮; বাহরুল আনওয়ার-৮৯ খণ্ড, ৪০৩ পৃ.
الأفضل كون الإمام هو المؤذن،
وفى الضياء: أنه عليه الصلاة والسلام أذن فى سفر بنفسه وأقام وصلى الظهر
وفى رد المحتار: وقد أخرج
الترمذى أنه عليه الصلاة والسلام أذ فى سفر وصلى بأصحابه (الدر المختار مع رد
المحتار، باب الاذان، مطلب هل بأثر النبى صلى الله عليه وسلم الأذان بنفسه-2/71
ফতোয়ায়ে শামিতে তিরমিজির
রেওয়ায়েত নকল করেছেন- সফরে নবি (ﷺ)
আজান দিয়েছেন, একামত দিয়েছেন এবং যোহরের সালাতের ইমামতি করেছেন। সূত্র: রদ্দুল মুহতার-২/৭১
দ্বিতীয় কথা হলো, যিনি আজান দিবেন তিনিই ইকামত দিবেন। দলিল:
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا
عَبْدَةُ، وَيَعْلَى بْنُ عُبَيْدٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زِيَادِ بْنِ
أَنْعُمٍ الإِفْرِيقِيِّ، عَنْ زِيَادِ بْنِ نُعَيْمٍ الْحَضْرَمِيِّ، عَنْ
زِيَادِ بْنِ الْحَارِثِ الصُّدَائِيِّ، قَالَ أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله
عليه وسلم أَنْ أُؤَذِّنَ فِي صَلاَةِ الْفَجْرِ فَأَذَّنْتُ فَأَرَادَ بِلاَلٌ
أَنْ يُقِيمَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ أَخَا صُدَاءٍ قَدْ أَذَّنَ وَمَنْ أَذَّنَ
فَهُوَ يُقِيمُ "
. قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ
عُمَرَ . قَالَ أَبُو عِيسَى
হান্নাদ (রহঃ) ..... যিয়াদ ইবনুল
হারিছ সুদাঈ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন একদিন ফজরের সময় রাসূল
(ﷺ) আমাকে আযান দিতে
নির্দেশ দিলেন। আমি আযান দিলাম। কিন্তু সালাতের সময় বিলাল ইকামত দিতে চাইলে তিনি বলরেন
তোমার সুদাঈ ভাই আযান দিয়েছে। আর যে, আযান দেয় সে-ই একাকত দিবে। তাখরিজ: ইবনে মাজাহ
৭১৭, তিরমিজি-১৯৯ [আল মাদানী প্রকাশনী]
নোট: ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিস দুর্বল, তবে অধিকাংশ আলিম এই হাদিস অনুসারে আমল
গ্রহণ করেছেন। তাঁরা বলেন যে আযান দেয় সে-ই ইকামত দিবে।
শেষকথা হলো, একই ব্যক্তি আযান, ইক্বামত ও ইমামত করতে পারবেন। কোন সমস্যা নেই। উত্তম হলো যিনি আজান দিবেন, তিনিই একামত দিবেন। সূত্র: ফাতাওয়া দারুল উলূম, খন্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৯৫
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪২০:
মোটিভেশান ক্লাস:
দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তাকওয়ার গুরুত্ব এ শিরোনামে লেসন প্লান দরকার। জাযাকাল্লাহ, তারিখ: ০৯/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শামছুল আলম ঢাকা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর কথা হলো,
আপনার প্রশ্নের আলোকে লেসন প্লান নিম্নে তুলে ধরা হলো,
ভূমিকা:
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
6:
قَالَتْ إِحْدَاهُمَا يَا أَبَتِ اسْتَأْجِرْهُ
إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ
সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম কর্মী, যে শক্তিমান
ও দায়িত্বশীল। সূরা কাসাস- ২৬
প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি নারী-পৃরুষের রয়েছে দায়িত্ব-কর্তব্য। যদিও সবার দায়িত্ব এক নয়। জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষকে নানা কাজকর্ম
করতে হয়। হালাল উপায়ে সব কর্মই করার সুযোগ রয়েছে। তবে যেকোনো দায়িত্ব বা কাজই আসুক, উপযুক্ত
শ্রম ও কর্ম না করে ফাঁকিবাজির কোনো সুযোগ নেই ইসলাম ধর্মে। মূলত ‘দায়িত্ব’ মুসলমানের
ওপর আমানত হিসেবে অর্পিত হয়। এই আমানতের হক যে পালন করতে পারবে সে পুরস্কৃত হবে আর
যে ঠিকমতো পালন না করে ফাঁকিবাজি করবে তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
সুতরাং একমাত্র আল্লাহ
তাআলার ভয়ই সব দায়িত্ব-কর্তব্য যথাযথ পালনে সহায়তা করবে।
প্রথমে দায়িত্ব-কর্তব্য ও তাকওয়ার সংজ্ঞা আলোচনা
করবো।
দায়িত্ব ও কর্তব্য কাকে বলে?
দায়িত্ব হচ্ছে কোন যথোপযুক্ত
ব্যক্তি বা সংষ্থা কর্তৃক প্রদত্ত নীতিমাল বা বিধি নিষেধ যেটা করতে আপনি বাধ্য। সোজা
কথায় আপনাকে ওগুলো করতেই হবে। না করলে জবাবদিহি করতে হবে। অন্যদিকে, কর্তব্য হচ্ছে-যেটা আপনার করা
উচিত কিন্তু না করলে সমস্যা হতে পারে বা নাও হতে পারে। অনেকটা ঐচ্ছিক।
তাকওয়ার পরিচয়:
التقوى لغةً: الوقاية، ومصدره:
وقاء، بمعنى حِفْظ الشيء عما يؤذيه، ومنه: قوله تعالى: ﴿ وَوَقَاهُمْ عَذَابَ
الْجَحِيمِ ﴾ [الدخان: 56].
ومعنى قولك: اتَّقِ الله: أي:
اجعل بينك وبين عذاب الله وقاية، ومنه: قوله صلى الله عليه وسلم: «اتَّقوا النار
ولو بشق تمرة»؛ رواه البخاري (1413)، ومسلم (2347) عن عدي بن حاتم.
ومعنى قولك: اتقى فلان كذا؛ أي:
جعله وقاية.
وفي الاصطلاح: للتقوى أكثر من
عشرةِ تعاريف: منها ما اقتُصِرَ فيه على تعريفِ جانبٍ دون آخر، ومن أحسن التعريفات
ما قال طلق بن حبيب: إذا وقعت الفتن، فأطفئوها بالتقوى، قالوا: وما التقوى؟ قال:
هي أن تعمل بطاعة الله على نورٍ من الله رجاءَ رحمة الله، والتقوى ترك معاصي الله
على نورٍ من الله مخافةَ عذاب الله؛ رواه ابن أبي شيبة في "مصنفه" برقم
(30993)، وهو أثر صحيح، والله أعلم.
شرح أثر طلق بن حبيب في تعريف
التقوى:
قوله: التقوى هي العمل بطاعة
الله: قال الله تعالى: ﴿ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ ﴾ [آل عمران: 50]، وهذا
في أكثر من عشرة مواضع من القرآن الكريم.
তাকওয়া শব্দের অর্থ বিরত থাকা, বেঁচে
থাকা, ভয় করা, নিজেকে রক্ষা করা। ব্যবহারিক
অর্থে পরহেজগারি, খোদাভীতি,
আত্মশুদ্ধি
ইত্যাদি বোঝায়। ইসলামি পরিভাষায়,
আল্লাহ
তায়ালার ভয়ে যাবতীয় অন্যায়, অত্যাচার ও পাপকাজ থেকে বিরত
থাকাকে তাকওয়া বলা হয়। অন্যকথায় সকল প্রকার পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে কুরআন
সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাকে তাকওয়া বলা হয়। যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন তাঁকে
বলা হয় মুত্তাকি।
দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে তাকওয়ার ভূমিকা:
ক. চাকরি/কর্ম
ক্ষেত্রে ওয়াদা পালনের গুরুত্ব:
প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, সংস্থা
তার কর্মচারী-কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার পূর্বে অঙ্গিকার নামা
বা শপথ নামা বা দায়িত্ব পালনে ওয়াদাবদ্ধ হয়। আর এ ওয়াদা যথাযথ পালনে আল্লাহর
নির্দেশ হলো,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
أَوْفُوا بِالْعُقُودِ
অর্থ: মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ন কর। সূরা মায়েদা-০১
খ. প্রতরণা না করা:
জনগণের সাথে যে প্রতারণা
করবে, তার জন্য
বেহেশত হারাম। যেমন,
রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি মুসলিম জনগণের শাসক নিযুক্ত হয়, অতঃপর সে প্রতারক বা আত্মসাৎকারীরূপে
মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। বোখারি, হাদিদস নং : ৭২৩৯;
মুসলিম, হাদিস নং : ৩৮০
গ. কাজে ফাঁকি না দেওয়া:
কাজে ফাঁকিবাজ পূর্ণ মুসলিম নয়। সব ক্ষেত্রে ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। নামাজ-রোজার
মতোই সেগুলো মেনে চলা ফরজ। যেমন ব্যবসায়ী কখনো ধোঁকা প্রতারণার আশ্রয় নেবেন না, ভেজাল
দেবেন না। চাকরিজীবী সময়মতো অফিসে আসবেন,
পূর্ণ
নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন এবং কাজে অলসতা করবেন না। কাজে যদি নিয়মবহির্ভূত
সময়ক্ষেপণ করা হয়, সেটা প্রতারণা হিসেবে গণ্য হবে। ইসলাম এসবে কখনোই
সমর্থন করে না। বরং নিয়মভঙ্গের জন্য শাস্তির কথা বলে। আল্লাহ বলেন,
وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا
عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ. وَإِذَا كَالُوهُمْ أَو وَّزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ
‘দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়, যারা
লোকের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় নেয় আর যখন তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন
করে দেয়, তখন কম দেয়।’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত
: ১-৩)
ফিকাহ বিশারদদের মতে, এখানে
মাপে কম-বেশি করার অর্থ হলো পারিশ্রমিক পুরোপুরি আদায় করে নিয়ে কাজে গাফিলতি করা। কাজে
ফাঁকি দিয়ে ওই সময় অন্য কাজ করা বা সময়টা অলস কাটিয়ে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির
হুমকি দেওয়া হয়েছে।
একজন মুত্তাকি ব্যক্তি মনে
প্রাণে ধারণ করে আল্লাহ আমাকে সর্বদা দেখছেন। সুতরাং সে কাজে ফাঁকি দেয় না।
যেমন,
أَلَمْ يَعْلَم بِأَنَّ اللَّهَ يَرَىٰ
সে কি জানে না যে, আল্লাহ দেখেন? সূরা আলাক-১৪
ঘ. দায়িত্বে অবহেলা করা গুনাহ:
সৎ, নিষ্ঠাবান
ও দায়িত্বশীলরা ঠিক সময়ে অফিসে আসেন। কর্তব্য পালনে ফাঁকি, অবহেলা
বা অলসতার আশ্রয় নেন না। সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, দক্ষতা
ও যোগ্যতা প্রয়োগ করে কাজের মান নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। দায়িত্বে অবহেলার
সুযোগ নেই। প্রতিটি ব্যক্তিকে তার কর্ম,
পেশা
ও দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّواالْأَمَانَاتِ إِلَىٰ
أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ
اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا
নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ
দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর
যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন
মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী। (সুরা
নিসা : ৫৮)
ঙ. অপচয়/অপব্যয়
না করা: যারা ইচ্ছাপূর্বক
অপব্যবহার করবে, তাদের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। পৃথিবীতেও
আসতে পারে যেকোনো বিপদাপদ। তাই আল্লাহ তাআলাকে ভয় করনে ওয়ালা ব্যক্তি কর্মক্ষেত্রে/দায়িত্ব পালনে অপচয় করতে পারে না।
কুরআনে কারীমে অপচয়কারীকে বলা হয়েছে শয়তানের ভাই। দেখুন-
وَ اٰتِ ذَا
الْقُرْبٰی حَقَّهٗ وَ
الْمِسْكِیْنَ وَ ابْنَ
السَّبِیْلِ وَ لَا
تُبَذِّرْ تَبْذِیْرًا. اِنَّ
الْمُبَذِّرِیْنَ كَانُوْۤا اِخْوَانَ
الشَّیٰطِیْنِ، وَ كَانَ
الشَّیْطٰنُ لِرَبِّهٖ كَفُوْرًا.
আত্মীয়কে তার প্রাপ্য দিয়ে
দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও; তবে কিছুতেই অপব্যয় করো না। সন্দেহ নেই, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান তার
প্রভুর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ! -সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ২৬-২৭
চ. আমানত রক্ষা করা: জাতির সরদার তাদের জিম্মাদার হন। জাতির কল্যাণকামনা, সব রকমের প্রয়োজনের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা এবং এর উৎকর্ষতার ফিকির করা শুধুমাত্র
তার দায়িত্বই নয়; বরং ফরজে আইন বা অবশ্য কর্তব্য। এর অনুভূতি
একান্ত জরুরি। মহান আল্লাহ বলেন,
‘وَالَّذِينَ هُمْ
لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ
এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে
হুশিয়ার থাকে। সূরা মুমিনুন-০৮
আমানত আল্লাহর হোক আর মানুষের
হোক, অঙ্গীকারও আল্লাহর
হোক বা মানুষের হোক এর খেয়াল রাখা মুমিনের গুণ। দায়িত্ব গ্রহণ করাও আল্লাহ ও মানুষের
সাথে অঙ্গীকার করার মতো। নবীজি (ﷺ) বলেন, ‘যে আমানত রক্ষা করে না তার ঈমানের দাবি যথাযথ নয় এবং যে অঙ্গীকার
পূরণ করে না তার দ্বীন যথাযথ নয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৩১৯৯) হজরত আলী রা. বলেন,
কোনো ব্যক্তির কদর ও মূল্যায়ন অনুমিত হয় তার দায়িত্বশীলতার অনুভূতির
মধ্য দিয়ে। প্রজ্ঞাপূর্ণ এই উক্তিটি নিয়ে যতই চিন্তা-ফিকির করা হবে সেটা কম হবে।
ছ. দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা
হবে:
যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন পবিত্র
আমানত হিসেবে গণ্য। আমানত রক্ষায় ইসলাম জোর তাগিদ দিয়েছে। আর এ দায়িত্ব সম্পর্কে
কিয়ামতের ময়দানে জিজ্ঞাসা করা। যেমন পবিত্র হাদিসে এসেছে-
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ،
حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي نَافِعٌ، عَنْ
عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ
" كُلُّكُمْ رَاعٍ فَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالأَمِيرُ الَّذِي عَلَى
النَّاسِ رَاعٍ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ
بَيْتِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ
بَعْلِهَا وَوَلَدِهِ وَهْىَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، وَالْعَبْدُ رَاعٍ عَلَى مَالِ
سَيِّدِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ، أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ
مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ
".
অর্থ: মুসাদ্দদ (রাহঃ) ... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ)
থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্তদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত
হবে। যেমন- জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল,
কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনদের দায়িত্বশীল,
কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীল,
কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আর গোলাম আপন মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী।
কাজেই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। শোন! তোমরা
প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই আপন অধীনস্তদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।
তাখরিজ: সহীহ বুখারী, আন্তর্জাতিক নং ২৫৫৪
জ. দায়িত্ব একটি আমানত:
ইসলামে আমানতের পরিধি অনেক বিস্তৃত।
চাকরিজীবীদের কাজের সময়টুকুও আমানত হিসেবে গণ্য। কাজ রেখে গল্প-গুজবে মেতে ওঠা বা কাজে
ফাঁকি দেওয়া খেয়ানতের শামিল। অফিসের জিনিসপত্রও কর্মীর কাছে আমানত। ব্যক্তিগত কাজে
তা ব্যবহার করা বা নষ্ট করা পুরোপুরি নিষেধ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে
মহানবী (ﷺ) বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ " آيَةُ
الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا
اؤْتُمِنَ خَانَ ".
‘মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি। তা হলো মিথ্যা কথা বলা, প্রতিশ্রুতি
ভঙ্গ করা এবং আমানতের খেয়ানত করা।’ (বুখারি : ৩৩)
উপসংহার: তাকওয়ারি গুরুত্ব সম্পর্কে
হজরত থানভি রহ-এর বর্ণিত একটি ঘটনা বর্ণনা করছি। একজন প্রথম
গর্ভবতী নারী তার শাশুড়িকে বলল, মা, আমি
তো প্রথম গর্ভধারণকারী। বাচ্চা হওয়ার অভিজ্ঞাতা আমার নেই। সুতরাং এমন যেন না হয় যে
বাচ্চা হয়ে গেলে, আর আমি টের পেলাম না। তখন শাশুড়ি বলল, বউ মা। তোমার তোমার যখন বাচ্চা হওয়ার সময় হবে, তখন
তোমাকে জাগাতে হবে না, বরং তুমিই সারা মহল্লাকে জাগাবে।
ঠিক তেমনি কোন মানুষের
আল্লাহর ভয় হাসিল হলে, তাকে কোন বিধান বা দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের বিষয়ে
বলতে হবে না, বরয় সে নিজেই সব করবে। সুতরাং দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪২১:
প্রশ্ন: কয়েকজন দ্বীনি ভাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা
সম্মিলিত ভাবে একটি দ্বিনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে ,এই উদ্দেশ্যে তারা ফান্ডও গড়ে তুলছে, প্রশ্ন হলো এই ফান্ডে জাকাতের অর্থ গ্রহণ করা যাবে কিনা,জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে কিনা। তারিখ: ০৯/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা আব্দুস সালাম, সাভার, ঢাকা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, স্বয়ং
আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে যাকাতের খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাই এ খাত ছাড়া অন্য কোথাও যাকাত প্রদান করা জায়েয
নয়। দলিল:
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ
لِلْفُقَرَآءِ وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْعٰمِلِیْنَ عَلَیْهَا وَ الْمُؤَلَّفَةِ
قُلُوْبُهُمْ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الْغٰرِمِیْنَ وَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ
ابْنِ السَّبِیْلِ ؕ فَرِیْضَةً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌ حَكِیْمٌ۶۰
যাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত
ও যাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য,
যাদের
মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের
জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এ আল্লাহর বিধান। আল্লাহ
সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।-সূরা তাওবা : ৬০
সুতরাং আপনার প্রশ্নেমতে ঐ ফান্ডে জাকাতের অর্থ গ্রহণ
করা জায়েজ নয় এবং যাকাত আদায় হবে না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪২২:
মোটিভেশন ক্লাস:
আসসালামুআলাইকুম। ইসলামের আলোকে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তারিখ: ১১/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা শাকের কুমিল্লা থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
ভূমিকা: মহান আল্লাহর বাণী-
ব্যক্তি জীবনে প্রশিক্ষণের
প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। প্রশিক্ষণ একটি অত্যন্ত শক্তিশালী মোক্ষম অস্ত্র যা
মানবসম্পদ উন্নয়নে এক বিশেষ এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। ছোট বড় সকল
প্রতিষ্ঠানেই প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত শিক্ষার
পাশাপাশি সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ব্যক্তিকে বিচক্ষণ ও দক্ষ রূপে গড়ে তোলে এবং
ভালো কারিগর তৈরিতে যথেষ্ট সহায়ক প্রমাণিত হতে পারে। দুটি স্তরে আলোচনা করবো:
ক. প্রথম স্তর: সাধারণ প্রশিক্ষণ বা দ্বীনি প্রশিক্ষণ
১. নবি-রাসূল
প্রেরণের অন্যতম লক্ষ্য হলো প্রশিক্ষণ দেওয়া: সমস্ত নবি-রাসূলগণই
নিজ উম্মাতদেরকে হাতে-কলমে দ্বীন শিক্ষা দিয়েছেন। বাস্তব আমল
দেখিয়েছেন। যেমন, পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
ইবনে উমার রা: বলেন, রাসূল সা: হাফইয়া থেকে সানিয়াতুল বিদা
পর্যন্ত সীমানার মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াসমূহের দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছেন।
(বুখারি)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা
করেন, একদা রাসুল (সা.) মসজিদে
নববীতে দু’টি মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন, অতঃপর বললেন, তারা উভয় মজলিসই কল্যাণের মধ্যে আছে,
তবে একটি অপরটির চেয়ে অধিক ভালো। একটি মজলিস আল্লাহকে ডাকছে এবং তার
কাছে প্রাপ্তির আশা করছে, আল্লাহ চাইলে তাদেরকে দিতে পারেন
আবার নাও দিতে পারেন। অপর মজলিস ফিকহ ও ইলম শিক্ষা লাভ করছে এবং অশিক্ষিতদেরকে তা
শিক্ষা দিচ্ছে। আর এরাই উত্তম মজলিস। আর আমিতো শিক্ষকরূপেই প্রেরিত হয়েছি। অতঃপর
তিনি তাদের মাঝে বসে পড়লেন।
উক্ত হাদিস থেকে এটা প্রতিয়মান হয় যে, সর্বত্তম মজলিস হচ্ছে যেখানে দ্বীনের
বিভিন্ন বিষয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এবং রাসূল (সা.) ও সেই মজলিসই বেশি পছন্দ
করতেন।
খ. দ্বিতীয় স্তর: সামরিক প্রশিক্ষণ :
১. যুদ্ধের প্রস্তুতি বা
প্রশিক্ষণের আল্লাহ তাআলার নির্দেশ: একজন সুদক্ষ, অভিজ্ঞ ও চৌকস যোদ্ধা হতে হলে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই । বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীর একটি স্লোগান হল- “কঠিন প্রশিক্ষণ, সহজ যুদ্ধ”। এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত
সেনাসদস্যগণ ব্যক্তিগত (রিক্রুট ট্রেনিং,কমান্ড, নিজ
নিজ কোরের পেশাগত কোর্স-ক্যাডার-প্রশিক্ষণ) ও দলগত (বছরে চারটি চক্রে, গ্রীষ্মকালীন-শীতকালন প্রশিক্ষণ) প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
আয়াত নং-০১
وَ اَعِدُّوۡا لَهُمۡ مَّا
اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ قُوَّۃٍ وَّ مِنۡ رِّبَاطِ الۡخَیۡلِ تُرۡهِبُوۡنَ بِهٖ
عَدُوَّ اللّٰهِ وَ عَدُوَّکُمۡ وَ اٰخَرِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِهِمۡ ۚ لَا
تَعۡلَمُوۡنَهُمۡ ۚ اَللّٰهُ یَعۡلَمُهُمۡ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فِیۡ
سَبِیۡلِ اللّٰهِ یُوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ
অর্থ: আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই
কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে,যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শত্রুদের ওপর
এবং তোমাদের শত্রুদের ওপর আর তারেকে ছাড়া অন্যান্যদের ওপর ও যাদেরকে তোমরা
জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুত যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে,
তা তোরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না। সূরা আনফাল-৬০
গোটা মুসলিম উম্মাহর প্রতি এটা এক স্থায়ী নির্দেশ যে, তারা যেন ইসলাম ও মুসলিমদের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত রাখার লক্ষ্যে
সব রকম প্রতিরক্ষা শক্তি গড়ে তোলে। কুরআন মাজীদ সাধারণভাবে ‘শক্তি’
শব্দ ব্যবহার করে বোঝাচ্ছে যে, রণপ্রস্তুতি
বিশেষ কোনও অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল নয়। বরং যখন যে ধরনের প্রতিরক্ষা-শক্তি কাজে
আসে, তখন সেই রকম শক্তি অর্জন করা মুসলিমদের জন্য অবশ্য
কর্তব্য। সুতরাং সর্বপ্রকার আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রও এর অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া
মুসলিমদের জাতীয়, সামাজিক ও সামরিক উন্নতির জন্য যত রকমের
আসবাব-উপকরণ দরকার হয়, সে সবও এর মধ্যে পড়ে। আফসোস! আজকের মুসলিম বিশ্ব এ ফরয আদায়ে চরম অবহেলা প্রদর্শন করেছে। ফলে আজ তারা
অন্যান্য জাতির আশ্রিত ও বশীভূত জাতিতে পরিণত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ
সূরতহাল থেকে পরিত্রাণ দিন। সূত্র: তাফসিরে তাওজিহুল কুরআন-মুফতি তাকি উসমানি দা.বা.
আয়াত নং-০২
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ
اٰمَنُوۡا خُذُوۡا حِذۡرَکُمۡ فَانۡفِرُوۡا ثُبَاتٍ اَوِ انۡفِرُوۡا جَمِیۡعًا
অর্থ: হে মুমিনগণ, নিজেদের অস্ত্র তুলে নাও এবং পৃথক
পৃথক সৈন্যদলে কিংবা সমবেতভাবে বেরিয়ে পড়। সূরা নিসা- ৭১
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা
মুমিনদেরকে তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ
দিতেছেন। শত্রুর বিরুদ্ধে মুমিনের অস্ত্রের ব্যবস্থা করা, নিজেদের সংখ্যা করা। তাফসিরে ইবনে কাসির-৩য়
খণ্ড; ১৭৪ পৃষ্ঠা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সূত্র: ইসলামের দৃষ্টিতে সৈনিক জীবনের দৈনন্দিন কার্যক্রম-১৩ পৃ. লেখক- মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
(এম.এ কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস ফিলআদব) ধর্ম শিক্ষক, বাংলাদেশ
সেনাবাহিনী।
হাদিস নং-০১
سَمِعْتُ رَسولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ
عليه وَسَلَّمَ وَهو علَى المِنْبَرِ يقولُ: {وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ} [الأنفال: 60]، أَلَا إنَّ القُوَّةَ الرَّمْيُ، أَلَا إنَّ القُوَّةَ الرَّمْيُ،
أَلَا إنَّ القُوَّةَ الرَّمْيُ.
الراوي : عقبة بن
عامر | المحدث : مسلم | المصدر : صحيح مسلم
অর্থ: হজরত উকবা ইবনে আমের রা.
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ আয়াত (সূরা আনফালের ৬০ নং আয়াত) তেলাওয়াত করে বললেনঃ
( قُوَّةٍ বা শক্তির ব্যাখ্যা সম্পর্কে) জেনে রাখ, শক্তি হল, তীরন্দাযী। শক্তি হলো তিরন্দাযী। তাখরিজ:
মুসলিম-১৯১৭
হাদিস নং-০২
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: "ارْمُوا وَارْكَبُوا، وَأَنْ تَرْمُوا خَيْرٌ مِنْ أن
تركبوا রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা তিরন্দাযী কর এবং ঘোড়সওয়ার হও, তবে
তীরন্দাযী করা ঘোড়সওয়ারী হওয়ার চেয়ে উত্তম। তাখরিজ: আবু
দাউদ-২৫১৩, তিরমিজি-১৬৩৭
হাদিস নং-০৩
وعْن عقبة بن عامر أَنَّهُ قَالَ: قَال رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: منْ عُلِّمَ الرَّمْيَ
ثُمَّ تركَهُ، فَلَيس
مِنَّا، أوْ فقَد عَصى رواه مسلم.
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তীর পরিচালনা শিখলো তারপর তার অভ্যাস ছেড়ে দিল সে আমাদের
(উম্মতের দলভুক্ত) নয়। অথবা তিনি বলেছেন, সে পাপ করলো।
মুসলিম-৪৭৯৬
হাদিস নং-০৪
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الأَكْوَعِ
قَالَ مَرَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى نَفَرٍ مِنْ أَسْلَمَ
يَنْتَضِلُوْنَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ارْمُوْا بَنِيْ إِسْمَاعِيْلَ فَإِنَّ
أَبَاكُمْ كَانَ رَامِيًا ارْمُوْا وَأَنَا مَعَ بَنِيْ فُلَانٍ قَالَ فَأَمْسَكَ
أَحَدُ الْفَرِيْقَيْنِ بِأَيْدِيْهِمْ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
مَا لَكُمْ لَا تَرْمُوْنَ فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ نَرْمِيْ وَأَنْتَ
مَعَهُمْ قَالَ ارْمُوْا وَأَنَا مَعَكُمْ كُلِّكُمْ
অর্থ: হজরত সালামা ইবনু আকওয়া
(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) গোত্রের একদল লোকের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ
সময় তারা তীরন্দাজীর প্রতিযোগিতা করছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে বনী ইসমাঈল! তোমরা তীরন্দাজী করে দাও। কেননা তোমাদের পূর্বপুরুষ
তীরন্দাজ ছিলেন। সুতরাং তোমরাও তীরন্দাজী করে যাও আর আমি অমুক গোত্রের লোকদের
সঙ্গে আছি। রাবী বলেন, তাদের এক পক্ষ হাত চালনা হতে বিরত হয়ে
গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাদের কী হল, তোমরা যে তীরন্দাজী করছ না? তখন তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিভাবে তীর ছুঁড়তে পারি, অথচ
আপনি তো তাদের সঙ্গে রয়েছেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা তীর
ছুঁড়তে থাক, আমি তোমাদের সবার সঙ্গেই আছি। বুখারি-২৮৯৯
والله
اعلم
بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪১৭:
আসসালামু আলাইকুম। শায়খ!
আমার জানার বিষয় হচ্ছেঃ মাছের রক্ত পাক না নাপাক। মাছ কাটার সময় যদি কাপড়ে লাগে, তাহলে নামাজ আদায় হবে
কি না?
তারিখ: ১৩/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ আমিনুল ইসলাম
দিনাজপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪২৩:
আসসালামু আলাইকুম। শায়খ! আমার জানার বিষয় হচ্ছেঃ মাছের রক্ত পাক না নাপাক। মাছ কাটার সময় যদি কাপড়ে লাগে,
তাহলে
নামাজ আদায় হবে কি না? তারিখ: ১২/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোজাম্মেল হোসেন, খাগড়াছড়ি থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো, এ বিষয়ে ইমামের মতভেদ রয়েছে।
دم السمك طاهر لا يجب غسله إذا أصاب الأرض أو الثوب ، وذلك لأن طهارة
ميتة السمك تدل على طهارة دمه ، لأنه لو كان نجسا لأمر الله بذبح السمك حتى يخرج
دمه ، كما أمر بذبح سائر الحيوانات .
وهذا مذهب أبي حنيفة وأحمد ، وأحد الوجهين للشافعية ،
واختاره بعض المالكية ، كابن العربي.
قال الكاساني في "بدائع الصنائع" (1/61) :
অর্থাৎ ইমাম আবু হানিফা এবং শাফিয়ি রহ এর মতে
মাছের রক্ত পাক, আর ইমাম আহমদ রহ. এর এক মতে পাক এবং মালিকি মাজহাবের কিছু ইমামের মতে পাক।
সূত্র: বাদাউস সানায়িআ-১/৬১
وقال أبو حنيفة: طاهر]
اهـ. وقال العلامة ابن عابدين الحنفي في "حاشية رد المحتار" (1/ 322): [والمذهب أن دم السمك طاهرٌ؛ لأنه دم صورة لا حقيقة] اهـ. واختتمت الأمانة العامة فتواها بقولها فيجوز الأخذ بمذهب الحنفية،
وهو مقابل الأصح عند الشافعية أنه طاهر،
: دم السمك طاهر وليس بنجس لقوله صلى الله عليه وسلم : (( هو الطهور ماءه ، الحل ميتته )) يقصد ماء البحر ، فالسمك وحيوان البحر ليس بنجس ؛ لأنه
إذا حلت ميتته حل الدم منه من باب أولى لأنه جزء منه .
وإن أصابه من دم السمك أو لعاب البغل أو الحمار أكثر من
قدر الدرهم أجزأت الصلاة فيه، أما دم السمك فليس بدم على التحقيق. فلا يكون نجسا. وعن أبي يوسف - رَحِمَهُ اللَّهُ - أنه اعتبر فيه الكثير الفاحش فاعتبره نجسا.
وأما لعاب البغل والحمار فلأنه
ইমামদ্বয়ের দলিল:
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ
صَفْوَانَ بْنِ سُلَيْمٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ سَلَمَةَ، - مِنْ آلِ
ابْنِ الأَزْرَقِ - أَنَّ الْمُغِيرَةَ بْنَ أَبِي
بُرْدَةَ، - وَهُوَ مِنْ بَنِي عَبْدِ
الدَّارِ - أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ
أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ سَأَلَ رَجُلٌ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ
يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا نَرْكَبُ الْبَحْرَ وَنَحْمِلُ مَعَنَا الْقَلِيلَ
مِنَ الْمَاءِ فَإِنْ تَوَضَّأْنَا بِهِ عَطِشْنَا أَفَنَتَوَضَّأُ بِمَاءِ
الْبَحْرِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " هُوَ
الطَّهُورُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُهُ " .
التخريج : أخرجه أبو داود (83)، وابن ماجه (386)، وأحمد (8720) باختلاف يسير، والترمذي (69)، والنسائي (59) واللفظ لهما
অর্থ: আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসলামা .... আবু
হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, আমরা
সাগরে সফর করে থাকি এবং আমাদের সাথে (পানির) সামান্য (মিঠা) পানি রাখি। যদি আমরা
তা দ্বারা উযু করি তবে আমরা পিপাসিত থাকবো এমতাবস্থায় আমরা সাগরের (লবণাক্ত) পানি
দ্বারা উযু করতে পারি কি? জবাবে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেনঃ সাগরের পানি পবিত্র এবং এর মৃত প্রাণী (মাছ ইত্যাদি) খাওয়া হালাল। তাখরিজ: আবু
দাউদ-৮৩; ইবনে মাজাহ-৩৮৬; আহমদ-৮৭২০;
তিরমিজি-৬৯; নাসায়ি-৫৯
ব্যাখ্যা: এ হাদিসে مَاؤُهُ
الْحِلُّ مَيْتَتُه ( অর্থাৎ এর মৃত প্রাণী তথা মাছ খাওয়া হালাল) শব্দ দ্বারা মাছের রক্ত পাক মাসয়ালা ইসতেমবাত করেছেন।
নোট: ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর মতে, সাগরের মৃত মাছই কেবল ভক্ষণ
করা আমাদের জন্য হালাল। ইমাম শাফিঈ, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদ
ইব্ন হাম্বল (রহঃ)-এর মতানুযায়ী সাগরের যাবতীয় প্রাণী ভক্ষণ করা জায়েয।
সারকথা হলো, মাছের রক্ত অপবিত্র নয়। সুতরাং কাপড়ে মাছের রক্ত
লাগলে কাপড় নাপাক হবে না; তা পরিধান করে নামায পড়া
যাবে। তবে এমন ময়লা কাপড় নিয়ে নামায না পড়াই ভাল। তাই সম্ভব হলে ধুয়ে কিংবা কাপড় বদলে নিবেন। ( ময়লা আর নাপাক এক জিনিস নয়)
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা
২০৩৬; কিতাবুল আছল ১/৫৫;আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৫; রদ্দুল মুহতার ১/৩২২
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
জিজ্ঞাসা-১২৪১৭:
আসসালামু আলাইকুম। শায়খ!
আমার জানার বিষয় হচ্ছেঃ মাছের রক্ত পাক না নাপাক। মাছ কাটার সময় যদি কাপড়ে লাগে, তাহলে নামাজ আদায় হবে
কি না?
তারিখ: ১৩/০১/২৩ ঈসায়ি/ইংরেজি
মাওলানা মোঃ আমিনুল ইসলাম
দিনাজপুর থেকে।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد بسم الله الرحمن الرحيم
তাসলিম ও হামদ-সানার পর প্রথম কথা হলো,
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রদানে, মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
وعليكم السلام ورحمة الله
وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ونسأل الله التوفيق وهو الموفق
والمعين
মর্যাদা নবি (ﷺ)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ কামিল
ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিচ্ছেন, ধর্ম শিক্ষক, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক (বগুড়া),
(এম.এ
কামিল ফিকাহ ও তাফসির, দাওরায়ে হাদিস, আততাখাস্সুস
লিলআদব), ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি,
শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বরিশাল।
তিনি কুরআন খতম করলে
পরিবার-পরিজন সকলের জন্য দো‘আ করতেন।[57] . ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ১/৩০৪।
নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না
এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না’ (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; ছহীহাহ হা/২৫০)।
বিভাগের
নাম্বার দিচ্ছি- ০১৭১১-৯৬১৩৭৪, বাদ আসর থেকে ইশা পর্যন্ত মোবাইল : 01923-295995 ; ০১৭১১-৯৬১৩৭৪
অবগতি
গত ১৯/১১/২২ তারিখে আল-বুরহানে জিজ্ঞাসা-১২৩৪৬ শিরোনামে প্রকাশিত মাসয়ালাটি কিছু ভাইয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে,
যাচাই-বাচাই পর কিছু সংশোধন- সংযোজন-বিয়োজন তথা সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। তাই কাঙ্খিত প্রর্থীদের পুনরায় দেওয়ার সুযোগ রযেছে এবং পুনরায় দেখার জন্য অনুরোধ রইল।
উল্লেখ যে, আমার মাত্র দুটি চোখ, একটি মাথা। অপর পক্ষে ২৩৬জন সদস্যের ৪৭২টি চোখ। সুতরাং সহজেই অনুমেয় অনেক কিছু ভুল ধরা পড়বে। আমি পূর্বেই বলেছি যে,
যেকোন ধরণের ভুল/ক্রুটি দৃষ্টিগোচর হলে, ইকরামুল মুসলিমিনের অংশ হিসেবে অবশ্যই অবগতি করবেন।
তবে অবগতিটা গ্রুপে না করে,
আমার ব্যক্তিগত আইডিতে নক করলে,
ভাল হয়। কেননা গ্রুপে বিভিন্ন বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
যা কাম্য নয়।
আল-হামদুলিল্লাহ এতটুকু সৎ সাহস আছে যে, আমার কোনো ভুল বুঝতে পারলে, তা স্বীকার করকে এবং সবাইকে অবগতি করতে কার্পণ্য করবো না ইনশাল্লাহ। ইতিপূর্বেও আমি কয়েকটি মাসয়ালা সংশোধন- সংযোজন-বিয়োজন করে অবগতি করেছি।
ইনশাল্লাহ তা অব্যাহত থাকবে।
নিবেদক
মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন